Wednesday, July 9, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1403



প্রেম তুমি পর্ব-০১

0

#প্রেম_তুমি
#part:1
#Mishmi_muntaha_moon

ভার্সিটির সকলের দৃষ্টি বউ সাজে গেটের ভিতরে দৌড়ে আসা আয়রার উপর।
আয়রা সবাইকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।একেতো ঢাকার ভার্সিটি তার উপর একা,ভয়ে বুক জোরে ধকধক করছে।
আয়রার পুরো নাম—-আয়রা আফরোজ।ওদের বাড়ি গ্রামে।বিয়ে থেকে পালিয়ে ঢাকায় আসাতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে।তাছাড়া ছোট বেলা থেকেই চঞ্চলতা কম থাকায় কোনো কাজ একা করতে পারতো না সব কাজে ওর মা তুবা বেগম কে সাথে নিয়ে যেতো।কখনো একা ট্রাভেল ও করে নি।।তাই এখন একা খুব অসস্তিতে ভুগতে হচ্ছে।

আয়রা একহাতে লেহেঙ্গা সামলে আরেকহাতে কাধের ভারী ব্যাগটা ভালো করে কাধে নিয়ে আস্তে আস্তে এগোতে এগোতে আশেপাশে তাকাতে লাগলো।সর্বপ্রথমই চোখ গেলো একটা ফ্রেন্ড সার্কেলের উপর। ৩টা ছেলে আর দুটো মেয়ে বসে আছে।একটা ছেলে গিটার বাজাচ্ছে ও গান গাচ্ছে মুখটা দেখা যাচ্ছে না ভালো করে।তার পাশে থাকা ছেলে মেয়েগুলো ও তাল মিলাচ্ছে।আর উনাদের ঘিরে অনেকে দারিয়ে গান শুনছে।
আয়রা ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতেই দেখে গিটার হাতে ছেলেটা গিটার বাজানো বন্ধ করে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে আয়রা ভয়ে তারাতারি চোখ সরিয়ে সামনে এগোতে লাগে।

অর্নিল গিটার বাজাতে থামতেই রোহান ফারহা তুশার আর জেবাও চুপ করে যায়।আর ওর চোখ অনুসরণ করে তাকায় আয়রার দিকে।
আয়রা নিচে তাকিয়ে আস্তে করে হেটে যাচ্ছে।তখনই রোহান আয়রার দিকে তাকিয়ে বলল

–নিউ স্টুডেন্ট?

রোহানের কথা শুনে ফারহাও বলে উঠলো

–হয়তো?আগে তো দেখি নি।

ফারহা গোলা টা আরেকটু উচিয়ে বলল
—হেই লেহেঙ্গা ওয়ালি

এমন ভাবে ডাকায় আয়রা থেমে গিয়ে যেখানে অর্নিল আর ওর ফ্রেন্ড রা বসে ছিলো ওখানে তাকায়।আয়রা কে তাকাতে দেখে ফারহা আবার বলে

–ইয়েস ইউ।কাম।

আয়রা কিছুক্ষন আশেপাশে তাকিয়ে ওদের কাছে যায়।

–জ্বি আপু কিছু বলবেন?

আয়রা শান্ত চোখে সবাই দেখলো সবাই সুন্দর কিন্তু গিটার হাতে ছেলেটা একটু বেশিই কিউট আর হ্যান্ডসাম পুরো মাই ড্রিম বয় ধার্শান রাবাল এর মত।আয়রা এইসব চিন্তা বাদ দিয়ে চুপ হয়ে দারাল।ফারহা কিছুটা এটিটিউড নিয়ে বলল

–শোন আমরা সিনিয়র বুঝলে।আমরা যা বলব এখন তোমার তা-ই করতে হবে বুঝলে।

ফারহার কথার মাঝেই তুশার বলে উঠলো।

–ওয়েট তোরা সবাই চুপ যা আমি বলি কি করা যায় এর।এই মেয়ে তুমি আমাদের ডান্স দেখাও কাপল ডান্স এই ড্রেস এর সাথে নাচ টাই পারফেক্ট।আর একটা ছেলে তুমি নিজেই চুস করে নাও।আমাকেও চুস করতে পারো ক্রাশ গার্ল বলে কথা(দাত কেলিয়ে)

তুশার কথা শুনে আয়রা ঘাবড়ে যায়।এইটা আবার কেমন ধরনের র‍্যাগিং।আয়রা থতমত খেয়ে বলল

–দে,,দেখুন ভাইয়া আমি নতুন এসেছি।আপনারা একটু বলবেন প্রিন্সিপাল স্যারের রুমটা কোথায়।

ফারহা হুংকার দিয়ে বলল

–হেই ইডিয়ট বড়দের সাথে কথার বলার ম্যানার্স নেই।তুশার যা বলেছে তা করো চুপচাপ।

আয়রা ভয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আর আশেপাশে তাকাচ্ছে। ভীড় লেগে গেছে চারপাশে মনে হচ্ছে সার্কেস হচ্ছে।
আয়রাকে দারিয়ে থাকতে দেখে অর্নিল বসা থেকে উঠে আয়রার কাছে দারায়।তারপর আয়রার হাত ধরে ওর সাথে কাপল ডান্স করতে লাগে।
আয়রা অর্নিলের কাজে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মানে কি হুট করে এসে হাত ধরে নাচা শুরু করে দিলো এইটা কোন ধরনের কথা।অর্নিল আয়রার হাতটা ছেড়ে দূরে সরে দারাতেই আয়রা দৌড়ে ভীড় ঠেলে চলে যায়
মাঠ পেরিয়ে বিল্ডিং এ গিয়ে বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নেয় আর বলতে লাগে।

–আল্লাহ কি মারাত্মক ব্যাপার।আমাকে বলে ম্যানার্স নেই হাহ।উফফ এখানে এসে তো পরলাম কিন্তু যেই ভয়ানক মানুষজন কিভাবে কি করব(চিন্তিত হয়ে)

আয়রা নিজ মনে কথা বলে প্রিন্সিপালের রুম খুজতে লাগে।

অর্নিল যেখানে বসেছিলো সেখান থেকে গিটার নিয়ে যেতে নেয়।রোহানের কথা শুনে দারিয়ে পরে।

–হেই ব্রো কি?(চোখ টিপ দিয়ে)

অর্নিল ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে

–কি?এভাবে মেয়েদের মত চোখ কেনো টিপ দিচ্ছিস।ওয়েট আমি মেয়ে না ওকে মেয়েদের দে গিয়ে কাজে লাগবে।

ওদের কথার মাঝেই ফারহা রেগে বলল

–চুপ কর তোরা অর্নিল তুমি আগে বল ওই মেয়েটার সাথে নাচলে কেনো?(রেগে)

অর্নিল ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল

–মাই ইউশ।

–মানে কি আমার থেকে পারমিশন নিবে না আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড হই।

–হোয়াট রাবিশ।অর্নিল কারো পারমিশন নেয় না কোনো কাজ করার আগে ওকে।

অর্নিল গিটার নিয়ে চুল গুলোতে আঙুল বুলাতে বুলাতে চলে গেলো।

_

আয়রা ভারী লেহেঙ্গা নিয়ে হেটেই ওর বেস্ট ফ্রেন্ড রিমুদের বাড়ি পৌছালো।ওর জন্যই ঢাকায় আসার ভরসা পেয়েছে।ক্লাস ৫ এ ওর সাথে ফ্রেন্ডশিপ হয়েছিলো তারপর ১০ পর্যন্ত একসাথেই পরে কিন্তু কলেজে ঢাকায় এসে ভর্তি হয়।কিন্তু সবসময় যোগাযোগ ছিলো ওর সাথে।ভাবতে ভাবতেই ফোন বেজে উঠলো।আয়রা তারাতারি ফোন ব্যাগের পকেট থেকে বের করে কানে ধরে।

–হ্যালো রিমু?

–আরে হ্যা কোথায় তুই আমাদের বাড়ি চিনবি তো?নাকি আমি আসবো?

–না তার প্রয়োজন হবে না আমি তোদের বিল্ডিং এর নিচেই দারিয়ে আছি।কত নাম্বার ফ্লাট?

–আচ্ছা দাড়া আমি আসছি।

আয়রা কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে ফোন কেটে গেলো।আয়রা ফোন ব্যাগে রেখে আশেপাশে দেখতে লাগলো।ঢাকা শহরটা কেমন যেনো কোলাহলময়।বেশি একটা আসা হয় না ঢাকায় কেউ নেই ও আপন।আয়রার ভাবনার মধ্যেই রিমু এসে জরিয়ে ধরলো।

— আরে আস্তে।একেতো এই লেহেঙ্গা তার ওপর তোর ওয়েট আমিতো উল্টিয়ে পরবো!

রিমু ছেড়ে দিয়ে মাথা চুলকে বলল

— ওহ সরি।আচ্ছা দে ব্যাগটা আমার কাছে দে।

রিমু ব্যাগটা ওর কাধে নিয়ে আয়রার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো ওদের ফ্লেটে।

রুমে আসতেই আমি গা এলিয়ে দিলো আয়রা।।রিমুর রুমেই ওকে থাকতে দিয়েছে ও আর আয়রা একসাথেই থাকবে।আয়রা বিছানা থেকে উঠে ব্যাগ থেকে একটা থ্রি পিস বের করল চেঞ্জ করতে।রিমু রুমে এসে আয়রার সামনে এসে দারালো।

— আয়রা আন্টি কি সব জানে?

আয়রা রিমুর দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

— কি পালিয়ে আসার কথা নাকি তোদের বাসায় এসেছি এটা?

— দুটোই।

— নাহ জানে না কিছুই জানে না।আমার কাছে জোমানো কিছু টাকা ছিলো তা সাথে নিয়ে এসেছি।

আয়রা কিছুক্ষন চুপ থেকে রিমু হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আবারও বলল।

–তুই আমার একটা হেল্প করবি প্লিজ।

রিমু ব্রু কুচকে আয়রার দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল

— কি বল আমার হাতে থাকলে অবশ্যই করব।

আয়রা নিচে তাকিয়ে কিছুটা বিচলিত কন্ঠে বলল।

–আমাকে একটা জবের ব্যবস্থা করে দিতে পারবি।তোরা আমায় থাকতে দিয়েছিস এর জন্য আমার থাকার খরচটা না হলেও ভার্সিটির খরচ ফি তারপর আমারও তো কিছু হাতখরচ আছে তাই না।

রিমু একটু চুপ থেকে কিছু একটা ভেবে উচ্ছাসীত কন্ঠে বলল।

–ওহ হ্যা মনে পড়েছে আমার মামার সামনেই একটা ক্যাফ আছে তুই ওইটাতে ওয়েটারের কাজ টা করবি?

আয়রা রিমুর কথায় কিছু না ভেবে সাথে সাথেই বলল

–অবশ্যই।থেংক ইউ ওয়ান্স এগেইন।

–আরে থেংক ইউর কি আছে যা এখন তুই ড্রেস পালটিয়ে আস।তারপর লাঞ্চ করে নে।কত লেট হয়ে গেছে।

খাবারের কথা শুনে আয়রার ক্ষিদেটা আরও বেড়ে গেলো।তারাতারি ওয়াশরুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্চ করে নিলো।

_

লাঞ্চ শেষ করে রিমু আর আয়রা একসাথে খাটে বসে বিভিন্ন কথা বলছে।রিমু ঠোট উল্টে বলল।

–জানিস তোকে বলার জন্য কত কথা জমে আছে।

রিমুর কথা আয়রা হেসে দিলো তারপর ঠোট ভর্তি হাসি নিয়ে বলল।

–আচ্ছা একে একে সব বলিস আমি তো কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি না।

রিমু মনে পরার ভংগি করে বলল

–ওহ আচ্ছা ভালো কথা তুই ভর্তি হয়েছিস?আর সব ঠিকঠাক হয়েছে তো?

রিমুর কথা শুনে আয়রার মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো তারপর মনখারাপ করে বলল

–সব আবার ঠিকঠাক। এই ঢাকা শহরে কিছু ঠিকঠাক হতে পারে?একদমই না(গালে হাত দিয়ে)

–কেনো কি হয়েছে।

আয়রা সামনে থাকা চুল কানের পিছনে গুজে রিমুকে একে একে সব বলল।তারপর রিমুর দিকে তাকিয়ে দেখে রিমু মুখ হা করে তাকিয়ে আছে।আয়রা ব্রু কুচকে বক্তে লাগলো।

–কি এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো।

–আমি কি ঠিক শুনলাম।তুই অর্নিল আহমেদ বললি না।

–হ্যা আমি পাশের ভাইয়া আপু দের বলতে শুনেছি অর্নিল বলেছে।

–ইশ তোর বদলে আমি থাকলে তো লাইফ সেটিং হয়ে যেতো।জানিস তুই অর্নিল আহমেদ সিনিয়র ভাইয়া আর ফেমাস বয়।মাস্টার্স করছে।আর কিউট হ্যান্ডসাম হওয়ায় ছোট থেকে বড় সকলের ক্রাশ বয়।আর টিচারেরও ফেভারিট স্টুডেন্ট।তাছাড়া আরও অনেক ট্যালেন্ট আছে।উনাকে দেখলে আমার মাথায় একটাই প্রশ্ন আসে যে একটা মানুষ এতো অলরাউন্ডার কি করে হতে পারে?হাও?আমার ড্রিম বয়।কিন্তু আমি শুনেছি উনার গার্লফ্রেন্ডও আছে।

আয়রা এতোক্ষন গালে হাত দিয়ে রিমুর কথা শুনছিলো ওর কথা শেষ হতেই মুখ খুলল।

–ওহ এতো ফেমাস উনি আমি তো জানতামই না।আর সকলের ক্রাশ বয় উনি তাহলে অবশ্য গার্লফ্রেন্ড তো থাকবেই।

আয়রার কথায় রিমু মন খারাপ করে বলল

–হুম! হ্যা আর উনি খুব রাগী তাই সকলে ভয়ও পায়।কেউ যদি উনার কথার নড়চড় করে তাহলে তো রাগে ফায়ার হয়ে যায়।তাই আমিও কখনো কিছু বলার সাহস পাই নি।আর তাদের ফ্রেন্ড গুলোও খুব রুড।

আয়রা মন দিয়ে রিমুর সকল কথা শুনল তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল।

–ছেঃ এরকম জাতির ক্রাশের উপর ক্রাশ খাই এর থেকে তো ভালো নিমের রস খাই।(মুখ বাকিয়ে)

আয়রাকে এমন অন্যমনস্ক হতে দেখে রিমু আয়রার কাধ ধরে জোরে নাড়া দেয়।এভাবে নাড়া দেওয়ায় আয়রা ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে রিমুর দিকে তাকায় তারপর অবাক কন্ঠে বলে

–কি?

–তুই বল কি ভাবছিলি এমন অন্যমনস্ক হয়ে?

–না কিছু না।আজ কলেযে গেলি না কেনো?

রিমু ঠোঁট ভর্তি হাসি নিয়ে বলল

–তুই আসবি বলে।

–ওহ।

_

আয়রা সকাল ৬ টা বাজে ঘুম ভাঙ্গে।সারা রাত ঘুমাতে পারে নি নতুন জায়গা বলে তার উপর বাড়ির টেনশন হচ্ছিলো কে জানে কি ঝামেলা হয়েছে।
এপিঠ ওপিঠ করে একটু আগেই আয়রার ঘুম এসেছিলো আবার এখন ঘুম ভেঙে গেলো।আয়রা বিছানা থেকে উঠে বাথরুম থেকে মুখ ধুয়ে বিছানা থেকে ওরনা নিয়ে বারান্দায় যায়।বারান্দায় দারালে রাস্তা স্পষ্ট দেখা যায়।রাস্তার পাশেই রিমুদের থাকার বিল্ডিং।
আয়রা রাস্তায় তাকিয়ে আছে।৬টা বাজে এই ভোর সকালেই মানুষজন ভরা রাস্তা গাড়ি।বিভিন্ন মানুষ তাদের কর্মস্থলে যাচ্ছে।
আয়রার কেমন যেনো অস্থির লাগছে ওর মা বাবার কথা মনে পরছে।ওর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে ও এরকম কোনো কাজ করেছে।

আয়রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে রুমে গিয়ে দরজা খুলে বাহিরে গেলো।বাহিরে গিয়ে দেখে রিমুর মা রান্নাঘরে কাজ করছে।আয়রাও রান্নাঘরে গেলো।
রিমুর আম্মু আয়রাকে রান্নাঘরে দেখে মুচকি হেসে প্রশ্ন করল।

–তুমি এখানে কেনো?

আয়রা মুচকি হেসে বলল

–আপনার হেল্প করতে আসলাম।দিন আমি রুটি বেলে দেই।আমি পারি।

আয়রার কথায় রুশা বেগম হেসে বললেন

–ভালো এইসব টুকটাক কাজ পারা ভালো কিন্তু এখন এইসবের প্রয়োজন নেই আর আমার হয়েই গেছে যাও কলেজে যাবে না আবার রেডি হয়ে নাও।

আয়রা রুশা বেগমের কথায় মাথা দুলিয়ে রুমে চলে গেলো।তারপর রিমুকে ডাক দিয়ে উঠিয়ে দুজন রেডি হয়ে নিয়ে খেয়ে বেরিয়ে পরল।

_

আয়রা আর রিমু কথা বলতে বলতে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকছে আচমকা রিমুকে লাফিয়ে উঠাতে ভয় পেয়ে যায়।

–কি হলো?

আয়রার প্রশ্নে রিমু হাত দিয়ে গেটের বাইরে তাকাতে বলল।

–ওই দেখ অর্নিল ভাইয়া আসছে।ইশ ব্রাউন শার্টে কি কিউট লাগছে।

আয়রা রিমুর কথায় গেটের দিকে তাকাতেই অর্নিলকে চোখে পরল আসলেই খুব মারাত্মক কিউট লাগছে।আয়রা অর্নিলের দিকে তাকিয়ে আছে গেট দিয়ে ঢুকে এমন ভাবে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো যেনো কেউ নেই আশেপাশে।

–আজব এমন ভাব করল যেনো আমাকে কখনো দেখেই নি।(মনে মনে)

রিমুর ডাকে আয়রার ধ্যান ভাঙে।

–কোথায় হারালি চল ভিতরে চল।

আয়রা মাথা নারিয়ে রিমুর সাথে গেলো কিন্তু চোখ অর্নিলের উপর।একটা আপু উনাকে দেখে জরিয়ে ধরেছে হয়তো ওইটাই গার্লফ্রেন্ড।আয়রা সেখান থেকে চোখ ফিরিয়ে নিজের কাজে মন দিলো।

চলবে,,,

তুমিময় পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0

#গল্প-তুমিময়
#Aysha_khan
#লাস্ট পার্ট
মামীর পছন্দ করে নিয়ে আসা শপিংয়ে আমাকে সাজানো হলো লাল টুকটুকে বৌ দ্যা গ্রেট আদনানের বৌ। আয়নায় নিজেকে দেখছি আজ বাকরুদ্ধ আমি। নিজের সৌন্দর্যে নিজেই মুগ্ধ হচ্ছি। মনে হলো আদনান ভাইয়ের বৌ সেজেছি বলেই এত সুন্দর লাগছে আমাকে! আসলেই কি তাই না! আমার অবুঝ মনের ভাবনা এগুলো। হতে পারে প্রেমে পরলে মানুষ উল্টো পল্টাই ভাবে শুনেছি আমি। আমিও প্রেমের রোগী তাই উল্টো পালটাই ভাবছি আজ। ভেবে একা একাই হেসে উঠলাম! পিছন থেকে মাইশা পুচকে বল বসলো,

‘ দেখ দেখ নতুন বৌয়ের লজ্জা কম। কিভাবে হাসছে বাসর ঘরের কথা ভেবে! অথচ সকালেও আপু বিয়েতে রাজি ছিলো না! ‘

ছিঃ ছিঃ অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এতটুকু মেয়ের কথা শুনে দুই মামীর সামনে লজ্জায় মাথা কাঁটা যাচ্ছে। আর বাকি গুলো দাঁত কেলিয়ে হেসে যাচ্ছে। আমার তাতে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে! ঠোঁট কাঁটা কাজিনদের সামনে কেন হেসে দিলাম আমি! আমার অবস্থা দেখে ছোট মামী ঠোঁট টিপে হেসে পেছন থেকে মেয়ের কান মলে ধরে বললেন,

‘ অরে লজ্জা বসতী তোর খুব লজ্জা ছোট হয়ে বড় আপুর লেগ পুল করছিস তাও বাসর ঘর নিয়ে? ‘

এবার সবাই দ্বিগুণ জোরে হেসে উঠলো। মাইশা ছোট মামীকে দেখেনি উনি আচমকা রুমে ঢুকে মেয়ের কথা শুনে নিয়েছে। বেচারি মাইশা ফেসেছে কেলানি খাবে এবার। আমি শয়তানি হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে। এবার বুঝো মজা! মামী ধমক দিয়ে ওকে রুম থেকে বের করে দিলো। এবার একে একে সবাই বাহিরে চলে গেলো। আমার পাশে পিহু আপু বসে! আমি নিজেও বাহিরে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। সবাই তো এলো বাবা এলো না এখনও! কখন আসবে? চিন্তা হতে লাগলো রাত এখন ১১ টা। সারা দিন বিয়ের ছোট খাটো আয়োজন চলেছে আদনান ভাইকেও ঐ সকালের পর আর দেখিনি। মনটা নিশপিশ করছে বাবা না এলে আমি কিছুতেই বিয়ে করবোনা। এই পৃথিবীতে বাবা ছাড়া আর কে আছে আমার তাকে ছাড়া আমি কিছুতেই বিয়ে করতে পারিনা এভাবে। যদিও আদনান ভাই বলেছেন বাবা থাকবে বিয়েতে!

রাত ১২ টায় আমাকে আদনান ভাইকে একত্রে ড্রইং রুমের সাজানো গোছানো স্পেসে বসানো হলো পাশাপাশি। আমি হা করে দেখছিলাম তাকে। কালো পাঞ্জাবীতে পিন্সেস লাগছে কালো রাজ্যের রাজপুত্র যেন৷ আমি দ্রুত নজর ফিরিয়ে নিলাম কেও দেখেনিলে আবার লজ্জা। তবে আড়চোখে দেখেছি আদনান ভাই এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। এই লোকের লজ্জা কম সে সবি পারে ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। সবাই সেখানে উপস্থিত একজন কাজী সহ! শুধু নেই অভি ভাইয়া আর বাবা। সবাই এই সেই কাজে মসগুল! আমি বারবার দরজায় তাকাচ্ছি! সেটা লক্ষ্য করে আদনান ভাই আমার বাম হাত চেপে ধরলো। আমি চমকে তার দিকে তাকালাম মলিন মুখে। সে স্মিত হেসে বলল,

‘ বিউটিফুল বাবার আসতে আর ৫ মিনিট লাগবে! অভি তাকে নিতেই গেছে অভি জানিয়েছে আমাকে। চিন্তা করোনা! ‘

অনেকটা স্বস্তি ফিরে পেলাম। এবং অনেকটা অবাকও হলাম। মনে হলো আদনান ভাই আমার বাবাকে বাবা বলেই ডাকলেন। আমার হৃদয় জুড়ে শান্তির হাওয়া বয়ে গেলো। আমি হাল্কা হাসলাম। আদনান ভাই চোখ দিয়ে ইশারা করলেন সব ঠিক ঠাক হয়ে যাবে! কয়েক মূহুর্তে পর আদনান ভাই অনেকটা ফিসফিস করে বললেন,

‘ বিউটিফুল যদি জানতাম বৌ সাজে তোমাকে এত সুন্দর লাগবে আরও আগেই বিয়ে করে ফেলতাম! ইশ পুরো বাটার মিল্ক লাগছে তোমাকে ইচ্ছে করছে এখুনি খেয়ে ফেলি! আজ রাতে একদম শেষ করে দিবো তোমাকে…! ‘

আর বলতে দিলাম না তাকে। ধরফর করা বুক নিয়ে সব ভুলে উচ্চস্বরে বললাম,

‘ পিহু আপু আমি পানি খাবো গলা শুকিয়ে গেছে ! ‘

আমার কান গরম হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে ধোঁয়া বের হচ্ছে। গাল লাল হয়ে ঘাম ছুঁটে গেছে হাল্কা৷ মনে মনে ইয়া আল্লাহ ইয়া আল্লাহ করছি। বিয়ে করছি এক বেসরমকে! যদিও এই লোক এসব বলতে পারে আমার ধারণার বাহিরে ছিলো কখনও এমন করেনিত আগে। এদিকে আদনান ভাই দুষ্টু হাসি দিচ্ছেন। আমি উনার দিকে আর ভুলেও তাকালাম না। লজ্জায় একা একা পিষ্ঠ হচ্ছিলাম আর সে মজা নিচ্ছে। বাকি সময় তার পাশে দম ধরে বসে রইলাম। যেন শ্বাস ফেললেই লজ্জা! আদনান ভাই বাঁকা হাসলেন যখন পিহু আপু পানি নিয়ে এলেন আর আমি লজ্জায় সেটাও খেতে পারছিনা। গাঁ জ্বলে যাচ্ছে আজকের দিনেও একটু শান্তি পেলাম না বাদর একটা না একটা পিছনে পরেই আছে! ধূর আমার বিয়ে আমিই একটুও মজা করতে পারলাম না! আর সবাই দাঁত কেলিয়ে হেসে যাচ্ছে।

আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে ১০ মিনিট পর। অভি ভাইয়া আমার বাবা নানু বড় মা বড় বাবা সবাই বাসায় ঢুকলেন। ড্রইং রুমের সবাই দাঁড়িয়ে গেলো তো কেউ থমকে গেলো। আদনান ভাইকে একদম শান্ত এবং শীতল লাগছে যেন কিছুই হয়নি। মুখো ভাব দেখে বুঝার উপায় নেই কিছু। আমি দাঁড়াতে গেলে দিলেন না হাত ধরে রাখলেন শক্ত করে যেন ছেড়ে দিলে পালিয়ে যাবো! আমি নানু বাবাকে এক সাথে আমাদের সামনেই বসতে দেখে শক পেয়েছি পরমুহূর্তেই হু হু করে কেঁদে ভাসাতে লাগলাম। প্রান্ত, আশিক, অভি ভাইয়ারা তারা দিলেন। এবং সেই অবস্থায় বিয়ে পরানোর কাজ শুরু হলো। আমি বাবার দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদছি এক্টু পর যেন চোখ থেকে রক্ত বেরুবে। বাবা নিজেও কাঁদছে নানুর চোখ দেখে কোনও ভাব ভঙ্গিমা বুঝতে পারলাম না। দুঃখি না সুখী? তবে বাবা আমার কাঁন্না সহ্য করতে না পেরে আমার ডান পাশে বসলেন। আমি বাবার কাঁধে মাথা ফেলে কাঁদতে কাঁদতেই বিয়ে করলাম এক প্রকার।

বিয়ে পরানোর পর আমার অবস্থা কাহিল কেননা অনেক কেঁদেছি সারাদিনের ব্যাস্ততায় ক্লান্ত হয়ে শরীর ছেড়ে দিয়েছি। নিভু নিভু চোখে শুনতে পেলাম বাবা বলছে আমাকে নিরিবিলি রুমে শুইয়ে দিতে। কাজিনরা আমায় নিয়ে গেলো আদনান ভাইয়ের রুমে আমাকে বেডে শুওয়াতেই ঘুমিয়ে গেলাম আমি যেন কতদিন পর আজ শান্তির ঘুম এলো চোখ জুড়ে। তারপর কী হয়েছে কিছু মনে নেই।

সকালে ঘুম ভাঙতেই চোখ ডলতে ডলতে ঘুম থেকে উঠলাম। ধীরে ধীরে ঘুমের রেশ কাটতেই দেখলাম ঘর জুড়ে তাজা গোলাপ দিয়ে সাজানো আমি নিজেও গোলাপে ভর্তি বেডে শুইয়ে। সারা ঘর ময় গোলাপের গন্ধে মৌ মৌ করছে। এবার আস্তে-ধীরে মনে পরলো কাল আমার বিয়ে ছিলো৷ আর আমি ফাস্ট নাইট স্পোয়াল করে ঘুমিয়ে পরেছি। ‘থ’ মেরে কিছু ক্ষণ বসে থেকে হঠাৎ আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। আদনান ভাইয়ের কথা ভেবে হাসি পাচ্ছে খুব। বাসর রাতে বৌ ঘুমিয়েছে আর বেচারা বর নিশ্চয়ই মশা মেরেছে বসে বসে?

আমার হাসির শব্দে আদনান ভাই বারান্দা থেকে রুমে এলেন এলোমেলো চুল ব্ল্যাক টিশার্ট গায়ে সাথে ব্ল্যাক ট্রাউজার। আমি তাকে দেখেও হাসি থামাতে পারলাম না। আদনান ভাই রেগে গেলেন মনে হয়? সে ধাক্কা দিয়ে আমাকে শুইয়ে দিলেন বেডে এবং আমার উপর উঠে ঝুঁকে পরলেন আমার দিকে ভয়ে আমার হাসি থেমে গেলো এবার! এবার উনার মুখে হাসি ফুটে উঠলো! ভ্রু নাচিয়ে বলল,

‘ হোয়াট? এখন, এখন কী করবা? সুন্দর একটি রাত মাটি করেছো সারাজীবন কী করে মাটি করবা? ‘

আমি কিছু বলতে পারলাম না ভেংচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে নিতেই। আদনান ভাই শব্দ করে চুমু খেলেন আমার কপালে, গালে!কেঁপে উঠালাম আমি আদনান ভাইয়ের প্রথম স্পর্শ অন্যরকম অনুভূতি আমার জন্য চোখ বন্ধ হয়ে গেলো আমার। অতঃপর উনি বললেন,

‘ বিউটিফুল আমি তোমাকে কাল ছাড় দিয়েছি ছেড়ে দেইনি। আমি তো সারাজীবন পাবো আমার প্রেয়সীকে! কিন্তু তোমার সুস্থতা সবার আগে! ‘

আমি সন্তুষ্টির হাসি হেসে উনাকে জরিয়ে ধরলাম। আদনান ভাই আমাকে জানালেন নানু সকালে উনার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ফোন করে তার কাজের জন্য। এবং আমাদের মেনে নিয়েছেন। শেষ বসসে নাতির ভালোবাসা হারাতে চান না উনি। তাই আদনান ভাই আর উনাকে কিছু বলেননি। কেননা আমি সবাইকে নিয়েই বিয়ে করতে চেয়েছি তাই। তাই অভি ভাইয়া সব শুনে নানুকেও নিয়ে এসেছেন। সব শুনে আমি মুচকি হাসলাম। অবশ্যই যা হয় যেভাবে হয় সবি ভালোর জন্যেই!
৫ বছর পর…

হায়াদ আর আমি একটা এনজিও থেকে কাজ শেষে বাড়ি ফিরছি। আমি এখন একটা এনজিওর সাথে কাজ করছি। হায়াদ ও আমার সাথেই আছে তাছাড়া তাদের পারিবারিক বিজনেস তো আছেই ওর জন্য। তবে এনজিওর সাথে কাজ করে ও আমার মতোই শান্তি পায় তাই এটাকে বেশি প্রাধান্য দেয় বরাবরই। আজ আমার দ্রুত বের হচ্ছি আজ হায়াদ মেয়ে দেখতে যাবে। বেচারার বিয়ের বয়স হয়েছে। আমি গাড়িতে উঠে দুষ্টু কণ্ঠে বললাম,

‘ আমাদের পুরো কাজিন পরিবার প্রেমে পরে বিয়ে পরলো আর তুমি! ‘

বলেই হেসে দিলাম। তার পর হায়াদ যা বলল শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না,

‘ কে বলেছে আমি প্রেমে পরিনি? আমি তোমার প্রেমে পরেছিলাম! কিন্তু তুমি অন্যকারো প্রেমে….! কন্টাক্ট ম্যাচ হয়নি! ব্যাপার না আমরা বেষ্টফ্রেন্ড! এতেই আমি খুশি! প্লিজ আজকের এই কথার জন্য যেন আমাদের ফ্রেন্ডশিপটা নষ্ট না হয় অয়ত্রী! ‘

বোবা হয়ে রইলাম যেন। এতবছর হয়ে গেলো আমি কত বোকা আমি হায়াদের মন একদিন ও বুঝতে পারিনি নাকি বুঝতে দেওয়ায় হয়নি আমাকে? বাসার সামনে গাড়ি থামতেই বোবার মতো বাসায় ঢুকে গেলাম। হায়াদ ও যতারীতি চলে গেলো নিজ বাসায়। সে রোজা আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে যায়। আমি আজ চুপচাপ রইলাম সারাদিন বিকেলে মেয়ে দেখতে যাওয়ার কথা থাকলেও আমি আর গেলাম না। তাই আদনান নিজেও গেলো না। পিহু আপু প্রান্ত ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে আমার বিয়ের কিছু দিন পরেই তারাও যাবে আজ মেয়ে দেখতে। পুচকে মাইশা হলে থাকে তাই যেতে পারেনি। আহি তো ঐ বাড়িতেই আছে।

অভি ভাইয়া দেশের বাহিরে আছেন বিজনেস ট্রিপে। এই ব্যাক্তি এখনও বিয়ে করেননি তার ধারা প্রেম হয়ে উঠে না আর সে নাকি প্রেম ছাড়া বিয়ে করবেনা। আকাশ ভাইয়া এখনও প্রেম করছেন তার মতে এতো দ্রুত বিয়ে সে করবেনা অথচ সবাই বলে বিয়ের বয়স পেরিয়েছে তার! তবুও তার কথায় সে অটুট। সেও আজ মেয়ে দেখতে যাবে। সাথে দুবাড়ির বড়রা তো আছেই। এতলোক নিয়ে যাওয়ার একটাই কারণ পছন্দ হলে আজি বিয়ে করে মেয়ে তুলে নিয়ে আসা হবে। তবে সব ডিপেন্ড করে হায়াদের পছন্দের উপর। আর আজি এসব জেনে আমার মনে হলো আমার না যাওয়াটাই ব্যাটার।

ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। আমি কিছুটা বিভ্রান্তিতে পরে গিয়েছি আসলে হুট করেই হায়াদের লুকোনো অনুভূতির কথা যেনে। এটাই চুপচাপ হয়ে যাওয়ার কারণ। আর কিছুই নয় খারাপ ও লাগছেনা কে কাকে ভালোবাসবে এটাতে তো আর আমরা কাউকে বলে দিতে পারিনা। এসবে মানুষ স্বাধীন৷ তবে এও বুঝতে বাকি নেই কেন হায়াদের সাথে আদনান ভাই আমাকে দেখতে পারতেন না। আদনান নিশ্চয়ই ব্যাপার টা বুঝতেন। তবে সেটা বিয়ের আগে কিন্তু বিয়ের পর আদনান ভাই যখন যানতেন আমি শুধুই আদনান ভাইকে ভালোবাসি। তার পর কোনদিন আদনান ভাই আমার সাথে এসব বিষয়ে কথা পর্যন্ত বলেননি। কেননা সে জানে আমি তার। অতীতেও ভালোবাসা হারিয়ে যেতে পারে ভয়েই হয়তো রেগে যেতেন কোনও ছেলেকে আমার পাশে দেখলে। আমি এখন তার সিচুয়েশনটা বুঝতে পারলাম অনেকটা।

তবে আমার জীবনের এই পাঁচটা বছর স্বপ্নের মতো কেঁটেছে হাসি মজা হইচইপূর্ণ দিন ছিলো এক একটা৷ আমাদের কাজিন, বন্ধু মহল। সবাই আছি বেশ দুঃখ সুখ মিলিয়ে! আদনান ভাই বিয়ের আগে আমাকে যতটা আগলে রাখতেন এবং বন্দী ছিলাম বিয়ের পর ততটাই স্বাধীনতা দিলেন! আজ নিজের মতো কাজ করছি পড়াশোনা শেষ করেছি। যখন যা খুশি করি সে বলতেই রাজি। যদিও অযাচিত আমি কিছু চাইনা যা আদনান ভাইয়ের পছন্দ না।

আদনান ভাই নিজেও একেরপর এক বিজনেসে উন্নতি করে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনও সে তার দাদুর সাথে কথা বলেনা। কিন্তু নানু এখনও আগের মতোই আমার সাথে সুন্দর ব্যাবহার করেন। জানিনা এগুলা অভিনয় নাকি অন্যকিছু। আমি এতেই খুশি সবাই এক সাথে আছি যেমনটা আমি সর্বদা চেয়েছিলাম। এবং বাবাও এখন আমাদের সাথেই থাকেন ছোট চাচ্চু ভালোই আছেন সেও আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বহুবার আমার অতীতের জন্য আমি করে দিয়েছি। সুন্দর জীবনে কোন ঘৃণা রাখতে চাইনা আমি। মামা মামীরা সর্বদাই মেয়ে ভেবেছেন আমাকে এখনও তাই আছে। এবং আমি কিছুই হয়নি এর মতো নানুর সাথেও আগে যেমন ছিলাম এখনও তেমনি আছি! আমার বিশ্বাস একদিন আদনান ভাইও সব ভুলে তার দাদুর সাথে আগের মতো হয়ে যাবেন। সেই দিনের অপেক্ষায়। আদৃতা আপু শুনেছি বিয়ে করেছেন উনি এখন লন্ডনে সেটেল্ড ভালোই আছে আমাদের সাথে যোগাযোগ হয় সে নিজেই করে তবে আদনান ভাইয়ের সাথে নয় আমার সাথে শুধু!

দক্ষিনা বাতাস আমার খোলা চুল থেকে থেকে উঁড়ছে। তখন আদনান ভাই পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন আমাকে। ৫ বছরে আদনান ভাইয়ের ভালোবাসা যেন দিন দিন বেড়ে গিয়েছে আমার প্রতি সত্যি নিজেকে ভাগ্যবতী ভাবি আজকাল আমি। এতো ভালোবাসা জীবনে পাবো কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি। সব সম্ভব করেছে আদনান ভাই। আমি কিছু একটা ভেবে ঘুরে তার দিকে তাকিয়ে উচ্ছ্বাস ভরা কণ্ঠে বললাম,

‘ ঠোঁট কাটা হাসব্যান্ড আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে! ‘

আদনান আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,

‘ আমি বাবা হবো আগে কেন বললে না? ‘

যাহ কাকে আমি সারপ্রাইজ দিতে গেলাম? সে নিজেই আমাকে হতভম্ব করে দিলো। আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,

‘ আপনি কিভাবে জানলেন? আপনার জন্য সারপ্রাইজটাও দিতে পারলাম না হাসব্যান্ডকে! ‘

বলতে বলতে দেখলাম আদনান ভাই জ্বল জ্বল চোখে তাকিয়ে আমার দিকে। করুণ দৃষ্টি তার ! এবার আমি নরম হয়ে এলাম। আস্তে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। আদনান ভাই অতিরিক্ত খুশিতে কেঁদে ফেলেছেন। আমি নিজেও তো কেঁদে ফেলেছিলাম যখন প্রথম যেনেছিলাম। ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট নিউজ ছিলো এটা আমার জন্য আমি জানি আদনান ভাইয়ের জন্যেও তাই। আমাদের জীবনে নতুন এক অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে। আমি আদনান মা-বাবা হওয়ার সুখ পেতে চলেছি…. এ এক অন্যরকম অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না এটা অনন্য অসাধারণ ফিলিং!

আদনান ভাই খুশি কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে ফিসফিস করে বললেন,

‘ আমাদের একটা প্রিন্সেস হবে বিউটিফুল! ‘

তার কথা মেজাজ চটে গেলো। আমি ধাক্কা দিয়ে উনাকে সরিয়ে দিয়ে সরু চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘ কে দিলো এই নিউজ আপনাকে? আমার ছেলে হবে এক দম আপনার মতো! হুহ! ‘

আদনান ভাইও রেগে বলল,

‘ মেয়ে হবে আমার মেয়ে চাই ঠিক তোমার মতো! ‘

সে এটা বলতেই। ব্যাস লেগে গেলো আমাদের ঝগড়া। একদম বিশাল ঝগড়া। এক সময় দুজনেই হাপিয়ে উঠলাম। ছেলে হবে মেয়ে হবে বলতে বলতে আদনান ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

‘ আই লাভ ইউ অয়ত্রী! আমার সবটা জুড়ে তুমি। তাই তুমিময় একটা মেয়েই আমার চাই! ‘

আদনান ভাইয়ের ভালোবাসা আদর মাখা কণ্ঠে গলে গেলাম আমি আস্তে বললাম,

‘ আমাদের মেয়েই আসবে! ‘

সঙ্গে সঙ্গে আদনান ভাই বাঁকা হেসে বললেন,

‘ আমার বোকারানী! আমি জিতে গেছি!’

আমি ঠোঁট উল্টিয়ে গাল ফুলালাম। অতঃপর এক সময় দুজনেই হেসে উঠলাম! এভাবে কেটে যাক প্রতিটা ভালোবাসাময় একেকটা দিন রাত মাস বছর…।

আকাশ পাতাল নড়ে উঠুক,
ভালোবাসারা ভালো থাকুক,

সমাপ্ত!

তুমিময় পর্ব-১০

0

#গল্প-তুমিময়
#Aysha_khan
#পার্ট ১০
‘ সব ছেড়ে দিবো তুই আমার হয়ে যা প্লিজ! ‘

বারান্দার রেলিং উপর দু হাতের কুনুই ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আদনান ভাই। দৃষ্টি সামনে রেখেই কথাটা বললেন। স্বর টা ভাঙা লাগছে! আদনান ভাই কী কেঁদেছেন? হতভম্ব হয়ে তার মুখের দিকে তাকালাম। রোদ্দুরের ঝলমলে আলোয় তার ফর্সা মুখে পরে দ্বিগুণ রূপ বারিয়ে তুলেছে! কিন্তু চোখ দুটোতে দুঃখের ছড়াছড়ি! এই দুঃখ টুকু না থাকলে এই সুপুরুষকে আরও মারাত্মক লাগতো! যদিও এখন দুঃখি প্রেমিক রূপেও তাকে ঘায়েল করাই লাগছে। আচ্ছা আদনান ভাই আমার পছন্দের। ভালোবাসার মানুষ সেও আমাকে ভালোবাসে। খুব কি ক্ষতি হতো নানু এরূপ ভিলেন হয়ে আমার জীবনে না এলে? একটু যদি বুঝতো আমার দুজন দুজনকে অতিরিক্ত চাই। আমারা আমাদের দুঃখ সুখের উল্লাসে মেতে থাকতে চাই আজীবন? একটুকু বুঝ কেন আল্লাহ নানুকে দেননি। হয়তো এভাবেই ভালো তাই। আমি মেনে নিয়েছি আদনান ভাই মেনে নিতে পারছেন না। তবে যতই কষ্ট হোক আমি এভাবে বিয়ে করবোনা!

আমি একটু কথা ঘুরাতে বললাম,

‘ আদনান ভাই এভাবে আর ভালো লাগছেনা! খিদে পেয়েছে! ‘

আদনান ভাই সোজা হয়ে দাঁড়ালেন! ক্ষোভে ফেটে পরে বললেন,

‘ কেন আমার হৃদয় হরন করে চিবিয়ে খেয়ে পেট ভরেনি তোমার? ‘

আমি বিরক্তিকর চাহুনির সাথে বললাম,

‘ প্লিজ আগে ঠিক করুণ আমি আপনার তুই না তুমি? ‘

আদনান ভাই ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে বললেন,

‘ তুই আমার তুমি আমার তোমার সব আমার। সব তুমিময়! আমি যা খুশি যখন খুশি ডাকবো এবার চল বিয়ে করি! তারপর ফুটবল টিম তৈরী মিশনেও তো নামতে হবে নাকি? ‘

তার কথা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলাম। কিসব উল্টো পালটা কথা বলছেন আদনান ভাই ফুটবল টিম? সিরিয়াসলি! আমি দ্রুত রুমে ঢুকে যেতে যেতে বললাম,

‘ আপনি পাগল হয়ে গেছেন! ‘

উনি পাউডলি বলেন,

‘ হ্যাঁ বিউটিফুল তোমার প্রেমে! ‘

এই প্রেম এই প্রেম সব ধ্বংসের গোড়া। এই প্রেমে পড়া মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা সেই বানী আজ সত্যি বলতে সত্যি মনে হচ্ছে। যে ব্যাক্তি এই বানী লিখেছে তাকে মেডেল ছুঁড়ে দিতে ইচ্ছে করছে। এত সত্যি কথার বানী লিখে যাওয়ার জন্য! উফফ এই প্রেম জীবনটা এভাবে প্যারাময় করে তুলবে জানলে এই সুদর্শন কুপুরুষের প্রেমে কিছুতেই পরতাম না! কুপুরুষ বলার আমে উনি একটা কুফা। যতে থেকে আমার জীবনে এসেছে জীবন কুফা হয়ে উঠছে কপালে শুধু শনি ঘুরে।

রুমে ঢুকে দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। তানাহলে এই লোক আবার কী বলে ফেলে! আস্ত নির্লজ্জ। লাগ দুটো টুকটুকে লাল হয়ে গিয়েছে আদনান কখনও আমার সাথে এভাবে কথা বলেনি। সর্বদা রাগ ধমক আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে চিৎকার এসবেই সীমাবদ্ধ। সেই ছেলেটা আমাকে এত ভালোবাসে অবিশ্বাস্য! তবে সে ইচ্ছে করেও তো এমন কিছু করেননি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফ্রেশ হয়ে বের হওলাম। আদনান ভাই আমার বেডে শুয়ে ফোনে মত্ত্ব! বাইরে যে কাজিনরা সোরগোল শুরু করেছে স্পষ্ট বুঝতে পারছি রুম সাউন্ডপ্রুভ হওয়ার পরেও এদের গলায় কতজোর! কি জানি ফাজিল গুলো কি করছে বাহিরে? আমি রুমে থাকা বেডের পাশে কাউচে বসে বললাম,

‘ আমার খিদে পেয়েছে! ‘

আদনান ভাই তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়িয়ে আমার পাশ ঘেষে বসে পরলেন। ব্যাপারটা এত দ্রুত হলো। আমি নড়বার সময় পাইনি! আদনান ভাই উনার ডান হাত ঘুরিয়ে এনে আমার গালে রাখলেন। তার কাজে আমি হতভম্ব। সে বললেন,

‘ খাবার তো পাবেনা রোমান্স করতে পারো আমার সাথে এই বদ্ধ রুমে! ‘

আমার চোখ মার্বেলের ন্যায় বড় বড় বয়ে গেলো তার কথা শুনে! আমি লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম তার পাশ থেকে। দৌড়ে দরজার কাছে গিয়ে চিৎকার করে বললাম,

‘ পিহু আপু প্লিজ বাঁচাও! আদনান ভাই পাগল হয়ে গেছে! ‘

কেউ সারাশব্দ দিলোনা শুনেছে বলেও মনে হলোনা কেউ আমার কথা। আদনান ভাই হুট করে এসে আমাকে ঘুরিয়ে দরজার সাথে চেপে ধরলেন। ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেলাম। আদনান ভাইয়ের স্বাভাবিক মুখ মুহূর্তে রাগান্বিত আভায় ফুঁটে উঠেছে। তাতে কপালের রগ দৃশ্য মান! ভয়ে মাথা নিচু করতেই। আদনান ভাই কর্কশ কণ্ঠে বললেন,

‘ লাস্ট টাইম জিজ্ঞেস করছি অয়ত্রী! তুমি কি চাও!’

লোকটা বেশিক্ষণ অন্য ফোর্মে থাকতে পারে না নিজের ফোর্মে চলেই আসে। মানুষ অভ্যাসের দাশ আসলেই কথাটা সত্য। রাগ, জেদ তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘ আমি এভাবে বিয়ে করবোনা আদনান ভাই প্লিজ! ‘

আদনান ভাই সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত চেপে ধরে রুমের বাহিরে নিয়ে গেলেন। ড্রইং রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সবাই মিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছে যদিও এখন প্রায় ১২ টা বাজে হয়তো। আমি ভেবেছিলাম আদনান ভাই আমাকে রেগে হয়তো বাবার কাছে রেখে আসবেন। কিন্তু না। উনি আমার হাত ধরে রেখে অভি ভাইকে ডাক দিলেন। সে আসতেই তাকে কিছু বললেন ফিসফিস করে। বাকি সবাই আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে। যেন হুট করেই এলিয়েন চলে এসেছে সবার সামনে! আমি সবার দিকে রাগী দৃষ্টি ছুঁড়ে মারলাম। ঠিক তখনি অভি ভাইয়া চলে গেলেন। আর আমাকে পিহু আপুর সামনে নিয়ে গিয়ে বিরক্ত স্বরে বললেন,

‘ এই ইডিয়েট টাকে রেডি করিয়ে দে! ‘

ভেতরটা কেঁপে উঠলো। রেডি কিসের জন্য রেডি? আমি দ্রুত বললাম,

‘ আপনি বলেছিলেন…..! ‘

পুরো কথা শেষ করতে পারলাম না তার আগেই আদনান ভাই বললেন,

‘ এখন আবার বলছি আজ রাতে আমাদের বিয়ে। দাদু বাদে আমার পরিবারের সবাই থাকবে তোর বাবা সহ। যে ব্যাক্তি আমার বউকে পছন্দ করেনা। সে আমার বিয়েতে থাকবে আমার পছন্দ না। ‘

আমি বরাবরের মতোই হতবাক হয়ে রইলাম! বাকি সবাই চেঁচিয়ে উঠলো খুশিতে মুহূর্তে ডাইনিং ড্রইং রুম ডান্সিং রুম মনে হলো আমার। সবার খুশি দেখে আমি আর কি বলবো খুজে পেলাম না। আদনান ভাইয়ের হৃদয়ে জমে থাকা ভালোবাসা গুলো হঠাৎ এক এক করে এভাবে প্রকাশ করছেন। আমি স্তব্ধ হয়ে রইছি। দুনিয়ায় নিষ্ঠুরতায় কষ্ট পেলেও হাজার। আবার তার এই ভালোবাসা গুলো দেখে মন জুড়ে এক শীতল বাতাস ভয়ে যাচ্ছে। যা সব কষ্ট গ্লানি দূর করে দিচ্ছে। এত নির্মম সত্য জেনেও আমি হয়তো আদনান ভাইয়ের ভালোবাসার জন্যেই পুরোপুরি ভেঙে পরছিনা। সত্যি ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে সব পানির মতো স্বচ্ছ হয়ে যায়। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদনান ভাইয়ের দিকে তাকালাম। উনি ফোনে কথা বলতে বলতে চলে যাচ্ছে বাকিরা হইচই করছে। আমি ঘর ভর্তি কাজিনের সামনে গিয়ে আদনান ভাইকে পিছন দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম,

‘ আই আ্যম স্যরি আদনান ভাই। আর কখনও আপনাকে কষ্ট দিবোনা প্রমিস! ‘

ঘর ভর্তি কাজিন ইয়াহু বলে চিৎকার দিতেই আমার ঘোর কাটলো! আমি দৌড়ে পালাতে গিয়েও পারলাম না সব গুলো আমাকে জেঁকে ধরেছে। আমি করুণ চোখে আদনান ভাইয়ের দিকে তাকালাম। উনি মুচকি হাসলো! ইশ এত সুন্দর হাসি তার আহা! কাল এই লোক আমার বর হয়ে যাবে ভেবেই লজ্জা পেয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম দ্রুত। কিন্তু সেকি কাজিন গুলো আরও দ্বিগুন লজ্জা দিতে লাগলো! উফফ জ্বালা….

——-

সন্ধ্যায় বড় মামী ছোট মামী বড় মামা ছোট মামা সবাই এলেন। সাথে আহি আয়াত ভাই হায়াদ ভাই তারাও। এলেন না শুধু বড় মা আর বাবা তাদের কাছে নানু থাকায় তারা আসতে পারেনি নানুকে দেখে রাখতেও তো একজন থাকা লাগবে তাই তারা থেকে গিয়েছেন।

বড় মামী এসেই আমার কপালে চুমু খেলেন। আমার হাতে দুটো মোটা মোটা চুড়ি পরিয়ে দিলেন। আমি তখন সমানে কেঁদে যাচ্ছি মামীকে ধরে! মামী বললেন,

‘ সেদিন নিজে আদনানের বিয়ের কথা বললাম আমি যেন কোনও রিয়েকশন দিস তুই আর আমার ছেলের কষ্ট কিছুটা হলেও কমে। কিন্তু করেছি উল্টো কাজ। প্ল্যান ফ্লপ খেয়ে গেলো। কিন্তু সেটা পরে যানতে পেরেছি। ‘

বড় মার কথায় মামারা সহ আমি নিজেও তার কোলে হেসে উঠলাম! আসলে মামী তখন জানতেন না তার ছেলেকে আমি আমার মনের কথা বলে দিয়েছি। আদনান আদৃতা আপুর বিয়ে ঠিক করেছে নানু শুনেই। মামী চেয়েছিলেন আদনান ভাইকে ভালোবাসলে আমি যেন বলে দেই। তাহলে যে এই দিনটা আসবে মামী যানতেন। কারণ মামীর আদৃতা আপুকে পছন্দ নয় কারণ মামী জানতেন আদনান ভাই আমাকে ভালোবাসেন। আদনান ভাই সত্যি ফ্রেন্ডলি একটা মা পেয়েছেন। যার সাথে উনি সব মন খুকে শেয়ার করতে পারেন। মনে মনে ভাবী আমার মার সাথেও যদি এমন একটা সম্পর্ক থাকতো কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয়ে উঠেনি। আমি মার সংস্পর্শই পাইনি কখনও ভেবেই দীর্ঘশ্বাস আড়াল করলাম কাউকে বুঝতে দিলাম না এই মুহূর্তে মাকে মিস করছি মনে হচ্ছে তাকে পাশে দরকার। কিন্তু মামীর স্নেহপূর্ণ ভালোবাসায় সব ভুলে গেলাম যেন। উনি নিজ হাতে আমাকে তৈরী করলেন….

চলবে!

তুমিময় পর্ব-০৯

0

#গল্প-তুমিময়
#Aysha_khan
#পার্ট ৯

‘ অয়ত্রী আমি জানি তুমি তোমার নানুকে অনেক ভালোবাস তাই তো তার এই রূপ আমি চাইনি কখনো তোমার সামনে আসুক। তাই উনার সব কথা মেনে নিয়েছিলাম! কিন্তু যখন তোমার মুখেই শুনলাম তুমি আমাকে ভালোবাস আমি আর নিজেকে আটকাতে পারিনি। পারিনি তোমার বিষন্ন ভগ্নহৃদয়ের চেহারা দেখতে। কিন্তু বিশ্বাস করো তুমি যতটুকু কষ্ট পেয়েছ আমি তার কয়েকগুণ বেশি কষ্ট পেয়েছি…. ৪ বছর ধরে লাগাতার পাচ্ছি! তাই তোমার কষ্টটা আমি সব থেকে ভালো বুঝেছি। আমি তোমাকে ভালোবাসি সেটা অদৃশ্য ভাবেই হোক। আমার প্রিয়শীর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারিনি তাই সেদিন….. আই এ্যাম সরি অয়ত্রী! ‘

আমি কাঁদতে কাঁদতে মাথা তুলে বললাম,

‘ কিন্তু নানু কেন আমাকে পছন্দ করে না? কি করেছি আমি? ‘

আদনান ভাই দীর্ঘশ্বাস ফেলল! অতঃপর বললেন,

‘ তোমার কোনও দোষ নেই অয়ত্রী। তুমি নিশ্চয়ই জানো! তোমার বাবা হিন্দু ধর্মের ছিলেন। কিন্তু ফুপিকে বিয়ে করার আগে তোমার দাদুবাড়ির সবাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন! কারণ তোমার বাবা এবং তোমার চাচ্চু দু’জনেই মুসলিম মেয়ের প্রেমে পরেছিলেন। তোমার দাদু ভালো মানুষ ছিলেন উনি সব মেনে নেন। আমাদের বাসায় বাবারা মেনে নিলেও সব ফুপির জন্য৷ দাদু কখনওই এসব মানতে পারেনি। তার মতে তোমার বাবা ফুপিকে বড় ঘরের মেয়ে বলে ফাঁসিয়েছেন। দাদু কখনওই তোমার বাবাকে পছন্দ করতেন না। আর যখন ফুপি মারা গেলেন তুমি হওয়ার পর। দাদুর একটাই কথা তোমার জন্যেই ফুপি মারা গিয়েছেন। এসব লেইম কথা বাবারা মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু মা বলে কিছু বলতেও পারতেন না।

তারপর অনেক বছর চলে গেলো! তোমার বিয়ের কথা শুনে আমাকে বাবাই বললেন তোমাকে নিয়ে আসতে… আর আমিও নিয়ে এলাম কিন্তু তোমাকে একা নিয়ে আসিনি প্রেমে রোগ নিয়ে এসেছিলাম সাথে সেই প্রেম রোগে আক্রান্ত হয়ে গেলাম আমি ৷ কিশোরী অয়ত্রীর প্রেমে পরতে যেন বাধ্য ছিলাম আমি। একা একা প্রেমে পরা বড্ড মজার অয়ত্রী। আমার সময় বেশ ভালো যাচ্ছিলো প্রেয়সীকে চোখ দেখা জ্বালাত্বন করা অভ্যাস হয়ে দাঁড়ালো। আর তোমার মনে আমার জন্য কাজ করতো ভয়। তোমার ভীতু ফেইসের প্রেমে আমি বার বার ঘায়েল হতাম।

এসবের মধ্যে বছর চলে গেলো আমি প্রেমে ডুবে আছি। তোমায় কারোর সাথেই মেনে নিতে পারতাম না আলাদা টেক কেয়ার করতাম এসব সবার চোখেই পরতো! কেউ কিছু না বললেও মনে মনে সবাই বুঝতো আমার মনের অবস্থা। কারোর প্রবলেম ছিলোনা। কিন্তু দাদুর ছিলো। সে কখনওই খুশি ছিলেন না তুমি এ বাড়িতে থাকছো। শুধু আমার ভয়ে কিছু বলেনি। কিন্তু যখন বুঝলো আমি তোমাকে ভালোবাসি। উনি আদৃতার সাথে আমাকে পরিচয় করালেন। অতঃপর কিছু দিন যেতেই বললেন। আদৃতাকে উনি আমার বউ হিসেবে আমাদের বাড়ি চায়৷ আমি বরাবরই মতোই রেগে গেলাম কিন্তু দাদুকে আমি শ্রদ্ধা করতাম অনেক তাই বেশিকিছু বলতে পারছিলাম না। দাদু বেশকিছু দিন আমাকে বোঝালেন। আমি মানতে নারাজ একসময় আমি নিজ মুখে বলেই ফেলি আমি তোমাকে ভালোবাসি। তখন দাদু রেগে গেলেন ভয়ংকর ভাবে এবং আমাকে উনার ছোট মনমানসিকতার সব কথা খুলে বললেন। আমি হতভম্ব ছিলাম। আমি তখনই যানতাম তুমি এসব জানলে মারাত্মক কষ্ট পাবে৷ দাদু আমাকে বললেন তোমাকে ভুলে যেতে। নাহলে উনি এসব আমাকে বলতে এবং আমাদের বাড়ি থেকে তারিয়ে দিতে বাধ্য হবেন। বাবারা তখন চুপ ছিলেন মার উপর কথা বলতে পারছিলেন না। আমি কিছুটা ভয়েই মেনে নেই উনার কথা। কারণ একটাই তুমি ছোট্ট ছিলে ঐ মুহূর্তে আমাদের বাসা থেকে চলে গেলে তোমার লাইফ নষ্ট হয়ে যেতো বাসায় অশান্তি হতো। তাছাড়া তোমার অতীত তোমার পিছু ছাঁড়েনি তখনও। সব থেকে বড় কথা তুমি কষ্ট পেতে তাই আমি চুপচাপ দাদুর কথা মেনে নেই। ভেবেছিলাম এদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।

তারপর আস্তে আস্তে চোখে পরলো তুমি আমাকে পছন্দ করোনা। এক কথায় দেখতেই পারোনা। আমি তোমাকে ভালোসলেও তুমি কখনওই আমাকে মেনে নিতে পারবেনা ভয় পাও তুমি আমাকে। তার কারণ ও আমি নিজেই। কেননা দাদুকে বিশ্বাস করাতে আমি তোমাকে ভুলে গেছি বা যাব! শক্ত ব্যাবহারই করতাম আমি তোমার সাথে। কষ্ট হতো অয়ত্রী প্রেয়সীর চোখে নিজের জন্য ভয় দেখতে কিন্তু পরিস্থিতি অন্য ছিলো। তুমি আমাকে ভাই ভাবতে দাদু তোমাকে পছন্দ করতেন না। আমিও তোমাকে ভালোবাসি বলতে পারতাম না। বাবারাও আমার সাপোর্টে ছিলো না। দাদু প্রতিনিয়ত নিজের সিদ্ধান্তে অটল। আমি সব দিক থেকে হাঁপিয়ে গেলাম ক্লান্ত ছিলাম একা লড়াই করতে করতে সবার সাথে!

তখন ভাবলাম তুমি যখন আমাকে ভালোবাসইনা তাহলে শুধু শুধু তোমাকে কষ্ট দিয়ে কী হবে। আমি শুধু তোমাকে আগলে রাখতাম। বাকি সব দাদুর কথা মতোই হতে লাগলো। আদৃতার সাথে সম্পর্কে জরাতে বাধ্য করলেন দাদু আমি মেনে নিলাম। কিন্তু তোমাকে কারোর পাশে সহ্য হতোনা উল্টো পালটা করে বসতাম। এভাবেই চলে গেলো কয়েকটা বছর। এতো সবের মাঝে তোমার ভীতু মনে কি চলছিলো আমি ধরতে পারিনি। তবে আমি জানতাম আমি তোমার অভ্যাসে মিশে গেছি। কিন্তু ভালোবাসো আমাকে কখনওই বুঝতে দাওনি আমাকে তুমি। আর সেদিন যখন নিজ মুখে বললে আমাকে ভালোবাসো। এত রাগ হলো। মনে হলো আরও আগে যদি বলতে আমি একটু কম কষ্ট পেতাম। তুমি বলোনি। আর যখন বললে আমি দাদুর এই বেড়াজালে আটকে থাকতে পারলাম না। অনেক চেষ্টা করেওনা। তাতে হোক তোমার কষ্ট এখন তুমি বড় হয়েছে সব কষ্ট সহ্য করার কিছু ক্ষমতা হয়েছে নিশ্চয়ই! আমি আর এসব মেনে নিতে পারতাম না। আমার তোমাকে চাই! আমি তো সেই রাতটার অপেক্ষায় ছিলাম কিন্তু সেটা স্বপ্নের মতোই কাল্পনা মনে হতো আমার যা কখনও সত্যি হবেনা ভাবতাম। কিন্তু দেখ সেটাও সত্যি হয়েছে। আমি কিছুতেই ছাড়তে পারবোনা দাদুর বিকৃত চিন্তার জন্য! প্লিজ অয়ত্রী আমি তোমাকে জোর করবোনা আমাকে বিয়ে করতে। শুধু বলবো আমাকে আর কষ্ট দিওনা তোমরা! ‘

সব শুনে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলাম। আদনান শেষের কথা গুলো এতটাই মিনতির স্বরে বলল, যে হু হু করে কাঁন্না বেরে গেলো। আমি এই নির্দয় লোকটার এতো করুণ স্বর আগে গুনিনি। সর্বদা কঠিক স্বরেই কথা বলেন আদনান ভাই। কিন্তু সব শোনার পর আমি কিছুতেই আদনান ভাইয়ের কষ্ট হয়তো কমাতে পারবোনা! কিছুতেই এভাবে উনাকে বিয়ে করতে পারবোনা! এভাবে এই পরিস্থিতিতো কখনওই না! আমি আস্তে করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম উনার থেকে। কষ্টে বুক ফেঁটে যাচ্ছে! তবুও নিজেকে ধাতস্থ করে চোখ মুখ মুছে বললাম,

‘ আপনি আমাকে জোর করবেন না বলছেন? ‘

আদনান ভাই তার রক্তিম চোখ জোরা আমার মুখে নিবদ্ধ করলেন স্মিত কন্ঠে বললেন,

‘ করবোনা! ‘

আমি একটু ভরসা পেলাম তার কণ্ঠে! তাই কাত কচলাতে কচলাতে। নিচের ঠোঁট কামড়ে বললাম,

‘ এভাবে আমি বিয়ে করতে চাইনা! আমাদের যতই কষ্ট হোক তাতে! নানু না চাইলে আমি আপনাকে বিয়ে করবোনা! আপনি আমাকে এখুনি আমাকে বাবার কাছে দিয়ে আসুন! প্লিজ!’

বলেই আদনান ভাইয়ের দিকে একবার তাকালাম উনার চোয়াল শক্ত হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে! ভয়ে দুকদম পিছিয়ে গেলাম! আদনান ভাইয়ের ফর্সা মুখ রক্তিমবর্ণ ধারণ করেছে! মারবেন আমাকে ভেবেই আমি দ্রুত বললাম,

‘ আপনি বলেছেন আপনি আমাকে জোর করবেন না! তাহলে আমার মতামতে আপনি রেগে যেতে পারেন না! ‘

আদনান ভাই ভয়ংকর রাগী অবস্থায় ও শীতল হাসলেন। বললেন,

‘ জোর করবোনা বলেছি! এটাতো বলিনি তুমি যা বলবে আমি মেনে নিবো? ‘

ধপ করে বসে পরলাম ফ্লোরে। আদনান ভাই শক্ত করে হাত মুঠিবদ্ধ করে রেখেছেন হাতের রোগ গুলো স্পষ্ট দৃশ্যমান! আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম। আদনান ভাই বেশকিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো সেভাবেই। আমি জানি সে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টায়। অতঃপর হঠাৎ ধুপ ধাপ পায়ে চলে যেতে যেতে বললেন,

‘ ঠিক আছে জোর করবোনা। কিন্তু যতক্ষণ অতিরিক্ত ভালো মেয়ে সাজার ইচ্ছে চলে না যায়। তুমি এখানেই বন্দী থাকবে! ‘

চোখ দিয়ে গরিয়ে পানি পরছে! লোকটা নির্দয়, নির্দয়, নির্দয়। জোর করবেনা অথচ বুঝিয়ে গেলো বিয়ের জন্য রাজিনা হলে আমাকে বন্দি করে রাখবেন! আমি পাত্তা দিলাম না আদনান ভাই বাইরে দিয়ে লক করে চলে গেলেন। আমি জানি আদনান ভাই যেতেই হুরমুর করে সব কাজিন রুমে ঢুকে যাবে। তাই অশ্রুসিক্ত চোখে ভাবতে লাগলাম। আমরা যাকে যেমন ভাবি সবাই তেমন নয়! মানুষ ভেতরে এক বাইরে আরেক! কি আশ্চর্য তবুও বুঝার উপায় নেই কিছুই? এমন যদি হতো সব বুঝা যেতো আর কোনও দুঃখ থাকতো নাকো!

আজ বড্ড মাকে মনে পরছে তাকে আমি কল্পনায় ছাড়া কখনও দেখিনি বাস্তবে। আর দেখেছি ছবিতে! আমার মা বড্ড সুন্দরী ছিলেন। ছবিতেও মারাত্মক সুন্দরী লাগতো তাকে। আমার দাদু বলতেন মা বড় ঘরের মেয়ে হলেও কখনওই তার মধ্যে অহংকারের ছিটে ফোঁটা ছিলোনা। বাবা যেভাবে রাখতেন মা তাতেই খুশি ছিলো। সুন্দর করে মানিয়ে নিতে পারতেন সবকিছুর সাথে নিজেকে। দাদু বলতেন সেই গুণ আমার মধ্যেই আছে আমিও মানিয়ে নিতে পারি সব কিছুর সাথে। কিন্তু আজ নানুর চিন্তা ভাবনা গুলো মেনে নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। ছোট মনে সত্যি আঘাত পেয়েছি। আচ্ছা আজ মা বেঁচে থাকলেও কি নানু এমন করতেন? না! হয়তো ভালো মানুষের একটা মুখোশ পরে থাকতেন। যা হয় ভালোই হয় হয়তো। মিথ্যে ভালোবাসার চেয়ে ঘৃণাও ভালো!

মা বাবাকে জরিয়ে খুব করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আজ নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে! যা কখনো ফিল হয়নি। বাবা মাকে এই মুহূর্তে পাওয়া সম্ভব নয়। অন্তত আদনান ভাইকে জড়িয়ে কাঁদতে চাই আমি। উনিইতো এটাই চায় কিন্তু কি করে বুঝাই আমি যে আর মেনে নিতে পারছিনা!

——–

রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেলো কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি মনে নেই৷ আমি ভেবেছিলাম ঘুম থেকে উঠে সবাইকে দেখবো কিন্তু সেকি দরজা খুলেনি কেউ আমি এখনও ফ্লোরেই পরে আছি। আদনান সত্যি তার সিদ্ধান্তে অটল নয়তো। ইয়া আল্লাহ, এই নির্দয় লোকটার মনে একটু মায়া দয়ার ফুঁল ফুটিয়ে দাও! পিহু আপু আর আদনান ভাই তিক্ততার গোডাউন আর এতই স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড নিজের কথায় নরচর মরে গেলেও হতে চায়না! আমি গিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলাম।

বেলা তখন ১১ টা। বাহিরে এখুনি কাঠ ফাটা রোদ্দুর আজ। সারা ঘরে রোদের উত্তাপে ঝলমল করছে সেই আলোতেই আমার ঘুম ভেঙেছে! পেটে খিদের জ্বালাও ফিল করতে পারছি। উফফ… কিছুদিন যাবত জীবনের মানেটাই বদলে গেলো আমার! বেডে গিয়ে উল্টো হয়ে ধপ করে শুয়ে পরলাম আবার ঠিক তখন বুঝলাম বারান্দায় কেউ দাঁড়িয়ে!
প্রথমে ভয় পেলেও দৌড়ে গেলাম কে ওখানে দেখতে!

আদনান ভাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্মোক করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঠোঁটে সিগারেটের স্টিকটা রাখতেই টেনে ফেলে দিলাম বাহিরে ছুঁড়ে! আদনান ভাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

‘ সব ছেড়ে দিবো তুই আমার হয়ে যা প্লিজ! ‘

চলবে!

তুমিময় পর্ব-০৮

0

#গল্প-তুমিময়
#Ayaha_khan
#পার্ট ৮

তিন দিন হয়ে গেলো রুম বন্দী আছি। খুব একটা খারাপ লাগছেনা এভাবে রুম বন্দী থাকতে। তবে মনে থাকা প্রশ্ন গুলো নিশপিশ করছে জানতে! কিন্তু উত্তরের কোঠা বরাবরের মতোই শূন্য! দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেডে ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

এটা আদনান ভাইয়ার এপার্টমেন্ট যেটা কক্সবাজারের নিকটে অনেকটা! আদনান ভাই আমাকে ঐদিন রাতে এখানেই নিয়ে এসেছেন। আহি বান্দরবনে ছিলো আদনান ভাই তাকে খবর দিলে। আহি আয়াত ভাই এখানে চলে আসে। তাদের চোখে কোনও বিস্ময় ছিলো না। আদনান ভাই আমাকে এখানে নিয়ে আসাতে। তবে আমি কারোর সাথে কোনও কথা বলিনি। আহি আয়াত ভাই চেষ্টা করেছে আমার সাথে কথা বলতে। আমার মনে হয়েছে অদের সাথে কথা বললে আরও এক ঝুড়ি প্রশ্ন আমার মাথায় বাড়বে! তাই আমি অপেক্ষায় আছি আদনান ভাই আমাকে সবটা এক্সপ্লেইন করবেন! কিন্তু তিন অপেক্ষায় করেও তার মুখ দেখতে পাইনি! কি আজব সে কি আমাকে এখানে ফেলে ঘুরতে চলে গেলো?

আজ একটু মেজাজ খারাপি হচ্ছে। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখলাম আহি ব্রেকফাস্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এসব শুকনো খাবার আর ভালো লাগছেনা। আমি খেতে পারছিনা। এলোমেলো প্রশ্ন গুলো না জানা অব্ধি গলা দিয়ে কিছুই নামছেনা। সেটা আমি কাউকে বলতেও পারছিনা। আহি আমাকে দেখে বলল,

‘ কেন এমন মন খারাপ করে আছিস! ‘

আমি রেগে গেলাম তিরিক্ষি মেজাজে বললাম,

‘ তাহলে কি আমার নাচা উচিৎ? নাকি গান গেয়ে বেরানো উচিৎ! ‘

আহির মুখ ভোতা হয়ে গেলো আমার কথা তব্দা মেরে বসে রইলো। ওকে কথা বলতে না দেখে আরও রাগ হলো। পুনোরায় মেজাজ গরম করে বললাম,

‘ তোর গুনধর ভাই কোথায়? ‘

আহি মিন মিন করে বলল,

‘ ভাই তিন দিন ধরে এক নাগাড়ে ঘুমে! কিভাবে না খেয়ে দেয়ে এভাবে ঘুমাচ্ছে আমি জানি না! ‘

মেজাজ মাত্রাধিক খারাপ হয়ে গেলো লোকটার কাহিনী শুনে। আমার জীবনটা জাস্ট ত্যাজপাতা বানিয়ে এখন উনি ঘুমোচ্ছে পরে পরে। এদিকে প্রশ্নের বেড়াজালে আটকে আমি। কিলবিল করা প্রশ্নের উত্তর জানতে আমার মস্তিষ্ক মন! কিন্তু তাতে তার কী! সে তার মতো দিব্বি আছে। মন বলছে পালিয়ে যাই কোথাও৷ নিজের সামলালাম কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বললাম,

‘ বাসায় সবাই….! ‘

আহি আমার কথা এড়িয়ে গিয়ে বলল,

‘ খেয়েনে তুই আগে! আমাকে আয়াত ডাকছে। তোদের জন্য আমার হানিমুন মাটি হলো সেদিকে কারো খেয়াল নেই। একজন ঘুমুতে আরেক জন প্রশ্ন খুজতে মসগুল! ‘

আমি বিরক্তিকর চাহুনি দিয়ে বললাম,

‘ তো আমি তোকে বলেছি এখানে আসতে? হানিমুন মাটি করে এলি কেন এখানে?’

আহি আমার কথা শুনে রেগে চলে যেতে নিলে আমি ওর হাত ধরলাম। মোলায়েম কণ্ঠে বললাম,

‘ আহি নানু…!’

আহি শেষ করতে দিলেন না আমাকে! জোরে শ্বাস নিয়ে বসে বলল,

‘ বাসায় সব ঠিক আছে তুই চিন্তা করিস না! খেয়েনে নাহলে আদনান ভাই রেগে যাবেন! ‘

আর কিছু বললাম না জানি শান্তনা ছিলো কিছুই ঠিক নেই। তবে না খেলে সত্যি আদনান ভাই রেগে যাবেন। তাই চুপচাপ খেয়ে নিলাম!
সারাদিন শুয়ে-বসেই কেঁটে গেলো আহি সঙ্গ দিতে এলেও ওকে ধাক্কিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি আয়াত ভাইয়ার কাছে বেচারা আমাদের জন্য হানিমুনে এসেও শান্তি পেলো না!

রাতে ফ্লোরে বসে হাটুতে মাথা রেখে কাঁদছিলাম তখন রুমে কেউ এলো আহি ভেবে রাগী গলায় বললাম,

‘ আহি চলে যা ভালো লাগছেনা আমার! ‘

জবাবে আদনান ভাইয়ের শীতল ঠাণ্ডা কণ্ঠ শুনতে পেলাম,

‘ এভাবে নাম মুখ ফুলিয়ে কাঁদতে ভালো লাগে শুধু? ‘

হুট করে তার কণ্ঠ শুনে থমকে মাথা তুলে দ্রুত দরজায় তাকালাম! আদনান ভাই স্লিভলেস ব্ল্যাক গেঞ্জি, ধূসর রঙের টাউজার পরে দাঁড়িয়ে চুল থেকে টপটপ পানি পরছে। একা ধারে ঘুমানোর জন্য বিষন্নতার কেটে গিয়ে যেন চোখ মুখের উজ্জ্বলতা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাত্র শাওয়ার নিয়ে আশায় মাত্রাধিক স্নিগ্ধ, সতেজ এবং নিষ্পাপ লাগছে। আমি রূপে মুগ্ধ হয়ে গেলাম! বলতেই হবে দেখতে সে মাত্রাধিক চমৎকার পুরুষালী সুদর্শন সুপুরুষ! কিন্তু তার অভ্যাস রাগ সব কুপুরুষ হুহ! মুখ ঘুরিয়ে নিলাম উনার থেকে! আড়চোখে দেখলাম উনি ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো আমার অবস্থা দেখে। আদনান ভাই চলে যেতে যেতে আবার বললেন,

‘ আমি খেয়ে আসছি। তার পর তোমার সাথে ডিল করছি? ‘

আমিও উঠে উনার পিছনে পিছনে এই প্রথম বাহিরে গেলাম। এই এপার্টমেন্টে মামা বাড়ির সবাই অসংখ্যবার এসেছি চট্রগ্রাম ঘুরতে। ব্যাপারটা এমন হয়েছে বাসার কারো মন খারাপ থাকলেও তাকে এখানেই নিয়ে আসে আদনান ভাই তার চট্রগ্রাম খুব পছন্দের তাই এখানে তাকে বড় মামী এই ফ্ল্যাট গিফট করেছিলেন সেটা আমি আসার আগেই। সেই সুত্রে এখানে অসংখ্যবার আসা এবং প্রত্যেকটা কোণা কোণা চেনা। আহি আয়াত ভাইয়ের রুমের দরজা খোলা দেখে উঁকি দিলাম একটু সাথে সাথে আদনান ভাই বলে উঠলেন,

‘ তোমার দেখছি লজ্জা নেই বিবাহিত দম্পতির রুমে উঁকিঝুকি দিচ্ছো তাদের রোমান্স দেখতে! ‘

বলেই উনি ডাইনিং এ বসে প্যাকেট খোলায় মনোযোগ দিলেন খাবারের। আমি উনার কথায় পাত্তা না দিয়ে আহির রুমে ঢুকেই গেলাম। মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো রুম ফাঁকা কেউ নেই রুমে! আহি আয়াত ভাইয়ার কোনও জিনিস পত্রও নেই। আমি দ্রুত পায়ে ডাইনিং এ যেতেই আদনান ভাই বললেন,

‘ তোর নানু অসুস্থ। তাই আহি আয়াত বাড়ি চলে গিয়েছে। আমরাও যাবো আমাদের বিয়ের পর! ‘

উনার শীতল কণ্ঠে স্বাভাবিক ভাবে কথা গুলো বলে কাচ্চি প্লেটে তুলে খেতে লাগলেন যেন অমরিত খাচ্ছেন। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। আদনান ভাই দাদু বলতে পাগল। কারোর কথা না শুনলেও দাদুর কথা উনি কখনওই ফেলেন না আর সেই লোক তিন দিন আগে তার উপর চেঁচিয়ে কথা বলে উনার কথা না শুনে আমাকে এখানে নিয়ে এলেন। এখানেই শেষ নয়। সেই দাদু অসুস্থ শুনেও উনি এখানে আরামে কাচ্চি গিলছেন! আমার চোখ ছানাবড়া!

আমি দৌড়ে আদনান ভাইয়ের রুমে গিয়ে উনার ফোন খুঁজতে লাগলাম বাসায় ফোন দিতে হবে নানু কেন এভাবে বললেন আমাকে সেটা তো জানিনা। কিন্তু আমার জন্য উনার কিছু হয়ে যাক আমি চাইনা! উনার এলোমেলো বেডের উপর ফোন পেয়েও গেলাম। কিন্তু ফোনে লক দেওয়া রাগ লাগছিলো খুব! ফোন হাতেই ডাইনিং গেলাম আদনান ভাই এখনও খাচ্ছেন! তাকে আজ ভয় লাগছে না তাই রাগী রাগী গলায় বললাম,

‘ আমাকে বাবার কাছে দিয়ে আসুন প্লিজ। আর আপনিও বাসায় জান তানাহলে নানু আরও অসুস্থ হয়ে পরবে! ‘

আদনান ভাই খাওয়া বন্ধ করে দিলেন। হাত ধুয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ক্রোধ নিয়ে তাকিয়ে বললেন,

‘ তুমি অয়ত্রী ভালো ব্যাবহার ডিজার্ভ করো না! তোমার পানিশমেন্ট পেতে বড্ড ভালো লাগে! দ্যান অল রাইট। তোমাকে আমি অতিরিক্ত ভালোবাসি এবং তোমার ভালোলাগার গুরুত্ব দেওয়া আমার কর্তব্য….!’

আদনান ভাইয়ের কথায় গাঁ শিওরে উঠলো! আদনান ভাই এগিয়ে এসে আমার হাত চেপে ধরলো। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম ভয়ে। আমাকে ভয় পেতে দেখে হাসলেন। আমার হাতের ফোন নিয়ে উনি চলে গেলেন নিজের রুমে। আমি বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলাম ভয় পেয়েছি প্রচণ্ড যদি গালে চড় মেরে দিত!

—————-

রুমের এক কোণায় বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ভাসাচ্ছি আমি। বাইরে আদনান ভাই প্রান্ত ভাইয়া আশিক, অভি ভাইরা চিল্লাচিল্লি করছেন! আদনান ভাই বিয়ে করবেন সেই খুশিতে। হ্যাঁ আদনান ভাই ঘোষণা করেছেন আমাকে বিয়ে করেই ঢাকা ফিরবেন! নির্দয় লোকটার বন্ধু গুলো ও নির্দয় এতকরে বললাম আমাকে একটু হেল্প করতে আমি বাসায় যেতে চাই। সম্পূর্ণ পরিবারের মত ছাড়া আমি কিছুতেই বিয়ে করবোনা। কিন্তু কিছুই করছে না কেউ আমার কথা শুনছেনা। বরং বিয়ে হবে সেই খুশিতে নাচানাচি করছে সকলে! আর আদনান ভাই তার কথা বাদ দিলাম ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে উনার মতো নির্দয় লোককে আমি ভালোবাসি! কি করে নানু অসুস্থ শুনেও উনি এই মুহূর্তে বিয়ের কথা ভাবেন? ভেবেই জোরে জোরে কেঁদে উঠলাম আমি!

শুধুই আদনান ভাইয়ার বন্ধুরা? আমার কাজিন সব গুলো সকাল সকাল এখানে হাজির শুধু আহি আয়াত, হায়াদ ভাইয়া বাদে। আহির হয়তো ওর শ্বশুর বাড়ি চলে যেতে হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকেই যায়। আদনান ভাই নির্দয় তাই বলে কাজিন গুলোও নির্দয় হয়ে গেলো সবাই ঐ অবস্থায় বাড়িতে বড়দের একা ফেলে এখানে চলে এলো? কি করে সম্ভব এসব মাথায় ঢুকছেনা।

পিহু আপু রুমে ঢুকে আমাকে এভাবে কাঁদতে দেখে বলল,

‘ এভাবে কাঁদছিস কেন? কে মরে গেছে তোর? ‘

আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,

‘ আপু নানু কেমন আছে, উনি অসুস্থ! তোমরা উনাকে এভাবে ফেলে কেন চলে এলে! ‘

কিছুটা থেমে আবার বললাম,

‘ আপু নানু ঐদিন আমাকে এভাবে কেন বলল? ‘

আপু শক্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ এতো ন্যাকা সাজছিস কেন। তুই কী এখনও বুঝিস না নানু তোকে পছন্দ করে না! বাকি সব আদনান নিজেই তোকে বলবে। আমি এখন শুধু তোকে এত টুকু বলতে পারি আদনান তোকে অতিরিক্ত ভালোবাসে। আমি জানি তুই ও বাসিস ভাইকে। তাহলে বিয়ের কথা শুনে কাঁদছিস কেন? ন্যাকামি বন্ধ কর! ‘

এত রুক্ষভাষী মেয়ে আমি আর একটা দেখিনি। পিহু আপু এতটা স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড কী বলবো! কোমল হৃদয়ে নানু আমাকে পছন্দ করে না শুনেই রক্তক্ষরণ হতে শুরু করেছে তার উপর পিহু আপুর রুক্ষভাষী কথায় আমি দ্বিগুণ জোরে কাঁদতে লাগলাম। পিহু আপু তাতে বিরক্ত বোধ করে বললেন,

‘ দাদু মিথ্যে শুনিয়েছে উনি সম্পূর্ণ সুস্থ যেন আদনান ভাই তোকে বিয়ে না করে বাসায় ফিরে যায় তাই এসব রটিয়েছে। কাঁদিস না স্যরি তো! ‘

কিছুতেই কান্না থামাতে পারছিনা এত সুন্দর অভিনয় নানু কি করে করলো। আদনান ভাইয়ের অভিনয় তাও আমি ধরে ফেলতাম। কিন্তু নানুর অভিনয়ে কোনও খাদ ছিলোনা। কখনো বুঝতে দেননি উনি আমাকে পছন্দ করেন না। তবে আমি বেশ বুঝতে পারছি আদনান ভাইয়ের ভয়েই উনি আমাকে কিছু বলতেন না। ইনফেক্ট সেদিন সকালেও সেই সাহস করেননি আমাকে কিছুই বলেননি। যা বলার আদনান ভাইকেই বলেছেন। তবে নানুর কথা রাখতেই আদনান ভাই আমাকে মেনে দিতে পারেননি কখনও?

বুক ফেঁটে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম আদনান ভাই ধোকা দিলেও মনে হয় এতো কষ্ট পেতাম না। হুট করেই নিজের প্রতি ঘৃণায় ভরে উঠলো মন! পিহু আপু আমার কাঁন্না দেখে ভরখে গেলো। আমাকে শান্ত করতে নান কিছু বলতে লাগলো। কিন্তু আমার চোখে শুধু নানুর সাথে কাটানো সময় গুলো চোখে ভাসছে কত নিখুঁত অভিনয় ছিলো!

পিহু আপু আমাকে শান্ত করতে না পেরে বাহিরে চলে গেলেন তার কিছু মুহূর্তে মধ্যেই হন্তদন্ত হয়ে আদনান ভাই রুমে ঢুকে দরজা আটকে আমার দিকে এগুলেন। উনাকে দেখে আমি দৌড়ে উনাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম। আদনান ভাই আমাকে ঝাপটে ধরে চুপ করে রইলেন। আমাকে কাঁদতে সময় দিলেন আদনান ভাই! বেশকিছু ক্ষণ পর বললেন,

‘ অয়ত্রী আমি জানি তুমি তোমার নানুকে অনেক ভালোবাস তাই তো তার এই রূপ আমি চাইনি কখনো তোমার সামনে আসুক। তাই উনার সব কথা মেনে নিয়েছিলাম! কিন্তু যখন তোমার মুখেই শুনলাম তুমি আমাকে ভালোবাস আমি আর নিজেকে আটকাতে পারিনি। পারিনি তোমার বিষন্ন ভগ্নহৃদয়ের চেহারা দেখতে। কিন্তু বিশ্বাস করো তুমি যতটুকু কষ্ট পেয়েছ আমি তার কয়েকগুণ বেশি কষ্ট পেয়েছি…. ৪ বছর ধরে লাগাতার পাচ্ছি! আই এ্যাম সরি অয়ত্রী! ‘

চলবে!

তুমিময় পর্ব-০৭

0

#গল্প-তুমিময়
#Aysha_khan
#পার্ট ৭
বেশকিছু ক্ষণ দরজা ধাক্কালাম কেউ খুলোনা।আদনান ভাইয়ের রুমের সামনে বাড়ির সবার গলার স্বর শুনতে পেলাম তবে স্পষ্ট কিছুই শুনতে পেলাম না। চেষ্টা করেও না। প্রথমে চিন্তা হলেও পরে ভাবলাম উনার রাগ সর্বদাই উঠে থাকে! তাই সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আমি ভাবলাম একটু ঘুমিয়ে নেই! সারারাত না ঘুমানোর ফলে ঘুমঘুম ভাব আর চোখ জ্বালা করছে। আমি ক্লান্ত শরীরে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পরলাম।

এক রাত্রী জেগে থাকার দরুন শুতেই রাজ্যের ঘুম চোখে নেমে এলো! কিন্তু ঘুম ভাঙার আগেই দরজা তীব্র শব্দে খুলে যাওয়ার আওয়াজে আমার ঘুম ভাঙলো! আমি লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। আদনান ভাই ততক্ষণে আমার হাত টেনে বাহিরে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি শুধু ওড়নাটা ঠিকঠাক করলাম। উনাকে কিছু বলার সাহস টুকু করলাম না। কেননা উনাকে দেখতে নরমাল লাগছেনা। রুম থেকে বেরুতেই নানু আদনান ভাই এবং আমার সামনে এসে দাঁলালেন। তাকে এভাবে দাঁড়াতে দেখে আমি আদনান ভাইয়ের দিকে একবার, একবার বাকি সবার দিকে তাকালাম। আদৃতা আপু কাঁদছে তাকে তার মা ধরে রেখেছে। উনার বাবা মাহাদ আঙ্কেল এর মুখে দাম্ভিকতার ছাপ। বাসায় সবার মুখ থমথমে! আমার বুকে অজানা ভয়ে মোচড় দিয়ে উঠলো।

আমাদের সামনেই নানু দাঁড়িয়ে। নানুকে পাশ কাটিয়ে আদনান ভাই আমাকে নিয়ে নিচে দিকে যেতে গেলেই। নানু বৃদ্ধা ভাঙা ফ্যাকাসে গলায় চেঁচিয়ে বললেন,

‘ আদনান তুই এই মেয়েকে বিয়ে করলে আমি এখুনি মরে যাবো! ‘

ঘুম থেকে উঠেই এমন পরিবেশ তার উপর নানুর কথাটা আমার কানে বার বার বেজে ওঠে। কয়েক মূহুর্ত সময় লাগে এই কথার মানে কী? আমি অবাক চোখে আদনান ভাইয়ের দিকে তাকাতেই আদনান ভাই নানুর থেকে দ্বিগুন চেঁচিয়ে বললেন,

‘ দাদু আমি ওকে আমার চাই! আমি আর কিছু শুনতে চাইনা। ‘

আদনান ভাই থামলেন বড় বড় শ্বাস ফেলেও রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে চেঁচিয়ে বললেন,

‘ আমি বিয়ে করলে এক মাত্র ওকেই বিয়ে করবো! কারোর প্রবলেম থাকলে আমাকে জানিয়ে দেবে। আমি আর আপনাদের বাড়ি যাবোনা! ব্যাস এটাই আমার লাস্ট কথা!’

কথাটা বলে আমার হাত ছেলে বড় মামীর সামনে গিয়ে তাকে জরিয়ে ধরে ভাঙা গলায় বলল,

‘ মা আমি অনেক চেষ্টা করেছি! পারিনি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিও! ‘

বড় মামী ছেলের এহেন অবস্থা দেখে কেঁদে ফেললেন। আদনান ভাইয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললেন,

‘ আমার বাবা যেটাতে খুশি আমিও তাতেই খুশি। তোর ইচ্ছে গুলো মেনে নিতে আমার কখনওই দ্বিমত ছিলোনা থাকবেওনা! ‘

আদনান ভাই ফ্যাকাসে মুখে স্মিথ হাসলেন। মার কপালে চুমু খেয়ে আমার কাছে এসে শক্ত হাতে হাত ধরলেন আবারও। সত্যি বলতেই নানু এই মেয়ে বলতে কি বুঝিয়েছেন আমি বুঝার চেষ্টা করছি। নানুর দিকে তাকিয়ে। কিন্তু উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে যেন ভস্ম করে দিবে আমাকে এখুনি! আদনান ভাই আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন নিচে। কিন্তু আমি এখনও পিছনেই তাকিয়ে নানু দৃষ্টির অগোচর হতেই সবগুলো কাজিনকে দেখতে পেলাম। তাদের মুখে বিশ্বজয় করা হাসি। হায়াদের মুখ সেই হাসির রেশ মাত্রাধিক বেশি! সেদিকে বেশি তাকাতে পারলাম না সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আদনান ভাইয়ের সাথে তাল মিলিয়ে নামতে কষ্ট হচ্ছিলো। তাই উনার থেকে হাত ছাড়াবার জন্য চেষ্টা করছিলাম ছাড়লেন না। দ্বিগুণ জোরে হাত চেপে নেমে একেবারে তার কালো গাড়িটার সামনে থামলেন। গাড়ির দরজা খুলে একবার তাকালো আমার দিকে। এত ধারালো দৃষ্টি ছিলো দেখে ভয়ে চুপচাপ বসে গেলাম। আদনান ভাই নিজেও ড্রাইভিং সীটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।

টু শব্দ করতে পারলাম না কিন্তু মনে হাজারো প্রশ্ন রয়ে গেলো কি হচ্ছিলো উপরে? আদনান ভাইয়ের কথা নানুর কথা মামীর কথা সব মিলিয়ে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে আমার কাছে৷ মাথায় প্রেশার তৈরি হচ্ছে আর তাতে আমি হিতাহিতজ্ঞান শূন্য হয়ে অস্ফুট স্বরে বললাম,

‘ আদনান ভাই নানু কী বললো এগুলো? আমাকে বলেছে না আদৃতা আপুকে? ‘

আদনান ভাই কিছুই বললেন না। উনি ফ্যাকাসে শুকনো মুখে ড্রাইভ করে যাচ্ছেন! হঠাৎ উনার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালাম অনেকটা দিন পর আজ! উনাকে দেখে মনে হলো উনি অনেক রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে। চোখের নিচে লাল আভা জ্বলজ্বল করছে যা উনার নির্ঘুম থাকার প্রমান দিচ্ছে। কিছু দিনে পর দেখেই মনে হচ্ছে আদনান ভাই শুকিয়ে গেছেন৷ সিল্কি চুল গুলো নির্জিব আর এলোমেলো লাগছে আজ যা সব সময় পরিপাটি দেখে এসেছি আমি! তবুও কালো টি শার্টে ব্ল্যাক জিন্সে চমৎকার লাগছে তাকে। শুধু সুন্দর মুখশ্রীটা আজ বড্ড বিষন্ন উনাকে এভাবে দেখে মাথা নিচু করে কেঁদে ফেললাম আমি। আমার কান্নার আওয়াজ তার কানে যেতেই গাড়ি কষে ব্রেক করলেন উনি! কঠোর স্বরে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ আজ আমার মন গলবে না অয়ত্রী! সব তোর জন্য হয়েছে। কি জাদু করেছিস আমাকে? দাদু ঠিকি বলে তুই একটা…..! ‘

তার মানে আদৃতা আপুকে নয় নানু ঐ কথা আমাকেই বলেছেন? আদনান ভাই আমাকে বিয়ে করতে চাইলে নানু…. উনাকে থেমে যেতে দেখে দ্রুত বললাম,

‘ আমি একটা কী আদনান ভাই। নানু কখনওই আমাকে বাজে কথা বলতে পারেনা! আজ উনি এসব কথা আমাকেই বলেছেন? কিন্তু কেন? ‘

আদনান ভাইয়ের চোখের কোণা বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রুকণা গরিয়ে পরলো। উনি ভাঙা গলায় চেঁচিয়ে বললেন,

‘ শুধু আমার শাসন আমার চেঁচামেচি আমার অসত্যতা, নির্দয়তা আমি খারাপ এগুলোই তোর চোখে পরে? আর কারো কুটিলতা চোখে কেন পরেনা তোর? ‘

তার গাড়ি কাঁপিয়ে চিৎকারে ভয়ে সীটে আরও এঁটে বসলাম। চোখ ফেটে জল গলাচ্ছে। নানু? নানু কী কিছু করেছে আমাকে? আমি আবার প্রশ্ন করলাম,

‘ নানু কী কিছু করেছে নানু ঐ কথা কেন বললেন? ‘

আদনান ভাই রক্তিম চোখে আমার দিকে ভয়ংকর চাহুনি ছুঁড়ে মারলেন। দাম্ভিক কণ্ঠে বললেন,

‘ তোর নানু কী করেছেন সেটা আর তোর না জানলেও হবে! আগে নিজের জান বাঁচা! সব তোর জন্য হয়েছে। আমি মানা করেছিলাম হায়াদের সাথে তোকে কথা না বলতে! বাট ইউ? ‘

তার কথায় কিছু একটা ছিলো। আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম ভয়ে ভেতরটা কেঁপে উঠলো। আজ যা যা হলো শুধু মাত্র আমি হায়াদের সাথে কথা বলেছি দেখে। সেটা বুঝতে বাকি নেই আমার। কিন্তু আদনান ভাই তো বললেন আমাকে ভালোবাসেন না তাহলে এসব ড্রামা কেন। আর আমাকে বিয়ের কথা উঠলোইবা কেন আজ। মাথাটা ফেটে যাচ্ছে কিছু বুঝতে পারছি না? আমার কি হলো এসব আর নিতে না পেরে রেগে চেঁচিয়ে বললাম,

‘ আমি বাসায় যাবো! না আপনাদের বাসায় না আমি আমার বাবার কাছেই চলে যাবো! ‘

আদনান ভাই সীটে হেলাম দিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলেন আমার কথায় আমার দিকে শীতল চোখে চাইলেন। আমার রাগ চলে গেলো নড়েচড়ে বসলাম। উনি ঠান্ডা কণ্ঠে বললেন,

‘ আমার রাগটা বাড়াস না অয়ত্রী! তোর জন্য আমার রাগটা ভালো হবেনা! ‘

আমি চুপ মেরে গেলাম গাড়ির সীটে মাথা হেলিয়ে চুপ করে বসে কাঁদতে লাগলাম। আদনান গাড়ি স্টার্ট দিলেন আবারও। কই যাচ্ছি যানার ইচ্ছে নেই। আমি শুধু ভাবছি নানুর কথাটা! মাথায় গেঁথে গেছে একদম। কি মানে সেটার। মামীর কথাগুলো আন্দাজ করতে পারছি কিন্তু আদনান ভাইয়ের তো শিওর নেই তাই সেটা নিয়ে ভাবছিনা। শুধু নানুর কথা গুলো পিরা দিচ্ছে! নিরবতা গাড়িতে আছড়ে পড়লো আদনান ভাই সেই নিরবতা ভেঙে বলল,

‘ আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। এবার তুমিও পাবে ভালোতো আমি একা বাসিনি! কষ্ট কেন একা পাবো? তোমাকেও পেতে হবে! সাথে নিজের করা ভুল গুলোর শাস্তি গুলোও পেতে হবে.. গেট রেডি! ‘

চলবে!

তুমিময় পর্ব-০৬

0

#গল্প-তুমিময়
#Aysha_khan
#পার্ট ৬
ভরা দুপুর, বাইরে কাঠ ফাটা রোদ্দুর। কিছু কাক কা কা করছে দূরে। রোদে উত্তাপে বাহিরে দুই একজন লোকজনের ও দেখা মেলছেনা আজ। আহি আয়াত ভাইয়া কাল রাতে হানিমুনে গিয়েছে। দুই পরিবার তারা ফিরে আসা পর্যন্ত এখানেই থাকবে। আজ দুদিন জ্বরের দোহাই দিয়ে বাহিরে যাইনা আমি। আদনান ভাই আদৃতা আপুকে এক সাথে দেখার সহস হয়না আর কেননা আগের মতো মনে সূক্ষ্ম আশাটুকু আর নেই আদনান এসব নাটক করেন। আমাকে ভালোবাসেন। নিজেকে বড্ড ছোট লাগছে আজ। দ্যা গ্রেট আদনান ভাইকে ভালোবাসার মতো ভুল কি করে করলাম আমি? আমার কী সেই যোগ্যতা আছে? কোথায়। আদনান ভাই কোথায় আমি!

তাছাড়া এতটা বেসামাল আমি কী করে হলাম কিভাবে বললাম আদনান ভাইকে এতো গুলো কথা কী করে শুনালাম আমি আমার অনুভূতি গুলো আমি সেটা ভেবেই অবাক। প্রেমে ডুবলে সত্যি মানুষ সব পায়ে ভয়কেও জয় করতে পারে যমকেও ভাল বাসতে পারে! আমার সাথেই তাই হয়েছে সেটাই আজ আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আমার এতটা বেসামালেরও কারণ আছে। নিজের ভালোবাসা অন্যকারোর হয়ে যাবে শুনলে নিশ্চয়ই কোনও রমনী সামলে থাকবে না?

আহির হলুদের দিন রাতেই আমি নানুর ঘরে সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়। নানু আর বড় মামার সাথে আদৃতা আপুর বাবাকে তাদের বিয়ের কথা বলতে শুনেছি। তবুও বুকে পাথর চেপে পুরো বিয়েতে মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখেছিলাম। শুধু মাত্র এই ভেবে আদনান ভাই…..এখন তার ঠিক আছে কথাটা আমার কানে বাজে শুধু। আর কিছুই নয়।

দুদিনেও আদনান ভাইকে দেখিনি এখন আর দেখতে ইচ্ছে করলেও। মনে হয় এভাবেই ভালো। বারান্দায় দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ মেইন গেটের দিকে চোখ পরতেই দেখলাম আদনান ভাই দাঁড়িয়ে দৃষ্টি তার আমার উপর ভ্রু কুঁচকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে উমি। উনার এহেন দৃষ্টিতে আমি মোটেও বিচলিত হলাম না শুধু দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলাম। কিছু সময় পর আদৃতা আপুর কণ্ঠ শুনতে পেলাম। এবার পাথড় মনটা গলতে শুরু করলো। দাঁতে দাঁত চেপে কান্না গুলো গিলে নিলাম। আমার চোখের সামনে দিয়েই আদনান ভাই আদৃতা আপুকে নিয়ে গাড়ি করে বেরিয়ে গেলেন।

মাঝে আরও দুদিন চলে গেলো। আজ জ্বর পুরোপুরি সেরেছে একদিন আমি উন্মাদ জ্বরে ভুগেছি। এত জ্বর আমার কখনওই হয়নি। তাই তো জ্বর চলে গেলেও শরীরে অসহ্য ব্যাথা এখনও আছে। তবুও হুট করেই এতদিন রুম বন্ধ থাকলে সবাই অন্যকিছু ভাবতে পারে যা আমি চাইনা। তাই আস্তে আস্তে নিচে গেলাম সিঁড়ি বেয়ে। প্রায় নেমেই গিয়েছিলাম তখন হায়াদ এসে আমার বাম হাত ধরে বলল,

‘ চলো হেল্প করছি! ‘

আমি মাথা দুলালাম সত্যি একটু সাপোর্টের দরকার ছিল এই মুহূর্তে। কেমন যেন পা কাঁপছিলো! হায়াদের সাপোর্টে নেমে দাঁড়াতেই আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। সেটা দেখে হায়াদ বলল,

‘ অয়ত্রী আর একটু রেস্ট নিতে। তোমাকে অনেক দুর্বল লাগছে। ‘

আমি মলিন মুখে স্মিথ হেসে বললাম,

‘ একটু হাটলেই ঠিক হয়ে যাবো। আপনি কোথাও যাচ্ছেন? ‘

‘ না ড্রইং রুমে সবাই মুভি দেখছে চলো তুমিও বসবে!’

‘ চলুন!’

হায়াদ ভাই আমাকে আবারও ধরে নিয়ে গেলো ড্রইং রুমে। ডুপ্লেক্স বাড়ি হওয়া দু তিন দিক দিয়ে সিঁড়ি আছে নিচে নামার আমি সামনের সিঁড়ি দিয়ে নামিনি। পিছনের দিক দিয়ে নেমেছি। হায়াদ আমাকে সেখান থেকে সামনে ড্রইং রুমে নিয়ে গেলো। সেখানে আদনান ভাই সহ সবাই বসে কাজিন গুলো। বড়া নেই হয়তো এই বিকেল টাইমে যে যার রুমে। আমি গিয়ে মাইশার পাশে বসলাম। আমার বাম পাশেই হায়াদ বসলেন। আমাকে দেখেই আদৃতা আপু আমাকে দেখেই আদনান ভাইয়ের গা ঘেষে বসলেন। আমি সেদিকে না তাকিয়ে দৃষ্টি বিশাল স্ক্রিনের টিভিতে রাখলাম। দেবদাস দেখছে সবাই এই পুরোনো মুভি দেখার মানে বুঝতে না পেরে এক বার হায়াদের দিকে প্রশ্নবোধক চাহনি দিলাম। সে দুষ্টু হেসে বলল,

‘ পুরোনো স্মৃতি চারণ করা স্বাস্থের জন্য ভালো! ‘

আমি বিরক্তিকর চাহুনি ওকে ছুঁড়ে মেরে সেই দেবদাস মুভি দেবদাসি হয়ে দেখতে লাগলাম। মনে মনে নিজের ভাগ্যকে হাজার গালি দিলাম। যখন কষ্টে থাকি তখন পুরো কায়নাত ঘুরেফিরে কষ্ট মার্কা জিনিস গুলোই চোখের সামনে ঘুরায়। তাতে যেন কষ্ট দ্বিগুন বেরে যায়। কায়নাত বড্ড নিষ্ঠুর!

রাতে একেবারে খেয়ে দেয়ে রুমে এলাম এর মধ্যে একবারও আদনান ভাইয়ের দিকে তাকাইনি ভুলেও। তাতে মনে হলো কষ্ট বারবে আর কিছুই নয়। দেখতে দেখতে এক সাপ্তাহ চলে গেলো। সব স্বাভাবিক তবে আমার জীবনটা পাংসে হয়ে গেছে। আজকাল একা থাকতে ভালো লাগে কাজিনদের আড্ডায় আমাকে পাওয়া যায়না। সবাই জিজ্ঞেস করলেও কি হয়েছে তোর। আমার উত্তর শরীর ভালো না বলেই কেঁটে পরা সবার চক্ষু আড়ালে।

এভাবেই ১ সাপ্তাহ কেটে গেলো। ছাঁদে দাঁড়িয়ে আমি সেই রাত থেকে ঘুম আসছিলো না আজ কেমন অস্থির লাগছিলো সব। তাই রাত দু’টোর দিকে ছাঁদে এসে দাঁড়িয়েছি এখন ভোর। আমার চোখের সামনে দিয়েই নিকষ কালো আঁধার কেঁটে ধীরে ধীরে আলোকিত হয়ে গেলো আকাশ পাতাল। মনে হলো ইশ যদি আমার জীবনটাও এভাবেই আলোকিত হয়ে যেতো? কিন্তু বাস্তবতা এটাই পৃথিবীতে রাত দিন যেমন আছে তেমনি জীবনে ভালো সময় খারাপ সময় বলেও একটা কথা আছে। আজ হয়তো আমার খারাপ সময় যাচ্ছে কিন্তু ভালো সময়টাও ঠিক আসবে ঠিক এই আলোকিত ভোরের মতো। আসতে বাধ্য তারা। কারণ এটাইযে নিয়ম দুঃখের পর সুখ আসবেই! ভাবনার মাঝেই মনে হলো কেউ পিছনে দাঁড়িয়ে। আমি ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকাম অমনি কেই ” ভাউউউ ” শব্দ করে উঠলো। বিকট এক চিৎকার মেরে তব্দা মেরে গেলাম সামনে হায়াদ দাঁড়িয়ে।

আমাকে এত ভয় পেতে দেখে বেচারা নিজেই ভয় পেয়ে গেলো। আমি বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলাম। হায়াদ আলতো করে পিঠে হাত রাখতে যাবে তখন আমার চিৎকার থেকে বিকট জোরে শব্দ হলো। তাতে এবার আমি চিৎকার দিয়ে হায়াদকে ঝাপটে ধরলাম। বেশকিছু ক্ষণ পিনপতন নীরবতা। অতঃপর আমি পিটপিট করে চোখ খুলতেই দরজায় চোখ পরলো। আদনান ভাই দাঁড়িয়ে রক্তিম চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। আমি আদনান ভাইকে দেখে দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়ালাম হায়াদ উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,

‘ আই এ্যাম সরি অয়ত্রী! বুঝিনি এতটা ভয় পাবে তুমি! ‘

আমি মাথা দুলালাম এই মুহূর্তে আদনান ভাইকে ভয় করছে আর কিছু না। কেন এত ভয় করে তাকে সেটা ভেবেই কান্না পেলো। তবে সব চুকিয়ে ফেলেছি আমি তাই কিছুটা স্বস্তি আছে মনের কোণে। আমি আদনান ভাইয়ের দিকে আর তাকালামা না। হায়াদকে বলাম,

‘ ইটস ওকে। আসকে অন্যমনস্ক ছিলাম তাই ভয় পেয়ে গেছি বেশি। আপনি এত সকালে ছাঁদে কেন? ‘

হায়াদ আদনান ভাইয়ের দিকে একবার তাকিয়ে মেকি হেসে বলল,

‘ তোমাকে পাহাড়া দিচ্ছিলাম যদি ছাঁদ থেকে কোন ছেলে পরি এসে তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যায় তাই…..!’

এই কথা শুনে দেখলাম আদনান ভাই আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুড়ে হনহনিয়ে নিচে চলে গেলেন। আমি অবাক চোখে হায়াদের সিকে তাকালাম ওর মুখে রহস্যময় হাসি! আমি কিছু জিজ্ঞেস করবো তখন।

পিহু আপু ছুঁটে এসে আমার হাত ধরে নিচে নিয়ে যেতে লাগলেন। আমি হায়াদ ভাই দুজনেই হতবিহ্বল পিহু আপুর কাজে। আপু আমাকে আমার রুমে ঢুকিয়ে রুম বাইরে থেকে লক করে দিলেন। আমি রুমে ঢুকেও শুনতে পাচ্ছিলাম আদনান ভাইয়ের রুম থেকে ভেসে আসছে ভাংচুরের শব্দ! তীব্র শব্দে কান ঝালাপা হয়ে যাচ্ছে। এদিকে আমি কিছুই বুঝতে পারছিমা হচ্ছেটাকি? আদনান ভাই কেন রেগে?

সে রেগে মেগে থাকলেই ভাংচুরের অভ্যাস আছে। তবে এখন উনি কেন রেগে মাথায় ঢুকছেনা। শুধু মনে হচ্ছে দুনিয়ায় সব বাজে অত্যাস এই ছেলের মধ্যে আছে ভালোই হয়েছে সে আমার ভালোবাসেনা।

তখনও আমি বুঝিনি আদনান ভাইয়ের ঘরে এই ঝড় আমাকে ঘিরে। আমার উপর শনি ঘুরছে! কপালে খারাপি আছে।

চলবে!

তুমিময় পর্ব-০৫

0

#গল্প-তুমিময়
#Aysha_khan
#পার্ট ৫
রাস্তার এক পাশে বেশ বড় বিল! বিলের পানি ল্যাম্পপোস্টের আলো চিকচিক করছে। অন্য পাশে ক্ষেত যতদূর দেখা যায়। তার মধ্যে সরু পিঁচ সচ্ছ রাস্তায় আমি আদনান ভাই নিরবে দাঁড়িয়ে। চারপাশ নিস্তব্ধতা চাপা ঝনঝন শব্দ গ্রাম্য পোকারা তৈরী করছে। পরিস্থিতিটা যেন তাতে আরও গম্ভীর করে তুলছে।

মনে চলছে কাল বৈশাখের ঝড়। এত গুলো বড় বড় কথা বড্ড দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে অটপকে বলে ফেললেও। আদনান ভাইয়ের রাগ, জেদ সম্পর্কে আমি বেশ পরিচিত। আমাকে এতো ভালোবাসার পরেও যখন উনি আমাকে তার অনুভূতি সম্পর্কে জানাতে অনিচ্ছুক। আর আমি সেটা টের পেয়ে গেছি এভাবে। তাতে উনি রেগে যাবেন। শুধু রাগবেন না মাত্রাধিক রেগে যাবেন। তিক্ত বানী আমি হজম করতে পারবো কিন্তু তার বেশি আমি সহ্য করতে পারবোনা। আমি বরাবরই কোমল হৃদয়ের অধিকারিণী। আমার হৃদয় হরনকারী আদনান ভাইয়ের থেকে এর থেকে বেশি কষ্ট আমি সহ্য করতে পারবোনা।

ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আমি যখন নিজের কোমল হৃদয়কে কিছু তিক্ত বানী শোনাতে পুরো দমে প্রস্তুত করে চলছি। তখন আদনান আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন! উনার ক্রু ভয়ংকর শীতল হাসিতে ভেতরটা কেঁপে উঠলো! আমি ভালোই বুঝলাম আমি নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছি! আদনান তখনও পেট হাত চেপে হাসতে ব্যাস্ত। লক্ষ্য করলাম তার মুখ অসম্ভব লাল হয়ে গিয়েছে। রাগে কাঁপছে সে। এতটুকু যথেষ্ট ছিলো আমার ভয়ে কেঁদে দেওয়া। চোখ বুক ফেঁটে কান্না পাচ্ছে আমার। ঠোঁট উলটে কেঁদে দিলাম আমি। মুহূর্তে চোখের জলে গাল ভেসে গেলো। আমার কান্নায় হাসি থামালেন উনি। রেগে চাইলেন আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে।

ভয়ে আমি কান্না থামানো আপ্রাণ চেষ্টা করাতে ফোপাঁনি উঠে গেলো নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হতে লাগলো। আমার এহেন অবস্থা দেখে উনি উনার দৃষ্টি অন্য দিকে রাখলেন। চুলে ব্যাক ব্রাশ করে আচমকা আমার ডান বাহু ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে ধরলেন আলতো করে। এত এত উষ্ণতা ছিলো উনার বক্ষঃস্থলে। আমি বিড়াল ছানার মতো উনার উষ্ণ বুকে মাথা আরও এঁটে দিগুন উদ্যোগে কাঁদতে লাগলাম। অনুভব করলাম উনার একটা হাত আমার চুলে হাত বুলাচ্ছে! তাতে কান্নারা আরও প্রগাঢ় হলো আমার। এতদিন আদৃতা আপুকে নিয়ে করা অভিনয়ের জন্য যে কষ্ট ছিলো আমার মনে সব কেঁদেই আমি ভাসিয়ে দিতে চাইলাম, উনার প্রতি আমার সকল অভিমান, অভিযোগ আমি আজ যেন শেষ করে দেবো বলেই ঠিক করেছি। বেশ কিছু ক্ষণ কাঁদার পর মস্তিষ্ক, মন সব আমাকে চিৎকার করে বলল, আজ এসব কিছু শেষ নয় শুরু যে কোনও একটা মেনে নিতে নয়তো মানতে প্রস্তুত হও অয়ত্রী এভাবে কষ্ট তুমি কেন পাবে? কি দোষ তোমার বরং দোষ তার যে তোমাকে যেনে শুনে কষ্ট দিচ্ছে আবার ভালোও বাসছে না। হয় তাকে শুধু কষ্ট দিতে হবে নয়তো ভালোবাসতে হবে। মনে মনে কথা গুলো ভেবেই অভিমানী স্বরে উনার বুকে পরে কাঁদতে কাঁদতেই বললাম,

‘ আপনি আমাকে ভালোবাসেন। এই দেখুন এখনও আপনি আমার কান্না সহ্য করতে পারছেন না! যদি ভালো নাই বাসেন। তবে…! ‘

আদনান ভাই অস্ফুট স্বরে বলেন,

‘ তবে? তবে হোয়াট?!

আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলাম পারলাম না বিন্দুমাত্র। বরংচ উনি দিগুন জোরে আমাকে জরিয়ে ধরলো। তবুও আমি রুঢ় কণ্ঠে বললাম,

‘ তবে আমাকে আমার মতো ছেড়ে দিন। আমাকে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে দিন। মুক্তি দিন আপনার এই অদৃশ্য ভালোবাসা অধিকারবোধ থেকে। আপনার এই অদৃশ্য ভালোবাসা আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ডুবে গেছে আদনান ভাই। তবে এখনও কিছু সময় আছে আমি মানিয়ে নিতে সেই ছোট্ট বেলা থেকে শিখেছি এখনও পারবো। কিন্তু আর একটু দেড়ি হলেওনা আদনান ভাই আমি পারবোনা আমি মরে যাবো। তাই আজ হয় আপনি আমাকে মেনে নিন। নয়তো কাল আদৃতা আপুর বাবা আপনার আর আদৃতা আপুর বিয়ের কথা বলবে… আর আপনাকে..!’

আমার কথা আকটকে। আদনান ভাই বললেন,

‘ তো আমাকে কি করতে হবে?’

আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে বললাম,

‘ আপনাকে বিয়েতে রাজি হতে হবে!’

আদনান স্বাভাবিক সুন্দর কণ্ঠে বললেন,

‘ ঠিক আছে! ‘

“ঠিক আছে!” একটা ছোট্ট শব্দ কিন্তু আমার মনে হলো এর থেকে তিক্ত, বিষাক্ত শব্দ আর একটি নেই। সত্যিই আজ মনে হলো একটা নির্দয় ছেলেকে ভালোবেসেছি আমি। আমার কিশোরী মনের প্রথম এবং শেষ অনুভূতি আদনাদ ভাই। বুঝাতে পারবোনা। তার ঠিক আছে কথাটায় আমার ঠিক কতটা কষ্ট হচ্ছে। তবে আমাকে এতটুকু কষ্ট দিয়ে থামলেন না আদনান ভাই কিছু থেমে আবার বলে উঠলেন,

‘আমি আদৃতাকে ভালোবাসি। তাকে বিয়ে করতে রাজি হবোনাইনা কেন? আদৃতাকে আমি সেই অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি। অনেক কষ্টে ওকে রাজি করিয়েছি আমাদের একটা সুন্দর রিলেশন আছে। যা বিয়ে পর্যন্ত যাবে এটাই স্বাভাবিক। তোমাকে এতটা টেক কেয়ার করার একমাত্র কারণ। তোর যার সাথে বিয়ে ঠিক করেছিলো সে তোমার পিছনে এখানে অব্ধি চলে এসেছিলো। তাই তোমাকে তোমার বাড়ি আর যেতে দেইনি তোমার বাবা তাই আমাদের বাড়ি এসেই তোমাকে দেখে যেতেন। কলেজ যাওয়াও ওই ইকবাল এর জন্যেই বন্ধ করেছি সেটা দাদুর কথায়। তুমি এক প্রকার বন্দী থাকতি তাই তোমাকে আমি মাঝেমধ্যে বাইরে নিয়ে যাই। দুষ্টুমি করি বাসায় সেটা তুমি খেয়াল করলেই দেখতে সব কাজিনদের সাথেই করি তাই বলে সবাইকে তো ভালোবাসিনা আমি তাই না? ‘

শরীর টা মিইয়ে ছিলো কষ্টে উনার এক্সপ্লেইন গুলো শুনে তীক্ষ্ণ ব্যাথায় বুকে রক্তক্ষরণ হলো। এককেকটা কথা তীরের মতো তীব্র গতিতে বুকে গিয়ে বাধল। সেগুলো থেকেই রক্তক্ষরণ এর উৎপত্তি। আমি বহু কষ্টে উনার দিকে একবার তাকালাম। উনি স্বাভাবিক ভাবে উনার তীক্ষ্ণ সুন্দর চোখ জোরা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে। আগের ভয়ংকরী রাগান্বিত আভা আর চোখে মুখে নেই। আমি স্মিত হাসলাম অতঃপর বললাম,

‘ তাহলে পিহু আপু প্রান্ত ভাইয়ার আগেই আপনার আর আদৃতা আপুর বিয়ের শপিং করতে হবে আমাকে?’

উনি উনার সুন্দর মুখশ্রীতে ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটিয়ে বলল,

‘ হ্যাঁ। এবং তুমি সুন্দর ভাবে বুঝার জন্য ধন্যবাদ আশা করি কোনও ঝামেলা করবেনা আর এসব বলে আমার মাথাও গরম করবেনা!’

আমি দুর্বল থাকলেও প্রথমের মত রূঢ় কণ্ঠে বললাম,

‘ চিন্তা করবেন না আর কখনও বলবো না! বলেই সঙ্গে সঙ্গে মাথা নিচু করে ফেললাম আমার কষ্টের অশ্রুপাত আমি এই নির্দয় লোকটাকে দেখাতে চাইনা যে!

জীবনের প্রথম এত কষ্ট পেয়েছি আমি মস্তিষ্ক নিতে পারেনি এক সময় জ্ঞান হারাই৷ জ্ঞান পুরোপুরি হারানোর আগে আদনান ভাই কিছু বলছিলেন আমাকে আমি শুনতে পেলেও মস্তিষ্ক ক্যাচ করতে পারেনি শব্দ গুলোর অর্থ। শুধু বুঝতে পারছিলাম আমি শূন্যে ভাসছি।

যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সকাল ১১ টা। মাথার পাশে বড় মামী বসে আছে আমাকে চোখ খুলতে দেখে বলল,

‘ কিরে এক বোনের বিয়ে দিয়ে ক্লান্ত হয়ে গেলি? এখনও তোর যমের বিয়ে বাকি। অসভ্যটা বিয়েতে রাজি হয়েছে। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠ। বাসায় সবাই তোকে নিয়ে চিন্তিত!’

ঘুম থেকে উঠেই আবারও আদনান ভাইয়ের বিয়ের কথা শুনতে পাবো ভাবিনি৷ মামী আমাকে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। একটু পর একে একে সব কাজিন বররাও এসে দেখে গেলেন এলেন না শুধু আদনান ভাই আদ আদৃতা আপু।

আদৃতা আপুকে আশা করি না আমি। কিন্তু আদনান ভাই? সে একবার এলেন না এতে অবাক আমি। কেননা আমার জ্বর হলে আকাশ পাতাল এক করে ফেলতেন লোকটা। আজ বড্ড আফসোস হচ্ছে। কাল নিজের অনুভূতির প্রকাশ না করলেই হয়তো আজ উনার কেয়ার গুলো পেতাম। হয়তো বা ওভাবেই ভালো ছিলো।

কিন্তু আসলেই কি তাই? না বরং পরে আমার বেশি কষ্ট হতো! তাই এখন থেকে আবার নতুন অভ্যাসে নিজেকে মানিয়ে নিতে প্রস্তুত হবো এটাই ভালো মায়া বারিয়ে লাভ কোথায় নির্দয় লোকটারতো কষ্ট হয়না। যা হওয়ার সব আমারি হোক। সে ভালো থাকুক সেটাই আমি চাই।

চলবে!

তুমিময় পর্ব-০৪

0

#গল্প-তুমিময়
#Aysha_khan
#part 4

আহিকে বাসরঘরে ঠিকঠাক রেখে যে যার মতো ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে যাচ্ছিলাম। রুমে ঢুকবো সেই মুহূর্তে কেউ হাত ধরলেন। আমি জানি ইনি কে। আদনান ভাই ছাড়া কেউনা। ক্লান্ত সাথে করুণ চোখে পিছনে ফিরে তাকাতেই উনার হাস উজ্জ্বল মুখ দেখে থমকে গেলাম। আদনান ভাই সুন্দর তেমনি তার হাসি মাত্রাধিক সুন্দর কিন্তু কথা হলো ছেলের হাসিও এতো সুন্দর হতে হয়? আশ্চর্য। যাইহোক উনি চাপা স্বরে ফিসফিস করে বললেন,

‘এখনে একটা স্টল আছে অত্যাধিক মজার ফুচকা খেতে পাওয়া যায়। খেতে চাইলে এখুনি….!’

তার কথা শেষ না হতেই আমি দ্রুত মাথা দুলালাম। অতঃপর উত্তেজিত কণ্ঠে বললাম,

‘একদম লোভ দেখাবেন না! রাত ১ টায় এই মফস্বল শহরে ফুচকা কোথাও পাওয়া যাবেনা। আপনি নিশ্চয়ই ছাঁদে যাওয়ার জন্য শাস্তি দিতে চাইছেন আমাকে ? প্লিজ আমি ক্ষমা চাইছি তো সরি সরি সরি প্লিজ!’

আদনান ভাই আমার কথা কানেও তুললেন না বরং চোখ বুজে কান পরিষ্কার করার মতো করে কানে আঙুল দিয়ে নাড়াতে লাগলেন। অতঃপর আমি চুপচাপ হেটে সামনে এগুতে লাগলাম। নির্দয় লোকটার চালাকি আমি বেশ বুঝতে পারছি কিন্তু কিছুই করতে পারছিনা। হারামি তোর বৌ পালিয়ে যাক।

‘ আমাকে গালি দেওয়া হয়ে গেলে। এইসব আবর্জনা স্তূপ মুখ থেকে কিছুটা পরিষ্কার করেনে প্লিজ। বিচ্ছিরি লাগছে!’

হঠাৎ এহেন কথায় পিলে চমকে উঠলো। শেষের কথাটা মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ সরাসরি পৌঁছে হৃদয়ে আঘাত করে বসলো। যার জন্য সাজলাম সেই বিচ্ছিরি উপাধি দিয়ে দিলো৷ আঘাত পাওয়ারি কথা তাও আমার মতো সোফট হার্টের মানুষের তো কথাই নেই! চুপসে যাওয়া মন নিয়ে হেটে যেতে যেতে লিপস্টিক মুছে নিলাম। আর কিছু করলাম না তাতে আবার ভূত উপাধিতেও উপাধিত হতে পারি কে জানে? হেটে হেটে তার পিছু পিছু চলছি কি আশ্চর্য উনি মেইন গেটের বাইরে গিয়েও হেটেই চলেছে। এদিকে আমার পা চলছে না। আজ আহির বিয়ে ছিলো। বিদায়ের কষ্ট না থাকলেও। দৌড় ঝাপে খুব ক্লান্ত সবাই। এখন তো যে যার মতো ঘুমিয়ে পরেছে আর আমাকে। অকর্মাটা এভাবে হাটাচ্ছে। আদনান ভাই একটা কাজও করেনি। শুধু বড়বড় কিছু আর্টিস্ট নিয়ে এসেছিলেন। ঘর বাড়ি সাজাতে। আর আমরা বোনরা টানা ১ মাস ধরে খাটছি তাও অল ক্রেডিট পাচ্ছে আদনান ভাই সবাই ডেকোরেশন এর জন্য প্রশংসা করছেন উনার। আচ্ছা উনি করেছেন টাকি তাই আমি বুঝলাম না কিছু লোক এনে হাজার প্রশংসা কুড়িয়েছেন এটাই। গাঁ জ্বালা করছিলো। আমাদের বোনদের কিন্ত হজম করা ছাড়া কিছুই করার নেই তো চাই চুপচাপ গিলছি মানে হজম করছি!

কিছু সময় হাটার পর গতি কমিয়ে হাপিয়ে গিয়ে বললাম,

‘ আদনান ভাই আর পারছিনা!’

উনি প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বলল,

‘ আমার সাথে কথা বলবে না ভেবেছিলে! এতটুকু শাস্তিতো প্রাপ্য তাই না?’

আপনারা খেয়াল করেছেন। আদনান ভাই আমাকে তুই তুমি দুটোয় বলেন। আসলে আমার সাথে একা থাকা কালিন উনি আমাকে তুমি করেই বলেন। আর নাহলে তুই ভীষণ আশ্চর্য হই আমি কৌতূহল ও জাগে জানার কেন এমন কিন্তু উত্তরের কোঠা শূন্য এতবছর ধরেই। উনার কথার পিঠে বললাম,

‘ এবার বাড়ি চলে যাই শাস্তি তো শেষ! ‘

আদনান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,

‘ আমার থেকে শাস্তি পেতে দেখছি তোমার খুব ভালো লাগে?’

আমি মেকি হাসলাম উত্তরে কিছু বললাম না। উনি অদ্ভুত হাসলেন আমার হাসির পিঠে। ঠিক তখন প্রান্ত ভাইয়া গাড়ি নিয়ে এলেন পাশের সীটে পিহু আপু বসে। বেশ অবাক হলাম আমি পিহু আপুকে দেখে আপু একটু লজ্জা লজ্জা পাচ্ছে আদনান ভাইকে দেখে। আদনান ভাই সেদিকে পাত্তানা দিয়ে আমাকে বললেন,

‘ গাড়িতে উঠ!’

আমিও চুপ চাপ উঠে বসলাম পিছনে। আমাকে উঠিয়ে আদনান ভাই নিজেও উঠে বসলেন প্রান্ত ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট দিলো। পিহু আপুকে দেখলাম আমারা বসতেই আপু কাচুমাচু ভাব বেরে গেলো। আমি মাথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রান্ত ভাইয়া পিহু আপুকে বারবার দেখছি। ঘাপলা লাগছে বেশ। সত্যি বলতে আমি বিস্মিত তাদের মধ্যে কিছু আছে ভাবতেও। আমাকে আরও বিস্ময় করে দিয়ে আদনান ভাই বাহিরে তাকিয়েই বল উঠলেন,

‘ অয়ত্রী এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। নেক্সট বিয়ে প্রান্ত পিহুর তুই আবার তিন মাসের জন্য শপিং করতে তৈরী হয়েনে!’

আদনান অতি শান্ত শীতল কণ্ঠে কিছু সাধারণ বাক্য বললেও। আমি বিস্ফোরিত চোখে তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। আদনান ভাইয়ের নির্লিপ্ততায় প্রকাশ করে উনি সব জানতেন। আমি এক হাত হাঁ করে পিহু আপুর দিকে তাকিয়ে। সে মুখ লুকাতে ব্যাস্ত। গাড়িতে দুই বন্ধুর নির্লিপ্ততা এই নিয়েই। সত্যি একটা ফুচকা স্টলে গাড়ি থামলো। এত-সময় বিস্মিত আস্মিত হলেও এখন আমি মনে মনে রাগ বড্ড রাগ। তাই চুপচাপ আদনান ভাইয়ের কথা মতো সব করলাম যা উনি আমাদের বললেন। পিহু আপুর সাথে কথা বললাম না একটুও। পিহু আপু কাচুমাচু করছেন শুধু কিন্তু কিছু বলতে পারছেন না তবে বুঝছেন আমি রেগে তার উপর।

ফুচকা আসলেই বেসামাল খেলাম। প্রান্ত ভাইয়া খাওয়া শেষে পিহু আপুকে নিয়ে গাড়িতে চলে গেলেন আমি আদনান ভাই খোলা রাস্তায় হাটছি। গাড়ি আস্তে আস্তে পিছনে পরে যাচ্ছে আমাদের। আদনান ভাই আমাকে একা বের হতে দেন না কোথাও কিন্তু এভাবে হুটহাট কোথাও না কোথাও ঠিকি নিয়ে যাবে সাপ্তাহে দু এক বার। হাটতে হাটতে আদনান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ অয়ত্রী আমি খুব খারাপ তাই না?’

আমি ফট করেই বলে ফেললাম,

‘ না আপনি খুব ভালো! ‘

আদনান ভাই নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল,

‘ নির্দয় লোকরা ভালো হয়!’

আজ কি যেন হলো আমার। তার এহেন কথায় চেঁচিয়ে উঠলাম,

‘ আপনি নির্দয় নন। কিন্তু আপনি নির্দয় লোকের অভিনয় করেন আমার সাথে। আমি জানি আদৃতা আপুকে ভালোবাসে না আপনি। শুধু শুধু আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন। আদনান ভাই সবাই বিয়ে করে ফেলছে আমরা কবে করবো!’

আদনান ভাই আমার কথায় কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেছে সেটা আমি বুঝতে পারলাম। এবং আমি নিজেও লজ্জায় পরে গেলাম তাই দ্রুত ভাড়ি লেহেঙ্গাটা একটু উঁচু করে সামনে হাটা দিলাম। কয়েকপা যেতে আদনান ভাই বললেন,

‘ অয়ত্রী আমি তোকে কখনওই বোন ছাড়া কিছুই ভাবিনি!’

আমি দাঁড়িয়ে গেলাম পিছনে ফিরে রূঢ় কণ্ঠে বললাম,

‘ মিথ্যে কথা এটা, সত্যি এটাই আপনি কখনওই আমাকে বোনের চোখে দেখতে পারেননি! হয়তো সেটা আমাকে এখানে আনার আগ থেকেই। আপনি ফাস্ট্রেট আর জেলাসিতে সব সময় আমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেন। কিন্তু এখন আমি কষ্ট পাইনা কারণ আপনিও আমার প্রথম অনুভূতি! ‘

আদনান ভাইয়ের ধরা পরে যাওয়া মুখ দেখে আমি কনফার্ম হয়ে গেলাম। এও বুঝলাম তিনি আমার কথা মেনে নিবেনা সহজে। শিকার করবে না উনি আমাকে ভালোবাসে বরং কষ্ট দিবে দিগুণ। আমি নিজেকে প্রস্তুত করলাম সেভাবে!

চলবে!

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।

তুমিময় পর্ব-০৩

0

#গল্প-তুমিময়
#Aysha_khan
#পার্ট ৩
আদনান ভাইয়ের রুম থেকে তার বলা কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বের হচ্ছিলাম। তখন আহি সহ হুরমুর করে সব কাজিন রুমে ঢুকে আমার আহি আমার ব্লাশ করা গাল টিপে ধরে আমি হতভম্ব! হচ্ছেটা কি এখানে? ওর চোখেও পানি। পিছনে আদৃতা আপু। আদনান ভাইয়ের ছোট বোন অনু, পাশে আহির বোন মাইশা আপু দাঁড়িয়ে! আদনান ভাইয়ের বন্ধু আশিক, প্রান্ত, অভি ভাইয়ারা দাঁড়িয়ে দরজার কোণায় তার পিছনে আয়াত ভাইয়া হায়াদ দাঁড়িয়ে এবং তাদের এক মাত্র বড় বোন পিহু আপু উজ্জ্বল মুখে আমার দিকে তাকিয়ে!

সবাই হুট করে কেন এই নির্দয় লোকটার রুমে হামলা চালিয়েছেন জানি না। হুট করেই আহি কাঁদো কাঁদো স্বরে দিগুন জোরে কান চেপে ধরে বলল,

‘ তুই সত্যি আমার ফুপ্পির মেয়ে অয়ত্রী তো? আমি আজ সন্দিহান প্রচণ্ড সন্দিহান, সব নিজ হাতে করে তুই আমাকে হলুদটা পর্যন্ত ছোঁয়াতে নিচে নামলিনা আদনান এত ডাকার পরেও? কি করে পারলি আমার এতো সুন্দর দিনটা মাটি করে দিতে? বল?’

আমি হত বিস্মিত আহির কথায়! কী বলছে কী এই মেয়ে? আমাকে আর আদনান ভাই ডেকেছেন ফাংশনে যেতে! যেকিনা আমাকে অনুষ্ঠান থেকে তাড়ানোর ধান্দায় কত কিছুই না করলো। এদিকে কান ব্যাথা নিয়েই আমি আদনান ভাইয়ের দিকে তাকালাম। এতো লোক তার ঘরে তবুও সে ঘুমের ভঙিমায় শুয়ে এই কাজটাও এই পাষণ্ডটাই পারে। আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে সে দিব্বি শুয়ে শুয়ে মজা নিচ্ছে!

‘ অয়ত্রী আহি কষ্ট পেয়েছে। এবং আমরা সকলেই কষ্ট পেয়েছি। তুমি নিচে গিয়েও কেন চলে এলে! আর এলেই যখন আদনান ডাকার পরেও কেন গেলে না!’

প্রান্ত ভাইয়ার এহেন কথায়। এবার আমি বুঝলাম ব্রেকফাস্ট টেবিলে কেউ কেন আমার সাথে কথা বলেনি। আহিতো সেই মুখ ভার করে ছিলো। ওর কষ্ট কমাতেও মনে হলো একটু প্রতিবাদ করা প্রয়োজন। এদিকে সবার মুখে একি প্রশ্ন তারা আদনান ভাইয়ের রুম ভর্তি করে এদিক ওদিক বসলেন। আদি তখনও আমার কান ছেড়ে বসছেনা। তাই পিহু আপু তাকে ছাড়িয়ে বসাতেই আহি ক্ষেপে বলল,

‘ ছাড়ো আপু ওকে বলতে হবে কেন ও নিচে গিয়েও এভাবে না বলে চলে এলো কি করে বোন হয়ে এ কাজ ও করলো? আমি এর উত্তর চাই?’

এবার আমি ঘুমের নাটক করা আদনান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রেগে বললাম,

‘ আমাকে তোদের নির্দয় ভাই আসতে দেয়নি!’

হায়াদ এবার কক্ষাট্ট করে বলে উঠলেন,

‘ আমি জানতাম এমনি কিছু, আদনান ভাই তোমাকে নিচে যেতে দেয়নি তাইনা? ‘

এবার ভয় পেলাম। তাই কিছু বলাম না। আহি আমার এবং হায়াদের কথায় জ্বলে উঠলো। এতো সময় কেউ ভুলেও ডাকেনি আদনান ভাইকে। আহি একবার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে! আদনান ভাই এর সামনে গিয়ে আদি চিৎকার করে বলল,

‘ অয়ত্রীর উপর কী শুধুই তোমার অধিকার ভাই? ও কি আমার বোন না ও কেন থাকবেনা আমার মেহেদীতে? আমার উত্তর চাই কেন দিলেনা ওকে আসতে? তুমি কি করে পারলে এটা?’

আমি সহ সবাই আহির কান্ডে হতবিহ্বল! কেউ ঘুনাক্ষনেও বুঝিনি ও এমন করে বসবে। আদনান ভাই তার সাথে কেউ চেঁচামেচি করুক সেটা একদম পছন্দ করে না। বড় মামা পর্যন্ত নরম স্বরে তার সাথে কথা বলে সেখানে আহি বাসার পুচকে। আর ও এই প্রথম এত দূর সাহস দেখাচ্ছে আদনান ভাইয়ের থেকে উত্তর চাইছে তাও চিৎকার করে। শুধু মাত্র আমার জন্যে মেয়েটা সত্যি আমি বলতে পাগল। কাজিনদের মধ্যে আমি সব থেকে সবার পছন্দের কেন সেটা জানিনা শুধু জানি ওরা আমাকে জান দিয়ে ভালোবাসে আগলে রাখে হ্যাঁ আদনান ভাইয়ের থেকেও বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেনা। ভাবতে ভাবতে চোখ দুটো জ্বল জ্বল করে উঠলো। আমি দ্রুত গিয়ে আহির হাত চেপে ধরলাম। বাকি সবাই ওকে শান্ত হতে বলছে কিন্তু আহি যেন আজ আগুনে পরিনত হয়েছে। যে কেউ এই মুহূর্তে ওকে দেখলে বলবে আসলেই মেয়েটা আদনান শুভ্রের কাজিন!

আমার যখন আহিকে নিয়ে ব্যাস্ত। আদনান ভাই হুট করেই শোয়া থেকে উঠে বসলেন! সোজা আমার দিকে তাকিয়ে শীতল কিন্তু শক্ত চোয়ালে বলে উঠলেন,

‘আমি রাতে তোর রুমে নক করিনি অসংখ্য বার?’

উনি রেগে গেছেন বুঝতে বাকি নেই। আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে মাথা দুলালাম। সেটা দেখে আহি রেগে বলল,

‘ ভাই আমি তোমার বোন বলে মিথ্যে বলবোনা তুমি সব সময় আপুকে ভয় দেখাও! এমন কেন? কই আমাদের সাথে তো এমন করোনা? ‘

আমি শক্ত করে আহির হাত খাঁমচে ধরলাম। যার অর্থ চুপ কর আর আমার কপালে শনি বারাস না। তুই তো চলে যাবি আমাকে কুয়োয় ধাক্কা দিয়ে ফেলে কেন যাবি? আদনান ভাই ভ্রু কুঁচকে আবারও বললেন,

‘ অয়ত্রী আমি তোকে ভয় দেখাই?’

আমি বোবার মতো আবারও মাথা নাড়ালাম দ্রুত! আদনান ভাই ভ্রু নাচিয়ে আহির দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ আমাকে মিথ্যে অপবাদ দিতে বোন হয়ে তোর বিবেকে বাধলোনা? আমি ওকে ডেকেছি ও যদি না বের হয়। নাক ডেকে ঘুমিয়ে পরে তাতে আমার দোষ কী? আমার তো মনে হয় যার জন্য আমার সাথে বেয়াদবি করছিস সে তোর থেকে বেশি ঘুমকে ভালোবাসে!’

উপস্থিত সবাই মিটমিট হাসছেন। আহি কটমট করে আমার দিকে একবার তাকিয়ে রুম ত্যাগ করলো। বাকি সবাই হু হা করে হেসে উঠলো। কিভাবে আমার অসহায়তার মজা নেওয়া হচ্ছে দেখে আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে! করুণ চোখে আদনান ভাইয়ের দিকে তাকাতেই সে আমাকে চোখ টিপ মারলেন। রেগে রুম থেকে বেরুনোর সময় দেখলাম আদৃতা আপু আমার দিকে এখনও রেগে তাকিয়ে মনে হচ্ছে মেরে ফেলবে আমাকে! আমি রেগে ছিলাম বলে হুদ্দাই মুখ ভেঙচিয়ে বের হয়ে গেলাম তার রুম থেকে। পিছনে আদৃতা আপু বের হলো। রুমে পিহু আপু অনু আপু আর মাইশা রয়ে গেলেন। সাথে পান্ত ভাইয়া আশিক ভাইয়া অভি ভাইয়া। আয়াত, হায়াদ এক সাথে কিছু একটা বলে হু হা করে হাসছিলেন! সেটা কি আমি বুঝলাম না।

তার আগেই আমি আহির রুমের দিকে ছুটে চলে গেলাম। কিন্তু এই মুহূর্তে আদনান ভাইয়ের রুমে যে কটা আছে সব গুলো লুচ্চামিতে পি এচ ডি প্রাপ্ত! আস্ত বজ্জাত সব গুলো। এদের পাশে অপরিচিত কেউ বসলে লজ্জায় জ্ঞান হারাবে তাতে আমার কোনও সন্দেহ নেই!

আহির রুমে ঢুকেই দেখলাম ও কাঁদছে আর এক হাতে মেহেদীর দিকে তাকিয়ে আছে। রুমে এক কোণায় পরে থাকা রাতে মেহেদী ঢালা থেকে একটা মেহেদী কোন নিয়ে নিশব্দে আমি ওর মুখোমুখি বেডে বসে হাত টেনে আমার কোলে রাখতেই ঝটকায় ছাড়িয়ে নিলো। চিৎকার করে বলল,

‘ আমার কারোর দোয়া চাই না। দিয়ে দেওয়ার হলে রাতেই আসতি!’

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম ওকে কী করে বলি? নির্দেয় লোকটার আসল কাহিনী যদিও আহি সবি বুঝেছে! তাই তো আমার উপর রেগে আমি কেন কিছু বললাম না আদনান ভাইকে! কিন্তু তাকে বলে যে কিছুই হতো না সেটা কি করে বলি আহিকে? আমি আবার ওর হাতটা টেনে নিজের কোলে রেখে মিনতির স্বরে বললাম,

‘ ঠিকাছে তুইই আমাকে দোয়া কর। দিতে দে আমাকে! ‘

এবার হাত নরালোনা আহি। চুপচাপ ফ্যাচ ফ্যাচ করতে লাগলো! ফর্সা মুখ ওর লাল হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতে। আমি ওর এই অবস্থা দেখে করুণ স্মিত কণ্ঠে করে বললাম,

‘ প্লিজ কাঁদিস না। তুই তো সবি জানিস তবুও এই অহেতুক জেদ কেন করছিস!’

আহি আমার দিকে তাকালো, রুক্ষ কণ্ঠে বলল,

‘ তোমার মনে হয় না কাল ভাই বাড়াবাড়ি করেছেন! ভাই জানে তুমি আমার কত কাছের। সেই তুমি একি বাড়িতে থেকে! আমার মেহেদী অনুষ্টানে নেই এটা কেমন হলো।আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। কখনও ক্ষমা করবোনা ভাইকে! ‘

আমি আর কিছু বলাম না। আহি এখন ভীষণ রেগে। তাই সব জেনেও রাগে সব ভুলে যাচ্ছে। যে আদনান ভাই কারো রাগের পরোয়া করেনা। তাই উনার উপর রাগ করা বোকামি ছাড়া কিছুই না! যতটা সম্ভব ওকে বুঝিয়ে কান্না থামালাম। তারপর বড়মা এসে হলুদের গোসলের জন্য ওকে কুচকুচে হলুদ শাড়ি পরিয়ে নিচে নিয়ে গেলেন। একদম হলুদ পরি লাগছিলো ওকে। গোসলে পুরোটা সময় আমি ওর পাশে ছিলাম। সবাই ওর কান্নার কারণ ততক্ষণে যেনে গিয়েছে তাই আমাকে প্রথমেই দিলো ওকে হলুদ ছোঁয়াতে। আমি হলুদ ছোঁয়াতেই আহির মুখে হাসি ফুটলো। রাগ,জেদ ভুলে গেলো। আমি মনে মনে হাসলাম। এই ভাই বোন গুলো আস্তো জেদি! মনে মনে বোনের ভালোবাসা মনটা একদম ফুরফুরে হয়ে গেলো। কালকের জন্য আমার মনেও একটা সুক্ষ্ম কষ্ট ছিলো। সেটা আহির হাসি আর আমার জন্য ভালোবাসা দেখে চলে গেলো।

তারপর হলুদ লাগানো নিয়ে হইচই পরে গেলো বাগান জুরে। সেই হইচইয়ে কোথাও আদনান ভাইকে দেখলাম না। আয়াত ভাই আমার দিকে হলুদ পানি ছুড়লেন আচমকাই। সবাই যখন হেসে কুটিকুটি আমিও কম যাইনা এক গাদা হলুদ হাতে নিয়ে উনার মুখে মেখে দিলাম। আমার দেখা দেখি। বাকি সবাই সেই মহান কাজে যোগ দিলেন। অতঃপর উনা সেই বিভৎস রকমের ফেইস দেখে আমি খিলখিল করে হেসে উঠলাম। ঠিক তখন হঠাৎ কী মনে করে ছাঁদে তাকাতেই দেখলাম আদনান ভাই সেই অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার উদাম শরীরে এক হাত জুরে ট্যাটু গুলো কিছুটা দেখা যাচ্ছে। দুপুরের তীক্ষ্ণ রোদের উত্তাপে তার ফর্সা মুখ পরায় রুক্তিম হয়ে গিয়েছে। কেন যেন বুকটা কেঁপে উঠলো। উনার এই দৃষ্টি আমাকে চিৎকার করে বলে উনি আমাকে ভালোবাসে অতিরিক্ত সেটা। কিন্তু উনার ব্যাবহার আমাকে বুঝিয়ে দেয় উনি ঠিক আমাকে কতটা অপছন্দ করেন কিন্তু আসলেই কি তাই?

নাকি তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে আরও অজানা সত্য? আমার সাথে করা তার ব্যাবহারের সত্য? কিছুই জানিনা আমি শুধু জানি আমি নিজেও অদ্ভুত যন্ত্রণা ভুগছি!

চলবে!