তুলির ফরসা নগ্ন ঘাড় দেখা যাচ্ছে। সদ্য স্নান করে চুল মুছতে মুছতে এসে দাঁড়িয়েছে আয়নার সামনে।
বিছানা থেকে তাকিয়ে আছে ইশতিয়াক। সে চাইলেই এখন উঠে গিয়ে বাহুডোরে বেঁধে ঘাড়ে চুমু খেতে পারে। কারণ রূপবতী তরুণী তার বিয়ে করা পত্নী। তবুও আজ এটা করবে না বলে ঠিক করেছে। আজ রাতেও তুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়া থেকে বিরত থেকেছে। এর কোনো বিস্ময়কর ব্যখ্যা নেই। এটা তার নিজের সঙ্গে এক ধরনের খেলা। সে মাঝে মাঝে দূর থেকেও উপভোগ করতে চায় তুলিকে। যেন এই রূপবতী তরুণী তার স্ত্রী নয়- প্রণয়িনী। যেন পাশের বাসার জানালায় দাঁড়িয়ে থাকা রমণী। যেন গোসল শেষে কোনো বাসার ছাদে বালিকা কাপড় রোদে দিতে এসেছে কিংবা চেয়ারে বসে ভেজা চুল শুকোতে মেলে বসে আছে। তাদেরকে দূর থেকে কেবল মুগ্ধ হয়ে দেখা যায়, প্রেমে পড়া যায়, চাইলেই ছোঁয়া যায় না।
সর্বপরি ইশতিয়াক মাঝে মাঝে তুলিকেও না পাওয়ার বিরহ বেদনা উপভোগ করতে চায়। এ যেন তার ব্যক্তিগত ছেলেমানুষি খেলা। কিন্তু ইশতিয়াক পারলো না। চোখের সামনে তুলির সদ্য স্নান করা উম্মুক্ত পিঠে মুক্তোর মতো জ্বলজ্বল করছে ফোটা ফোটা জল। লাল ব্লাউজের উপরিভাগ খানিকটা ভিজে আছে। তুলি আয়নায় ওর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে শাড়ির আঁচল টেনে ঢেকে নিল পিঠ।
নিজেকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, নিজের সঙ্গে প্রতারণা করে বিছানা থেকে উঠে গেল ইশতিয়াক।
তুলিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে থুতনি মাথায় ঠেকিয়ে আয়নায় তুলির চোখের পানে চোখ রাখে। চোখ নামিয়ে নেয় তুলি। যেন লজ্জা পেয়েছে নববধূ। মাথা থেকে শ্যাম্পুর মিষ্টি ঘ্রাণ নাক দিয়ে ঢুকে শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ায় যেন প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দাবিতে দেহে মিছিল হচ্ছে। এটা কি শ্যাম্পুর নিজস্ব ঘ্রাণ? কৃতিত্ব কি তার? না-কি রূপবতীদের চুলে গিয়ে আরও মোহময় হয়, মহিমান্বিত হয়।
ইশতিয়াকের নিজের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি এখনও পুরোপুরি ভঙ্গ হয়নি- ক্ষীণ আশা আছে। সে কেবল মাথায় থুতনি ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এমনটা প্রেমিক-প্রেমিকারাও করতে পারে।
– ‘তুলি।’
– ‘হু।’
– ‘টাওয়েল দাও আমি মূছে দিচ্ছি চুল।’
– ‘চুল কি ভেজা? মূছে নিয়েছি তো।’
– ‘ভালোভাবে মূছে দেই, দাও।’
তুলি টাওয়েল দেয়।
চুল মূছে দেয়া শেষ করে মুঠো করে ঘাড় থেকে সব চুল সরিয়ে সামনে নেয় ইশতিয়াক। বাহুডোরে বেঁধে নিয়ে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় উম্মুক্ত ঘাড়ে। ভেঙে ফেলে প্রতিশ্রুতি।
তুলি গলায় কৃত্রিম বিরক্তি এনে বললো,
– ‘ছাড়ুন তো।’
ইশতিয়াক অবাধ্য বর। সে ছাড়ে না। উল্টো তুলিকে টেনে ঘুরিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে,
– ‘খুব রাগ হয়েছিল শাড়ি পরোনি বলে। অথচ এই ভোরে গোসল করে পরে আছো।’
তুলি পুনরায় মোচড়া-মুচড়ি করে বললো,
– ‘ছাড়ুন তো, আমি কারও জন্য পরিনি। এখন ইচ্ছা হইছে তাই পরেছি। ছাড়ুন না প্লিজ, অনেক কাজ পড়ে আছে তো আমার।’
ইশতিয়াক না ছেড়ে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে টেনে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে কানের কাছে গুন-গুন করে বললো, “প্রাণ চায় চক্ষু না চায়….”
তুলি লজ্জায় লাল হয়ে বললো,
– ‘হ্যাঁ বলছি আপনাকে, আমি সবেমাত্র গোসল করে এসেছি তো ঢং করতে। ছাড়ুন তো, ছাড়ুন বলছি।’
– ‘আমার ছুটির দিনের ভোরটাই সুন্দর করে দিয়েছো শাড়ি পরে। কয়দিন থেকে বলি পরতে, কে শুনে কার কথা।’
– ‘হ্যাঁ জনাব, আর তাই আপনি গতকাল ফাইনালি মেয়েদের মতো অভিমান করেছিলেন, তাই না?’
– ‘আমি অভিমান করেছি কে বললো? সারাদিনে অফিস থেকে এসে ভালো লাগছিল না কিছু।’
– ‘জি আচ্ছা আর বলতে হবে না, আমিও কারও জন্য শাড়ি পরিনি। ছাড়ুন তো, ছাড়ুন বলছি।’
নিজেকে মুক্ত করে নেয় তুলি৷ ফোনটা বেজে উঠলো তখনই। ইশতিয়াক বালিশের পাশ থেকে তুলির মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বললো,
– ‘অচেনা নাম্বার, গতকালও একবার এসেছিল৷ কেউ ফাজলামো করছে হয়তো। রিসিভ করার দরকার নেই।
যাইহোক, আপনি ফ্রেশ হন, অফিসে যাবেন না?’
ইশতিয়াক আর সেটা নিয়ে ভাবতে গেল না। সে রসিকতা করে কৃত্রিম হতাশা দেখিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
– ‘ম্যাডাম আমাকে তাড়ানোর জন্য এতটাই পাগল হইছে যে, আজ শুক্রবার সেটাই ভুলে বসে আছে।’
তুলি ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠলো। একটু নার্ভাস হলেই সে এরকম ভুল-ভাল বলে বসে। ভাগ্যিস ইশতিয়াক সবকিছু পজিটিভলি নিচ্ছে।
তুলি ফিক করে হেঁসে বললো,
– ‘তাড়ানোর জন্য না, আপনি আজকাল রোজই অফিসে ‘যাচ্ছি যাচ্ছি’ করে দেরি করে যান।’
ইশতিয়াক আবার উঠে দাঁড়ায়, পাশের চেয়ারটা টেনে রাখে তুলির পেছনে। দুই হাতে মৃদু চাপ দিয়ে বসিয়ে বলে,
– ‘এমন রূপবতী বউ থাকলে অফিস যেতে ইচ্ছা করে না-কি?’
তুলির কাঁচভাঙা হাসিতে রুমটা ভরে উঠলো। ইশতিয়াক হাতের তালুতে তেল নিয়ে ওর চুলে দিচ্ছে। মানুষটাকে আয়নায় তাকিয়ে দেখছে তুলি। দিনকে দিন যেন শিশু হয়ে যাচ্ছে। অথচ মাথায় দু’একটা সাদা চুল উঁকি মারা শুরু করেছে। দেখতে সুদর্শন না বলার উপায় নেই। লম্বা আর সুঠাম দেহের অধিকারী। মাথাভর্তি কালো চুল।
এখন শর্ট প্যান্টের সঙ্গে বেগুনি রঙের পাতলা গেঞ্জি পরে আছে। এরকম পোশাকে একদম বাচ্চা ছেলে লাগে ওকে। অথচ অফিসে যাওয়ার সময় পোশাক পরে নিলে লাগে ভিন্ন কোনো পুরুষ।
– ‘কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?’
– ‘আপনাকে দেখি।’
– ‘আমাকে দেখার কি হলো।’
– ‘কিছু হয়নি, আচ্ছা শুনুন না, আজ কোথাও বেড়াতে যাই। আমরা কিন্তু বিয়ের পর দূরে কোথাও বেড়াতে যাইনি।’
আকাশ দিশাকে স্ট্রেচারে শুইয়ে দিয়ে ডাক্তারকে ডেকে আনতে চলে যায়। কিছু সময় পর ডক্টরকে সাথে নিয়ে ফিরে আসে। ডাক্তার এসেই সর্বপ্রথম দিশার হাতের পালস চেক করে। এরপর দিশার নিশ্বাস চলছে কিনা সেটা জানার জন্য দিশার নাকের কাছে হাত নিয়ে গিয়ে চেক করার পর মলিন সুরে আকাশকে বলে,
–‘রোগী আর বেঁচে নেই। আরো মিনিট পাঁচেক আগেই রোগী শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে। আপনারা রোগীকে নিয়ে আসতে আসতেই রোগী পথের মধ্যেই মারা গিয়েছে। দুঃখীত আমায় ক্ষমা করবেন। এখন আর কিছু করার নেই আমার।’
ডাক্তারের কথা শুনে আকাশ পুরোপুরি পাথর হয়ে গিয়েছে। মাথার উপরের আসমানটা যেনো তার উপরে ভেঙ্গে পড়েছে। কলিজাটা ভয়ানক ভাবে মোচড়াতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে যেনো কোনো ভয়ানক জন্তু তার কলিজাটাকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। নিশ্বাসটা ক্রমাগত অবিচল হয়ে আসছে। ডাক্তার এই মাত্র এটা কি শুনালো আকাশকে। আকাশ একদম অপ্রস্তুত ছিল ডাক্তারের মুখে এমন কথা শোনার জন্য। চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়তে শুরু করেছে। পা দু’টো হার মেনে আকাশের সঙ্গ ছেড়ে দিয়েছে। আকাশ হাঁটু ভাজ করে ধপাস করে ফ্লোরের উপরে বসে পড়ে। দুনিয়াটা যেনো খুব সামান্য লাগছে আকাশের কাছে। ইচ্ছে হচ্ছে দুনিয়া থেকে নিজের পরিচয় টাও মুছে দিতে। কি করবে সে আর বেঁচে থেকে এই দুনিয়ায়। তার তো প্রয়োজন ছিল শুধুই দিশাকে, কিন্তু দিশা তো তাকে ছেড়ে চিরতরের জন্য চলে গেছে। আকাশ দিশার কথা ভেবে পাগলের মতন কাঁদতে কাঁদতে নিজে নিজে বলে,
–‘দিশা তুমি বুঝলে না। আমার তোমাকেই দরকার ছিল। তুমি ব্যতীত আমার কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। গোটা দুনিয়ার সমস্ত কিছু এক পাশে রেখে আরেক পাশে তোমায় দিয়ে দাঁড়িপাল্লা করলে আমি নিতান্তই তোমাকে বেছে নিব। কিন্তু সেই তুমিই আমাকে রেখে পাষাণের মতন চলে গেলে। এখন আমার কি হবে। তোমায় পেয়ে অনেকটা সামলে উঠেছিলাম। তবে এখন তোমার নিষ্পত্তিতে আমি পুরোই ধ্বংস হয়ে যাবো। আমি পুরো শেষ।’
আকাশ প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়ে। দুনিয়ার সমস্ত হতাশা যেনো আকাশের উপরে এসে হানা দিয়েছে। হতাশার কারনে নিজের অজান্তেই পাগলের মতন করছে আকাশ। আকাশের পাগলামি দেখে প্রভা দৌড়ে গিয়ে আকাশের সাথে ফ্লোরে গিয়ে বসে। এরপর নিজের বুকে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে থাকে,
–‘আকাশ যা হয়েছে ভুলে যাও দয়া করে। উপর ওয়ালার লিখনে এই পর্যন্তই ছিল দিশার সাথে তোমার সফর। যখনি দিশার সময় ফুরিয়ে গেছে, তখনি উপর ওয়ালা দিশাকে উপরে নিয়ে গেছে। তাই প্লিজ পাগলামি না করে নিজেকে সামলে নাও। তুমি হাজার কাঁদলেও কি দিশা ফিরে আসবে বলো?’
প্রভার কথার উত্তরে আকাশ প্রভাকে বলে,
–‘হুম যা হয়েছে আমি সবটাই ভুলে যাবো। আমার কাছে ভুলবার মতন বিশেষ একটা ঔষধ আছে। সেটা খেলে সব কিছু সামলে নিতে পারবো। আর আমার নিজেকে সামলে নেওয়া অনেক বেশি প্রয়োজন। না হয়তো দিশার স্মৃতি গুলো আমায় জীবিত লাশ বানিয়ে দিবে। মেয়েটা শেষ সময়ে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল তার হাতে বেশি সময় নেই। আমি যেনো তাকে নিজের বুকে আগলে রাখি। সে আমার বুকে মাথা রেখে আমার সাথে শেষ কিছুটা সময় হাসিখুশি ভাবে কথা বলে কাটাতে চায়। কিন্তু আমি তার শেষ কথা গুলো রাখতে পারিনি। তাকে হসপিটালে নিয়ে আসার জন্য তড়িঘড়ি করেছি। আর অন্যদিকে মেয়েটা আমার বুকের মধ্যেই ম/রে পড়ে রয়েছে। আমি কতোটা পাষাণ, যে একজন মৃত ব্যক্তির শেষ আশা টুকু জেনেও তা পূর্ণ না করে তাকে জোরপূর্বক হসপিটালে নিয়ে এসেছি। আমি তো চাইলে পারতাম দিশার শেষ চাওয়া গুলো পূর্ণ করতে। কিন্তু আমি তা না করে নিজের মনগড়া সব কিছু করেছি। মেয়েটার সাথে সেই প্রথম যেদিন দেখা হয়েছে, আমি সেদিন থেকেই নিজের সবকিছু তার উপরে চাপিয়ে দিয়েছি। সে পল্লীর মেয়ে বলে কখনো নিজেকে বড় মনে করেনি। সব সময় নিচু হয়ে থাকতো। সব সময় নিজেকে বিনয়ী করে রাখতো। আমার একটা কথা মুখ দিয়ে বের হওয়ার আগেই সেটাকে পালন করার জন্য দিশা মরিয়া হয়ে উঠতো। মনে হতো যেনো দিশা আমার কেনা গোলাম। অথচ দিশা চাইলে দুনিয়া কাঁপাতে পারতো। সত্তার দেওয়া তার কাছে অপরূপ সুন্দর একটা চেহারা ছিল। ওর বয়সী মেয়েরা আট দশটা ছেলেকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরানোর ক্ষমতা রাখে। সেখানে দিশা আমার মতন পাষাণের জন্য পাগল ছিল। তার থেকেও বড় কথা দিশা নিষিদ্ধ নগরীতে থাকলেও দিশা শরীর ছিল একদম পবিত্র। শরীরে একটা কলঙ্কের দাগ ও ছিল না। দিশার ভার্জিনিটি আমি নষ্ট করেছি। দিশার সতিত্ব সর্বপ্রথম আমিই ভোগ করেছি। আর সর্বশেষ এসে মেয়েটা আমার কারনেই নিজের প্রাণ হারিয়েছে। দিশা কোনো এক কথার মারফতে বলেছিল, বাহিরের দুনিয়াটাতে শরীরের পাশাপাশি প্রাণের ও কোনো নিশ্চয়তা নেই। পল্লীতে শরীরের বিসর্জন ঘটলেও প্রাণের একটা নিশ্চয়তা আছে। আজ তার সেই কথাটা সত্যি হয়েছে। মেয়েটাকে আশ্বাস দেখিয়ে বের করে আনলাম পল্লী থেকে, আর শেষমেশ কিনা তাকে দুনিয়ার বুক থেকেই বিতারিত হতে হলো।’
–‘আকাশ দিশার স্মৃতিকে ভুলে যাও প্লিজ। ওর কথা যতো মনে করবে ততোই তোমার যন্ত্রণা প্রসারিত হবে।’
–‘হুম দিশার সমস্ত স্মৃতিকে আমি ভুলে যাবো। একদম চিরতরে ভুলে যাবো। না হয়তো দিশার স্মৃতি গুলো আমাকে আজীবন যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। তুই আমার থেকে একটু দূরে সর। আমি নিজেকে সামলে নিচ্ছি।’
আকাশের কথায় প্রভা আকাশকে ছেড়ে দেয়। প্রভা আকাশকে ছেড়ে দিতেই আকাশ নিজের কোমর থেকে মেশি/ন বের করে নিজের গলায় চে/পে ধরার জন্য মেশি/নটা গলার দিকে এগোতে থাকে। পাশ থেকে প্রভা আকাশের কর্মকান্ড দেখে খপ করে আকাশের হাত থেকে মেশি/নটা কেঁড়ে নিয়ে আকাশকে আবারো নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। প্রভার এমন আচরণে আকাশ প্রভাকে প্রশ্ন করে,
–‘আকাশ এসব কি করতে যাচ্ছিলি তুই হ্যাঁ?
মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর? এভাবে নিজেকে শেষ করে দিয়ে কে নিজের স্মৃতিকে ভুলে?’
–‘আমি ভুলি। প্রভা আমার আর শক্তি নেই নিজেকে সামলে নেওয়ার। তাই নিজেকে শেষ করে দেওয়াটাই সমাধান।’
–‘আকাশ একদম বাজে কথাবার্তা বলবি না। তুই নিজেকে শেষ করে দিলেই সব কিছুর সমাধান হবে না। একটা খু/নি বুক ফুলিয়ে জমিনে ঘুরে বেড়াবে, আর তুই একজনের বিরহে নিজেকে শে/ষ করে দিবি, এমন পাগলামোর কোনো মানেই হয়না। আকাশ একবার ভালো করে তাকিয়ে দ্যাখ তোর ভালোবাসার মানুষের লাশটার দিকে। কতোটা ভালোবাসলে দিশা জন্য তুই নিজের জীবন দিতে যাচ্ছিস। অথচ তোর সেই ভালোবাসার মানুষটাকে ফারহান নামক জা/নোয়ারটা কতোটা যন্ত্রণা দিয়ে মে/রেছে৷ আকাশ নিজেকে শেষ করে দেওয়াটা সমাধান না। নিজেকে বাঁচিয়ে রেখে কিছু কর এতেই তোর মঙ্গল। এভাবে কায়ারের মতন নিজেকে শেষ করে দিলে দিশাও অনেক বেশি কষ্ট পাবে। আকাশ আমি তোর সাথে বেঈমানী করেছি। তবে আমি কথা দিচ্ছি আমি তোকে পুরোপুরি সঙ্গ দিয়ে নিজের প্রায়শ্চিত্ত করবো। তবে তুই সমস্ত আজেবাজে চিন্তা মাথা থেকে বের করে ফারহানের একটা ব্যবস্থা কর। সে আমার আর তোর জীবন পুরোপুরি ধ্বং/স করে দিয়েছে। তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। ভয়ানক যন্ত্রণা দিয়ে মা/রবি তুই তাকে। দিশাকে সে যেভাবে কষ্ট দিয়ে মে/রেছে, আমি চাই তুই তার থেকেও হাজার গুন বেশি কষ্ট দিয়ে মা/রবি ফারহানকে। ওর
মৃ/ত্যুতে যেনো আট-দশটা মানুষ এমনিতেই শুধরে যায়। আর সাথে ওর চাচা টাকেও মৃ/’ত্যুর ঘাট অব্দি পৌঁছে দিয়ে আসবি।’
প্রভার কথা শুনে আকাশ কিছুটা স্বাভাবিক হয়। প্রভা ঠিকই বলেছে। নিজেকে শে/ষ করে দেওয়াটা সব কিছুর সমাধান নয়। সমাধান হচ্ছে বেঁচে থেকে দিশার খু/নির উপরে বদ/লা নেওয়া। আকাশ প্রভার কথা মতন নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে ভাবতে থাকে,
–‘হ্যাঁ প্রভা ঠিকই বলেছে। আমার ভালোবাসার মানুষটাকে ফারহান নিরীহ ভাবে মে/রেছে। আমি তাকে শে/ষ না করে নিজেকে শে/ষ করে দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম এতোটা সময়। নাহ আমি নিজের নয় ফারহানের দিন-তারিখ ঠিক করবো। আমার দিশাকে যেভাবে মে/রে/ছিস তার চেয়েও ভয়ানক ভাবে
মা/রবো তোকে আমি। একটু ধৈর্য ধর ফারহান। খুব জলদিই তোর দিন-তারিখ ঠিক করবো। আগে প্রিয় মানুষটার শেষ ক্রিয়াধারা করে আসি।’
আকাশ নিজেকে সামলে নিয়ে দিশার লাশ সঙ্গে বাড়ি ফিরে আসে। এরপর নিজের মা-বাবা এবং আরো কিছু লোকজনকে খবর দিয়ে দিশার লাশের শেষ ক্রিয়াধারা করে। দিশাকে যখন আকাশ মাটিতে দাফন করছিল, তখন আকাশের বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছিলো। কিন্তু ফারহানের উপরে ব/দলা নেওয়ার জন্যই সে কোনোভাবে নিজেকে সামলে নিয়েছে। না হয়তো হসপিটালেই সে নিজেকে শে/ষ করে দিতো। বুকে পাথর চা/পা দিয়ে দিশাকে আঁধার কবরে রেখে এসেছে আকাশ৷ বুকের ভিতরটা কি পরিমাণ খাঁখাঁ করছে আকাশের সেটা একমাত্র আকাশ এই জানে। আকাশ ভেবে কুল পাচ্ছে না, যেই মেয়েটা ঠিকঠাক মতন নিজেকে সামলে রাখতে জানতো না, সেই মেয়েটা একাকী আঁধার কবরে থাকবে কি করে। যেই মেয়ে টা তার জন্য এতোটা পাগলামি করতো, সে আজ তাকে ছেড়ে একা রাত কাটাবে কি করে। দিশার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ। কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলে দিশাকে নিয়ে সে হাজার রকমের ভাবনা চিন্তা করছে। ভাবতে এক পর্যায়ে ফুফিয়ে বলে উঠে,
–‘কলিজারে আমার উপরে ভরসা করে তুমি পল্লী ছেড়ে এসেছিল। কিন্তু আমি তোমার সেই বিশ্বাসটা রাখতে পারিনি। তুমি আমায় প্রায় বলতে পল্লীতে প্রাণ হারাবার ভয় নেই। পল্লীটাই তোমাদের জন্য সুরক্ষিত জায়গায়। কিন্তু সেই তুমিই আমার ভরসায় বাহিরের দুনিয়ায় কদম ফেলেছো। আর আমি কি করলাম তোমায় প্রা/ণে মে/রে ফেললাম। তোমার সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা শেষ করে দিয়ে তোমায় মৃত্যুর পর্যটক বানিয়ে দিয়েছি। এখন তুমি মাটির নিচে বসবাস করবে। এখন তুমি মাটির নিচের বিষয় বস্তু গুলাকে দেখে বেড়াবে। উপরে আসার সমস্ত রাস্তাই বন্ধ হয়ে গেছে তোমার। কলিজারে আমি জানি না তুমি আমায় ক্ষমা করবে কিনা। তবে বিশ্বাস করো আমিও তোমায় খুব বেশি ভালোবাসতাম। তোমার জন্য বাবার মুখে মুখে তর্ক করেছি। তোমার জন্যই আমি বাড়ি ছেড়ে দিয়েছি। আমার সব কিছুর একটাই লক্ষ্য মাত্রা ছিল, সেটা হলো তুমি। কিন্তু ফারহান নামক শ/য়/তানটা তোমাকে আমার থেকে আলাদা করে দিয়েছে। আমি এর- ব/দলা ওর থেকে অবশ্যই নিব। তবে কবরে শুয়ে থাকা হে প্রিয়তমা, তুমি আমায় মাফ করে দিও।’
আকাশ দিশার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে দিশা থেকে মাফ চেয়ে চোখের পানি মুছে বাসায় চলে আসে। আকাশের বাবা-মা সবাই আকাশকে বলে তাঁদের সাথে
বাড়িতে ফিরে যেতে। তবে আকাশ বলে দেয় সে একাই এই বাড়িতে থাকবে। আকাশের কথায় আকাশের বাবা-মা আর কিছু না বলে চুপচাপ নিজেদের বাড়িতে ফিরে যায়। আকাশের বাবা-মা চলে যেতেই আকাশ পূর্বের পরিচিত একজনকে ফোন করে কথাবার্তা বলে। দু-চার মিনিট কথাবার্তা বলে ফোন কেটে দুই ঘন্টা বাসায় বসে থাকে। দুই ঘন্টা পর ফোনে একটা ম্যাসেজ আসতেই আকাশ গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। বেশ অনেকটা সময় গাড়ি ড্রাইভ করে একটা নির্জন অন্ধকার বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায়। বাড়িতে পৌঁছাতেই একজন ব্যক্তি আকাশকে বলে উঠে,
–‘ভাই অমানুষের বা/চ্চা দু’টোকেই ধরে এনে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছি।’
–‘ঠিক আছে ভিতরে চল দেখছি। আর আমি যা যা বলেছি সব রেডি করে রেখেছিস তো?’
–‘হুম ভাই সব রেডি আছে।
আকাশকে ভাই ডাকা ব্যক্তিটাকে সঙ্গে নিয়ে আকাশ অন্ধকার বাড়ির কক্ষের ভিতরে প্রবেশ করে। কক্ষের ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখে তার দুই শিকারকে চেয়ারের উপরে বেঁ/ধে রেখেছে তার ছোট ভাই টা। যার নাম হচ্ছে রিফাত। বহু বছর আগ থেকেই রিফাত আকাশের হয়ে কাজ করে। সে কয়েকজন ছেলেপেলেকে সঙ্গে নিয়ে ফারহান এবং তার চাচাকে উ/ঠিয়ে এনে চেয়ারের সাথে বেঁ/ধে রেখেছে। আর পাশের একটা চেয়ায়ের উপরে আকাশের কথা মতন একটা টুলবক্স রেখে দিয়েছে। আকাশ ফারহান এবং তার চাচার একদম সামনা-সামনি একটা চেয়ার টেনে বসে। দু’জনেই অচেতন। আকাশের রিফাতকে বলে তাঁদের শরীরে পানি মে/রে তাঁদেরকে জাগ্রত করতে। আকাশের কথা মতন রিফাত দু’জনের গায়ে পানি ঢেকে তাদেরকে জাগ্রত করে। দু’জন জাগ্রত হয়ে আকাশকে দেখে অবাক হয়ে যায়। ফারহান আকাশকে দেখা মাত্রই চেঁচিয়ে বলে উঠে,
–‘তোর বাহাদুরি এখনো কমেনি? তোর প্রিয়তমার মৃত্যু দেখেও কি তোর হৃদয় কাঁপেনি ভ/য়ে? এতো কিছুর পরেও কোন সাহসে তুই আমাদেরকে লোক দিয়ে উঠিয়ে এনেছিস? এখনো সময় আছে নিজের ভালো চাস তো আমাদেরকে মুক্ত কর। না হয় তোকেও তোর প্রেমিকার মতন ভয়ানক মৃত্যুদন্ড দিব।’
আকাশ ফারহানের কথার কোনো উত্তর করে না। চুপচাপ টুলবক্স থেকে কস্টেপ বের করে ফারহানের এবং তার চাচার মুখে লাগিয়ে দেয়। এরপর ছোট একটা কাটার বের করে ফারহানের শ/রীরে গণহারে আঁকতে আরম্ভ করে। ফারহান সজোড়ে চেঁচাচ্ছে, কিন্তু আকাশ না থেমে তার কাজ চালিয়ে যায়। ফারহানের পুরো শরীর কাটার দিয়ে ক্ষ/ত বানিয়ে রিফাতকে দিয়ে লবন-মরিচ আনিয়ে ফারহানের সারা গা/য়ে মেখে দেয়। তারপর টুলবক্স থেকে বড় একটা চাইনিজ কু/ড়াল বের করে সেটা দিয়ে কু/পিয়ে ফারহানের দু’টো হাত শরীর থেকে আ/লাদা করে ফেলে। ফারহান আকাশের আচরণে ষাঁড়ের মতন চেঁচাতে আরম্ভ করে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। আকাশ একে একে চাইনিজ কু/ড়ালটা দিয়ে ফারহানের পা দু’টো ও হাঁটু থেকে কু/পিয়ে
আ/লাদা করে ফেলে। এরপর হাত-পা চারোটা এক জায়গায় করে রিফাতকে বলে,
–‘রিফাত বড় কড়াইয়াতে তেল গরম করেছিস?’
–‘জ্বি ভাই করে রেখেছি। পাশের রুমেই দু’জন মিলে দুই ঘন্টার উপরে তেল গরম করছে বড় কড়াইয়াতে।’
–‘ঠিক আছে এই দুটোকে সেখানে নিয়ে চল। আর হাত-পা গুলো একজনকে এসে ঐ রুমে নিয়ে যেতে বল।’
–‘ঠিক আছে ভাই।’
আকাশের কথা মতন রিফাত ফারহান এবং তার চাচাকে অন্য একটা রুমে নিয়ে যায়। ফারহানের শরীর থেকে অঝোরে রক্ত পড়ছে। আরেকজন এসে ফারহানের কা’/টা হাত-পা গুলা নিয়ে যায়। অন্য রুমে নিয়ে যাওয়ার পর আকাশ ফারহানের সামনেই তার হাত-পা গুলা তেলের কড়াইয়ার উপরে ছেড়ে দেয়৷ মিনিট দুয়েক যেতেই ফারহানের হাত-পা তেলের উত্তাপে একদম পুড়ে কালো হয়ে যায়। আকাশ রিফাতাকে ইশারা করে বলে পোড়া জিনিস গুলা কড়াউয়া থেকে নামাতে। আকাশের ইশারা মতন রিফাত কড়াইয়া থেকে পো/ড়া হাত-পা গুলো নামিয়ে ফেলে। পো/ড়া হাত-পা গুলো কড়াইয়া থেকে নামাতেই আকাশ ফারহানকে উ/ঠিয়ে নিয়ে সোজা ফুটন্ত তেলের উপরে ছেড়ে দেয়। ফারহান সাথে সাথে একটা বিকট আওয়াজে চিৎকার মারে। ফারহানের চিৎকার শুনে ফারহানের চাচার কলিজা পুরোপুরি শুঁকিয়ে গেছে। চেহারা ভয়ে কুঁচকে আছে। ফারহানের চাচার ভীত চেহারা দেখে আকাশ বলে উঠে,
–‘দ্যাখ তোর ভাই পুতের অবস্থা। প্রাণ হারানোর পাশাপাশি তেলের উত্তাপে পুড়ে কালো হয়ে গেছে। এখন তোর পালা। এই রিফাত কড়াইয়া থেকে
জা/নোয়ার টার দে/হ নামিয়ে এবার এই বেটাকে
তে/লের উপরে ছাড়৷’
আকাশের কথা শুনে ফারহানের চাচা মিনতি করতে শুরু করে আকাশের কাছে। কিন্তু আকাশ তো মিনতি শুনবার মতন লোক হয়। ফারহানের চাচাকেও ফারহানের মতন তেলের কড়াউয়ার মধ্যে ছে/ড়ে দেয় রিফাত এবং তার সাথের একজন মিলে। ফারহানের চাচাও মিনিট কয়েকের মধ্যে পু/ড়ে ছারখার হয়ে গেছে। প্রা/ণ যাওয়ার পাশাপাশি শরীরের সমস্ত গোস্তো ঝলসে গেছে ফারহানের চাচার। দু’জনকে ভয়াবহ মৃ/ত্যু দি/য়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসে নির্জন জায়গাটা থেকে আকাশ। গাড়ি টেনে বাড়িতে এসে পৌঁছায়। নিজের রুমে শুয়ে দিশার কথা ভাবতে থাকে। দিশার কথা ভাবতেই আকাশের মনটা ছটফট করতে শুরু করে। কারন দিশার মৃত্যুর প্র/তিশো/ধ নেওয়ার জন্য না হয় সে সাময়িকের জন্য দিশাকে ভুলে খুনিদেরকে মা/রবে বলে প্রতিক্ষা করে বসে ছিল। কিন্তু এখন তো তার প্র/তিশো/ধ পূরণ হয়েছে। এখন কি নিয়ে বাঁচবে সে। মাথায় কাজ করছে না আকাশের। চোখের পানি ছেড়ে বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা-ভাবনা করে আকাশ। কিছুক্ষণ পর সে হুট করেই বিছানা ছেড়ে উঠে চোখের পানি মুছে নিয়ে একটা ব্যাগে কাপড় চোপড় গুছিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। আর যাওয়ার আগে ঘরের দরজায় একটা চিঠি রেখে যায়। একদিন পর প্রভা আকাশের সাথে দেখা করতে এসে দরজার সামনে আকাশের রেখে যাওয়া চিঠিটা সে দেখতে পায়। প্রভা চিঠিটা পড়ে কান্না করতে করতে আকাশের বাসায় গিয়ে আকাশের মা-বাবার হাতে চিঠিটা দেয়। আকাশের বাবা চিঠিটা খুলতেই চিঠিতে লিখে যাওয়া কথা গুলো তিনি দেখতে পায়। আকাশের বাবা চিঠিটা পড়তে আরম্ভ করে..
–‘চিঠিটা কার হাতে গিয়ে পৌঁছাবে আমি জানি না! তবে আমার বিশ্বাস এটা আমার বাবার হাতে গিয়েই পৌঁছাবে। তাই বাবাকে সম্মোধন করেই বলছি। প্রিয় বাবা-মা তোমরা আমায় ক্ষমা করে দিও। আমি আর কখনো বাড়ি ফিরবো না। সব কিছু ছেড়ে অজানা এক গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে পড়েছি। বিশেষ করে বাবা তুমি আমায় ক্ষমা করে দিও। তোমার সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা আমি শেষ করে দিয়েছি। কয়দিন আগে তুমি আমার নামে অফিসের সমস্ত কাগজপত্র উইল করে দিয়েছো। কিন্তু আমি কাউকে কিছু না বলে দূর পথের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছি। বাবা তুমি তোমার সমস্ত সম্পত্তির নতুন করে কাগজ বানিয়ে ছুটকির নামে করে দিও। আমার টাকা পয়সা দুনিয়াদারীর কোনোই প্রয়োজন নেই। আমার দুনিয়া ছিল যেই মানুষটা, সেই মানুষটা অন্ধকার কবরে শুয়ে দিন কাটাচ্ছে। আর আমি কিনা দালান বাড়িতে থেকে ভালো মন্দ খেয়ে সময় কাটাবো। বাবা আমি কখনোই এমনটা করতে পারবো না। মেয়েটা আমার উপরে বিশ্বাস করে পল্লী ছেড়ে আমার সাথে থাকতে এসেছে। কিন্তু শেষমেশ আমার কারনেই তাকে পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে। বাবা আমার চাই না আর কিছু। একে একে দু’বার আঘাত পেয়েছি। প্রভাকে ভালোবেসে প্রতারণার শিকার হয়েছি। দ্বিতীয়ত দিশাকে ভালোবেসে তাকে নিজের কাছে আগলে রাখতে পারিনি। উল্টো তাকে নিজের হাতেই দাফন করে এসেছি। মেয়েটা শুধু আমার উপরে বিশ্বাস করে ঠকেছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যতোদিন বেঁচে থাকবো ততোদিন পাগলের মতন রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াবো। আমার পাগলিটা আঁধার কবরে একা থাকতে পারবে না। প্রচন্ড কষ্ট হবে তার একা থাকতে। তাই আমিও রাস্তাঘাটে ঘুরে বেরিয়ে একা থেকে দিশার কষ্টটা উপলব্ধি করবো। তোমরা আমার আর কখনো খোঁজ করো না। আমি একা থাকতে চাই। আর আমি যেখানেই থাকি না কেন সব সময় তোমাদের কথা স্মরণ রাখবো। ভালো থেকো তোমরা সকলেই।
ইতি
আকাশ
আকাশের বাবা-মা আকাশের চিঠিটা পড়ে কান্না করতে আরম্ভ করে। সাথে প্রভাও অনুশোচনায় ভুগে মরছে। তার জন্যই সব কিছু হয়েছে। সে যদি ফারহানের ফাঁদে পা না দিতো, তাহলে আজ আকাশের এই দূর্দশা হতো না। আর কখনোই দিশা মরতো না। কারন সে ঠিকঠাক থাকলে আকাশ কখনোই দিশা পর্যন্ত পৌঁছাতো না। চোখের পানি ছেড়ে পাগলের মতন কাঁদতে শুরু করে প্রভা। কিন্তু কেঁদে আর লাভ কি। নিজের একটা ভুল পদক্ষেপ নিজের পাশাপাশি বাকি আরো কয়েকটা মানুষের জীবন শেষ করে দিতে পারে। সেজন্য সবাই কোনো কিছু করার আগে সাবধান। যা করবেন ভেবেচিন্তে করবেন।
আকাশ কিছু বলে শেষ করার আগেই দিশা ফোন রেখে দিয়ে চলে গেছে দরজার কে এসেছে দেখার জন্য। এদিকে আকাশের গলা পুরোপুরি শুঁকিয়ে গেছে। বুকের ভিতরে ধুপধুপ করছে তার। কারন আকাশ আগ থেকেই আন্দাজ করে নিয়েছে ঘরের দরজায় কে এসে দাঁড়িয়ে আছে। থরথর করে কাঁপছে আকাশের শরীর। কি করবে দিশেহারা হয়ে গেছে আকাশ। চেহারার ধরণ পুরোপুরি পাল্টে গেছে। মাথায় যেনো কিছুই কাজ করছে না। আকাশের ঘাবড়ে যাওয়া চেহারাটা দেখে প্রভা আকাশকে প্রশ্ন করে,
–‘কি হয়েছে আকাশ তুমি এমন ঘাবড়ে আছো কেন? দিশা কি বলেছে তোমায়? আর তুমি কথা বলে শেষ করার আগেই দিশা ফোন কেন রেখে দিয়েছে?’
–‘বাড়ির দরজায় নাকি বেশ কিছুক্ষণ ধরে কেউ একজন কলিংবেল বাজাচ্ছে। দিশা আমার পুরো কথাটা না শুনে আমার সাথে পরে কথা বলছি বলে দরজায় কে এসেছে দেখতে চলে গেছে।’
–‘আকাশ তোমার এক্ষুনি একবার বাসায় যাওয়া উচিৎ। দিশাকে তোমার একা ফেলে রেখে আসা ঠিক হয়নি। কখন ফারহান নামক শয়তানটা তার কোনো ক্ষতি করে দেয়। আর তাছাড়া তোমার বাসার কলিংবেল বাজাচ্ছে কেউ একজন বেশ কিছু সময় ধরে। আল্লাহ না করুক সে যদি ফারহান হয়, তাহলে কিন্তু দিশার জন্য বিপদ আছে। তাই প্লিজ তুমি একবার বাসায় গিয়ে দেখে এসো দিশা কি অবস্থায় আছে।’
–‘হুম আমি এক্ষুনি বাসায় যাবো। কারন আমি যেটা কল্পনা করছি সেটা যদি হয়, তাহলে বিশাল বড় ক্ষতি হয়ে যাবে আমার।’
–‘ঠিক আছে যাও। তবে আমায় কি তোমার সঙ্গে নিয়ে যাবে?’
–‘বেঈমানের সঙ্গে চলালল করা বহু আগেই বাদ দিয়ে দিয়েছি আমি। আমি কাউকেই আমার সঙ্গে নিব না।’
–‘ঠিক আছে তুমি একাই যাও। আমি রিক্সায় করে তোমার বাড়ি আসছি। আসলে দিশার জন্য কিছু উপহার নিয়ে এসেছি সঙ্গে করে। সেসব উপহার দিশাকে দিতেই তোমার বাড়ি যেতে চেয়েছি। তবে সমস্যা নেই। তুমি চলে যাও তোমার মতন। আমি রিক্সায় করে আসছি।’
আকাশ আর কথা না বাড়িয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। আকাশের ভিতরটা উতাল-পাতাল করছে। প্রভার বলা কথা গুলো যদি সত্যি হয়, আর সেই অনুপাতে যদি ফারহান আমার বাসায় যায়, তাহলে নিশ্চিত জানো/য়ার টা আমার দিশার কোনো বড় ধরনের ক্ষতি করবে। আকাশ গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে তার নিজের পুরোনো নাম্বারে বেশ কয়বার ফোন করে, কিন্তু দিশা ফোন রিসিভ করে না। আকাশের ভয়টা আরো বেড়ে যায়। দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করে বাসায় গিয়ে পৌঁছায়। বাসায় পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে বাসায় প্রবেশ করবে সেই সময় দেখতে পায় বাসার দরজা খোলা। আকাশের মনে আতঙ্ক লেগে যায় ব্যাপার দেখে। কারন ঘরের দরজা ভালো করে লাগিয়ে রাখার কথা ছিল দিশার। সেখানে বাড়ির দরজা খোলা। আকাশের মনে কু ডাকতে আরম্ভ করে। দিশাকে দেখার জন্য ভিতরটা মরিয়া হয়ে উঠে আকাশের। তাড়াতাড়ি বাসার ভিতরে ঢুকে পড়ে দিশাকে দেখার জন্য আকাশ। এরপর বাসায় ঢুকে কয়েক কদম সামনে এগোতেই দেখে দিশা রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরের উপরে পড়ে আছে। পুরো ফ্লোর রক্তে লাল হয়ে আছে। আর দিশা নিরব হয়ে ফ্লোরের উপরে শুয়ে আছে। দিশার এই ভয়ানক অবস্থা দেখে আকাশ বিকট আওয়াজে একটা চিৎকার দিয়ে উঠে। মনে মনে সে যেটা নিয়ে ভয় পাচ্ছিলো সেটাই হয়েছে। আকাশ দৌড়ে দিশার কাছে যায়। দিশার কাছে গিয়ে দেখে দিশার গলায় কেউ ছুরি দিয়ে আঘাত মেরেছে। দিশার গলা থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে। আকাশের সারা শরীর কাটা দিয়ে উঠে দিশার অবস্থা দেখে। দিশার পাশে বসে কোনো রকমে সে দিশার মাথা উঠিয়ে নিজের কোলে রাখে। এরপর কাঁদতে কাঁদতে দিশাকে ডাকতে থাকে,
–‘দিশা এই দিশা? কথা বলো প্লিজ। তুমি কেন আমার পুরো কথাটা না শুনে দরজা খুলতে গেলে?
দিশা আকাশের কথার কোনো জওয়াব দেয় না। আকাশ দিশার থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে দিশার শরীর ঝাঁকিয়ে তাকে ডাকতে আরম্ভ করে।
এবার দিশা রেসপন্স করে উঠে। আকাশ দিশার রেসপন্স পেয়ে দিশাকে বলে,
–‘কেন তুমি তখন আমার পুরো কথাটা শুনলে না দিশা? তখন যদি আমার কথাটা শুনতে তাহলে কখনোই আর এমনটা হতো না।’
দিশা আকাশের কথা শুনে ছোট্ট আওয়াজে বলে,
–‘আমার কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তবে তার থেকেও বেশি কষ্ট হচ্ছে আমার নসিব দেখে। আসলে আমার নসিবেই ছিল এমনটা। আমার কপালে নেই আপনার সাথে সারাজীবন কাটানো। সেজন্য হুট করেই আমার সাথে এমনটা ঘটে গেছে। আমি সব সময় আপনার কথা শুনি। কিন্তু কলিংবেলের আওয়াজে বিরক্ত হয়ে ভাবলাম আগে কে এসেছে সেটা দেখে আসি। পরে না হয় আপনার সাথে কথা বলবো। এই প্রথম নিজের চিন্তা-ভাবনায় কিছু করার চেষ্টা করেছি, এবং প্রথম বারেই নিজের মৃত্যুকে দাওয়াত করে নিয়ে এসেছি। আসলে জানেন আমার কপালটাই খারাপ। কখনো মন থেকে কোনো কিছু চেয়েও সেটা আমি পাইনি। তবে আপনাকে ভাগ্য করে নিজের কাছে পেয়েছিলাম। আমার সব সময় ভয় হতো আপনাকে নিয়ে। আপনি না জানি কখন আমার থেকে দূরে সরে যান। কিন্তু দেখেন উপর ওয়ালার কি নির্মম পরিহাস আমি নিজেই আপনার থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আমিই ভয় পেতাম আপনাকে নিয়ে, এখন উল্টো আমিই চলে যাচ্ছি আপনাকে একা রেখে।’
–‘দিশা তোমার কিচ্ছু হবে না। আমি তোমাকে নিয়ে হসপিটাল যাচ্ছি। প্লিজ তুমি অশুভ কথাবার্তা বলিও না। দেখবে তুমি ঠিক হয়ে যাবে।’
–‘প্লিজ আপনি আমার জন্য দৌড়ঝাঁপ করিয়েন না। আমার চলে যাওয়ার সময় এসে গেছে। আমি সব কিছুকে অনুভব করতে পারছি। আপনি প্লিজ আমার জন্য তাড়াহুড়ো করবেন না।’
–‘দিশা তোমার কাছে অনুরোধ তুমি উল্টো-পাল্টা কথা বলিও না। তোমার কিচ্ছু হবে না বললাম তো।’
–‘আকাশ সাহেব আমার আফসোস থেকে যাবে আপনার জন্য। অবশ্য এখনো আফসোস হচ্ছে। তবে সব চাইতে বড় আফসোসটা তখন হবে, যখন আপনি আমাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার তাড়নায় অবিলম্বে থাকবেন, আর অন্য দিকে আমার প্রাণটা চলে যাবে। দেখুন আমি আপনার বুকে মাথা রেখে মরতে চাই। আমি শেষ সময় টুকু আপনার সাথে কথা বলে কাটাতে চাই। আমি জানি আমার হাতে আর বেশি সময় নেই। না হয়তো আমি আপনাকে বাঁধা দিতাম না। আমারো তো ইচ্ছে ছিলো আপনার সাথে সারাটা জীবন কাটানোর। তাহলে আমিই কেন আপনাকে বারন করছি একবার বুঝার চেষ্টা করুন।’
–‘দিশা আমি হাল ছাড়বো না। তোমার সমস্ত ইচ্ছেই আমি পূরণ করবো। তোমার মাথা নিজের বুকে নিয়ে তোমার সাথে ইচ্ছে মতন কথা বলবো। কিন্তু আমি হাল ছাড়বো না কখনোই। কারন তোমাকে নিয়ে আমি সারাজীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখেছি। দিশা তোমাকে আজ সকালে বলেছিলাম তোমার জন্য একটা গিফট আছে। সেই গিফটা কি তুমি কি জানো?’
–‘না জানি না।’
–‘দিশা আমি তোমাকে বিয়ে করে নিজের বউ বানাবো বলে ঠিক করেছি। দিশা আমি তোমার সাথে মরণ পর্যন্ত থাকতে চাই। তুমি সব সময় মনে মনে আমাকে নিয়ে একটা ভয় পাও। আমি কখন না জানি তোমায় ছেড়ে দেই। দিশা আমি তোমার সেই ভয়টা মনের ভিতর থেকে সারাজীবনের জন্য দূর করতে চেয়েছিলাম। আমি তো এতো সহজে হাল ছাড়বো না। প্রভাকে ভালোবেসে জীবনের সব চাইতে বড় শিক্ষাটা পেয়েছি। সে ভালোবাসার নাম করে হৃদয়ে জায়গা বানিয়ে আমাকে পুরো নিস্তেজ বানিয়ে দিয়েছে। শেষ হয়ে যেতে ধরেছিলাম আমি। তবে তুমি সঠিক সময়ে এসে আমায় নিজের কাছে টেনে নিয়েছো। আর আমিও সঠিক সময়ে তোমার দেখা পেয়েছি। আমার বেঁচে থাকার অনেক বড় একটা মাধ্যম তুমি। আমি তো হাত-পা গুটিয়ে কখনোই বসে থাকবো না দিশা। তোমাকে আমি হসপিটালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলবো।’
আকাশের মুখে বিয়ের কথা শুনে দিশার মুখের কোণে হাসি ফুটে উঠে। এখন তারো খুব করে বাঁচতে ইচ্ছে করছে। তার প্রিয় মানুষটা তাকে নিজেই সারাজীবনের জন্য আপন করে নেওয়ার কথা বলছে। মুখ ফুটে এবার দিশা নিজেই আকাশকে বলে উঠে,
–‘আমি বাঁচতে চাই আকাশ সাহেব। আমি আপনার সাথে আরো বহু বছর কাটাতে চাই। আপনি আপনার মতো করে শেষ চেষ্টা করে দেখুন। তবে আমার মনে হয় না আমাকে আপনি বাঁচাতে পারবেন। কারন আপনার প্রাক্তনের যার সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল, সে শুধু আমায় গলায় নয়, আমার পেটেও ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। আমার শাড়ীর কারনে হয়তো আপনি মর্মাঘাত গুলো দেখতে পাচ্ছেন না। তবে আমার শাড়ী উল্টোলেই আমার সমস্ত মর্মাঘাত দেখতে পাবেন। আর তাছাড়া পেটের উপরের অংশের শাড়ীতে দেখুন রক্ত লেগে আছে। আকাশ সাহেব আমার শরীরের অবস্থা দেখে আমি কোনো ভাবেই ভরসা পাচ্ছি না আমি বাঁচবো। তবে আমি বাঁচতে চাই। আমায় বাঁচিয়ে নিন প্লিজ।’
–‘তোমার কিচ্ছু হবে না। তুমি আমার উপরে ভরসা রাখো দিশা।’
দিশা আবারো মুচকি একটা হাসি দিয়ে চুপ হয়ে যায়। অপরদিকে আকাশ দিশাকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে গাড়ির সামনে এসে হাজির হয়। ঠিক সেই সময় প্রভা রিক্সা থেকে নেমে আকাশের বাসায় আসে। প্রভা এসে দিশাকে রক্তাক্ত অবস্থায় আকাশের কোলে দেখতে পেয়ে চমকে উঠে। প্রভার বেশ খারাপ লাগছে দিশার জন্য। গুটিগুটি পায়ে হেঁটে আকাশের কাছে এসে কিছুটা সময় দিশার দিকে তাকিয়ে থাকে। দিশার গলার কাটা জায়গাটা দেখে প্রভার শরীর কেঁপে উঠে। বেশ রাগ হচ্ছে ফারহানের উপরে তার। ইচ্ছে করছে ফারহানকে জলজ্যান্ত পুড়িয়ে মারতে। তবে সেটা তার পক্ষে সম্ভব না। ফারহানের শক্তির সাথে সে হয়তো কখনোই পেরে উঠবে না। তবে ফারহানকে তো এভাবে ছাড়া যাবে না। সেজন্য প্রভা আকাশকে বলে,
–‘শয়তানটা অলরেডি তোমার প্রভার গায়ে আঘাত ও করে বসেছে। আকাশ তুমি ঐ জানোয়ার টাকে ছাড়বে না। সে আমাকে তোমার থেকে দূরে সরিয়েছে। এখন এসে প্রভার সাথে এমন জঘন্য কাজটা করেছে। তুমি তাকে একেবারে শেষ করে দিবে। দরকার হয় আমি তোমার সঙ্গ দিব। সে যেনো কোনো ভাবেই বাঁচতে না পারে। ওর পাপের সাজা ওকে পেতেই হবে।’
প্রভার কথা শুনে আকাশ দিশাকে বলে,
–‘আমার দিশার কিছু হলে ফারহানকে মেরে তার শরীরের কয়েক হাজার টুকরো করবো আমি। এরপর সমস্ত টুকরো বস্তা ভরে নিয়ে গিয়ে শহরের কুকুরকে খেতে দিব। তবে সেসব কিছু পরে। আগে এখন তুই আমার দিশাকে বাঁচাতে সাহায্য কর। তুই তো গাড়ি ড্রাইভ করতে পারিস। তুই আমার গাড়িটা ড্রাইভ করে হসপিটালে নিয়ে চল। আর আমি দিশাকে নিয়ে পাশের সিটে বসছি। মেয়েটাকে সামলে রাখা প্রয়োজন।’
–‘ঠিক আছে।’
আকাশের কথা মতন প্রভা গাড়ি ড্রাইভ করছে। আর আকাশ পাশের সিটে বসে দিশাকে জড়িয়ে ধরে তার মাথাটা নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে রেখেছে। আকাশের চোখের কোণ বেয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। অপরদিকে দিশা চুপচাপ এক নজরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো সাড়াশব্দ নেই দিশার। এভাবে কিছুটা সময় যেতেই প্রভা আর আকাশ মিলে দিশাকে পাশের একটা হসপিটালে নিয়ে যায়। হসপিটালে পৌঁছে আকাশ দিশাকে কোলে করে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে হসপিটালের একটা স্ট্রেচারে শুইয়ে দিয়ে ডাক্তারকে ডেকে আনতে চলে যায়। কিছু সময় পর আকাশ ডক্টরকে নিয়ে ফিরে আসে। ডক্টর এসেই সর্বপ্রথম দিশার হাতের পালস চেক করে। এরপর দিশার নিশ্বাস চলছে কিনা সেটা জানার জন্য দিশার নাকের কাছে হাত নিয়ে গিয়ে চেক করার পর মলিন সুরে আকাশকে বলে,
–‘আমার সাথে বিয়ে হওয়ার পরেও প্রেমিকের উপরে অবৈধ মায়া হচ্ছে বুঝি? শোন তোর আকাশকে মরতেই হবে। আমার কাজে বাঁধা দিতে আসলে তোকেও তোর প্রেমিকের মতন মে/রে মাটির নিচে চাপা দিয়ে দিব। আজ দু’বছর ধরে তোর অবৈধ প্রেমিককে মারার জন্য পাগলের মতন এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি। এবার তাকে মরতেই হবে। সময় এসে গেছে গেছে তার উপরে যাওয়ার।’
ফারহানের কথা শুনে প্রভা পুরো চমকে উঠে। আকাশের উপরে ফারহানের কিসের এতো ক্রোধ, যার জন্য ফারহান আকাশকে মা/রার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রভা কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। প্রশ্নবোধক চাহনিতে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে। তখনি ফারহান পৈচাশিক ভাবে হাসতে আরম্ভ করে। প্রভা রীতিমতো আরো অবাক হয়ে যায় ফারহানের শয়তানি মার্কা হাসি দেখে। বিস্মিত হয়ে ফারহানের দিকে দৃষ্টিপাত করে তাকিয়ে আছে। প্রভার আশ্চর্যান্বিত চাহনি দিকে ফারহান বলে উঠে,
–‘কিরে অবাক হচ্ছিস বুঝি আমার নতুন রূপ দেখে? শোন এখনো তো কিছুই দেখিস নি। এই অল্প টুকু দেখে এভাবে চমকে গেলে হবে নাকি? তোর তো এখনো অনেক কিছু দেখা বাকি এবং অনেক কিছুই শোনা বাকি।’
–‘ফারহান মানে কি এসবের?’
প্রভার প্রশ্নে ফারহান প্রভার গলা ছেড়ে দিয়ে বলে,
–‘মানে টা সত্যিই জানতে চাইছিস তুই?’
–‘হুম আমি মানেটা জানতে চাই। তোমার সাথে আকাশের কিসের এতো শত্রুতা?’
–‘তাহলে শোন বলছি। তুই যখন আমার সাথে মেলামেশা করেছিস তখন হয়তো খেয়াল করেছিস আমার পিঠে অনেক গুলো সেলাইয়ের দাগ?’
–‘হুম দেখেছি।’
–‘তোর প্রিয় আকাশ আজ থেকে দু’বছর আগে আমার পিঠে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছিল। আমি সেই থেকেই সঠিক সময়ের সন্ধানে বসে আছি।’
–‘আকাশ তোমায় কেন ছুরি দিয়ে আঘাত করেছিল?’
–‘তুই তো ইতিমধ্যে জেনেই গেছিস আমার মেয়ের নেশা বেশি। আমি মেয়েদের সাথে অবৈধ রংতামাশায় লিপ্ত হই। আজ থেকে দু’বছর আগে একটা মেয়ের সাথে প্রেমের নাটক করে তাকে ব্যবহার করেছিলাম। তখন তোর প্রিয় আকাশ ছিল নাম করা মাস্তান। আমি মেয়েটাকে ব্যবহার করে ছেড়ে দেওয়ায় সেই মেয়েটা গিয়ে তোর অবৈধ প্রেমিককে বিচার দেয়। তখন তোর প্রেমিক ছেলেপেলে নিয়ে এসে আমায় অনেক মারধর করে। এবং আমার শরীরের অনেক কয় জায়গায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে। ছুরির আঘাত শুধু আমার পিঠেই নয় শরীরের আরো অনেক অংশেই রয়েছে। আমি সেদিন কোনোমতে নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়েছি। আর পালাতে পালাতে নিয়ত করেছি এই আকাশের বাচ্চাকে আমি দুনিয়া থেকেই বিতারিত করবো। আর সেই থেকেই পিছনে লাগি তোর আকাশের। তবে কোনো ভাবেই তোর আকাশকে কিছু করতে পারছিলাম না। বেশ চেষ্টা চালিয়েছি তোর আকাশকে মারবার, কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি। তবে আমি পরাজিত হতে মোটেও রাজি নই। সেজন্য বুদ্ধি করে নতুন ফন্দী এঁটেছি। সর্বপ্রথম প্ল্যান মোতাবেক তোকে আকাশ থেকে দূরে সরিয়ে নিজের ইচ্ছে মতন ব্যবহার করেছি।
যাতে করে তোর আকাশ কষ্ট পেয়ে ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু জানো/য়ার টা কষ্ট পেয়েছে ঠিক কিন্তু ভেঙ্গে পড়েনি। তাই এবার প্রথমে দিশাকে শেষ করবো। তারপর তোর আকাশের বুকে পাড়া দিয়ে তার গলা শরীর থেকে
কে/টে আলাদা করে ফেলবো। এরপরেই পূর্ণ হবে আমার বদলা নেওয়া।’
ফারহানের কথা শুনে প্রভার শরীর থরথর করে কাঁপতে শুরু করে। ফারহান তাকে কখনোই ভালোবাসেনি। তাকে শুধুমাত্র শিকার ধরবার আহার্য হিসেবে ব্যবহার করেছে। প্রভার চোখের কোণে পানি চলে এসেছে। কি করবে সে বুঝে উঠতে পারছে না। ফারহানের ফাঁদে পা দিয়ে সে কতো বড় ভুল করে এখন হারে হারে টের পাচ্ছে। ফারহানের জন্য সে তার ভালোবাসার মানুষ টাকে ধোঁকা দিয়েছে। যেই মানুষ টাকে সে একটা সময় অনেক বেশি ভালোবাসতো, সেই মানুষটার মনে সে আঘাত করেছে। যেই মানুষটা শুধু তার জন্যই গুন্ডামি মাস্তানি সব কিছু ছেড়ে দিয়েছে, সে সেই মানুষটার সাথেই বেঈমানী করে অন্য পুরুষের সাথে বিছানায় গিয়েছে। প্রভার চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে এখন। চোখের পানি গুলো ঝর্ণার পানির ন্যায় টুপটুপ করে পড়ছে। আকাশের জন্য ভিষণ খারাপ লাগছে প্রভার। অন্যদিকে আবার ফারহানের উপরে জঘন্য পরিমাণে রাগ উঠছে তার। ইচ্ছে করছে ফারহানের গলা চিপে ধরে তাকে চিরতরে ঘুম পাড়িয়ে দিতে। ভয়ানক রকমের অস্বস্থি লাগছে প্রভার। চোখের পানিতে প্রভার চেহারা পুরো ভিজে গেছে। ফারহান তার সুন্দর জীবনটা পুরো তসনস করে দিয়েছে। এখন প্রভার জীবনের কোনো আর মাইনে নেই। তার জীবনটাকে পুরোপুরি গেম বানিয়ে দিয়েছে ফারহান। হতাশায় ভুগতে শুরু করেছে প্রভা। এতো কিছুর পরেও প্রভা অকপটে ফারহানকে জিজ্ঞাস করে,
–‘এই জঘন্য গেমটা কি করে খেলতে পারলে ফারহান তুমি? তোমার থেকে কোনোদিন ও আমি এমটনা আশা করিনি। তুমি আমার জীবনটা পুরো শেষ করে দিলে।’
–‘আরেহ তোর জীবন শেষ করলেও তো তোকে নিজের বউ বানিয়েছে। তবে আকাশকে তো পুরোপুরি মেরেই ফেলবো।’
–‘ফারহান কখনোই তুমি এমনটা করতে পারবে না। আমি থাকতে আকাশের গায়ে একটা নখের আঁচড় ও আমি লাগতে দিব না। আকাশের কিছু করতে হলে তোমার আগে আমাকে শেষ করতে হবে।’
–‘প্রভা আমি ক্ষুদার্ত পশু। আমি এখন সামনে যা পাবো তাই গিলে খাবো। কোনো কিছুই দেখার সময় নেই এখন আমার কাছে। অহেতুক আমার সামনে আসিস না। না হয়তো কোনো কারন ছাড়াই তোর প্রাণ যাবে।’
–‘জীবন তো এমনিতেও শেষ। এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। যার সাথে কোনো কারন ছাড়াই বেঈমানী করে তাকে কষ্ট দিলাম, তার প্রায়শ্চিত্তে না হয় প্রাণ টাই যাবে।’
প্রভার কথা শুনে ফারহান রেগে গিয়ে প্রভাকে ধাক্কা দিয়ে আবার মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে,
–‘তোর আকাশ কোনো ভাবেই বাঁচবে না। সে আমার সাথে বাদে আমার চাচার গায়েও হাত উঠিয়েছে দিশা নামক মেয়েটার কারনে। সেদিন পল্লীতে গিয়ে আমার চাচা দিশাকে চাওয়ায় তোর আকাশ নাকি আমার চাচার গায়ে হাত উঠিয়েছে। তাই চাচা বললো যতো টাকা লাগবে লাগুক, কিন্তু আকাশকে মরা চাই। সেজন্য তোর আকাশকে তো কোনো ভাবেই ছাড়া যাবে না। একজন নয় দু’জনের বদলা নিব আমি তার উপরে। নিজের ভালো চাস তো আমার রাস্তায় আসবি না। না হয়তো তোর অবস্থাও ভয়াবহ হবে। চললাম আমি এখন। এভাবেই মাটিতে ছিটকে পড়ে থাক।’
ফারহান প্রভাকে মাটিতে ফেলে দিয়ে তাকে একা রেখে চলে যায়। অপরদিকে ফারহানের কথা শুনে প্রভার বুঝতে বাকি নেই ফারহানের পুরো গুষ্টির মানুষজন একই ধরনের। সবাই শরীর খেকো। নারীদের শরীর খাওয়ার তাড়না তাদের পুরো গুষ্টির মানুষেদের মধ্যেই বিরাজমান। চাচা এবং ভাইয়ের ছেলে সবাই এক ঘাটের মাঝি। তবে যাই হবে হোক প্রভা আকাশের কোনো ক্ষতি হতে দিবে না। তার জীবনটা তো ফারহান শেষ করে দিয়েছে। কিন্তু সে চাইলে আকাশকে বাঁচাতে পারে। সেজন্য সে শক্তি যুগিয়ে মাটি থেকে উঠে দাঁড়ায়। এরপর একটা গাড়ি ঠিক করে আকাশের বাসার উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়। আর মনে মনে ভাবতে থাকে,
–‘আমি গিয়ে সমস্ত সত্যি বলে দিব আকাশকে। আমি চাই না আকাশের কোনো ক্ষতি হোক। আমি প্রতারকের পাল্লায় পড়ে আকাশের সাথে বেঈমানী করেছি। মানুষটা এমনিতেই কষ্ট পেয়েছে আমার আচরণে। এর উপরে ফারহান যদি তার কোনো ক্ষতি করে বসে তাহলে তো বেশ খারাপ হবে। নাহ আকাশকে গিয়ে ফারহানের সমস্ত সত্যি বলে দিব। আমি জানি আমায় হয়তো কখনো আকাশ মাফ করবে না। তবে আমার জন্য যদি আকাশের প্রাণটা বেঁচে যায়, তাহলে সে সুন্দর একটা সংসার গড়তে পারবে দিশার সাথে। আর আমারো পাপের বোঝাটা কমবে।’
প্রভা আকাশের বিষয়ে ভাবতে ভাবতে আকাশের বাসায় গিয়ে হাজির হয়। আকাশের বাসায় পৌঁছে কলিংবেল বাজানোর পাশাপাশি জোরে জোরে দরজার বাড়ি দিয়ে আকাশকে ডাকতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ ডাকার পর দিশা এসে দরজা খুলে। দিশা দরজা খুলতেই প্রভা দিশাকে জিজ্ঞাস করে,
–‘দিশা আকাশ কোথায়?’
–‘কেন উনাকে দিয়ে আপনার কাজ কি? আর আপনি কি কারনে আবার এখানে এসেছেন? দেখুন আপনি এখান থেকে চলে যান। না হয়তো উনি এসে আপনাকে দেখলে বেশ রাগারাগি করবে। প্লিজ আপনি চলে যান।’
–‘দিশা আমি চলে যাবো। আমি এখানে থাকার উদ্দেশ্যে আসিনি। আমি আকাশকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে এসেছি। কথা গুলো বলেই আমি চলে যাবো। তুমি প্লিজ আকাশকে ডেকে দাও। না হয় আমাকে ওর কাছে নিয়ে চলো।’
প্রভার কথায় দিশা কিছু বলতে যাবে এমন সময় আকাশ পিছন থেকে এসে দিশাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
–‘দিশা আমাদের বাড়ির দরজায় বেঈমানটা দাঁড়িয়ে আছে কেন?’
–‘আপনার সাথে নাকি কি গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।’
–‘দিশা এই সব বিশ্বাসঘাতকের কথা কখনোই বিশ্বাস করতে নেই। সে তোমার আর আমার সুন্দর সম্পর্কটাকে ভাংতে এসেছে। দরজা লাগিয়ে দাও বেঈমান টার মুখের উপরে। এমন বেঈমানের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা, চেহারাটা দেখার পর্যন্ত ইচ্ছে নেই। দরজা লাগাও তুমি জলদি।’
আকাশের কথায় দিশা প্রভার মুখের উপরে দরজা লাগিয়ে দেয়। প্রভা দরজার বাহির থেকে বেশ করবার আকাশকে মিনতি করে তার সাথে একটু কথা বলতে, কিন্তু আকাশ তার সাথে কথা না বলে দিশাকে নিয়ে রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে নিজেদের মতন কথাবার্তা বলতে থাকে। এভাবেই পুরোটা দিন কেটে গেছে। পরেরদিন সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে আকাশ দিশাকে বলে,
–‘দিশা তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।’
–‘কি সারপ্রাইজ? ‘
–‘আজ নয় আগামীকাল বলবো।’
–‘আচ্ছা।’
–‘শুনো এখন আমি অফিসে চলে গেলাম। তুমি সাবধানে বাসায় থেকো। আর ওয়ারড্রবের মধ্যে আমার একটা পুরাতন ফোন আছে। যেটাতে আমারি একটা সিম লাগানো না। ফোনটা ওয়ারড্রব থেকে বের করে নিজের কাছেই রেখো। আমি যেনো কোনো কারনে ফোন দিলে তোমায় পাই।’
–‘আচ্ছা। আর শোনেন আপনিও সাবধানে যাবেন।
আকাশ দিশাকে বাড়িতে রেখে গাড়ি নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। খুশি মনে গাড়ি ড্রাইভ করছে আকাশ। আজ বাদে কাল সে দিশাকে নিজের করে নিবে। এরপর দিশার সাথে সুন্দর একটা সংসার গড়বে সে। প্রভাকে নিয়েও সে একই স্বপ্ন দেখেছিল, কিন্তু প্রভা তার সমস্ত স্বপ্নকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। তবে যাক বর্তমানে প্রভার অভাব পূরণ করতে দিশা তার লাইফে চলে এসেছে। এখন তার আর কোনো পিছুটান নেই। দিশাকে নিজের করে বাধাহীন ভাবে সে সামনে এগিয়ে যাবে। দিশা আর নিজের বিষয়ে ভাবতে ভাবতে আকাশ অফিসে পৌঁছে যায়। অফিসে পৌঁছে কেবিনে বসে নিজের মতন কাজকর্ম করতে আরম্ভ করে। ঘন্টা-দুয়েক যেতেই অফিসের ম্যানেজার এসে আকাশকে বলে,
–‘স্যার একটা মেয়ে আপনার সাথে কথা বলার জন্য অফিসের বাহিরে বেশ কিছুক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। অফিসের দারোয়ান তাকে বেশ কয়বার আপনার সাথে দেখা করবার কারন জিজ্ঞাস করেছে, কিন্তু মেয়েটা দারোয়ানের কথার কোনো উত্তর না করে বার বার একটা কথাই বলছে, সে নাকি আপনার সাথে দেখা করে আপনাকেই কারনটা বলবে।’
–‘আচ্ছা কেবিনে পাঠিয়ে দিন।’
–‘ঠিক আছে স্যার।’
ম্যানেজার কেবিন থেকে বেরিয়ে মেয়েটাকে কবিনে পাঠিয়ে দেয়। আকাশ মেয়েটাকে দেখা মাত্রই রেগেমেগে চেয়ার থেকে উঠে পড়ে। কারন মেয়েটা আর অন্য কেউ নয় মেয়েটা হচ্ছে প্রভা। আকাশের চরম রাগ হচ্ছে প্রভাকে দেখে। রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে প্রভাবে বলে উঠে,
–‘এই নির্লজ্জ মেয়ে লোক, এতোকিছুর পরেও আমার অফিসে কি করছিস তুই? তোর কি শরম লজ্জা বলতে কিছু নেই নাকি?’
–‘আকাশ তুমি আমাকে যা খুশি বলো, কিন্তু অনুরোধ আমার কথাটা একবার শান্ত মাথায় শোনো। তোমার সাথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে আমার।’
–‘কিসের এতো গুরুত্বপূর্ণ কথা তোর আমার সাথে?’
–‘আকাশ ফারহান তোমাকে প্রাণে মেরে ফেলবার প্ল্যান সাজিয়েছে। আর তার সাথে দিশার ও ক্ষতি করবে বলে ঠিক করে নিয়েছে।’
–‘মানে কি?’
–‘মানে হলো আকাশ দু’বছর আগে নাকি সে কোনো এক মেয়েকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ব্যবহার করায় সেই মেয়ে নাকি তোমায় বিচার দিয়েছিল। যার দরুন তুমি নাকি ছেলেপেলে সঙ্গে নিয়ে তাকে মেরেছো এবং সাথে ছুরি দিয়েও নাকি তার শরীরে আঘাত করেছিলে। ফারহান সেই থেকেই সে তোমার পিছু নিয়েছে। সে তোমার পিছু করতে করতে প্ল্যান সাজিয়ে আমাকে তোমার জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এখন তার নেক্সট প্ল্যান হচ্ছে তোমাকে মেরে ফেলা এবং তার সঙ্গে দিশার বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করা। আকাশ আমি ফারহানের আসল উদ্দেশ্য গতকালকেই জানতে পেরেছি। তুমি প্লিজ সাবধানে থেকো। এবং দিশাকেও সামলে রেখো।’
–‘কিহহ তার মানে এটাই সেই ছেলে যাকে আমি দু’বছর আগে মেরেছিলাম। কিন্তু আমি তাকে সেদিন দেখেও চিনতে পারলাম না কেন!
–‘হ্যাঁ সেটাই হবে। তবে শোন ফারহান যদি আমার সাথে লাগতে আসে তাহলে এবার তার মৃত্যু নিশ্চিত আমার হাতেই হবে। এবার আর সে আমার হাত থেকে বেঁচে ফিরতে পারবে না।’
–‘আকাশ আমিও চাই শয়তান টা তোমার কোনো ক্ষতি না করুক। বরং তুমিই তাকে একটা সাজা দাও। কিন্তু কথা হচ্ছে দিশাকে তুমি পুরোপুরি ভাবে সুরক্ষায় রেখো। আমার তো ভাগ্য খারাপ। কিন্তু আমার মতন ভাগ্য যেনো দিশার না হয়। অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমার সাথে সংসার করবো। তবে শয়তানের পাল্লায় পড়ে সেটা আর করা হলো না। তাই আমি মন থেকে চাই দিশাকে নিয়ে তুমি সামনে এগিয়ে যাও। আর মেয়েটাকে সব সময় ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখো। না হয়তো শয়তান টা যে কোনো সময় দিশার কোনো ক্ষতি করে দিবে। শয়তানটার কোনো বিশ্বাস নেই।’
প্রভার মুখে দিশার কথা শুনে আকাশ চমকে উঠে। কারন সে দিশাকে একা বাড়িতে রেখে এসেছে। আকাশ তাড়াতাড়ি বাসায় রেখে আসা তার পুরোনো ফোনে কল লাগায়। রিং পড়ছে কিন্তু দিশা ফোন রিসিভ করছে না। দিশা ফোন রিসিভ না করায় আকাশের ভয় লাগতে শুরু করে। আকাশ আবারো কল করে তার পুরোনো ফোনে। এবার দিশা ফোন রিসিভ করে। দিশা ফোন রিসিভ করতেই আকাশ দিশাকে জিজ্ঞাস করে,
–‘দিশা কি করছো তুমি?’
দিশা আকাশের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলে,
–‘পরে এসে কথা বলছি আপনার সাথে। কেউ একজন বেশ কিছুক্ষণ ধরে দরজার কলিংবেল বাজিয়ে যাচ্ছে। আমি দেখে আসছি কে এসেছে। তারপর এসে আপনার সাথে কথা বলবে।’
দিশার কথা শুনে আকাশ চেঁচিয়ে বলে উঠে রুম থেকে এক কদম ও বের না হতে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। আকাশ কিছু বলে শেষ করার আগেই দিশা ফোন রেখে দিয়ে চলে গেছে দরজায় কে এসেছে দেখার জন্য। এদিকে আকাশের গলা পুরোপুরি শুঁকিয়ে গেছে। বুকের ভিতরে ধুপধুপ করছে তার। কারন আকাশ আগ থেকেই আন্দাজ করে নিয়েছে ঘরের দরজায় কে এসে দাঁড়িয়ে আছে…..
কেউ একজন পিছন থেকে দৌড়ে তাদের সামনে এসে পানি জাতীয় কিছু একটা দিশার মুখের মধ্যে ছুঁড়ে মারে। দিশা সাথে সাথে চোখে মুখে হাত দিয়ে চেঁচিয়ে কান্না করতে আরম্ভ করে। দিশার মুখটা জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। দিশার মনের হচ্ছে যেনো তার চেহারায় ফুটন্ত আগুনের লাভা এনে কেউ নিক্ষেপ করেছে। দিশার কান্না শুনে আকাশের কলিজাটা ধুকপুক ধুকপুক করছে। অপরিদকে কেউ একজন আকাশ আর দিশার করুন অবস্থা দেখে অট্টহাসিতে মেতে উঠেছে। হাসির কন্ঠস্বরটা আকাশের বেশ পরিচিত। এর আগে বহু শতবার সে এই কন্ঠস্বর শুনেছে। তবে আকাশ একদম পাকাপোক্ত ভাবে শিওর হওয়ার জন্য পাশ ঘুরে তাকিয়ে দেখে প্রভা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে। প্রভাকে দেখা মাত্রই আকাশের শরীরের পশম কাটা দিয়ে উঠে। রাগে গিজগিজ করছে আকাশের সারা শরীর। ক্ষিপ্ত নজরে তাকিয়ে আছে আকাশ প্রভার দিকে। আকাশের রাগান্বিত চাহনি দেখে প্রভা বলে উঠে,
–‘কেমন বোধ হচ্ছে এখন? আমি বলেছিলাম না আমি তোদের দুটোকে শান্তিতে থাকতে দিব না। তোদের দুটোর চোখের ঘুম আমি হারাম করে ফেলবো। দ্যাখ তাই করেছি। তোর আর দিশার জীবন আমি শেষ করে দিয়েছি।’
প্রভার কথা শুনে আকাশ রাগ সামলাতে না পেরে চেঁচিয়ে বলে উঠে,
–‘প্রভা কি ছুঁড়ে মেরেছিস তুই দিশার মুখের মধ্যে? তাড়াতাড়ি বল। না হয়তো তোর অবস্থা কিন্তু অনেক বেশি খারাপ করে দিব আমি।’
–‘আকাশ তোর দিন শেষ। এখন আমার দিন চলছে। অহেতুক বড় গলায় কথা বলে নিজের আর বিপদ ডেকে আনিস না।’
–‘প্রভা আমার দিন তোর দিন কিছুই বুঝি না! দিশার কোনো ক্ষতি হলে তোর জীবন আমি পুরো তসনস করে দিব।’
–‘বাহ কি আদিক্ষেতা একটা পতিতা মেয়ের জন্য। আমি তোর কাছে এতো বার ফিরে আসতে চেয়েছি, তবে তুই আমায় ফিরিয়ে নিস নি। আমায় অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিস। কিন্তু আমায় একটা কথা বলতো, যে পল্লীর এই নষ্টা মেয়ের মধ্যে তুই এমন কি দেখতে পেয়েছিস যা আমার মাঝে নেই? কোন কারনে তুই এই নষ্টা মেয়েকে আমার থেকেও বেশি প্রায়োরিটি দিচ্ছিস?’
আকাশের রাগের মাত্রা আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। একে তো প্রভা দিশার মুখের মধ্যে ভয়ানক কোনো পদার্থ ছুঁড়ে মেরেছে। তার উপরে দিশাকে নষ্টা এবং পল্লীর মেয়ে বলে কথায় কথায় অবজ্ঞা করছে। দিশাকে নিয়ে কোনো কথাই সে সহ্য করবে না। দিশাকে সেভাবেই টেবিলে রেখে সোজা গিয়ে প্রভার গলা চেপে ধরে প্রভাকে বলে,
–‘শোন আমার দিশা নষ্টা না। নষ্টা হলি তুই। দিশা আমার জন্য কোনো পুরুষের স্পর্শে যায়নি। সে আমার জন্য নিজের শরীর বাঁচিয়ে রেখেছে। এমনকি দিশার কুমারিত্ব আমি নিজেই ভেঙ্গেছি। দিশা পল্লীর মেয়ে হয়ে পল্লীতে থেকে আমার জন্য সে অনেকটা সময় নিজের গা বাঁচিয়ে রেখেছে। আমার জন্য সে নিজেকে সামলে রেখেছে। আর তুই আমার প্রেমিকা হয়ে পরপুরুষ নিয়ে পল্লীতে গিয়ে ফষ্টিনষ্টি করে বেড়িয়েছিস৷ তুই আমার প্রেমিকা হয়ে অন্য পুরুষের বিছানায় গিয়েছিস। তুই আমার প্রেমিকা হয়ে অন্য পুরুষের সাথে বস্ত্রহীন ছবি তুলে আমাকেই মেইল করে পাঠিয়েছিস। আর দিন শেষে এসে বলছিস দিশা পল্লীর নষ্টা মেয়ে? তাহলে তুই কি? দিশা তো আমার জন্য নিজের ভার্জিনিটিকে রক্ষা করেছে। কিন্তু তুই কি করেছিস? তুই তো বিলিয়ে এসেছিস অন্যের কাছে নিজের শরীর। সব চাইতে বড় নষ্টা তো তুই। আবার কোন সাহসে তুই দিশাকে নিয়ে বাজে কথা বলিস? আর কি ছুঁড়ে মেরেছিস দিশার মুখে জলদি বল। না হয়তো গলা টিপে এখুনি শেষ করে দিব।’
প্রভার গলা বেশ জোরে চেপে ধরেছে আকাশ। প্রভার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অবস্থা খারাপ হওয়ার এই কথা। একজন পুরুষ রাগান্বিত হয়ে কোনো নারীর গলা চিপে ধরলে সে মুহুর্তের মধ্যেই আধমরা হয়ে যাবে। কারন পুরুষের শরীরে শক্তি নারীর তুলনায় দ্বিগুণ থাকে। প্রভার গলা দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। আকাশের রাগ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। কি করবে কোনো পদচিহ্ন না পেয়ে প্রভার গলা ছেড়ে দিয়ে বেশ জোরে কয়েকটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় প্রভার গালে। আকাশের হাতে থাপ্পড় খেয়ে প্রভা মাটির উপরে উল্টে পড়ে। প্রভা মাটিতে উল্টে পড়তেই আকাশ প্রভার চুল টেনে ধরে তাকে মাটি থেকে টেনে উঠিয়ে আবারো থাপ্পড় মারার প্রিপারেশন নেয়। আকাশের হিংস্রতা দেখে প্রভা এবার মিনতির সুরে বলে,
–‘আকাশ প্লিজ আমায় আর মেরো না। তোমার থাপ্পড় সহ্য করবার ক্ষমতা নেই আর আমার শরীরে। আমি বলছি সব কিছু।’
–‘জলদি বল।’
–‘দিশার মুখে আমি যাস্ট পানি ছুঁড়ে মেরেছি।’
–‘পানি ছুঁড়ে মারলে সে এভাবে আর্তনাদ করছে কেন?’
–‘কারন পানির সাথে মরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে এনেছিলাম।’
–‘দুনিয়ার বুকে কোনো কুদর্শন নারী থেকে থাকলে সেটা হলি তুই। তোর মতন কুদর্শন নারী এই পৃথিবীর বুকে খুব কমই আছে। আমার ভালোবাসার অপমান করে নিজের চাহিদা মিটিয়েছিস অন্যের সাথে। আবার পরিশেষে এসে আমাকে ভালো রাখার জন্য দিন রাত খেটে যাওয়া মানুষটার উপরে এসে মরিচ পানি ছুঁড়ে মারছিস। ছিহ লানত তোর উপরে। তুই যদি আমার সাথে কিছু করতি তাহলেও হয়তো আমি এতো কিছু বলতাম না। কিন্তু তুই দিশাকে কষ্ট দিয়েছিস। তোর জন্য জঘন্য একটা সাজা প্রাপ্য।’
আকাশ প্রভাকে জঘন্য সাজা প্রাপ্য বলেই প্রভার পেটের মধ্যে সজোড়ে একটা লাথি দিয়ে তাকে আবারো মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর দিশার কাছে ছুটে যায়। দিশা এখনো চোখে-মুখে হাত দিয়ে কান্নাকাটি করছে। আকাশ রেস্টুরেন্টের ওয়েটারকে জলদি এক বোতল পানি আনতে বলে দিশাকে শান্ত করায় মগ্ন হয়। দিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আকাশ। দিশা কান্না করেই চলেছে। ওয়েটার আকাশের কথা মতন পানি এনে আকাশকে দিয়ে যায়। আকাশ পানির বোতলটা খুলে দিশাকে ধরে একটু সাইডে নিয়ে গিয়ে দিশার মুখে পানি ছিটাতে থাকে। পুরো বোতলের পানি আকাশ দিশার মুখে ছিটিয়ে দেয়। দিশার চোখে- মুখে পানি ছিটানোর কারনে দিশা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। একটু আগে সে চোখ টাও ঠিক মতন খুলতে পারছিল না। আপাতত সে চোখ খোলার পাশাপাশি কিছুটা নর্মাল হয়। তবে দিশা নর্মাল হলেও দিশার চেহারা ভয়ানক রকমের লাল হয়ে আছে। দিশা চোখ খোলা মাত্রই আকাশের শার্ট খামচে ধরে বলে,
–‘আমার মুখ অনেক জ্বলছে। মনে হচ্ছে যেনো আমার সারা গালে ফোস্কা পড়েছে। প্লিজ আপনি কিছু একটা করুন। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।’
–‘দিশা একটু সহ্য করো। আমরা দু’জন খাওয়াটা শেষ করেই তোমাকে ফার্মেসীতে নিয়ে যাবো।’
–‘আচ্ছা।’
আকাশ দিশার মুখে পানি ছিটিয়ে তাকে সঙ্গে এনে আবার টেবিলে বসায়। এরপর নিজের বুকে টেনে আগলে নিয়ে বসে থাকে। রেস্টুরেন্টের ওয়েটার টেবিলে খাবার পরিবেশন করে দিয়ে গেছে। আকাশ হাত ধুয়ে দিশাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়। দিশা চুপচাপ আকাশের হাতে খেয়ে নেয়। আকাশ দিশাকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নেয়। প্রভা দূর থেকে আকাশ আর দিশার সব কিছু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। আকাশ দিশাকে খাইছে দিচ্ছে দেখে প্রভার ভিতরে উতাল-পাতাল করতে শুরু করে। তার ভিতরে কেমন যেনো লাগছে। ইচ্ছে করছে খাবার গুলো গিয়ে টেবিল থেকে ছুঁড়ে ফেলতে। তবে প্রভার এতোটা সাহস নেই। এমনিতেই আকাশ থেকে কয়েকটা থাপ্পড় এবং লাথি খেয়েছে। তার উপরে খাবার নিয়ে কিছু করলে আকাশ তাকে মেরেই ফেলবে। সেজন্য কিছু না করে চুপচাপ তাদের দৃশ্য দেখছে। ঐ দিকে দু’জনে খাওয়া দাওয়া শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে একটা ফার্মেসীতে আসে। ফার্মেসী ওয়ালারা দিশাকে দিনে তিনবার একটা মলম ব্যবহার করতে দিয়েছে। আর সাথে বলেছে কিছুক্ষণ পরপর মুখে পানি ছিটাতে। ফার্মেসী থেকে মলম নেওয়ার পর আকাশ দিশাকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসে। বাসায় পৌঁছাতেই দেখে আকাশের বাবা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ তার বাবাকে দেখতে পেয়ে ঘরের দরজা খুলে তিনাকে ভিতরে প্রবেশ করতে বলে। আর দিশাকে বলে রুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে মলমটা লাগাতে। দিশা আকাশের কথা মতন রুমে চলে যায়। দিশা চলে যেতেই আকাশের বাবা আকাশকে বলে,
–‘আকাশ তুই এতোটা নিচে নেমে যাবি আমি কখনোই কল্পনা করিনি। তুই পল্লীর একটা বেশ্যাকে নিজের ঘরে পুষে রেখেছিস আমার সেটা ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে।’
–‘বাবা তোমাদের ঘৃণা জন্ম না নেওয়ার জন্যই আমি বাড়ি ছেড়ে আলাদা থাকছি। তারপরেও এতোটা সমস্যা হচ্ছে কেন তোমাদের?’
–‘কারন সে একটা প্রফেশনাল প্রস্টিটিউট। সে তোর যোগ্য, না আমাদের বংশের যোগ্য। তার স্টাটাস বলতে কিছুই নেই। সমাজের চোখে সে একটা নষ্টা। তুই অহেতুক কেন একটা অযোগ্য মেয়ের পিছনে ঘুরে বেড়াচ্ছিস? তুই জানিস সমাজ তোর আর এই মেয়ের সম্পর্কে জানতে পারলে কতোটা নোংরা মন্তব্য করবে? একবার ভালো করে আন্দাজ করে দ্যাখ সোসাইটির মানুষজন তোদের বিষয়ে জানতে পারলে কতোটা হেনস্তা হতে হবে তোদেরকে। আকাশ এখনো সময় আছে এই মেয়েকে যেখান থেকে উঠিয়ে এনেছিস সেখানেই রেখে আয়। আমি তোর জন্য মেয়ে দেখছি। কয়েকদিনের মধ্যেই তোর বিয়ের ব্যবস্থা করবো আমি।’
–‘বাবা কোনো প্রয়োজন নেই এসবের। তোমার কষ্ট করে কোনো মেয়ে খুঁজতে হবে না। আমার দিশা হলেই চলবে। কারন দিশা কোনো নষ্টা মেয়ে না। আমার আগে দিশার শরীরে কোনোদিন কেউ স্পর্শ করেনি। দিশার সতিত্বের সাক্ষী আমি। আমি দিশা সম্পর্কে যখন জানতাম না তখন কথা গুলো বললে মানা যেতো। কিন্তু আমি দিশা সম্পর্কে জানার পরে দিশাকে নিয়ে কোনো বাজে কথাই আমি সহ্য করবো না। বাবা তোমার কাছেও অনুরোধ তুমি পবিত্র মেয়েটাকে নিয়ে কোনো খারাপ কথা বলবে না। আর বাকি রইলো সোসাইটি বা সমাজ, বাবা আমার দিশাকে নিয়ে কেউ একটা বাজে কথা বললে দু’বছর আগের ভয়ানক রূপটা দেখতে পাবে সে আমার। তোমারো নিশ্চয় মনে আছে আমি দু’বছর আগে কেমন ছিলাম। অনুগ্রহ করে তোমরা আমায় আবার সেই ভয়ানক রূপে ফিরে যেতে দিও না।’
–‘দ্যাখ আকাশ আমি কখনোই চাই না তুই আগের মতন বিগড়ে গিয়ে উল্টা পাল্টা কাজ কর। কারন তোর উপরে এখন আমার পুরে অফিসের দায়িত্ব। তাই আমি চাই তুই সুন্দর ভাবে সব কিছু কর। আর তাছাড়া তুই যেহেতু বলছিস দিশা কোনো বাজে মেয়ে না, তাহলে তুই তাকে জলদি বিয়ে কর। এমনিতেও আমি তোর মায়ের বেলায় বেশ খারাপ খারাপ কথাবার্তা শুনেছি। আমি চাইনা আমার ছেলেও বেলায় ও আমি খারাপ কিছু শুনি। তাই আগামী দুই দিনের ভিতরে তুই দিশাকে বিয়ে করে নিজের বউ বানিয়ে নে।’
–‘ঠিক আছে বাবা আমি আগামী দুই দিনের ভিতরেই দিশাকে বিয়ে করবো।’
–‘আচ্ছা এবার আমি চলে গেলাম। তবে শোন দিশাকে বিয়ে করে সোজা বাসায় চলে আসবি।’
–‘আচ্ছা।’
আকাশের বাবা আকাশের সাথে কথাবার্তা বলে চলে যায়। অন্যদিকে আকাশ থেকে লাথি খেয়ে প্রভা মাটিতেই পড়ে ছিল। ফারহান এসে তাকে সামলছে। প্রভা ফারহানকে সবটাই খুলে বলে। আকাশ তাকে থাপ্পড় মারার পাশাপাশি লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দিয়েছে। প্রভার কথা শুনে ফারহানের চরম রাগ উঠে যায়। ফারহান রাগান্বিত কন্ঠে প্রভাকে বলে,
–‘প্রভা এর প্রতিশোধ আমি তুলবো। তোমার গায়ে আঘাত করার কারনে তোমার প্রেমিক আকাশকে মরতে হবে। তাকে আমি জানে মে/রে ফেলবো। আর দিশা তার চেহারার আকৃতি আমি এভাবে বদলে দিব, যে কোনো কাস্টমার দিশাকে রুমে নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, তার চেহারা দেখলেও কাস্টমার’রা ভয়ে পালাবে।’
–‘ফারহান না তুমি এমনটা করবে না। তুমি দিশার সাথে যা খুশি করো। আমি তোমায় বাঁধা দিব না। তবে তুমি আকাশের কোনো ক্ষতিই করবে না। ওর কোনো ক্ষতি হলে আমি নিজেও কষ্ট পাবো। আমি চাইনা আকাশের তুমি এতো বড় ক্ষতি করো।’
প্রভার কথা শুনে ফারহান আরো রেগে যায়। ফারহান এসেছিল প্রভাকে সামলাতে। কিন্তু সে উল্টো প্রভার গলা চেপে ধরে প্রভাকে বলে,
–‘আমার সাথে বিয়ে হওয়ার পরেও প্রেমিকের উপরে অবৈধ মায়া হচ্ছে বুঝি? শোন তোর আকাশকে মরতেই হবে। আমার কাজে বাঁধা দিতে আসলে তোকেও তোর প্রেমিকের মতন মে/রে মাটির নিচে চাপা দিয়ে দিব। আজ দু’বছর ধরে তোর অবৈধ প্রেমিককে মারার জন্য পাগলের মতন এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি। এবার তাকে মরতেই হবে। সময় এসে গেছে তার উপরে যাওয়ার।’
ফারহানের কথা শুনে প্রভা পুরো চমকে উঠে। আকাশের উপরে ফারহানের কিসের এতো ক্রোধ, যার জন্য ফারহান আকাশকে মা/রার জন্য মরিয়ে হয়ে উঠেছে। প্রভা কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। প্রশ্নবোধক চাহনিতে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে। তখনি ফারহান পৈচাশিক ভাবে হাসতে আরম্ভ করে….
–‘হ্যাঁ আমি কোনো প্রস্টিটিউট নই। এবং আমাকে এর আগে কখনো কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি। আপনিই আমার জীবনের প্রথম পুরুষ,যে কিনা আমার কুমারিত্ব ভেঙ্গেছেন।’
দিশার কথায় আকাশ পুরোপুরি চমকে উঠে। চোখ বড় করে অবাক দৃষ্টিতে আকাশ দিশাকে প্রশ্ন করে,
–‘তাহলে কে তুমি দিশা? আর তুমি পল্লীতে থাকার পরেও ভার্জিন কি করে?’
–‘সমস্ত রহস্য আপনি জানতে চান?’
–‘হুম সমস্ত রহস্যই আমি জানতে চাই।’
–‘ঠিক আছে তাহলে শুনুন। আমার ডাক নাম তো আপনি জানেন এই। তবে আমার আসল নাম হলো প্রিয়তী। প্রিয়তী নামে আমায় সচরাচর কেউ ডাকে না। সবাই আমাকে দিশা নামেই চিনে। আমি কিন্তু ছোট থেকে পল্লীতে বড় হইনি। আমার বয়স যখন নয় কি দশ তখন মা আমাকে উনার একটা পরিচিত ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়। সাত-আট বছর আমি উনার কাছ থেকেই মানুষ হয়েছি। বেশ ভালো ছিল উনি, কিন্তু উনার বউটা ছিল একদম উনার বিপরীত। সব সময় আমার পিছনে এটা সেটা নিয়ে লেগে থাকতো। আমার সাথে ঝামেলা করতো। ঘরের মধ্যে আমার কারনে উনাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝেও ঝামেলা হতো। তাই লোকটা মানে মামাটা আমায় মায়ের কাছে চলে যেতে বলে। রোজ রোজ ঝামেলার থেকে চলে যাওয়াটাই ভালো ছিল। আমি চেয়েছিলাম অন্য কোথাও চলে যাবো, কিন্তু গত বছর মায়ের অসুস্থতার জন্য আবার আমাকে এই নিষিদ্ধ নগরীতে ফিরে আসতে হয়েছে। আমি এখানে এসে বেশ কয়েকমাস মায়ের সেবাযত্ন করেছি। তবে মা আর সুস্থ হয়নি। চলে গেছেন উপর ওয়ালার কাছে। মা মারা যাওয়ার পর আমি আবারো এই পল্লী থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই, কিন্তু কই যাবো কি করবো এসব ভেবে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। তখন পল্লীর সর্দারনী আমাকে বলে এই নিষিদ্ধ নগরীতে দেহের বিসর্জন হলেও প্রাণের একটা নিশ্চয়তা আছে। বাহিরের দুনিয়ায় দেহের পাশাপাশি প্রাণ টাও নাকি নিয়ে নেয়। তাই তিনি আমাকে পরামর্শ দেয় এখানে থাকতে। পল্লীর সর্দারনীর কথা মতন আমি পল্লীতেই থেকে যাই। কয়েক মাস আমি পল্লীতে থেকে নিজের গা বাঁচিয়ে রেখেছি। তবে আর কতোদিন। এভাবে বসে থাকলে তো আর হবে না। পেট চালানোর জন্য উপার্জন তো করতে হবে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমিও এসব কাজে নামবো। পল্লীর সর্দারনীর সাথে কথা বলে নেমে গেলাম খদ্দের সন্ধানে। পল্লীর রমণীরা একটা কথা ভেবেই নিজেকে শান্ত রাখে। শরীরের হোক বিসর্জন। টাকা হোক উপার্জন। টাকা কামাই করতে হলে শরীরের বিসর্জন দিতেই হবে। তাই নেমে গেলাম দেহ টাকে খদ্দের হাতে তুলে দিতে। আর সেদিন এই আপনার সাথে আমার দেখা।’
–‘তার মানে তুমি আমার আগে কারোর সাথেই এসব করোনি? আমিই তোমার প্রথম কাস্টমার হতে চলেছিলাম?’
–‘কারোর সাথেই করিনি। আর আপনিই আমার প্রথম কাস্টমার ছিলেন, কিন্তু আপনি সেদিন আমার সাথে চুক্তি করেননি। এসে কথাবার্তা বলে চুমু একে দিয়ে টাকা পাঁচশ গুঁজে দিয়েছেন হাতে। আপনার সেই প্রথম স্পর্শে আমি পুরো পাগল হয়ে ছিলাম। আপনার পরে চাইলে আমি কাস্টমার ধরতে পারতাম। কিন্তু আপনার স্পর্শ পাওয়ার পর কারোর সাথেই রুমে যেতে ইচ্ছে হয়নি। মনটা শুধু আপনার জন্য বেকুল হয়ে ছিল। সেই সময়টাতে আপনার কথা ভেবে নিজেকে সামলে রেখেছিলাম। আমার মন চাইছিল না আপনি বাদে অন্য কারোর সাথে কিছু করতে। আমি আপনাকে আমার কল্পনার রাজ্যের রাজা বানিয়ে দিয়েছিলাম। একান্তই বসে আপনার কথা ভাবতাম। কিন্তু উপর ওয়ালার কি লীলাখেলা আপনি পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে আমাকে একদম আপনার নামে করে নিয়েছেন। আমার সেদিন খুশিতে দুনিয়াদারী অন্য রকম লাগছিল। আমি মনে মনে একজনের উপরে আসক্ত হয়ে পড়েছিলাম, আর সে আমাকে টাকা দিয়ে একদম নিজের নামেই করে নিলো। কেমন যে লাগছিল সেদিন আমি আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না। আসলে একটা কথা কি, পুরুষের প্রথম স্পর্শে নারীর মনে গভীর ভাবে একটা দাগ কেটে যায়। যেটা কারোর কারোর আজীবন মনে থাকে। আবার কারোর কারোর দু’চার বছর মনে থেকে তারপর সেটা উঠে যায়। তবে সবার ক্ষেত্রেই বেশ লম্বা সময় দাগটা মনে থাকে। আপনার স্পর্শ আমি বেশ গভীর ভাবে অনুভব করেছি।’
দিশার কথা শুনে আকাশ আশ্চর্য হয়ে যায়। অবাক দৃষ্টিতে নিশ্চুপ হয়ে চোখ বড় বড় করে দিশার দিকে তাকিয়ে থাকে। আকাশ দিশার হিসাব-নিকাশ মেলাতে পারছে না। অপরদিকে দিশা আকাশের নিশ্চুপ হয়ে থাকা দেখে আকাশকে জিজ্ঞাস করে,
–‘কি হলো চুপচাপ হয়ে গেলেন যে?’
–‘না এমনিতেই। আচ্ছা দিশা তোমার কাছে আমার কয়েকটা প্রশ্ন আছে।’
–‘কি প্রশ্ন?’
–‘তোমার বলা সমস্ত কথাই বুঝলাম, কিন্তু আমি যেদিন এই পল্লীতে প্রথম এসেছিলাম, সেদিন তুমি আমার সাথে একদম প্রফেশনাল হয়ে কথাবার্তা বললে কি করে? সেদিন তো ফিল্ডে তোমার প্রথম দিন ছিল। আর তাছাড়া পল্লীর রমণীরা যখন আমায় নিয়ে এটা সেটা বলছিল, তখন তুমি তাদেরকে ধমক দিয়ে বলেছিলে আমি তোমার স্বামী। আমায় নিয়ে আর একটা কথা বললেও পুরো পল্লী তুমি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিবে। তোমার এক ধমকে সবাই চুপ হয়ে আমার রাস্তা ক্লিয়ার করে দিয়েছিল। তোমার সেই দিনের ক্ষমতা দেখে মনে হয়েছে তুমি ঐ সমস্ত রমণীদের লিডার। যে ভাবে বড় গলায় ধমক দিয়েছিলে তুমি ওদের সবাইকে। এক ধমকে সবাই সোজা হয়ে গিয়েছিল। এখন এখানে আমার প্রশ্ন হলো তুমি এসব কিছুতে না থাকা সত্বেও ঐ সমস্ত রমণীদের উপরে দাপট খাটিয়েছো কি ভাবে?’
–‘আকাশ সাহেব প্রথমত আমি এই পল্লীতে থেকে পল্লী সম্পর্কে বেশ ভালো ভাবে অবগত হয়ে গেছি। কাস্টমারের সাথে প্রফেশনাল ভাবে কথাবার্তা না বললে তারা কম টাকা দিতে চায়। তাই আপনার সাথে একদম পাকাপোক্ত প্রস্টিটিউটের মতন কথা বলেছিলাম। দ্বিতীয়ত আমি তাদের কোনে লিডার নই। তবে ধমক দিতে পেরেছি অন্য একটা কারনে। নিষিদ্ধ নগরীতে যেই মেয়েটা ভার্জিন থাকে এবং প্রথম কাজের জন্য মাঠে নামে, তাকে পল্লীর সবাই সম্মান দেয় সেই দিন। তার উপরে কেউ কোনো কথা বলে না। তাই আমি তাদেরকে ধমক দিয়েছিলাম। এই নিয়মটা বহুকাল আগ থেকেই নগরীতে চলে আসছে।’
আকাশ পুরোপুরি বোবার মতন হয়ে যায় দিশার মুখে সমস্ত বৃত্তান্ত শুনে। খুশিতে ভিতরটা উতলা হয়ে উঠেছে আকাশের। শরীরের পশম কাটা দিয়ে উঠেছে৷ কি করবে ভেবে উঠতে পারছে না। অজানা এক খুশিতে আকাশের ভিতরটা ভরে উঠেছে। ইচ্ছে করছে দিশাকে কোলে তুলে নিয়ে পুরো বাড়ি নেচে বেড়াতে। উত্তেজনাটা আর ধরে রাখতে পারছে না আকাশ। দিশার হাত চেপে ধরে দিশাকে বলে,
–‘দিশা তোমায় কোলে নিলে তোমার কোনো আপত্তি আছে কি?’
–‘আমার সব কিছুই আপনার নামে করে দিয়েছি। আপনার যা ইচ্ছে হয় করুন। তবে একটা প্রশ্নের উত্তর দিন।’
–‘কি প্রশ্ন? ‘
–‘সমস্ত সত্যি এবং আমি ভার্জিন হওয়ায় আপনি বেশ খুশি হয়েছেন তাই না? আর তার জন্যই আমাকে কোলে নিতে চাচ্ছেন? আচ্ছা আমি যদি এমমটা না হতাম তখন কি এমনটা করতেন? তখন কি আমায় নিয়ে আপনার মন এতোটা আনন্দিত হতো?’
–‘দিশা আমি খুশি হয়েছি ঠিক তবে তোমায় নিয়ে আমি আনন্দিত সব সময়ই ছিলাম। আমি যখন জানতাম না তুমি ভার্জিন এবং তোমার জীবনে কিছু রহস্য আছে। আমি তখন ও তোমায় নিজের কাছে টেনেছি। দিশা আমি খুশি হয়েছি ঠিক তবে স্পেশাল করে তোমার শরীর নিয়ে আমার কোনো আকর্ষণ নেই। যদি থাকতো তাহলে ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলতাম বহু আগেই। এখনো আমার সাথে বসে থাকা হতো না তোমার। আমি তোমার সম্পর্কে জানতাম তুমি নগরীর এক রমণী। তুমি টাকার জন্য মানুষের সাথে বিছানা শেয়ার করো। আমি তোমার বিষয়ে জেনেই তোমাকে এনেছি। কিন্তু এখনকার যেই সত্যি গুলো তুমি আমার সামনে প্রকাশ করলে, তাতে করে আমি আনন্দিত হয়েছি ঠিক তবে তুমি আমার থেকে আগের মতোই প্রায়োরিটি পাবে। তোমার সত্যি যেনে তোমায় আগের চেয়েও বেশি প্রায়োরিটি দিব সেটা হবে না। কারন সেটা করলে পল্লীর সেই আগের দিশাকে অপমান করা হবে।’
দিশা আকাশের কথা শুনে হাসতে হাসতে আকাশকে বলে,
–‘আচ্ছা হয়েছে এবার থামুন। আর আপনার যা করতে ইচ্ছে হয় করুন।’
আকাশ দিশাকে কোলে করে নিয়ে ওয়াশরুমে নামিয়ে দেয়। এরপর দু’জনে মিলে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে। ফ্রেশ হওয়ার পর আকাশ বাহিরে চলে যায় নাস্তা আনার জন্য। আর দিশা চুলোয় চা বসায়। আকাশ বাসার সামনের দোকান থেকে নাস্তা কিনে কিছু সময়ের মধ্যে বাসায় ফিরে আসে। এদিকে দিশার ও চা করা শেষ। এরপর দু’জনে বসে নাস্তা শেষ করে। আকাশ নাস্তা শেষ করে দিশাকে বলে,
–‘একটা শাড়ী পড়ে চটাচট রেডি হয়ে নাও।’
–‘কেন কোথায় নিয়ে যাবেন আমায়?’
–‘অফিসে নিয়ে যাবো তোমায় আজকে সঙ্গে করে। এবার যাও কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে নাও।’
–‘আচ্ছা।’
দিশা রেডি হতে শুরু করে৷ দু’জনের রেডি হওয়া শেষ। দু’জনে মিলে গাড়ি নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। অফিসে পৌঁছে আকাশ দিশার হাত ধরে দিশাকে অফিসে নিয়ে যায়। অফিসের সমস্ত কর্মচারী অবাক আকাশের সাথে কোনো মেয়েকে দেখতে পেয়ে। অফিসের সবাই জানে আকাশ এখনো সিঙ্গেল। বিয়েসাদী হয়নি এখনো আকাশের। সেজন্যই সবাই অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশ দিশাকে নিয়ে সোজা কেবিনে চলে যায়। এরপর দিশাকে বসিয়ে রেখে কি ভাবে সে কাজ করে সেসব দেখাতে শুরু করে। দিশা চুপচাপ বসে আকাশের কাজকর্ম দেখছে। আর আকাশ দিশাকে দেখিয়ে দেখিয়ে নিজের কাজ করছে। বারোটা বেজে গেছে। মাঝে আকাশের পি.এ এসে দু’জনের জন্য চা দিয়ে গেছে। আকাশ কাজকর্ম গুছিয়ে দিশাকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে পুরো অফিস ঘুরে দেখাতে থাকে দিশাকে। বিশাল বড় অফিস। দিশার ভিতরটা কেমন যেনো দলা পেকে যাচ্ছে। মনে মনে সে মানুষ টাকে চায়, কিন্তু মানুষটা তো বিশাল অর্থসম্পদের মালিক। কোথায় সে একটা পতিতার মেয়ে। আর কোথায় আকাশ একটা কোম্পানির মালিক। তার সাথে কখনোই দিশার যায় না। মন টা ছোট হয়ে আছে দিশার। পাশ থেকে আকাশ দিশার দিকে তাকাতেই বুঝে ফেলে দিশা নিজেকে ছোট মনে করছে। তাই আকাশ দিশার হাত শক্ত করে চেপে ধরে দিশাকে বলে,
–‘নিজেকে ছোট মনে করার কিছুই নেই। অভ্যাস করে নাও সব কিছুর। মানুষের জীবন সব সময় এক রকম যায় না দিশা। মাঝেমধ্যে দালানবাড়ির লোকদেরকেও ফুটপাতে খেয়ে পেটের খিদে মিটাতে হয়। আবার মাঝেমধ্যে নিচু জায়গার মানুষদের ও ফাইভ স্টার হোটেলে খেয়ে দিন কাটাতে সময়। সময় পরিবর্তনশীল। তোমার জীবনেও পরিবর্তন এসে গেছে। এখন থেকে এসব কিছুকে অভ্যাস করে নাও। এবার চলো বাকি টুকু ঘুরিয়ে দেখাই তোমাকে। তারপর দু’জনে মিলে রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেতে যাবো।’
আকাশের কথায় দিশার নার্ভাসনেসটা কিছুটা কমে যায়। কিছুটা সাহস পায় সে আকাশের কথায়। আকাশ দিশাকে অফিসের বাকি অংশটুকু ঘুরিয়ে দেখায়। এরপর দিশাকে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে চলে যায়। রেস্টুরেন্টে গিয়ে রেস্টুরেন্টের বাহিরে খোলা মেলা জায়গায় একটা টেবিলে বসে দু’জনের জন্য খাবার অর্ডার করে। রেস্টুরেন্টের কর্মচারী দু’জনের খাবারের অর্ডার কেটে চলে যায়। কর্মচারী চলে যাওয়ার পর দিশা আর আকাশ নিজেদের মতন কথাবার্তা বলছে। এমন সময় হুট করেই কেউ একজন পিছন থেকে দৌড়ে তাদের সামনে এসে পানি জাতীয় কিছু একটা দিশার মুখের মধ্যে ছুঁড়ে মারে। দিশা সাথে সাথে চোখে মুখে হাত দিয়ে চেঁচিয়ে কান্না করতে আরম্ভ করে। দিশার মুখটা জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। দিশার মনে হচ্ছে যেনো তার চেহারায় ফুটন্ত আগুনের লাভা এনে কেউ নিক্ষেপ করেছে। দিশার কান্না শুনে আকাশের কলিজাটা ধুকপুক ধুকপুক করছে। অপরিদকে কেউ একজন আকাশ আর দিশার করুন অবস্থা দেখে অট্টহাসিতে মেতে উঠেছে….
দিশার মনে কু ডাকতে শুরু করেছে। এতো সময় হয়ে গেছে কিন্তু আকাশ এখনো বাড়ি ফিরেনি। দিশার মনটা কেমন কেমন যেনো করছে। হাজারটা চিন্তা এসে দিশার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কোনো কিছুই তার ভালো লাগছে না। একটা সময় দিশা আর থাকতে না পেরে ফ্লোরে বসে বাচ্চাদের মতন কান্না করতে আরম্ভ করে। দিশা যেনো আগ থেকেই বিপদের সংকেত দেখতে পাচ্ছে। অস্থির হয়ে উঠেছে দিশার মন টা। চোখের পানি ঝর্ণার পানির ন্যায় প্রবাহিত হয়েই চলেছে। তবে আকাশের ফিরে আসার কোনো নাম নেই। দিশা আকাশের অপেক্ষায় কান্না করতে করতে ফ্লোরের উপরে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। অন্যদিকে আকাশ এখনো হাইস্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে। আকাশ স্বাভাবিক অবস্থাতে নেই। সে কি করছে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না। হাইস্পিডে গাড়ি চালিয়ে হুট করেই রাস্তার ধারে একটা মদের দোকানে গিয়ে হাজির হয়। এরপর মদের দোকানের ভিতরে ঢুকে ছাইপাঁশ অর্ডার করে খেতে আরম্ভ করে। আকাশ শুনেছে এসব ছাইপাঁশ নাকি মানুষের বিষন্নতা বা মনের কষ্ট দূর করে। তাই আকাশ মনের কষ্ট ভুলতে এসব ছাইপাঁশ খেতে আরম্ভ করেছে। আকাশ যতোই প্রভাকে ঘৃণা করুক না কেন, প্রভাকে সে অন্য পুরুষের সাথে মেনেই নিতে পারছে না। অবশ্য যদিও আকাশের কারনে আজ প্রভা অন্যের বউ। প্রভা আকাশের কাছে এসেছিল সুযোগ চাওয়ার জন্য, কিন্তু আকাশ তাকে সুযোগটা দেয়নি। প্রভার অনৈতিক মেলামেশা আকাশের মনে প্রভাকে এক প্রকার ঘৃণিত করে তুলেছিল। আকাশ সেজন্যে প্রভাকে সুযোগ দেয়নি। কিন্তু বর্তমানে প্রভা পার্মানেন্ট অন্য কারোর হয়ে গেছে সারাজীবনের জন্য আকাশ কেন জানি সেটা মানতেই পারছে না। প্রভার বিয়ে এবং সেই ছেলের সাথে মেলামেশার কিছু ছবি দেখে আকাশের ভিতরে কালবৈশাখী নেমে এসেছে৷ উত্তর-দক্ষিণ কোনো কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। আকাশ ও কিন্তু প্রভাকে রেখে দিশাকে নিজের ঘনিষ্ট করে রেখেছে। দিশার বিষয়টা তার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। কিন্তু প্রভার বেলায় সেটা অস্বাভাবিক লাগছে। আকাশ প্রভাকে নিয়ে ভাবছে আর গটগট করে ছাইপাঁশ খাচ্ছে। ছাইপাঁশ খেতে খেতে শরীরের তালগোল হারিয়ে বসে আকাশ। মাগরিব পেরিয়ে গেছে। মদের দোকানে এক বসায় তিন ঘন্টা সময় কি ভাবে কেটে গেছে আকাশ নিজেও সঠিক করে বলতে পারে না। ভরপুর ড্রিংক করে বিল চুকিয়ে গাড়িতে এসে গাড়ি স্টার্ট করে। আবারো কোনো গন্তব্য নেই আকাশের। প্রভার চিন্তা এবং ছাইপাঁশের নেশায় দিশার কথা পুরোপুরি ভুলেই গিয়েছে সে। গাড়ি স্টার্ট করে আবারো হাইস্পিডে গাড়ি চালাতে শুরু করে। গাড়ি চালিয়ে নিয়ে ব্রীজের উপরে গিয়ে গাড়ি থামায়। এটাই সেই ব্রীজ, যেই ব্রীজের উপরে মেশিন দিয়ে কয়েক টাকে টপকে দিয়েছিল আকাশ। এরপর গাড়ি থেকে নেমে ব্রীজের একপাশে চুপচাপ পাগলের মতন বসে পড়ে। প্রচন্ড বাতাস বইছে ব্রীজের উপরে। বাতাসটা বেশ মজা লাগছে আকাশের। শুরুতে ব্রীজের উপরে বসে কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলেও পরবর্তীতে একাকী বকবক করতে শুরু করে। আকাশের ভিতরে হিতাহিতজ্ঞান নেই। ছাইপাঁশ খেয়ে শরীরের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছে সে। একাকী বকবক করতে করতে রাত দশটা বেজে যায়। হুট করেই দিশার কথা মনে পড়ে তার। কারন ছাইপাঁশের রেষ কাটতে শুরু করেছে আকাশের। কিছুটা রেষ কাটতেই দিশার কথা মনে হয় তার। দিশার কথা মনে পড়ায় ব্রীজ থেকে উঠে গাড়ি চালিয়ে তাড়াতাড়ি করে বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি ফিরে এসে দেখে দিশা ফ্লোরে মরার মতন পড়ে আছে। মাতাল আকাশ দিশাকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে ডাকাডাকি করতে আরম্ভ করে।
–‘এই দিশা উঠ। খাট থাকতে ফ্লোরে ঘুমাচ্ছিস কেন তুই?’
দিশা আকাশের কথার কোনো উত্তর দেয় না। আকাশ দিশার কাছে উত্তর না পেয়ে হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে ডাকতে শুরু করে দিশাকে। আকাশ দিশাকে হাত দিয়ে কয়েকবার ঝাঁকি দিয়ে ডাকতেই দিশা লাফিয়ে উঠে পড়ে। উঠার পর আকাশকে দেখতে পেয়ে খপ করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে আরম্ভ করে। দিশা আকাশকে জড়িয়ে ধরার কিছু সময়ের মধ্যেই উপলব্ধি করতে পারে আকাশ ড্রিংক করে এসেছে। তাই দিশা আকাশকে প্রশ্ন করে,
–‘আপনি এতোটা সময় কোথায় ছিলেন?
আর আপনার শরীর থেকে মদের গন্ধ আসছে কেন?’
–‘আমায় ছাড় আগে। তারপর যা জিজ্ঞাস করার কর। আমি এমনিতে নিজের শরীর নিয়ে বিপদে আছি। তার উপরে তুই ও আমার শরীরের উপরে ঢুলে পড়েছিস। ছাড় আমাকে।’
–‘আকাশ সাহেব আমি আপনার গায়ে ঢুলে পড়িনি। আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরেছি।’
–‘লাগবে না তোর জড়িয়ে ধরা। আমার সব কিছুই কেমন যেনো অস্বস্তিকর লাগছে।’
–‘আচ্ছা এই যে নিন আপনাকে ছেড়ে দিলাম। কিন্তু আপনি এবার আমায় বলেন যে আপনি এতোটা সময় কোথায় ছিলেন? আর মদের গন্ধ কেন আসছে আপনার শরীর থেকে?’
–‘মদ খেয়ে রাস্তায় মাতালের মতন বসে ছিলাম।’
–‘কিন্তু কেন খেয়েছেন আপনি এসব ছাইপাঁশ?
এসব খাওয়া কি ভালো বলেন?’
দিশার একের পর এক প্রশ্ন শুনে আকাশের মাথা গরম হয়ে যায়। এমনিতেই আকাশের কথা বলতে ভালো লাগছে না। তার উপরে আকাশের মতে মেয়েটা একবার তার উপরে ঢুলে পড়ছে। আবার তাকে এটা সেটা প্রশ্ন করে পেরেশান করছে। আকাশের রাগ উঠে যায় দিশার কর্মকান্ডে। রাগ দমাতে না পেরে ঠাস করে দিশার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলে,
–‘এই মেয়ে তোকে এতো কৈফিয়ত দিতে যাবো কেন আমি হ্যাঁ? দ্যাখ অহেতুক প্রশ্ন করে আমার মাথা আর গরম করিস না। এমনিতেই মাথা বিগড়ে আছে। তাই অহেতুক প্রশ্ন করা বাদ দিয়ে রেখে ফ্রেশ হয়ে নতুন একটা শাড়ী পড়ে আয়।’
দিশা আকাশের হাতে থাপ্পড় খেয়ে ফ্লোর থেকে উঠে একটা শাড়ী নিয়ে দেয়াল ধরে ধরে ওয়াশরুমে চলে যায়। দিশার শরীর প্রচন্ড দূর্বল হয়ে আছে না খাওয়ার ফলে। সে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। ইচ্ছে করছে আরো কিছু সময় ঘুমিয়ে থাকতে। কিন্তু আকাশের কথায় সে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে শাড়ী পড়ে বেরিয়ে আসে। আকাশ দিশাকে দেখে পুরো মাতাল হয়ে যায়। এমনিতেই সে বাস্তবে মাতাল হয়ে আছে। তার উপরে দিশাকে শাড়ীটাতে বেশ হেব্বি লাগছে। দিশা শাড়ী পড়ে এসে আকাশের কাছে দাঁড়ায়। দিশা আকাশের সামনে এসে দাঁড়াতেই আকাশ দিশাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার উপরে ফেলে। এরপর দিশার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে দিশার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে স্পর্শ করতে আরম্ভ করে। দিশা একদম চুপচাপ শুয়ে আছে। আকাশকে সে ভালো-মন্দ কিছুই বলছে না। তবে ভিতরে ভিতরে তার বেশ ভালো লাগছে আকাশের স্পর্শ। কিন্তু সেটা সে আকাশের সামনে দেখায় না বা আকাশকে বুঝতে দেয় না। সে দেখতে চায় আকাশ তাকে পুরোপুরি ভাবে স্পর্শ করার পর আকাশের রিয়াকশনটা কেমন হয়। আকাশ দিশার শরীরের সিক্রেট পার্ট গুলোতে একে একে স্পর্শ করতে থাকে। কিছু জায়গায় ঠোঁট দিয়ে চুমু খাচ্ছে। কিছু জায়গায় হাত দিয়ে স্পর্শ করছে। আকাশের স্পর্শে দিশার শরীরে এক প্রকার কারেন্ট উৎপন্ন হচ্ছে। খনে খনে দিশার শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে যেনো কেউ একজন বৈদ্যুতিক লাইন দিশার শরীরের সাথে কানেক্টে করে দিয়েছে। আকাশ দিশার শরীরে স্পর্শ করতে করতে দিশার শরীর থেকে সমস্ত বস্ত্র সরিয়ে ফেলে। এরপর দিশার সাথে সে সে পুরোপুরি ভাবে ঘনিষ্ট হয়। দিশা খুশিতে আত্মহারা। আকাশ দিশাকে নিজের কাছে টেনে নেওয়ার পর দিশাকে জড়িয়ে ধরে সেভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল বেলায় আকাশের ঘুম ভাংতেই দেখে সে দিশাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। কারোর শরীরেই কোনো কাপড়-চোপড় নেই। আর দিশা তার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। রাতের ঘুমে আকাশ স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু দু’জনের শরীরে কোনো প্রকার জামাকাপড় দেখতে না পেয়ে সে দিশাকে জিজ্ঞাস করে,
–‘দিশা তুমি এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?
আর আমাদের দু’জনের একজনের শরীরেও কাপড় নেই কেন?’
–‘ভুলে গেছেন আপনি সব?’
–‘মানে?’
–‘মানেটা আপনিই মনে করার চেষ্টা করেন, যে রাতের বেলায় কি হয়েছিল।’
দিশার কথায় আকাশ ভাবতে থাকে রাতের বেলায় কি হয়েছে। কিছুটা সময় ভাবতেই রাতের সমস্ত ঘটনা তার মনে পড়ে যায়। রাতের ঘটনা মনে পড়তেই হুট করে সে অদ্ভুত ভঙ্গিমায় দিশাকে ছেড়ে দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে। আকাশের সাথে সাথে দিশাও শোয়া থেকে উঠে বসে। আকাশ উঠে বসা মাত্রই দিশার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। আকাশের অদ্ভুত ভঙ্গিমা দেখে দিশা আকাশকে প্রশ্ন করে,
–‘আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?’
দিশার কথায় আকাশ কোনো উত্তর না দিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিমায় উল্টো আকাশ দিশাকেই প্রশ্ন করে,
–‘দিশা কে তুমি? আমি কিন্তু গতকাল কিছু একটা উপলব্ধি করেছি। কিন্তু আমি তখন তোমায় কিছুই বলতে পারিনি আমার শারীরিক ভারসম্য ঠিকঠাক না থাকায়।’
দিশা আকাশের কথা শুনে হাসতে আরম্ভ করে।
দিশার হাসি দেখে আকাশ আবারো দিশাকে জিজ্ঞাস করে,
–‘দিশা আমি তোমার কাছ থেকে কিছু জানতে চেয়েছি। কে তুমি?’
দিশা এবার হাসতে হাসতে বলে,
–‘আমি কে মানে আমি দিশা।’
–‘তুমি দিশা সেটা আমিও জানি। কিন্তু গতকাল তোমার সাথে ঘনিষ্ট হওয়ার পর আমি জানতে পেরেছি তুমি কোনো প্রস্টিটিউট না। তুমি ভার্জিন একটা মেয়ে। তুমি যদি প্রস্টিটিউট হতে তাহলে তুমি কখনোই ভার্জিন থাকতে না।’
–‘হ্যাঁ আমি কোনো প্রস্টিটিউট নই। এবং আমাকে এর আগে কখনো কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি। আপনিই আমার জীবনের প্রথম পুরুষ,যে কি আমার কুমারিত্ব ভেঙ্গেছেন।’
দিশার কথায় আকাশ পুরোপুরি চমকে উঠে। চোখ বড় করে অবাক দৃষ্টিতে আকাশ দিশাকে প্রশ্ন করে,
–‘তাহলে কে তুমি দিশা? আর তুমি পল্লীতে থাকার পরেও ভার্জিন কি করে?’
দিশা লোভ সামলাতে না পেরে আকাশের চুলে হাত দিতেই আকাশ ভয়ানক ভাবে রেগে গিয়ে দিশার গালের মধ্যে সজোড়ে একটা থাপ্পড় মারে। দিশা আকাশের হাতে থাপ্পড় খেয়ে টাল সামলাতে না পেরে বিছানার উপরে চিত হয়ে পড়ে। আর আকাশ হায়েনার মতন দিশার শরীরের উপরে উঠে দু’হাত দিয়ে দিশার গলা চেপে ধরে। দিশার দম বন্ধ হয়ে আসছে। নিশ্বাস নিতে পারছে না সে। আকাশ দিশার গলায় এতো জোরে চেপে ধরেছে, যে দিশার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে। দিশা অশ্রুভেজা দৃষ্টিতে বাচ্চা শিশুর মতন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আর চোখের ভাষায় মিনতি করছে তাকে ছেড়ে দিতে। কিন্তু আকাশ দিশার উপরে মায়া না দেখিয়ে দিশার গলা আরো জোরে চেপে ধরে। মনে হচ্ছে যেনো আজকে আকাশ দিশাকে মেরেই ফেলবে। আকাশের বিন্দু পরিমাণ মায়া হচ্ছে না দিশার জন্য। পশুর ন্যায় খাবলে ধরে রেখেছে দিশার গলা। চোখের পানিতে বিছানার অনেকটা জায়গা ভিজে গিয়েছে। দিশার কোনো সাড়াশব্দ নেই। বনের বাঘ যেমন শিকারের গলায় কামড়ে শিকারকে আধমরা বানিয়ে দেয়, আকাশ ও দিশার এমন অবস্থা করে দিয়েছি। দিশা চেয়েও গলা থেকে সাউন্ড বের হচ্ছে না। শরীরে নড়াচড়া করবার মতন শক্তি পাচ্ছে না। দিশা যেনো একটা মরা লাশ হয়ে পড়ে আছে। এভাবে মিনিট খানিক যাওয়ার পর আকাশ হুট করেই দিশার গলা ছেড়ে দিশার বুক থেকে শাড়ীর আঁচল টেনে সরিয়ে ফেলে। তারপর মাতালের মতন ঝাঁপিয়ে পড়ে দিশার বুকের উপরে। আকাশ উন্মুক্ত ভাবে দিশার বুকে স্পর্শ করতে শুরু করেছে৷ দিশা তাকে কোনো প্রকার বাঁধা দেয় না। আর দিবেই বা কি করে, হিংস্র পশুরা শিকারকে প্রথমে দূর্বল করে। তারপর জীবিত অবস্থাতেই তাদেরকে ভক্ষণ করে। আকাশ ও তাই করছে। দিশার সমস্ত শক্তি কাবু করে নিয়ে উন্মুক্ত ভাবে দিশার শরীরে স্পর্শ করছে। আকাশ দিশার বুকের সমস্ত জায়গায় নিজের ইচ্ছে মতন স্পর্শ করতে থাকে। আর দিশা মরা লাশের মতন শুয়ে শুয়ে কল্পনা করে,
–‘কেন মানুষটা আমার সাথে এমনটা করলো! উনি কি চাইলে আমি উনাকে স্পর্শ করতে দিতাম না! আমি তো মন থেকে সব কিছুই উনার নামে করে দিয়েছি। তাহলে কেন তিনি হিংস্র পশুর ন্যায় আচরণ করলো আমার সাথে। ভালোবাসা দিয়েও তো মানুষকে কাছে টানা যায়। আমায় তো পারতো ভালোবেসে কাছে টানতে। কিন্তু তিনি তা না করে পশুর মতন করছে আমার শরীর নিয়ে। আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে সেটা তিনি একটা বারের জন্যেও বুঝার চেষ্টা করলো না। অবশ্য করবেই বা কেন, আমি তো পতিতা। আমাদের মন বলতে কিছু আছে নাকি। টাকা ছুঁড়ে দিয়ে শরীরের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়বে। তারপর যতোক্ষণ না নিজের উত্তেজনা কমবে ততক্ষণ তারা শরীর টাকে চিবিয়ে খেয়েই যাবে। মানুষ টাকে আমি সবার থেকে আলাদা ভেবেছি। কিন্তু মানুষটা দেখি অন্যান্য পুরুষদের থেকে আরো ভয়ানক। আল্লাহ এটা কার পাল্লায় এসে পড়লাম আমি। জীবন তো এমনিতেই বিষাদময় ছিল। এখন এই লোক পুরোপুরি শেষ করে দিবে আমার।’
দিশা আকাশকে নিয়ে মনে মনে উল্টাপাল্টা ভাবতে আরম্ভ করে। অপরদিকে আকাশ দিশার বুকে স্পর্শ করতে করতে একটা সময় স্পর্শ করা বন্ধ করে দিশাকে ছেড়ে দিয়ে অদ্ভুত ভাবে কান্না করতে শুরু করে। আকাশের কান্নার আওয়াজ শুনে দিশার কলিজায় মোচড় দিয়ে উঠে। এতো সময় যেসব চিন্তা-ভাবনা করছিল সে আকাশকে নিয়ে, সেসব চিন্তা-ভাবনা হুট করেই মাথা থেকে গায়েব হয়ে যায়। আকাশের কান্নার আওয়াজ শুনে দিশার সাথে এতো কিছু হওয়া সত্বেও সে সেসব কিছুকে ভুলে গিয়ে আকাশের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। আকাশের কান্নার আওয়াজ যেনো দিশার কলিজায় গিয়ে লেগেছে।
শক্তি যুগিয়ে শোয়া থেকে উঠে স্বাভাবিক ভাবে বিছানায় বসে আকাশকে বলে,
–‘আপনি কাঁদছেন কেন? কি হয়েছে আপনার?’
আকাশ দিশার কথার কোনো উত্তর দেয় না। সে নিজের মতন কেঁদেই চলেছে। আকাশের নিরবতা দিশাকে অস্থির করে তুলছে। দিশা আবারো আকাশকে জিজ্ঞাস করে,
–‘আকাশ সাহেব কি হয়েছে বলেন না আমায়। আপনি এভাবে কাঁদছেন কেন? প্লিজ বলেন না আমায়। আপনার কান্না আমার একদম ভালো লাগছে না। বুকের ভিতরে এক ধরনের একটা পেইন হচ্ছে আমার। আপনার কাছে অনুরোধ করছি কান্নার কারনটা বলেন আমায়।’
দিশার রিকোয়েস্ট আকাশ এবার মুখ খুলে।
–‘দিশা প্রভাকে দেখলাম এখান থেকে বেরিয়ে আবারো সেই ছেলেটার সাথে নিষিদ্ধ নগরীতে গিয়েছে।’
–‘হায়রে দুনিয়া। জানেন আমাদের পল্লীর মানুষরা একটা কথা বলে। নারীর অল্প প্রেমে নাকি পুরুষ পাগল হয়। আর পুরুষের গভীর প্রমেও নারীরা মজা লয়। আচ্ছা যাই হোক বাদ দেই সেসব কথা। কিন্তু আপনি এটা বলেন তো, যে আপনি কি ভাবে আর কোথায় দেখেছেন সেই মেয়েকে?’
–‘অফিসে যাওয়ার সময় দেখলাম সেই ছেলেটার হাত ধরে পল্লীতে যাচ্ছে।’
–‘তো আপনি কষ্ট পাচ্ছেন কেন? আপনি তো প্রভাকে আর ভালোবাসেন না। সে যার সাথে যা ইচ্ছে হয় করুক। আপনি কেন বেহুদা ঐ মেয়ের জন্য কষ্ট পাচ্ছেন বলেন তো?’
–‘দিশা আমি জানিনা আমি কেনো কষ্ট পাচ্ছি! প্রভা যাই করুক না কেন আমার কোনো কিছু যায় আসে না। কিন্তু তারপরেও আমার কেন জানি সহ্য হচ্ছে না সেই ছেলের সাথে প্রভাকে পল্লীতে যেতে দেখে। কিন্তু আমার কেন জানি সহ্য হচ্ছে না সেই ছেলের সাথে প্রভার রংতামাশা গুলো। আমি যেনো কল্পনা করতে পারছি তাদের অশ্লীল দৃশ্য গুলোকে। প্রভা আর সেই ছেলেটা একে অপরের সাথে পল্লীর একটা কক্ষে শারীরিক মেলামেশা করবে, আমি যেনো সেই দৃশ্য টা অদ্ভুত ভাবে আমার চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। দিশা আমার কেন জানি সহ্য হচ্ছে না প্রভার আর সেই ছেলের ঘনিষ্টতা। বুকের ভিতরটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। ভিতরটা খা খা করছে। আমি কেন জানি ওসব কিছুকে মানতেই পারছি না। আমি এখন কি করবো দিশা? আমায় একটা উপায় বলে দাও। রাগের তাড়নায় একটু আগে তোমার গলা চেপে ধরে তোমায় ও কতোটা কষ্ট দিলাম। যেটা আমার দেওয়া উচিৎ হয়নি। দিশা আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না। দোহাই লাগে একটা রাস্তা আমায় তুমি বলে দাও।’
–‘উপায় কি সত্যিই বলে দিব?’
–‘হুম বলে দাও।’
–‘উপায় বলে দেওয়ার পর আপনি কিন্তু আমায় কিছু বলতে পারবেন না?’
–‘ঠিক আছে তোমায় কিছুই বলবো না। আমি শুধু মুক্তি চাই এই কষ্ট থেকে।’
–‘আপনি আমার মাঝে ডুব দিন। আর আমায় নিয়ে পুরোপুরি ভাবে মেতে উঠুন। তাহলে আশা করি ঐ মেয়ের কথা আপনার আর মনে পড়বে না।’
–‘আপনার ঐ মেতে থাকাকে মেতে থাকা বলে না। আপনি একটু আগে নিজের রাগ ঝেড়েছেন আমার উপরে। আপনি যদি সত্যিই আমায় নিয়ে মেতে উঠতেন, তাহলে এতো সময়ে আপনার সাথে আমার অনেক কিছুই হয়ে যেতো।’
–‘তো কি ভাবে মেতে উঠতে বলছো তোমায় নিয়ে?’
–‘আমি দেখাচ্ছি।’
–‘হুম।’
দিশা আকাশকে খপ করে জড়িয়ে ধরে আকাশের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দেয়। একটু আগে এতো কিছু হওয়ার পরেও দিশা সেসব কিছুকে পরোয়া না করে আকাশকে জড়িয়ে ধরে তার ঠোঁটে চুমু খেতে আরম্ভ করে। দিশার স্পর্শে আকাশের শরীরে মাদকতা এসে ভর করতে শুরু করেছে। এভাবে কিছু সময় যাওয়ার পর আকাশ কেমন যেনো হয়ে যায়। সে যেনো নিজের শরীরের তালগোল পাকিয়ে ফেলতে শুরু করেছে। এবার আকাশ ও দিশাকে জড়িয়ে ধরে তার নেশায় মেতে উঠে। আকাশ দিশার ঠোঁটে পাগলের মতন স্পর্শ করতে শুরু করে। বেশ কিছুক্ষণ স্পর্শ করার পর আকাশ শরীর থেকে শার্ট খুলে ফ্লোরের উপরে ছুঁড়ে ফেলে। দিশা আকাশের শার্ট খুলে ছুঁড়ে ফেলা দেখে খুশি হয়ে যায়। কারন তার মনের ভিতরে অন্য কিছু ঘুরছে। সে চায় আকাশ তাকে নিজের একদম কাছে টেনে নিক। সে আর কতো সামলাবে নিজেকে। কখন কে কি অঘটন ঘটিয়ে বসে তার সাথে উপর ওয়ালাই ভালো জানেন। পল্লীর মেয়ে বলে কথা। এছাড়া আকাশ তাকে নিজের কাছে টেনে নেওয়ার পর আকাশের মুখের এক্সপ্রেশন সে দেখতে চায়। সে দেখতে চায় আকাশ তাকে নিজের কাছে টেনে নেওয়ার পর কেমন অদ্ভুত আচরণ করে। অপরদিকে আকাশ ও শার্ট ছুঁড়ে ফেলে তৈরী হয়ে উঠে দিশাকে পরিপূর্ণ ভাবে নিজের কাছে টেনে নেওয়ার জন্য। কিন্তু পরক্ষণেই আকাশ কিছু একটা ভেবে নিজেকে সামলে নিয়ে থেমে যায়। আকাশের থেমে যাওয়া দেখে দিশা প্রশ্ন করে,
–‘কি হলো থেমে গেলেন যে?’
–‘দিশা আমার মনে হয় না প্রভার থেকে পাওয়া আঘাত ভুলতে তোমার সাথে এসব করা উচিৎ। কারন না হয়তো আমিও তার মতন হয়ে যাবো। সে আমার উপরে কোনো কারনে অসন্তুষ্ট হয়ে অন্য পুরুষ ধরেছে। আর আমিও তার আচরণে অসন্তুষ্ট বা ব্যথিত হয়ে তোমার সাথে শারীরিক ভাবে লিপ্ত হতে চাচ্ছি। আমি এমন করলে তার আর আমার মাঝে কোনো তফাৎ থাকবে না। আর তাছাড়া তোমার সাথে এসব করবার মতন সঠিক সময় হয়নি এখনো। সঠিক সময় হলে আমি নিজেই তোমাকে কাছে টানবো।’
–‘ঠিক আছে বুঝলাম। কিন্তু নিজের কষ্ট গুলোকে লাঘব করবেন কি করে এখন?’
–‘তোমায় জড়িয়ে ধরে তোমার বুকে শুয়ে বেশ লম্বা একটা ঘুম দিব। আর তুমিও আমার সাথে শুয়ে থাকবে। এক ঘুমে রাতের বেলায় ঘুম থেকে উঠবো।’
–‘ঠিক আছে যেমনটা আপনার ইচ্ছে।’
এরপর আকাশ দিশাকে জড়িয়ে ধরে দিশার বুকে মাথা রেখে বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে। দিশা আকাশের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এই চুলে হাত দেওয়ার জন্য আকাশ কি জঘন্য আচরণ টাই না করেছে দিশার সাথে। কিন্তু দিশা তার পরেও আকাশের চুলে স্পর্শ করতে থাকে। আকাশ এবার কিছুই বলে না দিশাকে। বরং সে দিশার স্পর্শ অনুভব করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। রাতের বেলায় ঘুম থেকে উঠে আকাশ বাহির থেকে গিয়ে খাবার কিনে আনে। এরপর দিশাকে সঙ্গে নিয়ে খেয়ে আবারো শুয়ে পড়ে। এভাবেই সময় কাটছে তাদের। আকাশ নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে প্রভার সমস্ত স্মৃতিকে ভুলে দিশাকে নিয়ে লয়াল হবার চেষ্টা করে। এরমধ্যেই কেটে যায় দুই-চার দিন। বহু কষ্টে প্রভাকে সে নিজের মন থেকে দূর করেছে। তবে এখনো পুরোপুরি ভাবে ভুলতে পারেনি। হয়তো আরো কিছুটা সময় পেরোলে আকাশ পুরোপুরি ভাবে প্রভাকে ভুলে যাবে। আকাশ যতোটুকু সম্ভব নিজেকে সামলে নিয়ে অফিস আর দিশার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করছে। আকাশ অফিসে বসে বসে কাজ করছে। ঘড়ির কাঁটায় তিনটা বাজতে চলেছে। আকাশ আজ কাজের চাপে বাসায় যায়নি। যেদিন থেকে দিশাকে সে বাড়িতে নিয়ে এসেছি, সেদিন থেকে অফিস ছুটি হওয়ার আগেই সে বাসায় চলে যায়। তবে আজ অফিসে প্রচন্ড কাজ থাকায় বাসায় যাওয়া হয়নি তার। একেবারে অফিস ছুটি হলেই আজ সে বাসায় যাবে। চারটায় অফিস ছুটি। আর এক ঘন্টা পরেই অফিস ছুটি হবে। এমন সময় টেবিলের উপরে রাখা আকাশের ফোনটা সাউন্ড করে উঠে। আকাশ কাজ করা থামিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে একটা মেইল এসেছে। আকাশ স্বাভাবিক ভাবে ফোনটা হাতে তুলে মেইলটা চেক করে। তখনি সে দেখে প্রভা এবং সেই ছেলেটার বিয়ের পিক এবং তাঁদের দু’জনে ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি কেউ একজন তাকে মেইল করেছে। আকাশ পুরো থমকে যায় ছবি গুলো দেখে। ঐ মুহূর্তেই আকাশের ফোনে আবার অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে ফোন আসে। আকাশ কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে ফোনটা রিসিভ করে। আকাশ ফোন রিসিভ করতেই প্রভা অপরপাশ থেকে বলে উঠে,
–‘দ্যাখ আমরা গতকাল বিয়ে করে নিয়েছি। তোকে আমাদের বিয়ের এবং বাসর রাতের কয়েকটা ছবি পাঠিয়েছি। আমার ইচ্ছে ছিল বাসর রাতের সমস্ত কিছু ভিডিও করে তোকে মেইল করবো। কিন্তু আমার স্বামী আমায় এটা করতে দিলো না। তাই এ যাত্রায় ছবি গুলোই খালি পাঠিয়েছি। পরবর্তীতে সময় করে আরো কিছু পাঠাবো। এখন এগুলো দেখে অস্থিরতায় ভুগে মর। বলেছিলাম না তোদের জীবন আমি নড়ক বানিয়ে দিব। সবে মাত্র শুরু। বিয়েটা করে আমি নিজের পজিশনটা ঠিক করেছি। এরপর দ্যাখ কতো কি হয়। আমি আর ফারহান মিলে তোর আর সেই পতিতা মেয়েটার জীবন পুরো জাহান্নাম বানিয়ে দিব। আমায় প্রত্যখ্যান করার ফল তুই পাবি। আমায় রেখে সেই পতিতা মেয়ের সাথে রংতামাশা করার সখ চিরতরে বের করে দিব তোর ভিতর থেকে। এখন রাখলাম ফোন।’
প্রভা আকাশকে ফোন দিয়ে আজেবাজে কথা বলে ফোনটা রেখে দেয়। এদিকে আকাশের মাথায় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। একে তো দিশার ঘনিষ্ট ছবি, তার উপরে আবার সে বিয়ে করে নিয়েছে ফারহানকে। এতোদিন কষ্ট করে আকাশ নিজেকে সামলে রেখেও কোনো কাজ হলো না তার। প্রভা ছবি গুলো মেইল করে দিয়ে আকাশকে আবার বিগড়ে দিয়েছে। রাগে সারা শরীর ফেটে যাচ্ছে আকাশের। টেবিল থেকে উঠে ধ্রামমম করে ফোনটা দেয়ালের মধ্যে ফিক্কা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। পুরোপুরি মাতাল হয়ে গেছে সে। অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে বসে হাইস্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করেছে। কোনো গন্তব্য নেই আকাশের। অজানা পথ ধরে তুমুলবেগে গাড়ি ছুটিয়ে নিয়ে চলেছে। হয়তো আজকে আকাশের গাড়িই আকাশের গন্তব্য ঠিক করবে, যে আকাশ বাড়ি ফিরে যাবে না উপরে। কারন রাস্তা ঘাটের মানুষজন আকাশের গাড়ি চালানো দেখে ধরেই নিয়েছে এই ছেলে আজকে ভয়ানক কোনো দূর্ঘটনার শিকার হবে। অন্যদিকে দিশার মনে কু ডাকতে শুরু করেছে। এতো সময় হয়ে গেছে কিন্তু আকাশ এখনো বাড়ি ফিরেনি। দিশার মনটা কেমন কেমন যেনো করছে। হাজারটা চিন্তা এসে দিশার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কোনো কিছুই তার ভালো লাগছে না। একটা সময় দিশা আর থাকতে না পেরে মাটিতে বসে বাচ্চাদের মতন কান্না করতে আরম্ভ করে….
–‘উনি গতকাল রাতে আমায় নিজের হাতে শাড়ী পড়িয়ে দিয়ে সেই শাড়ী গভীর রাতে উনি নিজেই খুলেছে। আমার বক্ষবন্ধনীর মাঝ বরাবর যেই গভীর খাঁজ আছে সেখানে চুমু খেয়েছে। আমায় আলতো পিঠে জড়িয়ে ঠোঁটে, কপালে, ঘাড়ে এমনকি আমার নাভীর গভীর খাদে অগণিত চুমু একে দিয়েছে। এছাড়া আরো উনি উনার পুরুষত্বের পৌরষ আমার দেহে চালান করে বংশ প্রদীপের রেজিস্ট্রি করেছে। আরো শুনবেন? শুনতে চাইলে বলছি। আমার বলতে আপত্তি নেই।’
–না,না,না আমি আর শুনতে চাই না কিছু। আমার কান ফেটে যাবে এর চেয়ে আর বেশি কিছু শুনলে। আমি এখন তোদের ঘর থেকে চলে যাচ্ছি। তবে তোদের দু’টোকে আমি পরে দেখে নিব।’
প্রভা দিশার কথাবার্তা শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে যায়। প্রভা আর সহ্য করতে পারছিলো না আকাশ আর দিশার গোপন কথপোকথন। সেজন্য প্রভা ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেছে। প্রভার এমন আচরণে দিশা শব্দ করে হাসতে আরম্ভ করে। কিন্তু দিশা জানে না প্রভার ভিতরে সে দাবানলের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। যেই দাবানলের আগুনের উত্তাপে পরবর্তীতে তাদের দুটোকেই জ্বলতে হবে। দিশা হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পড়বে মতন অবস্থা। আকাশ দিশার কথাবার্তা শুনে তার দিকে আকস্মিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দিশার কথাবার্তা শুনে আকাশের শরীরেরে পশম পুরোপুরি দাঁড়িয়ে গেছে। দিশার সাথে সে কিছু না করা সত্বেও দিশা কি ভয়ানক ব্যাখ্যা দিয়ে বসলো গতকাল রাতের। তবে আকাশ বুঝে গেছে দিশার এইরূপ আচরণের আসল উদ্দেশ্য। কিছু সময় আকস্মিক দৃষ্টিতে দিশার দিকে তাকিয়ে থেকে স্বাভাবিক কন্ঠে দিশাকে বলে,
–‘দিশা এটা কি করলে তুমি? দিশা তুমি জানো না এই মেয়ে কতোটা ভয়ানক। সে তোমার জীবন পুরোপুরি বিষাদময় বানিয়ে দেবে। সুখে-শান্তিতে থাকতে দেবে না সে তোমায়। তুমি ওকে এসব বলে অনেক বড় ভুল করেছো।’
–‘আকাশ সাহেব আমি নিষিদ্ধ নগরের বাসিন্দা।
আর নিষিদ্ধ নগরীটা নড়ক থেকেও কোনো অংশে কম নয়। হিংস্র পশুর মতন সেই নগরীতে মেয়েদের শরীরকে চিবিয়ে খায় মানুষ। আপনার মতে এর চাইতেও বিষাদময় আরো কিছু আছে কি?’
–‘না নেই। কিন্তু তারপরেও…
–‘আপনি একদম টেনশন করবেন না। এমনিতেও আমি নড়ক থেকে উঠে এসেছি। আমি হাজার দুঃখ কষ্ট সয়ে অভ্যস্ত। আপনার প্রেমিকা আমার জীবনের সাথে যাই করুক না কেন আমার তাতে বেশি একটা ক্ষতি হবে না। কারন আমার অতীতের সময় গুলো আরো ভয়ানক ছিল। কিন্তু আপনি আমায় সেই নিষিদ্ধ নগরী থেকে বের করে এনেছেন। আমি এতেই সন্তুষ্ট। আপনার প্রেমিকা আমায় মেরে ফেললেও আমার আপত্তি নেই। তবে সে আপনার দিকে একটা আঙ্গুল তুললেও আমি তার খবর করে ছেড়ে দিব। সে জানে না আমি কি জিনিস। আমি কাপড় খুলতে অভ্যস্ত। সেটা হোক নিজের বা অন্যের। সে আপনার সাথে কিছু করার চেষ্টা করলে ওর শরীরের বস্ত্র আমি খুলে নিব। এরপর দেখবো কি করে মুখ দেখায় সে সমাজে।’
দিশার কথা শুনে আকাশের ভিতরটা খুশিতে ভরে যায়। কারন সে জীবনে এমন কাউকেই চেয়েছিল, যে কিনা নিজের সব টুকু দিয়ে তাকে ভালোবাসবে। যে কিনা তার জন্য গোটা পৃথিবীর মানুষের সাথে লড়াই করবে। বিপদে-আপদে তার ঢাল হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে। গোটা পৃথিবীকে এক পাল্লায় রেখে আকাশকে অন্য পাল্লায় রাখলে তার ভালোবাসার মানুষটা তাকে বেছে নিবে। বহু তালাশ করেছে সে প্রভার মাঝে এসব কিছু, কিন্তু প্রভা পুরোপুরি বিপরীত। প্রভা তাকে প্রায়োরিটি দেওয়া তো দূরের কথা, সে শরীর চর্চার জন্য অন্য লোকের সাথে বিছানা ভাগ করেছে। হাজার ভালোবাসার পরেও প্রভা তার সাথে ছলনা করেছে। তবে বর্তমানে সে দিশার মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেতে শুরু করেছে। যেই আশাটা সে প্রভাবে নিয়ে করেছিল, বর্তমানে সে দিশার মধ্যে সেটা দেখতে পাচ্ছে। প্রভাকে সে চেয়েও নিজের মনের মতন বানাতে পারেনি, অথচ দিশাকে নিয়ে সে কোনো আশা না রাখা সত্বেও দিশা তার মনের মতন। খুশিতে আত্মার হয়ে দিশাকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে বলে,
–‘হয়েছে থাক। তোমাকে কিছুই করতে হবে না। এমনিতেই তোমার শরীর অসুস্থ। এর উপরে অহেতুক চাপ উঠানোর কোনো প্রয়োজন নেই। প্রভার বিষয়টা তুমি আমার উপরে ছেড়ে দাও। তাকে আমি সামলে নিব।’
–‘আকাশ সাহেব আপনি বলতেই তো আর হবে না। আমারো কিছু দায়িত্ব কর্তব্য আছে। আমি আমার সেই দায়িত্ব কর্তব্য পালনে কখনো পিছু হাঁটবো না। একদম মেরে তক্তা বানিয়ে দিব আপনার প্রিয়তমাকে। চেনে না সে আমায়। একবার রেগে গেলে তার উত্তেজনা চিরতরে থামিয়ে দিব আমি।’
–‘দিশা আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে তখন তুমি আমার পক্ষে লড়াই করো। এখন খেতে চলো। এরপর তুমি বিছানায় শুয়ে রেস্ট করবে।’
–‘আচ্ছা।’
আকাশ দিশা দু’জনে মিলে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়। এরপর আকাশ দিশাকে নিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আকাশ দিশাকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। অপরিদকে দিশাও চুপটি করে আকাশের বুকে শুয়ে আছে। দুনিয়ার পরম শান্তি যেনো আকাশের বুকে। এজন্য সে চুপচাপ আকাশের বুকে শুয়ে সময় টাকে উপভোগ করছে। এভাবে কিছুটা সময় যেতেই অফিসের ম্যানেজার আকাশকে ফোন দেয়। আকাশ বিছানার পাশের টেবিল থেকে ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে ফোন রিসিভ করে।
–‘স্যার আপনি কি খুব বেশি ব্যস্ত?’
–‘নাহ ব্যস্ত না বলুন।’
–‘স্যার আমাদের নতুন প্রজেক্টের ফাইলটা রেডি করেছি। আপনি যদি একবার ফাইলটা দেখে সিগনেচার করে দিতেন তাহলে ফাইলের কাজটা সম্পন্ন হয়ে যেতো।’
–‘ঠিক আছে আমি অফিসে আসছি।’
–‘স্যার আপনি কষ্ট করে আবার অফিসে আসবেন? আমিই নিয়ে আসি ফাইলটা আপনার বাসায়।’
–‘নাহ থাক প্রয়োজন নেই। এমনিতে আজ আমি তাড়াতাড়ি অফিস থেকে চলে এসেছি। অফিসে আপনি বাদে আর কেউ নেই। এখন যদি আপনিও অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েন তাহলে কর্মচারীরা কাজে হেয়ালি করতে পারে। তাই আপনি অফিসে থেকে সবার দেখভাল করুন। আমিই আসছি ফাইলটা নিতে।’
–‘ঠিক আছে স্যার।’
আকাশ ফোন কেটে দেয় ম্যানেজারের সাথে কথা বলে। ফোন কাটার পর দিশাকে বলে,
–‘দিশা তুমি একটু বাসায় থাকো। আমার একটা কাজে অফিসে যেতে হবে। আমি আবার জলদিই ফিরে আসবো।’
–‘ঠিক আছে সাবধানে যাবেন। আর জলদিই বাসায় ফিরে আসবেন।’
–‘আচ্ছা।’
দিশাকে বাড়িতে রেখে আকাশ ফাইলটা আনার জন্য অফিসে চলে যায়। আকাশ বাড়ি থেকে বেরোতেই একজন বয়স্ক মহিলা এসে আকাশের বাড়ির দরজায় বেল বাজায়। বেলের আওয়াজ শুনে দিশা এসে দরজা খুলে। দিশা দরজা খুলতেই দেখে একটা বয়স্ক মহিলা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ মহিলাটাকে দেখে দিশা প্রশ্ন করে,
–‘কে আপনি?’
–‘আমি আকাশের আম্মু।’
দিশা কিছুটা চমকে উঠে। তবে পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে আকাশের আম্মুকে সালাম দিয়ে ঘরের ভিতরে আসতে বলে। আকাশের আম্মু ঘরে প্রবেশ করে ঘরের চারপাশটা দেখতে থাকে। আর দিশা মাটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কারন দিশার কাছে কেমন যেনো লজ্জা লাগছে আকাশের মায়ের চোখের দিকে তাকাতে। আকাশের মা পুরো ঘর টাকে এক নজর দেখে দিশাকে বলে,
–‘বাহ বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছে ঘর টাকে আকাশ। এখন খালি একটা সংসার গড়া বাকি। কয়েকজন বাচ্চা কাচ্চা খেলবে ঘরের মধ্যে। তারপর আমরা কখনো বেড়াতে আসলে বাচ্চা কাচ্চা গুলো দৌড়ে এসে দাদা- দাদি করে আমাদের কোলে লাফিয়ে উঠবে। কবে হবে এমনটা দিশা মা?’
দিশা চমকে উঠে আকাশের মায়ের কথায়। এমনিতেই সে লজ্জায় মাথা নুইয়ে রেখেছে। তার উপরে আকাশের মা আকাশের সংসার নিয়ে তাকে প্রশ্ন করছে। কেমন যেনো লাগছে দিশার। কি জওয়াব দিবে সে আকাশের মায়ের কথায়। তার কাছে তো কোনো উত্তর নেই। সে তো একটা প্রস্টিটিউট। আজ আছে কাল নেই। আকাশের পক্ষ হয়ে কি করে উত্তর দেবে সে আকাশের মায়ের কথার। কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সে। অপ্রীতিকর একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছে দিশা। কিছু বলতে চেয়েও দিশার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। আকাশের মা দিশার হাবভাব দেখে তার মনের অবস্থা বুঝে ফেলে। সেজন্য তিনি নিজেই দিশার কাছে গিয়ে দু’হাতে দিয়ে দিশার মুখ উপরে করে বলে,
–‘মা তোমার কিছুই বলতে হবে না। আমি বুঝে নিয়েছি তোমার ভিতরগত অবস্থা। আমি তোমায় এসব প্রশ্ন করে অপ্রীতিকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছি। মা তুমি কিছু মনে করো না। আমি জানি আকাশ তোমায় অনিশ্চিত ভাবে নিয়ে এসেছে। তার মতিগতির কোনো ঠিক নেই। সে আমাদেরকেও সেভাবে বলেনি। শুধু বলেছে তোমার মধ্যে সে মানসিক শান্তি খুঁজে পায়। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমাকে আকাশের বউ ভেবেই কথা গুলো বলেছি। দেখো মা তোমার অতীত নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমার ছেলে যাকে নিয়ে খুশি থাকতে পারবে আমি তাকেই বউ বলে মেনে নিব। হ্যাঁ হয়তো আকাশের বাবা তোমায় এতো সহজে মেনে নিবে না। তবে আমি তোমায় নিজের ছেলের বউ বলে গ্রহণ করে নিয়েছি। আমি চাই তোমরা দু’জন বিয়ে করে সংসার শুরু করো। কারন এভাবে থাকলে সমাজের চোখে আমার ছেলে কালার হয়ে যাবে। সাথে তোমারো সম্মান নষ্ট হবে। তাই তোমরা দু’জন জলদিই বিয়ে করে নাও। এরপর দু’জনে মিলে সংসার শুরু করো।’
আকাশের মায়ের কথায় দিশার চোখে পানি চলে আসে। দিশা আকাশের মায়ের কথা শুনে শূন্যে ভাসছে। আকাশের মা তাকে যেসব বলেছে সে কোনোদিন এসব কল্পনাই করেনি। দিশার কান্না দেখে আকাশের মা আবারো দিশাকে বলে,
–‘কিরে মা কান্না করছিস কেন?’
দিশা এবার শব্দ করে কান্না করে দেয়।
–‘আরে পাগলি মেয়ে আমার কাঁদে না। বিশ্বাস কর আমিও চাই তুই আকাশের বউ হয়ে আমারে পরিবারে আগমন কর।’
–‘আমি এতোসব কখনো ভাবিনি। কারন আমি জানি আমার কপালে এতো সুখ নেই। মা মরা মেয়ের কপালে কি এতো সুখ থাকে নাকি।’
–‘এই মেয়ে একদম বাজে কথা বলবি না। তোর মা নেই তো কি হয়েছে? আমি তো আছি। আমিই তোর মা আজ থেকে। আর কখনো বলবি না তোর মা নেই। এবার দেখি চোখের পানি মুছে দিচ্ছি। আর একদম কান্না করবি না। আর শোন তোর জন্য আমি কিছু জিনিস নিয়ে এসেছি। জিনিস গুলোকে সামলে রাখবি। কারন এসব আমাদের বংশের স্মৃতি।
আকাশের মা দিশার চোখের পানি মুছে দিয়ে ব্যাগ থেকে গলার একটা স্বর্নের নেকলেস বের করে দিশার গলায় পড়িয়ে দেয়। দিশা এবার পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে আকাশের মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। আকাশের মা দিশার গলায় স্বর্নের নেকলেসটা পড়িয়ে দিয়ে বলে,
–‘আমি তোকে নিজের ছেলের বউ বলেই মেনে নিয়েছি। এবার তুই আকাশকে রাজি করিয়ে বিয়েটা করে ফেল। আমি আর আমার ছেলেকে এভাবে মনমরা অবস্থায় দেখতে চাই না। প্রভা নামক মেয়েটা আমার ছেলেটাকে পুরো শেষ করে দিয়েছে।’
–‘মা আমি কখনোই আপনার ছেলেকে বিয়ের কথা বলতে পারবো না। কারন আমার সেই মুখটা নেই। উনি আমায় নোংরা একটা পরিবেশ থেকে উঠিয়ে এনে নিজের কাছে রেখেছে এটাই অনেক। তবে আমি আপনার ছেলেকে সব সময় সামলে রাখবো। আমি থাকতে কোনো বিপদ আপনার ছেলেকে স্পর্শ করতে পারবে না।’
–‘নিজের উপরে আস্থা রাখ। আমার ছেলে যখন তোকে নিজের কাছে রাখার মতন এতো বড় একটা রিস্ক উঠিয়েই নিয়েছে, তাহলে ধরে নে সে কখনোই তোর হাত ছাড়বে না।’
–‘মা আমিও চাই না উনাকে কখনো ছেড়ে যেতে। আমিও সব সময় উনার সাথেই থাকতে চাই।’
–‘মা তিনি অফিস থেকে দুপুরেই ফিরে এসেছে। কিন্তু একটু আগে কি একটা জরুরী কাজের জন্য আবার অফিসে গিয়েছে। বলেছে কিছু সময়ের মধ্যেই ফিরে আসবে।’
–‘আচ্ছা ঠিক আছে শোন আমি চলে গেলাম।’
আকাশ আসলে বলিস আমি এসেছিলাম।’
–‘কেন মা কিছু সময় থেকে গেলে হয় না। উনি হয়তো কিছু সময়ের মধ্যে এসেই পড়বে।’
–‘না রে মা আমার চলে যেতে হবে। কারন আকাশের বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আমি এখানে এসেছি। আকাশের বাবা জানতে পারলে কষ্ট পাবে। তাই আমি চলে যাই। পরে আবার কখনো আসবো।’
–‘ঠিক আছে মা।’
–‘শোন আমার ছেলের ভালো করে খেয়াল রাখবি। কোনে কিছুতে যেনো সে কষ্ট না পায়।’
–‘মা আপনি চিন্তা করবেন না। আমি উনাকে দেখে রাখবো।’
–‘হুম এবার চললাম।’
আকাশের মা দিশার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। আধঘন্টা পর আকাশ বাড়িতে ফিরে আসে। আকাশ বাড়িতে ফিরে আসতেই দিশা আকাশকে জানায় তার মা এসেছিল। আকাশ দিশার কথা শুনে তাকে প্রশ্ন করে তার মা তাকে কি বলেছে। দিশা আকাশকে বেশি কিছু বলেনা। গলার নেকলেসটা দেখিয়ে শুধু এটুকুই বলে আকাশের মা তাকে নেকলেসটা পড়িয়ে দিয়ে গেছে। দিশার কথা শুনে আকাশ ও আর কিছু বলে না। চুপচাপ খাটে বসে ফাইলটা দেখতে শুরু করে। আকাশ অফিসে গিয়ে ফাইলটা বাসায় নিয়ে এসেছে। সমস্ত কিছু দেখে সিগনেচার করে ফাইলটা আগামীকাল অফিসে নিয়ে যাবে। ফাইলটা নিয়ে খাটে বসে মনোযোগ সহকারে কাজ করছে। আকাশের চুল গুলো ফ্যানের বাতাসে উড়ছে। আর দিশা চুপচাপ আকাশের পাশে বসে মুগ্ধ নয়নে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশ কি সুন্দর করে আকাশের ছোট ছোট চুল গুলো ফ্যানের বাতাসে দুল খেয়ে বেড়াচ্ছে। দিশার খুব করে ইচ্ছে করছে আকাশের চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে দিতে। কিন্তু আকাশ কি মনে করবে সেটা ভেবে দিশা সাহস করতে পারছে না। তবে দিশা একটা সময় লোভে পড়ে যায়। এতসব না ভেবে সাহস করে আকাশের চুলে হাত দিয়ে বসে। দিশার এমন আচরণ আকাশ হুট করেই ভয়ানক ভাবে রেগে গিয়ে দিশার গালের মধ্যে সজোড়ে একটা থাপ্পড় মারে। দিশা আকাশের হাতে থাপ্পড় খেয়ে টাল সামলাতে না পেরে বিছানার উপরে চিত হয়ে পড়ে। আর আকাশ হায়েনার মতন দিশার শরীরের উপরে উঠে দু’হাত দিয়ে দিশার গলা চেপে ধরে। দিশার দম বন্ধ হয়ে আসছে। নিশ্বাস নিতে পারছে না সে। আকাশ দিশার গলায় এতো জোরে চেপে ধরেছে, যে দিশার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে। দিশা অশ্রুভেজা দৃষ্টিতে বাচ্চা শিশুর মতন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আর চোখের ভাষায় মিনতি করছে তাকে ছেড়ে দিতে। কিন্তু আকাশ দিশার উপরে মায়া না দেখিয়ে দিশার গলা আরো জোরে চেপে ধরে। মনে হচ্ছে যেনো আজকে আকাশ দিশাকে মেরেই ফেলবে…
আকাশ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দু’কদম সামনে এগোতেই দেখে দিশা বালিশের পাশ থেকে পিস্তলটা নিয়ে আকাশের দিকে নিশানা করে বলে,
–‘অনেক পাখনা গজিয়েছে তোর। এবার তোর ষোলোকলা পূর্ণ হয়েছে আকাশ। এখন তোকে মরতে হবে আমার হাতে। ডাকাতের দলের মতন তোর ও সময় হয়ে এসেছে উপরে যাওয়ার।’
দিশার এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে আকাশের হাত থেকে টাওয়াল টা ফ্লোরে পড়ে যায়। দিশার আচরণে আকাশ এতোটাই অবাক হয়, যে সে দিশার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে! মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা দিশার এই ভয়ানক রূপ আকাশের চেহারার রং পরিবর্তন করে দিয়েছে। আকাশ বুঝেই উঠতে পারছে না দিশা তার কোন কালের শত্রু। সে তো এই মেয়ের কোনো ক্ষতি করেনি কখনো। তাহলে দিশা হুট করে এভাবে নিজের রূপ পরিবর্তন করে নিলো কেন। কি চায় সে তার থেকে। আকাশ দিশার দিকে তাকিয়ে ভাবনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অমন সময় দিশা একটু জোরে চেঁচিয়ে আকাশকে বলে,
–‘মৃত্যুকে সামনে দেখে ভয় হচ্ছে বুঝি তোর?’
দিশার কথায় আকাশ ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এসে দিশাকে প্রশ্ন করে,
–‘দিশা আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি?’
–‘কেন মনে নেই তোর?’
–‘নাহ আমার তো কিছুই মনে পড়ছে না।’
–‘জীবনে এতো পাপ করেছিস যে নিজের পাপের হিসেব নিজের কাছেই নেই। তবে তুই টেনশন করিস না একদম। তুই আমার সামনে এসে দাঁড়া। তারপর আমি তোর কপালে গুলির নল ঠেকিয়ে ধরলে সব মনে পড়ে যাবে।’
আকাশ চুপচাপ দিশার কথা শুনে তার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। দিশার কথাবার্তা এবং তার আচরণে আকাশ একের পর এক অবাক হয়েই যাচ্ছে। তবে তার উত্তর জানা প্রয়োজন। যদি সে সত্যিই কোনো ভুল করে থাকে, তাহলে দিশার হাতে মরলেও তার কোনো আপত্তি নেই। সেজন্য সে চুপচাপ দিশার কথা মতন তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আকাশ দিশার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই দিশা আকাশের কপালে গুলির নল ঠেকিয়ে বলে,
–‘এবার ভাবতে শুরু কর কি করেছিস তুই। দেখবি ঠিকই মনে পড়ে যাবে। তবে যদি এরপরেও মনে না পড়ে, তাহলে আমিই তোকে মনে করিয়ে দিব। আর তার সঙ্গে উপরের টিকিট কেটে দিব।’
আকাশ ভাবতে শুরু করে সে কি করেছে। ভাবতে ভাবতে অতীতের সমস্ত ফ্লাসব্যাকের কথা সে ভাবতে শুরু করে। নিজের পুরাতন হিষ্ট্রি ঘাঁটতে শুরু করেছে আকাশ। লাইফে সে বহু কিছুই করেছে। একেক করে সব কিছু মনে করতে থাকে। কিন্তু দিশার ব্যাপারে কোনো কিছুই মনে করতে পারে না। আকাশ মিনিট দশেক ভাবনায় কাটিয়ে দিয়েছে। তবে কোনো উত্তর সে খুঁজে পায়নি। সেজন্য সে দিশাকে বলে,
–‘দিশা তোমাকে কেন্দ্র করে আমার কোনো কিছুই মনে পড়ছে না। তুমি প্লিজ নিজেই আমাকে বলে দাও আমি কি করেছি। তারপর না হয় আমায় মেরে ফেলো।’
আকাশের কথায় দিশা ফিক করে একটা হাসি দিয়ে আকাশকে বলে,
–‘আমায় জড়িয়ে ধরুন জলদি। না হয় গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিব।’
আকাশ তাজ্জব হয়ে যায় দিশার কর্মকান্ড দেখে। তবে সে তাজ্জব হলেও দিশার কথাকে মেনে নিয়ে তাকে কোনো ভাবে জড়িয়ে ধরে। আকাশ দিশাকে জড়িয়ে ধরতেই দিশা পিস্তলটা যেই জায়গা থেকে নিয়েছে সেই জায়গায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়। দিশার এই অদ্ভুত কান্ডকারখানা দেখে আকাশ দিশাকে জিজ্ঞাস করে,
–‘এটা কি হলো দিশা? আর পিস্তলটা ফেলে দিলে যে?’
আকাশের কথা শুনে দিশা হাসতে হাসতে আকাশের হাত নিয়ে গিয়ে তার পেটের উপরে রেখে নিজের শরীরে নিজেই আকাশের হাত দিয়ে স্পর্শ করাতে থাকে। এরপর আকাশকে বলে,
–‘আপনি কোনো কিছু করলেই তো আপনার মনে হবে। আপনি তো কোনো কিছুই করেননি। অহেতুক আপনি হাজার চেষ্টা করলেও তো কাজ হবে না।’
–‘মানে কি দিশা?’
–‘মানে হলো আমার প্রচন্ড রাগ এবং নিজের উপরে ঘৃণা হচ্ছে। এজন্য আমি নিজের রাগকে দমিয়েছি আপনাকে আবোল-তাবোল হুমকি দিয়ে। এখন আমার রাগ পুরোপুরি কমে গেছে। তবে এখনো ঘৃণাটা কমেনি নিজের উপরে। কারন আপনি যেই ডাকাতের দলকে উপরে পাঠিয়েছেন, তাদের মধ্যে থেকে একজন আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল। ঐ সিনটা আমার মনে পড়লেই কেমন যেনো লাগে।’
দিশার কথা শুনে আকাশের চরম মাত্রায় রাগ উঠে যায়। কিন্তু সে নিজেকে সামলে নিয়ে দিশাকে ছেড়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। আকাশ দিশাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়াতেই দিশা আকাশকে বলে,
–‘দিশা সেটা তুমি অন্য ভাবে আদায় করতে পারতে। এমনটা করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। তোমার এমন আচরণে যানো আমার ভিতরটা পুরো দলা পেকে গেছে?’
–‘আকাশ সাহেব আমার ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো এমনটা করবো না। এবার আপনি আমায় জড়িয়ে ধরুন। আমার প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছে নিজের উপরে। মনে হচ্ছে যেনো সেই লোকটা এখনো আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। কেমন যেনো লাগছে নিজেকে নিজের কাছে। প্লিজ আপনি আমায় জড়িয়ে ধরে আমার ভিতর থেকে সেই বাজে মনোভাব টাকে দূর করে দিন। না হয়তো আমি স্বস্তিতে থাকতে পারবো না।’
দিশার অদ্ভুত কর্মকান্ডের পিছনের আসল রহস্য জেনে আকাশের রাগ হাওয়া হয়ে যায়। তবে সে দিশাকে আর জড়িয়ে ধরে না। ঘাপটি মেরে আগের মতোই দাঁড়িয়ে থাকে। আকাশের নিরবতা দেখে দিশার আরো অস্বস্তি লাগতে শুরু করে। তার পক্ষে এভাবে থাকা আর সম্ভব না। নিজেই গিয়ে আকাশকে আবার জড়িয়ে ধরে পাগলামো করতে শুরু করে। দিশার পাগলামো দেখে আকাশ দিশাকে বলে,
–‘দিশা তুমি নিজে আমায় এভাবে স্পর্শ করলে তোমার অস্বস্তি কোনোদিন ও দূর হবে না। তোমার অস্বস্তি দূর হবে আমি তোমায় কাছে টানলে। আমার স্পর্শই তোমার অস্বস্তিকে দূর করতে পারবে।’
–‘তো টানছেন কেন কাছে আমায়? নিন না আমায় কাছে টেনে। আমি তো শুধু আপনার। আমার সমস্ত কিছুই তো আপনার জন্য উন্মুক্ত। আপনাকে তো বাঁধা দেওয়ার মতন কেউ নেই। তাহলে কেন আমায় কাছে টানছেন না? তাহলে কেন আমার অস্বস্তিকে দূর করছেন না? আপনি কি বুঝতে পারছেন না, যে আমি আপনার ঘনিষ্ট হতে চাচ্ছি? আপনি কি বুঝতে পারছেন না আমি আপনার ঐ লাল টুকটুকে ঠোঁট জোড়া দিয়ে আমার সারা শরীরে স্পর্শ করাতে চাচ্ছি? আপনি কি বুঝতে পারছেন না আমি আপনার সাথে একদম পুরোপুরি মিশে যেতে চাচ্ছি? তাহলে কেন এমন রোবটের মতন দাঁড়িয়ে আছেন? নিন আমায় স্পর্শ করুন। ডুব দিন আমার মাঝে। আমি আর পারছি না আপনার থেকে দূরে সরে থাকতে। আমার আপনাকে চাই।’
–‘দিশা তোমার কি কি চাই সব আমি বুঝতে পেরেছি। তবে আমি একটা জিনিস ক্লিয়ার ভাবে বুঝতে পারছি না! দিশা এটা তোমার কেমন চাওয়া, যে তুমি ঘৃণা কমাতে আমার সাথে ঘনিষ্ট হতে চাইছো? তাও আবার পুরোপুরি আমার মাঝে ডুব দিয়ে?’
–‘জানি না এটা আমার কেমন চাওয়া! আমি খালি এটুকুই জানি আপনার সাথে ঘনিষ্ঠ হলে আমার সব কিছুই বেঁচে যাবে।’
–‘সব কিছু বেঁচে যাবে মানে বুঝলাম না।’
–‘মানে টা খুবই সহজ। আমার লাইফে একটার পর একটা ঝামেলা হয়েই চলেছে। আমি আগে যেমন এই ছিলাম না কেন, আপনার স্পর্শে আমার শরীর পবিত্র হয়েছে। তাই আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনাকে নিজের সব টুকু বিলিয়ে দিলে আমি পুরোপুরি সুরক্ষিত থাকবো। আপনার আমানতের বরখেলাপ কখন হয় সেই ভয়ে থাকি আমি। সেজন্য আপনি যদি আমায় ঐ ভাবে কাছে টেনে নেন, তাহলে আমার আর কোনো ভয় থাকবে না। পরবর্তীতে কিছু হলেও মনে হবে আমার শরীরের আসল অংশীদার এই আমাকে প্রথম স্পর্শ করেছে। তাই আপনি এবার আমায় পুরোপুরি ভাবে নিজের কাছে টেনে নিন। না হয় আমি কিন্তু খুব খারাপ কিছু ঘটিয়ে ফেলবো। আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না আপনার জন্য নিজেকে সামলে রাখা। একেকবার একেকজন এসে আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করছে। কবে জানি আমায় অন্য কেউ জোর করে বিছানার সঙ্গী বানায়। এর চাইতে ভালো আপনার আমানত আপনি বুঝে নিন।’
দিশার সমস্ত কথাবার্তা শুনে আকাশ দিশাকে কাছে টেনে নিয়ে তার কপালে কয়েকটা চুমু একে দেয়। পরবর্তীতে দিশাকে বুকে টেনে নিয়ে বলে,
–‘তুমি আমার আছো আমারিই থাকবা। আমি থাকতে তোমার শরীরে কোনোদিন কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। নিজের সব টুকু দিয়ে আমি তোমায় রক্ষা করবো। এবার ভয়ের মাত্রাটা কমিয়ে খেতে চলো। অনেক হয়েছে অহেতুক কথাবার্তা। তোমার ঔষধের সময় হয়ে এসেছে। খাবার খেয়ে তোমার আবার ঔষধ খেতে হবে।’
–‘একটু কাছে টেনে নিলে কি এমন হবে? এমন করেন কেনো আপনি? আমি নিজ থেকে আপনাকে ধরা দিচ্ছি আর আপনি দূরে পালাচ্ছেন? এমন কেন আপনি?’
–‘দিশা সময় হলে তোমার ইচ্ছে আমি নিজেই পূরণ করবো। এখনো সঠিক সময় আসেনি। সঠিক সময়টা আসতে দাও।’
–‘ঠিক আছে চলেন খেয়ে নেই।’
আকাশ দিশাকে দমিয়ে খাবার টেবিলে নিয়ে বসে খাবার খেতে। দু’জনে মিলে কিনে আনা বিরিয়ানি গুলো খেয়ে রুমে চলে আসে। আকাশ রুমে এসে দিশাকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে সঙ্গ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরের দিন সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে বাহির থেকে দু’জনের জন্য নাস্তা কিনে আনে। আকাশ নিজের ভাগের নাস্তা টুকু খেয়ে চটজলদি রেডি হয়ে দিশাকে বলে,
–‘দিশা তোমার নাস্তা টেবিলে রাখা আছে। নাস্তা খেয়ে ঔষধ গুলো টাইমলি খেয়ে নিও। আমি অফিসে চলে যাচ্ছি। দুপুরে বাড়ি ফিরে আসবো। আর সঙ্গে করে দু’জনের খাবার ও নিয়ে আসবো। তুমি বাড়িঘর ভালো ভাবে আঁটকে ভিতর থেকে বসে থাকবে। আমি আসা পর্যন্ত কেউ ডাকলেও দরজা খুলবে না। আর ভুলে তুমি নিজেও কোথাও যাবে না।’
–‘আচ্ছা।’
আকাশ দিশাকে একা বাড়িতে রেখে অফিরে চলে যায়। চার ঘন্টা অফিসে কাটিয়ে একটার দিকে অফিস থেকে বেরিয়ে বাসায় চলে আসে। বাসায় আসার মাঝপথে দু’জনের জন্য খাবার নিয়ে নিয়েছে। বাসায় এসে দরজার কলিংবেল চাপতেই দিশা এসে দরজা খুলে। আকাশ ঘরে প্রবেশ করে দিশা সহ নিজেদের রুমে চলে যায়। বেশ টায়ার্ড লাগছে আকাশের। শার্টের বোতাম খুলে পাখার নিচে বসে। এমন সময় দরজার কলিংবেল আবার বেজে উঠে। আকাশ বসা থেকে উঠে কে আসছে দেখতে যাবে, কিন্তু দিশা তাকে আঁটকে দিয়ে বলে,
–আপনি পাখার নিচে বসে থাকেন। এমনিতেই অফিস করে টায়ার্ড হয়ে এসেছেন। আমি গিয়ে দেখছি কে এসেছে।’
–আচ্ছা।’
দিশা আকাশকে বসিয়ে রেখে বাড়ির মেইন দরজায় চলে যায় কে আসছে দেখার জন্য। মেইন দরজার গিয়ে যেই না দরজা খুলেছে, এমনিই প্রভা দিশাকে ধাক্কা দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে দিশার উপরেই চেঁচাতে আরম্ভ করে।
–‘এই তুই এখানে কি করছিস? আর আকাশ কোথায়?’
–‘আপনাকে কেন বলবো আমি এখানে কি করছি? আপনি কে যে আপনাকে আমার জওয়াব দিতে হবে?’
–‘ঠিক আছে আমি আকাশকেই প্রশ্ন করবো। আকাশ কই আছে সেটা বল। আজকে ওর একদিন কি আমার একদিন।’
–‘আপনি উনার কিছুই করতে পারবেন না। আর উনি ঐ যে উপরের রুম টাতে আছে।’
–‘আমি কি করতে পারি সেটা একটু পরেই দেখতে পারবি।’
প্রভা দিশাকে দেমাগ দেখিয়ে আকাশের রুমের দিকে তেড়ে যায়। দিশাও প্রভার পিছনে পিছনে রুমে গিয়ে হাজির হয়। প্রভা রুমে প্রবেশ করা মাত্রই আকাশের কলার ধরে চেঁচিয়ে বলতে থাকে,
–‘এই হারামজাদা প্রভা এই বাড়িতে কি করছে? আমি শুনলাম তুই নাকি গতকাল তাকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছিস। কি করছিস তোরা দু’টো এক সাথে? কে চলছে তোদের মাঝে?’
প্রভার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে আকাশ। কারন প্রভার সাথে কথা বলতে কোনো প্রকার রুচি হচ্ছে না আকাশের। দিশা দেখে হয়তো সে তার বাড়িতে প্রবেশ করতে পেয়েছে। যদি দিশার জায়গায় আকাশ দরজা খুলতে যেতো, তাহলে হয়তো প্রভা বাড়িতেই প্রবেশ করতে পারতো না। আকাশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আকাশের চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা থেকে প্রভা রেগে গিয়ে আকাশের শার্ট আরো জোরে টান ধরে আকাশকে বলে,
–‘আমার প্রশ্নের উত্তর দে আকাশ। তুই ওর সাথে গতকাল থেকে কি কি করেছিস? আমি সব কিছু জানতে চাই।’
আকাশ এবারো চুপ। কিন্তু দিশার রাগ উঠে যায় প্রভার আচরণে। তার সামনেই প্রভা আকাশের কলার চেপে ধরে তাকে শাসাচ্ছে। দিশা এই দৃশ্যটা সহ্য করতে না পেরে গিয়ে জোরপূর্বক প্রভা থেকে আকাশকে ছাড়িয়ে নেয়। তারপর উচ্চস্বরে প্রভাকে বলে,
–‘উনার গায়ে হাত দিলে হাতের কব্জি সহ কেটে ফেলবো বলে দিলাম। আর আপনার উত্তর জানতে হলে আমি দিচ্ছি আপনাকে উত্তর।’
–‘হ্যাঁ..হ্যাঁ বল কি কি করেছে সে গতকাল থেকে তোর সাথে।’
–‘বলছি কিন্তু লজ্জা পেলে আমায় দোষারোপ করতে পারবেন না।’
–‘হ্যাঁ তুই খালি বল সে তোর সাথে কি কি করেছে। তারপরে কি হবে সেসব তুই আমার উপরে ছেড়ে দে।’
–‘তাহলে শুনেন। উনি গতকাল রাতে আমায় নিজের হাতে শাড়ী পড়িয়ে দিয়ে সেই শাড়ী গভীর রাতে উনি নিজেই খুলেছে। আমার বক্ষবন্ধনীর মাঝ বরাবর যেই গভীর খাঁজ আছে সেখানে চুমু খেয়েছে। আমার আলতো পিঠে জড়িয়ে ঠোঁটে, কপালে, ঘাড়ে এমনকি আমার নাভীর গভীর খাদে অগণিত চুমু একে দিয়েছে। এছাড়া আরো উনি উনার পুরুষত্বের পৌরষ আমার দেহে চালান করে বংশ প্রদীপের রেজিস্ট্রি করেছে। আরো শুনবেন? শুনতে চাইলে বলছি। আমার বলতে আপত্তি নেই।’
–না,না,না আমি আর শুনতে চাই না কিছু। আমার কান ফেটে যাবে এর চেয়ে আর বেশি কিছু শুনলে। আমি এখন তোদের ঘর থেকে চলে যাচ্ছি। তবে তোদের দু’টোকে আমি পরে দেখে নিব।’
প্রভা দিশার কথাবার্তা শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে যায়। প্রভা আর সহ্য করতে পারছিলো না আকাশ আর দিশার গোপন কথপোকথন। সেজন্য তাড়াহুড়ো করে প্রভা ঘর থেকে বেরিয়ে চলে যায়। প্রভার এমন আচরণে দিশা শব্দ করে হাসতে আরম্ভ করে। কিন্তু দিশা জানে না প্রভার ভিতরে সে দাবানলের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। যেই দাবানলের আগুনের উত্তাপে পরবর্তীতে তাদের দুটোকেই জ্বলতে হবে….