বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1166



অন্তরালের অনুভূতি

0

অন্তরালের_অনুভূতি

মিলিকে বিয়ে করার পর বাসর রাত থেকে অবাক হওয়া শুরু হয়েছে,সেটা এখনো চলছে।

আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাসর রাতে ঘরে ঢোকার আগে আমাকে খুব করে বলল,,,

–বউকে যতটা সম্ভব হাতের মুঠোয় রাখবি ?

–কিভাবে ?

–খুব ভয় দেখাবি,,,,আর কঠিন গলায় কথা বলবি,,,,

আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,,,,,

–ভার্সিটি পড়ুয়া একটা মেয়ে,আমি তাকে এভাবে ভয় দেখাবো আর সে পাবে,,,,

–হুম,,,,পাবে,,,,

আমার বন্ধু হয়তো ভুলেই গেছে যে, বিয়ের পর থেকে ওর বউ ওকে এখানো হাতের মুঠো করে রেখেছে সেটা আমি যানি না।

যে মানুষ নিজের বউকে হাতে রাখতে পারেনি। এখনো নিজের বউয়ের কথায় উঠ বস করে।
এরকম একজন মানুষের থেকে টিপস নিয়ে নিজের বউকে হাতে রাখার চিন্তা করা নেহাত বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।

তাই এসব চিন্তা বাদ দিয়ে বাসর ঘরে ডুকলাম,,,

মিলিকে আগে থেকেই হালকা চিনতাম।মিলি আমার মায়ের বান্ধবীর মেয়ে দু একবার আমাদের বাসায় এসেছিল।

আমি বিছানায় গিয়ে বসতেই মিলি বলল,,,,

–কোন বুদ্ধি করে আসছ ?

–কিসের বুদ্ধি ?

–আমাকে হাতে রাখার ?

–নাহ,,,

–সত্যি,,

–আসলে, খুঁজেছি কিন্তু কোন বুদ্ধি পাইনাই।

–আর কখনো খুঁজবাও না কোন বুদ্ধি।

–কিন্তু তুমি কিভাবে বুঝলা ?

–সব ছেলেরাই এমনই হয়,,,বাসর রাতে বিড়াল মারার চিন্তা ভাবনা করে আসে।যাতে মেয়েরা তাদের সব সময় ভয় পায়।

–ওহ্,,,,তোমার তো দেখি ভালো অভিজ্ঞতা আছে এই ব্যাপারে।আগে কি কখনো বিয়ে হয়েছিল নাকি ?

–আজব,,,এসব জানতে হলে কি বিয়ে করা লাগে নাকি।

–তাহলে,,,

–যে বান্ধবী গুলির বিয়ে হয়েছে তাদের থেকে জেনেছি।

ওহ্

–কেন তোমার বন্ধুরা তোমাকে এই ব্যাপারে কিছু বলেনাই,,,

–ওরা আর কি বলবে,,,নিজেদের বউকে হাতের মুঠোয় আনতে গিয়ে নিজেরাই বউদের হাতের মুঠোয় চলে গেছে,,,

–তাই,,,নাকি,,,

–হম,,

সেদিন থেকে মিলিকে একটু কঠিনই মনে হত।তবে এখন অতটা মনে হয়না।

কিছুদিন আগের ঘটনা,,,

রাতে বাসায় ফিরে দেখি মিলি বই পড়তেছে,,,

ওর কাছে গিয়ে বললাম কাল তো আমার অফিস বন্ধ।চলো কাল কোথাও ঘুরতে যাই,,,

আমার কথা শুনে মিলি কোন উওর দিল না।

মিলির কাছ থেকে আশা অনুরূপ কোন উওর না পেয়ে খুব হতাশ হলাম।

পরের দিন বিকেল বেলা মিলি আমাকে দুটি শাড়ি দেখিয়ে বলল কোন শাড়িটি পরলে আমাকে মানাবে,,,,

–দুটি শাড়িই খুব ভালো।তুমি যাই পরবে তাতেই তোমাকে ভাল লাগবে,,,

আধা ঘন্টা পর মিলি রুম থেকে বেরিয়ে এল নীল শাড়িটা পরে।ও নীল শাড়িটা পরাতে আমি একটু আবাকই হলাম।

কারো প্রতি ভালবাসা থাকলে হয়তো তার মনের কথা জানা যায়।আর মিলিও হয়তো এভাবেই আমার মনের কথাটা জেনেছে।

মিলি আমার কাছে এসে বলল,,,

–কেমন লাগছে আমাকে ?

–ভাল,,

–শুধু ভাল,,,আর কিছু না।

আমি মিলির কপালের টিপ টা ঠিক জায়গাতে বসিয়ে তারপর বললাম এখন পারফেক্ট লাগছে।

–আমি কপালের টিপ টা ইচ্ছা করেই ঠিক জায়গাতে পরিনি।

–কেন ?

–তোমাকে পরীক্ষা করে দেখলাম আমার সবকিছু তোমার নজরে পরে কি না।

–হম বুঝলাম,,,কিন্তু এত সেজে গুজে কোথায় যাচ্ছ তুমি ?

–ঘুরতে,,,

–কার সাথে ঘুরতে যাবে ?

–তোমার সাথে,,

–কাল রাতে যখন ঘুরতে যাওয়ার কথা বলছিলাম তখন তো কিছুই বললে না।

–তখন বলিনি তো কি হয়েছে এখন তো বলছি,,,

যাও তারাতারি রেডি হয়ে আসো আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করতেছি,,,,

আমি রেডি হয়ে এসে দেখি মিলি আমার জন্য বসে আছে।তারপর দুজন একসাথে বের হলাম।

–এই রিক্সা যাবে ?

–কোথায় যাবেন ‘স্যার’

–যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন গন্তব্যে নেই।তোমার ইচ্ছা অনুযায়ী এই শহরের অলিতে গলিতে সন্ধ্যা নামার আগ পযন্ত আমাদের কে তোমার রিক্সায় নিয়ে ঘুরবা।

–আচ্ছা ‘স্যার’,,,, রিক্সায় উঠে বসেন।

রিক্সা চলতেছে তার আপন গতিতে।মিলি তাকিয়ে আছে প্রকৃতির দিকে আর আমি তাকিয়ে আছি মিলির দিকে।

এভাবেই চলুক না কিছুটা সময়,,,,,,,,,,,,


(সমাপ্ত)

লেখা || Tuhin Ahamed

মন ফড়িং ❤ ২০.

3
মন ফড়িং ❤
২০.
আসলেই কি ভালোবাসে?
নাকি শুধুমাত্র দেহের প্রতি চাহিদা? নিদ্র কাছে আসলেই ঠোঁটে, গলায়, কোমড়ে স্পর্শ করবে। এমন কেনো?
 কাছে বসে তো গায়ে হাত না দিয়েও তো ভালোবাসা যায়।
 তাহলে ও কেনো এমন? সকাল টাই তার নষ্ট করে দিয়ে গেলো। একটু না করাতেই রাগ করে অমনি চলে গেলো। পাশে একটু বসলো না!
রুমে গিয়ে কী করছে কে জানে! সারারাত ঘুমায়নি সেটা ওর চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। চোখ মুখে চিন্তার গভীর ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো। একজন মানুষের কখন রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে যায়?
 খুব বড় ধরনের চিন্তাভাবনা নিয়ে যখন ব্যস্ত থাকে, তখন। আমার জন্যই ও চিন্তিত ছিলো, আর আমিই কিনা এরকম বাজে ব্যবহার করলাম?
সারারাতের চিন্তার পর একটু স্বস্তি খোঁজার জন্যই হয়তোবা তার এতো কাছে এসেছিলো। আর সে কিনা এমন ভাবে….
আর এমন না যে নিজের কাছে ওর এই ধরনের পাগলামি খারাপ লাগে।
অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম হয়। অজানা অচেনা অনুভূতি তড়িৎ গতিতে তার পুরো শরীরে বয়ে যায়।
ওর নিশ্বাস আর শরীরের গন্ধটা আরও বেশি অস্থিরতা তৈরি করে। অস্থিরতা টাই সহ্য হয়না তার।
যেখানে সে ভালোবাসে কিনা শিওর না সেখানে এভাবে স্পর্শ করতে দেয়াটা ঠিক না।
মাথার বাপ দিকে খুব ক্ষীণ একটা চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়েছে। ব্যথাটা বেড়ে যাবে অদ্রির মনে হলো।
অদ্রি তাকে এভাবে অপমান করতে পারে ভাবতেও পারছেনা নিদ্র। ভালোবাসলে স্পর্শ করবে – এটাই স্বাভাবিক। পুরো এক রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে সে। অদ্রি কি সেটা জানে? কতোটা চিন্তার আর কষ্টের একটা রাত ছিলো সে ভাবতেও পারে? পুরো রাত তো নাক ডেকে ঘুমিয়েছে, সে কি বুঝবে! কিছুই না।
বাস্তবতা অনেক কঠিন। ভালোবাসলেই তাকে কাছে পাওয়া যায়না।
নিদ্রের চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এমন ভাবে রিজেক্ট হতে হবে ভাবতেই পারছেনা সে।
এখনই সবকিছু ছেড়ে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে তার।
কার জন্য এতো দূর থেকে সে ছুটে এসেছে সে?
এই মানুষটার জন্য?
ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে গোসল সেরে নিলো নিদ্র। ১ ঘণ্টা যাবত গোসল করলো নিদ্র। কিছুই ভালো লাগছেনা, অসহ্য।
সকালের নাস্তা করে ব্যথার মেডিসিন খাওয়ার পরে কিছুটা ভালো লাগতে শুরু করলো। রিতা তাকে বিছানা থেকে নামতে সাহায্য করাতে একটু সুবিধাই হলো।
নিদ্র কি নাস্তা করেছে নাকি রাগ করে আছে? রিতাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করা যাবেনা। সন্দেহ জাগলে সমস্যা।
– খালা মনি?
– হ্যাঁ বলো।
– সবার নাস্তা করা শেষ?
– হ্যাঁ।
– আপনি করেছেন?
– করবো।
– সবারই তো শেষ?
রিতার মনে পড়লো ওই নিদ্র নামের ছেলেটাকে সে নিচে নামতেই দেখেনি।
– না একজন নাস্তা করেনি। নিদ্র নামের ছেলেটা আজকে নিচেই নামে নাই। খুব অদ্ভুত ছেলে। গতকাল রাতে তোমার অজ্ঞান হওয়ার পরে ওই ছেলেই কোলে নিয়ে বিছানা অবদি নিয়ে এসেছিলো।
ছেলেটার গেঞ্জিতে রক্ত মেখে অবস্থা খারাপ ছিলো।
– আপনি ট্রে তে করে খাবার নিয়ে আসবেন?
– আমিই তাহলে দিয়ে আসবো?
– না, আমিই পারবো। এক হাতে ধরতে পারবো।
অদ্রি বাম হাতে ট্রে নিয়ে নিদ্রের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক বার নক করার পর নিদ্র দরজা খুলে দিলো।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো
– কিছু বলবেন?
– আমাকে ভিতরে আসতে তো দিবেন?
নিদ্র দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো।
– ট্রে টা তো ধরবেন।
নিদ্র ট্রে নিয়ে ছোটো টেবিলের উপর রেখে দিলো। অদ্রি বললো
– দরজাটা আটকান। আপনার সাথে আমার কথা আছে।
– না, এভাবেই বলুন। আমি আপনার কথার অমান্য করতে চাচ্ছি না।
– দরজা আটকান। এটাও আমার কথা।
অগ্যতা নিদ্রকে দরজা আটকে দিতে হলো।
বিছানার উপর আয়েশ করে বসে অদ্রি বললো
– নাস্তা কেনো করেননি?
নিদ্র দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বললো
– ঘুমাচ্ছিলাম।
– আপনার চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছেনা।
– কী বলার জন্য এসেছেন বলে চলে যান।
অদ্রির কিছুটা খারাপ লাগলো কথাটা শুনে। আসলে দোষ তো তার নিজেরই। না করারও একটা সিস্টেম আছে।
– নাস্তা এনেছি করে নেন।
– আপনি যান আমি করে নিবো।
– আপনি আমার সামনে নাস্তা করবেন। তারপর আমি যাবো।
নিদ্র রেগে গিয়ে বললো
– আমি সবসময় কেনো আপনার কথা শুনবো? আপনি তো কখনো আমার কথা শুনেন না।
নিদ্রের কাছে গিয়ে অদ্রি বললো
– আচ্ছা, এখন থেকে শুনবো। আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো?
নিদ্র চাপাস্বরে বললো
– রাগবো না কেনো? সারারাত আপনার চিন্তায় ঘুমাতে পারিনি। আপনাকে ভালোবাসি বলেই চুমু দেই, আদর করি, স্পর্শ করি। ভালোবাসলে তাকে কাছে পেতে প্রত্যেক পুরুষেরই ইচ্ছা করে। আমি একা নই, যার সাথেই রিলেশনে যাবেন সেই চাইবে।
তাহলে আমার ক্ষেত্রে কেনো এতো নিয়ম?
নিদ্রের বুকের উপর বাম হাত রেখে অদ্রি খুব আস্তে আস্তে বললো
– sorry আর হবেনা এমন। আপনি আমাকে যখন ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা স্পর্শ করতে পারেন।
– আমি মোটেও আপনাকে স্পর্শ করবো না। কোনোদিনও না।
অদ্রির সামনে একটাই উপায় – নিজ থেকে এগিয়ে যাওয়া। কারণ সে নিদ্রকে তার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে দেয়া যাবেনা। এমনও হতে পারে তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে।
নিদ্রের চিবুকে চুমু দিয়ে অদ্রি বললো
– সরি বললাম তো!
নিদ্র অন্যদিকে তাকিয়ে রাগে ফুসছে।
নিদ্রকে জড়িয়ে ধরলো এমনভাবে যে মাঝে এক চুল পরিমাণও ফাঁক রইলো না।
নিদ্র রাগীস্বরে বললো
– হয়েছে আর ঢং করতে হবেনা। নিজেই না করে নিজেই আবার আসে।
নিদ্রের চিবুকে চুমু দিয়ে বললো
– কী করবো বলুন? বড্ড ভালোবাসি যে।
– ছাই।
– না, আপনি একটা রত্ন। দেখুন তো কী পরিমাণ সুন্দর আপনি! আপনার সংস্পর্শ কোন মেয়ে চাইবেনা?
– অন্য কেউ চাইলেও। আপনি চান না।
– আচ্ছা রাগ করা থামান তো। এবার আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন তো। সকালে যেভাবে চুমু খেয়েছিলেন ঠিক তার চেয়ে দ্বিগুণ গভীর চুমু দিন তো। যেন আমি আমার খেই হারিয়ে ফেলি আপনার মাঝে। প্লিজ নিদ্র, না করবেন না।
নিদ্র দুই হাতে অদ্রির মুখ তুলে নিয়ে প্রথমে কপালে চুমু দিলো আলতো করে। তারপর গালে পাগলের মতো চুমু খেলো। অদ্রি অস্থিরতায় নিজেকে সামলে নিতে পারছিলোনা। মনে হচ্ছে একবারেই মিশে যেতে নিদ্রের সাথে।
নিদ্র আলতো করে অদ্রির ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে চুমু খেতে শুরু করলো। চুমুর তীব্রতা ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। অদ্রি পুরোপুরি ভাবে নিজেকে হারিয়ে ফেললো।
প্রতিটা চুমুতে ভালোবাসা, অস্থিরতা, অভিমান মিশে আছে নিদ্রের। নিদ্র যে কতোটা অস্থির হয়ে আছে তার প্রতিটি চুমুতে প্রকাশ পাচ্ছে।
অদ্রির বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়েছে। শেষ হবে কবে কে জানে???
চলবে…..!
© Maria Kabir

 

খেলাঘর /পর্ব-৪২

13

খেলাঘর /পর্ব-৪২
লেখা- সুলতানা ইতি

বহুত ফেয়ার কারতি হু তুম হে সানাম
কাসাম চাহে লে লোওও খোদাকি কাসাম”

নির্ঝরিণী গান শেষ করে স্টেজ থেকে নেমে নিজের সিটে এসে বসলো
করতালিতে চারি দিকে মুখর,আর মুগ্ধতা সবার চোখে

এবার আয়াপ গান গাইবে, আয়াপ স্টেজে উঠে নির্ঝরিণীর দিকে অনেক্ষন তাকিয়ে ছিলো
নির্ঝরিণী অস্বস্তিতে পড়ে গেলো
তার পর আয়াপ গান গাইতে শুরু করলো

“থাকতে পাশে হয়নি জানা ছিলাম তোমার আপন কতো
সব হারিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে বুকে নিয়ে গভীর ক্ষত
মাঝখানে দেয়াল দুই দিকে দুইটি জীবন
এভাবে জীবন আমি চাইনি
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে তোমায় পাইনি ।।

করোনা ক্ষমা ই অনুনয়, কাটেনা একা কি সময়
তোমাকে ছাড়া জীবন ছন্নছাড়া বেছে থাকা যন্ত্রণাময় ।।

মাঝখানে দেয়াল দুই দিকে দুইটি জীবন এভাবে জীবন আমি চাইনি
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে তোমায় পাইনি ।।

বুঝে ও বুঝিনি কি করেছি ভুল কি করে দেবো সে মাশুল এসো না ফিরে তুমি থেকো না দূরে
ও আমার অভিমানী ফুল ।।

মাঝখানে দেয়াল দুই দিকে দুইটি জীবন এভাবে জীবন আমি চাইনি
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে তোমায় পাইনি ।।,,,

গান শেষ হলো তবু ও চারি দিকে নিরাবতা
নির্ঝরিণীর অস্বস্তি আর ও বেড়ে গেলো মনে হচ্ছে পুরো গান আয়াপ নির্ঝরিণী কে ভেবেই গেয়েছে
নির্ঝরিণী তবু মনকে পাত্তা দিলো না নিজের মন কে বুঝালো,সব বুঝার ভুল

অনুষ্ঠান শেষে নির্ঝরিণী চলে যাচ্ছিলো আয়াপ এসে নির্ঝরিণী কে বাধা দেয়
আয়াপ- নির্ঝু প্লিজ আমার কথা শুনো দেখো সেদিন তুমি যা ভেবেছো সব ভুল

নির্ঝরিণী – আমি যা বুঝেছি সেটাই ঠিক আপনি এখন আমাকে ভুল বুঝানোর চেষ্টা করছেন
আমি আপনার কোন কথা শুনতে চাইনা
প্লিজ লিভ

আয়াপ- তোমাকে শুনতেই হবে

নির্ঝরিণী – পাব্লিকের সামনে সিনক্রিয়েট করবেন না প্লিজ,

আয়াপ- আমার একটা কথা…….

নির্ঝরিণী – চুপ একদম চুপ একটা কথা শুনতে চাই না আপনার কাছে এর পরে ও যদি আপনি কথা বলেন তা হলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি
নির্ঝরিণী আর পিছনে না থাকিয়ে হাটতে থাকে
গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে নির্ঝরিণী
একটা মেয়ে এসে বল্লো
– হাই নির্ঝরী আপু তোমার গান আমার কাছে অনেক ভালো লাগে,, একটা সেল্পি নিই তোমার সাথে

নির্ঝরিণী – সিওর, সেল্পি তুলে মেয়েটি চলে যাচ্ছিলো আবার পিছনে ফিরে বল্লো আপু,এই টা তোমাকে আয়াপ খান দিয়েছে

নির্ঝরিণী – কি এটা?
মেয়েটি বল্লো তুমি পড়ে দেখো কি আছে এতে,এই বলে মেয়েটি চলে যায় নির্ঝরিণী কাগজ টা ব্যাগের মধ্যে রেখে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে

অফিস শেষে মিথিলা বাসায় এসেই শুয়ে পড়লো খুব টায়ার্ড লাগছে এমন সময় মিথিলার ফোন আসে
মোবাইলের স্কিনে ইহানের নাম টা ভেসে উঠলো
মিথিলা- হ্যালো ইহান বল

ইহান- মিথিলা তুই জলদি সরোওয়ার্দি হসপিটাল চলে আয়, অরনির অবস্থা ভালো না
মিথিলা কথা টা শুনে আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়লো

হাসপাতালের ক্যাবিনে বসে আছে ওরা চারজন,অরনির মা নিচে গেছে ওষুধ আনতে
অরনি এতোক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকলে ও চোখ খুলে সবাই কে দেখে একটা মুচকি হাসি দিলো কিন্তু সেই হাসিতে কোন প্রান নেই
– তোরা সবাই এসে পড়েছিস দেখছি,কি ভেবেছিলি আমি মরে গেছি?

মিথিলা- এমন করে বলিস না অরু

অরনি- তোকে আর ইহান কে এক বাধনে বেধে তার পর আমি শান্তিতে চলে যাবো

মিথিলার কথা শুনে সাম্মি নড়ে ছড়ে উঠলো

ইহান- অরু তোকে একটা কথা জানানো হয়নি শুধু তুই কেনো এখানকার কেউ ই জানে না,
আমি জানি না তোরা আমার কথা কি ভাবে নিবি তবু ও বলছি অরুর জন্য,, অরু, মিথি ভুল হলে তোরা আমায় ক্ষমা করে দিস

মিথিলা- এমন কি কথা বলবি যে আগে ক্ষমা ছেয়ে নিলি

অরনি চুপ করে ইহানের দিকে ছেয়ে আছে বুঝার চেষ্টা করছে ইহান কি বলতে চায়

ইহান সাম্মির দিকে তাকিয়ে বল্লো
– সাম্মি তুই কথা টা বল

সাম্মি ইতস্তত করে বল্লো তুই বল

ইহান- আসলে শুন, মানে মিথিলার বিয়ের সময়, আসলে
ইহানের নার্ভাসনেস দেখে
সাম্মি বল্লো- আসলে আমরা দুজন বিয়ে করে নিয়েছি

অরনি যেন বড় একটা ধাক্কা খেলো চোখ বড় করে বল্লো কি বললি

মিথিলার মাঝে কোন ভাবান্তর দেখা গেলো না মনে হয় যেন কিছুই হয়নি সব স্বাভাবিক

রাহি- কখন করলি বিয়ে কি ভাবে হলো আমাদের তো বললি না, কি করে গোপন করলি আমাদের কাছে থেকে

ইহান চুপ করে বসে আছে, কিছুই বলতে পারছে না নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে

সাম্মি- আসলে মিথিলার বিয়ের দিন ইহান রাগ করে বেরিয়ে যায় আমরা কেউ সেদিনের পর থেকে ইহানের খবর পায়নি,তার কিছুদিন পরে আমি রাজশাহী যাই আমার আন্টির বাসায়, রাজশাহী কলেজে আমার কাজিন পড়াশুনা করে তো কাজিনের সাথে দুষ্টুমির ছলে ওর কলেজে যাই,আর সেই কলেজে আমি ইহান কে দেখতি পাই খুব অবাক হয়েছি আমি ইহান কে রাজশাহী কলেজে দেখতে পেয়ে,সেদিন ইহানের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম ইহান আগের মতো নেই খুব ভেংগে পড়েছে, তখন ইহান তোদের দুজনের কথা শুনতেই পারতো না,আর ইহান আমায় বলে তার সাথে দেখা হওয়া, কথা হয়েছে এগুলা যেন তোদের না বলি,ট্রাষ্ট মি দোস্ত আমি বলতাম তোদের কিন্তু ইহান আমায় প্রমিজ করায় তাই আমি……এতোটুকু বলে সাম্মি চুপ হয়ে যায়

পুরো রুমে পিন পতন নিরাবতা কারো মুখে কোন কথা নেই
নিরাবতা ভেঙে ইহান বল্লো
– সেদিন থেকে সাম্মির সাথে আমার যোগাযোগ হতো,আর সাম্মি আমাকে প্রচুর মেন্টালি সাপোর্ট দেয়,একটা সময় আমি দেশের বাইরে চলে যাই,সাম্মির সাথে ও যোগাযোগ বন্ধ করে দিই
তার কিছু দিন পর সাম্মি অস্ট্রিয়ায় যায় একটা পার্টিতে সাম্মির সাথে কথা হয়,,
তার পর জানতে পারি কাকতালীয় ভাবে সাম্মির মা আর আমার মা কাজিন সিস্টার উনারা আমাদের বিয়ের জন্য প্রেসার দেয় তখন ও আমার মিথিলা অরনির উপরে রাগ কমেনি আমি রাগের মাথায় মা কে বলে দিই আমি বিয়ে করবো কিন্তু সেটা যেন জানা জানি না হয়,খুব ঘরোয়া ভাবে আব্বু আম্মুর উপস্থিতিতে আমাদের বিয়ে হয়

সাম্মি- দোস্ত তোরা আমায় ভুল বুঝিস না আমি চাইনি বিয়েটা করতে, কিন্তু ইহান তখন অনেক সিনক্রিয়েট করাতে রাজি হলাম

ইহান- আসলে তখন আমি ভেবেছি তোরা দুজন আমাকে কষ্ট দিয়ে ভালো আছিস,আমি কেনো ভালো থাকবো না, তার অনেক পরে শুনি আমার আপু বিয়ে করেছে আর তাদের কাপল পিক আমায় পাঠায় তখন আমি আপির সাথে ইভান কে দেখে রাহির সাথে যোগাযোগ করি আর জানতে পারি সব কিছু
তার কিছুদিন পরে আমি দেশে আসি সাম্মি কে ওখানেই রেখে আসি,সাম্মি আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছে,বলেছে মিথিলার বিপদে তুই পাশে না থাকলে কে থাকবে
ইহান এতোটুকু বলে থেমে গেলো,

সাম্মি- স্যরি মিথিল, স্যরি অরু

মিথিলা উঠে সাম্মির পাশে এসে বসে বল্লো
-স্যরি বলছিস কেনো,খুব ভালো হয়েছে, আমি অনেক খুশি আজ

সাম্মি- দোস্ত বিশ্বাস কর আমরা একদিনের জন্য স্বামি স্ত্রীর মতো থাকিনি ইনফ্যাক্ট আমি কলেজের হোস্টেলে থাকতাম,ও আলাদা বাসা নিয়ে থাকতো

মিথিলা- দূর কি বলিস আমি তোর কাছে এই সব শুনতে ছেয়েছি নাকি,,

রাহি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বল্লো কংগ্রাচুলেশনস তোদের দুজন কে

অরনি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে চোখের পানি মুছে বল্লো
ভালো করেছিস সাম্মি, তুই জিতেছিস ইহান এমন একজন মানুষ যাকে আমি মনের সব সত্তা দিয়ে চাইতাম,তোকে কংগ্রাচুলেশনস,

মিথিলা- ইয়ে মানে দোস্ত এবার আমাকে উঠতে হচ্ছে,

সাম্মি- গাড়িতে গিয়ে বস ইহান আসছে তোকে পৌছে দিবে

মিথিলা- দরকার নেই, আমি একা ই যেতে পারবো
মিথিলা উঠে দাড়ালো রাহি মিথিলার পিছন পিছন এলো
রাহি- তুই ঠিক আছিস তো মিথিলা

মিথিলা- ঠিক না থাকার মতো কিছু হয়েছে কি?

রাহি- ঠিক থাকলেই ভালো,

মিথিলা এই রাতের বেলা রিক্সা নিতে চাইলো অন্ধকারে রাস্তার ধারে ল্যাম্প পোস্টের আলোতে হাটতে ইচ্ছে করছে
মিথিলা হাটছে

– এই মিথিল দাড়া

মিথিলা পিছনে ফিরে দেখলো সাম্মি ডাকছে মিথিলা দাঁড়িয়ে গেলো

সাম্মি- চল হাটতে হাটতে কথা বলি,

মিথিলা কিছু না বলে হাটতে শুরু করলো,বেশ কিছুক্ষন হাটার পর সাম্মি বল্লো
– মিথি তুই কি জানিস ইহান তোকে এখন ও ভালোবাসে

মিথিলা- জানার ইচ্ছে নেই

সাম্মি- অরনির সামনে তোকে একটা সত্যি জানানো হয়নি,অরনি কষ্ট পাবে ভেবে আমি ছেপে গেছি কথা টা

মিথিলা- তা হলে আমার কাছে ও ছেপে যা শুনতে চাইনা কোন সত্যি

সাম্মি- তবু ও আমি বলবো,ইহান আর আমি কাগজে কলমে স্বামি স্ত্রী ইহান আমায় বিয়ের রাতে বলেছে” সাম্মি তুই তো আমার সব কথাই জানিস আমি মিথিলা কে ভালোবাসি, আজ ও মিথিলা কে ভুলতে পারিনি, আমি তোকে কখনো স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো না,শুধু মায়ের অনুরোধে বিয়ে করেছি সাম্মি তুই আমায় ভুল বুঝিস না”সেদিন আমার ইহানের কথা মেনে নেয়া ছাড়া কোন উপায় ছিলো না,

ইয়ে আমি তোকে একটা কথা মানে একটা প্রস্তাব দিতে এসেছি

মিথিলা- কি?

সাম্মি- অরুর মতো আমি ও চাই তুই আর ইহান এক হয়ে যা

মিথিলা – সাম্মিইইইইইই,পাগল হয়ে গেছিস তুই?

সাম্মি- আমি সিরিয়েস

মিথিলা- আর একটা কথা বললে থাপ্পড় খাবি, যা আমার সাথে তোর আর আসতে হবে না

সাম্মি- তুই….

মিথিলা – সাট আপ

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর/পর্ব-৪১

0

খেলাঘর/পর্ব-৪১
লেখা- সুলতানা ইতি

মিথিলা বাসায় এসে নির্ঝরিণী আর আয়ান কে কথা টা জানায়, আয়ান অনেক খুশি আজ
আয়ানের থেকে ও অনেক বেশি খুশি আয়ানের দুই বোন ভাইয়ের খুশি তাদের কাছে রাজ্য জয়ের সমান

নির্ঝরিণী – ভাই এবার মন দিয়ে পড়াশুনা কর দেখলি তো তোর হবু শ্বশুর কি বল্লো

আয়ান- তোকে এতো পাকামি করতে হবে না

নির্ঝরিণী – দেখলি আপু এখন ও বিয়ের কতো দেরি এখনি ভাই আমায় পাত্তা দিচ্ছে না বউ আসলে জানি কি করে

আয়ান- আপু নির কে কিছু বল

মিথিলা- উফফ তোরা আবার শুরু করলি? নির্ঝর আমার সাথে কিচেনে আয় কাজে হেল্প কর, তা হলে আর ঝগড়া করার ফন্দি মাথায় আসবে না

নির্ঝরিণী – আমি পারবো না তোমার আদরের ভাই কে বলো

মিথিলা- নির্ঝরিণীইইই আমার লেইট হয়ে যাচ্ছে আসবি কি না বল

নির্ঝরিণী – এই রে আপু রেগে গেছে আসছি আপু,,আমার পুরো নাম ধরে ডাকলেই বুঝে যাই আমাদের চশমা ওয়ালির রাগ উঠেছে হি হি হি

মিথিলা বাসার সব কাজ শেষ করে অফিসের জন্য বের হলো আজ ও লেইট হয়ে গেলো অফিসে পৌছতে ইহান খুব রেগে গেছে আজ

ইহান- মিথিলা তুই জানতিস আজ অফিসে অনেক কাজ পুরোনো হিসেব গুলো সব করতে হবে,আজকে আতাহার গ্রুপ কে তাদের দেনা পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে এর পর থেকে ঐ গ্রুপের সাথে চৌধুরী গ্রুপের কোন সম্পর্ক থাকবে না,এর পর তুই আজ লেইট করলি

মিথিলা- স্যরি?

ইহান- ইটস ওকে,আজ থেকে অফিসের একটা গাড়ি তোকে বিকেলে দিয়ে আসবে,সকালে নিয়ে আসবে ওকে

মিথিলা- তার দরকার নেই বাসার কাজ সামলাতে একটু লেইট হয়েছে তাই পৌছতে পারিনি, এর পর এমন হবে না

ইহান- ওকে এটাই লাস্ট,এর পর ভুল হলে আমি যা বলবো তোকে তা শুনতে হবে,,সব ব্যাপারে বেশি বুঝতে যাবি না,বেশি বুঝে জীবনের বারটা বাজিয়েছিস

মিথিলা চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে

ইহান- কি হলো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো যা হিসেব গুলো দেখ

মিথিলা নিজের ক্যাবেনি বসে কাজ করছে,, এমন সময় ইহানের কল আসে
– মিথিলা কাজ হয়েছে? শেষ হলে তাড়া তাড়ি ফাইল হুলো নিয়ে আয় মিঃ চৌধুরী এসে গেছে

মিথিলা- এই তো শেষ আর একটু,মিথিলা ফাইল গুলো নিয়ে ইহানের ক্যাবেনি ডুকে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে ইহানের সামনে ইভান বসে আছে মিথিলার পা চলছে না যেন থমকে গেছে

ইহান- কি হলো মিস মিথি দাঁড়িয়ে পড়লে যে এসো
মিথিলা গিয়ে ইহানের পাশে দাঁড়ায়
মিথিলা কে দেখে ইভান বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়।

ইহান- মিঃ চৌধুরী আপনার আবার কি হলো, দাঁড়িয়ে পড়লেন যে বসুন

ইভান বসে পড়ে

ইহান- ইন্টিডিউজ করিয়ে দিচ্ছি,আমার পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট মিস আফরিনা মিথিলা

মিথিলার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে
ইভানের ও সেম অবস্থা

ইহান- কি হলো আপনারা দুজন দুজনকে হাই বলুন

ইভান ইহানের কথায় কান না দিয়ে বল্লো
– কাজের কথায় আসুন মিঃ ইহান চৌধুরী

ইহান- তা তো আসবো ই আফটার অল দীর্ঘ দিন পর চৌধুরী গ্রুপ আর আতাহার গ্রুপের বন্ধুত্বের সম্পর্ক টা ভাংতে যাচ্ছে তার আগে বলুন,আপনি মিস আফরিনা কে ছিনেন কিনা

কি হলো আফরিনা তুমি ছিনো নাকি মিঃ চৌধুরী কে

মিথিলা- ইহান, স্যরি, বসস আপনি প্লিজ কাজের কথায় আসুন এখানে পার্সোনাল কথা না বলি

ইহান- ফর্মালিটি শিখাচ্ছো আমাকে? অবশ্যই শিখাতেই পারো তুমি আমার সেক্রেটারি প্লাস আর কতো কি বলে ইভানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বল্লো বাই দ্যা য়ে কাজের কথায় আসা যাক

মিথিলা কে দেখার পর ইভান পুরো টা সময় স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে ও কোন লাভ হয়নি ইহান তার চেহারা দেখেই বুঝতে পেরেছে ইভান জ্বলছে আর লুচির মতো ফুলছে

ইহান ফাইল গুলো ইভানের সামনে দিয়ে বল্লো নিন হিসেব টা বুঝে নিন

ইভান ফাইল হাতে নিয়ে বল্লো
– আর দেখতে হবে না,আমার বিশ্বস্ত মানুষ ই ফাইল গুলো দেখেছে

ইহান- এক্সকিউজমি কিছু বললেন?

ইভান- নাহ কিছু বলার নেই আপনাকে আসি গুড বাই

ইহান- এক মিনিট একটা প্রশ্ন করার ছিলো

ইভান- করুন

ইহান তাচ্ছিল্যর হাসি হেসে বল্লো
-আপনি কি Jealous ফিল করছে

ইভান- আপনার কি দেখে মনে হলো,আমি Jealous ফিল করছি

ইহান- না মানে খুব তাড়া আপনার এখান থেকে বেরুনোর জন্য

ইভান- আপনি এখন থেকে আমার বিজনেস ক্লাইন্ট নন,আপনার সাথে আমি রিলেটেড নই সো আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই

ইহান- তাই নাকি দুলা- ভাই

ইভান আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে বেরিয়ে গেলো
গাড়িতে বসে আজ উলটা পালটা ড্রাইভ করছে মাথার মধ্যে মিথিলার ছবি আর ইহানের কথা গুলো ভন ভন করে গুরছে,তার পর গাড়ি টা থামিয়ে কিছুক্ষন জিম মেরে বসে রইলো,
– মিথিলা মিথিলা হ্যা মিথিলায়ায়ায়ায়া তার যোগ্যতা প্রমান করে দিয়েছে সে এখন চৌধুরী গ্রুপের এমডির পি এস আমি তাকে রিজেক্ট করেছি সে প্রতিশোধ নিয়ে নিলো, যাদের জন্য আমি তাকে বুঝতে পারিনি সে তাদের কম্পানিতে কাজ করছে নো য়ে মিথিলা আমার, মিথিলাকে আমি এই চাকরী করতে দিবো না মিথিলা আমার ওর উপর সব অধিকার আমার ই আছে কি বল্লো ঐ ছেলেটা , আমি Jealous কি না,আমি কেনো Jealous হবো মিথিলা আমার, সো আমার Jealous হওয়ার কোন দরকার নেই, আই লভ হিম

ইহান- খুব জব্দ হয়েছে আজ বুঝলি মিথি আজ সারাদিন লুচির মতো ফুলবে দেখিস

মিথিলা- এই সবের কোন দরকার ছিলো না ইহান,উনি কাজে এসেছে কাজের বাইরে কথা গুলো বলা কি ঠিক হয়েছে

ইহান রহস্য ভরা দৃষ্টিতে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বল্লো
– এ.ল্লো তোর কি বুকের বাম পাশে লেগেছে খুব

মিথিলা- ইহান ফাজলামি করিস না ভালো লাগে না সব সময় ফাজলামি

ইহান- এই তুই ভাবিস কি নিজেকে তুই বিশ্ব সুন্দরি সব ছেলে তোর জন্য পাগল? ,আমি এখন ও তোকে চাই তাই তো? তা হলে আমি বলবো তুই ভুল দারনা করছিস

মিথিলা- ইহান আমি এটা কখন বললাম, আমি শুধু বলেছি মজা করা সব সময় ভালো লাগে না

ইহান টেবিলে আঘাত করে বল্লো,অবশ্যই ভালো লাগতে হবে বিকজ আম ইউর বস ওকে

মিথিলা আর কিছু না বলে রাগে গজ গজ করতে করতে নিজের ক্যাবিনে ফিরে এলো
– এমন করছে কেনো ইহান,জব ই তো করছি বিক্রি তো হয়ে যাইনি ওর কাছে,এই জব টা ছেড়ে দিবো তার আগে অন্য কিছু একটা খুজে নিতে হবে

ইহান – উফফ মিথির সাথে এ ভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি,কিন্তু কি করবো কতোক্ষন আর নিজের ভেতর কষ্ট ছেপে রাখবো, ভালো বেসেছিলাম তোকে আর তুই করেছিলি অবহেলা, জীবন টা ই শেষ হয়ে গেলো

মিথিলা অফিস ছুটির আগেই বেরিয়ে পড়ে
কাজে মন বসছিলো না ঠিক করলো আজ হেটেই বাসায় ফিরবে
মিথিলার যখন খুব মন খারাপ হয় তখন নিশ্চুপ একা হাটতে পছন্দ করে এতে অনেক টা পথ হাটা যায় পা ও ব্যাথা হয়না যেহেতু তখন সময় টা ঘোরের মধ্যে কাটে
মিথিলা হাটছে হঠ্যাৎ নজর পড়লো সামনে গাড়ি পার্ক করে ইভান দাঁড়িয়ে আছে পথ রোধ করে

মিথিলা পাশ কাটিয়ে যেতেই ইভান বাধা হয়ে দাঁড়ায়
মিথিলা দাঁড়িয়ে যায় কিন্তু কোন কথা বলেনি

ইভান- এই মেয়ে খুব অ্যাটিটিউড দেখাচ্ছো তাই না অবশই দেখানোর কথা চৌধুরী গ্রুপের এমডির পি এস এর অ্যাটিটিউড থাকবে না এ হয় নাকি,মিথি তুমি ঐ ছেলেটার সামনে সামনে থাকো কেনো বলো তো আমার বুঝি খারাপ লাগে না

মিথিলা – দিন দুপুরে ড্রিংক করে অসভ্যের মতো মাতলামি করতে ভালো লাগছে তাই না

ইভান- একটু খেয়েছি কি করবো বলো তুমি নেই এই হৃদয়ে যে মরুভূমি হয়ে আছে একটু বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছি, দেবে কি এক ফোটা বৃষ্টির জ্বল, অবশ্যই তা দিয়ে মরুভূমি তে কিচ্ছু হবে না তবুও আমি তৃপ্ততা খুজে নিবো প্লিজ

মিথিলা- আপনি এখন সেন্সে নেই বাসায় যান

ইভান- বাসায় যাবো? কিন্তু সেখানে তো তুমি নেই তোমাকে দেখে ও যে চোখের তৃষ্ণা মিটেনা বার বার দেখতে চায় এই চোখ, চলনা মিথি নতুন করে পথ চলা শুরু করি

মিথিলার খুব রাগ হচ্ছে কিন্তু দাতে দাত ছেপে সহ্য করছে পাগলের সাথে পাগলামি করার কোন মানে হয় না মিথিলা পাশ কেটে চলে যাচ্ছিলো ইভান মিথিলার হাত ধরে টেনে গাড়ির সাথে ছেপে ধরে বল্লো
– এই মেয়ে এই কান খুলে শুনো, চাকরী টা ছেড়ে দাও,আমার বউ অন্যের সেক্রেটারি, ব্যাপার টা কেমন হয়ে গেলো না, আমার কিসের অভাব বলো,কোন কিছুর অভাব নেই, বলো চাকরি টা ছাড়বে কি না

মিথিলা- উফফ আমায় ছাড়ুন রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাতলামি করা আপনার সুশীল সমাজে থাকতে পারে,কিন্তু আমার অভদ্র সমাজে নেই

ইভান- ঠিক আছে তোমায় ছেড়ে দিবো আগে বলো তুমি এই চাকরী টা ছেড়ে দিবে

মিথিলা- নাহ,আমি চাকরী তো ছাড়বো ই না, এই বলে ইভান কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে মিথিলা চলে এলো, রাস্তার মানুষ জন কেমন কেমন করে তাকাচ্ছে মিথিলার দিকে মিথিলার সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই আপন মনে হেটেই চলছে

আজ মধুপুর কলেজে সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে প্রদান অথিতি শিল্পি নির্ঝরিণী,
নির্ঝরিণী সেখানে পৌছে তো অবাক হয়ে গেছে কারন সেখানে আয়াপ খান ও আছে
নির্ঝরিণী সিন্ধান্ত নিলো এখানে গান গাইবে না কিন্তু দর্শকের অনুরোধের কারনে যেতেও পারেনি
এই অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা যিনি করবেন আমান সাহেব তিনি নির্ঝরিণী আর আয়াপ কে ফুল দিয়ে স্বাগত জানিয়ে স্টেজে বরন করে নিলো, সবার অনুরোধ আগে নির্ঝরিণী গান গাইবে

নির্ঝরিণী গান ধরলো
“চাবেরকি বাহুমে মোজইহেএ যেতনি
হামকবি তুম্মম্মসে, মুহাবেতহু উতনি
খেইয়ে বিকরারি খেইয়ে বিকরারিনা আবহুকাম্মম্ম
বহুত ফেয়ার কারতি হু তুম হে সানাম
কাসাম চাহে লে লোওও খোদাকি কাসাম”

নির্ঝরিণী গান শেষ করে স্টেজ থেকে নেমে নিজের সিটে এসে বসলো

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর/৪০

0

খেলাঘর/৪০
লেখা-সুলতানা ইতি

মিথিলা এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে বেরিয়ে যায় ইভান পিছন থেকে ডাকলে মিথিলা সেদিকে পাত্তা দেয়নি

আয়ান আর নির্ঝর পড়তে বসেছে হঠ্যাৎ আয়ান পড়া বন্ধ করে বল্লো
– নির তোর সাথে কি আয়াপের ঝগড়া হয়েছে

নির্ঝরিণী বিরক্ত হয়ে বল্লো
– কেনো

আয়ান- না আজ প্রাইভেট থেকে ফেরার পথে আয়াপ খানের সাথে দেখা হলো,বল্লো তুই কেনো ওর ফোন রিসিভ করছিস না,আর তুই যা বুঝেছিস সেটা ভুল

নির্ঝরিণী – ভাই ঐ শয়তান টা কে নিয়ে কোন কথা আমাকে বলবি না ওর ব্যাপারে বলতে আমার ভালো লাগে না

আয়ান- নির অনেক সময় আমরা যা দেখি যা বুঝি তার মধ্যে ভুল থাকে সব সময় আমাদের চোখ যে সঠিক টা দেখবে এমন তো নয়

নির্ঝরিণী – ভাইই আর একটা কথা বললে আমি আপু কে ডাকবো

আয়ান- আপু বাসায় ফেরেনি এখন ও

নির্ঝরিণী উঠে অন্য রুমে চলে গেলো যে ভুল সে করেছে আর কোন ভুল করতে চায় না

আয়াপ নির্ঝরিণী দের বাড়ির একটু দূরে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জানে এই ভর সন্ধায় নির্ঝরিণী বের হবে না তবু ও কিছু ভালো লাগছে না, নির্ঝরিণী এমন বাজে ছেলে মনে করে আমাকে ছিঃ আমার ই ভুল ছিলো আগেই ওকে ব্যাপার টা ক্লিয়ার করে বললেই হতো
এতো দিন বুঝিনি নির্ঝরিণী কে আমি কতো টা চাই আজ বুঝে ও নির্ঝরিণী আমার থেকে অনেক দূরে, ভালোবাসি নির্ঝু তোকে,, এই পুঁচকে মেয়ের এতো রাগ,এতো বুঝে, আয়াপ নিজেই হেসে উঠলো নির্ঝরিণী দূরদর্শীতা দেখে, আসলে এখন যে যুগ এই যুগে নির্ঝরিণীর দূরদর্শীতা দেখানো ভুল কিছু নয়
এখানে দাঁড়িয়ে থেকে ও ওর দেখা পাবো না সো বাসায় যাই খুব খিধা পেয়েছে উফফ

মিথিলা বাসায় এসে দেখলো নির্ঝরিণী আলাদা রুমে পড়ছে

মিথিলা- কিরে আজ আবার ঝগড়া করেছিস

নির্ঝরিণী – নাহ ঝগড়া করিনি এমনি পড়তে ভালো লাগছে এখনে নিরিবিলি তে

মিথিলা বোনের কথা শুনে মুচকি হাসলো, এই টুকু মেয়ে ঠিক কথা লুকাতে শিখে গেছে

ছোট খাটো কোন ফাংশান হলে সেখানে নির্ঝরিণী কে ডাকা হয় আয়াপের সাথে থেকে নির্ঝরিণী কে ও এখন অনেক ই ছিনে তাই আর আয়াপের সাথে তার কাজ করতে হয় না
একদিন এক শো তে মিথিলা নির্ঝরিণীর জনপ্রিয়তা দেখে খুব খুশি হয়
যাক বোন আমার একা একাই কিছু করার চেষ্টা করছে এই সাহস টা ও তো সবার থাকে না

মিথিলা অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে যায়,এখন থেকে যেয়ে আবার টিউশনি ধরতে হবে ইচ্ছে থাকা সত্তে ও বোনের পার্ফম দেখা হয়নি

মিথিলা রিক্সা না পেয়ে হাটছে এই শহরে পথ চলার সংগি রিক্সা মিথিলার খুব প্রিয়ো
মিথিলার পাশ ঘেঁষে একটা গাড়ি থেমে যায়
মিথিলা ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে যায় গাড়ি থেকে একটা অচেনা ছেলে নেমে বল্লো
– আপু কোথায় যাবেন চলুন আপনাকে লিফট দিই

মিথিলা কপাল কুঁচকে বল্লো
– কে আপনি, পাগল হয়েছেন নাকি, অচেনা একটা মেয়েকে লিফট দিতে চাইছেন

ছেলেটি আর অন্য কেউ নয় আয়াপ খান ই নির্ঝরিণীর কাছে যেতে না ফেরে বুদ্ধি করে মিথিলা কে ফটাতে আসছে যদি মিথিলা কে মাধ্যম করে নির্ঝরিণীর সাথে কথা বলা যায়
বুদ্ধি টা আসলে আয়ানের দেয়া সেদিন রাতে আয়ানের সাথে অনেক কথা হয় সব কথার মাঝে আয়ান বল্লো নির্ঝরিণী আপুর কথা বেশি শুনে কাজেই আপনার আপু কে ম্যানেজ করতে হবে
সেখান থেকেই আজ সেধে সেধে মিথিলার সাথে কথা বলতে আসা

আয়াপ- কি বলছেন আপু আমি তো আপনাকে ছিনি রোজ দেখিও আপনি চৌধুরী গ্রুপে জব করেন তাই না,,
তাই ভাবলাম আপনি যে পথে যাবেন আমি ও সেই পথেই যাচ্ছি লিফট দিতে প্রব্লেম কি

মিথিলা- কিন্তু আমি আপনাকে আগে কখনো দেখিনি

আয়াপ- তাতে কি আপু সবাই যে সবাইকে ছিনতে হবে এমন কোন কথা নেই, আমি আপনার ছোট ভাইয়ের মতো প্লিজ আসুন

মিথিলার মোটেও গায়ে পড়ে সাহায্য করার ব্যাপার টা ভালো লাগলো না
– স্যরি আসলে আমার পথে একটু কাজ আছে তাই গাড়িতে যেতে পারছি না,বলে মিথিলা হন হন করে হাটা শুরু করলো

আয়াপ – যাক বাবা দুই বোনের ই শুচিবায়ু, একটু বেশিই বুঝে ধেৎ মেজাজ টা ই খারাপ হয়ে গেলো

আয়ানের আজ মন টা ভালো নেই কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না নির টা ও নেই তা হলে ওর সাথে একটা পরামর্শ করা যেতো উতলা কে ছাড়া আমি থাকবো কি করে ওর মা যে ওর বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে
আয়ান টেবিলে হাত রেখে হাতের উপর মাথা দিয়ে বসে আছে

মিথিলা বাসায় ফিরে নিজের কাজ গুলো শেষ করে রিডিং রুমে এসে দেখে আয়ান এমন করে বসে আছে মিথিলা আয়ানের মাথায় হাত রেখে বল্লো
– ভাই তোর কি শরির খারাপ?

আয়ান মিথিলার ছোয়া পেয়ে মাথা উঠিয়ে ঠিক করে বসলো

মিথিলা আয়ানের চোখ দেখে আৎকে উঠে ভাই তুই কেঁদেছিস কেনো? ভাই বল তোর কি হয়েছে?
মিথিলা ব্যাস্ত হয়ে পড়ে আয়ান কে নিয়ে

আয়ান আর নিজেকে ধরে রাখতে না ফেরে মিথিলা কে ঝড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়

মিথিলার খুব ভয় করছে সে কি মনের অজান্তে ভাই কে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে নাকি, কিন্তু মনে পড়ছে না তো কিছু
কাঁদছে কেনো আমার ভাই
মিথিলা কয়েক বার কান্না থামাতে বলে ও কোন কাজ হয়নি
পরে আয়ান নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– স্যরি আপু কেনো জানি আজ খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছিলো তুই কিছু মনে করিস না, এই বলে আয়ান উঠে চলে যায় মিথিলা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কি হচ্ছে এই সব কিচ্ছু বুঝতে পারছে না

নির্ঝরিণী বাসায় ফিরতেই মিথিলা বল্লো
– নির্ঝরী আয়ানের কি হয়েছে জানিস

নির্ঝরিণী অবাক হয়ে বল্লো
– কেনো আপি যাওয়ার সময় তো ভালো ই দেখে গেলাম কি হলো ওর

মিথিলা সব কথা নির্ঝরিণী কে বল্লো
নির্ঝরিণী- আপু এমনিতে অনেক রাত হয়েছে তুমি শুয়ে পড়ো আমি দেখছি ভাইয়ের কি হয়েছে

মিথিলা- হুম, আর আয়ান কি বলে আমায় জানাস মিথিলা নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লো
কিন্তু অস্বস্তি কাজ করছে কিছুতেই শান্তি লাগছে না, সারা দিন ভাই বোন কে শাসনের উপর রেখেছি, আর তাই ভাই আমায় ভয়ে তার মনের কথা বল্লো না এতো শাসন করেছি তাদের, এমন টা তো চাইনি আমি ছেয়েছি ভাই বোনে ভালোবাসার সব ধরনের ছোঁয়া দিয়ে আগলে রাখতে, কিন্তু কখন যে ওরা এতো দূরে সরে গেছেহ বুঝতে পারিনি

নির্ঝরিণী আয়ানের রুমে গিয়ে লাইট জ্বালালো
আয়ান উঠে বসলো নির্ঝরিণী আয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– কি হয়েছে ভাই তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো

আয়ান – তুই ফিরেছিস নির,জানিস সামনের সাপ্তাহে উতলার বিয়ে

নির্ঝরিণী – মানে বলছিস কি,

আয়ান- হুম উতলা খুব কেঁদেছে নির
বলেছে সুইসাইড করবে তবু ও অন্য কাউকে বিয়ে করবে না,আমি আপুকে কিছু বলতে পারছি না, বললে ও আপু মানবে না,না মানার ও যুক্তি আছে, কিন্তু

নির্ঝরিণী চুপ করে শুনছে সত্যি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না, আপু কে বললে আপু কি ভাবে নিবে ব্যাপার টা, কিন্তু দুটি জীবন তো নষ্ট হতে দেয়া যায় না, আব্বুর মৃত্যু পর ভাইকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরাতে কতো কষ্ট করতে হয়েছে
আবার যদি ভাই সে রকম হয়ে যায়,না আমি আপু কে ব্যাপার টা জানাই যা আছে কপালে তা ই হবে
নির্ঝরিণী আয়ান কে ছেড়ে উঠে দাড়ালো,আপু এখন ও ঘুমায়নি আমার বিশ্বাস
নির্ঝরিণী মিথিলার রুমের দরজায় এসে নক করে

মিথিলা- ভেতরে আয় নির্ঝর

নির্ঝরিণী ভেতরে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো
মিথিলা শোয়া থেকে উঠে চোখে চশমা টা পরে নিলো,
– কিরে আয়ান তোকে কিছু বলেছে?

নির্ঝরিণী – আপি ব্যাপার টা তোকে কি করে বলি বলতো,আসলে ভাই ভয়ে তোকে কিছু জানাতে চায়নি,

মিথিলা- ছেয়ে ছিলাম ভালোবাসা দিয়ে তোদের জীবনের কানায় কানায় ভরিয়ে দিবো,কিন্তু আমি যে না চাইতেই তোদের মনে ভয় ডুকিয়ে দিয়েছি সেটা বুঝতে পারিনি

নির্ঝরিণী – আপু তুই কষ্ট পাস না প্লিজ,তুমি তো বড়, মা বাবার জায়গাতে আছো ভালো মন্দের জন্য বলতেই পারো,দোষ টা আমাদের আমরা তোমাকে বেশি ভুল বুঝে ফেলেছি

মিথিলার চোখে পানি চশমা খুলে চোখের পানি মুছে বল্লো
– বল তো আয়ানের কি হয়েছে

নির্ঝরিণী কোন ভনিতা না করে বল্লো
– উতলা আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, ছেলে সরকারী চাকুরী জীবি,তাই আন্টি এই সমন্ধ হাত ছাড়া করতে চাইনি,কিন্তু ভাই আর উতলা আপু দু জন দুজনকে ভালোবাসে খুব,
আপু ওদের ভালোবাসা কতো টা গভীর তুমি বুঝতে পারবে না, উতলা আপু বলে দিয়েছে ভাই কে না ফেলে সুইসাইড করবে,আর ভাই তোকে কষ্ট দিতে পারবে না ভেবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে

মিথিকা নিস্তব্ধ হয়ে শুনছে নির্ঝরিণীর কথা,ভাবছে সে আমি চাইতাম না উতলা আয়ানের সাথে মিশে আয়ানের ছাত্র জীবন টা নষ্ট করে দিক টিনেজ বয়সে এই সব সম্পর্ক ভালো কিছু ভয়ে আনে না তাই তো আলাদা করতে ছেয়েছি, কিন্তু আমার মনে তো ভিন্ন কিছু ছিলো ভাই স্ট্যাবলিশ হলে উতলা কে ভাইয়ের বউ করে আনবো আমার ভাই যদি জীবন নিয়ে সুখি না হয় তা হলে আমরা সুখি হবো কি করে

মিথিলা কে চুপ করে থাকতে দেখে
নির্ঝরিণী বল্লো
– আপু দুটি জীবন এ ভাবে নষ্ট হতে দেয়া যায় না প্লিজ আপু তুই আন্টির সাথে কথা বল এখন ও অনেক সময় আছে

মিথিলা – আমি বললেই কি আন্টি রাজি হবে আমাদের আগের অবস্থান আর এখন কার অবস্থন আলাদা,আয়ান এখন স্টুডেন্ট আর ঐ ছেলে তো সরকারি চাকুরি করে

নির্ঝরিণী – আপু আমার ভাই কম কিসের, পড়া শুনা শেষ করে আমার ভাই যে সরকারি চাকুরি পাবে না তেমন তো নয়

মিথিলা- ওরা কি উতলা কে ততদিন পর্যন্ত রাখবে

নির্ঝরিণী – চেষ্টা করে দেখিনা,চেষ্টা করতে তো কোন দোষ নেই

মিথিলা- ঠিক আছে আমি কাল আন্টির সাথে কথা বলবো তুই আয়ান কে গিয়ে বল চিন্তা না করতে

নির্ঝরিণী চলে যায় মিথিলা ভাবছে ইহানের কথা এখন কার ছেলে মেয়েরা আমাদের থেকে এগিয়ে, তখন যদি আমি ভাগ্যকে মেনে না নিয়ে ইহান কে সব বলতাম তা হলে এতো গুলো জীবন নষ্ট হতো না,হয়তো অরণি ভালো থাকতো ,হয়তো আমি ও ইহানের সাথে ভালো থাকতাম,কিছুতেই আর দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি মিথিলা,রাত টা তার এভাবেই কেটে যায়,

সকাল সাত টায় মিথিলা উতলাদের বাসায় চলে
যায় পাশা পাশি বাসা হওয়ায় এই এক সুবিধা, সারা রাত ছটফট করেছে মিথিলা ভাইয়ের কথা ভেবে তাই সকাল না হতেই চলে এলো
উতলার মা মিথিলাকে দেখে তো অনেক খুশি

আন্টি- আরে মিথিলা তুই,আজকাল তো আমাদের বাসার পথ টা তুই ভুলেই গেছিস

মিথিলা হেসে বল্লো এখন থেকে রোজ আসবো আন্টি, আসলে সময় করতে পারি না বুঝো ই তো কতো ব্যাস্ত থাকি সারা দিন

আন্টি- তা আর বলতে হবে না মা,
বাপ মা মরা নির্ঝরী আর আয়ানের পাশে তুই না থাকলে তাদের যে কি হতো,,তোর মতো বোন যেন সবার ঘরে ঘরে হয়

মিথিলা হেসে বল্লো
– আন্টি আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো
উতলা ততক্ষনে পর্দার আড়ালে এসে দাড়িয়েছে

আন্টি- কি কথা বল মা

মিথিলা- আন্টি শুনলাম উতলা কে বিয়ে দিচ্ছেন

আন্টি হেসে বল্লো
– হ্যা মা ভালো ছেলে পেয়েছি তাই হাত ছাড়া করতে ইচ্ছে হয়নি

মিথিলা- কিন্তু উতলা তো এখন ও ছোট এই বয়সে বিয়ে

আন্টি- তোর কি এই বয়সে বিয়ে হয়নি,তবু কি তুই পড়া শুনা ছেড়েছিস

মিথিলা- আন্টি সবার জীবন চক্র এক নয়

আন্টি- কি বলতে চাইছিস তুই

মিথিলা- আন্টি উতলা কে চাই আমার ভাইয়ের বউ হিসেবে নয় আমার আরেক বোন হিসেবে,নির্ঝরিণী আয়ান কে যেমন আগলে রেখে বড় করেছি, উতলা কে ও তেমনি রাখব

আন্টি বিব্রত বোধ করতে লাগলো
– কিন্তু ওরা দুজনে তো এখন ও অনেক ছোট

মিথিলা- আমি এখন ই ছাচ্চি না বিয়েটা দিতে তবে আমাদের বড়দের মধ্যে পাকা কথা হয়ে থাক,তার পর ওরা যখন ম্যাছিউর হবে তখন ঢাক ঢোল বাজিয়ে উতলাকে নিবো

আন্টি- কিন্তু মা উতলার বাবা শুনলে মানবে না তা ছাড়া বিয়ের সব কেনা কাটা হয়ে গেছে…

মিথিলা- প্লিজ আন্টি আমি শুধু আমার ভাইয়ের কথা ভেবে বলছি না আমি উতলার কথা ও ভাবছি, উতলা সুখি হবে না,আর যদি খারাপ কিছু করে ফেলে তখন? আমরা কেউ ই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না, প্লিজ আন্টি আপনি আংকেল কে বুঝিয়ে বলবেন

আন্টি- তুমি তো আমায় চিন্তায় ফেলে দিলে মা,আচ্ছা তুমি বসো আমি তোমার আংকেল কে ফোন করে আসি
আন্টি উঠে চলে গেলো

– উতলা আর পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না বেরিয়ে এসো

উতলা এসে মিথিলা কে ঝড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয় আপু তুমি খুব ভালো প্রথম যেদিন আয়ানের সাথে দেখা করতে গেছি সেদিন তুমি আয়ান কে মেরেছো আড়ালে দাঁড়িয়ে আমি সব শুনেছি,, সেদিনের পর থেকে ঐ বাসায় যাওয়ার সাহস হয়নি,তোমাকে খুব খারাপ ভেবেছি সেদিন, আজ তুমি আমার ধারনা পালটে দিয়েছো

মিথিলা- পাগলি এতো কাদতে নেই, দেখি আন্টি কি বলে
বেশ কিছু সময় পর আন্টি হাসি হাসি মুখ করে ফিরে এসে বল্লো
– মিথিলা তোমার কথা বলাতে তোমার আংকেল অমত করেন যদি আয়ান কে উনি পছন্দ করেন না তবুও তোর ভাই তাই নিষেধ করেনি,তবে উনি বলেছে,আয়ান পড়া শুনা শেষ করলেই উতলা কে ঘরে তুলতে হবে,জবের জন্য অপেক্ষা করতে পারবে না

মিথিলা খুশি হয়ে উতলার কপালে চুমু খেয়ে বল্লো
– আলহামদুলিল্লাহ আন্টি এতে ই অনেক,আমি আছি তো আমার বোনের কোন কষ্ট হতে দিবো না
কিরে এবার খুশি তো

উতলা লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে ফেল্লো
আন্টি মিষ্টি নিয়ে এলো
নে মা,শুভ কাজে মিষ্টি মুখ না করলে হয়

মিথিলা বাসায় এসে নির্ঝরিণী আর আয়ান কে কথা টা জানায়, আয়ান অনেক খুশি আজ
আয়ানের থেকে ও অনেক বেশি খুশি আয়ানের দুই বোন ভাইয়ের খুশি তাদের কাছে রাজ্য জয়ের সমান

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর /পর্ব-৩৯

0

খেলাঘর /পর্ব-৩৯
লেখা-সুলতানা ইতি

সারা পথে নির্ঝরিণী কান্না করেছে,বাসায় এসে দেখে কেউ নেই আয়ান কলেজে আপু অফিসে একা বাসা পেয়ে নির্ঝরিণী চিৎকার করে কাদতে লাগলো,ছেলেরা এমন কেনো

কিছুক্ষন পর আয়ান বাসায় ফিরলো নির্ঝরিণী কে বাসায় দেখে বল্লো
– কিরে আজ শো তে যাসনি

নির্ঝরিণী – গিয়েছি, চলে এসেছি

আয়ান- তা হলে তোর আয়াপ খানের গাড়ি কলেজের সামনে দেখলাম যে

নির্ঝরিণী কর্কশ কন্ঠে বল্লো
– হয়তো কারো জন্য দাড়িয়ে ছিলো

আয়ান- ওহ হতে পারে বেছারা তো গাড়ি থেকে নামলেইই সবাই ছিনবে সেটা আবার আরেক প্রব্লেম,কবে তোর এমন জনপ্রিয়তা হবে

নির্ঝরিণী- উফফ ভাই চুপ করতো, ভালো লাগছে না নির্ঝরিণী উঠে চলে গেলো

আয়ান- আরেহ এতো রেগে আছে কেনো,নিশ্চয়ই আয়াপকে মনের কথা বলতে না ফেরে এই অবস্থা

মিথিলার অফিসে নিজের ক্যাবেনি বসে কাজ করছিলো ইন্টার কমে ডাক পড়লো, ইহান ডাকছে

মিথিলা- কিরে ডাকছিলি? কিছু কাজ ছিলো সেগুলা ই করছিলাম

ইহান- ওহ তোর কাজ কি শেষ

মিথিলা- হুম কেনো

ইহান- অরণি দের বাসায় যাবো,চল

মিথিলা – কেনো

ইহান গম্ভীর হয়ে বল্লো গেলেই বুঝবি তা ছাড়া আজ সেখানে সবাই থাকবে

মিথিলা আর কিছু বল্লো না অরণি দের বাসায় গিয়ে মিথিলা সত্যি সারপ্রাইজড হলো, সাম্মি রাহি সবাই সেখানে
মিথিলা গিয়ে সাম্মি কে ঝড়িয়ে ধরলো
– তুই তো আমায় ভুলেই গিয়েছিস সাম্মি

সাম্মি- ভুলিনি ইহানের থেকে তোর রোজকার খবর পাই

মিথিলা- ওহ তোর সাথে তো ইহানের বেশি কথা হয় এখন

অরণি আজ অসুখের কথা ভুলে গিয়ে বল্লো
– আজ সবাই এক হয়েছে, আজ কিন্তু আমি রান্না করে সবাইকে খাওয়াবো

মিথিলা- মাথা খারাপ? এই অসুস্থ শরির নিয়ে তুই যাবি কিচেনে

অরনি- মনে নেই মিথি তোর, ছয় বছর আগে তোর বার্থডে তে তুই আমাদের রান্না করে খাইয়েছিস,কথা ছিলো আমার বার্থডে তে আমি তোদের এমন ই রান্না করে খাওয়াবো, আজ আমার বার্থডে

মিথিলা ইহানের দিকে তাকায় আজ অরণির বার্থডে বলেই কি অফিসের কাজ ফেলে এসেছে

ইহান মিথিলার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে ছয় বছর আগের স্মৃতিতে ফিরে গেছে ইহান,ইহান মনে মনে প্রশ্ন করছে মিথিলা কে,মিথি আজ তোকে সেই ছয় বছর আগের মতো প্রপোজ করলে কি তুই ফিরিয়ে দিবি, আজ যে তোকে আমি ঠিক আগের মতো ই ভালোবাসি

মিথিলা ও আজ ইহানের চোখের ভাষা বুঝতে চাইছে,

মিথিলা আর ইহানের অবস্থা দেখে সাম্মি পাশে থেকে গলা খাকানি দিলো
– এহ এহেম্ম

সাম্মির গলার আওয়াজে ইহান বাস্তবে ফিরে এলো
মিথিলা ও নিজেকে সামলে নিলো

ইহান- এ কি করছি আমি ছয় বছর আগের জীবন আর আজকের জীবনের সাথে অনেক অমিল,আজ আমার জীবন একজনের সাথে বাধা আছে আমি কেনো সেটা ভুলে যাই,,

রাহি- এই তোরা কি ভাবনায় মজে থাকবি নাকি দুজনে

মিথিলা- না মানে

রাহি- ঠিক আছে আর না মানে করতে হবে না,চল অরনি সবার জন্য অপেক্ষা করছে ডাইনিং এ

ডাইনিং এ গিয়ে সবাই অবাক সেই আগের মেনু সেদিন মিথিলা যা যা রান্না করেছে চার জনের জন্য আজ অরণি ঠিক তা তাই রান্না করেছে

মিথিলা- হ্যারে এতো বছরে ও তুই সেদিনের খাবারের মেনু গুলো ভুলিস নি তাই না

অরণি – তোর সাথে তো আমার সব দিক থেকেই মিলে যায় মিথি, যেমন খাবারের মেনু গুলোর কথা তুই ও তো ভুলিস নি,ভুললে আজ ছিনতে পারতি না

মিথিলা আর কিছু বল্লো না,চুপ চাপ বসে পড়লো

ইহানের গলা দিয়ে খাবার নামছে না,ইহান বুঝে গেছে অরু কেনো সেই দিনের মেনু আজকের লাঞ্চে রেখেছে,সেদিন আমি মিথিলার রান্নার অনেক প্রশংসা করেছি,অরু চায় আজ ও সেদিনের মতো ওর রান্নার প্রশংসা করি
কিন্তু কি করে বুঝাবো অরু তোকে সেদিনের মতো কোন কিছুই আজ নেই, সব কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে

খাবার টেবিলে বসে কেউ ই খেতে পারছে না সবার চোখে পানি, অরণি ও আজ কাঁদছে

ইহান কোন ভাবে কয়টা খেয়ে হাত ধুয়ে উঠে যায়
তার গলা দিয়ে খাবার নামছে না

ইহান কে উঠে যেতে দেখে অরনি ও উঠে গেলো, একে একে সবাই খাবার অসম্পূর্ণ রেখেই উঠে যায়

ইহানের খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু ছেলে হয়ে কাঁদতে ও পারছে না, লজ্জা করছে তার কাঁদতে
– তোরা কথা বল আড্ডা দে, আমি আসি, এই বলে ইহান কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে যায়

মিথিলা ও বাসায় চলে আসে অরণি সামনে থাকলে কেমন যেন অসহায় লাগে যদি এমন কোন কিছু থাকতো যা দিয়ে অরু কে আগের মতো সুস্থ করা যেত, তা হলে তাই ই করতাম আমি

মিথিলা বাসায় এসে ক্লান্ত শরির টা এলিয়ে দিলো বিছানায়

নির্ঝরিণী এসে মিথিলার পাশে বসলো নিজেকে অনেক টা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে

মিথিলা- কিরে কিছু বলবি,তোর চোখ ফুলে আছে কেনো

নির্ঝরিণী – আজ কলেজে যাইনি,সারা দিন ঘুমিয়ে কাটিয়েছি তাই চোখ ফুলে গেছে

মিথিলা- তুই না সকালে বলেছিস আজ কলেজে যেতেই হবে তোর

নির্ঝরিণী – হুম পরে শরির টা কেমন জানি করছিলো তাই যাইনি

মিথিলা – অহ আচ্ছা

নির্ঝরিণী -বড় আপু ফোন করেছিলো,সেদিন যাওয়ার পথে দুলাভাইয়ের সাথে দেখা হয় আর তাদের মধ্যে অনেক কথা হয়,….

মিথিলা নির্ঝরিণী কে থামিয়ে বল্লো
– দুলাভাই মানে বড় আপুর জামাইর সাথে দুলাভাইর দেখা, মানে ইভানের দেখা

নির্ঝরিণী – হুম

মিথিলা – হুম তার পর

নির্ঝরিণী – দুলাভাই বলছে বড় দুলাভাইয়ের দেশের বাইরে যাওয়ার সব খরচ দিবে

মিথিলা- মানে কি, আপু ইভানের কাছে এই সব কথা বলেছে

নির্ঝরিণী – হুম,আপু বল্লো আপু নাকি কিছু বলেনি সোহাগ ভাইয়া ইভান ভাইয়ার কাছে কথার কথা বলেছে

মিথিলা- উফফ এখন ঐ লোকের সাহায্য নিতে হবে?এখন কয়টা বাজে নির্ঝর বলতো

নির্ঝরিণী – পাঁচটা

মিথিলা- ইভান তো এখন বাসায় থাকে না ওর নতুন বাসার ঠিকানা জানি না এখন

নির্ঝরিণী – তুই কি নিষেধ করবি নাকি

মিথিলা- মানা করতেই হবে ইভানের কাছে থেকে আমার পরবিবার কোন অনুগ্রহ নিক এটা আমি চাই না,আর তা ছাড়া সোহাগ ভাইয়ের মতো লোক দেশের বাইরে গিয়ে বাড়িতে টাকা পয়সা দিবে এটা অবিশ্বাস্য ,

নির্ঝরিণী – ঠিক বলেছিস

মিথিলা- ইভানের নাম্বার আছে তোদের কাছে

নির্ঝরিণী – আয়ানের কাছে আছে

মিথিলা-নাম্বার টা নিয়ে আয় তো

নির্ঝরিণী আয়ানের কাছে থেকে নাম্বার এনে দিলো মিথিলা ইভানকে কল করলো
দুই তিন বার রিং হয়ে যাওয়ার পর কল রিসিভ করলো ইভান

মিথিলা -আপনি কোথায় এখন

ইভান- মিথিইইই তুমি আমায় কল করেছো কি সৌভাগ্য আমার

মিথিলা- আজাইরা কথা বন্ধ করুন আপনি কোথায় আছেন বলুন

ইভান- বাসায় আছি, কেনো

মিথিলা- এখন ই ক্যাফটেরিয়া তে চলে আসুন

ইভান- আমি দু মিনিটে রেডি হয়ে এক মিনিটে আসছি

মিথিলা কল অফ করে দিলো
নির্ঝরিণী – আপু এখন না গেলেই নয়, এখন তো একটু রেষ্ট নিতে পারতি

মিথিলা- না এখন রেষ্ট নিলে ও শান্তি পাবো না
আচ্ছা আমি আসিরে মিথিলা বেরিয়ে যায়

– উফফ মিথিলা আমায় ফোন করে দেখা করতে বলেছে, ই্সস আমি আর ভাবতে পারছি না
ইভান তাড়াহুড়ো করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে আসে
ক্যাফেটেরিয়াতে ইভান অনেক্ষন বসে আছে কিন্তু মিথিলা আসেনি
উফফ মিথি আসতে লেইট করছে কেনো, আমি যে আর অপেক্ষা করতে পারছি না

বেশ কিছুক্ষন পর মিথিলা আসে
ইভান- বসো আর কি খাবে বলো

মিথিলা- আমি এখানে আপনার সাথে গল্প করতে আসিনি,যাস্ট কিছু কথা বলতে এসেছি

ইভান- ঠিক আছে বলো

মিথিলা – এই যে শুনুন এই রকম ভালো মানুষীর মুখোশ পরবেন না আমার সামনে, আমি ছিনি আপনাকে,

ইভান……

– মহান হওয়ার ইচ্ছে আপনার তাই না আমার দুলা ভাইকে দেশের বাইরে পাঠানোর কথা কে বলেছে আপনাকে, আমি বলেছি? বলিনি তো তা হলে? শুনুন আমরা চাইলে আমার দুলা ভাইকে দেশের বাইরে পাঠাতে পারি তার জন্য আপনার মতো লোকের সাহায্য লাগবে না কিন্তু আমরা তাকে পাঠাতে চাই না

ইভান- আমি জানি তো কেনো পাঠাতে চাও না,বড় আপু আমায় বলেছে,ট্রাস্ট মি, মিথি ভাইয়া কে যেখানে পাঠাবো উনি আমার লোকেদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোন খারাপ কিছু করতে পারবে না

মিথিলা- উফফ আপনি এভাবে কথা বলবেন না আপনার কাছে থেকে এভাবে কথা শুনতে আমি অভ্যাস্ত নই,আপনি প্লিজ আমাদের কে আমাদেত মতো করে থাকতে দিন

ইভান- তো আমি কি তোমাকে ডিস্টার্ব করেছি নাকি,তুমি তো আমার সাথে দেখা করতে আসছো, আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই চলে এলে তাই না

মিথিলা- সাট আপ,যাস্ট সাট আপ,আপনার মতো লোকের সাথে দেখা করা কথা বলার কোন ইচ্ছে আমার নেই

ইভান এবার রেগে যায়
– আমার সাথে কেনো কথা বলবে তোমার প্রেমিক আছে না ইহান তার সাথে কথা বলতে ঘুরতে ভালো লাগবে এখন

মিথিলা- ছিঃ আপনার মতো লোকের কাছে এটাই আশা করা যায়,শুনুন আমি কোথায় যাই কার সাথে ঘুরি সেটা আমার ব্যাপার আপনি প্লিজ আমার ফ্যামেলীর লোকদের থেকে দূরে থাকবেন,আমি আপনাকে সহ্য করতে পারি না,আপনার এই মুখ টা না যাস্ট অসহ্য

মিথিলা এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে বেরিয়ে যায় ইভান পিছন থেকে ডাকলে মিথিলা সেদিকে পাত্তা দেয়নি

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর/পর্ব-৩৮

0

খেলাঘর/পর্ব-৩৮
লেখা- সুলতানা ইতি

মিথিলা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো এমন কেনো হচ্ছে আমার সাথে কোন দিক থেকে কোন ভালো খবর পাই না, কি যে হয়েছে
মিথিলা আস্তে আস্তে উঠে জিমির রুমে গেলো
জিমি মিথিলা কে দেখেই হাউ মাউ করে কান্না শুরু করলো

মিথিলা কিছুক্ষন চুপ করে বোন কে জড়িয়ে ধরে রাখলো
– আপু শান্ত হও আর কি হয়েছে আমায় বল

জিমি- আমি আর ওর সংসারে ফিরে যাবো না, তোর কাছে আমায় রাখবি না

মিথিলা- কি হয়েছে পুরো টা বল আমায়

জিমি বলতে শুরু করলো, ওর মাথায় এখন বিদেশে যাওয়ার ভূত ছেপেছে, আমাকে বলতেছে আমার বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে দিতে
আমি বললাম বাবা নেই মা নেই মিথিলা কতো কষ্ট কররে আয়ান আর নির্ঝর কে পড়া শুনা করাচ্ছে,আমি ওদের বড় বোন হয়ে কোন সাহায্য করতে পারছি না আমি কোন মুখে গিয়ে টাকা চাইবো,
এই কথা বলাতে ও আমার গায়ে হাত তুলে আর বলে বাবার বাড়ি টা বিক্রি করে হলেও টাকা নিতে, আমি জানি তোর এই বাড়ি টা ছাড়া আর কোন সম্বল নেই,এখন তুই বল বাড়ি টা কি করে বিক্রি করি

মিথিলা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে জিমির দিকে বুঝার চেষ্টা করছে আপু বাড়ি বিক্রির ব্যাপারে দুলাভাইকে সাপোর্ট দিচ্ছে কি না,ওরা বাড়ি বিক্রির কথা ভাবলো কি করে? মিথিলা শান্ত কন্ঠে বল্লো
– তুই কি চাস

জিমি- তুই যা বলবি

মিথিলা চোখ বন্ধ করে বসে আছে ভাবছে আপু একজন হলে অবলীলায় থাকতে পারে কিন্তু স্বামির বাড়ি ছেড়ে একে একে সবাই বাবার বাড়ি এসে পড়লে লোকে কি বলবে এই সব প্রভাব আয়ান আর নির্ঝরিণীর জীবনে পড়বে, আর আপু কে আনলে মেহের নিগার মা হারা হয়ে যাবে, মেহের নিগার কে সহ আনলে অনেক ঝামেলা একটা মেয়ে কে পিতৃ পরিচয় ছাড়া বড় করা অনেক কঠিন কি করা যায় এখন

মিথিলা আয়ান নির্ঝরিণী কে ডাকলো
ওরা এসে মিথিলার সামনে বসলো

মিথিলা- তোরা তো সব শুনেছিস, কি করা যায় বলতো

আয়ান- বাড়িটা বন্ধক রেখে দুলা ভাইকে টাকা দিয়ে দে

মিথিলা- তা না হয় দিলাম,কিনতু পরে বাড়ির বন্ধক ছাড়াবি কি করে,

আয়ান- হয়ে যাবে কোন ব্যাবস্থা

আয়ানের কথা মিথিলার পছন্দ হয়নি
মিথিলা নির্ঝরিণী কে বলো
তোর কি ইচ্ছে নির্ঝর

নির্ঝরী সাথে সাথে কঠোর কন্ঠে বল্লো
– ঐ বেটা কে অনেক ছাড় দেয়া হয়েছে আরর না একটা টাকা ও দেয়া যাবে না ঐ লোক টাকে ঐ সালা সোহাগ কি আমাদের ব্যাংক পেয়েছে নাকি বাবার রাখা শেষ স্মৃতি বন্ধক রাখবো? নো য়ে

মিথিলা- তুই কি করতে চাস তা হলে

নির্ঝরিণী – আপু লোক টা কে একটা ধোলাই দিতে হবে, কেউ কখনো ওকে কিছু বলেনি তো তাই মাথায় ছেপে বসেছে

মিথিলা- ওকে ধোলাই দিতে যা যা লাগবে তা আমাদের নেই

নির্ঝরিণী – নেই মানে,আমি ফোন করে লোক টা কে আচ্ছা করে ঝেড়ে দিবো,দেখ তার পর কি হয়

জিমি- না এমন করিস না পরে যদি ও আর ও রেগে যায়

নির্ঝরিণী – তুই চুপ থাক আপু,এই সব পুরুষ দের টাইট দিয়ে রাখতে হয়,তুই সেটা কখনো ও করিস নি তো তাই লোক টা অনেক বেড়ে গেছে,

মিথিলা নির্ঝরিণীর কথা শুনে মনে মনে আশ্বস্ত হলো,
– তা হলে ফোন টা করেই ফেল নির্ঝর

নির্ঝরিণী ফোন করলো সোহাগ পাটওয়ারির কাছে মেহের নিগারের বাবা জিমির হাজবেন্ড

কল হচ্ছে, হচ্ছে কয়েক বার কল দেয়ার পর রিসিভ হলো
নির্ঝরিণী – ঐ ঘুমাচ্ছিলেন নাকি,শান্তির ঘুম দিচ্ছেন বউ বাচ্ছাকে বাবার বাড় পাঠিয়ে

সোহাগ- কে বলছেন

নির্ঝরিণী – ঐ বেটা আমাকে ছিনিস না এখন, আপনাকে তো দুলাভাই বলতে ঘেন্না লাগে ছিঃ

সোহাগ – ও নির্ঝরিণী, এতো রেগে আছিস কেনো

নির্ঝরিণী – আপনি জানেন না আমাদের অবস্থা, তা হলে আপনি কেনো আপু কে আমাদের বাড়ি পাঠিয়েছেন টাকার জন্য

সোহাগ- আসলে আমার টাকার খুব দরকার মেয়ে একটা আছে দেশে থেকে কিছু তো করতে পারছি না, তাই

নির্ঝরিণী -ঐ মিয়া টাকা কি জমা করে গেছেন নাকি আমাদের বাড়িতে,নাকি এখানে টাকার গাছ আছে, বিয়ে করেছেন যৌতুক নিয়ে,তার পর ও অনেক বার টাকা দেয়া হয়েছে আপনাকে,সেগুলা কি করেছেন আগে হিসেব দিন, তার পর আপনাকে টাকা দেয়া যায় কি না ভাববো

সোহাগ রেগে গিয়ে বল্লো
এই মেয়ে মুখ সামলিয়ে কথা বলো,বড়দের সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় জানিস না,ওহ জানবি কি করে মা বাবা নেই তো শিক্ষা দেয়ার জন্য,মেঝো টা একটা বেয়াদব তোদের কে বেয়াদব ই বানাইছে

নির্ঝরিণী – এই ছ্যারা মুখ সামলে কথা বল,আমাদের ভালো শিক্ষা দেয়ার দায়িত্ব তো আপনাদের উপরে ও আছে,তা হলে আপনারা কি একবার খোজ নিয়েছেন আমাদের? নেন নি তো, উলটো যখন তখন টাকার জন্য,পাঠান অসুস্থ শ্বাশুরির গলা থেকে হার খুলে বিক্রি করতে বিবেকে বাধেনি, আবার বলছেন বেয়াদব হয়েছি আপনার মতো লোকদের শিক্ষা দেয়ার জন্য আমাদের মতো বেয়াদব দের জন্ম নেয়া দরকার, কই যাকে আপনি বেয়াদব বলেছেন আমার মেঝো বোন সে তো আপনার সাথে এভাবে কথা বলতে রাজি হয়নি, বরং টাকা টা দিতে ছেয়ে ছিলো,কিন্তু আমি দিতে দিই নি,আর দিবো না, এর শেষ আমি দেখে ছাড়বো

সোহাগ- এই মেয়ে কি করবি তুই

নির্ঝরিণী – কি করবো,সোজা বাসা থেকে বের তিন কিলোমিটার দূরে একটা পুলিশ স্টেশন আছে সেখানে যাবো আপনার নামে এফ আই আর লিখবো নারী নির্যাতন মামলা করবো, চৌদ্দ শিকের মধ্যে পছিয়ে মারবো আপনাকে,এবার বুঝেছেন কি করতে পারি আমি

সোহাগ- এতো বড় বড় কথা ছাড়ছিস,বাস্তবে কিছুই পারবি না,টাকা আছে তোদের ফকিরের মুখে বড় কথা

নির্ঝরিণী – ওকে চ্যালেঞ্জ রইলো,সময় তিন ঘন্টা,এর মধ্যে চৌদ্দ শিকের মাঝে যদি সাক্ষাত না হয় আমাদের তা হলে আপনি যা ছাইছেন তা ই দেয়া হবে আপনাকে,মনে রাখবেন শরির শেষ রক্ত বৃন্দু দিয়ে হলে আমি জিতবো,আর হা জানেন ই তো আমরা ফকির তা হলে ফকিরের থেকে টাকা চাইতে লজ্জা করে না,আপনি তো আমাদের থেকে ও বড় ফকির

এবার সোহাগ একটু শান্ত গলায় বল্লো
– স্বামি স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া হয় তাই বলে কয়জন স্বামির ঘর ছেড়ে চলে যায়

নির্ঝরিণী – আপনি আমার আপুকে টর্চার করেছেন, তাই আপু আসতে বাধ্য হয়েছে

সোহাগ- আমি তোমার আপু কে বাবার বাড়ি যেতে বলিনি রাগের মাথায় পুরুষ রা কতো কথাই বলে সেগুলা সব ধরতে নেই

নির্ঝরিণী – ওকে ফাইন ধরলাম না,আপু কে পাঠাচ্ছি যদি আপু আবার ফিরত আসে তা হলে আমি যাবো ফেরত আপনার বাড়ি আপুকে বলবো আপনাকে খুন করতে,আর দায়ভার নিবো নিজের ঘাড়ে

এবার নির্ঝরিণীর কাছে থেকে মিথিলা ফোন কেড়ে নিয়ে বল্লো
– ভাইয়া আপনি ওর কথায় কিছু মনে করবেন না,আসলে একটা কথা ঠান্ডা মাথায় ভাবা উচিত আপনার একটা মেয়ে আছে
আপনাদের এখন যদি দুজনের পথ আলাদা হয়ে যায় মেয়েটার কি হবে তা হলে

সোহাগ – ঠিক বলেছিস তুই,আসলে মাথা গরম হয়ে গেছিলো তাই,পাঠিয়ে দে তোর আপু কে
আমি রাখছি,

মিথিলা- না থাক আপু কে পাঠাবো না আপনি আসুন,অনেক দিন শ্বশুর বাড়ি আসেন নি,এসে বেড়িয়ে যান আপুকে নিয়ে যান

সোহাগ- না আমি আসবো না জিমি কে পাঠিয়ে দাও

মিথিলা- আসেন না ভাইয়া আমাদের তো বড় ভাই নেই মুরুব্বী বলতে কেউ নেই,আপনি তো সব আসলে খুশি হবো

সোহাগ- ঠিক আছে আসছি

মিথিলা কল অফ করে দিলো একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো

তার পর জিমির দিকে তাকিয়ে বল্লো আপি তোকে একটা কথা বলি হুম
স্বামি স্ত্রীর মাঝে অনেক কিছু ই হয় সব কথা বাবার বাড়ির লোকদের জানাতে নেই কিছু কথা নিজের মাঝে রেখে মানিয়ে নিতে হয়

জিমি- তা হলে তুই স্বামির সংসার ছেড়ে বাবার বাড়িতে কেনো

বোনের কথা শুনে মিথিলা চুপ হয়ে গেলো কি বলবে বোন তো আর জানে না আমি কিসের মধ্যে ছিলাম,যার স্বামি তাকে সহ্য করতে পারে না তার কিছু করার থাকে না

মিথিলা চুপ থাকতে দেখে নির্ঝরিণী বল্লো
জিমিপু মেঝো আপু সাথে নিজেকে মিলিওনা সবার জীবনের গতি এক ভাবে চলে না আপু শ্বশুর বাড়ি থেকে এসে কারো উপরে বোঝা হয়নি বরং আমরা তার উপরে বোঝা হয়েছি

মিথিলা- থাক নির্ঝর এভাবে বলিস না,,
জিমি আর কিছু বল্লো না

সেদিন সোহাগ এসে দু দিন থেকে বউ বাচ্ছা কে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলো

আজ নির্ঝরিণী খুব তাড়াহুড়ো তে আছে আয়াপের সাথে একটা শো আছে তার,মিথিলা কে কলেজের কথা বলে বেরিয়ে গেলো

শো শেষে আয়াপ বল্লো
– নির্ঝু চলো তোমায় আজ একটা জায়গায় নিয়ে যাবো

নির্ঝরিণী – কোথায় যাবো,জায়গা টার নাম বলা যায় না

আয়াপ- তুমি আমায় বিশ্বাস করছো না তাই তো

নির্ঝরিণী – ব্যাপার টা সে রকম না,আমি একটা মেয়ে মানুষ আমার সে জায়গা যাওয়া সেইফ হবে কি না সেটা দেখতে হবে

আয়াপ- আমি কি তোমাকে উলটা পালটা কোন জায়গায় নিতে পারি

নির্ঝরিণী আয়াপের কথার সাথে না ফেরে বল্লো
– ঠিক আছে চলুন

আয়াপ একটা হোটেলের সামনে গাড়ি থামালো

নির্ঝরিণী – হোটেলে কেনো

আয়াপ- এখন তো এসেই গেছি চলো যেতে যেতে বলি
নির্ঝরিণী গাড়ি থেকে নেমে হাটা ধরলো
আয়াপ নির্ঝরিণীর পাশে পাশে হাটছে
– এখানে একটা রুম বুক করেছি

নির্ঝরিণী হাটা থামিয়ে বল্লো রুম কেনো
আয়াপ- আমরা তো বিয়ে করবো ই তার আগে একটু….

আয়াপের কথা শেষ করতে পারলো নির্ঝরিণী ঠাসস করে আয়াপের গালে থাপ্পড় দেয়
– এই ছিলো তোর মনে ছিঃ আপু ঠিক ই বলতো তোর মতো লোক ভালো হয়না বড় লোকের বখে যাওয়া ছেলে,আমি আপুর কথা বিশ্বাস করিনি এখন দেখছি…

আয়াপ মিথিলার কথার মাঝে বল্লো
– নির্ঝু তুমি আমায় ভুল বুঝছো আমার কথা টা তো আগে শুনো

নির্ঝরিণী – কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি ভাগ্যিস আগেই তোকে ছিনতে ফেরেছি,
নির্ঝরিণী আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে দৌড়ে রাস্তা এসে একটা টেক্সি ডেকে উঠে পড়ে,
আয়াপ থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শেষ পর্যন্ত নির্ঝরিণী আমায় ভুল বুঝলো

সারা পথে নির্ঝরিণী কান্না করেছে,বাসায় এসে দেখে কেউ নেই আয়ান কলেজে আপু অফিসে একা বাসা পেয়ে নির্ঝরিণী চিৎকার করে কাদতে লাগলো,ছেলেরা এমন কেনো,কেনো তাদের বিশ্বাস করে ঠকতে হয়

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর/ পর্ব-৩৭

0

খেলাঘর/ পর্ব-৩৭
লেখা- সুলতানা ইতি

ইহান- অরণির বাসায় যাবো তুই কি আমার সাথে যাবি

মিথিলা- হুম চল

মিথিলা আর ইহান অরণিদের ড্রইং রুমে বসে আছে, এখন ও ভেতরে যাওয়ার অনুমিত পায়নি অরণি নাকি এখন যেতে না নিষেধ করেছে এই নিষেধ করার পিছনে কি কারন থাকতে পারে অরনি কি কাঁদছে কান্না ছাপানোর জন্য ই কি এই নিষেধ

বেশ কিছু সময় পার হয়ে যাওয়ার পর অরনির
মা এসে বল্লো তোমরা এসো

মিথিলা উঠে দাড়ালো অনুমতি পাওয়ার পর এক সেকেন্ড ও দেরি করেনি সোজা অরনির রুমে চলে আসলো অরনি বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে
ইহান মিথিলার পিছন পিছন অরনির রুমে যায়
অরনি দুজন কে এক সাথে দেখে খানিক টা হাসার চেষ্টা করলো কিন্তু হাসি টা কান্না হয়ে বেরিতে আসতে চাইছে তাই অরনি হাসি টা ছাপা দিয়ে রেখেছে

মিথিলা অরনি কে জড়িয়ে ধরে বল্লো
– তুই একটাবার আমার সাথে যোগাযোগ করিস নি কেনো অরু

অরনি- প্লিজ অরু বলে ডাকিস না স্মৃতির পাতা ছাপা দিয়ে রেখেছি অনেক কষ্টে
তার পর বল কেমন আছিস, তোর সব কথা শুনেছি রাহির কাছে, আমার জন্য তুই ইহান কে ফিরিয়ে দিয়েছিস

মিথিলা অরনির মুখে হাত ছাপা দিয়ে বল্লো নিজেকে দুষছিস কেনো অরু এটা আমার ভাগ্য, ভালো আছি আমি খুব ভালো আছি ভাই বোন কে নিয়ে শুধু একের পর এক প্রিয়ো মানুষ গুলো হারিয়ে যাচ্ছে আমার জীবন থেকে

অরনি- খুজে নে এমন কাউকে যে সবাইকে হারানোর ব্যাথা ভুলিয়ে দিতে পারবে

মিথিলা- থাক বাদ দে এই সব

অরনি এবার ইহানের দিকে তাকালো
– ক্ষমা করেছিস তো আমায়

ইহান অরনির দিকে তাকিয়ে আছে চোখ দিয়ে এক নাগাড়ে পানি ঝরছে

অরনি- কাঁদছিস কেনো তোরা, একদম কাঁদবি না আমার তো এটা ভেবে ভালো লাগছে যাওয়ার আগে তোদের দুজন কে এক সাথে দেখতে ফেলাম, খুব অপরাধবোধ লাগছিলো আমার জন্য তুই মিথিলা কে ভুল বুঝেছিস অরনি একটু হাসলো ভালো লাগছে তোদের দুজন কে এক সাথে

ইহান- বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলাম আমরা চারজন, কি থেকে যে কি হয়ে গেলো, অরু তোর অনেক অভিমান আমার উপর তাই না রে

অরনি- তুই আমার সব ছেয়ে প্রিয়ো মানুষ ছিলি কিন্তু তোর প্রিয়ো ছিলো মিথিলা ভাগ্যের খেলায় মিথিলা তোর থেকে আলাদা হয়ে গেছে,ভেবেছি এই বুঝি তোকে পেয়ে যাবো কিন্তু তুই নিখোঁজ হয়ে গেলি আমি নিজে সুদূর দেশে পাড়ি জমালাম, কখন যে জীবন টা একটু একটু করে মরনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে টের ই পাইনি, জীবনের এই খেলাঘরে আমি হেরে গেছি ইহু তোর ভালোবাসাতে ও হেরে গেছি,তাতে আফসোস নেই, আমার একটা কথা রাখবি তোরা দুজনে

মিথিলা প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে ছেয়ে আছে অরনির দিকে,
ইহান – কি কথা বল

অরনি- তুই আর মিথিলা তোরা দুজন আবার এক হয়ে যা

মিথিলা- এই সব কথা থাক এখন অরু আমাদের কারো জীবন ই এখন আর আগের মতো নেই, তুই ভাব এখন যদি আগের সময় টা থাকতো আমাদের ছয় চোখের মিলনে হাসি দুষ্টুমি মিশে থাকতো কিন্তু তা নেই আছে প্রিয়োজন হারানোর ভয়, আছে দুঃখ, আছে চোখ ভরা জ্বল

মিথিলা থামতেই ইহান বল্লো
– সময় মানুষ কে অনেক কিছু শিখিয়ে যায় অরু, হয়তো তোর মনে এখন প্রশ্ন জাগবে কিন্তু আমি তোকে বলছি আজ নয় অন্য দিন তোকে সব বুঝিয়ে দিবো

অরনি- থাক আমার আর সময় হবে কি না জানি না,যদি না হয় আমার কবরে এক মুঠু মাটি দিতে যখন আসবি তখন বলিস আমি শুনে নেবো, আমি সেদিন ও থাকবো তোর আশে পাশে হয়তো বা বাতাসে মিশে কিংবা পাখির ডাক হয়ে

ইহান কিছু বলতে পারলো না অরনির কথা গুলো বুকে গিয়ে বিঁধছে না বুঝেই অরু কে কষ্ট দিয়েছি অন্যায় কিছু করেনি ভালোবেসেছে তাও নিরবে, শুধু শুধু মেয়ে টা কে ভুল বুঝে কষ্ট দিয়েছি

মিথিলা ভাবছে অন্য কথা, বিধির কি ইচ্ছে যার জন্য এতো আয়োজন তা কেই নিয়ে যাচ্ছে, তা হলে কেনো এতো কষ্ট কেনো এতো হাহাকার

অরনি- তোরা যা আমার এখন ঘুম পাচ্ছে

মিথিলা আর ইহান অরনির দিকে ছেয়ে আছে

অরনি -কি হলো যা

মিথিলা বেরিয়ে এলো এসেই একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়লো

মিথিলারা চলে যাওয়ার পর অরনি কান্নায় ভেঙে পড়লো, কি পাপ করেছি আমি আমাকেই কেনো শাস্তি দিলে আল্লাহ কান্নায় ভেঙে পড়ে অরনি আজ হারানো সব বন্ধু ফিরে এসেছে শুধু হারানো হাসি খুশি গুলো ফিরে আসেনি জীবন এমন কেনো ঘুরে ফিরে প্রিয়ো মানুষ গুলোর সাথে দেখা হলে তখন প্রিয়ো অনুভূতি গুলো কেনো সাথ দেয় না, সত্যি জীবনের খেলা বুঝা অনেক কঠিন

মিথিলা রিক্সায় বসে আকাশ পাতাল ভাবছে অরনির লাস্ট কথা টা নিয়ে ও অনেক ভেবেছে কিন্তু কোন কুল কিনারা পায়নি
হঠ্যাৎ মিথিলা খেয়াল করলো রিক্সা চলছে না
পাশে তাকাতেই দেখে ইভান চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে
মিথিলা রিক্সাওয়ালা কে কর্কশ কন্ঠে বল্লো
– কি হলো আপনি রিক্সা থামিয়েছেন কেনো,

রিক্সাওয়ালা – আপা এই বেডা গাড়ি থামাইতে কইছে

মিথিলা- আপনি যান তো

ইভান- প্লিজ মিথিলা ফিরে চলো

মিথিলা- মানে কি কোথায় ফিরে যাবো আমি তো আমার বাসায় যাচ্ছি

ইভান- ঐ বাসায় না আমাদের বাসায় চলো

মিথিলা- স্যরি আমাদের বাসা বলতে কোন বাসা আছে সেটা আমার জানা নেই,প্লিজ পথ ছাড়ুন

ইভান- ঠিক আছে পথ ছাড়বো আমার একটা কথার উত্তর দাও তো

মিথিলা- আপনার কোন কথার উত্তর আমি দিবো না

ইভান- নায়ার ভাই ইহানের সাথে কোথায় গিয়েছিলে গাড়িতে করে

মিথিলা- এক্সকিউজমি কি বলতে ছাইছেন আপনি আমি যেখানে যাই যার সাথে ই যাই তাতে আপনার কি

ইভান- না তুমি ইহানের সাথে যোগাযোগ রাখবে না একজন প্রতারকের ভাই কখনো ভালো হয় না

মিথিলা তাচ্ছিল্য হাসি হেসে বল্লো
প্রতারকের ভাই যদি ভালো না হয় তা হলে একজন প্রতারক কি করে ভালো হয়

ইভান- আমি বুঝতে পারিনি মিথি প্লিজ একটা সুযোগ দাও

মিথিলা- আপনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিনক্রিয়েট করছেন কেনো,কি পাব্লিকের হাতে ধোলাই খেতে ইচ্ছে করছে,আপনি যদি এখান থেকে এখন না যান তা হলে আমি এই কাজ টা ই করবো আর তাতে আপনার মান সম্মান বাড়বে না নিশ্চয়ই

মামা আপনি প্লিজ রিক্সা ঘুরিয়ে নিন এখানে দাড় করিয়ে রাখার কোন মানে হয় না

মিথিলা বাসায় চলে এলো, নির্ঝরিণীর মুখ টা কেমন থম থমে

মিথিলা- কি হয়েছেরে নির্ঝর

নির্ঝরিণী – বড় আপু এসেছে

মিথিলা-ভালো কথা,তুই মুখ এমন প্যাচার মতো করে রাখছিস কেনো

নির্ঝরিণী – দুলা ভাই আপু কে মেরেছে

মিথিলা – মানে,কেনো

নির্ঝরিণী – আমি জানি না আপু রুমেই আছে তুমি আপুর সাথে কথা বলো

মিথিলা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো এমন কেনো হচ্ছে আমার সাথে কোন।দিক থেকে কোন ভালো খবর পাই না, কি যে হয়েছে

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর/পর্ব-৩৬

0

খেলাঘর/পর্ব-৩৬
লেখা-সুলতানা ইতি

যাক ভাভা এমন করলো কেনো,নিজেই সেধে গাড়িতে উঠতে বল্লো নিজেই নামিয়ে দিলো এখন তো কোন রিক্সা পাবো না হেটেই যেতে হবে

মিথিলা হাটছে আন মনে
হাটতে হাটতে বাসার সামনে প্রায় চলে এসেছে এমন সময় হঠ্যাৎ কোথা থেকে ইভান এসে মিথিলার সামনে দাড়ালো

মিথিলা প্রথমে ভয় পেয়ে যায়,তার পর নিজেকে সামলে নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে গেলে ইভান পিছন থেকে মিথিলার হাত টেনে ধরে
– যেয়েও না মিথি প্লিজ আমার কথা শুনো

মিথিলা খুব রেগে যায়, হাত ছাড়ুন, নইলে আমি চিৎকার করবো

ইভান- ওকে যাও হাত ছেড়ে দিলাম আমার কথা টা তো শুনো

মিথিলা- কি কথা শুনবো আপনার,আদৌ কি আপনার কোন কথা বলার আছে?আর থাকলে ও আমাকে বলার মতো মুখ রাখেন? যখন চলে এসেছি আপনাকে ছেড়ে তখন তো একটি বারের জন্য ও এসে বলেন নি – ফিরে চলো
এখন যেই ধোকা খেয়েছেন অমনি ভালোবাসা উপছে পড়ছে আমার জন্য, আসলে আপনি ভবের পাগল যখন যে দিকে স্বার্থ টান দেয় সে দিকেই যান, এখন আপনার দরকার হয়েছে আমাকে তাই আমার পিছনে ছুটছেন,কিন্তু না আপনার প্রয়োজন নিয়ে তো আমার জীবন চলতে পারে না,প্লিজ আর কখনো ও আমার পথ আগলে দাড়াবেন না
মিথিলা এক দমে কথা গুলো বলে শেষ করে দূর্ত পা ফেলে হেটে চললো

ইভান থ হয়ে দাঁড়িয়ে মিথিলার চলে যাওয়া দেখছে আটকানোর কোন পথ নেই
মিথি আমি যে ভুল করেছি জানি তার ক্ষমা হয় না, কিন্তু আমি তোমার কাছে থেকে এই ইগনোরেন্স নিতে পারছি না প্লিজ মিথি ফিরে এসো,শুধু তুমি ই পারো আমার আগের সে হাসি খুশি পরিবার টা ফিরিয়ে দিতে
ইভান রাস্তার মাঝখানে বসে পড়ে হেটে গিয়ে গাড়িতে উঠার মতো শক্তি যেন তার নেই

নির্ঝরিণী এখন গান শিখতে যায়, নির্ঝরিণী গানের মাস্টার বলে দিয়েছে নির্ঝরিণীর আর গান শেখার দরকার নেই, এবার সে চাইলে গানে অ্যালবাম বের করতে পারবে
কিন্তু অ্যালবাম বের করতে প্রথমে অনেক টাকা ইনবেষ্ট করবে হবে ওতো টাকা নির্ঝরিণীর নেই তাই সে অ্যালবামের চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিলো
কিন্তু আয়াপ বলেছে তার ভিবিন্ন শো তে নির্ঝরিণী কে সাথে যেতে এ ভাবেই একদিন নির্ঝরিণী গানের জন্য সবার কাছে পরিচিত হয়ে যাবে

এর মাঝে ওদের এস,এস,সি এক্সামের রেজাল্ট বের হয়, আয়ান নির্ঝরিণী দুজন ই ভালো রেজাল্ট করে
মিথিলার আজ আনন্দের শেষ নেই তার কষ্ট কিছু টা হলে ও স্বার্থক হয়েছে

মিথিলা ভাই বোনদের ভালো একটা কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়,দুজনের পড়া শুনা ভালো ই চলছে

আমার রাজ কুমারী স্বপ্ন চারিণী আমার প্রিয়া আমার বাঁম পাজরের হাড়, কবে যে তোমায় পাবো?মন টা আকুলি বিকুলি করছে খুব তুমি নিশ্চয়ই আমার কথা ভাবছো, আমি জানি তুমি আমায় না দেখে থাকতেই পারো না কিন্তু কি করবো বলো,আপু কে আমার বড্ড ভয় হয়, আপুর নজরে পড়লে তোমাকে পাওয়া এই জনমে হবে না, জান মিস করছো আমায় খুব তাই না,শুনো তুমি চোখে কাজল দিও না তোমার ঐ কাজল কালো চোখ দেখে যে আমি খুন হয়ে যাই, ভালোবাসি তোমায় জানু
তুমি তো আলাদা কলেজে পড়ছো দেখো কারো প্রেমে পড়ো না আবার, তোমায় এত্তো গুলো ভালোবাসি
ইতি
তোমার আয়ান
তার পর কিছু কিস ইমোজি এঁকে চিঠি টা চার বাঁজ করে নির্ঝরিণী কে ডাকলো
আয়ান- নির এই চিঠি তা উতলা কে দিয়ে আসবি প্লিজ

নির্ঝরিণী দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বল্লো
– আমি কেনো তুই যা তোর চিঠি দিতে

আয়ান- যাস না রে, আপু দেখলে মেরেই ফেলবে আমায়

নির্ঝরিণী – তা এই ডিজিটাল যুগে যোগাযোগের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি থাকতে চিঠি কেনো তুই বেছে নিলি

আয়ান- শুন যেই কথা গুলো মুখে বলা যায় না সে কথা গুলো শুধু কাগজে কলমে বুঝানো যায় তাই এই চিঠি,,

নির্ঝরিণী – ওকে তাইলে আমি আপু কে গিয়ে ব্যাপার টা জানাই

আয়ান- ঠিক আছে তা হলে আমাকে ও তোর আয়াপ খানের কথা আপুকে এবার বলতে হবে

নির্ঝরিণী – এই না না কি বলছি যাস্ট কিডিং আমার ভাইটা কিচ্ছু বুঝে না, আর শুন ভাই আয়াপ খান শুধু ই আমার একজন পার্টনার আর বেশি কিছু নয় তুই আবার কি ভাবছিস কে জানে

আয়ান- থাক শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না আমি সব বুঝি

নির্ঝরিণী – কচু বুঝিস

আয়ান- এই শুন না কবে বলবি উনাকে তোর মনের কথা

নির্ঝরিণী – ভাই উনার সাথে আমার যায় না,কোথায় উনি কোথায় আমি,

আয়ান- তুই তার থেকে কম কিসের

নির্ঝরিণী – থাক ভাই এই নিয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না, যাই উতলা আপু কে চিঠি টা দিয়ে আসি
নির্ঝরিণী চলে যায়

নির্ঝরিণী এখন ছোট খাটো কোন শো হলে আয়াপের সাথে যায়,নির্ঝরিণীর গানের গলা এখন অনেকের ই পছন্দ, আয়াপ বল্লো
– কোকিলা তুমি একটা গানের অ্যালবাম বের করো যা খরচ লাগবে তা আমি দিবো

নির্ঝরিণী – না মিঃ আয়াপ আপু এটা ভালো চোখে দেখবে না,, আমি যে আপনার সাথে ভিবিন্ন শো তে আসি এটা আপু কে বলি না
আপু শুনলে খুব বকবে

আয়াপ – তোমার আপু এমন কেনো? একটা রাশ ভারি মানুষ

নির্ঝরিণী – আমার আপু খুব ভালো, আপনি আমার আপুর সাথে কথা বল্লেই বুঝতে পারতেন

আয়াপ বিড় বিড় করে বল্লো
– হুম হবু বড় বোনের সাথে তো দেখা করতেই হবে

নির্ঝরিণী – হুম কিছু বললেন

আয়াপ- না কিছু বলিনি
নির্ঝরিণী আর কিছু বল্লো না, লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে ফেল্লো

মিথিলা তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে আজ লেইট হয়ে যাবে অফিসে পৌছতে, তাই তাড়া তাড়ি একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়লো

– এই মিথিলা কোথায় যাচ্ছিস

মিথিলা পাশে ফিরে দেখলো রাহি কে

মিথিলা- আরেহ রাহি তুই

রাহি- হুম নাম রিক্সা থেকে কথা আছে তোর সাথে

মিথিলা- আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে রে,

রাহি- একদিন দেরি হলে কিচ্ছু হবে না তুই অফিস ফোন করে দে আজ তোর আসতে লেইট হবে

মিথিলা রিক্সা থেকে নামতে নামতে বল্লো আর্জেন্ট কিছু বলবি

রাহি -হুম
রাহি আর মিথিলা একটা কফি শপে গিয়ে বসলো
রাহি- অরণি দেশে ফিরেছে

মিথিলা খুশি হয়ে বল্লো
– ওহ তাই আমি ইহানের খোজ জানি,এবার যে করেই হোক ওদের দুজন কে এক করতেই হবে

রাহি- ইহানের সাথে তোর দেখা হলো কোথায় ইহান কবে দেশে আসলো

মিথিলা- এসেছে অনেক দিন এখন সে আমার বসস আমি তার পি এ

রাহি – মানে বুঝিয়ে বলতো

মিথিলা সব কথা রাহি কে বল্লো
রাহি সব কথা শুনে বল্লো
– ওহ মাই গড ইহান আমার সাথে একটু যোগাযোগ করলো না

মিথিলা – তা হলে চল আজ তুই আমার সাথে যাবি অফিসে

রাহি- আজ না তোকে একটা কথা বলার ছিলো

মিথিলা- হুম বল,অরণি কোথায় আছে আগে সেটা বল

রাহি- হুম সেটাই বলছি শুন,অনেক দিন আগে তোকে বললাম না অরণি অসুস্থ

মিথিলা- হুম এখন ও ভালো হয়নি?

রাহি – অরনির ক্যান্সার

মিথিলা- হোয়াট

রাহি- হুম লাস্ট স্ট্রেজ ডাক্তার বলেছে আর এক মাস ও থাকতে পারে,আবার পনেরো দিন ও থাকতে আবার হয়তো তার ও কম সময়

মিথিলা চোখের চশমা টা খুলে টেবিলে রাখলো হারিয়ে গেলো স্মৃতির পাতায়

মিথিলা কোন ভাবে নিজেকে সামলে অফিসে এলো
ইহান- আজ এতো লেইট হলো যে তোর

মিথিলা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বল্লো
আমি কি একটু বসতে পারি

ইহান মিথিলার অবস্থা দেখে বল্লো
– বস কিন্তু কি হয়েছে তোর মিথিলা তোর কি শরির খারাপ

মিথিলা- নাহ আমি ঠিক আছি, অর,অ,অর

ইহান- কি হয়েছে বল

মিথিলা- অরণি দেশে ফিরেছে মিথিলা কথা গুলো গলায় আটকে আসছিলো তবু ও কথা গুলো বল্লো

ইহান- হ্যাঁ তো এতে তোর এই হাল কেনো

মিথিলা- ইহান তুই না বললি তুই অরনি কে মৃত্যুর আগে ও ক্ষমা করবি না,সে তোর ক্ষমার পাওয়ার জন্য বসে থাকবে না রে

ইহান- মানে

মিথিলা- এতো হাসি খুশি প্রাণচঞ্চল মেয়েটা যে মরন ব্যাধি রোগে আক্রান্ত হয়ে এতো টা দিন হসপিটালে ছিলো আমরা কেউ কি তার খোজ রেখেছি

ইহান শান্ত গলায় বল্লো কি হয়েছে অরণির

মিথিলা- ক্যান্সার

ইহান আর কোন কথা বলতে পারলো নিস্তব্ধ হয়ে গেছে মনে হচ্ছে কথা গুলো বরফে আটকে গেছে

বেশ কিছু সময় পার হয়ে যাওয়ার পর ইহান কথা বল্লো
– অরণি এখন কোথায়

মিথিলা- ওদের বাসায়

ইহান- চল অরণির বাসায় যাবো তুই কি আমার সাথে যাবি

মিথিলা হুম চল

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

ডায়েরীকথা

0

ডায়েরীকথা

jannatul_ferdous

আজ ছেড়ে দিলাম ভালোবাসার পাখিটাকে।ধরে রাখার সামর্থ্য যে আমার নেই।অনেক ভালো থেকো জিহাদ,যতটা ভালো থাকলে আমাকে আর মনে থাকবে না।

ডায়েরীকথা??

প্রিয় ডায়েরীটা আকড়ে ধরে কান্না করছে শিমু।সেই প্রথম থেকে ভালোবাসার প্রতিটা শব্দ লিখে রেখেছে শিমু।কিন্তু আজ সে ডায়েরীকথার প্রতিটা লেখা যার উদ্দেশ্যে লেখা সেই মানুষটাকেই হারিয়ে পেললো।

প্রায় ৩ মাস আগে একটা পার্কে দেখা হয় শিমু-জিহাদের।শিমু পার্কের একটা পাশে ঝালমুড়ি খাচ্ছিলো।সামনেই উচ্চস্বরে কথা বলছিলো কয়েকজন বন্ধু।রেগে ঝালমুড়ি সহ মুড়ানো কাগজ টা ছুড়ে ছেলেগুলোর মুখে মারলো শিমু।যার গায়ে গিয়ে পড়ছিলো কাগজটা,সেই ছিলো জিহাদ।

জিহাদ-এই মেয়ে তোমার এত্ত সাহস কী ভাবে হলো?

শিমু-ওই আপনি এখানে এত উচ্চস্বরে কথা বলছিলেন কেনো?

জিহাদ-আমার যা ইচ্ছা হয় আমিও তাই করবো।

শিমু-আমারও যা ইচ্ছা হয় করবো।

জিহাদ-তোরে তো আমি…..

শিমু-কী করতে পারবি তুই।তোরে গরম পানিতে চুবাবো ফাজিল ছেলে একটা।

জিহাদ-তুই কী শয়তানের নানি একটা।

শিমু-তোরে আমি আজকে…….

বাকি বন্ধুরা এসে জিহাদকে জোর করে নিয়ে গেলো।শিমুও বাসায় ফিরে আসলো।

শিমুর আম্মু-এত রেগে আছিস কেনো?

শিমু-ওই ছেলে…….এই ছেলে এখানে কী করে?

শিমুর আব্বু-ও আমার বন্ধুর ছেলে।আজ থেকে কয়েকটা দিন এখানেই থাকবে।

শিমু-তোরে আমি দেখে নিবো।(জিহাদের কাছে এসে)

শিমুর আম্মু-কিছু বললি মা?

জিহাদ-না আন্টি,বলছে আমার জন্য এক কাপ চা বানিয়ে আনবে কিনা?

শিমুর আম্মু-তুই চা?

শিমু-হুম আনবো?

জিহাদ-যাও আমার রুমে দিয়ে যেয়ো।

শিমু-ওকে।

শিমুর আম্মু-তুই যা ফ্রেশ হ আমি দিয়ে দিচ্ছি।

শিমু-আমি যাচ্ছি তুমি রুমে যাও।

বলেই রান্না ঘরে চলে গেলো শিমু।গিয়ে চা বানাতে লাগলো।চা নিয়ে গেলো জিহাদের রুমে।

শিমু-আপনার চা।

জিহাদ-ওইখানে রাখো।

শিমু-জ্বি গরম আছে খেয়ে নিবেন।

জিহাদ-ওকে।

শিমু-(খা ভালো মত খা।সারা জনমে চা খাওয়ার কথা ভুলে যাবি)-মনে মনে।

জিহাদ-(না ঝড়গুটে হলেও কিউট আছে)–ভাবতে ভাবতে চা মুখে দিতেই জিহাদ যে চিল্লানি দিলো শিমুও ভয়ে লাফিয়ে উঠলো৷

শিমু-কী হলো.

জিহাদ-পানি।

শিমু পানি নিয়ে এসে জিহাদের সামনে এসে পানিটা ফ্লোরে ডেলে দিলো।জিহাদ আর না পেরে শিমুর ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে দিলো।অনেকক্ষন পর ছাড়তেই শিমু রেগে লাল হয়ে গেলো।

জিহাদ-এই মিষ্টির জন্য প্রতিদিন ওই রকম চা খেতে পারি।

শিমু পানির গ্লাশ টা ফ্লোরে ছুড়ে মারলো।গ্লাশটা ভেঙ্গে গেলো।

জিহাদ-শিমুর রাগটা জাস্ট দেখার মত।

শিমু রেগে কটমট করতে করতে চলে গেলো।জিহাদ হেসে উঠলো।

১মাস পর……
ঝড়গা দিয়ে শুরু হলেও শিমু যেদিন সেন্সলেন্স হয়ে হাসপাতালে ছিলো জিহাদের রাতের ঘুম হারিয়ে গেছিলো শিমুর ফোন বন্ধ পেয়ে।১ মাসে সম্পর্কটা অনেক ভালো জায়গায় চলে আসছিলো।প্রতিদিনেই জিহাদ শিমুর সাথে কথা বলতো।

পরেরদিন বকাও খেয়েছিলো শিমু।জিহাদকে বলেছিলো ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছিলো সে।কিন্তু সে হাসপাতালে ছিলো এটা জিহাদ কোনো ভাবেই জানতে পারলো না।এমনি কী শিমু নিজেও জানে না কেনো সে হাসপাতালে ছিলো।তাই বাবা কে জিজ্ঞেস করতে গেলো।

শিমু-বাবা আমার কী হয়েছে?

শিমুর মা-কিছু না রে মা।

শিমু-তোমরা কিছু লুকাচ্ছো?

শিমুর বাবা-না রে মা কিছু লুকাইনি।কলেজে যাবি না।

শিমু-বাবা আমি জিহাদের সাথে দেখা করতে যাবো।

জিহাদেরর মা-আচ্ছা যা।ছেলেটাকে বাড়িতে আসতে বলিস।

সেদিনেই জিহাদ প্রোপোজ করে শিমুকে।শিমুও ভালোবাসতো তাই জিহাদকে ভালোবাসি বলতে একটুও ভাবে নি শিমু।

এভাবেই ১মাস কেটে গেলো।১মাস পরেই জানতে পারলো শিমুর ব্রেনে সমস্যা। হঠাৎ একদিন ভুলে যাবে সে অতীতের সব কথা।ভুলে যাবে ভালোবাসার পাখিটাকে।

তাই আজ সে জিহাদকে সরিয়ে দিলো নিজের জীবন থেকে।ডায়েরীটা বন্ধ করলো সে।চোখের দু”ফোটা পানি পরলো।

আরো ৪৮ঘন্টা কেটে গেলো।হঠাৎ করেই পুষ্পের কথা মনে পরলো।পুষ্পের বার্থডে গেছিলো,কিন্তু শিমু ভুলে গেছে দিনটা।কল দিতেই পুষ্প বকা দিলো।চুপচাপ শুনে সরি বললো।পুষ্প মেয়েটাই অন্য রকম।সারাটা দিন শিমুর বকবক শুনলেও ক্লান্তি নেই।কিন্তু আজ শিমুই ভুলে গেলো পুষ্পের বার্থডের দিনটা।আবারও ডায়েরীটা উল্টালো।স্পষ্ট দিনটা লেখা আছে,কিন্তু উইশ করা হলো না।

বাসা থেকে বের হতেই হৃদয়কে দেখতে পেলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।মাঝে মধ্যে হৃদয় ওয়েট করে একজনের জন্য।

শিমু-কলেজে যাবি না?

হৃদয়-হুম এখন যাবো।

শিমু-ওকে চল।

হৃদয়-অনেক দিন পরে কলেজে যাচ্ছিস।

শিমু-হুম আর যাবো না।

হৃদয়-কেনো?

শিমু-এমনিই ভালো লাগছে না।

হৃদয়-তোর কী কিছু হইছে?

শিমু-না।কালকে পুষ্পের বার্থডে গেছিলো।

হৃদয়-এখন জানলাম।

শিমু-আমাকে দুইটা চকলেট এনে দে।

হৃদয়-এখানেই দাঁড়া আমি আনতেছি।

হৃদয় ফিরে এসে চকলেট দিলো হাতে।তারপর দুইজনেই কলেজে চলে গেলো।ওর রাগ ভাঙ্গিয়ে বিকেলেই ফিরে আসলাম বাসায়।শেষবারের মত দেখে এসেছি হৃদয়,সাকিব,রাফি,সুমা,প্রীতি,মিম,সালমা আর পুষ্পকে।হয়তো তাদেরও মনে থাকবে না আমার।
প্রিয় ডায়েরী কথাকেও ভুলে যাবো যেখানে প্রতিটা দিনের কথা লিখি।

জিহাদকে মনে পরছে খুব।আমি নেই তার জন্য হয়তো কান্না করছে।খুব অভিমানী ছেলেটা।তবে কষ্ট পেলেও কাউকে বলে না।

আজ আমার অপারেশন।ডাক্তার বলে দিয়েছে বাঁচার সম্ভাবনা নেই।শেষ চেষ্টা করতেছে সবাই।ডায়েরিতে তারিখটা লিখে রাখলাম।হয়তো আর পড়া হবে না আমার প্রিয় ডায়েরিকথার কথাগুলো।আমি মরে গেলে হয়তো সবাই কান্না করবে।তবে আমিই দেখবো না।
নীল নাকি বিষাক্ততার রং।তাই শেষের পাতায় নীল কালিতে লিখে রাখলাম——-
মৃত্যু যেখানে হাতছানি দিয়ে ডাকে,
ভালোবাসা সেখানে অসহায়।

মন ফড়িং ❤ ১৯.

0
মন ফড়িং ❤
১৯.
– একই অবস্থা মানে?
– মানে কিছুই না।
অদ্রির মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ভালোবাসি – কথাটা সে সেধে বলেছে আর  নিদ্র কিনা পাত্তাই দিলো না।
নিদ্র কে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো। আচমকা অদ্রির আচরণে নিদ্র অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
– কী হলো আবার?
– কিছুই না।
– তাহলে এভাবে ধাক্কা দিলেন কেনো?
– আমার ভালো লাগছেনা। রুমে যাবো।
অদ্রি বাম হাত দিয়ে দরজা খুলতে পারছিলো না।
নিদ্র হাসছিলো।
– দরজা আমি খুলে দিচ্ছি। দেখি কীভাবে যান!
অদ্রি বাধ্য হয়ে ডান হাত দিয়ে দরজা খুলতে গিয়ে আবার ব্যথা হলো। এবার রক্ত পড়তে শুরু করলো। পড়নের সাদা কামিজ রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে।
নিদ্র অদ্রির বাম হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে বিছানার উপর বসিয়ে দিলো।
আশেপাশে রক্ত মোছার কিছু না পেয়ে তোয়ালে দিয়ে রক্ত মুছে দিতে লাগলো।
নিদ্রের চোখ লাল হয়ে আছে। সম্ভবত খুব বেশি রেগে আছে।
– রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিবেন।
– দরজাটা…..
– দিচ্ছি।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও অদ্রিকে চলে যেতে হচ্ছে। তার সেই রুমে একাকীত্ব তাকে আবার ভর করবে। সাদা কামিজ, ওড়নায় রক্ত লেগে কেমন যেন আঠা আঠা ভাব হয়ে গেছে। পুরো শরীর ঘিন ঘিন করছে। রক্ত এখনো টপটপ করে পড়ছে।
রক্তের গন্ধটা মনে হলো তার নাকের মধ্যে লাফ দিয়ে ঢুকে পড়লো। পেটের মধ্যে গন্ধটা গুলিয়ে বমি আসার মতো অবস্থা। গন্ধটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। মাথার মধ্যে সব হঠাৎ করে ফাঁকা ফাঁকা লাগতে শুরু হলো। তারপর অদ্রির আশেপাশে সব আবছা হতে হতে নিকষ কালোতে রূপ নিলো। আর কিছুই মনে নেই।
নিদ্র দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে অদ্রির চলে যাওয়া দেখছিলো। মনের মধ্যে ক্ষীণ আশা ছিলো, ও ফিরে এসে জাপটে জড়িয়ে ধরবে। কিন্তু সেই আশা মনে হয় পূরণ হবেনা।
অদ্রি দাঁড়িয়ে গেলো। তার কিছুক্ষণ পরই অদ্রি মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
নিদ্র নিজের চোখকেই বিশ্বাস কর‍তে পারছেনা। একটু আগেও তো ও স্বাভাবিক ছিলো এখন এমন কেনো হলো?
অদ্রিকে কোনোমতে কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।
রিতা অদ্রির রুমের দিকে আসছিলো। অদ্রিকে নিদ্রের কোলে দেখে প্রথমত সে হতভম্ব হয়ে গেছেন, দ্বিতীয়ত অদ্রির অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কথা শুনে আরো বেশি হতভম্ব হয়ে গেলেন।
রশীদ সাহেবকে দিয়ে ডাক্তার ডাকানো হলো। ডাক্তার সাহেব হাতে ব্যাণ্ডেজ় লাগিয়ে দিয়ে যাওয়ার সময়  বলে গেলেন
– শরীর দূর্বল ছাড়া কিছুই তো এখন পাচ্ছিনা। প্রেশার নরমাল। হাতের ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরা দেখেই মনে হয় অজ্ঞান হয়ে গেছে। তারপরও আমি কিছু টেস্ট লিখে দিচ্ছি কিছুটা সুস্থ হলে করে ফেলবেন।
রিতা বললেন
– এখনকার জন্য কোনো মেডিসিন বা কোনো নির্দেশনা?
– আমি ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে দিয়েছি। সকালে ঘুম ভাঙবে। দুধ, ডিম আর সবুজ শাক সবজি খাওয়াবেন। খাওয়া দাওয়ার যেন অনিয়ম যেন না হয়।
রিতা নিদ্রের দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছে। ছেলেটাকে তার সুবিধার মনে হচ্ছে না।
হাতে তো ফোসকা পড়েছিলো, এরকম ছন্নছাড়া ভাবে কাটলো কীভাবে?
না, ছেলেটার মধ্যে সমস্যা আছে।
নিদ্র রাতে না খেয়েই রইলো। আসমা জামান অনেক বলার পরও কোনো কথা শুনলো না। নাজমুল সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন
– এতো সাধতে হবেনা। যার পেট তারই জ্বালা নাই, তোমার এতো সমস্যা কই?
– রাতে না খেয়ে থাকাটা ঠিক না, নাজমুল।
– ও তো ছোটো না যে বুঝেনা।
রশীদ সাহেব রাতে খেতে বসেও খেতে পারলেন না চিন্তায়। মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে তার যে কী হবে যে জানে।
নিজের মেয়ের মতোই অদ্রি।
রিতা অদ্রির রুমের ফ্লোরে বিছান পেতে শুয়ে আছ।নিদ্র ছটফট করছিলো অদ্রির কাছে যাওয়াদ জন্য কিন্তু রিতার কারণেই পারছেনা।
নিজের রুমে পায়চারি করেই পুরো একটা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিলো নিদ্র।
অসহ্যকর লাগছে তার। রিতাকে তার সহ্য হচ্ছেনা।
আজানের পর পর রিতার ঘুম ভেঙে গেলো। অনেক কাজ পড়ে আছে তার।
রিতাকে চলে যেতে দেখে নিদ্র অদ্রির রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।
অদ্রির বিছানার পাশে টুল নিয়ে বসে পড়লো।
ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে নিদ্রের ভেতরে হুহু হাওয়া বইতে লাগলো। কেমন বিষণ্ন লাগছে অদ্রিকে। চোখের দু কোণায় পানি জমে আছে। ঠোঁট দুটো কেমন শুষ্ক হয়ে আছে।
অদ্রির ঘুম ভেঙে যাওয়াতে নিদ্র বললো
– আর একটু ঘুমান।
অদ্রি উঠতে গিয়ে হাতে ব্যথা পেয়ে আবার শুয়ে পড়লো। ওড়নাটা আশেপাশেই নেই, অদ্রির সংকোচ হচ্ছে এভাবে নিদ্রের সামনে শুয়ে থাকতে।
– এখন কি সকাল?
– হ্যাঁ, অনেক সকাল।
– আমার ওড়নাটা একটু খুঁজে দিবেন।
প্রায় বাধ্য হয়েই কথাটা নিদ্রকে বললো।
নিদ্র অদ্রির পাশে বিছানার উপর বসলো।
– আমিই তো।
– একটু দূরে বসুন।
নিদ্র আরো বেশি কাছে বসলো। দু হাতের মধ্যে অদ্রির মুখ তুলে নিয়ে শুষ্ক ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ গভীর ভাবে গলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো।
অদ্রি প্রথমে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলেও নিদ্রের কাছে হার মানলো।
কতক্ষণ যে এভাবে ছিলো তাদের কারোরই জানা নেই। নিদ্র অদ্রির গলায় চুমু দিয়ে অদ্রিকে নিজের দিকে আরো কাছে টেনে নিলো।
অদ্রির বুকে ঠোঁট ঘষে দিয়ে বললো
– সারারাত ঘুমাতে পারিনি। শুধু আপনার রুমের আশপাশে ঘুরে বেড়িয়েছি।
আপনার দারোয়ানের জন্য একটুও কাছে আসতে পারিনি।
– ঠিক বুঝলাম না।
– রিতা নামের কে যেন উনি আপনার রুমেই ঘুমিয়ে ছিলেন।
নিদ্রের চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে অদ্রি বললো
– ঠিক হয়েছে। আমাকে তো বেশ ভালোভাবেই তাড়িয়ে দিলেন।
– আমি আপনাকে তাড়িয়ে দেয়ার কে শুনি? আমি তো পুরোটাই আপনার নিজের।
– বাহ! ভালো ডায়লগ জানেন দেখছি।
অদ্রির বুকে ঠোঁট ঘষতে লাগল নিদ্র। অদ্রির কেমন যেন লাগছে।
না সে নিদ্রকে না করতে পারছে না সহ্য হচ্ছে তার।
– নিদ্র?
– হুম।
– আপনি আমাকে ভালোবাসেন তো?
– কেনো এমন মনে হচ্ছে?
অদ্রির চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে নিদ্র বেশ অবাক হলো। অদ্রির চোখ ছলছল করছে।
কান্না জড়িত কণ্ঠে বললো
– আপনি শুধু আমার শরীর খুঁজে বেড়ান।
অদ্রি এরকম কথা বলতে পারে নিদ্রও ভাবতে পারেনি।
নিদ্র অদ্রিকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে গেলো। তারপর বললো
– আজ থেকে আমি আপনাকে আর স্পর্শ করবো না! হ্যাপি?
– হ্যাঁ। ভালোবাসলেই কি স্পর্শ করতে হবে নাকি? স্পর্শ ছাড়াও তো এতোদিন আমরা একে অপরকে ভালোবেসেছি। তাহলে এখন কেনো পারবো না?
– আপনি ঠিক বলেছেন। আচ্ছা আপনি থাকুন। আমার ঘুম আসছে, ঘুমাবো।
নিদ্র চুপচাপ চলে গেলো। অদ্রির চোখ বেয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো গলায়, যেখানে একটু আগেও নিদ্র চুমু এঁকে দিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলো তাকে।
চলবে…..!
© Maria Kabir

সমাপ্তি ২য় এবং শেষ পর্ব

0

সমাপ্তি ২য় এবং শেষ পর্ব

আপনার এত বিয়ে করার শখ জাগছে কেন??(তুলি)

তুলির কথা শুনে হা হয়ে তাকিয়েছিলাম কিছুক্ষণ৷ এরপর না বোঝার ভান করে একই প্রশ্ন করলাম….. মানে??(আমি)

মানে??,,,রাগে তুলি আমার চোখ থেকে চশমা টা খুলে বিছানার উপরে ফেলে দিয়ে,,, একদম বিয়ের কথা মুখেও আনবেন না। আনলে একদম খুন করে ফেলবো…(তুলি)

তুলির এই রুপ আমি আগে কখনো দেখিনি। সত্য বলতে ভয় পেয়ে গেছি,,, আমি আমতা আমতা করে বললাম,,,

ইয়ে না মানে বাবা মা বলছে,,৷ আর তাছাড়া বয়স ত আর কম হলো না…তাই আর কি!!(আমি)

বয়স ত আর কম হলো না জন্য বিয়ে করবেন তাই না?? ওকে ফাইন যান বিয়ে করেন।… (তুলি)

তুলি,,, তুমি ঠিক আছো ত,,,??(আমি)

তুলি রাগিভাবে আমার দিকে তাকালো,,, আমাকে কি আপনার পাগল মনে হচ্ছে??(তুলি)

আমি দাত গুলো বের করে এক গাল হেসে বললাম,,, ওটা পাগল না পাগলী হবে…(আমি)

তুলি পাশে থাকা চশমা টা তুলে,,, যাবেন না…..কি??

এ এই,, আচ্ছা যাচ্ছি, যাচ্ছি বলেই চলে আসছিলাম,, কিন্তু তুলির ডাকে আবার পিছনে ফিরতে হলো,৷

আবার কি??(আমি)

চশমা… আপনার…(তুলি)

ওহ, হুম, দাও..(আমি)

তাজ বাবু,, আপনি কি সত্যি বিয়েটা করবেন??(তুলি)

তুলির কথাটাতে কেমন যেনো ভেতর টাতে বিধলো,,,কিন্তু তবুও খুব শান্তভাবেই জবাব দিলাম,,

বাবা মা রাজি থাকলে করবো,,, আর ওনাদের বয়স ত কম হলো না বলো,,, ওনাদেরো ত ছেলে আর ছেলের বউ কে দেখতে ইচ্ছা করে তাই না বলো??(আমি)

এতই যদি বাবা মায়ের কথার ছেলে হয়ে থাকেন,, ত ৩ বছর আগে কি হয়েছিলো?? তখন কি বাবা মা রাজি ছিলো না??(তুলি)

ম, মানে??(আমি)

মানে ঘর থেকে বেরোন…(তুলি)

কিন্তু তুমি কি যেনো বলতেছিলা??(আমি)

কচু আর আন্ডা বলছিলাম বুঝলেন। যান বেড়োন.. (তুলি)

আ, আচ্ছা…বলে চলে আসছি ঠিক তখনি আবার তুলি আমায় ডাক দিলো…

তাজ সাহেব…(তুলি)

পিছনে ঘুরে,, হুম বলো..(আমি)

আমাকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দিন,, আর আপনার বিয়েতে আমি এখানে থাকতে পারবো না..(তুলি)

অবাক হয়ে,,, কি বলছো এগুলো,,?? মাথা ঠিক আছে তোমার??(আমি)

তুলি আমার দিকে তাকিয়ে,, পাঠাবেন কি না??(তুলি)

না,, পাঠাবো না। (আমি)

কেনো পাঠাবেন না?? কোন পরিচয়ে এই বাড়িতে আমায় রাখবেন?? ২ দিন পরে আপনার স্ত্রী যখন আমায় বাসা থেকে বের করে দিতে চাইবে তখন কি করবেন আপনি??(তুলি একদমে কথাগুলো বলে দিলো)

কি বলবো ভাবছি,, ঠিক সেই সময়ে তুলি বলে উঠলো,, তাজ সাহেব আপনি অনেক বোকা জানেন??(তুলি)

মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম,, বন্ধুরাও বলতো এটা,,..

তুলি এবার হেসে দিলো….

ওর হাসিটাতে আমি ২য় বারের মতো প্রেমে পড়লাম।

কি হলো??(তুলি)

কত সময় ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম জানি না,, তবে তুলির কথাতেই আবার বাস্তবে ফিরলাম,, ক, কই কিছু নাতো..(আমি)

তুলি এবার আমার কিছুটা কাছাকাছি এসে,,

তাজ সাহেব…(তুলি)

আমি শার্ট টা ঠিক করতে করতে,, হু বলো..

আমাকে এই বাসার পারমানেন্ট জায়গাটা আপনি দিতে পারবেন না??(তুলির চোখ ভেজা)

আমি অবুঝের মতো তুলির দিকে তাকিয়ে,, ক, কি বলো তুমি?? মানে কি.??.(আমি)

তুলি এবার পুরো রেগে গিয়ে বললো,, আপনি আমার রুম থেকে বেড়োবেন???

আমি আর কিছু সময় ওয়েট না করে তাড়াতাড়ি করে বেড়োয়ে এলাম….

তুলির কথা ভাবছি,, পার্মানেন্ট জায়গা মানে কি?? ছোট থেকে বন্ধুরা বোকা বলতে বলতে আমি কি সত্যিই বোকা হয়ে গেছি নাকি??

কিছুসময় ভেবেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো…তারমানে তুলি কি আমায় ভালোবাসে??(আমি)

কিন্তু কই ও ত আমায় কখনো কিছু বলেনি….নাহ,, তুলি আমায় কেন ভালোবাসবে?? ভালোবাসলে ত সেই ৩ বছর আগেই বিয়েতে রাজি হয়ে যেতো,,,নাহ। আমি ভুল ভাবছি….

এরকিছু দিন পরে,,,

একদিন বাসায় এসে তুলিকে দেখতে না পেয়ে,,আম্মুকে বললাম,,

আম্মু,,তুলি কই??(আমি)

আম্মু অবাক হয়ে জবাব দিলো,,সে কিরে,, তুলি তোকে জানায় নি??(আম্মু)

কি জানাবে??(অবাক হয়ে আমি)

তুলি ত আজ হোস্টেলে উঠেছে,,, কিন্তু ও ত আমাদের বলে গেলো ও নাকি তোকে সব কিছু বলেছে,, তুই নাকি রাজিও হয়েছিস??(আম্মু)

আম্মুকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বললাম,,,

ওহ হ্যা আম্মু,, তুলি আমাকে বলেছিলো,৷ আমারি মনে ছিলো না…(পুরো মিথ্যা বললাম,,, কারণ ওইদিনের পর ত তুলির সাথে আমার কথায় হইনি)

পরের দিন ই তুলির হোস্টেলে চলে যায়ঃ

কিন্তু কি পরিচয় দিয়ে দেখা করবো তুলির সাথে?? আর তুলি বা কি আইডিন্টি দিয়েছে এখানে ভাবতে ভাবতেই দেখি তুলি গেট দিয়ে বের হচ্ছে…

আ, আপনি এখানে??(তুলি)

তুলির পাশে হইতো হোস্টেলের মালিক ছিলো,,সে বললো,,

তুলি মা,, এইটা কে??(ভদ্রলোক)

তুলি আমতা আমতা করে,, ওই যে,, না মানে….(তুলি)

ওওহ,,, তোমার বড় ভাই?? যে তোমার সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছে??(ভদ্রলোক)

ভ, ভাই….(বলেই তুলির দিকে তাকালাম)

তুলি কিছু বললো না,, মাথা নিচু করে রইলো…

আমি আর কিছু বলতে পারিনি,, শুধু ভদ্রলোকের বলা কথাগুলো শুনছিলাম,, আর যতগুলো কথা উনি বললেন প্রায় প্রতিটা কথা আমার বুকে এসে বিধছিলো,, মোটকথা,, তুলিকে নিয়ে আমি যেই ভাবনাটা ভেবেছিলাম সেটা ওইদিন ওই কথাগুলো শোনার পরেই ভেঙে গিয়েছিলো….

রাত্রে এসে বাবাকে বললাম বিয়ের দিন টা যতটা তাড়াতাড়ি পারো কনফার্ম করো,,

বাবা কিছুটা অবাক হয়েছিলো…

আম্মু বলেছিলো,, কিন্তু তুই না বলেছিলি তোর এই মেয়েও পছন্দ হইনি

ভুল বলেছিলাম। হয়েছে পছন্দ…। এখন তোমাদের যা করার সেটাই করো….(কথাটা বলেই চলে এলাম)

আজ প্রথম তুলির জন্য আমার চোখ থেকে জল ঝড়ছে,,, আমি নাকি তুলির আশ্রয়দাতা?? আমি নাকি ওর ভাই?? আমি নাকি ওর ছিহ…..

তুলির প্রতি যেই ভালোবাসা টা আমার কাছে জমানো ছিলো সেটা একটু একটু করে রাত্রের কালো আধারে মিলিয়ে দিয়েছিলাম…

তুলিকে বিয়ের কার্ড দিয়েছিলাম বন্ধু সজিব কে দিয়ে…

শুনেছিলাম তুলি নাকি হাসিমুখে সেটা গ্রহণ করেছিলো।

আনিকা(আমার স্ত্রী) কে আমি তুলির মতো করে কখনো দেখি নি…

শুধু বিয়ের সম্পর্কে আবদ্ধ জন্য যতটুকু দায়িত্ব আমার ছিলো সেটা পূরণ করেছিলাম…

কিন্তু আমার মনেতে সারাক্ষণ শুধু তুলিই ছিলো…সত্যি বলতে আমি তুলিকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু কখনো বলতে পারিনি…আজ বলছি….. তুলি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি পাগলি,, অনেক বেশি…শুধু রাগ, জেদ আর ইগোর জন্য আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি।

আচ্ছা তুলি,, তুমি কি আমাকে একটুও ভালোবাসোনি ?? নাকি সত্যিই বাসতা??

ডায়েরি টা বন্ধ করলো তুলি….

তাজের মৃত্যুর ৫ বছর হচ্ছে আজ।

বিয়ের ৩ বছরের মাথায় তাজ শারীরিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে…ডাক্তারি চেকাপের পরে জানা যায় তাজের শরীরে ক্যান্সার বাসা বেধেছে…

শেষ সময় গুলোতে তাজ নাকি অনেক করে তুলিকে নিয়ে কথা বলতো,, পাগলের মতো একবার বলতো,, বাবা তুলিকে একটু বলবা এখানে আসতে??আমি ওকে একবার দেখবো…কিন্তু পরক্ষণে আনিকার দিকে তাকিয়েই বাবাকে বলতো,, না বাবা,, কোন প্রয়োজন নেই….

আনিকা সবকিছু জেনেও তাজ কে ভালোবেসেছিলো…তাই তাজের নিষেধ সত্বেও তুলিকে তাজের ব্যাপারে জানিয়েছিলো…

তুলি প্রথমে অনেক বড় ধাক্কা খেলেও,, আনিকা কে দেখে অভিমানে,, নিজেকে সামলে নেয়,, সাধারণ রাখে নিজেকে…তারপর আনিকা কে উত্তর দিয়েছিলো আমি যেতে পারবো না….

আনিকা যখন তাজ কে তুলির প্রতিউত্তরের কথা বলেছিলো,, তাজের মুখে বিদ্রুপাত্নক হাসি ফুটে উঠেছিলো…

সেই রাতেই তাজ ওর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে…

তুলিকে যখন জানানো হলো,, তুলি কান্নায় ভেঙে পড়ে হোস্টেলে…সেদিন কার সেই ভদ্রলোক বুঝতে পারলো,, তাজ তুলির ভাই না,, অন্য কিছু ছিলো…

তুলি তাজের প্রতি মৃত্যুবার্ষিকীতে এই ডায়েরি টা পড়ে আর চোখের জল ফেলে…

আম্মু তুলি,, এবার ত বিয়েটা করবি??(তাজের মা)

তুলি আম্মুর দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে উত্তর দিলো…

ভালোবাসার মানুষ টার জীবনের সমাপ্ত ঘটেছে,,, মানে,, নিজের জীবন টার সমাপ্তি ঘটেছে মা….(তুলি)

সমাপ্ত

[রাগ,জেদ,ইগো এই ৩ টা শব্দ ২ অক্ষরের হলে কি হবে?? একটা সম্পর্ক কে শেষ করতে এরা ২ মিনিট ও সময় নেয় না]

লেখাঃ তাসকিনা

সমাপ্তি পর্ব : ১ম

0

সমাপ্তি পর্ব : ১ম

লেখাঃ তাসকিনা

১৫ বছরের কিশোরী তুলিকে যেদিন প্রথম দেখতে যায়,,,তুলি আমার সামনে চুপটি করে বসে ছিলো। বাবা মা যখন তুলির কাকা কাকির সাথে কথা বলছিলো আমি তখন বেহায়ার মতো লুকিয়ে লুকিয়ে তুলিকে দেখছিলাম। ঠিক তখনি ব্যাপার টা খেয়াল করলাম,,

তুলি ঘোমটার আড়াল থেকে সামনে রাখা নাস্তার টেবিলের দিকে কিছু সময় পরপর তাকাচ্ছে ত আবার ঘোমটার আড়ালে মুখ ঢেকে নিচ্ছে।

ব্যাপার টা আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না,,,তবে কেনো তুলি এমন করছে জানার জন্য মায়ের কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললাম,,ব্যাপার টা জানতে…

মা তুলি…তুমি কি কিছু বলবা??(আম্মি)

তুলি এবার ঘোমটা টা ফেলে দিয়ে,,, আন্টি,, আপনারা যদি মিষ্টিগুলো না খান ত আমি কি খেতে পারি?? না মানে দেখেন ওগুলো ত নষ্ট হয়ে যাইতেছে…তাই আর কি…(তুলি)

তুলির কথা শুনে আমি, বাবা, মা,, ৩ জন ই অবাক হয়ে তুলির দিকে চেয়ে ছিলাম। আর ওদিকে তুলির কাকা কাকি তখন রাগে ফুঁসতেছিলো….ব্যাপার টা বুঝলাম না। ওনারা এমন করছে কেনো??

কয়েক সেকেন্ড পরে আব্বু আর আম্মু ২ নো জন হেসে দিলো…

তারপর আম্মি বললো,,,

এই কথা,,, হা হা,৷ তোমার যেইটা ইচ্ছা তুমি সেইটাই খাও হুম আম্মু..(আম্মু)

ধন্যবাদ আন্টি…বলেই তুলি সামনে রাখা নাস্তা গুলো খেতে শুরু করলো।

আরে আরে কি করিস,, এগুলো তোর জন্য নাতো,, এগুলো ওনাদের জন্য। (কাকিমা)

কাকিমা চিন্তা নিয়েন না,, ওকে ওর কাজ করতে দিন…(আমি)

আরো কিছুটা সময় কথাবার্তা বলে বিয়ের ডেট টা কনফার্ম করে আমরা চলে আসি।

কিন্তু ১৫ বছরের মেয়ে তুলির মধ্যে কি ছিলো যা আমি কিছুতেই ভুলতে পারছিলাম না। এতটা মায়া,, মিষ্টি হাসি,, দুষ্টুমি করে তাকানো সব কিছু কেমন যেনো আমি ভুলতে পারছিলাম না। দিন যতই যাই,,,আমি কেমন যেনো অস্থির হয়ে পড়ছিলাম,,, তুলিকে আমার করে কবে পাবো,, আর কবে ওর ওই মিষ্টি হাসি দেখতে পাবো??

কিন্তু আমার আসায় জল ঢেলে দিলো তুলির কাকিদের একটা ফোল কল,,,

বাবা মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,,

তুলি নাকি এ বিয়ে করবে না। ও নাকি আরো পড়াশোনা করতে চায় তাই…

আমার মন তখন আব্বু আম্মুকে বলছিলো,,, বলো আমি নিজে তুলিকে পড়াবো,,, ওর যত টা ইচ্ছা ও পড়বে কিন্তু তবুও আমি তুলিকে চায় আম্মি,,,

কিন্তু আম্মি আমার মনের কথা হইতো বুঝতে পারেনি ওইদিন…

এটাকে লাভ বলে নাকি আবেগ ছিলো আমি সেটা জানি না। কিন্তু প্রতি রাতেই তুলিকে খুব করে মিস করতাম।

একদিন বাসায় বসে আছি,, সামনে টিভি অন করে খবর দেখছি হঠাৎ কেউ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো…

কে কে আপনি,, আর আপনাকে দারোয়ান ঢুকতে দিলো কেমনে?? (আমি)

স্যার আমি ত ঢুকতে দিতে চায় নি,, আমারে ধাক্কা দিয়ে চইলা আইছে..(দারোয়ান পিছু পিছু এসে)

মেয়েটা মাথা থেকে উড়না টা সড়াতেই দেখি তুলি..

ত, তুলি তুমি??(আমি)

তাজ সাহেব,, আমায় আপনি বিয়ে করে নিন। আমি ও বাড়িতে আর থাকতে পারবো না,, আপনার ২ টো পায়ে পড়ি,, দয়া করুন..(তুলি)

এ, এই কি করছো?? উঠো উঠো,, ও বাড়িতে থাকতে পারবা না মানে?? কি হয়েছে??(আমি)

এরপর তুলি এক এক করে সবকিছু বলে দেয়…

কাকা কাকিমা ওকে ছোট থেকেই অবহেলা আর অনাদরে মানুষ করছে। আর এখন ত ওনারা তুলিকে বিয়ে দিয়ে ওর দায়িত্ব থেকে বেরোতে চায়। কিন্তু তুলি বিয়ে করতে চায় না জন্য নানাভাবে অত্যাচার করছে তুলির উপর দিয়ে,, ৩ দিন ওকে কোন খাবার দেয় নি কাকি। রুম আটকে রেখে দিয়েছে আর বলেছে আগে বিয়েতে রাজি হবি তারপর তোকে রুম থেকে বের করানো হবে…

আমি তুলির পা থেকে মাথা অবধি তাকিয়ে দেখি,, তুলির দাঁড়িয়ে থাকার মতো অবস্থাও নেই। পায়ে কোন জুতা বা সেন্ডেল ছিলো না জন্য,, পা কেটে জায়গায় জায়গায় রক্ত বেরোয়ছে। তুলিকে সোফাতে বসিয়ে,, আম্মু আব্বুকে ডাক দিলাম,,,

আব্বু আম্মু ত বেজায় খুশি। ওনারা বললেন,, তাইলে আজ ই বিয়ের সব আয়োজন করে ফেলি আমরা।।।

না বাবা…(আমি)

কেনো তাজ,, তুমি কি তুলিকে বিয়ে করতে রাজি না?? ওকে তোমার পছন্দ হয়নি??(বাবা)

আমি তখন তুলির দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখটা মলিন হয়ে আছে,,, হইতো আমার না বলাটা শুনে,,,

বাবা,, তুলি বিপদে পড়ে এ বাড়িতে এসেছে। আর মেইন কথা একটা আশ্রয়ের জন্য। আমাকে বিয়ে করার জন্য না। তাই না তুলি??(আমি)

তুলি কিছু না বলে চুপ করে রইলো,,

আমি তখন হালকা হেসে,,, আজ থেকে তুলির সমস্ত দায়িত্ব আমার বাবা…(আমি)

বাবা মা কিছু বললেন না। চুপচাপ চলে গেলেন…

ওনাদের আমার কথাটাতে ভালো লাগেনি এটা আমি ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছি..

এরপর প্রায় ৩ বছর চলে যায়,,, তুলি এখন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ছে…তবে তুলির প্রতি আমার যেই আবেগ নাকি লাভ ছিলো সেটা কিন্তু তখনও বিরাজ করছিলো,, প্রতি রাতে আমি তুলির পড়ার রুমের পাশে গিয়ে ওকে দেখার চেষ্টা করতাম। লাইটের আলো ওর সৌন্দর্য টাকে আরো বাড়িয়ে দিতো…

একদিনঃ

মেয়ের বাসা থেকে লোক এসেছে আমাদের বাসার পরিবেশ দেখতে,,,

ড্রয়িং রুমে বসে আছি আমি আব্বু, আম্মু…

এই টুকটাক কথা হচ্ছিলো আমাদের,,,

হঠাৎ তুলির আগমন। ওর হাস্যোজ্জ্বল মুখটা নিমেষে কালো হয়ে গেলো।কিন্তু কি কারনে,, এটা বুঝতে পারলাম না। তুলি ছুটে উপরের ঘরে চলে গেলো।

আব্বু আম্মু এদিকে ওনাদের সাথে কথাবার্তা বলে,, বিয়ের দিন ঠিক করে চলে গেলে,, আমি তুলির রুমের বাহিরে গিয়ে,,,

আসবো…(আমি)

তুলি ভেতর থেকে জবাব দিলো,, আপনাদের বাড়ি আপনাদের ঘর,,প্রবেশ করতে অনুমতি নিচ্ছেন কেনো??

বুঝতে পারলাম তুলি প্রচন্ড পরিমাণে রেগে আছে,,,

আমি তুলির রুমে প্রবেশ করে দেখলাম ওর চোখমুখ ফোলা,, এই ৩ বছরে তুলির ব্যাপারে আমি প্রায় সব কিছুই জেনে গেছি। অফিসে যাওয়ার আগে যখন ওকে স্কুল বা কলেজে নামিয়ে দিতাম,, গাড়ির মধ্যেই ওর থেকে প্রায় ওর ব্যাপারে সবকিছু জেনে গিয়েছিলাম।

আর ও কান্না করলে যে ওর চোখ ফুলে যায় এটাও জানতাম।

তুলি,, তুমি কান্না করছো কেনো?? কেউ কি তোমায় কিছু বলেছে??(আমি)

আপনাকে কে বলেছে আমি কান্না করছি?? (তুলি)

এই যে তোমার চোখ ফুলে গিয়েছে,,, এইটা থেকে বুঝতে পেরেছি..(আমি)

তুলি আর কিছু বললো না…চুপ করে রইলো…

কি হলো বলো,, কেউ কিছু বলেছে তোমাকে??(আমি)

আপনার এত বিয়ে করার শখ জাগছে কেন??(তুলি)

চলবে…

গরীবের প্রেম শেষ পাট

1

গরীবের প্রেম
লেখা/ রুবেল(হিংসুটে ছেলে)
——part2 -শেষ পাট

!
সাদিয়া বাসায় গিয়ে সায়মন কে কল করলো কিন্তু সায়মন ফোন রিসিফ করছে না,
সাদিয়ার মেজাজ অার ও গরম হয়ো গেল,
অবশেষ সায়মন ফোন রিসিফ করলো,

এ হারামি ফোর রিসিফ করিস না কেন?( সাদিয়া)
তুই ফোন কিনে দিছিস জন্য কি তোর ফোন রিসিফ করতে হবে?( সায়মন,,)
হ রিসিফ করতে হবে (সাদিয়া)
নিয়ে যা তোর ফোন, লাগবে না অামার(সায়মন)
রাগ দেখে বাচি না, অাচ্ছা শোন কাল একটু অাসতে পারবি(সাদিয়া)
কোথায় (সায়মন)
অাজ যে খানে দেখা করলাম (সাদিয়া)
অাচ্ছা ঠিক অাছে, অাসবো, অার শোন একটু খাবার নিয়ে অাশিস(সায়মন)
অাচ্ছা ঠিক অাছে (সাদিয়া)

!
পরের দিন সকাল ১০ টা….
সাদিয়া এসে বসে অাছে, সায়মন এর অাসার কোন খবর এ নাই
সাদিয়া অনেক টা রেগে অাছে
হঠাৎ সায়মন পাশে এসে বসলো

!
কয়টা বাজে (সাদিয়া)
১১ টা (সায়মন)
তোরে অাসতে বলছি কয়টায় (সাদিয়া)
১০ টায় ( সায়মন)
লেট করলি কেন(সাদিয়া)
জিএফ এর লগে দেখা করতে গেছিলাম(সায়মন)
কি??????(সাদিয়া)
জিএফ জিএফ। শুনছিস(সায়মন)
অাচ্ছা যা তার সাথে ডেটিং কর(সাদিয়া)
ও জানু রাগ করো না, অাসলে ঘুম থেকে উঠতে লেট হইছে (সায়মন)
তাহলে জিএফ এর কথা কইলি কেন(সাদিয়া)
অারে না তুই তো অামার জিএফ, (সায়মন)

ফাজলামো করিস না নে অাগে খা (সাদিয়া)
হুম দে (সায়মন)
শোন তোর ভালো কোন শাট অাছে (সাদিয়া)
কেন? অার শোন না অাজকের খাবার টা দারুন হইছে (সায়মন)
হুম অামি নিজে রান্না করছি (সাদিয়া)
উফপ অামার কপাল অনেক ভালো তোর মত একটা বউ পাবো (সায়মন)
অাবার শুরু করলি (সাদিয়া)
শোন বিয়ের পর কিন্তু রোজ অামাকে এ ভাবে রান্না করে খাওয়াবি? (সায়মন)
এটাই তোর শেষ খাওয়া বুজলি (সাদিয়া)
মানে?????(সায়মন)
মানে কালা অামায় ছেলে পক্ষ থেকে অাংটি পড়াবে (সাদিয়া)
মজা করছিস(সায়মন)
অামি তোর মত না যে মজা নিয়ে থাকবো যা বলছি সত্যি বলছি, তাই তোক বললাম ভালো শাট পড়ে কাল অামার বাসায় অাসবি(সাদিয়া)

!

সাদিয়ার মুখে এমন কথা শুণে সায়মনের মাথয় যেন অাকাশ ভেঙ্গে পড়লো,
কারন সাদিয়া সায়মন কে ফ্রেন্ড মনে করলেও সায়মন সাদিয়াকে বুকের মধ্যে বউ সেজে রেখেছে,
সায়মন ভাবতো সাদিয়া মুখে যাই বলুক সাদিয়া অামাকে অনেক ভালোবাসে,
হ্যা সাদিয়া সায়মন কে অনেক ভালোবাসে সেটা শুধু বন্ধু হিসাবে। সায়মনের চোখ এ দিয়ে পানি পড়ছে।

কি রে কাঁদছিস কেন(সাদিয়া)

কই না তো (সায়মন)
না তো মানে এই তো তোর চোখে পানি (সাদিয়া)
না মানে কিছু দিন পর তুই অার এ ভাবে অামার সাথে দেখা করবি না, খাবার অানবি না এটা ভেবে কান্না পাচ্ছে (সায়মন)
হুম এবার একটা জব খুজে তুই ও বিয়েটা করে নে, অাচ্ছা শোন অামি গেলাম কাল অাসিস কিন্তু (সাদিয়া,)
!
সায়মন রুমে গিয়ে অঝরে কান্না করছে কিছু তেই মানতে পারছে না সাদিয়া অন্যনো কারো হয়ে যাবে, বুকটা যেন ফেটে যাচ্ছে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে সাদিয়া তুই শুধু অামার অার কারো না, বাঁচবো না তোক ছাড়া,

!
রাতে না খেয়ে সায়মন ঘুমিয়ে গেছে,
সকাল ৯ টা একটা শাট বের করে সেটা ভালো কর লন্ডী করে , শাটটা পরে সাদিয়ার বাড়ি চলেগেল।

সাদিয়ার বাড়িতে অনেক মেহমান,
পুরো বাড়িটাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে, সাদিয়ার বর নাকি অনেক বর বিসনেস ম্যান, সাদিয়া অনেক খুশি সেটা সাদিয়া কে দেখে বুজা যাচ্ছে,
সাদিয়া তার হবু বরের হাতটা ধরে অাছে,
অনেকে ফটো সুট করছে,,
এ গুলো দেখে সায়মনের যেন বুকটা ফেটে যাচ্ছে,
সায়মনের খোজ নেযারো কোন প্রয়জন মনে করছে না সাদিয়া
সব অায়োজন শেষ এবার অাংটি পরাবে

ঠিক এ সমায়ে সায়মন চিৎকার করে বললো,
সাদিয়া তুই শুধু অামার অার কারো না, অামি তোকে ছাড়া বাচবো না রে,
সায়মনের মুখে এমন কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেলো,
সাদিয়ার বাবা মাথু নিচু করে অাছে,
সাদিয়া সায়মনের কাছে এসে

তুই কি পাগল হলি অামি তোক তো ভালো বন্ধু ভাবতাম
অার তুই কি না অাজ অামার এত বড়ো সবনাশ করলি ছি, বের হয়ে যা এখান থেকে(সাদিয়া)
সাদিয়া অামি তোক ছাড়া বাচবো না রে তুই শুধু অামার, (সায়মন,)

সাদিয়া সায়মনেন গালে অনেক গুলো থাপ্পর দিলো

অারে তোর কি যোগ্যতা অাছে অামাকে বিয়ে করার, অামার হবু কি করে যানিস। অনেক বড়ো বিসনেস ম্যান যা এখান থেকে (সাদিয়া)

সাদিয়া এ কথাটা বলে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল,
এ দিকে সাদিয়ার বাবা তার পোশা সিকিরুটির দিয়ে অনেক মার মারলো
রক্তে ভিজে গেছে সায়মনের শাটটা,

সায়মন কে বাহিরে রেখে অাসলে
সায়মনের কিছু বন্ধু সায়মন কে হসপিটালে নিয়ে যায়,
দু দিন পর সায়মন একটু সুস্থ হয়,

অাজ সাদিয়া বিয়ে,
সায়মনের পক্ষ থেকে সাদিয়া কে একটা বক্স গিফট করা হলো
উপরে লেখা ছিলো যানি অনেক রেগে অাছিস, প্লিজ বক্সটা বাসর রাতে গিয়ে খুলে দেখিস,
,
সাদিয়া বক্স টা নিজের কাছে রেখে দিলো,
বাসর রাতে সাদিয়া বক্স টা খু্লে একটা চিঠি অার একটা চাকরির apartment লেটার। যে চাকরিরে জয়েন করলে সায়মন মাসে, ৪০০০০ হাজার টাকা বেতন পাবে,
চিঠিটা সাদিয়া পরতে লাগলো

ডিয়ার জানু,

সরি সরি রাগ করলি? অাসলে অনেক দিন ধরে তোকে জানু বউ সোনা বলছি তো তাই অভ্যাস হয়ে গেছে,
লাল শাড়ি পড়ে বসে অাছিস তাই না?
যানিস প্রায় রাতে অামি স্বপ্ন দেখতাম তুই লাল শাড়ি পড়ে বাসর ঘড়ে বসে অাছিস অামার জন্য,
তার পর যখন অামি রুম এ অাসতাম তুই খাট থেকে নেমে অামাক অনেক কিল ঘুসি দিয়ে বলতি কুত্তা হাড়ামি কতক্ষন থেকে বসে অাসি।
হা হা হা সত্যি স্বপ্ন কখনো বাস্বব হয় না।
ঐ শোন না কথা দিচ্ছি অার কখনো হোস্টেল বিল বাকি রাখবো না,
তোর হাতের খাবারটা অনেক মিস করবো রে,
হা হা হা এখন অামি না খেয়ে থাকলেও কেউ খাবার নিয়ে অাসবে না,
অাচ্ছা শোন না সে দিন খুব কস্ট পাইছিস তাই না?
কি করবো বল তোর কেউ হাত ধরুক / অাংটি পড়াক এটা অামি মানতে পারছিলাম না,
তাই হঠাৎ ও গুলো বলে ফেলছি,
তুই তো যানিস অামি অনেক ফাজলামো করি,
এটা যানার পরও তুই……..
তোরে ফাজলামো করে বলছিলাম বউ
অার তুই অামার যোগ্যতা দেখলি,
অামি তো তোর বাড়িে দাড়োয়ান হওয়ারো যোগ্যতা োরাখি না,
ফাজলামোটা বুজলি না,
তুই রুমে যাওয়ায় পর যানিস অামাক অনেক মার মারছে রে
অনেক রক্ত বের হইছিল,
একটা কথা বলি সত্যি অামি তোক অনন্যে কারো সাথে শেয়ার করতে পারবো না,
তাই তো চলে যাচ্ছি অনেক দুর
যে খান থেকে কেউ ফিরে না।
ভালো থাবিস জানু

!
সাদিয়া চিঠিটা পড়ার পর অঝরে কেদে যাচ্ছে,
সাদিয়া রাতে বের হলো সায়মন কে খুজতে
সায়মন ততোক্ষন এ চলে গেছে না ফেরার দেশে।

সমাপ্ত

গরীবের প্রেম part 1

0

গরীবের প্রেম

লেখা/ রুবেল(হিংসুটে ছেলে)

——part 1—–

!

সায়মন এ ভাবে অার কত দিন চলবি বলতো?(সাদিয়া)
কেন অামি অাবার কি করলাম(সায়মন)
অাল্লাহ যে কেন তোর নামের সাথে অামার নামটা মিলে দিছে উনি ভালো যানে(সাদিয়া)
হাহাহা অাচ্ছা জানু তুমি এ ভাবে বলছো কেন?(সায়মন)
শোন ফাজালামো করবি না এই নে ধর(সাদিয়া)
কি এটা(সায়মন)
প্যাকেট খুলে দেখ(সাদিয়া)
ওয়াও thank you জানু(সায়মন)
এ নিয়ে তিনটা ফোন দিলাম তোক অার কিন্তু দিতে পারবো না (সাদিয়া)
উফপ জানু তুমি কত ভালো (সায়মন)
জানু মনু বাদ দে অামি তোর প্রেমিকা না (সাদিয়া)
তোক কে বলছে তুই অামার প্রেমিকা? তুই তো অামার বউ(সায়মন)
দেখ ফালতু কথা কস না, সকালে কি খাইছিস(সাদিয়া)
কি যে খাইলাম গো ঠিক মনে নাই(সায়মন)
থাক অার মিথ্যা বলতে হবে না(সাদিয়া)
কই মিথ্যা বললাম( সায়মন)
এবার বল হোস্টেল বিল কত টাকা বকেয়া অাছে(সাদিয়া)
২ মাসের (সায়মন)
এই নে ধর(সাদিয়া)
হুম(সায়মন)
হুম না, বাজে খরচ করবি না, বকেয়া টাকা পরিশোধ করে দিবি(সাদিয়া)
অাচ্ছা(সায়মন)
চল কিছু খাবি (সাদিয়া)
না থাক( সায়মন)
যা বলি তাই কর উঠ( সাদিয়া)
উফপ কানটা ছাড় লাগছে তো (সায়মন)
হুম ছাড়লাম এবার উঠ( সাদিয়া)
অাচ্ছা চল(সায়মন)

!
সাময়ন কে নিয়ে সাদিয়া একটা রেস্টুরেন্ট এ গেলো,
সাদিয়া ভালো করে বুজতে পারছে সায়মন সকাল থেকে কিছু খায়নি,
খাবে কি ভাবে হোস্টেল বিল বাকি,
কে ওরে খাবার দিবে,

!

এ ভাবে অার কত দিন বলতো? (সাদিয়া)
কি কত দিন(সায়মন)
অামার টাকায় চলবি(সাদিয়া)
যতো দিন শশুরের টাকা অাছে(সায়মন)
মানে(সাদিয়া)
মানে তুই অামার বউ তোর বাবা অামার শশুর তোর বাবার টাকায় তো খাচ্ছি তাই না? (সায়মন)
তুই কি সিরিয়াস হবি না, সব সমায় ফাজলামো ভালো লাগে না ( সাদিয়া)
,
খাইতে দিবি না উঠে যাবো(সায়মন)

রাগ দেখে বাচি না, খা তোরে কে বারন করছে?(সাদিয়া)
ও তোর টাকায় খাচ্ছি বলে তুই কথা শুনাবি, যা খাবোই না(সায়মন)
খাবি কেমনে পেট তো ভরে গেছে( সাদিয়া)
হ পেট ভরছে তোরে কইছে
অামি অারো খেতাম তোর জন্য খাইলাম না(সায়মন)
চল অাবার খাবি (সাদিয়া)
না থাক শশুরের টাকা মানে অামার টাকা বেশি খরচ করা যাবে না (সায়মন)
তোরে যে কি করবো রে হারামি (সাদিয়া)
কি অার করবি তোর অার অামার বেবির দেখা শুনা করবি(সায়মন)
প্লিজ দোস্ত একটা কিছু কর, অামি না থাকলে তোর কি হবে বলতো(সাদিয়া)
অামি না থাকলে মানে? কই যাবি তুই অামাক ছেড়ে?(সায়মন)
তোর মত অামি অাইবুড়ি হয়ে থাকবো নাকি, বিয়ে তো করতে হবে তাই না(সাদিয়া)
ও তোর অার অামার বিয়ের কথা ভাবচ্ছিস(সায়মন)
দেখ ফাজলামো অার ফালো লাগছে না তুই থাক অামি গেলাম(সাদিয়া)
যা যা তোরে কে অাসতে বলছে(সায়মন)

!
সাদিয়া রাগ করে চলে গেলো, সায়মন এর ফাজলামো গুলো অার ভালো লাগছিলো না।
সায়মন গ্রাম থেকে অাসছে শহরে লেখা পড়া করতে শহরে অাসার ১ বছর পরে ওর বাবা মারা যায়।
তারপর সায়মন গ্রামে যেতে চাইছিলো কিন্তু ওর মা অাসতে দেয়নি
মার স্বপ্ন ছেলে লেখাপড়া করে বড়ো চাকরি করবে,
কিন্তু সায়মনের মা অার খরচ চালাতে পারছিলো না, সায়মন ও অাশায় অাছে ভালো জব পেলে মা কে শহরে নিয়ে অাসবে,
কিন্তু মামা খালু অার টাকা ছাড়া অাজ কে কাকে চাকরি দেয়
সায়মন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হয়তো একদিন জব পাবে।
সাদিয়া সায়মনের বেষ্ট ফ্রেন্ড, সাদিয়া ওর বেপারে সবি যানে,
সাদিয়া সায়মন কে অনেক ভাবে সাহায্য করে যাচ্ছে, ।
সাদিয়া কুটি পতি বাবার একমাত্র মেয়ে,
তাই সায়মনে সাহায্য করতে একটু কষ্ট হয় না,
সাদিয়া ইচ্ছা করলে বাবা কে বলে সায়মনের চাকরির ব্যবস্থা করতে পারে।
সাদিয়া চায় ও ওর যোগ্যতায় কিছু একটা করুক

চলবে…..

খাট নিয়ে বিরম্বনা শেষ পর্ব

0

খাটনিয়েবিরম্বনা শেষ পর্ব

কুমু ওয়াশ রুমে যতেই আমি কানে হেড ফোন লাগিয়ে আমার পছেন্দর গান টা শুনতে শুরু করলাম।

গানটা এক এক করে চারবার শুনলাম।কিন্তু কুমু তো এখনো বের হচ্ছে না।এতক্ষণ তো লাগার কথা না,,,,

বাথরুমের দরজায় গিয়ে নক করতেই,,,

ভেতর থেকে কুমু বলল,

–দুই মিনিট, আসতেছি।

কুমু আসার পর কুমুকে জিজ্ঞাস করলাম আগের বার এমন করলেন কেন।

–কেমন করেছি

–বাথরুমে গিয়েই দৌড়ে এসে এক লাফে খাটে উঠলেন কেন।

–তখন তো আমি ভয় পেয়েছিলাম।

–এখানে তো কেউ ছিল না তাহলে কাকে দেখে ভয় পেলেন,,

–ছিল তো।

–কে ?

–আরশোলা,,,

–কিহ্

–আমি আরশোলা কে খুব ভয় পাই।

–আরশোলা কে ভয় পান ভালো কথা,তাই বলে লাফ দিয়ে খাট ভেঙে ফেলবেন।

–আমি কি ইচ্ছা করে লাফ দিছি নাকি।

–লাফ দেওয়ার আগে একবার চিন্তা করে তারপর লাফ দিতেন।

–কি চিন্তা করব ?

–আমি যে লাফ দিয়ে খাটে উঠব আমার ভার কি এই খাট টা সমলাতে পারবে।

–এত ভাবাভাবির সময় পাইনি তখন।আর আপনার এই খাটের তো আত্বা নেই।আজ না ভাঙলেও দুদিন পর এমনেই ভেঙে যেত।

–হইছে এখন ঘুমান।

–নিচে ঘুমাবো।

–কিছু করার নেই আজকে নিচেই ঘুমাতে হবে।

খাটের জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।কত বছর যে এই খাটে ঘুমিয়েছি তার কোন হিসাব নেই।খাট টার প্রতি এক ধরনের মায়া জন্মে গেছে।

খাটের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যানি ঘুমিয়ে গেছি,,,

সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে যার সাথে দেখা হচ্ছে সেই আমাকে দেখে কেমন যানি মুচকি মুচকি হাঁসছে।

এই হাঁসির কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।

যাই হোক বাড়িতে আর বেশিক্ষণ থাকেনি।চলে গেলাম বন্ধুদের কাছে।সেখানে যেতেই সবাই আমাকে অভিনন্দন জানাল।

বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার এক পযায়ে রিপন বলে উঠল ভাই তুই তো লিজেন্ড।

–কেন কি করেছি আমি।

–কাল রাতে তুই নাকি ক্রিকেট খেলে খাট ভেঙে ফেলছিস।

রিপন এই কথা বলতেই সবাই হো হো করে হেঁসে উঠল,,,

এখন সবাই আমাকে নিয়ে হাঁসাহাঁসি করছে।

দূর,,, এদের কথাবার্তা শুনে মেজাজটাই গরম হয়ে গেল।এরা আমার বন্ধু নাকি শক্রু এটা নিয়ে আমার ডাউট আছে।

রাতে বাড়ি ফিরে রুমে ডুকতেই চোখে পরল একটা নতুন খাট।কুমুর দিকে তাকিয়ে দেখি ওকে কেমন যানি খুশি খুশি লাগছে,,,

তাই কুমুকে জিগ্যেস করলাম কি ব্যাপার আপনাকে এত খুশি খুশি লাগছে কেন।

–আমাদের নতুন খাট দেখে।

–খাট দেখে এত খুশি হওয়ার কি আছে।

–আজ থেকে আর নিচে শুতে হবে না।

–ওহ্ এই ব্যাপার,,

কিন্তু আমাদের রুমে নতুন খাট আসলো কোথা থেকে ?

–আমাদের কাল রাতের খাট ভাঙার কথা শুনে বাবা আজকে নতুন খাট পাঠিয়ে দিছে,,,

–আপনি কাল রাতের কথা আপনার বাবাকে বলে দিছেন ?

–আমি বাবাকে এই ব্যাপারে কিছু বলেনি।বাবা কার থেকে যেন শুনল,,,

অবশেষে এই খবর আমার শুশুর বাড়ি পযন্ত চলে গেল,,,আমার আর মান সম্মান বলে কিছু রইল না,,,

–কোথায় যাচ্ছেন কুমু ?

–ওয়াশ রুমে।

–দাড়ান,,,দাড়ান,,,

–কেন ?

–আমি আগে ভেতর থেকে দেখে আসি।

–কি দেখবেন ?

–ভেতরে কোন আরশোলা আছে কিনা

–আজকে আরশোলা থাকলেও কোন সমস্যা নেই।আজকে নতুন খাট লাফ দিলেও ভাঙবে না।

–আমি আর কোন ধরনের রিস্ক নিয়ে চাইনা,,,

একবার খাট ভেঙে যে বিরম্বনায় আমি পরেছি।সে রকম বিরম্বনায় আমি আর পরতে চাইনা।

-(সমাপ্ত)-

লেখা~ Tuhin Ahamed

খাট নিয়ে বিরম্বনা দ্বিতীয় পর্ব

0

খাট নিয়ে বিরম্বনা দ্বিতীয় পর্ব


কুমুর চিৎকার আর খাট ভাঙার শব্দে বিয়ে বাড়ির সবাই এসে আমাদের দরজায় খট খট আওয়াজ করছে আর জিজ্ঞাস করতেছে কি হয়েছে,,,,

কুমু পরে গিয়ে কোমরে খুব ব্যথা পেয়েছে তাই ইশশশ,,,,,ও বাবা,,,,,,কি ব্যথা,,,,,মরে গেলাম,,,

এসব বলে চিৎকার করতেছে,,,

আমিও কোমরে ব্যথা পেয়েছি,,, তাও উঠে গিয়ে দরজা খুললাম।দরজা খুলতেই একে একে সবাই এসে রুমে ডুকে পড়ল।

কিভাবে এমন হল তা জিজ্ঞাস না করে সবাই মিট মিট করে হাঁসছে।এটা দেখে আমি অবাক হলাম।

এসবের ভিতর দিয়ে হটাৎ চোখ চলে গল বাবার দিকে।চেয়ে দেখি বাবা আমার দিকে রাগী একটা লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।আমার চোখ বাবার চোখে পড়তেই।

বাবা বলল,,,,

“রাম ছাগল একটা”

এটা বলেই বাবা এখান থেকে চলে গেল।বাবার সাথে সাথে ‘মা’ও এখান থেকে চলে গেল।কিন্তু মা কিছু বলেনি।

ঠিক তখনেই আমার বড় দুলাভাই ‘মানে আমার বড় আপুর জামাই আমার কানে কানে এসে বলল সবকিছুই রয়ে সয়ে করতে হয় তারাহুরা করলে এমনই হয়।

যাহ্ বাবা আমি আবার কি করলাম।

বড় দুলাভাই বলে শেষ না করতেই ছোট দুলাভাই বলল,,,

এটা কি করলা,,,,প্রথম দিনেই খাট ভেঙে দিলা।এটা কি ক্রিকেট খেলা নাকি,যে যত ইচ্ছা তত গতিতে বল করবা।

এখানে ক্রিকেট খেলার কথা আসলো কোথায় থেকে।ওনার কথা আমি কিছুই বুঝলাম না।

সবাই চলে যেতেই বিছানাটা ফ্লোরে করলাম।আজকে রাতে নিচেই থাকবো,,,ছোট বোন বলেছিল তার রুমে চলে যেতে।সে মায়ের সাথে থাকবে।কিন্তু আমিই যাই নি।

বিছানাটা করে,বিছানায় শুতেই কুমু আবার বলল,,,

–আমি ওয়াশ রুমে যাবো।

–না ওয়াশ রুমে যাওয়ার দরকার নেই।

–কেন ?

–একবার ওয়াশ রুমে যাওয়াতেই এই অবস্থা হয়েছে।আবার গেলে যে কি হবে ওটা আমি এখন কল্পনাও করতে চাই না।

–তাই বলে আমি এখন ওয়াশ রুমে যাব না।

–তা তো ঠিকই ওয়াশ রুমে যাওয়া ছাড়া কি থাকা যায় নাকি,,,, ওকে যাও তাহলে

কুমু ওয়াশ রুমে যতেই আমি কানে হেড ফোন লাগিয়ে আমার পছেন্দর গান টা শুনতে শুরু করলাম।

গানটা এক এক করে চারবার শুনলাম।কিন্তু কুমু তো এখনো বের হচ্ছে না।এতক্ষণ তো লাগার কথা না,,,,

বাথরুমের দরজায় গিয়ে নক করতেই ???

চলবে….

লেখা Tuhin Ahamed

খাট নিয়ে বিরম্বনা  প্রথম পর্ব

0

খাট নিয়ে বিরম্বনা প্রথম পর্ব


‘মা’ কে বিয়ের আগেই বলেছিলাম,বাবাকে বলতে আমার রুমের খাট টা চেন্জ করে দিতে।খাট টা অনেক পুরনো হয়ে গেছে,আর এই খাট টা ছোট হওয়ায় এটাতে দুজন থাকা কষ্টকর হয়ে যায়।

মা’ বাবাকে কথাটা ঠিকি বলেছিল।কিন্তু ঝামেলাটা বাঝায় আমার শশুর মশাই।ওনি নাকি আমাদের কে নতুন ফার্নিচার দিবে।ফার্নিচার এর কাজ এখনো কমপ্লিট হয়নাই তাই তিনি বলেছেন তোমরা কয়েক দিন একটু কষ্ট করে থাকো।ফার্নিচার বানানোর কাজ কমপ্লিট হলেই আমি তোমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিব।

ওনি যদি ফার্নিচার গুলি বিয়ের আগে দিতেন তাহলে আজ আমাকে এই দিন দেখতে হতো না।

গতরাতে ছিল আমার আর কুমুর বাসর রাত,,,

কুমু হচ্ছে আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে।বাবাই বিয়েটা ঠিক করেছিল।আমার কোন পছেন্দর মানুষ না থাকায় এই বিয়েটাতে আমি রাজি হয়ে যায়।

গতরাতে রুমে ঢুকতেই সদ্য বিবাহ করা বউটা
আমার পা ধরে সালাম করলো,এরপর চুপচাপ নিজের মত করে বিছানায় বসে আছে,আমিও কিছু বলার জন্য খুজে পাচ্ছিনা অপরিচিত একটা মানুষকে কিইবা বলার আছে। সময় শুধু বেড়েই যাচ্ছে দুজনই চুপচাপ,কিছুক্ষন পর তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,,,

–কুমু নাম টা খুব সুন্দর।

–ধন্যবাদ। আপনার নামটাও সুন্দর।

–মিথ্যা প্রশংসা করার জন্য ধন্যবাদ।

ছেলেদের দূর্বলতা কিসে আপনি
জানেন ?

–হ্যা জানি।

–কিসে ?

–মেয়েদের শরীরে।

–আমার ক্ষেত্রে হয়তো তা একটু ভিন্ন।

–যেমন ?

–আমার দূর্বলতা আপনার এ মেহেদী দেওয়া দুটা হাতে,আপনি যখন হাসেন আপনার গালে টোল পরে আমার দূর্বলতা আপনার এই গালে টোল পরা হাসিতে। আমার সবচেয়ে বেশি
দূর্বলতা কিসে জানেন ? আমার সবচেয়ে বেশি দূর্বলতা আপনার এ কাজল দেওয়া দুটা অপরূপ সুন্দর চোখে।

কুমু হয়তো এমন কিছু শুনার জন্য প্রস্তুত ছিলো নাহ,সে লজ্জা পেলো,লজ্জায় মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো।

হটাৎ বারান্দাটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ভেতরে প্রবেশ করা জ্যোৎস্নার মিষ্টি আলোটাও আমাদের এ বিশেষ রাতটার স্বাক্ষী হয়ে
থাকতে চাইছে।

কুমুকে বললাম,,,

–চাঁদ এর আলো আপনার পছন্দ ?

–অনেক বেশি।

–চাঁদ এর সাথে কখনও একা একা কথা
বলেছেন ?

–নাহ তা বলি নি কখনও।

চলুন বারান্দায় যাই,জ্যোৎস্নার আলোরসাথে কিছু সময় কাটিয়ে আসি।

আমি বারান্দায় চলে আসলাম,কুমু একটু পরই
ভয়ে ভয়ে আমার পিছে এসে দাড়ালো। বারন্দায় দুটা চেয়ার রাখা,একটাতে কুমুকে বসতে বললাম এরপর আমিও বসলাম।

মেয়েটা খুবই চুপচাপ স্বভাবের কথা কম বলে,হয়তো লজ্জায় কিংবা ভয়ে তা জানা নেই আমার।

অনেকটা সময় দুজনে একসঙ্গে চাঁদ দেখার পর রুমে চলে আসলাম।

রুমে এসেই কুমু বলল,,,

–আমি একটু ওয়াশ রুমে যাব,,,

–আমার রুমে এটাচ বাথরুম,আমি কুমুকে বাথরুমটা দেখিয়ে দিয়ে খাটে এসে শুইলাম।

ঠিক তখনেই কুমু চিৎকার দিয়ে এসে এক লাফে খাটের উপরে পরল।

খুব জোরে ঠাস এরে একটা শব্দ হল।

তারপর চেয়ে দেখি আমি আর কুমু দুজনেই খাটের বিছানা ভেঙে নিচে পরে আছি,,,

কুমুর চিৎকার আর খাট ভাঙার শব্দে বিয়ে বাড়ির সবাই এসে আমাদের দরজায় খট খট আওয়াজ করছে আর জিজ্ঞাস করতেছে কি হয়েছে,,,,

কুমু পরে গিয়ে কোমরে খুব ব্যথা পেয়েছে তাই ইশশশ,,,,,ও বাবা,,,,,,কি ব্যথা,,,,,মরে গেলাম,,,

এসব বলে চিৎকার করতেছে,,,

আমিও কোমরে ব্যথা পেয়েছি,,, তাও উঠে গিয়ে দরজা খুললাম……

চলবে….

লেখা Tuhin Ahamed

অনুভবেতোমায়খুঁজি শেষ পর্ব

0

অনুভবেতোমায়খুঁজি শেষ পর্ব


–কী চান আপনি ?

–কিছু না।

–আর কোনদিন কল করবেন না!

–যেদিন দেখবো মেয়েটির চোখ মেঘ ছুঁয়েছে সেদিনের পর আর জ্বালাবো না।

–এই যে মিস্টার এ,, বি,, সি,, যাই হোন না কেন এসব ছাড়ুন,,,,,নো মোর,,,,

–ওকে,,,, ছাড়লাম।

–হ্যালো!

… হ্যালো!

…হ্যালো!

আমি কিছৃ শুনতে পাচ্ছি না। লাইন কি কেটে
গেলো ?

–না,,, কারো উদ্বেগ দেখতে ভালো লাগছিলো!

–আপনি একটা যাচ্ছেতাই।

–এই অধম যাচ্ছেতাই এর পরিচয় জানার জন্য কেউ অস্থির এটা ভাবতে বেশ ভালো লাগছে কিন্তু,,,,

–ছাই অস্থির,,

–অস্থির না ?

–না

–ফোন রেখে দিলে অস্থির হবে কেউ ?

–খবরদার ফোন রাখবেন না। আজ আপনাকে বলতেই হবে কে আপনি!

–আজ না,,, অন্য কোন সন্ধ্যায়,,, যেদিন কেউ আমাকে সত্যিকারের খুঁজবে,,,সেদিন,,,

–আমি সত্যিকারেই খুঁজি বারান্দায় যাবার ইচ্ছেরা আমায় খুব জ্বালায়।

মনে হয়…

–কী মনে হয় ?

–কিচ্ছু না।

–হুম,,,কিচ্ছু না তাহলে ?

–মনে হয় কে এই মানুষ ? কেন সে আমায় দেখে ? এতো অপেক্ষা কেন করে ? হয়েছে এবার ?

–না হয়নি।

–আর কী ?

–কেউ একবার যদি তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তায় এসে দাঁড়াতো,,,

–দাঁড়ালে আপনার অনুবীক্ষণ দিয়ে দেখতেন আমার কপালে টিপ আছে কি না ? এর বেশি আর কীইবা পারেন আপনি।

–নাহ,,,এতোটাও এখন পারবো না।এখন একটু ঝামেলা আছে।পরে কথা হবে।ফোন রাখছি এখন।ভালো থাকবেন খুব।

–মানে কী ?

–মানে কিছু না! হলুদ দোতলা বাড়ির মেয়েটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।ফোন ছেড়ে আমার তার হাত ধরতে হবে।সময় নেই আপনার সাথে কথা বলবার।

–আপনি,,,,আপনি একটা যাচ্ছেতাই,,,

–যাচ্ছেতাই কী ?

–যাচ্ছেতাই রকমের বাজে আর পচা।কেউ এখন এই পচাটার জন্য হলুদ বাড়ির সামনে দাঁড়াবে ভাবতেও রাগ হচ্ছে,,,

–রাগ ভালো তো,,,যাচ্ছেতাই এক্ষুনি আসছে মেয়েটি যেন টিপ না পরেই আসে।ওখানে আজ যাচ্ছেতাই কেউ আলতো করে ছোঁবে।

–ছোঁবে,,,

–হু,,, ঠোঁট দিয়ে না আঙুল দিয়ে ছোঁবে সে,,,

—আমি কী জানতে চেয়েছি কিভাবে ছোঁবে ?

আশ্চর্য,,,,,,,,

আসলেই আপনি একটা যাচ্ছেতাই…

–হম,,,,রেডি হয়ে হলুদ বাড়ির সামনের রাস্তায় দারিয়ে থাকুন,,,,যাচ্ছেতাই আসছে,,,,

–আসুক আমি কি তাকে ভয় পাই নাকি,,,,

অতঃপর মেয়েটি হলুদ বাড়িটার সামনের রাস্তায় দারিয়ে আছে যাচ্ছেতাই কে দেখার জন্য।

(সমাপ্ত)

লেখা || Tuhin Ahamed

অনুভবেতোমায়খুঁজি প্রথম পর্ব

0

অনুভবেতোমায়খুঁজি প্রথম পর্ব

–নীল শাড়িতে তো আপনাকে বেশ মানায়।

–আপনি ?

–আমার ফোন নাম্বার সেভ করা ছিল না ?

–অচেনা কারো সাথে কথা বলতে আমার একদম ইচ্ছে করে না।আর আপনার নাম কি আমি জানি নাকি ? কি নামে নাম্বার সেভ করবো,,,,

–একটা কিছু লিখে কি সে করে রাখলেই পারতেন।তাহলে আর আমাকে চিনতে কষ্ট হতো না।

–আপনি তো মানুষ হিসেবে একদম ভাল না। কথা হবার পর আপনি ফোন বন্ধ করে ফেলেন

–আপনি আমার নাম্বারে কল দিয়েছিলেন,,,, এটা আগে বলবেন না,,,তাহলে তো আর আমি ফোন বন্ধ করি না।

–বলার দরকার নাই।

–কেন ?

–এমনি,,,এখন বলুন,,,,আমাকে কোথায় নীল শাড়ি পরা দেখলেন ?

–আপনার বান্ধবীর বিয়েতে।

–আপনি সেখানে কেন গেছিলেন ?

–আপনাকে দেখতে,,,

–কেন আমাকে আগে কখনো দেখেন নি ?

–দেখছি,,,তবে আজকের মতো নীল শাড়িতে দেখিনি।

–আপনি একটা পাগল।

–এক পাগলেই তো আরেক পাগলের সাথে সাথে কথা বলে,,,,

–আমাকে পাগল বললেন ?

–আপনি পাগল হতে যাবেন কেন,,,,

এখন বলুন তো আজকে বিকেলে কেন বারান্দায় আসেন নি ?

–আপনি কে বলুন তো ? বাসার আশেপাশে থাকেন এটা ভালই বুঝতে পারছি,,, কেন ফোন করেন ? আর আমার কাছে কী চান আপনি ?

–এতো প্রশ্ন একবারে করলে কোনটার উওর আগে দেব,,,,

–এক এক করে সবগুলোর উওর দিবেন।

–সবগুলোর উওর দিতে পারবো না।তবে আপনার কাছে কী চাই এটার উওর দিতে পারি।

–বলতে হবে না।আগে আপনার পুরো পরিচয় দেবেন তারপর অন্য কথা। না হলে না।

–কী না ?

–আমাকে আর কল দেবেন না।

–এতে কি আপনার ভালো লাগবে ?

–আপনার কি মনে হয়।

জানা নেই, চেনা নেই, কে না কে আপনি,,, আপনার ফোন না এলে আমার মন খারাপ হবে কেন,,,

–হবে,,,

–মাথা খারাপ আপনার

–তা একটু আছে অবশ্য,,

-একটু না,,, পুরোটাই খারাপ,,,,,

–আজকে নীল শাড়ি পরা কাউকে দেখবার পর মাথা পুরো খারাপ হয়ে গেছে,,,নীল শাড়িতে আমার অনেক দূবলতা আছে,,,তাই মাথা একটু খারাপ হয়ে গেছে,,,

আচ্ছা, আপনি টিপ পরেন না কেন ?

–পরি,

— কিন্তু আজ পরলেন না যে ?

-আপনি কি অনুবীক্ষণ নিয়ে বসে বসে শুধু মেয়েদেরই দেখেন নাকি।এছাড়া আর কোন কাজ নেই আপনার,,,

–কাজ আছে। তবে মেয়েদের না। শুধু মাএ একটা মেয়েকেই দেখি।

–কেন ? পরিচয় দিচ্ছেন না,,,,আর এসবের মানে কী ?

–কেউ এক জন প্রতিদিন বারান্দায় দারিয়ে কাউকে খুঁজে কিন্তু তাকে আর পায় না।

আর একটা কথা, আপনার ঠোঁটের নিচের ঐ ছোট কাল তিলটা আপনার সৌন্দর্য কয়েক গুন বাড়িয়ে দেয়।

–তিল টাও দেখে ফেলেছেন ?

বাহ,,,,,,,

আর কে বলেছে আমি কাউকে খুঁজি ? অদ্ভুত সব কথা!

–নীল শাড়ির সাথে নীল চুড়ি।এই দৃশ্য দেখলে চোখ জুরিয়ে যায়।

–আপনার চোখ দুটি বাঁধিয়ে রাখার মতো,,,

–কেন ?

–এই যে কত নিখুঁত দৃষ্টি আপনার,,,কোন কিছুই আপনার চোখ এরিয়ে যেতে পারে না।

–এটা দেখার জন্য হঠাৎ আসা বাতাসকে একটা ধন্যবাদ দিতেই হয় সে এসে আপনার চুল এলোমেলো করলো বলেই না নীল চুড়ি পরা হাতটা দেখতে পেলাম,,,,

–কী চান আপনি,,,,,,, ?



চলবে,,,,,

লেখা || Tuhin Ahamed