Tuesday, July 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1026



স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি পর্ব-০৬

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি
#পার্টঃ০৬
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

৩৩.

ইচ্ছে নিচে নামতেই মিসেস আনেয়া আর রাজ্জাক নীড়কে দেখে অবাক হয়ে যায়। পাশে তার বাবা নিহাল চৌধুরী হেসে হেসে তাদের সাথে কথা বলছে। ইচ্ছেকে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আানেয়া নীড় হাত দিয়ে ইশারা করে নিজের কাছে ডাকে। ইচ্ছে গিয়ে দৌঁড়ে তার ফুফুকে জড়িয়ে ধরে। ইচ্ছের চোখে পানি টলমল করছে এতোদিন পর এইভাবে ম্যাজিক এর মতো সবকিছু এক হয়ে যাবে তা তার ভাবনার বাইরে ছিলো৷ হঠাৎ ইচ্ছের মনে পড়লো আদ্রের কথা। আদ্র তাকে বলেছিলো আরেকটা চমক আছে।

৩৪.

‘ডক্টর ইনশিয়ার কি কন্ডিশন এখন?

‘মিস্টার নীড় মিসেস ইনশিয়া জান্নাতের গালের ওই ক্ষতটাতে তিনি তীব্র আঘাত অনুভব করেন। তবে আমার বিশ্বাস আজ নিশ্চয়ই ওনার গালে কোনো আঘাত করেছে কেউ।

“হোয়াট!

‘ইয়েস।

‘ডক্টর আমি কি ইনশিয়ার সাথে দেখা করতে পারি?

‘Yeah Sure.

‘Thank yOu sO much Doctor

৩৫.

সবাই কথা বলছে। শুধু ইচ্ছে কাউকে বার বার খুঁজছে। হঠাৎ ইচ্ছে দেখলো অয়নি এসেছে। ইচ্ছে অয়নির দিকে তাকিয়েতো পুরাই থ। এই মেয়ে শাড়ী না পড়ে সবসময়ের মতোই নরমাল ড্রেস পড়ে এসেছে!

‘চল আমার সাথে রুমে চল…

” আরে ইচ্ছে ছাড়। আমাকে আংকেলের সাথে কৌশল বিনিময়তো করতে দে…

‘কে শুনে কার কথা? অয়নিকে হাত টেনে ইচ্ছে নিজের রুমে নিয়ে যায়। রুমে যেতেই দরজা লাগিয়ে..দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

‘তুই না শাড়ী পড়বি?

‘অয়নি এইবার ভরকে যায়। ওইসময়তো আংকেলের কথায় সে ইচ্ছেকে ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কথা বলেছে কিন্তু এখন? এখন কি করবে।

‘কিরে বল….

‘না মানে ইয়ে ইচ্ছে… রুপ না করেছে।

“কিই! এতো বড় সাহস? আর তুই ইবা কেমন বেষ্টু বলতো? যে বফের কথায় বেষ্টুর মন রাখতে জানিসনা৷ তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই। ভুলেও কথা বলতে আসবিনা।

‘প্লিজ রাগ করিসনা ইচ্ছে। আসলে আমার শরীর খারাপতো তাই আর কি…

‘থাক তোর আর বানিয়ে কথা বলতে হবেনা। লাগবেনা তোর শাড়ী পড়া।

‘ওফ আচ্ছা ঠিক আছে। তোর একটা শাড়ী দে আমি পড়ে নেই এখন।

‘ইচ্ছে লাফিয়ে উঠে তাড়াতাড়ি আলমারি থেকে জামদানী একটা খয়েরী রঙের শাড়ী অয়নির হাতে দেয়। অয়নি অসহায় ফেইস নিয়ে বললো,

‘আল্লাহ এই মেয়ে আমাকে জ্বালিয়ে মারবে।

৩৬.

কাব্য!

‘হ্যাঁ ভাইয়া কাব্য… এইটা বলেই ইনশিয়া ফুঁপিয়ে কান্না করে দেয়।

‘কাব্যর এতো বড় সাহস? তোমার গালে থাপ্পড় মারে?

‘আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া। আমার গাল ছিঁড়ে যাচ্ছে একদম।

‘আদ্র হাতের মুঠে শক্ত করে ধরে রাখে৷ এই নিয়ে অনেকবার সে কাব্যের এইসব সহ্য করেছে। কিন্তু কাব্য জানেনা যে আদ্র ইনশিয়াকে জানে। আদ্র চোখ মুখ লাল করে কেউ একজনকে কল দেয়।

‘ভাইয়া..

‘কি হয়েছে ইনশিয়া? খুব কষ্ট হচ্ছে?

‘হ্যাঁ ভাইয়া আমার খুব খুব কষ্ট হচ্ছে ।

আমি বুঝলাম না এতোগুলো গার্ড রাখার পরও কাব্য ঢুকে কি করে বাসায়?

‘গার্ডদেরকে মেরে।

‘কেনো এসেছিলো?

……নিশ্চুপ

‘বলো কেনো এসেছিলো…

…..

ইনশিয়া আমি বলতে বলেছি..আদ্রর আলতো ধমকে ইনশিয়া কেঁপে বললো,

‘ডি ড্ ডিভোর্স এর জন্য।

৩৭.

এইতো আদ্র এসে পড়েছে?

সোফায় সবার নজর দরজার পানে। আদ্র মুচকি হেসে ঢুকছে।

‘মামা..কেমন আছো?

‘আলহামদুলিল্লাহ বাবা। আয় ভেতরো আয়।

আদ্র সোফায় বসতেই… চোখ যায় সামনের সোফায়। ইচ্ছে আর অয়নি বসে আছে। আদ্র মিটিমিটি হাসতেই ইচ্ছে মাথা নিচু করে ফেলে।

অয়নি ইচ্ছেকে গুচা দিয়ে বললো,

‘ইচ্ছে দেখ..আদ্র ভাইকে কি হ্যান্ডসাম লাগছে। ইচ্ছে অয়নির কথায় ফিসফিস করে বললো,

‘শাঁকচুন্নি চুপ থাকবি?

‘ইচ্ছে না চাইতেও চোরা চোখে আদ্রর দিকে তাকায়। ইচ্ছে আদ্রর দিকে তাকাতেই চমকে যায়। ওমা! আদ্রও নীল পান্জাবী পড়েছে! ইচ্ছেওতো নীল শাড়ী। হাতে ঘড়ি, চুলগুলো সিল্ক তাই বার বার সামনে পড়ছে। স্কিন কালার প্যান্টের সাথে আসলে আদ্রকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। চোখ ফেরানো দায় হয়ে পড়ছে। হঠাৎ আদ্রের চোখাচোখি হতেই তড়িঘড়ি করে মাথা নিচু করে ফেলে ইচ্ছে। আর আদ্র ওইদিকে মনে মনে হাসলো।

‘আনেয়া তাহলে এইবার আংটি পড়ানো হয়ে যাক?

‘হে ভাই সে আর বলতে?

‘ইচ্ছে মা এদিকে আয়তো।

‘ইচ্ছে তার বাবার দিকে অবুজ চাহনি নিয়ে তাকাতেই…নিহাল চৌধুরী.. আনেয়া নীড়ের কাছে যেতে বললো। আদ্রকে বললো,

‘বাবা ইচ্ছেকে এইবার আংটিটা পড়িয়ে দে। আদ্র কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তাড়াতাড়ি ইচ্ছেকে আংটি পড়িয়ে দেয়। ইচ্ছে অবাক চাহনি নিয়ে এখনো আদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। এখনো ইচ্ছের কাছে সবকিছু একটা ঘোর লাগছে। এইসব কি হচ্ছে তার বুঝতে কিছুটা সময় লাগলো। এইসব বুঝতেই, বাবার দিকে তাকালো। নিহাল চৌধুরী এগিয়ে এসে বললো,

‘এইবার আদ্রকে তুই রিং পড়া।

‘মানে?

‘রিংটা পড়া..

অয়নি এগিয়ে এসে ইচ্ছের হাত দিয়ে একপ্রকার জোর করে আদ্রকে রিং পড়ায়।

বাবা….

হঠাৎ পরিচিত কন্ঠ পেয়ে সবাই দরজার সামনে তাকায়। থমকে যায় সবার পা। চুপসে যায় সবাই। নিমিষেই যেনো কালো মেঘ এসে জমেছে।

চলবে…

স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি পর্ব-০৫

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি
#পার্টঃ০৫
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

২৬.

ইনশিয়া…

‘পেছনে কারো কন্ঠে নিজের নাম শুনে চমকে যায় ইনশিয়া জান্নাত। তাড়াতাড়ি মুখ ঢেকে পিছনে তাকায় সে। পেছনে তাকাতেই ছলছল চোখে মুচকি হাসে ইনশিয়া।

“কেমন আছেন আদ্র ভাইয়া।

‘আদ্র ইনশিয়ার চোখের পানি টা হাত দিয়ে মুছে বললো,

‘ভালো আছি বোন। তুমি ভালো আছো?

‘ভাইয়া ভালোতো আমিই থাকবো। খারাপতো শুধু থাকবে কাব্য চৌধুরী।

” মানে?

“কিছুদিন আগে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে এসেছিলো তাদের ফ্রেন্ড নাকি কাব্যের ফাঁদে পা দিয়েছে। তারা আমার কাছে সাহায্য চেয়েছে। আর আমি আমার দিক দিয়ে যতোটা সম্ভব ততোটাই সাহায্য করবো ভাইয়া।

‘আদ্র কিছুক্ষণ কিছু একটা ভেবে পকেট থেকে ফোনটা বের করে, ইনশিয়ার সামনে ধরে বললো,

” এই ছেলেমেয়েগুলো ইনশিয়া?

‘হে হে এরাই। এদেরকে তুমি চিনো আদ্র ভাই?

‘আদ্র ভাবশেলীন হয়ে মনে মনে বললো, “অয়নি আর রুপ!

২৭.

অয়নি কলেজে যেতেই দেখলো রুপ আর অয়নি একটা গাছের নিচে বসে কথা বলছে। অয়নি ওইদিক দিয়ে যেতেই… সামনে আদ্র এসে পড়ে। আদ্র দুই হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হেসে বললো,

‘ইচ্ছে পরী…তুমি কি জানো? খুব তাড়াতাড়ি তুমি আমার হতে যাচ্ছো?

‘এইসব কি যাতা বলছেন আদ্র ভাই?

‘আজকে তোমাদের বাসায় আমরা সবাই আসছি।

” ইচ্ছে অবাক হয়ে গেলো। কারণ উচ্ছ্বাস অদ্রিতাকে নিয়ে চলে যাওয়ার পর ফুপ্পিদের বাসার কেউ কখনো তাদের বাসায় আসেনি। আর তারাও যায়নি।

‘ইচ্ছে পরী..

‘আদ্রের ডাকে হুঁশ ফিরে ইচ্ছের।

‘আদ্র ভাই মজা করছেন?

‘আ’ম সিরিয়াস ইচ্ছে পরী।

‘এইটা কিভাবে সম্ভব হয়েছে? না মানে কিভাবে! বাবা…

‘ইচ্ছেকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আদ্র বললো,

‘আমরা আসলেই বুঝতে পারবা। আর আজ খুব বড় একটা চমক আছে সবার জন্য।

ইচ্ছে ভ্রু কুঁচকে বললো, “কি চমক?

‘চমকতো চমক ওই হয় ইচ্ছে পরী। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি…।

অয়নি আদ্রের কথার মাঝে হঠাৎ গলা একটু কাশি কাশি ভাব দিয়ে অয়নি বললো,

‘ডিস্টার্ব করলাম নাতো?

‘তুই না ওখানে ছিলি? এইখানে কখন আসলি?

‘তুই আদ্র ভাইয়ার সাথে কথা বলাই এতোটাই মগ্ন ছিলি যে দেখতে পাসনি।

” হ্যাঁ ঠিক বলেছো অয়নি।

‘রুপের কথায় সবাই পেছনে তাকায়। রুপের অবস্থা নাজেহাল। রুপের এই অবস্থা দেখো সবাই কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেয়।

‘কিরে রুপ অয়নি কি আজকে বেশি ডোজ দিয়ে ফেলছে?

‘আদ্র তুই ও?

‘না মানে তোর শার্টে গালে কিছু একটা ঠোঁট ঠোঁট ভাব দেখছিতো তাই… অয়নি লজ্জায় পড়ে যায় ব্যাপারটায়।

২৮.

অদ্রি রান্নাঘরে রান্না করছিলো। উচ্ছ্বাস গোসল দিয়ে বের হয়ে অদ্রির কাছে গেলো। অদ্রিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘আমার অদ্রিজার আম্মুটা কি রান্না করছে এখন?

“ইশশ উচ্ছ্বাস এখনোতো বেবি কনসিভই হলাম না এর আগেই মেয়ের নাম নিয়ে ডাকা শুরু করলে?

‘হয়নি তে কি হয়েছে হবেতো।

” সে না হয় হবে। যাও টেবিলে গিয়ে বসো আমি খাবার আনছি।

‘হঠাৎ ফোনের রিংটোন বাজতেই.. উচ্ছ্বাস বিরক্ত নিয়ে বললো, ‘ওফ এখন আবার কে কল দিলো? আমার বউটার সাথে একটু সময়ও কাটাতে পারিনা শান্তিতে। অদ্রি ফিক করে হেসে দেয় উচ্ছ্বাসের বলার ধরণ দেখে। উচ্ছ্বাস গিয়ে কল ধরতেই যা শুনলো তাতে সপ্তম আকাশে চলে গেছে সে বিষ্ময়ে। উচ্ছ্বাস ফোনটা কেটে কান্নায় ফ্লোরে বসে পড়ে। রান্নাঘর থেকে অদ্রি রুমে আসতেই চমকে যায়। যে উচ্ছ্বাসকে কখনো কাঁদতে দেখেনি সে আজ কাঁদছে!

২৯.

ফিমা… সারা বাড়ী এইভাবে সাজাচ্ছিস কেনো?

‘ফিমা একটু লজ্জা লজ্জা ভাব লইয়া বললো,

‘ওমা আফা আমনে মনে হয় জানেন না যে কেরে বাসা সাজগুজ করতাছি।

‘ইচ্ছে একটা ধমক দিয়ে বললো, “হপ..বল আজকে বাসায় কি কিছু আছে?

‘ফিমা একটু চুপসে ভাবে বললো, ” হো আফা…আমনেরে…’এই ফিমা তুই এইখানে কেনো? যা আশাকে রান্নার কাজে সহায়তা কর।

‘ফিমা পুরো কথা শেষ না করতেই নিহাল চৌধুরী ফিমাকে ধমক দিয়ে রান্নাঘরে পাঠিয়ে দেয়। ইচ্ছে বললো,

“বাবা আজ বাসায় কিছু আছে?

” হুম। আছে। পরে বলবো মা। তুই বরং তাড়াতাড়ি গোসল সেড়ে একটু পরিপাটি হয়ে থাক।

‘আমি কেনো পরিপাটি হয়ে থাকবো বাবা?

‘আরে বোকা মেয়ে বাড়িতে মেহমান আসলে কি যেমন তেমন ভাবে থাকা যায়?

‘ইচ্ছে একটু ভেবে বললো,

‘হুম তাতো ঠিকি। আচ্ছা আমি বরং যায়।

‘ইচ্ছে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। আর নিহাল চৌধুরী ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো,

“তোর মা মারা যাওয়ার আগে যা চেয়েছিলো তাই হচ্ছেরে মা।

৩০.

‘আদ্র বাবা দেখতো মাকে কোন শাড়ীটা পড়লে মানাবে..

‘আদ্র পিসিতে কাজ করছিলো। মায়ের কথায় মায়ের দিকে তাকালো। অনেকদিন পর তার মায়ের চোখে মুখে খুশির ছাপ সে দেখতে পাচ্ছে। আদ্র পিসি বন্ধ করে..মায়ের সামনে গেলো। পেছন থেকে তার মাকে জড়িয়ে ধরে আয়নায় তাকিয়ে হেসে বললো, ” মা তোমাকে সব কিছুতেই ভীষণ ভালো লাগবে৷

‘ইশ তাও তুই বলনারে বাবা।

‘আদ্র মাকে ছেড়ে সবগুলো শাড়ী দেখতে লাগলো বিছানায় বসে। বললো,মা..তুমি বরং ব্লু কালার শাড়ীটা পড়ো।

‘মিসেস আনেয়া নীড় খুশিতে গদগদ হয়ে ছেলের রুম থেকে চলে গেলেন। মা বের হতেই আদ্র ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,

‘বাবাকে ঠিক করতে অনেক সময় লেগেছে মা। কিন্তু আমি জানতাম না..মামার জন্য তোমার মন সবসময় এতোটা অখুশি থাকতো। যাকগে..মাতো মায়ের টা চুজ করে নিলো। আমি এখন কি পড়বো? আচ্ছা আমি বরং রুপকে একটা কল দেয়। এইটা ভাবতেই আদ্র বিছানায় পড়ে থাকা ফোনটা হাতে নিলো। তড়িঘড়ি করে কল লাগালো রুপের নাম্বারে।

৩১.

ইশ…এই অয়নিটা যে কেনো…কল দিয়ে কেনো বিকেলে ঘুরতে যেতে বললো৷ তাও কি পড়ে! নীল শাড়ী পড়ে। আজব। আমি কি শাড়ী পড়তে পারি নাকি! তাও পড়তে হবে মহারাণীর জন্য।

‘খুব বিরক্তি নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই নিজের সাথে কথা গুলো বললো ইচ্ছে।

অনেক যুদ্ধের পড় ইচ্ছের শাড়ী পড়া শেষ হতেই নিহাল চৌধুরী মেয়ের রুমে প্রবেশ করেন। নিহাল চৌধুরী গলাটা একটু কাশি দিয়ে ঝেড়ে বললো, “বাহ মা তুই আজ হঠাৎ শাড়ী পড়লি যে?

ইচ্ছে বিরক্ত নিয়ে বললো, “আর বলোনা বাবা। অয়নি নাকি বিকেলে ঘুরতে যাবে। কিন্তু শাড়ী পড়েই নাকি আমায় যেতে হবে। সে শাড়ী পড়বে কিনা! তাই ভাবলাম..মেহমানও আসবে আর বেরও হবো। আর তাছাড়া বিকেলতো প্রায় হয়ে গেলো পড়ে দেখা যাবে সময় নেই শাড়ী পড়ার তাই পড়ে ফেলেছি আগে।

নিহাল চৌধুরী মনে মনে হাসলেন। আফটার অল অয়নিকেতো তিনিই বলেছেন ইচ্ছেকে ভুলিয়ে বালিয়ে শাড়ী পড়াতে।

৩২.

‘ভাইয়া…আমার মুখে ভীষণ জ্বালা পোড়া করছে। আমি আর পারছিনা…প্লিজ ভাইয়া তাড়াতাড়ি আসুন’

‘ফোনের ওপাশ থেকে কারো কন্ঠে এই কথাটা শুনে..তড়িঘড়ি করে আদ্র ফোনটা কেটে মাকে বললো,

‘মা তুমি আর বাবা গাড়িতে করে চলে যাও আমি সময়মতো চলে আসবো।

‘তুই কোথায় যাবি?

‘আদ্র কোনো উত্তর না দিয়ে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে পড়ে।

‘আদ্র শুন..কোথায় যাচ্ছিস বাবা?

আদ্র যতোটা সম্ভব গাড়ি চালিয়ে…যথা জায়গায় গিয়ে পৌঁছাতেই চিৎকার করে বললো, ‘ইনশিয়া…ইনশিয়া…

চলবে….

স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি পর্ব-০৪

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি
#পার্টঃ০৪
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

২৩.

‘আহ..সেই লাগছে তোকে আর আদ্র ভাইকে পুরাই হিরো হিরোইন। ইশশ আমাকে যদি কেউ এইভাবে কলেজে কোলে করে নিয়ে আসতো।

“অয়নির এমন কথায় ইচ্ছে কটমট করে তার দিকে তাকায়। অয়নি এইসব পাত্তা না দিয়ে বললো,

” আদ্র ভাইয়া কি রোমান্টিক আর রুপটা দেখ..একটা আনরোমান্টিকের দিব্বা। শেষের কথাটা ভীষণ অসহায় হয়ে বললো অয়নি।

“ওফ অয়নি তুই থামবি? ইশ পা ব্যথায় আজ ক্লাস করতে পারবোনা একটুও।

” আচ্ছা তোর পায়ে ব্যথা পেলি কি করে?

“বেশ আল্হাদের সুরে কথাটা বললো অয়নি। ইচ্ছে তারপর বলতে লাগলো।

” আমি ফুচকা খাবো গাড়ি থামান।

“পাগল হয়েছো ইচ্ছে পরী? খালি পেটে তুমি ফুচকা খাবে? আর জানো? খোলা জায়গার ফুচকা একটুও ভালোনা।

” আপনাকে কোনটা ভালো আর না ভালো সেইটা আমি বলতে বলিনি আদ্র ভাই..গাড়ি থামান…

বাধ্য হয়ে আদ্র গাড়ি থামালো৷ কারণ সে জানে ইচ্ছে কতোটা ফুচকা পাগলী।

“ফুচকা খেয়ে আসো আমি বসে আছি।

‘হুম।

এইটা বলেই ইচ্ছে ফুচকা খেতে শুরু করে৷ ফুচকা খেয়ে যেই আসতে যাবে হঠাৎ একটা ইটের সাথে হোঁচট খেয়ে ধাম…..

এইটা বলেই ইচ্ছে অয়নির দিকে তাকায়। অয়নি হাহা করে হেসে চলেছে। কোনো ছেলের সামনে এইসব পড়ে যাওয়া টাওয়া যে কতোটা লজ্জাজনজ সেইটা ভাবতেই অয়নির হাসির কমতি নেই।

‘অয়নি….

‘ইচ্ছের রাগী গলা শুনে মুখে আঙ্গুল দেয় অয়নি। চুপসে যায় সে।

২৪.

মামা…

নিহাল চৌধুরী সোফায় বসে সংবাদ দেখছিলেন। হঠাৎ পরিচিত কন্ঠে ” মামা” ডাক শুনে পিছনে তাকায় সে। চোখ দুটো ঝলমল করে উৎফুল্লে।

“আদ্র!

” কেমন আছো মামা?

“এইতো দেখছিসইতো কেমন আছি। আয় বাবা আমার পাশে আয়।

” আদ্র গিয়ে বসে..নিহাল চৌধুরীর পাশে।

“আদ্র এতোদিন পর তোর মামার কথা মনে পড়লো?

” মামা তুমি কি বলো এইসব? আসলে অফিসের ভীষণ চাপ তাই…

“আচ্ছা থাক হয়েছে। কি খাবি বল? আজ আমি তোকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবো।

” আরে মামা না না। দরকার নেই৷ পরে একদিন এসে মামু ভাইগ্না দুজনে একসাথে রান্না করবোনে। এখন ছেড়ে দাও।

‘আদ্র হঠাৎ সোফা থেকে উঠে. ফ্লোরে বসে। নিহাল চৌধুরীর পায়ের কাছে। নিহাল চৌধুরীর হাত জাপটে ধরে বললো,”মামা ভাইবোনের মাঝে সব ঝামালা মিটিয়ে ফেললে হয়না?

‘নিহাল চৌধুরী দাঁড়িয়ে পড়ে বসা থেকে। গম্ভীর মুখে বললো,

“আদ্র….নিচ থেকে উঠো।

‘না মামা। আমি উঠবোনা। যতক্ষণ না অব্দি তুমি আমাকে কথার উত্তরটা দিচ্ছো।

‘আদ্র…

” মামা মা তোমাকে দেখার জন্য প্রায় ওই রাতে সবার আড়ালে কান্না করে। আজও মা..কাতলামাছের মাথাটা সবার অগোচরে নিজে না খেয়ে আমাদেরকে দিয়ে দেয়। কারণ, তুমি যে কাতলা মাছের মাথাটা ভীষণ খেতে ভালোবাসো।

‘নিহাল চৌধুরীর চোখে পানি। একটামাত্র বোন ওনার। খুব আদরের। কিন্তু ওনার ছেলে উচ্ছ্বাসের জন্য যে এইভাবে সব নষ্ট হয়ে যাবে তা ওনার কল্পনায়ও আসেনি।

‘আদ্র বসা থেকে উঠে নিহাল চৌধুরীর সামনে এসে বললো,

“মামা..অদ্রি আর উচ্ছ্বাস একে অপরকে ভালোবাসতো তাই ওরা পালিয়ে বিয়ে করেছে। এতে ওদের কোনো দোষ দেখছিনা আমি।

‘দোষ আছে আদ্র। উচ্ছ্বাস অদ্রিকে বিয়ের পিরি থেকে উঠিয়ে নিয়ে মান সম্মান নষ্ট করেছে তোর বাবার।

আদ্র নিহাল চৌধুরীর এই কথা শুনে, ” মনে মনে বললো, “নাহ..এইভাবে হবেনা। আগে বাবাকে ঠিক করতে হবে। মামা বাবার উপরই অভিমান করে আছে।

২৫.

ইচ্ছে বাসায় এসে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আদ্রকে দেখে চিৎকার দিতে যাবে এমন সময় আদ্র তাড়াতাড়ি ইচ্ছের মুখ চেপে ধরে হাত দিয়ে।

‘উম্ উমৃমৃ

‘ইচ্ছে ইশারা দিয়ে তার মুখপান থেকে হাত সরাতে বলতেই আদ্র ইচ্ছের মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। ইচ্ছে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে যায়। কারণ ইচ্ছে শুধু একটি তোয়ালে জড়িয়ে আছে সারা দেহে। আদ্রের খারাপ লাগছিলো বলে নিহাল চৌধুরী জোর করে তাকে রেস্ট করতে এই রুমে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু এতো এলাহি কান্ড ঘটে যাবে তা সে ভাবতে পারেনি।

ইচ্ছে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই কটমট করে তাকালো আদ্রের দিকে৷ আদ্র আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইচ্ছে বললো,

‘আপনি এইখানে কি করছেন আদ্র ভাই?

‘না মানে ইয়ে…

‘আমার রুমে কি করছেন?

‘আসলে মাথা পেইন করছিলো তাই মামা এইখানে নিয়ে এসেছে।

‘ইচ্ছে আয়নার সামনে গিয়ে ভেজা চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,

‘ফুফু জানে? আপনি এইখানে?

‘না।

‘উচ্ছ্বাস ভাইকে ভীষণ মনে পড়ে আদ্র ভাই।

‘আদ্র বুঝতে পারলো যে ইচ্ছের এইসব সুবিধার ঠেকছেনা। কখন না জানি কেঁদে দেয়। মেয়েটা খুব বাচ্চা স্বভাবের। আদ্র ইচ্ছের সামনে যেতেই এমন একটা কাজ করে বসলো ইচ্ছে যে আদ্র বিষ্মিত হয়ে গেলো। কয়েক সেকেন্ডের জন্য শ্বাস প্রশ্বাস দীর্ঘ হয়ে এলো।

ইচ্ছে কান্নায় আদ্রের বুকে মাথা রাখলো। ঝাপটে ধরলো আদ্রকে। আদ্রও নিজেকে স্বাভাবিক করে ইচ্ছের মাথায় হাত রেখে বললো,

‘কি হয়েছে আমার ইচ্ছে পরীর?

‘ইচ্ছে কান্না ভেজা কন্ঠে বললো,

‘আদ্র ভাই..উচ্ছ্বাসকে কতো দিন দেখিনা৷ কতো দিন ওহ আমাকে বলেনা…’বনু…এইটা বলেই ইচ্ছে পুনরায় কেঁদে উঠে।

আদ্র আদুরে কন্ঠে বললো,

‘আমি খুব তাড়াতাড়ি ওদেরকো নিয়ে আসবো ইচ্ছে পরী।

এই কথাটা শুনতেই ইচ্ছের যেনো হুঁশ ফিরলো। তার এতোক্ষণে বোধ হলো যে সে আদ্রের বাহুদ্বয়ে আবদ্ধ। ইচ্ছে ঝড়ের গতিতে আদ্রের থেকে সরে তাড়াতাড়ি রুম ত্যাগ করে।

চলবে….

স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি পর্ব-০৩

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি
#পার্টঃ০৩
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

১৫.

ফোনের রিংটোন বাজতেই একটি সুন্দর রমণীর পাশ থেকে উঠে কাব্য বিরক্তিতে কল ধরে।

‘হেই ইচ্ছে বেবি কি করো?.

‘কি আর করবো? তুমিতো নিজে থেকে একটা কলও দাওনা৷ ভালো লাগে বলো?

‘ওফ সরি জান। আই’এম এক্সট্রেমলি সরি।
এইটা বলতে বলতে কাব্য কিছু টাকা তার
বিছানায় এলোমেলো ভাবে অর্ধনগ্ন মেয়েটিকে ছুড়ে দিয়ে ইশারায় বেড়িয়ে যেতে বললো।

‘এতো সরি টরি বুঝিনা। তুমি কালই অফিসে না গিয়ে সারাদিন আমার সাথে টাইম স্পেন্ড করবে।

‘ওকে মাই বেবি।

‘আচ্ছা কাব্য আমি এখন রাখছি। অয়নি আমার জন্য কলেজে ওয়েট করছে।

‘ওকে বেবি।

১৬.

আদ্র সাদা শার্টের সাথে ব্লেজার, হাতে ঘড়ি, হাতে ফাইল নিয়ে নিচে নামতেই…রুপকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,”তুই এইখানে?

“কোনো? তোর বাড়িতে আসতে তোর পারমিশন লাগবে নাকি?

” ওহু তা নয়। সাডেনলি আসলি তাই বললাম।

‘তোর সাথে আজ তোর অফিসে যাবো। ভালো লাগছেনা কিছু।

‘বুঝেছি। বাসায় কিছু হয়েছে রুপ?

রুপ কিছু বলতে যাবে তার আগেই..মিসেস আনেয়া নীড় এসে বললেন,

‘হেরে রুপ,”অয়নিকে একবার নিয়ে আসতে পারিসনা? অয়নির কথা শুনতেই মিটমিট করে হাসে আদ্র।

আর এইদিকে রুপ মনে মনে আদ্রকে একশত একটা বকা দিয়ে জোরপূর্বক মুখে হাসি এনে বললো,

“না মানে আন্টি এখনোতো আমাদের বিয়ে টিয়ে হয়নি তাই আর কি। তবে হ্যাঁ একদিন তোমার কাছে না হয় নিয়েই আসবো।

মিসেস আনেয়া নীড় হেসে বললেন, ” আচ্ছা ঠিক আছে খেতে বস তোরা।

১৭.

হাতে একটা ফটো এলবাম নিয়ে কান্না করতে করতে ইচ্ছে বলছে,

‘কেনো চলে গেলে তুমি উচ্ছাস কেনো? আমাদের ছাড়া কি খুব বেশি ভালো আছো তুমি?

হঠাৎ রুমে কারো প্রবেশ অনুভব করে চোখের পানি মুছে তড়িঘড়ি করে ছবি এলবামটা আড়াল করে নেয় ইচ্ছে। ইচ্ছে পিছু ফিরে দেখে তার বাবা।

‘বাবা তুমি?

‘কি করছো তুমি?

“আসলে বাবা..

” অয়নি কল করেছে তোমার জন্য অনেক্ষন অব্দি বসে আছে তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে।

ইচ্ছে বাবাকে এড়াতে তাড়াতাড়ি আলমারিতে ফটো এলবামটা লুকিয়ে সাইড ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। নিহাল চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললেন, “উচ্ছ্বাস নামের আমাদের কেউ কখনো ছিলোনা।

১৮.

ড্রাইভ করতে করতে রেগে মুখ দিয়ে বিড়বিড় করছে আদ্র। তার রাগ করার যথেষ্ট ওয়ে আছে। রুপ তাকে অর্ধেক পথ এনেই গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ে। অয়নির জন্য। হঠাৎ আদ্র দেখে তার ইচ্ছে পরী এদিক ওদিক তাকাচ্ছে গাড়ির জন্য। আদ্র গাড়ি থামিয়ে দেয়। একটু ভাব নিয়ে বলে, ” আমি চাইলে তোমাকে ক্যাম্পাসে নামিয়ে দিতে পারি ইচ্ছে পরী।

‘হঠাৎ এমন কথাশুনে সামনে তাকায় ইচ্ছে। আদ্রকে দেখে অনেকটা চমকে উঠে। আদ্র গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আড়চোখে ইচ্ছের দিকে দৃষ্টিপাত করছে। ইচ্ছে কোনো কথা না বলে নাক বেংচি কেটে হাঁটা শুরু করে আর মনে মনে এই শহরের সব ড্রাইভারদের ১৪ গুষ্টি উদ্ধার করছে৷

‘আদ্র মিটিমিটি হেসে পেছন থেকে বললো, “ইচ্ছে পরী’ ভেবে দেখো। সামনে কিন্তু বৃষ্টিপাতের জন্য হাঁটু গেড়া পানি।

‘আদ্রের কথা শুনে ইচ্ছে থেমে যায়। মনে মনে কিছু একটা ভেবে আদ্রের সামনে যায়। আদ্রের দিকে এক পলক তাকিয়ে সোজা গাড়িতে উঠে বসে। আদ্র আলতো হেসে ড্রাইভিং সিটে বসতে যায়।

১৯.

” অয়নি আর রুপ দুজন হাত মিলিয়ে বললো,

‘হেই রুপ তুমি আদ্র ভাইয়াকে একা রেখে চলে আসছোতো?

‘আরে হে। মিস্টার আদ্র নীড়তো রেগে পুরাই বম। ইচ্ছে যদি আদ্রের সাথে না এসে কোনো গাড়ি পেয়ে যায়?

“আরে রুপ তুমি যে কি বলোনা। আমাদের ক্যাম্পাসের দিকে কোনো রিকশাওয়ালা আসবে বলে তোমার মনে হয়? বৃষ্টিতেতো রাস্তা ঘাটের যা তা অবস্থা।

হঠাৎ রুপ গেইটের দিকে তাকিয়ে বললো,

” প্ল্যান সাকসেসফুল মেরা জান..

রুপের কথা শুনে অয়নিও গেইটের দিকে নজর রাখলো। চোখ চড়গাছে অয়নির। নরমাল প্ল্যান করতে গিয়ে যে এতো বড় ওভার প্ল্যান হয়ে যাবে তা অয়নি বুঝতে পারেনি।

২০.

অদ্রি মন খারাপ? অদ্রির পেছন থেকে কোমড়ে জড়িয়ে ধরে কথাটা বললো উচ্ছ্বাস। অদ্রি পেছনে না তাকিয়েই বেলকনির গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, “জানো উচ্ছ্বাস? আদ্র ভাইয়াকে আমার ভীষণ মনে পড়ছে। ভাইয়াকে ছাড়া যেই আমি খাবার খেতে টেবিলে পর্যন্ত বসতাম না। সেই আমি আজ ভিন্ন শহরে..এইটা বলেই বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয় অদ্রিতা। উচ্ছ্বাস অদ্রিতার মাথা নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে আছে। কারণ সে জানে, এখন অদ্রিতাকে কান্না থেকে থামানো বড় দায়। মনে মনে ভাবতে লাগলো উচ্ছ্বাস, ” অদ্রি না হয় কেঁদে কষ্ট কমাতে পারে। কিন্তু আমি! আমিতো তাও পারিনা।

২১.

আদ্রের কোলে ইচ্ছে! বিষয়টা অয়নি আর রুপকে সপ্তম আকাশে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আদ্র অয়নি আর রুপের সামনে ইচ্ছেকে পাজা কোল থেকে নামাতেই ইচ্ছে নাক মুখ ফুলিয়ে অয়নিকে বললো, “অয়নি আমাকে ক্লাসে নিয়ে চল।

আদ্র পাশ থেকে ফোড়ন কেটে বললো,

” ইচ্ছে পরী তুমি বললে, “আমি ক্লাসে দিয়ে আসতে পারি। আফটার অল আমার বাবার কলেজ কিনা! কেউ কিছু বলতে পারবেনা।

‘আদ্র ভাই আমার পথ আমি সারাজীবন নিজেই চলতে পারবো আপনার কোনো দরকার পড়বেনা।

” আমি একা থাকতে দিলেতো।

“মানে?

ইচ্ছের কথায় আদ্র কোনো উত্তর না দিয়ে রুপকে বললো, ” রুপ চল।

“আরে এইইই আনসারতো দিয়ে যান। মামু কা ভাগ্নে।

নিজের কথার পাত্তা না দেওয়ায় ইচ্ছের কিছুটা ইগোতে লাগলো। ইচ্ছে চোখ রাঙিয়ে অয়নির দিকে তাকিয়ে বললো,” বললাম না আমাকে ক্লাসে নিয়ে যেতে?

“তোর পায়ের কি হয়েছে মনু?

‘অয়নি…

ইচ্ছের রাগের গতিভেদ বুঝে অয়নি চুপসে গিয়ে বললো, ” আরে রাগ করছিস কেনো? আমিতো জাস্ট এমনি জানতে চাচ্ছিলাম আর কি।

আদ্র গাড়ির সামনে গিয়ে একবার পেছনে তাকায়। ইচ্ছে আর অয়নি ক্লাসে ডুকছে। আদ্র মনে মনে বললো,”ইচ্ছে পরী”তুমিতো জানোইনা মামু তোমার সাথে আমার বিয়ে আজ থেকে প্রায় ৬ বছর আগেই ঠিক করে রেখেছে।

২২.

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখশ্রীতে হাত বুলাচ্ছে ইনশিয়া জান্নাত। হঠাৎ ফোনে টুং শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি ফোনটা হাতে নেয়। ফোনটা হাতে নিতেই মুখে ফুটে উঠে তার হাসি। ফোনটা রেখে…আবার আয়নার সামনে যায় ইনশিয়া। আজ ৩ বছর একটা কাক ‘ও” তাকে দেখেনি। নিজেকে গভীর আড়াল করে রেখেছে সে। হঠাৎ খেয়াল করে চোখের কোণে পানি। ইনশিয়া জান্নাত কাঁদছে! কান্না করে আয়নায় নিজেকে দেখে বার বার ইনশিয়া বলছে,”আমি তোমার ওয়াইফ ছিলাম কাব্য। ওয়াইফ। তবুও তুমি আমাকে ছাড়োনি! এইরকম স্বামী যেনো আর কখনো না হয় কারো।

চলবে…

স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি পর্ব-০২

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি
#পার্টঃ০২
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

৬.

“আদ্র ইচ্ছেকে ভীষণ ভালোবাসে অয়নি তাইতো আজ ৬ বছর ধরে ইচ্ছেকে কোনো বিপদ টাচ করতে পারেনি। নয়তো অনেক আগেই কাব্য ওকে ওর বেডের স্বীকার বানিয়ে ফেলতো।

‘রুপের কথায় অয়নি মাঝ নদীতে একটা ইটের কণা ফেলে রুপের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ঠিক বলেছো রুপ। কিন্তু ইচ্ছেকে এইসব বুঝাবে কে?অন্ধকে পথ দেখানো যায় রুপ। কিন্তু চোখ থেকেও যে অন্ধ তাকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়া যায়না।

‘কিন্তু অয়নি..আদ্র যে ইচ্ছে ছাড়া কিছু বুঝেনা।

‘আচ্ছা রুপ আমরা কিছু করতে পারিনা?

‘যেমন?

‘কাব্য’র আসল রুপটা আমরা ইচ্ছের সামনে নিয়ে আসতে পারিনা?

‘কিন্তু কিভাবে অয়নি?

৭.

মিস্টার নিহাল চৌধুরী সোফায় বসে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। ইচ্ছেকে সিড়িঁ দিয়ে উঠতে দেখে বললো,’দাঁড়াও।

‘কি হয়েছে বাবা?

‘ আজ তুমি আদ্রকে কি বলেছো?

‘বাবা আমি ওনার সম্পর্কে কিছু শুনতে চায়না আর বলতেও চায়না।

‘ইচ্ছে…

‘নিহাল চৌধুরীর আলতো ধমকে চুপসে যায় ইচ্ছে। তার বাবার সামনে সে স্ট্রং যতোটা আসলে সে ততোটা স্ট্রং না যতোটা বাবার সাথে তর্ক করতে গিয়ে মানুষ হয়।

‘আদ্র যথেষ্ট ম্যাচিউর ছেলে। তোমার অনেক বড় সে তাকে তোমার রেস্পেক্ট করা উচিৎ ইগনোর নয়।

‘বাবা রেস্পেক্ট তাকেই করা যায় যে..রেস্পেক্ট এর জায়গায় থাকে। আর আদ্র ভাই…

‘চুপ একদম চুপ থাকবে তুমি। বুঝলাম তোমার ফুপ্পির সাথে আমার বেশ রাগ-অভিমান তবে আমার বোনের ছেলেকে আমি অনেক ভালোবাসি। তাই আমি চাইনা যে আমার ভাগ্নেকে নিয়ে তুমি কিছু বলো।

‘ইচ্ছে বিড়বিড় করে বললো,’মামু কা ভাগ্নে’

৮.

আদ্র বেলকনির মাঝে রাখা বেতের সোফাটায় শুয়ে আছে৷ আর গান শুনছে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে। চোখ দুটো বন্ধ করা। চোখের কর্ণিশে গাল বেয়ে পানি পড়ছে। কতোতা ভালোবাসলে একটা ছেলেও একটা মেয়ের জন্য কাঁদতে পারে তা হয়তো আদ্রকে না দেখলে বুঝাই যেতোনা।

‘কেনো ইচ্ছে কেনো? তুমি বুঝতে পারোনা যে আমি তোমাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসি। কেনো বুঝোনা তুমি? কাব্য একটা বাজে ছেলে।

এইসব ভাবতেই আদ্র হাতের ফোনটা নিয়ে ফেইসবুকে একটা পোষ্ট করলো৷ এর মধ্যেই আদ্রের কাছে একটা মেসেজ আসে। আদ্র তাড়াতাড়ি কেউ একজনকে এস এম এস করলো।

৯.

ইচ্ছে সবে মাত্র ওয়াশরুম থেকে গোসল করে বেরিয়েছে। ভেজা চুল থেকে বিন্দু বিন্দু পানি পড়ছে। হাতের তোয়ালে আনতে যাবে এমন সময় পেছনে রাখা কেবিনেট থেকে ফোনে মেসেজ আসার শব্দ পেলো। ফোনটা বিরক্তিতে হাতে নিয়ে মেসেজ অপশন ওপেন করতেই দেখলো,

‘সামনে কাঁচের টুকরো,সাবধানে দেখে চলো ‘ইচ্ছে পরী’

এইটা লিখা। ইচ্ছে তড়িঘড়ি করে সামনে তাকালো। সত্যিই এইখানে কাঁচের টুকরো। তোয়ালেটা আনতে গেলেই তার পা আজ চলে যেতো। ইচ্ছে অবাক হয়ে ফোনের স্কিনে তাকালো। পরক্ষণেই মিনমিনিয়ে একটু হেসে ফেলে

১০.

“ম্যাম আমার পক্ষে এইটা একদমি পসিবল নয়। যদি কাব্য স্যার জানতে পারে তাহলে আমার জীবন নিয়ে নিবেন”

‘ফোনের ওপাশ থেকে কথাগুলো শুনতেই হাতের মুঠোয় শক্ত করে নেয় ইনশিয়া জান্নাত। ক্রুধ নিয়ে অপরপাশের ব্যাক্তিটিকে বললো, পসিবল না কথাটা আমি শুনতে চায়না। আমার জীবন কাব্য চৌধুরী নষ্ট করেতো দিয়েছে কিন্তু অন্য কোনো মেয়ের জীবন নিয়ে কোনো গেইম খেলতে আমি দিবোনা। এইটা বলেই কল কেটে দেয় ইনশিয়া জান্নাত। সামনে থাকা অয়নি আর রুপের দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনারা এতো কষ্ট করে আমাকে খুঁজে যেই হেল্প চেয়েছেন তা আমি করেছি। এইবার আপনারা আসতে পারেন।

১১.

আদ্র টেবিলে বসতেই… রাজ্জাক নীড় হেসে বললেন,

‘আদ্র..তোমার হাত ঠিক আছে?

‘ইয়েস পাপা।

‘কেনো এতো পাগলামি করো আদ্র? তোমার কিছু হলে আমরা কিভাবে বাঁচবো বলোতো?

‘যেইভাবে অদ্রিতাকে ছাড়া বেঁচে থাকতে পারছো ঠিক সেইভাবে।

‘কথাটা বলেই আদ্র টেবিল থেকে উঠে যায়। আনেয়া নীড় রাজ্জাক নীড়কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই…রাজ্জাক নীড় খাবার ছেড়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। আনেয়া নীড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললেন, ” ওই দিনটা সব সম্পর্কের মাঝে কাল ধরিয়েছে।

১২.

ইচ্ছে বিছানায় শুয়ে ফেইসবুকে ডুকতেই একটা পোষ্টে চোখ আটকে যায়।

‘ভালোবাসি কতোটা জানোনা তুমি,
হারাবো যেদিন বুঝবে তুমি।
ভালোবাসা এক নিখুঁত উপহার,
যার জীবনে আসে, সে বুঝে তার আয়াস।

এই পোষ্টটা দেখে ইচ্ছে আনমনে হেসে বললো,”কি নিখুঁত মানুষটার ভাবনা চিন্তা। না,একটা কমেন্ট না করলেই নয়।

১৩.

আদ্র রুমে বসে বসে অফিসের ফাইল ঘাটছে। ফোনে নোটিফিকেশন আসতেই ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে তার পোষ্টে একটা সুন্দর কমেন্ট করেছে একটা আইডি। আইডিটার নাম ‘আদ্র আকাশের ইচ্ছে’। আদ্র নামটা দেখে কিছুটা অবাক হয়। আবার খুশিও হয় এইটা ভেবে, “যাক আমার ইচ্ছের নাম একসাথে হলেও কেউ আইডিতে ইউজ করে। আদ্র কমেন্টটা ঘুটিয়ে ঘুটিয়ে দেখছে। কমেন্ট টা ছিলো এমন,

‘ভালোবাসা এক নিখুঁত উপহার তাতো জানি,
গোপন ভালোবাসা দ্বিগুণ সুন্দর তাও মানি।
প্রকাশ্য ভালোবাসার থেকে সারপ্রাইজ অনেক ভালো,
ভালোবাসি জানতে পেরেই ফুঁটবে যে তার মুখে হাসির আলো।

১৪.

‘জানো রুপ আজ আমি অনেক অনেক হ্যাপি আদ্র ভাইয়া আর আমার বেষ্ট ফ্রেন্ডের জন্য কিছু করতে পেরে।

অয়নি হেঁটে হেঁটে কথাটা বললো রুপকে৷ রুপের কোনো হেলদোল নেই৷ ভাবশেলীন হয়ে আছে সে। অয়নি রুপের হাত ধরে ঝেঁকে বললো,’এই রুপ শুনছো? আমি কি বলছি।

অয়নির ধাক্কায় রুপের ভাবনায় ছেদ পড়ে৷ সে বললো,

‘হ্যাঁ হ্যাঁ না…মানে..

‘তুমি কি এতো ভাবছো রুপ?

‘অয়নি তুমি একটা জিনিস ভেবে দেখেছো?

‘কি?

‘ইনশিয়া জান্নাত মেয়েটার মুখ একদিক দিয়ে ঢাকা।

‘হুম আমিও বুঝলাম না বিষয়টা। তবে আমার ভীষণ ভয় লেগেছিলো প্রথম।

চলবে….

স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি পর্ব-০১

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি
#সূচনা_পর্ব
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

১.

অবশেষে তুই ইচ্ছের প্রেমে পড়লি আদ্র? তাও যেই মেয়ে কিনা তোকে ভালোইবাসেনা?

‘আদ্র বাইকে হেলান দিয়ে আনমনে গিটার বাজাচ্ছিলো বেষ্ট ফ্রেন্ড রুপের কথা শুনে গিটার টা এক পাশে রেখে রুপের দিকে তাকিয়ে করুন চোখে বললো,

‘আমিতো ভালোবাসি রুপ’।

‘আদ্র তুই আর কতো পাগলামো করবি ইচ্ছের জন্য? ইচ্ছেতো সেই ঘুরেফিরে কাব্যকেই ভালোবাসে।

কাব্য’র নাম শুনতেই চোখ দুটো লাল হয়ে যায় আদ্রের। নিজেকে সামলে রুপকে কিছু একটা বলতে যাবে হঠাৎ চোখ যায় কলেজের গেইটের দিকে। সাদা কূর্তি পড়ে হেসে হেসে কয়েকটা মেয়ের সাথে কথা বলে বলে ইচ্ছে ক্যাম্পাসের দিকে আসছে। আদ্র রুপের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

‘তুই থাক আমি একটু আসছি।

‘আদ্র শোন….কোথায় যাচ্ছিস? এই আদ্র….

২.

‘কেমন আছো ইচ্ছে?

‘ইচ্ছের পথ আটকে সামনে দাঁড়িয়ে কথাটা বললো আদ্র।

‘ভালো ছিলাম আদ্র ভাই। তবে আপনাকে দেখে সব ভালো উধাও।

‘ইচ্ছে আমি এই কলেজে না পড়েও প্রতিদিন কার জন্য আসি আশা করি জানো?

‘জানিনা। আর জানতেও চায়না। এইবার আমাকে আপনার এই উত্ত্যক্ত থেকে মুক্তি দিন আদ্র ভাই অনেক হয়েছে আর নয়।

‘মুক্তি! হ্যাঁ দিবো মুক্তি তবে আমি যেইদিন এই পৃথিবী থেকে লিভ নিবো ইচ্ছে।

‘এইটা বলেই আদ্র ইচ্ছের অগোচরে চোখের পানি মুছে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো রুপের দিকে।

২.

কিরে ইচ্ছে এইভাবে চুপচাপ বসে আছিস কেনো?

‘অয়নি আমার সিরিয়াসলি আর আদ্র ভাইয়ের বিরক্ত করাগুলো ভালো লাগছেনা।

‘এইগুলো বিরক্ত করা বলেনা ইচ্ছে। এইগুলো হলো ভালোবাসার পাগলামি। নয়তো তুই’ই ভেবে দেখ আদ্র ভাইয়া বিজনেস এর সব কাজ সামাল দিয়ে অফিস থেকে সবসময় এই সময়ে কলেজ ক্যাম্পাসে এসে বসে থাকে কার জন্য বলতো? শুধুই তোর জন্য।

‘ওফ অয়নি তুই থামবি? তুই কি ওনার ঘটকালি করছিস?

‘আরে ইচ্ছে তুই রেগে যাচ্ছিস কেনো? আমিতো এমনিতেই তোকে জাস্ট….

‘অয়নিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ইচ্ছে বিরক্ত কন্ঠে বললো,

‘অয়নি তোর এইসব কথা শেষ হলে ক্লাসে আয়। আমি গেলাম।

‘এইটা বলেই ইচ্ছে কলেজ ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে হাঁটা দিলো ক্লাসের দিকে। অয়নি ইচ্ছের যাওয়ার পানে তাকিয়ে মনে মনে বললো, ‘তুই ভুল পথে হাঁটছিস ইচ্ছে। কাব্য মুটেও ভালো ছেলে নয়।

৩.

আদ্র বাসায় ফিরতেই..কোনো কথা না বলে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। দুম করে রুমের দরজা লাগিয়ে বিছানায় দুই হাত মাথায় চেপে ধরে বসে পড়ে। আদ্রের এই গম্ভীরতা নিয়ে যথেষ্ট ভয় পেয়ে আছেন মিসেস আনেয়া নীড়। আদ্রের এই গম্ভীরতা মানেই ভবিষ্যৎ ঝড়ের আভাস। তিনি রান্না ঘর থেকে এইসব ভাবতেই হঠাৎ উপর তলা থেকে জিনিস ভাঙ্গার শব্দ পেলেন।

৪.

‘কালো শার্ট, কালো প্যান্ট, হাতে দামি ব্রান্ডের ঘড়ি, চুলগুলো স্পাইক করা..একটা ছেলেকে দেখতে পেয়েই সব বন্ধু বান্ধব থেকে সরে দৌড়ে গিয়ে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে ইচ্ছে। জড়িয়ে ধরতেই ছেলেটি একটা ডেবিল স্মাইল দিয়ে বললো,

‘হেই সুইটহার্ট..কি হয়েছে?

‘কাব্য আমিতো ভেবেছিলাম আজকেও তুমি অফিস থেকে লেইটে ফিরে আসবে আমার ক্যাম্পাসে।

‘সবসময় লেইটে আসলে যে আমার কপালে ভালোবাসা জুটবেনা সে কথা কি আর আমি জানিনা ভেবেছো?

‘কাব্যের কথায় ইচ্ছে খিলখিল করে হেসে বলে,

‘বিয়ের পরে ভাত’ও জুটবেনা মিস্টার।

দূর থেকে অয়নি এইসব এক ধ্যানে দেখছিলো৷ অয়নির কাঁধে বৃষ্টি আলতো ধাক্কা দিয়ে বললো,

‘এইসব দেখে লাভ নেই অয়নি। ইচ্ছে কাব্যের মিথ্যে ভালোবাসায় ব্লাইন্ড হয়ে আছে। আমরা চাইলেও ওকে বুঝাতে পারবোনা যে কাব্য চৌধুরী ড্রেস চেইঞ্জ করার মতো মেয়ে চেইঞ্জ করে। চল বাসায় চল।

‘অয়নি ভাববিলাসী হয়ে ছোট্ট করে উত্তর দেয় ‘হুম’

৫.

খাবার টেবিলে আদ্র বসতেই আদ্রের হাতের দিকে তাকিয়ে মিসেস আনেয়া নীড়ের কলিজা কেঁপে উঠে। আদ্রের হাতে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে রাখা। কিন্তু ব্যান্ডেজ ভেদ করে টুপ টুপ লাল আবরণের রক্ত ওনার চোখ এড়ালোনা। টপ করে হাত থেকে খাবারের বাঁটিটা পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। আদ্র তাড়াতাড়ি চেয়ার থেকে উঠে মাকে উত্তেজিত কন্ঠে বলে,

‘কি হয়েছে মা? বলো কি হয়েছে?

‘আনেয়া বেগম ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে আদ্রের হাত ইশারা করলো। আদ্র ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললো,

‘আমার কিছু হয়নি মা। সামান্য একটু হাত কেটেছে মাত্র।

‘কেনো এমন করলি বাবা কেনো? আমি তোকে ওই মেয়েটার থেকেও আরো ভালো মেয়ে এনে দিবো।

‘মা আমি ইচ্ছের জন্য কিছু করিনি। আর তাছাড়া যতোই এইটা ওইটা বলোনা কেনো এইটাতো আর অস্বীকার করার নয় যে ইচ্ছে তোমারি ভাইয়ের মেয়ে।
চলবে,,

অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা পর্ব-০৯(অন্তিম পর্ব)

0

#অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা — [৯]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
#অন্তিম পর্ব
______________________

-‘ বারবার বলছি যা হয়েছে ভুলে মন দিয়ে সংসার কর। যে মানুষটা আমাদের খোঁজও নেয়নি তার জন্য এতোকিছু করে লাভ নেই। ‘

-‘ কি দিয়েছেন ওই মানুষটা আমাকে? বাবার আদর তো দূরের থাক পিতৃপরিচয়টুকুও দেননি। উনি উনার দুই মেয়ে তানহা আর মিরাকে নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করছেস! উনার নাকি দু’টো সন্তান! এদিকে আমি যে উনার আরো একটি সন্তান হই এটা তো উনি মানেনই না। উনার মান সম্মান নষ্ট হয়ে যাবে সমাজে তোমার কথা জানলে এইজন্যই তোমাকেও সীকৃত্বী দেয়নি কখনো। কতো অপ’মা’ন, অবহেলা সহ্য করে আমাকে বড়ো করেছো তুমি এই সবটা ভূলে যেতাম এতো সহজে মা? এটা সম্ভব নয়। আমাদের কি দোষ বলো? উনি সর্বদা তোমাকে বলে এসেছেন উনার দু’টো মেয়ে তাদের নিয়ে সুখী থাকতে চায় তো যে বাবা আমাকে সুখে থাকতে দেয়নি, আমাকে পরিচয় ও দেননি নিজের সন্তানের কারনে সেই সন্তানকে আমি কি করে এতো সহজে সুখে থাকতে দিবো মা? এটা তো কখনোই হতে পারে না! তাই জানোতো সেই কলেজে রাসেলকে দিয়ে সেদিন আয়মানকে আমিই ডাকাই আর তানহা যে ওয়াশরুমে যেতে চাইছিলো সেখানেও লোক আমিই ঠিক করাই যাতে ও আয়মানের সঙ্গে সেই রুমে ধরা পড়ে। আর সর্বশেষে আমিই ছিটকিনি এটে দিই! সাড়া কলেজ, মহল্লায় সবখানে তানহার নামে ছি ছি পড়ে কিন্তু ওই মিজান সাহেব উনি তো মহান! তানহা তো উনার সেই সন্তান যার জন্য উনি আমাদের ছেড়ে দিছে তাই সেই মহত্ব প্রমান করতে সে তানহাকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়! ‘

-‘ এতেও তোর শান্তি হয় নি? আর কি কি করেছিস তুই? এসব কিচ্ছু আমাকে কেনো বলিস নি আগে?

-‘ শোনো, ভেবেছিলাম এটুকুতে হবে কিন্তু তা না মিজান সাহেব তার বড়ো মেয়ের বিয়ে ঠিক করলো ধুমধাম করে আর আমি থাকতে সেটা কি করে হতে দিতাম মা? সেইজন্যই তো মিরা যখন জেনেছিলো নির্জনের সঙ্গে তানহার বিয়ে হবে আর সে নির্জনকে ভালোবাসে যখন এটা বলতে গেছিলো আমিই ওকে আটকে দিই! ওর বোনের ভ’য় দেখিয়ে কারন আমি চাইছিলাম বিয়েতে বড়ো সড়ো একটা ধা’মা’কা হউক! আর আমার প্ল্যানমতন আমি সবটা করি বিয়ের দিন মিরাকে দিয়ে মিথ্যা নাটক করাই জানো ও প্রথমে রাজি হচ্ছিলো না যখন তানহার ছোট্ট একটা এ’ক্সি’ডে’ন্ট করালাম তখন সুর সুর করে আমার কথা মেনে নিলো। মনে করেছিলাম মিরার সঙ্গে বিয়েটা ঠিক হউক কিংবা তানহার সঙ্গে বিয়েটা ভাঙু’ক! এই সমাজে যে একটা বিয়ে ভে’ঙে যাওয়া মেয়ের কি করুন পরিস্থিতি হয় সেটা তো সবারই জানা আর সেই করুন পরিস্থিতি তেই ফেলতে চেয়েছিলাম ওই মিজান সাহেবকে যাতে বুঝতে পারে! কিন্তু এবারও অসফল হলাম ওই আনোয়ার সাহেবের জন্য। উনি ধেই ধেই করে উনার বড়ো ছেলের বউমা করে নিলেন তানহাকে! এতোকিছু করেও যেনো কিচ্ছু হচ্ছিলো না মা, কিন্তু ভাগ্য বোধহয় আমার সহায় ছিলো কিছুটা সেইজন্যই তানহা আর আয়মানকে এক করেছে। জানো ওরা এখনো নিজেদের মেনে নেয়নি সেই অতীতের জন্য এটা আমি বুঝেছি। আর এইবার আমার সর্বশেষ পরিকল্পনা মতন আমি রাসেলকে বিয়ে করে ওই বাড়িতে ঢুকে পড়ি।’

-‘ মানে? তুই রাসেলকে ভালোবাসিস না?’

-‘ ভালোবাসা হাহ্! আমি কখনোই তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসি নি। জানোতো এতোকিছু করেও যখন কোনো কাজ হলো না তখন আজকেই শেষ কাজটা করে দিয়ে এসেছি! ওই তানহার খাবারে বি’ষ মিশিয়ে এসেছি! মিজান সাহেব তার সন্তানকে হারালে বুঝবে কেমন লাগে! ‘

তামান্নার কথা শেষ হতে না হতেই সপাটে দু’টো চ’ড় পড়লো ওর গালে! আর কেউ নয় এটা মে’রে’ছে ওর মা। তামান্না অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর মায়ের দিকে যে মা কখনো ওকে বকা পর্যন্তও দেয়নি সে আজ ওকে চ’ড় মা’র’ছে!

-‘ এই দিনটা দেখার জন্যই কি সমাজের এতো মানুষের এতো কথা শুনে তোকে বড়ো করেছি! সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো কিন্তু তুই শেষমেষ বি’ষ! এটা কি করে করতে পারলি? যা ওই বাড়িতে যা এক্ষুনি গিয়ে বি’ষ ফেলে দিয়ে আয়।’

-‘ সে তুমি যাই বলো না কেনো যা হবার তা তো হবেই। এবার আমি আর হারবো না। ওই মিজান সাহেবকে বুঝতে হবে যে সন্তান, সন্তান করে উনি আমাকে অস্বীকার করেছেন সেই সন্তান না থাকলে কেমন লাগে।’

তামান্না ওর মা’কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেড়িয়ে গেলো! তামান্নাকে দেখেই আমি সড়ে গেলাম। তামান্না চলে গেলো। আমি এখনো ঘোর কাটিয়ে ওঠতে পারছি না! কলেজে আমার ব’দ’নাম, বিয়ে ভা’ঙা, এমনকি বি’ষ মেশানোর মতন কাজও করতে পারলো তামান্না? যে কি-না আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিলো! বোনের মতন ছিলো সে-ই পিঠে ছু’ড়ি বসালো। কিন্তু ওর তো পুরো দোষ নয়। এর জন্য তো দায়ী আমার বাবা! তামান্না উনার মেয়ে, আমার সৎ বোন! ওকে পরিচয় দেয়নি আমার বাবা। তাও আমার জন্য!

এতোগুলা ধা’ক্কা পরপর নিতে পারছে না তানহা মাটিতে ধপ করে বসে রইলো। নিরবে অশ্রু বির্সজন দিচ্ছে যেনো কোনো কিছু বলার শক্তি তার মধ্যে আর অবশিষ্ট নেই! সকল শক্তি হারিয়ে সে খোলা মাঠে বসে কেঁদে চলেছে এক নাগাড়ে!
কিছুক্ষণের ভেতরই সেই জায়গায় আয়মান এসে উপস্থিত হয়। তখন ওভাবে আয়মানকে এভাবে বলার কারন আবার এখন তানহাকে এভাবে কাঁদতে দেখে ভড়কে যায়!

-‘ তুমি কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে? খুলে বলো আমাকে। ‘

তানহারর কান্নার বেগ যেনো আয়মানকে দেখে বৃদ্ধি পেলো। সে ক্রমশ কেঁদেই যাচ্ছে! একসময় আয়মানের কথা মতন ফোন থেকে ভিডিও টি বের করে আয়মানের সামনে তুলে ধরলো! ভিডিও দেখা শেষ করে আয়মান তানহাকে নিয়ে বাড়িতে গেলো। পথিমধ্যে তানহার মা’, বাবাকেও আসতে বললো। বাড়িতে রাসেল, সহ সবাইকে থাকতে বললো। কিছুক্ষণের ভেতর আয়মান তানহাকে নিয়ে বাড়ির ভেতর পৌঁছালো। সবাই আয়মানের কথা মতন ড্রয়িং রুমে বসে আছে! ইতিমধ্যেেই সেখানে তানহার বাবা মা-ও আছেন। এমনকি তামান্নাও আছে।

-‘ কিরে সবাইকে এভাবে ডাকলি কেনো তুই?’

-‘ কিছু দেখাবার আছে সবাইকে। ‘

এই বলে আয়মান তামান্নার মা’কে গাড়ি থেকে বাড়ির ভেতরে আনলেন। তামান্নার মা’কে দেখে মিজান সাহেব ওঠে দাঁড়ালেন! ওনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি তামান্নার মা’কে দেখে ঠিক কতোটা ভ’য় পেয়েছে।

-‘ কি হলো বাবা? উনাকে চেনা লাগছে আপনার তাই তো?’

আয়মাের প্রশ্নোত্তরে মিজান সাহেব কিছু বললেন না। তড়তড় করে ঘেমে যাচ্ছেন উনি! মনে ভ’য় ঢুকে গেছে তামান্নার মা’কে দেখে। তাহলে কি আজকেই সেই সত্যি টা এসে পড়বো সবার সামনে?

-‘ সকলের সুবির্ধাথে আমি বলবো না উনি কে তবে ভিডিও টা দেখো তাহলে সবাই বুঝবে।’

ভিডিও চালানো হলো সকলে দেখতে লাগলো ভিডিও টা! ইতিমধ্যেই আয়মানের কথা মতন পু’লিশ এসে উপস্থিত হয়েছে বাড়ির ভেতর। সবাই ভিডিও দেখছে সবার মুখেই অবাকের ছাঁপ লক্ষ্যনীয় তবে সবচেয়ে অবাক বোধহয় মিরা, তানহার মা’ই হয়েছেন! লজ্জা য় ভ’য়ে সব মিলিয়ে মিজান সাহেব ঠায় দাঁড়িয়ে আছে! অবশেষে ভিডিও শেষ হলো আয়মানের পরিবার নিরব দর্শক কারন ঘটনাটা মিজান সাহেবের। কিন্তু তানহার মা চুপ করে রইলেন না তিনি মিজান সাহেবের গা’লে সপাটে দু’টো চ’ড় বসিয়ে দিলেন! মিরাও যেনো এখনো হতভম্ব হয়ে আছে। তার বাবা এরকম একটা কাজ করবে সেটা মিরার কল্পনাতীতও ছিলো না। তানহা এখনো সমানতালে কেঁদে যাচ্ছে!

-‘ এতো বড়ো একটা অন্যা’য় করেছো তুমি ওই মহিলা আর তামান্নার সঙ্গে! তা-ও বুক ফুলিয়ে এতোদিন চলে এসেছো। মনের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই তোমার? কি করে করতে পারলে এরকম টা? আমার মেয়েদের কথা একবারো ভাবলে না? তোমার জন্য এতোকিছু হয়েছে! কেনো করলে এরকমটা বলো?’

-‘ বাবা! এই বাবা ডকটা বলার জন্যই তামান্না এতোকিছু করেছে। আমাকে জিগেস করলে আমি সবসময়ই বলতাম আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি আমার বাবাকে! আর আজকে সেই বাবা-ই এরকম একটা জঘ’ন্য কাজ করবে সেটা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে জানোতো? শতো যাই হউক তুমি তো বাবা! তাই তোমাক বেশি কিছু বলবো না কিন্তু আমার মুখ থেকে তোমার জন্য বাবা ডাক আসবে কি-না সেটা বলতে পারছি না! বোধহয় বাবা ডাকটা তুমি আর শুনতে পারবে না। ‘

-‘ শুধু তুই কেনো আপু? এই লোকটা আমার মুখ থেকে উনার জন্য বাবা ডাক কোনোদিনও শুনতে পাবে না! আমি ভূলে যাবো এই লোকটা আমার বাবা। যিনি এতো বড়ো একটা অন্যা’য় কাজ করেও আমাদের বাবা!সে-রকম বাবাকে বাবা বলার কোনো প্রয়োজন নেই! আজকে উনার জন্য তামান্না এতোটা করেছে! আমাকে দিয়ে কুৎ’সি’ত কাজ করিয়েছে।কিন্তু কেনো? এই লোকটার জন্য করেছে! এই লোকটাকে আর বাবা আমি ম’রে গেলেও করবো না!’

-নিজের মেয়ে, স্ত্রীর মুখ থেকে এসব শুনে নিরবে অশ্রু বির্সজন করছে মা’থা নিচু করে। কিন্তু সত্যি তো সবসময়ই তিক্ত হয়!

এতোক্ষণ চুপ করে ছিলেন তামান্না বেগম এবার তিনিও মুখ খুললেন,

-‘ আপনি আপনার সন্তানের জন্য আমা্র সন্তানকে পরিচয় দেননি যে কি-না আপনারই সন্তান ছিলো! গরিব ঘরের মেয়ে ছিলাম। আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়ে করলেন তাও সেটা ছিলো মিথ্যা বিয়ে! যদিওবা পরে সবটা জানি কিন্তু তখন আপনি আপনার বউ, বাচ্চার অযুহাত দিয়ে চলে গেছেন। আমিও মেনে নিয়েছি আমার এই নিষ্ঠুর নিয়তি। কিন্তু আমার কি দোষ ছিলো বলতে পারেন? সে কেনো বাবা ডাকতে পারলো না? বাবার ভালোবাসা তো দূর বাবার পরিচয় টুকুও পেলো না? দেখছেন যা করছেন তা ফিরে পেয়েছেন এখন আপনার সন্তানেরাও আপনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে! ওদের দৃষ্টি শুধু ঘৃ’না তাও আপনার জন্য! আমার মেয়ে ভূল করেছে কিন্তু তাও আপনার জন্যই!’

-‘ বাবা! কখনো আপনাকে বাবা বলে ডাকতে পারিনি। ছোটোবেলায় যখন দেখতাম সব বন্ধুদের বাবা এসে স্কুলে দিয়ে যায় তখন আমি ভাবতাম আমার বাবা কই? যখন বাবারা মেয়েদের নিয়ে ঘুরতে যেতো আমি ভাবতাম আমার বাবা কই? যখন একসঙ্গে খেলাধুলা করতো তখনও আমি ভাবতাম আমার বাবা কই? এরকম অনেক দেখেছি আর অনেক ভেবেছি নিজের মনে মনে আমার বাবা কই? তখনও কিচ্ছু বুঝিনি জানেন? কিন্তু যখন বড়ো হয়েছি একটু মায়ের কাছ থেকে সবটা জেনেছি তখন থেকেই আপনার আর আপনার সন্তানদেের জন্য মনে ত্রীব ঘৃ’না জন্মায়! কতোভাবে যে ওদের ক্ষ’তি করার চেষ্টা করেছি। আমার মনে শুধু একটাই কথা বাজতো তানহা আর মিরার জন্য আপনি আমাকে সন্তানের পরিচয় দেননি। এখন বুঝতে পারছি দোষ আমারই ছিলো বাবা? সে তো আমার নয়। অযথাই মরিচিকার পেছনে ছুঁটেছি। সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি পারলে ক্ষমা করে দিবেন নতুবা মনে মনে অ’ভি’শাপ দিয়ে যাবেন! আমাকে এরেস্ট করুন ভিডিওতে তো দেখলেনই আমি বি’ষ মিশিয়েছি, এতোকিছু করেছি, আমার বাকি জীবনটা ওই অন্ধকারেই কাটুক।’

-‘ সবটা মানলাম কিন্তু আমার দোষ কি তামান্না? তোমাকে ভালোবেসেছি তাই? আমাকে তুমি তোমার কাজে ব্যাবহার করে আসলে! এরকমটা না করলেও পারতে। ‘

-‘ ভালোবাসা ভালো। কিন্তু ভূল মানুষকে ভালোবাসা ঠিক নয়। তোমার জন্য সেই ভূল মানুষটা আমি ছিলাম এবার সঠিক মানুষকে খুঁজে নাও। আমিও যাচ্ছি আমার পথে।’

-‘ দাঁড়াও! আমার জন্য এতোকিছু হয়েছে না? এর খে’সারত আমিই দিবো! শুধু তামান্না একটিবার আমাকে বাবা বলে ডাকবে?’

তামান্না কোনো কিছু না ভেবে মিজান সাহেবকে জড়িয়ে ধরলেন বাবা বলে! যেনো বহু বছরের তৃষ্ণা মিটলো তার বাবাকে পেয়ে! মিজান সাহবে তামান্নাকে জড়িয়ে ধরলেন। এ-তো উনারই সন্তান!

-‘ পারলে ক্ষমা করে দিস আমাকে। তোদের বাবা হবার যোগ্য আমি ছিলাম না। আমার জন্য এতো কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তোদের! তবে এখন আমি মুক্তি দিয়ে দিবো তোদের। ‘

মিজান সাহবে সিঁড়ি বেয়ে উপরে ছাঁদে ওঠে গেলেন। বাড়িসুদ্ধ সবাই উনার পিছু পিছু গেলেন! উনি ছাঁদে ওঠেই আগে দরজা আটকে দিলেন। সবাই চেচামেচি করছে কিন্তু যা হবার তা তো হয়েই গেলো! মিজান সাহেব ছাঁদ থেকে লাফ দিয়ে নিজের প্রান ত্যাগ করলেন! সবাই দৌড়ে নিচে যায়! এম্বুলেন্সে কল করে কারন তখনও মিজা সাহেব বেঁচে ছিলেন। তানহা, তামান্না, মিরা, সবাই হাউমাউ করে কাঁদছে। মিজা সাহেব আধভাঙ্গা গলায় কথা বলেন,

-‘ তামান্না তো বাবা বলে ডাকলো এবার আমার বাকি দু’টো মেয়ে যদি একবার আমাকে বাবা বলে ডাকতো শেষবারের জন্য তাহলে হয়তো শান্তি পেতাম। পারলে ক্ষমা করে দিস। তোদের চোখে ঘৃ’না দেখে বাঁচতে পারবো না আমি। তোর মা’কে ও বলে দিস যাতে ক্ষমা করে। আমার পা’পের শা’স্তি আমি পেয়েছি। ‘

তানহা, মিরা বাবা বলে চিৎকার করে ওঠলো! ততোক্ষণে মিজান সাহেব দুনিয়ায় মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন! তানহার মা চুপটি করে আছে কোনো কথা নেই। তামান্না আর তামান্নার মা নিরব দর্শক! তবে তামান্নার চোখে অশ্রু জলজল করছে শেষবেলায় তো লোকটা তাকে মেয়ে বলেছে? পেরেছে বাবা ডাকতে! পুরো পরিবেশ নিস্তব্ধতায় গ্রাস করেছে! এভাবে কাঁদতে কাঁদতে তানহা অজ্ঞান হয়ে যায়! জ্ঞান ফিরতেই দেখে মিজান সাহেবের দাফ’ন কার্য সমপন্ন হয়েছে! দুপুর থেকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে! শোকে স্তব্ধ আছে এখনো পুরো মানুষজন। ওদিকে দা’ফনের জন্য তামান্নাকে পু’লিশ নিয়ে যায়নি তবে এখন নিতে এসেছে। তামান্না অশ্রুজল চোখে তানহার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

-‘ আমি দেখেছিলাম তখন তোকে। আমি জানতাম তুই ভিডিও করছিস তাই তো মা’কে বলার আগে সবটা খুলে বলি যাতে আমার অন্যা’য়ের শা’স্তি আমি পাই। আড়চোখে তোকে যখন দেখেছি মাটিতে বসে কাঁদতে তখন কেনো জানি আমারও খুব কষ্ট হচ্ছিলো জানিস? মনে হচ্ছিলো বারবার এই তুই তো আমাকে কম সাহায্য করিস নি। আজকে একটা মানুষের জন্য আমি তোর পিছু লেগেছি! অনুশোচনায় ভুগতে থাকি। তৎক্ষনাৎ সিদ্ধান্ত নিই আমি যা করেছি তার ফল ভো’গ করবো আমি। তাই সবটা খুলে বলতে থাকি যাতে তুই নিজের হাতো আমাকে আমার করা অন্যা’য়ের জন্য শা’স্তি দিস! আর হলোও ঠিক তাই। তুই নিজের হাতেই আমাকে শা’স্তি দিলি। এবার আমি চলে যাচ্ছি শান্তি মতন। শুধু বলবো তোদের এই বড়ো বাড়িটুকুতে আমার মা’কে একটুখানি আশ্রয় দিস। আর পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস।’

-‘ আগেও তুমি ভূল করেছে আর এখনো তুমি ভূল করছো! পু’লিশ তানহা নয় আমি ডেকেছি। যাই হউক কম কষ্ট পাইনি তোমার জন্য আমরা দু’জনে। ভালোবাসতাম তবুও ঘৃ’না দেখেছি তানহার চোখে শুধু তোমার জন্য তাই তোমাকে ক্ষমা করবার মতন মহৎ গুন আমার নেই। ‘

-‘ তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলিস সেটা অতীতে তবে এখন আর নেই। যা করেছিস আমার সঙ্গে সেটা কখনোই ভুলতে পারবো না সে যতোই আমার বাবা দায়ী থাকুক না কেনো। তবে যদি শুধরোতে পারিস তবে আসিস মেনে নিবো বোন হিসাবে।’

তামান্না চলে যায়। তামান্নার মা-ও চলে যায়। তানহা আর মিরা ওদের মা’কে নিজের কাছে রেখে দেয়। স্বামীর কর্মকান্ড আর অকস্মাৎ মৃত্যু যেনো উনাকে পাথর করে দিয়েছে!

দেখতে দেখতে বেশ ক’দিন পার হয়ে গেছে। এখনো মিজান সাহেবের শোক থাকলেও সবাই চেষ্টা করছে নিজেকে ওখান থেকে বেরিয়ে আনার। তানহার মা-ও স্বাভাবিক হয়েছে একটু একটু সে এখন তানহার চাচাদের সঙ্গে থাকে। তামান্নার মা-ও সেই বস্তিতেই থাকে। শুধু খরচাটুকু আয়মান দিয়ে দেয়। মিরা আর নির্জন আগের মতনই আছে। রাসেল এখনো অপেক্ষা করে আছে কবে তামান্না সংশোধিত হয়ে ফিরবে কারন তার ভালোবাসা যে সত্যি! সে সত্যিই তামান্নাকে ভালোবাসে আর তার জন্য অপেক্ষা যতোদিন করতে হয় রাসেল করবে। সবশেষে সবাই এগিয়ে গেছে শুধু থম মে’রে আছে তানহা আর আয়মানের জীবন।অফিস থেকে ফেরার পথে একটা লাল টুকটুকে শাড়ি নিয়েছে তানহার জন্য, উদ্দেশ্য সম্পর্কটা আরো একটু এগোবার…..

বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে পুরো রুমে কোথাও তানহাকে খুঁজে পেলো না আয়মান। শেষে বারান্দায় চোখ পড়তেই দেখা মিললো তানহার! এক পলকে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। মিজান সাহেব যাবার পর থেকেই তানহা এরম চুপচাপ, তামান্নার সত্যি, মিজান সাহেবের মৃত্যু সব মিলিয়ে এখনো পুরোটা কাটিয়ে ওঠতে পারেনি তানহা! আয়মান অতি যত্নে তানহার কাছে গেলো।

-‘ আজও এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে? কেনো জানি মনে হচ্ছে আমি যদি সবাইকে সত্যি টা না বলতাম তাহলে হয়তো তোমার বাবা ওরম করতেন না।’

-‘ আপনার কোনো দোষ নেই। সত্যি লুকানো যায় না। তবে বাবা চলে গেছেন এটা উনার আরো একটা চরম ভূল! নিজের জীবন থেকে তামান্নার থেকে, আমার থেকে, মিরার থেকে, মায়ের থেকে সবার থেকে পালা’তে উনি চলে গেছেন নিঃশব্দে। ভালো থাকুক উনি। ‘

-‘ বেশ আমি ধরে নিবো এতে আমি দায়ী নই যদি তুমি আমার কথা শোনো।’

-‘ বেশ বলুন তাহলে কি কথা?’

-‘ এই শাড়িটি পড়ে চলো আবারো আমরা রাতের শহড়টাকে দেখতে বেরিয়ে পড়ি?’

-‘ চলুন তাহলে।’

তানহা রেডি হয়ে আসলো। বরাবরের মতনই আয়মান তানহার রূপে মুগ্ধ হলো। বেরিয়ে পড়লো রাতের শহড়ে। হাত দু’টি একসঙ্গে ধরে হেঁটে চলেছে অজানা রাস্তায়, যে রাস্তায় শুধু আয়মানই আছে। হাঁটতে হাঁটতে একসময় ক্লান্ত হয়ে রিকশায় চড়ে বসলো। তানহা সযত্নে আয়মানের কাঁধে তার ক্লান্ত মক’থা এলিয়ে দিলো। আয়মানও তানহার হাত দু’টি নিজের মধ্যে রেখে তানহার কপালদ্বয়ে তার উষ্ঠের শীতল পরশ দিলো।

-‘ ভালোবাসি তোমাকে তানহা! সেবারো উত্তর দাওনি এবার বলো?’

-‘ ভালোবাসি আমিও আপনাকে। সকল ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আমার শুধু আপনাকেই লাগবে। ‘

আয়মানও মুচকি হেঁসে তার প্রেয়সি যে একসময় #অপ্রিয়_প্রেয়সী ছিলো সেই প্রেয়সীকে নিজের কাছে টে’নে নিলো! রিক্সা থেকে নেমে আবারো হাঁটা ধরলো তাদের নিজ গন্তব্য স্থলে। হাত দু’টি দু’জনের একসঙ্গে রেখে। বাড়িতে গিয়ে ক্লান্ত শরীর দু’টো বিছানায় এলিয়ে দিলো। আয়মান আবারো তার প্রেয়সীকে তার নিজ বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো। এ যেনো বহু প্রতীক্ষার ফল হিসাবে আজকে রাতটুকু এসেছে তাদের জীবনে।
ভালো থাকুক সকল ভালোবাসা।

——————-সমাপ্ত —————

অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা পর্ব-০৮

0

#অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা — [৮]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
______________________

-‘ তোমার হাতে এই ঘড়িটা? এটা তো আগে দেখিনি আপু, নতুন কিনলা বুঝি? ‘

মিরার আকস্মিক প্রশ্নে ভড়কে ওঠে তামান্না। মনের মধ্যে সন্দেহের আলাপন জেগে ওঠে দৃঢ়ভাবে। মনের ভাবনা মনে রেখে ওষ্ঠদ্বয়ে হাসির রেখা ফুটিয়ে জবাব দিলো,

-‘ হ্যাঁ এটা তো নতুনই। এই পরশু দিন মাত্র কিনলাম মিরা। কেনো বলোতো?’

-‘ আসলে আপু ঘড়িটা আমারও খুব পছন্দ হয়েছে তাই আর কি।’

-‘ ওহ্।’

তামান্না নিজের ঘরের দিকে অগ্রসর হতেই মিরা মনের আনন্দে নির্জনকে ডেকে নিয়ে ঘরে চলে যায়! অবশেষে সে যা ভেবেছে সেটাই তাহলে সঠিক? এখন তাহলে উপযুক্ত প্রমানের অপেক্ষা তাহলে বোঝা যাবে এটা কি তার নিছক মনের স’ন্দে’হই বটে নাকি যা ভাবছে তা-ই।

🥀🥀🥀

-‘ মা তুমি একদমই চিন্তা করো না আমি আমার উদ্দেশ্য সফল হবো খুব তাড়াতাড়ি। যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই বাড়িতে এখানে এসছি সেটা খুব তাড়াতাড়িই পূর্ন হবে কিন্তু তার আগে তুমি যা কান্ড করেছো একবার তোমাকে দেখতে আসছি আমি!’

তামান্নার রুম ক্রস করার সময় এই কথাগুলো শুনলাম একটু আগে। কই এই যে সাতদিন আগে মাত্র ওদের বিয়ে হলো তামান্না যখন এই বাড়িতে বিয়ে করে আসলো ও তো বলেছিলো ও নাকি রাসেলকে ভালোবেসে এই বাড়িতে এসেছে তাহলে কোন উদ্দেশ্যের কথা বলছে ও? ভাবতেই অবাক লাগছে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড হয়েও ওর কোনো উদ্দেশ্য আছে অথচ সেটা আমি কি-না জানিই না! বলার হলে নিশ্চয়ই বলতো কিন্তু ও যখন বলেনি তখন আমাকেই সবটা জেনে নিতে হবে দেখছি। হাই স্কুল লাইফ আর কলেজ অব্দিও তামান্নাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো অথচ ওর বাসাই কোনোদিন আমাকে নিয়ে যাওয়া তো দূর কখনো ওর মায়ের চেহারাটাও আমাকে দেখতে দেয়নি। ও এখানে বাসা ভাড়া করে থাকতো বলদো ওর মা গ্রামে একলা থাকে। কিন্তু ওর কথা শুনে মনে হচ্ছে না ওর মা গ্রামে একা থাকে! অথচ ও এক্ষুনি ফোনে ওর মা’কে বললো আসছি তার মানে ও আগে মিথ্যা বলেছে আমায়! শুধু তা-ই নয় ওর এই বাড়িতে আসার একটা উদ্দেশ্যও আছে যেটা কি-না আমরা কেউই জানি নক! সত্যি টা জানার জন্য তামান্নার পিছু নিলাম!

তামান্না বড়ো রাস্তার মোড় ছেড়ে সামনে একটু এগিয়ে গেলো সেখান থেকে অটোয় উঠলো আমিও ওর পিছু পিছু গেলাম। তারপর কিছু দূর এগোতেই একটা ব’স্তির ভেতর ঢুকলো তামান্না আমিও পিছু পিছু গেলাম। বস্তির ভেতর ঢুকলেও বস্তির ঘরগুলো থেকে পাঁচ মিনিট দুরত্বে একটা ভা’ঙাচোড়া ঘর আছে সেখানে গিয়ে ঢুকলো তামান্না!

আমিও মনের কৌতুহল মেটাতে সেই ভা’ঙাচোরা ঘরটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। একটা ছোট্ট জানলআ আছে সেইখানটায় গিয়ে দাঁড়ালাম ওদের কথা শোনার জন্য

-‘ তার মানে তুমি মি’থ্যা বলে আমাকে এনেছো এখানে! মা তুমি তো জানো তোমাকে কতোটা ভালোবাসি আমি আর তুমি সেটার সুযোগ নিয়ে মি’থ্যা বলে এখানে কেনো আনলে বলোতো?’

-‘ দেখ তামান্না মা আমার বোঝার চেষ্টা কর। তুই যা করছিস তা অ’ন্যা’য়। যা হবার তো হয়েই গেছে তাই না বল? এখন আর এসব বলে কি কোনো লাভ হবে আদৌ? এর চেয়ে বরং তুই মন দিয়ে সংসার কর এতেই আমি খুশি। ‘

-‘ তুমি খুশি? হাহ্! আমি কি কিছুই বুঝি না মা? ঠিক কতোটা খুশি নিয়ে তুমি আমাকে মানুষ করেছো? আর কি বললে যা হয়েছে তা হয়েছেই ভুলে যাবো? কখনোই না!’

এবার তামান্নার মা আর কিছু বললেন না চৃপ করে রইলেন! আমি এখনো ওদের কথা শুনে যাচ্ছি এই মধ্যবয়স্ক মহিলাটিই তামান্নার মা তাহলে! যেটা সন্দেহ করে এসেছি সেটাই ঠিক। মানে তামান্না আমাকে মিথ্যা বলছিলো ওর মা গ্রামে থাকে! জানিনা আর কতো কি শুনতে পাবো ভাগ্যিস এখানে এসেছিলাম তামান্নার পিছু পিছু। দেখি আরো কি বলে।

-‘ তো নিজের সুখের সংসার টা নষ্ট করে দিবি তুই? রাসেল তো ভালো ছেলে ও যদি জানে এসব তাহলে কি হবে ভেবে দেখেছিস একবারো?’

তামান্নার মায়ের কথায় চমকে গেলাম! মানে এসবের ভেতরে রাসেলও জড়িয়ে আছে। নিশ্চয়ই কোনো বড়ো সড়ো প্ল্যান লুকিয়ে আছে। তামান্নাকে এমনি এমনি বললে ও মিথ্যা বলবে তাই প্রমান হিসাবে ভিডিও করে নিই।

-‘ সংসার তো দূর! ভালোবাসা? কিসের ভালোবাসা হ্যাঁ? মা রাসেল শুধু মাত্র আমার খেলার একটা গুটি মাত্র বুঝেছো? ওকে না আমি কোনোদিনও ভালোবেসেছি আর না ভালোবাসবো! আমার তো শুধু উদ্দেশ্য একটাই যারা তোমাকে, আমাকে এই ক’রুন অবস্থা করেছে তাদের সুখ নষ্ট করা আর দেখো অলরেডি আমি সেখানে কতোটা এগিয়ে গেছি পৌঁছে গেছি মঞ্জিল ভিলায় যেখানে মিজান সাহেবের দুই মেয়ে মিরা আর তানহা আছে!’

-‘ ছেড়ে দে ওদের! আর কতো নিচে নামবি ? কম ক্ষতি তো করিস নি ওদের দুই বোনের বল? তানহার কলেজে যে বদ’নাম করেছিস মিরার উপর যে মিথ্যা তকমা লাগিয়েছিস এটাই যথেষ্ট আর কিচ্ছু করতে হবে না তোকে। আর যে তোকে দূরে ঠেলে দিয়েছে অস্বীকার করেছে তার জন্য কিছু করিস না আর!’

এতোক্ষণ ধরে সবটা চুপচাপ সহ্য করে শুনে এলেও এবার যেনো ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে গেছে আমার! তামান্নার মায়ের কথা শুনে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তামান্নাই সবকিছু করেছে! যাকে নিজের বোন ভেবেছি, যার সঙ্গে এতো বছর রয়েছি ছায়ার মতন আর সে কিনা আমার এতো বড়ো ক্ষতি করলো! মানতেই পারছি না এই সব কিছুর মূলে তামান্না রয়েছে! কিন্তু মা’থায় প্রশ্ন একটাই ও কেনো এরকম করলো?

-‘ এই যে এতোগুলা বছর আমরা যে কষ্টে রয়েছি সেগুলোর কি কিছুই দাম নেই মা? বড়ো হবার আগ পর্যন্ত কতো মানুষের কতো কটু কথা শুনেছি সেটা কেবল মাত্র ওই তানহা আর তানহার বাবার জন্য! এগুলো কি এতো সহজে ভূলে যাবো? কখনোই না! যে মানুষটা আমাকে জন্ম দিয়েছে, যে মানুষটা আমার বাবা তাকে একবারো পর্যন্ত বাবা বলে ডাকতে পারিনি, বাবার ভালোবাসা কি তা অব্দি এখনো বুঝতে পারিনি। সেই মানুষগুলোকে ছেড়ে দিবো এত্তো সহজে না! উনি উনার পরিবারের জন্য এতোকিছু করেছে তো ঠিকআছে সেই পরিবারকেই সুখে থাকতে দিবো না আমি! তারপর দেখো কি হয়?”

মনে হচ্ছে এখুনি গিয়ে তামান্নাকে ধরে জিগেস করি সবটা! কিন্তু ওর মনে নিশ্চয়ই কোনো ফ’ন্দি আছে যার জন্য ও এতোকিছু করেছে। ভরসা হচ্ছে না ওর উপর। আমি এখানে থাকলে নির্ঘাত আমার ক্ষ’তি করবে! এতোটা ঝুঁ’কি নিয়ে এখানে থাকাটা নিরাপদ বোধ করলাম না একা একা।

-‘ আয়মান কোনো প্রশ্ন করবেন না। আপনি এক্ষুনি বড়ো রাস্তা ছেড়ে যে ব’স্তিটা আছে সেখানে একটা ভা’ঙা বাড়ি আছে কোনো কথা না বলে যতো দ্রুত সম্ভব চলে আসুন।’

তানহার এরকম ফোনকলে আয়মান স্থির থাকতে পারলো না! হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেলো অফিস থেকে। মনের ভেতর একটাই প্রশ্ন কি এমন ঘটনার সম্মুখীন হলো তানহা?

#চলবে?

অপ্রয়ি প্রেয়সীর ভালোবাসা পর্ব-০৭

0

#অপ্রয়ি প্রেয়সীর ভালোবাসা –[৭]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
_______________________

সময়ের স্রোত বহমান। কারো জন্য অপেক্ষা করে না। দেখতে দেখতে প্রায় এক মাস হয়ে গেছে আমি এখন আয়মানদের বাড়িতে আছি। আয়মান আর আমার সম্পর্কটা আগের থেকে একটু উন্নতি হয়েছে। উনি রোজ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে উনার অফিসের জন্য বেরিয়ে যান আর আমি সংসারে কাজকর্মেই ব্যস্ত থাকি। আয়মান অফিস থেকে ফিরলে কখনো সখনো একটু আধটু গল্প করি উনার সঙ্গে। এভাবেই দিন দিন আমাদের সম্পর্ক টা আরো সহজ হয়ে যাচ্ছে।

-‘ তানহা একটু গিয়ে দেখোতো দরজা খুলে কে এসেছে?’

শাশুড়ি মায়ের কথায় কল্পনার ছেদ ঘটিয়ে দরজা খুলতে গেলাম। দরজার উপারেই আমার দেবর রাসেল দাঁড়িয়ে আছে। আমি যেই ওকে ভেতরে আসতে বলবো তখুনি দেখতে পেলাম ওর পিছু একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাও বধূর বেশে ঘোমটা দিয়ে!
আমি তৎক্ষনাৎ আমার শাশুড়ি মা’কে ডাক দিলাম। আমার ডাক শুনে বাড়ির সবাই নিচে নেমে আসলো। সবাই রাসেলকে দেখে অবাকের সপ্তম পর্যায় পৌঁছে গেছে! সবাই যতোটা অবাক হয়েছে তার চেয়ে দ্বিগুন পরিমান অবাক আমি হয়েছি। আসলে মূল ঘটনাটা হলো রাসেল আর অন্য কাউকে নয় আমারই বান্ধবী তামান্নাকে বিয়ে করে এনেছে! রাসেলের গায়ে বরের বেষ আর তামান্না বধূ সেজে রাসেলের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে! বোঝাই যাচ্ছে দু’জনে বিয়ে করে এসেছে। আমার চাচি শাশুড়ী রাসেলের কাছে গিয়ে রা’গা’ন্বিত দৃষ্টিতে তাকালেন! গালে জোরে স’পাটে একটা চ’ড় মা’রলেন! চ ড় খেয়ে রাসেল গালে হাত দিয়ে থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে! তামান্নাও নিশ্চুপ। পুরো বাড়ি জুরে পিনপিন নিরবতা বিরাজ মান।

-‘ তুই কি এই মেয়েটিকে বিয়ে করে এনেছিস?’

-‘ হ্যাঁ। আমি ওকে ভালোবাসি আর সেজন্যই ওকে বিয়ে করেছি আমি।’

-‘ তোর এই পা’গ’লামো ভালোবাসা বড়ো হয়ে গেলো এখন? কই একটিবারও তো আমাদের কিছু বললি না? এতো তাড়া কেনো তোর বিয়ের জন্য? আমরা কি তোর বিয়ে দিতাম না?’

এবার রাসেল নিশ্চুপ। কোনো কথা নেই তার মুখে। মুখ খুললো তামান্না। রাসেলের পিছন থেকে এসে দাঁড়ালো।

-‘ ওর কোনো দোষ নেই। যা করেছি আমিই করেছি। আসলে আমার বাবা নেই আমার মা’ই আছে তারউপর আমরা খুব গরিব। এরকম পরিবারে নিশ্চয়ই আপনাদের মতন বড়োলোক ছেলেকে বিয়ে করাতেন না? ওদিকে আমার মা আমার বিয়ের জন্য অহরহ সমন্ধ দেখছে আর আমিও রাসেলকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না তাই বাধ্য হয়েই আমরা দু’জনে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই কাউকে না জানিয়ে। এতে পুরো দো’ষ আমারই রাসেলের কোনো দো’ষ নেই!’

আমার চাচি শাশুড়ী মা কোনো কিছু বললেন না! ছেলরর দিকে এক পলক অ’গ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে উপরে চলে গেলেন। এতোদিনে এই বাড়িতে থেকে বেশ বুঝেছি চাচিআম্মা বড্ড রা’গী মানুষ! তার যখন রা’গ ওঠে তিনি কাউকে বেশি কিছু না বলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকেন! প্রায়ই এরকমটা করতে দেখেছি উনাকে। আজকেও উনি তা-ই করলেন রাসেলের উপর রা’গ দেখিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। ইতিমধ্যেই চাচাও বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছেন তিনি সবটা দেখে চাচিমার মতনই রে’গে গেলেন!

-‘ এই যে মেয়েটাকে বিয়ে করলি কোনো যোগ্যতা আছে তোর? এইচএসসি ওতো পাশ করতে পারিস নি ঠিকমতন। দু বার ফেল করে তারপর টেনেটুনে পাশ করেছিস। তোকে ব্যাবসার হাল ধরতে বললাম আর তুই এই কান্ড করলি? তোর মতন ছেলে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো তুই এই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যা!’

চাচি যেমন রা’গ করে দরজা বন্ধ করে বসে আছেন উপরে ঠিক তেমনি ভাবে আমার চাচা শশুড় রাসেলের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো, ওদের ঘরে আসতে না দিয়ে! আমরা সকলে এতোক্ষণ ধরে সবটা দেখছিলাম এবার আমার শশুড় মশাই যিনি এই বাড়ির কর্তা তিনি বলে ওঠলো,

-‘ অনেক হয়েছে তোর আর তোর বউয়ের কথা বলা! এবার আমি বলি সবাই শুনবে ব্যস! এখনআর বলে কোনো লাভ নেই বিয়েতো বিয়েই! বিয়ে নিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়। আর সবচেয়ে বড়ো কথা ওরা একে অপরকে ভালোবাসে এটুকুই যথেষ্ট! আমার মনে হয় ওরা একসঙ্গে সংসার করলে সুখেই থাকবে। ওরা ওদের রুমে যাক। বউমা তুমি গিয়ে খাবারটুকু দিয়ে আসো ওদের রুমে দুপুর হয়ে যাচ্ছে! সাদিকের দায়িত্ব সাদিকের বউকে বোঝাবার যাতে রাসেলের বিয়েটা মেনে নেয়। ‘

ব্যস আমার শশুড়মশাই তার আদে’শ শিরধার্য করে চলে গেলেন উপরে। উনার কথা শেষ না হতেই রাসেল তামান্নাকে নিয়ে রুমে চলে গেলো। আমিও গেলাম খাবার দিয়ে আসতে। রুমে গিয়েই দেখতে পেলাম রাসেল ওয়াশরুমে ঢুকেছে ফ্রেশ হবার জন্য। এই সুযোগে আমি তামান্নাকে চে’পে ধরলাম!

-‘ তুই রাসেলকে ভালোবাসতিস অথচ এই কথাটা আমার থেকে লুকিয়ে গেলি কি করে? সবচেয়ে বড়ো কথা হলো তোরা বিয়েও করে নিয়েছিস কিন্তু আমাকে কিচ্ছু জানালি না মানে কি এসবের?’

-‘ আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ। তুই তো জানিসই আমার মতন মেয়েকে তোর এই পরিবার মেনে নিতো না কিছুতেই তাই বাধ্য হয়েই বিয়েটা করতে হয়। ক্ষমা করে দে তোকে আমাদের সম্পর্কের কথা বলিনি বলে। রাসেলই আমাকে ওয়াদা করিয়ে ছিলো যাতে কাউকে কিচ্ছু না বলি এবার বুঝলি? এবার অন্ততো আমার উপর রক’গ করে থাকিস না প্লিজ।’

তামান্নার মুখ থেকে সব সত্যিটা শোনার পর সত্যিই আর ওর উপর রা’গ রইলো না আমার! ওর সঙ্গে কিছুটা গল্প করলাম যতোক্ষণ না পর্যন্ত রাসেল বেরোচ্ছিলো।

-‘ নে এবার খেয় নে। আমি যাচ্ছি কেমন? কোনো কিছু দরকার পড়লে আমাকে বলিস আমি থাকতে তোর আর কোনো অসুবিধা হবে না। ‘

তানহা চলে যেতেই তামান্না ঘরের দরজা আটকে দিলো।
-‘ আমিই থাকতে তুই কোনো দিনও সুখে হবি? এটা সম্ভব? উঁহু একদমই না! সেইজন্যই তো আমি চলে এসেছি। ‘

তামান্না নিজের আপন মনে হাসতে লাগলো! রাসেলকে দেখতে পেয়ে স্বাভাবিক ভাবে বসে রইলো আগের ন্যায়।

____________°____

আজকে আয়মানের পছন্দ অনুযায়ী সাদা রঙের শাড়ি পড়েছি। মাথায় সাদা ফুলের মালা। চোখ ভর্তি কাজল,হাত ভর্তি চুড়ি সব মিলিয়ে উনার পছন্দ মতন সেজে উনার জন্য অপেক্ষা করছি। উদ্দেশ্য হলো উনি আসলে ঘুরতে বেরোবো।

-‘ কি ম্যাডাম এতো সেজেগুজে বসে আছো যে আজকে?’

ড্রেসিং টেবিলে বসে ছিলাম হঠাৎ আয়মানের গলা শুনে চমকে ওঠলাম! উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।আজকে কেনো জানি লজ্জা করছে খুব করে।

-‘ আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আজকে আমরা বাহিরে যাবো খেতে?’

আমার কথায় আয়মান মা’থা দুলিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই আমরা দু’জন বেরিয়ে পড়লাম রাতের শহড়ে! সর্বপ্রথম রাস্তার ধারে দাঁড়ালাম কিছুক্ষণ উনা্ হাত দু’টি ধরো! হাতে হাত রাখ রেখে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করলাম। তারপর একটু ঘুরাঘুরি করে বসলাম এক জায়গায়।

-‘ কি সুন্দর মুহূর্ত না এখন? শুধু তুমি আছো বলে, এমনি করে যেনো প্রতি মুহুর্তই একসঙ্গে কাটে আমাদের।’

-‘ সবই ঠিকঠাক থাকবে যদি আপনি থাকেন সারাজীবন আমার সঙ্গে। ‘

-‘ তোমার সঙ্গে থাকবো বলেই তো এতোকাল অপেক্ষা করেছি আর সৃষ্টিকর্তা সেই তোমাকেই পাইয়ে দিলো আমাকে। একবার হারিয়েছি আর দিত্বীয় বার হারাতে দিবো না। কালো অতীত একেবারের জন্য বিদায় হয়েছে আমাদের জীবন থেকে। এখন শুধু সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যত।’

-‘ আমি আর কিছু বললাম না আয়মানের কথার পৃষ্ঠে। মানুষটাকে একটু ভালোবাসা দিলেই যেনো পৃথিবীর সমস্ত সুখ উনার মুখে। 🥰

#চলবে?

অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা পর্ব-০৬

0

#অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা –[৬]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
_______________________

বিষন্নতার মেলা বসেছে আজ আয়মানের মনে শান্ত পরিবেশেও যেনো তার মনটা অশান্তিতে ভরে ওঠেছে কারনটা অযথাই। মনুষ্যের অবচেতন মন কখন ভালো খারাপ থাকে তা বোঝা বড়ই দায়। মনকে স্থিতিশীল করতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো আয়মান। ভাগ্যও হয়ো তার এই যাত্রায় সহায় ছিলো না যার দরুন পথিমধ্যেই গাড়ি খারাপ হয়ে যায়। উপায়ন্তর না পেয়ে সেই গাড়ির সঙ্গেই হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে এক মনে ফোনে স্ক্রল করে যাচ্ছে! কর্নকুহুরে কোনো রমনীর হাসির শব্দ পৌঁছাতেই মা’থা তুলে তাকালো সেই সেয়েটির দিকে। মেয়েটির পরনে লাল রঙের থ্রিপিস মাথায় একটু খানি ঘোমটা দেওয়া। প্রকৃতির স্নিগ্ধ বাতাসে সেই ওড়নাটুকুও মা’থা থেকে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে বারংবার। মেয়েটি নিজের হাত দিয়ে সযত্নে আবারো ওড়না টুকু মা’থায় টেনে দিয়ে বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে আয়মানের পাশ দিয়ে চলে যায়। সেই মেয়েটির মুখের হাসি দেখে আয়মানের ব্যর্থিত মনেও যে কখন হাসির রেখা ফুটেছে তা সে নিজেই বুঝতে পারলো না!
মেয়েটি হাতে বই পত্র ছিলো পাশেই কলেজ, আয়মানের বুঝতে বাকি রইলো না মেয়েটি কলেজেই পড়ে। নিজের মনের মধ্যে থাকা মন খারাপ নিমিষেই ভ্যানিশ হয়ে গিয়ে দৃষ্টিতে সেই মেয়েটিকে স্থাপিত করে সোজা হাঁটা ধরলো ফুরফুরে মেজাজে!

তারপর থেকে প্রতিদিন সেই কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে সেই মেয়েটিকে দেখা যেনো নিত্যদিনের এক কাজের মধ্যে পড়ে গেছিলো আয়মানের। কিয়ৎক্ষন যাবত অপেক্ষা করার পর যখন সেই মেয়েটির চেহারা ভেসে ওঠতো সামনে তখন আয়মানের মুখেও হাসি ফুটতো। এমন করতে করতে প্রায় সপ্তাহ খানেক চলতে লাগলো। আয়মান দাঁড়িয়েও থাকতো এরকম জায়গায় সে মেয়েটিকে দেখবে কিন্তু মেয়েটির যেনো তাকে চোখে না পড়ে। সপ্তাহ খানেক পড় একদিন সেই মেয়েটি কলেজে এসেছিলো তার বান্ধবীকে ছাড়া। বাড়ি ফেরার পথে অঢেল বৃষ্টি শুরু হলো! তৎক্ষনাৎ গাড়ি থেকে একটি ছাতা নামিয়ে এনে মেয়েটির মা’থার উপর ধরে।

-‘ এই ছাতাটা নিন ম্যাডাম। বৃষ্টিতে তো ভিজে যাবেন। ‘

-‘ আমি আপনাকে চিনি না অথচ আপনার থেকে ছাতা কেনো নিতে যাবো বলুন?’

-‘ অপরিচিতো থেকেই চেনা হয়ে যাবেন যদি পরিচিতো হবার ইচ্ছে থাকে তো। এখন এই ছাতাটা নিবেন নাকি বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপে হবেন তারপর বাড়িতে যাবেন কি করে?’

সেই মেয়েটি কিছুক্ষণ ভাবলো। তখনও আয়মান মেয়েটির মা’থার নিচে ছাতা ধরে রেখেছে। এই কলেজ রাস্তায় এখন বহু স্টুডেন্ট আছে এখানে বৃষ্টিতে ভিজে একেবারে চুপচুপে হবার চেয়ে ছাতাটা নিয়ে নেওয়াই ঠিক মনে হলো সেই মেয়েটির কাছে।

মেয়েটি ছাতা নিয়ে চলে যাচ্ছে আয়মান দোকানের ছাঁয়ায় দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটি পিছন ফিরে আয়মানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো।

-‘ এই ছাতার মালিককে কিভাবে খুঁজে পাবো ছাতা দিতে?’

-‘ সে তোমার চারপাশেই থাকবে তুমি কেবল খুঁজে নিও তোমার দু চোখ ঘুরিয়ে?’

মেয়েটি চলে গেলো সেই জায়গা থেকে। পরেরদিন আবার কলেজে আসার সময় সেই ছাতাটি নিয়ে আসে সঙ্গে সেই ছাতার মালিককেও দেখতে পায়। এভাবেই প্রতিদিন সেই ছাতার মালিকের সঙ্গে তার দেখা হতো। মেয়েটি বুঝতে পারতো আয়মান হয়তো তাকে পছন্দ করে। কিন্তু আয়মানের জায়গায় অন্য কোনো ছেলে হলে নির্ঘাত এতোদিনে ভালোবাসি বলতে বলতে কানের পোকা নড়িয়ে দিতো! কিন্তু আয়মান সেটা করেনি বিধায় হয়ত একটু একটু ভালো লাগা জন্ম নিয়েছে সেই মেয়েটির প্রতি!

সেই মেয়েটিই তানহা। তানহা তখন সবে সবে কলেজে ওঠেছিলো আর সেই কলেজের রোডেই আয়মানের প্রথম দেখা। এভাবেই প্রতিদিন আয়মান একটু খানি তাকিয়ে দেখতো তানহাকে। দু চোখের চোখাচোখি হতো, ঠোঁটের কোনে ফুটে ওঠতো মুচকি হাসি। এরকম করে আস্তে আস্তে একদিন আয়মানের সঙ্গে তানহার বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে। মাঝে মাঝে একটু আধটু কথাও হতো আয়মান আর তানহার মধ্যিখানে। তানহার কাছে সেটা বন্ধুত্ব থাকলেও আয়মানের দিক থেকে সেটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো না। আয়মানের চাচাতো ভাইও সেম কলেজেই পড়াশোনা করতো। করতো বলে ভুল হবে বেচারা মাধ্যমিকে দু বার ফে’ল করে তবেই কলেজের মুখ দেখেছিলো। পড়ালেখায় টান ছিলো না তবুও বাবা মা চেয়েছিলেন উচ্চ মাধ্যমিক অব্দি পড়ুক। সে-ই চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গেও কলেজে যেতো দরকারে সেই সূত্র ধরেই তানহার সঙ্গে আয়মানের বন্ধুত্বটা জমে ওঠে।

কলেজে প্রোগ্রাম ছিলো সেই পোগ্রামের উপলক্ষ্যে তানহা সেদিন শাড়ি আর হিজাব পড়ে কলেজে এসেছিলো। পুরো ছয় মাস তানহাকে আড়াল থেকে দেখে আয়মান সিদ্ধান্ত নেয় আজকেই মনের অব্যাক্ত অনুভুতি তানহার সামনে তুলে ধরবে। পরিবারেও বাবা মা বিয়ের জন্য চা’প দিচ্ছে। আয়মান কাজের অ’যুহাত দিয়ে এসেছে এতোদিন কিন্তু এখন আর অ’যুহাত নয় সে সত্যিই পেয়ে গেছে তার ভালোবাসা যার সঙ্গে সে সারাজীবন থাকতে চায়। আজকেই সবটা খুলে বলবে আয়মান তানহাকে। সেই মতনই নিজেকে প্রস্তুত করে আসে কলেজে আয়মান। নিচে অনেকক্ষন অপেক্ষা করে কিন্তু কোথাও দেখতে পায় না তানহাকে। আরো অপেক্ষা করতে থাকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তখুনি আয়মানের চাচাতো ভাই ফোন করে বলে উপরে ফাঁকা ক্লাস রুমটায় যেতে সে ওখানে আছে তার দরকার ভীষন। আয়মান যায় সেই ফাঁকা ক্লাস রুমে কিন্তু তার ভাইকে কোথাও দেখতে পায় না। সে রুমের ভেতরই অপেক্ষা করতে থাক। বসে না থেকে আরো একবার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলার ঠিক কিভাবে বললে তানহা মানা করতে পারবে না!

ওদিকে বান্ধবীদের সঙ্গে প্রচুর হই হুল্লোর করে এক পর্যায়ে মুখে রং লাগাতে তানহার হিজাবটা প্রায়ই খুলে আসছিলো তখুনি সে হিজাব ঠিক করার জন্য ওয়াশরুমে যায় সেখানে কয়েকটা ছেলেকে দেখে তড়িঘড়ি করে ক্লাসে যাবার সময়ই পায়ে হোঁ’চট খায়! যার ফলে তানহার শাড়ির কুচিগুলো এলোমেলো হয়ে যায়। উপায়ন্তর না দেখে তানহা নিজের ক্লাসে যাবার আগে ফাঁকা ক্লাসরুম টায় ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। সেই রুমেই ছিলো আয়মান, তানহা জলদি করে দরজা বন্ধ করার ফলে আয়মানকে দেখতে পায়নি। দরজা বন্ধ করার শব্দে আয়মান ঘুরে তাকাতেই তানহাকে দেখতে পায়!

এলোমেলো শাড়ির কুচি আর হিজাব পড়া অবস্থায় তানহাকে দেখে বিমোহিতো দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কতক্ষণ নিজের প্রেয়সীর দিকে! ওদিকে তানহা আয়মানকে দেখে বেশ ভড়কে যায়। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে। মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে যদি কিছু খা”রাপ হয়? সেইভাবনার প্রয়াস ঘটিয়ে তানহা দরজা খোলার সময়ই আয়মান তানহার হাত ধরে বসলো! এতে তানহার ভ’য় বেড়ে দ্বিগুন হলো।

-‘ ভ’য় পেয়ো না প্লিজ, আমার কথাটি শুনো একটি বার?

-‘ আমি কিছু শুনবো না, পরে শুনবো এখন যেতে হবে।’

-‘ তানহা অনেক হয়েছে লুকোচুরি আর নয়। তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছো এই ছয় মাস আমি এমনি এমনি তোমাদের কলেজের পাশে দাঁড়াতাম না? শুধু তোমাকে একটি পলক দেখার জন্যই আমি দাঁড়িয়ে থাকতাম। তোমাকে দেখে মনের কোনে হাসি ফুটতো। সকল মন খারাপ নিমিষেই দূর হতো। এতোদিন একটু একটু করে তোমার প্রতি জন্মানো অনূভুতির গুলোর নাম শুধু একটাই ভালোবাসি! হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালোবাসি তানহা। তুমি আমার প্রেয়সী, সারাজীবনের সঙ্গী। কথা দিচ্ছি কখনো ছেড়ে যাবো না? তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?’

-‘ আপনার উত্তর আমি পরে দিচ্ছি কিন্তু তার আগে আমাকে যেতে দিন হাতটা ছেড়ে দিন প্লিজ।’

আয়মান বুঝতে পারে তানহা ভ’য় পাচ্ছে। সে তানহাকে চলে যেতে বলে। হাত ছেড়ে দেয় তানহার। দরজা খুলতেই দেখে বাহির থেকে বন্ধ করা দরজা! তানহা ঘা’বড়ে যায় হঠাৎ করে কে বন্ধ করলো দরজা? এখন এই বদ্ধ রুমের ভেতর শুধু আয়মান আর তানহা। ভ’য় আরো বেড়ে যাচ্ছে ক্রমশ। তানহা চিৎকার করতে লাগলো দরজা খুলে দেবার জন্য।

ওদিকে এক টিচার খুঁজছে তানহাকে তার এক স্টুডেন্টকে নো’টস দেবার জন্য যেটা সে তানহাকে দিয়েছিলো সেই স্টুডেন্ট কে দেবার জন্য তানহা বলেছিলো আজকে দিয়ে দিবে কিন্তু না দেওয়ার কারনে সেই টিচার খুঁজছে তানহাকে। খুঁজতে খুঁজতে অনেকক্ষণ খুঁজে না পেয়ে তানহার ক্লাসমেটদের নিয়ে সেই ফাঁকা বদ্ধ রুমের কাছে যেতেই সবাই শুনতে পায় তানহার চিৎকার!

-‘ আমাকে সাহায্য করুন, কেউ আছো থাকলে দরজাটা খুলে দাও। আমি আটকা পড়েছি আমাকে সাহায্য করো আমার খুব ভ’য় করছে এখানে। ‘

আয়মান নিরব দর্শকের মতন চেয়ে আছে তানহার পানে! সে-ও বুঝে ওঠতে পারছে দরজাটা বন্ধ করলো কে? ইতিমধ্যে সবাই এসে পৌঁছেছে সেই রুমে তানহার চিৎকার শুনে। তামান্না এসে দরজা খুলতেই তানহা তামান্নাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়! উপস্থিত সবার তানহার এলোমেলো অবস্থা আর কান্না তারউপর বদ্ধ রুমের ভেতর আয়মানকে দেখে তাদের মনে ধারনা করে নেয় কি হয়েছে!

-‘ এই ছেলেটি কি তোমার সঙ্গে উল্টেপাল্টে কাজ করার চেষ্টা করেছিলো তানহা? তুমি এমন অগোছালো কেনো? কি হয়েছে আমাদের খুলে বলো? নিশ্চয়ই কিছু খারাপ করেছে না তোমার সঙ্গে এই ছেলেটা? এই ছেলে তুমি কেমন চ’রি’ত্রহীন ল’ম্প’ট ছেলে বদ্ধ রুমে একটা মেয়ের সুযোগ নিচ্ছো! পরিবারের কোনো শিক্ষা নেই তোমার?’

-‘ স্যার আপনারা ভুল বুঝছেন আমি তো শুধু তানহাক*

-‘ স্যার একে আমাদের হাতে ছেড়ে দিন। আমরা মজা বুঝিয়ে দিচ্ছি! ‘

কয়েকটা উ’শৃং’খ’ল ছেলেরা মিলে আয়মানকে মা’রধ’র করে। ভাগ্যবশত আময়ানের চাচাতো ভাই রাজীব অতি কষ্টে সেখান থেকে আয়মানকে ছাড়িয়ে আনে। এর ভিতর তানহা যখন সবাইকে বলছে আয়মানের কোনো দোষ নেই ওকে যেনো ছেড়ে দেয়। তখুনি সবাই তানহাকে নিয়ে কানাঘুষা করা শুরু করে দেয়!

-‘ এইতো তানহা বলছে ওর কোনো দোষ নেই। এইখানে কিসব গোলাপ ফুল পড়ে রয়েছে! যদি ছেলোটা সুযোগ নিতো তাহলে এসব নিশ্চয়ই আনতো না? এগুলো আগে থেকে সব সাজানো! নতুবা এসব কোত্থেকে আসল? ছেলেটার উপর সব দোষ চা’পিয়ে দিয়ে এখন তানহা ভালো মানুষ সাজছে। আবার ছেলেটাকে বাঁচিয়েও নিলো কি সুন্দর করে?’

তানহা আপ্রান বোঝানোর চেষ্টা করলো, সে এসব কিচ্ছু করেনি।

-‘ স্যার বিশ্বাস করুন এসব কিচ্ছু করিনি। আমি তো জাস্ট আমার হিজাব টা ঠিক করার জন্য রুমে ঢুকেছিলাম আর তখুনি উনাকে দেখতে পাই আর উনি আমাকে কিসব ভালোবাসি বলছিলো। আমি জানি না উনি কেনো এসেছেন এখানে।’

–‘ তোমার থেকে অন্ততো এটা আশা করিনি তানহা। ভালোবাসি বলছিলো, ফুল দিয়েছে আবার দরজা বন্ধ করে রেখে ছিলে ধরা খাবার পর এখন বলছো তুমি কেনো জানো না? কথাগুলো তো একটু সাজিয়ে বলো? তোমাকে ভালো ভাবতাম কিন্তু তুমি ছিহঃ তুমি ক’লং’ক এই কলেজের!’

শুধু টিচার নয় আরো অনেক স্টুডেন্ট সহ সেদিন তানহাকে অপ’মা’ন, কটু কথা সব বলতে থাকে! তানহা এসব কিছু সহ্য করতে না পেরে বাড়িতে এসে বাবা মা’কে কাঁদতে কাঁদতে সেদিনই সবকিছু বলে। তানহার বাবা মায়ের মেয়ের উপর পুরো আস্থা ছিলো তারা তানহাকে মান’সি’ক ভাবে বুঝায় আশেপাশের কারো কথায় কান না দিয়ে। কারন সন্তানের বলা কথা, চোখের পানি কোনটা সত্যি মিথ্যা সেটা সব বাবা মা’ই বুঝতে পারে। স্টুডেন্ট, সহ চারিপাশের মানুষের নানান কটু কথার ভিড়ে তানহাকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয় তানহার বাবা মা। আয়মান তামান্নার থেকে নম্বর নিয়ে রাত্রিবেলা ফোন করে তানহার ফোনে।

-‘ আমি জানি না কি করে দরজাটা বন্ধ হলো। এখন নিশ্চয়ই তুমিও সবার মতন করে বলবে আমিই সবটা করেছি কিন্তু বিশ্বাস করো আমি কিচ্ছু করিনি। তবুও যা-কিছু হয়েছে তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী তোমার কাছে। আমি মা’র খেয়েছি তাতেও কোনো আপত্তি নেই যদি তুমি পাশে থাকো। আমি সত্যিই তোমাকে বেশি ভালোবাসি তানহা। ‘

পরিস্থিতি এমনিই ভালো ছিলো না তার উপর আয়মানের কথা শুনে তানহার রা’গ ওঠে যায়!

-‘ আপনার ভালোবাসা নিয়ে আপনি থাকুন! আপনার জন্য সবটা হয়েছে! আপনি বলছেন আপনি মা’র খেয়েছেন এটা কিছু না? এসব তো আপনার জন্যই হয়েছে! আপনার জন্য আমি চরিত্র’হী’ন অপবাদ শুনেছি। কে বলেছিলো আপনাকে কলেজে আসতে? আপনার জন্য আমাকে কতোটা অপ’মা’নিতো হতে হয়েছে সেটা আপনার ধারনাও নেই! আপনাকে আমি ভালোবাসবো তো দূর! আপনার জন্য শুধু ঘৃ’নাই অবশিষ্ট আছে বুঝলেন? ঘৃ’না করি আমি আপনাকে!”

শেষ কথা হয় আয়মানের সঙ্গে তানহার! নিজের প্রেয়সীর মুখ থেকে ভালোবাসি শোনার বদলে ঘৃ’না করি এই শব্দটা যে ঠিক কতোটা কষ্টের ছিলো সেটা আয়মান সেদিন বেশ ভালো করেই উপলব্ধি করেছে! তানহা বোঝেনি আয়মানের কষ্ট আর না আয়মান দেখেছিলো সেদিন তানহার অ’প’মান! দু’জনের দিক থেকেই অভিমানের এক পাহাড় তৈরী হয়। আয়মান তানহাকে ভোলার জন্য বিদেশে পাড়ি জমায়! রাসেল মানে আয়মানের চাচাতো ভাইকে সবটা আড়াল রাখতে বলে। বিদেশের শক্ত মাটিতে নিজেকে শক্ত করে গড়ে তুলে আয়মান! পরিবারের সঙ্গেও ভালো করে কথা বলতো না দু তিন মাস পর দু এক বার ফোন দিতো। আয়মানের বাবা মা ছেলেকে নিয়ে দু’শ্চিন্তার শেষ ছিলো না! হঠাৎ করে পরিবর্তন ছেলের ভিতর সেটা বাবা মা-ও মেনে নিতে পারেনি! কিন্তু কিছু করার ছিলো না আয়মান নিজেকে পুরো গুটিয়ে নিয়েছিলো!

সেদিনের পরই তানহার বাবা মা তানহাকে কয় মাসের জন্য বেড়াতে পাঠিয়ে দেয়। তারপর পুরো এক বছর পর তানহা আবারো নতুন কলেজে ভর্তি হয় নতুন উদ্যমে পড়াশোনা করার জন্য। সবটা ঠিকই ছিলো পড়াশোনার মাঝখানে নির্জনের সমন্ধ আসে তানহার জন্য যা তানহার পরিবার ফেরাতে পারেনি। বিয়েও ঠিক হয়েছিলো কিন্তু ভাগ্যের ফেরে বিয়েটা হলো না!

একমাত্র ছোটো ভাইয়ের বিয়েতে আসার করুন অনুরোধ আটকাতে পারেনি আয়মান। পরিবারের কথা ভেবে নির্জনের বিয়েতে এটেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু কে জানতো সেই অতীত আবারো তার বর্তমানে এসে পড়বে?

অতীতের কথা ভেবে ভেতর থেকে এক তপ্ত দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো আয়মানের! মা’থা থেকে অতীতের চিন্তা বাদ দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। যতোই বাদ দিতে চেষ্টা করুক কিন্তু আদৌ কি কোনো ঘটনা একেবারে আমাদের জীবন থেকে বাদ দেওয়া যায়? হয়তো বা একেবারের জন্য না! অতীতের ছাঁপ ভবিষ্যতে ও পড়ে যেমনটা তাদের সম্পর্কটা এখনো সহজ হয়নি সেই তিক্ত অতীতের জন্য।

#চলবে?