Tuesday, July 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1025



উইল ইউ ম্যারি মি? পর্ব-০৪

0

#উইল ইউ ম্যারি মি?
পর্ব–৪
®Fareen Ahmed

রুফটপের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় একটি পতাকা উড়ছে। প্রীতি আর জেরিন হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে একসাথে। হঠাৎ জেরিনের ফোনে ম্যাসেজ এলো। অমনি জেরিন প্রীতির হাত ছেড়ে দিতে দিতে বলল,” প্রীতি, ও নিচে আছে। আমি গেলাম।”
প্রীতি যেন অথৈ সাগরে ঢলে পড়ল। অসহায়ের মতো মুখ করে বলল,” আমাকে ফেলে তুই চলে যাবি? তোর ভরসাতেই আমি এসেছিলাম।”
” কিন্তু এখন কি করবো বল? ও যে এতো দ্রুত চলে আসবে আমি বুঝিনি।”
প্রীতি থমথমে গলায় বলল,” তোর বয়ফ্রেন্ডের কি খেয়ে-দেয়ে কোনো কাজ নেই? সারাক্ষণ তোকে ফলো করে? তুই যেখানেই যাস সেখানেই সে হাজির হয়ে যায়। ”
” আমার সুইট, কিউট বোন। রাগ করিস না প্লিজ। আমি জলদি চলে আসবো।”
” কাল শপিংমলেও তুই একই কাজ করেছিস।”
জেরিন তাড়াহুড়ো করে চলে যাচ্ছে। প্রীতি পেছন থেকে ডাকল। কিন্তু জেরিনের শোনার সময় নেই। তার হার্টবীট নিচে দাঁড়িয়ে আছে। ছুটে না গেলে তো মিস হয়ে যাবে। জেরিনের মতো এমন বয়ফ্রেন্ড পাগলী মেয়ে প্রীতি জীবনেও দেখেনি। তার এখন খুব বিরক্ত লাগছে। আজকেও কি আশরাফের সাথে বাড়ি ফিরতে হবে? আশরাফ যদি আজকেও রাস্তা ভুলে যায়!
” সাইকো!”
ফিসফিস করে শব্দটা উচ্চারণ করল প্রীতি। পেছনে ঘুরতেই ভ্যাবাচেকা খেল। আশরাফ একদম তার পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে হাতে লম্বা ট্রে নিয়ে। ট্রেতে তিনকাপ কফি। আশফাকের দৃষ্টি ধোঁয়া উঠা কফির চেয়েও উত্তপ্ত দেখাচ্ছে। প্রীতি কথা বলার আগেই আশরাফ প্রশ্ন করল,” কে সাইকো? আমি?”
প্রীতি অপ্রতিভ স্বরে বলল,” না তো। আমি জেরিনের কথা বলছিলাম। বয়ফ্রেন্ডের ব্যাপারে মেয়েটা একদম সাইকো।”
আশরাফ একটু হেসে হাতের ট্রে একটা ফাঁকা টেবিল দেখে রাখল। ওর এই হাসি দেখে প্রীতি বুঝতে পারল না যে কথাটা বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে কি-না। আসলে তো প্রীতি আশরাফকেই সাইকো বলেছে।
দুইজন কফি হাতে রুফটপের কিনারায় এসে দাঁড়ালো। প্রীতির ভয় লাগছে। নিচে তাকালেই মনে হয় পড়ে যাবে। সামনে কাঁচের দেয়াল। এই দেয়াল এতো স্বচ্ছ যে স্পর্শ না করলে এর উপস্থিতি বোঝা মুশকিল। প্রীতি অবশিষ্ট কফি পটের দিকে চেয়ে বলল,
” এইটা ফেরত দেওয়া যাবে না? জেরিন তো নেই। এখন এটা কে খাবে? শুধু শুধু ওয়েস্ট হচ্ছে।”
” ফ্লোরা এলে সে খাবে।”
” ততক্ষণে কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে না?”
আশরাফ যেন কথাটা শুনতেই পায়নি এমনভাবে কফিতে ছোট ছোট চুমুক দিতে লাগল। কিছু কিছু মানুষকে চা-কফি খাওয়ার সময় দেখতে সুন্দর লাগে। আরেকটা ব্যাপার হলো অতিরিক্ত কথা বলা মানুষটি যখন হঠাৎ শান্ত হয়ে যায় তখন তার চেহারায় একটা কিউটনেস ভাব চলে আসে। আশরাফ আজ অনেকটাই চুপচাপ। প্রীতি একনজরে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। তারপর আচমকাই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। অন্য মানুষের বয়ফ্রেন্ডের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকা অনুচিৎ। যখন আশরাফ প্রীতির ফিয়্যান্সে ছিল তখনও সে তাকিয়ে থাকতে পারতো না। লজ্জা পেতো। এখন আর লজ্জা পায় না প্রীতি। কিন্তু ভয় পায়। নিষিদ্ধ মায়ায় জড়িয়ে পড়ার ভয়। নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতিই যে মানুষের তীব্র আকর্ষণ!
” ফ্লোরা কখন আসবে?”
আশরাফ মনখারাপের কণ্ঠে জবাব দিল,” জানি নাহ!”
তার কণ্ঠে এক পশলা বিরহ। প্রীতি বলল,” মানে? আমরা কতক্ষণ অপেক্ষা করবো? আপনি ফ্লোরাকে ফোন দিচ্ছেন না কেন?”
” ফোন দিয়েছিলাম। ও বলেছে সময় লাগবে।”
আশরাফ হঠাৎ প্রীতির দিকে চেয়ে খুব উতলা হয়ে বলল,” প্রিটি! তুমি সত্যি ফ্লোরার সমস্যাটার সমাধান করতে পারবে তো? ও খুব কাঁদে। ভীষণ দুঃখী মেয়ে আমার ফ্লোরা। আমি ওর এতো দুঃখ টলরেট করতে পারছি না। মনে হয় কোনো বিগ জায়েন্ট আমার ব্রিথ পুশ করে রেখেছে। এতো বেশি কষ্ট হয়। তুমি প্লিজ কিছু করো প্রিটি! ফ্লোরার দুঃখগুলো যেন মুছে যায়। আই বেগ অফ ইউ।”
আশরাফ প্রীতির ডানহাত চেপে ধরে রাখল। যতক্ষণ প্রীতি তাকে প্রমিস না করবে ততক্ষণ যেন এই হাত ছাড়বে না। অদ্ভুত ছেলেমানুষী! প্রীতির বিরক্ত লাগার কথা। কিন্তু লাগছে না। বরং সে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল এক ছন্নছাড়া প্রেমিকের টলমল দৃষ্টির দিকে। কেবল প্রেয়সীর দুঃখের কথা চিন্তা করতেই যার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়, সেই অসম্ভব কমলমনা মানুষটির দিকে!

প্রমথকে রান্নাঘরে দেখে নাফিসাও ঢুকলেন।
” তুই আবার এখানে কি করিস ভাই?”
প্রমথ মিষ্টি হেসে বললেন,” আজকে ভাবলাম সবার জন্য বিরিয়ানী রাঁধি। প্রীতিও খুব খেতে ভালোবাসে। আবার শুনলাম জেরিনেরও নাকি ফেভারিট।”
নাফিসা ডাইনিং টেবিলের চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললেন,” তোর তো রান্না করার অভ্যাস হয়ে গেছে দেখা যায়। বেড়াতে এসেও রান্নাঘরে ঢুকে পড়েছিস। বাড়িতে কি প্রতিদিন তুই রাঁধিস?”
” বাপ-বেটির সংসার। আমি ছাড়া আর কে আছে? প্রীতি তো লেখাপড়া নিয়েই ব্যস্ত থাকে। চার-পাঁচটা টিউশন করায়। ওর সময় কই?”
” রান্নাবান্না জানে তো?”
প্রমথ স্টোভ বন্ধ করতে করতে বললেন,” তা জানে।”
” রান্না হয়ে গেল নাকি? দে তো, একটু চেখে দেখি। জেরিন আবার ঝাল খেতে পারে না৷ তুই মশলা বেশি দিসনি তো?”
প্রমথ প্লেটে অল্প বিরিয়ানী দিয়ে বললেন,” তুই নিজেই দেখে নে।”
বিরিয়ানী খেয়ে নাফিসা ফিদা হয়ে গেলেন।
” তুই তো জব্বর রান্না জানিস ভাই! মনে হচ্ছে হোটেলের বিরিয়ানী খাচ্ছি। উফ, ফাটাফাটি হয়েছে।”
প্রমথ বোনের থেকে এমন প্রশংসা পেয়ে হালকা লজ্জায় পড়ে গেলেন। প্রীতিও খাবার খেয়ে এমন বলে। প্রমথ ভাবতেন মেয়ে বুঝি বাপকে খুশি করার জন্য বলে। বাপ কষ্ট করে রান্না করেছে। ভালো না হলেও বলতে হবে। কিন্তু আজ নাফিসার কথা শুনে বুঝলেন, প্রীতি বাড়িয়ে বলতো না। নাফিসা খেতে খেতে বললেন,” মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর তোর প্ল্যান কি? একা হয়ে যাবি তো একদম। দেশে ফিরে কি করবি?”
প্রমথের বুক এখনি খাঁ খাঁ করছে। তিনি মাথা নিচু করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
” এখনও জানি না বোন। দেখি কপালে কি আছে!”
” আমার বাড়িতেই থাকতে পারিস তুই। রোজ এমন মজার রান্না করে খাওয়াবি আমাদের। আবার মেয়ের কাছাকাছিও থাকা হবে। প্রতিদিন প্রীতির সাথে দেখা হবে।”
প্রমথ বিস্মিত কণ্ঠে বললেন,” তুই কি সিরিয়াসলি বলছিস?”
” অবশ্যই সিরিয়াস। তুই থাকলে মাসুদকে বাদ দিয়ে দিবো। ড্রাইভিং তো তুই জানিসই। ওর বেতনটাই তোকে হাত খরচ হিসেবে দেওয়া হবে। ব্যাপারটা কিন্তু ভালোই। দেশে গিয়ে কি আর করবি? সেখানে কে আছে তোর?”
প্রমথ গোসল করতে যাওয়ার বাহানা দেখিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। মুখ অপমানে লাল হয়ে গেছে তাঁর। চোখ পানিতে টলমল। তিনি কষ্ট চেপে রাখলেন। মনে পড়ে যাচ্ছে শৈশবের কথা। নাফিসার সাথে তাঁর বয়সের পার্থক্য খুব বেশি নয়। দুই ভাই -বোন পিঠেপিঠি ছিল। কত হল্লাহল্লি করে বড় হয়েছে। পাতের ভাতও ভাগ করে খেয়েছে। সেই বোন এখন নিজের ঘরে ভাইকে ভাইয়ের পরিচয়ে রাখতে চায় না। রাখতে চায় চাকরের বিকল্প হিসেবে। নাফিসার প্রস্তাব শুনে খুশিই হয়েছিলেন প্রমথ। প্রীতিকে ইচ্ছে করলেই দেখতে পারবেন এর চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কিছু নেই। কিন্তু মেয়েটা যখন জানবে তার বাবা তারই আপন ফুপুর বাড়িতে কিভাবে থাকছে! তখন সহ্য করতে পারবে না। প্রীতির কত স্বপ্ন ছিল। লেখাপড়া করে বড় হবে। অনেক টাকা জমাবে। বাবাকে নিয়ে বড় ফ্ল্যাটে উঠবে। দেশ-বিদেশে ঘুরবে। কিছুই পূরণ হলো না। মাঝখান থেকে মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। সবই আল্লাহর ইচ্ছা। হয়তো এটাই ভাগ্যে ছিল। নাহলে এতোবড় ঘর থেকে হঠাৎ প্রীতির জন্য প্রস্তাব কেন আসবে? সারাজীবনের জন্য মেয়েটা পর হয়ে যাচ্ছে। প্রমথ ঠিক করলেন প্রীতির বিয়ের পর বাংলাদেশেই ফিরে যাবেন। স্কুলের দপ্তরির চাকরিটাই করবেন। তাও বোনের বাড়ির বাবর্চি কিংবা ড্রাইভার হবেন না।

প্রীতিকে কিছু বলতে হয়নি। আশরাফ নিজে থেকেই প্রীতির হাত ছেড়ে দিয়েছে। প্রীতির খুব কষ্ট হচ্ছে এখন। ঈর্ষা হচ্ছে ফ্লোরার উপর। মেয়েটা এতো ভাগ্যবতী কেন?
” অ্যাশ, হাউ আর ইউ মাই ডিয়ার!”
ফরসা, লাল চুলের একটি মেয়ে এসে উপস্থিত হয়েছে। আশরাফ মেয়েটিকে দেখেই ছুটে গেল। আলতোভাবে আলিঙ্গন করল। ইংরেজিতে বলল,” মিয়েলা, কতদিন পর দেখছি তোমাকে। কেমন আছো?”
আশরাফের মুখে মেয়েটির নাম শুনে প্রীতির ভুল ভাঙল। সে এই মেয়েকে ফ্লোরা ভেবেছিল। মিয়েলা প্রীতির কাছে এসে বলল,” কে এই প্রিটি গার্ল?”
আশরাফ হেসে বলল,” শী ইজ একচ্যুলি প্রিটি। ওর নামটাই প্রিটি।”
” ওয়াও, নাইস নেইম৷ নাইস টু মীট ইউ প্রিটি।” মিয়েলা প্রীতির সাথে হ্যান্ডশেক করল। তারপর আশরাফ আর মিয়েলা নানান বিষয় নিয়ে গল্প শুরু করল। হুটহাট পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা হলে যা হয়। প্রীতি ওদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। একসময় আশরাফ বলল,” এতোদিন পর তুমি নিউইয়র্ক এসেছো। ফ্লোরার সাথে দেখা করবে না? ও কিন্তু একটু পরেই এখানে আসবে।”
ফ্লোরার নাম শুনে মিয়েলার মুখটা কেমন গম্ভীর হয়ে গেল। প্রীতি বিষয়টা খেয়াল করল। তারপর কি যেন হলো। মিয়েলা ঠুনকো একটা বাহানা দিয়ে খুব দ্রুত বিদায় নিয়ে চলে গেল। প্রীতির মনে হলো তাদের আলোচনা আরও দীর্ঘায়িত হতো। যদি না ফ্লোরার প্রসঙ্গ উঠতো। মিয়েলা ইচ্ছে করেই আশরাফের থেকে পালিয়ে গেছে। কারণ ফ্লোরা সংক্রান্ত আলোচনা সে শুনতে চায় না। কিন্তু কেন?
মিয়েলা চলে যাওয়ার পর আশরাফ প্রীতিকে বলল,” মিয়েলা হচ্ছে আমার আর ফ্লোরার বেস্টফ্রেন্ড। আমরা তিনজন এক কলেজে ছিলাম।”
প্রীতি হেসে বলল,” আমি কিন্তু মিয়েলাকে দেখে প্রথমে ফ্লোরা ভেবেছিলাম।”
আশরাফ অবাক হয়ে বলল,” কেন?”
” আপনার থেকে গল্প শুনে আমি ফ্লোরাকে মনে মনে যেমন ভেবেছি মিয়েলা ঠিক তেমনই।”
” কিন্তু আমি তো তোমাকে ফ্লোরার লুকস নিয়ে কিছু বলিনি।”
” তবুও আমি মনে মনে ভেবে নিয়েছি। ফ্লোরা ওয়ান্ডারফুল। ”
আশরাফ চোখ বন্ধ করে মগ্ন কণ্ঠে বলল,
” ইয়েস। শী ইজ ওয়ান্ডারফুল। ওয়ান্ডারফুল স্মাইল, ওয়ান্ডারফুল হেয়ার, ওয়ান্ডারফুল ভয়েস! আমি ওর চেয়ে ওয়ান্ডারফুল পুরো পৃথিবীতে আর একটাও দেখিনি। শী ইজ দ্যা বেস্ট বিউটি ইনট্যায়ার ওয়ার্ল্ড!”
” আমার কিন্তু এখন ফ্লোরাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। ও কখন আসবে?”
” তুমি দেখতে চাও? আমি তোমাকে ওর ছবি দেখাচ্ছি।”
আশরাফ মোবাইল থেকে ফ্লোরার ছবি বের করল। প্রীতি খুব আগ্রহ নিয়ে ছবিটির দিকে তাকাল এবং চমকে গেল।

চলবে

উইল ইউ ম্যারি মি? পর্ব-০৩

0

#উইল ইউ ম্যারি মি?
পর্ব–৩
® Fareen Ahmed

জেরিন হাসতে হাসতে কিছুক্ষণ লুটোপুটি খেয়ে বলল,” আমি আগেই জানতাম আশরাফ ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড আছে। আজ-কাল তো ভিক্ষুকদেরও গার্লফ্রেন্ড থাকে। আর এতো হ্যান্ডসাম একটা মানুষের থাকবে না? তুই বিয়ে ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভালোই করেছিস।”
প্রীতি কোনো কথা বলল না। জেরিনকে ফ্লোরার ব্যাপারে সব ঘটনা বিস্তারিত জানানো শেষ। এখন সে বিচার-বিবেচনা করে রায় দিবে যে প্রীতির কি করা উচিৎ। প্রীতি বাড়ি ফিরেছে আজ সকালে। আশরাফ পৌঁছে দেওয়ার আগেই প্রমথ সাহেব হাজির হয়ে গেছেন মেয়েকে নিতে। আরোহী আর সরফরাজ আদর-আপ্যায়নে কোনো কমতি রাখলেন না। তারা আসলেই ভালো মানুষ। ভেজাল শুধু আশরাফের মধ্যেই। কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো, বাবা এখনও প্রীতিকে আশরাফদের বাড়িতে থাকা নিয়ে কিছু বলেনি। প্রীতি ভেবেছিল বাবা ভীষণ রাগারাগি করবেন। কিন্তু তিনি বেশ হাসিমুখেই ছিলেন। বাড়ি ফিরেও প্রীতিকে একটা কড়া কথা বলেননি। প্রীতির অবাক লাগল। জেরিন বলল,
” এজন্যই আশরাফ ভাইয়াকে আমি বিয়ে করতে চাইনি। কারণ আমি জানি, সুন্দর ছেলেদের ক্যারেক্টর ঢিলা হয়। ”
” ক্যারেক্টর ঢিলা বলছিস কেন? আমার কাছে তার কাজটা ঠিকই লেগেছে। সে যদি গার্লফ্রেন্ডের কথা এভাবে না বলতো তাহলে জানাও হতো না। এদিকে বিয়ে হয়ে যেতো। তারপর কতবড় সর্বনাশ হতো চিন্তা কর? সেদিক থেকে তিনি ভালো মানুষ। আমাকে আগে থেকে সব জানিয়ে দিয়েছেন।”
” এটা ঠিক বলেছিস। তবে তারপরও আমি তোকে একটা কথা বলবো। পার্টনার যদি নিজের চেয়ে পারফেক্ট হয় তাহলে তার থেকে দাম পাওয়া যায় না। তাই পার্টনার হিসেবে চুজ করা উচিৎ নিজের থেকে নিচু লেভেলের কাউকে। যার কাছে তুই অপশন হবি না, প্রায়োরিটি হবি। আর সে তোকে মাথায় তুলে রাখবে।”
” জ্ঞান দেওয়া বন্ধ কর। বিয়ে আমি এমনিতেও করবো না। কিন্তু কিভাবে বিয়েটা ভাঙবো সেই আইডিয়া দে।”
” সেটাই ভাবছি। দাঁড়া ভেবে বলি।”
প্রীতি একটু থেমে বলল,” আচ্ছা তুই আশরাফকে বিয়ে করতে চাসনি মানে? তোর সাথেও বিয়ের কথা হয়েছিল নাকি?”
” হুম। কেন তুই জানিস না? আরোহী আন্টি তো প্রথমে আমাকেই পছন্দ করে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার তো আতিফ আছে। তাই আমি নিষেধ করে দেই। পরেই তো আম্মু তোর কথা বলেছে ওদেরকে। আর ওরাও তোর ছবি দেখে পছন্দ করেছে।”
প্রীতি এই ঘটনা আগে জানতো না। এখন জেনে খুব অবাক হলো।
” তুই বয়ফ্রেন্ডের কথা বললি আর বিয়ে ভেঙে গেল?”
” হ্যাঁ। মা-ই আমাকে বললেন, আমার অন্য জায়গায় পছন্দ থাকলে জোর করে বিয়ে করার কোনো প্রয়োজন নেই। আসলে মা বোধহয় আমার থেকে বেশি তোর কথা চিন্তা করেছেন।”
প্রীতি আপ্লুত হয়ে গেল। নাফিসা ফুপু সত্যিই তার ব্যাপারে ভেবেছেন! মানুষটি সম্বন্ধে প্রীতি খুব খারাপ ধারণা পোষণ করে। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে নাফিসা কখনোই প্রীতিদের সাথে ভালো ব্যবহার করেননি। তাই বড়লোক ফুপুকে তার সবসময় অহংকারী মনে হয়। পর পর লাগে। অথচ আরোহী আন্টিরা তো জেরিনদের চেয়েও আরও বেশি বড়লোক। তাদের বাড়িতে একরাত থেকে প্রীতির একবারের জন্যেও নিজেকে আলাদা মনে হয়নি। আসলে মানুষ যেমনই হোক, আচার-ব্যবহারটা হচ্ছে প্রধান বিষয়। ফুপুর সাথে রক্তের সম্পর্ক তাও তাকে আপন মনে হয় না। আরোহী হকের সাথে প্রীতির কোনো সম্পর্কই নেই। তাও তার দিকে তাকালে মায়ের ছায়া খুঁজে পাওয়া যায়। কি আশ্চর্য! কিন্তু একটা বিষয় প্রীতি বুঝতে পারছে না। জেরিনের জন্য পাওয়া সম্বন্ধ নাফিসা ফুপু কেন ফিরিয়ে দিলেন? শুধুই জেরিনের বয়ফ্রেন্ড আছে বলে? নাকি তিনি আশরাফের কোনো দোষ-ত্রুটির ব্যাপারে জানেন? ফ্লোরার ব্যাপারটা নিশ্চয়ই জানেন। অথচ জেনেও তিনি প্রীতিকে বিয়ে দিতে চাইছেন। নিজের ফুপু সম্পর্কে এতো নিকৃষ্ট চিন্তা করার জন্য প্রীতির নিজেরই খুব খারাপ লাগল।

প্রীতির বাড়ি থেকে ফোন করে বিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সরফরাজ সাহেব মারাত্মক রেগে আছেন বিষয়টা নিয়ে। হঠাৎ কেন বিয়ে ভাঙা হলো? তার ছেলের কি খুঁত আছে? এমন ছেলে লাখে একটা। তার জন্য মেয়েদের লাইন লেগে থাকে। সরফরাজ সাহেবের মনে হচ্ছে গোড়ায় গন্ডগোল। পাত্রীপক্ষ বিয়েটা ভাঙেনি। এর মধ্যে নিশ্চয়ই আশরাফের কোনো কারসাজি আছে। সরফরাজ ডাকলেন,” আশরাফুল, বাবা আশরাফুল।”
আশরাফ প্রায় ছুটে এলো। বাবাকে সে যমের মতো ভয় পায়। কণ্ঠ শুনলেও ভয়। বাবার প্রতি এতো সমীহ থাকার একটাই কারণ। ফ্লোরা। আশরাফ বাবার সব আদেশ-নিষেধ রোবটের মতো পালন করে। শুধু ফ্লোরার ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা মানে না। তবে তার ধারণা একদিন বাবা ঠিকই কনভিন্স হয়ে যাবেন। আশরাফ সেইদিনের অপেক্ষায়। সরফরাজ বললেন,” প্রীতির সাথে কি তুমি ওই মেয়ের ব্যাপারে আলোচনা করেছো?”
” ওই মেয়ে কেন বলছো বাবা? শী হ্যাজ আ বিউটিফুল নেইম, ফ্লোরা।”
” চুপ করো তুমি!”
আশরাফ কেঁপে উঠল। সরফরাজ সাহেবের মাথায় আগুন জ্বলছে। শখ করে ছেলের নাম রেখেছেন আশরাফুল মাখলুকাত। ইসলামিক নাম। যেন ছেলেও ইসলামের পথে চলে। অথচ এই ছেলে বিয়ে করতে চাইছে বিধর্মী মেয়েকে। ছি, ছি!ওই মেয়ে এই বাড়িতে এলে সংসারে গজব সৃষ্টি হবে। সরফরাজ প্রায় গর্জন করে বললেন,” ওই মেয়ের সাথে তোমার সম্পর্ক আমি কোনোদিন মেনে নিবো না। জেনে রাখো। এখনি আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও। আর কোনোদিন আসবে না।”
আশরাফ সত্যিই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। যাওয়ার আগে নিজের গাড়ি নিয়ে গেল। এই গাড়ি বাবার দেওয়া না। মা আশরাফের জন্মদিনে উপহার দিয়েছিলেন। আশরাফ বের হওয়ার সময় একটা পয়সাও নেয়নি। শুধু গাড়িটা নিয়েছে। কারণ গাড়ি মায়ের দেওয়া। আশরাফ দ্রুত গাড়ি চালাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করল। ঘুম ভেঙে গেল মায়ের ডাকে। সে এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখেছে। বিয়েটা এখনও ভাঙেনি। বাবাও তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়নি।আশরাফ হাঁপাতে লাগল। ঠান্ডার মধ্যেও সে ঘেমে গেছে।আরোহী ছেলের ভীত চেহারা দেখে বিচলিত হয়ে উঠলেন।
” পানি খা বাবা। খারাপ স্বপ্ন দেখেছিস নাকি?”
আশরাফ পানি দিয়ে গলা ভিজিয়ে নিয়ে বলল,” আবার ওই স্বপ্নটা দেখেছি মা।”
আরোহী চিন্তিত হয়ে গেলেন। ছেলেটার খারাপ স্বপ্ন দেখে ভয় পাওয়ার অভ্যাসটা যাচ্ছে না। একা ঘুমানোর জন্যই মনে হয় এটা হচ্ছে। আরোহী আশাবাদী যে বিয়ের পর সমস্যাটা ঠিক হয়ে যাবে। আশরাফ দ্রুত লেপের আয়েশ ছেড়ে বিছানা থেকে নেমে গেল।
” প্রিটি কোথায় মা?”
” সে তো চলে গেছে তার বাবার সাথে।”
” তাই নাকি? আঙ্কেল এসে প্রিটিকে নিয়ে গেছেন?”
” হুম। তুই ঘুমিয়ে ছিলি বলে আর ডাকিনি।”
আশরাফ ফোন হাতে নিয়ে করিডোরে যেতে যেতে বলল,” তাহলে আমি বরং ফোন করে একটা খোঁজ নেই। সেইফলি বাসায় পৌঁছালো কি-না।”
” অবশ্যই। খুব ভালো হবে।”
আশরাফ রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আরোহী খুশিমনে ছেলের বিছানা গোছাতে লাগলেন। প্রীতির প্রতি আশরাফের অবসেশন আরোহীকে ভীষণ আনন্দ দিচ্ছে। এই কয়েকদিনে একবারও ফ্লোরার নাম উচ্চারণ করেনি আশরাফ৷ এটা ভালো লক্ষণ।
আশরাফ করিডোরে এসেছে যাতে মায়ের সামনে কথা বলতে না হয়। তাদের আলোচনার বিষয়-বস্তু মাকে শোনানো উচিৎ নয়।

প্রীতি বিছানায় বসে বই পড়ছিল।মোবাইলটা তার থেকে বেশ দূরে। জেরিন তখন শাওয়ার নিয়ে বাথরুম থেকে বের হয়েছে। প্রীতি বলল,” জেরিন, আমার মোবাইলটা দে তো।”
জেরিন হেসে বলল,” নে। তোর মাম্মা’স বয় ফোন করেছে।”
” মাম্মা’স বয় মানে?”
” মানে আশরাফুল মাখলুকাত। মাম্মা’স বয়।”
জেরিন নিজের কথায় নিজেই হেসে ফেলল। প্রীতি মোবাইল হাতে নিল। সাইকোটা তাকে কেন ফোন করেছে? গতকালও আশরাফের ফোন পেলে সে মুচকি হাসতো। আর এখন বিরক্তিতে কপাল কুচকাচ্ছে। জেরিন পাশে বসতে বসতে বলল,” স্পিকার অন কর। কি বলে আমিও শুনি একটু।”
প্রীতি স্পিকার অন করেই কথা বলল,
” হ্যালো।”
” প্রিটি, কেমন আছো?”
” প্রিটি না। আমার নাম প্রীতি।”
” তোমাকে যা বলেছিলাম মনে আছে? তুমি কি আঙ্কেলের সাথে কথা বলেছো?”
” এখনও বলিনি। কিন্তু আপনি টেনশন করবেন না। এই বিয়ে আমি যেকোনো উপায়ে ভাঙবোই।”
” থ্যাংকস। তুমি খুব ভালো প্রিটি। আমার ইচ্ছে করছে তোমাকে কফি খাওয়াতে। আমরা কি কোথাও মিট করতে পারি?”
প্রীতি জেরিনের দিকে তাকালো। জেরিন হাত নেড়ে নিষেধ করছে। প্রীতি শক্ত হয়ে বলল,” আমার আপনার সাথে কফি খেতে ইচ্ছে করছে না।”
” কেন?”
” এমনি।”
” তোমার কি মনখারাপ প্রীতি?”
প্রীতি আবারও জেরিনের দিকে তাকালো। জেরিন মুখ টিপে হাসছে। প্রীতি রাগান্বিত কণ্ঠে বলল,” আমার কেন মনখারাপ হবে? কি কারণে? আমার মন যথেষ্ট ভালো আছে।”
” কথা শুনে তো সেটা মনে হচ্ছে না। তুমি যদি আমার সাথে কফি খেতে না আসো তাহলে ধরে নিবো তোমার মনখারাপ।”
প্রীতি রাগ সামলাতে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলল। জেরিনের হাসিটাই তাকে রাগিয়ে দিচ্ছে বেশি। প্রীতি দাঁতে দাঁত পিষে বলল,” আপনার যা ইচ্ছা ভাবতে পারেন। আই ডোন্ট কেয়ার।”
এই বলে প্রীতি ফোন কেটে দিল। সাথে সাথেই জেরিন কথা বলল,” আরে, আরে, তুই এমন ব্যবহার করলি কেন? এখন তো সে ভাববে তুই তাকে পছন্দ করিস। তাই বিয়ে ভাঙায় তোর মনখারাপ হয়ে গেছে। তুই বিরহে মরে যাচ্ছিস।”
” কিন্তু তুই-ই তো আমাকে যেতে নিষেধ করলি।”
” হ্যাঁ। কিন্তু তোর উচিৎ ছিল কোনো বাহানা দেখিয়ে ভালোভাবে না করা। এমন রাগ দেখালে তো সে এটার ডাবল মিনিং বের করবে।”
প্রীতি হতাশমুখে বলল,” ধ্যাত, এতো রাগ উঠে গিয়েছিল যে কন্ট্রোল করতে পারিনি৷ এবার কি হবে?”
” কি আর হবে? যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। আবার ফোন দিলে স্যরি বলে দিস। বলবি তোর মেজাজ খারাপ ছিল।”
আশরাফ আর ফোন দিল না। প্রীতি জেরিনকে বলল,” আচ্ছা তুই উনাকে মাম্মা’স বয় বলিস কেন?”
” কারণ সে আসলেই মাম্মা’স বয়। তোকে যেদিন আরোহী আন্টি দেখতে এসেছিল সেদিনের কথা মনে নেই? এক মিনিটের জন্যেও ছেলেকে একা ছাড়েনি। আশরাফ ভাই কত চেষ্টা করেছে তোর সাথে আলাদা কথা বলার জন্য। কিন্তু আন্টির জন্য পারেনি। সবসময় ছেলেকে পাহাড়ায় রাখে৷ তোদের বিয়ে হলে জুটিটা ভালোই মিলতো। তুই ডেডি’স প্রিন্সেস। আর আশরাফ ভাই মাম্মা’স বয়।”
প্রীতি একটু গম্ভীর হয়ে চিন্তা করে বলল,” আচ্ছা এমনও তো হতে পারে যে আরোহী আন্টি ফ্লোরার ব্যাপারে সব জানেন। তাই তিনি আশরাফকে আলাদা কথা বলতে দেয়নি। পাহাড়া দিয়ে রেখেছে।”
” হুম। হতেও পারে।”
প্রীতির ফোন টুং করে বেজে উঠল। আশরাফ ম্যাসেজ করেছে,” আমি বাড়ি থেকে বের হচ্ছি। তোমার জন্য কফিশপে ওয়েট করবো। যদি না আসো, তাহলে মনে করবো বিয়ে ভাঙায় তোমার মনখারাপ হয়েছে। আমার ধারণা নিশ্চয়ই সত্যি না।”
প্রীতি স্তম্ভিত হয়ে গেল। লোকটা তো ভালোই শেয়ানা!
কথার প্যাঁচে ফেলে প্রীতিকে বাসা থেকে বের করতে চাইছে। জেরিন ম্যাসেজটা পড়ে হাসতে হাসতে বলল,” প্রীতি তুই যা প্লিজ। গিয়ে প্রমাণ করে দে যে ওর মতো দশটা পাত্র তোকে রিজেক্ট করলেও তোর মনখারাপ হবে না। তুই কোনো ফেলনা জিনিস না।”
” সত্যি যাবো?”
” হুম অবশ্যই।”
” কিন্তু একটা প্রবলেম। আমার মনে হয় উনি অন্য কারণে দেখা করতে চাইছেন।”
” অন্য কারণটা আবার কি?”
প্রীতি ফ্লোরার বাবা-মায়ের ডিভোর্সের ঘটনাটা বলল। জেরিন ভ্রু কুচকে বলল,” আজব তো! এই ছেলে তোকে ভালোই বোকা পেয়েছে। মগের মূলুক নাকি? তার হেল্প করা ছাড়া তোর আর কোনো কাজ নেই? তুই কি উত্তর দিয়েছিস?”
” আমি বলেছি চেষ্টা করে দেখবো।”
জেরিন কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে বলল,” গাঁধী!”

চলবে

উইল ইউ ম্যারি মি? পর্ব-০২

0

#উইল ইউ ম্যারি মি?
পর্ব–২
®Fareen Ahmed

জানালার বাহিরে শীতল শুভ্র রাত। বরফ এখনও জমেনি। তাই গাড়ি চালানো সহজ হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরেই আর এই রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামা সম্ভব হবে না। যা বোঝা যাচ্ছে, প্রীতিকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার পর আবার নিজের বাড়ি ফিরে যেতে ভালোই সমস্যা হবে আশরাফের। তবে এই নিয়ে প্রীতি বিচলিত নয়। লোকটার সমস্যা হওয়াই উচিৎ। প্রীতিকেও তো সে কতবড় সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। প্রীতি এখন কিভাবে বিয়েটা ভাঙবে? বাড়ি ফিরে জেরিনের সাথে এই নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। এসব ব্যাপারে জেরিনের মাথা থেকে অনেক কুবুদ্ধি বের হয়। প্রীতি সহজ-সরল মেয়ে। তার চেহারার মতো মনটাও খুব সাদা। জটিলতার সে কিছুই বোঝে না। তার চিন্তা-ভাবনাগুলোও তার মতোই সরল।
আশরাফ পাশে বসে ড্রাইভিং করছে আর নানান কথা বলছে। প্রীতি শুনছে আবার শুনছে না। ফ্লোরা সংক্রান্ত আলোচনায় তার আগ্রহ নেই। এর চেয়ে জানালার বাহিরে সারি সারি ম্যাপল গাছের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতেই বেশি আগ্রহী সে।
বিরাট অট্টালিকার সামনে গাড়ি থামল। আশরাফ হাসি মুখে বলল,” নামো, চলে এসেছি।”
প্রীতি হতচকিত দৃষ্টিতে আশেপাশে দেখতে লাগল। এ কোথায় এসেছে তারা? এটা তো নাফিসা ফুপুর বাড়ি না।
” এখানে কেন নামবো?”
আশরাফের সম্বিৎ ফিরল প্রীতির প্রশ্ন শুনে। কপালে হাত রেখে বলল,” ওহ মাই গড! কথা বলতে বলতে একদম খেয়াল ছিল না। তোমাদের বাড়ির রাস্তা না ধরে নিজের বাড়ির রাস্তায় চলে এসেছি। এক্সট্রিমলি স্যরি প্রিটি।”
প্রীতির মুখ চুপসে গেছে। মনে হচ্ছে মেয়েটা এখুনি কেঁদে ফেলবে। আশরাফ বলল,” তুমি খেয়াল করবে না? আমার না হয় মনে ছিল না। তুমি তো বাহিরেই তাকিয়ে ছিলে। একটু বলবে না আমাকে যে ভুল পথে যাচ্ছি?”
প্রীতি বোকার মতো তাকিয়ে আছে। সে কিভাবে বুঝবে কোনটা ভুলপথ আর কোনটা সঠিক? তার কাছে তো সব রাস্তা একই রকম লাগে। আশরাফ হাত মুঠো করে স্টেয়ারিং এ সজোরে একটা ধাক্কা মারল। আফসোস করে বলল,” ড্যাম! কি হবে এখন? আবার গাড়ি ঘোরাতে হবে। একদম অপোজিট রোড!”
প্রীতি চিন্তিত গলায় প্রশ্ন করল,
“এখান থেকে যেতে কতক্ষণ লাগবে?”
” মিনিমাম ওয়ান আওয়ার। আর যদি ফুল স্পিডে চালাই তাহলে হাফ এন্ড আওয়ার লাগতে পারে। কিন্তু তুমি সেটা টলরেট করতে পারবে না।”
প্রীতির ভয় লাগছে। বাড়ি ফিরতে আরও একঘণ্টা সময়! কি একটা অবস্থা। বাবা তাকে আর কখনোই একা বের হতে দিবে না। এতোবড় ভুল কিভাবে করল আশরাফ? প্রীতি হতাশ দৃষ্টিতে তাকাল।
আশরাফ সহসা সিট বেল্ট খুলতে খুলতে বলল,” বাদ দাও প্রিটি। যা হয় ভালোর জন্যই হয়। এই সুযোগে তুমি আমাদের বাড়িতে ডিনার করতে পারবে। বাবা-মা’ও খুব খুশি হবে তোমাকে দেখলে।”
আশরাফের প্রস্তাব শুনে চোখ কপালে উঠে গেল প্রীতির।
” না, না, এটা কি করে হয়? আমি এখন আপনাদের বাড়িতে ঢুকলে তো আমার ফিরতে আরও লেইট হয়ে যাবে। বাবা টেনশন করবে।”
” ফোন করে বলে দিও। আঙ্কেল নিশ্চয়ই সিচুয়েশন বুঝবেন। এখন আবার গাড়ি ঘোরানো ঠিক হবে না। ওয়েদার ভালো নেই। তাছাড়া তুমি আমাদের বাড়িতে প্রথমবার এসেছো। আমি তোমাকে এতো সহজে যেতে দেই কিভাবে? আফটার অল, ইউ আর মাই গুড ফ্রেন্ড।”
প্রীতি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বলল,” গুড ফ্রেন্ড?”
” আমরা কাপল না হতে পারলাম। এটলিস্ট ফ্রেন্ড তো হতেই পারি। তাছাড়া তুমি আমার কতবড় উপকার করেছো!”
প্রীতি মনে মনে একটু হাসল। যাকে এতোদিন প্রেমিক পুরুষ রূপে কল্পনা করেছে তাকে হঠাৎ করে বন্ধু ভাবা প্রীতির জন্য একদম সহজ ব্যাপার না। সে যাকে স্বামী হিসেবে পায়নি তাকে বন্ধু হিসেবেও চায় না। প্রীতি ছোট নিঃশ্বাস ছেড়ে উত্তর দিল,
” উপকার এখনও করিনি। বিয়ে ভাঙার ব্যাপারে আমি বাবার সাথে কথা বলবো। তারপর দেখা যাক।”
” সেজন্যই বলছি। তোমাকে ভেতরে যেতেই হবে। একটা ট্রিট তোমার পাওনা। আজকে রাতে আমাদের সাথে এখানেই থাকো না। কাল সকালে চলে যেও।”
প্রীতি বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকাল। কি সহজভাবেই না আশরাফ কথাটা বলে ফেলেছে। প্রীতি বাবার অনুমতি ছাড়া কলেজেও যায় না। সেখানে আশরাফদের বাড়িতে একরাতের জন্য থাকা মানে বিনা নোটিশে বাবার হার্ট ফেইলের ব্যবস্থা করা। অসম্ভব!

আরোহী হক প্রীতির প্লেটে আরও একটু সালাদ তুলে দিলেন। প্রীতির খেতে ইচ্ছে করছে না। রেস্টুরেন্ট থেকে তারা ইতিমধ্যে খেয়ে এসেছে। তাই পেটে বেশি জায়গা নেই। কিন্তু আরোহী খুব যত্ন নিয়ে প্রীতিকে খাওয়াচ্ছেন। এইভাবে কেউ যত্ন করলে নিষেধ করা যায় না। প্রীতির আবার একটা বাজে স্বভাব হলো, সে কখনোই কাউকে নিষেধ করতে পারে না। এমন রোগ অনেক মানুষেরই থাকে। কিন্তু প্রীতির রোগটা একটু বেশি করেই আছে। যেমন আশরাফকেও সে নিষেধ করতে পারেনি। ঠিকই জোর করে আশরাফ তাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। হবু শাশুড়ী আরোহী প্রীতিকে দেখে কতই না খুশি! তাকে সাথে নিয়ে খেতে বসেছেন। প্রীতির পেট ভরা ছিল। তবুও সে আরোহীকে নিষেধ করতে পারল না। শত হলেও তার হবু শাশুড়ী। যদিও এই বিয়েটা হবে না। কিন্তু সেই কথা তো এখনও কেউ জানে না। একটু পর সরফরাজ ইসলাম এলেন। গায়ে সাদা পাঞ্জাবী আর পায়জামা। মাথায় সাদা রুমাল বাঁধা। বোঝাই গেল নামায ঘর থেকে উঠে এসেছেন। গা থেকে আতরের সুভাষ আসছে৷ তজবী হাতে নিয়ে মুচকি হেসে প্রীতির সাথে কুশল বিনিময় সারলেন তিনি। কথা বললেন না কারণ জরুরী দোআ পড়ছেন। প্রীতির খুব মায়া হলো। আহারে, কত পরহেজগার একজন মানুষ! অথচ তার ছেলেটাকে দেখো, খ্রিস্টিয়ান মেয়ের সাথে লিভ টুগেদার করার জন্য বিয়ে ভেঙে দিচ্ছে। যদিও অন্য মানুষের জীবন নিয়ে প্রীতির নাক গলানোর ইচ্ছে নেই। আশরাফ এখন তার কাছে অন্য মানুষই বটে। বিয়েটা হলেই না নিজের মানুষ হতো।
” আর কিছু খাবে মা?”
” না আন্টি। আমার পেট ভরে গেছে।”
আরোহী আহ্লাদী দৃষ্টিতে প্রীতির মিষ্টি চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলেন। কোমল স্পর্শে প্রীতির চিবুক ছুঁয়ে বললেন,
” প্লিজ আমাকে মা বলে ডাকো। আর কয়েকটা দিন পরেই তো বিয়ে। এখন থেকে প্র্যাকটিস না করলে অভ্যাস হবে না তো।”
প্রীতি কৃত্রিম লজ্জা মেশানো হাসি দিল। তার আসলে অস্বস্তি লাগছে। আরোহী প্রীতির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,” তুমি আসলেই খুব প্রিটি একটা মেয়ে।”
প্রীতি মনে মনে বলল, “আপনার ছেলেও আমাকে একই কথা বলে। কিন্তু প্রশংসা করে না, ভুল করে। নামের ভুল উচ্চারণ। প্রীতি থেকে প্রিটি।” সরফরাজ সাহেবের দোআ শেষ হয়েছে। তিনি প্রীতির কাছে এসে হাসিমুখে জানিয়ে দিলেন,” তোমার বাবার সাথে কথা হয়েছে মা। তিনি তোমাকে আমাদের সঙ্গে থাকার অনুমতি দিয়েছেন।”
প্রীতি অবাক হয়ে গেল।
” সত্যি বাবা অনুমতি দিয়েছেন? আপনি কি বলে রাজি করালেন আঙ্কেল?”
সরফরাজ হেসে ফেললেন। আরোহী বললেন,” রাজি না হয়ে উপায় কি? তোমার বাবা তো আর বরফে ঢাকা রাস্তা পেরিয়ে তোমাকে নিতে আসতে পারবে না। তাই অনুমতি দিয়েছেন। আমি জানতাম দিবেন।”
প্রীতি চিন্তিত মুখে পানির গ্লাস হাতে নিল। ঘটনা এখানেই শেষ হবে না। বাবা নিশ্চয়ই কিছুক্ষণের মধ্যে প্রীতিকে ফোন করে একশো একটা ঝারি দিবেন।
আরোহী সরফরাজের দিকে চেয়ে উৎসাহী কণ্ঠে বলল,” জানো আমার কি ইচ্ছে করছে?”
” কি?”
” কাজী ডেকে এখনি দু’জনের বিয়ে পড়িয়ে দিতে।”
প্রীতির মুখ থেকে পানি ছিটকে দেয়ালে গিয়ে পড়ল।খুকখুক করে কাশি উঠল। আরোহী মাথায় হাত দিয়ে কাশি থামানোর চেষ্টা করলেন।
” কি হয়েছে মা?”
” কিছু না আন্টি। ওই একটু বিষম উঠেছে আর কি।”
” বিষম কেন উঠল?”
প্রীতি উত্তর না দিয়ে বড় করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। যে ভয়ংকর কথা সে শুনেছে, বিষম তো উঠবেই। হার্ট ফেইল যে করেনি এটাই বেশি। সরফরাজ হাসতে হাসতে বললেন,” আন্টির কথায় কিছু মনে করো না। তোমার বাবার অনুমতি ছাড়া আমরা তোমাকে পারমানেন্টলি ঘরে তুলবো না।”
সরফরাজ আর আরোহী একসাথে হাসতে লাগলেন। খুব প্রাণবন্ত তাদের হাসি। দু’জনই অমায়িক মানুষ। এমন বন্ধুর মতো প্রাণোচ্ছল শ্বশুর-শাশুড়ী কে না চায়?
আরোহী খুব শৌখিন মহিলা। প্রীতিকে নিজের ঘরে এনে আলমারী খুলে বসেছেন। একের পর এক শাড়ি গয়না বের করছেন। তিনি হয়তো সাজসজ্জা নিয়ে আলোচনা করতে খুব ভালোবাসেন। প্রীতিও ভালোবাসে। বিয়েটা হলে শাশুড়ীমায়ের সাথে তার খুব জমতো। এই কথা ভেবে প্রীতি নিজেই নিজেকে একটা গালি দিল। ঘুরে-ফিরে সে বিয়ে না হওয়া নিয়েই আফসোস করছে। অথচ বিয়েটা হয়ে গেলে যে তার কতবড় সর্বনাশ হতো সেটা নিয়ে তো একবারও শুকরিয়া আদায় করছে না। প্রীতি এই বিয়ে ভাঙতে চায়। আশরাফ তার ভালোবাসা নিয়ে সুখে থাকুক। প্রীতিও খুব শীঘ্রই আশরাফকে ভুলে যাবে। এতো গয়নাগাটি দেখে প্রীতির মনে পড়ে যায়, তার হাতেও একটা হিরার আংটি আছে। যেটা আশরাফের পরিবার দেখতে এসে তাকে পরিয়ে দিয়েছিল। বিয়ে ভাঙার পর এই জিনিসটা কি ফেরত দিতে হবে?
আরোহী প্রীতিকে স্বর্ণের বড় বড় নেকলেস দেখাচ্ছেন। সবকিছু এই বাড়িতে বউ হয়ে আসার পর প্রীতি পাবে। আশরাফের কোনো ভাই-বোন নেই। সব সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী আশরাফ। সেই একমাত্র ছেলের একমাত্র বউ হলে প্রীতিই পাবে সব স্বর্ণ-গয়না। কিন্তু প্রীতির কখনোই স্বর্ণের প্রতি আকর্ষণ নেই। তবে একটা ছোট্ট পাতলা নেকলেস দেখে তার ভালো লাগল। নেকলেসটা হাতে নিয়ে আয়নার কাছে গেল। গলার কাছে ধরল। এমন একটা নেকলেস তার মায়েরও আছে। আরোহী এই কান্ড দেখে প্রীতিকে নেকলেসটা পরিয়ে দিলেন। প্রীতি পরতে চাইছিল না। আরোহী জোর করলেন। তারপর একে একে তাকে আরও গয়না পরালেন। একটা দুইকেজি ওজনের লাক্সারি লেহেঙ্গা পরানোর পর প্রীতিকে একদম বউয়ের মতো লাগছিল।
প্রীতি আয়নায় নিজেকে দেখে লজ্জায় কুকড়ে গেল। গা ভর্তি দামী গয়না। প্রীতি কখনও ভাবেনি এইভাবে সে কোনোদিন সাজতে পারবে। আশরাফের বউ হওয়ার স্বপ্ন সে দেখে না। কিন্তু আরোহীর স্নেহও সে অগ্রাহ্য করতে পারছে না। শুধু ভদ্রহিলার মন রাখতেই হাসিমুখে নিজেকে সাজাতে দিয়েছে। আরোহী সাজগোজের পর প্রীতিকে জোর করে আশরাফের ঘরে পাঠালেন। আশরাফ প্রীতিকে এই অবস্থায় দেখে হেসেই খু*ন।
” তোমাকে একদম থিয়েটার গার্ল লাগছে প্রিটি।”
প্রীতি মুখ ভার করে বলল,” আমি সাজতে চাইনি। আন্টি জোর করে সাজিয়ে দিলেন। মানাও করতে পারিনি।”
আশরাফ ঠোঁটের নিচে হাত রেখে কিছু একটা ভাবছিল। হঠাৎ মনে পড়ায় বলল,” গট ইট, তোমাকে একদম সাউথ ইন্ডিয়ান ফিল্মের ক্যারেক্টর মনে হচ্ছে।”
” আপনি সাউথ ইন্ডিয়ান মুভিজ দেখেন?”
” ইংলিশ সাবটাইটেল দিয়ে দেখি মাঝে মাঝে। তুমি ওই মুভিটা দেখেছো? অনুশকা প্রাচীনকালের রানী থাকে। বিশ্বাস করো, ওই মুভিতে আনুশকার যেই লুক ছিল তোমার লুকও একদম সেইম। হাতে একটা তলোয়ার থাকলেই পারফেক্ট মানাতো। একদম লেডি ভিলেন।”
প্রীতির রাগ লাগছে। তাকে তো এখন লেডি ভিলেন লাগবেই। তাহলে হিরোইনটা কে? ওই সাদা চামড়ার ভুতনী? লালচুলো বান্দরী? কি যেন নাম? ফ্লোরা!
আশরাফ বলল,” এদিকে এসো তোমাকে একটা ম্যাজিক দেখাই। মজা পাবে।”
” আপনি কি ম্যাজিশিয়ান?”
” উহুম। কিন্তু টুকটাক জানি আর কি। ম্যাজিশিয়ানদের মতো এতো ডেডিকেশন আমার নেই। থাকলে ঠিক হয়ে যেতাম।”
” তাই বুঝি? আচ্ছা আপনার এইম ইন লাইফ কি?”
” বাংলাদেশে যাওয়া।”
প্রীতি অবাক হলো। কি বলে এই ছেলে! আমেরিকার মতো দেশে থেকে তার জীবনের উদ্দেশ্য নাকি বাংলাদেশে যাওয়া! তার মতো ছেলের জন্য বাংলাদেশে যাওয়া তো পান্তাভাতের মতো ব্যাপার।
” আপনি কখনও বাংলাদেশে যাননি?”
” কখনই যাইনি।”
” কি বলেন? নিজের মাতৃভূমিতেই যাননি? আঙ্কেল-আন্টি কখনও আপনাকে নিয়ে যায়নি?”
” উহুম!”
খুব মনখারাপ করে কথা বলছে আশরাফ। প্রীতি বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,” কেন নিয়ে যায়নি?”
” কারণ বাবা-মা চায় না আমি বাংলাদেশে যাই।”
” আআশ্চর্য! তারা কেন এটা চাইবে না?”
” এর পেছনে একটা কারণ আছে। আমি ঠিক করেছি বাংলাদেশে গেলে কমপক্ষে তিনমাস থাকবো। টানা একমাস আমি রিক্সা চালাবো। তারপরের একমাস ভ্যান চালাবো আর রেলওয়ে স্টেশনে কুলির কাজ করবো। পনেরো দিন ভিক্ষা করবো আর বাকি পনেরো দিন কৃষিকাজ করবো।”
” কৃষিকাজ ঠিকাছে। কিন্তু রিক্সা চালোনো, কুলিগিরি, ভিক্ষা, এসব কেন?”
” শখ! মানুষের কি শখ থাকতে পারে না?”
” এগুলো আবার কেমন শখ? আমাদের দেশের মানুষ তো এসব বাধ্য হয়ে করে।”
” এজন্যই আমি শখ থেকে করবো। আমি দেখতে চাই, শখের বশে রিকশা চালাতে কেমন লাগে। ভাঙা থালা আর ছেঁড়া শার্ট পরে সবার কাছে ইংরেজিতে ভিক্ষা চাইবো। সবাই বলবে শিক্ষিত ভিক্ষুক। ব্যাপারটা মজাদার হবে না?”
প্রীতি বক্রদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আশরাফ হাসছে। ফিচেল হাসি। ছেলেটা আসলে তার সাথে ফাজলামি করছে। ফাজিল কোথাকার! প্রীতি ঠিক করল আর এই ফাজিলের সাথে কথাই বলবে না। সে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলো। আশরাফ পেছন থেকে ডেকে বলল,” লিসেন প্রিটি।”
যদিও প্রীতি ভেবেছিল থামবে না তবুও তার পা দু’টো থেমে গেল। আশরাফ চেয়ার থেকে উঠে এসে বলল,” তোমার ফুপা আর ফুপুর মধ্যে সারাক্ষণ ঝগড়া লেগে থাকে তাই না?”
প্রীতি একটু চমকে গেল। ছেলেটা হঠাৎ পারিবারিক বিষয় টেনে কথা বলছে কেন? প্রীতি ভ্রু কুচকে বিরক্ত কণ্ঠে বলল,” হ্যাঁ লেগে থাকে। তো কি হয়েছে?”
” তুমি আসার পর থেকে ঝগড়াটা আর হচ্ছে না। তুমি তাদের সব ঝামেলা মিটিয়ে দিয়েছো। রাইট?”
” হ্যাঁ। এটা আমি ছোটবেলা থেকেই পারি। শুধু আমার বাড়ি না, যেকোনো বাড়িতে ঝামেলা হলেই আমি মিটিয়ে দিয়ে আসি।”
” ভেরি গুড। এজন্যই তোমাকে আমার দরকার।”
” কেন? আপনার মা-বাবাও কি ঝগড়া করে? কিন্তু দেখে তো মনে হয় না। আঙ্কেল-আন্টি কত হাসিখুশি!”
” আরে আমার মা-বাবা না। আমি ফ্লোরার জন্য বলছি।”
ফ্লোরার নামটা শুনেই কান আবার গরম হয়ে গেল প্রীতির। মুখ হয়ে গেল ভার। আশরাফ বলল,” ফ্লোরার মা-বাবা রোজ ঝগড়া করে। তাদের ঝামেলাটা ডিভোর্সের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। বাবা-মায়ের ডিভোর্স হলে ফ্লোরা বেচারি প্রচন্ড ভেঙে পড়বে। সামনে ওর এক্সাম। পড়াশোনায় মন দিতে পারছে না মেয়েটা। বাড়ি ফিরলেই সারাক্ষণ বাবা-মায়ের হাউকাউ। মাঝে মাঝে আমাকে ফোন করে কাঁদে। সে তার বাবা-মাকে খুব ভালোবাসে তো। তুমি কি তাদের আলাদা হওয়াটা আটকাতে পারবে প্রিটি?”
প্রীতির খুব বিরক্ত লাগছে। তার গার্লফ্রেন্ডের বাবা-মায়ের ডিভোর্স হলে এখানে প্রীতির কি করার আছে? প্রীতি কিভাবে তাদের আলাদা হওয়া আটকাবে? আর চেনা নেই, জানা নেই এমন দু’জন মানুষ প্রীতির মিষ্টি কথায় কি ডিভোর্স নেওয়া থামিয়ে দিবে? কি আজব! প্রীতি মনে মনে আশরাফকে বিছরি কয়েকটা গালি দিলেও মুখে বলল,” আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি।”

চলবে

উইল ইউ ম্যারি মি? পর্ব-০১

0

#উইল ইউ ম্যারি মি?
পর্ব– ১
®Fareen Ahmed

” আমি একজনকে ভালোবাসি। তার নাম ফ্লোরা। বাবা ছেলের বউ হিসেবে চায় বাঙালি মুসলিম মেয়ে। ঠিক তোমার মতো। কিন্তু ফ্লোরা বিদেশী আবার খ্রিস্টিয়ান। ওকে কখনোই আমার ফ্যামিলি মেনে নিবে না। তাই আমরা ঠিক করেছি বিয়ে না করেই সারাজীবন লিভ-ইন করবো। কিন্তু তোমার সাথে আমার বিয়ে হলে সেটা সম্ভব না। তুমি নিশ্চয়ই চাও না তোমার হাসব্যান্ড বিয়ের পরেও গার্লফ্রেন্ডের সাথে লিভ-ইন রিলেশনে থাকুক!”
প্রীতির পায়ের নিচের মাটি নড়ে উঠল। মাথায় আচমকা বিকট শব্দ হলো। আশরাফের কথা শুনে মাথা ঘুরছে। ইংরেজি সে কম বুঝে। কিন্তু আশরাফ ইংরেজি আর বাংলা মিশিয়ে একটি অদ্ভুত শব্দে কথা বলছে। যা বুঝতে একদম অসুবিধা হচ্ছে না প্রীতির। কিন্তু কথাগুলো মানতে অবশ্যই অসুবিধা হচ্ছে। যখন প্রথমবার সে আশরাফকে দেখেছিল, মনে মনে তখনি ভেবে নিয়েছিল এই ছেলেই তার প্রথম প্রেম। এর আগে কাউকে দেখে এতোটা ভালো লাগেনি প্রীতির। মোবাইলে আশরাফের ছবি বের করে সারারাত বালিশের তলায় রেখে ঘুমিয়েছে। ফ্লাইটে উঠে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রতিটি মেঘের খন্ডে আশরাফের মুখ দেখতে পেয়েছে। এক কথায় আশরাফের প্রেমে কল্পনায় প্রীতি বুঁদ হয়েছিল। যার প্রেমে সে এতো উন্মাদ হলো তার থেকে এমন ধরণের কথা শোনা মোটেও কোনো সহজ ব্যাপার না। কিন্তু একটা সত্যি কথা হচ্ছে, ভালোবাসাও জোর করে হয় না। প্রীতি তো হাজার চেষ্টা করেও তাদের পাড়ার রিফাতকে ভালোবাসতে পারেনি। অথচ রিফাত তার জন্য নেশা-টেশা করে কত কান্ড ঘটিয়েছিল। প্রীতি তো জানে আশরাফকেও জোর করা সম্ভব না। তাই নিয়তিকে মানা ছাড়া অন্য উপায় তার কাছে নেই।
” হেই প্রিটি, তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো?”
আশরাফের ডাকে নড়ে উঠল প্রীতি। মানুষটা এবারও প্রীতির নামের উচ্চারণ ভুল করেছে। অন্যসময় হলে প্রীতি শক্ত চেহারায় বলতো,” আমি প্রীতি, নট প্রিটি।” কিন্তু এবার সে কিছুই বলল না। তার বাকশক্তি হারিয়ে গেছে। আশরাফ আবার জিজ্ঞেস করল,” আর ইউ ওকে প্রিটি?
প্রীতি মাথা নেড়ে বোঝালো,” ইয়েস।”
তারপর ঢোক গিলে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে প্রশ্ন করল,” এখন আমাকে কি করতে হবে?”
প্রীতির প্রশ্নে আশরাফের দৃষ্টিতে খুশির ঝিলিক দেখা গেল। প্রসন্ন কণ্ঠে উত্তর দিল,” বাবার জন্য আমি বিয়েটা ভাঙতে পারছি না। আমার মতামতের কোনো গুরুত্বই বাবা দিচ্ছে না। তাই বিয়েটা তোমাকে ভাঙতে হবে। তুমি বাড়ি ফিরে সবাইকে বলবে, আমি তোমার সাথে খুব খারাপ আচরণ করেছি। তাই তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না।”
প্রীতি মনখারাপ করা চেহারা নিয়ে মাথা নাড়ল। তার চোখ টলমলে হয়ে আসতে চাইছে। খুব বিরক্ত লাগছে আশরাফকে এখন। ছেলেটার বয়স কত হবে? মিনিমাম চব্বিশ! এতোবড় ছেলে হয়েও তার মতামতের বুঝি কোনো গুরুত্ব নেই! বিয়ে ভাঙার জন্য প্রীতির মতো বাচ্চা মেয়ের কাছে অনুরোধ করছে। তাও জোর করে তুলে এনে। ছি, লজ্জা লাগা উচিৎ।
আশরাফ বিনীত কণ্ঠে বলল,” অর্ডারটা আজকে তুমি করো প্রিটি। তোমার পছন্দমতো। আমি আজ খুব খুশি। মনে হচ্ছে অনেক বড় একটা টেনশন মাথা থেকে নেমে গেছে। আমাকে টেনশন ফ্রী করার জন্য তোমাকে থ্যাংকস। ক্যান উই হাগ?”
প্রীতি কেঁপে উঠল। পর পুরুষকে জড়িয়ে ধরা তার জন্য অতি লজ্জাজনক ব্যাপার। যদিও আশরাফের কাছে এটা ডালভাতের মতো। সে নিউইয়র্ক শহরে বড় হয়েছে। তারা এখন বসে আছে নিউইয়র্কের বিখ্যাত সুশী নোজ রেস্টুরেন্টে। এখানকার মানুষের জন্য এই ধরণের বিষয় খুব সাধারণ। কিন্তু প্রীতির অস্বস্তি লাগছে। যদি বিয়ে ভাঙার প্রসঙ্গ না উঠতো, তাহলে প্রীতি শত অস্বস্তি ঠেলেও কাজটা করতে রাজি হতো। কিন্তু এবার রাজি হলো না। ইতস্তত করে বলল,” না প্লিজ।”
সে ভেবেছিল আশরাফ বোধহয় মাইন্ড করবে। কিন্তু এমন কিছু হলো না। প্রীতির নিষেধটা সে খুব স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করল। কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,” ওকে।” তারপর ওয়েটারকে ডাকল। প্রীতির এখন কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। তবুও সে অনীহা নিয়ে অর্ডার করল। বিয়ে ভাঙায় যে তার মনখারাপ হয়েছে এটা আশরাফকে কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না।
খাবার খেতে খেতে আশরাফ ফ্লোরা সংক্রান্ত গল্প শুরু করল। এসব শুনতে প্রীতির কলিজায় লাগছে। বুক ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু চেহারা স্বাভাবিক রেখে হাসতে হচ্ছে। ইশ, কে বলেছিল বিদেশী বড়লোক ছেলে বিয়ে করতে? এদের স্বভাব- চরিত্র ভালো হয় না তা প্রীতিকে অনেকেই বুঝিয়েছিল। কিন্তু বাবাই বড়ফুপুর কথায় নেচে উঠলেন। সদ্য এইচএসসি পাশ করা মেয়েকে বিয়ে দিতে বাক্স-পেটরা গুছিয়ে সোজা বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্ক চলে এলেন। এইখানে প্রীতির বড়ফুপু নাফিসা সুলতানা থাকেন। আশরাফের সাথে সম্বন্ধ তিনিই এনেছিলেন। ছেলে দেখতে রাজপুত্র, পরিবার উচ্চবিত্ত, গর্বিত বংশ আবার জন্মসূত্রে সিটিজেনশীপও আছে ইউএসএর। বাঙালি পরিবার হলেও ছেলের ফুল ফ্যামিলি যুক্তরাষ্ট্রে ওয়েল সেটেল্ড। নাফিসার নিজেরও প্রীতির বয়সী মেয়ে আছে। কিন্তু নিজের মেয়ের কথা না ভেবে তিনি ভাবলেন প্রীতির বিয়ের কথা। কেন? এই প্রশ্ন এসেছিল প্রীতির মনে। পরে তার উত্তর পাওয়া গেছে। নাফিসা আন্টির মেয়ে জেরিনের বয়ফ্রেন্ড আছে। জেরিন তার বয়ফ্রেন্ডের সাথেও লিভিং রিলেশনে আছে। এই দেশে তো এইসব নরমাল!
জেরিনের সাথে আজ প্রীতি শপিংএ বের হয়েছিল বিকালে। সূর্য ডোবার আগ মুহূর্তে শপিংমলে মাইকের মাধ্যমে সবাইকে সাবধান করা হলো, আধঘণ্টার মধ্যে স্নোফল শুরু হবে। তখন জেরিনের বয়ফ্রেন্ড এসেছে শপিংমলে। জেরিন তার সাথে ডেটে চলে গেল আর প্রীতিকে একটা ট্যাক্সি ঠিক করে দিল বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য। প্রীতির খুব ভয় লাগছিল কিন্তু এই দেশে আঠারো পেরোলেই স্বাধীনতা পেয়ে যায় সবাই। জেরিন কত উড়নচণ্ডী। ইচ্ছে হলেই বয়ফ্রেন্ডের সাথে রাত কাটাতে পারে। প্রীতির জন্য তো এইসব কল্পনার থেকেও অবাস্তব। বাবার হাত না ধরে সে বাড়ির পাশের বাজারেও যায়নি। সেখানে নিউইয়র্কের মতো সিটিতে ট্যাক্সি নিয়ে একা একা বাড়ি ফিরে যাওয়া কি তার পক্ষে সম্ভব? তবুও সাহস করে সে ট্যাক্সিতে উঠল।মাঝরাস্তায় প্রীতির ট্যাক্সি থামানো হয়। আশরাফকে দেখে প্রীতি খুশিই হয়েছিল। ভেবেছিল আশরাফ বুঝি তাকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিবে এবার। কিন্তু প্রীতিকে ট্যাক্সি থেকে বের করে আশরাফ নিয়ে এলো এই রেস্টুরেন্টে। প্রীতি আসতে চায়নি। আশরাফ বহু অনুনয়-বিনয় করে একপ্রকার জবরদস্তিই তাকে এনেছে। তাও প্রীতি ভেবেছিল তাদের সময়টা রোমান্টিক কাটবে। কিন্তু হলো বিপরীত।
আশরাফের কথায় বিদেশী ভাব স্পষ্ট। সঠিক উচ্চারণে বাংলা বলতে তার অসুবিধা হয়। এমনকি নিজের নামটাও সে ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারে না। তার নাম আশরাফ কিন্তু তাকে ডাকা হয় ‘অ্যাশ।’ আশরাফ প্রীতির সাথে ইংরেজিতেই কথা চালিয়ে যাচ্ছিল।
” তোমাকে এইভাবে তুলে আনার জন্য স্যরি। কিন্তু আমার কোনো উপায় ছিল না। কেউ তোমাকে আমার সাথে একা দেখা করতে দিতে রাজিই হচ্ছিল না। যেদিন আমরা আলাদা মীট করলাম সেদিনও তুমি তোমার কাজিন জেরিনকে নিয়ে এসেছিলে। রাইট? সেজন্যই আমি আজকে তোমাকে একা পেয়ে এই ব্যবস্থা করেছি। যেন আমরা প্রাইভেসী নিয়ে কথা বলতে পারি।”
প্রীতির খুব লজ্জা করতে লাগল। সে নড়াচড়া বন্ধ করে বরফের মতো জমে গেল। আশরাফ কেন তাকে একা পেতে চায়? তাহলে কি জেরিনের কথাই ঠিক? আশরাফও পশ্চিমা সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত! বিয়ের আগে ঘনিষ্টতা তাদের কাছে কম্পালসারি! আচ্ছা, হঠাৎ আশরাফ তাকে চুমু-টুমু দিয়ে ফেলবে না তো? ভয়ে প্রীতির কলিজা চুপসে গেল। তার ফ্যাকাশে মুখ দেখে আশরাফ দুঃখিত গলায় বলল,” এক্সট্রিমলি স্যরি প্রিটি। যদি আমি তোমাকে বেশি হার্ট করে থাকি তাহলে তুমি আমাকে মাফ করো। কিন্তু আমি বাধ্য ছিলাম।।আমার কাছে অন্যকোনো রাস্তা নেই। তোমার সাথে আমার পারসোনাল এই মিটিং খুব জরুরী। তোমাকে একটা কথা বলি প্রিটি, আমি এই বিয়েটা করবো না।”
প্রীতি বড় চমক খেল। কি বলছে এসব ছেলেটা? বিয়ে না করলে প্রীতির সাথে আলাদা কথা বলার এতো প্রয়োজন কেন? তাহলে কি… প্রীতি মেরুদন্ডে শিথিলতা অনুভব করল। তারপরেই আশরাফ বিনীত কণ্ঠে ফ্লোরার ঘটনা বলা শুরু করল। আর প্রীতির সমস্ত স্বপ্ন-আশা এক নিমেষে ভেঙে চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে গেল!
আশরাফ এখন তার আর ফ্লোরার প্রথম দেখা হওয়ার গল্পটা বলছে। যদিও প্রীতি শুনতে চায়নি। আশরাফ নিজে থেকেই বলা শুরু করেছে। ছেলেটা বাঁচাল প্রকৃতির। কিন্তু কথা বলার ধরণ অসম্ভব সুন্দর। সারাক্ষণ শুনতেই ইচ্ছে করে। তবে ফ্লোরা সংক্রান্ত আলোচনা প্রীতির বিষাক্ত লাগছে। সে কখন বাড়ি যাবে আর মন খুলে একটু কাঁদতে পারবে?
খাওয়ার-দাওয়ার পর্ব শেষ হলো। তবুও আশরাফের গল্প শেষ হলো না। ফ্লোরার প্রশংসা করে যাচ্ছে সে মহা উৎসাহে। যেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দরী মেয়ে ফ্লোরা। মেয়েটাকে একবার দেখতে ইচ্ছে করল প্রীতির। কিন্তু সে আগ্রহটা দমিয়ে রাখল। যার গল্প শুনেই ঈর্ষায় মরে যেতে মন চাইছে তার ছবি দেখলে না-জানি-কি হবে!
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আশরাফের গাড়িতে উঠল প্রীতি। তার ইচ্ছে করেছিল ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে। কিন্তু এটা করতে গেলে আশরাফ বুঝে ফেলবে যে প্রীতির মনখারাপ হয়েছে। আর যাই হোক, প্রীতি নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিতে চায় না।
গাড়িতে ওঠার পর প্রীতির খুব শীত করতে লাগল। আশরাফ চাদর এগিয়ে দিল। প্রীতি অবাক। আশরাফ কিভাবে বুঝল?
” তোমার মনে হয় শীত লাগছে। চাদরটা নিতে পারো। ”
প্রীতি চাদরটা লুফে নিল। এরপরেই তার কান্না পেয়ে গেল। ছেলেটা বড্ড কেয়ারিং। ছোটখাটো বিষয়ও খুব খেয়াল করে। এমন মানুষ জীবনে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। ফ্লোরা মেয়েটা ভীষণ ভাগ্যবতী। প্রীতি জানালার দিকে চেয়ে চোখের জল আড়াল করার চেষ্টা চালাল।

চলবে

স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি পর্ব-১২ এবং শেষ পর্ব

0

#স্নিগ্ধ_প্রেমের_অনুভূতি
#পার্টঃ১২ ও অন্তীম পর্ব।
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

৮৭.

আজ ভার্সিটিতে নতুন প্রফেসর আসবে তাই নিয়ে হৈ হুল্লোড় শুরু করেছে সব স্টুডেন্ট। ইচ্ছের মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে। কারণ আজ অয়নির ডেলিভারি ডেইট। আর বার বার কানে বাজছে আদ্রকে কেউ বাবাই বলছে। কিছুতেই মন বসছেনা আজ তার ক্লাসে। হঠাৎ মনে আরেকটা প্রশ্ন নাড়া দিলো ইচ্ছের মাথায়৷ ইনশিয়া! ইনশিয়া কোথায়?

৮৮.

নার্স..হাররি আপ..পেশেন্টকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব। কথাটা বলেই উত্তেজিত নিশ্বাস ফেলে নিশাত। চোখে মুখে তার চিন্তার ছাপ। আদ্রকে কল দিতে চায়না এখন সে। কারণ ৩ দিন হয়েছে মাত্র আদ্র দেশে ব্যাক করেছে। এই মুহুর্তে বিরক্ত করাটা সত্যিই খারাপ দেখায় ভীষণ।

৮৯.

নতুন প্রফেসরের জায়গায় আদ্রকে দেখে চমকে উঠে ইচ্ছে। সবাই হা করে আদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে বললেও ভুল হবেনা মনে মনে ভাবছে ইচ্ছে।

“সিট ডাউন অল।

” এইটা বলতেই সব স্টুডেন্ট বসে পড়ে। কিন্তু ইচ্ছে! সেতো এক ধ্যানে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রের দিকে।

‘এই মেয়ে বসো…

“তাও ইচ্ছের ধ্যান নেই।

” এই যে বসো…

“এতোক্ষণে হুঁশ আসে ইচ্ছের। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার। এমন বিব্রতকর..অবস্থায় পড়ে নিজেকে বোকা বোকা লাগছে তার।

আদ্র ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে কিঞ্চিত হাসলো৷

‘সবার নিজের পরিচয় দাও। লাস্ট বেঞ্চ থেকে স্টার্ট করো।

‘সবার পরিচয় শেষে ইচ্ছের পালা আসতেই..ইচ্ছে মনে মনে বললো,

” খাটাশ একটা। নিজের বউয়ের পরিচয় জেনেও যেনো জানেনা।

“নাম?

” ইচ্ছে চৌধুরী।

“সরি..

‘মাই নেইম ইস ইচ্ছে চৌধুরী।

” Sorry to Say, I think you are a Married Person.

‘ইচ্ছে চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কারণ কেউ আজ পর্যন্ত জানেইনা যে ইচ্ছে বিবাহিত।

‘মন চাচ্ছে বলে দেয় যে হে আপনি আমার বর। ওফ।

“হেই ইউ..কিছু জিগ্যেস করেছি তোমায়।

” নীড়…মিসেস ইচ্ছে নীড়।

‘আদ্র মুচকি হেসে বললো,

“ইয়েস রাইট। মিসেস নীড়।

৯০.

নিশাতের চোখে টপ টপ করে পানি পড়ছে। পাশ থেকে ছোট্ট মেয়েটি হাত ধরে বলছে,

” মামা কাঁদছো কেনো? মাম্মাম কোতায়? [ কোথায় ]

“নিশাত নিজেকে সামলে সামনে থাকা ছোট বাচ্চাটিকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে দেয়। সে কি করে এই অবুঝ বাচ্চাটিকে বলবে? যে তার মাম্মাম আর বেঁচে নেই।

৯১.

লন্ডন থেকে এতো ভয়ংকর একটা খবর নিশাত আদ্রকে দিবে তা আদ্র কখনোই ভাবেনি। আদ্র হ্যাস্তনস্ত হয়ে ইচ্ছেকে ডাকতে লাগলো..

‘ইচ্ছে… ইচ্ছে…

‘আদ্রের এমন হাঁক ছেড়ে ডাকাতে চমকে যায় ইচ্ছে। আসা পর্যন্ত ভালো করে কথাও বলেনি তার সাথে। সে কিনা তাকে ডাকছে?

” চলো আমার সাথে।

“আজব কোথায়? ছাড়ুন আমার হাত আমার লাগছে।

‘তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও আমরা লন্ডন যাচ্ছি।

‘কিই!

” বাসার কপউ জানে?

“কিছুদিন পরই চলে আসবো। রেডি হয়ে নাও। আমি মা বাবার সাথে কথা বলে আসি।

” আমার সামনে পরীক্ষা। আমি যেতে পারবোনা।

“আদ্রের মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে ইচ্ছের এমন ঘাড়ত্যাড়ামি দেখে। সে কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বললো,

‘এসেই যেনো দেখি রেডি হয়ে আছো।

৯২.

লন্ডনে এসে আদ্র ইচ্ছেকে হসপিটালে নিয়ে আসবে তা ইচ্ছের ধারনার বাইরে ছিলো। সে বুঝতে পারছেনা আদ্র চাইছেটা কি? আদ্র একটা কেবিনে ডুকতেই একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে…আদ্রের কাছে ছোটে এসে বললো, ” বাবাই তুমি এসেছো? বাবাই….আদ্র মেয়েটির আদো আদো ডাকে মেয়েটিকে কোলে নিয়ে বললো,”হে ইরসাত আমি এসেছি।

“ইচ্ছের বুকটা ধুঁক করে উঠলো।

‘এৃ এই মেয়েটা কে?

” ইচ্ছের কাঁপা কাঁপা কন্ঠ বুঝতে বেশি একটা বেগ পেতে হলোনা আদ্রকে।

“আদ্র নিশাতের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো ইরসাতকে নিয়ে যেতে।

” একি আপনার চোখে পানি?

“আদ্র কিছু না বলে সামনে শায়িত সাদা কাপড়ে জড়ানো মানুষটার কাপড় সরিয়ে নিলো।

” ক্ষনিক ক্ষণ ইচ্ছে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে শুয়ে থাকা মানুষটির দিকে। কেঁপে উঠে ভয়ে

“ইন্ ইনশিয়া আপু!

৯৩.

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে আদ্র। ইচ্ছে রান্না সেড়ে রুমে যেতেই দেখলো আদ্র এক ধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তারও মনে অনেক প্রশ্ন কিন্তু তাই বলেতো হাত পা ঘুটিয়ে বসে থাকা যায়না। এতো কিছু হয়ে গেলো সে জানলোইনা! ইচ্ছে ধীর পায়ে পিছনে গিয়ে বললো,

” বাংলাদেশে যাবোনা?

‘আদ্র আকাশের দিক থেকে চোখ নামিয়ে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে বললো,

“ইচ্ছে পরী জানি তোমার মনে হাজারো প্রশ্ন। আমি সেই গুলোর উত্তর আজ তোমায় দিতে চায়।

” ইনশিয়া জান্নাতের ব্লাড ক্যান্সার হয়েছিলো৷ কিছুদিন আগেই আমি আর নিশাত তা জানতে পারি। নিশাত ইনশিয়ার ভাই। পড়াশোনা করতো লন্ডনে। আর ওই বাচ্চা মেয়েটা! রুপের।

“চমকে উঠে ইচ্ছে। কি বলছেন এইসব?

” হে সত্যিই বলছি। ইরসাত রুপের সন্তান। ইনশিয়া যখন আমাদের বাসায় উঠেছিলো তখনি এমনটা হয়। রুপ অত্যান্ত নেশায় ছিলো আর সেইদিনি…

“অয়নি জানলে..

” অয়নি অনেক আগেই জেনে ফেলতো। কিন্তু ইনশিয়া আমার কাছে অনুরোধ করেছিলো যে কাউকে যেনো এই কঠিন সত্যিটা না বলি। অয়নি আর রুপ যেনো সুখে থাকে। জানো ইচ্ছে পরী? লন্ডনে এসে কিছুই ভালো লাগছিলোনা। ইনশিয়া বার বার চেষ্টা করেছে আমাকে দেশে পাঠাতে কিন্তু রাগ অভিমানে জায়নি। ইনশিয়া কষ্টতেই জীবনটা পার করেছে। কাব্যতো ওকে ইউজ করেছে। আর রুপ! ওতো কখনো হয়তো জানবেইনা যে ওর একটা মেয়ে আছে। ইনশিয়া এক টানা ৪ মাস হসপিটালে ছিলো।

“ইচ্ছে পরী তুমি কাঁদছো কেনো?

” ইচ্ছে আদ্রকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বললো,

“আর আমি আপনাকে কতো ভুল বুঝেছি।

” আদ্র আলতো হেসে ইচ্ছেকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“ভালোবাসি ইচ্ছে পরী।

” আমিও..অনেক অনেক ভালোবাসি আপনাকে।

“বাবাই আমাকে রেখেই তুমি ভালো মাকে একা জড়িয়ে ধরছো?

” আদ্র আর ইচ্ছে চমকে পিছনে তাকায়। দেখে ইরসাত..কোমড়ে দুই হাত রেখে মুখ গুমড়ো করে কথাটা বলছে।

‘ইচ্ছে আর আদ্র একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেলে। আর হাত বাড়িয়ে দেয় ইরসাতের দিকে।

সমাপ্ত।

স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি পর্ব-১১

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি
#পার্টঃ১১
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

৭৮.

“আজ ৫ বছর পর নিজ দেশে পা রাখতেই শান্তিপূর্ণ একটা নিশ্বাস নেয় আদ্র। এয়ারপোর্টের কর্ণারে তাকাতেই মুখটা হাসিতে থমথমে হয়ে উঠে তার। রাজ্জাক নীড় এগিয়ে এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বললো,

” কেমন আছো আদ্র?

‘ভালো আছি বাবা। তুমি কেমন আছো?

‘আমিতো ভালো নেই তোমাকে ছাড়া”

কথাটা শুনেই আদ্র তার বাবার পেছনে তাকালো। চোখ ভর্তি পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিসেস আনেয়া নীড়। চোখে তার হাজার অভিযোগ। আদ্র মুচকি হেসে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“মা তুমি কাঁদছো কেনো? আমি কিন্তু আবার চলে যাবো তুমি কাঁদলে।

” না না আমি আর কাঁদবোনা। তবুও তুই যাসনা।

‘উচ্ছ্বাস অদ্রি দৌঁড়ে গিয়ে আদ্রকে জড়িয়ে ধরে।

‘আদ্র হেসে বলে,

“কেমন আছিস তোরা?

” আদ্র আমরাতো ভালোই আছি। তুই কেমন আছিস তাই বল…

“উচ্ছ্বাসের কথায় আদ্র উত্তর দিতে যাবে তার আগেই চোখ পড়ে তার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকা ইচ্ছের দিকে। ইচ্ছে ধীর পায়ে এগিয়ে আদ্রকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই…আদ্র বললো,

” মা-বাবা চলো বাকি কথা বাসায় গিয়ে হবে।

‘হে বাবা চল চল

‘অদ্রি উচ্ছ্বাস ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ইচ্ছে ্র কাঁধে হাত রেখে বললো,

“সবটা ঠিক হতে অনেক সময় লাগবে ইচ্ছে।

৭৯.

আদ্র বাসায় আসতেই..নিহাল চৌধুরীকে নিয়ে আড্ডা করতে বসে গেলো। মামাকে কতোদিন পর সে পেয়েছে। যদিও ফোনে সবসময় যোগাযোগ ছিলো। ইচ্ছে অদ্রিজাকে কোলে নিয়ে ওদের সামনে যেতেই…নিহাল চৌধুরী বললো,

” আরে নানুভাই এসো এসো।

‘ইচ্ছে আঁড়চোখে আদ্রকে দেখছে। আদ্র যেনো তাকে দেখেও দেখছেনা৷

“মামা আমি রুমে যাচ্ছি।

“কেনো? চল লুডু খেলি।

” পরে খেলবো মামা। আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কল করার আছে।

“আচ্ছা যা।

” আদ্র ইচ্ছের দিকে না তাকিয়ে ইচ্ছের পাশ দিয়ে চলে যেতেই ইচ্ছে অসহায় ধরা কন্ঠে বললো,

“বাবা…

‘মারে অনেকটা বছর শেষ। তাই সবকিছু স্বাভাবিক হতেতো সময় লাগবেই।

৮০.

খেয়েছো?

‘ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে কথাটা শুনতেই মুচকি হাসে আদ্র। হেসে বলে,

” হুম খেয়েছি। তুমি?

“হে।

” কি করছো? আমাকে ছাড়া ভীষণ একা লাগছে?

“আদ্র আমাকে নিয়ে গেলেই কিন্তু পারতে।

” তুমি ওখানেই ভালো আছো। আর তাছাড়া তুমি ওইখানে সেটেলাইট হয়ে গেছো।

“তুৃমিওতো। তাহলে?

” আমারটা অন্য ব্যাপার। বাংলাদেশে সব তাই চলে এসেছি। মামুনি কোথায়?

“অপর পাশের ব্যক্তিটি একটা ছোট বাচ্চা মেয়ের হাতে ফোনটা দিয়ে বললো, এই নাও তোমার পাপার সাথে কথা বলো।

” বাবাই.. কোথায় টুমি?

“ওরে আমার লক্ষী মারে। আমি খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো কেমন? তুমি দুষ্টুমি করবেনা। আর একদম মাম্মামকে বিরক্ত করবেনা কেমন?

” বাবাই..টুমাকে আমি খুব মিস কলছি।

“আমার মামনিটাকেও আমি অনেক অনেক মিস করছি।

” হঠাৎ আচমকা কোনো শব্দে পেছনে ফিরে তাকায় আদ্র। দেখে ইচ্ছে চোখে পানি নিয়ে নিচে একবার তাকিয়ে তার দিকে তাকাচ্ছে। ইচ্ছের হাত থেকে কফির গ্লাস পড়ে গেছে। সাথে ট্রি। আদ্র তড়িঘড়ি করে ফোনটা কেটে ইচ্ছেকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইচ্ছে দৌঁড়ে নিজের রুমে চলে যায়।

৮১.

ইচ্ছে দরজা লাগিয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে কান্নায়। আদ্র কাকে বললো? যে বাবাই খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো? মেয়েকে! তার মানে আদ্র ভাই…এইসব ভাবতেই বুক ফেঁটে কান্না আসছে ইচ্ছের। দরজায় বার বার কড়াৎ নাড়ছে উচ্ছ্বাস। ইচ্ছে দরজা খুলছেনা বলে..উচ্ছ্বাস ফোনটা হাতে নেয় প্যাকেট থেকে। কয়েকবার ওপাশ থেকে রিং হতেই কল ধরে উত্তেজিত কন্ঠে কেউ একজন বললো,

“উচ্ছ্বাস বল।

৮২.

আদ্র…বলে চিৎকার দিয়ে দৌঁড়ে আদ্রকে রুপ জড়িয়ে ধরে। পাশ থেকে অয়নি..হেসে বললো,

” অনেকদিন পর আপনাকে দেখছি আদ্র ভাইয়া।

“আদ্র রুপের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মুচকি হেসে বললো,

” আমি ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো অয়নি?

“আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।

” আদ্র আমি বাবা হতে চলেছি..

“অনেকটা আগ্রহ নিয়ে কথাটা বললো রুপ। আদ্র হেসে বললো,

” বাহ্ তোরা বাপ হয়ে গেলি আর আমি! আমার জীবনে বোধহয় আর সুখ নেই বুঝলি রুপ?

৮৩.

‘রাত্রির আবছা আলোতে…ইচ্ছের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে কেউ একজন হাসছে। আলতো করে ইচ্ছের সামনে গিয়ে ফ্লোরে বসে ঘুমন্ত ইচ্ছের সামনে ঝেঁকে থাকা এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দেয় কেউ একজন। কপালে আলতো পরশ একেঁ বিড়বিড় করে বললো,

‘ভালোবাসি মেরি জান’

“ইচ্ছে আড়মোড়া হয়ে নড়তেই তড়িঘড়ি করে ইচ্ছের রুম থেকে প্রস্থান করে ছায়ামূর্তিটি।

৮৪.

সোনালি রোদ্দুরের আলাপনে ঘুম ভাঙ্গে ইচ্ছের। ঘুম ভাঙ্গতেই আয়নার সামনে যায়। আয়নার সামনে যেতেই চমকে উঠে সে। ঠোঁটে আলতো রক্ত জমাট বাঁধা! ইচ্ছে অবাক হয়ে বললো,

” আরে এমন কি করে হলো? আমার ঠোঁট কাটা! ইচ্ছে দরজার দিকে তাকাতেই রুহ কেঁপে উঠে তার।

“আরে দরজা খুললো কে? আমারতো স্পষ্ট মনে আছে ঘুমানোর আগে আমি দরজা লাগিয়েই ঘুমিয়েছি। দরজাতো ভেতর থেকে বন্ধ করা ছিলো। আর তাছাড়া আমিতো রুমে একাই ঘুমিয়ে ছিলাম। আদ্র ভাইয়ের ওইসব কথা শুনে। তাহলে দরজা খোলা কিভাবে? হাউ!

৮৫.

‘ইচ্ছে তুই আদ্রের গাড়িতে করে ভার্সিটিতে যাবি।

” আনেয়া নীড়ের কথা শুনে অনেকটা অবাক হয় ইচ্ছে। এতোদিন ওকে সহ্যও করতে পারতোনা। আর আজ!

“খাবার টেবিলে বসে দিব্য এক মনে খেয়ে যাচ্ছে আদ্র। আশেপাশে একটিবারের জন্যও তাকায়নি। খাবার শেষে
বেরুতে বেরুতে বললো,

‘মা ওকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দাও আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।

৮৬.

‘ইচ্ছে বাসা থেকে বের হতেই দেখলো আদ্র গাড়িতে হেলান দিয়ে ফোন টিপছে। আদ্রকে দেখে ইচ্ছে যেনো ক্রাশ খেলো।

‘ব্লু কালার ব্লেজার, ব্ল্যাক প্যান্ট,হাতে ঘড়ি চোখে সানগ্লাস। সব মিলিয়ে পুরো পরিপাটি।

“ইচ্ছের এইসব ভাবতেই..কেউ একজন তার কানে ফিসফিস করে বললো,

” আমি জানি আমি ক্রাশ বয়। তাই বলে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে?

চলবে…

স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি পর্ব-১০

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি
#পার্টঃ১০.
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

৬৭.

গায়ের পান্জাবীটা খুলে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় আদ্র। আজ ইচ্ছেকে ভীষণ সুন্দর লাগছে তার কাছে। এ যেনো এক ধরণীর পরী। আদ্র এইসব ভেবে আপনমনে হাসে। তখনি রুমে প্রবেশ করে উচ্ছ্বাস।

৬৮.

কাব্য ড্রিংক সাইডে বসে একটার পর একটা ড্রিংক করে যাচ্ছে। পাশ থেকে একটা ছেলে তাচ্ছিল্য করে বললো,

‘এই প্রথম কাব্য চৌধুরীর টার্গেট মিস! হাউ ম্যান? হাউ!

‘কাব্য চোখ লাল করে হাতে থাকা গ্লাসটি শক্ত মুঠোয় করে গ্লাসটি ছুঁড়ে ফেলে দেয় নিচে। আর বিড়বিড় করে বললো,

‘নো নেভার। ইচ্ছে শুধুই আমার। একদিনের জন্য হলেও ওকে আমার চায়। চায় মানে চায়।

৬৯.

রুপ..

‘রুপ অয়নির সাথে বারান্দায় শুয়ে শুয়ে কথা বলছিলো। কারণ ইনশিয়া রুমে থাকে আর সে বেলকনিতে বিছিয়ে থাকা বেতের সোফাতে। রুপ ইনশিয়ার দিকে তাকিয়ে অয়নিকে বললো,

‘অয়নি…আপু আমায় ডাকছে। তোমাকে একটু পর কল করছি। টাটা..

‘অপর পাশ থেকে কোনে উত্তর না শুনেই কলটা কেটে দেয় রুপ। ইনশিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

‘কিছু বলবে আপু?

‘রুপ..অয়নি তোমায় অবিশ্বাস করছে নাতো?

‘আরে আপু না না তেমন কিছুইনা। অয়নি আপনাকে আর আমাকে যথেষ্ট বিলিভ করে৷ সো প্লিজ…ভুল বুঝবেন না। আর এইসব ভেবে মনকে বিব্রত করবেন না।

৭০.

‘ইচ্ছে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে কানের দোল খুলছিলো। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠে। ফোনের স্কিনে কাব্য নামটা ভেসে উঠছে। ইচ্ছে ফোনটা হাতে নিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,

‘বেবি কালই আমরা পালাবো। সো ডন্ট ওয়ারি।

‘ব..ব্ বেবি..আই অনলি ওয়ান্ট ইউ৷ ইয়েস আই অনলি ওয়ান্ট ইউ।

‘তুমি আবার ড্রিংক করেছো কাব্য?

‘কাম বেবি…প্লিজ কাম।

‘কাল সারাজীবনের জন্য আমি আর তুমি এক হয়ে যাবো জান।

‘প্রমিস?

‘ইয়াহ বেবি প্রমিস।

৭১.

‘আদ্র আর একটু পরই..কাজী সাহেব চলে আসবে। একটাবার আবার ভেবে নিলে হয়না?

‘উচ্ছ্বাস অলরেডি আমি সব ভেবে নিয়েছি। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল।

‘তাই বলে আজ গায়ে হলুদ আজই বিয়ে?

‘হুম। আজই বিয়ে। কারণ আমি জানি কালই ইচ্ছে পালাবে কাব্যকে নিয়ে।

‘আদ….

‘উচ্ছ্বাসকে পুরো কথা শেষ না করতে দিয়ে..আয়নার সামনে আদ্র গিয়ে হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বললো,

‘আমি চায়না খারাপ কিছু হোক ইচ্ছের সাথে।

৭২.

ইচ্ছে বুঝতে পারছেনা হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো? রাত ২ টায় আদৌ কোনো বিয়ে হয়! এই প্রথম সে এমনটা দেখলো৷ ইচ্ছে আরো অবাক হচ্ছে বাসার সবাই কতো নরমালি বিয়েটাতে পার্টিসিপেট করলো। ইচ্ছে ধীর পায়ে বাবার সামনে গিয়ে বললো,

‘বাবা…

“এইটা হওয়ার ছিলো ইচ্ছে।

” ইচ্ছে তার বাবার এমন কথা শুনে উচ্ছ্বাসের দিকে তাকায়। উচ্ছ্বাসও মাথায় হাত বুলিয়ে অদ্রিকে নিয়ে উপরে চলে যায়।

‘আদ্র ইচ্ছের কাছে গিয়ে বললো,

‘রুমে চলো।

“রুমে চলো মানে?

‘আমাদের রুমে।

” ইচ্ছে চিৎকার ছেড়ে বললো,

‘কি পেয়েছেন আপনারা আমায় হ্যাঁ? পুতুল পেয়েছেন? পুতুল? এইভাবে জোর করে আপনি আমাকেতো বিয়ে করলেন মিস্টার আদ্র নীড়। কিন্তু আমার মন কখনোই আপনি পাবেন।

ঠাসস…একটা শব্দে থমকে যায় বাসার উপস্থিত সবাই। ইচ্ছে গালে হাত দিয়ে উপরে তাকাতেই দেখলো…অগ্নি চক্ষু নিক্ষেপ করে নিহাল চৌধুরী তাকিয়ে আছেন।

‘তোমার সাহস কি করে হয় আদ্রর সাথে চোখ গরম করে কথা বলার? যেই জায়গায় আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।

‘বাবা…

‘চুপ একদম চুপ। তোমার মুখ থেকে আমি বাবা ডাকটা আর শুনতে চায়না। লিভ…

‘যাবোনা আমি যাবোনা। বাবা আমাকে তোমার সাথে বাড়ি নিয়ে চলো..

‘রুমে নিজ থেকে যাবে? নাকি মামা যেই কাজটা করেছে তা আমি আবার রিপিড করবো ইচ্ছে?

“কিই! আপনি আমায় থাপ্পড় মারবেন?

‘ইচ্ছে হাতে তালি বাজিয়ে বললো,

” বাহ মিস্টার নীড় বাহ..বিয়ে হতে না হতেই গায়ে হাত! বাহ বাবা…ওয়ান্ডারফুল একটা ছেলের কাছে নিজের মেয়েকে তুলে দিয়েছো।

‘আদ্র ইচ্ছেকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে….ইচ্ছের হাত টেনে টেনে উপরে নিয়ে যাচ্ছে।

৭৩.

“ইচ্ছেকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আদ্র।

ইচ্ছে অবাক হচ্ছে আদ্রকে দেখে। এই আদ্রকে সে চিনেইনা। এ আদ্র হতেই পারেনা। অবাক পানে চেয়ে কথাগুলো ভাবছে ইচ্ছে। ইচ্ছে চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ায়।

” এতোদিন কিছু বলিনি। কিন্তু ভালোবাসলেই সব কিছুতে ছাঁড় নেই ইচ্ছে পরী।

“আপনি কোন অধিকারে আমাকে এইভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছেন?

‘স্বামীর অধিকারে।

‘স্বামী মাই ফুট। আই হেইট ইউ। জাস্ট হেইট ইউ।

‘সো হোয়াট? আমিতো ভালোবাসি। এখন না চাইলেও তুমি আমার। ৩ কবুলে আবদ্ধ হয়েছি আমরা।

‘আই ওয়ান্ট ডিভোর্স মিস্টার আদ্র নীড়..

‘আদ্র কষিয়ে থাপ্পড় মারে ইচ্ছের গালে। ইচ্ছের গালটা লাল হয়ে আছে। ৫ আঙ্গুলের দাগ স্পষ্ট।

‘তুই নিজেকে কি ভাবিস হে? রুপের ডিব্বা? আমাকে কি ভাবিস? কাঠের পুতুল? ছোট থেকে কোনো মেয়ের দিকে তাকিয়েও দেখিনি যেইদিন থেকে জানতে পেরেছি যে তুই আমার বউ হবি। তাহলে কেনো আমার কপালটা এমন বলতে পারিস? কেনো নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেও আজ আমি এতোটা কষ্টটায় ভুগছি? কেনো??? আনসার মি… ” এইটা বলেই বেলকনিতে চলে যায় আদ্র। আজ বড্ড নেশাক্ত লাগছে তার। পৃথিবীর এমন নির্মম ভালোবাসা সে আশা করেনি।

“ইচ্ছে কাব্যকে কল লাগিয়ে সব বলতেই কাব্য বললো,

‘না তুমি ভুলেও আদ্রের কাছে যাবেনা৷ আমি ছাড়া তোমাকে কেউ স্পর্শ করতে পারবেনা ইচ্ছে কেউনা। বিয়ে হয়েছে কি হয়েছে? তুমি আমার কাছে চলে এসো।

‘কলিজা কালই আমি চলে আসবো। আমি আসতে দিবোনা ওনাকে আমার কাছে। প্রমিস।

‘বারান্দায় শুয়ে চোখে র পানি ফেলছে কাব্য। এই রাতটা সবার জন্য কতো সুখময়। আর তার জন্য! বিষাক্ত!

৭৪.

সকাল সকাল ইচ্ছেকে কোথাও না দেখতে পেয়ে উচ্ছ্বাস বুঝে ফেললো যে ইচ্ছে তাদের ফেলা ফাঁদে পা দিয়েছে। আদ্র আয়েশ করে টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে। আনেয়া নীড় আর রাজ্জাক নীড় অবাক হয়ে দেখছে ছেলের এমন শান্তসৃষ্টকতা। আদ্র বাঁকা হেসে বললো,

” চিন্তা করোনা। চলে আসবে। আমি বাইরে ওয়েট করছি। উচ্ছ্বাস তাড়াতাড়ি আয়। এইটা বলেই বেরিয়ে যায় আদ্র। জিন্স প্যান্ট, টিশার্ট এর উপর ব্রাউন কালার জেকেটে যে কেউ তার প্রেমে হাবুডুবু খাবে।

৭৫.

না..না কাব্য তুমি এমন করতে পারোনা। ছেড়ে দাও আমায় প্লিজ…

“রুমের এইখান থেকে ওখান থেকে ছুটতে ছুটতে বললো ইচ্ছে। কাব্য ধীরে ধীরে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ইচ্ছের দিকে এগোচ্ছে। ইচ্ছে কান্না করতে করতে বললো,

” তুই এতোটা নিচু জানতাম না আমি। ছেড়ে দে আমায়…

“এতোদিনের গড়া ফসল কিভাবে নদীতে ভেসে যেতে দেয় বলোতো ইচ্ছে পাখি..

‘এইটা বলেই তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দেয় কাব্য।

‘ইচ্ছেকে ধরে বিছানায় ফেলে যেই কাব্য ইচ্ছের দিকে ঝুঁকে পড়বে তখনি দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আদ্র।

৭৬.

হাত টানতে টানতে বাসায় নিয়ে আসে ইচ্ছেকে আদ্র। সবাই ছুটে আসছে ড্রইং রুমে।

‘কি হয়েছে বাবা তুই এইভাবে ইচ্ছেকে টেনে আনলি কেনো? উচ্ছ্বাস তুই বল….

” ইনশিয়া….ইনশিয়া…

“আদ্রের ডাকে ইনশিয়া আর রুপ তড়িঘড়ি করে ড্রইং রুমে আসে। ইনশিয়া আদ্রের সামনে আসতেই…ইনশিয়ার মুখের কালো কাপড়টা সরিয়ে দেয় আদ্র। কেঁপে উঠে সবাই। ভয়ে আর্তনাদ করে ইচ্ছে। সবাই ভয়ে মুখে হাত দিয়ে অবাক চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে ইনশিয়ার দিকে।

” ও্ ওনার মুখ…

‘ইচ্ছে কেঁপে কেঁপে কথাটা বলতেই.. আদ্র হাঁক ছেড়ে বললো,

“কাব্যের ওয়াইফ এই মেয়েটি। ৩ বছর অটাল সংসার করে নির্যাতিত হয়ে যখন প্রতিবাদ করতে যায় এসিড ছুঁড়ে মারে তাকে। রাস্তায় কুকড়ানো অবস্থায় পায় আমি ইনশিয়াকে। লুকিয়ে রাখি একটা বাড়িতে৷ সেখানেও পৌঁছে যায় কাব্য। বাধ্য হয়ে রুপের বউ সাজিয়ে নিয়ে আসি..ইনশিয়াকে এই বাড়িতে। এইটা বলেই ইচ্ছের হাত ছেড়ে চলে যায় আদ্র। ইনশিয়া টলমল চোখে ইচ্ছেকে বললো,

” আসল সোনার কদর মানুষ সহজে বুঝেনা বোন। আদ্র ভাইয়া হিরের চেয়েও বেশি দামি। কারণ তার মন তা গড়ে তুলেছে।

৭৭.

ইচ্ছে বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। চোখে পানি। ভালোবাসার মানুষ এতোটা নিকৃষ্ট তা ভেবেই কান্না পাচ্ছে তার। আদ্র এখনো রুমে আসেনি। ইচ্ছে আদ্রর কাছো ক্ষমা চাইবে। আসল ভালোবাসাকে পায়ে ফেলে রেখেছিলো এতোদিন সে। কিন্তু আর নয়। হঠাৎ চোখে ঘুম লেগে যায় ইচ্ছের। সকালে উঠতেই খেয়াল করে আদ্র এখনো ফিরেনি। ইচ্ছে তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে নিচে যায়। বাড়ির সবাই মলিন মুখে বসে আছে।

‘ভাইয়া আদ্র ভাই কোথায়?

‘কথাটা শুনতেই উচ্ছ্বাস তাকালো ইচ্ছের দিকে। চোখে তার পানি। সোফা থেকে উঠে..ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে বললো,!হ্যাপি তুই? হ্যাপিতো? চলে গেছে আদ্র..অনেক দূরে। তোর চোখের সামনে আর আসবেনা।

“মানে!

” আমার ভাইটা তোর জন্য আজ এই বাড়ি ছেড়ে লন্ডনে চলে গেছে ইচ্ছে। তোকে আমরা কখনো ক্ষমা করবোনা কখনোনা। এইটা বলেই কান্নায় লুটিয়ে পড়ে অদ্রি। ইচ্ছে ধাম করে পড়ে যায় ফ্লোরে। পাথরের ন্যায় আজ সে।

“কলিং বেলের আওয়াজে..অতীতের শুকনো পাতা থেকে বেরিয়ে আসে ইচ্ছে। ডায়েরীর পাতা গুলোয় আরেকবার হাত বুলিয়ে ডায়েরীটা বন্ধ করে দেয় ইচ্ছে। স্টাডি রুম থেকে বেরিয়ে দরজা খুলতেই দেখে নিহাল চৌধুরী।

” বাবা তুমি? কিছু বলবে?

‘সেজেছিস আদ্রকে রিসিভ করতে?

‘হে বাবা। আজ ৫ বছর পর ওনাকে দেখবো। একটু সাজবোনা বলো?

‘নিহাল চৌধুরী কিছু বলতে যাবে তার আগেই অদ্রি এসে বললো,

“বাহ ইচ্ছে তোকে নীল শাড়ীতে বেশ সুন্দর লাগছেতো।

‘সত্যি আপু?

” হুম সত্যি।

“অদ্রিজা কোথায়?

” তোর ভাইয়ের কোলে। আচ্ছা তাড়াতাড়ি চল।

“ফুপ্পি….

” মা কিছু বলবেনা। চল।

“এই ৫ বছর অনেক জোর করেও নিহাল চৌধুরী ইচ্ছেকে এই বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে পারেনি। এর মধ্যে সবার সাথে আদ্রের কথা হলেও ইচ্ছের সাথে কথা হয়নি। হয়নি না..মোটকথা আদ্রই তার সাথে কথা বলতে চায়নি।

চলবে…..

স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি পর্ব-০৯

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি
#পার্টঃ০৯
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

৫৮.

চারদিকে মেঘলা আকাশের মেঘমালা। বইছে শীতল বাতাস। গোলাপি রংয়ের একটা টপস আর একটা ব্লু কালারের জিন্স পড়ে তড়িঘড়ি করে সাইড ব্যাগটা নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে ইচ্ছে। আদ্র কল দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলেছে তাড়াতাড়ি কলেজে যেতে। আদ্র কখনো গম্ভীর ভাবে ইচ্ছের সাথে কথা বলেনি আজ বলেছে তাই ইচ্ছে ভয়ে আছে। বিয়ে উপলক্ষে তার বাবা আদ্রদের বাসায় তাকে দিয়ে গেছে অদ্রির সাথে থাকবে সে। ইচ্ছে বুঝতেই পারছেনা বিয়ে তাই বলে বরের বাড়িতে থাকতে হবে! আজব।

৫৯.

কলেজ ক্লাসে ঢুকতেই পুরো ক্লাস অন্ধকার দেখে ঘাবরে যায় ইচ্ছে। ধীর পায়ে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

‘আদ্র ভাই… কোথায় আপনি?

‘ইচ্ছে মনে মনে পুনরায় আবার বললো,

‘সবাই কোথায় গেলো?

‘হঠাৎ সারা ক্লাসে আলো জ্বলে উঠলো৷ সবাই একসাথে বলে উঠলো, “হ্যাপি বার্থডে ইচ্ছে….

‘ইচ্ছে পুরো অবাক। আজকে তার বার্থডে আর তারই মনে ছিলোনা। হঠাৎ পেছনে থেকো শুনতে পেলো কেউ একজন বলছে,

‘Happy Birthday Ecche Pori”

‘ইচ্ছে পিছনে তাকিয়ে দেখলো আদ্র হাতে কেক নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো।

৬০.

এইটা তোমার গিফট ইচ্ছে পরী।

‘থেংকস আদ্র ভাই।

‘ইচ্ছে আদ্রের দেওয়া ডায়েরীটা গুটিয়ে গুটিয়ে একবার দেখলো। অনেক সুন্দর ডায়েরী। উপরে লিখা “Love at First Sight”

‘আদ্র ইচ্ছের দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে হোট করে ইচ্ছের এক হাত টান দিয়ে একদম নিজের কাছে এনে ফেলে। একজনের হার্টবিট অন্যজন শুনতে পাচ্ছে। ইচ্ছে পলকহীন ভাবে আদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্র এরপর যা করে বসলো এইটা ইচ্ছে কখনো ভাবেনি।

৬১.

আদ্র অফিসে বসে বসে পিসির দিকে তাকিয়ে ফিক করে হাসছে। কারণ ইচ্ছে আয়নার সামনে গিয়ে টিস্যু পেপার দিয়ে বারবার নিজের ঠোঁট মুছার চেষ্টা করছে। আদ্র হেসে হেসে মনে মনে বললো, “ভালোবাসার পরশ মুছা যায়না ” ইচ্ছে পরী” হঠাৎ আদ্রের ফোনে কল আসে।

৬২.

রুপ…সত্যিটা কখন সামনে আসবে?

‘আপু..আর কয়েকদিন ওয়েট করুন..আদ্র ঠিক যেইভাবে সাজিয়েছে ঠিক সেইভাবে হলে খুব তাড়াতাড়ি সত্যিটা সামনে আসবে।

‘ইনশিয়া বিরক্ত নিয়ে বললো,

‘কাব্য…কাব্যকে আমি ছাড়বোনা। কখনোইনা। কাব্য আমার জীবনটা নরক বানিয়ে ফেলেছে।

‘আপু কাব্যকে আদ্র কখনোই শেষ করে ফেলতো। শুধু আপনার দিকে তাকিয়ে এখনো চুপ আছে।

‘ইনশিয়া চোখের পানি মুছে বললো,

‘আদ্র ভাইয়ার জন্যইতো আমি বেঁচে আছি রুপ।

৬৩.

কিরে ইচ্ছে কি করছিস আয়নার সামনে?

‘অদ্রির কন্ঠ শুনে ইচ্ছে আমতা আমতা করে বললো,

‘না মানে আসলে আমি ঠোঁটটা একটু কেটে গেছে কিভাবে যেনো তার জন্য টিস্যু দিয়ে রক্ত আটকাচ্ছিলাম।

‘সে কিরে? ভাইয়া জানতে পারলে জানিস কি হবে? তাড়াতাড়ি ঠোঁটে কিছু লাগিয়ে নে।

‘ইচ্ছে অদ্রির কথা শুনে মনে মনে বললো,”তোমার ভাই ইতো করেছে। শয়তানের নানা একটা।

‘এই ইচ্ছে শুন যেইটা বলতে এসেছি.. ভাইয়া অফিস থেকে বেরিয়ে শপিংমলে আসবে। আর আমি আর তুই এইখান থেকে চলে যাবো। উচ্ছ্বাসও অফিস থেকে ওইদিকে চলে যাবে। বিয়ের কেনাকাটা করতে। তুই বরং তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নে।

‘আচ্ছা আপু। ইচ্ছে মনে মনে বললো, “এই বিয়ে হলেতো বিয়ে করবো ”

৬৩.

শপিংমলে আসতেই ইচ্ছেকে দেখে চোখ টিপ মারে আদ্র।

‘ইচ্ছে মনে মনে অবাক হয়ে ভাবলো, “এই আদ্র ভাইয়ের কি হলো? আগেতো এমন করতোনা। ইদানিং বেশি রোমান্টিক হয়ে গেছে ]

আদ্র ইচ্ছের ভাবান্তর ফেইস দেখে অদ্রি আর উচ্ছ্বাসের সামনেই ইচ্ছেকে বললো, ” কি ইচ্ছে পরী? আজকে কি ভাবনার ডোজ বেশি হয়ে গেলো?

‘ইচ্ছে হঠাৎ চমকে উঠলো। অদ্রি আর উচ্ছ্বাসের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে আদ্রের দিকে তাকালো। অসভ্য লোক একটা। সবার সামনে এইভাবে লজ্জাটা না দিলেই কি হতোনা? আদ্র উচ্ছ্বাস আর অদ্রিকে বললো, “তোরা ওইদিকে যা। আর আমরা এইদিকে যায়।

” ওকে।

৬৪.

হাতে এক গাদা শপিং ব্যাগ নিয়ে বাসায় ঢুকলো অদ্রি ইচ্ছে আর উচ্ছ্বাস। পেছনে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বাসায় ঢুকছে আদ্র। আদ্র সোফায় বসেই গা এলিয়ে দেয়। মিসেস আনেয়া নীড় সবার জন্য শরবত নিয়ে এসে বললো,

“কি দরকার ছিলো এই গরমে বের হওয়া? বলেছিলাম না? বিকেলে যেতে।

‘মা..বিয়ের কেনাকাটা। সেইটা কি বিকেলে গেলে পুরোপুরি করতে পারতাম?

‘তুই থাম অদ্রি। কি একটা যা তা অবস্থা। তোরা যা সবাই। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।

মিসেস আনেয়া নীড় চলে যাচ্ছিলেন তাকে থামিয়ে আদ্র বললো,

‘ইনশিয়া আর রুপ খেয়েছে মা?

৬৫.

ইনশিয়া…

‘আরে আদ্র ভাইয়া আসুন।

‘ডক্টরের সাথে কথা হয়েছে আমার৷ তোমার অপারেশনের জন্য আমি তোমাকে বাইরে পাঠিয়ে দিবো।

‘না ভাইয়া আমি বাহিরে যেতে চায়না।

‘যেতে হবে৷ আমার আর তোমাকে এইভাবে দেখতে ভালো লাগেনা ইনশিয়া।

‘যাবো তবে,সত্যিটা..সবার সামনে এনে।

‘আদ্র ভাবশীল হয়ে বললো,” হুম’।

৬৬.

দিন যায় রাত যায়। এইভাবে কেটে গেলো এক সপ্তাহ৷ ঘনিয়ে এসেছে গায়ে হলুদের দিন। ইচ্ছেকে কনে বেশে আর অদ্রিকে কনে বেশে সাজিয়েছে পার্লারের ২ জন মহিলা। এর মধ্যে আদ্র ইচ্ছেকে তেমন একটা বিরক্ত করেনি। যদিও তার মন সবসময় ইচ্ছের পানেই ছিলো। আর সিসিক্যামেরায় ২৪ ঘন্টায় নজর রাখতো তার ইচ্ছে পরীর উপর।

‘স্টেজে ইচ্ছে বসে আছে৷ ইচ্ছের হঠাৎ চোখ যায় হলুদ পান্জাবী পড়া আদ্রের দিকে৷ হেসে হেসে একটা ছেলের সাথে হাত মিলাচ্ছে। হাতে ঘড়িটা যেনো তার স্মার্ট অনেক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে। চুলগুলো উল্টোভাবে মিলিয়ে আছে। হঠাৎ আদ্র তাকাতেই ইচ্ছের চোখাচোখি হয়েছে। আদ্র তাকাতেই আদ্র ইচ্ছেকে দেখে একটা হাসি উপহার দেয়। জানেনা আজ ইচ্ছের এই হাসিটা কেনো এতো স্নিগ্ধ লাগছে। ইচ্ছের মুখে আনমনেই হাসি আসলো।

অদ্রি উচ্ছ্বাস মিটিমিটি হাসছে একে অপরকে দেখে। উচ্ছ্বাস হাত দিয়ে দেখিয়ে বললো,”তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।

‘আদ্র ফোনে রুপের সাথে কথা বলছিলো..হঠাৎ আনেয়া নীড় এসে বললো,

“আদ্র যা যা তাড়াতাড়ি ইচ্ছের পাশে গিয়ে দাঁড়া। কয়েকটা কাপেল পিক নে। মায়ের কথা শেষ হতে না হতেই..ইনশিয়া এসে বললো, ” ভাইয়া চলুন।

‘ইচ্ছের পাশে আদ্র দাঁড়াতেই আদ্র ইচ্ছের দিকে কয়েকমিনিট এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে৷ এই দেখার যেনো শেষ নেই। ক্যামেরা ম্যান ওই অবস্থায়ই..ইচ্ছে আর আদ্রের একটা পিক তুলে নেয়। আর হেসে বললো,

‘স্যার ম্যাম.আপনাদের এই চাহনিটা বেষ্ট ছিলো।

চলবে…

স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি পর্ব-০৮

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি
#পার্টঃ০৮
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

৪৮.

এই মেয়ে কে আদ্র?

মিসেস আনেয়া নীড় কড়া গলায় কথাটা বললো আদ্রকে। আদ্র এখনো পাশে থাকা মেয়েটির হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সে কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। বাড়ির সবাই ইতিমধ্যেই উৎকৃষ্ট দৃষ্টিতে পরখ করছে আদ্রের পাশে থাকা মেয়েটিকে।

‘ভাইয়া এই মেয়েটা কে?

‘অদ্রি…ওহ আসলে…

‘আমি বলছি মেয়েটি কে..’হঠাৎ এই কথা শুনে সবাই পিছনে তাকায়। ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা বলেছে রুপ। চোখে মুখে বিষন্নতা তার।

‘এইটা কে রুপ?

‘আন্টি মেয়েটি আমার সদ্য বিবাহিত বউ।

‘সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে রুপের দিকে। ইচ্ছের হঠাৎ চোখ যায় পেছনে চুপসে দাঁড়িয়ে থাকা অয়নির পানে। ইচ্ছে তড়িঘড়ি করে অয়নির কাছে গিয়ে বললো, “আর ইউ ক্রেজি অয়নি? নিজের ভালোবাসাকে কেউ এইভাবে অন্যের হাতে দিয়ে দেয়?

‘অয়নি জড়িয়ে ধরে ইচ্ছেকে কেঁদে ফেলে৷ মিসেস আনেয়া নীড় চোখ রাঙ্গিয়ে রুপকে বললো,

‘তুই না অয়নিকে ভালোবাসিস রুপ?

‘আমার কিছু করার ছিলোনা আন্টি। মেয়েটির সাথে পাবলিক আমাকে জোর করে বিয়ে করিয়ে দিয়েছে।

‘অদ্রি আর উচ্ছ্বাস একে অপরের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘কিই!

‘হে। আসলে এইটা একটা Accident. আন্টি মা বাবার কাছে গিয়েছিলাম৷ মেনে নেয়নি.. তাই বাধ্য হয়ে…

৪৯.

‘ওফ অয়নি রুপ তোরা জাস্ট অসাধারণ অভিনয় করিস।

‘আদ্র ভাইয়া..আপনার জন্যতো এইসব করতেই হলো।

‘হে অয়নি যা বলেছো।

‘অয়নি..হঠাৎ ইচ্ছের কন্ঠ পেয়ে সবাই..আমতা আমতা হয়ে উঠে।

আদ্র বললো, ” ইচ্ছে পরী’এসো আমার রুমে এসো।

‘আপনি না বললেও আসতাম আদ্র ভাই।

‘ইচ্ছে রুমে ঢুকতেই বিছানায় বসে থাকা মেয়েটিকে বললো,

‘আপনার নাম কি আপু?

‘আমার নাম ইনশিয়া জান্নাত।

৫০.

আদ্র সবে মাত্র গোসল করে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ পাশের রুমের বারান্দায় চোখ যায় তার। বারান্দার ভেতরেই রুম৷ ইচ্ছে গুনগুন করে গান গাইছে। আদ্র হঠাৎ ভাবলো, ইচ্ছেকে শুনিয়ে গান গাইলে মন্দ হয়না। ইচ্ছের দিকে উঁকি দিয়ে একটু গলাটা ঝেড়ে গান শুরু করলো আদ্র।

‘ কখনো কি রাত্রি কেটে..
ভোরের আলো এসে,
আমাকে জড়াবে….
কখনো কি মনেতে
লুকোনো কথা সে শুনতে পাবে..
যতবার কল করি
তুমি ব্যস্ত থাকো বন্ধুদের সাথে…
আবার আমি বের হলে,
বলো কি করো..তুমি অন্যদের কাছে,
চায় ছুটে যায়,
দূরে কোথাও পালায়.
তোমার ছায়া..থেকে সরে যেতে চায়।

৫১.

হঠাৎ এতো সুমুধুর কন্ঠে গান শুনে ইচ্ছে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে পড়ে। গান অনুসরণ করে বেলকনিতে যায় সে। আদ্রের গানের এতোই গভীরতা ছিলো যে ইচ্ছে আদ্রের একদম সামনাসামনি গিয়ে বেলকনির গ্রিলে ধরে দাঁড়ায়। আদ্রও এর সামনাসামনি গ্রিল এ ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো।

আর এইদিকে.. আদ্র চোখ খুলতেই ইচ্ছেকে তার দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠে। ইচ্ছে এখনো আগের মতোই আদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছে ধরা কন্ঠে বললো,

‘আপনি অনেক ভালো গান গাইতে পারেন আদ্র ভাই।

‘গানটা যার জন্য গিয়েছি তার মন ধরেছে তবে!

“ইচ্ছের এতোক্ষণে যেনো হুঁশ ফিরে৷ সে আদ্রের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে এক দৌঁড়ে বেলকনি থেকে গিয়ে দোম করে দরজা লাগিয়ে দেয়।

৫২.

‘আদ্র ভাইয়া হঠাৎ আপনি আমাকে রুপের ওয়াইফ করে কেনো নিয়ে এসেছেন বলবেন একটু?

‘ইশনশিয়ার কথায় আদ্র মুচকি হেসে বললো,

‘তোমার জীবন বিপদে ইনশিয়া। কাব্য যে কোনো টাইমে তোমার ক্ষতি করে দিবে। আর আমি থাকতে আমার বোনকে কেউ টাচ ও করতে পারবেনা। তুমি আমার কাছে যদি অদ্রির মতোই।

‘ইনশিয়ার চোখে পানি টলমল করছে। আদ্র গিয়ে ইনশিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো, ” চোখের পানির ভীষণ মূল্য। তাই অযথা খরচ করোনা।

৫৩.

আমার তো সন্দেহ হচ্ছে।

‘আনেয়া নীড় ঘর গোছাতে গোছাতে রাজ্জাক নীড়কে উপোক্ত কথাটি বললো। রাজ্জাক নীড় ভ্রু কুঁচকে বললেন,

‘কেনো?

‘এই মেয়ে রুপের বউ! আচ্ছা দেখেচো? মেয়েটার মুখের এক পাশ কালো কাপড়ে ঢাকা। আমারতো দেখতেই ভয় লেগেছে।

‘হতেই পারে কোনো সমস্যা। তুমি যে কেনো এতো উল্টা পাল্টা ভাবো কে জানে।

‘কিই! আমি উল্টা পাল্টা ভাবি?

‘,না মানে এমনি আর কি..

‘আজ সারাদিন তোমার চা খাওয়া বন্ধ। আনেয়া নীড় এইটা বলেই রেগে গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে যান। আর এইদিকে রাজ্জাক নীড় ফিক করে হেসে মনে মনে বলেন,

‘সেই আগের মতোই তুমি রয়ে গেলে আনেয়া।

৫৪.

আদ্রদের বাসার বসার ঘরে সবাই একসাথে বসে আছেন। নিহাল চৌধুরী একটু আগেই আসলেন। আজ উচ্ছ্বাস অদ্রি আর ইচ্ছে আদ্রের বিয়ের তারিখ ঠিক করা হবে।

‘ভাই আমি ভাবছি ওদের বিয়েটা আগামী সপ্তাহে ধরে ফেললে কেমন হয়?

‘হুম আনেয়া তুই ঠিকি বলছোস। কি বলো রাজ্জাক?

‘হে ভাইজান শুভ কাজে দেরি কিসের?

‘ওদের কথা শুনে আদ্র ইচ্ছের দিকে তাকায়। ইচ্ছেও আদ্রের দিকে রাগে কটমট করে তাকিয়ে ছিলো। তাই দুজনের চোখাচোখি হয়েছে। আদ্র ইচ্ছের দিকে তাকাতেই চোখ টিপ মারে। ইচ্ছে দুই চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষণ আদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে উপরে চলে গেলো।

৫৫.

দেখুন আদ্র ভাই..আমি কাব্য….

‘ইচ্ছেকে একদম বুকে চেপে ধরে আদ্র। পরম আভেশে জড়িয়ে ধরে তাকে। ইচ্ছে কথা বলতে গিয়েও থেমে গেছে।

‘ইচ্ছে পরী আদ্র…আদ্র থাকবে তোমার মুখে অন্য কেউ নয়। আর তুমি এখন একজনের হবু বউ তাই আমি চায়না..অন্য কোনো ছেলের কথা মুখে নাও তুমি।

‘ইচ্ছে আদ্রকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে বললো,

‘আই ডন্ট লাইক ইউ মিস্টার আদ্র নীড়। সো, প্লিজ ডিস্টেন্স ফ্রম মি।

‘আদ্র তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, “প্রশ্নই উঠেনা ডিস্টেন্সের।

৫৬.

আদ্র…তোর কথা মতো ইচ্ছেকেতো বলে দিলাম কাব্যকে নিয়ে পালিয়ে যেতে। ওহ কিন্তু সত্যিই যাবে। আমি আমার বোনকে ভালো করে চিনি।

‘আদ্র ডেবিল স্মাইল দিয়ে বললো,

” যেতে দেনা কাব্যকে নিয়ে এরপর বুঝতে পারবে কাব্যের আসল রুপ।

‘তুই ভেবে বলছিস? যে আমি ইচ্ছেকে পালিয়ে যেতে দিবো?

‘অফ কোর্স উচ্ছ্বাস। চিল কর। জাস্ট চিল। প্যারা নিসনা।

‘দেৎ তোর কোনো চিন্তায় নেই…

কথাটা বলেই উচ্ছ্বাস আদ্রের রুম থেকে চলে যায়।

উচ্ছ্বাস যেতেই আদ্র মনে মনে বলে,

“এইবার তুমি আসল আদ্র নীড়কে দেখবে ইচ্ছে পরী। এতোদিন লাভ দেখেছো এইবার দেখবে রোমান্টিক লাভ অত্যাচার।

৫৭.

আকাশে উঠেছে সূর্য। পাখিরা করছে চিকিমিকি। আকাশে উঠেছে একটুখানি নীল আভা।

ফোনের রিংটোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙে ইচ্ছের। ঘুম ঘুম চোখে বিছানায় হাতড়াতে হাতড়াতে মোবাইলটা নিয়ে কল ধরতেই..ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে কেউ একজন বললো,

‘তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে কলেজে এসো।

‘ইচ্ছে বিড়বিড় করে বললো, ” আদ্র ভাই!

চলবে….

স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি পর্ব-০৭

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি
#পার্টঃ০৭
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

৩৮.

অদ্রি আর উচ্ছ্বাসকে দেখে অবাক হয়ে যায় বাড়ি সদ্য লোক। অদ্রির চোখে পানি। উচ্ছ্বাসের গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। অদ্রি গিয়ে জড়িয়ে ধরে আনেয়া নীড়কে। আর ইচ্ছে! সে দৌঁড়ে যায় তার ভাইয়ের কাছে। উচ্ছ্বাসের গাল ধরে অপলক দৃষ্টিতে উচ্ছ্বাসের দিকে তাকাতেই জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বাসকে। এ যেনো এক মিলন মেলা। উচ্ছ্বাস ইচ্ছেকে ছেড়ে দিয়ে ধীর পায়ে বাবার সামনে যায়। গিয়ে পায়ে ধরে ফেলে। কান্না করতে করতে বললো,

‘বাবা…বাবাগো। তোমার এই অবুঝ ছেলেটাকে ক্ষমা করে দাও বাবা।

‘নিহাল চৌধুরীর চোখে পানি৷ নিহাল চৌধুরী ছেলেকে নিচ থেকে উঠিয়ে জড়িয়ে ধরলো।

আর এই দিকে আদ্রের মুখে এক অসীম হাসি৷ বিজয়ের হাসি। সে পেরেছে পরিবার গুলোর মুখে হাসি আনতে।

৩৯.

‘ওইসময় ভাইয়ারা এসেছিলো বলে আমি কিছু বলিনি। এইগুলো কি করেছো বাবা?

‘নিহাল চৌধুরীর রুমে এসে কথাগুলো এক নিশ্বাসে বললো ইচ্ছে। নিহাল চৌধুরী চায়ের কাপটা..সাইড কেনিটে রেখে বললো,

‘কি করেছি?

‘আমাকে রিং পড়ানো হয়েছে কেনো?

‘এইটা হওয়ার ছিলো তাই।

‘মানে?

‘মানে তোমার আর আদ্রের বিয়ে সেই ছোট থেকেই ঠিক করা। তোমার মা বেঁচে থাকতেই।

‘বাবা..

‘চিৎকার করে লাভ নেই ইচ্ছে এইটাই সত্যি।

‘আমার পক্ষে আদ্র ভাইকে সারাজীবন মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমি একজনকে ভালোবাসি বাবা।

‘কাব্য চৌধুরীকে তাইতো?

‘তুমি কি করে জানলে বাবা!

‘নিহাল চৌধুরী শব্দ করে একটু হেসে বললেন,

“বাবা হই আমি তোমার। তাই মেয়ের খুঁজতো রাখতেই হবে। তবে ইচ্ছে আমি একটা কথা তোমাকে আফ সাফ বলে দিচ্ছি এই ছেলের সঙ্গ তুমি ত্যাগ করো। ছেলেটা মোটেও ভালো নয়। ইচ্ছে…চুপচাপ তখন রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

৪০.

উচ্ছ্বাস ফোনে কথা বলছিলো অদ্রির সাথে। অদ্রিকে নিয়ে গেছে আনেয়া নীড়। কারণ অদ্রি আর উচ্ছ্বাসের অনুষ্ঠান করে আবার বিয়ে হবে। এইটা কারোর নয় আদ্রের চাওয়া।

‘আমার অদ্রিজার আম্মু কি করে?

‘ভালো লাগছেনা উচ্ছ্বাস।

‘কেনো হুম?

‘তোমাকে ছাড়া একা লাগছে ভীষণ।

‘তাইনা?

‘হুম। জানোতো.. তোমার বুকে ছাড়া এমনিতে আমার ঘুম আসেনা।

‘আচ্ছা আমার অদ্রিজার আম্মুর কাছে কাল আমি চলে আসবো হ্যাপি? এখন যাওতো…গিয়ে শুয়ে পড়ো। উচ্ছ্বাস কল কাটতেই…একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল এলো। কে ধরতেই ওপাশ থেকে পুরুষালী একটা কন্ঠে শুনতে পেলো,

‘নিজের বোনকে ভালো অবস্থায় দেখতে চাইলে তাড়াতাড়ি ওর রুমে যাও।

‘কে? কে আপনি?

” যেইটা আগে বলছি ওইটা করো।

‘উচ্ছ্বাস লাইন না কেটেই তাড়াতাড়ি ইচ্ছের রুমে যায়।

৪১.

ঠাসস…

ইচ্ছে গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে৷ উচ্ছ্বাস রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে ইচ্ছের পানে। ইচ্ছে কেঁদেই যাচ্ছে এক নাগাড়ে।

‘তুই এইটা কি করতে যাচ্ছিলি জানিস?

‘হে জানি। বিষ খেতে যাচ্ছিলাম৷ কারণ আমি কাব্যকে ছাড়া বাঁচতে চায়না।

‘ইচ্ছে….

‘ঠিকি বলছি ভাইয়া। আদ্র ভাইকে কখনো আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। জোর করে সব হয় তবে ভালোবাসা পাওয়া যায়না।

‘উচ্ছ্বাস মনে মনে কিছু একটা ভেবে, ইচ্ছের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, ‘বনু..তুই ছাড়া আমাদের আছে কে বলতো? আজকে তোর একটা কিছু হয়ে গেলে বাবার কি হতো ভেবে দেখেছিস? আচ্ছা তুই বরং বিয়ের আগে কাব্যকে নিয়ে পালিয়ে যাস।

‘উচ্ছ্বাসের কথা শুনে ইচ্ছে অবাক। চুখ গুলো এখনে বিষ্ময়কর নিয়ে তাকিয়ে আছে উচ্ছ্বাসের দিকে।

‘কি বললে!

‘হুম ঠিকি বলেছি। তুই বরং ঘুমা। আর হ্যাঁ ভুলেও খারাপ কিছু করবিনা।

ইচ্ছের রুম থেকে বের হতেই উচ্ছাস বেলকনিতে এসে নিচের দিকে তাকায়। আদ্রও বেলকনির দিকেই তাকিয়ে আছে৷ উচ্ছ্বাসকে দেখেই মুচকি হেসে দেয় আদ্র। উচ্ছ্বাস পকেট থেকে ফোনটা বের করে কানে নিয়ে মুচকি হেসে বললো,

‘আদ্র এতো রাতেও আমার বোনটার দিকে নজর রাখছিস? এতো ভালোবাসলে…জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছিস না কেনো?

‘আদ্র নিচ থেকে বেলকনির দিকে তাকিয়ে কানের ব্লুটুথ নিয়ে..কালো গাড়িটায় হেলান দিয়ে বললো,

‘কি করবো বল..ইচ্ছে পরী যে আমার জান পাখি।আর বাকি রইলো জোর করার কথা..। আমি চায়না যে ওর থেকে জোর করে ভালোবাসা আদায় করি।

৪২.

আদ্র…রুমে ফিরতেই..সোফায় হাত পা ছেড়ে বসে..ব্লেজার খুলে শার্টের দুটো বোতাম খোলা রেখে কলারটা পেছনে নেয় একটু। তারপর মাথা রেখে দেয় সোফায়। এক হাত দিয়ে কপাল চাপড়ে ধরে সে। চোখ বুঝে ভাবে বিবর্ষ সেই দৃশ্য। ভাগ্যিস..সে ওইদিন গিয়ে ইচ্ছের রুমে ক্যামেরা সেট করে এসেছিলো৷ নয়তো আজ…এইসব ভাবতেই রুহ কেঁপে উঠে আদ্রের।

৪৩.

নির্জন নগরীতে বাড়ছে মানুষের আনাগোনা। সূর্য হেলে উঠেছে নতুন সাজে৷ বাহিরে পাখিরা করছে কিচিমিচি৷ চোখে চকচকে..রোদ পড়তেই আড়মোড় ভেঙে ঘুম থেকে ছোট ছোট চোখ খুলে তাকায় আদ্র। আদ্র চোখ খুলতেই ঝাপসা চোখে..ইচ্ছেকে দেখতে পায়৷ ইচ্ছে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আদ্রকে দেখে হাসছে৷ আদ্র বিড়বিড় করে ঘুম ঘুম চোখে বললো,

‘ইচ্ছে পরী ভালোবাসি তোমায়। ভীষণ ভালোবাসি। আমার এই #স্নিগ্ধ_প্রেমের_অনুভূতি তুমি কেনো বুঝোনা বলোতো? আদ্রের এইসব বিড়বিড় করে কথা বলাগুলো কোনোটাই ইচ্ছের কান এড়ায়নি। ইচ্ছে সাথে সাথে হাসি বন্ধ করে দেয়। আদ্র বললো,

‘আমার স্বপ্নে এসেও…আমার প্রতি অনুভূতিহীন দেখাচ্ছো ইচ্ছে পরী?

হঠাৎ আদ্র কি একটা ভেবে যেনো ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে। সত্যি সত্যি ইচ্ছে তার সামনে!

৪৪.

অদ্রি গোসল থেকে বের হতেই দেখলো বিছানার শুয়ে কেউ একজন ফোন টিপছে। মুখটা বুঝা যাচ্ছেনা। মুখটা দেখতে একটু সামনে যায় সে। সামনে যেতেই অবাক!।

‘উচ্ছ্বাস তুমি!

‘ওমা অদ্রিজার আম্মু, আমার জায়গায় অন্য কাউকে আশা করেছিলে বুঝি?

‘না মানে আমি জানতাম আজ তুমি আসবে। তবে সকাল সকাল চলে আসবে তাতো জানতাম না।

‘আরে বলোনা..কাল রাত থেকেই তোমাকে ছাড়া ভালো লাগছিলোনা৷ তো ভাবলাম সকাল সকালই চলে আসি৷ তাই ইচ্ছে আর আমি চলে আসলাম।

‘তাইনা?

‘উচ্ছ্বাস বিছানা থেকে উঠে…যেই অদ্রিকে জড়িয়ে ধরতে যাবে হঠাৎ ‘অদ্রিকে ডাকতে ডাকতে ইচ্ছে রুমে চলে আসে।

ইচ্ছে তখন সাথে সাথে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বললো,

‘সরি সরি ভুল সময়ে চলে এসেছি। আম আম্ আমি কিছু দেখিনি।

‘অদ্রি লজ্জায় নুইয়ে গেলো। আর উচ্ছ্বাস বললো,

‘তবে রে.. এই কোথায় পালাচ্ছিস? দাঁড়া দাঁড়া বলছি।

৪৫.

রুপ তুমি যাবে? আদ্র ভাইয়াদের বাসায়।

‘কেনো?

‘ইচ্ছেরা মনে হয় আজ সেইখানে গিয়েছে তাই।

‘যেতে মন চাইছে?

‘হে। ভীষণ।

“চলো তাহলে…

‘কলেজ মাঠে একে অপরের হাত ধরে ধরে যাচ্ছিলো রুপ আর অয়নি। হঠাৎ রুপের ফোনে একটা কল আসে। রুপ নাম্বারটা দেখেই অবাক হয়ে যায়।

‘এই রুপ স্টেচু হয়ে আছো কেনো? কে কল করেছে?

‘ইনশিয়া জান্নাত।

৪৬.

‘ খাবার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে। হঠাৎ ইচ্ছে খেয়াল করলো আদ্র কোথাও নেই৷ উচ্ছ্বাস খেয়াল করলো ইচ্ছে চারিদিকে তাকিয়ে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। উচ্ছ্বাস গলাটা কাশি দিয়ে ঝেড়ে বললো,

‘অদ্রি…আদ্রকে কোথাও দেখছিনা যে..?

‘উক্ত কথাটি আঁড়চোখে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে বললো উচ্ছ্বাস।

‘ইচ্ছে উচ্ছ্বাসের কন্ঠ শুনেই চট করে খাবার খেতে মন দিলো। যেনো তার কিছু যায় আসেনা।

‘আদ্র ভাইয়া…একটা কাজে বাইরে গেছে।

‘কি কাজ? আমিতো আদ্রকে দেখলামইনা।

‘দেখলাম তো তাড়াহুড়ো করে কোথায় যেনো গেলো।

হঠাৎ কলিং বেল বাজতেই..অদ্রি উঠতে যাবে..এমন সময় মিসেস আনেয়া নীড় বললো,

‘থাক তুই বস। আমি খুলছি।

‘মিসেস আনেয়া নীড় দরজা খুলতেই অবাক।

চলবে….