অপূর্ণ অভিলাষ পর্ব-১০+১১

0
1256

গল্পঃ #অপূর্ণ_অভিলাষ (১০ এবং ১১তম পর্ব)
লেখাঃ #তাজরীন_খন্দকার

ইয়াজ আমাকে টানতে টানতে পেছনে গিয়ে দেয়াল পর্যন্ত আঁটকে গেলো। সে আর পেছনে যেতে পারছেনা। কিন্তু আমার পেছনে লুকাতেও পারছিলোনা! ইথিলা ভাবী এসে একপাশ থেকে ইয়াজের কান ধরে একটানে বের করে বললো,
___দুইদিন ধরে বাড়ি না এসে চোরের মতো চলাফেরা করা হচ্ছে? তুই কি ভেবেছিলি আমি বুঝবোনা? ভুলে গেছিস আমি তোর ৫ মিনিটের বড়? মানে তোর থেকে ৫ অক্ষর হলেও বেশি জ্ঞান আমার!

ইয়াজ চোখ বন্ধ করে কান ছাড়ানোর চেষ্টায় বললো,
___ইথিলা কান ছাড়ো প্লিজ, খুব লাগছে! আচ্ছা আমি মেনে নিলাম তুমি আমার বড়, এবার ছাড়ো।

ভাবী কানের উপর একটা মুচড় দিয়ে ছেড়ে দিলো, আমার দিকে একবার তাকিয়ে মৃদু হাসলো আর ইয়াজকে বললো..
___ভীষণ চালাক তুমি। সবাইকে বুঝাও এক, আর করো আরেক! তাইতো বলি দুইদিন ধরে বিন্দিয়া আগে আগে রুমে এসে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে যায় কেন?ওর স্বামী বাইরে আর ঘুম আসে বিষয়টা জটিল, তাই আজকে না ঘুমিয়ে দেখলাম, দেখি দরজা বাইরে থেকে লক আর কেউ নাই আশেপাশে। এক ঘন্টা ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। এবার গোপন সত্য ফাঁস করে দিবো সবার কাছে!

ইয়াজ ভাবীর হাত ধরে বললো,
___ মা’কে বলোনা ইথিলা। তাহলে তোমাকে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাটা আবার শুরু করে দিবে। আমি সবকিছু ঠিক করার জন্যই এমন করেছি! সরি,ক্ষমা করে দাও।

ভাবী কিছুটা অবাক বিষ্মিত চেহেরায় বললো,
___আমাকে মিলিয়ে দিতে?

ইয়াজ মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,
___হ্যাঁ। তুমি বাদল ভাইকে খুব ভালোবাসো না?

ইথিলা ভাবী মুখটা একটু গম্ভীর করে বলল,
___ হ্যাঁ বাসি!

এইটুকু বলেই ভাবী তলপেটে হাত দিয়ে একটা ব্যথাজনক শব্দ করলো। ইয়াজ ভাবীর কাঁধে ধরে বললো,
___কি হয়েছে? তুমি ঠিক আছো ইথিলা?

ভাবী ইয়াজের হাতটা আস্তে আস্তে সরিয়ে বললো,
___তলপেটে মাঝে মাঝে অদ্ভুত ব্যথা করে, সেরে যায় আবার। তুমি চিন্তা করো না, মেয়েদের এমন ব্যথার সম্মুখীন হওয়া গুরুতর কিছু না।

ইয়াজ অস্থির গলায় বললো,
___না ডক্টরের কাছে যেতে হবে। এখন তো সব বন্ধ,গাড়ীও পাবোনা, আচ্ছা কাল সকাল পর্যন্ত থাকতে পারবে তো? আর তোমার খারাপ লাগলে বিন্দিয়া তোমার সাথে থাকবে।

ভাবী হাত দিয়ে মানা করে বললো,
___এইতো এখনি কমে গেছে। আমি ঠিক আছি ভাই,একদম চিন্তা করো না। অল্প ব্যথা, অল্পসময় করে আবার সেরে যায়।

ইয়াজ বললো,
___ সত্যি বলছো তো?

ভাবী মাথা নাড়িয়ে বললো,
___হ্যাঁ সত্যি। আমি তাহলে গিয়ে ঘুমাই।

বলেই এক পা বাড়ালেন। ইয়াজ ভাবীকে ছেড়ে এবার আমার হাতটা ধরলো। ভাবী পেছনে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
___ এই দুষ্ট! খুব পাকনা হয়ে গেছো আজকাল। এখন বড় বোনকে কিছু বলার আর দরকার পড়েনা ?

ইয়াজ লজ্জায় হাসলো আর বললো,
___আসলে বিয়ের পরে গোপনীয়তা বজায় রাখলে ভালো। আর গোপন প্রেমও গভীর হয়। তবে সেটা আর পারলাম কই? তুমি ৫ মিনিটের বড় তাই সেই গুণে ধরে ফেলেছো!

ইয়াজের কথা শুনে ভাবী হাহা করে সেই হাসিটা হাসলো, যেটা ভাবীর মুখেসবচেয়ে বেশি সুন্দর দেখায় । হাসতে হাসতে ভাবী চলে গেলো।

এই বিষয়টাতে আমিও হাসি কারণ ইয়াজ আর ভাবীর মধ্যে এই ৫ মিনিটের ছোট বড় এর মূল্য অনেক বেশি, তবে ইয়াজ নাকি মাঝে মাঝে ত্যাড়ামি করে বলে, আমি তোমার চেয়ে দেখতে বড়,জ্ঞানী আর বুদ্ধিমান, এসব ৫ মিনিট কোনো ব্যবধান হলো?
তবে ইয়াজের কথা ঠিক,সে ছোট বেলা থেকেই মেধাবী, যার কাছেদ্বারেও ইথিলা ভাবী যেতে পারেনি। পড়ালেখাও ভাবী ফাঁকি দিতো।
আর যখন ভাবীর কাছে ইয়াজ হার মানে এবং সেটা স্বীকার করে ভাবী বড়, তখন ভাবী প্রচন্ড খুশি হয়।

ইয়াজ ওর বোনের শেষ হাসি দেখে মুচকি হাসিতে আমাকে নিয়ে রুমে গেলেও পরবর্তীতে ওর মুখটা আবার শুকনো হয়ে গেলো। মনে হয় ভাবীর জন্য চিন্তা করছে। আমি এরপর আস্তে আস্তে বললাম,
___আমি কি ভাবীর রুমে গিয়ে দেখবো? আর কাল তো ডক্টর দেখাবেনই,ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে।

ইয়াজ মাথা নেড়ে বললো,
___বিন্দিয়া আমার বোনের কিছু হলে আমি বেঁচে থাকতে পারবোনা।

আমি মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,
___কিছু হবে না ইনশাআল্লাহ। আচ্ছা যদি কখনো আমার কিছু হয়?

ইয়াজ আমার দিকে তাকালো। ভীষণ ভীত সেই দৃষ্টি। কাঁপা গলায় বললো,
___কখনো আর এটা বলোনা। তোমাকে, মা’কে,বাবাকে ছাড়া আমি পুরো ছন্নছাড়া হয়ে যাবো। তোমরা সবাইকে আজীবন আমার দরকার!

আমি হেসে বললাম,
___আমার আর আমার ভাইয়ার মধ্যে শুধু দুইটা মিল, আমাদের দুজনের নাক আর চোখ প্রায় এক। কিন্তু সব মিলিয়ে বিস্তর তফাৎ। আর আপনারা দুজন অবিকল এক,শুধু লম্বা খাটো, ছেলে মেয়ের বৈশিষ্ট্যে তফাৎ। তবে আপনি মনে হয় ভাবীকে উনার চেয়েও বেশি ভালোবাসেন।

ইয়াজ হেসে বললো,

____ ভুল বললে। ইথিলা ওর নিজের চেয়েও আমাকে বেশি ভালোবাসে। শুনো বলি,
আমি ছোট বেলায় খুব পেটুক ছিলাম, যখন কিছুই বুঝিনা। ইথিলা আর আমাকে দুইটাতে খাবার দিলে আমি আমারটা খেয়ে ইথিলারটাও খেয়ে ফেলতাম! এমন করতে করতে আমরা বড় হতে লাগলাম,তখন দেখেছি ইথিলা ইচ্ছে হলেও একটা জিনিস পুরোটা খায়না। আমার জন্য রেখে দিয়ে বলে আমার আর ইচ্ছে করছে না, তুমি খেয়ে ফেলো। এখনো বাবা বাজার থেকে কিছু আনলে আমার ভাগ আমি খেয়ে এদিক ওদিক খুঁজে দেখি ইথিলার ভাগ থেকে আমার জন্য রাখা খাবারটা কোথায় রেখেছে। একটা গ্লাস ভাঙলেও সেটার দোষ ইথিলা নেয়। তুমি হয়তো দেখেছো ইথিলা কোনো কষ্ট পেলে আমি নিতে পারিনা,তবে সত্যি এটাই এই শিক্ষা ইথিলার থেকে নেওয়া।
আমরা দুজন স্কুলে প্রথম ভর্তি হওয়ার পরে আমি খুব ভয় পেতাম, এক বছর ভয়ে ভয়েই কেটেছে। ওখানে একটা ছেলে ছিল আমার দিকে ক্ষেপা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো। তার একটাই কারণ আমি ক্লাসে প্রথম হয়েছিলাম। ইথিলাকে দেখেছিলাম ওই ছেলের কাছে হাতজোড় করে বলতে, আমার ভাইকে কিছু বলোনা,তোমাকে চিপস কিনে দিবো। মা যে টাকা টিপিনের জন্য দিতো, তার থেকে প্রায়ই ওই ছেলেটাকে এটা ওটা খাওয়াতো, যাতে আমাকে কিছু না বলে। একদিন ইথিলা নিজের জন্য কিছু কিনেছিল, সেদিন সকালে দেরি হয়ে যাওয়ায় সে ভালো করে খেতে পারেনি। কিন্তু প্যাকেট খোলার সময় ওই ছেলেটা সেটা নেওয়ার জন্য চলে আসে, কিন্তু ইথিলা বারবার বলছিলো আজকে না আরেকদিন দিবে,ওর ভীষণ খিদে। ছেলেটা শুনেনি,জোর করে নিয়ে চলে যাচ্ছিলো। এটা আমি সামনে দেখে সহ্য করতে পারলাম না, জানিনা কোথা থেকে তখন এতো রাগ আসলো, আর আমি একসাথে দুই তিনটা ঘুষি মেরে ওই ছেলেকে সেখানে ফেলে দিয়েছিলাম। এরপর স্যার বাড়িতে বিচার দিলেও সেই ছেলেটা আর আমাদের দিকে ভুলেও তাকায়নি, আর তখন থেকেই কেউ ইথিলাকে কিছু বললে তীব্র প্রতিবাদ করতাম, এমনকি মারধর পর্যন্ত করতাম। তাই কেউ এই সাহস করতে দুবার ভাবতে হতো। আর প্রতিবার আমার ক্ষতি হবে ভেবে ইথিলা পাগলের মতো কান্না করতো।

কথাগুলো বলতে ইয়াজের চোখ ছলছল করছিলো।
আমি ওড়নার একটা অংশ টেনে ওর চোখ মুছে দিলাম।

ওকে কিছু আর বললাম না। কারণ আমিও জানি ভাবী তার ভাইকে ভীষণ রকম ভালোবাসে! তবে এতকিছু জানা ছিলনা। আমিও আমার ভাইকে ভালোবাসি, তবে এখন মনে হচ্ছে ইথিলা ভাবী যতটা তার ভাইকে বাসে ততটা হয়তো পারিনি। কিন্তু সেটাকে কম বললেও হবে না, সবার মতোই স্বাভাবিক। কিন্তু ওদের দুই ভাইবোন একে অপরকে যতটা ভালোবাসে সেটা আজকাল দেখা দুষ্কর! কিন্তু মাঝখানে আমার ভাই আর ইয়াজের বোনের জীবন অসম্পূর্ণ। যার জন্য আমরা এখনো কিছু করতে পারছিনা।

পরেরদিন ছিল শুক্রবার। ইয়াজ সকাল সকাল উঠে ইথিলা ভাবীকে তৈরি হতে বললো। উদ্দেশ্য হাসপাতাল।
কিন্তু ভাবী স্বাভাবিকভাবে বললো,
___ইয়াজ দেখো আমি সুস্থ এখন। আমার কিছুই হয়নি। এটা কালকে হঠাৎ হলে নাহয় চিন্তা হতো, কিন্তু মাঝে মাঝেই হয় আবার সেরে যায়।

কিন্তু ইয়াজ মানছিলোনা। সে আজকেই যাবে।
আমার শাশুড়ী মা এসে ইয়াজকে বুঝিয়ে বললেন,
___ ইথিলা বলছে তো ওর কিছু হয়নি। কেন জোর করছিস? যদি আর এমন ব্যথা হয় তাহলে সাথে সাথে নিয়ে যাস।

মায়ের কথা শুনে ইয়াজ একটু থামলো। আর ভাবীকে বললো,
___আবার যদি ব্যথা হয়, আমাকে সাথে সাথে বলবে, নইলে কিন্তু খবর আছে।

ভাবী হেসে তারপর হ্যাঁ সম্মতিতে বললো আবার হলে জানাবে।
অন্যদিকে মা বারবার ইয়াজ আর আমার দিকে তাকাচ্ছে। কারণ আমরা দুজন একসাথেই বের হয়েছিলাম। মা হয়তো এটা নিয়ে কিছু বলতেন কিন্তু বললেন না। হয়তো ভাবছেন কিছু বললে যদি ইয়াজ আবার এমন করে!

মা চলে যাওয়ার পরে ভাবী একটু তাড়ার সাথে বললো,
___বিন্দিয়া চলো রান্না বসাই। নাস্তা তো হয়েছে, এখন রান্না শুরু করতে হবে তো।

আমি ভাবীর সাথে অগ্রসর হওয়ার আগেই থামলাম। কারণ ইয়াজ ভাবীর হাতে ধরে বলছে,
___তুমি রুমে গিয়ে রেস্ট নাও। আজকে ছুটি যেহেতু আমি আর বিন্দিয়া রান্না সামলাবো। আর মা’র দিকে নজর রেখো।

ভাবী হেসে বললো,
___তোমরা দুজন পারবে তো? আচ্ছা পারলে ঠিকাছে, আমি মাকে দেখবো। তাছাড়া মা এখন ঔষধ খেয়ে ঘুমাবে।

আমি ইয়াজের দিকে তাকিয়ে বললাম,
___আপনি রান্না জানেন?

ভাবী হাসতে হাসতে বললো,
___মা-বাবা যখন হজ্জ্বে ছিল, আমি তো তখন শ্বশুর বাড়িতেই ছিলাম তখন সে নিজের রান্না নিজেই করে খেয়েছে। এর আগেও আমরা ভাইবোন মিলে রান্না করে মাঝে মাঝে মা-বাবাকে চমকে দিতাম। বিষ্ময়কর হলেও সত্যি, ইয়াজের রান্না আমার চেয়েও ভালো।

ইয়াজ দাঁত দিয়ে জিহ্বা কামড়ে বললো,
___ইথিলা এসব বলতে নেই। এরপর আমার বউ আমাকে দিয়ে সবসময় রান্না করাবে। তুমি আমাকে আজীবনের জন্য ফাঁসিয়ে দিচ্ছো কিন্তু।

ভাবী মুখ বাঁকিয়ে বললো,
___ আরো বলবো, একশোবার বলবো। তুমিই রান্না করবে, বিন্দিয়া আর আমি শুধু বসে বসে গল্প করবো। হাহাহাহা!

আবারো সেই দুর্দান্ত হাসির সাথে ভাবী চলে গেলো।
ইয়াজ আর আমি গেলাম রান্নাঘরে।

সবকিছু কাটাকুটি ইয়াজ করলো। আমি আস্তে আস্তে বসালাম। কিন্তু মশলাপাতি আমি ঠিক আন্দাজে আগেই দিতে পারতাম না, কেউ না কেউ বলে দিতে হয়। তবে চেষ্টা করলে পারবোনা এমন নয়। তাও আমি ইয়াজকে বলে বলে সব দিলাম।
এরপর চুলার পাশে পাতিল রাখার জায়গাটা একটু খালি করে ইয়াজ সেখানে উঠে বসে পা নাড়াতে নাড়াতে বললো,
___ বাকিটা তুমি করো, আমি বসে বসে তোমাকে দেখি।

আমি লাজুকলতার হাসি হেসে ঠিকঠাক নাড়াচাড়া করতে লাগলাম। এর মধ্যে ইয়াজ দুইদিনবার হাত বাড়িয়ে ঘাম মুছে দিতে দিতে বলছে,
___বউ আমার লাল হয়ে যাচ্ছে। সরো নাহলে আমি করছি।

কিন্তু আমি বললাম,
___এই সংসারের একমাত্র ছেলের বউই তো সব দায়িত্ব নিতে হবে, আর কাজকর্মও করতে হবে। আপনি কি আর সবসময় বাড়ি থাকবেন?

ইয়াজ অদ্ভুতভাবে বললো,
___আহা সংসারী বউ আমার।

এরপর একটা আমেজ নিয়ে বললো,
___আরে তরকারির ঘ্রাণটা দারুণ লাগছে। দাও একটু টেস্ট করি?

তখনি শুনি শাশুড়ী মায়ের গলার আওয়াজ। ইয়াজ হুড়মুড় করে উঠে দরজার আড়ালে লুকালো। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। মা রান্নাঘরে ঢুকেই বলে,
___ঔষধ না খেয়েই ঘুমিয়ে গেছিলাম। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো আর এটা মনে হলো, পানি নিতে এসে দেখি কি সুস্বাদু ঘ্রাণ নাকে ঠেকছে, তারাতাড়ি করে এলাম। তা কি রান্না করছে আমার বউমা?

বলতেই বলতেই উনি ঢাকনা খুলে দেখলেন। চোখ বন্ধ একটু শুঁকলেন। কিন্তু আমার ভয় লাগছিলো, কারণ উনি ফিরলেই ইয়াজকে দেখে ফেলবেন। ঢুকার সময় দরজার পেছনে খেয়াল না করলেও ভেতর থেকে যাওয়ার সময় চোখ এড়াবেনা। মা উৎফুল্লের সাথে বললো,
___উমম দারুণ দারুণ। আমার তো এখনি খিদে পেয়ে গেছে।

বলেই আস্তে আস্তে মা ফিরলেন। ভয়ে আমি আর পেছনে তাকাচ্ছিলাম না। মা ফিরতেই চমকের স্বরে বললো,
___তুই এখানে কি? এদিকে ঘুরঘুর করছিস কেন?

আমি তাকিয়ে দেখি ইয়াজ একদম মায়ের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। সে মায়ের কথার জবাবে বললো,
___ মা তুমি রান্না করেছো? তাইতো এতো সুন্দর ঘ্রাণ পাচ্ছিলাম। রুম থেকে ছুটে এসেছি। আহহ আমার খিদে পেয়ে গেছে।

মা রাগী চেহেরায় বললো,
___ এটা কি একটা সত্যি কথা ছিল? তুই তোর বদ্ধ রুমে,ফ্যানের তীব্র বাতাসে ঘ্রাণ পাচ্ছিলি?

ইয়াজ থতমত করে বললো,
___ হ্যাঁ, তুমিও রুমে গিয়ে দেখো না, পাওয়া যায়! তোমার হাতের রান্ন বলে কথা!

চলবে…

গল্পঃ #অপূর্ণ_অভিলাষ (১১তম পর্ব)
লেখাঃ #তাজরীন_খন্দকার

মা তাচ্ছিল্যের সাথে ইয়াজকে বললো,
___আমি তোর মা, আমাকে ডান বাম শিখাতে আসিস না। আর তুই কি আমার রান্না চিনিস না? এসব যে তোর এক্সট্রা ভাব মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে, রান্না আমি করিনি,বিন্দিয়া করেছে।

বলেই হনহন করে বেড়িয়ে গেলেন। ইয়াজ ডান হাতের আঙুলগুলো বেঁকে ইশারা করে বললো,
___কি হলো বিন্দিয়া?

আমি হেসে বললাম,
___কি আর, আপনি ধরা খেলেন।

ইয়াজ মনটা খারাপ আবার বসলো। আর আমি ওকে এই অবস্থায় দেখে মুখ টিপে হাসলাম।
কারণ কিছু করার নেই, এক বাড়িতে লুকানো প্রেম বেশিদিন লুকায়িত থাকবেনা এটাই স্বাভাবিক।

এভাবে চলে গেলো আরো ৫ দিন।
এর মধ্যে ইয়াজ আমাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে গেলো। সেখানে সেবার দুইদিন থেকেছিলাম। কেন জানি তখন সে সবার সাথে ভীষণভাবে ভালোভাবে কথা বললো। ভাইয়া ভাবীকে নিতে রাজী ছিল বলে হয়তো। কিন্তু সমস্যাটা এখন ওদের জায়গা থেকে, ভাবী আসার আগ্রহ দিচ্ছিলোনা। আর ইয়াজ সময় দিয়েছিলো দুজনের মনোভাব বুঝতে।
আমার মা-বাবা ইয়াজের ব্যবহারে ভীষণ খুশি ছিলো। বাবা তো আমাকে খুশিতে জড়িয়ে ধরে বললেন..বিন্দিয়া আমি বলেছিলাম না সব ঠিক হয়ে যাবে? আমিও হেসে বললাম, আলহামদুলিল্লাহ বাবা আমি ভীষণ ভালো আছি।

এরপর এভাবেই চলে গেলো আরো দুইমাস। এর মধ্যে ভাবীর অসুস্থতাটা আর দেখা দেয়নি। তবে দিলেও উনি কাউকে এই ব্যপারে বলেন নি। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় অসময়ে পিরিয়ড থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো।
ইয়াজকে বিষয়টা বলতে মা দ্বিধা করলেও আমি এক মূহুর্তও অপেক্ষা করলাম না। তারাতাড়ি করে তাকে ফোন করে গাড়ী নিয়ে আসতে বললাম। আধ ঘন্টার মধ্যে ইয়াজ এসে ইথিলা ভাবীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো। ইমারজেন্সি অবস্থায় পরিক্ষার জন্য পাঠানো হলো। এই সংবাদ ভাইয়াকে বলেছিলাম, ভেবেছিলাম ভাইয়া মন খারাপ করবে শুধু। কিন্তু এক ঘন্টার মধ্যে ভাইয়াও এসে উপস্থিত হয়েছে।

হাসপাতালের বারান্দায় আমরা পাঁচজন। ভাইয়া,ইয়াজ,শ্বশুরবাবা আর শাশুড়ী মা, আর আমি। ভাবী বলছিলো তেমন কিছু হবে না, এতজনকে আসতে হবে না। কিন্তু কেউ শুনেনি।
ইয়াজ ভীষণ অস্থির হয়ে উঠছিলো, আর ভাইয়া সেটা হলেও চুপচাপ ছিল । কাকে কি বলবে এইটা ভেবেই উনি চুপ করে একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে রইলেন।
বিভিন্ন রকম মেডিকেল পরিক্ষা শেষ হলেও ভাবী বের হচ্ছিলোনা। ডক্টর এর মধ্যে জানিয়েছেন ব্যপারটা জটিল, তারাতাড়ি রিপোর্ট পাওয়ার সাথে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইয়াজ ডক্টরকে যতটা প্রশ্ন করেছে সবগুলো কাঁদতে কাঁদছে করেছে। ভাইয়া চুপ থাকলেও উনার চোখে থেমে থাকা অশ্রু আমার চোখ ফাঁকি দিচ্ছিলোনা।
রিপোর্ট কি আসে সেটা পেতে যেমন তাড়া ছিল, তেমন ভেতরটাও দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিলো।
হঠাৎ একজন বললো, গার্জিয়ান কে আছে? উনার স্বামী কিংবা মা থাকলে ভেতরে আসেন। কেন জানি ইয়াজ তখন আমার ভাইয়াকে ইশারা করলো যেতে। ভাইয়া ধির পায়ে ডক্টরের কেবিনে গেলো। ৫ মিনিটের মধ্যে বিধ্বস্ত চেহারায় বের হলো। ভাইয়া বেরুতেই ইয়াজ গিয়ে কাঁধ ঝাকিয়ে বললো,
___কি বলেছে ডক্টর?

ভাইয়া পানি চাইলেন, উনার গলা শুকিয়ে গেছে। ইয়াজ অস্থিরতার সাথেই এক দৌঁড়ে বাইরে গেলো পানি কিনতে, দৌঁড়ে এসে হাঁফাতে হাঁফাতে বোতলটা হাতে দিয়ে বললো,
___ তারাতাড়ি খেয়ে বলুন ডক্টর কি বললো?

ভাইয়া পানি খেয়ে বোতলটার ক্যাপ লাগাতে লাগাতেই একদৃষ্টে কোনো একদিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে কেঁদে উঠলো। ইয়াজ এবার কাঁদতে কাঁদতে রাগ এনে বললো
,___আপনি বলবেন কিনা? নইলে আমি এখনি ভেতরে যাবো।

ভাইয়া ইয়াজের হাত ধরে বললো,
___তোমার বোনের জরায়ুতে টিউমার, সেটাও সাব মিউকাস নামক এক জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ টিউমার। এতো তারাতাড়ি মেয়েদের এই সমস্যা খুব একটা হয়না, এর মধ্যে ডক্টর বললো টিউমার অপসারণ করলেও ভ্রুণ প্রতিস্থাপনের কোনো সুযোগ নেই। মানে সে আর কখনো মা হতে পারবেনা। আর খুব শীগ্রই এটা অপসারণ না হলে সেটা ক্যান্সার পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে আর তখন থাকবে মৃত্যুঝুঁকি।

ইয়াজ ফ্লোরে ধপাস করে বসে পড়লো। এটা শোনার সাথে সাথে আমার শাশুড়ী মুখ চেপে আওয়াজ করে কেঁদে উঠলো, বাবাও কাঁদতেছে। আর আমার মাথা ভীষণ যন্ত্রণা করছে, চারপাশ অন্ধকার দেখছিলাম। আমি চোখ বন্ধ করে একটা পিলারে ঠেস দিয়ে বসলাম, আর অস্পষ্টভাবে শুনলাম ইয়াজ বলছে,
___আপনি বলেছেন তো অপসারণের ব্যবস্থা করতে?

ভাইয়া বললো,
___ হ্যাঁ আমি বলেছি ইথিলার জীবন আগে তারপর সব। ১০ মিনিটের মধ্যেই তারা ব্যবস্থা করবে।

আমি চোখ ঢিপঢিপ করে খুলে শেষ দেখলাম ইয়াজ কাঁদতে কাঁদতে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরেছে।

তারপর আর কিছু মনে নেই, তারপর যখন চোখ খুললাম তখন তাকিয়ে দেখি আমার হাতে একটা স্যালাইন চলছে, এখন আমার মাকেও দেখতে পাচ্ছি। ইয়াজ আমাকে চোখ খুলতে দেখেই ঠোঁট ভেঙে মর্মান্তিকভাবে কেঁদে ফেললো। আমি আস্তে আস্তে বললাম,
___ভাবী কেমন আছে? অপারেশন হয়েছে?

ইয়াজ ফ্লোরে বসে আমার হাত ধরে বললো,
___এমন কেন হলো বিন্দিয়া? দুইটা সংবাদ কেন একসাথে? আমার বোনের সাথে এটা কি হয়ে গেলো?

আমি মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে ইয়াজের দিকে তাকালাম। ধীর কণ্ঠে বললাম,
___ আর কি সংবাদ?কি হয়েছে ভাবীর?

আমার মা আমার পাশে এসে বসলেন। কান্নার মধ্যে একটা হাসি টেনে আমার হাত ধরে বললেন,
__ ইথিলার অপারেশন হয়েছে, সাথে তোর জন্য খুশির সংবাদ! তোর বাবা আর আমি নানা নানু হতে যাচ্ছি! আর ইয়াজ তোর সন্তানের বাবা হবে।

আমি আমার পেটে হাত রেখে ইয়াজের কান্নামাখা মুখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ডুকরে কেঁদে উঠলাম।
এটা খুশির কান্না নাকি কষ্টের জানিনা। তবে ভাবী যখন জানবে উনি মা হতে পারবেন না, আর সেইসাথে তার ভাইয়ের সুসংবাদ, না জানি উনার কলিজাটা ফেটে আসবে! ইয়াজ হয়তো এটা ভেবেই এতো বেশি কান্না করছে। আমার স্পষ্ট মনে আছে বিয়ের আগের একটা ঘটনার কথা,
ভাবী, ইয়াজ আর আমি ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। ভাবী মজা করে বললেও কথাগুলো ভেতর থেকে ছিল। সেদিন বলেছিল,
___ আমার যদি আগে ছেলে হয়, আর ইয়াজের মেয়ে হয় তাহলে সেই মেয়েকে ঢুঁ মেরে আমার ছেলেকে দিয়ে নিয়ে আসবো।

আমি হেসে বলেছিলাম,
___ ইয়াজ ভাইয়ার যদি ছেলে হয়, আর তোমার মেয়ে হয়? (তখন ভালোবাসলেও সবার সামনে ভাই ডাকতাম)

ভাবী ভেবে বলেছিল,
___মেয়ে সিনিয়র হলে সমস্যা এটা বলছো? সমস্যা নাই তবুও নিয়ে আসবো। তবে আমার মেয়ে হলে, ইয়াজের ছেলে হলে সমস্যা, সে আমার মেয়েকে নিয়ে চলে যাবে। তবে আমি দোয়া করবো আমার যাতে প্রথম ছেলে হয়, এরপর মেয়ে। আর ইয়াজের প্রথম ছেলে হলেও যাতে পরে একটা হলেও মেয়ে হয় আমার ছেলের জন্য।

ভাবীর কথাগুলোকে হাসিরসিকতায় আর মাতিয়ে ইয়াজ বলেছিল,
___ইথিলা তুমি কি চাচ্ছো আমরা এই আত্মীয়তায় বোর হয়ে যাই? আমাদের আত্মীয়ের সংখ্যা আর না বাড়ুক?

তখন ভাবীও বুঝেছিলো ইয়াজ কথাটা আমার জন্য বলেছে, কারণ একে তো আমাকে বিয়ে করলে এক আত্মীয়তায় দুইটা হবে, আবার নতুন স্বপ্ন বুনে রাখলে সেটাতে তিনটা যুক্ত হবে। পুরো সম্পর্ক এক জায়গায়ই উলটপালট হবে। নতুন কোনো আত্মীয়তা আর হবে না।
ভাবী বিষয়টা চিন্তা করে চুপ করে গেছিলো।

এসব কথা মনে হতেই আমার খারাপ লাগা তীব্রতর হতে লাগলো।
একটা মেয়ে কিশোরীতে পা রেখেই মা হওয়ার স্বপ্ন দেখে, বিভিন্ন বাচ্চাদের দেখলে তার মধ্যে মাতৃত্ববোধ জেগে ওঠে। সে ভাবে তার সন্তান হলে কি নাম রাখবে, কেমন করে মানুষ করবে, কেমন করে তার তুলতুলে নরম হাত ধরে ধিরে ধিরে বাড়িয়ে তুলবে।
ভাবীও তো বোধহয় এমন হাজার স্বপ্ন দেখতেন, এমন কতো অভিলাষই না ছিল উনার। সবকিছুই আজ অপূর্ণতায় ছেঁয়ে গেছে। আর কোনোদিন এমন স্বপ্ন দেখার অধিকার পাবেন না। নিয়তি এমন কেন হয়?

ইয়াজ মা’কে বললো, আমার পাশে বসতে সে ইথিলা ভাবীর কাছে যাবে। আমি ডেকে বললাম আমিও যাবো। ইয়াজ বললো,
___ স্যালাইনটা দূর্বলতা কাটানোর জন্য। তুমি এখন অসুস্থ, আর স্যালাইন শেষ হয়নি। পরে যেও।

তখনি নার্স আসলো স্যালাইন কতটুকু হয়েছে পরিক্ষা করতে। আমি উনাকে দেখেই বললাম,
___ ১০ মিনিটের জন্য এটা খুলে রাখবেন প্লিজ। আমার ভীষণ দরকার।

উনি ইয়াজের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন খুলবেন কিনা! ইয়াজ বললো এই ফ্লোরেই একদম উত্তর কর্ণারে তার বোনের অপারেশন হয়েছে তাকে দেখতে চায়।
তিনি প্রথম কিছু ভাবলেন তারা বললেন,
___বেডসহ নিয়ে যেতে পারবেন। আপনি ধরেন আমিও হেল্প করছি।

তারপর দুজন মিলে দুই বারান্দা পেরিয়ে শেষ কর্ণারে গিয়ে ভাবীর কেবিনে গেলো। ভাইয়া, আমার শ্বশুর শাশুড়ী, আর আমার বাবা এখানে আছেন। এখন আমরা সবাই এক জায়গায়। ভাবীকে বেশি কথা বলতে বারণ করেছে। তাও তিনি আমাকে দেখে কাঁদার মধ্যে হাসলেন, পরক্ষণে ঠোঁট কামড়েও কান্না রোধ করতে পারছিলেন না। ইয়াজ মাথায় হাত রেখে বারবার শান্ত হওয়ার জন্য ধমক দিতে লাগলো।
আমি উনার বরাবর শুয়ে একপাশে তাকিয়ে বললাম,
___ কেন এমন হলো ভাবী?

ভাবী আমার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে এবার অদ্ভুতভাবে হাসলেন। আস্তে আস্তে হাতটা বাড়িয়ে দিলো, ভাইয়া হাতটা আঁকড়ে ধরে কোনোরকম নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। কারণ তিনি জানেন এখন কাঁদলে ভাবীও কাঁদবে আর এতে উনার ক্ষতি হবে।
ভাবী ভাইয়ার হাত ধরে ইয়াজকে বললো,
___ ভাই তুমি কষ্ট পেওনা। আমরা দুজন আবার এক হওয়ার জন্যই বোধহয় এটা হয়েছে।

ইয়াজ কিছু না বুঝে বললো,
___কি বলছো ইথিলা?

ভাবী ভাইয়ার দিকে একটু তাকালেন। ভাইয়া মাথা নেড়ে কিছু ইশারা করলেন। ভাবী তখন ধিরে ধিরে বললো,
___আমাকে ছাড়তে বলায় তোমার দুলাভাইয়ের উপর ভীষণ রাগ ছিল না? কিন্তু তুমি জানো উনি নিরুপায় হয়ে এটা চেয়েছেন! আমিও না পারতে চেয়েছিলাম। কে মা হতে চাইবেনা বলো? মেয়ের জীবন তো মাতৃত্ব ছাড়া অপূর্ণ। কিন্তু আমি আমার অপূর্ণ অভিলাষকে পূর্ণ করতে উনার কথামতো ছাড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু নিয়তি সেটা চায়নি।
উনি আমাকে ভীষণ ভালোবাসেন, এবং বাসতেনও। কেয়ার করতেন,লুকিয়ে লুকিয়ে আমার জন্য কাঁদতেন। উনার হয়তো হাজারবার ইচ্ছে হয়েছে আমার কপালে ভালোবাসার পরশ ছোঁয়াতে কিন্তু পারেননি। কারণ তিনি আগে থেকেই জানতেন তিনি বাবা হতে পারবেন না। তাই চাইতেন উনার জন্য আমার কোনো ক্ষতি না হোক, আমি যাতে অন্য জায়গায় বিয়ে করি। উনাকে জোর করে বিয়ে করানো হয়েছিল, আর আমিও জানি বিয়েটা ভীষণ তাড়ার মধ্যে হয়েছিলো,উনি নিজের সাথে বুঝে উঠতে পারেননি কি সিদ্ধান্ত নিবেন। তাই উনি লজ্জায় সেটা চেপে রেখেছিলেন। বিয়ের পরেও খুব চেয়েছেন বলবেন কিন্তু পারেননি লোকলজ্জার ভয়ে। উনার সহকর্মীরা উনাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলবে সেটা ভেবে। আমাকে অবহেলা করার নাটক কর‍তেন, কিন্তু একটা সময় আমার কষ্ট নিজ চোখে দেখে সহ্য করতে পারেননি। সেইবার বাড়িতে যাওয়ার পরে উনি সাহস করে আমাকে পুরো বিষয়টা জানিয়ে বললেন যাতে আমি অন্যত্র বিয়ের জন্য প্রস্তুত হই। বিশ্বাস করো ইয়াজ, আমি অনেক চেষ্টা করেছি, মা আমাকে অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু আমি মন স্থির করতে পারিনি। যদিও মা এখন এটা প্রথম জেনেছে,কিন্তু মা উনার অবহেলা দেওয়ার কথা শুনেই আমাকে নতুন করে সব শুরু করতে বলতো। কিন্তু আমি উনাকে ছাড়া কিচ্ছু কল্পনা করতে পারতাম না। কেন যেন মনে হতো উনার কাছে ছাড়া আমি আর কোথাও ভালো থাকবোনা। তাই একজীবন উনার জন্যই বুঝি লেখা হয়ে গেছে! আজকে উনি আমাকে অনুমতি দিয়েছেন সবাইকে সত্যটা বলতে, আমরা দুজন দুজনের পাশে ছায়ার মতো থাকলে উনি আর কারো মন্তব্যকে গ্রাহ্য করবেন না। আমরা দুজনেই অপূর্ণ, আর সেই অপূর্ণতায় পূর্ণতা খুঁজে নিবো।

তারপর ভাবী চোখ মুছতে মুছতে হাতটা বাড়িয়ে আমার গালে হাত রেখে বললেন,
___ আমি ফুফি হতে যাচ্ছি, আমি ভীষণ খুশি বিন্দিয়া। তোমার সন্তানকে বলবে আমাকে যেন বড়মা ডাকে,কেমন? আমি ইয়াজের ৫ মিনিটের বড় না?

বলেই হাসিটা আর ধরে রাখতে পারলেন না। মুখ চেপে কান্না শুরু করে দিলেন।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে