Wednesday, July 9, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1404



তুমিময় পর্ব-০২

0

#গল্প-তুমিময়
#Aysha_Khan
#পার্ট ২

ভোর বেলার স্নিগ্ধ রোদ তীর্যক হয়ে রুম জুড়ে ছেঁয়ে আছে। বাহিরে পাখিরা কিচিরমিচির সুর তুলছে! সাথে ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে ডানা ঝাপটাচ্ছে বড় বড় গাছ গুলোতে করছে এই ডাল ঐ ডাল। ঢাকা শহরে পাখির কিচিরমিচির এই সুর শোনা বড্ড দায়। বরংচো তীক্ষ্ণ গাড়ি,রিকশা ইত্যাদির হর্ণ বেশি শোনা যায়।

রাতে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পরায় ভোরেই ঘুম ছুটে গেল! বারান্দায় দাঁড়িয়ে আশপাশে দেখছিলাম। কিন্তু বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটা পাশি দেখা যাচ্ছে। তাই ফ্রেশ হয়ে চুপিচুপি একটু ছাঁদে ঘুরে আসবো আশপাশে পুরোটা দেখে আসবো ভেবে ছাঁদে চলে গেলাম। কারোরই এতো সকালে ঘুম ভাঙেনি এটাই স্বাভাবিক বিয়েতে সবাই ব্যাস্ত ছিলো। তার উপর মেহেদী অনুষ্টান শেষ হয়েছেই হয়তো শেষ রাতে। ওরাতো মাত্র ঘুমিয়েছে তাই ৭ টা বাজেই তাদের ঘুম ভেঙে যাবেনা!

ছাদে উঠেই আগে বাগানের দিকটায় তাকালাম ওখানেই মেহেদী অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়েছে। ওদিকে তাকিয়ে কয়েক মূহুর্ত পর আমি ফিক করে হেসে দিলাম। আহি আহির বন্ধুমহল, আমাদের চোদ্দগুষ্টির কাজিন সব বিশাল স্টেজে আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে! সেকি ঘুমের ছিরি কাতচিৎ হয়ে যে ভাবে খুশি ঘুম। এমন মনে হচ্ছে কতগুলো মাতাল পরে আছে যাদের দিন দুনিয়ার কোনও খেয়াল নেই! আমি এক মিনিট সময় নষ্ট করলাম না। দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে বাগানে চলে গেলাম। একেকটার আজব ভঙ্গিতে ঘুমানোর সুন্দর সুন্দর কিছু ছবি তুলে নিলাম। সুন্দর ছবি বলতে কয়েকটার মুখ থেকে লালা পরছে! ইয়া আল্লাহ আমি একা একা হেসে কুটিকুটি।

সবার ছবি তুলার শেষে আমি আদনাদ ভাইকে খুজলাম। পেলাম না! আমি জানি বটে সে এভাবে যেখানে খুশি ঘুমাবেন না। তার নিড এন্ড ক্লিন পরিবেশ ছাড়া ঘুম হয়না। মামুর বাড়িতে সব থেকে সুন্দর গোছানো রুমটা তার! তাই এখানে সে ঘুমোবে সেটা শুধু আমি কল্পনা করতে পারি। আমি চুপচাপ আবার ছাঁদে চলে এলাম। আসতে আসতে সবাইকে হোয়াটসঅ্যাপ করলাম ছবি গুলো আমি শিওড় ওর দেখে জ্ঞান হারাবে। তারাছাড়া একবছর আমি ওদের এই পিক গুলো দিয়ে বার্থডে উইশ করবো। হোয়াট আ্য কন্টেন্ট। একা একাই যখন হাসছিলাম। তখন পিছন থেকে হায়াদ ভাইয়ার কণ্ঠ শুনতে পেলাম।

‘আরে অয়ত্রী আলো এখানে আর তার বডিগার্ড নেই আশেপাশে কিভাবে কী?’

আমার হো হো করে হেসে দিলাম হায়াদের কথায়। বুঝতে বাকি রইলোনা হায়াদ ভাই আদনান ভাইকে বডিগার্ড বলে বুঝিয়েছেন। একমাত্র ইনিই পারেন এ কথা বলতে। কেননা আদনান ভাইকে সবাই ভয় পেলেও হায়াদ ভয় পায় না। হায়াদ আদনান ভাইয়ের ছোট কিন্তু আমার সিনিয়র। তবুও তার মধ্যে আদনান এর ভয় নেই। বিষয়টা আমার খুব ভালোলাগে। এবং ইনিই একমাত্র আমাকে বুঝেন! তার জন্যেই যত বকাই খাইনা কেন হায়াদকে আমি এড়িয়ে চলতে পারিনা। অনেকটা বন্ধুর দৃষ্টিতেই দেখি তাকে আমি! আবারও হায়াদের কথা ভাবনার সুতোয় টান পরলো!

‘ আরে কি ভাবছো ওতো? ভয় পাচ্ছো না তো? আরে আদনান এখনও ঘুমোয় ডোন্ট ওয়ারি!’

আমি মাথা নেড়ে বললাম,

‘আমি জানি আদনান ভাই ঘুমে! তানাহলে ছাঁদেই আসতে পারতাম না। আমি তো ভাবছিলাম আপনি কিভাবে আদনান ভাইয়ের ভয় পান না সেটা?’

হায়াদ ভাই মুচকি হাসলো,অতঃপর বলল,

‘ ভয় পেলেই মানুষ ভয় দেখায়। তাই আল্লাহ ছাড়া আমি কাউকে ভয় পাইনা!”

আমি সন্তুষ্ট কণ্ঠে বললাম,

‘ইম্প্রেসিভ হ্যায়া!’

হায়াত ভাই রেলিঙের উপর বসে বললেন,

‘ অয়ত্রী তোমার রাগ হয়না কখনও আদনান ভাইয়ের উপর?’

‘হয়না কারণ আমি জানি সে আমার ভালোর জন্যেই এমন করেন! তবে হ্যাঁ একটু বেশিই করে যদিও! তবে সে আমাকে জ্বালাতে পছন্দ করে। যেন আমি উনার বাড়াভাতে ছাই ঢেলে দিয়েছি!”

আমার কথার পিঠে কিছু বললেন না হায়াদ ভাই আশপাশে দেখতে ব্যাস্ত হলেন! আমি খানিক চুপ থেকে দূরে দৃষ্টি মেলে আবার বললাম,

‘ জানেন আমাকে যদি আদনান ভাই এখানে তুলে নিয়ে না আসতেন। আজ আমার জীবন এর থেকে ভয়াবহ রূপ নিতো! ছোট্ট চাচি তার আধ বুড়ো ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছিলেন। যার আগে একটা বিয়েও হয়েছিল। এবং দুই সন্তানের পিতা তার স্ত্রী পালিয়ে যায়! আমার বাবা আমার ক্ষেত্রে উদাসীন ছিলেন শুধু আমার ক্ষেত্রে না সংসার ক্ষেত্রেও। বাবা মাকে প্রচুর ভালোবাসতেন। উনি গত হওয়ায় সব থেকে কষ্ট বাবাই পেলেন। বাবা ভালো ব্যাংকে জব করতেন মা চলে যেতে সব ছেড়ে দিলেন। দাদু বলতো আমাকে ধরে প্রায় কাঁদতেন বাবা। আস্তে আস্তে বাবা একদম চুপচাপ হয়ে গেলেন। এতগুলো বছর ছোট চাচ্চু সব সামলাতেন আমার পড়াশোনা সংসার সব। আর তাই যখন ছোট্ট চাচি আমার বিয়ে ঠিক করলেন। বাবা দাদু কিছুই করতে পারছিলেন না কারণ ছোট চাচ্চুও রাজিই ছিলেন অনেকটা। সেই কঠিন সময়ে আদনান ভাই আমাকে একটা জঘন্য জীবন থেকে বাঁচিয়েছে। ক্ষণিকের রাগ আমার তার উপর থাকলেও। আমি কখনও ঘৃণা কিংবা রাগ করে থাকতে পারিনা আদনান ভাইয়ের সাথে। এখন তো মনে হয় আদনান ভাই যদি আমাকে জ্বালাত্বন না করেন আমার জীবন পাংসে হয়ে যাবে। তার জন্য আমি হাসিখুশি পরিবার পেয়েছি। বাবা মার মতো মামা মামী পেয়েছি একা আমি। অনেকগুলো কাজিন ভাই বোন পেয়েছি! আমি এসব হারাতে চাইনা। না যার জন্য এসব পেয়েছি তার জন্য মনে রাগ রাখতে চাই না!”

হায়াদ ভাই সব শুনে দুষ্টু হেসে বললেন,

‘ অয়ত্রী আমার মনে হয় আদনান ভাই তোমাকে ভালোবাসেন! কিন্তু ঐ আদৃতাকে তোমায় দেখিয়ে দেখিয়ে সামনে নিয়ে কেন ঘুরেন আমি বুঝিনা!’

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,

‘আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে মানে কী?’

হায়াদ ভাই রাগ দেখিয়ে বললেন,

‘ আরে দেখিয়ে দেখিয়েই তো। তোমার সামনে ছাড়া ঐ মেয়ের আশেপাশে ও তাকে দেখা যায় না। আদৃতা ঘেষাঘেষির চেষ্টা করলেও এক বেয়াল্লিশ চক্করের চিৎকার দিবে। বেচারি তখন তোমার মতোই কেঁদে কুঁটে ভাসায়৷ আমার তখন ওর জন্যেও মায়া হয়। কিন্তু যখনি তোমার সামনে থাকবে আদৃতার সাথে ফেবিকলের মতো চিপকে থাকবে যেন আদনান আদৃত বলতে অন্ধ! আসলে ব্যাপার টা সম্পূর্ণ উল্টো তুমি কলেজ রেগুলার যাও না বলে এসব জানো না।’

আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হতাশার স্বরে বললাম,

‘আমি সবি জানি হায়াদ ভাই। তাই তো এখন কষ্ট হয়না ঐ শাকচুন্নিটার ঝাজ দেখানো কথা! আমার মনে হয় আদনান ভাই আমাকে পছন্দ করলেও মানতে রাজি হয় দ্যা গ্রেট আদনান আমাকে পছন্দ করে এটায় হয়তো তার নিজের ইগোই হার্ট হয়ে যায় হুহ। আবার হয়তো সেটার জন্য আমার জঘন্য চেহারা দায়। আমি দেখতে হয়তো অনেক বিশ্রী কিনা! আস্ত বদ রাগী ছেলে চাইনা আমার উনার ভালোবাসা! এভাবেই জীবন ত্যাজ পাতা করে ছেড়েছে! ‘

হায়াদ ভাই পুরুষালী কণ্ঠে ঝংকার তুলে হাসলেন। অতঃপর বললেন,

‘আই কান্ট বিলিভ দিস তুমি ঐ বদরাগী ছেলেটাকেই ভালোবেসে বসে আছো!’

গাল দুটো লাল হয়ে গেলো কাচুমাচু করে বললাম,

‘ আমি আর ঐ নির্দয় লোকটাকে ভালোবাসা! অসম্ভব! ঐ লোকটাকে তো গন্ডার ও ভালোবাসতে ভয় পাবে। আর আমি তো নিরিহ প্রাণী! ‘

হায়াদ হো হো করে হেসে উঠলো। আমিও হাসি চেপে রাখার চেষ্টা করে অবশেষে হেসেই দিলাম। হায়াদ কিটকিটিয়ে হেসে বলল,

‘কথা কি মিথ্যে নয় অয়ত্রী। কিন্তু তুমি আর জঘন্য দেখতে কথাটা হজম করার মতো নয়। আমার আম্মু বলে। তোমার মামাদের একমাত্র বোন তোমার নানু বাড়ীর সব থেকে সুন্দরী মেয়ে ছিলেন। আর তুমি তোমার আম্মুর থেকেও সুন্দরী! ‘

আমি বিদ্রুপের স্বরে বললাম,

‘ সব সুন্দরীদের ভাগ্য কিন্তু খুব একটা ভালো থাকেনা! আবার সুন্দরী হলেই সব হয়না!’

————-

বেলা ১২ টা বিশাল বাড়ির লিভিং রুম ভর্তি মেহমান। সবাই হইচই চিল্লাচিল্লির মধ্যে ব্রেকফাস্ট করতে ব্যাস্ত। আদনান ভাই নিচে এসে এই হিবিজিবি পরিবেশ দেখে ঘোষণা করে গেছেন। আমাকে তার রুমে ব্রেকফাস্ট নিয়ে যেতে। আমি চুপচাপ বড় মার থেকে ব্রেকফাস্ট নিয়ে তার রুমের দিকেই যাচ্ছিলাম আড়চোখে দেখলাম আদৃতা আপু আমার উপর ভয়ানক দৃষ্টি নিক্ষেপ করছেন। কি আর করার? ভোতা মুখ করে আমি আদনান ভাইয়ের রুমে নক করলাম। সাথে সাথে ওপাশ থেকে জবাব এলো,

‘কাম ইন..!’

আস্তে করে রুমে ঢুকে দেখিনি উনি বেডে আধশোয়া অবস্থা আছেন। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। সিল্কি চুল গুলো সর্বদার মতো পার্ফেক্ট নেই। এলোমেলো অগোছালো লাগছে বড্ড। চিন্তার ভাজ পরলো আমার কপালে। মনে হলো উনি অসুস্থ! জিজ্ঞেস করবো অসুস্থ কী না তার আগেই উনি গাঁ জ্বালানো কথা বলে উঠলেন,

‘ এক প্লেট ব্রেকফাস্ট দিয়ে তুই কী উঁড়ে উঁড়ে আসছিলি! ১ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলো অপেক্ষা করছি! অপেক্ষা করতে করতে অসুস্থ হয়ে গেছি! তুই কী মেরে ফেলতে চাস আমাকে!’

উনার বাদরামি মার্কা কথা শুনে আমার নাক ফুলে ফেঁপে উঠছে। আস্ত অসভ্য ইতর ছেলে। উনার মতো বজ্জাৎ আমি আর একটি দেখিনি!

‘ আমি অনলি ওনান পিস তুই কোথায় দেখবি আর আমার মতো লক্ষ্মী ছেলে! ‘

হাসি পেলো প্রচুর এই লোকটা নাকি লক্ষ্মী? ভাবা যায় এগুলো! আমি ছোট্ট টেবিলে খাবার ট্রেটা রেখে। বেডের কাছে গিয়ে উনার কপালে হাত রাখতেই বলে উঠলো,

‘ আমি ঠিক আছি তুই খাইয়েদে তো আমাকে! একদম আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করবিনা বলে দিলাম। ছেলে ঘেষাঘেষি মেয়ে একটা!’

শেষের কথায় কষ্ট পেলেও। উনার আবোল তাবোল কথা শুনে বুঝতে বাকি নেই উনি! ড্রাংক। রাতে নিশ্চয় হাবিজাবি গুলো গিলেছেন উনি তাই তো এই বাদর আদনানের উৎপাত্তি! উনি সর্বদা এসব খান না কিন্তু যখনি খান বাদরামো শুরু করেন। আর আমি বুঝে যাই ব্যাপার টা কী। এবং যতবার আমার মনে হয়েছে উনি আমাকে ভালোবাসেন বা পছন্দ করেন। সেটাও উনার এই ড্রাংক অবস্থাতেই মনে হয়েছে! হুস থাকতে সে ফুসফুস! হ্যাহ।

খাইয়ে দিচ্ছি আর হাতে কামড় খাচ্ছি! আমি উনার দিকে করুন চোখে তাকালেও। বিশেষ কোনও পরিবর্তন হচ্ছেনা ভাবলেশহীন ভাবে খাচ্ছে আর আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! আমি দ্রুত খাওয়াতে লাগলাম তা না হলে কামড়ে ডজ বাড়তে পারে কে জানে একে বিশ্বাস নেই! খাওয়া শেষে আমি সব গুছিয়ে চলে যাবো উনি বলে উঠলেন,

‘ কোথায় যাচ্ছিস আমি যেতে বসেছি?’

আমি মাথা দুলালাম, মিনমিন করে বললাম,

‘আহিকে হলুদের জন্য গোসল করানো হবে। আমাকে দ্রুত যেতে বলেছে বড় মা!’

উনি চুপ করে অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমিও আর যেতে পারছিনা এভাবে চলে গেলে কপালে শনি! দাঁড়িয়ে পা দিয়ে পা ঘষছি। ঠোঁট কামড়াচ্ছি ইত্যাদি ইত্যাদি… কিছু সময় পর উনি যা বলে উঠলো আমি স্তব্ধ হয়ে রইলাম।

‘ আমি তোর আশেপাশে কোনও ছেলে কেন সহ্য করতে পারিনা জানিস?’

তার রুক্ষভাষী কথায়। আমার কণ্ঠস্বর কেঁপে উঠলো। বুকে ড্যাব ড্যাব করছে। জবাব না পেয়ে উনি পুনোরায় বললেন,

‘ তোর আশেপাশে কোনও ছেলে দেখলেই সেদিন রাতে আমি তোকে স্বপ্নে দেখি…!’

তার এহেন কথায় অস্ফুট স্বরে বলে উঠলাম,
‘মানে কি দেখেন স্বপ্নে?’

আদনান ভাই বাঁকা হেসে বললেন,

‘ আমি স্বপ্নে দেখি তোকে ঝাঁপিয়ে পরে চুমু খাচ্ছি!’

মুহূর্তে কান, মুখ লাল হয়ে গেলো তার কথা আমার ব্রেইন ক্যাচ করতেই সে আসলে কী বলেছে। কান থেকে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে। কিছু মুহূর্তের জন্য স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। অতঃপর কিছু সময় পর চেঁচিয়ে বললাম,

‘আমি এখুনি আদৃতা আপুকে আপনার অসভ্য কথা বলে দিবো!’

উনি ভাবলেশহীন ভাবে বলে উঠলেন,

‘ হ্যাঁ যা বলে দে। কিন্তু সকালের মতো আর একবার কোথাও তোকে দেখলে… স্বপ্ন সত্যি হয়ে যাবে!’

বলেই বেডে আয়েশ করে শুয়ে মুহূর্তে যেন ঘুমিয়ে পরলেন এমন একটা ভঙিমা করলেন। আর আমি হত বিস্মিত কী কী বললেন উনি এই মাত্র! ব্যাপার টা ক্লিয়ার উনি আদৃতা আপুকে দু টাকার দাম দেন না! তবে এগুলো উনি ড্রাংক অবস্থায় বলেই বলেছেন আমি জানি! হুস থাকবে সবার প্রথম রাতে দরজার খুলিনি বলে এক চড় বসিয়ে দিতেন! কিন্তু সব থেকে ভয়াবহ ব্যাপার উনি হায়াদের সাথে আমাকে ছাঁদে দেখেছেন! ইয়া আল্লাহ আর আমি আকাশ কুশুম ভাবছিলাম নির্দয় লোকটা জানবেও না! হ্যাহ বরাবরই সে আমার ভাবনার বাহিরে। আমি বোকার মতো সেটা বারবার ভুলে বসি!

আদনান ভাইয়ের রুম থেকে তার বলা কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বের হচ্ছিলাম। তখন আহি সহ হুরমুর করে সব কাজিন রুমে ঢুকে আমার ব্লাশ করা গাল টিপে ধরে আমি হতভম্ব! হচ্ছেটা কি এখানে?

চলবে!

তুমিময় পর্ব-০১

0

#গল্প-তুমিময়
#Aysha_Khan
#পার্ট ১

মেহেদী অনুষ্ঠান থেকে গরুর মতো টানতে টানতে আদনান ভাই আমাকে তার রুমে নিয়ে যাচ্ছেন। ভয়ে গলা শুকিয়ে আমার! কী কী অন্যায় করেছি আজ ভাবতে লাগলাম একটু পর যে সেগুলোর শাস্তি ভোগ করতে হবে আমাকে। তীক্ষ্ণ হাতে আমাকে টেনে রুমে ঢুকিয়ে মেঝেতে ছুঁড়ে ফেললেন উনি! ইতিমধ্যে কেঁদে দিয়েছি আমি হাতের ব্যথায় তবুও দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম! আদনান ভাই ততক্ষণে তার চমৎকার পুরুষালী কণ্ঠে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,
‘ অসভ্য মেয়ে, শরীর দেখিয়ে শো অফ করতে খুব ভালো লাগে তোমার? আমার নিষেধ অমান্য করে শাড়ি পরে অনুষ্ঠানে কোন সাহসে গেলে তুমি? পাখা গজিয়ে উঠেছে বাসায় নেই বলে? তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমাকে আমার কথা অমান্য করার শাস্তি দিবোনা?’

কথা গুলো তীক্ষ্ণ স্বরে বলে আর সময় নষ্ট করলেন না! কষিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলেন। আমার মনে হলো। গাল ফেঁটে গিয়েছে, আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে গালে, যার ফলস্বরূপ গাল জ্বরে যাচ্ছে! নিঃশব্দে ক্রন্দনরত, হতবিহ্বল অবস্থায় আমি শুধু এক পকল। অত্যন্ত অত্যধিক রাগান্বিত আভা মুখ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা আদনান ভাইয়ের দিকে তাকালাম। তার সুদর্শন বলিষ্ঠ চেহারার চোয়াল অসম্ভব শক্ত, তার শক্ত চোয়াল দেখেই বুঝতে বাকি রইলোনা আদনান ভাই ভীষণ রেগে! কিন্তু কেন শুধু মাত্র আমি শাড়ি পরেছি বলে? নিচে সকলেইতো পরেছে শাড়ি আদনান ভাইকি সকলকেই এভাবে হামকি, ধামকি, শাস্তি দিবে? না কাউকে দিবেনা শুধু আমার বেলাতেই যত শাস্তি! চোখ রাঙানো, চড়, থাপ্পড় আরও কতকি! বড্ড স্পেশাল আমি! ভাবনার মাঝেই আদনান ভাই স্তম্ভিত কঠিন স্বরে দাঁত কিরমির করে, আমাকে শাসিয়ে বলে উঠলেন,

‘লাস্ট টাইম অয়ত্রী! এটাই লাস্ট টাইম। আর একদিন, আর জাস্ট একদিন যদি আমি তোমাকে হায়াদ এর সাথে দেখেছি। ছেলেদের সাথে ঘেষাঘেষির অপরাধে আমি তোমাকে চিবিয়ে খাবো! মার্ক মাই ওয়ার্ড? ‘

এতটুকু বলেই আমার দিকে শীতল, স্থির, পূর্ণ দৃষ্টি মেলে চাইলেন উনি! তার শীতল চাহুনিতে ভেতর টা নড়ে উঠলো! বাম গালে হাত দিয়ে ভয়ে পাঁচ ছয় কদম পিছিয়ে গেলাম আমি। আমাকে পিছাতে দেখে দিগুণ রেগে গেলেন মনে হয় উনি। অর্থাৎ চিল্লিয়ে বললেন,

‘গেট আউট!’

এক সেকেন্ড সময় নষ্ট করলাম না আমি! ঠোঁটে হাত চেপে ক্রন্দনতর অবস্থায় দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম তার রুম থেকে। রুম থেকে বেরুতেই আদৃতা আপুর মুখোমুখি হলাম। আপু এই রুমেই আসছিলো। এই মহান নির্দয় মেয়ে আর কেউ নন! পাষণ্ড, জালিম আদনান ভাইয়ের একমাত্র গার্লফ্রেন্ড! আপু আমাকে এভাবে ছুটে তার বয়ফ্রেন্ড এর রুম থেকে বেরুতে দেখে আমাকে দ্রুত বললেন,
‘আলো দাঁড়ায়ও কি করছিলে তুমি আদনানের ঘরে? এভাবে ছুঁটে কোথা যাচ্ছো? ‘

আমি বাম গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। আপু আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে শক্ত হাতে আমার চিবুকে হাত রেখে মুখ উপরে তুলে আমার ক্রন্দিত মুখ দেখতে দেখতে বিদ্রুপের স্বরে বললেন,

‘ গালে স্পষ্ট মারের দাঁগ! আদনান মেরেছে নিশ্চয়ই? হ্যাঁ, আর মারবে নাই বা কেন। নিজের পরিচয় কী জানার পরেও হায়াদের সাথে বেহায়া দের মতো কেন করো তুমি! পুরো মেহেদী অনুষ্টানে হায়াদের সাথে ডলাডলি, ঘেষাঘেষি করে গেছো! আমি হলে তোমাকে বাড়ি থেকেই বের করে দিতাম। যানতো একটা প্রবাদ আছে দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ঢের ভালো!’

অপমানে চোখ দিয়ে ঝরনার মতো পানি উপচে পরছে! কেঁদে কেঁটে নাজেলাম আমি যখন দৌড়ে চলে যাবো এই নির্দয় মেয়েটার সামনে থেকে। কেউ স্বজরে আমার হাত চেপে ধরলো, আমি সঙ্গে সঙ্গে পিছনে তাকিয়ে দেখলাম। হায়াদ দাঁড়িয়ে, রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে জালিম লোকটার নির্দয় গার্লফ্রেন্ড এর দিকে অর্থাৎ আদ্রিতা আপুর দিকে। চোখে চোখে সংঘর্ষ লেগে গিয়েছে দুজনের মধ্যে! এদিকে আমি ভয়ে ভয়ে একবার হায়াদ আমার হাত চেপে ধরে রেখেছে সেদিকে তাকাচ্ছি। আর একবার আদনান ভাইয়ের কামরার দিকে তাকাচ্ছি। এবং হায়াদের থেকে হাত ছাড়াবার জন্য মুচরাচ্ছি! কারণ একটাই আদনান ভাই এই দৃশ্য দেখলে আমার হাতটাই কেঁটে জলে ভাসিয়ে দিবে। আমি সেটা মোটেও চাইনা! এদিকে হায়াদ রাগী গলায় বিদ্রুপের স্বরে আদৃতা আপুকে খোঁচা মেরে বলল,
‘ নিজের বয় ফ্রেন্ডকে নিজে হেন্ডেল করতে পারোনা! আর ঝাজ দেখাও নির্দোষ অয়ত্রীর সাথে। যার জন্য তোমার বয়ফ্রেন্ড এক প্রকার মরিয়া? তা তুমি কেমন গার্লফ্রেন্ড আদৃতা যে তুমি থাকতেও তোমার বয়ফ্রেন্ড অন্য একটা মেয়ে নিয়ে এতো পজেসিভ? তোমাকে আসলেই আদনান ভালোবাসে তো? আমার তো অন্যকিছু মনে হয়!’

বলে হায়াদ রহস্যময় হাসলেন! আদৃতা আপু আমি দুজনেই স্তব্ধ। আমি টাস্কি খেয়ে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা বন্ধ করেদিলাম হায়াদ ভাইয়ার কথা শুনে তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলাম! কি বলছে এগুলো উনি? আগুনে ঘী কেন ঢালছেন এভাবে? আদৃতা আপু আমাকে একদম পছন্দ করে না তার একটাই কারণ আদনান ভাইয়ের আমাকে নিয়ে ওভার পজেসিভনেস। তার উপর সেটাই আঙুল তুলে মিন করে খোঁচা মেরে আদৃতা আপুকে বলা হচ্ছে। আদৃতা আপু নিশ্চয়ই দিগুণ রেগে গেছেন। আমি আপুর দিকে তাকাতেই দেখলাম আপু আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে! ইয়া আল্লাহ… আমি কিছু বলবো হায়াদকে! সেই অবস্থায় আদনান ভাই তার রুম থেকে বেরুলেন। এবং ডান পাশে আমাদের দিকে চোখ পরতেই সবার আগে আমার হাতের দিকে তাকালেন উনি। যা কিছু দূরে দাঁড়িয়ে ও স্পষ্ট দেখলাম আমি! চমকে গেলাম, ভেতরটা শূন্য হয়ে গেলো! ভয়ে দিশেহারা হয়ে হায়াদ ভাইয়ার হাত ঝটকায় ছাড়িয়ে দৌড়ে নিজের রুমে ঢুকে গেলাম দরজা লাগিয়ে বসে পরলাম মেঝেতে!

আদনান ভাইয়ের পাশের রুমটাই আমার। এটা একটা ফাম হাউজ বিশাল বাড়ি। আজ আমার ছোট্ট মামার মেয়ে আহির মেহেদী ছিলো। এটা হায়াদের ফাম হাউজ ঢাকা থেকে কিছু দূরেই বটে। আর হায়াদের বড় ভাই আয়াত তার সাথেই আহির বিয়ে। আয়াত সম্পর্কে আমার বড় মামা অর্থাৎ আদনান ভাইয়ের বাবার বন্ধুর ছেলে। দুই ফ্যামিলিতে অনেক মিল রক্তের সম্পর্ককেও হার মানায় যেন! তাই তো দুই ফ্যামিলি একসাথে থেকেই আহি, আয়াতের বিয়ে দিচ্ছে বিশাল আয়োজন করে! সব ছাপিয়েও আদনান ভাই আমাকে হায়াদের পাশে সহ্য করতে পারেনা। যার জন্য এতো কিছু হয়ে গেলো। তবে সন্ধ্যায় আমাকে শাড়ি পরতে মানা করেছিলো সে।কিন্তু বরাবরের মতোই গার্লফ্রেন্ড রেখে আমার জীবন ত্যাজপাতা করায় কিছুটা ত্যাড়ামো করেই আমি তার কথা শুনিনি! আর এত সুন্দর কলাপাতা রঙা শাড়িটা পরার লোভ সামলাতে পারিনি। যদি ও বাড়িতে থাকলে তার কথা অমান্য করার সাহস হতোনা আমার যেহেতু একটা বিয়ে বাড়ি আছি আমারা চারপাশে মেহমানে ভরপুর লোক লজ্জায় কিছুই করবেনা ভেবেছিলাম সেগুরে বালি আমার ভাবনা! সে আমার ভাবনার বাহিরে আমার বুঝার উচিৎ ছিলো! তার মধ্যে লজ্জার ‘ল’ ও নেই সেটাও মনে রাখার উচিৎ ছিলো! তা না হলে কী আর ছোট বনের বিয়েতে নিজের গার্লফ্রেন্ডর কোমর চেপে ধরে ঘুরেবেড়ায় বিয়ে বাড়ি জুড়ে! যেখানে ছোটো বড় সকলে উপস্থিত এসব তার ধারাই সম্ভব! ইনফেক্ট তার ধারা এভরিথিং ইজ ফ্যায়ার এন্ড পসিবল। কারণ কেউ তাকে কিছুই বলতে পারবেনা! এটা ওয়ান এন্ড অনলি আদনান ভাই বলে কথা!

মেঝেতে বসে রীতিমতো হাপাচ্ছি! আর হাবিজাবি ভাবছি ভয়ে শরীর মৃদু কাঁপছে এখনও। লোকটাকে প্রচণ্ড ভয় পাই। ভয় না পেয়েও উপায় নেই। তার দয়াতেই বেঁচে আছি! না চাইতেও তার অযুক্তিযুক্ত শাসন আমাকে হজম করতে হয়। বড় মামা, মামী, ছোট মামা, নানু আরও বড়বড় মেম্বার বাসায় থাকতেও আমার ব্যাপারে সকল সিদ্ধান্ত ফয়সালা সে নিবে! কেউ কিছু বলবেনা বলতে পারবেনা কারণ তার রাগ। তার রাগকে সবাই ভয় পায়। সেখানে সে বাঘ আমি ইঁদুর আমি কে? উনার সিদ্ধান্ত অমান্য করার! উনি খুন করতেও আমাকে দুবার ভাববেনা। আমাকে তার সহ্য হয়না। তাই আমাকে প্রাণ খুলে উনি বাঁচতে দেন না!

আমার মা নেই। সেই ছোট্ট থেকেই। বাবাই আর দাদুর সাথেই বড় হই আমি। যখন ক্লাস নাইনে ছোট্ট চাচি সবাইকে বুঝিয়ে বিয়ে ঠিক করে ফেলে আমার। সেটা নানুর বাসায় সবাই জানতেই সেই খবর বাসাতের গতিতে আদনান ভাইয়ের কানে চলে গেলো ! তারপর আমার জীবন বদলে গেলো! আদনান ভাই আমার সামনে আমার বাবাকে চরমভাবে শাসালো। এতো ছোট্ট মেয়েকে বিয়ে দিতে চেষ্টা করার জন্য। ভয়ে আদনান ভাইয়ের হাতের নিচে আমি রীতিমতো ফোফাচ্ছিলাম তার গ্রাম কাঁপিয়ে চিৎকারে! ভয়ে নাকি অন্যকিছু যানা নেই কিন্তু বাবা কেন যেন সেদিন মাথা নিচু করে ছিলেন। আর আদনান ভাই? সে আমাকে সবার সামনেই তুলে নিয়ে এলো সেদিনই নানুবাড়ি! ব্যাস আর ঢাকা ছেলে মফস্বল শহরে যাওয়া হয়নি কোনদিন। বাবা দাদু প্রায় প্রতি মাসে আমার সাথে দেখা করে যায়। এখন যদিও দাদু বেঁচে নেই কিন্তু আমাকে তুলে আনাতে দাদু, বা বাবাইয়ের চোখে কষ্ট কোনও দিন দেখিনি আমি। কিন্তু আমার বেশ কষ্ট হতো এখানে। সবাই আমাকে আপন করে নিলেও অনেক ভালোবাসলেও যে তুলে নিয়ে এলো সেই আমাকে চোখের কাঁটার মতো বিহেভিয়ার করতে লাগলো। শুধু শুধু আমার সাথে নির্দয় জালিমের মতো আচরণ আমার ছোট মনকে কষ্ট দিতো খুব! তাকে এড়িয়ে চলাও দায় তাতেও শাস্তি। এই যেমন মাথায় পানি ঢেলে দেওয়া আমার ঘুমন্ত অবস্থায়! তার রুম পরিষ্কার করানো, বাথরুম পর্যন্ত পরিষ্কার করাতো সে। কেঁদে কেঁটে জীনের চাঁরটি বছর চলে যায়। আমি বুঝে নেই আমাকে ঐ জালিমের অত্যাচার সহ্য করতেই হবে। তানাহলেই বেশি কষ্ট। এক সময় মানিয়ে নেই। তারপর বুঝতে পারি সে আমাকে হয়তো পছন্দ করে! কিন্তুনা আমি যখন ভেবেই নেই সে আমাকে ভালোবাসে? ঠিক তখন সে আমাকে তার গার্লফ্রেন্ড আদৃতা আপুর সাথে পরিচয় করিয়ে আমাকে বলে আমি তার পার্মানেন্ট কাজের লোক। আমার সকল ভাবনা তখন সমুদ্রের জলেভেসে যাচ্ছে! কেঁদে কুঁটে আমি যখন নাজেহাল। অনেক বছর ধরে নাকি সে আদৃতা আপুকে পটাতে চেষ্টা করছে সত্যি পটে যাওয়াতে! রিলেশনে যাওয়ার খুশিতে তার ফ্রেন্ডদের ট্রিট দিবে বলে সেই আমাকে দেই একগাদা স্ট্রিট ফুড বানাতে বাধ্য করলো!

বুক ফেঁটে কান্না পাচ্ছিলো কত নির্দয় লোক! তখনবাড়ির সবাই আমাকে সান্ত্বনা দেয় এই বলে। গার্লফ্রেন্ড জুটিয়েছে তারমানে তোকে আর বিরক্ত করবেনা। তোর তো খুশি হওয়ার কথা বোকা মেয়ে! আর তুই কাঁদছিস? চিন্তায় কপালে ভাজ পরেলেও সবার যুক্তিতে আমি তখন সত্যি খুশি হয়ে যাই। আসলেই গার্লফ্রেন্ড ছেড়ে নিশ্চয়ই আমি কী করিনা করি এসব সে দেখবেনা? এতবড় জালিম, আমার একমাত্র শনি আমার কপাল থেকে সরে যাবে ভেবে আমি রাতে শান্তির ঘুম দেই। অতপর খুশিতে আপ্লুত হয়ে আমি পরদিন সেই মাঞ্জা মেরে কলেজ যাই। কপালের শনিতো যায়নি দিগুন হয়ে আমার জীবনের ব্যান্ড আজ পর্যন্ত বাজিয়ে যাচ্ছে আজও! সেদিনের পর আমি এক্সাম ছাড়া কলেজ যেতে পারতাম না। একা বাইরে বেরুনো সম্পূর্ণ নিষেধ হয়ে গেলো। বাড়ির কেউ আর আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভুল করলেন না। উল্টো ভয়ে নিজেরাই গুটিয়ে আজ পর্যন্ত।

আমি এক নিরহপ্রাণী যে মানুষ হয়েও চিরিয়াখানায় বসবাস করছি! শুধু মাত্র আদনান ভাইয়ের জন্য। ব্যাটা আস্ত খাটাশ তেমনি একটা জুটিয়েছে আদৃতা ফাদৃতা। সে আমাকে দেখলেই জ্বলতে থাকে টিউব লাইটের মতো। তার ধারণা আদনান ভাইকে আমি ফাঁসিয়ে রেখেছি। কিন্তু উনি আজও বুঝলেন না আমি নিজেই ফেঁসে আছি। যার কাছে ফেঁসে আছি তাকে ফাঁসানো আমার পক্ষে অসম্ভব!

আদনান ভাই আমার আশেপাশে কোনও ছেলে! কাজিন ভাইদেও সহ্য করেনা! ভ্যায়লেন্ট হয়ে যায় আমার উপর। জীবনে আমি কোনও ছেলের দিকে এক পলক তাকাতে পারিনি। একদল সিসিটিভি আমার উপর স্থাপন করা কিভাবে তাকাবো আমি?, জানি তাকালেই কপালে শনি! যেখানে আমার জীবনটাই শনি আরও শনি বারিয়ে লাভ কি! এদিকে আদৃতা আপু এসব দেখে। আমাকে সামনে পেলেই প্রথম দিন পরিচয় করে দেওয়ার আদনান ভাইয়ের সেই কথার রেশ ধরে গাঁ জ্বালা করা কথা বলে আমাকে অপমান করবে। সে চায় আমি যেন চলে যাই আদনান ভাইয়ের বাড়ি থেকে। আমিও ভাবি আদনান ভাইয়ের তৈরী করা এই চিরিয়াখানা ছেড়ে চলে যাওয়াই ভালো কিন্তু সেটা করে সত্যি কি তার চিরিয়াখানা থেকে মুক্তি পাবো? তাতে আমি ভীষণ ভাবে সন্দিহান। তাই সাহস করতে পারিনা। আর সন্দেহ নিয়ে কিছু করা ঠিকনা! আমি জানি এরকম কিছু চিন্তা করলেও আমাকে সে মেরে ফেলবে! তারপর চিবিয়ে খাবে!

দরজার তীক্ষ্ণ করাঘাতের শব্দ কানে আসতেই। দু হাতে কান চেপে ধরি। এখন আমি মরে গেলেও দরজা খুলবোনা আমি জানি দরজার পিছনে আমার শনি দাঁড়িয়ে! দরজা খুললেই শনি আমার কপালে আছড়ে পরবে আমি কিছুতেই নিজের শরীরের ক্ষতি করতে পারিনা! লক্ষ্মী বাচ্ছার মতো উঠে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলাম মাত্র ১ টা বাজে নিচে অনুষ্ঠান এখনও শুরুই হয়নি! আর আমার করা একটা ভুলের জন্য আমি আহির মেহেদী অনুষ্টান থেকে বাতিল দেখতেও পারবোনা। কচু! সব ঐ নির্দয় লোকটার চালাকি জানি আমি সে তো চাইছিলোই এটা আমি যথেষ্ট শালীনতা বজায় রেখে শাড়ি পরেছি অসংখ্য পিন লাগিয়েছি শুধু মাত্র তার ভয়েই। তবুও সে ভয়ই দেখালো আমাকে! আর কৌশলে আমাকে অনুষ্ঠান থেকে তারালো। আমি জানি আর কেউ না ডাকবে আমাকে আর না খুঁজবে! বাড়ি সকলেও আদনান ভাই সম্পর্কে আইডিয়া রাখে! আর আমি শুধু দোয়া করি ঐ পাষণ্ড লোকটার বিয়ে না হোক! জালিম একটা!

চলবে।

একটি প্রেমাচ্ছন্ন বিকেল পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0

#একটি_প্রেমাচ্ছন্ন_বিকেল
#পর্বঃ১১এবং শেষ
#Arshi_Ayat

রুশান ফোনটা বুকের ওপর রেখেই আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে গেছে।হঠাৎ ঘুমের মধ্যেই মনে হলো মৌ এসেছে এবং ওর বুকের ওপর শুয়ে আছে।ওরা দু’জনে খোলা মাঠে শুয়ে জোৎস্না বিলাস করছে।যদিও রুশানের অমাবস্যা ভালো লাগে তবুও আজ কেনো জানি পূর্ণিমাই ভালো লাগছে।

কিন্তু দৈবাৎ ঘুমটা ফানুসের ন্যায় উড়ে গেলো।রুশান ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারলো এটা স্বপ্ন ছিলো।ওর মন খারাপ হয়ে গেলো।যে আসবেই না সে স্বপ্নে এসে কেনো কষ্ট দেয়?

রুশান বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো।হঠাৎ দরজার দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলো।একটা নীল রঙা শাড়ি পড়ে চুল ছেড়ে স্বয়ং মৌ দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।রুশান তড়িঘড়ি করে হাতঘড়িটা দেখলো।এখন রাত ১.০০ টা।এই সময়ে মৌ আসবে এটা বিশ্বাসই হচ্ছে না রুশানের।এটা নিশ্চয়ই হ্যালুসিনেশন।অবশ্য হ্যালুসিনেশন হবে নাই বা কেনো!সারাদিন মাথার মধ্যে মনের মধ্যে স্বায়ত্তশাসন করলে তো হবেই!
রুশান দরজার সামনে গিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,’তুমি আমাকে শান্তি দিবে না তাই না?ঘুমিয়ে ছিলাম স্বপ্নে এসে জ্বালাতক করে গেলে।এখন আবার হ্যালুসিনেশন হয়ে সামনে দাড়িয়ে আছো।কি সমস্যা তোমার?যখন আসবেই না তখন স্বপ্ন,কল্পনায়ও এসো না প্লিজ।’
‘আমি সত্যিই এসেছি আপনার কাছে।’

কি ব্যাপার হ্যালুসিনেশন এসে আবার কথাও বলছে?সত্যি হ্যালুসিনেশন নাকি!রুশান ভ্রু কুঁচকে একবার আগাগোড়া মৌ কে দেখে নিলো।তারপর সন্দিহান গলায় বলল,’তুমি সত্যিই এসেছো?আসলেই তুমি মৌ তো?’
মৌ একহাতে মুখ চেপে ধরে হাসলো।তারপ বলল,’কি করলে বিশ্বাস করবেন?’

‘একবার জড়িয়ে ধরো তবে বিশ্বাস করবো।’
মৌ একটু এগিয়ে এসে সত্যি সত্যিই জড়িয়ে ধরলো।রুশানও শক্ত করে আকড়ে ধরলো।মৌ কানে কানে বলল,’বিশ্বাস হলো?’
রুশান কিচ্ছু বলল না।মৌ’কে ভেতরে টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।মৌ অবাক হয়ে বলল,’দরজা বন্ধ করলেন কেনো?’
‘কিছু প্রশ্নের উত্তর নিতে।’রুশান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।তারপর নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে ম্যাসেজগুলো দেখিয়ে বলল,’কি অপরাধ ছিলো আমার যে রিপ্লাই পাওয়ারও অযোগ্য ছিলাম?কলও রিসিভ হতো না।দুইমাসে একবারও দেখা,কথা কিছুই কেনো হলো না?কি অপরাধ ছিলো?সেদিন তুমিই বলেছিলো আমার চাওয়া বলতে তাই আমি বলেছিলাম।তোমার যদি আমাকে ভালো না-ই লাগতো তবে বলে দিতে পারতে এট লিস্ট যোগাযোগটা রাখতে পারতে।বন্ধু হয়ে থাকতাম।কিন্তু না তুমি তো পুরো পরই বানিয়ে দিলে।এতো বার করে বলেছি যে আমি চলে যাচ্ছি তাও এলে না কেনো?’

রুশান একনাগাড়ে কথাগুলো বলো থামলো।মৌ কিছুটা এগিয়ে এসে রুশানের গালে হাত রেখে বলল,’আমি বলতেই এসেছি।সেদিন যখন আপনার চাওয়াগুলো শুনলাম তখন আপনাকে আমার তথাকথিত ছেলেদের মতোই মনে হয়েছিলো।তাই আপনার ম্যাসেজ আর কল রিসিভ করি নি।কিন্তু আপনি সিলেট চলে যাওয়ার পর আমি আপনার শূন্যতা বুঝতে পারি।বুঝতে পারি আমিও আপনাকে ভালোবাসি।চেয়েছিলাম ছুটে আসতে।কিন্তু সকাল বেলা বের হওয়ার সময় আম্মুর ফোন আসে।ওরা আম্মুকে প্রচন্ড মারধর করছে।আম্মু শুধু ‘মৌ আমাকে বাঁচা’ এটা বলেই জ্ঞান হারায় ফেলছিলো।আমি কি করবো দিক দিশা পাচ্ছিলাম না।এক বান্ধবীকে ফোন দিলাম ওর ভাই পুলিশ।ওকে সব বললাম।তারপর ওর ভাই,আমি আর ও ওইখানে যাই মা’কে আনতে।গিয়ে দেখলাম মায়ের মাথা ফেটে গেছে।সারা শরীরে কালশিটে দাগ।মা’কে হসপিটালাইজড করলাম।মায়ের জ্ঞান ফেরার পর ওনার স্বামী,রাশেদ আর ওর বাবার নামে কেস করলাম।মা সুস্থ হওয়ার পর মা’কে নিয়ে নতুন একটা বাসায় উঠতে হলো।তারপর ডিভোর্সের জন্য উকিলের কাছে গেলাম।ডিভোর্স কাগজপত্র রেডি হওয়ার পর মা সাইন করলো তারপর ওদের কাছে ডিভোর্সের কাগজ পাঠালাম।দেড়মাস হয়েছে ওদের ডিভোর্স হলো।এতোকিছুর পরও আমি প্রতিদিন আপনার পাঠানো পুরোনো মেসেজগুলো পড়তাম আর কাঁদতাম।বারবার আপনার সাথে কথা বলতে মন চাইতো কিন্তু পারতাম না।ভাবতাম একদিন সামনাসামনি দাড়িয়ে সব বলবো।কাল আপনার যাওয়ার কথা শুনে আজ আর থাকতে পারলাম না।হ্যাঁ আমি জানি একটাবার কথা বলা উচিত ছিলো কিন্তু… ‘মৌ শেষ কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললো।তারপর চোখ মুছে বলল,’আমায় একটা বার ক্ষমা করা যায় না?’

‘না যায় না।শাস্তি পেতে হবে তোমায়।আমাকে তো কষ্ট দিয়েছো তারপর আবার নিজেকেও দিয়েছে।একটাবার পর্যন্ত জানাও নি।এতো সহজে তো মাফ পাবে না।’

মৌ কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,’কি শাস্তি?’

‘অপেক্ষা করতে হবে আমার জন্য।কাল আমি চলে যাবো।যতোদিন না আসবো ততদিন আমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’

‘কবে আসবেন আপনি?’

‘একবছর অথবা দেড়বছর পর ছুটিতে আসবো।’

‘আচ্ছা করবো।ততদিনই অপেক্ষা করবো আপনার জন্য।’

তারপর সত্যি সত্যিই রুশানের জন্য প্রায় দেড়বছর অপেক্ষা করতে হয় মৌ এর।কারণ পরেরদিন সকালেই রুশান চলে যায় আর মৌ এর অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু হয়।মাঝেমধ্যে রুশানের সাথে কথা হয়।বেশিরভাগ সময়ই হয় না।কারণ সময় মিলে না কথা বলার জন্য তবুও দিনশেষে একটা মেসেজ মৌ এর ফোনে আসতো।
দেড় বছর পর রুশান গতকালের আগেরদিন সকালে ফিরেছে।ফিরেই মৌ এর সাথে দেখে করেছে।গতকাল মৌ আর ওর মা এসেছিলো রুশানদের বাড়িতে।বিয়ের তারিখ ঠিক করতে কারণ রুশান দেরি করতে চায় না।আর বিয়ের সব আয়োজন এখানেই হবে।তাই মৌ ওর মা এখানেই আছে।

বিকেলে শিরিন শিহান আর মাহমুদা বেগম সিনিথিয়া বেগমের বাসায় গেছেন।রুনা বেগম সকালেই ভাইয়ের বাসায় গেছেন রুশানের বিয়ের খবর দিতে।ইফরা সন্তানসম্ভবা।এখন ছয়মাস চলছে তাই বাবার বাড়ি গেছে।রুহান কারখানায় আর রুমান অফিসে।রুশানও একটু আগে বেরিয়েছে।বাড়িতে শুধু মৌ ছাড়া আর কেউ নেই।মাহমুদা বেগম মৌ কে সাথে নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু মৌ যায় না।সবাই চলে যাওয়ার পর সে রুশানের ঘরে এসে ওর খাটে বসেছিলো।আজ এটা শুধু রুশানের রুম হলোও বিয়ের পর এই রুমটা দু’জনের হবে।

হঠাৎ হাট করে কেউ একজন দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেলো।মৌ আচমকা ভয় পেয়ে তাকাতেই দেখলো রুশান।ওকে দেখে খানিকটা লজ্জা পেলো কারণ ওর অগোচরে ওরই রুম এসে এভাবে বসে থাকাটা কেমন দেখায়!রুশান মৌ’কে অস্বস্তিতে পড়তে দেখে বলল,’রিল্যাক্স!আমি তোমাকে খেয়ে ফেলবো না।এটা কিন্তু তোমারও ঘর।যদিও এখনো অফিশিয়ালি হয় নি তবে হয়ে যাবে।’

তবুও যেনো লজ্জা আর অস্বস্তি কাটছেই না মৌ এর।তাই সে উঠে দাড়িয়ে বলল,’আচ্ছা।আমি আসছি।’এটা বলে চলে যেতে নিলেই রুশান মৌ এর হাত ধরে ঘুরিয়ে ওর কোমড় আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল,’এতো লজ্জা পাও তুমি?’

মৌ কিছু বলল না।নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।রুশান আস্তে আস্তে ওর লজ্জায় কাঁপতে থাকা ঠোঁটের দিকে এগুতেই মৌ চোখ বন্ধ করে ফেললো।রুশান হেসে ফেললো।শাহাদাত আঙুলট মৌ এর ঠোঁটে ছুঁইয়ে বলল,’থাক এটা বাসর রাতের জন্য তোলা রইলো।’
মৌ যেনো হাঁপ ছেড়ে বাচলো।রুশান ওকে ছেড়ে দিয়ে বলল,’চলো একটু হাঁটতে বের হই।’

‘চলুন।’মৌ এর এখনো লজ্জায় গাল লাল হয়ে আছে।

তারপর ঘরে তালা দিয়ে দুজনই বেরিয়ে পড়লো।পশ্চিম আকাশে হেলে পড়া সোনালি সূর্যটা বিকেলের জানান দিচ্ছে।হালকা একটা মৃদু হওয়ায় চারপাশের গাছে ছড়িয়ে পড়েছে।মৌ আর রুশান পাশাপাশি হাটছে।সময়টা অনুভব করছে।রুশান আরেকটু কাছে এসে মৌ এর হাতটা ধরলো।মৌ কিছু বলল না আরেকটা দৃঢ় হলো বন্ধনটা,দুজনের মুখেই পূর্ণতার হাসি ছেয়ে গেলো।

সমাপ্তি…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।বড়ো করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সত্যিকারের কাহিনিগুলো অহেতুক বড়ো করতে চাইলে গোলমেলে হয়ে যায় তাই আর করি নি।এই গল্পটা একটা আপুর জীবনের গল্প ছিলো।কাহিনীর কিছুই পরিবর্তন করা হয় নি শুধু গল্পের মাধুর্যটা রাখার জন্য কিছু চরিত্রের আগমন ঘটিয়েছি তবে শেষটা এমনই ছিলো হয়তো বা আরো সুন্দর ছিলো।আপনারা কল্পনা করে নেবেন।)

একটি প্রেমাচ্ছন্ন বিকেল পর্ব-১০

0

#একটি_প্রেমাচ্ছন্ন_বিকেল
#পর্বঃ১০
#Arshi_Ayat

মৌ কিছুটা ভয় পেলো রুশানের হাতে চিঠিটা দেখে।এখন রুশান কি বলবে না বলবে এটা ভেবেই ঢোক গিলছে।এদিকে রুশান মৌ কে ঘাবড়ে যেতে দেখে বলল,’ভয় পাচ্ছো কেনো মৌ?’

‘না মানে আসলে এটা আসার সময় আমার এক ক্লাসমেট দিয়েছিলো।আমি এমনিতেই নিয়েছিলাম কিন্তু পড়া হয় নি।’

রুশান স্বাভাবিক ভাবেই বলল,’ও আচ্ছা।তো এতো ভয় পাওয়ার কি আছে?ইট’স সিম্পল।চলো এটা পড়ি।তুমি পড়বে নাকি আমি পড়বো?’

‘আপনিই পড়ুন।’

‘আচ্ছা তাহলে ছাঁদে চলো।সারাদিন পড়তে পড়তে তো বোর হয়ে গেছো।এক কাপ চা খেতে খেতে একটু প্রেমপত্রের মজা নেওয়া যাক।’

‘ঠিকাছে চলুন।’মৌ কিছুটা হেসেই বলল।

‘তুমি ছাঁদে চলে যাও।আমি চা নিয়ে আসছি।’

‘আচ্ছা।’
রুশান চলে যাওয়ার পর মৌ চিঠিটা নিয়ে ছাঁদে গেলো।এর আগে আর রুশানদের ছাঁদে আসা হয় নি মৌ এর।মোটামুটি বড়ই ছাদটা।মৌ পিলারে হেলান দিয়ে রুশানের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।রুশান দশমিনিট পর দুই কাপ চা নিয়ে হাজির হলো।এককাপ মৌ কে দিয়ে বলল,’ছাদের বাইরে পা ঝুলিয়ে বসতে পারবে?’

‘কখনো বসি নি।তবে চেষ্টা করতে পারি।’

‘আচ্ছা তাহলে আসো।তবে খুব সাবধানে।’

‘আচ্ছা।’

আগে মৌ’কে বসিয়ে তারপর রুশান ওর পাশে বসলো।চায়ের একটা চুমুক দিয়েই প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,’চলো চিঠিটা পড়ি।’

‘আচ্ছা।’

রুশান ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করে চিঠিটা খুললো।তারপর পড়তে শুরু করলো।

‘প্রিয়তমা মৌ’

তোমাকে প্রথম দেখেই ভালো লেগেছিলো।তারপর তোমার সাথে ক্লাস করে তোমার পড়াশোনা দেখে আর ব্যাবহার দেখে আমি মুগ্ধ হলাম।এখন বোধহয় আমি তোমাকে ভালোই বেসে ফেলেছি।তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?প্লিজ অ্যান্সার দিও।’

ইতি ‘শাওন’

চিঠিটা পড়ে রুশান মুখে হাত একটু চাপা হাসলো।মৌ ভ্রু কুচকে মুখ গোজ করে বলল,’হাসছেন কেনো?’

‘এমনিই।পিচ্চি পিচ্চি পোলাপানে আবেগ দেখে হাসি পায় আর কি।যাক তুমিই বলো তোমার অ্যান্সার কি?’

‘আমি আর কি বলবো!আমার এগুলো ভালো লাগে না।এখন শুধু একটাই চাওয়া আমার সেটা হলো আমার সাফল্য।’

‘ইয়েস এটাই শুনতে চেয়েছিলাম আমি।এই চিঠিটা কাল ওই ছেলেকে দিয়ে বুঝিয়ে বলে দিবে।এরপরও যদি ছেলেটা বাড়াবাড়ি করে তাহলে ওকে আমি দেখবো।’

‘আচ্ছা।’
তারপর আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে রুশান মৌ’কে ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেও চলে এলো।
———–
রুশানের কেয়ার,সাপোর্ট আর নিজের পরিশ্রমে মৌ নিজের প্রস্তুতি অনেক ভালোভাবে শেষ করেছে।অবশেষে বহুল কাঙ্ক্ষিত ভর্তি পরীক্ষা চলেই এলো।কাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা।ওরা আজই চলে এসেছে কারণ সিলেট থেকে ঢাকা আসতে অনেক সময় লাগে।আর জার্নি করে এতোদূর এসে পরীক্ষা দিতে মৌ এর কষ্ট হবে ভেবে আজই চলে আসলো।ওরা ঢাকায় রুশানের বন্ধু হাসিবের বাসায় থাকবে। ওর বন্ধু হাসিবের বোনও এবার ভর্তি পরীক্ষার্থি।ভালোই হলো মৌ এস জন্য।

ভর্তি পরীক্ষাগুলো ভালোভাবেই শেষ করলো মৌ।এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর জাহাঙ্গীরনগরে,চট্টগ্রাম আর খুলনায় চান্স পেয়েছে মৌ।এইজন্য কনফিউশনে পড়ে গেছে সে কোনটা রেখে কোনটায় ভর্তি হবে।সবগুলোতেই ভালো সাবজেক্টও পেয়েছে।তবুও ঢাকা ভার্সিটিতেই ‘ব্যারিস্টারি’ তে ভর্তি হলো।হলেও সীট পেয়ে গেলো।আজই হলে উঠবে।তারপর এক দুইমাস হলে থেকে।ওই বাসা থেকে মাকে নিয়ে এসে আলাদা বাসা নিয়ে থাকবে।

মৌ কে ভর্তি করিয়ে দিয়ে রুশান বলল,’যাক তুমি তোমার স্বপ্নে পৌঁছে গেছো।এখন আমার কাজ শেষ।আমি তোমার চেয়েও বেশি তোমার সাফল্য কামনা করেছিলাম।আজকে তোমার চেয়ে বেশি খুশি আমি।’

মৌ কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে রুশানের দিকে চেয়ে বলল,’আজকের সাফল্যে আমার যতোটুকু পরিশ্রম ছিলো তার চেয়েও বেশি আপনার সাপোর্ট ছিলো।আমি সত্যিই খুব লাকি আপনার মতো একজনকে পাশে পেয়েছিলাম।’

‘এটা তো তোমার পরিশ্রম আর ভাগ্যেরই ফলাফল।বেষ্ট অফ লাক।’

‘ধন্যবাদ।আচ্ছা আপনি বলেছিলেন আপনি কিছু চাইবেন।আজ তো আমি সফল।এবার চেয়ে ফেলুন।’

‘চাইবো?’

‘হ্যাঁ অবশ্যই।আমি চেষ্টা করবো আপনার চাওয়া পূর্ণ করার।’

‘শ্রাবণের পহেলা বৃষ্টিতে তোমার সাথে ভিজতে চাই,
দমকা বাতাসে তোমার উড়ন্ত চুলগুলো ভালোবাসায় বাঁধতে চাই,
বেদনায় তোমার শুষ্ক কপলে গড়িয়ে পড়া অশ্রুবারি মুছতে চাই,
তোমার ওষ্ঠের সুধায় আকন্ঠ ডুবে থাকতে চাই,
আমি তোমার মাঝে বাঁচতে চাই,
আজন্ম তোমায় ভালোবাসতে চাই,
আর তোমার সাথে কিছু স্মৃতিমধুর প্রেমাচ্ছন্ন বিকেল চাই,

এতক্ষণ মন দিয়ে রুশানের কথাগুলো শুনলো মৌ।রুশান নিজের চাওয়াগুলো প্রিয়তমার কাছে বলে দিয়ে জানতে চাইলো,’আমার চাওয়া পূরণ করতে পারবে?’

মৌ রুশানকের দিকে তাকালো।কিন্তু কিছু বলল না।নিশ্চুপতায় ভর করে চলে গেলো।মৌ এর চলে যাওয়ার পথে রুশান বহুক্ষণ তাকিয়ে ছিলো।
———————
ঢাকায় দুইদিন থেকে রুশান আজই সিলেট ফিরবে।ভেবেছিলো মৌ এর সাথে দেখা করবে কিন্তু মৌ ফোনই রিসিভ করে না।রুশান ভেবেছে হয়তো ওইদিনের কথাগুলো মৌ এর ভালো লাগে নি!অথবা এমন কোনো অনুভূতিই নেই ওর মনে যেটা রুশানের মনে আছে ওর জন্য।রুশান কখনো জোর করবে না এ নিয়ে।ও শুধুই ওর অনুভূতিটা জানিয়েছে যা এই দুইমাসে জন্মেছে।আর জীবনটা অবশ্যই মৌ এর ওর ভালো লাগা মন্দ লাগা সবার আগে প্রায়োরিটি পাবে।এখন মৌ এর রুশানকে ভালো নাই লাগতে পারে এই নিয়ে আপসেট হওয়ার কিছু নেই।এগুলো রুশান মনে মনে বললেও তার মন বিদ্রোহ করে বলতে চাইছে মিথ্যা বলিস না রুশান!মনের কথা শুনে রুশান হাসলো।

রুশান কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে পড়লো গন্তব্য সিলেট।মৌ ফোন না ধরায় কাল রাতেই মেসেজ করেছে যে ও চলে যাচ্ছে।মেসেজ সিন হয়েছে কিন্তু কোনো রিপ্লাই আসে নি।রুশান ভেবেছিলো হয়তো দেখে করবো কিন্তু না শেষ পর্যন্ত আর দেখা হয় নি।

দুইমাস পরের কথা……..
রুশানের ইন্জিনিয়ারিং শেষ।ফরেইন থেকে একটা জব অফার এসেছে।বাড়িতে সবাই খুশী।তবে রুশান এখনো কনফার্ম করে নি মৌ এর জন্য।এই দুইমাসে অনেক কল আর মেসেজ দিয়েছে সে মৌ কে কিন্তু কোনোটারই উত্তর আসে নি।অন্তত একটাবার কথা বলে না করে দিতো।নাহ!তাও করে নি।হ্যাঁ, না কিছুই বলে নি।আজকে শেষবারের মতো একটা মেসেজ করবে এবং এটাই শেষ।

রাত বারোটা,
রুশান মেসেজ টাইপ করছে।

‘মৌ’
কেমন আছো?মনে পড়ে আমাকে?আমার ফরেইন এ একটা ভালো জব হয়েছে।আমি চলে যাবো।যদি মনে হয় তাহলে একবার এসো দেখা হয়ে যাবে।আর আমার চাওয়াটা নাহয় অপূর্ণই থাক।সব চাওয়া সবসময় পূর্ণ হয় না।ভালো থেকো।’

মেসেজটা সেন্ড হতেই মৌ সিন করলো করলো কিন্তু প্রতিবারের মতোই রিপ্লাই নেই।অভিমানে রুশান জব অফারটা ফাইনাল করে ফেললো।আগামী পনেরোদিন পরেই ফ্লাইট।এই পনেরোদিন ভিসা পাসপোর্ট তৈরি হবে।
——–
অবশেষে চলে যাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসলো।কালই ফ্লাইট।তাই আজ রুশান ওর সব বন্ধু আর আত্মীয় স্বজনের সাথে কথা বলল।যাদের সাথে দেখা হয় নি তাদের সাথে ফোনে কথা বলেছে।এদিকে রুনা বেগম তো ভেবে নিয়েছে ছোট ছেলে প্রথম ছুটিতে এলেই বিয়ে করিয়ে দিবো।এইজন্য তিনি গোপনে পাত্রীও খোঁজা শুরু করেছে।

আজ প্রচন্ড ক্লান্ত রুশান বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে পুরো সময় শেষ তাই আজ এতো রাত হলো।ঘরে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ফোনটা নিয়ে দেখলো মৌ অনলাইনে আছে।ভেবেছিলো একবার মেসেজ দিবে কিন্তু পরে ভাবলো মেসেজ দিয়েও তো লাভ নেই সিন করবে বাট রিপ্লাই করবে না আর এটা দেখে আরো বেশি কষ্ট লাগবে।থাক ও ওর মতোই থাকুক।কালই তো শেষদিন তারপর বোধহয় আর কথাও হবে না আর না-ই বা দেখা।

চলবে…

একটি প্রেমাচ্ছন্ন বিকেল পর্ব-৮+৯

0

#একটি_প্রেমাচ্ছন্ন_বিকেল
#পর্বঃ০৮_০৯
#Arshi_Ayat

পাত্রপক্ষ আসার সময় হয়ে গেছে।এদিকে ইফরার মা ইফরাকে বলে বলেও পার্লারে নিতে পারে নি।ইফরা মায়ের উপদেশ বাণী এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিচ্ছে।তাই সে ইফরার ওপর বেজায় রাগ।ইফরাও কিছু বলল না।মা টা শুধু শুধুই রাগ করে।ছোটোবেলা থেকেই ইফরার রংচং মাখতে ইচ্ছে করে না।মেকাপ তো জীবনেও কিনে নি।ওর বান্ধবীরা যখন মেকাপ কিনতো তখন ইফরা মনে মনে বলতো ‘টাকাগুলো ওয়েস্ট’।দুই কালারের দু’টো লিপস্টিক আর একটা কাজ ছাড়া কিছুই নেই ইফরার।তাও এগুলো গত জন্মদিনে বান্ধবী গিফট করেছিলো।সেই যে এগুলো ড্রেসিং টেবিলে ফেলে রেখেছিলো এখনো তেমনই আছে।সাজার মধ্যে শুধু চুলটা আচড়ে মুখটা ধুয়ে ঠোঁটে হালকা একটু লিপবাম দিয়ে বেরিয়ে যায়।এতটুকুই তার সাজ!এদিকে তারই বিপরীত চরিত্রে অধিকারী তার ছোট বোন ফাইজা।প্রচুর মেকাপ,লিপস্টিক,আইলেনারের কালেকশন তার কাছেই পাওয়া যাবে।

পাত্র পক্ষ আসার আধঘন্টা আগে একটা মেরুন রঙের শাড়ি পড়ে চুলে খোপা করে মায়ের জোরাজোরিতে হালকা একটু লিপস্টিক আর কাজল দিয়ে ইফরা তৈরি হলো।ছোটো বোন ফাইজা চেয়েছিলো বড়বোনকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে কিন্তু বড়োবোন মেকাপ আর হাবিজাবি কিছুই দিবে না।সাফ মানা করে দিয়েছে।

রুমানের বাড়ি থেকে রুমান ওর মা,ভাবি আর বড়ো ভাই এসেছে।ইফরাকে দেখেই রুমানের মায়ের যে পছন্দ হয়েছে সেটা ওনার কথাবার্তায় প্রকাশ পাচ্ছে।শিরিনের পছন্দ হয়েছে এখন শুধু রুহান বাকি!রুহান ইফরার সাথে পড়াশোনার বিষয়ে কিছু কথা বলল।মনে মনে রুহানেরও ভালো লেগেছে।তাই ইফরার মা’কে বলল,’আমরা কিন্তু আজই বাগদান করে ফেলতে চাই।’

ইফরার মা আলহামদুলিল্লাহ পড়লেন।তারপরই বললেন,’আচ্ছা।আপনারা যেভাবে বলবেন।’

তারপর বাগদান শেষ করে ওর চলে যায়।বিয়ের দিন আগামী শুক্রবার ধার্য করা হয়।
—————-
আজ রুশান মৌ’কে কোচিং এ ভর্তি করিয়ে দিলো।যেহেতু রুশান এখানে পড়ায় সেহেতু মৌ এর ভর্তি হতে ফি লাগে নি।মৌ কে ভর্তি করে আর্টসে কয়েকজন টিচারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আর্টসের এডমিশন টেস্টের বইগুলো সংগ্রহ করে ফেললো।মোটামুটি ম্যাক্সিমাম বই সংগ্রহে আছে বাকিগুলোও হয়ে যাবে।রুশান মৌ’কে কোচিং থেকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেলো।বাসায় এসে মৌ হালকা নাস্তা খেয়ে পড়তে বসে গেলো।তারপর দুপুর পর্যন্ত পড়ে খেয়ে আবারও পড়তে বসলো।মাঝখানে সন্ধ্যার সময় একটু ব্রেক নেওয়া হয়।তারপর আবারো রাত পর্যন্ত পড়ে।মাঝেমধ্যে হাতাশায় কান্না এলে রুশানের মোটিভেশনগুলো স্মরণ হয়।নিজের মায়ের কথা মনে পড়ে।এই একসপ্তাহে বোধহয় চার বার মায়ের সাথে কথা হয়েছে তাও কিঞ্চিৎ!

বাড়িতে উৎসব!উৎসব! লেগে গেছে।রুমানের বিয়ে তে অনেক আত্মীয় স্বজনের আসা শুরু হয়েছে।বাড়ির সকলের ব্যস্ততা বাড়ছে।রুশানকে আর শিরিনকে একা হাতে সব সামলাতে হচ্ছে।কারণ রুমান অফিস থেকে বিয়ের আগেরদিন ছুটি নিবে আর রুহানের তো নিজের কারখানা।নিজের কারখানায় নিজে না গেলে সব গোলমেলে হয়ে যায়।তবুও এতো ব্যস্ততার মাঝেও রুশান মৌ কে সাপোর্ট করতে ভোলে না।

আজ গায়ে হলুদ।বাইরে প্রচুর হইচই হচ্ছে।ভেতর থেকে এমন শব্দে পড়ার মনোযোগ পাচ্ছে না মৌ।তাই হতাশ হয়ে টেবিলের সামনে বসে আছে।আজ যেহেতু ভাইয়ের হলুদ সেহেতু রুশানকে তো থাকতেই হবে।সে আছোও কিন্তু মৌ এর কি অবস্থা!সমস্যা হচ্ছে কি না!সেটারও তো খোঁজ নিতে হবে!মূলত সেইজন্যই রুশান একটা বাহানা দিয়ে ঘরে চলে এলো।তারপর মৌ এর দরজায় নক করলো।মৌ দরজা খুলতেই রুশানকে দেখলো।রুশান ভেতরে ঢুকে দরজা আটকে দিয়ে বিছানায় এসে বসে মৌ’কেও ইশারা দিলো বসতে।মৌ বসতেই রুশান বলল,’কি অবস্থা পড়া হচ্ছে?’

‘না।হইচই এ মনোযোগ পাচ্ছি না।’

‘দেখো মৌ।তুমি এখন একটা যুদ্ধে আছো।আর যুদ্ধে জয়লাভ করতে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা পেরুতে হয়।মাঝপথে এমন নানা বাধা আসবে যেগুলো তোমাকে লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইবে।এখন যদি তুমি বাধা কে বাধা মনে করে না এগোয় তাহলে তুমি সফল হতে পারবে না আর যদি বাধা স্বত্বেও সাহস নিয়ে এগিয়ে যাও তবে সূদুর ভবিষ্যতে তোমার জয় নিশ্চিত।এই যে যেমন কেউ কাউকে ভালোবাসলে শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে তাকে আপন করে তেমনিই তোমার ভালোবাসা তোমার মা।তোমার মা’কে তোমার কাছে নিয়ে আসতে হলে তোমাদের মধ্যকার সব ভালোবাসা উপড়ে ফেলতে হবে।আর সহজ করে বলি শোনো,এই অনুষ্ঠান,বিয়ে,হাসি ঠাট্টা আনন্দ এগুলো তোমাকে আর তোমার মা’কে আলাদা করার চক্রান্ত।তুমি কি চাও এই চক্রান্ত সফল হোক?’

‘নাহ!কখনোই না।’

‘তাহলে পুনরায় পড়তে বসো।কাউকে আসতে দিও না তোমাদের মাঝে।’

‘আচ্ছা।’
মৌ কে পুরোপুরি মোটিভেট করে রুশান পড়তে বসালো।তারপর ওর রুম থেকে বেরিয়ে এক প্লেট তেহারি,একটা পেপসি,আর চার/পাঁচটা মিষ্টি নিয়ে এসে বলল,’পড়তে পড়তে আবার খাওয়ার কতা ভুলো না।দুর্বল হলে কিন্তু পড়তে মন চাইবে না।’

মৌ পড়তে পড়তে শুধু একবার ঘাড় হেলিয়ে সম্মতি জানালো।রুশান ওর একাগ্রতা দেখে মুগ্ধ।যদি শেষ পর্যন্ত লড়তে পারে তবে অবশ্যই সফল হবে।এই বিশ্বাসটা আছে রুশানের।এখন শুধু ওকে সাপোর্ট করতে হবে।হতাশ হতে দেওয়া যাবে না।

হলুদের অনুষ্টান শেষ হওয়ার পর যে যার মতো শুতে চলে গেলো।রুমানও ঘরে এসে গোসল করে ফ্রেশ হলো তারপর ইফরাকে ফোন দিলো।ইফরাও ঘরে একাই ছিলো।একটু পরই ওর কাজিন আর ছোটোবোনের চলে আসবে ওর সাথে ঘুমাতে।এমনিতে ইফরার গাদাগাদি কর শুতে মন চায় না তবুও ওরা আবদার করেছে বলে শুতে হবে।রুমানের ফোন পেয়ে ইফরা রিসিভ করলো।ওপাশ থেকে রুমান বলল,’কি করছেন?’

‘বসে আছি।মাত্রই ঘরে আসলাম।’

‘আপনি?’

‘আমিও।আচ্ছা মেহেদী দিয়েছেন?’

‘হ্যাঁ দিয়েছি।’

‘যদি কিছু না মনে করেন তবে মেহেদী রাঙা হাতের একটা ছবি চাই।’

ইফরা একটু হাসলো।বলল,’এভাবে চাওয়ার কি আছে?এখনো সংকোচ?হলুদ তো হয়ে গেলো।কাল বিয়ে।এতো সংকোচ নিয়ে সংসার হবে?’

‘না মানে আপনার যদি সমস্যা হয় তাই আর কি!’

‘কিসের সমস্যা?সুন্দর করে চাইবেন।বলবেন ইফরা আপনার মেহেদী রাঙা হাতের ছবি দিন আমি আমার অক্ষিযুগল শান্ত করবো।’

‘ওহে হৃদয়রাণী,
আপনার মেহেদী রাঙা হাত দুখানা দেখিয়ে আমায় ধন্য করুন।’

রুমানের এমন কাব্যিক প্রচেষ্টা দেখে ইফরা একটু চাপা হাসলো।তারপর বলল,’দিচ্ছি।হোয়াটসঅ্যাপ দেখুন।’

‘আচ্ছা।আরেকটু কথা বলবেন নাকি ঘুমিয়ে পড়বেন?’

‘ওরা আসতে আসতে আরেকটু কথা বলাই যায়।’

‘আচ্ছা।’
—————
সবাই ঘুমিয়ে যাবার পর রুশান মৌ এর রুমে নক করলো।মৌ দরজা খুলতেই রুশান এক কাপ কফি দিয়ে বলল,’এটা রাখো।পড়তে পড়তে খাবা।আর এখন রাত একটা বাজে।আর পনেরো বিশমিনিট পর ঘুমিয়ে যাবা।তারপর সকালে তাড়াতাড়ি উঠে আবার বসবা।লেট নাইট পড়ার চেয়ে সকালে পড়া ভালো।’

‘আচ্ছা।আপনি ঘুমাবেন না?’

‘আধঘন্টার মধ্যেই শুয়ে পড়বো।আসছি।দরজা আটকে দাও।’

এটা বলেই রুশান চলে গেলো।আর মৌও দরজা আটকে দিলো।

একটু আগেই বিয়ে পড়ানো হয়েছে।বর কনে একসাথে বসে আছে।অনেক আত্মীয় স্বজন এসে ওদের সাথে কথা বলছে ছবি তুলছে।রুমান ইফরা দুজনকেই ভালো লাগছে।হঠাৎ ইফরা রুমানকে খোঁচা দিয়ে ফিসফিস করে বলল,’আমার এক্সকে দেখবেন?’

রুমান ভ্রু কুঁচকে বলল,’কোথায়?আসছে নাকি?’

‘হ্যাঁ।ওই তো!সামনে তাকান।দু’টো ছেলে কথা বলছে।এরমধ্যে ডান পাশের পার্পেল কালারের পাঞ্জাবি পরাটা।’

রুমান দেখলো।দু’টো ছেলের মধ্যে ওর ভাই রুশানও আছে।রুশান আর ওই ছেলেটা কথা বলছে।রুশানের বন্ধু নাকি!ডাক দিবে!এটা ভাবতে ভাবতেই পাশ থেকে ইফরা রুশানকে ডাক দিলো,’হেই দেবর সাহেব এদিকে আসুন।’

নতুন ভাবির ডাক শুনে রুশান স্টেজের দিকে গেলো।আহাদ তো স্টেজের দিকে তাকিয়ে বউ সাজে ইফরাকে দেখে অবাক।সেও রুশানের পিছনে পিছনে গেলো।রুশান স্টেজে আসতেই ইফরা বলল,’দেবর সাহেব আপনার সাথে তো আমার তেমন ছবি নেই।আসুন কয়েকটা ছবি তুলি।’

‘জ্বি ভাবি।অবশ্যই।’

ইফরা চোখ দিয়ে ইশারা করে রুমানকে দাড়াতে বলল। দুইভাইয়ের মাঝে দাড়িয়ে ইফরা নানারকম পোজ দিয়ে ছবি তুললো।আর আহাদ বেক্কলের মতো তাকিয়ে রইলো।

রুশান মৌ কে বিয়ে বাড়িতেও আসতে দেয় নি।আসার সময় খাবার দিয়ে এসেছিলো।সারা বাড়িতে মৌ একা।ওর ঘরে পড়ছে আর সবাই বিয়ে বাড়িতে।যদিও বিয়ের মতো অনুষ্ঠানে কার না যেতে মন চায়।তবুও মনকে বাঁধতে হবে।

পুরোটা সময় আহাদ শুধু সুযোগ খুঁজেছে ইফরার সাথে কথা বলতে।কিন্তু পারছে না।কারণ একটু পর পরই মানুষজন আসে,কথা বলে ছবি তোলে।আর ইফরার এতো খুশীর কারণও বোঝা যাচ্ছে না।বিদায়ের আগে হঠাৎ ইফরা ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য উঠতেই আহাদ সুযোগ পেয়ে গেলো।ইফরাকে ফলো করতে করতে ওয়াশরুমের সামনে চলে এলো।তারপর ওকে ডেকে বলল,’ইফরা দাড়াও কথা আছে।’

ইফরা লেহেঙ্গাটা উঁচু করে ধরে বলল,’কি কথা?’

‘তুমি অনেক তাড়াতাড়ি মুভ অন করে ফেলছো দেখছি।’

‘কি ভেবেছে তুমি ধোকা দেওয়ার পর আমি সুইসাইড করবো?হাত কেটে ফেলবো?পাগল হয়ে যাবো?তোমার বিরহে বিরহিণী হয়ে যাবো?
অবশ্য কিছুদিন শোক পালন করেছিলাম তারপর রুমান মানে আমার স্বামী,আমার ভবিষ্যত আর করতে দেয় নি।এই জীবন নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি।আর থ্যাংকস টু ইউ।নিজেকে চেনানোর জন্য।তা নাহলে যদি তোমার সাথে নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে জড়িয়ে ফেলতাম তবে হয়তো অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যেতো।’

এটা বলে ইফরা ঘুরে দাড়াতেই আহাদ বলল,’এতো সুখী হইও না।এখনো খেল বাকি!আমাদের রিলেশন চলাকালীন আমাদের যতো কাপল পিক আছে সব যদি তোমার স্বামীর হাতে পড়ে তাহলে কি হবে বুঝতে পারছো?তোমার সুখ টিকবে তো?’

ইফরা শান্ত গলায় বলল,’ব্ল্যাকমেইল করছো?’

‘না তোমার সুখের সীমানা দেখালাম আর কি!’

‘আচ্ছা তাই?’এটা বলেই ইফরা জোরে হেসে দিলো।বলল,’ছবি দেখাবে রুমানকে?দেখাও।সমস্যা নাই।’
তারপর নিজের ফোন থেকে একটা ভিডিও ওপেন করে আহাদের সামনে ধরলো।ভিডিওটায় চোখ রাখতেই আহাদের শিরদাঁড়া খাড়া হয়ে হয়ে গেলো।ভিডিওটা তে ওর রিসেন্ট গার্লফ্রেন্ডের সাথে একটা রুমে ওরা।এই ভিডিওটা ওর গার্লফ্রেন্ডই ইফরাকে দিয়েছে। এই ভিডিওটা দেখে আহাদ আতংকগ্রস্ত হয়ে বলল,’এটা কোথায় পেয়েছো তুমি?’

‘কোথায় পেয়েছি বলবো না।শুধু বলবো ব্ল্যাকমেইল করতে এসে যেনো নিজেই ফাঁদে না পড়ে যাও।’

‘তুমি এই ভিডিওটা আমায় দিয়ে দাও।আমি তোমার সব ছবি রিমুভ করে দিবো।’

‘তুই রিমুভ করলেই কি না করলেই কি!ওইসব ছবি আমি রুমানকে আগেই দেখিয়েছি।আর এই ভিডিও আমি ডিলিট করবো না।কখন কাজে লেগে যায় বলা তো যায় না তাই না?’

এটা বলেই ইফরা একটা ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে স্টেজে চলে আসলো।স্টেজে আসতেই রুমান বলল,’কাজ শেষ?’

‘হ্যাঁ শেষ।ভিডিওটা দেখার পর কি যে অবস্থা হয়েছিলো ওর!’এটা বলেই ইফরা হেসে ফেললো।
সাথে রুমানও হাসলো।হাসি থামিয়ে ইফরা বলল,’আমি সত্যি আপনার এতো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য কি না জানি না তবে আমি আমি এই কদিনে বোধহয় আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।আগে খুব কষ্ট হতো।কিন্তু এখন হয় না।আমি আপনাকে কখনোই ছেড়ে যাবো না।’

‘আপনি চাইলেও পারবেন না।’

‘আমি চাইও না।’

সন্ধ্যায় বউ নিয়ে ঘরে ফেরা হয়েছে।ইফরাকে মধ্য মণিক করে বসানো হয়েছে।সবাই ওকে ঘিরে বসেছে।মৌ ও কিছু সময়ের জন্য এসে বউ দেখে গেছে।আরেকটু থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু রুশানের চোখ রাঙানিতে আর থাকতে পারে নি।
—————-
আজকে রিসেপশন।বরপক্ষের অনেক কাজ।এর মধ্যে মেইন দায়িত্বে আছে রুশান।তবুও একফাঁকে মৌ কে কোচিং এ দিয়ে এসেছে।আজকে ওর মডেল টেস্ট আছে।

মৌ পরীক্ষা দিয়ে বের হতেই ওরই এক ক্লাসমেট শাওন ডাক দিলো ওকে।মৌ দাড়ালো।শাওন এসে ওর পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল,’পরীক্ষা কেমন হয়েছে তোমার?’

‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তোমার?’

‘ভালো।আচ্ছা তোমার অর্থনীতির প্রিপারেশনে কি অবস্থা?’

‘ওটাও ভালো।দুইবার রিভিশন দিয়েছি আজকে গিয়ে আবার দিবো।’

‘ওহ!আচ্ছা।শোনো তোমাকে কিছু দেওয়ার ছিলো।’

মৌ ভ্রু কুঁচকে বলল,’কি?’

শাওন ব্যাগ থেকে একটা চিঠি বের করে মৌ’কে দিয়ে বলল,’বাসায় গিয়ে দরজা বন্ধ করে পড়বে।’

‘কি আছে এতে?’

‘আমার ভালোবাসা।’

মৌ এর আগে কখনো লাভ লেটার পায় নি।তবে বান্ধবীদের যখন লাভ লেটার আসতো তখন দেখতো।আর শাওন যখন দিয়েছে তখনই বুঝতে পেরেছে এটা লাভ লেটার।মৌ লেটারটা বইয়ের ভেতর রেখে দিয়ে বললে,’আচ্ছা পড়বো।’

‘আচ্ছা।তাহলে আমি আসি।’
এটা বলেই শাওন অন্যদিকে চলে গেলো।বাসায় এসে বইগুলো টেবিলে রেখে মৌ গোসল করে বের হতেই দেখলো রুশান এসে বসে আছে।মৌ কে দেখে বলল,’পরীক্ষার কি অবস্থা?’

‘অনেক ভালো।’

‘নেগেটিভ কয়টা দাগাইছো?’

‘পাঁচটা শিউর ছিলাম না।ওই পাঁচটা ছাড়া সবই শিউর।’

‘ওই পাঁচটা দেখে নিও।আর কাল কি পরীক্ষা?’

‘অর্থনীতি।’

‘আচ্ছা তাহলে সুন্দর করে পড়তে বসে যাও।আমি খাবার দিয়ে যাচ্ছি।খেয়ে নিবা।’

‘আচ্ছা।’
তারপর রুশান চলে গেলো।দুপুরে বাড়ি ভর্তি মানুষজন।পাঁচজন ওয়েটার রেখেও যেনো হচ্ছে না।অগত্যা রুশান নিজেও ওয়েটার হয়ে সবাইকে সার্ভ করলো।তারপর মৌ এর জন্য আলাদা করে বেড়ে ওকেও দিয়ে আসলো।পুরো সারাটা দুপুর খাটুনি করে পায়ের ওপর পা তুলে আরম করে বসা মেজো ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,’সমস্যা নাই আমারও দিন আসবে।সেদিন আমিও জামাই সেজে বসবো আর তোমরা ওয়েটার সেজে খবার সার্ভ করবা।’

আস্তে আস্তে মেহমান বিদায় হতে থাকলো।এদিকে ইফরা আর রুমানকে কনের বাড়ির লোকেরা নিয়ে গেলো।ওরা যাওয়ার পর রুশান একটু শান্তি করে বসলো তবুও যেনো শান্তি নেই এখনি আবার একটু টিউশনিতে যেতে হবে।তাই একটা মিষ্টি মুখে পুরে বেরিয়ে গেলো।

সন্ধ্যার সময় মৌ একবার নিজের রুম থেকে বেরিয়ে শিহানের সাথে দুষ্টুমি করলো।শিরিন আপুর ফোন দিয়ে মায়ের সাথে কথা বলে আবার নিজের ঘরে এসে পড়তে বসলো।এদিকে পৌরনীতি বইয়ের ভেতরে যে শাওনের লাভ লেটারটা পড়ে আছে সেটা সে বেমালুম ভুলে গেছে।

রাত এগারোটা পর্যন্ত পড়ে প্রচুর মাথাব্যথা করছিলো তাই মৌ ওয়াশরুমে গেলো মাথায় পানি দিতে।এদিকে রুশান টিউশনি থেকে ফিরেই মৌ এর ঘরে এলো।ওয়াশরুমে পানি পড়ছে দেখে বুঝলো ও ওয়াশরুমে তাই বিছানায় এসে বসল।খালি খালি বসতে ভালো লাগে না।তাই ওর অর্থনীতি বইটা হাতে নিয়ে উল্টাতে উল্টাতে দেখলো একটা ইনটেক চিঠি এখনো খোলা হয় নি।চিঠিটার ওপর লেখা ‘প্রিয়তমা মৌ’

রুশান ভ্রু কুঁচকে ফেললো চিঠিটা দেখে।এরইমধ্যে মৌও বের হয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে।মৌ কে দেখে রুশাম গম্ভীর স্বরে বলল,’এটা কি?’

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

একটি প্রেমাচ্ছন্ন বিকেল পর্ব-০৭

0

#একটি_প্রেমাচ্ছন্ন_বিকেল
#পর্বঃ০৭
#Arshi_Ayat

নাস্তা খেয়েই মৌ আর রুশান বের হবে সিনথিয়া খালার বাসা থেকে।আজই ওরা ফিরবে।রুশান চেয়েছিলো একা আসতে কিন্তু শিরিন ফোন দিয়ে বলল মৌ কেও নিয়ে আসতে।তাই আর কি করার এখন মৌ কেও নিয়ে ফিরতে হবে।এমনিতেও এই মেয়েটাকে দেখতে ইচ্ছে করে না!তারওপর কালরাতে কি জঘন্য কথা বলেছে।মনে পড়লে এখনো বমি আসতে নেয়।সেইজন্য আজ নাস্তাও খায় নি।সিনথিয়া বেগম আর শারমিন অনেক করে বলেছিলো কিন্তু রুশান নানারকম ছুতো ধরে খায় নি।

মৌ এর খাওয়া শেষে শারমিন আর সিনথিয়া খালার থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে এসে দাড়ালো।রুশান আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে।মনে মনে খুব রেগে আছে তাই আজ আর রিকশা নেয় নি।শিক্ষা দেওয়ার জন্য হাটিয়ে নিব।ওর তো সমস্যা নেই কারণ এই রোডে সপ্তাহে তিনদিন আসা পড়ে।একটা এডমিশন কোচিংএ পড়ানোর জন্য।আর বেশিরভাগ সময়ই হেঁটে আসে।

মৌ ওর পাশাপাশি এস দাড়াতেই রুশান রুক্ষ দৃষ্টিতে একবার চেয়ে তারপর বলল,’আজকে রিকশা নেই হেঁটে যেতে হবে।’

‘আচ্ছা।’এটা বলেই মৌ হাঁটতে শুরু করলো।একটু পিছনে রুশানও আসছে।মৌ হাঁটতে হাঁটতেই ভাবছিলো রুশানকে সরি বলা উচিত।কাল রাতে রেগে গিয়ে অনেক উল্টাপাল্টা কথা বলে ফেলেছে।কিন্তু সরি কিভাবে বলবে!এর আগে কাউকে সরি বলা হয় নি।তাই এক্সপিরিয়েন্সও নেই।কিন্তু বলা উচিত!ধূর একটা সরিই তো!বলেই দিই।এগুলো ভাবতে ভাবতেই মৌ পিছনে ফিরে রুশানের দিকে তাকালো।রুশানও ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো কিন্তু চোখে চোখ পড়তেই আকাশ,বাতাস,মাটি,পানির সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।মৌ একবুক সংকোচ নিয়ে মিনমিনে গলায় বলল,’একটু শুনবেন?’

রুশান একটু এগিয়ে এসে দায়সারা ভাবে বলল,’কি?’

‘সরি।’একটানে এই শব্দটা বলে এখন মৌ এর শান্তি লাগছে।কিন্তু রুশান হালকা ভ্রু নাচিয়ে বলল,’কেনো?’

‘ওই যে কাল রাতে আপনাকে ওইসব বলেছি তাই।’

‘ওহ!আপনার আবার অনুশোচনাও আছে!’
রুশানের এহেন খোঁচা মূলক কথা শুনেও মৌ কিছু বলল না।কারণ কথায় কথা বাড়ে।শুধু শুধু কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।রুশান পুনরায় আবার বলল,’আচ্ছা আমিও সরি।আমারও ওসব বলা ঠিক হয় নি।আর আমরা এই টপিক এখানেই ক্লোজ করে দেই।কি বলেন?’

‘আপনিই কিন্তু আগে শুরু করছিলেন।শিহানকে কিন্তু আপনিই বলছিলেন।শুধু শিহান কেনো সবাইকেই বলে বেড়াচ্ছিলেন।’

‘আমি সবাইকে বলি নি।শুধু শিহান আর ভাবিকে বলছি।’

‘যাইহোক বলছেন তো!’

‘আচ্ছা এগেইন সরি বাট আমরা আর এই টপিক নিয়ে কোনো কথা বলবো না।’

‘আচ্ছা কিন্তু শিহান যে আমাকে হাগু খালামণি ডাকে সেটা?’

‘আমি ওকে আজকে মানা করে দিবো।ও আমার ভিষণ ভক্ত।যা বলি তাই করে।’

‘ওহ!তাহলে তো হলোই।’

‘হুম।আচ্ছা ফ্রেন্ড হতে পারি?’রুশান একবার বাজিয়ে দেখার জন্য বলল।নিশ্চিত না করে দিবে এটাই ওর বিশ্বাস।কিন্তু রুশানের বিশ্বাস ভেঙে গেলো মৌ এর উত্তরে।সে বলল,’হ্যাঁ হওয়া যায়।যদিও আপনি বড়ো তবুও সমস্যা নেই।’

‘আচ্ছা।তাহলে তুমি করে বলি?’এইবার রুশান মনে মনে ভাবছে মৌ হ্যাঁ বলবে কিন্তু এবার রুশানকে ভুল কর মৌ বলল,’নাহ!আপনিটাই ঠিক আছে।তুমিটা একটু বেশি হয়ে যায়।তবে আপনি আমাকে তুমি করেই বলতে পারেন।’

‘ঠিকাছে ।আচ্ছা তুমি কোন গ্রুপের?’

‘আর্টসের।’

‘ওহ!আমি সাইন্সের।এবার ইন্জিনিয়ারিং শেষবর্ষে আছি।তোমার এইম কি?’

‘মা’কে মুক্ত করা।’

রুশান একটু কৌতুহলী হয়ে বলল,’মানে?’

‘মানে হলো আমার মা একটা জেলখানায় পড়ে আছে।আমি ওনাকে মুক্ত করে নিজের কাছে নিয়ে আসতে চাই।এটাই আমার এইম।’

‘কিসের জেলখানা?কিসের মুক্তি?বুঝতে পারছি না আমি।’

‘শিরিন আপু বলে নি আপনাকে?’

‘না।ভাবি তো বলল তুমি এখানে কয়েকদিন থাকবে।সেইজন্য আনতে যেতে হবে।’

‘ওহ!আচ্ছা আমিই বলছি।আমার বাবা অনেক আগেই মারা যায়।তখন মামারা জোর করে মা’কে আবার বিয়ে দেয়।এবং আমার মায়ের দ্বিতীয় স্বামী মদখোর।প্রতিরাতে গাঁজা খেয়ে এসে মা’কে প্রচন্ড মারে।আর আমার মার তো আছেই।উটকো ঝামলা যে!একটু বড় হবার পর আমার সৎ চাচাতো ভাই রাশেদ।ওই যে আমাকে আনার সময় যাকে দেখলেন সে!তার আমার ওপর নজর পড়ে যায়।আমাকে বিয়ে করতে চায় কিন্তু আমি,মা কখনোই চাইতাম না।মায়ের প্রচেষ্টায় কষ্ট করে ইন্টার পর্যন্ত পড়েছি।তারপর ওদের অত্যাচারে আর পড়তে পারি নি।একবছর ড্রপ দিয়েছি।ভেবেছি পরিণতি খুব খারাপ আমার কিন্তু তিনদিন আগে মা বলল আমাকে পালিয়ে যেতে কারণ ওই রাশেদের সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে।এবং শিগগিরই বিয়ে হবে তখন আর কেউই আটকাতে পারবো না তাই মা আমাকে পালিয়ে যেতে বললেন।এরপর তো আপনি জানেনই।’
কথা শেষ করে মৌ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।রুশান সব শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,’তোমার এখন খুব ভালো করে পড়া উচিত।নিজের লক্ষে পৌঁছানোর জন্য।’

‘হ্যাঁ কিন্তু আমি কোনো দিকদিশা পাচ্ছি না।এডমিশনের কোনো বইও নেই আমার কাছে।শুধু বোর্ড বইগুলো এনেছি।কোনো কোচিং এ করতে পারছি না।আর মাত্র দুইমাস বাকি।আমি ভিষণ হতাশ!জানি না পারবো কি না!’

‘পারবে!ধৈর্য ধরো।আমি তোমার এডমিশনের বইয়ের ব্যবস্থা করে দিবো আর আমি যে ভর্তিকোচিং এ পড়াই সেখানে আর্টসও পড়ানোও হয়।কাল নিয়ে যাবো আমি।এখন শুধু তোমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।যে স্বপ্ন দেখেছো সেটা বাস্তব করতে হবে।নিজের মা’কে মুক্ত করতে হবে।পারবে?’

মৌ রুশানের দিকে তাকিয়ে বলল,’পারবো আমি।’

‘গুড।আজকে সন্ধ্যার মধ্যেই তোমার এডমিশনের কিছু বই কালেক্ট করে দিবো।এর আগে তুমি মেইন বইগুলো পড়ে নিও।’

‘আচ্ছা।’
বলেই মৌ কেঁদে ফেললো।রুশান মৌ এর চোখের পানি আলতো করে মুছে দিয়ে বলল,’কেঁদো না।এই পানি গুলো জমিয়ে রাখো।যেদিন সাফল্য আসবে সেদিন মন ভরে কাঁদবে।’

মৌ চোখের পানি মুছে ফেললো দুহাত দিয়ে।তারপর ভরা গলায় বলল,’আমি সত্যিই কখনো ভাবি নি আমি এতো সাপোর্ট পাবো।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।’

‘ধন্যবাদে আমার পোষাবে না।’

‘তাহলে কি দিয়ে পোষাবে?’

‘যেদিন তুমি সফল হবে আমি সেদিনই চাইবো।ওটা তোলা রইলো’

‘আচ্ছা।’

বাসায় পৌঁছে মৌ রুশানের কথামতো বোর্ডবইগুলো নিয়ে বসলো।আর রুশান নাস্তা খেয়ে টিউশনি করাতে গেলো।এখন নাস্তা খেতে সমস্যা হয় নি।সব তো মিটেই গেলো।তবে ভালো লাগছে এমন একটা মেয়ের উপকার করতে পেরে।বাসা থেকে বের হওয়ার সময় শিহানকে দেখলো মৌ এর রুমে যেতে তাই ওকে ডাক দিলো।ছোট চাচার ডাক শুনে শিহান সোজা চাচার কাছে চলে এলো।রুশান শিহানের গাল টেনে বলল,’কোথায় যাচ্ছো শিহান?’

‘হাগু খালামণির রুমে।’

‘না বাবা উনি তোমার হাগু খালামণি না।উনি তোমার মিষ্টি খালামণি।’

‘কি বলো তো?’

‘মিষ্টি খালামণি।’

‘হ্যাঁ।এখন থেকে এটাই বলবে।ওক চাচ্চু?’

‘ওকে।’
তারপর শিহান মৌ এর ঘরে গেলো আর রুশান বেরিয়ে গেলো টিউশনি করাতে।
————
এদিকে রুমান বাসায় সবাইকে ইফরার কতা জানিয়েছে।সবাই রাজি হয়েছে শুধু রুহান বাদে।রুহান বলেছে মেয়ে দেখে তারপর বলবে। আজ সন্ধ্যায় ইফরাকে দেখতে ওরা ইফরাদের বাড়ি যাবে।

মেয়েকে দেখতো আসবে শুনে ইফরার মাও মেহমান সমাদর করার জন্য তোড়জোড় শুরু করলেন।ইফরা বারবার তাগাদা দিতে লাগলেন পার্লারে যাওয়ার জন্য।কিন্তু ইফরা এ নিয়ে বেশ বিরক্ত।কেনো দেখতো আসলে পার্লারে যেতে হবে।এমনে পছন্দ হলে হবে না হালে নাই।এতো সঙ সাজার কি দরকার!

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

একটি প্রেমাচ্ছন্ন বিকেল পর্ব-০৬

0

#একটি_প্রেমাচ্ছন্ন_বিকেল
#পর্বঃ০৬
#Arshi_Ayat

জীবনটা পুরা হাগুময় হয়ে গেছে।ওপরে,নীচে,ডানে,বামে সব জায়গায় হাগু আর হাগু।এই মেয়েটার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই এমন হচ্ছে।রুশান নাক মুখ কুচকে এগুলোই ভাবছে আর চুপচাপ হাঁটছে।এদিকে শারমিন ননস্টপ হেসেই যাচ্ছে তবে মৌ উচ্চস্বরে না হাসলেও মুচকি মুচকি হাসছে।এদের হাসি দেখে রুশানের রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে।একটা কিছু পেলেই হলো হাসি আর বন্ধ হয় না।
—————-
শপিং মল থেকে বের হয়ে বান্ধবীকে বিদায় দিয়ে ইফরা রুমানকে ফোন দিলো।হঠাৎ ইফরার ফোন পেয়ে রুমান হকচকিয়ে গেলো।সে এই সময়ে তাও ইফরার ফোন আশা করে নি।তবুও রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ইফরা হাই/হ্যালো না বলেই ডাইরেক্ট বলল,’আপনি কোথায়?’

‘অফিসে আছি।’

‘ছুটি কখন?’

‘আধঘন্টা পরই বের হবো।’

‘আধঘন্টা পর মাজারের সামনে চলে আসুন।’

‘আচ্ছা।’
ইফরা ফোন রেখে হাঁটা ধরলো।মাজারের সামনে পৌঁছাতে পনেরো মিনিট লাগবে।আরো পনেরো মিনিট রুমানের জন্য দাড়াতে হবে।

এদিকে ইফরা ডেকেছে বলে রুমান বসকে বলে আধঘন্টা আগেই বেরিয়ে গেছে।ফলে ইফরা পৌঁছানোর আগেই দেখলো রুমান নির্দিষ্ট জায়গায় দাড়িয়ে আছে।রুমানকে নিজের আগে পৌছাতে দেখে ইফরা বলল,’আপনার তো আরো পরে আসার কথা।এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে এলেন?’

‘আপনি ফোন দেওয়ার পরই বের হয়েছিলাম তাই।’রুমান এলোমেলো হেসে মাথা চুলকে বলল।

‘একি!মাথায় উঁকুন আছে নাকি?মাথা চুলকাচ্ছেন কেনো?’

রুমান দ্রুত জবাব দিয়ে বলল,’না না উকুন নেই।এমনিই চুলকাচ্ছিলাম।’

‘ওহ!আচ্ছা চলুন একটু হাটি।’

‘হ্যাঁ চলুন।’
ইফরা আর রুমান ফুটপাত ধরে পাশাপাশি হাঁটছে।হাঁটতে হাঁটতেই ইফরা বলল,’বিয়েটা কবে হলে ভালো হয়?’

এমন একটা কথা শুনবে এটা রুমান ভাবেও নি।নিজেকে অতি কষ্টে সামলে নিয়ে বলল,’আপনি যখন বলবেন।’

ইফরা খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল,’মানে কি!আপনার পছন্দ নাই?’
রুমান একটু থতমত খেয়ে বলল,’না মানে আমার তো সমস্যা নেই আপনি যখন বলবেন আমি তখনই জামাই সেজে হাজির হয়ে যাবো কিন্তু আমি তো আপনার জন্য বলেছি।আপনার তো কোনো সমস্যা থাকতেই পারে।’

ইফরা একবার রুমানের দিকে তাকিয়ে বলল,’আচ্ছা আপনি অফিশিয়ালি আপনার পরিবারকে দিয়ে আমার বাসায় প্রস্তাব পাঠান তারপর তারা কথা বলে যেদিন ধার্য করে সেদিনই।’

‘হ্যাঁ এটাই ভালো।ঝালমুড়ি খাবেন?’রুমান হালকা সাহস নিয়ে অফারটা করেই ফেললো।কারণ এই স্বর্ণকেশী মানবীকে সে ভালোবাসলেও তার সামনে কথা বলতে বেচারার হাঁটু কাপে,কথা এলোমেলো হয়ে যায়,টেনশনে গলা শুকিয়ে যায়,আরো নানান সমস্যা।কেনো যে এমন হয়!

ইফরা মৃদু হাসলো।অফারটা গ্রহণ করে বলল,’ঠিকাছে তবে বেশি ঝাল দেওয়া চলবে না।’

‘আচ্ছা ঠিকাছে।আপনি দাড়ান আমি আসছি।’
পাঁচ মিনিটের মধ্যে রুমান দুটো ঠোঙায়ভরা ঝালমুড়ি নিয়ে এলো।ইফরা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ধন্যবাদ দিলো।আর তাতেই যেনো রুমানের রাতের ঘুম,স্বপ্ন সব উড়ে বাষ্প হয়ে গেলো।এই মেয়েটাকে কেনো যে এতো ভালোবাসে রুমান নিজেও জানে না।খুব সাধারণ ভাবেই ভালো লেগে যায় মেয়েটাকে।একদিন বন্ধু আয়ানের গায়ে হলুদের মেয়েটাকে দেখেছিলো রুমান।সবার থেকে আলাদা দাড়িয়ে কাঁদছিলো।কাঁদতে কাঁদতে কাজল চোখের নিচে লেপ্টে গিয়েছিলো।দেখতে পেত্নী লাগছিলো কিন্তু চিকন সরু ঠোঁটের ওপরের তিলটা পেত্নী নামক শব্দটায় সায় দিচ্ছিলো না।সেদিন রুমান বিপাকে পড়েছিলো!
কেনো জানি কৌতূহলী হয়ে পুরো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে ওকে ফলো করেছিলো সে।তারপর থেকে গোপনে!হ্যাঁ খুব গোপনে ভালোবেসে ফেলেছিলো।তারপর একদিন বন্ধুর বোনের সাহায্যে মেয়েটার সব খবরাখবর নিয়ে জানতে পারে কিছুদিন আগেই মেয়েটার ব্রেকাপ হয়েছে।এবং সে এটা নিয়ে আপসেট তবে।তবে রুমান স্বার্থপরের মতো খুশিই হয়েছিলো।মেয়েটার বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করে মেয়েটার মা’কেও হাত করে ফেলেছিলো।
————
আজকে কাছাকাছি একটা পার্কে কতক্ষণ ঘুরাঘুরি করে,রাস্তার ধারে ফুচকা,চটপটি খেয়ে বাসায় ফিরেছে তিনজন।এই পুরোটা সময় মৌ শারমিনের সাথে দুই একটা কথা বললেও রুশানের সাথে কথা হয় নি।রুশানও বলে নি।ওর ধারণা মেয়েটা মেয়েটার প্রচন্ড অহংকার!তাই হয়তো ওর সাথে কথা বলে না।থাক না বলুক!এমন দু’একটা মেয়ে কথা না বললে কিচ্ছু আসে যায় না।

বাসায় ফিরে মৌ আর শারমিন ঘরে গেলো ফ্রেশ হতে আর রুশান একটু বাইরে গেছে।দশ মিনিট পর একটা দুই লিটারের সেভেন আপের বোতল নিয়ে হাজির হলো।শারমিন খুশীতে গদগদ হয়ে বলল,’উফ!বেয়াই সাহেব আপনি কিভাবে আমার মনের কথা বুঝে যান!আমিও এটাই চাইছিলাম।’

রুশানও মজা নিয়ে বলল,’বেয়াইনের মনের ভাবে বেয়াই না বুঝলে কে বুঝবে বলুন!’

এদিকে মৌ এদের অতিরিক্ত আদিখ্যেতায় বেশ বিরক্ত হচ্ছে।এসব ইন্ট্রোভার্ট মানুষের এই একটাই সমস্যা স্রোতের টানে ভাসতে পারে না।তাই দামও পায় না।

শারমিন গ্লাস এনে সেভেন আপ ঢেলে মা’কে এক গ্লাস দিয়ে এলো।সিনথিয়া বেগম নিজের ঘরে বসে তসবি টিপছেন।প্রত্যেকদিন তিনি নামাজের পর তসবি পড়েন।মা’কে দিয়ে এসে আগে রুশানকে দিয়ে মৌ’কে দিতে নিলেই মৌ বলল,’আমি খাবো না গো! তুমি খাও।’

বিষয়টা মৌ স্বাভাবিকভাবে বললেও রুশান ভেতরে ভেতরে ভিষণ ক্ষেপে গেলো।কথা না হয় নাই বলবে তাই বলে এখন সে এনেছে বলে খাবেও না।এতো তেজ!রুশান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার মৌ এর দিকে তাকালো।মৌ ও চাইলো ওর দিকে কিন্তু ওর এমন ধারালো দৃষ্টির কারণ বুঝতে পারলো না।

অনেক্ক্ষণ আড্ডা চললো কিন্তু আড্ডায় শারমিনের ছাড়া আর কারোই মনোযোগ নেই।মৌ এর এসব আড্ডা জমে না কিন্তু রুশান মৌ এর ওপর ক্ষেপে আছে বলেই মনোযোগ দিতে পারছে না।

রাতের খাবার খাওয়া শেষ হওয়ার পর আরো কিছুক্ষণ গল্পসল্প চলল।তারপর সবাই শুতে গেলো।মৌ আর শারমিন একসাথে ঘুমালো আর রুশান গেস্ট রুমে।
মাঝরাতে হঠাৎ মৌ এর ঘুম ভেঙে গেলো।মায়ের কথা মনে পড়ছে।কান্না আসছে।আজ দুইটা দিন হয়ে গেলো মা’কে দেখা হয় না।সামনাসামনি কথা হয় না।শোয়ার আগে সিনথিয়া খালার নাম্বার থেকে কিছুক্ষণ কথা হয়েছিলো।তারপর মা রেখে দেয়।জীবনটা এমন কেনো!মৌ বাম হাত দিয়ে চোখ মুছে সন্তপর্ণে বিছানা ছাড়লো।পানি খাওয়া প্রয়োজন তাই ড্রইং রুমে যেতে হবে।মৌ ড্রাইং রুমে এসে লাইট জ্বালিয়ে পানি খেয়ে আবার লাইট’টা বন্ধ করে চলে যেতে নিলেই কেউ একজন এসে ওর মুখটা চেপে ধরে।আর হাতদুটো পিছনে নিয়ে আটকে ফেলে।অন্ধকারে চেহারা বোঝা না গেলেই বোঝাই যাচ্ছে পুরুষ অবয়ব।মৌ ভয়ে লোকটার হাতে কোমড় দিয়ে বসলো।আর সাথে সাথেই লোকটা মৌ এর মুখ থেকে হাত সরিয়ে ফেললো।তারপর আর্তনাদ করে বলল,’ডাইনি একটা।এতো জোরে কেউ কামড়ায়?’

এতক্ষণে গলার স্বর চেনা গেলো।এটা রুশান।মৌ কিছুটা বিস্মিত হয়ে বলল,’আপনি!’

‘হ্যাঁ আমি।এতো জোরে কেউ কামড়ায়?এখন যদি আমার জলাতঙ্ক হয়?’

মৌ এর রাগ উঠে গেলো।ছেলাটা ওকে কুকুর বলল!

‘তুই ছাগল!তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী ছাগল।তুই ছাগলের গু, মুত সব খাস।’

আচমকা এই কথাগুলো বলেই মৌ বিদুৎ গতিতে রুমে চলো এলো।আর রুশান বেক্কলের মতো দাড়িয়ে রইলো।কি বলে গেলো মেয়েটা?রুশানের গা গুলাচ্ছে!ছি!
মৌ এর মতো রুশানও পানি খেতেই উঠেছিলো কিন্তু যখন নিজের রুম থেকে বেরিয়ে মৌ কে দেখলো তখন ভাবলো ভয় দেখাবে।কিন্তু এসে মুখ চেপে ধরতেই কামড়ে দিলো।

রুশান রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ড্রইং টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে খেতে নিলোই মৌ এর বলা’ তুই ছাগলের গু মুত সব খাস’ এটা মনে পড়ে গেলো।এখন পানিকেও মুত লাগছে কি একটা অবস্থা।রুশান পানি না খেয়েই ঘরে চলো গেলো।

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

একটি প্রেমাচ্ছন্ন বিকেল পর্ব-০৫

0

#একটি_প্রেমাচ্ছন্ন_বিকেল
#পর্বঃ০৫
#Arshi_Ayat

নাস্তা করে রুশান আর মৌ বেরিয়ে পড়লো যাওয়ার জন্য।শিরিনের মায়ের বাড়ি বেশি দূরে নয়।এখান থেকে রিকশায় দশ টাকা ভাড়া লাগে।আর হেটে দশ বা পনেরো মিনিট লাগবে।তবে আজ রিকশায় যাবে ওরা।মৌ এর ভিষণ বিরক্ত লাগছে এই বেয়াদব গোছের ছেলেটার সাথে বসতে।সাথে রাগও লাগছে। এতো বড় হওয়ার পর আক্কেল আন্দাজ সব পানিতে গুলিয়ে পেটে চালান করে দিয়েছে তা নাহলে সামান্য ‘হাগু’ কথাটা সবাইকে ধেই ধেই করে বলার কি আছে।এমন করছে যেনো ওদের গোষ্ঠীতে কেউ হাগে না।এই প্রথম হাগুর নাম শুনলো বলে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে বলে বেড়াতে হচ্ছে।অতিমাত্রায় অসভ্য হলে যা হয় আর কি!

এদিকে মৌ এর বিরক্ত মুখটায় নজর পড়তেই রুশান একটু ভ্রু কুঁচকালো।বিরক্ত হওয়ার মতো কোনো কাজ করেছে বলে তো মনে পড়ছে না তাহলে বিরক্তিটা ঠিক কোন কারণে?নাকি ওর মুখটাই এমন!একবার কি জিগ্যেস করা উচিত।না থাক যেচে জিগ্যেস করতে গেলে পরে গায়ে পড়া ভাববে।কেনো জানি ফার্স্ট ইম্প্রেশনেই কোনো মেয়ের যদি কোনো ছেলেকে অসভ্য,বেয়াদব মনে হয় তাহলে সারাজীবন তপস্যা করেও সেই মেয়েটির কাছে ছেলেটি ভালো হতে পারে না।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা চলে এসেছে শিরিন আপুর বাবার বাড়ি।রুশান ভাড়া মিটিয়ে ভেতরের দিকে হাঁটা ধরলো।পিছনে পিছনে মৌ ও আসছে।বাড়ির গেট একবারে খোলা।দুতলা ইংরেজি ‘এল’ আকৃতির গোলাপী রঙের বাড়ি।সামনে ছোটোখাটো একটা ফুলের বাগান আছে।ভেতরে যেতে যেতে এতটুকুই ঠাহর হলো মৌ এর।একতলার একটা ফ্ল্যাটের সামনে রুশান দাঁড়িয়ে পড়লো।দরজার পাশের কলিং বেল বাজানোর কিছুক্ষণ পরই একটা মেয়ে দরজা খুলে দিলো।রুশান মেয়েটাকে দেখে সহাস্যে বলল,’কি খবর বেয়াইন সাহেব?’

‘এই তো ভালো বেয়াই সাহেব।’
মেয়েটা কথা শেষ করতে না করতেই মধ্যবয়সী এক মহিলা এসে বলল,’এসো ভেতরে এসো।’
রুশান বলার আগেই ভেতরে চলে গেছে তারপর আয়েশ করে একটা সোফায় বসে পড়েছে। আর মৌ সঙ্কোচে ধীর পায়ে ভেতরে আসলো।রুশানের সাথে কথা বলা মেয়েটা মৌ কে দেখে বলল,’তুমিই মাহমুদা আন্টির মেয়ে?জানো তো আমরা সমবয়সী।আমিও এবার এডমিশন পরীক্ষা দিবো।’
মৌ সৌজন্যমূলক একটু হাসলো।আসলে মৌ মেয়েটার চেয়ে একবছরের বড় ও গতবার ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছে।তারপর ওই রাক্ষুসে ফ্যামিলি আর রাশেদের অত্যাচারে আর পড়তে পারে নি।ভেবেছিলো পড়া বোধহয় শেষ।না নিয়তি আরেকবার সুযোগ দিয়েছে ওকে।

মেয়েটা বকবক করতে করতেই ওকে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসালো।তারপর হেসে রুশানকে বলল,’আজকে কিন্তু থাকতে হবে বেয়াই সাহেব।’

‘না বেয়াইন সাহেবা আজকে কাজ আছে।আমি একটু পরই চলে যাবো।’

‘তা হচ্ছে না।’
এটা বলতে বলতেই মেয়েটা ভেতরে চলে গেলো।এই রুমে এখন মৌ আর রুশান বসে আছে তাও একবারে মুখোমুখি সোফায়।তাই মাঝেমধ্যেই না চাইতেও চোখাচোখি হচ্ছে আর দুজনই চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।এই চোখাচোখি চলতে চলতেই সিনথিয়া খালা নাস্তা নিয়ে চলে এসেছে।আর ওনার পেছনে ওই মেয়েটা জুসের ট্রে নিয়ে এসে হাজির।রুশান বিনীত ভঙ্গিতে বলল,’এতো কিছুর দরকার ছিলো না কিন্তু মাওই।’

‘আরে না বাবা।তুমি তো আসোই না।তাও আজকে এতোদিন পর এলে।আজ কিন্তু থাকতে হবে।’

‘না মাওই।আজ না।আজকে জরুরি কাজ আছে।অন্য একদিন থাকবো।’

সিনথিয়া খালা মন খারাপের গলায় বললেন,’তুমি সবসময়ই বাহানা দিয়ে চলে যাও।’

রুশান একটু লজ্জমিশ্রিত হাসি দিলো।এটা সত্যিই।এই বাড়িতে আরো কয়েকবার আসা হলেও থাকা হয় নি।নানারকম ছুতোয় কেটে পড়েছিলো।নাস্তা খেতে খেতে কিছুক্ষণ গল্প করে চলে যাওয়ার জন্য উঠতেই শিরিনের বোন শারমিন টেনে টেনে বলল,’থেকে গেলেই পারতেন।’
রুশান বলতেই যাচ্ছিলো অন্য একদিন থাকবে কিন্তু মৌ এর মুখটা দেখে মত পাল্টা বলল,’আচ্ছা ঠিকাছে এতো করে যখন বললেন তখন থাকতেই হয়।’
রুশানের কথা শুন শারমিন খুশী হয়ে বলল,’যাক এতোদিন বেয়াই সাহেব কথা শুনলো।’
আর এদিকে রুশানের না থাকার কথা শুনে মৌ যতোটা খুশী হয়েছিলো তার চেয়ে বেশি দুঃখী হয়েছে এখন।না থাকলেই পারতো সয়তান টা।ধ্যাত!

মৌ এর একশো ওয়াট বাল্বের মতো জ্বলে ওঠা মুখটা টুপ করে শূন্য ওয়াটে নেমে আসতে দেখে রুশানের ভিষণ আনন্দ হচ্ছে।তবে অদ্ভুত কারণেই মেয়েটাকে জ্বালিয়ে রুশানের মজা লাগছে।

শারমিন মৌ’কে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো।ওর হাত থেকে ব্যাগটা বিছানার ওপর রেখে বলল,’এটা আমার ঘর।আমরা এখানেই থাকবো একসঙ্গে।অনেক মজা হবে।’

মৌ কিছু বলল না।সে ঘুরে ঘুরে ঘর দেখতে ব্যস্ত।বেশ ছিমছাম আর পরিপাটি ঘর।উত্তরে একটা জানালা আছে।ওখান দিয়ে খোলা মাঠ দেখা যায়।শারমিন মৌ’কে ড্রইং রুমে আসতে বলে চলে গেলো।এই মেয়েটা প্রচুর মিশুকে!মাত্র কিছুক্ষণের মধ্যেই এতোটা ফ্রী হয়ে কথা বলছে। মৌ হলে কখনোই পারতো না।বেশ ইন্ট্রোভার্ট টাইপের সে।

বেশ খানিকক্ষণ পর মৌ ড্রইং রুমে গেলো।শারমিন ওকে দেখে বলল,’এতো দেরি তে এলে তুমি!আসো বসো।’
মৌ কে নিজের পাশে বসতে বলে সে আবারও বকবক শুরু করলো।আলোচনার সারবস্তু হলো কোনো মুভির কাহিনি।মৌ জীবনে বোধহয় দুইবার না তিনবার তাও অল্প একটু করে দেখেছে মুভির।প্রথম বার রাস্তায় চায়ের দোকানের এরপরে কলেজে একদিব বান্ধবীর ফোনে।এইতো এরপর আর মনে পড়ছে না।তাই মৌ এর এই আলোচনা ইন্টারেস্টিং লাগছে না।প্রচন্ড বোর হচ্ছে সে।
কিছুক্ষণ বসে মৌ পাশ থেকে উঠে দাড়াতেই শারমিন বলল,’কি হলো?’

‘কিছু না।আমি একটু রান্নাঘরে যাবো।আন্টির সাথে একটু কথা বলে আসি।’

‘আচ্ছা যাও।’
যাওয়ার সময় মৌ এর চোখ রুশানের দিকে পড়তেই দেখলো সেও ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মৌ চোখ ফিরিয়ে মনে মনে বলল,’আপদ!’

দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় শারমিন হঠাৎ বলে উঠলো,’বেয়াই সাহেব আজ তো আপনি থাকছেন তাই না!চলুন আমরা চারজান কোথাও ঘুরে আসি।’

‘হ্যাঁ যাওয়া যায়।’রুশান খেতে খেতেই বলল।

‘না না বাবা তোমরা তিনজন যাও ঘুরে আসো।আমি যাবো না।’সিনথিয়া বেগম আপত্তি করে বসলেন।

‘কেনো মা?’শারমিন মন খারাপ করে বলল।

‘খালি বাড়ি রেখে যেতে মন চায় না।তোরা যা।তোদের মতো বয়সে আমি কতো ঘুরে বেড়িয়েছি।এখন আর মন চায় না।’

মায়ের না যাওয়ার কথা শুনে শারমিন একটু মন খারাপ করলেও তাতে তার উৎসাহের বিন্দু মাত্র ভাঁটা পড়লো না।সে অতিউৎসাহে বলল,’আচ্ছা তাহলে আধঘন্টা পরই আমরা বের হবো।’

রুশান বলল,’ডান।’
————-
বান্ধবীর সাথে শপিং মলে ঘুরতে ঘুরতেই ভুলবশত একজনের সাথে ধাক্কা খেতেই ইফরা সরি বলার জন্য ঘুরে দাড়ালো কিন্তু সরি বলতে পারো না।কারণ সামনের মানুষটা আহাদ।ওর সাথে একটা মেয়ে দাড়ানো।ওর গার্লফ্রেন্ড।ইফরা মেয়েটাকে চেনে।চোখমুখ শক্ত করে ইফরা চলে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই আহাদ ওর হাত ধরে ফেললো।তারপর বলল,’একটু দাড়াও কথা আছে।’

‘হাউ ডেয়ার ইউ টাচ মি!’ভারী শক্ত গলায় বলল ইফরা।আহাদ হাতটা ছেড়ে দিয়ে ওর গার্লফ্রেন্ডকে বলল,’একটু সামনে যাও।আমি আসছি।’

মেয়েটা একবার ইফরার দিকে রুক্ষ দৃষ্টিতে চেয়ে কিছুটা সামনে গিয়ে দাড়ালো।আমিও আমার বান্ধবীকে একটু সাইডে যেতে বললাম।আহাদ কিছুক্ষণ ইতস্তত করতে করতে বলল,’তুমি নাকি বিয়ে করছো?’

‘হ্যাঁ।তোমার কোনো সমস্যা?’ইফরা তিক্ত গলায় বলল।

‘না সমস্যা না।ছেলেটা কে?’

‘সেটা জেনে তুমি কি করবে?’

‘না এমনিই।উইশ ইউ হ্যাপি ম্যারিড লাইফ।’

‘কথা শেষ।’

‘হ্যাঁ।’

‘ওকে।নাও বাই।’
এটা বলে ঘুরে হাটা ধরলো ইফরা।
————–
শারমিন ভারী মেকাপ করতেই একঘন্টা লাগিয়েছে।যেনো সে কোথাও বিয়ে খেতে যাচ্ছে।নিজের মেকাপ করা শেষ হতেই মৌ’কে বলল,’তুমি মেকাপ করবে?’

‘না।আমি মেকাপ দেই না।’

‘আচ্ছা তাহলে চলো বের হই।বেয়াই সাহেব অপেক্ষা করছে।’

রুশান শারমিনকে দেখেই মনে মনে একটা নাক ছিটকানি দিলো।কারণ ওর মেকাপ পছন্দ না।ন্যাচারাল বিউটিই সুন্দর।তবুও বেয়াইন বলে কথা বেয়াই সাহেব একটু প্রশংসা না করলে চলে?তাই রুশান একটু প্রশংসা করে দিলো।

বাসা থেকে তিনজন একসাথেই বের হলো।মৌ একটু পেছনে আর ওর দুজন সামনে কথা বলতে বলতে হাটছে।হঠাৎ হাটতে হাটতেই রুশান অসাবধানে ছাগলের হাগু এর মধ্যে পা দিয়ে ফেলসে।তাই দেখে মৌ আর শারমিনের হাসতে হাসতে অবস্থা শেষ।আর এদিকে রুশান ক্রুর চোখে মৌ এর দিকে তাকিয়ে আছে।

চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

একটি প্রেমাচ্ছন্ন বিকেল পর্ব-০৪

0

#একটি_প্রেমাচ্ছন্ন_বিকেল
#পর্বঃ০৪
#Arshi_Ayat

‘কেমন আছেন?’

‘ভালো না থাকলে দেখা করতে আসতাম না অবশ্যই।’

‘হ্যাঁ তা তো অবশ্যই।কি খাবেন?’

‘একটা কোল্ড কফি ব্যাস।’

রুমান ওয়েটারকে ডেকে একটা পেপসি আর একটা কোল্ড কফির অর্ডার দিলো।ওয়েটার চলে যেতেই রুমান ভণিতা না করে সরাসরিই বলল,’আমি আপনাকে পছন্দ করি।বিয়ে করতে চাই।’

‘শুনেছি মা বলেছে।’

‘আপনার কি এই সম্পর্কে কিছু বলার আছে?’

‘আপনি দেখতে বেশ ভালো।ভালো চাকরি করেন।না পছন্দ হওয়ার কারণ নেই কিন্তু আমার সমস্যা অন্য জায়গায়।’
ইফরা কথ শেষ করার আগেই ওয়েটার এসে অর্ডারকৃত খাবার দিয়ে গেলো।তাতে অবশ্য কথা বলায় ব্যাঘাত ঘটে নি।ইফরা দিব্যি বলেছে।আগে অবশ্য বলতে পারতো না এমন দিব্যি কথাবার্তা।চেহারায় লজ্জা লজ্জা একটা ভাব ছিলো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ভাবটা উবে যাচ্ছে দিনদিন।মাঝেমধ্যে ইফরা ভাবে কেনো এমন হচ্ছে!ছ্যাঁকা খেলে কি এমন হয়!

রুমান পেপসিতে একটা চুমুক দিয়ে বলল,’যেমন?কি সমস্যা?’

‘আমার অতীত।বোধহয় আমার অতীত জানলে আপনিই নিজেই আমাকে রিজেক্ট করবেন।’

রুমান বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই পেপসিতে আরেকটা চুমুক দিয়ে বলল,’আপনার অতীত আমি জানি।আপনার মা বলেছেন।আমার আপনার অতীত নিয়ে আপত্তি নেই।’

ইফরা একটু চমকালো।কারণ এর আগে সবাই ওকে অতীতের জন্যই রিজেক্ট করেছে কিন্তু এই ছেলেটা ব্যাতিক্রম।তবে হুট করে যাকে তাকে বিশ্বাস করে ফেলার মতো বোকামি ইফরা আর ইহকালে করবে না।তাই সে বলল,’আচ্ছা কিন্তু হুট করে আমি কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারবো না।আমার ভাবতে হবে।’

‘অবশ্যই।আমি অপেক্ষা করবো।’

ইফরা নিজের ঘড়িতে সময়টা দেখে বলল,’এবার উঠি তাহলে।’

‘আচ্ছা তবে যদি কিছু মনে না করেন আপনার নাম্বারটা পেতে পারি?’

ইফরা হাসলো।তারপর বলল,’মা এতো কিছু বলেছে অথচ নাম্বারটা দেয় নি!’

‘চেয়েছিলো কিন্তু আমি নেই নি।আপনার থেকে নেবো বলে।’

ইফরা মৃদু হাসির রেখে টেনে নিজের নাম্বারটা একটা টিস্যুর মধ্যে লিখে দিয়ে বলল,’ফোন দিলে রাত এগারোটা পর ফোন দিবেন।এর আগে আমি পড়াশোনা করি।ফোন বন্ধ থাকে।’

‘আচ্ছা।’
তারপর রুমান ইফরাকে রিকশায় তুলে দিয়ে বলল,’ভালো থাকবেন পারু।’

ইফরা চলন্ত রিকশাটা থামিয়ে বলল,’আমার নাম শাহনেওয়াজ পারুল ইফরা।আমাকে ইফরা ডাকবেন।পারু ডাকবেন না।ভালো লাগে না আমার।’

‘আচ্ছা ডাকবো না।’

‘এবার তাহলে আবার বলুন।’

‘কি?’

‘ওই যে রিকশায় তুলে যা বললেন।’

‘ভালো থাকবেন ইফরা।’

‘আপনিও ভালো থাকবেন রুমান।’
তারপর রিকশা চলতে শুরু করলো আপন গতিতে।পেছনে রুমান দাড়িয়ে আছে চেয়ে আছে রিকশার দিকে।ভাবছে হয়তো ইফরা পেছনে তাকাবে কিন্তু না তাকায় নি।
—————–
রুহান কারখানা থেকে মাত্রই ফিরলো।আজকে প্রচুর কাজের চাপ ছিলো।ড্রইং রুমের সোফায় এসে বসতেই শিহান দৌড়ে এসে বাবার কোলে উঠে বলল,’বাবা জানো আজ কে এসেছে?’

রুহান আদুরে কন্ঠে বলল,’কে এসেছে বাবু?’

‘হাগু আন্টি এসেছে।’এটা বলেই রুহান খিলখিলিয়ে হাসা শুরু করলো।পেছন থেকে শিরিন লেবুর শরবত নিয়ে এসে টেবিলে রেখে বললেন,’শিহান এগুলো কি কথা? কে বলেছে এই কথা তোমাকে?’

‘ছোট চাচ্চু বলেছে মা।’

‘না বাবা উনি তোমার মৌ খালামণি হয়।তুমি চোট চাচ্চুর কথা শুনিও না।’

‘আচ্ছা।’বলেই শিহান বাবার কোল থেকে নেমে দাদির রুমে চলে গেলো।শিহান চলে যেতেই শিরিন বলল,’আজ বড্ড ক্লান্ত লাগছে তোমায়।’

‘হ্যাঁ আজ প্রচুর কাজের চাপ ছিলো।নিঃশ্বাস ফেলারও সময় ছিলো না।’

‘আচ্ছা শরবতটা খাও।তারপর ফ্রেশ হয়ে আসো খাবার দিচ্ছি।’

‘রুমান,রুশান ওরা কোথায়?’

‘রুমান কার সাথে যেনো দেখা করতে গেছে।আর রুশান টিউশনিতে গেছে।’

‘ওহ!আচ্ছা আজকে কে এসেছে শিহান বলল যে।’

‘ওই তো আমার এক খালামণির মেয়ে এসেছে।এখান থেকে এডমিশন পরীক্ষা দেবে।আসলে মা এমন করে বলছিলো যে না করতে পারি নি।’

রুহান কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলল,’উনি ওনার বাসায় নিয়ে রাখতে পারেন না?আমাদের ঘাড়ে কেনো?’
শিরিন প্রত্যুত্তরে কিছু বলল না।খাবার বাড়তে চলে গেলো।রুহান হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে এসে বসলো।তারপর ভাত খেতে খেতে বলল,’দেখো যেনো বেশিদিন না থাকে।’

‘আচ্ছা।’

রুমান ঘরে ফিরলো রাত নয়টায়।রুমানকে দেখে শিরিন বলল,’তা দেখা হলো দেবর সাহেব?’

‘হ্যাঁ ভাবি হলো।’

‘তাহলে এবার তো বলো!’

‘এখনো বলার মতো কিছু হয় নি ভাবি হলে বলবো।’

শিরিন হতাশ গলায় বলল,’আচ্ছা।’

রুমান নিজের ঘরে চলে গেলো।আজ সে খাবে না।বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে।আর রুশান এগারোটার সময় খাবে।ওরটা ওকে ঘরে বেড়ে নিয়ে দিয়ে আসতে হবে।
——————
ভাত খেয়ে আরো কিছুক্ষণ পড়লো রুশান।পড়া নিয়ে সিরিয়াস না হলেও এখন পড়তে হচ্ছে অনেক কারণ সামনে ইন্জিনিয়ারিং ফাইনাল পরীক্ষা।একটানা পড়তে আর কতক্ষণ ভালো লাগে তাই সে বই বন্ধ করে ছাদে গেলো।এক কাপ চা হলে মন্দ হতো না।কিন্তু এত রাতে বানাতে আলসি লাগছে।তাই চা ছাড়াই ছাদে চলে গেলো।ওদের ছাদে রেলিং নেই।রুশান ছাদের বাইরে দু’পা ঝুলিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।তবে আজ চারপাশে আলো নেই ঘুটঘুটে অন্ধকার।আজ অমাবস্যা।কোনো এক বিচিত্র কারণে রুশানের পূর্ণিমা নয় অমাবস্যা ভালো লাগে।

রুমান ফোন নিয়ে ইতস্তত করছে ফোন করবে নাকি করবে না।এখন তো রাত সাড়ে বারোটা বাজে।ঘুমিয়ে পড়লো না কি!প্রচুর ইতস্তত হওয়া স্বত্বেও রুমান ফোন করলো।ওপাশ থেকে খুব স্বাভাবিক গলায়ই ইফরা বলল,’আর দশমিনিট পর ফোন দিলে হয়তো কথা বলতে পারতেন না।আমি ঘুমিয়ে পড়তাম।’

‘যাক ভাগ্য ভালো বলতে গেলে।’রুমান ইষৎ হেসে বলল।

‘ভালোও আবার কিছুটা মন্দও কারণ ঠিক দশমিনিট পর আর কথা বলতে পারবো না।কারণ আমি ঘুমাবো।’

‘সমস্যা নেই।দশমিনিটেই হবে।’

‘বাহ!ভালো।তাহলে শুরু করুন।’

‘কি শুরু করবো?’

‘যা বলার জন্য ফোন দিয়েছেন তা।’

রুমান বলার জন্য বিশেষ কিছু খুঁজে পেলো না।সে তো এমনিই ফোন দিয়েছে।শুধু একটু কথা বলার জন্য।রুমানকে চুপ থাকতে দেখে ইফরা বলল,’চুপ কেনো?’

‘না আসলে এমনিই।’

‘আচ্ছা তাহলে আমি বলি?’

‘বলুন।’

‘আপনার আগে প্রেম ছিলো?’

‘হ্যাঁ ছিলো।’

‘কয়টা ছিলো?’

‘দুইটা।ক্লাস টেনে থাকতে একটা করেছি।পরে মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সেটার ইতি ঘটে।তারপর অনার্সে উঠে।’

‘অনার্সের প্রেমটার ইতি ঘটলো কেনো?’

‘তারও বিয়ে হয়ে গেছে।’এটা বলেই রুমান হাসলো।

‘ও আচ্ছা।তাহলে এবার রাখি।আপনার দশমিনিট শেষ।শুভ রাত্রি।’

রুমান একটু হতাশ হয়ে বলল,’শুভ রাত্রি।’
ফোন রাখার পর ঘড়ির দিকে তাকাতেই রুমান আবিষ্কার করলো দশ মিনিট হতে আরো তিন মিনিট বাকি।সে চাইলো ইফরাকে আবার কল দিতে কিন্তু কল দিলে সে রিসিভ করতে করতে তিন মিনিট শেষ হয়ে যাবে।আর কথা বলাও যাবে না।তাই বেচারা আর কল দিলো না।
—————-
মৌ চুল আঁচড়াচ্ছিলো।একটু পরই বের হবে শিরিন আপুর আম্মুর সাথে দেখা করতে মানে ওর আম্মুর খালাতো বোনের সাথে।তাও ওকে দিয়ে আসতে যাবে রুশান।এটা নিয়েই বিরক্ত মৌ।সে রুশানকে দেখতে পারে না।প্রচুর অসভ্য ছেলেটা।কিন্তু মুখটা এমন করে রাখে যেনো ভাজা মাছটা উল্টাতে পারে না।কিন্তু পেটে পেটে প্রচুর শয়তানি।মৌ বিনুনিটা করে চিরুনিটা রাখতেই শিহান দৌড়ে ঘরে এসে বলল,’হাগু খালামণি আম্মু তোমায় নাস্তা খেতে ডাকে।’

মৌ অবাক হয়ে শিহানের দিকে চেয়ে বলল,’হাগু খালামণি কে?’

‘তুমি।ছোটচাচ্চু বলেছে।’

রাগটা যেনো চড়চড় করে মাথায় উঠে গেলো মৌ এর।কি সব বলেছে বাচ্চাটাকে।এখন ছেলেটাকে চড় দিয়ে বত্রিশটা দাঁত খুলতে ফেলতে ইচ্ছে করছে।মৌ এর রাগটা আরো একধাপ বাড়িয়ে দিয়ে শিহান বলল,’জানো ছোটচাচ্চু সবাইকে বলেছে তোমার নাম হাগু খালামণি।’

এটা বলেই শিহান চলে গেলো।মৌ এর এখন কান্না পাচ্ছে।আসলেই লোকটা অসভ্য,বেয়াদব,ইতর।

আদতে রুশান সবাইকে বলে নি সে শুধু শিরিনকে আর শিহানকে বলেছে তবে সবাইকে বলার দায়িত্বটা শিহান নিজের কাঁধেই নিয়েছে।

চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

একটি প্রেমাচ্ছন্ন বিকেল পর্ব-০৩

0

#একটি_প্রেমাচ্ছন্ন_বিকেল
#পর্বঃ০৩
#Arshi_Ayat

মৌ কে ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিয়ে রুশান বগির দরজার সামনে দাড়িয়ে ইচ্ছে মতো হাসছে।এতক্ষণ প্রায় হাসি চেপে রাখতে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।আর এদিকে মৌ এর লজ্জায় মাথাকাটা যাচ্ছে।কি বলতে কি বলে ফেললো।মুখ ফসকে কি এটাই বের হওয়ার ছিলো!ছি!ছেলেটা কি ভাবলো!

হাসির বেগ কমে আসতেই রুশান বগিতে এসে বসলে প্রায় সাথে সাথেই মৌ ও এসে নিজের সীটে বসলো।কিন্তু রুশানের দিকে তাকালো না।বাইরে তাকিয়ে রইলো।সে আজ প্রতিজ্ঞা করেছে কোনো ভাবেই রুশানের দিকে তাকাবে না।রুশান প্রথম কয়েকবার তাকালেও এরপর আর তাকালো না।নিজের ফোন নিয়েই ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।

সারা রাস্তা আর কোনো কথা হয় নি।সিলেট স্টেশনে এস যখন ট্রেন থামলো তখন দেড়টা বাজে।রুশান মৌ’কে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে একটা হোটেলে ঢুকলো।তারপর দুই প্লেট কাচ্চি অর্ডার দিলো।একটু পরই দুই প্লেট কাচ্চি সামনে চলে এলো।রুশান হাত ধুয়ে খাওয় শুরু করলো।সংকোচ হওয়া স্বত্বেও মৌও খাওয়া শুরু করলো।রুশান আগে খাওয়া শেষ করে বিল দিয়ে একটু বসলো মৌ এর জন্য কারণ মৌ এর এখনো খাওয়া হয় নি।যেনো ওর অস্বস্তি নাহয় তাই ফোনে মনোযোগ দিলো।খাওয়া শেষে মৌ’কে নিয়ে মেইন রোডে এসে একটা রিকশা ঠিক করলো।প্রথমে ওকে উঠতে দিলো।মৌ রিকশায় উঠে মাঝখান দিয়ে নিজের ব্যাগটা রাখলো।তাই দেখলে রুশান ভ্রু কুঁচকে বলল,’পুরো রিকশায় যদি আপনি আর আপনার ব্যাগ বসেন তাহলে আমি বসবো কোথায়?কি মেয়ে রে বাবা!’

মৌ মুখ কালো করে ব্যাগটা কোলে নিয়ে নিলো চেপে বসলো।তারপর রুশান পাশে বসলো।এইটুকু রিকশার মধ্যে মৌ এমন ভাবে চেপে বসেছে যেনো একটু ঝক্কি খেলেই রাস্তায় পড়ে যাবে।রুশান বিরক্ত মুখে কয়েকবার ঠিক হয়ে বসতে বললেও মৌ আগের অবস্থাতেই রইলো।রিকশা চলতে চলতে হঠাৎ একটা ঝক্কি খেতেই মৌ পড়ে যেতে নিলো।রুশান পেছন থেকে ত্বরিতগতিতে মৌ এর দুইবাহু চেপে ধরলো।ঘটনার আকস্মিকতায় মৌ এর আত্মা শুকিয়ে গেছে।রুশান ওকে ধরে সীটে বসালো।তারপর রুষ্ট হয়ে বলল,’এইজন্যই বারবার বলেছিলাম ঠিক হয়ে বসুন।না আমার কথা শুনবেন কেনো?আপনার তো পড়ে গিয়ে ভর্তা হওয়ার ইচ্ছে ছিলো।এখন পড়ে গেলো পুরো ভর্তা হয়ে যেতেন।’

মৌ মিনমিনে গলায় বলল,’সরি।’

রুশান বিরক্ত মুখে একবার চাইলো।কিছু বলল না।বাসার সামনে এসে ভাড়া মিটিয়ে মৌ’কে নিয়ে ভেতরে গেলো।ড্রইং রুমে শিরিন আপু আর ওনার শ্বাশুড়ি বসে আছে।মৌ’কে দেখে শিরিন উঠে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,’আসতে কোনো অসুবিধা হয় নি তো?’

মৌ কিছু বলার আগেই রুশান বলল,’হবে কিভাবে?আমি আছি না!সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে তোমার বোন নিয়ে আসছি।’

‘মহৎ কার্যসাধন করিয়াছেন আপনি।এখন যান ঘরে যান আপনার বন্ধু আসিফ আর সিয়াম এসেছে।’

‘কখন আসলো ওর?’

‘একটু আগেই আসছে।তোর রুমে বসে আছে।’

‘আচ্ছা আমি রুমে যাচ্ছি।’
এটা বলেই রুশান নিজের রুমের দিকে যেতে যেতেও আবার ফিরে এলো।বলল,’দাড়াও এক মিনিট।তোমার থেকে আজকের আর ওইদিনের মিলিয়ে দুই হাজার টাকা পাই।আমার দুইহাজার দাও।’

‘আজকে হাতে টাকা নাই রে ভাই।তোর ভাইয়ের থেকে নিয়ে দিবো।’

‘তুমি সবসময়ই এমন করো ভাবি।দিবো বলে আর দাও না।’

‘আচ্ছা যা এবার দিবো।’

‘মনে থাকে যেনো।তোমার জামাইয়ের থেকে নিয়া দিবা কিন্তু।’

শিরিন হেসে বলল,’আচ্ছা।’
রুশান নিজের রুমে চলে গেলো।

রুশান যেতেই শিরিন মৌ’কে বলল,’যাও তুমি শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।তারপর খাবে।’

‘আপু আমি খেয়ে আসছি তো।রুশান ভাইয়া বিরিয়ানি খাইয়েছে।’

মৌ এর কথা শুনে শিরিন কিছু বলতে যাওয়ার আগেই শিরিনের শ্বাশুড়ি রুনা বেগম বললেন,’তো কি হয়েছে?আবার খাবে।যাও হাত মুখ ধূয়ে আসো।’

মধু মাথা নাড়িয়ে সন্তপর্ণে চলে গেলো শিরিনের দেখিয়ে দেওয়া ঘরে।একদম রুশানের পাশেরটাই ওর ঘর।ঘরে এসে ব্যাগটা গুছানো খাটের ওপর রেখে সেখান থেকে একটা থ্রি পিছ বের করে গোসল করতে চলে গেলো।
——————-
‘মা বললাম না আমি বিয়ে করবো না।তুমি তবুও আমায় জোর করছো কেনো?’পারুল প্রচন্ড বিরক্তির সহিত বলল।

‘দেখ মা ছেলে ভালো।ভালো চাকরি করে।স্বভাব চরিত্র ভালো।বংশও ভালো।তুই না করিস না।ভালো সম্বন্ধ পাওয়া মুশকিল আজকালের জামানায়।তাই ভালো সম্বন্ধ হাত ছাড়া করতে নেই।আর তোর বাবার শরীরের অবস্থাও ভালো না।কখন কি হয় বলা যায় না।তোদের দুইবোনকে বিয়ে দিয়ে তবে আমাদের মুক্তি।’

‘মা দেখো আমি নিজের খরচ নিজেই চালাই।আমাকে নিয়ে তোমাদের সমস্যা হওয়ার কথা না।অতএব মুক্তি কিন্তু তোমরা পাচ্ছোই।আর বিয়েটাই কেনো জীবনের সব হতে হবে?বিয়ে ছাড়া কি চলা যায় না?’

‘ইফরা!কেনো তুই বিয়ে করতে চাচ্ছিস না?দেখ জীবন কিন্তু কারো জন্য থেমে থাকে না।একজনের জন্য তুই সবাইকে খারাপ ভাবতে পারিস না।আহাদ খারাপ ছিলো বলে অন্যছেলেও খারাপ হবে সেটা তো বলা যায় না।’

‘খারপ যে হবে না সেটার কি গ্যারান্টি মা?’

‘তবুও তোর ভাগ্য তো সুপ্রসন্ন হতেও পারে।’

ইফরা তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বলল,’হলে তো অনেক আগেই হতো।আচ্ছা যাও ওই ছেলেকে আসতে বলো আমি দেখা করবো।’

আশা বেগম উৎফুল্ল হয়ে বললেন,’সত্যি?কখন আসতে বলবো?’

‘বিকেল ৫.০০ টায় বলে দিও।’

‘আচ্ছা।’
ইফরা কথা শেষ করে বেরিয়ে পড়লো।দু’টো টিউশনি শেষ করে ওই ছেলের সাথে দেখা করবে।

ড্রইং রুমে বসে শিরিন,মৌ আর শিরিনের শ্বাশুড়ি বসে বসে গল্প করছিলো।হঠাৎ রুমানকে বের হতে দেখে শিরিন বলল,’কোথায় যাও রুমান?’

রুমান হালকা হেসে বলল,’একজনের সাথে দেখা করতে যাই ভাবি?’

চশমা নাকের ডগা থেকে তুলে রুনা বেগম বললেন,’কার সাথে?’

‘এখন বলবো না।দেখা করে এসে বলবো।’রুমানের মুখে একটা মিষ্টি হাসির ঝলক দেখা গেলো।

রুমান কিছু না বললেও শিরিন বুঝে গেলো।কারণ আগের রাতে বেশিকিছু না বললেও একটা মেয়েকে ওর ভালো লাগে সেটা বলেছিলো।হয়তো তার সাথেই দেখা করতে যাচ্ছে।তবে শিরিন বুঝলেও রুনা বেগম বুঝলো না।গোয়েন্দাগিরির উদ্দেশ্যে আরো কিছু জিগ্যেস করতে নিলেই শিরিন থামিয়ে দিয়ে বলল,’থাক মা যেতে দিন।ও এসে বলুক।এখন বোধহয় ওর দেরি হচ্ছে।তাই না রুমান?’
এটা বলেই রুমানের দিকে দাত কেলিয়ে একটা হাসি দিলো।রুমান একটু লজ্জা পেয়ে বলল,’আসছি আমি।’
রুমান চলে যাওয়ার পর আবারও কথা বলা শুরু করলো।
কথা বলতে বলতেই শিরিন শুনতে পেলো ওর ফোন বাজছে।কিন্তু ফোন তো রুমে।শিরিন আড্ডা ছেড়ে উঠে চলে গেলো।শিরিন যাওয়ার দুই মিনিট পর রুনা বেগমও চলে গেলেন পান খাওয়ার জন্য।মৌ একাই ড্রইং রুমের সোফায় বসে রইলো।আচমকাই মৌ এর পাশের সৌফায় রুশান এসে বসলো।টি টেবিলে রাখা রিমোট দিয়ে টিভি চালালো।চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতেই শিহান এসে চাচার কোলে এসে বসে পড়লো।রুশান ভাতিজাকে আদর করলো।শিহান কৌতুহলী দৃষ্টিতে একবার মৌ এর দিকে তাকিয়ে চাচাকে জিগ্যেস করলো,’চাচ্চু এই মেয়েটা কে?’

রুশান ভাতিজার চুলে আঙুল চালাতে চালাতে কানে কানে বলল,’এটা হলো তোমার হাগু খালামনি।’

চাচার কথা শুনে শিহান হেসে দিলো।চাচা ভাতিজা দু’জনেই হাসলো।তারপর আবারও রুশান কানেকানে বলল,’শিহান এটা কিন্তু কাউকে বলবা ঠিক আছে?’

শিহান মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে আবারও চাচা ভাতিজা একযোগে হাসা শুরু করলো।আর এদিকে চাচা ভাতিজার এমন হাসির কারণ ভুঝতে না পেরে মৌ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে

চলেবে..
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)