Tuesday, July 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1027



অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা পর্ব-০৫

0

#অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা –[৫]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
____________________

বাষ্পরাশিরা অন্তরিক্ষ জুড়ে আনাগোনা করছে কিয়ৎক্ষন যাবত! যেনো দৃষ্টির পলক ফেললেই ঝুমঝুমিয়ে মেঘ কনা বৃষ্টিতে রুপান্তরিত হয়ে ধরনীতে আছড়ে পড়বে! ঝিড়িঝিড়ি হাওয়ার বেগ বাড়ছে প্রবলভাবে।গাছের পাতাগুলো প্রচন্ড বাতাসের কারনে মৃদু কেঁপে ওঠছে! খোলা বাতাসে নিজের আপনমনে উড়ে চলেছে কেশগুলো। স্নিগ্ধ শান্ত কোমল প্রকৃতি যেনো গুরু গম্ভীর ভাবে সেজে নিয়েছে নিজেকে। কালো রঙের আধারে আবৃত করে রেখেছো গোটা অন্তরিক্ষ! আকাশ জুড়ে বাষ্পরাশি আর বি’দ্যুৎ চমকানোর আওয়াজে খোলা গগনের নিচে থাকাটা নিজেদেরকে নিরাপদ বলে মনে করলো না। হাঁটা ধরলো আশ্রয়স্থলে কিন্তু দূর দূরান্ত অব্দি কেবল গ্রামের আঁকাবাকা রাস্তা আর সামনে ফসলের ক্ষেতই কেবল ধরা দিলো দৃষ্টিতে! বাধ্য হয়ে গাছের নিচে আশ্রয় নিবে হাঁটা ধরলো! কিন্তু গুরু গম্ভীর প্রকৃতিও যেনো বলে দিচ্ছে আজ দু’জন ব্যাক্তিতে তাদের সঙ্গে বৃষ্টির সাজে সাজতে হবে। ঝুমঝুমিয়ে শুরু হয়ে গেলো বৃষ্টি। হিম শীতল হয়ে গেলো সারা সর্বাঙ্গ! আচমকাই বৃষ্টির ফোটার হিমশীতল স্পর্শ কাপুনি ধরিয়ে দিলো গায়ে। কাক ভেজা হয়ে গেলো তানহা আর আয়মান। বে’কুবের মতনই সেই অর্ধ রাস্তাই দাঁড়িয়ে থেকে বৃষ্টি উপভোগ করতে লাগলো দু’জনে। বৃষ্টির একেক টা ফোটা শরীরে পড়তেই অদ্ভুত শিহরন বয়ে যায় যেনো। আয়মান বৃষ্টিতে ভেজা পছন্দ করে না বিধায় সে পৌঁছে গেলো সেই গাছের নিচে।

সেইখান থেকেই দেখতে লাগলো তানহাকে যে এখনো সেই রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিজের হাত দু’টো খোলা প্রকৃতিতে ছেড়ে দিয়ে নিজের আপনমনে বৃষ্টি বিলাশ করে চলেছে। অন্য কেউ যে তার দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে বোধহয় কোনোরূপ উৎকন্ঠা নেই তার! আয়মান বিমোহিত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর দিকে! উঁহু প্রেয়সীও নয় ঠিক সে হচ্ছে #অপ্রিয়_প্রেয়সী! যেই প্রেয়সী প্রিয় হতে গিয়েও সময়ের ব্যাবধানে আজকে #অপ্রিয়_প্রেয়সী হয়ে গিয়েছে।
আয়মানের সজল দৃষ্টি গিয়ে নিক্ষেপ হলো রাস্তার ওদিক থেকে কয়েকটি মধ্যবয়স্ক লোকের দিকে। বোধহয় ক্ষেতেই কাজ করছিলো হঠাৎ বৃষ্টি আসায় নীড়ে ফিরছে! আর সেই একই রাস্তায় তানহাও চুপচাপ ভাবে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিকে সাদরে নিজের গায়ে মেখে নিচ্ছে, তার পিছনে যে মানুষ আসছে সেই খেয়াল বোধহয় নেই তার। আয়মান তানহার দিকে চোখ বোলালো এই কাক ভেজা শরীরে অন্য কোনো পুরুষ যে তানহার দিকে বেশ ভালো নজরে তাকাবে সেটা নিশ্চয়ই না? তৎক্ষনাৎ কাল বিলম্ব না করে রাস্তার পাশ থেকে তানহার হাত ধরে টে’নে নিয়ে সেই গাছের নিচে গিয়ে হেঁচকা টা’নে তানহাকে নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে নিলো!
লোকগুলো আঁড়চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে নিজেদের গন্তব্য চলে গেলো। আয়মানের বুকের মধ্যে মিশে আছে তানহা! এতোটা কাছের প্রথম স্পর্শ তানহাকে। এক অদ্ভুত অনূভুতির সম্মুখীন হচ্ছে তানহা আয়মানের স্পর্শ পেয়ে। মনে হচ্ছে এই খানেই স্তব্ধ হউক সময় কেটে যাক বেলা!
লোকগুলো চলে যেতেই তানহাকে নিজের বুক থেকে সড়ালো।

-‘ স্যরি। ওই লোকগুলোকে তুমি দেখতে পাওনি আর এই ভেজা অবস্থায় দেখলে নিশ্চয়ই তোমার দিকে খুব ভালো ভাবে তাকাতো না বলো? ‘

মনের মধ্যে দু’ষ্টু বুদ্ধির উদয় হলো। উনাকে জ্বা’লা’তে পাল্টা প্রশ্র করলাম।

-‘ আমার দিকে তাকালে আপনার কি? আমি তো আর আপনার প্রেয়সী না বলুন?’

-‘ প্রেয়সী নয়! তুমি আমার #অপ্রিয়_প্রেয়সী। যে প্রেয়সী প্রিয় হতে গিয়েও অপ্রিয় হয়ে গেছে!’

আয়মানের কথা কর্নকুহুরে বিচরন করা মাত্রই ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা মুচকি হাসি আমার নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো! তৎক্ষনাৎ অনুশোচনায় দগ্ধ হতে লাগলাম। সত্যিই তো আমি তো উনার #অপ্রিয়_প্রেয়সীই বটে! প্রিয় ছিলাম যেটা নিজের হাতেই নষ্ট করেছি আমি।

-‘ পাঁচ মিনিট ওয়েট করো। এই গাছের নিচেই থাকবে ভুলেও রাস্তায় আসবে না।’

আয়মান আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে রাস্তায় ছুট লাগালো! আমি বুঝতে পারলাম না এইভাবে বৃষ্টির ভেতর দিয়ে উনার ছুটার কারন। দৃষ্টিখানি বড়ো করে দেখলাম উনি দৌড়ে গিয়ে কোথায় যাচ্ছে? গাছপালার ভিড়ে আর বোধগম্য হলো না উনি ঠিক কোথায় গেলো? তবে বড়ো রাস্তার দিকেই এগোলেন। বৃষ্টি ঝুমঝুমিয়ে পড়ছে বিধায় লোকজন কেউ বাহিরে নেই একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে নতুবা লোকজন আমাকে এই ভেজা অবস্থায় দেখলে সেটা ভালো হতো না। আমার এই সাত পাঁচ ভাবার মধ্যে দিয়েই আয়মান এসে হাজির হলো আমার সামনে!
হাঁপাতে লাগলো। বোঝাই যাচ্ছে এই বৃষ্টির মধ্যে গ্রামের পিছলা রাস্তায় দৌড়েছেন সেটা ঠিক কতোটা কষ্টকর!

-‘ এই আপনার কি নিজের জন্য কোনো যত্ন নেই নাকি? এই বৃষ্টির ভেতর আপনি যে দৌড় লাগালেন যদি পিছলে পড়ে যেতেন?’

-‘ পড়তাম না বড়ো রাস্তার দিকে বেশি পিছলা নেই। এই নাও এটা পড়ে নাও শরীর যে ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। এভাবে এতোখানি রাস্তা পার করে বাড়িতে যাওয়া সম্ভব নয়। ‘

এতোক্ষণ খেয়াল না করলেও এবার বেশ ভালো করেই দেখলাম উনার হাথে একটা পলিথিন আছে।

-‘ এই পলিথিনে করে কি এনেছেন? আর কি পড়বো আমি? আমি তো জামাকাপড় পড়েই আছি। আর আপনি কোথায় গেলেন?’

-‘ উফফ! বা’জে ব’কা বন্ধ করবে তুমি! হ্যাঁ তুমি জামাকাপড় পড়েছো তো সাদা থ্রিপিসের ভেতর যে লাল আছে সেটা তো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে নাকি! বৃষ্টিতে ভিজে তো শরীরে জামাকাপড় একেবারে লেপ্টে আছে! তাই তোমার লাল, সাদা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। আর কোনো প্রশ্ন?

আয়মানের কথা শেষ হতেই লজ্জায় মনে হচ্ছে “হে মাটি তুমি ফাঁক হও তো আমি পা’তালে চলে যাই”🙂
ভাবা যায় এতোটা লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে আমাকে? এখন মনে হচ্ছে কোন দুঃখে বৃষ্টিতে ভিজতে গেলাম! আর আমারই বা কি দোষ এই বৃষ্টিই তো হুড়মুড়িয়ে চলে আসলো। এবার বেশ ভালো ভাবেই বুঝছি আয়মান কেনো ওই লোকগুলোকে দেখে আমাকে ওভাবে ধরেছিলেন।

-‘ লজ্জাবতী লতা না হয়ে লজ্জা নিবারন করে এই প্যাকেট টা হাতে নাও। ওই দোকান থেকে কষ্টে একটা বোরখা আর হিজাব এনেছি তোমার জন্য। ‘

উনার কথা শেষ হতে না দিয়ে আমি পাল্টা কথা বললাম।

-‘ আমাকে বলে যেতেই পারতেন। আমি তো আপনার জন্য চিন্তা করছিলাম নাকি বলুন? ‘

-‘ অতো চিন্তা করতে হবে না। আমার উল্টোদিক ফিরে বোরখাটা পড়ে নাও বৃষ্টি কমে আসছে বাড়িতে যেতে হবে।’

উনার কথা মতন বোরখাটা পড়ে নিলাম হিজাবটাও পড়ে নিলাম বেশ বড়ো করে। কাপড়গুলো ভেজা কিন্তু বোরখাটা ভারী হওয়ায় তেমন একটা বোঝা যাচ্ছে না তার উপর হিজাব তো পড়েইছি। এবার হাঁটা ধরলাম বাড়ির উদ্দেশ্য, কিছুদূর এগিয়ে অটোতে ওঠলাম।
_______________________

আমি শুকনো জামা পড়েছি কিন্তু আয়মান সেই ভেজা শার্ট আর প্যান্ট পড়েই ছিলো যার দরুন বেচারা সন্ধ্যা থেকে রুমে এসে ঠান্ডায় হাঁ’চি দিচ্ছে বারবার! রাত্রে খাবার খেয়েই উনি রুমে এসে শুয়ে পড়েছেন তড়িঘড়ি করে বোধহয় শরীরটা ভালো যাচ্ছে না! দোষ তো আমরই আমি উনাকে ঘুরতে নিয়ে গেছিলাম, কিন্তু এখন এগুলো ভাবলে চলবে না উনার খেয়াল রাখতে হবে।

-‘ ওষুধগুলো খেয়ে নিন আশা করি আপনার ঠান্ডাটা একটু কমবে। ‘

-‘ আচ্ছা তানহা মিরা তো তোমার নিজের আপন ছোটো বোন ওর নির্জনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিলো তিন বছর আর তুমি কিচ্ছু টের পাও নি একবারো?’

-‘ টের পায়নি বললে ভুল হবে। ও বলেছিলো সঠিক সময় আসলে বলবে কিন্তু ও যে এরকম একটা কান্ড করবে কে জানতো বলুন?’

-‘ ওর কান্ডের ফলেই আমরা আজ এখানে। নিয়তির খেলা দেখলে? যে তুমি আমাকে চাইতে না, আমাকে দেখে বিরক্ত হতে, দূরে ধুরে থাকতে সেই আমার সঙ্গেই এখন তোমাকে থাকতে হবে তা-ও কিনা সারাজীবন যদি তুমি চাও? ‘

-‘ হ্যাঁ আমি চাই থাকতে! বিয়েটা ছেলেখেলা নয় যে খেলা খেলবো। পবিত্র বন্ধনে যখন আবদ্ধ হয়েছি তখন সেটার মর্যাদা আমি রাখবো।’

আয়মানে দৃষ্টি তুখোড় হলো। তার অবচেতন মন কেবল একই প্রশ্ন বেজে চলেছে তাদের অতীত কি সুখে থাকতে দিবে আদৌ কাউকে? নাকি অতীতের ছাপ বর্তমানেও পড়বে? ভাবতে লাগলো সেই কালো অতীত যেখানে তাদের দুজনের পথ আলাদা হয়ে গেছিলো।

#চলবে?

অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা পর্ব-০৪

0

#অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা — [৪]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
________________________

চারপাশের বেষ্টনী ফুলে আচ্ছাদিত হয়ে রয়েছে সেই মাঝখানে বসে রয়েছে তানহা টুকটুকে গাঢ়ো রঙের গোলাপি শাড়ি সঙ্গে গোলাপি রঙের গাজরা ফুল দেওয়া আছে মা’থায়। হালকা সাজও আছে। দূর থেকেই বিমোহিতো দৃষ্টিতে কিয়ৎক্ষন তাকিয়ে রইলো আয়মান! ইশশ যদি কোনো অতীতের ছাঁয়া না থাকতো ওদের জীবনে তাহলে আয়মান এক্ষুনি গিয়ে তানহাকে একবার জড়িয়ে ধরতো। মনের আশা মনেই রেখে আয়মান তানহার পাশের চেয়ারে এসে বসলো। কিছুক্ষণ ছবি তোলার পর্ব শুরু হলো ছবি তোলা শেষ হলে খাওয়া দাওয়া সবকিছু শেষ করে এখন তানহার নিজের বাড়িতে যাবার পালা!

গাড়ির দরজা খুলে আপন মনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রয়েছি অনেকক্ষন যাবত। পাশ দিয়ে সাই সাই করে অন্য গাড়ি গুলো চলে যাচ্ছে যেনো সামনে এগিয়ে যাবার প্রতিযোগিতা চলছে। গাড়ি থামানোর আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো। চেয়ে দেখলাম বাড়িতে এসে পৌঁছে গেছি। আমাদের পিছনের গাড়িতে মিরা আর নির্জন আছে। বাড়িতে ঢুকে আত্নীয় স্বজন সবার সঙ্গে কথা বলে রুমে ঢুকলাম!

-‘ নিয়ম রক্ষার জন্য এসেছি তানহা কালকে সকাল হতেই চলে যাবো।’

-‘ কালকে সকালেই চলে যাবেন! একটা দিন অন্ততো থাকুন?’

-‘ এখানে থেকে বোর হচ্ছি! এখন তো সবে বিকেল তারপর রাত তারপর গিয়ে সকাল অবশেষে তারপর বাসায় যেতে পারবো! ‘

-‘ আপনার বোরিং লাগছে তো? বোরিংনেস কাটাতো চান?’

আয়মান তানহার কথা শুনে ভ্রু খানি কিঞ্চিৎ বাঁকিয়ে তানহাকো প্রশ্ন করলো।

-‘ তো তুমি কি আমাকে এন্টারটেইন করে বোরিংনেস কাটাতে চাচ্ছো?’

আয়মানের কথায় চম’কে ওঠলাম! আমি কি বললাম আর উনি কি বললেন? আমিও উনাকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম

-‘ এসব বাদ দিন ফ্রেশ হয়ে চলুন আপনাকে সামনে থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসছি। ‘

-‘ তোমার পিছু ঘুরতে ঘুরতে এই এলাকা গ্রাম সবই আমার চেনা হয়ে গেছে কিছুই বাদে নেই অচেনা।’

উনার কথা শুনে বিষম খেলাম! তৎক্ষনাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে একটু পরে রেডি হয়ে উনাকে নিয়ে নিচে গেলাম ঘুরার জন্য।
বাইরে বড়ো রাস্তা মোর ছেড়ে একটু দূর এগিয়ে গেলাম পাশ্ববর্তী গ্রামের দিকে। গ্রামগুলোতে এখন ধানের আমেজ প্রায়ই সব ঘরেই ধান রোদ দেওয়া হয়েছে কিংবা কেউ সিদ্ধ করতে ব্যাস্ত! স্নিগ্ধ কোমল প্রকৃতি। আমার পাশে হাঁটছে আয়মান মাঝে মাঝে আর চোখে উনার দিকে তাকাচ্ছি স্নিগ্ধ সতেজ বাতাস এসে আমাদের গায়ে দোলা দিয়ে যাচ্ছে! মুহুর্তটা ফ্রেমবন্দী করে রাখলে হয়তো মন্দ হতো না। আয়মান রাস্তা ধরে একটা দোকানের দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি তাকিয়ে দেখছি উনাকে।

-‘ এভাবে আড়চোখে না তাকিয়ে সামনে থেকে ভালো করেই তাকিয়ে দেখতে পারো আমি তো আর অন্য কেউ না তোমার নিজেরই স্বামী! ‘

উনার কথা শুনে হঠাৎই ভড়কে উঠলাম। লজ্জায় আবদ্ধ করলাম নিজেকে। মা’থাখানি নিচু করে রাখলাম।

-‘ এতো লজ্জা পেতে হবে না তোমাকে চলো একটু বসি এবার। ‘

আয়মানের কথানুযায়ী একটা গাছের নিচে ঘাসের উপর বসলাম। আমার পাশে আয়মান আর আমাদের দু’জনেরই সামনে গ্রামের স্নিগ্ধ কোমল রূপ সঙ্গে সতেজ হাওয়া তো আছেই!

-‘ তুমি কি আমাকে আগের মতনই ভাবো তানহা?’

আমি বসে ছিলাম উনি আমার হাত দু’টো নিজের হাতের মধ্যে রেখে নিয়ে উপরোক্ত কথাটি বললেন।

-‘ নাহ্! আগের মতন মনে করি না আমি আমার ভূল বুঝতে পেরেছি।’

আয়মানের মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠলো তানহার কথা শুনে। এ-ইতো চাই আর কিছু না! একবার সম্পর্কের প’তন ঘটেছিলো আবার না হয় শুরু করা যাক।
_____________________

মিরার বাবা মিরাকে ওসব কথা বললেও নিয়ম রক্ষার্থে তানহার সঙ্গে বাপের বাড়িতে আসে। মিরাদের বাড়িতে সবাই জয়েন ফ্যামিলি। মিরার, বড়ো ভাই আব্বু আর ওদের চাচা আর এক চাচাতো বোন, দাদীমা এই মিলেই ওদের ভরা ফ্যামিলি। পথিমধ্যে গাড়িটা খারাপ হয়ে যাওয়ায় ওদের আসতে দেরি হয় বাড়িতে এসেই ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে দু’জনে বেরিয়ে পড়ে আগন্তুকের উদ্দেশে!

-‘ নির্জন আমার খুব ভ’য় হচ্ছে এবার যদি উনি আমাদের কে আরো ভ’য়ংক’র কিছু করতে বলেন তখন কি করবো বলো? অলরেডি এসব মিথ্যা প্রেগন্যান্সির কথা বলে আপুর বিয়ে তোমার ভাইয়ের সঙ্গে দিয়েছি যেখানে আমি জানি যে আপুর সঙ্গে আয়মান ভাইয়ের ঝা’মে’লা আছে! এখন কি বলবে ওই লোকটি আমাদেরকে?’

-‘ মিরা বরাবরের মতনই বলছি তোমাকে এসব নিয়ে মা’থা না ঘামাতে। যা হবার তা তো হয়েই গিয়েছে! আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো ভাইয়ার পাস্ট সম্পর্কে আমি যা জানি সবটাই বলেছি তোমাকে, আমার ভাই বলে নয় তোমার বোনকে আমার ভাই নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসে যা আমি বুঝেছি। আমরা ওই মহিলার একটা গুটি মাত্র। পু’লি’শের সাহায্যও নিতে পারছি না দেখেছো তো? তুমি তো নিজেই দেখলে পু’লি’শের সাহায্য নিতে গেছি আর তোমার মায়ের আর তানহার কতো বড়ো এ’ক্সি’ডে’ন্ট হলো? এখন কোনো উপায় নেই আমাদের কাছে চলো এখান থেকে।’

মিরা আর নির্জন হাটতে লাগলো সামনে। ওদের বাসা থেকে বেরিয়ে বড়ো রাস্তা ছেড়ে আর একটু হাঁটলে একটা জ’ঙ্গল পড়ে। ওই জ’ঙ্গলে একটা পো’ড়া বাড়ি আছে সেখানের উদ্দেশ্য।

ঘনো কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরে বসে আছে এক মেয়ে! পড়েনে তার ছেলেদের মতন শার্ট প্যান্ট মুখে মাস্ক পড়া। একটা চেয়ারে বসে আছে সে তবে যেখানে মিরা আর নির্জন বসেছে সেইদিকের উল্টোদিক ফিরে বসে রয়েছে সেই মেয়েটি!

-‘ তানহা আর আয়মানের বিয়েটা হয়ে গিয়েছে এখন আর তোমাদের কিছু করতে হবে না। এখন থেকে যা করবার সব আমি করবো আর তাও প্রকাশ্যেই করবো। তোমাদের আর কোনো কাজ করতে হবে না কিন্তু যদি ভুলেও কিছু বলেছো বাড়িতে তো তোমার বোনের যে অবস্থা হতে হতেও হয়নি সেটাই হবে বুঝেছো তো? বাড়ির সবাই যেরকম জানে তুমি তোমার বোনের বিয়ে ভে’ঙেছো নিজের সংসার পাতার জন্য ঠিক যেনো সেরকমটাই সবাই জানে! একটু বেফাঁস কিছু যাতে না বের হয়? ‘

-‘ ঠিকআছে ঠিকআছে আমরা সবকিছু বুঝতে পেরেছে কাউকে বলবো না কোনো কিছু। কিন্তু আপনি দয়া করে আর কারো ক্ষ’তি করবেন না আমরা কথা দিচ্ছি কিচ্ছু বলবো না কাউকে সবটা যেরকম আছে ঠিক সেইরকমই থাকবে কেউ কিচ্ছু জানবে না আমি কেনো এসব মিথ্যা প্রেগন্যান্সির নাটক করলাম। ‘

মেয়েটির নির্দেশ অনুসারে মিরা আর নির্জন ওই জায়গা থেকে বেরিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো।

-‘ নির্জন সবই ঠিকআছে কিন্তু মেয়েটি কিন্তু স্বাভাবিক গলায় কথা বলেনি দেখলে তো? গলার আওয়াজ কিরকম মো’টা মানে ছেলেদের মতন করে কথা বলার চেষ্টা করেছে যেনো সত্যি উনার গলার আওয়াজ আমরা চিনতে না পারি। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার কি বলোতো এর আগের বার কিন্তু উনি কোনো কথা বলেনি একজনের সাহায্যে আমাদের দিয়ে সব বুঝিয়েছেন ওই মেয়ের হয়ে সব কথা বলতো। মেয়েটা আজকেই সরাসরি আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে তাও গলা মো’টা করে যাতে আমরা ধরতে না পারি!’

-‘ মিরা তুমি অতো ভেবো না তো। তুমি কি ভেবেছো এমনি এমনি ছেড়ে দিবো ওকে এখন সবাই আমাদে উপর রে’গে আছে আমরা যদি সবাইকে সত্যি টাও বলিও কেউ বিশ্বাস করবে না সবাই ভাববে নিজেদের সাফাই গাইছি তাই পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতে দাও তখন সব করা যাবে। ‘

মিরা নির্জনের কথায় সায় দুলিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরলো। ধৈর্য্য ধরলো কখন সবটা সামনে আসবে আর তাদের প্রতি বাড়ির সবার ঘৃ’নার দৃষ্টি সড়বে।
________________

আমি আর আয়মান বসে ছিলাম আমাদের সামনেই তামান্না এসে দাঁড়ালো! তামান্না আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমাদের বিয়ের ক’দিন আগ থেকেই ও নিঁখোজ ছিলো ওদের এখানে বাসা ভাড়া করে থাকে ওর পরিবার নাকি গ্রামে।

-‘ কিরে তামু তুই এখানে? তাও আবার এই সময়ই?’

-‘ তোকে চম’কে দিতেই তো এখন এখানে এভাবে আসলাম!’

-‘ ইর্য়াকি করিস না তামু সত্যি টা বল খুলে? ‘

-‘ আরে শোন এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম তোকে দেখতে পেলাম এতুটুকই।’

তামান্নাকে দেখতে পেয়ে আয়মান দূরে সরে গিয়ে দাঁড়ালো একটুখানি। আমি তামুর সঙ্গে একটুখানি কথা বলা শেষ করে আবারো আয়মানের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আবারো পাশাপাশি হাঁটতে লাগলাম দু’জন। আমি উনার হাতটা আঁকড়ে ধরে হাটতে লাগলাম। উনার হাত ধরার সময় উনি আড় চোখে একবার আমার দিকে তাকালেন ব্যস উনার ওই মা’তা’ল করা চাহনিই যথেষ্ট ছিলো আমার নিজেকে লজ্জায় আবৃত করার জন্য।

#চলবে?

অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা পর্ব-০৩

0

#অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা –[৩]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
_______________________

-‘ দেখুন বিয়েটা যেভাবেই হউক না কেনো আমি এই সম্পর্কটাকে সম্মান করতে চাই আর বাকি পাঁচটা স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কর মতন। এতে আমি একলা কিছু করতে পারবো না নিশ্চয়ই? আপনাকেও আমার পাশে থাকতে হবে।’

আয়মান এতোক্ষণ ভাবলেশহীন ভাবে থাকলেও তানহার শেষোক্ত কথাটি কর্নকুহুরে প্রবেশ মাত্রই দৃষ্টি গিয়ে নিবদ্ধ করলো তানহার উপর! বোধগম্য হবার চেষ্টা করতে লাগলো কিয়ৎক্ষন একি সেই তানহা? নাকি বদল ঘটেছে?

-‘ সম্মান কেনো আমি তো তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম কিন্তু তুমি বোঝোনি উল্টে আমাকে যাই হউক সে সব কথা বাদ দেওয়াই ভালো। জানিনা কি হতে চলেছে সামনে তবে প্রার্থনা করবো যাতে ভালো কিছুর প্রয়াস ঘটে।’

আয়মানের কথার পৃষ্ঠে কিছু বলার অবকাশ পেলাম না। খু্ব করে জানতে ইচ্ছে হচ্ছে মনের কোনে উনি কি এখনো আমাকে ভালোবাসেন? পরিস্থিতির চা’পে পড়ে মনের ইচ্ছে মনেই রেখে দিলাম।

-‘ জল্পনা কল্পনা বাদ দিয়ে ফ্রেশ হয়ে পাশে এসে শুয়ে পড়ো। আমাদের বিয়েটা সিনেমাটিক হলেও আমরা তো মানুষ তাই ওসব সিনেমাটিক কান্ডকারখানা আমার পছন্দ নয় আমি চাই সামনে এগোতে। বিয়েটা কোনো ছেলেখেলা নয় যে সিনেমার মতন কান্ড করবো। যদি পাশে এসে শুতে পারো তো শুয়ে পড়ো আর না হলে কিছু বলার নেই।’

আয়মানের কথা শেষ হতে না হতেই আমি ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়লাম উনার পাশে। উনি উল্টোদিক ফিরে রয়েছেন আমি ও উনার উল্টোদিক ফিরে শুয়ে রয়েছি। দু’জনেই নিশ্চুপ কারো মুখে কোনো কথা নেই কিংবা হাজারো কথা জমে আছে মন গহীন কোনে যে অপ্রকাশিতো হয়ে আছে!

____________________

আয়মান বরাবরই শান্তিপ্রিয় মানুষ। একাকীত্ব চুপচাপ থাকতেই বেশি পছন্দ তার। সকালবেলা মানুষের কোলাহলে আর ঘুমিয়ে থাকতে পারলো না বিধায় ফ্রেশ হতে চললো ওয়াশরুমে। ওয়াশরুমে যাবার সময় দেখতে পেলো তানহা খুব সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে! প্রায় তিন বছর পর এই মানুষটির মুখ আয়মান আজকে একেবারে ভালো করে গেথে নিচ্ছে মনের কোনে। চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে তানহার কপাল বরাবর হালকা করে তার ঠোঁট ছুঁইয়ে চলে যেনো খুব সন্তপর্নে যেনো তানহার ঘুম না ভাঙে।

সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠতেই দেখলাম আয়মান পাশে নেই একটু চোখ বোলাতেই দৃষ্টিগোচর হলো মহোদয় ড্রেসিং টেববলের সামনে বসে সাজুগুজু করছেন! আমাকে ঘুম থেকে ওঠতে দেখতে পেয়ে আমার কাছে এসে বসলো।

-‘ সুপ্রভাত। নতুন সকালের মতন নতুন ভাবে রঙিন হয়ে ওঠুক আমাদের জীবন। শাড়ি রাখা আছে রেডি হয়ে নিচে যেতে হবে। ‘

আমি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে আসলাম শাড়ি পড়ার জন্য কিন্তু আয়ান পূর্বের ন্যায় সেই একই স্থানে বসে রয়েছে!

-‘ আপনি একটু বাহিরে যাবেন আমি শাড়িটা পড়তাম? শাড়িটা তো বেশ বড়ো ওখানে পড়লে ভিজে যেতে তাই বলছি।’

-‘ ঠিকআছে আমি বারান্দায় যাচ্ছি। ‘

আয়মান বারান্দায় যেতে তানহা শাড়িটার ভাজ খুলে দেখলো। একদম টুকটুকে গাঢ়ো গোলাপি রঙের শাড়ি দেওয়া হয়েছে। তানহা শাড়িটা গায়ে পড়ে নিতে বারান্দায় দেখতে পেলো আয়মান বসে রয়েছে। তানহা আয়মানের কাছে যেতেই দেখতে পেলো আয়মান বারান্দায় বসে স্মো’ক করছে!

আয়মানকে স্মো’ক করতে দেখে আমার চক্ষু যেনো চড়কগাছ! এটা কল্পনারও বাহিরে ছিলো উনিও এরকম হলেন!
আমি উনার কাছে যেতেই আরো স্পষ্ট করে দেখতে পেলাম নিচে পাঁচ ছয়টি সি’গা’রে’ট পড়ে রয়েছে মানে আমার এই শাড়ি পড়ার সময়টুকুতে উনি এতোগুলো খেয়েছেন।

-‘ এই ব’দ অভ্যাসের কথা তো আগে শুনিনি কখনো।’

পিছনে তানহার আকস্মিক বলার কারনে ভড়কে গিয়ে হাত থেকে সি’গা’রেটটি ফলে দেয় আয়মান!

-‘ তুমি এখানে এসেছো কেনো? তোমার তো শাড়ি পড়া শেষে।’

-‘ হ্যাঁ সেইজন্যই আপনাকে রুমে আসতে বলার সময় দেখালম আপনি স্মো’ক করছেন। এগুলো আগে দেখিনি কখনো তাহলে আজকে হঠাৎ? ‘

-‘ হঠাৎ! হাহ্ ভুল বললে হঠাৎ নয়! এটা আমার সঙ্গীই বলতে পারো! তুমি ছেড়ে গেলেও এটা আমাকে ছেড়ে যায়নি আমার সঙ্গ দিয়েছে! তুমি কি বুঝতে পারছো আদৌ এই যে তুমি টুকটুকে রঙের শাড়ি পড়ো আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছো তোমাকে ঠিক কতোখানি সুন্দর লাগছে অথচ আমি তোমাকে ছুঁতে অব্দি পারছি না এটা আমার কাছে কতোটা য’ন্ত্র’ণা’দা’য়ক? এই যে তুমি কালকে আমার পাশে শুয়ে ছিলে পুরো রাত এই রাত নিয়ে আমার কতো আশা ছিলো অথচ একটি বারও তোমাকে ছুঁতে পারা তো দূর তোমার সঙ্গে ভালো করে কথাও বলিনি এটা কতোটা য’ন্ত্র’ণা’দা’য়ক ছিলো আমার কাছে। এগুলো কি আদৌ বুঝো তুমি? বুঝবে না কারন তুমি তো আমাকে ভালোবাসা তো দূর কখনো পছন্দও করোওনি! যদি এগুলা বুঝতে তাহলে আজকে তোমার আর আমার মধ্যে এতোখানি দুরত্ব এতোখানি দেয়াল তৈরী হতো না! বুঝতে হবে না তোমাকে তুমি যেমন ছিলে তেমনি থেকো যদি নিজে মন থেকে কিছু করতে চাও তো ঠিক আছে জো’র করে কখনো কিছু হবে না!’

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আয়মান দরজা খানি ধ’পাস করে প্রচন্ড জো’রে বন্ধ করে চলে গেলেন রুম থেকে! বোঝাই যাচ্ছে উনার রা’গ দরজার উপর দেখালো খানিকটা! আমি আসলেই বুঝলাম না উনার এতোটা রে’গে যাবার কারন। আমরা তো স্বামী স্ত্রী উনি চাইলেই আমাকে ছুঁতে পারেন কিংবা কথাও বলতে পারেন বলতে পারছেন না হয়তো সেই অতীত এসে বারংবার আমার বর্তমানটাকে আ’ঘা’ত হানে!

চুপচাপ বসে রয়েছি বেডের উপর। পুরো রুম জুরে আয়মানের ছবি কেবল। আমি ছবিগুলো দেখতে লাগলাম ঠিক তখুনি কারো ডাকে পিছন ফিরে ঘুরে তাকালাম।

-‘ তানহা মা আমি তোমার আরেকটা মা মানে তোমার শাশুড়ী মা! তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার মতন মুখ নেই তবুও বলছি ক্ষমা করে দিও পারলে আমাকে। তবে তুমি ভেবো না আমার বড়ো ছেলে আয়মান তোমার যোগ্য নয় ও নির্জনের থেকে অনেক ভালো আছে। ও ঠান্ডা মা’থার মানুষ নিজের মতন করে থাকতে পছন্দ করে তুমি একটু ওর সঙ্গে মানিয়ে নিও। তোমারা দু’জনের সহযোগিতায় এই সম্পর্কটা আরো দৃঢ় মজবুত হবে আশা করি তুমি বুঝেছো? ‘

-‘ জ্বি আমি বুঝেছি। তবে আপনি আমার গুরুজন আপনার ক্ষমা চাওয়ার কোনো দরকার নেই। কাজগুলো তো নির্জন একা করেনি আমার বোনও দায়ী আছে এতে তাই ক্ষমা চাইববন না।’

-‘ তাহলে নিচে আসো একটু পরেই তো তোমার পরিবারের মানুষজন চলে আসবে। ‘

নিচে যেতেই সবাই উৎফুল্ল হয়ে আমার কাছে আসতে লাগলো একে একে। সবাই এটা ওটা প্রশ্ন জিগেস করছে আমাকে জানতে চাইছে আমার সম্পর্কে। পুরো বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে কিন্তু আমার দৃষ্টি কেবল খুঁজে চলেছে আয়মান নামক মানুষটিকে! তাকে খুঁজে ব্যার্থ হয়ে বসে রইলাম পূর্বের ন্যায়। মিরাকেও নিচে নিয়ে আসা হয়েছে মিরার পাশেই বসে রয়েছে নির্জন দু’জন খুব হাসি মুখে সবার সঙ্গে কথা বলছে। নির্জন বেশ হেসে হেসে কথা বলছে মিরার সঙ্গে! হয়তো ভালোবাসে এই কারনে কিন্তু নির্জন যদি মিরাকেই ভালোবাসে আমাকে বিয়ে কেনো করতে চেয়েছিলো? আর মিরা কেনো বিয়ের দিনই সব বলতে আসলো ও তো আগেও বলে পারতো সবটা তাহলে আয়মানের সঙ্গে আমার বিয়েটা হতো না এইসব প্রশ্নের উত্তর যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে খুঁজে বের করতে হবে।

এতো কিছু ভাবনার মধ্যেই দৃষ্টি গিয়ে স্থির হলো আমার বাবা নামক মানুষটির দিকে! বাবা আমার কাছে আসতেই ঝা’পটে ধরে নিলাম যেনো কতোকাল দেখিনি বাবাকে! মিরা বাবার কাছে যেতেই বাবা হাত দিয়ে ওকে থামিয়ে দিলো!

-‘ তোমার জন্য কালকে আমার মান সম্মান টানাটানি হয়েছিলো। তুমি অন্য একজনকে ভালোবাসতেই পারো সেটা অ’ন্যা’য় নয় কিন্তু বিয়ের আগে প্রে’গন্যা’ন্ট হবার মতন ঘৃ’ন্য কাজ তার উপর সেটা নিজের বোনেরই বিয়ের দিন সবার সামনে ঘটা করে বলা এটা নিশ্চয়ই অ’ন্যা’য়? ভেবো না কালকে তোমার মা’থায় হাত রেখেছি বলে ক্ষমা করে দিয়েছি তোমাকে! তুমি যে কাজ করেছো তাতে ক্ষমা কেনো তোমাকো আমার নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দিতে ভাবতে হচ্ছে। এখানে তানহার শশুড়বাড়ীতে এসেছি লোকজন আছে তাই কোনো সিনক্রিয়েট করবে না দূরে যাও এখান থেকে!’

মিরা কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে গেলো নির্জনও গেলো মিরার পিছু পিছু।

-‘ মিরা তুমি প্লিজ কেঁদো না। এইতো শুনলে না তোমার বাবাই তো বললো ভালোবাসা কোনো অ’ন্যা’য় নয়। আমরা তো একে অপরকে ভালোবাসি তাহলে আমরা কোনো অ’ন্যা’য় করিনি বলো। যে সত্যিটা সবার চোখের আড়ালে রয়েছে সেটা আরো কয়েকদিন আমাদের চালিয়ে যেতে হবে নতুবা যাদের জন্য এতোকিছু করলাম সেটা পূর্নতা পাবে কই বলো?

-‘ আমার আপুই আমার সবচেয়ে কাছের তার জন্য মিথ্যা কেনো তুমি যা বলবে আমি কাই করবো। শুধু চাই ও একটু ভালো থাকুক। ওর ভালোর জন্যই এতো কিছু করেছি আমি।’

#চলবে

অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা পর্ব-০২

0

#অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা — [২]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
________________________

-‘ আমি ম’রে গেলেও কিছুতেই এই ছেলেকে বিয়ে করতে পারবো না মা!’

হইচইপূর্ণ পরিবেশ নিমিষেই স্তব্ধতায় গ্রাস করলো তানহার বলা কথা গুলো শুনে। প্রত্যেকের দৃষ্টি নিবদ্ধ তানহার দিকে। সবার মুখশ্রী এখন আগ্রহে পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে কানায় কানায়। সবারই এক প্রশ্ন কেনো তানহা বিয়ে আটকাতে চাইছে? কিছুক্ষণ আগের ঘটনা….

-‘ আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আমার ছোটো ছেলের করা ভুলের খে’সা’রত সে দিয়েছে কিন্তু তার জন্য তানহার যে ক্ষ’তি হলো তার খেে’সা’রত আমি দিবো। এই ছবিটা দেখুন এটা আমার বড়ো ছেলে আয়মান। ও বিদেশে থাকে ফ্যামিলি বিজনেস দেখার জন্য। আজকেই দেশে ফিরবে তার ছোটো ভাইয়ের বিয়ে দেখার জন্য। অলরেডি রাস্তায় আছে আমি ওকে বলে দিয়েছি সবটা ও বাড়িতে না গিয়ে এক্ষুনি এখানে আসবে। সে রাজি হয়েছে। আর পাত্রী পছন্দ করবে না এরুপ কোনো ভয় নেই কারন ও আমাকে কথা দিয়েছে ও মেয়ে না দেখেই বিয়ে করবে।’

তানহা অশ্রু সিক্ত অক্ষিজোরা গিয়ে স্থির হয় ফোনের স্ক্রিনের পানে চেয়ে। স্ক্রিনে থাকা আয়মান নামক মানবটিকে দেখে তানহার কান্নার পরিমান যেনো আরো দ্রুত গতি বেগে বৃদ্ধি পেলো কিয়ৎক্ষনের ভিতরেই। এই তো সেই মানুষ যার জন্য কলেজ ছেড়ে অন্য কলেজে স্থানান্তরিত হতে হয়েছিলো আমাকে। পুরো একটি বছর নষ্ট হয়েছিলো আমার!…
কিছুক্ষণের জন্য মস্তিষ্কে আ’ঘা’ত হানে পুরনো তিক্ত স্মৃতি। চক্ষু জোড়া ঘৃ’নার দৃষ্টি সহকারে ফিরিয়ে নিলাম ফোনের স্ক্রিনে থাকা মানুষটির থেকে। তারপরেই কন্ঠে দৃঢ়তা বজায় রেখে সকলের সামনে বিয়েতে বাঁধা দিলাম….

-‘ তানহা মা আমার তুই কেনো এই বিয়ে করতে পারবি না বল? মিরার তো বিয়ে হয়ে গেলো যেখানে তোর বিয়ের কথা ছিলো আজকে তাহলে? আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো এই বিয়েটা হলে তোরা দু’বোনে একসঙ্গে থাকতে পারবি আর বেয়াই সাহেবের উপর আমার পুরো আস্থা রয়েছে উনাদের সঙ্গে তো আমাদের পরিচয় আগ থেকেই আছে উনি তো তোর বাবার চেনা। আয়মান উনার ছেলে। আস্থা আছে খা’রা’প হবে না। আশা করি তুই এই বিয়ে করে অসুখী হবি না।’

-‘ কিন্তু মা তুমি**

-‘ কিসের কিন্তু তানহা? তোর মা যা বলছে আমারো সেই একই কথা। বিয়েটা করে নে মা। আমি জানি এই সমাজে বিয়ে ভে’ঙে যাওয়া মেয়ের বেঁচে থাকা কতোটা দায়! তুই আর দ্বিমত করিস না। রাজি হয়ে বিয়েতে।’

উপরোক্ত বাক্যগুলো আমার কর্নদ্বয়ে পৌঁছাতেই আমি নিথর দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকালাম। বাবার সেই আকুতি ভরা অক্ষি যুগল দ্বয়ের আবদার কোনোমতেই আমার পক্ষে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না! উপায়ন্তর না পেয়ে তার বাবার দিকে গিয়ে মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ নামক সম্মতি বোঝালাম যার অর্থ আমি বিয়ে করবো।

ইতিমধ্যেই মিরাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রুমের ভেতরে সাজগোজের জন্য। আমি পুতুলের ন্যায় বসে আছে। কিছুক্ষণ পর কি হবে সেটা ভাবতেই অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে! কি নি’ষ্ঠুর নিয়তি যার থেকে পালানোর জন্য এতোকিছু করলাম সে-ই আমার সঙ্গে থাকবে আজীবন! কিছুক্ষণের ভিতরে শুনতে পেলাম বাহিরের শোরগোল!
‘বর এসেছে’ কথাটি শোনা মাত্রই মায়ের নির্দেশ অনুসারে মাথায় ঘোমটা টেনে বসে রইলাম কনের স্থানে।

একসময় অনুভব করলাম তিক্ততায় ভরা মানুষটি আমার পাশেই বসে রয়েছে।
তানহার মা ঘোমটা বেশ বড়ো করেই দিয়েছে যার ফলে তানহার মুখ দেখা যাচ্ছে না। কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করলো একসময় কবুল বলতে বললে তানহা নির্দ্বিধায় কবুল নামক তিনটি পবিত্র শব্দ উচ্চারণ করে সবার সম্মুখ সমরে আয়মান নামক মানুষটির বউয়ের পরিচয়ে আবদ্ধ হলো! সকলের মুখে এবার দেখা মিললো প্রশান্ত হাসির রেখা। সবশেষে বর আর কনেকে একসঙ্গে সোফায় বসানো হলো মিষ্টিমুখ করানোর জন্য। আয়মান মিষ্টিমুখ করানোর জন্য বউয়ের ঘোমটা খুলে মিষ্টি তার অধরজোরার সামনে থেকেই পড়ে গেলো! তানহার সজল দৃষ্টি তৎক্ষনাৎ যায় আয়মানের নিকট। আয়মান স্তম্ভিত নয়ন নিয়ে তানহার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। তানহাও তাকিয়ে রয়েছে। আর কারোর বোধগম্য না হলেও তানহা ঠিকই বুঝতে পেরেছে মিষ্টি হাত থেকে পড়ে যাবার কারন। তবে সেই প্রকাশতা নিজের নিকট রেখে দিয়ে চুপটি করে আগের ন্যায় মাথা নিচু করে বসে থাকে। সকলের কথানুযায়ী আয়মান আবারো মিষ্টি খাওয়াতে গেলো এবার খুব সযত্নে মিষ্টি খাইয়ে দিলো।
ওদিকে মিরারও সাজগোজ প্রায় শেষ করে মিরা আর নির্জন দু’জন হাসিমুখে সবার সামনে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সবথেকে বেশি উৎফুল্ল লাগছে নির্জনকে অথচ এই তার জন্যই কিয়ৎক্ষন আগে দু’টি মেয়ের জীবন নিয়ে টানা হে’চড়া হচ্ছিলো! আনোয়ার সাহেবের কথায় দুই বধূকে বিদায়ের বন্দোবস্ত করা হলো। মিরা অশ্রুসিক্ত নয়ন জোড়া নিয়ে তার বাবার পদযুগল দ্বয়ের কাছে গিয়ে ঝাপটে ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করে নেয়। বাবাও তার মাথায় হাত রেখে আশ্বাস দেয়। যতোই হউক একসঙ্গে দু দু’টো মেয়ে বিদায় নিচ্ছে।

বাবা মা’কে জরিয়ে দু বোনের সেই আপ্লূত কান্না উপস্থিত বেশ কয়েকজনের মনেই নাড়া দিয়ে ওঠলো! একসময় সকল অশ্রুকে বিদায় দিয়ে মেয়ে দু’টোকে বিদায় দিয়ে দেয় দীর্ঘবছর ধরে আগলে রাখা পরম মমতা ভরা বাবা মা! অতিথিরাও চলে গেছে। এখন পুরো বাড়ি শূন্য প্রায় মিরা আর তানহাকে ছাড়া!
___________________________________

মঞ্জিল ভিলা বধূ বরনের আবেশে ছেয়ে গেছে পুরো। তার উপর সব থেকে খুশি হয়েছে আনোয়ার সাহেবের স্ত্রী। আয়মান দেশে ফিরেছে তা-ও বউ সঙ্গে করে নিয়ে! যে কি-না বিয়ে করবে না বলে একটা নিছক অযুহাতে চলে গেছিলো!
তার বড়ো ছেলে বিয়ে করেছে শুনে ছোটো ছেলের কীর্তির কথা বেমালুম ভুলে গেলো। তার বক্তব্য খা’রা’প থেকে যদি ভালো কিছু হয় তাহলে হউক না সে ভালো। এমনিতেই তার বড়ো ছেলে তো বিয়ে করবে না বলেই বিদেশে চলে গেছিলো। এখন তার ছোটো ছেলের জন্য একেবারে বউ নিয়ে ফিরলো এতেই খুশি। একে একে দুই নববধূকে বরন করে সব নিয়ম কানুন মেনে ঘরে প্রবেশ করানো হয়। মিরা আর নির্জনের চোখে মুখে আনন্দের উৎফুল্লতা বেশ লক্ষনীয়। যেনো এই দিনটার জন্যই দুজনে কতো অপেক্ষা করেছে! বোঝাই যাচ্ছে না তাদের বিয়ে কি এক পরিস্থিতিতে হয়েছে।
কিন্তু তানহা আর আয়মান চুপটি করে বসে রয়েছে কোনো কথার রেশ নেই কারো মুখে। সবচেয়ে স্তম্ভিত আয়মান হয়েছে তানহাকে নিজের বধূ বেশে দেখে।

পাড়া প্রতিবেশী সবাই এসে দু বউ দেখে একেবারে ধন্যি ধন্যি! দুই বউই দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী। ছোটো ভাই বিয়ে করতে যেয়ে বড়ো ভাইও বিয়ে করে এসেছে এ নিয়ে বেশ কথাও শোনা যাচ্ছে। কিছুক্ষণের ভিতর সবার বউ দেখা শেষ হয়ে যেতেই নির্জন আর মিরাকে তাদের রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বধূ বেশে আয়মানের জন্য অপেক্ষা করছি ফুলে সজ্জিত খাটের উপর। এতোক্ষণ উনি চুপ করে ছিলেন আশেপাশোর মানুষের জন্য না জানি এখন কি হবে আমার সঙ্গে? জানিনা কিসের প্র’তি’শোধ নিবেন আমার উপর! আমার চিন্তা ভাবনার মাঝখানেই দরজা ঠেলে উনি ভিতরে ঢুকলেন।

-‘ কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি তোমার থেকে। আমি জানি বিয়েটা একটা পরিস্থিতির চা’পে পড়ে হয়েছে। নির্জন যদি ওরকম কাজ না করতো তো তুমিই আজকে আমার ভাইয়ের বউ হতে। আমি চাইনি তোমার সঙ্গে আবার দেখা হউক আমার। যাকে ছেড়ে চলে গেছিলাম একেবারের জন্য ভাগ্য তার কাছেই এনে ফেললো!’

বিয়ের প্রথম রাত্রি। নিজের বরের মুখ থেকে এরকম তুচ্ছ তা’ছি’ল্য কথা শুনে বেশ কষ্ট হচ্ছে! যতোই হউক উনি এখন আমার স্বামী। কিন্ত যা হচ্ছে সে তো কেবল আমারই জন্য হচ্ছে সে আমি যতোই অতীত ভুলে থাকতে চাই না কেনো বর্তমান আমাকে বারবার অতীত নিয়ে প্রশ্ন ছুড়বে আর আমাকে সেগুলো নিয়েই এগোতে হবে।

-‘ তাহলে বিয়েটা না করলেই পারতেন। মুক্তই থাকতেন ঠিক তিন বছর ধরে যেরকম চলে গেছিলেন।’

-‘ ভুলে যেও না আমি অতো উৎফুল্ল মনে তোমাকে নিজের স্ত্রী হিসাবে আনিনি। এক প্রকার বাধ্য হয়েই সবটা করতে হয়েছে। তোমার আর আমার রাস্তা তো সেদিনই আলাদা হয়ে গেছিলো ভাবিনি আবারো জোড়া লেগে যাবে! তবে হয়তো আবারো অতীত পুনরাবৃত্তি হলেও হতে পারে। কিংবা যেই রাস্তা টা আলাদা হয়ে গেছিলো সেটা জোড়া লাগলেও লাগতে পারে তবে সেই সম্ভাবনা খুবই কম। অতীতের পুনরাবৃত্তি হবার সম্ভাবনা খুব বেশি।’

#চলবে?

অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা পর্ব-০১

0

#অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা –[১]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা

-‘ কাবিননামায় সই করবার আগে তোর হবু বর নির্জনের সম্পর্কে সবটা না জেনেই বিয়ের মতন পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাবি? বিয়ের আগে জেনে তো নে তোর হবু বর ঠিক কি করেছে আমার সঙ্গে! সবটা জানার পর ভেবে দেখিস বিয়েটা আদৌ করবি তো?’

কাবিননামায় যখনই সই করতে যাবে বিয়ের কনে ঠিক তখুনি বিয়ের ভরা আসরে কনে মানে তানহাকে সেই জায়গা থেকে সরিয়ে দিয়ে কনের বোন মিরা কতোগুলো কাগজ এনে মুখের উপর ছুঁ*ড়ে দিলো! বধূ বেশে থাকা তানহা সেগুলো মাটি থেকে সযত্নে কুড়িয়ে নিয়ে চোখ বোলাতে লাগলো ঠিক কি লেখা রয়েছে কাগজে?? নিজের ছোটো বোনকে এরকম আক্র*ম*নাত্নক আচরনে ততোটা অবাক হয়নি যতোটা না অবাক হয়েছে কাগজের লেখাগুলো পড়ে। কাগজগুলো কোনো সাধারন কাগজ নয় কাগজগুলো হলো প্রেগন্যান্সির রির্পোট যেটাতে মিরার নাম স্পষ্ট অক্ষরে বড়ো বড়ো করে লেখা রয়েছে! তানহা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রয়েছে কাগজগুলো হাতে নিয়ে। নিজেরই বোন কি করে বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবার মতো ঘৃ*ন্য কাজ করতে পারে তাও আবার নিজের বোনের হবু স্বামীর সঙ্গে! সেটা ভাবতেই গা শিওরে ওঠছে তানহার! ঠিক একটু আগেই এই কথা গুলোই বলছিলো মিরা তানহাকে….

-‘ কি আপু অবাক হয়ে যাচ্ছিস তো এসব দেখে তাই না? অবাক হয়েছিস কিন্তু তার আগে এটাতো তোর ভালো করেই জানা দরকার নয়কি যে এই সন্তানের বাবা আর অন্য কেউ নয় তোর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তোর হবু বর নির্জনের।’

উপস্থিত সবার চোখ এবার নির্জনের উপর গিয়ে পড়লো। নির্জনের বাবা আনোয়ার হোসেন নির্জনের সামনে গিয়ে সপাটে দু’টো থা*প্পড় মেরে দিলো নির্জনের গালে! নির্জন গালে হাত দিয়ে থ মেরে বসে আছে সেই আগের বরের জায়গাটায়!…..

-‘ নি*র্ল্জ্জ ছেলে! এই দিন দেখবার জন্য তোকে মানুষ করেছি আমি? তুই তো আমার মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিলি দেখছি! আমরা সবাই দেখেশুনে তানহাকে পছন্দ করেছিলাম তোর জন্য এমনকি তুই নিজেও তো এই বিয়েতে সায় দিয়েছিলিস তাহলে এখন এসব কেনো হচ্ছে? এতোই যদি তোর মিরার সঙ্গে সম্পর্ক থাকে তাহলে তুই তানহার সঙ্গে বিয়েতে রাজি হয়েছিলি কেনো? তখন বলতে পারলিনা তুই মিরার সঙ্গে এরকম একটা কান্ড করেছিস? এই শিক্ষা দিয়েছিলাম আমি যে বিয়ের আগে একটি মেয়েকে প্রেগন্যন্ট করবার? এই এতো লোকের সামনে আমাদেন সবার নাক কে*টে দিলি তুই।’

-‘ শুধু আপনার ছেলে নয় আনোয়ার সাহেব আমার এই অ*স*ভ্য মেয়ের কথা একটিবার বলুন? এরকম খারাপ নি*কৃষ্ট মেয়ে পৃথিবীতে আর একটিও নেই বোধহয়! যে কিনা নিজের বড়ো বোনের এরকম ক্ষ’তি করে! শুধু নিজের বোনেরই নয় এই অ’সভ্য মেয়ে তো দেখছি নিজেরও ক্ষ’তি করেছে। তোরও কি নির্জনের মতন মুখে কুলু পেতেছিলিস যে তুই নির্জনের সন্তানের মা হতে চলেছিস এটা আমাদের কাউকে বলিস নি?’

উপরোক্ত কথাগুলো মিরার উদ্দেশ্য বললো মিরার বাবা। মিরা কোনো কথা না বলে চুপটি করে রয়েছে মাথা নিচু করে রেখে। নির্জন ও কিছু বলছে না।….

আমার বিয়ের দিনই এসব কিছু শুনতে হচ্ছে আমাকে! এতোক্ষণ ধরে সব কথা শুনে গেছি এবার আমার মুখ খোলার সময় এসেছে।…..

-‘ এসব কি সত্যি নির্জন? যদি সত্যি হয় তাহলে তুমি আমার বোনের সঙ্গে অ*ন্যা’য় করে ওকে প্রাপ্য সম্মান না দিয়ে কি করে ফিরে যাচ্ছো তুমি?’

নির্জন চুপটি করে রয়েছে কোনো কিছু না বলে। হঠাৎই নির্জনের গালে সপাটে দু’টো থা*প্প*ড় পড়লো! নির্জন এবার মাথা খানি উঁচু করে তাকিয়ে দেখলো এই চ*ড়টা এবার আমি মে’রেছি নির্জনকে। আমার কাছ থেকে থা*প্প’ড় খেয়ে নির্জনের মুখশ্রী রক্তি’ম বর্নের আকার ধারন করেছে! বোঝাই যাচ্ছে নির্জন বেশ রে’গে আছে কিন্তু যা হয়েছে এখন তার বিপরীতে যদি আমাকে কেউ কিছু বললে উল্টে সবাই তার দিকেই তে’ড়ে আসবে! সেই মোতাবেক নির্জন চুপ করে রয়েছে। কিন্তু আমি চুপ করে রইলাম না। মিরা কাছে প্রশ্ন করলাম।….

-‘ মিরা তোর সঙ্গে নির্জনের সম্পর্ক কতো বছরের?’

নির্লিপ্ত কন্ঠে মিরার উত্তর,

-‘ আপু ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক তিন বছরের ও বেশি।’

উপস্থিত সবাই কানাঘুষা করতে শুরু করে দিয়েছে বোন হয়ে বোনের সংসার এভাবে ন’ষ্ট করে দিলো! আবার কেউ কেউ বলছে নির্জনেরই সব দোষ সে কেনো সম্পর্ক থাকা অবস্থায় ছোটো বোনকে রেখে বড়ো বোনকে বিয়ে করতে চলে এলো?….

মিরার বাবা প্রেশারের রোগী! উনি আশেপাশের মানুষের ক’টু কথা, অ’প’মা’ন, মিরার বলা কথা সবকিছু সহ্য করতে না পেরে অ’জ্ঞান হয়ে গেলেন!…
তৎক্ষনাৎ বিয়ে বাড়ির শোরগোল থেমে গিয়ে নিশ্চুপতা নেমে আসলো কোলাহল পূর্ন বিয়ে বাড়িটি! তানহা যেনো কোনো বলছে না যেনো বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ধরাধরি করে আনোয়ার হোসেনকে যেখানে কাবিননামায় সই চলছিলো সেই সোফায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিয়ে ডাক্তারকে ফোন দেওয়া হলো। কিছুক্ষণের ভিতরই ডাক্তার এসে দেখে গেলো ডাক্তার বলেছেন যে অতিরিক্ত টে*নশনে উনার প্রেশার বেড়ে গেছিলো যার জন্য অ*জ্ঞান হয়ে গেছে। ডাক্তার কিছু ওষুধ প্রেসক্রাইব করে যায়। একটু পরেই আনোয়ার হোসেনের জ্ঞান ফিরে আসে। মিরা তার বাবার কাছে যেতেই মিরার মা তে’লে বেগুনে জ্ব*লে ওঠলো……

-‘ এই তুই তানহার বাবাকে একদম স্পর্শ করবি না! উনি ঠিকই বলেছিলেন তুই হলি একটা অ*স’ভ্য মেয়ে! তোর জন্যই তোর বাবার এসব পরিস্থিতি।’

তানহার বাবা ক্ষীন স্বরে বলে -‘ আহ! আর কথা বাড়িও না তো। যা হবার হয়ে গিয়েছে এখন আর এসব বলে তো কোনো লাভ নেই বলো? তার চেয়ে বরং যেসব অতিথিরা এসেছে তাদের খাওয়া দাওয়ার ভার পলাশকে দেখতে বলো। আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। বিয়েতো হলো না কিন্তু ওনারা যাতে পেট ভরে খেয়ে যায় সেটা দেখো।’

-‘ আপনারা সবাই চুপ করুন এখানে বিয়ে হবে এবং মিরার বাচ্চার দায়িত্বও নির্জনই নিবে। সাথে তানহা কোনো অসম্মান হতে দিবো না আমি।’

উপস্থিত সবাই এবার থমকে দাঁড়ালো নির্জনের বাবার কথায়! আবারো কানাঘুসা করতে লাগলো সবাই নির্জনতো আর মিরাকে বিয়ে করবে না যদি বিয়েই করতো তাহলে তানহাকে বিয়ে করতে আসতো না। তাহলে এই অ’বৈধ বাচ্চা সহ মিরাকে কার কাছে বিয়ে দিবেন? জট খুললো আনোয়ার সাহেবের কথায়,…..

-‘ মিজান সাহেব আপনি আমার উপর ভরসা করতে পারেন নিশ্চিন্তে! মিরার বাচ্চার বাবা যখন নির্জন তখন নির্জনই বিয়ে করবে মিরাকে! আর নির্জন আর মিরার জন্য তানহার এতোটা অপমান আর অ*সম্মান হলো এতে যেমন আপনার মেয়েও দায়ী তেমনি আমার ছেলেও আর ছেলের দায় তো আমি এড়াতে পারবো না তাই তানহার দায়িত্বও আমি নিচ্ছি।’

-‘ আপনি এসব কি বলছেন কি?’

-‘ অবাক হবেন না ভাবী। মিজান সাহেবকে আমি ভাই বলেছি আর ভাইয়ের অ*সম্মান তে হতে দিতে পারি না বলুন? তাই আপাততো মিরার সঙ্গেই বিয়ে হউক নির্জনের তারপর বাকিটা বলছি।’

বিয়েতে মিজান সাহেবও আর কোনো বাঁ*ধা দিলো না। কাজী ডেকে বিয়ে পড়ানো হলো নির্জন আর মিরার! অপর দিকে তানহা চুপটি করে সবটা দেখে যাচ্ছে কি থেকে কি হয়ে গেলো? কিন্তু পরক্ষণেই নিজের বোনের সুখের কথা ভেবে আর মাথা ঘামালো না।…..

একটু আগে তানহার হাতের থা*প্প’ড় খেয়ে নির্জন রেগে গেছিলো এখন সে মিরার সঙ্গে বিয়ে করে উৎফুল্ল হয়ে বসে রয়েছে। এটাই তো সে চেয়েছিলো আর হলোও ঠিক সেটাই। খুশি মনে, নিজের মনে বুলি আওড়াচ্ছে……

-‘ এবার সবটা ঠিক হবে তানহা ভাবি। তুমি যেটা করেছিলে যার জন্য এতোকিছু হলো এবার সেই সবকিছু ঠিক হবে। এই সব অ*পমান, থা*প্প’ড় এবার সবকিছুর উসুল হবে। আমি তো আমার ভালোবাসার মানুষকে পেয়েছিই নিজের করে। এতোক্ষণ ধরে যা কিছু সবটাই প্ল্যানের একটা অংশ ছিলো মাত্র তোমার জন্য! সবচেয়ে বড়ো চমক অপেক্ষা করছে তোমার জন্য এই বিয়েটাতে। মাঝখান দিয়ে যেই অ*সম্মান, অপ*মানিতো হলাম আর আর মিরা মিলে সেইটার ফলও একটু পরই তুমি বুঝবে। অবশেষে আমার উদ্দেশ্য সফল হলো। যার জন্য এতোকিছু হলো তার নীড়ে শান্তি ফিরবে তোমাকে পেয়ে। এবার সব অগোছালো জিনিশ গুছিয়ে এক হবে। শান্তি আসবে এক অশান্ত মানবের জীবনে যার জন্য এতোকিছু হলো।’

-‘ ওদের বিয়ে তো হয়ে গেছে ভাবী! এবার তানহার জন্য ছেলে তৈরী কিছুক্ষণের ভিতরেই আসবে।’

কি থেকে কি হয়ে গেলো আমার জিবনে! স্মরনীয় একটা দিন ছিলো আজকে অথচ আমার বোনই আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘা’ত’কা করলো! বাবার মান সম্মান রক্ষা করতে না জানি কার সঙ্গে বিয়ে করতে হবে! এই বিয়ে করা ছাড়াও হয়তো কোনো উপায় নেই! না জানি কি আছে কপা’লে!…….

#চলবে?

দুজনা পর্ব-০৯(সমাপ্তি পর্ব)

0

#দুজনা
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-৯ম/সমাপ্তি পর্ব

আজকে আমি,আদন এবং আদিল গ্রামে যাচ্ছি আদিলের বাবার এবং আমার বাবার কবর যিয়ারত করতে।আগে থেকেই আদিল তার গ্রামের দূরসম্পর্কীয় এক বন্ধুর সাথে কথা বলে হুজুর ঠিক করে রেখেছে।যারা কবর যিয়ারত করবেন।আদিল অফিস থেকে সপ্তাহ খানেকের মতন হলো ছুটি পেয়েছে।তাই এই ছুটিতেই যাচ্ছি।আমরা গ্রামের বাড়িতে আসতে দেখি বাড়ির আশপাশ অনেক পরিবর্তন হয়েছে।রাস্তার পাশে কয়েকটা টিনের বাড়ি ছিল,সেগুলো পাকা দালান হয়ে গেছে।রাস্তাঘাটের শান বাঁধা হচ্ছে।পাঁকা করবে মনে হয়।আমি আদনকে নিয়ে কার গাড়ি থেকে নামি।আদিল গাড়ি লক করে নামে।আমরা সামনে হাঁটা ধরলে পেছন থেকে আদিয়া নানি ডাক দিয়ে উঠেন,

“আরেহ প্রিয়া যে?”
আমরা থেমে গেলাম।বললাম,
“হ্যা,আসসালামু আলাইকুম।ভালো আছেন নানি?”
“হ্যাঁ,ভালো আছি রে।তোদের দয়ায় খুব ভালো আছি।তা হঠাৎ কি মনে করে গ্রামে?এ তোমার ছেলে?”
“জ্বী,নানি।”
“মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর। তা বাড়িতে যাইতেছো?”
“জ্বী,নানি।বাবার কবর যিয়ারত করতে আসছি।”
“আচ্ছা।”
“তাহলে যাই নানি।পরে আবার দেখা হবে।”
“যাও বু।”

আমরা বাড়িতে আসলাম।বাড়িটার অবস্থা ভালো না।বড় কোনো ঝড় এলে যেকোনো সময় উড়ে যেতে পারে।আমি বাড়ির ভেতর ঢুকলাম।ধূলা-বালি ভরা।তারপরও নিজের অতীত,নিজের স্মৃতি,নিজের আপন নীড় এক মায়া ছুঁয়ে গেলো!বাড়ির চারপাশ ঘুরলাম কিছুক্ষণ। আদিল আমাদের জন্যে দোকান থেকে কিছু পানীয় খাবার,কেক এবং কলা নিয়ে আসে।হাতে তুলে দিয়ে,

“আপাতত এগুলো খাও,প্রিয়া।বাবার যিয়ারত শেষ হলে আমরা বাইরে যেয়ে খাবো।”

তখন বললাম,
“আচ্ছা?আমার না খুব মন চাচ্ছে বাড়িতে ক’দিন বেড়াতে।আজকে এলাম।আর আজকে রাতেই যদি রওনা করি..!”
আদিল বললো,
“থাকা যায়।কিন্তু বাড়ির অবস্থা! ”
“সমস্যা নেই।আমি সব ঠিক করে নিব।”

এরমাঝে কয়েকজন হুজুর আমাদের উঠানে এসে দাঁড়ায়।আদিলকে ডেকে উঠে,
“কই আদিল, বাবা?আছো?”

হুজুররা চলে এসেছে।আদিল আমাকে বলে,
“থাকো তাহলে। ”

বলে আদনকে তুলে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়।আদিলের কবর যিয়ারতের এইটুকু ঘরটা পরিষ্কার করার প্রস্ততি নিই।বিকেলে আদিল আদনকে নিয়ে ফিরে।বলে,

“প্রিয়া?আমার বাবারটা কাল করবো।আমরা যেহেতু আজ এখানে থাকবো তাই কাল করতে সমস্যা নেই।”
“তোমার ইচ্ছে।”
“তাহলে তুমি আদনকে নিয়ে থাকো আমি বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসছি।”

আমি বাঁধা প্রদান করি।বলি,
“আজ মাটির চুলাতে রান্না করবো।আপনি বাজার নিয়ে আসেন।”

আদিল কুট করে হেসে দেয়।বলে,
“আজকে মাটির চুলাতে রান্না করার খুব ইচ্ছ হয়েছে, না?”
“অনেক।নিয়ে আসেন।”
“আচ্ছা,তাহলে আদন তোমার কাছেই থাকুক।”

গ্রামের অনেক মানুষই ইতোমধ্যে শুনেছে আমি গ্রামে এসেছে তাই অনেকেই আমাকে দেখতে এসেছে।আদনকে কোলে নিয়েছে।আবার আদর করে দিয়েছে।সবার সাথেই অনেকক্ষণ ধরে কথা বলি।আসলে এই মাটি,মানুষ,পরিবেশ সবটার প্রতি কেনজানি একটা টান অনুভব হচ্ছে।খুব বেশি অনুভব হচ্ছে!

———————————————————পরদিন আমিও আদিলের সাথে যাই।আদিলের বাবার কবর যিয়ারত করবে।যিয়ারত শেষ হলে আদিলের বড় ভাইয়ের সাথে আদিলের দেখা হয়ে যায়।উনার চোখমুখ কেমনজানি উদাসীন উদাসীন।হাবভাবে বুঝা গেলো উনি খুব একটা ভালো নেই।আদিল ভাবলো পাশ কেঁটে চলে যাবে।উনি থামিয়ে দেন।বলে উঠেন,

“বড়লোক হয়ে ভুলে গেলি আমাদের?”

আদিল একদন্ড চুপ থেকে তারপর বললো,
“কেনো ভুলবো।সবই মনে আছে।”
“তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করিস নি যে?মায়ের,আমাদের একবারও খবর নিয়েছিস?”

আদিল এবার চুপ করে থাকে।উনি বলেন,
“জানিস আমার সব যে শেষ!সাজানো এতবড় কোম্পানি সআ তছনছ হয়ে গেলো!পথের ভিক্ষুক বানিয়ে দিয়েছে!খেতেও পারি না।কত মানুষ ঋণগ্রস্ত হয়ে আছি মানুষের কাছে!জমি আমার ভাগের থেকে একবিঘা বিক্রি করে কিছু মানুষের দেনা শোধ করেছি।আরো এখনো লাখ লাখ টাকা পাওনা।কিভাবে দিব,কি করবো কিছুই বুঝতেছি না।কাউকেই পাচ্ছি না সাহায্য করার মতন আমাকে!সব ব্যাটা স্বার্থপর!”

বলতে বলতে ভাসুরের চোখে পানি এসে এলো।আদিল চুপ করে রইলো।এবার তিনি চোখের কোণা থেকে পানি মুছে নেন।তারপর হাক ছেড়ে বলেন,

“ঘরে যাবি না?চল?”

আদিল বললো,
“আমি ঘরে যাবো না।মায়ের সাথে একটু দেখা করবো।আর দেখা করেই চলে যাবো।”

বলে আদিল বাড়ির দিকে এগোয়।বাড়ির ছোট উঠান টায় পা দিতে শাশুড়ী মা বেরিয়ে আসেন।আমি সালাম করি উঠি।উনি আদিলকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেন।আর কাঁদতে কাঁদতে বলেন,

“এই ছেলে তোর মনে কষ্ট দিয়েছে বাপ!তাই আজ কারখানার এই হাল হলো!মানুষকে ঠকিয়ে নিজে যে কোনোদিন সুখে থাকা যায় না আজ তার প্রমাণ হলো!এখন তো বাপ বুঝে।বুঝে আর কী লাভ হলো,সব তো তছনছ হয়ে গেলো!”

শাশুড়ী মা আদিলের সাথে কথা বলার মাঝপ আমার ঝা,এবং চাচী শাশুড়ী আমার দিকপ এগিয়ে আসেন।আমি সালাম করি চাচীমাকে।তিনি সালামের জবাব নিয়ে বলেন,

“আরেহ আমাদের প্রিয়া যে!এ কি তোমার ছেলে?”
বলেই আদনকে তুলে নেন।জা আমার কাছে আসে।খুব শান্ত কন্ঠে বলে,
“কেমন আছো,প্রিয়া?”
“জ্বী,ভালো।আপনি ভাবী কেমন আছেন।”
“জানোই তো কেমন আসি।”

বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন।আমার শাশুড়ী মা আদিলকে ছেড়ে এবার বলেন,
“আমার নাতি কই?আমার নাতিকে আমাট কোলে দে।”

চাচীমা আদনকে শাশুড়ী মায়ের কোলে তুলে দেয়।শাশুড়ী কোলে নিয়েই বলেন,
“আদিলের মতন একদম আমার দাদুটা।মাশাআল্লাহ। ”

আদনকে নিয়ে খুনসুটি করেন।তারপর আমি বলি,
“মা ভালো আছেন?”

শাশুড়ী মা আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। বলেন,
“আমার উপর তোমার খুব রাগ,না?”
“নাহ,মা কি বলেন!”
“হ্যাঁ,আমি জানি।তুমি মুখে না বললেও আমি বুঝি।আমাকে মাফ করে দে মা।আমি তোর উপর অনেক অন্যায়-অবিচার করেছি।”

আমি কথাগুলো এড়ানোর চেষ্টা করলাম।বললাম,
“মা আপা কোথায়?আপাকে দেখতেছি না যে?”
“ও তোমার ভাসুরের এই হাল দেখে আর আসেনি।ওর স্বামীর আবার যদি সাহায্য করা লাগে।পৃথিবীর সবাই ই নিজের স্বার্থ বুঝে রে মা।”

আমি তপ্তশ্বাস ছাড়লাম।আমি আর কি বলবো।সত্যিই,পৃথিবীর সবাই নিজের স্বার্থটা আগে বুঝে!আর যখন তারা কোনো বিপদে পড়ে তখন নিজেদের অন্যায়গুলো ধরতে পারে।অথচ এরআগে এরা অন্ধ থাকে।

আমার ভাবনার মাঝেই ভাসুর আদিলের সামনে এসে দাঁড়ায়।দুইহাত বাড়িয়ে বলে,
“ভাইরে তুই আমাকে একটু সাহায্য কর!আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি,ভাই!তুই ই পারবি আমাকে একমাত্র সাহায্য করতে!ভাই।আমার রক্তের ভাই!”

———————————————————
আমরা ঢাকায় আসার পর আদিল ওর ব্যাংক একাউন্টের সঞ্চিত যত যা টাকা আছে, সব উনার ভাইকে পাঠিয়ে দেয়।কারণ,উনার ভাইয়ের খোটা ছিল উনি আদিলের ভরণপোষণ চালিয়েছেন,বিয়ের পর আমাদের সংসারটাও চালিয়েছেন সেই খরচ, উনি আদিলের ভাই তাই এখানে একটা দায়িত্ব আছে।তারউপর উনি হাতজোড় করে আদিলের কাছে সাহায্য চেয়েছে
এসব ভেবেচিন্তে আদিল নিজের সব দিয়ে মুক্ত করেছে।কারণ আদিল উনাদের মতন বেইমান এবং পাষাণ না।আল্লাহ চাইলে উনাকে এরথেকেও বেশি দিতে পারে!তবে,হ্যাঁ,আদিল গতকাল রাত তার মাকে ফোনে বলে দিয়েছে,
“এই ভাইয়ের সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক থাকবে ঠিকাছে,কিন্তু কখনো মুখের সম্পর্ক হবে না।মিল হবে বা।আমার যতটুকু সামর্থ্য ছিল আমি সবটাই করেছি উনার জন্যে।আর হ্যাঁ,তোমার যখন ঢাকায় আসতে ইচ্ছে হবে আসবে।যদি থাকতে ইচ্ছে হয় থাকবে।যতদিন ইছে হয়।আর হ্যাঁ, তোমার ওষুধ খরচ,অন্যান্য যত যা খরচ,সবকিছুর জন্যে আমি প্রতি মাসে তোমাকে বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিব।

আদিল তাই ই করে।মাস না আসতে ওর মাকে সাতহাজার হাত খরচ দিয়ে দেয়।কারণ এটা আদিলের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।

সমাপ্ত…..!

দুজনা পর্ব-০৮

0

#দুজনা
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-৮

ইদানীং আদিলের ভীষণ অন্যমনস্ক থাকে।অফিস থেকে ফিরলে তেমন কথা বলে না।জিজ্ঞেস করলে অনেকগুলো কথার একটি বা দু’টি উত্তর পায়।আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে সে আমাকে নিয়ে খুব চিন্তিত।কারণ,ডাক্তার বলেছে মায়ের পুষ্টিজনিত অভাবের কারণে বাচ্চা গর্ভপাতে সমস্যা হতে পারে।তাই সিজার করা লাগবে।কিন্তু সিজারের কথা মুখে তুললেই তো হাজার হাজার টাকা।আমাদের মতন নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে ওতগুলো জোগাড় করা খুবই কঠিন ব্যাপার।আর সম্ভবও না।সংসারটাই ঠিক মতন চালাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে,সেখানে সিজারের কথা ভাবাও স্বপ্নের মতন।আমি রোজ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ি আর মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন বাচ্চাটা আমার নর্মালে হয়।

———————————————————
সকাল থেকে শরীরটা ভীষণ খারাপ লাগছে।বিছানায় শুয়ে থাকি,আবার শুয়ে থাকার মাখে কাতরে উঠি।আমার নিজেরই কেমন লাগছে তা আমি নিজেও জানি না।পেঁটের মতন বারবার ঢিপঢিপ ব্যথা করছে।ব্যথাটা তীব্র যেটা আমি সহ্য করতে পারছি না।তাই মাঝে মাঝে একটু কাতরে উঠি।মা পাশের রুম থেকে আমার কাতরানের কিছু ছিঁটেফুঁটে শব্দ হয়তো শুনতে পান।জোর গলায় বলেন,

“কথা বলতেছিস, প্রিয়া?”

চুপ করে থাকি।মা আবারো,
“কথা বলতেছিস না কেনো মা?”

আমার খুব ইচ্ছে হয় আদিলকে একটিবার কল করও।বলি,
“আমার না আর ভালো লাগছে না!”

কিন্তু আদিলতো এখন কাজে।ওকে কল করলে ডিস্টার্ব হবে।কলে বস কথা বলতে দেখলে বেতন কম যদি দেয়?কিন্তু ভাবনাটা বেশিক্ষণ চেপে রাখতে পারলাম না।আসলেই আমার পেঁটে প্রচন্ড ব্যথা করতেছে যা আমি সহ্য করতে পারছি না।আমি পেটে হাত রেখে খুব জোর গলায় কাতরাতে থাকি এবার।মা জবুথবু শরীর নিয়ে খুব কষ্টে হেটে আসেন আমার রুমে।যদিও কিছুটা চোখে আবছা আবছা দেখেন,তবে মেয়ের কষ্টগুলে সহজেই যেন ধরে ফেলেন।মাথাটা উনার কোলে টেনে,

“আদিলকে কল দে!তাড়াতাড়ি কল দে!”

মায়ের যেন কান্না পেয়ে যাওয়া অবস্থা!আমি পাশ থেকে ফোনটা নিই।আদিলকে সত্যি সত্যি এবার কল দিই।বিশ মিনিটের মাথায় আদিল বাসায় এসে হাজির হয়।আমাকে কোলে তুলে নেয়।আর মাকে বলে,

“মা আপনি বাসায় থাকুন!আমি প্রিয়াকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি!”

হাসপাতালে আসার তিনঘণ্টা পার হয়ে যায় আমার এখনো সিজার করা হচ্ছে না!আমি কাচের দরজা দিই আদিলকে দেখি সে যেন কাদছে।আর বারবার কারো দিকে হাতজোড়া মিনতি করছে।বুঝতে পেরেছি ডাক্তারকে।হয়তো বলছে,বাকি টাকাগুলো আমি পরে দিয়ে দিব।দয়া করে আমার বউয়ের সিজারটা করে দিন!কিন্তু ডাক্তাররা শুনে না।আমি বুঝতে পারছি আমার হয়তো এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বেশিদিন বাঁচা যাবে না।আসলে মরে গেলেই শান্তি!বাঁচলে স্বার্থপর,নিষ্ঠুর,খারাপ মানুষগুলোকে প্রতিনিয়ত দেখতে হবে।ওপারে চলে গেলে কাউকে দেখবো না।খুব ভালো থাকবো।খুব।ভাবতে ভাবতে কখন যে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি আর পরে কিছু মনে পরে না।হুঁশ আসতে দেখি আদিলের কোলে ছোট্ট একটা শিশু।সে খুব কাঁদছে।আদিল তার কান্না থামাতে সারা রুমে পায়চারি করছে,
“ওহ বাবু কাঁদে না।শোনা বাবা আমার আম্মু ঘুম থেকে জাগলে খাবার দেবে।একটু শান্ত থাকো,বাবা আমার?উম্মাহ!”

আমার ডেলিভারি হলো।সিজার নাকি নর্মাল?ভাবতেই উঠে বসার চেষ্টা করি প্রস্রাবের জায়গায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়।বসতে পারি নি।শুয়ে যাই আবার।পেটে হাত বুলাই।নাহ সিজার হয়নি।তাহলে নর্মালে হয়েছে।তবে কিভাবে?আদিল এতক্ষণে আমাকে দেখেছে।হেসে বলে,

“আমাদের ছেলে বাবু হয়েছে, প্রিয়া।কত্ত খুশি আমি।”

বলে হাসে আদিল।খুব হাসে।তারপর বলে,
“আচ্ছা? আগে ওকে দুধ খাওয়াওতো?কিচ্ছু খায়নি ও।ডাক্তার বলেছে খুব অপুষ্ট ও।ওকে প্রচুর শুধু মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।আর তোমাকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।”

বলে চিকন-পাতলা,দেড় কেজিও হবে কিনা জানি না।বাবুকে আমার কোলে তুলে দিয়ে বেরিয়ে যায়।আমি বাবুর দিকে তাকিয়ে থাকি কিছুক্ষণ শান্ত চোখে।ভেতরটা আপনাতেই আনন্দে ভরে যায়।কপালে দুটো আলতো চুমু বসিয়ে দিই।আমার বাচ্চা গর্ভপাতের ব্যাপারটা বলি আদিলের কাছ থেকে শুনলাম।আমি যখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলি তখন আমার বাবু মোটামুটি একটা স্টেজে চলে আসে আর বাবুকে বের করা ইজি হয়ে যায় যেখানে সিজারের প্রয়োজন হয়নি।নার্স এটা খেয়াল করেছিল তখন।সেই আমাকে রক্ষা করে।আর সিজারের ওতগুলো টাকা থেকে বাঁচায়।হাসপাতাল থেকে আসার সময় আদিল তাকে কিছু টাকা হাতে দিতে চায়।কিন্তু সে নেয়নি।বলে আপনারা সুস্থ থাকুন।আবার কোনো একদিন দেখা হলে ট্রিট দিয়েন।

—————————————————–
আদিল এখন অফিস থেকে ফিরলেই ভীষণ খুশি খুশি থাকে।এতটা খুশি আমি তাকে আগে কখনো দেখি নি।কারণ জিজ্ঞেস করে ফেলি।সে হাসতে হাসতে বলে,

“জানো?আমাদের কোম্পানিটি দিনেক দিন ভালো একটা জায়গা করে নিচ্ছে।খুব প্রফিট আর্ন হচ্ছে।লাস্ট বার অন্য একটা কোম্পানির সাথে প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং এর ডিল হলো না?সেখানে কেম্পানিটি ২ কোটি টাকা আর্ন করেছে।আর যার মধ্যে সবার থেকে সবথেকে বেশি অবদান ছিল আমার।বস তো সেই খুশি।বলেছে আমাকে পরের মাসেই ম্যানেজার বানিয়ে দিবে!”

আদিলের কথায় খুশিতে যেন আমার চোখে পানি চলে আসে।

———————————————————সেদিন থেকে আমাদের আর পেছনে তাকাতে হয়নি।আদিল ম্যানেজার!খুব সম্মান অফিসে আজকাল ওর।ওর বস ওকে একটা গাড়ি গ্রিফট করেছে।যেটা দিয়ে ও সহজে যাতায়াত করতে পারে।আমরাও কোথাও ঘুরতে গেলে,বা শপিং করতে গেলে গাড়িটা ব্যবহার করি।আমাদের বাসস্থানেরও পরিবর্তন হয়েছে।আমরা এখন খুব ভালো মানের টাইলসের ফ্ল্যাটে থাকি।বড় বড় তিনটা রুম।একটা ডাইনিং,বাথরুম।আর সবখানে আসবাবে ভরপুর।আমাদের নিজেদেরও ফ্ল্যাট হয়ে যাবে।আদিলের ব্যাংকে অনেক টাকাই জমা হয়েছে।সে ভাবছে আর দুই মাস পরেই একটা ফ্ল্যাট কিনে নিবে।আর তারসাথে আরেকটা খুশির সংবাদ, আমার মাও সুস্থ্য হয়ে গিয়েছেন আগের থেকে।ডাক্তার দেখিয়েছিলাম।ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন।নিয়মমতো সেভাবেই চলছে মা।এ সবকিছু নিয়ে মহান আল্লাহর কাছে আলহামদুলিল্লাহ!

——————————————————–এভাবে দেখতে দেখতে আরো দুটা বছর কখন যে কেঁটে যায় টেরও পাইনি।সংসার,সন্তান,মা,স্বামী সবকিছুতে মনব্যস্ত হয়ে যাই।সময়ের কথা একদন্ডও মাথায় আসেনি।একদিন দুপুরে আদনানকে(আমার ছেলে)ঘুম পাড়িয়ে নিউজ পেপার পড়তে বসলাম।আর হ্যাঁ,আরেকটা কথা,আমার কিন্তু সংবাদপত্র পড়ার অভ্যেস আছে।আদিলের সাথে বিয়ের আগে,যখন স্কুল-কলেজে পড়তাম তখন প্রচুর সংবাদপত্র কিনে কিনে পড়তাম।দেশের প্রতিদিনকার খবর প্রতিদিন জানতে আমার বেশ আগ্রহ।আর বাসায় তো তখন টিভি ছিলো না।তাই সংবাদপত্রই ছিল নিউজ জানার একমাত্র মাধ্যম।আজ অনেকদিন পর পড়তে বসলাম।কিন্তু সংবাদপত্রের প্রথম পাতা থেকে দ্বিতীয় পাতা উল্টাতেই আমার চোখজোড়া ধাঁধিয়ে উঠে।চরম রকম অবাকও হয়ে যাই।সংবাদপত্রে লিখা ছিল,

“আবদুল হামিদ চামড়া কারখানাটি গত সপ্তাহে পুরোপুরিভাবে দেউলিয়া হয়ে যায় এবং লাখ লাখ টাকার মতন ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন কোম্পানির মালিক,খুলনা!”

“আবদুল হামিদ” আমার শ্বশুরের নাম।শ্বশুরের নামই কারখানাটি ছিল,যেটা এখন আমার ভাসুরের।কিন্তু দেউলিয়া হয়ে গেলো!?তারপর বিস্তারিত পড়ি!বিস্তারিত পড়ে যতটুকু বুঝলাম উনি নকল প্রোডাক্টস উৎপাদন করেছেন,যার কারণে ব্যবসায়টি অনুকূলে চলে আসে!আর এখনো প্রতিকূলে আনারতো উপায়ও নাই।অনেকক্ষণ যাবৎ চুপ করে থাকি আপনাতে।সত্যি কথা বলতে আমি ভাবতেও পারি নি এত নামকরা কোম্পানি ছিল,আর তা এত তাড়াতাড়ি দেউলিয়া হয়ে যাবে!

রাতে আদিল বাসায় ফিরতে আদিলকে বিষয়টি তৎক্ষনাৎ বলি!আদিল গুরুত্ব দিলো না।নিজ মনে গাঁ থেকে শার্ট খুলতেছে।আর শিষ বাজাচ্ছে।

“আহা শুনুন না?ভাসুরের কারখানাটা যে দেউলিয়া হয়ে গেলো!এটা কিভাবে হলো ভাবা যায়!কি অবস্থায় জানি আছেন তারা কে জানে!ইস!!”

সাথে সাথে পেছন ঘুরে আদিল আমাকে বলে উঠে,
“বিজনেস দেউলিয়া হয়েছে ওদের।আমাদের না।অন্যদের নিয়ে এত ভাবতে হবে না তোমাকে।খাবার বাড়তে যাও,আমি ভাত খাবো। প্রচুর খিদে পেয়েছে।”

আমি স্থির চোখে তাকিয়ে থাকলাম আদিলের দিকে।

চলবে…

দুজনা পর্ব-০৭

0

#দুজনা
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-০৭

আদিল ঠিক তার পরদিনই গ্রামে চলে আসে।তারপর আমি এবং আদিল ওই বাড়িতে যাই।আদিল ঘরের ভেতর ঢুকতেই আমার শাশুড়ী মা কোথা থেকে এসেই আদিলকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠেন!খুব কাঁদেন!আর কাঁদতে কাঁদতে বলেন,

“ক’টা মাস আমার সাথে কথা বলিস নি তুই?আমার কথা কি একবারো তোর মনে পড়ে নি!?মাকে কীভাবে বুলতে পারলি তুই!”

আদিল উনার মাকে শুধায়,
“কেঁদো না মা।আসলে ভাগ্য সহায় ছিল না এই বাসার কারো সাথে যোগাযোগ রাখতে।”

শাশুড়ী মা আদিলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন
শাশুড়ী মায়ের মুখটা খুব শুকনো।চোখজোড়ার শীতল চাহনি।দেখেই বুঝা যাচ্ছে শাশুড়ী মা আদিলের জন্যে এই কয়দিন খুব মন খারাপ করেছেন।সবকিছুর উর্ধ্বে আদিল উনার সন্তান।আর সন্তানদের জন্যে মা-বাবার একটু হলেও মন কাঁদে।হয়তো তা প্রকাশ করে, বা করে না।এমন সময় আদিলের ভাই আসে।অত্যন্ত ব্যস্ততা ভঙ্গিতে সোফায় বসতে বসতে বলে,

“আসছিস তুই?কি নাকি হিসেবনিকেশ আছে? বুঝা,আমিও বুঝাই।আমার কল এসেছে খুলনা থেকে।সেখানে যেতে হবে জরুরী।তাও আসতাম না,খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে। তোর ধাপাধাপিতে আসতে হলো!এবার তাড়াতাড়ি বল কি বলবি!”

আদিল বসলো ওর ভাইয়ের সামনের সোফায়।বললো,

“ব্যবসা তো খুব জমজমাট যাচ্ছে তোমার,না?”

আদিলের ভাই মুখটা অন্যদিকের রাখা দৃষ্টিটা এবার বৈচিত্র্যময় ভঙ্গিমায় ভরে যায়।আদিল হালকা করে গলা ঝাঁড়ে এবার মায়ের দিকে তাকায়।বলে,
“মা তুমি ওখানে বসো।আজ আমাদের যা কথাবার্তা হবে সবকিছুর তুমি সাক্ষী থাকবে।আর সাক্ষ্যও দেবে।”

এমন সময় আমার জা এবং ননদ আসে।জা বলে,
“মা কি সাক্ষ্য দেবে!মায়ের সাক্ষ্য দেওয়ার মতন কি আছে!”

আদিল ওর ভাবীর কথাটা উপেক্ষা করে গেলো।মায়ের দিকে আবার তাকালো।শাশুড়ী মা যেয়ে বসলেন।আমি আদিলের কাছাকাছিই দাঁড়িয়েছিলাম। আদিল বলে,

“তোমার ব্যবসা ভালো যাচ্ছে তা তোমার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে আর তা তোমার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।যাইহোক এবার আসল কথায় আছি,এই যে ব্যবসা টা করছো ব্যবসাটা কি আগে বাবার ছিল না?”
“মানে কি বলতে চাচ্ছিস তুই?”
“আগে আমার কথার উত্তর দাও!”

আমার ভাসুর এবার চিৎকার চেঁচামিচি করে উঠেন,
“এই সংসারের পেছনে আমার ষোঁল বছরের পরিশ্রম।যা ইনকাম করেছি সব এই সংসারের পেছনে ঢেলেছি।আমার সবকিছু এই সংসারে!আর তোদের ব্যবহারে আমিতো মানুষ না।আস্ত একটা রোবট!”

শাশুড়ী মা বলেন,
“আহা চিৎকার চেঁচামিচি করছিস কেনো?ঠান্ডা মাথায় বল।দেখ ও কি বলে।আর তুই বলবি।”
“দেখো মা আমি তো তোমার ছেলেকে কিছু বলিনি। উনার কথাবার্তা দেখো।”
“কি দেখবে?কি?এই মায়ের পেছনে আমার প্রতি মাসে মাসে সাত হাজার করে দেওয়া লাগছে।ওষুধ সব আমি খাইয়েছি!”

পাশ থেকে ননদ বলে,
“আমিও। মায়ের ওষুধে আমারও অনেক টাকা ছিল।”

আদিল বলে,
“আমার আগে কথা ত শুনবে।কথা শুনে তর্কাতর্কি করছো কেন?প্রিয়াদের বাসায় সেদিন খুব গরদ নিয়ে গিয়েছিলে আমার সাথে বোঝাপড়া করবে।আমিও করতাম।এখন তা করছো না।ঝগড়া করবে?”

“আমি ঝগড়া করছি না।ঝগড়া তুই করতে চাচ্ছিস।বাবা মারা যাওয়ার পর তোর সব খরচ আমি চালিয়েছি।তোর বিয়ের পরও তোর খরচ আমি চালিয়েছি।এই পরিবারটাও আমি চালিয়েছি!আর তুই না কি না বলিস আমার সাথে তোর বোঝাপড়া আছে!সাহস কত।সব বোঝাপড়া ত আমার তোর সাথে আসে।”

আদিল বললো,
“ভাইয়া তুমি একটু থামো।আমি বলতেছি।’

শাশুড়ী মা,
” আদনান থাম।শোন ও কি বলে।”

আমার ভাসুরের নাম “আদনান”।
ভাসুরের ক্ষিপ্রতা কিছুটা কমে এলে এবার আদিল বলে,
” আমি তোমার অনেক খরচ করেছি।তার হিসেব আমার কাছে।আমি তোমার সব শোধ করে দিব।আর আপুর জামাইয়েরও।”
“কবে দিবি!কবে?খুব তো দেমাক দেখাস!বাহ!”
“সেটার রাস্তা তুমি করবে।”
“মানে?”
“বিজনেস টা বাবা আমাকে এবং তোমাকে দিয়েছিল।সেখানের মালিকানা অর্ধেক তুমি,আর অর্ধেক আমি।কিন্তু যদি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে যাই,বাবা বিজনেস টা আমার নামেই দিবে বলেছিল।কারণ,বাবা তোমার নামে ব্যাংকে ত্রিশ লাখের মতন রেখেছিল ব্যবসা করার জন্যে।আর বাবা মারা যাওয়া মাত্রই সেই টাকা তুমি কি করেছো তার হিসেব এখন আমাদের কাছে নেই।বাবার ব্যবসাটারও হিসেব নেই।অথচ,সেই আমার পাওয়া হকটা তুমি নিয়ে নিলে।নিয়েছো,ভাই।নিতে পারো।এবার যেটা বলতাম,প্রিয়ার সাথে আমার বিয়ের পর আমি তোমার সেখানে গিয়েছিলাম।তুমি সেখানে আমাকে লেবারের মতন ব্যবহার করেছে।তোমাকে বলেছি আমাকে কিছুটা দায়িত্ব দিতে।দাও নি।আমি তোমার সব টাকা নিয়ে ভেগে যাবো,আবার দায়িত্ব দিলে তোমার থেকেও ধনী হয়ে যাই কিনা।যাইহোক বাদ ওসব কথা।আর আপু?তোমার স্বামীও আমার সাথে এইরকম ব্যবহার করেছে।সে কুলিদের সাথে আমাকে কাজ করতে দিয়েছে।এবার তুমিই বলো মা!তুমি যে বলতে প্রিয়া আমাকে নিয়ে আসে গ্রামে?প্রিয়া আনে নি।ও কখনো আমাকে বলে নি আসতে।আমিই চলে আসতাম শুধুমাত্র তোমার বড়ছেলের,আর দুলাভাইয়ের ব্যবহারে!হয়তো প্রিয়া এখন জানলো আমি কেন তখন ঘনঘন চলে আসতাম।আমিও কি সংসারের কথা ভাবি না?ভাবি!খুব ভাবি!কিন্তু সংসার ধরার মতন আমার হাতে কিছু নেই।খুব ইচ্ছে ছিল ব্যবসা করবো,একজন বিজন্যাসম্যান হবো।কিন্তু ডিগ্রীর সার্টিফিকেট নিয়ে ঘুরে ঘুরে ছোটখাটো চাকরি জয়েন করি।এখন কি আর চাকরি আছে মা?”

আদিলের কথা শুনে আমার চোখজোড়া বসে গেল।স্বামীর মনে এত কষ্ট অথচ কখনো জানলাম না।আদিলের কথায় সবাই চুপ হয়ে গেলো!ভাসুর উসখুস করছেন।উসখুশ শ্লথে এনে মিনিট দুয়েক পর বলেন,

“বাবা মারা যাওয়ার সময় তোকে দেখতে বলেছে।আর বাবা কিছুই বলেনি।”
“হ্যাঁ,কিন্তু তার আগে বাবা যে হিসেব করে গেছে তোমার আমার সম্পত্তি নিয়ে?”
“বাবা মৃত্যুর সময় সব সরিয়ে নিয়েছে।আমাকে তোর হাতে রেখে গেছে।তোকে বাবার স্নেহে দেখতাম।এটাই!”
“করেছো স্নেহ?!”
“কম করেছি!?কম করলে সংসারে এত খরচ কে দিয়েছে শুনি!”
“শুনি না তোমার খরচ!তবে একটা কথা শুনে রাখো ভাই,পৃথিবীর সবাই স্বার্থন্ধেষী!আপন-পরের বিশ্লেষণ এরা বুঝতে চায়না।দোয়া করি আজীবন সুখে থাকো।চলে প্রিয়া?”

বলে আদিল বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।শাশুড়ী মা কাদতেছেন।
“আদিল?বাবা?আদনান?আমিতো এসবের কিছুই জানতাম না।আদিল কি বলতেছে!”
“সব অভিনয় আর মিথ্যে তোমার ছেলের!”

————————————————–
গোনে গোনে দুইটা বছর কোনোমতে আমাদের কেঁটে গেল।আমি বাচ্চাদের পড়িয়ে এসে ভারী পেঁটটা নিয়ে আমার ছোট্ট খুপরির মতন এসে বসলাম।খুব পানির পিপাসা পেয়েছে।শক্তি নেই উঠে দাঁড়িয়ে গিয়ে টেবিলের উপর থেকে জগ নিয়ে পানি ঢেলে খেতে।মা পাশের রুমে শুয়ে আছে।মাকে যে ডেলে বলবো,”মা, এক গ্লাস পানি দাও।”
সেই অবস্থা টা নেই।আমাদের কোনো অবস্থা ই নেই এখন আর।এই দুইটা বছর খুব কষ্টে যাচ্ছে আমাদের।আমরা শহরের একটা গলির ছোট্ট ছোট্ট খুপরির মতন দুইটা রুমের বাসায় থাকি।
সেদিনের পর আদিল আমাকে এবং আমার মাকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে।গ্রামে আর যায়নি।ওর ইচ্ছে আর যাবেও না।এখানে এখন আমি আশপাশের মহল্লার কয়েকটা বাচ্চা পড়াই।সকাল থেকে শুরু করি সন্ধে পর্যন্ত।আদিলও কোম্পানিতে খাটছে খুব।তবে বেতন নাই।আগের থেকে আরো খারাপ অবস্থা।
কোম্পানিটিতে লোকসান হচ্ছে খুব যার কারণে এম্প্লিয়িদের বেতন বাড়ার বদলে কমে যাচ্ছে।সংসার টা এখন আমার সাপোর্টেই চলে অনেকটা।সেই সময় ইন্টার পাশ করেছি।সেই টুকু দিয়ে পোলাপান দের পড়াই।আমার মায়ের অবস্থাও ভালো না খুব একটা বেশি।চোখে তেমন এখন আর দেখেন না।কানেও বেশি শুনেন না।বাবার শোকে,সংসারের অভাব-অনটনে কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছেন দিনেক দিন।আমি খাটের একহাতে শরীরের ভর রেখে আস্তে উঠে দাঁড়াই।পানি খাই।পেঁটে হাত বুলাই।বুলাতেই নড়ে উঠে পেঁটটা।পেঁটের দিকে তাকাতে তৃপ্তিময় হাসি ফুঁটে ঠোঁটে।আমার শরীরের এই আরেকটা মানুষের বসবাস!সাতমাস চলতেছে আমার।মেয়ে হবে কিনা ছেলে হবে তা জানি না।ভাবছি এবার টিউশনের টাকাগুলো হাতে পেলে আল্ট্রাসনোগ্রাফিটা করিয়েই নিব।এবার আর খরচের কথা ভাববো না।

চলবে…

দুজনা পর্ব-০৬

0

#দুজনা
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-০৬

আঁটটার দিকে আমার ঘুম ভাঙ্গে।পাশ ফিরে তাকাতেই আদিলের ঘুমন্ত মুখখানার দিকে চোখ যায়।আদিল ঘুমচ্ছে। নিষ্পাপ মুখের চোখের পাপড়ি জোড়া ফ্যানের বাতাসে বারবার কেঁপে উঠছে।সাথে টকটকে গোলাপী ঠোঁটজোড়াও।তাকিয়ে থাকলাম ওই মুখে খানিকক্ষণ। বিয়ের পর প্রথম প্রথম ভাবতাম মানুষটি খুব সহজ-সরল।কারো কথায় কষ্ট নেয় কম।বা কষ্ট পেলেও তা নিয়ে ওত ভাবে না।কিন্তু ইদানীং তা তাকে মোটেই মনে হচ্ছে না।খুব রাগ আছে মানুষটির!
আদিল নয়টার দিকে ঘুম থেকে উঠে।আমি তখন সবে বাথরুম থেকে বেরুলাম।আদিল আমাকে দেখতে পেয়েই বলে,

“রেডি হয়ে নাও।আজ বাইরে নাস্তা করবো।”

আমি আদিলের কথায় বেশ অবাক হলাম।হঠাৎ বাইরে নাস্তা?পরক্ষণে ঠাহরে আসলো,আদিল এই বাড়ির সবার উপর রাগ হওয়ার কারণে তাইতো বাইরে নাস্তা করার কথা বলেছে।কিন্তু বিষয়টি আমার কাছে বড্ড বেমানান লাগছে!আমি এগিয়ে গেলাম আদিলের কাছে।খাটের উপর বসে আদিলের দিকে তাকালাম।আদিল বুঝতে পারলো আমি কিছু তাকে বলবো,
“কিছু বলবে?”
“কাল মায়ের সাথে ওইভাবে রাগটা আসলে আমাদের ঠিক হয়নি।আমি,আপনি উনাদের উপর নির্ভর করে আছি।আপনি কর্মক্ষম এখন।এখনো যদি অন্যদের উপর নির্ভর করে থাকি সেটা আসলে আমাদেরও বিবেকে বাঁধে!আর উনাদেরও তো ভবিষ্যৎ আছে তাই না?কতকাল আরেকজনের গ্লানি টানবে।”
“কি বলতে চাইছো তুমি,প্রিয়া?”
বলে আদিল ভ্রু যুগল কুঁচকে আনলো।
“আমি না কাল সারারাত ভাবলাম।উনারা সংসারটা চালায় উনাদের খরচা হচ্ছে।কথাগুলো অন্যভাবেও কথা বলা যেত।এতটা রেগেমেগে কথা বলাটা একটু বেশিই হয়ে গেলো না?আমার না ভালো লাগছে না বিষয়টা কেনজানি।
শত হোক উনারা ত আপনার মা,বোন এবং ভাবী।”

আদিলের এবার ভ্রু যুগল আরো বেশিই কুঁচকে এলো।তারপর ভ্রু যুগল মসৃণ করে বললো,
“তুমি হয়তো অনেক কিছুই জানো না প্রিয়া!তাই এভাবে কথা বলছো।বাদ দাও।রেডি হয়ে নাও।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

বলে আদিল বিছানা উঠে নিচে নেমে বাথরুমে চলে যায়।আমি ছোট্ট একটা নিশ্বাস বেরিয়ে এলো।এমন সময় শাশুড়ী মা দরজায় করাঘাত করেন।আমি দরজা খুলে দিই।উনি আমাকে উপেক্ষা করে রুমের চারপাশে তাকাতে থাকেন।আমি অপ্রস্তুতকর বললাম,
“মা কিছু খুঁজছেন?”

উনি আমার কথার জবাব দিলেন না।কিছুটা জোর গলায় “আদিল,আদিল” বলে ডেকে উঠলেন।আমি বললাম,
“মা?আদিল বাথরুমে।”

উনি আর কিছু বললেন না।ঘাড় ঘুরিয়ে আগের স্থানের দিকে হাঁটা ধরতে গেলেই থেমে গেলেন হঠাৎ।বললেন,

“আদিল বেরুলে ওকে যেন বলা হয় খেতে যেতে!”

আদিল আর কিছু খেলো না।পরের কয়েকগুলো দিনে বাইরে থেকে আদিল আমার জন্যে এবং ওর জন্যে খাবার নিয়ে আসতো।শাশুড়ী মা খাওয়ার জন্যে বললেও আদিলকে খাওয়াতে রাজি করাতে পারতো না।যতবার শাশুড়ী মা আদিলকে খেতে যেতে বলতো আদিল বারবার একই উত্তর করতো,

“যেই দিন নিজে ইনকাম করতে পারবো সেইদিন হ খাবো!”

———————————————————
এক সপ্তাহ আদিল গ্রামে থেকেছিল।তারপর আবার শহরে চলে যায়।আর যাওয়ার সময় আমাকে আমার বাপের বাড়ি রেখে যায়।বলেছিল,আমার ভাসুর গ্রামে এলে তিনিও তখন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামে আসবেন।ভাসুরের সাথে কিছু বোঝাপড়া আছে তা সমাধান করে তারপর নাহয় যেখানেই আমি থাকি তার ব্যবস্থা করবেন।আপাতত বাপের বাড়িতে থাকতাম।আমি মেনে নিই আদিলের কথা।তবে মস্তিষ্কে এখনো একটা প্রশ্নই বাঁধছে আদিল বারবার উনার বড় ভাইয়ের সাথে কি বোঝাপড়া করবে?কি এমন বোঝাপড়া!

দেখতে দেখতে আরো দু’টা মাস কেঁটে যায়।চৈত্রের খা খা রোদ চারপাশে উত্ত্যপ্ততায় হাহাকার।শুষ্ক পরিবেশের গাছপালা,পশুপাখি,মাঠ-ঘাট,নদী-নালা সব পানির তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্ত হয়ে যায়।এক চটক বৃষ্টি নামলেই যেন তাদের প্রাণ ফিরে আসবে।আমি দক্ষিণের জানলার সামনে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি।বারান্দায় মসজিদের ইমাম বসে আছেন।আর বসে বসে জোরে জোরে তসবি,দোয়া-দুরূদ পড়ছেন,এবং বাবাকে ফু দিচ্ছেন।বাবার অবস্থা ভালো না।খুবই বেগতিক।কাল রাত থেকে বাবাকে পানি খাওয়ানো হচ্ছে শুধু।বাবা বারবার পানি খেতে চাচ্ছেন!মা ভীষণ ভয়ে।বাবা যদি মরে যায়?মা চান না বাবার কিছু হোক!তাইতো শেষবা আরো একটা চেষ্টা করে যাচ্ছেন,ওষুধের কাজ তো হলো না,শেষবার হুজুরকে দিয়ে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া-দরুদ পড়ালে বাবা যদি রোগমুক্ত হলো?যদিও আমরা জানি উপরওয়ালার যখন ইচ্ছে উনার বান্দাকে রাখবেন,যখন ইচ্ছে নিয়ম যাবেন।কিন্তু তারপরও আমরা তা মানতে চাই না।চোখ জড়িয়ে এলো আমার!খুব কান্না পাচ্ছে বাবার জন্যে!এমন সময় মা আমার ঘরে এলেন,

“প্রিয়া?প্রিয়ারে তোর বাবা কি সেরে উঠবে?হুজুরতো মনপ্রাণ দিয়ে দোয়া-দরুদ পড়ছেন।আল্লাহর নিশ্চয়ই দয়া হবেন,না?”

——————————————————–
নাহ আল্লাহর আর দয়া হলো না।শেষ রাতেই বাবা পৃথিবী ত্যাগ করেন।আমাদের মাথার উপর ভেঙ্গে পড়ে আকাশ।থমকে যায় পৃথিবী।মা খুব চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন!প্রতিবেশীরা মাকে শান্ত করার চেষ্টায় আছেন।অবশ্যি আমাকে কেউ শান্ত করার চেষ্টা করছে না।কারণ আমি শক্ত একটা খুঁটির সাথে হেলান দিয়ে আঁটসাঁটভাবে দাঁড়িয়ে আছি।চুপচাপ দূরের দিকে দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছি।চোখে কোনো ভাষা নেই।মুখে কোনো কথা নেই।চোখে পানিও নেই।আমি জানি না কেন নেই।তবে কি সেই পানি আমার আরো আগেই শুকিয়ে গিয়েছে?!
দুপুরের পর আদিল আসে।এতক্ষণে সবাই আদিলের জন্যেই অপেক্ষা করেছিল।আদিল আসলে বাবার দাফন-কাপন হবে।আদিল আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।
“প্রিয়া?”

আমি আদিলকে দেখলাম।মাথাটা আদিলের বুকে রাখলাম।তারপরও কোনো কথা বলতে পারলাম না।আদিল,

“মন খারাপ করে না প্রিয়া।পৃথিবীতে বেশিদিন কেউই স্থায়ী নয়।সবাইকেই যেতে হবে।সবাইকে!”

———————————————————
দেখতে আরো কয়কেকটা মাস কেঁটে গেল।মা কিছুটা এখন স্বাভাবিক।বাবার মৃত্যুর পর মা অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছিল।আমি মায়ের সারাক্ষণ পাশে পাশে থেকেছি। বাবার মৃত্যুর পর থেকে আমি মায়ের সাথেই আপাতত থাকছি।আদিল ঢাকায় ।সে বাবার গতের সময় গ্রামে এসে আবার ঢাকায় গিয়ে এরমাঝে গ্রামে আর আসা হয়নি ওর।ওর বড় ভাই এলে আসবে তাই বললো আমাকে।ঠিক তার দিন বিশেক পর ভাসুর আমাদের বাড়িতে এসে ঘনঘটা হাজির।ভাসুর হঠাৎ আমাদের বাড়িতে আগমণ ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারলাম না।তাছাড়া আসার কারণও নেই তেমন।বিয়ের পর উনাকে একবার মাত্র দেখেছিলাম।তেমন কথা বলা হয়নি।তাই উনার আসাতে ব্যাপারটা একটু অবাক হবারই মতন।উনি সটাং বারান্দায় থাকা শক্ত কাঠের চেয়ারটার উপর ধপ করে বসেন।আমি সামনেই ছিলাম,তবে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে।বলেন,

“আদিলের ফোন বন্ধ কেন?ওকে কতবার কল করেছি কাল বাসায় আসার পর থেকে,বারবার ফোন বন্ধ বাতাচ্ছে!”

আমি বুঝলাম না ঠিক।বললাম,
“সিম তো খোলা।বন্ধ না। ”
“কিসের খোলা?!কল দিতেছি তোমার সামনে দেখো!”
বলেই উনি পাঞ্জাবীর পকেট থেকে তরহর ফোনটা বের করে আদিলকে কল লাগান।বন্ধ বাতাচ্ছে।ততক্ষণে আমার মনে পড়ে গেল সে’বার আদিল তো ওর সিম পরিবর্তন করেছিল।আর কেনোই বা পরিবর্তন করলো হুটহাট তা আমার অজানা।সেই নাম্বার ইনাকে দেয় নি?বললাম,
“ভাইয়া,উনার তো আরেকটা নাম্বার আছে!আপনি যেই নাম্বারে কল করেছেন ওটা চালান না উনি এখন আর।”

ওমনি ভাসুর চেয়ার থেকে টপটপ করে দাঁড়িয়ে গেলো।আর গদগদ গলায় বলে উঠলো,
“এটাই ভেবেছি!এটাই!পরিবারের কারো সাথে আর কথা বলবে না উনি!আমাদের মাথা খেয়ে বীর সেজেছে এখন! ওকে বলে দিও তাড়াতাড়ি গ্রামে আসতে!আমার সাথে ওর নাকি বোঝাপড়া আছে!?দেখবো কত বোঝাপড়া আছে ওর!আর আমার কি কি বোঝাপড়া আছে তাও দেখাবো!দেখবো দেমাক কই থাকে ওর!ওকে কল করে জানিয়ে দিও।মনে থাকবে ত?”

“ভাইয়া কিছু খেয়ে যান!”
“খাবো আবার!পাগল বানিয়ে দিয়েছো তোমরা!”

বলেই তরহর করে বেরিয়ে যান ঘর থেকে। আর চলে যান।

চলবে……..

দুজনা পর্ব-০৫

0

#দুজনা
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-০৫

আজকে দুইদিন হয়ে গেলো আমাদের বাসায় এসেছি।সেইদিন শাশুড়ী মায়ের ওমন কথায় আর থাকতে ইচ্ছে হয়নি।সবার সামনেই ট্রলি ব্যাগ হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসি।আমার চলে আসাতে আমার শ্বশুরবাড়ির কারোই ওতটা ভ্রুক্ষেপ হয়নি!তবে আমার ননদ একটা কথা বলেছিল তখন আমার শাশুড়ী মাকে,,

” মা?ও যদি চলে যায় তাহলে বাসার কাজ করবে কে!”

আমি চাকরানী!আমাকে মাইনে বেতনে রেখেছে সবাই।আমি ওই বাড়ির বউ না!চোখজোড়া পানিতে আবারো টিপটিপ করে উঠে।ওড়নার কোণা দিয়ে চোখের পানিটুকু মুছে মোড়া থেকে উঠে বাবার ঘরে আসি।বিছানায় শুয়ে থাকা বাবার কংকাল দেহটার দিকে তাকিয়ে থাকি কিছুক্ষণ!ভেতরটা কেঁদে উঠে আবার।এই কষ্টটা ওই কষ্টটা থেকেও বেশি!খুব বেশি!আজ আমার বাবা যদি সুস্থ থাকতেন,বাবার অনেক টাকা থাকতো শ্বশুর বাড়ির সবার কাছে আজ ভালো থাকতাম!

———————————————————
পাঁচদিনের মাথায় হঠাৎ আমার শাশুড়ী মা কল করলেন আমার ফোনে।স্ক্রিনে উনার নাম্বারটা দেখে যদিও অবাক হলাম কিছুটা, তবে নিজের স্বার্থব্যতীক কলটা যা ছিল না তা আমি নিশ্চিত ছিলাম।কল রিসিভ করি।সালাম দিই।সালামের জবাব নিয়ে বলে উঠেন,

“বাসায় আসবে কবে?বাসায় আসার যে নামগন্ধ দেখছি না তোমার!ব্যাপার কি!”

কথাগুলো খুবই নমনীয় ছিল।আরো বেশি অবাক হলাম।ছোট্ট একটা শ্বাস ছেড়ে বললাম,

“জ্বী, যাবো!”
“কবে আসবে?”
“দেখি।”
“এত দেখাদেখির সময় নাই।স্বামীর বাড়ি।চলে আসবে।রাখলাম!”

আমি চুপ করে রইলাম।শাশুড়ী মা কল কেটে দিলেন।তবে শাশুড়ী মায়ের কথাগুলো এভাবে বলার কারণটা বের করতে বেশিক্ষণ সময় লাগলো না।আদিল আবার কল করতেই পরিষ্কার হয়ে যাই।আদিল শাশুড়ী মাকে সাত হাজার টাকা পাঠিয়েছে আজ সকালে।আর টাকাগুলো ধার করেই দিয়েছে আদিল।যদিও আদিল তার ধার করার ব্যাপারটা তার মাকে বলে নি।তাছাড়া বললেও কি লাভ হত!আমি এ’কদিনে উনাকে যতটুকু বুঝলাম উনার কাছে টাকাই সব।টাকা থাকলে সম্পর্ক, না থাকলে দূরসম্পর্ক!
আজ আদিল টাকা দিয়েছে তাই আমাকে যেতে বলেছে।আমি আদিলকে বলি তার মা আমাকে তাদের বাড়িতে যেতে বলেছে।আদিল বললো,
“যেয়ে বেড়িয়ে আসো তাহলে ক’দিন।”

আমি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে হাসলাম!আমার হাসিটা আদিলের একদমই ভালো লাগলো না।আতঙ্কের মতন হয়তো ওর কাছে লাগলো।সচকিত মস্তিষ্কে বলে উঠলো সাথে সাথে,
“কি হয়েছে প্রিয়া?যাবে না কেন?”

টাকা না দিতে পারে নি তাই কিছুই খেতে দেয়নি দুইদিন ওই বাড়িতে আমাকে।উনার মায়ের এই বিষয়টা আমার উনাকে বলা হয়নি।আমাদের বাসায় এসেছি বেড়াতে;অজুহাত দিয়েছি তাকে।এভাবে কত য অজুহাত দিয়েছি তাকে!কত যে মিথ্যে বলেছি!আমি হুট করে কেনজানি আদিলের কলে তখন শব্দ করে কেঁদে উঠি মনের অজান্তে!আদিল,
“হ্যালো প্রিয়া?হ্যালো?হ্যালো?কি হয়েছে তোমার!”

কি হয়েছে কি হয়েছে বলতে বলতে আদিলের বলা কথনের মাঝে আমি কল কেঁটে দিয়েছি।এখনো বাজতেছে কল।এই নিয়ে পাঁচশোর বেশি কল করেছে আদিল।আমার মায়ের ফোনেও!কিন্তু একটা ফোন থেকেও আদিলের সাথে কথা বলা হয়নি আমার!আমি জানি না!আমি কেমন জানি।আমার সাথে খারাপ, খুব খারাপ কিছএ ঘটলেও কেনজানি চুপচাপ থাকতে পার।এটা কি আমার স্বভাব নাকি মুড অফ তা জানি না,নাকি অন্যকিছু!তবে এটা সত্য আমি এখন আর পারতেছি না!আর পারতেছি না।
মা দুপুরের পর থেকেই আমার এহেন অস্বাভাবিক ব্যবহার লক্ষ করতেছেন।তবে কিছু বলছেন না,অথবা জিজ্ঞাসা করারও সুযোগ খুঁজতেছেন হয়তো তা পারছেন না!রাতের খাবার যখন আমার রুমে নিয়ে আসেন মা তখন আর চেপে রাখতে পারেননি।একপ্রকারে বাধ্য হয়েই,

“প্রিয়া মা?আদিলের সাথে কিছু হয়েছে তোর?”

পাশে বসতে বসতে।কিছু বলি নি আমি।চুপ করে থাকি।মাও চুপ করে থাকেন আমার দিকে তাকিয়ে।কিছুক্ষণ এভাবে কাটার পর আমি দীর্ঘ একটা হাঁক ছেড়ে ছোট্ট-ধীরে কন্ঠে বলি,
“তুমি না বলেছিলে মা শাশুড়ী মায়ের কথা স্বামীকে কিছু না বলতে।আবার স্বামীর কথা শাশুড়ী মাকে কিছু বলতে?তুমি কি জানো?এই যে স্বামীকে না বলা কথাগুলোতে শাশুড়ীর কত বড় বড় অপরাধ থাকে!”

মা আমার কথা ঠিক বুঝলেন না।বললেন,
“বুঝি নি প্রিয়া!”

থাক বাদ দাও!

——————————————–
রাত একটায় দরজায় খটখট আওয়াজ!আমি শুয়েছি মাত্র।রুমের বাইরে থেকে মায়ের হাঁটাহাঁটির আওয়াজ আসছে।কে এসেছে বলতে বলতে গিয়ে দরজা খুলে দেন।দরজা খুলেই,

“আরে আদিল বাবা যে!এতরাতে!”

আমি সাথে সাথে শোয়া থেকে উঠল বসি।আদিল বলে
“জ্বী। প্রিয়া কোথায় আম্মা?”
“ও ওর ঘরেই আছে।”

আদিল হয়তো মাকে আর কিছু বলি নি
আমার রুমের দিকে চলে আসে।দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে আমার দিকে তাকায়।
“এতরাতে আপনি গ্রামে চলে এলেন!”

আদিল আমার কথা অগ্রাহ্য করে আমার কাছে চলে এলো।আমার দুই কাঁধে হাত রেখে নরম স্বরে,

“কি হয়েছে প্রিয়া তোমার?তুমি আমার কল কেন রিসিভ করো নি!কি হয়েছে তোমার?বাসার কারো সাথে কিছু হয়েছে?বলো কিছু হয়েছে?”

আমি এখন বুঝলাম আদিল এতরাতে বাসায় আসার কারণ!মানুষ পাগল হয় শুনলাম।কিন্তু এতটা মাত্রাতিরিক্ত পাগল আদিলের মতন কাউকক দেখি নি!আমার মুহূর্তে আবার কান্না চল এলো।আদিলের বুকে মাথা রাখলাম।আদিল মাথায় হাত রাখলো।আবার বললো,

“বলো আমাকে?কি হয়েছে?প্রিয়া?প্রিয় পাখি আমার!বলো!”

আদিলের এতটা আদর মিশ্রিত কন্ঠে আমি আরো বেশিই ঠায় করতে থাকলাম ওর মাঝে।কেঁদে উঠলাম আওয়াজ করে এবার।খুব কাঁদতে থাকলাম।আদিল আর কিছু বললো না আমাকে!চুপ করে রইলো।ওর চুপ থাকাটা আমার কেনজানি অন্যরকম লাগলো।মনে হলো ও আমার ভেতরের কথা ধরে ফেলতে পেরেছে সব!

———————————————————
আদিল সব জেনে গেছে!আমার চাচীমা আদিলকে সব বলে দিয়েছে।আদিল এটা নিয়ে ওর মায়ের সাথে,বোনের সাথে এবং ভাবীর সাথে খুবব লেগেছে,

“আমার বউয়ের সাথে তোমরা যা করলে তোমরা মানুষ না।তোমরা জানোয়ার থেকেও খারাপ!টাকাই তোমাদের কাছে বড় হয়ে গেল?ও কি এই বাড়ির বউ না?ওর কি এই বাড়িতে কোনো অধিকার ছিল না?গাধার মতন চাকরানীদের মতন ওকে খাটিয়ে আবার টাকাড বড়াই দেখাচ্ছো।লজ্জা করছে না তোমাদের!এতটা নীচক, খারাপ এবং জঘন্য কেন তোমরা!ঠিক আছে এই সংসারে যত যা খরচ করেছো আমাদের পেছনে সব দিয়ে দিব!সব!তোমার মেয়ের জামাইয়ের কত টাকা খরচ হয়েছে সব হিসেব আমার কাছে আছে!আর তোমার বড় ছেলেরও!তবে,তোমার বড় ছেলের সাথে আমার অনেক বোঝাপড়া আছে!”

জা বলে উঠেন,
“বোঝাপড়া মানে?কিসের বোঝাপড়ার কথা বলতেছো তুমি?”
“সেটা তোমার স্বামী আসুক!”

পাশ থেকে ননদ এবার বলে উঠেন,
“কত টাকার ক্ষমতা হয়েছে তোমার,শুনি?চলো ত আমাদের উপর।তাও জীবনে দুই বছরে কাজে লেগে এই প্রথম মায়ের হাতে সাত হাজার টাকা দিলে!আমার স্বামীর যা এই সংসারে খরচ হয়েছে তোমার সারা জীবনের পরিশ্রমেও শোধ করতে পারবে না!আবার আসছো বড়াই দেখাতে?!”
“তোমাকে কি বলেছি এই বাসায় থাকতে?আর আমাদের মাথার উপর থেকে থেকে খরচের কথা বলতে?তোমার স্বামীর বাড়ি নাই?সেখানে থাকছো না কেনো?এই বাড়িতে কি তোমার!কি এই বাড়িতে!নিজের বাড়ির পথ মাপো!তারপর খরচের কথা তুলো!দেখবো তুমি কেমন খরচ করো এখানে!”

“মা শুনেন ওর কথা!”
“আদিল?বড় বোনের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?”
“ছোট্টদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তোমার মেয়ে শেখে নি।ওহ আমিতো ভুলেই গেলাম তুমি বোধহয় শেখায় নি!”

আমি আদিলকে থামাতে গেলাম।
“দয়া করে আর তর্কাতর্কি করবেন না!রুমে চলুন!”

আমার শাশুড়ী মা,
“তুই ই তো আমার ছেলের মাথা খেলি এখন আসছিস নাটক করতে?বন্ধ কর তোর নাটক!”
“উঁচু আওয়াজে কথা বলো না মা!ভুলে যেও না ওর এই বাড়িতে অধিকার আছে!”

“প্লিজ চুপ করুন এবার!আল্লাহর ওয়াস্তে থামুন!”

“আমি যদি আর কখনো ও শুনি আমার বউকে কিছু কেউ বলেছে,বা করিয়েছে সত্যি সেদিন আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।মনে রেখো সবাই!”

বলেই আদিল সবাইকে পাশ কেঁটে রুমে চল যায়।তারপর শাশুড়ী মা, ননদ এবং জা উনারাও মুখটা আমার দিকে বাঁকিয়ে একে একে সবাই চলে যায়য়।আমি রুমে চলে আসি তারপর!আদিলের কাছে আসতেই,

“অনেক বোকা মেয়ে দেখেছি!কিন্তু তোমার মতন বোকা মেয়ে আজ দেখেছি!মানুষ এতটা বোকা হয় কীভাবে প্রিয়া?কীভাবে?এতকিছু হলো,এতকিছু ঘটলো আমাকে এর টু শব্দও শোনালে না!আমার সাথে আর কথা বলবে না।আর না!তোমার মতন বোকা মেয়েদের সাথে আমি কথা বলবো না!দূরে যাও আমার সামনে থেকে।”

আদিলের অভিমান করা দেখা হাসি চলে এলো আমার খুব!এবার আরো উনার কাছে গেলাম-দেখি উনি কতটা দূরে রাখতে পারেন! নাহ, উনি মোটেও আমাকে ঘেঁষতে দিলেন না!আরো উল্টো বলে উঠলেন,

“মার দেব!”
“দিন! দিন!আপনার হাতে মার না শুধু চুম্মাও সারাজীবন খেতে রাজি!”

বলেই সটাং শক্ত করে,খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।আর বলতে থাকলাম,
“জীবনেও আপনার থেকে দূরে সরাতে পারবেন না।এভাবে আঁটার মতন লেগে থাকবো!হু!”

এমন সময় আমার উন্মুক্ত ঘাড়ে আদিলের উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ পেলাম।আর রফাদফা কেঁপে উঠলাম। বুঝতে বাকি নেই স্বামী আমার অভিমান ভেঙ্গে গেছে।আর বউকে তার আদর করা শুরু হয়ে গেছে!

চলবে……