Tuesday, July 29, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1009



কাঁচের সংসার পর্ব-০১

0

#কাঁচের_সংসার
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_১

‘তুমি কোনোদিন আমাকে ছাড়া থাকতেই পারবে না, দ্বিতীয় বিয়ে তো দূরের কথা।’ হাসতে হাসতে আরোহী সেদিন স্বামীকে মজার ছলে কথাগুলো বলেছিল কিন্তু কে জানতো যে আরোহীর হাসির সাথে উড়িয়ে দেওয়া কথাটাই সত্য প্রমাণিত হবে।

বিনিময়ে আরিয়ান সেদিন কিছু বলেনি শুধু মুচকি হেসে আরোহীকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিল।
———

আরোহী দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে একবার তাকালো সদ্য বিবাহিত নতুন দম্পতির দিকে।
আরিয়ানকে বেশ মানিয়েছে মেয়েটির সাথে। মেয়েটা দেখতে ভারী মিষ্টি। হয়ত এজন্যই আরিয়ানের মা সেই মেয়েটিকে ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিল। আর ছোট থেকে দেখে আসছে বলে কথা। বোনের মেয়েকে হয়ত আগে থেকেই নিজের ছেলের জন্য পছন্দ করে রেখেছিল কিন্তু মাঝখানে আরিয়ান আরোহীকে বিয়ে করে নিয়ে আসার জন্য হয়ত সফল হতে পারেনি।

আরোহী এক ফলক আরিয়ানের দিকে তাকালো। তাকে দেখে কোনোরকম লাগছে না। আরিয়ান এই বিয়েতে খুশি না-কি বেজার তা ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। তবে আরোহী এতটুক নিশ্চিত যে আরিয়ান এই বিয়েতে রাজি ছিল তবে স্নেহাকে সে বোনের নজরেই দেখে এসেছিলো সেটা আরোহী জানে কিন্তু বিয়েতে রাজি থাকার ফলে লুৎফা বেগম সেই সুযোগটা লুফে নিয়েছে। শতই হোক, অবশেষে নিজের কাজ সফল হলো বলে আর আরোহীর মতো একটা অনাথ মেয়েকে নিজের ছেলের কাছ থেকে দূরে সরাতে পারবে ভেবে উনার মুখ থেকে যেন হাসি সরছেই না।

নতুন দম্পতিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে অনেকেই। আরিয়ানের মা লুৎফা বেগম হাতে মিষ্টি নিয়ে দুজনের দিকে হাসিমুখে মিষ্টি বাড়িয়ে দিল। উনাকে আজ ভীষণ হাসিখুশি লাগছে। হয়ত এতদিনে মনের আশা পূরণ হলো সেই আশায়।

আরোহীর বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে, এই দম্পতিকে সে যেন একদম সামনে থেকে দেখে কিন্তু তার শাশুড়ি লুৎফা বেগমের কড়া নির্দেশ। তার অলক্ষী ছায়াটা যেন উনার ছেলে-বউ এর উপর না পড়ে।
আরোহী অশ্রুমাখা দৃষ্টিতে আরেকবার নতুন দম্পতির দিকে তাকিয়ে দরজা আটকে দিতে যেতেই দেখল, এতো মানুষের ভীড় থেকে ঠিকই একজন আরোহীর লুকিয়ে দেখাটা খেয়াল করেছে। সে মানুষটা হলো আরোহীর ভালোবাসা, আরিয়ান। আরিয়ানের চোখে কোনো অপরাধবোধ নেই কিন্তু আরোহীর সামনে ঠিকই অপরাধবোধের মতো দৃষ্টি দেখাচ্ছে। ওই চোখ দিয়েই যেন বুঝাতে চাচ্ছে কিছু একটা কিন্তু আরোহী আজ বুঝার চেষ্টা করলো না কিছু। কেন করবে! আরিয়ান তো আর তার নেই। আজ থেকে অন্য কারো সে।

———-

আরোহী দরজা বন্ধ করে দিয়ে মেঝেতে বসে পড়ল। তার সবচেয়ে আপনজনটাও আজ তাকে ছেড়ে দিল। এই দুনিয়ায় আর কেউ রইল না তার।
আচ্ছা, আরিয়ান তো জানতো যে আরোহীর আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তবুও কেন এমন করলো! তাই বোধহয় দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা উঠলেও ডিভোর্সের কথা তুলেনি।
এটা ভাবনা মাথায় আসতেই আরোহী তাচ্ছিল্য হাসি দিল। মায়া দেখাচ্ছে হয়ত!

মা-বাবা হীন মেয়েটা যখন আশ্রম থেকে বেরিয়ে এই বিষাক্ত শহরে ভালো সেজে মুখোশের আড়ালে ঢেকে থাকা মানুষদের মাঝখানে নিজের একটা ভরসার স্থান খুজছিল ঠিক সেই মুহূর্তে আরিয়ান তার দিকে ভরসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো। সে দেখেছিল তখন এই শহরে কত কত মানুষ বাজে প্রস্তাব দিয়ে চাকরি দিবে বলেছিল। তখন আরিয়ানের দু’চোখে আরোহী ভরসা খুঁজে পেয়েছিল। সে তখন কোনো দ্বিরুক্তি প্রকাশ না করেই আরিয়ানের হাত আঁকড়ে ধরেছিল। সে তখনই আরিয়ানকে শর্ত জুড়িয়ে দিয়েছিল যে তাকে পেতে হলে বিয়ে করে নিয়ে যেতে হবে। আসলে আরোহী মনে মনে এই বিষাক্ত শহর থেকে বাঁচার আকুতি থেকেই এটা বলেছিল। আর সে দেখতে চেয়েছিল যে আরিয়ান কী সত্যিকারেই তাকে চাই কিনা! না কি আরিয়ানও ভালোর আড়ালে মুখোশ পড়েছিল কিন্তু আরোহীর ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে আরিয়ান সাথে সাথে আরোহীকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গিয়েছিল। এরপর একেবারে বিয়ে করেই আরোহীকে আরিয়ান তার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল।

প্রথম প্রথম আরিয়ানের মা মেনে না নিলেও সময়ের সাথে সাথে মেনে নিয়েছিল কিন্তু আরোহীর হয়ত বুঝার ভুল ছিল। আরিয়ানের মা হয়ত আরোহীকে কোনো কালেই মেনে নেয়নি, এমনি ভালোর আড়ালে মুখোশ পড়ে রয়েছিল তা বিয়ের একমাস পেরোতেই আরোহী বুঝে গিয়েছিল।

আরিয়ানেরও হয়ত এখন আর আরোহীকে ভালো লাগে না! লাগবেই বা কী করে, আরোহী যে একবছর আগের আরোহী নেই। চেহারার সুন্দর ভাবটা আর নেই। লুৎফা বেগম আরিয়ান না থাকা কালীন এটা সেটা করতে দিত, আরোহীকে সারাদিন বিশ্রাম নিতে দিতো না সেসব আরিয়ান জানে না। আরিয়ান আসার সময় হলেই লুৎফা বেগম জোর করে আরোহীকে বিশ্রাম নিতে পাঠিয়ে দিতো। সারাদিন পর একটু বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ পেতেই আরোহীর দুই চোখে ঘুম নেমে আসতো। আর সেসময়ই আরিয়ান এসে নিজের মাকে রান্নাঘরে দেখে চেঁচিয়ে উঠতো। সে সোজা রুমে এসে আরোহীকে ঘুমাতে দেখে ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে টেনে তুলতো। আরোহী ধাক্কার তাল সামলাতে না পেরে ধরফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসতো। সে ঘুম ঘুম চোখে কিছু বুঝে উঠতে না পেরে আরিয়ানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেই আরিয়ান রাগী দৃষ্টিতে বলে উঠতো,

‘ওখানে রান্নাঘরে আমার বৃদ্ধ মা’কে কাজ করতে দিয়ে তুমি আরামের ঘুম ঘুমাচ্ছ? সারাদিন এভাবেই শুয়ে-বসে কাটাও আর আমি বাইরে কাজ করে ম’রি আর এখানে আমার বৃদ্ধ মা’কে কাজে মা’রো! এই বয়সী শাশুড়িকে কাজ করাতে দিয়ে নিজে ঘুমাচ্ছ লজ্জা করে না তোমার!’

আরোহী কিছু বুঝে উঠতে পারতো না। সে তো সব কাজ শেষ করে শাশুড়ি মায়ের জোরাজোরিতে রুমে এসেছিলো কিন্তু এসব…! আরোহী মনে মনে হিসাব মিলাতে ব্যস্ত হয়ে কিছু বলার উদ্দেশ্যে মুখ খুলতে নিতেই হঠাৎ আরিয়ানের পেছনে হাত মুছতে মুছতে তার শাশুড়ি লুৎফা বেগমকে রুমে ঢুকতে দেখতেই আরোহীর টনক নড়ে উঠতো। সে কিছু বলে উঠতেই আরিয়ান হাত উঁচু করে থামিয়ে দিত। লুৎফা বেগম আরেকটু ভালো সাজার অভিনয় করে আরিয়ানের উদ্দেশ্যে বলে উঠতো,

‘থাক বাবা। কিছু বলিস না। আমি যতদিন বেঁচে আছি, সব কাজ নিজের হাতেই করে নিব। এসব নিয়ে তোদের মধ্যে ঝামেলা হোক তা আমি চাই না।’

আরিয়ান তখন আরোহীর দিকে রাগী দৃষ্টি নিঃক্ষেপ করে রুম থেকে বেরিয়ে যেত।
আরোহী আরিয়ানের যাওয়ার দিকে নিস্পলক তাকিয়ে চোখ ভেজাতো। সে তখন থেকেই বুঝে নিয়েছিল যে এই সংসারে তার টিকে থাকা বড্ড কঠিন। এভাবে চলতে থাকলে আরিয়ান আর তার মধ্যে দুরুত্ব বাড়তেই থাকবে কিন্তু তার কোনো উপায় ছিল না। আরিয়ানের ততদিনে আরোহীর কাছ থেকে মন উঠে গিয়েছিল। আরিয়ানেরও বা আর কী দোষ! সে তার জায়গায় ঠিক ছিল। সারাদিন অফিস শেষে বাসায় এসে যখন দেখতো নিজের স্ত্রী রুমে পড়ে ঘুমাচ্ছে আর মা রান্নাঘরে কাজ করছে তখন যেকোনো ছেলেই এসব দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারবে না কিন্তু এসব দেখার মাঝে যে বড়ো ভুল লুকায়িত রয়েছে সেটা কোনোভাবেই আরোহী আরিয়ানকে বুঝিয়ে উঠাতে পারতো না। আরিয়ানের কাছে তার মায়ের কথায় সবার আগে। এভাবেই আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে একেবারের জন্য দুরুত্ব তৈরী হয়ে গেল। আর একবছর হয়ে যাওয়ার পরেও যখন আরোহী মা হয়ে উঠতে পারছিল না তখন আরিয়ানের মা লুৎফা বেগম যেন সুযোগ একদম হাতের নাগালেই পেল। নিজের বোনের মেয়েকে ছেলের সাথে বিয়ে করিয়ে দেওয়ার সুযোগ। আরিয়ান প্রথমে আরোহীর দিকে তাকিয়ে একটু নাকোচ করলেও পরে রাজি হয়ে গিয়েছিল কারণ তখন তাদের মধ্যে এমনিও দুরুত্ব বেড়ে গিয়েছিল। তবুও আরিয়ান দোটানায় ভুগে আরোহীর কাছে এসেছিলো। আরোহীর তখন আর কীই বা বলার থাকবে। সেও রাজি হতে বলে আরিয়ানকে এই বিরক্তিকর সম্পর্ক থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছিল।
এসব ভাবতেই আরোহীর চোখ ফেটে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।

আরোহী চোখ মুছে মেঝে থেকে উঠে বসলো। রুমের বাইরে থেকে এখন আর আগের মতো শোরগোল শোনা যাচ্ছে না। হয়ত নতুন বউকে নিয়ে আরিয়ান রুমে চলে গিয়েছে।
আজ আরোহীর জায়গা গেস্ট রুমে। এই রুমের পাশের রুমটাই এতদিন আরোহী-আরিয়ানের ছিল তবে আজ থেকে আরিয়ানের সাথে আর অন্য কারোর নাম আর অন্য কারো সাংসারিক হাত বিচরণ করবে সেই রুমে। আরোহীর এতদিনের সাজানো গুছানো সংসার যেন এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল।

#চলবে!

অন্যরকম তুই পর্ব-২১ এবং শেষ পর্ব

0

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ২১ [ শেষ পর্ব ]
#লেখিকাঃDoraemon
অনন্তের কথা শুনে অহনা থমকে যায়। অহনা অনন্তকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠল
–কোনো দেড়ি হয় নি। আমি তোকে বাঁচাবোই বাবা। তোর কিছু হবে না।
অনন্ত এবং অহনা দুজনেই পাশ ফিরে দেখে অনন্তের বাবা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। অনন্ত তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–এসব তুমি কি বলছো বাবা? আমার বাঁচার আশা নেই বললেই চলে। তাহলে তুমি কেন আমাকে মিথ্যা আশার আলো দেখাচ্ছো?
অনন্তের বাবা অনন্তের কাছে এসে অনন্তের কাঁধে হাত রেখে বলল
–কোনো দেড়ি হয় নি বাবা৷ আমার বন্ধু আমেরিকার অনেক বড় ভালো ডাক্তার। আমি তার সাথে তোর ব্যাপারে সব কথা বলেছি। সে আমাকে বলেছে একটু রিস্ক নিয়ে ব্রেইন অপারেশন করালে তুই ঠিক হয়ে যাবি বাবা। এতে তোর মৃত্যুর ঝুঁকি আছে কিন্তুু তিলে তিলে শেষ হয়ে যাওয়ার চেয়ে তোকে বাঁচানোর শেষ চেস্টা করাটা অনেক ভালো। তুই কালই আমার সাথে বিদেশ যাবি। আমি তোকে সুস্থ করে তুলবোই। তুই সুস্থ হয়ে যাবি।
অনন্তের বাঁচার আশার কথা শুনে অহনার চোখ দিয়ে খুশিতে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। অনন্ত অহনাকে কাঁদতে দেখে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কি হলো আবার কাঁদছিস কেন?তুই চাস না অহনা আমি আবার তোর কাছে বেঁচে ফিরে আসি?
অহনা অনন্তকে জড়িয়ে ধরল। অহনার মুখে কোনো কথা নেই শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। এটা দেখে অনন্তের বাবা মনে মনে বলল
–মেয়েটা সত্যি আমার ছেলেটাকে বড্ড ভালোবাসে।
অনন্তের বাবা রুম থেকে চলে গেল।
পরেরদিন অহনা অনন্তের সাথে এয়ারপোর্টে এসে অনন্তকে বিদায় জানাতে আসে। অহনা অনন্তকে কিছুতেই ছাড়তে চাইছে না। এয়ারপোর্টের সবার সামনে অহনা অনন্তকে জড়িয়ে ধরে অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে। অহনার কান্না দেখে অনন্তের বুকটাও কস্টে ফেটে যাচ্ছে। অনন্ত অহনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অহনার কপালে এবং গালে চুমু দিয়ে এক প্রকার কেঁদে দিয়েই অনন্ত অহনাকে বলল
–ভালো থাকিস রে পাগলী। যদি আমার ভাগ্যে আবার তোর জীবনে ফিরে আসা লেখা থাকে তাহলে আমি ঠিকই ফিরে আসব। আর যদি আমি বেঁচে না ফিরে আসতে পারি তাহলে কখনো নিজের ক্ষতি করবি না। মন দিয়ে পড়াশোনা করবি। নিজের খেয়াল রাখবি। অনন্তের কথা শুনে অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনার কিছু হবে না৷ আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তাহলে আপনি ঠিক আমার কাছে ফিরে আসবেন। আপনাকে ফিরে আসতেই হবে স্যার।
অনন্ত অহনার কথা শুনে একটু মুচকি হেসে অহনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
–তাই যেন হয় অহনা। আমি তাহলে আসি রে। ভালো থাকিস।
অনন্ত চলে গেল। অহনা এয়ারপোর্টে দাড়িয়ে এখনো কাঁদছে। বিমান পারি দিল আকাশপথে। বিমানের জানালার পাশের সিটে বসে অনন্ত বাইরের প্রকৃতির দৃশ্য দেখছে। অনন্ত মনে মনে বলল
–জানি না ব্রেইন অপারেশন করার পর আমি বাঁচব কিনা! কিন্তুু আমার যে বেঁচে থেকে অহনার কাছে ফিরে আসার খুব ইচ্ছা। আমি যে অহনাকে ভীষণ ভালোবাসি। জানি পাগলীটা এখনো নিশ্চয়ই এয়ারপোর্টে বসে বসে কাঁদছে।
অনন্ত কপালে এক হাত দিয়ে চোখের জল ফেলতে লাগল। অনন্তের বাবা অনন্তের কাঁধে হাত রেখে অনন্তকে সান্তনা দিতে লাগলেন। অনন্ত নিজের চোখের জল মুছে ফেলল৷
ছয় মাস কেটে গেল। অহনা এখন তার নিজের বাসায় থাকে। অহনার মা বাবা অহনাকে এত দেড়িতে বাসায় ফিরে আসতে দেখে অনেক বকাঝকা করেছিল। অহনা এই ছয়মাস অনন্তের কথা মনে করে কেঁদেছে। কিন্তুু অনন্তের খোঁজ খবর এখনো অহনা পায় নি। অনন্ত এখন কেমন আছে তা অহনা জানে না। অহনা নিরবে ঘরের দরজা বন্ধ করে কেঁদেই যায়। অহনা কলেজে যায় কিন্তুু পড়াশোনায় অহনার মন বসে না। অহনা ধীরে ধীরে আবারো আগের মতো অসুস্থ হতে থাকে। অহনার আবারো হার্টের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। অনন্তের জন্য কাঁদতে কাঁদতে অহনার শ্বাস কস্ট হতে থাকে৷ কিন্তুু অহনা এখনো অনন্তের জন্য অপেক্ষা করে। অহনা প্রতিদিন কলেজ থেকে বের হয়ে কলেজের গেটের সামনে অনন্তকে খুঁজে বেড়ায় কারণ অনন্ত সবসময় অহনার জন্য কলেজের গেটের সামনে অপেক্ষা করত। অনন্তকে দেখতে না পেয়ে অহনার মনটা খারাপ হয়ে যায়। আজ অহনার পরীক্ষা ছিল। কিন্তুু পরীক্ষায় অহনা মনোযোগ দিতে পারে নি৷ হাতে ফাইল বোর্ড নিয়ে অহনা কলেজ থেকে বের হয়ে দেখতে পেল অনন্ত কলেজের গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে। অনন্তকে দেখতে আগের থেকেও সুন্দর লাগছে। এবং অনেকগুলো মেয়ে অনন্তের সাথে কথা বলতে চাইছে আর অনন্ত তাদের সাথে ধমকি দিয়ে বিদায় করে দিচ্ছে। অহনার হাতে থাকা ফাইল আর বোর্ড মুহূর্তের মাঝেই মাটিতে পড়ে যায়। অহনা খুশিতে দৌড়ে গিয়ে সবার সামনে অনন্তকে জড়িয়ে ধরে। সবাই অহনার কান্ডে হা হয়ে থাকে। কলেজের ছাত্র-ছাত্রী এমনকি শিক্ষকেরাও অহনার এ কান্ড দেখে অবাক। অহনা অনন্তকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনি ফিরে এসেছেন স্যার! আমি জানতাম আপনি ফিরে আসবেন। আপনার কিছু হতে পারে না। আমার ভালোবাসা কখনো মিথ্যে হতে পারে না।
অনন্ত মুচকি হেসে অহনার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
–তোর ভালোবাসার টানে আমি মৃত্যুর পথ থেকে বেঁচে ফিরে এসেছি অহনা। আমি নিজেও কখনো ভাবতে পারি নি যে আমি বেঁচে তোর কাছে কখনো ফিরে আসতে পারব। নিয়তি আমাদের দুজনকে আলাদা করে নি অহনা।
অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনি জানেন এই ছয়মাস আমি আপনাকে কতটা মিস করেছি? আপনার রাগী কথাগুলো, আপনার শাসনগুলো, আপনার ভালোবাসাগুলো আমি কত মিস করেছি আপনি জানেন? আপনাকে ছাড়া থাকতে আমার কত কস্ট হয়েছে তার কোনো ধারণা আছে আপনার? আমি এই কয়েকদিন বেঁচে থেকেও জীবন্ত লাশের মতো জীবনযাপন করছিলাম। আমি শুধু বেঁচে ছিলাম আপনার জন্য কারণ আমি জানতাম আপনি আমার কাছে ফিরে আসবেন। দেখেছেন আমার কথাই সত্যি হলো।
অনন্ত একটা মুচকি হেসে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমাকে বিয়ে করবি অহনা?
অহনা লজ্জায় অনন্তের বুকেই মুখ লুকালো। সবাই অনন্ত আর অহনার প্রেম দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। তাদের মুখে আর কোনো কথা থাকে না। কারণ তারা সবাই জানে অনন্ত এবং অহনার ভালোবাসার কথা।
বেশ কিছুদিন পর খুব ধুমধাম করেই অনন্ত এবং অহনার বিয়েটা হয়ে যায়। অনন্তের মা-বাবা এবং অহনার মা-বাবা তাদের ভালোবাসাটা মেনে নেয়। অহনা বাসর ঘরে বসে আছে। অহনার বুকের ভিতর ভয়ে ধুকপুকানি হচ্ছে। একটু পরেই অনন্ত দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করল। এবার তো অহনার ভয়ে হাত পা কাঁপছে।
অনন্ত ধীরে ধীরে অহনার কাছে এসে বসে অহনার ঘোমটা সরিয়ে দেয়। অহনা এখনো লজ্জায় অনন্তের দিকে তাকাতে পারছে না।
অনন্ত অহনার লজ্জা মাখা চেহারা দেখে মুচকি হেসে অহনাকে কোলে তুলে নিল। অহনা ভয় পেয়ে অনন্তের গলা জড়িয়ে ধরল।
অনন্ত অহনাকে কোলে তুলে ছাঁদে নিয়ে গেল। ছাঁদে নিয়ে অনন্ত অহনাকে দোলনায় বসিয়ে দিল। অনন্ত অহনার হাতে একটা ডায়মন্ড রিং পড়িয়ে দিল৷ আকাশের চাঁদের আলোয় অনন্তের মুখটা আলোকিত হয়ে আছে সেটা অহনা বুঝতে পারছে। অনন্ত অহনার পাশে দোলনায় বসে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–জানিস অহনা এই ছয়মাস তোকে ছাড়া থাকতে আমারো ভীষণ কস্ট হয়েছে। কিন্তুু কি করব আমি যে ব্রেইন অপারেশন করার পর টানা পাঁচ মাস অসুস্থ ছিলাম।
অহনা অনন্তের কথা শুনে নিরবে কাঁদতে থাকে। অনন্ত এটা দেখে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–এই অহনা তুই একদম কাঁদবি না। তোর কান্না আমার সহ্য হয় না৷ এখন তো আমি সুস্থ হয়ে গেছি। কান্না থামা বলছি। আমি যে তোকে খুব ভালোবাসি।
অহনা কাঁদতে কাঁদতে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি স্যার৷ খুব ভালোবাসি।
অনন্ত এবার দোলনায় বসা থেকে উঠে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–অহনা তুই আমাকে এই স্যার স্যার ডাকাটা কি বন্ধ করবি? মরা থেকে কি আমি ফিরে এসেছি তোর মুখে স্যার ডাক শুনার জন্য?
–তাহলে কি বলে ডাকব?
–আমাকে তুই অনন্ত বলে ডাকবি। আর এই আপনি আপনি বলা বন্ধ করে তুমি বা তুই করে বলবি।
অহনা অবাক হয়ে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই করে বলব! স্যার আপনিও না কি যে বলেন! আপনি আসলেই খুব আলাদা, একদম অন্যরকম।
অনন্ত মুচকি হেসে অহনার মুখের একদম কাছাকাছি এসে বলল
–এই কথাটা আমাকে তুই করে আমার নাম ধরে বলতে পারবি?
অহনা লজ্জা মাখা মুখে অনন্তের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
–অনন্ত আমার কাছে আসলেই #অন্যরকম তুই।
অনন্ত মুচকি হেসে অহনাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে অহনার ঠোঁটজোড়া নিজের ঠোঁটের সাথে মিলিয়ে নিল।



~[সমাপ্তি]~
[অন্যরকম তুই গল্পটা কিছুটা বাস্তব এবং কিছুটা কাল্পনিক নিয়ে রচিত। প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আমার গল্পটা কেমন লাগল বলবেন🙂।ধন্যবাদ]

অন্যরকম তুই পর্ব-২০

0

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ২০
#লেখিকাঃDoraemon
অহনা মাটিতে বসে পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে চিতকার করে কাঁদতে লাগল। অহনার চোখ দিয়ে জল অনবরত পড়তে লাগল৷ অহনা পাগলের মতো কাঁদতে লাগল। অনন্তের বাসায় এখন কেউ নেই কারণ অনন্তের মা গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে এবং অনন্তের বাবাও অনন্তের মতো অফিসে তাই এই মুহূর্তে অহনার কি হয়েছে তা জিজ্ঞেস করার মতো কেউ নেই। দুপুর থেকে রাত ঘনিয়ে এলো। অহনা এখনোও মাটিতে বসে আছে। অনন্ত অফিস থেকে ফিরে নিজের রুমে ঢুকে অহনাকে মাটিতে বসে থাকা অবস্থায় দেখে থমকে যায়। অনন্ত দৌড়ে অহনার কাছে গিয়ে অহনার মুখোমুখি মাটিতে বসে। অনন্ত দেখতে পেল অহনার চোখ নাকমুখ ফুলে একাকার হয়ে গেছে। অহনার চোখগুলো টকটকে লাল হয়ে আছে। অনন্ত অহনাকে নিজের কাছে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কি হয়েছে অহনা তুই এভাবে মাটিতে বসে আছিস কেন? আর তোর চোখমুখের এই অবস্থা কেন? দেখে তো মনে হচ্ছে তুই সারাদিন এখানে বসে থেকে কান্না করেছিস। কি হয়েছে আমায় বল?
অহনা অনন্তের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে শান্ত গলায় অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনি কেন বলেন নি যে আপনার ব্রেইন টিউমার হয়েছে? বলুন কেন বলেন নি আপনি? আমি কি আপনার এতটাই পর যে আমাকে একবারও জানানোর প্রয়োজনবোধ করলেন না?
অনন্ত অহনার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অনন্তের আর বুঝতে বাকি রইল না যে অহনা সবটা জেনে গেছে। অনন্ত একটু মুচকি হেসে অহনাকে বলল
–অহনা তুই এসব কি বলছিস? আমার কিছু হয় নি তো। দেখ আমি ঠিক আছি৷ কিসব আজে বাজে কথা বলছিস তুই?!!
অহনা নিজের হাতে থাকা রিপোর্টটা অনন্তের দিকে ছুঁড়ে ফেলে বলল
–তাহলে এটা কি? এখানে তো স্পষ্ট লিখা আছে যে আপনার ব্রেইন টিউমার হয়েছে! আপনি আমার কাছে এত বড় সত্যিটা কেন লুকালেন স্যার?
অনন্ত কিছু বলছে না শুধু মাথা নিচু করে চুপ করে বসে আছে। অনন্তের এমন শান্ত আচরণে অহনা অভস্ত্য নয়৷ অহনা অনন্তকে বলল
–কি হলো স্যার কথা বলছেন না কেন? আমার প্রস্নের উত্তর দিন?
অনন্ত শান্ত গলায় অহনাকে বলল
–অহনা তুই যা জানতে পেরেছিস তা সবই সত্যি। হ্যা আমার ব্রেইন টিউমার হয়েছে। আমি আর বেশিদিন এই পৃথিবীতে নেই। যখন জানতে পেরেছি তখন খুব দেড়ি হয়ে গিয়েছে রে অহনা৷ আমি নিজেও তোর কাছ থেকে দূরে থাকতে চাই না কিন্তুু কপালের লিখন যে কেউ বদলাতে পারে না।
অনন্তের কথা শুনে অহনা রেগে অনন্তকে কষিয়ে থাপ্পড় দিয়ে দিল। অহনা কাঁদতে কাঁদতে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–বিশ্বাসঘাতক, বেঈমান, প্রতারক, আপনি! আমার কাছ থেকে দূরে চলে যাওয়ার প্লেন করছেন? যদি যাওয়ারই থাকে তাহলে কেন আমার জীবনে এলেন? বলুন কেন এলেন আমার জীবনে? আমার মনে কেন ভালোবাসা তৈরি করলেন আপনি? কেন আপনার প্রতি আমাকে দূর্বল করে দিলেন? আমি যে আপনাকে খুব ভালোবাসি তা কি আপনি বুঝতে পারছেন না?
অহনার কথায় অনন্তের চোখ দিয়ে টপ করে কয়েক ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ে। আজ প্রথম অনন্ত অহনার মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনতে পেরেছে। অনন্ত খুশি হয়ে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই কি বললি অহনা? শেষের কথাটা আরেকবার বল?
অহনা চিতকার করে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমি আপনাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভীষণ ভালোবাসি। পাগলের মতো ভালোবাসি। আপনার কথা ভাবতে ভাবতেই আমি আমার হৃদয়টাকে ক্ষত বিক্ষত করেছিলাম। আপনি আমার জীবনে একমাত্র ব্যক্তি যাকে আমি নিজের অজান্তেই খুব ভালোবেসে ফেলেছি। এতদিন আমি আমার ভালোবাসাটা বুঝতে পারে নি। কিন্তুু আজ যখন বুঝতে পেরেছি তখন কেন আমাকে ফেলে দূরে চলে যেতে চাইছেন স্যার? আমি যে আপনাকে ছাড়া বাঁচব না তা কি আপনি বুঝতে পারছেন না? আমার প্রতিটা নিঃশ্বাস জুড়ে যে শুধু আপনি আছেন তা কি আপনি বুঝতে পারছেন না স্যার?
কথাগুলো বলেই অহনা চিতকার করে কাঁদতে লাগল। অহনার কান্না দেখে অনন্তের বুকটা কস্টে ফেটে যাচ্ছে। অনন্ত অহনাকে আবারো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্নাজড়িত কন্ঠে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই এভাবে কাঁদিস না অহনা। তোর কান্না যে আমার সহ্য হয় না। কি করব আমি অহনা তুই বল! আমারও যে তোকে ছেড়ে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে ইচ্ছে করছে না৷ আমিও যে বাঁচতে চাই অহনা। তোর জন্য বাঁচতে চাই। খুব করেই বাঁচতে চাই অহনা। কিন্তুু এটা যে সম্ভব না। আমি যে আর বেশীদিন এই পৃথিবীতে নেই। আমার একমাত্র লক্ষ্য ছিল তোকে সুস্থ করে তোলা। আমি পেরেছি অহনা। আমি তোকে সুস্থ করতে পেরেছি। এখন যদি আমি মরেও যাই আমি তাতেও শান্তি পাব কারণ আমার মৃত্যুর আগে তোকে সুস্থ করে যেতে পেরেছি এবং আমার জীবনের কিছু মুহূর্ত আমি তোর সাথে কাটাতে পেরেছি৷ তোকে দুচোখ ভরে এতদিন দেখতে পেরেছি। আমি তোকে সারাজীবন আমার পাশে চেয়েছিলাম অহনা কিন্তুু আমার ভাগ্য যে বড়ই নিষ্ঠুর। আমার ভাগ্য যে তা হতে দিবে না।
অহনা অনন্তকে শক্ত করে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল
–আপনার কিছু হতে পারে না স্যার। আপনার কিছু হলে আমি বাঁচতে পারব না৷ দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো আমি স্যার। মরে যাবো আমি৷ প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না স্যার প্লিজ যাবেন না।
অনন্ত অহনাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে ধমকের স্বরে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–চুপ একদম চুপ৷ আরেকবার মরার কথা বললে থাপ্পড় দিয়ে তোর সব কয়টা দাঁত ফেলে দিব বেয়াদব মেয়ে। তোর এত বড় সাহস কি করে হয় নিজেকে মেরে ফেলতে চাস? আমি মরে গেলে মরে যাব।কিন্তুু ভুলেও তুই নিজের কোনো ক্ষতি করবি না।
অহনা কাঁদতে কাঁদতে মুচকি হেসে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমার নিজেকে মারতে হবে না স্যার! আমার প্রাণ পাখিটা যে আপনাকে ছাড়া বাঁচবে না তাই নিজের অজান্তেই আমার দেহ থেকে বের হয়ে আপনার কাছে চলে যাবে। আপনাকে ছাড়া যে এ মন কিছুতেই থাকতে পারবে না৷
অনন্ত অহনার কথা সহ্য করতে পারল না৷ অনন্তের ইচ্ছে করছিল অহনাকে থাপ্পড় মারতে তবুও অহনাকে থাপ্পড় না মেরে অনন্ত মাটিতে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে টেবিল থেকে একটা কাঁচের গ্লাস দেয়ালে ভেঙে নিজের হাত কেটে ফেলল। আর মুহূর্তেই অনন্তের হাত থেকে রক্ত ঝড়তে লাগল৷ অনন্ত অহনার দিকে মৃদু হেসে বলল
–আরেকবার যদি তোর মৃত্যুর কথা বলিস তাহলে এখনই নিজেকে শেষ করে ফেলব৷ যে কয়টা দিন বাঁচতাম সে কয়টা দিনও বাঁচব না৷ তার আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব।
অহনা অনন্তের কান্ড দেখে অবাক হয়ে যায়। অহনা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসা থেকে উঠে দৌড়ে এসে অনন্তকে জড়িয়ে ধরে বলল
–এটা আপনি কি করলেন স্যার? কেন নিজের হাতটা এভাবে কাটলেন আপনি?
অহনা নিজের শরীরের ওড়নাটা ছিঁড়ে অনন্তের রক্ত ঝরা হাতটা বেঁধে দিল। অনন্ত অবাক নয়নে অহনার দিকে তাকিয়ে থাকে।
অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই আমাকে ভালোবাসলি ঠিকই অহনা কিন্তুু তুই খুব দেড়ি করে ফেললি।



#চলবে…..

অন্যরকম তুই পর্ব-১৯

0

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃDoraemon
অহনাও অনন্তের কথা অনুযায়ী মন খারাপ করে অনন্তের বিছানায় শুয়ে পড়ল। কিন্তুু মুহূর্তেই অহনা ঘাবড়ে গিয়ে শুয়া থেকে উঠে বসল। অহনার এ কান্ড দেখে অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কি হলো এভাবে টাকি মাছের মতো লাফিয়ে উঠলি কেন? শুয়ে পড় বলছি। নাহলে তোর জন্য আরো শাস্তি অপেক্ষা করছে।
অহনা ভয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল
–স্যার আপনি কো কো কোথায় শুবেন? আমি তো আপনার বিছানায় শুয়েছি। আপনি কি আমার সাথে একই বিছানায় শুবেন নাকি? ভুলেও এমন কাজ করবেন না। আমি তাহলে বিছানা থেকে উঠে নেমে যাব।
অনন্ত মুচকি হেসে অহনাকে বলল
–আরে না রে পাগলি তুই বিছানায় শুয়ে পড়। আমি সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ছি। আর হ্যা আমাকে এত ভয় পাওয়ার কারণ নেই। আমি তোকে আগেও বলেছি আমি রাগী হতে পারি কিন্তুু পশু নই।
অহনা আর কিছু বলল না। চুপচাপ মুখ গুড়িয়ে শুয়ে পড়ল। অহনা বিছানায় শুয়ে একটা অদ্ভুত সুগন্ধ পাচ্ছে যা অহনাকে মাতাল করে দিচ্ছে। একসময় অহনা ঘুমিয়ে পড়ল। অনন্ত অহনার কাছে এগিয়ে এসে বিছানার এক কোণে বসে অহনার কপালে আলতো করে চুমুর স্পর্শ এঁকে দিল। অহনার তাতে কোনো খেয়াল নেই। অহনা তো এখন ঘুমের দেশে চলে গেছে। অনন্ত অহনার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কিন্তুু হঠাৎই অনন্তের মাথায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হতে লাগল। অনন্ত মনে মনে বলল
–আবারো আমার মাথায় সেই একই ব্যথা অনুভব হচ্ছে! উফফ এ ব্যথা যে কত যন্ত্রণার কি করে বুঝাবো! অহনা এখন ঘুমাচ্ছে। ওর যাতে কোনো মতেই ঘুমটা না ভেঙে যায় সেদিকে আমার খেয়াল রাখতে হবে। অনেক কস্ট করে ওকে ঘুম পাড়িয়েছি। ওকে কোনোমতেই আমার এই কস্টের কথা জানানো যাবে না।
অনন্ত বারান্দায় চলে গেল। এখন রাত ২ টা বাজে৷ প্রকৃতিটা চারিদিকে কত নিস্তব্ধ। হালকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে চারপাশে। অনন্ত আকাশের তাঁরাগুলোর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অনন্তের মাথার ব্যথাটা প্রবল আকার ধারণ করছে। অনন্ত মাথায় এক হাত রেখে মুচকি হেসে মনে মনে বলল
–জানিস অহনা এখন তুই আমার খুব কাছে। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। আমি জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস কিন্তুু মুখে স্বীকার করতে চাস না। হয়তোবা তুই নিজেও জানিস না যে তুই আমাকে ভালোবাসিস৷ তোর চোখে আমি আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি অহনা। কিন্তুু এই মনটা তবুও তোর মুখ থেকে একবারের জন্য হলেও ভালোবাসি কথাটা শুনতে চায়। নিজের মনটাকে কিছুতেই মানাতে পারছি না। আমি জানি যখন আমি এই প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাবো তখন তুই আমার জন্য খুব কাঁদবি। খুব কস্ট পাবি তুই আমার জন্য ৷ একদিন ঠিকই তুই বুঝবি আমার কাছে কতটা ছিলিস #অন্যরকম তুই। তখন নাহয় আমি থাকব না তোর পাশে। কিন্তুু যাই হোক আমার শেষ নিস্বাস নেওয়ার আগেই আমাকে তোকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতেই হবে। জানি আমার হাতে বেশিদিন সময় নেই। আমি নাহয় তোর মুখে ভালোবাসি কথাটা আকাশ থেকেই শুনে নিব।
অনন্তের মাথা ব্যথা ধীরে ধীরে আরও বাড়তে লাগল। অনন্ত মাথায় এক হাত রেখে তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে টেবিলের ড্রয়ার থেকে টেবলেট আর ঔষধ বের করে খেয়ে নিল। অনন্তের খুব কস্ট হচ্ছে। অনন্তের শ্বাস নিতেও কস্ট হচ্ছে। কিন্তুু আজ অহনা তার খুব কাছে। অহনার ঘুমন্ত মুখটা দেখেই অনন্ত তার সব কস্ট ভুলে যাচ্ছে। হাজারো কস্টের মাঝে অনন্তের মুখে একটু হাসি ফুটে উঠেছে। কিছু কস্ট আড়ালেই রেখে দিয়েছে অনন্ত। কারণ অহনা জানলে যে অনন্তের কস্ট সহ্য করতে পারবে না।
এভাবেই দিন যেতে লাগল। অহনা আর অনন্ত এখন খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে৷ অহনা এখন আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ। অনন্ত অহনাকে তার পরিবারের কাছে কিছুতেই যেতে দেয় না। অনন্ত অহনাকে তার নিজের কাছেই রেখে দিয়েছে। এটা অহনার মনে খুবই ক্ষোভ প্রকাশ করে। অহনার তার মা বাবার সাথে ফোনে কথা বলে। অহনার মা বাবা জানে অহনা তার বান্ধবীর বিয়ের জন্য তাদের বাসায় বেড়াতে গিয়েছে। কিছুদিন পরই ফিরে আসবে। দিন যাচ্ছে, সময় যাচ্ছে। অনন্ত আগের থেকে অনেকটাই শান্ত হয়ে গেছে৷ অনন্তের চোখ মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে। চোখের নিচে কালো কালি পড়ে গেছে। অনন্ত ঠিকমতো খাবারও খায় না। অহনা অনন্তের এ অবস্থা দেখে অনন্তকে কিছু জিজ্ঞেস করলে অনন্ত ব্যাপারটা এড়িয়ে যায়। অনন্ত এখন অহনার কাছ থেকে কিছুটা দূরত্বে থাকে। আবার হঠাৎ করেই অহনাকে জড়িয়ে ধরে। অহনার ব্যাপারটা কেমন সন্দেহ হতে থাকে। অহনা মনে মনে বলল
–যেই স্যারটা এত রাগী ছিল সেই স্যারটা ধীরে ধীরে এমন শান্ত হয়ে যাচ্ছে কেন! আর উনাকে মাঝে মাঝেই দেখি মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকেন। ঘন নিশ্বাস ফেলেন। উনার কি হয়েছে? উনি ধীরে ধীরে এমন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন কেন? উনাকে জিজ্ঞেস করলে তো উনি কিছুই বলেন না৷ আমাকেই খুঁজে বের করতে হবে উনার কি হয়েছে।
অনন্ত আজ অফিসে চলে গেছে৷ তাই অহনা অনন্তের পুরো রুমে খুঁজাখুঁজি করতে লাগল কিছু পায় কিনা। কিন্তুু অহনা পুরো ঘর খুঁজেও কিছু পেল না। হাল ছেড়ে দিয়ে অহনা বিছানায় বসে পড়ল। অহনা মন খারাপ করে বসে আছে। তখনই অহনার চোখ পড়ল অনন্তের বেডরুমের দেয়ালে থাকা বড় করে টাঙানো অহনার ছবির ফ্রেমটার দিকে। অহনা ছবিটা দেয়াল থেকে সরালেই নিচে একটা কাগজ অহনার পায়ে এসে পড়ল।
অহনা যখন কাগজটা হাতে নিয়ে খামটা ছিড়ে খুলে পড়তে শুরু করল তখন অহনার মনে ঝড় বইতে লাগল। কারণ কাগজে স্পষ্ট লেখা অনন্তের ব্রেইন টিউমার হয়েছে। আর অনন্তের বাঁচারও কোনো আশা নেই। ডেট একদম শেষ পর্যায় চলে গেছে। অহনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। অহনা ধুম করে মাটিতে বসে পড়ল।



#চলবে……

অন্যরকম তুই পর্ব-১৭+১৮

0

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃDoraemon
অনন্ত খুব জোরে থাপ্পড় দেওয়ার কারণে অহনা শব্দ করে কেঁদে যাচ্ছে। দুই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বাচ্চাদের মতো কেঁদেই যাচ্ছে। অহনার কান্না দেখে অনন্তের বুকটা কস্টে ফেটে যাচ্ছে৷ অনন্ত অহনার কাছে বসে অহনার মাথায় রাখতেই অহনা অনন্তের হাত সরিয়ে নেয়৷ অনন্ত মনে মনে বলল
–এটা আমি কি করলাম! একই তো মেয়েটার জ্বর আবার হার্ট দূর্বল তারওপর আমি ওকে এভাবে মারলাম। আমি আসলেই একটা অমানুষ। নাহলে অহনাকে এভাবে মারতে পারতাম না।
অহনা কাঁদতে কাঁদতে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনি খুব পঁচা। আপনি আমাকে এভাবে মারতে পারলেন? আমার গালে খুব ব্যথা লাগছে।
অনন্ত লক্ষ্য করল অহনার গালটা থাপ্পড়ের ফলে লাল হয়ে আছে। অনন্ত অহনার আরো কাছে এসে অহনার লাল হওয়া গালে একটা চুমু দিয়ে দিল। অহনা অবাক হয়ে অনন্তের দিকে তাকিয়ে রইল। অনন্ত অহনার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
–সরি অহনা আমাকে তুই ক্ষমা করে দে৷ কিন্তুু তুই আর কোনোদিন তোর মরার কথা বলবি না। কেন আমাকে এভাবে রাগিয়ে দিস তুই? আমার এসব কথা শুনতে ভালো লাগে না তুই জানিস না?
অহনা এবার আরো কাঁদতে লাগল। আবারও অনন্তকে জাপটে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। অহনার আবারও জড়িয়ে ধরায় অনন্ত আবারও অবাক হয়। অনন্ত অহনার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কান্না কি থামাবি নাকি আবার থাপ্পড় খাবি?
অহনা তাও কেঁদেই যাচ্ছে। অনন্তকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অহনা কেঁদেই যাচ্ছে। অহনা এবার কাঁদতে কাঁদতে অনন্তকে বলল
–আমি মনে হয় আর বেশিদিন বাঁচব না স্যার। আমার শ্বাস নিতে ভীষণ কস্ট হয়৷ আপনি পারলে আমাকে ভুলে অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী থাকবেন। আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না। তাহলে শুধু শুধু আমার জন্য কস্ট পাবেন না। আমি জানি আপনি আমাকে ভুলতে পারবেন।
অনন্ত এবার ধমক দিয়ে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই একদম চুপ থাক। তোর কিছু হতে দিব না আমি। সবচেয়ে ভালো ডাক্তার দিয়ে আমি তোর চিকিৎসা করাব। তোর কিছু হবে না। তুই আমাকে ভালো না বাসতে পারিস কিন্তুু আমি তোকে ভালোবাসি।
অহনা শান্ত গলায় অনন্তকে বলল
–আমার মতো একটা হার্টের রোগীকে কেন আপনি এত ভালোবাসেন স্যার?
অনন্ত এবার থমকে গেল। অনন্ত মনে মনে বলল
–তারমানে অহনা যানে ওর অসুখের কথা! কিন্তুু কেন আমাকে অহনা কিছু বলল না? কেন?
অহনা অনন্তকে জড়িয়ে থাকা অবস্থাই বলল
–কি হলো বলুন না কেন আমাকে এত ভালোবাসেন?
অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–ভালোবাসতে কোনো কারণ লাগে না অহনা। হঠাৎই আমার মনের ভিতর তুই ঢুকে পড়েছিস। আমার তোকে খুব ভালোলাগত। কিন্তুু ভালোলাগাটা যে কবে ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়েছে তা আমার নিজেরই অজানা।
অনন্ত অহনাকে নিজের থেকে ছাড়াতে চাইলে অহনা আবারও অনন্তকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে৷ অহনার কান্ড দেখে অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–যে তুই আমাকে আগে সহ্য করতে পারতি না সে তুই কিনা আমাকে এখন এভাবে বার বার জড়িয়ে ধরছিস! আমি কি এটা সপ্ন দেখছি নাকি বাস্তবে আমার সাথে এমন হচ্ছে?
অহনা মুচকি হেসে অনন্তকে বলল
–আপনাকে জড়িয়ে ধরেছি তারমানে এই না যে আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমি আপনাকে খুব ঘৃণা করি৷ কিন্তুু আপনার বুকে মাথা রাখতে আমার কেন জানি না খুব ভালো লাগছে।
প্লিজ আমাকে আরেকটু আপনার বুকে থাকতে দিন৷ আমাকে আবার পাগল বেহায়া মেয়ে মনে করবেন না কিন্তুু হুম।
অনন্ত অহনার কথায় হেসে ফেলল৷ অনন্ত অহনাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অনন্ত নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল৷
অহনা অনন্তের বুকের ভিতরের কস্টটা অনুভব করতে পারছে। অহনা উপরে তাকিয়ে দেখল অনন্ত কাঁদছে। অহনা অনন্তের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে অনন্তকে বলল
–কি হলো আপনার চোখে পানি কেন? এত রাগী মানুষের চোখে জল মানায় না। কাঁদবেন না প্লিজ।
অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই একদিনে বদলে গেলি কি করে অহনা? আমার সাথে নাটক করছিস নাতো?
অনন্তের কথায় অহনা খুব জোরে হাসতে লাগল৷ হাসতে হাসতে অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–হ্যা আমি নাটকই করছি। আপনার মতো রাগী দানব স্যারকে কি ভালোবাসা যায় নাকি? আপনিও না কত বোকা। হা হা হা আমি বদলাই নি৷ আর আপনাকে ভালোওবাসি নি। এটা তো আমি একটু আগেই আপনাকে বললাম। এখন যান আমার জন্য খাবার নিয়ে আসুন। আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে।
অনন্ত অহনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে অহনার জন্য খাবার আনতে চলে গেল। অনন্ত সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনে মনে বলল
–আমি এখনও জীবিত আছি আর আমি ভাবতেও পারি নি জীবিত থাকা অবস্থায় আমি তোর চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পাব অহনা। হ্যা তুই আমাকে ভালোবাসিস। কিন্তুু তুই তা স্বীকার করতে চাস না। কতদিন আমি বেঁচে থাকব জানি না কিন্তুু যতদিন বেঁচে আছি মরার আগে আমি তোর মুখে একবার ভালোবাসি কথাটা শুনতে চাই। জানি না তুই মুখ ফুটে কোনোদিন আমায় ভালোবাসি বলবি কিনা কিন্তুু মন জিনিসটা কিছুতেই মানতে চায় না। যে আমি ভালোবাসা বিশ্বাস করতাম না সে আমিই কিনা অহনার মুখে ভালোবাসি শুনার জন্য পাগল। নিয়তি কি আমাদের কোনোদিনও এক হতে দিবে?
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই অনন্ত অহনার জন্য খাবার নিয়ে চলে আসে। অনন্ত ঘরে এসে দেখল অহনা আবার কাঁদছে। অহনাকে কাঁদতে দেখে অনন্ত খুব রেগে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই আবারও কান্না শুরু করে দিলি? তোকে না আমি বললাম এভাবে কাঁদবি না।
অনন্তের ধমকে অহনা চুপ হয়ে গেল। অনন্ত হাতে প্লেট নিয়ে ভাত আর মাছ নিয়ে মেখে অহনার মুখের কাছে খাবার নিয়ে বলল
–এবার খুব বড় করে হা কর তো দেখি? ছোট করে হা করলে মার খাবি কিন্তুু৷
অনন্তের কথায় অহনা একটু হেসে চোখের জল ফেলে হা করল এবং অনন্ত অহনাকে খাইয়ে দিতে লাগল৷ খাওয়া শেষ করার পর অহনা অনন্তের কোলে শুয়ে পড়ল। অনন্ত মুচকি হেসে অহনার মাথায় হাত বুলাতে লাগল৷ অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনি আবার শিক্ষক জীবনে ফিরে আসুন স্যার। আপনাকে কলেজের ক্লাসে আবার আমি দেখতে চাই৷ আপনাকে ছাড়া কলেজটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে৷ আপনি আবার কলেজে ফিরে আসবেন তো স্যার?
অহনার কথায় অনন্ত থমকে যায়।



#চলবে…..

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃDoraemon
অহনার কথার কোনো উত্তর অনন্ত দেয় নি। অনন্ত এখনো চুপ করে আছে। অনন্তের চুপ করে থাকা দেখে অহনা আবারো অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কি হলো স্যার কিছু বলছেন না কেন? আপনি আবার আপনার শিক্ষক জগতে ফিরে আসবেন তো? আবার ফিরে আসুন না প্লিজ??
অনন্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তোর জন্য যে পেশাটা ছেড়েছি সেই পেশায় আমি আর ফিরে যেতে পারব না অহনা৷ আমাকে তুই জোর করিস না। আমি তোর এই কথাটা রাখতে পারব না। তোকে ভালোবেসেই আমি আমার শিক্ষক পেশাটা ছেড়েছি৷ আমি আমার ভালোবাসার অপমান করতে পারব না। আর আমি আমার কথারও খেলাপ করতে পারব না।
–কেন স্যার আমিই তো আপনাকে বলেছিলাম এই পেশাটা ছেড়ে দিতে এখন আমিই আপনাকে বলছি ফিরে আসতে তাহলে আপত্তি করছেন কেন? ফিরে আসুন না প্লিজ? এমন করছেন কেন?
অনন্ত মুচকি হেসে অহনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
–আমি চাই না তুই আবার আমার আগের রূপটা দেখে আমাকে ভয় পাস। আমার থেকে দূরে চলে যাস। আমি শিক্ষক পেশায় যাওয়া মানেই আবার তুই আমার ভয়ংকর রূপটা দেখে আমাকে ভয় পাবি৷
অহনা এবার অনন্তের কোল থেকে উঠে পড়ে সোজা অনন্তের মুখের সামনে সোজাসুজি বসল। অহনা এক দৃষ্টিতে অনন্তের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। অহনার এভাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে অনন্ত কিছুটা অবাক হয়।
–কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? আমি কি আগের থেকে বেশী অসুন্দর হয়ে গেছি নাকি যে এভাবে হাবলার মতো তাকিয়ে আছিস?
অনন্তের কথা শুনে অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনি দেখতে এত সুন্দর কেন? কি আছে আপনার মধ্যে?
অহনার কথা শুনে অনন্ত ৪২০ ভোল্টের শক খেল। অনন্ত কখনো আশা করে নি অহনাও তাকে অন্যান্য মেয়েদের মতো এমন প্রস্ন জিজ্ঞেস করবে! অনন্ত এবার ধমক দিয়ে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তোর কি মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে নাকি অহনা? কোন কথা থেকে কোন কথায় যাচ্ছিস তার কি কোনো খেয়াল আছে তোর?
–আমিতো ঠিকই বলছি। এত সুন্দর না হলেও আপনি পারতেন। এত সুন্দর ছেলে আমাকে ভালোবাসে এটা দেখতে বড্ড বেমানান লাগছে।
–অহনা তুই কি ঠিক আছিস?
–হ্যা আমি ঠিকই তো আছি৷
অনন্ত এবার রেগে অহনার দু বাহু ঝাকিয়ে চিতকার করে বলল
–তুই কি বলছিস তা কি তুই বুঝতে পারছিস অহনা?
অহনার এবার ধ্যান ফিরল। অহনা স্বাভাবিক হয়ে নিজের কথাগুলো মনে করে নিজেই লজ্জা পেতে লাগল। অহনা মনে মনে বলল
–হায় আমার কপাল! আমি এই দানবটাকে এসব বলেছি! ছিহ্ ছিহ্ ছিহ্ শেষে কিনা আমি এসব বললাম! আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। এবার তো স্যার আমাকে কেটে কিমা বানিয়ে দিবে!
অনন্ত রাগী গলায় অহনাকে বলল
–তুই যেন কি বলছিলি আমি তোর সাথে বড্ড বেমানান আরো কি বলছিলি আমি এত সুন্দর কেন?
মাথাটা কি তোর মঙ্গল গ্রহে ঘুরতে গিয়েছিল অহনা?
অহনা একটা মরা মরা হাসি দিয়ে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আই এম সরি স্যার! আমার ভুল হয়ে গেছে।
অনন্ত অহনার আরো কাছে এসে অহনার মুখের কাছে মুখ এনে অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই আমার জন্য একদম পারফেক্ট অহনা। নিজেকে ভুলেও বেমানান ভাববি না। আর আমি দেখতে সুন্দর সেটা আমি জানি এটা তোকে বিশ্লেষণ করে বলতে হবে না। আমার থেকে তুই হাজার গুণে সুন্দরী বুঝেছিস তুই?
অহনা অনন্তের কথায় অবাক সাথে ভয় পেয়ে যায়। অহনা মনে মনে বলল
–সুন্দরী তাও আবার আমি! জীবনেও কেউ আমাকে সুন্দরী বলল না। আর উনি যে কি দেখে আমায় ভালোবাসলেন একমাত্র খোদাই জানেন! পৃথিবীতে কি মেয়েদের অভাব পড়েছে শেষে কিনা আমার মতো গরীব বিশ্রী মেয়েকেই উনার পছন্দ হলো। ভাবা যায় এগুলা।
অনন্ত একটু মুচকি হেসে বলল
–ভালোবাসা এমনিতেই হয় অহনা। ভালোবাসা কোনো কিছু বিচার করে হয় না। তুই যেটা ভাবছিস তা নয়। আমি তোকে আগেও বলেছি।
অহনা চোখ বড়বড় করে মনে মনে ভাবতে লাগল
–আমার মনের কথা উনি বুঝলেন কি করে?! উনি কি শিক্ষকের সাথে সাথে জ্যোতিষীও ছিলেন নাকি!
–কি হলো আবার কোন দুনিয়ায় চলে গেলি তুই?
অহনা একটা শুকনো হাসি দিয়ে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–স্যার আমি এই দুনিয়ায় এখনো আছি। পরকালে কিছুদিন পর চলে যাবো আরকি!
অহনার কথা শুনে অনন্ত আবার রেগে গিয়ে অহনাকে ঠাসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। অহনা বিছানায় ছিটকে পড়ে। অহনা ভাবতেও পারে নি অনন্ত তাকে আবার মারবে। অহনা গালে হাত দিয়ে কান্না করতে থাকে। অনন্ত দাঁতে দাঁত চেপে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই কি বললি তুই পরকালে চলে যাবি? তোর পরকালে চলে যাওয়ার এতই শখ!
অনন্ত অহনার কাছে এসে অহনার দু হাত বিছানায় শক্ত করে চেপে ধরে। অহনা ছুটাছুটি করার চেস্টা করছে। অহনা ভয়ে কান্না করতে করতে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
— স স্যার আমি ওই কথাটা আর কোনোদিনও বলব না। আ আমাকে এ এভাবের মতো ক্ষমা…
অহনাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে অনন্ত অহনার ঠোঁটজোড়া নিজের ঠোঁটের সাথে মিলিয়ে নেয়। অহনা অনন্তের কাছ থেকে ছুটতেও পারছে না। কারণ অনন্ত অহনার দু হাত চেপে ধরেছে। কিন্তুু অদ্ভুত বিষয় হলো অহনার ঠোঁটে কোনো ব্যথা লাগছে না। অনন্ত যখন অহনাকে ছাড়ল তখন অহনা অনন্তের কাছ থেকে দূরে সরে অন্য দিকে তাকিয়ে হাঁপাতে লাগল৷ তারপর অহনা অনন্তের দিকে তাকিয়ে চিতকার করে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনি খুব বাজে স্যার৷ খুব বাজে। অসভ্য, ইতর, বেয়াদব, ফাজিল সব আপনি। আমার সাথে আপনি সবসময় এমন কেন করেন? এজন্য আমাকে আপনি আপনার বাসায় এনেছেন? আমি আজই আপনার বাসা ছেড়ে চলে যাব। আপনার পেশা চাকরি নিয়ে আপনি জাহান্নামে যান৷ আমি আপনাকে খুব খুব খুব ঘৃণা করি।
অনন্ত অহনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এটা দেখে অহনা আবারো অনন্তকে বলল
–কি হলো আবার আমার দিকে অসভ্যের মতো তাকিয়ে আছেন কেন? লজ্জা করে না আপনার?
–তুই উল্টো পাল্টা কথা বললে আমার কাছ থেকে এই শাস্তিই পাবি অহনা। আর বাসা থেকে যেতে চাইলে তোকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখব। যতদিন না তুই পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছিস ততদিনে তুই আমার বাড়িতে আমার ঘরেই থাকবি। তোকে এক কথা বার বার বলে আমি হয়রান হয়ে গেছি। এখন চুপচাপ ঘুমিয়ে পর।



#চলবে…..

অন্যরকম তুই পর্ব-১৫+১৬

0

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃDoraemon
অহনার শরীর ধীরে ধীরে দূর্বল হতে থাকে। এতটাই দূর্বল হতে থাকে যে অহনার শ্বাস নিতেও কস্ট হয়। অনন্ত কলেজের চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়ার পর ক্লাসের কোনো ছেলে-মেয়েই অহনার সাথে কথা বলে না। কেমন যেন এড়িয়ে চলে এবং বাজে ব্যবহার করে। কলেজের শিক্ষকরাও অহনার প্রতি ধীরে ধীরে প্রচুর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আজ কলেজে অহনা পড়া পারে নি বলে কলেজের শিক্ষক অহনাকে সবার সামনে অনেক বকাঝকা করে। বকাঝকাগুলো অহনার বুকে কাঁটার মতো বাঁধে৷ ধীরে ধীরে সবার অবহেলার স্বীকার হচ্ছে অহনা৷ আগে তো সবাই অহনাকে অবহেলা করতই এখন যেন আরও বেশি বেশি করে অবহেলা করে। কলেজ ছুটি হওয়ার পর আজ অহনা অনন্তকে কোথাও দেখতে পেল না৷ অনন্তকে কোথাও দেখতে না পেয়ে অহনার মনে শূন্যতা অনুভব হতে লাগল। অহনা মনে মনে বলল
–আজ দানব স্যারটা আসল না কেন? অন্যসময় তো আমাকে বিরক্ত করতে, অনেক জ্বালাতন করতে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। আজ কোথাও তাকে দেখতে পাচ্ছি না! আর আমিও না কিসব ভাবছি! মানুষ স্বভাবতই পরিবর্তনশীল। মানুষ বদলাতেও সময় লাগে না। তাই আজ থেকে উনিও হয়তোবা আর আমাকে বিরক্ত করবেন না। আমিও তো তাকে কম অপমান করি নি। আসলে আমার মতো পঁচা মেয়েকে কেউই ভালোবাসে না।
অহনা রাস্তায় হাঁটছে। রাস্তায় হাঁটার সময় অহনার বুকে অসম্ভব ব্যথা করছে। অহনার মাথাটাও ভীষণ ঘুরছে। অহনা মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলে কেউ ওকে ধরে ফেলে। অহনা চোখটা অল্প উপরে তুলেই অহনার মনটা অজানা খুশিতে ভরে উঠল৷ অহনা অস্পষ্ট কন্ঠে বলল
–স.. স.. স্যার।
অহনার চোখটা মুহূর্তের মাঝেই বন্ধ হয়ে গেল। অনন্ত অহনার শরীরে হাত দিয়ে দেখল অহনার জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। অহনার মুখটাও কেমন শুকিয়ে আছে৷ চোখের নিচেও কালি পড়ে গেছে।এটা অনন্তের বুকের ভিতর কেমন ভয় কাজ করতে লাগল। অনন্ত অহনার গাল ধরে চিন্তিত স্বরে অহনাকে একনাগারে ডাকতে লাগল
–অহনা এই অহনা তোর কি হয়েছে?! কথা বলছিস না কেন?! এই অহনা চোখ খুলে আমার দিকে তাকা? দেখ তোর অনন্ত স্যার এসেছে? কি হলো কথা বলছিস না কেন? আমার উপর অভিমান করলি বুঝি?
অনন্ত বুঝতে পারল অহনা জ্ঞান হারিয়েছে। অন্তত অহনাকে কোলে তুলে নিয়ে নিজের গাড়িতে বসিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেল। সেখানে অহনাকে চেকআপ করে ডাক্তার অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–রোগী আপনার কে হয়?
অনন্ত কোনো কিছু না ভেবেই ডাক্তারকে বলল
–ও আমার স্ত্রী। ও আমার জীবন মরণ সব। প্লিজ ডাক্তার বলুন অহনার তেমন কিছু হয় নি তো?
ডাক্তার বেশ গম্ভীর গলায় অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনার ওয়াইফের জ্ঞান হারিয়েছে কারণ উনি দীর্ঘ দিন যাবত হার্টের দূর্বলতায় আক্রান্ত। তারওপর উনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি সারাদিন চিন্তায় থাকেন। তাই উনার হৃদস্পন্দন ধীরে ধীরে কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আপনার ওয়াইফ যেকোনো সময়ই হার্ট অ্যাটাক করে মারা যেতে পারেন।
ডাক্তারের কথা শুনে অনন্ত ডাক্তারের কলার চেপে ধরে বলল
–আমার অহনার কিছু হবে না। আর একবার যদি আমার অহনাকে নিয়ে আপনি উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন তাহলে আপনাকে এখানে পুতে দিতে আমার দু মিনিটও লাগবে না। আমি বাংলাদেশের টপ বিজনেসম্যান আরমান আহমেদের একমাত্র ছেলে অনন্ত আহমেদ এবার নিশ্চয়ই চিনতে পেরেছেন আমাকে? আমি চাইলে সব করতে পারি। খুন করতেও আমার হাত একবারও কাঁপবে না
ডাক্তার কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল
–স্যা স্যার স্যার আপনি? আপনাকে আসলে আগে চিনতে পারি নি। আমাকে ক্ষমা করে দিন স্যার।
–আমার অহনাকে মরে যাওয়ার কথা বলার আগে হাজার বার ভেবে বলবেন। আমার স্ত্রীর কিছু হতে পারে না। বুঝতে পেরেছেন আপনি?
অনন্তের চিতকার করা কন্ঠে ডাক্তারের ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। নার্সরাও ভয়ে রীতিমতো কাঁপা-কাঁপি করছে।
অনন্ত অহনাকে বেড থেকে কোলে তোলে নিয়ে চলে গেল। নার্সরা ভয়ে ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে বলল
–স্যার উনি কে ছিলেন?
— শুনতেই তো পেলে কে ছিল! আর সবচেয়ে ভয়ংকর রাগী যদি কেউ থেকে থাকে তাহলে তা হলো অনন্ত আহমেদ। শুনেছিলাম খুব কম বয়সে বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে বাবার বিজনেস না সামলে চাকরি করছিলেন। একদম অবাধ্য ছেলে যাকে বলে। মা -বাবার কথাও উনি শুনেন না। উনার ভয়ে এলাকাও কাঁপে। আমি উনাকে আগে চিনতে না পারলেও এখন হারে হারে চিনেছি!
নার্সরা আবারও বলে উঠল
–কিন্তুু যতই রাগী ভয়ানক হোক না কেন উনি কিন্তুু দেখতে হেব্বি সুন্দর। কিন্তুু উনার স্ত্রী কত লাকি হয়েও এখন অসুস্থতায় ভুগছে।
অনন্ত অহনাকে গাড়ি করে নিয়ে যাচ্ছে অনন্তের নিজের বাসায়। অনন্ত অহনাকে তার পাশের সিটে বসিয়েছে। অহনার এখনো জ্ঞান ফিরে নি। অনন্ত অহনার মাথাটা নিজের কাঁধে রেখে গাড়ি চালাচ্ছে। কিন্তুু গাড়ি চালানোতে বেশি মন না দিয়ে অনন্ত অহনার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অনন্তের চোখের কোণে জল গড়িয়ে পড়ছে সেটা অহনা এখন দেখতে পারছে না। অনন্ত মনে মনে বলতে লাগল
–আমাকে ছেড়ে তুই চলে যেতে চাইছিস অহনা?! কিন্তুু আমি তোকে আমার কাছ থেকে কোথাও যেতে দিব না। তোকে ছাড়া আমি কি করে বাঁচব? বেঈমান মেয়ে এত ভালোবাসি তোকে তবুও তুই বুঝিস না। তোকে এবার থেকে আমি আমার কাছেই রাখবো। আমার কাছ থেকে কোথাও যেতে দিব না তোকে। তুই চাইলেও তোকে আমি আমার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে দিব না। তোর মরণকেও আমি মেরে ফেলব। দরকার হলে আমি নিজে মরব কিন্তুু তোকে মরতে দিব না।



#চলবে….

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃDoraemon
অনন্ত অহনাকে অজ্ঞান অবস্থায় কোলে করে নিজের বাসার ভিতর প্রবেশ করলে অনন্তের মা তা দেখে অবাক হয়ে যায়। অনন্তের মা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–বাবা তুই এ মেয়েটাকে কোথায় পেলি?
–মা ও তোমার ছেলের হবু বউ। আমি ওকে ভীষন ভালোবাসি। তাই বাসায় নিয়ে আসলাম। অহনা আমার ঘরেই থাকবে।
অনন্তের কথা শুনে অনন্তের মা অবাক হলো। অনন্তের মা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কিন্তুু মেয়েটা এভাবে অজ্ঞান হয়ে আছে কেন? ওকে এনেছিস ভালো কথা কিন্তুু ওর বাড়ির লোকের কাছে বলে নিয়ে এসেছিস তো?
–আমার অহনাকে নিয়ে আসতে আবার আমার কারও পারমিশন নেওয়ার লাগবে?! সেটা আমি মেনে নিতে পারব না মা। আমি তোমার সাথে পড়ে কথা বলব।
এটা বলেই অনন্ত অহনাকে কোলে নেওয়া অবস্থায় সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে নিজের বিছানায় অহনাকে শোয়াল।
অনন্ত অহনার পাশেই বসে আছে।
অনন্ত মনে মনে বলল
–আমিও দেখে নিব তুই আমাকে ছেড়ে কোথায় পালিয়ে যাস। আমি তোকে সুস্থ করে তুলবোই অহনা। তোর কিছু হতে পারে না। তোর পরিবার তোর যত্ন নিতে পারে নি। যদি যত্ন নিত তাহলে তুই ধীরে ধীরে এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তি না। আমি জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস না। কিন্তুু আমি যে তোকে ভালোবাসি। তাই যদি আমাকে জোর করে হলেও তোকে আমার কাছে রাখতে হয় তাহলে আমি সেটাই করব।
কয়েকটা ঘন্টা অতিক্রম হওয়ার পর অহনার ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরল। অহনা চোখ খুলে সামনে তাকিয়েই অনন্তকে দেখতে পেল।
আজ অহনা অনন্তকে দেখে একটও রাগ করছে না। শুধু অপলক দৃষ্টিতে অহনা অনন্তের দিকে তাকিয়ে আছে। অনন্ত একটা শুকনো হাসি দিয়ে অহনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। অহনা শুয়া থেকে উঠে বসতে চাইলে অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–খবরদার এখন উঠবি না। একটু বিশ্রাম কর। তারপর আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
অনন্তের কোনো কথা না শুনে অহনা খুব কস্ট করে শুয়া থেকে উঠে বসল। অনন্ত রেগে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমি যে বললাম আরেকটু বিশ্রাম নিতে সেটা কি তোর কানে গেল না?
অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমি বাসায় যাব। আমাকে বাসায় পৌছে দিবেন স্যার? ঐদিকে আমার মা-বাবা খুব চিন্তা করবে।
–তুই কোথাও যেতে পারবি না অহনা। আজ থেকে তুই আমার বাসায় থাকবি এবং আমার ঘরেই তুই থাকবি। আমি বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছি অহনা তুই সারাদিন আমার কথা ভেবেই নিজের এই হাল বানিয়েছিস। আমি সামনে থাকলে তুই আর আমাকে নিয়ে বেশি চিন্তা করবি না। তাই যতদিন না তুই সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হবি ততদিন তুই আমার বাসায় আমার সাথে এই রুমেই থাকবি। আমি আংকেল আন্টি কে বলে দিব তুই কয়েকটা দিন আমার সাথে থাকবি। তাহলে আর ওরা তোর জন্য চিন্তা করবে না।
অনন্তের কথা শুনে অহনা ভয়ে ঢুক গিলল। অহনা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–মানে কি স্যার? আমি আপনার সাথে একই ঘরে থাকব?! না না না আমি আপনার সাথে এখানে থাকব না। আমি বাসায় যাব। আপনি আমাকে বাসায় পৌছে না দিলে আমি একাই যাব।
অনন্ত এবার খুব জোরে ধমক দিয়ে অহনাকে বলল
–চুপ! একদম চুপ! তুই কোথাও যাবি না। আর হ্যা চিন্তা করিস না। আমি এতটাও খারাপ ছেলেও নই যে তোর সাথে খারাপ কিছু করতে যাব। এবং যদিও তুই পালানোর চেষ্টা করিস তাহলে তোর যে কি হাল আমি করব তা তুই কল্পনাও করতে পারবি না। তুই এখানে বস। আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
অনন্ত চলে যেতে নিলে অহনার মনটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠে। অহনা নিঃশ্বাস নিতে কস্ট হতে থাকে। হঠাৎই অহনা অনন্তের ডান হাত নিজের দু হাত দিয়ে চেপে ধরে। অনন্ত অবাক হয়ে পেছনে তাকিয়ে নিজের হাতের দিকে লক্ষ্য করে দেখল অহনা তার হাত ধরে রেখেছে। অনন্ত একটু অবাকই হলো। কারণ অহনা অনন্তকে স্পর্শ করা তো দূরের কথা, অহনা সবসময় অনন্তকে দেখলেই এড়িয়ে যেত। অনন্ত আবার পেছনে ফিরে অহনার কাছে এসে অহনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে একটু মুচকি হেসে অনন্ত অহনাকে বলল
–কি হয়েছে তোর? এভাবে আমাকে যেতে আটকালি কেন? তোর জন্য খাবার নিয়ে আসি। না খেলে যে তোর শরীর খারাপ করবে।
অহনা হঠাৎই অনন্তকে জড়িয়ে ধরল। হঠাৎ এভাবে অহনা জড়িয়ে ধরায় অনন্ত খুব অবাক হলো। অহনা অনন্তকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদতে লাগল।অহনার চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি গড়িয়ে পড়ছে৷ হঠাৎই অহনা এভাবে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকায় অনন্তের বুকের ভিতরটা কস্টে তোলপাড় হতে লাগল। কেউ যেন অনন্তের বুকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করছে এমন অনুভব অনন্তের হতে লাগল। আজ প্রথম নিজে অহনা অনন্তকে জড়িয়ে ধরল। কিন্তুু অনন্ত মনে মনে বলল
–মেয়েটা এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে কেন? ওর কান্না যে আমি সহ্য করতে পারি না!
অনন্ত অহনাকে ছাড়াতে গেলে অহনা আরও শক্ত করে অনন্তকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। অনন্তও অহনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অনন্ত একহাতে অহনার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত গলায় অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কি হলো এভাবে কাঁদছিস কেন? তোর কান্না আমার অসহ্য লাগে। একদম সহ্য করতে পারি না। কান্নাটা থামা বলছি৷
অহনা তবুও কেঁদেই যাচ্ছে। অনন্তকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে। অহনার শরীরটা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে সেটা অনন্ত অহনাকে জড়িয়ে ধরে স্পষ্ট বুঝতে পারছে। অনন্ত এবার ধমক দিয়ে অহনাকে বলল
–কি হলো কাঁদছিস কেন? তোর কান্না আমার ভালো লাগছে না।
অহনা এবার কাঁদতে কাঁদতে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আচ্ছা আমি কেন না চাইতেও সারাদিন আপনার কথা চিন্তা করি বলতে পারবেন? আমার সকাল থেকে রাত আর রাত গড়িয়ে সকাল হয়ে যায় শুধু আপনার কথাই ভাবতে ভাবতে। আজকে আপনাকে কলেজের সামনে না পেয়ে আমার এত কস্ট কেন হচ্ছিল? আপনার কথা চিন্তা করলে আমার হৃদপিন্ড এত দ্রুত চলে কেন? আচ্ছা আমি যদি একদিন আপনার কথা ভাবতে ভাবতে মরে যাই তাহলে কি আপনি আমায় ভুলে যাবেন? আপনি নিশ্চয়ই খুব সুন্দরী একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিবেন তাই না? আর আমার কথাও সারাজীবনের জন্য ভুলে যাবেন৷
অনন্তের চোখ জলে ঘোলাটে হয়ে গেছে। যেকোনো সময় টপ করে জল গড়িয়ে পড়বে। কিন্তুু বহু কস্টে চোখের জলগুলো অনন্ত নিজের চোখের মাঝেই সীমাবদ্ধ রেখেছে।
অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে আবারও বলল
–কি হলো কিছু বলছেন না কেন? আমি মরে গেলে আমাকে আপনি ভুলে যাবেন তাই না? তারপর অন্য কাউকে ভালোবাসে বিয়ে করে ফেলবেন ঠিক বললাম তো?
অনন্ত অহনাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে খুব কষিয়ে অহনার গালে ঠাসসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। অহনা ছিটকে বিছানার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল৷ অনন্ত রেগে চিতকার করে অহনাকে বলল
–তোর মরার খুব শখ হয়েছে তাই না? তাহলে ভালো করে শুনে রাখ তুই মরার আগে প্রথমে আমাকে নিজ হাতে মেরে তারপর নিজে মরবি৷ কারণ তোর মৃত্যুটা আমি সহ্য করতে পারব না৷ তুই বুঝতে পেরেছিস আমি তোকে কি বললাম?



#চলবে…..

অন্যরকম তুই পর্ব-১৪

0

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃDoraemon
অনন্ত অহনাকে গাড়ি করে বাসায় পৌছে দিয়ে নিজেও বাসায় চলে গেল। অহনা সারাদিন অনন্তের কথা ভাবতে ভাবতে লাগল। অহনা মনে মনে বলল
–আপনি যতই মুখে বলুন না কেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন কিন্তুু আমার মনে হয় এসবই আপনার নাটক। আমি আপনাকে কিছুতেই বিশ্বাস করব না স্যার।
অনেকগুলো দিন যেতে লাগল।অহনা প্রতিদিন অনন্তের কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে।
ঐদিকে অনন্ত প্রতিদিন অহনার ছবি জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। অনন্তের মা -বাবা অনন্তকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত কারণ অনন্ত দিনের পর দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। অনন্ত বাবার বিজনেস সামলালেও অনন্তের মন পরে থাকে অহনার কাছে। অনন্তের মা বাবা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ছেলের কিছু একটা হয়েছে কিন্তুু অনন্তকে তার মা বাবা কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে অনন্ত কিছু হয় নি বলে এড়িয়ে যায়। অহনার মনে অনন্তের জন্য এক অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হয়েছে সেটা অহনা বুঝতে পারলেও নিজের মন থেকে সবসময় অহনা এড়িয়ে যায়৷ অনন্ত প্রতিদিন অহনাকে দেখার জন্য অহনার কলেজে ছুটে চলে যায়৷ অহনা অনন্তকে দেখেও না দেখার ভান ধরে চলে যায়। অনন্ত অহনার এড়িয়ে যাওয়া ব্যাপারটা কয়েকদিন মেনে নিলেও বেশি দিন মানতে পারে নি।
আজ অহনা কলেজ ছুটি হলে কলেজের গেটের সামনে পৌঁছাতেই অহনা অনন্তকে দেখতে পায়। অহনা প্রতিদিনের মতো আজও অনন্তকে এড়িয়ে চলে যেতে নিলে অনন্ত অহনার হাতটা খুব জোরে টান দেয় যার ফলে অহনা অনন্তের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অনন্ত অহনার কোমড় জড়িয়ে নিজের আরও কাছে নিয়ে আসল। অনন্তের এমন কান্ডে অহনা রেগে গিয়ে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কি হচ্ছে টা কি এসব! স্যার আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি! আপনি….
অহনাকে কিছু বলতে না দিয়ে অনন্ত কলেজের সবার সামনে অহনার চুলের পেছন আঁকড়ে ধরে অহনার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বসিয়ে দেয়। কলেজের সব ছেলে -মেয়েরা, শিক্ষকরা এমনকি রাস্তার লোকেরাও অনন্তের এমন কান্ড দেখে অবাক হয়ে গেল। যখন অনন্ত অহনার ঠোঁটজোড়া ছাড়ল তখন অহনা রেগে গিয়ে অনন্তের গালে খুব কষিয়ে সবার সামনে থাপ্পড় দিয়ে দেয়। অনন্ত থাপ্পড় খেয়েও অহনার দিকে তাকিয়ে হাসছে। অনন্তের হাসি দেখে অহনা কিছুটা অবাক হলেও অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে খুব রাগী গলায় বলল
–আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে স্পর্শ করার? সবার সামনে এভাবে আমাকে অপমান করার? ভন্ডামি করার আর জায়গা পান না? সবার সামনে আপনি আমাকে খারাপ, বাজে মেয়ে প্রমাণিত করতে চাইছেন? আপনি কি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেছেন স্যার?
অনন্ত একটা মুচকি হাসি দিয়ে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–এটা অপমান করার জন্য নয় রে অহনা। আমি সবার সামনে জানিয়ে দিলাম যে আমি তোকে কতটা ভালোবাসি৷ আর আমি যে তোর জন্য কতটা বেহায়া হতে পারি তারই প্রমাণ দিলাম। তুই আমাকে অবহেলা করিস তাই আমি তোকে শাস্তি হিসেবে আমার ঠোঁটের স্পর্শ তোর ঠোঁটে দিয়ে দিলাম। যদি এভাবে তুই প্রতিদিন আমাকে এড়িয়ে চলিস তাহলে ভবিষ্যতে আরও কঠিন শাস্তি তুই পাবি।
অহনা অনন্তের কথা অবাক হয়ে শুনলেও মুহূর্তের মাঝে অহনা চারিদিকে লক্ষ্য করল সবাই আনাগোনা করছে এবং হাসাহাসি করছে৷ অহনার এটা দেখে বেশ লজ্জা লাগল। তাই অহনা অনন্তকে আর কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। অনন্ত এখনো একই জায়গায় দাড়িয়ে আছে।
অনন্ত মনে মনে বলল
–আমি চাইলেই তোকে জোর করে বিয়ে করতে পারি অহনা কিন্তুু আমি তা করব না। আমি চাই তুই মন থেকে আমাকে মেনে নিস। আমি চাই তুই আমাকে মন থেকে ভালোবাস। তারপর আমি তোকে বিয়ে করব। কিন্তুু তুই কেন আমার সাথে এমন করছিস অহনা! এতটা অবিশ্বাস করিস তুই আমাকে!
কলেজের কিছু মেয়ে অনন্তের সাথে কথা বলতে গেলে অনন্ত মেয়েদেরকে এড়িয়ে সেখান থেকে মুহূর্তের মাঝেই চলে গেল।
অহনা বাসায় গিয়ে দরজা বন্ধ করে খুব কান্না করতে লাগল। অহনা মনে মনে বলতে লাগল
–আপনি এতটা খারাপ স্যার! আমি ভাবতেও পারছি না আপনি আবারও আমার সাথে এমন আচরণ করবেন! শেষে কিনা সবার সামনে আপনি আমাকে…!!! আমি কলেজে এখন কি করে সবার সামনে নিজের মুখ দেখাব! সবাই তো আমাকে ছিহ ছিহ করে ঘৃণা করবে। কলেজের কেউ আর আমার সাথে কথা বলবে না!
ঐদিকে অনন্ত বাসায় গিয়ে নিজের বেডরুমের দরজা বন্ধ করে সোফায় বসে মদ, সিগারেট খেতে থাকে। অনন্ত মাদক সেবন না করলেও অহনার দেওয়া আঘাতে অনন্তের মনটা খুব ভেঙে যায়। অনন্ত নিজে নিজে বলতে থাকে
–বুঝবি অহনা। তুই ঠিকই আমার ভালোবাসা বুঝবি কিন্তুু আমাকে আর তুই সেদিন পাবি না। আমি চলে যাবো তোর থেকে বহু দূরে। তখন তুই আমাকে হাজার খুঁজলেও পাবি না। তখন আমার জন্য কাঁদবি কিন্তুু আমি সেদিন থাকব না।
অনন্ত পাগলের মতো হাসতে থাকে। অনন্ত গিটার হাতে নিয়ে গান গাইতে শুরু করল
🎶তুমি জানো না, তুমি জানো নারে প্রিয় তুমি মোর জীবনেরই সাধনা,,
তোমায় প্রথম যেদিন জেনেছি,,
মনে আপন মেনেছি,,
তুমি বন্ধু আমার মন মানোনা,,
ও তুমি জানো না, তুমি জানো নারে প্রিয় তুমি মোর জীবনের সাধনা🎶
গান গাওয়ার সময় অনন্তের চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে৷ অনন্ত বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশের তারা দেখতে থাকে। অনন্ত আকাশের তারা দেখে মুচকি হেসে বলতে লাগল
–এই তারা আমি যদি তোর কাছে চলে আসি তাহলে কি তুই আমাকে অহনার মতো অবহেলা করে দূরে সরিয়ে দিবি? তুই হয়তো অহনার মতো আমার সাথে বেঈমানী করবি না। অহনাটা না আমার ভালোবাসা খুব অবহেলা করে। আমাকে অবিশ্বাসও করে তুই জানিস তারা?!! আমি নাহয় একটু ভুল করে ফেলেছিলাম তাই বলে ও আমাকে এতটা কস্ট দিবে! জানিস তারা অহনা আজ আমার ভালোবাসার উপহার হিসেবে আবারও আমার গালে কষিয়ে থাপ্পড় মেরেছে। কিছুতেই অহনাটা আমার ভালোবাসাটা বুঝে না। আচ্ছা তারা তুই তো আকাশে থাকিস তুই নিশ্চয়ই সব দেখেছিস? হ্যা নিশ্চয়ই দেখেছিস। হা হা হা আমি আসলেই একটা পাগল। এত মেয়ে থাকতে শেষে কিনা অহনাকেই আমার মনে ধরলো! যাকে ভালোবাসি সেই আমাকে অবহেলা করে৷ আর যারা আমায় ভালোবাসে তাদের আমি অবহেলা করি। মন জিনিসটাও না আজকাল আমার সাথে বড্ড বেঈমানি করছে।
অনন্তকে থাপ্পড় দিয়ে ঐদিকে অহনার মনের ভিতর কেমন যেন কস্ট হচ্ছে। অহনা মনে মনে বলল
–আচ্ছা আমার বুকের ভিতর এত কস্ট হচ্ছে কেন? ওই লুচু দানবটার সাহস কি করে হয় আমার ঠোঁটের উপর অত্যাচার করার! থাপ্পড় মেরেছি বেশ করেছি কিন্তুু তবুও বুকে কেন এত চাপা কস্ট হয়?!
এভাবে আরও অনেকগুলো দিন কেটে যায়। ইদানীং অহনার বুকে প্রচুর ব্যথা হয় এবং শ্বাস কস্ট হয়। মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে যায় অহনা। কিন্তুু অহনা ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিলেও আদৌ কি তা স্বাভাবিক?!



#চলবে…..

অন্যরকম তুই পর্ব-১৩

0

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃDoraemon
অনন্তের এমন অদ্ভুত কথায় অহনার এতটাই লজ্জা লাগছিল যে অহনা পেছন ফিরে দৌড়ে চলে যেতে নিলে অনন্ত অহনার হাতটা খুব তাড়াতাড়ি ধরে ফেলে। অহনার হাত অনন্ত আবারও ধরায় অহনা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। অনন্তের স্পর্শ অহনার মনে বিদ্যুৎের মতো অনুভূতি তৈরি করতে লাগল। অহনাকে আবারও টান দিয়ে অনন্ত নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। অহনার ভীষণ ভয় লাগছে কারণ অনন্ত অহনাকে কিছুতেই যেতে দিচ্ছে না। অহনা ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে অনন্তকে বলল
–আপনি আমাকে যেতে দিন স্যার। আমি বা বা বাসায় যাব।
অহনার এই ভীতু চেহারাটা দেখে অনন্ত মুচকি হেসে দিল। কারণ অহনার এই ভীতু চেহারাটা অনন্ত ভীষণ উপভোগ করে।
–তুই কি আমাকে ভয় পাচ্ছিস অহনা?! কিন্তুু আমাকে যদি তুই এখনই ভয় পাস তাহলে সারাটা জীবন আমার সাথে কাটাবি কি করে? কিন্তুু বিয়ের পর আমি তোর সব ভয় দূর করে দিব তুই চিন্তা করিস না অহনা।
অনন্তের কথা শুনে অহনা অবাক হয়ে চোখ বড়বড় কর অনন্তের দিকে তাকাল। বৃষ্টির পানিতে এখনো ওরা দুজনে ভিজছে। তাও আবার জড়িয়ে ধরা অবস্থায় দুজনে ভিজে যাচ্ছে৷ অহনা অনন্তের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করছে কিন্তুু অনন্ত অহনাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে। কিছুতেই অনন্ত অহনাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়ছে না। অহনার এখন ভীষণ রাগ হচ্ছে। অহনা মনে মনে বলল
–উফফ এই লুচু দানবটা আমাকে ছাড়ছে না কেন! একটু পরেই রাস্তায় লোকজনদের আনাগোনা শুরু হবে৷ এখন যদি কেউ আমাকে এই দানবটার সাথে এভাবে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় দেখে ফেলে তাহলে তখন সবাই কি ভাববে? লোকে তো আমাকে চরিত্রহীন মেয়ে বলবে!
অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমাকে কি একবারের জন্য ক্ষমা করে কাছে টেনে নেওয়া যায় না অহনা? আমি যে তোর অবহেলা আর সহ্য করতে পারছি না।
অহনা কিছু বলছে না। অনন্ত অহনাকে জড়িয়ে ধরাতে অহনা অনন্তের বুকের হৃদস্পন্দন খুব ভালো করে শুনতে পারছে। যেমনটা অহনার বুকে ধুকপুকানি হয় ঠিক তেমনি অনন্তের বুকের ভিতরও একইভাবে ধুকপুকানি হচ্ছে। দুজনের মনেই একই কম্পন!
অনন্তের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে কিন্তুু বৃষ্টির পানিতে অনন্তের চোখের জলগুলোও ধুয়ে মিশে যাচ্ছে। অহনা তা দেখতে পারছে না। হঠাৎই আকাশে বজ্রপাত হওয়ায় অহনা অনন্তকে ভয়ে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। এতক্ষণ অনন্ত অহনাকে জোর করে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল কিন্তুু এখন অহনাও অনন্তকে জড়িয়ে ধরেছে। অনন্ত অহনাকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে দেখে ভীষণই খুশি হয় কিন্তুু অনন্তের এ খুশি বেশিক্ষণ থাকল না। অহনা অনন্তকে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে সড়িয়ে দেয়। অনন্ত ধাক্কা খেয়ে কিছুটা পিছিয়ে যায়। অহনার এমন আচরণে অনন্ত কিছুটা অবাক হলো। আবারও আকাশে বজ্রপাত হলো। অহনা চিতকার করে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনি আমাকে স্পর্শ করবেন না৷ আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে স্পর্শ করার? আর কি যেন বললেন! আপনাকে ক্ষমা করব! আমি?! হা হা হা কি করে ভাবলেন আপনি?! আমার একটা যথেষ্ট আত্নসম্মান বোধ আছে৷ আমি গরীব হতে পারি কিন্তুু আমি সস্তা নই যে আপনার মন গলানো কথায় আমি ভুলে যাব। আমি জানি এটা আপনার কাছে ভালোবাসা না আসলে আপনি তো আমাকে ভোগ করতে চান৷ নিজের চাহিদা মেটানো শেষ হয়ে গেলে আমারও প্রয়োজন ফুরাবে। তারপর একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে আপনি বিয়ে করে নিবেন। আমি কি এতটাই বোকা স্যার?! যে আমি আপনার চালাকি ধরতে পারব না?! পুরুষ মানুষের মনে নারীদের জন্য কখনো ভালোবাসা থাকতে পারে না! যা আছে তা শুধু শারীরিক চাহিদা। মিটে গেলেই ছুড়ে ফেলে দিবেন! তাই আমি আবারও বলছি স্যার আমার পেছনে না পড়ে থেকে আপনি অন্য কোনো ভালো মেয়ে খুঁজে নিয়ে প্রেম করে বিয়ে করে নিবেন। শুধু শুধু আমার মতো এক অসুন্দরী ভিখারির বাচ্চাকে কেন ভালোবাসতে যাবেন?
অহনা কথাগুলো বলতে বলতে চোখের জল ফেলছিল। কেন ফেলছিল তা অহনা নিজেও জানে না। অহনার চোখের জলগুলো বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে। কিন্তুু অনন্তের চোখে তা এড়ালো না। অনন্ত দেখতে পেল অহনার চোখের জল এবং অহনার চোখ যে ভীষণ লাল হয়ে আছে তা স্পষ্ট।
অনন্ত হঠাৎই হেসে উঠল। অনন্ত খুব মন প্রাণ ভরে হাসছে৷ কিন্তুু অনন্তের এই হাসিটা সুখের না দুঃখের সেটা অহনা বুঝতে পারছে না৷ অহনা মনে মনে বলল
–স্যার এভাবে হাসছে কেন? আমি যা বললাম তাতে তো উনার রেগে যাওয়ার কথা কিন্তুু উনি হাসছেন!
অনন্ত হাসতে হাসতে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তোর কাছে যা মনে হয় তুই তাই ভাবতে পারিস অহনা। কিন্তুু তোকে ছাড়া আমি যে বাঁচতে পারব না। হা হা হা কথাটা শুনতে ভীষণ অদ্ভুত লাগছে তাই না অহনা? এত এত সুন্দরী বড়লোক ঘরের মেয়ে থাকতে আমি তোকেই কেন ভালোবাসি! তোর পেছনেই কেন ঘুরঘুর করি! তুই এটাই ভাবছিস!?আমি জানি রে অহনা। কিন্তুু ভালোবাসা যে সুন্দর-অসুন্দর, ধনী-গরীব, কিংবা শারীরিক চাহিদা দিয়ে হয় নারে অহনা। ভালোবাসা মন থেকে হয়। এই যে দেখ তোকে আমি কোনো কারণ ছাড়াই ভালোবেসে ফেলেছি তার মানে কি আমার ভালোবাসাটা বিশুদ্ধ ভালোবাসা না? তুই হয়তো বলবি এটা আমার আবেগ কিন্তুু আমি জানি এটার আমার পবিত্র ভালোবাসা আর সেটা তুই অস্বীকার করলেও আমি অস্বীকার করতে পারব না। কিছুতেই অস্বীকার করতে আমি পারব না৷
অহনা অনন্তের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইতিমধ্যে অহনার গায়ে কাঁটা ধরে যাচ্ছে। অজানা অনুভূতি অহনার মনকে গ্রাস করছে। অহনা মনে মনে বলল
–এটা কি সত্যি আপনার ভালোবাসা নাকি কোনো এক ছলনা? আমি আপনাকে ভালোবাসি না বলে তাই আপনি কোনোভাবে আমার উপর প্রতিশোধ নিতে চাইছেন নাতো?! আপনার শাস্তি পেতে পেতে যে আমি ক্লান্ত স্যার। আর যে আপনার শাস্তি সহ্য করার মতো কোনো শক্তি আমার নেই।
অনন্ত অহনার দিকে তাকিয়ে একটু মৃদু হেসে অহনাকে বলল
–কি হলো অহনা? চুপ করে আছিস কেন? কিছু তো বল?
অহনা কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–স্যার আমি এখন বাসায় যাবো।
এটা বলেই অহনা চলে যেতে নিলে অনন্ত আবারও অহনার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের একদম কাছে নিয়ে এসে দাঁতে দাঁত চেপে অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য বলল
— তুই বাসায় যাবি ভালো কথা। কিন্তুু আমার গাড়ি করে তুই বাড়ি যাবি। বৃষ্টির পানিতে ভিজে তোর শরীরের সবকিছুই দেখা যাচ্ছে। এভাবে যদি তুই রাস্তায় হেঁটে বাড়ি ফিরে যাস তাহলে রাস্তার লোকেরা তোর দিকে লালসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে যা আমি একদমই হতে দিব না।
অনন্তের কথায় অহনা নিজের শরীরের দিকে তাকিয়েই দেখল সত্যি অহনার শরীরের সবকিছুই দেখা যাচ্ছে। অহনা ওড়না দিয়ে নিজের শরীর ঢাকার চেস্টা করছে কিন্তুু ওড়নাটা এতটাই বাজেভাবে ভিজে গেছে যে কিছুতেই নিজের শরীর ঢাকতে পারছে না অহনা।
অহনার এমন ঘাবড়ে যাওয়া অবস্থায় দেখে অনন্ত মুচকি হেসে দিল৷ অনন্তের মুচকি হাসি দেখে অহনার রাগ উঠে গেল। অহনা রাগী গলায় অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কি হলো স্যার? আপনি এভাবে হাসছেন কেন?
অনন্ত অহনার চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
–তোকে এ অবস্থায় দেখেই হাসছি। জানিস তোকে এ অবস্থায় দেখতে কতটা কিউট লাগছে?
অনন্তের কথায় অহনা আবারও চোখ বড়বড় করে অনন্তের দিকে তাকাল। অহনা অনন্তে বলল
–আপনি অনেক বাজে ছেলে। আমি আপনার গাড়ি করে বাসায় যাবো না। আমি এ অবস্থাতেই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি চলে যেতে পারব।
অহনার কথা শুনে অনন্ত রাগী দৃষ্টিতে অহনার দিকে তাকিয়ে বলল
–আমি যা বললাম তাই হবে। বেশী বাড়াবাড়ি করবি তো তুই ভালো করেই জানিস অহনা আমি কতটা ভয়ংকর হতে পারি। আশা করছি তুই আমার ভয়ংকর রূপটা আর দেখতে চাইবি না।
অনন্তের রাগী কন্ঠে বলা কথাগুলো শুনে অহনা ভয়ে চুপসে যায়। অহনা ভয়ে চোখগুলো বন্ধ করে ফেলে।
অহনার এমন ভীতু চেহারা দেখে অনন্ত আবারও মুচকি হেসে অহনাকে কোলে তুলে নিল৷ হঠাৎই অনন্ত অহনাকে এভাবে কোলে নেওয়াতে অহনা ভয়ে অনন্তের গলা জড়িয়ে ধরল।



#চলবে….

অন্যরকম তুই পর্ব-১২

0

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃDoraemon
আজ অহনার মনটা খুব খারাপ। তাই অহনা কলেজ গেল না। অহনার মনটা ভীষণ অস্থির লাগছে। অহনা রাতে ভালো করে ঘুমাতেও পারে নি। তাই অহনা খুব সকালে উঠে রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। এত সকালে রাস্তায় কোনো লোকজন নেই। সবাই এখন ঘুমাতে ব্যস্ত। অহনা আকাশের দিকে তাকাতেই দেখে আকাশটা মেঘাছন্ন। মনে হয় কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টি নামবে। অহনা মনে মনে বলতে লাগল
–মনে তো হচ্ছে একটু পরেই বৃষ্টি নামবে। কিন্তুু আমি যে ছাতা আনালাম না! বৃষ্টিতে ভিজলে তো আমার শরীরে জ্বর চলে আসবে! কিন্তুু তবুও বৃষ্টিতে ভিজলে মন্দ হয় না। বৃষ্টিতে ভিজলে মনটা ভালোই লাগবে। একটু জ্বর হলে কিছুই হবে না। অহনা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বাসা থেকে অনেকটা দূরত্বে চলে এসেছে। ইতিমধ্যে আকাশ থেকে টুপটুপ করে পানির ফোঁটা পড়তে লাগল। বৃষ্টি নেমে গেছে। অহনা বৃষ্টিতে ভিজেই রাস্তায় আনমনে হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই অহনা তার হাতে কারও স্পর্শ অনুভব করল। অহনা পেছনে তাকানোর আগেই অহনার হাতটা কেউ খুব জোরে টান দিল যার ফলে অহনা সেই ব্যক্তির বুকের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। হঠাৎই অহনার সাথে এমন হওয়ায় অহনা ভয় কেঁপে উঠল। অহনা উপরে তাকিয়েই অনন্তকে দেখল। অনন্তকে দেখে অহনার হৃদপিন্ডে ঢোল পেটানোর মতো ধুকপুকানি হতে থাকে। অহনার শ্বাস প্রশ্বাস ঘন হতে থাকে। অহনা অনন্তের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে গেলে অনন্ত শক্ত করে অহনাকে জড়িয়ে ধরল। বৃষ্টিতে দুজনেই ভিজে একাকার। অহনা খুব রেগে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমাকে ছাড়ুন আপনি! অসভ্য ছেলে একটা! মেয়ে দেখলেই জড়িয়ে ধরতে মন চায়! আপনি এখানে কি করে এলেন? তারমানে কি এতক্ষণ আপনি আমার পিছু নিচ্ছিলেন? কিন্তুু আমি তো আজ কলেজ যাই নি! তাহলে আপনি কি করে জানলেন আমি কলেজ না গিয়ে আজ রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করব?
অনন্ত অহনাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অহনার কানের কাছে ফিসফিস করে বলতে লাগল
–তুই যেখানেই যাস না কেন আমি সবসময় তোর পাশে সেখানেই থাকব অহনা। তুই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে থাকলেও আমি তোকে খুঁজে বের করতে পারব। আমার ভালোবাসার অনুভূতি এতটাও ঠুনকো নয় অহনা যে আমি তোর চলার গন্তব্য খুঁজে বের করতে পারব না। এটা আমার কাছে অত্যন্ত সহজতর একটা কাজ। তোকে যে বড্ড ভালোবাসি অহনা। তোর প্রতিটা নিঃশ্বাস আমি অনুভব করতে পারি।
অনন্তের এমন মায়া জরানো কন্ঠ অহনাকে খুব মাতাল করে দেয়। কিন্তুু অহনা নিজের মনকে সামলে নিয়ে নিজেকে অনন্তের কাছ থেকে ছাড়ানোর চেস্টা করতে করতে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনার মনগড়া কথা আপনি অন্য কাউকে শুনাবেন কিন্তুু আমাকে এসব শুনাবেন না। আমি আপনার এসব মনগড়া কথা কোনোদিনও বিশ্বাস করব না।
অনন্ত মুচকি হেসে অহনাকে বলল
–যখন আমি আর থাকব না তখন তুই বিশ্বাস করবি আমি তোকে কতটা ভালোবাসতাম। কিন্তুু সেদিন আমি আর থাকব না অহনা।
অনন্তের কথায় অহনার মনটা কেঁপে উঠল। অহনার চোখ দিয়ে মনের অজান্তেই জল গড়িয়ে পড়ল। অহনার ভীষণ রাগ হলো। অহনা রেগে গিয়ে অনন্তের বুকের বাম পাশে খুব জোরে কামড়ে দিয়ে অনন্তকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। ধাক্কা খেয়ে অনন্ত কিছুটা পিছিয়ে গেলেও অনন্ত মুচকি হেসে দিল। অহনা বুঝতে পারল না অনন্ত কেন হাসল ! অহনা মনে মনে বলতে লাগল
–স্যার এভাবে হাসলেন কেন! আমি স্যারকে কামড় দিলাম কোথায় উনি রেগে যাবেন তা না উল্টো হাসছেন!
অনন্ত মুচকি হেসে অহনাকে বলল
–এভাবে আমাকে কামড়ে দিয়ে কি তুই আমাকে তোর প্রতি আরো দূর্বল করে দিতে চাইছিস অহনা? আমাকে কি তুই তোর মারাত্মক অনুভূতিতে মেরে ফেলতে চাইছিস? তোর কামড়টা জ্বালা করলেও এই কামড়ের অনুভূতিটা খুবই মিস্টি রে অহনা। আমি এমনিতেও তোর প্রতি পাগল আবার তোর এই কামড়ে আমার মনটাকে তোর প্রতি আরও মাতাল করে দিচ্ছে অহনা। তুই যেমন আমার কাছে অন্যরকম ঠিক তেমন তোর এই কামড়ের অনুভূতিটাও আমার কাছে অন্যরকম।
অনন্তের কথায় অহনা বেশ লজ্জা পেল। অহনা অনন্তের দিকে তাকিয়ে দেখল অনন্তের শার্টের তিনটা বোতাম খোলা এবং অনন্তের বুকের বামপাশটাও ভীষণ লাল হয়ে আছে। বুকে কামড়ের দাগটাও স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। অনন্তকে বৃষ্টিতে ভেজা অবস্থায় অপরূপ লাগছে। যেকোনো মেয়েই অনন্তকে এ অবস্থায় দেখে প্রেমে পড়ে যাবে৷
অহনা নিজেকে সামলে নিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। অহনা মনে মনে বলতে লাগল
–ছিহ্ ছিহ্ ছিহ্ আমি স্যারকে এভাবে কামড়ে দিলাম! আবার স্যারের দিকে এমন হাবলার মতো তাকিয়ে ছিলাম! স্যার কি ভাববে! স্যার তো মনে করবে আমি মেয়ে হয়ে উনার দিকে কুনজরে তাকিয়ে ছিলাম। ভাবলেই ব্যাপরটা কত হাস্যকর লাগছে।
–কি হলো অহনা তোর মুখটা এমন লাল হয়ে আছে কেন? দেখে তো মনে হচ্ছে লজ্জা পেয়েছিস। কিন্তুু তোর লজ্জার কারণ তো আমি খুঁজে পাচ্ছি না৷ আজ হোক বা কাল তুই তো আমার বউ হবি তাহলে এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে? তখন তো শুধু বুকে না পারলে আমার সব জায়গাতেই কামড়ে দিস আমি তোকে কিছু বলব না।
অনন্তের এমন কথা শুনে অহনা অনন্তের দিকে বড়বড় চোখ করে তাকাল৷ অহনা মনে মনে বলল
–এতো দেখছি পাক্কা লুচু! ব্যবহারের কি বাহার!



#চলবে…..

অন্যরকম তুই পর্ব-১০+১১

0

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১০_১১
#লেখিকাঃDoraemon
আজ অহনা ভীষণ খুশি কারণ আজ থেকে অহনা কলেজে কোনোদিনও তার দানব স্যারের মুখ দেখবে না। তাই অহনা আজ অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু বেশী হাসিখুশি। কলেজে গিয়ে সব ক্লাসই অহনা মনোযোগ দিয়ে করল। কিন্তুু আজ চতুর্থ ক্লাসে অনন্তের জায়গায় অন্য স্যারকে দেখে অহনা হঠাৎই চমকে উঠল। তারপর অহনার মনে পড়ল অহনা নিজে অনন্তকে কলেজ ছাড়া করেছে। অহনা মনে মনে বলল
–আজ থেকে আমাকে ক্লাসে কেউ আর অপমান করবে না। যে অপমান করত তাকে তো আমি বিদায় করে দিয়েছি৷ কিন্তুু তবুও কেন মনে হয় কি যেন নেই! কি নেই! সবাই তো আছে। তাহলে ক্লাসটা এত ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কেন! ধ্যাত আমি এসব কি ভাবছি! পড়ায় মনোযোগী হই।
অহনা সব ক্লাস করার পর কলেজ থেকে যখন বের হবে তখন হঠাৎই অহনা অনন্তকে গেটের সামনে দেখে চমকে যায়। অনন্ত গেটের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। বাইরে একটা বিশাল বড় প্রাইভেট কার দেখা যাচ্ছে যা অহনা এর আগে কখনো দেখে নি। অহনার আর বুঝতে বাকি রইল না যে এটা অনন্তের গাড়ি৷ আর অনেক মেয়েরা অনন্তের সাথে কথা বলতে চাইছে কিন্তুু অনন্ত কারও সাথেই কোনো কথা বলছে না। তাই মেয়েরা মন খারাপ করে চলে যাচ্ছে। অনন্তকে দেখে অহনার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। কিন্তুু আজ অনন্তকে অন্যান্য দিনের তুলনায় দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। অহনা অনন্তের দিকে একটু তাকিয়ে মুখ গুড়িয়ে অনন্তের সামনে দিয়ে চলে যেতে নিলে অনন্ত অহনার হাত পেছন থেকে শক্ত করে চেপে ধরে। অহনা ভয় পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে অনন্ত তার হাতটা ধরে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অহনা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আ আ আমার হাত ধরেছেন কেন স্যার? আমার হা হাতটা ছেড়ে দিন৷
–ছাড়ার জন্য তো আমি তোর হাত ধরিনি অহনা! তুই বলিছিলি আমি চাকরিটা ছেড়ে দিলে তুই আমাকে ভালোবাসবি। আর এখন তুই আমায় দেখেও না দেখার ভান ধরে চলে যাচ্ছিস কেন? তুই না আমাকে ভালোবাসিস অহনা?
–ভালোবাসব বলেছিলাম কিন্তুু ভালোবাসি সেটা তো আমি আপনাকে বলি নি স্যার। আমি আমার মত পালটে ফেলেছি। আমি আপনাকে ভালোবাসব না৷ আর হ্যা আপনি আপনার চাকরি নিজের ইচ্ছায় ছেড়েছেন আমি কিন্তুু আপনাকে জোর করি নি৷
অহনার কথা শুনে অনন্ত একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল
–আমি জানতাম তুই এটাই বলবি। আমাকে তুই ভালোবাসিস না। কিন্তুু অহনা তুই যদি ভেবে থাকিস কলেজ থেকে আমাকে বিদায় করে দিলে তুই আমার থেকে মুক্তি পাবি তাহলে তুই বড্ড ভুল ভেবে ফেলেছিস।আমি চাইলেই কলেজে আবার ফিরে আসতে পারি কিন্তুু আমি সেটা করব না। তুই তোর ওয়াদা না রাখতে পারলেও আমি আমার ওয়াদা ঠিকই রাখব। আর আজ তুই ভালো করে শুনে রাখ, আমার শেষ নিস্বাস অবধি আমি তোকে ছাড়ব না। তুই আমার কাছ থেকে যতই পালাবার চেষ্টা কর না কেন, কোনো লাভ নেই। তোকে আমি খুব ভালোবেসে ফেলেছি অহনা।
তারপর অনন্ত অহনাকে একটান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— তাই আমি তোকে ভুলেও ছাড়ছি না। যতই তুই আকাশে উড়াউড়ি কর না কেন লাটাই তো আমার হাতেই। যখন একটান দিব তখন এভাবেই তুই আমার কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়বি।
অনন্তের কথা শুনে অহনা ভীষণ রেগে যায়। অহনা অনন্তের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনি কি বাংলা কথা বুঝেন না?! আমি যে আপনাকে ভালোবাসি না তা কি আপনার কানে যায় না? আপনাকে আমি কোনোদিনও ক্ষমা করব না। আপনার দেওয়া অপমানগুলো আমার সারাজীবন মনে থাকবে। আর হ্যা আমি তো সুন্দরী মেয়ে না আর আমি গরীব ঘরের অতি সাধারণ একটা মেয়ে। তাহলে আমাকে আপনি এত ভালোবাসেন তা আমি কি করে বিশ্বাস করব? আমাকেও এটা বিশ্বাস করতে হবে! আপনি সামান্য একটা চাকরি ছেড়েছেন যা শুধু আপনার কাছে শখের বস্তুু ছিল৷ আপনার কাছে তো টাকা পয়সার অভাব নেই৷ তাই আপনার এতে বিন্দু মাত্র ক্ষতি হবে না৷ আপনার মতো একজন বড়লোক সুদর্শন পুরুষ আমার থেকে হাজার গুণ বেশি সুন্দরী মেয়েকে নিজের জীবন সাথী হিসেবে পাবেন। তাই আমার পেছনে পড়ে না থেকে দয়া করে আমাকে মুক্তি দিন। আপনার টাইম পাস করার খেলনা আমি হতে চাই না।
এ কথাগুলো বলে অহনা চলে যেতে নিলে অনন্ত আবারও অহনার হাত ধরে টান দিয়ে অহনার কোমড় পেছিয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে অনন্ত অহনাকে বলল
–ভালোবাসতে কোনো কারণ লাগে না। তোর কাছে তুই নিজেকে অসুন্দর ভাবতে পারিস কিন্তুু আমার কাছে তুই পৃথিবীর সেরা সুন্দরী। তুই নিজেকে গরীব বলে তুচ্ছ মনে করতে পারিস কিন্তুু আমার কাছে তুই আমার মনের রাণী যে কখনো গরীব হতে পারে না। যেদিন তোকে আমি কলেজে প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই তোর প্রতি আমার অনুভূতি জন্মে কিন্তুু আমার অনুভূতিটা এতটাই ভয়ংকর হয়ে গিয়েছিল যে আমি তোকে নিজের অজান্তেই অনেক কস্ট দিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তুু তুই বিশ্বাস কর অহনা আমি আর কোনোদিনও তোকে কখনো কস্ট দিব না। আমাকে কি একটাবার সুযোগ দেওয়া যায় না?
কথাগুলো বলতে গিয়ে অনন্তের দুচোখ জলে ভিজে গেছে। তাই অহনা অনন্তের জন্য একটু খারাপ লাগলেও মুহুর্তেই অহনার আবার সেই খালি পায়ে কান ধরে ২০ বার কলেজ চক্কর দেওয়ার কথা মনে পড়ে যায় যা অনন্ত অহনাকে ভয়ানকভাবে দিয়েছিল৷ অহনার মনে পড়ে যায় স্টিলের স্কেল দিয়ে হাতে সেই ভয়ংকর আঘাতের কথা। অহনার মনে পড়ে যায় কান ধরে ক্লাসের বাইরে ৫০ বার ওঠবস করার কথা যা অনন্ত অহনাকে ভয়ানকভাবে শাস্তি দিয়েছিল এবং তা দেখে ক্লাসের সবাই হাসাহাসি করেছিল। এসব মনে পড়তেই অহনা অনন্তকে খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে সড়িয়ে দেয়। যার ফলে অনন্ত কিছুটা হলেও পিছিয়ে যায়।
অহনা খুব রাগী গলায় কাঁদতে কাঁদতে অনন্তকে বলল
–এসব মিস্টি কথা অন্য কাউকে বলবেন কিন্তুু আমাকে না। আমি আপনার এসব মিস্টি কথায় কোনোদিনও ভুলব না। আমি আপনাকে কোনোদিনও ক্ষমা করব না৷ কোনোদিনও না।
এ কথাগুলো বলেই অহনা দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়। অহনার কথা শুনে অনন্তের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়তে লাগল। অনন্ত মাটিতে বসে পড়ে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল। অনন্ত মনে মনে বলতে লাগল
–আমারই দোষ আমি আমার অহনাকে এত কস্ট দিয়েছি! অহনা কি করেই বা আমাকে ক্ষমা করবে। আমি যে আমার অহনার মনে খুব আঘাত দিয়ে ফেলেছি৷
অনন্ত আর অহনার কান্ড এতক্ষণ রাস্তার মানুষজন ও কলেজের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা দেখছিলেন। কিন্তুু এতে কারোর কোনো হুঁশ ছিল না। অনন্তকে সবাই চেনে ও ভয় পায়। তাই এতক্ষণ অহনার হাত ধরা ও অহনার সাথে মিশে কথা বলাতে কেউ কিছু বলে নি। এদিকে অহনা রাস্তায় হাঁটছে আর চোখের জল ফেলছে। অহনা চোখের জল মুছছে আবার মুহূর্তেই চোখে জল চলে আসছে। অহনা মনে মনে বলতে লাগল
–উফ আমি এত কাঁদছি কেন! এত কিসের কস্ট আমার! আমি কার জন্যই বা কাঁদছি! আমি কাঁদব না৷ আমি কিছুতেই কাঁদব না৷ কিন্তুু বেহায়া মনটা কেন যে মানতে চাইছে না। কিছুতেই বুঝতে পারছি না। চোখের জলগুলোও আজ উড়ে এসে আমার চোখে ধরা দিচ্ছে।



#চলবে….

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃDoraemon
অহনা বাসায় এসে দৌড়ে গিয়ে নিজের বেডরুমে গিয়ে ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। অহনার কান্ড দেখে অহনার মা চমকে উঠলেও কিছু বলল না।কারণ অহনার মা জানে যখন অহনার মন খারাপ হয় তখনই অহনা এমন হুটহাট দরজা লাগিয়ে বসে থাকে। এতে নাকি অহনার মন ভালো হয়ে যায়। তাই অহনার মা আর কিছু বলল না। অহনা দরজাটা লাগিয়েই থপ করে মাটিতে বসে পড়ে এবং দরজার গায়ে হেলান দিয়ে হাটু গুটিশুটি করে নিঃশব্দে কান্না করতে থাকে। অহনা মনে মনে বলতে লাগল
–আমার হঠাৎ কি হলো! এত কান্না কেন আসছে আমার! বুকের ভিতর এত কস্টই বা কেন হচ্ছে! বুকের ভিতর এত ধুকপুকানিই বা কেন হচ্ছে! আমি মনে হয় এত ভাবতে ভাবতে পাগল হয়ে মরেই যাবো। আজকে অনন্ত স্যারকে দেখে আমার মনের ভিতর এতো উথাল-পাথাল কেন হচ্ছিল? কেন উনার চোখের জল দেখে আমার সহ্য হচ্ছিল না? কে হয় উনি আমার? কেউই তো হয় না। তাহলে উনাকে কস্ট দিতে গিয়ে কেন এখন আমি নিজে কস্ট পাচ্ছি?! শুনেছিলাম উনিও নাকি আমাকে কস্ট দিয়ে নিজেকে কস্ট দিতেন। এটা কি ধরনের অনুভূতি! অন্যকে কস্ট দিয়ে নিজে কস্ট পাওয়া! আমি তো এটাই জানি না আমার মন আসলে চায় টা কি! আমি ধীরে ধীরে এমন পাল্টে যাচ্ছি কেন! আমি তো আগে এমন ছিলাম না! তাহলে কেন অদ্ভুত অনুভুতি আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে! আমি এসব অনুভূতির থেকে মুক্তি পেতে চাই৷ এই অনুভূতিগুলো যে ভীষণ যন্ত্রণার।
অহনা এগুলো মনে মনে ভাবতেই চোখে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়তে লাগল৷ আজ অহনাকে বড্ড অগোছালো লাগছে৷ খুব এলোমেলো লাগছে অহনাকে। এমন অদ্ভুত অনুভুতির শিকার হলে যে নিজের অজান্তেই মনটা এলোমেলো হয়ে যায়। অহনার মনটাও আজ সেরকম লাগছে।
ঐদিকে অনন্ত ফুল স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে আর একটার পর একটা সিগারেট ধরিয়ে অনবরত খাচ্ছে। অনন্ত কোনোদিনও সিগারেট খায় নি৷ কিন্তুু আজ সিগারেটের নেশাটাও অনন্তের মনে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সিগারেট খেলে নাকি কস্ট কমে যায় অনেকের ধারণা তাই অনন্ত আজ সিগারেটে আগুন ধরিয়ে সিগারেট খাচ্ছে। আর সাথে সাথেই অনন্তের বুকের ভিতরের আগুন আরো দ্বিগুণ জ্বলে উঠছে। নিজেকে নিজেই পুড়িয়ে অনন্ত এক অদ্ভুত আনন্দ পাচ্ছে। ভালোবাসার আগুনের থেকে সিগারেটের আগুন আজ অনন্তের কাছে তুচ্ছ মনে হচ্ছে। শরীরের জ্বালার থেকে আজ অনন্তের মনের জ্বালাটাই বেশী হচ্ছে। অনন্তের বুকের ভিতর আজ ভীষণ শূন্যতা অনুভব হচ্ছে। অহনার ভালোবাসা পাওয়ায় জন্য অনন্ত যত দিন যাচ্ছে ততই উতলা হয়ে পড়ছে৷ অনন্ত মনে মনে বলতে লাগল
–কতদিন তুই আমাকে এভাবে অবহেলা করবি অহনা! আমিও দেখব তুই কতদিন আমার থেকে দূরে পালিয়ে থাকিস। আমার মনে যে ভালোবাসার আগুন তুই ধরিয়েছিস সেটা কখনো নিভবে না। তুই পৃথিবীর সব সাগর ভর্তি পানি আমার মনে ঢেলে দিলেও আমার মনের ভিতর থেকে তোর প্রতি ভালোবাসার আগুন একটুও কমবে না। আজ সিগারেটের আগুনটাও আমার মনের ভালোবাসার আগুনটাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ অনন্ত কারও অবহেলা পছন্দ করে না। তোর অবহেলা তো নই। আমি যে তোর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য পথ চেয়ে বসে আছি অহনা। কবে তুই আমাকে বুঝবি অহনা! কবে আমাকে তুই ক্ষমা করে দিবি!
দুপুর থেকে রাত ঘনিয়ে এলো। অহনা আগের মতো আর ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে না। আগের থেকেও কেমন নিরব হয়ে গেছে৷ তাই অহনার মা তার মেয়ের জন্য বেশ চিন্তিত থাকেন। সকাল থেকে রাত ঘনিয়ে এলো। অহনা জানালার একপাশে দাড়িয়ে আকাশের চাঁদ তারার অপরূপ দৃশ্য দেখছে। অহনা নিজের অজান্তেই সারাদিন অনন্তের কথাই ভাবতে থাকে। অনন্তকে নিজের মন থেকে সরানোর হাজার চেস্টা করলেও অহনা কিছুতেই অনন্তকে মন থেকে সরাতে পারছে না। এমনকি পড়াশোনাতেও অহনার মন বসে না। অনন্তের কথা, অনন্তের অনুভূতি, অনন্তের স্পর্শ সবকিছুই অহনার কাছে বেশ রহস্যময় লাগে এবং সারাদিন অনন্তের কথা ভাবতে থাকে। তার সাথে অহনার মনে বয়ে যায় এক অনুভূতি যা অহনার মনকে সবসময় বিচলিত করে। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে অহনার চোখে আবারও জল গড়িয়ে পড়ে। অহনা মনে মনে বলতে লাগল
–জীবনে এমন এক অনুভূতির সম্মুখীন হতে হলো যা আমাকে প্রতিনিয়ত উতলা করে তোলে। অনুভূতি জিনিসটা না বড্ড খারাপ। একবার মনে আসলে কিছুতেই যেতে চায় না। হাজার চেস্টা করলেও যেতে চায় না। কিন্তুু কিসের অনুভূতি এটা? সেটাই তো বুঝতে পারলাম না!
অনন্ত বাড়িতে ফিরে নিজের বেডরুমের বিছানার একপাশে হেলান দিয়ে বসে হাতে পেনসিল আর খাতা নিয়ে একটা ছবি মন দিয়ে আঁকতে থাকে যে ছবিটা দেখলেই অনন্তের মনে শান্তি চলে আসে৷ ছবিটা অনন্ত আঁকা শেষ করলে অনন্ত ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের অজান্তেই হেসে ফেলল। অনন্ত নিজে নিজেই বলতে লাগল
–আমার মনের রাণীটাকে আমি নিজের হাতে আঁকলাম। কিন্তুু ছবিটাতে অহনাকে এত কিউট লাগছে না। আমার অহনার ছবি তো আমি আমার হৃদয়ের মাঝে এঁকে রেখেছি যে ছবিটাতে আমার বোকা কিউট অহনাকে খুব সুন্দর লাগে। কেন যে তুই আমার ভালোবাসাটা বুঝিস না অহনা!
অনন্ত নিজে নিজে হাসতে হাসতেই আবার নিজের অজান্তেই কপালে হাত দিয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল।
অনন্ত মনে মনে বলতে লাগল
–ভালোবাসা না বড়ই অদ্ভুত অহনা। কখনো আমাদের হাসায় আবার কখনো আমাদের কাঁদায়। কিন্তুু এই হাসি আর কান্নার মধ্যেও এক অদ্ভুত অনুভূতি লুকিয়ে থাকে।



#চলবে….