ভালোবাসি সমুদ্র পর্ব-০২

0
486

#ভালোবাসি_সমুদ্র
#পর্ব_2
#মৌসুমি
সেই ঘটনার পর বাড়ি এসে খুব কান্না করেছিলাম।শপথ করেছিলাম আর কোনোদিন তোর মুখোমুখি হব না।
এইভাবে একমাস কেটে যাওয়ার পর একদিন আমার এক বান্ধবীর মুখে শুনি সে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।কলকাতায় একটা ভালো জব পেয়েছে তাই সম্ভবত এলাকা ছেড়েছে।
তার এলাকা ছাড়ার কথা শুনে ভীষন কষ্ট পেয়েছিলাম কিন্তু প্রকাশ করিনি নিজেকে ভীষনভাবে শক্ত করার চেষ্টা করছিলাম।
কেটে গেল কয়েকটা বছর,
আজকে আমার মাধ্যমিক রেজাল্ট ভগবানের কৃপায় আর স্যারদের সাহায্য কঠিন দারিদ্রতাকে জয় করে আমি স্কুলে প্রথম স্থান অধিকার করেছি A+ পেয়ে।আমার এই রেজাল্ট করার জন্য ভগবানের পর আমার মা আর টিউশন স্যারের অবদান যা আমি কোনোদিন ভুলতে পারবোনা।কারন আমি যখন ক্লাস টেনে উঠলাম আমার বাবা গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে ,বাবার চিকিৎসা করতে করতে জমানো সব কিছু শেষ।এমনকি রান্না করার মতো দু মুঠো চাল নেই ছোটো ভাইটা ভাতের জন্য কাদতো।আমার নতুন ক্লাসে ভর্তি হওয়ার টাকা ছিল না ঘরে যেখানে তিন বেলা ঠিক করে খাওয়া জোটেনা সেখানে পড়াশোনা বিলাসিতা মাত্র।ভেবেছিলাম হয়তো পড়াশোনা করতে পারব না।মা রাতের অন্ধকারে খুব কাঁদত।সেই দিন ছিল ভর্তির শেষ দিন মা দেড় হাজার টাকার থেকে শুধু মাত্র পাচশো টাকা জোগাড় করতে পেরেছিল তাও খুব কষ্টে আর টাকা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।তখন সকাল এগারোটা আমি সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম সেইসময় আমার জীবনে ভগবানের মতো আসেন চন্দ্র স্যার তাকে দেখে আমার এক টুকরো আশার আলো জেগে ওঠে।স্যার মানুষ হিসেবে অমায়িক ছিলেন।আমি স্যার কে দেখে আর ও বেশি কাঁদতে থাকি আর বলি,”স্যার আমি মনে হয় আর পড়াশোনা করতে পারব না আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল”।
তখন স্যার আমার মাথায় স্নেহের পরশ দিয়ে বললেন ,”যাও মিষ্টি স্কুল ড্রেস পড়ে রেডি হয়ে এসো”।
আমি অবাক হয়ে স্যার কে জিজ্ঞেস করলাম কেন স্যার ড্রেস পড়ে কী করব উত্তরে স্যার বললেন,
কেনো পড়াশোনার ইচ্ছে নেই নাকি
আমি উত্তরে বললাম খুব ইচ্ছে স্যার কিন্তু আমার যে উপায় নেই।বলতে বলতে কেঁদে ফেললাম।
স্যার বললেন ,”আমি তোমাকে স্কুলে ভর্তি করে দেব কিন্তু একটা শর্তে তোমাকে মন দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে এবং স্কুলে প্রথম স্থান অধিকার করতে হবে”।
আমি কিছুক্ষণ ভেবে বললাম রাজি স্যার।
আমার মা স্যারের সামনে কেদে উঠলে স্যার বলেন কাদবেন না কাকিমা মিষ্টিকে স্কুলে ভর্তি করালে আমার সব টাকা শেষ হবে না,আপনি যেমন কষ্ট করছেন আরেকটু করুন আমার বিশ্বাস মিষ্টি পারবে।স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর সব কিছু ভুলে পড়তে লাগলাম মা ও আর ও দুইবাড়ি কাজ বাড়িয়ে দিল কষ্ট আরও জোরালো হলো।অনেক লোকে অনেক কিছু বলেছে আমাদের কিন্তু কান দিইনি আমারা।আমি ভালো রেজাল্ট করে একশ্রেণীর মানুষ দের জবাব দিতে চেয়েছিলাম ,মায়ের হাসি মুখ দেখতে চেয়েছিলাম এবং চন্দ্র স্যারের সম্মান রাখতে চেয়েছিলাম।হ্যাঁ আমি পেরেছি।এই সব কিছুর মধ্যেও আমি সমুদ্র কে ভুলিনি।সমুদ্র আমার মনের কোথাও না কোথাও আজও রয়ে
গেছে। হয়তো আগের মতো অনুভূতিটা নেই অভিমানে চাপা পড়ে গেছে।তবু আজও তাকে বলতে ইচ্ছে করে #ভালোবাসি_সমুদ্র কিন্তু আমি তার খোঁজ জানি না আজ বড্ড তাকে মনে পড়ছে।জানি না তার সাথে আর দেখা হবে কী না হয়তো হবে বা হবে না সবটাই ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছি।
মাধ্যমিক দেওয়ার পর একটা প্রাইভেট ব্যাংকে লেখালেখি আর কাগজ গোছানোর একটা কাজ জোগাড় করে দিয়েছে স্যার সপ্তায় তিন দিন যেতে হয় ।চার হাজার টাকা বেতন আর কয়েকটা টিউশনি পড়িয়ে কোনোমতে দিন চলে যাচ্ছে।ক্লাস 11এ নতুন স্কুলে ভর্তি হয়।ভাবতে পারিনি আবার দেখা হবে তার সাথে।আবার আমার মনে নতুন করে ঝড় উঠবে এটাও ভাবতে পারিনি।সমুদ্র আমার আবেগ না সে আমার ভালোবাসা এটা আমি খুব ভালো করেই এই কয়েক বছরে বুঝে গিয়েছিলাম।আমি তো চায়নি তার মুখোমুখি হতে তবে ভগবান কেন আমাকে আবার তার সাথে দেখা করাল। আমি আর সমুদ্রের দহনে পুড়তে চাইনা।সত্যিই চাইনা।
সেদিন বুধবার আমি টিফিনের সময় আমার কিছু বন্ধু বান্ধবীদের সঙ্গে মাঠে বসেছিলাম আমার চোখ যায় স্কুলের গেটে দেখলাম একটা আমাদের বয়সী ছেলে আর একটা প্রাপ্ত বয়সী যুবক অফিস রুমের দিকে যাচ্ছে প্রথমে বুঝতে পারিনি যে ওটাই আমার হৃদয় হরনকারী সমুদ্র। পরে ছেলেটি সমুদ্র দাদা বলে ডাকলে আমার বুক টা কেপে উঠল।আমি তাকে দেখার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম অফিস রুমের দিকে।গিয়ে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম হ্যাঁ এটাই সেই সমুদ্র অনেক পরিবর্তন হয়েছে তার চেহারায় আগের থেকে অনেক সুদর্শন হয়েছে সে ।কেউ মন দিয়ে না দেখলে চিনতে পারবে না কেউ।তাকে দেখে আমার পুরোনো সেই কথা সব মনে পড়ে গেল।চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়তে থাকল।কেউ দেখার আগেই চোখের জল আড়াল করে ফেললাম।হঠাৎ সমুদ্র আমাকে অবাক করে জিঞ্জাসা করল,”আরে মিষ্টি যে।ভালো আছো তো?
আমি আলতো করে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম।
সমুদ্র আর ও বলল আগের থেকে বড়ো আর পরিবর্তন ও হয়েছ দেখছি।
আমি আলতো হেসে সেখান থেকে চলে আসলাম আর কিছু বলিনি।
পিছনে তাকালে হয়তো তার অবাক করা মুখটা দেখতে পেতাম।
চলবে………..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে