ভালোবাসি সমুদ্র পর্ব-০৬

0
433

#ভালোবাসি_সমুদ্র
#পর্ব_6
#মৌসুমি
সমুদ্র কলকাতা গেছে আজ প্রায় একসপ্তাহ হলো এর মধ্যে একদিন সমুদ্রের সাথে কথা হয়েছে তাও সেইভাবে হয়নি দু মিনিট কথা বলে সে ফোন রেখে দিয়েছিল।সামনেই আমার পরীক্ষা।আজ দুদিন পর স্কুলে যাচ্ছি,সুমীর মুখে শুনলাম স্কুলে নাকি আমাদের নতুন জিওগ্রাফি টিচার হিসেবে মেডামের ছেলে জয়েন করেছে।স্যার নাকি বিদেশে থাকত সব মেয়েদের মুখে মুখে মেঘ স্যার।হ্যাঁ স্যারের নাম মেঘ সেন।আমাদের প্রথম ক্লাসটা নাকি তার যায় হোক আমি সুমী কে নিয়ে ক্লাস রুমের দিকে এগোলাম আমরা ঠিক মাঝের একটা বেঞ্চে বসলাম।
ঘন্টা পড়তেই স্যার ক্লাসে আসল।স্যার কে দেখে আমি আকাশ থেকে পড়লাম আর মনে মনে ভাবলাম আরে এটা তো সেইদিনের ছেলেটা যার সাথে ধাক্কা লেগে আমি পড়ে গেছিলাম।স্যার ও হয়তো আমাকে দেখে অবাক হয়েছে।সুমী আমাকে অনেকখন ধরে খোচা মেরে যাচ্ছে।আমি ওর মাথায় একটা থাপ্পড় মেরে জিজ্ঞাসা করলাম কী হয়েছে ?
সুমী উত্তরে বলল মিষ্টিরে সেই লেভেলের ক্রাশ নামক বাঁশ খেয়েছি।
আমি বললাম কী?কাকে দেখে আবার ক্রাশ খেলি ?
সুমী বলল মেঘ স্যার কে দেখে।
সুমী তুই আর শুধরালি না।
স্যার এক এক করে সবার নাম জিজ্ঞাসা করতে থাকল।আমার পালা আসতেই আমি খুব সুন্দরভাবে আমার ‌নাম টা বললাম।
সত্যিই বলতে হবে স্যারের ব্যবহার অমায়িক।

স্কুল ছুটি হলে আমি বাড়ি এসে ফ্রেস হয়ে বারান্দায় টেবিলে খেতে বসতেই দেখি পাশের বাড়ির এক কাকিমা।আমি ভদ্রতার খাতিরে তার সাথে কুশল বিনিময় করলাম।সেই কাকিমা হঠাৎ আমাকে বলে ,”কী গো মিষ্টি আর কত খাটবি এই বয়সে, কোথায় এই বয়সে ঘুরবি তা না সংসার টেনে বেড়াচ্ছিস”
আবার আমার মা কে গিয়ে বলল কী গো মিষ্টির মা মেয়েটাকে বিয়ে দেওয়ার বুঝি আর ইচ্ছা নেই।
উত্তরে মা বললো থাকবে না কেন সবারই তো ইচ্ছা থাকে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার।
কাকিমা আবার বলল, বিয়ে তো দেবা তা তোমার মিষ্টি তো এমনিতেও সুন্দর না আর ও রোদে পুড়ে গায়ের রং টা কী হয়েছে কে বিয়ে করবে এই মেয়েকে ?
আমি আর উত্তর না দিয়ে থাকতে পারলাম না বলে উঠলাম আচ্ছা কাকিমা আমার মা কী আপনাকে আমার বিয়ে নিয়ে চিন্তা করতে বলেছে বা আমার বিয়েতে কিছু দিতে বলেছে বলে নি তো তাহলে আপনার আমাকে নিয়ে এত চিন্তা কেন বলুন তো।
কাকিমা আমার কথা শুনে বেশ অপমানিত হলো আর মা কে বললো কী ভদ্রতা তোমার মেয়ের,বড়োদের সম্মান করতেই জানেনা।
আমি বললাম শুনুন কাকিমা সম্মান করি বলেই এখনো এখানে দাড়িয়ে কথা বলছেন নাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দিতাম।
কাকিমা এবার রেগে আমাদের বাড়ি থেকে চলে গেল।
আমি মা কে বললাম কেন যে এইসব মহিলাদের বাড়িতে আসতে বলো এদের কাজ শুধু অন্যের সংসারে কাঠি করা।

আজ আর পড়ানো ছিল না বৃহস্পতিবার সবার ছুটি‌ থাকে।ঘরের সব কাজ গুছিয়ে আমি বিছানায় বসতেই আমার ফোনটা বেজে ওঠে।ফোন হাতে নিয়ে দেখি সমুদ্রের ফোন।কল টা রিসিভ করলাম।রিসিভ করতেই সমুদ্র বলে উঠল মিষ্টি একটু বাড়ির পিছনের রাস্তায় আসবা।আমি অবাক হয়ে বললাম কেন?
সমুদ্র বলল অতো কিছু বলতে পারছি না প্লিজ একটু আসবে।
সমুদ্রের গলাটা কেমন যেন শোনাল তাই আমি আর বেশি কথা না বলে ঘরের দরজা ভালো করে লক করে বাথরুমের পিছনের দরজা দিয়ে বেরোলাম।
আমি রাস্তাই গিয়েই দেখি সমুদ্র একটু দূরে গাড়ি সামনে দাড়িয়ে।
আমি আসতে আসতে সমুদ্রের কাছে গেলাম সমুদ্রের কাছে যেতেই সমুদ্র আমাকে তার হাতের শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ করল এবং একটি অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে বসল আলতো করে আমার গালে তার উষ্ণ ঠোঁট ছুইয়ে দিল।এটা আমার জীবনের পুরুষের প্রথম স্পর্শ হওয়ায় আমি লজ্জায় সমুদ্রের বুকে মুখ লুকালাম।বুঝতে পারলাম সমুদ্র হাসছে।
সমুদ্র আবার বলে উঠল এইটুকুতেই তুমি লজ্জা পাচ্ছো মিষ্টি তাহলে বিয়ের পর কী করবে।
মিষ্টি হঠাৎ খেয়াল করল সমুদ্রের শরীর প্রচন্ড গরম।জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে সমুদ্রর।
মিষ্টি সমুদ্র কে বলল তোমার গায়ে জ্বর তো ।শরীর পুরো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।
সমুদ্র বলল মিষ্টি আমি যে পুড়ছি প্রতিনিয়ত তোমার দহনে তা তোমার চোখে পড়ে না।
সমুদ্র আমার হাতটা ওর বুকে চেপে বলল দেখ মিষ্টি আমার এইখানটা পুড়ছে ভীষণ ভাবে পুড়ছে চার চারটে বছর ধরে পুড়ছে তুমি নামক আগুনে ।
জ্বর তো ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু আমার মনের অসুখ যে তুমি ছাড়া কেও ঠিক করতে পারবে না।কেন এত জ্বালাছো মিষ্টি কেন? আমি তো আর সহ্য করতে পারছি না।
‌‌আমি বুঝতে পারলাম সমুদ্র জ্বরের ঘোরে এইসব বলছে একটু দূরে দেখলাম সমুদ্রর বন্ধু রাহুল দাড়িয়ে।আমি হাতের ঈশারায় রাহুল দা কে ডাকলাম।রাহুলদা আসতেই বলল মিষ্টি ওর খুব জ্বর।
আমি বললাম ওষুধ খেয়েছে?
রাহুল দা বলল না
বিকেল থেকেই তোমার কাছে আসবে বলে পাগলামি করছে।
আমি বললাম ওষুধ আছে তোমার কাছে
রাহুল দা বলল আছে এই নাও
আমি সমুদ্রের কাছে গিয়ে ও কে ওষুধ টা খাওয়ালাম জোর করে আর একটু বুঝিয়ে গাড়িতে তুলে দিলাম।
আমি সমুদ্র কে বিদায় জানিয়ে ঘরে চলে আসলাম। এসে সারারাত ঠিক করে ঘুমাতে পারিনি সমুদ্রের চিন্তায়।

সকাল হলে তাড়াতাড়ি সব কাজ গুছিয়ে টিউশনি পড়াতে গেলাম।ভাবলাম হয়তো সমুদ্রের দেখা পাব কিন্ত তার দেখা পেলাম না।হঠাৎ মনে পড়ল আমার ফোন আছে তো একটা ফোন করি বরং যেই ভাবা সেই কাজ।করে ফেললাম ফোনটা।কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসল না।আমি হতাশ হয়ে ফোনটা ব্যাগে রাখলাম।আবার ভাবলাম একটা মেসেজ করে দিই।এরপর আমি পড়াতে চলে গেলাম।
পড়ানো শেষ হতেই বাড়ির দিকে যেতেই দেখি সমুদ্র।
সমুদ্র কে দেখেই আমার মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল।অজান্তেই হেসে ফেললাম।
সমুদ্র একইভাবে আমাকে দেখে হেসে উঠল।
আমি ভাবলাম আমাদের প্রনয় টা বোধহয় একটু আলাদা।
চলবে…………….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে