ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব-১০

0
1489

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#পর্ব_১০
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

আকাশকে বাসায় আসতে দেখে ওর আম্মু বলল
“আকাশ আয়ান কোথায়?আয়ানকে নিয়ে আসিস নি।”

“আম্মু আয়ান আসে নি।কাজ শেষ করে বিকালে আসবে।”

রিয়া বলল
“আয়ান কি আমাদের সাথে বাসায় যাবে না?”

“হয়তো না।আয়ানের কথা শুনে এটাই বুঝলাম।”

আয়ানের আম্মু কান্না করছে।নিরা ওর শাশুড়ির কাছে গিয়ে বলল
“আম্মু আপনি কান্না করছেন কেনো?আয়ান তো বলে নি আপনাকে চলে যেতে।আপনি এইখানে থেকে যান।আয়ানকে বুঝিয়ে বলেন তাহলেই দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আয়ানের আম্মু বলল
“আয়ান আমাদের কারো কথাতে বাসায় যাবে না।ওর আব্বু যতদিন না ওকে বাসায় যেতে বলছে। ততদিন পর্যন্ত আয়ান বাসায় যাবে না।”

এবার আকাশ বলল
“আমারো তাই মনে হয়।কিন্তু আব্বু কি আয়ানকে বলবে বাসায় যেতে?”

“আমি ঠিক জানি না আকাশ।তোর আব্বু আয়ানকে বাসায় যেতে বলবে কি না সেটা আমার জানা নেই।কিন্তু আমি আয়ানকে ছেড়ে এখন বাসায় যাচ্ছি না।আমি এইখানেই থাকবো।”

রিয়া বলল
“হ্যা ফুপি এটাই ভালো হবে।ওনি তো আয়ানকে বাসায় নিয়ে যেতে পারলো না।বাসায় কত কি বলেছিল কিন্তু এইখানে এসে ওনার সব কথা ফুড় হয়ে গেছে।”

আকাশ রাগি চোখে রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।নিলা নিরাকে ফিসফিস করে বলল

“আপু রিয়া আপু আকাশ ভাইয়াকে ওনি করে বলছে কেনো?”

“রিয়া আকাশ ভাইয়াকে ভালোবাসে।বিয়ের কথাবার্তা চলছে।এবার বুঝেছিস।”

“এত দূর!আমাকে তো এইসব কিছুই বললে না।”

“তোকে বলে কি হবে হ্যা?তুই কি আমাকে বলেছিস তুই রিয়াদকে পছন্দ করিস।কিরে বলেছিস সেই কথা?”

নিলা এবার চুপ হয়ে গেল।হঠাৎ রিয়া বলল

“ভাবি!”

“হ্যা রিয়া বলো।”

“বাসায় কি কিছু আছে রান্না করার মত?”

“আসলে আমরা গতকালকেই এই বাসাতে এসেছি।দুপুরে অল্প কিছু রান্না করার জন্য আছে।”

রিয়া আকাশকে বলল
“আপনি বাজার থেকে মাছ মাংস চাল আর কিছু কাচা বাজার নিয়ে আসুন।ভাবি আর আমি মিলে রান্না করবো দুপুরের জন্য।এখন তাড়াতাড়ি যান।”

আকাশ রিয়ার দিকে বাকা চোখে তাকিয়ে থেকে হনহন করে চলে গেল।নিরা ওর শাশুড়ি মাকে নিয়ে ভিতরে রুমে গেল।ওদের পিছনে সায়রাও গেল।এখন ড্রয়িংরুমে শুধু রিয়া আর নিলা আছে।রিয়া নিলাকে বলল

“তোমার সাথে ঠিক মত কথা হয় না নিলা।আজ কথা বলা যাবে কি বলো?”

“হ্যা আপু সেটা বলা যায়।

“এইখানে বসো।”

নিলা আর রিয়া নিচে বসলো।রিয়া বলল
“তা দিনকাল কেমন চলছে?”

“ভালো আপু।”

“আর আমার ভাইয়ের সাথে কেমন চলছে?”

কথাটা শুনে নিলা কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেল।নিলা ভাবে নি রিয়া এমন কিছু বলবে।নিলা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।রিয়া নিচু হয়ে নিলার চেহারা দেখে বলল

“ইস আমার ভাইয়ের কথা বলাতেই লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।আমি কিন্তু সব জানি।”

এবার নিলা সামনে তাকিয়ে বলল
“কি জানেন আপু?”

“এই যে আমার ভাই তোমাকে ভালোবাসে।কিন্তু তুমি ঠিক মত ওকে পাত্তা দেও না।”

নিলা হেসে বলল
“আপু আপনার ভাই এখনো এই কথাটা আমাকে বলতে পারে নি।সামনে থাকলে এমন একটা চেহারা করে মনে হয় কিছুই বুঝে না।কিন্তু ফেসবুকে দেখি কত ভাব আপনার ভাইয়ের।”

“ওইটা আর বলতে।রিয়াদের ভার্সিটিতে একবার যেও।তাহলেই বুঝতে পারবে।”

“কেনো আপু?”

“তোমার সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে কিছুটা শান্ত হয়ে গেছে নাহলে বেশিরভাগ সময় ভার্সিটিতে মারামারি করে।”

“কিন্তু ওনাকে দেখে তো সেটা বুঝা যায় না।”

“আগে এমন ছিল না।ভার্সিটিতে পড়ার পর থেকেই এমন হয়েছে।কিন্তু এখন আবার কিছুটা চুপচাপ।”

“ওহ আচ্ছা।”

রিয়ার সামনে কিছু বলল না নিলা।কিন্তু মনে মনে নিলা বলছে
“ভার্সিটি মারামারি করেন তাই না।একবার দেখা হোক।তখন আপনাকে মজা দেখাচ্ছি।আপনাকে যদি ঠিক না করেছি তাহলে আমার নামও নিলা না।”

আকাশ অনেক কিছুই বাজার করে নিয়ে এসেছে।নিরা আর রিয়া সব কিছু নিয়ে রান্নাঘরে গেল।ওরা ঠিক করছে কি কি রান্না করবে।নিলা ভিতরের রুমে গিয়ে আয়ানের আম্মুর পাশে বসলো।নিলাকে দেখে আয়ানের আম্মু বলল

“কেমন আছো নিলা মা?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আন্টি।আপনার শরীর এখন কেমন আছে?”

“আয়ান চলে আসার পরে আর আগের মত নেই।”

“এখন তো আয়ান ভাইয়ার কাছে থাকবেন।ভাইয়াকে একটু বকে দিবেন আন্টি।এমন কেউ করে বলেন?কাউকে না বলে এইখানে চলে এসেছে।জানেন আন্টি আম্মুও অনেক টেনশন করেছিল আয়ান ভাইয়াকে নিয়ে।কিন্তু এখন ভাইয়ার খোজ পেয়ে অনেকটা খুশি হয়েছে।”

“আমার যদি আরেকটা ছেলে থাকতো তাহলে তোমাকে সেই ছেলের বউ করে নিয়ে যেতাম।”

নিলা কিছু বলল না।কিন্তু নিলার পাশ থেকে সায়রা বলল

“আন্টি আপনার বড় ছেলে দেখতে কিন্তু বেস হ্যান্ডসাম।ওনার বিয়ে কি হয়ে গেছে?”

“তোমার কি আমাকে পছন্দ হয়েছে পিচ্চি?”

রুমের ভিতরে আসতে আসতে আকাশ কথাটা বলল।কথাটা শুনে নিলা আর আকাশের আম্মু মুচকি মুচকি হাসছে।আর সায়রা তো পুরাই লজ্জায় পরে গেল।সায়রা ভাবে নি আকাশ এখন রুমে আসবে।সায়রা বলল

“আসলে আকাশ ভাইয়া আমি কথাটা মজা করে বলেছি।”

“তার মানে আমি হ্যান্ডসাম না।”

“না ভাইয়া।আমি এমনটা বলি নি।”

“তাহলে কেমন?”

“বলেছি আপনি অনেক ভালো।”

কথাটা বলেই সায়রা দৌড়ে রুম থেকে চলে গেল।এইখানে থাকলে সায়রা যে লজ্জায় পরবে সেটা বুঝেই পালিয়েছে।নিলা আয়ানের আম্মুকে বলল

“আন্টি কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?”

“হ্যা নিলা মা বলো।”

“আন্টি আয়ান ভাইয়া এমন কেনো?”

“আয়ান আবার কেমন নিলা?”

“এই যে এতো রাগি।”

এবার আকাশ বলল
“আয়ানের এইসব আব্বু থেকে পেয়েছে।আব্বুও এমন তাই আয়ানও এমন হয়েছে।”

“কি বলেন ভাইয়া! আঙ্কেলও এমন!কিন্তু ওনাকে দেখে তো মনে হয় না?”

আকাশের আম্মু বলল
“আয়ানকে দেখে তোমার এমন মনে হয়েছিল নিলা?”

“না আন্টি।”

“বাপ ছেলে পুরো এক রকমের।”

দুপুরের রান্না শেষ করে ফেলেছে নিরা আর রিয়া মিলে।আজ সবাই নিচে খেতে বসেছে।খাওয়ার মধ্যে নিলা বলল

“আজ এইভাবে খেতে কিন্তু খারাপ লাগছে না।”

আকাশ বলল
“হ্যা আমারো বেশ ভালো লাগছে।এক্স

আকাশের আম্মু বলল
“খাওয়া শেষে কথা বলো সবাই।এখন খাওয়াতে মন দাও।”

আকাশের আম্মু কথা শুনে কেউ আর তেমন কথা বলল না।খাওয়া শেষে সবাই রেস্ট নিতে চলে গেল।আকাশকে আলাদা রুমে রেস্ট নেয়ার জন্য দেয়া হল।আর বাকি সবাই ভিতরের রুমে রেস্ট নিলো।বিকালের মধ্যে আয়ান বাসায় চলে আসলো।আয়ানের আম্মু আয়ানকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো।অনেক দিন পরে আয়ানের আম্মু আয়ানকে দেখলো।আয়ান বলল

“আম্মু আমি বাইরে থেকে এসেছি।আগে ফ্রেশ হয়ে নেই।তারপরে তোমার কোলে মাথা রেখে একটু শুয়ে থাকবো।এখন ফ্রেশ হয়ে যেতে দেও আগে।”

“তুই কিভাবে পারলি আয়ান আমাকে ছেড়ে থাকতে?”

“আচ্ছা আম্মু এই সব কথা পরে হবে এখন আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”

আয়ান ফ্রেশ হতে চলে গেল।রিয়া আয়ানের মাকে বলল

“দেখেছো ফুপি আয়ান কেমন করলো?মন তো চাচ্ছিল গিয়ে দুইটা লাগিয়ে দেই।”

“তুই চুপ কর তো।আয়ান কিন্তু তো ছয়দিনের বড়।”

“বড় না ছাই।শয়তানের হাড্ডি একটা।”

কিছুসময় পরে আয়ান ফ্রেশ হয়ে আসলো।নিরা খাবার নিয়ে এসে আয়ানকে দিলো।আয়ান খাবারটা খাবে তখন আয়ানের আম্মু ওর হাত থেকে খাবারটা নিজের হাতে নিয়ে বলল

“নিজের হাতে খেতে হবে না আজ।আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”

আয়ানের আম্মু আয়ানকে খাইয়ে দিচ্ছে।তখন আকাশ বলল

“আম্মু আমাকে তো এইভাবে খাইয়ে দিলে না কখনো?”

“রিয়াকে বল খাইয়ে দিতে।কয়েকদিন পর যখন তোদের বিয়ে হবে তখন রিয়াকে বলিস তোকে খাইয়ে দিতে।”

এবার রিয়া বলল
“সেই হিসেবে তো নিরা ভাবি আয়ানকে খাইয়ে দিবে।তাহলে তুমি কেনো আয়ানকে খাইয়ে দিচ্ছো?”

এবার আয়ান বলল
“আম্মু পেত্নীটাকে এই বাসাতে নিয়ে আসলে কেনো?আমার ভালো এই পেত্নী কোনো দিনই দেখতে পারে না।”

“ফুপি তোমার ছেলেকে বলো চুপ থাকতে না হলে কিন্তু ওর খবর আছে।”

আয়ানের আম্মু বলল
“এই তোরা থামবি?”

আয়ানের আম্মুর কথাতে ওরা চুপ হয়ে গেল।খাওয়া শেষে আয়ানের আম্মু বলল

“আয়ান এখন তাহলে বাসায় চল।অনেক তো হল এবার।”

“নাহ আমি ওই বাসাতে যাবো না।আমি এইখানেই ঠিক আছি আম্মু।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে