হৃদয়ের আঙ্গিনায় তুমি পর্ব-১৫

0
765

#হৃদয়ের_আঙ্গিনায়_তুমি
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৫

আরিশ ওহিকে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে আসে।ওহি ঘুমাচ্ছে।আরিশ বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।সে নিজেও অপরাধী।ভীষণ অপরাধী ইনহাজের কাছে আর তার ভালোবাসার মানুষের কাছে।সে বেঁচে আছে কিনা আরিশ তো তাও জানে না।

আরিশ পকেট থেকে নিজের মানি ব্যাগটা বের করে।ইফার ছবিটায় চুমু খেয়ে বলে,,

-“তোমায় রক্ষা করতে পারিনি এটা আমার ব্যর্থতা।বাবার কথার জন্য তোমায় ছেড়েছি এটাও আমারই ব্যর্থতা।কি করবো বলো সেদিন না ছিলো চাকরি না ছিলো কিছু কিন্তু এখন সবই আছে তুমি নেই শুধু।ভালোবাসি ইফুরানী ভীষণ ভালোবাসি”

ওহির দিকে তাকিয়ে বলে,,
-“তোর ভাই একজন ব্যর্থ প্রেমিক ব্যর্থ ভাই।কিন্তু এখন থেকে তোকে আমি আগলে রাখবো কোনো খারাপকে তোকে ছুঁতে দেবো না”

ইনহাজের পাগল পাগল লাগছে সব কিছু।মনে হচ্ছে ছুটে ওহির কাছে চলে যাক।রুমের সব কিছু ভেঙে চুরে ফেলেছে।ইনহাজ পাগলের মতো বলছে,,,

-“কেনো কেনো আমি এমন করলাম।কালকে ওরকম না করলে আমার ওহি আমার কাছে থাকতো।কেউ আলাদা করতে পারতো না আমার থেকে ওকে।ও আমার ছেড়ে চলে গেলো কি করে”

রাফিন ছুটে বাড়ির ভেতরে ঢোকে।বাড়ির অবস্থা দেখে বেশ অবাক হয়।সে উপরে চলে আসে।ইনহাজের হাত বেয়ে রক্ত পরছে।ইনহাজ হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে।হাতে কাচ ঢুকে রক্ত পরছে।রাফিন ইনহাজকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়।

২৫.
সাতদিন কেটে যায়।ওহি মানসিক ভাবে বিধস্ত।সেদিনের রাতের ঘটনা মনে আসলেই ভয় আতঙ্ক ঘিরে ধরে ওকে।ও প্রায়ই সপ্নটা দেখে।আরিশ চিন্তিত বোনকে নিয়ে।আরিশ ওকে নিয়ে সাইকোলজিস্টের কাছে গিয়েছিল।সাইকোলজিস্টের কাছে যাওয়ার পর ওহি একটু স্বাভাবিক আচরণ করছে।ওহি রুমে বসে আছে।অন্ধকার আগেও তার সয্য হতো না আর সেদিনের পর তো আরো না।

ওহি রেডি হয়ে নেয়।ভার্সিটিতে যাবে ও।আরিশ খাবার নিয়ে আসে রুমে।ওহি ব্যাগ গোছাচ্ছিল তখন।আরিশ ওহিকে টেনে বিছানায় বসিয়ে খাইয়ে দেয়।ওহির চোখ ছলছল করে উঠে।ভাইয়া তাকে ভালোবাসে কিন্তু সে তার ভাইয়ের জন্য কিছু করতে পারছে না।

আরিশ বোনের চুল বেঁধে দিলো।ছোট বেলায় ও প্রায়ই এমন করে চুল বেঁধে দিতো ওহির।ওহি খুশি হয় ভীষণ।আজ কতগুলো দিন পর ভাইবোন মিলে একসাথে আছে।ওরা দুজন নিচে নামে।আরিশ ওহিকে দাড়িয়ে থাকতে বলে বলে,,
-“আমি গাড়ি নিয়ে আসছি দাঁড়া তুই”

-“আমি গাড়িতে যাবো না ভাইয়া আমি তোমার আগের সেই বাইকে করে যাবো।”

আরিশ মুচকি হেসে বাইক আনতে যায়।ওহি একা দাঁড়িয়ে আছে।আরিশ বাইক নিয়ে আসলে ওহি উঠে বসে।দু’জন চলে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে যেতে থাকে।ওহিকে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিয়ে বলে,,

-“আমি নিতে আসবো তোকে।ক্লাস শেষ হয়ে যাওয়ার পর ফোন দিস।”

ওহি মাথা নাড়ায়।আরিশ চলে যায়।ওহি মাহির আর আহিয়ার কাছে যায়।দুজন বসে গল্প করছিলো।ওরা ওহিকে দেখে হেসে কথা বলে।আরিশ আগেই ওদের সব জানিয়েছে।তাই প্রশ্ন করে না ওহিকে।স্বাভাবিক আচরণ করে।তিনজন হাসি ঠাট্টা করে ক্লাস শেষ করে।একটা ক্লাস না হওয়ায় তিনজন বের হয়।বাইরে এসে ইনহাজকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে।ওহি অস্থির হয়ে পরে।মাহিরের শার্ট চেপে ধরে।

আহিয়া ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে।ওরা ওকে নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে ইনহাজ ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়।মাহিরের প্রচন্ড রাগ ওঠে।তবুও ওহির মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ আছে।ওহি আহিয়ার কাঁধে মাথা রেখে আছে।আহিয়া এক হাতে জড়িয়ে ধরেছে ওহিকে।মাহিরও এক হাতে ধরে আছে।ওহির মাথা ঘুরছে।

ইনহাজ হুট করে ওহিকে কোলে তুলে নেয়।ওহি ছোটাছুটি করতে থাকে নামার জন্য।মাহির রেগে বলে,,,

-“কোন সাহসে আপনি ওহিকে কোলে নিয়েছেন নামান তাড়াতাড়ি।ও অসুস্থ বাসায় নিয়ে যেতে হবে ওকে ছাড়ুন”

ইনহাজ হেসে বলে,,
-“আমার সাহস তো তুমি জানোই ছোট শালাবাবু”

কথাটা বলেই ওহিকে নিয়ে গাড়িতে উঠে।ওহি চিল্লিয়ে বলে,,
-“ইউ!আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।গাড়ি থামান বলছি।বেহায়া অসভ্য র্নিলজ্জ লোক কোথাকার।”

ইনহাজ একটা বাগান বাড়ির সামনে গাড়ি থামায়।ওহিকে কোলে তুলে একটা রুমে নিয়ে আসে।ওহি রাগের চোটে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।ও ইনহাজকে থাপ্পড় মারে।ইনহাজ হাসে।অবাক হয় ওহি।সে রুমের জিনিসপত্র ভাঙতে থাকে।

ইনহাজ ওহির কাছে এসে ওকে থামানোর চেষ্টা করে।ওহি ওর হাতে কামড় দেয়।ওকে নিজের কাছে আসতে দেখে সেদিন রাতের কথা মনে পরে যায় ওহির।ভয় পেতে শুরু করে ইনহাজকে।ইনহাজের থেকে দূরে আসতে থাকে।ও কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,,

-“আপনি এগোবেন না আমার দিকে।আপনি একটা জানোয়ার আমার দিকে আসবেন না।আপনার স্পর্শে আমার ঘৃনা হয়।”

ওহির শেষের কথাটা শুনে ইনহাজের বুকে চিনচিন ব্যাথা করে।তবুও সে ওহির কাছে যায়।ওহিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিতেই ও ঢলে পরে।কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয়।রুম পরিষ্কার করে নিজেই।ওহির পাশে এসে বসে।ওর কপালে চুমু দেয়।

-“আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি ওহি।তোমাকে মুক্তি দিয়ে দেবো আজকে।সেদিন নিজের মানসিক শান্তি পাওয়ার জন্য তোমার সাথে অগুলো করলেও আমি তোমার কষ্ট দেখে উল্টো কষ্ট পেয়েছি।এই সাতটা দিন আমার কীভাবে কেটেছে আমিই জানি একমাত্র।”

ওহি চোখ খুলে ইনহাজকে নিজের কাছে দেখে উত্তেজিত ও আতঙ্কে পরে যায়।ইনহাজ ওহিকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।ইনহাজ বলে,,

-“রিলাক্স ওহি।আমি তোমাকে মুক্তি দিতে এখানে এনেছি।আজকে থেকে তুমি মুক্ত।তোমার সাথে আমার কেনো সম্পর্ক নেই।তুমি তোমার মতো থাকে আর ডিস্টার্ব করবো না।সেদিনের জন্য আমি ভীষণ অনুতপ্ত ক্ষমা করো আমায়।”

-“আমি আপনাকে জীবনেও ক্ষমা করবো না মিস্টার খান”

ইনহাজ ওহিকে বাসায় দিয়ে আসে।আরিশ ইনহাজকে দেখে খেয়ে ফেলানো লুক দেয়।ওহি বাসায় চলে আসে।আরিশ অস্থির হয়ে ওহিকে চেক করে দেখে বলে,

-“ও তোকে মেরেছে নাকি খারাপ কিছু করেছে ওহি”

-“ভাইয়া রিলাক্স কিছু করেনি উনি আমার।শুধু ক্ষমা চেয়েছেন আর কখনো আমাকে ডিস্টার্ব করবে না তাই বলেছে।”

২৬.
দেখতে দেখতে কেটে গেলো এক মাস।অনেক কিছু বদলেছে।বদলেছে ওহি।সে ভীষণ ভালোবাসে ইনহাজকে কিন্তু কখনো ফিরে পেতে চায় না।ফিরে পাওয়ার ইচ্ছেও নেই তার।যে মানুষটা এতোটা ছোট করেছে অপমান করেছে তাকে তার কাছে ফিরে যেতে চায় না।ওহি জানেও না ইনহাজের খবর।

জানতে চায় ও না।চায় না বললে ভুল হবে চায় তো ঠিকই কিন্তু ইনহাজের খোঁজ নেই।দেখেওনি সে সেদিনের পর থেকে ইনহাজকে।হয়তো সত্যি মুক্তি দিলো সে।কথাটা মনে আসতেই কান্না পায় ওহির।ইনহাজ অন্য কাউকে ভালোবাসবে বিয়ে করবে ভাবলেই বুক কেঁপে উঠে।

ভালোবাসলে যন্ত্রণা তো পেতেই হবে।ভালোবাসার আরেক নাম যে যন্ত্রণা।ওহির আর ভালো লাগে না।ভাইয়ের মুখের দিকেও তাকাতে পারে না সে।কষ্ট হয় ভীষণ।ছেলেটা এখনো ইফাকেই ভালোবাসে।সেদিন সাহস করে যদি বলতে পারতো তাহলে এমন কিছুই হতো না।না ইফা তার কাছ থেকে দূরে যেতো আর না ওহির জীবন এমন হতো।হয়তো ভাগ্যে এমন কিছুই লেখা ছিলো।

চলবে~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে