দু মুঠো বিকেল পর্ব-৫৪+৫৫+৫৬

0
2008

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৫৪
Writer-Afnan Lara
.
মানতে তার অনেক কষ্ট এই আর কি,,,তিনি শুধু এটাই বুঝেন যে স্পর্শ তার অবাধ্য হয়ে রিমকে বিয়ে করেছে
.
রিমঝিম চা বানিয়ে নিয়ে স্পর্শর কাছে গেলো,,মা বাবা দুজনেই তার রুমে চলে গেছেন ততক্ষণে,,আঁখিও নিজের রুমে,,রাত সাড়ে নয়টা বাজে এখন,,রিম চায়ের কাপটা নিয়ে সামনে তাকালো,স্পর্শ ফ্রেশ হশে বেরিয়েছে সবে
গায়ের শেরওয়ানিটা বদলে সে এখন একটা টিশার্ট আর প্যান্ট পরে নিয়েছে,রিমের থেকে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে সে রিমকে বললো চা খেয়ে রিম যেন এসব চেঞ্জ করে ফেলে,,
.
রিম ও বাধ্য মেয়ের মতন চেঞ্জ করতে চলে গেছে চা খেয়ে
স্পর্শ হাতে ফুলের পাপড়ি মুষ্টিবদ্ধ করে বসে আছে,রিম বের হলেই ওর গায়ে ছুঁড়ে মেরে দিবে সে
রিম একটা হলুদ রঙের সুতির শাড়ী পরে বাথরুম থেকে বের হলো,যেই না বাহিরে পা রাখলো সে ওমনি ফুলের পাপড়ি কতগুলো এসে ওর মুখের উপর পড়েছে
রিম অপ্রস্তুত হয়ে গেলো,তারপর চোখ খুলে সামনে তাকাতেই স্পর্শকে প্রান খুলে হাসতে দেখলো সে
স্পর্শ হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে
রিম টেবিলের উপর থেকে একটা গোলাপ নিয়ে ছিঁড়তে ছিঁড়তে স্পর্শর দিকে এগিয়ে আসছে
স্পর্শ বালিশ মুখের সামনে ধরে বলছে”এই না না না”
.
রিম ফুলের পাপড়ি গুলো বালিশের নিচ দিয়ে নিয়ে স্পর্শর গায়ে ঘষতে ঘষতে বললো”৩বছর আগে শীতের সকালে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে,সেটার শোধ তুলেছি ঐদিন,আর এটার শোধ তো আজই তুলবো”
.
আফসোস,আমি কিছুর শোধ তুলতে পারছি না
.
পারছেন না?নাকি নিতে চাচ্ছেন না
.
রিম,যেনে শুনে চ্যালেঞ্জ ধরিও কিন্তু
.
রিম বালিশ একটা নিয়ে তার উপর থেকে গোলাপের পাপড়ি সরাতে সরাতে বললো”ভয় নাকি সংশয়?কোনটা?”
.
স্পর্শ রিমের হাত থেকে বালিশটা টান মেরে নিয়ে নিলো তারপর বললো”কোনোটাই না”
.
তাহলে?
.
রিম দাঁত কেলিয়ে স্পর্শর হাত দুটো ধরে বললো”ভাবুন এমন একটা সময়ে কারেন্ট চলে যাবে,ঘুটঘুটে অন্ধকার”
.
তারপর?
.
কথা শেষ হতে না হতেই সত্যি সত্যি কারেন্ট চলে গেলো
স্পর্শ রিমের চুলের মুঠি ধরে এক টান দিয়ে বললো”অলক্ষুণে কথা না বললে হতো না?”
.
আমি কি জানি সত্যি হয়ে যাবে?
.
তারপর কি হতো সেটা বলো?
.
তারপর আপনি আমাকে ভালোবাসতে অপেক্ষা করতেন কারেন্ট আসা অবদি,হাহাহা!!
.
কথাটা বলে রিম তার গালে হুট করে একটা চুমু পেয়ে চুপ হয়ে গেছে,স্পর্শ মুখটা ওর কানের কাছে এনে বললো”স্পর্শ তার রিমকে ঘুটঘুটে অন্ধকারেও ভালোবাসতে পারে”
.
রিম হাতটা বাড়িয়ে স্পর্শর মাথার চুলগুলো এলিয়ে দিয়ে বললো”আর আমি এই আঁধারেও আপনার হাসি মাখা মুখটা বেশ দেখতে পাচ্ছি”
.
ভাইয়া??দরজা খুলে মোমবাতিটা নিয়ে যাও,,কারেন্ট আসতে দেড় ঘন্টার মতন লাগবে,জেনারেটর ও কাজ করছে না
.
আসছি
.
স্পর্শ উঠে এসে মোমবাতিটা এনে টেবিলের উপর রাখলো,রিম হাঁটু ভাজ করে মিষ্টি মাখা মুখে ওর দিকে চেয়ে আছে
.
স্পর্শ আস্তে আস্তে ওর সামনে গিয়ে বসে বললো”এভাবে তাকাইও না রিম”
.
কেন বলুন তো?গায়ে কাঁটা দেয়??
.
স্পর্শ রিমকে এক টানে কাছে নিয়ে এসে বললো”কাঁটা দেয় তবে এটা ভয়ের কাঁটা না,এটা হলো ভালোবাসার মানুষটাকে আজীবনের জন্য পেয়ে গেলাম সেটা ভাবার পর অনুভূতির কাঁটা”
.
রিম স্পর্শকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো”সব বাধা শেষ হয়ে গিয়ে আজ থেকে আমাদের নতুন জীবন শুরু তাই না?”
.
স্পর্শ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর ফোন বেজে উঠেছে,সে ফোনটা ধরতে যেতেই রিম ফোনটা ছোঁ মেরে নিয়ে বালিশের তলায় রেখে দিয়ে বললো”এখন কোনো কাজ না,শুধু আমি,,আমার দিকে মনোযোগ দিন বলছি”
.
স্পর্শ রিমের দিকে চেয়ে মুচকি হেসে পিছনে ফিরে টেবিলে থাকা কমলা রঙের মোমটা নিভিয়ে ফেললো

ভোর ৪টা ১০বাজে,,রিম কম্বলের ভেতর দিয়ে স্পর্শর একটা হাত জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে,,মুখটা আরেক দিকে ফিরানো
স্পর্শ অনেক কষ্টে তার হাতটা ছাড়িয়ে উঠে বসলো,শীতে গা কাঁপতেছে ওর,,ওর গায়ের টিশার্টটা রিমের গায়ে,,
জলদি করে গায়ে কম্বল জড়িয়ে বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করলো সে
কে কল করেছিলো তা দেখার জন্য
একটা আননউন নাম্বার,,স্পর্শ বিছানা থেকে নেমে আলমারি খুলে একটা টিশার্ট বের করে পরতে পরতে বারান্দার দিকে গেলো,তারপর সেই নাম্বারে ফোন করলো সে
প্রথমবার কেউ ধরলো না,পরেরবার ধরলো রিপন,,
.
রিপন??এটা কার নাম্বার?ফোন দিয়েছিলি কেন?
.
ভাইয়া তুমি জলদি হসপিটালে আসো,আশিকের অবস্থা অনেক ক্রিটিকাল
.
কি বলছিস এসব,আমাকে আগে জানাস নি কেন,কি হয়েছে ওর?
.
অনেকবার ফোন দিয়েছিলাম,জলদি আসো এত কিছুর সময় নেই
.
স্পর্শ পাগলের মতন ছুটে চলে গেলো হসপিটালের দিকে
হসপিটালে এসে দেখলো সত্যি সত্যি আশিকের অবস্থা অনেক খারাপ,খুব বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে ওর,ভারত ঢেকে ফেরার পথে এমনটা হয়েছে,ও প্ল্যানে আসেনি,,
রিপন কেঁদে কেঁদে বললো”অনেকবার ফোন দিয়েছিলাম তোমাকে”
.
আমি তখন!!!আগে বল এমনটা কি করে হলো?
.
জানি না,,আমাকে তো আরাফ কল করে খবর দিলো,আশিকের সাথে আরাফ ছিলো,আরাফ এখন আশিকের মা বাবাকে আনতে গেছে,আমাকে এখানে রেখে
উনারা পথ চিনেন না
.
আশিকের অবস্থা এতই খারাপ ডাক্তার কোনো আশাই দিতে পারছেন না,স্পর্শর মাথা ঘুরছে,সে কি করবে
আশিককে যে করেই হোক বাঁচাতে হবেই

রিমঝিম ঘুম থেকে উঠে পাশে স্পর্শকে না দেখে বেশ অবাক হলো,জলদি করে বিছানা থেকে নেমে সে বারান্দা আর ওয়াসরুমেও চেক করে আসলো,কিন্তু স্পর্শ কোথাও নেই,তখন পনে পাঁচটা বাজে
রিমঝিমের চিন্তা হলো এবার,ফোন খুঁজে ওকে কল করলো সে
স্পর্শ ধরছে না,কারণ সে তখন এ নেগেটিভ রক্ত কালেক্ট করতে ছোটাছুটি করছে
.
রিম ফোন রেখে ফ্রেশ হয়ে আসলো,,নামাজটা সেরে রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো কেউ বের হয়নি রুম থেকে,আসমা খালা ঠুস ঠুস করে কি যেন কাজ করছেন রান্নাঘরে
রিম উনার সাথে নাস্তা বানানোয় হাত লাগালো
.
রোকসানা বেগম নাইটি পড়ে দরজা খুলে বড় বড় চোখে স্পর্শর রুমের দিকে তাকিয়ে রইলেন,এবার তিনি খোঁচা মারবেন যে নতুন বউ দেরি করে ওঠে ঘুম থেকে,হেনতেন!!!
এখন সাড়ে পাঁচটা বাজে,,সাতটা বাজলেই তিনি এই ডায়ালগ দেবেন
এসব ভেবে রেখে যেই না তিনি রান্নাঘরের দিকে তাকালেন ওমনি রিমকে নাস্তা বানাতে দেখে ইয়া বড় শক খেয়ে পিছনে থাকা সোফায় বসে পড়লেন,বুকের ভেতর ধরফর ধরফর করেই যাচ্ছে
বুকে হাত দিয়ে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছেন তিনি এখন
নিজেই নিজেকে চিমটি কেটে পরে সবটা ক্লিয়ার করে মনে মনে ভাবলেন এই মেয়েটা এত ভালো কেন??কোথায় ভাবলাম খোঁচা দেওয়া শুরু করবো,তা আর হলো কই,কোনো কমতি রাখছে না দেখছি
.
রিম রুটি বেলতে বেলতে পিছন ফিরে বললো”মা আপনি চা খাবেন?”
.
না,নাস্তার পরে খাব
.
আচ্ছা
.
রোকসানা বেগম সোফা থেকে উঠে এক দৌড়ে নিজের রুমে ফেরত চলে গেলেন,,আসাদুজ্জামান চেয়ারে বসে পেপার পড়ছেন,রোকসানা বেগমকে আবার ফেরত আসতে দেখে বললেন”কি দেখলে??নতুন বউ নাস্তা বানায় তাই তো?”
.
তুমি কি করে জানলে?
.
আসমা এ সময়ে কচ্ছপের মতো স্পীডে পেঁপে কাটাই শেষ দেয় না আর সেসময়ে ভাজি রান্নার ঘ্রান নাকে আসলো,তার মানে নিশ্চয় কেউ না কেউ হাত লাগিয়েছে
আর তোমার মেয়ে তো এত জলদি ঘুম থেকে উঠবে না,বাকি থাকে রিম,রিমই রান্না করছে তাহলে
.
ভালো ভালো,এত ভালো আবার ভালো না
.
আসাদুজ্জামান যেন কথাটা শুনলেনই না,চুপচাপ পেপার ভাঁজ করে অপর পিঠ পড়ায় মন দিলেন তিনি

রিমঝিম নাস্তা বানানো শেষ করে এক ছুটে রুমে এসে আবারও স্পর্শকে ফোন করলো,স্পর্শ এবারর ধরে বললো সে একটু ব্যস্ত আছে,পরে কথা বলবে,আর কিছু বললো না,লাইন কেটে দিলো,রিমকে কিছু বলার সুযোগটাও দিলো না সে
রিম মন খারাপ করে বিছানায় থাকা কয়েকটা বেলিফুল কুড়িয়ে হাতে নিয়ে মুচকি হেসে দিলো
কাল রাতের কথা মনে পড়তেই অজানা এক ভালোলাগা কাজ করলো মনের ভেতরটায়,,,
এই মানুষটা এখন থেকে আমার প্রতি মোনাজাতে থাকবে
আল্লাহ যেন তার রক্ষা করে,,তাকে আমার জন্য সুরক্ষিত রাখে সবসময় এই দোয়াই করবো আমি,,আমাকে সে অনেক ভালোবাসে,আর আমিও
হয়ত তার মতন করে বাসতে পারবো না তবে যতটুকু বাসলে সে খুশি ততটাই বাসি আমি
তার সাথে প্রতিযোগিতায় জিতবো না আমি জানি,কারণ সে যে আমাকে উন্মাদের মতন ভালোবাসে,এর দাম আমি কখনও দিতে পারবো না তাকে
তবে সে যেটাতে খুশি হবে,অনেক বেশি খুশি হবে সেটাই দিব আমি তাকে
রিম মুচকি হেসে ফুলগুলো এক পাশে রেখে দিলো
ফুল বাসি হলেও এর ঘ্রাণ যেন আর ঘাড়ো হয় এখনও তাই
হাতে তাজা মেহেদির রঙ,স্বর্নের চুড়ি চিকচিক করছে,,রোকসানা বেগমের দেওয়া চুড়িগুলো
পাশেই ফুলগুলোর তাজা তাজা সুবাস,স্পর্শ সামনে থাকলে সব পরিপূর্ণ হতো এখন
কিন্তু তাকে দেখো,বিয়ের পরেরদিন ভোর হতেই উধাও
আরেকটু থাকলে কি হতো,নতুন জীবনের শুরতে অন্তত সকালে উঠে তার মুখটা দেখতে পারতাম আমি

সরি, আমরা মনে হয় উনাকে আর বাঁচাতে পারবো না,আর এটা পুলিশ কেস,,আপনারা পুলিশে খবর দিন জলদি
.
কেন?
.
এক্সিডেন্টে অবস্থা এত খারাপ হয়নি,,এক্সিডেন্টে চোট পেয়েছিলেন ঠিক তবে তার এরকম খারাপ অবস্থার কারণটা হলো গুলি,,উনাকে শুট করা হয়েছিল
.
এসব কি বলছেন আপনি?
.
রিপন স্পর্শর কাঁধে হাত রেখে বললো”জাকির চাচার কাজ না তো??”
.
কাজ না তো?এটা ওরই কাজ,,আশিকের একমাত্র শত্রু,ছাড়বো না ওরে!!!
.
রিপন পুলিশে খবর দিয়ে দিলো ততক্ষণে,,
স্পর্শ দেয়ালে একটা ঘুষি মেরে চুপ করে থাকলো,আশিককে সে বাঁচাতে চেয়েও পারছে না,কতটা জঘন্য হলে মানুষ এমনটা করতে পারে!!শত্রুতার এই ফল করলো শেষমেষ??
আমি এরে নিজের হাতে খুন করবো,,

স্পর্শ মাথায় হাত দিয়ে করিডোরে থাকা গুটিকয়েক চেয়ার গুলোর এক কোণার একটা চেয়ারে বসে আছে,,
আশিককে বাঁচানো জরুরি,,ওর দোষ আমি দেখছি না,একজন নিরপরাধ কেন এত কষ্ট পেয়ে মরবে,কেন আমি চেয়েও তাকে বাঁচাতে পারছি না
.
তুমি তো সব চেষ্টাই করছো,,কত টাকা এডভান্স করেছো সবেমাত্র দেখলাম আমি
আপন ভাইয়ের মতন দায়িত্ব পালন করছো তুমি
.
তাও তো লাভ হলো না,,ডাক্তার কি বললো শুনলি তো!
জাকির এমনটা কেন করলো??
.
ফোন বাজছে তোমার
.
স্পর্শ রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে জাকির চাচার অট্টহাসি শুনা গেলো,তিনি হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছেন
.
স্পর্শ রাগান্বিত হয়ে তার হাসি শুনছে
.
কিরে??বলতি বান্দ??হাহা!!আপন মানুষ খোয়া যাচ্ছে যাচ্ছে….
তোর তো আরও আপন মানুষ আছে তাই না?শুনলাম কাল নতুন বিয়ে করলি,আহা রে,মেয়েটা বয়সে একদম ছোট,,ওরে মারতে আমার কলিজায় লাগবে রে,তাও মেরে দেব
এটা ভাবিস না যে তোকে দেখিয়ে মারবো,তোকে আগে মারবো,তারপর তোর বউকে
আর নয়ত লটারি করবো,আগে তুই নাকি তোর বউ!
কাউকে ছাড় দিব না আমি,আমার সাথে বেইমানি করার ফল এবার ভুগবা তোমরা
.
স্পর্শ লাইনটা কেটে রিমকে কল করলো সবার আগে,রিম তখন গোলাপ কানে গুজে আয়নায় নিজেকে দেখছিলো,স্পর্শর কল আসতেই সাথে সাথে রিসিভ করলো সে
.
রিম??আমাকে বলা ছাড়া বাসা থেকে বের হবা না
.
কেন?কি হয়েছে?আর আপনি আসবেন কখন??নাস্তা করবেন না??আসুন না,ঘুম থেকে উঠার পর থেকে আপনাকে দেখিনি
.
যেটা বললাম মানবা,আমি পরে বাসায় ফিরে সবটা বুঝিয়ে বলবো তোমায়
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৫৫
Writer-Afnan Lara
.
এমন ভাবে বলছেন যেন আমাকে মারার জন্য কেউ দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে
হ্যালো??
.
ওমা!কেটে দিলো?সকাল থেকে এমন কেন করছে বুঝছি না আমি,ধুর ধুর
.
রিমঝিম যখন শুনবে তোমার ও জীবনে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে তখন সে তো সব মাথায় তুলবে
.
আমার কথা বলবো না ওকে,ওর নিরাপত্তা আসল,আমাকে ঐ জাকির চাচা হয়ে তার চাচাও কিছু করতে পারবে না
একবার শুধু হাতের নাগালে পাই,দরকার হলে ওরে মেরে আমি জেল খাটবো

স্পর্শর সাথে কথা হয়েছে তোমার??সকাল সকাল কোথায় চলে গেছে?ধরে রাখতে পারোনি?
.
মা আমি আসলে টের পাইনি উনি কখন চলে গেলেন
.
যাই হোক,মডার্ন মেয়েদের মতন আবার বিয়ের তিন চার বছর পর বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাববে না,আমার নাতিপুতি এখনই চাই
.
রিম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো,হাতের মুঠোয় পর্দার একাংশ
সোনালি রঙের পর্দাটা হাতের মুঠোয় গোল করতে করতে রিম ভাবতে থাকলো সে তো তাই ভেবে রেখেছে আগ থেকেই,,তাই মনে মনে হাসলো সে,তারপর লজ্জা পেয়ে রুমে ফেরত চলে গেলো,সকাল দশটা বাজে অথচ স্পর্শ এখনও আসছে না
আসাদুজ্জামান বেশ ব্যস্ত ছাদে বৌভাতের আয়োজন নিয়ে
আঁখি সাজগোজ করছে,যেন বৌভাতটা তারই
রোকসানা বেগম দুচোখে শশা আর সারা মুখে বেসন লাগিয়ে আরামসে শুয়ে আছেন
রিমঝিম খুব রেগে আছে স্পর্শর উপর,তাই রাগের বশে সে এখন বাসরের সব ফুল নিয়ে নিয়ে ঝুড়িতে ফেলছে
বেলি ফুল ফেলে গোলাপ ফেলতে যেতেই একটা হাত এসে ওকে আটকালো,হাতের ঘড়িটা দেখেই রিম চিনে ফেলেছে তাও মুখ ফুলিয়ে আরেক দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে রইলো সে
.
সরি
.
টেবিলে খাবার দিচ্ছি সেটা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করেন
.
কথা শেষ করে রিম হনহনিয়ে চলে গেলো রুম থেকে,স্পর্শর দিকে তাকালো ও না
স্পর্শ মাথা টিপতে টিপতে বিছানায় বসেছে,সেই ভোরবেলা থেকে হসপিটালের চেয়ারে বসে বসে আর রক্তের ব্যাগ কালেক্ট করতে দৌড়াতে দৌড়াতে আধমরা হয়ে যাওয়ার মতন অবস্থা হয়ে গেছে,বউকে কে বোঝাবে,এখন তার রাগ ভাঙ্গানো জরুরি তা নাহলে আমার সোজা কথাও তার কাছে ট্যারা মনে হবে
.
রিম ঠুস লরে প্লেট টেবিলে রেখে বললো”খাবেন না?ফ্রিজে রেখে দিতাম?”
.
আসছি!
.
স্পর্শ চেয়ার টেনে বসেছে,রিম ওকে খাবার সার্ভ করে দিয়ে চলে যাওয়া ধরতেই স্পর্শ ওর হাতটা ধরে আটকালো
.
কি চাই?
.
তোমাকে
.
ঢং করতে হবে না,হাত ছাড়ুন,আমার তোয়ালে আনা হয়নি,আমার বাসা থেকে তোয়ালে আনতে যেতে হবে,এতক্ষণ যাইনি আপনাকে খাবার দেওয়ার ছিল তাই,এখন আাপনি আসছেন,যা খুশি তাই করেন আমার কি??
আমি আমার কাজে যাচ্ছি,বাই
.
যা খুশি তাই?
.
হুম তাই
.
কথাটা শেষ করতে না করতেই রিমকে এক টানে স্পর্শ নিজের চেয়ারের সাথে লাগিয়ে ধরে বললো”খাবার শেষ না হওয়া অবদি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে,এরপর আমি তোমাকে যা করতে বলবো তা করবে”
.
হুকুম করছেন?
.
না,অধিকার ফলাচ্ছি
.
আমিও ফলাতে পারি,ভোর থেকে আপনি আপনার নতুন বউকে ছেড়ে কোথায় গিয়ে থেকেছিলেন,একটিবার খবর ও নেন নাই,তারপর আমি কল দিতে দিতে এট লাস্ট রিসিভ করে নিজেই নিজের কথা বলে উধাও হয়ে গেলেন,আমি আপনাকে কড়া কথা বলেছি তার বদলে???
চুপচাপ একা থাকতে চাচ্ছি,এমনি এমনি রাগ কমে যাবে
.
তা হচ্ছে না,রাগ দেখাও নয়ত আমার কাছে থাকো,কিন্তু যেতে পারবে না
.
এসব কি বলুন তো,আপনি এমন কেন করছেন?আর আপনি সকাল থেকে কোথায় গিয়েছিলেন সেটা পর্যন্ত বলছেন না
.
আমি আশিককে দেখতে হসপিটালে গিয়েছিলাম
.
কেন?কি হয়েছে উনার?
.
এক্সিডেন্ট হয়েছিলো,,অবস্থা খারাপ ওর,,রক্তর ব্যাগ কালেক্ট করতে গিয়েই এত লেট হলো,ওর নেগেটিভ তাই
নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপ তো আর সহজে পাওয়া যায় না
.
এখন কেমন আছেন?
.
ডাক্তার কিছুই বলতে পারছে না
.
আগে বললেই পারতেন,আমি আর এত রাগ করতাম না,টেনসন ও না
.
ভাবলাম বাসায় ফিরে সবটা জানাবো,বিয়ের পরেরদিনই বউয়ের রাগটা দেখতে হলো
.
বিয়ের পরেরদিনই বরকে উধাও দেখতে হলো
.
হইছে,সব বাদ,গরম গরম চা খাওয়াবে??প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা আমার
.
হুম
.
মা কোথায়?
.
মা তো ফেসপ্যাক লাগিয়েছেন
.
জানতাম
যার বিয়ে সে তেল মাখা মুখে ধেইধেই করে হাঁটছে আর তার শাশুড়ি কিনা ফেসিয়াল করছে
কি পরিবারের ছেলে আমি,বাহ বাহ বাহ বাহ!
.
রিম ফিক করে হেসে দিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো

স্পর্শ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে,সময়টা বিকেলবেলা
বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সময় এখন,রিম ছাদে স্টেজে বসে আছে,স্পর্শ একটা কাজের বাহানা দিয়ে চলে এসেছে এখানে
পকেটে থাকা শেষ কেনা সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে সে ওলটপালট করছে
নিজেই নিজেকে কথা দিয়েছিলো রিমকে পেয়ে গেলে সে এই নেশা ছেড়ে দেবে
এখন সে রিমকে পেয়ে গেছে,তার আর কিছুই চাই না
প্যাকেটটা ফেলে দিলো সে
তারপর মুচকি হেসে আবারও স্টেজের দিকে ফিরে গেলো
সেখানে ঘাড়ো গোলাপি রঙের একটি শাড়ী পরে রিম বসে আছে,তার পাশেই কিছু মেহমান,কেউ ওর সাথে কথা বলছে কেউ বা বাবা মায়ের সাথে
বিকেল হয়ে গেছে এখন,সূর্য ও নিচে নামছে
স্পর্শ রিমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো”আজকের দু মুঠো বিকেল আমার সাথে কাটাবে??”
.
রিম একটুও ভাবলো না,হাত বাড়িয়ে স্পর্শর হাতের উপর রাখলো,সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে স্পর্শ রিমকে নিয়ে বাসার নিচে চলে আসলো
তারপর বাইকে বসালো রিমকে,এবার বাইক চালু করে শহর থেকে কিছু দূরের একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে আনলো ওকে
পুরো পথটায় তারা বিকেল অনুভব করেছে,,এখন তারা এমন একটা জায়গায় যেখানে সরু পথ আর দুপাশে বড় বড় গাছে ঘেরা
বাইকটা একপাশে থামিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দুজনে দূরের বহুতল দালান গুলো দেখছে,,রিমের হাতে বাদামের প্যাকেট আর স্পর্শর হাতে বুট ভাজা
রিম নিজের বাদাম খেতে খেতে মাঝে মাঝে স্পর্শর হাত থেকে বুট নিয়েও মুখে পুরছে
স্পর্শ রিমের দিকে তাকিয়ে বললো”কখনও যদি মনে হয় আমি তোমার থেকে দূরে চলে গিয়েছি সেটা বিশ্বাস করবে না,আমি সবসময় তোমার পাশেই ছিলাম,আছি এবং থাকবো”
.
হঠাৎ এটা বললেন কেন?
.
এমনি,কথাটা মনে রেখো রিম
.
হু!আপনিও
.
আমি হারালে আমি আবার আগের জায়গায় ফিরে আসতে পারবো কিন্তু তুমি হারিয়ে গেলে আমি বড়ই বিপদে পড়ে যাব,সুতরাং তুমি হারাবে না
আমার হাত ধরে থাকবে
.
না
.
কি না?
.
আপনার হাত ধরবো না,আমি আমার বাচ্চার হাত ধরবো,সে আপনার হাত ধরবে
.
এখন থেকে এসব?
.
কেন?আপনার ইচ্ছে নেই?
.
দায়িত্ব বেড়ে যাবে তো তাই বললাম
.
কেন?একটা শিশুর দায়িত্ব নিতে গেলে কি হবে আপনার?
.
তুমি বুঝবে না,বাদাম খাও,আর খাবে?
.
লবন মরিচ শেষ হয়ে গেছে,আরেকটু এনে দিন,বাদাম আছে আর লাগবে না
.
ওকে বসো এখানে
.
রিমঝিম বাদাম একটা ছিলে মুখে দিয়ে বাইক থেকে নামলো রোডের উপর,,অনেকক্ষণ বাদে দূর পাল্লার বাস যায় এই রোড দিয়ে
রিমঝিম একটা বাসকে লক্ষ করে একটু কিনারায় এসে দাঁড়ালো,স্পর্শ দূর থেকে লবন মরিচ নিয়ে আসছে
রিমের কানের কাছে স্পর্শর একটা কথাই বাজতে লাগলো হঠাৎ করে
♣কখনও যদি মনে হয় আমি তোমার থেকে দূরে চলে গিয়েছি বিশ্বাস করবে না♣
.
স্পর্শ আসার আগেই রিম দৌড়ে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো
হাঁপাতে হাঁপাতে বললো”ঐ কথাটির মানে কি স্পর্শ?”
.
কিছু না,চলো বাড়ি ফিরে যাই
.
বলুন আমাকে,তাহলে কেন বললেন যদি নাই বা বুঝাতে চান
.
একদিন বুঝবে,শুধু মনে রেখো কথাটা,এখন বাইকে বসো,লেট হলে আবার মা রাগ করবে
.
রিম কিছই বুঝলো না,শুধু মাথায় একটা কথা ঢুকিয়ে নিলো আর সেটা হলো স্পর্শ ওর থেকে কিছু লুকাচ্ছে
যেটা লুকাচ্ছে সেটা অতীব মারাত্মক,, তা নাহলে কেউ হারিয়ে যাওয়ার কথা বলে না
কিন্তু সে তো আমাকে পুরো কথাটা বলতেই চাচ্ছে না
.
কি ভাবছো রিম?
.
কিছু না,বাসায় যাব,আর ভাল্লাগছে না আমার
.
হুম ভালো লাগবে কেন??মাথায় তো আমার বলা লাইনটাকে ওলটপালট করায় ব্যস্ত এখন আপনি
.
আর কি করবো?আপনি একটা কথা বললেন কিন্তু তার সংজ্ঞা দিলেন না,স্ট্রেঞ্জ না?
.
আমি কোনো স্ট্রেঞ্জ দেখছি না,আমাকে একটা আর্টিকেল বানাতে হবে,,সেটাই ভাববো এখন,তুমি আমাকে আরেকটা সংজ্ঞা খুঁজতে দিবা না
.
রিমঝিমকে নিয়ে স্পর্শ রিমদের বাসায় ঢুকলো এখন,বৌভাতের নিয়ম অনুসারে এই বাসায় থাকবে
তামিম একটা পাঞ্জাবি পরে ডালা সব পাহারা দিচ্ছে,,রিমকে দেখতে পেয়ে ওর মুখে হাসি ফুটলো,এক দৌড়ে রিমকে ঝাপটে ধরে সে বললো”আপু দেখো আমি এসব পাহারা দিচ্ছি”
.
খুব ভালো,কিন্তু এসব নেওয়ার লোক তো নেই,তাহলে তুমি শুধু শুধু এত কষ্ট করছো কেন?
.
রিনতি নিবে আমি জানি,তাই তো
.
আচ্ছা পাহারা দাও তাহলে
.
রিম??এদিকে আয়
.
মায়ের ডাকে রিম চলে গেলো রান্নাঘরের দিকে
স্পর্শ তামিমকে উপরে তুলে ঘুরিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে বললো”আবার দাদু ডাকো তো”
.
এখনতো তোমাকে দাদুর মতন লাগছে না,ভাইয়াবাবুর মতন লাগে
.
দুলাভাই ডাকবি বুঝলি?
.
ধুলাভাই
.
ধুলা না,দুলা,আবার বলো তো

রিহাব রিমঝিমের রুমটা ঠিকঠাক করছে আঁখির সাহায্যে
দুজন মিলে অনেক দুষ্টুমি করলো আজ,,,আর কদিন বাদেই তাদের ও বিয়েটা হয়ে যাবে,দুই এ দুই এ চার হয়ে যাবে
রিম স্পর্শ আর রিহাব আঁখি
.
রিমঝিম মাকে পিঠা সাজাতে হেল্প করছে
স্পর্শ তামিমের সাথে গল্প করলো কিছুক্ষণ, কিন্তু তামিম ওর কাছে বেশি থাকলো না,,রিনতিকে দেখে ঝগড়া ওরতে চলে গেছে সে
তাই স্পর্শ একটু ফ্রেশ হতে রিমঝিমের রুমে ঢুকলো
বৌভাতে রুম সাজানো হয় কিনা তা জানত না স্পর্শ,কিন্তু রিমঝিমের রুমটা ফুলে সাজানো দেখে বেশ অবাক হলো সে
সাথে মুখে হাসি ফোটালো,,,গোলাপ আর বেলি নয়
সব গাঁদা ফুল আর রজনীগন্ধা, তাও দেখতে বেশ লাগছে
রিহাব যে মন থেকে করলো সেটাই অনেক
রিম পিঠার ট্রেটা হাতে নিয়ে সোফার কাছে এসে দেখলো স্পর্শ নেই
মনে হয় ওর রুমে,তা ভেবে রিম তার রুমের দিকেই গেলো,ওমা রুমেও নেই
রিমঝিম কি আর করবে,নিচু হয়ে বিছানার উপর ট্রেটা রাখতে গেলো
কিছুক্ষনের মধ্যেই হুট করে একটা গাঁদা ফুলের মালা এসে ওর গলায় ঝুলে গেলো তার আবার মেইন পয়েন্ট স্পর্শর হাতে
সে মালা মুঠো করে ধরে এক টান দিয়ে রিমকে সামনে এনে দাঁড় করালো
.
কি?? এসব বাদ দিয়ে পিঠা খান,ঘর ভর্তি মানুষ সব
.
সব তো আমাদের জন্যই আসছে
.
তো কি আমাদের প্রেম দেখবে এখন?
.
দরজা লাগিয়ে নেবো,,দাও পিঠা,,মেয়েরা বিয়ের পর সুপার আনরোমান্টিক হয়ে যায়,তোমাকে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না
.
রিম কিছু না বলে একটা কিসের যেন ভাবনায় কপাল কুঁচকে গলা থেকে ফুলের মালাটা খুলে ফেললো তারপর চলে গেলো
স্পর্শ বিছানায় গোল হয়ে বসেছে পিঠা খাবে বলে
তামিম দরজার ফাঁক দিয়ে চোরের মতন এদিকেই চেয়ে আছে
স্পর্শ বিষয়টা টের পেয়ে তামিমকে ভেতরে ডেকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে
.
বলছি ধুলাভাই,রিনতি যদি তোমাদের এই রুমের ফুল চুরি করে?আমি এখানে সারা রাত দাঁড়িয়ে পাহারা দিই?
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৫৬
Writer-Afnan Lara
.
তামিমের বলা কথাটি শুনে স্পর্শ বোকা বনে গেলো
এরপর তামিমের উত্তর চাওয়া চেহারার ভাব দেখে হালকা কেশে সে বললো”আমি আর তোমার আপু থাকবো তো এখানে,তাহলে রিনতি কি করে চুরি করবে??”
.
তোমরা তো ঘুমাবা,ও যদি সেসময়ে এসে যায়?
.
আমি যদি দরজা লক করি তাহলে সে কি করে আসবে?
.
লজিক দেওয়া কথাটি শুনে তামিম গভীর ভাবনা চিন্তা করলো,এরপর বললো”ঠিক বলেছো,ভালো করে দরজা লাগিয়ে দিবে যাতে ও না আসতে পারে,তাহলে আমি এখন যাই”
.
তামিম চলে গেলো সোফার রুমের ডালা গুলো পাহারা দিতে
রিম আনমনে রান্নাঘরে এসে বাবার জন্য চা বানাচ্ছে
মা পাশে এসে বললেন”কিরে?তোর মুখটা ওমন করে রেখেছিস কেন?”
.
নাহ,কিছু না,,আচ্ছা ভাইয়ার বিয়েটা কবে হবে?
.
দেখি পরের মাসে ঠিকঠাক হলে ওদের ও বিয়েটা দিয়েই দিব,
.
রিমঝিম মুচকি হেসে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বাবার কাছে গেলো,বাবা তার রুমের জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছেন,
বাবার পাশে চায়ের কাপটা রেখে রিম চুপ করে বসে থাকলো সেখানেই
বাবা জানালার থেকে মুখটা ফিরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললেন”আমার রিমের মন খারাপ কেন?”
.
মন খারাপ নাহ,এমনিতেই একটু টেনসন হচ্ছে উনাকে নিয়ে
.
বাবা ব্রু কুঁচকে বললেন”কিসের টেনসন?”
.
উনি আসলে আমাকে আজ একটা কথা বললেন,কখনও তাকে কাছে না পেলে বা খুঁজে না পেলে আমি যেন তার অনুপস্থিতি বিশ্বাস না করি
.
তো এটাতে টেনসনের কি আছে?
.
বিয়ের পরেরদিন এটা কেন বললো সেটাই বুঝছি না আমি
.
তোকে স্ট্রং থাকার জন্যই হয়ত বলেছে,সব কিছুর নেগেটিভ মানে বের করবি না,দেখলি তো,বিয়ের পরেরদিন এখন মন খারাপ করে ঘুরাফিরা করছিস,তোর এখন দাঁত বের করে হাসা উচিত বোকা মেয়ে!!
.
রিম বাবার কথাই একটু ভরসা পেলো,মুচকি হেসে সে চলে আসলো স্পর্শর কাছে
স্পর্শ তখন ফোনে রিপনের সাথে কথা বলছিল,রিপন বললো অবস্থা আগের মতনই,,,আশিকের সব আত্নীয় স্বজন এসে হাজির হয়েছে এখানে
রিপন বসার জায়গাটাও পাচ্ছে না,,ওরা সবাই এখন এমন ভাব করছে যন তারাই সব,অথচ যেসময়ে আশিকের কাউকে দরকার ছিল তখন কেউ ছিল না রিপন আর স্পর্শ ছাড়া
স্পর্শ তাও একটু নিশ্চিন্ত হলো,,
রিমঝিম ড্রেসিং টেবিল থেকে চিরুনি নিয়ে চুলগুলো আঁচড়াতে আঁচড়াতে তার চুড়ির আলনার কাছে এসে দাঁড়ালো
হাতের চুড়ি গুলো খুলে আলনায় রেখে দিলো সে
.
স্পর্শ ফোন টেবিলের উপর রেখে দেওয়ার সময় বললো”তোমার গুনধর ভাই আমাকে আজ কি বললো জানো?”
.
কি?
.
সে আমাদের রুমটা সারারাত ধরে পাহারা দেবে,রিনতি নাহলে ফুল চুরি করবে
.
কবে যে ওর বুদ্ধি হবে কে জানে
.
রিম চুড়ির আয়নায় হাত বুলাচ্ছিল,স্পর্শ ঠিক ওর পিছনে দাঁড়িয়ে তার হাত দুটো বাড়িয়ে সেও চুড়িগুলো ছুঁয়ে দেখছে
রিম ওর হাতগুলোর দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছে
.
স্পর্শ এবার রিমের হাতদুটো ধরলো,রিম স্পর্শর দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে বললো”আমার না হুট করে মনে ভয় এসে গেছে,আপনি সত্যি করে বলুন না যে কি হয়েছে??”
.
রিম?
কিছুই হয়নি,তুমি আমার ঐ কথাটা বাদ দাও,আমি এমনি বলেছিলাম,এখন সেই সময় না ওসব ভাবার
এদিকে আসো
.
স্পর্শ রিমকে টেনে এনে বিছানায় বসালো তারপর নিজেও ওর পাশে বসে বললো”কাল বিয়ে হয়েছে আমাদের,আজ বৌভাত,,আমাদের উচিত জীবনটা সুন্দরভাবে কাটানো,,”
.
রিম দুষ্টু করে হাসলো তারপর একটু কাছে এসে বললো”কিভাবে কাটানো উচিত?”
.
স্পর্শ কিছুটা চমকালো রিমের হুটহাট মুড পাল্টাতে দেখে,এরপর সে বললো”শালাবাবুকে ডাকবো নাকি রুম পাহারা দিতে?”
.
দরকার নাই,হাত ধরাটাও হবে না তাহলে
.
হাহা,একটা শালাই পাইছি বটে আমি

রাত দশটা বাজে,,রিমঝিম স্পর্শর পাঞ্জাবির বোতামগুলো গুনছে এক এক করে,,আর স্পর্শ এক হাতে ওকে আগলে ধরে রেখে রিমঝিমের রুমের ওয়ালে টাঙানো একটি ছবি দেখছে,ছবিটা গ্রামীণ দৃশ্যর,,রিমঝিম এক দুই তিন চার করে গুনে গুনে স্পর্শর দিকে মাথা উঁচু করে চেয়ে বললো”আশিক ভাইয়ার কি খবর?”
.
স্পর্শ দৃশ্যটার থেকে চোখ সরিয়ে বললো”ভালোই,ওর পরিবারের সবাই ওর খুব খেয়াল রাখছে”
.
রিম বোতাম গুনতে গুনতে ট্রস করে একটা ছুটিয়েও ফেললো,ভয়ে এক লাফে উঠে বসলো সে
স্পর্শর মন ছিল আরেকদিকে,রিমের এমন হুট করে উঠে বসা দেখে সেও চমকে গেলো,সে উঠে গিয়ে বললো”কি হয়েছে?”
.
না মানে,নতুন কেনা পাঞ্জাবিটার বোতাম ছুটিয়ে ফেলেছি,সরি
.
সমস্যা নেই,,তুমিই তো ছিঁড়বা,আর কে বা আছে?
.
রিম লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রাখলো,স্পর্শর রিমের থুতনি ধরে বললো”আমাকে এত ভয় পাও কেন বলোতো?আজ পর্যন্ত কি করেছি যে এরকম বাঘের মতন ভয় পাও মাঝে মাঝে”
.
জানি না,আপনার ঐ চোখদুটো দেখলে আমার হুট করে ভয় চলে আসে
.
স্পর্শ রিমঝিমের মুখের সামনের চুলগুলোকে কানের পিছনে নিয়ে গুজে দিয়ে বললো”আমার এই জীবনটা অনেক আগোছালো,,মানে আমি কি চাই আমি জানি না,মাঝে মাঝে এমন কিছু করে ফেলি যার ফল সারা জীবন ধরে ভুগতে হয়
আমি ওরকম সমাজসেবক না তবে আমি আশিককে বাঁচাতেই জাকির চাচার দলের সাথে মারপিট করেছিলাম এজ এ গুড ফ্রেন্ড,,,ফ্রেন্ড হিসেবে যে দায়িত্ব থাকে সেটা পূরণ করতে গিয়েছিলাম
আর তাই এখন..
.
এখন কি?
.
স্পর্শ ঘোর থেকে বেরিয়ে আসলো,মনে মনে নিজেই নিজেকে বকতে থাকলো যে সে কেন রিমকে এসব বলতে যাচ্ছিলো
.
কি হলো??পুরোটা শেষ তো করুন
.
রিম আরেকটু এগিয়ে এসে আবারও শুনতে চাইলো
স্পর্শ উপায় না পেয়ে রিমকে কিস করে বসেছে
কোনোমতে বিষয়টা কাটানো দরকার ছিলো তাই সে এটাই করলো
রিম চোখ বড় তো করে রাখলো তাও সেঔ শেষে আবারও জিজ্ঞেস করলো কথাটা যেটা স্পর্শ বলতে গিয়েও বলছে না
স্প্রশ রিমের চুল টেনে ধরে বললো”আমি যেটা বলব জাস্ট ওটাই শুনবা,আর মাথায় নিবা,যেটা বলিনি সেটা জোর করে মুখ থেকে বের করাবা না,বাচ্চা মেয়ে বাচ্চার মতন থাকো”
.
তাহলে কি দরকার ছিল বলার,নাই বলতেন,শুধু শুধু আমার আগ্রহ বাড়িয়ে দেন সবকিছুতেই
.
স্পর্শ রিমকে ধরে শুইয়ে দিয়ে বললো”চুপচাপ শুয়ে থাকো”
.
রিম মুখটা ফুলিয়ে আরেকদিকে ফিরে কম্বল টেনে বললো”দেখিয়েন আবার,নিজে হারিয়ে যেতে গিয়ে আমাকেই না হারিয়ে ফেলেন”
.
কথাটা শুনে স্পর্শর মনে হলো এটাই সত্যি হতে চলেছে,তার বুকটা মূহুর্তেই কেঁপে উঠলো
সে রিমকে শোয়া থেকে আবারও টেনে তুলে ঝাঁকিয়ে বললো”খবরদার এই কথা আর কখনও বলবে না,আন্ডারস্ট্যান্ড???? ”
.
রিম বেশ ভয় পেয়ে গেছে স্পর্শর ধমকে,সাথে চমকেও গেছে,কারণ তার রাগ করে বলা কথাটা স্পর্শ এত সিরিয়াস কেন নিলো সেটাই ভাববার বিসয়
.
স্পর্শর ফোন বারবার বাজছে,ভুলে হাত লেগে ভাইব্রেশন হয়ে গিয়েছিলো,তারপরেও স্পর্শ টের পেয়ে জলদি করে রিসিভ করে নিলো রিম আর ওর কথার মাঝেই
রিপন জানালো আশিকের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে ও বারবার স্পর্শকে খুঁজছে,সে যেন জলদি আসে
.
স্পর্শ বিছানা থেকে নেমে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো”আই এম সরি রিম”
ব্যস আর কিছু বললো না সে
রিম আজও অনেক প্রশ্নের মাঝে আটকে পড়লো
স্পর্শ ওকে কিছুই জানাবে না,তার নিজেকেই সবটার উত্তর বের করতে হবে,তার আগে আশিক ভাইয়ার এমন হালের কথা তমা জানে কিনা সেটা বের করতে আমায়
.
রিম তার ফোন খুঁজে তমাকে ফোন করেছে,তমাও হসপিটালেই
তমা কান্নার জন্য কোনো কথাই বলতে পারছে না
রিম বুদ্ধি করে তমার থেকে হসপিটালের এড্রেস টা নিয়ে নিলো,তারপর একটা রিকসা ধরে সেও বেরিয়ে পড়েছে এখন

“তমাই সব প্রশ্নের জবাব আমায় দিতে পারবে”
.
রিমের খবর নেই এখন সময়টা কি চলে,এখন রাত এগারোটার বেশি বাজে,রোড আস্তে আস্তে ফাঁকা হচ্ছে,যখন একদম ফাঁকা রোডে রিকসা ঢুকলো তখন রিমের ভয় করা শুরু হলো
সে ভুলেই গিয়েছিলো এখন সে একা,ভয়ে রিকসার মাঝে বসে আছে সে,কোনো রকমে হসপিটালে পৌঁছাতে পারলেই হলো
আসার সময় নাহয় স্পর্শর সাথে আসব,একটু বকবে তাও ঠিক আছে
কিন্তু তার আগে হলো এক বিপত্তি,,ঐ যে ফাঁকা রোড,,নতুন বউ,গলায় সোনার চেইন চিকচিক করছে ক্রমশ
রিমঝিমের বেকুবি ছিল এটা,এরকম একটা সময়ে চেইনটা খুলে বের হলে হয়তবা এখন তার এই ঝামেলায় পড়তে হতো না
রিমের আবার কত সাহস,,যে হাইজ্যাকার তার চেইনটা চেয়েছে রিকসা থামিয়ে সে তার সাথেই ঝগড়া লাগিয়ে দিয়েছে
ভেবেছিলো এমনি এমনি ছুরি দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে,বেশি কিছু করবে না
কিন্তু হাইজ্যাকার যখন ওর হাতে এক ঘা মেরে দিলো
তখন ওর হুস আসলো,কান্নার জন্য কিছুই করতে পারলো না
হাইজ্যাকার ওর ফোন আর চেইন নিয়ে ভেগেছে
রিকসাআলা রোবটের মতন দাঁড়িয়ে সবটা দেখলো,সে কিছু করতে গেলে তাকে জখম হতে হতো
রিম কান্না থামিয়ে বললো”যেখানে যাচ্ছিলেন সেখানে চলুন”
.
আপা আপনার হাত থেইকা রক্ত বের হইতাছে তো
.
হুম,হসপিটালেই যাচ্ছি,ওখানে যা করার করে নেবো,এখন আমাকে হসপিটালে যেতে হবে
হসপিটালে এসেই রিম ছুটলো থার্ড ফ্লোরের দিকে
শাড়ীর আঁচল দিয়ে হাত ঢেকে রেখেছে সে
সবার আগে নজরে পড়লো তমাকেই,আশিকের পরিবারের সবার মাঝে তমাকে দেখে চিনলো সে
ওকে চিনতে পেয়ে একটা ডাক দিলো সে
স্পর্শ সেসময়ে আশিকের সাথে মিট করতে গেছে রুমে,রিমকে সে দেখেনি এখনও
তমা রিমকে দেখে কেঁদে ফেললো,ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে সে
রিম শুধু জিজ্ঞেস করলো আশিকের ঠিক কি হয়েছে
তমা জানালো সবটা,যে শুধু এক্সিডেন্ট নয়,,বরং জাকির চাচার দলের একজন সদস্যের গুলিতে ওর আজ এই অবস্থা
কথাটা শুনে রিম চোখ বড় করে ফেললো,তাহলে কি এখন!!!!
সেসব ভাবা বাদ দিয়ে রিম আবার জিজ্ঞেস করলো স্পর্শর সাথে এর কি সম্পর্ক
তমা চোখ মুছতে মুছতে জানালো”আশিককে মারার জন্য জাকির চাচা খুঁজছিলে তাকে সেটা জানতে পেরে স্পর্শ তাদের সাথে মারপিট করে এসেছে,এখন আশিক জাকিরের কাছে যেমন দোষী,স্পর্শ ও ঠিক তাই
এই কারণে স্পর্শর ও ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারেন উনি
বদলা নেওয়ার জন্য রিপনেরও কম ক্ষতি করেননি তিনি
আশিক সব জানিয়েছে তমাকে
রিম দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো
তার পিছে পিছে এত এত কিছু হয়ে গেলো,অথচ সে কিনা কিছুই জানে না?
.
তমা আশিকের মায়ের কাছে এসে বসলো আবার
রিম আশিকের কেবিনের পাশে এসে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলো
আশিকের পাশেই স্পর্শ বসে আছে,আশিকের সাথে কথা বলছে সে
আশিক শুধু করুন দৃষ্টিতে স্পর্শর মুখের দিকে চেয়ে আছে
.
যদি এরকম ঘটনা স্পর্শর সাথেও ঘটে??আমি কি করে বাঁচবো,,??
রিম মাথায় হাত দিয়ে দু পা হাঁটতেই অজ্ঞান হয়ে গেলো
সাথে সাথে তমা এসে রিমকে ধরে স্পর্শকে ডাকলো কয়েকবার
স্পর্শ রিমঝিমের নাম শুনে ভাবলো ও এখানে কেন আসবে,পরে গোলাগুলি শুনে বেরিয়ে আসলো রুম থেকে
হঠাৎ এখানে রিমকে এভাবে নিচে পড়ে থাকতে দেখে কিছুই বুঝলো না সে
রিমকে নিচ থেকে তুলতে তুলতে বললো “কি হয়েছে ওর,আর ও এখানে কি করে?”
নার্সরা স্পর্শকে বিচলিত হতে মানা করছে,কারণ একে তো হুট করে রিমকে এখানে এসময়ে দেখে স্পর্শ আগাগোড়া কিছুই বুঝছিলো না তার উপর ওকে এভাবে সেন্সলেস অবস্থায় নিচে পড়ে থাকতে দেখে আরও টেনসড হয়ে গেলো সে
আবার নার্স চোখ বড় করে বললেন”মাই গড উনার হাতের এমন অবস্থা হলো কি করে”
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে