Thursday, July 10, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1401



Darkness Part-04

0

#Darkness
Writer: Abir Khan
Part: 04
তনু জানে না কাল সকালে ও কত বড়ো একটা সারপ্রাইজ পেতে যাচ্ছে। নেহাল শুধু কালকের সকালের অপেক্ষায় আছে।

পরদিন সকালে,
তনু ঘুমের মাঝে ফিল করছে, কেমন জানি ঠান্ডা একটা বাতাস, নোনতা ঘ্রাণ বাতাসে আর সমুদ্র সৈকতে থাকা পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। সব মিলিয়ে ওর মনে মনে ভাবা পরিবেশের আভাস পাচ্ছে ও। তনু আর ঘুমাতে পারে না। ও আস্তে করে চোখ মেলে তাকিয়ে পুরো অবাক। আরে! এটা তো ওর বাসার রুম না৷ একটা ছোট্ট কাঠের ঘর। তনু একলাফে উঠে বসে। আশে পাশের তাকিয়ে দরজার বাইরে দেখে সাদা বালি। শুধু তাই না বাহিরটা অনেক উজ্জ্বল। আর কেমন জানি বড়ো বড়ো ঢেউয়ের শব্দ ভেসে আসছে। তনুর গলা শুকিয়ে যাচ্ছে অজানা উত্তেজনায়। হৃদস্পন্দন ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে। ও গুটিগুটি পায়ে আস্তে আস্তে ঘরটার বাইরে এসে দেখে অসম্ভব সুন্দর একটা সি বিচে ও। তনু খুশিতে একটা দৌড় দেয়। ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না৷ এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে বিশাল বড়ো সি বিচ। বিচের বালিগুলো একদম সাদা। আর সমুদ্রের পানি একদম পরিষ্কার। যেন কাচের মতো স্বচ্ছ। তনু একটু দূরে তাকিয়ে পুরো স্তব্ধ। এ যে নেহাল আসছে। তনু নেহালকে দেখা মাত্রই হা করে তাকিয়ে আছে। নেহাল খালি গায়ে শটস পরে সিক্স প্যাক বডিটা উডাম করে ঘাড়ের উপর বিশাল বড়ো বড়ো দুইটা গাছের টুকরা নিয়ে ওর দিকেই আসছে। তনু এবার লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নেহালের উপর থেকে ও চোখই সরাতেই পারছে না৷ একসময় নেহাল তনুর কাছে চলে আসে। গাছ দুটো পাশে রেখে তনুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাত দুটো দুদিকে ছড়িয়ে দিয়ে জোরে বলে উঠে,

— সারপ্রাইজজজজ….কেমন লাগলো?

দুষ্টু তনু মনে মনে ভাবছে, সারপ্রাইজ কি ওনার এই সিক্স প্যাক বডিটা নাকি এই সি বিচটা? উফফ! মনে হচ্ছে একসাথে দুইটা সারপ্রাইজ পেয়েছি। তনু লজ্জাসিক্ত মুখখানা নিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,

~ অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। অসম্ভব সুন্দর একটা সি বিচ৷ একদম আমার কল্পনার মতো। কিন্তু এটা কোথায়?
— পৃথিবীর একমাত্র এবং সবচেয়ে সুন্দর সি বিচ মানে,
Boracay White Beach, Philippines.
~ কি আমরা এখন ফিলিপাইনে?
— হ্যাঁ। এই সি বিচ’টা পৃথিবীর অন্যতম এবং সবচেয়ে সুন্দর সি বিচ। কারণ এই হোয়াইট বিচে যারা সাঁতার পছন্দ করে, তাদের সমতল, শান্ত জলের জন্য উপযুক্ত। ৩ মাইল দীর্ঘ এই প্রসারিতটি বোরাসাইয়ের অন্যতম জনপ্রিয় সৈকত হিসাবে বিবেচিত এবং এটি সৈকত কার্যকলাপ এবং রেস্তোঁরা থেকে নাইট লাইফ এবং হোটেলগুলির সমস্ত কিছু সরবরাহ করে। আবাসনটি সৈকত বরাবর তিনটি বিভাগে বিভক্ত, স্টেশনগুলি 1, 2 এবং 3 এবং যথাক্রমে বিলাসবহুল, মধ্য-স্তর এবং বাজেট থেকে শুরু করে। মোট কথা এই সি বিচের সাথে আর কোন বিচের তুলনা হয় না। তোমার ইচ্ছা ছিল না এরকম একটা বিচে আসার? নেও নিয়ে আসলাম তোমাকে। কি খুশি তো?

তনু বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে নেহালের দিকে। ও তো স্বপ্নেও ভাবে নি এরকম একটা জায়গায় ও কখনো আসতে পারবে৷ তনু কোন কিছু না ভেবেই সোজা নেহালকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে। আর বলে,

~ আপনি সত্যিই খুব খুব ভালো। আমি কল্পনাও করি নি জীবনের কখনো এত সুন্দর একটা সারপ্রাইজ পাবো। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। যান আজ থেকে আপনি যত খুশি তত আমার রক্ত খেয়েন৷ আমি কিচ্ছু বলবো না।

নেহাল হাসতে হাসতে তনুকে সামনে এনে প্রথমে ওর চোখ দুটো মুছে দিতে দিতে বলে,

— সেটা তুমি না দিলেও খেতে হবে আমাকে। নাহলে তোমাকে প্রোটেক্ট করবো কিভাবে! আমার যে অনেক পাওয়ার প্রয়োজন। আমার একমাত্র ভালবাসার মানুষটার কোন ভাবেই কোন ক্ষতি হতে দিব না আমি। বুঝেছো?

তনু মুগ্ধ হয়ে নেহালের সুন্দর আকর্ষণীয় মুখখানার দিকে তাকিয়ে আছে। নেহালও সেই রহস্যময় হাসি দিয়ে তনুকে দেখছে। হঠাৎ তনুর নজর চলে যায় নেহালের সিক্স প্যাক বডিটার উপর। এত কাছ থেকে এই প্রথম ও কোন ছেলেকে দেখছে। তাও আবার খালি গায়ে। তনু অজান্তেই নেহালের শরীরে হাত বুলিয়ে ওর টাইট ফিট বডিটা অনুভব করে দেখছে৷ নেহাল এই সুযোগে তনুকে জ্বালানোর জন্য বলে,

— পছন্দ হয়েছে আমার ফিটফাট বডিটা?

তনু নেহালের নেশায় এতটা বিভোর ছিল যে ও মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ হ্যাঁ বলে ফেলে। আর পরমুহূর্তেই ও জিহবায় কামড় দিয়ে অন্যদিকে ফিরে লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলে। নেহাল ওকে পিছনে থেকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,

— লজ্জা পরে। আগে চলো সি বিচটা ঘুরে দেখবে। আফটার অল তোমার জন্যই তো এখানে আসা।
~ হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন। (লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে)

নেহাল তনুর হাত ধরে বিচটা ঘুরে দেখতে শুরু করে৷ এখানের অক্সিজেন এত ফ্রেশ যে তনুর খুব ভালো লাগছিল। ওর পুরো শরীর যেন মুহূর্তেই সতেজ হয়ে যাচ্ছিল এই ফ্রেশ অক্সিজেনের জন্য। এছাড়া পুরো বিচে সারি সারি নারিকেল গাছে ভরা। নেহাল তনুকে বলে,

— আমরা বিচের একটা পাশে আছি। তাই এখানে তেমন কোন লোকজন নেই। ওই দিকে মূলত লোকালয়। তুমি কি ওদিকে যাবে নাকি এখানে থাকবে?
~ এখানেই সুন্দর। আপনি আর আমি শুধু। আর কাউকে লাগবে না।
— বাব্বাহ! আমি ত অবাক হয়ে যাচ্ছি আমার রোমান্টিক তনুকে দেখে। হাহা।

তনু লজ্জা পেয়ে বলে,

~ আপনি কিন্তু আমাকে অনেক লজ্জা দিচ্ছেন। আমি কিন্তু তাহলে ওদিকে একা চলে যাবো।
— আচ্ছা আচ্ছা সরিইই। চলো পানিতে নামি?

নেহাল দেখে তনুর মুখখানা মুহূর্তেই অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। ও তনুর দুই গালে হাত দিয়ে চিন্তিত স্বরে বলে,

— কি হলো আমার তনুটার? উজ্জ্বল মুখখানা এরকম অন্ধকার হয়ে গেল কেন? আমি কি ভুল কিছু বলেছি?
~ না না। আসলে…
— আরে আমার সাথে সংকোচ কিসের? বলে ফেলো।
~ আসলে আমি সাঁতার জানি না৷ সরি…
— ধুর পাগলি এই কথা! চলো তাহলে আজ তোমাকে সাঁতার শেখাবো।
~ যদি তলিয়ে যাই আমি?

নেহাল তনুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,

— তোমার ভ্যাম্পায়ার কিং তোমার সাথে থাকতে মনে হয় তুমি তলিয়ে যাবে?

তনু মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে মাথা নাড়িয়ে না না বলে। নেহালও হেসে বলে,

— তাহলে চলো।
~ আচ্ছা।

নেহাল তনুকে নিয়ে পানিতে নামে। তনু প্রথমে একটু ভয় পাচ্ছিল। কিন্তু নেহালের সঙ্গ ওর সব ভয়কে লজ্জা আর আনন্দে রূপান্তরিত করে দেয়। তনু নেহালের হাত ধরে সাঁতার কাটছে। মানে শিখছে আর কি। নেহাল ভালবাসা আর স্নেহ মিশিয়ে তনুকে সাঁতার কাটা শেখাচ্ছে। একসময় তনু হাপিয়ে যায়। তাই নেহাল বলে,

— একটা জিনিস দেখবে?
~ কি?
— কাছে এসো।

তনু নেহালের আরো কাছে গেলে নেহাল টুক করে তনুর কপালে একটা চুমু দিয়ে দেয়। তনু চমকে যায়। আর লজ্জা পেয়ে বলে উঠে,

~ এটা কোন দেখানো জিনিস?
— একদম না। আসল জিনিস তো এখন দেখবে। হাহা।

বলেই ও তনুর হাত ধরে এক টানে সমুদ্রের তলদেশ ডুব দেয়। তনু আকস্মিক ভয়ে ছটফট করতে থাকে। ও ভাবে ও দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে৷ কিন্তু একটু পরই ও ফিল করে ও পানির নিচে নরমাল ভাবে শ্বাস নিতে পারছে। তার মানে নেহাল কিছু একটা করেছে। নেহাল তনুর দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে ইশারায় ওর সাথে আসতে বলে। তনু খুব খুশি হয়ে ইশারায় আচ্ছা বলে। এরপর ওরা দুজন দুজনের হাত ধরে সমুদ্রের অনেক গভীরে গিয়ে অনেক অজানা, অনেক সুন্দর সুন্দর মাছ, সামুদ্রিক জীব, সমুদ্রের তলদেশের দৃশ্য ইত্যাদি দেখতে থাকে৷ তনুর যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না৷ এ যেন কোন এক অবিশ্বাস্য সুন্দর স্বপ্ন। ওরা অনেকক্ষণ সমুদ্রের তলদেশে ঘুরে উপরে চলে আসে। তনু উপরে আসতেই দেখে নেহালের হাতে একটা বড়ো মাছ। ও বলে উঠে,

~ একি! এই মাছটা নিয়ে আসলেন কেন?
— আনবো না? সকালের নাস্তা করবে না? নাকি না খেয়ে থাকার ইচ্ছা আছে?
~ কাচা মাছ খাবো? (অসহায় ভাবে তাকিয়ে)
— আহরে পাগলি টা! আগে বিচে চলো তারপর সব দেখবে।
~ এই যে শুনুন না, একটা সমস্যা আছে।
— হ্যাঁ বলো।
~ আমি কি এই ভেজা জামা কাপড় পরে থাকবো?
— একদম না। আসো আমার সাথে।

তনু নেহালের পিছনে পিছনে যায়। নেহাল মাছটা গাছটার উপর রেখে তনুর হাত ধরে একসাথে দাঁড়ায়। সাথে সাথে ওদের সামনে বড়ো গোল করে একটা ব্লাক হোল চলে আসে। নেহাল তনুকে নিয়ে সেই ব্লাক হোলে ঢুকতেই তনু নিজেকে ওর রুমে আবিষ্কার করে৷ নেহাল বলে,

— যাও চেঞ্জ করে আসো।
~ ওয়াও! এটা কিভাবে সম্ভব! চোখের পলকে আমরা চলে আসলাম?
— হাহা। ভ্যাম্পায়ারদের পাওয়ার সম্পর্কে তোমার কোন ধারণাই নেই। যাও যাও। চেঞ্জ করে আবার এই হোল দিয়ে চলে এসো।
~ আচ্ছা।

নেহাল আবার বিচে চলে আসে। এসে ওর হাত দিয়েই গাছ গুলো কেটে পিছ পিছ করে সেগুলোতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তারপর মাছটাকে ভালো করে রেডি করে যাতে তনু খেতে পারে। তারপর মাছটাকে আগুনের উপর পুড়তে দিয়ে দেয়। এই ফাঁকে ও পাউরুটি আর ডিম পোছ ও বানিয়ে ফেলে। মাছটাও হতে হতে তনু চলে আসে। এসে দেখে নাস্তা রেডি। তনু অবাক কণ্ঠে বলে,

~ আপনি দেখি রান্নাও পারেন। ভ্যাম্পায়ার’রা যে রান্নাও পারে আমার জানা ছিল না। বাহ! বাহ!
— হাহা। বসো বসো। আর দেরি না করে খেতে শুরু করো। এটা একটা মজাদার মাছ। তোমাদের ওখানে এই মাছের চাহিদা অনেক। কারণ এটা অনেক রেয়ার। সহজে কেউ পায় না। পাউরুটি আর ডিম দিয়ে মাছটা খেয়ে দেখো। কি মজাই না লাগবে।

তনু নেহালের কথা মতো খেয়ে দেখে। সত্যিই অনেক মজা লাগে ওর কাছে। এত সুস্বাদু মজার মাছ ও আগে কখনো খায় নি। ওরা দুজন মিলে পুরো মাছটা খেয়ে ফেলে। নেহাল হঠাৎ করেই কোথা থেকে যেন একটা জুসের বোতল নিয়ে এসে তনুকে দেয়। তনু বলে,

~ আমার নিজেকে অনেক স্বার্থপর মনে হচ্ছে। আপনি আমার জন্য কত কিছু করছেন আর আমি বসে বসে সব শুধু নিয়েই যাচ্ছি।
— তাই ভাবছো তুমি? তাহলে তোমার শরীরের মিষ্টি রক্ত গুলো কার পেটে যায় শুনি? কে খায় তোমার রক্ত?
~ তাই তো। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আমার রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার আপনি। হিহি।

নেহাল অট্টো হাসিতে ভেঙে পড়ে তনুর কথা শুনে। সাথে তনুও হেসে দেয়। নেহাল হাসতে হাসতে বলে,

— এখন বলো সবকিছু কেমন লাগছে?
~ মনের গভীর থেকে যদি বলি, সবটা স্বপ্নের মতো লাগছে। ছোট কাল থেকেই একা একা ছিলাম আমি। বাবা আমার সাথে ঠিক মতো কখনো কথাও বলে নি। কেন জানি মনে হয় সে আমাকে পছন্দ করে না। হয়তো আম্মু মারা যাওয়ার কারণ হিসেবে আমাকেই মনে করেন। তাই আমার কাছ থেকে সবসময় দূরে দূরে থাকে। জানেন, আমাকে নিয়ে কখনো কোথাও ঘুরতেও যায় নি। সবসময়ই একা ছিলাম আমি। কিন্তু আপনি এসে প্রথমে আমাকে বাঁচালেন আর তারপর আমার বিষন্ন জীবনটাকে হঠাৎ করে আনন্দ আর খুশিতে ভরিয়ে দিলেন। সত্যিই আপনি অনেক ভালো একটা মানুষ। সরি সরি ভ্যাম্পায়ার।
— হাহা। পাগলি একটা। কিছু দিন পর তুমিও ভ্যাম্পায়ার কুইন হয়ে যাবে দেখো এই ভ্যাম্পায়ার কিং এর। খালি বিয়েটা হোক।

তনু খুব লজ্জা পায়। নেহাল তনুর লজ্জাসিক্ত মুখখানা মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকে। এরপর ওরা আরও অনেকক্ষণ গল্প করে। তারপর দুপুরে আবার পানিতে নেমে অনেক মজা দুষ্টামি করে। নেহাল তনুর জন্য অনেক কিছু রান্না করে৷ ও সেগুলো খেয়ে খুব খুশি হয়। খেয়ে দেয়ে ওরা দুজন ক্লান্ত হয়ে সেই কাঠের ঘরে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। বিকেলে ওদের ঘুম ভাঙে। আর কিছুক্ষণ পর সূর্য মামা অস্ত যাবে৷ নেহাল তনুকে সাথে নিয়ে সূর্য ডুবে যাওয়া দেখতে বসে। তনু নেহালে কাঁধে হেলান দিয়ে ওর পাশে বসে সূর্য ডুবে যাওয়া দেখছে। ও নেহালকে জিজ্ঞেস করে,

~ আচ্ছা আমি যে এতক্ষণ বাসার বাইরে আজিম আঙ্কেল চিন্তা করবে না?
— তাকে আগেই হিপনোটাইজ করেই তো তোমাকে নিয়ে এখানে এসেছি। বাসা, ভার্সিটি নিয়ে কোন চিন্তা করো না। শুধু মুহূর্তগুলো উপভোগ করো।
~ আচ্ছা।

আস্তে আস্তে সন্ধ্যা হয়ে আসলে নেহাল বড়ো করে আগুন জ্বালায়। এখনকার পরিবেশটা যেন আরও রোমান্টিক আর রোমাঞ্চকর হয়ে উঠছে। তনুর মধ্যে অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করছে। নেহাল আর তনু সমুদ্রের পাড়ে বসে আছে। ঢেউ গুলো পাড়ে আছড়ে পড়ছে। সাথে ঠান্ডা বাতাস৷ নেহাল তনুর একটা হাত শক্ত করে ধরে বলে,

— তুমি আমার কাছে কত মূল্যবান একজন তা হয়তো কখনো বুঝবে না৷ শুধু এটুকু বলবো, তোমাকে অনেক ভালবাসি। তাই তোমাকে খুশি করার জন্য আমি সব করবো। লাগলে নিজের জীবনটাও দিয়ে দিব একদিন।
~ চুপ…একদম চুপ। আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই। আপনি না থাকলে কি নিয়ে আমি বাঁচবো বলেন? কে আমাকে সমুদ্রের তলদেশে নিয়ে যাবে?
— তনু… (খুব খুশি হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে)

তনু কান্নাসিক্ত নয়নে নেহালের দিকে তাকিয়ে আছে। নেহাল মুচকি একটা হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু হঠাৎই করেই নেহাল ওর পিছনে তাকায়। অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। তনু দেখে নেহালকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। ও নেহালের এই অবস্থা দেখে মুহূর্তেই ভয় পেয়ে যায়। এদিকে নেহাল দাঁড়িয়ে বলে উঠে,

— তনু, বিপদ এসেছে। এখন এখানে যাই হোক না কেন প্লিজ ভয় পাবে না৷ আর আমার পিছু ছাড়বে না৷ ১০০ এর উপর ভ্যাম্পায়ার এসেছে আমাদের মারতে।
~ কিহ! এখন কি হবে?
— কিছু হবে না৷ ওরা জানে না ওরা কাকে মারতে এসেছে। দেখি এদিকে আসো…

নেহাল তনুর ঘাড়ে কামড় দিয়ে ওর রক্ত খায়। কিছুক্ষণ পর ওকে ছেড়ে দিয়ে বলে,

— ঠিক আছো?
~ হ্যাঁ।
— প্লিজ ভয় পেয়েও না আমার আসল রূপ দেখে৷ চেয়েছিল কোন দিন যেন আমার আসল রূপ তুমি না দেখো কিন্তু মনে হচ্ছে তা আর সম্ভব না। আমাকে যেভাবে হোক তোমাকে বাঁচাতেই হবে৷

বলেই নেহাল মুহূর্তেই মধ্যে ওর আসল রূপ ধারণ করে। তনু দেখে….

চলবে…?

Darkness Part-03

0

#Darkness
Writer: Abir Khan
Part: 03
জন্তুটাকে দেখতে একদম মানুষ রূপী কিন্তু হিংস্র পশুর মতো লাগছে। যেন এখনিই তনুকে খেয়ে ফেলবে। ও কি করবে বুঝতে পারছে না। ও ভয়ে থরথর করে কাঁপছে৷ আজ বোধহয় আর বাঁচা হবে না। ও জোরে একটা চিৎকার করতে নেয়। কিন্তু তার আগেই সেই জন্তুটা চোখের পলকে ওর কাছে এসে ওর মুখ চেপে ধরে। শুধু তাই না ওর গলাও চেপে ধরে। তনুর মনে হচ্ছে ও আর বেশিক্ষণ বাঁচবে না৷ ও মনে মনে বলছে, নেহাল যদি সেদিনের মতো আজও ওকে বাঁচাতো। কিন্তু সে হয়তো আর আসবে না৷ ও যে তাকে আসতে না করে দিয়েছে। তনুর চোখগুলো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে আসছে। ও আর শ্বাস নিতে পারছে না৷ তাহলে এটাই কি ওর শেষ? না। হঠাৎ করেই তনুর গলাটা ওই জন্তুটা ছেড়ে দেয়৷ তনু ছিটকে পড়ে যায়। ও জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে দেখে জন্তুটার মাথায় কে যেন হাত দিয়ে ধরে আছে। শুধু তাই না সে হাতে আগুন জ্বলছে। দেখতে দেখতে আগুন মাথা থেকে পুরো শরীর ছড়িয়ে যায়। জন্তুটা জোরে চিৎকার দিয়ে মুহূর্তেই হাওয়া মিশে নাই হয়ে যায়। আর এরপরই তনু দেখে নেহাল দাঁড়িয়ে আছে। ওর হাতে সেই নীল আগুন জ্বলছে। তনু কোন মনে উঠে নেহালের কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

~ আমাকে বাঁচান প্লিজ আমাকে বাঁচান। আমি এভাবে মারা যেতে চাই না৷

নেহালের হাতে এখন আর আগুন নেই। ও তনুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর মাথার পিছনে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,

— আর ভয় নেই৷ ওকে শেষ করে দিয়েছি আমি। ওর অস্তিত্বও আর খুঁজে পাওয়া যাবে না৷
~ আ…আমাকে মেরে ফেলতো আর একটুউউ হলেই….
— শান্ত হও। কান্না থামাও। দেখি আমার দিকে তাকাও তো।

তনুকে সামনে এনে নেহাল ওর গলায় হায় রাতে। কিছুক্ষণ পরই তনু ফিল করে ওর পুরো শরীর একদম আগের মতো হয়ে গিয়েছে। যেন ওর সাথে কিছুই হয় নি। ও পুরো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নেহাল ওকে নিয়ে বেডের কাছে যায়। ওকে বসিয়ে দিয়ে একগ্লাস পানি এনে ওকে খেতে দেয়। তনুও পানি খেতে থাকে। আর এই ফাঁকে নেহাল বলতে থাকে,

— সরি আমার জন্যই তোমাকে এরকম একটা পরিস্থিতির শিকার হতে হলো। আমি যদি আগেই চলে আসতাম তাহলে ওকে দেখার আগেই ও শেষ হয়ে যেত।

তনু পানি খেয়ে গ্লাসটা আবার নেহালের কাছে দেয়। নেহাল সেটা রেখে দিয়ে তনুর পাশে এসে বসে ওর চোখ দুটো সুন্দর করে মুছে দেয়। তনু একটু শান্ত হয়ে আস্তে করে বলে,

~ আমাকে দয়া করে একটু বুঝিয়ে বলবেন? আমি এসব কিছুই বুঝতে পারছি না৷ কি হচ্ছে এসব?

নেহাল তনুর দিকে তাকায়। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে দেয়। তনু অসম্ভব লজ্জা পায়৷ নেহাল সেই রহস্যময় মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,

— আই লাভ ইউ।
~ কিহ! (আশ্চর্য হয়ে)
— আই লাভ ইউ। মানে তোমাকে ভালবাসি।

তনু একলাফে দাঁড়িয়ে যায়। আর কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,

~ মানে! কি বলছেন কি এসব! আমি মানুষ আর আপনি ভ্যাম্পায়ার। আপনার সাথে আমার কখনো মিল হয় না৷
— না হলে এখন হবে৷ কজ আই লাভ ইউ। অ্যান্ড আই নিড ইউ।
~ আপনার মাথায় সমস্যা হয়েছে। এটা অসম্ভব। আমি সাধারণ একটা মেয়ে৷ আর আপনি…
— তুমি সাধারণ একটা মেয়ে? কে বলল?
~ মানে?
— তোমার জানো? তোমার রক্তে এমন একটা পাওয়ার আছে যা সব ভ্যাম্পায়ার’রা চায়। তুমি একটা চুম্বকের মতো। আমি যদি তোমার কাছে না থাকি তাহলে অন্য ভ্যাম্পায়ার’রা চলে আসবে। যেমন একটু আগে একজন এসেছিল।
~ কিন্তু সে তো আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। আমার রক্ত খেতে আসে নি।
— হুম। কারণ তুমি মরে গেলে তোমার রক্তের শক্তি আর কেউ পাবে না৷ মানে আমি আর শক্তিশালী হতে পারবো না তার জন্য। আমার সব শক্তির উৎস এখন শুধু তুমি। তোমার রক্ত ছাড়া আমার শক্তি হারিয়ে যাবে৷ তাই ওরা তোমাকে মারতে এসেছিল।

তনু বেডে বসে পড়ে। নেহালের কথা শুনে ওর মনে হচ্ছে ওর মাথার উপর কে যেন বিশাল বড়ো একটা পাহাড় রেখে দিয়েছে। তনু মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে৷ নেহাল ওর কাছে গিয়ে বলে,

— আসলে আমি ভ্যাম্পায়ার কিং।
~ আপনি ভ্যাম্পায়ারদের রাজা? (ভীষণ অবাক হয়ে)
— হ্যাঁ।
~ তাহলে আপনি এভাবে ঘুরে বেরাচ্ছেন কেন?
— আমার শত্রুপক্ষ আমাকে মেরে ফেলতে চায় তাই। ওরা সবাই একসাথে হয়েছে। আমি চাইলে ওদের নিমিষেই শেষ করে দিতে পারি। কিন্তু একজন কিং কখনোই চাইবে না তার সাথীদের মেরে ফেলতে। তবে হ্যাঁ ওদের মধ্যে একজন বস আছে। যার পাওয়ার আমার সমতূল্য ছিল। কিন্তু তোমার রক্ত খাওয়ার পর আমি এখন আরও পাওয়ারফুল হয়ে গিয়েছি। তাই ওই বসটাকে মারতে পারলেই এই যুদ্ধ শেষ হবে৷ ওর সাথীরা ভয় পেয়ে আবার আমার অনুগত হয়ে যাবে৷

তনু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। পৃবিবীতে কত আজুবা আছে। তাদের মধ্যেও বেঁচে থাকার লড়াই চলে। তনু বলে,

~ আচ্ছা আমাকে মেরে ফেললে আপনি আপনার সব শক্তি হারাবেন?
— সব না কিছু টা।
~ ওও। এরজন্যই বলেছেন, আমাকে ভালবাসেন? কারণ আপনার আমাকে প্রয়োজন তাই। এবার সব বুঝতে পেরেছি।
— তোমাকে যদি এখন আমি মেরে ফেলে তোমার সব শক্তি আমি সাথে সাথে পেয়ে যাবো। এই শক্তি কখনো শেষ হবে না৷
~ তাহলে মারলেন না কেন?
— কারণ সেদিন রাতে আমি পাহাড়ের নিচে চাঁদের আলো থেকে শক্তি নিচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে মানুষের ঘ্রাণ পাই। দেখি তুমি পড়ে যাচ্ছো। কেন জানি মনটা বলল তোমাকে বাঁচাই। তাই বাঁচালামও। তুমি যখন আমার কোলে ছিলে চাঁদের মিষ্টি আলোটা তোমার উপর পড়েছিল। আর ঠিক তখনই আমি কারো মুগ্ধতায় হারিয়ে যাই। জীবনে প্রথম কোন মেয়েকে আমার এত ভালো লাগে। তুমি যখন আমার কোলে ছিলে আমার নিজেকে অনেক পাওয়ারফুল মনে হচ্ছিল। যেন কোন অস্বাভাবিক শক্তি আমার মধ্যে আসছে। তোমাকে আবার উপরে দিয়ে ভেবেছিলাম একটু কথা বলবো কিন্তু তোমার বন্ধুরা তোমার কাছে আসছিল। তাই আমি লুকিয়ে যাই। কিন্তু তোমাকে ছাড়া ভালো লাগছিল না আমার। তাই গভীর রাতে আমি আবার তোমার কাছে আসি। অনেকক্ষণ বসে ছিলাম তোমার কাছে। তোমার নেশায় এতটা বিভোর হয়ে যাই যে আমি অজান্তেই তোমার রক্ত খেয়ে ফেলি। আমি এটাই ভুলে গিয়েছিলাম যে আমি যদি কারো রক্ত খাই যে সাথে সাথে মারা যাবে। কিন্তু আমাকে পুরো অবাক করে দেও তুমি। তোমার রক্ত খাওয়া মাত্র আমি অস্বাভাবিক শক্তি অনুভব করি আমার মাঝে। শুধু তাই না তোমার শরীরে মুহূর্তেই রক্তে ভরে যায়। আমি পশুর রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকতাম। তবে যার রক্তই খেতাম সে মুহূর্তেই মারা যেত। কারণ আমার শরীর প্রচুর রক্ত টানে৷ তোমার পুরো শরীরের রক্ত খেতে আমার এক মিনিট লাগবে। কিন্তু সেদিন রাতে আমি অনেকক্ষণ তোমার রক্ত খেয়েও তোমার কিছু হয় নি। ঠিক তখনই আমি বুঝে যাই তুমি সাধারণ কোন মানুষ না। তোমার মধ্যে অস্বাভাবিক শক্তি আছে। তাই আমি সব ছেড়ে তোমার কাছে চলে আসি। এই একটা কারণ ছাড়াও আরেকটা কারণ হলো, আমার শত্রুপক্ষ কিভাবে যেন তোমার ক্ষমতা সম্পর্কে জেনে গিয়েছে। তাই তোমাকে বাঁচাতেও এসেছি। কারণ আমি চাই না আমার একমাত্র প্রিয় মানুষটার কোন ক্ষতি হোক। আর সত্যি বলতে তুমি যে একদম ভুল বলেছো ঠিক তা না৷ আসলে তোমার আমার অনেক ভালোও লেগেছে এবং তোমাকে আমার প্রয়োজনও।

তনু নেহালের কথা শুনে নিজেকে দেখছে। ও কখনো ভাবতেই পারে নি ওর মাঝে এত রহস্য লুকিয়ে আছে। হঠাৎ ওর একটা ঘটনা মনে পড়ে। একবার ও সিড়ি দিয়ে পড়ে মাথা ফেটে ওর অনেক রক্ত গিয়েছিল। কিন্তু তাও ওর কিছু হয়নি। ইভেন ওকে কোন রক্তও নিতে হয় নি। তনু নেহালের দিকে তাকিয়ে বলে,

~ আল্লাহ তায়ালা মনে হয় আমাকে আপনার জন্যই পাঠিয়েছেন। নাহলে আমার শরীরে এত রক্ত উৎপাদন ক্ষমতাও দিত না আর আপনাকে রক্তের তৃষ্ণাও দিত না৷
— হাহা। হয়তো। তবে ভয় নেই। সারাদিনে একবার তোমার রক্ত খাবো আমি। তাহলেই হবে।
~ কি জীবন আমার শেষমেশ রক্তচোষা এসে আমার কপালে জুটলো। তাও আবার রক্তচোষা রাজা।

তনুর কথা শুনে নেহাল হাসতে হাসতে বেডে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তনু নেহালের দিকে তাকিয়ে আছে। নেহালকে দেখলে মনেই হয় না যে ও এত শক্তিশালী আর একটা ভ্যাম্পায়ার। একদম স্বাভাবিক মানুষের মতোই লাগে৷ নেহাল হাসতে হাসতে তনুকে টান মেরে ওর কাছে এনে ওকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,

— তুমি চাইলে আমার মতো ভ্যাম্পায়ার হয়ে যেতে পারবে।
~ হ্যাঁ, তারপর আমি রক্ত পাবো কই?
— তোমার শরীরের এমনিই তো রক্ত বেশি। তোমার কোন রক্ত লাগবে না। উল্টো তুমি আমার মতো আরও বেশি পাওয়ারফুল হয়ে যাবে৷
~ তাই নাকি? তা আমাকে ভ্যাম্পায়ার হতে হলে কি করতে হবে শুনি?
— বলবো? শুনলে তো তুমি লজ্জা পাবে৷
~ পাবো না। বলেন।

নেহাল তনুর কানে কানে গিয়ে বলে। তনু শোনা মাত্রই লজ্জায় ওর পুরো মুখ লাল হয়ে যায়। ও নেহালের কাছ থেকে দূরে সরে বলে,

~ অসম্ভব অসম্ভব। আমি স্বাভাবিক মানুষই ভালো আছি।
— হাহা।

নেহাল তনুকে আবার কাছে টেনে বলে,

— যদি কোন দিন আমার কিছু হয় তাহলে শুধু তুমিই আমাকে বাঁচাতে পারবে। যদি তুমি ভ্যাম্পায়ার হও। আর আমি মরে গেলে তোমাকে বাঁচাবে কে বলো?
~ এইইই আপনি অনেক পঁচা। কথা জালে ফাসাচ্ছেন আমাকে তাই না? শোনেন যদি আমাকে সত্যিই ভ্যাম্পায়ার বানাতে চান তাহলে আমাকে বিয়া করতে হবে৷ নাহলে আমি কিছুই দিব না৷ এত সস্তা না আমি। এহহ…
— ভ্যাম্পায়াররা আবার বিয়েও করবে? হাহা। আচ্ছা যাও করলাম বিয়ে৷
~ হুম৷ আচ্ছা আপনাদের কোন মেয়ে ভ্যাম্পায়ার নেই?
— অনেক আছে।
~ তাদের মধ্যে কাউকে পছন্দ হয় নি?
— নাহ! সত্যি বলতে আমি রাজা হওয়ায় আর আমার পাওয়ার সবার থেকে বেশি হওয়ায় ভয়ে কেউ আমার কাছে আসতো না।
~ তার মানে আপনি যে এখন মানুষের রূপ ধরে আছেন এটা আপনার আসল রূপ না?
— না৷ আমার আসল রূপ দেখলে তুমি অজ্ঞান হয়ে যাবে ভয়ে৷
~ ওরে বাবা। থাক তাহলে। আপনাকে এভাবেই অনেক ভালো লাগে আমার।
— কি আমাকে ভালো লাগে? আসো এখনি তোমাকে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে দি। হাহা৷
~ এই এই সরেন…. একদম না।

তনু আর নেহাল হাসাহাসি করতে থাকে। তনু যেন ওর একাকিত্ব জীবনের মাঝে অন্যরকম একটা আনন্দ ভালো লাগা আর এডভেঞ্চার খুঁজে পেয়েছে। তনু এতটা অবুঝ না যে ও এটা বুঝতে পারবে না, আসলে নেহাল ওকে বাঁচাতে এসেছে। কিন্তু কাদের হাত থেকে? আর কারাই বা ওদের দুজনকে মারতে চায়? তনুর কেন জানি মনে হচ্ছে নেহাল ওকে সবটা বলে নি। কিছু রহস্য এখনো রহস্য আছে। তনু বলে,

~ আপনি কি এখন থেকে সবসময় আমার সাথেই থাকবেন?
— হ্যাঁ। কারণ আমার জীবনের একমাত্র সঙ্গী তুমি। তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকি বলো?
~ হুম বুঝি তো। সবই আমার রক্ত খাওয়ার ধান্দা।
— হাহা। একদম না। বলেছি না আমি তোমাকে ভালবাসি।
~ হুহ।
— আচ্ছা তুমি বলেছো তোমার অনেক গুলো ইচ্ছা আছে। কি কি বলো তো।
~ এখন একটা বলি। আস্তে আস্তে সব বলবো।
— আচ্ছে বলো।
~ আমার প্রথম ইচ্ছা হলো, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যাবো। সেখানে অনেক মজা করবো। জানি না ইচ্ছাটা পূরণ হবে কিনা৷ দেখা গেল ইচ্ছা পূরণ হওয়ার আগেই আমাকে আপনার ভ্যাম্পায়ার শত্রুরা খেয়ে ফেললো।
— আমি থাকতে তোমার আর কোন ক্ষতি কেউ করতে পারবে না দেখো।
~ দেখবো নে৷ এখন ছাড়েন আমি ঘুমাবো। খুব ঘুম পাচ্ছে।

তনু মুখ দিয়ে ছাড়তে বললেও ও নেহালকে জড়িয়ে ধরে আছে। নেহাল বুঝে যায় আসলে তনু ওকে ছাড়তে চায় না। তাই ও মুচকি একটা হাসি দিয়ে তনুকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

— নিজে ছাড়িয়ে নেও। কারণ আমি তো তোমাকে ছাড়ছি না।
~ তাহলে থাক। এভাবেই থাকি।

তনু ছোট বেলা থেকেই একদম একা ছিল। কোন ভরসা কিংবা একটু আদর ও পায় নি। আজ নেহালকে ওর ভরসা হচ্ছে। নেহালের স্পর্শ ওকে অন্যরকম একটা ভালো লাগা দিচ্ছে। তনু নেহালের মাঝে নিজেকে অনেক সেইফ মনে করছে। তাই ও নেহালকে হারাতে চায় না। কখনো না। কিন্তু ওরা কি পারবে সবসময় একসাথে থাকবে? কারণ ওদের দুজনের বেঁচে থাকা অন্যদের কাছে হুমকি। নেহাল এটা ভেবেই খুব ভয় পাচ্ছে। ও কি পারবে শেষ পর্যন্ত তনুকে বাঁচাতে? নাকি তার আগেই নিজে শেষ হয়ে যাবে? নেহাল মনে মনে ভাবে, ও যতদিন তনুর সাথে থাকবে ওর প্রতিটি ইচ্ছা ও পূরণ করবে৷ তনুর জীবনটা আনন্দ আর খুশিতে ভরিয়ে দিবে৷ সেটা যেভাবেই হোক। তনু জানে না কাল সকালে ও কত বড়ো একটা সারপ্রাইজ পেতে যাচ্ছে। নেহাল শুধু কালকের সকালের অপেক্ষায় আছে।

চলবে…?

Darkness Part-02

0

#Darkness
Writer: Abir Khan
Part: 02
তনু ভয় পেয়ে আর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তবে এখন ছেলেটার চোখ একদম নরমাল মানুষদের মতো। মানে কালো। তাহলে সেদিন কেন লাল হয়ে ছিল? ছেলেটা তনুকে আরও বেশি অবাক করে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,

— কেমন আছো তনু?
~ আপনি কে? আমার নাম জানেন কিভাবে? (ভীতু কণ্ঠে)
— আমি নেহাল। নেহাল আহমেদ আর কি।

কথা শেষ করে নেহাল তনুকে দাঁড় করিয়ে দেয়। তনু নিজেকে সামলে বলে,

~ আপনি এখানে কেন? আপনি তো পাহাড়ের…

নেহাল ঠোঁটে আঙুল রেখে তনুকে থামিয়ে দেয়। আর বলে,

— এখন থেকে আমি তোমার সাথেই থাকবো। মানে তোমার সাথে ক্লাস করবো।
~ এটা কিভাবে সম্ভব! আপনি তো আমার বড়ো। আর আপনাকে কেনই বা এখন মাঝ সেমিস্টারে আমাদের ক্লাসে ঢুকিয়ে দিবে? এটা অসম্ভব!
— দেখা যাক। এখন আসি। আবার দেখা হবে। বাই বাই তনুউউ…

নেহাল তনুকে স্তব্ধ করে দিয়ে চলে যায়। তনুর বন্ধুরা ওর কাছে এসে বলে,

~ ওয়াও দোস্ত! এই হ্যান্ডসাম ছেলেটা কে ছিল? তোকে চিনে মনে হচ্ছিলো। (নীলা)
— এই তোর সাথে আবার কোন খারাপ বিহেভ করেছে নাকি? বল আমাকে? (রনি)
~ না না৷ সে নাকি আমাদের ক্লাসে আমাদের সাথে পড়বে।
— বলিস কি? এটা কি সম্ভব নাকি? ডিন কখনো রাজি হবে না। (শান্ত)
~ আমিও তাই বলছি। চল ক্লাসে যাই। দেরি হচ্ছে।
— ওকে। (সবাই)

তনু বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছে। এই রহস্যময় ছেলে এখানে আসলো কিভাবে? সে কিভাবে ওকে চিনে? আর কিভাবে ওর সাথে পড়বে? কেনই বা পড়বে? সে তো বড়ো। তনুর মাথাটা গরম হয়ে যাচ্ছে। ওরা সবাই ক্লাসে ঢুকে যে যার সিটে বসে পড়ে। একটু পরই বেল বেজে উঠে। স্যার ক্লাসে এসে সবার সাথে হাই হ্যালো করে বলে উঠেন,

— স্টুডেন্ট, আজ তোমাদের ক্লাসে নতুন একজন ছাত্র যোগ হবে। সবাই তাকে হেল্প করবে আশা করি। নেহাল প্লিজ কাম।

নতুন ছাত্র যোগ হওয়ার কথা শুনে সবাই অবাক। সবাই হাইপার হয়ে যায়। যে এটা কিভাবে সম্ভব? মাজ সেমিস্টারে কিভাবে কেউ ভর্তি হয়! তনুও নেহালের নাম শুনে অনেক বড়ো একটা ধাক্কা খায়। তাহলে কি সে সত্যি সত্যিই ওর সাথে পড়বে? ও আশেপাশে মানুষের কথা শুনে আরও অস্থির হয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু সবকিছুকে একদম স্তব্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র তনুকে ভীষণ ভাবে অবাক করে দিয়ে নেহাল একটা মুচকি হাসি দিয়ে ক্লাসে এন্ট্রি মারে। আর সাথে সাথে সবাই চুপ। তনু খেয়াল করে নেহাল চোখ দুটো এখন একদম লাল। ও দ্রুত আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই কেমন জানি চুপ হয়ে একদৃষ্টিতে নেহালের দিকে তাকিয়ে আছে। একমাত্র তনুই স্বাভাবিক আছে। ও খুব ভয় পেয়ে যায়৷ ও নেহালের দিকে তাকিয়ে দেখে নেহাল ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তবে ঠোঁটের কোণায় রহস্যময় একটা হাসি। স্যার ওকে সবার সাথে পরিচয় হতে বলে। নেহাল বলে উঠে,

— আমি নেহাল আহমেদ। আজ থেকে তোমাদের সাথেই আমি সবসময় থাকবো। ধন্যবাদ।

সাথে সাথে ক্লাসের সবাই একদম নরমাল হয়ে যায়৷ নেহালকে ওদের নতুন বন্ধু হিসেবে তারা মেনে নেয়৷ এখন এমন একটা অবস্থা যেন ওরা ভুলেই গিয়েছে ভার্সিটির নিয়ম কানুনের কথা। তনু পুরো স্তব্ধ হয়ে আছে। ওর বন্ধুরা পর্যন্ত নেহালের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। এদিকে নেহাল আস্তে আস্তে হেঁটে তনুর কাছে আসে। তনুর সাথে একটা মেয়ে বসা ছিল। তনু খেয়াল করে নেহাল আবার ওর চোখটা লাল করে মেয়েটাকে বলে,

— তুমি পিছনের সিটে গিয়ে বসো। আমি ওর সাথে বসবো।

মেয়েটা একটা শব্দ না করে চুপচাপ উঠে চলে যায়। নেহাল আবার ওর চোখ দুটো স্বাভাবিক করে তনুর পাশে বসে। আর ওর দিকে তাকায়৷ তনুর আর বুঝতে বাকি নেই যে নেহাল কোন স্বাভাবিক মানুষ না৷ ও ভয়ে থরথর করে কাঁপছিল। ওর মন চাচ্ছিলো ও এখান থেকে পালিয়ে যাক। নেহাল ওর করুণ অবস্থা দেখে আস্তে আস্তে ওর একদম কাছে এসে ওর কানে কানে বলে,

— তোমার জন্যই এখানে এসেছি। ভয় নেই৷ আমি তোমার মতোই একজন। তবে একটু আলাদা।

তনু হঠাৎ করে নেহালের কথা শুনে আঁতকে ওঠে। ও চমকে গিয়ে একটু দূরে সরে বসে। নেহাল ভ্রুকুচকে তনুর দিকে তাকায় আর বলে,

— আমার কাছ থেকে দূরে সরে গেলে কিন্তু অনেক খারাপ হবে৷ খারাপটা তোমার না পুরো ক্লাসের হবে। আমি কি তা তো বুঝতেই পারছো। সো আমার কাছে কাছে থাকবে তুমি।
~ আ…আপ…আপনি কেন এখানে এসেছেন? কি চা…চান আপনিইইই?
— যদি বলি তোমাকে। আসলে ঠিক তোমাকে না, তোমার মিষ্টি পাওয়ারফুল ব্লাডকে। হাহা।
~ কিহহ!

তনু অসম্ভব ভয় পেয়ে যায় নেহালের কথা শুনে। আর এদিকে নেহাল শুধু হেসেই যাচ্ছে। তনু মানতেই পারছে না এসব৷ ওর খুব খারাপ লাগছে। সবকিছু কেমন অস্পষ্ট লাগছে। কেন নেহাল এখানে? আর নেহাল আসলে কে? কোন ভূত? ভূত হলে মানুষের মাঝে কি করছে? ভূত তো এত মানুষের মাঝে থাকতে পারে না। তাহলে ও কে? তনু আর এসব ভাবতে পারে না৷ ও নিজেকে কোন মতে স্থির করে ক্লাসে মনোযোগ দেয়। কিন্তু নেহাল পুরোটা সময় জুড়ে শুধু ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। তনুর যে কিরকম অস্তিত্ব লাগছিল তা বলার বাইরে। দেখতে দেখতে টিফিন ব্রেক চলে আসে৷ ও যেন এটার অপেক্ষায়ই ছিল। ও দ্রুত উঠে ক্লাসের বাইরে আসে। ওকে একটু খোলা জায়গায় যেত হবে৷ সব কিছু কেমন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। তনু হেঁটে হেঁটে ক্যানটিনের দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎই করে নেহাল কোথা থেকে এসে ওর হাত ধরে অন্যপাশে নিয়ে একটা খালি ক্লাসের মধ্যে ঢুকে পড়ে। ঢুকে ভিতর দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। তনু ভয়ে চিৎকার দিতে নেয়। কিন্তু তার আগেই নেহাল ওর মুখ চেপে ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে ফেলে। তনুর ভীতু চোখগুলো নেহালের লোভাতুর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। তনু ভাবছে নেহালের চোখে কিসের লোভ? ওকে ভোগ করার? শেষমেশ এভাবে ও ওর সব হারাবে? তনুর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। ও নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু নেহালের পুরো শরীরটা যেন লোহার মতো শক্ত। তনু অঝোরে কাঁদছে। নেহাল ওর কান্না দেখে বলে উঠে,

— আরে এভাবে কাঁদছো কেন? আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না। শুধু তোমার স্বাদ নিব৷ মানে তোমার রক্তের।

বলেই তনুকে পুরো স্তব্ধ করে দিয়ে নেহাল সত্যি সত্যিই ওর ঘাড়ে কামড় দেয়। সাথে সাথে তনু সেই রাতের ঠান্ডা ফিলটা আবার অনুভব হয়। ও বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। নেহাল সত্যি সত্যিই ওর রক্ত খাচ্ছে। কিন্তু ও কোন ব্যথা পাচ্ছে না৷ শুধু ঠান্ডা একটা অনুভূতি। কিছুক্ষণ পর নেহাল ওকে ছেড়ে দেয়৷ তনুর কান্না অনেক আগেই থেমে গিয়েছে। নেহাল যখন ওর সামনে আসে তনু দেখে নেহালের সামনের দুটো দাঁত অনেক বড়ো হয়ে বের হয়ে আছে। সেগুলোতে তাজা রক্ত লেগে আছে। কিন্তু মুহূর্তেই দাঁত দুটো আবার নরমাল দাঁতের মতো হয়ে যায়। নেহাল সেই রহস্যময় হাসি দিয়ে তনুর ঘাড়ের ওখানে হাত বুলিয়ে দেয়। আর সাথে সাথে দাগটাও নাই হয়ে যায়। এবার তনুর চোখের দিকে তাকিয়ে নেহাল ওর চোখ দুটো মুছে দিতে দিতে বলে,

— এবার বুঝতে পেরেছো আমি কে?

তনু অসহায় ভাবে মাথা নাড়িয়ে না বলে। নেহাল কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে ওর কানের কাছে এসে বলে,

— আমি ভ্যাম্পায়ার। রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকি আমি। আমার ২০০ বছরের জীবনে প্রথম এমন একজনের রক্ত খেলাম যার রক্ত আমাকে অনেক শক্তিশালী করে দেয়। এমন শক্তিশালী করে দেয়, যে আমি চোখের পলকে একটা গোটা পাহাড়কে নিমিষেই শেষ করে দিতে পারবো। আর সেই মানুষটা তুমি তনু৷ আই নিড ইউ।

নেহালের কথা শুনে তনুর চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে যায়। অনেক বড়ো একটা সক খেয়েছে ও। নিজের কানকে ও বিশ্বাস করতে পারছে না৷ ভ্যাম্পায়ারের কত গল্প, কাহানী আর মুভি ও দেখেছে। ভেবেছে এসব কাল্পনিক। কিন্তু আজ এই মুহূর্তে ওর সামনে জলজ্যান্ত একটা ভ্যাম্পায়ার দাঁড়িয়ে আছে। শুধু তাই না, সে ওর রক্তও খাচ্ছে। তনু সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়। ওর পক্ষে এসব নেওয়া আর সম্ভব না৷ কিছুক্ষণ পর তনু আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়। দেখে ও নেহালের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। নেহাল ওর দিকে মুচকি একটা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। তনু মাথায় হাত দিয়ে আস্তে আস্তে উঠে বসে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সেই ক্লাস রুমেই আছে ওরা। তনু নেহালের দিকে তাকিয়ে বলে,

~ আচ্ছা আমি কি কোন স্বপ্ন দেখছি? যদি স্বপ্ন নাই দেখে থাকি তাহলে এসব কি হচ্ছে বলবেন প্লিজ?

নেহাল তনুর গাল দুটো ধরে বলে,

— এই পৃথিবীতে যে কতশত রহস্য আর অজানা জিনিস লুকিয়ে আছে তা তোমরা কিছুই জানো না। তোমার ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। তবে বিশ্বাস রাখো আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না। আর হতেও দিব না। শুধু তোমার রক্ত খাবো। হাহা।

তনু অসহায়ের মতো নেহালের দিকে তাকিয়ে আছে। নেহাল কতটা স্বাভাবিক ভাবে বলছে ওর রক্ত খাবে। এদিকে তনু যে যায় যায় অবস্থা তার কোন খেয়ালই নেই। তনু উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

~ দেখুন দুনিয়াটা এখনো ঠিক মতো দেখতে পারি নি। আমার অনেক গুলো ইচ্ছা আছে। আপনি যদি আমার রক্ত খেয়ে আমাকে মেরে ফেলেন তাহলে অনেক গুলো ক্ষোভ নিয়ে দুনিয়া থেকে চলে যেতে হবে৷ আমার ইচ্ছা গুলো পূরণ হলে আমাকে খেয়ে ফেলেন আপনি। আমি কিছু বলবো না। তবে এখনকার মতো আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ।

তনুর কথা শুনে নেহাল হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ায়। উঠে ওর কপালে একটা টোকা দিয়ে বলে,

— ক্লাসে যাও। সবাই তোমাকে খুঁজছে।

বলেই মুহূর্তেই মধ্যে নেহাল একদম গায়েব হয়ে যায়। তনু পুরো অবাক হয়ে যায়। জলজ্যান্ত মানুষটা গায়েব! ওহ! সরি নেহাল তো মানুষ না ভ্যাম্পায়ার। তনু ভয়ে ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে ওর ক্লাসে চলে যায়। নেহাল তনুর ভার্সিটির বিল্ডিংয়ের ছাদে বসে আছে। বসে বসে তনুর কথা ভাবছে আর হাসছে। হঠাৎই নেহাল বলে উঠে,

— আমাকে ফাঁকি দেওয়া এত সহজ না। সামনে আয়।

মুহূর্তেই অদৃশ্য থেকে দৃশ্যমান হয় আরও একটা ছেলে। নেহালের পাশে বসে সে বলে,

— তোর পাওয়ারের কাছে সত্যিই আমরা কিচ্ছু না।
— তুই এখানে কেন সেটা বল?
— তোকে সতর্ক কর‍তে এসেছি। কারণ তুই যা করতে যাচ্ছিস তা ঠিক হবে না। তোর ক্ষতি হতে পারে।
— শোন ও শুধু আমার। কারণ ওকে আমার প্রয়োজন। সো ওর ক্ষতি করতে যে আসবে তাকে সবার আগে আমাকে পাড় করতে হবে৷ তাতে আমার ক্ষতি হলে হোক।
— ভুল করছিস নেহাল। তুই ভেবে দেখ। তার পাওয়ারের সামনে তোর পাওয়ার কিছু না।

নেহাল উঠে দাঁড়ায় আর বলে,

— আমার পাওয়ার সম্পর্কে তোদের ধারণা নেই। আসি।

কয়েক মিলি সেকেন্ডের মধ্যেই নেহাল গায়েব। ও চলে গেলে ওর সাথী বলে,

— তোর কিছু না হলেও মেয়েটাকে কে বাঁচাবে?

রাত ১১ঃ৪৫ মিনিট,

নেহাল গায়েব হয়ে যাওয়ার পর তনু আর ওকে এখন পর্যন্ত দেখে নি। ও এখন চুপচাপ ওর রুমে বসে আছে। শুধু নেহালের কথাই বারবার মনে পড়ছে। নেহাল কি সত্যিই চলে গেল? তনুর রুমটা অনেক বড়ো ছিল। তাই অনেক বড়ো বড়ো জানালাও আছে। বারান্দার পাশে যে জানালাটা ছিল হঠাৎ করে তনু খেয়াল করে কে যেন সেখানে বসে আছে। ওহ! তনুর রুমের বাতিটা কিন্তু অফ ছিল। তাই অন্ধকারে ও ঠিক দেখতে পাচ্ছিল না৷ ও ভয়ে আস্তে আস্তে করে উঠে সুইচের দিকে যেতে থাকে আর বলতে বলতে থাকে,

~ আপনি কি নেহাল? আপনি এত রাতে এখানে কেন?

তনু বাতি জ্বালাতেই দেখে এটা নেহাল না অন্যকেউ। নেহালের মতো সেই বড়ো বড়ো দুটো দাঁত বের হয়ে আছে। দেখতে একদম মানুষ রূপী হিংস্র পশুর মতো লাগছে। যেন এখনিই ওকে খেয়ে ফেলবে। তনু কি করবে বুঝতে পারছে না। ও ভয়ে থরথর করে কাপছে৷ আজ বোধহয় আর বাঁচা হবে না। ও জোরে একটা চিৎকার করতে নেয়। কিন্তু তার আগেই সেই জন্তুটা চোখের পলকে ওর কাছে এসে ওর মুখ চেপে ধরে। শুধু তাই না ওর গলাও চেপে ধরে। তনুর মনে হচ্ছে ও আর বেশিক্ষণ বাঁচবে না৷ ও মনে মনে বলছে, নেহাল যদি সেদিনের মতো আজও ওকে বাঁচাতো। কিন্তু সে হয়তো আর আসবে না৷ ও তো তাকে আসতে না করে দিয়েছে। তনুর চোখগুলো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে আসছে। ও আর শ্বাস নিতে পারছে না৷ তাহলে এটাই কি শেষ তনুর?

চলবে…?

Darkness Part-01

0

#Darkness
Writer: Abir Khan
Part: 01

তনু ওর ক্লাসমেইটদের সাথে সিলেটের একটা পাহাড়ি জায়গায় ক্যাম্পিং করতে এসেছে। ওরা সারা রাত এই পাহাড়ের চুড়ায় ক্যাম্পিং করবে৷ ওদের সাথে আরও দুটো দল এসেছে। তবে সবাই আলাদা আলাদা ভাবে ক্যাম্পিং করছে। তনুরা মোট পাঁচ জন ছিল। তনু, নীলা, রনি, শান্ত আর ইমন। ওরা সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। রাত এখন প্রায় ১২ নাগাদ বাজে। সবাই যখন অনেক ইঞ্জয় করছিল তখন তনু আকাশের দিয়ে তাকায়। দেখে বিশাল বড়ো একটা চাঁদ আকাশের বুকে। তবে গাছপালার জন্য ঠিক মতো দেখতে পারছে না ও। ওর বান্ধবী নীলা ওকে দেখে বলে উঠে,

~ কিরে চাঁদ দেখবি?
~ হ্যাঁ। (খুশি হয়ে)
~ এক কাজ কর, সামনে খালি জায়গা আছে ওখানে দাঁড়িয়ে দেখ। তবে খেয়াল রাখিস পড়ে যাস না যেন৷ কারণ রাস্তা কিন্তু ওখানেই শেষ। পড়ে গেলে একদম ৫০০ ফিট নিচে। মানে কেল্লাফতে।
~ আরে না না অতো পাশে যাবো না৷
~ আচ্ছা যা তবে।

নীলা জানে তনুর চাঁদ অনেক পছন্দ। তাই ও আরও সুযোগ করে দিল ওকে দেখার জন্য। তনু উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

~ তোরা সবাই বস, আমি একটু সামনে থেকে চাঁদ দেখে আসি।
~ আমরা আসবো তোর সাথে? (শান্ত)
~ আরে না না৷ সমস্যা নেই। আমি একটু দেখেই চলে আসবো।
~ আচ্ছা যা। (সবাই)

তনু জ্যোৎস্নার আলোতে সামনে এগোতে থাকে। আস্তে আস্তে সামনে আসতেই পাহাড়ের শেষ সীমানা। এখানে কোন গাছ পালা নেই। তাই খোলা আকাশের অপরূপ সুন্দর চাঁদটা বেশ ভালো ভাবে এখন দেখা যাচ্ছে। নীলা ঠিকই বলেছিল। তনু জ্বলজ্বল নয়নে আকাশের পানে তাকিয়ে চাঁদটাকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে। চাঁদটাকে যেন আজ অনেক বেশি সুন্দর লাগছে৷ একদম ফুলমুন যাকে বলে। তবে আজকের চাঁদটা অন্যদিনের চেয়ে কেন জানি বেশি বড়ো লাগছে তনুর কাছে। যার জন্য আরও বেশি সুন্দর লাগছিল দেখতে। জায়গাটা পাহাড়ের চুড়ায় হওয়ায় ঠান্ডা হিমশীতল একটা বাতাস এসে তনুর গায়ে লাগছে। ওর খুব ভালো লাগছে। তনু মুচকি একটা হাসি দিয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে ছিল। ওর দশ কদম সামনেই পাহাড়ি খাদ। একবার পড়লে বাঁচার আর কোন উপায় নেই৷ তাই ও দূরত্ব মেনেই দাঁড়িয়ে আছে৷ তনু যখন চাঁদের সৌন্দর্য্য উপভোগ করছিল হঠাৎই ওর অনুভব হয় ওর পিছন থেকে কেমন একটা গরম হাওয়া খুব দ্রুত গতিতে প্রবাহিত হয়ে চলে গেল। আর সাথে সাথে ওর পুরো শরীরে কাটা দিয়ে গেল। তনু দ্রুত পিছনে তাকিয়ে দেখে কিছুই নেই৷ ও আবার সামনে তাকাতেই আবার সেই গরম হাওয়া ওর পিছনে চলে আসে। তবে এবার সেটা আর যাচ্ছে না৷ মনে হচ্ছে ওর পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে। তনু সাহস করে আস্তে আস্তে পিছনে তাকাতেই দেখে একটা বিশাল কালো ছায়া। ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছায়াটা খুব জোরে ওকে একটা ধাক্কা দেয়। আর বিভৎস ভাবে হাসতে থাকে। তনু নিজেকে সামলাতে না পেরে পাহাড় থেকে ৫০০ ফিট নিচে পড়ে যায়। ও যে চিৎকার দিবে সে শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। ওর চোখটা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে আসে। ও অনুভব করছে ও নিচে পড়ে যাচ্ছে। তনু মনে মনে বলে,

~ তাহলে কি এটাই আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত? আমি মরে যাচ্ছি? বাবা-মাকে শেষবারের মতো দেখতেও পারবো না?

পাহাড়ের নিচে শক্ত শক্ত পাথর আছে৷ এগুলোর উপর পড়লে তনু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মারা যাবে৷ আর বেশি পথ বাকি নেই। তনু অনুভব করছে ও আর কিছুক্ষণ পর অস্ত্বিত্বহীন হয়ে যাবে৷ ওকে কেউ খুঁজেও পাবে না। হয়তো কোন জন্তু ওকে চিড়ে চিড়ে খাবে৷ তনুর দুচোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। ও ঠিক যখনই পাথরগুলোর উপর পড়বে তার আগেই খুব ঠান্ডা একটা স্পর্শ ওর পুরো শরীর জুড়ে ও অনুভব করে। মনে হচ্ছে কেউ ওকে ধরে আছে। তনুর চোখ কিন্তু এখনো বন্ধ। ও মনে মনে বলছে,

~ আমি কি তাহলে মরে গেছি? নাকি কারো কোলে আমি? কিন্তু এটা ত অসম্ভব। এত উপর থেকে পড়ে কেউ কখনো বাঁচবে না। কিন্তু আমি এই ঠান্ডা স্পর্শ কেন ফিল করছি?

তনু আর না পেরে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়। ও দেখে, দুটো লাল চোখ ওর দিয়ে তাকিয়ে আছে। তনু মুহূর্তেই ভয় পেয়ে যায়। অনেক ঘাবড়ে যায় ও। তবে চাঁদের আলোতে ও ভালো করে দেখে, একটা অসম্ভব সুন্দর ছেলে ওকে তার বাহুদ্বয়ে নিয়ে আছে৷ তনু স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে এই লাল চোখওয়ালা ছেলেটার দিকে। অনেকটা ফরসা মুখ, মাঝামাঝি আকারের ঘন কালো চুল, বড়ো বড়ো পাপড়ি আর ঠোঁটটা কেমন জানি, লাল লাল। এরকম ছেলে ও আগে কখনো দেখে নি। কে এই ছেলে? এখানে কিভাবে আসলো? আর ওকেই বা কিভাবে বাঁচালো? তনু কিছুই বুঝতে পারছে না। ছেলেটা ইশারায় ওকে চোখ বন্ধ করতে বলে। ও অজান্তেই নিজে নিজে চোখ বন্ধ করে ফেলে। তনু এবার ফিল করে ও খুব জোরে উপরের দিকে যাচ্ছে৷ যেন হাওয়ায় ভাসছে৷ কিছু মুহূর্ত পর ও পায়ের নিচে মাটি পায়৷ মানে ছেলেটা ওকে তার কোল থেকে স্থলে নামিয়ে দিয়েছে। এবার ও দ্রুত চোখ মেলে তাকিয়ে যা দেখে, তা দেখার জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তনু তাকিয়ে দেখে ও সেই পাহাড়ের চুড়ায় দাঁড়িয়ে আছে৷ যেখান থেকে ও একটু আগে পড়ে গিয়েছিল। ঠিক পড়ে যায় নি ওকে কেউ ধাক্কা দিয়েছিল। তনু কিছুই বুঝতে পারছে না ঠিক কি হলো ওর সাথে। ও কিছু ভাবতে যাবে তার আগেই ওর বাকি বন্ধুরা ওর কাছে চলে আসে। তনুকে অস্থির দেখে নীলা ওর কাছে এসে ওর হাত ধরে চিন্তিত স্বরে বলে,

~ কিরে কি হয়েছে? এরকম পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কিছু হয়েছে?

তনু নীলার দিকে তাকাতেই দূরে সেই লাল চোখ দুটোকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে। চোখ দুটোয় যেন আগুন জ্বলছে। তনু ভয় পেয়ে যায়। ও আস্তে করে বলে,

~ না কিছু হয় নি৷ এমনিই দাঁড়িয়ে ছিলাম।

বলেই আবার সেখানে তাকিয়ে দেখে চোখ দুটো আর নেই। যেন ওর কথাগুলো শোনার জন্যই সে দাঁড়িয়ে ছিল। নীলা বলে,

~ আচ্ছা আচ্ছা আয় এখন। অনেক চাঁদ দেখা হয়েছে।
— হ্যাঁ হ্যাঁ চল। অনেক রাত হয়েছে। (ইমন)

তনুকে নিয়ে ওর বন্ধু-বান্ধবীরা ক্যাম্পের কাছে চলে যায়। তনু বলে উঠে,

~ আচ্ছা তোরা আড্ডা দে৷ আমি শুয়ে পড়ি। শরীরটা একটু খারাপ লাগছে। ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে।
~ আমিও আসবো দোস্ত? (নীলা)
~ না না। তুই ওদের সাথেই থাক।
~ ঠিক আছে যা। কোন সমস্যা হলে ডাক দিস।
~ আচ্ছা৷

তনু ওর টেন্টে ঢুকে শুয়ে পড়ে। এদিকে শান্ত বলে উঠে,

— ও কেমন জানি অদ্ভুত আচরণ করছিল তাই না?
~ হ্যাঁ। বুঝলাম না হঠাৎ ওর কি হলো। (নীলা)
— আরে চিন্তা করিস না। হয়তো প্রথম এসেছে তাই একটু অসুস্থবোধ করছে। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে৷ (রনি)
— হুম ঠিক বলেছিস। আয় এখন একটা গান ধরি। (ইমন)
— আচ্ছা।(সবাই)

তনুর ফ্রেন্ডরা বাইরে আনন্দ করছে। কিন্তু তনু শুয়ে শুয়ে শুধু ভাবছে ওর সাথে এটা কি হলো। যতদূর ও বুঝতে পারছে এটা স্বাভাবিক কিছু ছিল না। তনু এবার হিসাব মিলাতে শুরু করে। প্রথমত, ওকে একটা কালো ছায়া ধাক্কা দিয়েছে৷ হয়তো সেটা কোন ভূত বা জ্বিন। কারণ এই পাহাড়ি এলাকায় এগুলো থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এরপর যা হলো সেটা ত অস্বাভাবিক আর অসম্ভব! ও ৫০০ ফিট নিচে পড়ে গিয়েও কিভাবে এখনো বেঁচে আছে? আর ওই ছেলেটাই বা ওকে কিভাবে বাঁচালো? তার চোখ কেন রক্তের মতো লাল? কে ছিল সে? কেন এত সুন্দর দেখে একটা ছেলে ওই পাহাড়ের নিচে ছিল? আর কিভাবেই বা ও আবার উপরে চলে আসলো? এত রহস্য আর এত প্রশ্ন তনুর মাথায় এমন চাপ দেয় যে ও আর নিতে পারে না। সবটা স্বপ্ন ভেবে ও ঘুমিয়ে পড়ে। রাত আস্তে আস্তে গভীর হয়। তনু ঘুমের মধ্যে ফিল করে কিছু একটা ওর ঘাড়ে কামড় দিয়েছে। তবে সেটা খুব ঠান্ডা কিছু। তনু আবার অচেতন হয়ে ঘুমিয়ে যায়।

পরদিন সকালে,

আজ ওরা সবাই ঢাকায় ফিরে যাবে। কাল থেকে ভার্সিটির ক্লাস শুরু। কোন ভাবেই মিস দেওয়া যাবে না। নীলা দেখে তনু এখনো ঘুমিয়ে আছে। ও তনুর টেন্টে ঢুকে আস্তে আস্তে ওকে ডাক দেয়।

~ এই তনু…তনু…উঠ সকাল হয়েছে। আমাদের রওনা দিতে হবে যে।

নীলার কয়েকটা ডাকে তনুর গভীর ঘুম ভাঙে। ও আস্তে আস্তে ঘুমাতুর অবস্থায় উঠে বসে। হঠাৎই নীলা তনুর ঘাড়ে হাত দিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখে বলে,

~ একি! তোর ঘাড়ে এমন দুটো ফুটো হয়ে আছে কেন? কি হয়েছে?

তনু একদম অবাক হয়ে যায়। সাথে সাথে ওর ঘুমের রেশ কেটে যায়। ও হাত দিয়ে চাপাচাপি করে৷ কিন্তু কোন ব্যথা অনুভব করে না। নীলা দ্রুত ওর ফোনটা বের করে একটা ছবি তুলে তনুকে দেখায়।

~ দেখ।

তনু ভালো করে ক্ষত দুটো দেখে হঠাৎ করে ওর রাতের কথা মনে পড়ে। ও গভীর রাতে ওর ঘাড়ে কিছু একটা ফিল করেছিল। তাহলে কি এটাই সেটা? তনু কিছুক্ষণ ভেবে বলে,

~ আমার মনে হয় পাহাড়ি কোন পোকা কামড় দিয়েছে। তাই এমন দাগ হয়ে আছে।

নীলাও একটু ভালো করে দেখে বলে,

~ মন্দ বলিস নি। হতে পারে। চল ঔষধ দিয়ে দি।
~ আচ্ছা আগে হাত মুখ ধুয়ে রেডি হয়ে আসি, তারপর দিস। এখন তুই যা।
~ ওকে, তাড়াতাড়ি আসিস। আমরা একটু পর রওনা হবো। বাসে উঠে নাস্তা করবো সবাই।
~ ঠিক আছে।

নীলা চলে গেলে তনু আবার ওর ঘাড়ে হাত দিয়ে ভাবে, কি হচ্ছে ওর সাথে এসব! এরপর ও ওর সব কিছু গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেয়৷ ওর বন্ধুরা মিলে যাওয়ার প্রস্তুতিও সম্পূর্ণ করে৷ সকাল দশটায় ওরা রওনা হয় ঢাকার উদ্দেশ্যে। তনুর সাথে এরপর আর কিছু হয় নি। ওর বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে ও কখন যেন সব ভুলে যায়৷ ওদের ঢাকা আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তনু বাস থেকে নামতেই দেখে ওর জন্য গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ও নীলা সহ সবাইকে বিদায় দিয়ে গাড়ির কাছে আসে। ওর পার্সোনাল কেয়ারটেকার মানে আজিম আঙ্কেলকে দেখে তনু জিজ্ঞেস করে,

~ পাপা এসেছে?

তিনি মাথা নিচু করে ইশারায় না বলেন৷ তনু গাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে বলে,

~ আচ্ছা আঙ্কেল তার কি মনে আছে যে তার একটা মেয়েও আছে? নাকি ভুলে গিয়েছে?
— মামনি, স্যার তো আসলে অনেক বিজি। আমি এটুকুই জানি৷
~ চলুন। আর কিছু শুনতে চাই না।

আজিম আঙ্কেল তনুকে নিয়ে ওর বাসায় চলে যান৷ উনার বয়স ষাটের কাছাকাছি। বেশ বিশ্বস্ত একজন লোক। তনুকে ছোট কাল থেকে তিনিই বড়ো করেছেন। ওর মা ওকে জন্ম দিয়েই মারা যান৷ তনুর বাবা অনেক ধনী ছিল। স্ত্রীকে হারিয়ে তনুকে আজিম আঙ্কেলের কাছে দিয়ে তিনি ব্যবসা নিয়ে নিজেকে আরও ব্যস্ত করে ফেলেন। তনু না পেয়েছে মায়ের আদর না বাবার৷ একাকিত্বই জুড়ে আছে ওর জীবনে শুধু। তনু বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। কেন জানি এই বাসাতে ওর আর ভালো লাগে না। দমটা বন্ধ হয়ে আসে। ও একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। কারণ কালকে ওকে ভার্সিটিতে যেতে হবে। এতদিন সামার ব্রেক ছিল ওদের। কালকেই শেষ।

পরদিন সকালে,

তনু সকাল সকাল উঠে রেডি হয়ে ভার্সিটি রওনা হয়। সকাল ১০ টায় ওদের ক্লাস শুরু। ও ভার্সিটি এসে গাড়ি থেকে নেমে সোজা ক্যাম্পাসে ওর ফ্রেন্ডদের কাছেই যাচ্ছিল। একটু অন্যমনস্ক থাকায় ও হঠাৎই কারো সাথে ধাক্কা খায়৷ সেই ঠান্ডা শরীরের অনুভূতি। তনু নিজেকে সামলে তাকিয়ে দেখে সেই রাতের ছেলেটা। আজকেও তার বাহুদ্বয়ে ও৷ তনু ভয় পেয়ে আর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তবে এখন ছেলেটার চোখ একদম নরমাল মানুষদের মতো। মানে কালো। তাহলে সেদিন কেন লাল হয়ে ছিল? ছেলেটা তনুকে আরও বেশি অবাক করে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,

— কেমন আছো তনু?

চলবে…?

প্রেম তুমি পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব

0

#প্রেম_তুমি
#part :17,,, last part
#Mishmi_muntaha_moon

সকলে একসাথে বসে সকালের নাস্তা করছে।খাবার খাওয়ার মাঝেই অর্নব অর্নিল কে জিজ্ঞাস করল

–তুই এখনি চলে যাবি।

অর্নিল খাবার খাওয়া শেষ করে দাঁড়িয়ে বলল

–হুম এখনি বের হবো।আমার পেকিং ও শেষ আর তুলির দূরসম্পর্কের আত্নীয় কখন আসবে?

অর্নিলের কথা শুনে অর্পা বেগম মৃদু কন্ঠে বলল

–রাস্তায় আছে হয়তো।

–ওহ আচ্ছা।

অর্নিল রুমে গিয়ে মোবাইল আর ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে।বের হলো। অর্নিল কে বের হতে দেখে অর্নব ব্রু কুচকে বলল

–এখনি চলে যাচ্ছিস আরেকটু পর যা।

–কেনো কোনো কাজ আছে।

অর্নিল গেট খুলতেই আয়রা দেখে ব্রু কুচকে তাকায়।

–তুমি এখানে?

আয়রা চুপ করে অর্নিল কে পাশ কাটিয়ে ভিতরে গেলো। তারপর সবাইকে সালাম দিয়ে অর্নিলের দিকে তাকিয়ে বলল

–আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই একলা।

আয়রার কথা শুনে অর্পা বেগম মুচকি হেসে বলল

–অবশ্যই এই অর্নিল যা ওর সাথে।

অর্নিল আয়রার হাত ধরে ওর রুমে নিয়ে যায়।তারপর হাত ছেড়ে দিয়ে বলে

–হুম বলো কি বলবে?

আয়রা আড়চোখে অর্নিলের দিকে তাকিয়ে বলল

–আপনি এতো সহজে হার মেনে নিবেন আমি ভাবতেই পারি নি।

আয়রার কথা শুনে অর্নিল অবাক হয়ে বলল

–কে বলেছে। আমি কখনো হার মানি না কোনো কাজে।বুঝে নাও ময়মনসিংহ যাওয়ার পিছেও কোনো প্লেন ছিলো।

আয়রা অর্নিলের কথা বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকে বলল

–মানে?

–কিছু না তুমি এখনো বাচ্চা বুঝবে এতোসব কথা।এখন বলো কি বলতে এসেছো?

আয়রা অর্নিলকে কিছু না বলে জরিয়ে ধরে আবার ছেড়ে দেয়।

অর্নিল আয়রার কাজ দেখে হেসে দিয়ে বলে

–লাইক সিরিয়াসলি। মুখ দিয়ে বলতে পারছো না।

অর্নিল কে হাসতে দেখে আয়রা ঠোঁট উল্টে বলে

–না,,, বুঝতে পারলে বুঝে নিন আর না বুঝলে আমি চললাম।

অর্নিল আয়রার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে বলল

–ও তাহলে আমাদের বিয়ের জন্য এতো আয়োজন?

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা মুখ গোমড়া করে বলল

–কিন্তু আমি আজ বিয়ে করতে পারবো না।

–মানে?

–মানে আমি আজ বিয়ে করবো না।একটু সময় প্রয়োজন আমার।২ বা ৩ দিন পর হোক তাতে কোনো প্রবলেম নেই।

–আচ্ছা তাহলে আমারও কোনো প্রবলেম।

–তাহলে এখন যাবেন না ময়মনসিংহ?

–এখন আর যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।আমার কাজ তো হয়েই গেছে।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে বলল

–আপনার কি ময়মনসিংহ যাওয়ার পিছে কোনো মাস্টার প্লেন ছিলো?

অর্নিল আয়রার গাল টিপে দিয়ে ঠোঁট চেপে হেসে বলল

–তা নয় তো কি?

আয়রা মুচকি হেসে নিচে গেলো। নিচে গিয়ে দেখে সবাই বসে আছে কাজি ও এসে বসে আছে।
আয়রা সবাইকে এভাবে বসে থাকতে দেখে অর্নবের সামনে গিয়ে বলল

–ভাইয়া আমি আজ বিয়েটা করবো না।

আয়রার কথা শুনে অর্নব ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে বলল

–কিন্তু কেনো?তুমি কি অর্নিল কে বিয়ে করবে না?

–না তা না। বিয়ে করবো কিন্তু আজ না ২, ৩ দিন পর বিয়েটা হোক?

আয়রার কথার মাঝেই অর্পা বেগম বলল

–কিন্তু তোমার কোনো সমস্যা আছে নাকি?

অর্পা বেগমের কথা শুনে আয়রা বলল

–না আন্টি তা বলছি না আমি বলতে চাইছি আজ হুট করে এভাবে বিয়ে,,,তাই আরকি ২, ৩ দিন পর হলে ভালো হয়।

আয়রার কথা শুনে অর্পা বেগম মুচকি হেসে বলল

–আচ্ছা তা ঠিক আছে।কিন্তু আজ যেহেতু কাজি সাহেব এসে পরেছে তাহলে কাবিন টা করে ফেলা যাক।

আয়রা কিছু বলতে নিবে তার আগেই ওর মা জুহি বেগম বলে উঠলো

–হ্যা আপনি ঠিক বলছেন।আয়রু তোর কি আপত্তি এতে চুপ করে থাক।

আয়রা ওর মার কথায় মুখ গোমড়া করে চুপ করে রইল। অর্নিল ও ওর মার কথার উপর আর কিছু বললো না।

কাবিন শেষে আয়রা আর ওর মা বাসায় ফিরে আসে।দুইদিন পর অনুষ্ঠান করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বড়রা।

আয়রা ওর মার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।আর ওর মা চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।

–মা আমার না কিছুই ভালো লাগছে না তোমাদের একা রেখে যেতে হবে ভেবেই অস্থির লাগছে।

জুহি বেগম চোখের কোনের জল লুকিয়ে মুছে মুচকি হেসে বলল

–এতো ভাবিস না। আমরা ভালোই থাকবো।আর মেয়েদের তো যেতেই হবে স্বামীর বাড়ি তাই এতো ভাবিস না। আচ্ছা যা এখন ঘুমিয়ে থাক কাল আবার সকালে উঠতে ও তো হবে।অর্নিলের আম্মু বলেছে কাল শপিং এ যাবে।তাই আজ তারাতারি ঘুমিয়ে পর।

আয়রা ওর মার রুম থেকে বেড়িয়ে ওর রুমে যায়।লাইট অফ করে ঘুমাতে নিবে তখনই ফোনে অর্নিলের কল আসাতে আয়রা বারান্দায় গিয়ে কল রিসিভ করে।

–হ্যালো।

–ঘুমাও নি এখনো?

–না মাত্র ঘুমাতে গিয়েছিলাম আর আপনি কল দিলেন।

–ও আচ্ছা তাহলে ঘুমাও কাল দেখা হবে।

অর্নিল ফোন কেটে দিতেই আয়রা মৃদুস্বরে বলে

–কাল কি করে দেখা হবে আমিতো যাবোই না শপিং।

আয়রা বারান্দা থেকে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে।

আয়রা খাটে চুপ করে বসে আছে।আয়শা তো শপিং করতে যাবে বলে খুশিতে রীতিমত লাফাচ্ছে।জুহি বেগম রেডি হয়ে আয়রার উদ্দেশ্যে বলল

–তুই কেনো যেতে চাচ্ছিস না?অর্নব কতো করে বলল তোকে যেতে।

–না মা তোমরাই যাও আমার ভালো লাগছে না যেতে।

জুহি বেগম আয়শা কে নিয়ে নিচে গেলো অর্নিলের মা আর অর্নব তুলি ওরা আয়রাদের বাড়ির নিচেই অপেক্ষা করছিলো। জুহি বেগম আর আয়শা যেতেই ওরা শপিং করতে গেলো।

আয়রা গেট আটকিয়ে ওর রুমে যায় তারপর টিভি ওন করে দেখতে লাগে। কিছুক্ষন বসে দেখতেই দরজার বেল বেজে উঠে।আয়রা কোলে থাকা বালিশটা রেখে উঠে দরজা খুলে দেয় অর্নিল কে দেখে ব্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।অর্নিল ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আয়রাকে এড়িয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে সোফায় গিয়ে বসে।অর্নিল কে এভাবে ঘরে ঢুকতে দেখে আয়রা দরজা অফ করে অর্নিলের সাথে গিয়ে বসে

–আপনি এখানে কেনো এসেছেন?

–ওয়াও রোমেন্টিক ফিল্ম।

অর্নিল কে এতো মন দিয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়রা রিমোট দিয়ে গানের চ্যানেল দেয়।ধার্শান রাভাল এর গান দেখে চিল্লিয়ে ওঠে।

–ওয়াও ধার্শান। হায়,,,,

অর্নিল আয়রার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে

–আয়ু ওই ফিল্মটা দাও ফাস্ট।

অর্নিল বলার পর আয়রার দিকে তাকিয়ে দেখে একধ্যানে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে যেনো আশেপাশে কেউ নেই।

–ওয়াও কত্তো কিউট লাগছে উফফ একদম অলস্কয়ার।মাই লাভ।

আয়রার কথা শুনে অর্নিল কিছুক্ষন ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে থেকে বলল

–আয়ু যাও আমার জন্য কিছু বানিয়ে নিয়ে আসো।

–উফ এখন না গান টা শেষ হোক।

–তুমি ঘরে আসা মেহমানদের সাথে এরূপ ব্যবহার করো?

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা রিমোট রেখে মুখ গোমড়া করে রান্নাঘরে যায় কিছু আছে কিনা দেখতে।
পাস্তা থাকায় আয়রা পাস্তা রান্না করার জন্য নিয়ে পিছে ফিরতেই অর্নিলের সাথে ধাক্কা খায়।

–আপনি এখানে কেনো এখন আপনার ফিল্ম দেখুন গিয়ে হুহ।

–স্ত্রী যেখানে স্বামী সেখানে।

–আবার,,,আগে গার্লফ্রেন্ড বলে আর এখন আবার স্ত্রী বলে আগে পিছে ঘুরা শুরু হইসে।

–হোয়াট! আমি কারো আগে পিছে ঘুরি না ওকে।যাই হোক একটা এনাউন্সমেন্ট করতে এসেছিলাম।

অর্নিলের কথায় আয়রা ভ্রু কুচকে বলল

–কিসের এনাউন্সমেন্ট?

–আজ থেকে ধার্শানের গান দেখা সম্পূর্ন বন্ধ।আর তোমার মুখ থেকেও।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা চোখ বড় বড় করে বলল

–মানে কি। আজব তো এটা কেমন কথা।আর আপনি ধার্শানের সাথে জালাস হচ্ছেন মানে,,,সত্যি?

–জাস্ট স্টপ আয়ু।ধার্শান যদি তোমার হার্ট জুরে থাকে তাহলে আমি কোথায় আছি?

–উফফ আপনিও না ধার্শান তো হেরো হিসেবে বাট রিয়েল লাইফ এ তো আপনি আমার ধার্শান।

আয়রার কথায় অর্নিল মুচকি হেসে আয়রার গালে কিস করে রান্নাঘর থেকে চলে যায়।
আয়রা গালে কিছুক্ষন হাত দিয়ে রেখে কাজে মনোযোগ দিলো।

২ দিন পর। আয়রা পার্লারে এসেছে সাজতে। সেজে সোজা অর্নিল দের নাড়ি যাবে সেখানেই অনুষ্ঠান হবে। একটু আগেই তুলি চলে গেলো। আয়রা একসাথে যাবে বলেছিলো কিন্তু ও বললো আয়রাকে পিক করতে গাড়ি আসবে সেটাইতেই যেতে বলেছে।আয়রা আর কিছু বলে নি।
আয়রার সাজ হতেই আয়রা বেরিয়ে দেখে গাড়ি। আস্তে করে গিয়ে গাড়িতে এসে বসে।কেমন যেনো ফিলিং হচ্ছে অন্যরকম।আয়রা কয়টা বাজে দেখে বাহিরে তাকাতেই চমকে উঠে।

–কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।এইটা তো অর্নিল দের বাড়ির রাস্তা না

–অর্নিল ভাই আপনাকে উনার প্রেকটিস করার বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেছে।

ড্রাইভারের কথা শুনে আয়রা ভ্রু কুচকে বিরবির করে বলতে লাগল

–আজব তো উনি ওখানে নিয়ে যেতে বলল কেনো?

–মেম এসে পড়েছি।

আয়রা ধীর পায়ে হেটে বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই অবাক হয়ে যায়।সুন্দর করে ডেকোরেট করা। উপর থেকে গোলাপের পাপরি পরায় আয়রা উপরে তাকায়।অর্নিল ছোট একটা বারান্দার মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে ওর উপর পাপরি ফেলছে। আয়রা আগে এই বারান্দা টা খেয়াল করে নি।অর্নিল উপর থেকে নেমে আয়রার সামনে দারায়।

–এইসব কি?সবাই হয়তো অপেক্ষা করছে।

অর্নিল কিছু না বলে আয়রার সামনে হাটু গেড়ে বসে বাম হাত নিয়ে রিং পরিয়ে দিয়ে আবার দাঁড়িয়ে পরে।

–আই লাভ ইউ ভেরি ভেরি ভেরি মাচ আয়ু।

অর্নিল মুচকি হেসে আয়রার দিকে তাকিয়ে আবার বলল

–তোমার উইশ ছিলো না এভাবে কেউ তোমাকে প্রপোজ করুক নাও তোমার উইশ পূরন করে দিলো তোমার ডেয়ার হাসবেন্ড।

আয়রা কিছুক্ষন স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে দেখে মুচকি হেসে বাহিরের দিকে হাটা দেয়।
আয়রার কোনো রিএক্ট না দেখে অর্নিল অবাক হয়ে আয়রার পিছে পিছে গিয়ে গাড়িতে বসে।অর্নিল গাড়িতে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করে।

–আয়ু তোমার ভালো লাগে নি এই সারপ্রাইস?

আয়রা জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে বলল

–হুম।

–তাহলে কিছুই তো বললে না দেখে?

আয়রা অর্নিলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল

–কিছু বলার খুজেই পাই নি।এতো ভালো লেগেছে যে প্রকাশ করার ভাষাই খুজে পাই নি।

–যাক ভালো এতো কষ্ট তাহলে কাজে লেগেছে।

বাড়িতে এসেই অর্নিল আয়রার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যায়।আয়রা সাদা রঙের লেহেঙা পরেছে আর অর্নিল ও মেচিং কোট সুট পরেছে। ওদের দেখে অর্নব এসে বলে

–এতোক্ষন কোথায় ছিলি?

অর্নিল আয়রার হাত ধরে স্টেজে নিয়ে বসিয়ে দিয়ে বলে

–তোর জেনে লাভ নেই। এইটা হাসবেন্ড ওয়াইফ এর মধ্যকার কথা।

আয়রা অর্নিলের রুমে বসে আছে আর অর্নিলের রুম খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। সুন্দর রুমটা আর সুন্দর করে ডেকোরেট করা। একটু আগেই ওর মা আর আয়শা চলে গেছে সবাই অনেক করে থাকতে বলেছে কিন্তু উনারা সাফ সাফ মানা করে দিয়েছে ওরা যাওয়ার পর থেকেই কান্না শুরু হয়েছে এখন একটু থেমেছে। আয়রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বারান্দার দিকে তাকালো। ছোট ছাদের মত বারান্দা দেখেই মন কিছুটা ভালো হয়।

একটু পর অর্নিল রুমে প্রবেশ করায় আয়রা চোখ তুলে তাকায়।অর্নিল এসেই আয়রার পা টেনে নিয়ে একজোরা নূপুর পরিয়ে দিয়ে কোলে তুলে নিলো। অর্নিল এভাবে আয়রাকে কোলে তুলে নেওয়াতে আয়রা ভয় পেয়ে অর্নিলের গলা জরিয়ে ধরে বলে

–আজব কি করছেন।

–আমার উইশ পূরন করবে না?বাসর রাতে সারা রাত জেগে কথা বলবো আজ।

অর্নিল থেমে আয়রার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে আবার বলল

–এতোদিন যেহেতূ অপেক্ষা করলাম তাহলে একরাত আরও অপেক্ষা করি কি বল?আর তোমাকে কিন্তু আজকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে আর সাথে আবেদনময়ী।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা মুচকি হেসে অর্নিলের বুকে মাথা এলিয়ে দেয় এই বুকই তো এখন থেকে ওর সবথেকে শান্তির জায়গা।

সমাপ্ত,,,,,

প্রেম তুমি পর্ব-১৬

0

#প্রেম_তুমি
#part :16
#Mishmi_muntaha_moon

আয়রার কথা শুনে জুহি বেগম বললেন

–তুই উনাকে চিনিস?

আয়রা আস্তে করে হেটে ওর মার পাশে দাঁড়িয়ে বলল

–উনি হলো অর্নিল ভাইয়ার ভাই অর্নব।

আয়রার কথা শুনে অর্নব মুচকি হেসে বলল

–তোমার আমাকে মনে আছে নাকি?

আয়রা ওর মার দিকে একপলক তাকিয়ে বলল

–জ্বী মনে আছে।কিন্তু আপনি এখানে কেনো এসেছেন?

–দেখো তুমি যা ভাবছো আমি তা-ই বলতে এসেছে।

অর্নবের কথা শুনে আয়রা আবারও ওর মা কে দেখে ভীতু কন্ঠে বলল

–দেখুন আমি ইচ্ছে করে উনাকে ব্যাথা দেই নি।অতুটুকু বিষয়ে কথা বলতে আপনি আমাদের বাড়িতে এসে পরলেন?

আয়রার কথা শুনে অর্নব ভ্রু কুচকে অবাক হয়ে বলল

–তুমি কিসের কথা বলছো?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!

অর্নবের কথা শুনে জুহি বেগম ও অবাক হয়ে বলল

–আয়ু তুই কাকে ব্যাথা দিয়েছিস কিসের কথা বলছিস?

আয়রা ভ্রু চুলকে মৃদু স্বরে বলল

–না আসলে,,, তা যাই হোক আপনি কেনো এসেছেন কোনো কথা ছিলো?

–হুম খুব ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছিলো তোমার আর অর্নিলের বিষয়ে।

অর্নিল কে আসতে দেখে অর্পা বেগম চিন্তিত হয়ে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

–তুই সেই সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছিস সারাদিনে একবারও না ফিরে এই রাতে বাড়ি ফিরলি? কোথায় ছিলি এতোক্ষণ?

অর্নিল ওর পকেটে হাত ঢুকিয়ে রুমের দিকে যেতে যেতে বলল

–মা আমি রাতে কিছু খাবো না।আমাকে একদম ডিসটার্ব করবে না প্লিজ।

অর্নিল ওর রুমে গিয়ে দরজা অফ করে দেয়।
অর্পা বেগম অর্নিলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।ইদানীং আস্তে আস্তে বদলে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।কিছু একটা করতে হবে। অর্পা বেগম কিছু ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে চলে গেলো।

অর্পা বেগমকে এমন চিন্তিত দেখে অর্নিলের বাবা উঠে বসে বলল

–কি হয়েছে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছো কেনো?

–চিন্তিত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে তো চিন্তিত হতেই হয়।

–চিন্তিত হওয়ার মতো আবার কি হয়েছে?

–অর্নিল কে দেখছো না ছেলে টা কেমন হয়ে যাচ্ছে?

–কোথায় আমি তো কিছুই দেখছি না।

–দেখবে কিভাবে সারাদিন ঘরের ভিতরেই বসে থাকো ছেলেদের খবর রাখা ও তো দরকার নাকি?

–আম্মু,,,

অর্নিলের ডাক শুনে অর্পা বেগম তারাতারি হাসি মুখে এগিয়ে গিয়ে বলল

–হুম বল।

–শোনো আমি তোমাকে কিছু ইনফর্ম করতে এসেছি

–কি ইনফর্ম করতে এসেছিস?

–আমি কয়েকদিনের জন্য ময়মনসিংহ যাবো আন্টিদের বাড়িতে।তোমাদের কোনো প্রবলেম আছে?

–না অর্নি আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তুই যা কয়েকদিন ওখানে থেকে আশেপাশে ঘুরে আস।

–আচ্ছা আমি আর পরশু যাবো।তুমি আন্টিকে ইনফর্ম করে দিও।

অর্নিল কথা শেষ করে রুমে চলে যায়।অর্নিল রুমে যেতেই অর্নিলের বাবা অর্পা বেগমের দিকে ব্র কুচকে তাকিয়ে বলল

–তুমি অর্নিল কে এতো সহজেই যেতে দিলে ব্যাপার কি?

অর্পা বেগম খাটে বসে বাইরে তাকিয়ে বলল

–ভালোই হলো কয়েকদিন ওখানে থেকে আসলে আগের মত হয়ে যাবে।

তুলি সকল কে খাবার সার্ভ করছে অর্পা বেগমের কথায় চোখ তুলে তাকায়।

–অর্নব কোথায় গেছে এখনো আসছে না কেনো?

–জানি না তো আমি কল ও করেছিলাম কিন্তু রিসিভ করে নি।

দরজায় কেউ নক করাতেই অর্পা বেগম বলল

–দেখো গিয়ে অর্নব এসেছে হয়তো।

তুলি তারাতারি গিয়ে গেট খুলতেই অর্নব কে দেখে মুচকি হাসলো। অর্নব ভিতরে ঢুকে হাত মুখ ধুয়ে খাবার খেতে বসে।

–কিরে এতোক্ষণ কোথায় ছিলি।

অর্পা বেগমের কথা শুনে অর্নব খেতে খেতে বলল

–একটা কাজ ছিলো তাই।

অর্নব খাবার খেয়ে উঠে রুমে চলে যায়।তুলি ও অর্নবের পিছে পিছে রুমে আসে।

–কি কাজের কথা বলছিলেন?

তুলির কন্ঠ শুনে অর্নব ফোন রেখে তুলির দিকে তাকায়।

–কেনো?

–এভাবেই বলুন না।

–আয়রাদের বাড়ি গিয়েছিলাম।

–অর্নব,,

অর্পা বেগম কে দেখে তুলি তারাতারি করে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। অর্পা বেগম তুলি কে এভাবে বেড়িয়ে যেতে দেখে ব্রু কুচকে বলল

–এই মেয়ে এভাবে চলে গেলো কেনো?

–বাদ দাও তুমি বলো কি বলবে।

–অর্নিল বলছিলো ও ময়মনসিংহ যেতে চাইছে আমিও হ্যা করে দিয়েছি ভালোই হবে তাই না।

অর্নব ওর মার কথা শুনে খাট থেকে লাফ দিয়ে উঠে বড় বড় চোখ করে বলল

–শিট তুমি হ্যা কেনো করলে।

অর্নব এভাবে বলায় অর্পা বেগম ব্রু উচিয়ে বলল

–কেনো কোনো ভুল কাজ করলাম নাকি?

–আমি আজ আয়রার সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম।

আয়রা ওর মার সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে। জুহি বেগম স্বাভাবিক ভাবেই আয়রার দিকে তাকিয়ে বলল

–দেখ তুই ঠিক করিস নি এইসব।

–তুমি এইটা বলছো তোমার জন্যই তো করলাম।

–দেখ তুই যদি অর্নিল কে ভালোবেসে থাকিস এতে আমার কোনোই আপত্তি নেই।তুই খুশি তো আমরাও খুশি।আর তুই এতোদিন এতোকিছু হলো আমাকে কিছুই বললি না কেনো?

আয়রা চোখ তুলে ওর মার দিকে তাকিয়ে মনখারাপ করে বলল

–আমি বলতে চাইছিলাম কিন্তু,,,কিন্তু এখন এইসব বলার কোনো মানে নেই।বাবা নেই এই ফেমিলির বড় মেয়ে হিসেবে আমার কর্তব্য বাবার জায়গায় সব দায়িত্ব নেওয়া।

আয়রার কথা শুনে জুহি বেগম অবাক হয়ে বলল

–কে বলেছে?আহা তুই যে কি কথাবার্তা মাথায় নিয়ে ঘুরছিস আজ বুঝতে পারছি। শুন আমার কথা মন দিয়ে তোর বাবা সবসময় বলতেন উনি যদি কখনো চলে ও যায় আমাদের কোনো কিছুর অভাব হতে দিবে না।আর সত্যি ও তাই উনি যথেষ্ট সেভিংস রেখে গেছে আমার আর আয়শুর জন্য যথেষ্ট।

আয়রা ওর মার রুম থেকে উঠে ওর রুমে চলে যায়। অর্নব আসার পর থেকেই বিভিন্ন কথা ভেবে ভেবে মাথাটা ব্যথা হয়ে গেছে।

–কিরে আয়রা কে মানাতে পারিস নি বলে চলে যাচ্ছিস এখান থেকে?

অর্নবের কথা শুনে অর্নিল মোবাইল ছেড়ে হেসে উঠে বসে তারপর বলে

–হোয়াট ডু ইউ মিন বাই এখান থেকে চলে যাচ্ছিস?

অর্নব দরজা থেকে সরে এসে ইজিচেয়ার বসে।তারপর বলে

–আম্মু বললো তুই ময়মনসিংহ যেতে চাচ্ছিস।

অর্নিল শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বলে

–সো হোয়াট আমি একেবারে ওখানে শিফট হচ্ছি নাকি?কয়েকদিনের জন্য যাচ্ছি।

অর্নব কিছু বলতে নিবে তার আগেই ফোনের রিং বেজে উঠে। স্ক্রিনে আয়রার মা লেখাটা ভেসে উঠতেই অর্নব তারাহুরো করে বলল

–আচ্ছা আমি একটু পর আসছি অপেক্ষা কর।

আয়রা ভার্সিটি তে ঢুকে দেখে অর্নিলের সব ফ্রেন্ড একসাথে বসে আছে ফারহা ও আছে কিন্তু মুখ গোমড়া করে বসে আছে।অর্নিল কে কোথাও না দেখে ঠোঁট কামড়ে ক্লাসে চলে যায়।

অর্নিল রুম থেকে বের হয়ে দেখে পুরো বাড়ি সাজানো হচ্ছে।অর্নব নিচে দাড়িয়েই সকল কে বলে দিচ্ছে কোন জায়গায় কি দরকার।অর্নিল ওখানে গিয়ে অর্নবের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে

–পুরো বাড়ি সাজাচ্ছিস কেনো?

অর্নিলের কথা শুনে অর্নব হচকচিয়ে গিয়ে তারাহুরো করে বলে

–তুই কাল চলে যাবি না তাই ফেরওয়েল পার্টি।

অর্নবের কথা শুনে অর্নিল অবাক হয়ে বলল

–আমি কি একবারে চলে যাচ্ছি?

অর্পা বেগম অর্নবের মাথায় চাটি দিয়ে মুচকি হেসে বলল

–আরেহ না ও তো মজা করছিলো। আসলে,, তুলির কিছু দূরসম্পর্কের আত্নীয় আসবে তাই।

অর্নিল কিছু না বলে কফি নিয়ে আবার রুমে চলে যায়।

চলবে,,

প্রেম তুমি পর্ব-১৫

0

#প্রেম_তুমি
#part :15
#Mishmi_muntaha_moon

অর্নিল আয়রাকে এভাবে পরে যেতে দেখে ছুটে গিয়ে আয়রার হাত ধরে উঠায়।তারপর রেগে বলে

–মানে কি এমন ছুটছো কেনো।পরে এবার শান্তি লাগছে?

আয়রার হাতের কনুইয়ের দিক দিয়ে ছুলে গেছে দেখে অর্নিল তারাতারি পকেট থেকে রুমাল বের করে বেধে দেয়।

আয়রা অর্নিলের থেকে কিছুটা দূরে সরে তারাতারি হেটে ক্যাফে তে চলে যায়।

অর্নিল ওর গাড়ির সামনে গিয়ে রেগে পা দিয়ে গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে বলে

“উফ এই মেয়েটা কবে বুঝবে?আমাকে দেখেই ছুটে পালাচ্ছে ইডিয়ট”

আয়রা ক্যাফে তে ঢুকতেই রিমুর মামা সামনে এসে রেগে বলে

–তোমার কাল থেকে আর কাজে আসতে হবে না।

রিমুর মামার কথা শুনে আয়রা অনুরোধ করে বলে

–কিন্তু কেনো আংকেল আমার কি কোনো ভুল হয়েছে হয়ে থাকলে ভেরি সরি।

–তুমি না বলে মাঝে কতদিন মিস দিলে তারপর ফোন করে আবার জয়েন হতে চাচ্ছিলে আমি জয়েন করলাম কিন্তু এখনও তুমি মিস দিচ্ছো আর লেট করে আসছো এগুলো চলবে না।

–সরি আংকেল আর হবে না প্লিজ।

–ঠিক আছে কিন্তু কাল যদি এমন হয় তাহলে আর কোনো কথা শুনবো না।

আয়রা ওর রুমের বারান্দায় বসে আছে হাতে চায়ের কাপ। এক ধ্যানে সাইডের কদম গাছটাতে তাকিয়ে আছে। অন্ধকারে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না কিছুই তবুও ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।আচমকা মাথায় কেউ হাত রাখাতে চমকে উঠে।

–মা,,?

জুহি বেগম আয়রার পাশে দারিয়ে বলে

–কি হয়েছে এতো ভাবোস কি নিয়ে?

–নাহ কিছু না।তুমি এখনও ঘুমাও নি?

–না।আয়শা কে ঘুম পারিয়ে দিয়ে আসলাম।তুই ঘুমাস নি কেনো এখনো কাল ভার্সিটি তে যাবি না?

–হ্যা যাবো তো।আচ্ছা যাও তুমি আমার ঘুম পাচ্ছে।

জুহি বেগম না যেতেই আয়রা বসা থেকে উঠে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে। জুহি বেগম আয়রার রুমের লাইট অফ করে চলে যায়।

–কি বললি তুই আয়রাকে প্রপোজ করে দিয়েছিস?

অর্নবের কথা শুনে অর্নিল মুখ চেপে ধরে আস্তে করে বলে

–হুম।

–এতো তাড়া কিসের ছিলো তোর?

–তাহলে আমি আবার ওর চলে যাওয়ার অপেক্ষা করতাম।

–কিন্তু তুই তো বললি ওরা এখানেই শিফট হয়েছে তাহলে আবার চলে যাবে কেনো?

অর্নিল পাশে থাকা পানি ভর্তি গ্লাস থেকে পানি খেয়ে বলল

–আমি জানি না তখন ওকে দেখে এতো খেয়াল ছিলো না কিছুর বলতে ইচ্ছে হলো তাই বলে দিয়েছি।

–হুম বলে যেহেতু দিয়েছিস এখন মানানোর চেষ্টা কর।

–আচ্ছা তুই যা তুলি বেচারি তোর অপেক্ষা করছে।

অর্নব অর্নিলের রুম থেকে চলে যায়। অর্নব চলে যেতেই অর্নিল বিছানা থেকে মোবাইল নিয়ে কাউকে ফোন দেয়।

আয়রা প্রায় ঘুমিয়ে গিয়েছিলো মোবাইলে আওয়াজে উঠে বসে মোবাইলের দিকে তাকায়।কিন্তু নাম্বারটা সেভ করা না থাকায় ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে

–এতো রাতে কে ফোন দিলো।

আয়রা কিছুক্ষন ভেবে রিসিভ করে কানে ধরে মৃদু কন্ঠে বলে

–হ্যালো কে?

–ঘুমাও নি এখনো?

–সরি আপনি হয়তো র‍্ং নাম্বারে কল দিয়েছেন। আপনি আমাকে যে ভাবছেন আমি সে নই।

–শাট আপ।ইডিয়ট আমি অর্নিল।

অর্নিল নাম শুনেই আয়রা তারাতারি কল কেটে দেয়।অর্নিল নাম টা শুনেই বুক ধকধক করছে।

আয়রা অর্নিলের কল কাটতেই অর্নিলের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।অর্নিল মোবাইল ছুড়ে সাইডে ফেলে রেখে কপালে হাত দিয়ে ঘুমায়।

“কালকে সব ক্লিয়ার করতেই হবে।আমার সাথে কোনো কথায় বলছেনা আজব।”

আয়রা হাতে চুরি পরছে আর আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে আছে।

–কি হলো দাঁড়িয়ে আছিয়া কেনো যাবি না।

জুহি বেগমের কথায় হুশ আসে।আয়রা অরনা ঠিক করে পরে তারাতারি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যায়।আয়রা হাটছে আর মনে মনে ভাবছে।

“উফ আমি কেনো এভাবে উনাকে দেখেই পালাচ্ছি।আমিই বা কি করি উনাকে দেখলেই মনে হয় হার্টে কেউ হাতুরি পিটা করছে।উফফ”

আয়রা আশেপাশে তাকাতে তাকাতে ভার্সিটির ভিতর পর্যন্ত যেতেই দেখে অর্নিল আর ওর সব ফ্রেন্ড রা গান গাচ্ছে প্রথম দিনের মত আর সবাই গোল হয়ে ওদের গান শুনায় ব্যাস্ত।আয়রা গানটা শুনে থেমে গিয়ে অর্নিলের দিকে তাকালো।

অর্নিল আয়রাকে আসতে দেখে ওর দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে গাইতে লাগে।

“ও,,ওও,, তেরে হোকে রাহেঙ্গে
ও,,ওও,, দিল জিদ পে আরা হে
ও,,ওও,, তেরে হোকে রাহেঙ্গে
ও,,ওও,, তেরা শখ চাড়া হে,,

আয়রা আর না শুনে তারাতারি ক্লাসে চলে যায়।
সুন্দর ভাবে ক্লাস শেষ হতেই আয়রা ভার্সিটি থেকে যেতে লাগে।সামনে একটা ছেলে কে দেখতে পেয়ে আয়রা মৃদু কন্ঠে ডাক দেয়।

–এইযে ভাইয়া,,,,

ছেলে টা আয়রার দিকে তাকাতেই আয়রা ওর কাছে যেতে পা বারায় কিন্তু কেউ শক্ত করে হাত চেপে ধরায় আয়রার ঘার ঘুরিয়ে পিছে তাকায়।অর্নিল কে দেখে কিছু বলতে নিবে তখনই অর্নিল আয়রার হাত ধরে টেনে ভার্সিটির কিছু দূরে একটা লেকের পাশে নিয়ে যায়।

–আমার সাথে কথা বলতে প্রবলেম আর ওই ছেলেটার সাথে কথা বলতে যাচ্ছিলে।

আয়রা অর্নিলের কথার জবাব না দিয়ে হাত ছাড়াবার চেষ্টা করতে লাগলো। আয়রা কে এভাবে হাত ছারানোর চেষ্টা করতে দেখে অর্নিল আয়রার হাত আরও শক্ত করে চেপে ধরতেই আয়রা আরও বেশি শক্তি দিয়ে ছাড়াতে চেষ্টা করে।আয়রা হাত জোরে নিজের দিকে টেনে নিতেই আয়রার চুরি ভেঙে খুব বাজে ভাবে অর্নিলের হাত কেটে যায়। অর্নিল ব্যথা পেয়ে মৃদুস্বরে ‘আহ’ শব্দ করে আয়রার হাত ছেড়ে দেয়।
হঠাৎ এভাবে অর্নিলের হাত কেটে যাওয়ায় আয়রা স্থব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে পরে। আয়রা কিছুতেই বুঝতে পারে নি এভাবে হাত কেটে যাবে।
আয়রা তারাতারি করে ব্যাগ থেকে অর্নিলের দেওয়া রুমাল দিয়ে অর্নিলের হাত বেধে দিতেই অর্নিল আয়রার হাত থেকে রুমাল টা ছিনিয়ে নিয়ে নেয়।তারপর হাতে পেচিয়ে নিয়ে আয়রার কাছে গিয়ে রেগে বলে

–কি হয়েছে এমন করছো কেনো।আমার জন্য কি কোনো ফিলিংস নেই তোমার?আমার কষ্টর কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে।

আয়রা অর্নিলের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।অনেক বেশি কেটে গেছে।সাদা রুমালের অনেকাংশই রক্তে ভরে গেছে।
আয়রাকে কিছু বলতে না দেখে অর্নিল রেগে কাটা হাত টা আরও জোরে চেপে ধরে।
অর্নিল কে এভাবে কাটা হাত টা চেপে ধরতে দেখে আয়রা চোখ মুখ খিচে বলে

–আস্তে রক্ত বের হচ্ছে তো।

অর্নিল কিছু না বলে আয়রাকে রেখেই সেখান থেকে চলে যায়।
অর্নিল যাওয়ার পর আয়রা রেগে সব চুরি খুলে ছুরে ফেলে দিয়ে কিছুক্ষন চুরি গুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর ক্যাফে তে যেতে লাগে যেতে একদম ইচ্ছে করছে না কিন্তু না গিয়েও তো উপায় নেই তাই যেতেই হবে।

অর্নিল বাড়িতে আসতেই দেখে তুলির বাবা মা আরও কিছু মানুষ এসেছে।সবাই এক সাথে বসে কথা বলছে আর তুলি সকল কে খাবার পরিবেশন করছে।অর্নিল একপলক দেখে রুমে চলে যায়।
রুমে গিয়ে কাটা জায়গাটা পরিষ্কার করে বেন্ডেজ করে নেয়।তারপর শাওয়ার নিয়ে বারান্দায় যায়।
আকাশটা কালো মেঘে ছেয়ে আছে।খুব জোরে বৃষ্টি হবে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
অর্নিল বারান্দা থেকে রুমে যেতেই দেখে অর্নব রুমে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে খুজছে।

–কাকে খুজছিস?

–আরে তোকেই তো খুজছিলাম। এখানে একা কি করছিস নিচে আস তুলির বাবা মা এসেছে।

–আমার মুড ভালো না আমি যাবো না তুই যা।

অর্নিল খাটে বসে চুল ঠিক করতেই অর্নব অর্নিলের হাত ধরে বলে

–এই তোর হাতে কি হয়েছে?

–না কিছু না।

–মিথ্যা বলছিস কেনো? আচ্ছা শুন আয়রাকে মানিয়েছিস?

অর্নবের কথা শুনে অর্নিল রেগে বলে

–না ও তো বুঝতেই চাচ্ছে না কিছু।কি করবো আমি এইটাও তো বুঝতে পারছি না।

অর্নব অর্নিলের অবস্থা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে অর্নিলের রুম থেকে চলে যায়। খুব রেগে আছে রাগ টা কমা জরুরি।

আয়রা সারারাত ঘুমাতে পারে নি খুব খারাপ লাগছিল। সকালে উঠেই শরীরে হাল্কা জ্বর অনুভব হয়।কাল ক্যাফে থেকে ফিরার পথে বৃষ্টি শুরু হয় আর বাড়িতে ফিরতে ফিরতে বৃষ্টি তে ভিজে নাজেহাল। তাই আজ এই অবস্থা।
আয়রা তবুও ভার্সিটি তে যেতে চাচ্ছিল কিন্তু জুহি বেগম সাফ মানা করেছে যেতে তাই আর কি করার। আয়রা কাথা মুরে শুয়ে আছে অনেক শীত লাগছে।
বিকাল হতে যাচ্ছে কিন্তু উঠতেই ইচ্ছা করছে না কিছু খেতেও ইচ্ছা করছে না।আয়রা খুব আলসেমি নিয়ে কাথাটা খুলে একটু উঠে খাটের পাশের জানালা টা বন্ধ করে আবারও কাথার ভিতরে ঢুকে যায়। জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস আসছিলো তাই কষ্ট করে উঠে বন্ধ করল। চোখ বন্ধ করে ঘুমাতে নিবে তখনই বাহিরে কোনো ছেলের আওয়াজ পেয়ে উঠে আস্তে করে বাহিরে যায়।

আয়রা ওর মার রুমে উকি দিতেই দেখে একটা ছেলে
উনার রুমে বসে আছে।আরেকটু ঢুকে সামনে থেকে দেখতেই ভ্রু কুচকে তাকায়।

–আপনি?

চলবে,,,,
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।

প্রেম তুমি পর্ব-১৪

0

#প্রেম_তুমি
#part :14
#Mishmi_muntaha_moon

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা কিছুটা চমকে গিয়ে পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে আশেপাশে তাকিয়ে বলল

–আপনি এই সব কি মজা করছেন? ফারহা আপু লুকিয়ে দেখছে নাকি আমাদের?

আয়রার এমন কথা শুনে অর্নিল ভ্রু কুচকে বলল

–নো আই এম সিরিয়াস।

এবার যেনো আয়রা থমকে গেলো। অর্নিলের মুখের অঙ্গভঙি দেখে সত্যি সিরিয়াস মনে হচ্ছে।আয়রা কি বলবে কিছু খুজে না পেয়ে যেতে নিতেই অর্নিল পিছন থেকে হাত চেপে ধরে আগের জায়গায় দার করায়।

–আন্সার দিবে না?

আয়রা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে অর্নিলের সাথে চোখে চোখ মিলাতে পারছেনা। কথা সব গুলিয়ে যাচ্ছে।এইবার মনে হচ্ছে অজ্ঞান হয়ে যাবে।আয়রা নিচে তাকিয়ে কোনোরকম ভাবে বলল

–সরি।

বলে হাত ছাড়িয়ে তারাতারি বেরিয়ে গেলো।

অর্নিল চোখ বন্ধ করে আগের জায়গায় কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর কপাল চেপে সামনে বিছিয়ে রাখা চেয়ারে বসে পরল।
এতো তারাহুরো করে বলে তো দিলো কিন্তু এখন কি করবে?
ফোন বেজে ওঠায় অর্নিল ফোন তুলতেই অর্নবের কন্ঠ শুনতে পেল।

–অর্নিল কোথায় তুই?

অর্নিল দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল

–বাহিরে আছি।

–বাহিরে অনেক জোরে বৃষ্টি পরছে তারাতারি বাড়িতে আস।তোর কাল ও দেখলাম জ্বর তারাতারি আস আম্মু টেনশন করছে।

অর্নবের কথায় অর্নিল শান্ত কন্ঠে বলল

–আমি ঠিক আছি।

বলে ফোন কেটে দিয়ে বাহিরে তাকালো সত্যি খুব জোরে বৃষ্টি পরছে। অর্নিল বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল

–আয়রা কি বাড়িতে যেতে পেরেছে ঠিক মতো?

অর্নিল বসা থেকে উঠে বের হয়ে আশেপাশে তাকায় এখানে অন্য যানবাহন পাওয়া সম্ভব না বাইকেই যেতে হবে।বাইক দিয়ে গেলে মুহূর্তে পুরো ভিজে যাবে।অর্নিল কিছুক্ষন এদিক সেদিক ভেবে বাইকে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে যেতে লাগল।

আয়রাকে এমন ভেজা অবস্থায় বাসায় আসতে দেখে জুহি বেগম তারাতারি এসে ওরনা দিয়ে আয়রার চুল মুছে দিতে দিতে বললেন

–আরে এভাবে ভিজলি কেনো।ক্যাফে তেই অপেক্ষা করতি বৃষ্টি থামা পর্যন্ত।

জুহি বেগমের কথায় ক্যাফের কথা মাথায় এলো।অর্নিলের জন্য ক্যাফেতে ও যেতে পারে নি। আয়রা ওর মার হাত টা মাথা থেকে সরিয়ে রুমে চলে যায়।তারপর ড্রেস চেঞ্জ করে ফেন অন করে কাথা মুড়িয়ে কিছুক্ষন জানালা দিয়ে বাহিরের বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আনমনে ভাবতে লাগলো

“বৃষ্টি কোথা থেকে এসে পরলো?উনার তো অনেক জ্বর ছিলো। বাড়িতে কিভাবে যাচ্ছে।বাইক এ গেলে তো পুরো ভিজে যাবে তখন আরও জ্বর বেড়ে যাবে।উফফ”

আয়রা ব্রু কুচকে কাথা দিয়ে পুরো মুখ ঢেকে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

অর্পা বেগম এদিক ওদিক হাটছে আর বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে।অর্নিল কে ভিজে টইটম্বুর হয়ে গেট দিয়ে ঢুকতে দেখে ছুটে যায়।তারপর চিন্তিত স্বরে বলে

–আরে তুই এমন ভিজলি কেনো?অর্নব বলল তোর জ্বর?

অর্নিল চুল হাত দিয়ে ঝেরে অর্পা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল

–নাহ আমার কিছুই হয় নি আমি একদম ঠিক আছি।অর্নব কোথায়?

–নাহ ও তো তুলিকে ওর বাবার বাড়ি দিয়ে আসতে গিয়েছে।

–ওহ।আচ্ছা আম রুমে গেলাম।

অর্পা বেগম অর্নিলের যেতে না দিয়ে ওর কপালে হাত দিয়ে দেখতে লাগলো। তারপর চোখ বড় বড় করে চমকে বলল

–অর্নি তোর তো জ্বরে শরীর পুরে যাচ্ছে আর তুই বলছিস ঠিক আছিস।

–ইটস ওকে আম্মু আম অলরাইট। ডোন্ট ওয়ারি।

অর্নিল ওর রুমে গিয়ে দরজা অফ করতে নিবে তখনই অর্পা বেগম জোর করে পানি ভর্তি বাটি আর রুমাল নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলো।

–আবারও? আমি,,,

অর্নিল কে আর কিছু বলতে না দিয়ে অর্পা বেগম অর্নিলের হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল

–চুপচাপ ঘুমা আমি জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছি।

অর্নিল অর্পা বেগমের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে বলল

–কোনো প্রয়োজন নেই।

–চুপ। নে আগে এই ঔষধ খেয়ে নে।

অর্নিল ওর মার জিদের সাথে পেরে না উঠে ঔষধ খেয়ে চুপ করে ঘুমিয়ে পরল। আর অর্পা বেগম অর্নিলের কপালে জলপট্টি দিতে লাগে।

দরজায় বারির আওয়াজে আয়রার ঘুম ভেঙে গেলো। আয়রা উঠে বসে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো আস্তে আস্তে অন্ধকার ছেয়ে যাচ্ছে চারপাশে।আয়রা মাথা চেপে ধরে আস্তে করে হেটে দরজা খুলে দিয়ে আবার গিয়ে খাটে বসে মাথাটা ঝিম ধরে আছে।জুহি বেগম আয়রার রুমে ঢুকে আয়রার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

–কিরে এই সময় ঘুমাতে গেলি কেনো?রাতে দেখা যাবে ঘুম আসবে না।আর বৃষ্টি তে ভিজলি জ্বর টর আসে নি তো আবার?

জুহি বেগম আয়রার কপালে হাত দিয়ে দেখে বলল

–না জ্বর তো আসে নি।

জুহি বেগম কে এমন চিন্তিত দেখে আয়রা বলল

–না মা আমি একদম ঠিক আছি।এভাবেই একটু শুইয়েছিলাম কখন ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতে পারি নি।

–আচ্ছা তুই মুখটা ধুয়ে আয়শা কে একটু পড়া।

–আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি।

জুহি বেগম যেতে নিতেই আয়রা ডাক দিয়ে বলে

–মা,, কিছু কথা ছিলো।

আয়রার কথা শুনে জুহি বেগম দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল

–হুম বল।

আয়রা কিছুক্ষন চুপ কিরে থেকে কিছু চিন্তা করে আবার বলল

–না কিছু না।তুমি যাও আমি আসছি।

–ঠিক আছিস তুই।

–হুম।

আয়রার মা চলে যেতেই আয়রা হাত মুখ ধুয়ে আয়শা কে পড়াতে যায়।

সকালে অর্নিলের ঘুম ভাঙে। রাতে কিছুই খাওয়া হয় নি একেবারে যে সন্ধ্যার দিকে ঘুম দিয়েছে সকালে ভেঙেছে।অর্নিল ফ্রেশ হয়ে বাহিরে যায়।অর্নিল কে দেখে অর্পা বেগম খাবারের প্লেট নিয়ে অর্নিল কে সোফায় বসিয়ে খাইয়ে দিতে দিতে বলে

–কাল রাতে এতো ডাকলাম শুনলি না। না খেয়েই ঘুমিয়ে ছিলি সারাটা রাত।আর কোথায় যাচ্ছিস এখন বাহিরে একদম যাবি না বলে দিলাম।

অর্নিল পানি খেয়ে যেতে যেতে বলল

–আমি ভার্সিটি তে যাচ্ছি আর এখন আমি ঠিক আছি ডোন্ট ওয়ারি।

–জ্বর শরীরে আর বলে ঠিক আছে।অর্নি,,,উফ এই ছেলে টা কে নিয়ে কি যে করি।

অর্নিল অর্পা বেগমের কথা না শুনে গাড়ি নিয়ে ভার্সিটি তে যেতে লাগে।

আয়রা ভার্সিটির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ভিতরে উকি দিয়ে মাঠের কর্নারে দেখতে লাগলো কেওকে না দেখে আস্তে আস্তে করে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকে।কর্নারে তাকিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ সামনে তাকাতেই দেখে অর্নিল একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে ওকে দেখে মেয়েটাকে বিদায় দিয়ে ওর কাছে আসতে লাগে।
আয়রা অর্নিল কে ওর দিকে আসতে দেখে ছুটে ক্লাসের ভিতরে চলে যায়।

অর্নিল ভার্সিটি তে ঢুকতেই একটা মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করতে লাগলো কেমন আছে আরও বিভিন্ন কথা অর্নিল ও ভদ্রতার খাতিরে টুকটাক কথা বলছিলো কিন্তু আয়রাকে দেখে ওর কাছে যেতে নিয়েই এভাবে ছুটে যেতেই অর্নিল ভ্রু কুচকে তাকায় তারপর নিজে নিজে বলতে লাগে

–লাইক সিরিয়াসলি। আমাকে দেখে এভাবে পালাচ্ছে যেনো আমি কোনো রোডসাইড রোমিও।

তুশারের চিৎকার দিয়ে ডাক শুনে অর্নিল ওদের কাছে গেলো।

–কিরে এভাবে রেগে আছিস কেনো?

জেবার কথা শুনে অর্নিল ব্রু কুচকে বলল

–না কিছু না।

তুশার অর্নিলের গিটার টা নিয়ে বাজাতে বাজাতে বলল

–নিউজ শুনেছিস?

তুশারের কথা শুনে সকলের ভ্রু কুচকে যায়।রোহান তুশারের কাধে হাত রেখে বলে

–কিসের নিউজ?

–আরে ফারহার বাবা ফারহার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।

তুশারের কথা শুনে অর্নিল একটা চেয়ার টেনে বসে বলল

–ও ওয়াও গুড নিউজ।

অর্নিলের কথা শুনে রোহান হেসে বলল

–তোর জন্য তো গুড নিউজ হবেই এতোদিন পর ওর থেকে পিছু যে ছুটবে।

রোহানের কথার মাঝেই জেবা অবাক হয়ে বলল

–কিন্তু ফারহা রাজি কি করে হলো?

–ওর বাবা যা! হয়তো বেচারিকে ধমকে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েছে।

তুশারের কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।
জেবা নিজের হাসি থামিয়ে সিরিয়াস হয়ে বলল

–না জর করে বিয়ে দেয়াটা ঠিক হবে না একদম।

জেবার কথা শুনে রোহান বলে

–হুম।

আয়রাদের একটু আগে ক্লাস শেষ হলো। আয়রা ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে ক্যাফে তে যেতে লাগে কালকেও যাওয়া হয় নি তাই আয়রা তারাতারি হেটে যেতে নেয়।অর্ধেক গিয়ে থেমে যায়।রাস্তা টা একদম ফাকা হয়ে আছে।আয়রা স্পিড কমিয়ে কিছুটা আস্তে হাটতে লাগে আর নিজে নিজে ভাবতে লাগলো

–এই ক্যাফের সেলেরি দিয়ে তো কিছুই সম্ভব না এখন আবার পুরও ফ্লাট ভাড়া নিয়েছি ভাড়া ও বেশি। ক্যাফের পাশাপাশি কিছু টিউশনি করাতে পারল ভালো হতো।

আয়রা বিভিন্ন কিছু চিন্তাভাবনা করে সামনে বাড়তে অর্নিলকে দারিয়ে থাকতে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকায়।

–উনি এখানে কেনো উফ।

আয়রা আস্তে আস্তে করে পিছে যেতে নিতেই অর্নিল ঘুরে আয়রার দিকে তাকায়
অর্নিল আয়রাকে দেখে শার্টের হাতা ফোল্ড করে ঠোট কামড়ে ওর তাকায়।

আয়রা অর্নিল কে ওর দিকে তাকাতে দেখে কিছুক্ষন ঠোট চেপে দাঁড়িয়ে থেকে পিছে ঘুরে ডানে বামে না দেখে ছুট লাগালো। কিছুদূর যেতেই হোচট খেয়ে নিজেকে সামলাতে না পেরে ধুম করে পরে।

চলবে,,,
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️

প্রেম তুমি পর্ব-১৩

0

#প্রেম_তুমি
#part :13
#Mishmi_muntaha_moon

গায়ে হলুদ শেষ,, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।একটু পর আবার বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে।
অর্নিল ওর রুমের বারান্দার রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাতে বিয়ারের বোতল একটু পর পর ওটাতেই চুমুক দিচ্ছে।ছাদে ডেকোরেশন করা হয়েছে।অলরেডি গান বাজনা ও শুরু হয়ে গেছে।ছাদ থেকে ফুল সাউন্ডে গান বাজছে।তুলির ফেমিলি রাও আজ সকালেই এসে পরেছে অর্নিল দের বাড়ি।একসাথেই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা হয়েছে বিয়েটাও একসাথেই হবে।

–অর্নিল,,, তুই এখানে কি করছিস?

অর্নবের আওয়াজ পেয়ে অর্নিল বাইরে থেকে চোখ সরিয়ে পিছন ফিরে অর্নবের কাছে যেতে যেতে বলল

–তুলি কে একা রেখে তুই এখানে কেনো?

–আর তুই ভাইয়ের বিয়েতে ভাই কে একা রেখে এখানে কেনো?আর তুই রেডি ও হোস নি এখনো?

অর্নিল অর্নবের কাধে হাত দিয়ে রুম থেকে বাহিরে নিয়ে গিয়ে বলল

–তুই যা আমি আসছি।

অর্নব অর্নিলের কপালে হাত দিয়ে বলে

–ওয়েট তোর শরীর এতো গরম কেনো জ্বর এসেছে নাকি?

অর্নিল অর্নবের হাত কপাল থেকে সরিয়ে বলে

–আরে নাহ আমার কিছুই হয় নি আমি একদম ঠিক আছি। তুই যা আমি ইন্সট্যান্ট রেডি হয়ে আসছি যা।

অর্নব অনেক জিজ্ঞাসা করার পরও অর্নিল জিদ করায় অর্নব চলে যায়। অর্নব চলে যেতেই অর্নিল ছাই রঙের পাঞ্জাবি পরে হাতে ঘড়ি পরে ছাদে যায়।অনুষ্ঠানে যেতে ইচ্ছে করছে শরীর খারাপ লাগছে তবুও যেতে তো হবেই।অর্নিল ছাদে গিয়ে দেখে সবাই খাবার খেতে ব্যস্ত।অর্নিল এগিয়ে গিয়ে গেস্ট দের খাবার সার্ভ করতে সাহায্য করতে লাগে। কিছুটা হেল্প করে তুশার আর রোহান কে দেখে ওদের কাছে যায়।

–এসেছিস তোরা।জেবা আসে নি?

অর্নিলের কথা শুনে রোহান বলল

–নাহ ওর বাবা পারমিশন দেয় নি আসার।

রোহানের কথা শুনে অর্নিল ছোট করে বলল

–ওহ।

তুশার আশেপাশে কিছুক্ষন চোখ বুলিয়ে অর্নিলের দিকে তাকিয়ে বলল

–ফারহা কে কি ইনভাইট করিস নি?

অর্নিল ও একবার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বলল

–তোদের সবাইকেই ইনভাইট দিয়েছি। তোরা যেমন আমার ফ্রেন্ড ফারহা ও আমার ফ্রেন্ড তাহলে ওকে কেনো দিবো না?কাল একটু ঝামেলা হয়েছিলো তাই হয়তো আসে নি।

–কেমন ঝামেলা?

–কাল রাতে ও ওর মা বাবা নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছিলো আর আম্মু কে বলল আমার আর ওর সম্পর্ক ছিলো।

অর্নিলের কথায় রোহান ভিষণ উৎসাহ নিয়ে বলল

–তারপর?

অর্নিল রোহানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল

–তারপর কি আবার আমি ওদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।কাল এভাবেই মেজাজ ভালো ছিলো না তার ওপর ফারহা এমন সিন ক্রিয়েট করায় মাথা ঠিক ছিলো না।

আয়রা রান্নাঘরে রান্না করছে।অবশেষে সব জিনিসপত্র গুছানো শেষ হয়েছে। সারাদিন এতো এতো কাজ করে ক্ষিদায় পেট জ্বালা করছে তাই একটু টুকটাক রান্না করতে এসেছে।আয়শা না খেয়েই ঘুমিয়ে আছে।আর জুহি বেগম ভাত আর তরকারি রান্না করছে আর আয়রা নুডুলস বানাচ্ছে। জুহি বেগম সবজি কাটতে কাটতে আয়রাকে বলল

–তুই আবার নুডুলস কেনো রান্না করছিস ভাত খাবি না?

জুহি বেগমের কথা শুনে আয়রা নুডুলস এর দিকেই চোখ রেখে বলল

–আপাতত অনেক ক্ষুদা লেগেছে তোমার ভাত তরকারি কখন হবে কে জানে এতোক্ষন ক্ষুদার্ত থাকতে পারবোনা সরি।

আয়রা নুডুলস বানিয়ে রুমে নিয়ে গিয়ে আয়শা কে ঘুম থেকে উঠিয়ে খাইয়ে দিলো সাথে নিজেও খেয়ে নিলো। আয়শা খেয়ে আবারও ঘুমিয়ে পরল। জুহি বেগম তরকারি চুলাতে বসিয়ে রুমে এসে বসে তারপর আয়রার উদ্দেশ্যে বলে

–তুই একটা ছেলের কথা বলেছিলি না? ওই ছেলেটাকে বলেছিস?

–নাহ কাল কলেজে যাবো তখন তো দেখা হবেই।তখন একে একে সব বলবো।আচ্ছা মা আমি আমার রুমে যাই ঘুম পাচ্ছে।

আয়রার কথা শুনে জুহি বেগম ব্রু কুচকে বলল

–ভাত খাবি না?

–না মা আর কিছু খাবো না।

আয়রা ওর রুমে গিয়ে দরজা অফ করে দেয়।ওর থাকার রুমে একটা বারান্দা আছে।আয়রা চুল গুলো বিনুনি করে বারান্দায় গিয়ে দারালো।অর্নিলের কথা মাথায় ঘুরছে।এতোদিন পর মার সাথে দেখা হওয়ায় আর এতো বড় একটা ঘটনা ঘটায় অর্নিলের কথা মাথায় আসে নি বেশি।

❝উনি হয়তো আমার জন্য অনেক চিন্তিত হয়ে আছে।আবার রেগে যায় নি তো? উফ কে জানে।
আচ্ছা উনি যখন শুনেছে আমি গ্রামে চলে গেছি উনার কি।মন খারাপ হয়েছিলো আমাকে খুজার চেষ্টা করেছিলো? কেনো করবে না আমি তো উনার গার্লফ্রেন্ড হই।❞

আয়রা মাথা চেপে ধরে তারাতারি রুমে চলে গেলো কি সব ভাবছে!রুমে আসতেই হঠাৎ অর্নিলের দেওয়া শাড়ির কথা মনে পরে। শাড়ির কথা মনে আসতেই আয়রা ওর মার রুমে ছুটে যায়।জুহি বেগমের রুমে গিয়ে দারিয়ে জোরে শ্বাস নেই।জুহি বেগম বিছানা ঠিক করছিলেন আয়রাকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে ব্রু কুচকে তাকিয়ে বলে

–কি হলো এভাবে ছুটে এলি কেনো।কিছু লাগবে?

জুহি বেগমের কথা শুনে আয়রা অস্থির হয়ে বলল

–না শুনো আমি একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে গিয়েছিলাম সেইটা নিয়ে আসতে ভুলে গেছি।

–শান্ত হ আমি নিয়ে এসেছি।তোর জিনিসপত্রের সাথে ব্যাগটা দেখেছিলাম তাই ওইটাও নিয়ে এসেছি।

জুহি বেগমের কথা শুনে আয়রা বুকে হাত দিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিলো। তারপর আবার নিজের রুমে চলে গেলো।

আয়রা সকালে তারাতারি উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে ভার্সিটি তে যায়।স্যারের সাথেও কথা বলতে হবে কতদিন মিস হয়েছে।
কলেজে এসে ভিতরে ঢুকতেই মাঠের কর্নারে চোখ যায়।
সেখানে তাকাতেই দেখে রোহান তুশার আর জেবা চমকে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।আয়রা অর্নিল কে দেখতে না পেয়ে ক্লাসে যায়।অনেক দিন পর আসায় কেমন যেনো লাগছে।

অর্নিল ঘুম থেকে উঠে টাইম দেখতেই চমকে উঠে ১২ টা বেজে গেছে অর্নিল তারাহুরো করে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে যেতেই দেখে তুলি শাড়ি পরে সোফায় বসে আছে আর তাকে ঘিরে আরও মানুষ বসে আছে।সবাই কথা বলছে। অর্নিল কে দেখেই ওর মামা উনাদের সাথে বসতে বললো। অর্নিল না চাওয়া সত্ত্বেও সবার সাথে বসে টুকটাক কথা বলল। অনেকক্ষন বসে থেকে হাতের ঘড়ি তে তাকাতেই দেখে ১ টা বেজে গেছে।অর্নিল বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরতেই সকলে আবারও অর্নিলের দিকে তাকায়।
সবাইকে এভাবে তাকাতে দেখে অর্নিল হাল্কা হেসে বলল

–আমার খুব জরুরি একটা কাজ আছে।

বলে তারাহুরো বাইক নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে যেতে লাগল।

ভার্সিটি তে গিয়ে রোহান তুশার আর জেবার কাছে যায়।
অর্নিল কে দেখে তুশার রোহান জেবা একে ওপরের দিকে তাকিয়ে চুপ করে অর্নিলের দিকে তাকায়।
অর্নিল কিছু বলতে নিবে কিন্তু ওদের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ব্রু কুচকে বলে

–তোরা এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?

–না কিছু না।

আয়রা ক্লাস শেষ হতেই হাতের নোট গুলো দেখতে দেখতে হাটতে লাগলো হঠাৎ কেউ শক্ত করে জরিয়ে ধরাতে হচকচিয়ে যায়।কিছুক্ষন চুপ করে দাড়িয়ে থাকতেই বুঝতে পারে আসলে কে?অর্নিল আয়রাকে ছাড়তেই আয়রা অর্নিলের দিকে তাকিয়ে তারাহুরো করে বলল

–সরি আপনাকে যাওয়ার আগে ইনফর্ম করতে পারি নি।মা হঠাৎ ফোন করে বলল বাবা আর নেই এটা শুনে আমার হুশ ছিলো না অন্য কোথাও।আপনার কল দেখেছিলাম আমিও দিয়েছিলাম নট রিচেবেল বলছিলো।

অর্নিল স্থির দৃষ্টিতে আয়রার দিকে তাকিয়ে থেকে আয়রার হাত টেনে বাইক বসিয়ে বাইক স্টার্ট দেয়।

অর্নিল ওর প্রেকটিস করার বাড়িতে আয়িরাকে নিয়ে হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যায়।আয়রা তো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্নিলের দিকে কি করতে চাচ্ছে ঠিক বুঝতে পারছে না। অর্নিল রুমের ভিতরে এসে আয়রার হাত ছেড়ে দিয়ে চোখে চোখ রেখে দারায়।আয়রা ব্রু কুচকে অর্নিলের দিকে তাকিয়ে থেমে থেমে বলল

–এখানে কেনো নিয়ে এলেন?আর আপনার দেখি জ্বর?

–এতোদিন কত খুজেছি তোমায় হেভ ইউ এনি আইডিয়া?

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা কিছুটা চুপ থাকতেই অর্নিল আবারও বলল

–আই ফল ইন লাভ উইত ইউ আয়ু।

চলবে,,,

প্রেম তুমি পর্ব-১২

0

#প্রেম_তুমি
#part :12
#Mishmi_muntaha_moon

অর্নিল বারান্দায় বসে হেডফোন কানে লাগিয়ে গান শুনছে।গিটার সাথেই গানের সাথে তাল মিলিয়ে মাঝে মাঝে নিজেও গেয়ে উঠছে।গান শুনার মাঝেই ধার্শানের এক তারফা গান টা বেজে উঠতেই অর্নিল থেমে গেলো। অবসর সময় আয়রার সাথে কাটালেই ও ধার্শানের গান শুনতো।মাথায় আবারও আয়রার কথা তাড়া দিয়ে উঠলো।অর্নিল মনে মনে বলে উঠলো

–আয়রা কি আর ফিরে আসবে না।

আয়রার কথা মাথায় আসতেই আরেকটা কথা মাথায় নাড়া দিয়ে উঠলো।
-আয়রাকে এতোবার ফোন দিলো একের পর এক দিয়েই গেলো কিন্তু তার পরিবর্তে একটা কল ও করলো না।এতো তারাতারি ভুলে গেলো এতোদিনে কি এক বিন্দু জুরেও জায়গা বানাতে পারে নি।

অর্নিল গম্ভীর হয়ে কিছুক্ষন বসে থেকে হেডফোন খুলে উঠে রুমে গেলো। মাথায় বেশি চাপ পরলেই ঘুম পায় কেনো যেনো।অর্নিল ভেঙে যাওয়া ফোনটা ড্রয়ার থেকে বের করে খুলল।সাথে সাথেই নোটিফিকেশনে আয়রার কল দেখতে পেল।আয়রার কল দেখে অর্নিল মুহূর্তেই উত্তেজিত হয়ে পরল।আয়রাকে ফোন করতে নিবে তখনই অর্পা বেগম অর্নিলের রুমে আসে।

–এই অর্নিল আমার সাথে আয় তো।

অর্নিল মোবাইলের দিকে তাকিয়েই ব্রু কুচকে বলল

–এখন না একটু পর আসছি কাজ আছে।

অর্নিলের কথা শুনে অর্পা বেগম অর্নিলের হাত থেকে মোবাইল টা ছিনিয়ে নিয়ে অর্নিলের হাত ধরে উনার রুমে নিয়ে গিয়ে নিজের মোবাইল হাতে ধরিয়ে বলল

–নে এইবার তোর ফুপ্পি,চাচা,আংকেল উনাদের ফোন করে কালকেই আসতে বল।

অর্পা বেগমের কথা শুনে অর্নিল বিরক্ত নিয়ে বলল

–আজব তো আমি কেনো এই সব কাজ করবো আব্বু কে বলো।

অর্পা বেগম অসহায় ভাবে তাকিয়ে বলল

–তোর বাবার শরীর অনেক ব্যাথা করছে বললো তাই উনি ঘুমিয়ে পরেছে। তাই তো আমি তোকে বললাম।প্লিজ বলে দে ওদের ফোন করে।

অর্পা বেগম বলে অর্নিলের মোবাইল নিয়েই চলে যায়। তারপর অর্নবের রুমে যায়।নক করতেই অর্নব দরজা খুলে দিয়ে ওর মা কে দেখে ভিতরে ঢুকতে বলে। অর্পা বেগম ভিতরে ঢুকে অর্নব কে বলে

–অর্নব এই মোবাইলটা তুই তোর কাছে রাখ নে।

অর্নব অর্নিলের ভেঙে যাওয়া মোবাইল ওর মার কাছে দেখে অবাক হয়ে বলে

–এই মোবাইল আমাকে দিচ্ছো কেনো?

–অর্নিল আমার কথা শুনছে না এই মোবাইলের জন্য যতক্ষণ আমার কাজ শেষ না হবে এই মোবাইল তোর কাছেই রাখবি।

অর্নব ব্রু কুচকে আবারও বলে

–কিন্তু ও এই মোবাইল নিয়ে বসে থাকবে কেনো ও তো নিউ মোবাইল কিনেছে ওটা তো ওর কাছেই।

অর্নবের একের পর এক প্রশ্ন করায় অর্পা বেগম বিরক্ত নিয়ে বলল

–চুপ কর যা বলেছি তা কর বেশি কথা না বলে।

অর্পা বেগম চলে যেতেই অর্নব মোবাইলটা ওর ড্রয়ারের ভিতর রেখে দেয়।

অর্নিল সবাইকে ফোন করা শেষ হতেই অর্পা বেগমের কাছে যায়।অর্পা বেগম উনার খাটে বসে কারো সাথে কথা বলছে। অর্নিল সামনে দারিয়ে ওর মার দিকে তাকিয়ে বলল

–আম্মু আমার মোবাইল দাও।

অর্নিলের কথা শুনে অর্পা বেগম কানের থেকে মোবাইলটা একটু দূরে সরিয়ে বলল

–তুই ওই ভাঙা মোবাইল দিয়ে কি করবি।আর এখন ওই মোবাইল দিতে পারবো না কাল নিস।

অর্পা বেগম আবারও মোবাইলে কথা বলতে লাগল। অর্নিল রেগে ওর রুমে চলে যায়।অনেক চিন্তা ভাবনার পর ভার্সিটির স্যারের কাছে আয়রার গ্রামের ঠিকানা জানবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘুমিয়ে পরল।

ফোনের রিং এর আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো অর্নিলের। রোহানের কল। অর্নিল উঠে বসে ফোন রিসিভ করতে রোহানের কন্ঠ ভেসে আসে।

–অর্নিল কয়টা বাজে খেয়াল আছে।আজ আমাদের কি প্লেন ছিলো ভুলে গেলি?

–ফোন রাখ আমি আসছি।

অর্নিল মোবাইল বিছানায় রেখে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে যেতেই হল ভর্তি মানুষের দৃষ্টি ওর দিকে দেখে অর্নিল ব্রু কুচকে তাকায়। কাল রাতে ফোন করে আসতে বলেছে তাই বলে এতো সকাল সকালে এসে সবাই হাজির হয়ে গেলো দেখে বিরক্ত হয়ে বাইকের চাবি নিয়ে গেট দিয়ে বের হতে নিতেই ওর মা ডাক দিলো। অর্নিল ঘাড় ফিরিয়ে অর্পা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল

–হোয়াট?

অর্নিলের মা অর্নিলের কাছে এসে বলল

–কোথায় যাচ্ছিস? কেমন ভাই তুই কাল তোর ভাইয়ের বিয়ে আর সব কাজ ফেলে রেখে চলে যাচ্ছিস?

অর্নিল বিরক্ত নিয়ে বলল

–আরে তুমি আমায় বিরক্ত কেনো করছো।

অর্পা বেগম জিদ ধরে বলল

–না তুই আজ বাহিরে যেতে পারবি না।ভিতরে আস তোর ফুপ্পি,চাচা রা এসেছে সকলের সাথে কথা বল গিয়ে।

অর্নিল বিরক্ত চেপে রেখে শান্ত হয়ে বলল

–আচ্ছা ঠিক আছে।কিন্তু আমার এখন যেতেই হবে আমি কিছুক্ষন পরেই এসে পরবো।প্রমিস।

অর্নিলের কথা শুনে অর্পা বেগম অর্নিল যে যেতে দেয়।

অর্নিল ভার্সিটি তে গিয়ে দেখে রোহান তুশার ফারহা জেবা সকলে গ্রাউন্ড এর কর্নারে চেয়ারে বসে আছে।অর্নিল কে দেখে ফারহা বলল

–অর্নিল তুমি এতো লেট কেনো করলে? চলো এখন।

ফারহার কথায় অর্নিল ওদের সামনে গিয়ে বলল

–সরি গাইস।আজ গান গাইতে পারবো না। তোদের তো বললাম কাল অর্নবের বিয়ে।আর আজকে আমার একটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে।অন্য একদিন ওকে?

অর্নিল জেবাকে নিয়ে অফিস রুমে আসতেই জেবা ব্রু কুচকে বলল

–এখানে কেনো নিয়ে এলি?

অর্নিল জেবার দিকে তাকিয়ে বলল

-একটা হেল্প লাগবে।তুই প্লিজ স্যারের থেকে আয়রার গ্রামের ঠিকানা টা জেনে আয়।

–আবার আয়রা।

–প্লিজ।

–তোকে প্লিজ বলতে হবে না আমি যাচ্ছি।

জেবা স্যারের থেকে ঠিকানা জেনে অর্নিলের কাছে দিতেই অর্নিল জেবাকে জরিয়ে ধরে বলে

–থেংক্স।

জেবা অর্নিল কে ছাড়িয়ে মুচকি হেসে বলে

–তাহলে কি আজই যাবি আয়রাকে খুজতে?

অর্নিল ঠোঁট কামড়ে জেবার দিকে তাকিয়ে বলে

–নাহ আজ যেতে পারবো না।অর্নবের বিয়ে কাল বাড়িতে অনেক কাজ আছে।

ঘর মুছে পুরো পরিষ্কার করে ক্লান্ত হয়ে নিচেই বসে পরে।

বিকেলে ঢাকায় এসেছে।আয়রা যেখানে থাকতো সেই বিল্ডিং এরই একটা ফ্লাট ভাড়া নেয়।
সব জিনিসপত্র ফ্লেটে এনে আর পরিষ্কার করতে করতে রাত ৮ টা বেজে গেছে।আয়রাকে এতো কাজ করে নিচে বসে পরে।আয়িরাকে এভাবে অস্থির হয়ে নিচে বসে পরতে দেখে জুহি বেগম বলে

–তুই এখন বিশ্রাম কর আমরা বাকি কাজ কাল করে নিবো।

আয়রা ওর মার কথায় একমত প্রকাশ করে ঘুমিয়ে পরে।হাত পা ব্যাথা করছে আজ অনেক ধকল গেলো সকলের উপর। জুহি বেগম ও কোনোরকম করে নিচেই ঘুমিয়ে পরে।

অর্নিল আর অর্নব ছাদে বসে কথা বলছিলো নিচ থেকে আওয়াজ পেয়ে দুজনেই নিচে যায়।
ফারহা আর ওর মা বাবাকে এই রাতে নিজেদের বাসায় দেখে অর্নিলের ব্রু জোড়া কুচকে যায়।অর্পা বেগম অর্নিল কে দেখে হাসি মুখে অর্নিলের হাত ধরে ফারহার পাশে বসিয়ে দেয়।তখনই ফারহার মা বলে উঠে

–দেখেছেন ফারহা আর অর্নিল কে একসাথে কি সুন্দর দেখাচ্ছে।

ফারহার মার কথায় অর্পা বেগম মুচকি হাসি দিলো।অর্নিলের মাথায় কিছুই ঢুকছে না।অর্নিল ফারহার পাশ থেকে উঠে ফারহার উদ্দেশ্যে বলে

–ফারহা এই সব কি?

ফারহা কিছু বলার আগেই অর্পা বেগম বলে

–অর্নি তুই আমাকে বললেই পারতি।আমার তো ফারহা কে প্রথম থেকেই খুব ভালো লাগে। আমার তোর আর ফারহার সম্পর্কে কোনো সমস্যা নেই।

অর্নিলের এতোক্ষনে সকল বিষয় ক্লিয়ার হয়।অর্নিল ফারহার হাত ধরে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বলে

–তোকে আমি কিছু বলি না তাই বলে এতো সাহস পাচ্ছিস তাই না। যা এক্ষুনি চলে যা এখান থেকে।

–কিন্তু অর্নিল আমার কথা তো শুনো।

–আই সেইড গেট লস্ট।

ফারহা ওর মা বাবাকে নিয়ে চলে যায় ফারহা ভেবেছিলো অর্নিলের মা কে রাজি করিয়ে অর্নবের বিয়ের সাথে ওর আর অর্নিলের বিয়েটাও যেনো হয়ে এই প্লেন করেই এতো রাতেই এসেছিলো। কিন্তু অর্নিলের এমন অপমানে অর্নিলদের বাড়ি থেকে চলে গেলো ।ফারহারা যেতেই অর্পা বেগম রেগে অর্নিলের সামনে এসে দারিয়ে বলল

–অর্নিল এইসব কেমন আচরণ করলি তুই।আর হলো টা কি?

অর্নিল বিরক্ত হয়ে বলল

–আমার ভালো লাগছে না আমি রুমে গেলাম।

অর্পা বেগম অর্নিল কে এভাবে রেগে যেতে দেখে অর্নব কে নিয়ে উনার রুমে যায়।তারপর বলে

–অর্নব তুই আজ সত্যি করে বল তো কি হয়েছে অর্নিলের।

অর্পা বেগমের প্রশ্নে অর্নব আয়রার কথা বলে দেয়।অর্পা বেগম অর্নবের কথা শুনে অবাক হয়ে বলল

–এতো কিছু হয়ে গেলো আর আমাকে কিছুই বলিস নি।

চলবে,,