এক টুকরো আলো পর্ব-৩৯+৪০

0
280

#এক_টুকরো_আলো
#পর্ব_৩৯
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

ঘুম ঘুম ভাব। চোখ বন্ধ করে আছে ফাবিহা। আচানক পিঠে ছু*রি জাতীয় কিছুর টা*ন পড়লো। সাথে সাথেই প্রাণ বিষিয়ে উঠল। ঝট করে চোখ খুলে দেখলো র*ক্তে মাখোমাখো হাত। ভ*য়*ঙ্ক*র এক হাসি। আত্মা কেঁপে উঠলো ফাবিহার। এদিকে পিঠ থেকে র*ক্ত ঝরছে। দ্বিতীয় কো**প দেওয়ার জন্য সুমন হাত ওঠাতেই চিৎকার করে উঠলো ফাবিহা।

ঘুম ভেঙে গেল এক ভ*য়*ঙ্ক*র স্বপ্নের মাধ্যমে। হাঁপাচ্ছে সে। তার চিৎকারে শাবাবের ঘুম ভেঙে গেল। সদ্য ঘুম ভাঙায় বিচলিত গলায় ফাবিহাকে জিজ্ঞেস করল,“কী হয়েছে? ভয় পেয়েছ কেন?”

ফাবিহা হাঁপাচ্ছে। শাবাব একহাত নিয়ে ওকে আগলে ধরে বলল,“খা*রা*প স্বপ্ন দেখেছ?”

ফাবিহা শাবাবের ভাঙা হাত মুঠো করে ধরলো। শাবাব স্পষ্ট টের পেল ফাবিহার কম্পন। হাত সরিয়ে পানির গ্লাস এগিয়ে ধরে বলল,“পানি খাও।”

ফাবিহা এক ঢোক পানি খেয়ে গ্লাস ফিরিয়ে দিল। তাকে সময় দিল শাবাব। খানিকক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে শুয়ে পড়ল ফাবিহা। শাবাব শরীরে কম্বল টে*নে দিয়ে আবারও জিজ্ঞেস করল,“ভয় পেয়েছিলে কেন?”

ফাবিহা ধীর গলায় নিজের স্বপ্ন বর্ণনা করল। শাবাব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ডান হাত ফাবিহার পেটের উপর রাখলো। মাথায় এক হাত রেখে চুলের ভাঁজে হাত চালালো। ফাবিহাকে সান্ত্বনা দেওয়া আর তার পুরুষ মনের আকাঙ্ক্ষা দুটোই সমাধান হলো।
“সুমনের একটা কঠিন ব্যবস্থা নেব। তুমি কোনো চিন্তা কোরো না।”

ফাবিহা শাবাবের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর নিজের পেটে থাকা হাতের দিকে মনোযোগ ঘুরিয়ে নিলো। শাবাবও বোধহয় বুঝতে পারল। কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। তার হাতের নড়চড় হলো না। ফাবিহা হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলল,“সুমনের জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তবুও। ”

শাবাব আবারও হাত রাখল। চোখ বন্ধ করে বলল,“ওর পরিবারকে জানানো হয়েছে। ওকে দমানোর আরো চেষ্টা চলছে।”

ফাবিহা ওর হাতটা আবারও সরাতে নিলো। এবার মেজাজ খা*রা*প হয়ে গেল তার। দাঁতে দাৃত চেপে বলল,“সমস্যা কী তোমার? আবার বিয়ে করেছো কেন? এভাবে ঘরের এককোনায় ফে*লে রাখার জন্য?”

ফাবিহা ঠাণ্ডা স্বরে বলল,“আমার এভাবে শুয়ে অভ্যাস নেই। ঘুম হয় না।”

শাবাব এবার পা দিয়েও পেঁচিয়ে ধরে বলল,“অভ্যাস কারোরই থাকে না। এখন তুমি আমার সাথে থাকতে না চাইলেও থাকতে হবে। এখান থেকে জে*লে যেতে হবে। ওখানে আমাকেও যেতে হবে।”

“তোমাকে মে*রে আমি একা একাই জে*লে যাব।”

শাবাব ফাবিহার বলার ভঙ্গিমা পরোখ করে মিটিমিটি হাসল। অতঃপর অধরে অধর মিশিয়ে চুপ করিয়ে দিল তাকে। প্রথমে সরাতে চাইলেও এক সময় ফাবিহা নিজেও সাড়া দেয়। দুটো বিপরীত লিঙ্গের মানুষ একই ঘরে, একই বিছানায় থাকলে আকর্ষণ কাজ করা স্বাভাবিক। হঠাৎ যখন ফাবিহার মস্তিষ্ক সজাগ হলো, সে বুঝতে পারলো কী করছে, তখনই সিটকে সরে গেল। শাবাবের দিকে পিঠ করে পাশ ফিরে শুলো। মাঝপথে এভাবে সরে যাওয়ায় শাবাবের রাগ হলেও হজম করার চেষ্টা করল। খানিকটা ধাতস্থ হতেই ফাবিহাকে আবার পেছন থেকে আলিঙ্গন করে বলল,“আমি তোমায় ভালোবাসি, তাই তোমার প্রতি সব রকম টা*ন অনুভব করি। শারিরীক, মানসিক দুটোই। এভাবে দূরে থাকা আমার জন্য কষ্টের।”

ফাবিহা লজ্জা পেল শাবাবের কথায়। নিজেকে স্বাভাবিক বুঝাতে সে কোনো প্রতিক্রিয়া না করে সোজা হয়ে শুয়ে রইল। শাবাব তাকে ধরে ওভাবেই ঘুমিয়ে গেল।

★★★

“বউয়ের ঘুম হইছেনি?”

ফাবিহা গলা পরিষ্কার করে ছোট্ট করে জবাব দিল,“জি মামি।”

“শাবাবরে ডাক দেও। বেলা হই যাইতেছে। নাস্তা করবো কোন সময়?”

“ডাকছি মামি।”

শাবাবকে ডাকল ফাবিহা। শাবাব ঘুম ঘুম চোখ ঝাপসা দেখল একটা জলপাই রঙের শাড়ি পরে তাকে ডাকছে ফাবিহা। হালকা সাজগোছও আছে বোধহয়! ফাবিহা এবার জোরে ধাক্কা দিয়ে বলল,“উঠছো না কেন? আমার খিদে পেয়েছে।”

শাবাব উঠে বসে হাই তুলে বলল,“সেজে আছো মিষ্টি বউয়ের মত। কিন্তু কথা এমন তিতা কেন? আদর করেও তো ডাকা যেত।”

“আদর তোমার অন্য হাতে দেব। কালরাতে কী করেছিলে আমি ভুলিনি।”

শাবাব বিস্মিত হতে হতেও হেসে ফেললো। বলল,“তুমি নিজেও চেয়েছিলে আমি তোমার কাছে যাই। সেজন্যই তো বাঁধা দাওনি।”

ফাবিহা কপট রাগ দেখিয়ে বেরিয়ে গেল। শাবাব না বললেও সত্য তো আর মিথ্যা হয়ে যাবে না। গতরাতের সেই চুম্বনে তারও সায় ছিল শারিরীক দিক থেকে। মানসিক দিক থেকে সে এখনো পুরোপুরি ভরসা করতে পারছে না। নিজেই দোটানায় আছে। এই শারিরীক টা*ন তাকে বুঝিয়ে দিল সংসার করতে ভালোবাসার প্রয়োজন হয় না। হাজার হাজার দম্পতি এভাবে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে সংসার করে চলেছে। এখন কেবল সন্তানের টা*ন*ই দুজনকে এক করে রেখেছে। ভালোবাসাটাই মূখ্য বিষয় নয়। তবুও সে চায় তার জীবন ভালোবাসাময় হয়ে উঠুক। দেরিতে হলেও ভালোবাসা আসুক।

শাবাব ঝটপট হাতমুখ ধুয়ে খেতে এলো। ফাবিহা আর সে পাশাপাশি বসে খাচ্ছে। মামি শীতের পিঠা বানিয়েছেন। ফাবিহা বেশ আগ্রহ নিয়ে খাচ্ছে। তার আগ্রহ দেখে শাবাব নিজের প্লেট থেকে একটা পিঠা ওর প্লেটে তুলে দিল। ফাবিহা খাওয়া থামিয়ে বলল,“আমার আর লাগবে না।”

আশেপাশে দুজন ঘুরতে বের হলো। এক একটা বাড়ির দূরত্ব পাঁচ মিনিটের। রাস্তায় খুব একটা মানুষজন দেখা যাচ্ছে না। হাঁটতে হাঁটতে ফাবিহা বলল,“আমাদের বাসায় ফিরে যাওয়া উচিত।”

শাবাব বলল,“এখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে তোমার?”

“না। বাড়িতে তোমার বাবা অসুস্থ। আম্মা, তুলি সবাইকে একা রেখে এসেছি। এভাবে আসা উচিত হয়নি আমাদের।”

“সমস্যা নেই। মা কিছু মনে করবে না।”

“আমার আর এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না। বাসায় চলে যাব।”

ফাবিহার মতিগতি বুঝলো না শাবাব। দুপুরের পরই দুজন আবার বেরিয়ে পড়ল। মামি মনঃক্ষুণ্ন হয়ে বললেন,“এটা কোনো কথা হইলো? কিছুদিন থাকবা এখানে, আর তোমরা কালকে আইসা এখন যাইতাছো গা। আমি কিছু কইছি?”

“না না মামি। তুমি মোটেও এসব ভেবো না। বাড়িতে বাবা অসুস্থ। তাই মন টিকছে না আমার।”

ফাবিহাকে নিয়ে শাবাব গাড়িতে চড়লো। দুজনকে বাড়ি ফিরতে দেখে সুরাইয়া অবাক হলেন। শাবাব মাকে বুঝ দিয়ে ঘরে ঢুকে গেল।
সি*গা*রে*ট ধরাতেই ফাবিহার কথা মনে পড়ল। তাই সোজা বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। বাইরে থেকে খেয়ে তারপর ঘরে ঢুকলো। তবুও টের পেল ফাবিহা। স্থির চোখে তাকিয়ে বলল,“শেষ?”

“কী?”

“সি*গা*রে*ট খাওয়া শেষ?”

শাবাব অবাকতার সুরে বলল,“আমি কি সি*গা*রে*ট ধরেছি নাকি?”

ফাবিহা ভ্রু উঁচিয়ে বলল,“আমি দেখিনি ভেবেছ?”

শাবাব চট করে তাকে একটা চুমু খেয়ে বলল,“স্মেল আসছে? আসছে না। এবার বিশ্বাস হলো? আমি সি*গা*রে*ট খাইনি।”

ফাবিহা কটমট করে বলল,“মিথ্যা বলা কবে ছাড়বে?”

শাবাব পুরো ভদ্র ছেলের মত বলল,“সি*গা*রে*টে*র কথা ছাড়া আর কোনো মিথ্যা বলি না তোমার সাথে। এটাও সেদিন থেকে বলবো না, যেদিন তুমি আমার কাছে আসবে।”

ফাবিহা ফোঁস করে বলল,“মিথ্যা বলে আবার গলায় জোর দিচ্ছ?”

“দিচ্ছি।”
বলেই হেসে চলে গেল শাবাব। আবার পিছু ফিরে বলল,“এখন থেকেই ছেড়ে দেব সুন্দরী, যদি তুমি চাও।”

“এখন বউয়ের সাথে ফ্লার্ট করছো? তোমার মত অ*ভ*দ্র আমি দুটো দেখিনি।”

“বউয়ের কাছে সাধু সেজে কয়জন ছেলেমেয়ের বাপ হতে পেরেছে? আমার আবার বাপ হওয়ার খুব শখ। তাই সাধুসন্ন্যাসী হওয়া আমার দ্বারা হবে না।”

নিজের জালে নিজেই ফেঁসেছে ফাবিহা। তাই চাইলেও কিছু বলতে পারে না। কারণ স্বেচ্ছায় যে গলায় দড়ি পরেছে।
হুরাইনকে কল দিয়ে কথা বলল। হুরাইরা জিজ্ঞেস করেছিল বইগুলো পড়েছে কিনা? জবাবে ফাবিহা বলেছিল,“সময় পাইনি। পড়ে তোমায় জানাবো।”

তাই একটা বই নিয়ে বসলো। “কুরআন থেকে নেওয়া জীবনের পাঠ”। শাবাব এসে তাকে পড়তে দেখে জিজ্ঞেস করল,“কী পড়ছো?”

বইয়ের নাম উল্টে দেখে কিছু বলল না।

★★★

হুরাইন বাবার বাড়িতে যাওয়ার দুদিন পরই তাকে নিয়ে এসেছে তাসিন। জনাব আজাদ কেবল গম্ভীরভাবে জামাতাকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তাসিন যে হুরাইনকে নিয়ে চলে এসেছে, তিনি বাঁধা দেননি। এটা দেখে তাসিন যেন হাতে সুযোগ পেয়ে গেল। হুরাইনকে রাগানোর জন্য বলল,“তুমি বাবার বাড়ি যাওয়ার জন্য পাগল আর তোমার বাবা তোমাকে বাড়ি থেকে বের করার জন্য পাগল। দেখলে না তুমি চলে আসাতেও বা্ধা দেয়নি। মনে মনে আ*প*দ বিদায় হয়েছে বলে খুশি হয়েছেন।”

হুরাইন রেগেও গেল।
“আমি আমার বাবার ছোটো মেয়ে। আমার জন্য সবার আদর বেশি। বাবাতো কিছু বলেননি লজ্জায়। যেভাবে দুদিন না যেতেই এসে বউ নিয়ে টা*না*টা*নি শুরু করেছেন।”

তাসিন মিটিমিটি হেসে বলল,“না না, তুমি যতই তোমার বাবাকে উপরে রাখার চেষ্টা করো, তোমার বাবা কিন্তু তোমাকে বাড়ি থেকে বিদায় করতে পেরেই খুশি হয়েছেন। চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল।”

“আপনি আর আমার সাথে কথা বলবেন না।”

“কথা না বললে কী হবে? আমার এত ইচ্ছে নেই তোমার সাথে কথা বলার।”

“ঠিক আছে। দেখা যাবে।”

“হ্যাঁ, দেখা যাবে।”

বাড়ি এসে মসিবতে পড়লো তাসিন। হুরাইন সত্যি সত্যি তার সাথে কথা বলছে না। এদিকে জ্বীনের মত তার জিনিসপত্র কোথায় রেখেছে, সেগুলো খুঁজে পাচ্ছে না তাসিন।
তাই বাধ্য হয়ে হুরাইনের সামনে গিয়ে হার মেনে বলল,“সব দোষ আমার। তোমার বাবা জিতে গিয়েছে। এবার দয়া করে আমার জিনিসপত্র বের করে দাও।”

হুরাইন ভাব নিয়ে বলল,“নিজের দোষ স্বীকার করার জন্য ধন্যবাদ আশা করবেন না।”

তাসিন দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়েও হেসে ফেললো। ভবিষ্যতে দুঃখ পেলেই তাকে হাসতে হবে। কোনোভাবেই দুঃখ প্রকাশ করা যাবে না।

#চলবে……

#এক_টুকরো_আলো
#পর্ব_৪০
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

ফাবিহা আফসোস করছে কেন মা-বাবা তাকে মাদ্রাসায় পড়াল না! তাহলে সে অনেক কিছু থেকে বেঁচে যেত। বিপদ-আপদ, পা*প থেকে বাঁচতে পারত। হুরাইনের জীবন এখন কতই না সহজ। তুলিকে নিয়ে ঘর থেকে বের হলো সে। শাবাব ঘরেই আছে। দুজনের হাঁটার মাঝেই এক মিষ্টি কণ্ঠ শুনে তুলি, ফাবিহা দুজনই ঘুরে তাকাল। ফাবিহার তুলনায় ছোটো একটি মেয়ে। মিষ্টি হেসে তুলিকে জিজ্ঞেস করল,“শাবাব ভাইয়ার বউ?”

“হ, ভাইজানের বউ। সুন্দরী আছে না?”

মেয়েটি ফাবিহাকে আগাগোড়া পরোখ করে বলল,“হুম, খুব সুন্দরী। হাই, আমি অরিন।”

ফাবিহাও মিষ্টি হেসে বলল,“আমি ফাবিহা।”

শাবাব বারান্দায় এসে অরিনকে দেখল। অরিনের নজরও পড়ল তার উপর। ডেকে উঠে বলল,“কী অবস্থা?”

শাবাব হেসে জবাব দিল।
“খুব একটা ভালো না। দাঁড়াও আমি আসছি।”

শাবাব বেরিয়ে আসতেই দুজনের কথা জমে গেল। তুলি আর ফাবিহা যেন পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া অপরিচিত লোকজন। অরিন এক সময় চলে গেল। ফাবিহা জিজ্ঞেস করল,“মেয়েটি কে?”

শাবাবের আগে তুলি মুখ খুললো। মুখ চেপে হেসে বলল,“ভাইজানের প্রেমিকা আছিলো এই আফু। পাশের বাড়ি আফুর নানার বাড়ি।”

ফাবিহা রেগে গেলেও প্রকাশ করল না। আগে প্রেম করেছে। অথচ একটু আগেও দেখে মনে হচ্ছিল দুজনের মাঝে জন্মের ভাব। শাবাব তুলির কথা শুধরে দিয়ে বলে উঠলো,“ ওর সাথে আমি প্রেম করিনি। ওর বোনের সাথে প্রেম করেছি। প্রাক্তন শা*লি*কা।”

ফাবিহা দাঁতে দাঁত কামড়ে ছিল। এবার নিচ থেকে একটা ইট তুলে নিতেই শাবাবের চোখ চড়কগাছ। আগুন ধরাতে গিয়েছে। এখন তো দেখছে বো**ম ফাটবে। সে জীবন বাঁচিয়ে দৌড়ে পালালো। কটমট করছে ফাবিহা। ভালো নেই, না? ওই মেয়েকে দেখে তো দিব্যি ভালো হয়ে গেল। খিলখিল করে হেসে উঠল তুলি। রাগ করে তাকে ধমক দিল ফাবিহা।
“হাসবি না। তুই আর তোর ভাইজান দুটোই ফা*ল*তু।”

তুলি হাসি না থামিয়ে ফাবিহার গায়ে ঢলে পড়তে পড়তে বলল,“ভাইজান আপনেরে ডরায় ভাবি।”

ফাবিহা গলা খাঁকারি দিয়ে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াল। চোখমুখে গম্ভীর ভাব ফোটানোর চেষ্টা করছে।

নিজের শুকনো জামাকাপড় ভাঁজ করছে ফাবিহা। পেছনে কোমরের দিকে শাড়ি নেমে গিয়েছে অনেকটা। শাবাব ফোন টিপছে কম ফাবিহাকে দেখছে বেশি। এখন তাকিয়ে আছে ফাবিহার শাড়ি সরে যাওয়া দৃশ্যমান আকর্ষণীয় কোমরে। ফাবিহার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ব্যাপারটা জানান দিতেই সে নিজের কোমরে হাত দিল। তারপর হাতের শাড়ি ভাঁজ করা বাদ দিয়ে শাবাবের সামনে এসে তার দিকে পিঠ করে দাঁড়ালো। শাড়িটা কোমর থেকে আরেকটু নামিয়ে দিতেই গলা খাঁকারি দিয়ে উঠল শাবাব।
“আরে কী করছ তুমি?”

ফাবিহা শাবাবের দিকে তাকিয়ে বলল,“তুমি যা দেখতে চাইছ, সেটাই দেখাচ্ছি।”

“ওহ্৷, দেখি আরেকটু দূরে দাঁড়াও। এত কাছ থেকে ভালো করে দেখছি না।”
বলেই ফাবিহার কোমরে দৃষ্টি স্থির করল সে। ফাবিহা অতিষ্ঠ ভঙ্গিতে মাথা দুলিয়ে শাড়ি ঠিক করে বলল,“অ*স*ভ্য। ক*টা*ক্ষও বোঝে না।”

শাবাব ভ্রু কুঁচকে বলল,“তুমি ক*টা*ক্ষ করেছ? ভালোভাবে দেখতেও দিলে না। ধ্যাত!”

ফাবিহা ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস টে*নে নিজের হতাশা কমানোর চেষ্টা করছে। শাবাব সাধু পুরুষ হবে, এটা আশা করা বোকামি। সে মাথায় হাত চেপে বসে আছে। শাবাব গায়ে শার্ট জড়িয়ে বের হওয়ার আগে তার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,“আই লাভ ইউ। আমি জানি এটা শুনতে না পেরে তোমার মন খা*রা*প। তাই বলে দিলাম। নয়তো তোমার মত বিস্ফো**রণ ঘটানো বো*ম*কে ভালোবাসতে আমার বয়েই গেছে।”

চলে যেতে গিয়েও আবার কানের কাছে মুখ এনে বলল,“বালিশের পাশে সিগারেট রেখেছি। আমি আসতে আসতে তুমি ফেলে দিও। তারপর আমার সিগারেট ফেলে দেওয়ার অপরাধে আমি তোমাকে চু*মু খাবো। তুলিকে দিয়ে ফেললে শা*স্তি দ্বিগুণ হবে বলে দিলাম।”

ফাবিহা নড়চড় না করে ওভাবেই বসে রইল। মনে হচ্ছে সে পাবনা মে*ন্টা*ল হাসপাতালে আছে।

রাতে দুজন বিছানার দুপাশে শুয়ে আছে। শাবাবের মুখ ফাবিহার দিকে ঘোরানো। সে ফাবিহাকে দেখছে। ফাবিহা সোজা হয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছে। শাবাবের দৃষ্টির অর্থ সে পড়তে পারছে। তার মনের উপর ঝুলে আছে শাবাব। নিরবতাকে ছুটি দিয়ে ফাবিহা মৃদু আওয়াজে বলল,“শাবাব।”

“হুঁ?”

“তুমি আমার কাছে আসতে পারো।”

শাবাব ফিসফিস শব্দে হেসে বলল,“তুমি মন থেকে চাওনি।”

ফাবিহা মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
“আমি না চাইলেও তুমি কাছে আসতে পারো। আমি বাঁধা দেব না।”

“মন থেকে চাইলেই আসব।”

ফাবিহা চুপ করে গেল। শাবাব ওর নাক টে*নে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,“ঘুমাও।”

চোখ বন্ধ করলেও ঘুমালো না শাবাব। ফাবিহা এখনো তাকিয়ে আছে। একটু পর আবারও বলল,“তুমি কাছে আসতে পারো শাবাব।”

“ঘুমাও ফাবিহা। সকালে কথা হবে।”

“আমি মন থেকে চাইছি।”

“না, তুমি মন থেকে চাওনি।”

“চেয়েছি।”

এবার শাবাব চোখ খুলল। চাতকের মত তাকিয়ে থেকে আহ্বান পেয়ে তা গ্রহণ করে নিলো সে। ফাবিহা চোখ বন্ধ করে রইল। শাবাব এগোতে গিয়েও রেগে গিয়ে পাশ ফিরে শুলো। ফাবিহার আচরণ বলছে সে তাকে মন থেকে গ্রহণ করেনি। কেবল স্ত্রীর অধিকার পালন করেই দায় থেকে মুক্ত হতে চাইছে। ফাবিহা অনেকক্ষণ কোনো সাড়া না পেয়ে চোখ খুলে শাবাবকে পাশ ফিরে থাকতে দেখে হতাশ হলো। সে নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করে শাবাবকে কাছে আসার আহ্বান জানিয়েছে। বিয়ে যেহেতু হয়েছে, তার অধিকার থেকে তো তাকে বঞ্চিত করা যায় না। সে ছোট্ট করে বলল,“সরি শাবাব!”

শাবাব ফিরলো তার দিকে। কাতর স্বরে বলল,“কীভাবে তোমার ভরসা অর্জন করতে পারি, বলো? আমি জানি আমি অ*ন্যা*য় করেছি। সবটা ঠিকঠাক চলছিল। মাঝখান থেকে তুমি আবার আমায় সুযোগ দিলে। আমি লো*ভী। তোমার লো*ভী। তোমাকে পাব বলে আবারও বিয়ে করে নিয়েছি। ভেবেছিলাম সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। কিচ্ছু ঠিক হয়নি। এভাবে অশা*ন্তিতে থাকা যায় না ফাবিহা। এতে কোনো স্বস্তি নেই।”

ফাবিহার দৃষ্টি স্থির। সে কোনো দিকে তাকাচ্ছে না। তার দৃষ্টি ঘুরছে শাবাবের চেহারায়। শাবাব তপ্তশ্বাস ছেড়ে বলল,“তুমি না-হয় দেশের বাইরে চলে যাও পড়ার জন্য। দূরত্ব আসলেই স্বস্তি মিলবে। কাউকে ভালোবেসে এত কাছে থেকেও মন থেকে যোজন যোজন দূরে থাকাটা কঠিন। যেকোনো একটা করো। হয় আমাকে ভালোবাসো অথবা দূরে চলে যাও।”

“আমি না-হয় চলে গেলাম। তখন তুমি এদিকটা কীভাবে সামলাবে?”

“কয়েক বছর গেলে সবাই এমনিতেই বুঝে যাবে। আমাকে কিছু বোঝাতে হবে না।”

“নিজেকে কী বোঝাবে।”

“ভালোবাসলেই পেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। নিজেকে বোঝাবো এটা আমার ক*র্মে*র শা*স্তি।”

ফাবিহা ক্ষণ সময় পর নিজ থেকেই শাবাবের অধর স্পর্শ করল। শাবাব কিছুক্ষণের জন্য চমাকালেও আঁকড়ে ধরলো ফাবিহাকে। ফাবিহা সরতে চাইলেও ছাড় পেলো না। শাবাব ফিসফিস করে বলল,“নিজ থেকেই এসেছো।”
পরপর ফাবিহার চোখের পাতায় চুমু খেলো।

★★★

চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে সুমনকে। চোখে কালো কাপড় বাঁধা। বুক বরাবর লা*থি পড়তেই চেয়ার সহ উল্টে পড়ল সে। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে। চোখের কালো কাপড় সরিয়ে দিতেই মাথায় র*ক্ত উঠে গেল সুমনের। রাগে হুঙ্কার ছাড়ল।
“শাবাব।”

শাবাব দাঁতে দাঁত চেপে উপর থেকে নিচে একবার মাথা দুলিয়ে দ্বিগুণ রেগে হুঙ্কার ছাড়ল, “শাবাব।”

“কু**********, তোর হাত ভে*ঙেও শিক্ষা হয়নি? আমার হাতের বাঁধন খুলে দে।”

“ফরহাদ, তোর ভাবি আর আমার বিয়ে উপলক্ষে এই জা******* মিষ্টি দিয়ে দে।”

“জি ভাই।” বলে ফরহাদ র*ড হাতে তুলে নিলো। সুমন সবরকম গা*লি দিয়ে যাচ্ছে। ফরহাদ আর সাথের দুটো ছেলে সুমনকে পি*টি*য়ে যাচ্ছে। ওর আর্তনাদে কেঁপে উঠছে কক্ষটি। শাবাব ফারহাদের হাত থেকে র*ড নিয়ে বলল,“এদিকে দে। কী মা*র*ছি*স? তাকিয়ে থাক।”

র*ড তুলে সুমনকে এক বা*ড়ি দিতেই ফরহাদ বলল,“ভাই আপনি হাতে ব্যথা পাবেন।”

শাবাব দাঁত কিড়মিড় করে বলল,“এর চামড়া ছিঁ*ড়ে জায়গামত লবণ -মরিচ দিতে পারলে ভালো লাগত।”

সুমনের দু’পায়ের ফাঁকে দুটো লা*থি বসিয়ে দিল। অবস্থা খুবই শোচনীয়। ফরহাদ বলল,“ভাই এবার মনে হয় ছেড়ে দেওয়া উচিত। আরও কয়েকটা পড়লে ম*রে যাবে। যা লা*থি মে*রে*ছে*ন, মনে হয় না আর ওর বংশধর আসবে।”

“যাক, ওরে গু*ম করে দিবি। ওর ফ্যামিলিকে সুন্দরভাবে বুঝিয়েছি। কোনো স্টেপ না নিয়ে ছেলেকে আরও প্রশ্রয় দিয়েছে।”

ফরহাদ আশঙ্কায় শাবাবকে বুঝিয়ে সুমনের নেতিয়ে পড়া শরীর দড়ি থেকে খুলে ফেললো। শাবাব এখন রাগে জ্ঞানশূন্য হয়ে আছে। তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিল।

ঘরে ঢুকে চুপিচুপি কম্বলের নিচে ঢুকতে নিতেই তেজী স্বরে প্রশ্ন ভেসে এলো।
“কোথা থেকে এসেছো?”

“কাজ করে এসেছি।” বলে কম্বলের নিচে ঢুকে পড়লো শাবাব। ফাবিহা শক্ত মুখে বলল,“রাত দেড়টা বাজে। কাজটা কি নতুন প্রেম? তা এসেছ কেন? ভোরের পর আসতে।”

ফাবিহার রাগী মুখের দিকে তাকিয়ে শাবাব মনে মনে হাসছে। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,“প্রেমিকার বাবা দেখে ফেলেছে। তাই চলে এসেছি।”

ফাবিহার চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। সে বলল,“শাবাব তুমি সীমা ছাড়াচ্ছ। তোমাকে বিশ্বাস করাই আমার ভুল ছিল।”

ফাবিহা সবটা সত্য ভেবে ক্রমশ উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে দেখে শাবাব সত্যটা বলল।
“আরে শান্ত হও।”

ফাবিহাকে সবটা বলতেই তার চোখ চড়কগাছ। বিস্ময়ে বলল,“তুমি এই হাত নিয়ে কীভাবে এতবড়ো সাহস করেছো?”

শাবাব হাসলো। ফাবিহাকে জড়িয়ে ধরে বলল,“মাথায় চাপ না দিয়ে ঘুমাও।”

ফাবিহা ওর হাত সরিয়ে দিয়ে শুলো। শাবাব বিরক্ত হয়ে বলল,“কালই তো সব ঠিকঠাক ছিল। আবার হাত সরাচ্ছো কেন?”

“চুপচাপ ঘুমাও শাবাব। তুমি কোনো রাজকার্য সামলে আসোনি। মা*র*ধ*র করে এসেছো।”

“আশ্চর্য! আমি কী করলাম?”

ফাবিহা সাড়া দিলো না। শাবাব মৃদু আর্তনাদ করে বলল,“আহ্ আমার হাত ভেঙে দিয়েছ।”

ফাবিহা শাবাবের দিকে ফিরে বলল,“অভিনয় না করে ঘুমাও। তোমার জন্য আমি এখনো ঘুমাতে পারিনি। ঘুমাতে না চাইলে ঘর থেকে বের হও।”

শাবাব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করে বলল,“জীবনে আর শান্তি পাবো না। জেনেশুনে আ*গু*নে ঝাঁপ দিয়েছি। কখন কোন মুড নিয়ে থাকে, বলা যায় না।”

#চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে