Wednesday, July 9, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1406



বর্ষাস্নাত রাত পর্ব-০৬

0

#বর্ষাস্নাত_রাত
লেখা – জান্নাতুল ফেরদৌস মাটি
পর্ব – ৬
________________
আরিফুল কন্ঠস্বর লঘু করে বলল,
” আপাতত নেই। ”
শেখ সাহেব বললেন,
” ভবিষ্যতে প্রমাণ সাপেক্ষে হতে পারে তাই তো?”
” হ্যাঁ, সেটা হতেই পারে। বুঝতেই তো পারছেন মার্ডার কেস, সন্দেহ ব্যাপারটা সবার দিকেই ঘুরঘুর করছে। ”
” তা বেশ এতে আমার কোনো সমস্যা নেই। কারণ আমি বিশ্বাস করি সত্যের জয় সর্বদা হয়। আমার ভাই পাজি হতে পারে, কথার ভাজে আমার ক্ষমতার প্রভাব আমি না দেখালেও সে ভালোই দেখাতে পারে কিন্তু কারো জীবন নেয়ার মত কাজ আমার ভাই করবে না। এ ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত। তাই আপনারা একবার না হাজারো বার সন্দেহ করলেও আমার কোনো সমস্যা নেই। ”
” ধন্যবাদ। ”
” এখন কথা হচ্ছে আমি জামিনদার হয়ে যদি আমার ভাইকে নিয়ে যেতে চাই তা কী সম্ভব? আপনাদের যখনই প্রয়োজন পড়বে আমি নিজে নিয়ে আসব। আসলে ভাই টা এভাবে থেকে অভ্যস্ত না তো!”
” এই মুহুর্তে আমি দুঃখিত! যদিও আমাদের নিকট থাকা সকল প্রমাণ সাপেক্ষে তানভীর সাহেব সম্পূর্ণ নির্দোষ তারপরও আমরা তাকে ছাড়তে পারব না। আপনি নিজেই দেখতে পারেন হালিমা মঞ্জিলের কেয়ারটেকার আমাদের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে আছে। সেও কিন্তু তানভীরসাহেবের মত নির্দোষ। তারপরও তাকে আমরা খালাস করছি না। করতে পারছি না। কারণ ঘটনা চক্র কোথা থেকে কোথায় যায় বলা তো যায় না। তাই যাদের উপর কিঞ্চিৎ সন্দেহ প্রথম থেকে হয়েছে সত্যটা সামনে আসার আগ পর্যন্ত তাকে আমরা ছাড়তে পারব না। ”
” আচ্ছা সমস্যা নেই। তাহলে আপনারা সব যাচাই বাছাই করুন তারপরই না’হয় তানভীরকে নিয়ে যাবো। ”
” জি ধন্যবাদ। ”
শেখ সাহেব চলে গেলেন।নীরবকে উদ্দেশ্য করে আরিফুল বলল,
” রাকিবের কথানুযায়ী যতটা খারাপ এদের ভেবেছিলাম ততটা খারাপ কিন্তু এনারা নন। তাছাড়াও শেখ সাহেবের সম্পর্কে আমি আগেও শুনেছিলাম, মানুষ হিসেবে তিনি অত্যন্ত সৎ এবং অমায়িক মনের অধিকারী। ”
” জি স্যার। উনি কিন্তু চাইলেই উপরে যোগাযোগ করে তার ভাইকে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু সে সেরকম কিছুই করেননি। এতেই বুঝা যায় তার মন-মানসিকতা কেমন প্রকৃতির।”
” হুম…..আচ্ছা মহিউদ্দিন সাহেবের গোপন ক্যামেরাটা ল্যাপটপে অন করো। দেখি কী আছে এর ভেতর। ”
” জি স্যার। ”
নীরব ক্যামেরাটির সাথে ল্যাপটপ কানেক্ট করে ভিডিওটি চালু করল। আর আরিফুল সামান্য টেবিলের দিকে ঝুঁকে গভীর মনোযোগের সাথে সেই ভিডিও দেখতে লাগল। শুরুর দিকে বাচ্চাদের খেলাধুলা, হাফসা ও মহিউদ্দিনের কর্মব্যস্ততার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল ভিডিওটি। আরিফুল বলল,
” সামনের অংশ খানিক কেটে দাও নীরব। এতঘন্টার ভিডিও দেখার সময় নেই এই মুহূর্তে আমাদের হাতে। মাঝের দিকে ধরো তাতেই সেদিনকার রাত টুকুর অংশ থাকতে পারে।”
” ওকে স্যার।”
নীরব মাঝের একটু আগের দিকেই ভিডিওটি চালু করে দিল। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বাড়ির গেইটের সিসি ক্যামেরায় যে ব্যাক্তিটিকে কালো কাপড় পড়া অবস্থায় সন্দেহ করা হয়েছিল সেই ব্যাক্তিটিই মহিউদ্দিন সাহেবের রুমে দাঁড়িয়ে। আর তার পেছনেই হাফসা। আরিফুল আর নীরবের চোখ যেন কপালে উঠে গেল। চাকু হাতে নিয়ে কালো কাপড় পড়া লোকটি মহিউদ্দিনের দিকে এগোতেই আরিফুল বলল,
” টেনে দাও নীরব। আমি ওসব দেখতে পারব না। মাথা যন্ত্রণা করে। ”
আরিফুলের কথামত নীরব মিনিট বিশেকের মত কেটে দিতে নিলেই আরিফুল আবার বলল,
” না থাক কেটো না, হয়তো এর মাঝেও অনেক প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে।”
” জি স্যার।”
বিভৎস ভিডিওটি দেখার মিনিট বিশেক বাদে একপর্যায়ে দেখতে পেল সেই লোকটি হাফসার গলার পাশেও চাকু মেরে দিয়েছে। আরিফুল চোখ বুজে নিলেই নীরব বলে উঠল,
” হায়রে পরকীয়া! ”
ভ্রু কুচকে আরিফুল ফের ভিডিও ফুটেজে তাকাতেই দেখতে পেল পরক্ষণেই মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ব্যাক্তিটির তার আসল রূপ বের করল। আরিফুল আর নীরব একে অপরের দিকে বিষ্ময় চাহনিতে একবার তাকাচ্ছে তো আরেকবার ভিডিও ফুটেজের দিকে। তাদের চোখকে যেন তারা নিজেরাই বিশ্বাস করতে পারছে না। ভিডিও ফুটেজ কয়েকবার স্টপ করে খুনির মুখগহ্বর ভালো করে দেখে আরিফুল অস্পষ্ট গলায় বিষ্ময় ভাব ফুটিয়ে বলল,
” রাকিব!”
নীরব বলল,
” আমি আগেই বলেছিলাম স্যার এই রাকিবই খুনি। ওর জুতো দেখেই আমার যথেষ্ট সন্দেহ হয়েছিল। কিন্তু আপনি তো তখন বিশ্বাস করেননি। আর ওর সেদিনের কান্না….. সেটাও আমার কাছে স্বাভাবিক কান্নার মত লাগেনি। কুমিরের কান্নার মত লেগেছে। এটাও আমি আপনাকে বলেছিলাম।”
” কোথায় এখন সে?”
” হাবিলদারকে সঙ্গে রেখে ওদিকটায় বসিয়ে রেখেছি। ”
দু’জনের কথা বলার মাঝেই একটি ছেলে এসে নীরবের হাতে কিছু কাগজ ধরিয়ে দিল। নীরব সেগুলো চেক করে আরিফুলের হাতে দিতেই আরিফুল সমস্ত কাগজপত্র চেক করে নীরবের দিকে তাকিয়ে বলল,
” তানভীর আর কেয়ারটেকারকে ছেড়ে দিও। আর হ্যাঁ তার আগে রাকিবকে আমার কাছে নিয়ে এসো। ”
” লকাপে ঢুকাবো না স্যার?”
” সে আবার বলতে? আগে এখানে নিয়ে আসো তারপর হারামজাদাকে ভেতরে ঢুকাবো।
” ওকে স্যার।”
নীরব চলে যেতেই আরিফুল বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। একহাত পকেটে ঢুকিয়ে টেবিলের এপাশ থেকে ওপাশ বিষাক্ত চাহনি সমেত হাঁটতে লাগল। মিনিট দুয়েক যেতেই নীরব ছুটে এলো। হাঁপাতে হাঁপাতে অস্থিরতা ভরা কন্ঠে বলল,
” স্যার! রাকিব….রাকিব নেই। পালিয়ে গিয়েছে সে। ”
” পালিয়ে গিয়েছে? মানে কী? কী বলছ তুমি?”
” হ্যাঁ স্যার ও নেই থানায়। পুরো থানা হন্ন হয়ে খুঁজেছি কোত্থাও নেই রাকিব। এমনকি বাহিরেও দেখেছি ও নেই। আমার মনে হয় ওর থেকে জুতো নেয়ায় হয়তো ওর সন্দেহ হয়েছিল তাই পালিয়ে গিয়েছে। ”
” শিট! তুমি না বলেছিলে হাবিলদারকে পাহাড়ায় রেখেছ? সে কোথায়? সে দেখেনি পালাবার সময়? ”
” স্যার হাবিলদারও তো নেই। ”
” মানে কী এসবের?”
” বুঝতে পারছি না স্যার।”
” গাড়ি বের করো…..ফাস্ট! ”
” ওকে স্যার।”
এরই মাঝে হাবিলদার ছুটে এসে বলল,
” স্যার স্যার রাকিব তো পালিয়েছে।”
হাবিলদারকে দেখে আরিফুলের মাথায় রক্ত চড়ে যায়। দাঁত কিড়মিড়িয়ে শার্টের কলার চেপে বলল,
” এখন এসেছিস সুসংবাদ দিতে? তোকে না ওই হারামজাদার সাথে রেখে গিয়েছিল পাহাড়া দিতে? কোথায় গিয়েছিলি তুই? হাওয়া খেতে না-কি ওই খুনিকে পালাতে সাহায্য করতে কোনটা? ”
হাবিলদার কাপা গলায় বলল,
” স্যার…..আমার সকাল থেকেই পেট খারাপ। কম করে হলেও এই নিয়ে পাঁচ ছয়বার বাথরুমে গিয়েছি। তাই পেটে চাপ পড়তেই আর হুশ ছিল না, দৌড়ে বাথরুমে চলে গিয়েছিলাম।”
” ভালো করেছিস। খুব ভালো করেছিস।”
বলেই দাঁতে দাঁত চেপে বেরিয়ে যায় থানা ছেড়ে আরিফুল। আর তার পিছু নিল নীরব।
.
সন্ধ্যা ৭ টা। রিমান্ড রুমের ভেতর বসে আছে রাকিব। তার ঠিক পেছন ভাগে বন্দুক হাতে সমেত এক পুলিশ কর্মকর্তা দাঁড়িয়ে। আর সম্মুখ ভাগে আরিফুল আর নীরব বসে। মুখ জুড়ে তার শত শঙ্কার ছাপ। সেকেন্ডের ব্যবধানে একের পর এক ঘামের নোনা ফোঁটা ছুঁয়ে যাচ্ছে গলা বেয়ে। সামনে থাকা পানি ভর্তি গ্লাসটি একনিমিষে ফাঁকা করেও গলা যেন ভেজেনি তার। যার দরুণ সেই শুকনো গলা ভেজাতে এই মুহূর্তে তার আরও পানির প্রয়োজন। তবে পানির কথা মুখ ফুটে বলার নূন্যতম শক্তি পাচ্ছে না রাকিব। ভয়ে নেতিয়ে গিয়েছে সে সম্পূর্ণ ভাবে।
সামনে থেকে আরিফুল বলল,
” পালিয়ে কী বিশেষ কোনো লাভ হয়েছে? সেই তো রাস্তার মোড় থেকেই ধরে আনলাম। অকারণে পালিয়ে নিজেকে ও আমাদের এভাবে হেরেজ করার কোনো মানে ছিল?”
রাকিব মাথা নিচু করে চুপটি মেরে বসে আছে।
আরিফুল আবার বলল,
” যেদিন মহিউদ্দিন সাহেবের ফুল ফ্যামিলির খুন হয় সেদিন রাতে তুমি কোথায় ছিলে? ”
রাকিব কাপা গলায় বলল,
” স্যার আর কতবার বলব, আমি আমার বন্ধুর বাসায় ছিলাম।”
” মিথ্যে…..মিথ্যে বলছ তুমি। সত্যি করে বলো কোথায় ছিলে? ”
” স্যার আমি সত্যিই করেই…..”
” রাকিব! আবারও বলছি মিথ্যে বলো না। সমস্ত প্রমাণ কিন্তু আমাদের হাতে অলরেডি চলে এসেছে। কোনোভাবেই তুমি বাঁচতে পারবে না। তাই এখনও সময় আছে গায়ে হাত তোলার আগে সত্যিটা খুলে বলো আমাদের।” রাকিবের কথার মাঝে উঁচুস্বরে কথাগুলো বলল আরিফুল।
রাকিব আবারও চুপ হয়ে গেল। আরিফুল নিজেই আবার বলল,
” কী হলো চুপ করে আছো যে? যার জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও ….”
কিন্তু এবারও রাকিব নিশ্চুপ। আরিফুল টেবিলে হাত দিয়ে সজোরে আঘাত করে বসা থেকে উঠে কোমরে হাত চেপে দাঁড়ালো।পেছনে ঘুরে রিমান্ড রুমের দেয়ালের সাথে সংযুক্ত থাকা বিশাল মাপের আয়নার দিকে ব্যর্থ দৃষ্টিতে তাকালো। এই আয়না দ্বারা বাহির থেকে ভেতরের কিছু দেখা না গেলেও, ভেতর থেকে বাহিরের সবই দেখা যায়। যেমনটা এই মুহূর্তে ভেতর থেকে দেখছেন ডিসি রাসেল।আর আরিফুল ডিসি রাসেলকে উদ্দেশ্য করে মাথা দুলিয়ে রিমান্ড রুম থেকে বেরিয়ে পেছন রুমে গেল। অর্থাৎ সেই আয়নার ভেতর রুমটিতে। যেখানে দাঁড়িয়ে আয়নার বহির্ভাগে ঘটা সমস্ত কিছু দেখে ও শুনে পর্যবেক্ষণ করছিলেন ডিসি রাসেল। আরিফুল যেতেই ডিস রাসেল রাকিবকে দেখিয়ে বললেন,
” এর জবানবন্দির জন্য অপেক্ষা করছ কেন? এমন তো না যে প্রমাণ আমাদের হাতে নেই, ওর সাক্ষীই সব। সবকিছু আমাদের ফেভারে আছে আরিফুল । ওর স্বীকারোক্তির কোনো প্রয়োজনই নেই। ”
” হাত চালাতে বলছেন স্যার?”
” অবশ্যই! কী কারণে এতকিছু ঘটিয়েছে জানতে হবে না!”
” জানব তো অবশ্যই স্যার। এতক্ষণ একটু সময় দিচ্ছিলাম ভালোয় ভালো যাতে বলে দেয়। এখন যেহেতু বললই না দ্বিতীয় রাস্তা তো অবলম্বন করতেই হয়।”
” যে রাস্তাই অবলম্বন করো না কেন, ঘটনার উদঘাটন দ্রুত হওয়া চাই। আর এই রাকিবের যেই ভয়াবহ অবস্থা দেখছি তাতে মনে হয় দুটো বারি দিলেই কথার ঝুড়ি বেরিয়ে যাবে। সময় নিবে না বেশি। ”
” জি স্যার।”
” তো যাও যা করার দ্রুত শুরু করো। হাতে সময় নেই আমাদের। ”
” ওকে স্যার। ”
আরিফুল আয়নার গোপন রুম থেকে বেরিয়ে হাতে দুটো মোটা বেতসহ রিমান্ড রুমে প্রবেশ করল। নীরবকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“বেটার হাত বাঁধো।”
নীরব মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে রশি এনে রাকিবকে হেঁচকা টানে মেঝেতে ফেলে হাত দুটো একটি আরেকটির সাথে বাঁধল। আরিফুল নিজের হাত একটি বেত রেখে অন্যটি নীরবের হাত ধরিয়ে দিল। রাকিবের সামনে দু পা এগিয়ে চুলের মুঠি ধরে বলল,
” এখনো বলবি না কোথায় ছিলি?”
” স্যার বিশ্বাস করেন…..”
রাকিবের কথা শেষ হবার আগেই আরিফুল সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রাকিবের পা বরাবর তার হাতে থাকা মোটা বেতের ছাপ বসিয়ে দিল। চোখের পলকে লাল রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছে জায়গাটি। রাকিব ব্যাথায় চিৎকার করতেই সেই জমাট বাঁধা জায়গাতে আবারও মারল আরিফুল।
রাকিব কান্নার মাঝে মা মা বলে চেঁচাতেই নীরব তার হাতের বেতটি দিয়ে রাকিবের হাতের উপরিভাগে সজোরে আঘাত করল। আরিফুল বলল,
” এই সামান্য আঘাত সহ্য হয় না? ব্যাথায় কুঁকড়ে গিয়ে মা বলে চেঁচাচ্ছিস? আর সেদিন যখন চার চারটে প্রাণ বিভৎস ভাবে কেড়ে নিলি তাদের বুঝি আঘাত লাগেনি? তোর তো সামান্য যন্ত্রণা হচ্ছেরে…..আর তাদের যে মরন যন্ত্রণা হয়েছে! ছোট্ট ছোট্ট দুটি নিষ্পাপ শিশু যাদের খেলার বয়স তারা যে মরন যন্ত্রণায় ছটফট করেছে সেটা বুঝি কিছু না? ”
বলেই আরিফুল আরও একটি আঘাত বসালো রাকিবের পিঠে। রাকিব ব্যাথায় কাতর হয়ে অস্পষ্ট গলায় বলল,
” বলব…আমি সব বলব।আমি সব বলে দিব আমাকে এভাবে মারবেন না। দোহাই লাগে আপনাদের আমাকে এভাবে মারবেন না।”
.
.
চলবে….

বর্ষাস্নাত রাত পর্ব-০৫

0

#বর্ষাস্নাত_রাত
লেখা – জান্নাতুল ফেরদৌস মাটি
পর্ব – ৫
.
” স্যার, খুনির সন্ধান হয়তো আমি পেয়ে গিয়েছি। ”
আচমকা ঝড়ের বেগে ছুটে এসে নীরবের এরকম একটি উদ্ভব কথা যেন রাসেল আর আরিফুলকে চমকে দিল! উৎকন্ঠা হয়ে আরিফুল বলল,
” কী বলছ নীরব! তুমি খুনির সন্ধান পেয়েছ! মানে কী? আর পেলেও কখন? কীভাবে? কেমন করে তুমি খুনির সন্ধান পেয়েছ?”
নীরব সামান্য ঝুঁকে তার হাতে থাকা মোবাইলটির গ্যালারি বের করে একটি জুতোর ছবি দেখালো। তবে এর প্রতিক্রিয়া বেশিদূর অবধি গেল না। ডিসি রাসেল চড়া মেজাজ করে বলেন,
” তোমার কাছে কী এই সবকিছু ফাইজলামি মনে হচ্ছে?আর আমরা এখানে ফাইজলামি দেখতে বসেছি? জুতোর ছবি দেখিয়ে বলছ খুনির সন্ধান পেয়ে গিয়েছ। মানে কী এসবের?ইতরামো করছ আমাদের সাথে? ”
নীরব সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে বলল,
” সরি স্যার! তবে আমি কিন্তু ভুল কিছু বলছি না স্যার। আপনারা চাইলে একবার চেক করে দেখতে পারেন। সিসি টিভি ফুটেজে রাত সাড়ে দশটায় কালো কাপড়ে আবৃত আমরা যে মানুষটাকে বাড়ির ভেতর ঢুকতে দেখতে পাই সেই মানুষটার পায়ে কিন্তু ঠিক এই সেইম জুতোই ছিল। যেটা কি-না আমি মনের অজান্তেই ভিডিও দেখার সময় লক্ষ্য করেছিলাম। আর আজ যখন সেই সেইম জুতো একজনের পায়ে দেখলাম সন্দেহের তীড় টা কেন যেন সঠিক মনে হচ্ছিল। তাই লুকিয়ে জুতো জোড়ার ছবি তুলে দ্রুত আপনাদের কাছে চলে আসি।”
ডিসি রাসেল আরিফুলের দিকে তাকিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,
” ভিডিওটি চালু করো ত…আমিও দেখি কী মিল আছে!”
আরিফুল ভিডিও টি চালু করতেই বেশ কয়েকবার পুষ করে করে দেখলেন রাসেল। একবার মোবাইল গ্যালারি তো একবার ভিডিও ফুটেজ। এভাবেই মিনিট দশেক যাবৎ ঘাড় দুলিয়ে যাচ্ছেন তিনি। একপর্যায়ে উদগ্রীব হয়ে বলে উঠলেন,
” জুতো দুটো তো একেবারেই সেইম! কোথায় পেলে তুমি এই জুতোকে? আর কার পায়েই বা ছিল এই জুতো জোড়া? ”
নীরব কন্ঠস্বর নিচু করে বলল,
” এই জুতোর মালিক বর্তমানে থানায় উপস্থিত আছে স্যার। ”
আরিফুল বলল,
” কে সে?”
নীরব বলল,
” রাকিব!”
রাসেল বললেন,
” রাকিব! মানে ভিক্টিমের চাচাতো ভাই? ”
নীরব বলল,
” জি স্যার। মহিউদ্দিন সাহেবের চাচাতো ভাইয়ের কথাই বলছি আমি। ”
আরিফুল বলল,
” আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এই সামান্য মিলের জন্য কারো উপর সন্দেহ করা ঠিক হবে না। কেননা এই সেইম জুতো আরও হাজারো মানুষের পায়ে আছে। তাই বলে কী তারা সবাই খুনি? আমাদের আরও কিছু প্রুভের প্রয়োজন। জোড়ালো প্রুভ।”
নীরব বলল,
” স্যার, আমি তো বলছি না এই সামান্য সন্দেহের ভিত্তিতে কারো উপর জেরা করতে। তবে একটা চেষ্টা তো করতে পারি আমরা। বাই চান্স যদি লটারিটা লেগে যায়। বলা তো যায় না কার মনে কী থাকে! আর এই রাকিবের আচরণবিধির উপরও যথেষ্ট পরিমাণ সন্দেহ কাজ করে আমার। সে যাই হোক, এখন আপনারা যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি রাকিবের জুতো জোড়া ডিএনএ করতে পাঠাবো। কেননা আমি আশা বাদী এই পরীক্ষার মাধ্যমেই সব সন্দেহের অবসান ঘটবে।”
আরিফুল বলল,
” সন্দেহ তো ক্ষানিকটা আমারও হয়। বিশেষ করে সেদিন রাতে ওর মিসিংটা নিয়ে। আচ্ছা এক কাজ করো রাকিবের থেকে জুতো জোড়া নিয়ে ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে দাও। আর হ্যাঁ, রাকিবের উপর নজর রেখো কিন্তু।”
” ওকে স্যার।”
নীরব যেতেই রাসেল বললেন,
” ব্যাপারটা বড্ড ঘোলাটে লাগছে আরিফুল। ”
আরিফুল ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
” যদি সেরকম কিছু হয়… তাহলে তো নিজ পরিবারের উপর থেকে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাবে স্যার। ”
মাথা নাড়িয়ে আরিফুলের মত রাসেলও নিঃশ্বাস ফেলল তবে….দীর্ঘশ্বাস!
চেয়ার ছেড়ে উঠে বললেন,
” এখন তাহলে আমি আসছি। জরুরি কিছু হাতের কাজ ফেলে রেখে এসেছিলাম। সেগুলো গিয়ে ঠিক করতে হবে। আর হ্যাঁ, ডিএনএ রিপোর্ট কী বেরোলো অবশ্যই আমাকে জানিও। তাছাড়াও প্রতি মুহূর্তের আপডেটও আমাকে সময়ে সময়ে জানাবে। ”
” ওকে স্যার।”
ডিসি রাসেল চলে যেতেই আরিফুল দাঁড়িয়ে সম্মান জানালো। পরমুহূর্তে আরিফুল যখন চেয়ারে বসে মুঠো হাতে মাথা ঠেকিয়ে নীরবতার মাঝে মত্ত ছিল ঠিক তখনই থানায় প্রবেশ করে সুদীপ। তার চলনে ফুটে উঠছিল অস্থিরতার ভাব। মুখভঙ্গি জানান দিচ্ছিল রহস্য উন্মোচনের আর্তনাদ।
আরিফুল বলল,
” কী ব্যাপার সুদীপ সাহেব? আপনি হঠাৎ এখানে যে?”
সুদীপ দ্রুত এসে বলল,
” স্যার… আসলে আমি একটা জরুরি কথা বলতে এখানে এসেছি। যদিও কথাটি আমার আরও আগে বলা দরকার ছিল কিন্তু ভোলামন আর ভয়ের জন্য বলে উঠতে পারিনি। ”
” তা কী কথা শুনি!”
” আসলে স্যার মহিউদ্দিনের ব্যাপারে কিছু কথা।”
” হ্যাঁ সেটা তো বুঝতেই পেরেছি। এখন কী কথা বলবেন বলুন। ”
” স্যার গত একমাস যাবৎ মহিউদ্দিন তার স্ত্রী অর্থাৎ হাফসা ভাবিকে সন্দেহ করছিল। শুধু সন্দেহ বললে ভুল হবে গুরুতর ভাবেই সন্দেহ করছিল। মহিউদ্দিনের কাছে মনে হচ্ছিল হাফসা ভাবি হয়তো অন্যকোন সম্পর্কে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে। অবশ্য তার যথেষ্ট প্রমাণও মহিউদ্দিন পেয়েছিল। তবে সেই মানুষটি কে সেটা বুঝতে পারেনি। আর তাই বৃহস্পতিবার দিন অফিস শেষে মহিউদ্দিন আমাকে নিয়ে যায় একটি ক্যামেরা কিনতে। বলেছিল রাতেই ক্যামেরা ফিট করবে। কিন্তু ক্যামেরা ফিট করে তো বিশেষ কোনো লাভ হলো না, পরের দিন তো লাশই হয়ে গেল।”
বেশ গভীর মনোযোগে সুদীপের কথাগুলো শুনছিল আরিফুল।সুদীপের কথা শেষ হতেই আরিফুল বলল,
” মহিউদ্দিন সাহেবের স্ত্রীর যার সাথে পরকীয়া জড়িত সম্পর্ক ছিল তাকে তো মহিউদ্দিন সাহেব চিনতেন না আপনার কথানুযায়ী। কিন্তু সন্দেহ দৃষ্টি কী কারো উপর পড়েছিল? মানে কাকে সন্দেহ করে আপনাকে সেরকম কিছু বলেছিল?”
” না স্যার সেরকম কিছু তো বলেনি। ”
” ও…… আচ্ছা ক্যামেরা কোথায় ফিট করবে সেরকম কিছু কী আপনাকে জানিয়েছে? ”
” শিউর করে তো কিছু বলেনি তবে মনের দোটানা নিয়ে বলেছিল তার নিজের রুমে রাখতে পারে, আবার নাও রাখতে পারে। সুযোগ বুঝে ব্যবস্থা নিবে এরকমটা বলেছিল মহিউদ্দিন। ”
“ওকে! আর কিছু বলেছিল?”
” জি না স্যার। আর তো কিছু বলেনি।”
আরিফুল টেবিলের উপর রাখা দুহাত উচিঁয়ে কনুই তে ভর দিয়ে মুঠোবন্দি হাতের মাঝে থুতনি গেঁথে গম্ভীর মুখে কী যেন ভাবতে লাগল। মিনিট দুয়েক যেতে থুঁতনি থেকে দুহাত নামিয়ে টেবিলের উপর রেখে দাঁড়িয়ে পড়ল। বলল,
” ওকে তাহলে আপনি এবার আসুন। পরে আবার কথা হবে। আমরা মহিউদ্দিন সাহেবের বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হবো তো সেজন্যই একটু তাড়া আছে।”
” কোনো সমস্যা নেই স্যার।”
” আর হ্যাঁ, ধন্যবাদ আমাদের সাথে এতটা কো-অপারেট করার জন্য। ”
বলেই আরিফুল বসা থেকে উঠে কয়েকজন দু’জন কনস্টেবল নিয়ে থানা থেকে বেড়িয়ে গেল।
.
হালিমা মঞ্জিলের ভেতর ঢুকতেই কয়েকজন পুলিশ আরিফুলকে স্যালুট দিয়ে সম্মান জানালো। আরিফুল তাতে সাড়া দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে মহিউদ্দিন সাহেবের ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়ল। গন্ধে গা গুলিয়ে আসছে সকলের। আরিফুল তো পারলে এক্ষুনি বমি করে দেয়। বাসি জমাট বাঁধা ছন্নছাড়া রক্তের এরকম বিভৎস গন্ধের সুবাস তার ভীষণ পরিচিত। চাকরির খাতিরে প্রায় পেতে হয় আরিফুলকে এই সুবাস। বিরক্ত লাগে তারপরও মনকে বেঁধে এই কড়া নিঃশ্বাসগুলো তাকে বারংবার আমন্ত্রণ জানাতে হয়। বমি মুখ পুড়ে আসলেও নিজেকে সংযত রাখতে হয়। যেমনটা এই মুহূর্তে রাখছে। নাকে রুমাল চেপে সাথে থাকা দু’জন কনস্টেবলকে গোপন ক্যামেরা খুঁজতে বলল। আর সে নিজেও এদিক ওদিক চোখ ফিরিয়ে ক্যামেরা খোঁজার সন্ধানে নেমে পড়ল।
একবার এ-রুম তো একবার ও-রুম এভাবেই খুঁজে যাচ্ছে সবাই। তাও ক্যামেরার কোনো হদিস পেল না কেউ। ঘন্টা প্রায় খোঁজার পরও ক্যামেরা না পেয়ে সবাই যখন হতাশ ঠিক তখনই আশার আলোর মত আরিফুলের নজর গিয়ে পড়ল মহিউদ্দিনের রুমের আলমারির উপর। ছোট্ট একটি জিনিসের উপর কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা। যেন কিছু লুকোনোর প্রচেষ্টা মাত্র!
আরিফুল কোনোকিছু না ভেবে একটি চেয়ার টেনে তার উপর দাঁড়িয়ে পড়ল। আলমারি থেকে আরিফুলের উচ্চতা ক্ষনিকের জন্য হলেও বেড়ে গেল। যার দরুণ খুব স্পষ্ট ভাবেই আরিফুল দেখতে পাচ্ছে আলমারির উপরটি। আরিফুল হাত উঁচিয়ে কাপড়টি সরাতেই তার কাঙ্ক্ষিত গোপন ক্যামেরাটি পেয়ে যায়। তবে এতেই সে থেমে থাকেনি। তন্নতন্ন করে পুরো আলমারির উপরটা তল্লাশ চালিয়ে গিয়েছে। যদি আরও কিছু প্রমাণ পেয়ে যায় সেই আশায়। কিন্তু না, আর কিছুই পায়নি আরিফুল। তাই ক্যামেরা হাতে নিয়েই চেয়ার ছেড়ে নেমে পড়ল। কনস্টেবলদের ডাক দিয়ে বলল,
” তোমরা কী সন্দেহজনক কিছু পেয়েছ?”
” না স্যার। তেমন কিছুই পাইনি।”
” আচ্ছা থাক আর কিছু লাগবে না। আর আমি ক্যামেরা পেয়ে গিয়েছি। এখানে আর থাকার প্রয়োজন নেই। আমরা এক্ষুনি থানায় ফিরব। ”
” ওকে স্যার।”
কনস্টেবলরা সামনে থেকে সরে যেতেই আরিফুল সামনে পা বাড়িয়ে দরজার দিকে এগুতে লাগল। আর সেই পায়ে পা মিলিয়ে তার পিছু নিল কনস্টেবল দু’জন।
.
থানায় পৌছে হাতের ক্যামেরাটি টেবিলের উপর রেখে কপালের ঘাম মুছে টেবিলে বসতেই নীরব এলো। বলল,
” হুট করে কোথায় গিয়েছিলেন স্যার? কোনো সংবাদ পেয়েছেন বুঝি? ”
” হ্যাঁ ওরকম কিছুই। মহিউদ্দিন সাহেবের বন্ধু সুদীপ এসেছিলেন। বললেন মহিউদ্দিন সাহেব তার স্ত্রীকে সন্দেহ করে বাড়িতে না-কি ক্যামেরা লাগিয়েছিল। তাও আবার মার্ডার হবার আগের দিন৷ তাই ওই ক্যামেরাটা খুঁজতে গিয়েছিলাম। যদি খুনি সম্পর্কে কোনো ক্লু পাই সেজন্যে। ”
” ও…তো ক্যামেরাটা কি পেয়েছেন স্যার?”
” হ্যাঁ পেয়েছি তো। একটু জিরিয়ে ল্যাপটপে অন করব। ”
” ও…”
” তোমার কী খবর? ডিএনএ রেজাল্ট কী এসেছে? ”
” না স্যার, এখনো তো আসেনি। তবে যাকে পাঠিয়েছি তার সাথে কথা হয়েছে আধ ঘন্টার মত সময় লাগবে আসতে। ”
” ও…”
” জি স্যার। ”
আরিফুল আর নীরবের কথা বলার মাঝেই থানায় উপস্থিত হলো এমপি শেখ সাহেব।মোটা স্বরে বললেন,
” থানার ওসি কে? ”
আরিফুল এগিয়ে এলো। পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল,
” জি আমি।”
শেখ সাহেব চেয়ারের দিকে ইশারা করে স্মিত হেসে বললেন,
” বসে কথা বলি?”
” জি অবশ্যই।”
মুখোমুখি বসে আছে এমপি শেখ সাহেব ও আরিফুল। চায়ের কাপে হাত ঘোরাতে ঘোরাতে শেখ সাহেব বললেন,
” তানভীর আমার ছোট ভাই আশা করি এতক্ষণে আপনারা এই ব্যাপারে নিশ্চয়ই অবগত হয়েছেন। ”
” জি।”
” তো তানভীরকে এখানে নিয়ে আসার কারণটা কী জানতে পারি?”
” হ্যাঁ অবশ্যই।”
আরিফুল আগে পরের সমস্ত ঘটনা একে একেখুলে বলতে লাগল শেখ সাহেবকে। সবকিছু শুনে শেখ সাহেব বললেন,
” সবই তো শুনলাম। আমার কথা হচ্ছে সব প্রুভ তানভীরের বিপরীতে যাওয়া সত্ত্বেও এখনো কি আপনাদের তানভীরকে নিয়ে কোনো প্রকার সন্দেহ আছে? ”

.
.
চলবে…..

বর্ষাস্নাত রাত পর্ব-০৪

0

#বর্ষাস্নাত_রাত
লেখা – জান্নাতুল ফেরদৌস মাটি
পর্ব – ৪
.
.
ইংরেজিতে গোটা গোটা অক্ষরের শব্দগুলো দেখে রাকিব ভেতর ও বাহির দুদিক দিয়েই দুমড়ে মুচড়ে গেল। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে দরজার কাছে যেতে নিলেই একদল পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। সে চিৎকার চেঁচামেচি করে বলে,
” ছাড়ুন ছাড়ুন আমাকে আপনারা । আমি ঘরে যাবো। আমি আমার ভাইয়ার কাছে যাবো। আমার সোনামণিদের কাছে যাবো। ছাড়ুন, ছাড়ুন বলছি ।”
কনস্টেবল আলিফ রাকিবকে ঝাঁকুনি দিয়ে বলল,
” এখানে এরকম কোন সিন করবেন না। আর না কিছু ছুঁতে যাবেন। এখানের প্রত্যেকটি জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভালো হবে এখান থেকে চলে গেলে।”
” আশ্চর্য তো! আমি আমাদের ঘরে যাবো আপনারা আমাকে কেন আটকাচ্ছেন? আমাদের নিজেদের ঘরে ঢোকার অধিকার আমার সম্পূর্ণ আছে। আপনারা আমাকে আটকাতে পারেন না।”
” আপনার অধিকার আপনি থানায় গিয়ে পেশ করেন। এখানে না। বর্তমানে আমরা নিজেদের ডিউটিতে আছি আর এ ফ্ল্যাট রয়েছে আমাদের জিম্মায়।এখানে আপনার অধিকার দেখার সময় নেই আমাদের হাতে।”
বলেই রাকিবকে সিঁড়ির দু ধাপ নিচে নামালো আলিফ। রাকিব কিছু বলতে নেয়ার আগেই নিচ থেকে পুরুষালী কন্ঠে বলে উঠল,
” আপনি কি রাকিব?”
রাকিব পেছনে ফিরে চোখ মুছতে মুছতে বলল,
” হ্যাঁ আমি…. কিন্তু আপনি?”
পেছন থেকে আলিফ বলে উঠল,
” উনি আমাদের থানার ওসি আরিফুল স্যার।”
রাকিব বলল,
” কাল তাহলে আপনিই কল দিয়েছিলেন স্যার?”
আরিফুল বলল,
” হ্যাঁ, আমিই দিয়েছিলাম। কিন্তু আপনি এখানে কী করছেন? আপনাকে তো সোজা থানায় যেতে বলা হয়েছিল। আপনি সেখানে না গিয়ে এখানে এলেন যে?”
” স্যার আমার বন্ধুর ন্যায় বড় ভাই, ভাবি, ভাইস্তা, ভাস্তি খুন হয়েছে….আর আমি এখানে আসব না? এটা কী সম্ভব স্যার?”
” আপনি কি ভেতরে যেতে চাইছেন?”
” জি স্যার।”
আরিফুল আর কথা বাড়ালো না।আলিফকে চোখের ইশারা দিয়ে বুঝিয়ে দিল হলুদ ফিতাটির একপাশ খুলে দিতে।
আলিফও মাথা নুইয়ে সঙ্গে সঙ্গে ফিতাটির একপাশ খুলে দিল। আর ওমনি ঘরের ভেতর হুমড়ি খেয়ে পড়ল রাকিব। পেছন পেছন ঘরের ভেতর এসেছে ওসি আরিফুল আর এস আই নীরব। আরিফুল চোখের ইশারায় নীরবকে বলল, রাকিবের চাল চলনের উপর নজর রাখতে।
নীরবও চোখের ইশারায় সম্মতি দিয়ে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করল রাকিবের উপর।
রাকিব একবার এ-রুম যাচ্ছে তো একবার ও-রুম। একবার ভাইয়ের কাপড় ধরে কাঁদছে তো একবার ভাস্তির। কাঁদার ফাঁকে একপর্যায়ে বলে উঠল,
” আমার নিষ্পাপ সোনার মানিকদের যে এই পরিণতি করেছে তাদের কাউকে আমি ছাড়ব না। কাউকে না।”
আরিফুল ভ্রু কুচকে বলল,
” আপনি কি কারো উপর সন্দেহের দাগ টানছেন? মানে কাউকে সন্দেহ হয় আপনার?”
রাকিব নাক টেনে প্রতিশোধপূর্ণ গলায় বলে উঠল,
” জি স্যার। আমার একজন না, পুরো একটি ফ্যামিলির উপর সন্দেহ হয়। আর আমি নিশ্চিত তারাই এই কাজটা করেছে। কেননা তারা ছাড়া আমার ভাইয়ের পরিবারের শত্রু এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই।”
” কারা তারা? কোথায় থাকে? আপনি কাদের কথা বলছেন? আর কাদেরই বা সন্দেহ করছেন? খুলে বলুন আমাদের প্লিজ!”
” তানভীর, আরবী আর….সাদিয়া। ”
” তানভীর, আরবী, সাদিয়া! এই তিনজন কারা? আপনি চেনেন এদের?”
” চিনি মানে খুব ভালো করেই চিনি। ওদের মত দুষ্টু প্রকৃতির মানুষ এ ভুবনে আর দুটি নেই। ওরাই আমার ভাইয়ের পরিবারকে শেষ করেছে। হ্যাঁ, ওরাই করেছে। ”
” ওরা কারা রাকিব?”
রাকিব কিছুটা সময় নিয়ে বলল,
” পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা।”
আরিফুল আর নীরব একে অপরের দিকে বিষ্ফোরিত চোখে চাওয়া চাওয়ি করল। আরিফুল বলল,
” পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা! এদের সাথে আপনাদের কী এমন বাজে সম্পর্ক যার জন্য এরকম একটি জঘন্য কাজ করল।”
” কিছুদিন আগেই আরবী অর্থাৎ ওই ফ্ল্যাটের ভাবির সাথে হাফসা ভাবির ঝগড়া বিবাদ হয়। যার ফলে ঘরে থাকা তার ছোট বোন ও তার হাজবেন্ড দুজনই ঝগড়ায় সামিল হয়। আরবী আর আমার ভাবি কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তো হাতাহাতিও করে ফেলে। তখনই আরবীর হাজবেন্ড তানভীর বলে উঠে, ‘তোরা এখানকার ভাসরা। ভাসতে ভাসতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় এসেছিস। আবার কথা বলিস? তোর সাহস কী করে হয় আমার বউয়ের গায়ে হাত দেয়ার? তোর হাত যদি ভেঙে গুড়িয়ে না দিয়েছি বলিস। আরে তোদের মেরে ভাগা দিলেও তো আমাদের কেউ ধরার নেই। সাবধান হয়ে যা বলে দিলাম।’ এভাবে থ্রেট দিয়েছিল তানভীর। আর যে জনসম্মুখে এভাবে থ্রেট দিতে পারে সে সবকিছুই করতে পারে। বিশেষ করে আমি মনে করি। ”
আরিফুল বলল,
” সে এরকম দাপট গিরি দেখিয়ে কথা বলল কেন? মহিউদ্দিন যেরকম ভাড়াটিয়া তানভীরও তো ভাড়াটিয়া। তাহলে এভাবে থ্রেট টাইপ কথা বলার কারণ কী? এলাকার দু চারটে মাথা তার হাতে না-কি? ”
” জি স্যার ওরকমই। তবে হাতে না একেবারে ঘরের। এই এলাকার এমপি তানভীরের আপন বড় ভাই হয়। তাই সে সবসময় এরকম দাপট দেখিয়ে কথা বলে। কারণে অকারণে সবার সাথে মিস বিহেভ করে। এমনকি বাড়িওয়ালাকেও ছাড় দেয় না সে। ”
” এতই যখন বাজে এই পরিবার তাহলে বাড়িতে এখনো রেখেছে কেন? নোটিশ দিয়ে বের করে দিলেই পারে।”
” ভয়ে স্যার ভয়ে। বাড়িওয়ালা এদের ভীষণ ভয় পায়। তাই শত চাওয়া সত্ত্বেও বের করতে পারে না এদের।”
” ও…..আচ্ছা, আপনি যে কথাগুলো আমাকে বললেন সেগুলো কি সবার সামনে বলতে পারবেন?”
” অবশ্যই স্যার। আর হ্যাঁ, আপনার যদি আমার কথা সামান্য পরিমাণও অবিশ্বাস হয় আপনি এক কাজ করতে পারেন, এ বাড়ির প্রত্যেকটি ভাড়াটিয়া এমনকি বাড়িওয়ালাকেও এ ঝগড়া আর থ্রেটের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে পারেন। সত্যতার প্রমাণ পেয়ে যাবেন।”
আরিফুল বা পকেটে হাত ঢুকিয়ে নীরবকে বলল,
” এ বাড়ির প্রত্যেকটি মানুষ অর্থাৎ ভাড়াটিয়া, বাড়িওয়ালা সবার থেকেই এ ঝগড়া সম্পর্কে সমস্ত তথ্য নিয়ে আসো। ততক্ষণে আমি ওই ফ্ল্যাট থেকে ঘুরে আসি।”
” ওকে স্যার।”
নীরব যেতেই আরিফুল রাকিবকে নিয়ে পাশের ফ্ল্যাটের বেল বাজালো।
আরবী ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকায় তানভীরকে বলল দরজাটা খুলতে। তাই তানভীর একপ্রকার অনিহা নিয়েই দরজাটা খুলল। দরজার ওপারে পুলিশসহ রাকিবকে দেখে তানভীর বলল,
” আপনারা!”
আরিফুল বিনা অনুমতিতে ঘরে ঢুকে সোফায় বসে পড়ল। বলল,
” কথা ছিল কিছু।”
তানভীর দরজা লক করে আরবীকে ডেকে অপর পাশের সোফায় বসতে বসতে বলল,
” আমাদের সাথে কথা! কিসের কথা? ”
” কিসের কথা বুঝতে পারছেন না বুঝি?”
” বুঝলে অবশ্যই জিজ্ঞেস করতাম না।”
” ও…. তাহলে সরাসরি বলছি। মহিউদ্দিন সাহেবের পরিবারের সাথে আপনার পরিবারের সম্পর্ক কেমন? মানে বন্ধুত্বসুলভ না-কি শত্রুপরায়ণ….কোনটা?”
” হঠাৎ এ ধাঁচের প্রশ্ন যে?”
” কেন? জিজ্ঞেস করা বারণ কী? ”
” বারণ বলিনি… বলেছি আমাদেরই বা কেন প্রশ্ন করা হচ্ছে? ”
” চার চারটে খুন হয়েছে আপনাদের পাশের ফ্ল্যাটে। বুঝতে পারছেন বিষয়টা? আর আপনাকে বা আপনাদের জিজ্ঞেস করব না তা কি হয়? তারউপর যদি হয় সাপ বেজির সম্পর্ক। ”
” সাপ বেজির সম্পর্ক মানে?”
” মহিউদ্দিন সাহেবের পরিবারের সাথে আপনার পরিবারের সম্পর্ক বাজে ছিল কেন?”
তানভীরকে চোখের ইশারায় থামিয়ে আরবী বলে উঠল,
” এই বাজে কিংবা ভালোর সম্পর্কের ব্যাখ্যা বুঝি এই রাকিব দিয়েছে? ”
আরিফ ভারী কন্ঠে বলল,
” আমি কিন্তু আপনার সাথে কথা বলছি না মিসেস তানভীর। ”
” আমার সাথে না বললেও আমাদেরকেই তো ইশারা করে কথাগুলো বলছেন। সেই সূত্র ধরে আমি কথা বলতেই পারি স্যার।”
আরিফুল আরবীর থেকে মুখ ফিরিয়ে তানভীরকে বলল,
” যতদূর শুনেছি কিছুদিন আগেই মহিউদ্দিন সাহেবের পরিবারের সাতে আপনাদের মনমালিন্য হয়েছিল এমনকি একপর্যায়ে হাতাহাতিও হয়ে থাকে। আর সেখানে আপনি মিঃ তানভীর তাদেরকে মেরে ফেলার থ্রেটও দিয়েছিলেন। কথাটা কি সত্য? আর সত্য হলেও কেন এভাবে থ্রেট দিয়েছিলেন?”
” আপনি একজন শিক্ষিত মানুষ। পুলিশ বিভাগের বড় পদে আছেন আপনার মুখে কিন্তু এ কথাটি মানালো না। অন্তত আমি মেনে নিতে পারলাম না। কারণ ঝগড়াঝাটির মাঝে সেন্স হারিয়ে অনেকেই কিন্তু অনেক কথা বলে থাকে। তাই বলে কী সেগুলো কেউ বাস্তবায়ন করে? হ্যাঁ অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন হয় যদি সেই ঝগড়ার কারণ মাত্রাতিরিক্ত গভীর হয় কিংবা স্বার্থ জড়িত কোনো ঘটনা থাকে তবে। কিন্তু আমাদের আর মহিউদ্দিন সাহেবের পরিবারের মাঝে কিন্তু সেসব কিছুই ছিল না। অতিক্ষুদ্র বিষয়ের জের ধরেই ঝগড়ার উৎপত্তি। তাও আবার মহিউদ্দিন সাহেবের স্ত্রীর জন্যই। সে একটু আগ বাড়িয়ে কথা বলতো যেটা আমার স্ত্রী পছন্দ করতো না। আর যার জন্যই সেদিন এতবড় ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হয়।”
তানভীরের কথা শেষ হতেই কলিং বেল বেজে উঠল। আরবী দরজা খুলতেই নীরব ঘরে ঢুকে পড়ল। আরিফুলের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মাথা নাড়িয়ে তদন্তের রেজাল্ট পজিটিভ এসেছে বুঝাতেই আরিফুল বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ল। সেই সাথে তানভীরও দাঁড়িয়ে পড়ল। বলল,
” আরও কিছু জানার থাকলে বলতে পারেন। আমি উত্তর দিতে প্রস্তুত। ”
” আলবাদ আছে তবে সব কথা তো সব জায়গায় বলা যায় না। আপনাকে আমাদের সাথে থানায় আসতে হবে তারপরই সব কথা হবে। ”
আরবী ভ্রু কুচকে বলল,
” না, ও কেন থানায় যাবে? ও তো থানায় যাবে না। ওর তো থানার সাথে কোনো সম্পর্ক থাকার কথা না। যে খুন করেছে তাকে খুঁজে থানায় নিয়ে যান। অকারণে শুধুমাত্র কিছু কথার ভিত্তিতে ও কেন আপনাদের সাথে থানায় যাবে।”
” কথার ভিত্তি থাকুক বা না থাকুক কিংবা কারণ হোক বা অকারণে আমরা যেহেতু তাকে থানায় যেতে বলেছি অবশ্যই প্রয়োজনে যেতে বলেছি। খোশ গল্প করতে না। ”
তানভীর আরবীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” কথা বাড়িয়ে লাভ নেই আরবী। সত্য যেটা সেটা আজ না হোক কাল প্রমাণ হবে। তুমি চিন্তা করো না। তুমি বরং ভাইকে কল দিয়ে সবটা বলো।”
” কিন্তু!”
” কোনো কিন্তু না…… যেটা বলেছি সেটা করো।”
বলেই আরিফুলের দিকে চোখ ফিরয়ে বলল,
” চলুন।”
আরিফুল দু পা এগিয়ে রাকিবের দিকে ফিরে বলল,
” আপনিও চলুন আমাদের সাথে।”
.
সিসি ক্যামেরা ফুটেজ চালু করে একই সিন বারবার রিপিট করে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে দেখছে ডিসি রাসেল। তার ফাঁকে বলে উঠে,
” এমপির ভাইকে যে ধরে আনলে এর ফলাফল কী হতে পারে ভেবে দেখেছ আরিফুল? আর এমনও না যে কোনোকিছু জানতে পেরেছ। ঘন্টার উপর হয়েছে এর পেছনে সময় ব্যয় করেছ কিন্তু সমাধান কী….. জিরো! স্বীকারোক্তিমূলক কোনো জবানবন্দিই পেলে না। এমনকি শুকিয়ে যাওয়া ঘামের ডিএনএ-ও তো মিলল না এর সাথে। এখন এমপির কাছে কী জবাব দিবে? ”
আরিফুল চিন্তিত স্বরে বলল,
” এমপির কাছে কী জবাব দেব বা সে কী করবে সেসব নিয়ে এই মুহূর্তে আমি ভাবছি না স্যার। আসল দোষী কে সেটা বড় কথা। তানভীরের মৌখিক স্বীকারোক্তি তো পরের কথা, আমাদের হাতে থাকা সব প্রমাণই তো ওর বিরুদ্ধে যাচ্ছে। কোনভাবেই ওর সাথে প্রমাণাদি যাচ্ছে না। তাহলে মৌখিক স্বীকারোক্তি দিয়ে কী হবে? ”
” হুম সেটাই তো বলছি….সব প্রমাণ যেহেতু ওর বিরুদ্ধেই যাচ্ছে এখন এমপিকে কী জবাব দিবে? ”
” সে একটা কিছু বলে সামলে নেয়া যাবে স্যার। আর আমি যতদূর জানি, তানভীর তার ভাইয়ের পাওয়ার যতটা দেখায় এমপি নিজেও ততটা পাওয়ার দেখায় না।মোটামুটি সাদামাটা ভাবেই থাকে। তাই আমার মনে হয় তাকে বুঝিয়ে বললে সে হয়তো বুঝবে।”
” হ্যাঁ, সেরকম তো আমিও শুনেছি। বাকিটা দেখো কীভাবে সামলাবে।”
এরই মাঝে হন্তদন্ত হয়ে এস আই নীরব এলো। উদ্বিগ্ন গলায় বলল,
.
.
চলবে…..

বর্ষাস্নাত রাত পর্ব-০৩

0

#বর্ষাস্নাত_রাত
লেখা – জান্নাতুল ফেরদৌস মাটি
পর্ব – ৩
_______________________
থানার নিজ টেবিলে একগালে হাত দিয়ে বসে আছে ওসি আরিফুল। কুচকে থাকা ভ্রুর ভাজে ফুটে উঠছে অগণিত চিন্তার আভাস। সামনের চেয়ারে ভীত মুখ নিয়ে বসে আছে হালিমা মঞ্জিল বাড়ির কেয়ারটেকার সালাম। আর তার পাশের চেয়ারে বসে আছে রিপোর্ট দাতা সুদীপ। সালামের সন্দেহ ভাজন দু-তিন টি কথা শুনে আরিফুল গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” তুমি পেছনের চেয়ার গুলোতে গিয়ে বসো। তোমার সাথে পড়ে কথা বলছি। ”
সালাম করুণ গলায় বলল,
” স্যার, আমি কিছু করি নাই। আমারে যাইতে দেন। সত্যিই কইতাসি আমি কিছু করি নাই স্যার।”
সালামের সাথে কথা না বাড়িয়ে আরিফুল হাবিলদারকে ইশারা দিয়ে সালামকে পেছনে নিয়ে বসালো। তারপর সুদীপের দিকে ফিরে বলল,
” রিপোর্ট দাতা তো আপনিই তাই না? ”
” জি স্যার।”
” তো আপনার পরিচয়! ”
” স্যার আমি সুদীপ। মহিউদ্দিনের কলিগ ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু।”
” ও…..তো আগে বন্ধুত্ব না-কি কলিগ?”
” আগে বন্ধুত্ব স্যার। ভার্সিটি লাইফ থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব। তারপর একইসাথে জবের জন্য ইন্টারভিউ দেয়া এবং ভাগ্যক্রমে পেয়েও যাই আমরা।”
” ও….. আচ্ছা, আপনি আজ কী মনে করে মহিউদ্দিন সাহেবের বাসায় গিয়েছিলেন? আপনি কী আগে থেকেই জানতেন বা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন যে এরকম কিছু ঘটতে পারে?”
” না স্যার, আমি কীভাবে জানব? আর আন্দাজ করার কথা তো প্রশ্নই আসে না। আমি তো গিয়েছিলাম দুদিন যাবৎ ও অফিসে আসে না বলে। আর আমাদের স্যারই আমাকে পাঠিয়েছেন। কলিগ সম্পর্কের বাইরে আমাদের মাঝে আরও একটি সম্পর্ক থাকায় স্যার নিজেই আমাকে এই দায়িত্বটি দেন। ”
” ও….তো যাওয়ার আগে ফোন দিয়েছিলেন না-কি ডিরেক্ট চলে গিয়েছেন? আর গিয়েও কী অবস্থায় পেয়েছেন সবকিছু? ”
” ফোন তো অনেকবারই দিয়েছি স্যার কিন্তু মহিউদ্দিন ধরেনি। তখন তো আর আমি জানতাম না যে, ও ততক্ষণে লাশে পরিণত হয়ে গিয়েছে। তো ফোন দিতে দিতে একপর্যায়ে যখন বিরক্ত হয়ে যাই তারপরই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ওর বাড়িতে আসি। আর তারপরই তো….. ”
” হুম তারপর? ”
সুদীপ কোন কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
এদিকে আরিফুল বলে উঠল,
” সুদীপ, চুপ করে থাকবেন না। আপনি গিয়ে কী অবস্থায় পেয়েছিলেন খুলে বলুন আমাকে।”
“মহিউদ্দিনের ফ্ল্যাটের মেইন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ কলিং বেল বাজানোর পরও যখন দরজা কেউ খুলছিল না, আমি আবারও মহিউদ্দিনের ফোনে কল দেই। আর ফোনটিও রিং হতে থাকে। একপর্যায়ে হঠাৎ করেই আমার কানে মহিউদ্দিনের মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজ ভেসে এলো। আমি দরজার সাথে কান লাগিয়ে সেই রিংটোনের আওয়াজ শোনার চেষ্টা করলেই আমার হাত দরজার হ্যান্ডেলের সাথে লেগে আমাকে অবাক করে দিয়ে দরজা খুলে যায়। আমি দরজার দিকে ভালো করে লক্ষ্য করতেই বুঝতে পারি এতক্ষণ যাবৎ দরজা ভিড়িয়ে রাখা ছিল। লক করা ছিল না। তারপর দু পা এগিয়ে মহিউদ্দিনের ঘরের দিকে যেতেই দেখতে পাই রক্তাক্ত ফ্লোর তবে তরল বা তাজা রক্ত না, জমাট বাঁধা কালো রক্ত। যেখানে বাসা বেঁধেছে শত মশা মাছি আড্ডা খানা। আর তার মাঝেই মুখ থুবড়ে পড়ে আছে হাফসা ভাবি। আর তার পাশে অর্থাৎ বিছানার উপর ঠিক একইভাবে পড়ে আছে মহিউদ্দিন।
বিশ্বাস করবেন কি-না জানি না স্যার, সেই মুহূর্তে আমার মনে হয়েছিল আর এক মিনিট দাঁড়ালে হয়তো আমি নিজেও এই পরিণতির স্বীকার হবো। তারপর মনে পড়ল বাচ্চা দুটোর কথা। ছুটে বাচ্চাদের ঘরে যেতেই বুক কেঁপে উঠলো আমার। বাবা মায়ের মত ঠিক একই অবস্থায় পড়ে ছিল নিষ্পাপ দুটো শিশু। বিছানার উপর মাহফুজ আর মেঝেতে মারিয়া। একটা মানুষের মনে কতটা হিংস্রতা কাজ করলে দুধের শিশুদের উপর এরকম অসহনীয় নির্যাতন করতে পারে সেই মুহূর্তে আমি হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছি।”
কথা বলার সময় সুদীপের চোখেমুখে ভয়ভীতির কোন ছায়া খুঁজে না পাওয়ায় আরিফুল বুঝতে পারল সন্দেহের তালিকার বহির্ভূত সুদীপ নামক ছেলেটি। তাই স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
” আচ্ছা, আপনি তো বললেন যে মহিউদ্দিন সাহেবের বেশ ঘনিষ্ঠ বন্ধু আপনি তাই না? ”
” জি স্যার। ”
” তাহলে আপনি নিশ্চয়ই জানবেন মহিউদ্দিন সাহেবের কারো সাথে মনমালিন্য ধরনের সম্পর্ক আছে কি-না! কিংবা ঝগড়া বিবাদ জাতীয় কোনো সম্পর্ক আছে কি-না! ”
” না স্যার, ও ওরকম ধরনের ছেলেই না। আসলে ও বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল। নিজের ভাই বোন বলতে কেউই ওর নেই। কাজিনদেরই নিজের ভাই বোন বলে ভাবত। বিশেষ করে ওর ছোট চাচার ছেলে রাকিবকে। যার দরুণ ঝগড়াঝাটি ওর ডিকশনারিতে নেই বললেই চলে। এমনকি ভাবিও যদি কোনো কারণে ওকে গালমন্দ করত তারপরও ও ওসব ঝগড়া বিবাদে যেত না। হেসে উড়িয়ে দিত। আর বাহিরের মানুষের কথা তো প্রশ্নই আসে না। ”
” ও……তো আপনার বিবরণ অনুযায়ী রাকিব নামের ছেলেটি মহিউদ্দিন সাহেবের বেশ ঘনিষ্ঠ কেউ ছিল তাই তো?”
” জি স্যার। বয়সে পাঁচ ছয় বছরের ছোট হলেও বন্ধুর মতই চলত। ”
” যদি বন্ধুর মতই চলে তারউপর যদি হয় ভাই তাহলে মহিউদ্দিন সাহেবের পরিবারকে ঘিরে যে এতবড় একটি দূর্ঘটনা ঘটল কই, সেই ভাইকে তো একবারের জন্যও দেখলাম না।”
” আসলে স্যার রাকিব মহিউদ্দিনদের সাথেই থাকে। বিগত কয়েক বছর ধরেই ওদের সাথে থাকছে। মহিউদ্দিনের মুখে যতটুকু শুনেছি বৃহস্পতিবার অর্থাৎ দূর্ঘটনা ঘটার আগের দিন রাকিব তার ফ্রেন্ডদের সাথে ৫ দিনের জন্য অন্য একটি ফ্রেন্ডের গ্রামে বেড়াতে যায়। আর সেজন্যেই হয়তো রাকিব এরকম একটি সময়ে মিসিং। এমনো হতে পারে ও জানেও না এসবকিছু। ”
” রাকিবের নাম্বার আছে আপনার কাছে?”
” জি স্যার।”
” নাম্বারটি দিন।”
সুদীপ নাম্বারটি দিতেই আরিফুল বলল,
” আচ্ছা তাহলে এখন আপনি আসতে পারেন। তবে…. যদি বিশেষ কোনো কারণে আপনার প্রয়োজন আমাদের পড়ে অবশ্যই কিন্তু আসতে হবে।”
” নিশ্চয়ই স্যার।”
” ওকে আসুন।”
সুদীপ সালাম দিয়ে চলে যেতেই আরিফুল বেশ চিন্তিত স্বরে হাবিলদারলে ডাক দিয়ে বলল,
” সালামকে ভেতরে নিয়ে যাও।”
” জি স্যার। ”
.
একটি বিশাল খালি রুমে বসে আছে সালাম। মাথার উপর একটি ঝুলন্ত লাইট আর সম্মুখে টেবিল। যার উপর রয়েছে একটি পানির গ্লাস ও একটি মাইক। তার বসার চেয়ারটি বাদে আরও দুটো চেয়ার আছে টেবিলের কোণ ধরে। আর তার সামনেই দেয়াল জুড়ে একটা বিশাল আয়না। টেবিল থেকে সর্বোচ্চ ৬ কি ৭ কদম দূরেই হবে আয়না টি। আর পুরো রুম জুড়ে কিছুই নেই। পুরো ফাঁকা।
সালাম পুরো রুমটি চোখ ঘুরিয়ে দেখেও আয়নার উৎস খুঁজে পেল না। ফাঁকা একটি রুমে এতবড় আয়না কেন রাখা সালাম কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না।
এমন সময় রুমের দরজা ঠেলে বড় বড় পায়ে এগিয়ে এলো আরিফুল। পেছনে একজন হাবিলদার। চেয়ার টেনে সালামের মুখোমুখি বসতেই সালাম ঢোক গিলল। বলল,
” স্যার…… আমারে এনে আনছেন কেন? এটা কিয়ের রুম? আপনেরা কি আমারে মারবেন?”
আরিফুল একগাল হাসল। বলল,
” এটা রিমান্ড রুম।”
রিমান্ড নামটি শুনতেই সালাম ভয়ে কুঁকড়ে উঠল। ছলছলে চোখে বলল,
” স্যার গো, আমি গেরামের গরীব মানুষ। শহরে আইসি কাম কইরা ভাত খাইতে। এই ছোট্ট একটা চাকরি কইরা নিজের সংসার চালাই। দুই পোলা মাইয়া আমার স্কুলে পড়ে। গেরামে বউ দুই পোলা মাইয়া নিয়া খুব কষ্ট করে। আমি চাকরি না করলে ওগো না খাইয়া মরতে হইব। আমারে ছাইরা দেন স্যার। আমি এডির কিছু জানি না স্যার।”
” এতো অগ্রিম কথা বলছ কেন? তোমাকে এখনো আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি? না-কি মারধর করেছি? এটা রিমান্ড রুম বলেই যে সবসময় মারধর হয় তা কিন্তু নয়। ”
” তাইলে?”
” তুমি যদি সহজেই সবকিছু খুলে বলো তাহলে তোমাকে আমরা কিছুই করব না। আর যদি সময় নাও কথা পেঁচাও তখনই সমস্যা হবে।”
” কিন্তু স্যার…… ”
” এখন বাজে কথা বাদ দিয়ে আমি যা জিজ্ঞেস করছি সেগুলোর সোজা সরল উত্তর দাও।”
বলেই হাতের একটি ফাইল খুলল আরিফুল। বলল,
” শুক্রবার রাত ৯ টার পর বাড়ির ভেতর কে কে ঢুকেছিল?”
” স্যার এডা আমি কেমনে কমু? এত বড় বাড়ি আর এত ভাড়াটিয়া, এহন ভেতরে কত মানুষই তো ঢুকে। আমি তো কহনই কাউরে তেমন কিছু কই না আর দেখিও না। ”
” আশ্চর্য! তুমি বাড়ির কেয়ারটেকার আর তুমি লক্ষ্য করো না যে বাড়ির ভেতর কে কে ঢুকে? তাহলে তোমাকে রেখেছে কেন? ঘাস কাটতে?”
” আমি তো খালি পানির টাংকি ভরি, সিড়ি ঝাড়ু দেই আর রাতের বেলা কেচি গেইট তালা লাগাই আবার সকালে খুলি। এরমধ্যে কেডা আইল কেডা গেল সেসব তো আমি দেহি না স্যার।”
সালামের কথা শুনে আরিফুলের মেজাজ বিগড়ে গেলেও নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলল,
” বুঝলাম তুমি কখনোই লক্ষ্য করো না, কে এলো আর কে বের হলো তাই তো?”
” হো স্যার।”
” কিন্তু তুমি বেখেয়ালি থাকা সত্ত্বেও অবশ্যই দেখেছ কে বাড়ির ভেতর এসেছে বা কে বাইরে গিয়েছে?মানে তোমার কথা অনুযায়ী যদিও তুমি লক্ষ্য করো কিন্তু দেখেছ তো। ”
” হো স্যার হেমনে তো দেখছিই।”
আরিফুল এবার যেন আশার আলো খুঁজে পেল। উদ্বিগ্ন গলায় বলল,
” কাকে দেখেছ?”
” সারাদিনই তো বাড়ির মানুষ আর বাইরের মানুষ বাড়ির ভেতর আয়ে যায়। বাইরের মানুষ বলতে ভাড়াটিয়া গো মেহমান আর কি। তয় রাত সাড়ে ১০ দিকে একটা বেডা আয়ে। সারা শরীলে কালা কাপড় পেঁচাইয়া। আমার কেমন জানি লাগলে হেরে দাঁড় করাইতে যাই। কিন্তু হে দাঁড়ায় নাই। কইছে, হে না-কি এই বাড়িরই ভাড়াটিয়া। বৃষ্টিতে হের শরীল ভিজ্জা গেছে এখন আর হে দাঁড়াইতে পারব না। কইয়াই তাড়াতাড়ি উপরে উইঠা গেছে। পরে আমিও ভাবলাম বাইরে যেই বৃষ্টি এইজন্যই মনে হয় কালা কাপড় শরীলে পেঁচাইছে। তাই আমিও আর হের পিছনে যাই নাই।”
” এটা কী সাড়ে দশটার ঘটনা?”
” হো স্যার।”
” আচ্ছা তোমাদের বাড়িতে কোনো সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে? ”
” হো আছে তো স্যার। আমি যেনে বইয়া থাকি হেনেই আছে। ”
” গ্রেট! ”
বলেই আরিফুল বসা থেকে উঠে চলে যেতে নিলে সালাম বলে উঠল,
” স্যার, আমি কী এহন যাইতে পারমু?”
আরিফুল স্মিত হেসে বলল,
” সময় হোক আমি নিজেই বলব।”
বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে হাবিলদারকে বলল,
” সালামকে কিছু খেতে দাও। আর হ্যাঁ, এখানে কিন্তু স্টিল দাঁড়িয়ে থাকবে তুমি।কোত্থাও যাবে না।”
” ওকে স্যার।”
আরিফুল দ্রুত পায়ে রিমান্ড রুম থেকে বেড়িয়ে নিজের টেবিলে এসে বসল। ফাইলপত্র গোছাতে গোছাতে এস আই নীরবকে ডেকে বলল,
” এক্ষুনি হালিমা মঞ্জিল গিয়ে বাড়ির মালিকের কাছ থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে আসবে। আমি ফুটেজ দেখেই কিন্তু বাড়ি ফিরব। অর্থাৎ ফাস্ট যাবে আর আসবে।”
” ওকে স্যার।”
.
দুপুর ৩ টা। হন্তদন্ত হয়ে হালিমা মঞ্জিলের মেইন গেইট পার হয়ে মহিউদ্দিনের ফ্ল্যাটের দিক এগোচ্ছিল রাকিব। দরজার কাছে যেতেই দেখতে পেল হলুদ রঙের একটি ফিতা দিয়ে দরজার সামনে বেড়িবাঁধ দেয়া। যাতে কালো রঙে লেখা Crime scene​ do not cross ……
.
.
চলবে…..

বর্ষাস্নাত রাত পর্ব-০২

0

#বর্ষাস্নাত_রাত
লেখা – জান্নাতুল ফেরদৌস মাটি
পর্ব – ২
___________________
ভিড়িয়ে রাখা দরজা খুলে লাইট জ্বালালো হাফসা। বিছানার উপর চোখ পড়তেই দেখতে পেল মাহফুজ আর মারিয়া নিশ্চিন্তে একে অপরকে জড়িয়ে ঘুমোচ্ছে। যেন নিরাপত্তায় আবৃত স্বর্গসুখে আছে দুজন।
হাফসার পাশে থাকা মুখোশধারী ব্যাক্তিটি বলল,
” মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই। নয়তো এক মায়ার জন্য অন্য মায়াকে ত্যাগ করতে হবে তোমার। ”
কথাটি শোনামাত্র হাফসা দু পা পিছিয়ে গেল। আর জায়গা করে দিল অপর মানুষটিকে তার কার্যসিদ্ধি করতে।
মুখোশধারী ব্যাক্তিটি কোনোপ্রকার সংকোচ ছাড়া বিছানার দিক এগিয়ে গিয়ে ঘুমন্ত মারিয়াকে একটানে বিছানা থেকে নামিয়ে মেঝেতে ফেলে দিল। আর পাশ ফিরে বিনা দ্বিধায় ছুরি চালালো মাহফুজের গলায়। যেন খুবই স্বাভাবিক কিছু করছে সে। মুহুর্তে মধ্যে মাহফুজ চাতক পাখির ন্যায় ছটফট করতে করতে গলা বাকিয়ে একের পর এক গোঙানির শব্দ বের করে পারি জমালো পরপারে। বিছানা রক্তে ভেসে যাচ্ছিল।আর যা নিচ থেকে বসে ঘুমন্ত চোখে দেখছিল মারিয়া। রক্তের স্রোত আর খেলার সাথি বড় ভাইয়ার রক্তমাখা ছেঁড়া গলা দেখে এক চিৎকার দিল মারিয়া। ভয়ে আম্মু আম্মু বলে হাফসার পা জড়িয়ে কোলে উঠতে চাইলে হাফসা মুখ চেপে ধরল। মাঝরাতে মারিয়ার সংকীর্ণ চিৎকারও যে তাকে বড় কোনো বিপদের সম্মুখীনে ফেলতে পারে সেই ভয়ে।
আর এদিকে সেই মুখোশধারী ব্যাক্তিটি মারিয়ার চেঁচানোর শব্দ শুনে একলাফে মারিয়ার কাছে এসে চুল মুঠবন্দি করে এক হেঁচকা টানে মেঝেতে ফেলে দিল। আর সেই রক্তমাখা ছুরিটি তৃতীয় বারের মত প্রয়োগ করল মারিয়ার ছোট্ট গলার কোন ঘেঁষে। তবে ছুরি টিতে আগের মত ধাঁরালো ভাবটা এখন আর নেই। যার জন্যে নৃশংস ভাবে মারিয়ার গলা ধরে ছুরির ধাঁরালো অংশ চাপ দিয়েই যাচ্ছে সেই পিচাশ নামক মানবটি। ছোট্ট মারিয়া নিষ্পলক দৃষ্টিতে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মরন যন্ত্রণায় ছটফট করতেই সেই মুখোশধারী ব্যাক্তিটি গলার থেকে ছুরি সরিয়ে আরও একবার ছুরি আঘাত বসায় মারিয়ার বা পাজরে। মুহুর্তের মাঝে মারিয়া কাতরানো অবস্থাতেই চোখ বুজে একেবারে নিথর দেহের পরিণত হয়। আর সেই নিথর দেহের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে হাফসা। একবার মারিয়ার দিকে, একবার মাহফুজের দিকে তো একবার রক্তস্নাত করা পুরো ঘরের দিকে তাকায় হাফসা।
মুখোশধারী ব্যাক্তিটি বসা থেকে উঠে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠে,
” ব্যাগ যে বের করে রাখতে বলেছিলাম রেখেছ?”
সামনের মানুষটির কথা যেন হাফসার কানেই গেল না। সে তার আগের মতই ঘূর্ণায়মান দৃষ্টিপথ বজায় রেখে নিশ্চুপ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলো। মুখোশধারী ব্যাক্তিটি হাফসাকে সামান্য ঝাঁকুনি দিয়ে বলল,
” কী হলো? এখনো দাঁড়িয়ে আছো যে? যাও ব্যাগ নিয়ে এসো।”
হাফসা চোখ ফিরিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে বলল,
” হ্যাঁ হ্যাঁ….. ”
” ব্যাগ!”
” ও….. আচ্ছা দাঁড়াও আনছি।”
বলেই পাশের রুম অর্থাৎ তৃতীয় রুম থেকে একটি কালো রঙের ব্যাগ নিয়ে এলো হাফসা। মুখোশধারী ব্যাক্তিটি ব্যাগ হাতে নিয়ে হাফসার শোয়ার রুমের দিক যেতে যেতে বলল,
” দ্রুত আলমারি খুলে টাকা পয়সা, গয়নাগাটি যা আছে এই ব্যাগে নাও। বেশি দেরি করা যাবে না। ভোর হবার আগেই এখান থেকে বেরোতে হবে।নইলে পড়ে সমস্যায় পড়তে হবে। ”
” আচ্ছা।”
বলেই আলমারি খুলে টাকা পয়সা, গয়নাগাটি যা ছিল সব ব্যাগে পুড়ে নিল হাফসা। বলল,
” সব নেয়া শেষ চলো।”
” এ টু জেট নিয়েছ? ”
” হ্যাঁ সব।”
” আচ্ছা ব্যাগটা আমার হাতে দাও।”
হাফসা ব্যাগটা মুখোশ পড়া ব্যাক্তিটির হাতে তুলে দিতেই দেখতে পেল অন্যহাতে এখনো ছুরিটি ধরে রেখেছে। বলল,
” কী ব্যাপার? ছুরিটি এখনো ফেলোনি যে? বাইরে কী এটা নিয়ে বের হবে না-কি? মানুষ দেখলে তো সন্দেহ করবে।”
” ও হো…..এটার কথা তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। যাই হোক, এটা কোথায় ফেলা যায় বলোতো। ”
” কোথায় ফেলবে……. তোমার যেখানে খুশি সেখানে ফেলে দাও।”
” তাই?” বলেই ছুরিটির দিকে তাকালো মুখোশ পড়া ব্যাক্তিটি।
এদিকে হাফসা তার পাশের মানুষটির এরকম অসঙ্গতিপূর্ণ বেখেয়ালি আচরণ দেখে ভ্রু কুচকে বলল,
” কী ব্যাপার? হঠাৎ করে কী হলো তোমার? এভাবে চুপসে গেলে যে? পালানোর ইচ্ছে নেই না-কি? ”
” পালানোর ইচ্ছে…..হ্যাঁ আছে তো। ”
” তাহলে দাঁড়িয়ে আছো কেন? চলো! রাত প্রায় সাড়ে ৩ টা বেজে গিয়েছে। এটাই পালাবার মূখ্যম সময়।”
” হ্যাঁ তা ঠিকাছে তবে…….”
” তবে……তবে কী?”
হাফসার সামনের মানুষটি হাতের ব্যাগটি মেঝেতে রেখে দু পা সামনে এসে হাফসার মুখোমুখি দাঁড়ালো। ছুরির হাতটি হালকা উঁচিয়ে রক্তমাখা ছুরির সরু অংশটি হাফসার গাল বেয়ে গলার নিচে বেশ জোরে চেপে ধরতেই হাফসা ঢোক গিলে বলল,
” আহ…..লাগছে তো! কী করছ কী তুমি? ”
বলতে না বলতেই গলার একপাশ সামান্য কেটে একফোঁটা রক্ত হাফসার গলা বেয়ে বুক পর্যন্ত নেমে গেল। হাফসা কিছু বলতে নেয়ার আগেই মুখোশ পড়া ব্যাক্তিটি বলল,
” তোমার কী মনে হয়……আমি পাগল? গাজা খেয়ে এখানে এসেছি ? যে তোমার মত সেকেন্ড হ্যান্ড দুই বাচ্চার মা’র জন্য এই এতকিছু করব। জীবনের রিস্ক নিয়ে মাঠে নামবো। আরে বোকা মেয়ে তুমি তো ছিলে তুরুপের তাশ। তোমাকে হাত করেছি শুধু নিজের কার্যসিদ্ধির জন্যে। এছাড়া তুমি আর কিছুই না। তোমার সাথে যুগের পর যুগ সংসার করা তো বহুত দূরের কথা, তোমার সাথে বসে এক বিকেল কাটানোরও ইচ্ছে নেই আমার।”
হাফসা চোখমুখ বড় করে বলল,
” বাবলু! তুমি আমার সাথে বিট্রে করছ? যেই আমি শুধুমাত্র তোমার জন্যে তোমার ভালোবাসার জন্যে নিজের স্বামী, সন্তান, সংসার সমস্ত কিছু বিসর্জন দিয়েছি সেই তুমি আমার সাথে বিট্রে করছ?”
বাবলু একগাল হেসে বলল,
” যেই মেয়ে নিজের স্বামী, সন্তানকে পর পুরুষের জন্য খুন করতে পারে সেই মেয়েকে বিশ্বাস করব আমি? আরে তুমি তো অন্য পুরুষের জন্য আবার আমাকেও খুনের ছক আঁকতে পারবে। বিন্দুমাত্র হাত কাঁপবে না তোমার। আর সেই তোমাকে বিশ্বাস করে কী নিজের মরন ডেকে আনব না-কি? ”
” বাবলু!”
বলেই কেঁদে দিল হাফসা।
” উফফ……. বারবার বাবলু বাবলু করো না তো। মুখ বন্ধ রাখো। বেশি কথা আমার ভালো লাগে না।”
” প্লিজ বাবলু এরকম করো না তুমি। আমি আমার সর্বস্ব তোমার জন্য নিজ হাতে খুইয়েছি। শুধুমাত্র তোমার ভালোবাসা পাবার আশায়। এভাবে আমার ভরসা ভেঙে দিও না।”
” তুমি না বড্ড বেশিই কথা বলছ হাফসা…..”
বাবলুর কথা শেষ হবার আগেই হাফসা চোখের জল মুছে বলে উঠল,
” তোমার কী মনে হয় তুমি আমাকে এভাবে ফেলে গেলে তুমি বাঁচতে পারবে? আমি তোমাকে বাঁচতে দিব? সব পুলিশকে বলে দিব আমি….. সব বলে দিব। ”
বাবলু এবার ক্ষানিকটা উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। বলল,
” সাধে কী তোমাকে বোকা বলি? আসলেই তুমি একটা বোকা মেয়ে। ভাবলে কী করে আমি তোমাকে এমনি এমনি রেখে যাবো? নিজের কুকর্মের প্রমাণ কী কেউ এভাবে রেখে যায় না-কি? ”
বলেই হাফসার গলায় চেপে রাখা ছুরিটা খাড়া ভাবেই গলার চামড়ার ভেতরে ঢুকিয়ে দিল বাবলু। সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছিটকে এলো বাবলুর গায়ে। তবে কালো কাপড়ে সারা শরীর আবৃত থাকায় রক্তের প্রভাব তেমন একটা পড়ল না বাবলুর উপর।
এদিকে হাফসা চোখ দুটো বড় বড় করে অস্পষ্ট গলায় বাবলু বলে একহাত বাড়াতে নিলেই বাবলু সেই ছুরিটি গলার ভেতর থেকে একটানে বের করে পরপর আরও দু’বার গেঁথে দেয়। যেন এই হাফসা নামক যন্ত্রণাটি থেকে সে অতিদ্রুত মুক্তি পায়।
দাঁড়ানো অবস্থাতেই হাফসা ধপাস করে মেঝেতে পড়ে যায়। যার দরুণ বাবলুর কাজটা আরও সহজতর হয়ে ওঠে। গলার পাশাপাশি এখন মাথা ফেঁটেও রক্ত ঝড়ছে হাফসার। কিন্তু বাবলুর সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার রক্তমাখা কালো কাপড়টা খুলে মহিউদ্দিনের আলমারি থেকে একটা পাতলা চাদর বের করে সারা শরীর ঢেকে হাতে ব্যাগ নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
.
সোমবার বিকেল ৫ টা। হালিমা মঞ্জিল বাড়িটির সামনে ৩টি পুলিশের জিপ। জন বিশেক পুলিশ ফোর্স আর ক্ষানিকটা দূরেই শত মানুষের ভীড়। যাদের সহজ ভাষায় বলা হয় উৎসুক জনতা। পুলিশ ফোর্স শত চেষ্টা করেও এই উৎসুক জনতার ভীড় কমাতে পারছে না। অবশ্য কমার কথাও নয়… একই পরিবারের চার সদস্য খুন। চারটি খানি কথা না-কি!
পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা রাসেল আহমেদ ভীড় ঠেলে বাড়ির ভেতর ঢুকে পুলিশ অফিসার মো: আরিফুল ইসলামকে বললেন,
” কী খবর আরিফুল? খবর কী কেসের? কিছু জানতে পারলে কী?”
আরিফুল স্যালুট দিয়ে বলল,
” না স্যার, সেরকম কোনো ক্লু তো এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে সন্ধান চলছে।”
” পাইনি, চলছে এসব বললে তো হবে না, সন্ধান দ্রুত শেষ করে আসামিকে খুঁজে বের করতে হবে। একই পরিবারের চার চারটে খুন হয়েছে বুঝতে পারছ বিষয়টা? ”
” জি স্যার।”
” আচ্ছা, জবানবন্দির জন্য কাদের নেয়া হয়েছে? ”
” বাড়ির কেয়ারটেকার আর যিনি রিপোর্ট করেছিলেন তাকে। কারণ এর বাহিরে কাউকের সন্দেহের তালিকায় পাওয়া যায়নি।”
” ও……আচ্ছা, খুনী ক’জন ছিল সে বিষয়ে কী কিছু জানতে পেরেছ?
” সেই বিষয়টা তেই তো খটকা লাগছে স্যার।”
” মানে?”
” খুনের ধরন বলছে এক কথা আর সমস্ত প্রমাণ বলছে আরেক কথা। কিছুক্ষণ আগেই ফিঙ্গার প্রিন্ট, ফুট প্রিন্ট এবং ডিএনএ টেস্টের রেজাল্ট এসেছে। যেগুলো আমি ঘন্টা খানেক আগেই করতে পাঠিয়েছিলাম। ফুট প্রিন্ট টেস্টের রেজাল্ট অনুযায়ী ঘরে সর্বশেষ একজন প্রবেশ করেছে এবং ওই একজনই ঘর ছেড়ে সর্বশেষে বেরিয়ে গিয়েছে। আর ফিঙ্গার প্রিন্ট টেস্টের রেজাল্ট অনুযায়ী খুনী ছিল দু’জন। একজন খুন করেছে আর আরেকজন খুন করতে সাহায্য করেছে। অর্থাৎ এই ভিক্টিমদের থেকেই একজন খুনির সঙ্গী ছিল। তবে পুরোপুরি না, শুধুমাত্র শো। খুনি তাকে হাত করে নিজের কার্যসিদ্ধি করে এবং সবশেষে তাকেও বাকি তিনজনের মত ভিক্টিমের তালিকায় যুক্ত করেছে।”
” কেস টা যতটা ক্রিটিকাল ভেবেছিলাম এখন দেখছি তার থেকেও বহুগুণ ক্রিটিকাল….কী বলো আরিফুল! ”
” জি স্যার। আর আরেকটা কথা স্যার, ঘরের আলমারি কিন্তু সম্পূর্ণ ফাঁকা পেয়েছি আমরা। কিছু দলিলপত্র ছাড়া বাদবাকি সমস্ত টাকা পয়সা, গয়নাগাটি সবকিছুই খুনি সাথে করে নিয়ে গিয়েছে। তবে ভুলবশত একটি আংটি ফেলে গিয়েছে। যেটা মেঝেতে পড়েছিল। আমরা সেটিরও ডিএনএ করিয়েছি তবে খুনির সাথে সেই আংটির কোনো লিংক পাওয়া যায়নি। সেই আংটির ডিএনএ মিলেছে হাফসা নামক ঘরের গৃহিণীর সাথে। এখন এমনো হতে পারে ধস্তাধস্তির সময় আংটি টা হাফসার হাত থেকে পড়ে গিয়েছে আবার এমনো হতে পারে এই হাফসাই খুনির সেই সঙ্গী নামক স্বীকার। আর পরকীয়ার জের ধরেই হয়তো এতকিছু করেছে।এখন সেই হিসেব করলে হাফসা নিজেই হয়তো এই গয়নাগাটি, টাকা পয়সা সমস্ত কিছু খুনির ব্যাগে পুড়ে দিচ্ছিল আর সেই সময় আংটি টা পড়ে যায়। হতেই পারে…… আর না হবারও কিছু নেই যেহেতু খুনির সঙ্গী কে ছিল এখনো প্রমাণ হয়নি। তাই আমরা ফিফটি পারসেন্ট ধরে নিতেই পারি হাফসাই ছিল সেই সঙ্গী। যেহেতু আংটির ডিএনএ হাফসার সাথে মিলে গিয়েছে। ”
” হুম, হতেই পারে।”
” আর স্যার, মহিউদ্দিন সাহেবের রুমে কিন্তু একটা রক্তমাখা কালো কাপড় পাওয়া গিয়েছিল। যেটা ডিএনএ করার পর খুনির গায়ের শুকিয়ে যাওয়া ঘামের কিছ অংশ বিশেষ পাওয়া গিয়েছে। আশা করছি এই একটা জিনিস পরবর্তীতে আমাদের কাজে লাগতে পারে।”
” হুম তাহলে তো ভালোই। তবে হ্যাঁ, যা করার ফাস্ট করতে হবে। এমনিতেই নিউজ চ্যানেল গুলোতে এই খবর ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পুলিশ যদি এর রিয়েকশন দেরিতে দেখায় সাধারণ জনগণ কিন্তু ক্ষেপে যাবে। আর উপরের প্রেসার তো আছেই।”
” জি স্যার।”
” আচ্ছা লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য ফাস্ট পাঠাও। যে গন্ধ ছুটেছে লাশ হয়তো অলরেডি পঁচনও ধরে গিয়েছে। ”
” জি স্যার, শুক্রবার রাতের ঘটনা।আর আজ সোমবার বিকেল। পঁচন তো ধরবেই।”
” হুম, তো আরিফুল লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হলে তুমি থানায় যাও। আর যাদের জবানবন্দির জন্য নেয়া হয়েছে তাদের খবরাখবর নাও।”
বলেই রাসেল বেরিয়ে গেলেন স্পট থেকে। আর আরিফুল স্যালুট দিয়ে ‘জি স্যার ‘ বলে নিজে উল্টো পথ ধরে এগিয়ে গেল ডেড বডিকে ময়নাতদন্তে পাঠানোর উদ্দেশ্যে।
.
.
চলবে……

বর্ষাস্নাত রাত পর্ব-০১

0

#বর্ষাস্নাত_রাত
লেখা – জান্নাতুল ফেরদৌস মাটি
পর্ব – ১
_______________________
রাত ১০ টা। বাহিরে ঝুম বৃষ্টি। সময়টা বর্ষার আওতায় পড়ায় আজকাল দৈনিকই বৃষ্টির ঝুমুম ঝুমুর শব্দে মুখরিত হয় ধরনীর কোল।
মহিউদ্দিনের বর্ষার এই ঝুম বৃষ্টি দেখতে বড্ড বেশিই ভালো লাগে। তাই তো ছেলে মাহফুজ ও মেয়ে মারিয়াকে নিয়ে বিছানার কোণে বসে জানালার গ্রিল ধরে মাথা উচিঁয়ে রেখেছে মেঘলা আকাশ পানে। এমন সময় হাফসা এসে উদগ্রীব কন্ঠে বলল,
” তোমরা এখনো সজাগ? তোমাদের না সেই কখন আমি ঘুমোতে বলেছিলাম। এখনো ঘুমোওনি যে?”
মহিউদ্দিন বলল,
” কেবলই তো ১০ টা বাজে। এত তাড়াতাড়ি কখনো ঘুমিয়েছি যে, আজ ঘুমোবো? তাছাড়াও বাহিরে দেখছ কী ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এখনই ঘুমিয়ে পড়লে মন তো মানবে না। তাই মিনিট বিশেক বৃষ্টির এলোপাতাড়ি খেলা উপভোগ করি তারপর না’হয় ঘুমানো যাবে।”
হাফসা মুখ বাকিয়ে বলল,
” তোমার সাথে কথা বলা আর কচু গাছের সাথে কথা বলা একই। যাকগে,যা ইচ্ছে করো তুমি…. এই মাহফুজ , বোনকে নিয়ে নিজেদের ঘরে যা। আর হ্যাঁ ঘরে গিয়ে বাবার মত আবার জানালার গ্রিল ধরে বসে পড়িস না। তোরা দু ভাই বোনই তো পেয়েছিস বাবার মত বৃষ্টি উপভোগ করার রোগ। কিন্তু রাত করে তো সেটা সম্ভব না, তাই সোজা রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়বি। বুঝেছিস? ”
৫ বছর বয়সী মারিয়া একলাফে মহিউদ্দিনের কোলে চেপে বসল। বলল,
” না না, আমি যাবো না। আমি তো আব্বুর সাথেই বসে বৃষ্টির খেলা দেখব। তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো যাও।”
মারিয়ার কথা শেষ হতেই ৮ বছর বয়সী মাহফুজ বলে উঠল,
” হ্যাঁ আম্মু, তোমার ঘুম পেলে তুমি ওইরুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আমরা তো আব্বুর সাথেই বসে বৃষ্টি দেখব।”
দুই ছেলেমেয়ের কথা শুনে হাফসার চড়া মেজাজ আরও দ্বিগুণ পরিসরে চড়ে গেল। তবে আজ সে মাত্রাতিরিক্ত চড়া মেজাজে কথা বলবে না। আর তো কিছুক্ষণ…. চলুক না সবার ইচ্ছেমতো।
ভেবেই বিছানার একপাশে গা মেলে দিল হাফসা। আর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মহিউদ্দিন ও তার দুই ছেলেমেয়ের দিকে।
এদিকে মহিউদ্দিন জানালার বাহিরে এক হাত মেলিয়ে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির পানি মুঠোবন্দি করে ছেলেমেয়ের মুখে ছিটিয়ে দিতেই মাহফুজ ও মারিয়া উল্লাসে লাফিয়ে উঠল। আর জড়িয়ে ধরল মহিউদ্দিনকে। মহিউদ্দিনও ছেলেমেয়ের উল্লাসের সঙ্গী হয়ে দু’হাত দিয়ে দু’জনকে জড়িয়ে ধরে খিকখিক করে হাসতে লাগল।
হঠাৎই কলিং বেলের আওয়াজ ভেসে এলো। মহিউদ্দিন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
” এতো রাতে আবার কে এলো?”
বলেই মারিয়াকে কোল থেকে নামিয়ে মহিউদ্দিন বসা থেকে উঠতে নিলেই হাফসা তড়িঘড়ি করে শোয়া থেকে উঠে গায়ের ওড়না ঠিক করে নেয়। আর দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
” তুমি বসেছ বসো। উঠতে হবে না তোমাকে। আমি দেখছি কে এসেছে।”
হাফসা চলে যেতেই মহিউদ্দিন মারিয়াকে কোলে তুলে বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল,
” অনেক বৃষ্টি দেখা হয়েছে মা আর দেখতে হবে না। এই মাহফুজ, চল বাবা ঘুমিয়ে পড়বি। নয়তো এবার তোর আম্মু এসে তোদের সাথে সাথে আমাকেও ঝাঁটার বারি খাওয়াবে। চল চল…”
মারিয়া দু’হাত মুখে চেপে ধরে হাসির ছলে বলল,
” আল্লাহ! আব্বু কী বলে! ”
মহিউদ্দিন মারিয়ার গালে চুমু খেয়ে বলল,
” আব্বু তো ঠিকই বলে। ”
বলেই মাহফুজ আর মারিয়ার রুমে ঢুকল মহিউদ্দিন। কোল থেকে মারিয়াকে নামিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। পাশেই শুয়ে পড়ল মাহফুজ। পায়ের নিচ থেকে পাতলা কাঁথা টেনে মাহফুজ আর মারিয়ার গায়ে মেলে দিয়ে বলল,
” ঘুমিয়ে পড়ো বাবা।”
মাহফুজ আর মারিয়া একত্রে বলে উঠল,
” গুড নাইট আব্বু। ”
” গুড নাইট।”
রুমের আলো নিভিয়ে দরজা বাহির থেকে টেনে নিজ রুমে চলে গেল মহিউদ্দিন। নিজ রুমে গিয়ে টিভি ছেড়ে বিছানায় শুয়ে রিমোট হাতে নিতেই মনে পড়ল হাফসার কথা। ক্ষানিকটা উঁচু স্বরেক বলে উঠল,
” কই গো! ”
হাফসার কোনো সাড়াশব্দ নেই। মহিউদ্দিন আবারও বলল,
” এই মাহফুজের আম্মু! কোথায় তুমি? আর কে এসেছে? ”
এবারও হাফসার কোনো সাড়াশব্দ নেই। তবে দরজার ওপাশ থেকে কেমন যেন একটা ফুসুরফুসুর শব্দ ভেসে এলো মহিউদ্দিনের কর্ণকুহরে। মহিউদ্দিন বলে উঠল,
” কী ব্যাপার কোনো উত্তর দিচ্ছ না যে? আর কে এসেছে কে? কার সাথে কথা বলছ তুমি?”
হাফসা এবার দ্রুত পায়ে রুমে এসে মহিউদ্দিনের পাশে বসে বলল,
” আরে পাশের ফ্ল্যাটের ভাবি এসেছিল। বলল, চিনি আছে না-কি! এদিকে চিনি তো আজই আমাদের ঘরে শেষ হয়েছে। কোথা থেকে দেই তাই আর কী ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলছিলাম।”
” ও আচ্ছা, কিন্তু তাই বলে এতগুলো ডাক দিলাম একটা উত্তরও দিলে না?”
” আরে উনার সাথে কথা বলার মাঝে যদি আবার তোমার সাথে কথা বলি বাজে দেখায় না? তাই কোনো সাড়াশব্দ করিনি।”
” ও……”
” সেসব কথা বাদ দাও। টিভি বন্ধ করে এখন ঘুমাও তো। অনেক রাত হয়েছে। আর ঘুমও ধরেছে। ”
বলেই হাফসা উল্টো পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। মহিউদ্দিন টিভি বন্ধ করে হাফসাকে নিজের দিক ফিরিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুলের ভাজে নাক ডুবাতে ডুবাতে বলল,
” কী হয়েছে আমার বউটার? আজ এরকম অদ্ভুত ব্যবহার করছে কেন হুম?”
হাফসা চোখমুখ কুচকে মহিউদ্দিনের থেকে নিজেকে কিছুটা আলাদা করে নিল। বলল,
” আমার ঘুম ধরেছে। প্লিজ ঘুমাতে দাও।”
বলেই হাফসা আবারও উল্টো দিক মুখ করে শুয়ে পড়ল। তবে মহিউদ্দিন এবার আর হাফসার কাছে গেল না। কয়েক সেকেন্ডের অবাক চাহনি ছুঁড়ে নিজেও উল্টো দিক ফিরে শুয়ে পড়ল।
রাত ১ টা। পুরো ঘর জুড়ে বিরাজ করছে থমথমে পরিবেশ। কোথাও কোন শব্দ নেই। নেই কোনো কোলাহল। কেবল বাহির থেকে ভেসে আসছে ঝুমুর ঝুমুর বৃষ্টির মিষ্টি শব্দ। স্তব্ধতাকে বুকে জড়িয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সবাই। এরই মাঝে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে চোখ মেলে তাকালো হাফসা। যেন এই সময়টারই অপেক্ষা করছিল সে। চোখ মেলতেই চোখের সম্মুখে দেখতে পেল মাথা থেকে পা অবধি কালো কাপড়ে আবৃত এক বিশাল পুরুষালী দেহ গঠনকে।কিন্তু তারপরও কিঞ্চিৎ ভয়ের ছাপ ফুটে উঠল না হাফসার মুখ জুড়ে। ধীর পায়ে বিছানা ছেড়ে নেমে সেই কালো কাপড়ে আবৃত পুরুষটির পেছনে গিয়েছে দাঁড়িয়ে পড়ল হাফসা। চোখমুখ জুড়ে শত শঙ্কার ছাপ।
তার সামনে থাকা মুখোশধারী পুরুষটি একহাতে চাকু অন্যহাতে একটি সুতি ওড়না নিয়ে একপা দুপা করে এগিয়ে যাচ্ছে মহিউদ্দিনের কাছে। খুব আলতো করে বিছানার উপর উঠে মহিউদ্দিনের উপর বসে পড়ল।
ঘুমের মাঝে শরীরের উপর মাত্রাতিরিক্ত ভর অনুভব করে মহিউদ্দিন চোখ মেলতেই দেখে তার উপর এক মুখোশধারী পুরুষ নিজের দেহের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে বসে আছে। আর পাশে হাফসা দাঁড়িয়ে। ঘরের ভেতর ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকায় হাফসার মুখভঙ্গি আন্দাজ করতে পারছে না মহিউদ্দিন। এরই মাঝে তার উপর ভর দিয়ে থাকা লোকটি অকারণেই মহিউদ্দিনের সাথে জোরজবরদস্তি করতে লাগল। মহিউদ্দিন কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকটি মহিউদ্দিনের গলায় কাপড়টি পেঁচাতে লাগল। মহিউদ্দিন হাত দিয়ে ধাক্কাধাক্কি করার একপর্যায়ে হাত ছিটকে দেয়ালের সুইচ বোর্ডে পড়তেই ঘরের আলো জ্বলে ওঠে। সামনে থাকা মানুষটির চোখ দুটো ভীষণ করে চেনা মহিউদ্দিনের। যেন শত জনম ধরে দেখে এসেছে সে এই চোখ দুটো। তাহলে এতো ক্ষিপ্রতা কেন? কেনই বা তারউপর এতো জিঘাংসা? সে তো কখনো কারো ক্ষতি করেনি।
মৃত্যু খেলায় লড়াই করার মাঝে কথাগুলো ভাবছিল মহিউদ্দিন। গলার ফাঁস টা ক্রমশ গভীর রূপ ধারণ করছে। দম নিতেও যেন মহিউদ্দিনের ভেতর তোলপাড় সৃষ্টি হচ্ছে। চোখের সামনে সবকিছুই ঝাপসা দেখাচ্ছে। তারপরও মহিউদ্দিন তার জীবন বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। হাত পা ছুঁড়ে উপরে থাকা মানুষ নামক পিচাশটিকে সরানোর বল প্রয়োগ করলেই পাশ থেকে হাফসা এসে তার হাত শক্ত করে চেপে ধরে। চোখে ঝাপসা দেখলেও হাফসার বিষিয়ে থাকা মুখটি মহিউদ্দিনের চোখ এড়াতে পারল না। মরণ যন্ত্রণা ভোগ করা সত্ত্বেও প্রিয় মানুষটির থেকে ধোঁকা খাওয়ার যন্ত্রণা টা যেন একটু বেশিই ছিল মহিউদ্দিনের কাছে। তাই তো হাফসার দিকে তাকিয়ে এক ফোঁটা জল টুপ করে গড়িয়ে পড়ে মহিউদ্দিনের চোখ বেয়ে।
একপর্যায়ে মহিউদ্দিনের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা টাও যেন নেতিয়ে পড়ছে। আর সেই সুযোগে সামনে থাকা মানুষটি ছুরি চালায় মহিউদ্দিনের গলার মধ্যভাগে।
রঙিন বিছানার চাদর রক্তের ছোঁয়ায় ক্রমশ গভীর রঙ ধারণ করছে। আর সেই রঙ আরও গাঢ় করতে হাত পা ছুঁড়ে গলার ছেঁড়া অংশ উঁচিয়ে বিলিয়ে দিচ্ছে মহিউদ্দিন আরও রক্তের বন্যা।
বাহিরে মুশলধারে বৃষ্টি আর ঘরে লাল টকটকে রক্ত বৃষ্টি। সেই রক্ত বৃষ্টির মাঝে গলা ছেড়ে অস্পষ্ট গলায় মহিউদ্দিন বলে উঠল,
” এ বছরের বর্ষাস্নাত রাত টা এভাবে রক্ত খেলায় মাতিয়ে তুললে হাফসা?”
কথাটি শেষ করতেই হাফসার মুখোশধারী সঙ্গী আরও একবার মহিউদ্দিনের গলায় ছুরি বসালো। আর আলাদা করে ফেলল দেহ থেকে মাথা নামক অংশটিকে।
হাফসা বিছানা ছেড়ে উঠে রক্তমাখা হাতটি জামায় মুছে বলল,
” সারাটা দিন খুব ভয়ে ছিলাম যদি ঠিকমত কাজটা না করতে পারি। কিন্তু যতটা ভয় পেয়েছি ততটাও ঝামেলা হয়নি। খুব সহজেই কাজটা শেষ করতে পেরেছি। ”
হাফসার কথায় কোনরকম মতামত প্রকাশ না করে গম্ভীর কণ্ঠে মুখোশের আড়ালে থাকা মানুষটি বলল,
” এখন ফালতু কথা বলে সময় নষ্ট না করে ওই রুমে চলো।”
হাফসা এবার ঢোক গিলল। ভ্রু কুচকে বলল,
” তোমাকে তো আমি বাচ্চাদের কিছু করতে নিষেধ করেছিলাম। আর তুমিও তখন রাজি হয়েছিলে। তাহলে এখন আবার ওই রুমে যেতে চাইছ কেন? তোমার মতলব কী? তুমি কি আমাকে বিট্রে করছ?”
” আহা…. তুমি না বরাবরই দু লাইন বেশি বুঝো। ওরা যদি বেঁচে থাকে তোমার কী মনে হয় তুমি আমাকে পাবে? তোমার ফ্যামিলি আমাদের দু’জনের মিলন মেনে নিবে? কখনোই না। সবাই বলবে এই দুটো বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে জীবন পার করে দিতে। তোমার পক্ষে কী এটা সম্ভব? যে মিলনের জন্য নিজের বরকে মারলে সেই মিলনই যদি না হলো লাভ কী তাহলে এতকিছুর? ”
হাফসা এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছুক্ষণ ভাবল। তারপর আড়ালে থাকা মানুষটির বুকে নিজেকে সঁপে দিয়ে বলল,
” সবাইকে ছেড়ে দিলেও আমি তোমাকে ছাড়তে পারব না। এ জীবনে তুমি ছাড়া আমি নিঃস্ব। তাই তোমাকে ছাড়া এ জীবন আমি কল্পনাও করতে পারব না। তোমার যা ভালো মনে হয় করো কিন্তু আলাদা হওয়ার কথা বলো না। ”
আড়ালে থাকা হাফসার প্রিয় মানুষটি কন্ঠস্বরে আহ্লাদী ভাব ফুটিয়ে বলল,
” এই তো আমার ময়না পাখির মতো কথা। এমনি এমনি তোমাকে এত ভালোবাসি না-কি? তোমার এই উজাড় করা ভালোবাসার জন্যেই তো তোমায় এতো ভালোবাসি। ”
হাফসাও মুচকি হেসে আরও আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল তার প্রিয় মানুষটিকে। আর সেই সুযোগে সেই মানুষটি বলে উঠল,
” চলো চলো, বাকি কাজটুকু সেরে ফেলি। ভোর হয়ে গেলে তো আবার সমস্যা হবে। ”
বলেই হাতে রক্তমাখা চাকুটি নিয়ে হাফসাকে বুকে জড়িয়ে এগিয়ে গেল পাশের রুমে।

.
.
চলবে…….

তুমি কে পর্ব-০৯ এবং শেষ পর্ব

1

#তুমি_কে?
লেখকঃ আবির খান
পর্বঃ ০৯(শেষ পর্ব)

রোহান সাথে সাথে বিশাল বড়ো সক খায়। ও এখন কি করবে? কিভাবে তুবাকে বাঁচাবে? একদিকে তুবা অন্যদিকে ওর পুরো কোম্পানি। যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক, কর্মজীবী মানুষের ভবিষ্যৎ। রোহান এখন কি করবে? ও আর বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। রুমে চলে এসে সোফায় বসে পড়ে মাথায় হাত দিয়ে৷ তুবা অস্থির হয়ে কান্না করতে করতে রোহানের পিছু পিছু চলে আসে। মেয়েটা একটু আগেই প্রাণ খুলে খুব হাসছিল। কিন্তু হঠাৎ করে হাসিটুকু কান্নায় পরিণত হয়ে গেল। তুবা খুব চিন্তিত স্বরে বলে,

~ ভাইয়া কি বলেছে প্লিজ একটু বলবেন?
— আগামী বারো ঘণ্টার মধ্যে তোমাকে বাসায় দিয়ে না আসলে ও আমার নাম খারাপ করবে৷ শুধু তাই না আমার কোম্পানিকেও নাকি শেষ করে দিবে।

তুবা চোখদুটো বড়ো বড়ো করে রোহানের দিকে তাকিয়ে আছে। ও বিশ্বাস করতে পারছে না ওর ভাই এতটা খারাপ। তুবাও রোহানের পাশে নিথর হয়ে বসে পড়ে। নিঃশব্দে মেয়েটা অঝোরে কাঁদতে থাকে। ও বুঝতে পারছে রোহানের অবস্থাটা এখন কেমন। তাই বেশি সময় না নিয়ে রোহানের হাতের উপর হাত রেখে তুবা কান্নাসিক্ত কণ্ঠে বলে,

~ আমি এমনিই আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আর দিতে চাই না৷ আমাকে দিয়ে আসুন বাসায়। আমি আমার জীবনটা একটু হলেও উপভোগ করেছি। জীবনের স্বাদ পেয়েছি। হয়তো এর চেয়ে বেশি আমার ভাগ্যে আর ছিল না। তাই আমি অনেক বেশি খুশি। আপনার মতো একটা মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে, আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন আপনি। তবে আর না৷ হয়তো এবার বিদায়ের পালা এসেছে। আর কিছু ভাবতে হবে না। দিয়ে আসুন প্লিজ৷

কথাটা শেষ হওয়া মাত্রই তুবার দুচোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। রোহান ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল। ও এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে তুবাকে ওর বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

— কিভাবে ভাবলে তুমি, যে আমি তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিব? কখনো না। আমার বিষন্ন জীবনের আনন্দ তুমি, আমার অন্ধকার রাতের চাঁদ তুমি, আমার স্নিগ্ধ সকালের আলো তুমি। আমার সবকিছুই তো তুমি। তাহলে কিভাবে আমি তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেই বলো? কখনো না। অসম্ভব এটা আমার জন্য।
~ আপনি কেন এসব বলছেন? আমার জন্য আপনার অনেক বড়ো ক্ষতি হবে৷
— হবে না৷ আমি অনেক ভেবে একটা বুদ্ধি বের করেছি।

তুবা মাথা তুলে রোহানের দিকে তাকিয়ে বলে,

~ কি বুদ্ধি?
— আমি তোমাকে নিয়ে তোমার বাসায় যাবো। তোমার ভাই আর মা তোমার সম্পত্তিই তো চায় তাই না? তুমি তাদের সব লিখে দিয়ে আমার সাথে একেবারে চলে আসবে৷ দরকার নেই কিছু তোমার। আমার যা আছে তা দিয়ে ৭ প্রজন্ম এমনিই শুয়ে বসে খেতে পারবে৷ কি বলো?

তুবা রোহানের কথায় লজ্জা পায় আর বলে,

~ আমার শুধু আপনাকে চাই। আর কিছু না।
— তাহলে আর দেরি না চলো। আর একটা কথা মনে রাখবে, তোমাকে হ্যাপি রাখার জন্য আমি সব করতে পারি।

তুবা মুগ্ধ হয়ে রোহানের দিকে তাকিয়ে আছে। হ্যাঁ এই সেই মানুষ যাকে ও ভীষণ ভাবে ভালবাসে। তুবা খুব করে চাচ্ছে ও বলে দিক, আমি আপনাকে ভালবাসি। কিন্তু ওর মন বলে এই সব ঝামেলা শেষ করে একেবারে ও মনের কথাটা বলতে। তাই ও আর বলে না। এদিকে রোহান দ্রুত ওর ফোনটা বের করে ওর পার্সোনাল উকিলকে কল দিয়ে সব বুঝিয়ে আসতে বলে। তারপর ওরা কোনরকম নাস্তা করে উকিল আসলে তাকে সাথে নিয়ে রওনা হয় তুবাদের বাসায়। মানে আহসান ম্যানসনে। রোহান আর তুবা পিছনের সিটে একসাথে বসে আছে। তুবা রোহানের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে চোখ বন্ধ করে। ওর প্রচুর ভয় করছে৷ ওর মন কেন জানি বলছে, ও রোহানকে হারিয়ে ফেলবে৷ এটা যখন ভাবছিল হঠাৎই রোহান ওর হাতটা শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে৷ তুবা সাথে সাথে ওর আস্থা বিশ্বাস আবার ফিরে পায়। এক ঘণ্টা পর ওরা তুবার বাসায় গিয়ে পৌঁছায়। গাড়ি নিয়ে ভিতরে ঢুকতেই আশেপাশে অনেক অস্ত্রধারী বডিগার্ড দেখে ওরা। গাড়ি পার্ক করে ওরা তিনজন নেমে পড়ে। একটা লোক এসে বলে,

— আমার সাথে আসুন৷

রোহান, তুবা আর উকিন সেই লোকের সাথে বাসার ভিতরে যায়৷ ঢুকেই হল রুমে দেখে সেই আহসান আর ওর মা একসাথে বসে আছে। আহসান রোহানকে দেখে বলে উঠে,

— ওয়াও! এ আমি কাকে দেখতে পাচ্ছি? আমার একমাত্র এবং সবচেয়ে বড়ো শত্রু, রোহান খান! ওয়েলকাম রোহান ওয়েলকাম।

তুবা ভয়ে রোহানের পিছনে লুকিয়ে আছে। ওর মা বলে উঠে,

~ আমার মেয়েটাকে ও কিভাবে বস করেছে দেখ আহসান৷
— মা ও যে কতটা খারাপ তুমি কল্পনাও করতে পারবে না৷ তুবা এদিকে মায়ের কাছে আয়। তোর একমাত্র আপনজন আমরা। ও না৷

রোহান উকিলকে ইশারায় বাইরে যেতে বলে। সে চলে গেলে এবার রোহান বলতে শুরু করে,

— তুবা আমার সামনে আসো। কিছু প্রশ্ন করবো তার উত্তর দিবে৷

তুবা রোহানের কথা মতো সামনে আসে। এবার রোহান প্রশ্ন করে,

— তোমার মা লাস্ট কবে তোমার কাছে এসে তোমার সাথে কথা বলেছে?
~ জানি না৷
— তোমার ভাই লাস্ট কবে তোমার সাথে ভালো ভাবে এসে দুটো কথা বলেছিল?
~ জানি না।
— তোমাকে নিয়ে লাস্ট কবে শপিং এ গিয়েছিল তোমার পরিবার?
~ জানি না আমি। (কান্না করে দেয়)
— তুমি কাদের সাথে ঘুমাতে?
~ সার্ভেন্টদের সাথে।
— তুমি অসুস্থ হলে তোমার দেখাশোনা কে করতো?
~ সার্ভেন্টরা।

এবার রোহান তুবার ভাই আর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

— এই হলেন আপনারা আপনজন! তাহলে এই ভাবে আপনারা আপনাদের বাড়ির মেয়ের সাথে ব্যবহার করেন? ছিঃ আহসান ছিঃ। টাকার লোভ তোকে এত নিচে নামিয়ে দিয়েছে? আরে ও না তোর আপন বোন? তুই তো আগে এমন ছিলি না! আণ্টি ও তো আপনার দশ মাস পেটে ধরা সন্তান। তাহলে কিভাবে আপনি ওর মা হয়ে ওর উপর এরকম জুলুম করতে পারেন? আপনিও তো একজন মেয়ে। ও আমাকে সব বলেছে। ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে ওর উপর আপনারা অনেক জুলুম করেছেন। কিসের জন্য সম্পত্তি? আচ্ছা আহসান এত ধন সম্পদ নিয়ে কোথায় যাবি তুই? একদিন তো আমাদের এই সব ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিন্তু এই মানুষগুলো কিন্তু সবসময় আমাদের হয়ে থাকবে। আমাদের জন্য দোয়া করবে। তাহলে মানুষের চেয়ে এই ধন সম্পদকে কিভাবে তুই বড়ো ভাবলি? তুই নিজেকে এমন বানিয়েছিস যে তোর আপন বোন তোর ভয়ে বাসা থেকে পালিয়েছে। ওকে যদি আমি না পেয়ে অন্য কোনো খারাপ লোক পেতো তাহলে তো এতক্ষণে তোর বোন সব হারাতো। কেন? কেন এমন হলি তুই?

আহসান আর ওর মা স্তব্ধ হয়ে আছে। রোহান একটু চুপ থেকে আবার বলে,

— আমার কথায় তোরা রাতারাতি যে ভালো হয়ে যাবি এমন না৷ আমি জানি তোরা পরিবর্তন হবি না৷ হতেও হবে না। উকিল মশাই ভিতরে আসুন৷
— জি স্যার।
— কাগজটা দিন।
— এই যে স্যার।
— এটা কিসের কাগজ তাই তো ভাবছিস? এটা সেই কাগজ যার জন্য তোরা তুবাকে রাস্তায় নামিয়েছিস। এই কাগজে লেখা আছে, তুবা সজ্ঞানে ওর নামে যা যা লেখা ছিল সব তোর নামে লিখে দিয়েছে। তুবা কখনোই তোর এই সম্পত্তি চায় নি। চেয়েছিল একমুঠ ভালবাসা। কিন্তু তোরা সেটা বুঝিস নি। তুবা সাইন করে দেও।
~ আচ্ছা।

তুবা দ্রুত সাইন করে দেয়। রোহান কাগজটা নিয়ে বলে,

— যাও তোমার বাবার কাগজটা নিয়ে আসো।

তুবা সেটাও নিয়ে আসে। রোহান কাগজ দুটো নিয়ে তুবার মায়ের কাছে যায়। তার হাতে কাগজ দুটো দিয়ে বলে,

— আণ্টি আমরা মানুষেরা কত খারাপ। সামান্য এই দুটো কাগজের জন্য সম্পর্ক শেষ করে দিয়ে একে অপরের শত্রুতে পরিণত হয়ে যাই। তাও রক্তের সম্পর্কের মধ্যে! নিন আপনার একমাত্র আদরের ছেলের নামে সব লিখে দিল আপনার মেয়ে। ওহ! সরি, আপনারা তো ওকে মেয়েই ভাবেন না। নিন।

রোহান তুবার মায়ের হাতে কাগজ দুটো দিয়ে আহসানের কাছে আসে৷ এসে বলে,

— কলেজ জীবন থেকে তুই আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিলি। তোর সাথে আমি কত সময় পাড় করেছি। কিন্তু ভার্সিটিতে উঠে একটা মেয়ের মিথ্যা কথাকে বিশ্বাস করে তুই সাথে সাথে আমাকে তোর সবচেয়ে বড়ো শত্রু বানিয়ে ফেললি। আজ সেই মেয়ে কি তোর জীবনে আছে? নেই আহসান৷ কারণ সে ভালো ছিল না৷ তুই নকলকে আসল ভেবে সেদিন আসলকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। আজও তাই করলি। তোকে আর কিছু বলার নেই আমার। তবে লাস্ট একটা কথা বলি, আমি তুবাকে অনেক ভালবাসি। নিজের থেকেও বেশি। পারলে আমাদের জন্য দোয়া করিস। তুবা চলো।

রোহান আর তুবা চলেই যাচ্ছিল হঠাৎই পিছন থেকে,

~ দাঁড়াও রোহান। (তুবার মা)

রোহান আর তুবা পিছনে ঘুরে তাকায়। তুবা মা আহসানের সামনে এসে কোন কিছু না বলেই কাগজ দুটো টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে আহসানের গালে ঠাস করে কষিয়ে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,

~ আজ থেকে তোদের বাবার যা আছে তার অর্ধেক তুবার আর অর্ধেক তোর। কোন কথা আছে আর?

আহসান গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে না বলে। তুবার মা এবার তুবার কাছে এসে বলে,

~ রোহান ঠিকই বলেছে, তোকে আমরা আমাদের মেয়ে ভাবতে পারি নি। কারণ আমি তোর আদর্শ মা ই হতে পারিনি কখনো। মা নামে কলঙ্ক আমি। পারলে আমাকে মাফ করে দিস।
~ না মা। এসব কি বলছো তুমি!
~ ঠিকই বলছি। রোহান, আমার মেয়েটাকে তোমার হাতে দিয়ে দিলাম। আজ থেকে ও তোমার। ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও কতটা ভালো আছে তোমার কাছে। তাই আমি চাই সারাটা জীবন তোমরা একসাথে থেকো। ওর বাবা একদম তোমার মতো ছিল। সৎ এবং আদর্শ ব্যক্তিত্ববান৷ কিন্তু তিনি ভালো একটা স্ত্রী পান নি। যার জন্য আজ এই অবস্থা। তবে আমার মেয়েটা অনেক ভালো। ঠিক ওর বাবার মতো। ওর খেয়াল রেখো বাবা। আর কিছু বলার নেই আমার।

রোহান তুবার মায়ের কাছে এসে তার হাত দুটো ধরে বলে,

— আণ্টি সামনের মাসেই ওকে আমি বিয়ে করবো। আপনি আর আহসান অবশ্যই আসবেন। আমরা অপেক্ষায় থাকবো। আমি চাই আমাদের বিয়ে থেকে যেন নতুন করে সব শুরু হয়। তুবা যেন ওর মা আর ভাইকে আবার ফিরে পায়। আমি সেদিনের অপেক্ষায় থাকবো।

হঠাৎই আহসান বলে উঠে,

— তোর কাছে আমি আজও হেরে গেলাম রোহান। আমি হয়তো আর কখনো তোকে পিছনে ফেলতে পারবো না৷ কারণ তোর মতো মানুষ দুনিয়াতে খুব কমই আছে৷ আমার বোনটার খেয়াল রাখিস। আর আমি জানি তোরা কখনো আমাকে মাফ করবি না। তাও পারলে ক্ষমা করে দিস।

বলেই আহসান চলে যায়। রোহান আর তুবাকে কিছুই বলতে দেয় না। ওরা বিদায় নিয়ে চলে আসে। উকিল মশাইকে রোহান ধন্যবাদ দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। এবার ওরা বাসার দিকে রওনা হয়। তুবা রোহানের হাতটা জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছে৷ ও ভাবছে এটা কি ছিল? কোন ম্যাজিক? রোহান কি থেকে কি করে ফেললো? আধা ঘণ্টা পর ওরা একটা অপরিচিত জায়গায় চলে আসে। রোহান বলে,

— বাইরে আসো।

তুবা অবাক হয়ে নামতেই আরও অবাক হয়। এত সুন্দর জায়গা ও আগে কখনো দেখে নি। তুবা অবাক স্বরে বলে,

~ আমরা না বাসায় যাচ্ছিলাম?
— হুম কিন্তু তোমাকে আমার কিছু বলার ছিল। তাই এখানে নিয়ে আসলাম।
~ কি বলবেন? আমার তো ভয় করছে। আবার ছেড়ে যাবেন নাতো?
— পাগলিটা আগে শুনে তো নেও। চলো ওদিকে।
~ আচ্ছা।

রোহান তুবাকে নিয়ে নিরিবিলি একটা সুন্দর জায়গা যায়। আশেপাশে কোথাও কেউ নেই৷ ওরা একটা বড়ো গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। রোহান তুবাকে ওর সামনে এনে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আর মন ভরে দেখতে থাকে। তুবা খুব লজ্জা পাচ্ছে৷ ও বলে উঠে,

~ আপনি আসলে কে বলবেন?
— আমি তোমার ম্যাজিক ম্যান৷ ম্যাজিক করে তোমার সব কষ্ট সব ভয়কে শেষ করে দি। হাহা।
~ একদম ঠিক বলেছেন। আসলেই আপনি আমার ম্যাজিক ম্যান।
— আচ্ছা তুমি আমার কে জানো?
~ কে?

রোহান তুবাকে ছেড়ে ওর সামনে হাটুগিরে বসে পকেট থেকে একটা ডায়মন্ডের রিং বের করে ওর সামনে ধরে বলে,

— তুমি আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ ভালবাসা। তুবা তোমাকে অনেক অনেক বেশি ভালবাসি। আমার এই জীবনের পথচলার সঙ্গী হবে?

তুবা পুরো স্তব্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ করেই যেন এক ঝুড়ি খুশি ওকে কেউ দিয়ে যায় এমন মনে হচ্ছে। তুবা কেঁদে দিয়ে বলে,

~ আপনার মতো একজনের জীবন সঙ্গীনী হওয়া আমার সৌভাগ্য। অবশ্য হবো।

রোহান তুবাকে রিংটা পরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর মিষ্টি ঠোঁটটাতে নিজের ঠোঁটটা ডুবিয়ে দেয়। যেন আর তর সইছিলো না ওর। অনেকগুলো মিষ্টি অনুভূতি ভাগাভাগি করে ওদের দুজনের ভালবাসা শেষমেশ পূর্ণতা পায়৷

— সমাপ্ত।

© আবির খান

তুমি কে পর্ব-০৮

0

#তুমি_কে?
লেখকঃ আবির খান
পর্বঃ ০৮
রোহান দু’চোখ মেলে তুবার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে ছিল আর দুঃখ বিলাস করছিল। আসলে ও ভাবছিল কবে এই মিষ্টি ঠোঁটের পরম স্পর্শ পাবে৷ কিন্তু হঠাৎই এমন কিছু হলো যা রোহান স্বপ্নেও ভাবে নি। তুবা হঠাৎ করে রোহানের মুখের দিকে এগিয়ে আসে। আর এরপর ওদের মাঝে এমন কিছু হয়ে যায় যেটা হওয়ার কথাই ছিল না। রোহান তুবার নরম ঠোঁটের স্পর্শে হারিয়ে যায়। ওর মনে হয় তুবা ইচ্ছা করেই এমনটা করেছে। কারণ তুবার কাছ থেকে ভালোই রেস্পন্স পাওয়া যাচ্ছিল। রোহান আর কি করবে, বেচারার ইচ্ছাটা শেষমেশ পূরণ হলো। ও আর নিজেকে ধরে রাখে না। হারিয়ে যায় তুবার স্পর্শে। এভাবে কতক্ষণ ওরা একে অপরের মাঝে ডুবে ছিল তার কোন হিসাব নেই। অনেকটা সময় পর ওরা একে অপরকে ছেড়ে দেয়। দুজনই হাপিয়ে গিয়েছে। তুবা রোহানকে ছাড়া মাত্রই অন্যদিকে ফিরে শুয়ে থাকে। আর রোহান এখনো অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে ওর ঠোঁটে হাত দিয়ে তুবার ঘন কালো চুলের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না ওদের সম্পর্কটা মুহূর্তেই এতটা গভীর হয়ে গেল। ও মনে মনে ঠিক করে, ওর জীবন সঙ্গিনী যদি কেউ হয় তাহলে সেটা একমাত্র তুবা। আর কেউ না। এটা ভেবে রোহান মুচকি একটা হাসি দিয়ে উঠে পড়ে। আর এদিকে আমাদের তুবামনির অবস্থা তো বেজায় খারাপ। ও ওর ঠোঁটে হাত দিয়ে লজ্জায় লাল টুকটুকে হয়ে মনে মনে বলছে,

~ হায়! হায়! এ আমি কি করেছি! কেন নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না? কেন? আমি কি ওনাকে ভালবেসে ফেলেছি তাহলে? ওনার প্রতি জমে থাকা মায়াগুলোই কি ওনাকে আমার কাছে এতটা আকৃষ্ট করেছে? ওনাকে ছাড়া আমার যে কিছুই ভালো লাগে না। ওনাকে এতটা কাছে পেয়ে নিজেকে আর ধরেই রাখতে পারলাম না। ওয়েট! দোষ শুধু আমার একার না৷ ওনারও দোষ আছে। ব্যটা লুচ্চা আমাকে কিভাবে জড়িয়ে আমার শরীর হাত দিয়ে বিচরণ করছিল। আসুক পারলে কিছু বলতে। আমিও তখন ওনাকে লজ্জা দিব। আমার লুচ্চা শয়তান। হিহি।

তুবা উলটা পালটা ভেবে অনেকক্ষণ ধরে নিজেকে সামলে নিয়ে আস্তে আস্তে উঠে বসে। ও উঠতেই রোহান ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আসে। ওদের দুজনের চোখাচোখি হয়। দুজনেই লজ্জায় এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। রোহান মনে মনে বলছে,

— সিট ওর দিকে তাকাতেই পারছি না। খুব লজ্জা করছে। ও যদি এখন রাগ করে। কারণ ওকে তো আমিই প্রথমে জড়িয়ে ধরে ছিলাম। উফফ! কি যে করি। তারচেয়ে নিচে চলে যাবো নাকি?

অন্যদিকে তুবা,

~ আল্লাহ, আমি বোধহয় লজ্জায় মরেই যাবো। এখন উনি যদি এসে আমাকে বকা দেয় আমি তো কিছুই বলতে পারবো না। কি যে করি? আল্লাহ মাটিটা যদি ফাঁকা হয়ে যেত তাহলে ঢুকে চুপটি মেরে বসে থাকতাম। উফফ!

রোহান আরও ভাবে,

— না না, আমার ওকে মোটেও অবহেলা করা ঠিক হবে না। তাহলে ও কষ্ট পাবে। আমাকে ভুল বুঝবে। হয়তো ভাববে, আমি ওকে খারাপ ভাবছি। তার চেয়ে একটু আগে যা হয়েছে সব ভুলে ওর সাথে নরমাল ভাবে কথা বলি। হ্যাঁ হ্যাঁ সেটাই ভালো হবে৷

রোহান এটা ভেবে তুবার কাছে এসে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,

— গুড মর্নিং। ঘুম ভাঙলো তবে? রাতে ঠিক মতো ঘুম হয়েছে তো?

তুবা অবাক হয়ে যায় রোহানের কথা শুনে। ও মনে মনে বলে,

~ একি! উনি তো পুরো স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে। কিন্তু কেন? উনিকি সব ভুলে গেল নাকি? উহুম অসম্ভব! আমার ঠোঁটটা লাল করে ফেলছে শয়তানটায়। ভুলে যাবার তো কথা না৷ তাহলে নিশ্চয়ই আমি যেন লজ্জা না পাই তাই স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে। উনিই একমাত্র ব্যক্তি যে আমার কথা সবার আগে ভাবে৷ এর জন্যই ত ওনাকে আমি… হিহি।

তুবাও মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে অনেক কষ্টে নিজেকে একদম স্বাভাবিক করে বলে,

~ গুড মর্নিং। জি খুব সুন্দর ঘুম হয়েছে। আপনি যে এত সুন্দর করে আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন, ঘুম ভালো না হয়ে কি আর পারে?

কথাটা বলা মাত্রই রোহানের চোখগুলো ডিমের মতো বড়ো বড়ো হয়ে যায়। ও লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর এদিকে আমাদের দুষ্ট তুবামনি মুখে হাত দিয়ে বসে আছে। ও আবেগে ওর মনের কথাটা বলে ফেলেছে। আসলে হঠাৎ করে এত কিছু হয়ে যাওয়ায় তুবার মাথা ঠিক নেই। তাই উলটা পালটা বলে ফেলেছে। তুবা মুহূর্তেই বেড ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

~ সরি সরি। আমি ফ্রেশ হয়ে কফি নিয়ে আসছি। আপনি একটু অপেক্ষা করুন।

বলেই এক ভো দৌড় তুবা। আর রোহান ধপ করে বেডে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থেকে ও অট্টো হাসিতে ভেঙে পড়ে। হাসতে হাসতে বেডে উপর শুয়েই পড়ে। এরপর ও বারান্দায় চলে যায়। আজকে আর ও জিম করে না। বারান্দায় দাঁড়িয়ে সকালের মনোরম পরিবেশটা অনুভব করে ও। কিছুক্ষণ পর তুবা লজ্জাসিক্ত মুখখানা নিয়ে কফি নিয়ে আসে। রোহান কফিটা নিয়ে তুবাকে বলে,

— আজ তোমার সাথে কফিটা ভাগাভাগি করে খেতে চাই। যদি কিছু মনে না করো আমার সাথে কফিটা ভাগাভাগি করে খাবে? জোর নেই কিন্তু। তুমি চাইলে নাও করতে পারো। কোন সমস্যা নেই।

তুবা একটা অসম্ভব সুন্দর হাসি দিয়ে বলে,

~ আপনার সাথে পুরো জীবনটা ভাগাভাগি করতে আমি রাজি আছি। এটা ত সামান্য কফি। আমি খুব খুশি হবো যদি আপনি আমাকে এই অধিকারটুকু দেন।

রোহান হাসি দিয়ে কফির মগটা ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

— কফিটাকে আরও মিষ্টি করে দেও তো।

তুবা লজ্জাসিক্ত মুখখানা নিয়ে কফির মগে এক চুমুক দিয়ে খেয়ে রোহানের দিকে এগিয়ে দেয়৷ রোহান সাথে সাথে যেখানটায় তুবা চুমুক দিয়েছে সেখানে চুমুক দিয়ে ও এক চুমুক খেয়ে বলে,

— আহ! অমৃত তুবা৷ আজকে কফির স্বাদটা যেন আরও অনেক বেড়ে গিয়েছে।

তুবা লজ্জায় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বলে,

~ এএএ…আবার লজ্জা দিচ্ছেন আপনিইই।
— হাহা। আচ্ছা আচ্ছা আর দিব না৷ এবার তুমি খাও।

এবার ওরা দুজন মিলে কফিটা ভাগাভাগি করে খায়। আসলে ঠিক কফি না ওরা ওদের মাঝের সুপ্ত ভালবাসাটুকুকে ভাগাভাগি করেছে। প্রকৃত ভালবাসা সবসময় ভাগাভাগি করেই তার তৃপ্তি অনুভব করা যায়। যেটা ওরা করেছে। কফি খাওয়া হলে ওরা দুজন বাগাননের দিকে তাকিয়ে থাকে। তুবা আর রোহানের মাঝে এক হাত দূরত্ব ছিল। রোহানের সেটা ভালো লাগে না। ও আস্তে আস্তে কৌশলে তুবার একদম পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তুবা মুচকি হেসে রোহানের কাঁধে মাথা হেলিয়ে দিয়ে বলে,

~ জানেন, আমার কাছে এ সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। আমি কখনো কল্পনাও করি নি আমার সাদাকালো জীবনটা হঠাৎ করে কেউ এভাবে রঙিন করে দিবে৷ আমাকে সবসময় ইটের শক্ত চার দেয়ালে বন্দি করে রাখা হতো। তখন মনে মনে ভাবতান, হয়তো কখনো ফেইরি টেলের সেই রাজপুত্র এসে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে৷ আমার জীবনের সব ইচ্ছাগুলো পূরণ করবে৷ আপনি না আমার জীবনের সেই রাজপুত্র হয়ে এসেছেন৷ যেন ম্যাজিক করে আমার সব কষ্টগুলোকে নিমিষেই শেষ করে দিয়েছে। জানি না কতদিন এভাবে আপনি আমার পাশে থাকবেন৷ তবে যতদিন থাকবেন আমি আমার সব কিছু দিয়ে আপনাকে খুশি করার চেষ্টা করবো। কারণ আমি আপনার কাছে অনেক ঋণি। সত্যিই অনেক।

রোহান তুবাকে ওর দিকে ঘুরিয়ে ওর গাল দুটো ধরে চোখে চোখ রেখে বলে,

— আমি তো তোমার সব কিছু চাই না তুবা। আমাকে যদি সত্যিই তুমি কিছু দিতে চাও, তবে তোমার মিষ্টি হাসিটা দিও। জানো তোমার হাসিটার সামনে আমি আজ পর্যন্ত তোমার জন্য যা করেছি তা সব মূল্যহীন। কারণ তোমার হাসিটা আমার কাছে অনেক অনেক বেশি দামী। আমি অনেক শান্তি পাই যখন তোমার এই মিষ্টি ঠোঁটে হাসির রেখাটা ফুটে উঠে। আমি সত্যিই অনেক শান্তি অনুভব করি। তোমাকে তা বুঝাতে পারবো না।

তুবা রোহানের কথা শুনে হেসে দেয়। আর বলে,

~ আপনি সত্যিই অনেক ভালো। আপনার প্রশংসা শুরু করলে কখনো তা শেষ করা যাবে না৷ আমি ভেবেছি আমার শরীরটাকে আপনি পছন্দ করেন৷ কিন্তু আমি ভুল। আপনি তো আমার..
— আমি তোমার তুমিটাকে ভালবাসি। শুধু তুমি। না তোমার দেহ না তোমার সৌন্দর্য। শুধু তুমি। তোমার অস্তিত্বটাকে।

তুবা চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে ভাবছে,

~ উনি কি আমাকে প্রপোজ করে দিল? আমি কি ঠিক শুনলাম? না না! আমি হয়তো ভুল শুনেছি। এতটা স্বাভাবিক ভাবে কেউ বলে নাকি ভালবাসি!
— কি হলো অবাক হয়ে আছো কেন?
~ না মানে আপনি কি একটু আগে বললেন আমাকে ভাল…

হঠাৎই রোহানের ফোনটা জোরে বেজে উঠে। রোহান তুবাকে একমিনিট বলে ফোনটা বের করে রিসিভ করে। অপর পাশ থেকে,

— এই বাস্টার্ড! তুই কি ভাবেছিস তুই আমার বোনকে তোর কাছে লুকিয়ে রাখবি আর আমি তা জানবো না? রোহান অনেক বড়ো ভুল করেছিস তুই।
— মুখ সামলে কথা বল। তুই তোর বোনকে বোন বলিস কোন মুখে! তোর বোন তোর ভয়ে বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে।
— ওরে তো আমি মেরেই ফেলবো। ও কিভাবে আমাদের মান ইজ্জত সম্মান এভাবে মাটিতে মিশালো?
— আমি বেঁচে থাকতে তুই কোন দিন ওর গায়ে একটা টোকা পর্যন্ত দিতে পারবি না৷ সেই ক্ষমতা তোর নাই। তুই জানি না আমি কে।
— হাহা। তুই আমাকে এখনো চিনতে পারিস নি তাই এই কথা বলছিস। আমি তোর জীবনের সবচেয়ে বড়ো শত্রু। বলতো কে আমি?
— আহসান?
— হ্যাঁ। আহসান। দ্যা আহসান কোম্পানির মালিক আমি। আগামী ১২ ঘন্টার মধ্যে যদি তুই আমার বোনকে আমার কাছে নিয়ে না আসিস তাহলে তোকে এমন বেজ্জতি করবো তুই আর কাউকে কখনো মুখ দেখাতে পারবি না। শুধু তাই না তোর কোম্পানি রাতারাতি শেষ হয়ে যাবে। শুধু মাত্র তোর জন্য। বাই।

বলেই তুবার ভাই আহসান ফোন রেখে দেয়। রোহান ভীষণ বড়ো একটা ধাক্কা খায়। ও স্তব্ধ হয়ে আছে। একটু আগেও ত সব ভালো ছিল। হঠাৎ করে এটা কি হলো! এদিকে তুবা কাঁদতে কাঁদতে রোহানকে জিজ্ঞেস করে,

~ কি হয়েছে? কি হয়েছে? কে কল দিয়েছে? আমার ভাইয়া?
— তুবা তোমার ভাইয়ার নাম কি, আহসান? আহসান কোম্পানির মালিক সেই আহসান?
~ হ্যাঁ।

রোহান সাথে সাথে বিশাল বড়ো সক খায়। ও এখন কি করবে? কিভাবে তুবাকে বাঁচাবে? একদিকে তুবা অন্যদিকে ওর পুরো কোম্পানি। যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক, কর্মজীবী মানুষের ভবিষ্যৎ। রোহান এখন কি করবে?

চলবে..?

তুমি কে পর্ব-০৭

0

#তুমি_কে?
লেখকঃ আবির খান
পর্বঃ ০৭
তুবা কফি হাতে বারান্দার দিকে যেতেই ও যা দেখে তা দেখার জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ও পুরো হা করে তাকিয়ে আছে। কারণ ও দেখে রোহান ওর সিক্স প্যাক বডিটা ফুল উদম করে ব্যায়াম করছে। তুবা এই দৃশ্য দেখে হা করে তাকিয়ে আছে। এদিকে রোহান খেয়ালই করে নি যে তুবা এসে দাঁড়িয়ে আছে। আসলে ও প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম করে। তাই আজও বাদ দেয় নি। একটা ছোট খাটো জিম বলা যায় রোহানের বারান্দাটাকে। ও ডাম্বেলটা পাশে রেখে ঘুরতেই দেখে, তুবা হা করে তাকিয়ে আছে। এদিকে তুবা এতক্ষণ রোহানকে পিছন থেকে দেখছিল। কিন্তু এখন পুরো সামনাসামনি দেখছে। রোহানের অস্থির বডি দেখে তুবার অবস্থা প্রায় খারাপ। ও লজ্জায় মরে যাচ্ছে। রোহান দ্রুত ওর পাশে থেকে তোয়ালেটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে মুখ মুছতে মুছতে তুবার কাছে আসছে। তুবার হৃদস্পন্দন বেড়ে আকাশচুম্বী। রোহান ওর একদম কাছে এসে কফির মগটা নিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,

— লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখা হচ্ছিলো তাই না? ভালোই দুষ্ট আছো তুমি।

রোহানের কথা শুনে তুবা লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ও রোহানের বডির উপর থেকে চোখ সরাচ্ছে না৷ রোহান সেটা বুঝতে পেরে বলে,

— কি দুষ্টু মেয়ে এখনো কিভাবে তাকিয়ে আছে দেখো। এই যে মিস…কই হারালেন আপনি? আমার কথা কি শুনছেন?

এবার তুবার হুশ হয়। ও দ্রুত চোখ নামিয়ে ফেলে। রোহান হাসি দিয়ে কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে কিছুটা খেয়ে বলে,

— আহ! একদম মনটা চাঙ্গা হয়ে গেল। দাঁড়াও আরেক চুমুক খেয়ে নি।

এদিকে তুবা আড় চোখে বারবার রোহানকে দেখছিল। রোহানও যে কফি খেতে গিয়ে কৌশলে তুবাকে ফলো করছিল, তুবা তা খেয়ালই করে নি৷ তাই রোহান বলে উঠে,

— যেভাবে দেখছিলে মনে হচ্ছে আগে কখনো এমন ফিটফাট বডি দেখো নি।

তুবা দ্রুত ইশারায় না না বলে। রোহান হাসি দিয়ে বলে,

— ছুঁয়ে দেখবে নাকি? সেই কলেজ লাইফ থেকে ব্যায়াম করে করে এই বডি বানিয়েছি। কি দেখবে?

তুবা খুব খুশি হয়ে রোহানের দিকে তাকালেও আবার লজ্জায় চোখ নামিয়ে আস্তে করে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। রোহান জোরে হেসে দেয় তুবার কান্ড দেখে৷ আর বলে,

— তুমি আসলেই একটা পাগলি। আচ্ছা দেখো ছুঁয়ে। সমস্যা নেই৷

রোহান চুপচাপ দাঁড়িয়ে কফি খেতে থাকে। আর তুবা আস্তে আস্তে খুব লোভাতুর দৃষ্টিতে রোহানের বডির দিকে তাকিয়ে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। একদম কাছে এসে সেই গুতাগুতি শুরু করে। রোহান আর না পেরে বলে,

— তোমার এই গুতাগুতির স্বভাব আর গেল না তাই না। বোকা সুন্দর করে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখো। এই যে এভাবে।

রোহান তুবার হাত ধরে ওর চেস্টের উপর রাখে। এবার তুবা ওর পুরো হাত দিয়ে রোহানের সিক্স প্যাক বডিটা স্পর্শ করে করে দেখছে৷ ও মনে মনে বলছে,

~ উফফ! কি হার্ড বডি ওনার। একদম পাথরের মতো। ইসস! যদি একটু ভুড়ি থাকতো ভালোই হতো। ঢোল বাজাতাম। কিন্তু এখানে ঢোল বাজালে আমি নিজেই উল্টো হাতে ব্যথা ভাবো। হাহা।

রোহান তাকিয়ে দেখে তুবা মিটমিট করে হাসছে। অসম্ভব মায়াবী লাগছে ওকে। মন চাচ্ছে ওকে জড়িয়ে ধরুক। কিন্তু এখন না পড়ে ধরা যাবে৷ রোহানের খুব ভালোই লাগছে তুবার এই নরম হাতের স্পর্শ। ও মনে মনে ভাবছে,

— হ্যাঁ হ্যাঁ এখন শুধু স্পর্শ করো। বিয়ের পরে তোমাকে দিয়ে প্রতিদিন ম্যাসাজ করাবো। হাহা।

রোহান কফি শেষ করে বলে,

— হয়েছে হয়েছে আর না। বেশি ছুঁলে আমার সিক্স প্যাক নাই হয়ে যাবে৷

তুবা রোহানের কথা শুনে ভ্রুকুচকে ওর দিকে তাকিয়ে কফির মগটা নিয়ে নেয়। আর বলে,

~ আপনাকে ভুড়িওয়ালাই বানাবো আমি।

বলেই রোহানের পেটে একটা মোচড় দিয়ে জোরে দৌড়ে পালায় তুবা৷ রোহান ওকে ধরতে যেয়েও থেমে যায়। আর হাসতে হাসতে বলে,

— আরে পাগলিটা কফিটা অনেক মজা হয়েছে সেটা ত শুনলেই না। খালি দুষ্টামি।

তুবা ততক্ষণে চলে গিয়েছে। রোহান ওর কথা মনে করে হাসতে থাকে। তারপর ও ফ্রেশ হতে চলে যায়। রোহান ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসতেই দেখে ওর ফোনটা বেজেই চলছে। ও দ্রুত রিসিভ করলে অপর পাশ থেকে,

— আসসালামু আলাইকুম স্যার।
— অলাইকুম আসসালাম।
— স্যার আজকে একটু অফিসে আসতেই হবে৷ খুব আর্জেন্ট। কিছু ডকুমেন্টস আপনাকে দেখে সাইন করতে হবে। পাশাপাশি একটা সাইডেও যেতে হবে। আসলে আহসান কোম্পানির লোকেরা নাকি সেখানে সমস্যা করছে।
— হোয়াট! ওকে আমি আসছি। ও অনেক বারাবাড়ি করছে। ওর খবর আছে এবার। (রাগী কণ্ঠে)
— জি স্যার। রাখি তাহলে।

রোহান ফোন কেটে দিয়ে খুব রাগী ভাবে পিছনে ঘুরতেই দেখে তুবা দাঁড়িয়ে আছে ভীতু দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে। রোহানকে রাগী দেখে তুবা ভীতু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

~ কি হয়েছে এত রেগে গেলেন যে? কে কল দিয়েছিল?

রোহান তুবাকে ভীতু আর চিন্তিত দেখে ওর কাছে এসে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,

— ও কিছু না৷ অফিসিয়াল কিছু ঝামেলা এসেছে। আমাকে আজ অফিসে যেতেই হবে।
~ ওহ! শুনুন, রাগের মাথায় কখনো কোন কাজ আর সিদ্ধান্ত নিবেন না। নাহলে কখনোই সেটাতে সফল হতে পারবেন না৷

রোহান খুব খুশি হয়ে যায় তুবার কথা শুনে৷ তাই ওর আরও কাছে এসে হঠাৎ করে ওর গাল দুটো ধরে খুব মায়া জড়িত কণ্ঠে বলে,

— একদম পাক্কা বউয়ের মতো কথাগুলো বললে তুমি। ঠিক আছে আমি আর রাগ করবো না। তুমি চিন্তা করো না।

তুবা রোহানের স্পর্শ আর ওকে এত কাছে পেয়ে লজ্জায় লাল হয়ে যায়। ও লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে বলে,

~ আপনি অনেক অনেক পঁচা। খালি লজ্জা দেন আমাকে। তাড়াতাড়ি নাস্তা খেতে আসুন৷ অফিসে যেতে হবে যে।

বলেই ও দ্রুত নিচে চলে যায়৷ রোহান পিছনে দাঁড়িয়ে হাসতে থাকে। এরপর ওরা একসাথে নাস্তা করে। নাস্তা শেষ হলেই রোহান তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে অফিসে চলে যায়। সেদিনের পর টানা এক সপ্তাহ কেটে যায়৷ রোহান ওর অফিসের কাজ নিয়ে এতটা ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে তুবার সাথে ঠিক মতো কথাই হতো না৷ যেমনঃ সকাল ৭ টায় বের হতে আর আসতো রাত ১/২ টায়। তুবা রোহানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে যেত। আর সকালে ও উঠার আগেই রোহান নেই। আসলে রোহানের কোম্পানি আহসান কোম্পানির থেকেও অনেক ভালো এবং বড়ো একটা প্রজেক্ট পেয়েছে৷ তাই রোহান সেটা নিয়ে অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কারণ ও চায় না কোন ভাবেই আহসান কোম্পানি ওদের আগে তাদের প্রজেক্টটা শেষ করুক। তাই ও অনেক পরিশ্রম করছে। এদিকে তুবার মন ভীষণ খারাপ। ও রোহানকে অসম্ভব মিস করছে। আজ একসপ্তাহ পর তুবা রোহানকে দেখতে পায়৷ ও রোহানের জন্য হল রুমে সোফাতে বসে অপেক্ষা করছিল। নিলুকে বলেছে আজ ও দরজা খুলবে। নিলু প্রথমে না করলেও তুবার অস্থিরতা দেখে ও চুপচাপ ঘুমাতে চলে যায়। তুবার স্বভাবতই ঘুম অনেক। কিন্তু আজ ঘুমকে উপেক্ষা করেও ও অপেক্ষা করছে রোহানের জন্য। মেয়েটা রীতিমতো একবার ঘুমে পড়ে যাচ্ছে আবার লাফিয়ে উঠছে। এরকম করতে করতে রাত দুটো নাগাদ বাজে৷ তুবার অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হয় না৷ কিন্তু হঠাৎই বাসার বেল বেজে উঠে। ও একলাফে উঠে বাসার দরজা খুলে দেখে রোহান দাঁড়িয়ে আছে। ওকে প্রচন্ড ক্লান্ত আর দুর্বল লাগছে। এই রোহানকে যেন চেনাই যাচ্ছে না। রোহানও তুবাকে দেখে অবাক কণ্ঠে বলে উঠে,

~ একি! তুমি আজ জেগে আছো যে? নিলু কই?

তুবা রোহানের হাত ধরে টেনে বাসার ভিতরে এনে মেইন গেইট লাগিয়ে দিয়ে ওর কাছে এসে ওর দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে হঠাৎ করে কেঁদে দেয়। রোহান পুরো বোকা হয়ে যায় ওর কান্না দেখে। তুবাকে ও কিছু বলতে যাওয়ার আগেই তুবা রোহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

~ আপনি নিজের কি অবস্থা করেছেন! একবার আয়নায় দেখেছেন? আমার পঁচা মানুষটা কেমন হয়ে গিয়েছে। আপনাকে আজ কতদিন পর আমি দেখছি জানেন?

কথাগুলো বলতে বলতে তুবা রোহানকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। যেন ও হারিয়ে যাচ্ছে৷ তুবার কান্না দেখে রোহানের হুশ হয়, ও তো ওর আসল মানুষটাকে সময় দিতেই ভুলে গিয়েছে। তুবা কতটা কষ্ট পেয়েছে যে এভাবে ওকে পেয়ে কেঁদে দিয়েছে৷ রোহান তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে। ও তুবাকে জড়িয়ে ধরে ওর মাথার পিছনে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,

— সরি। আসলে কাজে মন দিলে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি। আর নিজেকে হারিয়ে ফেলায় আমার একটা বড়ো অংশকেই আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আর এমন হবে না৷ প্লিজ তুমি কান্না থামাও।
~ আপনাকে কত মিস করেছি আপনি জানেন? একটু দেখতেও পারিনি। আর কি হাল বানিয়েছেন আপনি নিজের? (রোহানের দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে)

রোহান মুচকি হাসি দিয়ে তুবার চোখ মুছে দিতে দিতে বলে,

— আমার জন্য কখনো কাউকে এতটা চিন্তিত করতে দেখি নি। তুমিই প্রথম।

তুবা এবার লজ্জা পায়। আবেগে ওর ফিলিংস গুলো সব বের হয়ে যাচ্ছিল। তুবা রোহানের কাছ থেকে একটু সরে এসে বলে,

~ আপনি অনেক ক্লান্ত। প্লিজ আগে উপরে চলুন৷ আমি আপনার জন্য জুস বানিয়ে নিয়ে আসি ঠান্ডা ঠান্ডা। আপনার ভালো লাগবে।
— আচ্ছা।

রোহান উপরে গিয়ে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নেয়। আর এই ফাঁকে তুবা ওর জন্য জুস বানিয়ে উপরে নিয়ে আসে। রোহান সোফাতে বসে ছিল। আসলে অনেক বেশি ক্লান্ত ও। তুবা জানে না এই একসপ্তাহে মাত্র ৫ ঘন্টা ঘুমিয়েছে রোহান। অনেক প্রেশারে ছিল ও। তুবা রোহানের হাতে জুসটা দিয়ে বলে,

~ খেয়ে নিন ভালো লাগবে৷
— আচ্ছা। তুমিও বসো।

তুবা রোহানের পাশে বসে। রোহান জুসটা খেয়ে বলে,

— আহ! অনেক রিফ্রেশ লাগছে এখন। থ্যাঙ্কিউ সো মাচ।
~ খাবার নিয়ে আসবো রাতের?
— না না আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি। তুমি আর চিন্তা করো না। এবার ঘুমাও। আমিও ঘুমিয়ে পড়ি।
~ এখানে? সোফায়?
— হ্যাঁ। তো আর কোথায় ঘুমাবো?

তুবা একলাফে উঠে রোহানের কাছ থেকে জুসের মগটা নিয়ে পাশে রেখে দিয়ে রোহানের হাত ধরে ওকে বিছানায় নিয়ে আসে। রোহান অবাক হয়ে যায়। শুধু তাই না ওকে শুইয়েও দেও। রোহান তুবার কান্ড দেখে বলে,

— আরে কি করছো? আমরা একসাথে ঘুমাবো নাকি?
~ না। আজ আমি সোফায় ঘুমাবো। আর আপনি বেডে। অনেক কষ্ট করেছেন আর না৷
— আচ্ছা শোনো না একটা কথা বলি?
~ একশোটা বলেন।
— তুমিও আমার পাশে ঘুমাও৷ আমার গায়ে এতটা শক্তি নেই যে তোমার সাথে উলটা পালটা কিছু করবো। সো ভয় নেই।
~ আপনি অনেক ক্লান্ত তাই না?
— হুম। পুরো শরীর আর মাথাটা অনেক ব্যথা করছে। ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা নেই।
~ আচ্ছা আমিও একটা রিকোয়েস্ট করলে রাখবেন?
— হুম বলো।
~ কয়েকদিন ছুটি নিন না৷ কাজ কি এখনো শেষ হয় নি? আপনি তো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন দিন দিন।

রোহান তুবার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে ও খুব করে ওকে চাচ্ছে। ওর জন্য চিন্তা করছে। তুবা চায় না আর একা থাকতে৷ রোহান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,

— ঠিক আছে। যাও নিলাম ছুটি। এমনিও কাজের চাপ শেষ। বাকিটা আমার লোকেরাই দেখতে পারবে৷
~ ইয়াহু। সত্যি বলছেন?
— হ্যাঁ হ্যাঁ।
~ যান এই খুশিতে আমি আপনার মাথাটা টিপে দি।
— আরে না না কি বলছো তুমি ঘুমাও৷ তোমার অনেক ঘুম পেয়েছে জানি।
~ আমার জন্য আপনি অনেক করেছেন। আমি কি এটুকু করতে পারি না?

রোহান বুঝতে পারে ও যদি তুবাকে না করে তাহলে ও অনেক কষ্ট পাবে৷ তাই ও বলে,

— আচ্ছে ঠিক আছে দেও।
~ থ্যাঙ্কিউ। এবার চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকুন আর আমার ম্যাসাজ উপভোগ করুন৷
— ওকে ম্যাম। হাহা।

তুবা খুব যত্ন করে রোহানের মাথা ম্যাসাজ করে দিচ্ছে। রোহানের যে কি ভালো লাগছে তা বলার বাইরে। তুবার নরম হাতের স্পর্শ পেতে পেতে রোহান কখন যেন ঘুমের দেশে হারিয়ে যায়। বেচারা জানে না কাল সকালে ওর সাথে কি হতে যাচ্ছে।

পরদিন সকালে,

রোহান ঘুমের মাঝেই ফিল করে ও খুব নরম একদম তুলার মতো কোন কিছু একটাকে খুব আরাম করে জড়িয়ে ধরে আছে৷ রোহান চোখ না খুলেই হাত দিয়ে সেটার উপর বিচরণ করে বুঝার চেষ্টা করছে আসলে ও কি জড়িয়ে ধরে আছে। রোহান ভাবছে ওর কোলবালিশটা কবে থেকে এত নরম আর উষ্ণ হয়ে গেল? হঠাৎই ও ফিল করে এটা কোলবালিশ না এটা একটা জলজ্যান্ত মানুষ। রোহান ভীষণ ভয় পেয়ে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকিয়ে যা দেখে তার জন্য ও রেডি ছিল না। ও তুবাকে জড়িয়ে আছে৷ আর তুবার মুখখানা একদম ওর সামনাসামনি। ও যদি একটু সামনে আগায় তাহলেই কাজ শেষ। ওদের মাঝের অপেক্ষিত ঘটনাটা হয়ে যাবে৷ মানে আর সেটা নাই বা বলি। রোহান যে কি করবে বুঝতে পারছে না। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। ও এক চোখ খুলতেই তুবার বড়ো বড়ো সুন্দর পাপড়িগুলো দেখছে৷ সাথে ওর গোলাপি ঠোঁটটা। এই একটা জিনিসই রোহানের বারোটা না তেরোটা বাজিয়ে দিচ্ছে৷ ও মনে মনে বলে,

— ইসস! কেউ যদি একটু পিছন থেকে ধাক্কা দিত তাহলে হয়তো আমার কোন দোষ থাকতো না৷ উফফ! ওর কঠিন নেশায় পড়ে যাচ্ছি। ওর কাছ থেকে আসা এই মিষ্টি ঘ্রাণটা আমাকে আরও পাগল করে দিচ্ছে। আমি কি একটু ওকে স্পর্শ করে দেখবো? ও হয়তো টেরই পাবে না৷ জাস্ট একটু।

রোহান দুচোখ মেলে তুবার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে ছিল আর দুঃখ বিলাস করছিল। কিন্তু হঠাৎই তুবার দিক থেকে একটা চাপ আসে। আর সাথে সাথে ওদের….

চলবে…?

তুমি কে পর্ব-০৬

0

#তুমি_কে?
লেখকঃ আবির খান
পর্বঃ ০৬
রোহান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু হঠাৎ ও ফিল করে ওর পিছনে ওর পিঠে কে যেন গুতো দিচ্ছে। প্রথম প্রথম ও স্বপ্ন ভাবে৷ কিন্তু একের পর এক গুতো খেয়ে রোহানও ভয় পেয়ে যায়। কোন সাড়া শব্দ নেই, শুধু গুতো দিচ্ছে। একি অবস্থা! কে হতে পারে এই রহস্যময় গুতো দেওয়া ব্যক্তি? রোহান সবসময় ওর বালিশের নিচে ওর পিস্তলটা রাখে। ও ঠিক করে যদি ভূত হয় তাহলে আজ তাকেও ও গুলি করবে৷ তাই দেরি না করে ও পিস্তলটা নিয়ে যেই ঘুরে আচমকা তাক করে আর সাথে সাথে তুবা চিৎকার দিয়ে উঠে।

~ আয়ায়ায়ায়ায়ায়া……

রোহান দ্রুত পিস্তলটা সরিয়ে অবাক কণ্ঠে বলে উঠে,

— তুবা তুমি! এত রাতে? কোন সমস্যা?
~ আপনি তো আমাকে গুলিই করতে নিয়েছিলেন। আর একটু হলে তো আমি…
— আহ! শান্ত হও৷ আর তুমি আমাকে ডাক না দিয়ে এরকম গুতাগুতি করছিলে কেন? আমি নিজেই তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
~ আপনি গভীর ঘুমে ছিলেন। তাই গুতো দিয়ে আপনার ঘুম ভাঙার চেষ্টা করছিলাম। সরি…
— আরে পাগলিটা সরি বলছো কেন? আচ্ছা আগে বলো কি হয়েছে? কোন সমস্যা?

তুবা রোহানের বেডে বসে অস্থির কণ্ঠে বলে,

~ হ্যাঁ হ্যাঁ অনেক অনেক সমস্যা। আমার একা ঘুমাতে খুব ভয় করছে৷ মনে হচ্ছে কে যেন রুমে হাঁটছে। আবার মনে হচ্ছে কে যেন আমার উপর অ্যাটাকা করবে৷ আমি কখনো একা থাকি নি। খুব ভয় করছে। (অসহায় মুখ করে)
— ওহ হ। আমাকে আগে বলবে না৷ তাহলে এতক্ষণ জেগে থাকতে হতো না। ঘুমাও নি নিশ্চয়ই এতক্ষণ তাই না?

তুবা অসহায় মুখ করে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। রোহানও ব্যথিত হয়ে বলে,

— সরি আমার আসলে ভাবা উচিত ছিল। আচ্ছা চলো তোমাকে নিলুর কাছে দিয়ে আসি। তাহলে আর ভয় করবে না।

রোহান কথা শেষ করে বেড ছেড়ে উঠতে নিয়ে দেখে তুবার মুখখানা আরও মলিন হয়ে গিয়েছে। তারমানে ও চায় না নিলুর কাছে যেতে। তাহলে কি চায়? রোহান তুবাকে একটু বুঝার চেষ্টা করে আবার বেডে বসে বলে,

— নাহ! নিলু তো এখন ঘুমাচ্ছে। ওর আছে গেলে মেয়েটারও ঘুম ভেঙে যাবে৷ এমনিতেই সারাদিন অনেক কষ্ট করে। ওর ঘুমটা ভাঙা ঠিক হবে না কি বলো?

তুবা খুব খুশি হয়ে জোর জোরে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ হ্যাঁ বলে। রোহান এবার স্পষ্ট বুঝে যায় তুবা আসলে কি চাচ্ছে। তাই ও বলে,

— তাহলে তো একটাই রাস্তাই আছে। তোমাকে আমার রুমেই ঘুমাতে হবে। পারবে ঘুমাতে?
~ হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই পারবো। আপনি অনেক ভালো। জানি কোন দুষ্টামি করবেন না৷ তাহলে আমি সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ি। আপনিও ঘুমান। আর সরি ডিস্টার্ব করার জন্য।

বলেই তুবা সোফার দিকে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু রোহান খপ করে ওর হাত ধরে জোরে একটা টান মারে। তুবা নিজেকে সামলাতে না পেরে রোহানের উপর এসে পড়ে। রোহান ওকে ধরে ওর কোলের মাঝে নিয়ে নেয়। তুবা অসম্ভব লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জাসিক্ত নয়নে রোহানের দিকে তাকিয়ে আছে। রোহান ওর নাকে একটা টোকা দিয়ে বলে,

— আমি এতটা অধম না যে তোমাকে সোফায় ঘুমাতে দিব। তুমি আমার বেডেই ঘুমাবে৷

তুবার চোখ দুটো সাথে সাথে বড়ো হয়ে যায়। লজ্জায় ওর হার্টবিট অনেক বেড়ে যায়। ও কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,

~ কি বলছেন, আমি আর আপনি এক বেডে ঘুমাবো?( ভীষণ অবাক হয়ে)

রোহান কিছুক্ষণ তুবার দিকে তাকিয়ে শয়তানি একটা হাসি দিয়ে বলে,

— হ্যাঁ। শুধু ঘুমাবো না আরও অনেক কিছু করবো। হাহা৷
~ এই এই কি বলছেন এসব! আর কি কি করবেন হ্যাঁ? (লজ্জায় একদম লাল হয়ে গিয়েছে)
— দেখবে কি কি করবো আমি?

তুবা ভয়ে আর লজ্জায় মাথা নাড়িয়ে না না বলে। কিন্তু আসলে মনে মনে ও ঠিকই দেখতে চায়। ওর মাথার ভিতর এখন অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে। সেসব চিন্তা করে ও লজ্জায় শেষ। রোহান আস্তে আস্তে বেড থেকে নেমে হঠাৎই তুবাকে ওর কোলে তুলে নেয়৷ তুবা তো পুরো স্তব্ধ। ও বলে উঠে,

~ কি করছেন? আমাকে কোলে নিয়েছেন কেন? ছাড়েন বলছি।
— কেন তুমি না জানতে চাইলে আমি কি কি করবো? সেগুলোই তো করছি।
~ আরে না আমি তো মানে আসলে…

তুবার হার্টবিট এতই বেড়ে গিয়েছে যে এ ঠিক মতো কথাই বলতে পারছে না৷ তার উপর রোহান ওর এত কাছে। ওর শরীরের উষ্ণতা তুবা স্পষ্ট অনুভব করছে। রোহান ওকে কোলে করে বেডে সুন্দর করে শুইয়ে দেয়৷ তুবার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়৷ রোহান ওকে শুইয়ে দিয়ে ওর পাশে এসে বসে। আস্তে আস্তে ওর মুখের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তুবার কেমন জানি লাগছে। ও নিজেকে সামলাতে পারছে না৷ একসময় রোহানের গরম নিঃশ্বাস ওর চোখে মুখে পড়ে। তুবা দেখে রোহান ওর মিষ্টি ঠোঁটটার দিকে তাকিয়ে আছে আর ওর কাছে আসছে। এই দৃশ্য দেখে তুবার ঠোঁটটা থরথর করে কাঁপছে। অজানা অনুভূতিতে ও চোখ বন্ধ করে ফেলে। ওর পুরো শরীর নিথর হয়ে গিয়েছে। ওর মাথাও কাজ করছে না। ও শুধু অপেক্ষা করছে কখন রোহানের স্পর্শ পাবে৷ কিন্তু অনেকটা সময় পাড় হলেও ও আর কিছু অনুভব করে না৷ তাই ও আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে রোহান একটা বালিশ হাতে নিয়ে মুচকি হাসছে৷ তুবা পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। রোহান হাসতে হাসতে বলে,

— এই যে বালিশটা নিলাম এটা নিয়ে আমি সোফায় ঘুমিয়ে পড়বো। আর তুমি এখানে আরামে ঘুমাবে৷ বুঝলে?

তুবা যে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। রোহানের উপর কঠিন রাগ হচ্ছে ওর। মন চাচ্ছে পিটানি দিক কতক্ষণ। রোহান সুযোগ পেলেই ওর সাথে এমন করে৷ ওকে পাগল করে দিয়ে মজা নেয়৷ তুবা আর কিছুই বলে না৷ ও আস্তে করে অন্যদিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে৷ আহরে! মেয়েটা খুব কষ্ট পেয়েছে। কত কিছুই না ভেবেছিল। কিন্তু তা কিছুই হলো না। রোহান উঠে দাঁড়ায়। তারপর তুবার গায়ে ব্ল্যাংকেট’টা দিয়ে ওর মাথার কাছে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

— এবার আরাম করে ঘুমান। সকালে আবার আপনাকে জ্ব্বালাবো। শুভ রাত্রি।

বলেই রোহান হাসতে হাসতে চুপচাপ সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। তুবাও মুচকি হেসে দেয়। রোহানের রসিকতা দেখে ওর অভিমান মুহূর্তেই চলে যায়। ও কোলবালিশটাকে রোহান মনে করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। আর এদিকে রোহান সোফায় শুয়ে পিছন থেকে তুবাকে দেখছিল। ওকে জ্বালাতে খুব ভালোই লাগছে রোহানের৷ রোহান মনে মনে বলে,

— আগে মন ভরে জ্বালাবো। আর তারপর তোমাকে অনেক সুখ দিব৷ তাহলেই না প্রকৃত সুখ অনুভব করবে তুমি। হাহা।

রোহান কখনোই এত দুষ্ট ছিল না। ওর পছন্দের লেখক, আবির খানের রোমান্টিক গল্প পড়ে পড়ে এত দুষ্টু হয়েছে ও। ওর খুব ইচ্ছা ছিল ও যাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে নিবে তার সাথে ও এরকম অনেক দুষ্টামি করবে। ও তাই করছে। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই সেটা লিমিটে। রোহান তুবাকে সারাজীবনের জন্য ওর করতে চায় বলেই এমন করছে। যদি না চাইতো তাহলে কখনোই ওকে ওর রুমে আসতেই দিত না। তুবাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে রোহানও একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।

পরদিন সকালে,

আরেকটি নতুন সকাল নতুন দিন ওদের দুজনের জীবনে এলো। স্বভাবতই তুবার ঘুম আগে আগে ভেঙে গেল। কারণ ওর বাসার সার্ভেন্টদের সাথেই ও উঠে যেত। তুবা আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়। পাশের জানালা দিয়ে স্নিগ্ধ সকালের মিষ্টি রোদ এসে রোহানের ঘরে পড়ছে। তুবা আস্তে আস্তে উঠে বসে। বসেই বাম পাশে তাকিয়ে দেখে রোহান ঘুমিয়ে আছে৷ তুবা এদিক ওদিক তাকিয়ে দ্রুত বেড ছেড়ে রোহানের কাছে গিয়ে মাটিতে হাটুতে ভর দিয়ে ওর কাছে বসে। প্রথম চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে, চুটকি বাজিয়ে চেইক করে যে রোহান জাগনা নাকি ঘুমানো। দেখে বেশ গভীর ঘুমেই আছে ও। তুবা তো খুব খুশি। কারণ ও এটাই চাচ্ছিল। ও এবার মন ভরে ঘুমন্ত রোহানকে দেখছে৷ কি সুন্দর হ্যান্ডসাম রোহান। তুবা খেয়াল করে রোহানের চুলগুলো অনেক সিল্কি আর বড়ো বড়ো। ঘন ঘন আই ব্রু, গালে হালকা চাপ দাড়ি। আর রোহানের ঠোঁটটাও গোলাপি। তুবা মিটমিট করে হাসছে আর মনে মনে বলছে,

~ এহহ! আসছে আমাকে জ্বালাবে৷ তুবাকে জ্বালানো এত সহজ না। হুহ।

বলেই ও রোহানের মাথায় হাত রেখে আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,

~ আচ্ছা আপনি এত ভালো কেন? আমার মতো অভাগীর জন্য কত্তো কিচ্ছু করছেন। অন্যকেউ হলে এতক্ষণে হয়তো আমাকে ভোগ করা হয়ে যেত। আর তারপর রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিত। কিন্তু আপনি তা করেন নি। আমাকে অনেক সম্মান আর ভালো ভালো মুহূর্ত উপহার দিচ্ছেন। আমি যে আপনার কাছে কতটা কৃতজ্ঞ তা বলে বুঝাতে পারবো না। আমার অন্ধকার জীবনে আলো হয়ে এসেছেন আপনি। ইসস! আমার ভাগ্যে যদি আপনি সারাজীবনের জন্য থাকতেন তাহলে আমি দাসী হয়ে হলেও থাকতাম। কিন্তু আমার মতো এরকম পালিয়ে আসা মেয়েকে আপনি কখনোই আপনার করে নিবেন না তা আমি জানি৷ তাই যত দিন আপনার কাছে আছি শুধু আপনার হয়েই থাকবো। আমার লুচ্চা শয়তান আপনি৷ হিহি।

বলেই তুবা রোহানের কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে উঠে খুব খুশি মনে ফ্রেশ হতে চলে যায়। তুবা ভেবেছিল রোহান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু ও গেলে রোহান আস্তে করে একটা হাসি দেয়৷ কারণ ও এতক্ষণ ঘুমানো ছিল না। তুবা ওর কাছে আসা মাত্রই ওর ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। রোহান মনে মনে বলে,

— তোমাকে আমি কোথাও যেত দিব না। তুমি আমার কাছেই থাকবে।

এরপর রোহান আবার ঘুমিয়ে পড়ে। তুবা ফ্রেশ হয়ে নিচে কিচেন এ যায়। গিয়ে দেখে নিলু নাস্তা বানাছে। ও পিছন থেকে নিলুকে জড়িয়ে ধরে বলে,

~ শুভ সকাল নিলু। কেমন আছো?
~ আরে আপুমনি যে। শুভ সকাল। আলহামদুলিল্লাহ আপনি?
~ আমিও আলহামদুলিল্লাহ।
~ আপুমনি আপনাকে পেয়ে আমার যে কি খুশি লাগছে। আমি একা একটা মেয়ে সারাদিন কাজ করতাম। কথা বলা গল্প করার মতোও কেউ ছিল না। ভাইয়া তো সারাদিন কাজ আর কাজ নিয়ে বিজি থাকে। আমাকে পুরো বাসা দেখে রাখতে হয়। কিন্তু এখন আপনি আছেন৷ আপনার সাথে গল্প করে অনেক অনেক ভালো লাগে আমার।
~ হ্যাঁ এখন থেকে শুধু আমার সাথে গল্প করবে। যা মন চায় বলবে। কোন সমস্যা নেই।
~ হ্যাঁ অবশ্যই। বলেন আপনার জন্য স্পেশাল কি বানাবো? যা খেয়ে চাইবেন তাই বানিয়ে দিব৷
~ না না কিছু না৷ আমি ওনার জন্য কফি বানাতে এসেছি।
~ ও। আচ্ছা বানান। আমিও নাস্তা বানাই তাহলে।
~ আচ্ছা।

নিলু নাস্তা বানাচ্ছে আর তুবা রোহানের জন্য কফি। ও কফি বানাতে বানাতে নিলুকে জিজ্ঞেস করে,

~ আচ্ছা নিলু আমি খেয়াল করেছি উনি তোমাকে একদম বোনের মতো ট্রিট করে৷ তুমি কি ওনার কোন আত্নীয়র মেয়ে?
~ না না আপুমনি একদম না৷ ভাইয়া আমাকে একটা অনাথ আশ্রম থেকে নিয়ে এসেছিলেন। আজ ৩/৪ বছর হবে আমি এই বাসায় এসেছি। আসলে আমি দেখতে নাকি একটু বেশি সুন্দরী। তাই ভাইয়ার নাকি আমাকে দেখে চিন্তা হয়েছে যে আমার ওখানে থাকলে কোন ক্ষতি হতে পারে। তাই তিনি আমাকে তার বাসায় নিয়ে আসেন৷ একদম বোনের মতো করে আমাকে লালন পালন করেন৷ শুধু ভাইয়া না ভাইয়ার আব্বুও অনেক ভালো ছিলেন। তিনিও আমাকে একদম নিজের মেয়ের মতো ভাবতেন। আমি জীবনে আর কিছু না পেলেও বাবার আদর আর ভাইয়ের আদর পেয়েছি। আমাকে তারা কখনো এ বাসার সার্ভেন্টই মনে করে নি৷ উল্টো এখানে যারা কাজ করে তারা সবাই জানে আমি ভাইয়ার বোন৷ রোহান ভাইয়া যে কত্তো ভালো আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আপনাকে একটা গোপন কথা বলি। ভাইয়া তার সিন্দুকের একটা ডুব্লিকেট চাবি সবসময় আমার কাছে রাখেন৷ তাহলে একবার ভাবেন আমাকে কতটা বিশ্বাস করেন তিনি।

তুবা পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে নিলুর কথা শুনে৷ রোহান যে এতটা ভালো হতে পারে ও কল্পনাও করে নি। তুবা খুব খুশি হয়ে বলে,

~ আমার এই বিশ বছরের জীবনে ওনার মতো একজন ভালো মানুষ কখনো দেখি নি। আমাকেই দেখো, রাস্তা থেকে নিয়ে এসে এখন কতটা যত্ন করছেন৷ কেউ এরকম করে বলো।

নিলু তুবার কাছে এসে বলে,

~ ভাইয়া কিন্তু এমন না৷ উনি অনেক রাগী আর গম্ভীর। খুব সহজে কাউকে বিশ্বাসও করেন না আর কাউকে এত তাড়াতাড়ি আপনও করেন। কিন্তু আপনি আসার পর থেকে উনি অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছেন৷ আমার মনে হয় ভাইয়ার আপনাকে অনেক পছন্দ হয়েছে। গতকাল বিকেলে আপনাকে না পেয়ে ভাইয়া যে কি পরিমাণ অস্থির হয়েছিল তা যদি একবার দেখতেন। আমি নিজেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ভাইয়ার অবস্থা দেখে৷
~ আমিও দেখেছি। কিন্তু তোমার ভাইয়ার সাথে আমাকে কখনো মানায় না৷ আমি পালিয়ে আসা একটা মেয়ে৷ যার কোন ভবিষ্যৎ নেই নিলু। কিভাবে ওনার মতো একজন ভালো মনের মানুষ আমার মতো অনিশ্চিত জীবনের একটা মেয়েকে নিয়ে সারাজীবন থাকবে বলো? তার বন্ধুবান্ধব আত্নীয় স্বজন কি বলবে? আমার তো পরিবারই ঠিক নেই। (অসহায় কণ্ঠে)
~ একদম মন খারাপ করবেন না৷ আপনি আমার ভাইয়াকে চিনেনই না৷ সে এসব কখনো ভাববে না৷ দেইখেন৷
~ অনেক পাকনা হয়ে গেছো তুমি। কাজ করো তো। (লজ্জা পেয়ে)
~ হাহা। আপুমনি আপনি লজ্জা পেলে আপনাকে আরও বেশি সুন্দর লাগে৷ হিহি।

তুবা খুব লজ্জা পাচ্ছে৷ এরপর ওদের কথা শেষ হলে তুবার কফি বানানোও শেষ হয়ে যায়। ও কফি নিয়ে ট্রেতে করে উপরে রোহানের কাছে যায়। কিন্তু রুমে ঢুকে দেখে রোহান কোথাও নেই। তুবার নজর যায় বারান্দার দিকে। ও ভাবে রোহান হয়তো বারান্দায় আছে। তুবা কফি হাতে আস্তে আস্তে বারান্দার দিকে যেতেই ও যা দেখে তা দেখার জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তুবা পুরো হা করে তাকিয়ে আছে। কারণ ও দেখে রোহান…

চলবে..?