Friday, July 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1079



শীতল অনুভবে তুমি পর্ব-০৭

0

#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ৭

সামনে এগুতেই একজোড়া জ্বলানো আঁখি দেখতে পেল কুহু।যা তাসনির নজরও এড়ায় নি।সামনে আর কেউ নয় স্বয়ং ইশান দাঁড়িয়ে আছে রক্তচক্ষু নিয়ে।কুহু বরাবরের মতোই তার দৃষ্টি উপেক্ষা করল।এদিকে আদ্র এগিয়ে এসে বলল,

” আরে ইশান তুই?তুই কবে এলি?”

ইশান একটু থেমে জবাব দেয়,

” এখনই!”

” একটু আগে আসলে খেলতে পারতি!”

” হুম..!” কুহুর দিকে তাকিয়ে জবাব দিল ইশান।

এদিকে আদ্র দেখল ইশান কুহুর দিকে তাকিয়ে আছে।তা দেখে সে ভ্রু কুঁচকায়।সে বলে,

” ইশান!ওর দিকে কি দেখছিস?”

আদ্রর কথায় ইশানের হুশ ফেরে।সে নিজেকে সামলে বলল,

” কিছু না এমনি!”

এদিকে কুহু বলে উঠল,

” ভাইয়া!কেমন আছেন?”

কুহুর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ইশান।

” ভালো!”

” ভাবী কেমন আছে?আজকাল তো ভাবীকে দেখাই যায় না।কোথায় ভাবীর সাথে ঘুরাঘুরি করবেন তা-না আপনি এখানে ওখানে ঘুরছেন?ভাবীকে টাইম দিন।”

ইশান এসব শুনে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” আমি কি করব না করব সেটা আমিই জানি কাউকে এডভাইজ দিতে হবে না।”

” হুম!তবুও আপনার উদাসীনতা দেখেই বললাম।মাইন্ডে নিলে সরি।”

আদ্র এবার বলল,

” তোরা কি একে অপরকে চিনিস?”

ইশান কিছু বলার আগেই কুহু বলল,

” চিনি তো!অবশ্যই চিনি।ইনি আমার এক ভাই হন।”

তার মুখে এসব শুনে ইশানের রীতিমতো গা জ্বলছিল।যেন কুহু তাকে রাগানোর জন্যই এসব বলছে।আদ্র আবার বলল,

” ওহ্!আচ্ছা ঠিক আছে।তাহলে আজকের মতো বিদায়।পারলে আবার এসো।খেলা হবে!”

চোখ টিপ মেরে বলল।কুহু কটমট করে তাকাল।আদ্র যেন চুপসে গেল।তারপর কুহু আর তাসনি হাটা ধরল।আর এদিকে আদ্রও রাহিনদের নিয়ে চলে গেল।ইশান কে নিয়ে যেতে চাইলে সে বলে একটু পর আসছে।তারপর কুহুর পিছু নিল।এদিকে ব্যাপারটা তাসনি বুঝতে পারল।সে ইশানের উদ্দেশ্য টা জানার জন্য মরিয়া হয়ে উঠল।এসব ব্যাপারে তার ইন্টারেস্ট বেশি।তাই সে কুহুকে দোকানে যাওয়ার নাম করে একদিকে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল।আর কুহু একটা দোকানের পাশে গাছতলায় দাঁড়িয়ে রইল।আর এদিকে ইশান তাকে একা পেয়ে সুযোগ টা মিস করতে চাইল না।গিয়ে একেবারে তার মুখোমুখি দাঁড়াল।কুহু বেশ চমকে যায় এভাবে দাঁড়ানোতে।

” কি সমস্যা আপনি এখানে কি করছেন?” কুহু বিরক্তি নিয়ে বলে।

” আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই এসেছি।” ইশান সোজাসাপটা বলে দিল।

” ঠিক আছে আপনি থাকুন আমি যাচ্ছি!”

বলেই যেতে নিলেই ইশান তার বা হাত টান দিয়ে আগের জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেয়।কুহু এতে ভীষণ রেগে যায়।হালকা চেঁচিয়ে বলে,

” কি সমস্যা টা কি হ্যাঁ?”

” খুব তো ওই আদ্রর সাথে ডলাডলি করছিলে দেখছিলাম।ব্যাটিং শিখিয়ে দিচ্ছিল কত্ত আনন্দ!আমি একটু ধরেছি বলে গা জ্বলে যাচ্ছে?” ইশান গলা নামিয়ে বলল।

কুহু চোখ বড় বড় করে ফেলে।কারণ ইশান এসব জানল কি করে?অবশ্য তাদের খেলার সময় ইশানও উপস্থিত ছিল সেখানে।কুহু আর আদ্রকে একসাথে দেখে এক জায়গায় লুকিয়ে তাদের কার্যকলাপ দেখছিল।আর কেন জানি রাগে ফুসছিল।
কুহু এবার ইশান কে ধাক্কা দিয়ে বলল,

” তা-তে আপনার কি?বলুন আপনার কি এতে?খুব তো ছেড়ে দিয়েছেন আমায়!নিজের মর্ডান ওভার স্মার্ট বউয়ের সাথে রোমান্টিক মোমেন্ট কাটাচ্ছিলেন তা-ও আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে।সেসব কি ছিল?আর আপনি এখন আমার কেউ না।শুনেছেন?কেউ না আপনি আমার।সুতরাং আপনার কোন অধিকার নেই আমাকে কোন কাজে বাঁধা দেওয়ার।আমি কি করব না করব সেটা শুধুমাত্র আমি ডিসাইড করব।আপনি এ-তে কেন ইন্টারফেয়ার করছেন?আপনার কাছে নিজের বউ আছে।তার কাছে যান।আমার কেন বার বার হাত ধরছেন?বউ থাকতে পরনারীর হাত ধরতে,তার কোন কাজে বাঁধা দিতে বিবেকে বাঁধে না?”

ইশান অপলক তাকিয়ে থাকে কুহুর দিকে।তবু রিয়েলাইজ করতে পারছে না সে কি করেছে এবং কি করছে।এদিকে তাসনি এসব দেখে কিছুক্ষণ যাবৎ শুধু হেসেছে।তারপর এবার বেরিয়ে এলো।তারপর ইশান কে দেখে এমন ভাব করল যেন তাকে আগে এখানে দেখেই নি।

” আরে ভাইয়া আপনি?আপনি এখানে কি করছেন?আর এভাবে কুহু আপুর সামনে কেন দাঁড়িয়ে আছেন?”

ইশান তাসনির দিকে কটমট করে তাকাল।এই মেয়েটা সুযোগ পেলেই তাকে কথার মাধ্যমে অপমান করে।তাসনি আবার বলল,

” কি?ওমন দাঁত চেপে কি দেখছেন?দাঁত ভেঙে যাবে তো!”

ইশান কিছু না বলে একি জায়গায় খাড়া হয়ে রইল।তাসনি আর কিছু না বলে কুহুর হাত ধরে টেনে নিতে গেলেই ইশান থামিয়ে দেয়।তাসনি তা দেখে ভ্রু কিঞ্চিত কুঁচকিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল,

” কি সমস্যা?”

ইশান বলল,

” আমি কুহুর সাথে কথা বলছি।ওকে এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছো কেন?পরিবার কি এই শিক্ষা দেয় নি যে বড়দের সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয়?”

তাসনি কিছু বলার আগেই কুহু জোরে বলে উঠল,

” জাস্ট শাট ইউর মাউথ মি. ইশান!আমার পরিবার নিয়ে কথা তুলার আপনি কে?সাহস কত আমার সামনে রহমান বংশের শিক্ষা নিয়ে কথা তুলছেন?”

ইশান বলল,

” তো বাচ্চা মেয়ে এসব করছে কি করে?শুনো!তুমি যাও!আমার কুহুর সাথে কথা আছে।” তাসনিকে উদ্দেশ্য করে বলল ইশান।

” কেন?আমি যাব কেন?আমার সামনেই বলুন।আমি যাচ্ছি না।”

ইশান বেশ রেগে যায়,

” আমাদের পার্সোনাল কথার মাঝে তুমি কি করবে?”

তাসনি তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,

” লাইক সিরিয়াসলি ইশান ভাইয়া?বউ থাকতে অন্য কোন মেয়ের সাথে পার্সোনাল কথা থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না।বউ থাকতে এভাবে কোন মেয়ের হাত ধরতে লজ্জা করে না?লুজ ক্যারেক্টার কোথাকার!”

বলেই কুহুর হাত ধরে টেনে আনত্ব গেলে আবারো ইশান থামিয়ে দেয়।তাসনি এবার রেগে যায়।

” ছাড়ুন নয়তো আশেপাশের সবার কাছে প্রমাণ করব আপনি কেমন!”

” ঠিক আছে করো!”

” আচ্ছা?ওকে!”

বলেই চিৎকার করতে নিলেই ইশান তার মুখ চেঁপে ধরে।সে ভেবেছিল এমনি তাকে থ্রেট দিচ্ছে।কিন্তু সত্যি চিল্লাবে তা তার ধারণার বাহিরে ছিল।তাসনি এক ঝটকায় ইশানের হাত সরিয়ে কুহুকে টেনে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।যাওয়ার আগে চোখের ভাষায় বলল,

” আপুর পিছু নিলে ভালো হবে না।”

ইশান দাঁতে দাঁত চেঁপে সেই জায়গা প্রস্থান করে।এ ছাড়া কোন উপায়ও তো নেই।
____________

” একে তো আমার ইচ্ছে করছে নাসায় পাঠিয়ে দিই যাতে একে স্পেসে ছেড়ে দিয়ে আসে আর সে সেখানেই মরে যায়।” তাসনি রাগে গজগজ করতে করতে বলল।

” হয়েছে টা কি বলবি তো।” রুবিনা বলল।

” আরে ওই শয়তানটা আজ আবারো আমার পিছু নিয়েছিল।আর উল্টাপাল্টা বকছিল।” কুহু বলল।

” ওকে একবার উত্তম-মধ্যম দেওয়া উচিত!” রুবিনা বলল।

” বাট হাউ!” তাসনি বলল।

” আই ডোন্ট নো!” রুবিনা হেসে বলল।

” ধ্যাত!” তাসনি বিরক্ত হয়।

” আরে তুই তো আমাদের বুদ্ধির মাস্টার!তুই ভাব!” রুবিনা বলল।

” হুম!”

তারপর কুহু বলে উঠল,

” দরকার নেই এসবের!ও নিজের মতই থাক।কিছুই করতে হবে না।”

তাসনি আর রুবিনা ভ্রু কুঁচকায়।তাসনি বলল,

” তুমি এখনো ওই বাম্বেল টাকে ভালোবাসো?”

কুহু দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

” হয়তো বা!”

রুবিনা উঠে কুহুর মাথায় বারি দিয়ে বলল,

” বেশি কথা বলিস না!ও তোকে ছেড়ে দিল আর তুই ওর চিন্তা করছিস?শোন!আর যদি ওর প্রতি সহানুভূতি দেখি তো তোকেই আমি সাইজ করব।”

কুহু কিছু বলে না।
_________________

” ইশানের সাথে তোমার আসল সম্পর্ক কি?”

ভার্সিটির মাঠে বেঞ্চিতে বসে প্রিয় লেখকের উপন্যাস পড়ছিল কুহু।খোলা চুলগুলো মৃদু বাতাসে উড়াউড়ি করছে।উইথ-আউট মেক-আপ তার ফর্সা নিষ্পাপ মুখ খানা অপরুপ লাগছে।ব্যাগটা একপাশে রেখে বইয়ে ডুবে আছে।হঠাৎ কেউ তার পাশে বসে উপরোক্ত কথাটা ছুড়ে দিল।কুহু মাথা তুলে পাশে তাকাল।আদ্র সামনের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।কুহু ভ্রু কুঁচকায়।

” ম,মানে?”

আদ্র এবার তার দিকে তাকিয়ে বলল,

” ইশানের সাথে আসলে তোমার সম্পর্ক কি?”

কুহু কি বলবে ভেবে পায় না।আদ্র হঠাৎ এসব কেন বলছে?কুহু ঢোক গিলে বলল,

” আপনি হঠাৎ এসব কেন বলছেন?”

” কাল আমি সবই দেখেছি!”

” ক,কিহ্!”

ফ্ল্যাশব্যাক,,,,,,

আদ্র ইশান কে আসতে বললে সে একটু পর আসছে বলে দাঁড়িয়ে রইল।আদ্রর একটু সন্দেহ হয়।তাই সে বাকিদের বিদায় দিয়ে ইশানের পিছুপিছু যেতে থাকে।তখনই দেখে ইশান কুহুকে আটকে তার সাথে কথা বলছে।আর কুহু
রেগে কথা বলছে।তখন তাসনি এসে কুহুকে নিয়ে যেতে নিলে ইশান তাকে ধরে ফেলে।যা দেখে আদ্রর মনের গহীনে আরো কিছু সন্দেহ উঁকি দেয়।তারপর দেখে তাসনি তার সাথে আরো রেগে কথা বলছে আর চিল্লাতে নিলে তার মুখ চেঁপে ধরেছে।আর তাসনি রেগে কুহুকে নিয়ে চলে যায়।এসব দেখে আদ্র বুঝতে পারল তাদের মধ্যে কিছু চলছে।

” এবার বলবে?কি চলছে তোমাদের মধ্যে?”

” দ,,দেখুন ভাইয়া,,,,এসব আমি আপনাকে বলতে পারব না।” কুহু আমতা আমতা করে বলল।

” বলবে না?ঠিক আছে!”

তারপর আদ্র তার মোবাইল টা বের করল।তারপর কিছুক্ষণ টেপাটেপি করে কিছু একটা কুহুকে দেখাল।কুহু যা দেখে তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।কারণ…..!
কারণ কাল যখন কুহু লাফাচ্ছিল তখন আদ্র যে ছবি গুলো তুলেছিল সেগুলাই।যেখানে কুহুর বাচ্চামো প্রকাশ পাচ্ছে।আদ্র বাঁকা হেসে বলল,

” বলবে?নাকি এটা ভাইরাল করে দেব?”

” না না প্লিজ প্লিজ!এমন করবেন না ভাইয়া!প্লিজ!”

” তাহলে বলো সব আমাকে!”

” আ,,,আচ্ছা!আমি বলছি এখান থেকে চলুন।”

তারপর কুহু ব্যাগ আর বইটি নিয়ে সবার থেকে দূরের একটা বেঞ্চিতে গিয়ে বসল।সাথে আদ্রও।এখানে তেমন কেউ নেই।কুহু এক কোণে বসে রইল।

” বলো এবার!”

কুহু সামনে শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার আর ইশানের সব ব্যাপারে ব্যক্ত করতে শুরু করে।আর আদ্র এই ফাঁকে তার উপন্যাসের বইটা নিয়ে পড়তে পড়তে কুহুর কথা শ্রবণ করতে থাকে।

কুহু আর ইশানের দেখা হয়েছিল অনার্সের প্রথম দিকে।নতুন ভার্সিটিতে ট্রান্সফার হয়েছিল।তখন ক্লাসে সে তেমন কারো সাথে কথা বলতো না ইকরা ছাড়া।সে তো ক্লাস টেন থেকেই তার ফ্রেন্ড ছিল যা গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে।আর ইকরা কিছুদিনের জন্য না আসলে কুহু একা হয়ে পড়ে
সে কারো সাথে কথা না বলায় কেউ তার সাথে মিশতো না।কিন্তু একটা ছেলে বরাবরই সব সময় তার দিকে লক্ষ্য রাখতো।তার দিকে তাকিয়ে থাকতো।তাকে ফলো করতো।ছেলেটা আর কেউ নয় স্বয়ং ইশান।ইকরা প্রায় ১৫ দিন ভার্সিটি আসে নি তার নানু মারা যাওয়ায় সে অনেক ভেঙে পড়েছিল আর তা নিয়ে অনেক ঝামেলাও হয়েছিল তাই সে অনুপস্থিত ছিল।যার দরুণ কুহুও আসতো,ক্লাস করে,বই পড়ে সময় কাটিয়ে চলে যেতো।একদিন ইশান কুহুর পাশেই বসে পড়ে।কুহু প্রথমে চমকালেও পরে কিছু বলে না।তারপর নিজে গল্পের বই পড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।প্রথম কয়েকটা ক্লাস তাদের মাঝে কোন কথা হয় না।শেষের ক্লাসের সময় ইশান সাহস করে বলে,

” হাই!”

কুহু বইয়ে চোখ রেখে বলল,

” বাই!”

ইশান ভ্রু কুঁচকে বলে,

” হোয়াট!”

” নট!”

” কি বলো না বলো এসব?কিছুই বুঝি না।”

” না বুঝাই শ্রেয়!”

বলেই আবারো পড়ায় মন দিল কুহু।ইশান কিছুক্ষণ পর বলল,

” আচ্ছা তুমি এমন কেন?”

কুহু আবারো একি অবস্থায় বলল,

” কেমন আমি?”

” এই যে!কারো সাথে কথা বলো না,বললেও তিঁতা!”

কুহু চোখ তুলে তাকিয়ে মুখ কুঁচকে বলল,

” তিতা?হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট টু মিন বাই তিতা?”

” নাথিং!জাস্ট লিসেন!আই ওয়ান্ট ইউ!”

কুহু কিছুই বুঝে না।

” হোয়াট!”

” কিছু না।তো এটিচিউড ওয়ালি!তোমার নাম টা বলা যাবে?”

কুহু বইয়ে চোখ দেয়,

” ভি.আই.পি টিকিট লাগবে।”

” সেটা কি?”

কুহু বইটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বেঞ্চ থেকে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় ইশানের দিকে ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে বলল,

” সেটা নাহয় আপনি নিজেই ইনভেস্ট করে জেনে নিবেন।”

বলেই চলে গেল।আর ইশান ভাবতে থাকে,কি হতে পারে?

চলবে,,,,,,

শীতল অনুভবে তুমি পর্ব-০৬

0

#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ৬

” একটু শান্তিতে থাকতে চাইছি তা-ও দেবে না?কি চাও তুমি?জীবনসঙ্গী তো বেছেই নিয়েছো অন্য কাউকে তবে আমার কাছে কি?তুমি লাইফে এগুতে পারো আমি পারিনা?হ্যাঁ কেন পারিনা?অবশ্যই আমি পারি।দেখিয়ে দেব!আপনার চেয়েও এগিয়ে যাবো মি. অয়ন রশিদ ইশান!বাঁধা হয়ে আসলে তার স্টেপটা এমন ভাবে নেব যে আপনার জীবনটাই চুরমুর হয়ে যাবে মি. ইশান। ”

একা একাই বিড়বিড় করছিল কুহু।পড়ন্ত বিকেলের হালকা হলুদ লাল মেশানো হেলে যাওয়া রোদ্দুরে স্নিগ্ধ বাতাসে মনের কথা তার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করছিল।তার রোপণ করা প্রিয় বৃক্ষগুলোকেই সে তার নিজের সাথী ভাবে।এটা একটা ভালো পন্থা।মানুষদের সাথে শেয়ার করতে না পারলে রবের সৃষ্ট বৃক্ষের সাথে শেয়ার করাটা সবচেয়ে সুন্দর এবং ভালো উপায়।হঠাৎ কর্ণকুহরে একটা মিষ্টি ভোলা কণ্ঠ ভেসে আসে।

” একা একাই বিড়বিড় করবা নাকি আমাকেও কিছু শুনাবা? ”

তাসনি কুহুর পাশে এসে বসল।তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে ছুড়ে দিল উপরোক্ত বাণীটি।কুহু স্লান হাসল।

” কি শুনবি আর? ”

” কেন কি আবার শুনব?তুমি গাছেদের সাথে সব বলতে পারো আমায় বললে কি তোমার জামাই মরে যাবে? ”

” তাসনির বাচ্চা! ”

” উহু!এটা বললে ভুল হবে।তাসনির বাচ্চার মা হবে। ”

” আল্লাহ্ গো! ”

” হুম!তা কি বলছিলে? ”

” কি আর!ওই ইশান তো আমার পিছুই ছাড়ছে না। ”

” ওই কটবেল আবার এসেছে?কি করেছে? ”

কুহু সকালে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা ব্যক্ত করল।

” কি ক্যারেক্টার লেস রে বইন!এর মতো ছ্যাঁচড়া দুনিয়ায় ৩ টা দেখিনি।কিন্তু ওর এসব করার কারণ টা কি?ওর তো আর তোমায় ভালো লাগে না।তাহলে? ”

” জানিনা কি চায় এ! ”
_________________

মন টাকে হালকা ফ্রেশ করা দরকার ভেবে আজ তাসনিকে নিয়ে ঘুরতে যাবে কুহু।রুবিনাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু সে যাবে না।মোবাইল তো আছেই।নিরব আর শুভ যেতে চেয়েছিল কিন্তু টিউটর আসবে বিধায় যায় নি।
বিকেলের দিকে রেডি হয়ে বের হলো।একটা স্কুল মাঠে গেল।বিশাল বড় সুন্দর ঘাস যুক্ত মাঠ।এক প্রান্তে শহীদ মিনার।তার পাশে স্কুল কেম্পাস।আর সামনে ফুটবল আর ক্রিকেট খেলার মাঠ।দুজন ঝালমুড়ি নিয়ে শহীদ মিনারের সিড়িতে বসে ক্রিকেট খেলা দেখতে থাকে।

” আপু!কি সুন্দর খেলছে!চলো আমরাও খেলি! ”

তাসনি একটু পর বলে উঠল।অবশ্য কুহুরও মন চাইছে কিন্তু এত বড় মেয়ে হয়ে ছেলেদের সাথে খেলাটা ভালো দেখাবে না ভেবে বলল,

” নারে!তুই যা!আমি খেললে লোকে কি বলবে? ”

তাসনি মুখ ফুলিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,

” ধুর!যাও খেলবো না।তুমি আসো নাহলে যাবো না। ”

কুহু কি করবে বুঝতে পারে না।কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই হঠাৎ তাসনি হালকা চিল্লিয়ে উঠে,

” এক্টর ভাইয়া! ”

তার বলাবলি কুহু সামনে তাকায়।তাকিয়েই হা!কারণ আদ্র আর তার বন্ধুরা স্কুলের মাঠে প্রবেশ করছে ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম নিয়ে।তারা কুহু আর তাসনিকে খেয়াল করেনি।

” এক্টর ভাইয়া খেলতে এসেছে!ওয়াও! ”

” চুপ!বেশি কথা বলিস না তো! ”

” আরে কয়েকটা ছবি তো নিয়ে নিই। ”

বলেই কুহুর মোবাইল টা নিয়ে তাদের কয়েকটা ছবি ক্যাপচার করে নিল।কুহু বেশ বিরক্ত হয়।এই মেয়েটা খালি আদ্রকে নিয়েই এক্সাইটেড বরাবরের মতো।তারপর দুজন তাদের খেলা দেখতে থাকে।তাদের দল বেশ ভালোই খেলছে বিপরীত দলের বিরুদ্ধে।হঠাৎ ঘটল বিচিত্র একটা ঘটনা।আদ্রর এক ছক্কায় বল টা গিয়ে পড়ল সোজা কুহু আর তাসনির মাঝখানে অবশিষ্ট ফাঁকা জায়গায়।তা-তে দুজনই বেশ ভয় পেয়ে যায়।আরেকটু হলেই দুজনের থেকে একজনের মাথা ফাটতো।এতে কুহু বেশ রেগে যায়।ওদিকে আদ্র তাদের চেহারা দেখতে পায় নি।দূর থেকে চিল্লিয়ে বলল,

” আপু লাগে নি তো?বল টা এদিকে পাস করুন। ”

কুহু আরো রেগে যায়।এদিকে তাসনি আদ্রর কথা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।কুহু এবার বল টা নিয়ে তাদের দিকে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গেল।এগিয়ে যেতেই আদ্র কুহুকে দেখে তার ভ্রু আপনাআপনি কুঁচকে গেল।কুহু আদ্রর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,

” কি?খেলার সময় কি মন প্লুটোতে রেখে আসেন?প্রবলেম টা কি হ্যাঁ?আমার মাথা ফাঁটলে সেলাই আপনি করে দিতেন? ”

আদ্র চমকে গিয়ে কিছুক্ষণ থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর আমতা আমতা করে বলল,

” আব…আমি কি জানতাম নাকি কোন পেত্নী ওখানে বসে আছে? ”

কুহু আরো বেশি রেগে যায়।চেঁচিয়ে বলল,

” হোয়াট!হোয়াট ডিড ইউ সেই?আমি পেত্নী?হাউ ডেয়ার ইউ হা?জার্ক! ”

আদ্র দেখল পরিস্থিতি ঠিক না।কুহু সবার সামনে হুদাই তাকে অপমান করে ছাড়বে।তাই বলে উঠল,

” ওকে ওকে সরি সরি আন্টি আই মিন আপু। ”

” আমি তোর আপু লাগি? ” দাঁতে দাঁত চেপে বলল কুহু।

” আন,,ন,না না আপু না আপু না।ত,তোমার নাম কি যেন..”

তাসনি বলে উঠে,

” কুহু! ”

আদ্র বলল,

” আহ্,,,হ্যাঁ হ্যাঁ কুহু!মাফ করে দাও কুহু!সরি ভেরি সরি।নাও গিভ ইট ব্যাক। ”

কুহু হাতের বলের দিকে তাকাল।তারপর হেসে বলল,

” নো ওয়ে!একটা গান শুনান।তারপর দিব। ”

আদ্র কি বলবে বুঝতে পারে না।তারপর মাথায় একটা শয়তানী বুদ্ধি খেলে গেল।বাঁকা হেসে কুহুর দিকে এগিয়ে গেল।তার দিকে ঝুঁকে বলল,

” আমার রাতের আকাশে
তুমি যেন সন্ধ্যাতারা
প্রভাত হিমেল বাতাসে
তুমি যেন রজনীগন্ধা সুবাস
আমার এ ভালোবাসা
মানে না যে কোনও বাঁধা
প্রেয়সী তুমি সবটুকু আমার। “❤️

এভাবে ঝুঁকে যাওয়াতে কুহু বেশ ভড়কে যায়।আর তার এমন গান শুনে আরো অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।এবার তার বন্ধুরা মানে ইহান,আবিদ,রাহিন আর ফারাবী আর এদিকে তাসনি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে থাকে।তারপর তারা তালি দিতে থাকে।আর তাসনি তালি দিতে দিতে বলে,

” ওয়াও ভাইয়া ওয়াও!জাস্ট ওয়াও!কি করে পারেন এমন এক্ট করতে?আমি বিলিভ করতে পারছি না। ”

এদিকে কুহু ভয়ে প্রায় শেষ।আদ্র তাদের কথা শুনে কুহুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সরে আসে।কুহু হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।আদ্র বলল,

” গান তো শুনালাম।এবার তো দাও। ”

কুহু ভ্রু কুঁচকে কিছু না বলে বলটা আদ্রের দিকে ছুড়ে মারে প্রকট রাগে।আদ্র দক্ষ হওয়ায় তা ঠিক’ই ধরে ফেলে।তাসনি বলে উঠে,

” ভাইয়া ভাইয়া! ”

ইহান বলল,

” হ্যাঁ বলো পুঁচকি! ”

” পুঁচকি? ” তাসনি ভ্রু কুঁচকে বলে।তারপর সেটা আমলে না নিয়ে আবার বলল,

” আ..আমি আপনাদের সাথে খেলতে চাই।প্লিজ প্লিজ ভাইয়া। ”

ফারাবী বলল,

” তো কি হলো।ঠিক আছে।আসো। ”

” ইয়েস! ”

তাসনি খুশিতে আত্মহারা।আদ্র হেসে বলল,

” আচ্ছা তোমার নাম কি যেন? ”

” তাসনি! ”

” ওয়াও প্রেটি নেইম! ”

এদিকে কুহু কিছু না বলে দাঁতে দাঁত চেপে শহীদ মিনারের সিড়িতে আবার বসে পড়ল।আদ্র তা দেখে আবারো হাসল।এই মেয়েটার রাগী মুখটা তার খুব’ই ভালো লাগে।কুহু মুখ ফুলিয়ে বসে রইল।তারপর বাকিরা খেলা শুরু করল।তাসনির খুশি দেখে কে?কুহুর রাগ কিছুক্ষণের মধ্যেই উবে গেল।তাদের হাসাহাসি,খেলা দেখে পরক্ষণের মধ্যে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে।তাদের দেখে খুব করে মন চাইছে খেলতে।কিন্তু সেই ইচ্ছাটা বলি দিল।কিন্তু দূর থেকে কিছুক্ষণ পর তাসনি তাকে ইশারা করে ডাকল,

” আপু!আসো না খেলতে! ”

কুহু ইশারা করে বলে,

” না!তোরা খেল। ”

তাসনি এবার কুহুর দিকে এগিয়ে এলো।তারপর তার হাত ধরে টানতে টানতে বলল,

” কি হলো আপু আসো না প্লিজ! ”

” আ..আরে কি করছিস ছাড়!তোরা খেল! ”

” নাহ্ তুমিও আসো প্লিজ!আমি জানি তুমি খেলতে চাও কিন্তু পারছো না।প্লিজ আসো। ”

দূর থেকে আদ্র তাসনিকে ডাকল,

” তাসনি!এসো এখানে দাঁড়িয়ে যাও। ”

” আসছি! ”

বলেই কুহুকে মানাতে লাগল কিন্তু কুহু নারাজ।এদিকে অনেক্ষণ হয়ে যাওয়া তাসনির দিকে তাকিয়ে দেখল তাসনি কুহুকে টানছে।তাই আদ্র এগিয়ে তাদের দিকে এলো।

” কি হয়েছে? ” আদ্র প্রশ্ন ছুড়ে দিল।

তাসনি বলল,

” ভাইয়া দেখুন না।আপুকে খেলতে ডাকছি কিন্তু আসছেনা। ”

আদ্র কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল,

” তো কি হলো আসো!ক্রিকেট খেলার তুলনা হয় নাকি?এসো ভালো লাগবে। ”

” আরে নাহ্ আপনারা খেলুন।আমি খেলবো না। ”

” আরে একবার খেলেই দেখো।যদি ভালো না লাগে তো আমাকে যা খুশি করো।এভাবে বসে বসে দেখে কি হবে?চলো! ”

তাদের কথা শুনে কুহু আর বসে থাকতে পারল না।এমনিতে খেলতে মন চাইছে তার উপর তাদের জোর করা দেখে আগ্রহ আর দমাতে না পেরে উঠে দাঁড়াল।কিন্তু কুহু খেলতে পারছে না।তা দেখে তাসনি বলল,

” আপু তুমি তো পারছো না? ”

” হ্যাঁ একচুয়ালি প্রায় ৭-৮ বছর ধরেই তো খেলছি না।তাই পারছি না। ”

” এখন কি করবে? ”

আদ্র বলল,

” আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।এসো! ”

” আপনি? ”

” হ্যাঁ সমস্যা আছে?ঠিক আছে যাও! ”

” আরে না না।শিখবো শিখবো। ”

তারপর আর কি!কুহু ব্যাট ধরলে আদ্র তাকে বাচ্চার মতো ব্যাটিং শিখাতে থাকে।তাসনি যা দেখে মুখ টিপে জাসে সাথে বাকিরাও।কিছুক্ষণের মধ্যেই কুহু ব্যাটিং শিখে যায়।আর লাফাতে লাফাতে খেলতে থাকে।আদ্র তার বাচ্চামো দেখে ফটাফট কিছু ছবি তুলে ফেলে যা দিয়ে পরে তাকে জ্বালাতে পারে।
এই দিন’টা সত্যিই কুহুর জন্য স্মরনীয়।বেশ ভালোই কেটেছে যা সে কখনোই ভুলবে না।অনেক আনন্দ পেয়েছে।তারপর ফিরে যাওয়ার সময় আদ্রকে একটা মুচকি হাসি উপহার দিয়ে বলল,

” ধন্যবাদ!আজ আপনার জন্য অনেক আনন্দ করতে পারলাম। ”

প্রতিউত্তরে আদ্রও একটা মোহনীয় হাসি উপহার দেয়।

চলবে,,,,

শীতল অনুভবে তুমি পর্ব-০৫

0

#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ৫

” একেতো ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন তার উপর এভাবে হা করে কি দেখছেন হা? ” প্রচন্ড ক্ষোভে দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে বলল কুহু।

আদ্র কি বলবে বুঝতে পারেনা।

” এই!আমি যেখানেই যাই তুমি কোত্থেকে চলে আসো? ”

” প্লুটো থেকে আসি বুঝেছেন? ”

” স্টপ দিস!এখানে কি করছো তুমি? ”

” কেন দেখতে পাচ্ছেন না কি করছি?আপনি এখানে কি করছেন শুনি? ”

তাদের কথার মাঝেই ইকরা গেটের বাহিরে বেরিয়ে এলো।সে এতক্ষণ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল।কুহুকে আসতে দেখে যেই না হাত নাড়িয়ে ডাকতে যাবে,অমনি কুহু আর আদ্রর ধাক্কা।যা দেখে সে মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর তাদের দুজনের ঝগড়া দেখে দ্রুত নেমে আসে।এসেই কুহুর মুখ চেপে ধরে।তারপর আদ্রকে উদ্দেশ্যে করে বলল,

” ইয়ে ভাইয়া!আসলে ও একটু এমনই।কিছু মনে করবেন না। ”

আদ্র বলল,

” হুম দেখেই বুঝা যাচ্ছে তারছেড়া। ”

কুহু ইকরার হাত সরিয়ে গর্জিয়ে বলল,

” এই কি বললেন আপনি?আবার বলুন তো? ”

” কেন বয়রা নাকি তুমি? ”

” ইউ রাবিশ! ”

ইকরা আবার কুহুর মুখ চেঁপে ধরে,

” চুপ চুপ!ভ,ভাইয়া আপনি যান।ওকে আমি দেখছি। ”

” হুম..দেখে রাখিস।কোন সময় উড়ে এন্ড্রোমিডায় চলে যায়। ”

বলেই হেসে চলে গেল।কুহু এক ঝটকায় ইকরার হাত সরিয়ে বলল,

” কি হ্যাঁ কি?এভাবে চেপে ধরে ছিলি কেন? ”

” তুই আদ্র ভাইয়াকে এভাবে উল্টাপাল্টা বকছিস তো ধরব না? ”

” কেন কি হয়েছে?উনি কোন গ্রহের রাজা যে উনাকে বকলে পৃথিবী উল্টে যাবে? ”

” আরে…পাগল হলি নাকি?চল চল এখান থেকে। ”

বলেই কুহুর হাত ধরে টানতে টানতে সিড়ি বেয়ে ইকরার ঘরে নিয়ে গেল।তারপর ইকরার মায়ের সাথে টুকটাক কথা বলে নাস্তা করে রুমে আসল দুজন।

” এবার বল।ওই কি নাম যেন?হ্যাঁ হ্যাঁ ভাদ্র!উনি তোকে তুই করে বলছিল কেন?আর উনাকে বকলে কি এমন হবে?হুহ্! ”

” আরে আরে কাম ডাউন সিস!এট ফার্স্ট ইট’স আদ্র নট ভাদ্র।এন্ড সেকন্ড উনি আমার ভাইয়ের বন্ধু। ”

” হোয়াট!তোর ভাই এমন তেঁতোটাকে বন্ধু বানালো।কি বাজে কি বাজে! ”

” চুপ!বেশি কথা বলিস না।উনি খুব ভালো মানুষ জানিস? ”

” এহ্!করলার জুস।যত্তসব! ”

” আর উনার নামে দয়া করে এখানে কিছু বলিস না।তার হোস্টেল এখানেই। ”

” হোস্টেল! ” ভ্রু কুঁচকে বলল কুহু।

” কেন? ”

” ব্যাটা হোস্টেলে থাকে?হুহ্!এমন ভাব নেয় যেন বড়লোক বাপের ছেলে। ”

” বড়লোক বাপেরই তো। ”

” মানে? ”

” এতদিন ইউ এস ছিল।এসেছে কিছুদিন হলো। ”

” ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করতো আমার মাথায় কিছু আসছেনা। ”

ইকরা বিছানায় বসে বলল,

” উনি ছোট থেকে ইউ এস ছিলেন।প্রায় ২০ বছর ধরে।এক আত্মীয়র কাছে।এর মধ্যে প্রায় অনেক বার এসেছে।কিন্তু তার বাড়িতে যায় নি। ”

” কেন? ”

” এটা সেই জানে।এবার পার্মানেন্টলি চলে এসেছে। মাস্টার্স এই বছর শেষ হবে তার। ”

” ওহ্!ভালো ভালো।ব্যাটা এত তেঁতো কেন? ”

” কি বলিস এগুলা? ”

” যাক বাদ দে। ”
_____________

” এই ভাদ্র ব্যাটার রহস্য বুঝতে পারছিনা। ” কুহু পায়চারি করতে করতে বলল।

সামনেই বিছানায় তাসনি আর রুবিনা বসে আছে।তাসনি বইয়ে ডুবে আছে আর রুবিনা মোবাইলে।কুহুর কথা শুনে মাথা তুলে তাকাল।তাসনি ভ্রু কুঁচকে বলল,

” কোন ভাদ্রের কথা বলছো? ”

” আরে তোর ওই এক্টর ভাই। ”

তাসনি লাফিয়ে উঠে,

” এক্টর ভাই?তার নাম ভাদ্র? ”

এত কিছুর মাঝে রুবিনা ভ্রু কুঁচকে বলে,

” ভাদ্র,এক্টর ভাই এসব কি? ”

তাসনি আর কুহু রুবিনার দিকে তাকায়।কুহু চুপ করে থাকলেও তাসনি সব গরগর করে বলে দিল।

” ওয়াও!ইশ..একশন টা দেখা উচিত ছিল।ভিডিও আনতে পারলি না? ” রুবিনা বলল।

” ধুর আমি জানতাম নাকি?এক্সিডেন্টলি ঘটে গেছে। ” তাসনি বলল।

” ধ্যাত চুপ করো তো। ”

আর কিছু বলার আগেই রুবিনার ডাক পড়ল।রুবিনা দিল দৌড়।তা দেখেই কুহু আর তাসনি হেসে কুটিকুটি।তাসনি আবার বলল,

” আপু বলো না।তার নাম ভাদ্র? ”

” ধুর!আদ্র!আমি ভাদ্র বলছি আরকি। ”

” ওয়াও!যেমন ফেস,তেমন নাম তেমন একশন। ”

” এনাফ!আর ওর সাফাই গাইলে তোর গলা টিপব আমি। ”

” কেন কেন?এমন করো কেন?ওই ভাইয়াটা কি তোমার জামাইকে মেরে ফেলেছে নাকি? ”

” তাসনি! ”

চিল্লিয়ে বলে কুহু।তাসনি পরিস্থিতি ঠিক না দেখে হাসতে হাসতে দিল দৌড়।
____________

নিয়ম করে আজও ভার্সিটি যেতে হচ্ছে কুহুকে।ভার্সিটিতে পৌছাতেই চোখে পড়ল এক দলকে।আর তাতেই আটকে যায় তার আঁখিযুগল।২ জন মেয়ে আর ৩ জন ছেলে।যার মাঝে আদ্রও আছে।হেসে হেসে কথা বলছে তারা একে অপরের সাথে।কুহুর চোখ আদ্রতেই আটকে যায়।কালো টিশার্ট,কালো জিন্স।ফর্সা গায়ে রঙ টা বেশ ভালো মানিয়েছে।সাইড করে খাড়া করে রাখা হালকা কালো-বাদামী চুল।গোলাপের পাপড়ির ন্যায় অধরদ্বয়।হালকা নীল তার আঁখি দুটির মণি।আনমনে কিছুক্ষণ সেদিকেই তাকিয়ে থাকে কুহু।হঠাৎ একটা বিচিত্র দৃশ্য দেখতে যা দেখে তার মস্তিষ্ক উলটপালট বিচরণ করতে থাকে।যা সে মেনে নিতে পারছেনা।
কারণ ইশান একটু আগেই আদ্রদের কাছে এসে বসেছে।কুহু বুঝতে পারছেনা আদ্রর সাথে ইশানের কি সম্পর্ক।আর সে’দিন বিয়েতেই বা কি করছিল সে?কুহু পরক্ষণে ভাবল বন্ধুও তো হতে পারে।তাই সময় নষ্ট না করে ক্লাসে চলে গেল।

” কিরে কুহু!আজ কথা বলছিস না যে?চুপচাপ কেন?ওইদিন কি বলেছিলাম মনে নেই? ” পাশ থেকে ইকরা বলল।

” নারে!এইজন্য না। ” কুহু বলল।

” তাহলে? ”

” আসলে….আজ ইশানকে দেখলাম তোর ওই ভাদ্র ভাইয়ার সাথে বসে আছে।তাদের মাঝে রিলেশন কি সেটাই বুঝছিনা। ”

” ওহ্ এই ব্যাপার?জিজ্ঞেস করে নিবি। ”

” এহ্ আমি কেন করব? ”

” বারে!তুই জানবি তো তুইই তো জিজ্ঞাস করবি তাই না? ”

” আমি পারব না। ” সামনের দিকে ফিরে বলে কুহু।

” আচ্ছা ঠিক আছে এসব পরে বলিস। ”

ক্লাস শেষে ইকরা একটু ঘুরে এসে বলল,

” তোর ওই ইশান আদ্র ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড। ”

” হোয়াট! ” লাফিয়ে উঠে কুহু।

” হুম!এটা শুনে আমিও ভালোই চমকে গেছি।এর সাথেই আদ্র ভাইয়ার ভালো রিলেশন? ”

” যাক বাদ দে। ”
____________

ইকরার থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটির গেট দিয়ে বেরুতেই কেউ তার হাত টেনে ধরল।কুহু প্রথমে বিব্রত হলেও অজ্ঞাত ব্যক্তিটাকে দেখে ভীষণ রেগে যায়।এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নেয়।

” হোয়াট ইজ দিস ইশান? ”

” কেন?আমি হাত ধরলে কি সমস্যা?অন্য কারো কোলে উঠলে তো তোমার কিছু হয় না? ”

কুহু আরো রেগে যায়।

” কার কোলে উঠেছি আমি?আর আমার পার্সোনাল বিষয় নিয়ে কথা বলার আপনি কে? ”

” তোমাকে যে কেউ টাচ করতে পারে তাহলে আমি কেন পারব না? ”

” কেন পারবেন আপনি?আপনার কি বউ নেই?যান তাকে গিয়ে টাচ করুন আমার কাছে কি?এভাবে আমার অনুমতি ছাড়া আমার হাত ধরছেন সাহসের প্রশংসা করতে হয় তো!শুনুন!ফার্দার যদি এমন অসভ্যতা করেছেন তো আমার চেয়ে ব্যাড কেউ হবে না মি. অয়ন রশিদ ইশান!আই উড লাইক টু রিমাইন্ড ইউ দ্যাট আই এম নিলাদ্রি রহমান কুহু।নট অনলি কুহু।আমি আগের কুহু নই যে আপনার যেটা করবেন সেটাই মেনে নেব।ইট’স আহান রহমান’স ডটার।নট ইউর গার্লফ্রেন্ড অর সার্ভেন্ট!সো স্টে এওয়ে ফ্রম মি। ”

বলেই মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল কুহু।ইশান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করল।

চলবে,,,,

শীতল অনুভবে তুমি পর্ব-০৪

0

#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ৪

” তুমি? ” আদ্রের কন্ঠে বিস্ময় বিদ্যমান।

” হ্যাঁ আমি। ” কুহুর জবাব।

” তুমি এখানে কি করছো? ” আদ্র প্রশ্ন করে।

” নাঁচতে এসেছি।নাঁচ চিনেন? ”

” ইউ ডাফার!সোজা ভাবে কথা বলতে পারো না নাকি? ”

” নাহ্ পারিনা!ভার্সিটিতে মানুষ কি করতে আসে? ”

” ভার্সিটিতে তো সবাই পড়তেই আসে।কিন্তু তোমার মতো কিছু মেয়ে তো…বেড়াতেও আসে। ”

” ইউ জার্ক রাবিশ!আমাকে দেখে কি এমন মনে হয়? ”

” আমার তো তাই মনে হয়। ”

কুহু রেগে মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে থাকে।আদ্র হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।
_______________

” কি হয়েছে?এমন করছো কেন আপু? ” তাসনি আপেল খেতে খেতে প্রশ্ন করল।

কুহু এদিক থেকে সেদিক পায়চারী করছিল।তাসনির প্রশ্ন শুনে তার দিকে তাকাল।তারপর রাগে গজগজ করতে করতে বলল,

” তোর ওই এক্টর ভাই আছে না….”

কুহুর বাকি কথা শুনার আগেই তাসনি লাফিয়ে বলে উঠল,

” হ্যাঁ হ্যাঁ ওই ভাইয়া?কি হয়েছে? ”

” বারে!কি দরদ! ”

” আরে আপু বলো না! ”

” ওই কটবেল টা আমাদের ভার্সিটিতেই পড়ে। ”

” কিহ্!ওয়াও!তাহলে তো সেই হবে। ”

” তোর বিয়ে হবে!আমি আছি আমার জ্বালায়।আর তুই ওই তাল গাছ টাকে নিয়ে আছিস? ”

” আরে ভাইয়াটাকে আমার ভালো লাগে।কি একশন দেখেছো? ”

” আরে রাখ তোর একশন।ব্যাটা আমাদের ভার্সিটিতে আছে মানে আমার শান্তি নেই। ”

” আহারে!আমি তো বলি তার বাসা এখানে কোথাও হোক। ”

” ইউ….! ”

বলেই এগিয়ে আসতে নিলে তাসনি দল দৌড়।
______________

রাস্তার ধারে মিনমিনে পায়ে হাটছে কুহু।গন্তব্য ইকরার বাসা।খুব করে বলেছে যেতে।তাই আর না গিয়ে পারল না।
পথিমধ্যে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির দেখা।যা সে কিছুতেই মানতে পারছেনা।
ইশান!!!
কুহু তার পানে চেয়ে রইল একরাশ বিস্ময় নিয়ে।কারণ এই পথে তাকে সে আশা করেনি।অন্তত এখন তো না।ইশানও তার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল।যা কুহুর মোটেও হজম হলো না।কুহু ইশানের আশেপাশে তাকাল।রুইয়া নেই।কুহু কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই ইশান পথ আটকে দাঁড়াল।

” কেমন আছো কুহু? ”

কুহু চোখ রাঙিয়ে বলল,

” কেন?জেনে কি করবেন?ভালো থাকার সুখ টা তো কেড়েই নিয়েছেন।এখন কি ঢং করতে এসব জিজ্ঞাস করছেন?দেখি সরুন।আমার কাছে আপনার মতো অত সময় নেই। ”

ইশান যারপর নাই অবাক।

” এমন করছো কেন কুহু? ”

” কেমন করছি?আর কেমনই বা দেখতে চান? ”

” এভাবে কথা বলছো কেন আমার সাথে? ”

” তো কিভাবে কথা বলব আপনার সাথে? ”

” এভাবে রেগে রেগে কথা বলছো কেন?আর আমাকে আপনি বলেই বা ডাকছো কেন? ”

” তো কি করে ডাকব?আমি অপরিচিতদের সাথে তুমি বা তুই করে কথা বলি না।আর অপরিচিত দের সাথে ভালোভাবে কথা বলার অভ্যাস আমার নেই।সো সরুন। ”

” কি বার বার অপরিচিত অপরিচিত করছো?আমি কি তোমার অপরিচিত? ”

” তো কি পরিচিত? ”

” অবশ্যই পরিচিত! ”

” আচ্ছা?কে আপনি?কি হন আমার? ”

ইশান কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়।কি বলবে সে?আসলেই তো সে কুহুর কেউ না এখন।একটু থেমে সে বলল,

” ২ বছর ধরেই তো আমরা একে অপরকে চিনি। ”

” আগে চিনতাম।এখন চিনি না। ”

বলেই কুহু তার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগল।ইশান পেছন থেকে বলল,

” নতুন কাউকে পেয়ে গেছো তাই না?তাই আমাকে ইগনোর করছো? সে নিষেধ করেছে কোন ছেলের সাথে দেখা করতে কথা বলতে তাই না? ”

কুহু রাগে,ঘৃণায় দাঁতে দাঁত চেপে সেটা দমন করল।তারপর সামনে না ফিরেই বলল,

” হ্যাঁ! সে নিষেধ করেছে। শুনেছেন আপনি? সে নিষেধ করেছে। ”

ইশান আবারো বলল,

” জানিতো! তোমাদের মত মেয়েরা তো তাই করবে। একটা যেতে না যেতেই আরেকটাকে জুড়িয়ে নেবে। ”

কুহু সামনে ফিরল এবার।এগিয়ে এল ইশানের পানে।তার চোখে চোখ রেখে বলল,

” আচ্ছা? তো মি. ইশান! আপনার টা কি আপনার চোখে পড়ে না? আপনি কি করেছেন আমার সাথে তা কি আপনার ব্রেইন থেকে আউট হয়ে গেছে? আপনি অন্য মেয়ের মায়ায় পড়ে আমাকে দেওয়া সব আশা ভেঙে চুরচুর করে দিয়েছেন। তো আপনি কি? আপনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে দিব্যি আপনার স্মার্ট মর্ডান বউকে নিয়ে ভালো আছেন। তাহলে আমি কেন পিছিয়ে থাকবো? ছাড় তো আপনি দিয়েছেন। আমি নিজ থেকে ছেড়ে দেয় নি আপনাকে। সো আমার ব্যাপারে যদি আরেকটা বাজে কথা শুনি না আপনার মুখে? আমি কেস করব।আর রহমান বংশের কেস এত সহজে দমানো যায় না মি. ইশান। সুতরাং আমার থেকে দূরে থাকবেন। আর আমাকে দেখা না দেওয়ার চেষ্টা করবেন। স্টে এওয়ে ফ্রম মি। ”

বলেই কুহু সামনে হাটা ধরল।ইশান এখনো চেয়ে আছে তার পানে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে।কুহু এতটা শক্ত হয়ে গেছে তার ব্যাপারে?কে সে?যার জন্য তাকে ইগনোর করছে?জানতে হবে ইশানকে।
___________

” উফ!আল্লাহ্ জানে আমার সাথে হচ্ছেটা কি?এই তিনদিনে এই পর্যন্ত তিন তিন টা ধাক্কা খেয়েছি।আল্লাহ্ গো!কি করে যে এই প্যারা থেকে রক্ষা পাই? ”

ইশানের থেকে বিদায় নিয়ে ইকরার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল কুহু। যেই বাসায় ঢুকতে যাবে ওমনি এক ধাক্কা।এই সেই ধাক্কা না।একেবারে নিচে পড়ে যায় কুহু।তারপর বিড়বিড় করে কথাগুলো বলল।সামনে থাকা অজ্ঞাত ব্যাক্তিটা হাবার মতো তার দিকে তাকিয়ে আছে।ব্যাপারটা বুঝতে পেরে কুহু যেই না কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেই অজ্ঞাত ব্যাক্তিটার মুখ দেখে সে হতভম্ব হয়ে গেল।মুখ দিয়ে কিছুই বের হচ্ছেনা।অস্ফুট স্বরে বলে উঠল,

” আপনি? ”

চলবে,,,,,

শীতল অনুভবে তুমি পর্ব-০৩

0

#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ৩

ঘরে প্রবেশ করতেই হামলা হলো কুহু আর তাসনির উপর।নিরব আর শুভ তাদের কাপড় টেনে টেনে বলল,

” তাসনি আপুকে নিয়ে গিয়েছো আমাদের নিয়ে যাও নি কেন?”

কুহু আর তাসনি পড়ল আরেক বিপাকে।কুহু আমতা আমতা করে বলল,

” ওই আসলে…তোরা…”

” নো এক্সকিউজ!বলো কেন নাও নি?” নিরব বলল।

” আরে শোন!আমি কেন গিয়েছি জানিস?” তাসনি মাঝে চিল্লিয়ে বলে উঠল।

” কেন কেন?” নিরব আর শুভ একসাথে বলল।

তাসনি রোদেলা আহমেদ আর আশা ওয়াহিদের দিকে একবার তাকাল।তারা তাদের কাজে ব্যস্ত।তারপর সে গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলল,

” ওই ইশাইন্নার পিয়ানু বাজাতে বুঝেছিস?ওকে অনেক জ্বালিয়েছি ওখানে।তাই গিয়েছি।”

” কিন্তু আমাদের কেন নিলে না?” শুভ বলল।

” আরে ভাই!দাওয়াত তো শুধু কুহু আপুকে করেছে।আমাদের করেছে?”

দুজন মাথা দোলায়।তাসনি আবার বলল,

” তাহলে এত জন গেলে কি হবে ভাবতে পারছিস?আমি গিয়েছি তাতে কেউ কিছু মনে করবে না ভাববে যে আমি তাকে সঙ্গ দিতে গিয়েছি।এতজন নিয়ে গেলে রহমান বংশের মান ইজ্জত থাকবে বল?”

দুজন মাথা দোলায় আবার।

” তাই আমি গিয়েছি ওই ইশানকে কথা শুনাতে।শুনবি কি বলেছি?”

” হ্যাঁ হ্যাঁ!”

” চল তাহলে!”
________________

” শুনলাম তুই নাকি ওই ইশানের চব্বিশ টা বাজিয়েছিস?” রুবিনা প্রশ্ন ছুড়ে দিল।

কুহু হেসে ফেলল।

” হ্যাঁ রে আপু!তাসনির কথা নাই বা বললাম।ও ওকে এমন কথা বলেছে না,যদি চিল্লিয়ে বলতো তাহলে তার প্রেস্টিজের হাল পঁচা টমেটোর চেয়েও জঘন্য হতো।হাহা!”

” তুই পেরেছিস ওকে দেখাতে যে তুই ভালো আছিস?” রুবিনা শান্ত গলায় বলল।

” হুম..!অবশ্যই পেরেছি!আর তার ভুলগুলোও ধরিয়ে দিয়ে এসেছি।তার আর কিছুই বলার নেই।” কুহু স্লান হেসে বলল।

” ইশ…আমি থাকলে সব দেখতাম আর ওর প্রেস্টিজ পাঞ্চার করেই ছাড়তাম ব্যাটা শয়তান।আমার বোনকে ধোকা দেয়।” রুবিনা গজগজ করে বলে।

কুহু আবারো হেসে ফেলল।
_______________

সকালে উঠে নামাজ পড়ে একটু ছাদে হাটাহাটি করে এলো কুহু।এই পরিবেশটাই সবচেয়ে সুন্দর।স্নিগ্ধ কুহু মনে মনে বলল,

” একটা সময় এই ভোর সকালে তোমাকে নিয়ে স্নিগ্ধ বাতাস গুলো নিজের গায়ে মাখতে চেয়েছিলাম ইশান।কিন্তু তুমি তা চাও নি।তোমাকে ভালোবেসেছিলাম।কিন্তু তুমি বাসো নি।আমার প্রতিটা স্নিগ্ধতায় তুমি ছিলে ইশান।কিন্তু আমি ছিলাম না।আমার প্রতিটা #শীতল_অনুভবে_তুমি ছিলে ইশান।কিন্তু এখন আর নেই।তোমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি আমি ইশান।খুব ঘৃণা করি তোমাকে।”

একটু হাটাহাটি করে ডাইনিং রুমে এল কুহু।সকাল ৭.৪০ মিনিট এখন।বরাবর টাইমেই ব্রেকফাস্ট ৮ টায়।ডাইনিং রুমে এসে দেখে প্রতিদিনের মতোই আতাউর রহমান পত্রিকা পড়ছেন।পাশে জাওয়াত রহমান টিভিতে খবর দেখছেন।রুবিনা গেমিং এ আর তাদের পাশেই সোফাতে তাসনি বইয়ে ডুবে আছে।কুহু ভেবে পায় না একটা মানুষ এত পড়াকু কিভাবে হয়।সারাদিন বইয়ে ডুবে থাকে।কুহু তাসনির পাশে বসে তার মাথায় টোকা দিয়ে বলল,

” কিরে!এখানেও পড়বি?ওমা!এটাতো ইন্টারের বায়োল…..লাইক সিরিয়াসলি?কোন প্যারালাল ইউনিভার্সে এলাম?এই তুই এসব বুঝছিস?”

তাসনি বইয়ে চোখ রেখে বলল,

” বুঝছি তো!”

” কি বুঝছিস আমাকে বলতো?আর এত যেখানে সেখানে পড়া পড়া করিস কেন।আর ক্লাস এইটের মেয়ে ইন্টারের বই…..হোয়াট এ মাল্টিভার্স অব দ্যা ম্যাডনেস ইয়ার! হাউ ওমেন হাউ?পারে কেমনে এসব?”

বলেই মোবাইলে চোখ দিল কুহু।তাসনি আবারো বলল,

” না পড়লে সায়েন্সের জগতে ঢুকব কি করে?এত পড়ছি তোমাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য।যে কিভাবে এত কথা বলতে পারো।”

কুহু বলল,

” চুপ বাঁদরনি!নিজে কি বলে তার আত্তাপাত্তা নেই।পড় পড় ভালো ভাবে পড়।পরে চোখে ৬০০ পাওয়ার এর চশমা পড়বি তুই।এত পড়া দিয়ে কি হবে?শেষে তো শশুড়বাড়িতেই যেতে হবে।”

আতাউর রহমান বিষম খেলেন।বললেন,

” আব…কুহু আম্মু!তাহলে তুমি কি বিয়ে করবে?”

কুহু মোবাইল দেখছিল।এতক্ষণে বুঝতে পারল কি বলছে।স্ক্রলিং অফ করে আতাউর রহমানের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল,

” আ…ন,না বড় আব্বু!আমি এখন বিয়ে করব না।আমার তো এখনো অনার্সই শেষ হয়নি।”

আতাউর রহমান হেসে বললেন,

” তাহলে তাসনিকে বলছিলে কেন যে,এত পড়া দিয়ে কি হবে?শেষে তো শশুড়বাড়িতেই যেতে হবে??তাহলে?”

কুহু কি বলবে বুঝতে পারছেনা।নিজের জালে নিজেই ধরা পড়ল।আবারো হেসে বলল,

” ও..বড় আব্বু!আমি তো তাসনির ক্ষেত্রে বলছি।যে পড়াশোনা করছে।”

” এটা ওর প্রতিভা!শেখো ওর থেকে।তোমাদের ওর মতোই হওয়া উচিত।”

কুহু বিরক্ত হয়ে সামনে তাকাল।তারপর হুরাদ্রি জাবিন,আশা ওয়াহিদ আর রোদেলা আহমেদ এলেন টেবিলে নাস্তা নিয়ে।শুরু হয়ে গেল কে কার আগে বসবে তা নিয়ে থার্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার।
________________

আনমনে রাস্তার ধারে হাটছে কুহু।গন্তব্য ভার্সিটি।আজ যাওয়ার কোন ইচ্ছেই নেই কুহুর।কিন্তু ঘরের রুলস অনুযায়ী ভার্সিটি যাওয়ারও রুটিন আছে।তার বার বার ইশানের সাথে রুইয়ার সেই মুহুর্তের কথা মনে পড়ছে।মুখে বললেও ভেতরে ভেতরে সে অনেক কষ্ট পেয়েছে।কিন্তু তাকে শক্ত হতে হবে।আর কষ্ট পেলে হবে না।ঘৃণা করে সে ইশান নামটাকে।ঘৃণা করে সে ইশান নামের সেই ব্যক্তিটাকে।

ক্লাস করতেও মন চাইছে না।আজ একটা বাদরও ক্লাস করতে আসেনি।সমস্যা কি এদের?কুহু রেগে যাচ্ছে বার বার।২ টা করেই বেরিয়ে গেল।ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে।ঢুকতেই সাহেব সাহেবার দেখা।কুহু গিয়ে ইকরার পাশে বসে দিল এক থাপ্পড় তার পিঠে।ইকরা ” আহ্!” করে উঠে।কুহু রেগে বলল,

” হারামীর ঘরের হারামী!পড়াশোনা বাদ দিয়ে খানা আর আড্ডা তাই না?”

পাশ থেকে নাবিলা বলল,

” বাপরে বইন!তুমি নিজেই পড়াশোনা বাদ দিয়ে বয়ফ্রেন্ডের সাথে মিট করতে যাচ্ছো তা কিছু না?”

শোনা মাত্রই কুহুর মুখে আবারো আঁধার নেমে এল।সে কিছু না বলে মোবাইলে চোখ দিল।বাকিরা বিষয়টা বুঝতে পারল যে কিছু হয়েছে।আবির বলল,

” কিরে কুহু?কিছু হয়েছে?”

কুহু মাথা নাড়িয়ে বলে,

” নাহ্!”

” উহু!লুকাবিনা।কিছু তো হয়েছে।বল কি হয়েছে?আমাদের শেয়ার না করলে কাকে করবি?”

কুহু আবারো মাথা নাড়ায়,

” কিছুই হয়নি।”

” এই বল কি হয়েছে?ইশানের সাথে কিছু হয়েছে?” ইদ্রান বলল।

কুহু বুঝে গেল এদের না বলে থাকা যাবে না।তারপর নিজেকে শক্ত করে তাদের দিকে তাকিয়ে বলল,

” সে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।আর বিয়ে করে নিয়েছে।”

সবাই চিল্লিয়ে বলে,

” কিহ্!”

” কবে?” ইকরা বলল।

” কালকে।”

” আচ্ছা কাল যে কার কথা শুনে আমার কল কেটে দিয়েছিলি..”

” ওটা ইশান ছিল।”

তারপর কুহু তার বলা প্রতিটা কথা প্রতিটা ঘটনা তাদের সামনে তুলে ধরল।

” তোকে বলিনি।আমি জানতাম ওর মাঝে দোষ আছে।কারণ কি জানিস?” ইকরা বলল।

” কি?” সবাই একসাথে বলে।

” যখন কুহু ওর সাথে আমাকে ফার্স্ট মিট করায়,তখন তার দৃষ্টি ঠিক ছিল না।সে আমাদের কথা না শুনে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।ব্যাপারটা আমার মোটেও সুবিধার লাগেনি।না জানি আমার মতো আরো কার কার দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিল।”

” ওই লম্পটটার কথা আগে বলতে পারলি না?তাহলে আগেই ছেড়ে দিতাম শয়তানটাকে।” কুহু রেগে বলে।

” ইয়ার আমি চাইনি তুই আমাকে ভুল বুঝিস।এখন তো বয়ফ্রেন্ডের নামে কিছু বললেই ফ্রেন্ডসদের রিলেশন ভেঙে যায়।তাই বলিনি।” ইকরা বলল।

” থাক দোস্ত!এসব ভেবে মন খারাপ করিস না।তার এমন চরিত্রের ফল সে পাবে।” ইদ্রান বলল।

হঠাৎ কয়েকজন সিনিয়র কয়েকজন ছেলে আর মেয়ে প্রবেশ করল।আর তাদের দেখে বাকিরা ভয়ে চুপসে গেলেও কুহু হা করে তাকিয়ে থাকে।কেন?কারণ তার মাঝে সেই যুবকটাও ছিল যার সাথে ইশানের বিয়েতে কথা কাটাকাটি হয়েছে।তারা গিয়ে কুহুদের সামনের টেবিলে বসে পড়ে আর নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে।কুহু এখনো চেয়ে আছে তাদের পানে।নাবিলা ব্যাপারটা লক্ষ করে বলল,

” কিরে কুহু?এভাবে চেয়ে আছিস কেন ওদের দিকে?”

কুহু যেন তার কথা শুনতেই পায় নি।ইকরা বলল,

” আব্বে ওই!কি দেখছিস ওখানে?”

কুহু হুশে ফেরে।চোখ ফিরিয়ে আমতা আমতা করে বলল,

” আব…না কিছুনা।”

” তো ওদিকে এভাবে চেয়ে ছিলি কেন?” নাবিলা বলল।

” ওই না আসলে..ওদের কখনো দেখিনি।তাই চিনার চেষ্টা করছিলাম।”

” ওরা সিনিয়র আপু,ভাই!এতদিন আসেনি।ওরা ছিল তবে তেমন দেখা যায় নি।ওই যে নতুন ভাইয়াটা!ওটা এল কিছুদিন হচ্ছে।” আবির বলল।

” কি বলিস?আমি দেখিনি কেন?”

” এহ্!মহারাণী তিন দিন ভার্সিটিতেই আসেনি সে আবার দেখবে।” বুশরা বলল।

কুহু ভাবনায় ডুব দিল।ইশানের সঙ্গে দেখা করার জন্যই ভার্সিটি যাওয়ার নাম করে ঘর থেকে বেরিয়ে যেত সে।ভাবতেই তাচ্ছিল্য হাসল কুহু।তারপর কিছুক্ষণ কথা বলে বেরিয়ে গেল কুহু,ইকরা,বুশরা,নাবিলা,ইদ্রান,আবির আর নিহান।এরা ৮ জনই ভালো বন্ধু।তবে ইকরা আর কুহু একদম ক্লোজ ফ্রেন্ড।
সবাই চলে গেলেও কুহু যায় না।সে মাঠে গিয়ে ঘাসের উপর বসে ভাবনায় বিভোর হয়ে থাকে।তার না যাওয়া দেখে ইকরাও যায় না।সেও তার পাশে গিয়ে বসে।

” মন খারাপ এখনো?” ইকরা সামনের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।

” হুম..?” চমকে যায় কুহু।ইকরার দিকে তাকিয়ে বলল,

” তুই যাস নি?”

” তোকে ফেলে কি করে যাই?”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কুহু সামনে তাকায়।ইকরা আবারো প্রশ্ন করে,

” ইশানকে নিয়ে এখনো মন খারাপ করে আছিস?”

” উহু!তার মতো লম্পট কে নিয়ে কেন মন খারাপ করব?”

” তাহলে এমন চুপচাপ হয়ে গেছিস যে?আগের মতো কথা বলছিস না,আগের মতো বকছিস না আমাদের,আগের মতো মারছিস না।আজ একদমই শান্ত লাগছে তোকে।একদিনের ব্যবধানে আমাদের কুহু এত পাল্টে কি করে গেল?”

কুহু স্লান হাসল।

” কিছু কিছু ধাক্কা চাঞ্চল্যতাকে পরিপূর্ণ ভাবে পাল্টে দেয়।”

” তাই বলে সেই ধাক্কায় দূর্বল হওয়া চলে না।তোকে শক্ত হতে হবে।”

” হুম…!”

” কুহু!কাল থেকে তোকে যাতে এমন শান্তশিষ্ট না দেখি।যদি দেখি তো ইউরেনাস থেকে আনা পানিতে চোবাবো মনে রাখিস।”

হেসে ফেলল কুহু।

” ইউরেনাসের পানি কোথায় পেলি?”

” তাসনির শশুড়বাড়ি নাসায়।”

কুহু আরো জোড়ে হেসে ফেলল।তাসনির পড়াকুর ব্যাপারে এরাও জানে।এভাবে কিছুক্ষণ কথা বলেই ইকরা বিদায় নিল।কুহু আবারো ভাবনায় বিভোর হয়।সে কেন ভাবছে ইশানের কথা?নাহ্!ইকরার কথা মতে তাকে আবার আগের মতো হতে হবে।একদিন আগে যেমন চঞ্চল দুষ্ট ছিল তেমনই হতে হবে।মনে মনে পণ করে কুহু।উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাগটা নিয়ে পিছনে ঘুরতেই কানে এক টা সুমিষ্ট মোহনীয় কণ্ঠস্বর ভেসে এল কুহুর কর্ণকুহরে।

~♪ ” চাইলে তুমি হারিয়ে যাও
রাজাহীন কোন রাজ্যে,
জনশূণ্য কোন প্রাচ্যে,
যদি চাও রাঙিয়ে দাও
এই স্বচ্ছ জল।
গড় বর্ণহীন রংধনু
চাইলে তুমি বুনতে পারো,
স্বপ্নের রঙিন জাল।
যদি নাও বা থাকে স্বপ্ন অপুর্ণ💖” ♪~

এক ধ্যানে সেই সুমিষ্ট কন্ঠের গানে বিভোর কুহু।শেষ হতেই হুশে ফেরে সে।ভাবল কে হতে পারে এই মোহনীয় কন্ঠের মালিক।ভাবতে ভাবতেই সামনে এগিয়ে গেল।গিয়ে যা দেখল তাতে তার মাথায় যতগুলো নিউরণ ছিল সব এক এক করে ব্লাস্ট হতে লাগল।কারণ এ আর কেউ নয় সেই যুবকই।হাতে গিটার নিয়ে হাসতে হাসতে তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা জুড়ে দিয়েছে।কুহু অবাক হয়ে ভাবতে থাকে এর গলা এত সমুধূর?তাহলে কথাগুলো এমন তেঁতো কেন?হঠাৎ তাদের কথা শুনতে পেল,

” ভাই!তুই গান টা কোন কনসার্টে গা।নিশ্চিত তুই কোটিপতি।” রাহিন নামের এক ছেলে বলল।

যুবক হেসে বলল,

” তো কি আমি ফকির নাকি?”

” আরে না।তবে তোর যে গলা!ভাই রে!তুই এমনিতে ফেমাস আর কি বলব?আজ অনেক করেই গেয়েছিস।ভাই!প্লিজ কালকে একটা গাস প্লিজ!” নিশি নামের মেয়েটি বলে।

যুবক ভ্রু কিঞ্চিত কুঁচকিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে।নিশি আবার বলে,

” আদ্র প্লিজ!”

কুহু মনে মনে ভাবল,এর নাম তাহলে আদ্র?
আদ্র এবার বিরক্ত হয়ে বলল,

” আচ্ছা ঠিক আছে।হয়েছে?”

” ইয়েস!”

তারপর আদ্র সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,

” ওকে গায়েজ!গুড বাই!কাল দেখা হবে।আজ এটুকুই।”

সবাই একসাথেই বলল,

” গুড বাই!”

তারপর আদ্র গিটার টা ইহান নামের একটা ছেলের কাছে দিয়ে মোবাইল স্ক্রল করতে করতে এগিয়ে আসতে লাগল।সামনে যে কুহু আছে সেটা খেয়াল করেনি।আর কুহুও খেয়াল করেনি কারণ সে তার ভাবনার গ্রহে ছিল।হঠাৎ দুজনেরই হালকা ধাক্কা লাগে।তবে বেশি জোড়ে না হওয়ায় বেঁচে যায় দুজন।তারপর চোখ তুলে একে অপরের দিকে তাকায় দুজন।

চলবে,,,,,

শীতল অনুভবে তুমি পর্ব-০২

0

#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ২
বিলাশবহুল একটা বাড়িতে প্রবেশ করে তাসনি আর কুহু।চারদিকে অচেনা অজানা বহু মানুষের সমাবেশ।বাড়িটাতে রঙ বেরঙের আলোর বাহার।ঘাড় ঘুরিয়ে চারদিক দেখছে তাসনি আর কুহু।তাসনি অবাক হয়ে বলল,

” উরিব্বাস!বাড়িটাতো খুব বড়!”

” হুম..!একবার এসেছিলাম।আরেকবার বধু হয়ে আসার স্বপ্ন দেখেছিলাম।তার আগেই সব শেষ।”

” থাক!এসব ভেবে মন খারাপ করার কোন মানে হয় না আপু।”

” হুম…”

দুজন বাড়ির ভেতর ঢুকল।সবাই উচ্চবিত্ত পরিবারের মানুষ।সবাই পড়ে আছে অশালীন কাপড়-চোপড়।তাসনি তাদের দেখে ফিসফিস করে বলল,

” আপু!এদের কি লজ্জা জিনিস টা লোপ পেয়েছে নাকি?এসব পড়ে কি করে কনফরটেবল ফিল করে?”

” ওরা পারে রে!”

দুজন একটা টেবিলে বসে পড়ল।ইশানের মা রাবেয়া আক্তার হঠাৎ কুহুকে দেখতে পেলেন।তিনি তার কাছে আসলেন,

” আরে তুমি কুহু না?ইশানের বান্ধবী?”

কুহু প্রথমে চমকে যায়।তারপর হেসে বলে,

” হ্যাঁ আন্টি!চিনেছেন তাহলে?”

” তোমার মতো মিষ্টি মেয়েকে কি ভুলা যায়?পারলে তো তোমাকেই ইশানের বউ করে নিয়ে আসতাম।”

কুহু বিব্রত হয়।রাবেয়া আক্তার হেসে বলেন,

” এই দেখো!হাহা!খাওয়া দাওয়া হয়েছে?”

” আহ্..হ্যাঁ!”

” আরে বসে পড়ো।”

তাসনি এক পর্যায়ে ফিসফিস করে বলল,

” ইনি তোমাকে ইশান ভাইয়ার বান্ধবী বলছে কেন?ইনি তোমাদের বিষয়ে জানেন না?”

” নাহ্ রে!ইশানই আমাকে তার বান্ধবী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।”

” আচ্ছা খাটাস তো।এ নিশ্চয়ই আগে থেকে প্ল্যান করে রেখেছিল।তোমাকে শুধু ইউজ করে গেছে।”

” হুম..!” দীর্ঘশ্বাস ফেলে কুহু।

দুজন সবার সাথে খাওয়া দাওয়া করল।ইশানের দেখা নেই।সে হয়তো ব্যস্ত তার হবু বউয়ের সাথে কথা বলায়।কুহু আর তাসনি একটা কোণে চেয়ারে বসে রইল।হঠাৎ একটা কাজের মেয়ে অসাবধানতার কারণে তার গায়ে জুস ফেলে দেয়।এতে কুহুর রাগ উঠে যায় কিন্তু মেয়েটার আকুতি মিনতি দেখে আর কিছু বলল না।

” আপুমনি প্লিজ মাফ করে দিন।আমি দেখতে পাই নি গো।সত্যি প্লিজ আমায় মাফ করে দিন।”

কুহু হেসে বলে,

” আচ্ছা আচ্ছা!নেক্সট টাইম দেখেশুনে হাটবে।”

তারপর কুহু তাসনিকে বলে ওয়াশরুমে চলে যায়।ভীড়ের কারণে অনেক্ষণ পর ফেরত এল সে।কালো জামা হওয়ায় তেমন দাগটা বুঝা যাচ্ছেনা।তাসনি দূর থেকে ইশারা করল।কুহু এগিয়ে যায়।কিন্তু তার কাছে যাওয়ার আগেই হঠাৎ ঠাস করে ধাক্কা খায় সে।পড়ে যায় কুহু।তাসনি ” আপু!!” বলে হালকা চিৎকার দিয়ে হাত দিয়ে চোখ ঢেকে নেয়।কুহু চোখ মুখ খিচে থাকে।তাসনি একটু পর চোখের থেকে হাত সরিয়ে হাত দুটো মুখে নিয়ে আসে।তারপর হাবা হয়ে তাল দিতে শুরু করে।কুহু চোখ বন্ধ রেখে লক্ষ করল কেউ দূর থেকে তালি দিচ্ছে আর তার আশেপাশের লোকজন কথা বলছেনা।আর সে এটাও লক্ষ করল যে সে পড়েনি।মিনমিনিয়ে চোখ খুলল কুহু।তার সাথে ঘটা দৃশ্যটা দেখে সে নিজেই বাকরুদ্ধ।এক অচেনা যুবক তার কোমড় ধরে আছে।সে পড়ে যেতেই নিচ্ছিল তখন যুবকটা তার কোমড় আকড়ে ধরে।যুবকটা এক দৃষ্টিতে কুহুর দিকে তাকিয়ে আছে।কুহুর হুশ আসতেই সে দ্রুত উঠে দাঁড়ায়।তারপর সামনে থাকা অজ্ঞাত যুবকটার দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

” কি সমস্যা কি হ্যাঁ?চোখ কি গার্লফ্রেন্ডের ব্যাগে ঢুকিয়ে এসেছেন নাকি?নাকি অন্ধদের দান করে দিয়েছেন?”

যুবকটা এতক্ষণ কিছু না বললেও এবার সে রেগে গেল,

” ইউ স্টুপিড গার্ল!তুমি কি?চোখ কি নালায় ফেলে এসেছো?নাকি বয়ফ্রেন্ডের কাছে জমা দিয়ে এসেছো কারো দিকে না দেখার জন্য?কোনটা?”

বয়ফ্রেন্ডের নাম আসতেই তার মুখে আঁধার নেমে এল।ইশান তো এখন তার নেই।তাহলে সে কেন এমন হচ্ছে?যথাসম্ভব নিজেকে সামলে বলল,

” এগজাক্টলি ধাক্কাটা কে দিয়েছে? আমি নাকি আপনি?আর ধাক্কা দিলেনই তো ধরলেন কেন যত্তসব!”

বলেই তাসনির দিকে চলে গেল।যুবকটা তার দিকে দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে রইল।পরণে গ্রে কালারের পাঞ্জাবি।গলায় কালো মাফলার।পাশ থেকে আরেকটা ছেলে বলে উঠল,

” কাম ডাউন ব্রো!এ বম্বে মরিচ।এর সাথে জড়াতে যাস না।”

” এ বম্বে মরিচ হলে আমি কাঁচা মরিচ।”

বলেই অন্য দিকে চলে যায়।তার পিছু পিছু তার বন্ধুরাও ছুট লাগায়।

কুহু গিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে তাসনির পাশে বসল।তাসনি হাসতে হাসতে বসল,

” ওয়াও!আই লাইক দিস সিন আপু!হাহা!ইশ…কি সুন্দর ভাইয়াটা তোমায় ধরে নিল।”

কুহুর এমনিতে মেজাজ খারাপ তার উপর তাসনির এমন বকবকানি শুনে মেজাজ আরো বিগড়ে গেল।ধমক দিয়ে বলল,

” চুপ কর!বজ্জাতের বংশধর একটা!এর বদলে হিরো আলম ধরলে আরো খুশি হতাম।”

” কিহ্!ইয়াক ওয়াক!এত সুন্দর একটা হান্ডু ভাইয়ার সাথে তুমি ওই তেঁতো করলাটাকে তুলনা করলে।এহ্!”

কুহু কিছু বলল না।তাসনির সাথে কথায় পারা যায় না।
একটু পরেই পেছন থেকে ভেসে আসে সেই চিরচেনা কণ্ঠস্বর,

” এসেছো?ভালো কথা।আমি যেতে না যেতেই আরেকটার সাথে জড়িয়ে গেছো?বাহ্ বাহ্!মেয়েদের সত্যিই তুলনা হয় না।”

কুহু আর তাসনি ফিরে তাকায় তার দিকে।কুহুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।সে ভাবতেই পারছেনা যে ইশান তাকে এসব বলবে।

” কি বলছেন আপনি এসব?”

” কেন কি বলছি জানোনা?ওর সাথে এত ডলাডলি কিসের?”

কুহু আবারো চমকায়।কার কথা বলছে সে?

” কার কথা বলছেন আপনি মিস্টার ইশান?”

” কেন একটু আগে যে ছেলেটার কোলে উঠে বসে ছিলে তার কথা বলছি।হাহ্!আমি যেতে না যেতেই আরেকটাকে জুটিয়ে নিয়েছো।তোমরা মেয়েরা পারো বটে।”

কুহু ঘৃণায় জরজরিত হয়ে যায়।এদিকে তাসনির পিত্ত্বি জ্বলে উঠে।সে বিশ্বাসই করতে পারছে না যে কুহু যাকে মনে প্রাণে ভালোবাসতো সেই ইশান এমন নিচ মনের ছেলে।যে কিনা মেয়েদের নিয়ে এত বাজে ধারণা পুষে রেখেছে।কুহু কিছু বলার আগেই তাসনি বলে উঠল,

” ওয়েট ওয়েট ভাইয়া!আপনি আপুর কে হন বলুন তো?যে আপুর লাইফে ইন্টাফেয়ার করছেন?আপু যা খুশি তাই করবে।দরকার পড়লে ১৪ টা প্রেম করবে ২৮ টা বিয়ে করবে।আপনার কি?আপনি তো আপুকে ধোকা দিয়ে ২ বছরের ভালোবাসাকে পায়ে পিষে বিয়ে করে নিচ্ছেন আরেকজনকে।সেটা কি?আপু তো এই বিষয়ে আপনাকে কিছু বলেনি?তাহলে আপনি কে আপুকে এসব বলার?আর হ্যাঁ ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল।আপু ডলাডলি করতে যায় নি।আপু পড়ে যাচ্ছিল তাই ভাইয়াটা তাকে ধরে নিয়েছে।আগে নিজের চরিত্র মন মানসিকতা ঠিক করুন তারপর অন্যের টা নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে আসবেন।”

চশমা পড়া পিচ্চি ভোলা মেয়েটার কথা শুনে থমকে যায় ইশান।মেয়েটার বয়সই বা কত হবে ১৩-১৪ বছর।দেখে যতটা বোকা মনে হচ্ছে অথচ সে নয়।ইশান তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,

” তুমি কে?যে ওর হয়ে কথা বলছো?”

তাসনি আবার বলল,

” বলি কি শ্রবণ শক্তি লোপ পেয়েছে নাকি আপনার?আপু বলছিলাম শুনতে পান নি?বিয়ের আগেই বয়রা হয়ে যাচ্ছেন হায় হায়!”

কুহু আর ইশান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তাসনির দিকে।কুহু অবাক হচ্ছে তাসনির এই প্রতিবাদি রুপটা দেখে।আর এদিকে ইশান ভাবতেই পারছেনা এই টুকুন একটা পিচ্চি বোকা দেখতে মেয়ে তাকে এত কথা শুনিয়ে দেবে।পরিস্থিতি ঠিক না দেখে ইশান কথা ঘুরাল,

” আব..আমার উড বি ওয়াইফের সাথে তো পরিচয় করানো হয়নি।রুইয়া!কাম অন সুইটহার্ট!”

তাসনি বিড়বিড় করে ভেঙচিয়ে বলে,

” এহ্!সুইটহার্ট!ঢং দেখে নিশ্বাস পড়ে না বাপু!”

একটা মিনি ড্রেস পড়া মেয়ে এগিয়ে এল হাতে ড্রিংকস নিয়ে।এমন উশৃংখল মেয়ে দেখে কুহুর ইশানের মা রাবেয়া আক্তারের জন্য খুব খারাপ লাগল।এমন মেয়ে তাকে কখনো পাত্তাই দিবে না।ইশান মেয়েটাকে এক হাতে জড়িয়ে কুহুকে দেখিয়ে বলল,

” সুইটি এ হলো আমার একটা ফ্রেন্ড!কুহু নাম।আর কুহু!এ হলো আমার উড বি ওয়াইফ রুইয়া জামান।”

তাসনি বিরক্তিতে চোখ ফিরিয়ে নিল।এমনিতে এমন অশ্লীল কাপড়চোপড় পছন্দ করে না সে।তার উপর এর অশ্লীল কথাবার্তা!কুহুর বুকটা ফেটে যাচ্ছে।কিন্তু সে কিছু না বলে তাদের দিকে চেয়ে রইল।একটু পর বলল,

” হ্যালো ভাবী!কেমন আছেন?”

” আ’ম ফাইন সিস্টার!ইউ?”

” ইয়াহ্ ফাইন!আপনাকে আর ভাইয়াকে খুব মানিয়েছে।পারফেক্ট কাপল।এমন মেয়ের সাথে এমন লোকেরই মানানোর কথা।”

কুহুর কথা শুনে ইশানের চোখ চক্ষুকোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।

” থ্যাংকস সিস্টার!আশা করি তুমিও খুব ভালো হাসব্যান্ড পাবে।”

” হুম..!অন্তত এমন কেউ না যে মিথ্যে আশা দিয়ে ছেড়ে দেয়।” ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে কুহু।

ইশান কুহুর দিকে চেয়ে রইল।তারপর বলল,

” ওকে সুইটি চলো আমরা ওদিকটায় যাই।”

” রোমান্টিক মোমেন্টটা যেন চোখ এ ধরা দেয় মিস্টার ইশান..ভাইয়া!” কুহু বলল।

ইশানের মাথায় রাগ চড়ে বসল।কুহু তাকে কথার মাধ্যমে ইনসাল্ট করছে তা বেশ ভালোই বুঝতে পারল।তারা ভেতরে চলে গেলে তাসনি আর কুহু অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।কুহু হাসতে হাসতে বলল,

” কেমন বাঁশ দিলাম রে?”

” ওহ্ মাই গশ!হাহা!আর পারছিনা।একদম ফাটাফাটি।তার মুখটা দেখার মতো ছিল।এভাবে কথার মাধ্যমেই ফাঁসাবা খাটাসের দাদাটাকে।”

” বাপরে তুই যেভাবে তার পাম্প উড়িয়ে দিয়েছিস!হাহা!কি বলব তখন আমার হাসি চেঁপে রাখতে পারছিলাম না রে!”

হঠাৎ কারো কণ্ঠস্বর,

” এত হাসাহাসি হচ্ছে কেন এখানে?এটা কি জোকারের সার্কাস নাকি?নাকি জোকসের মার্কেট যে এত হাসাহাসি হচ্ছে?”

কুহু আর তাসনি হাসি থামিয়ে পেছনে তাকাল।সামনে থাকা যুবকটাকে দেখে কুহু বিরক্তিতে চোখ ফিরিয়ে নিল।তাসনি তো বেজায় খুশি!এই সেই যুবক।তাসনির তার একশন টা খুব ভালো লেগেছে।এক্টরদের চেয়েও ভালো রিয়েল সিন ছিল সেটা।কুহু এবার বলল,

” আমি হাসবো!ইচ্ছা হলে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে হাসবো।আপনার কি তাতে?”

” কিন্তু এমন মরা হাসি কেউ আমার সামনে হাসলে তা আমার পছন্দ না।”

” ডু ইউ মিন ইট?আপনার পছন্দ অপছন্দে আমার কিছু এসে যায় না।”

তাসনি মাঝে বলে উঠল,

” ভাইয়া ভাইয়া আপনি কি করেন?”

” মানে?”

” আপনার পেশা কি?”

” কেন?জেনে কি করবে তুমি?”

” আসলে জানতে চাচ্ছিলাম যে আপনি কোন এক্টর কি না!”

” কেন কেন?”

” তখন যেভাবে আপুকে ধরলেন।আপনার তো এক্টর হওয়া উচিত।মুভি করলে আপনার খ্যাতি কম থাকবে না ভাইয়া।সত্যি!”

যুবক তা শুনে হালকা হাসল।

” আচ্ছা!ঠিক আছে।তাহলে ডিরেক্টর তুমি হবা।”

” ইশ…কি যে বলেন না!”

কুহুর এসব শুনে গা জ্বলে যাচ্ছে।তাসনিকে ইশারায় চুপ করতে বলল।তারপর বলল,

” আপনার যদি ভালোই না লাগে তাহলে যান নিজের গার্লফ্রেন্ড এর কাছে যান।এখানে কি?এটা আপনার দাদার জায়গা নাকি শশুড়ের জায়গা?”

অজ্ঞাত যুবকটি ভ্রু কুঁচকায়।ত্যাড়া টাইপের মেয়ে কুহু সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পারল।সে কুহুর দিকে এগিয়ে এল।যা দেখে কুহু বেশ ভড়কে গেল।কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রাখল।তারপর যুবক তার খুব কাছে এসে তার মুখ কুহুর মুখের দিকে এগিয়ে নিয়ে বলল,

” আমার প্রেয়সীর হাসার জায়গা!”

শিউরে উঠে কুহু।তাসনি তালি দিতে দিতে বলে,

” ওয়াও ওয়াও!হোয়াট এ সিন ভাইয়া!আপনার সত্যিই এক্টর হওয়া উচিত।”

যুবক হেসে সরে আসে।তারপর হাসতে হাসতে চলে যায় চোখ টিপ মেরে।কুহুর যেন জান বাঁচল।এতক্ষণ ভয়টাকে খিচিয়ে রেখেছিল।তারপর যুবকের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভেঙচিয়ে বলল,

” এহ্!আমার সামনে কারো হাসা আমি পছন্দ করিনা।ব্যাটা এখন নিজে হাসছে।শালা বিটসএন্ট!তুই জীবনেও বউ পাবি না রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট এর মেয়ের জামাই কোথাকার!”

তাসনি আবারো হেসে দিল।কুহু আবারো বিরক্ত হয়।
______________

নাচের আসর শুরু হলো।ইশান আর রুইয়া কুহুর পাশেই ছিল।সে কুহুকে দেখিয়ে দেখিয়ে রুইয়ার সাথে ক্লোজ বিহেভ করতে শুরু করেছে।কুহু এসব দেখেও না দেখার ভান করে ড্যান্স দেখছিল।তখন তাদের ড্যান্স শুরু হয়।রুইয়া আর ইশানের।তাসনি লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নেয়।কি বাজে ড্যান্স!কুহুও মোবাইলে চোখ দেয়।ইশান মুলত কুহুর রিয়েকশন দেখার জন্যই এমন করছে।কিন্তু কুহুর কোন হেলদুল নেই।এতে ইশান বেশ অবাক হলো।তারপর কুহু একটু আড়ালে গেল তার ফ্রেন্ডসদের সাথে কথা বলার জন্য।তাসনি তখনো সেখানে বসে ছিল।ইশান কুহুর কাছেই যাচ্ছিল তখনই তাসনি ইশানকে চুপিসারে বলে,

” কি ভাইয়া?আবাল মার্কা ড্যান্স দিয়ে আপুকে কষ্টে ফেলতে চাইছেন।হাহ্!আপু এত বলদ না যে আপনাদের থার্ড ক্লাস ড্যান্স দেখে চোখের পানি ফেলবে।”

ইশান কিছু না বলে কুহুর কাছে যায়।কুহু তখনও কথা বলছিল তার বান্ধবীর সাথে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে।ইশান এসেই বলল,

” বাহ্ বাহ্!আমি যেতে না যেতেই প্রেমালাপ জুড়ে দিয়েছো।ওয়াও!ব্রাভো!আসলেই কি তুমি আমাকে ভালোবেসেছিলে?”

কুহু ইশানের গলা পেয়ে ইকরাকে গোপনে পড়ে করছি বলে কল কেটে দিল।তারপর কান থেকে ইয়ারফোন নামিয়ে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” কিছু বলেছেন আপনি?”

ইশান রেগে যায়।

” এতটা প্রেমে মত্ত ছিলে যে আমার কথাই শুনতে পাও নি?বাহ্!”

” স্টপ দিস বুলশিট মিস্টার ইশান!না জেনে না শুনে মন্তব্য করবেন না।”

” জেনেশুনেই করছি।আচ্ছা তুমি কি আসলেই আমাকে ভালোবেসেছিলে?”

” হঠাৎ এই প্রশ্ন?”

” যদি সত্যি ভালোবেসে থাকতে তাহলে আমি যেতে না যেতেই আরেকটা জুড়িয় ফেলতে পারতে না।”

কুহু এবার তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল,

” আচ্ছা?আপনার টা কি আসল ছিল?তাহলে কি করে পারলেন আমাকে ফেলে আরেকজনকে বিয়ে করতে?আপনিই তো বলেছিলেন এখনকার প্রেম গুলো বিয়ে পর্যন্ত যায় না।ভালো লাগা না লাগার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।তাহলে নিজের বলা কথাটা কেন ভুলে যাচ্ছেন?এখন আমি আপনার কেউ নই।আমি আপনার জন্য পরনারী।সো এসব লথা বলার কোন অধিকার আপনার নেই।আমার লাইফ!আমি যা খুশি করব।আমি আপনার কোন কাজে বাঁধা হয়ে আসিনি।সো আপনি আমার কোন কাজে বাঁধা হয়ে আসবেন না।নয়তো পুলিশ কেস করবো।আপনি উচ্চবিত্ত বংশের লোক হলে আমি ডাবল উচ্চবিত্ত বংশের মেয়ে।সো বি কেয়ারফুল!”

ইশান এসব শুনে বেশ অপমান বোধ করল।দাঁত কটমট করতে করতে যেতে নিলেই কুহু পেছন থেকে আবার বলল,

” কুহু জ্বলার মতো মেয়ে না মিস্টার অয়ন রশিদ ইশান!কি ভেবেছেন আপনার ওসব থার্ড ক্লাস ব্যাকডেটেড নাচ দেখে আমি আমার চোখের মূল্যবান অশ্রু ঝরাবো?আমার চোখের অশ্রুকণারা এত সস্থা নয়।তারা এত সহজে বাঁধ ভাঙে না।কি ভেবেছিলেন এসব দেখে আমি আপনার পায়ে পড়ব এই দু পয়সার ভালোবাসা ভিক্ষে চাইতে?হুহ্!কক্ষনো না।আমি নীলাদ্রি রহমান কুহু।আমি এত সস্থা নই!”

ইশান এসব শুনে কিছু না বলে রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়।কুহু সেখানেই হেসে ফেলে।কিন্তু তার চোখে পানি।চোখে পানি মুখে হাসি!মন টা বুঝা বড় দায়!

চলবে,,,,

শীতল অনুভবে তুমি পর্ব-০১

0

#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ১

” কালই আমার বিয়ে।দাওয়াত রইল।”

চমকে যায় কুহু।নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখ থেকে এমন কথা শুনে যে কারোরই ধাক্কা লাগবে।সেটাই হয়েছে কুহুর ক্ষেত্রে।কুহু ঢোক গিলে জিহ্বা দিয়ে অধরদ্বয় ভিজিয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল,

” এ,এসব কি বলছো ইশান?ত,তোমার বিয়ে মানে?”

সামনে থাকা প্রতীয়মান ব্যক্তিটা বিরক্ত হয়ে বললো,

” হ্যাঁ হ্যাঁ সত্যি বলছি।তোমাকে এতদিন ধরে বলতে চাইছিলাম কিন্তু সুযোগ হয়ে উঠেনি।”

কুহু কি বলবে বুঝতে পারেনা।

” তা,তাহলে আমাকে যে আশা দিয়েছিলে?তার কি হবে?এত সহজে ভুলে গেলে ইশান?এই ছিল তোমার ভালোবাসা?”

” স্টপ ইট কুহু!আর কত পুরনো পিরিতি মার্কা কথাবার্তা বলবে?আজকাল কি কোন রিলেশন বিয়ে পর্যন্ত যায়?যায় না!আর তোমাকে এখন আর আমার ভালো লাগেনা।আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে প্রায় ১ মাস হয়ে যাচ্ছে।কাল ফিক্সড ডেট।তোমার দাওয়াত রইল।”

” সে কি পারবে আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসতে?” থেমে থেমে বলে কুহু।

” কিসব বলোনা তুমি?তোমার চেয়েও স্মার্ট ও।বুঝতে পেরেছো?ও তোমার মতো ক্ষ্যাত না যে খালি এইসব থ্রি-পিস পড়ে বসে থাকে।সে আল্ট্রা মর্ডান মেয়ে।তার গেট আপ একদম ইউরুপ আমেরিকানদের মতো।”

” তাহলে আমার গেটআপ নিয়েই তোমার সমস্যা তাইতো?”

” উফ!তোমার সব কিছু নিয়েই আমার সমস্যা।তোমাকে আর ভালো লাগছে না ডিড ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড?”

” ইয়াহ্!ঠিক আছে।তুমি যা চাও তাই হবে।শুভ কামনা রইল।আর অবশ্যই বিয়েতে যাবো মিস্টার অয়ন রশিদ ইশান।”

” থ্যাংক ইউ কুহু।”

” হুম..!ইউ আর ওয়েলকাম মিস্টার ইশান।”

বলেই চলে যেতে থাকে কুহু।বার বার গলা আটকে আসছে কিন্তু ইশানের সামনে সে সেটা বুঝতে দেবে না।তাড়াতাড়ি বাসায় এসে রুমে ঢুকেই দরজা আটকে দিল।এদিকে তার এমন আচার-আচরণ দেখে আহান রহমান আর আশা ওয়াহিদ বেশ অবাক হন।এসে দরজা ধাক্কান।কিন্তু ভেতর থেকে আওয়াজ আসে,

” আমি পড়ছি আম্মু।ডিস্টার্ব করো না প্লিজ।”

তারা আর কিছু বলেনা।ভাবল হয়তো পড়ার চাঁপে এমন করছে।কিন্তু তারা জানেনা তাদের মেয়ে দরজার উপারে কতটা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।হ্যাঁ!ইশানের সামনে না কাঁদলেও সে অগোচরে খুব কাঁদছে।এই তার ভালোবাসা?দীর্ঘ ২ বছরের ভালোবাসা সে এভাবেই শেষ করে দিল?কি করে পারল সে?হয়তো সে তাকে কখনো ভালোবাসেই নি।শুধু সময় পাস করে গেছে।অনেক্ষণ কাঁদার পর কুহুর মন টা এবার শক্ত হলো সামান্য।সে উঠে দাঁড়াল।আঁখিদ্বয় মুছে নিল।তারপর মনে মনে বলল,কুহু এত দুর্বল নয়।আর এত সস্থাও নই যে তার মতো দু পয়সার মিথ্যে ভালোবাসার জন্য কাঁদবো তার কাছে হাত পাতবো।আমি আহান আর আশার মেয়ে।আমি কুহু!আমি কেন কাঁদবো?আমিও তাকে দেখিয়ে দেব যে আমি তাকে ছাড়া খুব ভালো আছি।

নীলাদ্রি রহমান কুহু।আহান রহমান আর আশা ওয়াহিদের প্রথম সন্তান।অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।আহান রহমান একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী।কুহুরা যৌথ পরিবার।আহান রহমানরা তিন ভাই।আহান রহমান মেঝ ভাই।বড় ভাই আতাউর রহমান আর তার স্ত্রী হুরাদ্রি জাবিন।এবং ছোট ভাই জাওয়াত রহমান এবং তার স্ত্রী রোদেলা আহমেদ।এবং কুহুর দাদী আয়েশা আফরিন।এক সাথেই থাকে।
____________

কুহু গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নেয়।তাকে শক্ত হতে হবে এবং ইশানকে দেখিয়ে দিতে হবে।তারপর পড়তে বসে।হঠাৎ দরজায় ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় প্রবল বেগে।কুহু বিরক্ত হয়,

” কে?”

ওপাশ থেকে দলবদ্ধ চিৎকার ভেসে আসে,

” দরজা খুলো!”

কুহু বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ায়।গিয়ে দরজা খুলে দেয়।সাথে সাথেই হুরহুর করে ঢুকে পড়ে তিনজন।শুভ,তাসনি আর নিরব।

” কি হয়েছে আপু?এভাবে দরজা আটকে বসে আছো কেন?” নিরব প্রশ্ন করে।

” কিছু না রে।” কুহু বলল।

” নাহ্!কিছুতো হয়েছে।নাহলে এমন কেন চেহারা?” তাসনি বলল।

” আপুনি বলো না।তুমি না বললে আম্মুকে দিয়ে বের করাবো।” শুভ বলল।

” ওরে বাবারে এত সব একসাথে কোনটার উত্তর দেব?”

তাসনি অতশি রহমান।ক্লাস এইটে পড়ে।
শুভ শিহাব রহমান।ক্লাস ফোর এর ছাত্র
আর নিরব হাসনাত রহমান।ক্লাস সেভেনের ছাত্র।

তাসনি আর নিরব জাওয়াত রহমানের সন্তান।আর শুভ কুহুর আপন ছোট ভাই।

তাসনি আবার প্রশ্ন করল,

” আপু কি হয়েছে বলো?ইশান ভাইয়া কিছু বলেছে নাকি?”

কুহুর বাবা মা এসব বিষয়ে না জানলেও তার ভাই বোনেরা জানে।তাদের সাথে সবই শেয়ার করে সে।
তাসনির কথা শুনে ঢুকরে কেঁদে উঠে কুহু।তার শক্তপোক্ত করা মনটা আবারো নরম হয়ে যাচ্ছে।বাকিরা অবাক হয়।তাসনি বুঝতে পারে নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে।তারপর কুহুর মনে পড়ে যায় তার নিজের প্রতি কথা প্রতিজ্ঞার কথা।সাথে সাথে চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হয় সে।

” স,সে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।”

” মানে?” তিনজন এক প্রকার চিল্লিয়ে উঠে।

” হ্যাঁ রে!তার নাকি কাল বিয়ে।আমাকে দাওয়াতও দিয়েছে।”

” এখন কি করবে?” তাসনি প্রশ্ন করে।

” যাব আমি তার বিয়েতে।”

” এসব কি বলছো?তুমি তাকে না আটকিয়ে তার বিয়েতে যাবে?” নিরব বলল।

” কেন আটকাবো বেহায়ার মতো?আমি এত সস্থা নাকি যে তার দু পয়সার ভালোবাসার জন্য তার পায়ে পড়ব?হ্যাঁ যাব আমি তার বিয়েতে।আর তাকে দেখিয়ে দেব যে তাকে ছাড়া আমি ভালো আছি।”

” হ্যাঁ!তোমার এটাই করা উচিত।আমি তোমাকে এটাই বলতে চাচ্ছিলাম কিন্তু তুমি আগেই নিয়ে নিয়েছো।” তাসনি বলল।

” হুম..!”

” সবাই খেতে আয়!”

দূর থেকে অস্পষ্ট স্বরে ভেসে এল আতাউর রহমানের স্ত্রী হুরাদ্রি জাবিনের বলা বাক্যটি।তারা এক দৌড়ে সিড়ি বেয়ে ৪ জন ডাইনিং রুমে উপস্থিত হয়।আশা ওয়াহিদ,রোদেলা আহমেদ আর হুরাদ্রি জাবিন খাবার সাজাচ্ছেন টেবিলে।আর আতাউর রহমান সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছেন।এই ঘরে সব নিয়ম অনুযায়ী চলে।হুরাদ্রি রহমানকে তারা খুব সম্মান করে।শুধু তাকেই না এই বাড়ির সকল বড় সদস্যদের তারা মান্য করে।আর বেশ ভয়ও পায়।
কুহু যতসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখছে।হুরাদ্রি জাবিনের বিষয়টা চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি।তিনি বললেন,

” কি ব্যাপার কুহু?চেহারা এমন লাগছে কেন?”

” ও কিছু না বড় আম্মু।এমনি কাল রাতে ঘুম হয়নি তো তাই।”

” কিন্তু বিকালে যখন দেখলাম তখন তো ঠিকই ছিলি।”

” আব….আ…”

কিছু বলার আগেই তাসনি বলে উঠে,

” চোখে পানি দিয়েছিলো।”

কুহু তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।হুরাদ্রি জাবিনও ভ্রু কুঁচকে তাসনিকে প্রশ্ন করেন,

” চোখে পানি কেন দিতে যাবে?”

তাসনি আবার বলে,

” ও আসলে..আমরা ভিডিওস বানাচ্ছিলাম।তাই চোখে পানি আনার জন্য দিয়েছে।আর বার বার পানি দেওয়াতে এমন লাল হয়ে আছে।”

হুরাদ্রি জাবিন কুহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

” তুই কি এখনো ছোট নাকি পোলাপানদের সাথে এসব ভিডিও বানাবি?”

তাসনি আবার বলে উঠল,

” আরে না!আমরা জোর করে আপুর সাথে খেলেছি।”

” ওহ্ আচ্ছা।তোদের মেঝ চাচা আর ছোট চাচাকে ডেকে নিয়ে আয়।আর রুবিনাকেও ডাক গিয়ে।”

” আচ্ছা বড় আম্মু।”

তাসনি আর কুহু গেল আহান রহমান আর জাওয়াত রহমান কে ডাকতে।তাদের ডেকে গেল রুবিনার রুমে।গেমসে মত্ত সে।রুবিনা আহিয়া রহমান।আতাউর রহমানের মেয়ে।তাসনি গিয়ে তার কানের কাছে জোরে চিল্লিয়ে বলে,

” রুবি আপু..!!!”

লাফিয়ে উঠে রুবিনা।তারপর স্বাভাবিক হয়ে তাকে ধমক দিয়ে বলে,

” বজ্জাত!কি সমস্যা তোর?এভাবে চিল্লালে তো যে কেউ হার্ট অ্যাটাক করবে।”

” যাক গে তুমি তো করোনি।”

” চুপ শয়তান।”

” আচ্ছা আচ্ছা খেতে ডাকছে।”

” আচ্ছা আসছি যা।আরে কুহু!তুই চলে এসেছিস?কবে আসলি?”

” অনেক আগেই আসলাম।”

” কিন্তু তুই না বলেছিলি আজ রাতের আগে ফিরবি।তাহলে?”

” যে কারণে গিয়েছিল তার উল্টোটা হলো জানো?” তাসনি বলল।

” কি হয়েছে?” রুবিনা প্রশ্ন করে।

” ব্রেক-আপ হয়ে গেছে ওদের।ওই ইশানের বিয়ে নাকি কালকে।দাওয়াতও করেছে।” তাসনি বলল।

” কিহ্!আমি বলেছিলাম তোকে।ওই ইশানের মধ্যে প্রবলেম আছে।তুই শুনিস নি।”

” যাক বাদ দাও এসব।এসব মনে করে আর ডিপ্রেশনে পড়তে চাইনা।” কুহু বলল।

” তোহ্!বিয়েতে যাচ্ছিস?”

কুহু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

” হুম..!”

” কেন?”

” দাওয়াত যেহেতু দিয়েছে যেতে তো হবেই।তাকেও আমি দেখিয়ে দেব আমি তাকে ছাড়া খুব ভালো আছি।”

” হুম..!রাইট ডিসিশন।”

আবারো অস্পষ্ট স্বরে ভেসে এল হুরাদ্রি জাবিনের গলা,

” তোরা কোথায় গেলি?”

তারা দ্রুত সব ফেলে দৌড় লাগাল।
_____________

সন্ধ্যা ৭ টা।কুহু রেডি হচ্ছিল।তখন তাসনি প্রবেশ করে।কুহু জামা চুজ করতে পারছিল না।তাসনিকে দেখে কুহু বলে,

” ভালো হলো এসেছিস।এই দেখতো কোনটা পড়বো!”

তাসনি একটা কালো গাউন বেছে দিল।

” এটাতে তোমাকে একদম হান্ডু আই মিন হান্ডি লাগবে।হিহি!”

কুহু ভ্রু কুঁচকে বলে,

” হান্ডু হান্ডি এসব কি আবার?”

” আরে জানো না?হ্যান্ডসামকে হান্ডু বলে আরকি।তুমি তো মেয়ে।তাই হান্ডি বললাম।”

” বাপরে!তোকে আসলেই বুঝতে পারিনা।”

তারপর কুহু চেঞ্জ করতে গেল।চেঞ্জ করে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসল।তারপর চুল আচড়াতে লাগল।পেছন থেকে তাসনি বলল,

” আপু শুনোনা!”

” হুম বল।”

” আমিও যাবো তোমার সাথে।আমায় নিয়ে চলো প্লিজ।”

কুহু তাসনির দিকে ঘুরে বলে,

” তুই যাবি?তুই ওখানে গিয়ে কি করবি?”

” একটু দেখবো ওই ইশান আর ওর বউকে।আর তোমাকে দেখে ওর রিয়েকশন কেমন তা দেখবো।আর তুমি কিভাবে ওকে দেখাবে যে তুমি ঠিক আছো সেটা দেখবো।প্লিজ প্লিজ আপু!”

কুহু কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকে।তাকে নিয়ে গেলে মন্দ হয় না।কথা বলার মতো একটা মানুষ পাবে।

” ঠিক আছে যা।ছোট আম্মুর থেকে পারমিশন নিয়ে আয়।”

” ইয়েস!আমি এক্ষুণি যাচ্ছি।”

খুশিতে গদগদ হয়ে তাসনি বেরিয়ে গেল।কুহু হেসে তার কাজে মন দিল।

” তুই নাকি কোথাও যাচ্ছিস কুহু?” রোদেলা আহমেদ জিজ্ঞেস করে কুহুকে।

কুহু তার দিকে না তাকিয়েই হালকা হেসে বলে,

” হ্যাঁ চাচী।একটা ফ্রেন্ডের বিয়েতে যাচ্ছি।তাসনিকেও সাথে দাও না।”

” আচ্ছা!সাবধানে রাখবি আর বেশি রাত করবিনা।৯ টার আগেই চলে আসবি।”

” ওকে মাই সুইট চাচী।যাও তুমি এবার।তাসনিকে পাঠিয়ে দাও।”

একটু পরেই তাসনি চলে এলো।তারপর দুজন সবার থেকে অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে গেল।

চলবে,,,,

চুপিসারে ভালবাসি পর্ব-০৯(অন্তিম পর্ব)

0

#চুপিসারে ভালবাসি
–পর্বঃ৯ (অন্তিম পর্ব)
সাদিয়া আফরিন নিশি
—————————-

“কীসের গল্প?”

ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল সোহা। জিসান প্রসন্ন হেসে বলল,

“মনে কর এক পাগল প্রেমিকের গল্প।”

অনিচ্ছা সত্ত্বেও সোহা রাজি হয়ে গেল শুনতে। নয়তো উপায় কী এখানে তার বোরিং লাগছে। আর যতটা এটেনশন অন্য দিকে রাখা যায় ততই তার জন্য ভালো। সোহা রাজি হতেই জিসান বলল, চল হাঁটতে হাঁটতে বলি। দু’জনে হাঁটছে সবার থেকে আলাদা হয়ে।

“এক ছিল এক প্রেমিক রাজা। বয়স তার তখন সবে আট বছর। তখনই রাজার জীবনে এন্ট্রি হয় আমাদের রানি সাহেবার। প্রেমিক রাজা রানি সাহেবার জন্মের পর থেকেই তাকে খুব করে নিজের ভাবতে শুরু করে। অন্য কেউ তাকে ছুঁলেও যেন প্রেমিক রাজার গায়ে ফোসকা পড়ে এমন। ছোট থেকেই সবসময় প্রেমিক রাজা তার রানি সাহেবাকে আগলে আগলে রেখেছে। সবসময় চুপিসারে ভালবেসে গেছে। ঠিক যখন সময় হয়েছে প্রেমিক রাজা তার মনের কথা তার রানি সাহেবাকে জানানোর ঠিক সেসময়ই আগমন ঘটে ভিলেনী শাঁকচুন্নির। এই ভিলেনী শাঁকচুন্নি যবে থেকে প্রেমিক রাজার দর্শন পেয়েছে তবে থেকে তার পেছনে পড়ে আছে। প্রেমিক রাজা হাজার চেষ্টা করেও তাকে দূর করতে পারে নি। বড্ড বেহায়া মেয়ে কীনা। হঠাৎই একদিন হুট করে ওই ভিলেনী শাঁকচুন্নি প্রেমিক রাজাকে জড়িয়ে ধরে। প্রেমিক রাজা আচমকা অপ্রস্তুত হয়ে কিছু বলতে নেবে ঠিক তার আগেই সেখানে উপস্থিত হয় রানি সাহেবার। রানি সাহেবা শুধু শুধুই ভুল বোঝে আমাদের প্রেমিক রাজাকে। তারপর তো প্রেমিক রাজা রানি সাহেবাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। উপায়ন্তর না পেয়ে মনের কষ্টে সে নিজেকে সবার থেকে দুরে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।”

“গল্প শেষ এখন তুই বল প্রেমিক রাজার এখন করণীয় কী? রানি সাহেবা তাকে ভুল বুঝে দুরে সরে না গিয়ে একটি বার তাকে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ তো দিতেই পারত তাই না?”

সোহা এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে সবটা শুনছিল। তার আর বুঝতে বাকি নেই যে জিসান নীলের কথা বলছে। তবুও সোহা সিওর হওয়ার জন্য বলল,

“তুমি কার কথা বলছো বলতো?”

জিসান কিঞ্চিৎ হেসে বলল,

“নিশ্চয়ই বুঝতে পারছিস।”

সোহা কিছু বলল না। চুপচাপ দাড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর আবার নিজে থেকেই জিসানকে বলল, বাড়ি যাব। জিসান সোহার মন পড়ার চেষ্টা করেও অক্ষম। অগত্যা বাড়ি নিয়ে গেল জিসান সোহাকে। ওদের সঙ্গে সঙ্গে বাকিরাও ফিরে এলো। রিয়ার অবশ্য ঘোর বিরোধিতা ছিল তবুও কেউ তা পরোয়া করে নি।

___

কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে মুখশ্রীতে কাঠিন্যতা এসে ভর করল নীলের। আজ আর সে ছাড় দেবে না। ঠাটিয়ে কয়েকটা চর বসিয়ে দিবে। উদ্দেশ্য সফল করতে প্রস্তুত নীল যখন পেছন ফিরে চাইলো ততক্ষণাৎ তার মনের কোণে হানা দিল এক অবিশ্বাস্য ভাবনা। সোহা এখানে? সে তো ভেবেছিল রিয়া। নীল অবিশ্বাস্য চাহনিতে চেয়ে আছে সোহার পানে। নীলকে চেয়ে থাকতে দেখে সোহা করুন কন্ঠে বলল,

“কী দেখছ?”

“তোকে। সত্যিই কী এটা তুই?”

সোহা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“ছুঁয়ে দেখো।”

নীল একটানে সোহাকে বুকে জড়িয়ে নিল। সোহাও শক্ত করে চেপে ধরল নীলকে। যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে।

___

ড্রয়িং রুমের পরিবেশ নিস্তেজ। সকলেই চুপচাপ। সোহা ভয়ে গুটিসুটি মে’রে দাড়িয়ে আছে। নীলের হাবভাব নির্বিকার। নিরবতা ভেঙে নীলের বাবা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,

“কী আর করা যাবে। অন্যায় যখন করেছে তখন শান্তি তো ওদের পেতেই হবে। আর ওদের শাস্তি হলো….”

সকলে অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে নীলের বাবার মতামত শোনার জন্য। তিনি একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,

“ওদের শাস্তি হচ্ছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওদের বিয়ে।”

সকলে ভীষণ ভাবে পুলকিত হয় নীলের বাবার মন্তব্যে। অতঃপর বিয়ের কথা একরকম পাকা হয়ে যায়। সোহার বাবা বাড়িতে না ফেরা অব্দি
আপাতত বিয়ের কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। সোহা লজ্জায় লাল হয়ে আছে। সকলে ওদের বিয়ে নিয়ে নানারকম আলাপ করছে।

সকলে খুশি হলেও খুশি হতে পারল না কেবল রিয়া। সে সবার মধ্যে চিৎকার করে নীলের কলার টেনে ধরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বসল। উপস্থিত সবাই হতভম্ব। অতঃপর জিসান সকলে খুলে বলে রিয়ার নীলের পেছনে পরে থাকার ঘটনাটা। সূর্যের মা নিজের ভাগ্নির এমন বেহায়াপনার কথা শুনে ভীষণ ভাবে লজ্জিত হন। তিনি ততক্ষণাৎ তার বাপের বাড়ির লোকজনকে রিয়া সমেত চলে যেতে বলেন। অবশেষে আপদ বিদায় নেয়।

___

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন আগত। সোহার বাবারও এ বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই। নানাপ্রকার আচার অনুষ্ঠানের পর সেই কাঙ্খিত মুহূর্তের সম্মুখীন নীল ও সোহা। এই মুহুর্তে সোহা এক হাত ঘোমটা টেনে বসে আছে তার প্রিয় মানুষটির আগমনের অপেক্ষায়। কিয়ৎক্ষণ পরেই নীল ঘরে প্রবেশ করে। সোহা কিঞ্চিৎ নড়েচড়ে বসে।

একটানে সোহার মাথা থেকে ঘোমটা সরিয়ে নেয় নীল। ভীত সোহা নীলের দৃষ্টি পানে দৃষ্টি রাখে। সোহার চোখে একরাশ নার্ভাসনেস। নীল সোহার সম্মুখে বসে পড়ে। সোহার মুখটা দু-হাতে আগলে নেয়। ইতোমধ্যে সোহার শরীরে কম্পন শুরু হয়ে গেছে। এই কম্পন নীলকে আরও গভীর ভাবে আকৃষ্ট করছে সোহার প্রতি। সময় অতিবাহিত না করে নীল এই প্রথম বারের মতো প্রেয়সীর অধরে অধর ছোঁয়ালো। সোহা খামচে ধরল নীলের পাঞ্জাবির কলার। ধীরে ধীরে স্পর্শ আরও গভীর থেকে গভীরে পৌছতে লাগল। কারো মুখে কোনো কথা নেই। দুটি হৃদয় জুড়ে শুধু অনুভূতির আধিপত্য।

___

সকাল থেকে সূর্যের ন্যাকামো স্টার্ট হয়ে গেছে। তার কারণ হলো সে তার সুয়োরানীকে কিছুতেই ভাবি ডাকতে পারবে না। ওদিকে সোহা গো ধরে বসে আছে সূর্যের মুখ থেকে ভাবি ডাক শুনবেই নয়তো নীলের কাছে নালিশ ঠুকবে। দু’জনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া-ঝাটি চলছে এটা নিয়ে। এরই মাঝে নীলের মা এসে দুজনকে থামিয়ে দেয়। দু’জনের মন রাখতে তিনি বলেন,”একদিন সূর্য সোহাকে ভাবি ডাকবে তো পরদিন আবার সুয়োরানী ডাকবে। এভাবে পালা করে ডাকলেই সমস্যা মিটে গেল।” নীলের মায়ের কথায় দু’জনেই অসন্তুষ্ট তবুও মেনে নিল। গুরুজন বলে কথা। মুখগোমরা করে বসে পরল সোহা। নীল ডাইনিং টেবিলের কাছে যেতে যেতে আড়চোখে সোহাকে একবার দেখে নেয়। অতঃপর গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলে,

“আমার বউকে কে কী বলেছে?”

সোহা কিছু বলে না। কাঁদো কাঁদো ফেস করে চেয়ে থাকে। সূর্য ততক্ষণে দৌড়। যেতে যেতে তার উত্তর, আমি নির্দোষ বাচ্চা।

নীল গ্লাসের পানিটা খেতে গিয়েও থেমে যায়। অস্ফুট স্বরে বলে,

“কে বাচ্চা?”

সোহা মুখ টিপে হেসে দেয়।

এভাবেই দিন চলতে থাকে তাদের।

………………..সমাপ্ত…………

চুপিসারে ভালবাসি পর্ব-০৮

0

#চুপিসারে ভালবাসি
সাদিয়া আফরিন নিশি
–পর্বঃ৮
__________________

“বাড়ি যাব”

বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টা করতে করতে কথাটি বলল সোহা। উপস্থিত সবাই হতভম্ব। শুধু নীল নির্বিকার। সে আগেই জানত এমন কিছুই হবে।
সকলে অনেক চেষ্টা করছে তবুও সোহাকে মানানো অসম্ভব হয়ে উঠছে। ডক্টর বলেছে এই মুহুর্তে সোহাকে কোনো প্রেসার না দিতে। নয়তো খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে। নীল অসহায়ের মতো চেয়ে চেয়ে দেখছে সোহার অবস্থা। সকলের সামনে কিছু বলতেও পারছে না। জিসান অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছে নীলকে। সে আস্তে করে নীলের কাছে গিয়ে দাড়িয়ে নিন্মস্বরে জিজ্ঞেস করল,

“ভাই কী হয়েছে? এনি প্রবলেম? সোহা এমন করছে কেন?”

নীল একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে জিসানের দিকে তাকালো। কপাল ডলতে ডলতে বলল,

“রিয়া…”

জিসান মুহূর্তেই বুঝে নিল সবটা। সে ক্রোধান্বিত হয়ে বলল,

“আমি আগেই ভেবেছিলাম একবার। এখন কী হবে। শুধু শুধু মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে। ওকে রিয়াকে তো আমি……. ”

শেষ কথাটি বলে জিসান ঘর থেকে বেড়িয়ে রিয়ার কাছে যেতে নিচ্ছিল কিন্তু নীল তার হাত ধরে পথ আটকায়। ধীর কন্ঠে বলে,

“আগে এদিক টা ঠিক করি তারপর আমি নিজেই রিয়াকে দেখে নিব।”

জিসানের রাগ কমলো না তবুও নীলের কথাকে প্রাধান্য দিয়ে শান্ত হওয়ার চেষ্টা করল।

___

সকলের জোরাজুরিতে চৌধুরী বাড়িতেই বাধ্য হয়ে থেকে যেতে হলো সোহাকে। সোহার মাও আজ তার মতের সঙ্গে এক মত নয়। তিনিও চান আজ এখানেই থাকতে। অগত্যা বাধ্য হয়ে এখানে থেকে গেল সোহা।

নিস্তব্ধ পরিবেশ। বাড়ির সকলে গভীর ঘুমে আছন্ন। কেবল ঘুম নেই দু জোড়া চোখে। সোহা তার মায়ের সঙ্গে একঘরে শুয়েছে। মালিহা আহমেদ অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সোহা চোখ মেলে চেয়ে আছে। তিক্ত সৃতি মনে করে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। অনেক সময় যাবৎ কান্নার ফলে সোহার পানির পিপাসা পেয়ে গেছে। টেবিলের ওপরের জার টা একদম ফাঁকা।সোহা একবার তার মাকে ডাকতে গিয়েও ডাকল না। নিজে নিজেই জার নিয়ে বেড়িয়ে গেল ড্রইংরুমের উদ্দেশ্যে।

মাঝপথে কেউ সোহার এক হাত টেনে নিয়ে এক কোণে দেওয়ালের সঙ্গে চেপে ধরল তাকে। আচমকা ভয় পেয়ে ঘাবড়ে গেল সোহা। চোখ খুলতেই তার সামনে দৃশ্যমান হলো চিরচেনা সেই প্রিয় মুখ। ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় নীলকে চিনতে একটুও অসুবিধে হলো না সোহার। সেই সঙ্গে তর তর করে বেড়ে উঠল মস্তিষ্কে চেপে রাখা কষ্ট গুলো। রাগে সোহার মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে। সে নীলের থেকে মুক্তি পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একনাগাড়ে। এরই মাঝে নীলের অসহায় কন্ঠ,

“প্লিজ শান্ত হ গোলাপ রানি। আগে আমার কথাটা তো শোন।”

“কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি। ছেড়ে দাও আমায়। নয়তো কিন্তু আমি চিৎকার করে সকলকে ডাকব।”

“তোর যা খুশি তাই কর তবে তার আগে আমায় নিজেকে এক্সপ্লেইম করার সুযোগ দে। একবার সবটা শুনে নিলে তুই বুঝতে পারবি ওই ঘটনায় আমার কোনো দোষ ছিল না।”

সোহা নাছোড়বান্দা। সে কিছুতেই নীলের কোনো কথা শুনতে নারাজ। সে নীলের বাহু থেকে নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করতে করতে বলল,

“কীসের এক্সপ্লেইম? কীসের কী?প্রবলেম কী তোমার? মাঝরাতে এসব কী নাটক শুরু করেছ?ছেড়ে দাও আমায়।”

অসহায় নীল শক্ত করে বুকের সঙ্গে মিলিয়ে নিল সোহাকে। সোহার রাগ হলো ভীষণ। যে বুকে অন্য নারীর ঠাই মিলেছে সে বুকে সে কখনোই মাথা রাখবে না, কখনোই না। সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও নীলকে নিজের থেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হলো সোহা। অবশেষে রাগে,দুঃখে কাঁদতে শুরু করল। সোহার কান্না উপলব্ধি করতে পেরে নীল অস্থির হয়ে পড়ল। সোহার মুখ টা তুলে ধরে বলল,

“কী হয়েছে গোলাপ রানি কাঁদছিস কেন?কাঁদিস না প্লিজ। তুই কাঁদলে যে আমার কলিজায় লাগে।”

“কেন, কীসের এতো দরদ শুনি?তোমার তো ভালবাসার লোকের অভাব নেই তো তাদের নিয়েই থাকো না। আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।”

“জানি অভিমান হয়েছে, কষ্ট পেয়েছিস তবুও একটা সুযোগ চাইছি নিজেকে প্রমাণ করার।”

“নাহ, নাহ, নাহ আমি কোনো কথাই শুনতে চাই না। তোমার কথা শোনার মতো বিন্দু মাত্র ইচ্ছে আমার নেই। প্লিজ যেতে দাও আমায়। তোমাকে দেখলে আমার ভীষণ ঘৃণা হচ্ছে। আই হেট ইউ। আই হেট ইউ। আই হেট ইউ।”

সোহা কাঁদতে কাঁদতেই দৌড়ে চলে গেল। নীল সেখানেই স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে। তার কর্ণে শুধু একটি কথারই প্রতিধ্বনি চলছে, “আই হেইট ইউ।” ভালবাসার মানুষের মুখ থেকে ভালবাসি কথাটি শোনার আগে ঘৃণা করি কথাটি শোনা যে কতটা ভয়ংকর তা এখন নীল হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারছে। একটু অসাবধানতায় এতকিছু হয়ে গেল। তার গোলাপ রানি তার থেকে দুরে চলে গেল।

___

সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে সকলেই উপস্থিত শুধু নীল বাদে। নিত্যদিন অবশ্য নীল সকলের সঙ্গেই ব্রেকফাস্ট করে তবে আজকে বলে দিয়েছে সে পড়ে খাবে। সোহা নিরব দর্শকের মতো দেখছে সবটা কিছু বলছে না। সকলে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে সোহা এখন পর্যন্ত কিছুই মুখে তোলে নি। কেবল হাত দিয়ে খাবার নাড়াচাড়া করে যাচ্ছে। এটা দেখে সোহার বড় মামি বলে উঠলেন,

“কী হয়েছে আম্মা খাচ্ছো না কেন?খাবার পছন্দ হয়নি?”

সোহা কিঞ্চিৎ হাসার চেষ্টা করে বলল,

“খেতে ইচ্ছে করছে না মামনি। আমার খাবার টা তুলে রাখো যখন ইচ্ছে হবে আমি খেয়ে নেব।”

সোহার কথার ঘোর বিরোধিতা করে তার মা বললেন,

“একদম নয়। তোমার শরীর ঠিক নেই। আগে খাবার শেষ করো।”

সোহা অনুনয়ের সুরে বলল,

“আম্মু প্লিজ জোর করো না। আমি বলছি তো পরে খেয়ে নেব।”

সোহার মা আর কিছু বললেন না। টেবিল ছেড়ে উঠে গেল সোহা। যেতে যেতে আবার থমকে দাড়াল রিয়ার কথা কর্ণগোচর হতেই। রিয়া বলছে সে গিয়ে নীলকে ডেকে আনবে। সোহার বুক চিড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো। একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আঁকাবাঁকা হেঁটে রুমে চলে গেল।

___

বিকেল পড়তে না পড়তেই সকলে মিলে রওনা হয়েছে ঘুরতে যাবে বলে। এটা অবশ্য রিয়ার প্ল্যান। রিয়া হলো সূর্যের মামাতো বোন। একটু বেহায়া কোয়ালিটির। সেই প্রথম যখন নীলকে দেখেছে তখন থেকে নীলের পেছনে পরে আছে। নীল নানাভাবে তাকে অপমান করেও কোনো ফায়দা হয়নি বরং তার বেহায়াপনা দিনকে দিন আরও বাড়ছে। এই তো গতদিন হুট করেই নীলের ঘরে ঢুকে তাকে জাপটে ধরে দাড়িয়ে ছিল। এই দৃশ্য দেখে সোহা নীলকে ভুল বুঝে তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় দুরত্ব।

সকলে যেতে রাজি থাকলেও সোহা আর নীল কিছুতেই ঘুরতে যেতে রাজি নয়। এমতাবস্থায় জিসান একটা প্ল্যান খাটায়। সে নীলকে বলে এটাই সুযোগ সোহার সঙ্গে প্যাঁচআপ করার। নীল এটা শুনে কিছু একটা ভেবে রাজি হয়ে যায়। সোহাকে রাজি করানোর জন্য জিসান গিয়ে তার ফুপ্পিকে বলে সোহার শরীর, মন ভালো নেই। বাহিরের পরিবেশ তারজন্য ভালো হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব শুনে সোহার মা সোহাকে ঠেলে ঠুলে পাঠিয়ে দেয় ওদের সঙ্গে।

সকলে মিলে একটা নির্জন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। রিয়া বারংবার নীলের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছে। সোহা এসব আড়চোখে দেখছে আর রাগে ফুঁসছে। হঠাৎই জিসান তার পাশে এসে দাড়িয়ে বলল,

“পিচ্চি একটা গল্প শুনবি?”

চলবে,

চুপিসারে ভালবাসি পর্ব-০৭

0

#চুপিসারে ভালবাসি
–পর্বঃ৭
Sadia afrin nishi
_________________

সোহার মনটা ভীষণ ছটফট করছে। কোনো কাজে মন লাগছে না। শুধু নীলকে ঘিরে ভাবনার সূচনা হচ্ছে। বর্তমান সময়ে স্মার্ট ফোন ইউজার নেই এ কথাটি বিরল। প্রায় সকলেই এই ফোনের অধিকারি। সোহার কাছেও একটি আছে তবে সেটা খুব একটা কাজে আসে না। সোহার ফোনের প্রতি তেমন একটা আসক্তি নেই বললেই চলে। তবে আজ এই ফোনটার ভীষণ প্রয়োজন তার জীবনে। ফোনের স্কিনে ভাসমান একটা নম্বরে ডায়াল করার প্রবল ইচ্ছে জাগছে তার মনে। কিন্তু সাহসে কুলচ্ছে না। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে নিজে থেকেই সোহার ফোনটা বেজে উঠল। আচমকা ধুক করে উঠল সোহার বুক। স্কিনে সোহার বড় মামির নম্বর টা ভাসছে। অজানা ভয়ে বুকটা ধক করে উঠল সোহার। নীলের যেই রাগ বাড়িতে গিয়ে আবার কোনো কান্ড বাধিয়ে বসল না তো ? চটজলদি ফোনটা রিসিভ করল সোহা। ব্যস্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,

“কী হয়েছে বড় মামনি? গুরুতর কিছু?”

নীলের মা আশ্চর্য হয়ে যায় সোহার এমন ব্যবহারে। পরক্ষণেই হেসে দিয়ে বলেন,

“নাহ আম্মা তেমন কিছু না। তোর মায়ের ফোনে কল দিয়েছিলাম রিসিভ করে নি এজন্য তোর নম্বরে দিলাম। তোর মায়ের সঙ্গে একটু কথা আছে। ফোনটা তোর মাকে দে তো?”

সোহার মন তবুও আশঙ্কায়। সে দ্রুত ছুটে মায়ের ঘরে চলে যায়। মালিহা আহমেদ তখন ওয়াশরুমে। সোহা বাহিরে থেকে ডাক দিতে যাবে তার আগেই তার মা বেড়িয়ে আসে। সোহাকে দেখে তিনি বলেন,

“কী হয়েছে কিছু বলবি?”

সোহা তার ফোনটা মায়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

“বড় মামনি। নাও কথা বলো।”

মালিহা আহমেদ ফোনটা নিয়ে সালাম দেয় নীলের মাকে। তারপর কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে কথপোকথন চলে। ওপাশের কোনো কথাই সোহা শুনতে পায় না। কথা শেষ হতেই সোহা আগ্রহের সহিত তার মাকে জিজ্ঞেস করে,

“কী হয়েছে মা? বড় মামনি কী বলল?”

“কাল ওই বাড়িতে যেতে চলেছে। গ্রাম থেকে সূর্যের নানাবাড়ির লোক আসবে। তাই আমাদেরকেও যেতে বলেছে। সকলে মিলে একসঙ্গে সময় কাটানো যাবে।”

সোহা একটু খুশি হলো। নীলের রাগ ভাঙানোর একটা সুযোগ তার জন্য অপেক্ষা করছে। খুশি মনে নিজের রুমে চলে গেল সে।

___

সোহার বাবা রিফাত আহমেদ ব্যবসায়ীক কাজে চিটাগং আছেন। আজ তার ফেরার কথা থাকলেও ফিরতে আরও দুদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন। তাই মালিহা আহমেদ শুধু সোহাকে নিয়েই বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।

গাড়িতে বসে বাহিরের পরিবেশ অবলোকন করছে সোহা। মনটা বারংবার খুশিতে নেচে নেচে উঠছে তার। কী সুন্দর আমাদের চারপাশের প্রকৃতি। ঝিলের পাড়ের সারি বাঁধা গাছগুলো বেশি আকর্ষণীয় সোহার নজরে। প্রায় দেড় ঘন্টা পর নীলদের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায় তারা।

বাড়িতে ঢুকতেই সকলে ছুটে আসে তাদের আপ্যায়ন করতে। এ বাড়িতে তাদের যত্নের কোনো কমতি নেই। সোহা তার মামিদের সঙ্গে ভীষণ ফ্রী। বিশেষ করে তার ছোট মামি অর্থাৎ সূর্যের মায়ের সঙ্গে। সোহা সোজা তার ছোট মামির সঙ্গে আড্ডা দিতে তার মামির ঘরে চলে গেল। বেশ কিছুক্ষণ আলাপ করার পর হঠাৎই সে বলে উপর,

“আচ্ছা ছোট মামনি নীলাদ্রি দা কোথায়? তাকে তো দেখতে পাচ্ছি না।”

“নীল তো সূর্যের সঙ্গে গেছে আমার বাবার বাড়ির লোকদের ট্রেন থেকে নিয়ে আসতে।”

“আসবে কখন?”

“এইতো খুব শীঘ্রই চলে আসবে।”

সোহার মনটা একটু খারাপ হলো তবুও নিজেকে স্বাভাবিক করে আবার মামির সঙ্গে আড্ডা জুড়লো।

___

নীলের বাড়ি ফেরার খবর পাওয়া মাত্রই ছুট্টে সে ঘরে চলে গেল সোহা। নীল তখন গায়ের শার্ট খুলে সবে মাত্র বিছানায় শরীর ছুঁয়িয়েছে। সোহা ভেতরে ঢুকতে গিয়েও ঢুকল না। দরজার বাহির থেকে উঁকি মে’রে দেখল নীলের অবস্থান। নীলের উন্মুক্ত বক্ষ চোখে পড়তেই লজ্জায় কুকিয়ে গেল সে। উল্টো দিকে ফিরে দ্রুত সেখান থেকে পদার্পণ করতে চাইল। কিন্তু তার আগেই ভেতর থেকে ভেসে এলো এক গম্ভীর কণ্ঠস্বর,

“ভেতর আয়।”

সোহা থমকে দাড়ালো। ধীর পায়ে ভেতরে প্রবেশ করল। মাথা নিচু করে দু-হাতের আঙুল মোচড়াতে ব্যস্ত সে। নীল মলিন কন্ঠে শুধালো,

“উঁকি মা’রছিলি কেন?”

সোহা আমতা আমতা কন্ঠে বলল,

“ক কই না নাতো…”

“আমি কী তবে ভুল দেখলাম?”

“ক কক কী জ জানি…”

“কেন এসেছিস বল?”

“সরি.. ”

“কেন?”

“কাল আপনাকে ওই কথাটা বলা হয়তো আমার উচিত হয়নি। বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে বলিনি। এমনিতেই মুখ ফসকে বলে ফেলেছি। আচ্ছা ওই সামান্য কথায় এতো রেগে যাওয়ার কী আছে?”

নীল চোখ মেলে দেখলো সোহার দিকে। সোহার দৃষ্টিও নীলের চোখে আবদ্ধ। নীল নম্র কন্ঠে বলল,

“সত্যিই কী কিছু নেই ওই কথায়?”

সোহা বলল,

“কোন কথায়?”

“তুইও বুঝবি একদিন কিন্তু সেদিন আমিও আর থাকব না। হারিয়ে যাব বহুদূরে।”

সোহার বুকটা ধক করে উঠল নিমেষেই। এবার সে বুঝতে পারছে কতটা ভুল কথা সে বলেছিল।এই কথার মর্মার্থ কতটা ভয়াবহ। নীল তার কথা তাকেই ফিরিয়ে দিল। সোহা কিছু বলল না। এক পা এক পা করে পেছতে পেছতে এক সময় দৌড়ে চলে গেল। নীল দেখল সেই যাওয়া। মনে মনে কিঞ্চিৎ হাসল। তাচ্ছিল্যের হাসি নাকি খুশির হাসি সেটা বোঝা গেল না।

___

নীলের সঙ্গে এক সুন্দরী রমনীকে লেপ্টে থাকতে দেখে সোহার দুনিয়া যেন থমকে গেল। এটা কী দেখছে সে। দরজার আড়ালে দাড়িয়ে এমন কিছু দেখতে হবে কখনো কল্পনাতেও আনে নি সে। সোহার চোখ জোড়া জলে টলমল। হাত পা কাঁপছে অবিরত। ইচ্ছে করছে ছুট্টে চলে যেতে এখান থেকে কিন্তু পারছে না। পা দুটো অবশ হয়ে আসছে। মাথাটা ঘুরছে ভীষণ। ধীরে ধীরে চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে তার। অতঃপর সোহার নিস্তেজ শরীর ঢলে পড়ে মেঝেতে।

ঠাস করে কিছু পড়ার শব্দে চমকে ওঠে নীল আর রিয়া। ছিটকে সরে যায় রিয়া নীলের থেকে। নীল রিয়ার দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর নিশ্বাস ফেলে দরজার দিকে অগ্রসর হয়। দরজার কাছে গিয়ে বড়সড় রকমের ধাক্কা খায় নীল। সোহা এখানে এভাবে পড়ে আছে কেন? তার চেয়ে বড় কথা সোহা কী কিছু দেখেছে নাকি? ওহ সীট, বলে দ্রুত সোহার কাছে গেল নীল। সোহার মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিল। সোহার চোখ বেয়ে পানি পড়েছে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। নীলের আর বুঝতে বাকি রইল না তার আশঙ্কাই ঠিক। নীল অস্ফুটস্বরে বলল,

“এখন কী হবে? কী করব আমি? কী করে মানাবো সোহাকে?”

অজানা ভয়ে দুরুদুরু করছে নীলের অন্তঃস্থল। সে বার কয়েক সোহার গাল ধরে ডেকেছে কিন্তু সোহা কোনো রেসপন্স করে নি। অগত্যা দ্রুত কোলে তুলে নিল নীল সোহাকে। সামনে অগ্রসর হতে হতে তার একটাই ভাবনা, “বুঝবি তো আমায় গোলাপরানি?”

পেছন থেকে নীল সোহাকে এতটা ক্লোজ দেখে দাঁত কিড়মিড়িয়ে নিজের রাগকে সংবরণ করার বৃথা চেষ্টা করছে অন্যকেউ।

___

ডক্টর ইনজেকশন পুশ করে জ্ঞান ফেরাল সোহার।মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপের ফলে এমনটা হয়েছে। অধিক কষ্ট, ভয়, অভিমান, রাগ সবকিছু একত্রে জেঁকে বসেছে তার মনে। যার ফলস্বরূপ এই অবস্থা। নীল নিজেকেই সোহার এমন অবস্থার জন্য দায়ী মনে করছে।ভেতরে ভেতরে অপরাধ বোধ কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে।
সকলে উদ্বীগ্ন হয়ে বসে আছে। অপেক্ষা সোহার জ্ঞান ফেরার। সোহা কী দেখে ভয়,কষ্ট পেয়েছে কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না।

কিয়ৎক্ষণ পরেই জ্ঞান ফেরে সোহার। সকলে উগ্রীব হয়ে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে তাকে। সোহার কারো কথায় মন নেই। তার চোখ জোড়া আটকে আছে দরজার কাছে দাড়ানো ছেলেটির দুই চোখের ভাঁজে। চোখে চোখে কথা হচ্ছে অনেক। সে কথা কেউ শুনছে না। ছেলেটির চোখে অসহায়ত্বের ছাপ আর মেয়েটির চোখে ঘৃণার ছাপ। সোহার ছোট্ট মনে সবে মাত্র নীলকে নিয়ে গড়ে ওঠা অনুভূতির পাহাড় ভেঙে গুড়িয়ে গেছে এক নিমেষে। এখন শুধু সেই মন থেকে একটা কথার প্রতিধ্বনি চলছে,,,”প্রতারক”

চলবে,