Thursday, July 10, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1402



প্রেম তুমি পর্ব-১১

0

#প্রেম_তুমি
#part:11
#Mishmi_muntaha_moon

সকাল হতেই অর্নিল হোয়াইট টিশার্টের উপর ব্লু জিন্সের শার্ট পরে রেডি হয়ে গিটার নিয়ে বাহিরে যায়।অর্নিলকে বাহিরে যেতে দেখে অর্পা বেগম হাসি মুখে বলল

–অর্নি কোথায় যাচ্ছিস?

অর্নিল ডায়নিং টেবিলে বসে অর্পা বেগম কে বলল

–ভার্সিটি তে যাচ্ছি।দাও খাবার দাও

অর্নিলের কথা শুনে অর্পা বেগম খাবার বেরে খুশি হয়ে বলল

–আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

অর্পা বেগম অর্নিল কে নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দিলো। অর্নিল খাবার খেয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে।
ভার্সিটি তে গিয়ে অর্নিল খালি ক্লাস রুম টাতে যায় যেখানে ওরা সব ফ্রেন্ড রা বসে আড্ডা দেয়।অর্নিল কে দেখতেই ফারহা খুশি হয়ে অর্নিলের দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু অর্নিল ফারহাকে এড়িয়ে তুশার রোহান আর জেবার কাছে গিয়ে ওদের পাশে বসে।অর্নিল কে দেখে তুশার বলে

–এতোদিন পর কোথা থেকে উদয় হইলি?

তুশারের কথা শুনে জেবা বলল

–ওয়াও তোকে দেখে খুব ভালো লাগছে।

অর্নিল গিটারে টুংটাং সুর বাজিয়ে বাকা হেসে এক চোখ টিপে বলল

–ইয়াপ নাও দি অল্ড অর্নিল ইস বেক।

অর্নিলের কথা শুনে সবাই চিল্লিয়ে উঠলো। অনেকক্ষন বিভিন্ন বিষয়ে গল্প করল সবাই।কথার মাঝেই রোহান বলল

–অনেক দিন হয়ে গেলো আমরা কেউই গান গাই নি।অনেকে রিকুয়েষ্ট ও করছে। তাই ভাবছি কাল আমাদের সেই আগের জায়গায় হয়ে যাক?

রোহানের কথায় সকলে সহমত প্রকাশ করে।অর্নিল ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল

–কাল পারবো না পরশু। কাল একটা কাজ আছে।

–আচ্ছা।

তুশার ফারহার দিকে তাকিয়ে মজা নিয়ে বলল

–কিরে ফারহা আজ এতো চুপ কেন?তোর বাপে বিয়া টিয়া ঠিক কইরা ফালাইসে নি?

তুশারের কথায় ফারহা হেসে বলল

–একদমই না। কিন্তু অতি শীগ্রই হবে ডোন্ট ওয়ারি।

ফারহার কোথায় রোহান ফারহার কাধে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে জোরে হেসে বলল

–যাহ তাহলে আমাদের অর্নিল বাদ।

–এইটা তো দেখাই যাবে।

আয়রা সন্ধ্যা বেলায় বাড়ি ফিরে সরাসরি ওর মার রুমে যায়।জুহি বেগম আয়শা খাইয়ে দিচ্ছে।আয়রাকে দেখে বলল

–কিরে কোথা থেকে ফিরলি?কত চিন্তা হচ্ছিলো।

আয়রা খোলা চুল গুলো হাত খোপা করে বলল

–না আমি আসলে ভাবছিলাম যে এখানে কয়েকটা টিউশনি করালে ভালো হতো।তাই বাহিরে গিয়েছিলাম কিন্তু,,,

আয়রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে রইল। জুহি বেগম আয়শাকে খাইয়ে হাত ধুয়ে রান্নাঘর থেকে আবার ভাত নিয়ে মেখে আয়রাকে খাইয়ে দিতে লাগল।তারপর বলল

–থাক এখন এইসব চিন্তা বাদ দে।

আয়রা খেতে খেতে আবারও বলল

–মা আমি আরেকটা ব্যাপার ভাবছিলাম।

জুহি বেগম ব্রু কুচকে বলল

–হুম বল কি ভাবছিলি?

আয়রা হাত দিয়ে মুখটা মুছে বলল

–মা আমি ভাবছিলাম যে এইখানে আমাদের কেউই নেই আর তাছাড়া আমার পড়া ও হবে না আর কোনো জব পাওয়ার ও সম্ভব না।আমরা যদি ঢাকায় চলে যাই।ওখানে আমি একটা জব করতাম ক্যাফে তে রিমুর মামার ক্যাফে খুব ভালো উনি।আর একটা রুম ভাড়া নিবো তাহলেই হবে। তুমি কি বলো?

আয়রার কথা শুনে জুহি বেগম কিছুক্ষন ভেবে বলে

–না আয়ু আমি এখান থেকে যেতে চাচ্ছি না।এখানে কেউ থাকুক অথবা না থাকুক আমাদের স্মৃতি তো সব এখানেই।আমি যেতে চাই না ঢাকা।

জুহি বেগম আয়শাকে ভালো করে ঘুম পারিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়।আয়রা ওর মার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে আস্তে করে উঠে ছাদে চলে যায়। মাথায় বিভিন্ন চিন্তা ঘুরছে আয়রার।আয়রা আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজে নিজেই বলে

–উফ কি করবো আমি।মা ও রাজি হতে চাচ্ছে না।কিন্তু এখানে থাকলে তো আমার জব করাও হবে না আর যেইটার জন্য বিয়ে থেকে পালালাম সেইটা ও হবে না।
আর মা আমাকে কখনো অভাবের কথা বলবেনা কিন্তু আমি তো চুপ করে বসে থাকতে পারবো না।

আয়রা মনখারাপ করে গালে হাত দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।

অর্নিল বাড়িতে গিয়ে দেখে অর্পা বেগম রেগে সোফায় বসে আছে আর উনার অপসাইট সোফায় অর্নব আর ওর বাবা চুপ করে বসে আছে।অর্নিল গিটার টা রুমে রেখে এসে অর্পা বেগমের সাথে সোফায় বসে পরল।তারপর অর্নবকে ইশারায় জিজ্ঞাস করল কি হয়েছে। অর্নব কিছু বলার আগেই অর্পা বেগম অর্নিলের দিকে ফিরে বলল

–দেখ না অর্নি ওরা কেউই আমার কথা শুনছে না।তোর বাবাকে তো আমি দেখে নেবো কিন্তু অর্নব,,,ও আমার কথা একদমই মানছে না তুই কিছু বল।

অর্পা বেগমের কথা শুনে অর্নব বড় বড় চোখ করে বলল

–ও আমায় কি বলবে আমি ওর থেকে বড় বুঝলা।

অর্নিল একপলক অর্নবের দিকে তাকিয়ে বলল

–আচ্ছা হয়েছে টা কি বলবি তো?

অর্নিলের কথা শুনে অর্নব কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে বলল

–মা তুলির সাথে দেখা করতে বলেছিলো আমি দেখা করেছি মা বলল তুলিকেই বাড়ির বউ করবে আচ্ছা ঠিক আছে এইটা ও মানলাম আমারও পছন্দ হয়েছে।কিন্তু এখন উনি বলছে এই কয়েকদিনেই বিয়ে করাতে চায়।মানে কি এর?

অর্নবের কথা শুনে অর্পা বেগম কাদো কাদো হয়ে বলল

–দেখলি কেমন করছে আমার সাথে।এই পরিবারে আমার কথার কোনো মূল্যই নেই।

অর্পা বেগমের কথা শুনে অর্নিল বলল

–মা তুমি কি বলছো তোমারই তো এই পরিবার কিন্তু অর্নব এর লাইফ ওর ডিসিশন জানা টাতো প্রয়োজন তাই না।

অর্নিলের কথা শুনে অর্পা বেগম মনখারাপ করে উঠে উনার রুমে চলে যায়। অর্পা বেগমকে এভাবে চলে যে দেখে অর্নব দীর্ঘশ্বাস ফেলে অর্নিলের দিকে তাকায়।

অর্নিল আর অর্নব একটা গাছপালা ভরা পাকা রাস্তায় গাড়ির উপর বসে আছে। অর্নিল আকাশের দিকে তাকিয়ে অর্নবের উদ্দেশ্যে বলল

–তুই এতো অভার রিয়েক্ট কেনো করছিস।তুলিকে যেহেতু তোর পছন্দ হয়েছে তাহলে মার কথায় রাজি হয়ে যা।

অর্নিলের কথা শুনে অর্নব ব্রু কুচকে বলল

–তুই ও মার কথায় সহমত?

অর্নবের কথায় অর্নিল নেমে নিচের থেকে ইট তুলে ডানে থাকা নদীতে ছুরে মেরে বলল

–সমস্যা কোথায় তোর?বিয়ে করে বাসর সেরে ফেলবি শেষ। এতে এতো চিন্তা ভাবনার কি আছে।

অর্নব ও গাড়ির উপর থেকে নেমে অর্নিলের পাশে দারিয়ে বলল

–মজা না করে একটা উপায় বল।

–রাজি হয়ে যা।

অর্নব কিছুক্ষন ভেবে গাড়িতে বসে বলল

–আচ্ছা ঠিক আছে।চল বাড়িতে।

সকাল হতেই অর্নিল রুম থেকে বের হয়ে সোফায় গিয়ে বসল। একটু পরেই অর্নব ও এসে বসল। অর্পা বেগম মনখারাপ করে চুপচাপ সবাইকে খাবার বেরে দিয়ে চলে যেতে নিতেই অর্নিল ডাক দিয়ে পাশে বসতে বললো। অর্পা বেগম চুপ থেকেই অর্নিলের পাশে বসে। অর্নিল চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল

–মা তুমি এখনো মুখ ফুলিয়ে বসে আছো।আচ্ছা বাদ দাও তোমার জন্য খুশির খবর আছে শুনবে?

অর্নিলের কথা শুনে অর্পা বেগম অর্নিলের দিকে তাকালো। অর্নিল কিছু বলার আগেই অর্নব চায়ের কাপ এ চুমুক দিয়ে বলল

–আমি রাজি বিয়েতে তোমার যখন ইচ্ছে তখনই।

অর্নবে কথা শুনে অর্পা বেগম খুশি হয়ে অর্নবের গাল চেপে ধরে রুমে চলে যায় তুলির মা বাবাকে খবর দিতে হবে তাই।

আয়রা মনমরা হয়ে বারান্দায় বসে আছে।কিছুই ভালো লাগে না।কোনো কাজ ও নেই খুব বোরিং কাটে সারাদিন।আয়রা গালে হাত দিয়ে রাস্তায় তাকিয়ে আছে জুহি বেগমের ডাক শুনে পিছে ঘুরে তাকায়।
জুহি বেগম আয়রার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে

–কি হয়েছে এতো মনমরা হয়ে থাকিস কেনো সারাদিন?

আয়রা মুচকি হেসে বলল

–নাহ কিছু না এভাবেই বাসায় এভাবে বন্ধি হয়ে থাকতে ভালো লাগে না।

জুহি বেগম হেসে বলল

–ওহ আচ্ছা শুন আমি অনেক ভেবে দেখেছি তোর কথা গুলো।

জুহি বেগমের কথা শুনে আয়রা খুশি হয়ে বলল

–কি ভেবেছ?

–তুই যা বলেছিস ঠিকই বলছিস। আমরা তাহলে ঢাকায় শিফট হবো

জুহি বেগমের কথায় আয়রা খুশি হয়ে জুহি বেগমকে জরিয়ে ধরলো।

আজকের পুরো সময় অর্নিল অর্নবের সাথেই কাটিয়েছে।
এখন অর্নিল আর অর্নব বসে টিভি দেখছে তখনই অর্পা বেগম এসে টিভি বন্ধ করে দেয়।
টিভি বন্ধ কিরে দিতেই অর্নব বিরক্ত হিয়ে বলে

–কি হলো আবার?

–শুন একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলার ছিল।

অর্নিল অর্পা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল

–বলো কি বলবে শুনছি আমরা।

অর্পা বেগম অর্নবের দিকে তাকিয়ে, খুশি মনে বলে উঠলো

–পরশু তোর বিয়ে।

অর্পা বেগমের কথা শুনে অর্নিল আড়চোখে অর্নবের দিকে তাকালো। অর্নবের মুখ দেখার মত।অর্নব অসহায় হয়ে বলল

–এতো তাড়া কিসের।

–তুলির ভাই দিহান কানাডা যাচ্ছে না।পরশুই ওর ফ্লাইট তাই।আমি তোর বাবাকেও বলে দিয়েছে উনার তো কোনো আপত্তি নেই। আর অর্নি তুই কাল কোথাও যাবি না সময় খুব কম সব রেডি করতে হবে তো পরশুই গায়ে হলুদ আর বিয়ে দুটোই হবে। আচ্ছা আমার অনেক কাজ আছে আমি যাই।

অর্পা বেগম কথা শেষ করে চলে যায়।উনি চলে যেতেই অর্নিল অর্নবের দিকে তাকিয়ে দাত কেলিয়ে বলল

–যাক ভালোই হলো। আচ্ছা আমি যাই সবাইকে ইনভাইট ও তো করতে হবে।আর কাল তো শপিং ও করতে হবে।

অর্নিল সোফা থেকে উঠে ওর রুমে চলে যায়।

চলবে,,,

প্রেম তুমি পর্ব-১০

0

#প্রেম_তুমি
#part:10
#Mishmi_muntaha_moon

অর্নিলের কথা শুনে অর্নব ব্রু কুচকে বলে

–চলে গেছে মানে কোথায় চলে গেছে।

অর্নিল কপাল চেপে ধরে বলল

–জানি না আমি।আমার ভালো লাগছে না তুই এখন যা।

অর্নব অর্নিলের কাধে হাল্কা চাপর দিয়ে চলে যায়।অর্নিল পাঞ্জাবি খুলে ব্লু কালারের শার্ট পরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। অনেক অস্থির লাগছে সাথে ক্লান্ত। একদিনে দুইবার জার্নি করার পর আবার আয়রাকে খুজতে হলো তাই এখন খুব ঘুম পাচ্ছে। অর্নিল চোখ বুজতেই ঘুমিয়ে গেলো।

বাহিরে মহিলাদের কথার আওয়াজে আয়রা নিচ থেকে উঠে দারালো। নিচে বসে ঘুমিয়ে যাওয়াতে শরীরটা খুব ব্যাথা করছে। আয়রা হাত পা ঝেরে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে গেলো। জুহি বেগম চুপ করে খাটে বসে আছে আর ৩, ৪ টা মহিলা দারিয়ে বিভিন্ন কথা বলছে। আয়রা আরেকটু এগিয়ে যেতেই একটা মহিলার কথা শুনতে পেল।

–শুনলাম আপনার নেয়ে আয়রা ফিরে এসেছে।জানতে পারলেন কেনো পালিয়েছিলো। আমার তো মনে হয় ওই ঢাকায় কোনো ছেলের জন্য পালিয়েছিলো।এখন দেখলেন তো তার ফল।মাঝে দিয়ে বেচারা ভাই সাহেব মরে গেলো।

উনাদের কথা শুনে অনেক রাগ লাগছে মানে কি!বাড়িতে একজন মারা গেছে তা না ভেবে এসে পরেছে নিচু কথাবার্তা বলতে।
আয়রা উনাদের সামনে গিয়ে বলল

–জ্বী কিছু বলছিলেন আপনারা? ভালো কথা বলতে না পারলে দয়া করে বাজে কথা বলবেন না।

আয়রার কথা শুনে একটা মহিলা বলল

–আরে দেখো যার মুখ দিয়ে কোনো বুলি বের হতো না ঢাকায় গিয়ে কথাও শিখে গেছে।

আয়রার মেজাজ আরও চটে গেলো। আয়রা রাগ নিয়ে বলল

–ঠিক বলেছেন।আগে চুপ ছিলাম কিন্তু আপনাদের মতো মানুষদের কথার জবাবে চুপ থাকা উচিত না।কিন্তু আমি কাওকে অসম্মান করতে চাই না।বড় রা যেমনই হোক বড় উনাদের অসম্মান করা উচিত না তাই আমি চাইছি আপনারা চলে যান এখান থেকে।

আয়রার কথা শুনে সবাই চলে গেলো। আয়রা রান্নাঘর থেকে টুকটাক খাবার বানিয়ে এবে ওর মা এবং ছোট বোন কে খাইয়ে দিলো। নিজেও কিছু খেয়ে নিলো কাল
থেকে কিছু খায় নি তাই খুব খিদে ও পেয়েছিল।
আয়রা রুমে যেতে নিতেই জুহি বেগম আয়রাকে উনার পাশে বসতে বলে। আয়রা ওর মার সাথে বসে।

–তুই এতোদিন কোথায় ছিলি আয়ু?

জুহি বেগমের কথায় আয়রা সব বলল। আয়রার কথা শুনে জুহি বেগম আয়রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল

–তাই তো আমি তোকে বলি সব সময় প্রয়োজনের সময় বুঝা যায় কে কতটা আপন।

জুহি বেগমের কথায় আয়রা বলল

–হুম মা কিন্তু আমি অর্নিল নামের একটা ভাইয়ার কথা বললাম না উনি খুব ভালো।যখনই আমি বিপদে পরেছি অথবা মন খারাপ ছিলো তখন উনি আমার পাশে ছিলো। শুধু তখন না উনি অলঅয়েস আমার পাশে ছিলো।

আয়রার কথা শুনে জুহি বেগম মুচকি হাসলেন।
আয়রার এতোক্ষণে অর্নিলের কথা মনে পরে। আয়রার মুখ টা মুহুর্তেই চুপসে যায়।আয়রার অবস্থা দেখে জুহি বেগম বললো

–কি হলো?

আয়রা জুহি বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল

–আমি যে তারাহুরোর মধ্যে গ্রামে আসলাম উনি জানেই না। কাল ভার্সিটি থেকে ট্রিপে যাওয়ার কথা ছিলো উনি হয়তো অপেক্ষা করছিলেন আমার জন্য।

সকাল হতেই অর্নিল রেডি হয়ে বেরিয়ে পরে। অর্নিলের মা অর্পা বেগম অর্নিল কে এমন তারাহুরো করে বেরিয়ে যেতে দেখে অর্নবের দিকে তাকিয়ে ব্রু কুচকে বলল

–অর্নব অর্নিলের কি হয়েছে কাল থেকেই কেমন চিন্তিত মনে হচ্ছে।

অর্পা বেগমের কথা শুনে অর্নব শ্বাস নিয়ে বলল

–জানি না আমি।

.
অর্নিল আয়রার থাকার ফ্লাটের পাশে গাড়ি পার্ক করে। তারপর গাড়ি থেকে বেরিয়ে ফ্লাটে গিয়ে নক করতেই মহিলা টা দরজা খুলে অর্নিল কে দেখে বলে

–আপনি?

অর্নিল অনুরোধের স্বরে বলে

–আসলে আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করতাম।আয়রা কি একেবারে চলে গেছে না মানে আপনি কিছু জানেন কি না?যাওয়ার আগে কিছু বলেছে?

অর্নিলের কথায় মহিলাটি বিরক্ত হয়ে বলল

–দেখুন আমি কালকেও বলেছি আমি জানি না উনি আমায় কিছু বলে নি।

মহিলাটির কথায় অর্নিল ঠোঁট কামড়ে বলে

–আপনাকে বিরক্ত করার জন্য সরি এন্ড অলসো থেংক ইউ।

অর্নিল গাড়ি নিয়ে ভার্সিটি তে যায়।তারপর ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসে গিয়ে রিমুর কাছে যায়।রিমু অর্নিল কে দেখে দারিয়ে পরে।অর্নিল রিমুর দিকে তাকিয়ে শ্বাস নিয়ে বলে

–কিছু ইনফরমেশন প্রয়োজন ছিলো। আয়রা কোথায় গিয়েছে জানো?

অর্নিলের কথা শুনে রিমু চোখ নামিয়ে বলল

–না আমি জানি না কিছু এই ব্যাপারে।

অর্নিল রিমুর অবস্থা দেখে কপাল চেপে ধরে বলল

–স্টপ রিমু মিথ্যা বলা বন্ধ কর।ইউ নো রাইট।

অর্নিলের কথা শুনে রিমু বিরক্ত নিয়ে বলল

–আমি বলতে চাইছি না আপনাকে ফোর্স করবেন না।

রিমু ব্যাগ নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলো। রিমুর কথা সব মাথার উপর দিয়ে গেল অর্নিলের বলতে চায়ছে না মানে কি?
অর্নিল ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আবারও আয়রাকে ফোন দিলো ফোন ঢুকছে না।অর্নিল রাগে মোবাইলটা ছুরে মারল।রোহানের কথায় অর্নিলের হুশ এলো। রোহান অর্নিলের সামনে দারিয়ে বলল

–কি হয়েছে তোর?

অর্নিল দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজেকে শ্বান্ত করল।ফারহা অর্নিলের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে বলল

–অর্নিল তুমি ওই আয়রার জন্যই এতো এগ্রেসিভ হচ্ছো এম আই রাইট?হাহ ওই আয়রা ওর গ্রামে চলে গেছে নিজের আসল জায়গায় আর কখনো ফিরে আসবে না ওকে।তাই বলছি ওকে খুজা বন্ধ করে দাও।

জেবা নিচের থেকে অর্নিলের মোবাইল তুলে অর্নিলের কাছে দেয়।অর্নিল মোবাইল নিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যায় ওদের সাথে কোনো কথা না বলেই। অর্নিল বাসায় যেতেই অর্পা বেগম চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন

–অর্নি তোর কি হয়েছে বল আমায়।অর্নব ও সব জানে কিন্তু আমায় বলছে না।তুই বল।

অর্নিল অর্পা বেগমের গালে হাত রেখে বলল

–কিছুই হয় নি।তুমি এভাবে চিন্তা করো না প্লিজ।আই এম ওকে।

আয়রা ঘুম থেকে উঠে দেখে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।আয়রা তারাতারি উঠে ওর মার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে গেলো। জুহি বেগম এতোদিনের কথা বলছিলেন আয়রাও ভালোই শুনছিলো কখন ঘুমাল টেরই পায় নি। আয়রা ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে দেখে অর্নিলের মিসড কল দিয়ে ভরা।আয়রা মাথায় হাত দিয়ে খাটে বসে পরল।

–শিট!এতোবার ফোন দিয়েছে।উফ।

আয়রা অর্নিলকে ফোন দিতেই ফোন বন্ধ বলে। আয়রা একবার ফোন দিয়েই ফোন বিছানায় রেখে দেয়।

–ধুর কল তো ঢুকছেই না।থাক কি করার এখন।

আয়রা রুম থেকে বেরিয়ে ওর মা কে খুজতে লাগে। সোফার রুমে যেতেই দেখে আয়শা মোবাইলে গেম খেলছে।

–আয়শু আম্মু কোথায়?

আয়শা মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে আয়রার দিকে তাকায়।তারপর বলে

–জানি না তো মনে হয় ছাদে।

আয়রা ছাদে যেতে নিয়েও আবার ফিরে এসে আয়শার সাথে বসে।কতদিন ধরে কোনো কথা বলা হয় নি। আয়শা আয়রা কে ওর সাথে বসতে দেখে মোবাইল রেখে আয়রার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।আয়রা আয়শার গাল টিপে দিয়ে বলে

–কিরে এতোদিন পরেছিস ঠিক মতো?

–হুম পরেছি তো।জানো আপু কাল রাতে আমি স্বপ্নে বাবাকে দেখেছি।দেখি বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলছে আয়শু মা তুই তো অনেক ছোট সব সময় মার পাশে পাশে থাকবি।তারপর আমি কিছু বলার আগেই বাবা চলে গেলো।

আয়শার কথা শুনে আয়রা চোখের কিনারায় জমা পানিটুকু মুছে আয়শার মাথায় হাত রাখল। তারপর বলল

–ঠিকই বলেছে।আমি তো পারলাম না। কিন্তু তুই সবসময় মার পাশে থাকবি কখনো কাদতে দিবি না বুঝলি?

আয়রার কথা শুনে আয়শা উপর নিচ মাথা নাড়ায়।
আয়রা মুচকি হেসে উঠে ছাদে গেলো। ছাদে গিয়ে দেখে কেউ নেই।আয়রা পূর্নদৃষ্টি মেলে আশেপাশে দেখতে লাগে। আয়রার লাগানো ফুল গাছের ছিটেফোঁটা নেই। আয়রা মনে মনে বলল

–কতদিন পর আবার ছাদে পা রাখলাম।

আয়রা রেলিং ধরে দারাতেই দেখল নিচে আয়রার সমবয়সী কতগুলো মেয়ে দারিয়ে কথা বলছে আয়রাকে দেখে ফিসফিস করে কি যেনো বলছে আয়রা ঠোঁট কামড়ে ছাদ থেকে নেমে গেল।

৫ দিন হতে চলল। রিমুকে এতো জিজ্ঞাসা করার পরও কিছুই বলে নি।
অর্নিল গিটার হাতে নিয় ছাদে বসে আছে অর্নবও সাথেই বসে আছে।অর্নিল কে চুপ করে বসে থাকতে দেখে অর্নব বলল

–কি হলো তোকে গিটার হাতে বসে থাকতে বলি নি।

অর্নিল গম্ভীর হয়ে বলল

–আমার গান গাওয়ার মুড নেই এখন তাই আমি গান গাইতে পারবো না।

অর্নিলের কথা শুনে অর্নব বিরক্ত হয়ে বলল

–আজব তো তুই আয়রার জন্য দেবদাস হয়ে যাচ্ছিস
কেনো?

অর্নবের কথা শুনে অর্নিল গিটার রেখে বলল

–আমি কি করলাম।আমি তো নরমাল আছি একদম।

অর্নব ব্রু কুচকে বলল

–তুই একদমই নরমাল না।তুশার ফোন করেছিলো কাল ও বলল তুই ওদের সাথে একদমই টাইম স্পেন্ড করছিস না ওরা তোকে খুজেই পায় না।তোকে আমি লাস্ট বার বলছি ওকে ভুলে যা।আর ফ্রেন্ড দের টাইম দে।

অর্নব কথা শেষ করে চলে যায়। অর্নিল অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভেবে সাইড থেকে গিটার নিয়ে মৃদু সুরে বাজাতে লাগে।

চলবে,,,
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই 🥰🥰

প্রেম তুমি পর্ব-০৯

0

#প্রেম_তুমি
#part:9
#Mishmi_muntaha_moon

অর্নিল আর ওর ফ্রেন্ড রা আনন্দ করতে করতেই সারা রাস্তা পাড় করলো। অর্নিল ফ্রেন্ড দের সাথে আনন্দ করলেও মাথায় আয়রার কথাই ঘুরছিল।হোটেলে পৌছে ওরা সবাই নামে।অর্নিল নেমেই আয়রাকে খুজতে লাগে রিমুকে একটা মেয়ের সাথে বসে থাকতে দেখে সেখানে যায়।

–হেই রিমু।

রিমু অর্নিলকে দেখে দাঁড়িয়ে হেসে বলল

–অর্নিল ভাইয়া।আপনি এখানে?কিছু বলবেন?

অর্নিল ব্রু চুলকে বলল

–আয়রা কোথায় তোমার সাথে নেই?

রিমু আয়রার নাম শুনে নিচু স্বরে বলল

–না ভাইয়া ও তো আসে নি হয়তো।আমাদের বাসে দেখি নি।

আয়রা আসে নি শুনে অর্নিলের রাগ লাগছে এতো করে বলল তবুও আসল না।সাথে চিন্তা ও লাগছে কোনো সমস্যায় পড়ে যায় নি তো?অর্নিল শিউর হতে পুরো হোটেল খুজে আর সকল স্যারদের ও জিজ্ঞেস করে কিন্তু সকলের একই কথা আয়রা আসে নি।অর্নিল মেজাজ খারাপ নিয়ে ফারহার কাছে গেলো। তুশার ফারহা রোহান জেবা সকলে একসাথে বসে বিভিন্ন কথা বলছে কোথায় ঘুরবে কি করবে।অর্নিল রুমে ঢুকেই ফারহার হাত ধরে দার করায় তারপর বলে

–তুই মিথ্যা কেনো বললি?

ফারহা অর্নিলের কথা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল

–আমি আবার কি মিথ্যা বললাম?

অর্নিল রাগ কন্ট্রোল করে দাতে দাত চেপে বলল

–আয়রাকে তুই বাসে উঠতে দেখছিলি?

অর্নিলের এমন রাগ মাখা প্রশ্নে ফারহা শুকনো ঢোক গিলে কিছু বলতে নিবে তার আগেই রোহান বলল

–কি হয়েছে তোর এমন রাগ দেখাচ্ছিস কেনো?

অর্নিল রোহানকে থামিয়ে দিয়ে বলল

–তোরা ফারহা আর আমার মাঝে কথা বলবি না।

ফারহা তো ভয়ে চুপসে আছে।ফারহার এইটা ভেবে ভয় পাচ্ছে যে অর্নিল ওর ফ্রেন্ডদের সাথে এভাবে রেগে কথা বলছে ওকে আবার চড় টড় দিয়ে দিবে নাকি?
অর্নিল আবারও ফারহাকে বলল

–দেখ ফারহা আমাকে আর রাগাস না। যা জিজ্ঞাসা করেছি বল।

ফারহা অর্নিলের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে বলল

–আসলে আমি আয়রাকে দেখিই নি আমিতো এভাবেই বলে দিয়েছি।সরি অর্নিল।

ফারহার কথা শুনে অর্নিলের মেজাজ আগের থেকেও বেশি বিগড়ে গেলো। অর্নিল কে এভাবে রাগতে দেখে তুশার অর্নিলের কাছে এসে কাধে হাত রেখে বলল

–কাম ডাইন অর্নিল।

অর্নিল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
অর্নিল কে বেরোতে দেখে ফারহা কাদো কাদো মুখ করে বলে উঠলো

–ওই মেয়েটার জন্য অর্নিল আর আমাদের মাঝে এতো দূরত্ব হয়ে গেছে।যেদিন ওই মেয়েটা ভার্সিটিতে ফার্স্ট এসেছিল সেই দিনটা আমার লাইফের সব থেকে খারাপ দিন ছিলো।

অর্নিল ওর রুমের বারান্দায় গিয়ে আয়রাকে ফোন দিলো কিন্তু কয়েকবার রিং বেজে আবার কেটে যাচ্ছে রিসিভ করছে না।অর্নিলের খুব খারাপ লাগছে এতোবার বলার পরও এলো না আর কেনো এলোনা তার কারণ টাও বলার প্রয়োজন বোধ করলো না।অর্নিল রুম থেকে বেরিয়ে কবির স্যারের রুমে গিয়ে নক দিলো। স্যার অর্নিল কে দেখে হেসে বলল

—অর্নিল আসো ভিতরে আসো।

অর্নিল রুমে ঢুকে স্যারের উদ্দেশ্যে বলল

–স্যার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছিলো।

অর্নিলের কথা শুনে কবির স্যার চিন্তিত স্বরে বলল

–হুম বল কোনো সমস্যা হয়েছে?

অর্নিল সামনের চুল গুলো পিছনে ঠেলে দিয়ে বলল

–না স্যার এখানে সব ঠিকঠাক আছে।আমি বলতে এসেছিলাম যে আমার আজ বাড়িতে যেতে হবে একটা ইমার্জেন্সি কাজ আছে।

অর্নিলের কথায় স্যার ব্রু কুচকে বলল

–তোমার বাড়ির সবাই ঠিক আছে তো?

–বাড়ির সবাই ঠিক আছে। কিন্তু আমার আজই যেতে হবে।

স্যারের থেকে পারমিশন নিয়ে অর্নিল ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পরে।

আয়রা বিকেল দিক দিয়ে ওদের গ্রামে পৌছাল। আয়রা বাড়িতে ঢুকেই দেখে ওর মা উনার রুমের এক কিনারায় বসে আছে আর আয়রার ছোট বোন আয়শা ওর মার পাশেই চুপ করে বসে আছে।আয়রার মা জুহি বেগম আয়রাকে দেখেই কেদে দিলেন। আয়রা ওর মা কে কাদতে দেখে গিয়ে জরিয়ে ধরে কেদে দিলো। জুহি বেগম কাদতে কাদতে বলতে লাগলো

–তোর বাবা একদম ঠিকঠাক ছিলো কিন্তু ওইদিন সকালে উঠে দেখি,,

বলে আবারও কাদতে লাগল।আয়রা কেদে বলল

–আমার জন্যই সব হয়েছে।আমাকে মাফ করে দাও মা।

–না তোর জন্য কিছুই হয় নি।আল্লাহ সকলের মৃত্যু আগে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছেন আমরা কি করতে পারি।

আয়রা আবারও নিশ্চুপ চোখের জল ফেলে বলল

–বাবাকে শেষ বার দেখতেও পারলাম না।কত অভাগা মেয়ে আমি।

আয়রার কাদতে কাদতে হেচকি উঠে গেছে। জুহি বেগম তারাতারি পানি এনে আয়রাকে খাওয়াতে আয়রা জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করল।

–যা তুই তোর রুমে গিয়ে বিশ্রাম নে।

আয়রা উঠে যেতে নিতেই আয়শা মৃদুস্বরে বলল

–আপু এতোদিন তুমি কোথায় ছিলে?সবাই বলে বাবা মরে গেছে মা অনেক কেদেছিল।আর রাতে আমার অনেক ভয় লাগতো।তুমি কোথায় গিয়েছিলে আমাদের রেখে।

আয়শার কথা শুনে আয়রা বলার মত কিছু খুজে পেল না।জুহি বেগম বলে উঠলো

–আপু একটা কাজে গিয়েছিলো।

আয়রা বসা থেকে উঠে ওর রুমে গিয়ে রুমের দরজা অফ করে দিলো। তারপর খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে হাটুতে মুখ গুজে কাদতে লাগল।নিজের মধ্যে কেমন একটা অপরাধবোধ কাজ করছে।আয়রা অস্থির হয়ে মৃদু স্বরে বলতে লাগল

–কত কষ্ট দিলাম বাবাকে কিন্তু শেষ বারের মত মাফ চাওয়া হলো না।

আয়রা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। বুকটা কেমন ভাড় লাগছে।

অর্নিল একরাশ ক্লান্তি নিয়ে আয়রা যেখানে থাকতো সেই বিল্ডিং এর নিচে দারিয়ে আছে।আয়রাকে একের পর এক ফোন দিচ্ছে কিন্তু রিসিভড হচ্ছে না।অর্নিল হোটেল থেকে সোজা এখানে এসেছে। রাত ৮ টা বাজে।অর্নিল আর দাঁড়িয়ে না থেকে আয়রা যেই ফ্লেটে থাকে সেই ফ্লেটে গিয়ে বেল বাজাতেই একটা মহিলা দরজা খুলে। অর্নিল কে দেখে ব্রু কুচকে বলে

–জ্বি কে আপনি?

অর্নিল কিছুটা বিব্রত হয়ে প্রশ্ন করল

–আয়রা আছে?

–নাহ উনি তো আজ সকালেই চলে গেছে এখান থেকে।

মহিলাটির কথা শুনে অর্নিল অবাক হয়ে গেলো। চলে গেছে মানে?অর্নিল ব্রু কুচকে মহিলাটিকে জিজ্ঞেস করল

–কোথায় চলে গেছে?

–জানি না কিন্তু উনি উনার সব জিনিসপত্র নিয়েই গেছে।

অর্নিল ঘাড় চুলকে চলে গেলো।
বাসায় যেতেই সকলে প্রশ্ন করতে লাগলো এতো রাতে এসে পরল কেনো?অর্নিল সকলের কথা উপেক্ষা করে রুমে চলে গেলো।
অর্নিল কাধের ব্যাগটা রেখে বিছানায় বসে হাতের সোজা পিঠ দিয়ে মুখ চেপে ধরে ।কাধে হাতের স্পর্ষ পেয়ে ঘাড় ফিরে তাকালো।

–কি হয়েছে? তোদের তো কাল আসার কথা ছিলো তাহলে আজ এতো রাতে কেনো?

অর্নবের কথায় অর্নিল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল

–আয়রা চলে গেছে আর আমাকে কিছুই বলল না।

চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।)

প্রেম তুমি পর্ব-০৮

0

#প্রেম_তুমি
#part:8
#Mishmi_muntaha_moon

আয়রা কলেজে যাওয়ার জন্য বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে এসেই দেখে অর্নিল রিকশার উপর বসে আছে।এই এক সপ্তাহ যাবত অর্নিল আয়রাকে প্রতিদিন পিক করতে এসেছে আবার বাসায়ও দিয়ে গেছে।কখনও গাড়ি কখনও বাইক আবার আজ রিকশা।আয়রা ব্রু কুচকে তাকাতেই অর্নিল চোখ দিয়ে ইশারা করে রিকশায় উঠতে বলল।আয়রা রিকশায় উঠে বসতেই রিকশা চলতে শুরু করে। আয়রা অর্নিলের দিকে তাকিয়ে বলল

–আপনি আজও এসেছেন নিয়ে যেতে।আমি না আপনাকে বলেছি আমি একা যেতে পারবো।নাকি বয়ফ্রেন্ডের এক্টিং করতে করতে নিজেকে সত্যিই বিশ্ব প্রেমিক ভাবছেন?

অর্নিল মুচকি হেসে বলল

–কেনো আমি নিতে আসলে কোনো সমস্যা আছে?

অর্নিলের কথায় আয়রা চুল সামলাতে সামলাতে বলল

–না সমস্যা হব কেনো।বাই দা ওয়ে আপনি আজ পাঞ্জাবি পরেছেন ভালো লাগছে।

আয়রার কথা শুনে অর্নিল মাথা নিচু করে বাকা হাসলো। তারপর বলল

–তাই নাকি?

–হুম।তা ফারহা আপুও কি শাড়ি পরেছে?

আয়রার কথা শুনে অর্নিলের মুড আর মেজাজ দুটোই বিগড়ে গেলো। অর্নিল আয়রার দিকে তাকিয়ে বলল

–বেশি কথা শিখে গেসো।

–আমি কারো সাথে ফ্রি হলে মন খুলে কথা বলি।

রিকশা থামাতেই আয়রা আর অর্নিল নেমে দারায়।আয়রা কলেজের ভিতরে ঢুকতেই দেখে ফারহা ওর দুকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ফারহাও আজ শাড়ি পরেছে।তাও আবার অর্নিলের পাঞ্জাবির সাথে মেচিং কালারিং কালো।
ফারহা আয়রার দিক থেকে চোখ সরিয়ে তুশারের দিকে তাকিয়ে বলে

–দেখলি এই মেয়েটার জন্য অর্নিল এখন রিকশায় চড়াও শুরু করে দিয়েছে আমরা একদিন ওকে আমাদের সাথে রিকশায় উঠতে রিকুয়েষ্ট করেছিলাম হাজার বলার পর ও মানে নি।

ফারহার কথা শুনে তুশার বিরক্ত মুখে চুপ করেই বসে রইল।

আয়রা ক্লাসে যেতে নিতেই দেখে সবাই ক্লাসের বাহিরে আর কিছু নিয়ে কথা হচ্ছে সবার মাঝে।আয়রা ক্লাসে না গিয়ে আবার অর্নিলের কাছে গেলো। অর্নিল আয়রাকে দেখে বলল

–কিছু বলবে?

আয়রা অর্নিলের দিকে তাকিয়ে বলল

–কলেজে কি কিছু হবে?আর ক্লাস হবে না?

অর্নিল কিছু বলার আগেই তুশার বলল

–নাহ ক্লাস হবে না আর কাল কলেজ থেকে ট্রিপে যাবে।

ট্রিপের কথা শুনে আয়রার মুখে চিন্তার ভাজ পরে গেলো। অর্নিল আয়রাকে বলল

–এই ট্রিপের সব দায়িত্ব আমার।চলো তোমার নাম লিখে দেই।

অর্নিলের কথায় আয়রা তারাহুরো করে হাত নারিয়ে বলল

–না না আমি কোনো ট্রিপে যাবো না।

অর্নিল আয়রার কথা না শুনে ওর নাম লিখে দিলো তারপর বলল

–যেতে তো তোমাকে হবেই।আমি ডিসাইড করে ফেলেছি।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা অবাক হয়ে বলল

–আমি যাবো কি যাবো না এইটা আমি ডিসাইড করবো আপনি না ওকে।

আয়রার কথায় অর্নিল হাতের ঘড়ি দেখে এক কথায় বলল

–আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড।

অর্নিলের এই একটা কথা শুনতে শুনতে আয়রা রীতিমত বিরক্ত। আয়রা বিরক্ত নিয়ে বলল

–এই বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডের থ্রেট দেওয়া বন্ধ করুন।আমি যাচ্ছি না মানে যাচ্ছি না।আমি এই আজাইরা ট্রিপের জন্য টাকা খরচ করতে পারবো না।আর আমি এই ট্রিপে যেতে কমফোর্টেবল না।

আয়রার কথা শুনে অর্নিল আয়রার একটু কাছে এসে নরম স্বরে বলল

–টাকার চিন্তা তোমাকে করতে হবে না।আর আমি আছি তো সাথে তাই না?

অর্নিলের কথায় আয়রা আর না করতে পারল না।রাজি হয়ে গেলো। তারপর আয়রা যেতে নিতেই অর্নিল ডাক দিয়ে থামালো।

আয়রা ঘাড় ঘুরিয়ে অর্নিলের দিকে তাকিয়ে বলল

–জ্বি বলুন।

অর্নিল আয়রার চোখে চোখ রেখে বলল

–কাল শাড়ি পরে আসবে।

অর্নিলের এমন অবদার শুনে আয়রা হাল্কা ভ্রু কুচকে বলল

–আমার শাড়ি নেই।

অর্নিল আয়রার থেকে চোখ সরিয়ে সাইডের টেবিল থেকে একটা শপিং ব্যাগ আয়রার হাতে ধরিয়ে বলল

–কাল যেনো শাড়ি পড়া দেখি।

অর্নিল হাত দিয়ে চুল স্লাইড করতে করতে চলে যায়।
আয়রা ক্লাসে ঢুকে রিমুকে খুজে কিন্তু পায় না।ইদানীং রিমুও আয়রাকে ইগনোর করছে কোনো কারণে। আয়রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটা বেঞ্চে গিয়ে বসল তারপর শপিং ব্যাগটা খুলে দেখল লাল রঙের খুব সুন্দর একটা শাড়ি। আয়রা শাড়িটা আবার ব্যাগে রেখে ব্যাগটা নিয়ে বাহিরে গেলো ক্লাসে একা কি করবে তাই আয়রা ক্যাফেতে যাবে ভেবেছে।গেটের সামনে যেতেই অর্নিলকে দেখতে পেল।একটা স্যারের সাথে কথা বলছে।আয়রা পাশ কাটিয়ে যেতে নিতেই অর্নিল হাত ধরে ফেলে।

–আচ্ছা স্যার আমি একটু পর আপনার সাথে কথা বলছি।

স্যার চলে যেতেই অর্নিল আয়রার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল

–কোথায় যাচ্ছো?

–ক্যাফেতে।

অর্নিল আয়রার হাত থেকে ওর দেওয়া শপিং ব্যাগ নিয়ে সেটার ভিতর কিছু রেখে আবার আয়রার হাতে ধরিয়ে দিল। তারপর বলল

–যাও এইবার।

অর্নিল পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে চলে গেলো। আয়রা কিছুক্ষন তাকিয়ে ভাবতে লাগলো।

–উনাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।আর উনার হাসিটা,,

আয়রা থেমে গিয়ে নিজের মাথায় চাটি মেরে সেখান থেকে চলে গেলো।

অর্নিল খুব ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম করবে তখনই অর্নব প্রবেশ করলো রুমে।অর্নিল অর্নব কে দেখে মুচকি হেসে বসতে বললো।অর্নব না বসে অর্নিল কে নিয়ে ছাদে গিয়ে বসল।

–আজকাল বড় বিসি মানুষ হয়ে গিয়েছিস দেখছি।ভায়ের সাথে সময় কাটানোর সময় নেই তোর।

অর্নবের কথা শুমে অর্নিল মুচকি হেসে বলল

–তোর সাথে সময় কাটানোর জন্য সময়ের প্রয়োজন হয় না।যখন ইচ্ছা আসবি আমি কখনো না করেছি?

–তুই না করবি না তা জানি আচ্ছা এখন বল এতো ক্লান্ত কেনো?

অর্নিল চেয়ারে গা এলিয়ে বলল

–আরে কলেজ থেকে ট্রিপে যাবে আর সেটার সব দায়িত্ব আমার।তাই আরকি একটু ক্লান্ত হয়েগিয়েছি।আচ্ছা তুই বল তুলির সাথে দেখা করেছিস।

অর্নিল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল

–তোর কি মনে হয় মা যেটা একবার বলেছে সেইটা না করে দম নিবে?দেখা করতে গিয়েছিলাম আজ।মেয়েটা আগের থেকে সুন্দর হয়ে গেছে।

অর্নিল হেসে দিয়ে বলল

–ওয়াও তার মানে তুলি আজ থেকে ভাবি যেহেতু তোর ও পছন্দ হয়েছে।

অর্নব ছোট ছোট চোখ করে বলল

–আমার কথা বাদ দে তোর কথা বল।

অর্নিল কিছু না বুঝার ভান করে বলল

–আমার আবার কোন কথা?

অর্নিলের কথা শুনে অর্নব বলল

–তুই আগে তো আমায় সব বলতি।আচ্ছা যা বলতে হবে না।এইটা বল তুই সত্যি আয়রাকে ভালোবাসিস?

অর্নবের কথা শুনে অর্নিল বলল

–আই ডোন্ট নো।

অর্নিলের জবাবে অর্নব একটু জরে বলল

–এর মানে ভালোবাসিস।আচ্ছা ওয়েট আয়রা জানে?

অর্নিল অন্যমনস্ক হয়ে বলে উঠলো

–নাহ আমি বলতে চাইছি না।

অর্নিলের কথা শুনে অর্নব অবাক হয়ে বলল

–আজব তো কেনো বলতে চাইছিস না।ভয় পাচ্ছিস নাকি?

অর্নবের কথায় অর্নিল অর্নবের দিকে তাকিয়ে বলল

–হোয়াট! ভয় আর আমি নেভার।আমি কাউকে ভয় না।

–তাহলে বলিস না কেনো?

অর্নিল অর্নবের কথায় পাত্তা না দিয়ে উঠে বলল

–আমি চললাম আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে।

অর্নিল সিড়ি দিয়ে নেমে ওর রুমে চলে গেলো।

আয়রা রুমে এসে রুম লক করে নিচে বেছানো বিছানায় বসল কাধের ব্যাগটা রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে উঠে ব্যাগ থেকে টাকা বেড় করলো আজকে সেলেরি পেয়েছে আয়রা।তার থেকে অর্ধেক ভাড়া দিয়ে দিতে হবে।
আয়রা 1500 টাকা আলাদা করে ভাড়া দিয়ে এসে অর্নিলের দেওয়া ব্যাগটা আবারও খুলল।ব্যাগে একজোড়া কানের দুল খুবই সুন্দর। আয়রা কানের দুল টা শাড়ির সাথে রেখে দিলো। ইদানীং মাথাটাও খুব ব্যাথা করে।আয়রা ঘুমাতে নিবে এরকম সময় কারো ফোন আসাতে আয়রা উঠে বসে ফোন তুললো। কিন্তু ফোন তুলে যা শুনল তার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলো না।

সকাল হতেই অর্নিল কলেজে এসে সকল স্টুডেন্ট দের বাসে বসায়।ফারহা, তুশার, রোহান জেবা ওরা সবাই একসাথে বসেছে।অর্নিক আয়রা কে খুজতে বাসের থেকে নামতে নিলেই ফারহা ডাক দেয়।অর্নিল ফারহার ডাক শুনে ওদের কাছে আসে।অর্নিল আসতেই ফারহা বলল

–অর্নিল তুমি কি আমাদের সাথে বসবে না?

ফারহার কথা শুনে অর্নিল ব্রু কুচকে বলল

–কেনো যেখানেই বসি এতে তোর কি?

ফারহা অর্নিলের কথায় তুশারের দিকে ফিরে বলল

–দেখলি তুশার এখন ও আমাদের সাথে বসবে ও না সবসময় তো আমাদের সাথেই বসতো কোনো ট্রিপে গেলে। এখন ওই আয়রার সাথে বসবে গিয়ে।

তুশার ফারহার কথার জবাব দিলো না অর্নিলের দিকে তাকালো। অর্নিল তুশারের দিকে তাকিয়ে বলল

–ওকে ফাইন।আমি এখানেই বসবো।বাট দেখে আসি আয়রা এসেছে কি না।

অর্নিল যেতে নিতেই আবারও ফারহা ডেকে বলে

–অর্নিল তোমার যেতে হবে না আমি দেখেছি ওকে ও অন্য একটা বাসে উঠেছে।

ফারহার কথা শুনে অর্নিল কিছু বলল না ওদের সাথে বসল।অর্নিল কে বসতে দেখে জেবা বলল

–আয়রার সাথে বসলে আমাদের কোনো সমস্যা হতো না কিন্তু আমাদের সাথে বসেছিস এটা দেখে আনন্দ লাগছে।

জেবার কথায় অর্নিল মুচকি হাসলো। বসে তো গেল কিন্তু তবুও মাথায় আয়রার কথায় ঘুরছে।অর্নিল সব চিন্তা বাদ দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল

–ইটস ওকে ট্রিপে গিয়ে দেখে নেবো।

চলবে,,,

প্রেম তুমি পর্ব-০৭

0

#প্রেম_তুমি
#part:7
#mishmi_muntaha_moon

আয়রা সকালে তারাতারি উঠে পরল।এখন সব পেকিং করে রাখতে হবে।আর আজকেও ক্যাফে থেকে ছুটি নিয়েছে।পনে ৭ টা বাজে।আয়রা পেকিং করতে করতে রিমুর দিকে তাকালো একদম ঘুমের রাজ্যে ডুবে আছে।
আয়রা আস্তে আস্তে সব পেকিং করে এক সাইডে রাখলো তারপর রিমুকে ডাক দিলো।
রিমু ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেয়।হঠাৎ সাইডে রাখা ব্যাগে চোখ যেতেই ব্রু কুচকে আয়রাকে জিজ্ঞেস করল

–আয়রু এই ব্যাগ কিসের।

রিমুর কথা শুনে আয়রা ব্যাগটার দিকে তাকিয়ে আবার রিমুর দিকে তাকালো তারপর বলল

–আমার সব জিনিসপত্র।আমি একটা রুম দেখেছি সেখানেই শিফট হবো আজ।

আয়রার কথা শুনে রিমুর ব্রু জোরা কুচকে গেলো।রিমু আয়রার কাছে এসে বলল।

–কেনো।এখানে থাকতে কি তোর কোনো সমস্যা হচ্ছে?

রিমুর কথা শুনে আয়রা মুচকি হেসে রিমুর হাত ধরে বলল

–তোদের এখানে আমার কোনো সমস্যা হয় নি বরং যখন একজনের খুব প্রয়োজন ছিলো তখন তোকে পাশে পেয়েছি তুই আমার জন্য যা যা করেছিস কখনও ভুলতে পারবো না।

–তাহলে কেনো চলে যাচ্ছিস।

রিমুর কথায় আয়রা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল

–দেখ তুই আমাক ফোর্স করিস না থাকার জন্য প্লিজ।

–আচ্ছা করবনা ফোর্স কিন্তু কেনো যাচ্ছিস এইটা তো বলবি।

আয়রা কলেজের ব্যাগ কাধে নিয়ে বলল।

–কোনো কারণ নেই।আমি এভাবেই চলে যাচ্ছি কতদিন থাকবো তোদের বাড়ি বল?

আয়রার কথা শুনে রিমু কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল

–যতই বল আমি জানি তুই বাবার ওই কথাগুলোর জন্য চলে যাচ্ছিস।

আয়রা কিছুটা বিরক্ত দেখিয়ে বলল

–আরে নাহ এমন কিছুই না উনি আমার বাবার মতই উনার কথায় আমি রাগ করব কেনো?আমি এভাবেই যাচ্ছি।তুই এখন এই কথা বাদ দে কলেজে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে চল তারাতারি।আর এমন মুখ ফুলিয়ে রাখবি না বলে দিলাম।

আয়রার কথায় রিমু মনখারাপ থাকার সত্ত্বেও মুচকি হাসলো।
আয়রা আর রিমু খেতে বাহিরে যায়। আয়রা আর রিমু খাবার টেবিলে বসতেই রিমুর মা খাবার দেয়।রিমুর মা আয়রাকে খাবার দিতে নিতেই আয়রা বলে।

–আন্টি আমি একটা রুম ভাড়া নিয়েছি আজই সেখানে শিফট হবো।আপনারা আমার জন্য অনেক করেছেন তার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আয়রার কথা শুনে রিমুর মা বলল

–কেনো হঠাৎ করে বলছো চলে যাবে।কোনো সমস্যা হয়েছে আমাদের এখানে?

আয়রা মুচকি হেসে বলল

–না আন্টি তেমন কিছুই না।তাছাড়া আপনাদের বাসায় তো আমি প্রায়ই আসবো।কোনো সমস্যা হবে না তো?

–না আমাদের কোনো সমস্যা হবে না আমরা তো আরও খুশি হবো।

–জ্বী আন্টি আমি কলেজ থেকে ফিরে আমার জিনিসপত্র এর ব্যাগ নিয়ে যাবো।

আয়রা আর রিমু কলেজে চলে যায়।কলেজে পৌছেই আয়রার চোখ অর্নিল আর ওর ফ্রেন্ডদের দিকে গেলো।

–তুই চলে যাবি। আমার রুম টা খালি হয়ে যাবে।

রিমুর এমন কথায় আয়রা মনখারাপ করে বলল

–আমারও খারাপ লাগবে অনেক

–তাহলে যাস না।

আয়রা রিমুর কথার জবাব দিলো না।
ক্লাস শেষ হতেই আয়রা রিমুর সাথে ওদের বাড়ি গিয়ে ব্যাগ নিয়ে আসলো।তারপর ভাড়া নেওয়া বাড়িতে গিয়ে গেলো।বাড়িতে গিয়ে হলো সমস্যা। আয়রার সাথে কয়েকটা জামাকাপড় আর পড়ার বই ছাড়া কিছুই নেই ঘুমাবে কোথায় আর খাবেই কি?আয়রা ব্যাগ রেখে বারান্দায় গেলো।বারান্দার ডান সাইডে একটা বড় কদম গাছ আছে।গাছটা পুরো কদমে ভরে আছে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।
আশেপাশে দেখতে দেখতে হঠাৎ নিচে চোখ যেতেই চমকে উঠলো।

–আমি কি ঠিক দেকছি।না এইটা অর্নিল ভাইয়া কি করে হতে পারে।উনি জানবে কি করে আমি এখানে শিফট হয়েছি।

অর্নিল আয়রাকে বারান্দায় দেখে হাত নারালো।আয়রা অর্নিলকে দেখে তারাতারি রুমের ভিতরে চলে গেলো।
সাথে সাথেই আয়রার ফোনে আননোন নাম্বারে ফোন আসতেই আয়রা কিছুটা অসস্তি নিয়ে ফোন তুললো।কারন এই নাম্বার কেউ জানে না আর আয়রার ফোন দেওয়ার মানুষ ও তো নেই।আয়রা ফোন তুলে সালাম দিলো।

–আসসালামু আলাইকুম কে?

–৫ মিনিটের মধ্যে বাহিরে আসো।নাহলে আমি উপরে আসবো।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা কিছু বলতে নিবে তার আগেই ফোন কেটে দিলো।আয়রা ফোনের দিকে তাকিয়ে ব্রু কুচকে বলতে লাগলো।

–আজব তো আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না।এখন কি করি।কে জানে সত্যি আবার এসে পরবে নাকি।

আয়রা অরনা ঠিক করে পরে নিয়ে নিচে গেলো।তারপর অর্নিলের সামনে দাঁড়িয়ে বলল।

–আপনি এখানে কেনো?আর জানলেন কি করে আমি এখানে শিফট হয়েছি?

–তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড আর গার্লফ্রেন্ডের খবর তো
রাখতেই হয়।

আয়রা বিরক্ত নিয়ে বলল

–দেখুন প্রথমত আমাকে গার্লফ্রেন্ড বলা বন্ধ করুন।আপনি বলেছেন শুধু এক্টিং তাহলে এখন তো কেউ নেই।

অর্নিল আয়রার কথা শুনে পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল।

–তা যাই হোক। তুমি চলো আমার সাথে।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা অবাক হয়ে বলল

–আমি আপনার সাথে কেনো যাবো?আর কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছেন?

–চুপ বেশি কথা বলবে না।চলো আমার সাথে।

অর্নিল আয়রার হাত ধরে বাইকে বসালো তারপর নিজেও উঠে চালাতে লাগলো।

আয়রা কিছুক্ষন চুপ থেকে আবারও একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো।অর্নিল কোনো জবাব দেয় না আয়রার কোনো কথার।তারপর একটা এক তালা বিল্ডিং এর সামনে বাইক থামায়।

আয়রা নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে লাগে।

–কোথায় নিয়ে এলেন।

আয়রার কথা শুনে অর্নিল আয়রার হাত টেনে ভিতরে নিয়ে যায়।
আয়রা ভিতরে গিয়ে ব্রু কুচকে আশেপাশে দেখে বসার
কিছু চেয়ার গিটার আরও অনেক কিছুই আছে গান গাওয়ার মত।তারপর ছাদের মত ছোট একটা বারান্দা ও আছে খুব সুন্দর।অর্নিল আয়রার দিকে তাকিয়ে ওর মুখের অবস্থা দেখে বলে।

–লাইক সিরিয়াসলি তুমি ভয় পাচ্ছো?হায়রে!

আয়রা নিজেকে স্বাভাবিক করে অর্নিলের দিকে তাকিয়ে বলল

— আপনি আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন বলুন?

–কিছু না এভাবেই ভাবলাম আমার ব্যাক্তিগত জায়গাটা তোমাকে দেখাই।এখানে আমি এসে মাঝেমধ্যে সময় কাটাই।আর এখানে আমার পছন্দের সকল কিছুই আছে।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা ভ্রু উচিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখলো।গানের সরঞ্জাম, বিভিন্ন আর্ট করা ছবি দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।দেখে মন মেজাজ ভালো হয়ে গেলো।আয়রা বারান্দায় গিয়ে ফুল গাছ দেখছে।

অর্নিল পকেট থেকে ফোন বের করে আয়রার অগোচরে ওর কতগুলো ছবি তুলে নিলো।তারপর আয়রা কে ডাক দিলো, অর্নিলের ডাক শুনে আয়রা ওর সামনে দাড়িয়ে বললো।

–কি হলো?
–আমার পাশে দাড়াও কিছু ছবি তুলবো।

অর্নিলের কথায় আয়রা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো।

–কেনো আমি আপনার সাথে ছবি তুলবো।

অর্নিল আয়রার কথা কে পাওা না দিয়ে আয়রার হাত ধরে পাশে দাড়া করিয়ে বললো।

–চুপচাপ দাড়াও। ফারহা কে গিয়ে দেখাতে হবে। তাহলে তো এখানে আসাটা কাজে লাগবে।

অর্নিলে কথায় আয়রা কিছুক্ষণ নি শব্দে দাঁড়িয়ে থেকে অর্নিলের মোবাইলের দিকে তাকালো।অর্নিল ছবি তুলে মোবাইল পকেটে রেখে আয়রা কে বললো।

–চলো তাহলে তোমাকে দিয়ে আসি।

অর্নিল বাসা থেকে বের হয়ে বাইকে গিয়ে বসলো আয়রা ও পিছে পিছে গিয়ে অর্নিলের কাধ ধরে বসে।
অর্নিল বাইক চালাতে চালাতে আয়রার উদ্দেশ্যে বললো।

–তুমি অন্য জায়গায় শিফ্ট হলে কেনো?

অর্নিলের কথায় আয়রা চোখে উরে আসা চুল সরিয়ে বললো।

–কারো উপর বোজ হয়ে থাকতে চাই না।

অর্নিল আয়রার কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো।অর্নিল কে চুপ থাকতে দেখে আয়রা বললো।

–আপনার দেখি সিন্গারদের মতো আলাদা গান গাওয়ার রুম ও আছে।

আয়রার কথায় অর্নিল বললো।

–সিন্গারদের মতো কি আমি তো সিন্গারই।

–ওহহহ

অর্নিলের কথায় আয়রা বিরবির করে ঠোঁট বাকিয়ে বললো।

–হাহ সিন্গার।

অর্নিল আয়রা কে বিরবির করে কথা বলতে দেখে জিগ্যেস করলো।

–কিছু বললে।

–না না আমি কি বলবো আবার আমি কিছুই বলিনি।

অর্নিল আয়রা কে বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে গেলো।আয়রা অর্নিলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বললো।

–কোথা থেকে এসে আবার চলেও গেলো।

চলবে…..

(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

প্রেম তুমি পর্ব-০৬

0

#প্রেম_তুমি
#part:6
#mishmi_muntaha_moon

অর্নিল চুপচাপ বাইক চালাচ্ছে।আয়রাও চুপ করে বসে আছে।নিরবতা ভেঙে অর্নিল বলল

–তুমি এই ক্যাফে তে কাজ করো।

আয়রা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল।

–হ্যা।

তারপর আবার চুপ।অর্নিলকে চুপ থাকতে দেখে আয়রা বলল।

–এখন বলেন আপনি সবার সামনে আমাকে গার্লফ্রেন্ড বললেন কেনো।

–লিসেন তোমাকে গার্লফ্রেন্ড বানানোর কোনো শখ আমার কোনো কালেই ছিলো না।আমি তো জাস্ট ফারহা আরও কিছু বিরক্তিকর মেয়েদের থেকে পিছু ছুটাতে বলেছি।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা মনে মনে বলল

–আর ওই রিমুর বাচ্চায় কি বলল পছন্দ করে আমায়।

আয়রাকে চুপ থাকতে দেখে অর্নিল বলল।

–কি হলো।

–না কিছু না।কিন্তু আমি আপনার হেল্প কেনো করবো?

আয়রার কথা শুনে অর্নিল হাসলো।

–আমি জানতাম তুমি এমন কিছুই বলবে তাই তো আগে থেকেই ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম।শর্তের কথা মনে আছে এইটাই তোমার শর্ত আমার গার্লফ্রেন্ড হয়ে থাকতে হবে।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা যেনো আকাশ থেকে পরল।

–আমি বলেছিলাম আপনি সুবিধার শর্ত দিবেন না।ওই রিমুর জন্য আমাকে ফাসতে হচ্ছে।উফফ।

–এখন কিছু করার নেই

আয়রা কিছুক্ষন মুখ গোমড়া করে রেখে আবারও বলল।

–আচ্ছা আপনি কি পাগল যে ফারহা আপুর থেকে পিছু ছুটাতে চান কত সুন্দর উনি।আপনার পিছে পাগল এইটা তো আপনার ভাগ্য।নাহলে আপনি,,,,

কথা বলার মাঝে হঠাৎ বাইক থামায় আয়রা পড়ে যেতে নিতেই অর্নিলের কাধ ধরে ফেলে।

–পাগল নাকি এতো জোরে বাইক থামালেন কেনো আমি এভাবেই হাল্কা ভাবে বসেছিলাম এখনই পরে যেতাম।

–বাইক থেকে নামো।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা ভয় পেয়ে বলল

–কেনো।আপনি আমায় মাঝ রাস্তায় রেখে চলে যাবেন কত খারাপ আপনি।

–নামো আগে।

আয়রা নেমে দারালো তারপর অর্নিলের দিকে তাকিয়ে রইল।অর্নিল চোখ ছোট ছোট করে বলল

–কি বললে তুমি ফারহা আমায় পছন্দ করে এইটা আমার ভাগ্য।আমার পিছে কত মেয়ে ঘুরে তোমার ধারণা আছে।আর ভার্সিটি তে আমি কি পরিমানে ফেমাস জানো তো।আমি যদি বলি আমার গার্লফ্রেন্ড প্রয়োজন তাহলে লাইন লেগে যাবে।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা মনে মনে বলতে লাগলো

–হাহ! নিজের প্রশংসা করা তো উনার থেকে শিখা উচিত।

অর্নিল আয়রাকে চুপ থাকতে দেখে বলল।

–আমি চললাম এখন তুমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকো।

অর্নিল বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।আয়রার তো কান্না পাচ্ছে।কি করবে এখন।ভাবতে ভাবতে আশেপাশে তাকাতেই মুখে হাসি ফুটলো।

–এইটা তো রিমুদের বাড়ি।ফাজিল কোথাকার আমাকে বোকা বানালো।কি পরিমানে ভয় পেয়েছিলাম।

আয়রা ওরনা ঠিক করে যেতে লাগলো।রিমুদের বাসায় যেতেই দেখতে পেলো রিমুর বাবা হাটছে।আয়রা রিমুর বাবাকে দেখেই সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল।

–কেমন আছেন আংকেল?

রিমুর বাবা কিছুক্ষন ব্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে গম্ভীর মুখে বলল।

–ভালো আছি।

রিমুর বাবা জবাব দিয়ে উনার রুমে চলে গেলেন।আয়রার ছোট বেলা থেকেই এমন গম্ভীর লোক দের কেমন যেনো ভয় ভয় লাগে মনে হয় কিছু বললেই ধমক দিবে।
আয়রা ঢোক গিলে রিমুর রুমে গেলো।রিমু একটা ড্রেস নিজের শরীরের সাথে লাগিয়ে আয়নার সামনে দারিয়ে দেখছে।আয়রা চুপ করে ব্যাগটা এক সাইডে রেখে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো।এসে দেখে রিমু খুশি মনে ড্রেস্ টা ভাজ করে ড্রয়ারে রাখছে।
আয়রা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বারান্দায় চলে গেলো।বাবাকে খুব মিস করছে।
আয়রা বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের কিনারায় জমা পানিটুকু আঙুল দিয়ে মুছে নিলো।

–আয়রা এখানে কি করছিস।আর এতো চুপচাপ কেনো।কিছু হয়েছে?

আয়রা পাশে রিমুকে দেখে মুচকি হাসলো তারপর বলল

–নাহ কিছুই না এভাবেই।

–আচ্ছা চল খেতে আয়।বাবা এসেছে দেখেছিস?আজ আমরা একসাথে বসে খাবো উফফ ভাবতেই ভালো লাগছে।বাবা আমার জন্য একটা নিউ ড্রেস ও এনেছে দেখেছিস?

আয়রা হেসে বলল

–হ্যা দেখলাম তো।

–আচ্ছা তাহলে চল খেয়ে আসি।বাবা চকলেট ও এনেছে একসাথে খাবো চল।

আয়রা আর রিমু খেতে যায়।বাহিরে গিয়ে দেখে রিমুর বাবা খাবার টেবিলে আগে থেকেই বসে আছে।আয়রাকে দেখে আবারও ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকালো।
আয়রার অনেক বেশি আনকমফর্টেবেল ফিল হচ্ছে ওদের মাঝে।তবুও চুপচাপ এসে বসল।রিমু তো আগেই গিয়ে ওর বাবার পাশে বসে পরেছে।
আয়রা কোনোরকম খাচ্ছে।রিমুর বাবার প্রশ্নে আয়রার গলা দিয়ে আর খাবার নামলো না।

–তোমার মা বাবার সাথে কথা হয়?

আয়রা রিমুর বাবার প্রশ্নে থতমত খেয়ে বলল।

–না,,,না আংকেল কথা হয় না।

আয়রা কথা শুনে রিমুর বাবা খেতে খেতে আবারও বলল

–একে তো পালিয়ে এসেছো তার উপর মা বাবার সাথেও কোনো সম্পর্ক রাখো নি।আমার মেয়ে রিমু হলে কখনই এমন করতে পারতো না আমরা ওর জান।

রিমুর বাবার কথা শুনে আয়রার অনেক গিল্টি ফিল হচ্ছে।ঠিকই তো বলছে।আয়রা চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।
রিমু ওর বাবার কথা শুনে চাপা স্বরে বলল।

–বাবা তুমি কি বলছো এই সব?প্লিজ আর কিছু বলো না।

রিমুর বাবা আর কিছু বললেন না চুপচাপ খেতে লাগলেন।আয়রা কিছুক্ষন না খেয়ে চুপচাপ বসে থেকে উঠে দারালো।তারপর মুচকি হেসে বলল

–আংকেল আন্টি আমার খাওয়া শেষ।আমি যাই খুব ক্লান্ত লাগছে।

আয়রা রুমে গিয়ে একপাশ হয়ে শুয়ে পরল।খুব রাগ লাগছে। এখন মনে হচ্ছে যে নিজের বাবা মার বিশ্বাস ভেঙেছে।আর আয়রার ওর মা বাবার প্রতি এই প্রগাঢ় ভালোবাসাও পানির মত মিলিয়ে গেলো।
আয়রা চোখ দিয়ে টপটপ পানি পরছে।রিমুকে রুমে ঢুকতে দেখে আয়রা চোখের জল মুছে চোখ বুজে রইল।রিমু আয়রার পাশে এসে আস্তে বলল

–আয়রা ঘুমিয়ে পরেছিস।

রিমুর ডাকায় আয়রা কোনো সাড়া দিলো না।রিমু রুমের লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পরল।আয়রার ঘুম পাচ্ছে না।কিছুক্ষন এদিক ওদিক করে উঠে দরজা খুলে বেরিয়ে পরল।তারপর রান্নাঘরে পানির জন্য যেতেই দেখলো রিমুর মা বাবার রুমে লাইট জ্বালানো আর কিছু নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে।আয়রা না চাওয়া সত্ত্বেও আস্তে করে গিয়ে দরজার পাশে দারালো।রিমুর বাবার কথার আওয়াজ আসছে

–দেখো এই মেয়েকে তুমি কালকেই এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য কথা বলবে।

–দেখো রিমুর বাবা তুমি এমন করছো কেনো।আয়রা রিমুর বান্ধবী হয় কিভাবে মুখের উপর চলে যেতে বলব।আর কি করেছে মেয়েটা।

–একেতো পালিয়ে এসেছে আবার জিজ্ঞেস করছো কি করেছে।আর আমি আজকে এই মেয়েকে একটা ছেলের সাথে দেখেছি।ছেলেটার বাইক করে আসছিলো।ঢাকায় এর জন্যই এসেছিলো নাকি পালিয়ে।মা বাবার উপর ও তো প্রশ্ন করতে হয় এই মেয়ের।আমার বিশ্বাস আমার মেয়ে কখনই এমন করতে পারবে না।

আয়রা আর শুনতে পারলো কান্নার চটে হেচকি উঠে যাচ্ছে আয়রা কোনোরকম নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রুমে চলে গিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।তারপর মুখ চেপে কাদতে লাগলো।

–আমার জন্য আমার মা বাবার ব্যাপারেও খারাপ কথা বলছে।

আয়রা অনেকক্ষন কেদে মুখ ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে গেলো তারপর আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু এখন তো আর ঘুম চোখে আসছে না।

সকাল হতেই রিমু আয়রা কে ডেকে তুললো।আয়রা উঠে হাত মুখ ধুয়ে ব্যাগ গুছাতে লাগলো।রিমু ও ব্যাগ গুছাতে গুছাতে আয়রাকে বলল।

–এই তোর চোখ গুলো এমন ফুলে আছে কেনো?

আয়রা ব্যাগ গুছাতে গুছাতেই বলল

–না এভাবেই রাতে বেশি আগে ঘুমিয়েছিলাম তো তাই হয়তো।

–ওহ আর কালকে বাবার কথায়,,,

রিমুর কথার মাঝেই আয়রা বলল

–না না আমি কিছুই মনে করি নি আর আমার সাথে কিসের ফর্মালিটি তোর?

–আচ্ছা চল খেয়ে তারাতারি কলেজে যেতে হবে।

আয়রা ব্যাগ কাধে নিয়ে বলল।

–আমার ক্ষিদে নেই।তুই খেয়ে বাহিরে আস আমি ওয়েট করছি।প্লিজ খাবারের জন্য ফর্স করিস না।

রিমু আর কিছু বলতে পারলো না।আয়রা বাহিরে গিয়ে রিমুর জন্য ওয়েট করতে লাগলো রিমু আসতেই কলেজে চলে গেলো।

আয়রাদের আজ দুটো ক্লাস হয়েছে।রিমু কলেজের বাহিরে গিয়ে আয়রাকে বলতে লাগলো।

–ওয়াও আজ তারাতারি শেষ হয়েছে ক্লাস চল আমরা ফুচকা খাই।

রিমুর কথা শুনে আয়রা বলল

–নারে আজ খেতে পারবো না তুই বাড়িতে চলে যা আমার আজ একটু তারাতারি ক্যাফে তে যেতে হবে।

রিমু মন খারাপ করে চলে গেলো।রিমু যেতেই আয়রা ক্যাফেতে গিয়ে ছুটি নিয়ে ঘর খুজতে চলে গেলো।
আয়রা ভেবে নিয়েছে রিমুদের বাড়িতে থাকবে না আর।তাই বাড়ি খুজার জন্য রিমুকে মিথ্যা বলে পাঠিয়ে দিলো।

বাড়িতে পৌছাতে পৌছাতে ৮:০০ বেজে গেলো।বাড়ি খুজার জন্য আজ অনেক বেশি ঘুরতে হয়েছে।অবশেষে একটা রুম পেয়েছে।তিনটা ফ্লেটের রুমে হাসবেন্ড ওয়াইফ থাকে সেই ফ্লেটেই একটা রুম ভাড়া নিয়েছে কালকেই সেখানে শিফট হবে বলেছে।
আয়রা এতো ঘুরাঘুরি করে খুব ক্লান্ত রাতেও আবার না খেয়ে ঘুমিয়ে পরল।

চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই আশা করি❤️❤️)

প্রেম তুমি পর্ব-০৫

0

#প্রেম_তুমি
#part:5
#Mishmi_muntaha_moon

সকলে আয়রার দিকে ভুতের মত তাকিয়ে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেউ স্বপ্নেও ভাবে নি আয়রা অর্নিলের গার্লফ্রেন্ড হতে পারে।
আয়রা তো চোখ তুলেই তাকাতে পারছে না।আয়রার অনেক রাগ লাগছে।সবার সামনে অসম্মান করে দিলো। মানে কি?
আয়রা রেগে অর্নিলের হাত ছাড়িয়ে চলে গেলো ক্লাসে।
আয়রা চলে যেতেই ফারহা অর্নিলের সামনে এসে বলল

–মানে কি অর্নিল তুমি সবার সামনে এইটা কেনো বললে?ও না আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড হই সবাই কে বলো।

–লিসেন এভ্রিওয়ান আমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে সবাইকে দেখা করিয়ে দিলাম।নাও এভ্রিথিং ক্লিয়ার।বায়।

অর্নিল শিষ বাজাতে বাজাতে চলে যায়।রোহান আর তুশারের কাছে যেতেই ওরা একের পর এক প্রশ্নের ঝুরি নিয়ে বসে।অর্নিলকে দেখে তুশার বলল।

–ওই লেহেঙ্গা ওয়ালি তোর গার্লফ্রেন্ড ছিলো।তলে তলে এতো কিছু?

তুশারের কথা শেষ হতেই রোহান বলতে লাগলো।

–ওই মেয়েটাকে দেখতে তো অনেক মাসুম মনে হয় কিন্তু রিলেশন ও চালিয়ে গেলো।তাও তোর সাথে।

ওদের দুজনের কথা শুনে অর্নিল বলল।

–তোরা চুপ থাক তো।আয়রা কিছুই আগে থেকে জানে না।আর আমাদের মাঝে রিলেশন টিলেশন কিছুই নেই।

ফারহা অর্নিল হাত টেনে ধরে বলল

–তুমি যতই বলো ওই মেয়েটাই খারাপ,কেরেক্টালেস যত্তসব।আমার অর্নিলের ওপর নজর দেয়।কালকে আমি ওয়ার্নিং ও দিয়েছিলাম।

অর্নিল ফারহার কথায় আরও রেগে গেলো।

–তুই ওকে কি বলেছিস কালকে।

অর্নিলের কথায় ফারহা থতমত খেয়ে যায়।

–না,,মানে আমি তো

–চুপ তোকে আমি বলেছি না ওর থেকে দূরে থাকবি।এখন থেকে যেনো মনে থাকে।

ফারহা রেগে সেখান থেকে চলে যায়।ফারহাকে চলে যেতে দেখে রোহান বলে উঠলো।

–কেনো তুই ওই মেয়েটার জন্য ফারহার সাথে এভাবে কথা বলছিস?

রোহানের কথায় অর্নিল ব্রু উঠিয়ে বলল।

–উফফ তোরা চুপ থাক।আয়রা আমার গার্লফ্রেন্ড না এইটা জাস্ট এক্টিং।ফারহার থেকে পিছু ছুটানোর জন্য।

আয়রা ক্লাসে আসার পর থেকেই অন্যমনস্ক হয়ে আছে। রিমু আয়রার সামনে হাত নেড়ে বলল

–শুনছিস আমার কথা?

আয়রা রিমুর দিকে তাকিয়ে বলল।

–কোন কথা?

আয়রার জবাব পেয়ে রিমু বলতে লাগলো।

–অর্নিল ভাইয়া সবার সামনে তোকে আজ গার্লফ্রেন্ড বলল।উফফ কি লাকি তুই আমাকে বললে ভালো হতো।আর তোদের কি আগে থেকেই কোনো সিন চলছিলো?

আয়রা রিমুর কথা শুনে রাগ নিয়ে বলল।

–দেখ তুই আমার ব্যাপারে এই সব ভাবছিস তো বাইরের সবাই কি কি ভাবছে আমার ব্যাপারে।উনি একদম ঠিক করে নি।

–আচ্ছা এই সব বাদ দে কিন্তু অর্নিল ভাইয়া কেনো বলল তোকে সবার সামনে গার্লফ্রেন্ড উনি হয়তো তোকে পছন্দ করে।

রিমুর কথায় আয়রা আড়চোখে রিমুর দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকিয়ে বলল

–ফালতু কথা বলবি না।এরকম কিছুই না।উনি কেনো আমাকে পছন্দ করতে যাবে।কত সুন্দর মেয়েরা উনার পিছে ঘুরে।আর সবার কথা বাদ দে ফারহা আপু উনারই ফ্রেন্ড উনাকে কত পছন্দ করে সারাদিন লেগেই থাকে।আর দেখেছিস ফারহা আপু কত সুন্দর স্মার্ট।এই সবাইকে ছেড়ে উনি আমাকে পছন্দ করবে হাহ!

আয়রার কথা শুনে রিমু চুপ করে রইল।রিমুকে চুপ থাকতে দেখে আয়রা আবারও বলল

–আচ্ছা বাদ দে এইসব কথা। পড়ায় মনোযোগ দে।

ক্লাস শেষ হতেই রিমু বাড়িতে চলে গেলো।আর আয়রা ক্যাফে যেতে লাগলো।
আয়রা হাটছে আর বারবার আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে অর্নিল আছে কিনা?
আয়রা আশেপাশে তাকিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে।আয়রাকে দেখে ডাক দিলো।ছেলেটার ডাক শুনে আয়রা নিজেকে দেখিয়ে বলল

–আমি?

ছেলেটা হ্যা বলতেই আয়রা ঠোঁট কামড়ে ওর কাছে যায়।তারপর বলে

–জ্বী বলুন কি বলবেন?

–তুমি আয়রা না?

ছেলেটার কথা শুনে আয়রা অবাক হয়ে বলে

–জ্বী কিন্তু আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?

আয়রার কথা শুনে ছেলেটা হাসলো।তারপর হাত এগিয়ে দিয়ে বলল।

–আমি অর্নব আহমেদ।অর্নিলের ভাই।

অর্নিলের ভাই শুনে আয়রা আরও অবাক হয়।তারপর মুচকি হেসে বলে।

–ওহ।

আয়রা হেন্ডশেক না করায় অর্নব নিজের হাত গুটিয়ে নিয়ে বলে।

–তুমি কি অর্নিলের গার্লফ্রেন্ড।

অর্নবের কথা শুনে আয়রা একনাগাড়ে বলতে লাগে।

–না না এমন কিছুই না ভাইয়া।আমি অর্নিল ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড না।

আয়রাকে এমন ঘাবড়ে যেতে দেখে অর্নব মৃদু হেসে বলে।

–রিলেক্স এতো ঘাবড়াচ্ছো কেনো।বুঝলাম তুমি অর্নিলের গার্লফ্রেন্ড না।

অর্নবের কথা শুনে আয়রা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করল।অর্নব আবারও বলতে লাগল।

–তুমি কি অর্নিল কে পছন্দ করো না?

অর্নবের কথা শুনে আয়রা বড়বড় চোখ করে বলল।

–না এমন কিছুই আমি উনাকে কেনো পছন্দ করতে যাবো।

–ওহ।

অর্নবকে চুপ থাকতে দেখে আয়রা বলল।

–আচ্ছা ভাইয়া আমি চললাম আমার এটা কাজ আছে।লেট হয়ে যাচ্ছে।

বলেই আয়রা তারাতারি করে চলে যায়।আয়রা চলে যেতেই অর্নব ব্রু কুচকে বলে।

–আজব তো সকালে তো দেখলাম অর্নিল আয়রাকে নিজের গার্লফ্রেন্ড বলল।আর আয়রা বলছে ও গার্লফ্রেন্ড না।স্ট্রেঞ্জ!

অর্নিল কলেজ থেকে বের হয়ে অর্নব কে দেখে ব্রু কুচকে ওর কাছে গিয়ে প্রশ্ন করে।

–তুই এখানে কি করছিস?

অর্নব অর্নিলের কাধে হাত রেখে বলে

–তোর গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।

অর্নবের কথায় অর্নিল ব্রু কুচকে বলে

–হোয়াট!আমার গার্লফ্রেন্ড আবার কোথা থেকে আসবে।

অর্নব ছোট ছোট চোখ করে বলে

–বড় ভাই থেকে কথা লুকাস।বেরি বেড।আয়রার সাথে কথাও বলেছি আমি।

অর্নিল আয়রার কথা শুনে বুঝতে পারে আসল ঘটনা। তারপর বলে

–তুই সকালেও কলেজে ছিলি।

অর্নব মাথা উপর নিচ নাড়ায়।অর্নিল ওর শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলে।

–তুই আমার উপর নজর রাখছিলি।

–একদম।আমার থেকে না লুকালেই পারতি।

অর্নব অর্নিল একসাথে হাটতে লাগে আর বিভিন্ন কথা বলতে লাগে।

আয়রা ব্যাগ নিয়ে ক্যাফে থেকে বেরিয়ে পরে।আজ ৮:৩০ বেজে গেছে।আয়রা ধীর পায়ে হাটছে।হঠাৎ খুব দ্রুত একটা বাইক এসে সামনে থামতেই আয়রা ভয় পেয়ে যায়।তারপর ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখে অর্নিল বাইক থেকে নামলো।
আয়রা অর্নিলকে দেখে বুকে থু থু দিলো।
অর্নিল আয়রার সামনে এসে বাকা হেসে বলল।

–হেই মাই গার্ল।

আয়রা অর্নিলের কথা শুনে রেগে বলল।

–দেখুন মুখ সামলে কথা বলুন।মাই গার্ল মানে কি হ্যা?

অর্নিল আয়রার কথা শুনে জোরে হেসে আয়রার কাছে এসে বলল

–বুঝিয়ে বলবো?

আয়রা অর্নিলের এমন অদ্ভুত আচরণে চোখ বুজে অর্নিলের কাধে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো।

–আপনি এখানে কেনো?

অর্নিল ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল।

–যেখানে আমার গার্লফ্রেন্ড সেখানে আমি।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রার খুব রাগ লাগছে।আসার পর থেকেই কি সব কথা বলছে।আয়রা রাগ নিয়ে বলল

–দেখুন ভাইয়া ফাইজলামি বন্ধ করেন।বলুন এখানে কেনো এসেছেন।আর সকালে আপনি একদম ঠিক করেন নি কেনো সবার সামনে বললেন আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড। সবার সামনে আমার কি সম্মান টাই রয়ে গেলো।

অর্নিল আয়রার কথা না শুনের ভান করে বলল বাইকে গিয়ে বসল তারপর আয়রাকে বলল

–বাইকে উঠে বসো।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা বড় বড় চোখ করে অর্নিলের দিকে তাকায়।
আয়রাকে এভাবে তাকাতে দেখে অর্নিল বলে

–হোয়াট? এভাবে আছো কেনো মনে হচ্ছে আমি অসম্ভব কিছু করে ফেলেছি?

–অসম্ভব কিছু করেন নি বলেছেন।আমি কেনো আপনার বাইকে বসবো।আমার কি পা নেই?

অর্নিল ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল

–এস ইউর উইশ।আমি তাহলে একাই চলে যাই রাত ৯ টার কাছাকাছি তারউপর ঢাকা শহর জানোই তো।এখানে রাস্তায় রাস্তায় বিভিন্ন ছেলেরা দারিয়ে থাকে তো কি হইসে তুমি তো সাহসী চলি আমি।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রার ভয় লাগছে কিন্তু আয়রা অর্নিলের সামনে প্রকাশ করতে চাইছে না।আয়রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত হয়ে অন্য দিকে ফিরে অর্নিলকে বলল

–আমি যেতে পারবো।

অর্নিল বাইক স্টার্ট দিতেই আয়রা মৃদুস্বরে বলল

–আপনি কি সত্যি চলে যাচ্ছেন।

অর্নিল আয়রার কথা না শুনার ভান করে বলল

–কিছু বললে?

–নাহ।

অর্নিল বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।আয়রা অর্নিলকে চলে যেতে দেখে মনে মনে বলল

–কত খারাপ লোক। আমি বলেছি তো কি হয়েছে একটা মেয়েকে এভাবে একা রেখে চলে গেলো।আরেকবার তো জিজ্ঞেস করতে পারতো।

আয়রা আপনমনে হাটতে লাগলো একটু এগিয়ে কতগুলো ছেলেকে দেখে থেমে গেলো।ঠোঁট কামড়ে মনে মনে আস্তে করে বলল

–উফ এতোগুলো ছেলে এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেনো?

পিছ থেকে চাপা হাসির শব্দে ঘুরে তাকায়।

–যাহ ছেলেগুলোকে দেখে ভয় পেয়ে গেলে।

অর্নিলের এমন খোচা মেরে কথা বলায় আয়রা বলে

–আপনি আবার এখানে কেনো এসেছেন আপনি তো চলে গিয়েছিলেন।

–আমি আবার দুর্বল মেয়েদের একা রাস্তায় রেখে যেতে পারি না।এখন চুপচাপ এসে বাইক এ বসো নাহলে সত্যি চলে যাবো।

আয়রা কিছুক্ষন নিজ মনে অর্নিলকে গালি দিয়ে বাইকে উঠে গিয়ে অর্নিলের থেকে একটু দূরে হাল্কা করে বসে।

–ঠিক করে বসো।

–ঠিক করেই বসেছি আপনি স্টার্ট দিন।

আয়রাকে এমন ত্যারামি করতে দেখে অর্নিল আর কিছু না বলে বাইক স্টার্ট দেয়।

চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই🥰🥰)

প্রেম তুমি পর্ব-০৪

0

#প্রেম_তুমি
#part:4
#Mishmi_muntaha_moon

শর্তের কথা শুনে আয়রার গলা শুকিয়ে গেলো।আর রিমু তো এক পায়ে রাজি।অর্নিল শর্তের কথা বলার সাথে সাথে রিমু বলল

–হ্যা হ্যা রাজি।

অর্নিল রিমুর কথা শুনে আয়রার দিকে তাকিয়ে বলল

–আর উনি?

রিমু আয়রাকে কনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলল।

–আয়রা হ্যা বল।

আয়রা রিমুর দিকে তাকিয়ে ব্রু কুচকে আবার অর্নিলের দিকে তাকালো।তারপর বলল

–কেমন শর্ত।বলুন আগে।

–এখন বলব না সময় আসলে আপনাআপনি জেনে যাবে এখন বলো রাজি কি না?

রিমু আয়রার কানের কাছে গিয়ে ফিশফিশিয়ে বলল

–দেখ রাজি হয়ে যা।অর্নিল ভাইয়া খুব ভালো উনি খারাপ বা উলটা পালটা কিছু করতে বলবে না।আর তোর ক্যাফে যাওয়ার টাইমও অভার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।তারাতারি হ্যা বলে দে।

রিমুর কথাগুলো আয়রা ভাবলো কিছুক্ষন ঠিকই বলছে।আবার ২:১৫ বেজে গেছে অলরেডি।আয়রা কিছুক্ষন ভেবে মুখ গোমড়া করে বলল

–আচ্ছা আমি মানবো আপনার শর্ত।

আয়রার কথা শুনে অর্নিল বাকা হেসে বলল।

–গুড।রোহান ওদের এসাইনমেন্ট গুলোতে কি হেল্প লাগবে দেখ।

আয়রা আর রিমুর এসাইনমেন্ট ফিনিশ হতেই ওরা চলে গেলো।
অর্নিল গিটার হাতে নিয়ে টেবিলে বসা থেকে লাফ দিয়ে নেমে বলল

–আচ্ছা আমি চললাম।

অর্নিলের কথা শুনে ফারহা রেগে অর্নিলের সামনে এসে বলল।

–অর্নিল তুমি এতোক্ষন ওদের জন্যই বসে ছিলে?আর কিসের শর্ত।

ফারহার কথায় অর্নিল হাতে থাকা ঘড়ি দেখে ব্রু কুচকে বিরক্ত নিয়ে বলল।

–ফারহা তোকে আমি আগেও বলেছি আমার লাইফে ইন্টার্ফের একদমই করবি না।ইউ আর নট মাই গার্লফ্রেন্ড। আর আমার সময় নেই। বায় অল।

অর্নিল চুল ঠিক করতে করতে চলে যায়।

আয়রা কলেজ থেকে সোজা ক্যাফে তে চলে যায়।ক্যাফে তে গিয়ে প্রথমই রিমুর মামার সাথে দেখা করে খুব ভালো মানুষ রিমুর মামা।
আয়রা উনার থেকে কাজের বাপারে সব জেনে কাজ করতে লাগে।

৮ বাজে,,,আয়রা কাজ শেষ করে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পরে বাড়িতে যাওয়ার জন্য।রাতের অন্ধকারে রাস্তাগুলো পুরো ভিন্ন লাগছে।ক্যাফে থেকে বেশি দূর না রিমুদের বাড়ি।তাই আয়রা আশেপাশে তাকাতে তাকাতে হাটতে লাগলো।অর্ধেক যাওয়ার পর সামনে ফারহাকে দেখে মাথা নিচু করে সাইড কেটে যেতে নেই কিন্তু ফারহা পিছন থেকে হাত টেনে ধরায় থেমে যায়।ফারহা এক ভ্রু তুলে কিছুটা সন্দেহীন গলায় বলল

–ইউ ইডিয়ট গার্ল!তুমি এখানে কি করছো তাও আবার এতো রাতে।

–জ্বী আপু আমি একটা কাজে এসেছিলাম আপনার না জানলে ও চলবে।

–রাইট তুমি কেনো ওখানে এসেছো তা জানার কোনোই ইচ্ছেই আমার নেই।কিন্ত একটা ওয়ার্নিং দেওয়ার ছিলো।এখানে পেয়ে গেলাম ভালোই হলো।ভার্সিটিতে তো অর্নিলের জন্য কিছু বলতে পারবো না বাট এখানে অর্নিল নেই।

ফারহার কথা শুনে আয়রা ব্রু কুচকে ফারহার দিকে তাকালো।ফারহা আবারও থ্রেট দিয়ে বলতে লাগলো।

–লিসেন তোমাকে যেনো অর্নিলের আশেপাশেও না দেখি অর্নিলের থেকে দূরে থাকবে বুঝলে।নোনসেন্স কোথাকার এসেছে আমার অর্নিলকে ছিনিয়ে নিতে।নিজকে দেখেছো আয়নায়।অর্নিলের দিকে নজর দিতে এসেছে।

ফারহার কথায় আয়রা হাল্কা রাগ দেখিয়ে বলল

–দেখুন আপনি সিনিয়র বলে যা নয় তা বলতে পারেন না।আর আমি কেনো অর্নিল ভাইয়ার দিকে নজর দিবো।আপনি আমাকে না বলে উনাকে বলুন না এই সব।

–বেশি কথা বলবে না আমি যা বলছি তাই করবে তুমি বুঝলে।

আয়রা নিজের হাত টা ফারহার হাত থেকে ছাড়িয়ে বলল

–আপনি না বললেও আমি উনার থেকে দূরেই থাকতাম।আপনার মত চিপকিয়ে থাকার শখ নেই আমার।

বলেই আয়রা দ্রুত পায়ে চলে গেলো।আয়রাকে চলে যেতে দেখে ফারহা রাগ নিয়ে বলল।

–ইডিয়ট!!আমাকে কথা শুনিয়ে চলে গেলো।

অর্নিল আর অর্নবের কথা বলার মাঝে রুমে অর্নিলের মা অর্পা বেগম ঢুকলেন।তারপর ওদের দুজনের উদ্দেশ্যে বললেন।

–কি কথা হচ্ছে?

অর্পা বেগমের কথা শুনে অর্নব বলল

–কিছু না মা।বস আমাদের সাথে।

অর্পা বেগম ওদের সামনে একটা চেয়ার টেনে বসল।অর্নিল হাতে থাকা মোবাইল পাশে রেখে অর্পা বেগমকে বললেন।

–কিছু বলতে এসেছো?

–কেনো এভাবে আসতে পারি না।

–নাহ অর্নব আর আমি কথা বললে তো তুমি আসো না তাই বললাম

অর্পা বেগমকে চুপ করে বসে থাকতে অর্নব আর অর্নিল একে ওপরের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করল তারপর আবার অর্পা বেগমের দিকে তাকালো।অর্পা বেগম কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলতে লাগলো।

–তোদের মামা ফোন করেছিলো কালকে।

অর্পা বেগমের কথা শুনে অর্নব ব্রু কুচকে বলল।

–তো?

অর্নবের কথা শুনে অর্পা বেগম বিরক্ত নিয়ে বলল

–চুপ কর কথার মাঝে কথা বলবি না।

অর্পা বেগমে্র ধমক শুনে অর্নব ঠোঁট বাকা করে বলল

–আচ্ছা বলো তুমি।

অর্পা বেগম মুচকি হেসে আবারও বলতে লাগলেন

–তোর মামা কালকে ফোন করেছিলেন।উনি বললেন উনার মেয়ে আছে না তুলি।

অর্পা বেগমের কথার মাঝে আবারও অর্নিল গালে হাত রেখে বলল।

–হ্যা আছে তো।তারপর।

অর্পা বেগম রেগে অর্নিলের দিকে তাকাতেই অর্নিল সিরিয়াস হয়ে বসল।অর্পা বেগম আবার বলতে লাগলেন।

–তুলির বিয়ের ব্যাপারে কিছু কথা বললেন।তুলি কে খুব ভালো লাগে।খুব মিষ্টি মেয়েটা।

অর্পা বেগমের কথা শুনে অর্নব অবাক হয়ে বলল

–কিহ।ওই পুচকিটার বিয়ের কথা বলছিলো।ও তো খুব ছোট তাই না?

–আরে নাহ ও এইবার সেকেন্ড ইয়ারে পরছে।আর পুরো কথা শুন আমি তোর মামাকে বলেছি তুলির বিয়ে আমি আমার বড় ছেলের সাথে করাতে চাই।উনিও রাজি।

অর্পা বেগমের কথা শুনে অর্নব যেনো আকাশ থেকে পড়ল।অর্নিল মুখ চেপে হাসি বন্ধ করে বলল।

–ওয়াও।তুলি আর অর্নব কে খুব মানাবে।মেড ফর ইচ আদার টাইপ।

অর্নিলের কথা শুনে অর্নব অগ্নিদৃষ্টিতে অর্নিলের দিকে তাকালো তারপর অর্পা বেগমকে বলতে লাগলো।

–মা তুমি এগুলো কি উলটা পালটা কথা বলছো বলো তো।আমি ওই তুলি কে কেনো বিয়ে করতে যাবো।আর আমি তো এখন ছোট বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি?

অর্নবের কথায় অর্পা বেগম অবাক হয়ে বললেন

–তুই এখন ছোট?বুড়া হয়ে যাচ্ছিস আর বলিস ছোট আর কয়েক বছর পার হলে তোকে তো কোনো মেয়েই বিয়ে করবে না।আমি আর একটাও কথা শুনতে চাই না তুলি আমার ঘরের বড় বউ হবে বুঝলি।

অর্পা বেগম নিজের কথা শেষ করে চলে গেলেন।অর্পা বেগম যেতেই অর্নিল জোরে জোরে হাসতে লাগলো আর বলল

–ওয়াও তুলি এখন থেকে তুলি ভাবি।

বলে আবারও হাসতে লাগলো।অর্নব অর্নিলের হাসি দেখে পিঠে একটা ঘুষি দিলো।তারপর বলল

–আর তুই কি বললি মার সামনে মেড ফর ইচ আদার।

বলে আরেকটা ঘুষি দিলো অর্নিলের পিঠে।

আয়রা ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে পৌছাতেই রিমু মা জিজ্ঞাস করল

–আয়রা সব ঠিকঠাক ছিলো?

রিমুর মার প্রশ্নে আয়রা মিষ্টি হেসে জবাব দেয়

–জ্বী আন্টি সব ঠিকঠাক ছিলো।

–আচ্ছা তুমি তাহলে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নাও গিয়ে তারপর ডিনার করব।

আয়রা রুমে গিয়ে দেখলো রিমু বসে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে আয়রাকে দেখে হেডফোন খুলে রেখে আয়রার দিকে তাকিয়ে বলল

–এসেছিস তুই?কেমন ছিলো সব?

আয়রা মৃদু কন্ঠে বলল

–হুম ভালো ছিলো।

আয়রা কাধ থেকে ব্যাগ রেখে ওয়াশরুম গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো।রিমু খাটের এক কোনায় বসে আয়রার দিকে তাকিয়ে আছে।আয়রা রিমুকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল

–কি?এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?

রিমু আয়রার কথায় মাথা দুপাশে নাড়ালো।আয়রা রিমুকে ফোন নিয়ে বসতে দেখে বলল

–আমার খুব মাথা ব্যাথা করছে।আমি ঘুমাচ্ছি খাবো না।ডাকিস না।

আয়রা বলে ঘুমিয়ে পরল।খাবারও আর খাওয়া হলো না।

সকাল হতেই রিমু আর আয়রা কলেজে গেলো।কলজে ঢুকতেই দেখলো অর্নিল দাঁড়িয়ে গেটের দিকেই তাকিয়ে আছে আর ওর সামনে একটা মেয়ে হাটু গেড়ে বসে আছে হয়তো প্রপোজ করছে।রিমু এটা দেখে চিল্লিয়ে বলে উঠলো।

–আমার প্রিন্স চার্মিংকে এই কোন মেয়েটক প্রপোজ করছে।

আয়রক রিমুকে হায়ামিয়ে দিয়ে বলল

–চুপ করে চল এখান থেকে।

অর্নিল গেট দিয়ে আয়রাকে দেখতে পেয়েই বাকা হাসি দিলো।সামনে বসে থাকা মেয়েটাকে বলল।

–সরি আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।

অর্নিল আবারও বলতে নিবে তার আগেই ফারহা এসে মেয়েটাকে উঠিয়ে বলল।

–লিসেন আমি হলাম অর্নিলের গার্লফ্রেন্ড।

ফারহাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে অর্নিল গিয়ে আয়রার হাত ধরে টেনে সবার মাঝে নিয়ে গেলো।
আয়রা অর্নিলকে এমন কাজ করতে দেখে বড় বড় চোখ করে অর্নিলের দিকে তাকায়।
অর্নিল আয়রাকে সবার সামনে নিয়ে মুচকি হেসে বলে।

–মিট মাই গার্লফ্রেন্ড আয়রা।

চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে সবাই)

প্রেম তুমি পর্ব-০৩

0

#প্রেম_তুমি
#part:3
#Mishmi_muntaha_moon

আয়রা গোসল করে বের হতেই রিমু হাত টেনে খাটে বসায়।আসার পর থেকেই পাগল করে ফেলেছে কি হয়েছে কি হয়েছে বলে।রিমু নিজেও খাটে বসে বলতে লাগে।

–এখন তো বল কি হয়েছে?

আয়রা রিমুকে একে একে সব বলল।রিমু শুনে রেগে বলল

–আজব পাগল নাকি?আর ওই ফারহা মেয়েটাও আস্তা পাগল।উনার মাঝে কথা বলার প্রয়োজন কি ছিলো?উনার জন্যই অর্নিল ভাইয়ার গিটারে পানি পরেছে।তুই জানোস গিটার অর্নিল ভাইয়ার জন্য খুব ইম্পর্ট্যান্ট সবসময় সাথেই থাকে।

–হুম আমার সরি বলা উচিত কাল সরি বলে দিবো।তারপর আর তাদের আশেপাশেও যাবো না।আমার নোট গুলোর জন্য কষ্ট লাগছে খুব কষ্ট করে লিখেছিলাম।আর তুই বললি কাল থেকে তো ক্যাফে যেতে হবে সময় পাবো কোথায়।আজ রাতেই লিখতে হবে।

রিমু আয়রার কথা শুনে করে বলল

–হুম।এখন তো কোনো কাজ নেই এখনও লিখে ফেলতে পারোস আর আমিও তোকে টুকটাক হেল্প করব।

রিমুর কথায় আয়রা মুখ বাকিয়ে বলে

–তোর টুকটাক হেল্প তোর কাছেই রাখ।জানি কি হেল্প করবি হেল্পের নাম শুধু কানের সামনে ঘ্যানঘ্যান করবি।

–এভাবে কেনো বলছিস।আচ্ছা চল এখন খেয়ে আসি তারপর তুই নোট লিখা শুরু করে দিস সন্ধ্যা পর্যন্ত তো শেষ হয়েই যাবে আশা করি।

–হুম।

অর্নিল ওর রুমে বসে মোবাইলে কিছু খুব মনোযোগে দেখছে মাঝে মধ্যে ব্রু কুচকে ফেলছে আবার বিরবির ও করছে।কেউ নক দেওয়ায় অর্নিল মোবাইল রেখে দরজার দিকে তাকায়। সাথে সাথেই মুখে বিশাল হাসি নিয়ে উঠে ওর ভাই অর্নবের কাছে গিয়ে জরিয়ে ধরে।

–আরে তুই কখন এলি?

–মাত্র আসলাম।আর প্রত্যেকবারের মত সোজা তোর রুমে।

অর্নিল অর্নব কে ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে দারায় তারপর ভ্রু কুচকে ঠোঁটে আঙুল বুলাতে বুলাতে বলে

–তুই দেখি পাঞ্জাবি পরেছিস।ওয়াও নাইস।

–হুম তো।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

–হুম যা।

আয়রা আরেকটু লিখে কলম রেখে দীর্ঘশ্বাস নিলো।
তারপর রিমুর দিকে তাকিয়ে বলল।

–ফাইনালি শেষ হলো লেখা।

আয়রার কথা শুনে রিমু হাতে থাকা মোবাইলের দিকে তাকিয়েই বলল

–অলরেডি ৮ বেজে গেছে তোর জন্য আমারও বসে থাকতে হয়েছে টানা ২ ঘন্টার মত।

–আহা টানা ২ ঘন্টা ধরেই তো মোবাইল টিপছিস।আর তোকে আমি বলেছি বসে থাকতে।

–নাহ তা বলিস নি কিন্তু একজন ভালো ফ্রেন্ডকে বলতে হয় না এভাবেই হেল্প করে।

রিমুর কথায় আয়রা এক ব্রু তুলে বলল।

–আহ,,,ভালো ফ্রেন্ড।

আয়রার কথায় রিমু হেসে দিলো তারপর বলল।

–ওহ শুন পরশু আব্বু আসবে।

–ওহ আংকেল আসবে।ভালো।

–হুম চল খেয়ে আসি কখন থেকে আম্মু চিল্লাচ্ছে।

–হুম চল।

আয়রা রিমু খেয়ে রুমে আসতেই রিমু গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পরল।আয়রা রিমুর সামনে এসে চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে মৃদু কন্ঠে বলল।

–রিমু ঘুমিয়ে পরলি?

আয়রার কথায় রিমুর কোনো জবাব এলো না।আয়রা বিছানা থেকে মোবাইল নিয়ে বারান্দায় যায়।

–আজও ঘুম আসবে না।কেমন অস্থির অস্তির লাগছে।উফ কি করি।

আয়রা বারান্দা থেকে রুমে গিয়ে এদিক ওদিক হাটতে লাগলো।

–আব্বু আম্মু কেমন আছে কে জানে?

আয়রা এভাবে পায়চারি করতে করতে ১১ টা বেজে গেলো।আয়রা আরেকবার রিমুর দিকে তাকিয়ে আস্তে করে রিমুর পাশে শুয়ে পরল।

অর্নিল কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে কাপ পাশের টেবিলে রাখলো তারপর অর্নবের দিকে তাকাতেই অর্নব বলল।

–তাহলে বল।আমার অগচড়ে কি কি হলো।

–কি হবে আবার সব তো ঠিকঠাকই আছে।

অর্নিলের কথা শুনে অর্নব হাসলো।অর্নিল অর্নবকে হাসতে দেখে বলল।

–তুই বল বিয়ে করছিস কবে বিয়ের বয়স তো পেরিয়ে যাচ্ছে

অর্নিলের কথা শুনে অর্নব অবাক হয়ে বলল

–সিরিয়াসলি!২৬ বছর মাত্র আর তুই বলছে বিয়ের বয়স পেড়িয়ে যাচ্ছে।

–তা নয় তো কি।আমার এখন ২৪ বছর আর ১ বছর পরই তো বিয়ে করব কিন্তু তোর জন্য দেখা যাবে আমার বিয়েটাও আটকে থাকবে।

অর্নব অর্নিলের কথা শুনে হেসে মজা করে বলল।

–কোনো সুন্দর মেয়ে পেলি নাকি যে বিয়ের জন্য তাড়া দেখাচ্ছিস।

অর্নবের কথায় অর্নিক ভাব নিয়ে বলল

–হাহ সুন্দর মেয়ে খুজতে হবে নাকি আমার পিছে কত মেয়েরাই তো ঘুরে।

–তাহলে কি একটাকে ধরে বিয়ে করে নিবি?

–হোয়াট তুই কি মনে করিস অর্নিল আহমেদ কে? এতো সস্তা নই।স্পেশাল কাউকে লাইফ পার্টনার বানাবো।

–ওহ তাই নাকি।আমি তো ভাবছি আম্মুর কাছে ফারহার ব্যাপারে কথা বলবো।

অর্নিল চোখ মুখ কুচকে বলল।

–হোয়াট।লাইক সিরিয়াসলি ফারহা।

অর্নব মুচকি হেসে বলল

–কেনো তাহলে অন্য কোনো স্পেশাল মেয়ে আছে নাকি?

অর্নবের কথায় অর্নিল চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বাকা হাসলো কিছু বলল না।

–এই আয়রা উঠ তারতারি এতো লেট করছিস কেনো আজ।

রিমুর ডাকে আয়রা লাফ দিয়ে উঠে পরল।তারপর চোখ কচলে রিমুর দিকে তাকালো।রিমু রেডি হয়ে চুল আচরাচ্ছে। আয়রা বিছানা গুছিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল।

–আরো আগে ডাকবি না।

আয়রার কথাকে পাত্তা না দিয়ে রিমু চুল আচরাতে লাগলো।

আয়রা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে তারাতারি রেডি হয়ে নিলো।রিমু ব্যাগ গুছাতে গুছাতে বলল।

–টেবিলে খাবার রেখেছি খেয়ে নে।আমি খেয়ে ফেলেছি।

আয়রা তারাহুরো করে একটা রুটি খেয়ে বেরিয়ে পরে।

আয়রা ওদের ক্লাস রুমে যেতে যেতে রিমুর উদ্দেশ্যে বলে।

–এই তোর মামাকে জিজ্ঞেস করেছিস কয়টা বাজে যেতে হবে।

–২ টা অথবা পনে ৩ টা দিকে গেলেই হবে।যেহেতু হাফ টাইম সকালে তো আর যেতে পারবি না তাই।আর ৮ টা পর্যন্ত।

রিমুর কথায় আয়রা চিন্তিত স্বরে ছোট করে বলল

–ওহ।

আয়রা সাইডে তাকাতেই দেখে অর্নিক আর সবাই বসে আছে আর ফারহা অর্নিলকে কিছু বলছে।দূর থেকেই বোঝা যাচ্ছে ফারহার কথায় অর্নিল বিরক্ত।
আয়রা ওদের দেখে হাতে থাকা বই দিয়ে মুখ ঢেকে তারাতারি হাটতে লাগলো।রিমু আয়রাকে এতো তারাতারি হাটতে দেখে চিল্লিয়ে বলল

–এই আয়রা এতো জোরে হাটছিস কেনো দারা আমার জন্য।

বলে আয়রার পিছে দোড় লাগালো।

অর্নিল দূর থেকে আয়রার দিকেই তাকিয়ে ছিলো।তুশারের কথা শুনে ওর দিকে তাকায়।

–কিরে লেহেঙ্গা ওয়ালি এতো জোরে দৌড়ে গেলো কেন?

তুশারের কথায় ফারহা বলে

–এই তোরা বার বার ওই ইডিয়ট মেয়েটার কথা কেনো বলিস।ও দৌড়ে যাক নাহয় কচ্ছপের মত আস্তে আমাদের কি?

ফারহার কথায় আবারও তুশার বলে

–বুঝি তুই ওর সাথে জেলাস ফিল করস।

তুশারের কথায় ফারহা রেগে বলল

–আমি কেনো ওর সাথে জেলাস ফিল করব ও আমার নকের যোগ্য ও না।

ফারহার কথায় অর্নিল রেগে বলল।

–ফারহা জাস্ট স্টপ।আর তোরা দুজন বার বার ঝগড়া কেনো করিস।আমি গেলাম স্যার দেখা করতে বলেছিলো।

অর্নিল গিটার রোহানের কাছে রেখে উঠে চলে যায়।

রিমু আর আয়রা ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে একটা বেঞ্চে গিয়ে বসে।রিমু সেড ভংগী করে আয়রার উদ্দেশ্যে বলে

–এখন এই এসাইনমেন্টের জন্য কোন সিনিয়ারের কাছে যাবো।তুই জানোস সিনিয়ার সকল আপু ভাইয়া খুবই রুড আর ভাবওয়ালি।

রিমুর কথা শুনে আয়রা চিন্তিত স্বরে বলল।

–উফ কি করব তাহলে এখন অলরেডি ১:৩০ বেজে গেছে।২ টায় তো ক্যাফে ও যেতে হবে।চল দেখি গিয়ে কেউ হেল্প করে কিনা।

রিমু আয়রার কথায় এক্সাইটেড হয়ে বলল।

–চল আমার প্রিন্স চার্মিং এর কাছে যাই।

রিমুর কথায় আয়রা ব্রু কুচকে বলতে লাগলো

–কিহ এই প্রিন্স চার্মিং টা কে?তুই রিলেশনে আছিস আর আমাকে কিচ্ছু বলিস নি।

আয়রার কথা শুনে রিমু চোখ বড় বড় করে বলল।

–আরে নাহ আমি কোনো রিলেশনে নেই।আমি তো অর্নিল ভাইয়ার কথা বলছিলাম। উনি অবশ্যই আমাদের হেল্প করবেন।

–নাহ উনার কাছে যেতে পারবো না।এখন উঠ সময় নষ্ট না করে অন্য কারো কাছে হেল্প চাই।

রিমু আর আয়রা অনেকক্ষন খুজে ক্লান্ত হয়ে আবার গিয়ে বেঞ্চটাতে বসে পরল।রিমু ক্লান্ত হয়ে বলল।

–যাক বাবা কাউকে পেলাম না।কয়েকজন রাজি হলেও আবার না করে দিলো।

রিমু কথা শুনে আয়রা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল।

–হ্যা কি করব এখন।

আয়রার কথার মাঝেই একটা ছেলে এসে ওদের সামনে দারালো।রিমু আর আয়রা চোখ তুলে তাকাতেই ছেলেটা বলল

–হেই হায়।তোমাদের হেল্প লাগবে এসাইনমেন্টের জন্য আমি হেল্প করতে পারি।

ছেলেটার কথা শুনে রিমু আর আয়রার চোখমুখ চিকচিক করে উঠলো।আয়রা উত্তেজিত কন্ঠে বলল

–জ্বী ভাইয়া।হেল্প করে দিলে খুব উপকার হতো।

আয়রা ব্যাগ থেকে এসাইনমেন্ট বের করে ছেলেটাকে দিবে তখনই একটা ছোট ছেলে এসে বড় ভাইয়াটার উদ্দেশ্যে বলল।

–ভাই আপনারে অর্নিল ভাই ডাকে।

ছোট ছেলেটির কথা শুনে ভাইয়াটা চলে গেলো।রিমু আর আয়রা ছেলেটার আসার প্রহর গুনছে।একটু পর ছেলেটা এসে রিমু আর আয়রাকে বলল।

–সরি আপুরা আমার একটা কাজ আছে আমি তোমাদের হেল্প করে পারবো না।

রিমু আর আয়রার শেষ আশাও চলে গেলো।আয়রা মন খারাপ করে বলল

–এখন কি করি?

–কি আর চল তারাতারি অর্নিল ভাইয়ার কাছে যাই নাহলে উনি ও চলে যাবে।

আয়রা রিমুর কথায় কিছু বলতে পারলো না ওর সাথে গেলো।
অর্নিল আর ওর সব বন্ধুরা একটা ক্লাসরুমে বসে আছে।তখন জেবা বলল

–আমরা এখানে কেনো বসে আছি অর্নিল।বাসায় যাবি না?

–তোর যেতে হলে যা আমি তোকে আটকে রেখেছি নাকি।

অর্নিল ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখে জেবা গালে হাত দিয়ে বসে রইল।
অর্নিল গিটার নিয়ে বাজাতে নিবে তখনই আয়রা আর রিমুকে ক্লাসে আসতে দেখে অর্নিল অগচড়ে বাকা হাসলো।ফারহা আয়রাকে দেখে রেগে গিয়ে বলল

–এই মেয়ে তুমি এখানে কি করছো?

ফারহার কথাকে পাত্তা না দিয়ে রিমু আয়রার হাত ধরে অর্নিলের সামনে গিয়ে দারালো।ওদের দেখে অর্নিল বলল

–কিছু বলবে তোমরা?

রিমু অর্নিলের দিকে তাকিয়ে অনুরোধের সুরে বলল

–ভাইয়া আসলে আমাদের এসাইনমেন্টের কথা তো জানেনই।প্লিজ আমাদের হেল্প করুন।কেউ আমাদের হেল্প করছে না।

রিমুর কথা শেষ হতেই আয়রা বলল।

–জ্বী ভাইয়া।আর কাল আপনার গিটারে পানি ফেলার জন্য সরি।আমি ইচ্ছা করে ফেলি নি।

আয়রার কথা শুনে অর্নিল মুখ চেপে হাসি আটকালো।
তারপর বলল।

–হেল্প চাই?

অর্নিলের কথায় আয়রা তারাহুরো করে বলল।

–জ্বি ভাইয়া।

অর্নিল কোলে রাখা গিটারটা সাইডে রেখে আয়রার একটু কাছে মুখ নিয়ে বলল।

–তাহলে আমার একটা শর্ত মানতে হবে।

চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই🥰🥰)

প্রেম তুমি পর্ব-০২

0

#প্রেম_তুমি
#part:2
#Mishmi_muntaha_moon

ফারহা অর্নিলকে আসতে থেকেই দৌড়ে জরিয়ে ধরে।ফারহা এভাবে জড়িয়ে ধরায় অর্নিল বিরক্ত প্রকাশ করে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।তারপর ভ্রু কুচকে বলতে লাগে।

–এভাবে চিপকাচ্ছিস কেনো দূরে থাক।

অর্নিল ফারহার থেকে দূরে গিয়ে জেবা আর রোহানের মাঝে বসে।অর্নিলকে মাঝে বসতে থেকে রোহান বিরক্ত হয়ে বলে উঠে

–দূর শালা মাঝে কেনো বসলি?

রোহানের কথাকে পাত্তা না দিয়ে জেবা আবার বলতে লাগে।

–কিরে অর্নিল আজ তোর গিটার আনিস নি?

–নাহ।আজ গাড়িতে আসি নি বাইক এ এসেছি।আর বাইক এ নিতে সমস্যা হচ্ছিলো আমার।রফিক কে নিয়ে আসতে বলেছি ও দিয়ে যাবে।

–ওহ।

আয়রা আর রিমু ক্লাসে বসে আছে।রিমু অর্নিলকে দেখার পর থেকে আয়রার কানের সামনে ওর কথাই বলে যাচ্ছে।আর আয়রা অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভাবছে।

–ওই দেখ আয়রা অর্নিল ভাইয়ারা ওই গাছের নিচের বড় বেঞ্চটাতে বসে আছে।উনারা সবসময় ওখানেই বসে।আর ফারহা আপু তো উনাকে দেখলেই টিকটিকির মত চিপকিয়ে থাকে।আর আমি তো তোর কথা শুনে ভেবেছিলাম অর্নিল ভাইয়া মনে হয় তোকে দেখে লাভ এট ফার্স্ট সাইট হয়ে গিয়েছে।কিন্তু আজকে দেখে মনে হলো অর্নিল ভাইয়া তোকে চিনেই না আমার ভাবনা একদমই ভুল হলো।আর ফারহা আপুই হয়তো অর্নিল ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড হবে।তাই তো ফারহা আপুকে আমি একদম পছন্দ করি না আর টিকটিকিও আমি একদম পছন্দ করি না তাই উনার নাম টিকটিকি দিয়েছি।(হেসে)

–রিমু তুই দয়া করে উনাদের কথা বন্ধ করবি।উনাদের কথা বলার মত অনেক মানুষ আছে এই ভার্সিটিতে তাই বলছি তুই ও ওই অর্নিল ভাইয়ার কথা বলে ঘ্যানঘ্যান করিস না।বলতে হলে এই ভার্সিটির ব্যাপারে কিছু তথ্য দে আর এতোদিনের ক্লাসে নোট গুলোও দিতে পারিস।

–ও হ্যা তোকে তো নোট গুলি দিতে হবে।

–হুম।আর শুন তোর মামার সাথে কথা বলেছিলি?আমি যে ক্যাফেতে কাজ করতে চাই।আর কলেজে আসার টাইমে যে একটা ক্যাফ দেখলাম ওইটাই তোর মামার ক্যাফ?

–হ্যা ওইটাই।আমি আম্মুকে দিয়ে কথা বলতে বলেছিলাম।আজকে গিয়ে আম্মুকে জিজ্ঞেস করব আচ্ছা?

–আচ্ছা।এখন ক্লাস করাবে না?

–নাহ ক্লাস ভালো করে হয় না।চল আমরা বাহিরে যাই।

–নাহ তুই তোর নোট গুলো আমাকে দে আমি লাইব্রেরি তে গিয়ে তুলে নেই।

–আচ্ছা।চল তোকে আগে পুরো কলেজ ঘুরে দেখাই তারপর লাইব্রেরি তে গিয়ে তুলে নিস।

–আচ্ছা চল।

রিমু একে পুরো কলেজ দেখিয়ে লাস্ট বিল্ডিংয়ের ২ তলায় উঠে। রিমুর ফোন আসাতে ও আস্তে আস্তে হাটতে লাগে আর আয়রা একে একে রুম গুলো ঘুরে ঘুরে দেখে লাগে। লাস্ট রুমে যেতেই অর্নিল আর ওর ফ্রেন্ডদের দেখতে পায়।আয়রা কে দেখে ফারহা তো রেগে আগুন আর অর্নিল আয়রার দিকে তাকিয়ে আছে মুখের রিয়েকশন বুঝা যাচ্ছে না।ফারহা রেগে কিছু বলবে তার আগেই তুশার বলে উঠে।

–হেই লেহেঙ্গা ওয়ালি তুমি এখানে কি করছো?

সবাইকে নিজের দিকে এভাবে ভুতের মত তাকিয়ে থাকতে দেখে আর তুশারের প্রশ্নে আয়রা থতমত খেয়ে যায়

–না আসলে,,,কিছু না ভুলে এসে পরেছি সরি।

বলে আয়রা তারাহুরো করে রিমুর হাত ধরে দৌড়ে ৩ তলায় গিয়ে সোজা লাইব্রেরিতে গিয়ে লাস্ট বেঞ্চে বসে।
আয়রা রিমুর হাত ছেড়ে দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেই।রিমু অবাক চোখে আয়রার দিকে তাকিয়ে বলে

–এভাবে হাত টেনে নিয়ে আসলি কেনো?

–কিছু না।তুই তারাতারি নোট গুলো বের কর।লেট হয়ে যাচ্ছে বাসায় যাবি না আবার।

রিমু বাগ থেকে নোট গুলো বের করে আয়রা কে দিয়ে ও উঠে লাইব্রেরি তে বই দেখতে লাগলো।

অর্নিক গিটার নিয়ে রুম থেকে বের হতে হতে বলল

–আচ্ছা আমি চললাম কিছু কাজ আছে।

অর্নিলকে চলে যেতে দেখে ফারহা তারাতারি বেঞ্চ থেকে উঠে অর্নিলের সামনে গিয়ে দারায়।ফারহাকে এভাবে সামনে এসে দারাতে দেখে অর্নিল ফারহার দিজে তাকিয়ে বলে

–হোয়াট?রাস্তা আটকালি কেন?

–অর্নিল তুমি আমায় তুই করে বলবে না ওকে আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড হই তুমি বলবে।তা যাই হোক চলো আমরা লাইব্রেরি তে যাই।

ফারহার কথা শুনে রোহান অর্নিলে পাশে দারিয়ে বলল

–লাইব্রেরি তোদের রোমেন্স করার জায়গা না।

–আজব রোমান্স করব কেনো আমরা সবাই যাবো।জেবা বল না ওদের।

–আচ্ছা চল যাই।

অর্নিল বিরক্ত হওয়ার সত্ত্বেও কিছু বললনা সবার সাথে লাইব্রেরি তে গেলো।লাইব্রেরিতে গিয়ে মাঝের একটা বেঞ্চ তে বসল ৫ জন।ফারহা লাইব্রেরি দেখে দেখতে বলল

–ওয়াও লাইব্রেরিটা কতো সুন্দর লাগছে।

ওর কথায় তুশার মুখ বাকিয়ে বলে উঠলো

–মুর্খ জীবনে লাইব্রেরি তে না আসলে তো হঠাৎ সুন্দর লাগবেই।

তুশারে কথায় সবাই হাসতে লাগলো।ফারহা রেগে গিয়ে বলল

–তুশার তুই যদি আমাকে আরেকদিন ইনসাল্ট করলি না দেখিস মেরে তক্তা বানিয়ে দেবো বেয়াদপ।

তুশার আর ফারহার মধ্যে কথা কাটাকাটি লেগে যায়।
অর্নিল গিটারটা হাতে নিয়ে দারিয়ে পরল তারপর যেতে নিবে তখন চোখ পরল পিছে থাকা আয়রার উপর।আয়রাকে দেখে ঠোঁট কামড়ে সেদিকে যেতে লাগলো।ফারহা অর্নিলকে পিছের দিকে যেতে দেখে ও পিছে পিছে যায়।

অর্নিল আয়রার সামনে দারিয়ে টেবিলে জোরে হাত দিয়ে বারি মারে।

আয়রা হঠাৎ এতো জোরে আওয়াজে ভয় পেয়ে চমকে সামনে তাকায়।অর্নিলকে দেখে অবাক হয়।অর্নিল আয়রাকে ওর দিকে তাকাতে দেখে বলতে লাগে

–তুমি আমায় ফলো করছো?(এক ব্রু উঠিয়ে)

অর্নিকের কথায় আয়রা বকা বনে যায়।

–আমি আপনাকে ফলো করবো কেনো।আমি তো জানিও না আপনি এখানে কখন এলেন।

–স্টপ ইউর ননসেন্স।আমি সকালে আসার সময় দেখলাম তুমি সামনে দারিয়ে ছিলে তারপর ক্লাস রুমেও এখন আবার লাইব্রেরি তেও।

আয়রা কিছু বলতে নিবে তার আগেই ফারহা আয়রার কাছে এসে হাতে থাকা কাপ নুডুলস আয়রার নোট গুলোতে ঢেলে দেয়।অর্নিল ফারহাকে এমন কান্ড করতে দেখে রেগে গিয়ে বলে

–ফারহা তুই এখানে কেনো এসেছিস আর এটা কি করলি আমি কথা বলছিলাম না?

আয়রার নোট লেখা এখনও শেষ হয় নি আরো এক পৃষ্ঠা লিখা বাকি ছিলো আর ফারহা সব কষ্টে নুডুলস ঢেলে দিলো।আয়রার রাগে কান্না পেয়ে যাচ্ছে।আয়রা টেবিলে পানি ভর্তি বোতল দেখে নিয়ে ফারহার উপর পানি ঢালতে নেই ফারহা সরে যাওয়াতে সব পানি অর্নিল আর ওর গিটারে গিয়ে পরে।এমনটা হবে আয়রা একটুও ভাবতে পারে নি।
অর্নিল জিন্স থেকে রুমাল বের করে শার্ট মুছতে লাগল।
অর্নিলকে কিছু বলতে না দেখে ফারহা আয়রার হাত টেনে ধরে বলতে লাগে।

–এই মেয়ে কি করলে এইটা।

ফারহাকে এভাবে চিৎকার করতে দেখে অর্নিল ফারহার হাত টেনে দূরে দার করায়।

–আমার শার্টে পানি পরেছে আমি দেখে নিবো।ওকে।

তারপর আয়রার দিকে তাকিয়ে ধমকে বলে উঠলো।

–তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো যাও এখান থেকে।

অর্নিলের ধমকে আয়রা ভয় পেয়ে টেবিল থেকে রিমুর নোট গুলো আর ব্যাগ নিয়ে এক দৌড়ে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে যায়।

আয়রা এক দৌড়ে গেটের বাইরে এসে পরেছে।তারপর রিকশায় উঠতে নিবে তখন রিমুর কথা মনে পরে।

–ওহ নো!আমি তো ভয়ের চটে রিমুর কথাই ভুলে গেছি।উফফ কি ভয়ানক ওই আপুটা দেখলেই ভয় লাগে।রিমুকে ফোন দিয়ে আসতে বলি।

আয়রা ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে রিমুকে ফোন দেয়।রিমু ফোন ধরেই প্রশ্ন করতে লাগে।

–আয়রা তুই কোথায় আমি পুরো লাইব্রেরি খুজে আরো কত জায়গায় খুজলাম তোকে।কোথায় তুই?

–আরে আমি কলেজের বাহিরে দারিয়ে আছি তারাতারি আস।আর কোনো প্রশ্ন করিস না এখন প্লিজ তারাতারি আস।

আয়রা ফোন কেটে রিমুর অপেক্ষা করতে লাগে রিমু আসতে বাসায় চলে যায়।

ফারহা মোবাইলে সেল্ফি তুলতে তুলতে হাটছে।আচমকা অর্নিল ফারহার হাত টেনে ধরাতে ফারহা ভয় পেয়ে যায়।অর্নিল ফারহাকে একটা খালি ক্লাস রুমে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়।

–অর্নিল তুমি আমায় এখানে কেনো নিয়ে আসলে।আর ভালো করে বললে আমি নিজেই আসতাম এভাবে টেনে,,,

ফারহাকে পুরো কথা বলতে না দিয়েই অর্নিল আঙুল তুলে বলতে লাগলো

–লিসেন আমি তোকে কিছু বিষয় ক্লিয়ার করে বলে দিচ্ছি।আয়রার থেকে দূরে থাকবি বুঝলি।আর আমার পার্সোনাল বিষয়ে একদম বা হাত ঢুকাবি না।মনে থাকে যেনো না হলে আমাকে তো তুই চিনসি।

–অর্নিল তুমি ওই লো ক্লাস মেয়েটার জন্য আমার সাথে এমন করছো।লাইক সিরিয়াসলি?

–আমি কার জন্য কি করছ তোকে বলার প্রয়োজন নেই।কিন্তু তোর যেনো আমার বলা কথা গুলো মনে থাকে।

অর্নিল ফারহাকে রেখেই ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে আশা করি🥰🥰)