তোমার জন্য সাইকো পর্ব-২২

0
2166

তোমার জন্য সাইকো
লেখক: নুসরাত জাহান অংকুর
পার্ট_২২

মুন তাকিয়ে দেখে ইয়াস আর পিয়ালী হাত ধরে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হচ্ছে।

মুনের দেখে খুব খারাপ লাগলো।
মুন কিছুক্ষণ ওদের দিকে তাকিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।



মুন বাড়ি পৌঁছে ওর মামনির রুমে গেলো।
মুন: মামনি আসবো?
রাইমা: আরে আয় তোর আবার পারমিশন লাগে
মুন: না তোমাকে কিছু বলার ছিল?
রাইমা: হা বল কি বলতে চাস?
মুন: মামনি আমি এখানে থাকবো না আমি বাড়ি যেতে চাই
রাইমা: কেনো রে কোনো সমস্যা ?
মুন: না মামনি কিন্ত আমি আমার বাড়ি যেতে চাই রোদকে ছাড়া আমার কিছু ভালো লাগছে না। ওই বাড়িতে থাকলে রোদের জিনিস পত্রের সাথে দিন পার হয়ে যায় কিন্ত
রাইমা: তোর পাপাই
মুন: আমি ওতো কিছু জানিনা এখনই আমি ওই বাড়ি যাবো।
রাইমা: এখনই তোর মাথা কি গেছে ?( রেগে)
মুন: মামনি প্লিজ তুমি তো আমাকে বুঝো আমি এখানে থাকবো না।

এখানে কি করে থাকবো চোখের সামনে দেখতে পারবো না আমি যদি বাড়ি ছেড়ে যাই উনি যদি সত্যি রোদ হয় তাহলে ঠিকই আসবে ( মনে মনে)

রাইমা: তোর যা ভালো লাগে তাই কর। কিন্ত এখন কোথাও যাবি না কাল সকাল হোক তখন দেখা যাবে ।

মুন কিছু না বলে চলে গেলো।

রাইমা: এই মেয়েটাকে যে কি করে বুঝাবো ।
বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।

মুন নিজের ঘরে বসে বসে গান শুনছে কাল রাতের কথা মুন কিছুতেই মুছে ফেলতে পারছে না ওর মনে হচ্ছে ওর ভালোবাসার মানুষ ওর সাথেই আছে শুধু ওকে চিনে নিতে হবে ।

মুন রোদের ছবি বের করে তার সাথে কথা বলছে।
মুন: খুব কষ্ট দিছেন আমায় অনেক কষ্ট দিছেন আমাকে বাদ দিয়ে ওই পেত্নীর সাথে ঘুরাঘুরি এবার বুঁজবেন মজা আপনি যদি সাইকো হন আমি ও সাইকো ওয়াইফ।



রাতে সবাই খাওয়ার টেবিলে বসে আছে ।
মুন এক বারের জন্য ও ইয়াশ এর দিকে তাকায়নি।

ইয়াশ আর পিয়ালির ঢং দেখলে গা জ্বলে যায় ।

মুন ওদের কে just ignore করছে।
ইয়াশ: কি হলো কাল তো আমার পিছনে পড়ে ছিল তাহলে আজ কেনো তাকাচ্ছে না ব্যাপার কি ( মনে মনে)
পিয়ালী: কি হলো বাবি খাচ্ছ না কেনো?
ইয়াশ: খাচ্ছি তো

মুন উঠে গেলো।
নিহাল: কি ব্যাপার মামনি উঠে গেলে কেনো?
মুন: পাপাই আমার একটা ফ্রেন্ড আরুশ এর কাছ থেকে নোট নেবো । আমার খাওয়া শেষ
( ইয়াশ এর দিকে তাকিয়ে)
নিহাল: আচ্ছা যাও।

মুন চলে গেলো।


রাতে লামিয়ার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে তখনই ওর রুমে ইয়াশ ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিচ্ছে।

মুন তো ওকে দেখে অবাক।
মুন: একি আপনি আমার ঘরে এতো রাতে কি করছেন? একটা মেয়ের ঘরে এতো রাতে আসা ঠিক না আপনি জানেন না। আপনি

আর কিছু বলার আগে ইয়াশ মুনকে দেঁয়ালে চেপে ধরে।
ইয়াশ: কার সাথে কথা বলছিলে হা (রেগে)
মুন : যার সাথে কথা বলি আপনার তাতে কি অন্যের বউ এর গায়ে হাত দিতে লজ্জা করে না কেমন মানুষ আপনি( নিজেকে ছাড়াতে)
ইয়াশ: আমি কেমন মানুষ সেটা তোমাকে দেখতে হবে না কার কাছ থেকে যেনো নোট নিবে বলছিলে আর একবার বলো তো দেখি তোমার সাহস কি করে হয় ( জোরে চেপে ধরে)
মুন: আমি কার কাছ থেকে কি নি আর না নক তাতে আপনার কি কিসের এত অধিকার আপনার আমার উপর আপনি ভুলে যাচ্ছেন আপনার ওয়ুড বিওয়াইফ ওই পাশের রুমে( ইয়াশ কে ধাক্কা দিয়ে)

মুনের ধাক্কা খেয়ে ইয়াশ কিছুটা দূরে যায়।

মুন: এতো শান্ত কেনো ঝড়ের আবাস পাচ্ছি আবার আগের মত সাইকো গিরি শুরু করবে না তো ( মনে মনে)

কিছু ক্ষণ চুপ থেকে মুনের কাছে গিয়ে ওকে দেয়ালে চেপে ধরে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।


।কিছুক্ষণ পর ইয়াশ মুনকে ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে একটা রাগী লুক দিয়ে বলে
ইয়াশ: আশা করি আমার অধিকার আর বুজিয়ে দিতে হবে না আগে ও বলেছি এখন আবার বলছি ছেলদের থেকে দূরে থাকো তোমার উপর শুধু আমার অধিকার ।
বলে চলে যাচ্ছিল।
পিছন থেকে মুন ওর কলার ধরে বিছানায় ফেলে ওর উপরে উঠে বসে ।

মুন: ওই কি ভেবেছেন আপনি হা যখন যা খুশি তাই করবেন। আপনি যা খুশি করবেন আর আমি কিছু করলে সাইকো গিরি শুরু তাই তো কত দিন আমার থেকে দূরে ছিলেন এখন সামনে এসে ও নাটক করছেন আমার কি কষ্ট হয়না । আর ওই এয়ালি না হেইয়ালি
রোদ: পিয়ালী..
মুন: হা ওটাই ওর সাথে এতো কিসের ঢং আর আপনি ওকে বিয়ে করবেন মানে কি হা আমি বেচে থাকতে এমন কিছু হচ্ছে না বুঝছেন। আপনি সাইকো হলে আমি ও সাইকো queen
রোদ: আমি তো তোমার জন্য সাইকো আর তুমি?
মুন: আমি ও আপনর জন্য সাইকো।
আপনি ওকে বিয়ে করলে আমি ও

এতক্ষণ রোদ মুনের কথা শুনছিল কিন্ত এই কথা শেষ হাওয়ার আগে রোদ মুনকে নিচে ফেলে বিছানায় ওর হাত চেপে ধরে। আর রাগী গলায় বলে

রোদ: কি বলতে যাচ্ছিল হা বলো এতো সাহস কে দিচ্ছে কিছু দিন আমি সাথে ছিলাম না বলে অনেক সাহস বেরেছে তাই না তোমার সাহস আমি কুমাবানে ( রাগী চোখ দেখিয়ে)
মুন: যা সাহস বেড়েছে আপনার queen হলে তো একটু সাহস হতে হবে তাই না
রোদ: তোমার সাহস অন্য কোথাও দেখবা আমার সামনে না ওকে।
মুন: হুই
সাইকো
রোদ: তোমার জন্য
বলে রোদ মুনকে ছেড়ে দিল।

মুন রোদকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না।
রোদ ও মুনকে থামছে না।

( হ্যা আপনারা ঠিক ধরেছেন ইয়াশ রোদ। রোদ কেনো এটা করছে সেটা রোদ নিজেই বলুক )


কিছুক্ষণ পর রোদ মুনকে বুক থেকে উঠিয়ে বলে।
রোদ: এই পাগলী কি হয়ছে আমি ত এখানেই আছি কিছু হয়নি চুপ কোনো কান্না না তোমার সাইকো তোমার সাথে আছে তাহলে কাদছ কেনো হুম তুমি জানো না তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারিনা।
মুন তো কেদেই যাচ্ছে।
রোদ: চুপ আর একবার কাদলে কিন্ত পিয়ালির কাছে চলে যাবো।

মুন কিছু না বলে রোদকে মারতে লাগে ।

রোদ: আরে এভাবে কেউ মারে উফফ লাগছে তো।
মুন: লাগুক আপনি আর একবার ওই পেত্নীর কথা বলেন তাহলে আমি আপনাকে মেরে ফেলবো( মারতে মারতে)
রোদ: আমি মরলে তুমি বিধবা হবে
মুন: আপনি খুব খারাপ কেনো এতো কষ্ট দেন আমায় বলুন তো
বলে আবার কাদতে লাগলো

( মুন কিন্ত এই গুন টা আমার থেকে পাইছে আমি ও কিছু হলে আগে কাদি আর যখন খুব রাগ হয় তখন ও কাদি)

রোদ: আরে পাগলী আমি আমার মিষ্টি বউকে ছেড়ে অন্য কারোর কাছে কেনো যাবো। আমি যা করছি সব তোমার আমার ভালোর জন্য ( মুনকে বুকে নিয়ে)
মুন: হা আমাকে কষ্ট দিয়ে আপনার আর আমার ভালো হয়েছে ।
রোদ: উফফ তুমি সব কথা শুনবে তো।
মুন: আচ্ছা সরি বলুন।
রোদ: সেদিন আমি অফিস এর কাজে বাইরে যাই আর আমার গাড়ির ব্রেক ফেল করা ছিল আগে থেকে এটা আমি জানতাম কারণ তোমার উপর আমার লোক লাগানো ছিল । কোয়েক দিন ধরে আমাদের পিছনে লোক ঘুর ঘুর করছিলো কিন্ত তারা জানে না তাদের পিছনে ও আমার লোক ছিল। তাদের মধ্যে একজন কে বন্ধী করে জানতে পারি ওই দিন আমার উপর আক্রমণ হবে ।
গাড়ির ব্রেক ফেল আগে থেকে জানার ফলে আমি সেদিন বেচে যাই আমার গাড়িটা নিচে পরে যায় আর আমি এক পাশে দাড়িয়ে দেখি কিন্ত তারা ও খুব চালাক আমি পাহাড় থেকে উঠে ফিরে আসার সময় তারা আমার উপর গুলি চালায়।
এই দেখো( বলে নিজের শার্ট টা তুলে পেটের দিকে দেখায় মুন দেখে তো অবাক)

সেদিন ওখানে বিপ্লব রহমান ছিল বলে আমি বেচে যাই আর আমার সুস্থ হতে কিছু দিন সময় লাগে ।
আমি তখনই ফিরে আসতে চাইলাম কিন্ত আমার লোকেরা জানায় যে তোমার উপর বিপদ আসছে তাই আমি নিজেকে আড়াল করে তোমার উপর নজর রাখছি।
আর তাদের কয়েক জনকে আমি খুঁজে বের করছি কিন্ত মাষ্টারমাই কে খুঁজে বের করার জন্য পিয়ালির সাথে এই সব।
পিয়ালী সব জানে আর তাদের মধ্যে কাজ করে।
আব্বু আম্মু আগে থেকে সব জানতো কিন্ত তোমাকে বলতে বারন করছি কারণ তোমাকে টেনশন দিতে চাইনি ।
সুস্থ হওয়ার পর প্রতিরাতে আমি তোমাকে দেখতে যেতাম । একবার তো তুমি আমাকে দেখেছো।
বিশ্বাস করো তোমার থেকে দূরে আমি একটু
ভালো থাকতে পারিনি অনেক কষ্ট হতো কিন্ত কিছু করার ছিল না তোমার সব কাজের উপর নজর রাখে তারা তাই তোমার
সামনে আমি যেতে পারতাম না।
সেদিন তুমি আমার ঘরে এসেছিলে আমি তোমাকে সব বলতে চায়ছিলাম
কিন্ত ওখানে পিয়ালী দরজার পিছনে লুকিয়ে ছিল তাই সরি বউ। মাপ করে দাও তোমাকে এতো কষ্ট দেওয়ার জন্য শুধু একজন কে ধরার জন্য।

এখন ও আসল লোককে বের করতে পারলাম না।

মুন কিছুক্ষণ ভেবে বললো।
মুন: চিন্তা করবেন না আল্লাহ আমাদের সাথে আছে আমরা ঠিক আসল লোকটাকে বের করতে পারবো ।
রোদ: হুম আর একটা উপায় আছে কাল পিয়ালী দেখা করতে যাবে তখনই আমরা জানতে পারবো।
মুন: আপনার খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই না?( কিউট ফেস করে)
রোদ: উহু একটু ও না আমার মিষ্টি বউ যে আমার সাথে আছে তার জন্য আমি সব কষ্ট সহ্য করতে পারি।
মুন রোদের গালে হাত দিয়ে ওর কপালে গেলে ভালোবাসার পরশ দিলো।

রোদ: কি হলো আজ এত ভালোবাসা
অনেক দিন পর দেখা সেই জন্য কি ?
মুন: আমি আমার জামাই কে আদর করছি তাতে আপনার কি
রোদ: তাই না
মুন: হা তাই
রোদ: আচ্ছা মেডাম আপনার যদি আদর করা শেষ তাহলে আমি এবার আমার ঘরে যাই ।
মুন: উহু কোথাও যাবেন না এখানে বসে থাকেন এটাই আপনার ঘর ।
এখানে ঘুমান।

এই বলে রোদকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে রোদের বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে পরলো।

রোদ: আরে অনেক কাজ বাকি আছে তো
মুন: কোনো কাজ না কতো দিন আপনর বুকে মাথা দেইনি
রোদ: কালই তো দিলে
মুন: আমি জানতাম ওটা আমার সপ্ন ছিল না।
রোদ: জী মেডাম এবার ঘুমান
মুন: হ্ন

মুন ঘুমিয়ে পরলো আর রোদ মুনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।



রোদ: কি করে সেই লোকটার কাছে পৌঁছাবো মুনকে এভাবে বিপদের মুখে ফেলে দিতে পারিনা না মুনের কিছু হলে আমি থাকতে পারবো না যা করতে হবে খুব তাড়াতাড়ি( মনে মনে)

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে