Friday, July 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1077



তুমি আসবে বলে পর্ব-০৪

0

#তুমি আসবে বলে
#পর্ব_৪
#ইভা রহমান

ভয়ে হিয়ার অন্তরাত্মা এই মুহুর্তে পুরো সংকুচিত হয়ে আছে। মেহু সব শুনে নিলো না তো। মেহুর চোখমুখ দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। হিয়ার ভয়কে আরো বাড়িয়ে মেহু রুমে আসলো। ভাঁজ করা হাত দুটো নিয়ে দাঁড়িয়েই সে তার চোখ দুটোকে আরো ছোট করে,তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে যেনো আগুনের বিচ্ছুরণ ঘটালো হিয়ার উপর।

-তোমাকে আমার প্রথম থেকেই সুবিধের মনে হয়নি। আমি জানতাম তুমি ঠিক এ বাড়িতে কিছু না কিছু উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছো। বলো কি উদ্দেশ্য তোমার?___আমি স্পষ্ট শুনলাম তুমি ফোনে কাকে জানি একটা রিভেঞ্জ এর কথা বলছিলে?

মেহুর কথায় হিয়ার সংকুচিত আত্নাটা যেনো আরো সংকুচিত হয়ে হিয়ারই শরীরের ভেতরে মিশে যেতে থাকলো। তাহলে কি প্রথম দিন এসেই হিয়া ধরা পড়ে যাবে। তাও আবার সামান্য এই ফোনে কথা বলার জন্য। না না হিয়া কিছুতেই এটা হতে দিতে পারে না। তাকে তার কথার জালে মেহুকে বোঝাতে হবে সে যা শুনেছে তা কিঞ্চিৎ সত্য কিঞ্চিৎ মিথ্যা। একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে হিয়া বিস্মিত চোখে বলতে শুরু করলো,

-আপনি আমায় ভূল ভাবছেন। আমি এ বাড়িতে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি ঠিকই কিন্তু রিভেঞ্জ নিতে নয়। আমার উদ্দেশ্য ছিলো আপনার দাদিমণির সামনে নিজের বেষ্ট ইন্টারভিউ দিয়ে এই চাকরিটা তে জয়েন করা। কারণ আমার ফাইনালসিয়াল কিছু সমস্যার জন্য আমার এই চাকরি টা খুবই জরুরি ছিলো। আর রিভেঞ্জ এর কথা বলছেন আমি কে আপনাদের, কি শএুতা আপনাদের সাথে আমার যে আমি রিভেঞ্জ নিতে চাইবো। আপনি বলুন?

হিয়ার কথায় এ মুহুর্তে কোনো প্রশ্ন খুঁজে পেলো না মেহু। সত্যি তো কে হিয়া যে অহেতুক এ বাড়িতে এসে রিভেঞ্জ নিতে চাইবে। কিন্তু হিয়ার সব কথা যে সে সোজাসাপ্টা ভাবে বিশ্বাস ও করে নিলো এমনটাও না।

-তুমি অনেক চালাক একটা মেয়ে। আজ থেকে তোমার উপর সবসময় আমার নজর থাকবে। ভেবো না এতো সহজে আমি তোমায় রেহাই দেবো।

কথা টা বলেই মেহু রুম থেকে বের হতে উদ্যেত হলো। রুম থেকে বের হবে কিন্তু কি মনে করে দরজার ঠিক মাথায় সে থেমে গেলো। পেছন ফিরেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতেই হিয়াকে বললো “আর একটা কথা,তোমাকে যেনো আমি উজানের সাথে বেশি মেলামেশা না দেখি৷ তাহলে এ-ই মেহুর চাইতে কেউ খারাপ হবে না কেউ না”

!
!
হিয়া নিজেকে শক্ত করে দাদিমণির রুমে আসলো। দেখতে পেলো দাদামণি একটা ফুটফুটে বাচ্চা কে কোলে নিয়ে তার কান্না থামানোর বৃথা চেষ্টা করছে।বাচ্চাটা আর কেউ না। এ হচ্ছে স্পর্শ। দেখতে টকটকে গায়ের রঙ কিন্তু বয়সের তুলনায় একটু বেশি নাদুসনুদুস। মনে হয় কোলে নিয়েই চিপে ধরে থাকা যাবে অনেকক্ষণ। এদিকে স্পর্শের এই কান্নার কারন, একটু আগে তার ঘুম ভেঙেছে কিন্তু উঠে বসে রুমে কাউকে না দেখতে পেয়েই ভয়ে সে কাঁদছে। হিয়া গিয়ে স্পর্শের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই,সম্পূর্ণ এক নতুন মানুষকে দেখে স্পর্শ কিছু মুহুর্তের জন্য স্ট্যাচু হয়ে গেলো। কিন্তু পর মুহুর্তেই আবার দাদিমণির ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো। দাদিমণি স্পর্শের সাথে হিয়ার পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো একেই তোমায় দেখেশুনে রাখতে হবে। স্পর্শকে দেখে একটা অজানা মায়া জন্ম নিলো হিয়ার মনে। হয়তো বাচ্চা টা অনাথ বলে এ-ই মায়া টা কাজ করছে তার। করতেই পারে স্বাভাবিক। কিন্তু সত্যি কি প্রকৃতির নিয়মে এই মায়া জন্মালো না মন থেকেই স্পর্শের প্রতি ভালো লাগা কাজ করছে হিয়ার!…….অনেক কষ্টে স্পর্শকে থামিয়ে দাদিমণি তার সাথে হিয়ার ভাব করাতে চেষ্টা করলো কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি স্পর্শ একটা অচেনা মানুষের সাথে ভাব করবে ব্যাপারটা এতো সহজ নয়। অনেক কাহিনি করে স্পর্শের সাথে নিজেও বাচ্চা হয়ে গিয়ে স্পর্শের সাথে কিছুটা ভাব করতে সক্ষম হলে হিয়া। দাদিমণি স্পর্শকে দুপুরের খাওয়ানোর দায়িত্ব হিয়াকে দিলো। আসলে উনি দেখতে চেয়েছিলেন হিয়া ঠিক কতো টা কি পারে।

!
!

সেই উদ্দেশ্যে স্পর্শকে নিয়ে ছাঁদে আসলো হিয়া৷ ছাঁদে আসতে পেয়ে স্পর্শের ছোট্ট মন যেনো খুশিতে ভরে উঠলো। এ-ই ছাঁদ নামক স্থান টা তার বহু কৌতুহলের জায়গা কিন্তু তাকে এই ছাঁদে নিয়ে আসার মানুষের বড্ড অভাব। দাদিমণি পারে না তার হাঁটুর ব্যাথা নিয়ে এতো ভারী সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে। মেহুতো শখ করে স্পশর্কে স্পর্শও অবধিও হয়তো সারাদিনে একবার করে না। আর বাকি রইলো উজান। সে তার পারিবারিক ব্যবসা থেকে ছুটি পেলে না স্পর্শকে নিয়ে ছাঁদে আসবে। তবুও সে আসে। সময় সুযোগ হলেই সে স্পর্শকে নিয়ে ছাঁদে আসে। যখন ব্যবসায় কাজের পরিমাণ কমে যায় তখন নিবিড়কে বাকি কাজের দায়িত্ব দিয়ে সে স্পর্শকে ছাঁদে নিয়ে আসে। তাই আজ উজান বাদে হিয়ার সাথে ছাঁদে আসতে পেরে আহ্লাদে ভেসে উঠলো স্পর্শ। একটু আগে হিয়ার কাছে আসতে যেটুকু সংকোচ ছিলো তার,ছাঁদে আসতে পেরে সেই সংকোচ টুকুও বাষ্পের মতো আকাশে মিলিয়ে গেলো মুহুর্তে।

শাহরিয়ার কুঞ্জের এ-ই ছাঁদ টা ঠিক ঢাকা চিড়িয়াখানার মতো। না মানে কথায় বলে না ঢাকা চিড়িয়াখানা নাকি একদিনে ঘুরে দেখে স্বাদ মেটানো যায় না তেমনি এ-ই সুবিশাল বাড়ির সৌন্দর্যে ঘেরা ছাঁদ টাও হয়তো একদিনে ঘুরে দেখা অসম্ভব। এক কিনারে কবুতরের ঘর যেখানে বিরাজ করছে নানা প্রজাতির কবুতর আর তাদের কন্ঠে ভেসে আসছে গুরুম গুরুম ধ্বনি। তো আরেক কিনারে দুটো বিশাল বড় বড় টব। একটায় দেখা মিলছে বাহারি রঙের এ্যাকুরিয়ামে রাখা মাছের মতো লাল-সবুজ-হলুদ নানা রঙের ছোট বড় মাছের সমাহার আর আরেকটায় ভেসে উঠছে কিছু জলজ ফুল। ফুলটা এর আগেও হিয়া দেখেছে ওর এক মামি বাসায় কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছে না নাম টা কি। এসব ছেড়েও পুরো ছাঁদের চারপাশের কিনারা জুড়ে বিরাজ করছে বাহারি রঙের ফুল গাছের সমাহার যার মধ্যে গোলাপের বিভিন্ন জাত’ই বেশি।

এসব দেখে হিয়ার পাশাপাশি মুগ্ধ স্পর্শ নিজেও। যদিও এগুলো তার পূর্বই বহুবার দেখা কিন্তু আবার দেখতে পেয়ে বাচ্চা টা যেনো নতুন করে দেখার স্বাদ পাচ্ছে……….এদিকে ছাঁদে আসার মূল উদ্দেশ্য যে এই এক বাটি খিচুড়ি স্পর্শকে খাওয়ানো তা ছাঁদের এই অবলীল সৌন্দর্যে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে কিছু মুহুর্তের জন্য ভুলে গিয়েছিলো হিয়া। স্মরণে আসতেই জিহ্বে কামড় দিয়ে হিয়া স্পর্শকে নিচে বসিয়ে বাগিয়ে বুগিয়ে খাওয়াতে শুরু করলো।দাদিমণি যে বললো দূরন্ত স্পর্শকে খাওয়ানো নাকি খুবই কষ্ট সাধ্য ব্যাপার,কিন্তু কোথায়! স্পর্শ তো একদম ভদ্র বাচ্চার মতো একবার ছাঁদ বাগান দেখছে তো একবার হিয়ার থেকে হাঙ্গুর পেরে পেরে এসে এক লোকমা করে খাচ্ছে। আসলে বাচ্চাদের খাওয়াতে লাগে ধর্য্য আর তার পাশাপাশি প্রাণ ভরা ভালোবাসা। দাদিমণির প্রাণ ভরা ভালোবাসা থাকলেও ধর্য্যের অভাবে সেটাও যেনো হারিয়ে যেতো পলকে…….হিয়া একবার স্পর্শকে খাওয়াচ্ছে তো আরেকবার কবুতরের দিকে মুখ করে বলছে এই স্পর্শ সোনা না খেলে কিন্তু কবুতর কে দিয়ে দেবো সব। হিয়ার কথায় স্পর্শ হাসছে,না এটা তার খাবার কেনো কবুতর কে খেতে দিবে সে। কখনো বা কবুতর দিয়ে কাজ না হলে হিয়া কিছু খিচুড়ি ভাত ছিটিয়ে দিচ্ছে মাছের টবে আর বলছে ফিস খাচ্ছে এবার তুমিও খাও নাহলে কিন্তু সব এই মাছ গুলোকে দিয়ে দেবো,কি দেবো? স্পর্শ চোখ বড়বড় করছে মানে সে খাবে। এভাবে প্রকৃতির মায়া দেখিয়ে দেখিয়ে,হাজার হাজার কথার ফুলঝুড়ি ফুটিয়ে হিয়া খুব যত্নভরে স্পর্শকে খাওয়াচ্ছে। আর হিয়া আর স্পর্শের এ-ই মুহুর্তটাকে ছাঁদের দরজার আড়ালে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে উজান..!! সে যে হিয়াকে দেখতে এসেছে তা নয় বরং হিয়া আসলে স্পর্শকে দেখে রাখার জন্য কতোটুকু যোগ্য তাই যাছাই করতে এসেছে। কারণ এর আগের বার যেই আয়াটাকে স্পর্শকে দেখেশুনে রাখার জন্য নিয়োজিত করা হয়েছিলো তিনি একবার স্পর্শকে খাওয়াতে গিয়ে স্পর্শ খাচ্ছে না দেখে রাগে স্পর্শের মুখ চিপে ধরে খাবার ঢুকিয়ে দিচ্ছিলো,আর এ-ই নির্মমতার দৃশ্য আর কারো নজরে না পড়ুক পড়েছিলো উজানের। সেই আয়াকে তখনি হাজারটা কথা শুনিয়ে দিয়ে উজান তাড়িয়ে দেয় এরপর আরো একজনকে নিয়োজিত করা হলেও সেও স্পর্শকে ঠিক করে দেখে রাখতে ব্যর্থ হয়। তাই এবার যাতে আর কোনো ভুলচুক না হয় তাই যাছাই করতে আসে উজান৷ আর তার পরীক্ষায় হিয়া সাবলীল ভাবেই পাশ করে যায়। স্পর্শকে খাওয়াতে গিয়ে যে হিয়া ক্লান্ত হয়নি তা না। অনেক অনেক ক্লান্ত হয়েছে কিন্তু একটা বারের জন্য বিরক্ত হয়নি!

!
!

উজানের পেছনে অনেক কষ্ট সাধন করে উপরে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো দাদিমণি।তিনিও উজানের মতো হয়তো হিয়াকে পরখ করে নিতে চান বলে এক দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছেন স্পর্শ আর হিয়াকে……..এদিকে স্পর্শকে দেখতে গিয়ে এবার উজানের চোখ আঁটকে যায় হিয়ার উপর। সকাল থেকে এতো গুলো সময়ে সে হিয়ার দিকে ঠিক সেভাবে চোখ মেলে দেখেনি। তখন যদি তাকে জিজ্ঞেস করা হতো হিয়া দেখতে ঠিক কি রকম, এ-ই প্রশ্নের উওরো হয়তো সে ঠিক করে দিতে পারতো না। কিন্তু এবার সে না চাইতেও হিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। হালকা বেগুনি রঙের জামা টা যেনো একটু বেশিই মানিয়েছে হিয়াকে। গায়ের রঙ দুধে আলতা রকমের না হলেও এই রঙকে কেউ শ্যামলতা আখ্যা দিলেও তা যেনো যথেষ্ট সৌন্দর্যমন্ডিত হয়েই চোখে লাগবে। চুল গুলোও কোমড় অবধি, না বেশি পাতলা না বেশি ঘন তবে নিচের দিকে কুঁচকে আসায় তা বেশ ভালোই মানিয়েছে হিয়ার মুখে উপরন্তু তখন মেহুর চুল কেটে দেওয়ার দরুন ঔ সামান্য কেটে যাওয়া চুল গুলো একটা মৌফুলি কিলিপ দিয়ে বেঁধে রাখায় তা হিয়ার এই মাধুর্যকে যেনো একটু বেশি বাড়িয়ে তুলেছে। তারউপর স্পর্শকে খুশি করতে গিয়ে হিয়া তার কানের এক পাশে গুজিয়ে নিয়েছে একটা গোলাপি রঙের গোলাপ যা এ-ই মুহুর্তে উজানের মতো যেকোনো পুরুষ জাতিকে কাবু করতে যথেষ্ট..!

দাদিমণি উজানের কাঁধে হাত রাখলেন। উজানের হুঁশ ফিরলো। দাদিমণি মুচকি হাসলেন। হেঁসে বললেন

-কি বললাম তোকে এ-ই মেয়ে একদম আলাদা আমাদের দূরন্ত স্পর্শ কে ঠিক সামলে নিতে পারবে।

দাদিমণির কথায় উজান খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারলো না। একটা অজানা ভয় এখনো তার মনে কাজ করতে থাকলো। ভূকুঁচকে দাদিমণিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-প্রথম দিন।তাই বলে এ-তো টাও ভরসা করে বসো না যাতে পূর্বের মতো পস্তাতে হয়।

দাদিমণি এর উওরে কিছু বললেন না। জানেন বললেও উজানের মন এতো সহজে শান্ত হবে না।উনি উজানকে উপেক্ষা করে এবার ছাঁদের ভেতরে আসলেন।ইতিমধ্যে স্পর্শের পুরো বাটি খিচুড়ি খাওয়া প্রায় শেষ।

-বাহ! আজ আমার স্পর্শ বাবা তো দেখছি সব খেয়ে নিলো।জাদু জানো না-কি হিয়া মা তুমি ।

-জাদু জানি কি না তা বলতে পারবো না তবে বাচ্চাদের খাওয়াতে গেলে নিজেকেও বাচ্চা হতে হয় আজ বুঝলাম।

দাদিমণি হাসলেন আলতো হাতে বুলিয়ে দিলেন হিয়ার মাথায় হাত।

-দাদিমণি একটা কথা ছিলো।আমি তো আসলে জানতাম না আমি আজই সিলেক্ট হয়ে এখানে থেকে যাবো। আমার এখনো অনেক জামাকাপড়,বইপত্র নিয়ে আসা বাকি যদি আপনারা একটু ব্যবস্থা করে দিতেন।

হিয়ার কথায় উজান হালকা কেশে নিলো। আলতো পায়ে স্পর্শকে এসে কোলে নিয়ে বললো,

-আপনি আপনার বাড়িতে ফোন করে বলুন কি নিয়ে আসা বাকি আছে,আমি ঠিকানা বলে দিচ্ছি।

হিয়া আলতো করে হেসে উওর দিলো ধন্যবাদ।

!
!

কথা অনুযায়ী হিয়া অর্পাকে ফোন করে বলে, ওর যাবতীয় জিনিস উজানের বলে দেওয়া ঠিকানায় পাঠিয়ে দেবার জন্য। হিয়ার নির্দেশে অর্পা সেদিনই হিয়ার প্রয়োজনীয় জামাকাপড় বইখাতা সব গুছিয়ে নিয়ে পরের দিনই তা পাঠানোর ব্যবস্থা করে। ঢাকা হতে সেই জিনিসপত্র গুলো পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় দুই দিন। এই দুই দিনে হিয়া যতোটা পেরেছে দাদিমণির সাথে থেকে এ বাড়ির সবার ব্যাপারে টুকিটাকি জানতে চেষ্টা করেছে। মেহু হচ্ছে দাদিমণির বোনের মেয়ের মেয়ে মানে সম্পর্কে সে দাদিমণির নাতনি। মেহুর মা নেই বাবা বিদেশে জব করে,তার পড়াশুনা টা ঢাকা শহরে হলেও মূলত সে মানুষ এই দাদিমণির কাছে। মেহু ছোট থেকে ভীষণ জে*দী মা বাবা কেউই কাছে না থাকায় সে হয়েছে একদমই এক*রোখা। সহজ কথা সহজ ভাবে বুঝতে চায় না। উজানের প্রতি অনেকটা দূর্বল। ওপর দিকে উজান হচ্ছে এ বাড়ির বড় ছেলের দ্বিতীয় সন্তান,কলেজে পড়াকালীন বাবাকে হারিয়ে এই শাহরিয়ার কুঞ্জের পুরো দায়ভার নিজের কাঁধে বহন করে নেয় সে। যেহেতু তার দুই চাচার কেউ ই এ শহরে থাকতো না তাই পুরো শাহরিয়ার পরিবারকে সেই মুহুর্তে শক্ত খুঁটি গেড়ে দিতে নিজের সর্বাত্ক চেষ্টা করে সে। তবুও এতো সতো দায়িত্বের মাঝে নিজের স্নাতক টা বেশ ভালো ভাবেই পাশ করে উজান। চাকরির ছিলো অগাধ সম্ভাবনা তবে পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো ব্যবসাতেই মনোনিবেশ করতে আগ্রহী সে……সব কিছু শেষে গল্পের ফাঁকে হিয়া এটাও জানতে পারে যে উজানরা তিন ভাইবোন। উজানের আগে যে বোন টা ছিলো স্পর্শ তারই বাচ্চা। এরপর উজান আর তারপরই তার ছোট বোন উষ্ণা। উজানের মা আপাতত তার ছোট বোনের বাড়িতেই আছে। কিন্তু বিহান সে যে বলেছিলো সে উজানের ভাই তাহলে। একটু ইনিয়েবিনিয়ে হিয়া বুঝতে পারলো বিহান উজানের নিজের ভাই না বরং ওরা কাজিন। তার মেজো চাচার বড় ছেলে। একটা সময় তারা একসাথেই এই বাড়িতে থাকতো। দাদিমণি এ ব্যাপারে বেশিকথা বাড়ালো না৷ মনটা ভার হয়ে আসলো তার। হিয়াও যেচে আর কিছু জানতে চাইলো না এখনি সব জেনে নিতে চাইলে তাকে সন্দেহ করার প্রবল সম্ভাবনা আছে।এতটুকু যখন জানতে পেরেছে বাকি রহস্যেও সে একটা সময় ঠিক উদঘাটন করতে পারবে।

এই দুদিনে উজানের সাথে হিয়ার তেমন একটা কথা হয় নি,না হয়েছে খুব একটা দেখা।ব্যবসার কাজে ভীষণ ব্যস্ত ছিলো উজান। বাড়িতে এসে দু মুঠো ভাত অবধি খাবারো যেনো সময় ছিলো না তার। রাতে এসে স্পর্শকে দেখতে আসতো ঠিকই কিন্তু রাত বারোটার পর স্পর্শও হিয়ার বুকে লুটিয়ে ঘুমের রাজ্যে ঘুরে বেড়াতো।

!
!
দুদিন পরঃ

সকাল থেকে আকাশ টা আজ ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদল করছে। কখনো আকাশ পরিষ্কার হয়ে শুভ্র মেঘের দেখা মিলছে কখনো বা ভারী মেঘের স্তুপে ঢেকে সূর্য তার তেজ দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে। আকাশের এই মুহুর্তে মুহুর্তে রঙ বদলানো দেখে বুঝতে পারা যাচ্ছে না এখন কি আকাশ কাপিয়ে বৃষ্টি নামবে না সূর্য্যিমামা মেঘ সরিয়ে তার মিষ্টি হাসি পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিবে। তার উপর আজই আবার হিয়ার পাঠানো জিনিস গুলো আনতে যেতে হবে। উজান চেয়েছিলে নিবিড় যদি যেতে না পারে তাহলে সে নিজে গিয়ে সব নিয়ে আসবে কিন্তু ওখান থেকে জিনিস টা কালেক্ট করতে লাগবে হিয়ার সাইন।তাই বাধ্য হয়ে হিয়াকে নিয়েই কুরিয়ার অফিসের দিকে যাএা শুরু করে উজান আর নিবিড় দুজনেই। এদিকে মাঝপথে একটা কাজের জন্য নিবিড়ের জরুরি তলব আসতেই উজান নিবিড়কে বলে তাকে আর হিয়াকে অফিসের সামনে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি টা নিয়ে তার পথে রওনা দিতে। হিয়া উজানকে আস্বস্ত করে বলে সে একাই পাড়বে সবটা করতে,উজান কেনো এতো অস্থির হচ্ছে। উজান হিয়ার কথা শুনে না বরং নিবিড়কে দাঁড় করিয়ে রেখে হিয়াকে নিয়ে কুরিয়ার অফিসে আসে। কুরিয়ার থেকে জিনিস গুলো তুলতে বেশি সময় লাগে না তাদের। সেটা তুলে নিয়েই দুটো বড় ব্যাগ গাড়ির ডিকি তে ভরিয়ে দিয়ে নিবিড়কে বলে তুমি গাড়ি নিয়ে আপাতত যাও আমি হিয়াকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসছি। জরুরি তলবে নিবিড় তার কাজের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে যায়।

!
!

এদিকে হিয়াকে নিয়ে বড় রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে উজান। একটা রিক্সা পেলেই তাতে তারা চড়ে বসবে৷ কিন্তু আপাতত এই রাস্তায় দেখা মিলছে না কোনো রিকশার।

-আপনাকে আমি বললাম নিবিড় ভাইয়ার সাথে চলে যেতে কিন্তু আপনি শুনলেন না। আমাকে একটা রিক্সায় তুলে দিলেই আমি ঠিক চিনে বাড়ি পৌঁছে যেতে পারতাম।

-আপনি বড্ড বেশি কথা বলেন হিয়া। আবহাওয়ার অবস্থা দেখেছেন যেকোনো মুহুর্তে ভারী বৃষ্টি নামতে পারে। বাই এনি চান্স আপনার রাস্তায় কোনো অসুবিধে হলে দাদিমণি আমাকেই রাগ করবে।আপনি কি চাইছেন যে আমি আপনার জন্য দাদিমণির বকা খাই।

-শুনুন আমি একাই একটা মেয়ে ঢাকা থেকে যখন এতোদূর চিনে আসতে পেরেছি তখন এতোটুকু পথও আমি ঠিক চিনে যেতে পারতাম।

হিয়ার কথায় উজান চোখ রাঙিয়ে হিয়ার দিকে তাকিয়ে উঠলো।আজ অবধি সবাই তার হ্যা তে হ্যা না তে না করেছে কিন্তু হিয়া যেনো বড্ড লাগামহীন। উজানের আগুনের চাহনিতে দমে গেলো হিয়া৷ সত্যি আবহাওয়া টা বড্ড খারাপ করছে।দমকা হাওয়া ইতিমধ্যে বইতে শুরু করছে। যেকোনো মুহুর্তে ভারী বৃষ্টি নামতে পারে। এ-ই ভারী বৃষ্টিতে শহরে প্রথম এসে একা চলাফেরা করা সত্যি চিন্তার বিষয়। দমকা হওয়ার চোটে কোনো রিক্সাই যাবার জন্য রাজি হচ্ছিলো না। বাড়তি টাকার বিনিময়েও না। অনেক কষ্টে একটা রিক্সা খুঁজে পাওয়া গেলো। উজানকে চিনতে পেরেই রিক্সা দাদু আর কথা বাড়ালেন না। নিজে থেকে যেচে বাড়ি পৌঁছে দিতে চাইলেন৷

!
!

হুট তুলে দিয়ে রিক্সায় পাশাপাশি বসে আছে উজান হিয়া। হিয়ার নিজের কাছে নিজের এ-ই মুহুর্তে খুবই অস্বস্তি লাগছে। কতো কাছাকাছি সে আর উজান। হিয়া জড়োসড়ো হ’য়ে বসে, যাতে তার হাঁটুর সাথে কোনোভাবে উজানের পা গিয়ে না লাগে। দমকা বাতাসে হিয়ার জামা উড়ে উপরে চলে আসছে। হিয়া অস্থির হাতে সেটা আবার নামিয়ে হাঁটুতে হাত দিয়ে চেপে রাখছে। হিয়ার কোমড় অবধি খুলে রাখা চুল উড়ে এসে বারবার বাড়ি খাচ্ছে উজানের গলার ভাঁজে। না চুল গুলোও বড্ড স্বার্থপরতার পরিচয় দিচ্ছে আজ। কোনোভাবে হিয়ার কাছে থাকতে চাইছে না। উজানের গলার ভাঁজ আর কানের লতিগুলো বড্ড মনে লেগেছে যেনো তাদের। এদিকে একটু উঁচু নিচু রাস্তায় এসে রিক্সা নামতেই হিয়ার মাথা গিয়ে সোজা বারি খেলো হুটের উপরে লোহা টার উপর।আহ বলে আস্তে করে চিৎকার করলো হিয়া। কি একটা অবস্থা একেবারে যাচ্ছে তাই। উজান এতোক্ষণ হিয়ার এই নাজেহাল অবস্থা পর্যবেক্ষন করছিলো। অস্থির হিয়াকে থামিয়ে দিয়ে সে শান্ত গলায় বলে উঠলো,

-আপনি এতো অস্থির কেনো হিয়া। দেখি শান্ত হয়ে বসুন। জামা টা হাঁটুর কাছে ধরে রাখুন। আমি এদিকে দেখছি,

হিয়া কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না,জামা টা হাঁটুর কাছে চেপে ধরলো।এরপর উজান যা করলো তার জন্য বিন্দুমাএ প্রস্তুত ছিলো না হিয়া৷ হিয়ার সারা শরীরের লোমকূপ শিরশিরে উঠলো। একি করছে উজান। উজান হিয়ার চুল গুলো দু হাতে গুছিয়ে এক হাতে মুঠো করে নিয়ে রাখলো। হিয়া চুপসে গেলো। এদিকে কিছু দূর পৌঁছাতে শুরু হলো আরো ঘোর বিপদ। বৃষ্টি নামক অনাকাঙ্ক্ষিত সৌন্দর্য আকাশকে রাগ দেখিয়ে মুহুর্তে ঝরে পড়লো। মনে হচ্ছে ধারার সব পানি বাষ্প হয়ে আকাশে গিয়ে মেঘ হয়ে এখন আবার বৃষ্টি হয়ে ধারায় এসে পতিত হচ্ছে। সাতটা মহাসমুদ্রও হার মানবে পড়ন্ত এই বৃষ্টির উপর। এখন তো বসন্তে রঙীন ঘুড়ি উড়াবার সময় এসময় যদি শ্রাবণের মেঘ গুলো আকাশে জড়ে হয়ে বৃষ্টি হয়ে নামতে শুরু করে কেমন লাগে।

মেঘেদের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। সিক্ত আকাশ তার কান্না ঝড়িয়ে যাচ্ছে। জমে গেছে হাসেঁর জলকেলি। থেমে গেছে পথিকের পায়ে হাটা। বাগানবিলাসি হেনা ফুটে গেছে। পাখিরা নীড়ে ফিরে সংসশয়ে পাড় করছে সময়।

রিকশা দাদু দূত হাতে ছাতা খুলে লাগিয়ে নিলেন তার হ্যান্ডেলে। লাল হলুদ ডোরাকাটা পলিথিনের ব্যাগ টা ঝটপট উজানের হাতে দিয়ে বললেন বাবা এটা জড়িয়ে নেও মা ভিজে যাচ্ছে। হিয়ার মুঠো করে ধরে রাখা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে উজান পলিথিনের ব্যাগ টা দুহাত প্রসারিত করে দুদিকের হুটের সাইডে গুঁজে দিয়ে ধরে থাকলো। যা বাতাস দিচ্ছে যদি পাছে খুলে পড়ে যায় এই ভয়ে। রিক্সা দাদু দূত প্যাডেল তুলে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিলো……..উজান বুঝতে পারছে না এই মুহুর্তে রিক্সা চালিয়ে যাওয়া টা উচিৎ হবে কি না। রিক্সা দাদু বললো সমস্যা নেই বাবা আর তো কিছুদূরেরই পথ। এরকম কতো রোদবৃষ্টিতে উনি রিক্সা চালিয়েছেন……..বৃষ্টির এতোই তেজ যে পলিথিন ব্যাগের উপর দিয়ে এসে বৃষ্টির ছাট জড়ো হচ্ছে উজানের সারা হাতে।হিয়াও কিছুটা কাক ভেজা হয়ে আছে। পলিথিন দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ছে দুজনের সারা শরীরে। হিয়ার খুলে রাখা চুল এসে জড়ো হয়ে উজানের ভেজা হাতে লেপ্টে যাচ্ছে। এতো শিরশিরে আমেজে দু’জনের শরীর দিয়ে তপ্ত শ্বাস বের হচ্ছে। কতো কাছাকাছি আজ আবারো দু’জন। হিয়ার নিশ্বাস এসে পড়ছে সামনে পলিথিন ধরে থাকা উজানের হাতের উপর। মুহুর্তে উজানের শরীরে একটা অন্যরকম অনুভূতির ছোঁয়া দেখা মিলছে। সেই রেশ গিয়ে লাগছে হিয়ার উপরেও। সামনে একটা গর্তে রিক্সা টা স্লাইড করে পড়তে হিয়া ঝুঁকে যায়।ঘপ করে ধরে ফেলে উজানের মেলে দেওয়া হাতটাকে। ইসস কি বাজে একটা অবস্থা। কিছুসময় বাদে হাত টা ছাড়িয়ে নেয় হিয়া। মনে একটাই দোয়া দরুদ পড়তে থাকে কোনোভাবে যেনো বজ্রপাত না পড়ে। নাহলে এমনিতে যা রোমাঞ্চকর কাহিনি চলছে এরপর বজ্রপাতের শব্দে সে ভয়ে উজানকে জড়িয়ে ধরুক কি বিশ্রী হয়ে যাবে তখন ব্যাপারটা। হিয়ার কথা আজ প্রকৃতি মানতে নারাজ। আকাশ কাপিয়ে ঘন অন্ধকারে বজ্রপাতের পর পর দুটো বিকট শব্দ কানে পৌঁছালো। হিয়া নিজেকে শক্ত করলেও উজান ভয় পেয়ে গেলো। রিক্সা দাদু কে বললো দাদু তুমি গাড়ি থামাও এভাবে বাড়ি ফেরা অসম্ভব। দাদুও আর পারছিলো না। রিক্সা থামালেন। তিনজনে এসে জড়ো হলেন একটা বাড়ির ছাউনির নিচে। রাস্তা পেড়িয়ে এই দু-তিন কদম আসতেই বৃষ্টি তার সুযোগ লুফে নিলো। যা ভেজার ভিজিয়ে দিলো এই দুই প্রেম প্রেয়সীকে।

চলবে….

তুমি আসবে বলে পর্ব-০২ও০৩

0

#তুমি আসবে বলে
#পর্ব_২+৩
#ইভা রহমান

সময় পেড়িয়ে এক বছরের কোঠাতে এসে সামিল। এই এক বছরে হিয়া যতোটা পেরেছে নিজেকে শক্ত করে,সমাজের মানুষের করা কটুক্তিকে পেছনে ফেলে নিজের জীবনটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেছে। তার মেরুদণ্ড যে কতেটা শক্তিশালী তা সে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আজো প্রতি রাতে তাকে বিহানের শেষ কথা গুলো বড্ড ভাবিয়ে তুলে। এতো দিনে সে এটা খুব ভালো করে বুঝে গেছে বিহানের প্রতি তার কখনো কোনো ভালোবাসা জন্মেনি বরং বিহানের প্রতি তার যে অনুভূতি ছিলো সেটা শুধু একটা নিরাপদ আশ্রয়ের ঠিকানা। সে বিহানকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চেয়েছিলো ঠিকই কিন্তু ভালোবাসার উপরে ছিলো তার একটা নিরাপদ আশ্রয় পাবার বাসনা। হ্যা তবে বিয়ে হলে একদিন ঠিকই বিহানের প্রতি তার সত্যিকার অর্থে ভালোবাসা জন্মাতো কিন্তু সেটা যখন আর হয়নি তাই সেসব সে গুড়ে বালি চিন্তা করে আর লাভ কি। তাই হিয়া আর চায় না বিহান তার জীবনে আর কখনো ফিরে আসুক কিন্তু সে চায় আসল সত্যে টা জানতে। সে জানতে চায় শুধু কি পরিস্থিতির চাপে পড়েই বিহান এই সিদ্ধান্ত টা নিয়েছে নাকি সব কিছুর পেছনে দায়ী উজান শাহরিয়ার বলে সেই নরপশুটা। যে মানুষকে মানুষ বলেই গণ্য করতে জানে না। এই একটা বছরে বিহানের প্রতি হিয়ার যতোটা না ঘেন্না জন্মেছে তার চাইতে উজানের প্রতি তার মনে আসা তিক্ততা হিয়ার মনের পরোতে পরোতে স্তুপ আকারে বাসা বেঁধে পাহাড় সমান আকার ধারণ করেছে।

!
!

ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজের নকশার পৃষ্ঠাটায় চোখ পড়লো হিয়ার,বাহ! এবারের নকশার ডিজাইন গুলো সত্যি অনেক মনকড়া বলে মনে হচ্ছে। পেপার টা হাতে নিয়ে খুতিয়ে খুতিয়ে দেখতে থাকলো হিয়া। জামার ডিজাইন গুলো তার মনে বড্ড ভালো লেগেছে। টুকিটাকি হাতের কাজ জানায় হিয়া ঠিক করে এবারের বৈশাখে এরকমই একটা জামা বানিয়ে সে উপহার দিবে তার ফুফাতো বোন বুলিকে। তাই পৃষ্ঠা টাকে পেপার থেকে তুলে নিতেই হঠাৎই হিয়ার চোখ যায় চাকরির বিজ্ঞপ্তির পাতাতে। উজান বলে লেখা নাম টার দিকে চোখ পড়তেই চোখ আঁটকে যায় তার। শান্ত হয়ে বসে বিজ্ঞপ্তি টা পড়তে গিয়েই হিয়া পেয়ে যায় তার সেই তাসের তুরুপ। উজান শাহরিয়ারের বড়বোনের এক বছরের বাচ্চা আর তার মধ্যবয়স্ক দাদিমনির দেখাশোনার জন্য একজন আয়ার প্রয়োজন। যার নার্সিং বিষয়ে জ্ঞান আছে তাকেই এই কাজের জন্য দেখেশুনে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে সেই মেয়েকে উচ্চমাধ্যমিক এর কোঠা শেষ করতে হবে আর নিয়ম অনুযায়ী তাকে তাদের বাড়িতেই থাকতে হবে”বিজ্ঞপ্তিটা পড়ে খবরের কাগজ টাকে হাতে নিয়েই হিয়া প্রায় বেশ কিছুক্ষন নিজের রুমে পায়চারি করলো। এই সুযোগ টাই তো সে চেয়ে এসেছিলো এতোদিন। অনেক ভেবে চিন্তে হিয়া সিদ্ধান্ত নিলো সে এই কাজের জন্য এপ্লাই করবে৷ যেই বলা সেই কাজ,ওখানে লিখে দেওয়া নির্ধারিত ওয়েবসাইটে গিয়ে হিয়া তার যাবতীয় ডিটেইলস দিয়ে ফর্ম টা পূরণ করেই তবেই শান্ত হলে। যদি সে সিলেক্ট হয়ে যায় তাহলে যেমন শাহরিয়ার বাড়িতে গিয়ে বিহানের খোঁজ পাওয়া যাবে ওমনি সে এই সত্য মিথ্যের বেড়াজাল থেকে আসল ঘটনা উন্মোচন করতে সক্ষমও হবে। সাথে হিয়া এটাও ঠিক করে নেয় যদি তার এই করুন পরিণতির জন্য উজান বলে লোকটা সত্যি দায়ী থাকে তাহলে সে উজানকেও ঠিক সেরকমই আঘাত দিয়ে বুঝিয়ে দেবে প্রতরণা ঠিক কি জিনিস। কোনো মেয়েকে ঘন্টার পর ঘন্টা বউ সাজিয়ে কাজি অফিসে বসিয়ে রাখা কতোটা হৃদয়বিদায়ক!

হিয়ার যাবতীয় ডিটেইলস দেখে শাহরিয়ার বাড়ির ম্যানেজার তার ফর্মটাকে এ্যাপ্রোভ করে দিয়ে আগামী সপ্তাহের বুধবার হিয়াকে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাক পাঠালো,আর সেই উদ্দেশ্য হিয়া এখন প্রস্তুত তার গন্তব্যের পথে রওনা দিতে!

-আমার খুব ভয় হচ্ছে তোর জন্য হিয়া,কি করে একটা অচেনা শহরে তুই একা একা এভাবে।

-কোনো ভয় নেই। এতোটা দূর্বল আমি নই অর্পা। তুই শুধু এদিকে ঔষধজ্যেঠু আর ফুফুকে দেখে রাখিস ওরা যেনো কেউ ঘুনাক্ষরের এটা টের না পায় যে আমি বিহানের খোঁজ নিতে বা উজান বলে লোকটার থেকে প্রতিশোধ তুলতে তাদের শহরে পাড়ি জমাচ্ছি।

-তুই পারবি তো হিয়া। শুনেছি উজান বলে লোকটা নাকি খুবই বদমেজাজি। তার সব সহ্য হয় কিন্তু প্রতরণা আর মিথ্যে তিনি দুচোখে সহ্য করতে পারে না। যদি তুই ধরা পরে যাস তখন।

-ধরা পড়ে গেলেও সমস্যা নেই। দাদি কে বলে মনে নেই তোর। ছেলেদের কাবু করার জন্য মেয়েদের দুটো অস্ত্র আছে এক তাদের মুখের হাসি আর দুই চোখের জল। হাসি দিয়ে সব ছেলেকে কাবু করা না গেলেও প্রত্যেক নারীর চোখের জলের কাছে হার মানতে বাধ্য এই পুরুষজাতি!

-এটা ছেলেমানুষী হিয়া।

-আমার জীবনটাই তো ছেলেমানুষী হয়ে ভোগের বস্তু হিসাবে এখন সবার হাসির পাএ হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্পা। হোক না আরেকটু ছেলেমানুষী…!

-হিয়া(অস্ফুটে)তবে যা করবি সাবধানে আর গিয়েই আমাকে ফোন দিস কিন্তু।

-হুম আর বাড়িতে যেনো কেউ না জানে বিষয়টা কেউ না মানে কেউ না।কেমন।

!
!
সব পেড়িয়ে হিয়া এসে পৌঁছালো তার গন্তব্যে।পা রাখলো উজান শাহরিয়ার এর শহরে তাদেরই এলাকায়।কথা ছিলো শহরের এই নামকরা কাঁচা বাজারের সামনটাতে বাড়ির ম্যানেজার হিয়াকে নিতে আসবে কিন্তু দীর্ঘ এক ঘন্টা অপেক্ষা করবার পরেও সেই ম্যানেজারের খোঁজ নেই উপরন্তু আর কিছু ভেবে না পেয়ে হিয়া সিদ্ধান্ত নিলো সে একাই ঠিকানা খুঁজে শাহরিয়ার কুঞ্জে গিয়ে পৌঁছাবে। যদিও সে ঠিকানা জানে তবুও একদম নিশ্চিত হবার জন্যেই সে একটু সামনে গিয়ে একজন ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলো “দয়া করে শাহরিয়ার কুঞ্জ টা এখান থেকে কোনদিক টায় একটু বলতে পারবেন”লোকটা কথা টা কানে নিতেই বিস্মিত চোখে হিয়ার দিকে তাকিয়ে আরেকবার হিয়ার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে তাকালো। কিছু না বলেই দূত জায়গা প্রস্থান নিতেই হিয়া একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। লোকটা তার দিকে ওভাবে তাকিয়ে কিছু না বলে চলে গেলো কেনো। নিজের মনে আসা প্রশ্নটাকে তুচ্ছ করে হিয়া সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন ভদ্রমহিলার কাছে ঠিকানা জানতে চাওয়ার উনিও হালকা হেঁসে দিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালো। ব্যাপারটা কিছু বুঝলো না হিয়া। বিহান তো বলেছিলো শহরে নাকি শাহরিয়ার কুঞ্জ বলতে সবাই এক নামে চিনে তাহলে সবাই এরকম করছে কিসের জন্য।

হিয়ার মনের উথাল-পাতাল ঢেউ টাকে আর বইতে না দিয়েই পেছন থেকে এক পুরুষালী কন্ঠ ডেকে উঠলো হিয়াকে। হিয়া পেছন ফিরতেই দেখতে পারে তার ঠিক এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে এক সুঠাম দেহের সুপুরুষ,সাদা পাঞ্জাবির সাথে সাদা চুড়িদার। হাতে এক ব্লাক ঘড়ি চুল গুলোও নিয়ম করে আছড়ানো। গায়ের রঙ যথেষ্ট সুন্দর সাথে সেই চওড়া ছাতি বলিষ্ঠ তেজ। সাধারণ কিন্তু পরিপাটি পরিমার্জিত সাজসজ্জা যেকোনো নারী মনকে আকর্ষণ করতে যথেষ্ট!নিজের চোখ টাকে সামলে নিয়ে হিয়া এবার কথা শুরু করলো। তাকে হঠাৎ এভাবে পেছন থেকে ডাকার কারণ।

-জ্বী কিছু বলবেন?

-আপনি কি মিস হিয়া মুনতাসীর বলছেন?

-জ্বী বলছি।

-আপনিই কি আজ নার্স হিসাবে ইন্টারভিউ দিতে শাহরিয়ার কুঞ্জে এসেছেন?

-জ্বী। কিন্তু আপনার পরিচয়?

-জ্বী আমি উজান শাহরিয়ার। শাহরিয়ার বাড়ির বড় ছেলে বলছি!

কথাটা শোনামাএই থমকে যায় হিয়া,যেই মানুষটাকে দেখার জন্যেই তার এতো দূর যাএা এতোক্ষণ কি না সেই মানুষটার সামনেই সে দাঁড়িয়ে ছিলো। ওহ মানুষগুলো এজন্যেই বোধহয় তার প্রশ্নের উওরে এরকম বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে ছিলো। হিয়া ভাবতে পারে নি উজান এতো টা সুদর্শন দেখতে হবে। বিহানের ভাষ্য মতে তো উজান দেখতে বখাটে টাইপ ছেলেদের মতো হবার কথা কিন্তু এই কন্ঠে যে এক অন্য রকম গাম্ভীর্যের দেখা পাচ্ছে সে। এতো সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিত্ব যাকে সে স্বপ্নে চেয়ে এসেছিলো এতোদিন। কি জানি উজান হয়তো শুধুই সুদর্শনের ভান্ডার তার আচরণ টাও যে ঠিক কতোখানি খাঁটি এবার সেটাও না হয় আস্তে আস্তে করে যাচাই করে নেওয়া যাবে!

-আচ্ছা বুঝলাম……আপনার বাড়ি থেকে আমাকে নিতে আসার কথা ছিলো। আমি দীর্ঘ এক ঘন্টা ধরে আপনাদের ম্যানেজারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু সে নেই!

-আমি আন্তরিকভাবে সে জন্য দুঃখিত।আপনি আমাদের বাড়িতে ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন,সে হিসাবে আপনি আমাদের বাড়ির অতিথি। আপনাকে নিতে আসার ব্যাপারে আমাদের আরো সচেতন হওয়া দরকার ছিলো। আপনি আমার গাড়িতে বসুন।আমি আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসছি।

-আপনি!

-কোনো সমস্যা?

-না,,বলুন কোথায় বসতে হবে,,

উজান গাড়ির দরজা খুলে হিয়াকে বসতে দিয়ে নিজে হিয়ার হাতের ব্যাগ টা পেছনে গিয়ে রেখে আসে। বাজারের লোকগুলোর সাথে দু একটা জরুরি কথা বলে নিয়ে উজান এসে ড্রাইভিং সীটে বসে যায়। গাড়ি স্টার্ট দিতে যাবে ওমনি সে খেয়াল করে হিয়ার সীট বেল্ট টা লাগানো নেই। উজান অনুরোধের সুরে বলে উঠে,

-কাইন্ডলি যদি সীট বেল্ট টা লাগিয়ে নিতেন?

উজানের কথা অনুযায়ী হিয়া সীট বেল্ট টা হাতে নেয় ঠিকই কিন্তু এটা কি করে লাগাতে হয় তা তো হিয়া জানে না।

-যদি কিছু মনে না করেন আমি কি সীট বেল্ট টা লাগাতে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

-জ্বী মানে আমি..

হিয়াকে খানিকটা অপ্রস্তুত দেখে উজান নিজে হিয়ার দিকে ঝুঁকে এসে সীটবেল্ট টা লাগিয়ে দিতে থাকে। আর উজানকে নিজের এতো কাছে আসতে দেখে হিয়া খানিকটা ভয় পেয়ে যায়। উজান এ-ই গাড়ির মধ্যে ওর কোনো ক্ষতি করে দেবে না তো। বিহান তো বলেছিলো উজান বিয়ে সংসার এসবে বিশ্বাস না করলেও মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করতে তার জুড়ি মেলা ভার!ভয়ে নিজের সীটে কুঁচকে গিয়ে আরো জড়োসড়ো হ’য়ে যায় হিয়া। না না প্রথমেই এতো দূর্বল হয়ে গেলে তাকে চলবে না,সে যে কাজের জন্য এতোদূর এসেছে সে বিষয়ে তাকে পরিষ্কার সবটা জানতে হবে,হিয়ার সীট বেল্ট টা লাগিয়ে দিয়ে উজান গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলো। উজানের কানে ছিলো ব্লুটুথ সেটা দিয়েই সে কথা বলতে শুরু করলো তার সহযোগী নিবিড় এর সাথে;

-তুমি খুব ভালো করে জানো নিবিড় দায়িত্বে অবহেলা আমি একদমই পছন্দ করি না। তার উপর উনি এতোদূর থেকে একটা দীর্ঘ জার্নি করে এসে এভাবে একটা ঘন্টা বাজারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এটা শাহরিয়ার পরিবারের জন্য কতোটা অপমানজনক তুমি বুঝো।

-সরি স্যার,আমি ঠিক সময় গাড়ি নিয়ে বেড়িয়েছিলাম কিন্তু মাঝপথে,

-আমি কোনো এক্সকিউজ শুনতে ইচ্ছুক নই নিবিড়,আই হোপ এরপর থেকে তুমি তোমার কাজের প্রতি আরো দায়িত্বশীল হবে।

কথাটা বলেই অপর পাশ থেকে আর কিছু শোনার প্রয়োজনটুকু বোধ না করেই উজান ফোন টা কেটে দিলো। তার চোখ মুখ দেখে এটা স্পষ্ট যে নিবিড়ের থেকে এরকম একটা কাজ কখনোই সে আশা করে নি। নিবিড়ের এই কাজে সে ভীষণ আশাহত।

-আপনি ওনাকে এভাবে না বললেও পারতেন। মানুষের তো সমস্যা থাকতেই পারে। তবে হ্যা উনি যদি আমাকে ফোন করে ব্যাপারটা বলতো তাহলে আমি অপেক্ষা না করেই ঠিক ঠিকানা খুঁজে পৌঁছে যেতে পারতাম,

-আপনি শহরে নতুন,এতোটাও নিজের উপর কনফিডেন্স থাকা উচিৎ নয়……আপনার বায়োডাটা দেখে যা বুঝলাম আপনি ইংলিশে অর্নাস করছেন তা হঠাৎ পড়াশোনার পাশাপাশি এই কাজে যোগ দিতে চাইছেন?

-আসলে সত্যি বলতে আমি অনাথ। ফুফুর বাড়িতে ছোট থেকে মানুষ। চেষ্টা করি নিজের যতোটুকু সামর্থ্য তা দিয়ে পরিবারে কিছু সহয়তা করতে। আর পরীক্ষা যেহেতু বছরের একদম শেষে তাই ভাবলাম বাড়িতে বসে থেকে আর করবো টা কি। আর যেহেতু ঔষধজ্যেঠুর সাথে কাজ করে নার্সিং এর জ্ঞান টুকু জানা আছে তাই আর সাত পাঁচ না ভেবে এপ্লাই করে ফেললাম।

-দুঃখিত,আমি জানতাম না আপনি অনাথ আর দ্বিতীয়ত্ব আপনার কাজের প্রতি আগ্রহ দেখে জিনিসটা ভালো লাগলো।

-ধন্যবাদ!….আচ্ছা আপনি কি করে বুঝলেন যে আমিই সেই মেয়ে যে আপনাদের বাড়িতে ইন্টারভিউ দিতে এসেছি?

-এই শহরের প্রত্যেকটা মানুষ আমাদের বিশেষত্ব আমাকে চিনেন আর আপনি যেভাবে ব্যাগপএ হাতে নিয়ে সবাইকে জিজ্ঞেস করছিলেন তাই আমি আন্দাজ করে বললাম যে। আর নিবিড়েরও তো আপনাকে এখানেই নিতে আসার কথা ছিলো।

-ওহ!তা ঠিক,

-আপনার কোয়ালিফিকেশন দেখে আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে এখন সবটা দাদিমণির হাতে। উনি আপনাকে দেখে পছন্দ করলেই আপনার চাকরি টা কর্নফার্ম।

-আমি চেষ্টা করবো আপনার দাদির মন রাখতে,আর যেই বাচ্চা টার কথা লেখা ছিলো?

-কে স্পর্শ?সে আমার বড় বোনের ছেলে। এ্যাকসিডেন্টের সময় আপুকে হারিয়ে সে এখন আমাদের কাছেই মানুষ।

-আচ্ছা,আর স্পর্শের বাবা?

-স্পর্শ কে গ্রহন করতে অস্বীকার জানায়। দাদিমণি আর চায়নি ব্যাপারটা জল ঘোলা হোক তাই স্পর্শ আমাদের সাথেই থাকে,

হিয়া একটা দম ছাড়লো,খুলে রাখা জানালার দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে উঠলো,,

-জীবন টা সত্যি কতো অদ্ভুত তাই না। আমার বাবা মা নেই বলে আমি অনাথ আর স্পর্শের বাবা থেকেও সে!

-হুম জীবনটা সত্যিই খুব অদ্ভুদ। আসুন,বাড়ি এসে গিয়েছে। নামুন এবার,,সাবধানে।

-জ্বী!নামছি।

চলবে…..

#তুমি_আসবে_বলে
#পর্ব_৩
#ইভা_রহমান

হিয়াকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই হিয়ারই বয়সী এক তরুণী কোথা থেকে দৌড়ে এসে জাপ্টে ধরলো উজানকে। ব্যাপারটাতে ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গেলো উজান। অনেক ভণিতা করে মেয়েটাকে তার চওড়া বুক থেকে সরিয়ে সামনে দাঁড় করাতে সক্ষম হলো। মেয়েটা হাসিমুখে কিছু বলার আগেই তার চোখ পড়লো উজানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হিয়ার উপর। ভূ-কূঁচকে এক পলকেই হিয়ার পা হতে মাথা অবধি পরখ করে নিয়েই সে একটা কৌতূহলী চাহনিতে উজানের দিকে প্রশ্ন ছুড়লো,

-মেয়েটা কে উজান?

-উনি শহর থেকে এসেছেন দাদিমনি আর স্পর্শের নার্স হিসাবে জয়েন করবার জন্য ইন্টারভিউ দিতে।

-আচ্ছা,কিন্তু তাকে তো নিবিড়ের নিয়ে আসার কথা ছিলো। তুমি হঠাৎ?

-নিবিড় ঠিক সময় পৌঁছাতে পারেনি তাই জন্য আমাকেই নিতে আসতে হলো। বাই দা ওয়ে তুমি কি কোথাও এখন বের হচ্ছো মেহু?

-হুম জয়ের বার্থডে উপলক্ষে একটা ছোট্ট গেটটুগেদার এর আয়োজন করা হয়েছে।সেখানেই যাচ্ছি দুপুরের আগেই ফিরে আসবো,,,,থাকো এসে কথা হবে।

উজান কিছু বলার আগেই মোহিনী হিয়ার দিকে একটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে পড়লো। উজান হিয়াকে সোজা নিয়ে আসলো তার দাদিমণির রুমে। হিয়ার সাথে ওনার পরিচয় করিয়ে দেবার মুহুর্তেই দাদিমণি আর হিয়া একে অপরকে দেখে বিস্ময়ে তাকিয়ে উঠলো। হিয়া মুখে এক বালতি হাসি টেনে বললো ম্যাম আপনি এখানে?__দাদিমণি উওর দিলো তার বাড়ি সে এখানে না থেকে আর কোথায় যাবে বল দেখি। হিয়া হাসলো। আলতো করে হিয়াকে জড়িয়ে নিলেন উনি। তাদের কথাবার্তা শুনে এটা স্পষ্ট যে তারা দু’জনেই পূর্বপরিচিত। উজান একটু অবাক হলো। বিস্মিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো আপনারা কি একে অপরকে আগে থেকেই চিনতেন? দাদিমণি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে বললো হুম তিনি হিয়াকে আগে থেকেই চিনে৷ মূলত হিয়ার সাথে তার পরিচয় টা ঔষধজ্যেঠুর মাধ্যমে। তার হাঁটুর চিকিৎসার জন্য যখন তিনি ঢাকা গিয়েছিলেন সেসময়ই তার সাথে হিয়ার পরিচয়।

-তাহলে দাদিমণি তুমি ওনার সাথে কথা বলে কি ঠিক করলে আমাকে জানিয়ে দিও। যদি তুমি ওনাকে রাখতে ইচ্ছুক হয়ে থাকো তাহলে আমি আজই ওনার সব থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

-ইচ্ছের আবার কি আছে৷ এ-ই মেয়েকে দেখেই তো আমার মন জুড়িয়ে গেলো। তা হিয়া’মা কতো স্যালারি দিলে তোমার হবে শুনি?

-আমি কি বলবো ম্যাম। আমার তো এ বিষয়ে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। একটা মানসম্মত স্যালারি পেলেই আমি সন্তুষ্ট। আর শুধু কি স্যালারি নিলেই চলবে আমাকেও তো তার বিনিময়ে যোগ্য সেবিকার মতো সেবা দিতে হবে বলুন।

-সেবার তুমি আমার জন্য যা করেছিলে আমি জানি তুমি এবারো ঠিক তোমার যোগ্যতার পরিচয় দিতে সক্ষম হবে।

দাদিমণির কথায় হিয়াকে নিয়োজিত করা হলো তার ও স্পর্শের সেবিকা হিসাবে। গেস্ট রুমের পাশের রুমটাতে ব্যবস্থা করা হলো হিয়ার থাকার। স্পর্শ আপাতত ঘুমোচ্ছে তাই ঠিক করা হলো সে ঘুম থেকে উঠে গেলেই তার সাথে হিয়ার দেখা করানো হবে। দাদামণি হিয়াকে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে বললো দুপুরের খাবারের জন্য ঠিক আড়াইটের দিকে ডাইনিং এ এসে জড়ো হতে। সময়ের ব্যাপারে উজান নাকি বড্ড সচেতন। হিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে বললো ঠিক আছে আমি সময় মতো খাবার টেবিলে উপস্থিত থাকবো। দাদামণির থেকে বিদায় নিয়ে হিয়া তার রুমে আসলো। ঘড়িতে তখন ২টা ১০ হাতে সময় খুবই কম। তাই এদিক সেদিক না তাকিয়েই হিয়া চটজলদি ওর গোসল টা সেরে নিয়ে বেড়িয়ে আসলো। গায়ে জড়ালো একটা হালকা বেগুনি রঙের সুতির কামিজ। চুল গুলো এখনো চিপচিপে ভেজা তার। মোছার সময় টাও যেনো নেই আর তার হাতে!

দূত পা চালিয়ে হিয়া ডাইনিং এ আসলো৷দেখতে পেলো দাদামণি তার জায়গায় বসে গিয়েছে। তার পাশের চেয়ারে বসে আছে মোহিনী বলে মেয়েটা,তার সামনের চেয়ারে একটা মাঝবয়সী ছেলে,আর তার পাশে একজন মধ্যবয়সী নারী। দাদামণি আর মোহিনীকে চিনলেও অপর দু’জনকে চিনতে বেগ পেতে হলো হিয়ার। ডাইনিং থেকে একটু দূরে ফোনে গভীর এক জরুরি সংলাপে উজানকে মগ্ন থাকতে দেখে হিয়া একটা শান্তির শ্বাস ছাড়লো। যাগ ঠিক সময়ে এসে পৌঁছেছে তাহলে সে। এখনো খাওয়া শুরু হয় নি। টেবিলের কাছে এসে মাঝের চেয়ার টা টেনে হিয়া বসতে যাবে ওমনি মেহু হিয়াকে থামিয়ে দিয়ে রাগান্বিত সুরে বললো”এটা উজানের চেয়ার,তুমি গিয়ে অন্য কোথাও বসো”হিয়া কথা বাড়ালো না চেয়ারটাকে আগের জায়গায় ঢুকিয়ে রেখে পিছন ফিরতে যাবে ওমনি পেছন থেকে আসা উজানের সাথে ধাক্কা খেয়ে বসলো সে। ভেজা চুলের কিছুটা মুহুর্তেই গিয়ে জড়িয়ে গেলো উজানের তিন নাম্বার বোতামের ভাঁজে। চুলে টান পড়তেই আহ বলে হালকা চিৎকার করে উঠলো হিয়া। ব্যাপারটা এতোই দূত হয়েছে যে দু’জনে বুঝতে পারে নি ঠিক কি হচ্ছে। উজান হিয়ার চঞ্চলতাকে থামিয়ে দিয়ে বললো আপনি একটু স্থির হয়ে দাঁড়ান আমি দেখছি। মুহুর্তে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো হিয়া। প্রথমদিনেই এরকম একটা মুহুর্তের সাক্ষী হতে হবে এটা ছিলো তার কাছে পুরো অকল্পনীয়-অবিশ্বাস্যযোগ্য। কতো কাছাকাছি তারা দু’জন। চুলের গিট্টু খুলতে গিয়ে যেনো আরো কাছাকাছি এসে জড়ো হলো দুটো হৃদয়❤️উজানের বুকের ঠিক মাঝ বরাবর রাখা হিয়ার মাথা। স্থির হিয়ার তপ্ত শ্বাস এসে পড়তে শুরু করলো উজানের বোতামের ফাঁক ভেদ করে খোলা বুকের উপর। এক অদ্ভুত অনুভূতি খেলে গেলো উজানের সারা শরীরে। হিয়ার গা দিয়ে ভেসে আসছে এক মিষ্টি সুবাস। যা আরো অস্থির করে তুলছে উজানকে। নারী শরীরের এ কেমন আকর্ষন,কতো মেয়েই তো তার গা ঘেঁসে চলতে চেষ্টা করে রোজ,কতো মেয়ের কথাই বা বলছি কেনো স্বয়ং মেহুই তো সবসময় তাকে ইনিয়েবিনিয়ে জড়িয়ে ধরে থাকে কোথায় তাদের বেলা তো এরকম আকর্ষন কাজ করে না তার। তাহলে আজ হঠাৎ কিছুক্ষণের পরিচয়ে একটা মেয়ের জন্য কেনো তার শরীর এভাবে কাঁপছে। দু’জনে এ মুহুর্তে প্রচন্ড রকমের অপ্রস্তুত হয়ে আছে। কাঁপা হাতের শিরশিরে আমেজ কিছুতেই বোতাম থেকে আর চুল গুলোকে সরাতে পারছেন না। একদিকে উজান চেষ্টা করছে তো আরেকদিকে হিয়া। দুজনের আঙ্গুল গুলো একে অপরের সাথে বারি খাচ্ছে।………এদিকে তাদের দু’জনের এই কান্ডে দাদিমণি সহ নিবিড় সাহেব নীরবে হেঁসে দিলেও দাবা*নলের অগ্নিশিখা এসে বিরাজ করতে থাকে মোহিনীর সারা অঙ্গ জুড়ে। সেই লেলিহান ক্রো*ধের শিখাকে নিয়ন্ত্রণ করতেই ফলের ঝুড়িতে রাখা কাঁ*চি টা হাতে তুলে নেয় মোহিনী৷ উঠে এসে একটানে কে*টে দেয় বোতামে জড়িয়ে থাকা হিয়ার কিছু চুল!!

মোহিনীর এ কাজে সবাই হতবাক। আর হতবাকের পাশাপাশি রাগান্বিত উজান। কি করলো এটা মোহিনী,কাঁ*চি টা তো হিয়ার চোখে গিয়েও লাগতে পারতো। মুহুর্তে চোখ দুটো লাল হয়ে গেলো তার। গম্ভীর কন্ঠে সে এবার ঝারি দিয়ে উঠলো মোহিনীর উপর,

-আর ইউ গোন এন ইনসেন্স মেহু। কি করতে যাচ্ছিলে এটা তুমি। একটু এদিক ওদিক হলেই কাঁ*চি টা চোখেমুখে লেগে একটা মারা*ত্মক ক্ষ*তি হতে পারতো ওনার!

-হলে তাই হতো?

-হোয়াট!

-তুমি এখন এ-ই বাহিরের মেয়ের জন্য আমাকে কথা শুনাবে উজান?

-তুমি ভুল করলে আমি অবশ্যেই তোমাকে শা*সন করবো। আর উনি বাহিরের কেউ নন।উনি দাদিমণির নার্স। আজ থেকে উনি এ বাড়িতে থাকবেন,তাই ওনার ভালোমন্দ দেখে রাখার দায়িত্ব এখন আমাদেরই।

-সেই তো। দায়িত্ব!

ব’লেই হনহন করে ডাইনিং ত্যাগ করলো মেহু। ঘটনা টা এভাবে মোড় নিবে হিয়া বুঝতে পারে নি। তবে এটা সে বুঝতে পেরেছে মেহু তাকে এ বাড়িতে বেশিদিন হয়তো স*হ্য করবে না।

-কি হলো,আপনি দাঁড়িয়ে দেখছেন কি,খেতে বসুন।

উজানের গম্ভীর কন্ঠে হুঁশ ফিরলো হিয়ার,”হু হ্যা করে বসছি”বলতে বলতে বসে পড়লো নিবিড়ের পাশের চেয়ায় টাতে,শার্টের হাতা গুলো ভালো করে ফ্লোড করে নিয়ে উজান নিজের চেয়ারে বসে গেলো। কিছু সার্ভেন্ট এসে সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে গেলো। নিশ্চুপ এই থমথমে পরিবেশ টাকে শান্ত করতে নিবিড়িই কথা শুরু করলো,

-আপনি তাহলে মিস হিয়া মুনতাসীর,

-জ্বী,

-আমি নিবিড়। স্যারের এ্যাসিটেন্ট,এ বাড়ির যাবতীয় কাজের ম্যানেজার। আজ আমারই আপনাকে নিতে আসার কথা ছিলো কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত গাড়িটা মাঝ রাস্তায় খারাপ হওয়াতে আমি ঠিক সময়ে আপনাকে নিতে আসতে পারিনি। তার জন্য আমি গভীরভাবে দুঃখিত

-সমস্যা নেই। জীবনে তো সমস্যা বলে কয়ে আসে না,আপনি নিতে না আসলে আমি ঠিক ঠিকানা খুঁজে চলে আসতে পারতাম।

-হুম,ধন্যবাদ!

আবার কিছুক্ষণ নীরবতা কাটিয়ে উজান একটা সার্ভেন্টকে ডেকে বললো মোহিনী ম্যামের রুমে খাবারটা নিয়ে যেতে। উজান বলা মাএই সার্ভেন্ট টা তার কাজে লেগে পড়লো। এদিকে এবার নীরবতা কাটিয়ে দাদিমণি একটা বিষয়ে কথা তুলতেই কপালের রগ ভাঁজ হয়ে আসলো উজানের।

-হয়েছে না হয় তাহেরের কিছু ভূল। তাই বলে তুই ওনাকে এভাবে তাড়িয়ে দিতে পারিস না উজান।

-আমি তোমাকে এ বিষয়ে আগেই বলেছি দাদিমণি উনি আমাদের সাথে প্রতরণা করেছেন। আমাদের মিথ্যে বলে আমাদের ব্যবসার অনেক টাকা আত্ম*সাৎ করেছেন,ওনার প্রয়োজন ছিলো সেটা উনি এসে আমাকে একবার বললেই পারতো। আমি ওনার প্রয়োজনের চাইতেও ওনাকে দ্বিগুণ ধরিয়ে দিতাম। কিন্তু তা না করে উনি ছলনায় আশ্রয় নিয়েছেন৷ আর এই সব প্র*তরণা,মিথ্যে আমি একদমই ঘে*ন্না করি তুমি খুব ভালো করে জানো সেটা,তাই আমি আশা করবো তুমিও এ বিষয়ে আর কখনো কোনো প্রশ্ন তুলে আমাকে অপ্রস্তুত করবে না।

উজানের কথায় দমে গেলো দাদিমণি,দাদিমণির চোখেমুখে হিয়া দেখতে পেলো এক অসহায়ত্বের চিহ্ন,

-আর একটা কথা। মোহিনীকে বুঝিয়ে দেবা এটা ঢাকা শহর না,যে ও ইচ্ছে মতো যেমন খুশি সেরকম জামাকাপড় পড়ে দিব্যি ফ্রেন্ডদের নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে যাবে। এটা শাহরিয়ার কুঞ্জ। এখানে এসব শহুরে চালচলন আমি একদমই সহ্য করবো না। শালীনতার সীমার মধ্যে থেকেই একটা মানুষের সবকিছু করা উচিৎ বলে আমি মনে করি….আশা করি মিস মুনতাসীর ও এ ব্যাপারে আমাকে নিরাশ করবেন না,যদিও আপনি ঢাকা শহরে মানুষ..!!

হিয়া কিছু বলতে পারলো না। শুধু নিজের সর্বস্ব দিয়ে হজম করে নিলো উজানের প্রত্যেকটা কথা। বিহান তাকে উজানের ব্যাপারে যে বিবরণ শুনিয়ে এসেছিলো এতোদিন তার বিন্দুমাএ ছিটেফোঁটাও সে এখন অবধি উজানের মধ্যে আবিষ্কার করতে সক্ষম হলো না উপরন্তু উজানের কথাবার্তা থেকে শুরু করে কথা বলার সময় এক অনন্য গাম্ভীর্য আর সাবলীল ব্যক্তিত্ব এই অল্পক্ষণের মধ্যেই এক অন্যরকম জায়গা তৈরি করে নিতে থাকলো হিয়ার মনে। উজান যে ভীষণ একরোখা তা তার কথাবার্তা শুনেই আন্দাজ করে নিতে পারলো হিয়া। সাথে এটাও সে উপলব্ধি করলো উজান ভীষণ রক্ষণশীল একজন মানুষ!

!
!
!
খাবার শেষে যে যার রুমে আসলো,ভেজা চুল গুলো দিয়ে এখনো টুপটুপ পানি ঝরছে হিয়ার। সেগুলো এবার ভালো করে না মুছলেই নির্ঘাত জ্বর সর্দি বিনা নিমন্ত্রণে এসে হাজির হয়ে যাবে। পেছন ফিরে চুল গুলো ঝেড়ে নিচ্ছিলো হিয়া এর মধ্যে কখন যে উজান এসে তার পেছনে দাঁড়িয়ে গিয়েছে বুঝতে পারেনি সে। চুল ঝারা শেষে মুঠো ভর্তি চুল গুলো এক টানে পেছনে মেলে দিতেই চুলের আগায় লেগে থাকা পানি গুলো সব বৃষ্টি হয়ে টুপটাপ ঝড়ে পড়লো উজানের বুকে আর হাতে আর অল্পকিছু কণা ঝরে পড়লো মুখের কোণে। এক দু বার মিটে মিটে চোখের পলক ফেললো উজান,হিয়া পেছন ফিরতেই উজানকে দেখে রীতিমতো ভ*য় পেয়ে গেলো। নিজের দিকে তাকাতে গিয়ে খেয়াল করলো গায়ে তার ওড়না জড়ানো নেই। মুহুর্তেই চোখ নামিয়ে নিলো হিয়া,বিছানা থেকে নিজের ওড়না টা তুলে গায়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো। উজান হিয়ার দিকে চোখ বুলিয়ে পেছনে ফিরলো। বুড়ো আঙ্গুলে চাপ দিয়ে চিবুকের কানিতে লেগে থাকা পানি টা মুছলো।

-আমি বুঝতে পারি নি,আমার উচিৎ ছিলো নক করে আসা?

-সমস্যা নেই,বলুন কি বলবেন?

উজান হিয়ার দিকে মুখ ঘুরে তাকালো কিন্তু হিয়ার চোখে চোখ রাখলো না,

-মোহিনীর ছেলেমানুষীর জন্য আমি আপনার কাছে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত,মেয়েটা আসলে ছোট থেকে অনেক জে*দী আর কেনো জানি না আমার ব্যাপারে একটু প*জেসিভ তাই আপনাকে আর আমাকে একসাথে ওভাবে দেখে…

-আমি কিছু মনে করিনি। কিন্তু ও যেভাবে কাঁচি নিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসছিলো একটু অসাবধান হলেই আমার অনেক বড় ক্ষ*তি হতে পারতো,

-এরপর থেকে এসব বিষয়ে আরো যত্নবান হবার চেষ্টা করবো। আসুন..

-কোথায় যাবো?

-দাদিমণি আপনাকে ডাকছে। স্পর্শ ঘুম থেকে উঠে গেছে।

-ওহ!ঠিক আছে আপনি চলুন,আমি আসছি।

উজান চলে যেতেই হিয়ার ফোনে ফোন আসলো অর্পার,হিয়া এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে নিয়ে খুব সন্তপর্ণে ফোন টা রিসিভ করলো,ওপাশ থেকে অর্পার চিন্তারত কন্ঠ স্পষ্ট বোঝা গেলো,

-আমি ঠিক আছি অর্পা,তুই কি আমাকে এতো দূর্বল ভাবিস বল তো?

-সে যাই হোক,সাবধানে থাকবি। আর হ্যা বললি না তো উজান বলে মানুষ টা ঠিক কি রকম?

-বুঝতে পারছি না অর্পা,বিহান আমার মনে লোকটার যেই প্রতিচ্ছবি তৈরি করে দিয়েছিলো উনি তার থেকে একদম আলাদা জানিস,পরিমার্জিত সাজসজ্জা,কথা বলার সময় এক গাম্ভীর্য,চাল চলন থেকে শুরু করে সবকিছু এতো পরিপাটি…

হিয়ার কথা শেষ না হতেই অর্পা হেসে দিলো

-প্রতিশোধ নিতে গিয়ে আবার প্রেমে পড়ে যাস না বান্ধবী। মনে রাখবি দুই ভাই’ই কিন্তু একই রক্তের!

-সে আর বলতে,একবার ভালোবেসে ঠকেছি দ্বিতীয়বার সেই ভুল করবো না। আমি শুধু সত্যি টা জানতে এসেছি সত্যি টা জানা হয়ে গেলেই আমি আমার উদ্দেশ্যকে সফল করে ঠিক কেটে পড়বো। লোকটাকে বুঝিয়ে দেবো একটা মেয়েকে বিয়ের সাজে বসিয়ে রাখা ঠিক কতোটা যন্ত্রণা*দায়ক!

অর্পার সাথে কথা টুকু বলে পেছন ফিরতেই আঁতকে উঠে হিয়া। ঘরের দরজার ঠিক সামনে বুকের কাছে হাত দুটোকে ভাজ করে হিয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহু!তাহলে কি মেহু সব শুনে ফেললো এবার!

চলবে…

তুমি আসবে বলে পর্ব-০১

0

#তুমি আসবে বলে
#পর্ব_১
#ইভা রহমান

কনের সাজে বঁধু বেশে কাজি অফিসের সামনে গত দেড় ঘন্টা ধরে বিহানের অপেক্ষায় বসে আছে হিয়া। যদিও তাকে ঘিরে রাখা তার ঔষধজেঠ্যু,তার ফুফুমণি,আর তার অনেক কাছের বন্ধু অর্পা এরা তিনজনের প্রত্যেকএই নিজেদের সব ধর্য্যটুকু ফুরিয়ে এটা মেনে নিয়েছে বিহান আর আসবে না। বিহান হিয়াকে ঠকিয়েছে,হিয়ার সাথে এক নোংরা প্রতারণার খেলায় সামিল হয়েছে তারা নিজেরাও। কিন্তু হিয়ার আবেগীমন তা মানতে নারাজ,তার বিশ্বাস বিহান আসবে। এক্ষুনি এসে বলবে হিয়া আমি এসে গেছি,আমি এসে গিয়েছি তোমাকে নিজের করতে। আর কোনো বাঁধা নেই হিয়া।

হিয়াকে শান্তনা দিতে ঔষুধজেঠ্যু হিয়ার মাথায় হাত রাখলো। আশাবাদী কন্ঠে বলে উঠলো”আমরা বোধহয় একটু তাড়াতাড়ি এসে পড়েছি মা”ঔষুধজেঠ্যুর কথাটা ঠিক হজম হলো না অর্পার। অর্পার আগেই সন্দেহ হয়েছিলো বিহান বলে লোকটা ঠিক সুবিধের না। সে শুধু হিয়ার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে হিয়াকে দিনের পর দিন ব্যবহার করছে,একটা নিরাপদ ভবিষ্যতের নকল চশমা হিয়ার চোখে পড়িয়ে দিয়ে সে হিয়ার সর্বস্ব গ্রাস করতে চাইছে।

-এটা কোনো কথা না ঔষধজেঠ্যু,যতো তাড়াতাড়ি এটা মেনে নিবা যে বিহান আমাদের সাথে প্রতরণা করেছে ততোই সেটা তোমাদের সবার জন্য মঙ্গল।

-আহ অর্পা কি হচ্ছে কি,দেখতেই তো পাচ্ছিস মেয়েটার মন মানসিকতা ঠিক ভালো যাচ্ছে না। একটু চুপ কর,মানুষের তো সমস্যা থাকতে পারে না-কি।

-যার আসার সে এতোক্ষণে এসে যেতো জ্যেঠু।

-এভাবে কেনো বলছিস অর্পা তুই,বিহান হয়তো রাস্তায় কোথাও জ্যামে আঁটকে আছে,আমি জানি নয়তো নয়তো ওর অফিসে কোনো জরুরি কাজ পড়ে গেছে তাই হয়তো। বিহান আমাকে ঠকাতে পারে না অর্পা,,সে তো আমাকে ভালোবাসে।

অর্পা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে উঠলো,সত্যি কি হিয়া এতোই বোকা!

-বিহানের ম্যাছ এখান থেকে বড় জোড় বিশমিনিটের পথ হিয়া। রাস্তায় অঢেল গাড়ির জ্যাম লেগে থাকলেও না হাঁটতে হাঁটতে ঠিকই আসা যায়,আর অফিসের জরুরি কাজ। শুক্রবার কোন সরকারি অফিস খোলা থাকে হিয়া। বল আমাকে। যুক্তি দে। তুমিই বলো ফুফি তোমার কি মনে হচ্ছে বিহান আসবে এখনো?

নিজের চোখের পানি টা আড়ালে মুছে নিয়ে ফুফি অনেক কষ্টে কথা বলতে সক্ষম হলো,

-আমি আর কি বলবো। ছেলেটার ফোন বন্ধ,অফিসে ফোন করে খোঁজ নিয়ে দেখলাম বন্ধ অফিস,সেখানেও সে নেই,ওর যা বন্ধু আছে সবাইকে চেষ্টা করে দেখলাম কেউ বিহানের খোঁজ জানে না। এখন।

-এখন আর কি। বাড়ি চলো,এখানে থাকতে দম বন্ধ লাগছে আমার।

বলেই অর্পা রাগে হাতে থাকা বিয়ের যাবতীয় জিনিসপত্র রাস্তায় ছুঁড়ে দিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো,ফুফুমনি ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলেও পরক্ষণেই নিজেকে শক্ত করে বললো তাহলে অর্পার কথাই হোক,এখন আমাদের বাড়ি ফেরা উচিৎ। ফুফুমনি শেষ অবধি হার মেনে অর্পাকে অনুসরণ করে গাড়ির দিকে পা বাড়ালো,,হিয়ার মাথায় হাত রেখে ঔষধজ্যেঠু অস্ফুটে হিয়াকে ডাকলো। হিয়া ঔষধজেঠ্যুর হাত টা শক্ত করে চেপে নিলো আর দৃঢ় কন্ঠে বললো,,

-তুমি চিন্তা করো না ওষুধজেঠ্যু এটুকু বিষয়ে আমি ভেঙে পড়ার মেয়ে না।

ঔষুধজেঠ্যু একটা স্বস্তির দম ছাড়লো,তিনি জানেন তার হিয়া দূর্বল না,যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতেও হিয়া নিজেকে শান্ত আর স্থির রাখতে সক্ষম।

গাড়িতে এসে বসলো হিয়া।ঔষধজেঠ্যু বললো তোমরা আগাতে শুরু করো আমি আসছি। হিয়া কথা বাড়ালো না। জানালার থাই টা নামিয়ে কাজি অফিসের দিকে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিলো। হিয়া বসে থাকাকালীন সময় দুটো বিয়ে কাজি সেরে ফেলেছিলো। এখনো তারই বয়সী একটা মেয়ে বিয়ে করবে বলে তার বরের সাথে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার চোখেমুখে দেখা মিলছে এক অন্যরকম শান্তির চিহ্ন আজ তার বিয়ে হবে আর তার ভালোবাসার মানুষটা তারই হাত ধরে বসে আছে। মেয়েটার মুখের হাসি হিয়ার বিক্ষিপ্ত মনটাকে আরো ক্ষেপিয়ে তুললো,উথাল-পাতাল ঢেউ তুললো হিয়ার বুকের মাঝে,সপাটে জানালাটা লাগিয়ে দিলো হিয়া,না দূর্বল হলে চলবে না তার। বিহানের না আসার কারণ জানার পরই সে ঠিক করবে সে কি বিহানকে ভালোবেসে বড্ড বোকামি করে ফেলেছে। বিহানকে অগাধ বিশ্বাস করে বিহানের খেলার পুতুল সেজেছে নাকি তার আর বিহানের ভালোবাসা টা এখনো পবিএ,এখনো আস্থার!!

অর্পা রাগে মুখ খুলে কিছু বলতে যাবে কিন্তু হিয়া হাত চিপে ধরে অর্পাকে থামিয়ে দিলো,এই মুহুর্তে এইসব কথা শুনতে তার একদমই মন সায় দিচ্ছে না। গাড়ি চলতে থাকলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাড়ি পৌঁছে শুরু হলো পাড়াপ্রতিবেশীর নোংরা মনের নোংরা কথা বার্তা। বধু বেশে আবার ফিরে এসেছে কনেপক্ষ। সবাই যেনো একটা নতুন আলোচনার বিষয় পেয়ে গেলো। কেউ বা জানালার পর্দা সারিয়ে দেখতে গিয়ে ব্যাঙ্গাত্নক হাসি দিয়ে উঠলো। কেউ বা সরাসরি কাছে এসেই জানতে চাইলো কি গো বর আসে নি না-কি,বাপ মা মরা মেয়ে কপাল টাই পুড়া,এ জন্মে এই অলক্ষুণে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবা তো তুমি সাহেলা।

সবার কথা দাঁতে দাঁত চিপে হজম করে বাড়িতে ঢুকলো সবাই। হিয়া যে সবার চোখে এখন হাসির পাএ হয়ে গিয়েছে এটা বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধে হলো না তার,শুধু কি সে তার ফুফুমনিকেও তো সবাই এরপর রাস্তাঘাটে কথার আড়ালে ছিঁড়ে একদম কুচি কুচি করে খাবে,আর তার জন্য দায়ি কে থাকবে বিহান না তার বিহানের উপর করা অন্ধবিশ্বাস….!!
!
!

বাবা-মা কে হারিয়ে অনাথ হিয়া মানুষ হয়েছে তার ফুফুমনির কাছে। মধ্যবওি পরিবারের মেয়েরা যেমন হয় হিয়াও ঠিক সেরকমই ছিলো। বেশকিছু আবদার ছিলো না তার। পড়াশুনার পাশাপাশি ঔষুধজেঠ্যুর সহযোগী হয়ে তার কাজে সহয়তা করাই ছিলো তার নিত্যদিনের কর্ম। এতে অবশ্য তার আয় রোজগাড় ও হতো কিছুটা। হাতে যা আসতো তা দিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস টুকু মিটিয়ে বাকি টাকা পুরোটাই ফুফুর হাতে তুলে দিতো সে। একদিন হিয়ার এই সাধারণ পরিপাটি জীবনে রঙীনতার ছোঁয়া নিয়ে বিহান আসে। সে হিয়াকে আশ্বাস দেয় সে হিয়াকে নিরাপদ আশ্রয় দেবে,সে হিয়াকে একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ দেবে,তার আর হিয়ার একটা সুন্দর সংসার হবে,হিয়ার কিশোরী মন বিহানের সেই চাটুকারিতাকে সহজেই ভালোবাসার উপাধি দিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করলো সবটা। এক বছরে সম্পর্কে বিহান যে ওর ফুফুমনি থেকে শুরু করে তার সমবয়সী ছোট বোন বুলিকেও এতো সহজে আপন করে নিয়েছিলো তা দেখে আবেগে ভরে উঠেছিলো হিয়া৷ নতুন নতুন জামার পসরা,বাড়িতে এলেই মিষ্টি মণ্ডার হাঁড়ি,নতুন নতুন উপহার হিয়া সহ বাড়ির সকলের মন জুগাতে যথেষ্ট ছিলো বিহানের। যদিও হিয়া এসব কখনোই নিজে থেকে বিহানের থেকে চায়নি,বিহান নিজে সেগুলো করেছে। কিন্তু আজ হঠাৎ সব ঠিক থাকার পরো বিহানের এই না আসাটা কিছুতেই যেনো মেনে নেবার মতো ছিলো না। কিছুতেই না।

!
!

নিজেকে সামলে নিয়ে হিয়া ঠিক করে সে বিহানের খোঁজে বের হবে। কোথায় যেতে পারে আর বিহান। ছোট্ট এই শহরে কি তাঁকে খুঁজে বের করা এতোই দুষ্কর!হিয়া বিহানকে খুঁজতে যাবার আগেই বিহানের অফিস কলিগ রাহাত অর্পাকে ফোন করে জানায় “বিহান গত পরশু রাতেই শহর ছেড়ে তার নিজের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে। তার ভাই উজান শাহরিয়ার বিহানের থেকে হিয়ার ব্যাপারে সব শুনে কিছুতেই হিয়াকে মেনে নিতে চাই নি। তার নাকি সোজাসাপ্টা কথা ছিলো কোনো অনাথ মেয়ে যার কোনো সহায়সম্পদ নেই সেই মেয়েকি না হবে শাহরিয়ার পরিবারের পুএবধু। কখনোই না,উপরন্তু উজান শাহরিয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিহান যদি হিয়াকে বিয়ে করে নেয় তাহলে সে তো বিহানকে তার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করবে করবে সাথে শাহরিয়ার বাড়ির দরজা সারাজীবনের জন্য বিহানের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হবে। আর যেহেতু বিহানের বাবা বেঁচে নেই আর তার চাকরি টাও উজানের রেকমেন্ডেশনের উপর অর্জিত তাই চাকরি টাও যে তার আর থাকবে না সেই ভয়ে সে হিয়ার নিরাপত্তার কথা ভেবেই নাকি সেদিন বিয়ে করতে আসে নি। সব হারিয়ে হিয়াকে ভালো রাখা তার পক্ষে সম্ভব না। আর হ্যা উজান শাহরিয়ার ঠিক করেছে তার ছোট ভাইকে তাদের চিটাগাং এর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে ওখানকার যাবতীয় দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে ওখানেই তার স্থায়ী ঠিকানা গড়ে দেবে তাই সেই সূএেই বিহান সামনের সপ্তাহে পাড়ি দিচ্ছে চিটাগং,হিয়া যেনো তার অপেক্ষায় আর বসে না থাকে।

অর্পার বলা কথা গুলো অনেক কষ্টে হজম করলো হিয়া। তাহলে এই ছিলো বিহানের মনে। হিয়া কিছু বললো না। শুধু আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের উপর একটা ব্যাঙ্গাত্নক হাসি দিলো সে।অর্পাকে বললো তুই রুম থেকে বেড়িয়ে যা আমি একটু একা থাকতে চাই। অর্পা বের হতে চাইলো না পাছে যদি হিয়া কিছু করে বসে। হিয়া অর্পাকে আশ্বাস দিলো বঁধু বেশে বাড়ি ফিরে এসে যখন সে ভেঙে পড়েনি তখন এই ঠুকনো বিষয়েও সে নিজেকে দূর্বলচিওের পরিচয় দিবে না। অর্পা বেড়িয়ে যেতেই হিয়া রুমের দরজা লাগিয়ে ঘরটাকে পুরো অন্ধকারে ঢেকে নিলো। বিছানায় শুইয়ে ভাবতে থাকলো বিহানের বলা এই কথা গুলোর যুক্তি টা ঠিক কতোটুকু!সত্যি কি সে পরিস্থিতির চাপে বিয়ে টা করতে আসতে পারলো না নাকি তার মনে সত্যি প্রতরণা ছিলো। তার সাথে উজান শাহরিয়ার বলে মানুষ টাকে আজ দেখবার এক অনন্য বাসনা তৈরি হলে তার মনে। বিহান এর আগেও তার বড়দার কথা বলেছে,,সে নাকি যেমনি রাগি ওমনি বদমেজাজি,মেয়েদের কে সে দুচোক্ষে সহ্য করতে পারে না,কিন্তু মেয়ে রা নাকি তার ভাইকেই পাবার জন্যে পাগল। বাড়িতে কোনো ওদের পরিবারের মতো উচ্চবিও উচ্চপদস্থ কেউ বেড়াতে আসলেই নিজের মেয়ে ভাগ্নীর জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে দেয়,কিন্তু উজান শাহরিয়ার নাকি এই সব বিয়ে সংসার এসবে একদমই আগ্রহই নন।কিন্তু তাই বলে,তাই বলে তিনি এভাবে একটা মেয়ের জীবন নিয়ে খেলতে পারেন না নিশ্চয়!কতোটুকু জানেন তিনি হিয়ার ব্যাপরে। একটা মেয়ের বিয়ে ভেঙে দেওয়া কি এতোই সোজা তাদের মতো পরিবারের ছেলেদের কাছে,,সে কি একবারো ভাবলো না একটা মেয়েকে এরপর ঠিক সমাজ কি রুপে চুষে খাবে,,যদি বিহানের কথা গুলো কে সত্যি বলেই ধরে নেয় তাহলে এসবের জন্য দায়ি আসলে ঠিক কে?আজ উজান বলে লোকটাকে দেখার আগ্রহের পাশাপাশি তার প্রতি প্রবল ঘৃণা জন্মনিলো হিয়ার মনে। যদি তার ক্ষমতা থাকতো তাহলে সে এই উজান বলে লোকটাকে বুঝিয়ে দিতো বিয়ে ভেঙে দেওয়ার কষ্ট টা ঠিক কতোটুকু।কতোটা যন্ত্রনাদায়ক ভালোবাসার মানুষের এরকম প্রতারণা,কতোটা ধারালো তাকে নিয়ে মানুষের এই ঠাট্টার ছলে করা বিদ্রুপ!!

চলবে…..

মেঘ রোদ্দুরের আলাপন পর্ব-০৯(অন্তীম পর্ব)

0

#মেঘ রোদ্দুরের আলাপন
#পার্টঃ০৯ এবং অন্তীম পার্ট।
#Writer:মারশিয়া জাহান মেঘ

৫৩.

জেইন রিশ এর ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিয়ে চোখ টিপ মেরে চলে যায়। রিশ অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে ক্ষনিকখন চেয়ে থাকে।

‘এইটা কি হলো! শয়তানের নানা একটা। আমাকে এতো বছর অপেক্ষা করিয়ে এখন ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে ভালোবাসা! নাক বেংচি কেটে কথাগুলো মিনমিনিয়ে বললো রিশ। হঠাৎ টু টু করে ফোনটা বেজে উঠে। ফোনটা হাতে নিতেই মুচকি হাসলো রিশ।

‘আহান ভাই কেমন আছো?

‘আর ভালো। নিহা তো আমার জীবন অর্ধেক বানায় ফেলতাছেরে বইন।

‘ওমা একদিনেই!

হঠাৎ ফোনের ওপাশ থেকে নিহা বলে উঠলো,

‘আপু দেখছো কি মিথ্যাবাদী? তবে যাই বলোনা কেনো এই মিথ্যাটাকে সত্য করতে হবে কি বলো আপু?

‘হুম হুম একদম।

‘ওই ম্ মানে [ আহান ]

এরপর আর কি! ওপাশ থেকে নিহা আর আহানের মাইর শুনা গেলো। [ হি হি হয়তো দাম্মুর দাম্মুর দিছে মাইর আহানরে ]

রিশ হাসতে হাসতে ফোনটা কেটে দিলো।

৫৪.

দাদীমা আমি এইটা আপনার জন্য বানিয়েছি।

‘ওমা আমার নাতবউ তো দেখছি বেশ ভালোই রান্না বান্না করতে পারে।

“শুধু তোমার নাতিকেই ভালোবাসেনা”

জেইনের কথায় আঁড়চোখে জেইনের দিকে তাকায় রিশ। জেইনও খাচ্ছে আর রিশের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।

“রিশ..

‘জ্বি বাবা।

” তোমাদের বিয়েটাতো হোট করে হয়ে গেছে যে তোমাকে কিছু দিতেই পারলাম না। এই নাও এইটা।

সেহের মেহেরিয়া রিশ এর দিকে একটা গয়নার বক্স এগিয়ে দিয়ে বললো।

‘না বাবা আমার এইসব কিছুই লাগবেনা। আপনারা যে হঠাৎ এতো সুন্দরভাবে আমাকে মেনে নিয়েছেন এইটাই অনেক। এমন দেখা যায়না যে ছেলে হঠাৎ বিয়ে করে নিয়ে আসে সবাই মেনে নেয়।

‘মা জেইন ইতো আমাদের সব। আর আমার কোনো মেয়ে নেই। তুৃমিই আমার মেয়ে। তাই বাবা একটা জিনিস দিলে নিতে হয়৷ না করতে নেই৷ এই নাও।

রিশ একবার জেইনের দিকে তাকালো। কি করবো এইটা ভেবে। জেইন চোখের ইশারায় নিতে বলে। রিশ গয়নার বক্সটা নিয়ে হাসি মুখে বললো, ‘ধন্যবাদ বাবা।

“তুমিও খেতে বসো মামনি”

“না বাবা আপনারা আগে খান পরে আমি খাচ্ছি।

” বাপি বলছে খেতে বসার জন্য বসো।

জেইনের দিকে তাকাতেই রিশ চুপসে বসে গেলো। কি আর করা যেইভাবে ধমকে বলেছে।

“আহা দাদুভাই আমার বোনটারে বকতাছো ক্যান? ছোট মানুষ তাই বুঝতে পারেনি।

” জেইন চোখ বড় বড় করে বললো, ‘কি! ছোট মানুষ? গ্রেণি জানো? ওর বয়স ৫০ হয়ে গেছে।

‘এ্যাহ আপনার কি হুম? আপনারতো ১০০ বছর।

এদের ঝগড়া দেখে হো হো করে হেসে দেয় সেহের মেহেরিয়া আর রিতা মেহেরিয়া।

৫৫.

মিসকাত ভিডিও কলে বসে আছে৷ তার পাশেই রিলজেম। রিশ হেসে বলে “বাহ দাভাই আজকে একসাথে যে?

‘আর বলিসনা। আমাকে পুরো ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসছে আমাকে নিয়ে তোর সাথে ভিডিও কলে বসবে বলে।

” ওমা কি বলো! কিরে মিসকাত কেনো?

‘আরে ওরে অভ্যাস করাচ্ছি বুঝিসনা? ওহ যখন বিয়ের পর কোথাও যাবে সকাল সকাল উঠে যেনো আমাকে কল দিতে পারে।

‘ওমা এতোকিছু ভেবে রেখেছিস?

‘তা না ভেবে কি আর উপায় আছে?। আচ্ছা আগে বল প্ল্যানটা কাজ হলোতো? ট্রিট দে।

‘দিবো দিবো জান। তোর প্ল্যান এর জন্যইতো আমি এইখানে। পাশ থেকে দাভাই বললো,

“শয়তানি বুদ্ধির রানী বলে কথা।

রিলজেম এর কথায় ফিক করে হেসে দেয় রিশ। আর মিসকাত তো চোখ গরম করে তাকায় রিলজেমের দিকে।

৫৬.

এই যে জেদী রাণী সারাদিন শুয়ে আছো কেনো? শরীর খারাপ?

জেইনের কথায় রিশ বিছানার এই পাশে ফিরে তাকায়। শুয়ে থেকেই বলে,

‘বিয়েতো হয়ছে একটা শয়তানের নানার সাথে কিচ্ছু বুঝেনা। আনরোমান্টিক ভূত একটা।

‘এই এই একদম ঠিক হচ্ছেনা কিন্তু। জেইন রিশ এর একদম সামনে এসে। চোখে চোখ রেখে বললো,

” আর যদি বলো রোমাঞ্চ এর কথা তাহলে…. দেখাবো নাকি?

‘ম্ মানে?

“জেইন আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মিশে যায় রিশের সাথে।

৫৭.

রিশ গোসল করে এসে বেলকনিতে যায়। আজ জেইন তাকে পরিপূর্ণ স্ত্রী হিসেবে সম্পূর্ণতা দিয়েছে। রিশ বেলকনিতে গিয়ে তোয়ালেটা রশিতে ছড়িয়ে দিয়ে বেলকনির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখছে। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ তার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রেখেছে। রিশ বুঝতে পেরে বললো,

” অফিস যাবেন না?

‘উহু।

“কেনো?

‘নতুন বউ রেখে এতো তাড়াতাড়ি অফিস গেলে হবে?

” আহা। যখন ভার্সিটিতে পিছু পিছু ঘুরতাম তখনতো পাত্তাই দিতেন না। আর এখন? ভালোবাসা উতলিয়ে পড়ছে?

‘একটা সত্যি কথা বলবো?

‘হুম।

‘আমিও তোমাকে ভালোবাসতাম। কিন্তু ভেবেছিলাম দেশে ফিরে তোমাকে সবকিছু বলবো। তার আগেইতো জানলাম তুমিও টিম এ জয়েন্ট। এরপর আরও বেশি খুশি হলাম যে তোমার সাথে মিশন। আবার ভয়ও পেয়েছি যে ক্যাপ্টেন ডন তোমার ক্ষতি করলে? পরেতো দেখলাম আমার ভয়টাই সত্যি হলো। ক্যাপ্টেন ডন তোমার সুযোগ নিয়ে বিডিতে অন্য একটা মেয়েকে পাঠিয়েছে।

রিশ মুখটা বেংচি কেটে বললো, থাক থাক হয়ছে।

“আগে বলো তুমি কি করে পারলে বিয়েতে বসতে?

রিশ হেসে হেসে বলে প্ল্যান।

জেইন অবাক হয়ে বললো মানে?

‘মিসকাত আমাকে বলেছিলো বিয়েতে রাজী হতে তো হলাম। তাও আসল নয় নকল বিয়ে। আহানের সাথে তার ভালোবাসা নিহার বিয়ে ছিলো সেদিন। কিন্তু আপনাকে ইমপ্রেস করার জন্য একটা কার্ড নকল ভাবে তৈরী হয়। আপনি যদি বিয়েতে না আসতেন তাহলে সেন্সল্যাস হয়ে যাওয়ার অভিনয় করতাম। আর আমি জানতাম স্বাদ ভাইয়া আপনাকে সব বলবে। এরপর হয়তো আপনি আসবেন। কিন্তু ঘটনা ঘটলো অন্যটা। আপনি বিয়ের মেইন মোমেন্টে গিয়েই আমাকে নিয়ে আসেন।

জেইন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রিশ এর দিকে। জেইন পরক্ষণেই রিশকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো, ” ভালোবাসি জেদী রাণী।

‘হুম আমিও তবে ওইতো একটাই আফসোস আমার নাতি নাতনি হলে গল্পতে শুনাতে হবে যেইখানে ছেলেরা ঘুরে মেয়েদের পিছে পিছে সেইখানে তার দাদু/নানু তার নানা/দাদাভাইয়ের পিছু ঘুরছে।

এইটা বলেই দুজনে ফিক করে হেসে দেয়।

________সমাপ্ত______

মেঘ রোদ্দুরের আলাপন পর্ব-০৮

0

#মেঘ রোদ্দুরের আলাপন
#পার্টঃ০৮
#Writer:মারশিয়া জাহান মেঘ

৪৭.

আজ রিশ এর বিয়ে৷ চারিদিকে মানুষের আনাগোনায় পুরো বাড়ী সজ্জিত ও হৈচৈ।

রিশ এক হাত মুখে নিয়ে নখ কামড়াচ্ছে আর অন্য হাত দিয়ে লেহেঙ্গার দোপাট্টা কুঁচি কুঁচি করছে। চিন্তিত ভঙ্গিতে এপাশ থেকে ওপাশ আর ওপাশ থেকে এপাশ করছে। মিসকাত হাতে রাখা ফোনটা বিছানায় ফেলে বিরক্ত নিয়ে বললো, ‘রিশ তুই এতো চিন্তা করছিস কেনো আজব।

‘রিশ এখন মিসকাতের পাশে বসে পড়ে। কাঁদো কাঁদো ফেইস নিয়ে বললো,

“যদি না আসে?

‘আসবে আসবে দেখিস ঠিক আসবে। থাকতে পারবেনা ঘরে বসে।

‘ওনি যে পাথর মানুষ সে তোকে আর কি বলবো।

” যতোই পাথর মানুষ হোক বেবি। পাথরের বুকে ভালোবাসা কোমলতা এনে দেয়।

‘এই মিসকাত দেখ বিয়ের দিন একদম বাংলা ছবির শাবনূর এর ডায়ালগ দিবিনা।

“যাক বাবা ডায়ালগ দিলাম কই?

‘আমার ভাইটারে এইসব ডায়ালগ বলেই পটিয়েছিস।

‘ম মানে?

‘তুই কি ভেবেছিস? আমি জানিনা যে কলেজ লাইফ থেকেই তুই আর ভাইয়া রিলেশনশিপে। আর আমি এইটাও জানি ভাইয়ার সাথে সবার সামনে তুই একদম স্বাভাবিক।

মিসকাত অবাক হয়ে বললো, ‘রিশ ত..মিসকাতকে সব কথা শেষ না করতে দিয়ে রিশ বললো,

‘আমার ভাইটা যে তোকে অনেক ভালোবাসেরে মিসকাত। তাইতো ফোনের ওয়ালপেপারে তোর ছবি।

মিসকাত লজ্জামাখা চেহারায় নুয়ে যায়। রিশ মুচকি হেসে বললো, ‘থাক লজ্জা পেতে হবেনা। এখন আমার চিন্তা কর।

‘ডন্ট ওয়ারি বেবি দেখিস ঠিক আসবে।

৪৮..

স্বাদ গাড়ি বের করো।

‘কেনো স্যার?

‘তোমার ম্যামকে আনতে যাবো তাই।

স্বাদ অবাক হয়ে বললো, ” স্যার কোন ম্যামকে? না মানে রিশ ম্যাম!

“ইয়েস।

‘বাট স্যার আজতো ম্যাম এর বিয়ে।

‘সো হোয়াট স্বাদ?

‘না মানে কিছুনা স্যার। আমি গাড়ি রেডি করছি।

গ্রেনি…গ্রেনি…

‘কি হয়েছে জেইন?

‘ওহ বাপি তুমি? গ্রেনি কোথায়?

” এইতো দাদুভাই। কি হয়েছে?

‘বাপি গ্রেনি আমি কিছু কথা বলতে চায়।

‘কি কথা দাদুভাই?

‘হুম কি কথা?

‘আসলে বাপি আমি বউ আনতে যাচ্ছি।

মিস্টার সেহের মেহেরিয়া আর রিতা মেহেরিয়া হেসে বললে, “রিশ কে তাইতো?

” জেইন অবাক হয়ে বলে “তোমরা কিভাবে জানলে?

‘স্বাদ বলেছে।

” কি!স্বাদ?

“হুম স্যার আমিই বলেছি দাদিমা আর বড় স্যারকে। স্যার আর টাইম ওয়েস্ট করা যাবেনা চলুন।

জেইন স্বাদকে জড়িয়ে ধরে বললো, ” থেঙ্কিউ স্বাদ। তোমার জন্যই আজ আমি এতটুকু।

৪৯.

রিশ কবুল বলতে যাবে এমন সময় গিয়ে জেইন তার হাত ধরে দাঁড় করায়।

“আরে কৃ কি করছেন ছাড়ুন। বাবাই দাভাই আমাকে ধরো। রিশ এর কথায় কেউ হেলদোল দেখালোনা। রিশকে জেইন জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে গাড়ী স্টার্ট দিলো। আর স্বাদকে বললো, ” স্বাদ তুমি এদিকটা সামলে এসো।

‘ওকে স্যার।

থেঙ্কস ম্যাম। আপনি সবাইকে ম্যানেজ করার জন্য।

“আপনাকেও। মিসকাত হেসে বললো।

‘মমতা আমরাতো জানতামইনা যে রিশ জেইনকে ভালোবাসে৷ মিসকাত তুমি কিভাবে জানলে?

” আংকেল আমি রিশ এর বেষ্ট ফ্রেন্ড জানাটা অস্বাভাবিক নয়।

‘হুম রাইট। আমিও জানতাম তুমি কিছুনা কিছুতো জানোই। নয়তো কি রিশ এমনি এমনি বিয়েতে রাজী হয়ে যেতো?

‘ওফ রিলজেম বাদ দে এখন দেখ আহানের সাথে নিহার বিয়েটা। বেচারা এই কয়েকদিন বেশ অভিনয় করেছে। আর এমন অভিনয় করেছে যে মার খেয়েও এসেছে। মমতা ওয়াহিদের কথা শুনে হো হো করে হেসে দেয় উপস্থিত সবাই।

৫০.

মিস্টার জেইন আপনি এমন করতে পারেন না। ছাড়ুন আমায়। জেইন ড্রাইভ করতে করতে বললো,

‘প্রশ্নই উঠেনা।

“আজব আপনি জানেন আপনি কি করেছেন?

‘জানিনা আর জানতে চাইওনা। তবে তুমি একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো রিশ। এখন তুমি মিস রিশ ওয়াহিদ একটু পরই হবে মিসেস রিশ মেহেরিয়া।

রিশ বড় বড় চোখ করে বললো, ‘কিই!

৫১.

বিয়ে সম্পূর্ণ হতেই রিশ পা বাড়ায় বাইরের দিকে। কাজী অফিসে নিয়ে এসেছিলো জেইন তাকে। রিশ যেতেই জেইন তার হাত শক্ত করে ধরে রাখে৷ দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ‘এখন তুমি আমার ওয়াইফ। সো আমার অনুমতি ছাড়া কোথাও যাবেনা। রিশ নাক ফুলিয়ে বললো,” ভালোবাসা উতলিয়ে পড়ছে এখন?

‘ধরে নাও তাই।

জেইন আর রিশ নামে মেহেরিয়া হাউজে।

রিশ একপলক সামনে তাকিয়ে দেখলো। ফুলে ফুলে আলিঙ্গন পুরোটা বাড়ী জুড়ে। রিশ কিছু বুঝে উঠার আগেই জেইন তাকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নিয়ে যাচ্ছে সদর দরজায় আর কিছু মেয়ে শাড়ী পড়া অবস্থায় ফুল ছিটিয়ে দিচ্ছে তাদের। তারা সদর দরজায় যেতেই একজন সাদা ফ্রেমের চশমা পরা মহিলাকে দেখতে পেলো রিশ। মহিলাটির বয়স বড়জোড় ৫০ উর্ধ্বো। হুইল চেয়ারে বসে আছেন তিনি। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন হাসিমাখা একজন সাবলম্বী পুরুষ। জেইন রিশকে কোল থেকে নামিয়ে হেসে বললো, “গ্রেনি বাপি নিয়ে এসেছি তোমাদের বাড়ীর নতুন সদস্যকে। রিশ এতোক্ষণ বুঝতে পারলো, যে এরা জেইনের দাদিমা আর বাবাই। রিশ জেইনের গ্রেনি আর বাপিকে সালাম করলো আর হাসিমুখে বললো,

‘কেমন আছেন আপনারা?

‘বইনরে ভালো ছিলাম না। সারাদিন একা একা কাটাতে হয়। কিন্তু এখন আর খারাপ থাকবোনা। আমার গল্প করার মানুষ এসে গেছে। রিশ এক পলক জেইনের দিকে তাকিয়ে নাক মুখ ফুলিয়ে রাখলো ক্ষনিকখন।

৫২.

রিশকে ৪০ মিনিট ধরে ডাকছে জেইন। কিন্তু তার ওয়াশরুম থেকে এখনো বের হওয়ার নাম নেই। ওয়াশরুমের দরজা খুলতে পাওয়ার শব্দে ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সেদিকে তাকায় জেইন। নীল কালার থ্রি পিসটাতে যেনো পরী লাগছে রিশকে। ফরসা দুধে আলতা শরীরের ঘড়নে রিশকে অনেক সুন্দর লাগছে। ভেজা চুল এ টুপ টুপ করে পানি পরছে। রিশ তোয়ালো দিয়ে ‌চুল ঝাঁড়ছে। কখন জেইন তার সামনে চলে গেছে সে টেরও পায়নি।

” আ আপ্ আপনি!

জেইন রিশকে হাত দিয়ে হেচকি এদন দিয়ে নিজের কাছে মিশিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দেয়।

চলবে….

মেঘ রোদ্দুরের আলাপন পর্ব-০৭

0

#মেঘ রোদ্দুরের আলাপন
#পার্টঃ০৭
#Writer:মারশিয়া জাহান মেঘ

৩৯.

‘জেইন আজ আমরা রাতে একটা পার্টিতে যাবো।

‘কি পার্টি বাপি?

‘বার্থডে পার্টি।

‘ওকে বাপি।

আর জেইন শুনো…তোমার গ্রেনিও যাবে। তুমি স্বাদ আর তোমার গ্রেনিকে নিয়ে চলে যাইও আর আমি বরং অফিস থেকে ডিরেক্টলী চলে যাবো।

‘ওকে বাপি।

সেহের মেহেরিয়া রুম থেকে বেরুতেই জেইনের ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনের স্কিনে ঝলমল করছে রিশ নামটি। জেইন ফোনটা না তুলে চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থাকে। অনেকটা ফোন বাজার পর সে ফোনটা হাতে নেয়।

‘কল ধরতে কষ্ট হয় আপনার তাইনা?

…….নিশ্চুপ…

কি হলো কথা বলছেন না কেনো? জানেন? আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটা নিবো আজ।

জেইন অস্ফুটে বলে, ‘কি সিদ্ধান্ত?

রিশ কান্নাভেজা কন্ঠে বলে,

‘যা এতোদিন কারে অপেক্ষা প্রহর গুনতে গুনতে নেওয়া হয়নি।

‘রিশ..

“না না চিন্তা করবেন না। সি আই ডি অফিসার রিশ ওয়াহিদ এমন কোনো কিছু করবেনা যাতে করে পত্রিকায় বের হয় যে সি আইডি অফিসার রিশ ওয়াহিদ সুইসাইড করেছে।

রিশ এর কথা শুনে বুক কেঁপে উঠে জেইনের। জেইন নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,

‘এইসবের মানে কি রিশ?

‘কিছুনা। কালকেই বুঝতে পারবেন। ভালো থাকবেন। বাই।

‘হ্যালো..হ্যালো রিশ…ফোনটা কান থেকে নামিয়ে দেখে রিশ ফোন কেটে দিয়েছে। জেইন চুলগুলো টেনে ধরে বলে,

‘তুমি কেনো বুঝতে চাইছোনা রিশ আমার শত্রুর অভাব নেই। অনেক বড় বড় অপরাধী প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করছে। সেইখানে তুমিও একজন অফিসার। তোমার শত্রু নেই কারণ তুমি সবেমাত্র পা রেখেছো দেশ রক্ষায়। কিন্তু আমি? আমাকেতো সবাই চিনে। কেউ যদি জানে তুমি আমার….ওফ কি করে বুঝাবো তোমায়।

৪০.

বাবাই আমি পার্টিতে যাবোনা। বেশ সিরিয়াস হয়ে কথাটা বললো রিশ। খাবার টেবিলে খেতে বসেছে সবাই। সবার দৃষ্টি স্থির রিশ এর দিকে। রিলজেম গলাটা ঝেঁড়ে বললো,

‘কেনো রিশ?

‘দাভাই আমার শরীরটা ভালোনা তাই।

‘রিশ তুমি যেতেই হবে। তুমি রিশ ওয়াহিদ। ডটার অফ শাহারিয়া ওয়াহিদ।

‘বাট বাবাই…

‘নো রিশ। আমি আর কিছুই শুনতে চায়না।

রিশ আর কথা না বাড়িয়ে আনমনে খাবার নাড়ছে। মমতা ওয়াহিদ মেয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে গেলেন৷ টেবিলে বসে আছে মিসকাত, রিশ আর রিলজেম। রিলজেম মিসকাতকে চোখে চোখে কিছু একটা ইশারা করতেই মিসকাত বললো,

“রিশ প্লিজ মন খারাপ করিসনা। তোকে ছাড়া আমি ওখানে বড় অসহায়রে। আজকে যদি আমার পরিবার…

‘ওফ মিসকাত শুরু করে দিলিতো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল। আচ্ছা যাবো হ্যাপি? এইটা বলেই রিশ হাত ধুয়ে চলে যায়। রিশ যেতেই হাতে হাত মেলায় রিলজেম এন্ড মিসকাত।

৪১.

জেইন গাড়ি থেকে নামতেই দেখলো গ্রিন কালার একটা লেহেঙ্গা পড়ে হেসে হেসে রিশ একটা ছেলের সাথে কথা বলছে। জেইন তার গ্রেনিকে নামিয়ে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে আর রিশ এর দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।

হঠাৎ রিশ এর চোখ যায় স্কিন কালার প্যান্ট এ্যাশ কালার ব্লেজার পরে হেসে হেসে কৌশল বিনিময় করা জেইন এর দিকে। জেইন তাকাতেই রিশ চোখ নামিয়ে পাশে থাকা ছেলেটার দিকে তাকালো। রিশ বুঝতে পারছে জেইন জেলাস ফিল করছে। কারণ তার চোখ দেখেই সে বুঝেছে। রিশ হঠাৎ ভাবলো, ‘একটু যেহেতু রেগেছে তো আরেকটু রাগালে কেমন হয়? রিশ এইটা ভাবতেই পাশে থাকা আহানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘চলো আহান আমরা সারা বাড়ীটা হেঁটে হেঁটে দেখি।

আর এইদিকে….

” স্বাদ..

‘ইয়েস স্যার।

“তোমার ম্যাম এর সাথে ছেলেটি কে?

‘আহান স্যার। ম্যাম এর কাজিন।

‘ওহ আচ্ছা।

রিশ জেইনের দিকে তাকিয়ে কোনো রিয়াকশন না দেখে মনে মনে বললো, ‘জেইন আপনার এই ডন্ট কেয়ার ভাবটা আমার জেদকে তিন গুন বাড়িয়ে দিচ্ছে।

৪২.

‘জেইন বাসায় ফিরে ফোনে রিশ এর হাসি মাখা মুখটাই চেয়ে আছে৷ জেইন বাঁকা হেসে স্বাদকে কল দিলো।

আর এইদিকে রিশ রাগে ফুঁসে উঠছে বার বার। জেইন মানুষটা এমন কেনো? ওফ ঘুরে ফিরে এই পাথর মানুষটার প্রেমেই পড়তে হলো আমাকে?

‘মিসকাত…

‘হুম।

‘মন খারাপ?

‘না। জানেন রিলজেম? আজ না পৃথিবীকে বড্ড প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হচ্ছে যে সে কেনো? আমার মা-বাবা কে দেখালো না কেনো? এইটা বলেই মিসকাত নিজের অজান্তেই রিলজেমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে।

৪৩.

‘ওমা আহান তোমার হাত পায়ের এই কি অবস্থা করেছো তুমি?

রিশ এর কথায় বাসার সবাই তাকায় আহানের দিকে। হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ তার। মমতা ওয়াহিদ তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে বললো, ‘এইখানে বস আহান। ইশ কি অবস্থা। এইসব কি করে হলো?

‘খালামনি আর বলোনা। হঠাৎ গাড়ি নিয়ে আসার পথে এট্যাক হয়।

‘ওমা সেকিরে? কিভাবে?

‘জানিনা গুন্ডাগুলো কিছু না বলেই আমাকে মারতে থাকলো। আহানের কথা শুনে রিলজেম হো হো করে হেসে দেয়।

৪৪.

” বাবাই আমি বিয়ে করতে চায়।

‘কিহ! রিশ এর কথা শুনে বসার ঘরের সবাই হা হয়ে আছে। যেনো এইটা কোনো ভূত দেখার বিষয়।

“কি হলো তোমরা সবাই এইভাবে কি দেখছো?

‘না মানে তুই সিরিয়াস রিশ?

‘হুম দাভাই।

‘রিশ আমি তোমার সিদ্ধান্তে খুশি হয়েছি। আমি চায় তুমি বিয়েটা করো।

‘থেংকস বাবাই। রিশ উঠে চলে যায়।

৪৫.

স্যার…ওহহহহ স্যার…স্বাদ এর চিৎকারে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে জেইন।

‘ক্ কও কি?

‘স্যার সর্বনাশ হয়ে গেছে।

জেইন চোখ ঢলতে ঢলতে বললো,

‘কি হয়েছে স্বাদ?

‘স্যার এই নিন।

” কি এটা।

‘খুলে দেখুন।

জেইন কার্ডটা খুলতেই চমকে উঠে। দড়ফড় করে লাফিয়ে বিছানা থেকে উঠে চোখে মুখে বিষ্ময় নিয়ে বলল, “রিশ এর বিয়ের কার্ড! জেইন স্বাদকে চলে যেতে বলে হাত ফোনটা নিয়ে রিশকে কল দেয়।

‘হুম বলুন

‘এইটাই তোমার সিদ্ধান্ত রিশ?

‘ধরে নিন তাই

“তুমি কি ভেবেছো জেইন তোমার এই সিদ্ধান্ত নেওয়াতে আমি জেলাসী হবো? নো ওয়ে

‘জানি কোনো ফিল হবেনা কারণ আপনিতো সঠিক ভালবাসার মর্যাদাই বুঝেন না মিস্টার জেইন মেহেরিয়া।

‘হুম ঠিক। আর আমি তোমার বিয়েতে অবশ্যই আসবো। আফটার অল তুমি আমাকে ইনভাইটেশন পাঠিয়েছো।

‘আপনি আসলে আমি সত্যি ভীষণ হ্যাপি হবো মিস্টার জেইন। এইটা বলেই রিশ কল কেটে দেয়। রিশের চোখে অশ্রু বেয়ে পরছে। চোখের পানিটুকু মুছে জেইনের প্রতি একরাশ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

৪৬.

ফেইসবুকে রিশ এর সাথে আহানকে অতি ঘনিষ্ঠভাবে দেখে জেইনের হাতের মুষ্টি আবদ্ধ হয়ে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে টাওজারের এক পকেটে এক হাত গুজে হাতের ফোনটা হাতে নিয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ফেইসবুকে রিশ এর পোষ্ট করা ছবিটির দিকে। হাসিমাখা ফেইসে হলুদ টইটুম্বর।

চলবে…..

মেঘ রোদ্দুরের আলাপন পর্ব-০৬

0

#মেঘ রোদ্দুরের আলাপন
#পার্টঃ০৬
#Writer:মারশিয়া জাহান মেঘ

৩৪.

“তাহলে রিশ ওয়াহিদ কোথায়?

‘ওপাশ…

‘ঠিক আছে আমি দেখছি। সব ইনফরমেশন আমাকে দিবে।

‘স্বাদ..বিডিতে যে আছে সে রিশ নয়।

‘হোয়াট!

‘হুম।

‘স্যার এইটা কি করে সম্ভব!

‘জানিনা। না এইবার দেখছি মাঠে আমাকে নামতে হবে।

‘স্যার তাইতো বলি ফর্মোলা দিচ্ছেনা কেনো।

‘আরে স্বাদ ওর কাছে ফর্মোলা থাকলেতো দিবে।

‘মানে!

‘মানে ফর্মোলা এখনো সি আই ডি অফিসার রিশ ওয়াহিদ এর কাছে।

” স্বাদ মেয়েটাকে কোম্পানিতে জয়েন করাও আর নজর রাখো। এমন নজর রাখো যে মেয়েটাকে যেনো ইজিলি বুঝতে পারি আমি যে আসলে সে চায়টা কি।

‘ওকে স্যার।

স্বাদ যেতেই জেইন বিছানায় বসে থুতনিতে এক হাত গুঁজে ভাবলো, ‘আমাকে ছদ্মবেশ নিতে হবে।

৩৫.

“রিশ তুই কি করছিস? হঠাৎ মিসকাত এর কথায় চমকে উঠে রিশ। আমতা আমতা করে বলে, ‘ক্ কই আমিতো আমাট গয়নাগুলো দেখছিলাম। বাবাই দিয়েছে।

‘ওহ তাই বল। সারাদিন দরজা বন্ধ করে কি করিস বলতো? আমার বুঝি একা লাগেনা?

‘ওলে আমার জানরে..একা লাগে বুঝি? তাহলে আমার ভাই সারাদিন তোর সাথে যে গল্প করে ওইটা কি?

‘না.. মানে ওফ রিশ তুই ওনা….

মিসকাতের লজ্জা দেখে রিশ হেসে ফেলে। আর মনে মনে ভাবছে,’ ওফ এই বিপদটা যে কেনো এখন আসতে গেলো।

‘মিসকাত তুই যা…টিভি দেখ আমি অফিসের একটা কাজ সেরেই আসছি।

‘ঠিক আছে। মিসকাত চলে যাওয়ার পর রিশ দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আলমারি ঘাটতে লাগলো। আর বিরক্ত নিয়ে বললো, ‘ওফ এই রিশ মেয়েটা ফর্মোলাটা কোথায় রেখেছে? এতোদিন ধরে খুঁজছি পাচ্ছিনা। নাহ এইবার বসকে কল করতেই হয়।

‘হ্যালো বস…

ওপাশ….

” বস আমার মনে হয়না এই অফিসার নিজের বাড়ীতে কিছু রেখেছে বলে। কি করা যায়? আর এইদিকে আমাকে রিশ ভেবে একটা জব অফার এসেছে। বস আমি নিশ্চিত ওই মেয়ের কাছেই আছে ফর্মোলা।

ওপাশ..

“স্যার গয়না-ঘাটি সব লুট করে নিয়ে আসবো?

ওপাশ…

‘ওকে স্যার।

৩৬.

স্বাদ মেয়েটা বেরিয়ে যাচ্ছে ওয়াহিদ হাউস থেকে। তুমি অল টিম রেডি করো। আর হুম আমার লোকেশন ট্রেস করো। আমার মন বলছে মেয়েটা এখন যেইখানেই যাচ্ছে সেইখানে ওদের লিডার এন্ড মিস R.W আছেন।

‘ওকে স্যার।

কল কেটে জেইন নকল রিশ এর পিছু নেই। ধীরে ধীরে এগোতে থাকে সে। নকল রিশ এর গাড়ি থামে একটা পুরনো বাংলোর সামনে। রিশ তাড়াতাড়ি বের হয়ে ঢুকে পড়ে সে বাংলোর ভেরতে।

‘তার মানে এইখানেই ক্যাপ্টেন আছে! আর মিস রিশ ও? না আমাকে ঢুকে দেখতে হবে। জেইন অতি সাবধানে ভেতরে প্রবেশ করে। ভেতরে অনেকগুলো রুম তাই জেইন বুঝতে পারছেনা কোনটাতে ঢুকেছে নকল রিশ। জেইনের পা থেমে যায় বাংলোর শেষ কোনায় রুমটার কাছে। সেইখানে কথা বলছে নকল রিশ ক্যাপ্টেন ডনের সাথে।

‘বস আমি ওর পুরো বাড়ি চেকিং করেছি কিছুই নেই।

‘তোমাকে প্লাস্টিক সার্জারি করে পাঠিয়েছি কি খালি হাতে আসার জন্য?

‘বস আমার কিছুই করার ছিলোনা। আমি নিশ্চিত ওই মেয়েটার কাছেই আছে।

‘হুম সেতো আমি জানি কিন্তু কেথায়!

‘বস চলুন দেখি।

‘দেখবোতো বটেই আগে তোমাকে উপরে পাঠায়..এইটা বলেই ক্যাপ্টেন ডন শুট করে নকল রিশকে৷ সব কিছু এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে যে জেইন নির্বাক। তার কিছুই করার ছিলোনা। ক্যাপ্টেনকে বের হতে দেখেই জেইন তাড়াতাড়ি দরজার বাইরে থেকে সরে যায়। ক্যাপ্টেন যেইদিকে যাচ্ছে পিছু পিছু জেইনও সেইখানে যাচ্ছে। হঠাৎ জেইন সি আইডি অফিসার রিশ ওয়াহিদকে দেখতে পেলো। হাত পা বাঁধা একটা চেয়ারে বসিয়ে রেখেছে৷ মুখে টেপ।

‘স্যার আমরা সারা বাংলো ঘিরে রেখেছ।

‘স্বাদ সাবধানে থাকতে বলো অল টিমকে। মিস রিশ এর বিপদ অনেক। কোনোভাবেই যেনো কেউ টের না পায় যে আমরা ঘিরে রেখেছি। নয়তে মিস রিশ এর ক্ষতি করে দিবে।

‘ওকে স্যার।

জেইন ফোনটা পকেটে রেখে, হাতে বন্দুকটা তাক করে এগিয়ে যায় ধীরে ধীরে। হঠাৎ গিয়ে শুট করে ক্যাপ্টেন ডনকে। সবাই ঘিরে ফেলে জেইন কে। ওদের টিম থেকে একজন বললো,

‘বন্দুক নিচে… বন্দুক নিচে রাখ…

‘দেখ তোদেরকে কিন্তু সারা বাড়ি ঘিরে রেখেছে অল সি আই ডি টিম পালাতে পারবিনা।

‘হাহা সি আই ডি ধরবে ক্যাপ্টেন ডনকে? ওই ফর্মোলা দিয়ে দে তারপর আমরা দেশ ছেড়ে চলে যাবো।

‘কখনো পাবিনা ওই ফর্মোলা।

‘ওহ দিবিনাতো? দেখ কি করি.. জেইনকে শুট করতে যাবে এমন সময়…স্বাদ আর অল টিম একে একে সবগুলোকে শুট করে।

‘স্বাদ নিয়ে যাও একে।

এরেস্ট হয় ক্যাপ্টেন ডন। জেইন রিশ এর দিকে একটু তাকিয়ে বন্দুকটা কোমড়ে গুজে স্বাদকে বললো, ‘স্বাদ ওনাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো৷ ওনি সিক।

‘ওকে স্যার।

৩৭.

রিশ টিপ টিপ করে চোখ খুলতেই নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে। জেইন গম্ভীর ফেইস নিয়ে ভেতরে ঢুকে। হাতে ফুল।

‘মিস রিশ কেমন আছেন?

‘রিশ জেইনের কন্ঠ শুনে রিশ মুখ ঘুরিয়ে নেয়। এ যেনো অভিমানের আকাশ।

কথা বলবেন না?

“না”

‘ঠিক আছে। আমি পরে এসে কথা বলবো..এইটা বলেই জেইন চলে যায়। রিশের দুই গাল বেয়ে পানি ঝড়ছে।

‘রিশ…

কান্না করতে করতে রিলজেম রিশকে ডাকে। রিশ তার দাভাইকে দেখে হো হো করে কেঁদে দেয় ছোট বাচ্চাদের মতো। মমতা ওয়াহিদ আর শাহারিয়া ওয়াহিদ নিরবে চোখের পানি ফেলছে। ওনাদের কষ্ট হচ্ছে এইটা ভেবে যে তাদের মেয়ে সেজে একটা মেয়ে ঘুরে বেরিয়েছে আর তারাই জানেনা?

৩৮.

জেইন কারো সাথে কোনো কথা না বলে পরখ করে রুমে গিয়ে দম করে দরজা লাগিয়ে দেয়। সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে ঝর্নার নিচে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে ৮ বছর আগের কথা।

‘একটা মেয়ে এসে জেইনকে বলে ‘আপনাকে আমার ভালো লাগে ভাইয়া’

জেইন তখন সবেমাত্র সি আই ডি টিমে জয়েন করে।

জেইন সামনে থাকা মেয়েটিকে গুটিয়ে একবার দেখে নিলো। পিংক কালার থ্রিপিস পরা। চুলগুলো স্টেটের ফলে ছেড়ে রেখেছে সে। মুখে এক চিলতে হাসি। চোখে কাজল। হাতে ঘড়ি। সাইড ব্যাগ। সব মিলিয়ে বুঝাই যায় যে সে ভার্সিটির স্টুডেন্ট।

জেইন অবাক হয়৷ ভালোও লাগে আবার ভাইয়াও!

‘এই পিচ্চি নাম কি তোমার?

মেয়েটি তখন নাক মুখ খেঁচে তার আশেপাশে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে বলেছিলো,”আমাকে বলছেন?

‘এইখানে তুমি ছাড়া কেউ আছে?

মেয়েটি তখন মুখ ফুলিয়ে বলেছিলো,

“আমি পিচ্চি না হু। ভার্সিটির শেষ বর্ষের ছাত্রী। আমার নাম রিশ ওয়াহিদ। আর কোন দিক দিয়ে আমাকে আপনার পিচ্চি মনে হয়।

‘বাব্বাহ তুমি এতো বড়?

‘হুম।

‘আচ্ছা পিচ্চি আমি এখন যায়?

‘আরে উত্তরটাতো দিয়ে যান ভাইয়া। আপনাকে আমার অনেক ভালো লাগে।

‘আরে পিচ্চি এতো আবেগ ভালোনা। এইটা বলে সেইদিন জেইন বাসায় চলে যায়। বাসায় গিয়ে খিল খিল করে হেসে উঠে রিশ এর কান্ডগুলো মনে করে। এরপর যতবারই রিশ এর সাথে দেখা হয়েছে ততবারই রিশের নাকি তাকে ভালো লাগে শুনতে শুনতে পাগল করে ফেলেছে। দিন দিন রিশ এর পাগলামো বাড়তেই থাকে। হঠাৎ জেইন একদিন চলে গেলো দেশের বাইরে। সেইখানে গিয়ে রিশ এর মায়াবী চেহারা বার বার ভাসমান হলেও সব ভুলে কাজে মন দিয়েছে সে। এরপর একদিন খবরের কাগজে দেখে ‘ধর্ষকদের হাত থেকে এই মেয়েটিকে বাঁচান সি আই ডি অফিসার রিশ ওয়াহিদ। রিশ এর নাম আর ছবি দেখে চমকে উঠে সে৷ এরপর ফরেনার টিম জানতে পারে বাংলাদেশে একটা ফর্মোলা চুরি হয়েছে। যা দ্বারা মানুষ সুস্থ হতে পারে। কিন্তু ক্যাপ্টেন ডন তা চেয়েছিলো অন্য দেশকে বিক্রি করে দিতে। এই ফর্মোলা রক্ষার দায়িত্ব জেইন যখন শুনে তাকে আর রিশকে দেওয়া হয়েছে তখন সে বেশ চমকে যায়। এরপরতো বাংলাদেশে চলেই আসলো।

‘দাদুভাই দরজা খুলো”… গ্রেনির ডাকে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে জেইন। হাক ছেড়ে বলে, ‘আসছি গ্রেনি তুমি টেবিলে গিয়ে বসো।

চলবে…

মেঘ রোদ্দুরের আলাপন পর্ব-০৫

0

#মেঘ রোদ্দুরের আলাপন
#পার্টঃ০৫
#Writer:মারশিয়া জাহান মেঘ

২৮.

ম্যাম আপনার জন্য একটা চাকরির অফার আছে। আপনি শুধু অফিসের অল স্টাফ রেগুলার এটেন্ড করছে কিনা তা দেখবেন”

একজন ভদ্রলোকের মুখে এমন কথা শুনে চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠে রিশ এর। রিশ হেসে বলে আমি জবটা করতে চায়। তবে হ্যাঁ যথেষ্ট আমার যোগ্যতায়।

‘হুম হুম Sure ম্যাম। তাহলে কাল চলে আসিয়েন ইন্টারভিউ দিতে।

‘অবশ্যই। ধন্যবাদ আপনাকে। রিশ কে বিনিময়ে একটা হাসি দিয়ে চলে গেলেন সেই ভদ্রলোকটি।

রিশ মনে মনে ভাবে, ‘আমাকে আমার কাজ সম্পূর্ণ করতে যেতেই হবে ওই কোম্পানীতে।

২৯.

জেইন চেয়ারে বসে বার বার বৃত্তান্তটা নিয়ে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। স্বাদ চুপ করে সামনে বসে আছে। জেইন নিরবতা ভেঙে বললো,

‘স্বাদ.. রিশ টের পায়নিতো কিছু?

‘নো স্যার। রহিম চাচাকে ম্যাম বলেছে যথেষ্ট ওনার যোগ্যতায় ওনি জবটা নিতে চায়।

‘হুম তাই হোক। বাট আমি রিশ ওয়াহিদকে আমার অফিসেই দেখতে চায় স্বাদ। এনিকোস্ট।

‘আই উইল ট্রাই অফ মাই বেষ্ট স্যার।

৩০.

রিশশশশশ…চিৎকার করে দৌড়ে গিয়ে মিসকাত রিশকে জড়িয়ে ধরে।

‘আল্লাহ এই মেয়ে কি এতো চিৎকার করছিস কেনো?

‘আগে তুই বল, তোরতো আন্টির সাথে দেখা করে চলে যাওয়ার কথা হঠাৎ থেকে গেলি কও বুঝে?

‘তোর বিয়ের বুঝি?

‘ওরে আমার ঢং তোর বিয়ের আগে আমার বিয়ে হবেইনা দেখিস।

‘হুম হুম দেখা যাবে।

ওদের কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয় রিলজেম। মিসকাত রিশকে দেখে এতোটাই কথায় মগ্ন ছিলো যে ভুলেই গেছে তাদের পাশে আরেকজন ব্যক্তি আছে। মিসকাত চুপসে যায়। রিশ দুই কোমড়ে হাত রেখে নাক ফুলিয়ে বললো,

‘দাভাই তুমি হাসছো কেনো?

‘আম আমি কই হাসলাম?

‘না হাসলে তোতলাচ্ছো কেনো?

‘ইশশ রিশ তোর বান্ধবী দেখতেই বড় হয়েছে কিন্তু ওর স্বভাব পুরাই বেবি হাহাহাহা।

‘রিশশশ…

‘হিহিহি..

‘রিশ তুইও হাসছিস?

‘তো কি করবো দেখলিনা? আমার দাভাই তোকে বেবি বললো.. এইটা বলে আবার হাহা করে হাসে রিশ। মিসকাত রাগী চোখে রিলজেম এর দিকে তাকাতেই রিলজেম একটা চোখ টিপ মেরে উপরে চলে যায়। মিসকাত হা হয়ে তাকিয়ে আছে। রিশ হঠাৎ খেয়াল করে মিসকাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আসলে রিশ এমনভাবে হাসিতে মত্ত ছিলো যে দেখেইনি তার দুষ্টু ভাইয়ের কান্ড। রিশ একটু মিসকাতের কাঁধে আলতো ধাক্কা দিয়ে বললো, ‘কিরে হা হয়ে আছিস কেনো? মশা ডুকবেতো।

৩১.

স্বাদ ৫ জন এয়ারপোর্ট থেকে আমাদের বাগান বাড়িতে ঠিকমতো পৌঁছে ছেতো?

‘ইয়েস স্যার। স্যার হ্যাড স্যার আপনার সাথে আলাদা মিটিং করতে চায়।

‘ওয়েল রাত ১০ টায় কানেক্টেড করে নিও।

‘ওকে স্যার।

“স্বাদ..একটা কথা বলবো তোমার সাথে?

‘অফ কোর্স স্যার। প্লিজ…

” আমার কেনো জানি একটা বিষয়ে সন্দেহ হচ্ছে।

‘কোন বিষয়ে স্যার?

‘আমার বার বার মনে হচ্ছে Something is Wrong

‘কেনো স্যার? কোন বিষয়ে?

‘রিশ ওয়াহিদ ফর্মোলা কান্ট্রির হাতে তুলে দিচ্ছেনা কেনো? এই কথাটা আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিনা।

“স্যার জানিনা কেনো আমারো অনেক সন্দেহ হচ্ছে। ওনি দেশের সাথে প্রতারকতা করবেন নাতো?

‘না আমার তা মনে হয়না। ওনার সম্পর্কে যতটা জেনেছি ওনি যথেষ্ট অনেস্ট একজন ওমেন অফিসার।

‘তাহলে?

” স্বাদ এই তাহলের উত্তরটা পাওয়ার জন্যইতো এই কোম্পানিতে ওনাকে চায়। এইখানে থাকলে ইজিলি ফলো করা যাবে।

‘রাইট স্যার।

৩২.

রিশ নে পায়েস।

‘পায়েস খাবোনা মম।

‘রিশ পায়েসতো তোর ভীষণ পছন্দের একটা খাবার খাবিনা কেনো?

‘দাভাই আর খেতে ভালো লাগেনা।

‘মমতা মিসকাত কে দাও।

‘হুম মম দিন দিন ওনাকেই দিন।

রিলজেম মিসকাতের দিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে হেসে কথাটা বললো।

রিলজেম মিসকাতের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে দেখে রিশ গলাটা একটু ঝেড়ে বললো,

‘দাভাই তুমি কি খাবে নাকি কাউকে দেখতে দেখতে পরে যাবে?

শাহারিয়া ওয়াহিদ মেয়ের দিকে একনজর তাকিয়ে মুচকি হেসে মনে মনে ভাবলো, ” যাক রিশ মন খুলে হাসছে।

‘ওগো শুনছো…কালতো আমাদের সবার ইনভাই আছে সবাই যাবে কিনা বলো।

শাহারিয়া ওয়াহিদ ওয়াইফের কথা শুনে বললো, ‘ওহ হে তাইতো ভুলেই গিয়েছিলাম। সবাই শুনো..কাল আমাদের সবার ইনভাইটেশন আছে সবাই যাচ্ছোতো?

‘বাবাই আমি যাবোনা

‘রিশ তুমিতো কখনো ইনভাইটেশন মিস করোনা ব্যাপার কি?

‘একচুয়ালী বাবাই আমার নিউ জবতো তাই একটু প্রস্তুতী নিতে হবে। তুমি বরং মিসকাত ও দাভাইকে নিয়ে চলে যাও আর মমতে আছেই।

‘না আমি তোকে ছাড়া কোথাও যাবোনা।

‘ওফ মিসকাত আমি না থাকলে কি হবে দাভাই আছেতো। তুই বরং দাভাইয়ের সাথে সাথেই থাকিস।

‘না ম্্ মানে…

‘হে হে রিশ তুই ঠিক বলেছিস আমি আছি ওনার কোনো প্রবলেম হবেনা। রিশ মিনমিনিয়ে হেসে বলে হুম তাইতো।

৩৩.

‘ছোট ছোট করে চোখ খুলে সি আই ডি অফিসার R.W. চোখটা খুলতেই কপালে হাত রাখলো। মাথাটা ব্যাথা করছে প্রচুর। মুখে টেপ লাগানো। চেহারার অবস্থা খুবই খারাপ। এতোক্ষনে ভালোভাবে তাকায় অফিসার R.W. চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে অন্ধকার একটা রুম। মনে মনে ভাবলো, ‘না না আমাকে যেভাবেই হোক পালাতে হবে৷ আমার দেশকে বাঁচাতে হবে। হে আল্লাহ আপনি সদয় হোন।

হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে আগের মতো বিবস্ত্র হয়ে চোখ বুঝে অফিসার RW.

মুহুর্তেই কয়েকজন মানুষের কথা শুনে সে।

কেউ একজন বললো, ”বস বলেছে এই অফিসারকে কিছুতেই একা ছাড়া যাবেনা। এই অফিসার অনেক চালাক তাই এ কখন কি করবে অজানা।

আরেকজন বললো,

‘সেইটা বস পরে যা করার করে নিবে। মেয়েটাকে এখন কোনোরকম উঠিয়ে খাইয়ে দে। এই অফিসারকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ একমাত্র এই অফিসারই জানে সেই ফর্মোলা কোথায়। বসের কথা অনুসারে একে জীবন্ত লাশ বানিয়ে রাখতে হবে হাহাহা।

অফিসার R.W মনে মনে বলছে, ‘এই আশা তোদের কখনো পূরণ হবেনা। ক্যাপ্টেন ডনকে আমি দেশের কোনো ক্ষতি করতে দিবোনা। এইটা অফিসার R.W এর প্রমিস।

৩৪.

স্যর টু বি এলার্ট। একটা ইম্পরট্যান্ট ইনফরমেশন আছে ফরেনার টিম এক্ষুণি অনলাইনে কানেক্টেড হতে চায়।

জেইন গোসল সেরে এইমাত্র ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছিলো। হঠাৎ স্বাদ এসে উপরোক্ত কথাটা বললো। জেইন ভেজা চুল গুলে হাত দিয়ে ঝাঁড়তে ঝাঁড়তে বললো,

‘কল লাগাও।

‘ওকে স্যার।

রিং হতেই জেইন ফোনটা হাতে নিয়ে বললো,

‘হুম বলো। কি ইনফরমেশন আছে?

ওপাশ……

‘হোয়াট? রিশ ওয়াহিদ ওইখানে হলে এইখানে কে?

চলবে…..

মেঘ রোদ্দুরের আলাপন পর্ব-০৪

0

#মেঘ রোদ্দুরের আলাপন
#পার্টঃ০৪
#Writer:মারশিয়া জাহান মেঘ

২০.

গ্রেনি…গ্রেনি..কোথায় তুৃমি?

‘দাদুভাই তুমি এসেছো?

‘হুম গ্রেনি।

‘খেয়েছো?

‘হুম। তুমিও গিয়ে খেয়ে নাও যাও। আমি না আজ তোমার জন্য পায়েস করেছি।

‘আমার জন্য পায়েস! সত্যি?

‘হুম দাদুভাই। আসলে কি বলোতো হুইলচেয়ারে বসার পর থেকেতো তেমন কিছুই করতে পারিনা। অথচ সবাই আগে বলতো আমার হাতের রান্না নাকি চমৎকার।

“ওফ গ্রেনি রাগ তুলছো কিন্তু আমার।

‘আচ্ছা আচ্ছা আর বলবোনা। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। আর তোমার বাপি তোমাকে বলেছে আসলে একবার দেখা করতে যেতে।

‘ওকে গ্রেনি যাচ্ছি।

২১.

রিশ কোথায় যাচ্ছিস?

‘মমকে দেখতে।

‘সত্যি? মিসকাত এর এমন টান টান উত্তেজনার কথা শুনে রিশ অবাক হয়ে বললো, এই আমি যাবো বলে তুই এতো খুশি কেনো? রিশ আয়নার সামনে যেতে যেতে আবার বললো, ‘ শুন আমি একেবারের জন্য যাচ্ছিনা বুঝলি? আমি জাস্ট আমার মমকে একটু দেখেই চলে যাবো জব খুঁজতে।

‘রিশ তুই সত্যিই রেস্টুরেন্টের জবটা করতে চাসনা? না মানে আমি সকালেতো দেখলাম ম্যানেজার তোকে কল দিয়েছে।

‘তো? কল দিয়েছে ভালো কথা ওনি অনুতপ্ত না হয়ে আমাকে বলেছে রিশ তুমি আসবে নাকি অন্যকাউকে নিয়ে নিবো।

‘কি বলিস এইটা বলেছে?

‘হুম৷ আসলে কি বলতো মানুষের সামনে যতক্ষণ থাকবি ততক্ষণি মানুষ তোর প্রশংসায় বিভোর থাকবে। আর আড়ালে গেলে বদনামের অভাব নেই।

২২.

জেইন শত্রুপক্ষ একবার যদি টের পায় যে তুমি বাংলাদেশে ব্যাক করেছো ব্যাবসার জন্য নয় কোনো উদ্দেশ্যে তাহলে তারা তোমার ক্ষতি করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।

‘বাপি তুমি আমাকে নিয়ে প্লিজ টেনশন করোনা।

‘জেইন তোমাকে নিয়েইতো আমার বড় ভয়। তোমার কিছু হলে তোমার গ্রেনি আর আমি শেষ হয়ে যাবো।

জেইন সেহের মেহেরিয়ারকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘বাপি আমার কিছু হবেনা। আর তুমি জানোইতো আমি এমন একটা পেশায় যুক্ত যেইটাতে লাইফ রিস্ক নিতেই হয়।

‘জেইন ফর্মোলাটার কোনো ইনফরমেশন পেলে?

‘বাপি সময় হলে তোমাকে আমি সব বলবো। এখন আমি যায়। ফ্রেশ হয়ে টিম এর সাথে একটা মিটিংয়ে বসতে হবে।

‘ওকে মাই সান।

২৩.

মম…মম.. রিশ বাড়ীতে ঢুকতেই অল সার্ভেন্ট ভূত দেখার মতো চমকে উঠে।

‘আফা আপনে!

‘টুটি মম কোথায়? আমি ডাকছি শুনতে পাচ্ছেনা?

‘আফা আমি আম্মারে অক্ষনোই ডাইকা আনতাছি।

টুটি মমতা ওয়াহিদকে ডাকতে যেতেই রিশ আরেকটা সার্ভেন্টকে বললো, ‘আমার রুমে এক কাফ কফি পাঠিয়ে দাও।

“আইচ্ছা আফা।

২৪.

জেইন আর স্বাদ দরজা বন্ধ করে জেইনেই রুমের আলমারির পেছনের গুপ্ত ঘরে ঢুকে। রুমটার চারদিকে এসি এন্ড হাই কোয়ালিটির লাইট।

‘স্যার..এই রুমটাও আমাদের জন্য নিরাপদ নয়৷ যদি শত্রু পক্ষের কেউ জানতে পারে আমাদের হাউস এই আমাদের সব কর্মস্থল তাহলে পরিবারের উপর ব্যাপারটা রিস্ক হয়ে যায়।

‘স্বাদ ইফ ইউ নো? এই রুমটা এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে এই রুমে কেউ ডুকলে আমি সবার আগে জানতে পারবো।

”I know Sir। বাট, তখনতো আপনি একা থাকবেন ফাইট করাটা অতিরিক্ত হয়ে যাবে তখন।

‘Don’t Worry স্বাদ। আমি সব এরেন্জ করে রেখেছি। চলো মিটিংয়ে বসা যাক।

স্বাদ আর জেইন ল্যাপ্টপের সামনে বসে অপর পাশ থেকে কয়েকজন বললো,

‘হেলো স্যার। আমরা জানতে পেরেছি যে ওই মেয়েটার অজান্তেই তার কাছে সেই ফর্মোলাটা আছে।

‘আমি জানি। আর তার জন্যই ওর উপর ২৪ ঘন্টা নজর রাখছি৷ কারণ যদি এই ইনফরমেশন টা সত্যি হয়ে থাকে তাহলে রিশ ওয়াহিদ এর অনেক বড় বিপদ সামনে।

স্বাদ অবাক হয়ে বললো, ‘তার মানে?

‘হুম স্বাদ রিশ এর কাছে ওই ফর্মোলা।

‘ওহ মাই গড। স্যার বুঝতে পারছেন? ম্যাম এর কতে বড় বিপদ।

ল্যাপ্টপের অপরপাশ থেকে আবার একজন বললো,

” স্যার আমরা বাংলাদেশে আসতে চায়। আমাদের হ্যাড স্যার বলেছেন আপনার সাথে থাকতে এন্ড ওই মেয়েটিকে প্রটেক্ট করতে।

জেইন অনেক্ষ ভেবে বললো, ওকে তোমাদের মধ্যে ৫জনের একটা টিম এইখানে চলে এসো আর বাকি সবাই লন্ডনেই থাকো। আর হুম, ওইখানে যা যা ঘটবে তার অল ইনফরমেশন আমাকে দিবে।

জেইন ল্যাপ্টপ অফ করে স্বাদকে বললো,

‘স্বাদ তুমি ৫জনের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করো। স্বাবধান কেউ যেনো সন্দেহ না করে।

স্বাদ যেতেই জেইন দরজা অফ করে ফ্লোরে বসে পড়ে দুই হাত দিয়ে মাথার চুল টানতে টানতে। আর মৃদ চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো, ” কি চাই এই রিশ ওয়াহিদ? ওনার কাছে ফর্মোলা অথচ ওনি কান্ট্রিকে তুলে দিচ্ছেনা। মানুষ না জানুক ওনার আরেকটা পরিচয়৷ কিন্তু আমি! আমিতো জানি। কেনো ফর্মোলা দিচ্ছেনা? আমি কিছু বুঝতে পারছিনা। কি করা উচিৎ আমার। যেই উদ্দেশ্যে আমাকে বিডি তে পাঠিয়েছে স্যার। যেই উদ্দেশ্যে আমি প্রথমে রেস্টুরেন্টে গিয়েছি ওফ জাস্ট আর ভাবতে পারছিনা। এখন গোসল দেওয়া দরকার। গরমে আমার শরীর নিশ্বেষ হয়ে যাচ্ছে। ঠান্ডা মাথায় এই বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে আমাকে।

২৫.

মম তুমি এইভাবে কাঁদলে কিন্তু আমি একটুও না বসে আবার চলে যাবো।

‘রিশ তুই আর যাসনা মা আমরা তোকে ছাড়া মরেই যাবো।

‘মম…

‘রিশ তুই প্লিজ আর যাসনা প্লিজ

‘দাভাই বিশ্বাস করো তোমাদের উপর আমার কোনো রাগ নেই৷ আমি পড়াশোনার জন্য আলাদা থাকছি৷ ট্রাস্ট মি।

‘পড়াশোনা বাসায় থেকেও করদ যায়” কারো গম্ভীর কন্ঠে এই কথাটা শুনে পিছনে তাকায় রিশ। দেখে তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে। রিশ চুপসে যায়। তার বাবাইকে ভয় পাই কিনা!

‘বাবাই আমি নিজেকে প্রুভ করতে চায়

‘আমার উপর এখনো রেগে আছো তাইতো?

‘ না না বাবাই। তা কেনো হবে? আমি সত্যিই চায় নিজে কিছু করতে।

‘বাসায় থেকে করো।

‘বাবাই মিসকাত…

রিলজেম রিশ কে আর কিছু বলতে না দিয়ে বললো,

‘মিসকাত আমাদের বাড়ীতেই থাকবে। তোর সাথে। তবুও তুই এইখানে থাক।

রিশ কিছু একটা ভেবে বললো, ‘ওকে। মমতা ওয়াহিদ খুশিতে মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন। রিলজেম মুচকি হেসে বেরিয়ে যায় মিসকাত কে আনতে।

২৬.

জেইন রেডি হচ্ছিলো অফিসে যাবে বলে হঠাৎ কল আসে। ফোনের স্কিনে ভাসমান হচ্ছে স্বাদের নাম। জেইন কলটা ধরতেই স্বাদ হাঁপিয়ে হাপিঁয়ে বলছে, ‘স্যার স্যার..ম্যাম ওয়াহিদ হাউস এ ব্যাক করেছেন। আচমকা এমন নিউস শুনে কিছুটা চমকে উঠলো জেইন। পরমুহূর্তেই ভাবলো হয়তো পরিবারের উপর রাগ করে আর থাকতে পারেনি।

“স্যার ম্যাম জব খুঁজছে।

‘তুমি কি করে জানলে স্বাদ? আর রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারকে যে বলেছিলাম রিশ কে রিজেক্ট করতে করেছে?

‘ইয়েস স্যার। তাইতো নিউ জব খুঁজছে।

জেইন বাঁকা হেসে বললো, ”Start Your Drama স্বাদ।

২৭..

মিসকাত রুমে বসে পাকন খাচ্ছি বাসার কলিংবেল বাজতেই বিরক্ত নিয়ে রিমোর্ট টা রেখে দরজা খুলে রিলজেমকে দেখো ভীষম খায় সে। রিলজেম রিশ এর ভাই সে ভালো করেই জানে। ব্লু টি-শার্ট সাদা সফট জিন্স প্যান্ট হাতে ঘড়ি পড়েছে। দেখেই বুঝা যায় বাসার ড্রেস পরেই চলে এসেছে।

” বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি ভেতরে নিয়ে বসাবেন?

‘না আম..না মানে বাসায় কেউ নেই।

রিলজেম ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বললো, ‘কাপড় চোপড় গুছিয়ে নিন।

মিসকাত অবাক হয়ে বললো, ‘কেনো?

“রিশ আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে।

‘রিশ! রিশ কোথায়? ওহ আর এইখানে আসবেনা? এইটা বলেই ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে থাকে মিসকাত। মিসকাত এর আচমকা এমন কান্ডে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় রিলজেম। রিলজেম একটু পর ফিক করে হেসে বলে ” একা যেনো না থাকতে হয় তাইতো রিশ আপনাকে নিতে পাঠিয়েছে। রিলজেমের কথা শুনে মিসকাত কান্না থেকে লাফিয়ে উঠে বলে সত্যি?

‘ইয়ে হুম হুম সত্যি।

চলবে….

মেঘ রোদ্দুরের আলাপন পর্ব-০৩

0

#মেঘ রোদ্দুরের আলাপন
#পার্টঃ৩
#Writer:মারশিয়া জাহান মেঘ

১৩.

রিশ স্টেজে উঠতেই চোখ যায় রিলজেম এর দিকে। রিলজেমকে দেখে তার অস্বস্তি হচ্ছেনা কারণ সে বরাবরই ভার্সিটির সব অনুষ্ঠানের আয়োজনে পার্টিসিপেট করে। রিশ রিলজেমের পাশে জেইনকে দেখে অবাক হয়ে যায়। জেইনকে দেখেই রিশের সারা শরীর রাগে কটমট করতে থাকে। পরক্ষণেই ভাবলো ওনি আসলে আমার কি? হয়তো আমাদের সেইম বিজনেস-ম্যান ওনার বাবা। তাইতো দাভাইয়ের সাথে।

স্যার…

‘হুম স্বাদ বলো।

“স্যার দেখেছেন? রিশ ম্যাম কিভাবে আপনার দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে ছিলো।

জেইন একটু গম্ভীর মুখে বললো, ‘তাকাতে দাও স্বাদ ওনিতো জানেনা জেইন মেহেরিয়া কি।

” বৈশাখের বিকেল বেলায়
তোমায় নিয়ে বকুল তলায়
প্রেমের এক খান গান শুনাবো।
পাখিরা ডাকবে, মনে রং লাগবে
কিছু মিষ্টি মধুর স্বপ্ন সাজাবো…
প্রেমের একখান গান সাজাবো।
………………….
……………….

রিশ এর গান শুনে সারা ভার্সিটি করতালি দেয়। ভার্সিটিতে গান নিয়ে কিছু হলে সবার আগে রিশ এর নাম থাকে। রিশ গান গেয়ে চোখে পানি নিয়ে দৌঁড়ে স্টেজ থেকে চলে যায়।

রিশ..দাঁড়া…রিশ

“একদম আমার পেছনে আসবেনা দাভাই।

‘রিশ বোন আমার প্লিজ থাম।

রিলজেম গিয়ে রিশ এর হাত ধরে ফেলে৷

‘রিশ প্লিজ বাসায় চল। মম অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছে তোর জন্য৷ প্লিজ চল।

‘দাভাই আমি নিজেকে প্রুভ করেই ওই বাসায় যাবো নয়তো না।

‘রিশ..বোন আমার। আমার উপর রাগ করে বাবাই আর মমকে কষ্ট দিসনা প্লিজ রিশ।

‘দাভাই বাবাইতো এইটাই চেয়ে ছিলো। আমি জাস্ট বলেছিলাম যে কোম্পানিতে জয়েন করতে চায়। আমিতো বলিনি যে আমাকে ফিউচার Owner’ করতে। আমাকে জয়েন করিয়ে একবার দেখতো কোম্পানির কোনো অবনতি হয় কিনা।

রিলজেম মনে মনে ভাবছে, ” রিশ তোকে আমি কিভাবে বুঝাবে যে বাবাই আমাদের দু-জনের যোগ্যতা দেখার জন্য আমার কথায় এমন করেছে।

“রিশ আচ্ছা তুই বাবাইয়ের কথা না হয় বাদ দে মমের কথা ভাব একটু প্লিজ বোন।

” দাভাই মায়ায় আটকে থাকলে জীবনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ভালো থেকো।

রিশ…রিশ প্লিজ যাসনা প্লিজ.

রিশ রিলজেমের কোনো কথা না শুনে দৌঁড়ে চলে যেতে লাগলো।

রিলজেম হাত মুঠো করে হাতটা ঝেড়ে রেগে বললো,

“সিট..আমার বোনটাকে যে আমি কি করি। রিশ কেনো বুজতে চাইছেনা যে মম সিক।

স্যার..দেখছেন দুই ভাই-বোনের স্নেহের মিল।

জেইন একটা আঙুল ঠোঁটে চেপে বললো,

‘স্বাদ আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিনা যে, ওদের ভাইবোনের এতো মিল তাও রাগে-অভিমান! না মানে..ওদের দুজনকে কি দেখে বুঝা যায়? ওদের মাঝে Misunderstaning.

” স্যার জানিনা কি বলবো তবে মিস্টার ওয়াহিদের মেয়ে বেশ জেদী এবং তেজস্কর।

‘কিভাবে বুঝলে?

“স্যার দেখলেন না? অলওয়েজ কেমন গম্ভীর হয়ে থাকে।

” জেইন বিড়বিড় করে বললো “তেজস্বীনি”

“স্যার কিছু বললেন?

” আব.. আরে না কিছু বলিনি চলো…অফিসে একবার যেতে হবে।

জেইন চোখে সানগ্লাসটা পড়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।

১৪.

‘রিশ..এই রিশ..রিশকে ডাকতে ডাকতে মিসকাত রুমের দরজা খুলে দেখলো রিশ হুড়মুড় খেয়ে উঠে চোখের পানি মুছে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

‘এই রিশ তুই কাঁদছিস কেনো?

‘ক ক্ কই কাঁদছি? আরে শুন না তোকে না খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই একা চলে এসেছি৷ রাগ করিসনা প্লিজ।

মিসকাত গিয়ে রিশ এর পাশে বসে। আদুরে সুরে বলে,

‘মিথ্যে বলার দরকার নেই রিশ। আমি জানি যে ভাইয়া ওইখানে ছিলো। আর ভাইয়ার জন্যই তুই ওভাবে চলে এসেছিস।

মিসকাত রিশ কে আর কোনো কথা বাড়ানোর সুযোগ না দিয়ে বললো,

‘চল গোসল দিয়ে রেডি হয়ে নে।

রিশ অবাক হয়ে বলে, ‘কেনো? দেখ মিসকাত আমি এখন জব খুঁজতে বের হবো।

মিসকাত ভেঙ্গু করে বললো, ‘দেখ মিসকাত আমি জব খুঁজতে বের হবো” তোকে কি না করছি জব করতে? এক কথা কতোবার বলবো যে কালকে জব খুঁজতে যাস।

‘মিস…রিশ সব কথা সম্পূর্ণ শেষ না করতেই মিসকাত বললো,

“দেখ রিশ আমি কিছু শুনতে চায়না। তুই আমার সাথে বের হচ্ছিস মানে হচ্ছিস।

‘কিন্তু কোথায় বলবিতো।

‘গেইলেই দেখতে পাবি।

১৫.

জেইন অফিসে ডুকতেই সব স্টাফ দাঁড়িয়ে গুড মর্নিং বলছে। জেইন হাত ঘুড়িটায় চোখ রেখে বললো, ‘১২ টা সমান! জেইন নিজের ক্যাবিনে ডুকে সামনে লাগানে বড় ফ্রেমের ছবিটা দেখে বললো, ‘মাম্মাম তোমাকে আমি দেখিনি তোমার আদরও পায়নি। তবে সবাই বলে তোমার কিছু গুন নাকি আজোও আমার মাঝে আছে। আর সবচেয়ে বড় গুন চাপা অভিমান। এইসব ভাবতেই জেইনের দুই চোখ ঝাপসা হতে থাকে।

” স্যার…

কারো ডাকে জেইনের ভাবনায় ছেদ ঘটে। জেইন নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

‘কাম।

‘স্যার আপনি আমায় ডেকেছেন?

‘হুম। স্বাদ ওই ফর্মোলা টার কি কোনো খুঁজ পেয়েছে আমাদের টিম?

“নো স্যার। বাট আই হোপ খুব শীঘ্রই পাওয়া যাবে।

‘ওয়েল এন্ড হুম..ভুলেও কেউ যেনো না জানে আমার আরেকটা পরিচয়। মাইন্ড ইট?

‘ইয়েস স্যার। আর হুম আমাকে আমাদের টিমের বিশ্বস্ত মানুষ একটা গোপন ইনফরমেশন দিয়েছে তোমাকে আমি পরে বলবো। তুমি ২৪ ঘন্টা রিশ ওয়াহিদের উপর নজর রাখবে গট ইট?

‘ওকে স্যার।

‘ওফ স্বাদ আমাকে স্যার বলে তুমি কি পাও বলোতো?

স্বাদ একটু মুচকি হেসে বললো,

‘স্যার আমি যতোই আপনার সেইম এইজের হয়না কেনো এইটাও সত্যি আমি আপনার টিম এন্ড বিজনেস এর একজন কর্মচারী।

‘স্বাদ তোমাকে আমি সেই চোখে দেখিনা৷ তুমি আমার ভাইয়ের মতো৷

‘জানি স্যার। তাও নিজেকে ছোট মনে হয় অনেক।

‘ওফ আচ্ছা আচ্ছা তুমি আমায় স্যার ই ডেকো। তাও ছোট মনে করোনা নিজেকে।

১৬.

তুই আমাকে পার্কে নিয়ে এসেছিস কেনো?

‘ওফ রিশ তুই না দিন দিন উচ্ছে ম্যাম হয়ে যাচ্ছিস।

‘হোয়াট? আমাকে দেখে তোর কোন দিক দিয়ে তিতা করলা মনে হয়?

‘এইতো মুখের কথা শুনে।

‘মিসকাত..

‘ওফ রাগ করছিস কেনো চল ফুচকা খায়।

‘ফুচকা!!!

‘হুম ফুচকা৷ এখনতো হ্যাপি হয়েছিস একটু আগেতো আসতেই চাইছিলিনা।

‘এই এই এখন চলনা এতো রাগ করছিস কেনো। চল চল ফুচকা খায়।

১৭.

হ্যালো স্যার ম্যাম ফুচকা খাচ্ছে। ঝালে ম্যামের গাল লাল হয়ে গেছে পুরো।

‘স্বাদ…

‘ইয়ে না মানে স্যার এমনি বলছিলাম আর কি।

‘ওই অবস্থাতেই একটা পিক তুলে দাওতো আমায়।

‘স্যার পিক!

‘হুম পিক Hurry Up.

স্বাদ ফোনটা কাটতেই অস্ফুটে বললো, “স্যারের যে মাঝে মাঝে কি হয় আল্লাহই জানে।

জেইনের ফোনে টুং করে আওয়াজ হতেই জেইন ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে মিষ্টি দেখতে একটা মেয়ে হাতে ফুচকা নিয়ে চোখ বুঝে খাচ্ছে। হয়তো ফুচকার টেস্টটা একটু বেশিই অসাধারণ ছিলো। তার পাশে আরেকটা মেয়ে। রিশকে হয়তো মেয়েটা কিছু বলছিলো৷ রিশ এর গাল ঝালে আসলেই লাল হয়ে গেছে। জেইন একটু মুচকি হেসে বললো,

‘আসলেই আপনি তেজস্বীনি রিশ। নয়তো কি আর নিজের এতো বড় একটা পরিচয় সিক্রেট রেখে সাধারণ ভাবে চলতে পারতে? তোমার পরিচয়তো শুধু ওয়াহিদ ইন্ডাস্ট্রির ফিউচার Owner’ নয় তোমার আরেকটা পরিচয়…এইটা বলেই বাঁকা হাসে জেইন।

১৮.

বাবাই আমি কোম্পানির ফিউচার Owner’ হতে চায়না তুমি রিশকে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে এসো।

‘তুমি ভেবে বলছো জেইন?

‘জ্বি মম আমি আপনাদেরকে ভেবেই বলছি।

‘হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত?

‘বাবাই আমার বোনের মনে আমার প্রতি যে ক্ষোভ দেখতে পাচ্ছি তাতে আমার আর ভালো লাগছেনা৷ আমি চায় রিশ ফিরে আসুক এই বাসায়। এইটা বলেই রিলজেম নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।

‘কি ভাবছো শাহারিয়া?

‘মমতা রিলজেম ওর বোনের প্রতি ভালোবাসা থেকে এই কথা বলছে। কিন্তু আমিতো জানি রিলজেম মনে মনে কষ্ট পাবে। তাই আমিও চায় রিশ নিজেকে প্রমাণ করুক।

১৯.

হ্যালে..তোমরা Sure যে মেয়েটার কাছেই সেই ফর্মোলাটা আছে?

………..

‘ওকে। আর তোমাদেরকে সময় হলে আমি নিজেই বলবো বাংলাদেশে ব্যাক করতে।

……..

ওয়েল। বাই।

স্বাদ…

ইয়েস স্যার।

তোমার পক্ষে মিস রিশ কে অলওয়েজ ফলো করদ পসিবল নয় বিকজ, তোমাকে আমার অলওয়েজ লাগে৷ তুমি মিস রিশ কে ফলো করার জন্য অন্য কোনে বিশ্বস্ত মেম্বারকে এটেন্ড করো।

‘বাট স্যার কেনো? ম্যাম এর সাথে আমাদের টিমের ওই সিক্রেট ফর্মোলার কি কানেকশন?

‘স্বাদ..

‘সরি স্যার। আমি এখনি এটেন্ড করার এরেন্জ করছি।

চলবে….