এক টুকরো আলো পর্ব-১৭+১৮

0
196

#এক_টুকরো_আলো
#পর্ব_১৭
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

কাঁধের দিকে জামা ছিঁড়ে বক্ষবন্ধনীর ফিতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একজন খিকখিক করে হেসে বলল,“দেখ দেখ কালো রঙের।”
কথা শেষ করেই ফিতা ধরে টা*ন দিয়ে পরপরই ছেড়ে দিল। রাবার জাতীয় জিনিস হওয়ায় তীব্র ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠলো। ফাবিহা অনবরত কেঁদে হাতজোড় করে বলছে,“আমি কী ক্ষ*তি করেছি তোমাদের? দোহাই লাগে আমাকে ছেড়ে দাও!”

অনেকেই হয়তো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না। হয়তো মনে পড়ে গেল আমার মেয়েটাও তো রাস্তায় একা চলাফেরা করে। দোষ যারই হয়ে থাকুক ,আগে মেয়েটিকে রক্ষা করা জরুরি। দুজন মধ্যবয়সী পুরুষ এগিয়ে এসে ধমকে উঠলেন,“কী হচ্ছে কী এখানে? মেয়েটিকে ছাড়ো। বে*য়া*দ*ব ছেলে।”

সুমনের এক বন্ধু বলে উঠলো,“এখান থেকে যান। বীর সাজতে আসবেন না। বাড়াবাড়ি করলে জান নিয়ে ফিরতে পারবেন না।”

লোক দুটো দমে গেলেন না। এখনো মনুষ্যত্ব বেঁচে আছে। ছেলেটির গালে এক চ*ড় বসিয়ে দিলেন সাহস করে। এরপর আরো কয়েকজন এগিয়ে এলো। পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে কিছু যুবক। যেই লোকটি সুমনের বন্ধুর গালে থা*প্প*ড় দিয়েছেন, তিনি হাঁক ছেড়ে বললেন,“না দেখার মতো চলে যাচ্ছো। যখন তোমাদের বোন হেনস্তা হয়, তখন পাশ দিয়ে নির্বিকারে হেঁটে যাওয়া মানুষদের গা*লি দাও। কেন তাঁরা তোমার বোনকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো না? তোমরাই সেই নির্বিকারে হেঁটে যাওয়া ছেলে। লজ্জা হওয়া উচিত তোমাদের। একই মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া মেয়েটাই কেবল তোমার বোন নয়। রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া, ইভটিজিং, ধ*র্ষ*ণে*র শিকার হওয়া মেয়েটাও তোমার বোন। তোমার না হলেও কারো না কারো বোন।”

লজ্জা পেয়ে ছেলেগুলো এবার এগিয়ে এলো। সুমনের ছেলেগুলোকে ঘিরে ধরে কয়েক ঘা বসিয়ে দিল। ফাবিহা শরীরে ওড়না মুড়িয়ে কাঁপছে আর চোখের পানি ফেলছে। কত বড়ো বিপদ থেকে আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছে। এখন একা বাড়ি যাওয়ার মতো শক্তি তার নেই। সুমন এতজনের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারবে না। হয়তো এরা পুলিশ ডাকবে। তাই ছেলেপুলে নিয়ে কেটে পড়লো। একে একে স্থান ফাঁকা হতে থাকলো। দাঁড়িয়ে রইলেন বাবার বয়সি সেই লোকটি। যিনি চ*ড় দিয়েছিলেন। ফাবিহাকে কাঁপতে দেখে তিনি নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,“বাসায় যেতে পারবেন, মামনী?”

ফাবিহা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,“আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ আঙ্কেল। আমার জন্য আরেকটু কষ্ট করতে পারবেন? আমি একা বাড়ি যাওয়ার শক্তি পাচ্ছি না। একটা গাড়ি ঠিক করে দেবেন!”

লোকটি কথা না বলে একটা ট্যাক্সি ডেকে নিলেন। ফাবিহাকে তুলে দিয়ে নিজেও সাথে চড়ে বসলেন। অবাক হলো ফাবিহা। তার চোখে তা স্পষ্ট। লোকটি মৃদু হেসে বললেন,“আপনি মানসিকভাবে এখন দুর্বল। আপনাকে পৌঁছে দেওয়া আমার কর্তব্য।”

ফাবিহা ঢুকরে কেঁদে উঠে বলল,“আপনার এই ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না আঙ্কেল।”

“না কেঁদে শক্ত হওয়া জরুরি।”

ফাবিহাকে তার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিল লোকটি। ফাবিহা বলল,“ভেতরে আসুন আঙ্কেল।”

লোকটি চমৎকার হেসে বললেন,“ বাড়ি চিনে গিয়েছি। অন্যদিন আসবো।”

“প্লিজ আঙ্কেল!”

ফাবিহার অনুরোধে লোকটি ভেতরে এলেন। সবটা শুনে ফাবিহার বাবা অস্থির হয়ে পড়লেন। অসুস্থ হওয়ার লক্ষণ। বিচলিত দেখাচ্ছে ফাবিহার মাকেও। বেশি সময় বসলেন না লোকটি। ফাবিহার বাবার সাথে কিছুক্ষণ আলাপ করে শুধু চা নিয়ে উঠে গেলেন। ফাবিহার বাবা যে মেয়ের জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন, ভালো পাত্র খুঁজছেন সেটাও আলাপের এক পর্যায়ে বলে ফেললেন।

ফাবিহা ভেতর থেকে একেবারে ভেঙে গিয়েছে। তার এখন আর কিছুই ভালোলাগছে না। যে পর্যন্ত না কেউ তার পরিস্থিতিতে পড়ছে, কেউ ভেতরকার কষ্ট অনুভব করতে পারবে না। জীবন একঘেয়ে লাগছে। একটা ঘটনা ঘটার পর সেটা এক কান দুই কান করে ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয় না। এলাকার কারো হয়তো নজরে পড়েছে। সে পুরো এলাকা ঘটনাটি ছড়িয়ে দিয়েছে। অথচ যখন মেয়েটির সাহায্য প্রয়োজন, তখন এগিয়ে আসলো না।

অধিকাংশ লোকজনই এখন কানাকানি করে ফাবিহাকে নিয়ে। মেয়েটার নিশ্চয়ই চরিত্রে দোষ আছে, নয়তো খালাতো ভাই জানাশোনা মানুষের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পরও ছেলেটা কেন বিয়ে করলো না? দুবার বিয়ে ভেঙেছে। এখন ছেলেগুলোর সাথে দেখা গিয়েছে। নিশ্চয়ই কিছু করেছে, নয়তো ছেলেরা একটা মেয়েকে হেনস্তা করার এতো সাহস পায় কোথায়?
রাস্তাঘাটে বের হলেই লোকের কথায় আতাউর রহমান অতিষ্ঠ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। ওনার বুক ব্যথাটা বেড়ে গেল। ফাবিহা বাবার কাছে গেল না। একমনে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে রইলো।

★★★

শাবাব অনবরত হেঁচে যাচ্ছে। সুরাইয়া ছোটো বাচ্চার মতো করে ছেলেকে ট্রিট করছেন। শাবাব মাকে দেখে আর করুণ চোখে তাকিয়ে থাকে। মাকে কিছু বললেও তিনি শুনবেন না। বরং কেঁদে ভাসাবেন। মা কষ্ট পাক সে চায় না। তাই চুপচাপ মায়ের কাছ থেকে যত্ন নিচ্ছে। গোসলের পরপর একটা তোয়ালে দিয়ে চুল মুছে দিয়েছেন ভালো করে। ওটা রেখে আরেকটা শুকনো তোয়ালে নিলেন। শাবাব বলল,“চুলে আর পানি নেই তো মা।”

“তুই চুপ থাক। চুলে পানি থেকে তুই আরো অসুস্থ হয়ে যাবি। তোকে একটা লক্ষ্মী মেয়ে দেখে বিয়ে করাবো। যে আমার মতো তোর যত্ন নেবে।”

শাবাব হেসে ফেললো মায়ের কথা শুনে। হাসি বহাল রেখেই বলল,“আমি তো বিয়েই করবো না।”

সুরাইয়ার হাত থেমে গেল। জহুরি নজর ফেলে বললেন,“একবার না তোর বাবার সামনে বলেছিস বিয়ে করবি? মেয়ে আর মেয়ের বাবা রাজি না কিন্তু তুই রাজি। ওই মেয়ের ঠিকানা দে। দেখি আমার সোনার টুকরো ছেলেকে কে বিয়ে করতে না করে।”

শাবাব কেশে উঠলো। মা যদি সোনার টুকরো ছেলের বাইরের কু*কী*র্তি*র কথা শোনেন। ছেলে কয়টা প্রেম করে বেড়িয়েছে যদি জানেন তবে জায়গায় স্ট্রোক করবেন। সুরাইয়া শাবাবের সাড়া না পেয়ে আবারও চুল মুছতে মুছতে বললেন,“কীরে বল মেয়েটার ঠিকানা।”

শাবাব বলল,“ওটা তো বাবাকে রাগানোর জন্য বলেছি।”

সুরাইয়া বললেন,“যাইহোক, তোর পছন্দ না থাকলেও তোকে বিয়ে করতে হবে। একটা ভালো মেয়ে এনে দেব তোকে।”

শাবাব বলল,“সবাই তাদের ছেলের জন্য টুকটুকে পরী আনতে চায় আর তুমি শুধু ভালো মেয়ে আনতে চাইছো!”

“মেয়ে রূপবতী হয়ে লাভ কী যদি ভালো না হয়? যদি দু’জনের মাঝে সুখশান্তি না থাকে তবে সেই বিয়ের লাভ কোথায়?”

শাবাব করুণ চাহনি দিয়ে বলল,“হয়েছে তো মোছা।”

সুরাইয়া ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললেন। আহ্লাদ করে বললেন,“তোকে আমার এখনো সেই ছোট্ট শাবাবই মনে হয়। একটুও বড়ো হোসনি।”

শাবাব বিড়বিড় করল,“সঠিক বয়সে বিয়ে করলে অন্তত দুটো বাচ্চার বাপ থাকতাম।”

সুরাইয়া শুনতে পেলেন না ছেলের কথা। শাবাবও এমনভাবে বলেছে যেন মায়ের কানে না পৌঁছে।
সুরাইয়া গেলেন ছেলের জন্য খাবার আনতে। ফিরোজ আলম তখন বাড়ি ফিরলেন। শাবাব আজ অসুস্থ। তিনি আগে ছেলেকে দেখতে তার ঘরে গেলেন। সুরাইয়াও খাবার নিয়ে শাবাবের ঘরে এসে ফিরোজ আলমকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,“তোমার আজ এতো দেরি হলো যে?”

ঠোঁট গোল করে নিঃশ্বাস ছেড়ে ফিরোজ আলম বললেন,“আর বলো না! রাস্তাঘাটে আজকাল কোনো মেয়ে নিরাপদ নয়। শাবাবের ভার্সিটি থেকে কিছুটা দূরে একটা মেয়েকে কয়েকজন ছেলে হেনস্তা করলো। আমরা বাঁধা না দিলে মেয়েটা আজ ধ*র্ষ*ণে*র শিকার হতে পারতো। মেয়েটিকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসতেই দেরি হলো।”

শাবাব ভ্রু কুঁচকে বলল,“আমাদের ভার্সিটির কাছে?”

“হ্যাঁ।”

“ওহ্। মা খাবার টেবিলে নিয়ে যাও। বাবা এসে গিয়েছে, সবাই একসাথে খাবে।”

সুরাইয়া তাই করলেন। বাবা-মায়ের সাথে খাবার খেয়ে উপরে উঠে একটা সিগারেট নিয়ে দু-ঠোঁটের ফাঁকে চেপে ধরলো। চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ করে লাইটার অন করে সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া ছাড়লো উন্মুক্ত বাতাসে। ফোন হাতে ফরহাদকে কল দিল। ভার্সিটির সামনে এতবড়ো গ্যাঞ্জাম লাগলো আর সে জানে না? ফরহাদ কল ধরলো।
“আসসালামু আলাইকুম ভাই।”

“আজ ভার্সিটির সামনে কী হয়েছে রে?”
শাবাবের সোজাসাপটা প্রশ্ন শুনে ফরহাদ বলল,“সুমন আর তার ছেলেরা ফাবিহা মেয়েটাকে বা*জে*ভা*বে হেনস্তা করেছে।”

দপদপিয়ে উঠলো রাগ। চোয়াল শক্ত তার।
“তোরা কোথায় ছিলি হা*রা*ম*জা*দা?”

চমকে উঠলো ফরহাদ। বিস্মিত কণ্ঠে বলল,“ভাই আমরা কী করবো? সুমনও আপনার শ*ত্রু আর ফাবিহা মেয়েটাও।”

“আমার শ*ত্রু হলেই কি তাকে এভাবে সুমনের হাতে ছেড়ে দেব? আমি প্রেম করে বেড়িয়েছি কিন্তু মেয়েদের ভো*গ করার কথা মাথায় ঢুকাইনি। সুমনের ইতিহাস তোর নিজেরই জানা। মেয়েটাকে ছেড়ে দেবে না ও। কতদিন থেকে এসব চলছে?”

“ভাই মেয়েটা আপনার শ*ত্রু। আপনি কেন এতো উত্তেজিত হচ্ছেন?”

শাবাব শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত রেখে বলল,“শ*ত্রু বলেই এতোকিছু করছি। ও আমার শ*ত্রু। তাই ওকে শাস্তি দেওয়ার অধিকারও আমার। সুমন কোথায় আছে খবর নে। আমি আসছি।”

ফরহাদের কথা শোনার আগেই কল কেটে দিল শাবাব। রাগে ফোঁসফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ছে। তার সাথে শ*ত্রু থেকেই ও ফাবিহার ক্ষ*তি করতে চাইছে। ওর এক্সদেরও হেনস্তা করেছে। তবে এতোটা নয়। ফাবিহার পেছনে বেশি ঘোরাঘুরি করতে দেখেছে বলে হয়তো ভেবে নিয়েছে শাবাবের মনে ফাবিহার জন্য সফট কর্নার আছে। সেজন্যই ফাবিহার ক্ষ*তি করতে এভাবে উঠেপড়ে লেগেছে।

★★★

তাসিন আলসে ভঙ্গিতে ঘরেই নামাজে দাঁড়ালো। হুরাইন অনেকক্ষণ ধরে কানের কাছে মৌমাছির মতো ভোঁ ভোঁ করছিল। মসজিদে গিয়ে জামাত ধরার সময় নেই। তাই ঘরেই দাঁড়ালো। এতক্ষণ ফোন ঘাটছিল সে।
নামাজে দাঁড়িয়ে সূরা ভুলে যাচ্ছে। মাথায় নানারকম চিন্তাভাবনা আসছে। তাদের কোম্পানির নতুন প্রজেক্ট নিয়ে মাথায় ভাবনা আসছে। কানে গানের সুর ধ্বনিত হচ্ছে। সিজদায় গেল। চোখে একটু আগে ফোনে দেখা বিভিন্ন অন্তরঙ্গ দৃশ্য ভাসছে। বারবার চোখ বন্ধ করছে। তবুও এসব যাচ্ছে না।
চোখের জি*না খুব ভয়*ঙ্কর। নামাজে দাঁড়ালেও তা চোখে ভাসে। আমরা ফোনে অনেকিছুই দেখি। যা আমাদের কাছে স্বাভাবিক, বিনোদন মাত্র। অথচ এসব চোখের জি*না।
কোনোভাবে নামাজ আদায় করলো তাসিন। হুরাইন চা নিয়ে আসলো। তাসিনের দিকে বাড়িয়ে দিল মিষ্টি হেসে। সে যথেষ্ট স্বাভাবিক থেকে ধৈর্যধারণ করার চেষ্টা করছে। লড়তে চাইছে। এ বাড়ির কোনো কিছুই বাবার বাড়ির কারো সাথে শেয়ার করছে না।
তার স্বামী, শাশুড়ি, ননদ হয়তো পরিবর্তন হয়ে যাবেন। কিন্তু সে যে তাদের দো*ষ সবার কাছে বলে বেড়াবে, তার রেশ থেকে যাবে। তাদের পরিবর্তন হলেও কেউ তাদের ভালোচোখে দেখবে না। তাতে হুরাইনের নিজেরই খারাপ লাগবে। সে আশাবাদী সবাই একদিন পরিবর্তন হবে। আল্লাহর উপর সে সবসময়ই ভরসা করে।
যতক্ষণ পর্যন্ত না তার কারো পরামর্শের প্রয়োজন পড়ছে, ততক্ষণ কিছুই বলবে না কাউকে। লড়াইটা তার একার।

#চলবে…….

#এক_টুকরো_আলো
#পর্ব_১৮
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

রাতের খাবার তৈরি করতে করতে জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি পাবার আশায় সুমধুর সুরে সূরা মূলক পাঠ করছিল হুরাইন। রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন সাজেদা। শুনতে খা*রা*প লাগছে না। বরং অন্তরে শান্তি অনুভব করছেন। তাঁরই পেছনে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে শুনছে তাসিন। তার স্ত্রীকে আল্লাহ যেন সব রকম গুণ দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত সূরা মূলক পাঠ করছিল হুরাইন, ততক্ষণ পর্যন্ত মা – ছেলে নড়চড় করলেন না। সে পিছু ফিরতেই সাজেদা থতমত খেয়ে গেলেন। দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে ঢুকে পড়লেন।

এখন গভীর রাত। ঘুম ভেঙে গেল হুরাইনের। সে খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছে। তাসিন আর তার মাঝে অজানা এক দূরত্ব এসে তাদের আলাদা করে দিয়েছে। দু’পাশ থেকে দুজনের এক হওয়ার হাহাকার। ডিম লাইটের আলোয় তাসিনের চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কাঁপা হাত এগিয়ে নিয়ে ওর মুখটা ছুঁয়ে দিল। বিড়বিড় করে বলল,“আপনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন আপনাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনি আমাকে সাহায্য করবেন।”

তাসিন নড়েচড়ে উঠলো। হুরাইনের হাত মুখ থেকে সরিয়ে ঘুমের ঘোরে হাতটি জড়িয়ে ধরলো। হুরাইন কিছুক্ষণ স্থির বসে রইল। অপর হাত বাড়িয়ে সময় দেখলো। এখনো তিনটা বাজতে সাত মিনিট বাকি। তাসিনের কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলো সাবধানে। তারপর ওজু করে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নিলো। ফজরের আজান পর্যন্ত তার নিঃশব্দে কান্নাকাটি চললো তার আল্লাহর কাছে। আজান হতেই তাসিনকে ডাকতে এলো। সে উঠতে খুব দেরি করে। হুরাইন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকলো।
“শুনছেন? ফজরের আজান হয়েছে।”

তাসিন “হুম” বলেই চুপ হয়ে গেল। হুরাইন আবারও ডাকলো, আবারও ডাকলো। তাসিন ‘উঠছি’ বলে আবারও ঘুমে তলিয়ে গেল। এটা নিত্যদিনের কাজ। হুরাইন আক্ষেপ করে কীসের দুঃখ তার? স্বামী তাকে জ্বালাতন করে? মা*র*ধ*র, গা*লা*গা*লি করে? না, নিঃসন্দেহে সে একজন ভালো স্বামী। শাশুড়ি, ননদ তাকে অপছন্দ করলেও সারাদিন পেছনে লেগে থাকে না। তবে কীসে তার দুঃখ?
এই পরিবারে সব আছে। তবে দ্বীন নেই। সকলের অন্তর কালো ছায়ায় ঢেকে আছে। এটাই যে তার বড়ো দুঃখ। কেন এই মানুষগুলো আখিরাত চিনে না?
হুরাইন গ্লাস থেকে পানি নিয়ে ছিটিয়ে দিলো তাসিনের চোখেমুখে। লাফ দিয়ে উঠলো সে। ঘুম ভেঙে বিরক্তি গলায় বলল,“পানি মা*র*লে কেন? আমি তো উঠতাম।”

হুরাইন হাসলো না। কঠিন মুখভঙ্গিতে বলল,“সেটা প্রতিদিনই দেখি। আচ্ছা আপনার কি আমার সাথে থাকার ইচ্ছে নেই? কেন এতো অবহেলা করছেন সবকিছু। আমার কথা বাদ দিন, নিজের প্রতি মায়া হয় না? কোথায় ডুবে আছেন? একবার চোখ মেলে দেখুন। যতদিন না আপনি মন থেকে আগ্রহী হবেন, আমি কেন কেউ আপনাকে পরিবর্তন করতে পারবে না।”

তাসিন আলসে ভঙ্গিতে বলল,“এতো কঠিন কথা কেন বলছো?”

হুরাইন হতাশ চোখে তাকায়। তারপরই তাসিনকে ঠে*লে দিয়ে বলে,“যান ওজু করে আসুন।”

তাসিন পরিষ্কার হয়ে ওজু করে বের হলো। নামাজ পড়ে এসে বিছানায় শুতে গেলেই হুরাইন বাঁধা দিল।
“এখন ঘুমাবেন না। চা খান। তারপর কাজ করুন। সকালবেলা কাজে বরকত হয়। মস্তিষ্ক সচল থাকে।”

তাসিন বিরক্ত হয়।
“হুরাইন কেন এমন করছো? রাতে দেরি করে ঘুমিয়েছি। এখন ঘুমাতে দাও।”

হুরাইন বলল,“আপনাকে তো কেউ বলেনি রাত জাগতে। আপনি তো ফোনে ব্যস্ত ছিলেন।”

“তুমি দিনদিন কঠোর হয়ে যাচ্ছো হুরাইন।”

“আমি কঠোর হচ্ছি না। আমি শুধু সত্যটাই বলছি।”

“আচ্ছা, এখন ঘুমাতে দাও প্লিজ!”
তাসিন শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণের মাঝে ঘুমিয়েও পড়লো। হুরাইন কিছুই বললো না। পা চলছে না। সে জোর করে পা টেনে রান্নাঘরে ঢুকলো। সকলের জন্য নাস্তা বানিয়ে টেবিলে রাখলো। সময় দেখে তাসিনকে ডাকতে গেল।
“আপনার অফিসের সময় হয়ে যাচ্ছে, উঠুন।”

প্রথমবারেই জেগে গেল তাসিন। হুরাইনের ঠোঁটে আফসোসের হাসি। ফজরের নামাজের জন্য মুয়াজ্জিন ডাকেন, স্ত্রী বারবার ডাকে। ওঠার কোনো তাড়া নেই। অথচ অফিস যাওয়ার তাড়া ঠিকই আছে। বলল,“অফিসের বসকে এতো ভয়? অথচ যে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তাঁকে ভয় নেই। নাস্তা করতে আসুন।”

হুরাইন বেরিয়ে গেলেও তার যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো তাসিন। গভীর ভাবে হুরাইনের কথাটি নড়াচড়া করলো। তারপর কী ভেবে যেন উঠে পড়লো। নাস্তা করে আবার ঘরে ফিরে তৈরি হয়ে নিলো অফিসের জন্য। নিশি এসে পাশে দাঁড়ালো। গলায় একটা ওড়না ঝুলানো।
“ভাইয়া আমাকেও নামিয়ে দিও।”

“চল।”

হুরাইন বলল,“বোরকা পরলে দেখতে সুন্দর লাগে আপু।”

নিশি কথা বললো না। তার চোখমুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে চরম বিরক্ত। তাসিন বলল,“ও বড়ো হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

তাসিনের মানসিকতা দেখে আশ্চর্য হয় হুরাইন। একটা কলেজে পড়ুয়া মেয়ে আর কত বড়ো হলে তাকে বড়ো বলা হবে?
“স্ত্রী ছোটো হোক বা বড়ো, তার ক্ষেত্রেই পর্দা ফরজ। আর বোনের ক্ষেত্রে কোনো গুনাহ নেই বলছেন? একজন বেপর্দা নারীর জন্য চারজন পুরুষ জাহা**ন্নামী হবে জানেন তো? তার মধ্যে বড়ো ভাই একজন।”

নিশি ছ্যাৎ করে উঠলো।
“দেখুন ভাবি, এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে। আমি মানছি আমি আপনার মতো পর্দানশীন নই। কিন্তু অশালীন চলাফেরাও করি না। জিন্স, টপ পরে ঘুরি না।”

“নিজের ভালো নিজে না বুঝলে কার সাধ্যি আপনাকে বুঝানোর?”

তাসিন এবার বলল,“তোকে তো আমাদের বিয়ের আগে একটা বোরকা কিনে দিয়েছিলাম। ওটা তো পরতে পারিস।”

“ওটা আমি একজনকে দান করে দিয়েছি।”

“তাহলে মাথায় কাপড় দিয়ে নে। আজ আরেকটা বোরকা কিনে দেব।”

“তোমার আমাকে নামিয়ে দিতে হবে না। আমি একাই যাচ্ছি।”

নিশি ভাইয়ের সাথে রাগ দেখিয়ে বেরিয়ে যেতেই তাসিন নরম স্বরে বলল,“এভাবে না বলে একটু বুঝিয়ে বললেই পারতে।”

হুরাইন কথার জবাব দিলো না। মাঝেমাঝে সে নিজের প্রতিই বিরক্ত হয়ে যায়।
তাসিন বেরিয়ে গেল বোনের পিছু পিছু।

হুরাইনের প্রতি ক্ষো*ভ*টা রয়ে গিয়েছে নিশির। বাড়ি ফেরার পর থেকেই নানা ভাবে হুরাইনকে কথা শোনানের চেষ্টা করছে। হুরাইন জবাব দিচ্ছে না কিছুরই। এক পর্যায়ে নিশি বলল,“ফাবিহা আপু আমার ভাবি হলে কত ভালো হতো। অথবা ভাইয়ার বান্ধবীদের মধ্যে কেউ একজন হতে পারতো। ভাইয়ার প্রতা*রণা*র কারণেই সবটা এলোমেলো হয়ে গেল।”

এবার মস্তিষ্কে চাপ পড়লো হুরাইনের। কৌতুহলী স্বরে জানতে চাইলো,“মানে? তোমার ভাইয়ার বান্ধবী ছিল? আর ফাবিহা আপু, কিছু বুঝলাম না।”

“বান্ধবী ছিল না, এখনো আছে। আর ফাবিহা আপুর সাথে ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। তাদের মধ্যে সবটা ঠিকঠাক ছিল। তারপর সে আপনার রূপে মজে বিয়েটা ভেঙে দিল। মন ভাঙলো ফাবিহা আপুর। মেয়েটা কতো কান্নাকাটি করেছে।”

উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে হুরাইন। তার এসব মানতে কষ্ট হচ্ছে। প্রশ্ন করলো,“এসবের সত্যতা কতটুকু?”

“বিয়েতে আমার মায়ের পক্ষের কাউকে দেখেছেন? দেখেননি। এই কারণেই কেউ রাগ করে আসেনি। ফাবিহা আপু লুকিয়ে এসেছিল কেবল আপনাকে দেখতে। কোন রূপবতীর মোহে পড়ে তাকে প্রত্যাখ্যান করলো সেটা দেখতে এসেছে। আর পুরোপুরি বিশ্বাসের জন্য মাকে জিজ্ঞেস করুন তারপর নিজের স্বামীকেই জিজ্ঞেস করে নেবেন।”

হুরাইন অপেক্ষায় রইল। আজকের অপেক্ষা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। যতক্ষণ পর্যন্ত না তাসিনের মুখের স্বীকারোক্তি পাচ্ছে, ততক্ষণ সে শান্ত হতে পারবে না।

দুপুরে খাবার র নামাজের বিরতি দেওয়া হলো। যদি দুই-একজন নামাজ বিরতি মানলেও সকলেই খাবার বিরতি হিসেবেই সময় নষ্ট করে। তাসিন বিরতি পেয়ে নামাজ পড়ে নিলো। একজন কলিগ বললেন,“তাসিন সাহেব তো হুজুর হয়ে গেলেন। মাশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ।”

আরেকজন বললেন,“কতদিনের জন্য এই পরিবর্তন।”
ভদ্রতারও প্রয়োজন মনে করলেন না। হেসে ফেললেন তিনি। তাসিন বলল,“এমনভাবে বলছেন কেন ভাই? পরিবর্তন হতো ক্ষতি কী?”

চলে যেতে নিতেই শুনতে পেল “এমন অনেককেই দেখেছি। ক’দিন হুজুর হয়ে যায়। পরে আবার শ*য়*তা*নে*র লেবাস ধরে।”

“আরে ভাই, এসব মানুষের এটেনশন পাওয়ার কৌশল। গান-বাজনা, মেয়ে বান্ধবী, মেয়ে কলিগ সবার সাথে গদগদ সম্পর্ক রাখছে। আবার হুজুর সাজতে এসেছে।”

রাগ হচ্ছে তাসিনের। যতবার সে নিজেকে পরিবর্তন করতে চায়, ততবারই সে হেরে যায়। শ*য়*তা*ন ধোকা দেয়, এই আশেপাশের মানুষগুলো বিদ্রুপ করে। নিজের নফসের সাথে যুদ্ধ করা সহজ নয়।

★★★

শাবাব বাড়ি ফিরতেই সুরাইয়া আঁতকে উঠলেন। ছেলের চেহারার এ-কি হাল! চোখে আগুনের ফুলকি। শরীরের কিছু জায়গায় আ*ঘা*তে*র চিহ্ন। এসব নতুন নয় সুরাইয়ার কাছে। ছেলের এসবের রেকর্ড আছে। প্রায়শই মা*রা*মা*রি করে বাড়ি ফেরে। তিনি বিচলিত হয়ে বললেন,“আব্বা আবার কোথায় মা*রা*মা*রি করেছো?”

কথা বলতে বলতে সুরাইয়ার চোখে পানি এসে ভীড় জমালো। শাবাব গম্ভীর মুখে বলল,“হাত-পা ব্যথা করছে। ভেতরে ঢুকতে দাও।”

সুরাইয়া সরে দাঁড়াতেই শাবাব নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় শরীর ছেড়ে দিল। সুরাইয়া কাঁদতে কাঁদতে ছেলের মাথার কাছে এসে বসলেন। বিলাপ করছেন বসে বসে। শাবাব চোখ বন্ধ করে নিলো। সুমনের সাথে আজ প্রচুর মা*রা*মা*রি হয়েছে। সেদিন সুমনের খোঁজ পায়নি বলে বেঁচে গিয়েছে। আজ সুযোগ বুঝে ক্ষো*ভ মিটিয়ে মে*রে*ছে তাকে। নিজেও মা*র খেয়েছে। তবে সুমনের অবস্থা করুণ। হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। এখনো রাগ কমছে না তার। দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।

ফাবিহা সারাদিন বাড়িতে বসে থাকে। তার দিকে তাকালেই তার মায়ের কান্না আসে। তিনি মেয়ের আড়ালে গিয়ে কান্নাকাটি করেন। কেন মেয়েটার জীবন এলোমেলো হয়ে গেল?
আতাউর রহমান ফাবিহাকে বললেন, “তৈরি হয়ে নে। আমরা থা*না*য় যাবো।”

ফাবিহা নড়ে না। জায়গায় স্থির বসে থাকে। তার মন এখন কোনো কিছুতেই সায় দেয় না। আতাউর রহমান তাড়া দেন। ফাবিহা বলে,“কী হবে বাবা? ওরা ছাড়া পেয়ে আরও হিং*স্র হয়ে উঠবে। ওদের থানা পুলিশের রেকর্ড আছে।”

“তাই বলে চুপ করে থাকবো?”

ফাবিহা কথা বলে না। আতাউর রহমান বললেন,“তোর ফুফুর কাছে কিছুদিন থেকে আয়।”

“ভালোলাগে না বাবা।”

“ঘুরে আয়, দেখবি ভালোলাগবে। বাবা কাল সকালে দিয়ে আসবো।”

মাও বললেন, “যা, ঘুরে আয়।”

“ঠিক আছে।”
ছোটো করে জবাব দিলো ফাবিহা। আতাউর রহমান মেয়েকে বোনের কাছে দিয়ে থাকার জায়গা পরিবর্তন করার কথা পরিকল্পনা করে নিলেন। এখান থেকে চলে যাবেন। এই শহরে ওনার মেয়ে ভালো থাকবে না।

এর মাঝে বাড়িতে মেহমান এলো। ফাবিহাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া লোকটি, ফিরোজ আলম। তিনি এসেছেন একটি সুখবর নিয়ে। ফাবিহার জন্য সমন্ধ নিয়ে এসেছেন ওনার বোনের ছেলের জন্য। সুযোগ্য ছেলে। সংসারে ঝুট ঝামেলা নেই। বিয়ের পর ছেলে নিজের কাছে বউকে বিদেশ নিয়ে যাবে। আতাউর রহমান সবটা শুনে আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তিনি ভাবেননি ফিরোজ আলম সমন্ধ নিয়ে আসবেন। সেদিন তো দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আনমনে মেয়ের বিয়ের কথা বলে ফেলেছেন।

ফাবিহার ফুফুর বাড়ি যাওয়া ক্যান্সেল হয়ে গেল। আগে পাত্রপক্ষ এসে দেখে যাক। তারপর মেয়ে ঘুরে আসবে।

ফিরোজ আলম রাতে বাড়ি এসে খাবার টেবিলে কথা তুললেন। সেদিনের মেয়েটির বাবার কাছে রোমাইজার ছেলের জন্য তিনি প্রস্তাব রেখেছেন। রোমাইজার সাথে কথা বলেই ছেলেকে নিয়ে মেয়ে দেখতে যাবেন। টেবিলে শাবাবও উপস্থিত ছিলো। খেতে খেতেই বলল,“কোন মেয়ে?”

“তুই যেদিন অসুস্থ ছিলি, সেদিন বাড়ি এসে যে মেয়েটার কথা বলেছিলাম তার কথাই বলছি।”

ভ্রু কুঁচকে গেল শাবাবের।
“মানে কী? নয়নের জন্য ওই মেয়েকে কেন তোমার উপযুক্ত মনে হলো?”

“তুই তো দেখিসনি। দেখলে এই কথা বলতি না।”

শাবাব বিড়বিড় করে বলল,“আমার আগে তুমি দেখোনি। ওর বিয়ে তো আমি হতেই দেব না। আমিও দেখি তুমি কীভাবে আমার শ*ত্রু*কে ভাগ্নের বউ বানাও।”

সুরাইয়া বললেন,“কিছু বলছিস?”

“হ্যাঁ। মাছ দাও।”

#চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে