কুহেলিকা পর্ব-১৫

0
606

#কুহেলিকা (পর্ব-১৫)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

কয়েকজন লোক ধারালো অ/স্ত্র হাতে মাইক্রো থেকে নেমে আকাশদের দিকে এগিয়ে আসে। দিশা লোক গুলোকে দেখে ভয়ে কাতর হয়ে আকাশকে খামচাতে শুরু করে। কিন্তু আকাশের কোনো হুঁশ নেই। সে দিশার চুলের ঘ্রাণ নেওয়ায় ব্যস্ত। লোক গুলো ধারালো অ/স্ত্র হাতে দিশাদের একদম নিটকে চলে আসে। নিকটে আসার পর এক টান দিয়ে দিশাকে আকাশ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দিশার গলায় ছুরি চেপে ধরে তার সাথে অসভ্যমো করতে শুরু করে। যেই লোকটা ছু/রি চেপে ধরেছে দিশার গলায়, সে দিশার কোমরের দিকে ধীরে ধীরে হাত এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। দিশার সমস্ত শরীর ফেলে রেখে লোকটার নজর পড়েছে দিশার কোমরে। ধবধবে সাদা কোমর। এই কোমরের দিকে যে একবার দেখবে, সে বরাবরের মতোই দিশার কোমরের নেশায় ডুবে যাবে। লোলটার বেলায় ও তাই হয়েছি। আকাশ পাশ থেকে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছে। তার ইচ্ছে করছে সামনের লোকটাকে জলজ্যান্ত মাটিতে পুঁতে দিতে। কিন্তু তাঁদের লোক সংখ্যা বেশি হওয়ায় আকাশ হাইপার না হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। দিশা আকাশের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার দৃঢ় বিশ্বাস আকাশ তাকে যে কোনো ভাবে বাঁচিয়ে নিবে। তবে কি ভাবে আকাশ এতো গুলো লোকের মোকাবেলা করে দিশাকে লোক গুলোর হাত থেকে বাঁচাবে। আকাশের পক্ষে তো এতো গুলো লোকের সাথে পেরে উঠা সম্ভব নয়। আর এছাড়া আকাশ এখনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আকাশের নিরবতায় দিশার মনে কু ডাকতে শুরু করে। দিশাকে জিম্মি করে রাখা লোকটা তার হাত দিশার ধবধবে সাদা পেটের সাথে যেই না স্পর্শ করাবে, এমন সময় আকাশ সবইকে চেঁচিয়ে বলে উঠে,

–‘তোরা সবাই হচ্ছিস কাপুরষ। একজন স্বামীর সামনে কি করে তোরা সবাই তার স্ত্রীকে স্পর্শ করছিস? তোদের তো পুরুষত্ব নাই রে। যদি থাকতো, তাহলে সর্ব প্রথম তোরা আমার সাথে মোকাবিলা করতি। তোদের সাথে মোকাবিলায় যদি আমি হেরে যেতাম, তাহলে না হয় আমার স্ত্রীর সাথে যা খুশি করতি। কিন্তু তোরা তো এসেই কাপুরুষের মতন ছুরির বলে আমার স্ত্রীকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে নিয়েছিস। শোন তোরা যদি সত্যিই পুরুষ হয়ে থাকিস, তাহলে আমার স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে আগে আমায় পরাজয় কর। এরপর আমার স্ত্রীর সাথে যা খুশি করিস।’

আকাশের কথা শুনে একজন লোক দিশাকে জিম্মি করা লোকটাকে বলে,

–‘এই তুই ওকে ছেড়ে দে। আগে এই বেটাকে শেষ কর। বেটা আমাদের পুরুষত্ব নিয়ে কথা বলেছে। আগে এই বেটাকে শেষ করে পরে সবাই মিলে ওর বউকে রাতের সঙ্গী বানাবো। ধবধবে সাদা শরীর টাকে খেয়ে ছুরি দিয়ে সারা শরীর একে রক্তে লাল করে দিব।’

–‘ঠিক আছে বস আমি ছেড়ে দিচ্ছি।’

দিশাকে জিম্মি করা লোকটা তার বসের কথা অনুসারে দিশাকে ছেড়ে দেয়। এরপর দিশাকে ছেড়ে দেওয়া লোকটা যাকে বস ডেকেছে, সে বাদে বাকি সবাই হাতের ধারালো অ/স্ত্র গুলো নিয়ে একত্রে হয়ে আকাশের দিকে এগিয়ে আসে। দিশা তো ভয়ে শেষ। তার কলিজায় পানি নেই। বুকটা শুখিয়ে মরুর মতন হয়ে গেছে। অপরদিকে আকাশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। চার-পাঁচজন লোক যে অ/স্ত্র হাতে নিয়ে তার দিকে তেড়েফুঁড়ে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে আকাশের কোনো পদক্ষেপ নেই। আকাশের দাঁড়িয়ে থাকা দেখে মনে হচ্ছে সব কিছুই স্বাভাবিক। না হয়তো সে কোনো একটা তড়িঘড়ি করতো। লোক গুলো আকাশের একদম নিকটে গিয়ে দাঁড়ায়। আকাশ এখনো চুপ। আকাশের চুপসে থাকা দেখে তার দিকে এগিয়ে যাওয়া লোক গুলো থেকে একজন অবাক হয়ে আকাশকে জিজ্ঞাস করে,

–‘কিরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছিস যে? তুই না একটু আগে আমাদের হুমকি দিলি? তাহলে এখন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বাঁচার জন্য বা আমাদের সাথে লড়াই করার জন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করবি না? এভাবেই কি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের হাতে নিজের প্রাণ শেষ করবি নাকি?’

লোকটার কথা শুনে আকাশ কিছুটা মুচকি হেঁসে লোকটাকে বলে,

–‘চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে নিজের প্রাণ হারাবো, না তোদের বিরুদ্ধে লড়াই করবো সেটা আমার উপরেই ছেড়ে দে। তোরা আমায় মারতে এসেছিস মেরে ফেল। বাকি আমি কি করবো সেসব দেখে তোদের কোনো ফায়দা নেই।’

আকাশের কথা শুনে আকাশকে প্রশ্ন করা লোকটা তার বাকি সঙ্গীদেরকে বলে,

–‘এই তোরা সবাই চলতো বেটাকে শেষ করে দেই। বেটার দেখি অনেক জবান চলে। সে এখনো জানে না আমরা কারা। আমরা কতো ভয়ানক ডাকাতের দল সেটা সে এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। চল বেটাকে সবাই মিলে আমাদের আসল পরিচয়টা দিয়ে দেই।’

লোকটা নিজেদের পরিচয় দিতে সবাইকে সাথে নিয়ে ছুরি দিয়ে আকাশকে মারতে যাবে, এমন সময় আকাশ কোমর থেকি একটা পিস্তল বের করে ঠুস,ঠুস করে মে/রে সবাইকে মুহূর্তের মধ্যেই জমের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। সব কয়টা লাশ হয়ে ব্রীজের উপরে পড়ে আছে। আকাশ থেকে সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ডাকাতের সর্দার এই দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। ভয়ে কাঁপতে শুরু করে তার শরীর। কাউকে লুটপাট করতে এসে নিজেরাই মৃত্যুর ফাঁদে আঁটকে যাবে সেটা ডাকাতের সর্দার কোনোদিন ও কল্পনা করেনি। হাতে তার ধারালো অ/স্ত্র, কিন্তু তবুও তার শরীর ভয়ে কাঁপছে। কারন তার হাতে প্রাণঘাতি অ/স্ত্র থাকলেও দূরত্বের কারনে সে আকাশের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। কিন্তু আকাশ চাইলে দূর থেকেই তার কিচ্ছা কাহানী তার লোকদের মতন শেষ করে দিতে পারে। লোকটার ভয়াবহ চেহারা দেখে আকাশ হাসতে আরম্ভ করে। এজন্যই বলে না জেনে উল্টো-পাল্টা মানুষকে ঘুম থেকে জাগাতে নেই। এতে হিতে বিপরীত হয়। ডাকাতের সর্দার ফেঁসে গেছে জোরালো ভাবে। আকাশ কিছুটা সময় তাচ্ছিল্যের সুরে হেঁসে ডাকাতের সর্দারকে জিজ্ঞাস করে,

–‘কিরে সমস্ত বাহাদুরি বেরিয়ে গেছে ভিতর থেকে? এখন কাঁপছিস কেন ভয়ে? একটু আগে তো বেশ চওড়া গলায় কথা বলছিলি তোরা সবাই মিলে। এখন চুপ হয়ে গেলি কেন?’

আকাশের কথায় ডাকাতের সর্দার মাটিতে হাঁটু ভাজ করে বসে পড়ে। এরপর হাত জোর করে আকাশের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলে,

–‘ভাই আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি না জেনে আপনার সাথে পাঙ্গা নিয়ে বসেছি। আপনি প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন। আর কখনো আপনার সাথে এমনটা করবো না।’

–‘অনেক দেরি করে ফেলছিস রে তুই। তোর সময় ফুরিয়ে গেছে। আজরাইল হয়তো পথেই আছে। আমি আমার দায়িত্ব শেষ করলেই আজরাইল এসে তিনার কাজটা সম্পন্ন করবে।’

–‘ভাই আপনার দু’টো পায়ে পড়ি। আপনি একটা বার আমাকে সুযোগ দেন।’

–‘কোনে সুযোগ হবে না তোর। কারন তোরাও মানুষকে সুযোগ দিস না। আজ আমার কাছে যদি মেশিন টা না থাকতো, তাহলে তো ঠিকই তোরা আমাকে মেরে আমার স্ত্রীর সাথে অসভ্যতামো করতিস। সেই সময় তো কোনো ধরনের সুযোগ দিতিস না তোরা। আর তার চাইতেও বড় কথা তোরা সমাজের অনেক বড় শত্রু। তোদেরকে বাঁচিয়ে রাখা মানে মানুষের জীবনকে নিশ্চয়তার বদলে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া। তাই তোকে উপরে যেতেই হবে। পরপারে ভালো থাকিস।’

আকাশ আর কোনো কথার সুযোগ না দিয়ে ডাকাতের সর্দারকেও শুট করে মে/রে ফেলে। সবাই শেষ। ব্রীজের উপরে দু’চারটা লাশ এবং দিশা আর আকাশ বাদে পুরো ব্রীজে আর কেউ নেই। ডাকাতের সর্দারকে মেরে ফেলার পরক্ষণেই দিশা কান্না করতে করতে দৌড়ে এসে আকাশকে জড়িয়ে ধরে। দিশার বুকের ভিতরটা এখনো ধুপধুপ করে কাঁপছে। আকাশ দিশাকে শান্ত করে বলে গাড়িতে উঠে বসতে। আকাশের কথায় দিশা গাড়িতে উঠে ঠিক, কিন্তু তার অশান্ত মনটা এখনো সেভাবেই রয়ে গেছে। আকাশ দিশাকে পাশে বসিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে। কিছুটা পথ অতিক্রম করার পর লোকালয়ে আসতেই দিশা আকাশকে বলে,

–‘গাড়ি থামান।’

–‘গাড়ি থামাবো মানে?’

–‘আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে আপনি গাড়ি সাইড করেন।’

–‘আচ্ছা ওয়েট করছি।

আকাশ দিশার কথায় গাড়ি রাস্তার একপাশে সাইড করে দিশাকে বলে,

–‘হ্যাঁ বলো কি হয়েছে?’

–‘আপনি পিস্তল দিয়ে কি করেন? আর এটা আপনার কাছে এসেছে কি করে?’

–‘দিশা এটা আমি নিজের সিকিউরিটির জন্য ব্যবহার করি। আর পিস্তলটা আমার কাছে কি করে এসেছে সেটা কি ভাবে বোঝাবো তোমায়?’

–‘যেভাবে বুঝালে আমি বুঝবো।’

–‘দিশা একটা সময় আমি বেশ উশৃঙ্খল ছিলাম। দলবল করতাম। এসব ছোট খাটো মেশিন সব সময় আমায় কোমরেই থাকতো। তবে আমি প্রভার সাথে রিলেশনে যাওয়ার পর সব রকমের দলবল ছেড়ে দেই। কিন্তু একটা মেশিন নিজের সিকিউরিটির জন্য সঙ্গে রেখে দেই। আজকে এটার বলেই আমরা দু’জন বেঁচে এসেছি।’

–‘ও আচ্ছা আমি ভেবেছিলাম অন্য কিছু। তবে একটা কথা বলেন তো আমায়। আপনি যে নিজের সিকিউরিটির জন্য এই অবৈধ জিনিসটাকে সব সময় নিজের সঙ্গে রাখেন, পুলিশ যদি আপনাকে কখনো পাকড়াও করে এটার জন্য?’

–‘কোনো চান্স নেই।’

–‘মানে বুঝলাম না!’

–‘মানে টা হলো অতীতে আমি নিজের যেই নাম বানিয়েছি, সেই নাম শুনলে এখনো অনেকের হাওয়া ছুটে যায়। তুমি টেনশন করো না। পুলিশ কখনোই আমাকে ধরবে না।’

–‘ঠিক আছে পুলিশ না হয় আপনাকে এটার জন্য ধরলো না, কিন্তু এই যে একটু আগে পাঁচ-পাঁচটা মানুষকে উপরে পাঠিয়েছেন, সেটার জন্য যদি পুলিশ আপনাকে ধরে?’

–‘আরেহ পুলিশ এতোসব জানবে না। আর জানলেও আমি জায়গা মতন একটা ফোন দিলে সব থেমে যাবে।’

–‘দেখুন আমার খুব ভয় হচ্ছে। আমি আপনার ক্ষতি কখনোই মেনে নিতে পারবো না।’

–‘দিশা তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না। আমার উপরে ভরসা রাখো। আর এবার গাড়ি স্টার্ট করলাম বাসায় চলো।’

–‘ঠিক আছে চলেন।’

আকাশ আর দিশা গাড়ি স্টার্ট করে বাসায় চলে আসে। বাসায় আসার পর আকাশ দিশাকে খাটে বসিয়ে দেয়, এবং কোমর থেকে মেশিনটা বের করে বালিশের পাশে রেখে টাওয়্যাল কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে দিশাকে বলে,

–‘আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি। আমি ফ্রেশ হয়ে ফিরে আসলে তুমি যেও ফ্রেশ হতে। তারপর দু’জন মিলে রাতের খাবার খেতে বসবো।’

–‘আচ্ছা।’

আকাশ ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে যায়। মিনিট পাঁচেক পর ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দু কদম সামনে এগোতেই দিশা বালিশের পাশ থেকে পিস্তলটা হাতে নিয়ে তার দিকে নিশানা করে বলে,

–‘অনেক পাখনা গজিয়েছে তোর। এবার তোর ষোলোকলা পূর্ণ হয়েছে আকাশ। এখন তোকে মর/তে হবে আমার হাতে। ডাকাতের দলের মতন তোর ও সময় হয়ে এসেছে উপরে যাওয়ার।’

দিশার এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে আকাশের হাত থেকে টাওয়্যাল টা ফ্লোরে পড়ে যায়। দিশার আচরণে আকাশ এতোটাই অবাক হয়, যে সে দিশার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে….

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে