সমাপ্তি পর্ব : ১ম
লেখাঃ তাসকিনা
১৫ বছরের কিশোরী তুলিকে যেদিন প্রথম দেখতে যায়,,,তুলি আমার সামনে চুপটি করে বসে ছিলো। বাবা মা যখন তুলির কাকা কাকির সাথে কথা বলছিলো আমি তখন বেহায়ার মতো লুকিয়ে লুকিয়ে তুলিকে দেখছিলাম। ঠিক তখনি ব্যাপার টা খেয়াল করলাম,,
তুলি ঘোমটার আড়াল থেকে সামনে রাখা নাস্তার টেবিলের দিকে কিছু সময় পরপর তাকাচ্ছে ত আবার ঘোমটার আড়ালে মুখ ঢেকে নিচ্ছে।
ব্যাপার টা আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না,,,তবে কেনো তুলি এমন করছে জানার জন্য মায়ের কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললাম,,ব্যাপার টা জানতে…
মা তুলি…তুমি কি কিছু বলবা??(আম্মি)
তুলি এবার ঘোমটা টা ফেলে দিয়ে,,, আন্টি,, আপনারা যদি মিষ্টিগুলো না খান ত আমি কি খেতে পারি?? না মানে দেখেন ওগুলো ত নষ্ট হয়ে যাইতেছে…তাই আর কি…(তুলি)
তুলির কথা শুনে আমি, বাবা, মা,, ৩ জন ই অবাক হয়ে তুলির দিকে চেয়ে ছিলাম। আর ওদিকে তুলির কাকা কাকি তখন রাগে ফুঁসতেছিলো….ব্যাপার টা বুঝলাম না। ওনারা এমন করছে কেনো??
কয়েক সেকেন্ড পরে আব্বু আর আম্মু ২ নো জন হেসে দিলো…
তারপর আম্মি বললো,,,
এই কথা,,, হা হা,৷ তোমার যেইটা ইচ্ছা তুমি সেইটাই খাও হুম আম্মু..(আম্মু)
ধন্যবাদ আন্টি…বলেই তুলি সামনে রাখা নাস্তা গুলো খেতে শুরু করলো।
আরে আরে কি করিস,, এগুলো তোর জন্য নাতো,, এগুলো ওনাদের জন্য। (কাকিমা)
কাকিমা চিন্তা নিয়েন না,, ওকে ওর কাজ করতে দিন…(আমি)
আরো কিছুটা সময় কথাবার্তা বলে বিয়ের ডেট টা কনফার্ম করে আমরা চলে আসি।
কিন্তু ১৫ বছরের মেয়ে তুলির মধ্যে কি ছিলো যা আমি কিছুতেই ভুলতে পারছিলাম না। এতটা মায়া,, মিষ্টি হাসি,, দুষ্টুমি করে তাকানো সব কিছু কেমন যেনো আমি ভুলতে পারছিলাম না। দিন যতই যাই,,,আমি কেমন যেনো অস্থির হয়ে পড়ছিলাম,,, তুলিকে আমার করে কবে পাবো,, আর কবে ওর ওই মিষ্টি হাসি দেখতে পাবো??
কিন্তু আমার আসায় জল ঢেলে দিলো তুলির কাকিদের একটা ফোল কল,,,
বাবা মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,,
তুলি নাকি এ বিয়ে করবে না। ও নাকি আরো পড়াশোনা করতে চায় তাই…
আমার মন তখন আব্বু আম্মুকে বলছিলো,,, বলো আমি নিজে তুলিকে পড়াবো,,, ওর যত টা ইচ্ছা ও পড়বে কিন্তু তবুও আমি তুলিকে চায় আম্মি,,,
কিন্তু আম্মি আমার মনের কথা হইতো বুঝতে পারেনি ওইদিন…
এটাকে লাভ বলে নাকি আবেগ ছিলো আমি সেটা জানি না। কিন্তু প্রতি রাতেই তুলিকে খুব করে মিস করতাম।
একদিন বাসায় বসে আছি,, সামনে টিভি অন করে খবর দেখছি হঠাৎ কেউ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো…
কে কে আপনি,, আর আপনাকে দারোয়ান ঢুকতে দিলো কেমনে?? (আমি)
স্যার আমি ত ঢুকতে দিতে চায় নি,, আমারে ধাক্কা দিয়ে চইলা আইছে..(দারোয়ান পিছু পিছু এসে)
মেয়েটা মাথা থেকে উড়না টা সড়াতেই দেখি তুলি..
ত, তুলি তুমি??(আমি)
তাজ সাহেব,, আমায় আপনি বিয়ে করে নিন। আমি ও বাড়িতে আর থাকতে পারবো না,, আপনার ২ টো পায়ে পড়ি,, দয়া করুন..(তুলি)
এ, এই কি করছো?? উঠো উঠো,, ও বাড়িতে থাকতে পারবা না মানে?? কি হয়েছে??(আমি)
এরপর তুলি এক এক করে সবকিছু বলে দেয়…
কাকা কাকিমা ওকে ছোট থেকেই অবহেলা আর অনাদরে মানুষ করছে। আর এখন ত ওনারা তুলিকে বিয়ে দিয়ে ওর দায়িত্ব থেকে বেরোতে চায়। কিন্তু তুলি বিয়ে করতে চায় না জন্য নানাভাবে অত্যাচার করছে তুলির উপর দিয়ে,, ৩ দিন ওকে কোন খাবার দেয় নি কাকি। রুম আটকে রেখে দিয়েছে আর বলেছে আগে বিয়েতে রাজি হবি তারপর তোকে রুম থেকে বের করানো হবে…
আমি তুলির পা থেকে মাথা অবধি তাকিয়ে দেখি,, তুলির দাঁড়িয়ে থাকার মতো অবস্থাও নেই। পায়ে কোন জুতা বা সেন্ডেল ছিলো না জন্য,, পা কেটে জায়গায় জায়গায় রক্ত বেরোয়ছে। তুলিকে সোফাতে বসিয়ে,, আম্মু আব্বুকে ডাক দিলাম,,,
আব্বু আম্মু ত বেজায় খুশি। ওনারা বললেন,, তাইলে আজ ই বিয়ের সব আয়োজন করে ফেলি আমরা।।।
না বাবা…(আমি)
কেনো তাজ,, তুমি কি তুলিকে বিয়ে করতে রাজি না?? ওকে তোমার পছন্দ হয়নি??(বাবা)
আমি তখন তুলির দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখটা মলিন হয়ে আছে,,, হইতো আমার না বলাটা শুনে,,,
বাবা,, তুলি বিপদে পড়ে এ বাড়িতে এসেছে। আর মেইন কথা একটা আশ্রয়ের জন্য। আমাকে বিয়ে করার জন্য না। তাই না তুলি??(আমি)
তুলি কিছু না বলে চুপ করে রইলো,,
আমি তখন হালকা হেসে,,, আজ থেকে তুলির সমস্ত দায়িত্ব আমার বাবা…(আমি)
বাবা মা কিছু বললেন না। চুপচাপ চলে গেলেন…
ওনাদের আমার কথাটাতে ভালো লাগেনি এটা আমি ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছি..
এরপর প্রায় ৩ বছর চলে যায়,,, তুলি এখন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ছে…তবে তুলির প্রতি আমার যেই আবেগ নাকি লাভ ছিলো সেটা কিন্তু তখনও বিরাজ করছিলো,, প্রতি রাতে আমি তুলির পড়ার রুমের পাশে গিয়ে ওকে দেখার চেষ্টা করতাম। লাইটের আলো ওর সৌন্দর্য টাকে আরো বাড়িয়ে দিতো…
একদিনঃ
মেয়ের বাসা থেকে লোক এসেছে আমাদের বাসার পরিবেশ দেখতে,,,
ড্রয়িং রুমে বসে আছি আমি আব্বু, আম্মু…
এই টুকটাক কথা হচ্ছিলো আমাদের,,,
হঠাৎ তুলির আগমন। ওর হাস্যোজ্জ্বল মুখটা নিমেষে কালো হয়ে গেলো।কিন্তু কি কারনে,, এটা বুঝতে পারলাম না। তুলি ছুটে উপরের ঘরে চলে গেলো।
আব্বু আম্মু এদিকে ওনাদের সাথে কথাবার্তা বলে,, বিয়ের দিন ঠিক করে চলে গেলে,, আমি তুলির রুমের বাহিরে গিয়ে,,,
আসবো…(আমি)
তুলি ভেতর থেকে জবাব দিলো,, আপনাদের বাড়ি আপনাদের ঘর,,প্রবেশ করতে অনুমতি নিচ্ছেন কেনো??
বুঝতে পারলাম তুলি প্রচন্ড পরিমাণে রেগে আছে,,,
আমি তুলির রুমে প্রবেশ করে দেখলাম ওর চোখমুখ ফোলা,, এই ৩ বছরে তুলির ব্যাপারে আমি প্রায় সব কিছুই জেনে গেছি। অফিসে যাওয়ার আগে যখন ওকে স্কুল বা কলেজে নামিয়ে দিতাম,, গাড়ির মধ্যেই ওর থেকে প্রায় ওর ব্যাপারে সবকিছু জেনে গিয়েছিলাম।
আর ও কান্না করলে যে ওর চোখ ফুলে যায় এটাও জানতাম।
তুলি,, তুমি কান্না করছো কেনো?? কেউ কি তোমায় কিছু বলেছে??(আমি)
আপনাকে কে বলেছে আমি কান্না করছি?? (তুলি)
এই যে তোমার চোখ ফুলে গিয়েছে,,, এইটা থেকে বুঝতে পেরেছি..(আমি)
তুলি আর কিছু বললো না…চুপ করে রইলো…
কি হলো বলো,, কেউ কিছু বলেছে তোমাকে??(আমি)
আপনার এত বিয়ে করার শখ জাগছে কেন??(তুলি)
চলবে…