হৃদয়ের আঙ্গিনায় তুমি পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0
990

#হৃদয়ের_আঙ্গিনায়_তুমি
#ইশা_আহমেদ
#অন্তিম_পর্ব

রাগ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়।ইনহাজের অবস্থা এখন তেমন।ওহিকে ছাড়া নিশ্বাস ও নিতে কষ্ট হয়।তার রাগের কারণের সে আজ এখানে।প্রতিশোধের নেশা রাগ সব মিলিয়ে তাকে ধ্বংস করলো।যেকোনো পরিস্থিতিই আসুক না কেনো আমাদের উচিত তা ভেবে চিন্তে কাজ করা।

-“ভাইয়া তুমি কাঁদছো।ভাবির কাছে না গিয়ে এখানে বসে কাঁদছো”

ইনহাজ দ্রুত চোখ মোছে।ইফার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,,
-“আমি কাঁদছি কোথায় পাগলি।চোখে কি যেনো পরেছে তাই পানি পরছে”

-“তুমি আমার সাথে মিথ্যা বলছো ভাইয়া।আমি তোমাকে চিনি ভাইয়া।কেনো করেছো সব কিছু।প্রতিশোধের জন্যই তুমি ভাবিকে হারালে”

-“আমি কি করতাম ইফা আমি তোকে অনেক ভালোবাসি।আর আমার সেই আদরের বোনের সাথে আরিশ ওইগুলো করলো।আর লাস্টলি তুই সুইসাইড করলি।তখন!তখন আমার অবস্থাটা কেমন হয়েছিলো বুঝতে পারছিস।বিদেশ থেকে ছুটে গিয়েছিলাম।”

ইফা মলিন হাসে।তার করা ভুলের জন্যই ওহি নামক মেয়েটার লাইফটা শেষ হয়েছে।সে যদি সুইসাইড না করতো তাহলে এতো কিছু হতো না।ও ইনহাজকে বলে,,

-“ভাইয়া টিকিট বুক করো আমরা বিডিতে ফিরবো”

-“কেনো তুই দেশে গিয়ে কি করবি।কোনো প্রয়োজন নেই যাওয়ার”

-“ভাইয়া আমি তোমার মতো বোকা নই যে ভুল করে নিজের ভালোবাসার মানুষকে হারাবো।আমি আরিশের কাছে যাবো।এবার কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না।”

ইফা চলে যায়।ইনহাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে।মেয়েটা বড্ড জেদি।একমাস আগেই ইনহাজকে তার আম্মু ফোন করে বলেছে ইফার জ্ঞান ফিরেছে।ওই দিনই ইনহাজ ফ্লাইট বুক করে পাগলের মতো চলে এসেছে বোনের কাছে।সে ভুল করেছে ওহিকে কষ্ট দিয়ে।সেও এখন তার ভালোবাসার কাছে ছুটে যাবে।

কেউ আটকাতে পারবে না।এতোদিন ওহি তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েছে এখন হবে ভালোবাসার অত্যাচারে অতিষ্ঠ।ওহির ছবি বের করে ইনহাজ তাতে চুমু খায়।
-“উফ বউজান আই আম কামিং”

২৭.
ওহি নিজের উপরই আজ ভীষণ বিরক্ত।কতো লেট হয়েছে।ওহি রিকশায় চরে বসে।কিছুদূর আসতেই জ্যামে পরে।ওহি বিরক্তির সীমা ছাড়িয়ে যায়।ওহি পাশ ফিরে তাকাতেই থমকে যায়।সে কাকে দেখছে।ইফা তার চোখের সামনে স্বয়ং ইফা বসে আছে গাড়িতে।ওহি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে চলেছে ইফা নামক রমনীকে।

ইফার পরনে একটা নীলরঙা শাড়ি,কপালে কালো টিপ চোখে কাজল।সব মিলিয়ে ভীষণ সুন্দর ইফা।ছবির থেকেও বেশি সুন্দর।পাশেই ইনহাজকে দেখে ওহি চোখ ফিরিয়ে নেয়।ইনহাজকে দেখলেই তার কান্না পায়।ইফা বেঁচে আছে ভাবতেই খুশি লাগছে।সে বাড়িতে গিয়ে তার ভাইকে জানাবে এই কথা।

ওহি ভার্সিটিতে আসতে আসতে ওর একটা ক্লাস শেষ হয়ে গিয়েছে।মাহির আহিয়া ওর কাছে আসে।ওরা তিনজন ফুসকার দোকানে আসে।ফুসকার খাওয়ার মাঝেই কেউ একজন ওহির সামনে এসে দাড়ায়।ওহি তাকে দেখে থমকে যায়।চোখ ফিরিয়ে নেয়।

ইনহাজ করুন কন্ঠে ওহিকে বলে,,
-“আমায় কি ক্ষমা করা যায় না।একবার ক্ষমা করে দেখোই না তোমায় জন্য আমি গোটা দুনিয়া ছেড়ে দেবো ওহিরানী।নিজের মনের কোঠায় রানী করে রাখবো”

ওহি তাচ্ছিল্য হাসে।
-“বুকের পাজর দিয়ে যেই শহরটা একটু একটু করে তৈরি করলাম,আপনি সেই শহরটাই আমার জন্য নিষিদ্ধ করলেন।”

কথাটা বলেই ওইফা নামক রমনী পেছনে ঘুরে।তার চোখের অশ্রুকণা সে দেখাতে চায়না তার সামনের মানুষটাকে।তাই সে অশ্রসিক্ত চোখ নিয়ে চলে যায়।একবারও ফিরে তাকায় না।আর সে,সে তো কান্নামাখা সেই মায়াময়ী চেহারার কথা ভাবে তারপর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,,

-“আমি তোমাকে নিজের করবোই মেয়ে।তুমি শুধু আমারই।আমার হৃদয়ের আঙ্গিনায় তুমি ছাড়া কারো অস্তিত্ব নেই।আমি মানি তোমার অভিমান করা জায়েজ কিন্তু আমি নিজের ভালোবাসা আর পাগলামি দিয়ে তোমার সব অভিমান দূর করবো।”

মাহির আর আহিয়া রাগি চোখে তাকায় ইনহাজের দিকে।ইনহাজ হাসে তা দেখে।মাহির ফুসকার বিল দিয়ে চলে যায়।ওহি সোজা বাড়ি চলে আসে।কিছু ভালো লাগছে না তার।আবার কেনো ইনহাজ তার লাইফে ফিরে আসলো।সে তো চাইনি ইনহাজ আর ফিরুক।

২৮.
ভার্সিটি আসতেই যে এতো বড় সারপ্রাইজ পাবে ওহি তা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি।বড় বড় কার্ডে সরি আর আই লাভ ইউ লিখা যা কয়েকটা ছেলে ধরে আছে।আর ইনহাজ একগুচ্ছ লাল গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।ওহি মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়।পেছন থেকে ইনহাজ বলে ওঠে,,

-“এই যে সুন্দরী,আমি কিন্তু তোমার পিছু ছাড়ছি না।যতই তুমি আমায় ইগনোর করো না কেনো!”

ওহি ক্লাসে এসে ধপ করে বসে পরে।মাহির আহিয়া চমকে ওর দিকে তাকায়।ওহি যে রেগে আছে বেশ বুঝতে পারছে ওরা।ওহি রেগে বলে,,

-“এই লোক পেয়েছে টা কি আমাকে প্রথমে অত্যাচার করলো এখন ভালোবাসা দেখাতে এসেছে।”

স্যার ক্লাসে ঢোকে তখনই।ক্লাস করে বের হতেই আবার ইনহাজ সামনে পরে।ওহি ইনহাজকে দেখে ইগনোর করে চলে যেতে চায়।কিন্তু ইনহাজ তো ইনহাজই।ওহির সামনে এসে বলে,,,
-“ওহিরানী এমন করছো কেনো সরি তো।একটু কথা তো বলো প্লিজ”

-“কি কথা বলবো আমি আপনার সাথে বলুন তো।কথা বলার কোনো কিছুই আর বাকি নেই মিস্টার খান”

ইনহাজ অসহায় কন্ঠে বলে,,
-“সত্যি কোনো কিছু বাকি নেই।”

-“না নেই।”

ওহি চলে যায়।ইনহাজ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওহির যাওয়ার পানে।কষ্ট হচ্ছে ভীষণ কষ্ট।ভালোবাসার মানুুষটার থেকে পাওয়া ইগনোর কেউই সয্য করতে পারে না।

২৮.
পাঁচ বছর কেটে গেলো।ওহি দাঁড়িয়ে আছে ছাদে।হিমেল হাওয়া ছুঁয়ে দিচ্ছে ওহির শরীর।পেছন থেকে একটা শক্তপোক্ত হাত তাকে ঝাপটে ধরে তার খোলা চুলে মুখ ডোবালো।ওহি মুচকি হাসলো।ওহি জানে মানুষটা কে!ইনহাজ মানুষটাকে সে ১ বছর পাত্তাই দেয়নি।বেচারা নিজের ভালোবাসা প্রমান প্রমান করতে করতে হাঁপিয়ে গিয়েছিলো।আর ইফা আরিশ তারা এখন ভীষণ ভালো আছে।

ওহির চেষ্টায় এখন ইনহাজ তার পুরো পরিবারের সাথে কথা বলে যোগাযোগ করে।আর ওহির বাবা সে তো দুই ছেলে মেয়েকে হারিয়ে পাগল প্রায়।ওহি এখনো তার বাবাইয়ের সাথে কথা বলে না।

-“কি করছেন ছাড়ুন।এটা ছাদ আশেপাশ থেকে লোকজন দেখবে।”

ইনহাজ নেশালো কন্ঠে বলে,,”উফ ওহিরানী চুপ করো তো তুমি মনে আছে আমার একটা বছর তুমি নষ্ট
করেছো”

ওহি নিজেকে ইনহাজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ভেংচি কেটে বলে,,,
-“হুহ ভালো হয়েছে।আপনাকে আরো শাস্তি দেওয়া উচিত ছিলো।”

-“মাম্মা”

ইনহাজ আর ওহি পেছনে তাকায়।একটা ছোট্ট ছেলে দাড়িয়ে আছে।ওহি মুচকি হেসে হাত বাড়াতেই বাচ্চা ছেলেটা দৌড়ে ওহির কাছ আসে।ওহি কোলে তুলে চুমু দেয় বাচ্চা জায়ানকে।জায়ানও তার মাম্মাকে চুমু দেয়।ইনহাজ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।ওহি আর জায়ান ইনহাজকে দেখে হাসতে থাকে।

জায়ান চলে যায় তার বনুর সাথে খেলবে বলে।বনু মানে আরিশ ইফার মেয়ে।জায়ান যেতেই ইনহাজ ওহিকে জড়িয়ে ধরে।গোধূলি বিকাল।ওহি ইনহাজের বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে সূর্য ডোবা দেখছে।ইনহাজ হেসে বলে,,

-“আমার হৃদয়ের আঙ্গিনায় শুধু একজনের বসবাস আর সে হলো আমার ওহি রানী।আমার হৃদয়ের_আঙ্গিনায়_তুমি ছিলে থাকবে সবসময়।ভালোবাসি ওহিরানী।

ওহি হাসে।মৃদু স্বরে বলে,,
-“আমিও আপনায় ভালোবাসি ইনহাজ”

সমাপ্ত~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে