Saturday, July 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1084



কুহেলিকা পর্ব-১৫

0

#কুহেলিকা (পর্ব-১৫)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

কয়েকজন লোক ধারালো অ/স্ত্র হাতে মাইক্রো থেকে নেমে আকাশদের দিকে এগিয়ে আসে। দিশা লোক গুলোকে দেখে ভয়ে কাতর হয়ে আকাশকে খামচাতে শুরু করে। কিন্তু আকাশের কোনো হুঁশ নেই। সে দিশার চুলের ঘ্রাণ নেওয়ায় ব্যস্ত। লোক গুলো ধারালো অ/স্ত্র হাতে দিশাদের একদম নিটকে চলে আসে। নিকটে আসার পর এক টান দিয়ে দিশাকে আকাশ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দিশার গলায় ছুরি চেপে ধরে তার সাথে অসভ্যমো করতে শুরু করে। যেই লোকটা ছু/রি চেপে ধরেছে দিশার গলায়, সে দিশার কোমরের দিকে ধীরে ধীরে হাত এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। দিশার সমস্ত শরীর ফেলে রেখে লোকটার নজর পড়েছে দিশার কোমরে। ধবধবে সাদা কোমর। এই কোমরের দিকে যে একবার দেখবে, সে বরাবরের মতোই দিশার কোমরের নেশায় ডুবে যাবে। লোলটার বেলায় ও তাই হয়েছি। আকাশ পাশ থেকে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছে। তার ইচ্ছে করছে সামনের লোকটাকে জলজ্যান্ত মাটিতে পুঁতে দিতে। কিন্তু তাঁদের লোক সংখ্যা বেশি হওয়ায় আকাশ হাইপার না হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। দিশা আকাশের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার দৃঢ় বিশ্বাস আকাশ তাকে যে কোনো ভাবে বাঁচিয়ে নিবে। তবে কি ভাবে আকাশ এতো গুলো লোকের মোকাবেলা করে দিশাকে লোক গুলোর হাত থেকে বাঁচাবে। আকাশের পক্ষে তো এতো গুলো লোকের সাথে পেরে উঠা সম্ভব নয়। আর এছাড়া আকাশ এখনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আকাশের নিরবতায় দিশার মনে কু ডাকতে শুরু করে। দিশাকে জিম্মি করে রাখা লোকটা তার হাত দিশার ধবধবে সাদা পেটের সাথে যেই না স্পর্শ করাবে, এমন সময় আকাশ সবইকে চেঁচিয়ে বলে উঠে,

–‘তোরা সবাই হচ্ছিস কাপুরষ। একজন স্বামীর সামনে কি করে তোরা সবাই তার স্ত্রীকে স্পর্শ করছিস? তোদের তো পুরুষত্ব নাই রে। যদি থাকতো, তাহলে সর্ব প্রথম তোরা আমার সাথে মোকাবিলা করতি। তোদের সাথে মোকাবিলায় যদি আমি হেরে যেতাম, তাহলে না হয় আমার স্ত্রীর সাথে যা খুশি করতি। কিন্তু তোরা তো এসেই কাপুরুষের মতন ছুরির বলে আমার স্ত্রীকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে নিয়েছিস। শোন তোরা যদি সত্যিই পুরুষ হয়ে থাকিস, তাহলে আমার স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে আগে আমায় পরাজয় কর। এরপর আমার স্ত্রীর সাথে যা খুশি করিস।’

আকাশের কথা শুনে একজন লোক দিশাকে জিম্মি করা লোকটাকে বলে,

–‘এই তুই ওকে ছেড়ে দে। আগে এই বেটাকে শেষ কর। বেটা আমাদের পুরুষত্ব নিয়ে কথা বলেছে। আগে এই বেটাকে শেষ করে পরে সবাই মিলে ওর বউকে রাতের সঙ্গী বানাবো। ধবধবে সাদা শরীর টাকে খেয়ে ছুরি দিয়ে সারা শরীর একে রক্তে লাল করে দিব।’

–‘ঠিক আছে বস আমি ছেড়ে দিচ্ছি।’

দিশাকে জিম্মি করা লোকটা তার বসের কথা অনুসারে দিশাকে ছেড়ে দেয়। এরপর দিশাকে ছেড়ে দেওয়া লোকটা যাকে বস ডেকেছে, সে বাদে বাকি সবাই হাতের ধারালো অ/স্ত্র গুলো নিয়ে একত্রে হয়ে আকাশের দিকে এগিয়ে আসে। দিশা তো ভয়ে শেষ। তার কলিজায় পানি নেই। বুকটা শুখিয়ে মরুর মতন হয়ে গেছে। অপরদিকে আকাশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। চার-পাঁচজন লোক যে অ/স্ত্র হাতে নিয়ে তার দিকে তেড়েফুঁড়ে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে আকাশের কোনো পদক্ষেপ নেই। আকাশের দাঁড়িয়ে থাকা দেখে মনে হচ্ছে সব কিছুই স্বাভাবিক। না হয়তো সে কোনো একটা তড়িঘড়ি করতো। লোক গুলো আকাশের একদম নিকটে গিয়ে দাঁড়ায়। আকাশ এখনো চুপ। আকাশের চুপসে থাকা দেখে তার দিকে এগিয়ে যাওয়া লোক গুলো থেকে একজন অবাক হয়ে আকাশকে জিজ্ঞাস করে,

–‘কিরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছিস যে? তুই না একটু আগে আমাদের হুমকি দিলি? তাহলে এখন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বাঁচার জন্য বা আমাদের সাথে লড়াই করার জন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করবি না? এভাবেই কি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের হাতে নিজের প্রাণ শেষ করবি নাকি?’

লোকটার কথা শুনে আকাশ কিছুটা মুচকি হেঁসে লোকটাকে বলে,

–‘চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে নিজের প্রাণ হারাবো, না তোদের বিরুদ্ধে লড়াই করবো সেটা আমার উপরেই ছেড়ে দে। তোরা আমায় মারতে এসেছিস মেরে ফেল। বাকি আমি কি করবো সেসব দেখে তোদের কোনো ফায়দা নেই।’

আকাশের কথা শুনে আকাশকে প্রশ্ন করা লোকটা তার বাকি সঙ্গীদেরকে বলে,

–‘এই তোরা সবাই চলতো বেটাকে শেষ করে দেই। বেটার দেখি অনেক জবান চলে। সে এখনো জানে না আমরা কারা। আমরা কতো ভয়ানক ডাকাতের দল সেটা সে এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। চল বেটাকে সবাই মিলে আমাদের আসল পরিচয়টা দিয়ে দেই।’

লোকটা নিজেদের পরিচয় দিতে সবাইকে সাথে নিয়ে ছুরি দিয়ে আকাশকে মারতে যাবে, এমন সময় আকাশ কোমর থেকি একটা পিস্তল বের করে ঠুস,ঠুস করে মে/রে সবাইকে মুহূর্তের মধ্যেই জমের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। সব কয়টা লাশ হয়ে ব্রীজের উপরে পড়ে আছে। আকাশ থেকে সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ডাকাতের সর্দার এই দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। ভয়ে কাঁপতে শুরু করে তার শরীর। কাউকে লুটপাট করতে এসে নিজেরাই মৃত্যুর ফাঁদে আঁটকে যাবে সেটা ডাকাতের সর্দার কোনোদিন ও কল্পনা করেনি। হাতে তার ধারালো অ/স্ত্র, কিন্তু তবুও তার শরীর ভয়ে কাঁপছে। কারন তার হাতে প্রাণঘাতি অ/স্ত্র থাকলেও দূরত্বের কারনে সে আকাশের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। কিন্তু আকাশ চাইলে দূর থেকেই তার কিচ্ছা কাহানী তার লোকদের মতন শেষ করে দিতে পারে। লোকটার ভয়াবহ চেহারা দেখে আকাশ হাসতে আরম্ভ করে। এজন্যই বলে না জেনে উল্টো-পাল্টা মানুষকে ঘুম থেকে জাগাতে নেই। এতে হিতে বিপরীত হয়। ডাকাতের সর্দার ফেঁসে গেছে জোরালো ভাবে। আকাশ কিছুটা সময় তাচ্ছিল্যের সুরে হেঁসে ডাকাতের সর্দারকে জিজ্ঞাস করে,

–‘কিরে সমস্ত বাহাদুরি বেরিয়ে গেছে ভিতর থেকে? এখন কাঁপছিস কেন ভয়ে? একটু আগে তো বেশ চওড়া গলায় কথা বলছিলি তোরা সবাই মিলে। এখন চুপ হয়ে গেলি কেন?’

আকাশের কথায় ডাকাতের সর্দার মাটিতে হাঁটু ভাজ করে বসে পড়ে। এরপর হাত জোর করে আকাশের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলে,

–‘ভাই আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি না জেনে আপনার সাথে পাঙ্গা নিয়ে বসেছি। আপনি প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন। আর কখনো আপনার সাথে এমনটা করবো না।’

–‘অনেক দেরি করে ফেলছিস রে তুই। তোর সময় ফুরিয়ে গেছে। আজরাইল হয়তো পথেই আছে। আমি আমার দায়িত্ব শেষ করলেই আজরাইল এসে তিনার কাজটা সম্পন্ন করবে।’

–‘ভাই আপনার দু’টো পায়ে পড়ি। আপনি একটা বার আমাকে সুযোগ দেন।’

–‘কোনে সুযোগ হবে না তোর। কারন তোরাও মানুষকে সুযোগ দিস না। আজ আমার কাছে যদি মেশিন টা না থাকতো, তাহলে তো ঠিকই তোরা আমাকে মেরে আমার স্ত্রীর সাথে অসভ্যতামো করতিস। সেই সময় তো কোনো ধরনের সুযোগ দিতিস না তোরা। আর তার চাইতেও বড় কথা তোরা সমাজের অনেক বড় শত্রু। তোদেরকে বাঁচিয়ে রাখা মানে মানুষের জীবনকে নিশ্চয়তার বদলে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া। তাই তোকে উপরে যেতেই হবে। পরপারে ভালো থাকিস।’

আকাশ আর কোনো কথার সুযোগ না দিয়ে ডাকাতের সর্দারকেও শুট করে মে/রে ফেলে। সবাই শেষ। ব্রীজের উপরে দু’চারটা লাশ এবং দিশা আর আকাশ বাদে পুরো ব্রীজে আর কেউ নেই। ডাকাতের সর্দারকে মেরে ফেলার পরক্ষণেই দিশা কান্না করতে করতে দৌড়ে এসে আকাশকে জড়িয়ে ধরে। দিশার বুকের ভিতরটা এখনো ধুপধুপ করে কাঁপছে। আকাশ দিশাকে শান্ত করে বলে গাড়িতে উঠে বসতে। আকাশের কথায় দিশা গাড়িতে উঠে ঠিক, কিন্তু তার অশান্ত মনটা এখনো সেভাবেই রয়ে গেছে। আকাশ দিশাকে পাশে বসিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে। কিছুটা পথ অতিক্রম করার পর লোকালয়ে আসতেই দিশা আকাশকে বলে,

–‘গাড়ি থামান।’

–‘গাড়ি থামাবো মানে?’

–‘আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে আপনি গাড়ি সাইড করেন।’

–‘আচ্ছা ওয়েট করছি।

আকাশ দিশার কথায় গাড়ি রাস্তার একপাশে সাইড করে দিশাকে বলে,

–‘হ্যাঁ বলো কি হয়েছে?’

–‘আপনি পিস্তল দিয়ে কি করেন? আর এটা আপনার কাছে এসেছে কি করে?’

–‘দিশা এটা আমি নিজের সিকিউরিটির জন্য ব্যবহার করি। আর পিস্তলটা আমার কাছে কি করে এসেছে সেটা কি ভাবে বোঝাবো তোমায়?’

–‘যেভাবে বুঝালে আমি বুঝবো।’

–‘দিশা একটা সময় আমি বেশ উশৃঙ্খল ছিলাম। দলবল করতাম। এসব ছোট খাটো মেশিন সব সময় আমায় কোমরেই থাকতো। তবে আমি প্রভার সাথে রিলেশনে যাওয়ার পর সব রকমের দলবল ছেড়ে দেই। কিন্তু একটা মেশিন নিজের সিকিউরিটির জন্য সঙ্গে রেখে দেই। আজকে এটার বলেই আমরা দু’জন বেঁচে এসেছি।’

–‘ও আচ্ছা আমি ভেবেছিলাম অন্য কিছু। তবে একটা কথা বলেন তো আমায়। আপনি যে নিজের সিকিউরিটির জন্য এই অবৈধ জিনিসটাকে সব সময় নিজের সঙ্গে রাখেন, পুলিশ যদি আপনাকে কখনো পাকড়াও করে এটার জন্য?’

–‘কোনো চান্স নেই।’

–‘মানে বুঝলাম না!’

–‘মানে টা হলো অতীতে আমি নিজের যেই নাম বানিয়েছি, সেই নাম শুনলে এখনো অনেকের হাওয়া ছুটে যায়। তুমি টেনশন করো না। পুলিশ কখনোই আমাকে ধরবে না।’

–‘ঠিক আছে পুলিশ না হয় আপনাকে এটার জন্য ধরলো না, কিন্তু এই যে একটু আগে পাঁচ-পাঁচটা মানুষকে উপরে পাঠিয়েছেন, সেটার জন্য যদি পুলিশ আপনাকে ধরে?’

–‘আরেহ পুলিশ এতোসব জানবে না। আর জানলেও আমি জায়গা মতন একটা ফোন দিলে সব থেমে যাবে।’

–‘দেখুন আমার খুব ভয় হচ্ছে। আমি আপনার ক্ষতি কখনোই মেনে নিতে পারবো না।’

–‘দিশা তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না। আমার উপরে ভরসা রাখো। আর এবার গাড়ি স্টার্ট করলাম বাসায় চলো।’

–‘ঠিক আছে চলেন।’

আকাশ আর দিশা গাড়ি স্টার্ট করে বাসায় চলে আসে। বাসায় আসার পর আকাশ দিশাকে খাটে বসিয়ে দেয়, এবং কোমর থেকে মেশিনটা বের করে বালিশের পাশে রেখে টাওয়্যাল কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে দিশাকে বলে,

–‘আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি। আমি ফ্রেশ হয়ে ফিরে আসলে তুমি যেও ফ্রেশ হতে। তারপর দু’জন মিলে রাতের খাবার খেতে বসবো।’

–‘আচ্ছা।’

আকাশ ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে যায়। মিনিট পাঁচেক পর ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দু কদম সামনে এগোতেই দিশা বালিশের পাশ থেকে পিস্তলটা হাতে নিয়ে তার দিকে নিশানা করে বলে,

–‘অনেক পাখনা গজিয়েছে তোর। এবার তোর ষোলোকলা পূর্ণ হয়েছে আকাশ। এখন তোকে মর/তে হবে আমার হাতে। ডাকাতের দলের মতন তোর ও সময় হয়ে এসেছে উপরে যাওয়ার।’

দিশার এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে আকাশের হাত থেকে টাওয়্যাল টা ফ্লোরে পড়ে যায়। দিশার আচরণে আকাশ এতোটাই অবাক হয়, যে সে দিশার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে….

চলবে….

কুহেলিকা পর্ব-১৪

0

#কুহেলিকা (পর্ব-১৪)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

–‘যাবো না আমি তোর বাড়ি। তুই চলে যা এখান থেকে। আমাকে নিয়ে বহু আদিখ্যেতা দেখিয়েছিস। এবার সমস্ত কিছু বন্ধ করে নিজের মতন থাকতে শিখ। আর আমায় চিরতরে ভুলে যা।’

হুট করে দিশার এমন অদ্ভুত কথাবার্তা শুনে আকাশ পুরো চমকে উঠে! সে কোনো মতেই দিশার অদ্ভুত আচরণ সম্পর্কে বুঝে উঠতে পারছে না! এই তো গতরাতেও মেয়েটা ঠিক ছিল। আকাশ যখন গতরাতে দিশাকে বলে আজ দুপুরে সে তাকে নতুন বাসায় নিয়ে যাবে, তখন দিশা কতো সুন্দর হাসিখুশি কথা বলেছে। কিন্তু হুট করেই দিশার কি এমন হলো, যে সে পুরোপুরি পল্টি খেয়ে নিয়েছে। আকাশ দিশার অদ্ভুত আচরণ দেখে দিশাকে জিজ্ঞাস করে,

–‘দিশা তোমার কি হয়েছে? তুমি তো গতরাতেও ঠিক ছিলে। এখন শেষ সময়ে এসে কেন এমন করছো তুমি?’

–‘তোকে এতো কিছুর উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই। তুই এখান থেকে চলে যা। অনেক দেখিয়েছিস আমার মতন মেয়েকে নিয়ে রংতামাশা। আর আমিও পাগলের মতন তোর রংতামাশায় সাড়া দিয়েছি। কিন্তু আর না, আমি আর তোর এই রংতামাশা সহ্য করবো না। তাই তুই এখান থেকে চলে যা। তোর সাথে আমি যেতে চাচ্ছি না।’

–‘দিশা কি হয়েছে সেটা তো বলবে? হুট করে তোমার এমন অদ্ভুত আচরণ আমায় বেশ অবাক করছে।’

–‘আমি তোকে আগেই বলে দিয়েছি যে আমি তোর কথার উত্তর দিতে বাধ্য না। খামোখা তুই এক প্রশ্ন এতোবার করছিস কেন?’

–‘আমি হাজার বার তোমায় প্রশ্ন করবো। যতক্ষণ না আমি উত্তর পাচ্ছি,ততক্ষণ আমি প্রশ্ন করেই যাবো।’

–‘দ্যাখ এমনিতেই মনমেজাজ ভালো নেই। খামোখা এর উপরে আরো হাজারটা প্রশ্ন করে মাথা বিগড়ে দিস না।’

–‘দিশা এবার কিন্তু বেশি হচ্ছে।’

–‘বেশি আমি নয় তুই করছিস। আমার মতন একটা পল্লীর নোংরা মেয়েকে নিয়ে তুই আদিখ্যেতা দেখাচ্ছিস, যেটা তোর দেখানো উচিৎ হচ্ছে না। কারন আমি ভোগের পাত্র ছাড়া আর কিছুই নই। সেখানে তুই আমাকে নিয়ে বাড়ি যাবি, এই করবি, সেই করবি। তোর এতো তালবাহানা আমার একদম সহ্য হচ্ছে না। তাই তুই এখন এখান থেকে চলে যা। এরপর কখনো আমার সামনে আসবি না। তোকে যেনো আজকের পর আর কখনো আমি আর আমার চোখের সামনে না দেখি।’

আকাশকে দিশা এতো শক্ত ভাবে কথা বলায় তার কান্না চলে আসে। তবে সে নিজের কান্না টাকে আঁটকে ফেলে। ভিতর থেকে উগলে চোখের পানি বের হতে চাচ্ছে, তবে দিশা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে চোখের পানি টাকে বের হওয়ার আগেই আঁটকে দেয়। আকাশের সামনে চোখের পানি ফেলে দিশা তার দূর্বলতা আর স্বীকার করতে চাচ্ছে না। এমনিতেই দিশা অনেকটা অতিরিক্ত করে ফেলেছে। তাই সে নিজেকে সামলে নিয়ে শক্ত ভাবে আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। অপরদিকে আকাশের চেহারা আগুনের কুন্ডলীর মতন লালবর্ণ ধারণ করেছে। দিশাকে সে এতোবার বারণ করার পরেও দিশা তার কথার অমান্য করে নিজেকে এই পল্লীর মেয়ে বলে দাবী করেছে। রাগের তাড়নায় আকাশ নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলতে বসেছে৷ শরীরের সমস্ত রক্ত টগবগ করে খলতে আরম্ভ করছে। কি করবে সে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না! ভাবনা-চিন্তার প্রতিফল না পেয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে দিশার গালের মধ্যে থাপ্পড় মেরে বসে। দিশা খাটের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। আকাশের হাতের থাপ্পড় খেয়ে টাল সামলাতে না পেরে সোজা গিয়ে মাটির উপরে ছিটকে পড়ে। দিশার শরীরটা ফ্লোরের উপরে ছিটকে পড়লেও তার মাথাটা গিয়ে লাগে খাটের পায়ার সাথে। বাড়ি লাগার পরক্ষণেই দিশার মাথা ফেটে যায়। আর সে কান্না করতে আরম্ভ করে। কিন্তু আকাশের রাগের মাত্রা কোনো ভাবেই কমে না। ক্রমশ আরো বেড়েই চলেছে আকাশের রাগ। দিশাকে যেনো সে আস্তো গিলে খাবে। এতো জোরে থাপ্পড় মারার পরেও আকাশ গিয়ে আবার দিশার চুলের মুঠি চেপে ধরে। এরপর ভয়ানক ভাবে চেঁচিয়ে বলে,

–‘তোর সাহস কি করে হয় একই কথা মুখ দিয়ে আবারো বের করার? আমি যে তোকে এর আগে দু’বার এসবের জন্য বারণ করেছি, তারপরেও কি তোর মাথায় ঢোকেনি আমার কথা গুলো?’

দিশা আকাশের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ফুফিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করে। তার ভিতরটা যেনো ভয়ে দলা মোচড়া হয়ে যাচ্ছে। শুরুতে বেশ ভালোই বুকে সাহস নিয়ে সে আকাশকে অনেক কয়টা কথা বলেছে। তবে বর্তমানে আকাশের রাগ দেখে তার মুখে তালা লেগে গেছে। আকাশের কথার উত্তর দিবে, সেই সাহসটাও দিশার হচ্ছে না। দিশার চুপসে থাকা দেখে আকাশ আবারো রাগান্বিত কন্ঠে দিশাকে জিজ্ঞাস করে,

–‘কিরে আমার কথার উত্তর দিচ্ছিস না যে?
আমি যে তোকে কিছু একটা প্রশ্ন করেছি, তুই সেটার উত্তর দিচ্ছিস না কেন?’

দিশা এবারো চুপ করে থাকে। এবারো দিশার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হয় না। আকাশ দিশার চুপসে থাকা দেখে আরো রেগে যাওয়ার বদলে কি ভেবে যেনো নিজেকে শান্ত করে নেয়। এরপর দিশাকে ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলে,

–‘ঠিক আছে তোমার উত্তর দিতে হবে না। তবে তোমার কাছে রিকোয়েস্ট করছি, তুমি তোমার অদ্ভুত আচরণের রহস্যটা আমায় বলো। দিশা বিশ্বাস করো আমি নিজের সাথে যুদ্ধ করে রাগ টাকে দমিয়ে এনেছি। প্লিজ তুমি আমার সেই রাগের মাত্রা টাকে আর বাড়িয়ে দিও না। না হয়তো পারমাণবিক বো/মা/র মতন বিস্ফোরণ ঘটবে। তখন কিন্তু আমি হাজার চেষ্টা করলেও নিজেকে আর দমাতে পারবো না। দেখা যাবে কোনো একটা খু/না/খু/নি করে ফেলেছি।’

আকাশের শান্ত ভাষায় হুমকি শুনে দিশা এবার মুখ খুলতে প্রস্তুত হয়।

–‘আমি গতরাতে পল্লীর কয়েক জনকে বলেছি আজ আমি আপনার সাথে এখান থেকে একেবারের জন্য চলে যাবো। আমার সেই কথা শুনে অনেকেই নানান বাজে কথা বলেছে। আমি নাকি আপনার টাকা পয়সার লোভে পড়ে আপনার সাথে যাচ্ছি। আমার নাকি বেশ লোভ আমার মায়ের মতন। আমার মা’ও নাকি বেশ লোভী ছিল। লোভ করতে করতেই নাকি তিনার মৃত্যু হয়েছে। আরো কতো নানান ধরনের বাজে কথা বলেছে। আবার একজন বললো আপনার মতন বড়লোকেরা নাকি জিনিস ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। আপনারা নাকি জিনিস ছুঁড়ে ফেলতে ওস্তাদ। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপনার সাথে যাবো না।’

–‘দিশা মানুষের কাজ হচ্ছে বাজে মন্তব্য রটানো। তুমি মানুষের কথা শুনে কি নিজের উপর থেকে বিশ্বাস হারাবে নাকি? তুমি নিজে কি জানো না তুমি কেমন? আর এতোদিন ধরে তুমি আমার সাথে চলাফেরা করেও কি বুঝো নি আমি মানুষটা কেমন?’

–‘আমি জানি আপনি ভালো। তবে আমি আপনার সাথে যেতে চাচ্ছি না। আপনি এখান থেকে চলে যান।’

–‘দিশা তোমার তো যেতেই হবে আমার সাথে।’

–‘না আমি যাবো না আপনার সাথে।’

আকাশ দিশার কথা শুনে এবার চুপ হয়ে যায়। কারন দিশাকে মানুষ বিষিয়ে তুলেছে। তাই যা করতে হবে আকাশের কাজে করতে হবে। মুখের কথায় এখন আর দিশাকে কাজে দিবে না। তাই আকাশ টুপ করে দিশাকে ফ্লোর থেকে কোলে উঠিয়ে নেয়। আকাশের এমন আচরণে দিশা হাত-পা ছুটাছুটি করতে করতে আকাশকে বলে,

–‘কি করছেন আপনি? আমি যাবো না আপনার সাথে। আপনি আমায় নামিয়ে দিন কোল থেকে।’

কে শোনে কার কথা। আকাশ দিশার হাত-পা ছুটাছুটি দেখে আরো শক্ত করে দিশাকে জড়িয়ে ধরে। এরপর কোনো কথাবার্তা ছাড়াই দিশাকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রুম থেকে বের হতেই আকাশ দেখে পল্লীর সর্দারনী রুমের বাহিরে দাঁড়ানো। পল্লীর সর্দারনীকে দেখে আকাশ জিজ্ঞাস করে,

–‘কি হয়েছে সর্দারনী?’

–‘সাহেব একজন আইসা কইলো দিশার রুম থেইকা নাকি বেশ চিল্লা চিল্লির আওয়াজ হুনন যাইতাছে, তাই আমি ছুইটা আইছি। সাহেব কি হইছে? আপনি এমন রাইগা আছেন ক্যান? তার উপরে দেখি দিশার মাথা থেইকা রক্ত পড়তাছে। আপনি ওরে এই অবস্থায় কোলে লইয়া কই যান?’

–‘আসলে মুখের বুলিতে কাজে আসেনি। তাই হাত চালাতে হয়েছে আমাকে। আর দিশাকে আমি একেবারের জন্য আমার বাসায় নিয়ে চলে যাচ্ছি। এখানে থেকে রোজ রোজ ঝামেলার হওয়ার থেকে ভালো তাকে একেবারে নিজের বাসায় নিয়ে চলে যাই।’

–‘সাহেব একদম ভালো সিদ্ধান্ত নিছেন আফনে। কারন দিশা এই হানে থাকলে রোজ রোজ নতুন ঝামেলা হইবো ওরে লইয়া। তাই আপনি নিয়া যাইতেছেন বেশ ভালোই হইলো। মাইয়াটার খেয়াল রাইখেন সাহেব।’

–‘হুম আপনি টেনশন করবেন না। আমি তার পরিপূর্ণ খেয়াল রাখবো।

–‘সাহেব আপনি নিয়া গেলে আমার আর টেনশন করবার কোনো কারন নাই। কিন্তু আপনি ওর কাপড়-চোপড় সঙ্গে লইবেন না?’

–‘না ওকে আমি এক কাপড়েই এখান থেকে নিয়ে যাবো। কোনো কাপড়-চোপড়ের দরকার নেই ওর। আগে ওকে বাসায় নিয়ে যাই। পরে সময় করে নতুন কাপড়-চোপড় কিনে আনবো নে ওর জন্য আমি।’

–‘ঠিক আছে সাহেব।’

–‘হুম এবার আমি চললাম দোয়া রাখবেন।’

পল্লীর সর্দারনীর থেকে বিদায় নিয়ে দিশাকে কোলে নেওয়া অবস্থাতেই পল্লীর পুরোটা পথ হেঁটে অতিক্রম করে এসে গাড়িতে উঠে বসে। এরপর বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। মাঝপথে আকাশ একটা ফার্মেসীর সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিশার কপালের মলম পট্টি করিয়ে নেয়। ফার্মেসী ওয়ালারা দিশাকে সামান্য কিছু ঔষধ কন্টিনিউ করতে বলেছে। আকাশ ফার্মেসী থেকেই ঔষধ গুলো ক্রয় করে নিয়ে পাশের একটা বিরিয়ানির দোকান থেকে দু’প্যাকেট বিরিয়ানি নিজের সঙ্গে নিয়ে দিশা সহ গাড়িতে উঠে বসে। আকাশ গাড়ি স্টার্ট করে দিশাকে নিয়ে বাসার সামনে এসে পৌঁছেছে। গাড়ি থেকে নেমে আকাশ দিশাকে নিয়ে যেই না বাড়িতে প্রবেশ করতে যাবে, এমন সময় আকাশের অফিসের ম্যানাজারের সাথে আকাশের দেখা হয়। অফিসের ম্যানাজার একটা মোটরবাইক করে এই পথ ধরেই যাচ্ছিলো, কিন্তু সে আকাশকে দেখতে পেয়ে থেমে যায়। ম্যানাজার গাড়ি থামিয়ে আকাশকে জিজ্ঞাস করে,

–স্যার আপনি হটাৎ এখানে যে?’

–‘এটা আমার নতুন বাড়ি। আমি এখন থেকে এখানে থাকবো। কিন্তু আপনি এখানে কেন?’

–‘স্যার আমার বাসাও এই এলাকায়। ঐ তো আর একটু পরেই আমার বাসা।’

–‘বাহ বেশ ভালো তো।’

–‘শুকরিয়া। কিন্তু স্যার আপনার সাথে উনি কে?’

–‘বলতে পারেন আমার ওয়াইফ।’

–‘স্যার আপনি বিয়ে করলেন কবে?’

–‘ম্যানাজার সাহেব সেসব পরে কখনো আপনাকে বলবো। এখন একটু তাড়াহুড়োয় আছি। আর আপনি পারলে আমার একটা উপকার করুন।’

–‘কি উপকার স্যার?’

–‘আপনার কাছে টাকা আছে?’

–‘জ্বি স্যার আছে তো।’

–‘তাহলে আপনি একটু মার্কেটে গিয়ে আমায় নতুন কয়েকটা শাড়ী আর কয়েক সেট থ্রি-পিস এনে দিলে বেশ উপকৃত হবো। আমি অফিসে গিয়ে আপনার টাকাটা আপনার আপনাকে দিয়ে দিব।’

–‘স্যার এভাবে বলবেন না। আপনার বাবার জন্যই আজ আমি এভাবে জীবনযাপন করতে পাচ্ছি। স্যার আমি গিয়ে এক্ষুনি শাড়ী আর থ্রি-পিস কিনে আনছি।’

–‘আচ্ছা এখন আমি দিশাকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকলাম। আপনি কিনে এনে আমায় ফোন করলেই হবে।’

–‘ঠিক আছে স্যার।’

ম্যানাজার আকাশের কথা মতন বাইক টেনে মার্কেটে চলে যায়। এদিকে আকাশ দিশাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে। বাড়িতে প্রবেশ করার পর আকাশ দিশার হাত-পা ধুইয়ে দিয়ে দিশাকে খাটে শুইয়ে দেয়। আর সে দিশার পাশে বসে চুপচাপ দিশার মাখায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। আকাশের পরম স্পর্শে দিশার কিছুটা ভালো লাগলেও তার মনের মধ্যে কেমন যেনো একটা অস্বস্তি কাজ করছে। মানুষটার স্পর্শ সে সব সময় পেতে চায়। তবে নতুন পরিস্থিতিটা তার কাছে কেমন যেনো অস্বস্তিকর লাগছে। আকাশ দিশার এই বিষয়টা বুঝতে পেরে দিশাকে জিজ্ঞাস করে,

–‘কি হয়েছে তোমার? আমার স্পর্শ তোমার ভালো লাগছে না?’

দিশা আকাশের কথায় মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জওয়াব দেয়।

–‘তাহলে তোমার চেহারায় অস্থিরতার ছাপ দেখতে পাচ্ছি কেন?’

–‘আমার না কেমন যেনো অস্বস্তি লাগছে। মানে আমি নতুন পরিবেশ টাকে মানিয়ে নিতে পারছি না। আমার কেমন যেনো একটা লাগছে।’

–‘ঠিক আছে একটু অপেক্ষা করো। আমি তোমায় কিছু সময় পরে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো।’

দিশা আর কোনো কথা বলে না। অপরদিকে আকাশ ও চুপ করে দিশার পাশে বসে থাকে। এভাবে কিছু সময় যেতেই ম্যানাজার আকাশকে ফোন বলে সে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে আকাশের জিনিসপত্র নিয়ে। আকাশ ম্যানাজারের ফোন পেয়ে দিশাকে রেখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ম্যানাজারের কাছে গিয়ে জিনিসপত্র গুলো নেয়। এরপর ম্যানাজারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাসায় ফিরে আসে। বাসায় ফিরে এসে একটা শাড়ী বের করে দিশাকে দিয়ে বলে,

–‘ওয়াশরুমে গিয়ে শাড়ীটা পড়ে এসো। এরপর তোমায় নিয়ে বের হবো আমি। আশা করি তোমার মনমানসিকতা ঠিক হয়ে যাবে সেখানে গেলে।’

দিশা কোনো কথাবার্তা ছাড়া চটজলদি আকাশের হাত থেকে শাড়ীটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। কারন আর থাকতে পারছে না এই বাড়িতে সে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে শাড়ীটা কোনো মতে শরীরে পেঁচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে দিশা। দিশা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই আকাশ দিশাকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। দিনের আলো নিভে গিয়ে রাত হয়ে এসেছে। আকাশ গাড়ি ড্রাইভ করে দিশাকে সঙ্গে নিয়ে বেশ কয়েকটা দার্শনিক স্থান ঘুরে দেখায়। ঘুরাঘুরির মধ্যেই রাত দশটা বেজে যায়। এরপর দু’জন মিলে একটা ব্রিজের উপরে গিয়ে হাজির হয়। দু’জনে ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে আছে। আর প্রকৃতির মোলায়েম বাতাস উপভোগ করছে। কেউ কারোর সাথে কোনো কথা বলছে না। এমন সময় হুট করেই আকাশ দিশার চুল থেকে ক্লিপ টা সরিয়ে নিয়ে দিশার চুল গুলো ছেড়ে দেয়৷ দিশা আকাশের এমন আচরণে আকাশের দিকে এক পলক তাকিয়ে চুল গুলো খোঁপা করার জন্য হাত মাথার দিকে অগ্রসর করে। সেই সময় আকাশ দিশাকে টান দিয়ে নিজের কাছে টেনে নেয়। এরপর দিশার চুলে মুখ গুঁজে দিয়ে বলে,

–‘চুল গুলো বাঁধার জন্য এতো তড়িঘড়ি করছো কেন? কামড়াচ্ছে নাতো চুল গুলো তোমায়?’

–‘বাতাসে চুলে জট লেগে যাবে। এমনিতেই মাথা থেকে চুল ঝড়ে পড়ছে। তার উপরে জট লাগলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।’

–‘সমস্যা নেই। আমি তোমার চুলের জট ছাড়িয়ে দিব। এখন আমাকে তোমার চুলের ঘ্রাণ নিতে দাও।’

আকাশের কথা শুনে দিশা আর কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। অপরদিকে আকাশ দিশার চুলে মুখ গুঁজে দিয়ে ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত। ঠিক সেই সময় হুট করেই ব্রিজের উপরে একটা মাইক্রো এসে দাঁড়ায়। আর তার ভিতর থেকে কয়েকজন লোক ধারালো অ/স্ত্র হাতে নিয়ে বেরিয়ে আকাশদের দিকে এগিয়ে আসে। দিশা লোক গুলোকে দেখে ভয়ে কাতর হয়ে আকাশকে খামচাতে শুরু করে। কিন্তু আকাশের কোনো হুঁশ নেই। সে দিশার চুলের ঘ্রাণ নেওয়া ব্যস্ত। লোক গুলো ধারালো অ/স্ত্র/ হাতে দিশাদের একদম নিকটে চলে আসে। নিকটে চলে আসার পর এক টান দিয়ে দিশাকে আকাশ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দিশার গলায় ছুরি চেপে ধরে তার সাথে অসভ্যমো করতে শুরু করে…

চলবে….

কুহেলিকা পর্ব-১৩

0

#কুহেলিকা (পর্ব-১৩)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

–‘আকাশ তুমি যেখানেই থাকো না কেন দশ মিনিটের ভিতরে তোমাকে আমার চোখের সামমে দেখতে চাই। না হয়তো পুরো বাড়ি আমি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিব।

আকাশ ফোন রিসিভ করার পর তার বাবার এমন ভয়ানক বার্তা শুনে চমকে উঠে! হটাৎ তার বাবার এভাবে রেগে যাওয়াটা আকাশের বেশ অদ্ভুত লাগে। তাই সে সাথে সাথেই তার বাবাকে জিজ্ঞাস করে কি হয়েছে। কিন্তু আকাশের বাবা আকাশের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে মুখের উপরে ফোন কেটে দেয়। আকাশের এবার আরো বেশি অবাক লাগে! হুট করে তার বাবা তার উপরে এভাবে ফায়ার হয়ে গেছে কেন। কোনো কিছুই আকাশের মাথায় ঢুকছে না। অস্থিরতায় আকাশের চেহারার ধরণ পাল্টে গেছে। পাশ থেকে দিশা আকাশের ব্যাকুলতা দেখে আকাশকে জিজ্ঞাস করে,

–‘কি হয়েছে জনাব? আপনার চেহারার ধরণ হুট করেই এমন হয়ে গেলো কেন? এই তো একটু আগেও তো স্বাভাবিক ছিলেন, কিন্তু ফোন আসার পর আপনার চেহারার ভাবমূর্তিই যেনো পাল্টে গেছে। কি হয়েছে বলবেন কি আমায়?’

–‘দিশা কি হয়েছে সেটা আমারো অজানা। আমি বাসায় গেলেই বুঝতে পারবো কি হয়েছে।’

–‘ওহ আচ্ছা। কিন্তু কে ফোন দিয়েছে?’

–‘বাবা ফোন করেছে।’

–‘ঠিক আছে তাহলে আপনি জলদি বাসায় চলে যান। হয়তো বাসায় কোনো সমস্যা হয়েছে।’

–‘হুম আমি বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছি, তুমি নিজের খেয়াল রেখো।’

–‘আমায় নিয়ে আপনার একদম টেনশন করতে হবে না। আপনি আগে নিজের ব্যাকুলতাকে দূর করুন।’

–‘আচ্ছা চললাম।’

এরপর আকাশ দিশাকে রেখে পল্লী থেকে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে এসে গাড়ি স্টার্ট করে। আকাশের গন্তব্য হচ্ছে বাড়ি। বেশ জোরে গাড়ি ড্রাইভ করছে আকাশ। আধঘন্টার পথ আকাশ বারো-তেরো মিনিটেই পাড়ি দিয়ে বাসায় পৌঁছেছে। বাসায় পৌঁছে দেখে আকাশের মা-বাবা এবং তার ছোট বোন আকাশের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আকাশ যেনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না কি হয়েছে! ধীরে ধীরে কদম বাড়িয়ে আকাশ তার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এরপর আকাশ কিছু জিজ্ঞাস করতে যাবে তার বাবাকে, তখনি আকাশের বাবা আকাশের মায়ের উপরে রেগে গিয়ে বলে,

–‘আকাশের মা তোমার ছেলের সমস্যাটা কোথায় একটু জিজ্ঞাস করো। দু’দিন হয় নি এখনো ভালো করে অফিস আদালত তার নামে করিয়ে দিয়ে সম্মানের মুকুট পড়িয়েছি তার মাথায়। কিন্তু তোমার ছেলে তার সেই সম্মান নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছে। সে নিজে তো নিজের সম্মান নষ্ট করছেই, সাথে আমাদের টাও খাবে।’

আকাশের মা আকাশের বাবার কথা শুনে আকাশকে প্রশ্ন করে,

–‘কিরে বাবা কি করেছিস তুই? তোর বাবা তোর উপরে এতো রেগে আছে কেন? তোর বাবা তো আমাদের ও কিছু বলছে না। বাবা তুই বল তো কি হয়েছে?’

–‘মা আমারো অজানা বাবা কেন এতোটা রেগে আছে আমার উপরে। তুমি নিজেই বাবাকে জিজ্ঞাস করো কি করেছি আমি।’

–‘ওগো আকাশের বাবা বলো না গো কি হয়েছে? আকাশ তো বলছে সে নিজেও জানে না তোমার রাগের কারন।’

–‘এখন কিছুই জানবে না সে। ভোলা রোগে ধরেছে তাকে। তাই আমিই মনে করিয়ে দিচ্ছি কি করেছে সে। তোমার ছেলে পতিতা পল্লীর মেয়েকে নিয়ে রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ায়। আবার সেই মেয়ের সঙ্গে নাকি নিষিদ্ধ নগরীর ভিতরেও সময় কাটায়। এবার তোমার ছেলেকে জিজ্ঞাস করো তার মনে পড়েছে কিনা। আর আমার কথা গুলো সত্যি কিনা।’

–‘কিরে আকাশ তোর বাবা যা বলছে তা কি সত্যি?’

আকাশ তার মায়ের কথায় চুপসে থাকে। কারন সে কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না। আকাশের চুপসে থাকা দেখে আকাশের মা তাকে আবারো জিজ্ঞাস করে,

–‘আকাশ তোর বাবার বলা কথা গুলো কি সত্যি নাকি?’

এবার আকাশ উত্তর দিবে বলে ঠিক করে। কারন সে যতো চুপসে থাকবে ততোই সমস্যা। যেহেতু বাসার মানুষ তার ব্যাপারে জেনেই গেছে, তাই সে মুখ খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তার ছোট বোনকে নিয়ে। তার সামনে আকাশ এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে চাচ্ছে না। সেজন্য আকাশ তার ছোট বোনকে আদর করে ডেকে বলে,

–‘ছুটকি তুই একটু নিজের রুমে যা। আমার কিছু কথাবার্তা আছে বাবা-মায়ের সাথে।’

–‘ঠিক আছে ভাইয়া আমি নিজের রুমে যাচ্ছি।’

আকাশের ছোট বোন নিজের রুমে চলে যেতেই আকাশ তার মা’কে বলে,

–‘হ্যাঁ মা বাবার কথা সত্যি। আমি পল্লীর একটা মেয়েকে নিয়ে ঘুরে বেড়াই। আর তার সাথে সময় কাটাই।’

–‘কেন রে আকাশ? দুনিয়ায় কি তোর মেয়ের অভাব পড়েছে? আর তাছাড়া তোর তো একটা সম্পর্ক আছে। আমি যতদূর জানি তোর সম্পর্কটা প্রভার সাথেই। তাহলে তুই এসব করে নিজের মানসম্মান কেন নষ্ট করছিস, আর নিজের সম্পর্কটার সাথেও কেন প্রতারণা করছিস? তুই জানিস তোর এই আচরণ সম্পর্কে সমাজ জানতে পারলে কি কেলেঙ্কারিটা হবে?’

–‘মা দুনিয়াতে মেয়ের অভাব নাই, কিন্তু আমাকে বুঝবার মতন মেয়ের ঠিকই অভাব। মা আমি কিন্তু সেই পল্লীতে এমনিতে এমনিতে যাই নি। আর সেই মেয়ের সাথেও কিন্তু এমনিতে এমনিতে ঘুরে বেড়াই নি। আমি সেই পল্লীতে যাই মানসিক শান্তি খুঁজতে। আর সেই শান্তিটা আমি পল্লীর একমাত্র মেয়ে দিশার কাছেই খুঁজে পাই। তোমরা আবার ভেবোনা না যেনো আমি শারীরিক তৃপ্তির জন্য এসব কথাবার্তা বলছি। মা আমার এসবের শুরুটা কিন্তু প্রভাই করে দিয়েছে। না হয়তো এই দিশার খোঁজ আমি কোনোদিন এই পেতাম না। আর পল্লীতে গিয়ে দিশার সাথে আমার মেশাও হতো না।’

–‘প্রভা এসবের শুরু করে দিয়েছে মানে কি?’

–‘মানে হলো শুরুতে প্রভাই আমাকে ধোঁকা দিয়ে অন্য একটা ছেলের সাথে সেই নিষিদ্ধ নগরীতে গিয়ে মেলামেশা করেছে। আমি গত দুই-তিন দিন আগে প্রভাকে সেই পল্লীতে একটা ছেলের সাথে প্রবেশ করতে দেখি। তখন আমি প্রভার পিছু নিয়ে তার নোংরামো সম্পর্কে জানতে পারি। প্রভা আমাকে প্রতিনিয়ত ধোঁকা দিচ্ছে মা। আর এই দিশা নামক মেয়েটা আমাকে বাঁচিয়েছে সবার হাত থেকে।’

–‘কি বলিস এসব? আর দিশা নামক মেয়েটা তোকে কি ভাবে বাঁচিয়েছে?’

–‘প্রভার পিছু নিয়ে যখন পল্লীতে প্রবেশ করি, তখন পল্লীর রমণীরা আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু এই দিশা তখন আমার সঙ্গ দিয়ে সবার হাত থেকে বাঁচিয়েছে।’

আকাশের কথা শুনে আকাশের বাবা বলে উঠে,

–‘সে তোকে বাঁচিয়েছে ভালো কথা, কিন্তু তার জন্য কি তুই তার সাথে চলাফেরা করবি নাকি? আর এমন মেয়ে তো টাকার জন্য হাজারো পুরুষকে সঙ্গ দেয়।’

–‘বাবা তোমার ধারণাটা একদম ভুল। আমি তাকে টাকার প্রলোভন দেখানোর পরেও সে টাকা নেয়নি। আর আমি কিন্তু তার সাথে অল্পতেই মেলামেশা করিনি। আমি মেয়েটার মনুষ্যত্ব দেখে তার সাথে চলাফেরা করেছি। প্রভা নিজের শারীরিক চাহিদার জন্য আমায় ধোঁকা দিয়েছে। সেখানে পল্লীর এই দিশা নামক মেয়েটা, যে কিনা টাকার জন্য সব করে, সে আমার টাকাকে প্রত্যাখ্যান করে আমায় গুরুত্ব দিয়েছে। আমার কষ্টকে সে নিজে উপলব্ধি করেছে। আমি এজন্যই তার সাথে মেলামেশা করি। প্রভা আমায় ভালোবেসেও প্রতারণা করেছে। আর এই মেয়ে পতিতা হওয়া সত্বেও নিজের কাজকর্ম ফেলে রেখে আমায় প্রতিনিয়ত সামলাচ্ছে। তার না আছে কোনো টাকার লোভ। না আছে কোনো বাজে চাহিদা। সে আমায় আগলে রাখা টাকে বেশ উপভোগ করে। তাই আমি তার সাথে মেলামেশা করি।’

–‘প্রভা তোর সাথে খারাপ আচরণ করেছে ভালো কথা, কিন্তু তুই ও কম করিস নি এসব করে। নিজের মানসম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছিস। তাই নিজের কষ্টকে ভুলতে এই কয়দিন যা করেছিস করেছিস, কিন্তু আগামীতে যেনো ঐ মেয়ের আসেপাশে তোকে যেতে না দেখি।’

–‘বাবা তোমার কথাটা আমি রাখতে পারবো না। যেই মেয়ে আমায় সামলে রাখার চেষ্টা করছে, আমি তার থেকে দূরে সরে নিজেকে বিরহের দাবানলে পুড়াতে চাচ্ছি না।’

–‘তার মানে তুই সেই মেয়ের কাছে আবারো যাবি?’

–‘আমি সেই মেয়ের কাছে আবারো যাবো না খালি, তাকে আমি আজীবন নিজের কাছেই রাখতে চাই। এতে তোমরা যা খুশি করতে পারো।’

আকাশের কথা শুনে আকাশের বাবার রাগের মাত্রা যেনো আরো বেড়ে যায়। তাই তিনি আকাশের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়ে আকাশের মা’কে বলে,

–‘তোমার ছেলেকে বলার মতন কোনো ভাষা আমার নেই। তবে আকাশের মা তোমায় আমি একটা কথা স্পষ্ট ভাবে বলে দেই, তোমার ছেলের সাথে আগামীতে সেই মেয়ের কোনো সংযোগ থাকলে বা তোমার ছেলে সেই মেয়েকে নিয়ে জীবন কাটাতে চাইলে তাকে এই বাড়ি ত্যাগ করতে হবে। কারন মানসম্মান ওর না থাকলেও আমাদের আছে। আমি চাই না আমার কথার অমতে গিয়ে কেউ কিছু করার পর আবার আমার চোখের সামনে এসে ঘুরে বেড়াক। তাই তোমার ছেলের কাছো দু’টো অপশন আছে। হয় সে ঐ মেয়ের অধ্যায় শেষ করে আমাদের সাথে থাকবে। না হয় সে এই বাড়ি ছেড়ে দিয়ে নিজের মন-মানি করবে।’

–‘আকাশের বাবা তুমি প্লিজ রাগ করো না। দেখো তোমার ছেলের সুখ-শান্তি টাই হচ্ছে বড় জিনিস। তোমার ছেলে যাকে নিয়ে ভালো থাকতে পারে থাকুক। কারন সংসার টা তো সে করবে। তাই খামোখা ওর সাথে এভাবে রাগ দেখিয়ে লাভ আছে বলো?’

–‘আকাশের মা আমি তোমার কোনো কথাই শুনবো না। আমি একবার যেটা মুখ দিয়ে বের করেছি সেটাই ফাইনাল। কারন আমি দ্বিতীয়বার আর এইসব ঝামেলায় পড়তে চাই না। বহু কষ্টে সম্মান জুড়িয়েছি। আকাশের মা তোমার মনে আছে, যখন তোমায় আমি বিয়ে করি তখন লোকে নানান কথা বলেছিল তোমায় নিয়ে?’

–‘হুম বেশ ভালো করে মনে আছে। আমি সেই সময় গুলোর কথা কখনোই ভুলবো না। তবে তুমি তো পরবর্তীতে নিজের নাম বানিয়ে সবাইকে সঠিক জওয়াব দিয়েছো। তাহলে এখন এতোটা ভয় পাচ্ছো কেন?’

–‘আকাশের মা তুমি সঠিক থাকার পরেও মানুষ তোমায় নিয়ে কি কি রটিয়েছিল। আর তোমার ছেলে তো সত্যিকারত্বে একটা প্রস্টিটিউটের সাথে সারাজীবন থাকতে চাইছে। তাহলে ভাবো কতো কি হতে পারে। তাই আমি কখনোই আকাশের সাথে ঐ মেয়েকে মেনে নিব না। তোমার ছেলে সেই মেয়ে বাদে আমাদের সাথে সম্মানের সহিত থাকতে পারে। না হয়তো সম্মান খোয়ানোর হলে অন্য কোথাও গিয়ে খোয়াতে বলো। আমার ঘরে তার জায়গা নেই। আমি আর দ্বিতীয় বার সম্মানের জন্য লড়াই করতে পারবো না।’

–‘ঠিক আছে তাহলে সে তোমার দেওয়া নতুন বাড়িটায় থাকুক। কিন্তু আমি চাইনা তুমি এসব নিয়ে কষ্ট পাও। আর আমি তোমার ছেলেকে সাপোর্ট করার কারন হচ্ছে, সে কষ্টে আছে। আমি চাইনা সে ঐ মেয়েকে ছেড়ে দিয়ে কষ্টের বোঝা আরো প্রসার করুক। সে যদি ঐ মেয়ের মধ্যে নিজের অস্তিত্বকে খুঁজে পায়, তাহলে সে থাকুক সেই মেয়ের সঙ্গে। এতে আমরা আপত্তি করে কোনো লাভ নেই।’

–‘তোমাদের যেমন খুশি তোমরা করো। আমি চললাম নিজের রুমে। তোমার ছেলের ব্যাপারে আমার কথা বলতে জাস্ট ঘৃণা হচ্ছে।’

আকাশের বাবা রাগ দেখিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। তখনি আকাশের মা আকাশকে বলে,

–‘আমি তোর বাবাকে গিয়ে শান্ত করার ব্যবস্থা করছি। কিন্তু যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যাই। যা করবি বুঝে শুনে করবি। কিন্তু দয়া করে নিজের পরিবারের সম্মান ডুবাস না।’

–‘মা তুমি আমার উপরে ভরসা রাখো।’

–‘তোর উপরে আমার ভরসা আছে। আচ্ছা শোন আমি গেলাম। তুই এখুনি নতুন বাসায় চলে যা। কারন তোর বাবা তোকে এই বাসায় দেখতে পেলে পরবর্তীতে আবারো রাগারাগি করতে পারে।’

–‘আচ্ছা।’

আকাশ তার মায়ের কথায় তখনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে নতুন বাসায় চলে যায়। এরপর সমস্ত জিনিসপত্র অর্ডার করে সেসবকে মানুষ দিয়ে সাজিয়ে ঘর টাকে রাতারাতি থাকার উপযুক্ত করে তোলে। রাত হয়ে এসেছে। আকাশ ঘরের কাজকর্ম শেষ করে গাড়ি টেনে দিশার সাথে এক ফাঁকে দেখা করতে পল্লীতে চলে যায়। পল্লীতে গিয়ে দিশার সাথে দেখা করে দিশাকে বলে,

–‘আগামীকাল তোমায় আমি আমার নতুন বাসায় নিয়ে যাবো। এরপর থেকে তুমি আর আমি দু’জনে মিলে সেই বাড়িতেই থাকবো। তুমি কাপড়-চোপড় গুছিয়ে রেডি হয়ে থেকো। আমি অফিস শেষ করে চারটা নাগাদ এসে তোমায় সঙ্গে করে নিয়ে যাবো।’

–‘আচ্ছা জনাব আমি রেডি হয়ে থাকবো।’

–‘হুম এখন আমি চললাম। কাল দুপুরে আসবো তোমায় নিয়ে যেতে।’

–‘আচ্ছা।’

দিশা আকাশের কথা শুনে মনে মনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। কারন তাকে আকাশ আগামীকাল এই পল্লী থেকে একেবারে নিয়ে চলে যাবে। তাই সে আকাশ আর নতুন জীবনকে ঘিরে কল্পনা করতে থাকে। অপরদিকে আকাশ দিশার সাথে কিছুটা সময় কথা বলে পল্লী থেকে বেরিয়ে গাড়ি করে তার নতুন বাড়িতে ফিরে আসে। পরেরদিন আকাশ অফিস শেষ করে দিশাকে আনতে পল্লীতে চলে যায়। পল্লীতে গিয়ে দেখে দিশা রেডি না হয়ে স্বাভাবিক ভাবে বসে আছে। দিশাকে স্বাভাবিক অবস্থায় দেখতে পেয়ে আকাশ দিশাকে জিজ্ঞাস করে,

–‘কি হলো তুমি এখনো রেডি হও নি যে? কখন যাবে তুমি আমার সাথে?’

আকাশের কথার প্রতিত্তোরে দিশা অদ্ভুত ভাবে রেগে দিয়ে আকাশকে বলে,

–‘যাবো না আমি তোর বাড়ি। তুই চলে যা এখান থেকে। আমাকে নিয়ে বহু আদিখ্যেতা দেখিয়েছিস। এবার সমস্ত কিছু বন্ধ করে নিজের মতন থাকতে শিখ। আর আমায় চিরতরে ভুলে যা।’

হুট করে দিশার এমন অদ্ভুত কথাবার্তা শুনে আকাশ পুরো চমকে উঠে! সে কোনো মতেই দিশার অদ্ভুত আচরণ সম্পর্কে বুঝে উঠতে পারছে না! এই তো গতরাতেও মেয়েটা ঠিক ছিল। আকাশ যখন গতরাতে দিশাকে বলে আজ দুপুরে সে তাকে নতুন বাসায় নিয়ে যাবে, তখন দিশা কতো সুন্দর হাসিখুশি কথা বলেছে। কিন্তু হুট করেই দিশার কি এমন হলো, যে সে পুরোপুরি পল্টি খেয়ে নিয়েছে….

চলবে…..

কুহেলিকা পর্ব-১২

0

#কুহেলিকা (পর্ব-১২)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

লোকটা চলে যেতেই নারাজ। সে দিশার সাথে কাজ করেই এখান থেকে যাবে। কিন্তু পল্লীর সর্দারনী তার পথের কাটা হয়ে দাঁড়ায়িছে। তাই সে রেগে গিয়ে পল্লীর সর্দারনীকে দিশার সামনে থেকে টান দিয়ে সরিয়ে দিশার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। লোকটার এমন আচরণে দিশা চোখ বুঝে বিকট আওয়াজে একটা চিৎকার মারে। কারন তার শরীরে আবারো দাগ লাগতে চলেছে। সে তার শরীর টাকে একজনের নামে লিখিত করে দিয়েছে। তার শরীরটা এখন একজনের আমানত। সে এই আমানতের বরখেলাপ কখনোই করবে না। কিন্তু বর্তমানে এই অসাধু লোকটা তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে সর্বত্র হাতিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টায় লেগেছে। এই বুঝি তার সব শেষ। দিশা এসব কল্পনা করতে থাকে। আর সুট বুট পড়া লোকটা দিশার উপরে পুরোপুরি ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রথমে লোকটা নিজের হাত দিয়ে দিশার হাত দু’টো দেয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে। এরপর নোংরা চাহনীতে দিশার শরীরময় ঘুরে বেড়াচ্ছে অনবরত। দিশার শরীরের খুব নিকটবর্তী হয়ে এক নাগাড়ে মুখ দিয়ে অশ্রাব্য গালির তুবড়ি ছুঁড়তে শুরু করে। দিশার অমত করা যেনো সে কোনো ভাবেই মানতে পারছে না। কারন আজ অব্দি সে যা চেয়েছে সবই পেয়েছে। কিন্তু এই প্রথম সে কোনো কিছুর জন্য এতোটা লড়াই করেছে। এভাবে কিছুটা সময় যাওয়ার লোকটা মুখে লাগাম দিয়ে দিশার ঘাড়ে স্পর্শ করার জন্য মুখ এগিয়ে নিয়ে যায়। এমতাবস্থায় হুট করেই আকাশ সেখানে চলে আসে। লোকটা আকাশের উপস্থিত দেখতে পেয়ে থেমে যায়। কিন্তু আকাশ আসার পর লোকটার জোরপূর্বক আচরণ দেখে তার পায়ের রক্ত মাথায় চড়ে গেলো। মুহূর্তের মধ্যেই সে হয়ে উঠলো বুনো ষাঁড়ের মতো হিংস্র। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দ্রুত পায়ে দিশার কাছে এগিয়ে যায় আকাশ। ওর অসহায় চাহনীর দিকে একবার দৃষ্টিপাত করেই লোকটার নাক বরাবর সজোরে ঘুষি মারে। ঘটনার আকষ্মিকতায় টাল সামলাতে না পেরে লোকটা মাটির উপরে মুখ থুবড়ে পড়ে। অপরদিকে দিশার হাত লোকটা দেয়ালের সাথে চেপে ধরার তার হাতে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। দিশা তার রক্ত জমাট বাঁধা হাত চেপে ধরে নিরবে কাঁদছে। আকাশ দিশার কান্না দেখে তার দিকে এগিয়ে যায়। এরপর হাত থেকে ফুলের তোড়াটা মাটিতে ফেলে দিয়ে পরম মমতায় দিশাকে বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আর বিড়বিড় করে বলে,

–‘দেরী করে আসার জন্য আমি দুঃখিত দিশা, এইতো আমি এসে গেছি। তোমাকে আর কেউ ছুঁবার সাহস পাবে না দেখবে। এবার কান্না থামাও।’

আকাশের কথায় দিশা কান্না থামানোর বদলে আরো জোরে শব্দ করতে কান্না করতে আরম্ভ করে। তার কান্নার বেগ দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়। হই-হট্টোগোল শুনে পল্লীর অনেকেই জড় হয় ঘটনাস্থলে। আকাশের বুকে দিশাকে কাঁদতে দেখে কেউ তাচ্ছিল্যের হাসতে শুরু করে, আবার কেউ এক বুক ভরা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কাস্টমারকে সময় দিতে নিজ কামরায় পা বাড়ালো। অন্ধকার গলি, পশ্চিমাকাশের অস্তমিত সূর্য জানালার ফাঁক দিয়ে নিভু নিভু করতে করতে ক্লান্ত হয়ে সাক্ষী হয়ে রইলো নিষিদ্ধ স্থানে জন্মানো এক পবিত্র ভালোবাসায় সিক্ত দুজন নর-নারীর মনোমিলনের। তবে ভিতরগত ব্যাপার কেউ জানে না। তাই একেকজন একেক ভাবে বিষয়টাকে গ্রহণ করে। তবে সবার কাছেই জিনিসটা প্রশ্নবোধক হয়ে যায়। তাচ্ছিল্যের সুরে যারা হেসেছে তাদের মনেও কৌতূহল জাগে বিষয়টা নিয়ে। আসলে হচ্ছে টা কি এখানে। কিন্তু কেউ কোনো উত্তর খুঁজে পায় না। সবাই আকাশ আর দিশার দিকে তাকিয়ে আছে। আর আকাশ দিশাকে সামলানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু দিশা আকাশের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে আকাশকে বলে,

–‘আমি শান্ত হবো না। কারন সেই লোকটা জোরপূর্বক আমার শরীরে স্পর্শ করতে চেয়েছে। আমি লোকটাকে হাজার বার বারন করেছি, কিন্তু তার পরেও সেই লোকটা আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু ভাগ্যিস আপনি সময় মতন চলে এসেছেন। না হয়তো আজ আমার অনেক বড় সর্বনাশ হয়ে যেতো। যাক আমি বেঁচে গিয়েছি এই দানবের হাত থেকে, কিন্তু আপনি এই দানবকে ছাড়বেন না। ওর শরীরের লাল রক্ত না দেখলে আমার কান্না আজ থামবে না।’

–‘ঠিক আছে তোমার ইচ্ছা পূর্ণ করবো আমি। অবশ্য আমি তাকে এমনিতেও ছাড়তাম না। আমি শুধু তোমায় সামলানোর তালে চুপসে আছি। না হয়তো এতো সময় ওর চেহারার আকৃতি আমি বলদে দিলাম। তবে বর্তমানে তুমিও চাও ঐ লোককে আমি জন্মের মতন শিক্ষা দেই। তাহলে অবশ্যই আমি সেই লোককে শিক্ষা দিব। তুমি একটুখানি সময় নিজেকে সামলাও। ঐ লোককে আমি দেখছি।’

আকাশ দিশাকে ছেড়ে দিয়ে সেই লোকের কাছে গিয়ে তার কলার চেপে ধরে। এরপর তাকে মাটি থেকে কিছুটা টেনে উঠিয়ে বলে,

–‘তোর কতো বড় সাহস তুই দিশার সাথে জোরজবরদস্তি করিস। কে দিয়েছে তোকে এতো বড় সাহস?’

–‘পল্লীর মেয়েকে স্পর্শ করার জন্য আবার সাহসের প্রয়োজন হয় নাকি? টাকা দিলেই তো তারা নিজে এসে আমাদের স্পর্শ করে।’

–‘মুখ সামলে কথা বল। সে এখন কোনো পল্লীর মেয়ে না। ওর নামে আর একটা বাজে কথা বললে তোর অবস্থা খারাপ করে দিব।’

–‘এমনিতেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছিস আমায় মেরে। তার উপরে নিজের জীবন আর ঝুকিপূর্ণ করিস না। না হয়তো জানে মারা পড়বি।’

–‘আমায় হুমকি দিচ্ছিস তুই?’

–‘আরে তোর মতন ছেলেকে হুমকি দিলেও তো হুমকির অপমান হবে। তোর জন্য তো আমার পরিচয় টাই যথেষ্ট। আমি কে সেটা শুনলেই তো তুই ভয়ে কাঁপতে আরম্ভ করবি।’

লোকটার কথা শুনে আকাশের রাগ আরো বেড়ে যায়। মুখে তালা লাগিয়ে এবার হাত চালাতে শুরু করে । লোকটার মুখে মুহূর্তের মধ্যেই অনেক কয়টা ঘুষি মে/রে বসে আকাশ। আকাশের ঘুষি খে/য়ে লোকটার মুখের অনেক কয়টা জায়গা কেটে যায়। নাক-মুখ থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়তে আরম্ভ করে। কিন্তু লোকটার মুখ এখনো বন্ধ হয় না। আকাশের হাতে এতো গুলা মা’র খাওয়ার পরেও সে বড় গলা করে আকাশকে বলে,

–‘আমার গায়ে হাত তোলার শাস্তি তোরা পাবি। তোদের দুটোকে আমি জানে মেরে দিব।’

আকাশ হাত চালানোর পর থেকে মুখে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। আর লোকটা তার হাতে এতো গুলো ঘুষি খাওয়ার পরেও গলাবাজি করছে। তার উপরে আবার হুমকিও দিচ্ছে। লোকটার মুখে হুমকি ভরা কথা শুনে আকাশ লোকটাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। এরপর লোকটার বুকের উপরে পাড়া দিয়ে বলে,

–‘শোন ঐ যে মেয়েটা খালি আমার। ওর দিকে কেউ আঙ্গুল তুললে তার হাত আমি কেটে ফেলবো। সেখানে তুই আমার সাথে সাথে তাকে প্রাণে মারার হুমকি দিচ্ছিস? তোকে তো জীবিত লাশ বানিয়ে দিব এখন।’

আকাশ লোকটাকে জীবিত লাশ বানিয়ে দিবে বলেই লোকটার বুকের উপরে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে জাঁতা মারে। যার ফলে লোকটা জায়গার মধ্যেই নিজের জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। লোকটার কাম খালাস। এবার আকাশ লোক টাকে ছেড়ে দিয়ে পল্লীর সর্দারনীর কাছে যায়। পল্লীর সর্দারনী মাটির দিকে দৃষ্টিপাত করে রেখেছে। সে লজ্জায় কারোর দিকে তাকানোর মতন সাহস করতে পারছে না। বিশেষ করে আকাশের দিকে। তাই সে নজর মাটির দিকে করে রেখেছে। আকাশ পল্লীর সর্দারনীর সামনে যাওয়ার পরেই তাকে জিজ্ঞাস করে,

–‘কোন সাহসে তুই থাকতে এই লোক আমার দিশার সাথে জোরজবরদস্তি করার চেষ্টা করেছে? তোর হুকুম ছাড়া তো এই পল্লীতে একটা কাকপক্ষীও নড়ে না। তাহলে এই লোক এতো সাহস কোথায় পেয়েছে?’

–‘সাহেব আমার ভুল হইয়া গেছে। আমার কারনেই এই লোক দিশার লগে এসব করবার সাহস পাইছে। সাহেব আমারে ক্ষমা কইরা দেন। আমি আর কোনোদিন ও এমন করুম না। আর আপনার দিশার ভরপুর খেয়াল রাখুম।’

–‘আগুন চিনিস?’

–‘জ্বি সাহেব চিনি।’

–‘তুই এবং তোর পুরো পতিতা পল্লীকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিব একদম। আমায় তুই এখনো ভালো করে চিনিস না। আমি চুপচাপ থাকি, কিন্তু রাগলে আগুনের কয়লার মতন জ্বলজ্বল করি। সর্দারনী প্রথম বারের মতন তোকে একটা সুযোগ দিলাম। তুই কতো বড় দাপট ওয়ালা মহিলা সেসব কিন্তু আমার দেখার সময় নাই। পরবর্তীতে আমার দিশার দিকে কেউ আঙ্গুল তুললেও তোর অবস্থা খারাপ হবে যাবে। মনে রাখবি এই দিশা এখন আমার। কেউ ওর দিকে নজর তুলে তাকালে বা তুই ওকে দিয়ে কোনো ধরনের কিছু করাতে চাইলে সেদিন কিন্তু তোর শেষ দিন হবে। শুধু তোর একার নয়, সেদিন পুরো পতিতা পল্লীর শেষ দিন হবে। কান খুলে একটা কথা শুনে রাখ, এবং উপস্থিত আপনারা সবাই ও শুনে রাখুন। এই দিশা পল্লীতে থাকবে ঠিকই, কিন্তু সে কোনো ধরনের কাস্টমার সার্ভিস দিবে না। কারন তাকে আমি মোটা অংকের টাকার দিয়ে নিজের নামে করে রেখেছি। সে শুধু আমাকেই সার্ভিস দিবে। তার পুরোটা জুড়ে শুধু এখন আমারই বসবাস। এক কথায় সবায় ধরে নিন সে আমার বিয়ে করা বউ। কথা গুলো যেনো সবার মাথায় থাকে। আর সর্দারনী তুই ও মাথায় ঢুকিয়ে রাখ ভালো করে কথা গুলো।’

–‘সাহেব টাকার লোভে পইড়া প্রথম বার ভুল করছি, কিন্তু এরপরের বার আর ভুল হইবো না। এই মাইয়ারে এখন থেইকা আমি নিজের মাইয়ার মতন দেখা শোনা করুম। কিন্তু প্লিজ দয়া কইরা আপনি মাথা ঠান্ডা করেন।’

–‘আমি ঠিক আছি। আপনারা সবাই এবার রুম থেকে বের হোন। আর যাওয়ার আগে এই উন্মাদকে উঠিয়ে নিজেদের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে রাস্তার মুখে ফেলে দিয়ে আসুন।’

আকাশের কথায় কয়েকজন ধরাধারি করে সুট বুট পড়া সেই লোক টাকে উঠিয়ে রুমের বাহিরে নিয়ে রুম টাকে খালি করে দেয়। রুমের মধ্যে খালি আকাশ আর দিশা। সবাই চলে যেতেই দিশা জোর কদমে হেঁটে এসে আকাশের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরপর নাক টানতে টানতে বলে,

–‘জানেন আমি পুরো জীবিত লাশ হয়ে যাচ্ছিলাম লোকটার পাগলামো দেখে। আমার খালি একটা জিনিস এই চোখে ভাসছিল, আমি আপনার সামনে কি করে দাঁড়াবো। কি করে আমি আপনাকে মুখ দেখাবো। কিন্তু উপর ওয়ালার কি মেহেরবানী আপনি হুট করেই চলে এসেছেন।’

–‘হুম উপর ওয়ালার মেহেরবানীই বলতে পারো। না হয় এই অসময়ে কখনোই আমার আসা হতো না।’

–‘আচ্ছা আপনি না চলে গেছিলেন? তাহলে আবার হুট করে এখানে আসলেন কি মনে করে?’

–‘আসলে আমি যাওয়ার সময় ছোটখাটো একটা জ্যামে আঁটকে পড়েছিলাম। তখন একটা বাচ্চা মেয়ে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ফুল বিক্রি করছিল। সেই বাচ্চা মেয়েটা জ্যামে আঁটকে থাকা অনেক কয়টা গাড়ি ওয়ালার কাছে যায় ফুল বিক্রি করার জন্য, কিন্তু কেউ তার ফুল কিনে না। অবশেষে মেয়েটা হতাশ হয়ে আমার কাছে আসে। মেয়েটার মায়া ভরা চেহারা দেখে আমি বুঝে নিয়েছিলাম এই ফুল গুলো বিক্রি করতে না পারলে তার পেটে দানাপানি পড়বে না। তাই আমি তার থেকে সমস্ত ফুল কিনে নেই। তখন সেই মেয়েটা আমায় বলে, এই ফুল গুলো আমার প্রিয় মানুষের চুলের খোঁপায় নাকি অনেক মানাবে। তাই আমি ফুল গুলো নিয়ে আবার এখানে ফিরে এসেছি। আমি চাইলে আগামীকাল ও দিতে পারতাম, কিন্তু ফুল গুলো আজকের ন্যায় এতোটা তরতাজা থাকতো না। এছাড়া আমার মন ও কেন জানি তোমায় নিয়ে কু ডাকছিল। তাই ফুল গুলো নিয়ে তোমার কাছে ছুটে এসেছি। আর ছুটে এসেই দেখি এই অবস্থা।’

–‘উপর ওয়ালা আমায় এযাত্রায় আপনার হাত দিয়ে বাঁচিয়ে নিয়েছে। জানেন শয়তান টার শরীরে অনেক জোর। আমি জোর খাটিয়েও তার সাথে পেরে উঠছিলাম না। আমি তো ভেবেছি আজ আমি শেষ।’

–‘দিশা এখন বাদ দাও এসব অলক্ষুণে কথাবার্তা।
না হয়তো মন খারাপ টা কখনোই ভালো হবে না। তাই এখন এসব বাদ দিয়ে আমায় নিতে মেতে থাকো।’

–‘আচ্ছা।’

আকাশের কথায় দিশা টপিকটা বাদ দিয়ে আকাশকে নিয়ে মেতে থাকার ট্রাই করে৷ দিশা হুট করেই মুচকি হাসি দিয়ে আকাশের শার্টের বোতাম খুলতে আরম্ভ করে। আকাশ দিশার আচরণে চোখ পাকিয়ে দিশার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সে দিশাকে কিছুই বলে না। দিশা আকাশের শার্টের সব কয়টা বোতাম খুলে আকাশের পশম ওয়ালা বুকে তার ওষ্ঠ দিয়ে কোনো দ্বিধাবোধ ছাড়াই স্পর্শ করতে আরম্ভ করে। দিশার আচরণে আকাশের শরীরে কারেন্টের মতন শকট দিয়ে উঠে। আকাশ প্রায় মাতাল হওয়া অবস্থা, এমন সময় আকাশের ফোন বেজে উঠে। আকাশ দিশাকে থামিয়ে দিয়ে পকেটে থাকা ফোন বের করে ফোনটা রিসিভ করে। ফোন রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে আকাশের বাবা রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠে,

–‘আকাশ তুমি যেখানেই থাকো না কেন দশ মিনিটের ভিতরে তোমাকে আমার চোখের সামমে দেখতে চাই। না হয়তো পুরো বাড়ি আমি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিব।

আকাশ ফোন রিসিভ করার পর তার বাবার এমন ভয়ানক বার্তা শুনে চমকে উঠে….

চলবে….

কুহেলিকা পর্ব-১১

0

#কুহেলিকা (পর্ব-১১)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

আকাশ দিশাকে গাড়ি করে এনে পল্লীর সামনে নামিয়ে দিয়ে সে বাসার উদ্দেশ্যে গাড়ি টেনে চলে যায়। এদিকে দিশা গাড়ি থেকে নামতেই একটা সুট বুট পড়া লোক দিশার পিছু নেয়। লোকটা দিশার দিকে লালসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার পিছু পিছু হাঁটতে আরম্ভ করে। দিশার এতো কিছু খেয়াল নেই। সে আপন মনে হাঁটতে থাকে। কিন্তু দিশার ধারণাতেও নেই, যে কোনো এক নরপিশাচ অসাধু মতলব নিয়ে তার পিছু নিয়েছে। দিশা হাঁটতে হাঁটতে নিজের বাসস্থানে গিয়ে পৌঁছাও। আর দিশার দিকে লালসার দৃষ্টিতে তাকানো লোকটা কিছু সময় দিশার পিছু নিয়ে পরবর্তী দিশার পিছু করা ছেড়ে দেয়। কারন সে এই পল্লীর নিয়ম কানুন সম্পর্কে বেশ ভালো করেই অবগত। সে জানে কোনো রমণীর সাথে পার্সোনাল ভাবে সময় কাটাতে হলে তাকে আগে পল্লীর সর্দারনীর সাথে কথা বলতে হবে। তাই সে কিছু সময় দিশাকে অনুসরণ করে পল্লীর সর্দারনীর কাছে চলে যায়। পল্লীর সর্দারনী লোক টাকে দেখে জিজ্ঞাস করে,

–‘সাহেব এই অসময়ে আপনি এহানে? আপনি তো আইলে রাতের বেলায় আহেন। কিন্তু আজ অসময়ে এহানে আইলেন যে?’

–‘আজ আমার কোনো কাজকর্ম নেই। তাই এই অসময়ে চলে এসেছি শারীরিক খিদে মিটাতে।’

–‘আচ্ছা যাক আইছেন ভালোই করছেন। আপনি একটু বইয়া অপেক্ষা করেন। যারা রুমে নাই আমি তাগোরে ডাইকা আনার ব্যবস্থা করতাছি। এরপর আপনার যারে ইচ্ছা তারে লইয়া রুমে যাইয়েন।’

–‘না আজ কোনো মেয়েকে ডেকে আনার দরকার নেই। আমি পল্লীতে আসার সময় একটা মেয়েকে দেখেছি। আমার তাকে হলেই চলবে।’

–‘সাহেব কোন মাইয়ারে দেখছেন?’

–‘যাকে দেখেছি তার নাম তো আমি জানি না। তবে মেয়েটা খুব অল্প বয়সী। তার গায়ে পড়নে একটা শাড়ী ছিল। আমি যখন পল্লীর ভিতরে আসার জন্য গাড়ি থেকে নামি, তখনি দেখি সে বাহির থেকে পল্পীর ভিতরে ঢুকছে। আমি মেয়েটাকে বেশ কিছু সময় অনুসরণ করেছি। মেয়েটা এসে আপনার বাসা থেকে দু’টো বাসা পরেই একটা বাড়িতে ঢুকেছে। আমার তাকে চাই। আজ তার সাথেই সময় কাটাবো আমি।’

–‘সাহেব আমি বুঝতে পারছি আপনি কার কথা কইছেন। মাইয়াটার নাম হইলো দিশা। কিন্তু সাহেব ক্ষমা করবেন আমারে। আমি সেই মাইয়ারে আপনার কাছে দিতে পারুম না।’

–‘দিতে পারবেন না মানে কি?’

–‘মানে হইলো সেই মাইয়ারে কারোর লগে দেওয়ার অনুমতি নাই আমার।’

–‘কিসের অনুমতির কথা বলছেন বুঝলাম না! আপনিই পল্লীর সর্দারনী। আপনি আবার কার অনুমতিতে চলেন? আপনার থেকেও বড় কেউ আছে নাকি এখানে?’

–‘না সাহেব আমার থেইকা বড় এহানে আর কেউ নাই। কিন্তু সেই মাইয়ারে আমি কোনো মতেই আপনার লগে রুমে দিতে পারুম না।’

–‘কিন্তু কেন?’

–‘কারন পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে সেই মাইয়ারে একজন অনির্দিষ্ট সময়ের লাইগা নিজের কইরা রাখছে। তাই সেই মাইয়ারে আমি কারোর লগেই দেই না।’

–‘দেখুন আমার সেই মেয়েকেই লাগবে। কে কতো টাকা দিয়েছি আমি জানি না! আমার সেই মেয়েকে লাগবে মানে সেই মেয়েকেই লাগবে। আমি দরকার হয় টাকার এমাউন্ট বাড়িয়ে দিব। কিন্তু আমার সেই মেয়েকেই চাই।’

–‘সাহেব আপনি এমাউন্ট বাড়ান আর যাই করেন, সেই মাইয়ারে আমি কোনো ভাবেই রুমে দিতে পারুম না। আপনি অন্য মাইয়া দেখেন।’

–‘যদি সেই লোক থেকে ডাবল টাকা দেই, তাহলেও কি আপনি সেই মেয়েকে আমার সাথে দিবেন না?’

–‘ডাবল টাকা মানে সাহেব?’

–‘ডাবল মানে দশ লাখ টাকা দিব আমি।’

পল্লীর সর্দারনী সেই লোকের মুখে দশ লাখ টাকার কথা শুনে হিচকিচ করতে শুরু করে। কারন তার শুধু টাকা চাই। সে এই ধান্দা করেই টাকার জন্য। টাকার কাছে তার নীতি কোনো মাইনে রাখে না। তবে আকাশ ও তাকে কম টাকা দেয়নি। এই লোকের আগে আকাশ দিশাকে তার থেকে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছে। এজন্য পল্লীর সর্দারনী দোটানায় পড়ে যায়। কি করবে সে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না! একজন পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে দিশাকে নিজের নামে বুকিং করে রেখেছে। আরেকজন তাকে দিশার জন্য দশ লাখ টাকা অফার করছে। বেশ চিন্তায় পড়ে যায় পল্লীর সর্দারনী। লোকটার কথার উত্তর না দিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে কি করবে সে। এমন সময় সুট বুট পড়া সেই লোকটা পল্লীর সর্দারনীকে বলে,

–‘কি হলো কথা বলছেন না যে? ভালো মন্দ একটা তো বলুন।’

–‘সাহেব আসলে আমি টাকার লাইগাই সব করি।
আমার কাছে টাকাই সব। টাকার থেইকা বড় কোনো কিছুই নাই আমার কাছে। কিন্তু কথা হইলো সেই বেডায় জানতে পারলে তো আমার উপরে রাইগা যাইবো।’

–‘তাহলে কি আমি না বলে ধরে নিব?’

–‘সাহেব আমার মাথায় কাজ করতাছে না আমি কি করমু এহন! এতো গুলা টাকা হাত ছাড়া করতে মন চাইতাছে না। আরেক দিকে ঐ বেডার লাইগা ভয় ও লাগতাছে।’

–‘দেখুন আপনার দোটানায় আমি পড়তে চাচ্ছি না। আপনি নিজের দোটানায় পড়ে খামোখা আমার সময় নষ্ট করছেন। তাই আমি চলে যাচ্ছি। আপনার দোটানাকে আমি না বলেই ধরে নিলাম।’

–‘সাহেব না…না আপনি যাইবেন না। সেই মাইয়ারে আমি আপনার লগে রুমে দিমু, কিন্তু….

–‘কিন্তু কি?’

–‘সে আমনের লগে কাজ করতে রাজি হইবো কিনা সেটা আমি বুঝতেছি না। কারন সেই বেডার লগে মাইয়ার বেশ খাতির জমছে। বেডায় মাইয়ারে গাড়িতে কইরা লইয়া ঘুইরা বেড়ায়।’

–‘সে আপনি আমার উপরে ছেড়ে দিন। আমি সেই মেয়েকে সামলে নিব। আপনি খালি আমায় সেই মেয়ের কাছে নিয়ে চলুন।’

–ঠিক আছে সাহেব চলেন আমার লগে। আর টাকা আমার ব্যাংকের একাউন্টে মাইরা দেন।’

–‘টাকা চলে যাবে। আপনি আমায় আগে সেই মেয়ের কাছে নিয়ে চলুন। বেশ উত্তেজিত হয়ে আছে শরীর। নিজের উত্তেজনা টাকে আগে শান্ত করি।’

–‘চলেন আমি আমনেরে দিশার কাছে লইয়া যাইতেছি।’

পল্লীর সর্দারনী লোকটাকে নিয়ে দিশার কাছে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হয়। লোকটা যেতে যেতেই পল্লীর সর্দারনীর একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেয়। পল্লীর সর্দারনী লোকটাকে নিয়ে দিশার রুমে পৌঁছে দিয়ে সে রুমের বাহিরে চলে আসে। লোকটা দিশার রুমে ঢুকে দিশাকে দেখতেই মাতাল হয়ে যায়। রুমে ঢুকে কোনো কথাবার্তা ছাড়াই কাপড় খুলতে খুলতে দিশার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। অপরদিকে দিশা লোকটাকে আপত্তি জানায় সে তার সাথে কাজ করবে না। কিন্তু কে শুনে কার কথা। লোকটা দিশার দিকে ক্রমশ এগিয়েই চলেছে। তার দরকার শুধু দিশার শরীর। দিশার শরীর চিবিয়ে না খেলে তার এই উত্তেজনা যেনো কখনোই কমবে না। আসলে বলে না, কুকুর চিনে না মানুষের পাত, আর উত্তেজনা বুঝে না জাতকুজাত। লোকটার মধ্যেও ঠিক একই রকমের উত্তেজনা জেগেছে। দিশা যে তাকে আপত্তি করছে সেই দিকে লোকটার কোনো খেয়াল এই নেই। তার দরকার শুধু দিশার শরীর। দিশার কচি শরীরটাই যেনো তার উত্তেজনা কমানোর এক মাত্র মাধ্যম। লোকটার ক্রমশ এগিয়ে যাওয়া দেখে দিশা চিল্লাতে শুরু করে। কিন্তু লোকটা থামবার কোনো নাম নেই। সে দিশার খুব নিকটে চলে গিয়েছে। দিশা দেয়ালের এক কোনায় জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে তার পবিত্র শরীরকে কোনো ভাবেই অপবিত্র করতে চাচ্ছে না। বহু কষ্টের বিনিময়ে কারোর ছোঁয়া লাগিয়ে দিশা নিজের শরীরকে বিশুদ্ধ করেছে। এই বিশুদ্ধ শরীরে সে আর কোনো দাগ লাগতে দিবে না। কিন্তু লোকটা তার খুব নিকটে চলে গিয়েছে। দানবের মতন দেহ টাকে কি করে আটকাবে সেটাই বুঝে আসছে না দিশার! কোনো উপায় না পেয়ে দেয়ালের সাথে জড়সড়ভাবে দাঁড়িয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে শুরু করে। দিশার চিৎকার শুনতে পেয়ে রুমের বাহির থেকে পল্লীর সর্দারনী দৌড়ে দিশার রুমে প্রবেশ করে। দিশা পল্লীর সর্দারনীকে দেখে বলে,

–‘আমি আমার উনিকে ছাড়া এই শরীরে আর কাউকেই স্পর্শ করতে দিব না। খালা আপনি দয়া করে এই লোক থেকে আমাকে বাঁচান।’

দিশার কথা শুনে পল্লীর সর্দারনীর মন হুট করে ঘুরে যায়। সে লোকটাকে সরে আসতে বলে দিশার সামনে থেকে। কিন্তু লোকটা পল্লীর সর্দারনীর কথায় কর্ণপাত করে না। সে নিজের লালসা মিটিয়েই শান্ত হবে। লোকটার উন্মাদের মতন আচরণ দেখে পল্লীর সর্দারনী দৌড়ে গিয়ে দিশার সামনে দাঁড়ায়। এরপর লোকটাকে বলে,

–‘সাহেব দিশারে আমি আপনার লগে কোনো মতেই দিমু না। আপনি চইলা যান। আপনার টাকা আমি আপনার একাউন্টে ফিরাইয়া দিতাছি। আমার টাকার দরকার নাই। হইতে পারে আমি নিষিদ্ধ নগরীর সর্দারনী, কিন্তু আমার মধ্যে একটু হইলেও সততা থাকা উচিৎ। শুরুতে আমি প্রলোভনে পইড়া গেছিলাম। তবে এহন আমি সুস্থ মস্তিষ্কে আছি। তাই এই মাইয়ার লগে আপনারে আমি কোনো মতেই কাম করতে দিমু না।’

লোকটা এতোটাই উন্মাদ হয়ে গেছে, যে সে পল্লীর সর্দারনীর কথা শুনে তাকে হুমকি দিয়ে বলে,

–‘দেখুন আমায় রাগতে বাধ্য করবেন না। তাহলে কিন্তু আপনার জন্যেও খারাপ হবে বিষয়টা। আমায় যদি না করার হতো তাহলে শুরুতেই করতেন। টাকার প্রলোভনে পড়ে এই মেয়ের কাছ অব্ধি নিয়ে এসেছেন, এখন আবার বলছেন ওর সাথে কাজ করতে দিবেন না। কি মগের মুল্লুক নাকি সব কিছু? সরে যান ওর কাছ থেকে। আমি মাঝপথ থেকে ফিরে যাওয়ার মতন লোক নই।’

–‘টাকার লোভে পড়াটাই আমার ভুল হইছে। আর আমি এর লাইগা ক্ষমা চাইতাছি আপনের থেইকা। আপনি দয়া কইরা ওর কথা মাথা থেইকা ঝাইড়া ফালান। আমি আপনার টাকা আপনারে ফেরাইয়া দিতাছি।

লোকটা চলে যেতেই নারাজ। সে দিশার সাথে কাজ করেই এখান থেকে যাবে। কিন্তু পল্লীর সর্দারনী তার পথের কাটা হয়ে দাঁড়ায়িছে। তাই সে রেগে গিয়ে পল্লীর সর্দারনীকে দিশার সামনে থেকে টান দিয়ে সরিয়ে দিশার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। লোকটার এমন আচরণে দিশা চোখ বুঝে বিকট আওয়াজে একটা চিৎকার মারে। কারন তার শরীরে আবারে দাগ লাগতে চলেছে। সে তার শরীর টাকে একজনের নামে লিখিত করে দিয়েছে। তার শরীরটা এখন একজনের আমানত। সে এই আমানতের বরখেলাপ কখনোই করবে না। কিন্তু বর্তমানে এই অসাধু লোকটা তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে সর্বত্র হাতিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টায় লেগেছে। এই বুঝি তার সব শেষ….

চলবে….

কুহেলিকা পর্ব-১০

0

#কুহেলিকা (পর্ব-১০)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

আকাশ দিশার হাত ধরে নিয়ে ফ্ল্যাটের বাকি রুম গুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে। দু’জনের মনে খুশির জোয়ার বইছে। প্রভার দেওয়া কষ্টের কথা আকাশ বলতে গেলে ভুলেই গিয়েছে। সে এখন দিশাকে নিয়ে মেতে আছে। অন্যদিকে প্রভা আকাশের থেকে দিশাকে কি করে আলাদা করা যায় সেটার ভয়াবহ একটা প্ল্যান সাজিয়ে বসে আছে। এক কথায় আকাশ শুধু তার। যে কোনো মূল্যে আকাশকে তার চাই। সে সেটার জন্য খু/না/খু/নি করতেও দ্বিধাবোধ করবে না। প্রভা ইতিমধ্যে দিশাকে আকাশ থেকে দূরে সরানোর একটা পারফেক্ট প্ল্যান বানিয়ে ফেলেছে। এখন খালি সেই প্ল্যান মোতাবেক মাঠে নামা বাকি। এদিকে আকাশ দিশাকে পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখায়। আর তার সাথে পুরো বাড়িতে কোথায় কি সেট করবে সেটা দিশার সাথে পরামর্শ করতে থাকে। আকাশের আচরণে দিশার মনে হচ্ছে সে যেনো আকাশের বিয়ে করা বউ। আর আকাশ এজন্যই তার সাথ সব বিষয় নিয়ে পরামর্শ করছে। দিশার কাছে বেশ লাগছে ব্যাপার গুলো। অন্যদিকে আকাশ আর দিশার সম্পর্কের সমীকরণ প্রতিনিয়ত জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। কখনো কখনো দিশার প্রতি আকাশের আচরণ দেখে মনে হয় সে তার অর্ধাঙ্গিনী, তার উপর আকাশের সব ধরনের অধিকার আছে। সে মুহূর্তে দিশার সত্যি সত্যিই একটা ছোট্ট সংসারের স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু পরমুহূর্তেই সেই স্বপ্ন কাচের মতো ভেঙে গুড়িয়ে যায়। আকাশ হয়ে ওঠে সম্পূর্ণ অপরিচিত গোয়ার প্রকৃতির মানুষ। এই আকাশকে দিশা প্রচুর ভয় পায়। আবার মনে মনে তাকে ভালোবাসে। আকাশের আচরণ এবং তার স্পর্শে দিশার মনে ভালোলাগার রেশ রেখে যায়, এ রেশ কাটানোর ক্ষমতা দিশার নেই। অদ্ভুত গোলকধাঁধায় আঁটকে গেছে দুজনে, এর প্রতিকার কি? এর ইতি কোথায়? দিশা আকাশের মনোমুগ্ধকর আচরণে নেগেটিভ চিন্তা-ভাবনা বাদ দিয়ে রেখে আকাশ আর তাকে নিয়ে পজিটিভ চিন্তা-ভাবনা করতে থাকে।

–‘ইশ আমার কল্পনা গুলো যদি সত্যি হতো। আমি যদি এই মহান মানুষটার স্ত্রী হতাম। হ্যাঁ মানুষটার অনেক রাগ, কিন্তু মনটাও তো অনেক ভালো। রাগলে না হয় নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে। তবে ভালোবাসতে সময় তো একদম নিজের সব টুকু দিয়ে ভালোবাসে। এই যে আমি নিষিদ্ধ নগরীর দেহ ব্যবসায়ী একটা মেয়ে, আমায় তো সবাই দেহ বিক্রেতা নামে চিনে। সবাই আমাদের কাছে নিজের খিদে মিটাতে আসে। একগাদা টাকা ছুঁড়ে মেরে শরীরটাকে নিজেদের ইচ্ছে মতন চিবিয়ে খায়। কেউ কখনো জিজ্ঞাস করেনা আমাদের কি চাই। কেউ কখনো আমাদের ভিতর টাকে বুঝার চেষ্টা করে না। তাঁদের পুরুষত্ব মিটানোর জন্য একটা শরীর চাই। তারা সেটা পেয়ে গেলে ডানে বায়ে তাকানোর মতন প্রয়োজন মনে করে না। হিংস্র পশুর ন্যায় শরীর টাকে চিবিয়ে খেয়ে চলে যায়। কেউ আমাদের শরীর টাকে ছাড়া আমাদের মন টাকে প্রায়োরিটি দেয় না। সেখানে এই লোকটা আমার মতন একটা মেয়েকে পল্লীতে থেকে নিয়ে এসে নিজের স্ত্রীর মতন মর্যাদা দিচ্ছে। আমি জানি আমার কোনো যোগ্যতাই নেই এই লোকের স্ত্রী হবার। আর কখনো হতেও পারবো না। তবে লোকটা আমাকে সাময়িকের জন্য যেভাবে প্রায়োরিটিটা দিচ্ছে, সেটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি কখনো কারোর স্ত্রী হতে না পারলেও স্ত্রী হবার স্বাদ আমি পেয়ে গেছি। এই মহান মানুষটা আমাকে সেই স্বাদ পাইয়ে দিতে সাহায্য করেছে। তাই এখন থেকে কোনো ভাবেই মানুষটার মনে কষ্ট দিব না। উনার সমস্ত রাগ আমি হাসিমুখে মেনে নিব। যেখানে কেউ আমাদের কষ্টই বুঝে না, সেখানে এই মানুষটার থেকে আমি প্রায়োরিটি পাচ্ছি, তাহলে তার রাগ আমি সহ্য করতে পারবো না কেন, অবশ্যই আমি পারবো। আমাকে পারতে হবে।’

দিশা এসব নিয়ে কল্পনা করতে করতে ভাবনার জগতে বিচরণ করে। আকাশ দিশার বেখেয়ালি ভাব দেখে দিশাকে জিজ্ঞাস করে,

–‘এই দিশা তুমি এতো মন দিয়ে কি ভাবছো?’

আকাশের কথায় দিশার হুঁশ ফিরে আসে। হুঁশ ফিরে আসার পর স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় আকাশকে বলে,

–‘না তেমন কিছু না।’

–‘আমি দেখতেই পাচ্ছি দিশা। তুমি আমায় বললেই তো আর হবে না। মানুষের চেহারা দেখে আন্দাজ করে নেওয়া যায় সে কোন মনোভাবে আছে। তো এবার চটাচট বলে ফেলো কি ভাবছিলে।’

–‘আচ্ছা আপনাকে একটা প্রশ্ন করি যদি কিছু মনে না করেন?’

–‘দিশা আমাকে কিছু বলার জন্য তোমার খানিক বাদে বাদে অনুমতি নিতে হবে না। তুমি আমায় অনুমতি ছাড়াই যে কোনো প্রশ্ন করতে পারো।’

–‘আচ্ছা আপনি আমায় নিয়ে পল্লীর সর্দারনীর সাথে কতোদিনের চুক্তি করেছেন?’

–‘সারাজীবনের জন্য।’

–‘মানে বুঝলাম না? আপনি কি কখনো বিয়ে করবেন না নাকি? আর আমার মতন মেয়েকে নিয়ে সারাজীবন চুক্তি কেন করেছেন? আমার জন্য তো আপনার সংসার জীবনে সমস্যা হতে পারে।’

–‘জানি না আমি কেন তোমায় নিয়ে পল্লীর সর্দারনীর সাথে চুক্তি করেছি! তবে এটুকু বলতে পারি তুমি আমার সাথে আজীবন থাকবে।’

–‘কি করে সম্ভব এমনটা? আপনি কি বিয়েসাদী করবেন না? আর তাছাড়া মানুষ কি বলবে?’

–‘হ্যাঁ দরকার হয় বিয়ে করবো না। তোমায় নিয়ে এভাবেই বিয়ে ছাড়া আজীবন কাটিয়ে দিব। আর মানুষ কি বলবে সেসব নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। কারন মানুষের খাই না পড়িও না। আমার লাইফ আমি কি ভাবে লিড করবো সেটা একান্তই আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার।’

–‘এটা কোনো কথা বলুন? মানুষের কথায় না হয় কান দিলেন না, কিন্তু আপনি একটা নষ্টা মেয়ের সাথে এভাবে কি করে সারাজীবন কাটাবেন? আপনার তো পার্সোনাল একটা লাইফ আছে। খামোখা আমার জন্য সেটাকে বরবাদ কেন করছেন?’

দিশার কথায় আকাশের আবারো রাগ উঠে যায়। আকাশের রাগ উঠা মানে তো সকলেই জানেন কি ঘটবে এখন। হ্যাঁ আকাশ আবারো কোষে থাপ্পড় লাগিয়ে দিয়েছে দিশার গালে। তারপর দিশাকে টেনে নিয়ে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে তার গলার চেপে ধরে হুংকার দিয়ে বলে,

–‘তোকে এক কথা কয়বার বলতে হয় রে? আমি তোকে আগেও বারন করেছি নিজেকে নিয়ে একটা বাজে কথাও বলবি না। কিন্তু তার পরেও তুই আবারো নিজেকে নষ্টা বলেছিস। এই তোর সমস্যা কি? সাহস খুব বেড়ে গেছে তোর? না তোর সাথে একটু ভালো ভাবে কথা বলি দেখে কারেন্ট এসে গেছে শরীরে কোনটা?’

আকাশের হাতে থাপ্পড় খেয়ে দিশার আবারো চোখের পানি পড়তে শুরু করে। দিশা নীরবে কেঁদে যাচ্ছে। গলা দিয়ে কোনো সাউন্ড বের হচ্ছে না তার। আর বের হবেই বা কি ভাবে, আকাশ যে জোরে তার গলা চেপে ধরেছে, এতে করে তার নিশ্বাস নিতে পর্যন্ত কষ্ট হচ্ছে। দিশার নীরবতা দেখে আকাশের রাগের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। দিশা যে তার হাতে থাপ্পড় খেয়ে কান্না করছে সেই দিকে আকাশের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। আকাশ পুরো উন্মাদ হয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে দিশাকে আস্তো গিলে খেয়ে নিতে। নিজের শরীর থেকে আকাশ কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছে। কি করবে সে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না! রাগ যেনো আকাশকে পুরো হিংস্র পশু বানিয়ে দিয়েছে। দিশাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের মাথার চুল টানতে আরম্ভ করে। কিন্তু এতেও কোনো কাজ হয় না। যার দরুন হুট করেই সে দিশার বুক থেকে শাড়ী টান দিয়ে সরিয়ে ফেলে। এরপর হিংস্র পশুর ন্যায় দিশার বুকের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আকাশ নিঃসংকোচে দিশার বুকের মাদকতা গ্রহণ করছে। আকাশের আচরণে মনে হচ্ছে দিশা যেনো তার বিয়ে করা বউ। অপরদিকে দিশা দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে মূর্তির ন্যায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে চোখের পানি ফেলছে। কোনো প্রকার কোনো সাড়াশব্দ করছে না। আকাশ যে তার বুকের উপরে হিংস্র পশুর ন্যায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে সেটা নিয়েও কোনো প্রকার প্রতিবাদ করছে না দিশা। আর প্রতিবাদ করবেই বা কি ভাবে, দোষ তো তার। সে যদি আকাশকে রাগিয়ে না দিতো, তাহলে তো কখনোই আকাশ তার সাথে এমনটা করতো না। সে দোষ করেছে বিধায় এখন সে সাজা পাচ্ছে। আধঘন্টা খানিক আকাশ তাকে এভাবে সাজা দেয়। আধঘন্টা পর আকাশের রাগ কমে যাওয়ায় সে দিশাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,

–‘এই দিশা কেন তুই এমন করিস? তুই কি বুঝিস না আমার যে খুব কষ্ট হয়? তুই কি বুঝিস না আমি খুব কষ্টে আছি। তারপরেও কেন তুই আমার সাথে এভাবে কথাবার্তা বলিস? আমি তো তোকে এনেছি নিজের কষ্ট দূর করতে। কিন্তু তুই তো আমার কষ্টকে আরো প্রসার করে দিচ্ছিস। আচ্ছা আমি কি তোকে নিজের কাছে রাখতে চেয়ে কোনো পাপ করেছি?’

দিশা আকাশের কথার কোনো উত্তর দেয় না। চুপচাপ কাঁদতে থাকে আগের ন্যায়। আকাশ দিশার নীরবতা দেখে আবারো দিশাকে জিজ্ঞাস করে,

–‘দিশা আমার কথার উত্তর দে। আমি কি তোকে নিজের কাছে রাখতে চেয়ে কোনো পাপ করেছি? তুই কেন বারবার ঐ নোংরা কথা বলে আমায় আঘাত করিস? তুই কি বুঝিস না তোর সেসব কথায় আমার ভিতরেও আঘাত লাগে?’

এবার দিশা আকাশের কথায় মুখ খুলে।

–‘না আপনি কোনো পাপ করেন নি।’

–‘তাহলে কেন বলিস ওসব কথা? আমি তো তোকে এর আগেও বারন এমন কথা বলতে। তাহলে কেন তুই বারবার ঘুরেফিরে সেই একই কথা মুখে আনিস?’

আকাশের কথা শুনে দিশা আকাশের একটা হাত টেনে নিয়ে তার বুকের উপরে রাখে। এরপর হাত টাকে ধরে নিজের বুকের সমস্ত অঙ্গে স্পর্শ করাতে করাতে বলে,

–‘আর কখনোই ওমন কথা মুখে আনবো না। এই যে নিন আপনার হাত আমার বুকের সমস্ত অঙ্গে ছুঁইয়ে দিয়েছি। আমি আগে নিজেকে অপবিত্র ভাবতাম। কিন্তু এখন আমি পবিত্র। মানুষের পবিত্রতা তার মনে থাকে। আমার মনটা কোথায় সেটা আমি জানি না! হয়তো গলার নিচ থেকে নিয়ে শুরু করে নাভীর উপরিভাগের কোনো একটা অংশে আমার মন আছে। এজন্য আমি আপনার পবিত্র হাত আমার সারা বুকে ছুঁইয়ে নিজেকে পবিত্র করে নিয়েছি। আপনি আবার ভাববেন না যেনো আমার তাড়না জেগেছে। যদি এমনটা হতো তাহলে এতোটা সময় আমি নিশ্চুপ থাকতাম না। আমার সারাটা বুকেই তো এতোটা সময় আপনি স্পর্শ করেছেন। কিন্তু আমি নিজেকে সামলে নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার যদি তাড়ানা জাগতো, তাহলে আমি বহু আগেই কান্না থামিয়ে আপনার সাথে মেতে উঠতাম। আমি কিন্তু সেটা করিনি। আর এখন যেটা করেছি, সেটা নিজের শুদ্ধতার জন্য করেছি। আমার মনে হয়েছে আপনার পবিত্র স্পর্শে নিজেকে পবিত্র করা সম্ভব। তাই আমি এমন টা করেছি। আর তার চাইতেও বড় কথা আগামীতে আমার মুখে আর কোনো ধরনের বাজে কথা শুনবেন না। যদি শুনতে পান তাহলে তখনি গলা টিপে আমায় মেরে ফেলবেন। অনেক হয়েছে উল্টো-পাল্টা কথা। আমাদের একটা নীতি আছে। কাস্টমারের মন যুগিয়ে আমরা তাদেরকে সার্ভিস দেই। অবশ্য আপনি আমার কাস্টমার নন। আপনি হচ্ছেন আমার খুব কাছের একজন। আপনি যেসব সহ্য করতে পারেন না, আমি চাইনা ঐসব কথা আর আপনার সামনে মুখ দিয়ে বের করি।’

আকাশ দিশার আচরণ এবং তার কথা শুনে কিছুটা সময় দিশার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে। এরপর নিজেকে সামলে নিয়ে দিশাকে বলে,

–‘তোমার মতন একটা মানুষ যার লাইফে থাকবে তার আর কিছুই প্রয়োজন নেই। দিশা আমি ক্ষমাপ্রার্থী তোমার সাথে এভাবে রাগারাগি করার জন্য। আমার উচিৎ হয়নি তোমার সাথে তুইতোকারি করা এবং তোমার গলা চেপে ধরা। তাই তোমার কাছে মন থেকে ক্ষমা চাচ্ছি।’

–‘আপনার ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কারন আপনার রাগের চাইতেও আপনার ভালোবাসার মাত্রাটা অনেক বেশি। আপনার এই ছোটো খাটো রাগ আমি সহ্য করার ক্ষমতা রাখি। তাই অনুগ্রহ করে আমার কাছে ক্ষমা চাইবেন। আমি চাইনা আপনি আমার কাছে ছোট হোন।’

দিশার কথা শুনে আকাশ খপ করে দিশাকে নিজের বুকে টেনে নেয়। বুকে টেনে নেওয়ার পর দিশার ঠোঁটে এবং কপালে আলতো করে চুমু একে দিয়ে বলে,

–‘আমি মনের মানুষ পেয়ে গেছি। আমি এখন নিজেকে এই মনের মানুষের জন্য তৈরী করে নিব।’

–‘মানে?’

–‘মানে টা এখন বলা যাবে না। সময় হলে এর মানে তুমি নিজেই জেনে যাবে। এখন চলো এখান থেকে। অনেক সময় হয়ে এসেছে। তোমায় পল্লীতে নামিয়ে দিয়ে বাসায় যেতে হবে। তারপর আবার এই ঘরের জন্য জিনিসপত্র অর্ডার করতে হবে। অনেক কাজ আমার।’

–‘আচ্ছা চলুন।’

আকাশ আর দিশা বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে পড়ে। আকাশ দিশাকে গাড়ি করে এনে পল্লীর সামনে নামিয়ে দিয়ে সে বাসার উদ্দেশ্যে গাড়ি টেনে চলে যায়। এদিকে দিশা গাড়ি থেকে নামতেই একটা সুট বুট পড়া লোক দিশার পিছু নেয়। লোকটা দিশার দিকে লালসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার পিছু পিছু হাঁটতে আরম্ভ করে। দিশার এতো কিছু খেয়াল নেই। সে আপন মনে হাঁটতে থাকে। কিন্তু দিশার ধারণাতেও নেই, যে কোনো এক নরপিশাচ অসাধু মতলব নিয়ে তার পিছু নিয়েছে….

চলবে….

কুহেলিকা পর্ব-০৯

0

#কুহেলিকা (পর্ব-৯)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

–‘এই যে দ্যাখ আমার বউ। এই মেয়ের জন্যই আমি এখানে এসেছি। এখন তোর সামনে আমি ওকে নিজের কাছে টেনে নিব। আমি এখন তোর সামনেই ওর শরীরের হাজারটা অঙ্গে করবো। তুই খালি চোখ পাকিয়ে দেখে থাক। তুই যদি পারিস পরপুরুষ নিয়ে বিছানায় যেতে, তাহলে আমিও পারবো তোর সামনে এই মেয়ের শরীরে স্পর্শ করতে।’

আকাশ প্রভার সামনে দিশাকে স্পর্শ করবে এই কথাটা বলে শেষ করতে না করতেই আকাশ দিশাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে প্রভার সামনেই দিশার ঠোঁট জোড়ায় পাগলের মতন চুমু খেতে আরম্ভ করে। দিশা আকাশের এমন কর্মকান্ডে বিস্মিত হয়ে যায়! যদিও দিশা এই নিষিদ্ধ নগরীর বাসিন্দা, তার কাছে এমন ছোটখাটো স্পর্শ কোনো মাইনে রাখে না। তবে তারপরেও দিশার কেমন যেনো একটা ফিল হচ্ছে। তার উপরে আকাশ তার ভালোবাসার মানুষের সামনেই দিশাকে নিজের বউ বলে দাবী করছে। ব্যাপারটা দিশার কাছে বেশ আনন্দদায়ক লাগছে। দিশা এক কল্পনার রাজ্য হারিয়ে গেছে। আর হারাবে নাই বা কেন, নিত্যদিন পল্লীতে অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করে। সবাই নিজের তাড়না মেটাতে আসে, কিন্তু এই প্রথম কেউ একজন পল্লীতে দাঁড়িয়ে পল্লীর এক রমণীকে নিজের বউ বলে দাবী করছে। আকাশের স্পর্শে দিশা পুরো নিজের হুঁশ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। “অপরিদকে প্রভা আকাশের এই দৃশ্য দেখে রেগে মেগে আগুন। তার ভিতরটা যেনো উত্ত্যক্ত লাভার মতন খলখল করছে। তার সামনেই তার ভালোবাসার মানুষটা অন্য কাউকে জোর গলায় বউ বলে দাবী করছে। শুধু তাই নয়, তার সামনেই দাঁড়িয়ে তার ভালোবাসার মানুষটা পল্লীর এক পতিতা নারীকে স্পর্শ করছে। প্রভা যেনো এই বিষয় টাকে কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছে না। অবশ্য যদিও সে নিজে সেম ভুলটাই করেছে, কিন্তু তার পরেও কেন জানি আকাশের সাথে অন্য মেয়েকে সে কোনো ভাবেই সহ্য করতে পারছে না। তার যেনো মনে হচ্ছে তার কলিজাটা হিংস্র পশুর ন্যায় বের করে কেউ চিঁড়ে ফুড়ে খেলা করছে। নিজেকে সে কোনো ভাবেই সামাল দিতে পারছে না। মাটি থেকে উঠে সোজা গিয়ে দিশার চুল ধরে টেনে তাকে আকাশ থেকে আলাদা করে বলে,

–‘এই মেয়ে তুই একদম আমার আকাশের গায়ে ঘেঁষবি না। সে খালি আমার। সে খালি আমার দেহতেই স্পর্শ করবে। আমি বাদে কোনো নারীকে স্পর্শ করতে দিব না আমি তাকে। তাই তুই আকাশ থেকে দূরে থাক। না হয়তো অনেক বেশি খারাপ হবে।

প্রভার আচরণ দেখে আকাশের মাথায় রক্ত উঠে যায়। সে সোজা গিয়ে প্রভার গালে সজোড়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলে,

–‘তুই কোন সাহসে দিশার চুল ধরে টান দিয়েছিস?’

–‘আকাশ তুমি পল্লীর একটা নোংরা মেয়ের জন্য আমার গায়ে হাত তুললে? তোমার কি একটুও হাত কাঁপলো না এমনটা করতে?’

–‘প্রভা মুখ সামলে কথা বল। না হয় থাপ্পড় আরো কয়েকটা লাগিয়ে দিব তোকে। আর তুই কি বললি? সে পল্লীর নোংরা মেয়ে? তাহলে তুই কি? তুই তো ওর থেকেও জঘন্য। সে তো টাকার বিনিময়ে মানুষের সাথে ওসব করে। আর তুই তো শারীরিক তৃপ্তি মেটাতে ফারহানের সাথে এমনটা করেছিস। তাহলে আমার হাত কাঁপবে কেন? তুই ভুল করেছিস তাই তুই সাজা পেয়েছিস।’

–‘আকাশ তুমি আমার মেরেছো ঠিক আছে, কিন্তু তাই বলে তুমি আমার সামনেই এই নষ্টা মেয়েটাকে চুমু খাবে?’

–‘সবে তো মাত্র চুমু খেয়েছি। আরো তো বহু কিছু এখনো বাকি আছে। সময় আসলে তাকে শুধু চুমু নয়, তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করবো। তার পুরো শরীরে আমি চুম্বন করবো। তার গর্ভে আমার সন্তান হবে।’

–‘আকাশ না তুমি এমনটা কখনোই করবে না। তোমার চাহিদা তুমি আমার সাথে মিটাও। কিন্তু এই মেয়েটার সাথে তুমি কোনো কিছুই করবে না। আকাশ আমি তোমাকে অন্য কারোর সাথে দেখতে পারবো না। আকাশ আমি ভুল করে ফেলেছি। আমি তার জন্য তোমার পা ধরে ক্ষমা চাইছি। তুমি প্লিজ এবারের মতন আমার ক্ষমা করে দাও।’

–‘প্রভা তোর মতন মেয়ের মুখে এসব ক্ষমা টমার কথা মানায় না। কারন নষ্টা এই মেয়ে না, নষ্টা হলি তুই। সে তোর মতন শারীরিক চাহিদা মিটাতে এসব করে না। তার আহার যোগাতে সে এমন করে। তোর সাথে তার আকাশ-পাতাল তফাৎ। তার থেকে তোর মনমানসিকতা বর্তমানে হাজার গুন বেশি অপরিষ্কার। তোকে গ্রহণ করা কখনোই আমার পক্ষে সম্ভব না।’

–‘আকাশ প্লিজ তুমি এমমটা করো না। তোমার যা ইচ্ছে হয় তুমি আমার সাথে করো। আমার মা/রো কা/টো যা ইচ্ছে হয় করো, কিন্তু শেষ একটা বার আমায় সুযোগ দাও।’

–‘বললাম তো সম্ভব না। তোর মতন নারীকে সুযোগ দিলে সুযোগের ও অপমান হবে। তুই নিজের খিদে মিটাতে এসব করেছিস। আর এই মেয়ে তার মনের তৃপ্তির জন্য আমার সঙ্গ দিচ্ছে। আমি কখনোই এই মেয়েকে ঠুকরে তোকে গ্রহণ করবো না।’

–‘আকাশ তার মানে তুমি আমায় আর গ্রহণ করবে না?’

–‘বললাম তো না।’

–‘তাহলে শুনে রাখো, আমিও তোমাদের দু’জনকে এক হতে দিব না। তোমাদের দু’জনের জীবনের সব চাইতে বড় কাটা হয়ে দাঁড়াবো আমি। তুমি আমার না হলে তোমাকে আমি কারোর হতে দিব না।’

–‘সে তোর যা করার করে নিস। আমিও দেখতে চাই তুই কি কি করতে পারিস। এবার চললাম। তোর সাথে অহেতুক কথা বলে নিজের সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না।’

আকাশ প্রভার সাথে কথা শেষ করে দিশাকে প্রভার সামনেই কোলে উঠিয়ে নিয়ে হাঁটা শুরু করে। আকাশের আচরণে প্রভার চোখ দিয়ে টলমল করে পানি পড়ছে। কিন্তু কি লাভ চোখের পানি ঝড়িয়ে। ভালোবাসার অপমান করে পরমপুরুষের সাথে রংতামাশায় লিপ্ত হলে তো এমনটাই হবে। প্রভা অশ্রুভেজা দৃষ্টিতে আকাশ আর দিশার দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশ প্রভার দিকে আর দৃষ্টিপাত না করে সোজা দিশাকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে হাঁটা দেয়। হাঁটতে হাঁটতে নিষিদ্ধ নগরী অতিক্রম করে গাড়ির সামনে এসে পৌঁছায়। গাড়ির সামনে পৌঁছানোর পর গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে দিশাকে একপাশে বসিয়ে দিয়ে সে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। এরপর গাড়ি স্টার্ট করে নতুন বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। দিশাকে নতুন বাসা দেখানোর জন্যই শাড়ী পড়ে রেডি হয়ে থাকতে বলেছিল। আকাশ মনমরা হয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে, কারন তার ভিতরেও প্রভার জন্য খারাপ লাগছে। যতোই হোক প্রভাকেও তো সে ভালোবাসতো। নিজেকে সামলে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে আকাশ। অপরদিকে দিশা আকাশের পাশের সিটে বসে চুপচাপ এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। দিশা আকাশের মনের ভিতরে কি চলছে সেটা তার দিকে তাকিয়ে থেকে অনুভব করার চেষ্টা করছে। আকাশের মলিন চেহারা দিশাকে কিছুটা বুঝতে সাহায্য করেছে, কিন্তু মনের ভিতরে কি চলছে আকাশের সেটা এখনো দিশা বুঝে উঠতে পারেনি। দিশার নজর যেনো আকাশের চেহারা থেকে সরছেই না। এমন সময় আকাশ হুট করেই দিশাকে বলে উঠে,

–‘দিশা এভাবে তাকিয়ে না থেকে আমার কষ্ট তো কমাতে পারো।’

দিশা আকাশের কথা শুনে থতমত খেয়ে যায়!
দিশার স্বাভাবিক চাহনিটা পাল্টে গেছে। চোখ গুলো কপালে তুলে কপাল কুঁচকে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে দিশা। এমন সময় আকাশ দিশাকে আবারো বলে উঠে,

–‘বুঝো নি হয়তো আমার কথা। অবশ্য বুঝবে কি করে, আমি তো পরিষ্কার ভাবে তোমায় বলিনি। শুনো আমি তোমায় বলতে চাইছি তুমি আমার নিকটে এসে একদম গা ঘেঁষে বসো। যাতে করে তোমার শরীরের মাদকতা আমার ভিতর থেকে সমস্ত কষ্ট দূর করে দেয়।’

দিশা আকাশের কথা মতন চুপচাপ আকাশের কাছে গিয়ে বসে। এরপর আকাশকে বলে,

–‘আচ্ছা আপনি এমন উন্মাদ কেন বলেন তো?’

–‘তোমার এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে থাকলেও আমি তোমাকে সেটা দেওয়ার অবস্থায় নেই। তাই এখন এসব প্রশ্ন বন্ধ করে আমার আরো কাছে আসো।’

–‘আসলাম তো কাছে। আর কতো কাছে যাবো?’

–‘তোমার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আমার শরীরে স্পর্শ হয় মতন করে আমার কাছে এসে বসো।’

দিশা আকাশের কথায় কিছুটা লজ্জা পায়। তবে সে আকাশের কথা অমান্য করে না। আকাশের একদম গা ঘেঁষে গিয়ে বসে। এরপর দিশা আকাশকে বলে,

–‘হয়েছে এবার?’

–‘না হয়নি। আমার কোলে এসে বসো। তোমার শরীরের উষ্ণতা প্রয়োজন আমার।’

–‘না আমি আর কাছে যেতে পারবো না। কারন আপনি গাড়ি ড্রাইভ করছেন। আমি আপনার আরো ঘনিষ্ঠ হলে দেখা যাবে আপনি ড্রাইভ করা বাদ দিয়ে রেখে আমায় নিয়ে মেতে উঠবেন, যার ফলে গাড়ি এক্সিডেন্ট করে বসবে।’

দিশা দু’জনের ভালোর জন্যই আকাশকে কথা গুলো বলে, কিন্তু দিশার কথা শুনে আকাশের কেন জানি চরম রাগ উঠে যায়। আকাশ হুট করে গাড়ি থামিয়ে দিশার গালে সজোড়ে একটা থাপ্পড় মেরে দিয়ে বলে,

–‘এই পল্লীর মেয়ে, আমার কথার উপরে কথা বলার সাহস কি করে পেয়েছিস তুই? তোকে পুরো আমি টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছি। আমি কোনো কথা মুখ দিয়ে বের করা মাত্রই তুই সেটাকে চটাচট পালন করবি। কিন্তু তুই তা না করে আমার মুখের উপরে কথা বলিস?কতো বড় সাহস তোর? এখন চুপচাপ আমার কোলে এসে বসে আমায় দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বুকে পড়ে থাক। না হয় থাপড়ে তোর গাল লাল করে দিব আমি।’

আকাশের ভয়ানক বার্তা শুনে দিশা চুপচাপ আকাশের কোলে বসে তাকে দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রাখে। আর আকাশ গাড়ি স্টার্ট করে চুপচাপ আবার ড্রাইভ করতে শুরু করে। অবশ্য সে চুপচাপ থাকলেও তার ভিতরটা কেন জানি রাগে ফেটে যাচ্ছে। সে চুপচাপ থেকে নিজের রাগের উপরে কন্ট্রোল পাবার চেষ্টা করছে। অপরদিকে দিশার ভিতরটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। একটু আগে বলা আকাশের সমস্ত কথা যেনো দিশার কলিজাটাকে চিঁড়ে টুকরো টুকরো করে করে দিচ্ছে। চোখের কোনে পানি এসে জমা হয়েছে। এখুনি যেনো আকাশের বুক দিশার চোখের পানিতে ভেসে যাবে, কিন্তু দিশা আড়াল করে চোখের পানি মুছে নেয়। কারন তার কান্না করাটা মানায় না। সে এখন অন্যের ক্রয় করা পাত্রী। তার ক্রেতা এখন যেভাবে চায় সেভাবেই তার সাথে ব্যবহার করতে পারে। তাই নিজের কান্নাকে দমিয়ে চুপচাপ আকাশের বুকে পড়ে থাকে। এদিকে আকাশ গাড়ি ড্রাইভ করে তার বাবার দেওয়া বাড়ির সামনে এসে পৌঁছায়। বাড়ির সামনে পৌঁছানোর পর মিষ্টি গলায় দিশাকে গাড়ি থেকে নামতে বলে। আকাশ তার রাগের উপরে পুরোপুরি কন্ট্রোল নিয়ে নিয়েছে। দিশা আকাশের কথায় চুপচাপ আকাশকে ছেড়ে দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। দিশার পর পর আকাশ ও গাড়ি থেকে নেমে দিশার হাত ধরে তাকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায়। দিশা পুরো কাঠ-পুতলির মতন হয়ে গেছে। তার চেহারায় কোনো হাসি নেয়। আকাশের সাথেও সে কথা বলছে না। আকাশ তাকে যেমনটা করতে বলে সে তেমনটাই করছে। আকাশ দিশাকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গিয়ে পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখায়। আর কোথায় কি সেট করবে সেটা দিশাকে বলতে থাকে। দিশা চুপচাপ আকাশের কথা শুনে যায়। আকাশ দিশার মন খারাপের ব্যাপারটা কিছু সময় যেতেই বুঝে ফেলে। তাই আকাশ দিশাকে একটা জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে। এরপর সামনের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বলে,

–‘দিশা ঐ যে সামনে জায়গাটা দেখছো, সেখানে একটা ড্রেসিংটেবিল ফিট করবো। যার মধ্যে বিশাল একটা আয়না থাকবে। তুমি রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে সেই আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াবে, আর আমি তোমাকে পিছন থেকে ঠিক এভাবেই জড়িয়ে ধরে তোমার কাঁধে গলায় অগণিত চুমু খাবো। তুমি মাঝে মাঝে যখন আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে সাজগোজ করবে, তখন আমি হুট করে এসে তোমার রূপের ব্যাপক প্রসংশা করবো। তখন তুমি লজ্জায় লাল হয়ে আমার বুকে মুখ লুকাবে।’

–‘হ্যাঁ আর না লুকালে তখন আমার চুল টেনে ধরে কয়েকটা থাপ্পড় মেরে বলবেন, তুই নিষিদ্ধ নগরীর মেয়ে। তোকে দিয়ে কিছুই হবে না।’

দিশার কথা শুনে আকাশের বুকের ভিতরে ছ্যাঁত করে উঠে। চটজলদি দিশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বুকের সাথে লেপ্টে জড়িয়ে ধরে। এরপর শান্ত গলায় বলে,

–‘প্রিয়তমা ক্ষমা করে দাও আমায়। আসলে ঐ সময় আমার মাথা ঠিক ছিল না। আমি আসলে তোমায় সেভাবে বলতে চাইনি। হুট করেই কি ভাবে যেনো আমার মুখ থেকে ওইসব কথা বেরিয়ে গেছে। প্লিজ তুমি আমায় ভুল বুঝো না দিশা। দিশা তুমি ছাড়া বর্তমানে আমার আর কেউ নেই। আমি তোমার মাঝে নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করছি। তুমি যদি আমায় ভুল বুঝো, তাহলে আমার মরন হবে নিশ্চিত তুমি সেটা লিখে নাও।’

আকাশের কথায় দিশা হু…হু করে কেঁদে উঠে। তার ভিতরটা কেমন যেনো ধুপধুপ করছে আকাশের কথা শুনে। মনে হচ্ছে দিশার কলিজায় কেউ চাকু ঢুকিয়ে দিয়েছে। দিশার কান্না দেখে আকাশ দিশাকে বলে,

–‘দিশা কেঁদো না প্লিজ। তোমার কান্না আমার বুকে গিয়ে লাগছে।’

আকাশের কথা শুনে এবার দিশার রাগ উঠে যায়। তাই সে আকাশের বুকে কামড়ে দিয়ে বলে,

–‘বদ লোক তুই আমায় কাঁদিয়ে দিয়ে বলছিস না কাঁদার জন্য? আমায় এটা সেটা বলাতে আমার ততোটা খারাপ লাগেনি, যতোটা তোর মরনের কথা শুনে এখন লাগছে। এই বদ লোক তুই কি জানিস, আমার দুনিয়ায় তোর নাম করে ভূমিকম্প হচ্ছে? এই বদ লোক তুই কি জানিস, আমার দুনিয়ায় তোর জন্য বৃষ্টি হচ্ছে? জানিস তো না। অবশ্য জানবি কি ভাবে, তুই তো পাষাণ। মুখে যা আসে তাই বলে দিস। তোর কথায় কারোর হৃদয় ক্ষত হবে সেই খেয়াল কি তোর আছে?’

–‘দিশা আমার ভুল হয়ে গেছে। আগামীতে এমন কথা আর কখনোই বলবো না।’

–‘মনে থাকে যেনো কথাটা। তোর মুখ থেকে যদি আগামীতে এমন ধরনের কথা শুনি, তাহলে আমি নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিব।’

–‘এই না,না আর কখনো ওসব বলবো না।’

–‘মনে থাকে যেনো।

–‘হুম মহারানী মনে থাকবে।’

–‘এবার চলুন বাকি যেসব রুম দেখা হয়নি সেসব আমায় ঘুরে ঘুরে দেখাবেন। আর আমিও ক্ষমাপ্রার্থী তুই-তুকারী করার জন্য।’

–‘দিশা ক্ষমা চাওয়ার কিছুই নেই। কারন তোমার রাগটা আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি, বরং আরো ভালোই লেগেছে। তুমি মাঝে মাঝে আমার সাথে এভাবে তুইতোকারি করবে। এবার চলো বাকি রুম গুলো ঘুরে ঘুরে দেখি।’

আকাশ দিশার হাত ধরে নিয়ে ফ্ল্যাটের বাকি রুম গুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে। দু’জনের মনে খুশির জোয়ার বইছে। প্রভার দেওয়া কষ্টের কথা আকাশ বলতে গেলে ভুলেই গিয়েছে। সে এখন দিশাকে নিয়ে মেতে আছে। অন্যদিকে প্রভা আকাশের থেকে দিশাকে কি করে আলাদা করা যায় সেটার ভয়াবহ একটা প্ল্যান সাজিয়ে বসে আছে। এক কথায় আকাশ শুধু তার। যে কোনো মূল্যে আকাশকে তার চাই। সে সেটার জন্য খু/না/খু/নি করতেও দ্বিধাবোধ করবে না….

চলবে….

কুহেলিকা পর্ব-০৮

0

#কুহেলিকা (পর্ব-৮)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

হুট করেই আকাশ দেখে প্রভা গতকালের সেই অচেনা লোকটার সাথে হাসি-তামাশা করতে করতে পল্লীর ভিতরের একটা দালান বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে। আকাশ প্রভাকে এভাবে দেখতে পেয়ে আকস্মিক দৃষ্টিতে প্রভার দিকে তাকিয়ে আছে! চোখের কোনে পানি টলমল করছে। নিশ্বাসের প্রতিক্রিয়া যেনো স্বাভাবিক থেকে অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। স্বস্তিতে নিশ্বাসটাও নিতে পারছে না সে। মনে হচ্ছে যেনো তুর পাহাড়ের এক অংশ কেউ নির্জিত করে আকাশের বুকের উপরে রেখে দিয়েছে। নিশ্বাসের ঘনত্ব ক্রমশ বেড়েই চলেছে। প্রভা এখনো আকাশকে দেখেনি। সে অপরিচিত লোকটার সাথে হাসি-তামাশায় এতোটাই মগ্ন যে তার থেকে কিছুটা দূরে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে সেটা এখনো তার চোখে পড়েনি। আকাশ মূর্তির ন্যায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। প্রভা লোকটার সাথে হাসি-তামাশা করতে করতে কিছুটা পথ এগিয়ে আসতেই আকাশকে দেখতে পায়। আকাশের দেখা মাত্রই প্রভার মুখ থেকে হাসি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। বুকের ভিতরে কম্পন করছে প্রভার। মনে হচ্ছে যেনো এখুনি তার মনের দুনিয়াতে বেশ জোরালো একটা ভুমিকম্প হবে। দু’জন দু’জনের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে। তাদের দেখে যে কেউ বলবে ইউসুফ নবীর আমলে জোলেখা যেই দৃষ্টিভঙ্গিতে ইউসুফ নবীর দিকে তাকিয়ে ছিল, তারা দু’জন এখন একে অপরের দিকে সেই দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তবে তারা দু’জন এই খালি জানে এভাবে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকার আসল কারনটা কি। আকাশ পলকহীন ভাবে প্রভার দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু প্রভা বেশিক্ষণ সময় আকাশের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকতে পারে না। সে আকাশের তাকিয়ে থাকা দেখে লজ্জায় লাল হয়ে যায়। আকাশের চোখ থেকে নজর সরিয়ে ছেলেটাকে রেখে ধীরে ধীরে আকাশের কাছে এগিয়ে আসে। এরপর আকাশের কাছে এসে মাটির দিকে দৃষ্টিপাত করে আকাশকে বলে,

–‘কি করছো আকাশ তুমি এখানে? এই জায়গাটা তো ভালো না। তুমি এখানে কি করতে এসেছো?’

–‘ধরে নাও কারোর লীলাখেলা দেখতে এসেছি।
আর আমিও জানি এই জায়গাটা ভালো না।’

–‘লীলাখেলা মানে?’

–‘মানে টা ঐ যে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটার সাথে পল্লীর দালানকে সাক্ষী রেখে নিজের শারীরিক চাহিদা মিটিয়েছো। আমি সেই লীলাখেলার কথা বলেছি। আশা করি তুমি আমার কথা বুঝতে পেরেছো। এরপর আর অহেতুক প্রশ্ন করবে না।’

প্রভা চুপ হয়ে যায় আকাশের কথা শুনে। তার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠেছে। আকাশের সাথে এসব নিয়ে কথা বলার মতন সাহস করে উঠতে পারছে না। তখনি আকাশ প্রভাকে প্রশ্ন করে,

–‘প্রভা কেন করলে তুমি এমনটা? আমার ভালোবাসায় কি কমতি ছিল? আমার জানা মতে তো আমি তোমায় ভালোবাসতে কমতি করিনি। যখন যেটা বলেছো সেটাই করেছি। আমার জন্মদাতা পিতা-মাতার কথার যতোটা অনুগত্য করিনি, আমি তার চাইতেও হাজার গুন বেশি তোমার কথা শুনেছি। আমি ছিলাম এক লাগামহীন গরু। আমার জীবনের রশি কেউ কোনোদিন স্পর্শ করতে পারেনি এবং আমি নিজেও কাউকে স্পর্শ করতে দেইনি। কিন্তু তুমিই একমাত্র মানুষ যার হাতে কিনা আমি আমার সমস্ত কিছু তুলে দিয়েছি। আমার ব্যক্তিগত জীবনে যেই নিয়মনীতি গুলো ছিল আমি সব কিছুই তোমার জন্য ভঙ্গ করেছি। বাকি সবার জন্য বরাবরের মতোই ঠিক ছিল। আমার জীবনে বহু মানুষ আসতে চেয়েছে, কিন্তু আমি তোমার জন্য কাউকে নিজের জীবনে আসতে দেইনি। আমি ভাবতাম নীতি সবার জন্য ভঙ্গ করলে নিজের সম্মান কমে যায়। তাই তুমি বাদে দুনিয়ায় সমস্ত মানুষের জন্য আমার নিয়মনীতি খুবই শক্ত ছিল। এজন্যই কেউ আমার লাইফে আসতে পারেনি। আর সেই তুমি কিনা পরপুরুষের সাথে দিনদুপুরে এই পল্লীতে এসে রং-তামাশায় মেতে উঠেছো?’

–‘আকাশ আমার ভুল হয়ে গেছে। প্লিজ তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও।’

–‘প্রভা ক্ষমার বিষয়টা পরে আসছে। তুমি আমায় এটা বলো যে তুমি এমনটা কেন করলে? আর কি কারনে তুমি পরপুরুষের সাথে এই পল্লীতে এসেছো? আমার উত্তর চাই প্রভা।’

–‘আকাশ এই পল্লীতে মানুষ কেন আসে তুমি নিশ্চয় জানো। প্লিজ তুমি আমায় এসব নিয়ে প্রশ্ন করো না আর। আমি সব কিছুর জন্য তোমার কাছে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমায় শেষ একটা সুযোগ দাও আকাশ।’

–‘প্রভা অন্যের সাথে রং-তামাশা করতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা খেয়েছো তুমি। কোন মুখে ক্ষমা চাইছো? লজ্জা করছে না?’

–‘আকাশ কোন মুখে ক্ষমা চাইছি আমি জানি না! তবে এটুকু বলবো দোষ আমার একার নয়। আমার এসবের পিছনে তোমারো অবদান রয়েছে।’

–‘বাহ বেশ সুন্দর কথা বললে। রং-তামাশা করবে তুমি, আর অবদান থাকবে আমার?’

–‘তা নয় তো কি? তুমি কখনো ভালোবেসে একটা বারের জন্যেও আমার শরীরে স্পর্শ করেছো? তুমি কখনো আমায় ভালোবেসে একটা বারের জন্যেও আমার জড়িয়ে ধরে নিজের বাহুতে টেনে নিয়েছো? নাও নি। কখনোই নাওনি। আচ্ছা আমার কি কোনো শখ-আহ্লাদ বলতে কিছু নেই? আমার কি কোনো ভিতরগত চাহিদা থাকতে পারেনা? তুমি আমার শরীরটাও ভালো করে কখনো স্পর্শ করোনি। সব সময় ঝগড়াঝাটি আর নিজের হিংস্রতা দেখিয়ে এসেছো। আমি ভালো খারাপ যাই বলি না কেন তুমি রেগে যাও। তাহলে আমি তোমায় ছেড়ে অন্য লোকের সাথে নিজের চাহিদা মেটাবো না কেন? তুমি তো আমায় কোনো সুখ শান্তিই দাওনি। তাহলে আমি কেন অন্য পুরুষের মধ্যে নিজের সুখ খুঁজে বেড়াবো না? আকাশ তোমার কাছে হয়তো আমার এসব কিছু ভুল মনে হচ্ছে। কিন্তু আমার কাছে সব কিছুই স্বাভাবিক লাগছে।’

–‘প্রভা তোমার লজ্জা থাকা উচিৎ। একটা মেয়ে বিয়ের আগেই শারিরীক চাহিদা মেটানোর জন্য পরপুরুষের সাথে বিছানায় চলে যাচ্ছে, তাও আবার নিজের প্রেমিক বাদে অন্য পুরুষের সাথে, প্রভা এসব মেয়েদেরকে মেয়ে বলে না, এসব মেয়েদেরকে বলে বার/মুখ্যা বা ন/টী। ছিহ আমার ভাবতেই ঘৃণা লাগছে আমি তোমার মতন একটা নিচু মনমানসিকতার মেয়ের সাথে সম্পর্ক করেছি।’

–‘ও আচ্ছা তাই বুঝি? তাহলে তুমি যদি এতোই ভালো হও তাহলে এই পল্লীতে কি করছো? আমাকে না হয় ন/টী বলবে, তাহলে তোমাকে মানুষ কি নামে ডাকবে?’

–‘প্রভা আমি এখানে তোমার মতন চাহিদা মেটাতে আসিনি। আমি এসেছি মানসিক শান্তির তালাশ করতে।’

–‘হাসালে আকাশ হাসালে তুমি আমায়। শোনো কখনো কাউকে কিছু বলার আগে নিজের দিকটা দেখে নিবে।’

–‘তোমার তাচ্ছিল্যে মার্কা কথাবার্তায় আমার কিছুই আসবে যাবে না। কারন এই পল্লীতে বলতে গেলে তোমার জন্যই আসা। গতকাল মদের বোতল নিয়ে এই লোকের সাথে পল্লীতে প্রবেশ করেছো। তোমার সেই দৃশ্য দেখতে পেয়েই আমি তোমার পিছু নিয়ে পল্লীতে প্রবেশ করেছি। না হয়তো আমি পল্লীতে কখনোই আসতাম না।’

–‘আচ্ছা আকাশ বাদ দাও না যা হয়েছে। ভুল আমিও করেছি, ভুল তুমিও করেছো। তাই দু’জন দু’জনের ভুল কাটাকাটি করে সব কিছু ঠিক করে নেই।’

–‘প্রভা ভুল আমি নয় তুমি একা করেছো। আর তোমার সাথে সব কিছু ঠিকঠাক করে নেওয়া অসম্ভব। যেই মেয়ে পরপুরুষের সাথে পল্লীতে এসে নিজের উত্তেজনা নিভায়, তার সাথে আমি কোনোদিন এই সম্পর্ক রাখবো না। দরকার হয় পল্লীর একটা মেয়েকে নিজের স্ত্রী বানাবো, কিন্তু তোমার মতন কালসাপকে নিজের লাইফে আর ফিরিয়ে আনবো না।’

–‘আকাশ দেখো তুমি তো আমায় খারাপ কিছু করতে দেখো নি। তুমি শুধু ফারহানের সাথে আমাকে দেখেছো। আমাদের মাঝে কি হয়েছে সেসব তো আর তুমি জানোনা, কিন্তু আমি তোমায় সব সত্যি বলছি। ফারহানের সাথে আমি ফিজিক্যালি ইন্টি/মেট হয়েছি। আমি যদি এই বিষয়টাকে অস্বীকার করি তাহলে তুমি কোনো ভাবেই জানতে পারবে না আমরা একে অপরের সাথে মেলামেশা করেছি। কিন্তু আমি তোমায় সত্যিটা বলে দিয়েছি। এবার তো আমার ভুল টাকে ক্ষমার নজরে দেখো। আগামীতে এমনটা আর আর কখনোই হবে না। আর ফারহান থেকেও আমি দূরে থাকবো।’

–‘বাহ অসাধারণ! পরপুরুষের সাথে নোংরামি করার পর সেটাকে নিজ মুখে স্বীকার করাকে তুমি সততা বলে মনে করছো? তাহলে শোনো তোমার এই অপরিচ্ছন্ন সততার কোনো দাম নেই আমার কাছে। আর তাছাড়া তুমি কি বললে? তুমি আমায় না বললে তোমার বিষয়ে আমি কখনোই জানতে পারবো না? প্রভা তুমি মানুষকে যতোটা নির্বোধ মনে করো মানুষ কিন্তু ততোটা নির্বোধ না। তুমি পরপুরুষের সাথে নিষিদ্ধ পল্লীর দালান বাড়ি থেকে হাসিঠাট্টা করতে করতে বেরোচ্ছো, আর মানুষ তোমার বিষয়ে বুঝবে না? প্রভা তোমার কথা শুনে ব্যাপক হাসি পাচ্ছে আমার। প্রভা মানুষ তোমায় নিয়ে ঠিক ধারণাটাই করবে, কিন্তু আমায় নিয়ে করতে পারবে না। কারন আমি খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। যতোই হোকটা নিষিদ্ধ নগরী, কিন্তু তোমার মতন কেউ আমায় উত্তেজনা মিটিয়ে ভাড়াটে কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেনি। আর তার চাইতেও তোমার বিষয়ে অনেক বড় একটা প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে। গতকাল তুমি এই লোকের সাথেই কিছু সিক্রেট ছবি তুলেছো। কেউ একজন সেই ছবি গুলোকে আমার কাছে মেইল করে পাঠিয়েছে। এবার বলো তোমার বিষয়ে কি জানা বাকি আছে আমার? আমি তোমার সিক্রেট ছবি গুলো দেখার পরেও কোনো কিছু জানা বাকি আছে বলে মনে হচ্ছে তোমার?’

প্রভা আকাশের কথা শুনে ফারহানের দিকে নির্লজ্জের মতন চোখ রাঙিয়ে তাকায়। সে যে এতো বড় ভুল করেছে সেই দিকে তার কোনো খেয়াল এই নেই। সে ফারহান নামক ছেলেটার দিকে কয়েক সেকেন্ড চোখ রাঙিয়ে তাকানোর পর তার থেকে নজর সরিয়ে আকাশকে বলে,

–‘আকাশ তুমি কি সত্যিই আমার পিক দেখেছো ফারহানের সাথে?’

–‘প্রভা এই সিচুয়েশনেও এসে তোমার সাথে মজা করছি বলে মনে হচ্ছে তোমার? ‘

–‘তার মানে তুমি সত্যিই বলছো। আর এই হারা/মির বাচ্চা ফারহান তোমাকে আমার সেসব পিক পাঠিয়েছে। ওকে তো আজকে আমি…

প্রভা ফারহানের দিকে তেড়ে গিয়ে তার কলার চেপে ধরে। এরপর ফারহানের গালে সজোড়ে কয়েকটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিয়ে ফারহানকে বলে,

–‘ছিহ তুই এতোটা জঘন্য? মজা নিতে ঠিকই নিয়েছিস, কিন্তু মজা নেওয়া শেষে আমায় কাঠগড়ায় লটকে দিয়েছিস। কেন করলি ফারহান তুই এমনটা? এখন মানুষটা তো আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।’

–‘আমি যা করেছি বেশ করেছি। আমার দরকার ছিল তোর শরীরের মজা নেওয়া আমি সেটা নিয়ে নিয়েছি। আমার পেশাই হচ্ছে এটা। আমি সময়ে সময়ে মেয়ে পটিয়ে তার সাথে মেলামেশা করি। তোর সাথেও আমি মজা নিয়েছি। তবে তোকে একটা কথা বলি। আমি মেয়ে পটিয়ে তার সাথে বেশিদিন থাকি না। কিন্তু তোর সাথে আমার সারাজীবন থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে। তাই আমি তোর আর আমার ছবি গুলো তোর বয়ফ্রেন্ডকে পাঠিয়েছি। যাতে করে সে তোকে ছেড়ে দেয়। আর আমি তোকে নিজের করে নিতে পারি।’

প্রভা ফারহানের কথা শুনে রেগেমেগে আগুন হয়ে যায়। নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে করতে না পেরে পায়ের থেকে জু/তা খুলে ফারহানের গায়ে ধ্রাম…ধ্রাম করে কয়েকটা বাড়ি মারে। এরপর ফারহানকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে এসে আকাশের পা ঝাপটে জড়িয়ে ধরে। এমন সময় দিশাও সাজগোজ করে শাড়ী পড়ে ঘটনাস্থলে আসে। দিশা আকাশের অপেক্ষায় রেডি হয়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে নিজের রুমে বসে ছিল, কিন্তু আকাশের কোনো খোঁজ খবর না পেয়ে আকাশের খোঁজে সে বেরিয়ে পড়ে। রুম থেকে বেরিয়ে কিছুটা পথ আসতেই দিশা দেখে একটা মেয়ে আকাশের পায়ে ধরে ক্ষমা চাচ্ছে। “অপরদিকে আকাশ দিশাকে দেখতে পেয়ে ঝাটকা দিয়ে প্রভা থেকে নিজের পা ছাড়িয়ে নেয়। যার ফলে প্রভা উল্টে পড়ে যেতে নিয়েও পড়ে না। আর আকাশ প্রভা থেকে নিজের পা ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে গিয়ে দিশার হাত ধরে টেনে এনে দিশাকে প্রভার সামনে দাঁড় করায়। প্রভা মাটিতে হাত-পা ছিটিয়ে বসে আছে। আকাশ দিশাকে প্রভার সামনে এনে দাঁড় করানো মাত্রই তাকে নিজের বাহুতে আলতো পিঠে জড়িয়ে ধরে। এরপর প্রভাকে রাগান্বিত কন্ঠে বলে,

–‘এই যে দ্যাখ আমার বউ। এই মেয়ের জন্যই আমি এখানে এসেছি। এখন তোর সামনে আমি ওকে নিজের কাছে টেনে নিব। আমি এখন তোর সামনেই ওর শরীরের হাজারটা অঙ্গে করবো। তুই খালি চোখ পাকিয়ে দেখে থাক। তুই যদি পারিস পরপুরুষ নিয়ে বিছানায় যেতে, তাহলে আমিও পারবো তোর সামনে এই মেয়ের শরীরে স্পর্শ করতে।’

আকাশ প্রভার সামনে দিশাকে স্পর্শ করবে এই কথাটা বলে শেষ করতে না করতেই আকাশ দিশাকে নিজের শরীরের সাথে লেপ্টে নিয়ে প্রভার সামনেই দিশার ঠোঁট জোড়ায় পাগলের মতন চুমু খেতে আরম্ভ করে….

চলবে….

কুহেলিকা পর্ব-০৭

0

#কুহেলিকা (পর্ব-৭)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

মেইল বক্স ওপেন করতেই প্রভার সিক্রেট কিছু ছবি তার সামনে অপ্রত্যাশিত ভাবে ভেসে উঠে। ছবি গুলো দেখার পর আকাশের ঘোলাটে চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে যায়! অদ্ভুত দৃষ্টিতে আকাশ ছবি গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে! ছবির মধ্যে প্রভা আপত্তিকর ভাবে অন্য একটা পুরুষের সাথে বসে আছে। আকাশের কলিজায় মোচড় দিয়ে উঠে তার প্রিয়তমাকে এভাবে অন্য একটা লোকের সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখতে পেয়ে। কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না আকাশ! ছবি গুলোর দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে নিজে নিজে বলে,

–‘প্রভা কেন করলে তুমি এমনটা! আমি তোমার জন্য কি করিনি! নিজের সাধ্য মতন সব কিছুই করেছি। আমার পৃথিবীর সমস্ত সুখ আমি তোমার নামে করে দিয়েছি। যেই আমি আকাশ কারোর পরোয়া করতাম না, মানুষ আমার চোখের সামনে মরে গেলেও আমি তার দিকে ঘুরে তাকাতাম না, সেই আকাশ তোমার জন্য পাগল হয়ে ছিলাম। আর তুমিই কিনা শেষমেশ আমার সাথে এভাবে খেলা করলে। প্রভা আমার লাইফে অনেক মেয়ে আসতে চেয়েছে, কিন্তু আমি কারোর সাথেই কমিটমেন্টে যেতে নারাজ ছিলাম। কারন প্রেম মানেই আজাইরা প্যারা। তবে তুমি আমার সেই চিন্তা-ভাবনাকে পরিবর্তন করে দিয়ে আমার লাইফে এন্ট্রি করলে, এবং পরিশেষে তুমিই আমার লাইফ টাকে জাহান্নাম বানিয়ে দিলে। আমি তো চাইনি এসব প্রেম ভালোবাসা। প্রভা তুমি নিজেই তো এসে সব কিছু করলে আমার সাথে। তাহলে আজ তুমি অন্য পুরুষের সাথে কি করছো! আর তাছাড়া আমিও তো সেই নিষিদ্ধ নগরীতে প্রবেশ করেছি, কিন্তু কই আমি তো কারোর সাথে অনৈতিক কোনো কিছু করিনি। তাহলে তুমি কেন সেই নগরীতে প্রবেশ করে অন্য লোকের সাথে ঘনিষ্ঠ হলে! তার থেকে আমার কোন দিকে বা কোন অংশে কম রয়েছে! প্রভা কাজটা তুমি ভালো করোনি। আমি জানিনা এসব দেখার পর আমি কি ফয়সালা করবো! তবে তোমার সাথে হয়তো এবার আমার লাইফের সব চাইতে বড় বোঝাপড়াটা হবে। আগামীকাল আসুক। তারপর অফিস শেষ করে তোমার সাথে বোঝাপড়া করবো। এখন আপাতত তুমি নামক অধ্যায়টাকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা বাদ দিলাম। তুমি আমার প্রেমিকা হয়ে যদি পল্লীতে গিয়ে রংতামাশা করতে পারো, তাহলে আমিও সেই নিষিদ্ধ পল্লীর একটা নোংরা নারীর সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে তাকে নিজের স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো। প্রভা তুমি নিজ ইচ্ছায় নিজের শরীরে দাগ লাগিয়েছো। আর পল্লীর সেই মেয়েটা নিজের দাগ মুছতে আমার কাছে আসবে। তোমার সাথে তার তফাৎ আকাশ পাতাল। কেউ সম্মান অর্জন করতে চাইছে, আর কেউ নিষিদ্ধ নগরীতে গিয়ে নিজের সম্মান নষ্ট করছে। তাই এখন আমি নিজের ভালোটাকেই প্রাধান্য দিব। প্রভাকে নিজের করে নিলে মানুষ বলবে এই মেয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে শারীরিক সুখ-শান্তির জন্য নিষিদ্ধ নগরীতে গিয়েছে। আর দিশাকে আপন করে নিলে মানুষকে দেওয়ার মতন অন্তত একটা উত্তর আমার কাছে থাকবে। আমি পল্লীর একটা নারীর মাঝে ভালোবাসার তালাশ করে তাকে বউ বানিয়েছি। আমার কাজটা ঠিক না হলেও আমি পল্লীর একটা অভাগা নারীকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছি। যাক গে এখন এতোসব ভেবে আর লাভ নেই। উঠে ফ্রেশ হয়ে মায়ের সাথে একটু গল্পগুজব করে আসি। বাকি যা হবে আগামীকাল দেখা যাবে।’

আকাশ বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে তার মায়ের রুমে চলে যায়। আকাশের মনের ভিতরে এখনো খুটখুট করছে। প্রভা তার সাথে প্রতারণা করায় প্রভাকে না হয় লাইফ থেকে আউট করে দিবে সে। কিন্তু দিশার বিষয়টা নিয়ে সে কি ভাবে কি করবে! আকাশ তার মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে এসব ভাবতে থাকে। আকাশের মা আকাশের ভাবুক চেহারা দেখে জিজ্ঞাস করে,

–‘কিরে তুই এতো মনোযোগ দিয়ে কি ভাবছিস?’

–‘আচ্ছা মা তোমায় একটা কথা জিজ্ঞাস করি?’

–‘হুম কর।’

–‘আচ্ছা মা মনে করো সমাজ একটা মেয়েকে খুব বাজে দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে, আর আমি সমাজের সেই বাজে দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাই, তাহলে তোমরা কি সেই বিষয়ে কোনো আপত্তি করবে?’

–‘আকাশ তুই যার মধ্যে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাবি, তুই যার মধ্যে নিজের ভালোবাসাকে উপলব্ধি করতে পারবি তুই সেটা কর। তোর বাবা আর বাকিরা কি করবে আমি জানি না! তবে আমি তোর সিদ্ধান্তকে হাসিখুশি মেনে নিব। আর তাছাড়া তুই সমাজের কথা বলছিস? শোন এতোকিছু ভেবে কখনোই পারবি না। কারন সমাজ তোকে খাওয়ায় পড়ায় না। আর তাদের কাজ এই হচ্ছে মানুষকে নিয়ে সমালোচনা করা। তাই তুই সমাজের কথায় কান না দিয়ে নিজের মনের টা শোন। এতেই তোর মঙ্গল।’

আকাশ তার মায়ের কথা শুনে খুশিতে তার মা’কে জড়িয়ে ধরে। ছেলের এমন আহ্লাদী আচরণ দেখে আকাশের মা রেহেনা পারভিন ও আকাশকে জড়িয়ে ধরে৷ মা-ছেলের মধ্যে ভালোবাসার লেনাদেনা হচ্ছে। এভাবে কিছুটা সময় কাটানোর পর আকাশের মা আকাশকে বলে,

–‘যা এবার গিয়ে বাকিদের ডেকে নিয়ে খাবার টেবিলো বস। আমি সবার জন্য খাবার লাগাচ্ছি টেবিলে।’

–‘আচ্ছা।’

আকাশ ঘরের সদস্যদের ডাক দিয়ে খাবার টেবিলে বসে পড়ে। আকাশের বাবা সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছিল, তিনি আকাশের ডাক শুনতে পেয়ে খেতে চলে আসে। আকাশের মা কিছু সময়ের মাঝে টেবিলে খাবার লাগিয়ে তিনিও খেতে বসে পড়ে। সবাই একসাথে মিলে রাতার খাবার খাচ্ছে। খাওয়ার মাঝামাঝি অবস্থায় আকাশের বাবা আকাশকে বলে,

–‘আকাশ তোকে কিছু বলার আছে আমার।’

–‘কি কথা বাবা?’

–‘আগে খাবারটা শেষ কর পরে বলছি।’

–‘আচ্ছা।’

এরপর আকাশ নিজের খাওয়া দাওয়া জলদি সেরে নিয়ে তার বাবার কথা শোনার জন্য খাবার টেবিলেই বসে থাকে। দেখতে দেখতে আকাশের বাবার ও খাওয়াও শেষ হয়েছে। তিনি খাওয়া দাওয়া শেষ করে আকাশকে বলে,

–‘আচ্ছা শোন তোকে যেটা বলতে চাচ্ছিলাম…

–‘হুম বাবা বলো।’

–‘তুই আর বউমা থাকার জন্য আমি একটা ফ্ল্যাট কিনেছি। তোরা বিয়ের পর দু’জনে নতুন ফ্ল্যাটে থাকবি। আর আমি আর তোর মা এবং মিলি এই বাড়িতে থাকবো।’

–‘বাবা এসবের কি প্রয়োজনে ছিল বলো?
এতো বড় বাড়ি থাকতেও আলাদা করে ফ্ল্যাট নিতে গেলে কেন তুমি?’

–‘কারন আমি বহু আগেই ভেবে রেখেছিলাম তোকে একটা বাড়ি গিফট করবো। তাই তোর জন্য সেটা নিয়ে নিলাম। এখন বল তুই বিয়ে কবে করছিস? তোর মা তো আমার মাথা খেয়ে ফেলছে তোকে বিয়ে করানোর জন্য। তোর কি কোনো মেয়ে টেয়ে পছন্দ আছে নাকি? না হয় আমরা মেয়ে দেখছি তোর জন্য। এবার বিয়েটা করে নে।’

–‘বাবা আমি এতো জলদি গিয়ে করতে চাচ্ছিনা। তোমরা আমায় আর কিছুদিন সময় দাও। এখনো আমি বিয়ের জন্য তৈরি না।’

–‘তৈরী না মানে কি? এতো বড় অফিসের মালিক। তার উপরে এতো বড় একটা ফ্ল্যাট রয়েছে তোর নামে, তাহলে বিয়ে করতে আপত্তি কোথায়?’

–‘বাবা আমার সবই আছে। তোমরা আমায় সবই দিয়েছো। টাকা পয়সার দিক থেকে আমার কোনো কমতি নেই, কিন্তু আমি মানসিক ভাবে তৈরী না। আমাকে তোমরা আরো কিছুটা সময় দাও। আমি নিজের মনমানসিকতাকে ঠিক করে তারপর বিয়েসাদী করবো।’

–‘ঠিক আছে তোর যেমন ইচ্ছে। তবে শোন জলদিই করবি যা করার। আর আগামীকাল অফিস শেষ করে তোর নতুন ফ্ল্যাটে গিয়ে সারা বাড়ির ডেকোরেশন করতে যা যা লাগে সব অর্ডার করে দিয়ে আসবি। আমি নতুন ফ্ল্যাটের চাবি তোর মায়ের কাছে দিয়ে রাখবো। আগামীকাল অফিসে যাওয়ার সময় তোর মায়ের কাছ থেকে নিয়ে যাস সেটা।’

–‘আচ্ছা।’

–‘এবার গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। সকালে আবার তোর অফিস আছে।’

–‘হ্যাঁ বাবা।’

আকাশ তার বাবার সাথে কথা শেষ করে নিজের রুমে চলে আসে। রুমে এসে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে।
পরেরদিন সকাল বেলায় যথাযথ ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে তার মায়ের কাছ থেকে তার নতুন ফ্ল্যাটের চাবি নিয়ে নেয়। আকাশের মা চাবি দেওয়ার পাশাপাশি নতুন ফ্ল্যাটের কাগজপত্র ও আকাশকে দিয়ে দেয়। আকাশের পরিবারের লোকদের এই একটা বিশেষ গুন। তারা পরের জন্য বা হেলায় খেলায় কোনো কাজকে ফেলে রাখে না। যা বলবে সব ক্লিয়ার কাট এবং যা করবে সব তৎক্ষনাৎ। আকাশ তার মায়ের কাছ থেকে নতুন ফ্ল্যাটের কাগজপত্র এবং ফ্ল্যাটের চাবি নিয়ে বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
ড্রাইভার গাড়ি ড্রাইভ করছে৷ আকাশ পিছনের সিটে বসে আছে। গাড়ি নিষিদ্ধ নগরীর সামনে আসতেই ড্রাইভার আকাশকে অদ্ভুত ভাবে বলে উঠে,

–‘স্যার আজ কি পল্লীতে যাবেন? আমি কি গাড়ি সাইড করবো?’

ড্রাইভারের কথা শুনে আকাশ কিছুটা থতমত খেয়ে যায়। তবে সে পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে ড্রাইভারকে বলে,

–হ্যাঁ গাড়ি সাইড করুন। বহু সময় হয়েছে মানুষটার চেহারা আমি দেখিনি। তার উপরে মনটাও কেমন কেমন করছে মানুষটার জন্য।’

–‘স্যার আমি এজন্যই আপনাকে জিজ্ঞাস করেছি। আমি আগেই ভেবেছিলাম এই জায়গায় আসলে আপনার মন কেমন কেমন করবে।’

–‘আচ্ছা এবার গাড়ি সাইড করেন আমি চট করে নিজের কাজটা সেরে আসি।’

ড্রাইভার আকাশের কথা মতন গাড়ি সাইড করে। আকাশ গাড়ি থেকে নেমে মনে সাহস নিয়ে সোজা পল্লীর ভিতরে চলে যায়। আজ কেন জানি তার মনে কোনো ভয় লাগছে না। প্রথমদিন কেমন নার্ভাস ছিল সে, তবে আজ মনের ভিতরে হুট করে কোথা থেকে যেনো সাহস চলে এসেছে। তার মনে হচ্ছে এই নিষিদ্ধ নগরীটা তার জন্য পুরাতন হয়ে গিয়েছে। আকাশ নিজের মতন হেঁটে পল্লীর একদম ভিতরে চলে যায়। পথের মাঝে কোনো রমণীও আজ তাকে আটকায়নি। পল্লীর ভিতরে গিয়ে একজনকে দিশার কথা বলতেই সে গিয়ে দিশাকে ডেকে আনে। দিশা আসার পর আকাশকে দেখা মাত্রই তার মলিন চেহারায় হাসি ফুটে উঠে। কিন্তু অপরদিকে আকাশের প্রচন্ড রাগ উঠে যায় দিশাকে দেখে। দিশা আকাশের সামনে আসতেই আকাশ দিশার দুই গালে দু’টো থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়। দিশা আকাশের এমন কান্ড দেখে অবাক চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সে যেনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না! সবেই তো মাত্র মানুষটা তার সাথে দেখা করতে আসলো। তার জানা মতে সে তো কোনো ভুল করেনি। তাহলে হুট করেই মানুষটা তার দুই গালে দু’টো থাপ্পড় মারলো কেন! কি এমন করেছে সে। দিশার নিজের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পেয়ে চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সময় আকাশ দিশাকে চেঁচিয়ে বলে উঠে,

–‘তোর সমস্যা কি দিশা?’

–‘আমি কি করেছি?’

–‘কি করিস নি সেটা বল?’

–‘বিশ্বাস করুন আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না! আপনি প্লিজ আমায় বুঝিয়ে বলুন কি করেছি আমি। আমায় না খুব ভয় করছে।’

–‘তুই এভাবে শাড়ী পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস কেন?
তুই জানিস তোকে অনেক সুন্দর লাগলে। এই অবস্থায় যদি কোনো খদ্দের তোর উপরে আকৃষ্ট হয়ে তোর সাথে কিছু করতে চায়, তখন তুই কি করবি?’

দিশা আকাশের কথা শুনে কিছু বলবার মতন সাহস করতে পারে না। কারন আকাশের সারা শরীর ভর্তি যে রাগ সেটা দিশা ভালো করেই জেনে গেছে। তাই সে চুপ করে আছে কোনো উত্তর না দিয়ে। দিশার চুপসে থাকা দেখে আকাশ আবারো তাকে বলে উঠে,

–‘এভাবে আর কখনো শাড়ী পড়বি না তুই। কারন শাড়ীতে অনেক সুন্দর লাগে তোকে। আমি চাইনা কেউ তোর উপরে নজর দিক। তুই আমার সামনেই খালি শাড়ী পড়বি। এছাড়া সারাদিন থ্রি-পিস পড়ে ঘুরে বেড়াবি। মনে থাকবে?’

–‘হুম।’

–‘এবার গিয়ে শাড়ী খুলে থ্রি-পিস পড়ে নে। আমি চললাম। তোর সাথে এক নজর দেখা করার জন্যই এসেছি। এখন আমার যেতে হবে।’

–‘সাবধানে যাবেন।’

–‘হুম সাবধানেই যাবো। আর শোন তিনটা নাগাদ শাড়ী পড়ে রেডি হয়ে বসে থাকবি। আমি তোকে নিয়ে একটা জায়গায় যাবো।’

–‘আচ্ছা।’

–‘এখন চলে গেলাম।’

আকাশ দিশার সাথে কথা বলে যাওয়ার জন্য কদম বাড়ায় সামনে দিকে, এমন সময় পিছন থেকে দিশা আকাশকে ডাক দিয়ে বলে,

–‘এই এই এভাবে চলে যাচ্ছেন যে? যাওয়ার আগে কি আমায় একটু কাছে টানবেন না?’

আকাশ দিশার কথা শুনে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,

–‘আসো কাছে আসো।’

দিশা আকাশের ডাকে দৌড়ে এসে আকাশের বাহুতে ঝাপটে পড়ে। আর আকাশ দিশার কপাল দু’হাত দিয়ে উঠিয়ে কয়েকটা চুমু একে দিয়ে দিশাকে বলে,

–‘ক্ষমাপ্রার্থী তোমায় থাপ্পড় দেওয়ার জন্য। ক্ষমাপ্রার্থী তোমার সাথে তুইতোকারি করার জন্য। আসলে তোমায় খুব সুন্দর লাগছিল। তাই তোমার উপরে আমি রেগে গিয়েছিলাম।’

–‘আমি আর কখনো শাড়ী পড়বো না। আমি চাই না আপনি আমার উপরে রেগে থাকুন।’

–‘হুম একদম শাড়ী পড়বে না তুমি পল্লীতে থাকলে। তবে আমার সাথে কোথাও ঘুরতে বের হলে তখন অবশ্যই শাড়ী পড়তে হবে তোমাকে।’

–‘হুম আপনার সঙ্গে গেলে তখনিই শাড়ী পড়বো।’

–‘আচ্ছা এখন আমার দেরি হচ্ছে। তুমি দুপুরে রেডি হয়ে থেকো। আমি তোমায় এসে নিয়ে যাবো।’

–‘আচ্ছা।’

–‘চললাম।’

আকাশ দিশাকে ছেড়ে দিয়ে চলে আসে। আর দিশা জলদি গিয়ে আকাশের কথা মতন শাড়ী খুলো থ্রি-পিস পড়ে নেয়। আকাশ পল্লী থেকে বেরিয়ে গাড়ি করে অফিসে চলে আসে। অফিসে এসে কাজে মনোনিবেশ করে। দেখতে দেখতে দুইটা বেজে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি করে কেবিন থেকে বের হয়ে ম্যানাজারকে বলে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে আকাশ। অফিস থেকে বেরিয়ে ড্রাইভারকে ইশারায় বলে গাড়ি নিষিদ্ধ নগরীর সামনে নিয়ে যেতে। ড্রাইভার আকাশের ইশারা মতন গন্তব্যের সামনে এসে গাড়ি দাঁড় করায়। আকাশ গাড়ি থেকে নেমে দিশাকে আনার জন্য হেঁটে পল্লীর ভিতরে প্রবেশ করে। কিছুটা রাস্তা হাঁটার পর দিশার অপেক্ষায় একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়। এমন সময় হুট করেই আকাশ দেখে প্রভা গতকালের সেই অচেনা লোকটার সাথে হাসিতামাশা করতে করতে পল্লীর ভিতরের একটা দালান বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে…..

চলবে…..

কুহেলিকা পর্ব-০৬

0

#কুহেলিকা (পর্ব-৬)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

দিশা পল্লীর দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে আকাশকে পল্লীর মুখ পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। এখন আকাশের গাড়ি করে চলে যাওয়ার পালা। কিন্তু আকাশ না গিয়ে দিশাকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে কয়েকটা চুমু একে দেয়। দিশাও আকাশের স্পর্শ চুপচাপ অনুভব করে। আকাশ চুমু খাওয়া শেষ করে দিশাকে বলে,

–‘নিজের খেয়াল রেখো। আমি চললাম। আবারো তোমার সাথে আমার দেখা হবে।’

এরপর আকাশ দিশাকে ছেড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। পরে গাড়ি স্টার্ট করে বাসায় চলে আসে।
বাসায় আসার পর গাড়ি পার্কিং করে যখনি বাড়ির মেইন দরজায় আসে, তখনি দেখে বাড়ির মেইন দরজার সামনে প্রভা দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ প্রভাকে হুট করে দেখতে পেয়ে ঘাবড়ে যায়! চোখ পাকিয়ে প্রভার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রভা আকাশের আকস্মিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখে আকাশকে জিজ্ঞাস করে,

–‘আকাশ এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?’

–‘নাহ মানে আসলে তোমাকে এভাবে বাসার সামনে দেখতে পেয়ে বেশ অবাক হলাম।’

–‘আকাশ এখনো তো বাকি অবাক হওয়া। এটুকুতেই চমকে গেলে হবে নাকি বলো?’

–‘অবাক হওয়া বাকি মানে?’

–‘আকাশ তুমি কোথায় গিয়েছিলে একটু বলবে আমায়?’

–‘কোথায় যাবো আবার অফিস থেকে বাসায় ফিরলাম।’

–‘এরমাঝে কি আর কোথাও যাওনি?’

–‘হ্যাঁ গিয়েছি, কিন্তু কেন?’

–‘আকাশ তুমি আমার কাছে কেন এর উত্তর জানতে চাইছো? আকাশ তুমি ভালো করেই জানো তুমি কোথায় গিয়েছিলে। আর তাছাড়া তোমার শরীর থেকে এনগেজ স্পেল ডিওড্রেন্ট ফর ওম্যান পারফিউমের ঘ্রাণ ভেসে আসছে। যেই পারফিউম টা সচরাচর মেয়েরা ব্যবহার করে থাকে। এর মানে তুমি কোনো নারীর ঘনিষ্ঠ হয়েছিলে?’

–‘হয়তো হয়েছিলাম, কিন্তু কেন এসব জানতে চাইছো সেটা বলো?’

–‘আকাশ কেন জানতে চাইছি মানে? তুমি আর আমি একে অপরের সাথে সম্পর্কে আছি। আমি তোমার থেকে জানবো না তো কে জানবে?’

–‘ওহ আচ্ছা এই কথা? তাহলে আমি কেন তোমার বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে এড়িয়ে যাও? আমার বেলায় কেন এতো লুকোচুরি?’

–‘কি লুকোচুরি করেছি আকাশ আমি?’

–‘প্রভা আল্লাহ আমাকে অন্ধ বানায় নি। আমি না সব কিছুই দেখতে পাই। হাতে মদের বোতল নিয়ে অপরিচিত কারোর সঙ্গে নিষিদ্ধ নগরীর পথে ছুটে চলা আমারো চোখে বাঁধে।’

প্রভা আকাশের কথা শুনে কিছুটা ঘাবড়ে যায়। কারন সে সত্যিই মদের বোতল নিয়ে অন্য একটা পরপুরুষের সাথে সেখানে গিয়েছিল। কিন্তু সে এই কথা আকাশকে কখনোই বলতে পারবে না। আর এই কারনেই সে আকাশের পল্লীতে যাওয়ার বিষয় নিয়ে তাকে খোলাখুলি প্রশ্ন করতে পারছে না। প্রভা কিছু সময়ের মাঝেই নিজেকে সামলে নিয়ে কিছু না জানার ভঙ্গিমায় আকাশকে বলে,

–‘মা…মা… মানে কি আকাশ?’

–‘তুমি কি সব উল্টো পাল্টা কথা বলছো? কিসের মদের বোতল আর কিসের অপরিচিত কারোর সাথে নিষিদ্ধ নগরীতে যাওয়া?

–‘প্রভা আমায় গোমরাহ করার চেষ্টা করিও না।’

–‘আকাশ তুমি আমায় খুলে না বললে আমি তোমার কথা বুঝবো কি করে?’

–‘ক্ষমাপ্রার্থী আমি তোমায় কিছু খুলে বলতে পারবো না।’

–‘কেন আকাশ?’

–‘কারন যে অলরেডি সব কিছুই জানে তাকে নতুন করে বলার কিছুই দেখি না। আর তাছাড়া আমি এসব বলে কষ্টের বোঝা আরো বাড়াতে চাইনা।’

–‘ঠিক আছে আমাকে তোমার কিছুই বলতে হবে না। তবে একটা কথা মাথায় রেখো, তুমি আমায় ছেড়ে অন্য কারোর কাছে গেলে তোমায় আমি খুন করে ফেলবো। কারন তোমাকে আমি অন্য কোনো নারীর সঙ্গে দেখতে পারবো না।’

–‘প্রভা তুমি সৎ থাকলে তোমার সাথে অসৎ কিছু হবে না। তবে যদি তুমি অসৎ কিছু করো, তাহলে তোমার সব কিছুই হারাতে হবে। এবার আমি বাসায় প্রবেশ করবো। আমার অনেক টায়ার্ড লাগছে। তুমি এখন এখান থেকে চলে যাও।’

–‘হ্যাঁ আমি চলে যাবো, কিন্তু যাওয়ার আগে তোমার মায়ের সাথে একবার দেখা করে যাই।’

–‘নাহ এমম ফর্মালিটিস এর দরকার নেই। তুমি এখন চলে গেলেই আমি খুশি হবো।’

–‘ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি। তুমি যেটাতে খুশি হবে আমি সেটা হাসি মুখেই মেনে নিব। নিজের খেয়াল রেখো।’

এরপর প্রভা চলে যায়। প্রভা চলে যাওয়ার পর আকাশ ও বাড়িতে প্রবেশ করে। আকাশের বাসার লোক সবাই আজকে বেশ খুশি। কারন তাদের ছেলে আজকে নতুন জীবনে পা রেখেছে। বেশ ভালো মন্দ রান্না করেছে আজ আকাশের মা। কিন্তু আকাশের মা জানেন না, যে আকাশ বাহির থেকে ভোজন করে এসেছে। আকাশ বাড়িতে আসতেই আকাশের মা টেবিলে খাবার সাজাতে শুরু করে। ঘড়ির কাটা তিনটার ছক পেরিয়ে গেছে আরো বহু আগেই, কিন্তু আকাশের জন্য এতো সময় সবাই না খেয়েই বসে ছিল। আকাশের একটা ছোট্ট বোন আছে মিলি, সেও আকাশ আসবার অপেক্ষায় না খেয়ে বসে ছিল। আকাশ বাড়িতে আসতেই সবার তড়িঘড়ি লেগে যায় খাবারের জন্য। পরিবারের সদস্যদের এমন আহ্লাদিত চেহারা দেখে সে সেটাকে অটুট রাখবে বলে আবারো সবার সাথে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সবার মান রক্ষা করে হালকা-পাতলা খেয়ে খাবারের টেবিল ছেড়ে নিজের রুমে চলে আসে। রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। আকাশের মা’ও কিছু সময় পর আকাশের রুমে আসে। রুমে আসার পর আকাশের হাতে অফিসের ডকুমেন্টস গুলো ধরিয়ে দিয়ে বলে,

–‘এই যে তোর আমানত। তোর বাবা এটা আমায় দিয়ে বলছে তুই আজ দুপুরে বাড়ি ফিরে আসলে এটা যেনো আমি তোকে বুঝিয়ে দেই। নে তোর আমানত তোকে বুঝিয়ে দিলাম। এবার মন দিয়ে তোর বাবার অফিস টাকে আগলে নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হ।’

–‘মা দোয়া করো আমার জন্য। আমি যাতে বাবার এই প্রতিষ্ঠান টাকে আরো বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।’

–‘অবশ্যই বাবা! দোয়া করি তুই তোর বাবার প্রতিষ্ঠান টাকে আরে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যা। আর শোন তোকে একটা কথা বলার ছিল,

–‘কি কথা মা?’

–‘পড়ালেখা যা হয়েছে হয়েছে, এবার বিয়েটা করে নে। তোর তো পছন্দ আছে যতটুকু শুনলাম বা জানলাম, আমার মতে এবার বিয়েটা করে নে।’

–‘মা সবে মাত্র বাবার কাজকর্মে হাত দিয়েছি। আরো কিছুদিন যাক পরে এসব নিয়ে ভাবা যাবে। আর তাছাড়া আমার পছন্দ আছে ঠিকই, কিন্তু তার বিষয়ে পুরোপুরি না জানা অব্দি আমি বিয়ো করবো না।’

–‘জানার আর কি বাকি আছে? তোরা তো একে অপরের সাথে রিলেশন করছিস বছর পেরিয়ে গেল। এতোদিনেও কি তোরা একে অপরের বিষয়ে পুরোপুরি জানিস নি?’

–‘না মা জেনেছি, কিন্তু……

–‘কিন্তু কি?’

–‘নাহ মা কিছু না। তোমরা আমাকে আর কিছুদিন সময় দাও। তারপর বিয়েসাদী নিয়ে ভাবা যাবে।’

–‘ঠিক আছে সময় দিলাম, তবে জলদিই ডিসিশন নিবি কিন্তু।’

–‘হুম।’

–‘আচ্ছা এবার তুই রেস্ট কর আমি নিজের রুমে গেলাম।’

–‘আচ্ছা।’

আকাশের সাথে কথাবার্তা বলে আকাশের মা আকাশের রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। “এদিকে আকাশ তার মা রুম থেকে বেরোতেই অফিসের ডকুমেন্টস গুলো বিছানার একপাশে রেখে বালিশে মাথা গুঁজে শুয়ে পড়ে।
এরপর একাকী শুয়ে দিশাকে নিয়ে কল্পনা করতে আরম্ভ করে। দিশার চিরল দাঁতের হাসি, ভীত চেহারা, ঠোঁটকাটা স্বভাব, আকর্ষনীয় দেহ, আর মায়াবী চোখ সবই যেন তাকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করছে। মন বলছে ছুটে আবার তার কাছে চলে যেতে। ছুটে গিয়ে দিশার মাথা বুকে চেপে ধরে চুলে বিলি কাটতে কাটতে নিজের সব সুখ-দুঃখের গল্প শোনাতে। কিন্তু পরক্ষণেই হুট করে তার মস্তিষ্ক বাজে চিন্তা চলে আসে। দিশা যতোই অসাধারন ব্যক্তিত্বের অধিকারী হোক না কেনো সে এক অন্ধকার গলির বাসিন্দা, সভ্য সমাজের গায়ে সে ছিটকে পড়া নোংড়া কাঁদা ছাড়া কিছুই নয়। তাকে সভ্য সমাজের মানুষ ভোগ করতে পারে, ব্যবহার করতে পারে কিন্তু নিজেদের মাঝে জায়গা দিতে পারে না। এসব ভাবতেই মন ও মস্তিষ্কের দ্বন্দ্বে নিজেকে বড্ড অসহায় লাগে আকাশের। এছাড়া অন্যদিকে আবার প্রভা নামক কেউ একজন রয়েছে তার জীবনে। আকাশ বেশ চিন্তায় পড়ে যায় দু’জনকে নিয়ে। পুরো মাথা জ্যাম হয়ে আছে আকাশের। কাকে নিয়ে সে সিরিয়াস হবে সেটাই সে বুঝে উঠছে পারছে না! দু’জনের দু’রকম সমস্যা। আকাশ প্রভাকে এতোটা ভালোবাসার পরেও সে অন্যে লোকের সাথে পল্লীতে গিয়ে সময় কাটাচ্ছে। অপরদিকে দিশা একটা প্রস্টিটিউট। মানুষ বুঝবে না তার ভিতরে যে সুন্দর একটা মন আছে। মানুষ তার সিলমোহর অনুযায়ী তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে চলে যাবে। আকাশ তাকে এনে এই সভ্য সমাজের মাঝে কি করে খাপ খাওয়াবে সেটাই আকাশ বুঝে উঠতে পারছে না! মস্তিষ্কে এসব নিয়ে অতিরিক্ত প্রেশার দিতেই আকাশের মাথা পেইন করতে শুরু করে। তাই সে চিন্তা-ভাবনাকে ক্ষান্ত করে এই অসময়েই ঘুমিয়ে পড়ে।

অন্যদিকে দিশাও একটা রুমের মধ্যে শুয়ে বুকে একটা বালিশ জড়িয়ে ধরে আকাশের কথা কল্পনা করতে থাকে। কল্পনার এক পর্যায়ে সে নিজে নিজে বলে উঠে,

–‘আচ্ছা সব গাছই তো পাখিদের ডাকে, কিন্তু পাখিরা সব গাছে বসে না। পাখিরা বোঝে কোন গাছ তাকে ছায়া দেবে, কোন গাছ তাকে ফল দেবে, বসার জন্য শাখাপ্রশাখা দেবে। কিন্তু মানুষ মানুষ পাখির থেকেও বোকা কেন! এই যে মানুষটা, সে আমার মধ্যে কি পেয়েছে! আমি তো দুনিয়ার সব চাইতে নোংরা বস্তির লোক। দুনিয়ায় এতো সুন্দর সুন্দর রমণী থাকতেও কেন সে আমার মধ্যে নিজেকে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করছে! সে তো পারে বিছানায় আমার পিঠ ঠেকিয়ে নিজের চাহিদা পূরণ করতে। সে তো পারে আমার দেহের প্রতিটা অঙ্গের গভীর ভাবে স্বাদ নিতে। সে তো পারে আমাকে দিয়ে বাকি আট-দশটা পুরুষদের মতন নিজের শরীরের খোরাক মিটাতে। কিন্তু কেন সে এমন করে না! চায় টা কি লোকটা আমার মাঝে! সে কি বুঝেনা আমি সতিত্ব হারা নারী। সে কি জানেনা আমি নিজের সর্বত্র হারিয়ে ফেলছি। তাকে দেওয়ার মতন নতুন করে আর কোনো কিছুই আমার মাঝে নেই। আমায় সে আপন করে নিলে সব দিকেই ঠকবে। এতো কিছুর পরেও সে আমার মধ্যে কি খুঁজে বেড়াচ্ছে উপর ওয়ালাই ভালো বলতে পারবেন! আর আমিও জানিনা আমার জীবনে কি ঘটতে চলেছে। তবে মানুষটা যদি আমায় নিজের করে নিয়ে এতো বড় সারপ্রাইজ দেয়, তাহলে আমিও মানুষ টাকে একটা সারপ্রাইজ দিব। আর প্রচুর ভালোবাসবো মানুষটাকে। মানুষটা যখন সারাদিন খাটাখাটুনি করে বাড়ি ফিরবে, তখন মানুষটার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে মানুষটার নামে উন্মুক্ত করে দিব। মানুষটা যখন ক্লান্তি নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকবে, তখন শরীরের কাপড় অগোছালো করে মানুষটার পাশে গিয়ে চুপটি করে শুয়ে মানুষটাকে প্রলোভন দেখাবো। যাতে করে মানুষটা আমায় নিজেই কাছে টেনে নিয়ে তার শরীরে বহন করা ক্লান্তির কিছুটা ভাগ আমায় দিয়ে দেয়। মানুষটা যখন খুব বেশি রেগে থাকবে, তখন মানুষটার কাছে গিয়ে জোরপূর্বক তার একটা হাত আমার কোমরে রেখে তার চোখের দিকে মায়াভরা চাহনিতে তাকিয়ে থাকবো। যাতে করে তার সমস্ত রাগ আমার মায়াভরা চাহনি দেখেই হারিয়ে যায়। এই বিশাল ভুবনকে রাঙ্গিয়ে দিতে ভোর সকালে যখন আকাশে সূর্য উদিত হবে, তখন মানুষটার আগে ঘুম থেকে উঠে তার জন্য চা বানিয়ে এনে চুপচাপ বিছানার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবো। যখনি মানুষটা ঘুম থেকে উঠে চায়ের কাপ দেখে সেটাকে এগিয়ে নিতে চাইবে, তখনি চায়ের কাপ সরিয়ে নিয়ে আমার উষ্কখুষ্ক ঠোঁট জোড়া মানুষটার সামনে এগিয়ে দিয়ে বলবো, এই যে মহাশয়, চায়ের কাপ ততক্ষণ মিলবে না যতক্ষণ না আপনি আমার উষ্কখুষ্ক ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়া আরো সারা রাত মানুষটাকে নিজের বুকে নিয়ে ঘুমবো। এক কথায় আমার রাজ্যের সমস্ত ভালোবাসা আমি মানুষটাকে বিলিয়ে দিব।’

দিশা আনমনে এসব নিয়ে বকবক করতে করতে বকবক থামিয়ে দিয়ে হুট করে সেও আকাশের মতন ঘুমিয়ে পড়ে। দু’জনেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেছে। রাতের বাজে নয়টা। ফোনের শব্দে আকাশের ঘুম ভেঙ্গে যায়। আকাশ ঘুম থেকে উঠে ঘোলাটে চোখ নিয়ে বিছানার একপাশে রাখা ফোনটা হাতে তুলে নেয়। ফোনে কেউ একজন মেইল করেছে। আকাশ ফোনটা হাতে নেওয়ার পর কি মেইল এসেছে সেটা দেখার জন্য মেইল বক্স ওপেন করে। মেইল বক্স ওপেন করতেই দিশার সিক্রেট কিছু ছবি তার সামনে অপ্রত্যাশিত ভাবে ভেসে উঠে। ছবি গুলো দেখার পর আকাশের ঘোলাটে চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে যায়…..

চলবে….