দু মুঠো বিকেল পর্ব-৪৫+৪৬+৪৭

0
2166

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৪৫
Writer-Afnan Lara
.
খোঁচা মারতে হবে না আর,অলরেডি আপনার বিয়ে করা বউ হয়ে গেছি আমি
.
তা ঠিক,এখন ঘুমাও তো
.
হুম
.
রিম আরেক দিকে ফিরে শুয়ে পড়লো,,,

ফজরের আজান দিচ্ছে চারিদিকে,,,ভোর হয়ে গেছে,রিমঝিম আজ স্পর্শর আগেই উঠে পড়লো,,স্পর্শর মাথর চুল ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না,কম্বলের ভেতরে ঢুকে ঘুমাচ্ছে সে
রিম আস্তে করে কম্বল সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো বিছানা ছেড়ে,,তারপর মাথায় আঁচল টেনে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ,,ভোরের পরিবেশ,কি যে ভালো লাগছে বলে বুঝানো যাবে না,আজান এখনও শুনা যাচ্ছে,আজান শেষ হলেই অজু করে এসে রিমঝিম নামাজ পড়বে
স্পর্শ এখনও ঘুমায়,উনাকে ডাকতে হবে এখনই
এই ভেবে রিম বারান্দা থেকে চলে এসে স্পর্শকে ডাকাডাকি শুরু করে দিলো
স্পর্শ এপাশ ওপাশ করতে করতে বললো”কি হলো আবার?”
.
নামাজ পড়বেন না?
.
নামাজের কথা শুনে স্পর্শ লাফ দিয়ে উঠে বসে বললো”আজান দিয়েছে?”
.
সেই কখন,,শুনেননি?
.
নাহ তো,
.
স্পর্শ জলদি করে উঠে চলে গেলো অজু করতে,রিম ও গেলো,,,
দুজনেই নামাজ পড়ে এখন বারান্দায় বসে একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে
.
কি হলো??
.
কি হলো?
.
ওমন করে কি দেখছেন?আমি এসে বারান্দায় বসলাম বলে আপনিও আসলেন,,যান ঘুমান,এখনও অনেক সময় বাকি
.
আর তুমি কি করবে?
.
আমি রোদ ওঠা দেখবো
.
আমিও দেখবো
.
তখন তো আপনাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতে গলা ফাটিয়ে চেঁচাতে হয়েছিলো আর এখন আপনার ঘুম আসছে না?
.
শুনো!যখন কেউ গভীর ঘুম থেকে টেনে তুলে কাজের জন্য,তখন কাজটা হয়ে গেলে তারপর আর ঐ গভীর ঘুম আসেনা,তার ছিঁটে ফোটাও না
.
বুঝলাম,তাহলে দেখেন রোদ কিভাবে ওঠে
.
স্পর্শ তার একটা হাত রিমের পিঠের উপর দিয়ে নিয়ে বারান্দার গ্রিলের উপর রেখে বললো”তা আর বলতে??”
.
রিম ব্রু কুঁচকালো,তাও কিছু বললো না,চুপ করে দূরের একটা বটগাছের দিকে চেয়ে থাকলো,,

সকাল সাড়ে ছয়টা বাজে,রিমের কথা ছিল সে রোদ ওঠা দেখবে তা আর হলো কই,সে এখন স্পর্শর বুকের সাথে মাথাটা লাগিয়ে বেঘোর ঘুমাচ্ছে আর স্পর্শ রিম এবং রোদ দুটোই দেখছে,,মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে
ঘুমানোর কথা কার আর ঘুমাচ্ছে কে!
কি নেই জীবনে?সবটাই তো পেলাম,যাকে চেয়েছি তাকে পেয়ে গেলাম,এখন আমার বুকে সে ঘুমায়,আমার হাসিতে সে হাসে,এবার পরিবার মেনে নিক,খুব ধুমধাম করে তোমায় বউ বানিয়ে ঘরে তুলবো,,সেদিনকার বিয়েটায় কারোর মুখেই হাসি ছিল না,তবে আমাদের বিয়েটা আবার যখন হবে তখন সবার মুখে হাসি থাকবে,রিহাবের মুখে তো দাঁত কেলানো হাসি থাকবে দেখো রিম,সব মানিয়ে নেবো একদিন
সময় লাগবে তবে ঠিক মানিয়ে যাবে,আমি বিশ্বাস করি
.
রিম ঘুমের ঘোরে হু মু মু করছে,স্পর্শ হেসে দিয়ে ওর চুলগুলোতে বিলি কাটতে কাটতে বললো”রুটি কিন্তু ভারতের মানচিত্র বানাবো,চলবে?”
.
রিম সাথে সাথে জেগে গেলো,স্পর্শর বুক থেকে সরে গিয়ে বললো”উমমমম!!নাহহহ,ভারতের মানচিত্র খেতে গেলে রুটি খাওয়ার শখখই উঠে যায়, তার চেয়ে বরং আমিই বানাই,আপনি খবরের কাগজ আনুন যেখান থেকে পারেন
.
কেন বলোতো??
.
আরে ওগুলার ভিতরে যে মেগাজিন বই থাকে ওগুলো পড়তে আমার অনেক ভাল্লাগে
.
আচ্ছা আনবো
.
রিম উঠে চুলে খোঁপা করতে করতে রান্না ঘরে চলে গেছে
স্পর্শ চাচার বাসায় যাবে বলে বেরিয়েছে ওর বাসা থেকে,চাচার বাসায় খবরের কাগজ পাবে সে
.
চাচার বাসায় আসতেই চাচি ভালো করে ধরেছে ওকে
সে রিমকেও যেন ডাকে তাই,,রিম সহ আজ এখানে নাস্তা করবে
স্পর্শ ফোন নিয়ে রিমকে কল করতে গিয়ে ভাবলো রিম তো ফোন খুলে রাখবে না,আর আসার সময় তো আমি ওর ফোন আনিনি,তাহলে বাসায় গিয়েই আনতে হবে ওকে
.
স্পর্শ চাচিকে বলে বের হলো রিমকে আনতে
পথেই দেখা হয়ে গেলো বাবার সাথে,এ সময়ে বাবা এখানে,আশ্চর্য ব্যাপার!
স্পর্শ তো ভূত দেখার মতন মুখ করে চেয়ে আছে
বাবা ওকে ঝাঁকিয়ে বললেন”কিরে?!এরকম রোবট হয়ে গেলি কেন,বিশ্বাস হচ্ছে না আমি এই সাতসকালে এলাম কি করে??হেহে সারপ্রাইজ কেমন দিলাম??”
.
স্পর্শ থতমত খেয়ে বললো”আগে বলো এসময়ে এখানে কি করো?”
.
চল তোর বাসায় যাই,গরম গরম চা খেতে খেতে বলবো নাহয়
.
না মানে আমি তো চাচার বাসায় সকালের নাস্তার দাওয়াত পেয়েছি,তুমি বরং আমার সাথে সেখানে চলো
.
ওহ তাহলে তো আরও ভালো,আগে সেখানে নাস্তা করে তারপর নাহয় তোর ফ্ল্যাটটা দেখে আসব
.
হুম,এবার বলো কেন এসেছো?
.
বাবা স্পর্শর কাঁধে হাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললেন”আমার একটা অফিসের কাজ উত্তরার ডাক অফিসে পড়েছে,সেখান থেকে খামটা কালেক্ট করে নিতে হবে,তাই আসলাম,আর সকাল সকাল আসার কারণ হলো ঐ খামের পেছনে সারাদিন লেগে যাবে”
.
আমি তো নিয়ে দিতে পারতাম,আবার কষ্ট করে আসতে গেলে কেন?
.
আরেহ ওরা তো তোকে খামটা দিতো না,যে মেইন মালিক তাকেই তো দেবে,কড়া আইন বুঝেছিস?
.
ওহহ
.
এদিকে স্পর্শ ভাবতে ভাবতে শেষ রিমকে নিয়ে কি করবে,ও তো বাসায় নাস্তা বানাতে ব্যস্ত মনে হয়
.
বাবা তো বাসায় ঢুকেই চাচাকে জড়িয়ে ধরে হাসাহাসি শুরু করে দিছেন,সাথে চাচাও
চাচি এক্সট্রা রুটি বানাতে ব্যস্ত তার ভাসুরকে দেখে
.
স্পর্শ চোরের মতন রিমের কাছে যেতে নিতেই বাবা ওর হাত ধরে আটকালেন ওকে তারপর বললেন”কিরে কই যাস তুই??
.
ইয়ে আসলে…
.
চাচা বিষয়টা বুঝলেন তারপর স্পর্শর বাবাকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে স্পর্শর কাছে এসে হাত ভাঁজ করে দাঁড়ালেন তারপর শান্ত গলায় বললেন”স্পর্শ এটাই সময়,,রিমকে নিয়ে আয়,,তোর বাবাকে আমরা সবটা বুঝিয়ে দেবো,অন্তত একজনকে বিষয়টা জানানো জরুরি”
.
স্পর্শ মাথা নাড়িয়ে বললো”ঠিক বলেছেন,ঠিক আছে,আমি রিমকে নিয়ে আসতেছি”
.
স্পর্শ বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে,রিম সবেমাত্র বসে বসে আলু কাটছে ভাজি বানাবে বলে,কলিংবেল বাজতেই উঠে এসে দরজা খুললো সে
স্পর্শর মুখে হাসি দেখে রিম স্পর্শর হাতের দিকে তাকিয়ে বললো”পেপার কই?”
.
স্পর্শ কিছু না বলেই রিমের হাত মুঠো করে ধরে বললো”চলো আমার সাথে,আজ চাচার বাসায় নাস্তার দাওয়াত”
.
ওহ,দাঁড়ান হাত ধুয়ে আসি
.
রিম হাত ধুতে যেতেই স্পর্শ দূর থেকে বললো মাথায় ঘোমটা দিও
.
রিম ভাবলো হয়ত চাচা চাচির সামনে যাবে তাই,সে মাথায় ঘোমটা দিয়ে চললো স্পর্শর সাথে
স্পর্শ হাঁটতে হাঁটতে বললো”বাবা এসেছে”
.
কথাটা শুনে রিম থেমে গিয়ে চোখ বড় করে তাকিয়েছে,পিছন ফিরে দৌড় দেওয়া উচিত আমার নাকি বকা খেতে চলতাম?
.
কি ভাবো এতো?আমি সব সামলে নেবো,,আর নয়ত চাচা তো আছেই,,বাবা পানির মতন,যে ছাঁচেই দাও মিশে যাবে,বাবাকে ভালো মতন বুঝিয়ে দিলেই সবটা ঠিক হয়ে যাবে,আর চাচা আমাকে কথা দিয়েছেন বাবাকে ঠিক ম্যানেজ করে ফেলবে
.
রিম আর কি করবে,স্পর্শর পিছু পিছু চাচার বাসার সামনে এসে হাজির হলো
দরজা খুললেন বাবা নিজে,রিম এবং স্পর্শ দুজনেই আঁতকে উঠেছে,বাবা গম্ভীর গলায় বললেন”ভেতরে এসে সোফায় বসো তোমরা দুজন”
.
রিম আর স্পর্শ চুপচাপ গিয়ে সোফায় বসেছে বাবার কথা মতন,রিম তো মাথা তুলে তাকাচ্ছে না ভয়ে,স্পর্শ একবার চাচাকে দেখছে আবার বাবাকে,মাঝে মাঝে রান্নাঘরে চাচির দিকেও তাকায় সে
বাবা পানি একটু খেয়ে গ্লাসটা আগের জায়গায় রেখে দিয়ে বললেন”না জানিয়ে বিয়ে করলা তোমরা?এত বড় ডিসিশান নিজেরাই নিয়ে নিলে?একবার ফোন করে জানালেও না,আজ এতদিন পর আমি আমার ভাইয়ের মুখ থেকে শুনলাম,হয়তবা ও না বললে কখনও জানতাম ও না
.
সসসরররি বাবা
.
তোর সাথে কথা বলছি পরে,এখন রিমের সাথে কথা বলবো আমি,এই মেয়ে!এই বান্দরটার মধ্যে এমন কি দেখলে যে বিয়েই করে নিলে?
.
রিম চোখ বড় করে তাকালো স্পর্শ বাবার দিকে,স্পর্শর তো গোল খাওয়ার মতন অবস্থা
.
বাবা ওদের দুজনেরই চমকায়িত রুপ দেখে কিছুটা হাসলেন মনে মনে তারপর বললেন”কোনো গুনই নাই,রুটি পর্যন্ত চীনের মানচিত্রর মতন বানায়”
.
রিম ফিক করে হেসে ফেললো তারপর বললো”আমার মনে হয় দেখতে ভারতের মানচিত্র”
.
রাইট রাইট!!খেয়েছো তাহলে!
.
চাচা ভ্রু কুৃচকে বললেন”রুটি বানাতে পারে এটাই অনেক”
.
তুই চুপ থাক,যেকোনো দেশের মানচিত্র হলেও সমস্যা হতো না,সমস্যা আরেক জায়গায় আর সেটা হলো সব রুটির মাঝখানে একটা আংটি বরাবর ফুটো করে রাখে,সেই রুটি আর খেতে মন চাইবে বল??
.
স্পর্শ মাথায় হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে,রিম হাসতে হাসতে শেষ তবে একটু মনে মনেই হাসছে,মুরব্বীদের সামনে হাসাটা কেমন দেখায়
.
বাবা এবার গম্ভীর হয়ে বললেন”তো যা বলছিলাম আমাদের কাউকেই না জানিয়ে বিয়ে করে ঠিক করোনি একদম,,তবে যা হয়ে গেছে তা তো ঘটে গেছে,এখন আর চেঁচিয়ে লাভ নাই,তবে মিসেস রাগীনিকে আমি যদি এই কথা বলি আমাকে বাসা থেকে বের করে দিবে,এবার বলো আমার কি করা উচিত?”
.
বাবা আমি চাই না এখন সবাই জানুক,চাচা জোর করলো তোমাকে জানাতে তাই জানালাম কিন্তু মাকে জানালে কি হবে বুঝো তো
.
তোর মাকে আজ নাহয় কাল জানাতেই হবে,কারণ তোর মা এখন নিহাকে বের করে দিয়ে তার দূর সম্পর্কের চাচাতো বোনের মেয়ের সাথে তোর বিয়ে দিবে বলে ঠিক করেছে,মেয়ের নাকি সবে ষোল,,বয়স কম,কথা বলে কম,কাজে পটু,তার নাকি অনেক পছন্দ হয়েছে
.
ভেরি ফানি!!এরকম বাচ্চা মেয়ে আমার দরকার নাই,ম্যাচিউর মেয়েই পছন্দ,আর সে এখন আমার ওয়াইফ,বাচ্চা মেয়েদের হাতে খেলনাই সুন্দর লাগে,রুটি ছেঁকার খুন্তি নয়
.
সেটা কে বোঝাবে তোর মাকে,আমি পারবো না
.
সময় হলে আমি বুঝিয়ে দেবো,আপাতত বিষয়টা গোপন রেখো এটাই তোমার কাছে আমার রিকুয়েস্ট
.
আচ্ছা ফাইন,,তবে একটা কথা,রিমকে আমি শুরু থেকেই পছন্দ করতাম,,ভাবতাম আমার ছেলের পছন্দ আছে,তবে এটা যে সত্যি হয়ে যাবে তা ভাবিনি কখনও,,রিম ভালো মেয়ে,,আগলে রাখিস,আর শুনো মেয়ে এই ছেলে যদি তোমাকে কোনো প্রকার ডিস্টার্ব করে আমাকে কল করবা,ওরে টাইট একমাত্র আমি দিতে পারি
.
রিম মুচকি হেসে চেয়ে থাকলো,তারপর কি ভেবে উঠে গিয়ে চাচির কাজে হাত লাগালো সে
চাচি একা একা এতক্ষণ কাজ করছিলেন,রিমের হেল্প পেয়ে খুশি হলেন অনেক
রিম খাবার নিয়ে টেবিলে এনে এনে রাখছে,চাচি সব বানিয়ে ফেলেছেন তাই এখন আর বানানোর কাজ নেই,,চাচি রিমের হাতে খাবারের বাটি দিতে দিতে বললেন”
আমার মেয়ে যখন আসে তখন পুরো ঘরটা গরম
হয়ে থাকে,তুমি আসায় তেমনটাই মনে হচ্ছে হঠাৎ”
.
রিম উনার হাতটা ধরে বললো”মাঝে মাঝে আসব তাহলে”
.
মাঝে মাঝে কিসের,যখনই মন চাইবে তখনই চলে আসবা,আমার কোনো ছেলে নাই,স্পর্শকে ছোট থেকে আমি আমার ছেলে ভেবে এসেছি,,তোমাকে এখন নিজের ছেলের বউ মনে হচ্ছে আমার
.
স্পর্শ যদি আমার সত্যিকারের ছেলে হতো তাহলে তোমাকে আমি সাথে সাথেই মেনে নিতাম

রিমঝিম টেবিলের এক কোণায় মানে যে সিটে স্পর্শ বসেছে সেখানটায় দাঁড়িয়ে বাবাকে আর চাচাকে সব এগিয়ে দিচ্ছে
.
স্পর্শ হাত একটু এগিয়ে নিয়ে রিমের আঁচল মুঠো করে ধরে চুপচাপ খাবার খাচ্ছে নিজের
বারবার টান খাওয়ায় রিম টের পেলো স্পর্শ ঠিক কি করছে,রিম ও ভালো মানুষের মতন সবার দিকে তাকিয়ে থেকে হাত নিচ দিয়ে নিয়ে আঁচল ছুটানোর চেষ্টা করছে অযথা
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৪৬
Writer-Afnan Lara
.
আঁচলটা একটানে ছুটিয়ে ফেললো রিমঝিম,তারপর বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ
স্পর্শ এমন ভাব করছে যেন সে কিছুই জানে না

বাবা নাস্তা শেষ করে বেশ একটা তাড়াহুড়ো নিয়েই চলে গেলেন তার কাজে,স্পর্শ রিমকে নিয়ে বাসায় ফিরে এসেছে,এখন তৈরি হচ্ছে অফিস যাওয়ার জন্য
রিম কোমড়ে হাত দিয়ে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো স্পর্শকে যে তখন এমন করলো কি জন্যে
স্পর্শ তখন টাই বাঁধছিলো,রিমের এমন প্রশ্নের জবাবে সে জাস্ট রিমের হাতের কব্জিটা ধরে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে বললো”পারলে আরও অনেক কিছুই পারি,১০০ওভার হয়ে গেছে কিন্তু খুকি!!একটু সাবধানে থেকো,কেমন?”
.
রিম একটু পিঁছিয়ে গিয়ে তব্দা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ তারপর কিসব ভাবাভাবি শুরু করে রান্নাঘরে চলে আসলো
স্পর্শ মুচকি হেসে নিজের কাজে মন দিয়েছে,মেয়েটাকে ভয় দেখাতে সেই রকম মজা লাগে,খুব খুব ভালো লাগে
যখন বোকার মতন দাঁড়িয়ে থাকে তখন তার মুখটা দেখার মতন হয়,হাহাহা!!
.
স্পর্শ হাসতে হাসতে বাসা থেকে বের হলো অফিস যাবে বলে
কাল বাদে পরশু বেতন পাবো,সেটা দিয়ে ড্রেসিং টেবিল আর নয়ত একটা খাট কিনতে হবে,ফ্লোরে আর কত শুবো??
বেতন পাবো বিশ হাজার,খাটের দামই হবে ষোল হাজারের মতন
বাকি চার হাজার দিয়ে কি করবো,অবশ্য মা যে টাকা দিয়েছে তাতে করে আমার আরও ছয় সাত মাসেও বেতনের দিকে তাকাতে হবে না
.
রিমঝিম রান্নাঘরে বসে বসে তরকারি কাটছিল হঠাৎ দরজায় নক হতে থাকলো চার পাঁচবার করে
রিম কিছুটা ভয় পেয়ে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো কিন্তু খুললো না
পরে স্পর্শর গলা শুনে খুললো সে,স্পর্শ বিচলিত হয়ে আছে
ও যাওয়ার এক ঘন্টাও পূর্ন হয়নি এত জলদি আসাটা কেমন যেন লাগছে
রিম চিন্তিত হয়ে বললো”কি হয়েছে আপনার??এরকম ঘামাচ্ছেন কেন??কি হয়েছে?”
.
রিম রিম আসলে তোমার বাবা!
.
আমার বাবা??কি হয়েছে বাবার?
.
তোমার বাবার হার্ট এ্যাটাক হয়েছে,জলদি চলো হসপিটালে,আঁখির ফোন এসেছিলো
.
রিম আর কোনোদিক না ভেবেই স্পর্শর সাথে ছুটলো,পথে কাঁদতে কাঁদতে অবস্থা বেহাল হয়ে গেছে ওর
বাবা বাবা করে কেঁদেই যাচ্ছে সে
স্পর্শ রিমকে হসপিটাল অবদি এনে বললো “আমি সহ গেলে রিহাব সবটা বুঝে যাবে,আগে তুমি যাও বরং”
.
রিম দৌড়ে করিডোরে এসে যেই না রুমে ঢুকতে যাবে ঠিক সেই মূহুর্তে রিহাব এসে থামলো,ওর চোখে মুখে শক্ত শশক্ত ভাব,মনে হয় এই বুঝি মানুষ খুন করে ফেলবে সে
.
রিম কেঁদে কেঁদে বললো”বাবা কেমন আছে?আর মা কোথায়??”
.
তুই কোন অধিকারে এখানে এসেছিস??কোন অধিকারে!!!!!
.
রিম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে,মা চোখের পানি মুছতে মুছতে হসপিটালের রুম থেকে বেরিয়ে রিমকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লেন,তারপর কাছে এসে রিমকে যত পারলেন চড় মারলেন,মারতে মারতে ঝাঁকিয়ে বললেন”এসবের জন্য জন্ম দিয়েছিলাম তোকে??তোর আবারও চলে যাওয়ার কথা শুনে আজ তোর বাপের এই হাল,তুই দায়ী!!!
এমন মেয়ে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো
এখন আর কেন এসেছিস??বের হয়ে যা,আর কোনোদিন তোর এই মুখ আমাদের দেখাবি না,কলংকিনি!”
.
রিমকে এক ধাক্কা মেরে মা দূরে সরিয়ে দিলেন,রিম দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ছলছল চোখে চেয়ে আছে রিহাব আর তার মায়ের দিকে
ওপাশ থেকে বাবার মৃদু আওয়াজ ভেসে আসছে
বাবা রিমকে ডাকছেন বারবার,ডাক শুনেই রিম দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো বাবার কাছে
বাবা হাত দিয়ে ওকে কাছে ডাকছেন,রিম কাঁদতে কাঁদতে কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বাবার হাতটা শক্ত করে ধরলো,বাবা চুপ করে ওর মুখের দিকে চেয়ে আছেন,তারপর চোখ বন্ধ করতেই তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো,,আবারও চোখ খুলে তিনি বললেন”মা রে,আর কটা দিনই না বেঁচে আছি,রিহাবকে নিয়ে চিন্তা নেই,কিন্তু তোকে নিয়ে বড্ড চিন্তা হয়,আর আজ এই হাল আমার হলো,,মরার আগে তোকে একটা ভালো দায়িত্ববান ছেলের হাতে তুলে দিতে পারলে মনটা শান্তি পেয়ে যেতো,আমার কথা রাখবি বল?নাকি আবারও চলে যাবি আমাদের ছেড়ে?”
.
রিমঝিম রোবটের মতন দাঁড়িয়ে আছে বাবার মুখ চেয়ে,,রিহাব কাছে এসে শক্ত গলায় বললো”বাবা তোমার দেওয়া কথা যদি ও রাখতে চায় তবে বলো ওকে নিসাদ সব জেনেও ওকে বিয়ে করতে রাজি,,ওর ছবি দেখিয়েছি আমি
নিসাদের পরিবারকে বললে তারা এই বৃহস্পতিবার আসবেন,ওকে দেখবেন তারপর পছন্দ হয়ে গেলে পরেরদিন শুক্রবারে ওর আর নিসাদের বিয়েটা দিয়ে দেবো,ছোটখাটো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে,নিসাদ বলেছে ওকে বিয়ের পর পড়াবে,রাজি থাকলে বলো আমাদের সাথে থাকতে নাহলে যেন এই মুখ আর আমাদের না দেখায়”
.
রিম ভাবছে তার বিয়ের কথা এখন বলা কোনো মতেই সম্ভব না,কিন্তু এখন সে কি করবে??
মুখে হাত দিয়ে করিডোরে চলে আসলো রিম,মা রিমকে আসতে দেখে ভেতরে চলে গেলেন,করিডোর ফাঁকা,তামিম মনে হয় আসেনি এখানে
রিম ফ্লোরে বসে কেঁদে কেঁদে ডান পাশে তাকাতেই দেখতে পেলে স্পর্শকে,স্পর্শ ইশারা করে জিজ্ঞেস করছে সব ঠিক আছে কিনা
রিম নিচ থেকে উঠে দৌড়ে গিয়ে স্পর্শকে জড়িয়ে ধরলো
.
স্পর্শ ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো”তোমার বাবা সুস্থ আছেন তো??সব ঠিক হয়ে যাবে,চিন্তা করো না রিম”
.
রিম স্পর্শর বুক থেকে মাথা সরিয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো”বাবা আমাকে আরেকটা ছেলেকে বিয়ে করার কথা বললেন,ভাইয়া বললো রাজি না হলে আর যেন তাদের মুখ না দেখাই”
.
স্পর্শর হাত রিমের হাত ছুঁয়ে ছিল এতক্ষণ,এখন সে হাত সরিয়ে ফেলেছে কথাটা শুনে
.
রিম মুখটা খুললো আরও কিছু বলার জন্য কিন্তু
তার আগেই স্পর্শ রিমের গলা থেকে চেইনটা খুলে নিলো,,একটু পিছিয়ে দাঁড়ালো সে
তারপর বললো”ভুলে যাও এতদিন কি হয়েছিলো,বিয়েটার কথাও ভুলবা,আমরা এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জেদ ধরলে মাঝখান দিয়ে তুমি তোমার বাবাকে হারাবে,পরিবার হারাবে,আমি সেটা কিছুতেই হতে দিতে চাই না
আমি এসব জানতাম বলেই কখনও তোমাকে বিয়ে করতে চাইনি,ভাবতাম ও না এ বিষয়ে,আর সেদিন বিয়েটাও করতে চাইনি আমি
এখন দেখলে তো!
.
আপনি এসব!
.
ব্যস রিম,,পরিবারকে কষ্ট দিয়ে আমরা কখনওই সুখী হতে পারবো না,আর তোমার বাবাকে আজ এই সত্যিটা জানালে কি থেকে কি হয়ে যেতে পারে তা ভেবেছো একবারও?তখন তো দোষ আমার উপরেই পড়বে
তার চেয়ে বরং তারা যে ছেলের সাথে বিয়েটা দিতে চায় করে ফেলো!
তোমাকে আমি না কিস করেছি না অন্য কিছু,তুমি এখনও ভার্জিন,আর কোনো চিন্তা না করে বিয়ে করে ফেলো
.
আমাকে কবুল বলার আগেই আপনি সেই ছেলেকে উধাও করবেন বলেছিলেন সেটার কি হলো?
.
ততদিন কথাটা সঠিক ছিল,প্রযোজ্য ছিল,কিন্তু আজ পরিস্থিতি পুরো উল্টো,, বিষয়টা তোমার বাবাকে ঘিরে
.
আমি অন্য একটা ছেলেকে কি ভাবে?
.
রিম তুমি তো আমাকে ভালবাসো না,তাহলে তোমার তো কোনো সমস্যা হওয়ারই কথা না, আর হ্যাঁ আমি তোমায় তালাকনামা রেডি করে দেবো,দেরি হলেও দেওয়া যাবে,ডোন্ট ওয়ারি
.
রিম রাগে গজগজ করতে করতে বাবার রুমের সামনের সিটে এসে দপ করে বসে পড়েছে
স্পর্শ চলে গেলো সেখান থেকে,রিহাব হসপিটাল রুম থেকে বেরিয়ে করিডোরের সিটে রিমকে দেখতে পেয়ে খুশি হলো,তারপর পকেট থেকে ফোন বের করে নিসাদকে কল করলো বিষয়টা জানাতে
.
রিমের চোখের পানির বাঁধ মানছে না কিছুতেই,জীবনে এত কান্না সে করে নাই
বাবার শরীর খারাপ এই ভেবে নয় বরং এত বড় ডিসিশানের মুখোমুখি হয়েছে সে কারনে
বিবাহিত হওয়ার পরেও তাকে আরেকটা ছেলে বিয়ে করবে,আর যে তার আসল স্বামী সে নিজেই বলছে করে নাও বিয়েটা
কি সহজ তাই না???,লোকটার কাছে আমার ফিলিংসের কোনো দাম নেই,মুখে মুখেই আমার জন্য সাইকো ছিল এতদিন,আর এখন যখন খুব দরকার পড়লো তার তখন উনি সাইকো থেকে বোকা,সৎ সহজ সরল পুরুষ হয়ে গেলেন,আদর্শবান ছেলে,নিজের বউকে আরেকটা ছেলের সাথে বিয়ে দেবেন
আরে কিস করে নাই তো কি???এই যে কোমড়ে টাচ,জড়িয়ে ধরা,নেক কিস এসব কি???এসবে তো আমি অর্ধেক আনভার্জিন হয়ে গেসি এসব ভাববে না???

স্পর্শ হাতে ব্যাগ নিয়ে বাড়ি ফিরছে,,বাড়ি থেকে অফিস যাবে এখন থেকে
একলা ফ্ল্যাটে আর থাকবো না,আর রিমের বিয়েটাও তো দেখতে হবে
মেয়েদের স্বামী আরেক বউ ঘরে আনলে তাকে বলে সতীন
আর আমার তো বউ আরেক বিয়ে করে স্বামী আনবে তাহলে সে কি হবে সতান??আই মিন শয়তান??
যাই হোক,,বাসায় ফিরে মায়ের কোলে মাথা রেখে এক ঘুম দেবো,শরীর টায় একটু স্বাধীনতা দরকার
প্রচুর ডিপ্রেশনে আছি আমি,একটু রিল্যাক্স হওয়া জরুরি,তারপর যা হবে দেখা যাবে
.
স্পর্শ বাড়ি ফিরে নিজের রুমে এসে ব্যাগ বিছানার উপর রাখলো,তারপর গায়ের শার্টটা খুলে পকেট থেকে একটা সিগারেট নিলো খাওয়ার জন্য
এতদিন ভেবেছিলাম রিমঝিমের নেশা নেওয়া ধরলে এই নেশায় আর হাত লাগাবো না,আর এখন মনে হচ্ছে এরে নিয়েই সংসার পাততে হবে,রিম আমার কপালে থেকেও নাই
সিগারেট মুখে তুলে লাইটার দিয়ে যেই না ধরাবে আগুন তার আগেই নজর গেলো তার রিমের রুমের দিকে
রিম মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে আছে জানালার গ্রিল ধরে
.
স্পর্শর কষ্ট হলো রিমের এমন হাল দেখে,পরে কিসব ভেবে সে রুম থেকে চলে গেলো
রিমের খুব রাগ হচ্ছে কিন্তু কিছুই করার নেই তার,,জানালার পর্দা টেনে গাল ফুলিয়ে বসে থাকলো সে বিছানায়
তামিম মরাকান্না জুড়ে দিয়ে এগিয়ে এসে রিমের গলা জড়িয়ে ধরে কান্নার সাউন্ড আরও বাড়িয়ে দিলো
রিম তার মনের কষ্ট একপাশে রেখে তামিমকে জিজ্ঞেস করলো সে এমন মরা কান্না কাঁদছে কি জন্যে
.
তামিম নাক মুছতে মুছতে বললো তার ক্যাকটাস গাছের টবটা উধাও ছাদ থেকে তাই সেই শোকে কাঁদছে
রিম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো আরেকটা কিনে দেবে
তামিমকে সান্ত্বনা দিতে দিতে আবারও জানালা দিয়ে স্পর্শর রুমের দিকে তাকালো রিম
আগে এই রুমটার দিকে ভুলেও তাকাতো না সে,আর আজ বারবার ঐ রুমটার দিকেই চোখ চলে যাচ্ছে,সেই লোকটাকে দেখতে বারবার মন চাচ্ছে,আমাকে এত এত ভালোবেসে এখন দূরে ঠেলে দিলো এক মূহুর্তেই
অবশ্য উনাকে দোষ দিচ্ছি কেন,উনি তো আমার বাবার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন
বাবাকে বুঝালে হয়তবা বুঝতো
.
রিম তামিমকে সরিয়ে বিছানা থেকে নামতেই মা আর রিহাব এসে হাজির ওর সামনে
রিহাব আবারও সেই শক্ত গলায় বললো”বাবার কথা রেখেছিস ভালো কথা,বাবার কথার বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে কিছু বোঝানোর চাপ প্রয়োগ করলে খুব খারাপ হয়ে যাবে তোর রিম”
.
রিম আর কিছুই বলতে পারলো না,আবারও চুপ করে বসে থাকলে বিছানায়,,ওদিকে আজ ইচ্ছে করেই স্পর্শ তার রুমে আসছে না,কলিংবেল এক নাগাড়ে বেজেই যাচ্ছে সেই কখন থেকে
স্পর্শ সিগারেটের শেষ অংশ জানালা দিয়ে ফেলে গেলো দরজা খুলতে,দরজা খুলতেই সে দেখলো ওপাশে একটা আস্ত জোকার দাঁড়িয়ে আছে মনে হচ্ছে
একটা চিকন মেয়ে,লম্বা ৪ফুট ৫ইঞ্চি হবে,,,দুই হাতে চার ডজন চুড়ি, গলায় ঝিনুকের মালা,চুলে কাঁচা ফুল গুজানো
সে স্পর্শকে দেখে মাথায় ঘোমটা দিয়ে নিচে বসে গিয়ে সালাম করা শুরু করে দিয়েছে
স্পর্শকে মনে হয় কেউ কারেন্টের শক দিয়েছে,,,সে এক প্রকার লাফিয়ে দূরে সরে গেলো,সাথে ভয় ও পেলো কিছুটা
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৪৭
Writer-Afnan Lara
.
আশ্চর্য!! কে তুমি??এমন বিহেভ করছো কেন?
.
আমি আসলে,মানে আসলে!
.
আসলে কে তুমি?
.
ও তোর হবু বউ রে স্পর্শ,,স্বামীকে সালাম করলো,এরকম ভয় পাচ্ছিস কেন?
.
স্পর্শ ব্রু কুঁচকে মায়ের দিকে তাকালো একবার তারপর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো”এরকম সালাম বেশির ভাগ চাচা জেঠাদের করতে দেখেছি,আমি তো তোমার চাচা লাগি,ঠিক আছে,বেঁচে থাকো,ক্লাস নাইনে গোল্ডেন এ প্লাস পাও দোয়া করি,বাই”

কথা শেষ করে স্পর্শ নিজের রুমে চলে আসলো
.
মেয়েটা রোবট হয়ে এখনও বাসার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে,তার হবু স্বামী কিনা তাকে ভাইয়ের মেয়ে বানিয়ে দিলো?
.
আরে নিশু এসব মাথায় নিও না,চলো তো, আজ তোমার হাতের রান্না খাব আমি

মেয়েটা এবার ভাবনা চিন্তা থেকে বাইরে এসে রোকসানা বেগমের সাথে রান্নাঘরে চলে গেলো
.
নাও এবার আমাকে নুডুলস পাকোড়া আর চা বানিয়ে খাওয়াও তো মা
.
রোকসানা বেগম মেয়েটার মুখের ভাবগতি দেখে তব্দা খেয়ে গেলেন,মনে হচ্ছে মপয়েটা এমন নাম এই প্রথম শুনেছে
.
কি হলো নিশু??পারো না?
.
পারি তো
.
তাহলে?
.
খেতে পারি,রাঁধতে পারি না,অনেকবার খেয়েছি,আপনি বানালে উপরে সস ও দিয়েন,আরও ভাল্লাগবে
.
রোকসানা বেগম যেন আকাশ থেকে পড়লেন,ঢোক গিলে পা পিছিয়ে পিছিয়ে এক দৌড় আঁখির রুমে চলে এলেন তিনি,,তারপর আঁখিকে ডেকে তুললেন,কারণ আঁখি দুপুরের ঘুম ঘুমাচ্ছিলো
.
কি হলো মা?
.
নিশু যে ভালো রান্না জানে এই খবর তোকে কে দিয়েছিলো রে?
.
আঁখি বালিশ কোলে নিয়ে আবারও শুয়ে পড়ে বললো”কে আবার,ওর মা আছে না?? তার নানুর বাসার পাশের বাসায় এক মহিলা থাকে তার চাচাতো বোন বলেছিলো মেয়েটা হেব্বি রান্না জানে
.
কি কি কি??কে??এসব আবার কি,মেইন মেয়ের মায়ের থেকে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল তোর
.
মেয়ের মা বুঝি বলবে আমার মেয়ে রান্না জানে না
খবর নিতে হলে আশেপাশের এরিয়া থেকে নিতে হয়,ইউ হ্যাভ টু বুঝতে হবে
.
ওহ!কিন্তু মেয়ে তো রান্না জানে না
.
নুডুলস ও রাঁধতে জানে না নাকি?
.
না,ধুর ছাই,আমার ছেলের জন্য কি মেয়ের অভাব পড়েছিলো?
.
নিশু দরজার কাছে এসে চোরের মতন দাঁড়িয়ে থেকে বললো”আন্টিইইই নুডুলস পাকোড়া বানাবেন না?”
.
রোকসানা বেগম দাঁতে দাঁত চেপে চলে গেলেন নিজের রুমের দিকে,আঁখি ও লেপ টেনে শুয়ে পড়েছে,নিশু এবার গেলো স্পর্শর রুমের দিকে
স্পর্শ ও দরজা লাগিয়ে রেখেছে

রিমঝিম বাবার হাত ধরে বসে আছে চেয়ার নিয়ে,বাবা ঘুমাচ্ছেন,রিম বাবার হাতের আঙ্গুল গুলোতে ম্যাসেজ করছে আর ভাবছে স্পর্শের কথা,স্পর্শ হুট করে সব কিছু থেকে কি করে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারে?
আমার কেন যেন মনে হচ্ছে যা হচ্ছে তা ঠিক হচ্ছে না,কিন্তু স্পর্শ তো দেখি অলরেডি আমাকে এভয়েড করা শুরু করে দিয়েছে,আমার কি করা উচিত,,চিৎকার করে কান্না করতে চেয়েও পারছি না আমি,সব কিছু অসহ্যকর মনে হচ্ছে বার বার

এই এই!
.
স্পর্শ বিছানার মাঝখানে বসে সিগারেট খাচ্ছিলো,কারোর এই এই শুনে মাথা বাঁকিয়ে রিমঝিমের রুমের দিকে তাকালো সে
তামিম গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে
.
কি ব্যাপার শালাবাবু??
.
তুমি জানো রিম আপুর বিয়ে
.
জানি
.
তোমাকে এতদিন মিস করেছিলাম আমি,ও হ্যাঁ জানো আমার ক্যাকটাস গাছটা চুরি হয়ে গেছে,আমি তাই মন খারাপ করে বিকাললের চকলেটটা খাইনি এখনও
.
আহালে,আচ্ছা আমি একটা এনে দিব
.
তাও তো আর আমার আগের গাছটা ফিরে পাব না,তুমি বরং আমার গাছটাই খুঁজে দাও
.
তোমার এ কাঁটা ওয়ালা কাছ আমি কই পাবো?
.
তুমি চাইলে আমি তোমার গোয়েন্দা দলের এ্যাসিস্টেন্ট হতে পারি
.
বাপ রে বাপ,আজকালকার ছেলে মেয়েরা কি পাকা পাকা কথা বলে,ঠিক আছে,সন্ধ্যা বেলায় আমি বাসা থেকে বের হয়ে পুরো ছাদ খুঁজে দেখব পাই কিনা
.
আচ্ছা,ভাইয়াবাবু
.
ভাইয়াবাবু কি আবার?
.
তুমি আমাকে শালাবাবু বলো,আর তুমি আমার ভাইয়া,তাই আমিও ভাইয়া বাবু ডাকবো
.
ওরে শাবানা!!!যা এখান থেকে,মেজাজ খারাপ করিস না,বরং তোর আপুরে চকলেট একটা দিয়ে আয়,বেচারি মনে হয় এখনও কাঁদছে,আর আমি যে বলছি চকলেট দিতে সেটা আবার বলিস না তাহলে তোর ক্যাকটাস গাছ পেয়েও তোকে দিব না
.
আচ্ছা আচ্ছা

রিম??আসার পর থেকে তোকে কিছুই খেতে দেখিনি আমি,কদিন বাদে ছেলের পরিবার আসবে তোকে দেখতে,চেহারার এমন হাল করলে চলবে??না জানি আবার ছেলের মা বাবা রিজেক্ট করে,ইচ্ছে করেই এমন করছিস তাই না??যেন ওরা তোকে পছন্দ না করে?
ওগো শুনো তোমার মেয়ে কি করতে চায়!
.
মা প্লিস,এতটা জঘন্য হইও না,আমি খাব এখন,তাও বাবাকে এর মাঝে জড়িয়ে ফেলো না
কথাটা বলে রিম হনহনিয়ে দরজা খুলে ছাদের দিকে চলে গেলো
স্পর্শ আর তামিম মিলে ছাদের কোণায় কোণায় ক্যাকটাস গাছটা খুঁজছে,রিম ছাদে এসেই স্পর্শকে দেখে হাঁটার গতি বাড়িয়ে স্পর্শর কাছে চলে আসলো,স্পর্শ রিমকে দেখে চমকে গেছে,তারপর মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে সে বললো”তামিম পেয়েছো?”
.
না তো,আরে রিম আপু ভালো করেছো এসেছো,আমার গাছটা খুঁজো দাও
.
রিম স্পর্শর চোখে চোখ রেখে চুপটি করে আছে,তারপর শান্ত গলায় বললো”রিনতিকে দেখেছি দরজা খুলে বারবার এদিক ওদিক চোরের মতন ঘুরাফিরা করতে,এই কাজ ওরই হতে পারে,ওর বাসায় গিয়ে দেখ যা”
.
তামিম তো রিমের কথা শুনে এক দৌড় দিলো
রিম একটু এগিয়ে এসে বললো”আপনি এমন কেন করলেন?”
.
কি করলাম?আমার না অনেক কাজ আছে,বাসায় মেহমান,আসলে যার সাথে মা আমার বিয়ে ঠিক করেছে সে এসেছে,ছোট মানুষ,হয়ত আইসক্রিম পেলে মহা খুশি হবে,আমি বরং যাই ওর জন্য কিছু নিয়ে যাই
.
থামুন!আমি কেউ না আপনার কাছে??তাহলে ওভাবে ছুঁয়েছিলেন কেন বলুন!কি দরকার ছিল আমাকে সেসব অনূভুতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার??
.
সেটার জন্য সরি,আমি কি জানতাম শেষ সময়ে এসে তোমার বাবার এমন একটা ঘটনা ঘটবে আর তোমার থেকে এমন কিছু চেয়ে বসবেন তিনি,আমার কি করার বলো??অবশ্য তোমার ও তো কিছু করার নেই,তোমার বাবা আর ভাইয়া তো আমাকে পছন্দই করে না
.
আপনি বেইমান!!!আপনি একটা স্বার্থপর!!!
.
স্পর্শ ছাদের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চুপ করে,,
রিম কেঁদে ফেললো,চোখের পানি মুছতে মুছতে নিচে বসে গেলো সে,তারপর কান্নাটা একটু থামিয়ে মুখ তুলে বললো”যদি ঐ মেয়েটার সাথে বিয়ের নাম ও নিয়েছিস তো দুটোকে কেটে নদীর জলে ভাসি দেবো!”
.
স্পর্শ হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে,রিম ওর কোনো উত্তর না পেয়ে উঠে চলে গেলো হনহনিয়ে,বাসায় ঢুকার আগেই দেখলো রিনতি আর তামিম ঝগড়া করছে,দুজনের হাতের মাঝখানটায় ক্যাকটাস গাছটা টানাপোড়ায় আছে,তামিম এদিকে টানছে,রিনতি ওদিকে টানছে
.
রিমঝিম এখন এদের ঝগড়া থামানোর মুডে নেই বলে দরজা খুলে বাসার ভেতর চলে গেলো সে
.
স্পর্শ ও যাচ্ছিলো,এমন তুমুল ঝগড়া দেখে থেমে গেলো সে
কিছু একটা করে পরিস্থিতি সামলাতেই হবে,দুটোই মিলে যে ঝগড়া শুরু করেছে বাপরে বাপ
থামো তোমরা!!!টবটা আমাকে দাও
.
আঙ্কেল এটা আমার টব
.
এটা আমার টব
.
ওকে আমি ডিসাইড করবো টবটা কার,,দেখি তোমরা দুজনের মধ্যে একজন এমন একটা ক্লু দাও যেটাতে বিশ্বাস করা যায় এটা তোমাদের মাঝে একজনেরই গাছ.
.
রিনতি তো মহা ভাবনায় পড়ে গেলো
.
তামিম ও ভাবছে
.
হঠাৎ তামিম চেঁচিয়ে বললো”সে জানে গাছটায় কতগুলো কাঁটা আছে,কারণ রিনতির গায়ে ফোঁটানোর আগে সে কাঁটা গুনে রাখতো
তা শুনে রিনতিও চেঁচিয়ে বললো সে ও জানে
.
ওকে ফাইন,রিনতি বলো কয়টা কাঁটা আছে
.
হুমমমমম,৫টা
.
তামিম দাঁত কেলিয়ে বললো”সাড়ে ১৬টা”
.
সাড়ে মানে?
.
মানে একটা ভাঙ্গা
.
ওহ তাই,ওকে আমি গুনতেছি
স্পর্শ গুনে গুনে দেখলো সত্যি তাই,রিনতি চোরের মতন মুখ করে জিততে পারলো না দেখে ভ্যাত করে কেঁদে দিলো,পুরো দালান কাঁপছে তার কান্নায়,স্পর্শ তামিমের হাতে টবটা ধরিয়ে দিয়ে বললো এখন থেকে এটা রিমের বারান্দায় রাখতে,ছাদে রাখলে আবারও চুরি হবে,তারপর সে চলে গেলো
তামিম জলদি করে বাসায় চলে আসলো,বাহিরে বেশি থাকা সেফ না
রিম গাল ফুলিয়ে জানালার গ্রিল ধরে স্পর্শর রুমের দিকে এতক্ষণ চেয়ে ছিলো,কিসব মাথায় আসতেই পর্দা ভালো পরে টেনে দিয়ে সে তার বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো,মা খাবার এক প্লেট টেবিলের উপর রেখে গেছেন সেই কখন,রিমের একটুও খিধে পায়নি,সকাল থেকে যা যা হচ্ছে তাতে পেট ভালোমতন ভরে গেছে,আর কিছু খাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না
কিন্তু মনে হয় খেতে হবে তা নাহলে মা আবার আরেকটা কথা বলে মনে কষ্ট দেবেন,এমনিতেও কম কষ্ট পাচ্ছি না আমি

স্পর্শ বাসায় ঢুকতেই দেখলো মা এক প্যাকেট বরফ মাথায় দিয়ে বসে আছেন,আর মাঝে মাঝে বলছেন”কেয়া কারু মে মারজাঁউ??”
.
একি মা কি হয়েছে তোমার??এত শীতের ভেতর মাথায় বরফ দিয়ে রাখছো কেন?শরীর ঠিক আছে তো তোমার?
.
মা মুখ তুলে চেয়ে ভ্যা ভ্যা করে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন,তারপর চোখের পানি টিস্যু দিয়ে মুছতে মুছতে বললেন”এর চেয়ে ঐ রিমই ভালো ছিলো,তোর কপালে এসব কি জুটাচ্ছি আমি,এদিক আছে তো ওদিক নাই,হায়রে কপাল আমার,নিজের ছেলের জন্য সুপাত্রী খুঁজতে হিমশিম খেতে হচ্ছে,কি দিনকাল আসলো রে বাবা কি বলবো তোকে
.
স্পর্শ মুচকি হাসলো তারপর একটাভাব নিয়ে বললো”ঐ রিমঝিমের তো বিয়ে”
.
মা করুন দৃষ্টিতে টাইলসের দিকে চেয়ে থেকে বললেন”স্বর্ন খোয়ালে এর মর্ম বোঝা যায় রে”
.
কি আর করার বলো,,তোমার কথা রাখতেই তো আমি রিমকে ভুলে থাকার চেষ্টা করেছি এতদিন,আর এখন তুমি আবার?
.
এখন আর ঐ রিমকে চেয়েও কি লাভ,যা হবার তা তো হতে চলেছে,সবই পোড়া কপালের পরিণাম,আহারে আহারে,আজ একটা সিরিয়াল শেষ হয়ে গেলো সেই কষ্টে ডিপ্রেশনে ছিলাম এর ভেতরে ঐ নিশুর স্বভাব দেখে মনে হচ্ছে আকাশ থেকে পড়ে খেজুর গাছে আটকে গেছি
.
ঐ মেয়েটা যায়নি?
.
কচু যাবে,একটা আস্ত জোঁক,বাসার সব খাবার খেয়ে চলেছে, যাওয়ার নামই নিচ্ছে না,ওর মা এক ঘন্টা পর এসে ওকে নিয়ে যাবে,তোর নাম নিচ্ছে মেয়েটা,তোর সাথে কথা বলতে পাগল হয়ে গেছে
.
আমি এর মাঝে নেই,বাই,রুমে ঢুকে দরজা অফ করবো,ঐ মেয়েটা গেলে তারপর আমাকে ডাকবা,তার আগে না
.
হুম তা তো বুঝলাম কিন্তু এই খাদক মেয়ে তো ততক্ষণে আমার বাসা মরুভূমি বানিয়ে দেবে রে
হায় হায় রে,খাল কেটে কুমির এনেছি আমি,হায় হায়
.
স্পর্শর খুব হাসি আসছে কোনো রকমে হাসি আটকিয়ে সে নিজের রুমে চলে আসলো,আশিককে একটা কল করতে করতে ফোনটা কানের সাথে লাগিয়ে সিগারেট একটা মুখে দিলো সে
বারান্দায় যেতে যেতে রিমঝিমের জানালার দিকে এক নজর তাকিয়ে দেখলো রিম জানালা বন্ধ করে রেখেছে,কাঁচের ওপাশে পর্দাটাও টেনে রেখেছে,বোঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে