Tag: মিসেস চৌধুরী

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Last_Part
    #Writer_NOVA

    ৩ মাস পর…….

    সময় বহমান।সে তার নিজ গতিতে চলবেই। শুধু সময়ের সাথে পরিস্থিতি নামক বস্তুটা বদলে যায় নানাভাবে।পাওয়া, না পাওয়া হাজার আক্ষেপ নিয়ে ছুটে চলে আমাদের জীবন।আকশি ও ফিহার বিয়ের ২ মাস ২৪ দিন চলছে।স্বামী, বাচ্চা,টেবলেট ও শ্বশুর নিয়ে ছোট একটা সংসার ফিহার।যার যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে সবাই। তিন মাস আগের ঘটনায় দুই চৌধুরীর রাগ ভাঙাতে ফিহাকে বেশ নাকানিচুবানি খেতে হয়েছে।হাজার মেহনত করে,মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টানা ৫ দিন পর ফিহা, আকশি ও আনিস চৌধুরীর রাগ ভাঙাতে সক্ষম হয়েছে। তখনকার কথাগুলো মনে পরলেই ফিহা আপনমনে হেসে উঠে।আকশি, আনিস চৌধুরী ফিহার সাথে কথা বলতো না,মুখটা গম্ভীর করে রাখতো।অবশেষে ফিহা বিয়েতে রাজী হলো সব ঠিক হয়ে যায়।ঘরোয়া ভাবেই বিয়ে হয়ে যায় আকশি ও ফিহার।যারা জানতো ফিহা চৌধুরী বাড়ির বউ তারাই শুধু বিয়েতে উপস্থিত ছিলো।আবদুল সাহেব, আনিস চৌধুরী, সাফান ও আদিয়াত এই চারজনের সামনে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয় ফিহা ও আকশি।আজ ফিহা সত্যিকারের মিসেস চৌধুরী। আকশি সারাদিন অফিস সামলায়।আর ফিহা বাসায় থেকে সংসার।পুরো অফিসের মানুষ জানে ফিহা ও আকশির বিয়ে ২ বছর আগে হয়েছে। তাদের কে বিয়ের ব্যাপারটা জানানো হয়নি।জানলে হয়তো কিছু আজাইরা পাবলিক ফিহাকে নানাভাবে বিরক্ত করতে উঠে পরে লাগতো।

    দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমেছে। দোলনায় অনি ঘুমোচ্ছে। ফিহা বেডে বসে একটা বিশাল বড় ছবির এলব্যাম উল্টে পাল্টে দেখছে।এই এলব্যামটা ফিহার বিয়ের দিন আদিয়াত গিফট করেছিলো।আদিয়াতের মোবাইল ক্যামেরায় বিভিন্ন সময়ে আকশি, ফিহা ও অনির তোলা সেই ছবিগুলো আছে।আরো অনেক ছবি তুলেছিলো ওদের আগেচরে। সেগুলো বের করে একসাথে এলব্যাম করে ফিহাকে গিফট করেছিলো।ফিহা ১ম বার ছবিগুলো দেখে পুরো শর্কড হয়ে ছিলো।গুরুত্বপূর্ণ মোমেন্টের ছবিগুলো আজ স্মৃতি।

    ফিহাঃ না চাইতেও অনেক কিছু পেয়েছি আমি।আমার মতো একটা মেয়েকে এতো ভালবাসবে তুমি সেটা আমি কখনও ভাবিনি।সেদিন সাফান ঠিক কথায় বলেছিলো তুমি আমায় অনেক ভালো রাখবে।আজ ভেবে দেখলাম সাফান সত্যি বলেছে।আমি যদি তোমাদের ছেরে সেদিন চলে যেতাম তাহলে হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভূল করতাম।আমি কতটা বোকা কাজ করতে বসেছিলাম।পুরোনো কথাগুলো ভাবলে নিজের প্রতি রাগ উঠে।তাও তুমি আমায় খুশি মনে মেনে নিলে।জানো এখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয় নিজেকে।একটা মিথ্যা সম্পর্ক দিয়ে শুরু হয়ে আজ সত্যি সম্পর্কে বাঁধা পরে গেছি।

    ফিহা আপন মনে বিরবির করে কথা বলছে।হঠাৎ অনি ঘুম থেকে উঠে গেল। অনি এখন দাঁড়াতে পারে।নিজ চেষ্টায় এক পা এক পা করে হাঁটতেও পারে।তবে দুই এক পা হেঁটে ধপ করে পরে যায়।মুখে সবসময় মা,বাবা, দাদা।এখনো ঘুম থেকে উঠে মা, মা বলে চিৎকার করে কাঁদছে। ফিহা জলদী করে অনিকে কোলে তুলে নিলো। অমনি সে চুপ হয়ে গেল।অনি যেদিন প্রথম বার ফিহাকে মা বলে ডেকেছিলো,ফিহা মনে হয় খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল। মা ডাকটা যে কি?সেটা একমাত্র যার সন্তান নেই সে বুঝে।অনির মুখে মা ডাক শুনে ফিহা নিজেকে স্বার্থক মনে করে।

    ফিহাঃ আমার ছোট্ট পরীটা উঠে গেছে। এখন আমার মা-মণি কি খাবে?কি খাবে?(একটু ভাবার ভান করে)হুম মনে পরেছে।এখন আমার মাম্মাম ফিডার ভর্তি সুজি খাবে।আমার লক্ষ্মী মা-মণি।খাওয়ার সময় একটুও দুষ্টুমী করবে না।
    অনিঃ মা মা মা মা ই ই ই।
    ফিহাঃ আমিই তোমার মা।এতবার বলে মুখ ব্যাথা করতে হবে না।এই চৌধুরী বাড়ির সাথে পরিচয়টা তো তোমার জন্য হয়েছে মা-মণি।নয়তো আজ কোথায় থাকতাম আল্লাহ জানে। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে।আমি এখন আমার এই ছোট্ট পরীটার সত্যিকারের মা।এই টেবলেট গেলো কোথায়?ওকে তো অনেকক্ষণ ধরে দেখছি না।

    🌿🌿🌿

    এদিক সেদিক তাকিয়ে ফিহা টেবলেটকে খুঁজতে লাগলো। অনিয়াকে কষ্ট করে আধা ফিডার সুজি খাইয়ে নিচে নেমে এলো।অনিকো কোলে নিয়ে রান্নাঘরে গেল।দুই কাপ চা তৈরি করে শ্বশুর আনিস চৌধুরীর রুমে গেল ফিহা।

    ফিহাঃ আসবো বাবা?
    আনিসঃ আরে বউমা এসো।আমি না বলেছি তোমার অনুমতি নিতে হবে না। এই পুরো বাড়ি এখন তোমার দায়িত্বে।তুমি যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারবে।
    ফিহাঃ আপনার চা।

    রুমে এসে এক কাপ চা আনিস চৌধুরীর দিকে বাড়িয়ে দিলো।অনিকে পাশে বসিয়ে ফিহা আরেক কাপ হাতে তুলে নিলো।

    আনিসঃ আকশি এখনো আসছে না কেন?
    ফিহাঃ অনির আব্বুর কথা বলছেন বাবা?অনির আব্বু তো বললো আজ আসতে একটু দেরী হবে।গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে আজ।সাফান ফোন করে আমায় বলে দিলো।আমি তো সবকিছু সামলাতে পারিনি।এখন ১ম থেকে সব গুছিয়ে নিচ্ছে তিনি।

    আনিসঃ তুমি আমাদের জন্য যা করেছো তাই বা কম কিসের? তোমাকে তার যথাযথ মর্যাদা দিতে পেরে আমি এখন মরেও শান্তি পাবে।তোমায় যদি আকশির বউ না করতে পারতাম তাহলে সারাজীবন নিজের ভেতরে ভেতরে অপরাধ বোধ নিয়ে বেঁচে থাকতাম।তোমার সংসার আল্লাহ চৌধুরী বাড়িতে লিখে রেখেছে তুমি কি আর এসব ছেড়ে যেতে পারবে বউমা??

    ফিহাঃ একটা প্রবাদ আছে না যদি থাকে নসিবে, আপনা আপনি আসিবে।আমাকে আল্লাহ অনির আব্বুর জন্য বানিয়েছে আমি কি অন্য বাড়ি যাবো বাবা।তার বাম পাঁজরের হার থেকে আমি তৈরি। সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে থাকলেও তার জন্য আমাকে এখানে আসতেই হতো।

    আনিসঃ আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া।তিনি আমার কাছে আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
    এবার শান্তিতে চোখ বুজতে পারলেই আমার মুক্তি। ছোট ছেলের সংসার দেখে মরতে পারছি এটাই বা কম কিসের? আমিতো আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম।আমি ভেবেছি আকশি কখনও আমার বুকে ফিরে আসবে না।
    ফিহাঃ বাবা,টেবলেটকে কোথায়?
    আনিসঃ টেবলেটকে আমি সার্ভেন্টের সাথে বাজারে পাঠিয়েছি।বাড়িতে থাকতে থাকতে ও বোর হয়ে যাচ্ছে। তাই ভাবলাম বাজার থেকে ঘুরে আসুক ভালো লাগবে।
    ফিহাঃ বাবা,একটা কথা জিজ্ঞেস করা ছিলো?
    আনিসঃ হ্যাঁ,মা বলো।
    ফিহাঃ আপনারা এতো নাম থাকতে কুকুরের নামটা টেবলেট কেন রাখলেন?
    আনিসঃ আকশি টেবলেট খেতে ভীষণ পছন্দ করতো।যেখানে টেবলেটের পাতা দেখতো সেখান থেকেই খেয়ে নিতো।ওর জন্য ঔষধের পাতা লুকিয়ে রাখতাম।তারপরেও খুঁজে নিয়ে খেয়ে নিতো।একবার সমস্যা হয়ে গেলো।কিছু দিন হসপিটালে এডমিটও ছিলো।ইনজেকশনের ভয় দেখিয়ে এই টেবলেট খাওয়ার অভ্যাস ছারিয়েছি।যেহেতু ওর পছন্দ ছিলো টেবলেট তাই যখন কুকুর ছানা কিনে আনলাম তখন এটার নাম টেবলেট রেখে দিলো।ছোট বেলার কথাগুলো মনে হলে এখনো লজ্জা পায় আকশি।

    ফিহাঃ অদ্ভুত, কেউ টেবলেট খেতে এতো পছন্দ করে।আমারতো দেখলেই ভয় করে।এত বড় বড়। ওগুলো গিলতেও কষ্ট হয়।

    আনিস চৌধূরী বিনিময়ে মুচকি হাসলো।অনি তার দাদাভাইয়ের সারা বেড জুড়ে হামাগুড়ি দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কখনও এটা ধরে তো কখনো ঐটা।পুরো রুম জুড়ে তার রাজত্ব। বড্ড দুষ্ট হয়ে গেছে সে।কারো কথা শুনে না।এটা টান দিয়ে ফেলে দিবে,ঐ টা ছুড়ে মারবে।ফিহাকে জ্বালিয়ে মারে।তবু্ও ফিহা একটুও বিরক্ত হয় না।মিনিটের মধ্যে সারা রুম তোলপাড় করতে ওস্তাদ অনি।দুষ্টুমী করে খিলখিল করে হাসে।

    ফিহাঃ মা-মণি ঐটা দাদাভাইয়ের চশমা।ধরে না ভেঙে ফেলবে তো।এতো দুষ্টুমী করো কেন তুমি?
    আনিসঃ একদম বাবার মতো হয়েছে। আকশিও এমন দুষ্টুমী করতো।ওকে সামলাতে আমার হাল-বেহাল হয়ে যেতো।
    ফিহাঃ অনেক দুষ্ট হবে বাবা।এখনি হামাগুড়ি দিয়ে এটা, সেটা ভেঙে ফেলে।বকা দিলে খিল খিল করে হাসে।কোন কথা শুনে না।ভীষণ বজ্জাত।এখনি যা দুষ্টুমি করে।আরো বড় হলে আল্লাহ জানে কি করবে?

    আনিস চৌধুরী অনিকে কোলে বসিয়ে দিলেন।অনি থাবা মেরে তার থেকে খালি চায়ের কাপটা নিয়ে নিলো।কাপ হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলো।
    ফিহাঃ মা-মণি রেখে দেও।
    আনিসঃ থাক বউমা।ভেঙে ফেললে নতুন কিনে নিবো।
    ফিহাঃ তার জন্য নয় বাবা।ভেঙে গেলে কাচের টুকরো দিয়ে ব্যাথা পাবে তো।

    আনিস চৌধুরী অনির সাথে সময় দিতে লাগলো।আজকাল দিনগুলো তার ভালোই যায়।সারাদিন অনির সাথে হেসে,খেলে কাটায়।ফিহা নিজ হাতে রান্না করে।টেবলেট অনিকে পাহারা দেওয়া,ওর সাথে খেলা করা,সারা বাড়ি ঘুরে দেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।সবার দিন আনন্দে কাটে।বর্তমানে অনি হাতের কাপটা বেডে ফেলে দাদাভাইয়ের চোখ থেকে চশমা কেড়ে নিলো।

    ফিহাঃ নাহ অনি।তুমি বাবাকে বড্ড বেশি জ্বালাতন করছো।চলো তোমায় শীতের কাপড় পরিয়ে দেই।এটা তো নষ্ট করে ফেলছো।
    আনিসঃ আরেকটু থাকুক আমার কাছে। তুমি বরং শীতের কাপড় দিয়ে যাও আমি পরিয়ে দিবো।
    ফিহাঃ আচ্ছা বাবা।আপনি রাখুন ওকে।আমি রাতের খাবারের ব্যবস্থা করি।একটু সাবধানে রেখেন।চোখের আড়াল হলেই দুষ্টুমীতে মেতে উঠবে।আমি শীতের কাপড় দিয়ে যাচ্ছি।

    🌿🌿🌿

    অনির শীতের কাপড় দিয়ে,ফিহা কিচেনে রান্না করতে চলে গেল।দিনকাল ভীষণ ভালো কাটছে তাদের। আদিয়াত এখন নিজেদের ব্যবসা সামলায়। এক মাস পর আদিয়াত ও অনন্যার বিয়ে।সাফান, চৌধুরী কোম্পানিতে ভালো পোস্টে চাকরী করে।সবসময় আকশির সাথেই থাকে।সাফান চাকরীতে যোগ দেয়ার কিছু দিন পর ছোট-খাটো অনুষ্ঠানে করে সারার সাথে বিয়ে হয়েছে। সারার বাবা অবশ্য এই বিয়েতে প্রথমে মত দিতে চাইনি।কিন্তু আকশি ও ফিহা অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বিয়েতে রাজী করেছে।রিয়ানা এখন জেলে।দুধের ফিডারে ঘুমের ঔষধ পেয়ে পুলিশের কাছে প্রমাণ সহ কমপ্লেন করেছে আকশি।রিয়ানা যাতে টাকা দিয়ে বের না হতে পারে তার জন্য ডাবল টাকা দিয়ে পুলিশকে হাত করে রেখেছে আকশি।

    সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে অফিস থেকে ফিরলো ফিহা।টেবলেট ড্রয়িং রুমের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। অনি এখনো আনিস চৌধুরীর কাছে আছে।এই সময়টা অনি ওর দাদার কাছেই থাকে।আকশি ফ্রেস হয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখলো ডেসিং টেবিলের ওপর ধোঁয়া ওঠা গরম কফি।মুচকি হেসে মগ হাতে নিয়ে চুমুক দিলো।ওমনি সারাদিনের ক্লান্তি উধাও হয়ে গেল।এই আড়াই মাসে নেশা হয়ে গেছে এটা।অফিস থেকে এসে ফিহার হাতের বানানো কফি না খেলে ভালো লাগে না।

    রাতের খাবার একসাথে খেয়ে যে যার যার রুমে ঘুমাতে চলে গেলো।ফিহা অনিকে ঘুম পারাতে চাইলো।কিন্তু অনি দুষ্টুমী শুরু করেছে।ফিহা অনিকে নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। অনি বারান্দার গ্রিল ধরে খেলছে।পেছন থেকে এক জোড়া হাত এসে ফিহাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।কানের কাছে এসে গুণগুণ করে গান গাচ্ছে সে।মি.আকশি কি গান শুনচ্ছে ফিহাকে চলুন আমরাও একটু শুনে আসি😁।

    ♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪

    তোর চেয়ে আর কে বেশি, বাসবে আময় ভালো
    আঁধার ভরা জীবনে, তুই তো আশার আলো।
    তুই তো আমার সব রে পাগল,তুই তো আমার সব,
    তুই তো আমার বেঁচে থাকার, বড় অনুভব। (×২)

    জীবন যখন থমকে দাঁড়ায়, নানারকম বাহানায়
    তুই সে জড়িয়ে আমায়, বাঁধিস নতুন ভরসায়।(×২)
    তুই তো আমার সব রে পাগল,তুই তো আমার সব,
    তুই তো আমার বেঁচে থাকার, বড় অনুভব। (×২)

    তোরি চোখে দেখি আমি,ছোট্ট সুখের পৃথিবী,
    মনের ভেতর থাকিস রে তুই, হয়ে প্রেমের ছবি।(×২)
    তুই তো আমার সব রে পাগল,তুই তো আমার সব,
    তুই তো আমার বেঁচে থাকার, বড় অনুভব। (×২)

    ♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪

    🌿🌿🌿

    গানের গলা খারাপ নয় আকশির।ফিহা মনোযোগ সহকারে স্বামীর গান শুনছে।গান শেষ হতেই ফিহা বেশ কয়েকবার গলা ঝেড়ে বললো।

    ফিহাঃ হঠাৎ জনাব গান গাইলো যে।সারাদিন অফিস করে ক্লান্ত হয়ে কারো আবার গান গাইতেও মন চায়।
    আকশিঃ না, মন চাইলো তাই গাইলাম।কেন গাইতে পারি না।তা কেমন হলো?
    ফিহাঃ চলে কোনরকম।তবে বেশি ভালো নয়।

    ফিহা মুখ টিপে হেসে কথাটা বলে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো আকশি চোখ দুটো ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

    ফিহাঃ এভাবে তাকিয়ে থাকার কিছু হয়নি।যা সত্যি তাই বলেছি।আজ ভালোবাসা মনে হচ্ছে উথলে পরছে।ঘটনা কি মি.চৌধুরী🤨?(ভ্রু উঁচু করে)
    আকশিঃ কোন ঘটনা নেই মিসেস চৌধুরী। আমার মন চাইলো আমার বউকে গান শুনাতে তাই শুনালাম।
    ফিহাঃ নেও ধরো তোমার মেয়েকে।আমি বিছানা করবো।এখন একটু তাড়াতাড়ি ঘুমাও।নয়তো সকালে অফিস যেতে চাইবে না।

    অনিকে আকশির কোলে দিয়ে চলে যেতে নিলো।আকশি ফিহার এক হাত ধরে হেচকা টান দিতেই আবার সামনে চলে এলো।

    ফিহাঃ কি হলো এটা?আমি রুমে যাবো।
    আকশিঃ একটু পরে।আমরা এখন একসাথে চাঁদ দেখবো।

    ফিহাঃ মেয়ের ঠান্ডা লেগে যাবে অনির আব্বু।তোমার যে মাঝে মাঝে কি হয় আমি নিজেও বুঝি না।
    আকশিঃ আমাদের মেয়ে অলরেডি কিছু সময় পর ঘুমিয়ে যাবে। আচ্ছা ফিহা একটু ভাবো তো।গত চারটা মাসে কি থেকে কি হয়ে গেলো।কোথায় তুমি ছিলে আর কোথায় আমি।

    ফিহাঃ এসব কথা শোনার টাইম নেই আমার। তোমার সাথে এখন কথা শুরু করলে তুমি শেষ করার নাম নিবে না।তারপর দেখা যাবে আগামীকাল অফিস করতে তোমার কষ্ট হবে।

    আকশিঃ ভালোবাসি মিসেস চৌধুরী। তুমি না এলে হয়তো আমাদের জীবনটাই এলোমেলো হয়ে যেতো।

    ফিহাঃ আমিও ভালোবাসি মশাই আপনাকে।এখন আপনি কি আমার হাতটা দয়া করে ছারবেন।মেয়েটা এখানে থাকলে নির্ঘাত ঠান্ডা লেগে যাবে।
    (কোমড়ে দুই হাত রেখে কঠিন গলায়)

    আকশিঃ এখন তো আমার নিজের মেয়ের ওপর হিংসে হয়।তুমি সবসময় অনিকে নিয়ে থাকো। আমার কথা চিন্তাও করো না।(মুখ গোমড়া করে)

    ফিহাঃ তুমি আবার রাগও করতে পারো।ভূলে যেয়ো না আমার মিসেস চৌধুরী হওয়ার পেছনে অবদান শুধু আমার মেয়ের অন্য কারো নয়।তাই ওর সাথে হিংসে করা ছেড়ে দেও।

    আকশিঃ তা ঠিক।এই ছোট্ট পরীটা না থাকলে হয়তো তোমাকে পেতাম না।অনি বড় হলে কি তুমি ওকে জানাবে আমরা ওর বাবা-মা নয়?

    ফিহাঃ প্রশ্নই উঠে না।অনি আমাদের পরিচয়ে বড় হবে।ও জানবে আমরাই ওর বাবা-মা। বড় হয়ে ও যদি অন্য কারো থেকে জানে তাহলে জানুক।কিন্তু আমরা কখনও জানাবো না।এতে অনি নিজের সাথে যুদ্ধ করা শুরু করবে।হীনমন্যতায় ভুগবে। যেটা আমি কখনও চাই না।

    আকশিঃ তোমাকে আমি এই জন্য এতো ভালোবাসি মিসেস চৌধুরী। সাথে আমাদের ছোট মা-মণি তো আছেই।তোমরাই আমার এখন সব।
    ফিহাঃ আমারও।(মুচকি হেসে)

    আকশি ও ফিহা দুজন চোখ বন্ধ করে অনির মাথায় চুমু খেলো।ফিহা অনিকে একহাতে জরিয়ে রেখেছে। আর আকশি ওদের দুজনকে এক হাতে জড়িয়ে ধরেছে।আর অনি পরী অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।

    ভালো থাকুক এরকম ছোট পরিবারগুলো।সেই কামনাই করি আমরা সবাই। ছোট ছোট খুশিগুলো নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করুক।

    ______________(সমাপ্ত)_______________

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-১৯

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-১৯

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_19
    #Writer_NOVA

    ৭ দিন পর…….

    ফিহা এখন অনেকটা সুস্থ। অবশ্য তা সম্ভব হয়েছে আকশির জন্য। এই সাতটা দিন আকশি ফিহার সাথে আঠার মতো লেগে ছিলো।ফিহার কোনটা প্রয়োজন,কি খাবে,ঠিকমতো ঔষধ খেয়েছে কি না?কোথায় যাবে,কি করবো ইত্যাদি ইত্যাদি। সবকিছুর খেয়াল রেখেছে আকশি।১ম ১ম ফিহা বিরক্ত হলেও এখন হয় না।বরং আকশির কেয়ারিং গুলোর মাঝে ভালো লাগা খুজে পায়।একটা কেয়ারিং ছেলে সব মেয়েদের পছন্দ। অতিরিক্ত কেয়ার যদিও বা একসময় বিরক্তর কারণ হয়।তবুও মেয়েরা মন-প্রাণ দিয়ে ঠিকি যত্নশীল ছেলে চায়।ফিহাও তার ব্যাতিক্রম ছিলো না।কিন্তু অনির চিন্তা মাথায় আসার পর বিয়ের চিন্তাই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছিলো।এখন আকশিকে দেখে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে।এক কথায় বলতে গেলে ৭ দিনে আকশির প্রতি ফিহা অনেকটা দূর্বল হয়ে গেছে।

    ল্যাগেজে জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে ফিহা।আজ সে চৌধুরী বাড়ি থেকে চলে যাবে।কল করে সাফানকে চলে আসতে বলেছে।ফিহার বর্তমানে ধারণা আকশি যেহেতু ফিরে এসেছে এখন এই বাড়িতে ওর থাকার কোন মানে হয় না। “এই বাড়ি থেকে চলে যাবে”কথাটা ভেবে গতকাল রাত থেকে কান্না করে মুখ, চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। অনিয়া,আনিস চৌধুরী ও টেবলেটকে আর দেখতে পারবে না মনে করে আরেকদফা কান্না করে নিলো।সাফান চলে এসেছে। সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে ফিহার কান্ড কারখানা দেখে মিটমিট করে হাসছে।

    ফিহাঃ হাসছিস কেন?
    সাফানঃ তুই যখন এদের ছেড়ে যেতেই পারবি না তাহলে ল্যাগেজ গুছচ্ছিস কেন?
    ফিহাঃ কে বলেছে আমি যেতে পারবো না।এতদিন চৌধুরী বাড়ি সামলানোর কেউ ছিলো না। তাই আমি ছিলাম।এখন এই বাড়ির ছোট ছেলে এসে পরেছে। আমার কাজ শেষ। অফিস, সংসার,বাচ্চা সব তিনি সামলাবেন।আমাকে তো কোন প্রয়োজন নেই। তাই আমি চলে যাচ্ছি। আমি কারো ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।

    সাফানঃ কান্না করছিস কেন?

    ফিহাঃ অনিকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।অনেক মিস করবো ওকে।তারপরেও চলে যেতে হবে।

    সাফানঃ তুই তো মিসেস চৌধুরী। কথাটা ভূলে গেছিস। তোর সংসার,মেয়ে, শ্বশুর ছেরে চলে যাবি।

    ফিহাঃ আমি তো সারাজীবন এই পরিচয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তা আর হলো কোথায়?আমরা তো অনেক কিছুই চাই। কিন্তু সব কি পূরণ হয়?

    সাফানঃ তুই কি পাগল হলি ফিহু?তুই চলে গেলে অনির কি হবে ভেবে দেখেছিস।ঐ ছোট্ট দুধের বাচ্চাটা তোকে ছাড়া কিছু বুঝে না।তুই চলে গেলে ও মারা যাবে তোর শোকে।

    ফিহাঃ একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবি না।আমি চলে গেলে সবাই ভালো থাকবে।আকশি চৌধুরী কোন ভালো মেয়েকে বিয়ে করে নিবে। তাহলেই তো অনি ভালো একটা মেয়ে পেয়ে যাবে।

    সাফানঃ তোর মাথার কয়টা স্ক্রু ঢিলে হয়েছে আমাকে বলবি কি?তোর মতো যে অনিকে অন্য কেউ ভালবাসবে তার গ্যারান্টি কি?এমন হতে পারে তার অবহেলায়,অনাদারে,অযত্নে আমাদের মতো করে বড় হবে অনি।তুই কি এটা মেনে নিবি?বাচ্চাটার সাথে তুই এমনটা করিস না।ওর কি দোষ বল?

    ফিহাঃ যদি আকশি চৌধুরী না আসতো তাহলে আমি পুরো পরিস্থিতি সামলে নিতাম।কিন্তু এখন তো উল্টো হয়ে গেছে। আমি এই বাড়িতে কোন পরিচয়ে থাকবো বল তো।আমি কারো বোঝা হতে চাইছি না।সুতরাং আমি চলে যাবো।কেউ আমাকে কিছু বলেনি।সবার থেকে অফুরন্ত ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু আমার মতো মেয়ের কপালে যে এসব নেই রে।আমি কারো দয়া নিয়ে বাঁচতে চাই না।

    সাফানঃ এখানে দয়ার কি হলো?তুই এতোদিন যেভাবে ছিলি সেভাবেই থাকবি।

    ফিহাঃ না, সেটা তো হয় না।আকশি চৌধুরী বেঁচে না থাকলে আমি মিথ্যা সম্পর্কে নিয়ে এই বাড়িতে থাকতে পারতাম।কিন্তু সে বেঁচে থাকা অবস্থা তার বাড়িতে মিথ্যে পরিচয়ে কি করে থাকি বল?আমি আজ চলে যাচ্ছি এটাই আমার শেষ কথা।তুই যদি আমাকে তোর সাথে নিতে চাস তো চুপচাপ নিয়ে চল।যদি নিতে না চাস তাহলে সাফ সাফ বলে দে।আমার ব্যবস্থা আমি করে নিবো।

    সাফানঃ আমি সেটা বলিনি যেটা তুই বুঝেছিস।আমি অনিয়ার দিকে তাকিয়ে তোকে এখানে থাকতে বলেছি।তুই আকশি কে বিয়ে করার প্রস্তাবে রাজী হয়ে যা।ছেলেটা ভীষণ ভালো। ওকে বিয়ে করলে এসব কিছু তোকে ছারতে হবে না।তুই মিসেস চৌধুরী পরিচয়ে বাঁচতে পারবি।

    ফিহাঃ আমি এতদিন তাদের সবকিছু দেখে রেখেছি। সেই কারণে তার ঋণ চুকাতে আমাকে বিয়ে করতে চাইছে।এছাড়া আর কিছু নয়।

    সাফানঃ তোর ধারণা মিথ্যে।

    ফিহাঃ আমি এসব ব্যাপারে আর কথা বলতে চাইছি না।তুই বাইরে অপেক্ষা কর আমি আসছি।

    সাফানঃ আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা কর।তুই —-

    ফিহাঃ প্লিজ সাফান,প্লিজ। আমি তোর কাছে হাত জোর করছি।তুই এসব কথা আর বলিস না।আমার অনির জন্য অনেক কষ্ট হয়।

    🌿🌿🌿

    কথাগুলো বলে ফিহা বেডে বসে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পরে।সাফান ধীর পায়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। দরজার পাশে অনিকে কোলে নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে আকশি।ভেতরের সব কথাই সে শুনতে পেরেছে।মনের আকাশে একরাশ বিষন্নতা ঘিরে ধরেছে।ফিহাকে নিয়ে সংসার করার যে সুপ্ত বাসনাটুকু জেগে উঠেছিল,তা এখন উড়ু উড়ু করে পালাতে চাইছে।সাফানকে আকশি পাঠিয়ে ছিলো ফিহাকে বোঝানোর জন্য। কিন্তু কাজ হলো না।

    সাফানঃ আই এম স্যরি ব্রাদার। আমার কথা মানলো না।ওর ধারণা তুমি ওর ওপর দয়া করেছো।তুমি ওকে বলে দেও না কেন?তুমি যে ফিহুকে ভালোবাসো।

    আকশিঃ মেয়েরা নাকি কেউ ভালোবাসলে আগে থাকতে বুঝতে পারে। তাহলে ও কেন বুঝে না।এই কয়েকদিনে আমার সবটুকু দিয়ে আমি বুঝানোর চেষ্টা করেছি।কিন্তু ও বুঝতে চায়নি।সব কথা কি মুখে বলে দিতে হবে?আমার অপরাধ হয়ে গেছে। কাল রাতে যদি ডাইনিং টেবিলে বাবার সামনে ওকে বিয়ের কথা না বলতাম,তাহলে হয়তো ও আমাদের ছেড়ে যেতে চাইতো না।অন্তত পক্ষে আর কিছুটা দিন তো আমার চোখের সামনে থাকতো।বাবা বুঝালো,আমি বুঝালাম,অনির দোহাই দিলাম। তারপরেও কাজ হলো না।ওর আত্মসম্মান এতো বেশি। তাহলে চলে যাক ও। আমি মানা করবো না।আমি কখনও বলবোও না যে আমি ওকে ভালবাসি।ওর যদি আমাদের প্রতি কোন ভালোবাসা না থাকে তাহলে আমার ভালোবাসা তো পুরোই ফিঁকে।কি দরকার মিথ্যে সম্পর্কে বেঁধে রাখার?আমি ওর ওপর কোন দয়া করছি না।আমি ভালোবেসে ওকে বিয়ে করতে চাইছি।সারাজীবন নিজের কাছে রাখতে চাইছি।আমার কথা বাদ দিলাম।কিন্তু অনিয়া, অনি কি দোষ করছে?অনিকে এতবড় শাস্তি কেন দিতে চাইছে ফিহা?ও জানে না ওকে ছারা অনি বাঁচবে না।এখন ওর মায়ের দায়িত্ব কোথায় গেলো?কোন মা কি তার সন্তানকে এই অবস্থায় ফেলে যেতে পারে।তুমিই বলো সাফান।

    সাফানঃ ফিহু মনে করছে তুমি ওর প্রতি দয়া করছো।এতদিন তোমাদের সবকিছু দেখে রেখেছে সেজন্য তুমি ওকে বিয়ে করতে চাইছো।কিন্তু ওর ধারণাটা সম্পূর্ণ ভূল।তুমি ওর ভূল ধারণাটা দূর করে দেও।ফিহা,ছোট বেলা থেকে কারো কাছে দায়বদ্ধ হয়ে থাকতে চাইতো না।ওর কথা মেয়ে হয়েছে বলে কি মাথা নিচু করে থাকবো নাকি।ছেলেদের সাথে সমান তালে মাথা উঁচু করে বাঁচবো। নিজের আত্মসম্মানে আঘাত জীবনেও মেনে নেয়নি।

    আকশিঃ কিন্তু এখানে তো ওর আত্মসম্মানের কোন কথাই উঠছে না।ওর দিকে যাতে ভবিষ্যৎ কেউ চোখ তুলে তাকাতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলাম।আজ ও বাড়ি থেকে চলে গেলে দুদিন আগে হোক বা পরে সবাই তো জেনে যাবে ফিহা আমার বউ ছিলো না।তখন ওর দিকে সবাই আঙুল তুলবে।কেউ জেনো আঙুল তুলতে না পারে সেজন্য আমি ওকে বিয়ে করতে চাইছি। ওর চরিত্রে কেউ যাতে দাগ লাগাতে না পারে।কিন্তু ফিহা তো আমাকে ভুল বুঝছে।সবচেয়ে বড় কথা আমি ওকে ভালোবাসি।ওকে ছাড়া অন্য কাউকে নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে আমি ভাবতে পারছি না।

    সাফানঃ আমি তোমার ব্যাপারটা বুঝতে পারেছি আকশি।কিন্তু পাগলীটা কেন বুঝতে চাইছে না সেটা আমি বুঝছি না।

    আকশি চোখের পানি মুছতে মুছতে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল।সাফান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সিঁড়ির রেলিং ধরে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলো। আনিস চৌধুরীর মন খারাপ করে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে। টেবলেট ও তার পায়ের কাছে মুখ গুঁজে বসে আছে।চোখে পানি চিকচিক করছে।

    (আপনাদের সবার হয়তো ফিহার ওপর রাগ উঠতে পারে।কারণ ফিহা একটু বেশি বুঝছে।কিন্তু ফিহা যেহেতু সিউর জানে না আকশি ওকে ভালোবাসে। এমনটা করাই স্বাভাবিক। আর ফিহার মনে ভূল ধারণা জেগেছে যে ফিহাকে আকশি দয়া করছে।তাই ফিহা এ বাড়িতে থাকতে চাইছে না।কিন্তু অনির দিকটা না দেখায় ওর ওপর রাগ করাটাই শ্রেয়।তবে ফিহার পরিস্থিতি নিজেকে দাঁড় করালে আপনার কাছেও নিজের আত্মসম্মানটাই আগে এসে হানা দিবে।পুরোটা পর্ব শেষ করে, একটু ভেবে দেখবেন।এর আগে ফিহার ওপর রাগ করেন না।)

    🌿🌿🌿

    ফিহা ল্যাগেজ টানতে টানতে নিচে নেমে এলো।সোফার দিকে তাকাতেই সবাইকে দেখতে পেলো।ফিহাকে দেখেই অনি তার ছোট হাত দুটো ওর দিকে বাড়িয়ে দিলো।যা দেখে ফিহার বুকটা দুমড়ে মুচড়ে ঝড় শুরু হয়ে গেল।বুক ফেটে চিৎকার আসছে।আনিস চৌধুরীও শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছেন।আদিয়াত কিছু সময় আগে এসেছে। দুই হাত ভাজ করে মুখটা গোমড়া করে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে। যত কিছু হোক ও তো আকশির বন্ধু। আকশির মনের অবস্থা ওর থেকে ভালো আর কে বুঝতে পারবে।ফিহাকে দেখে টেবলেট খুশি মনে ওর দিকে ছুটে এলো।ফিহা ল্যাগেজ রেখে হাঁটু মুড়ে টেবলেটের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।

    ফিহাঃ একদম দুষ্টুমী করবি না।সবার খেয়াল রাখবি।সবসময় তাদের পাশে থাকবি।তুই থাকতে অনির যদি কোন ক্ষতি হয় তাহলে তোকে আমি ছারবো না।অনেক রাগ,অভিমান,গাল মন্দ করেছি তোকে।প্লিজ মাফ করে দিস।পারলে আমায় ভুলে যাস।বাবার খেয়াল রাখবি।কখনও তাদের নজরের বাহিরে যাস না।ভালো থাকিস।

    ফিহার গলায় কান্না জরিয়ে আসছে।টেবলেটের কাছ থেকে উঠে যেতে নিলে ফিহার হাতটা ধরে বসলো টেবলেট। করুণ চোখে তাকিয়ে রইলো ফিহার দিকে।টেবলেটের চোখ দুটো জেনো বলছে,কোথাও যেয়ো না আমাদের ছেড়ে। ফিহা অন্য দিকে তাকিয়ে হাতটা ছারিয়ে নিলো।ভীরু পায়ে আনিস চৌধুরীর সামনে এসে বসলো।আনিস চৌধুরী ফিহাকে দেখে মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলেন।

    ফিহাঃ আমাকে ভূল বুঝবেন না বাবা।আমি কখনও আপনাদের খারাপ চাইনি আর চাইবো না।আজ ১ম আপনার কথায় অবাধ্য হয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। মাফ করে দিয়েন আমাকে।আমি কারো মনে কষ্ট দিতে চাইনি।(চোখ মুছে) ঔষধগুলো ঠিকমতো খাবেন।কোন কাজ করবেন না।যথাসাধ্য রেস্ট নিবেন।অবসর সময়ে অনির সাথে সময় ব্যয় করবেন।শরীরের যত্ন নিবেন।আমি নেই বলে অনিয়ম শুরু করে দিয়েন না।আমি প্রতিদিন ফোন করে আপনার খোঁজ নিবো।আপনার ছোট ছেলের জন্য একটা মিষ্টি চেয়ে বউ এবং অনির জন্য একটা পারফেক্ট মা খুঁজে নিয়েন।

    আনিসঃ আমাদের জন্য তোমাকে ভাবতে হবে না।আমরা তোমার কেউ হই নাকি যে আমাদের চিন্তা করবে।সবার কথা যদি সত্যি তুমি ভাবতে তাহলে আমাদের এভাবে একা ফেলে কখনও চলে যেতে পারতে না।অনিকে নিজের সন্তান মনে করলে আজ ফেলে রেখে চলে যেতে পারতে না।আমরা বাঁচি বা মরি তাতে তোমার কি?তুমি এখন আসতে পারো।

    আনিস চৌধুরী রেগে কঠিন গলায় ফিহাকে কথাগুলো শুনিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেল।ফিহা এক দৃষ্টিতে তার চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। চোখ দিয়ে অনরবত পানি ঝরছে।আঁচল দিয়ে চোখ মুছে আকশির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অনি ফিহাকে দেখে ভীষণ কান্না করছে।হাত বাড়িয়ে অনিকে নিতে গেলে আকশি দু পা পিছিয়ে গেল।

    ফিহাঃ একটি বার আমার কোলে দেন না অনিকে।এক মিনিটের জন্য দেন।আমি তো আর কোলে নিবো না।প্লিজ একটি বার দিন।(কাঁদতে কাঁদতে)

    আকশিঃ মিছে মায়ায় জড়িয়ে কি লাভ ফিহা?তুমি তো চলেই যাবে।তাহলে অনির প্রতি দরদ না দেখালেই ভালো হয়।তুমি আমাকে ভুল বুঝলে।একবার আমাদের কথা চিন্তা করলে না।তোমাকে ছাড়া দুধের বাচ্চাটা কি করে থাকবে সেটাও ভাবলে না।আমি তোমাকে বিয়ে করে এই বাড়ির বউ হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে চেয়েছিলাম।অনির মা হিসেবে গ্রহণ করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু সে সুযোগটা তুমি দিলে না।
    এখন অনিকে নিয়ে কি করবে তুমি?বাবার কথাও শুনলে না।তুমি চলে যাও।আর সম্পর্কের দোহাই দিয়ে আটকে রাখবো না তোমাকে।
    ফিহাঃ সাফান চল।(কঠিন গলায়)

    🌿🌿🌿

    ল্যাগেজ হাতে নিয়ে সাফানের সাথে সদর দরজা পেরিয়ে বের হয়ে গেলো ফিহা।মাঝ রাস্তা পর্যন্ত এসে পেছনে তাকালো।নীরব ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে আকশি ও আদিয়াত।টেবলেট ছুটে ফিহার পিছু আসতে চেয়েছিলো।কিন্তু আকশি আটকে রেখেছে।অনি প্রচুর কান্না করছে।দোতালার দিকে তাকাতে দেখতে পেলো আনিস চৌধুরী বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। চশমার ফাঁক দিয়ে চোখের পানি মুছছে।
    গেইট পার হওয়ার আগে ফিহা শুনতে পেলো অনির কান্নার বেগ বেরেই চলেছে।ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।

    সাফানঃ আরেকবার ভেবে দেখ ফিহু।তুই ভুল করছিস।এখনো সময় আছে ফিরে যা।এটা তোর নিজের সংসার।আকশি তোকে অনেক ভালবাসে।কোন দয়া দেখাচ্ছে না।
    ফিহাঃ আকশি আমায় ভালোবাসে!!(অবাক হয়ে)
    সাফানঃ সবকিছু আগে আগে বুঝে যাস আর এই সামান্য ব্যাপারটা বুঝলি না।পেছনে তাকিয়ে দেখ ও তোর জন্য কান্না করছে।

    ফিহা পেছনে তাকিয়ে দেখলো আকশি শার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছছে।অবাক চোখে ফিহা সাফানের দিকে তাকালো।
    সাফানঃ তুই না অনির মা।কোন মা কি তার মেয়ে কে এভাবে ফেলে রেখে যায়।তুই চলে গেলে ওর কি হবে তুই ভেবে দেখ।অনি ও তো তাহলে আমাদের মতো বেড়ে উঠবে।তুই কি সেটা চাস বল?তুই কি ওর কান্না শুনতে পাচ্ছিস না।অনি তোর মেয়ে। সবার কথা বাদ দিয়ে ওর জন্য থেকে যা।মেনে নে পরিস্থিতিটাকে। আকশির সাথে বিয়ে হলে তুই অনেক সুখী হবি।

    সাফান কথা শেষ করে পাশে তাকাতেই দেখলো ফিহা নেই। কারণ ফিহা দৌড়ে অনির কাছে যাচ্ছে। আকশি চোখের পানি মুছে উল্টো দিকে ঘুরেছে রুমে যাওয়ার জন্য। ঠিক তখনি কেউ ছোঁ মেরে ওর থেকে অনিকে কেড়ে নিলো।অনি তার কোলে গিয়ে শান্ত হয়ে গেল।সামনে তাকাতেই আকশি দেখতে পেলো ফিহা অনিকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে সারা মুখে চুমু খাচ্ছে।

    ফিহাঃ কি হয়েছে আমার মাম্মামের?একদম কান্না করবে না।আমি যে তোমার মায়ায় সত্যি বাঁধা পরে গেছি।আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।কখনও যাবো না।আমি বাকি জীবন তোমাদের সাথেই কাটাবো।প্লিজ তুমি কান্না করো না।তুমি কান্না করলে আমার একটুও ভালো লাগে না।

    টেবলেট সামনে এসে দাঁড়ালো। করুণ চোখে ফিহার দিকে তাকিয়ে পুরে ঘটনা বোঝার চেষ্টা করছে।আকশি অভিমান করে নিজের রুমে চলে গেল।ফিহা মুচকি হেসে অনিকে বললো।

    ফিহাঃ তোমার বাবার আমার ওপর ভীষণ রাগ হয়েছে। এবার তোমার দাদুভাই ও বাবার রাগ ভাঙাতে আমার দফা রফা হয়ে যাবে।টেবলেট, তুই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?তোদের ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না আমি।
    আদিয়াতঃ মায়ার বাঁধন ছেড়ে যেতে যখন পারবে না তাহলে এতো কিছু করার কি দরকার ছিলো। এবার আঙ্কেল ও আকশির রাগ ভাঙাতে তোমার মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হবে।তখন বুঝবে কত ধানে, কত চাল।

    ফিহা প্রতি উত্তরে কিছু বললো না।শুধু মুচকি হেসে আদিয়াতের কথা হজম করে নিলো।সাফানকে উদ্দেশ্য করে বললো।

    ফিহাঃ সাফান আমার ল্যাগেজটা নিয়ে ভেতরে চলে আয়।আমি এ বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না।শ্বশুর বাড়িতে বাচ্চা ফেলে চলে গেলে সবাই আমাকেই বাজে মেয়ে বলবে।
    সাফানঃ আমি আসছি।যাক বাবা,শেষ পর্যন্ত তোর সুমতি খুললো।

    না,এই বাচ্চাটাকে ছেড়ে ফিহা কিছুতেই থাকতে পারবে না।আজ একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেল।মায়া নামক বস্তুটা থেকে এত তাড়াতাড়ি ছাড়া পাওয়া মোটেও সম্ভব নয়।মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছে ফিহা।বাকি দুই মি.চৌধুরীর রাগ কি করে ভাঙাবে এখন তার জন্য।
    অনি নিজের ছোট হাত দিয়ে চোখ ডলছে।পাশে টেবলেট অনির শাড়ির আঁচল ধরে বসে আছে।ফিহা খুশি মনে অনিকে জরিয়ে ধরে কপালে কপাল ঠেকালো।

    #চলবে

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-১৮

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-১৮

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_18
    #Writer_NOVA

    কেটে গেছে বেশ কিছু ঘন্টা। সাফান অনিকে নিয়ে ব্যস্ত।টেবলেট আকশির আশেপাশে ঘুরঘুর করছে।আনিস চৌধুরীকে জোর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে আকশি।সাথে টেবলেটকেও।আনিস চৌধূরীকে দেখে রাখার জন্য টপবলেটকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।আদিয়াত ফরেনসিক ল্যাবে গিয়েছে ফলাফল জানতে।আবদুল সাহবেও অফিসের পানে ছুটেছেন। আজও পুরো অফিস তাকে সামলাতে হবে।মানুষটা বড্ড সহজ সরল।মনের মধ্যে কোন প্যাঁচ নেই। আকশিদের কোম্পানির জন্য নিজের জানটা দিতেও প্রস্তুত আছে।আকশি কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে তার প্রেয়সীকে দেখছে।মুখটা হাজারো বিষন্নতায় ঘেরা।ফিহাকে চেকআপ করে একজন মহিলা ডাক্তার কেবিন থেকে বের হতেই আকশির মুখোমুখি হলো।

    আকশিঃ ডক্টর, পেশেন্টের অবস্থা কিরকম?
    ডক্টরঃ দেখুন মি.চৌধুরী উনি এখন ভীষণ দূর্বল।তার এখন ফুলদমে রেস্টের প্রয়োজন। আপনার ওয়াইফ মিসেস চৌধুরী নিজের একটুও খেয়াল রাখে না।সারাক্ষণ টেনশন করে কোন ব্যাপার নিয়ে।
    খাওয়া -দাওয়া নিশ্চয়ই ঠিকমত করে না।পুষ্টিকর খাবারের ধারের কাছেও মনে হয় যায় না।যার কারণে উনি এরকম দূর্বল হয়ে গেছে। খাবারের দিকটা কড়া নজর রাখবেন।উনি যাতে স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খায়।
    আকশিঃ ধন্যবাদ ডক্টর।
    ডক্টরঃ ওয়েলকাম মি.চৌধুরী। নিজের ওয়াইফের খেয়াল রেখেন।আমি আসছি।

    ডক্টর চলে যেতেই আকশি বড় করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছারলো। ফিহার জন্য ভীষণ মন খারাপ করছে।মেয়েটা নিজের খেয়াল না রেখে ওদের পরিবারের জন্য নিজের ক্ষতি করলো।তারপরেও অনির চিন্তা ওর কাছে সবার আগে।

    আকশিঃ পৃথিবীর সব মা মনে হয় এমনি হয়।সাফানের থেকে জানলাম, ফিহা স্লিপ কেটে পরে যাওয়ার পরেও শক্ত করে অনিকে ধরে রেখেছিলো।যাতে ওর কিছু না হয়।আমার মা থাকলে বোধ হয় আজকে আমারও এই ক্ষতি গুলো মেনে নিতে পারতো না।অনেক কষ্ট পেতো বড় ভাইয়ার জন্য। সেই ছোট্ট বেলায় তোমায় দেখেছিলাম মা।চেহারাটা আবছা আবছা মনে আছে। ছবিতে দেখলেও মনে তোমার ছবি আঁকা আছে। তোমাকে কি ভোলা যায়?তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো।আল্লাহ যেনো তোমাকে বেহেশতে নসিব করে। তুমি ছোট থাকতে আমাদের জন্য কত দোয়া করেছো?সেই দোয়া আল্লাহ নিশ্চয়ই কবুল করছে।কারণ তোমার দোয়া না থাকলে আজ আমি বেঁচে ফিরতে পারতাম না।আল্লাহর রহমতও আমার সাথে আছে।তোমায় ছারা পৃথিবীটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে।এখন তোমার মতো আমাকে কেউ আঁচল দিয়ে মুখ মুছে দেয় না।আমি অসুস্থ হলে কেউ মাথায় জলপট্টি দিয়ে দেয় না।দুধ খাওয়ার জন্য কেউ পেছন পেছন ছুটে না।তোমার মতো কেউ আমাকে ভালবাসতে পারবে না মা।কেউ না,কেউ পারবে না।
    (কাঁদতে কাঁদতে)

    “মা” মাত্র একটা অক্ষরের একটা শব্দ। এই শব্দটার তুলনা অন্য কিছুতে হয় না।পৃথিবীতে যদি আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে পারে সে হলো আমাদের মা।যে নিস্বার্থে সন্তানের জন্য নিজের জীবন বাজি রাখতে পারে। সন্তানের দুঃখ, কষ্টে যার চোখ পানি সবার আগে আসে সে হলো মা।মায়ের বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না।সন্তান হাজার ভূল করলেও তাকে ক্ষমা করে বুকে টেনে নেয়।পৃথিবীর সকল মানুষ আমাদের গলা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেও মা তার সন্তানকে কখনও ফেলে দিতে পারে না।বুকের মাঝে আগলে রাখে।

    শত ঝড় -ঝাপটা মোকাবেলা করে তিনি আমাদের মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখায়।কিন্তু আমরা সেই মা-কেই বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে আসার সময় একটুও কষ্ট পাই না।যখন তাকে হারিয়ে ফেলি তখন বুঝি মায়ের গুরুত্ব। একটা প্রবাদ আছে না দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝি না।ঠিক তমনি মা শেষ বয়সে এসে আমাদের থেকে অবহেলা,অনাদর পেয়ে ধুঁকে ধুঁকে নিশ্বেষ হয়ে যায়।একবারও চিন্তা করি না জীবনের প্রথম বয়সে যদি আমাদের মা আমাদেরকে এতটা আদর,যত্ন দিয়ে বুকে আগলে না রাখতো তাহলে আজ আমরা ধরনীর বুকে পা ফেলে চলতে পারতাম না।তাই এখনও সময় আছে মা থাকতে মায়ের মর্মটা বুঝুন।সমুদ্রের পানি দিয়েও যদি আমরা মায়ের গুণগান লিখা শুরু করি তাহলে সমুদ্রের পানি শেষ হয়ে যাবে।কিন্তু মায়ের গুণগান, আত্মত্যাগ, ভালোবাসা, স্নেহ, আদর,যত্ন কখনও শেষ হবে না।

    মায়ের কথা মনে হতেই হাঁটু গেড়ে বসে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পরেছে আকশি।টাকা,পয়াসা,মান,দৌলত থাকা সত্ত্বেও আজ তার বুকটা শূন্য হয়ে আছে।যার অভাবটা মা ছারা কেউ পূরণ করতে পারবে না।মাথায় কারো আলতো পরশ পেয়ে চোখ মুছে তার দিকে তাকালো আকশি।সাফান চিন্তিতভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অনিয়া, সাফানের কোলে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। অনেক কষ্টে অনিকে ঘুম পারিয়েছে সাফান।

    সাফানঃ কি হয়েছে আকশি?তুমি কাঁদছো কেন?
    আকশিঃ কই কিছু হয়নি তো।আমি ঠিক আছি।(কৃত্রিম হাসি দিয়ে)
    সাফানঃ আমিও একটা ছেলে আকশি।তাই তোমার যে কিছু হয়নি এই কথা আমি বিশ্বাস করছি না।তুমি অনেক সময় ধরে কাঁদছিলে।কি হয়েছে বল আমায়?ছেলেরা তো সামান্য কারণে কাঁদে না।যখন সে নিজের সাথে যুদ্ধ করে হেরে যায় তখন কাঁদে। আমায় বলতে পারো।হয়তো তোমার মনের বোঝাটা হালকা হবে।
    আকশিঃ ব্যাস এমনি কিছু হয়নি।হঠাৎ করে মায়ের কথা মনে হয়ে গেল।অনেক মিস করছি তাকে।
    সাফানঃ এর জন্য মন খারাপ করেছো তুমি। আমি ভাবলাম কি না কি হলো?তোমার তো তাও ভালো।তুমি জানো তোমার বাবা-মা কে? তাদের পরিচয়ে বড় হয়েছে। আর আমি ও ফিহা।আমরাতো আজ পর্যন্ত এটাও জানলাম না আমাদের বাবা-মা বেঁচে আছে না মরে গেছে। তাদের নাম কি?কি আমাদের বংশ পরিচয়। কারা জানি এতিমখানায় দয়া করে ফেলে রেখে গিয়ে ছিলো।সেই সুবাদে এখনো বেঁচে আছি।নয়তো কবে শিয়াল,কুকুরের খাদ্য হয়ে যেতাম।বেঁচে আছি, ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। এর থেকে বেশি আর কি হতে পারে বলো।

    আকশি অবাক চোখে সাফানের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের মা নেই বলে সে দুঃখ পাচ্ছিলো।তার কাছে মনে হয়েছিলো সেই পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় অসহায়।কিন্তু তার থেকে অনেক মানুষ আছে যাদের কেউ নেই। এটা ভেবে আকশির সব মন খারাপ উধাও হয়ে গেল।আকশির বাবা আছে,টাকা আছে, নিজস্ব বাড়ি,গাড়ি, বিজনেস আছে।কিন্তু অনেক মানুষের তো তাও নেই। তাহলে সে নিজেকে কেন অসহায় ভাবে।সাফানের কিছু নেই তারপরেও সে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে।কিন্তু তার কেন এতো আক্ষেপ?হ্যাঁ,তার পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ব্যাক্তি মা নেই। কিন্তু তার বাবা,ভাই তো তার সাথে ছিলো।কিন্তু সাফানের তো তাও নেই। সেজন্য গুরুজনেরা বলতো নিজের থেকে নিচুস্তরের লোকদেরকে দেখো।তাহলে তোমার মনে হবে তুমি সত্যি সুখী। উপরের স্তরের মানুষকে দেখলে আফসোস ছারা আর কিছু পাবে না।

    🌿🌿🌿

    দুপুরে একসাথে খাবার খেয়ে নিলো সাফান ও আকশি।দুজনের মধ্যে কয়েক ঘন্টায় ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।সাফানের থেকে ফিহার ব্যাপারে বেশ ইনফরমেশন জোগাড় করে ফেলেছে সে।সাফানকে আকশি বারবার চলে যেতে বললেও সাফান মানা করে দিয়েছে। ওর একটাই কথা ফিহা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সে এখানেই থাকবে।আকশিও আর জোর করলো না।দুজন একসাথে কেবিনের বাইরে থাকা চেয়ারে বসে গল্প করছে। হঠাৎ অনি ঘুম থেকে জেগে গেল।সাফান অনিকে নিয়ে আসতে গেল।অনিকে ফিহার পাশেই রেখে এসেছিলো।সাফান যাওয়ার পর ধীর পায়ে আদিয়াত এসে আকশির পাশের সিটে বসলো।

    আকশিঃ কি রিপোর্ট দিলো?ফিডারে থাকা দুধে কি কিছু মিশানো ছিলো।

    আদিয়াত হাতে থাকা রিপোর্টের ফাইলটা আকশির দিকে বাড়িয়ে দিলো।আকশি রিপোর্ট পরে চোখ মুখ শক্ত করে ফেললো।

    আকশিঃ ওর এতবড় সাহস?আমার মেয়ের ফিডারে কড়া ডোজের ঘুমের ঔষধ মিশিয়েছে।এর শাস্তি ওকে অবশ্যই পেতে হবে।আমি তোকে ছারবো না রিয়ানা।
    (রেগে দাঁতে দাঁত চেপে)

    আদিয়াতঃ আমারও ঠিক তোর মতোই রাগ উঠেছিলো।আমি যদি এই মুহূর্তে রিয়ানাকে সামনে পেতাম তাহলে গলা টিপে মেরে ফেলতাম।একটা ছোট বাচ্চার সাথে কেউ এরকম করতে পারে।ছিঃ কতটা নিচ মন মানসিকতা।

    আকশিঃ আমার ওকে নিজের হাতে খুন করতে ইচ্ছে করছে। কতটা খারাপ হলে কেউ এমনটা করতে পারে।এই মেয়েটাকে আমার আগের থেকেই পছন্দ নয়।নিজের স্বার্থের জন্য ও যা খুশি তাই করতে পারে।
    আদিয়াতঃ হাইপার হোস না।এখন তো আমাদের হাতে প্রমাণ আছে।আমরা নিশ্চয়ই ওকে এর যথাযথ শাস্তি দিবো।কিন্তু এখন ফিহার দিকে তোর নজর দিতে হবে।
    আকশিঃ ঠিক বলেছিস।

    সাফান অনিয়াকে নিয়ে চলে এলো।সাফানের কোল থেকে অনিকে নিজের কোলে নিলো আকশি।

    আকশিঃ কেমন আছো মা-মণি?তুমি এখন মাম্মিকে পেয়ে আমাকে ভূলে গেছো। অবশ্য ভূলবেই তো আমাকে তো তুমি এর আগে কখনও দেখো নি।তুমি তো গুড গার্ল।তাহলে এখন ফিডারে থাকা সব দুধটুকু খেয়ে নেও দেখি।

    অনি ফিডারের চুষনি মুখে দিয়ে বসে আছে। এক চুমুকও গিলে নি।বেশ কিছু সময় ব্যয় করেও আকশি অনিকে একফোঁটা দুধ খাওয়াতে পারলো না।আকশি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। আকশির মুখের কন্ডিশন দেখে আদিয়াত ও সাফান দুজন একসাথে হেসে উঠলো।

    আকশিঃ বেশি করে হাসো।দিন তো তোমাদেরি।আমি চিন্তা করছি ফিহা অনিকে সামলায় কি করে?বাপ রে এখনি যা দুষ্টু হয়ে গেছে। আর তো দিন পরেই গেছে।

    আদিয়াতঃ শুধু শুধু তো আর ফিহা অনির মা হয় নি।মা হতে হলে অনেক দায়িত্ব লাগে।সেই দায়িত্ব গুলো পালন করে বলেই ফিহা অনির কাছে তার নিজের মা হয়ে উঠেছে। অনি এখন ফিহাকে ছারা কিছু বুঝে না।

    আকশিঃ তা তো দেখতেই পাচ্ছি।আমি যে এই মা আর মেয়েকে কি করে পটাবো তার টেনশনে মরে যাচ্ছি।

    চোখ দুটো ভার হয়ে আছে ফিহার।পিটপিট করে চোখ খুলে চারপাশ দেখতে লাগলো।মাথাটা অনেকটা হালকা লাগছে।চারিদিকে তাকিয়ে ফিহা বুঝতে পারলো ও এখন হসপিটালে।সকালের কথা মনে হতেই ধপ করে উঠে বসতে চাইলে কোমড়ে ব্যাথা অনুভব করলো।অনি কোথায়?সকালে তো ওকে কিছু খাওয়ানো হয়নি।ধীরে ধীরে সকালের ঘটনা মনে পরে গেল।শক্তি জোগাড় করে উঠতে নিলে নার্স এসে বাঁধা দিলো।

    নার্সঃ আরে ম্যাম আপনি করছেন কি?আপনি অসুস্থ। এভাবে উঠতে পারবেন না।আপনি রেস্ট নিন।শরীর ভীষণ দূর্বল।যেকোনো সময় পরে যেতে পারেন।
    ফিহাঃ আমার বাচ্চা কোথায় নার্স?সারা সকালে ও মুখে কিছু দেয় নি।আমার মেয়ে আমাকে ছারা কারো হাতে খায় না।
    নার্সঃ আপনার মেয়ে আপনার স্বামীর কাছে আছে।আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।প্লিজ ম্যাম আপনি হাইপার হবেন না।
    ফিহাঃ আমার স্বামী। (অবাক হয়ে)
    নার্সঃ হুম আপনার স্বামী। আমি কি তাকে ডেকে দিবো।আপনার মেয়ে কি নিশ্চয়ই আপনার দেখতে ইচ্ছে করছে।
    ফিহাঃ হ্যাঁ,খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। আপনি কি আমাকে একটু ধরে বসিয়ে দিবেন।
    নার্সঃ নিশ্চয়ই।

    ফিহাকে ধরে নার্স বসিয়ে দিয়ে আকশির কাছে চলে
    গেলো।ফিহা এবার নিজের দিকে তাকালো। শরীরে হসপিটালের আকাশি কালার পোশাক, হাতে স্যালাইন লাগানো।আকশির সামনে এসে নার্স বললো।

    নার্সঃ এখানে পেশেন্টের স্বামী কে?
    আকশিঃ জ্বি আমি।
    সাফানঃ 🙄🙄
    আদিয়াতঃ 🤨🤨
    আকশিঃ এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন তোরা আমার দিকে?আমি কি ভুল কিছু বলেছি।
    সাফান, আদিয়াতঃ একদম না।(একসাথে)
    আকশিঃ কিছু বলবেন? (নার্সকে উদ্দেশ্য করে)
    নার্সঃ পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে।আর বাচ্চাকে দেখতে চাইছে।আপনি বাচ্চাকে নিয়ে ভেতরে চলে যান।

    আকশি ভীরু পায়ে গুটিগুটি পা ফেলে ফিহার সামনে যেতে লাগলো।ভেতরে ভেতরে অনেক আনইজি ফিল করছে।ফট করে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো।দরজা খোলার শব্দে ফিহা সেদিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল।ওর সামনে অনিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আকশি চৌধুরী। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।ধীর গতিতে আকশি ফিহার সামনে এলো।আকশির থেকে ফিহা অনিকে কোলে তুলে নিলো।কিন্তু হা করে আকশির দিকেই তাকিয়ে আছে ফিহা।আকশি এক হাতে ফিহাকে জরিয়ে নিয়ে ফিহার দিকে তাকালো।ফিহা এতটাই অবাক হয়েছে যে নিজের বাহু থেকে আকশির হাত সরাতেও ভুলে গেছে।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।কোলে ছোট বাচ্চা।মনে হচ্ছে সদ্য মা-বাবা হওয়া দম্পতি।

    আদিয়াত এবারও ঠিক সময়ে একটা ফটো তুলে নিলো।আকশির পেছন পেছন এসেছিলো।ওদের দুজনকে এভাবে দেখে ছবি তোলার লোভটা সামলাতে পারে নি।পকেট থেকে মোবাইল বের করে বেশ কিছু ছবি তুলে ফেললো।

    #চলবে

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-১৭

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-১৭

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_17
    #Writer_NOVA

    হাসপাতালে ভর্তি ফিহা।ওর কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আনিস চৌধুরী, সাফান,আবদুল আজিজ সাহেব।সাফানের কোলে অনিয়া। অনি চিৎকার করে কেঁদে পুরো হাসপাতাল তুলে ফেলেছে।কেউ শান্ত করতে পারছে না।টেবলেট দরজার একপাশে ঘাপটি মেরে চুপ করে বসে আছে। তার মনটাও খারাপ। সাফান অনিকে সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। কিছুতেই কান্না থামাতে পারছে না।কান্না করতে করতে অনি গলাস্বর ডাবিয়ে ফেলেছে।যেটাকে আমরা আঞ্চলিক ভাষায় গলা ভেঙ্গে যাওয়া বলি।

    অনি সকাল থেকে এক চুমুক দুধও মুখে দেয় নি।
    সবাই এখন অপেক্ষা করছে ফিহার ঘুম ভাঙ্গার।ফিহা কোমড়ে বেশ চোট পেয়েছে। আল্লাহ রহমত করছে বলে মাথায় আঘাত পাইনি।ডক্টর ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রেখেছে।শরীর অনেক দূর্বল ফিহার।স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। হাতে স্যালাইনে চলছে।মুখটা শুকিয়ে এতটুকু হয়ে আছে।সবার খেয়াল রাখতে গিয়ে বেচারী ফিহা নিজের খেয়াল রাখতে পারে না।

    আকশির কানে আদিয়াত ফিহার অসুস্থতার খবর দিতেই গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেছে।এতটা তাড়াহুড়ো করে এসেছে যে আদিয়াতকে ফেলেই চলে এসেছে। টেনশনে পাগল হওয়ার জোগাড় সে।নিজের ছদ্মবেশ না নিয়েই চলে এসেছে।রিসিপশন থেকে কেবিন নং জেনে ছুটে চলে এলো। দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে আনিস চৌধুরীর সামনে থেমে বললো।

    আকশিঃ বাবা, ফিহা কেমন আছে?ওর কিছু হয়নি তো।ওর অবস্থা কি রকম?ফিহা ঠিক আছে তো।

    আকশিকে দেখে আনিস চৌধুরী ও আবদুল আজিজ সাহেব চোখ ডলতে লাগলো।তারা দুজন ভূত দেখার মতো করে চমকে উঠেছে।তাদের মনে হচ্ছে তারা ভূল দেখছে।নিজের গায়ে চিমটিও কাটলে।যখন ব্যাথা পেলো তখন নিজের চোখকে বিশ্বাস করলো তারা।

    আকশিঃ কথা বলছো না কেন তোমরা?ফিহা ভালো আছে তো?আমার ফিহার কিছু হতে পারে না।
    আনিসঃ আকশি বাবা আমার। (খুশি হয়ে)

    আনিস চৌধুরী প্রায় দৌড়ে আকশিকে জরিয়ে ধরলো। কত মাস পর নিজের ছেলেকে দেখছে।চোখের পানি পরছে অনবরত। আকশিও তার বাবাকে জরিয়ে ধরে কান্না করছে।সাফানের মাথার ওপর দিয়ে সব গেছে। বাপ-বেটাকে এভাবে দেখে আবদুল সাহেবের চোখের পানি ভরে গেছে। বর্তমানে আনিস সাহেব এতো খুশিতে কি বলবে তার ভাষা হারিয়ে ফেলছে।

    আকশিঃ বাবা, আমি তোমাদের অনেক মিস করেছি।কেমন আছো তুমি?

    আনিসঃ আমি ভেবেছি তুই মারা গিয়েছিস।আমি পুরো নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলাম তোদের হারিয়ে। কিন্তু ছোট বউমা বলেছিলো তুই একদিন ঠিক ফিরে আসবি।ওর কথাই ঠিক হলো।আমাদের সবার চিন্তা করতে করতে নিজের শরীরের কি হাল করেছে দেখ।আজ ওর কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।তোকে তো ছোট বউমার ব্যাপারে বলাই হয়নি।আসলে তোরা না থাকায়—

    আকশিঃ আমি সব জানি বাবা।আমি তোমাদের সব খোঁজ -খবর রেখেছি।আর আমি ফিহাকে এবার সত্যি তোমার ছোট বউমা বানাতে চাই। আমি ফিহাকে ভালবাসি।

    আকশির কথা শুনে সাফান,আনিস চৌধুরী, আবদুল সাহেব অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। কেবিনের সামনে গিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে ফিহাকে এক নজর দেখলো আকশি।তারপর সাফানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অনিকে সাফানের কোল থেকে নিলো।অনি আকশির কোলে গিয়ে চুপ হয়ে গেল।

    সাফানঃ যাক বাবা,সারাদিন এতকিছু করেও বজ্জাত মেয়ের কান্না থামাতে পারলাম না।আর ছেলেটা কোলে নিতেই সব ঠান্ডা। চাচার কথায় যতটুকু বুঝলাম,ছেলেটা আকশি চৌধুরী। মানে ফিহার পাতানো স্বামী। (মনে মনে)

    আকশিঃ এই ছেলেটা কে বাবা?(সাফানকে দেখিয়ে)
    আনিসঃ ওর নাম সাফান।বউমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

    আকশি সাফানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো

    আকশিঃ আমি আকশি চৌধুরী।
    সাফানঃ আমি সাফান হাসান।

    দুজন একসাথে হাত মিলালো।টেবলেটের মনটা এতই খারাপ ছিলো যে ওর আশেপাশে কি হচ্ছে সেদিকে ওর খেয়াল ছিলো না।হঠাৎ নাকে একটা পরিচিত ঘ্রাণ পেতেই এদিক সেদিক তাকিয়ে আকশিকে দেখতে পেলো।খুশি মনে এক ছুটে টেবলেট আকশির কাছে চলে এলো।আকশি এক হাঁটু মুড়ে টেবলেটের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। টেবলেট খুশি হয়ে লেজ নাড়িয়ে দুই বার ঘেউ ঘেউ করে আনন্দ ধ্বনি করলো।

    আকশিঃ কেমন আছিস তুই? তুই থাকতে ফিহা ব্যাথা পেলো কি করে?আমি না থাকায় ফাঁকিবাজি শিখে গেছিস। এটা তো ভালো কথা নয়।

    আবদুলঃ আমার যে কি খুশি লাগছে তা তোমাকে বোঝাতে পারবো না আকশি বাবা।চৌধুরী বাড়ির এক পুত্র এখনো বেঁচে আছে, এটা যে আমাদের জন্য কতবড় খুশির সংবাদ। আমি আজই পুরো কোম্পানিকে খবরটা জানাবো।

    আকশিঃ এখন নয় চাচা। আর কিছু দিন যাক।
    আনিসঃ আকশি তুই নিখোঁজ হওয়ার পর অনিল ও লিয়া এক্সিডেন্টে মারা গেছে। আমি ও অনি দিদিভাই ভাগ্য জোরে বেঁচে যাই।তারপর ফিহাকে সবকিছু দেখার জন্য নিয়ে আসি।

    আকশিঃ আমি জানি বাবা।আমি তখন অনেক অসুস্থ ছিলাম।যার কারণে আমি ভাইয়া,ভাবীকে শেষ দেখাও দেখতে পারি নি।(ছলছল চোখে)

    আনিসঃ তোর কি হয়েছিলো?এয়ারপোর্ট থেকে নিখোঁজ কি করে হলি তুই?

    আকশিঃ আমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিল।

    আনিসঃ আমার মনে হচ্ছে আমাদের বড় কোন শত্রু আছে।যে তোর কিডন্যাপ ও আমাদের গাড়ি এক্সিডেন্ট করিয়েছে।

    আকাশিঃ আমি ১মে এমনটাই ভেবেছিলাম বাবা।যার কারণে আমি এতদিন লুকিয়ে ছিলাম।তবে এই একমাস পুরো দমে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারলাম,তোমাদের গাড়ি কেউ এক্সিডেন্ট করায়নি।

    আনিসঃ তাহলে!!!! (অবাক হয়ে)

    আকশিঃ গাড়ির আগের থেকে সমস্যা ছিলো।হঠাৎ করে ব্রেকফেল হয়ে যাওয়ায় এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে।
    আনিসঃ তোকে কিডন্যাপ কে করলো?

    আকশিঃ আমাকে ভূলে কিডন্যাপ করা হয়েছিলো।অন্য একটা ছেলের বদলে আমি কিডন্যাপ হয়েছি।ঐ ছেলে ও আমার দুজনের পরনে কালো শার্ট,প্যান্ট ছিলো।কিডন্যাপাররা ঐ ছেলে ভেবে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে রাম ধোলাই দিয়েছে। আদিয়াত যদি আমাকে সঠিক সময়ে খুঁজে না পেতো তাহলে আজ আমি বোধ হয় তোমাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম না।

    (বিঃদ্রঃ আশা করি আমি আপনাদেরকে অনিল, লিয়ার মৃত্যু ও আকশির কিডন্যাপের বিষয়টা বুঝাতে পেরেছি।এই দুটো ঘটনাই যাস্ট এক্সিডেন্ট। এর পেছনে কোন মেইন মাস্টার মাইন্ড বা ভিলেন নেই।)

    আকশির কথা শুনে আনিস চৌধুরী মুখে হাসি ফুটে উঠলো। তার ধারণা ছিলো তাদের বিজনেসের কোন শত্রু এমন করছে।যদিও তার জানামতে তাদের কোন শত্রু নেই।আনিস চৌধূরী চোখের পানি মুছে বললেন।

    আনিসঃ আমি যদি ছোট বউমাকে খুঁজে না পেতাম তাহলে তুই আজকে আমাকে ও অনি দিদিভাইকে জ্যন্ত পেতি না।এখন তুই এসে পড়েছিস।মেয়েটাকে এবার এসবের ভেজাল থেকে বের করে দিবো।আর সারাজীবনের জন্য ফিহাকে তোর বউ করে আমাদের সাথে রেখে দিবো।তাহলে অনি দিদিভাই তার মা-কে হারাবে না।আমিও আমার মেয়েকে হারাবো না।

    আকশিঃ আর আমি আমার বউকে হারাবো না।

    আকশির কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে উঠলো। সাফান ভীষণ খুশি হলো।যাক ফিহার তাহলে একটা সুন্দর পরিবার হবে।তখনি আদিয়াত দৌড়ে ওদের সামনে এসে হাঁপাতে লাগলো।আকশিকে টেনে আড়ালে নিয়ে বললো।

    আদিয়াতঃ হারামী,তোকে আমি খবর দিলাম।আর তুই কি না আমাকে ফেলে চলে এলি।এই তোর বন্ধুত্বের পরিচয়।আমি তোর জন্য এতকিছু করলাম আর তুই কিনা আমাকে নিয়ে আসার প্রয়োজন মনে করলি না।তোর সাথে কোন কথা নেই। যা ভাগ, শালা।যেদিন থেকে তুই ফিহার প্রেমে পরেছিস সেদিন থেকে আমার কথা ভূলে বসে আছিস।তোর ভাব দেখে মনে হয় পৃথিবীতে তুই একাই প্রেম পরেছিস।ফিহা যদি তোকে মানা করে দেয় তাহলে আমার থেকে বেশি কেউ খুশি হবে না।
    আকশিঃ সরি দোস্ত। আমার তখন মাথা কাজ করছিলো না। তাই তোকে না নিয়ে তাড়াহুড়ো করে চলে এসেছি।
    আদিয়াতঃ বুঝি বুঝি সবই বুঝি।ছোটবেলায় খাইছি সুজি, একটু হলেও কিছুটা বুঝি।তুই যে ফিহার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস সেটা কি আঙ্কেল জানে?

    আস্তে করে আকশির কানের কাছে গিয়ে শেষের কথাটা বললো আদিয়াত।

    আকশিঃ আমি বাবাকে বলে দিয়েছি যে আমি ফিহাকে ভালবাসি আর বাবাও বলেছে ফিহা সুস্থ হলে আমাদের বিয়ে দিবে।
    আদিয়াতঃ তুই তো দেখছি আমার সাথে থেকে থেকে অনেক বুদ্ধিমান হয়ে গিয়েছিস।যাক,আমি তাহলে গাধা পিটিয়ে মানুষ করতে পেরেছি😜।
    আকশিঃ আমি ভালো কিছু করলে তোর ক্রেডিট আর খারাপ করলে আমার।এত চালাকি আমার সাথে চলবে না।বরং তুই আমার সাথে থেকে এতো চালাক হয়ে গেছিস।
    আদিয়াতঃ খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই। তোর মতো হাঁদারাম আমাকে ধূর্ত বানাবে।
    আকশিঃ তুই কি হসপিটালের মধ্যেও ঝগড়ার মুডে আছিস।তোকে আল্লাহ ভূলে কি ছেলে বানিয়ে ফেলেছে নাকিরে?ঝগড়া করা তো মেয়েদের অভ্যাস।
    আদিয়াতঃ চুপ কর।কখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছিস।এটা একটা হসপিটাল ভূলে গেছিস।
    আকশিঃ 😲😲
    আদিয়াতঃ 😎🥴

    একটা নার্স এসে ওদের সামনে দাঁড়ালো। সাফান দূরে দাঁড়িয়ে ওদের দুজনের খুনসুটি গুলো দেখছিলো।এতিমখানায় থাকতে সাফান আর ফিহাও এমন করতো।

    নার্সঃ মিসেস.ফিহার বাড়ির লোক কি আপনারা?
    আকশিঃ জ্বি আমরা।কিছু লাগবে।
    নার্সঃ এই ঔষধগুলো পেসেন্টের জন্য লাগবে। দয়া করে নিয়ে আসুন।
    আকশিঃ প্রেসক্রিপশনটা দিন।
    নার্সঃ এই নিন।

    নার্স চলে যেতেই আকশি সাফানের কোলে অনিয়াকে দিলো।আদিয়াতকে ডেকে সাফানের সাথে পরিচয় করে দিলো।
    আকশিঃ আদি, ওর নাম সাফান।ফিহার বেস্ট ফ্রেন্ড। আর সাফান ওর নাম আদিয়াত।আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
    আদিয়াতঃ আমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড নই।মিথ্যা কথা বলছে বকশি।না সরি আকশি।আমি উনাকে চিনিই না।আজকে ১ম দেখলাম।তা সাফান কেমন আছো?
    সাফানঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি?
    আদিয়াতঃ আমিও ভালো আছি।
    আকশিঃ সাফান তুমি একটু অনিকে দেখে রাখো।আমি জলদী করে ঔষধ নিয়ে আসছি।
    আদিয়াতঃ আমিও যাবো।
    আকশিঃ কে ভাই আপনি?আপনাকে তো আমি চিনি না। জীবনের ১ম দেখলাম আপনাকে।
    আদিয়াতঃ হারামী, আমার কথা আমাকেই ফিরত দিচ্ছিস।সবার দিন কিন্তু একসমান যায় না।
    আকশিঃ যা ভাগ।

    আকশি ঔষধ আনতে ফার্মেসীতে রওনা দিলো।আনিস চৌধুরী ও আবদুল আজিজ সাহেব একসাথে বসে কথা বলছে।সাফান অনি ও টেবলেটকে নিয়ে বাগানের দিকে চলে গেল। আদিয়াত আকশির পেছনে দৌড়ে যাচ্ছে।
    আদিয়াতঃ আকশি দাঁড়া। আমাকে নিয়ে যা।

    ♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪

    এক মুঠো রোদ্দুর হাতে, এক আকাশ নীল
    আজ তোমার জন্য ব্যস্ত শহরে,
    চলছে ভালোবাসার মিছিল
    শুধু তোমার জন্য,
    প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল।(×২)

    এক মুঠো রোদ্দুর হাতে, এক আকাশ নীল
    আজ তোমার জন্য ব্যস্ত শহরে,
    চলছে ভালোবাসার মিছিল।

    রাতের আকাশ জাগে,তারার চাদরে।
    বৃষ্টি ভেজা বাতাস বহে,রাতের আদরে।
    পাহাড়ে পাহাড়ে ফুটলো বনফুল।
    শুধু তোমার জন্য,
    প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল।(×২)

    ♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪

    ফার্মেসীতে থাকা কিশোর বয়সের ছেলেটা একাকিত্ব দূর করতে মোবাইলে গান শুনছে। আদিয়াত ঔষধের প্রেসক্রিপশন এগিয়ে দিলে, ছেলেটা ঔষধ খুঁজে খুঁজে বের করে দিতে লাগলো। কিন্তু আকশির সেই দিকে কোন ধ্যান নেই। সে একমনে গানটা উপভোগ করছে। শিল্পী বালামের “এক মুঠো রোদ্দুর” গানটি এখন যেনো তার পরিস্থিতির সাথে হুবহু মিলে গেছে।

    #চলবে

    রিচেক দেওয়া হয় নি।তাই ভূল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর
    দৃষ্টিতে দেখবেন।🥰🥰

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-১৬

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-১৬

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_16
    #Writer_NOVA

    পরের দিন………

    আকশি ও আদিয়াত একটা দরকারী কাজে অফিসে এসেছে। কিন্তু অফিসের একজন কর্মচারী থেকে জানলো আজও ফিহা অফিসে আসবে না।আদিয়াত চলে যেতে নিলে আকশি ওকে টেনে ভেতরের দিকে নিয়ে গেল।

    আদিয়াতঃ টেনে এখানে নিয়ে এলি কেন?
    আকশিঃ আমরা এখানে কেন এসেছি তুই ভূলে গেছিস। কাজ না করে চলে যাবো।
    আদিয়াতঃ কিন্তু ফিহাতো নেই।
    আকশিঃ ফিহা না থাকায় তো সুবিধা হয়েছে। এখন আমরা অনায়াসে কেবিনে গিয়ে আমাদের কাঙ্খিত জিনিস পেয়ে যাবো।
    আদিয়াতঃ ফিহা থাকলে কেবিনে ঢুকতে সুবিধা হতো।এখন কেবিনে ঢুকলে চোর সন্দেহ করে গণধোলাই ফ্রী তে পেয়ে যাবি।আগেরবার দারোয়ানের ধাওয়ার কথা এত তাড়াতাড়ি ভূলে গেলি।
    আকশিঃ চুপ কর।আমাকে একটু ভাবতে দে।

    নিজের চুলগুলো হালকা ঝাড়া দিতে দিতে ভাবতে লাগলো আকশি। এবার ভাবছেন তো কি এমন দরকারী কাজ পরলো ওদের। দরকারী কাজটা হলো রিয়ানা সেদিন ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত ফিডারটা যা দোলনার নিচে ফেলেছিল সেটা আদিয়াত দেখে ফেলেছিল।তবে ফিডার দেখে নি।রিয়ানা যে কিছু একটা পা দিয়ে ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়েছে সেটা দেখেছে।কিন্তু কি?সেই রহস্যের সমাধান করতে আজ এখানে এসেছে। তখন মিটিংয়ের চিন্তায় আদিয়াত ব্যাপারটা ভূলেই গিয়েছিলো।রাতে আকশিকে কথাটা বলতেই আকশি ব্যাপারটা নিয়ে খুব সিরিয়াস হয়ে যায়।তাই সকাল সকাল অফিসে চলে এসেছে।

    আকশিঃ পেয়ে গেছি!!!
    আদিয়াতঃ কি পেয়েছিস?
    আকশিঃ আমরা এখন আবদুল চাচাকে গিয়ে বলবো গত পরশু আমারা ফিহার কেবিনে ভুলে আমাদের ফাইল রেখে চলে গেছি।তাই এখন আমাদের ফাইলটা নিতে হবে।
    আদিয়াতঃ আইডিয়াটা মন্দ নয়। চলে কোন রকম আর কি।তবে বেশি ভালো নয়।
    আকশিঃ ঘুষি মেরে তোর মুখের আদল বদলে দিবো।ফাইজলামি না করে জলদী চল।রিয়ানা নিশ্চয়ই অনির ক্ষতি করতে এসেছে। মেয়েটা একটুও ভালো নয়।রিয়ানাকে আমি হারে হারে চিনি। নিজের স্বার্থের জন্য অন্যের ক্ষতি করতে এক ফোঁটাও বুক কাঁপবে না।হোক সে বড় মানুষ কিংবা বাচ্চা।
    আদিয়াতঃ এখানে দাঁড়িয়ে মহান ব্যাক্তিদের বড় বড় ভাষণ না দিয়ে ভেতরে চল।

    দুই বন্ধু একসাথে আবদুল আজিজ সাহেবের কেবিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

    আকশিঃ আসতে পারি মি.আবদুল আজিজ।
    আবদুলঃ আরে মি.পাটোয়ারী। আসুন আসুন।হঠাৎ কি মনে করে?আরে দাঁড়িয়ে কেন, বসুন।
    আদিয়াতঃ গত পরশু যখন আমরা সবাই মিলে কোম্পানির ওনারের কেবিনে গিয়েছিলাম তখন আমরা ভূলে আমাদের জরুরি একটা ফাইল রেখে গেছি।সেটা এখন আমাদের অনেক প্রয়োজন।
    আবদুলঃ ওহ এই ব্যাপার।আপনারা বসুন।কোথায় আছে বলুন আমাকে?আমি সিকিউরিটি পাঠিয়ে নিয়ে আসতে বলছি।
    আকশিঃ নাআআআআআ।(চিৎকার করে)
    আবদুলঃ কি হয়েছে মি.পাটোয়ারী?
    আদিয়াতঃ এই গাধা এতো জোরে চিৎকার দিলি কেন?প্রেমে পরে কি বুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে। (ফিসফিস করে)
    আদিয়াতঃ সরি মি আবদুল। আসলে আমরা ফাইলটা কোথায় রেখেছি সেটা ভূলে গেছি।সিকিউরিটি খুঁজে পাবে না।তাই আমার ভাই এতো জোরে চিৎকার দিলো।
    আবদুলঃ ঠিক আছে তাহলে আপনারা যান।
    আদিয়াতঃ আপনি চাইলে আমাদের সাথে আসতে পারেন।যদি আপনার আমার কথা বিশ্বাস না হয়।
    আবদুলঃ না না ঠিক আছে। আমি আপনাদের বিশ্বাস করে যেতে দিয়েছি এবার আপনারা আমার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখলেই হবে।
    আকশিঃ কোম্পানির ওনার আসে নি কেন?
    আবদুলঃ ছোট বউমার শরীরটা ভালো নয়।
    আকশিঃ কি হয়েছে ফিহার?(ব্যস্ত হয়ে)
    আবদুলঃ 🤨🤨
    আদিয়াতঃ 🤦‍♂️🤦‍♂️
    আবদুলঃ কি বললেন আপনি?
    আদিয়াতঃ কোথায় কিছু বলেনি তো?ভাই জিজ্ঞেস করলো আপনাদের ওনারের কি হয়েছে?
    আবদুলঃ বউমার প্রচন্ড মাথা ব্যাথার কারণে আজ অফিসে আসবে না।
    আদিয়াতঃ আমরা তাহলে আসছি।অনেক কাজ বাকি আছে আমাদের।

    আদিয়াত কথাটা আকশির দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।আরেকটু হলে ধরা পরে যেতো।এই আকশি মাঝে মাঝে কোথায় কি বলতে হয় সেটা ভূলে যায়।সবসময় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।আর সবকিছু আদিয়াতের সামলাতে হয়।রুমের বাইরে এসে আদিয়াত চোখ দুটো ছোট ছোট করে আকশির দিকে রেগে তাকালো।

    আদিয়াতঃ তোর কমোন সেন্সগুলো কি প্রেমে পরার পর উড়াল দিয়ে তোকে ছেড়ে চলে গেছে। তুই কি বলে ফেলেছিস তোর ধারণা আছে। ভাগ্যিস চাচা ভালো করে শুনতে পায়নি।নয়তো আজ কপালে শনি ছিলো।
    আকশিঃ ফিহা অসুস্থ, এই খবরটা শুনে আমি চুপ থাকবো।আমার যে কি টেনশন হচ্ছে।
    আদিয়াতঃ চুপ থাকবি কেন?একটা ঢোল আন।পুরো অফিস ঢোল পিটিয়ে খবরটা সবাইকে জানিয়ে দিয়ে আয়।তোর নির্বুদ্ধি কর্মকান্ড দেখলে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। তোর পাল্লায় পরে এবার যে মিথ্যে কথা বলেছি সারাজীবন মনে হয় না এতো মিথ্যে কথা আমার বলা হয়নি।
    আকশিঃ আহারে!! তুই তো সাধু মানুষ। একটা মিথ্যা কথাও বলিস না।
    আদিয়াতঃ তোর জন্য বলতে হয় এখন।মুখ ফসকে উল্টো পাল্টা কথা বলিস।আর সেগুলো আমাকে হ্যান্ডেল করতে হয়।
    আকশিঃ হয়েছে, আমাকে সাহায্য করে তো হাতেম তাঈ হয়ে গেছিস।এবার দুজন এখানে লড়তে থাকলে আমাদের কাজ আজকে আর হচ্ছে না।জলদী চল।

    দুজন রুমে এসে দরজা আটকে দিলো।হন্যি হয়ে এদিক সেদিক ফিডারটা খুঁজতে লাগলো। যদিও ওরা জানে না সেটা ফিডার ছিলো।

    আদিয়াতঃ আকশি তোর কি হয়েছে রে?আমার মনে হচ্ছে তোর মাথা গেছে। আমি আজি পাবনার হেমায়েতপুরে তোর জন্য একটা সিট বুকিং করতে হবে।(রেগে)
    আকশিঃ তুই আজকে আমার পেছনে পরেছিস কেন?আমি তোর কোন বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছি।
    আদিয়াতঃ না তোকে মাথায় তুলে নাচবো।আমি তোকে বলেছি রিয়ানাকে আমি দেখেছি দোলনার নিচে কিছু ফেলতে।আমরা দুজন মিলে দোলনার নিচে খুঁজবো। সেটা না করে তুই টেবিলের ড্রয়ারে কি খুঁজছিস😤?
    আকশিঃ আমি শুধু এই জন্য আসিনি।আমার একটা দরকারী কাগজ লাগবে।সেটা খুঁজতেও এসেছি। টাকা পয়াসা হাতে নেই। ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে কাগজটা লাগবে।না জেনে কমপ্লিমেন্ট করাটা তোর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
    আদিয়াতঃ হয়েছে, হয়েছে। তোরা পাতানো জামাই, বউ কখন কি করিস সেটা আমার মাথায় ঢুকে না।যেমন তুই তেমনি তোর ঐ বউ ফিহা।তবে ফিহা তোর থেকে বেশি কমোন সেন্স নিয়ে চলে।তুই তো শালা, দিনকে দিন বুদ্ধ আর হাঁদারাম হচ্ছিস।
    আকশিঃ একবার অফিস থেকে বের হতে দে।তারপর দেখ তোর কি অবস্থা করি।তোর মুখের আশেপাশে লাল, লাল দাগ দেখতে পাবি।
    আদিয়াতঃ 😡😡
    আকশিঃ চুপচাপ কাজ কর।নয়তো আমার চেয়ে বেশি খারাপ কেউ হবে না।সারাক্ষণ শুধু বকবক করিস।

    আকশি ও আদিয়াত দুজন কাজে লেগে পরলো।আগেই বলেছি ফিহার কেবিনের দিকে সাধারণত মানুষ বেশি একটা আসে না। আদিয়াত উবু হয়ে দোলনার নিচে খুঁজতে লাগলো। একসময় কোণার দিকে একটা ফিডার দেখতে পেলো।ফিডারটা হাত দিয়ে এনে জোরে চেঁচিয়ে আকশিকে ডাকলো।

    আদিয়াতঃ আকশি ই-ই ই-ই!!! (চিৎকার করে)
    আকশিঃ এতো জোরে চিৎকার করছিস কেন হারামজাদা? গণপিটনু খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে।
    আদিয়াতঃ হারামী রুম সাউন্ড প্রুফ করা। এখন যদি আমরা কেবিনের ভেতরে বক্সে জোরে গান ছেরে উরা ধূরা ডান্সও করি তাও কেউ জানবে না।
    আকশিঃ আর জ্ঞান বিতরণ করতে হবে না মহাশয়।কেন ডাকিয়াছেন তাহা বলিয়া আমাকে উদ্ধার করুন।
    আদিয়াতঃ এদিকে আয়।
    আকশিঃ কেন?
    আদিয়াতঃ আসতে বলছি আসবি।এত প্রশ্ন করিস কেন?দেখে যা জলদী করে।

    আকশি একরাশ বিরক্তি নিয়ে আদিয়াতের সামনে এসে দাঁড়ালো। আদিয়াত হাতে থাকা ফিডারটা দেখিয়ে বললো।

    আদিয়াতঃ আমি সঠিক দেখেছিলাম।এই যে দেখ। এই ফিডারটাই রিয়ানা দোলনার নিচে ফেলে দিয়েছিলো।
    আকশিঃ রিয়ানা কি তাহলে অনিয়ার সর্বনাশ করতেই এসেছিলো।যদি এমনটা হয় তাহলে রিয়ানাকে আমি খুন করে ফেলবো।ওর এত বড় সাহস আমার ভাতিজীর ক্ষতি করতে এসেছে।অনেক বড় ভূল করেছে রিয়ানা।এর শাস্তি ওকে অবশ্যই পেতে হবে।
    আদিয়াতঃ দুধের কালারটা কিছুটা বিবর্ণ হয়ে গেছে। আমি সিউর রিয়ানা এটার সাথে কিছু মিশিয়েছে।এই মেয়ে মোটেও ভালো নয়।অনেক স্বার্থপর।
    আকশিঃ এক কাজ কর আদি।তুই এই ফিডারটা দুধ সহ ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়ে দেয়।এখন তারাই বলতে পারবে ফিডারের দুধের মধ্যে কি মেশানো আছে।
    আদিয়াতঃ আচ্ছা। তুই কি তোর কাগজটা খুঁজে পেয়েছিস?আমাদের এখন বেরুতে হবে।
    আকশিঃ হুম আমি পেয়ে গেছি।চল তাড়াতাড়ি। ফিডারটা পকেটে ঢুকিয়ে ফেল।কেউ যাতে না দেখে।আমি বাসায় ফিরে যাবো আর তুই ফরেনসিক ল্যাবে চলে যাবি।

    দুইজন খুব সাবধানে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো।ফিহার কেবিনে কোন সি সি টিভি ফুটেজ নেই। যার কারণে ওরা বেঁচে গেলো।নয়তো ঘটনার মোড় উল্টো দিকে ঘুরে যেতো।ফিহা নিজের কেবিনে সি সি টিভি ফুটেজ পছন্দ করে না।

    অন্য দিকে……

    ফিহার মাথাটা আজ অসহ্যকর ব্যাথা করছে। যার কারণে অফিসে যায় নি।হঠাৎ করে কেন মাথা ব্যাথা শুরু হলো তা বুঝতে পারছে না।এদিকে অনিয়াও অনেক জ্বালাতন করছে।কোন সার্ভেন্টের কোলে যাচ্ছে না,টেবলেটর সাথে থাকছেও না, খেলছে না।দোলনায় রাখলেও চিৎকার করে কাঁদছে। ফিহা কোলে তুলে নিলে শান্ত হয়ে যায়।কিন্তু ফিহা অসহ্যকর মাথা ব্যাথা সত্ত্বেও অনিকে কোলে নিয়ে রাখছে।সাফানকে কল করে আজ চলে আসতে বলেছে ফিহা।সাফান থাকলে হয়তো একটু রেস্ট নিতে পারবে।সাফান বাচ্চা অনেক পছন্দ করে। সাফান ছাড়াতো আপন বলতে ওর কেউ নেই।

    ফিহাঃ মাথা ব্যাথা তো কমার নাম নিচ্ছে না। ঔষধ খেয়েও কাজ হলো না।আচ্ছা একটু মাথায় কি তেল দিবো।যদি মাথাটা শান্তি লাগে।

    অনিয়াকে কোলে নিয়ে বেড থেকে নামলো।মাথার চুল এলোমেলো।কপালের সামনের বেবি চুলগুলো এসে চোখ ঢেকে ফেলেছে। মুখ,চোখে একরাশ বিষন্নতা।তেলের বোতল হাতে নিয়ে বেশ কিছুটা তেল নিয়ে মাথায় দিলো।২য় বার দেয়ার সময় অনি মোচর দিয়ে হাত ঝাড়া মেরে তেলের বোতলটা ফেলে দিলো।বোতল থেকে অনেকখানি তেল মেঝেতে পরে গেল।ফিহা বোতল তুললেও পরে থাকা তেল খেয়াল করলো না।সাধারণত টাইলসের মেঝেতে তরল জাতীয় কিছু পরলে দেখা যায় না।তেলের বোতলটা পাশে রেখে সাফানকে কল করলো।

    ফিহাঃ হ্যালো সাফান, কোথায় তুই? এত দেরী লাগে তোর আসতে?
    সাফানঃ আমি তোদের সদর দরজা দিয়ে মাত্র ঢুকেছি।আর দুই মিনিট অপেক্ষা কর আমি চলে এসেছি।
    ফিহাঃ আচ্ছা, জলদী আয়।আহহহহহহহহহহ

    একটা আর্তচিৎকারে সারা চৌধুরী বাড়ি স্তব্ধ হয়ে গেলো।সাথে অনির কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।

    সাফানঃ হ্যালো ফিহু, ফিহু। কি হলো তোর?কথা বলছিস কেন?ফিহু, ফিহু কি হয়েছে? (ভয় পেয়ে)

    ফিহা কথা বলবে কি করে? অসাবধান বশত তেলের মধ্যে পা স্লিপ কেটে ফিহা পড়ে গিয়েছে। অনিয়া মায়ের চিৎকারে ভয় পেয়ে কান্না করছে।প্রচন্ড ব্যাথা পেয়ে ফিহা অজ্ঞান হয়ে যায়।তবে অনির কিছু হয়নি।কারণ অনিয়াকে ফিহা নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছিলো।এখনও অনিয়া ফিহার বুকের ওপর শুয়ে আছে।জ্ঞান হারানোর আগেও ফিহা শক্ত করে অনিয়াকে নিজের সাথে ধরে রেখেছে। যাতে অনির কিছু না হয়।ঝাপসা চোখে ফিহা দেখতে পেলো সাফান পাগলের মতো দৌড়ে ওর দিকে এগিয়ে আসছে।

    #চলবে

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-১৫

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-১৫

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_15
    #Writer_NOVA

    সন্ধ্যার আবছা আলো চারিদিকে ছরিয়ে পরছে।যদিও সন্ধ্যা হতে এখনো ঢের বাকি।আগ্রাহায়ন মাসের শেষ দিকে শীত তার প্রভাব ফেলাতে শুরু করে।হালকা কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে আশপাশ।যার কারণে মনে হচ্ছে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ফিহা অনিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে। অনি মুখে থাকা চুষনি দিয়ে খেলা করছে।টেবলেট আনিস চৌধুরীর সাথে আছে।আজ সারাটা দিন শ্বশুর ও মেয়ের সাথে সময় কাটিয়ে মনটা অনেক ফুরফুরে লাগছে ফিহার।আজ তো মনটা শান্ত আছে।কিন্তু গতকাল কিরকম ছটফট করছিলো।

    ফিহাঃ কাল রিয়ানা আমার কেবিনে কি করছিলো?হঠাৎ করে ওর আগমণ আমার ঠিক মনে হলো না।কিছু তো একটা ঘাপলা ছিলো।আমার মন বলছে রিয়ানা আমার মেয়ের ক্ষতি করতে এসেছিলো।মেয়েটাকে আমি অপমান করেছিলাম।এত সহজে আমাকে ছেড়ে দিবে বলে মনে হয় না।নিশ্চয়ই এর বদলা ও নিয়েই ছারবে।আমাকে আরো সাবধানে থাকতে হবে।আমি থাকতে আমার মেয়ের কোন ক্ষতি হতে দিবো না। (অনিয়ার দিকে তাকিয়ে) চিন্তা করো না অনি মা-মণি। তোমার মা থাকতে কেউ তোমার ক্ষতি করাতো দূরে থাক তোমার চুলও কেউ স্পর্শ করতে পারবে না।

    ফ্লাসব্যাক……….

    টেবলেট যখন দেখলো রিয়ানা ফিডারে থাকা দুধের সাথে কিছু একটা গোলালো।তখন এক মুহূর্ত দেরী না করে ছুট লাগালো হল রুমের দিকে।হল রুমে মিটিং শুরু করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এখন সবাই বক্তব্য দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

    আবদুলঃ এখন আমাদের মাঝে বক্তব্য রাখবে আমাদের কোম্পানির নতুন ওনার মিসেস চৌধুরী। ছোট বউমা এবার তুমি কিছু বলো?

    ফিহাঃ জ্বি, চাচা।কোম্পানিটা যেহেতু আমার তাই আমাকে তো অবশ্যই কিছু বলতে হবে।প্রথমে সবাইকে আমি সালাম জানাই।আসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন।আজকে আমাদের বক্তব্য হলো খুবাই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে। আর সেটা নিশ্চয়ই সবাই জানেন।তারপরও আমি—–

    পরের কথাগুলো বলার আগেই টেবলেট ছুটে হল রুমে চলে এলো।এসে দিকপাশ না তাকিয়ে ফিহার শাড়ির আঁচল মুখে নিয়ে দরজার দিকে টানতে লাগলো।টেবলেটের এরকম কান্ড দেখে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেলো।একজন ক্লায়েন্ট তো বলেই ফেললো।

    —-কি এসব মিসেস চৌধুরী? এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলছে।আর এখানে কোথা থেকে এই কুকুর চলে এলো।মিটিং -এর মধ্যে এসব এলাউ না আপনি জানেন না মিসেস চৌধুরী??

    আদিয়াতঃ কি রে আকশি, কি হয়েছে রে?হঠাৎ টেবলেট ফিহার আঁচল মুখে নিয়ে টানছে কেন?
    আকশিঃ আমিও তো বুঝতে পারছি না। (নিচুস্বরে)

    ফিহাঃ কি হয়েছে টেবলেট? তুই শাড়ির আঁচল টানছিস কেন?কি হয়েছে বল আমায়?

    টেবলেটের চোখে পানি টলমল করছে।সে বার বার ফিহাকে আঁচল টেনে দরজার দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু ফিহা বুঝতে পারছে না। কয়েকজন বিরক্ত হয়ে ফিহাকে বললো।

    —দেখুন মিসেস চৌধুরী আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে কথা বলছি।এখন আপনার কুকুর যদি আমাদের ডিস্টার্ব করে তাহলে আমাদের কোটি কোটি টাকার টেন্ডার লস হওয়ার সম্ভাবনা আছে।আপনি দয়া করে এটাকে বাইরে রেখে আসুন।

    —-আমরা এখানো কোন লাইভ সো দেখতে আসিনি।অলরেডি আমাদের ১০ মিনিট দেরী হয়ে গেছে। এখন কি আপনি এই কুকুর বিদায় করে বিজনেসের কথা বলবেন।আপনার কোন কাজ না থাকতে পারে কিন্তু আমাদের এখনো বহু কাজ আছে।

    —-এ কিরকম ওনার ভাই?উনি এখানে কুকুর নিয়ে তামাশা শুরু করে দিয়েছেন।এদিকে যে আমাদের মিটিংয়ে দেরী হয়ে যাচ্ছে সে খেয়াল নেই। আনিস সাহেব কার হাতে নিজের অফিস তুলে দিলো?যার কিনা সময়ের ব্যাপারে সামান্য কোমন সেন্স নেই।

    —আনিস চৌধুরী বা কেমন মানুষ? এমন একটা মেয়ের হাতে পুরো কোম্পানির দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন।এতো বোকা মানুষ হয় নাকি।এখন তো আনিস চৌধুরীর ওপর আমার রাগ হচ্ছে।

    নানাজন ফিহাকে নানা কটু কথা শুনাতে লাগলো।অন্যদিকে টেবলেট এসব তোয়াক্কা না করে ফিহার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। টেবলেটের চোখে হাজার আকুলতা।আকশির মাথা ইতিমধ্যে গরম হয়ে গেছে। ফিহা ও নিজের বাবার নামে এসব বাজে কথা সে মেনে নিতে পারছে না। ফিহার চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেছে। আকশি যখনি রেগে কিছু বলতে যাবে তখনি ফিহা সকলের উদ্দেশ্য চেঁচিয়ে উঠলো। ফিহার ধমকে সবাই টাসকি খেয়ে গেল।

    ফিহাঃ এনাফ ইজ এনাফ।অনেক বাজে কথা শুনেছি আমি।আপনাদের যদি এতই সমস্যা হয় তাহলে আপনারা চলে যেতে পারেন।আমাদের কোম্পানিতে আপনাদের মতো ক্লায়েন্ট না থাকলেও চলবে।খবরদার আমার শ্বশুরকে নিয়ে যদি আরেকটা বাজে কথা বলেন তাহলে আমি কাউকে ছেড়ে কথা বলবো না।আর টেবলেট ও আমার ব্যাপারে খারাপ মন্তব্যও আমি একসেপ্ট করবো না।আমার টেবলেট যথেষ্ট ভদ্র কুকুর। অন্য দশটা রাস্তার কুকুরের মতো নয়।(রেগে)
    (একটু ভেবে) অনিয়ার কিছু হয়নি তো😳😳।

    অনিয়ার কথা মনে হতেই দরজার দিকে দৌড় দিলো ফিহা। পিছনে পিছনে টেবলেট, আকশি,আদিয়াত ও আবদুল আজিজ সাহেব।ফিহার বুকের ভেতর দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। সামন্য জায়গাটুকু দৌড়ে মনে হচ্ছে অনন্ত কালের রাস্তা। শেষ হচ্ছে না।বুকের ভেতর ঢিপঢিপ শব্দ হচ্ছে। এই ভয়টাই সে পাচ্ছিলো।

    🌿🌿🌿

    অন্য দিকে রিয়ানা ঘুমের ঘোরে অনিকে ফিডার মুখে দেওয়ার চেষ্টা করছে।কিন্তু অনির পেট ভরা থাকায় ফিডারের চুষনি মুখে দিচ্ছে না।ঘুমের ঘোরে বারবার হাত দিয়ে ধাক্কা মেরে ফিডার সরিয়ে ফেলছে।

    রিয়ানাঃ এই মেয়েটা ফিডার মুখে নিচ্ছে না কেন?কেউ এসে পরলে সমস্যা হয়ে যাবে।অথচ এই বিচ্ছু মেয়েটা চুষনি মুখে নিচ্ছে না।একটু মুখে দে নারে বেবি।এখন আমার ইচ্ছে করছে গলা টিপে ধরতে।ফাজিল মেয়ে কোথাকার?এসব বাচ্চা-কাচ্চা আমার এই জন্যই পছন্দ না।যত্তসব উটকো ঝামেলা।
    (বিরক্তির সুরে)

    বারবার চেষ্টা করছে রিয়ানা।কিন্তু অনি ফিডারের চুষনিতে মুখও লাগায়নি।সাধারণত বাচ্চাদের পেট ভরা থাকলে ঘুমের মধ্যেও মুখে কিছু দেয় না।জোর করে খাইয়ে দিতে গেল হাত ঝারা মেরে সেটা সরিয়ে দেয়।এখন অনিও ঠিক সেম কাজটা করছে।সবচেয়ে বড় কথা আল্লাহ মায়ের দোয়া কবুল করে নিয়েছে।ফিহা তখন মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিল যাতে ওর মেয়ের কোন ক্ষতি না হয়।আল্লাহ সেটা কবুল করে নিয়েছে। এখন হাজার চেষ্টা করেও ওর ক্ষতি কেউ করতে পারবে না।যেখানে অনির রক্ষক স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা।সেখানে সামান্য মানুষ ওর কি ক্ষতি করবে।রিয়ানা মুখ চেপে যেই অনির মুখে চুষনি
    দিতে যাবে তখনি ফট করে দরজাটা খুলে যায়।রিয়ানার চোখ দুটো ভয়ে গোল গোল হয়ে গেছে।

    ফিহাঃ কে তুমি এখানে কি করছো?আমার মেয়ের দোলনার সামনে কি করো তুমি? এদিকে ঘোরো তো।এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি?এদিকে ঘুরছো না কেন?আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি তোমাকে?আমার কথার উত্তর দিচ্ছো না কেন?

    রিয়ানা উল্টো দিকে ঘুরে থাকার কারণে কেউ ওর মুখ দেখতে পারছে না।টেবলেট দৌড়ে রিয়ানার সামনে গিয়ে ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো।রিয়ানা ভয়ে, আতংকে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো।হাতে থাকা ফিডারটা কি করবে সেই চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে গেলো।

    রিয়ানাঃ এখন কি করবো আমি?ফিডারটা কোথায় ফেলবো?আমার টেনশনে হাত পা ঘামছে।এখন ধরা পরে গেলে তো আমি শেষ। কি করি, কি করি?ই-উ-রে-কা পেয়ে গেছি।

    আবদুলঃ এই মেয়ে কে তুমি?আমাদের অনি দিদিভাইয়ের সামনে কি করো?ওর কোন ক্ষতি করতে আসো নি তো।তোমাকে তো সুবিধার মনে হচ্ছে না।

    ফিহাঃ সিকিউরিটি, সিকিউরিটি। এই গার্ডগুলো লোথায় গেলো?অচেনা, অজেনা মানুষ আমার কেবিনে কি করে ঢুকলো?(জোরে চেঁচিয়ে)

    আবদুলঃ বউমা তুমি ব্যস্ত হয়ো না।আমি দেখছি ব্যাপারটা।(শান্ত কন্ঠে)

    ফিহাঃ এই সিকিউরিটি কোথায় গেলো?কাজের সময় একটাকেও পাওয়া যায় না। সবাই কি অফিসে এসে ঘাস কাটে নাকি।(রেগে)

    ওদের কথার ফাঁকে রিয়ানা হাতে থাকা ফিডারটাকে দোলনার নিচে ফেলে দিলো।তারপর পা দিয়ে ঠেলে ফিডারটা দোলনার কোণার দিকে পাঠিয়ে দিলো।এখন দুই হাতে আঙুল মোচরাতে লাগলো রিয়ানা।আবদুল আজিজ সাহেব বাইরে চলে গেল সিকিউরিটি ডাকতে।

    রিয়ানাঃধরাতো পরে গেলাম। এবার কি বলবো?এই মেয়ে যা ডেঞ্জারাস।আমাকে কি না কি করে?ধূর, ভালো লাগে না।যত দোষ ঐ কুকুরটার।এটাকে একদিন পেলে আমি নিশ্চয়ই বিষ খাইয়ে মেরে ফেলবো।শয়তান কুকুর।

    ফিহা এগিয়ে এসে রিয়ানার কাঁধে হাত রেখে জোরে সামনের দিকে ঘুরালো।কিন্তু রিয়ানার মুখ নিচু করে রাখায় সামনের কাটা চুলগুলো দিয়ে মুখ ঢেকে আছে।ফিহা রিয়ানাকে না দেখে বললো।

    ফিহাঃ কান দিয়ে কি বাতাস ঢুকে না।আমি কখন থেকে বলছি আমার দিকে তাকাতে।চুলগুলো সরাও।তোমার সাহস কি করে হয় এখানে আসার?কোন সাহসে তুমি আমার কেবিনে ঢুকছো?ডেম ইট।উত্তর দিচ্ছো না কেন?

    আদিয়াতঃ এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম বড় নয়।এতো সিকিউরিটি গার্ড থাকতে তুমি অনুমতি না নিয়ে ভেতরে ঢুকেছো?

    আকশিঃ এখন মুখের ভাষা কোথায় হারিয়ে গেছে। মাথা নিচু করে রেখেছো কেন?মুখ তোলো।কি জন্য এসেছো এখানে?বাচ্চাটার কোন ক্ষতি করতে আসো নি তো।

    রিয়ানাঃ আশ্চর্য, কারো ব্যাপারে না জেনে এতগুলো কথা বলে ফেললেন।
    ফিহাঃ মিস রিয়ানা আপনি??(অবাক হয়ে)
    রিয়ানাঃ কেন আমি আসতে পারি না?

    🌿🌿🌿

    আকশি ও আদিয়াত ভ্রু কুঁচকে রিয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে। অবশ্য রিয়ানা ওদের ছদ্মবেশে থাকায় চিনে নি।আদিয়াত আকশির কানের সামনে মুখ নিয়ে নিচুস্বরে বললো

    আদিয়াতঃ দোস্ত এই রিয়ানা চুরেল এখানে কি করে?

    আকশিঃ এই মেয়ে মোটেও সুবিধার নয়।যেখানে যায় সেখানেই কোন না কোন ভেজাল করে থাকে।

    ফিহাঃ আপনি এখানে কি করছেন?(রেগে)

    রিয়ানাঃ হেই ইউ। কি ভাবো তুমি নিজেকে?দেশের প্রেসিডেন্ট নাকি?আমার যখন ইচ্ছে হবে তখনি এই অফিসে আসতে পারবো।কেন এসেছি তার কৈফিয়ত তোমাকে দিবো নাকি।এটা আমার আকশির অফিস।তাছারা আমার বাবার বন্ধুর অফিসে আমি যখন খুশি তখন আসবো।তোমার অনুমতি নিবো নাকি?(রেগে)
    ফিহাঃ আগে আপনার বাবার বন্ধুর অফিস ছিলো।কিন্তু এখন আমার। তাই এই,অফিসে আসতে এবং আমার কেবিনে ঢুকতে হলে আপনাকে অবশ্যই আমার অনুমতি নিতে হবে।

    রিয়ানাঃ যাস্ট শেট আপ।ইউ রাস্কেল।তোমার মতো একটা থার্ড ক্লাস মেয়ের থেকে এই রিয়ানা অনুমতি নিবে।কিভাবো তুমি নিজেকে?

    দুই কদম এগিয়ে রিয়ানা হাত তুললো ফিহাকে চড় মারার জন্য। ফিহা চোখ বন্ধ করে ফেললো।কিন্তু কোন চড় মারার শব্দ পেলো না।ফিহা পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলো ওর পেছন থেকে একটা হাত এসে রিয়ানার হাতটাকে মুচরে ধরে রেখেছে। ফিহাকে থাপ্পড়ের হাত থেকে বাঁচানোর মালিকটা কে সেটাতো আমরা সবাই জানি।আমাদের নায়ক আকশি😜।

    রিয়ানাঃ তোমার সাহস কি করে হয় আমার হাত ধরার?রিয়ানার হাত ধরে অনেক ভূল করলে তুমি। তোমাদের সবাইকে আমি দেখে নিবো।আমি কাউকে ছারবো না।

    রেগে গজগজ করতে করতে রিয়ানা বেরিয়ে গেলো।যদিও কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে সে এবার বেঁচে গেলো।বাইরে এসে একটা শয়তানি হাসি দিলো রিয়ানা।কারণ এতখন মিথ্যে রাগের ভান করে সে বেঁচে গেছে। মুচকি হাসতে হাসতে অফিস থেকে বেরিয়ে গেল।কিন্তু দোলনার নিচে দুধের ফিডারের কথা তিনি একবারে ভূলে গেছে। যেটা তার জন্য অনেক বড় বিপদ নিয়ে আসবে।

    ফিহাঃ থ্যাংন্কস, বাঁচানোর জন্য।
    আকশিঃ দিস ইজ মাই বিজনেস। আমার বউয়ের গায়ে কেউ হাত তুলবে আর তাকে আমি ছেড়ে দিবো নাকি।(বিরবির করে)
    ফিহাঃ হোয়াট??কিছু বললেন নাকি?
    আকশিঃ কিছু না। কিছু না।(আমতা আমতা করে)
    আবদুলঃ কি হলো বউমা?রিয়ানাকে দেখলাম কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে।
    ফিহাঃ কিছু হয়নি চাচা।চলুন মিটিংয়ে ফিরে যেতে হবে।টেবলেট কি খুঁজছিস তুই?

    🌿🌿🌿

    অনেক সময় ধরে টেবলেট নাক দিয়ে কিছু একটা শুঁকছে। সারা রুমে কি জানি খুঁজছে? কিন্তু সে খুঁজে পাচ্ছে না।সবাই বেরিয়ে গেলো।কিছু দূর গিয়ে ফিহা থেমে গেল।
    আদিয়াতঃ কি হলো মিসেস চৌধুরী?
    আকশিঃ আপনি থেমে গেলেন কেন?
    আবদুলঃ মিটিংয়ে দেরী হয়ে যাচ্ছে। চলো বউমা।
    ফিহাঃ আপনারা যেতে থাকেন আমি আসছি।

    কথাটা বলে ফিহা উল্টো দিকে দৌড় দিয়ে নিজের কেবিনে ঢুকে গেল।অনির দোলনার সামনে গিয়ে ওর দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো।তারপর হুট করে কোলে তুলে নিয়ে টেবলেট কে ডাকতে লাগলো।

    ফিহাঃ রিয়ানা নিশ্চয়ই আমার কলিজার টুকরো অনির কোন ক্ষতি করতে এসেছিলো।তবে আজ যদি টেবলেট না থাকতো তাহলে কোন দূর্ঘটনা ঘটে যেত।
    কোন প্রমাণ না থাকায় আমি কিছু বলতেও পারলাম না।টেবলেট চল আমার সাথে। আজকের মিটিংয়ে তুই ও অনিয়া আমার সাথেই থাকবি।আজ থেকে তোরা দুজন আমার সাথে অলটাইম থাকবি।অনিয়াকে আমি আর এক মূহুর্তের জন্যও আমার চোখের আড়াল করবো না।

    ফিহা ঘুমন্ত অনিয়াকে কোলে তুলে এবং টেবলেটকে সাথে নিয়ে হল রুমের দিকে হাঁটতে লাগলো।

    আবদুলঃ বউমা দিদিভাই ও টেবলেটকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো তুমি?(অবাক হয়ে)

    ফিহাঃ আমি ওদের নিয়েই মিটিং করবো।আমি আর কখনও এক মিনিটের জন্যও আমার মেয়েকে চোখের আড়াল হবো না।আমার বিশ্বাস আজ যদি ঠিক সময় আমরা না পৌঁছাতাম তাহলে অনির নিশ্চয়ই কোন ক্ষতি হয়ে যেত।আমি মা হয়ে আমার মেয়ের কোন ক্ষতি একসেপ্ট করতে পারবো না।

    আবদুলঃ কিন্তু ক্লায়েন্টরা তো বাজে মন্তব্য করবে।

    ফিহাঃ কে কি বললো আই ডোন্ট কেয়ার। আমি আমার কাজ করে যাবো।আমি নিশ্চয়ই আমার সন্তানের অমঙ্গল মেনে নিবো না।

    আকশিঃ কিন্তু আপনার তো কষ্ট হবে।

    ফিহাঃ আমার মেয়ে আমার সাথে থাকলে কোন কষ্ট হবে না।বরং আমি খুশি মনে কাজ করতে পারব।কিন্তু আমার মেয়ে আলাদা থাকলে আমার মনের অশান্তি বেড়েই যাবে।যাতে করে আমি কোন কাজে মনোযোগ দিতে পারবো না।আর আমার মেয়ে যথেষ্ট ভদ্র ও শান্ত। আমাকে ছারা অন্য কাউকে বিরক্ত করবে না।তাই আপনারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।

    ফিহার কথা শুনে আবদুল সাহেবে,আকশি ও আদিয়াত মুগ্ধ চোখে ফিহার দিকে তাকিয়ে আছে। সত্যি পৃথিবীতে মায়ের থেকে বড় কেউ নেই।পুরো মিটিং অনিকে কোলে নিয়ে এবং টেবলেটকে পাশে নিয়ে কমপ্লিট করেছে ফিহা।

    ফ্লাসব্যাক এন্ড…………

    সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। দূর মসজিদে মাগরিবের আজান হচ্ছে। গতকালের কথা ভাবতে ভাবতে এত দেরী হয়ে গেছে সেটা ফিহা বুঝতে পারে নি।হুশ ফিরে আসতেই জলদী করে ফিহা রুমে ঢুকে গেল।বারান্দার দরজা আটকে রুমের লাইট জ্বালালো।টেবলেটকে ডেকে অনির পাশে বসে খেলতে বললো ফিহা।অনি ও টেবলেট একটা ছোট বল নিয়ে খেলতে লাগলো।ফিহা ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে নামাজ পরার জন্য ওজু করতে ওয়াস রুমে ঢুকে পরলো।

    #চলবে

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-১৪

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-১৪

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_14
    #Writer_NOVA

    পূর্ব দিগন্তে ডিমের কুসুমের মতো সূর্যটা উঁকি দিচ্ছে। একটু পর হয়তো তার কিরণ সারা ভূবন আলোকিত হয়ে উঠবে।ফিহা খুব শক্ত করে নিজের সাথে অনিয়াকে মিশিয়ে রেখেছে।আজ অনেক দিন পর সূর্য উদয় দেখছে ফিহা।অনিয়া তার মায়ের বুকে মুখ গুঁজে পরম নিশ্চিন্তে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। ফিহা মায়াবী চোখে অনিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আজ ফিহা অফিস যাবে না।সারাদিন অনিয়ার সাথে সময় কাটাবে।অফিসের কাজের জন্য আজকাল অনির দিকে খেয়াল দেওয়া হয় না।টেবলেট ওর ছোট ঘর আরামে ঘুমাচ্ছে। এই বোবা প্রাণীটার ওপর দিনকে দিন ফিহার মায়া বেড়েই যাচ্ছে। আর অনিয়া তো এখন ওর কলিজার টুকরো। ঘুমন্ত মেয়ের দিকে তাকিয়ে ফিহা একা একা কথা বলছে।

    ফিহাঃ পাগলী মেয়ে আমার।ভোর সকালে উঠে আমাকে জ্বালিয়ে এখন ঘুমানো হচ্ছে। আমি নাহয় নামাজ পরতে উঠেছি কিন্তু তোমার কেন উঠতে হবে।দিনকে দিন মা-মণি তোমার পাঁজি পানা বেড়েই যাচ্ছে। আমি সাথে না থাকলে ঘুমের থেকে জেগে যাও।এটা কিন্তু ভালো কথা নয়।

    আনিসঃ কার সাথে কথা বলছো ছোট বউমা?

    ফিহাঃ আরে বাবা আপনি?কখন এলেন?কিছু লাগবে?আমায় ডাক দিলেই হতো।নয়তো কাউকে পাঠাতেন।আপনি কেন কষ্ট করে উঠে এলেন।
    আনিসঃ তুমি ব্যস্ত হয়ো না মা।আমি ঠিক আছি।

    ফিহাঃ এত সকাল করে কেন উঠেছেন বলুন তো।নামাজ পরে শুয়ে থাকলেও তো পারেন।এত সকালে তো এখনো সূর্যও উঠেনি।

    আনিসঃ শুয়ে, বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাচ্ছি বউমা।সারাদিন তো এসবের মধ্যেই থাকি।একা এতবড় বাড়িতে থাকতে আর ভালো লাগে না।আমার দিদিভাই কেমন আছে?

    ফিহাঃ আপনার দিদিভাই আজ রাতে ঘুমায়নি।কিছু সময় পর পর কান্না করে উঠেছে।আযানের আগে একটু চোখ লাগিয়েছিলো কিন্তু আমি নামাজ পরতে উঠার সাথে সাথে জেগে গেছে। এখন আবার ঘুমালো।

    আনিসঃ রাতে কান্না করেছে কেন?(চিন্তিত সুরে)
    ফিহাঃ জানিনা বাবা।কখনও তো এমন করে না।আজ কিছু সময় পর পর ফুঁপিয়ে কান্না করে উঠেছে।কিন্তু কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।

    আনিসঃ দিদিভাই হয়তো কিছুতে ভয় পেয়েছে।তাই এরকম বিহেভ করছে।

    ফিহাঃ আমিও বুঝতে পারছি না আসলে কি হয়েছে? দুই দিন ধরে এতো ব্যস্ত ছিলাম যে ওর দিকে ভালোমতো খেয়ালও দিতে পারি না।সেজন্য আজ আমি ঠিক করেছি অফিসে যাবো না।সারাদিন অনিকে ও আপনাকে সময় দিবো।অফিসে থাকার দরূণ আপনার যত্নও নিতে পারি না।কি খান,কি করেন কিছুই জানি না।আজকে আমি বাড়িতে থেকে নিজের হাতে সবকিছু রান্না করবো আর আপনাদের দুজনের কেয়ার করবো।আজ অফিসে না গেলে কি কোন সমস্যা হবে বাবা?

    অানিসঃ এটা কেমন কথা হলো বউমা?তোমার সংসার,অফিস,তোমার বাবা, তোমার মেয়ে।সবকিছু যেখানে তোমার সেখানে আমি বলার কে?

    ফিহাঃ বাবা এসব কিছু আমার কাছে আমানত।আমার কোন হক নেই তাতে।

    আনিসঃ কি বলো তুমি বউমা?আমি সবকিছু তোমার হাতে তুলে দিয়েছি।এখন আমার যা ছিলো আর যা আছে সব তোমার।আমার এসবে কোন অধিকার নেই। এবার শান্তিমত দুচোখ বন্ধ করতে পারলেই আমার মুক্তি।

    ফিহাঃ এতো বিশ্বাস করেন আমায়।(ছলছল চোখে)
    আনিসঃ নিজের থেকেও বেশি তোমায় ভরসা করি বউমা।অনি দিদিভাই ঘুমিয়ে গেছে। ওকে বিছানায় শুইয়ে দেও।বড্ড জ্বালাতন করে তোমায়?

    ফিহাঃ যত দিন যাচ্ছে আমার প্রতি পাগল হয়ে যাচ্ছে। কোথাও অনিকে ছারা যেতে পারি না।এখন তো আমার ওয়াস রুমে যাওয়া দায় হয়ে পরেছে।আমার সাথে সবসময় লেপ্টে থাকে।আগে তাও কারো কোলে যেতো। কিন্তু এখন আমায় ছারা কিছু বুঝে না।

    অনিকে বিছানায় রেখে গায়ের ওপর হালকা করে কম্বল মেলে দিলো।যদি ততটা শীত নয়।তবুও ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা আছে।আনিস চৌধুরী মুগ্ধ চোখে ফিহার দিকে তাকিয়ে আছে।

    আনিসঃ অনি তোমায় অনেক বিরক্ত করে তাই না বউমা।যার জন্য তোমার মাঝে মাঝে ওর, আমার ওপর রাগ হয়।

    ফিহাঃ ছি ছি বাবা কি বলেন এসব?কোন মা কি তার মেয়ের ওপর বিরক্ত হতে পারে।আর কোন মেয়ে কি তার বাবার ওপর রাগ করে থাকতে পারে।অনি যেমন আমার মেয়ে তেমনি আপনিও আমার বাবা।এটা সত্যি যে আমি অনির নিজের মা নয় কিংবা আপনি আমার নিজের বাবা নন।কিন্তু আমি সেটা মানি না।আপনি আমার নিজের বাবা,অনি আমারি মেয়ে। আপনাদের দুজনকে ছেড়ে আমি কোথাও যাচ্ছি না।

    আনিসঃ আমি আমার অনি দিদিভাইয়ের জন্য একজন সত্যিকারের আদর্শ মা আর নিজের জন্য একটা মেয়ে নিয়ে এসেছি।আমার আর কিছু চাই না।
    আজ যদি আমার আকশি থাকতো তাহলে আমি তোমাকে সত্যিই নিজের ছোট বউমা বানিয়ে নিতাম।

    ফিহাঃ ওহ্ এখন মেয়েকে ভালো লাগছে না।তাই বউ বানানোর চিন্তায় আছেন।তার মানে দাঁড়ালো আপনি আমায় একটুও ভালোবাসে না।আমি ঠিক বলেছি না বাবা?আমি মনে হয় আপনাদের যত্ন নিতে পারছি না।যার কারণে মেয়ে থেকে বউ করবেন ভাবছেন।
    (মুখ গোমরা করে)

    আনিসঃ আমি তা বুঝাইনি বউমা।তুমি আমার বউমা এবং মেয়ে দুটোই।তোমারজায়গায় আজ অন্য কোন মেয়ে থাকলে হয়তো আমার সবকিছু নিঃশ্ব করে পালিয়ে যেতো।কিন্তু তুমি তা করো নি।এই বুড়ো বাপ আর এতিম বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে অবিবাহিত হয়েও সমাজের কাছে বিবাহিত হওয়ার দাগ লাগিয়েছো।নিজের জন্য একটুও ভাবো না।

    ফিহাঃ বাবা,আপনি আবারও উল্টো পাল্টা কথা বলছেন।আপনাকে না আমি বলেছি একদম নিজেকে এত ছোট ভাববেন না।আর অনিকে কখনও এতিম বলবেন না।অনির মা ফিহা চৌধুরী এখনও বেঁচে আছে।তাই আমার অনি এতিম নয়।আপনি নিজেকে কেন একা ভাবেন বলুন তো।আপনার মেয়ে ফিহা যতদিন আছে ততদিন আপনারা কেউ নিঃস্ব বা একা নন।কথাটা মনে রাখবেন।

    আনিসঃ বাহ বাহ আমার মেয়ে দেখছি আজকাল আমার ওপর রাগও করে।

    ফিহাঃ হুম, বাবার ওপর মেয়ে রাগ করতেই পারি।এবার আমাকে বলুন বাবা, কি খাবেন? চা নাকি কফি?

    আনিসঃ এক কাপ চা হলে ভালো হতো।

    ফিহাঃ তাহলে আপনি বসুন আমি চা করে আনছি।আপনি এখানেই বসে থাকবেন।কোথাও যাবেন না কিন্তু। আজ একটু ঠান্ডা পরেছে। ঠান্ডার মধ্যে আপনার হাঁটা চলা কম করতে হবে।

    আনিসঃ আমি আমার দিদিভাইয়ের সামনেই বসে আছি। তুমি গিয়ে চা নিয়ে এসো।

    ফিহা খুশি মনে চা তৈরি করতে চলে গেল।আনিস চৌধুরী বড় করে দীর্ঘ শ্বাস ছারলো। নিজের মনের মাঝে তিনি আনন্দ খুঁজে পাচ্ছেন।যাক, তিনি নিজের ও অনির জন্য একজন খাঁটি মনের মানুষ খুঁজে পেয়েছেন।এর থেকে বেশি আর কি লাগে?

    ফিহা চা তৈরি করে নিয়ে এলো।বউ শ্বশুর মিলে কিছুখন ব্যবসা বাণিজ্যের কথা বললো।ফিহা নিজ হাতে আনিস চৌধুরীকে ঔষধ খাইয়ে বিশ্রাম করতে ঘরে পাঠিয়ে দিলো।ফিহার শ্বশুর চলে যেতেই ভেবেছিলো একটু ঘুমাবে।তাই বিছানায় অনির পাশে বালিশে মাথা হেলিয়ে দিলো।কিন্তু বেশ কিছু সময় এপাশ ওপাশ করেও ফিহা ঘুমাতে পারলো না।তাই উঠে আলতো করে অনির কপালে চুমু খেতে গিয়েও থেমে গেল।

    ফিহাঃ ছোট বেলায় গুরুজনদের বলতে শুনেছিলাম ঘুমন্ত বাচ্চাকে কিসি করতে নেই। তাহলে নাকি বাচ্চারা অনেক পাঁজি, রাগী ও জিদ্দি হয়।যদিও আমি এসব মানি না।তারপরেও আমি তোমাকে ঘুমের মধ্যে কিসি দিবো না। তুমি আমার মানিক চাঁদ। মাশাল্লাহ, কত কিউট দেখতে আমার পরীটা।ঘুমন্ত মানুষকে নাকি অনেক সুন্দর লাগে।বাচ্চাদের তো আরো বেশি। আমার পরীকে না দেখলে আমি কখনও এটা বিশ্বাস করতাম না।ঘুমিয়ে থাকলে চেহারাটা আরো বেশি মায়াবী লাগে।ইচ্ছে করে সারা মুখে আদরের পরশ দিয়ে দিতে।এই মায়াবী চেহারা দেখে আমি সারাজীবন পার করে দিতে পারবো।আমার কোন কষ্ট হবে না।বরং আমি তোমার মুখের হাসির জন্য সারা দুনিয়ার কাছে নিজের জীবন বাজি রাখতে রাজি আছি।কারণ আমি এই ছোট্ট সোনামণিটার মা।

    মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কথাগুলো বললো ফিহা।
    দুধ গুলিয়ে ঘুমের মধ্যে অনিকে খাইয়ে দিলো।
    তারপর উঠে চলে এলো টেবলেটের ঘরের কাছে।রুমের উত্তর পাশে খুব সুন্দর একটা ছোট্ট ডগ ঘর।সেটায় টেবলেট থাকে।

    ফিহাঃ টেবলেট আর কত ঘুমাবি বল তো?কত বেলা হয়ে গেছিস তুই জানিস।যদিও আজকে অফিস যাবো না।কিন্তু আমার যখন ঘুম আসছে না তাহলে তোকেও আমি ঘুমাতে দিবো না।উঠ না।এতো পরে পরে ঘুমালে চলে।আমি ভাবলাম তোকে নিয়ে বাইরের বাগানে ঘুরতে যাবো।আর তুই এখনো আলসেমি করে শুয়ে আছিস।আমাকে আজ রান্না করতে হবে।তিন বেলার খাবার আজ আমি রান্না করবো।তুই যদি আজ আমার সাথে বাইরে না যাস তাহলে তোর দুপুরের খাবার মাইনাস।

    ফিহার এতগুলো কথার একটাও বোধ হয় টেবলেটের কানে ঢুকলো না।কারণ সে যেহেতু শুনেছে আজ ফিহা অফিস যাবে না সো টেবলেটের আজ কোন কাজ নেই। তাই সারাদিন পরে পরে ঘুমাবে।টেবলেট ফিহার দিকে ঘুম ঘুম চোখে একবার তাকিয়ে হাই তুললো।তারপর আবার মুখ গুঁজে চোখ বন্ধ করে নিলো।মোট কথা ফিহার কোন কথাকেই সে পাত্তা দেয়নি।এখন সে আরামচে ঘুমাবে।ফিহা টেবলেটের ওপর বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বিরবির করতে করতে চলে গেল।

    ফিহাঃ ধূর,টেবলেট টা এলো না।ও এলে আমি একটু বাইরে যেতাম।আপাতত এখন আমার মেয়ে উঠবে না।একা একা বাইরে যেতেও ভালো লাগছে না।কি করব, কি করব?বাড়িতে তো কোন সার্ভেন্ট ও জেগে নেই। আবদুল চাচাকে ফোন দিয়ে আজকে অফিস সামলাতে বলে দিতে হবে।আমি এখন কি করবো?(একটু ভেবে)পেয়েছি!!! পুরো বাড়িটা আমার এখনো ঘুরে দেখা হয়নি।আমি বরং এখন পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখি।কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবো।আচ্ছা, অনিল ভাইয়া ও লিয়া ভাবীর রুমটা আগে ঘুরে দেখলে কেমন হয়?ইয়েস ঐ রুমেই আগে যাবো।

    যেমন ভাবা তেমন কাজ।ধীর গতিতে অনিলের রুমের দিকে হাঁটতে লাগলো ফিহা।রুমের দরজায় ছিটকিনি লাগানো।তালা মেরে রাখা হয়নি।কেউ এদিকে আসে না বলে তালা মারার প্রয়োজন মনে করে না।দরজার ছিটকিনি খুলে ফিহা ভেতরে প্রবেশ করলো।রুমটা ঘন কালো কুচকুচে অন্ধকার। বাইরের ছিটেফোঁটা আলোয় হাতরে লাইটের সুইচ খুঁজে লাইট জ্বালালো।বহুদিন ব্যবহার না করায় রুমে একটা গুমোট গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে পুরো রুম সাজানো গোছানো।দেখে মনেই হয় না রুমে কেউ থাকে না।

    পুরো রুমে চোখ বুলাতে বুলাতে একটা ছবির কাছে এসে চোখ আটকে গেল।ধীর পায়ে সেই ছবির সামনে এসে দাঁড়ালো ফিহা।দেয়ালে টাঙানো বিশাল বড় একটা ফ্রেম।যেখানে অনিল,লিয়া ও অনিয়া আছে।লিয়াকে এই প্রথম দেখলো ফিহা।অসম্ভব সুন্দরী, চোখের মণি দুটো ধূসর রঙের।ছবিতে লিয়া ঘুমন্ত অনিয়াকে কোলে নিয়ে আছে।অনিয়া তখন খুব ছোট। লিয়া দুই হাতে জাপটে ধরে রেখেছে অনিকে।আর অনিল, লিয়াকে এক হাতে জরিয়ে ধরেছে।লিয়ার মাথার সাথে হালকা করে নিজের মাথা হেলিয়ে রেখেছে।দুজনের পরনে হালকা আকাশি কালার ড্রেস। ফিহার কাছে ছবিটা পৃথিবীর বেস্ট ছবি মনে হলো।কারণ এখানে একটা ছোট্ট পরিবার আছে।বাবা,মা এবং তাদের ছোট সোনামণি। এর থেকে ভালো ছবি আর কি হতে পারে?তবে আফসোস তারা সারাজীবন এভাবে থাকতে পারলো না।

    #চলবে

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-১৩

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-১৩

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_13
    #Writer_NOVA

    মিটিং শুরু হয়ে গেছে আরো ২০ মিনিট আগে।এক এক করে সব ক্লায়েন্ট বক্তব্য রাখছে।আদিয়াত মনোযোগ সহকারে গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশনগুলো টুকে নিচ্ছে। আকশি মহাশয়ের কথা কি বলবে?তিনি তো কিছু সময় পর পর আড়চোখে ফিহাকে দেখতেই ব্যস্ত।ফিহার মনটা আনচান করছে অনিয়ার জন্য। কেন জানি বার বার মনে হচ্ছে অনিয়ার কোন বিপদ হবে?কথায় আছে না মায়ের মন সবার আগে বিপদ সংকেত পায়।সন্তানের বিপদের ইঙ্গিত মায়ের মনে ঘন্টা বাজায়।ফিহা হয়তো অনিয়াকে জন্ম দেয়নি।কিন্তু এতোদিন লালন-পালন করে তো ওর প্রতি দূর্বল হয়ে গেছে। আল্লাহ হয়তো এই কারণে অনির সাথে ফিহার মনের কানেকশন জুড়ে দিয়েছে।

    আকশি বেশ কিছু সময় ধরে খেয়াল করছে ফিহা মিটিংয়ে মনোযোগী নয়।খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবছে।

    আকশিঃ আজ ফিহার কি হলো?অনান্য সময় তো ওকে বেশ গম্ভীর দেখায়।কিন্তু আজ মনে হচ্ছে কিছু একটা নিয়ে অনেক চিন্তিত।কি ভাবছে এতো?হাব-ভাব তো ভালো ঠেকছে না।আমি যতটুকু জেনেছি ফিহা সামান্য ব্যাপার নিয়ে কখনও চিন্তা করে না।মেয়েটা নাকি বেশ স্ট্রোং।ভেতরে ভেতরে ভয় পেলোও কখনও মুখে তা বুঝতে দেয় না।কিন্তু আজ কি হলো ওর?আমি ফিহাকে এভাবে নিতে পারছি না।ফিহা কি আমাদের ব্যক্তিগত কোন কারণ নিয়ে টেনশনে আছে।না, আমাকে জানতেই হবে।(মনে মনে)

    ফিহা এক ধ্যানে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অনিকে ঘুম পারিয়ে রেখেছে।টেবলেট পাহারা দিচ্ছে। তারপরও মনটা কু-ডেকেই যাচ্ছে। কোন কিছুতে শান্তি লাগছে না।

    ফিহাঃ আমার অনিকে নিয়ে ভয় কেন করছে?আমার মনে হচ্ছে আমার মেয়ের নিশ্চয়ই কোন ক্ষতি হবে।টেবলেট তো ওর পাশে আছে।তারপরেও কেন ভয় করছে আমার।কিছু সময় পর পর বুকটা ধক করে উঠছে।একটা শব্দ হলেই মনে হচ্ছে আমার অনিয়ার সাথে খারাপ কিছু হচ্ছে। কোথায় আগে তো এরকম কখনও মনে হয়নি।অস্থির, অস্থির লাগছে ভেতরটা।আল্লাহ তুমি আমার মেয়েটাকে দেখো।অনি আমার কাছে চৌধুরী বাড়ির আমানত।তাছাড়া আমার নিজের মেয়ে।হ্যাঁ,যে যাই বলুক।আমি কারো কথা শুনবো না।অনিয়া আমারি মেয়ে। ওর কিছু হলে আমি নিজেকে মাফ করতে পারবো না।বাবা আমাকে বিশ্বাস করে ওর দায়িত্ব দিয়েছে।আমি যদি সেটা পালন করতে না পারি তাহলে আমার নিজেকে শেষ করা ছারা অন্য কোন উপায় থাকবে না।আল্লাহ যত কষ্ট দেওয়ার,যত বিপদ দেওয়ার আমাকে দিয়ো।কিন্তু তোমার কাছে আমার আর্জি দয়া করে আমার অনির কোন ক্ষতি তুমি হতে দিও না।(মনে মনে)

    ফিহার চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে।এই মনে হয় টুপ করে পরে যাবে।পৃথিবীর সব মা এমনি হয়।নিজের চাইতে বেশি সন্তানের জন্য ভাবে।তাই তো আল্লাহর পর মা কে সম্মান করতে বলা হয়েছে।মায়ের দোয়া আল্লাহ অবশ্যই কবুল করবে।মায়ের পদতলে সন্তানের বেহশত। কিন্তু কোন মা তার সন্তানকে পায়ের নিচে কখনও রাখে না।শত, হাজার কষ্টের মধ্যেও নিজের বুকে পরম যত্নে সন্তানকে আগলে রাখে।নিজের জীবন যায় যাক কিন্তু সন্তানের কিছু হতে সে দিবে না।এই জন্যই তো মায়েরা পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন।সবার ওপরে আমাদের মা।তার ওপরে কাউকে মর্যদা দেয়নি আল্লাহ। ভালবাসি তোমাকে মা।তোমার মতো আর কেউ আমাদের জন্য এত ভাবে না।এতো ভালোবাসা দিয়ে বুকে আগলে রাখে না।এই জন্য আল্লাহ এতো মর্যদা দিয়েছে মা-কে।একজন মা সন্তানের জন্য যতটা কষ্ট স্বীকার করে তা আর কেউ কখনও করে নি, করবেও না।

    আকশিঃ আদি, এই আদি।ঐ আদি বজ্জাতের কাঁদি।
    আদিয়াতঃ কি হয়েছে এত ডাকছিস কেন?দেখছিস না মিটিং চলছে।এখন কথা বলে মান-সম্মানের মাথা খাস না।যদি তারা বুঝতে পারে আমরা কথা বলছি তাহলে রুম থেকে বের করে দিবে।কতবড় পানিশমেন্ট এটা ভেবেছিস?এই বয়সে এসব মানা যায়।

    আকশিঃ তোর বক্তৃতা বন্ধ করবি।নিজে যে এক লাইনের বদলে পুরো রচনা শুনিয়ে দিচ্ছিস। সেই বেলা কিছু হয় না।আর আমি সামান্য ডাক দিয়েছি তাতেই এতো কিছু হয়ে গেলো।শালা,হারামী,শয়তান।

    আদিয়াতঃ গালি না দিয়ে কি জন্য ডেকেছিস তা বল?

    আকশিঃ ফিহার মনটা মনে হচ্ছে অনেক খারাপ।

    আদিয়াতঃ তো আমি কি করবো?তোর বউ মন খারাপ করে আছে সেটা ঠিক করার দায়িত্ব তোর, আমার নয়।আপতত মন খারাপের কথা ছাড়।মিটিংয়ে মনোযোগ দে।একটা গুরুত্বপূর্ণ টপিকে কথা হচ্ছে। তোদের বিজনেসের জন্য অনেক দরকারী।
    আদিয়াতঃ তোর মিটিংয়ের পেচাল বন্ধ কর। আমার এখন ফিহার জন্য চিন্তা হচ্ছে। ফিহাকে আমি এইভাবে নিতে পারছি না। আমার ভীষণ খারাপ লাগছে।

    আদিয়াতঃ ভাই আমার এখন একটু চুপ কর।মিটিং থেকে বের হওয়ার কোন ইচ্ছে আমার নেই।

    আকশিঃ তুই একটু ভেবে দেখ ফিহা শুধু শুধু কারণে মন খারাপ করে না।ফিহা খুব শক্ত গঠনের মানুষ। সামান্য ব্যাপারে মন খারাপ করবে এমন মেয়ে তো ফিহা নয়।
    আদিয়াতঃ আল্লাহ বাচাও আমায়।🤦‍♂️🤦‍♂️
    আকশিঃ আমার কথাটা শোন।
    আদিয়াতঃ আরেকটা কথা বললে আমি তোর নামে কমপ্লেন করবো।
    আকশিঃ 🤭🤭

    🌿🌿🌿

    রিয়ানা খুব সাবধানে সিকিউরিটি সামলিয়ে ভেতরে ঢুকলো। হাতের সাইড ব্যাগে কড়া ডোজের ঘুমের ঔষধ। এতোটা কার্যকরী যে মৃত্যুর সম্ভাবনা একশ পার্সেন্ট।তা যদি ছোট কোন বাচ্চাকে দেওয়া হয় তাহলে ২৮ মিনিটের মধ্যে মৃত্যু পুরো নিশ্চিত। আজ তার অপমানের বদলা নিবে।তবে সেটা অনিয়ার ওপর নিবে।সেদিন ফিহার কাছে অপমানিত হয়ে এতটা প্রতিশোধ পরায়ন হয়েছে যেকোন মূল্যে ফিহার ক্ষতি চায়।যেহেতু এখন ফিহার চৌধুরী বাড়ি থাকার মূল কারণ হলো অনিয়া।তাই অনিয়াকেই মেরে ফিহাকে শিক্ষা দিবে।

    ফিহাঃ খুব সাহস তোর ফিহা।এবার তোর বড়মুখ আমি বের করবো।তোর কলিজার টুকরো অনিয়াকে আমি দূরে সরিয়ে দিবো।তোর চৌধুরী বাড়ি এখনো মাথা উঁচু করে থাকার কারণটাই আমি দূরে সরিয়ে দিবো। এক ঢিলে আমি তিন পাখি মারবো।অনিয়া শেষ হবে,ফিহা জেলে যাবে,পুরো কোম্পানি আমার হাতে আসবে।আমার যে এতো খুশি লাগছে।এখন ফিহা মিটিংয়ে। সবাই কাজে ব্যস্ত।অনিয়া নির্ঘাত রুমে একা।কিন্তু ঐ বজ্জাত টেবলেটের কি ব্যবস্থা করবো সেটা একটু ভাবতে হবে।আইডিয়া পেয়ে গেছি।

    কিছু একটা ভেবে খুশি মনে হাঁটতে লাগলো। চুপিচুপি ফিহার কেবিনে সামনে এসে দাঁড়ালো। দরজাটা হালকা ফাঁক করে দেখলো অনি দোলনায় ঘুমাচ্ছে। ওর দোলনার পাশে টেবলেট চোখ বন্ধ করে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে আছে নাকি জেগে আছে তা বুঝতে পারলো না রিয়ানা।কিন্তু ওর মনে তো এখন শয়তানি বুদ্ধি উঁকি ঝুঁকি মারছে।কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে রিয়ানা বিকট একটা শব্দ করলো।কি হয়েছে তা দেখার জন্য টেবলেট এক দৌড়ে বাইরে চলে এলো।এটায় ছিলো রিয়ানার টেবলেটকে সরানোর বুদ্ধি।এই সুযোগে রিয়ানা আড়াল থেকে বের হয়ে রুমে ঢুকে পরলো।দরজাটা আটকে দিলো।আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে লাগলো অনিয়ার দোলনার দিকে।

    টেবলেট ফিরে এসে দেখলো দরজা বন্ধ। পশু,পাখি তার মনিবের বিপদ নাকি আগের থেকে টের পায়।দরজার উপরের দিকে কিছুটা সাদা কাচ লাগানো।ঐ কাচ দিয়ে তাকালে ভেতরের সব দেখা যায়।কিন্তু এতো ওপরে টেবলেট দেখবে কি করে?আশেপাশে কিছু একটা খুঁজতে থাকে। একসময় পেয়েও যায়।দরজার থেকে কিছুটা দূরে একটা হালকা পাতলা ছোট টুল দেখতে পায়। টেবলেট সেটাকে মাথা দিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে দরজার সামনে নিয়ে আসে।তারপর সেটায় উঠে সাদা কাচটার দিকে উঁকি দেয়।ততক্ষণে রিয়ানা অনির ফিটারে দুধ গুলে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে ফেলেছে।বাঁকা হেসে অনির দিকে এগুতে থাকে।

    রিয়ানাঃ আর কিছু সময় পর সব শেষ হয়ে যাবে।ঘুমিয়ে নেও ছোট্ট মা-মণি।তোমার মা সেদিন খুব বড় মুখ করে আমায় অপমান করেছিলো।সেই মুখ আজ আমি গুড়িয়ে দিবো।এই রিয়ানাকে অপমান ও পাঙ্গা নেওয়ার মজা আমি হারে হারে টের পাইয়ে দিবো।

    এক পা এক পা করে এগুচ্ছে রিয়ানা।মুখে তার বিশ্ব জয় করা হাসি।টেবলেট দরজার বাইরে থেকে ঘেউ ঘেউ করছে।ওর চোখেও আজ ভয়।কিন্তু সাউন্ড প্রুফ থাকায় রিয়ানা টেবলেটের চেঁচামেচি শুনতে পাচ্ছে না।সাধারণত এদিকে কেউ আসে না।যে যার যার কাজে ব্যস্ত।টেবলেটের গলার আওয়াজ কেউ পাচ্ছে না।

    #চলবে

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-১২

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-১২

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_12
    #Writer_NOVA

    কেটে গেল বেশ কিছু দিন।আজ অফিসে বেশ বড় করে মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ক্লায়েন্ট থাকবে আজ মিটিংয়ে। ফিহার আজও বেশ ভয় ভয় করছে।যদিও সেদিনের মতো নয়।আকশি, আদিয়াতও আজ থাকবে মিটিংয়ে। সকাল থেকে ফিহার মনটা কু-ডাকছে। মনে হচ্ছে আজ কোন খারাপ কিছু ঘটবে।কিন্তু কি ঘটবে সেটাই বুঝছে না।অনিকে কোলে তুলে নিয়ে কেবিনের আবছা সবুজ রঙের কাচের দিকে তাকিয়ে আছে। আজও মনটা ছটফট করছে। কোনকিছু ভালো লাগছে না। অনিয়া তার মায়ের মুখে চোখে হাত দিয়ে খেলছে।ফিটারে দুধ গুলে অনিয়ার মুখে দিলো।কিন্তু অনি ফিটার খাওয়া নিয়ে দুষ্টুমী করছে।চুষনি মুখে নিয়ে বসে আছে।

    ফিহাঃ মাম্মাম তুমি কিন্তু বেশ দুষ্টু হয়ে গেছো।খাবার খাওয়ার সময় তোমার দুষ্টুমী বেড়ে যায়।সকাল থেকে কিছু খাওনি।এখন একটু খেয়ে নেও। আজ আমার মিটিং আছে।অনেক সময় সেখানে থাকতে হবে।তুমি তো টেবলেটের সাথে এখানে থাকবে।টেবলেট তো তোমাকে খাওয়াতে পারবে না।আমি তোমায় না খাইয়ে গেলে মিটিংয়ে মনোযোগ দিতে পারবো না।এমনিতেই মনটা আজ খারাপ কিছু হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। মা-মণি জলদী গিলো।মুখে চুষনি কামড় দিয়ে বসে থাকলে কি হবে?দুধ গিলতে হবে তো।এই টেবলেট আবার কোথায় গেলো?

    অনিয়া দুষ্টুমী করছে।মুখে তার মিষ্টি হাসি।মায়ের সাথে দুষ্টুমী করে সে বেশ মজা পাচ্ছে। ফিহা নিরাশ চোখে ওর মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।তবে সে চাহনীতে নেই কোন রাগ, নেই কোন অভিমান।আছে একরাশ মায়া,স্নেহ,ভালোবাসা।আবদুল আজিজ সাহেব দরজায় টোকা দিলো।

    আবদুলঃ আসবো ছোট বউমা।
    ফিহাঃ চাচা আমিতো বলেছি আপনি আমার কেবিনে আসলে অনুমতি নিবেন না।আরেক দিন এমন করলে আমি কিন্তু আপনার সাথে কথা বলবো না।

    ফিহা ঠোঁট উল্টে গাল ফুলিয়ে কথাটা বললো।যেটা দেখে আবদুল সাহেবে না হেসে পারলো না।কেবিনে ঢুকে মুচকি হেসে ফিহার মাথায় হাত রাখলো।

    আবদুলঃ পাগলী মেয়ে।এতবড় হয়ে গেছো একটা মেয়ের মা তুমি। তারপরও বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে রাখো। কেউ দেখলে বিশ্বাস করবে না তো। তোমার যে একটা মেয়ে আছে।
    ফিহাঃ আমি এমনি চাচা😁😁।টেবলেট কোথায় চাচা?ওকে অনেক সময় ধরে দেখছি না।
    আবদুলঃ টেবলেটকে দেখলাম বাইরে ঘুরঘুর করছে।
    ফিহাঃ ওহ আচ্ছা।আপনি কিছু বলবেন চাচা?
    আবদুলঃ আজলের ফাইলগুলো কমপ্লিট করেছো বউমা।তোমাকে যেগুলো চেক করতে ও সিগনেচার করতে দিয়েছিলাম।
    ফিহাঃ হ্যাঁ,চাচা। সব রেডি করে রেখেছি আমি।
    আবদুলঃ ফাইলগুলো আমাকে দেও বউমা।আমি আজকের মিটিংয়ের প্রেজেন্টেশন রেডি করে ফেলি।
    ফিহাঃ আপনি একটু অনিয়াকে ধরুন।আমি ডেস্ক থেকে ফাইল বের করে দিচ্ছি।
    আবদুলঃ দেও বউমা,আমার অনি দিদিভাইকে।

    ফিহা অনিয়াকে আবদুল সাহেবের কোলে দিয়ে ডেস্কে ফাইল খুঁজতে লাগলো। আকশি ও আদিয়াত চলে এসেছে। হল রুমে অপেক্ষা করছে তারা দুজন।টেবলেট মালিকের শরীরে ঘ্রাণ পেয়ে আকশির আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। আবদুল সাহেব অনিয়ার সাথে কথা বলা শুরু করলো।

    আবদুলঃ কেমন আছো অনি দিদিভাই?মাম্মিকে একদম জ্বালাবে না।তুমি তো ভালো মেয়ে। মাম্মি সারাদিন কত কাজ করে?এখন মাম্মিকে জ্বালালে মাম্মি কোথায় যাবে বলতো?তুমি কি মাম্মিকে বিরক্ত করো।ওহ,তুমি বিরক্ত করো না।তুমি ভদ্র মেয়ে তাই না।কোন দুষ্টুমী করো না। আমি জানিতো তুমি খুব ভালো মেয়ে।অনেক লক্ষ্মী, শান্ত, ছোট কিউট বেবি।

    ফিহাঃ হুম অনেক ভালো মেয়ে। এভাবে কোন জ্বালাতন করে না।তবে খাওয়ার সময় ও ঘুমের সময় তার পাঁজিপানা শুরু হয়ে যায়।আমি আপনাদের নাতনির এক দন্ডও চোখের আড়াল হতে পারি না।ওয়াশ রুমে গেলেও শান্তি নেই। খাবার খাওয়ার সময়ও তাকে কোলে নিয়ে খেতে হবে।নয়তো হাত-পা ছুঁড়ে, চিৎকার করে কেঁদে সারা বাড়ি মাথায় তুলে ফেলবে।যত বড় হচ্ছে তত বজ্জাতপনা বেড়ে যাচ্ছে। এক মিনিটের জন্যও কোথাও গিয়ে শান্তি নেই। যা করবো সব ওকে কোলে নিয়েই করতে হয়।

    আবদুলঃ এখনকার বাচ্চারা তো একটু বেশি দুষ্টু হয়।খাবার খেতে তাদের সবচেয়ে কষ্ট। বাচ্চারা তো মায়ের পাগল থাকবেই।ওরা তো জানে কে তাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে?নিজের মাকে ভালবাসবে না তো কাকে বাসবে?সারাদিন তো তোমার কাছেই থাকে।তুমি ওর খেয়াল রাখো,আদর করো,ওর যত্ন নেও।সেটা তো দিদিভাই বুঝে।যার জন্য তোমাকে চোখের আড়াল করতে চায় না।ও মনে করে তুমি কাছে থাকলে ওর সব দুঃখের অবসান।

    ফিহাঃ হয়তো এমনটাই। আমারতো মা ছিলো না। তাই মায়ের আদর কিরকম হয় সে ব্যাপারে কোন ধারণা নেই। তবে জানি মায়ের অভাবটা কিরকম?আঁচল দিয়ে চোখের পানি,মুখ মুছার ভাগ্য আমার হয়নি।

    আবদুলঃ মন খারাপ করো না বউমা।আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখো।তিনি যা করেন সব আমাদের ভালোর জন্য করেন।আমাদের জন্য কোনটা মঙ্গলজনক সেটা একমাত্র আল্লাহ জানে।তাই নিজের জীবনের ওপর নিরাশ হয়ো না।বরং আল্লাহর ওপর আস্থা রাখো। নিশ্চয়ই দুঃখের পর সুখ আছে।

    ফিহাঃ হুম। আপনি ঠিক বলেছেন।থাক,এসব বাদ দিন।এখন এসব কথা বললে মিটিংয়ে দেরী হয়ে যাবে।
    এই নিন আপনার ফাইল।আমি সব দেখে নিয়েছি।তারপরেও আপনি একটু চেক দিয়ে নিয়েন।

    আবদুলঃ আচ্ছা, আসি বউমা।নেও ধরো দিদিভাইকে।সাবধানে রেখে, খাবার খাইয়ে তারপর মিটিংয়ে জলদী করে চলে এসো।

    আবদুল আজিজ সাহেব অনিয়াকে কোলে দিয়ে ফাইল হাতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।ফিহা অনিয়াকে কোলে নিয়ে ঘুম পারানোর চেষ্টা করতে লাগলো।অনিয়াকে জাগনা রেখে যাওয়া যাবে না।চোখের সামনে ফিহাকে না দেখলে তো কান্না করে সারা অফিসের কর্মচারীদের কাজে ব্যাঘাত ঘটাবে।জেগে থাকলে ফিহা মিটিংয়েও অনিয়ার জন্য চিন্তা করবে।কিছুতেই মন দিতে পারবে না।

    🌿🌿🌿

    হল রুমে যে যার যার নির্ধারিত সিটে বসে আছে। আকশি ও আদিয়াত সামনের সারিতে বসেছে।আকশি কিছু সময় পর পর এদিক সেদিক তাকিয়ে ফিহাকে খুঁজছে। আদিয়াত যে ওর সাথে কথা বলছে সেদিকে তার মোটেও খেয়াল নেই। শুধু কথার মাঝে হু হা বলে উত্তর দিচ্ছে।

    আদিয়াতঃ আমি তোকে কিছু বলছি😡।তুই কি শুনছিস?এদিক ঐদিক কি দেখছিস।
    আকশিঃ হু হু শুনছিতো বল।(এদিক সেদিক চোখ ঘুরাতে ঘুরাতে বললো)
    আদিয়াতঃ আমার মাথা শুনছিস😡।কখন থেকে এদিক সেদিক তাকিয়ে যে তুই ফিহাকে খুঁজছিস সেটা আমি ভালো করেই জানি।ফিহা একটু পরে আসবো।
    আকশিঃ পরে আসবে মানে।এটা কোন কথা নাকি।কোম্পানির ওনারকে এতো দেরী করে আসলে কি হয়?সামান্য কোমন সেন্স কি নেই?সবাই কত সময় ধরে অপেক্ষা করছে।আর ফিহা ওনার হয়ে এখনো আসলো না।এদিকে নজর না দিলে যে কত কত টাকার টেন্ডার লস হয়ে যাবে তুই জানিস।

    আকশি রেগে কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে ফেললো।আদিয়াত দুই গালে হাত দিয়ে মনোযোগ সহকারে ওর দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছিলো।

    আকশিঃ এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? আমি কিছু ভূল বলি নি।

    আদিয়াতঃ কেউ অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করছে না।একমাত্র তুই ওর জন্য অপেক্ষা করছিস।মিটিং শুরু হতে আরো ১০ মিনিট সময় বাকি আছে। তুই তো দেখছি ফিহার জন্য দিনকে দিন পাগল হয়ে যাচ্ছিস।এতো ভালবাসা রাখবি কোথায় দোস্ত?

    আকশিঃ মিটিং তো শুরু হয়ে গেল।তাই এসব বলছিলাম।(শুকনো হাসি দিয়ে)

    আদিয়াতঃ দাঁত বের করে লাভ নেই। তুমি যে ফিহার ভালোবাসায় বুদ হয়ে আছো, আমি তা ভালো করেই বুঝতে পারছি।মিটিং এখনো শুরুই হলো না।এদিকে তুই কত শত কথা বলে ফেললি।

    আকশিঃ কত দিন ধরে ওকে দেখি না তুই জানিস।

    আদিয়াতঃ হুম জানি।বেচারী তো তোর মতো হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায় না।অনেক কাজ করতে হয় তার।তোর ভাতিজীকে সামলাতে গিয়ে হিমশিম খায়।তারপরেও অনিয়ার যত্নের কোন ত্রুটি করে না।অফিস,সংসার,তোর বাবা,বাচ্চা, মিটিং,আজ এই ঝামেলা, কাল ঐ ঝামেলা।এগুলো সামলিয়ে যে ফিহা বেঁচে আছে, ভালো আছে তাতেই আলহামদুলিল্লাহ বল।আমার তো মনে হয় না তুই এসব একা সামলাতে পারতি।ফিহা কাঁচা হাতে সবদিকে সমান নজরে চালাচ্ছে। ভাই নামাজ পড়ে দোয়া করিস এমন একটা মেয়ে তোদের সবকিছু চালানোর জন্য পেয়েছিস।

    আকশিঃ হয়েছে আর জ্ঞান বিতরণ করতে হবে না।তুই না একটু আগে বাইরে গিয়েছিলি।ফিহা কেন আসছে না সেটা বল।নিশ্চয়ই ফিহার কেবিনে উঁকি ঝুঁকি মেরেছিস।অবশ্য মারবি না কেন?তোর তো অভ্যাসই অন্যের রুমে উঁকি ঝুঁকি মারা।

    আদিয়াতঃ কি বললি তুই? আবার আমার মান-সম্মান নিয়ে টান দিস।ঐ কার রুমে উঁকি ঝুঁকি মারতে দেখেছিস তুই? বল জলদী বলবি।যদি না বলতে পারিস তাহলে তোকে এখন মেরে ছাদে শুকাতে দিবো।উল্টো পাল্টা কথা না বললে কি তোর পেটের খাবার হজম হয় না।

    আকশিঃ কেন তুই অনন্যার রুমে উঁকি ঝুঁকি মারিস নি।সেবার যে তোকে হাতে নাতে ধরলাম। পা টিপে টিপে যে অনন্যার রুমে গিয়েছিলি।সেটা ভূলে গেছিস।

    আদিয়াতঃ হারামী, অনন্যা আমার হবু বউ।সেই কবের থেকে ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।ওর রুমে উঁকি ঝুঁকি মারলে তোর সমস্যা কি?

    আকশিঃ বিয়ে ঠিক হয়ে আছে বাট বিয়ে এখনো হয়নি।তাহলে তুই ওর রুমে উঁকি মারতে গিয়েছিলি কেন?এখন আমায় বলবি।নয়তো তোর হবু বউকে গিয়ে বলবো তোর চরিত্রে দোষ আছে,রাতে বারে গিয়ে ড্রিংক করিস,তোর অনেক গার্লফ্রেন্ড আছে।ব্যাস তোর বিয়ে ক্যান্সেল।

    আদিয়াতঃ এগুলো তো ডাহা মিথ্যা কথা।
    আকশিঃ সেটা তুই আর আমি জানি।কিন্তু দিনা তো নয়।সো চুপ হো যা মেরি দোস্ত 😜।

    আদিয়াতঃ ব্যাপারটা কিন্তু ভালো হবে না আকশি।

    আকশিঃ কেন রে এখন জ্বলে কে?আমারও সেম এমনি লাগে।যখন তুই ফিহাকে নিয়ে বলিস।

    আদিয়াতঃ তুই ব্যাটা সুবিধাবাদী।তোর কপালে শনি আছে।সময় সবসময় সবার এক যায় না।আমারও সময় আসবে।তখন দেখবি কত ধানে কত চাল?

    আকশিঃ যত ধান থাকবে ততই চাল হবে।তোর এসব নিয়ে চিন্তা না করলেও চলবে।তুই শুধু অনন্যাকে নিয়ে ভাবতে থাক।নয়তো তোর হবু বউ কিছু দিন পর অন্য কারো বউ হয়ে যাবে।

    আদিয়াত চুপ হয়ে গেলো।অনন্যা, আদিয়াতের খালাতো বোন।ছোট বেলা থেকে ওদের দুজনের বিয়ে ঠিক করে রেখেছে ওদের দুই পরিবার।অবশ্য অনন্যা,আদিয়াত দুজন দুজনকে ভীষণ ভালোবাসে।টেবলেট বেশ কয়েকবার আকশির আশেপাশে ঘুরে গেছে। যেই আকশি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো অমনি খুশি মনে ফিহার কাছে চলে গেল।

    অন্য দিকে ফিহা বেশ কষ্টে অনিয়াকে ঘুম পারালো।ঘুমের ঘোরেও অনিয়া শক্ত করে তার মা-কে ধরে রেখেছে। অনিয়াকে নিজের থেকে ছারিয়ে দোলনা শুইয়ে দিলো ফিহা।কি ভেবে জানি আবার অনিকে দোলনা থেকে উল্টো করে তুলে নিলো।নিজের সাথে শক্ত করে ধরে রাখলো বেশ কিছুখন।

    #চলবে

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-১১

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-১১

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_11
    #Writer_NOVA

    সারাটা দিন ভাবনার মাঝে ডুবে চলে গেল ফিহার।কোন কেক কাটা বা পার্টি করেনি।নিজের জীবন একটা গোলক ধাঁধায়। সবকিছু এখন ঘোরের মাঝে মনে হয়।টেবলেটের গলার বেল্ট একহাতে ধরে আরেক হাতে অনিকে কোলে নিয়ে সদর দরজা দিয়ে চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করলো ফিহা।সোফায় আরাম করে পায়ের ওপর তুলে বসে আছে সাফান।ক্লান্ত শরীরে বাড়িতে ঢুকে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো ফিহা।
    সাফানকে সে খেয়াল করে নি।হঠাৎ সাফানের গলা পেয়ে চোখ দুটো ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকালো।

    সাফানঃ শুভ পয়দা দিবস ফিহু,বান্দরনী,শয়তাননি।
    জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
    ফিহাঃ যেই না জীবন তার আবার জন্মদিন।
    (তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে)

    কথা না বাড়িয়ে ফিহা উপরে উঠে গেল।সাফান বেশ বুঝতে পেরেছে ফিহা ওর সাথে রাগ করে আছে।থাকাটাই স্বাভাবিক।এমন একটা দিনে সবাই চায় তার প্রিয় মানুষটার সাথে কাটাতে।কিন্তু সাফান আজ সারাদিন খুব ব্যস্ত ছিলো যার কারণে ফিহার জন্মদিনের কথা প্রায় ভুলতেই বসেছিলো।হঠাৎ বেকারীর সামনে দিয়ে আসতে গিয়ে কেক দেখে মনে পরে যায়।তাই দেরী না করে চৌধুরী বাড়ি চলে এলো।আসার সময় ফিহার খুব প্রিয় একটা জিনিস নিয়ে এসেছে।যেটা ওর প্যান্টের পকেটে আছে।

    সাফানঃ মহারাণী মনে হচ্ছে বেশ রেগে আছে আমার ওপর। এখনি যেতে হবে নয়তো আরো রাগবে।আজকে যে আমার কি হবে আল্লাহ জানে?আল্লাহ আমার পিঠ আজ সাথে থাকবে না।পিঠে আজ বস্তা বেঁধে আসলে ভালো হতো।আল্লাহ, আমার মতো মাসুম একটা কিউট বাচ্চাকে ফিহার মারের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিও।

    আল্লাহের নাম নিতে নিতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলো সাফান।ফিহা অনিয়াকে দোলনায় খেলনা দিয়ে বসিয়ে রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেল।দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই টেবলেট সাফানকে দেখে ঘেউ ঘেউ শুরু করলো।

    সাফানঃ কি রে তুই কি শুরু করলি?চুপ কর মেরি বাপ।তুই এভাবে চিৎকার, চেঁচামেঁচি করলে সবাই আমাকে চোরভেবে গণপিটুনি দিবে।দাঁড়া তোকে আমি ঘুষ দিচ্ছি।

    সাফানের পকেট হাতিয়ে একটা ছোট বিস্কুটের প্যাকেট পেলো।কি মনে করে জানি কিনেছিলো।এখন কাজে লাগছে।বিস্কুটের প্যাকেট খুলে দুটো বিস্কুট ছুঁড়ে মারলো সাফান।টেবলেট এগিয়ে এলো বিস্কুটের দিকে।
    সাফানঃ তোমাদের কি করে হাত করতে হয় সেটা এই সাফান জানে😎।ভাগ্যিস,বিস্কুটের প্যাকেট ছিলো।

    কিন্তু টেবলেট বিস্কুটের সামনে গিয়ে কিছু সময় ঘ্রাণ শুকলো।তারপর বিস্কুট দুটোকে পাশ কাটিয়ে দৌড়ে সাফানের দিকে আসতে শুরু করলো।সেটা দেখে সাফানও উল্টো দিকে দৌড়।সাফান তো জানে না টেবলেট যেই সেই কুকুর নয় ভি.আই.পি কুকুর। যার কারণে সে অচেনা মানুষের খাবার মুখে দেয় না। টেবলেট সাফানের পিছু নিলো।যদিও সাফান কুকুর ভয় পায় না।কিন্তু টেবলেটকে ওর কেন জানি অনেক ভয় করে।ওর বিশ্বাস টেবলেট ওকে কাছে পেলে কামড় দিবে।সারা বাড়ি দৌড়াচ্ছে সাফান।তার পেছন পেছন টেবলেট ঘেউ ঘেউ করছে।

    সাফানঃ বাপ, এবারের মতো ছেড়ে দে।এই কানে ধরছি আর কখনও তোর সামনে আসবো না।এভাবে দৌড়ালে আমার শক্তি সব ফুরিয়ে যাবে।এবার তো থাম রে।ফিহু কই তুই? এবারের মতো বোইন তোর কুত্তার থেকে আমাকে বাঁচা।

    কিন্তু টেবলেট ওর কোন কথায় গলছে না।হিংস্রভাবে ওর পিছনে ধাওয়া করছে।আসলে সারাদিন ফিহার মন খারাপ ছিলো।যার কারণে টেবলেটের সাথে কোন কথা বলেনি।যাতে করে টেবলেটের মনও ভীষণ খারাপ।এখন সাফানকে দেখে সে চোর ভেবেছে।তাই ওর পিছু নিয়ে সারাদিনের রাগ কমাবে।

    সাফানঃ ফিহা কোথায় তুই? আমাকে বাঁচা বোন।আমি আজকে শেষ। টেবলেট আজ ওর সব দাঁত আমার ওপর প্রয়োগ করবে।তারপর আমাকেই বস্তা বস্তা টেবলেট গিলতে হবে। ফিহু?????

    ফ্রেশ হয়ে ফিহা তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে ডেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অনি এখনো খেলনা নিয়ে একা একা খেলছে।ফিহা ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তোয়ালেটা বেডে রাখলো।অনিয়ার কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত রাখলো।অনি ওর মাকে দেখে খুশি হয়ে হাত দুটো ফিহার দিকে বাড়িয়ে দিলো।ফিহা অনিকে কোলে তুলে নিলো।তখনি ওর কানে সাফানের চিৎকার ভেসে এলো।

    ফিহাঃ এরকম করে ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছে কে?গলাটা সাফানের মতো লাগছে।টেবলেট গেল কোথায়?(একটু ভেবে)এই রে টেবলেট আবার সাফানকে চোর ভেবে দৌড়ানি দিচ্ছে না তো।গিয়ে দেখে আসি তো।

    অনিয়াকে কোলে নিয়ে এক প্রকার তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো ফিহা।
    ফিহাঃ যা ভেবেছিলাম তাই হলো।টেবলেট আজ সাফানকে আচ্ছা শিক্ষা দিয়ে দিবে।

    সাফানের কান্ড দেখে ফিহার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার জোগাড়। সারা ড্রয়িং রুমে চক্কর কাটছে সাফান।ওর পিছনে পিছনে ঘেউ ঘেউ করতে করতে দৌড়াচ্ছে টেবলেট। ফিহাকে দেখে সাফান চিৎকার করে বলে উঠলো।
    সাফানঃ বোইন আমারে বাঁচা। আমি আজকে শেষ।আর দৌড়াতে পারতাছি না।ঐ জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁত না কেলিয়ে তোর এই কুত্তা সরা আমার পেছন থেকে।
    ফিহাঃ একদম ঠিক আছে।এবার বোঝ ঠেলা।এটায় তোর শাস্তি। শয়তান একটা।
    সাফানঃ ফিহু ওকে সরা।আমাকে একটু পর হসপিটালে ভর্তি পাবি।(দৌড়াতে দৌড়াতে)
    ফিহাঃ টেবলেট চলে আয়।টেবলেট ওর নাম সাফান।আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

    এই কথাটা পুরো ম্যাজিকের মতো কাজে লাগলো।টেবলেট চুপচাপ সাফানের পিছু ছেড়ে ফিহার সাথে ঘেঁষে দাঁড়ালো। সাফান হাঁটুতে দুই হাত রেখে হাঁপাতে লাগলো।অবাক চোখে টেবলেট ও ফিহার দিকে তাকিয়ে আছে সাফান।

    সাফানঃ শালার কুত্তা। তোকে আমি দেখে নিবো। শালার শয়তান।আমি এতখণ ধরে এতো কিছু বললাম তোর গায়ে লাগলো না।শুধু তোর পায়ে ধরার বাকি ছিলো।তাও আমার ওপর তোর দয়া হলো না।আর ফিহু যেই তোকে সরতে বললো সেই সরে গেলি।তোকে শালা একদিন একলা পেলে যে আমি কি করি তুই দেখে নিস।আজকে আমাকে দিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতা করালি না তোকে দিয়ে সেদিন হয় কাবাডি খেলবো নয়তো তোকে ফুটবল বানাবো।

    সাফানের কথা শুনে ফিহা হাসি কিছুতেই থামাতে পারছে না।পেট ব্যাথা হয়ে গেছে ওর।অনিয়াকে কোলে নিয়ে পেট ধরে সোফায় বসে পরলো ফিহা।
    সাফানঃ হাসো হাসো বেশি করে হাসো। কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ।সত্যি আমি যদি তোর এই কুত্তাকে একদিন পাই তাহলে ওর খবর আছে।শালা,আমায় আজ যে দৌড়ানি দিয়েছে তা আমি জীবনেও ভুলবো না।
    ফিহাঃ সাফান ভাই আমার, কেমন লাগলো আজ🤭?
    (মুখ টিপে হেসে)
    সাফানঃ তুই তো এখন মজা নিবিই।আমার ইচ্ছে করছে এটাকে উল্টো করে চার পা ধরে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আসতে।
    ফিহাঃ টেবলেটের কোন বোন নেই। তাই তুই ওর দুলাভাই হতে পারছিস না।থাকলে নিশ্চয়ই তোর মতো একটা ষাঁড়ের সাথে বিয়ে দিতাম।
    সাফানঃ মানে কি বলছিস তুই🤨?
    ফিহাঃ মানেটা খুব সিম্পল। তুই যেভাবে বারবার টেবলেট কে শালা বলছিস আমার তো মনে হচ্ছে ওর কোন বোন থাকলে তাকে বিয়ে করে নিতি😂।
    সাফানঃ তুই আবার আমাকে নিয়ে মজা করছিস।একগ্লাস পানি দে ফিহু।
    ফিহাঃ আমি পারবো না।নিজেরটা নিজে এনে খা।
    সাফানঃ কেন?
    ফিহাঃতোর সাথে আমি কোন কথা বলবো না।তুই সারাদিনে আমাকে একবার কলও দিসনি।
    সাফানঃ বোন তোকে আমি সব বলছি।এবার জলদী করে আমাকে একগ্লাস পানি খাওয়া।
    ফিহাঃ আনতে পারি একটা শর্তে।
    সাফানঃ আবার কি শর্ত।এমনিতে তোর কুত্তার ধাওয়া খেয়ে আমার সব এনার্জি লস হয়ে গেছি। আবার তুই কোন শর্ত দিবি।তুই যে আমার হাল বেহাল করবি সেটা আমি ভালো করেই জানি।
    ফিহাঃ আচ্ছা তুই বকবক কর।আমি পানি এনে দিবো না।ভেবে দেখ কোনটা করবি?
    সাফানঃ বল কি শর্ত?
    ফিহাঃ এখন ১০০ বার কান ধর উঠবস করবি তুই। যদি রাজী হোস তাহলে পানি এনে দিবো।নইলে নিজেরটা নিজে নিয়ে আয়।
    সাফানঃ হাতি ফাঁদে পরলে চামচিকায়ও লাথি মারে।এমনিতে তোর টেবলেট আমায় বেশ নাকানি-চুবানি খাইয়েছে।আবার তুই আমাকে শাস্তি দিতে চাইছিস।
    ফিহাঃ এটা আমাকে সারাদিন ফোন না দেওয়ার শাস্তি। 😎😎
    সাফানঃ একগ্লাস পানির জন্য এমন করলি না।মনে রাখিস তুই। আল্লাহর কাছে ঠেকা থাকবি তুই। হাশরের ময়দানে আল্লাহ তোকে পানি দিবো না।হু হু মনে রাখিস কথাটা।এই সাফানের কথা কখনও ভূল হয় না।
    ফিহাঃ কি বললি তুই? তোর ছোট বেলার এই অভ্যাসটা এখনো যায় নি।দাঁড়া তোর একদিন কি আমার একদিন।

    ফিহা অনিয়াকে কোলে নিয়েই সাফানের পিঠে দুড়ুম দাড়ুম তাল ফেলতে লাগলো।সাফানকে মারতে দেখে অনিয়া খিলখিল করে হাসছে।
    সাফানঃ বোন এবার আমাকে ছেড়ে দে।আমি টেবলেটের হাতে যে ধাওয়া খেয়েছি তাতে হাঁপিয়ে উঠেছি।এখন তুই যদি এই মাসুম বাচ্চাটাকে এভাবে মারিস তাহলে মরেই যাবো।তোরা কি শুরু করলি বলতো।প্রথমে এই টেবলেট তারপর তুই। আহ্ ফিহু লাগছে।এবারের মতো মাফ কর বোন।এই জীবনে ২য় ভূল হবে না।যত কাজ থাকুক তোর জন্মদিনে আমিই প্রথম উইশ করবো।হু হু তুই দেখিস।
    ফিহাঃ মনে থাকবে তো।
    সাফানঃ আলবাত থাকবে।আজকে যেই ধাওয়া খেয়েছি সেটা কি ভুলতে পারি।এই ধাওয়ার কথা মনে হলেই তোর জন্মদিনের কথা মনে পরে যাবে।
    ফিহাঃ মনে রাখিস কথাটা। যদি ভুলে যাস তাহলে তোকে আমি আবার টেবলেটের ধাওয়া খাওয়াবো।
    সাফানঃ ছাইরা দে বোইন,কাইন্দা বাঁচি। এমন ভূল কখনও করিস না তুই ।আমার আজ ঢের শিক্ষা হয়েছে।

    ফিহা হাসতে হাসতে ডাইনিং টেবিল থেকে গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে এলো।সাফানের হাতে দিতেই ঢকঢক করে পুরো গ্লাস পানি এক নিশ্বাসে খেয়ে ফেললো।ফিহা গ্লাসটা ডাইনিং টেবিলে রাখতে গেল।সাফানের চোখটা টেবলেটর ওপর পরতেই রেগে বললো।
    সাফানঃ তোকে একদিন হাতে পাই শুধু। আজ শরীরে শক্তি নেই বলে বেঁচে গেলি।যেদিন তোকে হাতে পাবো সেদিন তোর বাপ,দাদা চৌদ্দ গুষ্ঠির নাম ভূলিয়ে দিবো। নয়তো আমার নামও সাফান হাসান নয়।

    টেবলেট মুখ গুজে চুপচাপ সোফার পাশে বসে আছে।টেবলেট মনে হয় বুঝতে পারলো সাফান ওকে বকছে।তাই মুখ তুলে সাফানকে দুই বার ঘেউ ঘেউ করে প্রতিবাদ করে আবার মুখ গুঁজে রাখলো।
    সাফানঃ আবার ঘেউ ঘেউ করিস।দাঁড়া তোকে তে–

    কথাগুলো বলে সাফান আশেপাশে কিছু খুঁজতে লাগলো। একসময় টি-টেবিলে থাকা ফুলদানি হাতে নিয়ে টেবলটকে ছুরে মারতে নিলো।ফুলদানি হাতে নিয়ে উঁচু করে যেই ছুঁড়ে মারবে সেই ফিহা চলে এলো।
    ফিহাঃ কি করছিলি তুই?
    সাফানঃ কই কিছু না তো।আমিতো ফুলদানিটা হাতে নিয়ে দেখছিলাম কি রকম দেখতে।
    ফিহাঃ 🤨🤨
    সাফানঃ অমন করে তাকাস না।আমি সত্যি বলছি।
    ফিহাঃ তোকে কি বলেছিলাম?
    সাফানঃ এবারের মতো মাফ করে দে।আর জীবনে ভুল হবে না।
    ফিহাঃ আমি মানছি না।নে শুরু কর।
    সাফানঃ কানে ধরে উঠবস করতেই হবে😔।
    ফিহাঃ হুম 😎।
    সাফানঃ না করলে হয় না।
    ফিহাঃ তুই যদি এখন ১০০ বার কান ধরে উঠবস না করিস তাহলে তোর সাথে কথা বলবো না।আর তুই ভালো করে জানিস আমি যা বলি তাই করি।
    সাফানঃ আজ সকালে যে কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছিলাম কে জানে?আমার দিনটাই খারাপ গেলো

    সাফান চুপচাপ কানে ধরে উঠবস করা শুরু করলো। যদি এই শাস্তি মেনে না নেয় তাহলে নিশ্চয়ই ফিহা কথা বলবে না।আর ফিহা ওর কথা না বললে তো ওর কিছু ভালো লাগে না।সোফায় বসে মিটমিট করে হাসছে ফিহা।আনিস চৌধুরী এই সময় রুম থেকে বের হয় না।তাছারা তার রুম সাউন্ড প্রুফ করা।যার কারণে তিনি এতো হুলস্থুলের কিছুই জানেন না।

    সাফানঃ আর পারছি না।এবারের মতো মাফ করে দে।তুই যদি এখন আমাকে এভাবে শাস্তি দিস তাহলেতোর জন্য যে গিফট এনেছি তা কিন্তু দিবো না।
    ফিহাঃ কি এনেছিস?(খুশি হয়ে)
    সাফানঃ আমার শাস্তিটা মাফ করে দে।তাহলে দিব।
    ফিহাঃ(একটু ভেবে) আচ্ছা যা মাফ করে দিলাম।এবার আমার গিফট দে।
    সাফানঃ চোখ বন্ধ কর।

    ফিহা চোখ বন্ধ করতেই সাফান ওর মাথায় একটা গোলাপি কালার কি জানি কি ফুল হবে,সেটা মাথায় পরিয়ে দিলো।পকেটে এত সময় থাকার কারণে অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। কাঁচা ফুল এত সময় থেকেছে এই তো বেশি। ফিহা খুব খুশি হলো।

    সাফানঃ সরি বেলি ফুলের মালা পাই নি।তাই এটা গিফট করলাম।তোর নিশ্চয়ই পছন্দ হয়নি আমার এই সামান্য উপহার।এখন তো তোর অনেক টাকা।আমার মতো গরীবের এই সামান্য উপহার তোর পছন্দ হবে না।
    ফিহাঃ একটা চড় দিবো।আমি কি বলেছি আমার পছন্দ হয়নি।খুব সুন্দর হয়েছে।আমার ভাই ভালোবেসে আমার জন্য একটা চকলেট আনলেও সেটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।

    ফিহার কথা শুনে সাফানের মুখে হাসি ফুটলো।ফুলের কারণে ফিহাকে খুব সুন্দর লাগছে।মা ও মেয়ের দুজনের পরনে হালকা গোলাপি কালার ড্রেস।ফিহার মাথায় গোলাপি ফুল আর অনিয়ার মাথায় ছোট গোলাপি ফুলের রাউন্ড বেন।ফিহাকে অনেক সুন্দর লাগছে।অনিয়ার মুখে ছোট বেবী চুষনি।এটা থাকার কারণে অনিয়া এত সময় শান্ত ছিলো।ওদের দুজনকে এভাবে দেখে অনেক খুশি হলো সাফান।

    #চলবে

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-১০

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-১০

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_10
    #Writer_NOVA

    হঠাৎ করে কেউ পেছন থেকে ওর চোখ হাত দিয়ে আটকে ধরলো।ব্যক্তিটার হাতে অনেকগুলো নানা রংয়ের হার্ট শেইপ বেলুন।ফিহার নাকে মন মতোয়ারা একটা পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে।কেন জানি পারফিউমের ঘ্রাণটা নাকে আসতেই মুহূর্তে মনটা ভালো হয়ে গেল তার।ছেলেটা কানের কাছে মুখটা এনে লো ভয়জে বললো।

    —Many many happy returns of the day.Happy birthday too you,my dear Mrs.Chowdhury.May Allah bless you.Now you are my sweet hurt.Don’t wary dear I am always with you.Because you are only mine.Take care yourself.Allah Hafiz.❤️❤️

    ফিহা এই ভয়েজটা সে আগেও কোথাও শুনেছে।কিন্তু কোথায় শুনেছে তাতো মনে নেই। চোখ ধরে থাকা ব্যাক্তিটা কে সেটা ফিহা জানে না।তবে নিজের চোখকে তার হাত থেকে ছুটাতেও ইচ্ছে করছে না।এই মানুষটাই আজ এমন বিশেষ দিনে তাকে সর্বপ্রথম জন্ম দিনের শুভেচ্ছা জানালো।ফিহা নিজের মনের মাঝে অন্য রকম একটা ফিলিংস খুঁজে পাচ্ছে।
    আস্তে আস্তে চোখের বাঁধন ঢিলে হয়ে এলো ফিহার।কিন্তু ফিহা এখনো চোখ বন্ধ করে আছে।বেশ কিছু সময় পর চোখ খুলে অবাক হলো ফিহা।কারণ ওর আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলো না সে। ফিহার অবাক সাত আসমানের চূড়ায় উঠলো যখন সে দেখলো দরজা ভেতর থেকে লক করা।সারা কেবিনের এদিক সেদিক মানুষটাকে খুঁজতে লাগলো সে।কিন্তু কাউকে দেখলো না।

    ফিহাঃ আশ্চর্য কে ছিলে এখানে?আমার চোখ ধরেছিল কে?আমাকে জন্মদিনের উইশ করে গেল।এটা কি ভ্রম ছিলো।না,এমন টাতো হওয়ার কথা নয়।তাহলে কে এসেছিলো এখানে?তার লো ভয়েজটা আমার কাছে অন্যরকম কিছু মনে হলো কেন?যদি কেউ এসে থাকতো তাহলে গেলো কোথায়?এতো তাড়াতাড়ি তো যাওয়ার কথা নয়।আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি দরজাটা ভেতর থেকে লক করা।সে আসলো কি করে আর গেলোই কিভাবে?আমি কি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি নাকি।আমার মাথা ঘুরছে।কি হলো আমার সাথে?হঠাৎ করে কি ম্যাজিক হয়ে গেলো।আমার যে জন্মদিন সে জানলোই বা কি করে?

    মাথায় হাত দিয়ে ডোভেনে বসে পরলো ফিহা।সবকিছু মাথার ওপর দিয়ে গেছে তার।হঠাৎ টেবলের দিকে তাকাতেই ফিহার চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে গেল।চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে অনেকগুলো রং-বেরঙের হার্ট শেইপ বেলুন।ফিহা প্রায় দৌড়ে সেখানে চলে গেল।একটা টকটকে লাল বেলুনে ছোট একটা চিঠির খাম।চিঠির খামটা হাতে নিয়ে ভেতর থেকে চিঠিটা বের করলো।চিঠির ভাজ আস্তে আস্তে খুললো ফিহা।ওর কাছে মনে হচ্ছে সবকিছু স্বপ্ন। চিঠির মধ্যে লেখা ছিলো।

    “This is only for you. My little surprise. You are my sweet hurt dear.Because you are only me Mrs. Chowdhury.”

    চিঠিটা হাতে নিয়ে থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে ফিহা।ওর কাছে মনে হচ্ছে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে। একটু পরেই সব আগের মতো হয়ে যাবে।নিজের গায়ে চিমটি কেটলো সে।ব্যাথা পেয়ে মৃদু শব্দও করলো।কিন্তু এখনো ঘোর কাটেনি ফিহার।বুকের বা পাশটা সমান তালে ঢিপঢিপ শব্দ করেই যাচ্ছে। কে হতে পারে? এই চিন্তায় বিভোর সে।তার তো কোন বয়ফ্রেন্ডও নেই যে এভাবে হুট করে এসে উইশ করে যাবে।কিছু একটা ভেবে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিলো ফিহা।যে যার যার কাজে ব্যস্ত।হঠাৎ ওর সামনে
    একজন পিয়নকে দেখতে পেয়ে ডাক দিলো ফিহা।

    ফিহাঃ এই যে শুনুন।
    —জ্বি বলুন।
    ফিহাঃ আমার কেবিন থেকে কি কাউকে বের হতে দেখেছেন?
    —ম্যাম, আমি অনেক সময় ধরে এখানে আছি।কিন্তু আপনার কেবিনে কাউকে ঢুকতেও দেখিনি আবার বের হতেও দেখেনি।
    ফিহাঃ তাহলে কি করে ভেতরে আসলো সে?
    (বিরবির করে)
    –কিছু বললেন ম্যাম??
    ফিহাঃ না কিছু না।আপনি এখন আসতে পারেন।
    —ওকে ম্যাম।
    ফিহাঃ উনার কণ্ঠটাও এতো চেনা চেনা মনে হলো কেন?পুরো চেহারাও তো দেখলাম না।ক্যাপ পরা ছিলো বলে মুখটা দেখতে পায়নি।নিচের দিকে তাকিয়ে সব কথার উত্তর দিলো।অদ্ভুত লাগলো তো ব্যাপারটা।আমার চেহারার দিকে তাকালো না কেন?

    নিজের মনে কথাগুলো বলে পেছন দিকে ঘুরতে ঘুরতে বললো
    ফিহাঃ আপনার সাথে আমার—–যাক বাবা, কোথায় গেলো?মাত্র তো আমার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। এই লোকটাও তো হাওয়া হয়ে গেলো।আমার সাথে আজ হচ্ছেটা কি?আজ সবকিছু অদ্ভুত, অদ্ভুত লাগছে।ভূতের পাল্লায় পরলাম নাকি আমি।

    মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে কেবিনে ঢুকলো ফিহা।চেয়ারে বসে দুই হাতে মুখ ঢেকে পুরো অঙ্ক মিলানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

    সিঁড়ি বেয়ে খুব জলদী করে নেমে পরলো আদিয়াত।আরেকটু সময় থাকলে সে ধরা পরে যেতো ফিহার কাছে। আদিয়াতের গায়ে অফিসের পিয়নের পোশাক,মাথায় বিশাল বড় ক্যাপ।তখন ফিহা আদিয়াতকেই ডাক দিয়ে কথা জিজ্ঞেস করেছিলো।আদিয়াত বুঝে যায় যে ফিহা ওর দিকে কেমন করে জানি তাকাচ্ছে। মানে সন্দেহ করছে।বেশ কয়েকবার ফিহা ওর মুখ দেখার জন্য উঁকি ঝুঁকিও মেরেছে।কিন্তু মুখ দেখতে পারে নি।

    আদিয়াতঃ এই আকশির জন্য যে আমাকে আরো কত কিছু করতে হবে আল্লাহই জানে।আর এক মিনিট থাকলেই ধরা খেয়ে যেতাম।তারপর নির্ঘাত চোর ভেবে গণ ধোলাই দিতো।আকশিটা শেষ পর্যন্ত আমাকে ওদের অফিসের পিয়নের ড্রেসও পরালো।একবার ফিহার কেবিন থেকে নিচে নামুক ও।আজ ওর খবর আছে। আকশির একদিন কি আমার যতদিন লাগে।এই ছেলেটার কখন কি হয় আমি নিজেই বুঝি না।

    আপন মনে কথা বলতে বলতে আদিয়াত অফিসের পেছনে এসে দাঁড়ালো। তখনি পেছন দিক থেকে পাইপ বেয়ে নিচে নেমে এলো আকশি।ফিহাকে পেছন থেকে চোখ আটকিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা আকশিই জানিয়েছে। আর আদিয়াতকে পিয়নের পোশাক পরিয়ে বাইরে পাহারা দিতে রেখে গিয়েছিলো।ফিহার রুমের দক্ষিণ দিকে একটা ছোট জানালা আছে। যেটায় কোন গ্রীল নেই।অবশ্য অনেক উচুতে থাকার কারণে গ্রীল বা কাচ লাগানোর প্রয়োজন মনে করেন নি আকশির বাবা।জানালা না বলে ছোট খুপরী বললেও ভূল হবে না।পাইপ বেয়ে উঠে সেই জানালা দিয়ে কেবিনে প্রবেশ করা যায়।তাই আকশি টুপ করে চোরের মতো সবার অগোচরে বেলুন নিয়ে ফিহার কেবিনে ঢুকে ওকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ফিরে এসেছে।

    আকশিঃ বাপ রে আরো কত কি যে করতে হবে?

    শরীরের ধূলা ঝারতে ঝারতে আকশি কথাটা বললো।আদিয়াতের দিকে তাকাতেই দেখে আদিয়াত ওর দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে।

    আকশিঃ কি হয়েছে? চোখ দুটোকে এমন করে রেখেছিস কেন?মুখটাও তো পটকা মাছের মতো ফুলিয়ে রেখেছিস।

    আদিয়াতঃ ইচ্ছে করছে তোর মাথাটা সামনের ঐ ইট দিয়ে ফাটিয়ে ফেলতে।আমাকে শেষ পর্যন্ত তুই তোদের অফিসের পিয়ন বানিয়ে ফেললি।

    আকশিঃ ওহ এবার বুঝেছি তোর মুখটা পটকা মাছের মতো ফুলানো কেন?তুই পারমানেন্টভাবে পিয়নের চাকরীটা চাচ্ছিস ভাই। দেখ আমি তো এখন এই কোম্পানির মালিক নই তাই আমাকে এসব বলে লাভ হবে না।তুই বরং এই ব্যাপার নিয়ে ফিহার সাথে কথা বল।ফিহা চাইলে তোকে দয়া মায়া করে পিয়নের পোস্টে চাকরী দিতে পারে।ও যদি নাও দেয় তাহলে তুই কান্না করিস না।আমি যখন মালিক হবো তোকে তখন অবশ্যই পিয়নের পোস্টে একটা চাকরী দিবোই দিবো।(এক চোখ মেরে)

    এমনিতে আদিয়াত আকশির ওপর রেগে বোম হয়ে ছিলো।আর এখন আকশির কথাগুলো ঠিক আগুনে ঘি ঢালার মতো ওর মনে কাজ করলো।

    আদিয়াতঃ শালা,তোর জন্য এতকিছু করছি আর তুই আমাকে কি না তোর কোম্পানিতে পিয়নের চাকরী দিবি।আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।আমার বাপের টাকা কি কম পরছে নাকি?তোর অফিসে আমাকে পিয়নের চাকরী করতে হবে।আমি আমাদের এতো বড় কোম্পানি ছেরে তোর পিছনে সময় নষ্ট করছি।আর তুই কি না বলছিস আমাকে পিয়নের চাকরী দিবি।যার জন্য করি চুরি, সেই বলে চোর।তুইও তো এই প্রবাদ বাক্যের মতো করলি।যা তোর সাথে কোন কথা নেই। (রেগে)

    আদিয়াত রেগে চলে যেতে নিলে আকশি ওর হাত ধরে ফেলে।আকশি মিটমিট করে হাসছে।একটু বেশি রাগানো হয়ে গেছে আদিয়াতকে।এখন নিজেদের রাগ মিটিয়ে না নিলে পরে আরো দুরত্ব বেড়ে যেতে পারে।সেটা ভেবে আকশি বললো।

    আকশিঃ ধূর আমি তো মজা করছিলাম।আর তুই সত্যি ভেবে নিয়েছিস।তুই না থাকলে আজ আমি সবার আগে ফিহাকে বার্থ ডে উইশ করতে পারতাম না।

    আদিয়াতঃ ফিহার যে আজ বার্থ ডে সেটা তুই জানলি কি করে?

    আকশিঃ ঐদিন মিটিংয়ে ফাইল চেক করে জানতে পারি।ওর নামের জন্য ফাইল ওপেন করলেও ওর নাম জানতে পারি নি।কিন্তু তখন বার্থ ডে মনে রাখি।তাই আজ উইশ করে দিয়েছি।এমনভাবে উইশ করেছি যে আজ সারাদিন ওর সাথে কি হয়েছে সেটা ভেবে কোন কাজে মনোযোগ দিতে পারবে না।

    আদিয়াতঃ আমাকে একটা সত্যি কথা বলবি??
    আকশিঃ হুম বল।
    আদিয়াতঃ তুই কি ফিহাকে ভালবাসিস?
    আকশিঃ হুম।(অন্য দিকে তাকিয়ে)
    আদিয়াতঃ সত্যি 😲।
    আকশিঃ হুম😐।
    আদিয়াতঃ ভাই তাহলে অবশেষে তুইও কারো প্রেমে পরলি।আমারতো বিশ্বাস হচ্ছে না।
    আকশিঃ তোর বিশ্বাসের জন্য আমি কি করতে পারি?
    আদিয়াতঃ ধূর এটাতো কথার কথা।আমার এমনি তোর ওপর সন্দেহ হচ্ছিল। তুই যখন ফিহাকে দালানের পাইপ বেয়ে বেলুন নিয়ে গিয়ে উইশ করে এলি তখনি আমি সিউর হয়ে গেছি।
    আকশিঃ হবিই তো।তুই তো আবার প্রেমে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেছিস।
    আদিয়াতঃ একটা কথা।তুই যে গ্যাস বেলুন কোমরের সাথে বেঁধে ওপরে উঠলি তখন যদি বাতাস বইতো তাহলে তোর অবস্থা কি হতো ভাব তো।তোকে তো বেলুনসহ উড়িয়ে নিয়ে যেত।অবশ্য তোকে তো আকাশে তুলতে পারবে না।তোর যা বডি।
    (মুখ টিপে হেসে)
    আকশিঃ খুব মজা নিচ্ছিস।আমার তো ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছিলো।কি করে যে উঠলাম তা ভেবে এখন আমার হাত-পা কাঁপছে।
    আদিয়াতঃ বলতে হবে তোর ভালবাসার পাওয়ার আছে।যে ছেলে একতলার থেকে দোতালায় উঠতে চাইতো না সে পাইপ বেয়ে চার তালায় উঠে গেছে। ভাবা যায় এগুলো।ভালবাসার মানুষের জন্য কতকিছু করে আসলি।সবে তো শুরু। আরো কত কি যে দেখতে হবে রে।

    —-কে কে রে ঐ খানে কথা বলে কে??

    দারোয়ানের গলার স্বর পেয়ে দুই বন্ধু পরিমরি করে উল্টো দিকের গেইট দিয়ে দৌড়।তাদের আর পায় কে?নিজের অফিসের দারোয়ানের ধাওয়া খেয়ে আকশি এখন আপাতত রাস্তা দিয়ে দিশাহারা হয়ে দৌড়াচ্ছে।

    অন্য দিকে ফিহা চিঠির খামের এক কোণা ঠোঁট দিয়ে ধরে রেখে ভেবেই চলেছে।কে দিতে পারে এটা?মানুষটাই বা কে ছিলো?সবকিছু তার কাছে এখন ধোঁয়াসা, ধোঁয়াসা লাগছে।আজ সারাদিন তার এই কথা চিন্তা করতে করতেই কাটবে।

    #চলবে

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-০৯

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-০৯

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_09
    #Writer_NOVA

    বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখতে ব্যস্ত আকশি।আজকাল তার কিছুই ভালো লাগে না।অবশ্য দুদিন আগে ফিহাকে দেখার পর থেকেই এসব সমস্যা হচ্ছে। কেন জানি খুব শূন্য শূন্য লাগে জীবনটা।পড়াশোনায় ভীষণ ভালো ছিলো আকশি।সবসময় শুধু পড়া আর পড়া।যার কারণে কখনও মেয়েদের সময় দেওয়া তো দূরে থাক তাকানোর সময়টুকু হয়নি।ওর সমাবয়সীরা যখন মাঠে ফুটবল খেলছে কিংবা কোথাও বসে আড্ডা দিচ্ছে সেখানে আকশি পড়ার টেবিলে বই নিয়ে বসে আছে। যার কারণে ওর বন্ধুও তেমন ছিলো না।নবম শ্রেণিতে আদিয়াতের সাথে পরিচয়। আজও সেই বন্ধুত্ব অটুট আছে।বন্ধুর মতো বন্ধু একটা হলেই যথেষ্ট। দশটার প্রয়োজন নেই।

    সবকিছুতে আকশির এখন ফিহাকে মনে পরে।হঠাৎ করে ফিহার হাসি হাসি মুখ মনে পরে যায়।ওর চাহনি,কথা বলার স্টাইল, মায়াবী চেহারা, সেই ইনসেন্ট ফেস সবকিছু যেনো ওর চোখে ভাসছে।নিজের মাথার পেছনের চুলগুলো মুঠ করে ধরে কয়েকটা ঝারা মারলো। তারপর মুচকি হাসলো।

    আকশিঃ আমি বুঝতে পারছি না বারবার আমার ঐ মেয়েটার কথা মনে পরছে কেন?সবচেয়ে সুন্দর ছিলো ওর হাসিটা।আমি বোধ হয় পাগল হয়ে যাবো।কি ভাবছি আমি?ভাবনায়, কল্পনায়,স্বপ্নে সব জায়গায় শুধু ঐ মেয়েটা।ওর হাসির ঝংকার এখনো আমার কানে বাজছে।আমি যে কিছুতেই তাকে ভুলতে পারছি না।এবার মনে হয় সত্যি কোন মেয়ের প্রেমে পরলাম।তাও মেয়েটার হাসি দেখে।

    পাগলীরে তোর মুখের হাসিতে,
    পরবো আমি প্রেমের ফাঁসিতে।
    তুই কি আসবি দেখিতে??
    আমায় একটু ভালবাসিতে।
    পাগল করা তোর ঐ চাহনীতে,
    আমি হাজারবারও পারিবো মরিতে
    ভাবনার সাগরে ফেলে জল
    শুধু একটিবার আসবি বল।
    (লেখনীতেঃ নোভা)

    নিজের মনে কবিতা আবৃত্তি করে আপন মনে হেসে উঠলো আকশি।নাহ্ সত্যি তাকে প্রেমের ভূতে ধরেছে।সেটা হলো ফিহার প্রমের ভূত।সেটাকে কি করে সামলাবে তা আকশি জানে না।এই দুই দিনে সারা দিন রাত ফিহার ওপর নজর রেখেছে সে।এতে করে আকশি ফিহার কোন বেড হেবিটতো পাইনি বরং আরো দূর্বল হয়ে পরেছে ।সবজায়গায় ফিহাকে দেখে,কোন মেয়ে কথা বললেই মনে হয় ফিহা কথা বলছে।এমনকি স্বপ্নে পর্যন্ত ফিহার হাসির শব্দ শুনতে পায়।তার মানে আমাদের আকশি মহাশয় পুরো দমে ফিহা নামক অসুখে অসুস্থ হয়ে পরেছে।ফিহার মিটিংয়ের শুরুতে ইনোসেন্ট ফেস মনে করে মিটমিট করে হেসে উঠলো আকশি।ঠিক তখনি ওর পাশে এসে দাঁড়ালো আদিয়াত।ভ্রু কুঁচকে আকশির দিকে তাকিয়ে আছে সে।অথচ আকশি দ্বীন-দুনিয়া ভূলে ফিহার ভাবনায় মগ্ন।আদিয়াত শেষে আকশিকে জোরে একটা ধাক্কা দিলো।ভাবনা থেকে ফিরে ওর দিকে তাকালো আকশি।

    আকশিঃ কি হলো এভাবে ধাক্কা মারলি কেন?

    আদিয়াতঃ পাগলের মতো হাসছিস কেন? আমি কয়েক মিনিট ধরে তোর পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছি। অথচ তুই কি জানি ভেবে নিজের মনে হেসেই চলেছিস।তোর কি হয়েছে বলতো?দুই দিন ধরে তোর মতি গতি আমার ভালো ঠেকছে না।

    আকশিঃ ক ক কই আমার আবার কি হবে?আমি ঠিক আছি।আমার কিছু হয়নি।(আমতা আমতা করে)

    আদিয়াতঃ এই তুই কি লুকাচ্ছিস আমার থেকে।একদম মেয়েদের মতো ন্যাকামো করবি না।তোর ভাব-ভঙ্গি আমার স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।সেদিন তোদের অফিস থেকে আসার পর থেকে তোর আচার-আচারণ কিছুই আমার সুবিধাজনক মনে হচ্ছে না।কি রকম কি রকম জানি করিস?

    আকশিঃ আমি ঠিকই আছি।শুধু তোর মাথাই গিয়েছে।

    আদিয়াতঃ এক মিনিট, এক মিনিট।তুই আবার প্রেমে পরিস নি তো।তোর মাঝে আমি প্রেমে পরার লক্ষ্যণ গুলো খুঁজে পাচ্ছি।

    আকশিঃ এসব ফালতু পেচাল বাদ দিয়ে আমি যে কাজে পাঠিয়েছিলাম তার খবর বল।

    আদিয়াতঃ ঐ মেয়েটা সম্পর্কে এতো কেন জানার আগ্রহ তোর?আমার কাছে ব্যাপারটা কি রকম জানি রহস্য রহস্য লাগছে।

    আকশিঃ তোর রহস্য তোর কাছে রাখ।আর কাজের কথায় ফিরে আয়।সকল ইনফরমেশন জলদী করে দে।আমার পরবর্তী স্টেপ নিতে হবে।

    আদিয়াতঃ দিচ্ছি দিচ্ছি। মেয়েটার ইনফরমেশনের জন্য মনে হচ্ছে তোর জানটা বের হয়ে যাচ্ছে।

    আকশি বারান্দা থেকে চলে এলো।ওর পেছন পেছন আদিয়াতও রুমে ঢুকলো। আকশি সোফায় বসে ল্যাপটপ ওন করতে করতে বললো।

    আকশিঃ বেশি বকবক না করে বলতো।
    আদিয়াতঃ মেয়েটার নাম ফিহা।
    আকশিঃ ফিহা,বাহ্ খুব সুন্দর নাম তো।
    (বিরবির করে)
    আদিয়াতঃ কিছু বললি??
    আকশিঃ না না কিছু বলি নি।তুই বলতে থাক।

    আদিয়াতঃ ফিহা ছোট থেকে এতিমখানায় বড় হয়েছে। আপন বলতে এতিমখানার মানুষ। সাথে আছে ওর এক বেস্ট ফ্রেন্ড। পাবলিক ভার্সিটিতে নিজের খরচে পড়াশোনা করেছে।পড়াশোনার পাশাপাশি বেশ কয়েকটা টিউশনি করতো।তারপর ম্যানেজমেন্টে অনার্স পাস করে সেই এতিমখানায় বাচ্চাদের টিচার হিসেবে যোগ দেয়।

    আকশিঃ হুম তারপর।বাবা কি করে চিনলো ফিহাকে?
    আদিয়াতঃ প্রায় সময় আঙ্কেল মানে তোর বাবা, ফিহা যে এতিমখানায় চাকরী করতো সেখানে বাচ্চাদের জন্য পোশাক, খাবার নিয়ে যেতো।সেখানেই ফিহাকে দেখতে পায় আঙ্কেল। তার অনেক পছন্দ হয় ফিহাকে।ভাই-ভাবী মারা যাওয়ার পর অনিয়াকে লালন-পালন করা টাফ হয়ে যাচ্ছিলো।তাই আঙ্কেল ফিহাকে নিয়ে আসে।কিন্তু ফিহাকে কি পরিচয় দিবে সেটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরেন তিনি। তখন তার মাথায় একটা বুদ্ধি চলে আসে।তিনি সবার কাছে প্রচার করে দেন ফিহা তোর স্ত্রী। অনিয়া তোর ও ফিহার সন্তান। আর তোদের দুই বছর আগে বিয়ে হয়েছে। এতে করে কেউ ফিহার দিকে আঙুল তুলে কথা বলতে পারেনি,কেউ বাজে মন্তব্য করেনি।যেহেতু তুই দুই বছর লন্ডনে ছিলি তাই ব্যাপারটা কোন ঘোলাটে হয় না।সবাই খুব সহজে বিশ্বাস করে নেয়।

    আকশিঃ কিন্তু বাবা ওকে রাজী করালো কিভাবে?যতটা মনে হলো ফিহার টাকার কোন লোভ নেই।

    আদিয়াতঃ তুই ঠিক ধরেছিস।ফিহাকে আঙ্কেল অনেক টাকা দিবো বলেছিলো।কিন্তু ফিহা সাফ সাফ মানা করে দেয়।সে নিজেকে মিথ্যা পরিচয়ে গড়তে পারবে না।কিছুতেই ফিহা রাজী হচ্ছিল না।কিন্তু অনির দিকে তাকিয়ে রাজী হয়েছে। অনিকে কোন টাকা ছাড়া লালন-পালন করার দায়িত্ব নেয় সে। আঙ্কেল অনিকে দেখে রাখার জন্য ফিহাকে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা দিতে চেয়েছিলো।ফিহা সেটা নিতে রাজী হয়নি।বরং আঙ্কেলকে সোজা সাপটা ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে সে মাতৃত্বকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে পারবে না।বেচারী প্রথমে কোনকিছু তে রাজী হতে চাই নি।শুধুমাত্র অনির মুখেের দিকে তাকিয়ে সব মেনে নিয়েছে। ফিহা চায়নি অনিও ওর মতো এতিম হয়ে বেড়ে উঠুক।এই হলো ফিহার যাবতীয় বায়োডাটা।

    আকশিঃ আই সি।তাহলে তো এবার মিসেস চৌধুরীকে একটু জ্বালাতন করাই যায়।দেখি চেষ্টা করে, মিথ্যে মিসেস চৌধুরীকে সত্যিকারের মিসেস চৌধুরী বানাতে।

    মনে মনে কথাগুলো বলে টেডি স্মাইল দিলো আকশি।ওর মনে এখন শয়তানি বুদ্ধি এসে ভিড় করেছে।

    আদিয়াতঃ মিটমিট করে হাসছিস কেন?
    আকশিঃ সময় হলে জানতে পারবি।এখন আমি তোকে কিছু বলবো না।
    আদিয়াতঃ তোর ভাব-সাব আমি কিছু বুঝছি না আকশি।আমায় এখন একটু বুঝিয়ে বলবি তোর মনে কি চলছে?
    আকশিঃ আমি জানি না ওকে ভালবেসেছি কি না।তবে ওর জন্য আমি অন্য রকম কিছু ফিল করছি।আমি খুব জলদী সব ঠিক করে তোকে জানাবো আদিয়াত।(মনে মনে)
    আদিয়াতঃ তুই হঠাৎ, হঠাৎ কোথায় হারিয়ে যাস বল তো?
    আকশিঃ এক জায়গায় যেতে হবে তারাতাড়ি চল।
    আদিয়াতঃ কোথায় যাবো?
    আকশিঃ বেশি কথা বলিস না। গেলেই দেখতে পারবি।

    ল্যাপটপ বন্ধ করে আদিয়াতকে টানতে টানতে কোথায় জানি নিয়ে গেলো আকশি।আদিয়াত বার বার ওকে জিজ্ঞেস করছে কোথায় যাবে?কিন্তু আকশির একি উত্তর গেলেই দেখতে পারবি।আপাতত আকশির সাথে যাওয়া ছারা আদিয়াতের অন্য কোন উপায় নেই।

    মন খারাপ থাকলেই ফিহা অফিসের কেবিনের আবছা সবুজ রঙের কাচের সামনে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে থাকে।অনিয়াকে নিয়ে আবদুল সাহেবে বাইরের বাগানে গিয়েছে। সাথে টেবলেটও যোগ দিয়েছে। ফিহার একা একা ভালো লাগছে না।হঠাৎ করে একটা ছেলে পেছন থেকে ওর চোখ হাত দিয়ে আটকে ধরলো।ছেলেটার হাতে নানা রংয়ের অনেকগুলো হার্ট শেইপ বেলুন।

    #চলবে

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-০৮

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-০৮

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_08
    #Writer_NOVA

    রাতে একসাথে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেছে ফিহা ও আনিস চৌধুরী।দুপুরের মিটিংয়ের কথা আবদুল সাহেবের কাছ থেকে শুনেছেন তিনি।ফিহা যে প্রথম বার দূর্দান্ত বক্তব্য রেখে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে, সেটা শুনে আনিস চৌধুরী বেশ খুশি।
    নিজের অজান্তেই মুখে হাসি ফুটেছে তার।তিনি সবদিক থেকে পারফেক্ট একটা মেয়ে চুজ করেছেন।অনিয়া একটা মেয়ে সার্ভেন্টে কোলে নিয়ে ঘুরছে।টেবলেট অনিয়ার আশেপাশে ঘুরঘুর করছে।

    আনিসঃ আজকের মিটিং কেমন হলো বউমা?

    ফিহাঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো বাবা।আমি ভাবতেই পারিনি এতো কথা বলতে পারবো।পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা ছাড়া এতো কথা কি করে বললাম তাতে আমি নিজেই কনফিউশানে পরে গিয়েছিলাম।প্রথম প্রথম তো অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।আবদুল চাচা ভয় ভেঙে দিলো।উনি যদি আজকের মিটিংয়ে না থাকতো তাহলে আমি ভয়ে হার্ট অ্যাটাক করে ঐখানেই চিৎপটাং হয়ে মরে পরে থাকতাম।

    আনিসঃ ভয়ের কিছু নেই বউমা।আমি জানি তুমি পারবে।তাই তো তোমাকে আমি চয়েজ করেছি।তোমার চোখে আমি জেতার অদম্য শক্তি দেখেছি।যা আর কোন মেয়ের চোখে দেখতে পাইনি।তোমাকে যে শক্ত হাতে সবকিছুতে সামলে নিতে হবে।

    ফিহাঃ বাবা আপনি চিন্তা করবেন না।আপনি শুধু রেস্ট নিন।আপনার ধারণা আমি একদিন অবশ্যই সত্যি করবো।

    আনিসঃ মা রে আমায় মাফ করে দিও।নিজের স্বার্থের জন্য তোমাকে কতগুলো দায়িত্বে বেঁধে রেখেছি।আফিস,সংসার,মেয়ে আরো কতকিছু তোমায় সামলাতে হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বাস করো বউমা আমি যে নিরুপায়।আমার হাতে এছাড়া আর কোন পথ ছিলো না।আমি এই বয়সে কখনো এতকিছু সামলাতে পারতাম না।টেনশনে টেনশনে শেষ হয়ে যেতাম।তখন আমার দিদিভাই টার কি হতো?সেটা ভেবেই তোমাকে নিয়ে এসেছি।আমি যে তোমার মাঝে মাতৃত্ব দেখেছি।
    ওর মা হওয়ার আগ্রহ, যোগ্যতা দেখেছি।ওর জন্য তোমার মনে মায়া, ভালোবাসা, স্নেহ খুঁজে পেয়েছি।তাই বাধ্য হয়ে তোমাকে আমাদের সাথে জরিয়ে ফেলেছি।

    ফিহাঃ আমি কিছু মনে করি নি বাবা।বরং অনেক খুশি হয়েছি।কারণ আমি নিজের বাবা ও মেয়ে পেয়েছি। পেয়েছি সুন্দর একটা ছোট পরিবার।এখন আমিও সবার কাছে মাথা উঁচু করে বলতে পারবো আমারও একটা পরিবার আছে।আমারও মাথার ওপরে বাবা নামক ছায়া আছে।আমি এতিম নই।না,আমি এখন সত্যিই এতিম নই। আমার একটা পরিচয় আছে। আনিস চৌধুরীর মেয়ে আমি।আমি এখন মিসেস চৌধুরী। আপনি আমাকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছেন।মাথা উঁচু করে বাঁচার তাগিদ দিয়েছেন।সবার কাছে পরিচয় করে দিয়েছেন আমি অনিয়ার মা। এটাই তো আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া বাবা।

    আনিসঃ বউমা তুমি দেখো, একদিন তুমি অনেক বড় হবে।আমি দোয়া করে দিলাম তোমাকে।তবে বউমা কখনও অন্য পাঁচজন মেয়ের মতো আমাকে ও আমার নাতনিকে দূরে ঠেলে দিয়ো না।তাহলে যে সে দিনই হবে আমার শেষ দিন।

    ফিহাঃ ছি:ছি:বাবা এসব কি বলেন?এখন যা আছে সবই আপনাদের।আমি তো শুধু আপনাদের আমানতদার।আপনাদেরকে এবং অফিস দেখে রাখার দায়িত্ব আমার।এগুলো আগে আপনাদের ছিলো, সারাজীবন আপনাদেরি থাকবে।আমার এগুলো চাই না।আপনি ও আমার মেয়ে আমার পাশে থাকলেই চলবে।আর কিছু লাগবে না আমার।আপনি মনে হয় আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না,তাই না বাবা।আমি সঠিক বলেছি তো??

    আনিসঃ না বউমা সেটা নয়।আমি শুধু তোমার কাছে অনুরোধ করছি।আমি তোমাকে অনেক বিশ্বাস করি।কারণ আমি তোমাকে টাকার কথা বলে আনতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তুমি তা প্রত্যাখান করো।যখনি অনির কথা বললাম তখন তুমি রাজী হলে।অনিয়াকে লালন-পালনেও তুমি কোন টাকা নিতে রাজী হলে না।
    এমনকি আমাকে সাফ সাফ জানিয়ে দিলে তুমি কখনও মাতৃত্ব টাকার বিনিময়ে বিক্রি করবে না। ঠিক তখনি বুঝে গেছি তুমি কি রকম মেয়ে। তরপরও ভয় হয় বউমা।কখন মানুষের মন পাল্টে যায়।সেটাতো বলা যায় না।জানো বউমা,মানুষের মনকে আকাশের রংয়ের সাথে তুলনা করা হয়।কারণ দুটোই খনে খনে রং বদলায়।

    ফিহাঃ আপনি আমাকে নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকুন বাবা।আমি আপনাকে বাবা বলে ডেকেছি। কোন মেয়ে কি তার বাবার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে?কেউ যদি করেও থাকে,আমি কখনও আমার বাবার সাথে বৈঈমানী করবো না।নিজের সর্বস্ব দিয়ে আপনাদের সাহায্য করবো।এখন যে সবকিছু আমার।যেমন আপনি,অনিয়া।আপনি তো আমাকে অধিকার দিয়েই দিয়েছেন।তাই তো আমি বলতে পারি আমার বাবা,আমার মেয়ে।এর থেকে বেশি আমার মতো এতিম মেয়ের আর কি লাগে বলুন তো?

    আনিসঃ একদম কথায় কথায় এতিম বলবে না।আমি ও অনি কি মারা গেছি।যেদিন আমরা থাকবো না সেদিন বলবে তুমি এতিম।আমরা বেঁচে থাকতে কখনও নয়।তুমি আমার মেয়ে আর অনি তোমার মেয়ে।কথাটা মনে রেখো বউমা।

    আনিস চৌধুরীর কথা শুনে চোখ খুশিতে দুটো চকচক করে উঠলো ফিহার।একটা এতিম মেয়ের এর কাছে এটা যে কতবড় খুশির সংবাদ সেটা শুধু মাত্র সেই জানে।আনিস চৌধুরীর চোখের আড়ালে ফিহা নিজের চোখের পানি মুছে নিলে।গাল বেয়ে দুই ফোঁটা পানি খুশির কারণে পরে গিয়েছিল। কিন্তু সে তো সাফান ছারা নিজের চোখের পানি আর কাউকে দেখায় না।তাই জলদী করে মুছে নিয়েছে।

    খাবার শেষ করে ফিহা অনিয়াকে নিয়ে রুমে চলে গেল। কিছু সময় অনিয়াকে ঘুম পারানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলো।কিন্তু ব্যর্থ চেষ্টা আর সফল হলো না।অনিয়া ওর মায়ের সাথে দুষ্টুমী করতে লাগলো।

    ফিহাঃ কি হচ্ছে এগুলো মাম্মাম?তুমি ইদানীং ভীষণ ফাজিল হয়ে যাচ্ছো।মাম্মিকে জ্বালানোর ধান্দায় থাকো।খাবার খেতে গেলে আর ঘুমাতে গেলে তোমার দুষ্টুমী শুরু হয়ে যায়।এটা তো ঠিক কথা নয়।এরকম তো পঁচা মেয়েরা করে।তুমি কি পঁচা মেয়ে বলো?মোটেও না।তুমি তো আমার ভালো মেয়ে। আমার লক্ষ্মীসোনা,জাদুর কণা।তুমি যদি মাম্মিকে এভাবে জ্বালাতন করো তাহলে মাম্মি তো বিরক্ত হয়ে তোমাকে বকা দিবো।তখন কি তোমার ভালো লাগবে বলো। একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরো মানিক।তুমি জেগে থাকলে তো আমি ঘুমাতে পারবো না।সারাক্ষণ তোমার টেনশন হবে।আর কিছু সময় পর পর জেগে উঠবো।জলদী করে ঘুমিয়ে পরো।সকালে উঠে আমাদের আবার অফিসে যেতে হবে।সেটা কি তুমি ভুলে গেছো মাম্মাম??

    খাটের কোণা থেকে টেবলেট উঠে এসে ফিহার পায়ের কাছে চুপটি করে বসে রইলো।একটু আগে তারও রাতের ডিনার হয়েছে। সারাদিন অনিয়াকে সময় দেয় বলে টেবলেট মহাশয়ের চোখেও রাতে ঘুম ভির করে।চাইলে অন্য কুকুরের মতো টেবলেটও সারাদিন ঘুমিয়ে কাটাতে পারে।কিন্তু সেটা সে করে না।অনিয়া জেগে থাকুক বা ঘুমিয়ে সবসময় ওর দোলনার পাশে কিংবা ওর সাথে থাকবে।মনে হয় না সারাদিনে এক মিনিটের জন্যও চোখ দুটো লাগায় টেবলেট।

    ফিহাঃ জানিস টেবলেট যতদিন যাচ্ছে ততই তোর,অনির আর বাবার মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি।জানি না এই মায়া কাটিয়ে উঠতে পারবো কি না।রাতে ঘুমের ঘোরে, সকাল ভোরে অনির মুখটা না দেখলে মনটা ছটফট করে।তোকে সকালের ব্রেকফাস্টে খুঁজে না পেলে মনে হয় কি যেনো একটা নেই নেই। বাবার সাথে রাতের খাবার না খেলে মনে হয় সারাদিন কিছু একটা বাকি পরে গেছে। যখন তোর মালিক আকশি আসবে তখন তো তার হাতে সব তুলে দিয়ে আমি চলে যাবো।কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তখন ভালো থাকবো না রে।আমার যে দম বন্ধ হয়ে আসবে।সেসব কথা ভাবলেই এখনি আমার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠে।

    একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অনিয়াকে কোলে তুলে নিলো ফিহা।অনির মুখটা কি মায়াবী! এই মুখের হাসির জন্য সে শত কষ্ট করতেও রাজী আছে।কারণ সে যে এখন অনিয়ার মা।হোক সে জন্ম দেয়নি কিন্তু দায়িত্ব তো ওালন করছে।তাতেই ফিহা দাবী করতে পারে এটা ওর মেয়ে।টেবলেটও বেশ কয়েকবার কুই কুই করে শব্দ করে ফিহার সাথে ঘেঁষে বসলো।

    ফিহাঃ মায়া জিনিসটা বড় অদ্ভুত। যার ওপর পরে যায় হাজার চেষ্টা করেও তার থেকে উঠানো যায় না।তোদের সবার ওপর আমার এই কয়েকদিনে এতো মায়া হয়ে গেছে যে আমার মনে হয় তুই, অনিয়া,বাবা সবাই আমার আপনজন।সবকিছু আমার, আমার মনে হয়।কোথা থেকে যেনো অধিকাটা পেয়ে যাই।আল্লাহ বাচ্চাদের জন্মের সাথে সাথে চেহারায় অনেক মায়া দিয়ে দেয়।যাতে করে মা-সহ সবাই বাচ্চার মায়ায় পরে যায়। তাহলে আমি কেন অনির মায়ায় পরবো না বলতো।যেখানে ও নিজেই জানছে আমি ওর মা।আমিতো দিনকে দিন শুধু ওর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছি।আমি এটাও বিশ্বাস করতে আরম্ভ করেছি যে অনি আমার নিজের মেয়ে। আমার মনে হয় ও আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে। এখন ওকে আলাদা করে বাঁচা বোধ হয় আমার সম্ভব নয় রে টেবলেট। আমি যে অনিকে সত্যি নিজের মেয়ে ধরে নিয়েছি।ও বোধ হয় আমাকে নিজের মা মনে করে।তাহলে আমি ওকে ছেড়ে কি করে যাই বলতো।

    ফিহা হঠাৎ থেমে গেল।আজ সব কিছু টেবলেটের সাথে শেয়ার করলো সে।নিজের মনটা অনেক হালকা মনে হচ্ছে। টেবলেটও বুঝতে পেরে চুপটি করে ওর দিকে তাকিয়ে ওর মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করছে।ফিহা সেটা বুঝে টেবলেটের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
    তারপর জোর খাটিয়ে কড়া গলায় বললো।

    ফিহাঃ কোথাও যাবো না আমি তোদের ছেড়ে। বাকি জীবনটা আমি তোদের সাথেই কাটাতে চাই।এখন যে তোরাই আমার সব।

    কথাগুলো একনাগাড়ে বলে অনিয়াকে শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো ফিহা।মনে হচ্ছে ফিহা ছেরে দিলেই কেউ অনিয়াকে ওর কাছে থেকে নিয়ে যাবে বহুদূরে। অনিয়াও মায়ের উষ্ণ পরশ পেয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো।

    #চলবে

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-০৭

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-০৭

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_07
    #Writer_NOVA

    যথা সময়ে মিটিংয়ের জন্য সবাই হাজির হলো।ফিহা অনিয়াকে ঘুম পারিয়ে মিটিং রুমে চলে এলো।আপতত এখন অনিয়া টেবলেটের তত্ত্বাবধায়নে থাকবে।আকশি ও আদিয়াত ছারা আরো অনেক ক্লায়েন্ট এসেছে।ফিহা রুমে ঢুকতেই সবাই যার যার আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওকে সম্মান জানালো।যাতে ফিহা বেশ অবাক হলো।এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না। চোখ দুটো ছোট ছোট করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আবদুল সাহেবের দিকে তাকালো।আবদুল সাহেব ফিহার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো।

    আবদুলঃ অবাক হওয়ার কিছু নেই ছোট বউমা।এখানে যারা যারা এসেছে সবাই আমাদের কোম্পানির অধীনে আছে।তোমার একটা সিগনেচার ছারা তাদের এক পয়সার পণ্যও বিক্রি হবে না।তুমি যদি বিল পাস না করো তাহলো কোন কোম্পানি তার পণ্য বাজারে ছারতে পারবে না।আমদানি, রপ্তানি, পুনঃরপ্তানি তো অনেক দূরেই থাক।

    ফিহা ব্যাবসায় বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করেছে।তাই এসব সে ভালো করেই বুঝে।যাতে করে আবদুল সাহেবের কথার মধ্যে পুরো ব্যাপারটা আঁচ করে ফেলেছে। মুখে একটা গম্ভীরতা নিয়ে নির্দিষ্ট চেয়ারে বসলো ফিহা।পুরো রুমটা আবছা নীল আলোতে ঘেরা।নীল আলোটা অবশ্য মাল্টিমিডিয়ার।বিশাল বড় রাউন্ড টেবিল।২০-২৫ জন ক্লায়েন্ট হবে।সবার মাঝে নিজেকে কেমন জানি লাগছে ফিহার।ভেতরে ভেতরে বেশ ভয় পাচ্ছে। তবে মুখে একটা পাঁজি পাঁজি ভাব রেখে দিয়েছে।ওদের কোম্পানিটা আমদানি,রপ্তানি ও পুনঃরপ্তানি নিয়ে কাজ করে।

    আবদুলঃ আসালামু আলাইকুম। আপনারা সবাই নিশ্চয়ই ভালো আছেন।ভালো থাকারি কথা।আজকে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে মিটিং রেখেছি।তবে প্রথমে আমি আমাদের কোম্পানির নিউ ওনারের সাথে পরিচয় করে দিতে চাই। যদিও এর আগে আপনারা তাকে দেখেন নি।

    আবদুল সাহেবের কথা শুনে আকশির গলা শুকিয়ে আসছে।কারণ এখন আবারো ওর নাম নিবে।আর মেয়েটাকে ইঙ্গিত দিয়ে বলবে ঐটা ওর বউ।বেশ কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে হাতের সামনে থাকা পানির বোতল খুলে মুখে দিলো।

    আবদুলঃ আপনারা নিশ্চয়ই জানেন আমাদের কোম্পানির সাবেক ওনার আনিস চৌধুরী এখন অসুস্থ। তার বড় ছেলে ও বউ কার এক্সিডেন্টে মৃত্যু বরণ করেছে।ছোট ছেলেও তিনমাস ধরে নিখোঁজ। তাই আনিস চৌধুরী বাধ্য হয়ে তার ছোট ছেলের বউকে এই কোম্পানির ওনার করেছে।সকল বিষয়ের দায়িত্ব ছোট বউমার হাতে তুলে দিয়েছে।এখন থেকে আমাদের পুরো কোম্পানি চালাবে আমাদের ছোট সাহেব আকশি চৌধুরীর বউ।আপনারা উনাকে মিসেস আকশি চৌধুরীও বলতে পারেন।

    ব্যাস এই ভয় আকশি পাচ্ছিলো।পানি মুখে দেওয়ার আগেই বিষম খেলো।কাশতে কাশতে অবস্থা নাজেহাল। পানি মুখে দিয়ে ঘটালো আরেক বিপত্তি।
    এবারো সে সেম কাজটা করলো।মুখের পানি আর গিলতে পারলো না।পিচকিরির মতো করে ছিটিয়ে আদিয়াতের পুরো শরীর ভিজিয়ে দিলো।ভাগ্যিস আদিয়াতের ওপর পরছে।অন্য কেউ হলে ওর খবর নিয়ে ফেলতো।আদিয়াত ওর দিকে খাইয়া ফালামু লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।

    ফিহাঃ এনিথিং রং মি.পাটোয়ারী?
    আদিয়াতঃ নো ম্যাম।ইট’স ওকে।
    আকশিঃ দোস্ত সরি রে।আসলে বার বার আমার নামটা এমনভাবে নিচ্ছে যে আমি নিজেই কনফিউশানে পরে যাচ্ছি। আমার আসলে কথাটা হজম হচ্ছে না।বিয়ে না করেই বউ হয়ে গেছে আমার।

    কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে কথাটা বলেও পার পেলো না আকশি।আদিয়াত চোখ পাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।

    আদিয়াতঃ শালা,তোর খবর আছে। আরেকবার এমন করেছিস কিছু বলেনি।কিন্তু এবার ছারবো না।শুধু মিটিংটা শেষ হতে দে। তারপর দেখ কি করি?

    আদিয়াতের কথার বিনিময়ে আকশি শুধু মুচকি হাসলো। কারণ সে ভালো করেই জানে আদিয়াত কিছুই বলবে না।আদিয়াত তো ওর সাথে এক মিনিটের জন্যও রাগ করে থাকতে পারে না।ফিসফিস করে দুজন চারিদিকে তাকাতেই দেখলো সবাই ওদের দুজনের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

    আকশিঃ সরি এভরিওয়ান।যাস্ট মিসটেক।
    আবদুলঃ আর ইউ ওকে মি.সুমন?
    আকশিঃ ইয়াহ আই এম।
    আদিয়াতঃ আপনারা প্লিজ মিটিং শুরু করুন।
    আবদুলঃ আমি এখন আমাদের নতুন ওনারকে বলবো আমাদের উদ্দেশ্য কিছু বলতে।
    ফিহাঃ চাচা,আমায় কেন ফাঁসিয়ে দিলেন।আমি কি বলবো?আমি তো কিছুই জানি না।কীভাবে শুরু করবো তাও বুঝতে পারছি না।ভীষণ ভয় করছে।মনে হচ্ছে কেউ বুকের মধ্যে হাতুড়ি পেটা করছে।

    কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে কথাটা বললো ফিহা।আবদুল সাহেব ওকে আশ্বাস দিয়ে বললো।

    আবদুলঃ তুমি চিন্তা করো না বউমা।আমিতো আছিই।এখন তোমাকে সবার উদ্দেশ্য কিছু কথা বলতে হবে।নয়তো তাদের মনঃক্ষুন্ন হয়ে যাবে।তুমি ভয় পেয়ো না।সাহস করে বলে দেও।
    ফিহাঃ কি বলবো?
    আবদুলঃ তোমার মনে যা চায় তাই বলো।
    ফিহাঃ আমার ভীষণ ভয় করছে🥺।
    আবদুলঃ ধূর বোকা মেয়ে। তোমার আবদুল চাচা থাকতে তোমার কোন ভয় আছে।

    ফিহা ভয়ে ভয়ে দাঁড়ালো। হৃৎপিন্ডটা ধুকপুক করছে।এত জোরে চলছে যে মনে হচ্ছে বের হয়ে যাবে।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কানে থাকা ব্লুটুথ ওন করলো।এখন ফিহা কিভাবে বক্তব্য শুরু করবে তাও খুঁজে পাচ্ছে না।

    ফিহাঃ আল্লাহ কোন মসিবতে ফেললে আমায়?আমার ভয়ে কলিজা শুকিয়ে আসছে। একে তো বিয়ে না হয়ে কোন আকশি না ফাকশি তার বউ হিসেবে পরিচয় দিতে হয়েছে। তার মধ্যে এক বাচ্চার মা হয়ে গেছি।এবার এই ব্যাঙের অফিস সামলাতে হবে।সে না হয় মেনে নিলাম।কিন্তু এখন মিটিং কিভাবে সামলাবো?ধূর ব্যাঙ🐸।আর ভালো লাগে না।কবে যে ব্যাটা বজ্জাত, হাতির নাতি,চামচিকার বয়ফ্রেন্ড,শয়তানের দুলাভাই আকশি ফিরবে। ঐ আকশি ফিরলে তার হাতে সব তুলে দিয়ে আমি ছুটি নিবো। এসব বাবা আমার দ্বারা সম্ভব নয়।আল্লাহ বাঁচাও আমাকে।

    মনে মনে কথাগুলো বলে ইনসেট ফেস করে সবার দিকে তাকালো।ফিহার মুখের রিয়েকশন দেখে আকশি ফিক করে হেসে উঠলো।তবে শব্দ না হওয়ায় কেউ ওর দিকে তাকালো না। আকশি আর ফিহা দুজনেই এখন ফাটা বাঁশের চিপায় আছে।বিয়ে না করেও বউ।ব্যাপারটা মনে হতে আরেকবার মিটমিট করে হাসলো আকশি।আকশির চোখ ফিহার দিকে পরতেই দেখলো ফিহা ওর দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।আকশি মাথা নিচু করে ফেললো।ফিহার দিকে বেশি সময় তাকিয়ে থাকলে নিজের চোখ সারানো দায় হয়ে যেতো।কোন ঘোরে চলে যেত সে।কারণ আকশি ফিহাকে যত দেখে তত মুগ্ধ হয়ে যায়।আকশিকে হাসতে দেখে ফিহা মনে মনে বেশ রাগলো।

    ফিহাঃ দাঁড়াও ব্যাটা।আমাকে দেখে হাসি আসছে।আমিও তোমার হাসি বের করছি।কি ভেবেছো মশাই?আমি কিছু বলতে পারবো না।হু হু আমিও দেখিয়ে দিবো ফিহা কি চিজ?আমাকে কি তোমার জোকার লাগে?এবার তোমার ভূল আমি ভেঙে দিচ্ছি মহাশয়।নয়তো আমার নামও ফিহা নয়।(মনে মনে)

    ফিহা চোখ বন্ধ করে একটা বড় করে নিঃশ্বাস ছারলো।নিজেকে মনে মনে শক্ত করছে।একজন ক্লায়েন্ট বলে উঠলো
    —প্লিজ মিসেস আকশি চৌধুরী আপনি কিছু বলুন।
    ফিহাঃ আসালামু আলাইকুম। আমার পরিচয় তো আমাদের কোম্পানির ম্যানেজার সাহেব বলেই দিয়েছেন।তাই নতুন করে আমি কিছু বলতে চাইনা।
    আদিয়াতঃ দয়া করে ম্যাম, আপনার নামটা যদি বলতেন?
    ফিহাঃ আমি মিসেস চৌধুরী। আপাতত আমার এখন কোন নাম নেই। আমি এই নামেই সবার কাছে পরিচিত হতে চাই। আপনারা আমাকে মিসেস চৌধুরী বললেই আমি খুশী হবো।এবার ফেরা যাক আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায়।আমি প্রথমে আমাদের প্রযেক্টের ব্যাপারে কিছু বলতে চাইছি।

    ক্লায়েন্টদের মধ্যে থেকে একজন বললো
    —ম্যাম আমাদের চট্টগ্রামের প্রযেক্টের ব্যাপারে কিছু বললে ভালো হতো।কারণ সেখানেই আমদানি রপ্তানি করতে হলে অনেক বিপত্তিতে পড়তে হয়।

    ফিহাঃ ওকে মিস্টার। আমরা তাহলে সে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করি।আমি প্রথমে আমাদের কোম্পানির মেইন টপিক মানে আমদানি, রপ্তানি ও পুনঃরপ্তানি কি সেটাই বলি।যদিও আপনারা সবাই সেটা জানেন।আমরা বিদেশ থেকে যে পণ্যটা কিনি সেটা হলো আমদানি।আর বিদেশিদের কাছে যে পণ্যটা বিক্রি করি সেটা রপ্তানি। মেইনলি যেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয় সেটা হলো পুনঃরপ্তানি।এটা হলো আমরা বিদেশ থেকে কোন পণ্য আমদানি করে আমাদের দেশে এনে সেটাকে প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করাকে পুনঃরপ্তানি বলে।

    মধ্যে বয়স্ক এক ক্লায়েন্ট বললো
    —ম্যাডাম আমাদের কোম্পানিগুলো যথেষ্ট পরিশ্রম করেও লোকসানের মুখে কেন পরে সেটা যদি বলতেন?

    ফিহাঃবিদেশ থেকে একটা পণ্য আমদানি করতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের সেই পণ্যটা কিনতে হয়।তারপর যে ভেজাল সেটা হলো জাহাজে পণ্য আনায়ন।আমাদের কে পণ্যটা আনতে হলে অবশ্যই জাহাজের সাহায্য নিতে হবে।কিন্তু বিপর্যিত পরিবেশে পণ্য আনায়নটা অনেক টাফ হয়ে যায়।যে কোন সময় ঝড়ের মুখে পরার সম্ভাবনা আছে।তবে যদি সেটা হয় বাংলা মাসের বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্যমাসের সময়।তাছাড়া বিভিন্ন ঝুঁকি, সমস্যা তো আছেই। কোন রকম সাগর পারি দিলে দেশে আসার পর বিভিন্ন খরচ।ডকচার্জ,কুলিভাড়া,গুদামভাড়া,পরিবহণ খরচ ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেক খরচ পরে যায়।তারপর বিভিন্ন শুল্ক তো আছেই। অবশেষে যখন আমরা পণ্যটা আমাদের হাতে পাই। যদি এর মাঝে একটু দেরী হয়ে যায় তাহলে আমরা যথা সময়ের পণ্য তথা সময়ে বাজারে ছারতে পারি না।কারণ পণ্য হাতে পাওয়ার পর আরো বেশ কয়েক ধাপে মোড়কিকরণ,সিল লাগানো ইত্যাদি পেরিয়ে ভোক্তাদের জন্য উপযুক্ত করে বাজারে ছারতে হয়। আমরা যদি যথাসময়ে আমাদের পণ্য বাজারে ছারতে না পারি তাহলে বেশ বড়সড় একটা লোকসান গুনতে হয় আমাদের। এম আই রাইট??

    সবাইঃ ইয়েস ম্যাম।
    ফিহাঃ আমাদের আমাদানির পুরো ক্ষেত্রে বেশ নজরদারি করেও আমরা লোকসানে পরি।যার কারণ বিপ্রতিকূল পরিবেশ।শুধুমাত্র পণ্যটা পৌঁছাতে কিছু দিন দেরী হওয়ার কারণে আমরা কোটি কোটি টাকার লোকসানে পরে যাই।সেটা সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। নিশ্চয়ই উত্তর পেয়ে গেছেন আপনারা।

    মেয়ে ক্লায়েন্টঃ ম্যাম এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি?

    ফিহাঃ গুড কোশ্চেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলো আমদানি করার আগে সঠিক পণ্য যাচাই করে, বাজর চাহিদা বিবেচনা করে, পণ্যটির সিজন শুরু হওয়ার কিছু দিন আগে সকল পদক্ষেপ নিয়ে আমদানি করা।তাছারা বিকল্প হিসেবে ইনসুরেন্সে তো আছেই। তারপরও সঠিক পদক্ষেপে আমরা আমাদের কোম্পানিকে কোটি কোটি টাকার লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে পারি।

    একজন যুবক বয়সের ক্লায়েন্ট বললো
    —ম্যাম আমরা কি রপ্তানির ক্ষেত্রেও সেম পদক্ষেপ গ্রহণ করবো??

    ফিহাঃ মোটেও না।আমদানি ও রপ্তানি একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও দুটো কথার ভিন্ন অর্থ,ভিন্ন পদক্ষেপ।রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের পণ্যকে আকর্ষণীয়,টেকসই,সবদিক থেকে বেটার হতে হবে।নয়তো বিদেশিরা আমাদের পণ্য কিনতে আগ্রহী হবে না।কিন্তু পুনঃরপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা ঠিক দুটো পদক্ষেপের দিকে খেয়াল রাখবো। তাহলে আমাদের কাজগুলো সঠিক হবে।এবং বিদেশিরা আমাদের পণ্য কিনতে আগ্রহী ও উৎসাহী হবে।সেজন্য সবার প্রথমে আমাদের পণ্যের মান ভালো হতে হবে।পণ্যের মানের ওপর ডিপেন্ড করে কোম্পানির লাভের মুখ দেখবে নাকি লোকসানের মুখ। আমি আশা করি আপনাদের সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছি।

    সবাই একসাথে হাতে তালি দিয়ে উঠলো।ফিহা নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছে ব্যবসায় সম্পর্কে এত কথা সে কি করে বললো?তারপর একে একে সবাই যার যার প্রোজেক্ট বুঝিয়ে দিতে লাগলো।কিন্তু আদিয়াত ও আকশি অবাক হয়ে ফিহার দিকে তাকিয়ে আছে। এতো সুন্দর করে গুছিয়ে ফিহা কথা বলতে পারবে সেটা ওরা দুজনের কেউ ভাবতে পারে নি।আকশি তো কখন থেকে দুই হাতের ওপর নিজের গাল রেখে এক ধ্যানে ফিহার দিকেই তাকিয়ে আছে।

    #চলবে

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-০৬

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-০৬

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_06
    #Writer_NOVA

    আদিয়াত ও আকশি আজ ছদ্মবেশে অফিসে এসেছে।ফিহা আজ কোম্পানির সব ক্লাইন্টের সাথে মিটিং রেখেছে।ওরা দুই বন্ধু ক্লাইন্ট সেজেই এসেছে।
    দুজন এমনভাবে সেজে এসেছে যে কেউ ওদের দেখলে চিনবে না।আলগা দাড়ি,চুল,তিল লাগিয়ে ভিন্ন ধরনের বেশ ধরেছে দুজন।আবদুল আজিজ সাহেব ওদের দুজনকে ফিহার কেবিনে ঢুকলো। ফিহা অনিয়াকে চামচ দিয়ে খিচুড়ি খাওয়াচ্ছিলো।সারা মুখে অনিয়ার খিচুড়িতে মাখামাখি। তাতে যেনো অনিকে আরো বেশি কিউট লাগছে।

    আবদুলঃ ছোট বউমা আসবো?
    ফিহাঃ কতবার বলেছি চাচা,আপনি আমার থেকে অনুমতি নিবেন না।নিজেকে খুব ছোট মনে হয়।

    ফিহা অনির দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো।আকশি ও আদিয়াত এমনভাবে এসেছে যে আবদুল সাহেবেও চিনে নি।আর এদিকে আবদুল সাহেবের মুখে ছোট বউমা ডাক শুনে আকশির মাথা ঘুরে গেছে। ফিহা অন্য দিকে ঘুরে থাকায় এখনো দেখি নি।আবদুল সাহেব আকশির কানের কাছে গিয়ে নিচু স্বরে বললো।

    আবদুলঃ আমাদের ছোট বউমা খুব ভালো। আকশি বাবা নিজের জন্য একটা পারফেক্ট মেয়ে খুঁজে নিয়েছে।বউমার সবদিকে নিখুঁত নজর। দেখেন না স্বামী নেই তারপরও সবকিছু নিজে একা সামলে নিচ্ছে। কোন অভিযোগ করে না।আমাদের দিদিভাই তো বউমার জীবন।
    ফিহাঃ চাচা দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ভেতরে আসুন।

    তারা তিনজন ভেতরে ঢুকলো। টেবলেট টেবিলের সামনে চুপ করে বসে ছিলো।হঠাৎ একটা পরিচিত ঘ্রাণ পেয়ে আকশির সামনে এসে ঘুরঘুর করতে লাগলো।
    আবদুলঃ ছোট বউমা তোমার সাথে পরিচয় করতে নিয়ে এলাম এদের।
    আবদুল সাহেবের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাদের দিকে ঘুরলো ফিহা।সামনে আকশি ও আদিয়াতকে দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আবদুল সাহেবের দিকে তাকালো।
    আকশিকে দেখিয়ে আবদুল চাচা বললো।
    আবদুলঃ উনি হলেন মি.সুমন পাটোয়ারি।
    ফিহাঃ পাটোয়ারি আবার কি রকম বংশ পরিচয়?
    (মনে মনে)
    এবার আদিয়াতকে দেখিয়ে বললো
    আবদুলঃ উনি মি.সুমন পাটোয়ারীর ভাই সোহেল পাটোয়ারী।

    আকশি ও আদিয়াত হ্যালো বলে হাত বাড়িয়ে দিলো ফিহা সুন্দর করে একটা সালাম দিলো।কিন্তু হাত মিলালো না।সেটা দেখে আকশি কিছু সময় ফিহার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।
    আকশিঃ না,মেয়েটাকে দেখে তো ফ্রড মনে হচ্ছে না।ব্যবহারেও অমায়িকতার ছোঁয়া রয়েছে। আমার ভাতিজীর তো বেশ খেয়াল রাখে মনে হচ্ছে। কিন্তু টেবলেটের জন্য আবার বিপত্তি না বেঁধে যায়।সে যে আমায় চিনতে পেরেছে তা আমি বুঝে গেছি। আমার সামনে যদি টেবলেট এরকম ঘুরে ঘুরে ঘনঘন লেজ নাড়ে তাহলে আমি ধরা পরে যাবো।আল্লাহ রাস্তা দেখাও।আমি এখন ধরা পরতে চাই না। এখন ধরা পরলে আমি সব রহস্যের সমাধান করতে পারবো না। (মনে মনে)
    ফিহাঃ বসুন, মি.পাটোয়ারী।
    আকশিঃ হ্যাঁ,ম্যাডাম তাতো বসতেই এসেছি।আমাদের এখনো কত কাজ বাকি।(চেয়ারে বসে)

    আনমনে কথাটা বলতেই আকশিকে আদিয়াত কনুই দিয়ে একটা খোঁচা মারলো।

    ফিহাঃ আমি ঠিক বুঝলাম না আপনি কি বললেন?
    আকশিঃ না মানে আমি বললাম যে এখন কি বসে থাকলে চলবে।মিটিংটা জলদী সেরে নিলে ভালো হতো।আমাদের অফিসেও তো কাজ আছে।
    ফিহাঃ ওহ বুঝতে পেরেছি। আমার বাচ্চাকে খাওয়ানো শেষ হলেই আমি মিটিং শুরু করবো।এক মিনিট (একটু ভেবে)আমি তো ১১ টার সময় মিটিং শুরু করবো বলেছি।এখন বাজে ৯টা ৪৫। আপনারা এতো তাড়াতাড়ি চলে এসেছেন যে??

    অনির মুখে খিচুড়ি ভর্তি চামচ দিতে দিতে কথাটা বললো ফিহা।আকশি আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে মুখটা শুকনো করে ফেললো।যার মানে হলো ভাই এবার তুই সামলা।আমি পারবো না।

    আদিয়াতঃ আসলে ঢাকার রাস্তায় তো ভীষণ জ্যাম থাকে।আমরা ভাবলাম জলদী রওনা দেই। যদি জ্যামে পরি তাহলে তো মিটিং-য়ে এটেন্ড করতে পারবো না।তাই জলদী চলে এসেছি।
    ফিহাঃ ওহ্ ভালো।
    আকশিঃ এই কুকুর কি আপনার?কখন থেকে আমার পেছনে পেছনে ঘুর ঘুর করছে।আমার অবশ্য এসব কুকুর ছানা পছন্দ না।

    আকশির কথা শুনে আদিয়াত ওর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো। আকশি চোখের ইশারায় বুঝালো, এই কথাটা না বললে ওকে সন্দেহ করে ফেলতো।

    আবদুলঃ কুকুরটা ছোট বউমার নয়।আমাদের আকশি বাবার। আকশি নেই বলে এখন সবসময় ছোট বউমার সাথেই থাকে।
    আকশিঃ আকশি কে?(না জানার ভান করে)
    আবদুলঃ ছোট বউমার স্বামীর নাম আকশি।

    মাত্রই বেচারা আকশি টেবিল থেকে গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে মুখে দিয়েছিলো।আবদুল সাহবের কথা শুনে বিষম খেলো।কথাটা হজম করতে না পেরে পেচকির মতো সব পানি আদিয়াতের শরীরে ছিটিয়ে দিলো।সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।
    আদিয়াতঃ কি করলি এটা তুই?
    আকশিঃ সরি ভাই, খেয়াল করিনি।

    ফিহা টেবিলে থাকা টিস্যু বক্স থেকে একটা টিস্যু নিয়ে আদিয়াতের দিকে বাড়িয়ে দিলো।আদিয়াত হাত বাড়িয়ে সেটা নিয়ে কোর্ট মুছতে লাগলো।টেবলেট এখনো ঘন ঘন লেজ নাড়িয়ে তার মালিকের আকর্ষণ পাওয়ার চেষ্টা করছে।কিন্তু আকশি মোটেও সেদিকে তাকাচ্ছে না।টেবলেটের দিকে তাকালেই ওর মনটা খারাপ হয়ে যাবে।সাথে ওকে আদর করতে মন ব্যাকুল হয়ে উঠবে।ফিহা টেবলেটের দিকে একবার তাকিয়ে আকশির দিকে তাকালো।

    আকশিঃ মেয়েটা আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?আমায় চিনে ফেললো নাকি?
    ফিহাঃ আপনাকে খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে। কোথাও যেনো দেখেছি।(ভাবার মতো করে)
    আদিয়াতঃ কোথায় দেখবেন আমাদের?আমরাতো অনেক বছর পর দেশে ফিরলাম।তাছাড়া এক মানুষের চেহারার সাথে অন্য মানুষের চেহারা অনেক সময় মিলে যায়।আপনি হয়তো তেমনি ভাবছেন।
    ফিহাঃ আপনি ঠিক বলেছেন।হয়তো অন্য কাউকে দেখেছি।(টেবলেটের দিকে তাকিয়ে) টেবলেট এদিকে চলে আয়।উনাদের বিরক্ত করছিস কেন?অনিকে দেখে রাখতে হবে তো।

    কিন্তু টেবলেটের কানে কথাটা ঢুকলো না।সে আকশির পায়ের কাছে ঘাপটি মেরে বসে রইলো।সে এখন কিছুতেই এখান থেকে উঠবে না।এতদিন পর মালিককে দেখে সে ভীষণ খুশি হয়েছিলো।কিন্তু আকশি এখনো ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেইনি বলে মন খারাপ করে চুপটি মেরে বসে আছে। চোখ দুটো ছলছল। মনটাও তার ভীষণ খারাপ। টেবলেটকে এভাবে নিতে পারছে না আকশি।ভীষণ অস্থির লাগছে তার।আবদুল আজিজ সাহেব বললেন।

    আবদুলঃ মি.পাটোয়ারী আপনারা বসুন।আমি মিটিংয়ের তৈরী করি।আমার কত কাজ বাকি আছে। অনেক ফাইল কমপ্লিট করতে হবে।

    আবদুল আজিজ সাহেব চলে গেলেন।তিনি চলে যেতেই আকশি ইচ্ছে করে টেবিলে থাকা পেপারওয়েট
    ফেলে দিলো।সেটা তোলার বাহানায় টেবলেটর মাথা নেড়ে দিলো।ওমনি টেবলেট খুশি হয়ে কয়েকবার ঘেউ ঘেউ করে উঠলো।
    ফিহাঃ টেবলেট হচ্ছেটা কি?তুই তো কখনও এমন করিস না।উনাদের সাথে এমন করছিস কেন?

    টেবলেট খুশি মনে তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতদিন পর মালিকের হাতের ছোঁয়া পেয়ে সে বেশ খুশি।
    ফিহাঃ আপনারা কিছু মনে করবেন না প্লিজ। টেবলেট কারো সাথে এমন করে না।ও খুব ভালো।ও তো সাধারণত কারো সাথে মিশে না।কিন্তু মি.সুমন আপনার সাথে সাথে কেন ঘুরছে তা আমি বুঝতে পারছি না।আপনার পায়ের নিচে গিয়ে কেন বসে আছে সেটাও আমার জানা নেই।
    আকশিঃ আপনি জানবেনও না মিস।(বিরবির করে)
    ফিহাঃ কিছু বললেন মি.সুমন?
    আকশিঃ না না কিছু বলি নি।আপনার কুকুরটা খুব ভালো তাই বললাম।

    ফিহা অনিয়াকে খিচুড়ি খাওয়ানো শেষ করে ফিটারে করে পানি খাইয়ে দিলো।মুখটা পানি দিয়ে মুছিয়ে দিলো।তারপর টিস্যু দিয়ে মুখের পানি মুছিয়ে দিলো। নিজের হাত ধুতে ওয়াস রুমে চলে গেল।যাওয়ার আগে ওদের দুজনকে বললো।

    ফিহাঃ আমার মেয়েকে দুই মিনিটের জন্য একটু দেখবেন প্লিজ। আমি হাত ধুয়ে আসছি।আমার বেশি সময় লাগবে না।
    আদিয়াতঃ আপনি যেতে পারেন।
    ফিহাঃ ধন্যবাদ।

    ফিহা ওয়াসরুমে ঢুকতেই আকশি জলদী করে অনিয়াকে কোলে তুলে নিলো। যদিও এর আগে কখনও নেয়নি।অনিয়ার ছবি দেখেছে।দুই বছর লন্ডনে থেকে গ্রাজুয়েট কমপ্লিট করে তারপর ফিরলো।কিন্তু বাড়িতে যাওয়া হলো না।তার আগেই ঘটে গেল অঘটন।ভাই-ভাবীর মৃত্যুতে আসতে পারেনি।এর থেকে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে?অনিয়াকে কোলে তুলতেই মনটা হালকা হলো আকশির।অনিয়া তো ওর ভাই-ভাবীর শেষ স্মৃতি।এখন সব ঠিক হয়ে গেলে নিজের বাবা ও ভাতিজী কে নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিবে।অনিয়াও মনে হয় বুঝতে পেরেছে এই মানুষটার সাথে তার রক্তের সম্পর্ক।তাই চুপটি করে আকশির বুকের সাথে মিশে আছে।নিজের মাথাটা হেলিয়ে রেখেছে।টেবলেট সামনে এসে খুশিতে লেজ নারতে লাগলো।আকশি এক হাতে অনিয়াকে ধরে টেবলেটের মাথায় অন্য হাত বুলাতে বুলাতে বললো।

    আকশিঃ শোন টেবলেট আমি এখানে ছদ্মবেশে এসেছি।এখন যদি তোকে যখন তখন সবার সামনে আদর করি তাহলে তো ধরা পরে যাবো।আমার সামনে তুই একদম মন খারাপ করে থাকবি না।তুই মন খারাপ করে থাকলে আমার কি ভালো লাগে বল।তোর চোখের পানি আমি একদম সহ্য করতে পারি না।সব ঠিক হলে আমি তোকে সবসময় আমার কাছে রাখবো।এখন আপাতত মেয়েটার সাথে থাক।

    টেবলেট সব কথা বুঝতে পেরে অনির দোলনার সামনে বসে মুখ গুঁজে রইলো।টেবলেট যে আকশির ওপর রাগ করেছে সেটা আকশি ঢের বুঝতে পারলো।

    আদিয়াতঃ তুই এখানে থাক আমি বাইরের দিকটা দেখছি।সাবধানে কথা বলিস।
    আকশিঃ ওকে তুই যা।মেয়েটার সব ইনফরমেশন নিতে থাক।কোন কিছু যাতে বাদ না পরে।
    আদিয়াতঃ অফিসের কেউ মনে হয় না ওর ব্যাপারে জানে।কাউকে তো কিছু জানায়নি।
    আকশিঃ তারপরও তুই খোঁজ লাগা।যদি কোন ক্লু পাওয়া যায়।
    আদিয়াতঃ তার চেষ্টাই করতে হবে।
    আকশিঃ আর শোন সাবধানে কাজ করিস।
    আদিয়াতঃ আমাকে নিয়ে চিন্তা করিস না।আমি সবধানেই থাকি।তুই অসাবধানে মুখ ফসকে কথা বলে ফেলিস।

    আদিয়াত চলে যেতেই আকশি টেবলেটের সামনে এক হাঁটু গেড়ে বসে পরলো।ওর মাথায় আলতো করে হাত রাখলো।অনি ওর কোলে খুশিমনে বুড়ো আঙ্গুল চুষছে।যার কারণে চুক চুক শব্দ ভেসে আসছে আকশির কানে।

    আকশিঃ টেবলেট প্লিজ আমার অবস্থা বোঝার চেষ্টা কর।আমি এখন পরিস্থিতির শিকার।আমি চাইলেও তোকে আমার কাছে রাখতে পারবো না।তোকে কতবার বলবো তুই মন খারাপ করে থাকলে আমার ভালো লাগে না।
    ফিহাঃ কে মন খারাপ করে থাকলে আপনার ভালো লাগে না?(কপাল কুঁচকে)

    আকশির বুকটা ধুক করে উঠলো।ফিহা ওদের সব কথা শুনে নেয়নি তো।এবার কি করবে সে?যদি সব কথা শুনে ফেলে।তাহলে তো ধরা পরে যাবে।আর সবকিছুর পেছনের মাস্টার মাইন্ডকে ধরতে পারবে না।আকশির নিজেকে চোর চোর মনে হচ্ছে। কিছু সময় এদিক সেদিক তাকিয়ে বুদ্ধি পেয়ে গেলো।পকেট থেকে মোবাইল বের করে হাতে নিলো।

    ফিহাঃ কি ব্যাপার মি.পাটোয়ারী? বললেন না কে মন খারাপ থাকলে আপনার ভালো লাগে না?
    আকশিঃ আমি ফোনে কথা বলছিলাম।আমার এক ফ্রেন্ড। ও মন খারাপ থাকলে আমার ভালো লাগে না।
    ফিহাঃ ওহ্। আপনি ঐ খানে কি করছেন?
    আকশিঃ অনিয়া কান্না করছিলো তাই ওকে কোলে তুলে এদিকে দাঁড়িয়ে ছিলাম।(আমতা আমতা করে)

    আকশি বড় করে হাফ ছারলো। ফিহা কিছু শোনে নি।এমনকি সে যে টেবলেটের সাথে কথা বলছিলো সেটাও বুঝতে পারে নি ফিহা।আকশি পেছনে ঘুরে থাকায় ফিহা টেবলেটকে খেয়াল করলো না।ফিহা যে খুব চতুর ও সব দিকে নজর রাখে সেটা আকশি বুঝতে পেরে মনে মনে নিজেকে আরো সাবধানে থাকার তাগিদ দিলো।আকশি খেয়াল করলো অনিয়া ও ফিহা আজ এক রংয়ের ড্রেস পড়ে এসেছে।দুজনকে বেশ মানিয়েছে। ফিহাকে তার ভালোই লেগেছে।

    আকশিঃ মেয়েটার চেহারাটা বেশ মায়াবী।যতটুকু বুঝলাম অনিয়া ও টেবলেটকে সে অনেক ভালবাসে।আমারতো তাকে ভালোই লেগেছে।চোখ দুটো একটু বেশিই মায়াবী।এক কথায় সব মিলিয়ে অপূর্ব।ধ্যাত,আমি এসব কি ভাবছি? পাগল হয়ে গেলাম নাকি।(মনে মনে)

    ফিহা আকশির চোখের সামনে তুরি বাজালে ওর ধ্যান ভাঙ্গে। এতখন সে এক ধ্যানে ফিহাকে দেখছিলো।সেটা মনে করে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল।

    ফিহাঃ আমার দিকে তাকিয়ে কি ভাবছেন মিস্টার?
    আকশিঃ ক ক কই কিছু না তো।
    ফিহাঃ তোলাচ্ছেন কেন?আপনারা এখানে কেন এসেছেন বলেন তো?আপনাদের বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না।(চোখ, মুখ কুঁচকে)
    আকশিঃ এই রে বুঝে ফেললো নাকি।এবার কি হবে?আদি থাকলে ম্যানেজ করে নিতো।এবার আমি কি করবো?মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।(মনে মনে)

    ফিহা আকাশির মুখের অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে উঠলো। তাতে অবাক হয়ে আকশি ওর দিকে তাকালো।না,মেয়েটা হাসলে আরো বেশি ভালো লাগে।আজ মনে হয় আকশি ফিহার প্রতি পাগল হয়ে যাবে।ফিহার সবকিছু তার ভালো লাগছে।

    ফিহাঃ আমি মজা করছিলাম।আর আপনি সিরিয়াস নিয়ে নিয়েছেন।আপনারা তো এখানে মিটিংয়ের জন্য এসেছেন। সেটাও ভূলে গেছেন নাকি।
    আকশিঃ ভূলে নি মনেই আছে।(হাসি দিয়ে)
    ফিহাঃ আমার মেয়ে কে আমার কোলে দিন।নাকি ওকে আপনি রেখে দিবেন।
    আকশিঃ রাখতে পারলে তো রেখেই দিতাম।আপনাকে কখনও দিতাম না।
    ফিহাঃ আমিও আমার মেয়ে কাউকে দিচ্ছি না বাপু।তাই ওই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
    আকশিঃ আচ্ছা ঝেড়ে ফেললাম।

    আকশি অনিয়াকে উল্টো করে ফিহার দিকে ঘুরিয়ে কথা বলছিলো।ফিহা টুপ করে অনির থুতনিতে আদর করে একটা চুমু খেলো।এক হাতে আলতো করে অনির গাল ধরে রেখেছে।আকশিও এই সুযোগে অনির মাথায় ঠোঁট ছোঁয়ালো।পুরো ঘটনাটা ক্যামেরা বন্দী করতে ভুললো না আদিয়াত।এতো সুন্দর একটা মোমেন্টে পিকচারটা বেশ উঠলো।রুমে ঢোকার সময় হাতে মোবাইল ছিলো।তাই দেরী না করে হুট করে ছবিটা তুলে নিলো।ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে বাচ্চা, বাবা-মা নিয়ে হ্যাপি ফ্যামেলী।তিনজনকে একসাথে বেশ মানিয়েছে।

    #চলবে

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-০৫

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-০৫

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_05
    #Writer_NOVA

    একটা টি-স্টলের সামনে থামনে বাইক থামালো সাফান।স্টল থেকে ম্যাচ নিয়ে সিগারেট ধরালো।বেশ কিছু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে সিগারেট শেষ করলো।
    খাওয়া শেষ করে বাইকে উঠে রওনা দিলো তার গন্তব্যে।অনেক দিন পর প্রিয় মানুষটার সাথে দেখা হবে।সেটা মনে হতেই সাফানের মন খুশিতে ভরে গেল।

    কেবিনের দক্ষিণ পাশের আবছা সবুজ কাচের দিকে তাকিয়ে আনমনে গত কয়েক দিনের কথা ভাবছিলো ফিহা।টেবলেট অনির দোলনার পাশে ঘুমাচ্ছে।অনিয়া চুপচাপ নিজের হাত-পা নিয়ে খেলা করছে।হঠাৎ পেছন থেকে ফিহার চোখ একজোড়া হাত আটকে ফেললো।ফিহা জানে ব্যক্তিটা কে?তাই কোন রিয়েকশন দেখালো না।ওর একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড সাফান ছারা অন্য কেউ এ কাজ করবে না। অন্য কোন ছেলের হয়তো সাহসও হবে না।

    ফিহাঃ চোখ ছার সাফান।
    সাফানঃ (নিশ্চুপ)
    ফিহাঃ কেন এসেছিস এখানে?তোর সাথে আমার কোন কথা নেই। ভালো চাস তো চুপচাপ চোখ ছেড়ে দিয়ে নিজের কাজে চলে যা।

    সাফান বেশ বুঝতে পেরেছে ফিহা ওর সাথে রাগ করেছে।তাই ফিহার চোখ ছেড়ে দিলো।তারপর ফিহার দুই বাহু ধরে ফিহাকে সামনের দিকে ঘুরালো।

    সাফানঃ তুই আমার সাথে রাগ করেছিস মনে হচ্ছে।
    ফিহাঃ আমি কারো সাথে রাগ করি না।সর সামনের থেকে। আমার কাজ আছে।
    সাফানঃ হুম থাকবেই তো।তুই তো এখন বিশাল বড় কোম্পানির ওনার।আকশি চৌধুরীর ওয়ান এন্ড ওনলি ওয়াইফ।কি যেনো বলিস সবাইকে? (একটু ভেবে)ও মনে পরেছে মিসেস চৌধুরী। এম আই রাইট মিসেস চৌধুরী?
    ফিহাঃ বিলাই,হনুমান,বান্দর,শয়তান,ফাজিল,
    গাধা,গিরগিটি। তুই ও মজা নিচ্ছিস।

    ফিহা সাফানকে ইচ্ছে মতো বকে ওর পিঠে কিল, ঘুষি দিতে লাগলো।সাফান ওর হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে। বেশ কিছু সময় মার দেওয়ার পর ফিহা শান্ত হলো।কিন্তু সাফান ওর গায়ে একটা আঁচড়ও দেয়নি।অবশ্য এটা নতুন নয়।এতিমখানায় থাকতে সাফানের সকাল শুরু হতো ফিহার মার খেয়ে।দুজন একসাথে বড় হয়েছে। বেস্ট ফ্রেন্ড ও ভাই-বোনের সম্পর্ক দুজনের মাঝে। যদিও ওদের পরিচয় এতিমখানায়।

    সাফানঃ আমাকে মেরে আলু ভর্তা করে ফেলেছিস।
    আহ্ সারা শরীর ব্যাথা করছে।
    ফিহাঃ আমার মতো সামান্য মশার আঁচড় যে হাতির শরীরে কোন প্রভাব ফেলিনি তা আমি ভালো করে জানি।বড়লোক হয়ে গেছিস তাই আমাকে মনেও পরে না।হুম ভালো ভালো।
    সাফানঃ বড়লোক আমি নই তুই হয়েছিস।বিশাল বড় বাড়ি,অফিস,শ্বশুর, মেয়ে সবকিছু নিয়ে এত বিজি তুই। তোকে তো ফোন দিলেও পাওয়া যাবে না।তাই তোকে আমি ডিস্টার্ব করি নি।
    ফিহাঃ আমায় ভুলে গেছিস সেটা বলিস না কেন?যা যেখান থেকে এসেছিস সেখানে চলে যা।লাগবে না আমার কাউকে।

    কথাটা বলে মুখ ঘুরিয়ে চোখের অবাধ্য পানির ফোঁটা কে সামলানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলো ফিহা।এই কয়েক দিনে সে অনেকটা হাঁফিয়ে উঠেছে।স্বাভাবিক ভাবেই নিজের কাছের আপন মানুষটাকে দেখলে অভিমানটা খুব জোরালো ভাবে জেঁকে বসে মনে। ফিহার ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হয়নি।যেই সাফানকে ছারা তার দুদন্ড চলতো না আজ তাকে ছারা সে রয়েছে। এই পনেরো দিনে এক মিনিটের জন্যও কথা হয়নি।যাতে করে সাফানের প্রতি খুব অভিমান হয়েছে ফিহার।সেটা বুঝতে পেরে সাফান আলতো হাতে ফিহাকে জরিয়ে ধরলো। ফিহা প্রথমে ছারানোর চেষ্টা করলেও পর মুহূর্তে নিজেই সাফানকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।

    সারা পৃথিবীর কাছে ফিহা নিজেকে স্ট্রং দেখালেও এই একটা মানুষের কাছে সে পুরোপুরি দূর্বল।সব মানুষের কাছে নিজের চোখের পানি আড়াল করলেও এই মানুষটার কাছে সে পারে না।সাফান ওর বন্ধু কম ভাই বেশি। যাকে ফিহা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারে।সেই ছোট্ট বেলা থেকে একসাথে বড় হয়েছে। দুজন দুজনকে ঠিক কতটা চেনে তা হয়তে আমি বুঝাতে পারবো না।ওদের মাঝেও ভালবাসার সম্পর্ক আছে।তবে সেটা বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি কিছু নয়।
    বাবা-মা না থাকায় ফিহার সবচেয়ে কাছের মানুষ সাফান। সাফান সবসময় ফিহাকে হেল্প করে।ফিহার বেঁচে থাকাটাই সম্ভব হয়েছে ওর জন্য। আজ যদি সাফান না থাকতো তাহলে কবে ফিহা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতো।হারিয়ে যেতে এই স্বার্থপর পৃথিবী থেকে।আমরা তো সবসময় এমন একটা বন্ধু চাই যে আমাদেরকে বুঝতে পারবে,সারা পৃথিবীর সাথে আমাদের জন্য যুদ্ধ করবে,দিন শেষে ক্লান্তি বেশে থাকলে জিজ্ঞেস করবে আমরা ঠিক আছি কি না।এক চিলতে মুখের হাসির জন্য হাজারটা বাহানা খুঁজবে। সাফান ঠিক এরকম একটা বন্ধু ফিহার।

    ফিহা চোখ বুজে এখনো কান্না করছে।সাফান ওকে থামালো না।কান্না করলে মনটা হালকা হয়।আজ ফিহা কান্না করে এই পনেরো দিনের সব বোঝা মাথা থেকে হালকা করুক।ফিহার কান্নার আওয়াজটা কমে আসতেই সাফান ওর মাথায় হাত রাখলো।

    সাফানঃ ধূর,পাগলী কাঁদছিস কেন? আমি আছি না।তোর এই বন্ধু থাকতে তোকে কেউ কিছু করতে পারবে না।আমি কখনও তোর কিছু হতেই দিবো না।তুই যে আমার ওয়ান এন্ড ওনলি বেস্ট ফ্রেন্ড +বোন।কোন ভাই কি তার বোনের কোন ক্ষতি হতে দিতে পারে?তুই বল।আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের দিকে যে আঙুল তুলবে পরের দিন তার হাত সে খুঁজে পাবে না।

    ব্যাস, আর কি লাগে? একটা মেয়েকে যখন তার বিশ্বাস্ত মানুষটা মাথায় হাত রেখে এই কথাগুলো বলে তখন সে মানসিকভাবে নিজেকে এতটা প্রস্তুত করে যে পুরো পৃথিবীর সাথে সে একাই লড়াই করতে পারবে।কিন্তু আফসোস সবার কপালে এমন ফ্রেন্ড জোটে না।ফিহা সত্যিই ভাগ্যবতী।তাই সাফানের মতো এতো ভালো একটা বন্ধু পেয়েছে।

    সাফানঃ হয়েছে তো এবার আমাকে ছাড়।তোর মতো মুটকি আমারে এইভাবে ধইরা রাখলে আমি তো গাইল্লা যামু বোইন।এবার আমারে ছাইরা একটু সইরা দাঁড়া। আমার নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। তোকে মুটকি বললে মুটকিরেও অপমান করা হবে।
    ফিহাঃ কি বললি তুই?

    ফিহা সাফানকে ছেড়ে দিয়ে রেগে ওর কান টেনে ধরলো।আজকে ওর খবর আছে।
    সাফানঃ ছার হাতি লাগছে তো।
    ফিহাঃ হাতি কে আমি, নাকি তুই?
    সাফানঃ খেয়ে খেয়ে তো দিনকে দিন ফুলতাছিস।কবে জানি বাস্ট হয়ে যাস।তখন তোর জামাই কপাল চাপড়াবে।
    ফিহাঃ তুই থামবি।
    সাফানঃ না না হ্যাঁ থামবো।বোইন এবার কানটা ছার।আমার কানটাকে টেনে টেনে তো বড় করে ফেললি।
    ফিহাঃ একদম ঠিক করেছি।আর কখনও মুটকি বলবি।মনে রাখিস কান মলাটা।
    সাফানঃ তোকে মুটকি বলবো না।এখন থেকে হাতি বলবো রে হাতি।
    ফিহাঃ আমার ওজন মাত্র ৫০ কেজি।আর তুই আমাকে হাতি বলিস কোন দিক দিয়ে। শয়তান,ডানকি,মানকি,ফাজিল।ভাগ চোখের সামনে থেকে। আসতে না আসতেই শয়তানি শুরু করেছিস।
    সাফানঃ হাতি মেরি সাথি।দয়া করে কানটা ছেড়ে দেও।তুই না আমার ভালো বোইন।
    ফিহাঃ যা এবারের মতো ছেড়ে দিলাম।
    (কান ছেড়ে দিয়ে)
    সাফানঃ
    কি সুন্দর তারাগুলো,
    জোসনা তাহার রাত্রী।
    আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে,
    একপাল মোটা হাতি।

    সাফানের কবিতা শুনে ফিহা হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেছে। সাফান মানুষটা খুব রসিক।যেখানে যাবে সবসময় হাসিতে সবাইকে মাতিয়ে রাখবে।যার কারণে ফিহা ওকে আরো বেশি পছন্দ করে।তবে বন্ধু হিসেবে।অন্য কিছুতে নয়।যারা এমন সবাইকে হাসি-খুশিতে মাতিয়ে রাখে তাদের মনেই হাজার দুঃখের ভীর থাকে।তেমনি সাফানের মনেও আছে।তবে সেটা সে কাউকে বুঝতে দেয় না।ফিহা এখনো হাসছে।ওর সাথে থাকলে ফিহার মনটা এমনি ভালো হয়ে যায়।ফিহা হাসি থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো।

    ফিহাঃ এটা কি হলো?
    সাফানঃ এটা একটা সুন্দর কবিতা হলো।আমাদের সোলাইমান ভাইয়ের থেকে শুনেছিলাম।খুব সুন্দর তাই না।
    ফিহাঃ তোকে ইচ্ছে করছে নিজ হাতে গলা টিপে হত্যা করতে।তুই জীবনেও ভালো হবি না।

    ওদের কথার মাঝে অনিয়া কান্না করে উঠলো।ফিহা জলদী গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো।
    ফিহাঃ এই তো মা-মণি।এই যে আমি এখানে।দেখ কে এসেছে।তোমার মামা তোমার সাথে দেখা করতে এসেছে।তোমার মামার সাথে আমরা কথা বলবো না ঠিক আছে।এত দিন পরে কেন এসেছে?সে জন্য তার সাথে আড়ি।

    সাফানঃ বাহ্ তুই বিয়ে ছারা এক বাচ্চার মা ও হয়ে গেলি।থাক তোর আর কষ্ট করতে হবে না।রেডিমেড মা হয়ে গেছিস।
    ফিহাঃ পায়ে কিন্তু আমার দামী ব্রান্ডের জুতো আছে।ঠাস করে দুই গালে দুটো দিলে দ্বীন- দুনিয়ার সব ভূলে যাবি।কথা সাবধানে বলিস।
    সাফানঃ আচ্ছা 🥺।আমি তো ভুলেই গিয়েছি তুই এখন মিসেস চৌধুরী। বাদ দেই এসব।এবার তোর মেয়েটাকে আমার কোলে একটু দে তো।আমার ওয়ান এন্ড ওনলি ভাগ্নি কে আমিই এখনো কোলে নেই নি।এসব কি ভাবা যায় বল?
    ফিহাঃ তুই কি তোর ঐ ওয়ান এন্ড ওনলি কথাটা ছারবি।এটা তোর কথার মধ্যে মুদ্রা দোষ। এটা বদলাতে শেখ।
    সাফানঃ পকপক না করে আমার ভাগ্নিকে দে তো।
    ফিহাঃ দাঁড়া একটু।
    সাফানঃ আমি দাঁড়াতে পারবো না।এখনি দিবি।এত কষ্ট করে ওর জন্য আমি এখানে এলাম।আর তুই নাকি ওকেই দিবি না।
    ফিহাঃ ও এখন আসলের থেকে সুদের মায়া বেশি হয়ে গেছে। আমি তোর কেউ নয়।
    সাফানঃ কথা বলিস না। দে আমার কাছে।
    ফিহাঃ ব্যস্ত হচ্ছিস কেন তুই? অনির ডায়পার লিক করেছি।আমি পাল্টিয়ে দিচ্ছি তোকে।নাকি এভাবেই নিবি।নে ধর তাহলে।তোর টি-শার্ট পুরো ভিজে যাক।

    সাফানের আগ্রহ দেখে শেষ পর্যন্ত অনিয়াকে ওর কোলে দিতেই হলো।সাফানের কোলেই ফিহা ডায়পার চেঞ্জ করে দিলো।তারপর সাফান অনিয়ার সাথে কথা বলতে শুরু করলো।অনিয়াও খুশি হয়ে ওর সাথে মুখ নারাতে শুরু করলো।

    সাফানঃ আমার মামা কোথায়?তোমার মা একটু ভালো না অনেক পঁচা। দেখো আমার সাথে কেমন করে।একটু ভালো না।ওকে পাল্টিয়ে নতুন মা নিয়ে আসবো আমরা।এই মুটকি কে রাখবো না।পোল্ট্রি মুরগির মতো সবসময় বসে বসে খায়।কাজের কাজ তো একটু করে না।

    সাফানের কথা শেষ হওয়ার আগেই অনিয়া জোরে কান্না শুরু করলো।ওর মা কে যে খারাপ বলেছে সেটা বোধ হয় সে বুঝে গেছে।
    সাফানঃ কি রে এই কয়েক দিনে এতো জাদু করে ফেলছিস।তোকে এসব কথা বলায় দেখ কান্না করে দিলো।মনে হচ্ছে সব বুঝে ফেলেছে।
    ফিহাঃ তুই আমার মেয়ে কে চিমটি মারছিস আর আমার মেয়ে কাঁদবে না তা কি হয়?তাছারা ওর মা ওর জীবন।তুই সে মাকে নিয়ে বাজে কথা বলবি আমার মেয়ে বুঝতে পারবে না।তোর মতো শয়তানকে চিনতে আমার মেয়ে ভূল করে না।
    সাফানঃ যেমন মা তেমন মেয়ে। দেখতে হবে না মেয়েটা কার?
    ফিহাঃ আমার মেয়ে কে নিয়ে একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবি না।

    টেবলেট এতখন ওদের কথা শুনছিলো।এবার সাফানের সামনে এসে ঘেউ ঘেউ শুরু করলো।ফিহাকে যে এতগুলো কথা বলেছে সেটা টেবলেটও বুঝতে পেরেছে।
    সাফানঃ এটা আবার কোথা থেকে আসলো?এই টাকে তো এতখন খেয়াল করি নি।
    ফিহাঃ এটা আমাদের পোষা কুকুর। তুই আমাকে নানা কথা বলবি আর ওরা কিছু বলবে না।এখন থেকে আমাকে কিছু বলতে হবে না।আমার মেয়ে ও কুকুরই উত্তর দিয়ে দিবে।
    সাফানঃ যা বাবা!! এটাকেও পটিয়ে নিয়েছিস।ভালো ভালো খুব ভালো।

    ফিহা ফিটার তৈরি করে অনিয়াকে খাওয়াতে লাগলো।তখনি ওর চোখ গেলো সাফানের দিকে।বয়স খুব বেশি নয়। ২৫ শেষ হওয়ার পথে।গায়ের রংটা তামাটে বর্ণের।ওর মুখের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ওর হালকা গোলাপি বর্ণের ঠোঁট দুটো।চুলগুলো এলোমেলো। পরনে ডার্ক ব্লু টি-শার্ট, সাদা প্যান্ট।পায়ে বেল্টের জুতো। কিছু সময় ফিহা ভেবে বললো।

    ফিহাঃ চল আমার সাথে।
    সাফানঃ কোথায় যাবো?
    ফিহাঃ আমার কিছু কেনাকাটা আছে।অফিসে আজ তেমন কোন কাজের চাপ নেই। টেবলেটের জন্য, অনিয়ার জন্য কিছু ড্রেস লাগবে।
    সাফানঃ তুই যা। আমি তোর সাথে কেন যাবো?
    ফিহাঃ তুই আমার মেয়ে কে রাখবি।আর আমি কেনাকাটা করবো।
    সাফানঃ আমি যাবো না।তোদের মেয়েদের সাথে
    শপিং -এ যাওয়া মানে আমার সারাদিন শুধু শুধু নষ্ট করা।একবার আমার গার্লফ্রেন্ড সারার সাথে গিয়ে আমার শিক্ষা হয়ে গেছে।
    ফিহাঃ তুই যাবি না তো তোর ঘাড়ে যাবে।জলদী চল।তুই আমার মেয়ে ও শপিং ব্যাগ ধরতে যাবি।

    সাফানকে টেনে নিয়ে গাড়িতে উঠলো ফিহা।আজ ওর অবস্থা নাজেহাল করে ছারবে সে।অবশ্য শপিং করবে সাফানের জন্য। কিন্তু সাফানকে বললে সে রাজী হবে না।তাই ওকে জানালো না।

    #চলবে

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-০৪

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-০৪

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_04
    #Writer_NOVA

    অফিসে আসার পর থেকে ফিহার ভালো লাগছে না।মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে।অনিকে বেবি দোলনায় শুইয়ে দিয়ে টেবলেট কে বললো।

    ফিহাঃ টেবলেট অামার মাম্মাম -এর দোলনাটা আস্তে আস্তে ধাক্কা দিয়ে দে তো।আমার মাথাটা এতো ব্যাথা করছে কেন বুঝতে পারছি না। একটু খেয়াল রাখিস ওর।আমি বোধ হয় মাঢা ঘুরিয়ে পরে যাবো।

    ফিহার কথা শুনে টেবলেট দৌড়ে টেবিলের দিকে গেল।সেখানে ছোট দুইটা ড্রয়ার আছে।একটা ড্রয়ারের উপরে আঁচড় কাটতে লাগলো।এর মানে হলো টেবলেট সেটা খুলতে চাইছে।ফিহা সেটা খেয়াল করে ওর কাছে এগিয়ে গেলো।

    ফিহাঃ কি হয়েছে টেবলেট? তুই এখানে কি খুঁজছিস? তুই সামনে থেকে সর আমি দেখছি।

    টেবলেট সরে গেল।ফিহা ড্রয়ার খুলে সেখানে মাথা ব্যাথার বাম দেখতে পেলো।মুখটা এমনি খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে গেল।ফিহা যত টেবলেট কে দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। সাথে ভালবাসার পরিমাণটাও বেড়ে যাচ্ছে। একটা বোবা প্রাণী যে মানুষকে কতটা হেল্প করতে পারে সেটা টেবলেটকে দেখে বোঝা যায়।আসলেন এটা সত্যি। কারণ আপনি মানুষ কে তিনবছর জান-প্রাণ দিয়ে সাহায্য করবেন। কিন্তু সে তিনদিনও মনে রাখবে না।অথচ এই বোবা প্রাণীটাকে তিনদিন সাহায্য করবেন তারা তিন বছরের বেশি আপনাকে মনে রাখবে।ফিহা খুশি হয়ে টেবলেটকে কোলে নিলো।

    ফিহাঃ তোর মালিক তোকে ভালো শিক্ষা দিয়েছে।যত দেখি তোকে ততই মুগ্ধ হয়ে যাই।তুই সবসময় আমার ও অনির সাথে থাকবি।তুই সাথে থাকলে অনেক ভালো লাগে।আমি আগে বামটা কপালে লাগিয়ে নেই।তারপর তোর সাথে কথা বলি।

    বাম লাগানো শেষ হতেই অনিয়া হাত পা তুলে গগণ বিদারক চিৎকার শুরু করলো।ওর সামনে কাউকে না দেখে সে তার একাকিত্ব জানান দিচ্ছে। ফিহা দৌড়ে গিয়ে অনিয়াকে কোলে তুলে নিলো।

    ফিহাঃ ওরে আমার জাদু। কি হয়েছে তোমার লক্ষ্মীটা?তোমার মাম্মাম এখানেই আছে।আমি কি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারি?মা কি তার মেয়ে ছেরে চলে যাবে।যে যাই বলুক তুমি আমার মেয়ে।মা কি শুধু জন্ম দিলেই হয় যায়।মা হতে তো কতগুলো দায়িত্ব লাগে।আমি না হয় জন্ম না দিয়ে সেই দায়িত্ব পালন করে তোমার মা হয়ে থাকবো।আমি তোমার আর্দশ মা হয়ে দেখাবো।তুমি আমার পরিচয়ে বড় হবে।এখন আমার মানিক, একটু কান্না বন্ধ করো।তোমার মা তোমার সাথেই আছে,আর সাথেই থাকবে।আমার মা-মণির কি খুদা লেগেছে।মাম্মাম পঁচা তাই না মা-মণি।তোমার খিদে পেয়েছে এখনো খাবার দেইনি।এক্ষুনি দিচ্ছি সোনা মণি।

    ফিহার গলার আওয়াজ পেয়ে অনিয়ার কান্না বন্ধ হয়ে গেছে।তখনি কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে অনুমতি চাইলো আবদুল আজিজ সাহেব।

    আবদুলঃ আসতে পারি ছোট বউমা।
    ফিহাঃ আরে চাচা আসুন।এটা তো আপনাদের অফিস।অনুমতি নেওয়ার কি আছে।
    আবদুলঃ অনি দিদিভাই।কি হয়েছে তোমার?মায়ের কোলে সবসময় বসে থাকলে মা কাজ করবে কি করে?মা সারা দিন কত কাজ করে।তুমি যদি মায়ের কোলে উঠে বসে থাকো তাহলে মায়ের কাজ করতে সমস্যা হবে।তুমি তো ভালো মেয়ে।ভালো মেয়েরা কখনও মা-মণিকে জ্বালাতন করে না।

    আবদুল সাহেবের কথা শুনে খিল খিল করে হাসছে অনিয়া।এমন ভাবে হাসছে মনে হয় সব কিছু সে বুঝতে পেরছে।ফিহা ফিটার তৈরি করছে।
    আবদুলঃ দাও ছোট বউমা।আমার কাছে দিদিভাইকে দেও।তুমি ওকে নিয়ে কাজ করতে পারবে না।আমি দিদিভাইকে রাখছি। তুমি ফিটার তৈরি করো।
    ফিহাঃ না পারলেও অভ্যাস তো করতে হবে চাচা।আমি আমার মেয়ের গায়ে একটা ফুলের আঁচড়ও লাগতে দিবো না।এখন যে আমার অনেক দায়িত্ব। অনিয়াকে মানুষের মতো মানুষ করতে হবে।সারা পৃথিবীর কালো ছায়া থেকে ওকে রক্ষা করতে হবে।তা না হলে আমি যে মা হয়ে ব্যর্থ হয়ে যাবো।

    ফিহা অনিয়াকে আবদুল সাহেবের কোলে দিয়ে কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে গেল।
    আবদুলঃ মা গো তোমার মতো যদি সবাই বুঝতো।তাহলে হয়তো কোন বাচ্চা আজ এতিমখানায় থাকতো না।যখনি কোন দম্পতির সন্তান না থাকে তাহলে আমরা আফসোস করি।কিন্তু কোন এতিমখানার বাচ্চার বাবা -মা না থাকলে আমাদের মনে আফসোস হয় না।আমরা ভাবি সে তো এতিমখানায় আছে তার মানে ভালো আছে।সন্তান ছারা বাবা-মায়ের কষ্টের চেয়ে যে বাবা-মা হীন সন্তানের কি কষ্ট সেটা আমরা উপলব্ধি করি না।যদি করতাম তাহলে হয়তো মনবতা নামক বস্তুটা আরো উচ্চ মর্যদায় থাকতো।

    ফিহাঃ বাবা-মা হীন থাকা যে কি কষ্টের সেটা আমি জানি চাচা।প্রতিটা মুহূর্তে নিজেকে কুঁড়ে কুঁড়ে কষ্ট দেয়।মাথার ওপর একটা ছায়া নেই। পায়ের নিচে মাটি নেই। মুখ মুছে দেওয়ার জন্য কোন আঁচল নেই। মাঝে মাঝে বেঁচে থাকতেও ইচ্ছে হয় না।তারপরও বেঁচে থাকতে হয়।সেজন্য আমিও চাই না অনি তার মা ছারা বাঁচুক। আমি শুধু মাত্র এই ছয় মাসের বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে এখানে এসেছি।আমি একটা মা হীনা মেয়ে হয়ে অন্য বাচ্চাকে তো মায়ের অভাব বুঝাতে দিতে পারি না।তাই আমি ওকে আমার সর্বস্ব দিয়ে বড় করবো।

    হাতের ফিটার টাকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে কথাগুলো বললো ফিহা।আবদুল সাহেবের কোল থেকে অনিয়াকে নিয়ে ফিটার খাওয়াতে লাগলো।
    ফিহাঃ চাচা, কোন দরকার ছিলো?
    আবদুলঃ কতগুলো ফাইলে তোমার সাইন লাগতো।
    ফিহাঃ দিন আমি করে দিচ্ছি।
    আবদুলঃ তুমি আগে অনি দিদিভাই কে ফিটার খাইয়ে নেও।তারপর সব কাজ।
    ফিহাঃ আমাকে এখন একসাথে সব সামলাতে হবে চাচা।এক হাতে আমার মেয়ে আরেক হাতে অফিস।এখন থেকেই সব অনুশীলন করে রাখতে হবে।

    ফিহা একহাতে অনিকে ধরে আরেক হাতে সাইন করে দিলো।আবদুল সাহেব অবাক চাহনিতে ফিহার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটাকে দেখে দিনকে দিন শুধু মুগ্ধ হচ্ছে। আচার,ব্যবহার, মন-মানসিকতা মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।নিজের মেয়ে নয়,নিজের অফিস নয়।তারপরও নিঃস্বার্থ ভাবে সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।অবিবাহিত হয়েও মায়ের অধিকার নিয়ে দাঁড়িয়েছে অনিয়ার পাশে।
    ফিহাঃ নিন চাচা,হয়ে গেছে।
    আবদুলঃ মা গো তোমায় দেখলে মনটা ভরে যায়।মেয়ে জাতির প্রতি শ্রদ্ধাটা আরেক ধাপ বেড়ে যায়।

    সত্যি তোমার মতো মেয়ে যদি ঘরে ঘরে থাকতো।
    ফিহা এত কথার বিনিময়ে শুধু মুচকি হাসলো।আবদুল সাহেব ফাইল কমপ্লিট করে খুশি মনে চলে গেল।ফিহা অনিয়াকে খাইয়ে ঘুৃম পারাতে লাগলো।কিছু সময়ের মধ্যে অনিয়া ঘুমিয়ে পরলো।অনিয়াকে দোলনায় শুইয়ে দিয়ে টেবলেটকে এক প্যাকেট বিস্কুট এগিয়ে দিলো।এত সময় ধরে টেবলেট দোলনার পাশে ঘাপটি মেরে বসে ছিলো।বিস্কুট পেয়ে টেবলেট খুশি মনে খেতে লাগলো।

    বাসায় এসে আনিস চৌধুরীর সাথে বসে রাতের খাবার খেলো। তারপর অনিয়াকে এক হাতের ওপর নিলো।ফিহা নিজের ও অনির গায়ে চাদর টেনে দিয়ে ঘুমের দেশে পারি দিলো।গভীর রাতে অনিয়া নড়েচড়ে উঠলো।ওর নড়াচড়া ফিহা ঘুমের ঘোরে বুঝতে পারলো। অনিয়া কান্না করতে নিলেই ফিহা ঘুমের ঘোরে ওর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।যাতে করে অনিয়া আর কান্না করলো না।ঠোঁট ফুলিয়ে রাখলো।

    #চলবে

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-০৩

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-০৩

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_03
    #Writer_NOVA

    ল্যাপটপে এক ধ্যানে কিছু একটা করছিলো আকশি।সারা পৃথিবীর কাছে সে মৃত হলেও আসলে সে মৃত নয়।ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে। সেটা অবশ্য সম্ভব হয়েছে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড আদিয়াতের জন্য। খাটের মধ্যে বসে দুই পা মুড়ে ল্যাপটপে মনোযোগ সহকারে কাজ করছে আকশি।তখনি খুব দ্রুত রুমে ঢুকলো আদিয়াত।চোখ মুখে তার বিস্ময়।

    আকশিঃ কি হয়েছে আদি?এনিথিং রং?এরকম করে হা করে কি দেখছিস?
    আদিয়াতঃ আকশি তুই বিয়ে করেছিস?

    আদিয়াতের প্রশ্ন শুনে আকশি ল্যাপটপের স্ক্রীনটা বন্ধ করে ওর দিকে তাকালো। চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকালো।আদিয়াতের এই প্রশ্নটা আকশির হজম হলো না।ছেলেটা কি ভর দুপুরে উল্টো পাল্টা কিছু খেয়ে এসেছে নাকি?

    আকশিঃ আর ইউ ওকে?তুই কি এই দুপুরে ড্রিংক করেছিস?মাথা ঠিক আছে তো ভাই।
    আদিয়াতঃ আমার কথার উত্তর দে।তুই কি আমাদের না জানিয়ে বিয়ে করেছিস।
    আকশিঃ প্রচুর খিদে পেয়েছে। যা গিয়ে খাবার তৈরি কর।আমার এসব মজা করার কোন ইচ্ছে নেই।
    আদিয়াতঃ আমি মজা করছি না আকশি।আমি সিরিয়াসভাবে জিজ্ঞেস করছি।তুই কি সবাইকে না জানিয়ে কোন বিয়ে করেছিস?আর তোর কি কোন মেয়ে আছে?

    আদিয়াতের কথা শুনে আকশি কপাল কুঁচকে ওর দিকে তাকালো। কারণ আদিয়াত কোন মজা করছে না।বরং সিরিয়াস ভাবে কথাগুলো বলছে।

    আকশিঃ আদি তুই ভালো করে জানিস আমি এখনো বিয়েই করিনি।তাহলে আমার বাচ্চা আসবে কি করে?
    আদিয়াতঃ তুই সত্যি বলছিস তো?
    আকশিঃ আমি সত্যি বলছি।আমি বিয়ে করবো আর তুই জানবি না তা কি হয়?
    আদিয়াতঃ তাহলে ঐ মেয়েটা আর বাচ্চাটা কে?
    আকশিঃ কোন মেয়ে আর কোন বাচ্চা?
    আদিয়াতঃ একটা মেয়ে তোর বউয়ের পরিচয়ে তোদের কোম্পানি চালাচ্ছে। ওর সাথে সবসময় একটা মাস ছয়েকের একটা বাচ্চা থাকে।আর মেয়েটা সবার কাছে বলে সেটা তোদের বাচ্চা।
    আকশিঃ হোয়াট??কি বলছিস তুই? (অবাক হয়ে)
    আদিয়াতঃ আমি সত্যি বলছি।তুই সত্যি আমাদের না জানিয়ে বিয়ে করে নিস নি তো।
    আকশিঃ কি সব কথা বলছিস বল তো?আই এম সিউর মেয়েটা ফ্রড।আমাদের টাকা, পয়সা,সম্পত্তি হাতানোর জন্য এসব মিথ্যে নাটক করছে।
    আদিয়াতঃ তোর বাবা পুরো কোম্পানির দায়িত্ব মেয়েটার ওপর দিয়ে দিয়েছে।এখন তোদের সবকিছু মেয়েটা সামলায়।
    আকশিঃ বাবা কোম্পানি ওর হাতে তুলে দিছে।কিন্তু কেন?আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না।
    আদিয়াতঃ তুই কি মেয়েটা কে চিনিস?
    আকশিঃ আমি কি করে মেয়েটা কে চিনবো?
    আদিয়াতঃ আমি তোকে মেয়েটার ছবি দেখাচ্ছি। দেখতো চিনিস কি না।

    আদিয়াত মোবাইল বের করে ফিহা ও অনিয়ার একসাথে থাকা একটা ছবি দেখালো।আকশি চোখ মুখ শক্ত করে বললো।

    আকশিঃ আমি এই মেয়েকে চিনি না। জীবনে কোন দিন দেখিও নি।কিন্তু বাচ্চাটা মনে হচ্ছে অনিয়ার মতো।আমি সিউর মেয়েটা কোন বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে।আমি নিশ্চিত আমাদের প্রোপার্টি হাত করে পালাবে।
    আদিয়াতঃ পালানোর হলে এতদিন বসে থাকতো না।আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি মেয়েটা পনেরো দিন হলো তোদের বাসায় আছে।তোর বাবা পুরো কোম্পানির দায়িত্ব মেয়েটার ঘাড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে হাফ ছাড়ছে।যদি মেয়েটার পালানোর ইচ্ছে থাকতো তাহলে এত দিন বসে থাকতো না।তোর ভাষ্য মতে বুঝলাম যে বাচ্চাটা অনিয়া হবে।
    আকশিঃ কিন্তু মেয়েটা কে?কি উদ্দেশ্য মেয়েটা আমার বউ বলে সবার কাছে পরিচয় দিচ্ছে?সবকিছু কি রকম ঘোলাটে লাগছে আমার কাছে।
    আদিয়াতঃ আমার মনে হয় কি, তোর ভাই ভাবী যেহেতু মারা গেছে সে কারণে হয়তো অনিয়াকে লালন-পালন করার জন্য তোর বাবা মেয়েটাকে এনেছে।
    আকশিঃ সে না হয় বুঝলাম।কিন্তু আমার বউয়ের পরিচয়, কোম্পানি চালানোর ব্যপরটা তো বুঝলাম না।তুই তো আমাকে চিন্তায় ফেলে দিলি।
    আদিয়াতঃ তোদের নাকি দুই বছর আগে বিয়ে হয়েছে?
    আকশিঃ কি-ই-ই-ই?
    আদিয়াতঃ এমনটাই তো সবার মুখ থেকে শুনলাম।
    আকশিঃ নিশ্চয়ই এর পেছনে বড় কোন রহস্য আছে। সেই রহস্য আমায় খুঁজে বের করতে হবে। হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না।কাজে লেগে পর।মেয়েটার সব ডিটেলস আমার চাই। কোথা থেকে এসেছে,ওর উদ্দেশ্য কি,আমার বউ বলে কেন পরিচয় দিচ্ছে, অনিকে আমার মেয়ে কেন বলছে সবকিছু।
    আদিয়াতঃ বাহ্ আকশি!! তুই দেখছি বউয়ের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য উঠে-পরে লেগেছিস।যাই বলিস মেয়েটা কিন্তু দেখতে মাশাল্লাহ। তোর সাথে হেব্বি মানাবে।যাকে বলে পারফেক্ট জুরি।(মুখ টিপে হেসে)
    আকশিঃ তুই একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়েও মজা করছিস।আমি মেয়েটাকে কখনও দেখি নি।আর বিয়ে করা বউ কি করে হতে পারে বল।মেয়েটার পেছনে লোক লাগিয়ে দে।ওর সব ইনফরমেশন আমার চাই। বাসায়, অফিসে সব জায়গায় সি সি টিভি ফুটেজ লাগাবি।যাতে ২৪ ঘন্টা আমি মেয়েটাকে চোখে চোখে রাখতে পারি।
    আদিয়াতঃ ভালবাসা মনে হচ্ছে উথলে পরছে।এতো ভালবাসিস বউকে।এক মিনিটের জন্য চোখের আড়াল করতে চাচ্ছিস না।আমার তো মনে হচ্ছে সত্যি মপয়েটা তোর বউ ।
    আকশিঃ বেশি কথা না বলে চুপচাপ যা বলেছি তাই কর।আমার কালকের মধ্যে সব কমপ্লিট চাই।
    আদিয়াতঃ হঠাৎ তুই এতো সিরিয়াস হয়ে গেলি কেন?
    আকশিঃ কারণ আমার মেয়েটাকে যাচাই করে দেখা উচিত।এমনো হতে পারে মেয়েটা আমাদের শত্রু পক্ষের।যদি বাবা ও অনিয়ার কোন ক্ষতি করে ফেলে।বর্তমানে আমার পরিবারের দুইজন ছারাতো আর কেউ বেঁচে নেই।
    আদিয়াতঃ আরেকজন আছে তোর এই বউ।মেয়েটা কিন্তু দেখতে অনেক সুন্দরী। চেহারাটা কি মায়াবী?ভাই তোর পছন্দ না হলে আমাকে দিয়ে দে।আমি বিয়ে করে নেবো মেয়েটাকে।
    আকশিঃ তোর এই ফালতু কথা বন্ধ করে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা কর।আর আমি যা বলেছি তা যাতে কালকের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়।
    আদিয়াতঃ যথা আঙ্গা মহারাজ। আপনি যা বলেছেন তা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো।কালকের মধ্যে তোদের বাড়ি ও অফিসের সি সি টিভি ফুটেজ তোর ল্যাপটপে থাকবে।
    আকশিঃ কথার যাতে হেরফের না হয়।
    আদিয়াতঃ সবই বুঝলাম কিন্তু একটা জিনিস মাথায় ঢুকছে না।তুই মেয়েটাকে নিয়ে এতো হাইপার হচ্ছিস কেন?প্রেমে-টেমে পরে যাস নি তো।
    আকশিঃ তুই কি এখান থেকে যাবি।নাকি আমার হাত দুটো তোর মুখে প্রয়োগ করবো।
    আদিয়াতঃ যাচ্ছি যাচ্ছি। পারিস তো ঐ একটাই।তবে আরেকটা কথা।
    আকশিঃ আবার কি?
    আদিয়াতঃ তুই নিজেকে গা ঢাকা দিয়ে এই দূর্গম পাহাড়ে কেন লুকিয়ে রেখেছিস।তুই তো নিজে গিয়ে কোম্পানি চালাতে পারতি।
    আকশিঃ সময় হলে সব বলবো।এখন জলদী করে খাবারের ব্যবস্থা কর।
    আদিয়াতঃ তুই কি আমাকে তোর চাকর ভাবিস।
    আকশিঃ তার থেকেও কম কিছু ভাবি।
    আদিয়াতঃ হারামী,আমি এত কষ্ট করে সবকিছু করি।আর তুই আমার সাথে এমন করিস।আমি দোয়া করে দিলাম তোর কপালে এই মেয়েটাই পরবে।তুই মিলিয়ে নিস।আমার কথা কখনো ভূল হয় না।
    আকাশিঃ কথা না বলে জলদী ভাগ।
    আদিয়াতঃ যাচ্ছি যাচ্ছি। আমার হয়েছে যত জ্বালা।

    আদিয়াত খাবারের সন্ধানে বের হয়ে গেল।আকশি বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। মাথাটা তার ঝিমঝিম করছে। কিছু তেই অঙ্ক মিলাতে পারছে না।সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। তিন মাস ধরে এখানে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। সামনে তাকিয়ে পাহাড় দেখতে মনোযোগ দিলো আকশি।চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। বাইরের দিকে তাকালে মনটা এমনিতে ভালো হয়ে যায়।এখনো সেদিনের কথাটা মনে হলে নিজে নিজে অবাক হয়ে যায়।কি করে বেঁচে গেল সে।

    লন্ডন থেকে ফিরে গাড়িতে উঠে ছিল সে। কিন্তু তার আর বাড়ি ফিরে যাওয়া হলো না।রাস্তা থেকে কিডন্যাপ হয়েছিল।পুরোনো একটা ভাঙাচোরা বাড়িতে টানা তিনদিন না খেয়ে পরে ছিলো।তারপর ওকে ইচ্ছে মতো মেরে শহর থেকে দূরে একটা পরিত্যক্ত জায়গায় ফেলে দেয়।প্রচুর মার দেওয়ার কারণে আকশি নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।কিডন্যাপাররা মৃত ভেবে ফেলে চলে যায়।আদিয়াত অনেক কষ্ট করে ওকে খুঁজে বের করে। তারপর আকশিকে নিয়ে এই দূর্গম পাহাড়ে চলে আসে।সুস্থ হতে বেশ কিছু দিন লেগে যায়।তারপর খবর পায় ওর ভাই-ভাবী কার এক্সিডেন্টে মৃত্যু। ওর কাছে ব্যপারটা আরো রহস্যজনক লেগেছে। যার কারণে সব কিছুর উত্তর খুঁজতে এখানে রয়ে যায়।

    দুপুরের খাবারের পর আদিয়াত বের হয়ে গেল।আকশি এক কাপ চা নিয়ে বারান্দায় বসে ছিলো।গায়ে কালো টি-শার্ট, কালো টাউজার।যদিও আকশি ততটা ফর্সা নয়।তারপরও কালো পরলে ওকে ভীষণ ভালো লাগে। গায়ের রং টা চাপা ফর্সা।বয়স ২৭ এর কাছাকাছি।চেহারার মাঝে সবসময় গম্ভীরতা ফুটে থাকে। উচ্চতা ৬ ফুটের কাছাকাছি। আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছিলো আকশি।ধীর পায়ে আদিয়াত এসে ওর সাথে দাঁড়ালো।

    আকশিঃ কি ব্যাপার তুই চলে এলি যে?
    আদিয়াতঃ এখানে থেকে ঐসব কাজ করা অনেক টাফ হয়ে যাবে।তোর লাইফ রিস্ক হয়ে যেতে পারে।সবচেয়ে বড় কথা অনিয়া ও আঙ্কেলের ক্ষতি হবে।
    আকশিঃ কিন্তু কেন?(কপাল কুঁচকে)
    আদিয়াতঃ তোকে হন্যি হয়ে তোর শত্র পক্ষ খুঁজছে।এখন যদি তুই এসব কাজ করতে যাস তাহলে ওদের অনেক সহজ হবে তোকে খোঁজার জন্য।
    আকশিঃ আমার সাথে কার শত্রুতা ও কেন?সেটাই আমি বুঝতে পারছি না।
    আদিয়াতঃ এখন আমরা কি করবো?

    আকশি কিছু সময় ভেবে আদিয়াতকে বললো।
    আকশিঃ চল আদি।
    আদিয়াতঃ কোথায় যাবো?
    আকশিঃ আমরা আজি ঢাকায় ফিরে যাবো।
    আদিয়াতঃ পাগল হয়ে গেছিস তুই। এখন তোর ওপর হামলা হতে পারে।
    আকশিঃ তুই কথা না বলে সব গোছানো শুরু কর।আমরা আজ রাতের মধ্যে ফিরে যাবো।
    আদিয়াতঃ তুই কি ঠিক আছিস? কি বলছিস এসব?
    আকশিঃ এখানে যেহেতু আমরা গা ঢাকা দিয়ে আছি।কেউ আমাদের চিনতে পারে নি।তেমনি ঢাকায় আমরা ছদ্মবেশে ঐ মেয়েটার দিকে খেয়াল রাখবো।পাশাপাশি আমার কিডন্যাপের পিছনে কে আছে সেটা বের করবো।

    কথাটা বলে আকশি সদা শার্ট ও কালো প্যান্ট নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেলো।ফিরে এসে কালো কোর্টটা গায়ে জরিয়ে নিলো।সাথে দুই হাতে কালো হান্ড গ্লাবস পরে নিলো।

    আদিয়াতঃ তুই যতটা সহজ ভাবছিস ততটা সহজ নয় ব্যাপারটা।
    আকশিঃ চুপচাপ রেডি হয়ে নে।আমরা এখনি বের হচ্ছি।সবকিছু প্যাক করিস।
    আদিয়াতঃ আমি বলতে—
    আকশিঃ আর কোন কথা নয়।জলদী চল।

    আদিয়াত মুখ গোমরা করে তৈরি হতে চলে গেল।আকশি কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসলো।

    আকশিঃ আকশি চৌধুরীর বউকে তো একটু দেখতেই হয়।আমার বিয়ে হয়েছে সেটা আমিই জানি না।ব্যাপারটা কি রকম হাস্যকর।আমার একটা সুন্দরী বউ ও বাচ্চা আছে।আগে জানলে তো আরো আগে ঢাকায় ফিরতাম।কি অদ্ভুত কথা!! আমার বউ এখনো আমি দেখিনি।বউ রেডি থেকো।তোমার স্বামী আসছে তোমার কাছে। ভয় পেয়ো না।এখন থেকে ২৪ ঘন্টা তোমার খেয়াল রাখবো।শত হোক আমার বউ বলে কথা।

    কথাগুলো নিজের মনে মনে বলে রহস্যময়ী হাসি দিলো আকশি।তারপর খুব শীঘ্রই আদিয়াতকে নিয়ে রওনা দিলো ঢাকার উদ্দেশ্য।

    #চলবে

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-০২

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-০২

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_02
    #Writer_NOVA

    বারান্দায় দাঁড়িয়ে এক কাপ কফি হাতে নিয়ে আকাশ দেখছে ফিহা।বেবি দোলনায় অনিয়া শুয়ে আছে। টেবলেট দোলনাটা ধাক্কা দিচ্ছে। আর অনিয়া খিলখিল করে হাসছে।অনিয়ার হাসি রুমে ঝংকার দিয়ে ফিহার কানে এসে বাজছে।হাসির শব্দে ফিহার মনটা ভালো হয়ে গেছে। দুই -তিন বার বারান্দা থেকে উঁকি মেরে ফিহা অনিকে দেখে নিলো।কফির মগে চুমুক দিয়ে বড় করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছারলো। ফিহা বাসায় অল টাইম সেলোয়ার-কামিজ পড়ে থাকে।অফিসে শাড়ি পড়ে যায়। তখনি রুমে ঢুকলো আনিস চৌধুরী। অনির দোলনার কাছে গিয়ে ওর সাথে কথা বলতে লাগলো।

    আনিসঃ আমার দিদিভাই টা কোথায়?দিদিভাই আজ মায়ের সঙ্গে অফিস করে এসেছে। তুমি একাই তো পুরো অফিসটা সামলাতে পারো।মাম্মিকে কষ্ট করে কি জন্য যেতে হবে?তুমি বড় হয়ে একাই সব সামলাবে।তুমি কিন্তু দিদিভাই একদম মাম্মিকে জ্বলাবে না।মাম্মি সারাদিন কত কষ্ট করে? তুমি যদি জ্বালাও তাহলে মাম্মি এতো কিছু একা সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে পরবে।

    দাদা-ভাইয়ের কন্ঠ পেয়ে অনিয়া এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অনিকে দেখে যে কেউ কোলে নিতে চাইবে চাহনিটা যে কি মায়াবী তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।গাল দুটো বেশি গুলোমুলো।দেখলেই ইচ্ছে করে গাল টেনে দিতে।দাদা-নাতনীর কথার মাঝে ফিহা পিছনে এসে দাঁড়ালো।

    ফিহাঃ বাবা কখন এলেন?আমায় বলতে পারতেন আমি নিজে আপনার সাথে দেখা করতাম।কিছু লাগবে আপনার?আপনি কষ্ট করে কেন উঠে এলেন।

    আনিসঃ তুমি ব্যস্ত হয়ো না বউমা।আমি ঠিক আছি।

    ফিহাঃ আপনি দুপুরে ঠিকমতো ঔষধ গুলো খেয়েছেন তো।আমি তো অফিসের জন্য আপনার ঠিক মতো খেয়ালও রাখতে পারি না। অফিস থেকে ফিরে ভেবেছিলাম একবার আপনার রুমে যাবো।কিন্তু ফ্রেশ হয়ে দেখি প্রচন্ড মাথা ধরেছে।তাই এক কাপ কফি নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম।তারপরও আমি একবার আপনার রুমে উঁকি দিয়ে ছিলাম।কিন্তু দেখলাম আপনি শুয়ে রয়েছেন।আমি ভাবলাম আপনি ঘুমিয়ে আছেন তাই ডিস্টার্ব করি নি।

    আনিসঃ ঠিক আছে বউ মা। আমি কিছু মনে করি না।
    অনিলের মা মারা গেছে ১৮ বছর ধরে। ব্লাড ক্যান্সার ধরা পরেছিলো ওর।হাজার চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারি নি।আল্লাহর জিনিস আল্লাহ নিয়ে গেছে। ১৮ টা বছর অনিলের মা কে ছারা থাকলাম।আমার একা থেকে অভ্যাস হয়ে গেছে বউমা।বড্ড বেশি ভালবাসতাম অনিলের মাকে।তাই ২য় বিয়ে করিনি।ছেলে দুটোকে নিয়ে অনেক কষ্ট করে আজ বাংলাদেশের অন্যতম বিজনেস ম্যানের জায়গা দখল করেছি।দুটো ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে কতটা কষ্ট করতে হয়েছে সেটা আমি জানি বউমা।

    ফিহাঃ বাবা আপনি আমার জন্য একদম চিন্তা করবেন না। আমি ঠিক সবকিছু সামলে নিবো।

    আনিসঃ তোমাকে আমি একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতে ঠেলে দিয়েছি।আমায় মাফ করে দিও বউমা।আমার বয়স হয়ে গেছে তার মধ্যে এই বয়সে এক্সিডেন্ট। নয়তো আমি একা অনি কে সামলে নিতাম।আমার মনে হলো অনির জন্য একটা মা এবং আমাদের অফিসের জন্য একজন শক্ত গঠনের মালিকের প্রয়োজন। তাই তোমায় সিলেক্ট করে নিয়েছি।

    ফিহাঃ আমি নিশ্চয়ই আপনার কথার মর্যাদা রাখতে পারবো।আমার জন্য দোয়া করবেন বাবা।ছোট বেলায় কেউ এতিমখানায় রেখে গেছে। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে আমি অনুভব করেছি বাস্তবতাকে।আমি জানি মা ছারা থাকতে কতটা কষ্ট দায়ক।দিনের পর দিন কুঁড়ে কুঁড়ে মরেছি। কিন্তু কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় নি।নিজের বাবা-মা কে আমি জানি না।তাদের প্রতি কোন অভিযোগ নেই আমার। আমার জীবনটাই এরকম।আমি মেনে নিয়েছি আমার ভাগ্যকে।আমি বাবা-মায়ের কষ্ট পেয়েছি কিন্তু অনিকে পেতে দিবো না।আমি আমার স্বর্বস্ব দিয়ে ওর খেয়াল রাখবে। এখন আমার বেঁচে থাকার কারণটাই যে অনিয়া।হ্যাঁ,এটা সত্যি আমি ওর মা নই।তবে বাবা, আমিও একটা মেয়ে। আমার মাঝেও মাতৃত্ব নামক বস্তুটা আছে।

    আনিসঃ আমি সব দিক ভেবেই তোমাকে সিলেক্ট করেছি বউমা।আমি জানি তুমি কি?তোমার কাজের প্রতি ধৈর্য্য দেখে আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই।

    ফিহাঃ এতিমখানায় তো আমার কেউ ছিলো না। কিন্তু এখন আমি এই জায়গায় এসে আমার বাবাকে পেয়েছি, আমার নিজের মেয়ে পেয়েছি। হোক না অনিয়া, অনিল ভাইয়া ও লিয়া ভাবীর মেয়ে।কিন্তু এখন যেহেতু সে নেই তাহলে আমিই অনিয়ার মা,বাবা দুটোই।আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।

    আনিসঃ তোমার ওপর ভরসা আছে দেখেই তো আমি সবকিছুর ভার তোমার ওপর দিয়ে আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি।আমি জানি তুমিই পারবে সব সামলাতে।অনিল,বড় বউমা,আকশি সবাই কে হারিয়ে আমি যে নিঃশ্ব হয়ে গেছি।তোমাকে পেয়ে আমি আশার আলো খুঁজে পেয়েছি।এখন আমার সবচেয়ে বড় আমানত অনিয়া কে তুমি আগলে রাখবে। আর এই বুড়োটাকে সামান্য আশ্রয় দিলেই হবে মা।আমি যে আর পারছি না।আল্লাহ আমার কাছে থেকে কেন আমার বেঁচে থাকার কারণটাকে নিয়ে যায়।

    কথাগুলো বলে ডুকরে কেঁদে উঠলো আনিস চৌধুরী। ফিহা এগিয়ে এসে তার কাঁধে হাত রেখে বললো।

    ফিহাঃ আপনি চিন্তা করবেন না বাবা।আমি আছি তো।আপনার ভরসা আমি নিশ্চয়ই রাখবো।এখন যে আপনি আর অনিয়া আমার সব।আপনি যদি এভাবে ভেঙে পরেন তাহলে আমার কি হবে?আমি যে মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে পরবো।

    আনিসঃ আমি নিজেকে শক্ত করে নিবো।আমাকে যে শক্ত হতেই হবে তোমার ও আমার দিদিভাইয়ের জন্য। তোমাকেও বউমা সব সামলে এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে।

    ফিহাঃ আমাকে যে পারতেই হবে বাবা।আমার মেয়ের জন্য হলেও নিজেকে গড়ে নিতে হবে। যেটা ছেলেরা পারতো আজ সেটা মেয়েরাও করে দেখাচ্ছে।এখন মেয়েরা ঘরের কাজের পাশাপাশি অফিসও সামলাতে পারে।তাহলে আমি কেন পারবো না।সর্বশেষে একটা কথাই বলবো বাবা,”আমরা নারী,আমরা সব পারি।”

    আনিসঃ আমার দোয়া সবসময় তোমার সাথে থাকবে বউমা।এখন উঠি।এশারের আযান হচ্ছে। নামাজ পরতে হবে।তুমিও পরে নেও।দুপুরে যোহরের নামাজ পরেছিলে তুমি?

    ফিহাঃ হ্যাঁ,বাবা।অফিসে নামাজ পরে নিয়েছি।এখন নামাজ পরে নেই। তারপর দুজন একসাথে রাতের খাবার খেয়ে নিবো।

    আনিসঃ আমি সত্যি একটা বউমা নয় নিজের মেয়ে খুঁজে পেয়েছি। খুব শখ ছিলো আমার একটা মেয়ে থাকবে।আল্লাহ শেষ বয়সে এসে সেই শখটা পূরণ করে দিলো।

    ফিহার উত্তরে কিছু বললো না।বিনিময়ে মুচকি হাসলো।আনিস চৌধুরী নিজের রুমে চলে গেলেন।ফিহা অনিয়াকে ফিটারে করে দুধ খাইয়ে নিজে নামাজ পরে নিলো।আশ্চর্যজনক একটা বিষয় হলো
    টেবলেট অনিয়ার সাথে থাকলে অনিয়া কখনও কান্না করে না।খিলখিল করে হেসে টেবলেটর সাথে খেলা করে।টেবলেট থাকায় ফিহার অনেক সুবিধা হয়েছে। যেমনঃ অনিকে সবসময় ছায়ার মতো দেখে রাখা,অনি কান্না করলে তা দৌড়ে গিয়ে ফিহাকে জানান দেওয়া,অনির জামা-কাপড় এগিয়ে দেওয়া,অনির সাথে খেলা করা।এই জন্য ফিহা ওকে ভীষণ ভালোবাসে।বোবা প্রাণী যে মানুষের এতো উপকার করতে পারে, তা টেবলেট কে না দেখে কখনও বুঝতে পারতো না ফিহা।

    নামাজ শেষ করে ফিহা জায়নামাজটা ড্রয়ারে রেখে দিলো।তখনি ওর চোখে পরলো উত্তর দিকের দেয়ালে কালো কাপড় দিয়ে কিছু একটা ঢেকে রাখা হয়েছে। ভালো মতো না তাকালে বোঝা যায় না।

    ফিহাঃ কি হতে পারে এটা?এভাবে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার কারণটাই বা কি?কি এমন জিনিস আছে।এতদিনে তো খেয়াল করি নি।আসলে এমনভাবে রাখা হয়েছে দূর থেকেতো দেখে বোঝাই যায় না যে এখানে কিছু আছে।কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার রহস্যটাও তো আমার কাছে ঘোলাটে লাগছে।

    বরাবরের মতোই আমরা মানুষ বড় কৌতূহলী।যেটা আমাদের থেকে লুকানো হয় সেটার প্রতি তো আরো বেশি।ফিহা কালো কাপড়টা ধরে টান দিতেই দেখলো একটা বিশাল বড় পেইন্টিং। একটা ছেলে তার পোষা কুকুর কোলে নিয়ে বসে আছে। ছেলেটা যে আকশি চৌধুরী সেটা বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই ফিহার।আর কুকুরটা টেবলেট।এলোমেলো চুল,ডান হাতের দুটো আঙ্গুল উঁচু করে রেখেছে। আরেক হাতে টেবলেটকে ধরে রেখেছে। টেবলেটর পরনে ওর গায়ের রং বাদামী বর্ণের একটা গেঞ্জি।জিহ্বা বের করে রেখেছে সে।একটা জিনিস খেয়াল করে ফিহা হেসে উঠলো।

    ফিহাঃ আমার কাছে দুটোকেই কুকুর ছানা মনে হচ্ছে। মালিকও গলায় বেল্ট বেঁধে রেখেছে। পাশাপাশি তার কুকুরের গলায় ও বেল্ট আছে।মি.আকশি চৌধুরী কি তখন নিজেকে টেবলেটর মতো সাজিয়েছিলো নাকি?আমার তো তাই মনে হচ্ছে।

    আকশি ও টেবলেট দুজনের গলায় ডগি বেল্ট দেখে ফিহার ভীষণ হাসি পাচ্ছে।মুখ টিপে কিছু সময় হেসে নিলো। এই মানুষটা পারেও।কি দরকার ছিলো টেবলেটের মতো নিজেকে সাজানোর।

    #চলবে

  • মিসেস চৌধুরী পর্ব-০১

    মিসেস চৌধুরী পর্ব-০১

    #মিসেস_চৌধুরী
    #Part_01
    #Writer_NOVA

    —-তোমার মতো একটা লো ক্লাস ও চিফ মাইন্ডের মেয়ে আকশি চৌধুরীর ওয়াইফ।হাউ ফানি।তোমাদের মতো মেয়েদের আমি ভালো করে চিনি।টাকাওয়ালা ছেলে দেখলেই তার গলায় ঝুলে পরো।কি ভাবো নিজেকে?রূপের মায়া দিয়ে বড়লোক ছেলেকে ফাঁসিয়ে সব কেড়ে নিয়ে অন্য ছেলের হাত ধরে পালিয়ে যাবে।এই রিয়ানা বেঁচে থাকতে তার আকশিকে কখনো অন্য কারো হতে দিবে না।তোমার মতো থার্ড ক্লাস মেয়ের হাতে তো জীবনেও না।

    অফিসে নিজের কেবিনে দাঁড়িয়ে ফাইল চেক করছিলো ফিহা।মন মানসিকতা এমনি ভালো নেই। হঠাৎ একটা মেয়ের কন্ঠ পেল।এতক্ষণ পিছনে ঘুরে থাকলেও এখন সামনে তাকালো।ফাইলের থেকে চোখ উঠিয়ে শান্ত ভঙ্গিতে রিয়ানার দিকে তাকালো।মেয়েটার পরনে পোশাক দেখে মনে হবে না বাঙালি। কারণ সে পশ্চিমা দেশগুলোর পোশাক অনুসরণ করেছে।শর্ট স্কার্ট,চুলগুলো কাঁধ পর্যন্ত কার্ট দেয়া,ভ্রুর মধ্যে রিং বসানো,ভারী মেকআপ,পায়ে হায় হিল।এক কথায় বাঙালি কালচারের কোন ছিটেফোঁটাও নেই।রিয়ানার মুখে হাজারো বিরক্ত প্রকাশ পাচ্ছে।

    ফিহাঃ কারো রুমে আসার সময় পারমিশন নিয়ে আসতে হয়।সেটা নিশ্চয়ই আপনি জানেন মিস রিয়ানা।আপনার তো নূন্যতম ম্যানারটাও নেই। আর আপনি আমাকে লো ক্লাস মেয়ে বলাছেন।দেখে তো মনে হচ্ছে খুব স্মার্ট। কিন্তু আচার-আচরণে কোন স্মার্টনেস খুঁজে পাচ্ছি না কেন?
    রিয়ানাঃ তুমি আমাকে ম্যানার শেখাবে?হাউ ডেয়ার ইউ। কি ভাবো তুমি নিজেকে?আমি জানি তুমি পুরো কোম্পানিটাকে নিজের নামে করে নিয়েছো।
    ফিহাঃ আমি বর্তমানে চৌধুরী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির ওনার।তাই ভদ্র ভাবে কথা বলেন।আপনাকে গলা ধাক্কা মেরে বের করতে আমি ২য় বার ভাববো না।

    (ফাইলে চোখ বুলাতে বুলাতে কথাটা বললো ফিহা।)

    রিয়ানাঃ তোমার এতো বড় সাহস।তুমি আমায় এসব বলো।তুমি জানো আমি কে?আমার এক চুটকিতে তুমি ধূলোয় মিশিয়ে যাবে।(চিৎকার +রেগে)
    ফিহাঃ ডোন্ট সাউট মিস রিয়ানা। এটা আমার অফিস।আপনার নয়।আমার বাচ্চা ঘুমিয়েছে।ও যদি আপনার চিৎকারে ভয় পেয়ে উঠে যায় তাহলে আমি আপনাকে ছেড়ে কথা বলবো না।
    রিয়ানাঃ তুমি আমায় হুমকি দিচ্ছো।রিয়ানাকে হুমকি দিচ্ছো।এর ফল মোটেও ভালো হবে না।
    ফিহাঃ আপনাকে ভদ্র ভাবে বলছিলাম কিন্তু আপনি মানেন নি।তাই আমাকে পরবর্তী স্টেপ নিতেই হবে।

    মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফিহা ম্যানেজার আবদুল আজিজ সাহেবকে কল করলো।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তিনি ফিহার রুমে চলে এলেন।

    আবদুলঃ আমায় ডেকেছো ছোট বউ মা।
    ফিহাঃ এই ময়লা আবর্জনা টাকে ড্রেনে ফেলে দিন।ড্রেনের জিনিস এখানে কি করছে? আমার মেয়ে ঘুমিয়েছে।এই সময়ে আমি কোন ঝামেলা করতে চাই না।উনাকে বাইরে রেখে আসেন।
    আবদুলঃ রিয়ানা মা মণি বাইরে চলো।
    রিয়ানাঃ হেউ ইউ তুমি নিজেকে কি মনে করো?আমাকে ময়লা আবর্জনা বলছো।আমি তোমাকে ছারবো না।একে তো আমার আকশিকে নিয়ে গেছো।তার মধ্যে আবার বড় বড় ডায়লগ দিচ্ছো।আই উইল কিল ইউ।যাস্ট কিল ইউ।
    আবদুলঃ চলো মা মণি।ছোট বউ মার সাথে আর ভেজাল করো না।অনি দিদিভাই উঠে যাবে।
    রিয়ানাঃ ছারুন আমায়। একদম টার্চ করবেন না।আপনাদের মতো ছোট লোক আমার জুতা ধরারও স্পর্ধা নেই। আর আপনি আমার হাত ধরছেন।
    ফিহাঃ যাস্ট শেট আপ মিস রিয়ানা।আপনার সাহস কি করে হয় চাচাকে এসব বলার।
    (রেগে+চিৎকার করে)
    আবদুলঃ ছোট বউ মা তুমি শান্ত হও। এখন কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। চলো রিয়ানা মা-মণি।
    রিয়ানাঃ ডোন্ট টার্চ মি।(ফিহার দিকে তাকিয়ে) আমি তোমায় দেখে নিবো।কাজটা তুমি ঠিক করলে না।

    রাগে গজগজ করতে করতে হাই হিলে খটখট করে রিয়ানা চলে গেল।আবদুল আজিজ সাহেব নিষ্পলক চাহনিতে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।

    আবদুলঃ ছোট বউ মা ওর সাথে লাগতে যাওয়া তোমার ঠিক হয়নি।মেয়েটা বড্ড উচ্ছৃঙ্খল। ওদের ব্যবহারি এরকম।বড়লোক বাপের আদুরের দুলালি হলে যা হয় আরকি।অনিল বাবা,আকশি বাবা আমাদের মাঝে নেই। বড় সাহেবেরও শরীর ভালো না।এখন যদি তোমার ও অনিয়া দিদিভাই এর কিছু হয়ে যায় তাহলে আমরা কি করবো?

    কথাগুলো বলে চোখের পানি মুছলেন আবদুল সাহেব।ফিহা সামনে এসে তাকে টিস্যু এগিয়ে দিলেন।
    ফিহাঃ চিন্তা করবেন না চাচা।আল্লাহ আছে আমাদের সাথে। কিছু হবে না।আপনাদের দোয়া ও আল্লাহর রহমতে সব ঠিক হয়ে যাবে।টেবলেটকে যে দেখছি না।কোথায় ও?
    আবদুলঃ টেবলেট বাগানে বসে আছে।
    ফিহাঃ ওকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন।টেবলেট থাকলে নিজেকে অনেকটা হালকা লাগে।মনে হয় নিজের কোন আপনজন সাথে আছে।
    আবদুলঃ আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি ছোট বউ মা।

    বেশ কিছু সময় পর একটা বাদামী বর্ণের কুকুর দৌড়ে কেবিনে ঢুকলো।এই বাদামী বর্ণের কুকুরটার নাম টেবলেট। আকশির পোষা কুকুর। ফিহাও ওকে ভীষণ পছন্দ করে। টেবলেট সবসময় অনিয়াকে দেখে রাখে।টেবলেট কাছে আসতেই ফিহা ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।

    ফিহাঃ টেবলেট কেমন আছিস তুই? এখন থেকে আমাদের সাথেই থাকবি।সবসময় আমার মেয়ে অনিয়াকে দেখে রাখবি।যা চুপটি করে অনির দোলনার কাছে বসে থাক।

    টেবলেট ফিহার কথা শুনে অনিয়ার দোলনার কাছে বসে রইলো।পুরো কেবিনটা খুব সুন্দর করে সাজানো।এক পাশে একটা টেবিল, তিনটা চেয়ার। অন্যপাশে একটা বড় ডেভিন।দক্ষিণ পাশে পুরোটা আবছা সবুজ রঙের কাচ লাগানো।তার পাশেই একটা বেবি দোলনা ও বেড।দোলনায় ঘুমিয়ে আছে ৬ মাসের একটা বাচ্চা মেয়ে।নাম অনিয়া চৌধুরী।ভবিষ্যতের চৌধূরী পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকারী।বর্তমানে চৌধুরী পরিবারের মাত্র তিনজন সদস্য বেঁচে আছে। ফিহা ওর মেয়ে অনিয়া,ওর শ্বশুর আনিস চৌধুরী। একটা কার এক্সিডেন্টে আনিস চৌধুরীর বড় ছেলে অনিল চৌধুরী ও তার বউ লিয়া চৌধুরী মারা যায়।আনিস চৌধূরীও গুরুতর আঘাত পায়।সেদিন তাদের সাথে ফিহা ছিলো না।কিন্তু অনিয়া ও টেবলেট ছিলো।ভাগ্যক্রমে সেদিন টেবলেটের কারণে অনিয়া বেঁচে যায়।এটা জানতে পেরে টেবলেটের প্রতি মায়াটা আরো বেশি বেড়ে যায় ফিহার।আকশি নিখোঁজ আছে ৩ মাস যাবত।এক্সিডেন্টের দুই মাস আগের থেকে সে নিখোঁজ ।আজ পর্যন্ত তার কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তাও কেউ জানে না। ফিহার বিশ্বাস একদিন আকশি ঠিক ফিরে আসবে।

    পুরো কোম্পানি ও সংসার এখন ফিহাকে চালাতে হয়।যে কিনা এসবের কিছুই বুঝতো না।আজ ১০ দিনের হলো কোম্পানিতে যোগ দিয়েছে। একদিকে দেশের নামকরা বিজনেস কোম্পানি, অন্য দিকে ছোট বাচ্চা,বাড়িতে অসুস্থ শ্বশুর, স্বামী নিখোঁজ। সবকিছু সামলাতে ফিহা হিমশিম খাচ্ছে। ওর সাথে যদি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ও আবদুল আজিজ সাহেব আজ না থাকতো তাহলে তাকে আজ রাস্তায় বসতে হতো।

    কাচের সামনে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিলো ফিহা।পাশে তাকিয়ে দেখলো অনি এখনো ঘুমাচ্ছে। এই মেয়েটার প্রতি অসম্ভব মায়া কাজ করে তার।নিজের কলিজার টুকরোর থেকে কম নয়।কি মায়াবী চেহারা! এই চেহারার দিকে তাকালে সব কষ্ট ভুলে যায় ফিহা।কারণ তার মাঝেও তো মাতৃত্ব নামক বস্তুটা আছে।

    —মে আই কাম ইন??
    ফিহাঃ ইয়েস কাম ইন।

    কেবিনে ঢুকলো মাঝ বয়সী এক ভদ্রলোক। নাম আদনান আহমেদ।আহমেদ কোম্পানির ওনার। এবং চৌধূরী কোম্পানির ডিল পার্টনার।মাথায় খানিকটা টাক।মুখে গম্ভীরতা আছে।

    —–আমি আদনান আহমেদ।আহমেদ গ্রুপ অব কোম্পানির ওনার।(হাত বাড়িয়ে দিয়ে)
    ফিহাঃ আসালামু আলাইকুম। আমি মিসেস চৌধুরী।

    ফিহা হেন্ডশেক না করায় আদনান আহমেদ মনে মনে বেশ অপমানিত হলেন।তবে মুখে কিছু বললেন না।ফিহা কখনও কারো সাথে হেন্ডসেক করে না।সালাম দিয়ে কথা শুরু করে।

    আদনানঃ আপনার নামটা কি জানতে পারি?আসলে কোথাও আপনার নাম দেখতে পেলাম না।এমনকি কাগজেও লেখা নেই।
    ফিহাঃ আমি মিসেস চৌধুরী।
    আদনানঃ এটা তো আপনার পদবী।
    ফিহাঃ নো মি.আহমেদ।বর্তমানে এটাই আমার পরিচয়।আমি মিসেস চৌধুরী। বিয়ের পর স্বামীর পরিচয়ে নারীর পরিচয়।যদিও এটা আমাদের সমাজের রীতি।তাই আমি এখন সবার কাছে সমাজের নিয়মটা ফলো করছি।স্বামীর পরিচয়ে নিজের পরিচয় দিচ্ছি।আশা করি এবার বুঝতে পেরেছেন।নতুন করে কিছু বোঝাতে হবে না।ওতটা অবুঝ আপনি নন।

    ফিহা তাকে সামনের চেয়ারে বসতে বলে নিজে চেয়ারে বসলো।ফিহা যে কোম্পানির ওনারের চেয়ারে বসলো সেটা মনে হয় ভদ্রলোকের পছন্দ হলো না। এমনটা মনে হলো ফিহার।আদনান আহমেদ খুব মনোযোগ সহকারে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ফিহাকে দেখতে লাগলো। মেয়েটার বয়স তো কম করে হলে ২৩-২৪ এর বেশি হবে না।পরনে কালো পারের গোলাপি শাড়ি।মুখে কোন মেকআপ নেই। মুখটা যথেষ্ট মায়াবী। চোখ দুটো ডাগর ডাগর।মাথায় কালো হিজাব বাঁধা। গায়ের রং হলদে ফর্সা।

    ফিহাঃ মিঃ আহমেদ আমাদের পরবর্তী ডিলের কি খবর?সবকিছু ঠিক আছে তো।
    আদনানঃ হাতে সরু চুড়ি,নাকে নাকফুল,গায়ে গাঢ় রংয়ের শাড়িতে আপনাকে কি মানায় মিসেস চৌধুরী ?
    ফিহাঃ আপনি কি বলতে চাইছেন?
    (চোখ দুটো ছোট ছোট করে)
    আদনানঃ আমি কি বোঝাতে চাইছি সেটা নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পেরেছেন। আকশি চৌধুরী মারা গেছে তিন মাস ধরে।আর আপনি চুড়ি,নাকফুল,শাড়ি পড়ে ঘুরে বেরাচ্ছেন।ব্যাপারটা কি ভালো দেখাচ্ছে?
    ফিহাঃ আমার পার্সোনাল ব্যাপারে আপনি নাক না গলালে আমি খুশি হই।আর হ্যাঁ,আমার স্বামী এখনো মারা যায় নি।সে এখনো নিখোঁজ। মারা গেলে লাশটা তো পাওয়া যেতো।শুধুমাত্র নিখোঁজ হয়ে গেছে বলে সে মারা গেছে সেটা তো ঠিক নয়।আমিও সেটা বিশ্বাস করে সাদা বিধবার কাপড় পড়ে বসে থাকবো।এটা নিত্যান্ত বোকামী ছারা কিছু নয় আমার কাছে।
    আদনানঃ উনি যে বেঁচে আছে তার গ্যারান্টি কি?
    ফিহাঃ দেখুন মি.আহমেদ আপনি যদি আমার পার্সোনালি ব্যাপারে নাক গোলান আমি কিন্তু পরবর্তী বিল পাস করাবো না।আর আমার সই ছাড়া এখন কোন বিল পাস হবে না।কারণ আমার শ্বশুর মশাই নিজ হাতে আমাকে পুরো কোম্পানির দায়িত্ব কাগজ-কলমে তুলে দিয়েছে।সেটা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়।আমি চাই না আপনি আপনার এতো বড় ডিলটা হারান।এতটা নির্বোধ নিশ্চয়ই আপনি নন।

    তারপর তাদের মধ্যে বিজনেসের কথা ছাড়া অন্য কোন কথা হলো না। পুরো সময়টা আদনান আহমেদ চুপ করেই ছিলেন।ফিহার কথায় যে তার আত্মসম্মান বোধে লেগেছে।তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। আদনান আহমেদ চলে যেতেই অনি ঘুমের থেকে উঠে গেল। উঠেই নিয়ম মোতাবেক তার মাকে না দেখে চিৎকার করে কান্না শুরু করলো। ফিহা জলদী করে গিয়ে অনিয়া কে কোলে তুলে নিলো।

    ফিহাঃ ওরে আমার সোনা মণিটা।কি হয়েছে তোমার?এই তো তোমার মাম্মাম এখানে।কিছু হয়নি তো।তোমার মাম্মাম থাকতে কি তোমার কিছু হতে পারে।কে বকেছে তোমায়।আমার লক্ষ্মীটাকে কে বকেছে?তোমার বাপি আসলে তার নামে বিচার দিবো আমরা ওকে।তুমি কান্না করো না প্লিজ।আমার মানিক চাঁদ।তুমি এভাবে কান্না করলে মাম্মামের তো ভালো লাগবে না।আমার পাখিটার কি খিদে পেয়েছে? একটু ওয়েট করো মামণি।আমি তোমার জন্য ফিটার বানাচ্ছি।

    পরিচিত সুরটা পেয়ে অনিয়া চুপ হয়ে গেল।কারণ এই কয়েক দিনে সে বুঝে গেছে এই কোলটাই তার সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। যে তাকে খুব ভালোবাসে।অনিয়া দুই হাত দিয়ে তার মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে। যেনো ছেড়ে দিলেই তার মা চলে যাবে।ফিহা ফিটার তৈরি করে অনিয়ার মুখে দিলো।আর অনিয়াও লক্ষ্মী মেয়ের মতো করে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে খুশি মনে ফিটার খেতে লাগলো।খাওয়া শেষ হতেই ফিহা অনিকে জরিয়ে ধরে গালে চুমু খেলো।মায়ের আদরের পরশ পেয়ে অনিয়াও চোখ বন্ধ করে নিলো।পাশে চকচক চোখে তাকিয়ে আছে টেবলেট।বুঝা যাচ্ছে টেবলেটও ওদের দুজনকে এভাবে দেখে খুব খুশি হয়েছে।

    #চলবে