দু মুঠো বিকেল পর্ব-৫১+৫২+৫৩

0
1967

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৫১
Writer-Afnan Lara
.
তুই সিউর??? তুই এই লোকটাকেই বিয়ে করেছিস?
.
রিম চোখটা রসগোল্লার মতন করে রেখেছে,তারপর আর সাত পাঁচ না ভেবে হ্যাঁ বলে দিলো,নির্ঘাত এটা স্পর্শররই প্ল্যান,তা নাহলে আর অন্য কেউ কেন এসে বলবে আমি তার বউ
এই লোকটাকে স্পর্শই পাঠিয়েছে,তাই হ্যাঁ বলা উচিত
.
রিহাব উঠে দাঁড়িয়ে মাকে ইশারা করে রিমের হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে গেলো ওর রুমের দিকে
তারপর চোখ রাঙিয়ে জিজ্ঞেস করলো কেন সে এই ব্যাপারটা জানালো না আগে
রিম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে,,মা মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়লেন,তারপর বললেন”করলি তো করলি এমন ছেলের সাথে করলি যে কিনা এরকম বুইড়া দেখতে?গালে সব দাঁড়ি আর দাঁড়ি”
.
রিম মনে মনে ভাবছে স্পর্শ নিজে আসলে কি হতো??অন্তত কেউ আমার টেস্ট নিয়ে কিছু বলতো না আর,ধুর ধুর!
.
এখন কি করবো আমি,বলে তো দিলাম যে এই লোকটাই আমার বর,এর পরে কি হবে??স্পর্শর এমন প্ল্যানের আগামাথা কিছুই তো বুঝছি না আমি
.
কিরে??উত্তর দিচ্ছিস না কেন?আর রিহাব তুই এমন চুপ হয়ে গেলি কি কারণে?
.
মা আমার মনে হয় রিম ভুল করছে ঠিক আছে তবে ছেলেটা ভালো,ভালো বেতন পায়,অন্তত নিসাদের চেয়েও বেটার
.
কি বলিস!চেহারা দেখেছিস?
.
রিমকে জিগাও,ও চেহারা দেখেনি?বাবাকে কি জবাব দেবো?
.
আমার ও মাথায় সেটাই ঘুরপাক খাচ্ছে যে তোর বাবাকে কি বলবো
.
একা বাসায় থেকে থেকে একটা বেয়াদব হয়েছে,,,সীমার বাহিরে চলে গেছে একেবারে,এত বড় পদক্ষেপ নিয়ে নিলো,একবার আমাদের কথা চিন্তা পর্যন্ত করলো না
.
আম্মা!!ভাইয়া আপনারা কোথায়??
.
মা আর রিহাব চমকে সেদিকে চেয়ে আছে,,এমন করে ডাকছে যেন কত জনম জনমের আত্নীয় আমাদের
.
রিহাব বের হয়ে বললো”আম্মা কে?”
.
কেন??রিমের মা তো আমার আম্মাই হলেন,আর আপনি তো আমার ভাইয়া
.
বয়সে আপনার ছোট হই আমি,যা বুঝলাম আপনাকে দেখে
.
না না,আমি একদমই আপনার বয়সেরই,,তুই তুকারিও বলতে পারি আমরা
.
মা একটু সন্দেহ চোখ করে এগিয়ে এসে বললেন”আপনার গলা এমন শোনাচ্ছে কেন?মনে হয় দম বন্ধ করে কথা বলছেন”
.
কথাটা শুনে লোকটা কেশেই ফেললো,তারপর কাশিটা থামিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো”আমার গলা এমনই আম্মা”
.
আমাকে আম্মা ডাকবেন না একদম
.
কেন আম্মা?
.
উফ!!!
.
আপনারা কি বিয়েটা মানতে চাচ্ছেন না?তা কি করে হয়??আমরা তো ধর্ম মতে বিয়ে করেছি
.
আমরা তো বলিনি যে আমরা বিয়েটা মানছি না,বিয়ে যখন হয়ে গেছে তখন আর কি করার,কথা সেটা না,কথা হলো তোমরা আমাদের না জানিয়ে বিয়ে করে ঠিক করোনি একেবারেই,,
এতজন ইমাম,হুজুরকে নিয়ে বিয়ে করেছো,ভাবা যায়????তা তোমার পরিবারে কে কে আছে,তারা জানে এসব??তারা কবে আসবে?,তোমার বাবার নাম কি??
.
সেটাই তো কথা,আমার বাবা মা এটা জানলে বিয়ে ভাঙ্গিয়ে ছাড়বে,আমি আবার বড়লোকের ছেলে তো তাই,বাবা মা মনে হয় না রিমকে পছন্দ করবে
এখন আমি চাই এখানে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়েটা করে বাবার বাসার দরজায় গিয়ে দাঁড়াবো,তখন এমনিতেই মানবে
.
সেটা কি করে হয়,তোমার জাত,পরিবার না দেখে আমরা আনুষ্ঠানিক বিয়ে করিয়ে দেবো??তাদের সাথে কথা না বলেই?
.
তাহলে আমি রিমকে নিয়ে যাচ্ছি,আপনারা আপনাদের কথায় অটল থাকেন,আইন অনুযায়ী রিম আমার ওয়াইফ,আপনারা আটকাতে পারেন না
.
তোমার পরিবারের সাথে কথা না বলে আমরা কিছুই করবো না
.
রিম,রেডি হও,আমরা যাচ্ছি
.
আরেহ এসব কি ভাই??
.
তো আপনি বলেন ভাই,আমার কি করা উচিত??
.
মা রিহাবকে টেনে নিয়ে গেলো একটু দূরে,তারপর ফিসফিস করে বললেন রিমের বাবাকে বিষয়টা জানিয়ে তার থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিত হবে
.
দুজন মিলে তাই হনহনিয়ে বাবার রুমের দিকে চলে গেলো
.
তামিম একটা ক্রিম বিসকিট হাতে নিয়ে ছাদ থেকে সবেমাত্র বাসায় ফিরেছিলো,সোফায় এমন বয়স্ক লোককে বসে থাকতে দেখে সে কিছুটা চমকালো,তারপর গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এসে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো লোকটার
.
দাদু??
.
শালা!!!
.
কি???
.
কিছু না,আমি তোমার দুলাভাই,দাদু না
.
তুমি তো নিসাদ ভাইয়া না
.
যা ভাগ এখান থেকে,মেজাজ খারাপ করবি না এখন
.
কে তুমি?
.
লোকটার থেকে তামিম আর কোনো উত্তর না পেয়ে সোজা মায়ের কাছে গেলো
রিমঝিম জানালা আর বারান্দা দিয়ে উঁকি মেরে স্পর্শকে খুঁজছে বারবার
প্ল্যান সম্পর্কে কিছুই জানালো না কেন
.
বাবা রিহাবের মুখে সব কথা শুনে চুপ করে থাকলেন তারপর বললেন ছেলেটাকে ভেতরে ডাকতে,তিনি কিছু কথা বলতে চান
.
রিহাব তাই করলো,লোকটাকে এদিকে ডেকে আনলো,লোকটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে সালাম দিলো আগে,তারপর বসলো
বাবা ওকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন,এরপর বললেন”তুমি বলতেছো তোমার পরিবারকে না জানিয়ে রিমকে অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে নিয়ে বাসার দরজায় গিয়ে দাঁড়াবে,এটা বাচ্চাদের মতন কথা বললা!!
বিয়ে শুধু তোমার আর রিমের হয়নি,দুই পরিবারের মিল থাকাটা জরুরি
যেহেতু অনুষ্ঠান হয়নি,হওয়া উচিত সেহেতু দুই পরিবারের মত থাকা ও জরুরি,,,সুতরাং তুমি তোমার পরিবারকে ফোন করে বলো আসতে,আমাদের আপত্তি নেই
.
দেখুন,,আমার পরিবার জানলে এই বিয়ে ভেঙ্গে দেবে,,,তা ছাড়া রিম আর আমি একসাথে থেকেছি অনেকদিন,এখন বিয়েটা ভেঙ্গে গেলে আপনাদের মেয়েকে কে বিয়ে করবে??বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করুন
.
অনুষ্ঠান করে বিয়ে করে নিয়ে গেলে বুঝি তারা মেনে নেবে?
.
অবশ্যই মানবে,কারন তখন সবাই জেনে যাবে,আর না করে পারবে না
.
এখন ও না করতে পারবে না,কারণ অলরেডি তোমরা বিবাহিত,তাই বলছি উনাদের ডাকো,তা নাহলে আমাকে বলো আমি কল করে উনাদের দাওয়াত দেবো
.
আমার একটা শর্ত আছে
.
কি?
.
আপনি শুধু আমার বাবার সাথে কথা বলবেন,শুধু আপনি,আর কেউ না
কথাটা লোকটি রিহাবের দিকে চেয়ে বললো
.
রিমঝিমের বাবা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ তারপর বললেন”ঠিক আছে,ডাকো তাকে”
.
লোকটা ফোন বের করে কানে ধরলো,,তারপর তাকে আসতে বলে ফোন রাখতে রাখতে সে বললো”আমার শর্ত রাখবেন না??”
.
রিহাব মুখটা ফুলিয়ে বললো”আমি আর আমার মা থাকলে কি সমস্যা? ”
.
আপনাদের এত শর্ত আমি মানছি আর আমার এই শর্ত আপনারা মানতে পারছেন না??ঠিক আছে,আমি রিমকে নিয়ে চলে যাচ্ছি
.
বাবা তুমি এক কাজ করো তার সাথে আমার ফোনেই কথা বলিয়ে দাও
.
না বাবা,,তোমরা যা বলার সামনা সামনি বলবে,ঠিক আছে,আমি আর মা থাকবো না
চলো মা কিছু বাজার কাল থেকে গিয়েছিলো,, আমি এখন যাব সেই বাজার করতে,তুমিও চলো আমার সাথে
.
মা মাথাটা নাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে রিমঝিমকে ডেকে বললেন বাবার কাছে থাকতে,তারপর চলে গেলেন তারা,বেশি দূরে না,বাসার কাছেই তরকারির হাট টা
.
তামিম বসে বসে টিভি দেখছে,কলিংবেল বেজে উঠলো মিনিট দশেক বাদে
দরজার ওপারে স্পর্শর বাবা দাঁড়িয়ে আছেন,তামিম দরজা খুলে দিতেই তিনি সোজা রিমের বাবার রুমের দিকে চলে গেলেন
.
রিমঝিমের বাবা স্পর্শের বাবাকে দেখে চমকে গেলেন,তারপর বললেন”আরে বেয়াই যে,আসুন আসুন,কি মনে করে?”
.
আসাদুজ্জামান চেয়ারে বসতে বসতে বললেন”আপনিই তো ডাকলেন”
.
মানে?
.
আমি আপনার মেয়ের শশুর তো,চিনলেন না?
.
কিছুই বুঝছি না আমি
.
মানেটা সহজ,,,আমার গুনধর ছেলে ইসতিয়াক স্পর্শই আপনার মেয়েকে বিয়ে করেছে তাও আমাদের না জানিয়ে
আচ্ছা মা রিম,একটু চা খাওয়াবে??
.
রিম মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো
.
তাহলে এটা কে?
.
হেহে!!এটাই স্পর্শ
.
কিহহ?তাহলে এমন বেশ কেন?
.
স্পর্শ দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বললো”রিহাব ভাইয়া জানলে এই জনমে আর রিমকে আনুষ্ঠানিক বিয়ে করা হতো না তাহলে”
.
হাহাহাহাহা,এবার বুঝলাম সবটা,,,আমার ছেলেকে ভয় পাও বলে এত কিছু?
.
বেয়াই আগে বলো আমার ছেলে তোমার মেয়ে জামাই হিসেবে মানছো কিনা?কথা কিন্তু পাকা করতেই এলাম আমি
.
স্পর্শ ভালো ছেলে,আগে রিমকে জ্বালাতো বলে আমি একটু অপছন্দ করতাম ওকে,কিন্তু চাকরি করে সে অনেকটাই বদলে গেছে,রিম যদি ওকে পছন্দ করে তাহলে আমার আর কোনো আপত্তি নেই,আর ওরা তো বিয়েও করেই ফেলেছে
.
সেটাই,,,বিয়ে করে ফেলেছে বলে আমাদের মত কোনো ফ্যাক্ট না এখন
.
তো রিহাব আর রিমের মায়ের তো এটা জানা জরুরি,আর এখন না জানালেও বিয়েতে তো আপনাদের দেখেই চিনবে,কথা তো চাপা রাখার মতন না
.
সেটাই ভাবছি,স্পর্শ??নেক্সট কি করবি?
.
আমার মনে হয় না রিহাব ভাইয়া আমাকে মেনে নেবেন,,তারা জানবেন এটা ঠিক,মাকে আগেই জানিয়ে দেবেন,তবে রিহাব ভাইয়া অনুষ্ঠান শেষে জানবেন,তার আগে না
.
সেটা কি ভাবে সম্ভব?
.
আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি কি করে কি করতে হবে,শুধু তার আগে একটা কথা বলতে চাই,, আমি আর রিম দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসি,,বিয়ে পর্যন্ত করে ফেলেছি আমরা,আমাদের আলাদা হতে দেবেন না,রিহাব ভাইয়া যখন শুনবে আমার কথা তিনি কিছুতেই বিয়েটাকে আনুষ্ঠানিক রুপ পর্যন্ত এগোতে দিবেন না, তা জানি আমি,,হ্যাঁ আমি তার গায়ে হাত তুলে ভুল করেছিলাম তার জন্য মাফ চাইবো কিন্তু এটা সে সময় না
এখন কিছু হলেই হিতের বিপরীত হয়ে যাবে
বিয়েটা পরিবারগত হোক,,আমি আর রিম মিলে তাকে বুঝিয়ে দেবো সব,,তিনি ঠিক বুঝবেন,,
.
বেয়াই আমার মনে হয় স্পর্শ ঠিক বলছে,,
.
হুমমম,কি জানি কি হয়,তবে আমি ওকে জানাবো না,কিন্তু রিমের মাকে জানাবো,,বাকিটা তোমরা দেখো কি করবা
.
স্পর্শ কথা শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে চলে যাওয়ার আগেই ওর চোখ গেলো রান্নাঘরের দিকে,রিম চা বানাচ্ছে সেখানে,বাবা এখনও তার বেয়াইর সাথে কথা বলায় বিজি
স্পর্শ এই সুযোগে চুপিচুপি রুমে ঢুকে রিমের কানের কাছে একটা চুমু দিয়ে এক দৌড় মেরে দিলো
রিম তো ঝটকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,স্পর্শ যাকে পাঠিয়েছে সে আমাকে টাচ করলো?এত বড় সাহস!!
বেয়াদব কোথাকার!!ছিঃ ছিঃ এত খারাপ!!
.
রিম ভালোমতন কানের কাছে ডলতে ডলতে চা নিয়ে বাবাকে দিয়ে এসে এক দৌড়ে রুমে গিয়ে জানালা খুলে স্পর্শকে ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে,কিন্তু তার কোনো খবর নেই
প্রচণ্ড রকম বিরক্তি আসছে এবার,কোথায় গেলো লোকটা??সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে আমার
.
রিহাব বাজার করে মাকে নিয়ে আসতে আসতে বললো নিসাদকে সে মানা করে দিয়েছে,,
এদিকে আঁখির বাবাকে ওদের বাসা থেকে বের হতে দেখে রিহাব কৌতুহল নিয়ে একটু এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো উনি এসময়ে এখানে কেন,,কোনো কাজ আছে নাকি
.
ঐ আসলে রিহাব,তোমার আর আঁখির বিয়ের বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলতে আসলাম
.
ওহহ,আসুন না,চলে যাচ্ছেন কেন?
.
তার আগেই একটা কাজ পড়ে গেছে,আগে সেটা করে আসি
.
আচ্ছা
.
মা আর রিহাব বাবার রুমে আসলো সবার আগে
.
ওমা রুম ফাঁকা,লোকটা নেই,লোকটার বাবা আসার কথা তিনিও নেই,রিমের বাবা চা খাচ্ছে ফু দিয়ে দিয়ে
.
কি হলো??উনারা কোথায় বাবা?
.
কথা বলা শেষে চলে গেছেন
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৫২
Writer-Afnan Lara
.
চলে গেলো??তা তুমি ছেলের বাবার সাথে কথা বললে?উনার কি মত?
.
উনি তো রাজি,বাট নিজের বউকে একটু ভয় পান বলে তিনিও তার ছেলের পক্ষে কথা বললেন
.
বাবা মানেটা বুঝলাম না
.
মানে সহজ,বিয়েতে ছেলের পরিবারের কেউ থাকবে না
.
সেটা কি করে হয়,তাহলে আমরা অনুষ্ঠানটা কাদের নিয়ে করবো?
.
রিহাব তোকে এত ভাবতে হবে না,তুই গিয়ে ডেকোরেশনের লোকদের সাথে কথা বল,বিয়ে ছাদে হবে,,জলদি করে সব করতে হবে,কাল শুক্রবার, কাল বিয়েটা সহজভাবে হয়ে যাবে
.
রিহাব আর কিছু বললো না,চুপচাপ চলে গেলো রুম থেকে
.
আমার মনে হচ্ছে তুমি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো
.
শুনে তাহলো,,,ছেলেটা হচ্ছে স্পর্শ,ছদ্দবেশে এসেছিলো,,রিম আর স্পর্শ বিয়ে করেছে,আসাদুজ্জামান ভাইয়ের সাথে কথা বললাম আমি
.
কি বলো এসব,আমি তো একদমই চিনতে পারিনি,,
.
হুম আমিও তো,পরে ওরা বলায় তারপর বিশ্বাস হলো,যাই হোক রিহাব যেন এসব না জানে
যেমনটা চলছে তেমনটা চলুক,,রিহাব বিয়ের পরে সবটা জানবে,তার আগে জানলে ও বিয়েটা হতে দিবে না
স্পর্শকে রিম ভালোবাসে,আর স্পর্শ তো সেই কবে থেকেই ওর জন্য পাগল,আর তাছাড়া ওরা বিয়েও করে ফেলেছে
সব সমস্যা এখন রিহাবকে নিয়ে,রিহাব জানলে বিয়েটার আনুষ্ঠানিক রুপ কিছুতেই হতে দেবে না
.
হুম তা তো জানি,রিহাব তো স্পর্শকে একদমই পছন্দ করে না
আচ্ছা দেখো কি করে কি করবা,আমার তো মাথায় কিছুই ঢুকছে না
.
মা আসবো?
.
আয়,ডেকোরেশনের লোকদের সাথে কথা বলেছিস?
.
হ্যাঁ,,আচ্ছা বাবা আমাকে এটা বোঝাও,ছেলের পক্ষের কি কেউই আসবে না?
.
নাহ!ছেলের অনুরোধ,আর চিন্তা করিস না,ছেলের বাবা নিজে কথা দিয়েছেন আমাকে

কিহহহহহ!!!কি বললা তুমি???না এ হতে পারে না
নায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া!
.
এরকম হিন্দি সিরিয়ালের দজ্জাল বেটিদের মতন রিয়েক্ট করছো কেন?
.
তো কি করবো??স্পর্শ রিমকে বিয়ে করেছে,মানে আমার জনমের শত্রু রিমকে??
.
করে তো ফেলেছে,এখন আর কি করার,আর তুমি নিজেও তো ওর জন্য ভালো কেনো পাত্রী খুঁজেও এতদিন পাওনি,তার চেয়ে রিমই ভালো
.
না ভালো না,ঐ মেয়েকে আমি পছন্দ করি না
.
ঐদিন আঁখি বললো তুমি রিমঝিমের প্রশংসা করছিলে
.
শুনেন স্পর্শর বাবা,,ওটা আবেগে বলেছিলাম,তাই বলে এই না যে….
.
ব্যস থামো তুমি,বিয়ে ওরা করে ফেলেছে,আমাদের আর কিছুই করার নাই
.
সেটা নাহয় বুঝলাম,কিন্তু আমাদের ছাড়া স্পর্শ একা একা বিয়ে করবে কাল তা আমি কিছুতেই হতে দিতে পারি না
.
তুমি চাও রিহাব সবটা জানুক?ও জানলে কি হবে সে জানো তো??
.
জানি,কিন্তু তোমরা এটা বুঝার চেষ্টা করছো না কেন যে আমার একটামাত্র ছেলে,,আমি তার বিয়ে দেখবো না?
.
কে বলেছে দেখবা না,,রিহাব আমাদের সবাইকে দাওয়াত দিবে,তখন মেহমান হয়ে গিয়ে দেখে আসবে নাহয়
.
ঐ মেয়ে আমার বাড়িতে আসবে,আমি এত রাগ কই রাখবো,আলমারিও তো খালি নেই
.
গয়না রেডি করো,নতুন বউয়ের গলা খালি দেখে আসলাম,,আমার পুত্রবধুকে রানীর বেশে রাখবে তুমি
.
রিহাব জানলে গুলি করে দিবে আমি সিউর
.
পরেরটা পরে দেখা যাবে,তুমি আমাকে আর টেনসন দিও না তো
.
স্পর্শ কোথায়?
.
কি জানি,ঐ রকম বুড়ো বেশ নিয়ে আবার কোথায় গেলো সেটাই বুঝছি না আমি

রিমঝিম চুপিচুপি বারান্দায় এসে ফিসফিস করে স্পর্শকে ডাকছে
সেই কখন থেকে উনাকে দেখিনি আমি,ফোনটাও ধরছে না,প্ল্যানের আগামাথা কিছুই বুঝিনি
তার উপর ঐ লোকটা আমাকে টাচ করেছে,এত এত কথা পেটে থেকে এবার ব্লাস্ট হয়ে যাবে,আর মেইন মাস্টারমাইন্ড যিনি তিনিই উধাও,ইচ্ছে করছে ভেজা কাঠ দিয়ে মেরে ভূত বানিয়ে দিই,উফ!!!আমার ধৈর্যের আর কত পরীক্ষা নেবেন উনি??এবার না জানি ঐ বুড়ো লোকটাকেই বিয়ে করতে হয় আমায়,ও খোদা,কি হবে আমার
.
স্পর্শ ছাদে গিয়ে বসের সাথে কাজ নিয়ে কথা বলছে,বস একটা ফাইলের ১৪নং পৃষ্ঠার ডিটেইলস বুঝছেন না বলে ওকে কল করেছে,কারন ফাইলটা ও রেডি করেছে
এদিকে রিমকে ও কিছুই জানানো হয়নি
.
বসের সাথে সব কথা শেষ করে স্পর্শ বাসায় ফিরে নিজের রুমের দিকেই যাচ্ছিলো তার আগেই মা হাতে রুটি ছেঁকার খুন্তি নিয়ে দাঁড়ালেন ওর সামনে
চোখ বড় বড় করে রাগে ফুঁসতেছেন তিনি
স্পর্শ বোকা ছেলের মতন চেয়ে আছে মায়ের দিকে
.
কককককি মা?
.
কককককিছু না,রুটি বানিয়েছি,গরম গরম খাবি,খেতে বস,অন্য কোনে কাজে গেলে খুন্তি তোর মুখে ঢুকিয়ে দেবো,বেয়াদব!
.
স্পর্শ ঢোক গিলে গিয়ে চেয়ারে বসলো,মা রুটি ডিম আর তরকারি দিতে দিতে বললেন”সেই ঐ মেয়েটাকেই বিয়ে করে নিলো,তাও আমাদের কাউকে না জানিয়ে,কি মধু পাইছে কে জানে,,,নিশ্চয় জাদুটোনা করিয়েছে তা নাহলে আমার ওমন সোনার টুকরো ছেলেকে কি করে বিয়ে পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলো,হায় হায় রে,আমার জীবন শেষ
.
বিয়ে করলাম আমি,জীবন শেষ হলো তোমার?
.
তা নয়ত কি??দেখিস বিয়ের পর তোর বউয়ের জন্য তুই আমার মুখে মুখে তর্ক করবি
.
মা এখন থেকে এসব ভাবছো,রিম তোমাকে অনেক স্নেহ করে,,তোমাকে মাথায় করে রাখবে,,আমি জানি
.
দেখিস কি করে আমার সাথে,অবশ্য ও কিছু করার আগেই ওর ভাই কোন মহাযুদ্ধ করে সেটা ভাব তুই আগে
.
স্পর্শ চুপ চাপ খাওয়া শেষ করে নিয়ে এক দৌড়ে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে ফেললো,তারপর বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে গায়ের শার্টটা খুলে আরেকটা শাীট নিলো পরার জন্য,রিমকে সবটা জানাতে হবে
হুট করে কোথা থেকে রিম এগিয়ে এসে গলা টিপে ধরলো স্পর্শর
স্পর্শ চোখ বড় করে চুপ করে গেলো
রিম ভ্রু কুঁচকে স্পর্শর পায়ে ভর দিয়ে উঁচু হলো একটু তারপর বললো”সকাল থেকে কি মইরা গেসিলেন?”
.
না তো
.
রিম নামের কোনো মেয়ে নাই আপনার জীবনে??
.
ছিল
.
ছিল??মেরে তক্তা বানিয়ে দিব তোমাকে,অসভ্য ইতর,এত বড় প্ল্যান করলেন আর আমাকে জানালেন না,আর কোথা থেকে একটা বুড়ো লোক এনেছেন আমার বর সাজিয়ে,,জানেন উনি আমার কানের কাছে চুমু দিয়ে ভেগে গেছে,ফের যদি এক্টিংয়ের জন্য ঐ লোকটাকে ডাকেন তো আপনাকে মেরে পুঁতে দেবো
.
আচ্ছা,গলা ছাড়ো,বিয়ের আগেই মেরে ফেলবা নাকি??
.
আচ্ছা ছাড়লাম,কিন্তু ভাইয়া কিছু না জানলে ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে বিয়ে করবেন কি করে??
.
স্পর্শ ভাবলো রিমকে সে জানাবে না ছদ্দবেশী লোকটা সে নিজেই,একটু মজা করা যাক
.
কি হলো কিছু বলছেন না কেন?
.
সেটা কাল দেখে নিও,এখন শুধু রোমান্স হবে
.
স্পর্শ রিমের দিকে এগিয়ে গেলো,,রিম দুম করে বিছানায় বসে পড়ে বললো”সারাদিনে আমার একটা খবর নেয় নাই এখন আসছে ঢং করতে,আচ্ছা আপনার মা রাজি তো?”
.
মা রাজি না হয়ে না হয়ে অবশেষে হলেন
.
সত্যি!!!
.
আস্তে,,,আগে বিয়েটা হোক তার পর খুশি হইও
.
রিম স্পর্শকে জড়িয়ে ধরলো,,মুখটা ওর বুকে লুকিয়ে চুপ করে থাকলো সে
.
এই রিমকেই এতটাদিন ধরে চেয়েছিলাম,অবশেষে পেলাম,,
.
আজ রাতে থাকি এখানে?
.
জি না,একেবারে কাল বাসরে দেখা হবে,তার আগে না
.
কি হয়েছে আমি আজ রাত এখানে থাকলে??ডিস্টার্ব করবো না তো,দুটো চুমু খাব তারপর ঘুম
.
দুটো চুমু ও খাওয়ার দরকার নাই,যাও এখন,শেষ মূহুর্তে কোনো গন্ডগোল চাই না আমি
.
হুহ,যাচ্ছি যাচ্ছি

রিমঝিমকে মা একটা ডালা ধরিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বললেন “রোকসানা বেগম পাঠিয়েছে,রিহাব জানে তোর বরের পরিবার থেকে এসেছে,কিন্তু কে দিয়েছে তা সে জানে না,একটা অচেনা ছেলে এসে দিয়ে গেলো”
.
রিমঝিম ঢালাটায় হাত বুলিয়ে মুচকি হাসলো,ওর হাসি দেখে মা ও হাসলেন,মেয়েটাকে বাসার পাশেই বিয়ে দিয়ে তিনি মহা খুশি,যখন ইচ্ছা তখন দেখতে পারবেন নিজের মেয়েকে,কথাও বলতে পারবেন এর চেয়ে মজার আর কি হতে পারে
.
রিমঝিম একের পর এক ডালা পেয়ে তো অবাক,তার গোটা রুমটা ভর্তি হয়ে গেছে,,
রিহাব ছাদে ডেকোরেশনের সব দিক সামলাচ্ছে,তাই ডালা কোথা থেকে আসছে তা ওর ধারনার বাহিরে
স্পর্শ আঁখিকে কড়া করে জানিয়ে দিয়েছে বিষয়টা গোপন রাখতে
তাই আঁখিও রিহাবকে কিছু জানায়নি
.
স্পর্শ অফিসে গেছে এসময়ে,,বস বলেছে ছুটি নিতে হলে দরখাস্ত জমা দিতে হবে সেখানে এসে
রিমঝিম ডালা সব দেখতে দেখতে বিছানার এক কোণায় ঘুমিয়ে পড়েছিলো,,আর জাগেনি,আজ অনেক কাজ হয়ে গেছে
কাল দিনটা অনেক মূল্যবান,এনার্জিটিক থাকতে হবে,তাই জলদি করেই ঘুমিয়েছে সে
আর ওদিকে স্পর্শর ঘুম নেই,সে বাসায় ফিরে মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে আছে,রোকসানা বেগম রাতের ১১টায় ওর শেরওয়ানির মাপ নিচ্ছেন
এক রাতেই বানিয়ে নিতে হবে তাই,মাফ ঠিক থাকা জরুরি,রেডিমেট হলে হবে না
স্পর্শ আবার চওড়া দেহের,,তাই উনি সবদিক খেয়াল রেখেই মাপ নিয়ে টেইলারকে কল করে অর্ডার দিয়ে দিলেন,,কাল দুপুরের আগেই বাসায় পৌঁছে যাবে
স্পর্শ নিজের রুমে এসে বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো,আজ সারাদিন এত এত কাজ করেছে সে,হাত পা আর চলছিল না,ফেনে যেমন কথা বলেছে,সামানা সামনি তার চেয়ে বেশি বলেছে,আর রিহাবের সামনে ২০০টা মিথ্যা কথা বলতে যেয়ে হাফ এনার্জি আমার ওখানেই শেষ
সব এনার্জি তুলে রাখতে হবে,কাল বিয়ের পর বিরাট বড় ধামাকা হবে

পরেরদিন ভোর থেকে হইচই লেগে আছে,তামিম একটা পুরান শলার ঝাড়ু নিয়ে ছাদে তদারকি করছে
ঝার্ড়ু দিয়ে সে মোটেও ঝাড়ু দিচ্ছে না,তার আপুর বিয়ের ফুল যাতে কেউ চুরি না করে সেটার পাহারাদার হিসেবে কাজ করছে সে,কেউ কাজ দেয় নাই তবে সে রিনতিকে একটা গোলাপ চুরি করতে দেখে এখন পাহারা দিয়ে যাচ্ছে,কাউকে নিতে দিবে না
.
রিমকে মা খাইয়ে দিচ্ছেন,কারন রিম খেতে না করে দিয়েছিলো,তার নাকি খিধে নেই
ওদিকে স্পর্শ তার সাজগোজের সব নিয়ে একটা বয়েজ পার্লারে এসে বুড়ো লোক সাজছে
ভয়েজ পার্লারে এসে বুড়ো লোক সাজা দেখে বাকিরা অবাক হয়ে স্পর্শকে দেখে যাচ্ছে
দুপুর ২টার সময় বিয়ে হবে,,রিমকে ঘিরে ওর ফুফু,ফুফাতো বোন,খালা মামি সবাই আছেন,ওকে ঠিক তেমন করে সাজানো হয়েছে যেমনটা স্পর্শ চেয়েছিলো
স্পর্শ রিমকে একদিন বলেছিলো-বিয়ের দিন তোমার পরনে থাকবে লাল একটি বেনারসি,দু হাতে থাকবে ২ডজন লাল চুড়ি,কপালে তোমার ঐ চিকন ব্রুর মাঝকানটায় থাকবে একটি লাল টিপ,টিপটায় আবার স্টোন আটকানো থাকবে,কানে থাকবে সোনার কানের দুল,গলায় হালকা পাতলা সোনার একটা নেকলেস
পায়ে লাল আলতা,সোনার একটি পায়েল,মোটকথা সেদিন তুমি লালে লাল সাজবা
আর তাই সাজলো রিম,,স্পর্শ পাগল হয়ে যাবে আজ
না জানি কেমন সাজছেন উনি,,
.
স্পর্শ সোফার রুমে এসে বসেছে,ওর পাশেই ওর বাবা,,একটু দূরে মা
ওর পরিবারের সবাই আছে,অথচ এই প্যাটার্নটা রিহাব বুঝে নাই
বিয়েটা আজ রেজিস্টার করে হচ্ছে
রিহাব ডেকোরেশন দেখতে গেছে
কাগজে স্পর্শ নিজের নাম লিখলো,নামটা রিহাব যাতে না দেখে তাই ওকে বাবা মা ইচ্ছে করেই ছাদের ডেকোরেশন দেখতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন
বেশ শান্তিমতন বিয়েটা সম্পূর্ন হলো
রিমকে ছেড়ে সবাই এবার এক এক করে খেতে চলে যাচ্ছে ছাদের দিকে
রিমের কাছে এখন শুধু ওর ফুফাতো বোন পুতুল,আর মিশকা,,,বাকি সবাই চলে গেছে
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৫৩
Writer-Afnan Lara
.
রিমঝিম বিছানা থেকে নেমে পা টিপে টিপে রুম থেকে বের হলো তার বরকে কেমন লাগছে তা দেখার জন্য
পর্দাটা সরিয়ে উঁকি দিলো সে
সোফার উপর স্পর্শর বাবা বসে পান খাচ্ছেন,পাশেই রোকসানা বেগম চোখ বড় করে উনাকে কিসব বলছেন
সবার কোণায় বরের পোশাকে সেই বুড়ো লোকটাকে বসে থাকতে দেখে রিমের চোখ কপালে উঠে গেছে
দৌড়ে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে সে বললো”স্পর্শ কোথায়?”
.
তামিম রোস্ট একটা খাচ্ছে হেঁটে হেঁটে,রিমকে দেখে এগিয়ে এসে বললো”এই যে এই দাদুটাই তো বর”
.
কথাটা শুনে রিম মাথা ঘুরে পড়ে গেলো নিচে,যখন সে চোখ খুললো তখন দেখলো সে তার রুমে শুয়ে আছে,পুরো রুম ফাঁকা,ওপাশের রুম থেকে গোলাগুলি শোনা যায়
কি হলো?এরকম চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে কেন?
.
রিম দরজার কাছে এসে দাঁড়াতেই শুনতে পেলো স্পর্শ আর রিহাবের ঝগড়াজাটির আওয়াজ
সেই লেভেলে ঝগড়া হচ্ছে,রিমের মনে পড়লো তার বরের বেশে সেই বুড়ো লোকটা ছিল,আর তামিম বললো ওটাই নাকি বর
তাহলে আমি যে সই করলাম ওখানে তো স্পর্শর নাম ছিল
সে যাই হোক,এই ঝগড়া আমাকেই থামাতে হবে
রিম সাত পাঁচ আর না ভেবে রুম থেকে বের হতেই মুখোমুখি হলো রিহাবের
রিহাব এই শীতের মাঝেও ঘামছে,সামনেই স্পর্শ দাঁড়িয়ে আছ,ওর চোখ মুখ লাল হয়ে আছে
.
রিম???তুই এই ছেলেটাকে বিয়ে করেছিস?
.
রিম চুপ করে থেকে একটা নিশ্বাস ফেলে বললো”হুম”
.
কেন রিম??এই ছেলেটা আমার গায়ে হাত তুলেছিল ভুলে গিয়েছিলি?
.
না ভুলিনি,ভাইয়া তুমি উনাকে মাফ করে দাও
.
কখনও না,আমাকে আর ভাইয়া ডাকবি না,চলে যা যেখানে যাওয়ার
.
ভাইয়া শুনো আমার কথা…
.
রিহাব আরেক দিকে ফিরে চলে গেলো,,সবাই মূর্তির মতন জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছে,স্পর্শ রিমকে ইশারা করলো কান্না থামাতে
তারপর সেও রিহাবের পিছু পিছু গেলো
রিহাব নিজের রুমের পড়ার টেবিলটার কাছে বসে আছে
যে ছেলেকে সে পছন্দ করে না সেই কিনা আমার বোনকে কেড়ে নিলো,,যা থেকে পালাচ্ছিলাম তা আমার নাকের ডগায় হয়ে গেলো,আমি টেরই পেলাম না,স্পর্শ নিজ থেকে না বললে হয়ত আজ টেরই পেতাম না আর
.
রিহাব?
.
রিহাব মুখ তুলে দরজার কাছে স্পর্শকে দেখে অগ্নি দৃষ্টিতে এক নজর চেয়ে মুখটা আরেকদিকে ফিরিয়ে নিলো
.
তুমি তো তোমার বোনকে অনেক ভালোবাসো তাই না?
তোমার বোন যদি আমার কাছে সুখী হয় তখন তোমার আপত্তি আসছে কেন?
.
যে ছেলে আমার গায়ে হাত তুলতে পারে সে আমার বোনের গায়েও!
.
তুমি আর রিমঝিম সেম না,সম্পর্কে তুমি আমার ভাই,আর রিম আমার স্ত্রী,ওর গায়ে হাত কেন তুলবো আমি?যাকে এতটা বছর ধরে পাগলের মতন ভালোবেসে শেষে বিয়ে করেছি তার গায়ে আঁচ ও তো আমি আসতে দেবো না কোনোদিনও
একটিবার ভেবেছো?আমার মা যিনি রিমকে একটুও পছন্দ করেন না সেই তিনি আজ ডালা সমেত রিমকে নিয়ে যেতে এসেছেন,মা মেনে নিতে পারলে তুমি কেন পারছো না রিহাব??আমি মাফ চেয়েছি তোমার কাছে,পারলে মাফ করে দিও নাহলে যাচ্ছি আমি রিমকে নিয়ে
.
স্পর্শ চলে গেলো,,রিমঝিম নিজের রুমে এসে টেনসন করে যাচ্ছে অনবরত,, এদিকে রোকসানা বেগম ঢুকলেন ওর রুমে
পরনে হালকা মিষ্টি কালারের একটি শাড়ী,সাথে হিজাব,তিনি চুপচাপ রিমের কাছে এসে বললেন”চলো!তোমার যাওয়ার সময় হয়েছে”
.
রিম মুখ তুলে একবার তাকালো উনার দিকে তারপর বিছানা থেকে নেমে চললো উনার সাথে,,মা বাবা ওকে ধরে কাঁদলেন,ওরকম কান্না কারোরই আসেনি,কারণ মেয়ে পাশের বাসায় যাচ্ছে,রিমের চোখ স্পর্শকে খুঁজছে বারবার
কোথাও নেই,,রোকসানা বেগম,আঁখি আর আসাদুজ্জামান মিলে রিমকে নিয়ে তাদের বাসায় ঢুকলেন,,দরজা থেকে স্পর্শর রুম পর্যন্ত গাঁদা ফুল আর গোলাপের পাপড়ির পথ বানানো,,
রিম ফুলে পা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আঁখিকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো “রিহাব ভাইয়া কি করছে”
আঁখি জানালো “চুপচাপ টেবিলের কাছে বসা অবস্থায় দেখেছে ওকে”
.
রিম মন খারাপ করে স্পর্শর রুমে ঢুকলো এবার
রুমটা বেলি আর গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো,,রিমঝিম বিছানায় বসতেই আঁখি চোখ মেরে দিয়ে চলে গেলো,,আত্নীয় স্বজন কম এসেছিলো,,আর রিমের বাড়ির মেহমান বেশি ছিলো,,কিছু স্পর্শদের বাসার ও ছিল,রিহাব টের পায়নি
.
রিম বিছানায় হাত রেখে গোলাপের পাপড়ি গুলো ছুঁয়ে দেখছে,,দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সে মুচকি হেসে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো
স্পর্শ দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দরজা লাগালো,তারপর রিমের কাছে এসে দাঁড়ালো সে
রিম মাথা উঁচু করে যখনই তাকালো দেখলো সেই বুড়ো লোকটাকে
ভয় পেয়ে ছিটকে দূরে চলে গেলো সে
তারপর চোখ বড় করে বললো”সসসসস্পর্শ কোথায়?”আপনি এখানে কেন?”
.
কন্যা!!! আজ তোমার আর আমারই তো বিয়ে হয়েছিলো,তখন তামিমের কথা শুনে অজ্ঞান হয়েছিলে কেন?
.
রিম চোখ বড় করে বিরাট বিরাট শ্বাস নিচ্ছে,তার নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না,,স্পর্শর জায়গায় এই লোকটা আসলো কোন সাহসে??
.
স্পর্শ এগিয়ে যেতেই রিম দৌড়ে রুমের কোণায় চলে গিয়ে বললো”খবরদার কাছে আসবেন না”
.
রিম এবার কোনো উপায় না পেয়ে স্পর্শর নাম ধরে এক চিৎকার দিতে যাবে তার আগেই স্পর্শ ওর মুখ চেপে ধরে নরমাল ভয়েজে বললো”আমি”
.
রিম বোকার মতন চেয়ে থাকলো এবার
স্পর্শ রিমের মুখ থেকে হাত সরিয়ে গালের দাড়ি গুলো খুলে ফেলে দিলো
রিম দাঁত কেলিয়ে বললো”তাহলে সেই বুড়োটাই আপনি?”
.
জি!চিনতে পারলেন না আফসোস
.
রিম দুম করে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বললো”আমাকে এতদিন জ্বালালেন,অসভ্য লোক তো আপনি”
.
আজ থেকে বেসামাল সভ্য হয়ে যাব
.
বেসামাল সভ্য কি জিনিস?
.
দেখবে?
.
হুম,দেখি?
.
স্পর্শ রিমকে কোলে তুলে নিয়ে বারান্দায় চলে আসলো,সেখানে থাকা গার্ডেন চেয়ারে বসলো সে,কোলে রিম
রিম মুচকি হেসে স্পর্শর মুখের দিকে চেয়ে আছে,স্পর্শও হাসলো তারপর বললো”এরকম বারান্দায় মদ খেয়ে বাড়াবাড়ি করার ফলেই তোমাকে বিয়ে করতে হয়েছিলো সেদিন,প্রতিবেশী সেই আন্টির ছেলে অনেক উপকারে আসলো আমার
.
সেই তো ভাগ্য বদলে দিলো
.
পুরোটাই বদলে দিলো,,তা খুকি আজ থেকে কিন্তু আপনি আর খুকি হবেন না,বাড়ির বউ হয়ে গেলেন,,ক বছর বাদে ডজন খানেক বাচ্চার মা ও হয়ে যাবেন
.
ভালবাসাটা কি কমবে?
.
বাড়বে,তিনটা বছর ধরে তোমাকে দূর থেকে ভালোবাসতে বাসতে আজ বিয়েই করে নিয়েছি তাও অফিসিয়ালি,,
.
ভাইয়া মেনেছে?
.
নাহ,তবে মানবে,সেও কিন্তু আমার বোনকে বিয়ে করতে আসবে কিছুদিন পর
.
রিম স্পর্শর বুকে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে বললো”আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম আপনার জায়গায় বুড়ো লোকে দেখে”
.
তুমি তো সেসময়ে সেন্সলেস হয়ে গিয়ে আরও ধামাকা করলে,,তোমাকে আমি তোমার রুমে তুলে এনে শুইয়ে দিয়েছিলাম,সবাই তামিমকে দোষ দিচ্ছিল তখন
.
হাহা!!!সবসময় সত্য বলা ওর স্বভাব
.
সেই কারণে আমার বউটা অজ্ঞান হয়ে গেলো তাও বিয়ের দিন
.
ওসব বাদ,এখন শুধু ভালোবাসা হবে
.
রিম স্পর্শর কোল থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মাথা থেকে নেটের ঘোমটা খুলে দড়িতে টাঙিয়ে দিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”কেমন লাগলো বললেন না,আপনার মনের মত সেজেছি কিন্তু”
.
আমার রিমকে ঠিক আমার রিমের মতনই লাগছে,বিয়েতে অনেক মেয়েদের চেনাই যায় না,তবে আমি আমার রিমকে চিনতে পারছি
.
রিম মূর্তির মতন হয়ে স্পর্শর দিকে তাকিয়ে থাকলো,গতবছর এই দিনে এ সময়ে সে স্পর্শর থেকে পালিয়ে রুমে বসে পড়ছিলো,জানালার পর্দা টানানো,,রাত বারোটায় চা খেতে আসবে সে
স্পর্শ সেসময়ে চেয়ার নিয়ে জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে রিমের পা দেখছে,রিম বিছানায় পা মেলে হাতে বই নিয়ে পড়ছে,আর মাঝে মাঝে পা দুলাচ্ছে
তখন দুজনেই দুই আলাদা পৃথিবীর আর আজ তারা এক হয়ে গেলো,এখন তাদের একটাই পৃথিবী
রিমের সেই কথা মনে আসতেই খুব খুব ভালো লাগলো,মাথার খোঁপার পিন খুলতে খুলতে সে রুমের দিকে চলে গেছে ভালোলাগাটা ভাবতে ভাবতে
স্পর্শ শেরওয়ানি ঠিক করে দড়ি থেকে রিমের ঘোমটা হাতে নিতেই ওপাশে রিমের বারান্দায় রিহাবকে দেখে থেমে গেলো
রিহাব চোখের পানি মুছে শক্ত করলো নিজেকে তারপর বললো”আমার বোনটাকে এমন হাসিখুশি রেখো,খুশি হলাম এটা জেনে যে ও তোমাকে পেয়ে খুশি”
.
দোয়া করবা রিহাব,,এন্ড থ্যাংক ইউ
.
অল দ্যা বেস্ট!!
.
স্পর্শ রুমে এসে রিমের কোমড়টা আলতো করে ধরে ওর কানের কাছে কপালটা রেখে বললো”তোমার ভাইয়া মেনে নিয়েছে আমাদের”
.
রিম চমকে হাত থেকে চুড়ি গুলো খোলা বাদ দিয়ে স্পর্শর দিকে ফিরে তাকালো,তারপর মুখে হাত দিয়ে ফেললো,তার বিশ্বাস হচ্ছে না,ভাইয়া এত সহজে মানতে পারে??
খুশিতে রিমের চোখে পানি এসে গেছে স্পর্শর মুখে এই কথাটা শুনে
.
স্পর্শ রিমের চোখ দুটো মুছে দিয়ে বললো”১০০টা চড়ের শোধ তুললাম না আজও,আফসোস,”
.
রিম ড্রেসিং টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে বললো”অল ইউরস্”
.
স্পর্শ আয়নার উপর হাত রেখে মুখটা এগিয়ে এনে ফিসফিস করে বললো”মাথার ঐ তারকাঁটা গুলো খুলেন আগে,তা নাহলে সকালে উঠে আমার মুখের ভেতর পাবো ওগুলা,আপনার চুলের যা ঘ্রান,আমার তো মন চাচ্ছে ঐ পিনসমেত গিলে ফেলি”
.
রিম ঘুরে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে পিন খুলছে আয়নার দিকে চেয়ে

রোকসানা বেগম সোফায় বসে স্পর্শর রুমের দিকে তাকিয়ে আছেন,আসাদুজ্জামান এক কাপ চা নিয়ে উনার পাশে বসলেন তারপর বললেন”কি গো??তোমার তো ছেলে বউ এসে গেলো,কাল থেকে তোমাকে চা করে খাওয়াবে,নুডুলস পাকোড়া করে খাওয়াবে”
.
দেখবো তো,কেমনে কি করে,সেই ভাবনাই ভাবছি
.
আঁখি রান্নাঘরে থেকে বললো”বাবা??ভাইয়াদের চা পাঠাবো?রাত নয়টা বাজে”
.
পাঠা,,চায়ের সাথে বসিকিট ও দিস
.
হুহ দরদ!
.
তোমাকে যেদিন আমি বিয়ে করে এই বাসায় নিয়ে এসেছিলাম,আমার মা ও কিন্তু চা পাঠিয়েছিলো,সাথে ফিরনি দিয়েছিলেন,নিজের হাতে বানানো,আর তুমি তে কিছুই বানালে না রিমের জন্য
.
নতুন বউয়ের জন্য আমি বানাবো ফিরনি??
.
আখি চা পাতা দিয়েছিস ওদের জন্য যে চা বসিয়েছিস?
.
না বাবা,মাত্র পানি মাপছি
.
থাক ওমন করেই রেখে দে,তোর মা এসে চা বানাবে
.
কিহ,আমি?

রিম?
.
হুম বলুন
.
পিন পরে ছাড়াবে,যাও আমাদের জন্য চা বানিয়ে আনো তো
.
এ সময়ে চা খবেন?
.
এখন তুমি চা না বানালে বাসায় কুরুক্ষেত্র লাগবে
.
রিম মাথা নাড়িয়ে দরজা খুলতেই দেখলো স্পর্শ মা বাবা দুজনেই চা বানানো নিয়ে ঝগড়া করছেন
রিম একটু এগিয়ে এসে বললো”আমি বানাচ্ছি”
.
এটা বলে সে রান্নাঘরে চলে গেলো,,রোকসানা বেগম ভূত দেখার মতন মুখ করে রেখেছেন
আসাদুজ্জামান ও কিছুটা চমকালেন,স্পর্শ দরজা দিয়ে মাথা বের করে বললো”আমি বলেছি,তা নাহলে তোমরা দুজন আজ বাসা উল্টে ফেলে দিতে”
.
রোকসানা বেগম দাঁত কেলিয়ে বললেন”আমার সোনার টুকরো ছেলে,উম্মাহ”
.
দেখেছো,বিয়ের দিন বউ নিজে চা বানাচ্ছে,সারাটা জীবন তোমাকে দেখে রাখবে সে
.
রোকসানা বেগম হিজাব ঠিক করে একটা ভাব নিলেন,মনে মনে তিনিও জানেন রিম মনের দিক দিয়ে খুব ভালো
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে