Friday, July 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1078



মেঘ রোদ্দুরের আলাপন পর্ব-০২

0

#মেঘ রোদ্দুরের আলাপন
#পার্টঃ০২
#Writer:মারশিয়া জাহান মেঘ

৭.

রিশ ভার্সিটি যাবিনা? আজতো নববর্ষ উপলক্ষে বেশ চাকচিক্য অনুসারে অনুষ্ঠান হবে।

‘মিসকাত তোর এতো অনুষ্ঠান নিয়ে ইন্টারেস্ট কেনো বলতো? আর তাছাড়াও আমি যেতে পারবোনা। আমাকে জব খুঁজতে হবে।

‘জব খুঁজতে হবে মানে?

‘আমি রেস্টুরেন্টের জবটা আর করতে চায়না তাই।

মিসকাত রিশকে বিছানায় বসিয়ে ঠান্ডা মাথায় বললো,

‘রিশ কেনো করতে চাসনা তুই? দেখ এইখানে তুই অনেক সুযোগ -সুবিধা পাস। ভার্সিটিতে এক্সাম চললে তোকে কি সুন্দরভাবে ছুটি দেয়। আর আমার ক্যাফ! এইটাতো একদিন না গেলে ২০০ টাকা কেটে দেয়। ফলে এক্সামের জন্য ছুটি নিতে খড়কাঠ পুড়াতে হয়।

‘ছেড়ে দে।

‘হোয়াট! রিশ তোর কি হয়েছে বলতো? জবটা কেনো করতে চাসনা?

এরপর রিশ মিসকাতকে সবকিছু খুলে বললো রেস্টুরেন্টে যা যা হয়েছে।

‘ওহ এই ব্যাপার? কিন্তু রিশ তাতে প্রবলেমটা কোথায়? তোকেতো আর বলেনি যে রিশ কাল থেকে আর রেস্টুরেন্টে আসবেনা।

‘যেইখানে আত্মসম্মান নেই সেইখানে থাকা বোকামো ছাড়া কিছুইনা মিসকাত। আর তাছাড়া আমি নিজের যোগ্যতায় জবটা পেয়েছিলাম তাতেও চাকরি থাকবেনা থ্রেট কেনো শুনতে হবে? তুই রেডি হয়ে নে ভার্সিটি যাবিনা?

‘প্লিজ রিশ প্লিজ চলনা ভার্সিটিতে। আর তাছাড়া জবতো তুই কালকেও খুঁজতে পারবি। প্লিজ চলনা…।

‘ওফ তোকে নিয়েনা আর পারিনা মিসকাত৷ ঠিক আছে আমিও যাবো।

‘আরেকটা কথা রাখবি? প্লিজ না করিসনা।

মিসকাত মুখটা ভেঙ্গে এমন ভাবে কথাটা বলেছে যে রিশ ফিক করে হেসে দেয়। পরে বলে আচ্ছা না করবোনা বল।

‘আজকে আমরা দুজন শাড়ী পড়ে যাবো প্লিজ।

‘না না আমি এইসবে নেই। তোর ইচ্ছে হলে তুই ই পর।

‘রিশশ..

‘ইশশ আচ্ছা পড়বো।

মিসকাত রিশকে মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরে।

৮.

স্যার..আজ এইখানকার ভার্সিটিতে নববর্ষের অনুষ্ঠান। আপনাকে সেইখানে চিফ গেস্ট হিসেবে আমন্ত্রিত করেছে।

“স্বাদ জেইনকে একবার ডেকে পাঠাওতো।

‘হুম Sure স্যার।

জেইন শুয়ে শুয়ে ফেইসবুকিং করছিলো। হঠাৎ স্বাদ সামনে এসে আমতা আমতা করে বললো,

‘স্যার..সরি এই সময়ে আপনার রুমে আসার জন্য। আসলে বড় স্যার আপনাকে ডেকেছে।

‘বাপি আমাকে ডেকেছে? ওকে স্বাদ তুমি যাও আমি আসছি।

স্বাদ যেতেই জেইন ফোনটা বিছানায় রেখে ব্ল্যাক কালার টি-শার্টের উপর এ্যাশ কালার একটা ব্লেজার পড়ে নেয়। সাথে এ্যাশ কালার সফট প্যান্ট। হাতে কালো কালারের রেশভারী ঘড়িটা পড়ে চুলটা হাত দিয়ে বুলিয়ে নেয় আয়না দেখে দেখে। তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে প্যান্টের পকেটে রেখে তার বাপির রুমের দিকে পা বাড়ায়।

বাপি আসবো?

”Come on, my son. You don’t need permission to come to my room”

“Thanke You বাপি। বলো কোথায় যেতে হবে।

” বাহ আমার ছেলেতো দেখছি বলার আগেই বুঝে নিয়েছে যে তাকে কোথাও পাঠানো হবে।

জেইন একটু মুচকি হেসে বললো, “বাপি তুমি বিজনেস এর দরকারে আর নিজে কোথাও না যেতে পারলে সেইখানে আমন্ত্রণ রক্ষার্থে আমাকে পাঠাও সেইটা আমি খুব ভালোভাবেই জানি। তাইতো একেবারে রেডি হয়ে চলে এসেছি।

” আমি তোমাকে নিয়ে খুব গর্ববোধ করি জেইন। আসলে কি বলোতো..তোমার মাম্মাম যখন তোমাকে ১ মাসের মাথায় রেখে মারা যান। তখন অনেকে অনেক কথা বলেছিলো যে, মা ছাড়া ছেলে মানুষ হবেনা৷ সবাই আমাকে বলেছিলো আরেকটা বিয়ে করতে। কিন্তু আমি কখনোই চায়নি আমার ছেলে সৎ মায়ের অবহেলা পাক। তাই ব্যবসার পাশাপাশি দিনরাত তোমাকে সামলেছি। সবচেয়ে বড় কথা তোমার গ্রেনি না থাকলে একটা কখনো সম্ভব ছিলোনা। তুমি আছো বলেই আমার অর্ধেক কাজ হয়ে যায়। নয়তো আমি যে কি বিপাকে পরতাম।

‘বাপি প্লিজ মন খারাপ করিওনা৷ আমাকে দেখো আমি তোমার আর গ্রেনির মাঝে মায়ের ভালোবাসা খুঁজে পায়। আমাকে দেখেছো কখনো? মাকে নিয়ে মন খারাপ করতে? যাক বাদ দাও। কোথায় যেতে হবে বলো।

‘চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে আজ নববর্ষের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেইখানে চিফ গেস্ট হিসেবে আমাকে আমন্ত্রিত করেছে তাই তোমাকে পাঠাতে চায় আমি। আর এছাড়াও ওইখানে আমাদের মতোই আরেকজন টপ বিজনেস -ম্যান শাহারিয়া ওয়াহিদ আসবেন।

জেইন মনে মনে নামটা কয়েকবার এলোমেলো করে ভাবলো, ‘ওহ মনে পড়েছে। রিশ নামক মেয়েটির বাবা। বাহ্ ভালোইতো অনেক কিছু জানা যাবে।

সো যথেষ্ট রেসপেক্টফুলি কথা বলবে। যাও সাবধানে যেও। আর হ্যাঁ সাথে স্বাদ কে নিয়ে যেও।

‘ওকে বাপি। গ্রেনিকে বলে দিও আমি কেথায় গিয়েছি।

“ওকে মাই সান।

৯.

বাবা আমি যাবো ভার্সিটি অনুষ্ঠানে?

‘না রিলজেম। তোমাকে যেতে হবেনা। কি জানি রিশ তোমাকে চিফ গেস্টের আসনে দেখে কেমন রিয়েক্ট করে।

‘বাবা তুমি যদি সব রিশকে নিয়েই ভাবো তবে আমাকে কেনো রেখেছো? আমাকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিলেইতো পারো।

” রিলজেম…

“চিৎকার করবেন না মম। আমিতো ঠিকি বলেছি। আপনারা সবসময় আপনাদের মেয়েকে নিয়ে ভাবেন। কই? এইটাতো একটাবারো ভাবেন না যে আপনাদের ছেলে পড়াশোনা শেষ করে বসে আছে বিজনেস সামলাতে তাকে বিজনেসে জয়েন করায়। মম আর বাবাই এইভাবে চলতে পারেনা৷ আপনারা হয় কিছু করুন নয়তো আমার প্রপ্রারটি আমাকে বুঝিয়ে দিন।

‘দেখো মমতা দেখো। তোমার ছেলে লোভের বশে অন্ধ হয়ে গেছে। তোমার ছেলের জন্য আজ মেয়েটা রাগ করে চলে গেছে।

” রিলজেম.. তুমি ভুলে যেওনা তুমি কার সাথে কথা বলছো। তুৃমি তোমার মা বাবার সাথে কথা বলছো আশা করি এইটা তোমাকে মনে করিয়ে দিতে হবেনা।

‘মম আমি কি বলেছি রিশকে যে তুই বাড়ি ছেড়ে চলে যা?

‘না বলোনি। তবে এইটাতো সত্যি যে তোমার বাবা আর তোমার সাথে রাগ করে রিশ চলে গেছে। কি জানি মেয়েটা কি খায় কি পড়ে..এইটা বলেই মমতা ওয়াহিদ হো হো করে কেঁদে দেয় মেয়ের জন্য।

‘কেঁদোনা মমতা। তুমি অসুস্থ। চলো রুমে চলো।

‘মম আপনি অসুস্থ প্লিজ নিজেকে সামলান।

‘থাক রিলজেম তোমাকে আর তোমার মমের কথা ভাবতে হবেনা। এইটা বলেই শাহারিয়া ওয়াহিদ তার ওয়াইফ মমতা ওয়াহিদকে নিয়ে রুমে চলে যান।

১০.

‘এই রিশ দেখ দেখ ভার্সিটির সবাই তোর দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে।

‘ওফ মিসকাত আমার দিকে না তোর দিকে তাকিয়ে আছে। আসলে কি বলতো তোকে যা কিউট লাগছে এই শাড়ীটাতে যে কি বলবো।

“থাক থাক হয়ছে বইন আর বাঁশ দিসনা। অলরেডি অনেকগুলো বাঁশ দিয়ে ফেলছোস।

‘আরে মিসকাত আমি সত্যি বলছি।

‘শুন, সত্যি বলতে তোকেও অনেক কিউট লাগছে। আসলে তুইতো এমনিতেই সুন্দর আর আজকেতো বলে সেজেছিস তার জন্য ভার্সিটির সবাই দেখ কেমন হা করে তাকিয়ে আছে।

১১.

ভার্সিটির সামনে ৩টা ব্ল্যাক কালারের গাড়ি আর ৩ টা কার কালারের এ্যাশের মধ্যে গাড়ি এসে থেমেছে।

একটা গাড়ি থেকে রিশ আর স্বাদ বেরিয়ে এসেছে। জেইন চোখের সানগ্লাসটা খুলে ভার্সিটিটা পরখ করে একবার দেখে নিলো। আরেকটা গাড়ি থেকে রিলজোম আর তার বাবাইয়ের এসিস্ট্যান্ট আহিল এসেছে।

স্যার ওনি হলেন রিলজেম ওয়াহিদ মিস্টার শাহারিয়া ওয়াহিদদের একমাত্র ছেলে।

‘হাই মিস্টার ওয়াহিদ। আই এম জেইন মেহেরিয়া। সেহের মেহেরিয়ার ছেলে।

” হাই জেইন।

“স্যার চলুন যাওয়া যাক..

‘হুম আহিল চলো।

জেইন স্বাদের সাথে সাথে যাওয়াতে মিনমিনিয়ে বললো,

‘স্বাদ মিস্টার ওয়াহিদ না আসার কথা? ওনার ছেলে এসেছে কেনো?

‘জানিনা স্যার। হয়তো ওনার বাবা পাঠিয়েছেন।

১২.

এখন আপনাদের সামনে গান পরিবেশন করতে আসছেন..

” রিশ ওয়াহিদ।

এই নামটা শুনে রিশ চমকে উঠে। রিশ মনে মনে বললো, ‘আজব আমিতো কোনো গানে নাম দেয়নি তাহলে কে আমার নাম দিলো?

হঠাৎ দেখলো মিসকাত দুষ্টুমি ভঙ্গিতে হাসছে তার দিকে তাকিয়ে। রিশ বুঝে ফেলেছে যে মিসকাত নাম দিয়েছে। বার বার মাইকে ডাকছে রিশকে। তাই উপায়ন্তর না পেয়ে তাকে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে স্টেজে।

আর এইদিকে স্বাদ আর জেইন দুজনি অবাক। রিলজেম স্বাভাবিক থাকলেও। স্বাদ জেইনের কানে ফিসফিস করে বলে,

‘স্যার রিশ এইখানে পড়ে?

‘আমিওতো জানতাম না স্বাদ। ভাই এইখানে! বোনও গান গাইবে? যাক এখন দেখা যাক দুজন ঠিক কি কি রিয়াকশন দেখায়। এইটা বলেই জেইন বাঁকা হাসে। তার এই মেয়েটিকে জানার আগ্রহ না চায়তেই বেড়ে যাচ্ছে।

চলবে….

মেঘ রোদ্দুরের আলাপন পর্ব-০১

0

#মেঘ রোদ্দুরের আলাপন
#সূচনা পর্ব
#Writer:মারশিয়া জাহান মেঘ

১.

‘বিল পে কেউ এইভাবে করে? এনিওয়ে টাকাটা আমার হাতে দিন।

‘এই মেয়ে তুমি জানো? তুমি কার সাথে এতো রাগ দেখিয়ে কথা বলছো?

‘আমার এইসব দেখার দরকার নেই যে আমি কার সাথে কথা বলছি। দেখার বিষয় এইটা যে এইখানে অভদ্রতার পরিচয় সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে টাকাটা এইভাবে ছুঁড়ে টেবিলে ফেলে দিয়ে। ওনিতো টাকাটা আমার হাতেও দিতে পারতেন। কারণ আমি এইখানেই ছিলাম।

আর এইদিকে নিচের দিকে তাকিয়ে কোনো রকম রাগ কন্ট্রোল করছে সেইখানেই তাদের পাশে বসে থাকা তৃতীয় ব্যাক্তিটি।

‘ম্যানেজার ম্যানেজার…

‘ইয়ে…ইয়েস স্যার বলুন।

‘আপনাদের রেষ্টুরেন্টের মেয়ে ওয়েটারদের দেখি মুখে তেজের অভাব নেয়।

‘কি করেছে স্যার?

‘আমার স্যারের সাথে মিস বিহেভ করেছে আপনার এই ওয়েটার।

‘ওফ রিশ এইসব কি হচ্ছে? তুমি স্যারের সাথে মিস বিহেভ করেছো কেনো? তুমি জানো ওনি কে? টপ বিজনেস-ম্যান সেহের মেহেরিয়ার ছেলে জেইন মেহেরিয়ার।

‘স্যার ওনি কে এইসব আমার দেখার ইচ্ছে নেই। আমি এইখানে কাজ করি দায়িত্ব পালন করি। কিন্তু কারো নাম এটিটিউড দেখতে আসিনা। আমার যেমন দায়িত্ব এইখানে এসে প্রত্যেকটা কাস্টমারদের যত্ন সহকারে সেবা দেওয়া তেমনি ওনাদেরো দরকার আমাদের হাতে সুন্দর করে তার বিনিময় দেওয়া৷ ওনি খেয়ে দেয়ে বিল পে টা টেবিলে ছুঁড়ে ফেলে বলেছেন টাকাটা নিতে এইটা অবশ্য অন্যকারো কাছে অপমান জনক না হলেও আমার কাছে অপমান জনক। কথাগুলো বলেই রিশ সেইখান থেকে চলে যায়।

‘স্যার সরি।

‘ইটস ওকে ম্যানেজার সাহেব। তবে ওনাকে বলবেন নেক্সট টাইম যেনো আমার সামনে আর না আসে। জাস্ট না আসে।

এইটা বলেই জেইন উঠে চলে যায়। পেছনে যাচ্ছে তার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট স্বাদ।

‘স্বাদ….

‘ইয়েস স্যার, বুঝেছি স্যার আজকে বিকেলের মধ্যেই পেয়ে যাবেন।

২.

রিশ নেক্সট টাইম তুমি কোনো কাস্টমারের সাথে এমনভাবে কথা বললে তোমাকে এই চাকরি ছাড়তে হবে। আজকে তুমি যার সাথে মিস বিহেভ করেছো ওনি চাইলেই তোমাকে অনেক কিছু করতে পারতো। নেহাৎ ওনি নিজেকে কন্ট্রোল করেছে।

‘স্যার ওনি যেমন করেছেন আমিও ঠিক তেমনভাবেই ওনাকে বুঝিয়ে দিয়েছি কোনটা উচিৎ আর কোনটা অনুচিৎ। আর বাকি থাকলো আপনার চাকরি! চাকরি না থাকলে না থাকবে অন্য কোথাও নিয়ে নিবো চাকরি। তবে যেইখানে নিজের সেল্ফ রেসপেক্ট এর প্রায়োরিটি নেই সেইখানে রিশ ওয়াহিদ ও নেই…কথাটা বলেই সাইড ব্যাগটা নিয়ে চলে গেলো রিশ।

৩.

জেইনের গাড়ি থামে একটা বড় বাড়ীর সামনে। জেইনের দাদাভাই এই বাড়ীটা মার্বেল আকারের কিছু বিদেশী পাথর দিয়ে তৈরী করেছেন। রাজপ্রাসাদের থেকে কোনো দিক থেকে কম নয় বাড়ীটি। বাড়ীটির দুই পাশে ছড়ানো নানা বাহারের ফুল। যদিও এই বাগান টা সম্পূর্ণ জেইন নিজ দায়িত্বে করেছে।

জেইন বাড়ীর ভেতরে ঢুকতেই লাইন বাই লাইন দাঁড়িয়ে থাকা বডিগার্ডগুলো সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। জেইন ভেতরে ঢুকছে আর সবার হাতে একটা একটা করে নিজের ঘড়ি,সুট খুলে খুলে সবার হাতে দিচ্ছে। সবশেষে জেইন সাদা শার্টের বোতাম গুলো খুলতে খুলতে একটা রুমে যায়। সেইখানে একজন বয়স্ক মহিলা চোখে চশমা পড়ে উপন্যাস পড়ছে। জেইন মুচকি হেসে ডাক দেয়

‘গ্রেনি’

‘দাদুভাই এসেছো?

‘হুম গ্রেনি। তুমি কি করছো? ঔষধ খেয়েছো?

‘না মানে..দাদুভাই…

জেইন বুঝতে পেরেছে যে তার গ্রেনি ঔষধ খায়নি৷ তাই রেগে চিৎকার করে সব সার্ভেন্টদের ডাকে। সবাই দৌড়েঁ আসে। এই বাড়ীর প্রত্যেকটা মানুষ জেইনকে ভয় পায়। কারণ জেইন যেমন গম্ভীর তেমন রাগী। আবার জেইন একমাত্র ভয় পায় তার বাবাকে। আর ভালোবাসে বেশি তার গ্রেনিকে।

‘গ্রেনির ঔষধ দাওনি?

‘দাদুভাই ছেড়ে দাও ওদের। ওরাতো এনেইছিলো আমিই খায়নি।

‘কি হলো সবাইকে প্রশ্ন করেছিতো।

জেইনের চিৎকারে সব সার্ভেন্ট কেঁপে উঠে। একজন কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,

‘স্যা স্যার মানে আমরা এনেছিলাম ঔষধ কিন্তু দাদীমা খায়নি।

‘খাবেনা বললেই না খাইয়ে চলে যাবে তোমরা? যাও এইখান থেকে সবাই..জাস্ট আউট।

সবাই মাথা নিচু করে চলে যেতেই রেজিয়া মেহেরিয়া বললেন,

‘দাদু ভাই শুধু শুধু তুমি সবাইকে বকলে। আসলে ওদের কোনো দোষ ছিলোনা।

‘গ্রেনি ওদের দোষ ছিলোনা? তুমি খাবেনা বলেছো আর ওরা এইটাই মেনে নিলো? আর তুমি নেক্সট টাইম থেকে ঠিকমতো ঔষধ না খেলে আমি কিন্তু সত্যি আবার লন্ডনে চলে যাবো।

‘দাদু ভাই প্লিজ এমনভাবে বলোনা। তুমি ছাড়া এইখানে কেইবা আছে আমার? তোমার বাবাতো সারাদিন অফিস নিয়ে বিজি থাকে।

‘তাহলে বলো নেক্সট টাইম থেকে সবসময় ঠিকমতো ঔষধ খাবে।

‘আচ্ছা বাবা খাবো। এখন যাওতো ফ্রেশ হয়ে এসো আমরা দুজন একসাথে লাঞ্চ করবো।

‘ওকে গ্রেনি তুমি জাস্ট ৫ মিনিট ওয়েট করো আমি যাবো আর আসবো…এইটা বলে রিতা মেহেরিয়াকে একটু জড়িয়ে ধরে জেইন পা বাড়ালো নিজের রুমের দিকে।

৪.

রুমের লাইট টা অন করে সাইড ব্যাগটা টেবিলে রেখে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দেয় রিশ। সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে তার হাত পা অবশ হয়ে যায়। রিশ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখে। তারপর উঠে ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে রিশ দেখে বিছানায় বসে বসে ফোন টিপছে মিসকাত। মিসকাত রিশকে দেখে ফোনটা রেখে মুচকি হেসে বললো,

‘কখন এলি রিশ?

‘এইতো ১০ মিনিটের আপ হলো৷ আজকে তোর ক্যাফ তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে নাকি মিসকাত?

‘নারে। আসলে আজ আমার একদম ভালো লাগছিলোনা তাই তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়ে এসে পড়েছি।

‘মিসকাত কফি খাবি? দাঁড়া আমি নিয়ে আসছি।

রিশ মিসকাতের জবাবের অপেক্ষা না করে পা বাড়ালো কিচেনে। ক্ষনিক সময় পর ফিরে এলো দুই কাপ গরম ধোঁয়া উঠা কফি নিয়ে।

‘এই নে কফি।

‘আচ্ছা রিশ তোর ভালো লাগে? সব ছেড়ে এইভাবে থাকতে?

‘হুম অনেক ভালো লাগে। কারণ নিজের যোগ্যতা প্রুভ করতে অনেক মানুষকে অনেক কিছু করতে হয়। ধরে নে আমিও তাই করছি।

‘তোর মম প্রতিদিন যে কল দিয়ে কান্না করে তোর খারাপ লাগেনা একটুও?

‘খারাপ! আর আমি দুটো দু জিনিস মিসকাত৷ যদি আমি মম এর মায়ায় আটকে যায় তাহলে নিজে আউট অফ কন্ট্রোলে চলে যাবো। এন্ড আই ডন্ট ওয়ান্ট দিস।

‘তোর মতো আমার হলে আমি কখনোই এমন অবস্থায় থাকতাম না।

মিসকাতের এমন কথায় রিশ জবাব না দিয়ে একটু আলতো হাসে।

৫.

জেইনের সামনে একটা ফাইল রাখে স্বাদ। জেইন পিসি’র’ দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো,

‘Start telling all his details’

‘Okey Sir.

স্যার মেয়েটির নাম রিশ ওয়াহিদ। ডটার অফ শাহারিয়া ওয়াহিদ।

‘নেক্সট ‘

‘ওয়াহিদ ইন্ডাস্ট্রির ফিউচার Owner’

‘নেক্সট’

‘স্যার মেয়েটি তার ফ্যামিলি থেকে আলাদা থাকে। একটা মেয়ের সাথে একটা ফ্ল্যাট শেয়ারে দুজন একসাথে থাকে। আর রেস্টুরেন্টেে পার্ট টাইম জব করে। ভার্সিটির শেষ বর্ষের স্টুডেন্ট রিশ। আর তার সাথের মেয়েটির নাম মিসকাত৷ সেও একটা ক্যাফে জব করে।

‘কেনো?

‘স্যার মেয়েটির বাবার ধারণা যে মেয়েরা কিছুই পারেনা তাই তিনি তার মেয়ের থেকে তার ছেলেক প্রায়োরিটি বেশি দেয়।

‘তাহলে মেয়েটি ফিউচার Owner কিভাবে?

‘স্যার মেয়েটির বাবা মানে শাহারিয়া ওয়াহিদ মেয়েকে অনেক ভালোবাসেন। কিন্তু তিনি এই ধারণা কেনো পুষে রেখেছে জানিনা ‘যে মেয়েরা কিছুই পারেনা৷ তবে আমি ইনফরমেশন পেয়েছি রিশ ওয়াহিদ ইন্ডাস্ট্রির ফিউচার Owner’।

‘ওকে’ তুমি এখন আসতে পারো।

‘ওকে স্যার৷ আল্লাহ হাফেজ

আল্লাহ হাফেজ।

জেইন পিসি টা বন্ধ করে রেখে থুতনিতে হাত গুজে দিয়ে ভাবছে,’মেয়েটার বাবা মেয়েটাকে ভালোওবাসে আবার তুচ্ছ চোখেও দেখে?

স্ট্রেইন্জ।

৬.

In Wahid House….

রিলজেম তোমার জন্য আমার মেয়ে আমাকে ভুল বুঝে বাড়ি ছেড়েছে তবুও তোমার শান্তি হয়নি?

‘বাবা দেখুন। সবার সামনে আপনি দেখান যে আপনি আমাকে বেশি ভালোবাসেন কিন্তু সত্যিতো এইটাই যে আপনি রিশকে বেশি ভালোবাসেন। তাহলে আমি কিভাবে বিলিভ করি যে আপনার মেয়ে যোগ্য না হয়েও তাকে আপনি ফিউচার Owner’ করবেন না?

‘রিলজেম আমি তোমার কাছে জবাবদিহি দিতে বাধ্য নয়। আর শাহারিয়া ওয়াহিদ এতো নিচু মানসিকতা নিয়ে চলাফেরা করেনা যে যোগ্য না হয়েও যোগ্য বলবে।

‘বাবা রিশ বাড়ি ছেড়ে না যাক সেইটা আমিও চেয়েছিলাম। কিন্তু রিশ আর আপনারা কেনো বুঝতে চাইছেন না বাবা যে আমাকে যদি ইন্ডাস্ট্রির ফিউচার Owner’ না করেন তাহলে বন্ধু সমাজ আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। আর রিলজেম ওয়াহিদ কারো হাসির পাত্র হতে চায়না।

‘রিলজেম তুমি ভুলে যেওনা ছোট থেকে আমরাই তোমাকে বড় করেছি সমাজ বড় করেনি।

‘বাবা…

“যা সত্যি তাই বলেছি। নিজের মমকে দেখেছো একবারো? মানুষটা মেয়ে শোকে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে রয়েছে। তোমরা দুই ভাই বোন একে অপরের সাথী ছিলে। আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি ভাইয়ের জন্য বোন জেদ করে বাড়ী ছেড়ে দিবে। রিশ এর কথাতো বাদই দিলাম সে সবকিছু না ভেবে না বুঝে এতটুকু বুঝেই বাড়ী ছেড়েছে যে তার বাবাই তাকে তুচ্ছ ভাবে।

এইটা বলেই গম্ভীরতা নিয়ে শাহারিয়া ওয়াহিদ চলে গেলেন ড্রইং রুম থেকে।

রিলজেম একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

চলবে,,

শীতল অনুভবে তুমি পর্ব-১৫(শেষ পর্ব)

1

#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ১৫ এবং শেষ

সময় বয়ে চলে আপন ধারায়।কারো জন্য কেন?একটুক্ষণের জন্যও থামার অনুমতি নেই তার।সে গড়িয়ে যাবে।একটা দিন,একটা সপ্তাহ,একটা মাস,একটা বছর ঘুরে ঘুরে শেষ করে নতুন দিন বয়ে আনবে।
কুহুর জীবন থেকেও চলে গেছে একটা বছর।এই একটা বছর তার কাছে ১০ যুগ মনে হয়েছিল।সেইদিনের পর থেকে নাওয়া খাওয়া একদম ছেড়েই দিয়েছিল কুহু।তার আদ্র যে আর ফিরে আসে নি।কুহু অনেকটা ভেঙে পড়েছে।সে সত্যিই আদ্রকে শুরু থেকে আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলেছিল।কিন্তু সে বুঝে নি।আর আজ?আজ সে বুঝতে পারছে সেই শীতল অনুভূতি গুলো।কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গেছে।আদ্র যে সেসব শুনার জন্য আর নেই।
এই কয়দিনের মধ্যে ইহান আর ইকরার বিয়ে হয়ে গেছে।সবাই ঠিক আছে কিন্তু ঠিক নেই কুহু।আদ্র কুহুকে উলটপালট করে দিয়ে চলে গেছে।

গোধূলির পড়ন্ত বিকেলে নদীর পাড়ে হাতে মুখ ভর করে বসে আছে কুহু।শূন্য দৃষ্টিতে নদীর পানিতে তাকিয়ে আছে।গোধূলির আলোতে চিকচিক করছে মুক্তোর মতো পানিগুলো।আজ ঘরে তোরজোর চলছে।রুবিনার ভাই আসবে।যার সাথে ছোট থেকে কুহুর বিয়ে ঠিক।কুহু ব্যাপারটা শুনার পর আর নিজের মধ্যে নেই।সে আদ্র ছাড়া আর কাউকেই আপন করে নিতে পারবেনা।কখনোই না।কুহু ভাবছে এক বছর আগের কথা।এটা সেই দিন যেদিন আদ্র চলে গেছিল কুহুকে ফেলে।এই কয়দিনে হাসতে ভুলে গেছে কুহু।তার বাবা-মা ব্যাপারটা প্রথমে সন্দেহ করলেও পরে তাসনির বুঝানোয় গুরুত্ব দেয় নি।

“কেন চলে গেলেন আদ্র?কেন আমায় একা করে চলে গেছেন আপনি?আপনি নেই বলে অন্য কেউ আমায় নিজের করে নিচ্ছে।প্লিজ এভাবে অন্য কারো হতে দিবেন না আমায়।প্লিজ আদ্র!ফিরে আসুন।আমি অন্য কারো হতে চাই না।আমি আপনার হতে চাই আদ্র।আমি আপনার কুহুতান হতে চাই।আমি আদ্রের কুহুতান হতে চাই।”

আপন মনে বিড়বিড় করছে কুহু।তাসনি আর রুবিনা এসে তার পাশে বসল।রুবিনা বলল,

” কিরে!কি করছিস?আমরা কাজ করছি আর তুই এখানে বসে আছিস?”

কুহু সামনে দৃষ্টি রেখে বলল,

” এমনি বসে আছি।ভালো লাগছে না।”

” ১ বছর ধরে শুনে আসছি কথা-টা।কি হয়েছে টা কি তোর?”

” কিছু নাহ্!”

” আপু!আজ রুবিনা আপুর ভাইয়া আসবে।মানে আমাদের সবচেয়ে বড় ভাই।”

” তা-তো জানি।”

” উফ রে!তুই আমার ভাবী হবি?আমার বিলিভ’ই হচ্ছে না রে।হাহা!”

” উফ!চুপ করো আপু।যাকে চিনি না তাকে আমি বিয়ে করতে পারব না।”

” আরে বিয়ে কি এখন হয়ে যাচ্ছে নাকি?আস্তে আস্তে পরিচিত হবি।তারপর হবে প্রেম।”

” আপু!স্টপ প্লিজ।আমি কাউকেই বিয়ে করতে পারবো না।”

” কেন?আজও ইশানকে ভালোবাসিস নাকি?”

” নাহ্!”

” তাহলে?”

” উফ রুবি আপু!কুহু আপুকে একটি শান্তি দাও তো।আপু বিয়ের জন্য প্রস্তুত না।আগে তোমার বিয়ে হবে তারপর।”

” এহ্!আমি করবো না।”

” নোপ!এট ফার্স্ট ইউ!হিহি!”

” এইরে!আম্মু কুহুকে ডাকতে পাঠিয়েছে আর আমি গপ্পো জুড়ে দিয়েছি।এই!চল চল!”

” কেন?”

” আরে!ভাইয়াকে আনতে যেতে হবে তো।”

” আমি যাবো না।”

” কেন?”

” আমার ইচ্ছা।বড় আম্মুকে বলো আমি যাব না আমার ইচ্ছে হচ্ছে না।”

” হুম আমারো যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।” তাসনি বলল।

” আরে তোরা একটাও যাবি না তো আমি কি সেখানে ড্যান্স পারফরম্যান্স করতে যাব নাকি?”

” শুভ আর নিরবকে নিয়ে যাও।”

” ধ্যাত!”

রুবিনা বক বক কর‍তে করতে চলে গেল।তাসনি কুহুকে বলল,

” কি করবে এখন?”

” জানি না।আমি উনাকে বিয়ে করতে পারবো না।”

” হুম!পালিয়ে যাও আপু।”

” কি বলছিস এসব?রহমান বংশের মেয়ে এসব করতে পারে না তাসনি।”

” তাহলে কি করবে?আদ্র ভাইয়া আসবে না আর।নিজ দোষে আজ কপাল চাপড়াচ্ছো।এসবের জন্য দায়ী তুমি আপু।এখন এর মাশুলও তুমিই দিবে।বিয়ে করে নাও শিশির ভাইয়াকে।”

” উনার নাম শিশির?”

” হুম!শিশির রহমান।”

কুহু দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

” জানি না এর মাশুল আমি কিভাবে দেব।আদ্র কি আর ফিরে আসবে না?”

” হয়তো বা হয়তো না।”

” চল!”

দুজন মিলে হাটা ধরল।বাসায় পৌছাতেই দেখল হুরাদ্রি জাবিন দাঁড়িয়ে আছেন।তিনি বললেন,

” কিরে কুহু?তুই যাচ্ছিস না কেন?”

” ইচ্ছে করছে না বড় আম্মু।”

” কেন?”

” ভালো লাগছে না।আমি যেতে চাই না।”

” তাসনি তুই যাচ্ছিস না কেন?”

” আমারো ভালো লাগছে না বড় আম্মু।শরীরটা ভালো লাগছে না।”

” ওহ্!আচ্ছা ঠিক আছে।তোর মেঝ চাচা,ছোট চাচা,রুবিনা,শুভ আর নিরব যাবে।”

” ওহ্!”

কুহু রুমে ঢুকে গেল।তারপর মোবাইলটা হাতে নিল।সেইদিনে তুলা আদ্রের হাস্যজ্বল ছবিটা বের করল।সেই ছবি যেটা তাসনি তুলে দিয়েছিল।ক্রিকেট ব্যাট হাতে ইহানের সাথে কথা বলা অবস্থায়।কুহুর চোখ বেয়ে অশ্রুপাত হয়।কোথায় হারিয়ে গেছে সেই দিন গুলো যখন তারা ঝগড়া করতো।খেলতো হাসতো।
_______________

প্রায় ২ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে।তারা তাকে রিসিভ করেছে।এখন রওনা হয়েছে।কুহুর ভেতরটা ধুক পুক করছে।সে জানে না এখন তাকে কি ফেস করতে হবে।সে শুধু এটা জানে সে শিশিরকে কখনোই বিয়ে করতে পারবে না।যদিও করে নেয় তবু তাকে আপন করে নিতে পারবে না।কখনোই না।কুহুর খুব কান্না পাচ্ছে।গলা আটকে আসছে।সে ওই লোকটাকে দেখতে চায় না।যার জন্য আদ্রকে হারাতে হবে তাকে দে কিছুতেই দেখতে চায় না।লোকটা কেমন হবে?ভালো নাকি খারাপ?লোকটা কি তার উপর জোর জবরদস্তি করবে?তার উপর অধিকার খাটাবে?
এসব ভাবনা তাকে তাড়া করে বেরাচ্ছে।তাসনি এসে তার পাশে বসল।

” কি ভাবছো?”

কুহু কান্নায় ভেঙে পড়ল।কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল,

” আ..আমি আর পারছি না তাসনি।আমি ওই লোকটার নাম আর শুনতে পারছিনা।পারব না আমি ওই লোকটাকে বিয়ে করতে।আমি আদ্রকে ছাড়া…এই জায়গা কাউকে দিতে পারব না।”

” কি করবে বলো?আদ্র ভাইয়া হয়তো আর আসবে না।”

” হ্যাঁ জানি আসবে না।কারণ তাকে কষ্ট দেওয়ার মতো কথাটাই তো বলেছি।”

” মানে?কি বলেছো তুমি?”

” আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।”

” হোয়াট!আপু!তুমি?ছিহ্!কি করলে এটা?এর কারণেই চলে গেছে আদ্র ভাইয়া।তিনি জানেন তুমি আর তার হবে না।তুমি অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছো তাকে।এবার মাশুল দাও এর।”

কুহু শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বাহিরে।তাসনি তার দিকে চেয়ে থাকে।তার নিজের’ই খারাপ লাগছে কুহু আর আদ্রের এই অবস্থায়।কলিং বেল বাজল।তাসনি আর কুহু তা শুনতে পেল।তাসনি কুহুর দিকে তাকাল।কুহুর বুক ধরফর করছে।তাসনি তার হাত ধরে বলল,

” চলো!”

কুহু করুণ দৃষ্টিতে দেখল তাসনির দিকে।

” চলো আপু!এভাবে বসে বসে শোক পালন করে লাভ নেই।চলো!”

কুহু দাঁড়াল।তাসনি আর কুহু ডাইনিং রুমে এলো।কিন্তু দরজা খুলল না।কলিং বেল বেজেই চলেছে।এদিকে রোদেলা আহমেদ,হুরাদ্রী জাবিন আর আশা ওয়াহিদ ডাইনিং রুমে এলেন।রোদেলা আহমেদ বললেন,

” কি ব্যাপার দরজা খুলছিস না কেন?”

তাসনি আমতা আমতা করে বলল,

” আমরা খুলতেই যাচ্ছিলাম।”

কুহু আর তাসনি এক কোণে দাঁড়িয়ে রইল।হুরাদ্রী জাবিন দরজা খুলে দিলেন।হুড়মুড় করে শুভ আর নিরব ঢুকল হাতে আইসক্রিম নিয়ে।তারপর রুবিনা ঢুকল।কুহু কাঁপছে।
পরে ছোট চাচা ঢুকলেন লাগেজ হাতে।তারপর মেঝ চাচা মানে আহান রহমান শিশিরের সাথে কথা বলতে বলতে ঢুকলেন।তারপর ব্যাগপ্যাক হাতে সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটি ঢুকল।যাকে দেখে থমকে গেল কুহু আর তাসনি।হা হয়ে গেল দুজন’ই।দুজন অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে আছে ব্যাক্তিটার পানে।কেন যেন মনে হচ্ছে চোখটা তাদের ধোঁকা দিচ্ছে।অস্ফুট স্বরে কুহু বলে উঠল,

” আদ্র!”

হ্যাঁ!ব্যাক্তিটা আদ্র’ই ছিল।আহান রহমানের সাথে কথা বলতে বলতে ঢুকছিল।অবশ্য সে বলছে না।আহান রহমান এটা সেটা জিজ্ঞাস করছেন আর সে উত্তর দিচ্ছে।কিন্তু!আদ্র এখানে কেন?শিশির কোথায়?
তাসনি হা করে তার দিকে তাকিয়ে বলল,

” এ,,এটা?এক্টর ভাইয়া?”

কুহু কেঁপে উঠে আদ্রের মুখশ্রী দেখে।আগের মত’ই তার চেহারার বেহাল অবস্থা।শুকিয়ে গেছে বেশ।আদ্র ঢুকতেই হুরাদ্রী জাবিন গিয়ে আদ্রকে জড়িয়ে ধরল,

” বাবা!কেমন আছিস?জানিস কত্ত মিস করেছি তোকে?”

আদ্র হেসে বলল,

” হুম জানি তো!আম্মু আমায় অনেক মিস করেছে।”

” জানিস’ই তাহলে আসিস নি কেন এতদিন?ফুফুর বাড়িটা এত মধুর হয়ে গেল?”

” আরে আম্মু!এসে তো গেছি তাই না?তবে?তোমার অসুখের কি হলো?মেডিকেয়ার হয়েছে?”

” আরে আমার ওষুধ হলি তুই।”

” তার মানে মিথ্যা বলেছো?”

” হাহা!আচ্ছা আয় ফ্রেশ হয়ে কিছু খা।রেস্ট নে।”

আদ্র রোদেলা আহমেদ আর আশা ওয়াহিদ এর সাথে কুশল বিনিনয় করে ভালোমন্দ জিজ্ঞাস করল।কুহু আর তাসনি এখনো হা করে তাকিয়ে আছে।তাসনি বলল,

” আমায় একটা চিমটি দাও তো।”

কুহু হাবা হয়ে তার মাথায় চাপড় দিল।তাসনি বলল,

” ইট’স নট এ ড্রিম।ওহ্ মাই গশ!”

হুরাদ্রী জাবিন,আশা ওয়াহিদ আর রোদেলা আহমেদ কিচেনে চলে যান আদ্রকে রুমে যেতে বলে।আর আহান রহমান আর জাওয়াত রহমান ফ্রেশ হতে গেলেন।এবার আদ্রের চোখ পড়ল কোণে দাঁড়িয়ে থাকা কুহু আর তাসনির দিকে।আদ্রর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল যেমনটি হয়েছিল তাসনি আর কুহুর ক্ষেত্রে।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল কুহুর দিকে।তার ভেতরটা কেঁপে উঠল কুহুর চেহারা দেখে।কি হাল হয়েছে মেয়েটার?চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।চেহারা শুকিয়ে গেছে।অধর দুটোও শুকিয়ে গেছে।এই মুহুর্তে দুজন দুজনকে দেখে কি রিয়েকশন করবে বুঝতে পারছেনা।তাসনি চিল্লিয়ে ‘এক্টর ভাইয়া’ বলে দৌড়ে আদ্রকে জড়িয়ে ধরল।আদ্র হতভম্ব হয়ে সেও তাসনিকে জড়িয়ে ধরে।

” ভাইয়া!কোথায় ছিলেন আপনি?জানেন আপনার সাথে কত্ত যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি?নাহ্ আপনি জানবেন কি করে?আপনি তো আমাদের ছেড়ে ভালোই ছিলেন ওই পাড়ে।”

আদ্র কিছুক্ষণ তাসনির দিকে তাকিয়ে রইল।ক্ষীণ হাসল।তারপর বলল,

” ওরে বাবারে!বোনটা বুঝি বেশ রাগ করেছে?”

” হুম খুব।”

” শেষে তুইই আমার চাচাতো বোন?আমার তো বিলিভ’ই হচ্ছে না।”

” আর আপনি আমাদের শিশির ভাই?কিন্তু আপনার নাম তো আদ্র তাই না?”

” আগে আমাকে আপনি বলা বন্ধ কর।হুম আমার নাম শিশিরও আদ্রও।”

” মানে?”

” শিশির রহমান আদ্র আমার নাম।”

” ওয়াও!হোয়াট এ কো-ইন্সিডেন্ট?”

” হুম।”

তারপর আদ্র কুহুর দিকে তাকাল।কুহু এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে হতভম্ব হয়ে।সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না আদ্র ফিরে এসেছে।

” ঠিক আছে।তুই যা।আমি ফ্রেশ হয়ে নিই।”

” হুম!”

আদ্র কুহুর দিকে একবার তাকিয়ে ব্যাগ নিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।কুহু ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল তার যাওয়ার দিকে।মনে মনে বলল,

” এখনো অভিমান জমে আছে আমার উপর?ভাঙবে না এই পাহাড় সমান অভিমান টা?”

তাসনি কুহুর দিকে তাকাল।তার কাছে গিয়ে বলল,

” এটা কি ছিল আপু?শেষ আদ্র ভাইয়াই আমাদের চাচাতো ভাই?আর..আদ্র ভাইয়া ফিরে এসেছে?”

” হুম ফিরে এসেছে।তবে নতুন আদ্র।আগের আদ্রের সাথে এই আদ্রের অনেক তফাৎ।”

” হয়তো ভাইয়া তোমাকে ইগনোর করছে এই কারণে যে তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো।এটা জেনে।”

” হুম জানি।”

” মানিয়ে নাও।”

কুহু দীর্ঘশ্বাস ফেলে।তারপর ধিমিধিমি পায়ে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেল।বিছানায় শুয়ে পড়ল।চোখ বেয়ে অনর্গল অশ্রুপাত শুরু হলো।সে কি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে?
________________

প্রায় ৭ টা দিন কেটে গেছে।আদ্র কুহু কেউই একে অপরের সাথে টু শব্দ টি করে কথা বলেনি।কুহু খুব কষ্ট পায়।আদ্র কি এখনো তার উপর অভিমান করে আছে?
এদিকে আদ্রর ভাবনা টা-ও প্রায় সেইম।কুহু কি আসলেই অন্য কাউকে ভালোবাসে?তবে চেহারার এই হাল কেন?আর তার সাথে কি একটু কথা বলা যায় না?
_________________

খানিকটা চোখ লেগে এসেছিল কুহুর।হঠাৎ মাথায় কারো কোমল স্পর্শ পেল।চক্ষুযুগল খুলে দেখল আশা ওয়াহিদ তার মাথার কাছে বসে আছে।

” কি হয়েছে আম্মু?এই অবেলায় শুয়ে আছো কেন?”

কুহু হেসে বলল,

” এমনি আম্মু ভালো লাগছিল না।”

” আসো ডিনার করবে।”

কুহু লাফিয়ে উঠল।

” ডিনার!”

” হুম।”

” কিন্তু…আমি তো সন্ধ্যায় শুয়েছিলাম।এত বেলা হয়ে গেল?আমায় ডাকলে না?”

” আমি জানতাম নাকি?”

” আচ্ছা চলো।”

আশা ওয়াহিদ বেরিয়ে গেলেন।কুহু মুখ ধুয়ে নিল।ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে বের হলো।ডাইনিং রুমে।যেতেই দেখল সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে।সাথে আদ্রও।কুহু তার দিকে এক নজর ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার সোজাসুজি একটা চেয়ারে বসে পড়ল।

” কি ব্যাপার আম্মু?এই অসময়ে ঘুমাচ্ছিলে কেন?”

কুহু একগাল হেসে বলল,

” ও এমনি বড় আব্বু।মাথা ব্যাথা করছিল তাই।”

সবাই খাওয়া শুরু করল।আদ্র এক নজর কুহুর দিকে তাকাল।কুহু নিচের দিকে তাকিয়ে প্লেটে আঁকিবুঁকি করছে।তাসনি এক নজর তাদের দিকে তাকাল।মন টা বিষন্নতায় ভরে গেল তার।এই দুটো কখনোই কি এক হবে না?
কুহু কয়েক লোকমা খেয়ে উঠে পড়ল।হুরাদ্রি জাবিন বললেন,

” আরে আরে কুহু কি করছিস?”

” কি করছি মানে?”

” না খেয়ে উঠে যাচ্ছিস কেন?”

” খেয়েছি তো!”

” আমার মাথা খেয়েছিস।এসব কি?সব তো রয়ে গেছে।”

” খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না বড় আম্মু।”

” কেন?”

কুহু একবার আদ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,

” ভালো লাগছে না।”

তারপর দ্রুত সেই জায়গা প্রস্থান করল।আদ্র কুহুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

খাওয়া দাওয়া শেষে আদ্র ছাদে গেল।কিন্তু ছাদে গিয়েই দেখল কুহু আগে থেকেই ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।আদ্র তার দিকে একবার তাকিয়ে অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়াল।কুহু এখনো জানেনা যে আদ্র ছাদে এসে দাঁড়িয়েছে।মৃদু বাতাস বয়ে যাচ্ছে।রমণীর খোলা চুলগুলো উড়ছে।আদ্র নিজেকে সামলাতে পারছে না।গিয়ে কুহুর চুলগুলো বেঁধে দিল।কুহু চমকে গেল।তাড়াতাড়ি পেছন ফিরল।আদ্রকে দেখে একটু না অনেক বেশিই অবাক হলো।আদ্র কিছু না বলে আবারো অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়াল।কুহু কিছুই বুঝল না।কিছুক্ষণ হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আদ্রের দিকে।আদ্র মোবাইল স্ক্রল করতে ব্যস্ত।কুহু সামনে তাকাল।তারপর সামনে তাকিয়েই বলল,

” চুল বেঁধে দিলেন কেন?”

আদ্র কিছুক্ষণ চুপ থেকে মোবাইল চোখ রেখেই বলল,

” আশেপাশের বিল্ডিং এ অনেক ছেলেই আছে।তাদের চুল দেখানো টা রহমানদের মানায় না।”

কুহু কিছু বলল না।সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে।নিরবতায় কেটে যায় কিয়ৎক্ষণ।আদ্র চলে যেতে নিলেই কুহু তার দিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে বলে উঠল,

” দাঁড়ান!”

আদ্র থমকে দাঁড়াল।কুহুর দিকে ফিরল।কুহু এখনো চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।তারপর আস্তে আস্তে অক্ষি দুটো খুলল।অধর দুটো ভীষণভাবে কাঁপছে।সাথে চোখের পাপড়িগুলোও।আদ্র নেশালো চোখে তাকিয়ে থাকে তার এই মুখটার দিকে।কুহু তার কাছে এলো।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,

” কুহুতানকে…ভুলে গেছেন?”

আদ্র থমকে যায়।কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে বলল,

” মনে রাখি বা না রাখি এতে কার’ই বা কি?”

কুহু ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে রইল।ভাঙা গলায় বলল,

” আ..আমার তো অনেক কিছু!”

আদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকাল।

” কেন?তোমার কি?তোমার তো কিছুই হওয়ার কথা না।”

কুহুর চোখ বেয়ে এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।আদ্র তা দেখে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেল।তার কুহুর কান্নাটা সহ্য হচ্ছেনা।

” কান্না থামাও।”

কুহু ভাঙা গলায় বলল,

” আ..আমি ক..কোথায় কাঁদছি?”

আদ্র কিছু না বলে চলে গেল।কুহু কান্নায় ভেঙে পড়ল।নিচে বসে পড়ল।আজ খুব কান্না পাচ্ছে।নিজেকে সামলানো টা ভীষণ কষ্টকর তার কাছে।কান্নামিশ্রিত ক্ষীণ স্বরে বলতে লাগল,

” কেন আপনাকে ভুলতে পারছিনা?কেন আপনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিনা?ইশানের জন্য তো কখনোই আমার এমন লাগে নি।তাহলে আপনার জন্য কেন?কেন বিষাক্ত জীবনটাতে এলেন?কেন আবার চলে গেলেন?ফিরিয়ে দিয়েছি বলে চলে যেতে হবে?ফিরে এসেছেন তা-ও নতুন হয়ে?আসতেন না আর।কেন এলেন এমন নতুন আদ্র হয়ে?আগের ভাদ্র হয়ে আসতে পারলেন না?কেন?যদি না-ও পাই তো ভুলতে চাই আপনাকে।কিন্তু আমি ভুলতে পারছিনা।আমি আপনাকে ভুলতে পারছি না কেন?ইশানকে তো ভুলেই গেছি আপনাকে কেন পারছিনা?”

” কারণ ইশান মোহ ছিল।কুহুতানের আদ্র মোহ নয় ভালোবাসা ছিল।”

আচমকা আদ্রের গলা পেয়ে কুহু কান্না থামিয়ে উপরে তাকাল।আদ্র তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আদ্র কুহুকে টেনে তুলল।পূর্বের ন্যায় ফিঁচেল গলায় বলল,

” মনের ভাবটা প্রকাশ করতে পারলেনা?কেন একটা বছর নিজেও কষ্ট পেলে আমায়ও কষ্ট দিলে বলো?জানো?এই কয়টাদিন আমি কিভাবে কাটিয়েছি?জানার চেষ্টা করেছো বলো?জানো যখন তুমি বললে তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো তখন আমার কেমন লেগেছিল?নিজের ভেতরটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছিলো।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যখন এখানে আমার অস্তিত্বই নেই তো আমি এখানে থেকে কি করব?আমি আগের জায়গায় চলে গেছি।আর এর মাঝে আম্মু অনেকবার চলে আসতে বলেছে কিন্ত আমি আসি নি শুধু তোমার জন্য।যে তোমাকে আমি অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারব না।তার উপর আম্মু বলেছে আমার চাচাতো বোনের সাথে আমার বিয়ে ঠিক।এটা শুনে আমি আর আসবোই না পণ করে নিয়েছিলাম।আমার পক্ষে কুহুতানকে ছাড়া আর কাউকে মেনে নেওয়া সম্ভব না।কিন্তু আম্মু আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে নিয়ে এসেছে।এসেই জানতে পারি সেই কাজিন আর কেউ নয় তুমি।জানো এটস শুনে কত্ত খুশি হয়েছিলাম?কিন্তু খারাপ লেগেছিল তুমি তো অন্য কাউকে ভালোবাসো।কিন্তু সেইদিন তাসনি বলার পর থেকে শুধু তোমার বলার অপেক্ষায় ছিলাম।আমি কথা বলছি না বলে কি তুমিও বলবে না?”

কুহু অশ্রুসিক্ত নয়নে আদ্রের আঁখিদুটির দিকে তাকিয়ে রইল।মাথা নিচু করে কান্না টা লুকানোর অনেক চেষ্টা করল।তবু ফুঁপিয়ে কেঁদে দিল।আদ্র বলল,

” কান্না থামাও কুহু প্লিজ।”

কিন্তু কুহু কান্না থামায় না।

” কুহু প্লিজ আমি সহ্য করতে পারছিনা।”

কিন্তু সে থামল না।সমান তালে শব্দ করে কেঁদে চলেছে।আদ্র তার বাহু ঝাকিয়ে বলল,

” কুহুতান থামো!”

কুহু কান্না থামিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল।আদ্র মোহনীয় কন্ঠে বলল,

” ভালোবাসি কুহুতান।অনেক ভালোবাসি।কারণ আমার প্রতিটা #শীতল_অনুভবে_তুমি।শুধুই তুমি ছিলে আর থাকবে।”

~সমাপ্ত~

শীতল অনুভবে তুমি পর্ব-১৪

0

#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ১৪

” কুহু দাঁড়া কি করছিস তুই?কুহু!”

ইকরা অনেক ডাকল কিন্তু কুহু থামল না।আদ্র ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।সে বুঝতে পারল না কুহুতান তাকে কেন রিজেক্ট করলো।তার মানে কি সে এখনো ইশানকেই ভালোবাসে?আদ্র কি করবে ভেবে পায় না।ইহান তার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

” তুই হাল ছাড়িস না আদ্র।তুই পারবি।”

আদ্র মাথা নাঁড়ায়।তারপর সে চলে যায়।ইহান বুঝতে পারল সে কষ্ট পেয়েছে।
এদিকে কুহু বাসায় পৌছে গোসল করে নিল।তারপর বিছানায় বসে মোবাইল স্ক্রল করতে থাকে।তখন’ই তাসনি প্রবেশ করল।

” কি ব্যাপার আপু?আজ তাড়াতাড়িই ফিরে এলে।”

” আরে তুই জানিস না?আজ শুভ নববর্ষ।”

” ওহ্!তাই স্কুল বন্ধ দিয়েছিল?ধ্যাত!তোমাকে না-ও করতে পারলাম না।থাক গে!অনুষ্ঠান হয়েছে নাকি?”

” হুম!”

” এক্টর ভাইয়া এসেছিল?”

আদ্রের কথা আসতেই কুহুর মনে পড়ে যায় একটুক্ষণ আগের কথা।ভাবতেই কেমন যেন লাগল।সে কেন রিজেক্ট করল তা সে নিজেই জানে না।

” কি হলো আপু কোথায় হারিয়ে গেলে?”

কুহু বলল,

” ন,নাহ্!এমনি।”

” আরে বলো না।আদ্র ভাইয়া এসেছিল?”

” হুম!”

” আহ্!কি করলে ওখানে?আচ্ছা শুনেছি ইকরা আপুর রিং সিরেমনি হয়ে গেছে ইহান ভাইয়ার সাথে?”

” হুম!কিন্তু কোত্থেকে শুনলি?”

” আরে আদ্র ভাইয়াই বলল।”

” উনার সাথে তোর আবার কবে দেখা হলো?”

” আজ সকালেই!”

” সকালে?কোথায়?”

” আমি একটু হাটতে গেছিলাম।তখন।”

” ওহ্!”

কুহু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” তুই যা তাসনি।আমি একটু ঘুমাবো।”

” এমা!এই টাইমে কিসের ঘুম?”

” আহ্!যা!”

” আচ্ছা!গুড নাইট!থুক্কু গুড আর্লি নুন।”

বলেই তাসনি প্রস্থান করল।কুহু শুয়ে পড়ল।কিন্তু ঘুম নেই চোখে।বার বার আদ্রের ডিসেপয়েন্টেড মুখ টা চোখের সামনে ভাসছে।সে কি ভুল করেছে?কিন্তু সে তো এমন কিছু চায় নি।তাহলে?কি হচ্ছে এসব তার সাথে?কুহু অনেক ঘুমানোর চেষ্টা করল কিন্তু পারছে না।তার এমন কেন মনে হচ্ছে?
____________________

পরদিন…….

ভার্সিটি পৌছেই আদ্রের মুখোমুখি হয় কুহু।কেঁপে উঠে তার মুখশ্রী দেখে।আঁখি দুটি লাল টুকটুকে হয়ে আছে।আদ্র বলল,

” কেমন আছো কুহুতান?”

কুহু কিছু বলল না।পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই আদ্র বলল,

” ইগনোর করছো?”

কুহু এবারো কিছু বলল না।পাশ কাটিয়ে চলে গেল।আদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলল।কেন কুহু এমন করছে তা তার অজানা।কুহু নিজেই জানে না সে এমন কেন করছে।
ভাবনার মাঝে কেউ তার কাঁধে হাত রাখল।পাশ ফিরে দেখে ইকরা।

” ভাইয়া!প্লিজ মন খারাপ করবেন না।সহ্য হচ্ছে না আপনাদের ব্যাপারটা।”

আদ্র ছলছল চোখে হেসে বলল,

” কেন রে?তুইও তো এতদিন এই কাজটাই করে এসেছিস।ইহানকে ইগনোর করেছিলিস।”

” ওটা-তো আপনার বন্ধু মেয়েদের সাথে ডলাডলি করছিল তাই।কিন্তু আপনাকে কেন কুহু ইগনোর করছে বুঝতে পারছিনা।প্লিজ ভাইয়া চোখের পানি গুলো ঝড়াবেন না প্লিজ ভাইয়া।”

” হুম!জানিনা কেন আমায় এমন করছে।তবে আমি জানি তার মাঝে একটু হলেও আমার অস্তিত্ব টা আছে।”

” চেষ্টা চালিয়ে যান ভাইয়া।”

” হুম!”

আদ্র ক্লাসে চলে গেল।কুহু বসে আছে।ভাবনায় বিভোর সে।পাশ থেকে বুশরা বলল,

” আজও আদ্র ভাইয়াকে রিজেক্ট করেছিস?”

কুহু তার দিকে তাকাল কিন্তু কিছু বলল না।নাবিলা বলল,

” কি হয়েছে কুহু এমন করছিস কেন তুই?আদ্র ভাইয়াকে কেন ইগনোর করছিস?উনি তোকে ভালোবাসে তুই বুঝতে পারছিস না?”

কুহু দু’হাত দিয়ে কপাল আর মাথা চেঁপে ধরে বলল,

” উফ!চুপ কর তোরা প্লিজ!আল্লাহ্ এর দোহাই লাগে চুপ কর প্লিজ।”

বুশরা,নাবিলা আর ইকরা চুপ করে গেল।শেষে ইকরা একটা কথা’ই বলল,

” সময় থাকতে গুরুত্ব দে কুহু।হারিয়ে গেলে আফসোস করা ছাড়া কিছুই থাকবে না তোর।”

কুহু কিছু বলল না।ক্লাসে একদমই মন বসছে না।কুহু ভেবে পাচ্ছে না কি করবে।
________________

প্রায় ১ মাস কেটে গেছে।এই কয়দিনে আদ্র অনেক মানানোর চেষ্টা করেছে কুহুকে।কিন্তু বরাবরের মত’ই ইগনোর করেছে কুহু।কিন্তু কুহুর অবস্থা বলা বাহুল্য।এই কয়দিন তার রাত নির্ঘুমই কেটেছে বলা যায়।তার কেন যেন কিছুই ভালো লাগে না।কেন?সে বুঝছে না কিছুই।খাওয়া দাওয়াও হয় না আজকাল।তাসনি ব্যাপারটা খতিয়ে দেখেছে বিষয়টা কিন্তু কিছুই জানতে পারেনি।

আদ্র কুহুকে একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে গেল চেপে ধরে।কুহু ছাড়া পেয়ে কর্কশ গলায় বলল,

” কি সমস্যা আপনার?এভাবে নিয়ে এসেছেন কেন আমাকে?”

” কুহুতান!এমন কেন করছো বলো?আজও ইশানকে ভালোবাসো?”

” নাহ্!তার মতো ধোঁকাবাজকে ভালোবাসবো বলে আপনার মনে হয়?”

” তাহলে আমায় কেন ইগনোর করছো?”

” দেখুন আমি পারব না আপনাকে গ্রহণ করতে।”

” কেন পারবে না?”

” আমি জানি না।আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।শুনেছেন আপনি?”

কথাটা শুনে আদ্রর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল।আদ্র বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।তার মানে?সে পারলো না তার কুহুতানের মনে জায়গা করে নিতে।সে পারল না?

” দয়া করে আমার পিছু ছেড়ে দিন প্লিজ।”

” ক,কে সে জানতে পারি?”

” কেন জেনে তাকে মারতে যাবেন?”

” আমাকে কি তোমার এমন মনে হয় কুহুতান?”

” আহ্!প্লিজ স্টে এউয়ে ফ্রম মি প্লিজ।”

কুহু চলে গেল।আদ্র মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।তার আর কোন উপায় নেই কুহুকে যেতে দেখা ছাড়া।রোবটের মতো হেটে হেটে চলে এলো হোস্টেলে।

কুহু বাসায় পৌছে মুখ হাত ধুয়ে নিল।কেন যেন খুব কান্না পাচ্ছে।আপনা-আপনি চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।পেছন ফিরতেই তাসনির মুখোমুখি হলো।তাসনি ভ্রু কুঁচকে বলল,

” তুমি কাঁদছো?”

” ন,না তো!”

” আমি জানি তুমি কাঁদছো।কেন কাঁদছো?”

” তাসনি সর!আমায় যেতে দে।”

তাসনি সরে দাঁড়াল।কুহু গিয়ে শুয়ে পড়ল।তাসনি পাশে বসল।

” আপু!আজ আমি না জানা পর্যন্ত তোমায় শান্তি দেব না আমি পণ করে নিয়েছি।বলো কি হয়েছে তোমার?চেহারার হাল এমন কেন?মনে হয় রাতে ঘুমাও না।আজকাল খাওয়া দাওয়াও প্রায় ছেড়ে দিয়েছো।কেন?”

” এমনি খেতে ইচ্ছে হয় না।”

” উহু!শুধু এটুকুই নয়।আদ্র ভাইয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাস করলে তুমি এরিয়ে চলো।এখনো তুমি কাঁদছিলে।আপু বলো!নয়তো আমি তোমাকে বড় আম্মুকে কিছু একটা বলে ফাঁসিয়ে দেব।তোমার আর ইশান ভাইয়ার বিষয়টা ফাঁস করে দেব হুম।”

কুহু লাফিয়ে উঠল।এই মেয়ের বিশ্বাস নেই।অনেক ভাবে কথা বানাতে পারে এ।

” আপু বলো প্লিজ।এতে মনের ভারাক্রান্ত ভাবিটা কমবে।চাপটা কমবে।বলো!”

কুহু ঠোঁট চেপে কিছুক্ষণ বসে রইল।তারপর এক এক করে সব ব্যক্ত করল।তাসনি সব শুনে হা করে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ।তারপর মুখ কুঁচকে হতবাক ভান টেনে বলল,

” তুমি ভাইয়াকে রিজেক্ট করেছো?কেন আপু?”

” আমি জানিনা।”

” জানো না মানে?ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে আপু।আর তুমি কিনা?আপু কেন করছো এমন বলো-তো?তুমি এখনো ওই কটবেলটা কে ভালোবাসো?”

” নাহ্!”

” তাহলে?কেন রিজেক্ট করছো ভাইয়াকে?”

” আমি জানি না তাসনি।আমি জানি না।আমি তার থেকে এমন কিছু আশা করিনি।কখনোই করিনি রে।”

” তাহলে তুমি কাঁদছো কেন?আদ্র ভাইয়াকে আপন করে নাও।”

” আমি পারব না তাসনি।”

” কেন পারবেনা?তাহলে এভাবে নিজেকে কষ্ট দিয়ে মারবে?দুটি অশান্ত মনকে তুমি নিজেই শান্ত করতে পারো আপু।প্লিজ আপু ভাইয়াকে মেনে নাও।”

কুহু চুপ করে রইল।তাসনি তার হাত ধরে বলল,

” আপু!তুমি হয়তো আদ্র ভাইয়াকে ভালোবাসো।কিন্তু তুমি অনুভূতি গুলো বুঝতে পারছোনা।”

কুহু কিছু বলল না।তাসনি তাকে আবারো একি কথা বলে চলে গেল।
_______________

” ভাইয়া!আম্মু আপনার জন্য দিয়েছে…”

কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় ইকরা।তার আম্মু আদ্রর জন্য মুরগীর মাংস পাঠিয়েছিল ইকরার দিয়ে।রুমের দরজা খুলা ছিল তাই ঢুকে কথাটা বলতে গিয়েও সম্পুর্ণ করতে পারল না।আদ্র কাপড়-চোপড় গুছাচ্ছে।চারদিকে লাগেজের ছড়াছড়ি।

” এ,,এসব কি ভাইয়া?”

” ওহ্ ইকরা?”

” এসব কি?”

” ভালো থাকিস ইকরা।ইহানকে কখনো কষ্ট দিস না।প্লিজ!”

” কিন্তু এসব কেন বলছেন ভাইয়া?”

” কারণ এসব বলার জন্য আর থাকবো না।”

” ম,মানে?”

” চলে যাচ্ছি।”

” চলে যাচ্ছেন মানে?কোথায়?”

” ইউ এস!”

ইকরার হাত থেকে বাটি-টা পড়ে গেল।আদ্র তা দেখে বলল,

” আরে আরে!কি করলি এটা?সব ফেলে দিলি তো?এগুলো তো ইহানকে খাওয়াতে পারতি।”

” ভাইয়া এসব কি বলছেন?চলে যাবেন মানে?কেন যাবেন?আপনি তো পার্মানেন্টলি চলে এসেছেন।তাহলে?”

” এখানে থাকাটা আমার দ্বারা অসম্ভব ইকরা।আমি পারব না কুহুতান এর অবহেলাগুলো নিতে।দূর থেকেই তাকে ভালোবেসে যাবো।তবু সামনে থেকে তার ইগনোর করাটা আমি নিতে পারব না।ওই দূর দেশের বিষাক্ত মুহুর্তগুলোই খুব ভালো কুহুর অবহেলা থেকে।”

ইকরার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল,

” প্লিজ ভাইয়া!এমন করবেন না।প্লিজ ভাইয়া যাবেন না।এভাবে কাউকে না বলে আপনি কাউকে না বলে যেতে পারেন না ভাইয়া।প্লিজ!”

আদ্র ভাঙা গলায় বলল,

” আ’ম সরি ইকরা!আ..আ’ম সো সরি।”

বলেই লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।ইকরা অনেক আটকানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু সে কারে উঠে পড়ল।ইকরা হতভম্ব হয়ে ছলছল নয়নে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল।তারপর কিছু মাথায় আসতেই দ্রুত দৌড় লাগাল কুহুর বাসার উদ্দেশ্যে।
জানালার পাশে বিছানায় বসে বাহিরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কুহু।দৃষ্টি তার শূন্য।
কলিং বেল বাজল।তাসনি দরজা খুলে দিতেই ইকরা হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করল।তাসনি অবাক হয়ে বলল,

” ইকরা আপু তুমি এই সময়?”

” তাসনি!কুহু কোথায়?”

” আছে তো কিন্তু কেন?”

” আমার সাথে চলো!”

ইকরা কুহুর রুমের দিকে ছুটে গেল।এভাবে ইকরাকে রুমে প্রবেশ করতে দেখে কুহু খানিকটা ভড়কে গেল।

” ক,কি হয়েছে?” কুহু বলল।

ইকরা ছল ছল চোখে ভাঙা গলায় বলল,

” অনেক কিছু হয়ে গেছে রে কুহু।”

” কি হয়েছে?”

” আদ্র ভাইয়া!”

কুহু লাফিয়ে উঠল।

” কি হয়েছে আদ্রের?”

” আদ্র ভাইয়া নেই।চলে গেছে।”

” চলে গেছে মানে?”

” হ্যাঁ!ইউ এস চলে যাচ্ছে।যা আটকা ভাইয়াকে।একমাত্র তুইই পারবি রে।”

” হোয়াট!হ্যাঁ আপু!যাও প্লিজ যাও!”

কুহু দ্রুত ওড়না টা নিয়ে ছুটে গেল।সবাই নিজেদের রুমে।তাই এসবের খেয়াল নেই তাদের।
কুহু প্রাণপনে ছুটছে।কেন যেন মনে হচ্ছে বড় কিছু তার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।পেছন থেকে তাসনি আর ইকরা চিল্লাচ্ছে,

” কুহু দাঁড়া!”

” ইকরা আপু একটা গাড়ী নাও।” তাসনি বলল।

ইকরা একটা সি এন জি নিল।তারপর কুহুর দিকে গেল।কুহুকে উঠতে বলল কিন্তু তার হুশ নেই।সে প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে।উপায় না পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে তাকে জোর করে টেনে তুলল ইকরা।

এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে আদ্র।ঢুকবে কি ঢুকবে না ভাবছে।সে-কি একটু অপেক্ষা করবে তার কুহুতানের জন্য?যদি সে তাকে এসে আটকায়?

নিজের ভাবনায় নিজেই হাসল আদ্র।কি আশা করছে সে?,আর কার থেকেই বা আশা করছে।তবু একবার পেছন ফিরে দেখল।বরাবরই ডিসেপয়েন্টেড সে।দীর্ঘশ্বাস ফেলল আদ্র।তারপর লাগেজ আর ব্যাগ প্যাক উঠিয়ে ঢুকে গেল।কিন্তু হঠাৎ তার কর্ণকুহরে পৌছাল কুহুতানের চিৎকার।সে ডাকছে,

” আদ্র!”

কিন্তু সে জানে।এটা তার আশা মাত্র।তার ইচ্ছা।হাসল আদ্র।তারপর ঢুকে গেল।কিন্তু সে জানতো না যে এটা তার ভুল ছিল না।এটা সত্যিই ছিল।হ্যাঁ!কুহু তাকে ডেকেছে।খুব জোরে ডেকেছে।কিন্তু তার ডাক ব্যার্থ হয়েছে।আদ্র ঢুকার সময়ই সে এসে গেছিল।কিন্তু খুব দেরি হয়ে গেছে।আদ্র তার ডাক শুনলেও শুনেনি।
কুহু কিছুক্ষণ থমকে গেল।তারপর মাটিতে বসে পড়ল।চিৎকার করে কাঁদতে লাগল কুহু।সে পারেনি!হ্যাঁ সে পারেনি।তাকে আটকাতে।ইকরা আর তাসনি তার পাশে বসল।

” বলেছিলাম তোকে।সময় থাকতে গুরুত্ব দে।এখন দেখলি তো!হারিয়ে ফেললি।”

” হ্যাঁ আমি…জানি।আ..আমি অ..নেক বড় ভ..ভুল করেছি।ক.কিন্তু এত বড় স..শাস্তি দিবেন না আমায়..আদ্র।প্লিজ একবার ফিরে আসুন।আমি..আপ..নাকে কখনোই কষ্ট দেব না।ইগনোর কর..ব না আদ্র।আর আপনাকে ভাদ্র বলব না প্লিজ এক..টাবার ফিরে আসুন।প্লিজ..ফিরে আসুন আপ..নার কুহুতানের কাছে।”

ইকরা আর তাসনি ছলছল নয়নে চেয়ে থাকে কুহুর দিকে।আদ্র কি ফিরবে না আর তার কুহুতানের কাছে?

চলবে,,,,,,

শীতল অনুভবে তুমি পর্ব-১৩

0

#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ১৩

” এখন আমাদের সামনে আসবে আমাদের হবু বউমা।যে এক বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে আমার ছেলের সাথে।”

ইহানের বাবা ইরান স্পিকার অন করে বললেন।ইকরা অনেক আগেই সবার পেছনে চলে গেছে।ইকরা এবার ঐশিকার দিকে তাকাল।সে হাসিমুখে চেয়ে আছে ইহানদের পানে।ইকরা ঠোঁট চেপে কান্না আটকে রাখল।কিন্তু হঠাৎ তার চোখ দুটো বন্ধ হয়ে এলো।সাদা কিছু একটা তার চোখে বার বার রিফলেকশন হচ্ছে।ইকরা আস্তে আস্তে আঁখিদ্বয় খুলল।হ্যাঁ!তার উপর লাইট পড়েছে।ইকরা আশেপাশে তাকাল।আশেপাশে কোন দিকেই লাইট নেই।কিন্তু তার উপর রাউন্ড লাইটের আলো পড়ছে।আর সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে।ইকরা কিছুই বুঝল না।সে ইহানের দিকে তাকাল।ইহান,ইহানের বাবা ইরান মাহমুদ এবং তার মা শ্রেয়সী রহমান তার দিকে তাকিয়ে আছেন ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে।ইকরা ভ্রু কুঁচকে তাকায় সবার দিকে।ইরান মাহমুদ বললেন,

” স্টেজে চলে এসো আমার হবু বউমা।”

ইকরা হতভম্ব!তাকে বলছে?সে ঐশিকার দিকে তাকাল।সে-ও হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ইকরা আর ইহানদের দিকে।ইকরা ঠাই দাঁড়িয়ে রইল।সে কি করবে বুঝতে পারছে না।হঠাৎ ঐশিকা নিজে এসেই তাকে টেনে নিয়ে স্টেজে দাঁড় করিয়ে দিল।ইকরার ঘোর এখনো কাটেনি।ইকরা বার বার নিজেকে বুঝাচ্ছে এটা শুধুই একটা স্বপ্ন।ঘোর কাটলেই সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।পাশেই ইহান দাঁড়িয়ে ছিল।সে তার কানে ফিসফিস করে বলল,

” এটা স্বপ্ন না পিচ্চি!এটা বাস্তব।”

ইকরা চমকে তার দিকে তাকাল।আসলে তার মনের কথা পড়েছে ব্যাপারটা তা-না।তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে নিজেকে স্বান্তনা দিচ্ছে।তাই ইহান তার পরিস্থিতি বুঝে তাকে কথাটা বলল।তারপর রিং পড়ানোর আগ মুহুর্তেই ইরান সাহেব বলে উঠলেন,

” এভাবে পড়ানো ঠিক হবে না।বেয়াইন সাহেবদের আসতে বলো এখন’ই।”

ইকরা দেখল তার আম্মু এবং আব্বুও উপস্থিত হয়েছে।ইকরা ছানাবড়া চোখে চারপাশটা লক্ষ করতে লাগল।কিছুই বুঝতে পারল না।তার বাবা আর মা তার কাছে এলো।তার মা বললেন,

” হয়েছে এভাবে তাকাস না।আগে আংটি পড়ানো শেষ হোক সব জানতে পারবি।”

তারপর তার কথা অনুযায়ী আংটি পড়ানো শেষ হলো।ইকরার ঘোর এখনো কাটছেই না।রাত প্রায় শেষের দিকে।সবাই ফিরে যাবে।কুহুরাও একটু পর চলে যাবে।তাই সবাই মিলে যাওয়ার আগে একটা আড্ডার আসর জমালো।ইকরার বাবা-মা রাও মুরব্বিরা মিলে ছোটখাটো আসর জমিয়েছে।
ইকরা এখনো কিছুই বুঝতে পারছে না।কুহু বলল,

” কিরে ব্রকেন হার্ট?এভাবে মুরগির মতো বসে আছিস কেন?”

ইকরা এবার মুখ খুলল,

” তোমরা কি কেউ আমায় বলবে এসব কি হচ্ছে?”

ইরা বলল,

” কি হচ্ছে আবার?বিয়ে হচ্ছে!”

সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।ইকরা রেগে গেল।

” আন্সার মি!”

” আমি বলছি পিচ্চি।” ইহান বলতে নিলেই ইকরা থামিয়ে বলল,

” আপনি চুপ থাকুন।একটা কথাও বলবেন না।জাস্ট শাট ইউর মাউথ।”

” ওকে আমি বলছি।” ঐশিকা বলল।

ইকরা ঐশিকার দিকে তাকাল।মেয়েটার মুখে হাসি লেগে আছে।ইকরা কিছুই বুঝল না।ঐশিকা কিছু বলতে নিলেই অহনা বলে উঠল,

” উহু ঐশি আগে আমি বলি।শুনো!ইহান তো তোমাকে সেই প্রথম দিন থেকেও পছন্দ করতো যখন তুমি তার সাথে ঝগড়া করেছিলে।মনে আছে?তোমার প্র‍্যাক্টিকাল খাতা টা নিয়ে ঝগড়া করেছিলে?আর পিচ্চি বলায় বেশ রেগে গিয়েছিলে?তারপর থেকেই তোমাকে ও পছন্দ করতো যা পরে ভালোবাসায় রুপ নেয়।ও তোমাকেই শুধু ক্ষেপাতো।তোমার সাথেই যেচে পড়ে কথা বলতো।কিন্তু তোমাকে কি করে বলবে বুঝতে পারছিল না।যদি তুমি রিজেক্ট করো?তাই একটা প্লেন করলো।তার বিয়ে সত্যি সত্যি ঐশির সাথে ঠিক ছিল।তাদের বাবা-মা’ই ঠিক রেখেছিল কিন্তু এতে তাদের দুজনের’ই মত ছিল না।পরে তোমার অনুভূতি বুঝার জন্য সে ঐশির সাথে সাহায্য চায়।আর সে রাজি হয়।যখন দেখল ঐশির সাথে কথা বলায়,জড়িয়ে ধরায় তোমার খারাপ লাগছে তাতে সে বুঝতে পারল তুমিও তাকে পছন্দ করো।তাই তা আরো প্রমাণ করতে সে বিষয়টা অ্যাঙ্গেজমেন্ট পর্যন্ত নিয়ে যায়।আর তা তোমার সাথেই হওয়ার কথা ছিল ঐশির সাথে না।কারণ তোমার এই অবস্থা দেখে ধরেই নিয়েছিলাম আমরা যে তুমি ইহানকে ছাড়া ভালো নেই।তাই কুহু,বুশরা আর নাবিলা আন্টিকে জানায় এই ব্যাপারে।আন্টি আঙ্কেলের সাথে কথা বলে।তারা বিষয়টি বুঝতে পারে আর আমরা সবাই মিলে ইহানের আব্বু আম্মুকে বুঝাই।আর ঐশিও যখন বলে সে এই বিয়েতে রাজি না।তাই তারাও রাজি হয়ে যায়।আর প্লেন মাফিক তোমাকে এখানে কুহু ব্ল্যাকমেইল করে নিয়ে আসে।কি?কেমন দিলাম?”

ইকরা হা করে চেয়ে রইল সবার পানে।ইহান বলল,

” কি?এখন কি স্বীকার করবে?”

ইকরা এবার মুখ ফুলিয়ে সেখান থেকে উঠে চলে এলো।আদ্র বলল,

” এই রে!রেগেছে!যা যা ব্রো!পিচ্চির রাগ ভাঙা।”

ইহান ঢোক গিলল।ইকরার অভিমান সম্পর্কে এই কয়দিনে অনেক ধারণা হয়ে গেছে তার।সে সেখান থেকে উঠে ধীরে সুস্থে এগিয়ে গেল।
নিশি আদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল,

” কিরে?ইহান রাহিন তো মেরেই দিল।তুই কি সিঙ্গেলই বসে থাকবি?”

রাহিন বলল,

” ওই বেডি ওই!আমি কি মেরেছি হা?”

” বুঝো না চান্দু?আমরা সব জানি।”

” শাট আপ!এখানেও শান্তি নেই?” ফারাবী বলল।

নিশি চোখ মুখ কুঁচকালো।সাথে রাহিনও।নিশি আবারো বলল,

” কি আদ্র?ইহান তো বিয়ে করেই নিয়েছে।তুই কবে করবি?আর আমাদের একটু খাওয়ার সুযোগ করে দিবি?”

আদ্র হাসল।বলল,

” ভাবি নি এখনো।তবে মনের রানী পেয়ে গেলে আর দেরি নেই।হয়তো বা পেয়েও গেছি।”

শেষ বাক্য ধ্বনিত হওয়ার সময় তার আঁখিদ্বয় কুহুর দিকে স্থির ছিল।কুহু আনমনে কিছু ভাবছিল তাই ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি।বাকিরাও বুঝেনি।ইরা বলল,

” ওয়াও!কবে পাবি?”

আদ্র আবার বলল,

” বললাম না?হয়তো পেয়ে গেছি।”

” কে সে?” সবাই একসাথে বলে বসল।

” পরে বলব!”

” যাহ্!” সবাই বিরক্ত হলো।

” কাল/পরশু নাহয় জানাবো।”

সবাই শান্তি পেল।এসব ব্যাপারে ইন্টারেস্ট থাকাটা তাদের কাছে অত্যন্ত স্বাভাবিক।

ইকরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে মুখ ফুলিয়ে।ইহান তার পাশে এসে দাঁড়াল।

” এখনো রাগ করে থাকবে?”

ইকরা বলল,

” আপনি এখান থেকে যান।”

” হুম যাবো।তবে তোমাকে নিয়েই!”

” নাহ্!আমি যাব না।আমার চিন্তা কারো নেই।যান বলছি।”

” আচ্ছা?”

ইহানের কার্যকলাপে সত্যিই ঘাবড়ে গেল ইকরা।কারণ তাকে কোলে তুলে নিয়েছে সে।ইকরা বলল,

” আ…আরে!কি করছেন এসব?নামান আমাকে।নামান বলছি।প্লিজ নামান।”

” পিচ্চি!আমাকে রাগিও না।আমি কিন্তু রেগে গেলে খুব খারাপ।”

ইকরা ভাবল রেগে গেলে কি এমন হবে?

” রাগুন আপনি তাতে আমার কি?নামান আমাকে!”

এইবার ইহানের কাজে ইকরা হতভম্ব হয়ে গেল।মুখের ভাষা হারিয়ে গেল।কারণ?ইহান ইকরার অধর দুটি রাঙিয়ে দিল নিজের ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা।

একটু পর মুক্ত করে দিল নিজের বাধন থেকে।ইকরা বলল,

” এ….এ..টা ক..কি কর…লেন আপ..নি?”

” বলেছিলাম না আমায় রাগিও না।ফল স্বরুপ এটাই তোমার শাস্তি।”

ইকরা হা করে তাকিয়ে রইল।তারপর ইহান তাকে কোল থেকে নামিয়ে বলল,

” চলো নইলে আমার প্রেস্টিজ ঢিলা হয়ে যাবে।”

ইকরা কিছু না বলে ইহানের সাথে তাল মিলিয়ে হাটতে লাগল।তারপর তাদের মাঝে বসল।আদ্র বলল,

” কিরে?রাগ ভাঙিয়েছিস?”

ইহান বলল,
” না ভাঙালে এখানে কি করে?”

ইকরা কিছু না বলে ইহানের দিকে আড়চোখে তাকাল।কিছু বলল না।এভাবে আড্ডা আসর শেষ করে সবাই রওনা দিল।ইকরা তার বাবা মার সাথেই চলে যায়।ইদ্রান,আবিদরা নিজেদের বাইকে করে চলে যায়।এদিকে ফারাবী,রাহিন আর নিশিদের বাসা একসাথে হওয়ায় তারা একসাথেই চলে যায়।আর অহনা আর ইরার বাসা ইহানদের দুই ঘর পরেই।বাকি রইল আদ্র আর কুহু।কুহুর ইকরাদের সাথে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু আঙ্কেল আন্টি ব্যাপারটা জানতো না তাই তাকে না জানিয়েই বেরিয়ে পড়ে।এবার তাকে একাই যেতে হবে।এদিকে আদ্ররও ইকরাদের সাথেই যাওয়ার কথা ছিল।তার হোস্টেল সেখানেই।

” একা যাবে?”

” হুম তা-তো মনে হচ্ছে।”

” তো আমার সাথেই না-হয় চলো।একা যাওয়া টা ঠিক হবে না।”

” আচ্ছা!চলুন।”

দুজন পথ চলতে লাগল।আশেপাশে কোন মানুষ নেই।দোকানিরা দোকান বন্ধ করে ফিরে গেছে আপন নীড়ে।পথ পথ চলতে চলতে কুহু বলল,

” আচ্ছা আপনার ফ্রেন্ড বিয়ে করে নিচ্ছে।আপনি বসে আছেন কেন?”

” মনের মতো কাউকে পাই নি।তাই!”

” আচ্ছা?কবে পাবেন?”

” হয়তো পেয়ে গেছি।”

” তো বলে দিন।নয়তো হারিয়ে যেতে পারে।”

” বলতাম তবে ভয় করছে যদি সে ভুল বুঝে?”

” বলেই দেখুন।”

” হুম!তো!তুমি?”

” জানিনা।আর কাউকে আপন করতে পারি কি-না।”

” করে নাও।ইশানের জন্য তো তুমি বসে থাকবে না।ইশান বিন্দাস আছে তার বউকে নিয়ে।তুমিও থাকো।”

কুহু হাসল।বরাবরই দুই গালেই টোল পড়েছে।আদ্র অপলক মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকে।কুহু বলল,

” হ্যাঁ আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমি ওকে কখনো ভালোবাসিই নি।”

” কেন?”

” কারণ..এখন আমার কষ্ট হয় না ব্যাপার গুলো ভেবে।”

” তাহলে তো ভালোই।ধোকা মনে রাখার কি দরকার।”

” হুম!”

কথার মাঝেই ইকরাদের বাসার সামনে চলে এলো তারা।আদ্র বলল,

” তো তোমাকে পৌছে দিয়ে আসি চলো!”

” না না আমি যেতে পারব।”

” বিশ্বাস কি করে করব?যুগ টা খুব খারাপ।এভাবে তোমায় একা ছাড়তে পারিনা।চলো।”

আদ্র কুহুর সাথে হাটতে লাগল।কুহু অর্ধেক পথ এসেই বলল,

” এই যে এসে গেছি।আপনি ফিরে যান।”

” সত্যি তো?”

” হুম সামনেই তো।”

” আচ্ছা!কাল দেখা হবে।বায়!”

” বায়!”

আদ্র ফিরে গেল।যাওয়ার পথে কুহুর দিকে ঘাড় ফিরিয়ে দেখল।এদিকে কুহুও কি মনে করে আদ্রর দিকে তাকালো।ব্যস দুই আঁখি এক জায়গায় স্থির হলো কিছুক্ষণের জন্য।আদ্র হেসে হাত নাড়াল।কুহুও হাত নাড়িয়ে বিদায় নিয়ে ঝট করে সামনে ফিরে হাটতে লাগল।আদ্র হেসে ফিরে গেল।
_________________

” মেয়েটা তো মনে হয় আর আসবেই না।নাহ্!আমাকেই ওকে আনতে হবে।” ইশান মনে মনে বলল।

রুইয়া এখনো ফেরে নি।কাল যে গেছে আর আসেনি।ইশান জানে ও কোথায় গেছে।তাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল রুইয়ার বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে।বাসায় তার বাবা মা নেই।তাই তাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়নি তাকে।

প্রায় আধা ঘন্টা শেষ।ইশান দরজায় টোকা দিল।কিন্তু কেউ দরজা খুলল না।ইশান রুইয়াকে কল দিল।রুইয়ার ফোন বন্ধ।ইশান এবার রুইয়ার রুমের জানালা দিয়ে তাকে ডাকার জন্য মনস্থির করল।কিন্তু কে জানতো তার জন্য কেমন দৃশ্য অপেক্ষা করছে।জানালার পাশে যেতেই কিছু কথা তার কর্ণকুহরে পৌছাল।ইশান জানালার পাশে দাঁড়িয়ে তা-তে কান দিল।

একটা মেয়েলি কন্ঠ বলছে,

” আমরা এখন কি করব?আমার আর ইচ্ছে হচ্ছে না ওর সাথে থাকার।”

মেয়েলি কন্ঠ টা রুইয়ার তা বেশ ভালোই বুঝতে পারল ইশান।এবার তার কানে একটা পুরুষালি কন্ঠ ভেসে এলো।সে বলছে,

” টাকা গুলো তো এনেছো তাই না?”

রুইয়া বলল,

” হুম।এখানে আরো ৪ লাখ টাকা আছে।বাকিগুলো আমি অনেক আগেই এখানে নিয়ে এসেছি।”

পুরুষালি কন্ঠটা বলল,

” যেহেতু টাকা হাতে এসেই গেছে তাহলে আর কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা বিয়ে করে নেব।তবে এখন না।তুমি ওর কাছে যাও আর ভুলিয়ে-ভালিয়ে আর আদায় করে নাও।”

রুইয়া বলল,

” হুম!সোহান!আমি প্রেগন্যান্ট!”

” কিহ্!”

” হুম!১ মাসের!আর সন্তানটা তোমার’ই!”

ইশানের মাথায় বাজ পড়ল।কাঁপাকাঁপা হাতে জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিল।সামনে থাকা দৃশ্যটা দেখে তার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল।তার অতীব স্মার্ট,সুন্দরি প্রিয়তমা বউ আরেকজনের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত।ইশানের মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে।যার জন্য সে এক মূল্যবান জিনিসকে হারিয়েছে আজ সেই তাকে ধোকা দিয়েছে।ইশান এবার গলা ফাটিয়ে বলল,

” রুইয়াাাা!”

রুইয়া আর ছেলেটা চমকে উঠল।তারপর তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল।রুইয়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ইশান চিল্লিয়ে বলল,

” এসব করতে রাগ করে এসেছিলি এখানে?একাউন্টের টাকা তুই আর তোর আশিক গায়েব করেছিস তাই না?আরো খাবি?ক্যারেক্টার লেস।কি দেখে তোকে বিয়ে করেছি আমি?”

রুইয়া এখনো চেয়ে আছে তার পানে।ইশান এবার গিয়ে তার চুলের মুঠি ধরে ঠাস করে চড় লাগিয়ে দিল।রুইয়া এতেই নিচে পড়ে যায়।আর ইশান গিয়ে ছেলেটার নাকে ঘুষি বসিয়ে দেয়।নাক ফেটে রক্ত ঝর‍তে শুরু করে।এদিকে রুইয়া ফ্লাওয়ার ভ্যাস নিয়ে তাকে মার‍তে আসলে ইশান তার মুখেও ঘুষি মেরে দেয়।আর দুজন’ই দূর্বল হয়ে যায়।আর ইশান রুইয়ার ব্যাগটা বের করলো যা সে আসার সময় নিয়ে এসেছিল।সেখানে প্রায় সাড়ে তিন লাখের মতো আছে।ইশান রুইয়ার আলমিরা খুলে দেখল সেখানেও একটা বড় ব্যাগ আছে যাতে ছয় লাখের মতন ছিল।ইশান পুলিশকে ফোন করে।
আর এদিকে ১০ মিনিটের মাঝেই তার পুলিশ ফ্রেন্ড হাজির।

” দোস্ত!এ আমার ওয়াইফ।ছিহ্!একে ওয়াইফ বলছি।এ আমার প্রাক্তন স্ত্রী।আমার থেকে ছলে বলে টাকা খেয়ে তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাওয়ার প্লান করছিল।আমি হাতে নাতে ধরে আমার টাকা গুলো আদায় করেছি।এদের শাস্তি এমন ভাবে দিবি,যাতে পরবর্তীতে এসব কাজ করতে ৭ বার ভাবে।”

ইশানের টাকা আর ক্ষমতার জোড়ে তার বন্ধু তাদের লকাপে পুরে দিল।ইশান বাসায় গিয়ে কাঁদতে লাগল।এর জন্য সুন্দর সম্পর্কটা সে ভেঙে দিয়েছে।আজ সে মা আর বাবাকে কি জবাব দেবে?
সে কি কুহুর কাছে ফিরে যাবে?কিন্তু কুহু তো বিবাহিত।সে আদ্রকে বিয়ে করে নিয়েছে।কি করবে এখন সে?দিশেহারা হয়ে পড়ল ইশান।
_____________________

রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল কুহু।পথেই ইকরার দেখা।

” কিরে?বধু?কি অবস্থা?”

ইকরা তার মাথায় বারি দিয়ে বলল,

” যাহ্ শয়তান!”

” হিহি!চল!”

” এই শোন শোন!জানিস আজ উৎসব হচ্ছে।ভার্সিটিতে।আজ ভার্সিটি বন্ধ।”

” কিহ্!কেন?”

” বুদ্ধু!জানিস না আজ নববর্ষ?”

” ওহ্ আচ্ছা!আমার তো মনেই নেই।আম্মু নিষেধ আসার জন্য।কেন এখন বুঝতে পারলাম।”

” হুম!”

” তো তুই এভাবে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন তাহলে?”

” আরে যাব তাই।”

” কোথায়?উৎসবে?”

” হুম!”

” ঠিক আছে।যা আমি গেলাম।”

ইকরা কুহুর ব্যাগ টেনে ধরল।

” গেলাম মানে?কোথায় গেলাম?”

” বাসায়!?”

” উহু!চল আমার সাথে যাবি।”

” হোয়াট দ্যা…আমি যাব না।”

” যাবি না?ঠিক আছে আমিও যাব না।”

” আরে…আচ্ছা আচ্ছা চল।ধ্যাত!”

দুজন পথ চলতে থাকে।কুহু একটু সাবধানে গেল।ওইদিনের মতো পানি,রঙ মারামারি হলে পুরো ড্রেসটাই যাবে।ইকরা কোথায় হারিয়ে গেছে সেই জানে।কুহু এদিক সেদিক খুজল কিন্তু নেই।আর এদিকে তার বন্ধু আর আদ্রদেরও দেখা পেল না।কুহু একটা সাইডে বসে রইল।যাতে তার উপর কেউ কিছু না ফেলে।আর প্রায় ১০ মিনিট এভাবেই কাটে।হঠাৎ তার পেছন থেকে ইকরা বলে উঠল,

” ওই!”

কুহু চমকে গেল।পেছন ফেরে বলল,

” হুম?”

” চল!”

” কোথায়?”

” চল আগে!”

কুহুর হাত ধরে টানতে লাগল ইকরা।আর টানতে টানতে ভার্সিটির পেছনের বাগানে নিয়ে এলো।এখানে তেমন কেউ নেই।শুধু কুহুর ফ্রেন্ডরা আর আদ্রের ফ্রেন্ডরা আছে।কুহু অবাক হলো।সবাই এভাবে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে কেন?ভ্রু কুঁচকে সবার দিকে তাকাল।ইকরা তাকে ছেড়ে তাদের পাশে দাঁড়াল।

” কি হয়েছে?তোমরা আমাকে এভাবে দেখছো কেন?”

বুশরা বলল,

” পেছনে তাকা!”

কুহু ভ্রু কুঁচকে পেছন ফিরল।সামনের দৃশ্যটা দেখে তার আঁখি যুগল ছানাবড়া।বেশ অবাক হয়ে তাকাল সামনে থাকা প্রতীয়মান ব্যাক্তিটার দিকে।স্বয়ং আদ্র দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।হাতে এক গুচ্ছ জুঁই ফুল।কুহু হা করে তাকিয়ে রইল।আদ্র অধরে হাসি ফুটিয়ে বলল,

” কুহুতান!হ্যাঁ!এই নামটা আমার সবচেয়ে প্রিয় নাম।জানো?সেইদিন যখন তোমার সাথে ধাক্কা লেগেছিল,আমি শুধু তোমাকেই দেখছিলাম।অক্ষি দুটো আপনা-আপনি তোমাতে আটকে গেছিল।তোমার কথা বলার স্টাইলটা আমার খুব’ই ভালো লাগতো।তোমাকে রাগানোটাও আমার পছন্দ ছিল।প্রথম প্রথম অনুভূতিটাকে গুরুত্ব দেই নি।পরে আস্তে আস্তে তোমাতে আসক্ত হয়ে গেছি আমি কুহুতান।সত্যি খুব আসক্ত হয়ে গেছি।মনে জায়গা দিয়ে বসেছি তোমায়।আমার প্রতিটা #শীতল_অনুভবে_তুমি কুহু!শুধুই তুমি।খুব ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে কুহু।হবে কি এই আদ্রের কুহুতান?”

কুহু ঘোরের মাঝে আছে।পেছন থেকে বাকিরা চিল্লিয়ে বলছে,

” কুহু সে ইয়েস!এক্সেপ্ট হিম কুহু।”

কুহু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” সরি!”

” মানে?” আদ্র বলল।

” আমি আপনাকে গ্রহন করতে পারলাম না।সরি!”

” কিন্তু কেন?আমায় কি একটু ভালোবাসা দিতে পারবে না?দিয়েই দেখো তোমায় রাঙিয়ে দেব।”

” সরি আদ্র ভাইয়া!”

বলেই কুহু পেছন ফিরে চলে যেতে থাকে।বাকিরা অনেক অবাক হয়।ইকরা চিল্লিয়ে বলল,

” কুহু কি করছিস তুই?দাঁড়া!”

আদ্র ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।কুহুর এমন জবাব সে আশা করেনি।
চলবে,,,,,,

শীতল অনুভবে তুমি পর্ব-১২

0

#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ১২

ভার্সিটির সামনে মাঠে বসে আছে ইহান,আদ্র,রাহিন,ফারাবী,ইরা,অহনা সহ কুহুর ফ্রেন্ডসরা।আড্ডা জুড়িয়ে দিয়েছে সিনিয়র জুনিয়ররা।এই কয়দিনে ভাবসাব বেড়েছে তাদের মাঝে আরো।

” আজ একটা সারপ্রাইজ আছে।” হঠাৎ ইহান বলল।

” তোর আবার কি সারপ্রাইজ?গার্লফ্রেন্ড জুটিয়েছিস নাকি?” রাহিন হেসে বলল।

ইহান রাহিনের মাথায় বারি দিয়ে বলল,

” ডায়েনের ভাই!নিজে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করে আর আমাদের বলে বেড়ায় আই এম সিঙ্গেল ব্রো।মেক মি মিঙ্গেল।মন চায় থাপড়াই থোবড়া সাদা করে দিতে।”

রাহিন চোখ বড় বড় করে বলল,

” তুই কিভাবে জানিস?”

তার এ-কথা শুনে বাকিরা চিল্লিয়ে বলল,

” তার মানে ইহানের কথা সত্য?”

রাহিন জিভে কামড় দিল।আর হঠাৎ তাদের কথার মাঝেই কিছু একটা হুট করে ইহানকে জড়িয়ে ধরল।ইহান,আদ্র সহ কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিল।তার মাঝেই ঝড়ের গতীতে ইহানকে জড়িয়ে ধরল।ইহান প্রথমে কিছুই বুঝতে পারল না।বাকিরাও হতভম্ব।সবাই দেখল একটা মেয়ে।বেশ স্মার্ট বলা যায়।কিন্তু ইকরার ব্যাপারটা কেন যেন ভালো লাগল না।ইহান মেয়েটাকে ছাড়িয়ে বলল,

” ঐশি তুমি?”

মেয়েটা বলল,

” হুম জানস!”

বাকিরা ভ্রু কুঁচকে বলল,

” জানস?”

ইহান বলল,

” আহ্ গায়েস এ হলো আমার ফুফাতো বোন ঐশিকা।”

আদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল,

” শুধুই কাজিন নাকি অন্য কিছু?”

ইহান চোখ বড় বড় করে বলল,

” মানে?আরে না।”

ইকরা দাঁড়িয়ে বলল,

” তো কি?জানস তো আর সবাই এমনি এমনও বলে না তাই না?”

মেয়েটা মানে ঐশিকা বলল,

” রাইট!হাই গায়েস আমি ঐশিকা।সবাই ঐশি বলেই ডাকে।আমি ইহানের কাজিন + হবু বউ।”

” হোয়াঠ!” সবাই লাফিয়ে উঠল।

ইহান হাসল।ইকরা হা করে তাকিয়ে রইল তাদের পানে।অধর দুটো ভীষণ ভাবে কাঁপছে তার।আপনা-আপনি!রাহিন বলল,

” তলে তলে তাহলে এসব চলছে?”

ইহান হেসে বলল,

” তুমি পারো আমি পারিনা?”

কুহু বলল,

” এসব কি সত্যি নাকি শুধুই মজা?আপনি কি মেয়েটার সাথে ফ্লার্ট জাতীয় কিছু করছেন নাকি?”

ইহান বলল,

” আরে না!কাজিনের সাথে কেউ ফ্লার্ট করে?”

ইকরা বলল,

” করে না?সত্যি করে না?আমি তো অনেক জায়গায় দেখেছি করে।”

ইহান ইকরার দিকে তাকাল।এখনো ইকরা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।ইহান বলল,

” অনেকে হয়তো করে।কিন্তু আমি এসব কখনোই করিনি আর করবোও না।”

ইকরা ভেবেছিল ইহান হ্যাঁ বলবে।কিন্তু এ কথা শুনে তার খুব খারাপ লাগতে শুরু করল।কিন্তু কেন?
ইহান ইকরাকে লক্ষ করে চোখ ছোট ছোট করে বলল,

” কি পিচ্চি?কি হয়েছে?”

ইকরা চমকে বলল,

” ক,কই?কিছু না তো।আ….”

তার ফোন এলো।ফোনটা কানে লাগাল।

” আ…আমি আসছি তাহলে।আম্মু যেতে বলেছে।”

বলেই কথা বলতে বলতে দৌড়ে চলে গেল।বাকিরা তার এমন ব্যাবহারে হতভম্ব হয়ে গেল।তারপর কি হলো কে জানে?হঠাৎই সবাই ফিক করে হেসে দিল।
__________________

” এমন কেন লাগছে আমার?কি হচ্ছে এসব আমার সাথে?তার বিয়ে ঠিক তাতে আমার কি?আমার তো খারাপ লাগার কথা না?ক,,কিন্তু তার বিয়ে ঠিক?কথাটা কি আসলেই সত্য?হোক সত্য আমার কি?কিন্তু এটা ঠিক হচ্ছে না।”

একা একাই বিড়বিড় করছে ইকরা।তার মানতে ইচ্ছে হচ্ছে না যে ইহানের বিয়ে ঠিক।কেন মানতে পারছে না সে?তা তার অজানা।মন টা বার বার খারাপ হয়ে যাচ্ছে।এদিকে হঠাৎ দরজায় করাঘাত হলো।ইকরা নিজেকে স্বাভাবিক করে দরজা খুলে দিল।

” কি হয়েছে তোর?কখন থেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি রিসিভ করছিস না।সমস্যা টা কি?”

কুহু ভেতরে প্রবেশ করে বলল।ইকরা নিজের মোবাইল হাতে নিল।সাইলেন্ট করা।কুহুর প্রায় ১২ টা ফোন এসেছে।ইকরা বলল,

” সরি রে!সাইলেন্ট ছিল।”

কুহু ব্যাগটা বিছানায় রেখে বসে বলল,

” সাইলেন্ট কেন থাকবে?আর এভাবে চলে এলি কেন?”

” আম্মু আসতে বলেছিল।”

” মিথ্যা!লায়ার!আন্টিকে আমি জিজ্ঞেস করেছি।আন্টি তোকে আসতে বলেনি।ইভেন ফোনও করেনি।”

ইকরা কিছু বলল না।তখন তার মা ফোনই করেনি।সেখান থেকে চলে আসার জন্য ফোন কানে লাগিয়ে এভাবে এক্ট করে চলে এসেছে।সেখানে থাকাটা তার পক্ষে কেন যেন খুব কষ্টকর ছিল।কুহু আবার বলল,

” কি?বল!”

” আব….আসলে খারাপ লাগছিল তাই…”

” খারাপ লাগছিল?তো বাহানা করতে গেলি কেন?”

ইকরা কি বলবে ভেবে পায় না।আমতা আমতা করে বলল,

” ওই একচুয়ালি আমি….”

” বললেই তো পারিস ইহান ভাইয়ার বিয়ের খবর শুনে ধাক্কা খেয়েছিস?”

ইকরা চোখ বড় বড় করে ফেলল।

” ম,মানে?”

” সত্যি করে বলতো তুই কেন চলে এসেছিস এভাবে বাহানা দেখিয়ে?”

ইকরা নিজেই নিজের মাথায় বারি দিল।

” স্বীকার করলেই তো হলো তুই ইহান ভাইয়াকে পছন্দ করিস।এভাবে আমাদের থেকে লুকানোর কি আছে?”

” কি বলছিস এসব কুহু?আমি কেন তাকে পছন্দ করতে যাবো?”

” আমি জানি ইকরা!লুকিয়ে লাভ নেই”

” পাগল হয়ে গেছিস তুই।কিসব পাগলের প্রলাপ বকছিস?”

” ঠিক আছে।আমি না হয় উল্টাপাল্টা বকছি।কিন্তু তোর চোখ তো বলে দিচ্ছে তুই কষ্ট পেয়েছিস।”

” কুহু!ফালতু কথা বলিস না।”

” ঠিক আছে।তোর ইচ্ছা।”

বলেই কুহু ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেল।ইকরা কি করবে ভেবে পায় না।আসলেই কি ইহানের প্রতি দূর্বল হয়ে গেছে?
_______________

” রুইয়া!তোমার ব্যাংকে যে ৭ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছি ওগুলো কোথায়?”

ইশান বিছানায় কানে ইয়ারফোন গুজে শুয়ে থাকা রমণীকে উদ্দেশ্য করে বলল।রুইয়া বলল,

” ভাইকে দিয়েছি।”

” কিহ্!এত টাকা তুমি তোমার ভাইকে দিয়েছো?”

” ২ লাখ টাকা ভাইয়ের শপিং এর জন্য দিয়েছি।আর ২ লাখ আম্মু আর আব্বুর জন্য।বাকিটা আমি নিজের কাছে রেখেছি।”

” এসব কি রুইয়া?টাকা গুলো কি তোমার ফ্যামিলিকে দেওয়ার জন্য জমা দিয়েছি?”

” টাকা গুলো আমার ব্যাংকে দিয়েছো ইশান।তোমার না।সো আমি যেমন খুশি তেমনই সেগুলো খরচ করব।পারলে আরো দিও কারণ একটা ট্যুর আছে।আমার ওখানে অবশ্যই যেতে হবে।”

” কিহ্!আমি পারব না।পারলে নিজের টাকা দিয়ে করো।এমনিতে এত টাকা খেয়ে দিয়েছো এখন আরো খুজছো কোন মুখে?”

” ইশান!তুমি এসব বলতে পারলে?তোমার কাছে কি আমার আবদার কিছুই না?এই তোমার ভালোবাসা?ইএ তোমার স্মার্টনেস?যে বউয়ের আবদার পূরণ করতে পারে না সে আবার কিসের স্মার্ট?”

” রুইয়া!” দাঁতে দাঁত চেপে বলল ইশান।

রুইয়া বলল,

” এভাবে চিল্লিয়ে লাভ নেই ইশান।থাকবো না আমি তোমার মতো কিপ্টের সাথে।যে কিনা নিজের বউয়ের ইচ্ছাই পূরণ করতে পারেনা।”

রুইয়া আর দাঁড়াল না।আলমিরা থেকে তার একটা ব্যাগ বের করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।ইশান তাকে থামানোর চেষ্টা করলেও ব্যার্থ হলো।তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে পড়ল।
_________________

” হেই পিচ্চি কেমন আছো?”

ইকরা চমকে পেছনে তাকাল।বেঞ্চিতে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইহান।ইকরা দাঁড়িয়ে ‘ভালো’ বলেই উঠে চলে গেল।ইহান দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এমনটা প্রতিদিনই হয়ে আসছে।ইহান যতবারই তার সাথে কথা বলতে আসছে ততবারই সে ইগনোর করছে।ইহান হতাশ হয়।পিচ্চিটা এমন করছে কেন?
ইহান পেছন থেকে বলল,

” ইকরা কি হয়েছে?এমন করছো কেন?”

ইকরা থমকে দাঁড়াল।এই প্রথম তাকে নাম ধরে ডাকল ইহান।ঘাড় ঘুরিয়ে আঁড়চোখে ইহানকে একবার দেখল।তারপর ‘কিছুনা’ বলেই হাটা শুরু করল।ইহান ঠাই দাঁড়িয়ে রইল।তারপর উল্টো পথ ধরে চলতে থাকল।

” পিচ্চিটার হলো টা কি?” ইহান চিন্তিত মুখে বলল।

আদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল,

” কোন পিচ্চি?”

” আরে আমি পিচ্চি কাকে ডাকি?”

” ওহ্ ইকরা?কেন কি হয়েছে?”

” জানি না।কথা বলতে আসলে ইগনোর করে।আমি তার সামনে গেলেই সে প্রস্থান করে।কিছুই বুঝতে পারছিনা।”

” উসকে তো পুরি ডাল হি কালি হে!” ফারাবী হেসে বলল।

” কিহ্!” ধমক দিয়ে বলল ইহান।

” নো নো না-থিং ব্রো।”

ইহান দীর্ঘশ্বাস ফেলল।তারপর সবাই একটা রহস্যজনক মুচকি হাসি দিল।
__________________

” ইকরা!তোর হয়েছে টা কি?চেহারার কি হাল হলো দেখ!” নাবিলা বলল।

ইকরা বলল,

” কই আমার চেহারা তো ঠিক’ই আছে।”

কুহু বলল,

” নাহ্ ঠিক নেই।চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।চেহারাটাও শুকিয়ে গেছে।”

ইকরা কিছু বলল না।বুশরা বলল,

” তোর কি হয়েছে বলতো?আগের মতো কথা বলিস না,আগের মতো বকবক করিস না।আগের মতো ঝগড়াও করিস না।একচুয়ালি তোর হয়েছে টা কি ইয়ার?”

ইকরা নিজেও জানে না তার কি হয়েছে।

” কিছুই হয়নি।এমনি ভালো লাগছে না”

তিনজন বুঝতে পারল ইকরা কিছুতেই বলবে না।কুহু বলল,

” ইহান ভাইয়া আর ঐশিকা আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।”

ইকরা উঠে চলে গেল।তিনজন দীর্ঘশ্বাস ফেলল।আর তখনই ইহান আর আদ্র ক্যান্টিনে উপস্থিত হলো।তারা খালি চেয়ারে বসে পড়ল।কুহু বলল,

” ভাইয়া এসব ঠিক হচ্ছে না।একজনের মন যে পুড়ছে তা-ও খেয়াল রাখা উচিত।”

ইহান বলল,

” কার মন পুড়ছে?”

” ইকরা!ওর চেহারার অবস্থা দেখেছেন?”

” ও কেন পুড়বে?”

” ভাইয়া!”

” আচ্ছা আচ্ছা।তো কি যেন বলছিলাম?হ্যাঁ….”
________________

” ইকরার অবস্থা দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে।” সামনের দিকে তাকিয়ে বলল কুহু।

” হুম তা-তো দেখতেই পাচ্ছি।” আদ্র বলল।

” কিছু কি করার নেই?ইহান ভাইয়া কি এসব ঠিক করছে?আমার তো মনে হয় না।”

” কি জানি!সেটা তো ও-ই জানে।”

কুহু দীর্ঘশ্বাস ফেলল।আদ্র তার দিকে তাকিয়ে বলল,

” তো তুমি কি ভেবেছো?”

” কি ভেবেছি মানে?”

” মানে…জীবনে কি করবে ভেবেছো?”

” কি আর করব?”

” জীবনে এগিয়ে যাবে না?কাউকে কি আর আপন করে নেবে না?”

” ইশানই তো ছিল কিন্তু এখন তো আর কেউ নেই যে আপন করে নেব।”

” অনেকেই আছে।বেছে নাও।”

” চেষ্টা করব।”

” উহু!চেষ্টা নয়।অবশ্যই করতে হবে।এগিয়ে যাও কুহুতান।তোমাকে এগিয়ে যেতেই হবে।”

কুহু হাসল।

” কুহুতান?খুব সুন্দর নাম দিলেন তো!”

” পছন্দ হয়েছে?”

” হুম খুব!”

” তাহলে আজ থেকে এই নামেই ডাকি?”

” হুম।আচ্ছা চলুন দেরি হচ্ছে।আমায় আবার বাসায় ফিরে যেতে হবে।”

” আচ্ছা!”

দুজন পথ চলতে লাগল।
_________________

ঘাসের উপর বসে আছে ইহান বাদে সবাই।ইকরা এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।সবাইই কথা বলছে হাসাহাসি করছে।কিন্তু ইকরা এসবে নেই।তার ভেতরের চিৎকার গুলো কেউই শুনতে পাচ্ছে না।আর ইহানের উপস্থিতি টের পায় ইকরা।

” হেই গায়েস!”

” হ্যালো!”

” একটা কথা বলতে এসেছিলাম।”

” বলে ফেল!” রাহিন বলল।

” আরে ওয়েট লাফাচ্ছিস কেন?দম নিতে দে।”

ইকরা একবার মলিন চোখ ইহানের দিকে তাকাল।ইহান তারপর হেসে বলল,

” এ গুড নিউজ গায়েস!সামনের বুধবার আমার আর ঐশিকার অ্যাঙ্গেজমেন্ট।আসবি কিন্তু তোরা।”

ইকরার বুকের ভেতর ছ্যাঁত করে উঠল।ঘনঘন চোখের পলক ফেলতে লাগল যাতে অশ্রুগুলো বের না হয়ে যায় অক্ষিকোটর থেকে।অধরযুগল কাঁপছে খুব।বাকিরা চিল্লিয়ে উঠে,

” ওয়াও!আমাদের আগেই ইহানের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।” অহনা বলল।

” আরে ধুর বেডি!রিং সিরেমনি হচ্ছে বিয়ে কোথায়?”

” আরে একিই তো!”

” হুম!”

ইকরা দাঁড়িয়ে চলে যেতে লাগল।এখানে কান্না আটকানো কোনমতেই পসিবল না।আর তখনই ইহান পেছন থেকে বলল,

” এসো কিন্তু পিচ্চি!”

ইকরা কোনমতে বলল,

” এই নামে ডাকবেন না প্লিজ।”

বলেই কোনমতে চলে গেল।বাকিরা হা হয়ে চেয়ে রইল তার পানে।
________________

” বলেই দে না।”

ইকরা ভ্রু কুঁচকে কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল,

” কি বলবো?”

” ইহান ভাইয়াকে।”

” কি বলব উনাকে?”

” বল যে তুই তোর বুইড়াকে অনেক ভালোবাসিস।”

” কুহু!কি বলছিস এসব?”

” ঠিক’ই বলছি।”

” স্টপ ইট কুহু!”

” তুই কষ্টে মরবি আর আমি স্টপ করব?”

” কিসের কষ্ট?”

” ইকরা প্লিজ এক্সপোজ কর আল্লাহর দোহাই লাগে।”

” কুহু ফালতু কথা ছাড় তো।আমি উনাকে ভালোবাসি না।শুনেছিস তুই?”

” তাহলে তখন ইহান ভাইয়া কথাটা বলার পর তুই এভাবে চলে এলি কেন?ইকরা!তুই চাইলে থামাতে পারবি বিয়েটা।প্লিজ থামা!”

ইকরা এক দৃষ্টিতে কুহুর দিকে চেয়ে রইল।আজই সেই কাঙ্ক্ষিত দিন।ইহান আর ঐশিকার রিং সিরেমনি।কুহু রেডি হয়ে ইকরার কাছে এসেছে তাকে সাথে নেওয়ার জন্য।

” কি কিছু ভেবেছিস?”

ইকরা দাঁড়িয়ে বলল,

” না!আমি তাকে ভালোবাসি না সো এসব কথা ছাড়।”

” ঠিক আছে।রেডি হ!”

” রেডি হবো মানে?”

” মানে আবার কি রেডি হ?অনুষ্ঠানে যাবি না?”

ইকরা থেমে বলল,

” না!”

” কেন?সহ্য করতে পারবিনা?”

” কুহু!”

” যদি বলিস ভালোবাসি না তাহলে দেখিয়ে দে।যদি না যাস তাহলে বুঝবো সত্যিই তুই…”

” না না আমি যাব।ঠিক আছে?আমি যাব।”

” হুম!রেডি হ!সময় মাত্র ৩ মিনিট!”

” এহ্!”

” হ্যাঁ!যা!”

ইকরা নীল কামিজ পড়ে বেরিয়ে এলো।চুলগুলো বাঁধতেই কুহু খুলে দিল।

” এটুকুই থাক।”

” আরে…”

” উহু!”

দুজন বেরিয়ে পড়ল ইহানের বাসার উদ্দেশ্যে।ইকরার ভেতর উতালপাতাল শুরু হয়ে গেছে।অস্থিরতা বেড়েই চলেছে।কি হবে এখন?নিশ্চয়ই ঐশিকা কে ইহান আংটি পড়াবে।সবার সামনে পরিচয় দিবে ঐশিকা আমার উড বি ওয়াইফ।তখন কেমন লাগবে তার?

” তোমরা এসেছো?” আদ্র এগিয়ে এসে বলল।

” হ্যাঁ এসেছি!সাথে ব্রকেন হার্ট টাকেও নিয়ে এসেছি!” কুহু রিকশা থেকে নেমে বলল।

ইকরা যেন কিছুই শুনতে পায় নি।সে এখনো ঘোরের মাঝে আছে।শুধু এটাই ভাবছে তার কি সহ্য করার ক্ষমতা আছে?

” ইকরা!আর ইউ ওকে?” আদ্র বলল।

ইকরা চমকে গিয়ে আদ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,

” ইয়াহ্!”

” তো চলো!”

তিনজন ভেতরে ঢুকল।ইতোমধ্যে প্রায় সবাইই চলে এসেছে।প্রতিবারের মতো শুধু কুহু আর ইকরাই দেরি করেছে।ইহান এগিয়ে এলো।ইকরার দিকে তাকিয়ে বলল,

” তো ফাইনালি এসেছো?”

” হ,হুম!”

” গুড পিচ্চি!”

” ডোন্ট কল মি পিচ্চি!”

” আচ্ছা?পিচ্চি!”

ইকরা অন্য পাশে চলে গেল।ইহানের এই ডাকটা তার সহ্য হচ্ছেনা।মিছে মায়া বাড়িয়ে কি লাভ?

আদ্র ইহানকে বলল,

” ইয়ার আর কত?প্লিজ স্টপ ইট এনাফ!”

” জাস্ট ওয়েট এ মিনিট!সব ঠিক হয়ে যাবে।”

” ইয়ার!মেয়েটার অবস্থা দেখ!”

” আই নো ব্রো!ওয়েট কর একটু!”

এনাউন্সমেন্ট করা হলো।একটু পরেই শুরু হবে রিং সিরেমনি।ইকরার বুকের ভেতর ঢাক-ঢোল পিটিতে শুরু করেছে।এই বুঝি ইহান অন্য কারো হয়ে গেল?ইহান স্টেজে দাঁড়াল।ইকরার চোখ ইহানের মাঝে আটকে গেল।কালো সাদা মিশ্রণের পাঞ্জাবি পড়া যুবকটার দিকে না তাকিয়ে উপায় নেই।এবার ডাকা হবে রিং এর আসল মালিককে।মানে ঐশিকা কে।ইকরা চোখ ফিরিয়ে নিল।সে এই দৃশ্য দেখতে পারবে না।
তারপর…….

শীতল অনুভবে তুমি পর্ব-১১

0

#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ১১

ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে ইকরাকে বিদায় দেওয়ার পর একা একাই পথ চলতে থাকে কুহু।হঠাৎই মনে হলো কেউ তার নাম ধরে ডাকল।একটু থেমে মনের ভুল ভেবে আবারো পথ চলতে থাকে।কিন্তু এবারের টা ভুল মনে হচ্ছে না।সত্যি কেউ তার নাম ধরে ডাকছে।

” কুহু!”

কুহু পেছন ফিরল।প্রতীয়মান ব্যাক্তিটাকে দেখে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে এলো।আহিল তার কাছে এসে বলল,

” কেমন আছো?”

কুহু বিরক্ত হয়ে বলল,

” ভালো আছি।”

” আমি কেমন আছি….”

আহিলকে থামিয়ে কুহু বলল,

” ওহ্ হ্যালো!আমি দেখতে পাচ্ছি আপনি কেমন আছেন।কি জন্যে ডেকেছেন?”

” আরে এত তাড়া কেন?বলব তো সব আস্তে আস্তে।”

” আস্তে আস্তে বলার দরকার নেই।এখন বললে বলুন নয়তো চললাম।”

পিছন মুড়তে নিলেই আহিল তার হাত ধরে নিল।কুহু ছাড়ানোর আগেই হঠাৎ কেউ হেঁচকা টান দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিল তার।কুহু সামনে তাকিয়ে ব্যাক্তিটাকে দেখে কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল।ব্যাক্তিটি স্বয়ং ইশান।কুহু তার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে থাকে।ইশান আহিলকে চিল্লিয়ে বলল,

” হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ হার?”

আহিল ইশানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” তাতে তোমার কি শুনি?”

” আমার কি তা শুনে তোর কাজ কি?তুই ওকে ধরার সাহস কোত্থেকে পেলি?”

” কি সমস্যা?এভাবে তুই-তোকারি করার মানে টা কি?আর ওকে ধরলে তোমার কি?ওকে ধরি,ওর সাথে রিলেশন করি,বেড-পার্টনার করি তা-তে তোমার কি?”

ঠাস!চড়ের শব্দে কেঁপে উঠল চারদিক টা।কেঁপে উঠল কুহু।ইশান আহিলকে চড় মেরেছে।

” বিচ!সাহস তো কম নয় এসব বলিস?”

কুহু তাড়াতাড়ি ইশানকে থামাল।

” ইশান কি করছো?প্লিজ শান্ত হও।এখানে সিনক্রিয়েট করো না প্লিজ।”

আহিল রেগে তেড়ে আসতে নিলেই কেউ তাকে আটকিয়ে ফেলল।

” কি করছিস টা কি আহিল?মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর?” আদ্র মুখ কুঁচকিয়ে বলল।

” আদ্র ছাড় ও আমাকে মেরেছে।”

” কে মেরেছে?”

বলতে বলতেই ইশানের দিকে চোখ গেল।কুহু ইশানের হাত আটকে দাঁড়িয়ে আছে।যা আদ্রর মোটেও পছন্দ হলো না।

” কি হয়েছে?”

” ও কুহুর গায়ে হাত দিয়েছে।ওকে বেড পার্টনার বানানোর কথা বলেছে।কুহু ছাড়ো আজ এর শেষ করেই ছাড়ব।” ইশান কুহুর থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু কুহু ছাড়ে না।

আদ্র এসব শুনে চোখ ঘুরিয়ে আহিলের দিকে তাকায়।

” তুই সত্যি এসব বলেছিস?”

” হ্যাঁ হ্যাঁ বলেছি।কুহুকে আমার চাই তাই বলেছি।”

ঠাস!এবার আদ্রই মেরেছে আহিলকে।ইতোমধ্যে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে।আদ্র চিৎকার করে বলল,

” মুখের ভাষা কি লোপ পেয়েছে তোর?ভদ্র ফ্যামিলির পরিচয় তুই এভাবে দিবি?বল কথা বল!তোকে ওর থেকে দূরে থাকতে বলেছিলাম তবু তুই?”

” তোমার মানা করায় আমার কিছু যায় আসে না।কুহু শুধুই আমার।”

” বলি কি ভাইয়া!একটা মানুষ এত্ত ছ্যাঁঁচড়া কি করে হয় বলুন তো?”

হঠাৎ তাসনির গলা পায় সবাই।সকলের দৃষ্টি তাসনির দিকে যায়।তাসনি হাতে কিছু চকলেট নিয়ে এগিয়ে আসছে তাদের দিকেই।দেখে বুঝা যাচ্ছে দোকান থেকেই এসেছে।তাসনি কাছে এসে বলল,

” একটা মানুষ যে এত বড় ছ্যাঁচড়া হয় তা আপনাকে দেখেই বুঝলাম।”

আহিল রেগে দাঁড়িয়ে বলল,

” হোয়াট!কি বলতে চাও তুমি?”

তাসনি শান্তভাবেই বলল,

” আপনাকে তো বলেই ছিলাম।আপু বিবাহিত।তবু আপনি কু*ত্তার মতো তার পেছনে পড়ে আছেন কেন?”

” আচ্ছা?ও বিবাহিত?তাহলে কাল ও আদ্রর সাথে নাচছিল কেন?এতে তার স্বামী তাকে কিছু বলবে না?”

তাসনি চুপ করে গেল।কুহু আর আদ্রও কি বলবে ভেবে পায় না।তাসনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” বলবে না কারণ আদ্র ভাইয়াই কুহু আপুর স্বামী।”

ইশান,আহিল,কুহু আর আদ্র থমকে যায় ছোট্ট তাসনির কথা শুনে।কুহু আর আদ্র হা করে তাকিয়ে থাকে তার পানে।কি বলছে এ?

” হ,হোয়াট!?আ,,,আমি বিশ্বাস করি না।” আহিল অবিশ্বাস্যের সাথে বলল।

তাসনি হেসে বলল,

” মানতে না চাইলেও এটাই সত্য।ঘরোয়াভাবেই বিয়ে হয়েছে।কাউকে বলা হয় নি।পরে বড় করে অনুষ্টান করা হবে।”

এদিকে ইশান বাকরুদ্ধ।কুহুর দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল,

” তাসনি যা বলছে তা কি সত্য কুহু?”

কুহু সামনের দিকে তাকিয়ে জবাব দিল,

” হ্যাঁ!”

” ম,মানে?”

” মানে আবার কি?আপনি সহজেই বিয়ে করে নিতে পারেন আমি পারি না?”

ইশান কিছু না বলে তার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।সে এটা মেনে নিতে পারছে না।

” শুনেছেন আপনি?আপনার কি নূন্যতম লজ্জাবোধ নেই এভাবে একটা বিবাহিত মেয়ের পেছনে পড়ে থাকতে?” তাসনি বলল।

আহিল বাকরুদ্ধ।কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না সে।কিই বা বলার আছে?আদ্র এখনো চেয়ে আছে।এবার সে পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বলল,

” আরো অপমান হওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি তোর?”

আহিল কিছু বলল না।নিজের রাগ টাকে সংযত করে ভীড় ঠেলে বেরিয়ে চলে গেল।ইশান একি জায়গায় ঠাই দাঁড়িয়ে আছে।সাথে আদ্র আর কুহুও।তারপর ইশান কিছু একটা ভেবে মূর্তির মতো হাটতে হাটতে চলে গেল।আদ্র সবার উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলল,

” নাটক শেষ আপনারা এখন যেতে পারেন।”

তারা বেশ অপমান বোধ করল তাই না দাঁড়িয়ে এক এক করে সবাই চলে গেল।সবাই যেতেই তাসনি আদ্র আর কুহুর সামনে গিয়ে বলল,

” সরি তখন পরিস্থিতি সামলাতে তোমাদের ব্যাপারে কথাটা বলতে হয়েছে।”

কুহু আর আদ্র একসাথেই বলল,

” ঠিক আছে ঠিক আছে।”

তারপর দুজন দুজনের দিকে তাকাল।আর হালকা হাসল।তাসনি তা দেখে ভ্রু কুঁচকায়।

” কিছু চলছে নাকি?” তাসনি ভ্রু কুঁচকে হেসে বলল।

আদ্র আর কুহু চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকায়।তাসনি হেসে ফেলল।তারপর কুহু তাসনির হাত ধরে আদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল,

” ওকে ভাইয়া!আসি তাহলে।নিজের খেয়াল রাখবেন।আর ধন্যবাদ এভাবে ডাল স্বরুপ আসার জন্য।”

আদ্র প্রতিউত্তরে মুচকি হাসে।কুহু ফিরে যেতে থাকে।যাওয়ার পথে তাসনিকে বলল,

” তুই কোত্থেকে উদয় হলি?”

” আরে দোকানে গিয়েছিলাম ক্যাটবেরি আনতে।দেখি ভীড় জমেছে।আর আদ্র ভাইয়ার গলার আওয়াজও পেলাম।ঢুকে দেখি ওই পঁচা আলুটা তোমার সাথে শুরু করেছে।”

” হুম!তুই তো একদম ফাঁটিয়ে দিলি রে।”

” হিহি!”
__________________

” তুই এখনো বসে আছিস?সব তো প্যাকিং শেষ আর ট্রান্সফার নেওয়াও শেষ।তাহলে বসে আছিস কেন?”

আদ্র বিছানায় বসে থাকার আহিলকে বলল।আহিল তার দিকে তাকিয়ে বলল,

” তুই আরেকবার ভেবে দেখ তুই যা করছিস ঠিক করছিস কি-না?”

” হ্যাঁ আমি ঠিক’ই করছি।তোর মতো লম্পটের সাথে আর এক মুহূর্ত থাকাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

আহিল রেগে ব্যাগ গুলো নিয়ে বেরিয়ে গেল।আদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলল।কুহুকে ওসব বলাতে প্রচূর রাগ উঠে গিয়েছিল তার।কেন সে নিজেই জানে না।
______________

” এটা…এটা কিছুতেই হতে পারে না!কুহু এমন টা করতেই পারে না।ও…ও বলেছিল ও শুধু আমাকেই বিয়ে করবে।কিন্তু!কিন্তু ও আদ্রকে বিয়ে করে নিল?এটা কিছুতেই করতে পারে না ও।”

এসব বলতে বলতেই ভাঙচুর করতে শুরু করেছে ইশান।রুইয়া কান থেকে ইয়ারফোন নামিয়ে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাল।তার বাবা এবং মা ঘরে নেই এই মুহুর্তে।রুইয়া বিরক্ত হয়ে বলল,

” এসব কি বেবি?হোয়াট ইজ ইট?এমন করছো কেন?”

এই মুহুর্তে রুইয়াকেও তার প্রচুর বিরক্ত লাগছে।কিছু না বলে তার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বেরিয়ে গেল।রুইয়া কিছুই বুঝতে পারল না।কিন্তু যাওয়ার সময় ইশানের মোবাইল টা রেখে গেল।রুইয়ার সন্দেহ জাগে।কারণ সে কুহুর নাম টা শুনেছিল ইশানের মুখে।আর তার বিয়েতেও কুহুর সাথে ইশানকে অনেক বার দেখেছে।আর কয়েকদিন ধরেই দেখছে ইশান তার সাথে কথা বলে না।সারাটা দিন মোবাইলের মধ্যে কিছু একটা দেখে।আর রুইয়া কাছে আসলেই লুকিয়ে ফেলে।রুইয়ার সন্দেহ অনেক আগে থেকেই জেগেছে কিন্তু কিছু বলে নি।ভাবল আরো দেখতে হবে বিষয়টা।কিন্তু আজ তার ব্যবহার স্বাভাবীক মনে হচ্ছে না।তাই সন্দেহ টা তীব্র হলো।তাই ধীরে ধীরে গিয়ে তার মোবাইল টা হাতে নিল।কিন্তু এ-কি!লকড!রুইয়া কি করবে ভেবে পায় না।তারপর কিছু একটা ভেবে মোবাইলটা রেখে নিজের কাজে মন দিল।
_________________

” সত্যি করে বল তোর আর কুহুর বিয়ে হয়েছে?” ইশান আদ্রর কলার ধরে বলল।

আদ্র ছাড়ানো চেষ্টা করে বলল,

” কি করছিস ইশান ছাড়!”

কিন্তু ইশান ছাড়েনা।

” আগে আমার প্রশ্নের জবাব দে আদ্র।”

” হ্যাঁ কাল আপনি যা শুনেছেন সব’ই সত্য।শুনেছেন আপনি?এবার উনাকে ছাড়ুন।”

আকস্মিক এমন কথা শুনে দুজনই পেছনে তাকাল।কুহু দাঁড়িয়ে আছে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে।তার চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে।ইশান বলল,

” নাহ্ কুহু!তুমি কিছুতেই এমনটি করতে পারো না।”

” কেন পারিনা?”

” তুমি..তুমি বলেছিলে তুমি শুধু আমাকেই বিয়ে করবে।কিন্তু…কিন্তু তুমি আদ্রকে বিয়ে করে নিয়েছো?”

ইশানেফ কথা শুনে কুহু অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।তারপর হাসি থামিয়ে বলল,

” লাইক সিরিয়াসলি মি. ইশান?হাস্যকর তো!আমি আপনাকে কেন বিয়ে করব?আর!আর আপনিও তো আমাকে বলেছিলেন শুধু আমাকেই বিয়ে করবেন।তাহলে?কেন আমাকে ছেড়ে আপনার মর্ডান বউকে বিয়ে করলেন?আপনি পারলে আমি কেন পারি না?আজকাল কোন প্রেম বিয়ে পর্যন্ত যায় না।যায়?তা-তো আপনিই বলেছিলেন তাই না?সো আমার পিছু ছাড়ুন।আর নিজের বউকে নিয়ে ভালো থাকুন।আর সহ্য হচ্ছে না আপনার মতো ক্যারেক্টার লেস কে।ছাড়ুন উনাকে।”

কিন্তু ইশান ছাড়ে না।কুহু আর উপায় না পেয়ে তাদের দিকে এগিয়ে গেল।ধাক্কা দিয়ে ইশানকে সরিয়ে আদ্রের সামনে দাঁড়াল।

” দূর হন আমার সামনে থেকে।প্লিজ গো ওয়ে আই সেই গো এওয়ে!”

ইশান কিছু না বলে দাঁতে দাঁত চেপে চলে গেল।আদ্র এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দুজনের পানে।কুহু তার দিকে ফিরে বলল,

” সরি আবারো একি টাইটেল ইউজ করতে হলো।”

” নাহ্ নাহ্ কোন সমস্যা নেই।আত্মরক্ষার জন্য তো করাই যায়।”

” আপনার লেগেছে কোথাও?”

কুহু আদ্রের চারপাশটা দেখতে লাগল।আদ্র বলল,

” আরে না না।কিছু হয়নি।”

” চলুন!”

দুজন ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।পৌছেই সম্মুখীন হলো পানি মারামারির।হ্যাঁ পানি মারামারি চলছে।আসলে কোন এক উৎসব চলছিল তাতেই তারা এসব শুরু করেছে।দুজনের গায়েই ফেলে দিয়েছে পানি।শুরুটা হয়েছিল ইকরা আর ইহানের দিয়ে।কুহু বিরক্ত হয়ে বলল,

” কি হচ্ছে এসব?পুরাই ভিজিয়ে দিলি তো?”

ইকরা বলল,

” আজকের দিন টা ভিজ সমস্যা নেই।প্রতিদিন তো ভিজিস না তাই না।”

” আরে ইকরা কি করছিস তোরা এসব?”

” আরে ভাইয়া একটু খেলছি আরকি।আজ শুধুই খেলা হবে।”

” তোরা শুধরাবি না।”

” উহু কখনো না।”

কুহু এক সাইডে গিয়ে কাপড় ঝাড়তে লাগল।কিন্তু আবারো কেউ পানি মারল তার উপর।সে মুখ উঠিয়ে কিছু বলতে গেলে দেখল আদ্র।কুহু চোখ পাকিয়ে বলল,

” আপনি!”

” হিহি!একটু মজা করাই যায়।”

” ইউ…!”

কুহু পানি নিয়ে তার পেছনে ছুট দেয়।আর আদ্রও ছুটে যায় আর ভীড়ের মাঝে হারিয়ে যায়।কুহু এদিক সেদিক খুজে বেড়াচ্ছে কিন্তু আদ্র কোথাও নেই।সে পানি নিয়ে এদিকে ওদিক ঘুরে ঘুরে খুজল।কিন্তু কোথাও আদ্রর ছিটেফোঁটা নেই।হঠাৎ সামনে সবাইকে এক জায়গায় জড়ো হতে দেখল।সবাই এক জায়গায় গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভীড় করে।কুহুর ভয় লাগতে শুরু হলো।আদ্রর কিছু হয় নি তো?কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে গেল তাদের পানে।ভীড় ঠেলে এগিয়ে যায়।তারপরই বুম!তার উপর আবারো পানি পড়েছে।উহু!সাধারণ পানি না।রঙ মেশানো পানি।এবার তার সাদা গোলাপি মিশ্রণের থ্রি-পিস টা মুহুর্তেই লাল রঙে রাঙিয়ে গেল।কুহু সামনে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল।সামনেই আদ্র বালতি হাতে দাঁড়িয়ে আছে।বুঝতে পারল এসব তারই কাজ।ইচ্ছে করে কুহুকে এসব দেখিয়ে এদিকে আনিয়ে এসব মেরেছে।কুহু রেগে হাতের বালতিতে থাকা পানি গুলো নিয়ে আদ্রর দিকে তেড়ে গেল।আদ্র ছুটল।পেছনে কুহু।আর সামনেই ইকরা আর ইহান পানি হাতে দাঁড়িয়ে ছিল একে অপরকে মারার জন্য।একে অপরকে মারবে বলে ভয় দেখাচ্ছে।হঠাৎ আদ্র তাদের পাশে দৌড়ে গেল।তা দেখে তারা সেদিকে তাকাল।আর কুহু কোনদিক লক্ষ্য না করে আদ্রর পেছনে দৌড়াচ্ছে।দৌড়াতে দৌড়াতে খেল ইকরার সাথে ধাক্কা।আর ইকরা তার ধাক্কায় ইহানের গায়ের উপর পড়ল আর দুজনই নিচে পড়ে যায়।হাতে থাকা সব পানি দুজনের উপরেই পড়ে।আর কুহু একবার তাদের দিকে তাকিয়ে আবারো আদ্রের পেছনে ছুটল।
ইকরা কিছুক্ষণ ইহানের দিকে তাকিয়ে থাকে।ইহান তা দেখে ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,

” কি পিচ্চি কি দেখছো?”

এই কথা শুনে ইকরা ভ্রু কুঁচকে রেগে তার উপর থেকে উঠে বলল,

” বুইড়া!”

ইহান হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়াল।তারপর বলল,

” সত্যি!তুমি খুব’ই পাতলা।”

ইকরা চোখ গরম করে তার দিকে তাকায়।তারপর ‘বুইড়া’ বলে তার দিকে তেড়ে যায়।সুযোগ বুঝে ইহানও দেয় দৌড়।

” একবার দাঁড়ান দেখিয়ে দেব পানি কাকে বলে!”

কুহু চিৎকার করে বলল দৌড়াতে দৌড়াতে।আদ্র থামেই না।

” উহু!আমাকে দমানোর চেষ্টা করো না কুহুতান।নিজেই দমে দেখাও।হিহি!”

কুহু একটু থেমে যায়।কি বলল আদ্র?কুহুতান!?কিন্তু আদ্র দূরে চলে যাচ্ছে দেখে সে আবারো ছুটল।

” দাঁড়ান না একবার।আপনি আমায় দুইবার মেরেছেন আমি একবারও পারলাম না।”

আদ্র হাসল।কিন্তু থামল না।তা দেখে কুহু থেমে গেল।তারপর পাশের বেঞ্চিতে বসে পড়ল।মুখ টা কুঁচকে রাখল কপট রাগ আর বিরক্তিতে।আদ্র পেছন ফিরতেই দেখল কুহু আর দৌড়াচ্ছে না।এক পাশে বসে আছে।আদ্র কিছু বুঝল না।তাই আস্তে করে এগিয়ে গেল তার পানে।কুহু তার দিকে তাকাল না।আদ্র মুখটা বাচ্চাদের মতো করে বলল,

” কি হয়েছে?থেমে গেলে কেন?”

কুহু তার দিকে তাকিয়ে হাল্কা হাসল।তারপর পাশে থাকা বালতি নিয়ে তার উপর ছুড়ে মারতে নিলেই আদ্র ঘুরিয়ে দেয় বালতিটা।যাতে সব পানিই কুহুর উপর পরে।এবারো ফেল!কুহু বেশ রেগে যায় আদ্রর উপর।একটুও মারতে দিচ্ছে না।তাই মুখ ফুলিয়ে বেঞ্চির উপর বসে রইল।আদ্র হাসল।

” পানি মারতে পারো নি বলে মুখ ফুলিয়ে রেখেছো বাচ্চাদের মতো।সত্যি বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।” হেসে বলল আদ্র।

” হুহ্!” কুহু মুখ ফিরায়।

” আচ্ছা আচ্ছা সরি।মারো!”

” কোথায় পাবো?”

” আনছি!”

আদ্র পানি আনতে গেল।এই সুযোগে কুহু তার পিছু পিছু গিয়ে পাশে থাকা একটা মেয়ে থেকে পানি কেড়ে নিয়ে আদ্র ঘুরতেই দিল ঝাপ্টা।

” গশ!কে রে?”

আদ্র কুহুকে দেখল।বাচ্চাদের মতো হাসছে।আদ্র আনমনে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।কুহু হাসি থামিয়ে ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,

” কি?”

আদ্র ইশারায় বলল,কিছুনা।কুহু বলল,

” তো এভাবে কি দেখছেন?”

” তোমাকে দেখছি।”

” আমাকে কেন দেখছেন?”

” ইচ্ছে হলো দেখার তাই দেখছি।পুরো বাচ্চা লাগছে।”

” আপনিও ইহান ভাইয়ার মতো শুরু করেছেন?”

হেসে দিল আদ্র।কুহু দেখল হাসলে আদ্রের এক গালে টোল পড়ে।অবশ্য কুহু হাসলে দু-গালেই পড়ে।কুহু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।আনমনে বলেই দিল,

” হাসলে আপনাকে খুব সুন্দর লাগে।”

আদ্র তার দিকে তাকাল।কুহুর মুখে লাল রঙ,নীল রঙ লেপ্টে আছে।চুলগুলোও মুখে কিছু কিছু লেপ্টে আছে।

” আচ্ছা?দেখি তুমি হাসো!”

কুহু ভ্রু কুঁচকে বলল,

” কেন?”

” তোমাকে কেমন লাগে দেখি।তারপর প্রশংসা করি।”

হেসে ফেলল কুহু না চাইতেই।আদ্র অপলক তাকিয়ে থাকে।যেন দিন দুনিয়া ভুলে তার দিকেই তাকিয়ে থাকুক।আদ্র বলল,

” সব সময় হাসবে।যাতে তোমার এই সৌন্দর্যটা দেখতে পাই।”

কুহু মুচকি হাসল।

” আপনিও!”

” ওই দাঁড়ান দাঁড়ান বলছি।স্টপ!”

আচমকা ইকরার গলায় দুজন তাদের দিকে ফিরল।আর দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এ দুজন আবারো দৌড়াদৌড়ি করছে একে অপরের সাথে।কুহু বলল,

” তোরা কি শুধরাবি না?”

” উহু কুহু!তোমার বান্ধবীকে বলো আমার পিছু ছাড়তে।আধা ঘন্টা ধরে শুধু দৌড়িয়েই যাচ্ছে।প্লিজ!”

কুহু আর আদ্র হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

” ভাইয়া দাঁড়িয়েই যান।দেখুন ও কি করে।”

ইহান হুট করে দাঁড়িয়ে পড়ল।আর ইকরা ধাক্কা খেল তার সাথে।ইহান আরেকটু হলেই পড়ে যেত।তারপর ইকরাকে তুলে বলল,

” তুমি আসলেই খুব পাতলা।পিচ্চি বলে কথা।”

ইকরা মুখ বেঁকিয়ে বলল,

” হুম!পাতলা তাই এই পাতলা পিচ্চির ধাক্কায় পড়ে যাচ্ছিলেন।”

” আরে ওটাতো…”

” হুম হয়েছে হয়েছে।বুইড়া!”

” এই আমার মুখে কি ভাঁজ পড়েছে?বয়স বেড়েছে আমার?”

” হুহ্!আর আমার শরীর কি ছোট রয়ে গেছে?বয়স কমেছে?”

ইহান কি বলবে ভেবে পায় না।তারপর আদ্র আর কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল,

” কি?এত ভেটকাচ্ছিস কেন?মনে রঙ লেগেছে?”

কুহু হাসি থামিয়ে চোখ বড় বড় করে বলল,

” মনে রঙ লেগেছে মানে?”

” মানে বুঝো না?হয়ে গেছে তোমাদের?”

” আহ্!” বিরক্ত হয়ে কুহু ভীড়ের মাঝে বাকি বন্ধুদের কাছে চলে গেল।আদ্র তার পানে চেয়ে রইল।ইহান তার কাঁধে হাত দিয়ে বলল,

” মন খারাপ করিস না ইয়ার!একদিন হয়েই যাবে দেখিস।” (চোখ টিপ মেরে বলল)

আদ্র চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকাল।

” কিহ্!”

” না-থিং!”
__________________

” লকটা খুলার চেষ্টা করুন।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।সময় মাত্র ১০ মিনিট।এর মাঝে খুলতে পারলে রেহাই পাবে।”

রুইয়া তাড়া দিয়ে ম্যাকানিককে বলল।ছেলেটা বলল,

” আপু এমন করলে তো খুলা সম্ভব না।ওয়েট করুন একটু।”

” আর ওয়েট করতে পারছি না জলদি খুলো!” হালকা চেঁচিয়ে বলল।

ছেলেটা কিছু না বলে নিজের কাজ করতে লাগল।আর কিছুক্ষণ পরেই লক খুলতে সক্ষম হলো।রুইয়া হাতে যেন চাঁদ পেল।তাড়াতাড়ি মোবাইল নিয়ে টাকা না দিয়েই বেরিয়ে যাচ্ছিল।পেছন থেকে ছেলেটা বলল,

” আরে আপু কি করছেন?টাকা না দিয়েই চলে যাচ্ছেন?দেখে তো বড়লোক মনে হচ্ছে।তাহলে টাকা দিতে এত সমস্যা কেন?”

রুইয়া চোখ মুখ কিঞ্চিত কুঁচকিয়ে ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিল।তারপর দ্রুত বেরিয়ে পড়ল।বাসায় পৌছেই মোবাইল নিয়ে বসল।ইশান নেই।আজও রাগারাগি করে বেরিয়ে গেছে ভাঙচুর করে।কারণ আদ্রকে আর কুহুকে একসাথে খেলা-ধুলা,পানি মারামারি,হাসাহাসি,দৌড়াদৌড়ি করতে দেখেছে যা সে কোন মতে মেনে নিতে পারছে না।তাই এসেই ভাঙচুর করে বেরিয়ে পড়েছে।আর রুইয়ার সন্দেহ আরো তীব্র হয়েছে।তাই কোন কিছু না ভেবেই ইশানের মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
এদিক সেদিক ঘাটাঘাটি করে কিছুই পেল না সে।তারপর বিছানায় মোবাইলটা ছুড়ার আগেই গ্যালারিতে চাঁপ পড়ল।যার দরুন গ্যালারির রিসেন্ট ছবি গুলো দেখতে পায় সে।ছুড়তে গিয়েও ছুড়ে না।তারপর তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল।আর তার বেশ রাগ উঠে যায়।রাগে গজগজ করছে আর বড় নিশ্বাস ফেলছে।কারণ বেশ অর্ধেক’ই কুহুর হাস্যজ্বল ছবি দিয়ে ভরপুর।আর ইশান কুহুরই ছবিগুলো দেখে।রুইয়া রাগে ফেঁটে পড়ে।নাহ্!কিছু তো করতেই হবে।যেই উদ্দেশ্যে এসেছে তা-তো পূরণ করতেই হবে।

চলবে,,,,,,

শীতল অনুভবে তুমি পর্ব-১০

0

#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ১০

এক জোড়া লাল আঁখি কুহু,আদ্রকে পরখ করছে।কেন যেন সেই চোখে না চাইতেও পানি জমা হচ্ছে।সেই চক্ষুর মালিক বার বার তা সংযত করার চেষ্টা করছে।কিন্তু কেন এমন হচ্ছে তা তার অজানা।সেই ব্যক্তিটি আর কেউ নয় স্বয়ং ইশান।তার আঁখি এই দৃশ্যটাকে মেনে নিতে পারছে না।যে কুহু আর আদে হাসাহাসি করছে তা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।কেন পারছে না?সে তো রুইয়াকে ভালোবাসে।তবে?আসলেই কি সে কাউকে ভালোবাসে?

কিছু একটা ভেবে এগিয়ে গেল তাদের দিকে।তারা ইশানকে দেখে হাসি থামিয়ে তার দিকে নজর দিল।আদ্র বলল,

” আরে তুই?ভাবীকে আনিস নি?”

ইশান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” আসলে এটাতো গ্রুপ পার্টি ভার্সিটির।ওকে কেন আনবো?”

কুহু হেসে বলল,

” ভাবী কেমন আছে ভাইয়া?”

ইশান কুহুর দিকে তাকাল।তারপর বলল,

” ভালো!”

আদ্র কুহুর দিকে তাকায়।সে ভালোই বুঝতে পারলো কুহু ইশানকে জ্বালানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু কিছু বলল না।ইশানকে টানতে টানতে বলল,

” আয় চল চল আজ একটা ড্যান্স পার্টি আছে।নাঁঁচবি কিন্তু!”

” আরে আরে আমি নাঁচবো না।”

” উহু নাচতে হবে।”

আদ্র ইশানকে নিয়ে টানতে টানতে অন্য দিকে চলে গেল।তাসনি বলল,

” হোয়াট দ্যা ম্যাটার?এ আজ কিছুই বলল না?”

” হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।”

” হুম!আপু!” তাসনি কুহুর হাত ধরে ডাকল।

” হুম?”

” আজ বলছে ড্যান্স পার্টি হবে।তোমাকে নাঁচতে হবে।প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”

” আরে না।”

” উহু!প্লিজ প্লিজ আসো!”

তাসনি কুহুকে টেনে ভেতরে নিয়ে গেল।কুহু ভেবেছিল আদ্র ইশানকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এমনটি বলেছে।কিন্তু দেখল সত্যি সত্যি ড্যান্স পার্টির আয়োজন করা হয়েছে।সবাই মাঝখানের চেয়ার টেবিল গুলো সরিয়ে বড় একটা জায়গা খালি করে দিল।অনেকেই ড্যান্স শুরু করে দিল।কুহু কর্নারে একটা চেয়ারে বসে পড়ল।
তাসনি এখনো আগের জায়গায়ই দাঁড়িয়ে আছে।তার হাবভাব দেখে বুঝা যাচ্ছে সে কিছুক্ষণের মধ্যেই নাচ শুরু করে দেবে।
ইকরাও কুহুর পাশে এসে বসল।

” কিরে!এভাবে সবার থেকে দূরে কেন বসে আছিস?”

” কই?এমনি দেখছিলাম।আচ্ছা?ড্যান্স তো একটু আগেই হলো।এখন আবার কিসের?” কুহু বলল।

” আরে ওটা তো এমনি আমরা গানের তালে নেচেছিলাম পাগল।এটা এমনি ড্যান্স।”

কুহু ভ্রু কুঁচকে বলল,

” ওসব থার্ড ক্লাস গানের ড্যান্স নাকি?”

” আরে নাহ্!রোমান্টিক গানের ড্যান্স।”

” ওহ্!”

” হুম।নাচবি?”

” আরে নাহ্।তুই নাচ!”

” আরে আয় না।”

” ইকরা প্লিজ।”

” নোপ!আয়!”

” তোর ইচ্ছে হলে তুই নাচ না তোর বুইড়ার সাথে।”

” কিহ্!”

” তো আমাকে টানছিস যে?যাহ্!তুই যা!”

ইকরা আর না পেরে মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল।কুহু হেসে ফেলল।তারপর মনোযোগ দিল সবার দিকে।বাকিরা নাচছে তো নাচছেই সাথে ইকরাও শুরু করে দিয়েছে।সাথে রাহিনরাও।ইহান আর আদ্রকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।কুহু নজর ঘুরাল।কিন্তু হঠাৎ কেউ পেছন থেকে টেনে তাকে নাচার আসরে নিয়ে গেল।কুহু সামনে ফিরে দেখল ব্যাক্তিটি আর কেউ নয় স্বয়ং আদ্র।কুহু ভ্রু কুঁচকে বলল,

” কি ব্যাপার আপনি এভাবে…”

” ওখানে বসে বসে কি করছো?সবাই ড্যান্স করছে তুমিও করো!”

” আরে নাহ্!আমি এসব করি না।”

” কিন্তু এখন করবে।”

” মানে?আরে…”

বলতে না বলতেই আদ্র কুহুর হাত ধরে ঘুরিয়ে দিল।তারপর নাচা শুরু করে কুহুর সাথে।কুহু প্রথমে থামতে বললেও এখন তার ভালোই লাগছে।নাচের তালে সে বুঝতেই পারে নি সে কার সাথে নাচছে।আর এক জোড়া অক্ষি তাদের এই মুহুর্ত গুলোকে পরখ করছে।ইশান এক কোণে দাঁড়িয়ে দেখছে তাদের এই মুহুর্ত।সে আর পারছে না সহ্য করতে।কিন্তু কেন তার কারণ সে খুজে পেল না।এদিকে আহিল হা করে তাকিয়ে আছে তাদের পানে।কারণ তাসনি বলেছিল কুহু বিবাহিত।তাহলে কুহুর সাথে আদ্র এমন বিহেভ করছে কেন?আহিল দাঁতে দাঁত চেপে রাগ সংযত করল।তাসনি দেখল আদ্র আর কুহু একসাথে…এটা দেখে তার খুশির আস্ত রইল না।কারণ সে চায় তারা ঝগড়া না করে একটু নিজেদের বুঝুক।

” কি ব্যাপার এমন লাফালাফি করছো কেন?”

ইহানের এমন প্রশ্নে নাচা বন্ধ করে ইকরা চোখ গরম করে ইহানের দিকে ফিরল।

” কিহ্!আমি লাফালাফি করছি?কোন দিক থেকে মনে হচ্ছে আমি লাফালাফি করছি?”

” তো?এসব কে লাফালাফি না বলে কি বলব?”

” ইউ…!আমি লাফালাফি করছি না।আমি নাচছি দেখতে পাচ্ছেন না??”

” আচ্ছা?এভাবে কেউ নাচে?”

” মানে?তো কিভাবে নাচে?”

” নাচে তো এইভাবে!”

ইহান ইকরার হাত ধরে ঘুরিয়ে তার দিকে ঝুঁকল।ইকরা কিছুই বুঝল না।তার দিকে অপলক তাকিয়ে রইল।তারপর ইহান ইকরাকে তুলে নাচাতে লাগল।বলল,

” এই ভাবে নাচে বুঝেছো?”

‘হু হু’ করে হেসে দেয় ইকরা।যতই ঝগড়া করুক তার কিছু বিহেভ ইকরার ভালোই লাগে।

চলবে,,,,,,

শীতল অনুভবে তুমি পর্ব-০৯

0

#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ৯

কুহুদের ক্যাম্পাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আহিল।উদ্দেশ্য কুহুকে দেখার।কাল থেকেই মনে শান্তি পাচ্ছে না।কুহুকে দেখার জন্য মন টা ছটফট করছে।অনেক্ষণ যাবত দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কুহুর দেখা নেই।এদিক দিয়েই আদ্র,রাহিন,ইহান,আবিদ আর ফারাবী যাচ্ছিল।আহিলকে দেখে আদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকায়।এদিকে ইহানদের খেয়াল নেই।তারা নিজেদের মধ্যে হাসতে ব্যস্ত।সে দাঁড়িয়ে আহিলের মনোভাব বুঝার চেষ্টা করে।আদ্রকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে ইহানও দাঁড়িয়ে যায়।

” কি হলো?দাঁড়িয়ে গেলি কেন?” ইহান আদ্রর কাঁধে হাত দিয়ে বলল।

আদ্র আহিলকে ইশারা করে বলল,

” এ এখানে কি করছে?”

” আরে!ও তো কালই এলো।আজ আবার কেন এসেছে।তোকে বলেছে নাকি?”

” নাহ্ তো!বলে নি।”

দুজন এগিয়ে গেল।আহিলের পানে।

” আহিল!তুই এখানে কি করছিস?”

আহিল চমকে পেছন ফিরে তাকায়।আদ্রকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে।আমতা আমতা করে বলল,

” ওহ্….আসলে….”

” কি?” আদ্র বলল।

” এসেছিলাম…আরকি….”

” তোকে কেন সেটা জিজ্ঞাস করেছি।”

আদ্র ভালোই বুঝতে পারল আহিল কুহুর জন্যই এসেছে।আহিল এবার গলা নামিয়ে বলল,

” ইয়ার কাল যে মেয়েটার সাথে দেখা হলো তার জন্যই এসেছি।”

” কেন?ওই মেয়েটার সাথে তোমার কি?” ইহান বলল।

” ওকে খুব ভালো লাগে আমার।তাই!”

” দেখেছো এখনো কয়দিন হচ্ছে যে ভালো লাগবে?” ইহান ভ্রু কুঁচকে বলল।

” আরে ভাই তুমি বুঝবে না।”

” আহিল!মেসে চলে যা।” আদ্র বলল।

” কিন্তু…”

” আহিল যা!” কড়া গলায় বলে আদ্র।

আহিল বিরক্ত হয়ে কপাল কিঞ্চিত কুঁচকিয়ে চলে গেল।কিন্তু সে হোস্টেলে যায় না।একটা কোণে দাঁড়িয়ে থাকে।আদ্র সেটা লক্ষ করল কিন্তু কিছু বলেনি।আর এদিকে কুহু,ইকরা,নাবিলা আর বুশরা বেরিয়ে এলো।ইহান তো ইকরাকে দেখেই হাত নাঁড়িয়ে বলল,

” হেই পিচ্চি!”

ইকরা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।দাঁত কটমট করে বলল,

” বুইড়া!”

তাদের কাছে আসতেই কুহু বলল,

” কি ব্যাপার?আপনারা এখানে?”

” ওই..এমনি হাটছিলাম আরকি!” আদ্র বলল।

” আপনি একা হাটেন তবু এই বুইড়ার সাথে হাটবেন না।”

ইহান চোখ বড় বড় করে বলল,

” আমার মতো সুদর্শন যুবক কে তুমি বুইড়া বলছো?”

” আর আমার মতো অনার্স পড়ুয়া মেয়েকে আপনি পিচ্চি বলছেন?”

” পিচ্চিকে তো পিচ্চিই বলব।”

” স্টপ ইট!বুইড়া!”

” পিচ্চি!”

” আহ্ চুপ কর তোরা!” আদ্র বিরক্ত হয়ে বলল।তারপর কুহুদের উদ্দেশ্য করে বলল,

” ঠিক আছে তোমরা যাও।কাল দেখা হবে।”

” আচ্ছা!”

বলেই কুহুরা যেতে নিলে আদ্র বলে উঠে,

” আর শুনো!”

তারা থেমে যায়।আদ্র আবার বলল,

” কাল সায়েন্স গ্রুপের একটা পার্টি আছে।মেডিক্যাল স্টুডেন্টদের জন্য।তোমরা এসো কিন্তু।”

কুহু ভ্রু কুঁচকে বলে,

” কার পক্ষ থেকে?”

” আমার আর আদ্রর!” আদ্রর কাঁধে হাত দিয়ে বলল ইহান।

” ওয়াও!কয়জনকে ইনভাইট করা হয়েছে?”

” এই তো ২০-৩০ জনকে।”

” আর তোমার মতো একটা পিচ্চিকে।” ইহান বলল।

” হোয়াট দ্যা…”

” স্টপ স্টপ আবার শুরু করিস না।” কুহু ইকরার মুখ চেঁপে বলল।

” ওকে গুড বায়!ইদ্রানদের বলে দিও।”

” ওকে ভাইয়া!” কুহু বলল।

” ওকে বায়!”

” বায়!”

বলেই কুহু,ইকরা,নাবিলা আর বুশরা বেরিয়ে যেতে থাকে।আর আদ্র আর ইহান একটা সাইডে গিয়ে বসল।আর আহিলকে লক্ষ করল।এদিকে কুহুরা বের হতেই আহিল কুহুদের কাছে এলো।কুহু প্রথমে খেয়াল করেনি।সে ইকরাদের সাথে কথা বলছিল।তখনই আহিল পথ আগলে দাঁড়ায়।

” হেই বিউটি!”

কুহু আহিলের দিকে তাকাল।বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে ফেলে সে।

” আমাকে বলছেন?”

” হুম!কেমন আছো?”

” ভালো!”

” তা আমি কেমন আছি জিজ্ঞাস করবে না?”

” আপনি তো ভালোই আছেন।আপনার তো আর হাত পা ভাঙা নেই যে জিজ্ঞাস করব কেমন আছেন।দেখতেই তো পাচ্ছি আপনি সুস্থই আছেন।”

দূর থেকে আদ্র আর ইহান সব শুনতে পাচ্ছিল।তারা কুহুর এমন জবাবে দূর থেকে হেসে কুটিকুটি হয়ে গেল।ইহান হাসতে হাসতে বলল,

” ওহ্ মাই গশ!কি ইয়ার!কুহু তো…আর কি বলব?জাস্ট ওয়াও!”

” ওহ্ লর্ড!এত কিছু?” আহিল হেসে বলল।

” আপনার প্রলাপ শেষ হয়েছে?”

” ওহ্ না না।এখন তো সবে শুরু।”

” কি বলবেন বলুন।”

” আরে এত তাড়া কেন?ধীরে ধীরে সব হবে।”

” সব হবে মানে?” ভ্রু কুঁচকে বলে কুহু।

” কুল ডাউন বেবি!”

” হেই ইউ!ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট মিক্সার গিরগিটি!সমস্যা টা কি হ্যাঁ?কখন থেকে পেঁচার মতো প্যাকপ্যাক করে যাচ্ছেন?” বুশরা রেগে বলল।

” এন্ড হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট টু মিন বাই বেবি?ওকে দেখে কি বেবি মনে হয় আপনার?” ইকরা বলল।

” তোমরা কারা আবার?আমি তো কুহুর সাথে কথা বলছি।এতে তোমরা কেন মাথা ঢুকাচ্ছো?”

” আগে আপনি বলুন আপনি কোন উপগ্রহের এলিয়েন?” ইকরা বলল।

” হোয়াট!?”

আর কিছু বলার আগেই আদ্র আর ইহান এসে পড়ল।আদ্রকে দেখে আহিল চমকে যায়।আদ্র চোখ রাঙিয়ে বলল,

” বলেছিলাম কি শুনিস নি?তুই এখানে কি করছিস?”

” কি আর করবে এখানে এসে বকবক করবে।” নাবিলা বলল।

” যা আহিল!”

আহিল কিছু না বলে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চলে যায়।আদ্র বলল,

” শুনো কুহু!ওর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে।ও গায়ে পড়া স্বভাবের ছেলে।”

” হুম তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।লুজ ক্যারেক্টার।” কুহু বলল।

” হুম!”
______________

” দেখ তো কোনটা পড়লে ভালো হবে?”

কুহু কয়েকটা কাপড় বিছানার উপর রেখে তাসনিকে উদ্দেশ্য করে বলল।তাসনি বেঁছে বেঁছে বড়ই পাতা রঙ,গোলাপি রঙ আর সাদা রঙের মিশ্রণের একটা থ্রি-পিস নিয়ে বলল,

” এটাতে তোমাকে একদম কিউট দেখাবে।”

কুহু কাপড়টা হাতে নিল।মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,

” আমারও পছন্দ হয়েছে।”

” তো কই যাচ্ছো?” তাসনি প্রশ্ন করল।

” সায়েন্স গ্রুপের একটা পার্টি আছে।ভাদ্রদের পক্ষ থেকে।”

অগোচরে আদ্রকে এই নামেই ডাকে কুহু।
তাসনি বলল,

” এক্টর ভাইয়ারা পার্টি দিয়েছে?”

” হুম..!”

” আচ্ছা তুমি নাকি আজকাল এক্টর ভাইয়ার সাথে ফ্রি হয়ে গেছো?”

কুহু ভ্রু কুঁচকে বলে,

” তোকে কে বলল?”

” ইকরা আপু বলেছে!” হেসে বলল তাসনি।

” হুম আজকাল ঝগড়া করার কারণই খুজে পাই না।”

কাপড় টা ইস্ত্রি করতে করতে বলল।

” যাক বাবা!তোমরা তো সারাক্ষণ ঝগড়া ঝগড়া।এখন একটু রোমান্টিক হয়েছো!”

কুহু ইস্ত্রি করা বাদ দিয়ে তাসনির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাল।তাসনি হেসে আমতা আমতা করে বলল,

” আহ্…..মানে….তোমরা সবসময় ঝগড়া করো..এখন একটু কমেছে এটাই বলতে চাইছি।হিহি!”

কুহু হেসে নিজের কাজে মন দিল।তারপর ইস্ত্রি করা শেষ হতেই তাসনি কথা বলে বেরিয়ে যেতে নিলেই কুহু পেছন থেকে বলল,

” তুই চাইলে যেতে পারিস।”

তাসনি যেন এটারই অপেক্ষা করছিল।পেছন ফিরে উৎফুল্ল হয়ে বলল,

” সত্যি?আমাকে নিবে?”

” চাইলে আয়!ওখানে সব মেডিক্যাল স্টুডেন্ট রা আসবে।মানে সিনিয়রদের মধ্যে ইশানও আসবে।তুই তো কথার মাধ্যমেই সবাইকে ফাঁসিয়ে দিতে পারিস।”

” উফ!থ্যাংক ইউ আপু।লাভ ইউ!”

বলেই নিজের রুমের দিকে দৌড়ে গেল।তারপর কিছুক্ষণের মাঝেই রোদেলা আহমেদ কে মানিয়ে রেডি হয়ে চলে এলো।এখন সন্ধ্যা ৬ টা।তাদের সন্ধ্যার আগেই পৌছে যেতে বলেছিল।

” হ্যালো ইকরা!তুই রেডি?”

” হ্যাঁ হ্যাঁ একটু পরেই বের হচ্ছি।”

” আরে কুটনি এখন বের হ!”

” আচ্ছা আচ্ছা!”

কুহু রেডি হয়ে তাসনিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।গায়ে সেই বড়ই পাতা রঙ,গোলাপি রঙ আর সাদা রঙের মিশ্রণের থ্রি-পিস।খোলা চুল।মুখে কোন মেক-আপ নেই।কুহুকে এতেই অপরুপ লাগছে।
ইকরার বাসা কুহুর বাসা থেকে খুব একটা দূরে না।১০ মিনিটের দুরত্ব।আর ইকরার বাসার সামনে দিয়েই যাবে।পার্টি হবে একটা বাড়িতে।ভাড়া করেছিল আদ্ররা।কুহু ইকরার বাসার সামনে এসে তাকে ফোন করল।ইকরা বেরিয়ে এলো।

” কি?এতক্ষণ কি?” কুহু চোখ পাকিয়ে বলল।

” আরে সরি!চল এবার।আরে তাসনি!তুমিও যাচ্ছো?”

তাসনি হেসে বলল,

” হুম আপু!”

” সেফটির জন্য নিয়ে যাচ্ছি।কথায় যে পাঁকা,যে কাউকেই মুহুর্তে ফাটিয়ে দিতে পারবে।কেউ বিরক্ত করলে তাসনিকে দিয়ে একশন নিব।”

” হুম সাইন্টিস্ট এর সাথে সাথে পাকনিও।”
_____________

বিলাশবহুল সেই বাড়িতে প্রবেশ করল কুহু,ইকরা আর তাসনি।আগে থেকেই অনেকে ছিল।সবাইই কুহুর ভার্সিটির স্টুডেন্ট।ভেতরে ঢুকতেই দেখা হলো আদ্রর সাথে।আদ্র এগিয়ে এসে হাসিমুখে বলল,

” আরে তোমরা এসে গেছো?এত দেরিতে যে?”

” আসলে রেডি হতে দেরি হয়ে গেছে।” ইকরা বলল।

” ওহ্!হুম..!তোমাদের বাকিদের চেয়েও ভালো লাগছে।”

কুহু আর ইকরা হাসল।এর মাঝে আদ্রর নজর পড়ল তাসনির দিকে।

” আরে তাসনি!ওয়াও!বেস্ট কিপার আমাদের।হাহা!”

” যাহ্ ভাইয়া কি যে বলেন না।আমি বেস্ট কিপার হতে যাবো কেন?” তাসনি হেসে বলল।

” তা নয়তো কি?ওইদিন কি সুন্দর খেলেছো।” আদ্র বলল।

” হিহি!” তাসনি হাসে।

” চলো খাওয়া দাওয়া করে নাও।”

ইকরা,কুহু আর তাসনি খাওয়া দাওয়া করল।তারপর আদ্রের বলা একটা রুমে গেল।সেখানে সবাইই বসে ছিল।কুহুদের দেখে নিশি,অহনা,ফারাবী,রাহিন,ইরা হাত উঠিয়ে বলল,

” হাই!”

” হ্যালো!”

আদ্র সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,

” ফ্রেন্ডস!এ হলো তাসনি।তোরা তো চিনিসই!”

” ওয়াও সেরা একটা খেলোয়াড়!” ফারাবী বলল।

” সবাই আমায় খেলোয়াড় খেলোয়াড় করা বন্ধ করুন তো।” তাসনি বলল।

” শুনলাম তুমি নাকি খুব মেধাবী স্টুডেন্ট।আর পড়াকু?” ইরা বলল।

” ধুর এমন তো সবাইই হয়।” তাসনি হেসে বলল।

” উহু!ভুল।তোমার ব্যাপারে আমরা সবাই শুনেছি।গ্রেট!এমন স্টুডেন্ট বিরল।” অহনা বলল।

সবাই আড্ডা জুড়ে দিল।কিন্তু ইকরার দুই আঁখি শুধু একজনকেই খুজে চলেছে।ইহান!কেন যেন শূন্যতা অনুভব করছে এতজনের মাঝে তাকে ছাড়া।শেষে আর না পেরে বলেই দিল,

” কি ব্যাপার আদ্র ভাইয়া!বুইড়া টা কোথায়?”

তার এমন কথাতে সবাই না হেসে পারল না।আদ্র বলল,

” বুইড়া বুড়ির সাথে কথা বলতে গেছে।”

কিন্তু কথাটা শুনেই ইকরার মুখে আঁধার নেমে এলো।বুড়ি কি তার গার্লফ্রেন্ড কে বলছে?তা নজর এড়ায় নি সবার।তারা বুঝতে পারল ইকরার অবস্থা।মুখ টিপে হাসল সবাই।
নিজেদের মাঝে সবাই কথা বলছে।ইকরা ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য উঠল।তারপর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রুমে ঢুকতেই বাড়ির বারান্দার দিকে নজর পড়ল।খুব সুন্দর জায়গাটা।তাই লোভ সামলাতে না পেরে সেদিকে চলে গেল।বাহিরের সব’ই দেখা যাচ্ছে এই বারান্দা দিয়ে।ইকরা দাঁড়িয়ে অনুভব করতে থাকে স্নিগ্ধ বাতাস গুলো।তখন পাশেই কারো উপস্থিতি টের পায় সে।পাশ ফিরে দেখে ইহান তার পাশে দাঁড়িয়েছে।কানে ফোন।তার মানে তার বুড়ির সাথে কথা বলছে।

” হুম কাল’ই!তুই থাকবি?”
……….

” আরে না।আম্মুকে বলিস বিরিয়ানি রাঁধতে।”
……..

” হাহা!ওকে!হুম..!বায়।লাভ ইউ!”

বলেই ফোন কট করে কেটে দিল।এদিকে ইকরা ভাবতে থাকে,গার্লফ্রেন্ড কে তুই করে।ভাবতেই হাসি পাচ্ছে।

” কি পিচ্চি?এখানে কি করছো?”

” পিচ্চামি করছি দেখছেন না?”

” পিচ্চামি?এটা আবার কি?”

” বাচ্চাদের বাচ্চামো হলে পিচ্চিদের পিচ্চামিই তো হবে তাই না?”

” বাপরে!হুম..!খাওয়া দাওয়া হয়েছে?”

” হুম আপনার?”

” হুম…!”

আর কিছু বলার আগেই তাদের ডাক পড়ল।
____________

” এখন আমাদের মাঝে গান নিয়ে আসছে……’মৃদুলা’!”

গানের অনুষ্টান শুরু হলো।সবাই গানের তালে নাঁচছে আর গান গাইছে।নাবিলা,বুশরা,অহনা,নিশি আর ইরাও নাঁচছে।ইতোমধ্যে লাজ লজ্জা ফেলে ইকরাও শুরু করে দিয়েছে নাচানাচি।বাকি রইল ফারাবী,রাহিন,ইহান,আদ্র,তাসনি আর কুহু।তারপর গান গাওয়ার জন্য উঠল ইহান।তার গলাও আদ্রর মতোই।

~♪ চুপচাপ বসে তুমি,
মেঘের আড়ালে,
দূতেরা,তোমায় নিয়ে,
গান লিখে যাবে।
তোমার পথ চেয়ে,
সারাটা জীবন
আমার দিন রাত আজ,
হয়েছে পাগল।
এই মন,কিছু বুঝেনা,
জীবন,তোমাকে ছাড়া।
ঝরিয়ে দাও,,,অসীম অগোচরে।
ঝরিয়ে দাও,বৃষ্টির সুর ধরে।
ঝরিয়ে দাও,,,,,,
তোমার শীতল প্রেমে। ♪~♥

শুরু হলো করতালি।ইকরা মনে মনে ভাবল,গানের গলা টা তো খুব মিষ্টি।হঠাৎ ইকরা দেখল ইহান তার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মেরেছে।যা দেখে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইল ইহানের পানে।ইহান স্পিকার রেখে নিচে নেমে এলো।এসে ইকরার সামনে দাঁড়িয়ে তার চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে বলল,

” কি পিচ্চি?কি দেখছো এভাবে?ভয় লাগে তো।”

ইকরা মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল।ইহান হেসে ফেলল।তারপর আদ্রকে বলল,

” কিরে ভাই!তুই গাবি না?”

” আরে নাহ্!”

কুহু বলল,

” গান না!আপনার গানের গলা খুব ভালো।”

তাসনি বলে উঠল,

” হুম এক্টর ভাইয়া!আপুর থেকে শুনেছি আপনি গান গাইতে পারেন খুব ভালো।প্লিজ আজকে আমার জন্য গান।”

আদ্র তাদের কথা রাখতে গিয়ে স্টেজে উঠল।সুমিষ্ট মোহনীয় কণ্ঠস্বরে চারদিক টা ভরে গেল।

~♪ দীর্ঘশ্বাস তোমার রুহ্ম দেয়াল ছুয়ে
বিবর্ণ রাত্রি কাটে বিমূর্ত সময়,
প্রার্থনা তোমার হারিয়ে যায় অন্ধকারে
স্তব্ধ এই বদ্ধঘরে অস্পষ্ট স্বরে,
নিঃসঙ্গ একা তুমি ক্লান্ত জীর্ণ তুমি
অন্ধ দেয়াল জুড়ে দুঃস্বপ্ন আছড়ে পড়ে

পারবে কি ভেঙে দিতে এই দেয়াল
পারবে কি ছেড়ে যেতে এই বাধন,
ধুলোমাখা জানালার আলো ছাড়িয়ে
পারবে কি ফিরে যেতে আবার।

আর্তনাদ তোমার বিদগ্ধ এ মন জুড়ে
প্রতিধ্বনি করে চুপিসারে,
স্বপ্নগুলো কেন জড়িয়ে যায় এ মায়াজালে
দুঃসহ যন্ত্রনাতে অশান্ত ঝড়ে,
নিঃসঙ্গ একা তুমি ক্লান্ত জীর্ণ তুমি
অন্ধ দেয়াল জুড়ে
দুঃস্বপ্ন আছড়ে পড়ে।♪~♥

আশা ওয়াহিদ ফোন দেওয়ায় কুহু বারন্দায় গেল কথা বলতে।কথা শেষে পেছন ফিরতেই মুখোমুখি হলো সেই বিপদের।
আহিল!!!
কুহু পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলেই আহিল পথ আগলে দাঁড়ায়।কুহু বিরক্ত হয়ে কপাল কিঞ্চিত কুঁচকিয়ে বলল,

” সমস্যা টা কি?এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?সরে দাঁড়ান।”

” আরে আরে!কুল বেবি!একটু দাঁড়াও।”

” হোয়াট দ্যা..!এসব কোন ধরনের শব্দ?”

” আরে বাদ দাও।শুনো না!আসো ওদিকটায় একটু হাটি।”

” আপনি হাটুন আমাকে কেন টানছেন স্ট্রেঞ্জ!”

” তোমাকে নিয়েই হাটবো।চলো!”

” আমি পারব না।সরুন।”

” আরে চলোই না।”

” মুভ ওকে?”

” নোপ!প্লিজ চলো।”

” হোয়াট ইজ ইট!পথ ছাড়ুন বলছি!”

” কি হচ্ছে এখানে?”

হঠাৎ আদ্রের কন্ঠস্বর শুনতে পায় তারা।কুহু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।পেছনেই আদ্র আর তাসনি দাঁড়িয়ে আছে।আহিল বলল,

” আরে কিছুই না।এমনি!”

” এমনি কি?”

” একচুয়ালি ওর সাথে একটু গল্প করতে চাইছিলাম।”

” কেন?ওর সাথে আবার কিসের গল্প?তোর ফ্রেন্ড আমরা!আমাদের ছেড়ে তোর ওর সাথে কেন গল্প করতে মন চাইল?”

” আব…তো সমস্যা কি?”

তাসনি এবার মুখ খুলল,

” ভাইয়া!এত গুলা ফ্রেন্ড থাকতে,,মেয়েদের সাথে গল্প করতে আসা কি ঠিক?তাও আবার একটা বিবাহিত মেয়ের সাথে?”

অবিশ্বাস্যের সাথে আহিল বলে উঠে,

” বিবাহিত?”

এদিকে আদ্র আর কুহুও অবাকের সহিত তাসনির দিকে তাকায়।আর তার মনোভাব বুঝার চেষ্টা করতে থাকে।

” হুম বিবাহিত।এখন তার স্বামী যদি জানতে পারে আপনি একান্ত তার সঙ্গে গল্প করছেন,হাটাহাটি করছেন।ব্যাপার টা কি দাঁড়ায়?”

আহিল কিছু না বলে কুহুর দিকে তাকিয়ে থাকে।আদ্র হেসে বলল,

” কি বুঝেছিস?”

আহিল কিছু না বলে মুখ শক্ত করে তাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেল।সাথে সাথেই তিনজন হেসে দেয়।আদ্র বলল,

” ওয়াও তাসনি!তুমি আসলেই পারো বটে।”

” হিহি!আসলে এদের জ্বালাতে খুব ভালো লাগে।” তাসনি বলল।

কুহু হেসে বলল,

” এজন্যই ওকে নিয়ে এসেছি।যাতে সে কথার মাধ্যমে এদের ফাঁসাতে পারে।”

” হাহা!আসলেই!ইউ আর ওয়ান্ডারফুল!” আদ্র বলল।

আর তখন……

চলবে,,,,,

শীতল অনুভবে তুমি পর্ব-০৮

0

#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব_৮

পরদিন……

” হ্যালো!” ইশান কুহুর দিকে হাত নাঁড়াল।

” জ্বী!” কুহু দাঁড়িয়ে বলল।

” আমরা কি ফ্রেন্ডস হতে পারি?”

” সরি?” কুহু ভ্রু কুঁচকায়।

” না মানে…আমরা কি বন্ধু হতে পারি না?”

কুহু শান্ত গলায় বলল,

” আমি আপনাকে চিনি না।আর আমি অপরিচিত দের সাথে বন্ধুত্ব করি না।ধন্যবাদ।”

বলেই কুহু ক্যাম্পাসে চলে গেল।ইশান বাঁকা হেসে তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,

” আমার ফাঁদে পা-তো তোমাকে দিতেও হবে মিস এটিচিউড ওয়ালি।”
______________

এই ক’দিনে অনেক ঘুরেছে কুহুর পিছু পিছু।ফ্রেন্ডশিপের জন্য অনেক কাঠখড় পুড়াতে হয়েছে তাকে।আর কুহুরও ভালো লাগতো তার এমন ব্যবহার গুলো।তাই একদিন বন্ধুত্বের প্রস্তাব গ্রহণ করে কুহু।তারপর থেকেই শুরু হয় তাদের মেলামেশা।এর মাঝে ইকরাও জেনে যায় তাদের ব্যাপারে।আর তারপরই ইদ্রানদের সাথে পরিচয় হয় তাদের এক’ই ভার্সিটিতেই।তবে ইশান তাদের সবারই সিনিয়র ছিল।সেইদিন কুহুর সাথে ইন্ট্রডিউস হওয়ার জন্যই তার ক্লাসে গিয়েছিল।যা কুহু আগে থেকেই জানতো তবে কিছু বলে নি শুধু তামাশা দেখেছে তার।
প্রায় অনেকদিন কেটে যায়।দেখতে দেখতে ২ বছর এভাবেই চলে যায়।আর কুহু দেখল কিছুদিন ধরে ইশান তাকে ইগনোর করছে।ফোন দিলে ব্যস্ততার বাহানা দেখিয়ে কেটে দেয়।দেখা করতে বললে ভার্সিটির আর তার বাবার অফিসের কাজের বাহানা দিয়ে কেটে পড়ে।একদিন সে নিজেই ফোন করে কুহুকে আসতে বলে।তারপরই বিয়ের কথা বলে।

কুহু সামনে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে এটুকু বলে থামল।আদ্র এতক্ষণ তার কথা শুনছিল আর বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছিল।তারপর সে কুহুকে বলল,

” তুমি ওকে থামানোর চেষ্টা করলে না?”

কুহু তাচ্ছিল্য হেসে বলল,

” কেন থামাবো?আমি এতো সস্থা নাকি?তা-ছাড়া সে-ই তো আমার সাথে রিলেশন শুরু করেছিল।এখন সে-ই ভেঙে দিল।আবার ছ্যাঁচড়ার মতো আমার পিছনে পড়ে রয়েছে নিজে বিয়ে করে।আমাকে কারো সাথে দেখলেই এসে আমাকে টাচ করে আর উল্টাপাল্টা কথা শুরু করে।যেন এখনো তার সাথে আমার রিলেশন আছে।হাহ্!নির্লজ্জতার পরিচয়।বউ পেয়েছে।তা ছেড়ে আমার পেছনে পড়ে আছে।আর আপনার সাথে কথা বলি দেখে তার জ্বলে।”

আদ্র কষ্ট পায়।তার বেস্ট ফ্রেন্ড তার প্রতি জেলাস?

” ও হয়তো এখনো তোমাকে ভালোবাসে?তাই এমন করছে!”

” হাহ্!তার এসব থার্ড ক্লাস ভালোবাসার আর দরকার নেই।আমি তখন বোকা ছিলাম।আর কখনো এসব অবৈধতায় জড়াবো না।এখন বুঝতে পারছি কত বড় ফালতু কাজ করে নিজেকে কষ্ট দিয়েছি।”

আদ্র কুহুর কাঁধে হাত রাখে।অদ্ভুদ শিহরণ বয়ে যায় তার শরীরে।সে স্বান্তনার গলায় বলল,

” লাইফে এগিয়ে যাও!সে পেছনে পড়ে আছে,,,তাকে এভোয়েড করো।দরকার হলে বিয়ে করে নাও।যাতে সে আর তোমার পেছনে না ঘুরে।”

কুহু অবাক হয়ে আদ্রর দিকে তাকায়।খানিকটা হাসি পায়।বিয়ে করতে বলছে?
______________

সেই সকাল থেকেই একটা নোট খুজে যাচ্ছে কুহু।কিন্তু পাচ্ছেই না।তারপর ভাবল ইকরাকে কল দিবে।তাই মোবাইল খুলতেই দেখল গ্যালারিতে।তখন নিজের ছবি তুলে সেগুলো দেখতে দেখতে সেভাবেই স্ক্রিন অফ করে দিয়েছিল সে।তারপর গ্যালারি থেকে বেরুনোর আগেই একটা ছবিতে চোখ আটকে যায়।সেইদিন মাঠে তুলা আদ্রর ছবিটা।হাস্যজ্বল ছবি।ঘামার্ত্বক মুখ মন্ডল।ঘামের কারণে চুল গুলো ললাটে লেপ্টে আছে।গায়ে সাদা টি-শার্ট আর কালো ট্রাউজার।ব্যাট নিয়ে ইহানের সাথে হেসে কথা বলছিল।সেই সুযোগেই তাসনি তার মোবাইল নিয়ে তুলে ফেলেছে।তাসনি আবার ফটোগ্রাফিতে দক্ষ।একদম পারফেক্ট একটা ছবি।কুহু আনমনে সেদিকে চেয়ে থাকে।তারপর হুশ আসতেই ভাবল ডিলিট করে দেবে।এভাবে কারো ছবি তার মোবাইলে থাকবে এটা কেমন যেন দেখায়।কিন্তু করতে যেয়েও পারল না।কেন যেন মন চাইছে না।তাই আর ডিলিট না করে নিজের নোট খুজার কাজে মন দিল।তখনই ফোন এলো ইকরার।

” হ্যালো!” কুহু মোবাইল কানে লাগাল।

” আব্বে কই তুই?আসছিস না নাকি?” ইকরা বলল।

” আরে ইয়ার নোটগুলো খুজে পাচ্ছি না রে!”

” বলিস কি রে?”

” হুম ইয়ার!”

” কোন নোট?”

” তুই যে কাল দিয়েছিলি।”

” আরে আমি তোকে কবে দিলাম?”

” আরে আমি কাল বলেছিলাম প্র‍্যাক্টিকাল গুলো আমায় দিস তো তুই বললি আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিবি।তো?”

” আরে আমি তোকে দেই নি তো।ভুলে গিয়েছিলাম।”

” ধ্যাত বাঁদরনি কোথাকার।আমাকে শুধু শুধুই হয়রান করলি।”

ইকরা হেসে বলল,

” আচ্ছা আচ্ছা সরি সরি।”

” রাখ তোর সরি।ওটা এখন ব্যাগে নে।ক্লাসে আমায় দিবি।”

” ওকে ওকে আমি নিচ্ছি….আরে!”

” কি হলো?”

” আরে ওটাতো এখানে নেই।”

” নেই মানে?কই রেখেছিস?খুজে দেখ!”

” আরে এখানেই তো রেখেছিলাম কিন্তু….ইয়ার নেই তো।”

” তাহলে কই যাবে?ইকরা!ইকরা!!”

হঠাৎ উপাশ থেকে কিছুক্ষণ নিরবতার পর ইকরা চিল্লিয়ে বলল,

” কুহু!!!পেয়েছি দোস্ত!”

” নে তাহলে।”

” আরে এখানে পাই নি তো।ব্রেইনে পেয়েছি।”

” ধ্যাত বলিস কি?”

” আরে ইয়ার!কালকে প্র‍্যাক্টিকাল খাতা টা আর আর কিছু বই হাতে নিয়ে তোর কাছেই যাচ্ছিলাম।তখন আদ্র ভাইয়ার এক বন্ধু এসে ধাক্কা লাগলে সব পড়ে যায়।তাকে অনেক কথা শুনিয়ে দিই।সে রেগে গেলে পরে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দৌড় দেয়।আর আমি তো কিছুই বুঝিনি।আমি বই গুলো তুলে নিয়ে আসি।কিন্তু এখন বুঝতে পারছি ওই ব্যাটা প্র‍্যাক্টিকাল নোট টা নিয়ে পালিয়েছে রে।”

” গশ!কোন কাজটা তোর দ্বারা কোন দিন হয়েছে বলবি মহারাণী?”

” সরি রে!”

” তোর সরি ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখ!কেন বলতে গেলি এত সব।তাহলে আমি প্র‍্যাক্টিকাল টা পেতাম আর সব খালাস।”

” আচ্ছা প্লিজ বকিস না।”

” আচ্ছা!কোন ভাইয়া জানিস?”

” আরে কি নাম জানি…ভুলে গেছি।”

” চিনবি?”

” কেন চিনবো খাটাস টাকে?”

” উফ!ক্যাম্পাসে আয় আমি আসছি।”

কুহু রেডি হয়ে বেরিয়ে যায়।আর রাস্তায় ইকরা অপেক্ষা করছিল।কুহু গিয়ে চাপড় মেরে দিল।তারপর তাকে নিয়ে গেট দিয়ে ঢুকল।আর ঢুকতেই নজরে পড়ে আদ্র,ইহান,আবিদ,রাহিন আর ফারাবীকে।সাথে আছে নিশি,ইরা আর অহনা।তারাও তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের দুজন।ইকরা এবার রেগে বোম হয়ে কুহুর হাত ধরে টানতে টানতে তাদের কাছে গেল।আর গিয়েই ইহানকে আঙুল দেখিয়ে বলল,

” এই যে আপনি!গিভ মি মাই প্র‍্যাক্টিকাল।”

ইহান যেন কিছুই বুঝতে পারেনি।ভ্রু কুঁচকে বলল,

” কি?কিসের কথা বলছো তুমি?”

” কিসের কথা মানে?আমার প্র‍্যাক্টিকাল খাতাটা ফেরত দিন।” চেঁচিয়ে বলে ইকরা।

” আরে…কোন প্র‍্যাক্টিকাল?”

” ড্রামা বন্ধ করুন গন্ডার কোথাকার!আদ্র ভাইয়া!একে আমার খাতা ফেরত দিতে বলুন।”

” কিসের প্র‍্যাক্টিক্যাল ইকরা?” আদ্র জিজ্ঞাস করল।

তারপর ইকরা সব ব্যক্ত করল।যা শুনে বাকিরা হাসাহাসি শুরু করে দিয়েছে ইতোমধ্যে।

” ইয়ার দিয়ে দে।বাচ্চা মেয়ে!” আদ্র বলল।

” বাচ্চা মেয়ে?আমি বাচ্চা?” মুখ ফুলিয়ে বলল ইকরা।

” আরে…আমার জন্য তো তুই বাচ্চাই!”

” আচ্ছা দিতে বলো!”

” ইহান দিয়ে দে না।”

” দেব!আমার স্টাইলে!” ইহান ভাব নিয়ে বলল।

” আপনার মতো হাবলার আবার কিসের স্টাইল?” মুখ বেঁকিয়ে বলে ইকরা।

ইহান জ্বলে উঠে।

” কিহ্!হাবলা তা-ও আমি?তো তুমি কি?পিচ্চি?”

” হোয়াট!আমি পিচ্চি?কোন এঙ্গেল থেকে আমাকে পিচ্চি মনে হয়?অনার্স সেকেন্ড এ আমি বুঝেছেন?”

” সে যাই-হোক পিচ্চি তো পিচ্চিই!”

” আপনি কি দিবেন?”

” আগে কান ধরে সরি বলতে হবে।কালকের জন্য আর আজকের জন্য।”

ইকরা দিশেহারা হয়ে পড়ে।এতক্ষণ হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে কুহু সব দেখছিল চুপচাপ।এবার পরিস্থিতি ঠিক না দেখে এগিয়ে এসে ইহানকে বলল,

” ইহান ভাইয়া!প্র‍্যাক্টিকাল টা আমার ভীষণ জরুরী!সকাল থেকেই খুজে যাচ্ছি কিন্তু পাচ্ছিনা।প্লিজ দিন।”

” তুমি ওর সাইড নিচ্ছো না তো?”

” না ভাইয়া!কখনোই না।”

ইহান কিছু একটা ভেবে লাইব্রেরি রুমে গেল।তারপর খাতাটা নিয়ে ইকরাকে দেওয়ার ভান করে কুহুর দিকে এগিয়ে দিল।যা দেখে ইকরা বেশ অপমান বোধ করে।আবিদ বলল,

” ইহান!স্টপ ইয়ার!ইকরা তুমি যাও।”

ইকরা কিছু না বলে কুহুকে টেনে ক্লাসের দিকে এগুতে থাকে।আবার পেছন থেকে ইহান বলে উঠল,

” হুম হুম যাও পিচ্চি!”

ইকরা দাঁতে দাঁত চেঁপে ক্লাসে চলে যায়।ইহান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।বাকিদের মুখও থেমে নেই।
___________

পরদিন…….
লাইব্রেরি থেকে বেরুতেই হঠাৎ কেউ ইহানের উপর পানি ছুড়ে মারল।মুহুর্তেই শুভ্র সাদা শার্টটা ভিজে একাকার হয়ে যায়।কালো চুলগুলো ভিজে ললাটের সাথে লেপ্টে যায়।সাথে আদ্র আর রাহিনও ছিল।প্রথমে তারা থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর শুরু করে মাটি কাঁপানো হাসি।ইহান হাত পা ঝেড়ে রেগে গিয়ে সামনে তাকাল।সামনে ইকরা বালতি হাতে মুখে চেঁপে হাসছে।পাশে বুশরা,নাবিলা,ইদ্রান আর নিহান দাঁড়িয়ে আছে।তারা হাবা হয়ে চেয়ে আছে ইহান আর ইকরার পানে।ইকরা এত বড় সাহস করবে তা তাদের ধারণার বাইরে ছিল।ইকরা হাসতে হাসতে বেহাল অবস্থা।ওদিকে আদ্র আর রাহিনের কথা নাই বললাম।ইহান রেগে ধমক দিয়ে বলল,

” ইউ!আমাকে পানি মারার সাহস কি করে পেলে হ্যাঁ!”

ইকরা ব্যাঙ্গ করে বলল,

” বা-রে!আমার সাহসের এখনো কি দেখেছেন?এটা নমুনা মাত্র।হুহ্!”

” আমাকে পানি মারলে কেন?” চিল্লিয়ে বলল ইহান।

” আমায় পিচ্চি বলে অপমান করেছেন তাই।”

” তো পিচ্চিকে পিচ্চি না বলে কি বলব হ্যাঁ?”

” আমাকে কোন দিক দিয়ে পিচ্চি মনে হয় আপনার বলুন তো!” রেগে গিয়ে বলল ইকরা।

ততক্ষণে কুহুও চলে এসেছে।সে এদিক দিয়েই যাচ্ছিল ইকরাদের খোজে হঠাৎ দেখল ইকরা,নাবিলা,বুশরা,ইদ্রান আর নিহান এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।তা দেখে তাদের দিকে এগিয়ে আসতেই দেখল ইকরা ছোট একটা বালতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর কার সাথে ঝগড়া করছে।আর একটু এগুতেই দেখে ইহান কাঁক ভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।যা দেখে কুহু ঠিক’ই অনুমান করতে পারল।সে দ্রুত গিয়ে ইকরার মুখ চেঁপে ধরল।

” চুপ চুপ ইকরা!ভাইয়া এই পিচ্চিটাকে মাফ করে দিন।আমার তরফ থেকে মাফ চাইছি।”

ইহান কিছু বলার আগেই ইকরা কুহুর হাত সরিয়ে বলল,

” কিসের মাফ হুম?কোন মাফ চাইতে হবে না।এটা তার পাপের সাজা।”

” হোয়াট!সিনিয়রদের সাথে কীভাবে বিহেভ করতে হয় তা-ও জানো না?সাধে কি আর পিচ্চি বলি?”

” তো আপনি কি বুড়ো?আমি পিচ্চি হলে আপনার চোদ্দগুষ্টি পিচ্চি আপনার বউ পিচ্চি।হ্যাবলা কোথাকার!”

” আমি হ্যাবলা তাই না?দেখিয়ে দিচ্ছি!”

বলেই দৌড়ে গেল ইকরার দিকে।ইকরা পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বালতি ঠাস করে নিচে ফেলে দিয়ে ছুট লাগায়।তাদের এসব দেখে বাকিরা হা হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে রইল।

” আরে পালাচ্ছো কেন?আমি হ্যাবলা এর প্রমাণ দেখবে না?” পিছন থেকে চেঁচিয়ে বলল ইহান।

ইকরা দৌড়াচ্ছে তো দৌড়াচ্ছে থামার নাম নেই।এদিকে ইহান প্রায় কাছেই চলে এসেছে।এমন সময় ইকরা হয়রান হয়ে থেমে যেতেই ইহান তার সাথে খায় এক ধাক্কা।ইকরা ক্লান্ত হওয়ায় তার বুকে ঢলে পড়ে।ইহান দ্রুত ইকরাকে ধরে নেয়।তাকে তাড়া করার উদ্দেশ্য থাকলেও তাকে আঘাত দেওয়ার উদ্দেশ্য ইহানের মোটেও ছিল না।তাই না চাইতেও ধরে নেয় ইকরাকে।হঠাৎ চোখ পড়ে ইকরার বাদামী চোখ দুটির দিকে।গাঢ় বাদামী।ইহান না চাইতেও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।আর ইকরা এভাবে পড়ে যাওয়াতে ইহানের রিয়েকশন দেখতে তার দিকে তাকাতেই দেখে ইহান এক দৃষ্টিতে তাকে পরখ করছে।এক মোহনীয় তার দৃষ্টি।ইকরা তার নজর বুঝার চেষ্টা করতে থাকে।কিন্তু সে ব্যার্থ হয়।
এদিকে তাদের এমন ধাক্কা দেখে সবাই মুখে হাত চেঁপে দাঁড়িয়ে আছে।এবার তারা ব্যাপারটা বুঝতে পারল।বুশরা হেসে ভ্রু কুঁচকে বলল,

” গায়েস!সামথিং রোমান্টিক রোমান্টিক।”

” অবিয়াসলি!!!” নিহান বলল।

ইদ্রান ভ্রু কুঁচকে বলে,

” এখানে কি বিনা টিকিটে বিনা পয়সায় চিপস পপকর্ন ছাড়াই রোমান্টিক ড্রামা দেখানো হচ্ছে?”

এদিকে রাহিন আদ্রকে বলল,

” হোয়াট ইজ ইট ব্রো!”

আদ্র বলল,

” আই ডোন্ট নো!বাট সামথিং ওয়েট ক্র‍্যাজি।”

” এন্ড রোমান্টিক!” হেসে বলল রাহিন।

এদিকে ইকরার হুশ ফিরে এলো।একি!এ এর কাছে কি করছে এভাবে?দ্রুত ইহান কে ধাক্কা দিয়ে সরে এলো ইকরা।সাথে ইহানও নিজেকে সামলে নেয়।ইকরা কি বলবে না বলবে ভাবতে ভাবতেই চেঁচিয়ে বলে উঠে,

” হোয়াট ইজ ইট?এভাবে ধাক্কা দেওয়ার মানে টা কি?পিচ্চি বলে যখন তখন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবেন?”

ইহান গা জ্বলানো বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বলে,

” ওহহো!স্বীকার করলে তো যে,তুমি পিচ্চি!”

ইকরা নিজের কাজে নিজেই মাথায় বারি দিল।আমতা আমতা করে বলল,

” আব……একচুয়ালি…” ইকরাকে থামিয়ে ইহান বলল,

” এনিওয়ে!তুমি খুব’ই পাতলা।তোমাকে উঠাতে আমার এক হাত’ই যথেষ্ঠ।সাধে কি আর পিচ্চি বলি।”

ইকরা রেগে গিয়েও কিছু বলতে পারেনা।মুখ ফুলিয়ে ইহানের পিঠে কিল বসিয়ে দেয় দৌড়।ইহান কিছু না বলে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে।তারপর আদ্রদের কাছে ফিরে আসে।ইদ্রান,নিহান,নাবিলা,কুহু আর বুশরা ইহানের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।তারা কিছুই বুঝতে পারছে না যেন।ইহান যেতেই রাহিন বলল,

” কি দোস্ত!চলছে নাকি?”

ইহান ভ্রু কুঁচকে বলল,

” কি চলছে?”

” আরে বুঝো না?হয়ে গেছে?”

” আরে ডুড কি হয়ে গেছে?”

রাহিন কিছু বলার আগেই আদ্র থামিয়ে দেয়,

” আরে চুপ কর।এসব ড্রামা দেখতে দেখতে ক্লাস টাই মিস গেল।ধ্যাত!”

” সব ওই তোর বোনের জন্য!” ইহান বলল।
_______________

এভাবেই প্রায় ১ মাস চলে যায়।ইশানকে তেমন দেখা যায় নি।কুহু সেইদিন এসব বলার পর থেকে তার মধ্যে একটা অনুশোচনা কাজ করতে থাকে।তার তো বউ আছে তবু সে কুহুর কাছে কেন যাবে?আর তার তো কুহুকে ভালো লাগে না তাহলে কুহুকে আদ্র বা অন্য কারো সাথে দেখলে এমন কেন করবে?তাই আর তেমন আসে নি।আড়ালেই দেখে গেছে কুহু কি করেছে না করেছে সব।তার মধ্যে সে বেশিরভাগই কুহুকে আদ্রর সাথে দেখেছে।অবশ্য এই কয়দিনে কুহু আদ্রর সাথে একটু ফ্রেন্ডলি ক্লোজ হয়েছে।বলতে গেলে কিছুটা ফ্রেন্ডের মতই।আজকাল অল্পই ঝগড়া করে।নিজেদের মাঝে কথাবার্তা শেয়ার করে।আগে যেমন ঝগড়া করতো।ঝাড়ি দিয়ে রাগানো কথাবার্তা বলতো সেটা এখন নেই।এখন শান্তভাবেই ফ্রেন্ডলি কথাবার্তা হয়।আর এই কয়দিনে কুহু,নিহান,বুশরা,নাবিলা,আবির,ইদ্রান,ইকরা আবিদ,ফারাবী,রাহিন,নিশি ওদের সাথে অনেক টা ক্লোজ হয়ে গেছে।তবে ইকরা আর ইহান এসবের কিছুই না।তারা দুজন আগে যেমন ছিল তার থেকেও আপডেট হয়েছে।প্রতিদিনই কোন না কোন কারণে ঝগড়া হয়।একটা মূখ্য কারণ হচ্ছে,’পিচ্চি’।ইহান পিচ্চি বলে বলেই ইকরাকে ক্ষেপায়।যা তার খুব’ই ভালো লাগে।
_____________

কেমিস্ট্রি ল্যাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোমড়,পা ধরে গেছে কুহুর।কাজ প্রায় শেষের দিকে।তারপর একটু বাহিরে গেল হাটাহাটি করতে।হঠাৎই ধাক্কা…….

” উফ!আদ্র ভাইয়া আপনি……”

বলতেই কুহু থেমে যায়।কারণ ওটা আদ্র ছিল না।অন্য একজন ছিল।ছেলেটা ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।এমনিতে ধাক্কা তার উপর এভাবে তাকিয়ে থাকাতে কুহু আরো রেগে যায়।

” হোয়াট দ্যা হেল?একে তো ধাক্কা দিয়েছেন তার উপর এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে টা কি হ্যাঁ!”

কুহুর এমন চেঁচামেচিতে ছেলেটা চমকে যায়।তারপর বলে,

” সরি মিস!আমি আপনাকে ধাক্কা দেয় নি বরং আপনি দিয়েছেন।”

কুহু আরো বেশি রেগে যায়।চোখ পাকিয়ে বলল,

” আমি দিয়েছি?লাইক সিরিয়াসলি?তো আপনাকে ধাক্কা দিয়ে আমার লাভ টা কি শুনি?”

ছেলেটা কি বলবে বুঝতে পারে না।আর কিছু বলার আগেই কুহু এক সুপরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পায়।

” কুহু!”

কুহু পেছব ফেরে।আদ্র দাঁড়িয়ে আছে।আদ্র ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এলো। তারপর ছেলেটার পাশে গিয়ে দাঁড়াল।

” আরে আহিল তুই এখানে কি করছিস?”

আহিল নামের ছেলেটা বলল,

” আরে ইয়ার কিছু না।ঘুরছিলাম তখনই এই ডাইনির সাথে ধাক্কা খেয়েছি।আর এতেই শুরু হয়ে গেল এর পেকপেক!”

” কিহ্!জার্কফেস!আমি ডাইনি?শালা তুই কি?”

আদ্র এবার কুহুকে থামিয়ে বলল,

” আরে আরে!কুহু থামো!আহিল এভাবে বলিস না ওকে ও এমনি!আমার সাথেও এমন হয়েছে তুই কিছু বলিস না ইয়ার তোর ঘর উড়িয়ে দেবে।”

আহিল হেসে দেয়।কুহু রাগে ফেটে পড়ছে।আদ্র জোরপূর্বক হেসে বলল,

” আসলে ও আমার মামাতো ভাই আহিল।ও আসলে অন্য ভার্সিটিতে পড়ে
নতুন তাই ভার্সিটিতে ঘুরাতে নিয়ে এলাম।”

” ভাইয়া এই বাম্বেল টাকে সামলে রাখবেন।দ্বিতীয় বার যেন কারো সাথে ধাক্কা না খায়।” কুহু বলল।

তারপর আর কিছু না বলেই মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল।আদ্র এবার কুহু যেতেই আহিলের মাথায় বারি দিয়ে বলল,

” কি সমস্যা?এত লাফালাফি করিস কেন?”

” আরে ভাই ওই তো….” আহিলকে থামিয়ে আদ্র বলল,

” হয়েছে চুপ!চল এবার।”

আহিল যেতে যেতে বলল,

” ভাই আর যাই বলিস!মেয়েটা কিন্তু সেই!কিউট একদম।আমায় একটু লাইন করে দে না।”

আদ্রর কথাটা মনে হয় একদম ভালো লাগলো না।সে বলল,

” চুপ বেশি কথা বলিস না।ওর দিকে নজর দিস না ও খুব ডেঞ্জারাস।”

” ভাই প্লিজ!”

” আহিল!” ধমক দিয়ে বলল আদ্র।

আহিল আর কিছু না বলে হাটতে থাকে।
________________

আহিলের মন মানছে না।কিউট পরিটাকে আবারো দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে।রাগী মুখ টি খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে।মায়ায় পড়ে গেছে তার।
আহিল আহমেদ।আদ্রর মামাতো ভাই।আর আদ্ররই রুমমেট।নতুন শিফট হয়েছে।তবে সে অন্য ভার্সিটিতে ট্রান্সফার হয়েছে।আর আজ সে যায় নি তাই আদ্রর কাছে আবদার করলো তার ভার্সিটি ঘুরে দেখার।আদ্র না চাইতেও তাকে নিয়ে গেল।আর আদ্রর সাথেই ঘুরছিল তখন আদ্রকে ইহান একটা জরুরি কাজে ডাকলে সে সেদিকে চলে গেলে আহিল অন্যদিকে চলে যায়।আর সেখানেই অসাবধানতার কারণে ধাক্কা লাগে কুহুর সাথে।সেখানেই দেখা কুহুর সাথে।তারপর থেকেই সে কুহুর ফেস টা ভুলতে পারছে না।মনে মনে একটা পণ করল,

” সুন্দরি!তোমাকে যে আমার চাইই চাই!”

চলবে,,,,,