ডান হাতে ব্যথা পেয়ে অদ্রি চাপা স্বরে উঁহু বলে উঠলো। চোখ মুখে স্পষ্ট ব্যথার ছাপ। নিদ্র অদ্রির ডান হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো, ফোসকা টা গলে গেছে। মনে হয় তার হাতেই লেগে।
– স্যরি, আমি খেয়াল করিনি।
– স্যরি বলার কিছুই হয়নি। দোষ আমারই ছিলো।
ব্যথায় অদ্রির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করলো।
– এই প্লিজ কাঁদে না। আমার কাছে মনে হয় বার্ন ক্রিম আছে। ক্ষত স্থানে লাগালে কিছুটা ভালো লাগবে।
অদ্রি আপনি বিছানার উপর বসুন। আমার ব্যাগে খুঁজে দেখতে হবে। নিদ্র বার্ন ক্রিম খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
অদ্রি হাত নাড়াতেও পারছেনা। অসহ্যকর লাগছে। একটু আগেও সুন্দর সময় পার করছিলো আর এখন!
– বার্ন ক্রিমে কাজ হবে কিনা জানিনা। ফোসকা ফেটে গেছে।
ক্রিম দেয়ার সময় অদ্রি হাসতে হাসতে বললো
– এভাবে মানে এতো আস্তে আস্তে ক্রিম দিয়ে দিলে কোনোদিনও শেষ হবেনা দেয়া। আর এভাবে কেউ ক্রিম দিয়ে দেয়? ক্ষত স্থানে লাগছেই না। আশেপাশেই ঘোরা ফেড়া চলছে আরকি।
নিদ্র তোতলাতে লাগলো।
– ভয় লাগছে, যদি আপনি ব্যথা পেয়ে বসেন।
– ব্যথা অলরেডি পাচ্ছি। তাই দয়া করে একটু দ্রুত কাজ সারুন।
ক্রিম দেয়া শেষ হলে নিদ্র বললো
– আপনি তো দেখছি শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছেন দিনদিন। খাওয়া দাওয়া কি করেন না?
ওড়না ঠিক করে অদ্রি বললো
– করি বৈকি।
– আমার উপর রাগ হচ্ছে না আপনার?
– কেনো?
– না মানে ইয়ে আপনাকে এভাবে জাপটে ধরে…… মানে….
নিদ্রের ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে অদ্রি বললো
– রাগ না অভিমান ছিলো। এখন নেই, উবে গেছে!
নিদ্র অদ্রির গলায় গভীর চুমু দিলো। তারপর অদ্রির ঠোঁটে ঠোঁট চেপে তীব্রভাবে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। আনাড়ি ভাবে চুমু এঁকে দিয়ে নিদ্র বললো
– আপনার আরো কাছে আসতে পারবো আমি?
নিদ্রের গলায় গভীর চুমু দিয়ে বললো
– কেনো নয়? আমি আপনারই অপেক্ষায় ছিলাম।
– চলুন বিয়ে করে ফেলি।
– আপনার পরিবার রাজি হবে? আমি তো বিধবা মেয়ে।
অদ্রির ঘাড়ে মাথা রেখে নিদ্র বললো
– আপনার এই ডায়লগ দেয়া কবে বন্ধ হবে?
– এটা তো কোনো ডায়লগ না। আমার জীবনের গল্প।
অদ্রির ঘাড়ে নিদ্র নাক ঘষে বললো
– অতীত ছিলো আর কিছুই না। বর্তমানটা কেমন লাগছে?
– স্বপ্নের মতো ঠিক। মনে হচ্ছে একটা ঘোরের মধ্যে আছি। আপনার আনাড়ি চুমুতে মনে হচ্ছিল আমি আমাকেই হারিয়ে ফেলছি। একটু একটু করে হারাচ্ছিলাম নিজেকে।
রিতা আসমা জামানের গল্পে বিরক্ত বোধ করছেন। কিছুই বলতে পারছেন না। বয়স্ক মানুষ তাই চুপচাপ সহ্য করছেন। এদিকে অদ্রি সেই কখন তার রুমে ঢুকেছে এখনো বের হয়নি। মেয়েটার অসুস্থতা বাড়লো কিনা কে জানে?
ডাকতেও সাহস পাচ্ছেন না। নিদ্র নামের ছেলেটার জন্য অদ্রি তার উপর রেগে আছে।
রশীদ সাহেব আগামীকাল আসলেই, তাকে দিয়ে নিদ্রকে ওই রুম থেকে বের করতে হবে।
– রিতা, শুটকি মাছ আছে নাকি?
– রান্না করাটা শেষ।
– কাঁচাটা তো আছে?
– আছে।
– তাহলে ভর্তা করো। বেশি করে ঝাল দিয়ে।
রিতা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে থালা বাসন ধুতে লাগলো।
লিলি বেশ মনোযোগ দিয়ে রান্না করছে। রঙিন ভাইজান এসেছে, সেও তো রাতে খাবে। রান্না ভালো না হলে, ঠিকঠাক মতো খেতে পারবেনা। বেচারার কষ্ট হবে। ঝাল, নুন, তেল সব ঠিকঠাক মতো হতে হবে।
রঙিন ভাইজান আগের থেকে বেশি সুন্দর হয়ে গেছেন।
একজন মানুষ এতো সুন্দর কীভাবে হয়?
প্রায়ই ফরেইনার দের মতো দেখতে। রিতার জন্য সে সাজগোজ টাও করতে পারেনি।
লাল রঙের জামাটাও পড়ার সুযোগ পায়নি সে। চা দেয়ার অজুহাতে রঙিন ভাইজানের সাথে কথা বলা যেতো। এই রিতাটার জন্য সব মাটি হয়ে গেলো।
সে কি দেখতে খুব খারাপ নাকি? অন্ততপক্ষে অদ্রির চেয়ে সুন্দরী সে। ওরকম রোগা টাইপের চেহারার মেয়েকেই কাজের লোক হিসাবে মানায়, তাকে না।
– আমার ঘুম আসতে চাচ্ছে। তবে একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছে।
অদ্রিকে প্রশ্নটা করলো নিদ্র।
– শর্তটা কী?
– চুলে বিলি কেটে দিবেন?
– এখন না।
– কেনো কেনো?
– এখন ঘুমানো যাবেনা। রান্না হচ্ছে তারপর খাবেন। তারপর ঘুম।
– ম্যাডাম নিজে কি এরকম নিয়ম মেনে চলেন?
– আমার কথা বাদ দিন। আমি তো আমিই।
অদ্রির চুলে আঙুল চালিয়ে দিয়ে নিদ্র বললো
– এখন আপনি আর আমি মিলে আমরা হয়ে গেছি।
– আপনার তো লুসি আছে। কীভাবে সম্ভব শুনি?
– O my God! আমিই তো ওকে ভুলে গেছিলাম। আপনি কীভাবে মনে রাখলেন?
– আপনিই তো বলেছিলেন, ” আমার লুসি আছে। ” সে থাকতে আমি আর আপনি কীভাবে আমরা হই?
– ও কিছুই ছিলোনা। মোহ ছিলো ক্ষণিকের।
– আমিও কি ক্ষণিকের মোহ আপনার কাছে? আমার চেয়েও বেটার কাউকে পেলে আমিও মোহ হয়ে যাবো?
– আপনি আমার কাছে কী? এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। আপনার প্রতি আমার ফিলিংসটাও আমি ব্যাখ্যা করতে পারবো না।
লুসি আমার মায়ের নার্স ছিলো। সেই থেকে কথাবার্তা, পরিচয়। লুসিকে আমি ফিল করতে পারিনা কিন্তু আমি কারণে অকারণে আপনাকে ফিল করতে পারি। এইযে দেখুন না, আপনাকে কাছে পাওয়ার সাথে সাথেই নিজের উপরই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি।
বিয়ের পূর্বে চুমু দেয়া, স্পর্শ করা হারাম কিন্তু আমি পারছিনা। এজন্যই বলছি, চলুন বিয়ে করে ফেলি।
অবশেষে আমার সাথে লিজার বিয়েটা হয়ে গেল।প্রচন্ড অনিচ্ছা সত্তেও এই বিয়েটা আমাকে করতেই হল।
লিজাকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর মা এসে আমাদেরকে বরন করে ঘরে তুলল।বিয়ে বাড়িতে সাবাই এসে ভীর করেছে নতুন বউ দেখতে।এসব দেখে আমার ভাল লাগতে ছিল না।তাই আমি ঘর থেকে বের হয়ে যায়,,,,
এখন বাজে রাত বারোটা।বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পরেছে।ঘরে এসে দেখি লিজা খাটের উপরে বসে আছে।হয়তো আমার অপেক্ষাতেই বসে আছে।কিন্তু আমি তো এমনটা কখনো চাইনি।
ঘরে থাকতে মোটেও ইচ্ছা হচ্ছে না।তাই বারান্দায় চলে আসলাম।পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট ধরালাম।অনেক দিন ধরে সিগারেট খাওয়া হয় না।সিগারেট টানতেছি আর ধোঁয়া ছাড়ছি,,,,
এর সাথে সাথে একবছর আগের স্মৃতি গুলি মনে পরে গেল।
সেদিন লিনা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।ডাক্তার লিনাকে দেখার পরে কিছু টেস্ট করতে দেয়।লিনার টেস্ট গুলি করিয়ে ওরে বাসায় দিয়ে তারপর আমি বাসায় ফিরি।
সেদিন বাসায় আসার পরে খুব চিন্তা হচ্ছিল কাল লিনার কি রিপোর্ট আসে এটা নিয়ে,,,
পরের দিন ডাক্তারের কাছে রিপোর্ট নিয়ে যাওয়ার পরে ডাক্তার রিপোর্ট দেখে যা বলল এমন কিছু শুনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।ডাক্তার যখন বলল লিনার ব্রেন টিউমার হয়েছে।এটা শুনার পরে আমার পৃথিবীটাই কেমন যেন উলট পালট হয়ে গেল।
এর পরে দেশের অনেক বড় বড় ডাক্তার লিনাকে দেখিয়েছি কিন্তু কোন ডাক্তারেই লিনাকে সুস্থ হওয়ার আশ্বাস দিতে পারল না।আর এদিকে যতই দিন যাচ্ছিল লিনার অবস্থার ততই অবনতি হচ্ছিল।
তারপর নিলাকে দেশের বাহিরে নিয়ে গেলাম।কিন্তু সেখানের ডাক্তাররাও তেমন কোন আশ্বাস দিতে পারছিল না।এভাবেই চলে গেল আরো কিছুদিন।
তারপর একটা সময় ডাক্তার জানিয়ে দিল ওনাকে নিয়ে দেশে চলে যান।ওনার সুস্থ হওয়ার মত আর কোন চিকিৎসা নেই।ওনি এই মূহুর্তে ওনার জীবনের লাষ্ট স্টেজে আছেন।যে কোন সময় ওনার কিছু একটা হয়ে যেতে পারে।
ডাক্তারের থেকে কথা গুলি শুনে নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল তখন।একটা মানুষ চখের সামনে তিল তিল করে শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তার জন্য কিছুই করতে পারছি না আমরা।লিনার বাবা আর লিজা খুব ভেঙে পরল ডাক্তারের কথা শুনে।এদিকে লিনাও কিভাবে যেন সব জেনে গেল।
দেশে ফিরেই লিনা সবাইকে একসাথে তার ঘরে ডাকলো।আমি,লিজা,আঙ্কেল সবাই লিনার কথা শুনার জন্য ওর ঘরে গেলাম।আমাদের সবার উদ্দেশে লিনা বলল,,,,
– তোমরা আমাকে না বললেও আমি ঠিকি বুঝতে পেরে গেছি আমি আর বেশি দিন বাঁচবো না।আমি মরে যাবো এতে আমার কোন দুঃখ নেই।কিন্তু আমি মরে যাওয়ার আগে যদি তোমাদের কাছে কিছু চাই তোমরা কি আমাকে তা দিবে ??
আমরা সবাই তখন কান্না জরিত কন্ঠে বললাম। তুমি কি চাও বল।আঙ্কেল লিনার কাছে গিয়ে লিনার মাথা আঙ্কেলের বুকে নিয়ে আঙ্কেল কান্না করতে করতে বলল।তুই কি চাস আমাকে বল মা,,,,
– বাবা আমি মারা যাওয়ার আগে আমার আপুর বিয়েটা আমি দেখে যেতে চাই।
আচ্ছা মা তাই হবে।আমি লিজার জন্য কাল থেকেই ছেলে খুঁজতে ঘটক কে খবর দিচ্ছি।
– না বাবা,তোমাকে ছেলে খুঁজতে হবে না।আপুর জন্য ছেলে আমি পছন্দ করেছি।
তুই কার কথা বলছিস মা ?
– লিনা যখন আমার দিকে তাকিয়ে আমার নাম টা বলল।আমি এটা শুনে খুব অবাক হলাম।লিনা এটা কি করে বলতে পারল।আমি তো ওকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারি না।তাহলে সে এটা কেমন করে বলল।
লিনার মুখে এটা শুনে আমি সাথে সাথেই বললাম না লিনা এটা আমি কখনোই করতে পারবো না।আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকেই চাইনা লিনা।
একটা সময় লিনা আমাকে এমন ভাবে বলল।তখন আমি খুব দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে পরে গেলাম।একদিকে মৃত্যু পথ যাত্রী লিনার কথা রাখতে লিজাকে বিয়ে করতে হবে আর অন্যদিকে আমার ভালবাসা।আমি কি করব কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
তখন আঙ্কেল আমাকে বলল,,,বাবা তুমি কি আমার মেয়ের কথা টা রাখবে না ??
আমি আঙ্কেলকে কি উত্তর দিব ভেবে পাচ্ছিলাম না।
একটা সময় লিনার কথা রাখতে গিয়ে আমার মনের অবাধ্য হয়েই এই বিয়েটা করতে আমি রাজী হলাম।
সেদিনের এই একটা ঝড়েই আমার জীবনটা কেমন উলট পালট করে দিল।
ওফফ,,,,,হাতে সিগারেটের আগুনের ছ্যাঁকা লাগলো।কখন যে আমার জীবনের মত করে হাতে থাকা সিগারেট টাও পুরতে পুরতে ছাই হয়ে গেল খুঁজি পেলাম না।
এর মধ্যেই হটাৎ ফোনটা বেঝে উঠল।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি আমার ফোনে তো কোন কল আসেনি তাহলে শব্দটা কোথায় থেকে আসছে,,,
পরক্ষণেই মনে হল ফোন বাজার শব্দটা আমার ঘর হতে আসছে।হয়তো লিজার ফোনে কল আসছে,,,,
কিন্তু এত রাতে লিজাকে কে ফোন করল।এটা ভাবতেই,,,
খুব জোরে একটা চিৎকারের আওয়াজ কানে আসলো।আমার এই চিৎকারের কারন বুঝতে একটুও দেরি হল না।এই চিৎকার শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস আর চখের কোনে দু-ফোটা জল চলে এলো আমার….
#সমাপ্ত
গল্পটা আজকে শেষ করে দিলাম।আমি আমার সবটুকু দিয়েই গল্পটা লিখতে চেষ্টা করেছি।জানি না কেমন হয়েছে,এটা আপনারাই ভাল বলতে পারবেন।
যারা দৈর্য্য নিয়ে পুরো গল্পটা পরেছেন তাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
চাকরিটা আমার হয়ে গেছে।এই মাসেই চাকরিতে জয়েন দিয়েছি।আর আমার পোস্টিং হয়েছে ঢাকাতে।ঢাকায় আসার আগে আপনার বাবার সাথে দেখা করতে গেছিলাম।তিনি আমাকে বলেছেন আপনার সাথে দেখা করতে আর আপনার খোঁজ খবর রাখতে।
– ও আচ্ছা।
কালকে বিকেলে কি আপনার সাথে দেখা করা যাবে ?
– সামনে আমার পরীক্ষা আমি এখন আপনার সাথে দেখা করতে পারবো না।পরীক্ষা শেষ হোক তারপর কোন একদিন না হয় দেখা করবো।
দেখা করতে পারবে না কথাটা শুনে মনটা কিছু টা খারাপ হয়ে গেল তারপরই মনে হল লিনার পরীক্ষা না থাকলে হয়তো সে দেখা করত।
এভাবেই কেটে গেল আরও এক সপ্তাহ।রাতে আবার ফোন দিলাম।লিনা ফোন রিসিভ করে বলল ওর মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা ও পরে কথা বলবে।
লিনার অসুস্থতার কথা শুনে সেদিন রাতে আমার আর ঘুম হল না।
খুব সকালে আবার লিনাকে লিনাকে ফোন দিলাম,,,
মাথা ব্যাথা কমছে ?
– হ্যাঁ,,,ব্যাথার ঐষুদ খেয়েছি এখন আর ব্যাথাটা নেই।
আজকে বিকেলে একটু দেখা করতে পারবেন ? প্লিজ না বলবেন না।
– ওকে,,,,আমি বের হওয়ার আগে আপনাকে জানিয়ে দিব কোথায় দেখা করব।
লিনা যে ঠিকানা দিয়েছে প্রায় এক ঘন্টা ধরে সেখানে বসে আছি।ও বলেছিল পাঁচটায় আসবে আমি চারটায় এখানে এসে বসে আছি।ওর সাথে দেখা করব বলে সময় যেন কিছুতেই যাচ্ছিল না।তাই এক ঘন্টা আগেই এখানে চলে এসেছি।এখানে বসে বসে লিনার কথা কল্পনা করতেছি।এর মধ্যেই কে যেন পেছন থেকে বলে উঠলো,,,,
– কখন আসলেন ?
এইতো ঘন্টা খানেক হবে।
– এত আগে আসলেন কেন।আমি তো বলেই দিয়েছি আমি পাঁচটায় আসবো এখানে।
বাসায় একা একা ভাল লাগতেছিল না।তাই চলে এসেছি।
– তাই বলে এক ঘন্টা আগে আসতে হবে।
কি আর করব।একা বাসায় থাকি,কথা বলার মানুষ নেই।তাই একটু আগেই চলে আসলাম।
তো কাল রাতে হটাৎ এত মাথা ব্যাথা হল কেন ?
– যানি না।তবে মাঝে মধ্যেই এমন হয়।ব্যাথার ঐষুদ খেলে আবার কমে যায়।
ডাক্তার দেখিয়েছেন ?
– ডাক্তারের কাছে যাবো যাবো করে যাওয়া হচ্ছে না।
কালকেই আপনি ডাক্তার দেখাবেন।মনে থাকবে ?
– ওকে দেখাবো।
তো আপনার চাকরি জীবন কেমন চলছে ?
হম ভালোই চলতেছে,,,,,
সেদিন লিনার সাথে দেখা করে বাসায় চলে আসি।তারপর মাঝে মধ্যেই লিনার সাথে আমার কথা হত।তবে বেশি একটা না।
আর এভাবেই সময় গুলি চলে যাচ্ছিল,,,,
এর মধ্যেই একদিন অফিসে থাকা কালীন সময়ে লিনা ফোন দিল।এখন পর্যন্ত ও আমাকে একবারও ফোন দেয়নি।হটাৎ করে ওর ফোন পেয়ে আমি একটু এবাক হলাম,,,,
তাই ফোন রিসিভ করে বললাম।
হ্যাঁ বলেন,,,
– আচ্ছা,,,আপনার খুঁজে কি A- রক্তের কেউ আছে ?
আমার রক্তের গ্রুপেই A-
– সত্যি আপনার রক্তের গ্রুপ A- ?
হম।
– আপানাকে আমি একটা ক্লিনিকের নাম বলছি আপনি এক্ষুনি এখানে চলে আসুন।খুব তারাতারি আসবেন কিন্তু।
ওকে আমি আসতেছি।
– ওকে তাহলে এখন আমি ফোন রাখছি বাই।
এই বলেই লিনা ফোন রেখে দিল।আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে চলে গেলাম ঐ ক্লিনিকে।সেখানে গিয়ে দেখি লিনা আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে।আমাকে দেখেই বলল,,,
– আপনি এসেছেন,,,
হম এসেছি।আপনি বলছেন আর আমি আসবো না।এখন বলুন কাকে রক্ত দিতে হবে।
– আমার এক বান্ধবী কাল রাতে এক্সিডেন্ট করে পা অনেকটা কেটে গেছে।শরীর থেকে অনেক ব্লাড বের হয়ে গেছে।ডাক্তার বলেছে খুব দ্রুত ওরে ব্লাড দিতে হবে।অনেক জাইগায় A- ব্লাড খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি।তারপর আপাকে ফোন দিলাম।কি অদ্ভুত ব্যাপার আপানাকে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম আপনার ব্লাড A-।এখন আমার বান্ধবীকে আপনার রক্ত দিতে হবে।
তারপর রক্ত দেওয়ার জন্য লিনা আমাকে নিয়ে গেল।
সেদিন লিনার বান্ধবীকে রক্ত দিয়ে শরীর খুব ক্লান্ত লাগছিল তাই বাসায় এসে রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরেছি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি লিনা অনেক বার ফোন দিয়েছে।এটা দেখার সাথে সাথেই আমি আবার লিনাকে ফোন দিলাম,,,,
– কি ব্যাপার,,,রাতে আমি আপনাকে এতবার ফোন দিলাম আপনি ফোন রিসিভ করলেন না কেন ?
শরীর খুব ক্লান্ত ছিল তাই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
– আপনার কি শরীর খারাপ ?
না শরীর ঠিক আছে।
– জানেন আমার বান্ধবীরা সাবাই কাল আপনার খুব প্রশংসা করেছে।তখন আমার খুব ভালো লাগছিল ওদের মুখে আপনার প্রশংসা শুনতে।
আমার পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ কেন ?
– আমার বান্ধবীকে রক্ত দিলেন তাই আপানাকে একটা ধন্যবাদ দিলাম।
ধন্যবাদ দিতে হবে না।আপনার বান্ধবী মানে তো………….. !!
– কিছু বললেন ?
না কিছু বলিনাই।
সেদিনের পর থেকে লিনার সাথে আমার সম্পর্কটা একটু অন্যরকম হতে শুরু করল।এখন আমি ফোন দেওয়ার আগেই সে আমাকে ফোন দেয়।তারসাথে রাত জেগে অনেক কথা বলি।এখন আমি তাকে তুমি করে বলি আর সে আমাকে আপনি করেই বলে।দিনগুলি খুব ভালোই যাচ্ছিল আমাদের,,,,,
তারপর একদিন সে আমাকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বলল।আমিও তার সাথে দেখা করতে গেলাম,,,,
– জানেন আজকের দিনটা না আমার জন্য খুব স্পেশাল।
কেন আজকে কি ?
– আজকে আমার জন্মদিন।তাই আজকের দিনটা আমার কাছে খুব স্পেশাল।
এটা শুনার সাথে সাথেই আমি লিনাকে উইশ করলাম।তারপর একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বড় একটা কেক অডার করলাম।ওকে রেস্টুরেন্টে বসিয়ে রেখে আমি একটু বাহিরে আসলাম।তারপর মার্কেটে গিয়ে আমার পছন্দে ওর জন্য একটা নীল শাড়ি কিনলাম আর ওকে দেওয়ার জন্য কিছু ফুল নিলাম।
তারপর রেস্টুরেন্টে এসে ওকে ফুল আর শাড়িটা দিলাম।শাড়িটা ওর খুব পছন্দ হয়েছিল।তারপর দুজনে কেক কাটবো এমন সময় লিনা বলল আমার মাথাটা কেমন যানি করছে আর সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে গেল।
এক বছর পর••••••
– কিরে আর কতক্ষণ লাগবে তোর,,,,
এইতো মা আমার হয়ে গেছে।
– সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করতেছে।
তুমি যাও আমি আসছি।
আজ আমার বিয়ে।আমি বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি আর এদিকে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে।মা এটাই বলতে আসছিল আমাকে।
বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পরে আমাকে বরন করার জন্য লিনা তার বান্ধবীদের নিয়ে এসেছে।লিনাকে দেখার পরেই আমার বুকের ভিতর টা কেমন করে উঠল।কিন্তু ওকে দেখে মনে হচ্ছিল ও খুব হাঁসিখুশি।
লিনাকে দেখার পরে শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছে একটা মানুষ এতটা কষ্ট নিয়ে কি করে হাঁসতে পারে।
লিনা আমাকে বরন করে ভেতরে নিয়ে গেল।আমি শুধু তাকিয়ে দেখিতেছি মেয়েটাকে কিন্তু কিছুই বলতে পারছি না।
তারপর বিয়ে পারানোর জন্য কাজী এসে যখন আমাকে বলল,,, বলুন বাবা কবুল।অনেক চেষ্টা করতেছি কবুল কথাটা বলার কিন্তু কিছুতেই এই ছোট শব্দটা আমার মুখে আসতেছে না।আমার শুধু বার বার লিনার কথাই মনে হচ্ছিল।
এর মধ্যেই লিনা এসে আমার সামনে দাঁড়ালো।ওকে দেখার পর আর কবুল না বলে থাকতে পারলাম না।
অবশেষে আমার সাথে লিজার বিয়েটা হয়ে গেল।প্রচন্ড অনিচ্ছা সত্তেও এই বিয়েটা আমাকে করতেই হল।
তার মানে চাকরিটা আমার হয়ে গেছে।বাবা মা কে খবরটা জানালাম ওনারা খুব খুশি হয়েছেন।তবে বাবাকে দেখে মনে হল বাবা একটু বেশিই খুশি হয়েছেন।হয়তো এটা ভেবেই বাবা বেশি খুশি হয়েছেন যে আমাকে আর ওনার টাকা দিতে হবে না।
সাথে সাথে আঙ্কেলকেও খবরটা জানালাম ওনিও খুব খুশি হয়েছেন খবরটা শুনে।
আগামী মাসের এক তারিখে চাকরিতে জয়েন দিতে হবে।তাই সবকিছু গুছগাছ করে নিলাম। যাওয়ার আগে একবার আঙ্কেলের সাথে দেখা করে গেলে ভাল হয়।
তার পরের দিনেই চলে গেলাম ওনার সাথে দেখা করতে।আমাকে দেখে আঙ্কেল খুব খুব হল।তারপর চাকরির ব্যাপারে জিগ্যেস করল।এর ভেতরেই আমি জিজ্ঞাস করলাম আঙ্কেল লিনা বাসায় নেই ?
– না বাবা,লিনা তো বাসায় নেই।ও তো ঢাকায় চলে গেছে।
লিনা বাসায় নেই কথাটা শুনে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল।
– তোমার চাকরির পোস্টিং কোথায় হয়েছে বাবা ?
“ঢাকায় হয়েছে”
– ওহ্ তাহলে তো ভালোই হয়েছে।লিনাও ঢাকায় থাকে তোমারও সেখানেই পোস্টিং হল।দুজন একি শহরে থাকবে।
আঙ্কেল আপনার কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ থাকবো।আপনি আমাকে ঐ সময় টাকা টা না দিলে চাকরিটা আমার হতো না।
– এভাবে বলো না বাবা।আমার কাছে সে সময় টাকা টা ছিল তাই তোমাকে টাকাটা দিয়ে একটু সাহায্য করছি।আর বাকি সব কৃতিত্বই তো তোমার।
আঙ্কেল আপনাকে ঘিরে যে আমার মনে অনেক প্রশ্ন জমে আছে,,,,
– হম আমি যানি আমাকে নিয়ে তোমার মনে অনেক প্রশ্ন আছে।
তবে শুনো আমি তোমাকে কিছু কথা বলি।এর ভিতরেই হয়তো তুমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবে,,,,
লিজার বয়স তখন ছয় বছর আর লিনার বয়স সারে তিন বছর ঠিক তখনেই তাদের মা মারা যায়।তখন আমি মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলাম।তখন অনেকেই আমাকে বলেছিল আমি যেন আরেকটা বিয়ে করে নেই।কিন্তু আমি আমার মেয়েদের কথা চিন্তা করেই বিয়েটা করিনি।
তখন আমার ছিল বিশাল ব্যবসা।ব্যবসাতে সময় দিতে গেলে মেয়েদের সময় দিতে পারি না।আর তখন মেয়েরাও আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না।তাই নিজেকে ব্যবসা থেকে গুটিয়ে নিলাম।সবসময় মেয়েদের কাছেই থাকতাম।
তখন দুই মেয়েকে ঘিরেই ছিল আমার পৃথিবী।
তারপর আস্তে আস্তে মেয়েরাও বড় হল বুঝতে শিখলো আমিই তাদের মা আমিই তাদের বাবা।
আমার দুই মেয়েই পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল।তাই আমারো ইচ্ছা ছিল আমার দুই মেয়েকেই পড়াশোনা শিখিয়ে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলবো।
বড় মেয়েটা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়ে ভর্তি হওয়ার তিন বছর পর যখন ছোট মেয়েটা একদিন ফোন দিয়ে বলল বাবা আপুর মত আমিও ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি।সেদিন আমার মনে হয়েছিল হ্যাঁ,আমি পেরেছি আমার মেয়েদের কে সেভাবেই গড়ে তুলতে।
বিগত এক বছর ধরেই বিভিন্ন জায়গা থেকেই অনেক ছেলের বাবাই মেয়েদের বিয়ের সমন্ধ নিয়ে এসেছে আমার কাছে।সেখানে অনেক বড় ধরেনের চাকরি জীবি ছেলে ছিল,অনেক ধনী পরিবারের ছেলে ছিল।তবে সেই ছেলেদের মধ্যে কোন ছেলেকেই আমার মেয়ের যোগ্য হিসাবে আমার কাছে মনে হয়নি।
এর মধ্যেই হটাৎ করে একদিন তুমি তোমার বাবাকে নিয়ে আসলে আমাদের বাসায়।তুমি তোমার সমস্যার কথা আমাকে খুব সহজেই অকপটে বলে দিলে।কোন কিছুই আড়াল করোনি আমার থেকে।তোমার এই গুনটা আমার খুব ভালো লেগেছিল।যেহেতু একটা সময় আমি ব্যবসা করেছি তাই মানুষ চিনতে আমার ভুল হয় না।তাই হয়তো সেদিন এতকিছু না ভেবেই তোমার হাতে টাকাটা তুলে দিয়েছিলাম।
তুমি সেদিন চলে যাওয়ার পরেও আমি খুঁজ নিয়ে জেনেছি টাকাটার তোমার খুব প্রয়োজন ছিল সেদিন আর তুমি মানুষ হিসেবেও নাকি খুব ভালো।তারপর আমার মনে হল আমি মানুষ চিনতে মোটেও ভুল করিনি।
তারপর তুমি যখন আমার বাসায় এসে লিজা কে দেখে গিয়ে বললে তুমি লিজাকে নয় লিনাকে বিয়ে করতে চাও।তখন এটা শুনে আমি একটু অবাকই হয়েছিলাম।
আমার বড় মেয়ে লিজা শান্ত প্রকৃতির।রূপে,গুনে শিক্ষায় দিক্ষায় লিনার থেকে লিজা এগিয়ে।লিনাও ভালো তবে ও একটু আনমনা আর ভাবুক প্রকৃতির।
লিজাকে পছন্দ না হয়ে তোমার লিনাকে পছন্দ হয়ে গেল।এমনটা হওয়ার কোন কারন আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না।আর তুমিও আমাকে এমন ভাবে বললে আমি খুব দ্বিধা দ্বন্ধে পরে গেছিলাম এটা নিয়ে।কি করব ভেবেই পাচ্ছিলাম না।
তারপর ভবিষ্যতের কথা চিন্তে করে সিদ্ধান্তটা নিয়েই নিলাম।লিনাকেই তোমার কাছে বিয়ে দিব।
তবে এটার জন্য যে আমার বড় মেয়ে লিজা একটু কষ্ট পেয়েছে এটা আমি ঠিকি বুঝতে পেরেছি।তবে এই কষ্ট টা সাময়িক।কিছুদিন পরে হয়তো আর থাকেবে না।
সেদিন যদি আমি তোমার কথা না ভেবেই লিজাকে তোমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিতাম তাহলে এটা তোমাদের বিবাহ পরবর্তী জীবনে বিরুপ প্রভাব ফেলতো।
তাই আমি আমার ছোট মেয়েকেই তোমার হাতে তুলে দিতে চেয়েছি।আর তুমি সেদিন যে সৎ সাহস নিয়ে আমাকে কথাটা বলেছিলে।সেদিন তোমার ঐ সৎ সাহসটাকে আমি সম্মান করেছিলাম।
তুমি চাইলেই সেদিন তোমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে আমার দেওয়া টাকার কথা চিন্তা করে বিয়েটা করে নিতে পারতে।কিন্তু,তুমি তা করোনি।এই বিষটা আমার খুব ভালো লেগেছে।
আর বিয়ের পরে মেয়ের বাবা থেকে জোর করে যে টাকা আদায় করে নেওয়া হয় সেটাকে যৌতুক বলে।এখনো কিন্তু তোমাদের বিয়ে হয়নি।আর সেদিনের দেওয়া টাকাটা আমি কিন্তু তোমাকে যৌতুক হিসাবে দেই নি।তোমার বিপদে আমি শুধু তোমাকে সাহায্যে করেছি মাত্র।আর কিছু না।
তোমার সাথে কথা বলে আমার খুব ভালো লেগেছিল সেদিন।আর সেই ভালো লাগা থেকেই হয়তো সেদিন তোমাকে টাকাটা আমি দিয়েছি।
আঙ্কেল আমার একটা কথা আপনাকে রাখতে হবে।
– কি কথা ?
আমার আর লিনার বিয়ের আগেই আমি আপনাকে টাকা টা ফেরৎ দিতে চাই।
– সে সব পরে দেখা দেখা যাবে বাবা।আগে তুমি গিয়ে আগে চাকরিতে জয়েন দাও।
আঙ্কেল এর থেকে এতগুলি কথা শুনে সেদিনের পর থেকে ওনার প্রতি আমার সম্মান বোধ আরও কয়েক গুন বেড়ে গেছে।সত্যিই ওনি একজন অসাধারণ মনের মানুষ।ওনাকে খুব কাছ থেকে না দেখলে আর ওনার বলা কথা গুলি না শুনলে এটা হয়তো কোন দিন জানতেই পারতাম না।
সেদিন যখন ওনার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসবো তখন ওনি আমার হাতে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বলেছিলেন এটা তুমি রাখো।
টাকাটা আমি নিতে চাইনি।কিন্তু,ওনার সাথে আমি পেরে উঠিনি।তারপর একরকম বাধ্য হয়েই টাকাটা আমাকে নিতে হল।
আমার কাছে লিনার ফোন নাম্বার নেই।আঙ্কেলের থেকে কিভাবে ফোন নাম্বার চাইবো এটা চিন্তা করতেই আঙ্কেল বলে ফেলল তোমার কাছে হয়তো লিনার ফোন নাম্বারটা নেই।তুমি ওর ফোন নাম্বারটা নিয়ে যাও,,,
ঢাকায় এসে চাকরিতে জয়েন করেছি এক সপ্তাহ হল।নতুন এসেছি তো তাই এই এক সপ্তাহে কাজের চাপটা আমার কাছে বেশিই মনে হয়েছিল।
আজকে ছুটির দিন হওয়ায় অফিস বন্ধ ছিল।তাই সকাল থেকেই কয়েক বার লিনার নাম্বারটা ফোনে চেপেছি কিন্তু কল দিতে পারিনি।
তাই রাতের বেলা সাহস করে কল দিয়েই ফেললাম।দুইবার রিং হওয়ার পর তৃতীয় বারেই মাথায় ফোন রিসিভ করল,,,,
এর মধ্যেই হটাৎ একদিন আঙ্কেল ফোন দিয়ে বলল।আগামীকাল তোমার পরিবার নিয়ে আমাদের বাসায় আসো।
পরের দিন সকাল বেলা আমি,মা আর বাবা লিনাদের বাসায় যাওয়ার জন্য তৈরি হলাম।তখন বাবা আমার হাতে একটা আংটি দিয়ে বলল এটা তোর কাছে রাখ।আমি আংটি টা হাতে নিয়ে বললাম বাবা এটা দিয়ে আমি কি করবো ?
– এটা আমি তোকে দেইনি তোর কাছে রাখতে বলছি।এটা আমার বৌমা’র জন্য।
যে বাবা কিনা তার ছেলেকে টাকা দিলে ওটার হিসাব রাখে আর আজ ওনার ছেলের বউয়ের জন্য আংটি নিয়ে যাচ্ছে।এটা ভাবতেই আমার কেমন যানি লাগছে।
যাই হোক অবশেষে আমরা লিনাদের বাসায় গেলাম।সেখানে গিয়ে দেখি বাসাটা হালকা সাজানো হয়েছে।লিনার বাবা আমাদের দেখতে পেয়েই এগিয়ে এসে বাসার ভেতরে নিয়ে গেলেন।
লিনার বাবার সাথে আমার বাবা- মা কথা বলতেছিল এর ফাঁকে আমি আঙ্কেল কে জিজ্ঞাসা করলাম,,,,
আঙ্কেল আমি কি লিনার সাথে একটু আলাদা ভাবে কথা বলতে পারি।
– হ্যাঁ বাবা তুমি গিয়ে কথা বলো,লিনা ওর ঘরেই আছে।আয়েশা তুই ওর সাথে গিয়ে লিনার ঘরটা ওকে দেখিয়ে দে।
এই বাড়ির কাজের মেয়েটা আমাকে লিনার ঘরে নিয়ে গেল।ঘরে গিয়ে দেখি কেউ নেই ঘরে।ঘরটা খুব সুন্দর করে গুছানো।ঘরের দেয়ালে দেয়ালে টানানো ছিল বিখ্যাত চিত্র শিল্পীর আঁকা কিছু ছবি।সেগুলি আমি ঘুরে ফির দেখতে ছিলাম এর মধ্যেই হটাৎ আমার চোখ চলে গেল বারান্দাটার দিকে।বারান্দায় গিয়ে দেখি এখানে বিভিন্ন রকমের ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে টবে।যেহেতু সময়টা ছিল বসন্ত কাল তাই সব গাছেই ফুল ফুটে আছে।
এত গুলি ফুলের মধ্যে আমার আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে ছিল বেলি ফুল।কারণ বেলি ফুল আমার খুব প্রিয় একটা ফুল।এত প্রিয় একটা ফুল হাতের কাছে পেয়েছি তাই ধরতে খুব ইচ্ছা হল।
যেই না আমি ফুল গুলি ধরতে যাবো ঠিক তখনেই কেউ একজন পেছন থেকে বলে উঠলো,,,
– সাবধান,,,ফুলে হাত দিবেন না।
কেন ?
– আমি আমার বাগানের ফুলে কাউকে হাত দিতে দেই না।
আর আপনি এখানে কি এসেছেন কেন ?
আপনার সাথেই কথা বলতে এসেছিলাম।আর এখানে আসার আগে আপনার বাবার থেকে পারমিশন নিয়েই এখানে এসেছি।
– আমি তো একটু পরেই ওখানে যেতাম।আপনি এখানে না আসলেও পারতেন।
আর এখন যেহেতু এসেই পরেছেন তাহলে বলেন কি বলতে চান।
আপনাকে কি আপনার বাবা কিছু বলেছে ?
– হম বলেছে।তবে আপনি কাজটা মোটেও ঠিক করেন নি।আপনার জন্য আমার আপু অনেক কষ্ট পেয়েছে।
একটা মেয়ের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিয়ে।এটা নিয়ে তারা অনেক স্বপ্ন দেখে।কোন মেয়ের যখন বিয়ে ঠিক হয়ে যায় তখন সেই মুহূর্ত থেকে মেয়েটার মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তন চলে আসে।
আর বিয়ে ঠিক হওয়ার এক সপ্তাহ পরে যখন মেয়েকে বলা হয় ছেলে পক্ষ এই বিয়েটা ভেঙে দিছে।তখন মেয়েটার মনের অবস্থাটা কি হয় একবার দেখেছেন কি ?
আর বিয়েটা ভেঙে যাওয়ার পরক্ষণেই মেয়েটাকে যখন জানানো হয় তাকে নয় তার পরিবর্তে তারই ছোট বোনকে ছেলে পক্ষের পছন্দ হয়েছে তখন ঐ মেয়ের অবস্থাটা কি রকম হয় এটাও একবার ভেবে দেখবেন,,,,
আমি আপনার আপুর সাথে একবার কথা বলতে চাই।ওনার থেকে আমি এটার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিব।
– আপুকে আপনি কই পাবেন।আপু তো বাসায় নেই,,,,
দুইদিন আগে বাবা যখন আপুকে ডেকে নিয়ে কথা গুলি বলেছিল আমি তখন সেখানেই ছিলাম।আপু তখন হাঁসি মুখেই বলেছিল বাবা ওনার যখন লিনাকেই পছন্দ হয়েছে তাহলে লিনার বিয়েটাই আগে হোক।এতে আমার কোন আপত্তি নেই বাবা,,,,
তখন আপু হাঁসি মুখে কথা গুলি বললেও আপুর ভেতরে ছিল একটা চাপা কষ্ট।এটা বাবা বুঝতে না পারলেও আমি কিন্তু সেদিন ঠিকি বুঝেছি।
আর এর জন্যই আপু পরীক্ষার বাহানা দিয়ে আজকে সকালের ট্রেনেই ঢাকা চলে গেছে,,,,
আচ্ছা আপনাকে যদি একটা কথা জিগ্যেস করি তাহলে কি সত্যি করে উওর টা দিবেন ?
হ্যাঁ দিব,,,আপনি বলেন কি জানতে চান।
– আপুর সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হল কিন্তু, আপুকে পছন্দ না করে আপনি আমাকে পছন্দ করলেন কেন ? আপু তো দেখতে আমার থেকে কম সুন্দর না।পড়াশোনার দিক থেকেও আপু আমার থেকে অনেক এগিয়ে তাহলে আপুকে আপনার পছন্দ হল না কেন ?
আমি আপনাকে বা আপনার আপু,দুজনের মধ্যে কাউকেই আগে কখনো দেখেনি।বলতে গেলে আপনার আপুকে না দেখেই এই বিয়েটাতে আমি রাজী হয়ে যায়।সেদিন যখন আপনার বাবা আমাকে ফোন দিয়ে বলল লিজা বাসায় এসেছে তুমি কালকে আমাদের বাসায় আসো।
তারপর আমি এখানে আসলাম।আর,যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হল তাকে আমি আজ প্রথম বার দেখবো এমন একটা আগ্রহ নিয়েই আমি সেদিন আপনাদের বাসায় এসেছিলাম।
সেদিন যখন আপনাদের বাসার সামনে দাড়িয়ে দরকায় কলিং বেল দিয়েছিলাম তখন কিন্তু দরজা টা আপনিই খুলেছিলেন আর প্রথম আমি আপনাকেই দেখেছিলাম।তখন আমি আপনাকে দেখে মনে করেছিলাম আপনিই হয়তো লিজা যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
লিজা ভেবেই আপনাকে সেদিন আমার প্রথম দেখাতেই ভাল লেগে যায়।আর এতটাই ভাল লেগেছিল আপনাকে যার জন্য পরে আর অন্য কাউকে লিজা বলে মানতে পারিনি।
এরপর এটা নিয়ে আমি অনেক বার ভেবেছি কিন্তু মনের সাথে যুদ্ধ করে আমি পেরে উঠিনি।মন যে শুধু আপাকেই চেয়েছিল।
– কিন্তু আপনাকে যে আমার একটুও ভালো লাগে না।
তাহলে কি এই বিয়েটা হবে না ?
– বিয়েটা হবে।কারন বিয়েটাতে যে আমার বাবার সম্মান জরিয়ে আছে।আমি চাইনা আমার বাবার অসম্মান হোক।
তবে এই বিয়েটাতে আমার কোনরকম মত নেই।শুধু বাবার কথা ভেবেই বিয়েটা করব,,,,
তাহলে তো আমি এই বিয়েটা করব না।
– কেন,,,,করবেন না কেন ?
যে বিয়েতে আপনার কোন মত নেই শুধু বাবার সম্মানের কথা ভেবে বিয়েটা করছেন।এই বিয়ে আমি করতে পারবো না।
– তাহলে কি আপনি আমার মত নিয়ে এই বিয়েটা করতে চান ?
“হম”
– তাহলে যে আমার একটা শর্ত আপনাকে মানতে হবে।
আপনার মত পাওয়ার জন্য আমি যে কোন শর্ত মানতেই রাজী।কি শর্ত মানতে হবে বলুন।
– আমার আপুর বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বিয়েটা হবে না।
ওকে আপনার আপুর বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমি আপনাকে বিয়ে করব না।
– আর আমি যে আপনাকে এই শর্ত দিয়েছি বাবা যেন কখনোই এই কথা জানতে না পারে।
এই আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি এই শর্তের বিষয়টা আমার আর আপনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।এটা আমি আর কাউকেই বলব না।
সেদিন যখন লিনাকে আংটি পরানোর পরে আঙ্কেল বিয়ের তারিখ নিয়ে কথা তুলল।তখন আমি বললাম আঙ্কেল বিয়েটা আমি এখনেই করতে চাচ্ছি না।চাকরিটা আগে হোক আর এদিকে লিনাও অনার্স টা কমপ্লিট করুক।তাই আমি আপনার কাছে একটু সময় চাই।
তখন আঙ্কেল ওনার মেয়েকে জিগ্যেস করল লিনা তুমি কি এই বিষয়ে কিছু বলতে চাও ?
– বাবা আপনার মতামতেই আমার আমার মতামত।আপনি যা ভালো মনে করবেন তাই হবে।
তারপর আঙ্কেল বললেন বিয়েটা তাহলে কিছুদিন পরেই হোক।এর মধ্যে তুমি নিজেকেও আরেকটু গুছিয়ে নাও।
আঙ্কেলের কথা শুনে আমার মা বাবাও আর আপত্তি করল না।সবাই এটাই মেনে নিল।
সেখান থেকে বাড়িতে আসার তিন দিন পরেই পিওন বাড়ি এসে একটা চিঠি দিয়ে গেল।চিঠি টা হাতে নিয়ে খুলে দেখি এটা আমার জয়েনিং লেটার।
তার মানে চাকরিটা আমার হয়ে গেছে।বাবা মা কে খবরটা জানালাম ওনারা খুব খুশি হয়েছেন।তবে বাবাকে দেখে মনে হল বাবা একটু বেশিই খুশি হয়েছেন।হয়তো এটা ভেবেই বাবা বেশি খুশি হয়েছেন যে আমাকে আর ওনার টাকা দিতে হবে না।
সাথে সাথে আঙ্কেলকেও খবরটা জানালাম ওনিও শুনে খুব খুশি হয়েছেন খবরটা শুনে।
আগামী মাসের এক তারিখে চাকরিতে জয়েন দিতে হবে।তাই,,,,
এর মধ্যেই হটাৎ করে একদিন মেয়ের বাবা ফোন দিয়ে বলল তুমি কালকে আমাদের বাসায় আসো।আমার বড় মেয়ে লিজা বাসায় এসেছে।
ওনি আজকে ফোন না দিলে হয়তো ওনার কথা আমার মনেই হতো না।আমি এতটাই আনন্দের মধ্যে ছিলাম যে সবকিছুই কেমন করে যেন ভূলে গিয়েছিলাম।সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেই মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাই।দিনগুলি আমার ভালই যাচ্ছিল।
পরের দিন ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে তৈরি হয়ে রওনা দিলাম মেয়েকে দেখার জন্য মেয়ের বাড়ির উদ্দেশে।যাওয়ার সময় বার বার একটা কথাই মনে হচ্ছিল তখন আমার টাকার খুব প্রয়োজন ছিল তাই যে মেয়েকে আমার বিয়ে করতে হবে তাকে না দেখেই তার বাবার থেকে টাকা নিয়ে চলে এসেছি।এখন যদি মেয়েকে দেখে আমার একটুও পছন্দ না হয় তাহলে কি হবে,,,,
পছন্দ না হলে তখন তো আর আমার কারার কিছুই থাকবে না।টাকা গুলিও জমা দেওয়া হয়ে গেছে যে।ওনি টাকা চাইলেও তো আর টাকা গুলি আমি ওনাকে ফেরৎ দিতে পারবো না।
দূর,,,এখন আর এত চিন্তা করে কি হবে।যা হওয়ার তা তো অনেক আগেই হয়ে গেছে।এখন মেয়ে যদি আমার পছন্দ নাও হয় তাহলেও এই মেয়েকেই বিয়ে করব।যা আছে কপালে।
মেয়েদের বাসার কলিং বেল চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু কেউ তো দরজা খুলছে না।যেই না দ্বিতীয় বার কলিং বেল চাপতে যাবো ঠিক তখনেই দরজা খুলে গেল।দরজা খুলে যাওয়ার পর আমি যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।এই দৃশ্য দেখে আমি কিছুতেই আর চোখ ফেরাতে পারছি না।তাই হ্যাঁ করে তাকিয়ে আছি মেয়েটার দিকে,,,
ঠিক তখনেই ভেতরে থাকা মেয়েটা বলে উঠলো,,,
– কি ব্যাপার,কাকে চাই ?
আঙ্কেল আমাকে গতকাল ফোন করে বলেছিলেন আজকে আসার জন্য।
ওহ্ বাবা তাহলে আপনার কথাই বলেছিলেন।ওকে আপনি ভেতরে আসুন।
ভেতরে গিয়ে বসলাম।আর মনে মনে বললাম এতক্ষণ আমি কি ভাবতে ছিলাম আর এখানে এসে কি দেখলাম।এমন মেয়ে আমি আর আগে কখনো দেখিনি।এ আমার যেন কল্পনাকেও হার মানিয়েছে।মানুষ এত সুন্দর হয় কি করে,,,
এখন আর মনের মধ্যে আগের সেই ভাবনাটা নেই।এখন শুধু মনে হচ্ছে বিয়েটা আমি কখন কবরো।আর মনে হচ্ছে এই মেয়েকে বিয়ে না করতে পারলে আমার জীবনটাই হয়তো বৃথা হয়ে যাবে যে,,,
– তুমি কখন আসলে বাবা ?
এইতো আঙ্কেল কিছু কিছুক্ষণ হল আসলাম।
– আমি একটা কাজে শহরে গিয়েছিলাম।মাত্রই বাসায় আসলাম।তুমি বসো আমি ভেতর থেকে ফ্রেস হয়ে আসতেছি।
ওকে আঙ্কেল আপনি ফ্রেস হয়ে আসুন আমি এখানেই অপেক্ষা করতেছি।
আঙ্কেল ভেতরে চলে গেল।আমি একাই বসে আছি।বাড়ির কাজের মেয়ে এসে নাস্তা দিয়ে গেল।কিন্তু,কিছুই খেতে হচ্ছে না।আমার ভাবনায় শুধু মেয়েটাই ঘুরছে।চোখ বন্ধ করলেই দরজার সামনের ঘটে যাওয়া দৃশ্যটা চোখে ভেসে উঠে।
এর মধ্যে আঙ্কেল এসে পরেছে,,,
– কি ব্যাপার কিছুই খাচ্ছ না যে।
এখন খিদে নেই আঙ্কেল।তাই খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
– তোমার চাকরির ব্যাপারটা কি হল ?
টাকা জমা দিয়ে সবকিছু কমপ্লিট করে আসছি আর ওরা বলেছে কিছুদিনের মধ্যেই নাকি জয়েনিং লেটার পেয়ে যাবো।
– ওকে।
কালকে আমার বড় মেয়ে লিজা বাসায় এসেছে তাই তোমাকে আজকে আসতে বলেছি।আমি লিজার সাথে কথা বলেছি।ও বলেছে বাবা তোমার ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা।তোমার মতামতেই আমার মতামত।আর আমি যানি তোমার পছন্দ কখনই খারাপ হবে না।
আঙ্কেল এর থেকে কথা গুলি শুনে খুব খুশি খুশি লাগছিল আমার।
– তুমি বসো আমি লিজাকে নিয়ে আসি।
আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছি আরেকটা বার তাকে দেখবো বলে।কি মায়াময় ছিলো তার সে চাহনি,,,,
একটু পরেই আঙ্কেল সাথে করে ওনার মেয়েকে নিয়ে আসলো।কিন্তু,আঙ্কেলের তো শুধু লিজাকে নিয়ে আসার কথা তাহলে সাথে আরেকটা মেয়ে আসলো ওটা আবার কে ?
ওহ্,,,আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আঙ্কেলের তো দুই মেয়ে।ও হয়তো আঙ্কেলের ছোট মেয়ে হবে।
তারপর আঙ্কেল ওনার মেয়েদের আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন এ হচ্ছে আমার বড় মেয়ে লিজা আর এইটা হচ্ছে আমার ছোট মেয়ে লিনা।লিজা এবার মাস্টার্স ফাইনাল দিবে আর লিনা এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পরাশুনা করছে।
আঙ্কেলের এই কথাটা আমার বুক ত্রিশূলের মত হয়ে খোঁচা দিল।দরজা খোলার সময় যাকে দেখলাম,যাকে নিয়ে এতকিছু কল্পনা করলাম সে কিনা আঙ্কেলের ছোট মেয়ে।এটা আমি কিছুতেই মানতে পারতেছি না।
এটা শুনার পরে ভেতর থেকে বড় রকমের একটা ধাক্কা খেলাম।তাই কথাবার্তা সংক্ষিপ্ত করে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।
বাসায় এসে আমি খুব চিন্তায় পরে গেলাম।এতদিন ছিল এক চিন্তা,মেয়ে আমার পছন্দ না হলে কি করব।আর আজ থেকে নতুন চিন্তা হল যাকে আমার পছন্দ হয়েছে সে হচ্ছে ওনার ছোট মেয়ে।তবে বড় মেয়েও খুব ভালো দেখতেও যতেষ্ট সুন্দরী।কিন্তু আমার যে ছোট মেয়েকেই ভালো লাগে।
এইটা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই এক সপ্তাহ কেটে গেল কিন্তু এখনো কোন উপায় বের করতে পারলাম না।তাই বাধ্য হয়েই অবশেষে আঙ্কেলকেই ফোন দিলাম,,,,
ওনার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে বলেই ফেললাম।আঙ্কেল আপনাকে আমি একটা কথা বলতে চাই।কিন্তু, কথাটা আপনাকে যে কিভাবে বলব বুঝতেছি না।আর কথাটা শুনে আপনিই বা কি মনে করবেন,,,,,
– আমি কিছুই মনে করবো না বাবা।তুমি কোন রুকম সংকোচ না করেই আমাকে কথাটা বলতে পারো।
আঙ্কেলের মুখ থেকে কথাটা শুনে মনে কিছুটা সাহস পেলাম আর সেই সাহস নিয়েই বলে ফেললাম।আঙ্কেল আমি আপনার বড় মেয়েকে নয়,আপনার ছোট মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।
আমার কথা শুনে ওনি চুপ হয়ে গেলেন।
তারপর বললেন,,,দেখো বাবা তোমাকে তো আগেই বলেছি আমি আমার বড় মেয়েকে বিয়ে দিতে চাই।আর এই ব্যাপারে আমার মেয়ের সাথে কথা হয়ে গেছে।আমার মেয়ে আমার এক কথাতেই এই বিয়েতে মত দিয়েছে।তাছাড়া বড় মেয়েকে রেখে আগে ছোট মেয়েকে বিয়ে দিলে মানুষ জনেই বা কি বলবে।
আঙ্কেল আপনি যদি চান আগে আপনার বড় মেয়েকে বিয়ে দিতে তাহলে তাই হবে।লিজার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরেই না হয় আমি লিনাকে বিয়ে করব।আমি সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করব আঙ্কেল।
আমি চাইলেই হয়তো আপনার বড় মেয়েকে বিয়ে করে নিতে পারতাম।এই কাজটা করলে এটা আমার মনের বিরুদ্ধে করা হতো।এতে লিজা বা আমি কেউ সুখী হতে পারতাম না।বিয়েটা তো আঙ্কেল দুই-চার দিনের ব্যাপার না।এটা হচ্ছে সারাজীবনের ব্যাপার।
– ওকে।
আমি ভেবে দেখি কি করা যায়।পরে তোমাকে জানাবো।
সাহস করে হয়তো কথা গুলি আঙ্কেল কে বলেছি।কিন্তু,এখন নিজের মধ্যেই কেমন যানি একটা অপরাধ বোধ কাজ করতেছে।যে মানুষটা আমার বিপদে আমার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল সেই মানুষটাকেই আজ আমি বিপদে ফেলে দিলাম,,,,
এভাবেই সময় গুলি চলে যাচ্ছিলো।আর আমার মাঝে একটা অজানা ভয় থেকেই গেল।
এর মধ্যেই হটাৎ একদিন আঙ্কেল ফোন দিয়ে বলল।আগামীকাল তোমার পরিবার নিয়ে আমাদের বাসায় আসো,,,,,,
– তুই যদি এই বিয়ে না করিস তাহলে এই বাড়িতে তোর কোন যায়গা হবে না।এখন ভেবে দেখ তুই কি করবি।
এই কথা গুলি বলেই বাবা চলে গেল আমি খুব চিন্তায় পরে গেলাম কি করবো এখন।পরাশুনা শেষ করেছি দুই বছর হল এখনো একটা চাকরি হল না।বাবা যদি এখন বাড়ি থেকে বের করে দেয় তাহলে কোথায় যাবো।আর ওনাকে কথা দিয়ে এসেছি পাঁচ দিনের মধ্যে টাকার ব্যবস্থা করবো।
খুব টেনশনে না পরলে আমি সাধারণত সিগারেট খাই না।তাই আজকে একটা সিগারেট ধরালাম।সিগারেট খেলে কেমন যানি একটা প্রশান্তি পাই।সিগারেট টানতে টানতে হটাৎ মাথায় একটা প্রশ্ন এলো।আমি যদি “দশ” লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতে পারি,তাহলে “দশ” লক্ষ টাকা যৌতুক নিয়ে বিয়ে করতে পারবো না কেন ?
চাকরির জন্য যখন বলেছিল পাঁচ দিনের মধ্যে টাকা দিলে চাকরিটা হবে।আর আমিও তখন ওনার এক কথায় রাজী হয়ে গেছিলাম।কই তখন তো একবারের জন্যও আমার মনে হয়নি আমি ঘুষ দিয়ে চাকরি নিচ্ছি।তাহলে এখন আমার এটা মনে হচ্ছে কেন,,,আমি যৌতুক নিয়ে বিয়ে করবো না।
এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর হয়তো আমার জানা নেই।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বাবার ঘরে গেলাম। বাবা আমাকে দেখেই বলল,,, কি সিদ্ধান্ত নিলে ?
আমি এই বিয়েটা করতে চাই বাবা।তুমি ওনাদের সাথে কথা বলো।
আমার কথা শুনার পরে বাবাকে দেখে মনে হল ওনি খুব খুশি হয়েছেন।খুশি হওয়ারি তো কথা বাবা তো এটাই চেয়েছিলেন।আমি যেন এই বিয়েটা করে নেই।
হাতে যেহেতু সময় বেশি নেই তাই আর সময় নষ্ট না করে পরের দিনেই চলে গেলাম মেয়ের বাবার সাথে দেখা করতে।মেয়েদের বাড়ি দেখে আমি অবাক হলাম।এর আগে এত সুন্দর বাড়ি আর কোথাও দেখিনি আমি।বাড়ির ভেতরটা খুব সুন্দর করে সাজানো গোছানো।
আমি আর বাবা বসে আছি ডাইনিং রুমে।কিছুক্ষণ পরেই মেয়ের বাবা আসলো আমাদের সাথে দেখা করতে।বসা থেকে উঠে ওনার সাথে কুশল বিনিময় করলাম।
ওনার সাথে অনেক কথা হল আমাদের।ওনাকে আমি আমার সম্পর্কে সবকিছু বুঝিয়ে বললাম।ওনি আমার সব কথাই মনোযোগ সহকারে শুনলো।আর ওনার হাঁসি মাখা মুখটাই বলে দিচ্ছিলো ওনার হয়তো আমাকে পছন্দ হয়েছে।
আমারা দুপুরের দিকে ওনার বাসায় গেছিলাম তাই দুপুরের খাবার না খাইয়ে আমাদের ছাড়ল না।দুপুরের খাওয়া শেষে আমরা বিশ্রাম নিচ্ছিলাম ঠিক তখনেই মেয়ের বাবা এসে আমার হাতে একটা “দশ” লাখ টাকার চেক তুলে দিলেন।
আমি টাকা টা হাতে নিয়ে প্রথমে বাবার দিকে তাকালাম আর মনে মনে বললাম বাবার জন্যই আজ আমাকে টাকার কাছে বিক্রি হতে হল।
তারপর মেয়ের বাবাকে উদ্দেশ্যে করে বললাম। আজকেই আমাকে টাকা টা দিয়ে দিলেন যে,,,আর আপনার মেয়ের সাথে তো দেখা হল না।
আমার কথা শুনে ওনি বললেন,,,,
– তুমি না বললে টাকা টা পাঁচ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে।তাই আজকেই তোমাকে টাকা টা দিয়ে দিলাম।আর আমার মেয়ে তো এখন বাসায় নেই।আমার দুই মেয়েই ঢাকায় থাকে।তারা সেখানে থেকেই পড়াশোনা করে।আমার বড় মেয়ে বাড়িতে আসলেই আমি তোমাকে জানাবো তখন তুমি আমাদের বাড়িতে চলে এসো।
আমি এই টাকা টা নিয়ে আমার চাকরির জন্য জমা দিয়ে দিলাম।পরে যদি আপনার মেয়ের আমাকে পছন্দ না হয় তখন আমি কিভাবে আপনাকে টাকা ফেরৎ দিব ?
– সে সব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।আমার মেয়েদের আমি খুব ভাল করেই চিনি।ওরা কখনো আমার কথার অবাধ্য হয় না।আমার কথাই ওদের কথা।
ওকে আমি তাহলে আজকে আসি,,,,,
সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে রাতের ট্রেন ধরেই ঢাকায় চলে আসলাম।তারপর সকাল বেলা টাকা গুলি নিয়ে জমা দেওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হলাম,,,
টাকা গুলো অফিসে গিয়ে জমা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।ওরা বলেছে কিছুদিনের মধ্যেই চাকরির জয়েনিং লেটার পেয়ে যাবেন।এখন মনের মাঝে অন্যরকম একটা প্রশান্তি অনুভব করতেছি।
এখন সময় গুলি খুব ভাল কাটছে।ইচ্ছা মতো খাচ্ছি ঘুমাচ্ছি নেই কোন চিন্তা ভাবনা।সময় গুলি যেন খুব তারাতারিই চলে যাচ্ছিল।
এর মধ্যেই হটাৎ করে একদিন মেয়ের বাবা ফোন দিয়ে বলল তুমি কালকে আমাদের বাসায় আসো।আমার বড় মেয়ে লিজা বাসায় এসেছে,,,,
বাবার জন্য আজ টাকার কাছে নিজেকে বিক্রি করে দিলাম।মনের কাছে,বিবেকের কাছে হেরে গেলাম আমি।
ছোট বেলায় যখন বাবার কাছে কোন প্রয়োজনে টাকা চাইতাম বাবা টাকা ঠিকই দিত কিন্তু বাবার হিসাবের খাতায় টাকার পরিমাণটা লিখে রাখতেন।একদিন খুব আগ্রহ নিয়ে বাবাকে জিগ্যেস করলাম।বাবা আমি তোমার কাছে টাকা চাইলে তুমি আমাকে টাকা দাও ঠিকি কিন্তু ওটা আবার হিসাবের খাতায় লিখে রাখো কেন ?
বাবা বলল,,,,
– এই যে তোকে এত এত টাকা খরচ করে পড়াশোনা করাচ্ছি সে গুলি তোর থেকে আবার আদায় করে নিতে হবে না।এখন যদি আমি হিসাবের খাতায় হিসেবটা তুলে না রাখি তাহলে তো মনে থাকবে না কোন দিন তোকে কত টাকা দিয়েছি।
এতদিন শুধু মানুষের মুখে মুখেই শুনতাম আমার বাবা নাকি খুব কৃপণ।কিন্তু সেদিন বাবার কথা শুনে মনে হল মানুষ ভুল কিছু বলে না।
গতকাল একটা চাকরির ভাইবা ছিল।সব কিছুই ভালো ছিল।তারপরেও চাকরিটা আমার হবে না।এই রকম ঘটনা এর আগেও বহুবার ঘটেছে।ভাইবা ভালো দেবার পরেও চাকরি হয় নি।
এবার অফিসের একজন বলল,ভাই এভাবে চাকরি হবে না।চাকরি পেতে হলে খরচ করতে হবে। খুব কম করে হলেও “দশ” লক্ষ,পারলে বলেন।আর পাঁচ দিনের মধ্যে টাকা টা দিতে হবে। তাহলে আপনার চাকুরী হয়ে যাবে। আপনার রেজাল্ট ভালো আছে।
আমিও কি যেন মনে করে রাজী হয়ে গেলাম।কিন্তু আমার কৃপণ বাবা আমাকে এতগুলি টাকা দিবে কি না এটা একবারও ভেবে দেখলাম না।কিছু না ভেবেই ওনার কথাই রাজী হয়ে গেলাম।তারপর ওনার থেকে পাঁচ দিন সময় নিলাম।
রাতে আমার এক বড় ভাইকে বিষয়টা জানালাম।উনি বলল, দেখি কি ব্যাবস্থা করতে পারি।আরও কয়েক জনের সাথেও এই ব্যাপারে কথা বললাম।সাবাই একই কথা বলল,,,দেখি কি করতে পারি।
পরের দিন বাড়িতে এসে বাবাকে বিষয় টা জানালাম।আমার সব কথা শুনার পরে বাবা বলল,,,
– তোমার পেছনে আমি ইতিমধ্যেই অনেক টাকা ইনভেস্ট করেছি কিন্তু এখন পর্যন্ত এক টাকাও রির্টান দিতে পারোনি তুমি।তাই তোমাকে আমি আর কোন টাকা পয়সা দিতে পারবো না।
বাবার কথা শুনে আমি হতাশ হয়ে গেলাম।বাবা যদি আমাকে টাকা না দেয় তাহলে তো চাকরিটা আমি পাবো না।আর এত গুলি টাকা তো কেউ আমাকে ধার হিসেবে দিবে না।টাকার চিন্তায় চিন্তায় সারাদিন কেটে গেল তাও কোন উপায় বের করতে পারলাম না।
রাতে না খেয়েই শুয়ে পরলাম।বাবা রাতে আমার রুমে এসে দেখে লাইট অফ করে অন্ধকার ঘরে শুয়ে আছি।বাবা লাইট অন করে আমার বিছানায় বসে বলল,,,
– তুই যতই মন খারাপ করে শুয়ে থাকিস না কেন। আমি তোকে কোন টাকা দিতে পারবো না।তবে,,,তুই যদি বলিস তাহলে আমি অন্য ভাবে তোর টাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারি।
বাবার কথা শুনে আমি শুয়া থেকে উঠে বললাম কিভাবে ?
– তোর এই ব্যাপারে আমি একজনের সাথে কথা বলেছিলাম।সে আমাকে বলল তার খুঁজে এক লোক আছে ওনার নাকি অনেক টাকা আছে।ওনার দুইজন মেয়ে আছে,ওনার কোন ছেলে সন্তান নেই।তাই ওনি নাকি ভাল একটা ছেলে খুঁজছেন বড় মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য।তুই তো ছেলে হিসেবে খুবই ভাল তুই যদি ওনার বড় মেয়েকে বিয়ে করিস তাহলে ওনি তোর চাকরির সব টাকা দিবে।
তুমি কি বলতেছ বাবা,,,আমি যৌতুক নিয়ে বিয়ে করব ?
– এটাকে যৌতুক বলে না।ওনার সব সম্পত্তি তো ওনার দুই মেয়েই পাবে।আর তুই তো ওনার মেয়েকে বিয়ে করবি।ওনি ওনার মেয়ে আর মেয়ে জামাইয়ের সুখের জন্যই টাকা টা দিবে তাহলে তুই নিতে আপত্তি করছিস না।
না বাবা।আমি যৌতুক নিয়ে বিয়ে করবো না।দরকার নেই আমার চাকরির।
– তুই যদি এই বিয়ে না করিস তাহলে এই বাড়িতে তোর কোন যায়গা হবে না।এখন ভেবে দেখ তুই কি করবি।
এই কথা গুলি বলেই বাবা চলে গেল।বাবার কথা শুনে আমি খুব চিন্তায় পরে গেলাম কি করবো এখন,,,
•
•
চলবে……
বিকেলের দিকে বাসার কাজের মেয়ে ফোন দিয়ে বলল নিনিতার অবস্থা বেশি ভাল না।ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
খবরটা শুনে আমি অফিস থেকে ছুটে চলে গেলাম হাসপাতালে।ডাক্তারদের সাথে কথা বললাম।
ডাক্তার বলল নিনিতার অবস্থা আশঙ্কাজনক।এই মূহুর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না।আপনারা সবাই রোগীর জন্য দোয়া করেন।আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি ওনাকে সুস্থ করে তোলার জন্য,,,,,
এর মধ্যে নিনিতার মা-বাবাও এসে পরেছে।নিনিতার এই অবস্থার কথা শুনে ওনারা মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পরেছেন।
রাত দশটার দিকে ডাক্তার এসে জানালো আপনাদের কন্যা সন্তান হয়েছে।আর নিনিতার জ্ঞান এখনো ফিরেনি জ্ঞান ফিরলে আপনাদের জানানো হবে।
কন্যা সন্তানের পিতা হয়েছি এই কথাটা শুনার পর মনের মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি হল।একবারের জন্যও মনে হয়নি এটা তো আমার সন্তান না,এই সন্তানের পিতা আমি না।
এদিকে নিনিতার জন্য খুব টেনশন হচ্ছে।ওর এখনো জ্ঞান ফিরছে না কেন।আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছি আল্লাহ্ তুমি আমার নিনিতাকে সুস্থ করে দেও।
এর মধ্যে নার্স এসে বলে গেল আপনারা চাইলে আমাদের বাচ্চাকে দেখতে পারেন।নিনিতার মা- বাবাকে বললাম চলেন আমরা বাচ্চাকে দেখি আসি।কিন্তু ওনারা এই বাচ্চাকে দেখতে যেতে আগ্রহী না।আমি ওনাদের কে বললাম,,,
আমার কাছে তো একবারের জন্যও মনে হচ্ছে না এটা আমার মেয়ে না।আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা আমাদেরই মেয়ে।তাহলে আপনারা কেন আমার মেয়েকে দেখবেন না।আমার কথা শুনে নিনিতার বাবা-মা কেঁদে দিলেন।তারপর ওনাদের নিয়েই আমি আমার মেয়েকে দেখতে গেলাম।
আমাদের মেয়েটা দেখতে একদম ওর মায়ের মত হয়েছে।প্রথমে আমি কোলে নিলাম তারপর নিনিতার বাবা- মাও কোলে নিলেন।
অবশেষে সকাল দশটায় নিনিতার জ্ঞান ফিরলো।জ্ঞান ফিরার পর থেকেই আমাদের কে দেখতে চাচ্ছে।আমি আমাদের মেয়েকে কোলে নিয়ে নিনিতার সাথে দেখা দেখা করতে গেলাম। নিনিতাকে দেখে মনে হচ্ছে ও আমার কোলে বাচ্চা দেখে একটু এবাকই হয়েছে।আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম দেখেন আমাদের মেয়ে দেখতে ঠিক আপনার মতোই হয়েছে,,,,,,,,
নিনিতা এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ হওয়ার ডাক্তার হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে আসার অনুমতি দিয়েছেন।বাসায় আসার পর এখন নিনিতা অনেকটাই সুস্থ আর এদিকে আমরা আমাদের মেয়ের একটা নাম ঠিক করলাম।নিনিতার পছেন্দেই মেয়ের নাম রাখা হয়েছে প্রিতি।এই নামটা আমারও খুব পছন্দ হয়েছে।
আমাদের মেয়ে একটু একটু করে বড় হচ্ছে আর মেয়ের প্রতি আমার টান টা একটু একটু করে বেড়েই যাচ্ছে।এখন আমি প্রায়ই অফিস ফাঁকি দেই আমার মেয়ের জন্য।ওর সাথে সময় কাটাতে আমার খুব ভালো লাগে।
আর এদিকে নিনিতার সাথে আমার সম্পর্কটা আর দশটা সম্পর্কের মতো না হলেও ডাক টা আপনি থেকে নেমে তুমিতে চলে এসেছে।
আমি তার কাছে কখনোই স্ত্রীর অধিকার চাইনি।আমার ইচ্ছা নিনিতা যেদিন নিজে থেকে আমাকে স্ত্রীর অধিকার দিবে সেদিনেই আমার অধিকার আমি বুঝে নিব তার আগে নয়।
প্রিতির বয়স এখন দের বছর।কয়েক দিন ধরে আমার মেয়ে আধো আধো গলায় আমাকে বাবা বাবা বলে ডাকছে।ওর মুখে বাবা ডাক শুনলে নিমিষের মধ্যেই আমার জমে থাকা সব অপূর্ণতা যেন পূর্ণতা পেয়ে যায়।
প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরার পর বাকিটা সময় আমি আমার মেয়ের সাথে কাটাই।আমাদের বাবা মেয়ের খুনসুটি দেখে নিনিতা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।নিনিতা আমার থেকে হয়তো কখনো এতটা প্রত্যাশাই করেনি আর তাই হয়তো এভাবে তাকিয়ে থাকে।
দিনগুলি যেন আমাদের খুব ভালোই যাচ্ছিলো,,,,
কিন্তু এর মধ্যে আবার নতুন করে একটা সমস্যা দেখা দিল।অফিসের একটা কাজে পনেরো দিনের জন্য দেশের বাহিরে গিয়েছিলাম সেখান থেকে ফিরার পর থেকেই নিনিতাকে আমার কাছে একটু অন্যরকম লাগছিল।প্রয়োজনের বেশি কথা বলে না আর সারাক্ষণ কেমন জানি চুপচাপ থাকে।অনেক বার নিনিতাকে জিগ্যেস করেছি কি হয়েছে কিন্তু ও আমাকে কিছুই বলছে না।
এখন কি করব আমি কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না।আমি বাহিরে যাওয়ার আগে বাসায় নিনিতা আমাদের মেয়ে প্রিতি আর সাথে কাজের মেয়ে শিমলাকে রেখে গেছিলাম।বাহিরে যাওয়ার আগে সবকিছুই তো ঠিকঠাক ছিল তাহলে এর মধ্যে কি এমন হল যার জন্য নিনিতার এত পরিবর্তন।
মাথায় কিছুই আসছে।হাটাৎ মনে হল শিমলাকে জিগ্যেস করে দেখি তো,,,, ও কিছু জানে কিনা,,,
– শিমলা একটু এদিকে আয় তো
– বলেন কি জন্য ডাকছেন।
– আচ্ছা আমি বিদেশে যাওয়ার পর কি এখানে কোন সমস্যা হয়েছিল।এই ব্যাপারে কি তুই কিছু জানিস ?
আমার কথা শুনে শিমলা কেমন জানি চুপ হয়ে গেল কোন কথা বলছে না।
– কি হল কিছু বলছিস না যে,,,,
– আপনি চলে যাওয়ার দুদিন পর বাসায় একটা লোক আসছিল আর ওনার সাথে ম্যাডামের অনেক ঝগড়া হয়েছিল সেদিন।
– কে আসছিল ? আর ঝগড়াই বা হয়েছিল কেন ?
– আমি তো ওনারে চিনি না আর কোন দিন ওনারে দেখিও নাই এই বাসায় আসতে।সেদিনেই ওনারে প্রথম দেখলাম।আর কি নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল এটা আমি সঠিক ভাবে কইতে পারুম না তয় আমার মনে হয় আমাদের প্রিতি মামনিরে নিয়ে কিছু একটা কথা হচ্ছিল দুজনের মধ্যে,,,
– কি কথা হয়েছিল কিছু মনে আছে তোর
– আমার মনে হয় ঐ লোকটা আমাদের প্রিতি মামনিরে নিয়ে যেতে আসছিল।
শিমলার কথা শুনে আমি খুব চিন্তায় পরে গেলাম কে আসছিল সেদিন আর আমাদের মেয়েকে নিতে চায় কেন।
এসব প্রশ্নের কোন উত্তর আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না।আর এদিকে নিনিতাও আমাকে কিছুই বলছে না।উত্তর না জানা হাজারো প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল তখন।
রাতে শুয়ে আছি কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছিল না।নিনিতার দিকে তাকালাম ওকে দেখে মনে হল সেও এখনো ঘুমায়নি।
এর মধ্যেই নিনিতার ফোনটা বেজে উঠলো।
নিনিতা ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেল সাথে আমিও গেলাম ওর পেছন পেছন।নিনিতা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিল।ওর সব কথা আমি শুনতে পেলেও অপর প্রান্ত থেকে কি বলছিল এটা আমি শুনতে পাইনি।তবে নিনিতার কথা শুনে যা মনে হল কেউ একজন আমাদের মেয়েকে নিয়ে যেতে চায়।কিন্তু সেটা কে এটা কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
ফোনে কথা বলা শেষ হতেই নিনিতার কান্নার আওয়াজ আমার কানে ভেসে আসলো।মনে হচ্ছে মেয়েটা কান্না করছে।খুব ইচ্ছা করছিল তখন ওর কাছে গিয়ে ওর চোখের জল মুছে দিয়ে জিগ্যেস করি কি হয়েছে আমাকে বল,,,,
কিন্তু কেন জানি তার কাছে আমার যাওয়া হল না।
তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম যে করেই হোক নিনিতার কষ্টের কারন আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে।
পরের দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি নিনিতা পাশে নেই।ওর ফোনটা এখানেই পরে আছে।আমি ফোনটা হাতে নিয়ে কাল রাতে নিনিতাকে যে নাম্বার থেকে ফোন করেছিল ওই নাম্বারটা আমার ফোনে নেই।তারপর অফিসে গিয়ে ওই নাম্বারে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম এটা রাফি।রাফি নামটা শুনার পর রাফিকে চিনতে আমার একটুও সময় লাগলো না।
তারপর আমি ওকে বললাম আমি নিনিতার স্বামী,আমি আপনার সাথে একটু দেখা করতে চাই।ওনি না করলেন না।আমার সাথে দেখা করতে ওনি রাজী হয়েছেন।তারপর পর আমি বললাম আপনার হাতে সময় থাকলে আমি আপনার সাথে আজকেই দেখা করতে চাই।ওনি বললেন তাহলে বিকেল 4•00 টায় এই ঠিকানাই চলে আসুন।
4•00 টার একটু আগেই আমি সেই ঠিকানাতে চলে গেলাম।কিছুটা সময় পরেই রাফি এসে জিগ্যেস করলো,,,
– আপনিই কি নিনিতার স্বামী ?
– হম আমিই নিনিতার স্বামী।
– তো আমার সাথে দেখা করার কারণ জানতে পারি কি ?
– হ্যাঁ অবশ্যই,,,,
আপনি আমাদের সুখের সংসারটা কেন ভাঙতে চাইছেন ?
– আমি তো আপনাদের সংসার ভাঙতে চাইনা।আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন তাহলে আমি আর কখনো আপনাদের ধারে কাছেও আসবো না।
– আপনার মেয়ে ? কে আপনার মেয়ে ?
– কেন নিনিতার বিয়ের আগে আপনি জানতেন যে নিনিতা অন্তঃসত্ত্বা ছিল ?
– অন্তঃসত্ত্বা ছিল জানতাম।আর হ্যাঁ জেনেই বিয়েটা করেছি,,,,তো ??
– তো কি,,,,ও আমার সন্তান।এখন আমার সন্তান আমাকে ফিরিয়ে দিন।
– প্রিতিকে নিজের সন্তান বলে দাবি করতে আপনার লজ্জা করে না।মেয়েটা যখন অসহায় অবস্থায় আপনার কাছে গিয়েছিল তখন আপনি ওকে বলেছেন আপনি নাকি ওকে স্পর্শই করেন নি।তাহলে এখন কিসের ভিত্তিতে প্রিতিকে নিজের সন্তান দাবি করছেন ?
– তখন এটা বলা ছাড়া আমার কিছুই করার ছিল না।
– বাহ্,,,ভালো বলেছেন।নিজে বিবাহিত হওয়া সত্তেও একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জরিয়ে পরলেন।আর মেয়েটার সাথে শারীরিক সম্পর্কও স্থাপন করলেন।আর এখন আসছেন ঐ সম্পর্কের ফসল নিতে।
একটা বার কি ভেবে দেখেছেন যখন স্বার্থপরের মত নিজের স্বার্থ হাসিল করে মেয়েটাকে ছেড়ে চলে গেছিলেন সেই মূহুর্তে মেয়েটার বেঁচে থাকটা কতটা কষ্টকর ছিল।
– শুনেছি আপনি নাকি সে সময় টাকার জন্য নিনিতাকে বিয়ে করেছিলেন।তো আপনার মুখে কি নীতি কথা শোভা পায়।
– হ্যাঁ আমি টাকার জন্য সেদিন নিনিতাকে বিয়ে করেছিলাম ঠিকি কিন্তু টাকার থেকে সম্পর্কটার গুরুত্ব আমার কাছে কম ছিল না।আর হ্যাঁ একটা সময় বুঝলাম টাকার থেকেও সম্পর্ক গুলির গুরুত্ব অনেক বেশি।
আপনি একটা মেয়েকে মাঝ নদীতে ফেলে চলে গেছিলেন।কিন্তু আমি সেখান থেকে মেয়েটাকে তীরে এনে একটা নতুন জীবন দিয়েছি।আর আপনি আবার মেয়েটাকে নদীতে ফেলে দিতে চাইছেন।
– কি করব বলেন বিয়ের ছয় বছর হতে চলল কিন্তু এখনো আমি সন্তানের মুখ দেখতে পারিনি।একটা সন্তানের জন্য কত জায়গাতেই না গিয়েছি।কিন্তু একটা সন্তানের মুখ আর দেখা হল না।সেদিন যখন রাস্তায় নিনিতার কোলে বাচ্চাটাকে দেখার পর খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম নিনিতা বাচ্চাটাকে নষ্ট করেনি আর ঐ বাচ্চাটাই আমার।তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।বুকটা হা হা করে উঠলো।ছুটে চলে গেলাম নিনিতার কাছে যাতে আমার সন্তান আমাকে ফিরিয়ে দেয়,,,,,
কিন্তু আজ বুঝলাম এই সন্তান শুধু আমি জন্মই দিয়েছি।এই সন্তানের বাবা হওয়ার কোন যোগ্যতাই আমার নেই।আর কোন দিন সেই যোগ্যতা আমার হবেও না।
এই সন্তানের যোগ্য পিতা আপনি।আপনাদের কাছেই ভালো থাকুক আমার সন্তান।আমি আর কোনদিন এই সন্তানের দাবি নিয়ে আপনাদের সামনে আসবো না,,,,,
এতটুকু বলেই রাফি নামের লোকটা চলে গেল।
এখন নিজের মাঝে অন্যরকম একটা প্রশান্তি খোঁজে পাচ্ছি।
বাসায় এসে দেখি নিনিতা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে।ওর কাঁদে হাত রাখতেই ও আমার দিকে তাকালো।ওর চোখের কোনের জল মুছে দিয়ে বললাম আমাদের মেয়েকে আর কেউ আমাদের থেকে নিয়ে যেতে চাইবে না।আমি মাত্রই রাফির সাথে দেখা করে এসেছি।রাফি বলেছে ও আর কোন দিন আমাদের কাছে সন্তানের দাবি নিয়ে আসবে না।এই সন্তান আমাদের,,,,,
এতটুকু বলতেই নিনিতা কান্না শুরু করে দিয়েই আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরল,,,আমিও আর কিছু বললাম না। ও কাঁদুক এই কান্না কষ্টের নয় এটা যে সুখের কান্না।
•
•
•
আজকে আমার আর নিনিতার দ্বিতীয় বাসর রাত।অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বিয়ে করলে বিয়েটা বৈধ হয় না।আমরা আমাদের বিয়েটাকে বৈধতায় রূপান্তরিত করতেই আজ দ্বিতীয় বারের মত বিয়েটা করলাম।
#সমাপ্ত
(ধৈর্য নিয়ে গল্পটা পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ)
– এইতো পরের স্টেশনেই আমরা নামবো।তারপর সেখান থেকে একটা রিক্সা নিয়ে সোজা বাড়ি চলে যাবো,,,,,
– আমারা চলে এসেছি।
– আমরা কি এখানেই নেমে যাব ?
– হম।
আমি নিনিতাকে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে গেলাম।এখনো ভালো করে ভোরের আলো ফোটেনি।হালকা অন্ধকার রয়ে গেছে।
– এখন কীভাবে যাবো ?
– ওটাই ভাবতেছি।
– আর কতো দূর যেতে হবে ?
– বেশি না আরও ১ কিমি এর যেতে মত হবে।
– রিক্সা নিয়ে নিন।
– হ্যাঁ কিন্তু রাস্তা অনেক খারাপ আর এই শরীরে এভাবে রিক্সায় করে যেতে পারবেন ?
– মনে হয় পারবো।
– এই ভাই ! যাবেন ?
– কোথায় যাবেন স্যার ?
– এইতো সামনের হরিশপুর বাজারের কাছে সরকার বাড়িতে।
– যাবো ভাই।তবে আসার সময় ফাঁকা আসতে হবে তো, তাই ভাড়াটা একটু বাড়িয়ে দিয়েন।
– হম বাড়িয়েই দিবো চলেন,,,,
আমি ব্যাগ নিয়ে রিক্সাতে উঠলাম,অধের্ক রাস্তা যাওয়ার পর নিনিতা বলল,রাস্তার ঝাকুনির ফলে ওর পেট ব্যাথা করছে,ও আর রিক্সায় করে যাবে না।আমি রিক্সা থেকে নেমে গেলাম।সামনে তাকিয়ে দেখি রাস্তার অবস্থা আরও বেশি খারাপ।
আমি রিক্সা থেকে নামতেই নিনিতাও নেমে গেল।
– চলেন আমরা বাকি রাস্তাটুকু হেঁটেই যাই।আমি আর এভাবে যেতে পারবো না।
আমি রিক্সা ওয়ালাকে বললাম,আপনি ব্যাগ নিয়ে চলে যান,আমারা হেঁটে আসছি।
অবশেষে হেঁটেই ১০ মিনিট পর বাড়ী গেলাম।
বাড়িতে গিয়ে মা-বাবার সাথে দেখা হল।নিনিতাকে আমার সাথে দেখে মা,বাবা দুজনেই ভীষণ খুশি হয়েছে।
আমি নিনিতাকে বললাম আপনি একটু রেস্ট নিতে থাকুন।আমি একটু বাজারের দিকে যাচ্ছি।
বাজারে এসে এলাকার এক বড় ভাই কে নিয়ে চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে গেলাম,সম্পর্কে উনি আমাদের চাচা।
– আসসালামু ! চাচা কেমন আছেন ?
– হ্যাঁ বাবা ভালো, ঢাকা থেকে কখন আসলে ?
– একটু আগেই এসেছি,আপনার কাছে আসলাম একটা অভিযোগ নিয়ে।
– কি অভিযোগ বাবা,,,
– আমাদের রাস্তাটার এই অবস্থা কেন ? গত দুই বছরে রাস্তার কোন কাজ হয়নি।রাস্তায় এত বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।এটা মেরামত করছেন না কেন।
– আমি কি করবো বাবা। এমপি সাহেব কে কতো বার বললাম,এই বাজেটেও মনে হয় হবে না।
– তার মানে আপনি কোন উপকার করতে পারবেন না ?
– বাবা এই রাস্তা পুনরায় মেরামত করতে প্রায় 15 লক্ষ টাকা খরচ হবে। আমার একার পক্ষে সেটা সম্ভব না।
– যদি আমি সেই রাস্তা তৈরি করে দেই।
– কি বলো ?
– হ্যাঁ।তবে একটা শর্ত আছে রাজনৈতিক কোন ঝামেলায় যেন আমাকে পরতে না হয়।
– আমি এখুনি এমপি সাহেবের সাথে কথা বলছি।
– আপনি কথা বলেন আর আমি রাস্তা মেরামতের সব ব্যাবস্থা করছি।
তারপর আমি কিছু বাজার করে বাড়ী আসলাম।বাড়িতে আসতেই নিনিতা জিগ্যেস করল,,,
– কোথায় গেছিলেন ?
– বাজার করতে আর একটু ঘুরলাম।
মায়ের সাথে দেখলাম ভালোই কথা বার্তা চলেছে নিনিতার।আর মায়ের মুখেও শুধু নিনিতা আর নিনিতা।আর এদিকে আমার মায়ের একটা মাত্র ছেলে আমি এতদিন পরে বাড়িতে এসেছি এই ব্যাপারে আমার মায়ের কোন খায়ালি নেই।এখন নিজেকেই নিজেদের বাড়িতে কেমন জানি অসহায় অসহায় লাগছে।
বিকেলে চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের বাড়ীতে আসলো,,,
– বাবা সুমন বাড়িতে আছো ?
– জি চাচা আসেন ভেতরে আসেন।
– এই নাও বাবা এমপি সাহেবের অনুমতি পত্র আর এটা আমার অনুমতি পত্র। আর এই ৩ জনের সাথে কথা বলে নাও, এরা তোমাকে
তোমার চাহিদা মাফিক যা চাইবা তাই দিবে।
– ধন্যবাদ চাচা। আচ্ছা এই রাস্তা করতে কয় দিন লাগতে পারে ?
– তারাতারি করে করতে চাইলে এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
– কিন্তু আমার কাছে যে এতো সময় নেই।আমি বাড়িতে তিন দিন থাকবো আর এই তিন দিনের মধ্যেই কাজটা শেষ করতে হবে।
– বাবা এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে সম্ভব ?
– টাকা থাকলে চাচা সবকিছুই সম্ভব।প্রয়োজনে দ্বিগুণ লোক নিয়োগ করতে হবে।
– তোমার যে ভাবে সুবিধা হয় সেভাবেই কাজটা করো।
চেয়ারম্যান চাচা চলে গেছে আর এদিকে আমিও কাজের অডার দিয়ে দিয়েছি তারা কাল থেকেই কাজ শুরু করবে আর যে ভাবেই হোক তিন দিনের মধ্যে তারা কাজটা শেষ করবে বলে আমাকে জানিয়েছে।
পরের দিন সকাল বেলা ঘুমিয়ে ছিলাম।নিনিতা এসে ঘুম থেকে ডেকে বলল,,,,
– বাড়িতে অনেক মানুষ এসে ঝড়ো হয়েছে তারা আপনার সাথে দেখা করতে চায়।
– ওকে আমি গিয়ে দেখি কারা আসছে,,,
বাহিরে এসে দেখি আমার স্কুলের সব স্যারে’রা এসেছে।আমি সব স্যারদের এক সাথে দেখে একটু আবাকই হয়েছি।স্যারদের সালাম দিয়ে ভেতরের রুমে নিয়ে বসতে দিলাম।তারপর স্যারে’রা বলল,,,,
– আমরা শুনলাম তুমি নাকি আমাদের রাস্তাটা নতুন করে মেরামত করে দিচ্ছ।তাই আমরা সব স্যারে’রা মিলে একটা আবদার নিয়ে তোমার কাছে এসেছি।
– কি আবদার বলেন,,,,
– আমাদের স্কুলের সামনের যে খালি জায়গাটা ছিল সেটা এতদিন আমরা স্কুলের মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে এসেছি।কিন্তু এই জায়গার মালিক জায়গায়টা বিক্রি করে দিবে।আমাদের স্কুলের যেহেতু নিজস্ব কোন মাঠ নাই তাই আমরা চাইছিলাম এই জায়গায়টা স্কুলের জন্য কিনে মাঠ হিসাবে ব্যবহার করতে।
– এই ব্যাপারে আমার থেকে কি ধরনের সহযোগিতা চান আপনারা ?
– আমাদের স্কুলের ফান্ডে যে টাকা আছে তা দিয়ে জায়গাটা কিনা সম্ভব না।এখন তুমি যদি আমাদের পাশে থেকে আমাদেরকে একটু সহযোগিতা করতে তাইলে আমাদের খুব উপকার হতো।
– জায়গাটার মূল্য কত ?
– জায়গার মালিক বলছে যদি স্কুল জায়গাটা নেয় সে ক্ষেত্রে 10 লক্ষ টাকায় জায়গাটা তিনি দিয়ে দিবেন।
– আপনারা ওনার সাথে কথা বলুন।আর হ্যাঁ 10 লক্ষ টাকার পুনো টাকাটাই আমি দিতে চাই।
– তুমি আমাদের অনেক উপকার করলে বাবা।আজ তাহলে আমরা আসি,,,
– আমাদের বাসায় সকালের সকালের নাস্তা করে তারপর যাবেন।
– অন্য একদিন এসে না হয় খেয়ে যাবো।আজকে স্কুলে একটু কাজ আছে তাই আজ যেতে হবে,,,,,
স্যারেরা চলে যেতেই মা এসে বলল,,,
– তুই এখানে এসে আবার কি শুরু করলি বলতো ?
– তেমন কিছু না মা ,রাস্তাটা ঠিক করতেছি আর স্কুলের জন্য জায়গা কিনে দিচ্ছি।
আজকে থেকে রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে।কাজ ভালো ভাবেই হচ্ছে।দেখে মনে হচ্ছে তিন দিনের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হয়ে যাবে।
এর মধ্যেই নিনিতার বাবা ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছে আমরা কবে ঢাকায় ফিরবো।ওনাকে জানিয়ে দিয়েছি কালকে বিকেলে আমরা ঢাকায় ফিরবো।
সন্ধ্যায় এলাকার কয়েকজন এসে বলল তারা কালকে রাস্তা উদ্বোধনের জন্য একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সেখানে আমাকে আর নিনিতাকে যেতে হবে।এর মধ্যেই তারা জেনে গেছে নিনিতার জন্যই রাস্তাটা মেরামত হয়েছে তাই তারা চাচ্ছে নিনিতাই কাল রাস্তাটা উদ্বোধন করুক।
এই প্রস্তাব শুনে আমারও খুব ভাল লেগেছে।
পরের দিন সকাল বেলা আমরা রাস্তা উদ্বোধন করতে গেছি।নিনিতাকে দেখে মনে হচ্ছে ও আজকে অনেক খুশি।ওর হাঁসি মাখা মুখ দেখে আমারও খুব ভাল লাগছে।
বিকেল বেলা বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে যখন ঐ রাস্তা দিয়ে রিক্সায় করে যাচ্ছিলাম তখন নিনিতা বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিল।
ঢাকায় এসেই আবার ব্যস্ততার আবরনে বন্ধী হয়ে গেলাম।তবে নিনিতার সাথে আমার সম্পর্কটা আগের থেকে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে।
দিন গুলি এখন ভালই যাচ্ছে।আজকে সকালে অফিসে আসার সময় দেখে আসলাম নিনিতার শরীরটা বেশি ভাল না।এই জন্য অফিসের কোন কাজেই আজ মন বসাতে পারছি না।
বিকেলের দিকে বাসার কাজের মেয়ে ফোন দিয়ে বলল নিনিতার অবস্থা বেশি ভাল না।ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
খবরটা শুনে আমি অফিস থেকে ছুটে চলে গেলাম হাসপাতালে।ডাক্তারদের সাথে কথা বললাম।
ডাক্তার বলল নিনিতার অবস্থা আশঙ্কাজনক।এই মূহুর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না,,,
প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার সময় আমার সাথে একটা মেয়েও কলেজে যেত।আবার কলেজ থেকে আসার সময় ঐ মেয়েটা আমার সাথেই আসতো।
এভাবে কয়েক দিন যাওয়ার পর হটাৎ একদিন সাহস করে মেয়েটার সাথে কথা বললাম।মেয়েটাও ভাল ভাবেই আমার সাথে কথা বলল।তারপর থেকে মেয়েটার সাথে কথা বলতে বলতে কলেজে যেতাম আবার কথা বলতে বলতে কলেজ থেকে বাসায় আসতাম।
এভাবে চলে গেল তিন-চার মাস।এই তিন-চার মাসে মেয়েটার সাথে কত কথাই না বলেছি।তারপর একটা সময় আমি বুঝতে পারলাম আমি মেয়েটার প্রেমে পরে গেছি।আর মেয়েটা আমার সাথে যেভাবে কথা বলতো আমার কেন যানি মনে হতো মেয়েটাও আমাকে পছন্দ করে।
সিদ্ধান্ত নিলাম মেয়েটাকে আমার ভালবাসার কথা বলব।কিন্তু কোন ভাবেই তা বলতে পারতে ছিলাম না।বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মনে মনে বলি আজকে যে করেই হোক মেয়েটাকে আমার ভালবাসার কথা বলবই বলব।কিন্তু মেয়েটার সামনে কিছু বলতে গেলেই আমার কাঁপাকাপি শুরু হয়ে যায়।কিছুতেই যেন কিছুই হচ্ছিল না।
তারপর হটাৎ মনে পরলো সামনেই তো 14 ফেব্রুয়ারি।সে দিন তো ভালবাসা দিবস।সেদিনেই না হয় আমি আমার ভালবাসার কথা মেয়েটাকে জানাবো।
এর মধ্যেই আমার এক বন্ধু একদিন বিকেল বেলা এসে বলল চল নদীর পার থেকে ঘুরে আসি।নদীর পারে বসে থাকতে আমার খুব ভালো লাগে তাই আর না করলাম না।ওর সাথে ঘুরতে চলে গেলাম।
নদীর পার দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পরলো একটা মেয়ে আর একটা ছেলের ওপর তারা ছাতার নিচে বসে আছে।আমার আর বুঝতে বাকি রইল না তাদের দুজনের মধ্যে সম্পর্কটা ঠিক কি ধরনের।তখন এই ধরনের প্রেমিক-প্রেমিকা দেখলে আমার মাথায় প্রায়ই একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেত রোদ নাই বৃষ্টি নাই তাও ওরা কেন ছাতার নিয়ে বসে থাকে।যাই হোক এখন আর এই প্রশ্নটা মাথায় আর আসে না।তখন এত কিছু বুঝাতাম না তাই হয়তো এই ধরনের প্রশ্ন মাথায় আসতো।
হাঁটতে হাঁটতে যতই মেয়েটার কাছে যাচ্ছিলাম মেয়েটাকে কেমন যানি চেনা চেনা মনে হচ্ছিল।আরও কাছে যাওয়ার পর যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
এই দৃশ্য দেখার পর প্রেম না করেও সেদিন ছোট খাটো একটা ছ্যাঁকা খেয়েছিলাম,,,
আমার কথা শেষ না হতেই নিনিতা বিকট শব্দে হাসা শুরু করল।ওর হাঁসি যেন কিছুতেই থামছিল না।এই প্রথম ওকে এভাবে হাঁসতে দেখলাম।নিনিতাকে হাঁসলে যে এত সুন্দর দেখতে লাগে এটা কি মেয়েটা যানে,,,কি যানি হয়তো সে তা যানে না।
– তারপর কি এখানেই আপনার প্রেমের সমাপ্তি ঘটলো ?
– আরে না।এর পরেও আরও একটা আছে।
– এখন তো আপনাকে আমার সন্দেহ হচ্ছে।আচ্ছা আপনি কি এখনো কারো সাথে প্রেম টেম করেন ?
– কি যে বলেন,,,, কারো সাথে সম্পর্ক থাকলে কি আর আপনাকে বিয়ে করি।
– হম।তাও ঠিক,,,
এখন আপনার পরের প্রেম কাহিনী শুরু করেন।তিনটার মধ্যে দুইটাই যখন বললেন তাহলে ওটা আর বাকি থাকবে কেন,,,,
– এইচ এস সি পরীক্ষায় আমি ভালো রেজাল্ট করেছিলাম আর এস এস সি তে রেজাল্ট ভালই ছিল সেই সুবাদে ভাল একটা ভাসিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই।
আমার বয়স তখন উনিশ কি বিশ,আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামে রিনা নামের একটা মেয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়।আগের বারের মত এবারও প্রথম দেখায় প্রেমে পড়লাম আর ভদ্র ছেলের মতো অপেক্ষা করতে থাকলাম,কখনও তাকে সেভাবে খুব কাছ থেকে দেখা হয়নি।ফোনের মাধ্যমেই আমাদের মধ্যে কথা হতো।আর এভাবেই তিনটা বছর পার হয়ে গেলো…
সবকিছুই ঠিক ঠাক যাচ্ছিলো, জানতাম পড়া শেষ করে যে কোন একটা চাকুরী পেলে সে মেয়েকে হয়তো পাবো, কারণ ছেলে হিসাবে আমার একটা ভালো সুনাম আছে এলাকায়।আর এটা ভেবেই পড়াশোনায় মনোযোগ দিলাম।
কিন্তু একদিন আমি টাকার কাছে হেরে গেলাম, যে মেয়ে আমাকে বলতো পড়া শেষ না করে বিয়ে করবে না,সে মেয়ে হুট করেই রাতের অন্ধকারে বিয়ে করে নিলো,আর এটা আমি জানতেই পরলাম না।যখন আমি এটা জানলাম তখন আমার কাছে সব কিছু কেমন জানি স্বপ্ন মনে হলো,পরে বুঝলাম এটা স্বপ্ন না এটাই বাস্তবতা।এই বাস্তবতাকে ঘিরেই হয়তো বেঁচে থাকতে হবে আমাকে।
সেদিন আমি বুঝেছিলাম টাকার ক্ষমতা কতখানি।ছেলে নাকি মাসে ষাট হাজার টাকা বেতন পায়, আর মধ্যবিত্ত ঘরে ষাট হাজার টাকা বেতন লটারির টিকিটের মতো, তাই রিনার বাবাও আর দ্বিতীয় বার ভাবলো না,যেখানে টাকা আছে সেখানে সুখ আছে, তাই রিনাও রাতের অন্ধকারে এভাবে বিয়ে করে নিলো।
এই চরম বাস্তবতা থেকেই সেদিন শিক্ষা নিয়ে ছিলাম জীবনে বিয়ে করলে টাকাকেই বিয়ে।
পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য অনেক ঘুরাঘুরি করেছি কিন্তু কোথায় একটা চাকরি পাইনি।তারপর অনেক কষ্টে সততা আর মেধার জোরে আপনাদের অফিসে চাকরিটা আমি পাই।চাকরির প্রথম দিন থেকেই আপনার বাবা আমাকে অনেক সাপোর্ট করতেন আর ওনার থেকে আমি অনেক ভালবাসাও পেয়েছি।
এরপর একদিন আপনার বাবা আমাকে ডেকে সব ঘটনা খুলে বললেন।আর বললেন এই বিয়েটা তুমি না করলে আমার মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে।তার পরের ঘটনা তো আপনি সব জানেনই।
– আপনার বলা আগের ঘটনা গুলি শুনে আমার প্রচুর হাঁসি পেয়েছিল।কিন্তু এবার তার উল্টো টা হল।আপনার কথা গুলো শুনে খুব খারাপ লাগলো,,,,,,
– এগুলি এখন শুধুই অতীত।এগুলি এখন আর মনে করি না।
– হম,,,
আচ্ছা আপনাদের বাড়িতে যেতে আর কতটা সময় লাগবে,,,,
– এইতো পরের স্টেশনেই আমরা নামবো।তারপর সেখান থেকে একটা রিক্সা নিয়ে সোজা বাড়ি চলে যাবো,,,,,
– যদি আমার কাছে জানতে চান তাহলে আমি বলব,এই ধরনের মানুষের সাথে দ্বিতীয় বার আর দেখা না হওয়াটাই ভাল।এরা আবার যখন আসে তখনও কোন না কোন স্বার্থের খুঁজেই আসে।
– আমার মাথাটা আবার কেমন যানি ঘুরছে।আমাকে বাসায় নিয়ে চালুন,,,,
সেখান থেকে নিনিতাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।নিনিতা অসুস্থ থাকায় দুইদিন আর অফিস যাইনি আমি।
আজ নিনিতা একটু সুস্থ থাকায় আজকে অফিসে এসেছি।বিকেলে অফিস থেকে বের হবো এমন সময় বাড়ি থেকে ফোন আসলো বাবা অসুস্থ আমাকে বাড়ি যেতে হবে।আর মা বলল বিয়েটা তো তুই একা একাই করেছিস।আমরা এখনো তোর বউ কে দেখিনি।আসার সময় বৌমা’কে সাথে করে নিয়ে আসিস।
কিন্তু এই অবস্থায় ওকে কীভাবে সেখানে নিয়ে যাবো এটা নিয়ে আমি কিছুটা চিন্তায় পরে গেলাম।
– মা ফোন দিয়ে বলল বাবা অসুস্থ আমি আজকে রাতে বাড়িতে যাব তো আপনি কি আমার সাথে আমাদের গ্রামের বাড়ী যাবেন ?
– এই শরীরে কি এতো দূর জার্নি করাটা ঠিক হবে ?
– আমি আপনাকে যাওয়ার জন্য জোর করবো না।আপনার যেতে ইচ্ছে হলে আমার সাথে যেতে পারেন।
আমি তাকে আর কিছু বললাম না,আর মনে হয় বলার অধিকার ও নাই।আমিও চাই সুস্থ ভাবেই বাচ্চা টা হয়ে যাক।
রাত 11 টার বাসে যাবো তাই ব্যাগটা গুছিয়ে নিলাম ঠিক তখনেই নিনিতা এসে বলল,,,
– আপনি কি রাতেই চলে যাবেন ?
– হ্যাঁ,রাত 11 টার বাসে যাবো।
– বাসে কেন ? নিজের গাড়ী রেখে।
– এভাবে বউ ছাড়া গাড়ী নিয়ে গেলে খারাপ দেখাবে, তাছাড়া আমি সাধারণ ভাবে থাকতে বেশি পছন্দ করি, অনেক দিন ধরে এই শহরের জগতে নিজেকে আঁটকে রেখেছি।এখন গ্রামে গিয়ে মুক্ত বাতাসে একটু মুক্ত হতে চাই।
রাত সারে নয়টার দিকে নিনিতার বাবা ফোন দিয়ে বলল,,,,
– নিনিতা বলছে যে, তুমি নাকি আজকে রাতে গ্রামের বাড়ী চলে যাচ্ছ ?
– জি হ্যাঁ,,
– নিনিতাকেও নিয়ে যাও।তোমার মা আমাকে ফোন করেছিলো।
– আপনার মেয়ে তো অসুস্থ তাই আমি ভাবলাম ও সুস্থ হোক তারপর না হয় ওকে নিয়ে যাবো।
– কিছু হবে না, তোমরা এসি বাসে যাও। আমি কালকে গাড়ী পাঠিয়ে দিবো,বাসে ঝাকি লাগবে না।
– আপনার মেয়ে যেতে রাজী থাকলে আমার কোন সমস্যা নাই।
ফোন রাখতেই নিনিতা আমার কাছে এসে বলল আচ্ছা আপনার গ্রামের বাড়িতে কি কি দিয়ে যাওয়া যায়।
– বিমান ছাড়া সব কিছু দিয়েই যাওয়া যায়।
– ট্রেন দিয়ে যাওয়া যায় ?
– হম, যাওয়া যায়।
– আমি ছোট বেলায় একবার ট্রেনে উঠেছিলাম এর পর আর কখনো ট্রেনে উঠিনাই।আমি ট্রেন দিয়ে যাবো।
আমি রাতের ট্রেনের একটা কেভিন ভাড়া করলাম।রাত ১১ টায় আমারা ট্রেনে উঠলাম তারপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ট্রেন ছেড়ে দিলো।
– আপনি ট্রেনে যেতে চেয়েছেন।কিন্তু ট্রেনের কোন সিট খালি ছিল না। তাই 1200 টাকার এই কেভিন 4000 হাজার টাকায় নিয়েছি।
– শুধু শুধু এতগুলো টাকা কেন খরচ করতে গেলেন।আমরা না হয় বাসেই চলে যেতাম।
– আপনি বলেছেন ট্রেনে যাবেন 4000 টাকার জায়গায় যদি 4 লাখ টাকাও লাগতো তাহলেও আমি আজকে আপনাকে নিয়ে ট্রেনেই যেতাম।
আমার কথা শুনে নিনিতা আর কিছু বলল না শুধু আমার দিকে কিছুটা সময় তাকিয়ে ছিল।
– আমি একটু ওয়াশ রুমে যাবো।আপনি কি আমাকে ওয়াশ রুম পযন্ত দিয়ে আসবেন ?
– হম অবশ্যই।চলেন,,,
– ওয়াশ রুমে যাওয়ার আগে নিনিতা ওর ফোনটা আমার কাছে রেখে যায়।এই প্রথম আমি ওর ফোন হাতে নিলাম।
ফোন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।এর মধ্যে ফোনে একটা কল আসলো।চিন্তায় পরে গেলাম এত রাতে ওকে কে ফোন করল,,,যাইহোক আমি ফোন রিসিভ করলাম না।নিনিতা বের হতেই ওর হাতে ফোন দিয়ে বললাম দেখেন তো কে যানি আপনারে ফোন দিচ্ছে।
– ফোন রিসিভ করলেই পারতেন।
– আপনার ফোন, আমি কেন ধরবো,,,
নিনিতা ফোন বের করে কথা বলল, তারপর বলল, আপনার ফোন বন্ধ কেন ? বাবা বার বার ফোন দিচ্ছিল আপনাকে।
– হ্যাঁ তাই তো।আপনার বাবা আমাকে অনেক বার ফোন দিয়েছে।
– আমি এর আগে একা কোথাও যায় নি, মানে বাবাকে ছাড়া।স্কুল বা কলেজে গেলেও আমাকে বাবা একা পাঠাতো না,আজ এতো দূরে যাচ্ছি তাও এই শরীরে তাই বাবা একটু চিন্তা করছে।
– না ঠিক আছে।বাবার সাথে দেখা করে খুব তাড়াতাড়িই আমরা ঢাকায় ফিরে আসবো।
– আমার না খুব খুদা লেগেছে।আসার সময় বাসা থেকে কিছু খাবার নিয়ে এসেছিলাম।
– তাহলে সেগুলো খান।
– আপনি কিছু খাবেন না ?
– না
– চলেন দুজনে একসাথে খাই।
– ওকে,,,
– আচ্ছা আপনার কি ছোট বেলার কথা মনে পরে ?
– মনে পরবে না কেন।জীবনের সবচেয়ে ভাল সময়টা যে তখন কাটিয়েছি।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মাদ্রাসায় চলে যেতাম তারপর সেখান থেকে এসে স্কুলে যেতাম।স্কুল থেকে এসে সবাই একসঙ্গে পুকুরে গোছল করতাম।পুকুরে সাঁতার কাটতে কাটতে চোখ লাল হয়ে যেত।তারপর মা হাতে একটা লাঠি নিয়ে এসে মারের ভয় দেখিয়ে পুকুর থেকে তুলে নিয়ে যেত।দুপুরে খাওয়ার পর মা ঘুমাতে বলত।আমিও গিয়ে বিছানায় শুতাম যখনেই দেখতাম মা ঘরে নেই উঠে এক দৌড়ে মাঠে চলে যেতাম খেলতে।তারপর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতাম।মা তখন বকাবকি করে পড়তে বসাতো।কিছুক্ষণ পড়ার পরেই ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসতো।মায়ের ধমক শুনে চোখ খোলে আবার পড়তাম।একটু পরেই আবার চোখ বন্ধ হয়ে যেত।তারপর মা বুঝে যেত আজ আর পড়াশোনা হবে না।তখন রাতের খাবার খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিত।আর আমিও ঘুমের দেশে চলে যেতাম।
এভাবেই আমার শৈশব কেটেছে।তারপর যখন আস্তে আস্তে বড় হয়ে ক্লাস এইট এ উঠলাম তখনি এক মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম।
– ছোটকালের প্রেম,খুব ইন্টারেস্টিং তো,তারপর কি হল,,,
– মেয়েটা শহর থেকে এসে গ্রামে আমাদের স্কুলে ভর্তি হল।ওকে দেখে আমার খুব ভাল লেগে যায়।তারপর আর কি পরে গেলাম ওর প্রেমে পরে।যে আমি সপ্তাহে ছয় দিনের মধ্যে তিন দিন স্কুলে যেতাম সেই আমি তখন নিয়মিত স্কুলে যেতাম মেয়েটাকে দেখার জন্য আর এদিকে আমার মা কি খুশি এখন আর আমাকে জোর করে স্কুলে পাঠাতে হয় না।কিন্তু “মা” তো আর আমার ভেতরের খবরটা জানতো না।আমি যে এখন কেন প্রত্যেক দিনেই স্কুলে যায়।
– তারপর কি হল,,,,
– তারপর আর কি দেখতে দেখতে চলে গেল দুই বছর।এস এস সি পরীক্ষা শেষ হতেই মেয়েটা চলে গেল শহরে।মেয়েটাকে আর কিছু বলা হল না।
– আহারে,,,,আগে বলে দিলেই পারতেন।
– তখন কি আর এত কিছু বুঝাতাম নাকি।ওকে দূর থেকে দেখতাম তাতেই ভালো লাগতো।
– তাহলে এটাই কি ছিল আপনার প্রথম প্রেম ?
– প্রেম আর হল কই।কিছুই তো বলতে পারিনি মেয়েটাকে।
এর পরেও আরও একটা মেয়েকে আমার ভাল লেগেছিল।
– আবার,,,,
– হম
– তো সেটার কি হল,,,,
– গ্রাম থেকে এস এস সি দেওয়ার পর তখন আমি শহরের একটা কলেজে ভর্তি হয়েছি।বাড়ি থেকে যেতে আসতে বেশি সময় লাগতো তাই কলেজের কাছেই একটা বাসা ভাড়া নিলাম থাকার জন্য।
প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার সময় আমার সাথে একটা মেয়েও কলেজে যেত।আবার কলেজ থেকে আসার সময় ঐ মেয়েটা আমার সাথেই আসতো।
এভাবে কয়েক দিন যাওয়ার পর হটাৎ একদিন সাহস করে,,,,,
নিনিতা কে নিয়ে আমি হাসপাতাল থেকে বের হলাম, ডাইভার কে আমি আগে ছেড়ে দিয়েছিলাম, তাই গাড়িটা আমি চালাচ্ছিলাম! রাস্তার এক পাশে থামলাম।যায়গাটা আমার খুব পরিচিত,কারণ ১০ বছর আগে একবার যখন একটা ট্রেনিং এর জন্য ঢাকা এসেছিলাম তখন স্বপ্ন অন্যরকম ছিল।জানতাম আমার কাছে কোটি টাকা আসবে না আমি লাখ টাকা বেতন পাবো না।সময়ের সাথে সাথে সব কিছু আবছা হয়ে গেছে।
আমি গাড়িটা থামালাম।
নিনিতা:- এখানে গাড়ী থামালেন কেন ?
আমি:- নামেন।
নিনিতা:- কেন?
আমি:- এতো প্রশ্ন কেন ? নামেন !
নিনিতা গাড়ি থেকে নামতেই ওকে বললাম আপনি এখানে একটু দাঁড়ান আমি আসতেছি।
•
•
•
পাঁচ মিনিট পর নিনিতার কাছে আসতেই নিনিতা বলল,,,
নিনিতা:- কি ব্যাপার,আপনি রেস্টুরেন্টের ভেতরে যাওয়ার পরেই রেস্টুরেন্ট থেকে সব মানুষ বের হয়ে চলে যাচ্ছে কেন।
আমি:- আগে ভেতরে চালুন তারপর বলছি।
নিনিতা:- হম,এখন বলুন সবাই এভাবে বের হয়ে গেল কেন।
আমি:- এই রেস্টুরেন্ট এর মালিক কে গিয়ে বললাম এই রেস্টুরেন্ট টা পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমাকে খালি করে দিন।আমি আমার ওয়াইফের সাথে একান্তে এখানে কিছুটা সময় কাটাবো।
নিনিতা:- আপনি বলাতেই ওরা পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুরো রেস্টুরেন্ট টা খালি করে দিল।
আমি:- প্রথমে না করেছিল।তারপর আমি বললাম আমি এফ আর গ্রুপের এমডি।রেস্টুরেন্ট টা আমাকে খালি করে দিতেই হবে।আর আমি এখানে যতক্ষণ সময় কাটাবো ততক্ষণে আপনি যত টাকা বিক্রি করতেন আমি আপনাকে এর তিন গুণ টাকা বিল হিসেবে দিব।
নিনিতা:- তারপর কি হল ?
আমি:- তারপর কি হল এটা তো আপনি নিজেই দেখলেন।
নিনিতা:- এসবের কি দরকার ছিল ? এখানে কি এমন আছে যে ওদের এত টাকা দিতে হবে ?
আমি:- আপনি টাকার চিন্তা করছেন ? আমি অন্য চিন্তা করছি ?
নিনিতা:-কি ?
আমি:- এখানে আমি ২ টা স্বপ্ন পূরণ করলাম।
নিনিতা:- কি কি?
আমি:- ১০ বছর আগে আমি যখন ঢাকায় আসি, আমি জানতাম আমি হয়তো অতো বেতন পাবো না যে আমার বউকে ফাইভ-স্টার
হোটেলে নিয়ে গিয়ে ডিনার করাতে পারবো, তাই তাকে অল্প টাকায় কীভাবে সুখে রাখা যায় সে চিন্তা করতাম,কিন্তু আজ এখানে এসে আমার সেই স্বপ্নটা পূরন করলাম।
নিনিতা:- আর ?
আমি:- টাকা আর ক্ষমতার বলে সময়কে কিনে নিলাম।
জায়গাটা অনেক শান্ত তাই না ?
নিনিতা:- এদিক অদিক কি খুঁজছেন ?
আমি:- ওয়েটার কে বলি আমাদের কে খাবার দিতে।
নিনিতা:- আমি এখন কিছু খাবো না।
আমি:- আপনি কিছু না খেলে যে আমার দুইটা স্বপ্নের মধ্যে একটা স্বপ্ন পূরন হবে না
নিনিতা:- আজ এতো ম্যায়া হলো কীভাবে ? নাকি আমি মরে যাবো এ কথা শুনে এতো খুশী ?
আমি:- না ভাবলাম। বিয়ে যখন করেছি,তখন নিজের স্বপ্ন গুলো অন্তত পূরণ করে নেই।
নিনিতা:- দেখেন আমার শরীর এখন ভালো নাই, তাই আপনার স্বপ্ন এখন পূরণ করতে পারবো না।আর কয়েক মাস পর বাচ্চাটা হয়ে যাক,আমি সুস্থ হই, তখন আপনার সব স্বপ্ন পূরন করব।
আমি:- আচ্ছা একটা কথা প্রশ্ন করবো ?
নিনিতা:- কি বলেন ?
আমি- এই বাচ্চা আসলো কীভাবে ?
নিনিতা:- মানে ?
আমি- না মানে,এই বাচ্চার বাবা কে ? কীভাবে আপনার সাথে আপনার পরিচয় হলো ? সে এখন কোথায় আছে ?
নিনিতা:- দুই বছর আগে ছেলেটার সাথে আমার পরিচয়,ছেলেটার নাম রাফি প্রথম তার সাথে পরিচয় হয় আমার বান্ধবীর বাসায়। সে আমার বান্ধবীর ছোট ভাইকে প্রাইভেট পড়াতো, সেই সূত্রে ওর সাথে আমার পরিচয় হয়।
তারপর মাঝে মাঝে বান্ধবীর বাসায় গেলে ওর সাথে আমার কথা হত।এভাবে ৬ মাস চলার পর তার সাথে আমার রিলেশন হয় ছেলেটা নাকি গরীব ছিল, কিন্তু অনেক মেধাবী।ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে তখন গনিতের ওপর মাস্টার্স করছিলো, আমি তাকে অনেক ভাবে হেল্প করতাম।পড়াশোনা শেষ হতেই বাবাকে বলে তার চাকরির ব্যবস্থা করে দেই।
তার চাকরি হয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর সে একদিন আমাদের বাড়ী আসলো, সে দিন বাসায় কেউ ছিল না আর রাতেও আসবে
না আব্বু-আম্মু।
সে দিন রাতে কি থেকে কি হয়ে গেলো,
বুঝলাম না। আমি এসব করতে চাই নি,কিন্তু সে বলল,আমার তো এখন চাকরি হয়েই গেছে।আর কিছুদিন পরেই তোমার বাবার সাথে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলব আমি।ওকে অনেক ভালবাসতাম তাই ওর কথা ফেলতে পারিনি সেদিন।
সে দিনের ঘটনার মাস খানেক পর একদিন রাফিকে দেখলাম একটা মেয়ের সাথে রিক্সায় করে কোথায় যেন যাচ্ছে।প্রথমে ভাবলাম এটা হয়তো ওর কোন কাজিন।কিন্তু না,পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ওটা ছিল রাফির বিবাহিতা বউ।দুই বছর আগেই রাফি এই বিয়েটা করেছিল।এটা আমি কিছুতেই মানতে পারলাম না।
আমি যার এতো উপকার করলাম যাকে এতো বিশ্বাস করলাম সে যে আমাকে এইভাবে ধোঁকা দিবে কখনও বুঝিনি, সে আমাকে একটুও ভালোবাসে নি, সে শুধু আমাকে ব্যাবহার করেছে।সেটা কোন ব্যাপার না কিন্তু আমার এই রকম ক্ষতি করলো কেন ?
দুই মাস পর জানতে পারলাম যে আমি প্রেগন্যান্ট।আমি তাকে অনেক বার ফোন করলাম, কিন্তু সেই নাম্বার বন্ধ। আমার আব্বুও
খোঁজ নিলো,আব্বুর এক বন্ধু তার সাথে দেখা করলে সে বলে সে আমাকে ছুয়েও দেখেনি, এই বাচ্চার বাবা সে না,সে আমার শুধু বন্ধু ছিল।আর এখনো তাই আছে
আমি তো এই শুনে অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম, আমি আত্মহত্যা ও করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি বেঁচে যায়,তখন জোর করে আপনার সাথে আমার বিয়ে দেয়।আপনিও তো শুধু আমাদের টাকা দেখে আমাকে বিয়ে করেন।
আচ্ছা একজন কে মন থেকে ভালোবাসা কি পাপ ? আমার বাবার অনেক টাকা,এটা কি আমার জন্য অভিশাপ ? আমি কি ভালোবাসা পাবার যোগ্য না ?
নিনিতাকে কিছু বলতে পারিনি, শুধু চোখ দুটো মুছলাম।এতদিন শুধু আমি আমার কষ্ট টা কে অনেক বড় মনে করতাম, কিন্তু ওর গল্প শুনে মনে হলো, আমার কষ্ট ওর সামনে ছোট্ট একটা আঁচড় মাত্র।এটা ভেবে আরও খারাপ লাগলো মেয়েটা পাহাড় পরিমাণ কষ্ট নিয়ে একটা লোভী মানুষের সাথে সংসার করে যাচ্ছে।
এই পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষেরই আলাদা কিছু গল্প থাকে।যা হয়তো আমাদের অনেকরই জানা থাকে না।তাদের ব্যাপারে পুরোপুরি না জেনেই আমরা নানা রকম মন্তব্য করে থাকি।নিনিতার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।এতদিন নিনিতার প্রতি আমার অন্যরকম ধারণা ছিল কিন্তু ওর থেকে ওর জীবনের বাস্তবতা শুনে ওর প্রতি থাকা আমার ভুল ধারণা গুলি ভেঙে গেল।
আমি:- আচ্ছা,রাফি নামের ছেলেটা যদি কখনো আপনার কাছে এসে ওর সন্তানের দাবী করে বসে।তখন আপনি কি করবেন ?
নিনিতা:- আপনার কি মনে হয় তখন আমার কি করা উচিত।
আমি:- সমস্যা টা আপনার ব্যক্তিগত।আপনার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আমি তো কিছু বলতে পারবো না।
নিনিতা:- সমস্যাটা আমার ব্যক্তিগত হলেও এখন আমি আপনার বিবাহিতা বউ।এখানে আপনারও কিছু মতামত থেকেই যায়।
আমি:- যদি আমার জানতে চান তাহলে আমি বলব,এই ধরনের মানুষের সাথে দ্বিতীয় বার আর দেখা না হওয়াটাই ভাল।এরা আবার যখন আসে তখনও কোন না কোন স্বার্থের খুঁজেই আসে।
নিনিতা:- আমার মাথাটা আবার কেমন যানি ঘুরছে।আমাকে বাসায় নিয়ে চালুন,,,,
আজকে চার মাসের এক অন্তঃসত্ত্বাকে বিয়ে করলাম যদিও সে সন্তানের পিতা আমি না।কিন্তু নিয়তির এই খেলায় বিয়েটা আমাকে করতেই হল।বিয়ের আগে যখন মেয়েটার সাথে আমার কথা হয়েছিল তখন প্রথমেই মেয়েটা আমাকে প্রশ্ন করেছিল,,,,
আমি অন্তঃসত্ত্বা এটা জানার পরেও আপনি আমাকে বিয়ে করতে কেন রাজী হলেন ?
– টাকার জন্য রাজী হয়েছি।আপনার বাবার সাথে আমার কথা হয়েছে।আর ওনি আমাকে বলেছেন আমি যদি আপনাকে বিয়ে করি তাহলে ওনি ওনার সম্পত্তির অধের্ক অংশ আমার নামে লিখে দিবেন।তাই এই বিয়েটা করতে আমি রাজী হয়েছি।
সামান্য টাকার জন্য আপনি আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে গেলেন,,,সত্যিই যে পুরুষ মানুষরা স্বার্থপর হয় আপনাকে দেখে আবার সেটা বুঝতে পারলাম।
– আচ্ছা এখন যদি এই একই প্রশ্ন আমি আপনাকে করি তাহলে,,,
আমি শুধু আমার সন্তানের একটা পরিচয়ের জন্য এই বিয়েটাতে রাজী হয়েছি।আমার সন্তানের জন্মের পর কেউ যেন তার বাবার পরিচয় জানতে না চায় এটা ভেবেই আপনার সাথে বিয়েটা করে নিচ্ছি।
– টাকার জন্য আপনাকে বিয়ে করতে রাজী হওয়ায় আমি আপনার কাছে স্বার্থপর হয়ে গেলাম।আর আপনি অন্তঃসত্ত্বা হয়েও আমাকে বিয়ে করতেছেন আপনার সন্তানের পরিচয়ের জন্য তো আপনি কি স্বার্থপর নন।
মেয়েটা আর আমার কথার কোন উত্তর দিল না।
কিছু সময় নিরব থেকে আবার বলল,,,
আমার এই অবস্থা কি করে হল এটা জানবেন না ?
– এখন জানতে ইচ্ছে করছে না।যদি কখনো জানতে ইচ্ছে হয় তখন না হয় আপনার থেকে জেনে নিব।
ওপাশে শুয়ে আছে আমার নতুন বউ।আজকেই প্রথম ওর নামটা জানতে পারলাম।ওর নাম নিনিতা
দূরত্ব আর অসহায়ত্ব জিনিসটা কি সেটা আজকে ঠিক অনুধাবন করতে পারলাম।চোখ দিয়ে না চাইতেও কেন জানি জল গড়িয়ে পড়ছে,হয়তো অতীত গুলো আজ খুব মনে পড়ছে।
বয়স তখন উনিশ কি বিশ, রিনা নামের একটা মেয়ের প্রেমে পড়লাম ভদ্র ছেলের মতো অপেক্ষা করতে থাকলাম, কখনও তাকে ভালো করে দেখিনি, এভাবে তিনটা বছর পার হয়ে
গেলো…
সব ঠিক ঠাক যাচ্ছিলো, জানতাম পড়া শেষ করে যে কোন একটা চাকুরী পেলে সে মেয়েকে হয়তো পাবো, কারণ ছেলে হিসাবে আমার একটা ভালো সুনাম আছে।
কিন্তু একদিন আমি টাকার কাছে হেরে গেলাম, যে মেয়ে পড়া শেষ না করে বিয়ে করবে না বলেছিল, সে মেয়ে হুট করেই রাতের অন্ধকারে বিয়ে করে নিলো, আমার কাছে সব কিছু কেমন জানি স্বপ্ন মনে হলো, পরে বূঝলাম এটা স্বপ্ন না এটাই বাস্তবতা।
সেদিন আমি বুঝলাম টাকার ক্ষমতা কতখানি।ছেলে নাকি মাসে ষাট হাজার টাকা বেতন পায়, আর মধ্যবিত্ত ঘরে ষাট হাজার টাকা বেতন লটারির টিকিটের মতো, তাই রিনার বাবাও আর দ্বিতীয় বার ভাবলো না,যেখানে টাকা আছে সেখানে সুখ আছে, তাই রিনাও রাতের অন্ধকারে এভাবে বিয়ে করে নিলো।
আমি সেদিন একটা জিনিস শিখলাম, আপনার কাছে যদি টাকা থাকে তবে সব আছে, সেই টাকাই আপনাকে দিবে ভালো মানুষের সার্টিফিকেট,সেই টাকাই দিবে সুখ, আর সত্যিই তো মেয়েটাকে আমার সাথে বিয়ে দিলে হয়তো সারাজীবন বাসের ধাক্কা খেয়ে খেয়ে জীবন পার করতে হতো।
আর এখন হয়তো ওর স্বামী ওর জন্য গাড়ী কিনবে, আমার সাথে থাকলে তাকে সারা জীবন ভাড়া বাড়ীতে থাকতে হতো, দুই ঈদের মধ্যে ভাগ করে নিতে হতো,কোন টা নিজের জন্য আর কোন টা পরিবারের জন্য, কিন্তু এখন সেটা করতে হবে না,সত্যিই তো টাকাই সব।
সেদিন থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমিও টাকাকে বিয়ে করবো, হোক সে মেয়ে কালো, বা অন্ধ বা ডিভোর্সি।বড়লোকের মেয়ে হলেই হবে।
দুই বছর আগে, আমি এই কোম্পানিতে জয়েন্ট করি।আমি যে কোন দিন নিনিতাকে(কোম্পানির মালিকের মেয়ে) বিয়ে করবো সেটা আমি স্বপ্নেও কখনো ভাবি নি, কারণ স্বপ্নেরও কিছু সীমানা থাকা উচিৎ।
কিন্তু কয়েকদিন আগে হটাৎ স্যার(নিনিতার বাবা) এসে ওনার মেয়ের সম্পর্কে সবকিছু আমাকে বলল।তারপর বলল এ বিয়ে তোমাকে করতেই হবে, না হলে আমার মান সম্মান কিছুই থাকবে না।
প্রয়োজনে উনি কোম্পানির ৫০% সহ ওনার সম্পত্তির অধের্ক আমার নামে লিখে দিবে।
মনে মনে ভাবলাম এই সুযোগ হয়তো হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না,আর নিনিতা দেখতেও অনেক সুন্দরী। আর বাচ্চা ওটা ব্যাপার না নিজের বলে চালিয়ে দিবো।
ব্যাস হয়ে গেলো বিয়ে কি অদ্ভুত ব্যাপার! কাবিন-নামা তে তারিখ এক বছর আগের। সাক্ষী কাজী সাহেব সবাই খুশী, আমার স্যার কাজী সাহেব কে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে দিলো, উনি খুশী হয়ে চলে গেলো,উনি বলল,স্যার আপনি চিন্তা করবেন না,আমি সব ব্যাবস্থা করে দিবো, এই বিয়ে আজ না আজ থেকে ১ বছর আগে এই তারিখে হয়েছে।
এই হচ্ছে টাকার ক্ষমতা নিয়ম শুধু গরিবের সময় গরিবের মেয়ে পালিয়ে গেলে সেটা মানুষ বলে রহিমের মেয়ে বাড়ী থেকে পালিয়েছে, আর বড়লোকের মেয়ে পালিয়ে গেলে বলে, আরে বন্ধুর সাথে কক্সবাজার ঘুরতে গেছিলো।টাকা থাকলে সব নিয়ম-কানুন পকেটে চলে যায়।
পরের দিন সকালে,,,
স্যার:- বাবা, নীরব,আজ সন্ধ্যায় একটা পার্টি আছে, আর দুপুরে তোমাকে অফিসে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তাই ১২ টার মধ্যে অফিস চলে আসো।
আমি:- জি আচ্ছা!
বিয়ে হওয়ার পরে এখন পর্যন্ত আমি নিনিতার সাথে একবারও কথা বলেছি কি না ঠিক মনে পড়ছে না।
বড়লোক বাবার মেয়েদের প্রতি আমার ধারণা আগে থেকেই ভালো না, হয়তো ছবি আর খবর দেখে এই মনোভাব আর নিনিতাকে কে দেখে সে ভাবনা যেন ১০০% সত্যি হয়ে গেলো।
যাক আমার এসব ভেবে লাভ নাই,আমার টাকা চাই,আমি সেটা পেয়ে গেছি।দুপুরে অফিস গেলাম আমাকে নতুন এমডি করা হলো।
আমি:- একটা কথা বলবো ?
স্যার:- হা বলো বাবা!
আমি:- আমার বেতন কতো ?
স্যার:- তুমি হয়তো বুঝো নি।আজ থেকে আমার কোম্পানির ৫০% মালিক তুমি নিজে।আর প্রতি মাসে এই কোম্পানি থেকে যা লাভ আসবে তার অধের্কটা তোমার।
আমি:- এই পদের বেতন কতো ?
স্যার:- আগের জন কে আমি ৪ লক্ষ ৫০ টাকা দিতাম।
আমি:- আমাকেও তাই দিবেন। আর কোম্পানির যে লাভ হবে সেটা কোম্পানিতেই থাক।
সন্ধ্যায় স্থানীয় একটা বড় কমিউনিটি সেন্টারে আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান করা হলো।সবাই জানলো, আমারা ১ বছর আগে পালিয়ে বিয়ে করি, কিছু দিন হল আমার শ্বশুর জানতে পারে তাই আজকে অনুষ্ঠান।
হাজার হলেও এক মাত্র মেয়ে বলে কথা।
শ্বশুর এক কোটি টাকার একটা নতুন গাড়ী আমাকে উপহার দিলো।সাথে থাকার জন্য একটা বাড়িও দিল।বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে আমি নিনিতাকে নিয়ে নতুন বাড়ীতে উঠলাম।
মাস দুয়েক পরের কথা,,,
সন্ধ্যায় হটাৎ করে নিনিতা মাথা ঘুরে পড়ে গেলো, আমি খবর পেয়ে অফিস থেকে সোজা হাসপাতাল গেলাম ডাক্তার আমাকে বলল যে নিয়মিত না খাওয়ার কারণে সে অনেক
দুর্বল হয়ে গেছে, তার ওপর সে সব সময় চুপচাপ থাকে।
সত্যিই তো এই দুই মাসে আমার মনে পড়ে না যে ঠিক মতো প্রয়োজন ছাড়া তার সাথে দুই মিনিট কথা বলেছি কিনা…
অথচ আমি সেই ছেলে যাকে বড় ভাইয়ারা বউ পাগল বলতো,কারণ আমি ওদের বলতাম বিয়ে করে বউকে সময় দেন, টাকা না দিতে পারেন ভালোবাসা দেন, সময় দেন।সত্যি মানুষ পরিবর্তনশীল। তাই তো আমিও এই রকম হয়ে গেছি।
নিনিতা কে নিয়ে আমি হাসপাতাল থেকে বের হলাম, ডাইভার কে আমি আগে ছেড়ে দিয়েছিলাম, তাই গাড়িটা আমি চালাচ্ছিলাম! রাস্তার এক পাশে থামলাম।যায়গাটা আমার খুব পরিচিত,কারণ ১০ বছর আগে একবার
যখন একটা ট্রেনিং এর জন্য ঢাকা এসেছিলাম তখন স্বপ্ন অন্যরকম ছিল।জানতাম আমার কাছে কোটি টাকা আসবে না আমি লাখ টাকা বেতন পাবো না।সময়ের সাথে সাথে সব কিছু আবছা হয়ে গেছে।
আমার প্রথম বাচ্চা,নরমাল এ হয়।প্রায় ১৮ঘন্টা লেবার ছিল।আমি চিৎকার চেঁচামেচি খুব কম করসি,প্রতিবার ব্যাথার দমক আসলে আমি শুধু দাঁত মুখ খিচে বেডের রড ধরে পরে থাকতাম।
আমার জনাব ভীতু মানুষ।ইনডিউজ এর জন্য সেলাইন পুশ করার সাথে সাথেই আমি বললাম,”তুমি চলে যাও,থাকার দরকার নাই।”
সে বলল,”না আমি থাকবো।”
২-২.৩০ঘন্টা সে আমার হাত ধরে হাউ মাউ করে কাঁদলো, এরপর ঝটকা দিয়ে বের হয়ে চলে গেল।শুনছি বাকি রাত জায়নামাজে বসে কেঁদে কেঁদে কাটাইসে।
২য় বার,আমার নরমাল হওয়ার পুরা চান্স ছিল, ডাক্তার,সব রিলেটিভ খুব চাপ দিল,নরমাল করো।আমি,আবার সেই পেইন নেয়ার জন্য রাজি ছিলাম না।
পরে সবাই ওকে ধরলো,যেন আমাকে রাজি করায়।সে জাস্ট বলল,”ওকে পেইনে আমি দেখসি,আবার দেখার ক্ষমতা আমার নাই।আমি ওকে এই নিয়ে প্রেসার দিব না।ও যেটা ভালো বুঝে,সেটাতেই আমি সাথে আছি।”
আমার সিজার হলো।
কিন্তু বাচ্চা হওয়ার পরে আমাদের মধ্যে ডিস্টেন্স অনেক বেড়ে যায়।ও আমাকে টাচ ই করতো না,কাছে আসা তো দূরে থাক।বলত,”তুমি ব্যাথা পাবা।আরো সময় যাক।”
কিন্তু আমি বুঝতেসিলাম,এতে দূরত্ব আরো বাড়বে,কমাবে না।তাছাড়া এমন দুর্বল সময়ে অনেকেই সুযোগ নেয়।
মাঝে মাঝে ওর উপর রাগ হত,পোস্ট প্রেগনেন্সি হরমোন এর জন্য ডিপ্রেশন, ফ্রাস্ট্রেশন মাথায় চেপে বসত।
মাঝে মাঝে ড্যাম কেয়ার ভাব করতাম,থাক,না আসলে নাই,আমার অত শখ নাই,যাক জাহান্নামে।আমার কি।
এভাবে মাসের পর মাস যেতে থাকে,ডিপ্রেশন কথায় ও মুখে বুঝা যেতে শুরু করে,দুইজনের ই।
জানি না আমার ভিতরের কেউ খুব তাগাদা দিল,নাহ,তোমাকেই আগাতে হবে,তোমাকেই ইনিশিয়েটিভ নিতে হবে,না হলে এই সম্পর্কের খবর আছে।
বাচ্চা আসার আগেও যে কাজ করার কথা জীবনে ভাবি নাই,তাই করা শুরু করলাম।
সে অফিস থেকে ফেরার আগে সেজেগুজে বসে থাকতাম।
নিজের সব ক্লান্তি,একটা বাক্সে বন্ধি করে হাসি খুশি,উচ্ছল থাকতাম।
কোন মতে বাচ্চাকে ঘুম পারায়, আগের মত তার সাথে বসে রাত জেগে টিভি দেখতাম,ঘুমে, টায়ার্ডে চোখ জ্বলত, তাও মধ্য রাতে চা,নাস্তা নিয়ে বসে গল্প করে,মুভি দেখতাম।
ধীরে ধীরে খুবই ধীরে ধীরে সে নরমাল হতে থাকলো, আমি তার কাছে তার বাচ্চার মা হওয়ার সাথে সাথে আবার বউ হতে থাকলাম।
ও পরে বলসিল,আমি যদি না আগাতাম,এই ডিস্টেন্স কোনদিন কমত না হয়ত আরো খারাপ দিকেই যেত।।।
এত প্যাচাল পারলাম,এক ছোট বোনের বর্তমান অবস্থার কথা ভেবে।তার একটাই ধারণা, জামাই তার প্রতি আর ইন্টারেস্টেড না।আর ভালোবাসে না ইত্যাদি।।
আর এমন সিচুয়েশন এর মধ্য দিয়ে ম্যাক্সিমাম নতুন প্যরেন্টস যায়।
আর দুঃখজনক হলেও খুব কম হাজব্যান্ড ই এই ক্ষেত্রে হেল্পফুল আর আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়।
আর প্রেগনেন্সি হরমোন এর চাপে আমরাও নিজের রাগ জিদ দেখিয়ে সিচুয়েশন আরো খারাপ করে ফেলি।
আমরা যেভাবে মা হই, ছেলেরা সেভাবে বাবা হয় না।দশ মাস বাচ্চা আমাদের ভিতরে থাকে,বাবা রা হয়ত শুধু বাইরে থেকে কিক ফিল করে।এরপর একদিন হঠাৎ করেই একটা বাচ্চা তার কোলে দিয়ে বলা হয়,”এই নাও তোমার বাচ্চা,তুমি এখন বাপ।”
ওদের খুশির ঝাপটা টা কেটে যাওয়ার পর আসে রেস্পন্সিবিলিটি আর নতুন লাইফে এডজাস্টমেন্টের ধাক্কা।বাচ্চার সাথে বাবার বন্ডিং হতে কিছু সময় লাগে,তার উপর তার বেটার হাফ পুরা দিন থাকে টায়ার্ড,খিটখিটে মেজাজে।সেলাই এর ব্যাথায় কাতর।
এই অবস্থায় বেশিরভাগ সময় সে নিজেকে দূরে রাখাটাই সবার জন্য ভালো বলে মনে করে।”আমি আর কিছু করতে পারতেসি না,তো ওদেরকে স্পেস দেই ” ,অনেক রাত পর্যন্ত অফিসে থাকা বা আলাদা বিছানায় ঘুমানো কে সে নিজের দ্বায়িত্ব ভাবে।এভাবে সে আস্তে আস্তে একা হয়ে যায়।
অনেকে শুনি হাজব্যান্ড ছাড়া বাচ্চা নিয়ে আলাদা ঘুমায়,কারন বাচ্চা রাতে কাঁদলে বাবার ঘুমে ডিস্টার্ব হয়।এটা আমার মতে খুবই ভুল কাজ।
বাচ্চা হলে মা কে কোটি কোটি স্যাকরিফাইজ করতে হয়।সাথে বাবাকেও কিছু স্যাকরিফাইজ করতে শিখা উচিত।বাচ্চার ঘুম ভাঙলে মা কে ঘুমাতে দিয়ে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে হাঁটা,বাচ্চার টুকটাক কাজ করা বাচ্চার সাথে বাবার বন্ডিং বাড়ায়, দ্বায়িত্ব বোধ বাড়ায়,নিজেকে ইনভলব,গুরুত্বপূর্ন ভাবতে পারে।
আলহামদুলিল্লাহ, সেই কয়েকমাসের কষ্টের ফল,এখন পাচ্ছি।বাবা ছেলের বন্ডিং দেখতে দেখতে আমার সময় কেটে যায়,ছেলের সব কাজে সে এগিয়ে আসে,আমার সব কাজে হেল্প করে,যতটা সম্ভব আমাদেরকে সময় দেয়,আমাকে সব সময় হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করে, আলহামদুলিল্লাহ এখন সব নরমাল,actually নরমাল থেকেও অনেক বেশি ভালো।
আগে যত ভালোবাসতো,কেয়ার নিত,এখন তার দশ গুন নেয়।
তাই কষ্টই হোক,আমাদের ও উচিত দিন বা রাতের কিছু সময় হাসব্যান্ডের জন্য দেয়া।যেভাবেই হোক,যত কষ্টই হোক,যত টায়ার্ড থাকি।
দিনশেষে কিন্তু,আমদের সবারই দুইটা বাচ্চা,একটা শাশুড়ির বাচ্চা,একটা আমার বাচ্চা??
#এক.আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি।কিন্তু আমি বোরকা একদম নেকাবসহ পড়তাম। তাই আমাকে এইট নাইনের মত লাগতো।একদিন রাত দশটায় আমি, আব্বু-আম্মু আর আমার ছোটভাই বাড্ডা থেকে লোকাল বাসে বাসায় আসতেছিলাম।তো আমরা সিট না পাওয়ায় দাড়িয়ে ছিলাম।বাস ব্রেক করার সাথে সাথে আমি সিটে বসা এক ছেলের মাথার চুল শক্ত করে মুঠোয় নিয়ে নিজেকে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাচিয়েছিলাম। তারপরও প্রায় ৫/৭ মিনিট আমি চুল ধরেই দাড়িয়ে ছিলাম।আমার খেয়ালই ছিলনা।পরে যখন আমরা নেমে যাবো তখন হঠাৎ ই তাকিয়ে দেখি ছেলেটা ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয় আছে।আমিও তাড়াতাড়ি তার চুল ছেড়ে নেমে পড়ছি। খুব লজ্জা পেয়েছালাম।
#দুই.আমি একদিন অটোতে উল্টো দিকের সিট এ বসছি। আর একটা ছেলে ড্রাইভারের সাথে বসছে ঠিক আমার পিছনেই। সারা রাস্তা ভালভাবে হেলান দিয়ে গেছি।নামার পরে দেখি ছেলে টা হা করে তাকিয়ে আছে।পরে দেখি অটোর মাঝখানে গ্রিল নাই। সারা রাস্তা দুইজন দুজনের পিঠে পিঠ লাগাইয়া গেছি। লজ্জায় আমি শেষ
#তিন.
আব্বু কক্সবাজারে ঘুরতে গেছে। আমি আমার বয়ফ্রেন্ড কে কল করতে বলছি আম্মুর নাম্বারে। হঠাৎ আম্মু কোথা থেকে এসে পড়লো কে জানে। তো বিএফ কল করলে ফোন রিসিভ করলো আম্মু। আমার বিএফ তো বুঝতে পারে যে ওই টা আমি না। তো ও বলে যে, “আন্টি রাখি আছে?” আম্মু বলল যে, “না এখানে রাখি নামের কেউ নেই। তখন ও ফোন রেখে দিলো। তার পরপর ই আব্বু কল করলো। আম্মু নাম্বার ভালো করে না দেখে ই ফোন রিসিভ করে। আমি তো ভয়ে শেষ, আবার আমার বিএফ কল করলো নাকি ভেবে। আব্বু আম্মু কে জিঙ্গাসা করলো ” মধু লাগবে??” আম্মু বলল, ” মধু নামের কেউ নেই।” আব্বু আবার বলল, “লাগবে না?” আম্মু বলল,”আপনি কাকে চান?” আব্বু মজা করে বলল, “তোমাকে চাই”।
পরে আম্মু হাসতে হাসতে বলে তোর আব্বু ফোন করছে। খুব বাঁচা বেচে গেছিলাম……
আব্বু কথা রেখেছেন। তিনবার ইন্টারমিডিয়েট ফেল করার পর আমার বোনের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন রিকশাওয়ালার সাথে। সব বাবাই যদিও এরকম কথা রাগ করে বলেন কিন্তু আমার আব্বু এক কথার মানুষ। বলেছেন এবং দিয়েছেন।
আমার রিকশাওয়ালা দুলাভাইকে নিয়ে আমি খুবই বিরক্ত। যখন তখন আমার সাথে এসে শালী শালী বলে ঢং করে লোকের মধ্যে আমার খুবই বিরক্ত লাগে।
ভয়ে ভয়ে আমি ভালোভাবে পড়াশোনা করছি। আমি ফেল করতে চাইনা। আমি রিকশাওয়ালা বিয়ে করতে আগ্রহী নই।
দুলাভাইয়ের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড আমরা জানতাম না। আব্বু একদিন ওনার রিকশায় বাজার করে ফিরছিলেন তখন উনি আব্বুর সব বাজার নিজে হাতে করে বাসায় পৌছে দিয়ে গেছেন দেখে আব্বু মুগ্ধ হয়েছেন। যার ফলস্বরূপ ওনার সাথে আমার বোনের বিয়ে। কিন্তু ওনার ফ্যামিলির সাথে আমাদের এখনো দেখা হয়নি। দুলাভাই সারাদিন রিকশা চালিয়ে এসে বাসায় এসে ঘাম মুছতে মুছতে ডাকেন,”ও বউ,ও শালী!পানি দেও।”
মনের দুঃখে আমার বোন কয়েকবার আত্নহত্যা করতে গেছে। প্রতিবারই আব্বুর কাছে জোরসে থাপ্পড় খেয়েছে।
দুলাভাইকে আমার বোন দেখতে পারে না। রাতে আমার ঘরে এসে থাকে আর সারারাত কাঁদে, “লাবণ্য এ আমার কি হয়ে গেল রে!! আমার বয়ফ্রেন্ড ছিল সরকারি অফিসার আর আমার বিয়ে হয়ে গেল একটা রিকশাওয়ালার সাথে রে!!!”
আপুকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই। সামনে আমারো রেজাল্ট আমি খুবই আতংকে আছি। হয়তো আমার বর হবে এক অটোওয়ালা। তারপর দুই ভায়রা-ভাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকালে একজন অটো নিয়ে বের হবে একজন রিকশা। এদিকে আমরা দুই বোন প্রাইভেট কার ছাড়া কোথাও যাই না। কি একটা অবস্থা!
দুঃশ্চিন্তায় শিউরে উঠে আমার আর সেই রাতে ঘুম হয় না।
আমার বিদেশ থাকা ফুপী বাসায় এসেই চিল্লাচিল্লি শুরু করেছেন! আব্বুকে বলছেন,এইটা তুমি কি করলা? এতবড় ক্ষতি কেউ নিজের মেয়ের করে? এরচেয়ে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতা, আমি কি মরে গেছিলাম?
এসব বলতে বলতে দুলাভাইয়ের কাছে গিয়ে রাগী গলায় বললেন,”you scoundrel! How dare you? I will sue you!!”
দুলাভাই বললেন, “You can’t,bcz she is my legal wife. And whatever. I have no mistakes actually..”
আমরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি দেখে দুলাভাই আবার বললেন, “আমিও ভালো ঘরের সন্তান।আমিও ইন্টার ফেইল। ইংরেজিতে ভালোই ছিলাম অংকে ধরা খাইছি। এজন্য আমার আব্বুও আমাকে রিকশা কিনে দিছে!”
বিয়ের পর আজ আমার শ্বশুড় থুরি শ্বাশুড়ি বাড়িতে পঞ্চম দিন, আসলে শ্বাশুড়ি বাড়ি বলার কারণ হলো এই বিশাল বাড়িটা আমার শ্বশুড় করেছেন তার প্রিয়তমা ইস্ত্রির নামে, এবং আমার শ্বাশুড়িই যে এই বাড়ির একমাত্র রাজা তা বিয়ের পরের দিন তার আদরের ছোট খোকাকে অফিসে পাঠিয়েই প্রমাণ করে দিয়েছেন,সমস্ত খাবার আমাকে দিয়ে রান্না করালেও পরিবেশনের দায়িত্ব টা তিনি নিয়ে এটা আমায় খুব ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন যে আমার মতো অবলা শাবনূর এর কপালে বাংলা সিনেমার রিনা খান দাজ্জাল শ্বাশুড়ি জুটেছে,,, সে যাই হোক এই ৫ নম্বর দিনের সকাল বেলায় আমি সকলের জন্য খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে অপেক্ষা করছি, সবাই খেতে বসলে,আমার শ্বাশুড়ি আম্মা এসে চিল শকুন নজর দিয়ে খাবারের খুত বের করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে খাবার পরিবেশন করতে করতে বলিলেন
—এত খাবার রান্না করেছো কেন বউমা বেচে যাওয়া খাবার কি তোমার বাপের বাড়ি পাঠাবা?
এইত্ত শ্বাশুড়ির লাইনে আসছেন বাপের বাড়ি নিয়ে কথা বলতেছেন, আমার জা এর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে যথেষ্ট ভয়ে আছে আমার রাগ ঘুড়ে তার বাপের বাড়ি যাবে এই আশংকায়, আমি একটু ভেবে চিন্তে বুঝলাম মায়াগিরি দেখানো ছাড়া উপায় নাই, শাড়ির আচল কোমড়ে গুজে টেবিলের থেকে মেলামাইনের তরকারি পরিবেশনের চামচটা নিয়ে একটা বাড়ি মারলাম টেবিলে, বা হাত মাজায় দিয়ে চেচিয়ে বললাম
—এই যে আমার শাশুড়ির ছোট খোকা তুই কিন্তু বলেছিলি আমার বাপের বাড়ি নিয়ে কেউ কোনো কথা কখনো বলবে না, আমি কিন্তু এবার রেগে যাচ্ছি
আমার বরটা ফেরদৌস টাইপ নিরীহ চোখে আমার দিকে চাইলো সাথে আমার শ্বাশুড়ি বাড়ির বাকি সবাইও আমার এই আচমকা প্রতিবাদী ছোট বউয়ের চরিত্র দেখে কিছুটা টাস্কিতো ভাবে তাকালেন।
—ছোট বউ, তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার ছোট খোকার সাথে তুই তোকারি করতেছ!
আমি একটু ভয়ে আমার শ্বশুর আর ভাশুরের দিকে তাকালাম তাদের চোখে সম্মতি দেখে আবার প্রতিবাদী শাবনূর চরিত্রে ফেরত গিয়ে বললাম,
—শোনেন শাশুড়ি আম্মা, ৪ বছর প্রেমের সম্পর্কে আপনার ছোট খোকারে আমি অলিম্পিক দৌড় দেওয়াইছি আমার পিছনে, সেখানে এইগুলা তো কিছুই না, ৪ বছরে তার ধৈর্য দেইখে নিশ্চিন্ত হইছি সে হইলো গৃহপালিত স্বামী এবং ছেলে আপনি আমার বাপের বাড়ি নিয়ে কথা বললে সে যেমন মায়ের বাধ্যগত সন্তানের মতো প্রতিবাদ করিবে না তেমনি আমিও হইলাম তার প্রাণ ভোমরা আমাকেও সে ছাড়িবার পারবে না…. এখন চুপচাপ এইখানে বসে পড়ুন খাবার আজকে থেকে আমি পরিবেশন করব নয়তো ছোট খোকার মায়ের সাথেও তুই তোকারি শুরু করব কিন্তু।
আমার শ্বশুর একটু শব্দ করে হেসে উঠলেন আমার শাশুড়ি খাইয়ালামু লুকে তাকাতেই শ্বশুর আব্বা চুপ,
—এই শাশুড়ির ছোট্ট খোকা কি হলো হা করে তাকিয়ে না থেকে খেয়ে নাও, আর খবরদার কেউ যেন আমার শ্বশুর আব্বার অযত্ন না করে আজ থেকে, অনেক সহ্য করেছেন তিনি,
আমার শাশুড়ি আহত বাঘিনীর মতো ফুসছেন এক্ষুনি তার থাবায় কাউকে জখম না করলে তার শান্তি নেই তিনি তার ছোট খোকার দিকে তাকাচ্ছেন,নিশ্চয়ই অপদার্থ বলে ছেলে কে মনে মনে গালি দিচ্ছেন, আমার শাশুড়ি না খেয়েই শহর কাপানো শব্দে গিয়ে তার ঘরের দরজা লাগালেন,ওমনি আমার শ্বশুর আব্বা সশব্দে হো হো করে হেসে উঠলেন,
—বুঝলি বড় খোকা এতদিনে তোর মায়ের শিক্ষা হলো
—তাই তো দেখছি বাবা
যদিও আমি একটু কানকাটা টাইপ তাও লজ্জা পেয়ে গেলাম, আসলে এ সব আমার শ্বশুরের প্লান ছিল তার ইস্ত্রি কে একটু গরম করার জন্য মাঝে মাঝেই নাকি তিনি এমন করেন,নতুন বউ হিসেবে আজ দায়িত্ব টা আমার ছিল রাগ আবার তিনিই ভাঙাবেন, তাতে অসুবিধা নেই।
আমার শাশুড়ি রিনা খানের ডুপ্লিকেট অরিজিনাল না একটু পরেই তার রাগ ভেঙে যাবে মাথায় তেল নিতে পারি না আমি তেলের বাটি নিয়ে তার সামনে বসলে ঠিকই যত্ন করে তেল দিয়ে চুলে বেনী করে দেবেন আমি জানি,রাগের বশে চুলের মুঠি ধরে টান দিলেও অসুবিধা নেই, ইন্ডিয়ান সেসা তেল নিয়ে আমার চুল আপাতত ঘন কালো এবং মজবুত আছে।আবার হয়তো কোনোদিন একটু অভিমান করে আমার বাপের বাড়ি নিয়ে কথা বলে উঠবে, তাতেও অসুবিধা নেই, বৌমার বাপের বাড়ি নিয়ে কথা বলা প্রতিটা শাশুড়ির শাশুড়িগত অধিকার।
আসরের নামাজের কয়েক মিনিট পর কতগুলো যুবক চিৎকার করে উঠল, কে কোথায় আছ, তাড়াতাড়ি এসো, এক ব্যক্তিকে রেল কেঁটে চলে গেছে! ঘঠনাস্থলের আশেপাশের লোকজন সকলেই এসে উপস্থিত হল।রেলেকাঁটা ব্যক্তিকে ঘিরে সকলে জটলা বেঁধে দাঁড়াল। দেখা গেল হতভাগ্য ব্যক্তিটি একজন যুবক। ১৯ বছর বয়সের এক টগবগে যুবক! রেলের চাকা যুবকের দেহকে দু’টুকরো করে ফেলেছে!দেহের নিম্নাংশ রেলের চাকার সাথে মারাত্নক ঘর্ষণের ফলে কোথাও যেন উড়ে গেছে! উপরাংশ এখনও জীবিত, তড়পাচ্ছে আর লাফাচ্ছে! লোকেরা দেখতে পেল যুবকের বুকের ভেতর এখনও রূহ বিদ্যমান! হৃদপিন্ড এখনও শ্বাস-প্রশ্বাস সঞ্চালণ করছে! যুবকটি এখনও জীবিত!!! উপস্থিত লোকদের একজন এগিয়ে আসল। মুমূর্ষু যুবকের মাথা কোলে উঠিয়ে নিল। কানের কাছে মুখ নিয়ে কালেমার তালক্বীন দিতে শুরু করল। বলতে লাগল: বল হে যুবক, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ! বল, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ! কালেমার আওয়াজ শুনতেই যুবক আগের চেয়ে আরও বেশি কেঁপে উঠল! যুবক কাঁপতে থাকল!
শরীর ঝাড়া দিতে থাকল! অবশেষে উচ্চারণ করেই ফেলল: আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ! অতঃপর যুবকের দেহ স্থির হয়ে গেল। হৃদপিন্ড শান্ত হয়ে গেল। রূহ মওলার ডাকে সাড়া দিয়ে দেহ ত্যাগ করে চলে গেল। যুবক মারা গেল। কালেমার উপরই মারা গেল! লোকেরা হাঁক ছুড়ল, একটা চাদর নিয়ে এসো! দেহের উপরাংশ চাদরে উঠাব।বাকি অংশ খুঁজে উপস্থিত করব।
রাত্রি ছিল বিদঘুটে অন্ধকার। কতগুলো নওজোয়ান তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোনের টর্চ অন করল। যুবকের দেহের উপরাংশ ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যা পাওয়া গেল, তা খুঁজে চাদরে বহন করে রেললাইনের পার্শ্বস্থ একটি কফিখানায় নিয়ে আসা হল। লোকেরা যুবকের দেহে তল্লাশি চালাল, নাম-ঠিকানা কোনকিছু পাওয়া যায় কি না। একজন ব্যক্তি যুবকের ডান হাতটা ধরল, অমনি চিৎকার করে উঠল- ইয়া আল্লাহ!এই যুবকটা খৃষ্টান!!! তার হাতে ক্রুশ!!! লোকেরা লাশটি উঠিয়ে নিল।তারা দিশেহারা হয়ে গেল, এখন কি তারা লাশটিকে ফেলে চলে যাবে? অথচ যুবকটি কালেমার উপর মৃত্যুবরণ করেছে। নাকি তার পরিবার-পরিজনের কাছে পৌঁছিয়ে দিবে, যাতে খৃষ্টান গোরস্থানে দাফন করা যায়?! উপস্থিত লোকেরা যুবকের লাশকে নিশ্চুপ বহন করে নিয়ে যাচ্ছে আর নিঃশব্দে অশ্রুবিসর্জন দিচ্ছে! হঠাত পথিমধ্যে গ্রামের প্রথম রাস্তার মুখে যুবকের পিতার দেখা মিলল! কারণ, ঘঠনাস্থলের পার্শ্ববর্তী গ্রামেই যুবকের ঠিকানা। যুবকটি মসজিদের সন্নিকটেই মারা গেছে! মসজিদের আশপাশের সকলেই মুসলিম। যুবকের পিতা কান্নারত অবস্থায় মাথা ঝুকিয়ে নিয়ে বলল, আমি যা বলব, তাতে আপনারা যারপরনাই আশ্চর্য হয়ে যাবেন! আমি আপনাদেরকে লজ্জাবনত হয়ে বলছি, আমার এই ছেলে কুরআনের তেলাওয়াত শুনার বড্ড পাগল ছিল! হ্যাঁ,সে একজন খৃষ্টান। তবুও সে মুসলিমদের কুরআন শুনতে পছন্দ করত! আমি তার কামরায় ঢুকতাম। ঢুকে তাকে দেখতে পেতাম সে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে কিছু শুনছে। আমি জিজ্ঞেস করতাম: বাছা! কী শুনছ?
সে বলত:আব্বু, গান শুনছি! তবুও আমি কান থেকে ইয়ারফোন সরিয়ে নিতাম। দেখতাম সে কুরআনের তেলাওয়াত শুনছে! আমি তাকে নিষেধ করতাম। ধমক দিতাম। শক্তাশক্তি করতাম। বলতাম: তুমি যদি কুরআন শুনা বন্ধ না কর, তাহলে আমি তোমাকে মেরে ফেলব! সে উত্তরে বলত: আব্বু, আপনি কখনও তা পারবেননা!কখনও আমায় হত্যা করতে পারবেননা! আমাকে বিরত রাখতে পারবেননা! কুরআন থেকে আমাকে দূরে রাখতে পারবেননা! উপস্থিত লোকেরা কান্নাশ্রু মিশ্রিত আনন্দে একেঅপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করল! তারা যুবকের ব্যথিত-বিষন্ন পিতাকে বলল: আপনার ছেলে কালেমার উপর মৃত্যুবরণ করেছে! নিজ মুখে শাহাদাতাইন উচ্চারণ করে মৃত্যুবরণ করেছে! সে শাহাদাতাইন উচ্চারণ করেছে অর্ধদেহে! ব্যথায় কাতর যুবকের পিতা বলল: আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি, যা আমার ছেলে সাক্ষ্য দিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। অত:পর সে উচ্চারণ করল- আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ! ঐ রাত্রে যুবকের বাসর রাত ছিল। দিনেই সে বিয়ে করেছিল। বাসর রাতের পরিবর্তে তার জানাযার নামায পড়া হল! মুসলিমদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হল। ঘঠনাটি বাস্তব সত্য। ঘঠনাটি শাইখ মুহাম্মাদ আস-সাওয়ী তার কোন এক বয়ানে বলেছেন। তিনি ঘঠনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী।
সূত্র- আরবের সাড়াজাগানোফেইসবুক পেইজ
# ﻛﻞ _ ﻳﻮﻡ _ ﻗﺼﺔ _ ﺗﻬﺰ _ﺍﻟﻌﺎﻟﻢ হতে অনূদিত।
কুরআনের প্রতি মহব্বতের কারণে আল্লাহ খুশি হয়ে দুই ব্যাক্তিকে ঈমান দিয়ে দিলেন। আল্লাহু আকবার! সুবহানাল্লাহি ওবিহামদিহী! কুরআনগুলো আজ আমাদের ঘরে বড় অবহেলিত! প্রিয় ভাই-বোন আমরা কি দৈনিক অল্প কিছু সময় কুরআনের পরশে ব্যয় করতে পারি না? আসুন ২৪ ঘন্টায় অন্ততপক্ষে আধাঘন্টা হলেও আমরা কুরআনের জন্য ব্যয় করি। আল্লাহ তাওফিক দিন।
আমিন….
দেখ দেখ মাইয়াডা খালাম্মার মতো বোরকা পইরা যাইতাছে ভেতরে নাজানি কত্ত সুন্দর ,যদি একবার পাইতাম ইশশশ ”
আমি জারিন। বাসা থেকে মাদ্রাসায় যাচ্ছিলাম ছাত্রীদের বাংলা ক্লাস নেওয়ার জন্য। রাস্তায় চার-পাঁচ জন বখাটে খেলের দল থেকে একজন উপরের কথা গুলো বললো। আমি কথা গুলো শুনে থেমে গেলাম।পিছনে ফিরে তাদের কাছে গেলার। তারা সবাই চুপ করে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, হয়তো ভাবছে চড় টর মারি কিনা। আমি সুন্দর করে সালাম দিলাম ।কেউ সালামের উত্তর দিল কিনা বুঝা গেল না। তারপর বললাম ‘আচ্ছা আপনাদের মধ্যে লিডার কে? ‘
সবাই দেখি মাঝখানে একজনের দিকে তাকালো,তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম “আচ্ছা ধরেন আপনার সাথে যদি আমার বিয়ে হয় তাহলে তো আমি আপনার বউ হবো তখন যদি আপনার বউকে কেউ এই ধরনের কথা বলে তাহলে কি আপনি খুশি হবেন? ” (এভাবে বললাম কারন তাদেরকে মা বোনদের কথা বলে লাভ নাই) ছেলেটি বললো : না একদম খুন করে ফেলবো।( যে কথা গুলো বলছে তার দিকে একটু রাগী চোখে তাকালো)
আমি বললাম : খুন করতে হবে না যেসব মেয়েদের এসব খারাপ কথা বলেন তারা আপনাদেরও বউ হতে পারে এটা মাথায় রাখিয়েন।
ছেলেগুলো অবাকের শেষ সীমানায় পৌছে গিয়েছিল।
কারো মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হলো না।
তারপর আমি আর কিছু না বলে মাদ্রাসায় চলে গেলাম।
পরের দিন আবার একি জায়গায় ছেলেগুলো দাড়িয়ে ছিল আমি সামনে দিয়ে যেতেই সবাই একসাথে সালাম দিল। সালামে একটু তাচ্ছিল্য মেশানো ছিল। আমি উত্তর দেওয়ার পরে সবাই আবার একসাথে বলে উঠলো “কেমন আছেন ভাবি ?” শুধু লিডার ছেলেটি মুচকি মুচকি হাসছিল। আমি ভালভাবেই উত্তর দিলাম “জি আলহামদুলিল্লাহ্ ভাল আছি। আপনারা? ”
সবাই বললো ভাল। আমি বললাম আলহামদুলিল্লাহ্ বলতে হয়। আর সালামের অর্থ হলো “আপনার উপর শান্তি বর্শিত হোক ” সালাম একটা দোয়াও। সালাম দিলে ভাল করে দিবেন। তাদের মধ্যে একজন কি যেন বলতে চাইলো কিন্তু লিডার ইশারায় চুপ থাকতে বললো
।আমি আর কিছু না বলে সালাম দিয়ে মাদ্রাসায় চলে গেলাম।
এরপর থেকে আমাকে দেখলেও কেউ আর কিছু বলতো না, শুধু মাঝে মাঝে সালাম দিত। কিছু দিন যাওয়ার পর খেয়াল করলাম অন্যছেলে গুলো না থাকলেও তাদের লিডার দাড়িয়ে থাকে। আর আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো । আমি নিচের দিকে তাকিয়ে চলে যেতাম।
আরো কিছুদিন যাওয়ার পর একদিন উনি আমাকে সালাম দিল আমি উত্তর দিলাম। তারপর বললো …..
“আসলে আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই। কিন্তু কিভাবে যে বলবো বুঝতে পারছি না ( মাথা চুল্কে, নিচের দিকে তাকিয়ে) আসলে আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি। বিয়ে করতে চাই । ”
আমি বললাম :দেখুন আপনি হয়তো ঠিক মতো নামাজ পরেন না। নেশা টেশাও করেন। কিন্তু আমি এমন একজনকে চাই যে সব সময় আল্লাহ্ তালার কথা মনে করিয়ে দিবে। আপনি যদি সেরকম হওয়ার চেস্টা করেন তাহলে ভেবে দেখবো,কথাটা বলেই দ্রুত পায়ে চলে গেলাম।এরপর থেকে তাকে আর সেখানে দাড়িয়ে থাকতে দেখতাম না।
তারপর ২ – ৩ মাস পর আমি তার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম । একদিন যাওয়ার পথে উনি আমাকে সালাম দিলেন, আমি প্রথমে চিনতে পারছিলাম না। তারপর তাকিয়ে দেখি স্বাভাবিক ভাবে দাড়ি রাখা মায়াবী মায়াবী চেহারার সেই ছেলেটি আমি বললাম “জী বলুন ” উনি বললেন “আমি এখন নিয়োমিত নামাজ পরি। নেশা ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই। ইসলামের বিধান মেনে চলার চেস্টা করি। এখন কি আমাকে মেনে নেওয়া যায়?
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম ” জি আমার পরিবারে প্রস্তাব পাঠান ” উনি খুশি হয়ে বললেন ” আলহামদুলিল্লাহ্, অবস্যই খুব তারাতাড়ি পাঠাবো ”
তার নাম হলো সাবিত। তার পরিবার ভালই ছিল কিন্তু সে বন্ধুদের সাথে মিশে ওরকম হয়ে গিয়েছিল। পরিবারের সম্মতিতেই আমাদের বিয়ে হলো।
বাসর রাতে উনি আমাকে প্রথম দেখেন ,কিছুখন অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে বলেন “আমি যেমন ভেবেছিলাম আল্লাহ তার থেকেও সুন্দর আর মূল্যবান উপহার আমাকে দিয়েছেন ,চলো নামাজ পরে নতুন জীবনের জন্য দোয়া করি ”
তার কথা শুনে আমার নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হলো।
(কাল্পনিক)
গল্প :সালামের ফল
লেখা : Afia Tabassum Akhi