দু মুঠো বিকেল পর্ব-৪৮+৪৯+৫০

0
1953

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৪৮
Writer-Afnan Lara
.
এই আশিকটাও নাহহহ,কবে তার সিম খুলবে আর কবে তার সাথে দুটো কথা বলতে পারবো আমি,এত ভীতূর ডিম একটা,দেড় মাস হয়ে গেছে এখনও তার খোঁজ খবর নেই কোনো,,
.
স্পর্শ ফোন পকেটে ঢুকিয়ে রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মনের সুখে সিগারেট খেতে খেতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,আজ কতটা দিন পর সে তার নিজ বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে
রিমকে সে খুব একটা কষ্ট দিয়ে ফেলছে তা মনে করে এখন নিজেরই মন খারাপ হয়ে আছে তার
আজ তো মঙ্গলবার,,,বৃহস্পতিবারে নিসাদ মানে যার সাথে রিমঝিমের বিয়ে হওয়ার কথা তার পরিবার আসবে ওকে দেখতে এন্ড আই এম হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিউর ওরা রিমকে এক দেখাতেই পছন্দ করে ফেলবে
আচ্ছা দেখা যাক!
.
হ্যাঁ হ্যাঁ আমাদের তো ভুলে যাবেনই,উত্তরায় গিয়ে কত কলিগ হলো আপনার,, আমাদের মত ছোটখাটো বন্ধুবান্ধবদের আর কে মনে রাখে?
.
এমন খোঁচাস্বরুপ উক্তি শুনে স্পর্শ নিচে তাকালো,রিপন হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে
.
আরে সরি সরি,আসার পর থেকে তেমন সময় পাইনি টংয়ে আসার
.
হুম,সময় পাবেন কেন,আমরা তো কেউ না
.
তোরাই সব,দাঁড়া আসছি
.
কথাটা বলে স্পর্শ বেরিয়ে চলে আসলো রিপনের কাছে তারপর ওকে জড়িয়ে ধরে ওর পিঠে দু একটা বাড়ি দিয়ে বললো”কি খবর তোর??”
.
এই তো ভালো,বসো চা খাবে আর তোমার অফিসের গল্প শোনাবে
.
হুম
.
স্পর্শ বেঞ্চের উপর বসেছে,হাতে থাকে সিগারেটটা ফেলে দিয়ে হাতের পিঠ দিয়ে মুখটা মুছে ফেললো সে
রিপন চায়ের কথা দোকানদারকে বলে পাশেই বসলো তারপর সবার আগে কথা শুরু করলো রিমকে নিয়ে
.
স্পর্শ স্বাভাবিক গলায় বললো”ওর তো বিয়ে”
.
তো?ভাগাবে না?
.
নাহ
.
কেন?
.
কি দরকার,রিহাব মাঝে ওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,আর কত লড়বো
.
এতদিনের ভালোবাসাকে এইভবে যেতে দিবে?
.
আমার হাতে কিছুই নেই,,আর রিম তো আমাকে ভালোবাসে না,তাহলে কিসের জন্য লড়াইয়ে নামবো?
.
উপরে দেখো মিয়া!
.
স্পর্শ উপরে তাকালো,রিম বারান্দায় দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে স্পর্শর চোখের পানে চেয়ে আছে
.
স্পর্শ মুখটা আরেক দিকে ফিরিয়ে নিয়েছে,রিপনের হাত থেকে গরম চায়ের কাপটা নিয়ে টাটকা গরম চা জলদি শেষ করার তোড়ে আছে সে এখন
আর একবার ইচ্ছে করে রিমের বারান্দার দিকে তাকাতেই সে দেখলো রিম নেই ওখানে,,
যাক বাবা বাঁচলাম,এদিকে অফিসের বসের হুটহাট কল আসলো দেখে চা খাওয়া উঠে গেছে স্পর্শর
চায়ের কাপটা পাশে বেঞ্চের উপর রেখে সে কল রিসিভ করলো,,ওপাশ থেকে বস নয় বসের পিএ বললেন আজ অফিসে ইমারজেন্সি মিটিং আছে,স্পর্শ যেন রাত আটটার আগে পোঁছে যায় সেখানে
যেহেতু এটা অফিস টাইম না তাই স্পর্শ জিজ্ঞেস করলো কিসের মিটিং
পিএ জানালো নতুন ক্লায়েন্ট এসেছে আর তিনি আজ রাতেই আবার লন্ডন ফিরে যাবেন যার কারণে গ্রুপ আকারে সকলকে আসতে বলা হচ্ছে সময় মতন
.
স্পর্শ জলদি করে রুমে চলে আসলো,অফিসের শার্টটা পরতে পরতে মাকে বললো তার অফিসে যেতে হবে এখন,ফিরতে দেরি হবে,মা যেন খাবারের ওয়েট না করে,হয়ত অফিসে খাবার দিতে পারে আজ
.
এদিকে রিহাব তার ফোন এনে রিমের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো নিসাদের সাথে আলাপ করতে,নিসাদ ওর সাথে কথা বলতে চায়
বেশ জোরপূর্বক ভাবেই দিয়ে চলে গেলো সে
রিম ও আর কিছু বলতে পারলো না
এদিকে নিসাদ হাই হাই শুরু করে দিয়েছে,রিম চুপ করে ফোন কানে ধরে দাঁড়িয়ে আছে জানালার ধারে,স্পর্শ টাই বাঁধছে আয়নার কাছে এসে,,রিমের নজর সেদিকেই
আর নিসাদ আজ অফিস থেকে ফিরে কি কি করলো ওসব বলে যাচ্ছে বার বার
.
স্পর্শ টাইটা ভালো মতন বেঁধে বেরিয়ে চলে গেছে
“জলদি করে উত্তরার বাস ধরতে হবে,কি মহা ঝামেলা,আজ ফ্ল্যাটে থাকলে এত ভেজাল বইতে হতো না,সব খালি আমার সাথেই হয়,প্রাইভেট কোম্পানির এই এক ঝামেলা,যখন তখন মিটিং,যখন তখন অফিসে চলে আসতে হয়”

রাত সাড়ে এগারোটার দিকে স্পর্শ তার বাসায় ফিরেছে আবার,অফিস থেকে কেক আর জুস খাইয়েছে,ডিনার করায়নি
“মাকে আরও বলেছি আজ খাব না
রুম এত অন্ধকার কেন??প্রচুর টায়ার্ড হয়ে গেছি আজ,আহহ!!ঘাড় ব্যাথা””
স্পর্শ মাথা টিপতে টিপতে লাইট জ্বালিয়ে রুমের দিকে না তাকিয়ে দরজা লক করলো,তারপর হাত থেকে অফিসের ব্যাগটা রেখে টাই খুলতে খুলতে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো রিমকে
সে বিছানার মাঝখানটায় বসে আছে,মুখটা মলিন করে
গায়ে একটা ছাই রঙের জর্জেট শাড়ী,,হাতে ছাই রঙের চুড়ি
স্পর্শ এক প্রকার শক খেয়েছে,,পরে ভাবলো হয়ত মনের ভ্রম,তারপর সে গায়ের শার্টটা খুলতে খুলতে আয়নার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে
শার্ট খুলে চেয়ারের দিকে ছুঁড়ে মেরে এবার সে হাতের ঘড়ি খুলছে
ওপাশ থেকে দুটে হাত তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো হঠাৎ
রিমের ছোঁয়া গায়ে লাগতেই স্পর্শ কেঁপে উঠেছে,তার আর বুঝতে বাকি নেই যে এটা কেনো ভ্রম না,এটা সত্যি
রিম মাথাটা স্পর্শর খালি পিঠে এলিয়ে রেখে আস্তে করে বললো”আজকে আমাকে যেতে বলবেন না,বললেও আমি যাব না,স্বামীর ঘরে একটা দিন থাকতে দিবেন?? ”
.
স্পর্শ পিছন ফিরে রিমকে ধরে ঝাঁকিয়ে বললো”এসব কি রিম??তোমার ভাই জানলে তুলকালাম বাঁধাবে,সেই খবর আছে তোমার?”
.
জানবে না,সব ঘুমে
.
কথাটা বলে রিম স্পর্শকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে,ওর বুকে মুখ লুকালো সে
স্পর্শ নিজেকে আটকে রাখতে পারছে না কিছুতেই,রিম এমন কেন করছে,এমন করলে আমি কি করে নিজেকে ধরে রাখবো
আর কত!
.
রিম মুখ একটুখানি তুলে বললো”আমি আজ সকালে নাস্তার পর থেকে কিছু খাইনি,মা খাবার দিয়ে গিয়েছিলো,রাগ করে রেখে দিয়েছি,খাবেন আমার সাথে?”
.
খাবার কই পাবো,আমি তো মাকে বলেছি আজ অফিস থেকে ফিরে খাব না
.
আমি নিজ হাতে খিচুড়ি বানিয়েছি,হাত মুখ ধুয়ে আসুন,আমি খাইয়ে দেবো
.
স্পর্শ চুপচাপ গেলো হাত ধুতে
.
রিম টিফিন বক্সটা নিয়ে বিছানায় এসে বসে পড়েছে,আজ সে এখান থেকে নড়বে না
শত হোক আমার স্বামীর রুম এটা,আমার তো হক আছে নাকি??
.
স্পর্শ তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে এসে রিমের পাশে বসলো,রিম সাথে সাথে লোকমা তুললো ওর সামনে
স্পর্শ চাইছে ইগনর করার আর এই মেয়েটাকে দেখো,ইগনর করতেই দিচ্ছে না,জীবনে যেটা করেনি এখন সেটা করছে
স্পর্শ রিমের হাতে লোকমা না খেয়ে নিজেই লোকমা বানিয়ে নিজে নিজে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে
রিমের তো চোখে মুখে পানি এসে গেছে স্পর্শর এমন আচরণ দেখে
তাই সে খেলো না,চুপ করে স্পর্শর খাওয়া দেখছে
স্পর্শ খাওয়া শেষ করে পানি নিয়ে খেয়ে রিমের দিকে তাকিয়ে দেখলো রিম এখনও ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে ওর মুখের দিকে
.
স্পর্শ পানির গ্লাসটা রিমের হাতে ধরিয়ে দিয়ে রিমের দুপাশে দুহাত রেখে এগিয়ে এসে রিমের ঠোঁটটা ছুঁয়ে ফেললো
সেকেন্ড পুরোপুরি হলো কিনা জানি না,কারন ততটা জলদিতেই সে ঠোঁটটা পুনরায় সরিয়ে ফেলে উঠেও চলে গেছে ততক্ষণে
রিম আচমকা শখ খেয়ে বসে আছে,এটা কি হলো?কেন হলো?কি বা হলো??
পরে সে বুঝলো এটা কিস ছিলো,যাকে বলে মিনি কিস
এই কিস দেওয়া আর না দেওয়া সেম ব্যাপার,তবে সামান্য এটাতেই আরও বেশি টান অনুভব হচ্ছে,ইচ্ছে করে এমন করলো লোকটা,আমাকে কষ্ট দিতে তার পৈশাচিক আনন্দ অনুভূত হয়,আর তাই এখন এমন করলো
মনে হচ্ছে ছুঁয়েও ছোঁয় নি
কি আজব!!
.
রিম হাত থেকে টিফিন বক্সটা আর গ্লাস রেখে হনহনিয়ে স্পর্শর সামনে এসে দাঁড়ালো,স্পর্শ সিগারেটের ধোঁয়া উপরের দিকে ছেড়ে রিমের দিকে এক নজর তাকিয়ে আবারও দূরের ল্যাম্পপোস্টটার দিকে নজর দিলো
রিম ওর হাত ধরে টেনে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো”আমি কিছু খাইনি!”
.
জানি
.
তখন ওটা কি ছিল??
.
কিছুই ছিল না,কাঁদছিলে তাই করলাম
.
এখনও কিন্তু কাঁদছি
.
স্পর্শ সিগারেট মুখে দিতে গিয়ে আটকে গেলো,রিমের দিকে তাকালো এবার
রিম শক্ত চোখে চেয়ে আছে,,স্পর্শ ভ্রুটা নাচিয়ে আবারও সিগারেট খাওয়া শুরু করে দিলো
রিমের খুব রাগ হলো,টান মেরে ওর হাত থেকে সিগারেটটাই নিয়ে নিলো সে
তারপর চোখের পানি মুছে সিগারেটটা মুখে পুরে দিলো
স্পর্শ তাড়াহুড়ো করে ওর মুখ থেকে সিগারেটটা টেনে ফেলে দিলো নিচে
.
রিম হালকা কেশে কেশে বললো”ফেললেন কেন,আমিও দেখি আমাকে ইগনর করে কাকে পাত্তা দিচ্ছেন”
.
স্পর্শ রিমের হাত ধরে নিয়ে গেলো রুমের দিকে,তারপর হাত বাড়িয়ে তার জানালার পর্দাও টেনে দিলো
এরপর ওকে জানালার সাথে লাগিয়ে ধরে বললো”কাল বাদে পরশু তোমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে আর আজ তুমি আমার কাছে এসেছো নিজেকে বিলিয়ে দিতে??”
.
কেন??পারি না?
.
না পারো না
.
রিম স্পর্শর গলায় হাত দিয়ে চেপে ধরে বললো”পারি,১০০ বার পারি”
.
রিম প্লিস বোঝার চেষ্টা করো,যাও নিজের রুমে
.
রিম স্পর্শর গায়ের দিকে তাকালো তারপর বললো”তেল মালিশ করে দেই?”
.
রিম তুমি কেন এমন করছো??তুমি কি চাও আমি তোমাকে জোর করে বাসায় দিয়ে আসি??
.
আমি তেল গরম করে আনছি,থাকুন
.
রিম পাশ কেটে চলে গেলো ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে তেলের বোতলটা নিয়ে,,চুলা জ্বালিয়ে বাটিতে করে তেল গরম হতে দিলো সে
স্পর্শ মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে আছে
.
বাসার সবাই যে যার রুমে ঘুমিয়ে আছে
রিম তেল গরম করে এসে আবারও দরজা লক করলো,তারপর বিছানায় উঠে স্পর্শর পিছনে বসলো সে
স্পর্শ এখনও মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে
রিম দুহাতে তেল ঘষে স্পর্শর পিঠে মালিশ করতে লাগলো চুপচাপ
.
রিম??
.
যাব না,আমাকে আমার কাজ করতে দিন
.
রিম বেশ সুন্দর করেই তেল মালিশ করলো,স্পর্শর ঘাড়ে ব্যাথা ছিলো সেটাও চলে গেছে এখন,,টায়ার্ডনেসটাও উধাও
রিম তেলের বাটিটা পাশে রেখে হাত ধুয়ে আসলো,এসেই দেখলো স্পর্শ শার্ট পরছে,রিমকে দিয়ে আসবে বলে
রিম বিছানাতে এসে গোল হয়ে বসে পড়ে বললো সে কিছুতেই যাবে না
.
স্পর্শ শার্টটা পরে রিমের হাত মুঠো করে ধরে বললো”যেতে তোমাকে হবেই,বারোটা বেজে গেছে,তোমার ভাইয়া যদি তোমার রুম চেক করতে আসে?”
.
আমি ভেতর থেকে দরজা লজ করে রেখেছি,আসবে না,লক করে বারান্দা দিয়ে টপকে এসেছি
.
রিম ত্যাড়ামি করবে না,চলো আমার সাথে,আর তুমি এসব করে কি বুঝাতে চাচ্ছো
.
রিম কাঁদো কাঁদো চোখে চেয়ে থেকে এগিয়ে এসে স্পর্শকে আবারও ঝাপটে ধরলো তারপর বললো”ভালোবাসি বলে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার স্পর্শ,,আপনাকে হারাতে চাই না আমি,আমি তো আপনার স্ত্রী তাই না?তাহলে কেন আপনি আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছেন,,আমাকে নিজের করে নিন না স্পর্শ,আমি চাই না অন্য কারোর হতে,আমার আপনাকেই লাগবে,এতদিন পাগলের মত ভালোবেসে এখন আপনি আমায় মাঝ রাস্তায় ফেলে আসতে চাচ্ছেন??কেন??আমি জানতে চাই কেন??বাবাকে বোঝালে বাবা বুঝবে না??
রিহাব ভাইয়ার মতামতই সবটা নয় স্পর্শ
.
বুঝবে না,তোমার বাবা তোমার ভাইয়ের পক্ষে তা না হলে বলতেন “তোর যাকে পছন্দ তাকে বিয়ে কর”
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৪৯
Writer-Afnan Lara
.
ওসব কথা রাখুন,,আমি বললাম আমি এখান থেকে যাব না মানে যাব না,হাত ছাড়ুন,আমি ঘুমাবো এখন
.
রিম হাত ছাড়িয়ে হনহনিয়ে বিছানার কাছে এসে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো
স্পর্শ কিছুক্ষন বিরক্ত নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো,এরকম ঘাড়ত্যাড়ামি শুরু করে কি বুঝাতে চাচ্ছে ও??
.
স্পর্শর ও চোখ জুড়ে ঘুম আসছে,অফিসে মিটিংয়ের নামে লেকচার দিতে হয়েছে বকবক করে,তাই সে বাধ্য হয়েঔ রিমের একপাশে শুয়ে চোখটা বন্ধ করলো
মিনিট পাঁচেক বাদে রিম একটু একটু করে এগিয়ে এসে স্পর্শর গায়ের সাথে লেগে ওকে ঝাপটে ধরে ফেলেছে
.
যা বুঝলাম আজ আর ঘুমাতে দিবে না আমায়
.
আঙ্গুল বাড়িয়ে এনে সে স্পর্শর বুকে কিসব লিখছে,হিবিজিবি,যার মানে সে নিজেও জানে না
স্পর্শ উপরের ছাদটার দিকে তাকিয়ে আছে করুন দৃষ্টিতে
.
সমাজ ধরে বিয়ে করিয়ে দিলো আর পরিবার ধরে বিচ্ছেদ ঘটাচ্ছে
প্রকৃতির কি লীলা খেলা!
.
স্পর্শ!
.
হুম
.
কিছু না
.
রিম স্পর্শর ঘাড়ে নাক ঘষে চুপ করে থাকলো,স্পর্শ আড় চোখে ওর মুখের দিকে একবার ফিরে তাকিয়ে থাকলো
.
মেয়েটা আজ এমন করছে যেন আমাকে আমার থেকেই দূরে কথোাও নিয়ে যাওয়ার ধান্ধা তার
.
এরকম নড়াচড়া করছো কি জন্য?নিজে তো ঘুমাচ্ছোই না সাথে আমাকেও ঘুমাতে দিচ্ছো না তুমি
.
চলুন না বারান্দায় গিয়ে বসি,চা খাই,গল্প করি
.
হ্যাঁ,আর তোমার ভাই দেখে আমার গর্দান নিক
.
আপনি ভীতু??আপনি লড়তে পারবেন না?
.
লড়তাম,পারি অবশ্যই,বাট তোমার বাবা স্বচক্ষে এসব দেখলে আবারও হার্ট এ্যাটাক হবে তার,তাই আমি এখন বড়ই শান্ত ছেলে
.
আচ্ছা,তাহলে এখানে শুয়েই গল্প করি,,উঠুন না
.
স্পর্শ উঠে বসে ল্যাম্পশ্যাডটা জ্বালালো,,রিম ও উঠে বসেছে
.
বলো কিসের গল্প করবা,শুনি,নাহলে তো আমাকে ঘুমোতে দিবে না
.
রিম মুচকি হেসে চেয়ে আছে স্পর্শর দিকে,কিছুই বলছে না
স্পর্শ ও তাকিয়ে আছে
মানে এভাবে চেয়ে চেয়ে থেকে মনে মনে গল্প করার ইচ্ছা হয়েছে তার
.
রিম বেশ কিছুক্ষন চেয়ে থেকে কেঁদে ফেললো সেই আবারও,কেঁদে কেঁদে স্পর্শকে আগলে ধরলো সে
স্পর্শ আর ইগনর করলো না ওকে,নিজেও ধরে রাখলো রিমকে
দুজনেই চুপচাপ,,আশেপাশের সব কিছু ও চুপচাপ,কোথাও কোনো বারতি শব্দ নেই
কেউ ঘুমাচ্ছে,কেউ রাত জেগে গান শুনছে,কেউ বা চ্যাটিং করছে,,আর কেউ বা প্রিয়জনকে ভালোবাসতে ব্যস্ত
প্রিয়জনকে ভালোবাসতে যে দেয়াল এসে মাঝে আঘাত হানে এখন সেই মূহুর্তটায় রিমঝিম আর স্পর্শ রয়েছে
রিমের কান্নায় স্পর্শর বুকটা ফেটে চুরমার হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ
কেন দুজন দুজনকে ভালোবেসেও পাচ্ছি না একে অপরকে
কেন ধর্ম মতে বিয়ে হওয়ার পরেও আমাদের মনে এত সংশয়??
পরিবারের পরিস্থিতির জেরে কি যে বিয়েটা হয়েছিলো সেটাও ধামাচাপা হয়ে যাবে??
না তা হতে দিতে পারি না আমি,আমি চাইলে সব ঠিক করতে ফেলতে পারি,কিন্তু রিমের বাবা??উনার যদি কিছু হয়ে যায় আমি তো নিজেকেও মাফ করতে পারবো না তাহলে
মানুষ দোটানায় পড়ে,আর আমি তিনটানায় পড়েছি
একদিলে রিম যে আমাকে বুঝেছে এমন একটা সময় যখন আমার হাতে কিছু নেই
অন্যদিকে রিমের বাবার অসুখ,একটা চিকন সুতোর মতন হয়ে আছে,বেশি টানলে ছিঁড়ে যাবে
আর তার ভেতর রিহাব,,কাঁটার তৈরি দেয়াল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
রিমের বাবাকে মানিয়ে নিতে গিয়েও পারছি না ঐ রিহাবের দরুন,ওরে কি করে থামাবো
মানে আগুনে পানি ঢালবো কি করে সেটাই মাথায় আসছে না আমার
আঁখি??ও আমাকে হেল্প করতে পারবে?কিন্তু কি করে??
.
রিম স্পর্শর বুকেই ঘুমিয়ে পড়েছে,,সেটা বুঝতে পেরে স্পর্শ আলতো করে ওকে পাশে শুইয়ে দিয়ে কম্বলটা ভালোমতন টেনে দিলো ওর গায়ে,ফোন খুঁজে ভোর চারটার এলার্ম দিলো সে
জলদি উঠে রিমকে তার রুমপ ফেরত পাঠাতে হবে,নাহলে এই রিহাব শান্তিতে কাউকে বাঁচতে দেবে না
.
স্পর্শ পাশে শুয়ে রিমের দিকে তাকালো,রিম হাত দুটো ভাঁজ করে মাথার নিচে রেখে ঘুমাচ্ছে,,
মেয়েটা আজ নিজ থেকে আমার কাছে এসেছিলো আর আমি ওকে এক বিন্দু ভালোবাসাটাও দিতে পারলাম না
যাকে পাবার জন্য উতলা হয়ে ছিলাম,সে নিজ থেকেই আসলো কিন্তু আমি আজ তাকে ছুঁতে গিয়েও ছু্ঁতে পারলাম না
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস আমাদের

ভোর চারটা বাজে,এলার্ম ভেজে উঠেছে তখন,,রিম স্পর্শকে শক্ত করে ধরে মৃদু স্বরে বললো”যাব না,অফ করেন”
.
স্পর্শ চোখ টা বন্ধ রেখেই হাত নিয়ে ফোন খুঁজে এলার্ম অফ করলো তার ১০সেকেন্ড বাদে চোখ খুললো সে,এরপর রিমকেও টেনে তুলে ফেললো
রিম ঘুম ঘুম চোখে এক নজর তাকিয়ে স্পর্শর কাঁধে হেলান দিয়ে আবারও শুয়ে পড়ে বললো”কিছুতেই যাব না”
.
যাও বলছি!!!
.
এক ধমকে রিমের সব ঘুম,জেদ ভেগে গেছে,রিম চোখ বড় বড় করে চেয়ে থেকে মুখটা ফুলিয়ে বিছানা থেকে নেমে চলে গেলো,আর একটি বারও তাকালো না পিছন ফিরে
বারান্দা টপকে নিজের রুমে এসে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে দেখলো স্পর্শ তার বিছানায় বসে এদিকেই চেয়ে আছে,রিম মুখটা ব্যাকা করে নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো,কাঁদতে কাঁদতে এখন আর চোখ দিয়ে পানি বের হয় না,আর এখন এসময়ে কাঁদার ও ইচ্ছা নেই তার

তার চেয়ে বরং চুপচাপ ঘুমানোই ভালো
.
পরেরদিন সকাল সকাল রিহাব অফিসে যাওয়ার আগে রিমঝিমকে নিজের চোখে দেখে নিয়ে তারপর গেলো
.
তামিমের খুশি ধরে কে,একেতো রিম বাড়ি ফিরেছে আরেক তো তার ক্যাকটাস গাছটাও ফেরত পেয়েছে,কি মজা রে মজা!
মনের আনন্দে সে গাছে পানি দিতে দিতে স্পর্শর বারান্দার দিকে তাকালো,স্পর্শ চেয়ারে বসে ঢুলতে ঢুলতে ফোন টিপছে
তামিম এক দৌড় রিমের কাছে ফিরে গিয়ে বললো”স্পর্শ ভাইয়াবাবু তো বারান্দায়,দেখবে চলো”
.
রিম সোজা গেলো বাথরুমে,তারপর সেখান তেকে ঠাণ্ডা এক বালতি পানি নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো
স্পর্শ রিমকে খেয়াল করেনি,সে চুপচাপ ফোন দেখেই যাচ্ছে
রিম বালতি উঁচু করে পুরো বালতির পানি স্পর্শর গায়ে ঢেলে দিয়ে বললো”হিসাব বরাবর”
.
স্পর্শ এক চিৎকার করে বসে আছে এখনও,তামিম মুখে হাত দিয়ে তব্দা খেয়ে গেছে
রিম দাঁতে দাঁত চেপে বললো”আমাকে আরেক ছেলের হাতে তুলে দেওয়ার খুব শখ না তোর,এবার দেখ কেমন লাগে”
.
কথাটা বলে সে নিজের রুমে ফিরে আসলো আবার
তামিম স্পর্শর করুন চেহারা দেখছে,স্পর্শ ভিজে টইটুম্বুর,অথচ বিন্দু মাত্র রাগ হচ্ছে না তার
রিম তার জায়গায় ঠিকই আছে,রিমের আমার উপর রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক
.
কিসের শব্দ হলো রে??
.
রোকসানা বেগমের আওয়াজ পেয়ে তামিম বেহুশ হয়ে এক দৌড় মারলো,এক দৌড়ে সে মায়ের রুমে চলে গেছে
রোকসানা বেগম তার ছেলেকে এমন হালে দেখে রীতিমত অবাক,চেয়ারের উপর থেকে তোয়ালে এনে ওর গায়ে দিয়ে বললেন”কিরে??তোর এই অবস্থা কি করে হলো??”
.
না আসলে এক বালতি পানি এনেছিলাম গাছে দেবো বলে,পায়ের সাথে লেগে বালতি উপ্রে আমার গায়ে পড়লো সব পানি
.
তা তো বুঝলাম,কিন্তু বলাতি কোথায়??
.
ঐ যে উল্টে পড়লো,বালতি তো নিচে পড়ে গেছে
.
তুই ও না,ঠিক করে কোনো কাজই করতে পারিস না,জামা চেঞ্জ করে নাস্তা করতে আয়,অফিস যাবি তো
.
হুম,আসছি

আপু এটা কি করলে,এখন যদি ভাইয়াবাবু তোমায় মারে?
.
আমি ধরে ওরে পিটাবো,তুই চুপ থাক,মেজাজের ফালুদা করে রেখেছে,বেয়াদব একটা
.
শীত শীততত
.
পানি ঢাললাম উনার গায়ে,শীত করছে তোর?
.
আব্বু বলেছে সকল মুসলিম ভাই ভাই,তো উনার শীত লাগলো তাই আমারও লেগে গেলো
.
তুই যা এখান থেকে,একবার এক রকম লজিক নিয়ে হাজির হয়

রিহাব যাওয়ার সময় মাকে বারবার করে সাবধান করে গেছে রিমকে যেন কড়া নজরে রাখে,,রিম তো নিজের ঘরে চুপ করে ভাবছে কাল কি হবে তার সাথে,উনারা যদি ওকে পছন্দ করে ফেলে তাহলে সব গেলো জলে
.
স্পর্শ তৈরি হয়ে অফিসেও চলে গেছে,,,রিমঝিম শেষে অনেক ভেবে ডিসিশান নিলো সে নিসাদকেই বিয়ে করবে
স্পর্শ যখন বেইমানের মতন বিহেভ শুরু করছে বাবার অসুখের দোহায় দিয়ে তখন আমিও বেইমানি করেই দেখাবো
বুঝুক রিমকে হারানো কত ভারী হয়ে পড়বে তার উপর

মা রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে ফোনে তার ননদের সাথে কথা বলছেন আর ডাল রান্না করছেন,কাল উনাকে আসতে বললেন তিনি,কথা শেষ না করতেই দেখলেন রিম পাশে এসে পেঁয়াজ কাটা শুরু করলো ডালে বাগার দিবে বলে
.
মা তো অবাক হওয়ার শেষ সীমানায়,হুট করে রিমঝিমের এমন স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া অবিশ্বাস্য ব্যাপার
.
রিন পেঁয়াজ কাটতে কাটতে বললো”বড় ফুফুকে বলো মেজো ফুফুকেও সাথে করে নিয়ে আসতে, মজা হবে তাহলে”
.
মা ইয়া বড় হা করে তাকিয়ে রইলেন,তারপর ঢোক গিলে রিমের ফুফুর সাথে কথা বলায় মন দিলেন
রিমঝিম ডাল রেডি করে চলে গেলো ডাইনিংয়ের দিকে
তারপর তামিমকে টিভি দেখা থেকে উঠিয়ে টানতে টানতে বারান্দা পর্যন্ত এনে এদিক ওদিক দেখলো
স্পর্শ তো নাই,ধুর, কোথায় ভাবলাম উনাকে দেখিয়ে দেখিয়ে তামিমের সাথে আলাপ করবো বিয়ে নিয়ে,উনাকে একটু জেলাস ফিল করাবো তা আর হলো কোথায়
.
কি হলো আপু,সিনচান দেখতে বসছিলাম,টেনে নিয়ে এলে কেন?
.
না এমনি,কিছু না,যা তোর কাজে যা
.
রিমঝিম আবারও চলে গেলো মায়ের কাছে,মাকে বললো কি কি কাজ আছে দিতে
মা রিমের কপালে হাত দিয়ে চেক করলেন তারপর বললেন”জ্বর তো নাই,আচ্ছা ভাত হয়েছে কিনা দেখে মাড় ফেল,আর তো কাজ নেই,আমি তরকারি রেঁধে ফেলেছি আগেই”
.
ওহ ঠিক আছে!!
.
স্পর্শর আজ বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে,কারণ অফিস থেকে সোজা বাস ধরে তাদের বাড়ি ফিরেছে তাই,উত্তরায় হলে বিকালেই পৌঁছে যেতো
.
রিম সেই কখন থেকে উঁকি মেরে সেদিকে চেয়ে ওয়েট করছিলো,যখনই সে স্পর্শকে দেখলো দৌড়ে গিয়ে আবারও তামিমকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসলো বারান্দায়
.
আবার কি আপু?
.
দাঁড়া ২মিনিট
.
স্পর্শ তার রুমে এসে শার্ট খুলতে খুলতে বারান্দার দিকে গেলো
রিম সাথে সাথে কথা শুরু করে দিলো
.
শুন তামিম,কাল তোর হবু দুলাভাই আসবে,,ভালো মতন যত্ন করবি,তাহলে তোকে ভালো ভালো গিফট দিবে
.
স্পর্শ ব্রু কুঁচকে চেয়ে আছে ওদের দিকে
রিম আবারও বললো-
“ইস রে ছেলেটা এত কিউট,এত কিউট,উম্মাহহহহহহ!”
.
ঠুস করে কিসের যেন আওয়াজ আসতেই রিম আর তামিম দুজনেই পিছন ফিরে তাকালো,,স্পর্শ একটা টব নিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছে নিসাদের এত প্রশংসা শুনে
.
রিম হাসলো মনে মনে,তারপর কোনো পাত্তা না দিয়ে তামিমের হাত ধরে ওকে নিয়ে চলে গেলো রুমের দিকে
সবেমাত্র এক ডোজ দিলাম,কাল ওরা আসা অবদি আরও অনেক অনেক ডোজ দিব তোমারে মিঃস্পর্শ
আমাকে ইগনর করা না??এবার আমি তোমারে ইগনর করবো,দেখো তুমি শেষে নিজেই পাগল হয়ে এই বিয়ে ভাঙ্গবে আমার আর কষ্ট করতে হবে না,ইনভেস্টমেন্ট তো আমি তোমাতেই করবো
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৫০
Writer-Afnan Lara
.
রিম নির্ঘাত আমাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য এমন করছে!
এই মেয়েটা একবার ভালো,একবার খারাপ তো একবার রণচন্ডি রুপ ধারণ করতে পারে
নিজে যে আমাকে জেলাস ফিল করাতে গিয়ে এমন লাফিয়ে লাফিয়ে বিয়েতে হ্যাঁ বলে দিলো পরে ওর জন্য আবার কোন ঝামেলা শুরু হয় সেটা আমি জানি না,শুধু জানি এরে থামাতে হবে
পরে এমন হবে যে আমি শেষ মূহুর্তে বিয়েটা ভাঙ্গতে গেলেও তার এমন বিয়েতে রাজির ম্যাটারটা দেয়াল হয়ে দাঁড়াবে ঠিক মাঝ বরাবর
ইস রে এই গাভীটাকে নিয়ে যে কি করবো আমি!!

বিকালে রিহাব সোফায় বসে টিভি দেখছিলো,নিসাদের ফোন আসলো এবং সে জানালো যে যদি দু পরিবারের সম্মতি থাকে তাহলে কালই কাবিন হয়ে যাবে
রিহাব তো কথা শুনে এক পায়ে খাঁড়া
রিম লুকিয়ে এই কথা শুনতে পেয়ে ওর খুব খারাপ লাগলো,মনে হলো জীবনের সব বুঝি শেষ হতে যাচ্ছে
যাচ্ছে কি??অলরেডি হয়ে গেছেও
স্পর্শ তো সব ছেড়েই দিয়েছে,আমার হাতে যে কিছুই নেই
.
স্পর্শ তো তার রুমের জানালা বন্ধ করেছে,তারপর বারান্দার দরজাটাও
রিম যেন আজও না আসতে পারে তাই,পরে আবার কোন ঝামেলায় পড়তে হয় তা ভেবে এটা করলো
সাবধানতার কূল নাই,এটা মনে রাখতে হবে
রিমঝিম তো স্পর্শর এমন কান্ড দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে,হাতের কাছে ইট পাটকেল থাকলে সব ওদিকে ছুঁড়ে মারতো সে
কিন্তু নাহ,,সব ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না আমি

হ্যালো চাচা???
.
কিরে স্পর্শ,এতদিন পর আমাদের মনে পড়লো তোর তাহলে
.
একটা সাহায্যের দরকার অনেক,আর আমার মনে হয় তুমি আমাকে হেল্প করতে পারবে
.
কি সাহায্য???
.
ঐ যে তোমাদের সোসাইটির আনোয়ার মিয়া আছে না যিনি আমাকে আর রিমকে ধরে বিয়ে করিয়ে দিয়েছিলেন
.
হুমমম,কি হয়েছে?
.
উনার এফবি আইডি আছে তোমার কাছে?
.
দেখতে হবে,কেন রে?
.
আমাকে লিংক দাও আইডির,লিংক কেমনে দেয় জানো তো?
.
জানি জানি,ওতটাও গাঁইয়া না,তুই অপেক্ষা কর,আমি দেখছি
.
পাক্কা ২০মিনিট পর চাচা আবারও ফোন করলো স্পর্শকে
বললেন আনোয়ার মিয়ার আইডি পাননি তবে তার এক সহযোগি মিনাল হোসেনের আইডি পেয়েছেন
তার লিংকটাও দিয়ে দিয়েছেন মেসেজ করে
স্পর্শর প্রথমে মন খারাপ হলেও পরে কি যেন ভেবে সে মিনাল হোসেনের আইডিতে ঢুকলো,,তাকে মেসেজ ও করলো
কোনো রিপ্লাই নেই
বয়স্করা আমাদের মতন সারাদিন নেটে থাকবেন না এটাই স্বাভাবিক কিন্তু স্পর্শর যে এখনই দরকার অনেক
.
ইস এই আইডিয়াটা আগে আসলে এতদিনে প্লেট সাজানো ও হয়ে যেতো,ধুর ধুর!!
.
রাতের ১০টায় মিনাল হোসেন একটিভ হলেন,মেসেজের রিপ্লাইতে লিখলেন “কে আপনি?”
.
স্পর্শ হাই হ্যালো না করে শুরুতেই জিজ্ঞেস করলো তিনি আনোয়ার মিয়ার আইডির নাম জানেন কিনা
.
তিনি বললেন আনোয়ার মিয়া এফবি চালান না,তারপর জিজ্ঞেস করলেন কি দরকারে?
.
স্পর্শ আর কি করবে,এনার থকে কিছু ক্লু পাওয়া যায় কিনা তাই ভেবে বললো কদিন আগে আনোয়ার মিয়া একটা ছেলে আর একটা মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন,সেখানে দু একজন ভিডিও ও করেছিলো বিয়ের
তো সেই ভিডিওটা যদি পাওয়া যেতো
মিনাল হোসেন সাথে সাথে উত্তর দিলেন তিনি নিজেই ভিডিওটা করছিলেন,তার কাছে আছে,তবে তার আগে পরিচয় দিলে তিনি ভিডিওটা দেবেন
.
স্পর্শ খুশিতে আটখানা
তারপর খুশি থামিয়ে নির্দ্বিধায় বলে দিলো যার বিয়ে দিয়েছিলো সেখানে সে নিজেই ছিলো বর
.
লোকটা প্রথমে কত কত জ্ঞান দিলো স্পর্শকে,যৌবনের তাড়নায় একটা আবিয়াত্তি মেয়েকে একসাথে এক বাসায় রাখা,ভালো হয়েছে আনেয়ার মিয়া ধরে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেনন, এসব হ্যানত্যান বলে অবশেষে তিনি ভিডিওটও স্পর্শকে দিলেন
স্পর্শ ভিডিওটি সেভ করে নিলো
এরপর একটা ফেক একাউন্ট খুললো মেয়েদের নাম দিয়ে
ওটা থেকে ভিডিওটি রিহাবকে পাঠালো সে
রিহাবের এফবি আইডিতে
.
যাই হোক রিহাব বাজারে এসেছে এখন মাছ মাংস কিনতে,কাল নিসাদের পরিবারকে জমিয়ে খাওয়াবে
এফবিতে মনে হয় না আজ আর যেতে পারবে,,যে কাজ ঘাড়ের উপর,একের পর এক,একের পর এক
বড় ছেলেদের সব সময় কাজ বেশিই থাকে
বাড়ি ফিরতে ফিরতে আজ অনেক রাত হয়ে গেছে,এই এরিয়াতে সবসময় সাড়ে দশটার পর তরকারির হাট উঠে বলে এত রাত করে রিহাব বাহিরে ছিল
বাসায় ফিরে হাত মুখ ধুয়ে সে এক ঘুম দিয়েছে,ডিনার পর্যন্ত করেনি
মা মাছ মাংস সব সাইজ করছেন বসে বসে
রিমঝিম কেঁদে কেঁদে শেষ হয়ে যাচ্ছে এই ভেবে যে কাল তার কি হবে আহারে
আমার সামনে কোনো পথ খোলা নাই
কি হবে আমার!!!
.
দেখতে দেখতে সকালটাও হয়ে গেছে
রিহাব ঘুম থেকে উঠে মুখ না ধুয়েই এফবিতে গেলো,মেসেজ রিকুয়েস্টের নোটিফিকেশন আসলো,, কোথাকার কোন এঞ্জেল উর্বশীর মেসেজ
রিহাব তেমন একটা মেয়েদের মেসেজ চেক করে না তবে
হুট করে অনেক দিন পর কোনো মেয়ের মেসেজ আসায় কিছুটা কৌতুহল নিয়েই সে মেসেজটা চেক করলো,,,
একটা ভিডিও দেওয়া
এবার আগ্রহটা আরও বেশি বেড়ে গেছে তার,সাথে সাথে ভিডিওতে ক্লিক করলো রিহাব
শুরুতেই দেখা মিললো কতজন হুজুরের,ইমাম,মুরব্বী
সব বয়স্ক লোক,,তার মাঝে শার্ট প্যান্ট পরা একটা ছেলে দুহাত ধরে মোনাজাত দিচ্ছে,,মুখে আবার স্টিকার দেওয়া
যাই হোক এটাতে রিহাব যা বুঝলো বিয়ে পড়ানো হচ্ছে এখানে
তারপর যিনি ভিডিও করছেন তিনি ভেতরের রুমের দিকে নিয়েও ভিডিও করলেন,কতগুলো মহিলা,তারাও মোনাজাত ধরে রেখেছেন,সবার মাঝখানে সেলোয়ার কামিজ পরা একটা মেয়ে বসে আছে ঘোমটা দিয়ে,মেয়েটার মুখ দেখেই রিহাব আঁতকে উঠেছে,আরেহ এটা তে রিমঝিম!!!
ভিডিওটি সম্পূর্ন দেখছে রিহাব,সবার শেষে এক এক করে বাকিদের কথাবার্তায় সে বুঝলো বিয়েটা রিমেরই,আর ঐ স্টিকার দেওয়া ছেলেটার
কারণ ওখানে উপস্থিত সবাই বয়স্ক পুরুষ মহিলা,মুরব্বি টাইপের
শুধু যাদের বিয়ে হয়েছে তারা ছাড়া
.
রিম বিয়ে করেছে??এটা কে দিলো আমায়,সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে
রিম আমাদের তো এসব কিছুই বলেনি,আর এটা কার বাসা??
চেনা চেনা মনে হচ্ছে.মাকে জানাতে হবে!
.
রিহাব এক দৌড়ে গেলো মায়ের কাছে,মা রান্নাঘরে সকালের নাস্তা বানাচ্ছিলেন
রিহাব মায়ের সামনে ফোন ধরে ভিডিওটা প্লে করলো আর বললো মনোযোগ দিয়ে দেখতে
মা কাজ ফেলে মনযোগ দিয়ে দেখতে দেখতে শুরুতেই বললেন”এখানে তো বিয়ে হচ্ছে,আমাকে দেখাচ্ছিস কেন?”
.
মা দেখো,এটা রিম না?
.
রিমের কথা শুনে মা ফোনটা চোখের আরও কাছে এনে ভালমতন দেখলেন
হুম এটা তো রিমই!!!
রিমের বিয়ে হয়েছে?কই আমরা তো এই ব্যাপারে কিছুই জানি না,আর কার সাথেই বা হলো?ছেলের মুখে স্টিকার কেন?
.
রিহাব রিমঝিমের রুমের দরজার কাছে এসে পরপর নক করে যাচ্ছে
রিম কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েছিলো,এমন ধুমধাম আওয়াজ কানে আসতেই হকচকিয়ে উঠে বসে পড়লো সে
তারপর বুকে থুথু দিয়ে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে দরজা খুললো সে
রিহাব রিমঝিমকে টেনে ড্রয়িং রুমে এনে দাঁড় করিয়ে বললো”তুই বিয়ে করেছিস?”
.
কথাটা শুনে রিম ভূত দেখর মতন মুখ করে চেয়ে থাকলো
.
মা পাশে এসে বললেন”কাকে করেছিস?”
.
কলিংবেল বাজছে,,রিম কিছু বলতেও পারলো না,রিহাব রিমের দিকে তাকাতে তাকাতে গিয়ে দরজা খুললো
ওপারে একটা লম্বা চওড়া দেহের ছেলে দাঁড়িয়ে আছে
গাল ভর্তি দাঁড়ি আর কচ্ছপ টুপি মাথায়,মোট কথা তার মুখটা বুঝতে অনেক সময় লাগবে,যাই হোক রিহাব ব্রি কুঁচকে বললো”কি চাই?”
.
রিমঝিম কি এখানে থাকে?
.
লোকটার কথায় মনে হলো কেউ তার গলা চেপে ধরেছে আর সে খুব কষ্টে কথা বলছে
রিহাব আরও বেশি করে ব্রু কুঁচকিয়ে বললো”কেন?”
.
আমি তার বিয়ে করা বর,তাকে চাই আমার এখন
.
মা হনহনিয়ে কাছে এসে লোকটাকে ভালোমতন দেখতে থাকলেন,তারপর বললেন”একটু ভেতরে আসেন তো,আপনার দাঁড়ি আর টুপির কারণে আপনার নাক ও তো ভালোমতন দেখা যাচ্ছে না
.
রিম এতক্ষণ এমন ভাব ধরে ছিল যেন সে ভূত দেখেছে,আর এখন স্পর্শর জায়গায় অন্য একটা লোকটা তার স্বামীর পরিচয় দিচ্ছে দেখে তার হার্ট এ্যাটাক হওয়ার উপক্রম
.
লোকটা সাথে সাথে ভিতরে ঢুকে গিয়ে সোফাতেও বসে পড়লেন
.
রিহাব মায়ের কানে ফিসফিস করে বলতে থাকলো”মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছি”
.
হুম রে,আমারও খুব চেনা লাগছে
.
চেনা তো লাগবেই
.
কেন কেন???
.
লোকটা রিহাবের দিকে তাকিয়ে তারপর রিমের মায়োর দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলালেন,পুরো দাঁতগুলো লাল লাল
মনে হয় একদিন ধরে পান খেয়ে এমন হাল করেছে
যাই হোক এবার তিনি শুরু করলেন তার পরিচয় দেওয়া
.
তিনি বললেন তিনি হলেন রিমের মায়ের চাচাতো বোনের নন্দাইয়ের ছেলের কলিগ
.
রিহাব চোখটা ইয়া বড় করে বললো”তার সাথে চেনা চেনা লাগার কারন তো দেখছি না”
.
তাহলে ভাবেন এত দূর সম্পর্কের লোক আমি,আমাকে তো চেনা ইম্পসিবল,তার পরেও আপনারা ফিসফিস করা শুরু করলেন যে আমাকে চেনেন,আমাকে চেনা একদমই অসম্ভব ব্যাপার,হেহে!
.
রিহাব লোকটার সামনে বরাবর বসে বললো”আপনি সত্যি রিমকে বিয়ে করেছেন?”
.
রিম মুখ ফুটিয়ে বলতে যাবে এটা সেই লোক নয় তার আগেই লোকটা টুপিটা একটু উঠিয়ে এমন ভাবে চোখ রাঙালো যেন এখনই চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে ওকে
রিম সাথে সাথে চুপ,তবে চুপ থাকা ঝড়ের পূর্বাভাস, রিম মনে মনে ভাবছে কোন পথ দিয়ে দৌড়ে গিয়ে স্পর্শকে ব্যাপারটা জানাবে
.
রিহাব কথা বাড়াবে পরে,তার মাথায় আসলো আগে জিজ্ঞেস করার যে ছেলে কি জব করে
.
আপনি কিসের জব করেন?
.
আমি সরকারি চাকরি করি,বিসিএস ক্যাডার,হেহে!!।
.
কবে জয়েন হলেন?
.
হতে যাব
.
মানে?
.
এখনও হই নাই,বিশ্বাস হয় না বুঝি?অবশ্য সরকারি চাকরি এমন একটা জিনিস অনেকে মানতে চায় না যে আমরা করি বা করতে পারি
.
মা একটু এগিয়ে এসে বললেন”মাত্রই তো বললেন যে করেন না”
.
কই বললাম?
.
মা মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে রিহাবের পাশে বসে বললেন”এত প্যাঁচ ছেলে হয়ে কেমনে দিতে পারে রে রিহাব??,হায় হায় রে আমার মেয়েটার জীবন তছনছ করে দেবে রে”
.
আরে আমি বুঝাচ্ছি আসলে আমি কি জব করি,আমি পরীক্ষা দিয়েছি,ইন্টার্ভিউ এক দুই মাস পর,,
একচুয়ালি আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি,শুনেছি নিসাদ নামে একটা ছেলের সাথে আপনারা রিমের বিয়ে ঠিক করেছেন,ওর বেতনের খবর নিয়েছি আমি,ও নাকি ১৮হাজার বেতন পায়
আর আমি ২০হাজার
এবার বলেন,আমাকে পেয়ে জিতছেন নাকি ওরে পেয়ে জিতছেন??
আমার আবার প্রোমোশন হওয়ার ও ব্যাপার স্যাপার আছে
.
রিম লোকটার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে
দেখে মনে হয় কাছের লোক আবার চেহারায় এত দাঁড়ি দেখে মনে হয় বাপের জন্মেও দেখি নাই,আসলেই কে এটা?
আমার মনে হয় স্পর্শই উনাকে পাঠিয়েছে,এবার বুঝলাম ভালো করে পায়ে পা মিলিয়ে চলতে হবে,নাহলে প্ল্যান ফ্লপ হলে স্পর্শ আমাকেই বকবে
.
কিরে রিম??
.
কিরে রিম টা মধুর সুরে বললো রিহাব,রিম তো অবাক,পরে ভাবলো উত্তেজিত হয়ে হয়ত ভাইয়া মিষ্টি সুরে কথা বলছে
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে