মহুয়া দৌড়াচ্ছে। তার পিছনে ছুটছে কিছু বখাটে ছেলেপুলে। মহুয়া ভয়ে আত্মা কাঁপচ্ছে। ইতি মধ্যেই রাস্তা ঘাট ফাঁকা হয়ে গেছে। চারিদিকে ঘন জঙ্গল আর দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু গাছ গুলোর ছায়া ছাড়া কিছুই চোখে পড়চ্ছে না। নিজের কঁপালে নিজেই চাপড়াচ্ছে সে। বাস নষ্ট হয়ে গেছে অর্ধেক রাস্তায়। প্যাসেঞ্জাররা তুলকালাম বাজিয়ে গাড়ির ড্রাইভারকে গালি-গালাজ করে যে যার পথে হাটা ধরেছে। মাঝ নদীতে পড়েছে মহুয়া। একা একা পা বাড়াতেই নজরে পরেছে কিছু বখাটেদের। সামনের উঁচু টিলার উপর বসে তারা জুয়া খেলছিল। মহুয়াকে দেখেতেই হুরমুরিয়ে নেমে আসে। মহুয়া ভয়ে মনে মনে আল্লাহকে ডাকলো। একরাতে এত কিছু নিতেই পারছেনা। মস্তিষ্ক খালি খালি লাগচ্ছে সে বার বার পিছনে ফিরে তাকাছে তো পা ছুটাচ্ছে। কিন্তু আজ যেন বিপদ তার শেষ হবারই নয়। আকাশের বুক চিঁড়ে বেড়িয়ে আসচ্ছে আক্রোশ। বাজ ফালিয়ে কোথাও করে দিছে আলোকিত চারিদিক। ঝড়ো হাওয়া বইছে। ঘন কালো মেঘ জমে চাঁদ ঢেকে আড়াল করে দিচ্ছে। মহুয়ার হাঁপিয়ে গেছে পা যেন আর চলছেই না। কোন পথ ছেড়ে কোন পথে চলে এসেছে? কিছুই জানা নেই তার। মহুয়া দাঁড়িয়ে পড়লো। ছেলে গুলো চলেই এসে, প্রায় তাকে ছুঁই ছুঁই । মহুয়া হু হু করে কেঁদে আবার ছুটলো। চোখের সামনে ক্রমসেই অন্ধকার হয়ে আসচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তে শুরু হয়ে গেল তুমুল বৃষ্টি। আর দূর্ঘটনা ঘটলো তখনি। ধাপিয়ে আসা কালো রঙ্গা মার্সেডিজের সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে দূরে যে পড়লো মহুয়া। আধো খোলা চোখ দিয়ে দেখলো, এক জোড়া পা দ্রুত তার সামনে এসে থামলো। মহুয়ার দিকে ঝুঁকে ঠোঁট নাড়লো। মহুয়া পিটপিট করে শুধু সামনে থাকা ছেলেটির দিক তাকালো, আবার চোখ ফিরিয়ে ছেলেটির পিছনে তাকালো। তার পিছু নিয়া বাখাটে গুলো চলে যাচ্ছে উল্টো পথে। মহুয়া হাফ ছাড়লো। কিছু বলতে চাইলো, মাথা যন্ত্রণা করছে খুব কিন্তু মুখে রা নেই। বাক শক্তি বুঝি হারিয়ে ফেলেছে সে? মহুয়া আবার তাকালো। ঝংকার তুলা কন্ঠময় বলে যাচ্ছে,
” মিস আর ইউ ওকে? এভাবে ছুটছিলেন কেনো?”
মহুয়ার কানে পৌঁছাল কিনা বুঝা গেলো না।শুধু ভয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ মহুয়ার। বৃষ্টিতে সারা শরীর ভিজে গেছে।কাপড় লেপ্টে আছে সারা অঙ্গে। ছেলেটিকে এতো কাছে দেখে ভয় ঝেঁকে বসেছে, আচ্ছা সেকি মহুয়ার ক্ষতি করবে? আজ রাতে ঘটে যাওয়া বার বার ঘটনা গুলো কি আবার পুনরাবৃত্তি হবে? ছেলেটি আবার ডাকলো। মহুয়া ছেলেটির দিক তাকিয়ে রইলো। চোখে মুখে কত শুদ্ধতা, শুভ্রতা। এ ছেলেটি হয়তো আলাদ। সত্যি কি তাই? পুরুষ জাতির উপর আজ বড্ড ঘৃণা হচ্ছে মহুয়ার। বুঝে উঠতেই পাড়চ্ছে। কিছু বলতে নিলো মহুয়া তার আগেই জ্ঞান হারালো।
———-
মনটা আজ বড্ড বিষন্ন ইয়ামিনের। বরাবরের মতো তার মা বিয়ে নিয়ে প্যাচ প্যাচ শুনতে অসহ্য হয়েই বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়ে সে। তার এক কথাই সে বিয়ে করবে না। আর তার মা নাছর বান্দা। প্রতিদিন ইনিয়েবিনিয়ে বিয়ের কথা তুলবেই।আজো -ও একগাদা মেয়েদের ছবি নিয়ে হাজির হয় তার ঘরে। তাই আজ এক প্রকার ঝগড়া করেই বের হয়েছে বাসা থেকে। এর মাঝেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে তুমুল ভাবে। বড্ড উদাসীনতা রোগো মাথার চুল টানতে টানতে গাড়ি চালচ্ছিলো সে। কোথা থেকে ছুটে একটি মেয়ে গাড়ি সামনে আসতেই ব্রেক কোসলো ইয়ামিন। দরজা ঠেলে বের হয়ে কাছে আসতেই বুক ধক করে উঠলো।বৃষ্টি তেজ তখন তীব্র। মেয়েটি বেঁচে আছে না মরে গেছে বুঝার জন্য ঝুকলো। মেয়েটি পিটপিট করে তাকিয়ে আছে রাস্তার ধারে থাকা স্টেডিয়াম লাইটের হলতে আলো একটি উজ্জল মুখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। মেয়েটি ঠোঁট নারছে কি বলচ্ছে বোধগাম্য হলো না ইয়ামিনের। মেয়েটি এবার চোখ বুঝে নিলো। নিস্তেজ হয়ে পরে রইলো মাটিতে। বৃষ্টির পানিতে ভেসে যেতে লাগলো রক্ত। ছেলেটি অবাক হয়ে গেলো। মহুয়ার মুখে পড়ে থাকা চুল সরাতেই ভেসে উঠলো ক্ষত স্থানটি। বুকে মাঝে কেমন জানি করে উঠলো ইয়ামিনের। নাকের সামনে কাঁপা কাঁপা হাত এগিয়ে দিলো। শ্বাস নিচ্ছে দেখে সুস্থির ফিরে পেলো। কোনো কিছু না ভেবেই কোলে তুলে নিলো তাকে। গাড়ির পিছনের সিটে শুয়ে গাড়ি ঘোরালো।
——
চিঠি পড়ে সেদিন থম মেরে বসে থাকে মহুয়া। সারা রাত ভাবে কে এই ব্যক্তি? কে এই প্রেমিক মানুষ? যার ভিতরে এতোটা ভালোবাসা তারাথায় ভনভন করে ঘুড়তে থাকে প্রতিটি শব্দ। মস্তিষ্ক শিরায় উপশিরায় জানান দেয় লোকটি তার প্রিয়তমার ভালোবাসায় কাতর। নয়তো বড্ড পাগল বা পাগল প্রমিক।আবার সব পাগলরা প্রেমিক হয় না। আর কেউ কেউ হয় ভবের পাগলো। এমন অনেকেই আছে যারা হয় নিশ্চুপ পাগল প্রেমিক। নিঃশব্দে শুধু ভালোবেসে যেতে পারে এরা আজীবন। লোকটিকে মহুয়া সেই ক্যাটাগরিতেই ফেললো। নিশ্চুপ পাগল প্রেমিক। সারা রাত এসব ভেবে ভোর রাতে কলম উঁচিয়ে সেও লিখে ফেললো কয়েক লাইন। লোকটিরও জানা দরকার? তার পায়রা তার চিঠি ভুল ঠিকানায় এনেছে।মহুয়া লিখলো,,
মিঃ প্রিয়তমার প্রিয়তম,
“মধ্যযুগে চিঠি প্রচলন ছিলো জানতাম। ডিজিটাল যুগেও যে কেউ তার অনুভূতি এতো সুন্দর করে সাদা কাগজে তুলে ধরতে পারে সে মানুষটি নিজ মনের সাথীকেও ভালবাসাতে পারে অসীম তা স্পষ্ট। যদি-ও চিঠি ভুল মানুষটির কাছে এসেছে। পড়েও ফেলেছি তার জন্য দুঃখীত। তবে দোয়া করি! দুনিয়ায় যেই প্রান্তেই আপনার প্রিয়তমা থাকুক না কেন। তার কাছে আপনার মনের উড়ে চিঠি পৌছে আপনার কাছে ফিরে আসুক।
ইতি
প্রিয়তমার চিঠি ভুল ঠিকানায় আসা আর সেই ভুল ঠিকানার মালিক,
মরিচীকা।
চিঠিটি লিখে চটপট পায়রার পায়ে বেঁধে উড়িয়ে দিলো মহুয়া। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ভোরের আলোর সাথে তাল মিলিয়ে ছুটে চলতে দেখতে লাগলো পায়রাটিকে। মনের মাঝে আনন্দের রেশ সেদিন সারাদিন কেঁটে ছিলো। চিঠির জবাব পাবে না ভেবেও সারাদিন এই ভাবনায় কাঁটিয়ে দিয়েছিলো মহুয়া। সেই অপেক্ষা যেন ছিলো মিষ্টি এক অনুভূতি। আর মুখের লাজুক হাসি।
স্বপ্নের মাঝে পুরোনো কিছু স্মৃতি ভেসে উঠতেই ঘুমের মাঝে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো মহুয়ার। তার সামনেই সোফায় বসে থাকা বড্ড বিরক্ত ইয়ামিন বিস্ময়ে বিমুঢ়। একটা অসুস্থ মেয়ে কিভাবে ঘুমের মাঝে হাসতে পারে? যদিও সে মেয়েদের বড্ড অপছন্দ করে। কিন্তু মেয়েটিকে তার কেন যেন অন্যরকম লাগচ্ছে। তার কারণটা কি? নিতান্তই মেয়েটির বাচ্চা মুখ নাকি তার দূর্দশা? ইয়ামিন মাথা চেপে ধরলো নিজেকে নিজেই গালি দিয়ে বলল,,
কথাটায় চোখ তুলে তাকালো মহুয়া। মধ্যবয়সী এক থলথলে দেহের লোকটির বিভৎস রক্তিম নয়ন জোড়া তার সর্বাঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে।।শুকনো ঢুক গিললো মহুয়া। বুকের ভিতর ধ্রিম ধ্রিম আওয়াজে হাতুড়ি পিটানোর মতো শব্দ করতে লাগলো।বাড়ি থেকে মাঝ রাতে বিয়ে করবে না বলে পালিয়ে এসেছিলো মহুয়া। কোথায় যাবে ভাবতে না পেরে স্টেশনে সামনে এসে দাঁড়ালো। রাত তখন একটা কি দুইটা ট্রেন সব একে একে গন্তব্যে ছেড়ে চলে গেছে। শুধু গন্তব্যহীন মহুয়া প্লাটফর্মে বসে কাঁদচ্ছিলো আর ভাবচ্ছিলো কি করবে সে? কোথায় যাবে!তখন-ই লোকটি হাজির হয়। লোকটি আবার গলার স্বর উঁচিয়ে বলল,,
” কি হলো কথা বলছো না কেন? চলো জলদি। না হয় আরো পাঁচশত বাড়িয়ে দিবো!”
“নাটক করিস আমার সাথে? এখন তোকে প্রয়োজন আমার। চল জলদি ।”
মহুয়ার হাত আবার টেনে ধরলো লোকটি। মহুয়া এবার চিৎকার করে বলল,,
” আমি যাবো না। আপনি ভুল ভাবচ্ছেন আমি তেমন মেয়ে নই!”
লোকটি ভ্রু কুঁচকালো। আগের থেকে শক্ত করে মহুয়ার হাতটি টেনে ধরলো। হিসহিসিয়ে বলল,,
“একদম নাটক করবি না! তাহলে এখানেই..”
মহুয়ার বুক ফেঁটে কান্না পেলো। নিজের দোষে নিজেই ফেঁসে গেছে মহুয়া। মহুয়া মনে মনে আল্লাহকে ডেকে শরীরে সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা মারে লোকটিকে। লোকটি ধুম করে নিচে পড়ে যায়। মহুয়া সেই ফাকে বেগ কাঁধে উঠিয়ে প্রান পন চেষ্টা করে ছুটে পালাতে। কিন্তু তার আগেই লোকটার বিশাল থাবা খামচ্ছে ধরলো মহুয়ার পিঠে। মহুয়া চিৎকার করতে চাইলো। কিন্তু আশেপাশে মানুষের অস্তিত্ব ক্ষীণ। কারো কাছে সাহায্য চাইবে তার-ও উপায় নেই। মহুয়া কি করবে ভেবে না পেয়ে পিছনে ফিরে লোকটির পুরুষ অঙ্গে এক লাথি বসালো। লোকটি কুকিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। মহুয়া এবার আর দাঁড়ালো না। এক ছুঁটে বের হয়ে গেলো স্টেশন থেকে। ছুটতে ছুটতে মেন রাস্তার ধারে আসতেই একটি বাসের দেখা মিললো। কোনো কিছু না ভেবেই উঠে পড়লো সেটায়। জানালার পাশেই সিট পেয়ে বসে পরে সুস্থির নিশ্বাস ছাড়লো মহুয়া। বাহির থেকে বাসের জানালা ভেদ করে আসা জ্যোৎস্নার আলো গায়ে লাগচ্ছে মহুয়ার। হঠাৎ করেই মহুয়ার বুকে এক অসহনীয় যন্ত্রনা চিনচিন করে ব্যথা দিতে লাগলো।কেন করছে এসব মহুয়া? কিসের আশায়? যার জন্য এত বিপদ মাথা নিচ্ছে, সে কি আদো তাকে মনে রেখেছে? বুকের মাঝে জমিয়ে রাখা, দুঃখ কষ্ট গুলো দলা পাকিয়ে কান্নায় রূপ নিয়ে ঝড়ে পড়তে লাগলো।মহুয়া তার ব্যাগ থেকে একটি বক্স বের করলো। বক্স খুলতেই দৃশ্য মান হলো কিছু চারকোনা নানা রঙের ছোট ছোট চিরকুট আর কিছু পায়রার পালক। মহুয়া কাঁপা কাঁপা হাতে তুলে নিলো একটি লাল রঙ্গা চিরকুট। ভাবতে লাগলো গত দুবছর আগে এমনি একটি জ্যোৎস্না আলোকিতময় রাতে মহুয়ার সাথে ঘটে যাওয়া এক অদ্ভুত ঘটনার কথা।
ঠিক সেই মুহূর্তে কোথা থেকে একটি পায়রা এসে বসলো মহুয়ার সামনে। মহুয়া অবাক হয়ে গেলো। প্রথম ভয় পেয়ে গেলেও শুভ্র পালকে ঢাকা পায়রাটিকে তুলে নিলো কোলে। পায়রাটিও যেন চুপটি করে আছে। যেন সে আদর খেতে খুব ভালো লাগচ্ছে। মহুয়া হাসলো। পায়রার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতেই চোখে পড়লো পায়রার পায়ে বাঁধা কিছু একটা। মহুয়া চট করে খুলে নিলো পায়ের মাঝে বাঁধা কাগজের টুকরোটি। ভ্রুকুচকে পড়তে লাগলো কাগজটি খুলে,
প্রিয়তমা,
দিন ফুরুচ্ছে, মাস পড়চ্ছে, বছর ঘুরছে। শুধু থেমে গেছে আমার ভালোবাসা, আমার আবেগ, আমার অনুযোগ, আমার অনুভূতি। কবে ফিরবে তুমি? আমার নীড়ে আসবে কবে? গুনে গুনে ঘনকাল পাড় করছি। তবুও যেন থেমে গেছে সে দিনটির মাঝেই। হারিয়ে গেছিলে, দূরে চলে গেছিলে তুমি। এখনো বসে থাকি, অপেক্ষা করি আসবে তুমি। হাত দুটি ধরে চোখের কোনের মুক্ত ঝর্ণার বিলিন করে বলবে, আমি এসেছি ফিরে। প্রিয়তমা! তোমায় যে আমি আজ-ও আমার শয়নে স্বপনে খুঁজে বেড়াই! দেখা তো মিলেনা তোমার?আমাকে কি মনে পড়ে না তোমার? একটি বার কি দেখা দিতে ইচ্ছে হয় না? জানাতে ইচ্ছে করে না,
“প্রিয়তম তুমি ছাড়া এ হৃদয় শুন্য, ভাঙচুর।তোমায় ছাড়া অন্ধকার রাত্রিদিন। তুমি এসো? হাতটি ধরো? দূরে কেন জড়িয়ে নেও ভালবাসার চাদরে?”
কিন্তু আমার যে জানতে ইচ্ছে করে। বড্ড জানতে ইচ্ছে করে, কবে পাবো তোমার দেখা? কবে রাখবো হাত তোমার হাতে? কবে জোড়াবো আমার ভালোবাসার চাদরে। সময়ের গতি পথ নাকি তীব্র গতিতে ছুটে। তাহলে আমি কেন থেমে? বলো তো? আজ-ও কি আমার জীবন বিতৃষ্ণায় কেঁটে যাবে! আমি কি আর তোমার দেখা পাবো না প্রিয়তমা! জানো আজ-ও তোমায় লিখে যাই চিঠি কিছু উড়িয়ে দেই আকাশে, কিছু রেখে দেই আমার কাছে।একান্ত নিকটে। কিন্তু উত্তর মিলেনা। তবু-ও অপেক্ষায় থাকি। দেখা হবে তোমার আমার ও-ই পারে।
ইতি
প্রিয়তমার অপেক্ষারত প্রিয়তম
কিছু একটার শব্দে তন্দ্রা ছুটে গেলো মহুয়ার। বাস দাঁড়িয়ে আছে। বাহির থেকে আসা একাধিক কন্ঠের জন্য বুঝ উঠতে পারছে না কিছু মহুয়া। সে জানালা দিয়ে বাহিরে উঁকি দিলো।
কটমটে মুখ নিয়ে নিয়ে তাকিয়ে আছে সিয়াম ভাইয়া।মনে করিনি উনি আসবেন!একটু আগে উনিই আকাশবাবুকে পেছন থেকে এক ঝটকায় সামনে এনে দুটো চড় বসিয়ে দিয়েছেন।আর তখন থেকে আমি ঠাই দাড়িয়ে আছি!কি হচ্ছে?আকাশবাবু কিসব বলছেন?এখানেই বা কি হচ্ছে?কেনো হচ্ছে কিছুই বুঝছি না!সব মাথার উপর দিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
-তুই কোন সাহসে আমায় চড় মারলি সিয়াম?তুই এখানেই বা কি করে আসলি?
আকাশবাবু আবার দু পা আমার দিকে এগিয়ে আসলেন।একটু ঝুকে বললেন,
-তুমি ওকে এখানে নিয়ে এসেছো না!আমার কলস্ আমার এস এম এস সব তুমি ওকে দেখিয়েছো তাইতো?
হাত তালি দিলেন আকাশবাবু!আশেপাশে থেকে কিছু লোক ঘিরে ধরলো আমাদের।এতক্ষণ যেখানটা জনমানবশূন্য হয়ে ছিলো আর হঠাৎ করে প্রায় বারো তেরোটার মতো লোক বেড়িয়ে এলো।সয়তানি হাসি নিয়ে আকাশবাবু বললেন,
-আমি আগে থেকেই সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি ডিয়ার ফ্রেন্ড!যদি!যদি ঘুনাক্ষরেও কেউ টের পায় যে সিয়া এখানে এমন জায়গায় আসবে তাহলে কেউই ওকে একা ছারবে না।আর তুই হলে তো কথাই নেই।যাগগে,দুটোকে বাধ তোরা।
সবাই একে একে এগিয়ে এলো।সিয়াম ভাইয়া অনেক চেষ্টা করেও পারেনি কাউকে আটকাতে।দুটো চেয়ারে বেঁধে দিলো আমাদের।তবে আশ্চর্য জনক ব্যাপার এটা যে মুখ বাধার আগে সিয়াম ভাইয়া একটা ইনোসেন্ট হাসি দিয়েছিলো।তারপর উনি শরীর ছেরে দেন।বেধে নিতে দেন তাকে আর আমাকে।তবে সেই হাসিটা আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।কেনো সেই হাসি দিলেন উনি?কেনো?
আশেপাশে তাকালাম!আকাশবাবুর পোষা গুন্ডাদের মধ্যে দুটো লোক সামনে এলো।উনি আবার বললেন,
-তুই যেমন ভেবে রেখেছিলি আমাদের বন্দি করবি ঠিক তেমনি আমারও সবটা আগে থেকেই চিন্তা করা ছিলো।আর এই সপু আর চন্দন এখানে আমি এদেরকে তোর চেলাদের দলে ডুকিয়ে দেই।অবশ্য আমি আগেই সবটা বলে রেখেছিলাম এদের।আর আমার ইসারায়ই আমাদের বাধা অবস্থার পিক মেইল করে পাঠিয়ে দিয়েছিলো পুলিশ স্টেশনে।
-স্টপ!আপনি কিডন্যাপের মতো বড় অপরাধ করেছেন!হাবিদার এরেস্ট করুন।
উনাকে এরেস্ট করলেন একজন হাবিলদার আর বাকি গুলো ভয় দেখিয়েই নিচে নিয়ে গেলো।আমাদের বাধন খুলে দেওয়া হলো।সিয়াম ভাইয়া আমার হাতটা শক্ত হাতে ধরলেন।মাথাটা বনবন করেই চলেছে।আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না ঠলে পরলাম সিয়াম ভাইয়ার বুকে।
………..🥀
জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে কোনে রুপে আবিষ্কার করলাম।আশেপাশে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।সবার মাঝে চোখদুটো সিয়াম ভাইয়াকে খুজছিলো।তবে আশ্চর্যের ব্যাপার আমি এভাবে কেনো?কার সাথে আমার বিয়ে?অনেকের ভিরের মাঝে টুসি সামনে এসে দাড়ালো।বেচারীর চোখদুটো ফুলে গেছে।হয়তো কেঁদেছে কোনো কারনে!কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বললো,
-আমায় মাফ করে দিস সুয়া!আমি…
-কিন্তু কেনো?আর আমি এভাবে কোনে সাজে কেনো?
-আমি তোকে আকাশ ভাইয়ার সাথে দেখা করিয়েছিলাম।সেদিন যদি আমি বুঝতাম তাহলে আজ হয়তো তোকে..
-এতে তোর কোনো দোষ নেই।পাগলি আমি তোকে কেনো দোষারোপ করবো তুইও তো জানতিস না উনি আমায়…
-জানতাম আমি!আকাশ ভাইয়া আমায় বলেছিলো তোকে ভালোবাসে।কিন্তু আমি জানতাম না তুই সিয়াম ভাইয়াকে ভালোবাসিস।তাই কিছুই বলিনি!
-তুই না যেনে এটা করেছিস এতে তোর কোনো দোষ নেই।আচ্ছা এটা বল,আমায় এরকম কোনে কে সাজালো?
-তোর এখনো এটা মনে হয়?আর ও নিজেই আমাদের তোদের বিয়ের কথা বলেছে।আর বাধা কিসের ওকে কিছু খাইয়ে বিয়ের মন্ডবে নিয়ে এসো।
কথাটা বলেই চাচ্চু চলে গেলেন।আমি সবার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-আজই আর এখনি বিয়ে?
আম্মু আর চাচী একসাথে হুমম বললো।আমি এখনো হ্যাবলার মতো সবার দিকে তাকিয়ে আছি।
-জানো সিয়া আপু আমাদের এখানেই আসতে দিচ্ছিলো না।এই মাত্র আসতে দিলো।কেনো গো?
-হুমম কেনো বলোতো সিয়া আপু।তোমার বিয়ে আর আমরা আসবো না?উফফ!
পাশে তাকালাম।সবুজ আর উষা দুজনেই আমার হাটু জরিয়ে ধরেছে।কাঁদোকাঁদো মুখ করে রয়েছে তারা।দরজার দিকে তাকাতেই ফুপিকে দেখলাম।হাতে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে আমার দিকেই আসছে।বিষন্ন মুখ নিয়ে বললাম,
-তাহলে তোমরা সত্যিই আমায় বিয়ে দিয়ে দিচ্ছো?
-হুমম দিচ্ছি!আমাদের অতো টাকা পয়সা নেই যে আমরা বাড়িতে মেয়ে পুষে রাখবো।
ফুপি খাওয়াতে লাগলো।আমি খেতে খেতেই বললাম,
-ঠিক আছে!দাও বিয়ে আমায়!আর যখন কোনোদিন আসবো না তখন বুঝবে!
ফুপির এক চিলতে হাসিই আমায় বুঝিয়ে দিলো এগুলো মন থেকে বলেনি ফুপি।
★
আমায় খাইয়ে আবার কিছুটা সাজিয়ে বাইরে নিয়ে আসলো টুসি।চারিদিকে আলোয় ঝকমক করছে।পুরো গার্ডেনটা ফুলে মোড়ানো। এত তারাতাড়ি এত আয়োজন।মানুষজন পিপীলিকার মতো কিলবিল করছে।এত আত্মীয়ওকেও নেমত্রন করা হয়ে গেছে?আমায় টুসি ঠেলতে লাগলো।ওর দিকে তাকাতেই ও ইসারায় এগিয়ে যেতে বললো।মণ্ডপে নিয়ে গেলো আমায়।সবুজ আর উষা দুজনেই সিয়াম ভাইয়ার সাথে বসে আছে।সাদা শেরওয়ানিতে অনেক কিউট লাগছে সিয়াম ভাইয়াকে।আমায় উনার পাশে বসিয়ে দিলো টুসি।লজ্জায় লেহেঙ্গার ওরনাটা খামচে ধরেছি।
….সব কাজ শেষে,,,,,
কাজি উনাকে কবুল বলতে বললেন।উনি একটু সময় নিয়ে বললেন,
-কবুল..কবুল..কবুল!
এবারতো আমার পালা!কি করে বলবো?শুকনো ডোক গিলতেই পারছি না।কিন্তু…
-মা এবার তুমি বলো!
কাজি সাহেব আমায় বলতে বলছেন!মনটা চাইছে মাটি ফাঁক করে ঠুকে যাই।আস্তে আস্তে বললাম,
-কবুল!
সিয়াম ভাইয়া আমার হাতটা ধরলেন।এবার লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি।উনি কানে ফিসফিস করে বললেন,
” চিরদিন একসাথে থাকবো!কখনো ছাড়বো না একে অপরকে!ঠিক আছে? ”
অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম।উনি ইসারায় বলতে বললেন।আমিও উনার কানে ফিসফিস করে বললাম,
” শুধু এ জিবনেই নয়।মৃত্যুর পরও যেনো একসাথে থাকতে পারি।তাই গড়তে হবে ইসলামিক দাম্পত্য জীবন।তাই রাজি তো নামাজ,রোজা,আর তাহাজ্জুদ এর মতন ভালো কাজের জন্য ”
উনি হুমম বলে সায় দিলেন।দুজনেই এক চিলতে হাসি দিলাম😊😊।
অনেকদিন বন্ধ থাকা বিল্ডিংটার তিনতলায় এলোপাতাড়ি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কাঠগুলোর মাঝে দুজনে চেয়ারে বাধা রয়েছি।মুখবাধা অবস্থায় একে অপরের দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে আছি।হাত মুরিয়ে চেয়ারের পেছনে বাধা।পা দুটোও একসাথে করে বাধা।নরবার মতোও ফাঁক দেয়নি।পাশের চেয়ারে বাধা লোকটার কোনো হেলদোল নেই।তখন থেকে আমি একাই ছোটার জন্য ব্যস্ত।কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।ঘামে নেয়ে গেছি দুজনে।সিয়াম ভাইয়ার খয়েরি রঙের শার্টটা ঘামে রং পালটিয়েছে।হ্যা আমরাই দুজনে বাধা!কি করে এতটা ভুল হলো মানুষ চিনতে!এতটাই বোকা আমি!একটা মানুষ এতটা অভিনয় কিভাবে পারে?দুটো বছর অভিনয় করেছে।সাদাসিধে মানুষের অভিনয়!যা বড্ড কঠিন!নিজের আসল রুপ লুকিয়ে,এতদিন,কিন্তু কেনো?এতদিনের বন্ধুত্বের এই দান।
-কি ভাবলে সিয়া?সরি! তোমরা?
পেছনে অতি আলো থাকায় সামনে শুধু তার কালো ছায়ামূর্তি দেখা যাচ্ছে।তবে কন্ঠ চেনা।চিনি এই নরকিট মানুটাকে।ভালোমানুষের মুখোশ পরে ছিলো এতদিন।আজ উনি ওনার আসল রুপ দেখালেন।
সেই কালো ছায়া থেকে ধিরে ধিরে এগিয়ে আসতে লাগলেন সামনে উনি।সাথে সাথে তার মুখেও আলোয় পরিষ্কার হতে লাগলো।জ্বলজ্বল করেছে ওই ঘৃন্য আকাশবাবুর মুখটা।মুখে বাকা হাসি তার।সামনে এসে দাড়ালেন উনি।তার দারানোয় দুজনে ছটপট করতে লাগলাম।সিয়াম ভাইয়া উমম উমম করে কিছু বলছেন।তবে মুখ বাধা থাকায় অস্পষ্ট।
-আহা!আস্তে আস্তে!অত ছটফট কিসের?এখনো তেজ যায়নি দেখছি।আরো ডোজ দিতে হবে?তুই চিন্তা করিস না।তোকে বেশি কষ্ট দিয়ে মারবো না!
-উমমম উমমম!
-এই কে কোথায় আছিস মুখটা খুলে দে!বেচারাদের অবস্থা কাহিল!
কোথ থেকে একটি লোক এসে মুখটা খুলে দিলো।সিয়াম ভাইয়া চেচিয়ে বললো,
-হারামজাদা!একবার ছেরে দে তারপর দেখ তোর কি অবস্থা করি।
-কুললল!কললল!বন্দীদের এতটা ছটফট করা উচিত নয়।শনলাম তুই নাকি একবারও ছোটার চেষ্টা করিসনি।আর আমি আসাতেই মুখ দিয়ে খই ফুটছে?
কেউ যেনো কাটা বেধে দিচ্ছে এই যঘন্ন কথাগুলোয়।আমি বললাম,
-আপনি এতটা নিকৃষ্ট?নিজেরি অজান্তে আপনার মতো মানুষকে বন্ধু,নিজের বন্ধু করেছি।নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে এখন!ছেড়ে দিন আমাদের!কেনো বেধে রেখেছেন আমাদের?
উনি আমার দিকে ঝুকে পরলেন।সিয়াম ভাইয়া আরও ছটফট করতে করতে বললো,
-তুই সিয়াকে টাচ ও করবি না।নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।
আকাশবাবু সিয়াম ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-চুপপ!একদম চুপ!এখনো তো কিছুই করিনি।আমাদের বিয়ে হবে বাসর হবে।কিন্তু তুই এগুলোর কিছুই দেখতে পাবি না।কারন তার আগেই..
উনি আমার দিকে ফিরলেন।ন্যাকা কান্নার মতো করে বললেন,
-তুমি!তুমি এভাবে বলো না আমায়!আমি..আমি তোমায় খুব ভালোবাসি।খুউউব!আর এসব আমাদের জন্যই করা।এই সিয়ামকে শেষ করে দিয়ে দুজনে একসাথে থাকবো।খুব ভালো থাকবো!
আজনা কষ্ট ঘিরে ধরলো ওই কথাটায়।কি বললেন উনি?সিয়াম ভাইয়াকে শেষ করে মানে?শেষ মানে?আর আমরা দুজনে?তাও আবার একসাথে?কোনদুঃখে!কি করনে?ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম,
-কি বললেন?আপনার সাথে আমিই?মরে গেলেও তো আমি আপনার সাথে থাকবো না!আর….
-সুউউউ!চুপ!ওসব বলতে নেই!না হলে যে আমাদের শান্তির জিবনে ঝড় আসবে।দাম্পত্য জিবনে এসব আমি একেবারে এলাও করবো না।
-কিসের দাম্পত্য জীবন?কি জাতা বলছেন আপনি?
দেখুন আমাদের ছেরে দিন!না হলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।আর এসব আপনার প্লান করা তাইতো?
-হা হা হা হা!এই জন্যই তো আমি তোমাকে পছন্দ করি।ঠিক ধরেছো!একদম ঠিক ধরেছো!মেঘ বলে আদেও কেউ নেই।আর আমি তোমাকে ভালোবাসি বলেই মিথ্যা বলেছি।আর এই সিয়ামের প্রতি অনেকদিন থেকেই আমার রাগ ছিলো।কথায় কথায় টাকা দেখাতো।ও সবসময় বন্ধুদের ট্রিট দিতো।আর আমি…
একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।উপরে তাকালাম।……………….
কিছুক্ষণ আগে..
রিকসা নিয়ে মেসেজে দেয়া ঠিকানায় পৌছালাম।অবাক হলাম,অনেকদিন বন্ধ হয়ে থাকা বিল্ডিং এ কেনো ডাকলেন আকাশবাবু?এখানে অনেকদিন কেউ আসেও নি।চারপাশে গাছের পাতা এক হাটু সমান।চারিদিকে একদম শুনশান!কোনো পোকামাকড় ও এখন অব্দি চোখে পরেনি পর্যন্ত।ফোনটা হাতেই ছিলো।খামচে ধরে ছিলাম ওটাকে।কেমন গা ঝমঝমে জায়গা।ভয় করছে!হঠাৎ মেসেজের শব্দে চমকে উঠলাম!মেসেজটা আকাশবাবু দিয়েছেন।উনি ভেতরে আসতে বললেন ওই মেসেজে!একটা শুকনো ডোক গিললাম।কাঁপা কাঁপা পায়ে এগোতে লাগলাম।বিল্ডিং এর কাজ অনেকদিন বন্ধ থাকায় কেমন কালচে দাগে লেপ্টে গেছে পুরো বিল্ডিংএ।বিল্ডিংটায় পা দেয়া মাএ একটা সজোরে বাতাস বয়ে গেলো উপর দিয়ে।কেমন গুমট গন্ধ ও আসছে।আবার মেসেজ আসলো,
“তারাতাড়ি ভেতরে এসো ভয়ের কিছু নেই!”
মনে সাহস নিয়ে জোর পায়ে হাটা লাগালাম।বিল্ডিংটা অনেক বড় জায়গা জুরে তাই প্রথম তলাটাও বেশ বড়ো। সিঁড়ি খুজতে একটু সময় লাগলো তার পর দোতলায় গেলাম আবার মেসেজ আসলো,
“তিনতলায় এসো”
আমায় কি উনি দেখতে পাচ্ছেন নাকি?আর সবথেকে বড় কথা উনি এতদূর আর এখানেই কেনো আনলেন?তিনতলায় যাওয়ার জন্য এগোলাম।গুমট গন্ধটা অনেক কমে গেছে।চারিদিকে কোনো দেয়াল দিয়ে ঘেরা নেই।তিনতলার দিকে হাটা লাগালাম।সিড়ি বেয়ে ওঠার সময় কারো গলার আওয়াজ পাচ্ছিলাম।তৃতীয় তলার পশ্চিমের এক কোনে পকেটে হাত গুজে উল্টোদিক হয়ে দাড়িয়ে আছেন আকাশবাবু।
-এসেছো তাহলে??
আগের মতো এবারও দেখতে পেলেন আমায় কিন্তু কি করে?
-অত ভাবনা চিন্তা করার কিছুই হয় নি।তোমার পায়ের আওয়াজ পেয়েছি তাই না দেখেই বললাম।
-কেনো ডেকেছেন আপনি এখানে আমায়?
উনি আমার দিকে ফিরলেন,
-এতদিন বলতে চেয়েও পারিনি তাই দেরি হয়ে গেছে।তবে আজ যা বলার সব কোনো দ্বিধা ছারা বলবো!
-কিন্তু সেই কথাগুলো কি?
-ভালোবাসি!ভালোবাসি তোমায়!হ্যা ঠিকিই শুনেছো ভালোবাসি তোমায়।বড্ড ভালোবাসি!যেদিন প্রথম তোমার ওই কপালে,ঠোঁটে কেটে যাওয়া মুখটা দেখেছিলাম।সেদিন থেকেই আমি তোমায় আমার ভালোলাগতো।তারপর টাপুরকে দিয়ে দেখা করলাম।আরও উতলা হয়ে উঠলো এই মন।দেখা বাড়ালাম,কথা বড়ালাম এসবের কারন শুধু বন্ধত্ব?না!ভালোবাসতাম তোমায় আমি ভালোবাসতাম।তারপর হঠাৎ যখন তুমি আবার সিয়ামদের বাসায় গেলে আমিও ছুটে গেলাম।ওর সাথে ঝগড়াও করলাম।আর তুমি কিনা ওকে ভালোবাসো?আমি এটা কিছুতেই হতে দিবো না সিয়া!তুমি শুধু আমার!ইউ’র ওনলি মাইন!
ভেতরটা কেমন ধুকধুক করছে।এসব কি বলছেন উনি?সেদিন সিয়াম ভাইয়ার বলা কথাগুলো তাহলে মিথ্যা নয়!উনি সত্যিই আমায়!
-এসব কি বলছেন আপনি?আর একদিনে যে বলছেন না ভালোবেসেছেন ওটা ভালোলাগা ছিলো ভালোবাসা নয়।একদিনের দেখায় ভালোবাসাটা হয় কিভাবে।
-আমি সত্যিই বলছি।প্রথম দিনিই আমি তোমায় ভালোবেসেফেলেছি।তাইতো দুটো বছর আমি তোমার পিছুপিছু ঘুরেছি।আশা করি এবার তুমি সবটা বুঝেছো!
-না!না না না!কিছুই বুঝিনি আমি!আর বুঝতেও চাই না!ভালোবাসি না আপনাকে আমি।আর এসব আসছেই বা কোথথেকে।পাগলের মতো কি জা_তা বলছেন আপনি?
উনি আমার দিকে তেরে এলেন।রাগি গলায় বললেন,
-কি বললে তুমি?কি বললে আরেকবার বলো?ভালোবাসো না আমায় তাই তো?দেখো এতদিন আমি তোমায় অনেকবার বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি!তবে আজ বলছি,আই লাভ ইউ সিয়া!লাভ ইউ টু মাচ!
উনি আমার অনেকটাই কাছে চলে এসেছেন।অসস্তি লাগছিলো।তাকে এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বললাম,
কাচের গ্লাস থেকে শুরু করে রুমের সমস্ত সামগ্রী ভেঙে গড়াগুড়ি খচ্ছে হোস্টেলের ৩৫ নাম্বর রুমটায়।দরজা বন্ধ রুমের ভেতরে দাউদাউ করে জ্বলছে আকাশের মনের ক্ষিপ্ত রাগ।ডেসিনের কাচের ভাঙা টুকরোগুলোয় রাগী মুখ ফুটে উঠছে তার।ভেতরের সেই জ্বলন্তক আগুন এখনো দগ্ধ হয়নি।বিছানার এক কোনে পিঠ হেলিয়ে মাথা ঠেস দিয়ে রেখছে আকাশ।মনে মনে ভাবছে সে,
-এতগুলো!এতগুলো মিথ্যা যাকে বললাম।নিজের প্রবাসী বন্ধুকে নিজের ভাই বানিয়ে এতগুলো বানিয়ে বানিয়ে গল্প বললাম।আর আঙ্কেল?আঙ্কেলকেও তো সব বানিয়ে বলেছি।সিয়ামকে উনি কিছুই বলেনি।সিয়াম আমার ভাইকে গুম করেছে এটা শোনার পরও সিয়া বলছে ওকে ভালোবাসে!আর যে মেয়েটার পেছনে দু বছর ঘুরলাম।যাকে নিজের করার ও সপ্ন দেখেছি।সে আমায় ঠকাবে?আমায়?এই আকাশকে?
কাল এর জবাব সিয়াকে দিতে হবে!দিতে হবেই!তুমি যদি আমার না হও তাহলে সিয়ামকেও হতে দিবো না!মেরে ফেলবো কিন্তু তোমায় কাউকে হতে দিবো না!
আজ সিয়া তুমি যা করেছো তার দ্বিগুণ মাশুল দিতে হবে তোমায়!আর এই শাস্তিটা পাবে সিয়াম!তোমার ভালোবাসা!তোমার ভালোবাসাকে শেষ করে দিয়ে তোমাকে আমার করবো!আমার করবো!
.
মেঝেতে পরে থাকা অবস্থায় সকালে ঘুম থেকে উঠলাম।এভাবে নিজেকে মেঝেতে দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলাম।অতঃপর কাল রাতের ঘটলাগুলো একে একে সৃতিপট সামনে এনে দিলো।একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম।….ফ্রেশ হয়ে নীচে আসতেই চোখদুটো সিয়াম ভাইয়াতে আটকে গেলো।উনিও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কাল রাতের কথা মনে পরতেই মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো।ভাবলাম ওনাকে ইগনোর করবো।যেমন ভাবা তেমন কাজ।চোখ সরিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে লাগলাম।নিচে এসে পাশ কটিয়ে চলে আসলাম।উনি এখনো আমার দিকেই তাকিয়ে হয়তো কিছু বলতেও যাচ্ছিলেন তবে তাকে না দেখে আসায় আটকে গেলেন।আমি সোজা রান্নাঘরে গেলাম।দেখলাম চাচী চা ঢালছেন।আময় দেখে চাচী বললো,
-থাক তোমায় আর বানাতে হবে না আমিই বানিয়ে দিচ্ছি।তুই এখানেই দারা।
-আচ্ছা।
একটু পর চাচী বানিয়ে দিলো।মগটা হাতে নিয়ে বেশ ভাব দেখিয়েই সিয়াম ভাইয়ার সামনাসামনি গিয়ে বসলাম।একবারও তাকাইনি।বেশ ভাব নিয়েই চুমুক দচ্ছি।জানি আমাদের মাঝে দূরত্ব,উনি দেখতে পাচ্ছে না তবে Nestle ঘ্রাণ বরাবরই বেশি।উনি বুঝলেন আমি কি খাচ্ছি!চারিদিকে ঘ্রাণে মাতোয়ারা।উনি বললেন,
-তুই Nestle খাচ্ছিস?
বেশ ভাব নিয়ে বললাম,
-হুমমম!
-কে করে দিলো তোকে?
-কেনো?কে আবার?চাচী!
-তোকে দিলো আর আমায় দিলো না আম্মু কি জানে না যে আমি এটা খুব পছন্দ করি!তুই আম্মুকে আমার বলে এনে নিজে খাচ্ছিস তাইনা?
-আমার বয়েই গেছে আপনার নাম করে আনার।আমি চাচীকে গিয়ে বললাম চাচী করে দিলো।এটুকুর জন্য আপনার নাম দেয়ার দরকার পড়ে না!
-তু্…
তাকে চুপ করিয়ে দিয়ে বললাম,
-আমি কি জানি!আর এটা বলিয়ে বানিয়ে নিয়ে এসছি।যার ইচ্ছে সে গিয়ে বানিয়ে আনুক।পারলে নিজে বানাক আর নিজে খাক!
-তুই আমার সাথে ফাজলামো করছিস?ওকে ডান!আজ তুই বানিয়ে আনবি আমার জন্য কফি।আন্ডারস্ট্যান্ড স্টুপিড!
কত বড় সাহস আমায় স্টুপিড বলে!না না না!আমায় শান্ত থাকতে হবে।জাস্ট ইগনোর জাস্ট ইগনোর!
বেশ ভাব নিয়েই পায়ের ওপর পা তুলে খেতে লাগলাম।উনি হা করে দেখছেন।
-তোকে আমি কিছু বলেছি সিয়া!
-কই কি বলছেন?না!আমার যদ্দুর মনে পরে আপনি তো আমায় কিছুই করতে বলেননি!আমার তো এমন কিছুই মনে পরছে না।কি্ কিছু বলেছিলেন বুঝি?আ’ম সরি ভাইয়া আমি শুনিনি!
-ওকে!আমি আবার বলছি আজ তুই আমার জন্য Nestle বানিয়ে আনবি।এবার শুনেছিস!নাকি মাইক নিয়ে বলবো?
-আমার বয়েই গেছে আপনার জন্য কফি করতে।শুনুন মিস্টার আমি কারো মেইড নই যে আমি কফি করবো।আজব!আর আপনি আমায় কেনো বলছেন আপনার সার্ভেন্ট আছে তাকে বলুন।নয়তো আপনার আম্মুকে বলুন!
কথাটা বলেই সোফা থেকে উঠে হাটতে লাগলাম।উনিও উঠেছেন।তাতে আমার কি?আমি ওনার পাশ দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম বেশ ভাব নিয়ে।
পেছন থেকে হেঁচকা টান।সোজা সামনে গিয়ে দারালাম।দুজনেই সামনাসামনি!উনি চেয়াল খিচে রয়েছেন।তবে মুখে রাগ দেখছি না।হাতটা খিচে ধরেছেন।কড়া গলায় বললেন,
-আমার মাথা গরম করিস না সিয়া!তোকে যা করতে বলেছি তাই কর বুঝেছিস।নাহলে কিন্তু আমি জোর করতে বাধ্য হবো!কাল রাতে লাভ ডোজ কম হয়েছে নাকি?এখানেই তোর সাথে প্রেম করতে বলছিস?করবো?
কি মানুষ রে বাবা।নিজের বাড়িতে এত্ত মেইড আবার নিজের মা ও আছে তবুও এগুলো কথা বলছেন কি করে উনি?
-চুপ!আমি যখন বলেছি আমি তোর হাতে খাবো তখন তুই বানিয়ে আনবি।দু মিনিটে সামনে কফি চাই।আর হ্যা তুই বানিয়ে আনবি।তুই!আমি নিজের প্রেয়সীর কাছ থেকে খেতে চাই।আমার সিয়ার কাছ থেকে।আমার পাওয়া বড় প্রাপ্তির কাছ থেকে।
বলেই হাত ছেরে দিলেন।জোর পায়ে হেটে রান্নাঘরে গেলাম।চাচীকে কিছু না বলেই দুধ বসিয়ে দিলাম।চাচী আমায় বললো,
-কি রে!আবার দুধ বসাচ্ছিস যে?দুধ খাবি?
মুখে রাগী ভাব নিয়ে বললাম,
-না!
-তাহলে দুধ বসাচ্ছিস কেনো?
-চাচী তোমার ছেলের আদেশ এটা!এখন উনিও খাবেন Nestle।তাও আবার আমার হাতে!আর তখন থেকে ওসব কি যেনো আজেবাজে কথা বলছিলেন।
-ভালোই বানাস তো তুই কফি!মনটা ভরে গেলো।আহা কি স্বাদ!এই কফিটা আর এটা বানানোর ওর্নার শুধুই আমার!
মনটা চাইছিলো মাথা ফাটিয়ে দেই।ওয়েট!কি বললেন উনি?এই কফিটা তো আমি বানিয়েছি।তাই ওর্নার ও আমি।লজ্জায় মাটি ফাক করে ডুকে যেতে ইচ্ছে করছে।তারাতাড়ি করে দৌরে পালিয়ে আসলাম ওখান থেকে।কে জানি আরও যদি কিছুর হুকুম করে।কত সুন্দর ভাব নিয়ে প্লান মতো কাজগুলো করছিলাম।আর উনি আমার জালে আমাকেই ফেললেন।আমাকে দিয়েই কফি করিয়ে নিলেন।কই ভাবলাম এটিটিউট দেখাবো।ধ্যাত ভালো লাগে না।
রুমে এসেই দরজা বন্ধ করে দিলাম।বিছানায় পিট হেলিয়ে দিতেই ফোনটা বেজে উঠলো।ফোন হাতে নিয়ে দেখি আকাশবাবু ফোন করেছে।রিসিভ করলাম,
ওপাশ থেকে উনি বললেন,
-কোথায় তুমি?
-সিয়াম ভাইয়ারদের বাসায়ই এখনো আছি!
-কখন ফিরবে?
-আজই!
-এনি ওয়ে,তোমায় একটা কথা বলার জন্য ফোন করেছিলাম।আজ দুপুর বারোটার দিকে আমার সাথে দেখা করো।আমি মেসেজ করে ঠিকানাটা পাঠিয়ে দিচ্ছি।
-কিন্তু!হ্যালো,হ্যালো,হ্যালো…
ফোন কেটে দিয়েছেন উনি।হঠাৎ কেনো দেখা দেখা করতে চাইছেন উনি?!মেসেজ আসলো।উনি ঠিকানার সাথে ঠিক টাইমে আসতে বলেছেন।
-কে ফোন করেছিলো সিয়া?
সিয়াম ভাইয়ার কন্ঠ শুনে চমকে উঠলাম।দরজায় তাকাতেই উনাকে দেখালাম।দরজা!আমিতো দরজা বন্ধ করেছিলাম খোলা কি করে?উনি দরজা ভেঙে ভেতরে আসলেন নাকি?তাহলে শব্দ তো হওয়ার কথা।আমিতো কিছুই শুনিনি।উনি আবার বললেন,
-কে ফোন করেছিলো?আর কারিই বা মেসেজ আসলো?
এখনো ভেবেই চলেছি।ওভাবেই বললাম,
-আকাশবাবু!
-কি বললো ও?
-হেকা করতে!
-কিহ্??
ধ্যান ভাঙলো আমার।কি বলেছি আমি?
-না মানে দেখা করতে!
-আর কি মেসেজ করেছে ও?
উনি তেরে আসলেন।হাত থেকে ফোনটা কেড়ে মেসেজ চেক করতে লাগলেন।কিয়ৎক্ষন পর হাতে ফোন হাতে দিয়ে বললেন,
-ঠিক সময়ে পৌছে যাবি?দেরি যেনো না হয়!
কি ভাবলাম কি হলো?ভেবেছিলাম উনি হয়তো যেতে মানা করবেন কিন্তু উনিতো যেতে বলছেন।
-তোকে আম্মু ডাকছে নিচে ব্রেকফাস্ট এ আয়!
চলে গেলেন উনি!আমি উনার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছি।
অত ভাবলে আমি ভ্যাবলা হয়ে যাবো আর ভেবে কাজ নাই নিচে আসলাম।সিয়াম ভাইয়া কোথায় জানি চলে গেলো।
-কি রে খেতে আয়।কি দেখছিস ও দিকে?
ডাইনিং থেকে চাচী ডাকছে।সেখানে যেতেই দেখলাম চাচ্চুকে,
-কেমন আছো চাচ্চু?তুমি তো আমার সাথে একবারও কথা বললে না!
-ওহ্!এ কয়দিন বড্ড কাজের চাপ।এত কাজ…
-হয়েছে হয়েছে😤
-ওরকম ফুসছিস তো!আমায় আজই ব্যবসার কাজে শহরের বাইরে যেতে হবে আর এখন..
-আচ্চা ঠিক আছে!
🍁
সবেমাত্র রুমে আসলাম।কিছুক্ষণ আগেও আকাশবাবুর মেসেজ এসেছে ব্রেকফাস্ট এর সময়।আমি যেনো না ভুলি যাওয়ার কথাটা।
১১.৩০মিনিটে……
রেডি হচ্ছিলাম।এর মধ্যেই সিয়াম ভাইয়া অনেকবার মেসেজ দিয়েছে।বলেছে “ঠিক সময় মতো পৌছাবি সামান্য দেড়ি হলে তোর খবর আছে তাই তারাতাড়ি রেডি হচ্ছিলাম।হালকা টিয়া কলারের সালোয়ার কামিজ পরে নিলাম।চুলগুলো বাধিনি।ফোনটা হাতে নিয়ে বাইরে আসলাম।সোজা চাচীর কাছে গেলাম।চাচী সুয়ে রেস্ট নিচ্ছিলেন।চাইনি ডিস্টার্ব করতে কিন্তু বলে তো যেতেই হবে,
-চাচী!
উনি চোখ বুজে ছিলেন তবে ঘুমোননি।আমার এক ডাকে উঠলো চাচী।চাচী বললো,
-কি?কিছু বলবি?আর তুই কোথায় যাচ্ছিস?
-বলবো বলেই তো এসেছি!আমি চলে যাচ্ছি চাচী।আমার একটু কাজ আছে কাজটুকু সেরে আমি বাড়ি চলে যাবো।
-কিন্তু তোর তো বিকেলে যাওয়ার কথা ছিলো তাহলে এখন কেনো যাবি তুই?
-ওইযে বললাম একটু কাজ আছে।
-আচ্ছা।দাড়া আমি ড্রাইভার কে বলে দিচ্ছি ও তোকে নিয়ে যাবে।
গাড়িতে গেলে তো আমি ওখানে যেতেই পারবো না।আর আমায় ওখানে যেতেই হবে।বারবার দুজনেই যেতে বলেছে।না না গাড়িতে করে যাওয়া যাবে না।চাচীকে বললাম,
-আমার কাজ আছে আমি গাড়ি নিয়ে যেতে পারবো না।আর আমি একাই যেতে পারবো।
-তোর যখন কাজ আছে তখন আর আর কি করা যাবে যাগগে,তুই পৌছে একটা ফোন করিস।কেমন!
হঠাৎ কেনো চলে গেলেন উনি?এমন কিছুই তো ঘটেনি যারদরুন উনি আমাকে না বলে চলে যাবেন।চাচীকেও কিছু বলেনি!ফোনটাও উপরে রেখে এসেছি।
এখানে থাকার একবিন্দু ইচ্ছে নেই।না!চাচীকে একবার বলি কথাটা,
-চাচী আমি বাড়ি যাবো!
চাচী সোফায় বসে টিভিতে মগ্ন।কথার কোনো উওর নেই।আবার জিজ্ঞেস করলাম,
-চাচীইইইইই…..
আমার দিকে ফিরে তাকাতেই আবার বললাম,
-আমি বাসায় যাবো চাচী!
চাচী টিভিটা বন্ধ করলেন।সোফা থেকে উঠে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,
-এইতো এলি আর এখনি চলে যাবি।না!তোমার কোথাও যাওয়া হচ্ছে না।
-একটু বোঝো চাচী…
-চুপ!কি বুঝবো?কেনো রে!আমরা তোর পর হয়ে গেছি তাইনা।সেদিনের পর তুই আমাদেরও ঘৃনা করিস আর তাই তুই চলে যেতে চাইছিস।
-তাহলে তো হয়েই গেলো।অন্তত একটা রাত তুই থাক!কাল বিকেলে না হয় চলে যাস!
-আমি…
-আর কোনো কথা নয়।যাও গিয়ে বিশ্রাম নাও!
আর কি বলবো।চাচী ঠিকিই ইমোশনাল ব্লাকমেল করেলো আমায়!
কোনো কথা না বলে চুপচুপ রুমে আসলাম।কেমন ভয় ভয় আর অসস্তি অসস্তি লাগছে।আকাশবাবুর কথা মনে পরতেই ফোন হাতে নিয়ে কল দিলাম।উনি রিসিভ করলেন,
-আপনি এভাবে কেনো চলে গেলেন?আর আমাকেও তো কিছু বললেন না!কেনো চলে গেলেন আপনি?
-কিছু বলবে??
-না আসলে…
-তাহলে রাখছি!
কেটে দিলেন ফোন!আশ্চর্য,আমার সাথে কি হলো উনার?আমিতো কিছু বলিনি।এরকম ভাবে কেনো কথা বললেন উনি?উনার আর সিয়াম ভাইয়ার মধ্যে যেসব ঘটলো এসবের জন্য উনি কি আমায় দোষারোপ করছেন?
কিন্তু উনি তো তখন আমায় বললেন যে এতে আমার কোনো দোষ নেই,তাহলে??
বিছানায় গিয়ে বসলাম।কিছুই ভালো লাগছে না।
________🌸
সবেমাত্র নিচ থেকে ডিনার করে ঘরে আসলাম।সবাই নিচে থাকলেও সিয়াম ভাইয়া ছিলো না!তাই তারাতাড়ি যতটা তারাতাড়ি সম্ভব খেয়ে চলে এসেছি।এবাড়িতে ডিনার একটু রাত করেই হয়।তাই ঘুম পাচ্ছে।বিছানাটা ঠিক করে লাইট অফ করে সুয়ে পরলাম।
……কিছুক্ষণ পর কারো হাতে স্পর্শে চমকে উঠলাম।জানালা দিয়ে আসা স্নিগ্ধ চাঁদের আলোর স্পষ্ট সিয়াম ভাইয়ার মুখটা দেখতে পেলাম।উনি অপরাধবোধ আর করুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।অসস্তি হচ্ছে আমার।এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,
-আপনি এত রাতে এখানে কি করছেন?তখন ওভাবে অপমান করে আপনার শান্তি হয়নি?
উনি জোর করে আবারো আমার হাতটা ধরলেন।দু হাতে মুঠো করে চুমু একে দিলেন।কেপে উঠলাম!কি চাইছেন উনি?এত রাতে কেনই বা এসেছেন এখানে?উনি করুন কন্ঠে বললেন,
-আমি সব রাগের মাথায় বলেছি সিয়া।তুই রাগ করেছিস তাইনা?তোকে ওভাবে আকাশের সাথে দেখে আমি কন্ট্রোল করতে পারিনি নিজেকে।তুই আমার ওপর আর রাগ করিস না সিয়া এমনিতেই তো রেগে আছিস!
-দেখুন!আমি কারো ওপর রাগ করিনি আপনি এখান থেকে চলে যান!
-যাবো না!
মেজাজ আগুন হয়ে গেলো।তাকে থ্রেট দিলাম,
-আপনি না গেলে কিন্তু আমি চাচ্চুকে ডাকবো!
কথাটা বলেই বিছানা থেকে উঠে যেতে চাইছিলাম উনি পেছন থেকে এক টানে উনার বুকে সাথে মিশিয়ে নিলেন।
পুরো শরীর ঝাকি দিয়ে উঠলো।অল্প অল্প কম্পন হচ্ছে শরীরে সেটা টের পাচ্ছি।উনি বার বার এক হাত দিয়ে মাথায় দিয়ে টেনে আরো মিশিয়ে নিচ্ছেন।বুকের বা পাশে মনে হচ্ছে কউ করাঘাত করছে।চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে।কি করবো কি না করবো কিছুই বুঝতে পারছি না!
-আকাশের সাথে তোকে দেখলেই মাথা দিয়ে আগুন বের হয় আমার।আর ছাঁদে তোকে ওভাবে দেখে আমি নিজেকে সামলেতে পারিনি।তাই রিয়েক্ট করেছি ওভাবে।
-ছা.ড়ুন আমায়!
-আগে বল তুই আমায় ক্ষমা করেছিস!তুই যদি ক্ষমা না করিস আজ সারারাত তোর সাথে একই ঘরে থাকবো।তখন সইবি তো?
-এ্ এসব কি আজেবাজে কথা বলছেন!আগে আমার ছাড়ে তো!
উনি কপালে অতি নরম ভাবে চুমু খেলেন।শরীরের সব লোমগুলো দাড়িয়ে গেলো।ভেতরের এই অবাধ্য শিহরণ আটকানো বড্ড মুশকিল!
-ছাড়বো না!বললাম তো?আজ আমি তোর সাথে একই বিছানায় থাকবো।আর ছাড়তেই পারি যদি তুই আমার এত্ত বড়বড় অপরাধগুলো মাফ করে দিস!
বারবার আকাশবাবুর কথা বলছেন উনি।কিন্তু কেনো?বিরক্ত লাগছে এবার!সত্যেটা বললাম,
-উনি আমার বান্ধবী টাপুরের কাজিন।ওই প্রথম আলাপ করিয়েছে আমাদের।আর তখন থেকে অনলাইনে একটু আধটু কথা হতো তারপর…
-তারপর??তারপর কি?
-তারপর থেকেই তাকে বন্ধু বলে সম্বোধন করি।ব্যাস এতটুকুই!
-কিন্তু ও তোকে বন্ধু মনে করে না।
-তার মানে?
-মানেটা স্পষ্ট সিয়া।দুপুরে যখন তুই আমায় প্রথম উক্তিতেই ভালোবাসি বললি।সেটা আকাশের সহ্য হয়নি।পরের কথাটুকু না শুনেই বেরিয়ে গেছে ও।কারন কি বলতো?কারন এই যে ও তোকে ভালোবাসে।
যদি সিয়াম ভাইয়ার কথা সত্যি হয়ে থাকে তাহলে…
তাই উনি ওভাবে চলে গিয়েছেন!ফোন কেটে দিয়েছেন!
-বুঝতে পারছিস আমি কি বোঝাতে চাইছি?ও তোকে শুধু বন্ধু মনে করে না!ও তোকে ভালোবাসে!
-কিন্তু উনি তো আমায় কখনোই কিছুই বলেনি!
-হয়তো বলতে পারেনি এতোদিনে!আবার এটাও হতে পারে,তোর জিবনে কেউ নেই এরকমটা ভেবেছিলো ও।পরে তোকে সবটা বলবে ভেবছে।
দুজনেই কিছুটা সময় নিস্তব্ধ।আমি আকাশবাবুর কথা ভেবে চলেছি।এ কথাগুলো সত্যি কি না।নাকি সিয়াম ভাইয়া এমনিই বলছেন?কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না!
…একটু পর বাকা হাসি ঝুকিয়ে সিয়াম ভাইয়াকে এগিয়ে আসতে দেখলাম।এদিকে আমি তার এগোনোতে পেছোচ্ছি।উল্টো দিকে হাঁটতে হাঁটতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো।একটা শুকনো ঠোক গিললাম।উনি এখনো কিছুটা দূরে তবে এগোচ্ছেন।ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি।কি করবেন উনি?কেনো এভাবে এগিয়ে আসছেন?কথাগুলো ভাবতেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।উনি এবার কাছে চলে এসেছেন!সারা শরীরে কেমন শিহরণ হচ্ছে।অদ্ভুত এই অনুভূতি।আমাদের মাঝে হয়তো আধ ইঞ্চি ও দূরত্ব নেই।উনি বাকা হেসে বললেন,
-তুই নামকই এক অদ্ভুত আর্কষন আছে যা আমাকে বারবার তোর কাছে টেনে আনছে।আগেও এনেছে।তবে অনেক দূরত্ব ছিলো তাতে।এ দুই বছরে যখন তুই কলেজে যেতিস আমি তোকে একবার দেখার জন্য বেড়িয়ে পরতাম।জানিনা কেনো তোকে দেখে আর কিছুই ভালো লাগতো না।কিছুই না!শুধু তোকেই দেখতে ইচ্ছে করতো!
কি বলছেন উনি?আমি সঠিক শুনছি তো?কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
-কিন্তু কেনো?কেনো আপনাকে আমায় দেখতে ইচ্ছে করতো?আপনি তো আমায় সামান্য ও ভালোবাসেন না।তাহলে?
-জানিনা!আমি জানিনা,কেনো তোর জন্য আমি এতটা উতলা হয়ে উঠতাম।পাগল পাগল লাগতো নিজেকে।এসবের কারন আমার নিজেরও জানা নেই তবে হ্যা আমি তোকে খুব ভালোবাসি।এটুকু বুঝেছি আমি!
চোখদিয়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি পরতে লাগলো।উনি কপালে আবারো শীতল স্পর্শ দিলেন।নাকের সাথে নাক লাগিয়ে বেড়িয়ে গেলেন রুম থেকে।আমি ধপাস করে মেঝেতে পরে গেলাম আর ভাবতে লাগলাম উনার বলা কথাগুলো।কি সব বলে গেলেন উনি?আমায় ভালোবাসে!আমায়?তার সবচেয়ে অবহেলার পাত্রীকে।
……….ফ্লাসব্যাক
-তোকে কম করে হলেও শতবার ফোন করেছে।তোর চাচা চাচীর সাথে তো ঝামেলা হয়নি।বারবার ফোন করছেন তারা।আর তুই?একটিবার গেলে কি হবে ওখানে?দু বছর তুই ও বাড়িতে যাসনি আর তোর কারনে তোর বাবা যেটুকু সময় ও বাড়িতে দিতো এখন দেয়না।সেও দু বছর যাননি তোর চাচার সাথে দেখা করতে।তোর চাচা আসতে বললে কাজের অজুহাত দেখিয়ে আর যায় না।কেনো বলতো?তোর জন্য কারন তুই যাসনা তাই!এতবার করে তারা যেতে বলছে তাও তুই কিভাবে না বলতে পারিস?আমার একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ,তোর জন্য দু ভাইয়ের সম্পর্কে আবার বিভ্রাট হোক এটা আমি চাই না।তাই তোকে ও বাড়িতে যেতে হবে এটাই ফাস্ট এন্ড লাস্ট ডিসিশন।
-কিন্তু আম্মু ওখানে সিয়াম ভাইয়া আমায় এলাও করবে না।দেখো আমিও চাইনা আব্বু আর চাচ্চুর সম্পর্কে আবার কোনো ছিট ধরুক।কিন্তু…..
-তবে..!তবে তুই যেতে চাইছিস না কেনো?দেখো আমি তোমায় ভালো করে বলছি,তারাতাড়ি রেডি হয়ে নাও আর বেড়িয়ে পড়ো।
-আম্মু তুমি বোঝার চেষ্টা করো।
-দু মিনিট মাএ দুমিটে তোমায় রেডি হয়ে বাইরে দেখতে চাই।আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।
কথাটা বলেই বাইরে চলে গেলো আম্মু। আম্মুকে আমার পজিশনটা বোঝাতে পারলাম না।ও বাড়িতে যেত হবে ভাবতেই বুকটা মোচর দিয়ে উঠছে।কি করবো আমি?এটাও তো ঠিক আমার জন্য আব্বুও দু বছর ও বাড়িতে যায়নি।এমনিতেই জোড়াতালি দেয়া সম্পর্ক।আর তার উপর আমি…
-সিয়া রেডি হয়েছিস?নাকি তুই তোর জেদ ধরে এখনো বসে আছিস!
আর কিছুই করার নেই।বাইরে থেকে হাকডাক শুরু হয়ে গেছে।ঝটপট রেডি হয়ে বাইরে আসলাম।আম্মু আর আব্বুকে বলে বেড়িয়ে পড়লাম।একটা ভ্যান নিয়ে পৌছালাম সেখানে।টাকা মিটিয়ে গেটের সামনে আসলাম।একদম অন্যরকম লাগছে বাড়িটাকে।যেনো পুরোই পাল্টে গেছে বাড়িটা।কাঁপা কাঁপা পায়ে দরজার সামনে দাড়ালাম।ভয় করছে!ঠিক কিভাবে নেবে আমার আাসাটা সিয়াম ভাইয়া?মাত্রাতিরিক্ত সিনক্রিয়েট করবে না তো?ভয় নিয়েই দরজায় বেল বাজালাম।সাথেসাথে দরজা খুলে দিলো চাচী।
-কি রে! কেমন আছিস?আমাদের একবারও দেখতে ইচ্ছে হয়না বুঝি।দু বছর তোকে দেখিনি।একদম পাল্টে গেছিস। আয় ভেতরে আয়।
দু পা এগিয়ে দাড়িয়ে পড়লাম।আশেপাশে স্লো মোসনে চেক করে নিলাম উনি আছে নাকি।উপরে তাকানোর সাহস হলো না।যদি রেলিং এর কিনারে থাকে তখন?
-কি রে দাড়ালি যে!আয় ভিতরে আয়।বুঝেছি, সিয়ামকে ভয় পাচ্ছিস তো?ও এখন বাড়িতে নেই। তুই নির্দিধায় আয়।
একটা সস্তির নিশ্বাস নিলাম।দৌরে গিয়ে চাচীকে জড়িয়ে ধরলাম,
-কেমন আছো চাচী?চাচ্চু কোথায়?চাচ্চু ভালো আছে?
-তোকে ছাড়া যে ঠিক কতটা ভালো থাকা যায় তা আমারা এই দু বছরে বুঝেছি।
__তুই আসবি বলে আজ তোর সব পছন্দের খাবার রান্না করছি।তুই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় আর তোর চাচ্চু অফিসে,এখনো আসেনি।
যেহেতু সিয়াম ভাইয়া নেই তাই মনের আনন্দে উপরে উঠলাম।সোজা চাচীর ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলাম।চাচী আমায় ডয়নিংয়ে বসিয়ে নিজে হাতে খাইয়ে দিলো।কিছুক্ষণ কথাও হলো আমাদের।একটু পর চাচীর কাজে সাহায্য করতে লাগলাম।যদিও চাচী আমায় কাজ করতে দিতে চাইছিলো না।কিন্তু আমিও নাছোড় বান্দা।তাকে বললাম,
-তুমি আমায় বলোনা কি করতে হবে।আমি করে দেবো।তুমি শুধু হুকুম করো।তারপর দেখো।
-কি বলি বলতো?তুই আমার কথাটা…
-ওহ্ চাচী আমি কাজ করবো তো কি হয়েছে?আমি কি আগে এখানে কাজ করিনি।তাহলে এখন..!আর রেশমি আন্টি থাকতে তুমিই বা এসব করছো কেনো?
-ও একটু দেশের বাড়ি গেছে।আর দেখনা কাল বার্থটাবে পড়ে আমার পায়ে কি লেগেছে কি বলবো।তাই আমি ওপড়েও যেতে পারিনি।আর সিয়ামের কাপড়গুলো…..
আমতা আমতা করে বললাম,
-ক.. কি কাপড়গুলো?
-ও বলছিলো ওর কাপড়গুলো অনেক ময়লা হয়েছে। সব কাপড় নাকি বিছানায় দলা করে রেখেছে।এখন আমি কি করে উপরে গিয়ে সেগুলো আনবো? আমিতো কাল রাতেও নিচের একটি ঘরে ছিলাম।তুই যদি নিয়ে আসতি?
-না চাচী আমায় মাফ করো।আমি ও ঘরে যেতে পারবো না।এমনিতেই উনি আমায় এক্কেবারে সহ্য করতে পারে না।আর তুমি বলছো নিজেই আজরাইলের কছে যাবো।
-এইতো বলছিলি কাজ করবি।একটা কাজ দিলাম আর অমনি চুপসে গেলি।
__তাহলে এখন কি যে করি?
চাচীর বলা কথাটা মনে পরলো,সিয়াম ভাইয়া তো বাসাই নাই তাহলে এতো ভয় কিসের?মনে সাহস নিয়ে উপরে গেলাম। সিয়াম ভাইয়ার রুমে ডুকে কেবল কাপড়ে হাত দিলাম আর তখনি উনি পেছন থকে……
……..বাকিটা তো আপনারা জেনেনই!
.
-তুই একটু বিশ্রাম নিয়ে খেতে আসিস।আমি যাচ্ছি!ডাকতে যেনো না হয়।আচ্ছা আমি আসছি।আর ফ্রেশ হয়ে আয়তো!জলদি।
-আমিও এটাই ভাবছি!আমি তো ও দিকে ব্যাস্ত ছিলাম।হয়তো তুই যখন উপরে ফ্রেশ হতে গিয়েছিলি তখনি ও এসেছে।
চাচী রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।চোখের কোনে এখনো পানি লেগে আছে।ওয়াশরুমে গিয়ে চোখমুখে পানি দিতে লাগলাম।ওয়াশরুমের বাইরে বেডের কিনারের ছোট্ট টেবিল থেকে ফোনের আওয়াজে তারাতাড়ি বেড়িয়ে ফোনটা হাতে নিলাম।আকাশ বাবু ফোন করেছেন।প্রথম কলটা রিসিভ করতে পারিনি।উনি আবার কল করলেন, রিসিভ করলাম,
-কই তুমি?আজ আসবেনা কলেজে?কি করো?কিছু বলছো না কেনো?আজিব,কিছুকি হয়েছে?
নিজেকে সামলে ভয়েস ঠিক করে উওর দিলাম,
-আমায় বলতে দিবেন তারপর তো বলবো।একটানা প্রশ্ন করেই চলেছেন।কিছু হয়নি!
-তাহলে আজ কলেজে কেনো আসোনি?তুমি আসবেনা?কিন্তু কেনো?
-আমি আজ কলেজে আসতে পারবো না।আমি…
-কি?আর কেনোই বা আসবে না।অসুস্থ?
– না আসলে আমি চাচা-চাচীর সাথে দেখা করতে এসেছি।তাই আজ কলেজে আসতে পারবো না।
কিছুক্ষণ নিরবতা।তারপর উনি বললেন,
-আমি সিয়ামদের বাসায় আসছি।আমি না আসা পর্যন্ত তুমি ও বাড়ি থেকে আসবে না।ওকে?
আগে থেকেই জানতাম সিয়াম ভাইয়ার ক্লোজ ফ্রেন্ড হন উনি।হয়তো প্রায়ই আসেন।যাগগে,তাকে ওকে বলে কেটে দিলাম।অনেক্ষন নিচে আসতে বলেছেন চাচী।না গেলে বিপদ আছে।তাই রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে গেলাম।ডাইনিং টেবিলে সিয়াম ভাইয়া বাদে সবাই আছে।চাচী বসার জন্য ইসারা করলো।যাক,ভয়ার্ত মানুষটা নেই এটাই শান্তি। অনেক কথা বলেছি কে জানে ভাগ্যে কি নাচছে ?তবে আমার কাছে সব কথাগুলো সঠিক মনে হয়েছে তাই বলেছি!
-কই যাস?অসময়ে কই বেরোচ্ছো সিয়াম?
চাচীর কথায় পেছন ফিরে তাকালাম।চাচীর কোনো উত্তর না সিড়ি বেয়ে নামছেন সিয়াম ভাইয়া।কোনো চাঞ্চল্যকর সাজ নেই।ট্রাউজার ও একটি গেঞ্জি পরেছেন। মুখটা গোমরাটে,বিন্দু বিন্দু ঘাম স্পষ্ট।বুকটা কেমন ধুকধুক করছে।চাচী আবারো বললেন,
-কথার উওর দাও সিয়াম।এই ভর দুপুরে কই যাও?
মুখটা একটু বাকা করে দাড়ালেন উনি।কিছু একটা ভেবে উওর দিলেন সিয়াম ভাইয়া,
-সামন্য কাজ আছে।সামনেই যাচ্ছি।
চাচী আর কিছুই বললেন না।চাচ্চু তখন থেকে একবারও তাকয়নি পর্যন্ত। আমার দিকে একপলক দেখে দু পা এগিয়েই থেমে গেলেন সিয়াম ভাইয়া।আমি এখনো তাকিয়েই আছি।তার থেমে যাওয়াতে সামনে তাকালাম,আকাশবাবু!উনি এসেছেন!
-কেমন আছিস সিয়াম?অনেকদিন পর দেখা!
-হঠাৎ তুই এখানে?দু বছর পর এখানে আসতে মন চাইলো?
-হুম চাইলো তো!আর কিভাবেই বা আসবো?দু বছর নিজের ভাইকে খুজতেই তো চলে গেলো!
সিয়াম ভাইয়া যতই স্বাভাবিক ভাবে কথা বলার চেষ্টা করলেও তার কটমটে দুটি চোখ আর খিচে ধরা চেয়াল দ্বারা স্পষ্ট তিনি আকাশবাবুর আসাটা মটেই পছন্দ করেননি।কিন্তু কেনো?আমি যতদূর জানি তারা ফ্রেন্ড আর খুব ভালো ফ্রেন্ড।তাহলে?
-তা কিসের জন্য এসেছিস?
-সিয়াম…!
সিয়াম ভাইয়া আর আকাশবাবু চাচ্চুর কথায় আমাদের দিকে তাকালেন।আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।চাচ্চু এগিয়ে গিয়ে বললেন,
-এতটা নিচ মানুষিকতা হয়েছে তোমার।অনেকদিন পর তোমারি তো বন্ধু এসেছে।আর তুমি বলছো কেনো এসেছে?তুমি ওর কথায় কিছু মনে কোরোনা আকাশ।তুমি ভেতরে এসো লান্স এখানে করবে।
-সরি!
এটা বলে উনিও ডাইনিং এ এসে বসলেন।চাচী,চাচ্চু আর এই অবলা আমি সবাই হতভম্ব। উনি তো বাইরে যাচ্ছিলেন তাহলে?আকাশবাবু এসেছেন তাই হয়তো!
#চলবে….
#সাঝের_বাতি
#Sajid_Hasan
🥀#বোনাস_পর্ব🥀
-আপনারা ভালো আছেন আন্টি,আঙ্কেল?
-আল্লাহর রহমতে, আলহামদুলিল্লাহ ভলো আছি!
-নিজেকে,নিজের ক্যারিয়াকে ভলোই গড়ে তুলেছো আকাশ?
-জ্বী!
-আকাশ!তোমার ভাইকে খুজে পেয়েছো?…
মুহূর্তেই আকাশবাবুর মুখটা বিবর্ন হয়ে গেলো।উনি নিজেকে যথসম্ভব সামচ্ছেন।চাচ্চু আর চাচী খাওয়ায় ব্যাস্ত।আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি।
আর চাচ্চু কোন ভাইয়ের কথা বলছে?আকাশবাবুর ভাই আছে?কই উনি তো কখনো বলেনি!একটু পর আকাশবাবু বললেন,
-মেঘ কে এখনো পাওয়া যায়নি!
আকাশবাবু,চাচ্চু,চাচী ওনারা কথা বলছেন।কিন্তু আমি যেনো এখানেই নেই।তখন হুট করেই সিয়াম ভাইয়ার মত বদলের কথাটা মস্তিষ্ক কুড়ে খাচ্ছে।আর আকাশবাবুর ভাই মেঘ!লান্স সেড়ে সিয়াম ভাইয়া উপরে চলে গেছেন অনেকক্ষণ।অবাক হলাম,উনি একবারও তার বন্ধুকে ডাকলেন না!এখনো সবাই টেবিলেই বসে আছি।তবে সবার খাওয়া শেষ।আমিও উঠে আসছিলাম আকাশবাবু দাড়াতে বললেন।চাচ্চুকে কি জানি বলে আমার সাথেই উপরে আসলেন।ভেবেছিলাম চলে যাবো।তবে আমি জানি চাচী যেতে দিবে না।তাই এ নিয়ে কোনো কথা বলি নি।সিড়ি দিয়ে দুজনে একসাথেই উঠছিলাম,উনি বললেন,
-চলো ছাদে যাই।
সম্মতি দিলাম।উনি আর আমি একসাথেই ছাদে গেলাম।বরাবরই সিয়াম ভাইয়াদের ছাদটা ফুলে মোড়ানো। সামনে,পেছনে,একোনে,ওকোনে সবখানে ফুলের সমাহার।ছোটনকাকা এগুলোর যত্ন নেয়।বাড়ির উত্তরের দিকে একটা বড় জাম গাছ আছে।গাছটা এতটাই বড় যে ছাদ পেড়িয়ে উপরে উঠে গেছে।দুজনে দুপুরের তির্যক রোধ থেকে মুক্তি আর প্রাকৃতির সুমিষ্ট বায়ু সেবনের জন্য জামতলার নিচে রেলিং এর কাছে গিয়ে দাড়ালাম।
-তুমি তো এখানে সেদিনের পর আসোনি তাহলে?আজ হঠাৎ এ বাড়িতে?
আজ!এ পর্যন্ত!ঘটে যাওয়া সব ঘটনা আকাশবাবুকে খুলে বললাম।উনি নিতান্তই আমার টুসি!তাই সবটা বললাম!কোনোরকম দ্বিধাছাড়া।
-সিয়াম আবার তোমাকে কিছু বলেনি তো?তোমাকে অপমান করেনি তো?
সিয়াম ভাইয়ার করা অদ্ভুত কাজের কথাটা লুকিয়ে গেলাম।
-না!
-ওওও…সত্যি তো?নাকি কিছু লুকাচ্ছো আমার কাছ থেকে?
-না!আর তো আর সিয়াম ভাইয়ার সাথে ঠিক মতো কথাও হয়নি।
-তুমি জানো?সেদিনের পর আমি নিজে একদিনো সিয়াম এর সাথে কথা বলিনি।দেখাও করিনি।আর আজও করতাম না শুধু….
-কেনো?শুনেছি উনি তো আপনার খুব ভালো বন্ধু হয় তাহলে?
-ভালো বন্ধুই শুধু নয় ও আমার ভাইয়ের মতো ছিলো।আমি প্রায়ই আসতাম এ বাড়িতে।বলতে পারো এখানে থেকেই আমি ডাক্তারি পরেছি।আমি হোস্টেলে থাকতাম।তবে সপ্তাহের বেশি দিনগুলুই এখানে কাটানো।আন্টি-আঙ্কেল আমাকে সিয়ামের থেকে কোনো অংশে কম চোখে দেখেনি।আর এখনো দেখেনা।তারপর কিছুদিন পর আমি বিদেশে আমি আমার ছোট ভাই সিয়ামের এর কাছে যাই।আর যখন আসি,আমার ছোটভাই মেঘ আসার জন্য বায়না ধরে।ওকে নিয়েও আসি।কিন্তু আমি কি করে জানবো বলো যে এটাই ওর…..!
-এটাই ওর কি?বলুন!
-তাহলে শোনো,
আমি,সিয়াম,মেঘ আর আমাদের কিছু ফ্রেন্ড মিলে গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে জঙ্গলে গিয়েছিলাম।যেদিন তোমায় সিয়াম ওভাবে অমানুষের মতো মেরেছিলো তার আগের দিন।আমরা সবাই ভেবছিলাম ওখানেই রান্না করে খাবো।সবিই ঠিকঠাক গুছিয়ে নিয়েছিলাম কিন্তু নেইনি পর্যপ্ত পানি।সবাই মিলে ঠিক করলাম মেঘ আর সিয়াম জঙ্গলে পানি খুজতে যাবে।যদি সেদিন আমি মেঘকে সিয়ামের সাথে না পাঠাতাম তাহলে এরকম কিছুই হতো না।অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছি কিন্তু সিয়াম কিংবা মেঘের পাত্তা নেই।সারাদিন খুজেছি ওদের পাইনি কাউকেই।সবার কাছেই টর্চ ছিলো তাই আমরা রাতেও খুজেছি অবশেষে রাত আটটার দিকে পাই।কিন্তু শুধু সিয়ামকে মেঘকে পাইনি।সিয়ামের সারা শরীরে রক্ত লেগে ছিলো।ওকে অনেকক্ষন ধরে প্রথমিক চিকিৎসা দিয়েছি।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এটা যে,ওর শরীরে কোনো আঘাতই নেই।তাহলে এতো রক্ত কার?এই চিন্তায় আমার মাথাটা ছিড়ে যাচ্ছিলো।একটু পর সিয়ামের জ্ঞান ফিরে।আমি ওকে বহুবার জিজ্ঞেস করেছি মেঘ কোথায়?অথচ ও কোনো উত্তরই দিতে পারেনি।এতে আর আমি কি ধরে নেবো,এটাতো স্পষ্ট ওই কিছু করেছে আমার ভাইকে।পুলিশকেও ফোন করেছি কিন্তু কোনো প্রমান পায়নি বলেই ওকে ছেরে দেয় পুলিশ।আর আমি ইচ্ছে করেই আঙ্কেল আন্টিকে বলতে বাড়ন করেছি।এমনকি পুলিশও যেনো না বলে তারও ব্যাবস্হা করছি!তারপর ওকে যখন পুলিশ ছেড়ে দেয় সময়টা বিকেল।ও সোজা বাসায় চলে আসে।কিন্তু আমার আর ওর সেদিন তুমুল ঝগরা হয়!ও প্রচন্ড রেগে ছিলো।আর একটু পরই ফোন আসলো তোমায় ও এভাবে মেরেছে।এখনো আমার ভাই নিখোঁজ।পাইনি তাকে!আর হয়তো পাবোও না।আর যখন ওর ওই মানুষ নামক অমানুষের চেহারাটা দেখেছিলাম সেদিনি ঠিক করে রেখেছিলাম আর কোনো যোগাযোগ রাখবো না ওর সাথে।রাখিও নি।নিজের কথায়,চিন্তায় অটুট ছিলাম!
-আপনি বলতে চাইছেন সিয়াম ভাইয়া আপনার ভাইকে..
-তা ছারা আর কি ভাববো বলো?এটা তো নিসন্দেহে সিয়ামেরই কাজ!
-কিন্তু সিয়াম ভাইয়া এরকম মানুষ নন।আমার এটা বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছ আকাশবাবু।
-তাহলে তুমি বলো?কই আমার ছোটভাই মেঘ?
-কিন্তু ওনার এসব করে লাভ কি?
-বিপদ থেকে বাচতে এসব হয়তো করেছে ও।
-মানে?
-মানে?মানেটা হলো সিয়াম নিষ্চই কোনো বিপদে আমার ভাইকে ঠেলে দিয়েছিলো।ওসব কথা বাদ দাও!কখন যাবে তুমি?
সেদিন আমায় ও ভাবে মারার কারনটা কি ওই রাগ।উনি রেগে ছিলেন বলেই হয়তো সামান্য কারনে আমায় মেরেছিলেন।উনাকে বললাম,
-যেতে তো এখনি চাই কিন্তু চাচী কিংবা চাচ্চু যেতে দিবে না।তারা আমাকে বড্ড ভালোবাসে আর আমিও।এই দুটো বছর অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছে তাদের বীনা।আজ এতদিন পর এখানে এসে তারা এবং অনেক খুশি।
-এইযে জাম গাছটা দেখছো,এটা আমি আর সিয়াম কতো উঠে জাম পেড়ে খেয়েছি।তবে সিয়াম উঠতে পারতো না আমি টেনেটুনে ঠেলেঠুলে উঠাতাম।আর দুজনে মিলে জাম খেতাম।অঙ্কেল গাছটা কেটে দিতে চেয়েছিলো। আমাদের তখন তুমুল প্রতিবাদের কারনে তারপর উনি আর কাটেননি।
-তাই নাকি!
-আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই কেনো ও এতো বাজেভাবে মেরেছে তোমায়?
-সেদিন আমারো দোষ ছিলো।আমি যদি একটু দেখে চলতাম তাহলে এরকম হতো না।আগে থেকেই আমি এ বাড়িতে আসলেই মনটা আনন্দিত হয়ে থাকতো।আর সেদিনো খুশিতে আত্মহারা হয়ে ছিলাম যার কারনে আমি ওই কোল্ড কফি সিয়াম ভাইয়া উপর ফেলে দেই।
উনি হঠাৎই মাথায় একটা ঝাকি দিয়ে বললেন,
-এসব আর ভালো লাগছে না।বাদ দাও..
উনিতো জিজ্ঞেস করলেন তাই তো বললাম😒।টপিক চেঞ্জ করলাম।উনি ফানি জোক শোনালেন।উনি এতো তারাতাড়ি নিজের মাইন্ড সেটআপ করলেন কি করে?উনি একটু আগেই তো উনার ভাইয়ের কথা বলতে বলতে,,,আর এখন জোক্স শোনাচ্ছেন যাগগে,দুজনেই হাসছি।উনি বরাবরই হাসিখুশি একজন মানুষ।
পেছন থেকে কারো হাত তালি আওয়াজে হাসি থেমে গেলো আমাদের।দুজনেই পেছন ফিরে তাকালাম,
-বাহ্!ব্রিলিয়ান্ট!এক্সেলেন্ট!অসাম!
সিমাম ভাইয়া!উনি আমাদের দিকে তাকিয়ে হাততালি দিতে দিতে কথাটা বললেন।অদ্ভুত হাসি টেনে রেখেছেন উনি।উপর ঠোঁটটা বা দিকটা একটু উচু করা।আকাশবাবু উনার দিকে তাকিয়ে আছেন আর আমিও।
-ভালোই তো নাগর জুটিয়েছিস সিয়া!তোকে প্রশংসা না করে পারছি না।যেই দেখলি আমাকে কাবু কারতে পারছিস না অমনি আরেকটা!
লজ্জা নেই তোর?বেহায়া একটা মেয়ে।খুব হাসছিস দুজনে!তাহলে তোকে শাস্তি দেয়াটা কোনো ভুল ছিলোনা বল?আর শাস্তি দিয়েই বা কি হয়েছে,কুকুরের বাকা লেজ যে সোজা হয়না তুই তার বাস্তব প্রমান!কত দিনের সম্পর্ক তোদের?
তার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না।তবে একটু আগে বলা আকাশবাবুর কথাগুলো শোনেনি উনি।আর নাগর!কে সে?আকাশবাবু?উনি তো আমার বন্ধু!কিছু না জেনেই উনি সেদিনের মতো আবার…
-সিয়াম তুই এসব কি বলছিস?তোর মাথা ঠিক আছে?এতগুলো বাজে কথা!তোর মুখে আটকালো না সিয়াম।আর তুই ওকে কেনো এভাবে গালি দিচ্ছিস?ঠিক কোন সাহসে?নাগর,আমরা যদি হয়েও থাকি তাতে তোর কি আসে যায়?
আকাশবাবুর কথায় উনার দিকে তাকালাম।কি বললেন আকাশবাবু?উনি কি ঠিক আছেন।তার কথায় যদি সিয়াম ভাইয়া অন্য ভাবে নেয় তাহলে তো আরও বিপদ….
-বলবিই তো?প্রেমিক যে হয় তোর।তাকে অপমান করেছি গায়ে তো লাগবেই।
-মুখ সামলে কথা বল সিয়াম!নিজের লিমিট ক্রস করিস না।
তারা দুজনে একে অপরের সাথে এভাবে ঝগরায় ব্যাস্ত কেউ কাউকে একচুল ছাড় দিতে রাজি নয়।অথচ,মনটা বারবার বলছে এর জন্য আমি দায়ী।দুজনের এই ঝগড়া কিভাবে থামবো আমি?কি করা উচিত আমার?
ঝগড়ার মাঝেই আকাশবাবুকে হাতটা টেনে হাটা শুরু করলাম।কারন আমি জানি ওনাকে আমার সাথে দেখেই উনি এভাবে রিয়েক্ট করছেন।অন্যকোথায় হলে আমিও ছেড়ে কথা বলতাম না।হঠাৎ এরকম সিয়াম ভাইয়ার ব্যবহার!কিছুই মাথায় ডুকছে না।
-নাগরকে খুব ভালোবাসিস তাই না রে?তাই তো নিয়ে যাচ্ছিস!আজেবাজে মানুষের কথা কেনো শুনতে হবে তাকে?আহারে,কি প্রেম?
তার কথা আর সহ্য হলো না দাড়িয়ে পরলাম।চোখের ক্ষুদ্রতর পানির কনাটুকু মুছে সামনে গিয়ে দাড়ালাম।কড়া গলায় বললাম,
-কতোটা নিচ মনের মানুষ আপনি?এতগুলো আজেবাজে কথা বলতে বাধছে না মুখে আপনার।এরকম সেদিনো আপনি না জেনে আমায় মেরেছেন।সেদিনো আমার কোনো দোষ ছিলো না আর না আজ আছে।উনি শুধুমাত্র আমার একজন বন্ধু।সেদিনের পর যখন আমি ভেঙে পরেছিলাম।সেদিন এই মানুষটাই আমায় সাহস যুগিয়েছিলো।উনি আর টাপুরই আমার খুশি হওয়ার মাধ্যম ছিলো।
__জীবনে যাকে আমি ভালোবেসেছিলাম সে আর কেউ নয় আপনি!হ্যা আপনাকে আমি ভালোবাসতাম।তবে এখন আমি ঘৃনা করি আপনাকে।ঘৃনা করি।
সামন্যতম মনুষ্যত্ব নেই আপনার মাঝে।এতটুও নেই কি?
কিভাবে বলতে এই মানুষটাকে আমার..
শেষের কথাটা আকাশবাবুর দিকে তাক করে কথাটা বললাম।কিন্তু পেছনে উনি নেই।এইমাত্রই তো এখানে ছিলেন উনি।কোথায় গেলো উনি?সিয়াম ভাইয়ার দিকে একপলক তাকালাম উনি রাগি চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছেন।
কোনোকিছু না বলে নিচে আসলাম।চাচীকে গিয়ে আকাশবাবুর কথা জিজ্ঞেস করলাম চাচী বললো উনি চলে গেছেন!
হঠাৎই কেউ আমায় পেছন থেকে জড়িয়ে সোজা বিছানায় ফেলে দিলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমায় মিশিয়ে নিলো তার বুকের সাথে।আচমকা এরকমটা হওয়ায় চোখমুখ খিচে বন্ধ করে রয়েছি।ভেতরে কেমন তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।ইিয়াসকে হাড় মানিয়ে নিবে এই ঝড়।তার বুকের ধুপধাপ আওয়াজ দ্বীগুন গতিতে বাড়ছে।শার্টের দুটো বোতাম খোলা,উদম বুকে মাথা ঠেকানো আমার।তার গরম নিশ্বাস আঁচছে পরছে মুখে।এই শ্বাস সরাসরি হৃদয় নামক স্থানে বিধছে ।পা থেকে মাথা পর্যন্ত একটি পশম ও নড়ছে না পুরাই ফ্রিজড্ হয়ে রয়েছি।নিশ্বাস অনেকক্ষণ যাবত বন্ধ। অনেক চেষ্টা করেও শ্বাস নিতে সক্ষম হইনি।একদম নির্বাক দুটি মানুষ এক হয়ে রয়েছি।বুকটা টিপটিপ করছে।শরীরে ঘটে চলা এক অদ্ভুত অনুভূতি প্রকাশ হচ্ছে।কিন্তু আর কতক্ষণ? কে হতে পারে?বর্তমানে আমি যেখানে আছি সেখানে তো এরকম হওয়াটা কল্পনারও বাইরে।এখানে যদি কেউ গলাটা টিপে ধরতো সেটাও মেনে নিতাম।কিন্তু!না..
শক্তি যেনো হাড়িয়ে ফেলিছি।সামান্য মাথাটা তুলতেই মনে হচ্ছে সব শক্তি খাটাতে হচ্ছে।মাথাটা তুললাম, সামনে থাকা লোকটাকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না।এটা কোনো কল্পনা নয়তো,নাকি আমি সপ্নের জগতে রয়েছি।বাকা হাসি ঝুলিয়া রাখা মুখটা আর কারো নয়,সিয়াম!হ্যা সিয়াম ভাইয়ার!এটা মানতে যে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।তোলপাড় হওয়া ঝড়কে কাটিয়ে ফনি শুরু হয়েছে বুকে।নিজেরি অজান্তে চোখ দিয়ে নামছে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি। সিয়াম ভাইয়ার মুখটা আমি সপ্নেও আশা করি নি।হাত পা কেমন অবস হয়ে আসছে।
__কেনো আজ উনি আমায় এভাবে জড়িয়ে ধরছেন?কেনো?সেদিনের পর তো একটা বারও খোজ নেয়নি আমার।তাহলে?কোনো অধিকার নেই তার সিয়ার শরীরে হাত দেয়ার।একটাবারও উনি কখনো বলেনি “সিয়া কেমন আছিস” তাহলে আমায় উনি ঠিক কি মনে করে এভাবে বিছানায়…
আমায় কি পুতুল পেয়েছে?উনি যেভাবে নাচাবেন আমি সেভাবে নাচবো।না!আর নয়!আর এক মূহুর্ত এভাবে নয়।এক ঝটকায় দূরে ঠেলে দিলাম তাকে।এতে উনি বেশিদূর যায়নি উনি কারন,একটু বেশিই জোরে ধরেছিলেন।
-কেমন আছিস তুই?তোর মুখচোখ তো শুকিয়ে কাট।ক বছর খাসনি?
বাহ্!ভালোই তো নাটক পারে দেখছি।খুব আদর দেখাচ্ছে যে আজ।কিন্তু আমিতো এখন এই আপনি নামক কোনো আদরের অপেক্ষা করি না।আপনি কেনো?কারো আদরের জন্য এই সিয়া অপেক্ষা করে না এখন।মনে সাহস যোগালাম।চোখের কোনে লেগে থাকা পানিটুকু মুছে ঠাসস করে একটা চড় লাগিয়ে দিলাম,
-আপনি কোন সাহসে আমায় এভাবে জড়িয়ে ধরছিলেন?ঠিক কোন সাহসে?
-তুই আমার ওপর রাগ করেছিস তাইনা?এটাই স্বাভাবিক।তুই বিশ্বাস কর তোকে সেদিন কষ্ট দিয়ে আমিও ভালো ছিলাম না।এক একটা দিন আমি কোনো এক অজানা আগুনে পুড়েছি।মোটেই ভালো ছিলাম না আমি।কথায় আছে না, অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজে কখনো ভালো থাকা যায় না,ঠিক তেমনি।এতদিনে বুঝছি তুই আমার ঠিক কোন জায়গায় বাসা বেঁধেছিস।প্রতিসপ্তাহে এসে তুই যে খড়কুটো দিয়ে যেতিস সেটা আমার কল্পনার ও বাইরে ছিলো।সেদিনের পর যখন তুই আর আসলি না,তোর কোনো ফোন আর আসলো না,যানিনা কেনো সেদিন থেকেই তোকে বারবার দেখতে ইচ্ছে করতো।মনটা ছুটে যেতে চাইতো তোর কাছে।তুই যখন কলেজে যেতিস চুপিচুপি একবার হলেও তোকে দেখে আসতাম।এক দিন!মাএ একটা দিন তোকে না দেখলে অতি অসস্তি লাগতো।নিজেকে বহুবার প্রশ্ন করেছি,
কেনো আমায় তোকে দেখতে ইচ্ছা করে?আমার তো খুশি হওয়ার কথা। যেখানে আমায় জ্বালানোর মতো আর কেউ নেই!কিন্তু কে জানবে ধিরে ধিরে এই মনটা যে তোকে জরিয়েছিলো। তোর দেয়া একটু একটু ভালোবাসা নিয়ে হৃদয়ের এক কোনে জমাচ্ছিলো।আমি আবারো বলছি তুই বিশ্বাস কর,এই দু বছরে একটা দিনও আমি তোকে ছাড়া ভালো থাকিনি।থাকিনি ভালো!
কথাগুলো বলতে বলতে তার চোখ বেয়ে নোনাজল পড়ছিলো।কোনো আগ্রহ দিলাম না তাতে।চেচিয়ে বললাম,
-ব্যাস!অনেক বলেছেন।আপনার মুখের এসব কথা তো আমি বিষবার মরে গেলেও বিশ্বাস করবো না।যে মানুষ কোনোকিছু না ভেবেই একবার জানার চেষ্টাও না করে এভাবে অমানুষের মতো মারতে পারে, তার মুখে এসব কথা হস্যকর ছারা আর কিছুই নয়।কেনো?কি লাভ আপনার এরকম কথা বলে?ওওও এতদিন কাউকে অপমান আর মারতে পারেননি তাই…একটা কথা জেনে রাখুন সিয়াম ভাইয়া, আমি আপনাকে শুধুই ঘৃনা করি শুধুই ঘৃনা।
-আমি এসব করার আগেই অবহত ছিলাম যে আমায় এসব শুনতে হবে।আর শুনছিও,শুনবোও।এই দু বছরে আমি অনেক পাল্টে গেছি সিয়া।তুই নামক অনেক সপ্ন দেখেছি।এই প্রথম কাউকে পাগলের মতো ভালোবাসেছি আমি।যদিও আমার আগে একটা সম্পর্ক…..
সাহস করে আজ অনেক কথা বলে ফেলেছি।জানি ভাগ্যে অনেক কষ্ট আছে।কিন্তু ওনার আজ এই ব্যবহারে এটুকু কি প্রাপ্প নয়?রুম থেকে বেড়িয়েই আসছিলাম উনি ঝাঁঝালো কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন,
-আকাশের সাথে তোর কিসের সম্পর্ক?
থমকে গেলাম।আকাশে বাবুর কথা উনি কিভাবে জানলেন?এই দু বছরে আমার সুখ ও দুঃখের সাথি টাপুর আর আকাশ বাবু।আমার বেস্টফ্রেন্ডে পরিনত হয়েছেন উনি।
সিয়াম ভাইয়ার প্রশ্নের উওরটা দেইনি।কেনো দেবো?কে হয় উনি আমার?কেউ না!জোর পায়ে হেটে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম।চাচির রুমটা বরাবরের মতো আমার জন্য বরাদ্দ থাকে।এ বাড়িতে আসলে চাচির সাথেই থাকি।রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ফুপিয়ে কেদেঁ দিলাম।দরজার সাথে ঘেসে মাটতে বসে পড়লাম।
-যে মানুষটাকে ভুলতে আমার দেড় বছরের বেশি সময় লেগেছে। আজ আবার আমার জিবনে কেনো ডুকতে চাইছেন উনি?কেনো ভোলা সৃতিগুলো আবার মনে করিয়ে দিলেন?এই দুটো বছর আমি কিভাবে কাটিয়েছি তা আপনার কল্পনার বাইরে সিয়াম ভাইয়া।দেড় বছরে এমন একটি রাত যায়নি যে রাতে আপনার ছবি দেখে অঝরে চোখের পানি ছেরে কাঁদিনি।তাবুও আপনাকে কিছুটা ভুলতে সক্ষম হয়েছিলাম আমি।হয়েছিলাম!…….
দরজার ওপাড় থেকে চাচি দরজাটা সমনে ধাক্কাচ্ছে।নিজেকে ঠিক করে নিলাম যতটা সম্ভব।দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে ছিলাম এতক্ষণ। উঠে দাড়িয়ে দরজাটা খুলে দিলাম।দরজা খোলার সাথেসাথে চাচী বললো
-কিরে দরজা বন্ধ করে কি করছিলি?তোকে যে বললাম কাপড়গুলো নিয়ে….তোর মুখচোখের এই হাল কেনো?ও ঘরে সিয়াম তোকে কিছু বলেছে?তোকে কি ও মেরেছে? কি হলো আমায় বল সিয়া!
নিজেকে যথাসম্ভব সামলে আমতাআমতা করে বললাম,
-কিছু হয়নি চাচি।কি বলোতো মাথাটা কেমন ঘুরছে।অনেকদিন পর আসা তাই একটু ইতস্তত লাগছে।তা ছারা আর কিছু না।
-তবে তোর মুখচোখ এরকম লাগছে কেনো?কি হয়েছে? সিয়াম কিছু বলে থাকলে আমায় বল!বললে তোর নিজেরো মনটা হালকা হবে।!
চাচির কথায় বুকটা কেমন ভার হয়ে আসছিলো।নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না।হু হু করে কেঁদে দিলাম।চাচি হয়তো আমার কাঁদাটা আশা করেন নি।আমায় বিছানায় নিয়ে বসিয়ে চাচি ও বসে পড়লো।চাচির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরলাম।চাচি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
-তুই জানিস….
তখন বেলাটা মাথার উপর। আমি দুপুরের জন্য রান্না করছিলাম!প্রায় শেষ ও হয়ে এসেছিলো সব।তখন সিয়ামের আগমন।আমি সেদিন যতটা অবাক হয়েছিলাম তা হয়তো সিয়াম দুনিয়াতে আসার পর কোনোদিন এতটা অবাক হইনি।বিদেশ থেকে আসার পর তো আর সিয়াম কোনোদিন রান্নাঘরে যায়নি।যাগগে, ও আমার সামনে আসলো।ওকে জিগ্যেসা করলাম কিছু লাগবে নাকি।ও বললো কিছু লাগবে না।আড়াই মিনিট ওখানেই দাড়িয়ে কিছু একটা ভেবে আমায় জিজ্ঞেস করলো,
– আম্মা সে..সেদিনের পর সিয়া আর একবারও এখানে ফোন দে..য়নি তাইনা?
হঠাৎ তোর কথা বলাতে আমি সেদিন হকচকিয়ে গেছিলাম।এতদিন বিশ্বাস না করলেও সেদিন বিশ্বাস করেছিলাম,ভুতের মুখে….
ততক্ষণে উঠে গেছি আমি।কি শুনলাম আমি?ঠিক শুনলাম তো?উনি আমার কথা জিজ্ঞেসা করেছেন।আমার কথা!যাকে কিনা উনি ঘৃণা ছারা আর কিছুই করেননা।তার কথা!তাহলে সত্যিই উনি আমায় ফলো করছেন এতদিন।তার তো মেসেজ ও পেয়েছি একদিন….
_______সেদিন_______
সেদিন সবেমাত্র আমি,টুসি,আর আকাশ বাবু অনলাইনে ভিডিও চ্যাট করে বেড়োলাম।মাএ কিছুদিনেই আরও একজন বন্ধু পেয়েছি।বন্ধু বললে ভুল হবে বেস্টফ্রেন্ড।তিনি আর কেউ নয় আকাশবাবু।অনলাইনে আসলেই তার সাথে কথা হয়।ফেসবুকে ঘাটাঘাটি করছিলাম।
মুলত,সিয়াম ভাইয়ার করা কিছু নতুন পোস্ট দেখছিলাম।উনিও তখন অনলাইনে ছিলেন।তার সাথে কথা হয়নি প্রায় পাঁচ মাস হয়েছে।দেখাও হয়নি!হঠাৎ একটা মেসেজ আসলো,প্রথমে আকাশবাবু ভেবেছিলাম। কিন্তু না,ওই মেসেজটা আকাশবাবুর ছিলো ওটা সয়ং সিয়াম ভাইয়ার ছিলো।মেসেজটা চেক করলাম,
– সরি!
শুধু সরিটুকু লিখেছেন উনি।হাজারটা অভিমান আর কষ্ট বুকে পাথরচাপা আছে তাই রাগে আর রিপ্লাই দেয়নি।আর কেনই বা দেবো?উনি তো আমায় শুধু ঘৃনা করে তাহলে সরি কেনো বললেন উনি?..হয়তো চাচ্চু কিংবা চাচির কথায়..!
_______🌼
এসব কি কারনে করেছেন উনি?কেনোই বা চাচিকে আমার সম্পর্কে এসব বলেছেন। চাচিকে জিজ্ঞেসা করলাম,
-কেনো জিজ্ঞেস করেছিলেন উনি।তাও আবার তার সবথেকে ঘৃণার মানুষের কথা!আমি তো তার কাছে অসয্যকর,তাহলে?বলো চাচি, বলো?
আশেপাশের সব মেয়েরা ব্যাহায়ার মতো তাকিয়ে আছে তার দিকে।অথচ,সেদিকে তার কোনো হেলদোল নেই।তার দৃষ্টি আমাতে স্থির। পলকহীন ভাবে তাকিয়ে রয়েছেন সেদিনের সেই ডাক্তারবাবু।সেই সাধা শার্ট তবে কালো পাইপিং করা আছে,কালো জিন্স,হাতে তার কালো সাদা ব্রান্ডের ঘরি,হালকা হলুদ ও কালো রঙের সু।
-এইযে মিস সিয়া!
ধ্যান ভাঙলো আমার। সেও চোখ সরিয়ে নিলো। কিছু বলার আগেই টাপুর বলে উঠলো,
-এনি হলেন আমার ভাইয়া।আমার কলেজটা ঘুরতে এসেছে।ভাবলাম এসেছেই যখন তোর সাথে মিট করিয়ে দি।আমার মূলত কাজিন হয়।ওনার নাম হলো….
-আকাশ তাইতো?
একদম বিস্ফোরিত চোখে তাকালো টাপুর।সে হয়তো আশা করেনি আমার বলা কথাটা।
-ত্ তুই চিনিস?
-না.. সেরকম কিছু না আসলে… ফেসবুকে আলাপ!
বাহ্ সিয়া!দারুণ বললি তো। হুট করে মুখ ফসকে কথাটা বললেও তা হয়তো কাজে দিয়েছে।কিন্তু উনি যদি সবটা বলে দেয়?আর টুসি যদি সবটা জানতে পারে তাহলে তো আমায়..
একটা শুকনো ডোক গিললাম।এখন তার দিকে তাকিয়ে রয়েছি।উনি কি বলবেন সেই আশায়।কেমন ভয় ভয় লাগছে।একনজর টুসির দিকে তাকালাম ও দুজনকেই খুতিয়ে দেখছে।হয়তো হজম হয়নি কথাটা।
-হ্যা আমিও ওকে ফেসবুকেই প্রথম দেখেছি।ভাবিনি এভাবে দেখা হবে।বাই দা ওয়ে, কেমন আছো?
তার কথায় টুসি কেমন ঠোঁট টিপে হাসছে।আচ্শর্য,এভাবে কি হয়েছে।টুসিকে কি উনি আমার ব্যাপারে সবটা বলে দিয়েছে?কিন্তু উনি তো যানেনই না আমি এখানে আসবো।না! তাহলে কি আমার সাথে আলাপ করাতো?এটা হয়তো কো ইন্সিডেন্ট!মুখে হাসি ফুটেয়ে উত্তর দিলাম,
-অনেক মজা হবে। যাওয়াই যায়,চল সিয়া ভাইয়ার সাথে ঘুরে আসি।
-আ্ আমি..?
-তা নয়তো কে আমি?তুই জানিস ভাইয়ার সাথে ঘুরতে গেলে সব খরচ ভাইয়া বহন করে।আর আজকে না করলাম ক্লাস তাতে কী? সুমন তো আছে। সুমন এর কাছ থেকে সব নোটস্ নিয়ে নেবো।
-কিন্তু…
-তোমার মেধাবি ফ্রেন্ড হয়তো যেতে চাইছে না।
এবার আকাশবাবুও বলতে লাগলেন।আর কি বলবো?তাই রাজিই হয়ে গেলাম,
-না..তেমন কিছু না চলুন!
:
:
:
-তোর কি হয়েছে বলবি তো? আজ তিনদিন ঘর থেকে বাইরে যাস নি কি হয়েছে আমাকে বল?তুই কি অসুস্থ বোধ করছিস?এভাবে থাকার মনে কি সিয়াম।তোমার কিছু হলে সরাসরি আমাদের বলো?
-আমি ঠিক আছি।আম্মু তুমি এখন বাইরে যাও।আমায় একা থাকতে দাও,প্লিজ।
অসুস্থ রোগীর মতো সুয়ে ছিলো সিয়াম। সেদিনের পর থেকে তাকে অস্থিরতা ঘিরে ধরেছে।অপরাধী মনে হচ্ছে তাকে।অবশ্য এর কারন তার জানা নেই।
-কি বলবে ও!এতদিন সেকরার ঠুকঠুক ছিলো কিন্তু ও তো এবার কমারের এক ঘা দিয়েছে। কিছু বলার মুখ আছে ওর।প্রতিদিন সকালে যার ফোন আসতো সেতো আজ!এখনো!এ পর্যন্ত ফোন দেয়নি।কেনো বলোতো?শুধুমাএ তোমার এই ছেলের কারনে।!
দরজায় দাড়িয়ে আছেন ইবনান শেখ।সিয়াম ও তার মা ঘুরে তাকাতেই তিনি মিস.রেহেনা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
-বলো তোমার ছেলেকে,আছে কোনো উওর?পারবে আমাদের সেই সিয়াকে ফেরাতে,পারবে!পারবে না।হ্য্,খালি পড়াশোনায় ভালো হলেই যে মানুষ ভালো হয় না রেহানা! হয় না।
কথাটা বলেই ঘর ত্যাগ করে ইবনান শেখ।তিনি যে তার একমাত্র ছেলে সিয়ামকে ঘৃণা করেছেন তা বুঝতে বাকি নেই।যথাসম্ভব চেষ্টায় ব্যাস্ত চোখের কোনে আসা পানিটুকু আটকাতে সিয়াম।শুধুমাএ ছেলেদের কাঁদা যায় না বলে,নাকি..ভেতরে জ্বলছে অগ্নিশিখায় অগ্নাত্বক কোনো প্রতিশোধের আগুন!
.
সামনে পরপর দুটো ফুচকার প্লেট সাজানো।দু ভাই বোন যে কি এতো কথা বলে কে জানে?এদিকে আমার মুখ দিয়ে লালা ঝড়ছে।এরা কি আদেও খাবে নাকি এভাবে গল্পই করবে?সেই কখন এসেছি একটা ফুচকার দোকানে।ফুচকাও দিয়েছে অথচ এদের…
টুসিকে অনেকক্ষণ যাবত চেয়ারের নিচ দিয়ে খোঁচাচ্ছি তবু কোনো হেলদোল নেই মেয়েটার।গল্পে মাতোয়ারা হয়ে রয়েছে, আশ্চর্য!
-আপনি খাওয়া কেনো শুরু করছেন না? ফুচকা খান না?
একেই নিজেরা গল্পে ব্যাস্ত অন্যদিকে আমায় বলছে!আরে ভাই তোমরা শুরু করলেই তো আমিও শুরু করছি।কথাগুলো মনেমনে বিরবির করে চলেছি। উনি আবার বললেন,
-কি হলো?কোনো সমস্যা হচ্ছে আপনার?
-না না কোনো সমস্যা নেই।আসলে আপনারা না শুরু করলে আমি কিভাবে করি বলুন।আর এমনিতেও ফুচকা আমার প্রিয়💙
-ও তাই তাহলে তো এবার শুরু করতেই হয়।
★
পেট পুরে ফুচকা খাওয়ার মজাই আলাদা।দু প্লেট ফুচকা খেয়ে কিছুটা সময় হেটে বাড়ির পথে রওনা দিলাম।বাড়িতে এসে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়নি কারন,ঠিক সময়ে বাড়ি এসেছি।
ফ্রেশ হয়ে বিছানায় হেলান দিলাম।সেদিনের লাঠির আঘাতের কিছুটা ব্যাথা এখনো রয়েছে।সোজা অনলাইনে চলে আসলাম।না!কাউকেই এক্টিভ পেলাম না। তাই ইউটিউব এ নাটক দেখতে লাগলাম।নতুন বের হওয়া নাটকের নামটি ছিলো “এক্স_চেন্জ”। নাটকটি যখন প্রায় শেষের পথে তখনি একটি মেসেজ আসলো।একটু বাকি ছিলো তাই ভালো করে লক্ষ করিনি।আবার মেসেজ আসলো।মেসেজগুলো সিন করলাম,
বলেই খালাস! উনি অনলাইন থেকে বের হয়ে গেছেন।তাই আর রিপ্লাই দিলাম না।কিছুক্ষণ পর ওনার আরও একটি মেসেজ আসলো,
-রিপ্লাই দিতে কষ্ট হয়??
ওনার কথার আগামাথা বুঝলাম না।উনি কি আমার উপর রাগ করলে? আর এতে আমার তো দোষ নেই।তাহলে?রিপ্লাই দিলাম,
-আপনি তো নেটে ছিলেন না তাই রিপ্লাই দেয়নি।
-ওহ্!আমি একটু ব্যাস্ত আছি তাই..
-আচ্ছা ঠিক আছে বায়।আমার একটু কাজ আছে।
-রাগ করেছো?
দেখেও রিপ্লাই দিলাম না।যার সাথে আজ নিয়ে মাএ দুদিন দেখা হয়েছে তার সাথে এত কিসের কথা।আজব!
বাইরে চেঁচামেচির আওয়াজ। কিন্তু আজকে তো কারো আসার কথা নয়। তাহলে?বিছানা থেকে উঠে বাইরে যাওয়ার আগেই আমার ঘরে দুটো আগুন্তুকের আগমন।আসেই দুটো সোজা বিছানায়।আগুন্তুকের এই আগমনে আমি অতি আনন্দীত।
-কেমন আছো উষা।ফুপি কই?তোমরা কখন এলে?
-আমরা ভালো আছি তুমি কেমন আছো সিয়া আপু?আম্মু তো বাইরে মামার সাথে কথা বলছে।আর আমরা,আমরা কিছুক্ষণ আগেই এলাম।
[আমি জানিনা ফুপির মেয়ে আমায় কি বলে ডাকবে।হুদাই আপু দিসি😶]
-রাগ তো হবেই তুমি কতদিন একটা ফোন দাওনা।শেষ কবে দিয়েছো তা হয়তো তোমারি মনে নেই।
-আচ্ছা ঠিক আছে এত রাগ করতে হবে না।আমি তোমাদের আজ আইসক্রিম খাওয়াবো।ওকে!
-ওকে ওকে ওকে!
রুম থেকে বেড়িয়ে বাড়ান্দায় গিয়ে দেখি ফুপি ও আব্বু কথা বলছে।দূর থেকেই ফুপিকে ডাকলাম,
-ফুপিইইইইই!!
এই ফুপি নামক একটা মানুষ যাকে আমি আমার সব কথা সেয়ার করি।কখনো কোনোকিছু লুকাই না তার কাছে।অবশ্য আমি লুকাতে চাইলেও পারি না কিভাবে যে বুঝে যায়..
ফুপি এগিয়ে এসে বললো,
-কেমন আছিস সিয়া?তুই কি করে পারলি এত বড় একটা কথা লুকাতে?তাও আবার আমার কাছে?তুই পারলি এটা করতে?
ফুপি কথাগুলো একপ্রকার জোরেই বললো।ফুপির পেছনে একবার উকি মারলাম।বাবা আছে কি না জানতে।না!নেই!একটা সস্তির নিশ্বাস নিলাম।ফুপিকে বললাম,
-কিভাবে জানলে তুমি।আমি আর মা ছারা তো কেউই জানে না তাহলে তুমি এসব খবরাখবর পাও কোথা হতে?
-কেনো?তুই লুকাবি বলে কি আমায় কেউ বলবে না।কেন রে?আমার ভাই বলেছে।তোর চাচাজান!
-ওও..আমি এমনিতে বাবাকেও কথাগুলো বলি নি।তোমার কাছ থেকেও লুকাতে চাইছিলাম আর তুমি সব আগে থেকেই জানো দেখছি।
-আপু চলো যাই।এবার দোকানই বন্ধ করে দেবে।
-আচ্ছা চলো সবুজ।ফুপি আমি আসছি।পড়ে কথা হবে।
ওদের আবদার মিটিয়ে ফুপির সাথে অনেকক্ষণ গল্প করলাম।ফুপি রান্না করিয়ে খাইয়ে চলে গেলো।সাথে উষা আর সবুজও।
দিনগুলো এভাবেই কাটতে লাগলো।সময় তো আর কারো জন্য থেমে থাকে।সে নিজের নিয়মে চলছেই।ধিরে ধরে একটি বছর কোটে গেলো।টুসি আমায় আকাশবাবুর সাথে বন্ধুত্ব করিয়ে দিয়েছে।ওদের নিয়ে আরও একটি বছর কেটে গেলো।
বেরোনোর সময় পর্যন্ত তাকে দেখলাম না।বাড়ির বাইরে আসার আগে দোতলার কিনারের ঘরটায় একপলক উঁকি দিলাম।না!কেউ নেই।এই সিয়া আজ পাহাড় সমান অভিমান চলে যাচ্ছে সিয়াম ভাইয়া। বিশ্বাস করুন আর কোনোদিন আসব না আপনার জীবনে,কোনো দিন না!
আমি আর মা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।একটা রিকশা নিয়ে চলে আসলাম নিজ বাসায়।একটু পর ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা হেলিয়ে দিলাম।এখনো হালকা হালকা ব্যাথা আছে।কিছুই ভালো লাগছে না।বারবার সিয়াম ভাইয়ার কথা মনে পরছে।নিজেকে মনকে বারবার বললাম,
-ভাববো না আমি আর ওনার কথা।মুছে দেবো,ওনার সব সৃতি মুছে দেবো এ জিবন থেকে।যে মানুষটা আমায় এতটা কষ্ট… না!উনি তো আমায় এখন বোন হিসেবে স্নেহটুকু ও করেনে না আর ভালোবাসা!
নিজের মনকে সান্ত্বনা দিয়ে ফেসবুকে গলাম।ডাটা অন করতেই টুইং করে কয়েকটি মেসেজ ও ফেসবুক থেকে একটি নটিফিকেশন আসলো।প্রথমে পাত্তা না দিলেও বারবার মেসেজ আসতে লাগলো।উহ্!এমনিতেই এক অদ্ভুত যন্ত্রনা আর এর উপর এত মেসেজ।কে ইনি?
বিরক্তি নিয়ে মেসেজ চেক করতে গিয়ে যা দেখি তা দেখে আমি রিতমত অবাক!প্রায় বিশ টারও বেশি মেসেজ দিয়েছে।মেসেজগুলো সিন করলাম,
– Hi,Hlw……..।
ব্যাস! মেসেজ দেওয়ার দুই মিনিটও অপেক্ষা করেননি আবার মেসেজ দিয়েছেন,
-কেমন আছো এখন?
এরকম অনেকগুলো মেসেজ দিয়েছে।আবার ফ্রেন্ডরিকয়েস্ট এক্সেপ্ট করতেও বলেছেন।কে ইনি আর বলছে কেমন আছো?তারমানে আমি যে অসুস্থ ছিলাম উনি এটা জানেন।কে হতে পারে?আগ্রহ নিয়ে প্রফাইল নেম দেখলাম!” Nil Akash “প্রফাইল নাম দেখে না চিনলেও প্রফাইল ফটো দেখে চিনলাম।ইনি সেই ডাক্তারবাবু যিনি আমার চিকিৎসা করেছিলেন।কিন্তু উনি এভাবে এতবার মেসেজ দিচ্ছেন কেনো?মনটাকে ঠিক করতে রিপ্লাই দিলাম,
– জি বলুন!
সাথেসাথে রিপ্লাই আসলো,
– এখন কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ!অনেকটা সুস্থ আছি।
– তোমার প্রফাইল লক্ কেনো?লক্ এর কারনে তোমার কোনো পোস্টই দেখা যাচ্ছে না।
আজিব!আমার পোস্ট দেখে উনি কি করবেন।আর এসবই বা কি বলছেন?তাকে রিপ্লাই দিলাম,
– কেনো?
– এমনিই,তুমি আমার ফ্রেন্ডরিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করো।
এমনিতেই ভালো লাগছে না আর উনি।ধ্যাৎ,বুঝতে পারছি না কি করলে একটু শান্তি পাবো?এরমধ্যেই উনি আবার মেসেজ দিলেন,
– কি হলো?
বুঝলাম, যতক্ষণ না এক্সেপ্ট করবো ততক্ষণ শান্তি দিবেন না।বিরক্তি নিয়েই তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করলাম।অতঃপর তাকে মেসেজ দিলাম,
– করেছি।
তার আর কোনো রিপ্লাই পেলাম না।অবশ্য মেসেজটা উনি সিন করেছে।বেড়িয়ে আসলাম অনলাইন থেকে।বিছানা ছেরে বারান্দায় এসে দাড়ালাম,আকাশটা আজ আমার মনের মতো বিষন্ন।কেমন গুমট হয়ে আছে আকাশটা।হয়তো বৃষ্টি হবে।একটু পর ফোনের টুংটাং আওয়াজ কানে ভেসে আসলো।ফোন হাতে নিয়ে দেখি “টুসি” নামটা জ্বলজ্বল করছে।আসলে টাপুর আমার বেস্টি ওকে আমি টুসি বলে ডাকি।ওর ফোন পেয়ে মনটা নেচে উঠলো।একপ্রকার উল্লাস নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম,
– এই সুয়া কি করছিস?
এই একটা আমার আর ওর বধ অভ্যাস কেউ কারো সঠিক নাম ধরে ডাকি না।
– কিছু না।
– এই সুয়া!এভাবে কথা বলছিস কেনো?
– বাদ দে, কাল যাবি কলেজে?
– তুই গেলে অবশ্যই যাবো।
– কি করছিস তুই?আর দুদীন কলেজেই বা কেনো যাসনি?কিছু হয়েছে?
-আরে কিছুই হয়নি।আমি একটু অসুস্থ ছিলাম।
-আমায় একবার বলবি না তুই!এখন কেমন আছিস?
-অনেক ভালো আছি।
– আচ্ছা রাখছি।আমার জানপাখি বারবার কল করছে।
– আচ্ছা!
জানপাখি বলতে ওর bf।ওরযে কতগুলো bf আছে তা হয়তো ও নিজেও জানে না।ফোনটা রেখে বাইরে অগ্রসর হলাম।বাড়ির পেছনের রয়েছে আমার ছোট্ট একটা বাগান।বাগানে গিয়ে দেখলাম সবার জান যায় যায় অবস্থা।দৌরে গিয়ে পানি নিয়ে আসলাম।সবকটা গাছেই পানি দিলাম। পানি পাওয়ার পর সবাই যেনো প্রান ফিরে পেলো।কিন্তু আমি…….?
________________________
অন্ধকার দরজাবন্ধ ঘরটায় অনুসূচনায় আতরাচ্ছে কেউ।সমানে কামারের মতো ধপাস!ধপাস!হাতুড়ি পিটিয়ে চলেছে কেউ তার বুকে।এই হাতুড়ির আঘাতে একটু একটু করে অবস হয়ে আসছে তার শরীর। কিন্তু কেনো?ভুল তো সে করেনি, তাহলে এ দুদিন কেনো বুকের ভেতরে এই অদ্ভুত যন্ত্রণা হচ্ছে তার।কিছুতেই কেনো কিছু ভালো লাগছে না তার।এমটা হওয়ার তো কথা ছিলো না। তাহলে?
………এ কোন আগুন পোরাচ্ছে তাকে।কেনো মনে হচ্ছে তার করা কাজটা পুরোটাই অন্যায়,পুরোটাই অবিচার।
এসির হাওয়া পিরো দমে চলছে তবুও কেনো এত ঘামছে সে?কপালে,নাকে,খোঁচা খোঁচা দাড়িতে সব জায়গায় ঘাম।
বাইরে ঝরো হাওয়া বইছে।বারবার বাতাস নামক কেউ জানালাটা ঠেলছে।মাঝেমাঝে বিজলির চমক ও দেখা যাচ্ছে।ভাবনাকে বাদ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে জানালায় গিয়ে দাড়ালো(..)।বাইরে ঘটা এই দুর্যোগের আর তার মনের একই মিল।সবকিছুই এক!বাইরের ঝড়ো হাওয়া তার অন্যায়গুলো তার চোখের সামনে কেমন মেলে তুলছে।কিছুতেই তার মাথায় আসছে না এ কেমন বাতাস?কেনো বারবার তাকে সিয়ার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।অথচ,সেতো তাকে তার যথাযথ শাস্তি দিয়েছে।তাহলে কেনো তাকে কিছু ভালো লাগছে না?কেনো সিয়ার উত্তপ্ত আগুনে জ্বলছে সে?
________________________
-সপ্ন বোনা ভালো তবে তা এত তারাতাড়ি হয়ে যাবে অমি কল্পনাও করিনি।কখনো কোনো মেয়েকে দেখে এতটা আকৃষ্ট হয়নি যতটা সিয়ার প্রতি হচ্ছি,হয়েছি।যেখানে মেয়েকে দেখে এড়িয়ে যাওয়া আমার একপ্রকার ফ্যাশন আর সেখানে আমি?
একলা ঘরে সিয়ার প্রফাইলে চোখ রেখে কথাগুলো ভাবছে আকাশ।রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করার সাথেসাথে প্রফাইল উকি মারে আকাশ।সিয়ার প্রফাইল পিক ও তার কিছু পোস্ট করা পিক এ মগ্ন ও মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে।
– মাএ একদিন,হ্যা মাএ একদিন দেখেছি তাকে। তাতেই এতটা, এতটা ভালোলাগা কেনো কাজ করছে আমার? মেয়েটা কি জাদু জানে নাকি?না,নিষ্চই জাদু জানে আর তা না হলে আমি কেনো এত ওকে নিয়ে ভাবছি? কেনো?বারবার তাকে দেখতেই বা ইচ্ছে হচ্ছে কেনো আমার?এই আকাশ কোনো মেয়েকে নিয়ে ভাবছে এটাও সম্ভব। খুব তো ভেবেছিলাম মেয়ে নামক জিনিসটাই জিবনে আনবো না।আর এখন নিজে খুজে,মেসেজ এ বলে কারো প্রফাইল চেক্ করতে হচ্ছে!একদমই অন্যরকম ব্যপারটা।যকে এই প্রথম আমার ভালোলেগেছে তাকে যে ভাবেই হোক আমার চাইই! ”
সন্দেহহীন হয়েই সব ফেসবুক ফ্রেন্ড দেখতে যায় আকাশ। ফ্রেন্ড লিস্টে সিয়ামকে দেখে যতটা না অবাক হয়েছে তার থেকে বেশি অবাক হয়েছে “টাপুর” কে দেখে।কারন টাপুর ওর কাজিন। একদম বিষ্ময়কর মনে হচ্ছে তার।আকাশ আর সিয়ার পুরোই মেচুয়াল ফ্রেন্ডলিষ্টে রয়েছে টাপুর।
খুশি যেনো উপছে পরছে তার।কারন একদমই বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক টাপুর আর আকাশের।তরিঘরি টাপুরকে ফোন করে আকাশ।দু বার কল দেওয়ার পর ও যখন বিজি বলছে এবার সামান্য রাগ হয় আকাশের।রাগ নিয়েই আরেকবার ফোন করে টাপুরকে।ভেবেছিলো এবারো হয়তো বিজিই বলবে কিন্তু না,
– হ্যা ভাইয়া বলো?
– এই কার সাথে এত কথা বলিস তুই? দুবার ফোন করলাম আর দুবারই ব্যাস্ত!কোন ছেলের সাথে বলছিলি তুই?
– ক..কই না তো।আ..আমি আবার কেনো কোনো ছেলের সাথে কথা ব..লতে যাবো।
বাবার কথায় মুখে হাত দিলাম। চোখমুখ ফোলার কারনটা কিভাবে বলবো আমি?কিভাবে বলবো যে মানুষটা আমায় এভাবে মারলো আমি তার জন্য কেঁদেছি, তার কতগুলো ছবি দেখে রাত কাটিয়েছি।আবার বুকের কোনে চিনচিন ব্যাথার অনুভব।কি বলবো এখন আমি?আর তাছাড়া ওখানকার ঘটনা বাবা কিছুই জানেন না।ইচ্ছে করেই বলতে বারন করেছি বাবাকে।এমনিতেই এক সুতোয় বেধে আছে আমাদের আর চাচ্চুর সম্পর্ক।আরও যদি….
– কি হলো?এরকম নিস্তব্ধ হয়ে গেলে যে?
– আসলে কাল রাতে ঘুমাতে পারিনি।অনেক চেষ্টা করার পর একটার পর ঘুমিয়েছি তাই হয়তো……
বাবা কতটা বিশ্বাস করেছে জানি না তবে মা যে একফোঁটা ও বিশ্বাস করেনি তা মায়ের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে।
– তা কোথায় যোচ্ছো?আর তুমি তো কিছু খাওনি!
– আমার অনেক লেট হয়ে গেছে আমি কলেজের ক্যান্টিনে গিয়ে খেয়ে নেবো।আর এমনিতেও দুদিন কলেজ যাওয়া হয়নি।
কথাটা বলেই বেড়িয়ে পরলাম।করন আর কিছুক্ষণ দাড়ালে হয়তো জেরার মুখে পরতে হতো।বাড়ি থেকে বেড়িয়ে একটা ভ্যান নিয়ে কলেজের উদ্দেশে রওনা হলাম।একটু দেরি হলেও পৌছালাম কলেজে।কলেজের সামনে প্রতিবারের মতন টুসি দাড়িয়ে আছে।রিকশা থেকে নেমে ভারা মিটিয়ে টুসির সামনে গিয়ে দাড়ালাম।আজ ওর মুখে হাসিতে ভরপুর।বুঝলাম না! আজ লেইট তাও এরকম হাসি টেনে রেখেছে মুখে।
– সুয়া তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে!
– কি?
টুসির পেছন থেকে এভাবে কারো এন্টি আশা করিনি।সারপ্রাইজ! আর তাছারা উনি তো…আমি কিছু বলার আগেই টাপুরের পেছন থেকে এন্ট্রি নেওয়া লোকটা বলে উঠলো,