Monday, July 7, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1415



মধুরেণ সমাপয়েৎ পর্ব-০১

0

#মধুরেণ_সমাপয়েৎ
#সূচনা_পর্ব
মুশফিকা রহমান মৈথি

– শাড়ি না পরতে পারলে পরার কি দরকার তাই তো বুঝি না, এখন খোলা শাড়ি নিয়ে র‍্যাম্প ওয়াক করবে নাকি?

সাফওয়ানের কথায় মেজাজ তুঙ্গে উঠে যায় আয়াতের। এই লোকের সমস্যা কি এইটা আজ অবদি বুঝতে পারে না আয়াতের। যখনই কোনো একটা অপ্রীতিকর সিচ্যুয়েশনে পরবে সেইখানে লোকটা হাজির হবে নয়তো উনার সামনেই কোনো না কোনো অপ্রীতিকর সিচ্যুয়েশন ঘটবে। একে হিলে বেঁধে শাড়ির কুচি খুলে গেছে, উপর থেকে এনার বাক্যির শেষ নেই। দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো,
– সাফওয়ান ভাই আসলে কি বলুন তো, আমি বিয়ে থেকে পালানোর সময় ভাবি নি আমাকে ওয়ার্ল্ড রেস চ্যাম্পিয়নশিপে নিজের নামের পতাকা উড়াতে হবে!! আগে জানলে শাড়ি না উসাইন বোল্টের কস্টিউম পড়ে আসতাম।
– মুখ তো কেঁচির মতো চলে, তা তোমার বাবার সামনে মুখটা চালালে হয়তো এভাবে পালাতে হতো না!
– চালিয়েছিলাম, বিনিময়ে বা গালে থাপ্পড় আর সাত দিন রুমে আটকে রেখেছিলো।
– তোমার শাড়ির কুঁচি ঠিক হইলে কি আমরা যাইতে পারি?? তোমার বাবার বডিগার্ডরা আসলো বলে।

আয়াত আর কোনো কথা বললো না, বলে না কথায় কথা বাড়ে। আর এই লোকটার সাথে কথা বলতে গেলে শুধু যে কথায় কথা বাড়বে সেটা নয়, সকাল হয়ে যাবে অথচ তর্ক শেষ হবে না। শেষমেশ দেখা যাবে বাবার বডিগার্ডরা সত্যি চলে আসবে। এখন তাড়াতাড়ি কোনো ট্রান্সপোর্ট ধরে কাজী অফিস যেতে হবে। এক ঘন্টা আগেও আয়াত একরকম ভেবেছিলো কিন্তু পুরো উল্টো কাহিনী ঘটে গেলো, যাকে দু চোখে সহ্য হয় না তার সাথেই এখন পালাতে হচ্ছে।

এক ঘন্টা আগে,
ক্রমাগত ইফাদকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে আয়াত। ফোন ধরা তো দূর, খালি ওয়েটিং বলে যাচ্ছে ফোন অপারেটরের মহিলাটি। হাতে সময় খুব কম, আর চার ঘন্টা পর আয়াতের বিয়ে। একটা বলদের সাথে, রামিম সাহেব অর্থাৎ আয়াতের বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে। অনেকবার রামিম সাহেবকে বুঝাতে চেয়েছে আয়াত কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয় নি। আয়াত রামিম সাহেবকে জানিয়ে দিয়েছে, বিয়ে করলে ইফাদকেই করবে। ও বাদে কাউকে সে বিয়ে করবে না। কিন্তু রামিম সাহেবের এক কথা, উনি বেকার ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিবেন না। দরকার হলে ড্রাইভারের সাথে বিয়ে দিতেও রাজী। ইফাদ গ্রাডুয়েশনের পর বেকার বসে আছে তিন বছর, সারাদিন ক্লাব, পাবে বন্ধুদের সাথে টাকা উড়ানোই ইফাদের একমাত্র কাজ। তার কথা তার বাবার এতো টাকা যে সে সারাজীবন বেকার থাকলেও কিচ্ছু যায় আসবে না। আয়াত এবং ইফাদের রিলেশন প্রায় চার বছর হতে চললো, যতবার ই তাকে বিয়ের কথা বলে সে এড়িয়ে যায়। আয়াত তাকে বলতে বলতে মুখ ব্যাথা করে ফেলেছে অথচ তার কোনো হেলদুল নেই। আজ আয়াতের বিয়ে অথচ ছেলেটার কোনো পাত্তাই নেই। টানা বিশ বার ফোন দেওয়ার পর শেষমেশ ফোনটা তুললো ইফাদ, বিরক্তির সাথে বললো,
– কি ব্যাপার? এতো ফোন দিতে হয়? কথা বলছিলাম তো বেবি।
– রাখো তোমার বেবি, ইফাদ আজকে আমার বিয়ে। তোমার কি কিচ্ছু যায় আসে না? আমি সেদিন ই তোমাকে বলে দিয়েছিলাম বাবা সিরিয়াস। তুমি যদি কিছু না করো এবার সত্যি ই আমাকে হারিয়ে ফেলবে। তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবাসো? ইফাদ এখনো যদি কিছু না করো আর চার ঘন্টা পরে আমার বিয়ে হয়ে যাবে। তখন চাইলেও কিছু করার থাকবে না।
– তুমি এটা এখন বলছো? তুমি ই তো আমার সাথে এতোদিন যোগাযোগ করো নি
– আজ সাত দিন পর আমি আমার ফোন পেয়েছি, তুমিতো একবারও আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করো নি। এখন তোমাকে ডিসিশন নিতে হবে হয় আমাকে এখান থেকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করবে নয়তো আমি ওই বলদকেই বিয়ে করে ফেলবো।
– ঠিক আছে, আমি ব্যবস্থা করছি।

ফোনটা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়লো আয়াত। ভালোবাসা কতোটুকু অসহায় করে তুলতে পারে তার প্রমাণ হাতেনাতে পাচ্ছে। দরজায় কড়া নাড়লে, চোখ মুখ মুছে দরজা খুলে দেয় আয়াত। দরজা খুলতেই তানি ভেতরে ঢুকে। তানি আয়াতের বেস্টি, তানিকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে চোখে পানি ছেড়ে দিলো আয়াত।
– তানি, আমি কি করবো?
– আমি তোকে অনেক আগ থেকেই বলেছি এই ইফাদ ছেলেটা তোকে ঝুলিয়ে দিবে, দেখলি তো?
– ও বললো ব্যবস্থা করছে।
– এখন রেডি হয়ে নে, আমাদের পার্লার যেতে হবে। আন্টি আমাকে পাঠালেন।
– দোস্ত, আমি ওই বলদাকে বিয়ে করবো না।
– বারবার বলদা বলদা কেনো বলছিস, ছেলেটার নাম হাবিব। স্ট্যাবলিসড ভদ্র ছেলে, ইফাদের চেয়ে হাজারো গুন বেটার।
– আমি পারবো না হাবিব টাবিবকে বিয়ে করতে, ইফাদ একটা ব্যবস্থা ঠিক করবে দেখিস।
– দেখা যাক। এখন চল

আধা ঘন্টা পর,
পার্লারে যাবার পর ইফাদের ফোন আসে আয়াতের মোবাইলে। ফোন রিসিভ করতেই ইফাদ জানায়,
– আয়াত, আমি সাফওয়ানকে পাঠাচ্ছি। এখন কোথায় আছো?
– তুমি আসবে না?
– আমি একেবারে কাজী অফিসে যাবো। ওখানে আমার শ্বশুরের কিছু স্বাস্থ্যবান বডিগার্ড আছে। সাফওয়ানকে সন্দেহ করবে না।
– আচ্ছা, আমি গুলশান একের এক পার্লারে আছি। আমি ঠিকানা এস.এম.এস করে দিচ্ছি।

মিনিট পনেরো পর সাফওয়ান এসে হাজির পার্লারের গেটে। বন্ধুত্বের খাতিরে এই জটের মধ্যে সাফওয়ানকেও জড়াতে হলো। আয়াত আর সাফওয়ানের মাঝে ছত্রিশের আকড়া, যদি আয়াত বলে ডান তো সাফওয়ানকে বাম বলতেই হবে। আয়াত যতটা এলোমেলো সাফওয়ান ততোটা গুছানো। যতবার তারা মুখোমুখি হয়েছে ততোবার ই একটা ওয়াল্ড ওয়ারের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অবশেষে তানির সাহায্যে কোনোমতে সাফওয়ান আয়াতকে নিয়ে পালাতে সক্ষম হয়। এখন আসি বর্তমানে।

বর্তমান,
রাত ৮.৩০টা,
মিরপুর ২ এর কাজী অফিসের সামনে বিগত এক ঘন্টা যাবৎ দাঁড়িয়ে আছে সাফওয়ান এবং আয়াত। গুলশান থেকে সরাসরি মিরপুর চলে আসে তারা, যাতে বডিগার্ডদের হাতে না পরতে হয়। অথচ এখনো ইফাদের কোনো খোঁজ নেই। বাহিরের বেঞ্চিতে বসে ঝিম ধরে বসে আসে আয়াত। সাফওয়ান ক্রমান্বয়ে ফোন করে চলেছে ইফাদকে অথচ তার ফোন বেজেই চলেছে, কেউ রিসিভ করছে না। একটা বড় নিশ্বাস ফেলে আয়াতের পাশে গিয়ে বসে সাফওয়ান। মেয়েটার মুখটা চুপসে গেছে, যেখানে কিছুক্ষণ আগেও ঝগড়া যাচ্ছিলো অথচ এখন চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। সারাদিন কিছু পেটে পড়েছে কিনা সন্দেহ। সাফওয়ান পাশে বসতেই বলে উঠে,
– সাফওয়ান ভাই, আমি কি কোনো ভুল করে ফেলেছি?
– কেনো বলোতো?
– এই দেখুন না, বাবা-মার সম্মান জ্বলাঞ্জলি দিয়ে ভালোবাসাকে পেতে চলেছিলাম। কি হলো? সেও আমাকে মাঝ রাস্তায় একা করে দিলো
– আচ্ছা আমিতো কথা বলেছি, উনারা আর আধা ঘন্টা খোলা রাখবেন বলেছেন। আর না হলে কাল বিয়েটা করে নিও। ইফাদকে আমি চিনি, ও ঠিক চলে আসবে।
– শান্তনা দিচ্ছেন?
– উহু, ও আর যাই করুক তোমাকে ঠকাবে না।

সাফওয়ানের কথায় মলিন হাসি হাসে আয়াত। মেয়েটার হাসিটা দেখে সাফওয়ানের হৃদয় কিঞ্চিত কম্পন দিয়ে উঠে। পুনরায় ইফাদকে ফোন দিতে থাকে সাফওয়ান।

রাত ১১টা,
ইফাদের ফোন বন্ধ আসছে, কাজী অফিস বন্ধ। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাফওয়ান আয়াতকে বলে,
– আয়াত আমার মনে হয় তোমার বাড়ি যাওয়া উচিত। তোমার বাবা-মা হয়তো পাগল প্রায় হয়ে তোমাকে খুজছেন।
– আপনি বাড়ি চলে যান, ইফাদ এখনো আসতে পারে।
– পাগলামি করো না, বাড়ি যাও ( খানিকটা রেগে)
– বাবা খুন করে ফেলবেন আমায়, আমার বাবার রাগ সম্পর্কে আপনার ধারণা নেই।
– আচ্ছা, উনি ইফাদকে অপছন্দ কেনো করেন?
– বাবা ড্রাইভারের সাথেও আমাকে বিয়ে দিতে রাজী কিন্তু বেকার ছেলেকে নিজের মেয়ে জামাই সে কিছুতেই করবেন না। মার জন্য টেনশন হচ্ছে না জানি চিন্তায় বেহুশ হয়ে যাচ্ছে।
– তাহলে এখন কোথায় যাবে?
– জানি না, তানির বাসায় যেতে পারবো না। রাতে ওর অহেতুক একটা ঝামেলা হবে, এর থেকে আমি একটা হোটেলে থেকে নিবো। দেখি সকালে কি করা যায়।
– আর ইউ শিউর?
– হুম।

একটা সস্তা হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারা। এতো রাতে কোনো ভালো হোটেলে যাবার মতো ওয়ে নেই সাথে টাকাও। শুধু যাতায়াতের টাকা, ভোটার আইডি আর কিছু ডকুমেন্টস বাদে আর কোনো টাকা নিয়ে বের হয় নি আয়াত। মনটা খচখচ করছে সাফওয়ানের; মেয়েটাকে এভাবে হোটেলে একা ফেলে যেতেও মন সায় দিচ্ছে না তার। হোটেলের ভেতর যেতে নিলেই সাফওয়ান হাত টেনে ধরে আয়াতের। পিছনে ফিরে চোখে চোখ রাখতেই দৃঢ় কন্ঠে সাফওয়ান বলে উঠে,
– আমি ব্যাচেলর থাকি, এক রুমের চিলেকোঠা। কিন্তু এই হোটেলের থেকে মাচ মাচ বেটার। ইফ ইউ ওয়ান্ট ইউ ক্যান কাম উইথ মি। আমি নিচে বিছানা করে শুতে পারবো। এসব হোটেলে থাকাটা সুবিধার হবে না। প্লিজ কাম
– না না, একজন ছেলের সাথে রাতে আমি থাকতে পারবো না।

আয়াতের অস্বস্তি দেখে শান্ত গলায় সাফওয়ান বলে,
– ইউ ক্যান ট্রাস্ট মি। দরকার হলে আমি ছাদেই থাকবো। শুধু ল্যান্ড লর্ডকে নিয়ে একটু সমস্যা, আই উইল হ্যান্ডেল। রাত অনেক হয়েছে, বাড়ি পৌছাতে পৌছাতে সাড়ে বারো তো বাজবেই। ঐ মোটা ষাড় ঘুমিয়ে যাবে ততক্ষণে। চলো, প্লিজ

অবশেষে আয়াত রাজী হলো, সোডিয়ামের লাইটে পাশাপাশি হেটে চলেছে আয়াত-সাফওয়ান। দুজনের গন্তব্য এক কিন্তু লক্ষ্য আলাদা। রেললাইনের দুটো আলাদা লোহার লাইনের মতো পাশাপাশি হেটে যাচ্ছে তারা। জানে না কেউই আগামীতে কি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে! রাস্তার পাশের খড়কুটোহীন মানুষেরা বস্তা পেতে ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে তো আরেকদল মানুষ রাত জেগে চেঁচিয়ে সবাইকে শান্তনা দিচ্ছে, “ঘুমিয়ে পড়ো আমরা জেগে আছি”। রিক্সা না পেয়ে প্রচুর হাটতে হচ্ছে তাদের। হিল পড়ে পায়ে ঠসা পড়ে গেছে আয়াতের। আর না পেরে হিল খুলে ফেললো সে, নিচে জিন্স থাকায় শাড়িটা খানিকটা উপরে তুলে নিলো। হঠাৎ পেছন থেকে দুজন টহল পুলিশের বাঁশির শব্দ এবং চিৎকারে ভয়ে জমে গেলো তারা। না জানি কি বিপদ আসতে চলেছে। পুলিশদের একজন চেঁচিয়ে যাচ্ছে,
– এই এতো রাতে কি আকাম করতেছো, এই দাঁড়াও?

ভয়ে সাফওয়ানের ডান হাত আকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে পড়লো আয়াত। ধীর গলায় বলতে লাগলো,
– এখন কি হবে? সারা রাত থানায় কাঁটাবো নাকি?
– কিচ্ছু হবে না, তুমি চুপ থাকবে তাহলেই হবে।

পুলিশেরা তাদের কাছে এসেই……

চলবে।

বাদলে ঘেরা আকাশ পর্ব-৭+৮

0

#বাদলে_ঘেরা_আকাশ
#Part_7_and_8 ( last part )
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha

মনে হচ্ছে আকাশ টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ছে বর্ষার উপর। বর্ষা কল্পনাও করেনি এমন কিছু দেখবে। ছবির দিক থেকে একবার চোখ দুটো সরিয়ে আকাশের দিকে তাকায়। আকাশের চোখ দুটো প্রখর নীরব। নিরবতায় ভয় লাগছে বর্ষার। ঝড় আসার পূর্বে যেমন সব কিছু নিরব থমথমে হয়ে যায় এখন ঠিক সেই পরিস্থিতি বিরাজমান ঘরটাতে।
মনে হচ্ছে এখনি কোন বড় সড় ঝর আসবে। আর দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে যাবে সব।

বর্ষা আবার তার চোখের দৃষ্টি ছোট ছবিটাতে আবদ্ধ করে। ছবিটা তার বাবার। অনেক পুরনো সেই ছবি তখন সম্পুর্ণ ইয়াং তিনি৷ ছবিটিতে বর্ষার বাবার মুখ লাল কালি দিয়ে ক্রস চিহ্ন করা। বর্ষা অবাক হওয়ার সর্বোচ্চ তুঙ্গে। তার বাবার ছবি কেন এখানে আসবে? আর কেনই বা এমন লাল দাগ এঁকে রাখবে ছবিতে। এতো পুরনো ছবি কোথায় বা পেলো?

আকাশ একটু সামনে এগিয়ে বড় ছবিটিতে নরম ভাবে হাত বুলিয়ে
‘এটা আমার ফুপু আঁখি যুবায়েরের ছবি। আমার ফুপু বললে ভুল হবে আমার আরেক মা। আমার মায়ের থেকে বেশি ভালোবাসতো উনি আমায়৷ আমার গোসল, খাওয়া,ঘুম সব ছিলো আমার ফুপুর সাথে ফুপুর হাতে। আমিও ফুপু ছাড়া কিছু বুঝতাম না। মা বলেই ডাকতাম। ছোট ছিলাম তাই হয়তো বেশি আদরের ফলে এমন করতাম। ফুপু না খাইয়ে দিলে খেতাম না এমনকি আম্মু খাইয়ে দিলেও না।

আকাশ একটু চুপ থেকে
‘ আমার নামটাও ফুপুর দেওয়া। আকাশ। ( আবার একটু থেমে) এতো বিশালতার মাঝে আমি হঠাৎ আমার ফুপুকে হাড়িয়ে ফেললাম।

নিশ্চয়ই ভাবছো আমি তোমায় কেন এসব বলছি আর তোমার বাবার ছবিই বা এখানে এই ভাবে কেন!
তোমার বাবা আমার ফুপুকে বাঁচতে দেয়নি।
তোমার বাবার ছবি এইজন্য এখানে।

বর্ষা হতবাক হয়ে
‘ কি বলছো এইসব আকাশ।
‘ তোমার বাবা আমার ফুপুর খুনি। এক হাস্যজ্জল পরিবার ছিলো আমার। দাদা, ফুপু আব্বু ,আম্মু আমি,আফিফ। কতো আনন্দে দিন পাড় করছিলাম আমরা। কিন্তু তোমার বাবার জন্য সেই আনন্দ বেশিদিন টিকেনি।

তোমার বাবা আমার ফুপুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে। সন্তান রেখে স্ত্রী মারা গেছে শুনে ফুপুও মায়ায় পড়ে যায় তোমার আব্বুর, ভালোবেসে ফেলে ওই মানুষ রুপি জানোয়ারকে। একসময় আমার ফুপু জানতে পারে ফুপু প্রেগন্যান্ট। তোমার বাবার কাছে গেলে উনি তোমাদের দোহাই দিয়ে ফিরিয়ে দেয় আমার ফুপুকে। বলে দেয় এবরশন করিয়ে নিতে। আবার বিয়ে করলে নাকি তোমাদের কষ্ট হবে। ফুপু অনেক বলেছিলো তোমাদের মায়ের আদর দিয়ে বড় করবে। কিন্তু তোমার বাবা অপমান করে তাড়িয়ে দেয় ফুপুকে। আর কোন উপায় না পেয়ে ফুপু আম্মুকে সব বলে, আম্মু আব্বুকে বলে আর আব্বু আমার দাদাকে।

আকাশ থমকে যায়। শরীরের শিরায় শিরায় মনে হচ্ছে রক্তের বদলে আগুন প্রবাহিত হচ্ছে। সারা শরীর জ্বালা করছে
বর্ষা কান্না করছে এই সব শুনে।
‘ তারপর!

আকাশ দগ্ধ চোখে
‘ দাদু ফুপুকে মেরেছিলো কেন এমন করলো তাই। সব শেষে আব্বু আর দাদু তোমার বাবার কাছে যায়। তোমার বাবা স্পষ্ট বলে দেয় ওটা উনার বাচ্চা নয়।

আব্বু আর দাদা চুপ করে এসে ড্রয়িংরুমে বসে। ফুপু এসে দাদুকে জিজ্ঞেস করে কি বলেছে নাইম।
দাদু চুপ করে ছিলো কোন কথা বলছে না। আব্বু যখন দাদুকে ধরতে যাবে তখনি দাদু আমার সামনে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। দাদুকে হাসপাতালে নিয়ে কোন কাজ হয়নি
কারন দাদুর ডেথ নাকি বাড়িতেই হয়ে গিয়েছিলো। সবাই বাড়ি এসে ফুপুকে ডাকলে ফুপুর কোন সারাশব্দ পাওয়া যায় না। সবাই দৌড়ে ফুপুর রুমের কাছে এসে দেখি ফুপুর রুম ভিতর থেকে লক করা। অনেক ডাকাডাকির পরও যখন ফুপু দরজা খুলে না তখনই আব্বু দারোয়ানকে ডেকে আনে দুজন মেলে দরজা ভাঙে…..

বর্ষার শরীর কাঁপছে। সে স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। হাত পা থরথর করছে। কাপাকাপা কন্ঠে
‘ তারপর

আকাশ রাগ আর ক্রোধে ভরা চাহনিতে তাকায় বর্ষার দিকে। তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে

‘ দরজা ভাঙতেই দেখি ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে ফুপু। সবাই দৌড়ে গিয়ে ফুপুকে ধরে। আমি নড়তে পারছিলাম না একটুও। নড়ার শক্তি পাচ্ছিলাম না। দাদার জন্য কান্না করে আর চোখ দিয়ে পানিও বের হচ্ছিলো না। সবাই আমাকে অনেক কাঁদানোর চেষ্টা করেছিলো জানো কিন্তু কেউ পারেনি।

আকাশের গলা শুকিয়ে যায়। একটু ঢোক গিলে
‘ দাদা আর ফুপুকে একসাথে কবর দিয়েছি। ফুপুর রুম থেকে আমি প্রতিদিন কান্নার আওয়াজ শুনতে পেতাম। প্রতিদিন ফুপু আমায় বলতো আকাশ আয় তোকে আমি ঘুম পাড়িয়ে দেই। তাই প্রতিদিন রাতে আমি ফুপুর রুমে যেতাম। আম্মুরা বুঝতে পারছিলো আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে তাই ওই রুমে যেতে দিতো না। কেউ যাতে ওই রুমে যেতে না পারে তাই আমিই ছোট করে লিখে রেখেছিলাম। এই রুমে কেউ প্রবেশ করবেন না। শুধু আমিই লুকিয়ে লুকিয়ে আসতাম রুমে।

আম্মু আব্বু দুজনই জানে তোমায় কেন বিয়ে করেছি আমি। ওরা না করেছিলো তোমার সাথে এমন করতে কিন্ত আমি যে ওয়াদা করেছিলাম ফুপুর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তোমার বাবাকে আমি ছাড়বো না। উনি আমার পরিবারের সুখ শান্তি সব নষ্ট করে দিয়েছিলো। আমি উনার সুখ শান্তি নষ্ট করবো।

সেই কাজিনের মাধ্যমে জানতে পারি তুমি তার সাথে ভার্সিটিতে পড়ো। আর তার মাধ্যমেই তোমার সাথে পরিচয়। প্রেমের অভিনয়, বিয়ে সবই ছিলো অভিনয় কিন্তু মাঝখান থেকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম তোমায়। কিন্তু তোমার থেকে আমি আমার ফুপুকে বেশি ভালোবাসি। ফুপুর কথা মনে হতেই তোমার প্রতি আমার ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই আসেনা। আমার ফুপুর যেই অবস্থা করেছে তোমার বাবা আমিও ঠিক তেমন অবস্থা করবো তোমার ভেবেছিলাম কিন্তু তোমায় ভালোবেসে বিয়ে করে ফেললাম। কিন্তু তুমি শাস্তি পেতে তৈরি হয়ে যাও। তোমার বাবা এখন বুঝবে আমরা কেমন অবস্থায় ছিলাম।

বর্ষা ফ্লোরে বসে পড়ে কান্না করে
‘ মিথ্যে সব মিথ্যে। আমার আব্বু এমন হতে পারেনা। তোমাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। যে লোকটা তার মেয়েদেরকে এতো ভালোবেসে মানুষ করতে পারে। সে অন্য একটা মেয়ের সাথে এমন করতে পারে না।

বর্ষার কথা শুনে গর্জন করে উঠে আকাশ। হাটু গেড়ে বসে এক হাত দিয়ে বর্ষার মুখে চাপ দিয়ে ধরে

‘ শাট আপ জাস্ট শাট আপ।

আকাশ একটা চেয়ার লাথি মেরে ফেলে দিয়ে

‘ যে রাগ আমি পুষে এসেছি এতো গুলো বছর। তা আমি কমাবার চেষ্টা করেছিলাম। এতো কিছুর পরও আমি মানা করেছিলাম এই রুমে আসতে। কেন আসলে? আর এই শাস্তি এখন তোমার পেতেই হবে।

‘ আকাশ কেন করছো আমার সাথে এমন? বাবা এসব করতে পারে না। যদিও বা করে থাকে তাতে আমার কি দোষ বলো আমি তো শুধু তোমায় ভালোবেসেছি। ( কান্নায় কথা বলতে পারছে না বর্ষা।
‘ আমার ফুপুও শুধু ভালোবেসেছিলো। আর তুমি ওই লোকের মেয়ে এটাই তোমার দোষ। তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস করো তাহলেই সব জানতে পারবে মুখোসের পিছনে কি লুকিয়ে আছে। আমার বাবা মা তোমায় তোমার ফেমিলিকে ক্ষমা করে দিতে পারে কিন্তু আমি করবো না।

দূর থেকে আযানের শব্দ ভেসে আসছে
আকাশ বর্ষাকে টেনে তুলে
‘ যাও কাপর-চোপর গুছানো শুরু করো। এই রাতই ছিলো তোমার শেষ রাত আকাশ যুবায়েরের কাছে। ডিভোর্সের সব ব্যবস্থা সকালে উকিলের সাথে কথা বলে করবো।

আকাশ টেনে রুম থেকে বের করে বর্ষাকে। নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে ড্রয়ার থেকে সব কাপড় ছুড়ে ফেলতে থাকে বর্ষার উপর।
‘ নাও প্যাক করা শুরু করো।

বর্ষা দৌড়ে গিয়ে আকাশকে ঝাপ্টে ধরে
‘ তোমার পায়ে ধরি আকাশ আমার সাথে এমন করো না। আমি তোমায় ভালোবাসি তোমায় ছাড়া থাকতে পারবো না। এই বাড়িতে আমি কাজের মেয়ে হয়ে থাকবো তবু একটু জায়গা দাও আমায়।

আকাশ তৃপ্তির হাসি হেসে
‘ আমার ফুপুও নিশ্চয়ই এই ভাবে ভিক্ষা চেয়েছিলো তোমার বাবার কাছে।
.
.
.

কিছুদিন পর

বর্ষার বাবা নাইম সাহেব বসে আছে আকাশ যুবায়েরের বাড়ির ড্রয়িংরুমে। পাশেই চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে আশিক যুবায়ের।

আকাশ ডান হাতে সাদা এপ্রোন নিয়ে সিড়ি দিয়ে উপর থেকে নামতে নামতে
‘ আব্বু এখনো এই লোক যায়নি?

আকাশের কথা শুনে আশিক সাহেব
‘ আকাশ বৌমা প্রেগন্যান্ট, মা হতে যাচ্ছে। তুই আর রাগ নিয়ে বসে থাকিস না বাবা। বর্ষাকে নিয়ে আয় বাড়ি।

নাইম সাহেব দাঁড়িয়ে
‘ বাবা তুমি আমার মেয়েটার সাথে এমন করো না। আমার মা মরা মেয়ে অনেক কষ্টে ওকে মানুষ করেছি। ও দিন দিন অনেক অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। তোমার প্রয়োজন এখন ওর।

আকাশ বিদ্রুপাত্মক একটা হাসি দিয়ে
‘ যা হচ্ছে এই গুলো আপনাদের পাওনা। আব্বু উনাকে চলে যেতে বলো নয়তো আমার হাত উঠে যাবে।

বর্ষার প্রেগন্যান্সির আট মাস চলছে। অনেক কষ্ট হয় এখন চলাফেরা।আকাশের সাথে অনেক যোগাযোগ করতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি।

একটু একটু করে হেটে কিচেনে গিয়ে চা বানিয়ে নিয়ে যায় নাইম সাহেবের রুমে।
নাইম সাহেব ইজি চেয়ারে বসে আছে চোখ বন্ধ করে।

বর্ষা ধীরে ডেকে
‘ আব্বু তোমার চা।

নাইম সাহেব চোখ খুলে
‘ তোকে কে বলেছে চা নিয়ে আসতে এখন এতো নড়াচড়া করিস না মা।

বর্ষা নাইম সাহেবের চোখের দিকে মায়া নিয়ে তাকিয়ে
‘ হুম

বর্ষা ঘুরে চলে যেতে নিলেই
‘ বর্ষা
‘ হুম আব্বু
নাইম সাহেব বর্ষার হাত ধরে
‘ মারে আমায় ক্ষমা করে দিস। আমার জন্য তোকে এসব পোহাতে হচ্ছে।
‘ এসব বলো না বাবা। ঘুমিয়ে যাও তাড়াতাড়ি
‘ হুম

অনেক বেলা হয়ে গেছে তনিমা নাস্তা বানিয়েছে। বর্ষা খাবার পরিবেশন করছে
‘ তনিমা আব্বু এখনো উঠেনি?
‘ না আপু আমি তো ডেকেছি দুবার উঠেনি।
‘ আব্বু তো এতক্ষণ ঘুমায় না। দাঁড়া আমি ডেকে নিয়ে আসছি। এক সাথে না খেলে ভালো লাগে না।

বর্ষা আব্বু বলে কয়েকটা ডাক দেয় নাইম সাহেবের কোন উত্তর না পেয়ে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে দেখে নাইম সাহেব এখনো ইজি চেয়ারেই বসে আছে রাতে হয়তো এখানেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।
বর্ষা নাইম সাহেবের চশমাটা খুলতে নিলেই নাইম সাহেবের হাত পড়ে যায় নিচে মাথা পড়ে যেতে নিলেই আব্বু বলে জোরে চিৎকার দিয়ে ধরে ফেলে।
তনিমা দৌড়ে আসে বর্ষার চিৎকার শুনে। দারোয়ানও ভিতরে এসে

‘তনিমা মা কি হয়েছে বর্ষা মা চিৎকার করলো কেন?

দারোয়ান নিজামুদ্দিন ভালো করে লক্ষ করে দেখে বর্ষা জড়িয়ে ধরে আছে নাইম সাহেবকে। দারোয়ান কাছে গিয়ে নাইম সাহেবের বুকে মাথা রেখে বলে উঠে
‘ মারে সাহেব আর বেঁচে নেই। রাতেই ও আমার কাছে গিয়ে বলছিলো নিজামুদ্দিন আমার কিছু হলে আমার মেয়ে দুইটারে দেখে রাখিস।

কান্না করছে নিজামুদ্দিন। তনিমা চিৎকার করে কান্না করছে। বর্ষা নাইম সাহেবের মুখখানিতে একবার হাত বুলিতে দিলো।

আফিফ, আশিক সাহেব মনিরা বেগম এসেছে কিন্তু আকাশ আসেনি। নাইম সাহেবকে কবর দেওয়া হয়ে গিয়েছে। আশিক সাহেব বর্ষাকে নিয়ে যেতে চাইলে
‘ অনেক তো হলো বাবা এখন একটু নিজের মতো বাচঁতে চাই। তনিমাটার আর আমি ছাড়া কেউ নেই।
‘কিন্তু বর্ষা মা তোর এই অবস্থায় এখানে থাকা রিস্ক। কখন কি হয় না হয়।
‘ আল্লাহ আছে বাবা কিছু হবে না আমার আকাশকে বলে দিবেন বাচ্চা হওয়ার পরই ওকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবো আমি। ওর মনের ইচ্ছেতো পূরণ হয়েছে ওকে জানিয়ে দিয়েন। অবশ্য জেনে গেছে এটা জানি। তবে জানিয়ে দিবেন আমিও আর ওর পথের কাটা নই। মনিরা বেগম কান্না করছে বর্ষাকে ধরে।

.
.
.
বর্ষা তনিমা কে ধরে শুয়ে আছে হসপিটালের বেডে। তনিমা কান্না করছে যেখানে বর্ষার কান্না করার কথা ছিলো
‘ আরে পাগলি মেয়ে কিছু হবে না আমার। কান্না করছিস কেন? আমি জানি আমি ছাড়া তোর কেউ নেই। তাই এতো তাড়াতাড়ি তোকে ছেড়ে যাচ্ছিনা। চিন্তা করিস না।

বাচ্চা নরমালে হবে না তাই সিজার করা হবে। দুজন নার্স এসেছে বর্ষাকে ওটিতে নিয়ে যাবার জন্য৷

ওটিতে নিয়ে গিয়েছে বর্ষাকে তনিমা আফিফ আর তার বাবা মাকেও বলেছে আসতে ওরা সবাই এসেছে। আকাশ আগে থেকেই হসপিটালে ছিলো। আকাশ যেই হসপিটালে আছে সেই হসপিটালেই বর্ষাকে নিয়ে আসা হয়েছে
কিছুক্ষন পর কান্নার আওয়াজ শুনতে পায় সবাই তনিমা খুশিতে লাফিয়ে উঠে। আফিফের মুখেও খুশি দেখার মতো। একজন নার্স বাচ্চাকে এনে তনিমার কোলে দিলো। তনিমা কান্না করছে বাচ্চাকে দেখে। ছেলে বাবু হয়েছে। মনিরা বেগম খুশিতে তার নাতিকে তনিমার কোল থেকে নিজের কোলে তুলে নেয়। আফিফ দৌড়ে গিয়ে আকাশকে জোর করে নিয়ে আসে ওটির সামনে আকাশ আসতেই তনিমা সরে যায় রাগে৷

মনিরা বেগম খুশিতে
‘ আকাশ দেখ তোর বাচ্চা ঠিক তোর মতো হয়েছে। ছোট্ট আকাশ আমাদের।

আকাশ কোলে তুলে নেয় বাচ্চাকে। কি এক অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে ভিতরে। এই সুখ যেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখ। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আকাশের চোখ দিয়ে অজান্তেই একটু পানি বের হয়ে গেলো।

এমন সময় ওটি ওটি থেকে বের করছে অবচেতন বর্ষাকে। হাতে সেলাইন লাগানো। ওই ঘটানার পর এই প্রথম আকাশ বর্ষাকে দেখছে। মেয়েটা আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়েছে। আকাশের খুব ইচ্ছে হচ্ছে বর্ষাকে একটু ছুঁয়ে দিতে কিন্তু তার আগেই বর্ষাকে নিয়ে যায় নার্সরা কেবিনে দেওয়ার জন্য। আকাশ ছেলের কপালে একটা চুমি এঁকে দিয়ে বাচ্চাকে আফিফের কোলে দিয়ে নিজের কেবিনে চলে যায় আকাশ।

আকাশের এই একটা বছর আনন্দে কাটেনি। প্রতিটিদিন সে কেঁদেছে বর্ষার জন্য । আকাশও জানে বর্ষার সাথে সে অন্যায় করেছে কিন্তু প্রতিশোধ আর প্রতিশ্রুতি তাকে বর্ষার কাছে যেতে দেয়নি। বর্ষাকে শাস্তি দিয়ে আকাশও একা কেঁদেছে।

মনিরা বেগম ক্লান্ত শরীর নিয়ে হতাশা হয়ে আকাশের রুমে গিয়ে দেখে আকাশ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। মনিরা বেগম আকাশের পাশে বসে

‘ আকাশ আজকে এক মাস হলো তোর বাচ্চা হয়েছে। বাচ্চাকে দেখতে গেলি না। বর্ষাকে বলেছিলা তনিমা সহ এখানে চলে আসতে সেও আসলো না হাসপাতাল থেকেই চলে গিয়েছে বাবার বাড়ি। বাবা প্রতিশোধ মানুষকে ভালো থাকতে দেয়না। তাই দেখ আজকে তুই প্রতিশোধ নিয়েও ভালো নেই। তোর মনে শান্তি নেই। মানুষকে ক্ষমা করতে শেখ। ক্ষমার মাঝে এক অপুর্ব শান্তি আছে। আর বর্ষার তো কোনো দোষ ছিলো না। কার শাস্তি তুই কাকে দিলি বাবা ভেবে দেখ। ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো। তোর ছেলেরও তো কোনো দোষ নেই ওকে কেন বাবার আদর থেকে বঞ্চিত করছিস?

আকাশ এবার মনিরা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। আকাশের বুকেও যে ভীষণ ব্যাথা।

‘ যা বাবা বর্ষার কাছে যা ওকে ফিরিয়ে নিয়ে আয়। আর দেরি করিস না।

আকাশ ছুটছে তার বর্ষার কাছে। আজকে ক্ষমা চেয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে তার বর্ষাকে।

অনেকক্ষণ ধরে ড্রয়িংরুমে বসে আছে আকাশ কিন্তু বর্ষা আসছে না। ঘন্টাখানেক পর বর্ষা এসে
‘ সরি একটু দেরি হলো বাচ্চাকে ঘুম পাড়াচ্ছিলাম তো।

আকাশ বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে৷ বর্ষার সৌন্দর্য দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। মা হওয়ার জন্য হয়তো। বর্ষার মুখে কোন ক্লান্তির ছাপ নেই

‘ আকাশ

বর্ষার ডাকে চোখ নামায় আকাশ

‘ কেমন আছো বর্ষা?
‘ খারাপ দেখতে চেয়েছিলে কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছেই ভালোই আছি ।
‘ আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে আমার ছেলেকে নিয়ে ফিরে চলো বর্ষা। আমি অনেক অন্যায় করেছি আমি জানি কিন্তু বিশ্বাস করো আমিও ভালো ছিলাম না।

‘ তোমাকে আমি ক্ষমা অনেক আগেই করে দিয়েছি আকাশ। তবে হ্যা তোমার ছেলে না ও শুধু আমার একার ছেলে। আয়াতের উপর তোমার কোন অধিকার নেই। চলে যাও আকাশ আমি ফিরে যাবো এই অপেক্ষায় আর থেকো না।

‘ একটি বারের জন্য ফিরে চলো বর্ষা

‘ আমি এখন শুধু আমার ছেলের জন্য বাঁচবো আকাশ। আমার ভালোবাসাকে তো তুমি মেরেই ফেলেছো।
আর যাওয়ার আগে শুনে যাও যার শাস্তি তুমি আমার বাবাকে আর আমাকে দিয়েছো সেই গুনাহ আমার বাবা করেই নি। আব্বুর ডায়েরি পড়ে জেনেছিলাম তাও আব্বু বলেনি কিছু। ওরা যমজ ভাই ছিলো। নাইম আর ফাহিম। আমার ফাহিম চাচ্চু তোমার ফুপুর সাথে অপরাধ করেছিলো আমার আব্বু নয়। ফাহিম চাচ্চু আব্বুর নাম করে এসব ব্লান্ডার করে বেড়াতো। তখন নতুন নতুন আম্মু মারা গিয়েছিলো আমাদের নিয়ে আব্বু দেশের বাহিরে ছিলো। আমরা যখন দেশে আসি আব্বু লোকের মাধ্যমে জানে ফাহিম চাচ্চু এসব করেছে তারপর উনাকে আব্বু বাসা থেকে বের করে দেয় উনার সম্পত্তি দিয়ে। আব্বু যদি তোমাদের আগে চিনতো তাহলে আমাকে নিশ্চয়ই বিয়ে দিতো না তোমার কাছে।

আকাশ বাকরুদ্ধ হয়ে যায় কি বলছে এসব বর্ষা
‘ আমায় আগে বলোনি কেন বর্ষা?

‘ আগে বললে কি হতো আকাশ? আমার চাচ্চু তো আমার রক্তই। তখন বলতে তোমার চাচ্চু তো এমন করেছে তার শাস্তি তুমিই পাবে। মাঝখান থেকে দেখো আমার আব্বু চলে গেলো আমাদের এতিম করে। আর কেউ রইলো না আকাশ আমাদের ছায়া হয়ে। ( কান্না সামলিয়ে)

আমার বাবা আমার আদর্শ। আমি জানতাম আমার বাবা এমন কিছু করতে পারে না। তোমার মতো আমার বাবার মৃত্যুর জন্য আমি তোমাকে দায়ী করবো না। এটা আমার ভাগ্য।
তুমি ভালো থেকো আকাশ

আকাশ বেড়িয়ে পড়ে বর্ষার বাড়ি থেকে অঝোরে কান্না করছে সে। কি করলো এটা আকাশ? মাফ চাইলেই কি আর সব কিছু ঠিক হবে? মাফ কি ভাবেই বা চাইবে বর্ষা মাফ করে দিলেও তো সে নিজেকে মাফ করতে পারবে না

🍁🍁🍁পাঁচ বছর পর 🍂🍂🍂

তনিমা তোর হাজবেন্ডকে বল তার ভাইকে বলতে আমি ফিরবো না কিছুতেই। এমন ভুলগুল যেন না শেখায় আমার ছেলেকে।

‘ আপু আফিফ তো বলেই সব সময় কিন্তু আকাশ ভাইয়া কার কথা শোনে? আকাশ ভাইয়া তো আকাশ ভাইয়াই।

তনিমা আর আফিফের বিয়ে হলো দুই বছর। কিন্তু এরপরেও বর্ষার মন গলাতে পারেনি আকাশ। তনিমা আফিফও কম চেষ্টা করেনি বর্ষার রাগ ভাঙাতে। আকাশ প্রতিদিন এসে অনেক রাত অব্দি থাকে কখনো থেকে যায় রাতে আয়াতের সাথে। কিন্তু বর্ষার দিক থেকে কোন সারাশব্দ পায় না।

আকাশ আয়াতকে কোলে নিয়ে

‘ আয়াত তোমার আম্মুকে বলো একটা বিশ্বস্ত কাজের ছেলে তোমাদের ভীষণ প্রয়োজন। আমাকে যাতে রেখে দেয়।

আয়াত কুটিকুটি করে হেসে
‘ পাপ্পা কি বলো তুমি না ডাক্তার?
‘ হ্যাঁ বাপ কিন্তু তোর মা তো একজনকেও রাখতে চাইছে না ডক্তার হোক বা কাজের ছেলে।

আয়াত আবার হাসছে। ছেলের হাসি দেখে বর্ষা মুখ আড়াল করে হাসছে।

বর্ষা এক কাপ চা তনিমাকে দিয়ে
‘ তনিমা এটা তোর ভাইয়াকে দিয়ে আয়।

‘ আপু আমি বুঝিনা সবই ঠিক আছে তোদের কিন্তু তুই ভাইয়ার সাথে কথা বলিস না কেন।

বর্ষা দীর্ঘশ্বাস ফেলে
‘ আমি ওকে ভালোবাসি তনিমা। ও যেই ভুলটা করেছে আমি সেটা করতে চাই না। তাই ওকে দূরে সরিয়ে দিইনি। আয়াতকেও তার বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করতে পারিনা আমার জন্য ।

‘ তাহলে কাছে টেনে নিচ্ছিস না কেন ভাইয়াকে?

একটু চুপ থেকে

‘ জানি না। ও প্রতিদিন ক্ষমা চায় আমার কাছে সেটা আমার ভালো লাগে।

হঠাৎ আফিফ এসে
‘ কিন্তু ভাবি আর চাইবে না। আমার স্মার্ট ফোনে আপনার সব কথা রেকর্ড হয়ে গিয়েছে আর তা এখন ভাইয়াকে শোনাবো হিহিহি।

‘ আফিফ ভালো হবেনা কিন্তু ফোন দাও আমাকে।
আফিফ ভোঁ দৌড় বর্ষা জানে সে পারবে না তাই আর কথা বাড়ায়নি।

বর্ষা তার রুমে আয়াতের কাপড় গোছাচ্ছিলো। হঠাৎ পিছন থেকে আকাশ জড়িয়ে ধরে বর্ষাকে। বর্ষা কেঁপে ওঠে আকাশের ছোঁয়া পেয়ে। আফিফ হয়তো ফোনে রেকর্ড করা সব শুনিয়েছে আকাশকে তাই এতো সাহস নিয়ে এসেছে বর্ষার কাছে। নাহয় এতো গুলো বছরের মাঝে বর্ষাকে ছোঁয়ার সাহস করেনি। বর্ষার ইচ্ছে করছে না আজ আকাশকে বাধা দিতে। বর্ষার এখন মনে হচ্ছে ” বাদলে ঘেরা আকাশ ” বর্ষাকে আকাশের দিকে ঘুরিয়ে জড়িয়ে ধরতেই আয়াত এসে

‘ পাপ্পা তোমাদেল কি আড়ি শেষ হয়ে গিয়েছে?

বর্ষা লজ্জায় পড়ে যায়। কাপড় ঠিক করে চুপ করে বের হয়ে যায় রুম থেকে। আকাশ আয়াতকে কোলে তুলে গালে একটা চুমু দিয়ে। চলো এখন আম্মুর চুমু খাবো।

আয়াত হো হো করে হেসে উঠে আকাশ আয়াতকে নিয়ে বর্ষার পিছন পিছন রুম থেকে বের হয়।

সমাপ্ত

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

বাদলে ঘেরা আকাশ পর্ব-০৬

0

#বাদলে_ঘেরা_আকাশ
#Part_6_
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha

আস্তে আস্তে নিচে নামতে নিলেই বর্ষা ওই রুমের সামনে থেমে যায় যেখানে আকাশ যেতে মানা করেছিলো। ভিতর থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। আর এই শব্দ আকাশের। বর্ষা ভয় পেয়ে যায়। আকাশের কিছু হলো না তো? আকাশ এই ভাবে কান্না করছে কেন? বর্ষা দরজা খুলতে নিলেই দেখে দরজা ভিতর থেকে লক করা। বর্ষা আর কিছু না ভেবে আস্তে করে আকাশ বলে ডাক দেয়। কোন পরিবর্তন না হওয়ায় আবার আকাশ বলে ডাক দেয়। তিন ডাকের মাথায় সব নিস্তব্ধ হয়ে যায়। কান্নার আওয়াজ আর নেই। বর্ষা দরজায় ধাক্কা দিয়ে আবার আকাশ বলে ডাক দিতেই আকাশ দরজা খুলে রক্তিম চোখ নিয়ে দাঁড়ায় দরজায়। মনে হচ্ছে ডাক দিয়ে বর্ষা বিশাল অপরাধ করে ফেলেছে। বর্ষা আকাশের চোখ দেখে ভয় পেয়ে যায়। কান্নার ফলে চোখ এমনিতেই ফুলে লাল হয়ে গিয়েছে তার সাথে বিদ্রোহী রাগ নিয়ে তাকানোর ফলে চোখ ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। বর্ষা আকাশের তাকিয়ে থাকা দেখে ভয়ে কিছু না বলে নিচে তাকায়। আকাশ কিছু না বলে দরজা লক করে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।

বর্ষা এখনো তাকিয়ে আছে নিচে। এতো অদ্ভুত সব কেন ঘটছে বর্ষার সাথে? আকাশেরই বা কি হয়েছিলো কেন কান্না করছিলো সে? আকাশ কি তাহলে এবনরমাল? এবনরমাল কি ভাবে হবে? বাকি সবই তো সে নরমাল ভাবে করে। সবার সাথেই সে ভালো কিন্তু বর্ষার সাথে কেন করছে এমন আকাশ? আর এই রুমের ভিতরেই বা কি আছে? এতো এতো প্রশ্মের জবাব বর্ষা কোথায় পাবে কার কাছে গেলে পাবে?বর্ষার চোখ থেকে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।

রুমে গিয়ে আকাশ ঘুমিয়ে গেছে। ঘুমিয়ে গিয়েছে নাকি ঘুমানোর ভান ধরছে সেটা আকাশ ভালো করে জানে। বর্ষা কথা না বাড়িয়ে পাশেই শুয়ে পড়ে আকাশের। বর্ষা ছটফট করছে শুয়ে কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না আর। এমন কিছু ঘটার পর ঘুম আসারও কথা না । শুধু মনে হচ্ছে বুকে নিদারুণ ব্যাথা হচ্ছে। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হাওয়ার পরে সুদুর কোন মসজিদ থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে বর্ষার কানে। আযানের শব্দ শুনে বর্ষা উঠে ওয়াশরুমে চলে যায় ওজু করে এসে নামাজে বসে। চোখ দিয়ে কেন যেন ঝর্নার মতো অঝোর ধারায় পানি গড়িয়ে পরছে।

বর্ষা নামাজ পড়ে বেল্কুনিতে বসে পড়ে আকাশ দেখার জন্য। বর্ষার খুব ভালো লাগে অন্ধকার আকাশ কিভাবে আস্তেধীরে আলোতে ভরে যায় তা দেখতে। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বর্ষার চোখ লেগে যায়। আর ওইভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে।
আফিফের ডাকে ঘুম ভাঙে বর্ষার।
‘ সরি ভাবি ডিস্টার্ব করার জন্য । ভাইয়া সেই সকালে উঠে হসপিটালে চলে গেলো। আপনার কোন সারাশব্দ নেই তাই আম্মু পাঠালো দেখতে আপনি কি করছেন। অনেকক্ষণ নক করার পরও রেসপন্স না পেয়ে চিন্তায় পড়ে ভিতরে আসলাম। কিছু মনে করেননি তো?

বর্ষা গুটিসুটি হয়ে
‘ না কিছু মনে করিনি। কয়টা বাজে?
‘ ঘড়িতে দশটা বাজে কিন্তু আপনার জন্য ছয়টা, আম্মু বলেছে আপনি ঘুমিয়ে থাকলে যেন না ডাকি।

বর্ষার লজ্জা লাগছে। নতুন বউ হয়ে দশটা পর্যন্ত ঘুমানো নিশ্চয়ই ভালো দেখায় না। সবাই কি ভাববে? বর্ষা তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে
‘ তোমার ভাইয়া কি দুপুরে ফিরবে?
‘ কখনো আসে কখনো আসে না। আম্মু বলেছিলো না যেতে হাসপাতালে। বিয়ে করে কেউ পরের দিন ছুটি না নিয়ে হাসপাতালে যায়? বড়ই আজব।

সবই আজব ( মনে মনে)
‘ আচ্ছা আফিফ তোমাদের ওই রুমে কি আছে? যেখানে লেখা ভিতরে কেউ প্রবেশ করবে না।

আফিফের মুখখানা সাথে সাথে কেমন মলিন আর চুপসে গেছে।
আফিফ তালহীন হয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি মনিরা বেগম এসে
‘ কিরে মা উঠে গেছিস?

বর্ষা লজ্জা নিয়ে নরম সুরে
‘ জ্বী মা।

‘ আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় নাস্তা করবি। আফিফ তুই আমার সাথে আয় গেস্টদের একটা লিস্ট বানাতে হবে।

বর্ষার মনে কেমন খচখচ করছে। আকাশের বিষয়ে তার সব জানতে হবে। এখন এটা তার অধিকার। কিন্তু কিভাবে জানবে সব? ওই ঘরেই কি আছে সব উত্তর? কিন্তু আকাশ তো ওই ঘরে যেতে মানা করেছে।
.
.
.
এখন প্রায় প্রতি রাতেই বর্ষা ওই রুম থেকে আকাশের কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়। আকাশ যখন রুমে আসে তখন বর্ষা ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকে। আকাশকে কিছু জিজ্ঞেস করলে হয় এড়িয়ে যায় নাহয় খারাপ ব্যবহার করে বর্ষার সাথে তাই বর্ষাও কিছু বলেনা আর আকাশকে।

একদিন সকালে তনিমা আসে বাসায়, বর্ষা তনিমাকে খুঁজে খুঁজে গিয়ে পায় আফিফের রুমে। একজন অপরজনকে জড়িয়ে ধরে আছে। বর্ষার ওদের এই অবস্থায় দেখে মুহুর্তের মাঝে রাগ উঠে যায় আর তনিমাকে টেনে একটা চড় বসিয়ে দেয়।
‘ কেন করছিস এসব তনিমা?

তনিমা গালে হাত দিয়ে কান্না করছে। এইদিকে আফিফ
‘ ভাবি আমার কথাটা শুনুন
‘ আফিফ তুমি কোন কথা বলবেনা যা বলবার আমি বলবো আর সেটা শুধু তনিমাকে৷

তনিমা অশ্রু নিয়ে
‘ আপু আমি আফিফকে ভালোবাসি।
‘ চুপ কর তনিমা তুই। এই কথা মুখ দিয়ে আর একবারও বের করবি না।

তনিমার হাত ধরে বর্ষা তার রুমে নিয়ে যায়। দুই-বোন চুপ করে বসে আছে তনিমা কান্না করছে নিরবে। তনিমার কান্না দেখে বর্ষার বুক ফেটে যাচ্ছে। ছোট বেলা থেকে ওদের মা নেই তাই মায়ের ভালোবাসা বর্ষা তনিমাকে দিতে চেষ্টা করেছে। কোনদিন দু-বোনের মাঝে কখনো ঝগড়া হয়নি। সব কিছু থেকে আগলে রাখতে চেষ্টা করছে তনিমাকে, তাহলে আজকে কি ভাবে দিবে বোনকে ভুল পথে চলতে।

বর্ষা তনিমাকে জড়িয়ে ধরতেই তনিমা জোরে শব্দ করে কান্না করে উঠে। বর্ষা দু-হাতে তনিমার চুল গুলো ঠিক করে দিতে দিতে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে
‘ তুই জানিস তো তোর বোন তোর ভালো চায়?

তনিমা কান্না করে মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ বোঝালো।
‘ আমি তোকে বলিনি তনিমা। আমি ভালো নেই আকাশের সাথে। ( চোখ মুছে) কিন্তু ওকে ভালোবাসি বলে ছেড়ে যেতে পারছি না। না ও আমায় ছাড়ছে। ও আমাদের সম্পর্কের প্রথম দিন থেকে কিছু লুকাচ্ছে। আকাশ আমার সাথে হঠাৎ হঠাৎ এমন বিহেভ করে যেন আমি ওর অনেক পুরনো শত্রু। ওর পুরোটা শুধু রহস্যে ঘেরা। হোক বা নাহোক ও আমার থেকে অনেক বড় কিছু লুকাচ্ছে আর আমি সেটার সাথে জড়িত নিপুণভাবে। আমি চাই না যেই ভালোবাসার ফাঁদে পড়ে আমি আটকে গিয়েছি তোর সাথেও এমন হোক। তোকেও এই বাড়িতে এসে এমন সাজা পেতে হয় আমি চাইনা।

তনিমা বিষ্ময় নিয়ে বর্ষার দিকে তাকিয়ে
‘ কি বলছিস আপু? আকাশ ভাইয়া তো তোকে অনেক ভালোবাসে।
‘ সেটা সবাই জানে। আমিও জানি কিন্তু কিছু একটা আছে যা আমি বুঝতে পারছি না। অনেক হয়েছে আজ আমি ওই রুমে যাবোই।
‘কোন রুমে?
‘ কিছু না তুই বুঝবি না। তুই বাসায় যা আমি কালকে বাসায় গিয়ে তোর সাথে কথা বলবো।

অনেক হয়েছে এখন এর সাথে আমার বোন জড়িত হয়ে গেছে আমি আর চুপ করে থাকতে পারবো না। ( মনে মনে)
.
.
.
বর্ষা হাসপাশ করছে আকাশ কখন ঘুমাবে। আকাশ ঘুমাতেই আকাশের ড্রয়ার থেকে ওই রুমের চাবিটা নিয়ে সরাসরি চলে যায় ওই রুমে। রুমটা কেমন ধুলোতে ভরা। মনে হচ্ছে রুমে কেউই প্রবেশ করে না। আকাশ তো রুমে আসে তাহলে পরিষ্কার করে না কেন কে জানে! মস্ত বড় এটা কি? আয়না হবে হয়তো পর্দা দিয়ে ঘেরা। বর্ষা কৌতুল নিয়ে পর্দাটা সরিয়ে দিতেই দেখে বিকট বড় একটা মেয়ের ছবি। কি অপুর্ব দেখতে উনি। বর্ষার চোখ ওই ছবিতেই আটকে যায়। বর্ষার ছবিটা ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব। এতো সুন্দর কাউকে বর্ষা আগে কখনো দেখেনি। তাই কাছে গিয়ে ছুঁয়ে দেয়। কিন্তু উনি কে? বর্ষা ছবিটার থেকে চোখ তুলে দেখে পাশেই আরেকটা ছোট ছবি একটু কালো পর্দা দিয়ে ঘেরা। ওই পর্দাটা ওঠাতে নিলেই পিছন থেকে
‘ ওটা আমি উঠিয়ে দিচ্ছি।

আকাশের শব্দ শুনে লাফ মেরে ওঠে বর্ষা৷
আকাশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বর্ষার কাছে এসে বর্ষার মুখোমুখি দাঁড়ায়। বর্ষা ভয়ে স্তব্ধ হয়ে আছে। আকাশ বর্ষার দিকে তাকিয়েই হঠাৎ করে ডান হাত দিয়ে টান দিয়ে পর্দাটা সরিয়ে ফেলে ওই ছবির উপর থেকে। বর্ষা ওই ছবির দিকে তাকাতেই কেঁপে ওঠে, যেন মাটি সরে যায় পায়ের নিচ থেকে। মনে হচ্ছে আকাশ টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ছে বর্ষার উপর………

চলবে……

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

বাদলে ঘেরা আকাশ পর্ব-০৫

0

#বাদলে_ঘেরা_আকাশ
#Part_5_
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha

লেখা গুলো একটা ছোট বাচ্চার হবে বুঝা যাচ্ছে। রুমের ভিতরেই বা কি আছে?
বর্ষাকে এই ভাবে থমকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে আকাশ বর্ষার চোখের দিকে তাকিয়ে
‘ কি হলো বর্ষা দাঁড়িয়ে গেলে কেন?

বর্ষা একটু চিন্তিত মুখে আকাশের দিকে নরম একটা হাসি ফুটিয়ে
‘ কিছু না।

আকাশ বর্ষার এক হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করে আরেক হাতে বর্ষার কাধে ধরে বর্ষাকে নিয়ে যায় তার রুমে৷ বর্ষা রুমে ঢুকেই কিঞ্চিৎ অবাক হয় আকাশের রুম দেখে। বেডের মাথার কাছে দেয়ালে বিশাল বড় এক ফ্রেমে বর্ষার ছবি আবদ্ধ করা। হাস্যজ্জল প্রানবন্তর সেই ছবি। বর্ষা অবাক হলো ছবিটা দেখে। আকাশের কাছ থেকে বর্ষা এমন কিছু আশা করা দূরের কথা ভাবাই হয়নি কখনো । বর্ষা বড় ফ্রেম থেকে চোখ দুটো সরিয়ে পাশের দেয়ালে তাকিয়ে দেখে ওখানেও বর্ষা আর আকাশের ছবি ছোট ছোট ফ্রেমে। আকাশের প্রতি এখন দুটানা আরো বেড়ে গেছে।

‘ বর্ষা তুমি রেস্ট নাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

বর্ষা এর আগে কখনো এ বাড়িতে আসেনি আজকেই প্রথম। তাই সব কিছু ঘুরে দেখার কৌতূহল আর আগ্রহের সীমানা নেই। বর্ষা দেখতে দেখতে আবার ওই রুমের সামনে চলে যায় যেখানে বর্ষা দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো। কি সুন্দর স্পষ্ট করে লেখা ” এই রুমে কেউ প্রবেশ করবেন না”। বর্ষা একবার হাত দিয়ে লেখা গুলো আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে যখনি রুমের দরজা খুলতে যাবে তখনি বর্ষার হাত ধরে হেচকা টানে ফেলে দেয় আকাশ। পড়ে গিয়ে কপালে চোট পায় বর্ষা।

‘ তোমার সাহস কি করে হয় বর্ষা এই রুমের দরজা খোলার? তুমি দেখতে পাওনি এখানে কি লেখা? ( হুংকার করে) নূন্যতম কমনসেন্স নেই তোমার?

বর্ষা ব্যাথায় কান্না করছে। এমনিতেও বর্ষার শরীরে তেমন শক্তি নেই আবার উঠে দাঁড়ানোর মতো। তাই কিছু না বলে বর্ষা ওখানেই পড়ে রইলো। আকাশ নিজেকে কন্ট্রোল করে বর্ষাকে কোলে তুলে নিলো।
বর্ষাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে
‘ আমি বলেছিলাম রেস্ট নিতে ওখানে কিসের জন্য গেলে তুমি? আর দরজায় কি লেখা ছিল দেখোনি? তারপরও কেন গেলে দরজা খুলতে?

‘ কেন কি আছে ওই রুমে? যার জন্য আমি যেতে পারবো না?

আকাশ আর কিছু না বলে ফাস্ট এইড বক্স এনে বর্ষার কপালে মলম লাগিয়ে দিয়ে।
‘ সব কিছু এতো বেশি বুঝো কেন?

বর্ষা কান্না করছে মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে। আকাশের রহস্য সে বুঝতে পারছে না। আবার তার মায়াজালে তাকে আটকিয়ে ও ফেলেছে খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে বর্ষা।

আকাশ বর্ষাকে এমন কান্না করতে দেখে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে বুকের মাঝে। বর্ষার কাধে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে চুমু দিতেই বর্ষা কেঁপে উঠে আঁকড়ে ধরে আকাশকে। আকাশ বর্ষাকে বুকে নিয়ে শুতেই ঘুমিয়ে যায় গতকাল ভালো করে না ঘুমানোর ফলে।

কিছুক্ষণ পরেই বর্ষার ঘুম ভেঙে যায়। আকাশের বুকেই এখনো বর্ষা। আকাশ দু’হাতে শক্ত করে এখানো ধরে আছে বর্ষাকে। কিছু মুহুর্ত এই ভাবে শুয়ে থেকে আকাশের হাত সরিয়ে উঠে ফ্রেশ হতে যায় বর্ষা। ফ্রেশ হয়ে এসে আকাশের পাশে বসে আকাশকে দেখছে গভীর ভাবে। ঘুমন্ত অবস্থায় কোন মায়াপুরির মায়ার রাজার মতো লাগছে আকাশকে। আকাশের এতো রুপ কেন আকাশের মতোই। কখনো মেঘ, কখনো রোদ, আবার কখনো গর্জন করে উঠে।

মায়া নিচে যেতেই দেখে আকাশের আব্বু আশিক যুবায়ের বসে আছে। উনার হাতে কিছু কাচামরিচ সেগুলোর বোটা ছাড়াচ্ছে। বর্ষা নিচে নেমে আশিক সাহেব কে সালাম করলো। আশিক সাহেব বর্ষার মাথায় হাত দিয়ে
‘ জানিস মা আজকে খুব ভালো লাগছ। আজকে আমার ঘরে একটা মেয়ে এসেছে। যার অভাব ছিলো এতোদিন খুব। দেখ তোর শাশুড়ী মা আমাকে দিয়ে রোজ এই সব কাজ করায়। একটা মেয়ে থাকলে তো আর আমার এসব করতে হতো না।

বর্ষা মুচকি হেসে
‘ বাবা দিন আমি করে দিচ্ছি।
‘ না এখন কিছু করতে হবে না তোর, তুই অসুস্থ এখন। আমার পাশে বসে বসে দেখ কি ভাবে মরিচের বোটা ছাড়িয়ে ফ্রিজে রাখতে হয় হাহাহা।

বর্ষা কথা না বাড়িয়ে মনিরা বেগমের কাছে গিয়ে
‘ মা আমি কি হেল্প করবো বলুন।

মনিরা বেগম চোখ উল্টে কপাল কুচকে বর্ষার দিকে তাকিয়ে
‘ তোর কিছু করতে হবে না তুই রেস্ট নে গিয়ে, না হয় তোর শশুরের সাথে বসে গল্প কর।

বর্ষা হতাশ গলাই আচ্ছা বলে বেড়িয়ে এলো কিচেন থেকে।

.
.
.
সন্ধ্যায় ড্রয়িংরুমে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছিলো তখনি নাইম সাহেব আর তনিমা এসে হাজির ।
নাইম সাহেবকে দেখে বর্ষা দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। এই প্রথম বাবার কাছ থেকে সে দূরে থাকছে। এর আগে কখনো বাড়ি ছেড়ে বর্ষা থাকেনি। নাইম সাহেব আশিক যুবায়েরকে উদ্দেশ্য করে
‘ ভাই সাহেব এর আগে মেয়েকে ছাড়া থাকিনি তো ওর জন্য মনটা কেমন ছটফট করছিলো আর তনিমা ও কান্না করছিলো তাই চলে আসলাম বর্ষাকে দেখতে।

আশিক যুবায়ের বসা থেকে উঠে
‘ ভাই সাহেব এখন এটা আপনারও বাড়ি যখন ইচ্ছে মেয়েকে দেখতে চলে আসবেন।

তনিমা বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে
‘ আপু আজকে কি ভাবে থাকবো আমি? একা রুমে আমার ভয় লাগে।

তনিমার কথা শুনে বর্ষার চোখে পানি আসলেও সবাই হেসে নাজেহাল অবস্থা । তনিমা লজ্জায় বর্ষাকে ছেড়ে দূরে দাঁড়াতেই আফিফ তনিমার কাছে এসে মুখটা তনিমার কানের কাছে নিয়ে
‘ বেয়াইন সাহেব আপনি বললে রাতে আমি আপনার রুমে থাকতে পারি।

তনিমা আগ্নিলাল দৃষ্টি দিতেই আফিফ তনিমার দিকে তাকিয়ে ডুব গিলে
‘ মানে আপনার রুমের সামনে পাহাড়া দিতে পারি।

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে তনিমা আর নাইম সাহেব সবার থেকে বিদায় নিয়ে প্রস্থান করলো। আকাশ খেয়েই রুমে চলে গিয়েছে অনেকক্ষণ হলো। বর্ষা বসে সবার সাথে গল্প করছে। নাইম সাহেব আর তনিমার জন্য মনটা খারাপ লাগছে বেশ। গল্প করা শেষে সবাই বর্ষাকে উপরে আকাশের রুমে পাঠিয়ে দিলো৷

বর্ষা রুমে প্রবেশ করেই বেশ আশ্চর্য হলো। আকাশ রুমটাকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে ফুল আর বেলুন দিয়ে। বর্ষা সারা রুমে চোখ বুলাতেই আকাশ এসে সামনে হাজির হয়। বর্ষার কনিষ্ঠা আঙুলে নিজের কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে জড়িয়ে ধরে ভিতরে নিয়ে আসে আকাশ। বেডের উপর থেকে গাড় কালো খয়েরি একটা শাড়ী দিয়ে
‘ এই শাড়ীটা তোমায় অনেক মানাবে। অনেক খুঁজে এই শাড়ী তোমার জন্য কিনে এনেছি।

বর্ষার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না এটা আকাশ। আকাশকে এমন রোমান্টিক হতে কখনো দেখেনি বর্ষা। শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে যেতে নিলেই আকাশ বর্ষার হাত ধরে
‘ উমহু কোথাও যাবে না তুমি। আমি পড়িয়ে দিবো।

বর্ষা আরেকদফা অবাক হলো আকাশের কথা শোনে। আজকে আকাশের কি হলো ভাবছে। মাথায় কোথাও আঘাত পায়নি তো আবার?
আকাশ শাড়ীটা বর্ষার হাত থেকে নিয়ে আস্তে আস্তে ভাজ খুলতে থাকে
‘ ব্লাউজ আর পেটিকোট ও পড়িয়ে দিব?

বর্ষা চোখ বড় বড় করে ফেলে কি বলে এই গুলো এই ছেলে? সত্যিই আজকে কিছু হয়েছে উনার। বর্ষা দৌড়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। না হয় সত্যিই উনি ব্লাউজ পেটিকোট পড়িয়ে দিবে।

বর্ষা ওড়না দিয়ে পুরো শরীর আবরণ করে আস্তে আস্তে আকাশের কাছে এসে থামে। আকাশ মুচকি হেসে শাড়ী পড়ানো শুরু করে৷
বর্ষা চোখ নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে নেই সাথে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস। অনুভব করছে আকাশের ছোঁয়া। আকাশ শাড়ী পড়িয়ে
‘ এবার তাকিয়ে দেখো কি অপরুপ রুপ নিয়ে জন্মিয়েছো তুমি।

বর্ষা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় নিজেকে দেখার জন্য। বাহ বেশ সুন্দর লাগছে তো ( মনে মনে) এতো সুন্দর করে কোন ছেলে শাড়ী পড়াতে পারে জানা ছিলো না। আকাশ বর্ষার গলাই ছোট একটা চেইন পড়িয়ে দিলো সাথে একটা রকেট আছে যাতে এ,বি লেখা। বর্ষা রকেটটা কে ছুয়ে দিলো পরম যত্নে।

আকাশ বর্ষার চুল গুলো পিঠ থেকে সরিয়ে তার ঠোট গুলো পিঠে গভীর ভাবে বসিয়ে দিতেই বর্ষা চোখ গুলো বন্ধ করে ফেলে। মনে হচ্ছে বিদ্যুৎ গতিতে রক্ত চলাচল করছে। বর্ষা আকাশের দিকে ফিরে আকাশকে জড়িয়ে ধরে কেঁপে উঠে৷

🍁🍁🍁🍁🍁
রাত তিনটা বাজে বর্ষার ঘুম ভেঙে যায়। বর্ষা পাশে তাকিয়ে দেখে আকাশ পাশে নেই। ঘুম জড়ানো চোখে আকাশ বলে ডাক দেয় কিন্তু আকাশের কোন সারাশব্দ নেই।

বর্ষা হঠাৎ করে লাফ দিয়ে উঠে। ওয়াশরুমে গিয়ে দেখে আকাশ নেই। বেল্কুনিতে ও নেই। বর্ষা দরজা খুলে উপরে থেকেই নিচে তাকিয়ে দেখে আকাশ ড্রয়িংরুমেও নেই। আস্তে আস্তে নিচে নামতে নিলেই বর্ষা ওই রুমের সামনে থেমে যায় যেখানে আকাশ যেতে মানা করেছিলো। ভিতর থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। আর এই শব্দ আকাশের…………

চলবে………..

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

বাদলে ঘেরা আকাশ পর্ব-০৪

0

#বাদলে_ঘেরা_আকাশ
#Part_4_
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha

‘ আকাশ কোথায় যাচ্ছি আমরা? এটা তো আমাদের বাসার রাস্তা নয় তাহলে কোথায় যাচ্ছি?
‘ আর পাচঁমিনিট তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।

আকাশ একটা কাজী অফিসের সামনে গাড়ি থামালো বর্ষা অবাক হয়ে বাহিরে তাকিয়ে
‘ আকাশ আমরা এইখানে কেন এসেছি? এটা তো কাজী অফিস।

আকাশ মাথাটা একটু ঝুকে নরম সুরে
‘ হ্যা ডিয়ার আমরা বিয়ে করবো আজ। তাই কাজী অফিসে আসলাম। সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে এখন শুধু আমাদের ভিতরে প্রবেশ বাকি।

বর্ষা অবাক হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। কিছু বলতেও পারছে না আকাশ করতে কি চাইছে সেটাও বুঝতে পারছেনা। বিয়ে তো হচ্ছেই সবার মতামত নিয়ে জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে। তাহলে এমন লুকিয়ে কাজী অফিসে বিয়ে করার মানে কি? আকাশ এমন কেন ভান করছে যেন আমি পালিয়ে যাবো এখনই বিয়ে না করলে।

‘ কি হলো বর্ষা? কি ভাবছো? নিশ্চয়ই ভাবছো বিয়ে তো হচ্ছে তাহলে এখন কাজী অফিসে বিয়ে করার কি দরকার।

বর্ষা মাথাটা উঁচিয়ে আকাশের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়

‘ তুমি ওইদিন কিভাবে এনগেজমেন্টের দিনে বিয়ে করবেনা বলে না করে দিয়েছিলে মনে আছে? আবার কখন কোন ডিসিশন নাও সেই ভয়ে তো আর আমি থাকতে পারিনা। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা আগে বিয়ে করে নেবো পরে নাহয় আবার অনুষ্ঠান করা হবে তোমার ইচ্ছে থাকলে। আমার এতো আয়োজন করে বিয়ে আয়োজিত করা একদমই ভালো লাগেনা। তাও রাজি হয়েছি তোমার ইচ্ছেতেই জমকালো আয়োজন করে বিয়ে হবে । এখন তোমার তো আমার ইচ্ছেও পূরণ করতে হবে তাই না?

‘ কিন্তু আকাশ এইভাবে বিয়ে করা ঠিক হবে না। সবাই তো ডেট ফিক্সড করেছেই তাহলে আবার এমন কেন করতে হবে? আব্বু শুনলে ভীষণ কষ্ট পাবে। আব্বুর অনেক শখ আহ্লাদ আছে আমার বিয়ে নিয়ে।

আকাশ বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে চোখ একবার বন্ধ করে আবার খুলে

‘দেখো তুমি এমনিতেই কিসব টেনশন করে অসুস্থ হয়ে গিয়েছো। এমন ভাবে চলতে থাকলে তো হবে না। বিয়ে হয়ে গেলে তোমার টেনশন কম থাকবে আর আমারো। তুমি কাগজে পত্রে আমার হবে। এখন চলো অনেকক্ষন ধরে সবাই অপেক্ষা করছে।
তোমাকে আমার বানাতে এইটুকু তো করতে হবেই। যার উপর একমাত্র আমার অধিকার থাকবে। ( মনে মনে)

আকাশ আর কিছু না বলে বর্ষার চোখে তীক্ষ্ণভাবে মননিবেশ করলো। বর্ষার চোখ ব্যথিত আর জানার আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।

তনিমা দাঁড়িয়ে আছে বাসায় যাওয়ার জন্য। সকালে কেমিস্ট্রি প্রাইভেটটা পড়া যমালয়ে যাওয়ার মতো লাগে। একে তো কেমিস্ট্রি কিছু মাথায় ঢোকে না দ্বিতীয়তো এতো সকালে উঠে পড়ার জন্য আসতে হিমশিম খেতে হয় হাজারটা। প্রায়শই মিস যায় প্রাইভেট। এখন আবার একটাও রিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। হাটতে একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না। চোখে একরাজ্যের ঘুম। হঠাৎ একটা কার এসে ব্রেক কষে তনিমার কাছে। তনিমা ভয়ে দুইহাত পিছনে চলে যায়। এই বুঝি গাড়ি লাগিয়ে দিলো তনিমার শরীরে। গাড়ি থেকে দাঁত বের করতে করতে বের হয়ে এলো আকাশ যুবারের ছোট ভাই আফিফ যুবায়ের। তনিমা আফিফকে দেখেই রাগে কটমট করছে। আফিফ দাঁত কেলাতে কেলাতে তনিমার কাছে এসে

‘ আরে বেয়াইন সাহেবা যে।

তনিমা চোয়াল শক্ত করে
‘ আপনি কি সাতসকালে আমাকে উপরে পাঠিয়ে দেওয়ার নিয়ত করে বের হয়েছেন?
‘ নাউজুবিল্লাহ কি যে বলেন আপনাকে তো পারলে আমি বেধে রাখি আমার কাছে উপরে কেন পাঠাবো।

‘যেই ভাবে গাড়ি দাঁড় করিয়েছেন আমার কাছে আপনার নিয়ত যে ভালো ছিলো না স্পষ্ট বোঝা যায়।
‘ আমার গাড়ির হাত খুবই পাকা এতো সহজে কাউকে গাড়ি লাগায় না।

‘ যাই হোক এখানে কি করছেন?

আফিফ এদিক সেদিক তাকিয়ে
‘ আপনাকে পাহাড়া দিতে এসেছি। ( শব্দ করে হেসে) জোক করলাম এই দিকে দিয়েই যাচ্ছিলাম দেখলাম আপনি দাঁড়িয়ে আছেন, আর একা একটা পিচ্চি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভেবে লিফট দিতে আসলাম ।

এই ছেলেটাকে তনিমার একটু সহ্যও হয় না। তারপরও শুধু তনিমার পিছনে লেগে থাকে। মহোদয় যে এই দিক দিয়ে যাচ্ছিলেন না আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তনিমার জন্য তনিমা বেশ ভালোই জানে।

‘ আমি তো আপনার সাথে যাবো না। যেহেতু কোন রুলস নেই আপনার সাথে আমার যেতেই হবে সেহেতু আমি যাবো না।
‘ আপনার তো আমার সাথে যেতেই হবে বেয়াইন সাহেবা। ভাবি হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরছে তাই আপনার তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরা উচিত। আমার উরোজাহাজে উঠুন এখনই বাসায় পৌঁছে দেবো।

‘ আপনার এটা উরোজাহাজ নাকি মরুজাহাজ আমি ভালো করেই জানি। আমি উঠলে তো এটা চলতেই চায়না ঠেলাগাড়ির থেকেও স্লো চলে। পাঁচ মিনিটের রাস্তা দুই ঘন্টায় শেষ হয়। আবার পথে দুইশত বার নামেন।

‘ সেটাই তো আপনি বুঝলেন না বেয়াইন সাহেবা কেন……

‘ হয়েছে এতো প্যাঁচাল পারতে হবেনা চলুন।

তনিমা গাড়িতেই উঠেই ঘুমিয়ে যায় চোখে প্রচুর ঘুম থাকায়। আফিফ রিকশার মতো স্লো করে গাড়ি চালাচ্ছে আর তনিমাকে দেখছে। আসলে স্পিডে চালালে তো সাথে সাথেই পৌঁছে যাবে তনিমাকে আর দেখতেও পারবে না তাই স্লো গাড়ি চালায়।

অল্পকিছুক্ষণ হলো আকাশ আর বর্ষা বাসায় ঢুকে দেখে নাইম সাহেব ড্রয়িংরুমে বসে মেয়ের জন্যই অপেক্ষা করছে। বর্ষার চোখে মুখে অপরাধবোধ কাজ করছে। যে বাবা জন্ম দিয়ে মা ছাড়া একা একা মানুষ করেছে তাকে, সে বিয়ে করে এসেছে বাবাকে না জানিয়েই। একবার ইচ্ছে হচ্ছে বাবাকে জড়িয়ে ধরে সব বলে দিতে আবার বোধগম্য হচ্ছে সে তো বড় হয়ে গিয়েছে এখন কি ছোট বাচ্চার মতো কান্না মানায়?

নাইম সাহেব অশ্রুজড়িত চোখ নিয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে
‘ মা এখন ভালো আছিস তুই?

বর্ষা মাথা নিচু করে
‘ হ্যা আব্বু। আব্বু তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো।
‘ হ্যা বল।
‘ আব্বু আমরা

বর্ষার কথার মাঝে আফিফ আর তনিমা এসে বাসায় হাজির হয়।
‘ আপু কেমন আছিস এখন?
বর্ষা অল্প হেসে
‘ হ্যা ভালো আছি । আফিফকে কোথায় পেলি?
‘ রাস্তার মাঝে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম তখনই উনি আমায় দেখে গাড়ি থামালো।

আকাশ নাইম সাহেবের সামনে এসে
‘ আংকেল আমরা বিয়ে করে ফেলেছি কাজী অফিসে গিয়ে।

আকাশের কথা শুনে আফিফ তনিমা আর নাইম সাহেব তিনজনই ঝটকা খেয়েছে মনে হচ্ছে। নাইম সাহেবের চোখ সাধারণের চেয়ে একটু বড় হয়ে গেলো

নাইম সাহেব কপট রাগে
‘ মানে কি?
‘ আংকেল বর্ষা এইভাবে আরো অসুস্থ হয়ে যাবে একা একা বাসায় থেকে। বিয়ের ডেট আসতে এখনো অনেক বাকি। ও আমাদের বাসায় গেলে সবার সাথে থাকলে সুস্থ আর ভালো থাকবে। তাই আমি হঠাৎ এই ডিসিশন নিলাম আপনাদের কাউকে না জানিয়েই বিয়ে করে ফেললাম।

‘ তাই বলে তুমি বড়দের না জানিয়ে এতো বড় একটা ডিসিশন নিয়ে নেবে? আমার মেয়ে আমার মতামতের প্রয়োজন মনে করোনি?

‘ আংকেল আব্বুও জানে না৷

তনিমা নাইম সাহেবের কাছে গিয়ে
‘ আব্বু রাগ করছো কেন এমনিতেও তো ওদের বিয়ে হতোই। আগে হয়েছে তো কি হয়েছে। আমরা নাহয় একটা রিসেপশন রাখবো।

আফিফ আকাশের দিকে কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে
‘ ভাইয়া কাউকে না বলেই বিয়ে করে নিলি? যাইহোক ভালোই হয়েছে আমাদের বাড়িতে নতুন মেম্বার যোগ হলো। নতুন ভাবি পেয়ে গেলাম।

আকাশ নাইম সাহেবের চেহারায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে কষ্টের ছাপ। আকাশের ভীষণ ভালো লাগছে নাইম সাহেবকে ব্যথিত দেখে। আকাশ নাইম সাহেবকে উদ্দেশ্য করে আবার বলল

‘ আংকেল আমি বর্ষাকে নিয়ে যেতে চাই।
রিসেপশন নাহয় দুদিন পর দেওয়া হবে। আগে
বর্ষা পুরোপুরি সুস্থ হোক৷

🍁🍁🍁🍁🍁

আকাশ যুবায়েরের বাড়িতে বর্ষা পা রাখতেই আফিফ বললো
‘ ওয়েলকাম ভাবি আমাদের বাসায় তোমায় স্বাগতম।

নাইম সাহেব এই বাড়িতে ফোন করে সব বলায় আগেই ব্যপারটা সবাই জেনে যায় তাই নতুন করে আর কেউ অবাক হয়নি। বর্ষা ড্রয়িংরুমে যেতেই আকাশের মা মনিরা বেগম বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে
‘ এখন কেমন আছিস মা? হাসপাতালে যেতে পারিনি আকাশ মানা করেছিলো, আর বলেছিলো সকালে তোকে বাসায় নিয়ে আসবে। কিন্তু বিয়ে করে যে নিয়ে আসবে সেটা বলেনি হারামজাদাটা। যাইহোক তোকে এখানে আর বসাবো না তুই রুমে গিয়ে রেস্ট নে। তোর শশুর মশাই গিয়েছে বাজার করে আনতে তুই আসবি শুনে। আমি তোর পছন্দের খাবার বানাবো আজকে।

আকাশ বর্ষাকে নিজের রুমে নিয়ে যাওয়ার সময় বর্ষা দেখলো একটা রুমের দরজায় লেখা এই রুমে কেউ প্রবেশ করবেন না। বর্ষা একটু অবাক হলো কয়েকজন সদস্যই বাড়িতে কেই বা ঢুকবে? এমন লিখে রাখার মানে কি? লেখা গুলো একটা ছোট বাচ্চার হবে বোঝা যাচ্ছে। রুমের ভিতরেই বা কি আছে ?……….

চলবে……..

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

বাদলে ঘেরা আকাশ পর্ব-০৩

0

#বাদলে_ঘেরা_আকাশ
#Part_3_
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha

টিপটাপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাহিরে হইচই করে বইছে বিস্তীর্ণ বাতাস। কাচের জানালার গা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির ফোটা। বর্ষা বেডে শুয়ে থেকে তাকিয়ে আছে জানালার দিকে। বৃষ্টির মতো করে কেমন জেন তার জীবন ও ঝরে যাচ্ছে। ভালো লাগে না এখন কোন কিছুই। মুহুর্তে মুহুর্তে আবহাওয়ার মতো সব কিছু পালটে যায়। তাই ভয় হয় বর্ষার৷ বর্ষা বৃষ্টি গুলো ছুঁয়ে দিতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পাচ্ছে না শরীরে।

আকাশ ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখে তনিমা বসে টিভি দেখছে। সিএনে কার্টুন দেখছে আর হাসছে। আকাশের ভিষণ রাগ হলো দুটো বোনই এক রকম। একটা কিছু করলে অন্য কিছু মনে থাকে না। কেউ যে এসেছে তার দিকে বেখেয়াল। আকাশ হালকা কাশি দিয়ে
‘ তনিমা বর্ষা কোথায়?

তনিমা হকচকিয়ে উঠে আকাশের দিকে তাকিয়ে
‘ আরেহ ভাইয়া! কখন এলেন?
‘ অনেকক্ষন হলো।
‘ সরি ভাইয়া আসলে টিভি দেখছিলাম তো বুঝতে পারিনি।
‘ বুঝার উচিত ছিলো।

তনিমা আকাশের কথা শুনে নিচে তাকায়
‘ আরে আমি তো মজা করছিলাম। এই ভাবে তো কেউ এসে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবে । তখন আমার এক মাত্র শালিকাকে কোথায় পাবো?

তনিমা আকাশের কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয়। আকাশ একটু হেসে
‘ বর্ষা কোথায়?
‘ আপু অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তার রুমেই শুয়ে আছে, আমি এতক্ষণ আপুর সাথেই বসে ছিলাম। তারপর আপু বললো একটু একা থাকতে চাই তাই আমি এসে টিভি ছাড়লাম। আব্বু ও বাসায় নেই একা একা বোরিং লাগছিলো।
‘ কি হয়েছে বর্ষার?
‘ আপু ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না। আর কিসব চিন্তা করে তাই হয়তো অসুস্থ হয়ে গেছে।আব্বু বলেছে ডাক্তার দেখাতে বা আপনাকে খবর দিতে কিন্তু আপু মানা করলো বললো এমনি ঠিক হয়ে যাবে। ফোনটা ও সাইলেন্ট করে ড্রয়ারে যে রেখেছে আর ধরেনি হয়তো।

আকাশ চুপ থেকে
‘ আচ্ছা তুমি টিভি দেখো আমি বর্ষার রুমে যাচ্ছি।

আকাশ দরজায় নক না করেই রুমে ডুকে দেখে বর্ষা শুয়ে আছে। জানালার দিকে তাকিয়ে আছে নিষ্পলক ভাবে। কিছু গভীর চিন্তায় নিমজ্জিত খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। ডাক্তার হওয়ার একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে রোগীকে দেখলেই বুঝতে পারা যায় সে খুব চিন্তায় আছে।

আকাশ আস্তে আস্তে বর্ষার কাছে কাছে গিয়ে বেডের এক কোনায় বসে বর্ষার মাথায় হাত দেয়। বর্ষা এখনো তাকিয়ে আছে জানালায়।

‘ বর্ষা!

বর্ষা একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার জানালার দিকে তাকায়

‘ এতো অসুস্থ হলে কি ভাবে? আর আমায় জানাও নি কেন? আংকেলও কিছু বলেনি তুমি নাকি মানা করেছো বলতে। রাগ করেছো আমার সাথে?
‘ ভালোবাসেন আমায়?
‘ চলো হসপিটালে যাবে এখন আমার সাথে। ( এক হাতে ধরে)

বর্ষা আকাশের হাত সরিয়ে
‘ আগে বলুন ভালোবাসুন আমায়?

আকাশ একটু চুপ থেকে বর্ষার চোখে তাকিয়ে
‘ হ্যা বাসি

বর্ষা চোখ বন্ধ করে আবার নিঃশ্বাস ছাড়লো।

‘ আমায় একটু জড়িয়ে ধরবেন? আমার কেমন যেন ভয় লাগছে।

আকাশ কোন কথা না বলে বর্ষাকে দুবাহুতে তুলে নেয়। বর্ষা দুহাতে আকাশের কাধে ধরে জড়িয়ে ধরেছে আকাশকে। বর্ষা কান্না করছে।
আকাশ চুপ করে আছে কিছু বলছে না বর্ষাকে। এখন কিছু বললে বর্ষা রাগ দেখাবে। আকাশের জন্যই তো বর্ষা কান্না করছে এমন, এখন কিবা বলবে বর্ষাকে। আকাশের চোখ দিয়েও টপ করে একফোটা পানি পরলো৷ মানুষকে চোখের সামনে কাঁদতে দেখলে অপর মানুষের ও কান্না পায় এই জন্যই হয়তো, নয়তোবা ভালোবাসার মানুষকে চোখের সামনে কান্নারত অবস্থায় দেখলে অপর মানুষটার চোখে বিন্দু বিন্দু পানি জমা হয় তাই আকাশের চোখেও পানি। কিন্তু আকাশের চোখে কেন পানি আসবে? পানি আসা যাবে না। আরো অনেক কিছু বাকি এখনি চোখে পানি আসলে কি ভাবে হবে?

হঠাৎ বর্ষার কান্না বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আকাশ বর্ষার মাথায় হাত দিয়ে
‘ বর্ষা!
বর্ষা কোন শব্দ করছে না দেখে আকাশ বর্ষার মাথা বুক থেকে তুলতেই দেখে বর্ষা নেতিয়ে পড়েছে চোখ।

হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে বর্ষা। ডাঃ মেহেদী আকাশের কাছে এসে
‘ ডাঃ আকাশ তেমন কিছু সিরিয়াস না। বেশি স্ট্রেস নেওয়ার কারনে আর না খেয়ে থাকার ফলে এমন হয়েছে। আমি স্যালাইনের সাথে এনার্জির একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে দিয়েছি ঠিক হয়ে যাবে।
‘ থ্যাংস মেহেদী।
‘ ইটস মাই ডিউটি। টেক কেয়ার অফ হার।

বর্ষার পাশে বর্ষার হাত ধরে বসে আছে বর্ষার বাবা নাইম সাহেব। মেয়ের এমন অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পরে তিনি৷ তার হাসিখুশি মেয়েটা আজকে এই অবস্থা তিনি ভাবতে ও পারছে না। কি হয়েছে বর্ষা তাকে সব কিছু খুলে ও বলছে না। এমন অবস্থায় মেয়েকে জিজ্ঞেস ও করতে পারছে না কি হয়েছে ওর। ওই দিন আকাশকে কেন বিয়ে চায়নি বর্ষা আর জিজ্ঞেস করা হয়নি। ভেবেছিলো হয়তো নিজেদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে যা ঠিক হয়ে যাবে। বর্ষা সুস্থ হলে ওর মধ্যে কি চলছে জানতে হবে তার। দুই মেয়ের কথা ভেবে সারাজীবনের সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়েছে তিনি৷ এখন কি ভাবে মেয়েদের কষ্ট দেখবে নিজের চোখে!? এই সব ভেবে কান্নায় ভেঙে পড়ে নাইম সাহেব। মেয়ের হাত ধরে কান্না করছে তিনি। এই দিকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা আকাশের মুখ ঝলমল করছে। নাইম সাহেবের চোখে পানি দেখে আকাশের মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি ফুটে উঠে অজান্তেই। এই হাসি মনে হচ্ছে অনেক সাধনার হাসি। অনেক অপেক্ষিত মুহুর্তের পর এই হাসি ফুটেছে আজ আকাশের মুখে। আকাশ তৃপ্তি নিয়ে দেখছে এই কান্না।।

নাইম সাহেব চোখ মুছে রুম থেকে বের হতে নিলেই দেখে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ নাইম সাহেব তাকিয়ে তাকায় সামনে এগিয়ে এসে

‘ আংকেল ঠিক আছেন আপনি?
‘ আকাশ বাবা আমার মেয়ের কি হয়েছে?
‘ তেমন কিছুনা ঠিক হয়ে যাবে। না খাওয়ায় এমন হয়েছে আর স্ট্রসে।

নাইম সাহেব মুখ গম্ভীর করে
‘ আমি সেটাই বলছি আমার মেয়ের কি হয়েছে, ওর কি নিয়ে স্ট্রেস? তুমি তো সব জানার কথা। আমার মেয়ের যদি কিছু হয় আমি কাউকে ছাড়বো না। ও সুস্থ হলে আমি সম্পুর্ন বিষয় জানবো কি হয়েছে, তুমি কি কিছুই জানো না?

‘ আংকেল বর্ষা আমায় তেমন কিছু বলেনি। ও সুস্থ হোক জেনে নিবো।
‘ হুম তাই ভালো।
‘ আংকেল আজকে রাতটা বর্ষার হসপিটালেই থাকতে হবে। আপনি বাসায় চলে যান আমি এই খানে আছি বর্ষার সাথে৷

‘ না আমি বাসায় যাবো না আমার মেয়েকে একা রেখে।
‘আংকেল আমি আছি তো টেনশন করবেন না। আমি সকালে বর্ষাকে বাসায় পৌঁছে দিবো। ও এমনিতেও ঘুমাচ্ছে আর উঠবে বলে মনে হয়না। শুধু শুধু আপনি বসে থেকে কেন কষ্ট করবেন? আর তনিমা ও বাসায় একা। আপনি বাসায় যান। আমি আছি এই খানে।

‘ আচ্ছা বাবা তুমি বর্ষাকে দেখে রেখো। আর কোন সমস্যা হলে আমায় ফোন দিও।
‘ জ্বী আংকেল।
.
.
.

রাত দুটো বাজে আকাশ বসে আছে বর্ষার ডান হাতটা তার হাতের মুঠোয় নিয়ে। বর্ষার হাত গুলো যতবার আকাশ ধরেছে ততবারই বর্ষার প্রেমে পড়েছে। বর্ষার হাতে এক অন্য রকম জাদু আছে মনে হয়। আকাশ বর্ষার হাতে একটা চুমু দিয়ে বর্ষার মুখের দিকে তাকায়। কি নিষ্পাপ মেয়ে না চাইতে ও আকাশ ভালোবেসে ফেলে এই মেয়েটাকে তার উদ্দেশ্য সে ভুলে যায় বার বার। আকাশ বর্ষার কপালে একটা চুমু দিয়ে বর্ষার হাতে তার গাল রেখে চোখ বন্ধ করে।

সকালের ঝলমলে রোদের ঝাপটা এসে বর্ষার মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায়। হাতের স্যালাইন খোলা৷ ডানহাতটা টান দিতে ভারী অনুভব হলে
বর্ষা তাকিয়ে দেখে আকাশ তার হাতে গাল পেতে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। বর্ষা আরেক হাত বাড়িয়ে আকাশের গাল ছুঁয়ে দিতেই আকাশ জেগে যায়৷

‘ গুড মর্নিং জান।

বর্ষা ভ্রু কুঁচকে
‘ আসলেই কি জান নাক….

আর কিছু বলার আগেই আকাশ বর্ষার ঠোট আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে

‘ গতকাল তো আমায় ভয় দেখিয়ে দিয়েছিলে। এখন উঠে পড় আংকেল হয়তো অপেক্ষা করছে আমাদের। গতকালকে আংকেল অনেক চিন্তায় ছিলো তোমার। এখন তার আদরের মেয়েকে সুস্থ দেখে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলবে।

আকাশ এমন ভান করছে যেন কিছুই হয়নি। বর্ষা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আকাশকে।

🍁🍁🍁🍁🍁🍁

‘ আকাশ কোথায় যাচ্ছি আমরা? এটা তো আমাদের বাসার রাস্তা নয় তাহলে কোথায় যাচ্ছি?
‘ আর পাচঁমিনিট তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে………..

চলবে……….

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

বাদলে ঘেরা আকাশ পর্ব-০২

0

#বাদলে_ঘেরা_আকাশ
#Part_2_
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha

আমি তোমায় আকাশ সমান ভালোবাসি তবে সাথে আকাশ সমান ঘৃণা ও করি। আর দুটোই তোমার সহ্য করতে হবে। তোমার হাতে আর কোন অপশন নেই বর্ষা। না আমার হাতে আর কোন উপায় আছে। তোমার ভালোবাসা হোক বা ঘৃণা তার জন্য পৃথিবীতে একমাত্র আমিই আছি। তুমি আর অন্য কারো হতে পারবে না।

বর্ষা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখে পানি দিচ্ছে আর কান্না করছে। কেমন হয়ে গেছে সুন্দর মুহুর্ত গুলো। যেখানে ভালোবাসার ছড়াছড়ি থাকার কথা ছিলো সেখানে ব্যাথা আর কষ্টের খেলা। যেখানে ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাবার আনন্দ করার কথা সেখানে প্রিয় মানুষকে পাবার কোন সুখ হচ্ছে না। বরং প্রতিনিয়ত ভিতরে কেউ ছুরিঘাত করছে মনে হচ্ছে। এমন অচেনা কেন হয়ে উঠে আকাশ কেন এমন দু’চরিত্র নিয়ে কাছে আসে?! বর্ষা কান্না করছে আর মুখে পানি দিয়ে যাচ্ছে৷ আকাশের এক চোখে বর্ষার জন্য জলধারা আর অন্য চোখে বর্ষার জন্য আগুন। কেন এমন করছে আকাশ?

আজ বর্ষা আর আকাশের এনগেজমেন্ট ছিলো। ঘন্টা কয়েক আগেই যখন আকাশ বর্ষাকে রিং পড়াবে বর্ষা হাত সরিয়ে আকাশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে তার বাবার দিকে চেয়ে
‘ আব্বু আমি এই বিয়ে করতে চাই না। ( চোখের পানি মুছে)

আকাশ অবাক হয়ে বর্ষার হাতে ধরে আকাশের দিকে ফিরিয়ে

‘ বিয়ে করতে চাই না মানে?

বর্ষার বাবা নাইম সাহেব হতভম্ব হয়ে
‘ কেন মা? কি হয়েছে?

বর্ষা নাইম সাহেবের কাছে কাছে ছুটে এসে উনাকে জড়িয়ে ধরে
‘ আমি করতে চাই না আব্বু এই বিয়ে আমাকে জোর করো না। আমি আকাশকে ভালোবাসি কিন্তু আমি এই বিয়ে করতে চাই না। আমি এই বিয়ে করলে…….. আমি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছি আব্বু। আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। আমার ভালো লাগে না কিছু আব্বু। আমার ভিষণ চাপ পড়ে মাথায়।

আকাশ দু পাটির দাঁত এক সাথে করে নাড়াচ্ছে। আর দু চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে।
‘কি হয়েছে বর্ষা? কেন এমন করছো? বিয়েটা কিন্তু তোমার মতামতের উপর ভিত্তি করেই ঠিক হয়েছে।

‘ আমি এখন এই বিয়ে করতে চাই না আকাশ। আমি তোমায় ভালো……
‘ জাস্ট শাট আপ এখন করতে চাই না মানে কি? তাহলে রাজি কেন হয়েছিলে? আমি কি তোমায় বিয়ে করার জন্য জোর করেছিলাম? এমন করার মানে কি সবার সামনে? আগে কেন বলোনি? আমার ভুল কোথায়?

নাইম সাহেব আকাশের দিকে তাকিয়ে
‘ আমার মেয়ে এই বিয়ে করতে না চাইলে তাকে আমি জোর করবো না। বর্ষা না চাইলে হবে না এই বিয়ে। আমার মা মরা মেয়েকে আমি অনেক কষ্টে আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছি।

‘ আংকেল আমি একটু বর্ষার সাথে কথা বলতে চাই প্লিজ না করবেন না। ও আমার সাথে অভিমান করে এই সব বলছে।

‘ আব্বু আমি করতে চাই না এই বিয়ে। আমি অনেক সাহস জুগিয়ে এই কথা বলেছি। আমি চাই না।

নাইম সাহেব মুখ গম্ভীর করে
‘ ঠিক আছে কিন্তু বর্ষা না চাইলে এই বিয়ে হবে না আমি বলে দিলাম।

( বাকিটুকু তো আপনারা জানেন ই )

বর্ষা চায়নি আজকে তাদের এনগেজমেন্ট টা হোক। চায়নি আকাশকে বিয়ে করতে। আকাশের এমন দু রকমের চরিত্র দেখে ভয় পেয়ে যায় বার বার বর্ষা তাই অনেক কষ্টে অনেক চিন্তাভাবনা করে ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করতে বর্ষা আজ না করে দেয়। কিন্তু আকাশ তা বরাবরের মতোই হতে দিচ্ছে না। বার বার কোন না কোন ভাবে কোন কিছু ক্রিয়েট করে বর্ষাকে মানিয়ে নেয়। বর্ষা চাইলে ও তখন আর তার শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারে না। বার বার হেরে যায় আকাশের কাছে।

বর্ষা নিচে নামতেই আকাশের আব্বু আশিক যুবায়ের বর্ষার দিকে তাকিয়ে

‘ বর্ষা মা তুই ঠিক আছিস?

বর্ষা কিছু বলার আগেই আকাশ এসে বর্ষার পাশে দাঁড়িয়ে

‘ হ্যা আব্বু ও ঠিক আছে৷ আসলে ও একটু…..

নাইম সাহেব বর্ষার দুই কাধে হাত দিয়ে

‘ এখন বল মা তোর ডিসিশন কি বল। তুই যা বলবি তাই হবে। তোর আব্বু কখনো তোর কথা ফেলেনি আজকে ও ফেলবে না। আমি তোকে খুশি দেখতে চাই।

বর্ষা একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে নাইম সাহেবকে জড়িয়ে ধরে

‘ আমি এই বিয়েতে রাজি আব্বু। আকাশের উপর রাগ করে বিয়ে করতে চাই নি। এখন সব ঠিক আছে অনুষ্ঠান শুরু করো। ( এক হাত দিয়ে চোখ মুছে)
‘ সত্যি বলছিস তো তুই?
‘ হুম আব্বু সত্যি।

আকাশের মুখে বিষ্ময়কর এক হাসি ফুটে উঠে এই হাসির কারন বর্ষা ধরতে পারে না, ছুতে পারে না হাসির মুগ্ধতা। এই হাসি বর্ণ বর্ষার কাছে অন্য রকম লাগে। এই হাসি খুব জোরে গিয়ে আঘাত করে মনে। এই হাসির কারন জানতে চায় বর্ষা।

আকাশ বর্ষাকে আংটি পড়াতেই বর্ষা আকাশকে আংটি পড়িয়ে দেয়। আর সবাই হাত দিয়ে কনগ্রেটস করে ওদের। বর্ষার মুখে কোন হাসি নেই। সে চিন্তায় বিভোর হয়ে আছে আকশের। আকাশ কি চায়? কেন করছে এমন? আকাশ কি ভালোবাসে না বর্ষাকে?

আকাশের ডাকে বর্ষার ধ্যান ভাঙে
‘ কি হলো বর্ষা কি ভাবছো? কতক্ষণ ধরে কথা বলছি উত্তর দিচ্ছো না।
‘ কিছু না।
‘ হাসি নেই কেন মুখে?
‘ একটু মাথা ব্যাথা করছে তো।

আকাশ ভ্রু কুঁচকে
‘ ডাক্তার বর সামনে রেখে ও মাথা ব্যাথা হয়? স্ট্রেঞ্জ।
‘ কেন ডাক্তারের বউদের অসুখ হতে নেই?
‘ হতে নেই কেন? হতে পারে। তবে আকাশ যুবায়েরের বউয়ের অসুখ হতে পারে না। (বলে কেমন একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে উঠলো আকাশ)

বর্ষার মোটেই ভালো লাগেনি আকাশের হাসি তাও কিছু না বলে চুপ হয়ে যায়। আকাশের সামনে কিছু বলতে ও ভয় লাগে বর্ষার। আকাশ কখন কি বলে, করে, বুঝে উঠতে পারে না বর্ষা

বর্ষার বোন তনিমা বর্ষার কাছে এসে।

‘ আপি তুই না বলেছিলি এনগেজমেন্টে গান করবি! গাইবি না?

বর্ষা চার দিকে তাকিয়ে
‘ তনিমা চুপ কর। তোকে কে বলেছে এখন এই সব বলতে।

আকাশের ভাই আফিফ যুবায়ের

‘ ভাবি একটা গান কিন্তু শোনাতেই পারো।

আকাশ বর্ষার কানের কাছে মুখ নিয়ে
‘ তুমি কিন্তু বলেছিলে একদিন গান শোনাবে। আজকে বেস্ট দিন শুনিয়ে দাও।

বর্ষা মুখ তুলে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশের এখনো মনে আছে ওই দিনের কথা ভেবে।
বর্ষা একদিন ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় আকশের সাথে হাটতে হাটতে বলেছিলো তার বিয়ের অনুষ্ঠানে সে গান গাইবে। আর আকাশকে গান শোনাবে।

‘ কি হলো বর্ষা একটা গান শোনাও না!

সবাই চুপ হতেই বর্ষা আকাশকে ডেডিকেট করে গান শুরু করে

এই চেনা শহর, চেনা সময়
সময় গড়ালে অচেনাও হয়
এই তোমায় নিয়ে আমি ভাবি
তোমায় অনেক চিনে ফেলেছি
আসলে কি করেছি?

তোমায় আমি চিনি না, আবার বোধ হয় চিনি
তোমায় আমি চিনি না, আবার বোধ হয় চিনি ( আকাশের পিছনে ফিরে চোখ মুছে)

এই ভালোবাসা দিলাম তোমায়
কিন্তু একটা কিন্তু থেকেই যায়
যখন দূরে দূরে থাকো তুমি
তখন অনেক ভালোবেসে ফেলি, হায়!
আসলে কি বেসেছি?

তোমায় ভালোবাসি না, আবার বোধ হয় বাসি
তোমায় ভালোবাসি না, আবার বোধ হয় বাসি

এই চেনা রাস্তা, চেনা বাস-ট্রেন
চেনা অচেনায় দেখি
সবাই ছুটে চলে একলা কিংবা
দলে দলে ঠিক কিংবা ভুলে
বইতে বইতে যেমন জল
কেমনে কেমনে কেমনে সব এক হয়ে যায়?
সুখ-দুঃখ কষ্টের পাহাড়ের ঝর্ণার মতো বয়ে চলা মানুষদের
আমি ডাকি না
আমি ডাকি না, নাকি ডাকি?
আমি চিনি না
আমি চিনি না, নাকি চিনি?
কাউকে আমি চিনি না, আবার বোধহয় চিনি
কাউকে আমি চিনি না, আবার বোধহয় চিনি..

🍁🍁🍁🍁🍁🍁

বর্ষাকে কল দিচ্ছে বার বার আকাশ কিন্তু একটা কল ও রিসিভ করছে না বর্ষা। আকাশের ভিষণ রাগ হচ্ছে এখন। এনগেজমেন্টের পর আকাশের সাথে ভালো করে কথা বলেনি বর্ষা। তাহলে কি বর্ষা কিছু আন্দাজ করেছে? কেমন যেন একটা এভয়েট করছে বর্ষা আকাশকে। আর এভয়েট জিনিসটা আকাশ একদম সহ্য করতে পারে। শরীরে থাকা সাদা এফ্রোন টা খুলে ছুড়ে মেরে টেবিলে । বর্ষার কাছে একটা মেসেজ পাঠায়

” আজকেই আমাদের বিয়ে হবে, বিয়ের ডেট এখনো অনেক দেরি তাই আমরা কাজি অফিসে বিয়ে করে নিবো আমি আসছি। রেডি হও”

আকাশ রাগে কটমট করে দ্রুত গাড়িতে উঠে
বর্ষার বাসার সামনে গাড়ি থামায়…………

চলবে……..

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

বাদলে ঘেরা আকাশ পর্ব-০১

0

#বাদলে_ঘেরা_আকাশ
#Part_1_
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha

হয় আমায় ভালোবাসুন না হয় আমায় ছেড়ে দিন, মুক্তি দিন আমায়। জোরে শব্দ করে কেঁদে উঠে বর্ষা। ‘তোর রুহ যদি বের হয়ে যায় দেহ থেকে ওই রুহকে ও আমায় বিয়ে করতে হবে। আকাশ যুবায়ের বর্ষার উপরে পুরো শরীর ছেড়ে দিয়ে এক হাতে মুখ চেপে ধরে আবার বলতে লাগলো
‘ আর তুই তো এখনো জীবিত তাহলে আমাকে বিয়ে না করার কথা ভাবলি কি ভাবে? কি ভাবে ভাবলি আমায় রেখে ওপারে চলে যাবি? বা পালিয়ে যাবি৷ এই দুনিয়ার কোন কোনায় ও তোর ঠায় হবে না একমাত্র আকাশ যুবায়েরের বাহু ছাড়া ।

বর্ষা হাত-পা ছুটাছুটি করছে আকাশের নিচ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য কিন্তু পারছে না। আকাশের বুকে পিঠে খামচাচ্ছে তবু ও আকাশ ছাড়ছে না বর্ষাকে। বর্ষা যত ছাড়াতে চাইছে ততই এটে যাচ্ছে আকাশের সাথে। বর্ষা ক্লান্ত হয়ে চোখের পানি ছেড়ে শান্ত হয়ে যায়। তবু ও আকাশের বর্ষাকে ছাড়ার কোন নাম গন্ধ নেই। বর্ষা পুরোপুরি শান্ত হবার পর আকাশ বর্ষার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে বর্ষার বুকে মাথা রেখে বর্ষার সাথে লেপ্টে যায়। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বর্ষাকে।

বর্ষা আস্তে-ধীরে দু’হাত তুলে দেয় আকাশের পিঠে। খামচে ধরে আকাশের সাদা শার্ট আর চুল। ডুকরে কেঁদে উঠে বর্ষা।

‘ কেন করছেন আমার সাথে এমন? এমন বাঁচা মরার মাঝে কেন রেখেছেন আমায়? কেন এমন শাস্তি দিচ্ছেন আমায়? আপনি কি বুঝতে পারছেন না আমি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি।

একটু থেমে
হয় আমায় ভালোবাসুন না হয় আমায় ছেড়ে দিন মুক্তি দিন আমায়। ( আবার জোরে শব্দ করে কেঁদে উঠে বর্ষা)
আমি যখনি ভাবি আপনি আমায় ভালোবাসুন আপনার কাছে যেতে চাই ভালোবেসে বলতে চাই ভালোবাসি, তখনি আমায় দূরে ঠেলে দিন। মনে হয় আমি খুবই তুচ্ছ বিষয় আপনার জন্য। এক কাপ চায়ের মাঝে পড়ে যাওয়া কোন এক পিপড়ে। যাকে বিষম রাগে কাপ থেকে আঙুল দিয়ে তুলে ফেলে দিন।

আবার যখন ভাবি আপনি আমায় ভালোবাসেন না আপানার কাছ থেকে দূরে চলে যেতে চাই তখনি আপনি আমায় কাছে টেনে দুবাহুতে ভরে পিষে দিন।মনে হয় আমি ছাড়া আপনার বাঁচা দায়। আমায় ছাড়া আপনি নিজেকে কল্পনা করতে পারেন না। পারেন না নিজেকে সাজাতে। এলোমেলো অগোছালো হয়ে যান। মনে হয় আপনার আকাশ আষাঢ় ভাঙা ঝুম বৃষ্টির পর এক মুষ্টি রোদের অপেক্ষা করছে। কেন মনে হয় কোন পাখি বাসা হারিয়ে ছটফট করছে তার রাত অতিবাহিত করার জন্য একটু খানি আশ্রয়ের।
তবে কেন এই দোটানা আমার? কেন মনে হয় আপনি ভালোবাসুন আমায় আবার কেন মনে হয় বাসুন না? কেন মনে হয় আপনি হাজার বছরের চেনা আবার কেন মনে হয় আপনাকে আমি চিনি না।

আপনার এক বাহুতে জান্নাত জাহান্নাম দুটোই মেনে নিতে পারছি না আমি। প্লিজ আমায় মুক্তি দিন। আমি অনেক কষ্ট করে সাহস জুগিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সবাইকে জানিয়েছি আপনাকে আমি বিয়ে করতে চাই না। আমি এই ভাবে বাঁচতে পারবো না আকাশ। এই ঘৃনা ভালোবাসার মাঝে কেন রেখেছেন আমায়? কি অপরাধ আমার?

আকাশের চোখ দিয়ে ও পানি ঝরছে অনবদ্য।
বর্ষার জামা ভিজে গেছে আকাশের চোখের পানি দিয়ে। বর্ষা অনুভব কর‍তে পারছে আকাশ কান্না করছে। তাই বর্ষা আকাশকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আপনি প্রতিবার এমন কান্না করেন যখন আমি চলে যেতে চাই , আর এমন করবেন না প্লিজ। আমায় যেতে দিন। মানুষ এমন দোটানায় বাঁচতে পারে না। তার সারি সারি সপ্ন সাজাতে পারে না। সপ্ন সাজানোর ও কিছু নিয়ম থাকে ধাপ থাকে। আমার পছন্দ, রাগ আবেগ,অভিমান, অনুভুতি, আর ভালোবাসা কিছুই জায়গা করে নিতে পারেনি। ( এক হাতের পিঠ দিয়ে আবার চোখ মুছে নেয় বর্ষা।

দিন না আমায় মুক্তি আমি হাত জোর করছি। আমি আর পারছি না। বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা সবাইকে বলে দিন আপনি ও আমায় বিয়ে করতে চান না। আমায় মুক্তি দিন আমার এই নরকসমান অনুভব থেকে। মুক্তি দিন আমার এই দোটানায় পড়া অনুভুতি থেকে।

আকাশ কিছু বলছে না চুপ করে আছে বর্ষার বুকে। আকাশের এই পিনপতন নীরবতা বর্ষাকে আরো অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে নিরবতা ভীষণ কষ্ট দেয়। এই নিরবতা আরো দোটানায় ফেলে দেয় বর্ষাকে। কি চাই সে কেন স্পষ্ট করে বলে না? কেন এই জঠিল মোড়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছে বর্ষাকে!? বর্ষা বুঝতে পারে না।

আফরা গওহর বর্ষা বাবা মায়ের বড় মেয়ে। অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। বর্ষার মা বেঁচে নেই।
বর্ষার ছোট একটি বোন আছে আযহা গওহর তনিমা,তনিমা সবে কলেজে পা দিয়েছে । বর্ষার বাবা আনিস গওহর নাইম একজন ব্যবসায়ী। দু-মেয়ের কথা ভেবে আর বিয়ে করেনি। বর্ষা যখন বছরের মাঝামাঝিতে তখন তার এক মিউচুয়াল ফ্রেন্ডের মাধ্যমে আকাশ যুবায়েরের সাথে পরিচয় হয়। বর্ষার ওই ফ্রেন্ড আকাশের কাজিনও ছিলো। আকাশ ছিলো সদ্য পাশ করে বের হওয়া ডাক্তার। ইন্টার্নশিপ শেষে যোগ দিয়েছে একটা হসপিটালে। প্রথম দেখায় আলাপালোচনা ছিলো দুজনেরই অসাধারণ। এরপর ক্যাম্পাসে প্রায়শই দেখা যেতো আকাশকে। কখনো বাহানায় কখনো বা বলতো বর্ষার সাথেই দেখা করতে এসেছে।

একদিন বর্ষা কাধে ব্যাগ নিয়ে হল থেকে বের হচ্ছিলো
‘ কেমন আছেন?
‘ আপনি?! আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি কেমন আছেন?
‘ হ্যা আলহামদুলিল্লাহ এখন অনেক ভালো আছি।
‘ কেন আগে ভালো ছিলেন না?
‘ ছিলাম হয়তো, তবে এতোটা না।

বর্ষা একটা মুচকি হাসি দিয়ে হাটতে থাকে। গাছপালার ডাল আর পাতার ফাঁকফোকর দিয়ে আকাশের মুখে বার বার রোদ এসে পড়ছে। বর্ষা লক্ষ করলো আকাশকে তাতে চমৎকার লাগছে। নিরবতা কাটিয়ে

‘ কারো সাথে দেখা করতে এসেছেন?
‘ কেন কারো সাথে দেখা করতে না আসলে কি আপনার সাথে কথা বলা যাবে না?
‘ ঠিক তা নয় তবে আমি ভাবি কোন প্রয়োজনে আসেন।
‘ আপনার সাথে দেখা করা ও কিন্তু প্রয়োজন।
‘ আর সেটা কি?
‘ সব কথা বলতে হয়না। ওটা না হয় উহ্য থাক।

বর্ষার বিষয় গুলো খুব ভালো লাগতো। আকাশের এমন সরল উক্তি বর্ষাকে আরো উম্মাদ করে তুলতো।

আকাশ কখনো বলেনি সে বর্ষাকে ভালোবাসে। কিন্তু বর্ষা হয়তো আকাশকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলো। একদিন আকাশ সরাসরি বর্ষাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।

‘ আপনাকে বিয়ে করতে চাই আপনার মতামত কি?

বর্ষা প্রচন্ড অবাক হয়ে

‘ এই ভাবে কেউ বিয়ের প্রস্তাব দেয়?? তাছাড়া একজন ডাক্তার আরেকজন ডাক্তার কে বিয়ে করে। আপনি কেন আমায় বিয়ে করতে চাচ্ছেন?

‘ কোথাও কি লেখা আছে একজন ডাক্তার আরেকজন ডাক্তারকে বিয়ে করতে হয়? যদি ও বা কোন বইয়ে থাকে আমি সেই বই আবার নতুন করে লিখবো।

‘ আসলে এমনই হয় তাই বললাম। কোথাও লেখা আছে কিনা জানা নেই আমার।

বর্ষা আকাশকে বলে তার বাবার সাথে কথা বলার জন্য । আকাশের পরিবারের সাথে বর্ষার পরিবার বসে কথা বলে। বিয়ের সব ঠিক ঠাক হবার পর থেকে আকাশকে চিনতে পারে না বর্ষা। বর্ষার কখনো মনে হয় তার আকাশ আকাশ সমানই দূরে। আবার কখনো মনে হয় এইতো আকাশ জমিনে তাকে ইচ্ছে হলেই ছোঁয়া যায়।

আকাশ মাঝে মাঝে প্রচন্ড হিংস্র হয়ে উঠে মনে হয় বর্ষার সাথে ওর অনেক পুরনো হিসেব বাকি। আবার মনে হয় বর্ষাকে সে শত বছর আগে থেকে ভালোবাসে।

একদিন বর্ষা আকাশের জন্য রান্না করে খাবার নিয়ে গিয়েছিলো হসপিটালে। ভেবেছিলো আকাশ হয়তো অনেক খুশি হবে। কিন্তু আকাশ খুশি না হয়ে সব গুলো খাবার ফেলে দেয় রাগে। আর টেবিলে জোরে আঘাত করে বলে

‘ আমি তোমায় বলেছিলাম খাবার নিয়ে আসতে?

বর্ষা দু-হাত কানে চেপে ধরে এমন শব্দদূষণে। কান্না করে বের হয়ে যায় হস্পিটাল থেকে। বর্ষা পথে বসে অনেক কান্না করেছিলো। স্বাভাবিক হয়ে একটু লেট করে বাসায় যায় বর্ষা। বর্ষা বাসায় পৌছানোর আগে গিয়ে দেখে আকাশ বসে আছে। আকাশের সাথে কোন কথা না বলে
বর্ষা রুমে চলে যায় বর্ষার, পিছনে আকাশ ও বর্ষার রুমে গিয়ে বর্ষাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
‘ সরি আসলে তখন আমার মাথা কাজ করছিলো না। একটা পেসেন্টের অবস্থা অনেক ক্রিটিকেল ছিলো তাই মন ভালো ছিলো না।
‘ বর্ষা কিছু না বলে আকাশকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। প্রায় আধা ঘন্টা কান্নার পর বর্ষা আবার আকাশের জন্য খাবার নিয়ে আসে।
.
.
.
বর্ষার বুক থেকে আকাশ মাথা তুলতেই বর্ষার ভাবনার ছেদ ঘটে। আর একটা বড় দীর্ঘশ্বাস আসে। এটা ভেবে এমন আরো অনেক ঘটনা আছে। কিন্তু কেন করে আকাশ এমন বর্ষার সাথে? ভেবে পায় না বর্ষা৷

আকাশ উঠে বসে বর্ষার দু-হাত ধরে
‘ বাহিরে সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য তুমি বাহিরে গিয়ে এখনই বলবে বিয়ে ভাঙার কথা তুমি আমার সাথে অভিমান করে বলেছো। যা বলেছো আমার উপর রাগ করে। তুমি আমাকেই বিয়ে করতে চাও।

বর্ষা কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যায়। মুখ ধোয়ার জন্য।

এই দিকে আকাশ মিনমিন করে বলছে।
‘ আ’ম সরি বর্ষা। আমি তোমায় আকাশ সমান ভালোবাসি তবে সাথে আকাশ সমান ঘৃণা ও করি। আর দুটোই তোমার সহ্য করতে হবে। তোমার হাতে আর কোন অপশন নেই……

চলবে…….

দ্বিতীয় বসন্ত পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0

#দ্বিতীয়_বসন্ত
#পর্বঃ১০এবং শেষ
#Arshi_Ayat

ইশতিয়াক রেজাসহ ওনার পুরো ফ্যামিলি এসেছে আর না চাইতেও অহর্নিশকেই ওদের রিসিভ করতে হয়েছে।এদিকে অহির শরীর খারাপ।ঘুমালেই কিসব স্বপ্ন দেখে। ইমিডিয়েটলি ডাক্তার ইয়াসমিনের সাথে কথা বলতে হবে।আজই দেখা করার কথা ছিলো কিন্তু মাঝখান থেকে ইশতিয়াক রেজার আগমনে সব ভেজতে গেলো।তবুও আজই অহর্নিশ চেষ্টা করবে একবার ডাক্তার ইয়াসমিনের সাথে দেখা করার।

ওনাদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে অহর্নিশ হাসপাতালে চলে গেলো।মিসেস অনামিকা যেতে না করেছিলো কিন্তু অহর্নিশ কাজ দেখিয়ে চলে যায়।হাসপাতালে সারাদিন ডিউটি করে ফেরার সময় ডাক্তার ইয়াসমিনের চেম্বারে গেলো অহর্নিশ।দুই একটা সৌজন্যমূলক কথা শেষ করে অহর্নিশ অহির সমস্যা গুলো বলল।সব শুনে উনি একটু উদ্বিগ্ন গলায় বললেন,’আমার মনে হয় ওনার স্মৃতিগুলো আস্তে আস্তে মনে পড়ছে।এটা ভালো লক্ষ্মণ কিন্তু একটা শঙ্কা আছে।বর্তমান ভুলে যাওয়ার চান্স খুব বেশি।’

‘লক্ষ রাখুন ওনার ওপর আর কাল একবার নিয়ে আসবেন।’

‘আচ্ছা।’
অহর্নিশ চিন্তিত মুখে ঘরে এলো।অহি স্মৃতি ফেরার বিষয়টা বেশ পীড়া দিচ্ছে ওকে।শুধু বারবারই মনে হচ্ছে যদি ও ভুলে যায় সবকিছু!না চিনতে পারে অহর্নিশকে তখন?

সন্ধ্যার সময় বাসায় এসে প্রথমেই দেখলো বসার ঘরে সেজুতি আর ওর বাবা মা সাথে পূর্ব চৌধুরী আর মিসেস অনামিকাও আছেন।তাদের সকলেই গল্প মেতে উঠেছেন।অবশ্য বাল্যকালের বন্ধু বলে কথা!অহর্নিশ সবার দিকে তাকিয়ে একটু সৌজন্য হেসে নিজের ঘরে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে অহির ঘরে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু তার আগেই ওর ঘরে সেঁজুতি চলে এসেছে।সেঁজুতিকে দেখে অহর্নিশ ভেতরে ভেতরে বিরক্ত হলেও প্রকাশ করলো না।একটা সৌজন্য হাসি দিয়ে বলল,’আরে সেঁজুতি কেমন আছো?’

‘এইতো ভালো তুমি?’

‘ভালো।তো পরীক্ষা কবে তোমার?’

‘সামনের মাসে বোধহয়।’

‘ওহ!হঠাৎ শিলিগুড়ি আসার কোনো কারণ আছে নাকি?’

‘হ্যাঁ তোমার বাবা মা’ই তো আসতে বলল।’

অহর্নিশ একটু অবাক হয়ে বলল,’আমার বাবা মা?’

‘হ্যাঁ তোমার বাবা মা’ই পাপাকে ফোন দিয়ে আসতে বলল।’

‘ওহ!আচ্ছা তুমি একটু বসো আমি আসছি।’
সেঁজুতিকে নিজের ঘরে বসতে বলে অহর্নিশ অহির ঘরে চলে এলো।অহর্নিশকে দেখে অহি বলল,’কখন আসলেন?’

‘এইতো একটু আগে।’

‘ওহ!আচ্ছা একটা লকেট আছে না আপনার কাছে যেটা আপনি আমায় দেখিয়েছিলেন।’

‘হ্যাঁ।’

‘সেটা একটু আনবেন?’

অহর্নিশ দ্রুত পায়ে নিজের ঘরে গিয়ে অহিকে লকেট’টা এনে দিলো।অহি লকেটের ছবি দুইটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,’অহর্নিশ জানেন এই মহিলাটা আমার মা।’

অহর্নিশ প্রচন্ড বিষ্ময় নিয়ে অহির দিকে তাকালো।অহিও অহর্নিশের দিকে তাকিয়ে বলল,’হ্যাঁ ইনিই আমার মা।আজ দুপুরে জ্ঞান হারিয়েছিলাম হঠাৎ।তারপর জ্ঞান ফিরতেই সব মনে পড়লো।’

বিষ্ময়ে অহর্নিশের মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।অহি লকেট’টা নিজের গলায় পরতে পরতে বলল,’আমি বাংলাদেশি।আমার নাম প্রিয়তি।আমার মা মারা গেছে।ছয়মাস হবে।আত্মহত্যা করেছিলো।বাবার দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিতে পারে নি।আমিও পারি নি।তবে মা বেশি আবেগপ্রবণ ছিলো সহ্য করতে পারে নি।অকালে আমায় ছেড়ে চলে গেছে।মা যাওয়ার পর পনেরো দিন খুব কষ্টে পার করছিলাম।তারপর ছোটো খালামণি বলল তাদের বাসায় যেতে।রাজি হলাম।ভাবলাম গিয়ে ঘুরে আসলে মন্দ হবে না।খালামণি খুব ভালোবাসে আমাকে।আমার খালার বাসা বান্দরবান।রওনা হয়েছিলাম সকাল সকাল তারপর হঠাৎ একটা বাস এক্সিডেন্টে আমার কিছু মনে নেই।কিভাবে এখানে আসলাম সেটাও কিছু জানি না।তারপর যা হয়েছে সব তো আপনি জানেন।’

এ পর্যন্ত বলেই প্রিয়তি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।তারপর বলল,’আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে।আমি বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাই।’

অহর্নিশ এতক্ষণ কিছু বললেও এখন বলল,’তাহলে আমি?আমাদের ভালোবাসা?’

‘আপনাকে যে ভালোবেসেছে সে অহি।প্রিয়তি আপনাকে ভালোবাসে নি।প্রিয়তির জীবন এতো সহজ না।’

‘কি বলছো তুমি এগুলো?তুমি কি ভুলে গেছো আমাদের কাটানো সময়গুলো?’

‘মনে রেখে কি লাভ?এসব মিছে আবেগ।আপনি ভালো থাকবেন।আপনার ভবিষ্যৎ জীবন সুন্দর হোক।আমি বোধহয় কাল ফিরবো।’

‘অহি!আমি তো তোমাকে ভালোবাসি।তুমি এতো সহজে সবকিছু ছেড়ে যেতে পারো না।’

‘অহি না প্রিয়তি।আমি প্রিয়তি।আর অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।আমার জন্য এতোটা করেছেন বলে তা নাহলে আমি হয়তো আজ বেঁচেই থাকতাম।আর হ্যাঁ আপনাদের এখান থেকে কিভাবে যেতে হয় আমি তো জানি না একটু ব্যবস্থা করে দিয়েন।’

অহর্নিশ তৎক্ষনাৎ কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেঁজুতি চলে এলো।প্রিয়তিকে দেখে বলল,’আপনি কে?’

প্রয়তি মৃদু হেসে বলল,’আমি?আমি প্রিয়তি।অহর্নিশের ফ্রেন্ড।আর আপনি?’

‘আমি ওর ফিয়ন্সে।’

‘ওহ!কংগ্রাচুলেশনস।বিবাহিত জীবনে সর্বোচ্চ সুখ কামনা করি।’

সেঁজুতির সাথে কথা বলে প্রিয়তি বাইরে আসতেই মিসেস অনামিকার মুখোমুখি পড়লো।ওনার সাথে দেখা হতেই প্রিয়তি বলল,’আন্টি আমি কাল চলে যাবো।আমার সব মনে পড়েছে।আপনাকে জানা অজানায় কোনো কষ্ট দিয়ে থাকলে মাফ করবেন।’

মিসেস অনামিকা কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে বললেন,’তোমার সত্যিই সব মনে পড়েছে?’

‘জ্বি আন্টি।’

আজকে সারারাত অহর্নিশ প্রিয়তির সাথে কথা বলার চেষ্টায় ছিলো কিন্তু পারে নি।প্রিয়তি কোনো সুযোগ দেয় নি।ফোন বন্ধ করে রেখেছিলো আর দরজাও বন্ধ রেখেছিলো।অহর্নিশের প্রচুর কষ্ট হচ্ছিলো।এই সাতাশ বছরের জীবনে ও খুব কমই কান্না করেছে কিন্তু আজকে চোখের পানি উপচে পড়ছে।ভেবেছিলো হয়তো অহির স্মৃতি ফিরলে ওকে চিনতে পারবে না।

অবশেষে বিদায়ের সময় চলে এসেছে।অহর্নিশ কিছু না করলেও মিসেস অনামিকা প্রিয়তির যাওয়ার সব ব্যাবস্থা করে দিলেন।যাওয়ার সময় অহর্নিশের সাথে দেখা করে নি।কি দরকার শুধু শুধু দুঃখ বাড়িয়ে।অহর্নিশও অভিমানে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিলো।আশা ছিলো শেষ বেলায় হয়তো মত পাল্টাবে।থেকে যাবে কিন্তু না, যার যাওয়ার সে যাবেই।

ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।প্রিয়তি নিজের সীটে হেলান দিয়ে বসে আছে।চোখ থেকে দু’ফোটা অশ্রু বিনা দ্বিধায় গড়িয়ে পড়লো।

‘যেতে নাহি দিবো হায়,
তবুও ছেড়ে চলে যেতে হয়।’

১ সপ্তাহ পর……
অহর্নিশ ওয়ারড্রব থেকে একটা শার্ট বের করতেই সেখান থেকে একটা চিঠি পেলো।কৌতূহল বশত চিঠিটা হাতে নিলো।তারপর খুলতেই দেখলো ঝকঝকে হাতের লেখায় কিছু কথা।

অহর্নিশ,
আপনাকে প্রিয় বলে সম্বোধন করবো না।কারণ আপনাকে প্রিয় বলার অধিকার আমার নেই।আমি অবেলার অতিথির মতো আপনার জীবনে এসেছিলাম সেভাবেই চলে যাচ্ছি।আমাদের গন্তব্য আলাদা।আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য আলাদা।সেটা এক হতে পারে না।যেকারণে আমি আমার মা’কে হারিয়েছি সেই একই ঘটনা আমি আবার পুনরায় করতে পারবো না।সেঁজুতি মেয়েটা আপনাকে অনেক ভালোবাসে।আমি চাইনা আমার জন্য ওর রঙিন স্বপগুলো ভেঙে যাক।আমার জন্য ও নিজের ক্ষতি করুক।যেমনটা আমার মা করেছে।আমি চাই আপনারা ভালো থাকুন।
আপনাকে আমি সত্যিই খুব ভালোবেসেছি।আপনি আমার জীবনের দ্বিতীয় বসন্ত।আমার জন্ম পহেলা বসন্তে।আমার জীবনে ওটাই একমাত্র বসন্ত ছিলো কিন্তু এখন দ্বিতীয় বসন্ত আপনি।কারণ আপনি না থাকলে আমি হয়তো বেঁচেই থাকতাম না।আমার দ্বিতীয় বসন্ত হয়ে আপনি সারাজীবন আমার মনের মধ্যে বাস করবেন।ভালোবাসি আপনাকে!

ইতি অহি

চিঠিটা পড়ে অহর্নিশ হাসতে হাসতেই কেদে ফেললো।পেয়ে হারানোর ব্যাথা পাঁজরে পাঁজরে ছড়িয়ে পড়েছে।

সমাপ্ত.
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

দ্বিতীয় বসন্ত পর্ব-৮+৯

0

#দ্বিতীয়_বসন্ত
#পর্বঃ৮_৯
#Arshi_Ayat

জুতোজোড়া হাতে নিয়ে নরম ঘাসের ওপর হাতে হাত রেখে হাঁটছে দুজনে।নিজেদের মধ্যে কথা হচ্ছে থেমে থেমে।কখনো অহি হাসছে তো কখনো অহর্নিশ হাসছে আবার কখনো দুজনকেই একসাথে হাসতে দেখা যাচ্ছে।দূর থেকে দেখে মনে হয় একজোড়া মুক্ত কপোত-কপোতী মনের সুখে হাঁটছে।
——————
মিসেস অনামিকা বাসায় এসে অহর্নিশ,অহি দুজনের একজনকেও না দেখে ঘরে গিয়ে স্বামীকে জিগ্যেস করলেন,’অহর্নিশ কোথায় গিয়েছে জানো?’

‘হ্যাঁ ও তো ওর বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গিয়েছে।’

‘আর ওই মেয়েটা?’

‘এটা তো জানি না।’পূর্ব চৌধুরী চিন্তিত হয়ে বললেন।

মিসেস অনামিকা রুষ্ট হয়ে বলল,’এখনো বুঝতে পারছো না?দুজনে একসাথে গায়েব হওয়ার মানে কি?দেখো গিয়ে প্রেম করছে দু’জনে।’

‘কি করা যায় বলো তো?’

‘সেঁজুতির বাবা মা’কে ফোন দাও।যেনো দশদিনের মধ্যে এখানে চলে আসে।ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা দিয়ে রাখি।তারপর ওর পরীক্ষা শেষ হলে বড়ো করে করা যাবে।কিন্তু এখন এসব আটকাতে হলে এটার বিকল্প আমি দেখছি না।’

‘আচ্ছা আমি ইশতিয়াক রেজা’র সাথে কথা বলছি।আর তুমি একটু মেয়েটাকে চোখে চোখে রেখো।’

আরো কিছুক্ষণ তারা শলা পরামর্শ করলো।তারপর পূর্ব চৌধুরী সেজুতির বাবাকে ফোন দিলেন আর মিসেস অনামিকা বসার ঘরের সোফায় এসে বসলেন যেনো মেয়েটাকে কিছু কথা শোনাতে পারে।

সন্ধ্যার কিছু পরেই অহি প্রথমে বাসায় ঢুকলো।ওকে ঢুকতে দেখেই মিসেস অনামিকা টিভিটা বন্ধ করে সোজা হয়ে বসলেন।অহিকে চলে যেতে দেখে বললেন,’এই মেয়ে এদিকে আসো।’

কিছুটা ভীত মুখে অহি ওনার সামনাসামনি বসলো।ভেতরে ভেতরে ভীষণ ভয় পাচ্ছে সে।মিসেস অনামিকা গম্ভীর স্বরে বললেন,’এতক্ষণ কোথায় ছিলে?’

অহি কিছুটা ইতস্তত কন্ঠে বলল,’এই তো আন্টি কাছাকাছি একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম।’

‘তাই নাকি?তা এতো মিথ্যে কথা কোথাও শিখেছো?’মিসেস অনামিকার গলায় তাচ্ছিল্যের হাসি।

অহি চুপ করে রইলো।অপমান গুলো নিতে পারছে না সে।দৌড়ে ঘরে চলে যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সেটা অসভ্যতা হবে।তাই কোনো কথা না বলে নিচের দিকে চেয়ে রইলো।মিসেস অনামিকা আগাগোড়া একবার অহিকে দেখে কঠোর গলায় বললেন,’দেখো মেয়ে আমার বাড়িতে খাচ্ছো,থাকছো আমি কিচ্ছু বলছি না কিন্তু আমার ছেলের পিছনে পড়ো না।ক’দিন বাদেই ওর দিবো আমার তাই কোনোভাবেই ওর কাছাকাছি আসবে না আর কতোদিন অন্যের বাসায় শুয়ে বসে খাবে।এবার নিজে নিজেই কিছু করো।স্মৃতি হারিয়ে যাওয়ার নাটকতো বেশিদিন চলবে না।অহর্নিশের বিয়ে হলো ওর বউ আসলে তোমাকে কিন্তু চলে যেতে হবে।বুঝতেই তো পারছো!যাক আর কিছু বললাম না ঘরে যাও।’
এটা বলেই মিসেস অনামিকা উঠে দাড়ালেন।তারপর গটগট করে নিজের রুমে চলে গেলেন।উনি চলে যেতেই অহি বাঁ হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দ্রুত পায়ে ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।অতিশয় যন্ত্রণায় বিছানায় উপুড় হয়ে বালিশে মুখগুজে অশ্রুবিসর্জন দিতে লাগলো।

অহর্নিশ বাসায় এসে নিজের ঘরে চলে গেলো।সে একটু আগের কথোপকথনের কিছুই জানে না।মিসেস অনামিকাও অহর্নিশকে কিছু বললেন না।তাই ও ভেবেই নিয়েছে ঘরের কেউ বুঝতে পারে নি।ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে অহিকে কল দিতেই দেখলো ফোন বন্ধ।চার্জ নেই ভেবে আর ফোন দিলো না।পরে কথা বলা যাবে।

রাতে খাবার টেবিলে পূর্ব চৌধুরী খেতে খেতেই বললেন,’দিনকাল কেমন যাচ্ছে অহর্নিশ?’

‘এইতো ভালোই বাবা।’যদিও এই টাইপের প্রশ্নের মানে অহর্নিশ বুঝতে পারলো না তবুও সরল মনেই উত্তর দিলো।

‘ভালো হলেই ভালো।শোনো তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।’

অহর্নিশ কৌতুহলী গলায় বলল,’কি সারপ্রাইজ বাবা?’

‘সেটা সারপ্রাইজটা পেলেই জানতে পারবে।’

‘ওহ!আচ্ছা।আমি অপেক্ষা করবো।’এটা বলেই অহর্নিশ স্মিত হাসলো।

কাঁদতে কাঁদতে না খেয়েই ঘুমিয়ে গেছে অহি।ফোন বন্ধ বলে অহর্নিশ খবরও নিতে পারে নি।তবে সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ও একবার অহির ঘরের সামনে এসেছিলো কিন্তু ভেতর থেকে লক বলে ঢুকতে পারে নি।বাইরে থেকে আসার পর থেকে কি এমন হলো যে ফোন বন্ধ আবার এখন দরজাও বন্ধ!এবার কিঞ্চিৎ সন্দেহ হলো অহর্নিশের।তবে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।হতাশ হয়ে অহির রুম থেকে ফিরে নিজের রুমে চলে গেলো সে।

রাতের শেষ প্রহর!বিছানায় হাটুমুড়ে মাথা ধরে বসে আছে অহি।ভিষণ যন্ত্রণা করছে মাথাটা।মন হচ্ছে ছিড়ে পড়ে যাবে।প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে।স্বপ্নের মধ্যে কিছু একটা দেখে ধড়ফড়িয়ে উঠেছে।তারপর থেকেই মাথায় ভিষণ যন্ত্রণা।কিন্তু স্বপ্নে যা দেখলো তার কোনো আগা মাথাই নেই।বোঝাই যাচ্ছে না এটা কেনো দেখেছে।
কষ্ট করে টলতে টলতে কোনোমতে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে হাঁটু মুড়ে বসে রইলো।ঠান্ডা পানির ছোঁয়ায় মাথাব্যাথাটা নামতে লাগলো।তবে প্রচন্ড শীত করছে।শীতে গা ঠকঠক করে কাপছে।তাড়াতাড়ি করে জামা কাপড় পাল্টে বিছানায় এসে বালিশে হেলান দিয়ে বসলো।এখনও মাথাব্যথাটা আছে তবে অতো তীব্র না।কিন্তু বারবারই মনের চোখের সামনে স্বপ্নের দৃশ্য ভাসছে।দৃশ্যটা এমন যে একটা মহিলার শরীর ফ্যানের মধ্যে ঝুলছে কিন্তু চেহারাটা অস্পষ্ট!আশেপাশে আরো অনেককেই দেখতে পেয়েছে তাদের চেহারাও অস্পষ্ট!কেবল স্বপ্নের মধ্যে তার চেহারাটাই স্পষ্ট!সে ওই লাশটা দেখে জ্ঞান হারিয়েছে আর তখনই ঘুম ছুটে যায়।কিন্তু এটা কেনো?এই স্বপ্নের সাথে সম্পর্ক কি?এটা কি হারানো স্মৃতির অংশবিশেষ?তাহলে ওই মহিলাটাই বা কে?আমার আপন কেউ?আমি কাঁদছিলাম কেনো তার লাশ দেখে?ওই মহিলাটাই বা আত্মহত্যা কেনো করলো?
একগাদা প্রশ্নে অহির মাথা ভার হয়ে রয়েছে।অবেলায় গোসলের ফলে এখন কাশিও আসছে।কি মুসিবত!ইতিমধ্যে চার/পাঁচবার কাশি দেওয়াও শেষ।তবে শারীরিক অসুস্থতা ওর মনে এখন আর প্রভাব ফেলছে কেবলই নিজের অতীতের সাথে স্বপ্নের কানেকশন খুঁজতে চেষ্টা করছে।কিন্তু এখন আর কিচ্ছু মনে পড়ছে না।মনে করতে গেলে মস্তিষ্কে প্রেশার পড়ে!ব্যাথা হয়!তবুও মনে এগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে।শুয়ে শুয়ে এগুলো ভাবতে ভাবতেই আবার ঘুমিয়ে পড়লো সে।

সকালে উঠে ফ্রেশ হতে না হতেই হাসপাতাল থেকে জরুরি কল এলো অহর্নিশের।কলটা পেয়ে দ্রুত তৈরি হয়ে হাসপাতালে রওনা হলো।আজকে নাস্তাটাও করা হয় নি অহির সাথেও দেখা হয় নি।হাসপাতালে পৌঁছুতেই ইমার্জেন্সিতে যেতে হলো।এরপর তিনঘণ্টায় অপারেশন শেষ করে চেম্বারে এসে বসলো।ক্ষিধেয় পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।এখনি নাস্তা এসে পড়বে।যেহেতু আজ অহির সাথে কথা হয় নি তাই প্রথমেই অহিকে ফোন দিলো।দুবার রিং হতেই অহি কল ধরলো।অহর্নিশ ক্লান্ত কন্ঠে বলল,’সরি জানপাখি আজ হঠাৎ একটা ইমার্জেন্সি পড়ে যাওয়ায় দেখা করতে পারি নাই।এবার বলো তুমি খেয়েছো?’

‘হ্যাঁ।আপনি?’

কাল রাতে গোসল করায় অহির ঠান্ডায় প্রায় গলা বসে গেছে।তাই কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে।আর কথাও অস্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।ফোনের এপাশ থেকে ওর অস্পষ্ট কন্ঠ শুনে অহর্নিশ চিন্তিত হয়ে বলল,’কি হয়েছে তোমার?গলা এমন শোনাচ্ছে কেনো?’

‘কিছু না একটু ঠান্ডা লেগেছে?’

অহর্নিশ একবার বাইরে তাকিয়ে দেখলো বৃষ্টি নেই।তারপর বলল,’বাইরে তো বৃষ্টিও নেই তাহলে ঠান্ডা লাগালে কিভাবে?’

‘ওই তো এমনিই লেগে…’বলতে বলতেই অহি জোরেশোরে একটা কাশি দিলো।কাশির শব্দ শুনেই বোঝা যাচ্ছে সিরিয়াস লেভেলের ঠান্ডা লেগেছে।অহর্নিশ রাগী গলায় বলল,’আমাকে ডাক্তারি পড়াও?আমি বুঝবো না ভাবছো?এমনি এমনিই তোমার ঠান্ডা লাগছে।সিরিয়াসলি অহি তুমি আমাকে মিথ্যে বলছো!তুমি জানো তোমার মিথ্যে আমার কাছে ধোপে টিকবে না।বলো কিভাবে লাগলো ঠান্ডা?কি উল্টাপাল্টা কাজ করছো?’

‘আসলে কাল রাতে মাথাব্যথা হওয়ায় গোসল করছিলাম।’অহি কিছুটা ভীত কন্ঠে বলল।

‘ও মাই গড!তুমি মধ্যরাতে মাথাব্যথার জন্য গোসল করছো?মানে আমি বুঝি না অহি!তোমার কি সেন্স একবারেই চলে গেছে?কোন বুঝে তুমি ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে গেলে।আমাকে একবার কল দিতে!আর কাল রাতে ফোন বন্ধ তারওপর দরজাও বন্ধ ছিলো কেনো?’কঠোর শোনালো অহর্নিশের কন্ঠে।

‘আসলে,মানে আমার খুব ঘুম পেয়ে গিয়েছিলো তাই দরজা বন্ধ করে শুয়েছিলাম পরে আর খুলতে মনে নাই।আর ফোনে চার্জ ছিলো না।তারপর মাঝরাতে হঠাৎ প্রচন্ড মাথাব্যথা হয় তাই গোসল করেছি।আপনাকে ডাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনার ঘুম নষ্ট করতে ইচ্ছে হলো না।’কোনোমতে মিথ্যা কথাগুলো বলে ফেললো ও

‘উফফ!ঘুম মাই ফুট।রাগ লাগছে ভিষণ।এখন যাও মনিষার মা’কে বলো তোমাকে আদা চা করে দিতে।সন্ধ্যার সময় আমি এসে দেখবো।আজকে সারাদিন একটু পরপরই আদা চা খাবে।’

এটা বলেই খট করে ফোনটা রেখে দিলো অহর্নিশ।আসলেই মেজাজ গরম হয়ে গেছে।একে তো তিনঘণ্টা ধরে একটা ক্রিটিকাল অপারেশন ছিলো তারওপর ক্ষিধেও লেগেছে চরম আর এদিকে অহির গাধামি দেখে আরো বেশি রাগ উঠছে।

অহর্নিশ ফোন রাখার পরও অহি গেলো না মনিষার মায়ের কাছে চায়ের কথা বলতে।আসলে ভালো লাগছে না তার।সবকিছু কেমন জেনো বিষের মতো লাগছে।কিন্তু একটু পরই মনিষার মা একটা বড়ো মগে করে আদা চা দিয়ে গেলো।অহি বুঝতে পেরেছে এটা অহর্নিশেরই কাজ।তবে খেতেও ভালো।লাগছে না আবার মা খেলেও গতি নেই।এক চুমুক দিতেই ফোনটা বেজে উঠলো।অহর্নিশের ফোন এটা হলফ করেই বলা যায়।অহি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো,’আমি জানতাম তুমি বলবে না তাই আমাকেই বলতে হলো।এখন তাড়াতাড়ি শেষ করবে চা।একদম গরম গরম থাকতে।এটা শেষ হলে আবার দিয়ে যাবে।ভুলেও না খাওয়ার কথা মাথায় আনবে না।তোমাকে আজ আমি চায়ে ডুবিয়ে রাখবো।এটাই তোমার সাস্তি।’

‘এতো চা কিভাবে খা…..’কথা শেষ করতে না করতেই আবার কাশি।

‘যেভাবে কাল রাতে আক্কেল আন্দাজ বিসর্জন দিয়ে গোসল করছো সেভাবেই খাবা।সন্ধ্যায় এসে তোমার বিহিত আমি করবো।’

‘সরি আর এমন করবো…. ‘আবার কাশি।অহর্নিশ হতাশ হয়ে কপাল চাপড়ে বলল,’আর কথা বলা লাগবে না।এখন তাড়াতাড়ি খাও।রাখছি।’

আজকে সারাদিন অহর্নিশ ফোন করে করে অহির খবর নিয়েছে।যখনই ফাঁক পেয়েছে তখনই।মাঝেমধ্যে না খাওয়ার বাহানা দেওয়ায় অহিকে দু’চারটা বকাও গিফট করেছে।আর বেচারি আজ নাহলে ৯/১০ মগ চা খেয়েছে।পাকস্থলীতে এখন চায়ের রাজত্ব।চা খেতে খেতে মুখ তিতা হয়ে গেছে।এখন চায়ের ওপর জাস্ট বিরক্ত সে।আর এক ফোটা চাও কেউ খাওয়াতে পারবে না ওকে।তবে উপকার হয় নি বললে ভুল।আগের থেকে গলাটা একটু পরিস্কার হয়েছে।বন্ধ নাকের দরজা খুলেছে।গলা ব্যাথাটাও কম।

শরীরটা অবসন্ন লাগায় বিকেলের দিকে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলো।অহর্নিশ যখন সন্ধ্যায় আসলো তখনও অহি ঘুমেই ছিলো।ফ্রেশ হয়ে একবার বাবা মায়ের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো তারা টিভি দেখে।অহর্নিশ চুপচাপ অহির ঘরে এসে ওর কপালে হাত দিলে গা সামান্য গরম।জ্বর এখনো পুরোপুরি আসে নি।এখনি কিছু খাইয়ে ঔষুধ খাওয়াতে হবে।অহর্নিশ অহির হাত ধরে কোমল কন্ঠে বলল,’অহি,ওঠো।খেতে হবে তোমার।খেয়ে ঔষধ খাবে।’

সে ওঠার বদলে আরো গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলো।অহর্নিশ আবারও ডাক দিলো।অহি চোখ মুখ কুঁচকে ঘুমের ঘোরেই বলল,’ যান তো!আর চা খাবো না।’

এবার অহর্নিশ হেসে ফেললো।সারাদিন চা খেয়ে বিরক্ত হয়ে গেছে বোঝাই যাচ্ছে।অহর্নিশ একটু ঝুঁকে ওর কানেকানে বলল,’আর চা খেতে হবে না।ওঠো অহি।’

এবার হাই তুলে চোখ খুললো অহি।ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,’কখন এলেন আপনি?’

‘এইতো আধঘন্টা হবে।সকালের চেয়ে বেটার লাগছে গলা।’

অহি রুষ্ট হয়ে বলল,’কচু লাগছে।চা খেতে খেতে আমার জিহ্বা পুড়ে গেছে।মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে গেছে।’

‘ঠিকই আছে।আরো যাও মাঝরাতে ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে।যদি বলো তাহলে আজকে মাঝরাতে তোমাকে খালের পানিতে চুবিয়ে আনবো।তাতে যদি তোমার শিক্ষা হয়।’

অহি ঠোঁট উল্টে মন খারাপ করে বলল,’কি করবো!তখন অনেক মাথাব্যথা ছিলো কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।যা মনে হয়েছে করেছি।’

অহর্নিশ আলতো করে অহির গালে দুইহাত রেখে বলল,’আজকে আবারও বলছি।কখনো কোনো সমস্যা হলে আগে আমাকে বলবে।আমি তো আছি!রাত হোক দিন হোক।২৪ ঘন্টা তোমার জন্য সার্বিস খোলা থাকবে।’

অহর্নিশ কথায় অহি মৃদু হাসলো।মনিষার মাকে দিয়ে গরম ভাত আনিয়ে অহিকে খাইয়ে ঠান্ডা আর জ্বরের ঔষধ খাওয়ালো।তারপর গলায় মাফলার পেচিয়ে দিলো।তারপর কিছুক্ষণ কথা বলে নিজের ঘরে চলে গেলো।যাওয়ার সময় মিসেস অনামিকার সামনে পড়তেই তিনি জিগ্যেস করলেন,’অহর্নিশ ওই মেয়েটার ঘরে কেনো গিয়েছো?’

‘মা ও অসুস্থ।’

‘কি হয়েছে ওর।’

‘ঠান্ডা লেগেছে অনেক।সাথে জ্বরও আছে দেখলাম।’

মিসেস অনামিকা বিড়বিড় করে বললেন,’সব নাটক।আমার ছেলের কাছ থেকে সিমপ্যাথি পাওয়ার জন্য করছে এগুলো।সমস্যা নেই।আর কয়েকটা দিন!’

মায়ের বিড়বিড় করে বলা কথাগুলো অহর্নিশ বুঝতে না পারলেও এটা বুঝতে পেরেছে যে এগুলো অহিকে উদ্দেশ্য করেই বলা।তবে অহর্নিশ কিছু বলল না।একটা সৌজন্যমূলক হাসি বিনিময় করে নিজের ঘরে চলে এলো।

ঘড়িতে এখন সাড়ে তিনটা বাজে বোধহয়।আজকেও অহি কালকের স্বপ্নটা দেখেছে।আজকেও কালকের মতোই তীব্র মাথাব্যথা।দশমিনিট ধরে মাথা চেপে বসে ছিলো সে।তারপর কোনোমতে অহর্নিশকে কল দিলো।মাঝরাতে ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় অহর্নিশের বেডসাইড থেকে ফোনটা নিতেই দেখলো অহির ফোন।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অহি করুণ কন্ঠে বলল,’আমার খুব খারাপ লাগছে।আপনি একটু আসুন না।’

‘আসছি,আসছি।আমি আসছি।’দ্রুত ফোনটা নিয়ে অহর্নিশ অহির ঘরে চলে এলো।অহি তখনো মাথা চেপে ধরে রেখেছে।অহর্নিশ ঘরে এসে লাইট জ্বালিয়ে ব্যস্ত কন্ঠে বলল,’কি হয়েছে অহি?খারাপ লাগছে খুব?’

‘মাথাব্যথা করছে খুব।অসহ্য লাগছে।’

অহর্নিশ দ্রুত মাথা ব্যাথার ঔষধ নিয়ে এলো নিজের ঘর থেকে।ঔষধটা খাইয়ে মাথাব্যথার বামটা মাথায় লাগিয়ে আবার শুইয়ে দিয়ে ওর বিছানার পাশে বসে মাথা মালিশ করে দিতে লাগলো।অহি চোখ মুখ খিঁচে শুয়েছিলো।ব্যাথা যেনো কমার বদলে বাড়ছে।তবে একটা সময়ে মালিশ করতে করতে আর ঔষধের প্রভাবে ব্যাথাটা কমে গিয়েছিলো।তারপর আস্তে আস্তে অহি ঘুমিয়েও গিয়েছিলো।অহর্নিশ যখন অহির ঘর থেকে বর হয় তখন রাত সাড়ে চারটা।নিজের ঘরে এসে বিছানায় বসলো।মাথায় চিন্তা ঝেকে বসেছে।পরপর দুইদিন ধরে মাথাব্যথার কারণ কি?কাল ডাক্তার দেখাতে হবে।কোনো সমস্যা হলে প্রথম থেকেই পরিত্রাণ করা ভালো।

সকাল সকাল মিসেস অনামিকা অহর্নিশের ঘরে এলেন।অহর্নিশ অহির ঘর থেকে আসার পর আর ঘুমায় নি।মা’কে তাও এতো সকাল নিজের ঘরে দেখে বুঝতে পারলো কোনো জরুরী কথা বলতেই এসেছে।তাই কোনোরকম ভণিতা না করেই বলল,’কিছু বলবে?’

‘হ্যাঁ আজ তোর ইশতিয়াক আঙ্কেল আসবেন।ওনাদেরকে আনতে যাবি তুই।’

অহর্নিশ কিছুটা বিস্মিত হয়ে বলল,’হঠাৎ?কোনো কারণ আছে নাকি?’

‘হ্যাঁ।আছে বলেই আসছে।তুই আনতে যাবি।’

‘কিন্তু মা আমার তো ডিউটি আছে।’

‘থাক।একদিন ছুটি নিবি।’

‘মা ডাক্তারদের ছুটি হয় না।তুমি তো জানোই।’

‘আমি কিছু শুনতে চাই না।তুমি যাচ্ছো!’

এটা বলেই মিসেস অনামিকা চলে গেলেন।উনি যাওয়ার পর অহর্নিশের কপালে সুক্ষ্ম চিন্তার ভাজ পড়লো।হঠাৎ ইশতিয়াক রেজা’র এখানে আবির্ভাবের কারণ কি?একা আসছেন নাকি ওরা সবাই আসছে!

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)