Tuesday, August 26, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 487



মিঠা রোদ পর্ব-৬+৭

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“জি বলুন আদুরে তোশামণি।একজন অসুন্দর পুরুষ কবীর শাহ বলছি।”

ফোনের ওপাশ থেকে কোকিলের কুহুরবের অনুরুপ অস্পষ্ট এক শব্দ করলো তোশা।ফিসফিস করে বলল,

“আপনি ভীষণ সুন্দর জানেন।হুহ নিজেকে অসুন্দর বলবেন না।”

“তা বেবী গার্ল আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?তাছাড়া এতো রাতে কল করলে যে?সব ঠিক আছে তো?”

“সব ঠিক আছে।”

তোশা বিশেষ কোনো বাক্য খুঁজে পাচ্ছে না বলার জন্য।কীভাবে বলবে?আজ শপিং মলের কান্ডে সে লোকটির ব্যক্তিত্বে ভীষণ মুগ্ধ হয়ে গিয়েছে।পেটের ভেতর বহু লাল নীল রঙের প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে।শুকনো ঢোক গিলে নিজের গলা ভিজিয়ে নিলো তোশা।

“আপনাকে বলেন তো আমি কী নামে ডাকি?”

কবীর চট করে একটা সম্বোধন করতে গিয়েও থেমে গেলো।তোশা কখনো বিশেষ কিছু বলে তাকে ডাকেনি?কেন?তাছাড়া কবীর অহেতুক ওসব সম্বোধন মন থেকে হয়তো মেনে নিতেও পারবেনা।গম্ভীর সুরে বলল,

“এখনও কোনো নামে ডাকো নি।”

“ঠিক করে দেন কী নামে ডাকবো।”

“আমি তোমার মা-বাবার বন্ধু।সেই হিসেবে না হয় ডাকবে।”

“নাহ কবীর বলে ডাকবো।”

ধমকে উঠলো কবীর।ছোটো কারো মুখে নিজের নামটা শুনতে সে মটেও পছন্দ করেনা।তোশার কিছু বিষয় ভীষণ বাচ্চামো লাগছে তার কাছে।

“আমাকে নাম ধরে ডাকছো কেন?তুমি আমার ফ্রেন্ড নাকী তোমার মা?”

“এমনভাবে বলছেন কেন?নাম ধরে ডাকা যাবেনা?”

“অবশ্যই না।গুরুজন তোমার।কিছু বাচ্চামো আমি ক্ষমা করে দেই মায়ান ও তাহিয়ার জন্য।কিন্তু আজকে বেশী হয়ে গেলো না?তাহিয়া কোথায়?ওকে ফোন দাও।”

“মা ঘুমে।”

“তুমি এতো রাত জেগে কী করছো তাহলে?”

“আপনাকে থ্যাংকস জানাতে।দিনে সাহায্য করার জন্য।আপনি ছেলে মানুষ লজ্জা না পেয়েও।”

“শুনো তুমি একটা পনের বছরের বাচ্চা আমার জন্য।এছাড়া কিছুই নয়।নাম ধরে কখনো ডাকবেনা আমাকে।রাখো এখন।”

তোশা হয়তোবা কেঁদে ফেলবে এখন।প্রচন্ড কষ্ট দিয়ে শুধু মামী ও নানী কথা বলে তার সঙ্গে।আর আজ কবীর বলল।একটু নাম ধরে ডেকেছে দেখে ব্যক্তিটা এমন শুনালো।নাক টানার শব্দে সম্বিৎ ফিরে পেলো কবীর।মেয়েটা হয়তো ভুলে বলে ফেলেছে।সে নিজেকে সামলে কিছু বলতে যাবে এর পূর্বেই কল কেঁটে দিলো তোশা।হুট করেই কবীরের বুকে নির্জনতা নেমে এলো।ক্লান্ত বিক্ষিপ্ত মন ও ঘামভেজা শরীরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।তোশাকে এভাবে বলার কোনো অভিপ্রায় ছিলনা তার।কিন্তু রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।একটা বাচ্চার কাছে কী ক্ষমা চাওয়া?এই চিন্তায় ধীরে ধীরে তন্দ্রায় তলিয়ে যাচ্ছে সে।ক্ষণবাদে বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব করলো।চোখ তুলে সে দেখলো লম্বা চুল ও লাল রঙের সুন্দর একটি সিল্কের শাড়ী পরনে মেয়ে তার বুকে মাথা দিয়ে আছে।কবীর আনমনে তাকে জোরালো ভাবে জাপটে ধরলো।মিষ্টি করে শুধালো,

“কোথায় ছিলে এতোদিন?আমি তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।”

মেয়েটি জবাব দেয়না।বরং গুনগুন করে কিছু গাইতে থাকে।কবীর ব্যকুল কণ্ঠে বলল,

“কী হলো বলো কোথায় ছিলে?”

এবার মেয়েটি চট করে নিজের মাথাটি উঠালো।কবীর ঘুম ঘুম চোখে দেখলো গোলগাল অতীব সুন্দর মেয়েটি হাসছে।ভীষণ হাসছে।মেয়েটিকে পরীর মতোন দেখাচ্ছে।তবে কবীর চিনে তাকে।সমস্ত মায়া দিয়ে উচ্চারণ করলো,

“তোশামণি?”

“উহু পরী।দেখুন তো কবীর আবার ডাকলাম আপনাকে নাম ধরে।বকেন আমাকে।কী হলো কবীর?”

তোশাকে একটুও বকতে ইচ্ছে করছেনা কবীরের।এতো মায়াময় কাওকে কটূ কথা শোনানো যায়?সে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিতে চাচ্ছে।মেয়েটা কী সুন্দর করে শাড়ী পরেছে।আঁচলটা আরেকটু টেনে নিলে কী হতো?ফর্সা চিতল মাছের মতোন গলাটি দেখে তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠলো কবীর।হাতটা যেই তোশাকে স্পর্শ করবে তৎক্ষনাৎ মেয়েটি তা ধরে কামড় বসিয়ে দিলো।কবীর আর্তনাদ করে উঠে বসলো।পুরো রুম জুড়ে ঈষদুষ্ণ আলোর ছড়াছড়ি।কিন্তু কোথাও উজ্জ্বল আলোর মতোন লাল শাড়ী পরিহিত কেউ নেই।কবীরের ঘুম ছুটে যেতে মিনিট দশেক সময় লাগলো।পুরোপুরি বিচার, বুদ্ধি মস্তিস্কে আগমণ করতেই নিজের উপর ঘৃ ণা য় ম রে যাচ্ছে সে।তোশা যে কীনা বিশ বছরের ছোট তার থেকে।সেই মেয়েটির উপর এমন চিন্তা?লাল রঙের বিশেষ শাড়ীটিকে সে চিনেছে।এটা নিজ স্ত্রীর জন্য কিনেছিল উনিশ বছর বয়সে।পরবর্তী একজন মালিক পেয়েছিল শাড়ীটি।কিন্তু এখন শূন্য হয়ে আলমারির এক কোণায় রয়ে গিয়েছে। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো কবীর।পাশের ফ্রিজ থেকে রুট বিয়ারের ক্যান নিয়ে গলা ভিজিয়ে নিলো।এমন স্বপ্ন কখনো দেখবেনা বলে স্থির করলো সে।

(***)

“কী ব্যাপার তোশামণি?মন খারাপ তোমার?”

“না আম্মু।”

“তাহলে চোখ ফোলা কেন?এলার্জি হলো না তো?”

তাহিয়া ব্যস্ত হয়ে তোশার চোখ দুটো দেখতে লাগলো।এঁটো হাত থাকার দরুণ ভালোভাবে কিছু বুঝছে না।পাশে কল্লোলের মা তটিনী দাঁড়িয়ে আছে।তাহিয়া তাকে বলল,

“ভাবী দেখো তো একটু মেয়ের চোখে কী হয়েছে?”

তটিনী থমথমে মুখে জবাব দিলো,

“কেন আমার অফিস নেই?খেতে এমনিতেই দেরী হয়ে যাচ্ছে।”

“দেখতে কতোক্ষণ লাগে?”

“দেখে কী লাভটা বলো?কিছুই হয়নি চোখে।দেখো গিয়ে বেশী ঘুমানোর দরুণ।”

রাগ উঠে গেলো তাহিয়ার।মেয়ের জন্য একটু বেশীই অস্থির সে।তোশা তাকে আশ্বস্ত করে বলল,

“মা আমার কিছুই হয়নি তো।টেনশন নিওনা।”

“নিশ্চয় পানি কম খাচ্ছো।”

তটিনী মাঝখান থেকে বলে উঠলো,

“মেয়েকে নিয়ে এতো আহ্লাদ তোমার।কী দরকার ছিল পৃথিবীতে আনার।পেটের ভেতর রেখে দিতে।আমাদের অন্তত এতো ন্যাকামি দেখতে হতো না।”

মামীর কথায় তোশার খুব কান্না পাচ্ছে।কিন্তু কিছু বলতে পারবেনা।একদিন জবাব দিয়েছিল।ফলস্বরুপ নানা-নানু এখন তোশার সঙ্গে খেতে বসেনা।দুঃখে ভাত মুখে নিয়েই ব্যাগ কাঁধে স্কুলের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো সে।তাহিয়া তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে এসে দেখলো রাস্তার কোথাও নেই তোশা।ভয়ে হাত পা কাঁপছে তার।মেয়েকে কখনো একা ছাড়েনা সে।গাড়ী নিয়ে বের হয়ে এলো তখুনি।কিন্তু ভাগ্য খারাপ ছিল।কিছুদূর যেতেই সিগন্যালে পড়তে হলো।এরপর শুরু হলো জ্যাম।প্রায় বিশ মিনিট পর কিছু মনে হলো তাহিয়ার।তার জীবনে কবীর সব বিপদে সাহায্য করেছে।আজও ব্যতিক্রম নয়।কবীরের নাম্বার ডায়াল করলো।ওপাশ থেকে রিসিভ করলে বলল,

“শুনো কবীর।তুমি কোথায় এখন?”

“স্কুলের সামনে কেন?বাচ্চাদের দিতে এসেছিলাম।”

“একটু দেখো তোশা পৌঁছে গিয়েছে কীনা।ভাবী বাসায় কথা শুনিয়েছে তাই একা একা চলে গেলো।”

কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে কবীর বলল,

“চিন্তা করো না।তোশামণি ক্লাসে ঢুকেছে।আমি দেখেছি।”

“কথা হয়েছে ওর সঙ্গে?”

“হ্যাঁ।”

“বাঁচালে।আমি যাচ্ছি স্কুলে।”

কবীর ফোনটা রেখে দিলো।তাহিয়াকে সে একটু মিথ্যা বলেছে।তোশা ও তার দেখা হয়েছে ঠিক।কিন্তু মেয়েটা কবীরের সাথে মটেও কথা বলেনি।বরং উপেক্ষা করেছে।ছোট্ট এই মেয়েটির এমন ব্যবহারে অনেক কষ্ট পাচ্ছে সে।মেয়েটির অভিমান সে মেনে নিতে পারছেনা।অথচ অনুভূতি দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক নয় তাদের।কবীরের মনে হলো দুনিয়ায় সবথেকে মিষ্টি মেয়ে তোশামণির সঙ্গে একটু কথা বলতে হবে তার।উহু,একটু না।সুদীর্ঘ পাঁচ মিনিট কথা বলতে হবে।তবেই ভেতরের য ন্ত্র ণা কমবে।

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৭
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“স্বপ্ন দেখা শেষ হলে বাস্তবে ফিরে আসেন।কী যেন নাম?তোশা রাইট?”

এক ধ্যানে খাতার দিকে তাঁকিয়ে ছিল তোশা।হুট করে নতুন ম্যাডামের কণ্ঠে চেতনা ফিরলো।বিব্রত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালো সে।

“সরি ম্যাডাম।”

“এর মানে সত্যিই এতোক্ষণ যা বুঝিয়ে চলেছিলাম তার এক ভাগও শুনতে পাওনি?”

“না।”

এমন অকপটে সত্য বলার দরুণ দিশা অবাক হলো।জীবনে অনেক স্টুডেন্ট দেখেছে সে।কিন্তু ভুল করে সহজে স্বীকার করার মতো কাওকে দেখেনি।পরক্ষণে তোশার মা,বাবার নামটা স্মরণে এলো তার।

“ঠিক আছে বসো।আর যা পড়াচ্ছি মনোযোগ দাও।তোমার বাবা কিন্তু অনেক ব্রাইট স্টুডেন্ট ছিলেন।”

তোশা অবাক হয়ে শুধালো,

“আপনি আব্বুকে চিনেন?কীভাবে?”

“চিনি একভাবে।এখন মহাকর্ষের সূত্র গুলো মুখস্থ করো জলদি ক্লাসের আর সকলে পাঁচ মিনিট ধরে পড়ছে।”

তোশা চট জলদি গুনগুন করে মুখস্থ করতে লাগলো।যদিও পড়াটি সে বুঝেছে।এখন কয়েকবার পড়েই ভালো মতন আয়ত্ত্ব করে নিলো।চোরা চোখে সে স্কুলে আসা নতুন ম্যাডাম দিশার পানে তাঁকালো।ভদ্র মহিলা বেশ সুন্দর।টানা দুটো চোখ।ঠোঁট দুটো কী সুন্দর আকৃতিতে তৈরী।ভীষণ ফর্সা।প্রথমবার তোশার মনে হলো দিশার মতো চেহারার আকৃতিতে সে কাওকে দেখেছে।পিরিয়ড শেষ হওয়ার ঘন্টা বাজলো।দিশা সুন্দর পরিপাটি করে শাড়ী পরেছে।আঁচলটা একটু টেনে উঠে দাঁড়ালো।বৃষ্টি ঠায় বসে আছে।কিন্তু তাকে ইশারা করে বাহিরে আসতে বলল দিশা।

“কিছু বলবে চাচী।”

দিশা উষ্ণ শ্বাস ছাড়লো।সম্পর্ক না থাকলেও সম্বোধন রয়ে যায়।বৃষ্টিকে একটু গোপনে নিয়ে ব্যাগ থেকে বক্স বের করে দিলো।

“এটা আহনাফের জন্য।নানুর হাতের সন্দেশ ও খুব পছন্দ করে।”

“কিন্তু চাচী কোর্ট থেকে তোমার দেওয়া কিছু নেওয়া মানা।”

“বৃষ্টি জানো তো।বাঘিনী কখনো নিজ শাবকের শি কা র করেনা।রাখো আহনাফের ভালো লাগবে।আর কাইন্ডলি কবীরকে বলবেনা আমি এই স্কুলে জব নিয়েছি।”

বৃষ্টি মাথা নাড়ালো।দিশার সঙ্গে এক সময় খুব ভালো সম্পর্ক ছিল তার।সেই সুবাদে আজ দিশার ব্যাপারটা গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিলো।বক্সটা হাতে নিয়ে সে আহনাফের ক্লাসের দিকে এগিয়ে গেলো।দিশা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।ভেতরটা ভীষণ জ্ব লে যায় তার।একটি সিদ্ধান্তের জন্য আজ সে ছেলের কাছে থেকেও দূরে।

(***)

আগামীকাল একটা বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে।এই কারণে শাহ কমিউনিটি সেন্টারটি জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে সাজানো হচ্ছে।তোশা সবুজ ঘাসের উপর বসে এক মনে গেম খেলছে।পরনে তার গোলাপি রঙের একটি ফ্রক।দেখতে মিষ্টি লাগছে।চুলগুলো তাহিয়া ভালোমতন বিনুনি করে দিয়েছে।এরকম বড় কোনো অনুষ্ঠানে সচরাচর মেয়েকে নিয়ে আসে তাহিয়া।যেন কাজের ব্যাপারে শিখতে পারে।হুট করে বড়সড় এক মূর্তিমানব তার পাশে এসে বসলো।তীব্র কড়া সুগন্ধ গা থেকে আসছে।তোশামণি আড়চোখে দেখে সেই মানুষটিকে।অভিমানে মুখটা ঘুরিয়ে নেয়।কবীর ঘামে ভেজা শরীর থেকে শার্টটি একটু টেনে নিলো।হাতে ভর দিয়ে প্রাণভরে শ্বাস নেয়।অসম বয়সী মেয়ের অভিমানে সে পুলকিত বোধ করে।মজা নেওয়ার জন্য শুধায়,

“তা তোশামণি এতো বা জে ড্রেস পরে কেন এসেছো?”

নাক কুঁচকে তোশা জবাব দেয়,

“আপনার শার্টটাও ভীষণ পঁ চা।”

“তাই?কী বলো তো।আমি দরিদ্র এক মানুষ।একটা ভালো শার্ট কিনে দিও।”

“সত্যি দিবো?”

“সত্যি দিবে।”

“মজা করছেন।”

“মজা করছিনা।”

“মিথ্যা।”

“সত্য।”

“উহুহহ।”

“হুহহহ।”

তোশামণির ছোট্ট হৃদয়ে রাগ এসে জমা হলো।গেমে হেরে যাওয়ার আশংকা থাকলেও ফোনটা রেখে দিলো।কবীরের মুখোমুখি হয়ে বলল,

“আমার কথার বিপরীত বলছেন কেন?”

“কেন?কথায় পারবেনা দেখে ভয় পাচ্ছো?”

“আমাকে হারাতে পারবেন না।”

“তাই?আহারে তুমি না রাগ করেছিলে আমার উপর।সেটিই তো এখন নেই।”

লজ্জা পেলো তোশা।একটু দূরে গিয়ে বসলো।ওদিকে পাইপের কাজ চলছে।আগামীকাল বর-বউয়ের হলুদে উপর থেকে বৃষ্টির মতোন পানি দেওয়া হবে।কবীরের মনের হাসি মুখে ফুঁটে উঠলো।সে একবার ভেবেছিল বাচ্চার রাগ ভাঙাবেনা।পরক্ষণে মনে হলো হোক না বয়সের ছোট একটা মানুষের খুশির কারণ।কবীর এগিয়ে এসে তোশার কাঁধের সঙ্গে বাহু মিলালো।যদিও তার মনে ঝড় বইছে নরম ছোঁয়ায়।কিন্তু সেটাকে তোয়াক্কা না করে বাহু দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলল,

“এই তোশামণি বলো আমাকে কবে শার্ট কিনে দিবে।”

“দিবো না।”

“মন খারাপ হলো।”

“বেশ হয়েছে।”

হুট করে জোরে একটা শব্দ হলো।কবীর দুহাত দিয়ে তোশাকে আগলে বুকের মধ্যে লুকিয়ে নিলো।তাদের থেকে অনতিদূরে পানির পাইপটা জোরে শব্দ হয়ে ফেটে গেছে।সেখান থেকে হালকা পানি এসে দুটো মানুষকে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।কবীরের ভেতরকার পঁয়ত্রিশ বছরের পুরুষ থমকালো।মন বলছে পনের বছরের এই মেয়েটা নেহাৎই বাচ্চা মেয়ে।কিন্তু অপর মন বলছে বয়সে কী?এই মেয়েটাও সুন্দর একজন নারী।যার দেহে উষ্ণ র ক্ত প্রবাহিত।নরম ত্বক পুরুষের ছোঁয়ায় লাল হয়।গা দিয়ে তীব্র মেয়েলি সুগন্ধ বের হয়।নিজের সঙ্গে দ্বন্ধ করেও তোশাকে জড়িয়ে ধরে রাখলো।ওদিকে মেয়েটা চোখবন্ধ করে স্বপ্ন অনুভবে ব্যস্ত।

দূর থেকে আলিঙ্গনরত এই দুজনকে দেখে কারো কপালে ভাঁজ পড়লো।নিজের সঙ্গে লোকটি বলে উঠলো,

“মায়ানের মেয়ের সাথে কবীরের এতো ঘনিষ্ঠতা যে দিনে দুপুরে এরকম জড়িয়ে ধরে আছে।বাহ, দিশাকে জানাতে হবে ব্যাপারটা।”

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-৪+৫

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“এই মেয়ে শুনো।”
“জি আমাকে বলছো?”
“হ্যাঁ।ক্যাপ্টেন তোশামণি তোমাকে ডেকেছে?”

ক্লাসে আসা নতুন মেয়েটা ভ্রু কুঁচকালো।একে তো অচেনা জায়গা।দ্বিতীয়ত একমাসেও কোনো বন্ধু হয়নি তার।এভাবে ক্লাস ক্যাপ্টেন ডাকবে বিষয়টা মাথায় আসেনি।বৃষ্টি আধ খাওয়া টিফিন ব্যাগে ভরে মেঘা নামের মেয়েটির সঙ্গে সঙ্গে চলল।মাঠের এক পাশে তোশাকে ঘিরে অনেকে বসে আছে।ক্লাসের সব স্টুডেন্টের কাছে এমনকি শিক্ষকদের নিকটও বিশেষ কদর আছে তোশার।মেয়েটা সবসময় নজরকাঁড়া রেজাল্ট করে।এমনকি আঁকানোর হাতটাও বেশ।

“আমাকে ডেকেছিলে তোশা?”

সুন্দর ছিমছাম কিশোরী চুলগুলো একপাশে দুলিয়ে বলল,

“তুমি আমাদের সাথে মিশো না কেন?”

“এমনি।আমি মানুষের সঙ্গে কম মিশতে পারি।”

“বসো আমাদের পাশে।আজ থেকেও আমাদের গ্যাঙের সদস্য তুমি।মিশবে তো?”

খুব সুন্দরভাবে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলো তোশা।বৃষ্টি ইতস্তত করলো।পরবর্তীতে কিছু একটা ভেবে হাসি মুখে হাত মিলালো।

“তুমি খুব ভালো তোশা।”

“তোশামণি বলবে।আমার সব কাছের মানুষ এই নামে ডাকে।বসো টিফিন খাওয়া শেষ?”

“নাহ এখনও শেষ হয়নি।”

এহেন সময় ছোট্ট একটা বাচ্চা ছেলের কণ্ঠ শোনা গেলো।সকলে সেদিকে তাঁকালো।বছর আটের একটা বাচ্চা ছেলেকে বড় ক্লাসের ছেলেরা দুই হাত পা ধরে উপরে উঠিয়ে দুলাচ্ছে।মুচড়াতে মুচড়াতে ছেলেটি ক্রমাগত নিজেকে ছাড়তে বলছে।বৃষ্টি তৎক্ষনাৎ সেদিকে উঠে গেলো।যেন মানুষটা খুব আপন তার নিকট।

“ছাড়ো আমাকে।ছাড়ো আমাকে।নিচে নামিয়ে দেখো একবার।সব কয়টাকে কী করি।”

ছোট বাচ্চার হুমকিত আশেপাশের ছেলেরা হো হো করে হেসে উঠলো।একজন তো বলেই উঠলো,

“ওর সাইজের থেকে মুখের কথা বড়।”

“কারণ ও শাহ বংশের ছেলে।এখুনি নামাবে তা নয় স্যারের কাছে বিচার দিবো।”

“এই তুমি আমাদের ক্লাসের নতুন মেয়েটা না?নাম তো বৃষ্টি।”

বৃষ্টি এগিয়ে এসে বলল,

“হ্যাঁ।ওকে ছেড়ে দাও।”

“ধরেছি তাই কী হয়েছে?এমনি খেলছি।”

“ও কোনো খেলনা নয় যে খেলবে।”

“দেখো বৃষ্টি।”

“আহনাফকে ছাড়ো বলছি।”

“ছাড়বো না।”

বৃষ্টি এগিয়ে এসে তৎক্ষনাৎ ছেলে গুলোর থেকে আহনাফকে টেনে ধরলো।বিষয়টা ইতিমধ্যে বড় হয়ে যাচ্ছে।নাছোড়বান্দা ছেলেগুলো শক্ত করে বাচ্চাটাকে ধরে আছে।হুট করে তাদের মধ্যে যে এতোক্ষণ কথা বলছিলো তার পিঠে দুমদাম করে কিল ঘুষি পড়তে লাগলো।তোশা রাগত সুরে বলছে,

“শ য় তা ন ছেলে।ছাড় ওকে।সারাদিন দুষ্টুমি করিস।আর পরীক্ষায় দুই পাস।দাঁড়া বলে দিবো আঙকেলকে।”

“তোশা ব্যাথা পাচ্ছি তো।”

“রবীন এখন যদি তুই না যাস।তবে খবর আছে।”

“যাচ্ছি রে তোশামণি।বাচ্চাটা দেখতে কতো সুন্দর।এজন্য খেলছিলাম।গালটা ধরতেই দিলো না।তোর মতো সুন্দর।”

তোশা চোখ বড় বড় রবীনের দিকে তাঁকালো।তৎক্ষনাৎ ছেলেটা দলবেঁধে পালালো।আহনাফের সামনে হাটু গেড়ে বসে শার্ট ঠিক করে দিচ্ছে বৃষ্টি।রবীন সঠিক বলেছে ছেলেটি আসলেও অনেক সুন্দর।চোখ আর কপাল কারো সঙ্গে হুবুহু মিলে যাচ্ছে।তোশা বৃষ্টির উদ্দেশ্যে শুধালো,

“বাবুটাকে তুমি চিনো বৃষ্টি?”

“হ্যাঁ।আমার চাচাতো ভাই।”

“দেখতে অনেক সুন্দর।এতো ফর্সা কেন?”

“আমার চাচীর মতো দেখতে।আহনাফ যাও তোশামণিকে থ্যাংক ইউ বলো।”

নিজেকে বিন্যস্ত করে তোশার সামনে এসে দাঁড়ালো আহনাফ।ফোলা ফোলা গালে ধূলো লেগে আছে।তোশা হাত বাড়িয়ে তা পরিষ্কার করে দিলো।আলাদা গম্ভীর ভাব বাচ্চা ছেলের মুখটায়।যেন দুনিয়া নিয়ে সে মহা বিরক্ত।

“থ্যাংক ইউ তোশামণি।”

ধমকে উঠলো বৃষ্টি।অপ্রস্তুত ভঙিতে বলল,

“আহনাফ ও তোমার বড়।তোশামণি বলো না।”

“আরে সমস্যা নেই বৃষ্টি।বাচ্চাটা এতো কিউট।”

আহনাফ হুট করে আবদার করে বসলো।তোশার হাত দুটো আঁকড়ে ধরে বলল,

“আইসক্রিম খাবো তোশামণি।”

এরকম সহজ সরল আবদার তোশা ফিরিয়ে দিতে পারলো না।সেও পাল্টা হাত ধরে ক্যান্টিনের পথ ধরলো।পথিমধ্যে দু-জনের মধ্যে নানা প্রশ্ন-উত্তরের বিনিময় হচ্ছে।বৃষ্টি এখনও অবিশ্বাসের চোখে আহনাফকে দেখছে।এটা তার সেই চাচাতো ভাই যে দাদীর রান্না খাবার ছাড়া খায়না।জীবনেও কারো কিছু নেয়না।উল্টো দিতে গেলে নাক সিঁটকায়।সারাক্ষণ সকলের থেকে দূরে দূরে থাকে।সকালেও তো বৃষ্টির মা ব্রেডে বাটার লাগিয়ে দিলো দেখে খেলো না।নাহ এটা নিশ্চয় আহনাফ না।অন্য কেউ।কোনোভাবে বৃষ্টি নিজের মনকে বুঝাতো পারলো না।অথচ সে যদি জানতো বাবা-মায়ের বিচ্ছেদে মন খারাপ করে থাকা আহনাফ অবশেষে কারো সান্নিধ্যে স্বস্তি লাভ করেছে।বরং আবদার করতেও দ্বিধা আসেনি মন থেকে।

(***)

আজ বৃহস্পতিবার।সপ্তাহের এই দিনে তোশা মায়ের অফিসে একবার হলেও আসে।কোনো বিশেষ কারণে নয়।শুধু ঘুরতে।মায়ের রুমটায় ঘুরে ঘুরে দেখছে তোশা।সব জায়গায় শাহ শাহ লেখা।সেগুলোর উপর হাত বুলিয়ে রোমাঞ্চিত হয় তোশা।সেই যে দেড় মাস আগে দেখেছিল।কবীর শাহ!নামটাও কী সুন্দর লাগে তোশার কাছে।মায়ের কাছে শুনেছে সে।কবীর চট্টগ্রামে থাকে।এজন্য নানা বাহানায় সেখানে ঘুরতে যাওয়ার কথাটি উঠিয়েছে সে।কিন্তু ফল শূন্য।হুট করে ঘাড়ে গরম কারো নিশ্বাস পেয়ে চমকে উঠলো তোশা।পিছন ফিরে দেখলো অফিসে কাজ করা সবথেকে প্রবীণ লোকটি দাঁড়িয়ে আছে।তোশা তাকে শুধালো,

“কী ফজলু আঙকেল?”

“তোমার জন্য কোকাকোলা পাঠিয়েছে ম্যাডাম।আসো খাও।”

“ওহ।”

তোশা চেয়ারে বসতে গেলে ফজলু তার আগেভাগে বসে পড়লো।মেয়েটার ভ্রুঁ কুঁচকে গেলো।ফজুল পান খাওয়া দাঁত বের করে বলল,

“তোশামণি বসার জায়গা নেই?আমার কোলে বসতে পারো।”

অল্প বয়সে তার মা তাকে জন্ম দেওয়ায় তোশা ভীষণ অসুস্থতায় ভুগতো।এই কারণে শরীরের গঠনে কিছুটা ছোট।তবে মানসিক ভাবে এসব বোঝার জন্য বড়।কিছু বলতে যাবে তার আগেই বড়সড় কেউ ফজলুর কোলে বসে পড়লো।যৌবন শেষ হওয়া ফজলু আর্তনাদ করে উঠলো।কড়া পারফিউমে মুহূর্তেই রুম ভরে উঠলো।মেরুন রঙের ফর্মাল স্যুটে কবীর আনমনে ফোন দেখছে।যেন চেয়ারে বসা ফজলুকে সে দেখেনি।তোশা অভিভূত হয়ে গেলো।

“স্যার,স্যার।আমি ম রে গেলাম।”

না জানার ভান করে কবীর বলল,

“ওহ ফজলু আঙকেল।আপনি এখানে আমি তো ভেবেছিলাম চেয়ার।”

“স্যার সরেন।”

“নাহ।আপনার ভার সহ্য করার বয়স নেই।একটু পর এ মাসের বেতন নিয়ে আগামীকাল থেকে আসবেন না।”

কবীর উঠে দাঁড়ালো।ফজলু ভয় পেয়ে গেলো।কবীর স্যারের সঙ্গে এবার দিয়ে দ্বিতীয় বার দেখা তার।কিন্তু প্রথমবারের মতোন মিশুক লাগছেনা।মুখ ফুটে কিছু বলতে যাবে এর পূর্বে চিল্লিয়ে বলল,

“আউট।”

ফজলু চলে গেলে ফিচেল হেসে কবীর বলল,

“কেমন আছো বেবী গার্ল?”

“অনেক অনেক ভালো।”

“এতো ভালো থাকার কারণ?”

“জানিনা।”

কবীরকে দেখে তোশার হাত পা কাঁপছে।অনুভূতির জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে সে।লাজুক ভঙ্গিতে বলল,

“কেমন আছেন?অনেকদিন পর দেখলাম।”

” ভালো।কিন্তু তোমার মতো অনেক অনেক ভালো।

“আপনাকে দেখায় এতো ভালো লাগছে আমার।”

এতো সহজ সরল স্বীকারোক্তিতে কবীর আবার হতভম্ব হয়ে গেলো।মেয়েটা পাগলাটে ধরণের।কিন্তু তার কাছে ভালোই লাগে।নিজের চমকে যাওয়া ভাব আড়াল করে বলল,

” চলো।বাহিরে তাহিয়া ও তোমার মামী অপেক্ষা করছে।হাত ধরে এসো।”

কতো সহজে হাত বাড়িয়ে দিলো কবীর।তোশার মনটা কেমন করে উঠলো।সে কোনো দ্বিধা না করে হাতটা আঁকড়ে ধরলো।ফিসফিস করে বলল,

“হাতটা কখনো ছাড়বেন না কিন্তু।”

আনমনে কবীরও জবাব দিলো,

“কখনো না।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“আমি আসলে ভীষণ ভালো অভিনয় করতে জানি।কীভাবে জানেন?মা চায় সবসময় যেন তার ছোট্ট মেয়ে হয়ে থাকি।এটা ওটা আবদার করি।আর মা সেগুলো দিতে হিমশিম খাবে।এমন না কিছু বুঝিনা।সবই বুঝি।আসলে ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে তো।দুনিয়াটা খুব ঝলমলে না হলেও বানিয়ে নিতে হয়।”

কবীর ভূত দেখার মতো চমকে তোশার দিকে তাঁকিয়ে রইলো।মেয়েটির কথাবার্তা হুট করে ভীষণ বড়দের মতোন হয়ে গেলো না?ক্ষণপূর্বেই সে একটি কথা ভাবছিলো।তোশা দুই চোখে যা দেখছে সেটাই নিয়ে নিচ্ছে।এমনকি তার মা নিজেও খুব একটা টাকা পয়সার চিন্তা করছেনা।বরং সাজেশন দিচ্ছে এটাও ভালো লাগবে ওটাও ভালো লাগবে।বিষয়টি কবীরের কাছে মটেও ভালো লাগেনি।সে কিছু একটা বলবে ভেবেছিল।পরক্ষণে ভাবলো অনধিকার চর্চা হয়ে যাবে।কিন্তু কবীরের মন চাচ্ছে খুব করে তোশাকে শাসন করতে।এই অধিকার মনটা কেন চেয়েছিল?

“হঠাৎ একথা কেন?”

“আমি ড্রেস কিনছি আর আপনি অদ্ভূত চোখে তাঁকিয়ে আছেন।বিষয়টা বুঝি আমি।”

“বাহ!তোশামণি এতো বড় কবে হলো?”

“আমাকে চিনেন কবে থেকে?”

কবীর চিন্তা করার ভঙিতে বলল,

“হুমম।মাস খানেক আগে থেকে।তবে বুঝেছি ভালো একটা মেয়ে।”

“হুঁ?আরো কতোবার বুঝতে হবে আমাকে।তবেই সঠিক চিনতে পারবেন।”

“কতোবার?”

“গুণতে হবে বুঝলেন।”

তোশা কবীরের থেকে দূরে সরে গিয়ে মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।একটা লাল রঙের থ্রি পিচ নিজের উপর রেখে তোশা বলল,

“মা দেখো তো কেমন লাগছে?”

“ভীষণ ভালো।এটাও নিয়ে নাও।বুধবারে যখন বান্ধুবীদের সাথে ঘুরতে যাবে তখন পরে যেও।”

“ওকে।আমি ট্রাই করে দেখে আসছি।”

তোশা চলে গেলে তাহিয়ার পাশে এসে দাঁড়ালো কবীর।মুচকি হেসে বলল,

“তোশামণি এতোটাও বাচ্চা নয় দেখছি।”

“এটা কীসের জন্য মনে হলো?”

“মনে হলো এমনিতে।যাই হোক কাল আমাকে চট্টগ্রাম যেতে হবে।তুমি কাইন্ডলি মিটিংটা সামলে নিবে?”

বিরক্ত হলো তাহিয়া।উদাস কণ্ঠে বলল,

“আমাকে খুব বিশ্বাস করছো।এতো এতো টাকার বিষয়টা কেন যে শুধু আমাকে সামাল দিতে বলছো।”

“নাহ তোমাকে বিশ্বাস করিনা।”

“একটা কথা বলো তো কবীর।আমার উপর এই চোখ বন্ধ বিশ্বাসটা মায়ান করতে বলেছে তাইনা?প্রাক্তন স্ত্রীর প্রতি এতো মায়া কিন্তু খুব একটা ভালো নয়।”

“বাদ দাও তাহিয়া।তোশা এখনও ফিরে এলো না যে।”

“তাইতো।আমি দেখছি দাঁড়াও।”

“নো।আমি দেখে আসছি।”

কবীর ট্রায়াল রুমের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।বড্ড এলেমেলো পা তার।কিন্তু একজন নারীর দর্শনে থেমে গেলো যে একমনে ড্রেস দেখছে ঘুরেঘুরে।শুস্ক হয়ে উঠলো কবীরের কণ্ঠ।কী অদ্ভূত দুটো মানুষ এতো কাছাকাছি কিন্তু দূরত্ব?সেটা তো আকাশসম।কবীর উষ্ণ শ্বাস ফেললো।য ন্ত্র ণা থেকে চোখটা সরিয়ে নিলো।তোশা এক জায়গায় শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।লাল রঙের ড্রেসটায় দেখতে ভীষণ মিষ্টি লাগছে।ফোলা ফোলা গাল দুটো বড্ড আকর্ষণীয়।কবীরের মনটা হঠাৎ ষোল বছরের কিশোরের হতে চাচ্ছে।তোশা কান্নামাখা মুখে কবীরকে কাছে ডাকলো।

“কী হয়েছে বেবিগার্ল?”

তোশা নিচু সুরে বলল,

“একটা ভুল হয়ে গিয়েছে আমার।আম্মুকে ডাকেন।”

“কী হয়েছে সেটা বলো তো।”

“আম্মুকে ডাকেন।পার্সোনাল বিষয়।”

কবীর একটা জিনিস ভেবে পেলো না পনের বছর বয়সী মেয়ের কী এমন পার্সোনাল বিষয় থাকতে পারে।কিন্তু পরক্ষণে কিছু একটা ভেবে তাহিয়াকে ফোন করলো।তোশা এখনও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

“কী হয়েছে কবীর?কল কেন করলে?”

“দেখো তো।তোশার কী সমস্যা।”

“কী হয়েছে তোশা মা?”

“আম্মু শুনো।”

“হ্যাঁ বলো।”

তাহিয়াকে টেনে ফিসফিস করে পিরিয়ড কথাটি উচ্চারণ করলো তোশা।কিন্তু ততোটা গোপন হয়নি কথাগুলো।স্বল্প দূরত্বে দাঁড়ানো কবীর স্পষ্ট শুনলো।খুবই বিব্রত হলো ব্যক্তিটা।নিশ্চয় ট্রায়াল দিতে গিয়ে এই ড্রেসটা নষ্ট করেছে।কবীর আসছি বলে তৎক্ষনাৎ কাউন্টারে গিয়ে ড্রেসটার বিল মিটিয়ে দিলো।এটা সে কেন করলো জানা নেই।অবশ্য আর ড্রেস গুলোর দাম দিলে তাহিয়া ভীষণ রাগারাগি করবে।এই নিয়ে যেন কোনো প্রকার কথা না হয় তাই তৎক্ষনাৎ বিনা বিদায়ে শপিং মল থেকে বের হয়ে গেলো কবীর।

(***)

তোশামণির খুব লজ্জা লাগছে।সত্যি বলতে খুব খুব খুউউউব।কিন্তু কাওকে এই অনুভূতিটা ব্যক্ত করতে পারছেনা।মন খারাপ হলে সে তার কল্লোল ভাইয়ের কাছে আসে।তার বিছানায় উপর হয়ে গড়াগড়ি খায়।আর পুরো সময়টিতে সবথেকে পড়াকু,ভালো,ভদ্র ছেলে কল্লোল অঙ্কে ডুবে থাকে। কঠিন ম্যাথটা শেষ হলে সে তবেই কথা বলে।আজও ব্যতিক্রম নয়।তোশাকে ক্ষণে ক্ষণে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে দেখে কল্লোল শুধালো,

“কী ব্যাপার তোশামণি।আজ এতো দুঃখ কেন?”

চিন্তিত ভঙিতে জবাব দেয় তোশা,

“আমি আজ অনেক লজ্জা পেয়েছি একজনের কাছে।”

“কীভাবে?”

“বলা যাবেনা।”

“ওহ।”

কল্লোল পুনরায় বইয়ে ডুবে থাকার জন্য অগ্রসর হলো।সামনে তার এইচএসসি পরীক্ষা।তোশা তার পড়ায় বিঘ্ন ঘটিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“একটা না চাওয়া স্পর্শ পছন্দের মানুষ করলে কিছু হয়না।কিন্তু অপরিচিত মানুষ করলে এতো সমস্যা কেন হয়?”

“হুঁ?বুঝিনি কথাটি।”

“ধরো একজনকে আমি ভালোবাসি তাই ভুল করে সে অহেতুক স্পর্শ করে ফেললো সেটা তার খারাপ লাগেনা।কিন্তু সেম স্পর্শ সমান ভুল করে অন্য কারো থেকে পেলে কেন খারাপ লাগে?গা ঘিনঘিন করে।”

“তুমি খিচুড়ি পছন্দ করো না।কিন্তু বিরিয়ানি করো।কিন্তু দুটোই চালের তৈরী ভেজ, নন-ভেজ হয়।তাহলে একটা খারাপ লাগে আরেকটা কেন লাগেনা?”

বুঝদারের মতোন মাথা দুলায় তোশা।ফিসফিস করে বলে,

“তাহলে সে আমার পছন্দের মানুষ।হাহ, আমি তো জানতাম।অজানার ভান করছি কেন?আর লজ্জা পাচ্ছি কেন আসলে?”

নিজ ভাবনায় মশগুল তোশামণি আস্তে ধীরে উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।ভবিতব্য পূর্ণ বয়স্ক যুবক কল্লোল চশমার ফাঁকে তার প্রস্থান দেখলো।সে সম্পর্কে তোশার মামাতো ভাই।দুজনে একত্র বড় হয়েছে।এমনকি একে অপরের মিলও রয়েছে।কল্লোলের গোপন অনুভূতি হচ্ছে তোশা।কিন্তু সেই কথাটি বলার সাধ্য আপাতত তার নেই।কখনো হবে কী?

(***)

ভেজা চুলগুলো হাত দিয়ে ঝেড়ে দিলো কবীর।এতোক্ষণ ট্রেডমিলে দৌড়েছে সে।মাথায় পানি না দিলে ভালো লাগছিলো না।গায়ে জড়ালো গেঞ্জটি ত্বকের সঙ্গে লেপ্টে আছে।তামাটে পেশিবহুল বাহুদুটোর শিরা উপশিরা দৃশ্যমান।কবীরকে পয়ত্রিশ বছর বয়সেও ভীষণ সুন্দর দেখায়।আগে অবশ্য এমন ছিলনা।ইদানীং অর্থের শেষ নেই।তাই নিয়মিত জিম,খাদ্যভাস পালন করেই নিজের যৌবন ধরে রাখতে সক্ষম হচ্ছে।আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো কবীর।ছোট্ট টাওয়াল দিয়ে মুখটা মুছে নিচ্ছে আর ভাবছে জীবনটা একাকিত্বে ভরে গিয়েছে তার।আপন মানুষ বলতে কেউ নেই।ঠিক এমন সময় তার ফোনে অচেনা একটা নাম্বার থেকে কল এলো।

“হ্যালো কে?”

“হ্যালো,হ্যালো শুনেন।আমি পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর মেয়ে তোশামণি বলছি।”

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-২+৩

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“আমার ভয় লাগছে।আশেপাশে কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে।”

“কোনো ভয় নেই।দেখো আমি আলো নিয়ে এসেছি।”

মেয়েটির বুকের স্পন্দন অনুভব করতে পারছে কবীর।এখনও তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।সন্ধ্যার শীতল বাতাস তাদের স্পর্শ করে গেলো।মিষ্টি একটা সুগন্ধে সম্মোহিত হয়ে উঠলো কবীরের পুরুষ মন।আনমনে তোশার চুলে নাক ঠেকিয়ে জোরে নিশ্বাস নিলো।পরক্ষণে হুশ ফিরলো তার।বলিষ্ঠ হাতে মেয়েটিকে সোজা দাঁড়া করালো।নরম গালে দৃঢ় হাতটি ঠেকিয়ে শুধালো,

“এতো দূর কীভাবে এসেছিলে?দেখি তাঁকাও তো আমার দিকে।”

দুটো দৃষ্টির পরস্পর মিলনে প্রথমবারের মতোন পুরুষটিকে দেখলো তোশা।মেয়েটা খেয়াল করলো কয়দিন পূর্বে স্বপ্নে যে মানুষটিকে দেখে পেটের ভেতর সহস্র প্রজাপতি উড়ে গিয়েছিল।সেই স্বপ্ন মানবের সাথে বাস্তবে সামনে দাঁড়ানো মানুষটির বহু মিল আছে।হাত বাড়িয়ে কবীরের গাল ছুয়ে দিলো সে।

“চলো তোশা।তাহিয়া অপেক্ষা করছে।কীভাবে এলে এখনও কিন্তু বললে না।”

“আম্মু বকবে অনেক।”

“আমি আছি তো।”

“আপনি কী সেই কবীর শাহ?ওইযে আম্মুর বন্ধু।”

“ঠিক ধরেছো।তোমাকে শেষবার দেখেছিলাম যখন জন্ম নিলে।যদিও ওটা প্রথমবার ছিল।”

কবীর এক হাত দিয়ে তোশাকে নিজের সাথে মিশিয়ে গাড়ীতে নিয়ে গিয়ে বসলো।মুহুর্তেই কমিউনিটি সেন্টারের জন্য যাত্রা শুরু হলো তাদের।নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে নিয়েছে তোশা।মেয়েটার খুব কৌতুহল হচ্ছে পুরুষটিকে নিয়ে।আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো,

“আপনি এতোদিন কোথায় ছিলেন?”

“লন্ডনে।কেন তাহিয়া কখনো বলেনি?”

“উহু।”

খুব বেশী সময় লাগলো না বিয়ের জায়গাটিতে পৌঁছাতে।কবীরের গাড়ীতে তোশাকে দেখে দৌড়ে এলো তাহিয়া।মেয়েকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো।কপালে বড় একটা চুমো দিয়ে তাহিয়া শুধালো,

“তোশামণি কোথায় গিয়েছিলে তুমি?আর কেন?”

চঞ্চলা কিশোরীর চোখদুটো আশেপাশে ঘুরছে।কারণ ইতিমধ্যে বিয়ে বাড়ীর সকলে গেটের কাছে সমাবেত হয়েছে।এরমধ্যে মেহরাবকে দেখে তোশার চেহারায় অনুভূতির পরিবর্তন ঘটলো।সে কিছু বলতে যাবে এর পূর্বে মেহরাব ইশারায় না করে দিলো।সকলের দৃষ্টি সেদিকে না থাকলেও কবীর বিষয়টা দেখলো।তবে বুদ্ধিদীপ্ত এই পুরুষটি তাহিয়াকে বলল,

‘তাহিয়া তোশামণি ভয় পেয়েছে।ওকে এখন এতো প্রশ্ন করো না।আর বিয়েটা হয়ে গেলে দুজনে আমার সাথে যাবে।কেমন?”

“তবে কবীর আমার জানা প্রয়োজন।ও বের হলো কেন?”

“তাহিয়া!আমাকে বিশ্বাস করো।”

উষ্ণ শ্বাস ফেললো তাহিয়া।এক জীবনে কবীর নামক এই বন্ধুটি তার কাছে সবথেকে ভরসার জায়গা।ডিভোর্সের পর থেকে কেমন আগলে রেখেছে ছায়ার মতোন।মেয়েকে নিয়ে তাহিয়া ভেতর দিকে পা বাড়ালো।হুট করে তোশা বলল,

“মা আমি তাকে থ্যাংক ইউ বলিনি।”

“কাকে?”

মুখে কোনো জবাব দিলো না তোশা।বরং দৌড়ে গিয়ে কবীরকে পুনরায় জড়িয়ে ধরলো।পুরুষটি একটু বেশীই লম্বা।পেশিবহুল শরীর।নিয়মিত শরীর চর্চার দরুণ বেশ বড়সড় দেখা যায়।সেই তুলনায় তোশা নেহাৎই বাচ্চা মেয়ে।চল্লিশ কেজি ওজনের ছিমছাম দেহটাকে হেসে জড়িয়ে ধরলো কবীর।মেয়েটির মাথা তার বুকের অর্ধেক অবধি ঠেকেছে।

“কী হলো তোশামণি?”

“থ্যাংক ইউ।”

“বাহ।তুমি তো ভালোবাসা দেখাতে জানো।”

মাথা উঠিয়ে কবীরকে উজ্জ্বল আলোতে পুনরায় দেখলো তোশা।নাহ সত্যিই বড় মিল আছে স্বপ্নের সঙ্গে।

(***)

মেহরাবের রোগা শরীরটা ক্ষণে ক্ষণে ঘেমে উঠছে।ভীর থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে সে।তখন তোশাকে নিয়ে বের হওয়ার পর ভুলে ওকে রেখে সে বন্ধুদের সঙ্গে চলে এসেছিল।
পরবর্তীতে মেয়েটির খোঁজ পড়ায় মনে এসেছে।আচমকা প্রচন্ড ভারী একটা হাত তার ঘাড়ের উপর পড়লো।গলা একদম কনুই দিয়ে চেপে ধরলো কেউ।মেহরাব চিৎকার করে উঠলো।

“চিল্লাবে না ছেলে।আগে বলো তোশার হারিয়ে যাওয়ার পিছনে হাত আছে কীনা।”

মেহরাব ভয় পেলেও বহু কষ্টে জবাব দিলো,

“কে তোশা?”

“তোশাকে চিনো না?লাল রঙের লেহেঙ্গা পরা গোলগাল সুন্দর মেয়েটা।”

কবীর নিজ মুখে তোশাকে সুন্দরী বলে একটু বিব্রত বোধ করলো।একটা বাচ্চাকে মেয়েকে তার চোখে অন্য রকম সুন্দর লাগা শোভনীয় নয়।

“ও তো লেহেঙ্গা না ফ্রক পরেছে।”

“একদম না।ওটা লেহেঙ্গা।”

“আরে না ফ্রক।আমি কতো জিএফকে কিনে দিয়েছি।”

“লেহেঙ্গা।”

“ফ্রক।”

রাগ উঠে গেলো কবীরের।মেহরাবের গলা আরেকটু জোরে চে পে ধরলো।চিৎকার করে ছেলেটা বলল,

“লেহেঙ্গা ওটা।আপনি ঠিক।”

“তোশাকে চিনো দেখছি।”

“আজ পরিচয় হলো।”

“বাহিরে তুমি নিয়ে গিয়েছিলে তাইনা?”

“হ্যাঁ।খারাপ মতলব ছিলনা কিন্তু।”

“রেখে এলে কেন?”

“ভুলে গিয়েছিলাম ওর কথা।”

কবীর আশ্চর্য হয়ে ছেলেটির গলা ছেড়ে দিলো।মেহরাব ছিটকে সরে মানুষটিকে দেখলো।এমন লম্বা চওড়া সুদর্শন পুরুষ সিনেমা কিংবা একশন মুভিতে দেখেছে সে।শার্টের উপর দিয়ে বাইসেপস গুলো ছুঁয়ে বলল,

“ওরে বাবা।এগুলো আসল।”

“তুমি কীভাবে একটা মেয়ের কথা ভুলে গেলে?জানো দুনিয়া কেমন?যদি কিছু হতো।”

“সরি ভাইয়া।”

“তোমার ভাইয়া লাগি আমি?”

“আরে ভাই বানিয়ে নিয়েছি।”

কবীর বিরক্ত হয়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরলো।ছেলেটা পা গ লা টে ধরণের।তাছাড়া মানুষ বিষয়টা জানলে তোশাকে ভুল বুঝবে।পিছন পিছন মেহরাব এসে বলল,

“বস ফোন নাম্বার দাও।তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে।একবার দাও।কোথায় থাকো সেটা তো বলো।”

“আমাকে তোর বন্ধু মনে হয়?সর এখান থেকে।”

“শুনো তো বস।”

কবীর থামলো না।বড় বড় পা ফেলে সামনে হাঁটা ধরলো।অজান্তে মনটা ভালো হয়ে গেলো তার।কারণটা কী তোশা?কথাটি ভাবতেই অদ্ভূত লাগলো কবীরের নিকট।

(***)

এক ফালি মিঠা রোদ তোশামণির মুখের উপর এসে লুটোপুটি খেতে লাগলো।হাত দিয়ে মুখে ছায়া করলো সে।বিরক্তিতে ঘুম ভেঙে গেলো তার।ঘুমঘুম চোখে উঠে বসলো।স্থান কাল ভুলে জোরে জোরে চিল্লিয়ে বলল,

“আম্মু আম্মু জানালা গুলো বন্ধ করে দাও।আমি আরো ঘুমাবো।”

“তাহিয়া বাহিরে গিয়েছে।ঘুমাচ্ছিলে এজন্য ডাকেনি।”

পুরুষ কণ্ঠ শুনে ঘুম ছুটে গেলো মেয়েটির।আলুথালু চুলগুলো হাত দিয়ে চোখের সামনে থেকে সরিয়ে দিলো।কবীর দাঁড়িয়ে আছে সামনে।পুরুষটির শরীরে ঘামে ভেজা টি শার্টটি লেপ্টে আছে।গলায় থাকা এডামস এপেল শুকনো ঢোক গেলার সঙ্গে উঁচু নিচু হচ্ছে।তোশার বড় লোভ হলো সেটি ধরার জন্য।কবীর তাকে তাড়া দিয়ে বলল,

“এগারটা বাজে।ঘুমিয়েই যাচ্ছো।উঠবে কী?”

“নাহ।আরো ঘুমাবো।”

“এতো ঘুমালে খারাপ লাগবেনা?”

“রাতে ঘুমাতে পারিনি আমি।”

“কেন?”

“বাসাটা কেমন ভয়ংকর।”

কবীর চারিধারে চোখ বুলালো।গাজীপুরের এই বাসাটায় খুব বেশী থাকা হয়না।এজন্য কিছুটা নির্জন।

“ভূতের ভয় পাচ্ছিলে?”

“কীভাবে বুঝলেন?”

“আমি মনের কথা বুঝতে পারি।”

“মিথ্যা।”

হেসে ফেললো কবীর।বাচ্চাদের সঙ্গে মিশতে ভীষণ ভালো লাগে তার।মেয়েটা তার চোখে সেরকমই।এগিয়ে এসে তোশার সামনে বসে তার চুলগুলো এলেমেলো করে দিলো।আপাত দৃষ্টিতে বিষয়টি সাধারণ হলেও কবীরের মন কেমন যেন করে উঠলো।অগোছালো যুবতী মেয়ে।পরনের কাপড় এলেমেলো হয়ে আছে।গা দিয়ে পূর্বের মতোন মিষ্টি গন্ধ।নরম ত্বকে স্পর্শ করার দরুণ কবীরের অ স হ্য কর অনুভূতি হলো।এরকম আগেও হতো।যখন তার প্রাক্তন স্ত্রীকে মনেপ্রাণে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার বিনিময় করতো।তবে একই অনুভূতি তোশাকে স্পর্শ করার পর কীভাবে এলো?

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“তোমার সংসার ভাঙলো কেন?উত্তর হলো বনিবনা হয়নি।আমার সংসার ভাঙলো কেন?এটিরও জবাব বনিবনা হয়নি।শিউলির সংসার ভাঙছে কেন?মজার ব্যাপার হলো এই বারও সেই একই জিনিস হয়নি।বনিবনা কিংবা বোঝাপড়া।বোঝাপড়া শব্দের ভার আসলে কতো?যে আমাদের কারো হলো না?”

অন্তত গভীর প্রশ্ন করলো তাহিয়া।ঈষৎ গরমে শুভ্র মেদুর গালে রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে।কবীর অতি সন্তপর্ণে গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছে।প্রশ্নটির জবাবে সে বলল,

“আমি যদি জানতাম তাহলে কখনো ডিভোর্স হতো?জানো তাহিয়া এতো প্রেম,ভালোবাসা, মায়া কীভাবে হাওয়ায় মিশে গেলো।ও আমার স্ত্রী থেকে এখন প্রাক্তন।”

“খারাপ লাগে বিষয়টা ভাবলে?”

“খুব।কিন্তু যখন তিক্ততার কথাগুলো স্মরণে হয় তখন মনে আসে একা আছি বেশ আছি।”

তাহিয়া হেসে ফেললো।একই অনুভব মায়ানের সাথেও হয়।তোশামণির বাবা বলে লোকটাকে কতোদিন ডাকা হয়না।ইতস্তত করে তাহিয়া শুধালো,

“মায়ানের সাথে যোগাযোগ হয়?”

কবীর হাসলো।তাহিয়া জানে মায়ান এমন একজন বন্ধু তার নিকট যার সাথে একদিনও কথা না বলে থাকা যায়না।এইতো সকালেও তোশাকে সে ভিডিও কলে দেখিয়েছে।

“তুমি জানো এই প্রশ্নের জবাব তাহিয়া।”

“জানি।তবে একটু ফর্মালিটি করলাম।”

“হয় কথা।মাঝেমধ্যে তোশার জন্য কান্নাকাটি করে।মেয়েটাকে একবার তার বাবার কাছে যেতে দেওয়া কী খুব দোষের হবে?”

“অবশ্যই।মায়ান যা চেয়েছিল তা সে পেয়েছে।কানাডায় বসবাস করছে এখন।নতুন বিয়ে করেছে।মেয়ে না হলেও চলবে।কেন ওর স্ত্রীর বাচ্চা নেই?”

“আছে।একটা ছেলে..।

” থামো থামো কবীর।আমি শুনতে চাইনা।আমার মেয়েটা বড় হোক ভালোভাবে।এই কান দুটো শুধু তোশামণির সফলতার গান শুনতে চায়।নাকী ওর বাবার নাটক।”

কবীর গাড়ীর লুকিং গ্লাসে পিছনের সীটে ঘুমিয়ে থাকা তোশার পানে তাঁকালো।মেয়েটা উচিতের থেকে অনেক বেশী ঘুমিয়ে সময় কাঁটায়।কবীর মাথা ঈষৎ দুলিয়ে বলল,

“তোমার মেয়ে এতো ঘুমায় কেন?পড়াশোনা করে তো ঠিকমতো?”

“আরে না।সময় পায়না একদম।পড়াশোনাতে খুব ভালো।এজন্য ছুটি পেলে এরকম মাইন্ড ফ্রেশের জন্য ঘুমিয়ে কাঁটায়।”

“তোশামণিকে তুমি ঠিকঠাক বড় করছো।প্রাউড ফিল হয় তোমার প্রতি তাহিয়া।কে বলবে তুমি সেই মেয়েটা যে কলেজে মায়ানের ধমকে থরথর করে কেঁপেছিলে।বড় সোনালী ছিল সেই দিন গুলো।”

“হুঁ।”

কবীরের স্মৃতিচারণে বিশেষ সায় না দিয়ে তাহিয়া গাড়ীর জানালা দিয়ে পিছনে ছুটতে থাকা রাস্তায় দৃষ্টি রাখলো।এ জীবন কেমন বেদনার।প্রিয় মানুষ কতো সহজে অচেনা হয়ে যায়।

তাহিয়াদের বাসার সামনে এসে গাড়ী থামালো কবীর।নেমে বাহিরে দাঁড়ালো।এই বাড়ীটা তার ভীষণ চেনাজানা।মনটা ফুরফুরে হয়ে গেলো ব্যক্তিটার।কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের মতোন এক বালতি পানি তার উপর এসে পড়লো।তাহিয়া বিষয়টা দেখেই চিৎকার করে উপরে তাঁকালো।একজন ত্রিশ বছরের রমণী শূন্য বালতি হাতে দাঁড়িয়ে আছে।

“শিউলি এটা তুই কী করলি?”

চেঁচানো সুরে জবাব এলো,

“আপু সরি।আমি ভেবেছিলাম শয়তানটা আবার এসেছে।”

“অন্ধ নাকী তুই?ময়লা পানি ছিল নিশ্চয়?”

“হ্যাঁ আপু।”

“কীযে করিস না তুই।”

কবীর ইশারা করে শুধালো,”শয়তানটা কে?”

“ওর হাজবেন্ড।বাড়ীতে সবসময় এমন লাগিয়ে রাখবে।অতিষ্ঠ হয়ে গেলাম।”

মেজাজ খারাপ হলেও মেয়ের ঘুমন্ত মুখ দেখে নিমিষেই তা চলে গেলো।তাহিয়া যুবতী বয়সে ভীষণ রুপবতী হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত ছিল।কিন্তু মেয়ে তোশার রুপ যেন কিছুতেই থামছেনা।বাঁধ ভাঙা নদীর জলের মতোন।শুধু বাড়ছে।উষ্ণ শ্বাস ফলে আস্তে করে ডাকলো,

“তোশামণি উঠো।বাসায় এসে পড়েছি।উঠো তোশামণি।”

ধীরে ধীরে চোখ খুললো তোশা।সর্বপ্রথম নজরে এলো পাশের জানালায় বিরক্তিকর মুখে দাঁড়িয়ে থাকা অতি সুদর্শন পুরুষটির দিকে।ভ্রু দুটো কতো সুবিন্যস্ত ভাবে কুঁচকে আছে।তোশার সদ্য জাগ্রত মস্তিক বিষয়টা বুঝতে পারলো না।ক্ষণবাদে খেয়াল হলো এটি তার স্বপ্ন পুরুষ নয়।বরং কবীর শাহ।কিন্তু গায়ে নোংরা পানির আভাস দেখে হেসে বলল,

“তাতিন করেছে একাজ তাইনা?আপনাকে ভেজা শরীরে খুব সুন্দর লাগছে।”

কবীরের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো।এমনকি তাহিয়াও হতভম্ব হয়ে ক্ষণিকের জন্য মেয়েকে দেখলো।কবীর বিব্রত হয়ে শুধালো,

“কী বললে তোশামণি?”

“সুন্দর লাগছে আপনাকে।”

তাহিয়া বিরোধ করলো।অপ্রস্তুত হেসে বলল,

“ও এমনি বলেছে।চলো বাসার ভেতর বাবার পাঞ্জাবী আছে।ফিট হতে পারে।ওটা পরে গোসল করে তবে যাবে।মনে হচ্ছে মাছ ধোঁয়ার পানি।”

উপর হতে উচ্ছাসিত শিউলি জবাব দিলো,”আপু ঠিক ধরেছো।মাছ ধোঁয়ার পানি।কবীর ভাই বলেন তো পানি ঠান্ডা না গরম ছিল?”

“শিউলি ফুলের বাচ্চা উপরে এসে দেখাচ্ছি।সব এক্সিডেন্ট তোমার আমার সাথেই হয়।”

“কী করবো বলেন?আপনার এতো ছোট্ট দেহ আমার বড় বড় চোখে লাগেনা।ভেতরে আসেন।বাকী কথা পরে হবে।”

তাহিয়া ও কবীর ভেতরের পথে পা বাড়ালো।পুরুষটির শরীরে লেপ্টে থাকা সাদা শার্টটি যতোক্ষণ পারলো মন ভরে তোশা দেখে নিলো।এমন অদ্ভূত অনুভূতি হচ্ছে কেন তার?

(***)

“তাতিন আমি তোমাকে কতো মিস করেছি জানো?”

“ওরে আমার তোশা বাচ্চাটা।আমিও খুব মিস করেছি তোমাকে।কিন্তু শুনলাম তুমি হারিয়ে গিয়েছিলে?কিছু যদি হতো।”

অভিমান করে তোশা বলল,

“কিছু হয়নি তাইনা?তোমরা সকলে আমাকে বাচ্চার মতো দেখো।”

“তুমি তবে বড় মানুষ নাকী?”

“হুঁ।অনেক বড় মানুষ।”

শিউলি হেসে তোশাকে জড়িয়ে ধরলো।বোনের মেয়ে হলেও সে নিজ মেয়ের থেকে কম আদর করেনা।এমনকি তার স্বামী নিজাম যার সঙ্গে ইদানীং একটুও মিলছেনা কিছু তার।সেই লোকটাও বিভিন্ন বাহানায় তোশার খোঁজ নেয়।একটা মেয়ে প্রায় সকলের কাছে আদুরে।খালাকে ছেড়ে তোশা বিছানায় খুলে রাখা ল্যাপটপের দিকে এগিয়ে গেলো।স্ত্রীনে থেমে থাকা গানটি সচল করে দিলো।মুহুর্তে রুনা লায়লার কণ্ঠে শুনতে পেলো,

চোখ মেলে যারে পেয়েছি
স্বপ্নের নায়ক সেই তুমি,
নিশিদিন প্রতিদিন স্বপ্নে দেখি আমি
নিশিদিন প্রতিদিন স্বপ্নে দেখি
চোখ মেলে যারে পেয়েছি তারে ভালবেসেছি
স্বপ্নের নায়ক সেই তুমি
আমি জানি শুধু জানি আমি
স্বপ্নের নায়ক সেই তুমি।
স্বপ্নের নায়ক সেই তুমি
স্বপ্নের নায়ক সেই তুমি।

কিশোরী তোশা মনোযোগ দিয়ে লাইন গুলো শুনছে।চোখ মেলে সে নিজেও তো একজনকে পেয়েছে।তবে সে স্বপ্নের নায়ক?তার স্বপ্নের নায়ক এতো বড় মানুষ?কৌতুহলী হয়ে শুধালো,

“তাতিন।স্বপ্নের নায়কের বয়সে বড় হতে পারেনা?”

ভীষণ বাচ্চামো প্রশ্ন।শিউল ল্যাপটপ অফ করে বলল,

“কেন হতে পারেনা?স্বপ্নের নায়ক ছোট, বড়,অন্ধ,প ঙ্গু সব হতে পারে।সঠিক মানুষের কী আবার সুন্দর অসুন্দর বিচার?কিন্তু বাস্তবতা বড় কঠিন।এই স্বপ্নের নায়ক টায়ক বলে কিছু হয়না।”

“আসলেও হয়না।”

“উহু,বাস্তব কঠিন।আচ্ছা তোশা দেখে এসো তো কবীর ভাই চলে গিয়েছে নাকী?তার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল।”

“চাকরীর কথা বলবে তাতিন?”

“হ্যাঁ।”

“মা শুনলে খুব রা গ করবে।”

“ইশ,করবেনা।তুমি যাও তো।”

হেলে-দুলে নানার রুমের দরজার সামনে দাঁড়ালো তোশা।মুহুর্তেই পা দুটো থমকে গেলো তার।রোদে পো ড়া খাওয়া পেটানো তামাটে দেহের পুরুষ আনমনে চুল মুছে যাচ্ছে।বিন্দু বিন্দু জলকণা নিবারণ ত্বক দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে।শিউরে উঠলো কিশোরী তোশামণি।য ন্ত্র ণা হচ্ছে তার।কানের কাছে প্রজাপতিরা ক্রমাগত বলে যাচ্ছে “স্বপ্নের নায়ক সেই তুমি।”

দরজার কাছে লজ্জামাখা তোশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিব্রত হলো কবীর।তড়িঘড়ি করে পাঞ্জাবী গায়ে জড়িয়ে নিলো।

“তোশামণি ভেতরে এসো।কিছু লাগবে?”

ঘোর ভাঙলো তোশার।সে রুমের ভেতরে এসে মাথা দুলিয়ে বলল,

“কিছু লাগবেনা।খালামণি..।”

“হ্যাঁ কী তোশামণি?”

কবীরের গায়ের সুগন্ধে নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে তোশার।সে কোনোকিছু বলতে পারছেনা।জবাব না দিয়ে তৎক্ষনাৎ রুম ত্যাগ করলো।কবীর কপাল কুঁচকে নিজের সঙ্গে বলল,

“এই মেয়ের আবার কী হলো?”

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-০১

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১
#লেখা:সামিয়া খান প্রিয়া

পনের বছর বয়সে আমি পঁয়ত্রিশ বছরের এক বলিষ্ঠ পুরুষের প্রেমে মজেছিলাম।গুণে গুণে আমার থেকে বিশটা বছরের বড় ছিল।কীভাবে হলো প্রেমটা সেই বিষয়ে আজও আমার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই।ব্যক্তিটার ভালো নাম কবীর শাহ।যার নাম শুনলে আম্মুর প্রিয় স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহ এর কথা মনে পড়ে যায় আমার।দেখতে কিন্তু সে নায়ক বটে।গমরঙা দেহ,সুললিত কণ্ঠ,অকম্প ত্বক।ঠোঁটে সবসময় তির্যক হাসি।কবীরের আমার প্রতি কীভাবে ভালোবাসা তৈরী হয়েছিল সেই গল্প আমাকে কোনো এক বিকেলে শুনিয়েছিল সে।ভালোবাসার গল্প,ঘৃ ণা র গল্প,হারিয়ে গিয়েও হারিয়ে যাওয়ার গল্প।কিন্তু পরিশেষে এটা আমার গল্প।

(আরম্ভ)

কোনো এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর মেয়ে বিয়ের উপলক্ষে আশেপাশের যতো প্রকারের দরিদ্র মানুষ রয়েছে তাদের দাওয়াত করেছে সে।শ’য়ে শ’য়ে মানুষেরা টেবিলে খাওয়া দাওয়া করছে।অপর পাশে আত্নীয়দের জন্য খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে।সবেমাত্র মায়ের হাতে খেয়ে চেয়ারে বসে পা দুলাচ্ছে তোশামণি।অসহায় মানুষদের খাওয়া দেখতে ভীষণ ভালো লাগে তার।যখন সে বড় হবে তখন এমন একটা রেস্ট্রুরেন্ট খুলবে যেখানে তিনবেলা এরকম টেবিল সাজিয়ে দাওয়াত খাওয়াবে মানুষদের।দুই টাকার বিনিময়ে।পরবর্তীতে সেই টাকা দিয়ে একটা গাছ রোপণ করবে?এরপর..।ভাবনা এগুতে পারলো না তোশা।তার বয়সী একটা ছেলে চেয়ার নিয়ে পাশে বসলো। হালকা কেশে বলল,

“তুমি ভাইয়ার চাচাতো শালী তাইনা?”

তোশা নিশ্চুপে মাথা নাড়িয়ে নাবোধক অর্থ প্রকাশ করলো।ছেলেটা পুনরায় উৎসাহী হয়ে বলল,

“আমাদের পক্ষ থেকে কেউ?বাসে তো দেখিনি।”

“আমি ছেলে পক্ষও না।মেয়ে পক্ষও না।”

ছেলেটা ভ্রুঁ কুঞ্চিত করলো।এই সুন্দর গোলগাল পরীর মতোন ফর্সা দেখতে মেয়েটাকে কোনোমতে অসহায় মনে হচ্ছে না।উল্টো ছিমছাম শরীরে সুন্দর দামী একটি ফ্রক।ছেলেটি পুনরায় শুধালো,

“তুমি তবে কার পক্ষ থেকে এসেছো?”

“আমার আম্মু এই পুরো বিয়েটা দেখছে।মানে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে।”

“ওহ বুঝেছি।অনুষ্ঠানটা অন্য লোকেরা সাজিয়েছে?এজন্য সব জায়গায় এভাবে শাহ লেখা।তাইতো বলি বিয়েটা আমার বড় ভাইয়ের।অথচ অন্য ছেলের নাম কেন?আচ্ছা শাহ কে হয়?”

তোশা মাথা দুলিয়ে বলল,

“চিনিনা।কখনো দেখিনি।তবে শুনেছি আম্মুর পার্টনার।”

“বাই দ্য ওয়ে তোমার নাম কী?”

“তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।ক্লাস নাইনে পড়ি।তোমার নাম কী?”

“মেহরাব খান।তুমি চৌধুরী, আমি খান।দুজনে কিন্তু শত্রু।আমিও ক্লাস নাইনে পড়ি।”

তোশার চোখদুটো ছোট ছোট হয়ে গেলো।প্রথম দেখায় মেহরাবকে খারাপ লাগেনি তার।আলাপ করার ইচ্ছা আছে।কিন্তু সে নিজে থেকে কিছু বলবেনা।মেহরাব অবশ্য এটা ওটা বলে খুব অল্প সময়ে তার সঙ্গে সখ্যতা করে নিলো।দুজনে নানা বিষয়ে আলাপ করছে।এমন সময় মেহরাব বলল,

“আচ্ছা তোশা এভাবে বসে থাকলে কোনো মজা পাবেনা।চলো ওদিকটায় আমরা সবাই কিছু একটা করবো।”

কৌতূহলী হয়ে তোশা বলল,

“কী করবে?”

“চলো তো আগে।”

“দাঁড়াও আম্মুকে বলে নেই।”

উঠে দাঁড়ালো মেহরাব।উপহাস করে বলল,

“তুমি ছোট বাচ্চা?আন্টিকে বলে যেতে হবে?”

নতুন তৈরী হওয়া এই বন্ধুর মুখে নিজেকে ছোট বাচ্চা বলা শুনতে মটেও ভালো লাগলো না তোশামণির।তাইতো মায়ের সবসময় বাধ্যগত সন্তান মাকে না জানিয়ে মেহরাবের সঙ্গে কমিউনিটি সেন্টারের নির্জন পাশটায় চলে গেলো।

(***)

তাহিয়ার শুভ্র নাকটায় শিশির দানার মতোন ঘাম জমে আছে।পরনে জামদানী শাড়ীটা ঈষৎ এলেমেলো হয়ে গিয়েছে।চিকন, সরু দেহ তার।মসৃণ ত্বক।মাত্র বিশ বছরে মা হয়ে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ছাঁপ তার মধ্যে নেই।গত মাসে পঁয়ত্রিশ তম জন্মদিনের সাথে নিজের একমাত্র মেয়ে তোশারও পনের তম জন্মদিন পালন করলো।অথচ চেহারায় পঁচিশ বছরের যুবতীর ছাঁপ।বছর দশেক আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে নিজেই সফল ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছে।আপাতত শিল্পপতীর মেয়ের এই বিয়েটা পার করতে পারলে সে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।তার টিমের সবথেকে বয়স্ক লোকটি তড়িঘড়ি করে এসে বলল,

“ম্যাম,এখনও লাইটিং ঠিক হচ্ছে না।লাইনেই সমস্যা।এভাবে চললে সন্ধ্যায় রাস্তা দিয়ে ধোঁয়াও তৈরী করা যাবে না।”

“পাপন আঙকেল বিষয়টা আপনি দুই ঘন্টাতেও সমাধান করতে পারেননি?ওদিকে কবীর ফোনের উপর ফোন করছে।পুরো বিষয়টা পার্ফেক্ট না হলে প্রচুর সম্মানহানী হবে।”

“ম্যাম, আমরা তো চেষ্টা করছি।”

“বর-বউয়ের এন্ট্রি সন্ধ্যায় এমন হবে সেটা ছয় মাস ধরে ঠিক করা।আর আপনি আজ বলছেন যে চেষ্টা করছি?আফসোস।”

বিরক্তির ফলে তাহিয়ার কপাল কুঁচকে এলো।ইদানীং সাধারণ বিষয়ে রাগ উঠে যায়।তোশা পেটে থাকাকালীনও এতোটা মুড সুইং হয়নি।ফোন ভাইব্রেট হলো।স্ত্রীনে কবীর নামটা ভেসে উঠছে।ব্যক্তিটার ফ্রেন্ডের ছোট ভাইয়ের বিয়ে।এজন্য সব যেন পার্ফেক্ট হওয়া চাই।তাহিয়া জানে এখন ফোন রিসিভ করলে কথা কাটাকাটি হবে দুজনের।এজন্য আস্তে করে ব্যাগে ভরে রাখলো।উষ্ণ শ্বাস ফেলে নিজের এসিস্ট্যান্টকে জিজ্ঞেস করলো,

“তোশা কোথায় দ্বীপা?”

“খাবারের ওখানে তো বসে ছিল।”

“মানে?তোমাকে না বলেছিলাম সবসময় ওর খোঁজ রাখতে?যাও খুঁজে নিয়ে এসো।”

“জি ম্যাম।’

ক্ষণবাদে দ্বীপা শূন্য ফিরে এসে বলল,

“তোশামণি ওখানে নেই ম্যাডাম।আশেপাশে কোথাও দেখিনি।”

তাহিয়ার আত্নাটা কেমন যেন করে উঠলো।একমাত্র মেয়েকে সে চোখে হারায়।

“নেই মানে?কোথায় গিয়েছে?”

“জানিনা।”

“ই ডি য় ট।ওকে খুঁজো।আমার মেয়েটা বোকাসোকা।”

তাহিরা হন্তদন্ত হয়ে আশে পাশে দেখতে লাগলো।মনে প্রাণে চাচ্ছে তার সন্তান যেন সুস্থ থাকে।

(***)

দিনের আলো কমে আসছে ক্রমশ।তোশা ভারী লেহেঙ্গাটি ধরে এদিক ওদিক তাঁকাচ্ছে।মেহরাব তাকে অচেনা এই রাস্তাটা ধরে কোথায় নিয়ে এসেছে বুঝতে পারছেনা।এই জায়গাটি তার জন্য নতুন।গাজীপুরে আগে কখনো আসা হয়নি।তোশার খুব আফসোস হচ্ছে কেন সে নতুন কিছু দেখার লোভে গেটের বাহিরে চলে এলো।রাস্তা দিয়ে লোকেরা নামাজের জন্য মসজিদে যাচ্ছে।তাদের কয়েকজনকে কমিউনিটি সেন্টারের কথা জিজ্ঞেস করেছিল।কিন্তু সে ছোট বেলা থেকে পূর্ব পশ্চিম চিনেনা।ফল স্বরুপ পূর্ব ভেবে পশ্চিমে চলে এসেছে।তোশা একসময় হতাশ হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়লো।পাশে একজন মহিলা যাচ্ছিলো।তাকে দাঁড়া করিয়ে বলল,

“আন্টি একটু শুনুন।”

মহিলাটি তার উপর থেকে নিচে একবার তাঁকিয়ে দেখলো।কাঠকাঠ হয়ে জবাব দিলো,

“কী চাই?”

“আপনার কাছে ফোন থাকলে একটু দিবেন?আম্মুকে কল করবো।”

“টাকা নাই ফোনে।”

কথাটি খুব দ্রুতবেগে বলে মহিলাটি চলে গেলো।তোশার কান্না পাচ্ছে এখন।অন্যদিকে রাস্তাটি নির্জন হয়ে আসছে।হঠাৎ একটা কুকুর ডেকে উঠলো।সঙ্গে আরো কয়েকটি কুকুরের ডাক।দলবদ্ধ হয়ে প্রাণী গুলো ঝগড়া করতে করতে এগিয়ে আসছে।তোশা এই প্রাণীটিকে খুব ভয় না পেলে অচেনা পরিবেশে মন যেন কেমন করে উঠলো তার।মৃদু সুরে কান্না করতে করতে দৌড় লাগালো।পিছন পিছন কুকুর গুলোও যেন আসছে।প্রচন্ড ভয়ের মুহুর্তে একটা গাড়ী তাকে অতিক্রম করে থেমে গেলো।সেখান থেকে একজন ছায়ামূর্তি নামলো।তোশা বলে দৃঢ় কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠলো।মেয়েটা থামলো।কুকুর গুলোর বিষয়টা আগুন্তক বুঝতে পেরে এগিয়ে গেলো।

“তোশা অবশেষে তোমাকে পেলাম।তাহিয়ার অবস্থা খুব খারাপ।এতদূরে কীভাবে এলে?”

অচেনা কণ্ঠ।কখনো শুনেনি মেয়েটা।তবে পরিচিত কিংবা অপরিচিত দেখলো না।ছুটে গিয়ে লোকটার উপর ঝাপিয়ে পড়লো।ভাগ্যিস ব্যক্তিটা শক্ত করে ধরেছিল মেয়েটিকে।তোশা একদম তার পেটানো দেহের সঙ্গে মিশে গেলো।মিষ্টি সুবাস নাকে এসে ঠেকলো আগুন্তকের।শান্তসুরে বলল,

“বেবী গার্ল।সব ঠিক আছে তো।আমি আছি।”

কম্পমান কণ্ঠে তোশা শুধালো,

“কে আপনি?আম্মুর কাছে নিয়ে চলেন।”

আগুন্তক নরম সুরে বলল,

“আমি কবীর শাহ।ভয় নেই আমার সাথে।”

কবীর শাহ নামটি তোশা নিজেও একবার উচ্চারণ করলো।নির্জন রাস্তায় তোশার নিকট নামের শব্দগুলো কেমন অদ্ভূত মধুর শুনালো।সে পুরুষটির সঙ্গে আরেকটু মিশে গেলো।

চলবে।

প্রিয়দর্শিনী পর্ব-৪৫

0

#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব__৪৫

বিকালে আবিদ থানায় গিয়ে দেখে ছেলেগুলোকে সেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। অফিসারের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলে নেয় আবিদ। পরবর্তীতে অফিসার তাকে কনস্টেবল সহ সেলে প্রবেশ করতে বলে। নাহলে হঠাৎ করে তারা আঘাত করে বসতে পারে। তবে আবিদ অফিসারকে নিষেধ করে দেয়। ছেলেগুলোর সঙ্গে সে ব‍্যক্তিগত কথা বলতে চায়। আবিদ চায়না সেগুলো অন‍্যকেউ জানুক। সে সেলে ঢুকে দরজা লক করে দেয়। সিনিয়র অফিসার সহ পুলিশ সবাই সবটা দেখল। তারা আবিদের উপর কিছু বলতে পারবে না, তাই চুপ থাকা শ্রেয় মনে করল। জেলের মেঝেতে ছেলেগুলো পরে ছিল। তাদের হাতে মুখে মারের দাগ রয়েছে। তাদের ভীতস্থিত মুখয়ব দেখে স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে কথা বের করতে তাদেরকে বেধড়ক মারা হয়েছে। আবিদ পুলিশকে সেলের ভেতরে একটা চেয়ার দিতে বলে। কিছুক্ষণ পরে একজন কনস্টেবল চেয়ার দিয়ে গেলে আবিদ সেখানে আরাম করে বসে। খুব শান্ত স্বরে লিডার ছেলেটাকে জিগ্যেস করে,

‘তোমাকে কে অর্ডার করেছিল? কার কথায় আমাকে অ‍্যাটাক করেছিলে?’

ছেলেটি চুপ ছিল অন‍‍্য ছেলেদের মতো সে মার খেয়ে দমে যায়নি। নির্ভয়ে আবিদের প্রাণে তাকিয়ে ছিল। ছেলেটিকে দেখে দৃঢ়চেতা মনে হলো আবিদের। আবিদ তার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকায়। কোনো জবাব না পেয়ে আবিদ আবারো বলে,

‘তুমি এখন আমার হাতে বন্দি। তোমাদের ধারণা নেই আমি কী করতে পারবো! আমি জানি তোমরা এই প্রফেশনে শখের বসে আসোনি এজন্যই সুযোগ দিতে চাইছি। আমাকে সবটা বলো আমি তোমাদের সাহায্য করবো কথা দিচ্ছি।’

ছেলেটি নির্বিকারভাবে তাকিয়ে ছিল। হয়তোবা ভাবছিল আবিদকে বলবে কী না? আবিদ সময় দিলো কিন্তু ছেলেটার উত্তর না পেয়ে আবারো বলে,

‘তোমাকে সময় দিচ্ছি আমাকে সবটা খুলে বলো। তাহলে তোমরা হয়তো বেঁচে যাবে। তাছাড়া আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারবো। ভয় নেই তোমাদের সবার ফ‍্যামেলীতে পুলিশ প্রটেকশনের ব‍্যবস্হা করে দিবো।’

লিডার ছেলেটাকে এবার নড়েচড়ে বসতে দেখা গেলো। সে আড়চোখে সবার দিকে তাকিয়ে দেখল একবার। সবাই ইশারায় সম্মতি দিতেই আবিদকে ইশারা করে কিছু বলে। আবিদ কিছুটা আন্দাজ করে তাদের বেলের ব‍্যবস্থা করে। পুলিশগুলো অবাক হয়ে যায় আবিদের সিদ্ধান্তে। যারা আবিদকে মারতে চেয়েছিল তাদের বেল করানো সবার কাছে বোকামি! কিন্তু আবিদের কাছে বড় অস্ত্র আসল কালপ্রিটকে ধরার জন‍্য। সবার বেল করানোর পরে আবিদ সর্বপ্রথম ছেলেগুলোর চিকিৎসার ব‍্যবস্থা করে। হসপিটালে তাদের চিকিৎসা শেষে নিজের সিক্রেট প্লেসে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে পাঁচ-ছয়জন ছেলে একটু ভয় পায়। আবিদকে দেখে বোঝা যাচ্ছিলো না, তার এমন সিক্রেট প্লেস থাকতে পারে। ছেলেগুলো জানে সিক্রেট প্লেস কিসের জন‍্য ব‍্যবহার করা হয়। এজন্যই মূলত ভয় পাচ্ছিল। তবে আবিদ তাদের আস্বস্ত করে, সে কোন ক্ষতি করার জন‍্য আনেনি। সন্ধ্যা হয়ে গেছে! এমন সময় আবিদের কাছে দর্শিনীর ফোন আসে বেশ কয়েকবার। আবিদ ছেলেগুলোর জন‍্য খাবারের ব‍্যবস্থা করছিল। মার খাওয়ার পর তাদের অবস্থা খারাপ ছিল। জেলে খেতে দেয়নি সম্ভবত। খাবার পেয়ে তারা হামলে পড়েছে। আবিদ তাদের নিয়ে ব‍্যস্ত থাকায় ফোনটা রিসিভ করতে পারেনি। পরবর্তীতে আরেকদফা ফোন পেয়ে সবার অগোচরে রিসিভ করলে দর্শিনী বলে,

‘আবিদ আপনি কোথায়?’

দর্শিনীর গলার স্বর একটু অন‍্যরকম লাগছিল। আবিদ হঠাৎ-ই ভয় পেলো মনে হয়। সহসা চিন্তিত হয়ে জিগ্যেস করে,

‘একটু কাজে ব‍্যস্ত আছি! কিছু হয়েছে কী?’

‘আপুর লেবার পেইন উঠেছে! আমাকে ম‍েডিপ‍্যাথে যেতে হবে। উজান ভাইয়া আপুকে মেডিপ‍্যাথে নিয়ে গেছে। মা আমাকে এইমাত্র ফোন দিয়ে জানালো। আপনি কী তাড়াতাড়ি আসতে পারবেন? তাহলে আপনার সঙ্গে যেতে পারতাম। আমার আপুর জন‍্য বেশ চিন্তা হচ্ছে।’

আবিদ আশ্চর্য হয়ে গেলো। প্রজ্জ্বলিনীর নয়মাস এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। এখনো দুইমাস বাকি আছে অথচ এতোদ্রুত লেবার পেইন উঠেছে! বিষয়টি অবাক করার মতো। আবিদ হাতের পৃষ্ঠে ঘড়িতে সময় দেখে বলে,

‘এতো তাড়াতাড়ি লেবার পেইন কীভাবে কী, দর্শিনী?’

‘সব সম্ভব আবিদ! মন হচ্ছে প্রি-ম‍্যাচুয়ার বেবি হবে। আপু দূর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছিলো তখনই ডাক্তার বলেছিল বেবির জন্মের সময় কম্পলিকেশন থাকতে পারে। জানেন আপু উজান ভাইয়া প্রায় ভে’ঙ্গে পড়েছে। যদি কম্পলিকেশন থাকে তবে সিজার করতে হতে পারে। আমার খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে!’

দর্শিনীর দূর্বল কন্ঠস্বর শুনে আবিদের খারাপ লাগে। সে দর্শিনীকে বলে,

‘মন খারাপ করোনা। আদিবাকে সঙ্গে নিয়ে যাও! আমি ডাইভার চাচাকে বলে দিচ্ছি।’

‘আপনি আসবেন না?’

‘নয়টা-দশটাই পৌঁছে যাবো! আপাতত তুমি আদিবাকে সঙ্গে নিয়ে যাও।’

দর্শিনী আর কথা না বাড়িয়ে আবিদকে সাবধানে থাকতে বলে ফোন রেখে দেয়। পরপরই আবিদ ছেলেগুলোর কাছে ফিরে আসে। ছেলেগুলো ইতিমধ্যে খাওয়া শেষ করেছে। গার্ডদের একজন আবিদকে চেয়ার এগিয়ে দেয় বসতে।

.

আদিবা দর্শিনী দুজনেই আবিদের পারমিশন পেয়ে রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। দর্শিনী খবরটা সবাইকে জানিয়েছে। অনুসা বেগম দর্শিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে চিন্তা করতে নিষেধ করেন। অবশেষে আদিবা দর্শিনীকে গাড়িতে তুলে দিয়ে তিনি বাড়ির ভেতরে চলে আসেন। পুরোটা রাস্তা দর্শিনী টেনশনে হাঁসফাঁস করছিল। আদিবা তাকে বারবার সান্ত্বনা দেয়। দর্শিনী জোর করে হাসার চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা।

মেডিপ‍্যাথে পৌঁছাতেই নিহালের সঙ্গে আদিবা দর্শিনীর দেখা হয়ে যায়। আজকে প্রজ্জ্বলিনীর ওটিতে নিহাল উপস্থিত থাকবে। প্রজ্জ্বলিনীর বেবি যেহেতু সিজারে হবে। এজন্যই ওটিতে ঢোকানোর আগে যাবতীয় ফরমালিটি পূরণ করে নেয় উজান। দর্শিনী কেবিনে গিয়ে দেখে প্রজ্জ্বলিনী পেটের ব‍্যথায় কাঁদছে। পাশেই উজানকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। চোখগুলো ছলছলে তার। দর্শিনীর মা-বাবা তার বোনকে সাহস রাখতে বলছে। অন‍্যদিকে উজানকে সামলাতে উজানের বাবা আজকে উপস্থিত আছেন। দর্শিনী বোনের পাশে বসে হাত আঁকড়ে ধরে। প্রজ্জ্বলিনী কাঁদতে কাঁদতে বোনকে বলে,

‘প্রিয়, যদি আমার আর বেবির কিছু হয়ে যায় উজানের কী হবে? আমার তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। আমি আর বেবি দুজনে সারভাইব করতে পারবো তো?’

প্রিয়দর্শিনী বোনের হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলে,

‘অবশ‍্যই পারবে। উজান ভাইয়ার জন‍্য তোমাকে পারতে হবে আপু। একটু কষ্ট সহ‍্য করে নেও। নিজের মনোবল শক্ত রাখো। আল্লাহর নাম নেও, ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।’

উজানের চোখ ছলছল করছে। প্রজ্জ্বলিনীর সামান‍্য কষ্ট সহ‍্য করতে পারেনা সে। সেখানে প্রসবকালীন বেদনা কতোটা মারাত্মক খুব ভালো মতো বুঝতে পারছে। এজন্যই উজানের আরো বেশি খারাপ লাগছে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা বুঝে আশরাফ সাহেব তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন। উজান নিজের বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। এমন সময় দুজন নার্স এসে প্রজ্জ্বলিনীকে স্টেচারে করে ওটির উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। যাওয়ার আগে প্রজ্জ্বলিনী বারবার উজানের দিকে তাকাচ্ছিল। উজান ওটির দরজা পর্যন্ত তার হাত ধরে রেখেছিল।

কিছুক্ষণ পরে অপেক্ষা শেষে নিহালের সঙ্গে আরো একজন সিনিয়র ডাক্তার, ইন্টার্নসহ, নার্স ওটিতে ঢুকে পরে। সবাই ওটির বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে। টেনশনে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হসপিটালেও উজানের শরীরে ঘাম ছুটে গেছে। দর্শিনী আর প্রিয়মা বেগম পাশে থাকা বেঞ্চে বসে আল্লাহকে ডাকতে থাকে। একেই তো প্রি ম‍্যাচিয়ুর বেবি! অন‍্যদিকে বাচ্চার পজিশন উল্টো হয়ে গেছে। আদিবা দর্শিনীর পাশে বেঞ্চে এসে বসে। নিহালের সঙ্গে কথা হয়েছে তার। বেবির পজিশন উল্টে যাওয়ার ফলে কম্পলিকেশন তৈরি হয়েছে। তবে নিহাল বলেছে নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করবে।

দেড়ঘন্টা হয়ে গেছে। প্রজ্জ্বলিনীর কোন খবর নেই! উজান ভয়ে জড়সড় হয়ে ছটফট করতে থাকে। পরিবারের সবার একই অবস্থা। কিছুক্ষণ পর ওটি থেকে নিহাল বের হয়। নিহালের চিন্তিত মুখ দেখে উজানের শ্বাসরোধ হয়ে আসছে। কিছু জিগ্যেস করার আগেই নিহাল সবাইকে তাড়া দিয়ে বলে,

‘আরো দুব‍্যাগ রক্তের প্রয়োজন। দ্রুত ব‍্যবস্থা করুন। তিন-চার ব‍্যাগে হয়ে যাবে ভেবেছিলাম। কিন্তু শর্ট পড়েছে। অপারেশন চলছে দ্রুত ব্লাডব‍্যাংকে গিয়ে আরো দুব‍্যাগ রক্তের ব‍্যবস্থা করুন।’

নিহালের কথায় উজান দৌঁড়ে হসপিটালের ব্লাডব‍্যাংকে চলে যায়। ভাগ‍্য ভালো ছিল সেখানে বেশি বড় লাইন ছিলনা খুব সহজেই দুব‍্যাগ ও পজেটিভ ব্লাড পেয়ে গেছে। উজান যত দ্রুত সম্ভব ওটিতে গিয়ে ব্লাড পৌঁছে দেয়। ব্লাড পেতেই ওটির দরজা দ্বিতীয়বারের মতো বন্ধ হয়ে যায়। উজান ওটির কাচ থেকে প্রজ্জ্বলিনীকে দেখতে থাকে। প্রজ্জ্বলিনীর শরীর অবশ করে জ্ঞান সচল রাখা হয়েছে। উজানের চোখে পানি জমতে শুরু করে। সে বারবার বলতে থাকে,

‘আল্লাহ আমার স্ত্রী-সন্তানকে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে আমার কাছে ফিরিয়ে দেও।’

.

দশটার দিকে আবিদ মেডিপ‍্যাথে চলে আসে। গার্ডদের রেখেই এসেছে। আবিদকে আসতে দেখে দর্শিনী আদিবা উঠে দাঁড়ায়। আবিদ দর্শিনীর হাত ধরে বলে,

‘সব ঠিক আছে তো? ভয় পাচ্ছো কেনো তুমি?’

দর্শিনী আবিদের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকায়। কান্নার জন‍্য চোখমুখ ফুলে গেছে। ফর্সা চেহারায় হালকা লাল আভা। আবিদ দর্শিনীর গাল আলতো করে ছুঁয়ে বলে,

‘ওটিতে কখন ঢোকানো হয়েছে?’

দর্শিনী নাক টেনে বলে,

‘আটটার দিকে।’

‘এখন দশটা বাজছে! এতো দেরি কেনো হচ্ছে?’

‘জানিনা! আমার খুব ভয় করছে।’

‘হুশশ! কিছু হবে না ভয় পেয়ো না।’

আবিদ উপস্থিত শ্বশুর-শাশুড়ি সহ সবাইকে সালাম জানায়। অবশেষে উজানের কাঁধে হাত রেখে ইশারায় বোঝায় সব ঠিক হয়ে যাবে। উজান কাঁধের কাছে আবিদের হাত আঁকড়ে ধরে। ছেলেদের কাঁদতে হয়না। উজান চাইছে না কাঁদতে তবুও নিরবে কাঁদতে হচ্ছে। আবিদ তাকে জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত রেখে বলে,

‘সব ঠিক হয়ে যাবে, ভাই! ভরসা রাখুন আল্লাহর উপর।’

আবিদের আসার কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ-ই শব্দ করে ওটির দরজা খুলে যায়। ভেতর থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। পুরোপুরি দুঘন্টা পরে ওটি থেকে বের হলো নিহাল। সবাই চাতক পাখির ন‍্যায় তার দিকে চেয়ে আছে। নিহাল সবার চোখেমুখে আতঙ্ক দেখে বলে উঠে,

‘অপারেশন সাকসেস ফুল! কনগ্রাচুলেশন উজান ভাই আপনি ফুটফুটে এক পুত্র সন্তানের জনক হয়েছেন।’

নিহালের চোখেমুখে প্রাণখোলা হাসি। উপস্থিত সবার মুখে ত‍ৎক্ষণাৎ হাসি ফুঁটে উঠে। উজান এখনো স্বাভাবিক হয়নি। প্রজ্জ্বলিনীর খবর না পাওয়া পযর্ন্ত শান্ত হতে পারছেনা। পরবর্তীতে একটা নার্স এসে তোয়ালে পেঁচানো ফুটফুটে এক বাচ্চাকে উজানের কোলে দেয়। সবাই মুগ্ধ হয়ে মাশআল্লাহ বলে উঠে। অপারেশন সাকসেসফুল করতে পেরেছে বলে নিহালের চোখে মনোমুগ্ধকর হাসি! ওটি থেকে সিনিয়র ডক্টর আর ইন্টার্ন বেরিয়ে যায়। উজান ছেলেকে কোলে নিয়েই প্রজ্জ্বলিনীর কথা জিগ্যেস করে। নিহাল হাস‍্যজ্জ্বল মুখে বলে,

‘প্রজ্জ্বল ভালো আছে। প্রথমে অবশ‍্য অবস্থা খারাপই ছিল। আমি টেনশনে পড়ে গেছিলাম কী করবো ভেবে? যেহেতু কারণবশত বেবির পজিশন উল্টে গেছিলো। বাধ‍্য হয়ে নরমাল ভাবেই বেবির পজিশন ঠিক করতে চেষ্টা করেছি। সবচেয়ে বড় কথা প্রজ্জ্বলিনী মারাত্মক ভয় পাচ্ছিলো। কান্নাকাটি করছিলো। পরবর্তীতে বাচ্চার পজিশন ঠিক করতে সফল হই। এজন্যই অপারেশনে এক্সট্রা দুইব‍্যাগ রক্তের প্রয়োজন পড়েছিল। এখন সব ঠিক আছে। প্রজ্জ্বল ভালো আছে জ্ঞান নেই তার। কিছুক্ষণ পরে ফিরে আসলে সবাই দেখা করতে পারবেন।’

উজানের চোখ খুশিতে চিকচিক করছে। পরবর্তীতে উজান বাচ্চার কানে মিষ্টিমধুর সুরে আজান দেয়। সবাই তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাচ্চাকে প্রাণভরে দোয়া দিল। নিহালের অবদান অনেক ছিল এখানে। সবাই তাকে কনগ্রাচুলেট করে ভালো করে। নিহাল চেন্জ করার জন‍্য সবাইকে বলে নিজের কেবিনের দিকে এগিয়ে যায়। সবাই যখন বাচ্চা আর প্রজ্জ্বলিনীকে নিয়ে ব‍্যস্ত। আদিবা তখন সবার অগোচরে নিহালের কেবিনের দিকে এগিয়ে যায়। নিহাল নিজের কেবিনে এপ্রোন, মাস্ক খুলে বেসিনে হ‍্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধৌঁত করছিল। ঠিক এমন সময় পেছন থেকে, একটা ছোট শরীর তাকে জড়িয়ে ধরে। তৎক্ষণাৎ নিহালের হাত থেমে যায়। বুঝতে পারে তার কেবিনে বিনা পারমিশনে কে এসেছে। আয়নায় প্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে মিষ্টিমধুর হাসে নিহাল। আদিবা তাকে এখনো জড়িয়ে আছে। নিহাল তোয়ালে দিয়ে হাত মুছে আদিবার হাত ধরে সামনে নিয়ে আসে। আদিবা মিষ্টি করে হেসে বলে,

‘অনেক অনেক শুভেচ্ছা ডাক্তার সাহেব! আজকে আপনি আমাকে সবচেয়ে বেশি খুশি করেছেন। আপনি আর আপনার প্রফেশন আমার কাছে সবচেয়ে সম্মানের।’

নিহাল বাঁকা হেসে আদিবাকে জড়িয়ে ধরে। মূহুর্তেই আদিবা ফ্রিজড হয়ে যায়। নিহাল তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিশফিশ করে বলে,

‘আপনি যদি খুশি হয়ে থাকেন, তাহলে এবার আমাকে খুশি করুন রানি সাহেবা!’

নিহালের এহেন কথায় আদিবা ঈষদুষ্ণ লজ্জায় লাল, নীল হয়ে যায়। নিহাল যে এমন নির্লজ্জ হতে পারে আদিবা আন্দাজ করেনি কখনো। তাকে লজ্জা পেতে দেখে নিহালের ঠোঁটে আবারো হাসি ফুটে ওঠে।

#চলবে

[ সবাই ভুলত্রু’টি মানিয়ে নিবেন প্লীজ ]

একতরফা ভালোবাসা পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব

0

#একতরফা_ভালোবাসা
#পর্বঃঅন্তিম
#লেখিকাঃদিশা_মনি

প্রেয়া আহিলের সাথে আজ অনেকদিন পর নিজের চেনা শহরে পা রাখলো। সিলেটের মায়া ত্যাগ করে সে এলো ঢাকায়। এতদিন পর নিজের চিরচেনা শহরে পা রেখে তার ভীষণ ভালো লাগল।

আহিল তাকে প্রথমে নিয়ে এলো প্রান্তিদের বাড়িতে। আসার পথে দীর্ঘক্ষণের নীরবতা ভেঙে প্রেয়া আহিলকে প্রশ্ন করেছিল,
“তোমাকে আমি কি শর্ত দিয়েছিলাম সেটা মনে আছে তো?”

আহিল বলে,
“হুম মনে আছে৷ বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে না।”

প্রেয়া সেই মুহুর্তে মৃদু হাসে। আহিলের হাত ধরেই তুষারদের বাড়িতে পা রাখে সে৷ প্রেয়ার আসার খবর শুনেই তুলি ছুটে ধরে তার প্রাণপ্রিয় বান্ধবীকে৷ দুজন বান্ধবী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করতে থাকে। তুলি বলে,
“এতদিন পর আমার কথা মনে পড়ল? কোথায় ছিলি এতদিন?”

“ছিলাম কোথাও একটা? তোর কি অবস্থা বল। আগের থেকে তো অনেক মোটা হয়েছিস দেখছি।”

“এতদিন পর এসেই আমাকে ইনসাল্ট করছিস!”

এবার দুজনে একটু হাসে। ততক্ষণে প্রান্তিও এসে উপস্থিত হয়েছে। প্রান্তিকে দেখেই প্রেয়া ছুটে যায় তার দিকে। প্রান্তি দূরে সরে এসে বলে,
“একদম আমার কাছে আসবি না। আমি কে হই তোর?”

“আপি আমি….”

“তুই কি হ্যাঁ? আমাকে যদি নিজের বোন ভাবতি তাহলে এতদিন আমার থেকে দূরে থাকতি না। আমার সাথে এভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতি না। জানিস আমার বাবুটাকে জন্ম দেওয়ার সময় আমি মরে যেতে ধরেছিলাম!”

প্রেয়া অসহায় মুখ করে নেয়। প্রান্তর গাল ছুয়ে আদর করে দিয়ে বলে,
“ও তো অনেক সুন্দর হয়েছে।”

“হুম। একদম তোর মতো কিউট পুতুল হয়েছে।”

“আপি, তুমি আমায় কাছে টেনে নেবে না? মানছি আমি ভুল করেছি৷ কিন্তু তুমি বড় বোন হিসেবে আমায় মাফ করতে পারো না?”

প্রান্তি সাথে সাথে প্রেয়াকে নিজের বুকে টেনে নেয়। আবেগাক্রান্ত হয়ে বলে,
“তোর ভুল তো আমি সবসময় ক্ষমা করে দিয়েছি। আজও নাহয় আরেকবার তোকে ক্ষমা করলাম।”

প্রেয়া হাসে। সে জানতো প্রান্তি তার উপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারবে না।

সবাইকে খুশি দেখে আহিলেরও ভালো লাগে। তার এতদিন নিজেকে দোষী মনে হতো যে তার জন্যই প্রেয়ার জীবনটা এমন হয়ে গেছে। আজ আবার প্রেয়ার জীবনটা গুছিয়ে দিতে পেরে তার অনেক ভালো লাগছে।

আহিল প্রেয়ার নাম ডাকে আলতো স্বরে ডাকে। প্রেয়া তার দিকে তাকাতেই সে বলে,
“আমি তাহলে এবার চলি। তুমি নিজের খেয়াল রেখো।”

আহিল যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তুষার সেখানে উপস্থিত হয়ে বলে,
“যাচ্ছ মানে টা কি? নিজের বউকে কি এখানেই রেখে যাবে?”

প্রেয়া বলে ওঠে,
“কেন তুষার ভাই? আমি এখানে থাকলে আমাকে খাওয়াতে কি তোমার খুব অসুবিধা হবে?”

“মোটেই না। কিন্তু তোমার নিজের বাড়ি থাকতে তুমি এখানে কেন থাকতে যাবে বল?”

প্রেয়া বলল,
“আমার নিজের কোন বাড়ি নেই তুষার ভাই। আমি আর আহিল আমাদের এই সম্পর্কের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

সবাই অবাক হয়ে যায় প্রেয়ার কথা শুনে। আহিল নিশ্চুপ থাকে। প্রান্তি বেশ রাগী স্বরে বলে,
“এটা কেমন কথা প্রেয়া? আহিল তোর জন্য এতদিন ধরে কত অপেক্ষা করেছে। কিভাবে তোকে খুঁজেছে ছেলেটা। তোর জন্য নিজের বাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। আর তুই বলছিস ওকে ডিভোর্স দিবি?”

প্রেয়া ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
“আমার ডিশিসন আমি নিয়ে নিয়েছি আপি। আমি এই সম্পর্কটা রাখতে চাইনা।”

এমন সময় হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হন রাহেলা বেগম। তাহেরা বেগম তাকে প্রেয়ার আসার খবর জানিয়েছিলেন। তাই তো তিনি ছুটে এসেছেন। নিজের করা ভুলগুলো যে এবার শোধরানোর পালা।

তিনি এসেই প্রেয়ার সামনে এসে হাতজোড় করে বলেন,
“আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি প্রেয়া। সেই অন্যায়ের যথাযথ শাস্তিও পেয়েছি। আমার স্বামী, ছেলে কেউ আমার সাথে ভালো ব্যবহার করে না। সবার দ্বারাই আমি অবহেলিত। আমি আজ তোমাকে অনুরোধ করে বলছি আমার ভুলের শাস্তি আমার ছেলেটাকে দিও না। এই ৩ বছর ও কি যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গেছে সেটা শুধু আমিই জানি। আমি চাই আমার ছেলেটা এবার একটু শান্তি পাক। যেটা শুধু তুমিই ওকে দিতে পারো৷ দয়া করে এই মায়ের অনুরোধ রাখো। প্রয়োজনে আমি তোমার পায়ে..”

প্রেয়া রাহেলা বেগমকে আটকে দিয়ে বলে,
“ছি ছি! এমন করবেন না। আমি আপনাকে অনেক আগেই মাফ করে দিয়েছি। তবে আপনার ছেলের জীবনে ফেরা আর আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি আমার জীবনটা নিজের মতো করে কা/টাতে চাই।”

“কিন্তু..”

“দয়া করে আমাকে আর রিকোয়েস্ট করবেন না। আমি আহিল ভাইকে বলে দেব ও যেন বাড়িতে ফিরে যায়। সাথে চাচা আর ওকে বলে দেব যেন আপনার সাথে আর খারাপ ব্যবহারও না করে।”

“তবুও তুমি ফিরবে না?”

“না, ফিরবো না। আমরা একে অপরের জন্য সঠিক নই।”

প্রান্তি কিছু বলতে যাবে এমন সময় আহিল তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“থাক। আর কিছু বলতে হবে না৷ প্রেয়ার সিদ্ধান্তকে আমি সম্মান জানাই। আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়াই বেটার হবে। আমি চাই, আমার জন্য যেন ওকে আর কোন বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে না হয়।”

সবাই অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। প্রান্তি শেষবারের মতো প্রান্তিকে বোঝানোর জন্য তার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“দেখ বোন, কোন সম্পর্ক ভাঙা যতোটা সহজ গড়া তার চেয়ে হাজার গুণ কঠিন। তাই যাই করিস না কেন একটু ভেবে চিন্তে করিস।”

“আমি না ভেবে কোন কাজ করি না আপি।”

প্রান্তি হতাশ হলো।

★★★
একে অপরের পাশাপাশি বসে আছে আহিল ও প্রেয়া। তাদের সামনে একটি পেপার। এই পেপারটাই হয়তো আজ তাদের ভাগ্য চিরতরে বদলে দিতে চলেছে। উকিল শেষবারের মতো তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন,
“তাহলে কি তোমরা আলাদা হয়ে যেতে চাও?”

আহিল বলে,
“হ্যাঁ। এটাই আমাদের ফাইনাল ডিশিসন।”

“কিন্তু আমি চাই না।”

সহসাই এমন একটি কথা বলে আহিলকে অবাক করে দেয় প্রেয়া। আহিল বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকাতেই প্রেয়া মৃদু হেসে বলে,
“আমি সেই কিশোর কাল থেকেই তোমাকে ভালো বেসে গেছি। আমার এই ভালোবাসা ঠুনকো নয়। সেই ভালোবাসা সর্বদা ছিল এখনো আছে। জানো আহিল ভাই আমি খুব চাপা স্বভাবের মেয়ে। আমি নিজের মনের কথা কাউকে মন খুলে বলতে পারি না৷ তোমাকেও পারিনি। তাই তো তোমাকে হারাতে বসেছিলাম। কিন্তু ভাগ্য আমায় সুযোগ দিয়েছে। আমার একতরফা ভালোবাসার জোড় ছিল জন্য এখন তুমিও আমার প্রতি তীব্র ভালোবাসা প্রকাশ করছ। এই ভালোবাসা আমি হারাতে চাই না আহিল ভাই। তোমাকে হারানোর কষ্ট আমি আর সহ্য করতে পারবো না। আমরা কি সবটা আবার নতুন ভাবে শুরু করতে পারি না?”

“অবশ্যই পারি।”

দুজনেই হাসে।

★★★★
“তারপর কি হলো?”

আকাশ মৃদু হাসে। তার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“তারপর আর কি? ওরা দুজনে সুখে শান্তিতে বসবাস করলো।”

আকাশের মেয়ে ইরা তাকে শুধাল,
“তাহলে ঐ প্রেয়াই সেই মেয়ে যার কারণে তুমি আমার মাকে ভালোবাসতে পারো নি?”

“কে বলল পারিনি? আমি অবশ্যই পেরেছি। তোর মাকেও আমি ভালো বেসেছিলাম।”

“তাহলে আজও কেন তুমি ঐ প্রেয়াকে মনে রেখেছ? কেন তার কথা ভেবে কষ্ট পাও?”

আকাশ মৃদু হেসে বলে,
“সবাই তো আর প্রেয়া বা প্রান্তির মতো হয়না যাদের একতরফা ভালোবাসা পূর্ণতা পায়। কারো ক্ষেত্রে পায়না। আর তাদের মনে এই না পাওয়ার কষ্ট সবসময়ই থেকে যায়। একতরফা ভালোবাসা হলো স্বেচ্ছায় পান করা বি’ষের মতো। যা আমাদের হৃদয়কে সবসময় ক্ষতবিক্ষত করে। আর তোর মা হলো আমার জীবনে এমন এক নারী যে আমাকে পাগলের মতো ভালোবেসেছিল। আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিল। তাই তো আমি প্রেয়াকে ভুলতে পেরেছিলাম। আমার হৃদয়জুড়ে শুধু তোর মায়ের বাস। প্রেয়া তো সেই হৃদয়ে থাকা শুধু একটা দীর্ঘশ্বাসের নাম। যেই দীর্ঘশ্বাসের নাম ❝একতরফা ভালোবাসা❞।”

❤️❤️❤️সমাপ্ত❤️❤️❤️

একতরফা ভালোবাসা পর্ব-১৬

0

#একতরফা_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি

আহিলকে দেখামাত্রই প্রেয়া অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো৷ এতদিন পর আহিলকে দেখে কি প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিৎ সেটা ভেবে পেল না। তাই সে আকাশকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
“আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি গাড়িটা স্টার্ট করুন। আমার ভালো লাগছে না ”

বলেই গাড়িতে চড়ে বসল। আকাশও গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিল। আহিল যন্ত্রমানবের মতো সবটা দেখল। প্রেয়াকে এতদিন পর দেখে সে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। বৃষ্টিতে যে সে ভিজে যাচ্ছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই। আহিল আকাশের গাড়ির পেছনে ছুট লাগালো কিন্তু আর নাগাল পেল না। তবুও দমলো না সে৷ আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রতিজ্ঞা করে বলল,
“এতদিন পর যখন তোমার হদিশ পেয়েছি তখন আর তোমায় আমি হারিয়ে যেতে দেবো না প্রেয়া। তোমাকে আমার কাছে ফিরতেই হবে। আর সেটা যেকোন কিছুর মূল্যেই হোক না কেন।”

★★★
প্রেয়া হোস্টেলের সামনে পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমেই আকাশের উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন। তবে আপনার ভালোর জন্য আপনাকে একটা পরামর্শ দেই আর সেটা হলো আপনার এই একতরফা ভালোবাসাকে দাফন করে দিন। আমি আপনাকে এই ভালোবাসার বিনিময়ে কিছু দিতে পারব না। শুধু শুধু কষ্ট পাওয়ার কোন মানে নেই। আমি নিজেও এক জনকে একতরফা ভাবে ভালোবেসে পুরোটা জীবন জুড়ে কষ্ট পেয়ে গেছি৷ তাই চাই না আপনিও একই রকম কষ্ট পান। আশা করি আপনি নিজের ভালোটা বুঝতে পারবেন।”

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলেই প্রেয়া হোস্টেলের ভেতর প্রবেশ করল। প্রেয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল আকাশ। একটু আগেই তার মন ভেঙে গেছে। তবুও সে সামলালো নিজেকে। মলিন হেসে বললো,
“কাউকে জোর করে পাওয়ায়ার অধিকার বা ক্ষমতা কোনটাই আমার নেই। আপনি যদি আমায় ভালো না বাসেন তাহলে সেটা আপনার ব্যাপার। কিন্তু আমার এই একতরফা ভালোবাসা আজীবন থেকে যাবে। আপনাকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি প্রেয়া। আপনাকে ভোলা সম্ভব নয়।”

প্রেয়া হোস্টেলে নিজের রুমে আসে৷ তারপর নিজের ব্যাগপত্র গুছিয়ে নেয়। প্রেরণা প্রেয়াকে এভাবে সবকিছু গোছাতে দেখে প্রশ্ন করে,
“সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছ কেন? তুমি কি কোথাও যাচ্ছ?”

প্রেয়া বলল,
“যাচ্ছি না তবে খুব শীঘ্রই ফিরতে হবে। আমার অতীত যে আমায় ডাকছে।”

প্রেরণা প্রেয়ার কোন কথার মানে বুঝল না। প্রেয়া প্রেরণার হতবিহ্বল মুখের দিকে চেয়ে বললো,
“আমার কথা বুঝতে হবে না তোমায়। তুমি শুধু এটুকু জেনে রাখো খুব শীঘ্রই আমার জীবনে নতুন মোড় আসতে চলেছে। যখন আসবে তখন তুমি সেটা নিজেই দেখতে পাবে।”

প্রেরণা মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানান দিলো৷ প্রেয়া অদ্ভুতভাবে হেসে বললো,
“এবার আমি মুক্তি পাবো। এতদিন ধরে ব্যাপারটা আমার কাছে গলার কা/টার মতো আটকে ছিল। এবার সব ঠিক করব। সবটা আমায় ঠিক করতেই হবে।”

★★★
প্রেয়া আজ ভার্সিটি থেকে হোস্টেলে ফিরেই জানতে পারল তার জন্য কেউ অপেক্ষা করে আছে। মানুষটা কে হতে পারে সেটা বুঝতে খুব একটা বেগ পেতে হলো না তাকে। অবশেষে প্রেয়ার ভাবনাকে সত্য প্রমাণ করেই আহিল এসে দাঁড়ালো তার সম্মুখপানে। প্রেয়া হাসিভরা মুখে বলল,
“হ্যালো আহিল ভাইয়া। লংগ টাইম নো সি। কেমন আছ তুমি?”

আহিলের এত দিনের চাপা রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটল। সে ভীষণ রেগে বলল,
“এতদিন আমার থেকে দূরে থেকে আমাকে এত কষ্টের মধ্যে রেখে এখন তুই এসে জিজ্ঞেস করছিস আমি কেমন আছি।”

প্রেয়া তীব্র ভৎসর্না করে বলল,
“আমি তোমায় কষ্ট দিয়েছি বুঝি? তা কিভাবে কষ্ট দিলাম? আমি কি তোমায় বিয়ে করে দিনের পর দিন তোমাকে স্বামীর মর্যাদা দেই নি? আমি কি তোমার সাথে দিনের পর দিন খারাপ ব্যবহার করেছি নাকি দিনের পর দিন তোমায় অপমান করে গেছি। কোনটা বলো?”

প্রেয়া যে আহিলকে পিঞ্চ করেই কথাগুলো বলল সেটা বুঝতে পারল আহিল। তাই তো অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বলে ফেলল,
“তুই আমাকে ভুল বুঝতে পারিস প্রেয়া। আসলেই আমি অতীতে তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু গত তিন বছর ধরে আমি যে কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি সেটা তুই কল্পনাও করতে পারবি না।”

“তুমি কিভাবে কষ্ট থাকতে পারো আহিল ভাই? তুমি তো আমার থেকে মুক্তি চেয়েছিলে। আর আমি তোমাকে সেটাই তো দিয়েছিলাম। আমি তো এটাও ভেবেছিলাম এতদিনে তুমি বোধহয় আমাকে ভুলে নতুন ভাবে জীবন শুরু করেছ। আজ আমি তোমার মুখে এসব কথা শুনে বেশ অবাকই হচ্ছি।”

“তুই আমার কথাটা শোন প্রেয়া।”

“হ্যাঁ, বলো। আমি শুনছি।”

” তুই আমাকে ছেড়ে চলে আসার পরই আমি তোর প্রতি ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পেরেছি আর..”

“বাহ, যখন আমি তোমার কাছে ছিলাম তখন এই ভালোবাসা কোথায় ছিল? একবারও বলেছিলে আমায় এই ভালোবাসার কথা? যখন আমি ভেঙে পড়েছিলাম তখন মানসিক সাপোর্ট দিয়েছিলে?”

“জানি আমার ভুল ছিল প্রেয়া। কিন্তু তোর ভুলকেও এভাবে ছোট করে দেখার মানে নেই। আমার প্রতি তোর রাগ থাকতেই পারে কিন্তু তাই বলে নিজের সব আপনজনদের ছেড়ে এভাবে অচেনা একটা শহরে এসে পড়ে থাকবি?!”

“আমার কাজের কৈফিয়ত আমি তোমায় দেব না।”

“আমি কৈফিয়ত চাচ্ছিও না প্রেয়া। আমি শুধু চাই তুই এখন আমার সাথে ফিরে চল।”

“অসম্ভব। আমি কিছুতেই তোমার সাথে ফিরব না। আমাকে কি ভেবেছ কি তুমি? আমি কি তোমার হাতের কোন পুতুল নাকি যে, তোমার ইশারায় নাচব? যখন ইচ্ছা দূরে চলে যেতে বলবে আমি দূরে চলে আসব। আবার যখন কাছে টেনে নেবে কাছে আসব। মানে সবটা এতই সহজ? আমার কি কোন আত্মসম্মান নেই? আমি ফিরবো না তোমার সাথে।”

“আমার জন্য না হলেও নিজের আপনজনদের জন্য তুই ফিরে চল প্রেয়া। জানিস সবাই তোকে খুব মিস করে। তোর আপির একটা ছেলে হয়েছে। ওর নাম প্রান্ত, বয়স দুই মাস। তুই তো ওকে দেখিসও নি। প্রান্তি তো ওকে জন্ম দেওয়ার সময় ম/রতে বসেছিল। সেইসময় বারবার তোকে দেখতে চাইছিল। তোর কাছে নাহয় আমার ইমোশনের কোন মূল্য নেই কিন্তু ওদের কথা তো ভাব একটু।”

প্রেয়া নরম হয়। প্রান্তির কথা শুনে তার মন ছটফট করতে থাকে। মনে তীব্র বাসনা জাগে নিজের বোনকে দেখার। তবুও সে এত সহজে গলে না। আহিলের দ্বারা আগে নিজের ইচ্ছাটা পূরণ করবে তারপর বাকি কিছু। এমন ভাবনা থেকেই প্রেয়া বলে ওঠে,
“বেশ, আমি আবার ঢাকায় ফিরে যেতে রাজি আছি তবে আমার একটা শর্ত আছে। সেই শর্ত তোমায় অবশ্যই মানতে হবে।”

“শর্ত? কি শর্ত আছে তোর?”

প্রেয়া নির্লিপ্তভাবে বলে,
“আমার শর্ত একটাই, আমি মুক্তি চাই এই মিথ্যা সম্পর্ক থেকে। আই ওয়ান্ট ডিভোর্স।”

“প্রেয়া…”

“হুম। ঠিকই শুনেছ। আমি এই unhealthy রিলেশনটা আর কন্টিনিউ করতে পারব না। আমার শান্তির প্রয়োজন। তোমার থেকে মুক্তি চাই আমার। রাজি থাকলে বলো আমি ঢাকায় ফিরতে রাজি আছি।”

“আমায় কি একটা সুযোগ দেওয়া যায়না প্রেয়া?”

প্রেয়া সাথে সাথেই পাশে থাকা একটি কাঁচের গ্লাস মেঝেতে ছু/ড়ে ফেলে। গ্লাস ভেঙে কাঁচের টুকরো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আহিল বুঝতে পারে না প্রেয়া এমন কেন করলো। প্রেয়া কিছুটা দম নিয়ে বলে,
“এই ভাঙা কাঁচ কি তুমি জোড়া লাগাতে পারবে আহিল ভাই?”

“এটা কেমন প্রশ্ন?”

“আমি উত্তরটা দেই, পারবে না। বরং এটা জোড়া লাগাতে গেলেই তোমার হাত রক্তাক্ত হয়ে যাবে। আমার সম্পর্কটাও ঠিক এই ভাঙা কাঁচের মতো। তাই আমাদের জন্য এটাই ভালো হবে যে আমরা মিউচুয়াল ডিভোর্সের পথে হাটি।”

আহিল বুঝতে পারল প্রেয়া নিজের সিদ্ধান্তে কতোটা অনঢ়। তাই আহিল এবার হাল ছেড়ে দিয়ে বললো,
“বেশ, তবে তুই যা চাস তাই হবে। আমি তোকে মুক্তি দেব এই মিথ্যা সম্পর্ক থেকে।”

“দেখেছ তো আহিল ভাই অদৃষ্টের কি খেলা। একসময় তুমি আমার থেকে মুক্তি চেয়েছিলে আর আজ তোমায় কষ্টের সাথে আমাকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলতে হচ্ছে। আমার না ভীষণ পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে।”

বলেই হাসতে লাগল প্রেয়া।

চলবে ইনশাআল্লাহ ❤️

একতরফা ভালোবাসা পর্ব-১৫

0

#একতরফা_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি

আহিল তার অফিসের কিছু জরুরি কাজে সিলেট যেতে চলেছে আজ। যাওয়ার পথে তুষার এবং প্রান্তির সাথে দেখা হয়ে যায় তার। প্রান্তির কোলে তার দুই মাস বয়সী ছেলে প্রান্ত। আহিলকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে প্রান্তি। প্রান্তকে আহিলের কোলে তুলে দিয়ে ব্যথিত স্বরে বলে,
“আমার ছেলেটা জন্মের পর থেকে নিজের খালামনিকে দেখলোই না। কি ভাগ্য ওর! প্রেয়ার অভিমান, রাগ, দুঃখ কি এতটাই বেশি? প্রান্তকে জন্ম দিতে গিয়ে তো আমি মরেই যাচ্ছিলাম৷ যদি আমি মরে যেতাম তাহলে তো ও আমাকেও আর দেখতে পেতো না কখনো। এসব কিছুর জন্য আমি প্রেয়াকে কখনো ক্ষমা করবো না।”

তুষার প্রান্তির উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“থাক না এসব কথা। আমি তো এটা বুঝি না আহিলের সাথে দেখা হলেই তুমি কেন শুধু প্রেয়ার কথা তোলো। ঐ স্বার্থপর মেয়েটার কথা বলে ছেলেটাকে আর কত কষ্ট দেবে? তোমার বোনের জন্য তিন বছর ধরে ছেলেটা কতই না কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।”

“আমি আমার বোনের ভুল আছে। কিন্তু তবুও আহিলের সাথে যদি ওর সম্পর্ক ঠিক থাকতো তাহলে তো এমন হতো না।”

প্রান্তির কথা শুনে আহিল কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। তাদের সাথে কিছু টুকটাক কথা বলে সিলেটের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়। গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করার সময় প্রান্তির বলা কথা গুলো মনে করে সে। হালকা হেসে বলে,
“সত্যিই হয়তোবা আমি নিজের দোষেই প্রেয়াকে হারিয়ে ফেলেছি। তবে ভাগ্য যদি আরো একবার আমাকে সুযোগ দেয়, যদি আবার প্রেয়াকে আমার জীবনকে ফিরিয়ে দেয় তাহলে আমি ওকে আর হারিয়ে যেতে দেব না। নিজের প্রণয় বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখব। কিন্তু আমার মনে হয়না ভাগ্য আমাকে সেই সু্যোগটা আর দেবে। আমি তো এটাও জানি না প্রেয়ার সাথে এই জীবনে আর কোনদিন দেখা হবে কিনা। ভাগ্য কি আমার উপর আর সদয় হবে না?”

এসব ভাবনায় মত্ত থেকেই ড্রাইভ করে চলেছিল সে।

★★★
প্রেয়া বর্তমানে সিলেটের একটি হোস্টেলে অবস্থান করে। এখানে তার রুমমেট প্রেরণা নামের একটি মেয়ে। গত তিন বছর থেকেই তারা রুমমেট। যার ফলে তাদের মধ্যে সম্পর্কটা অনেক গভীর। প্রেয়ার জীবনের কোন কথাই প্রেরণার কাছে অজানা নয়। প্রেয়ার অতীত নিয়ে প্রেরণার কাছে সব কথাই খোলাশা করেছে সে৷ তবে প্রেয়ার চাপা স্বভাবের কারণে টানা তিন বছর একসাথে থাকার পরেও মাত্র এক মাস আগেই সব জানতে পারল প্রেরণা। তার আগে তো সে পরিবার নিয়ে কোন কথাই বলতে চাইত না। এই প্রসঙ্গে কথা উঠলে সে কথাই ঘুরিয়ে দিত।

রাতে প্রেয়া ও প্রেরণা ঘুমানোর আগে গল্পগুজব করছিল। কথায় কথায় প্রেরণা হঠাৎ বলে ওঠে,
“আচ্ছা প্রেয়া একটা প্রশ্ন করব উত্তর দিবা?”

“হ্যাঁ, বলো।”

“এই কথাটা কিছুদিন ধরেই আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। আজ আর থাকতে পারলাম না তাই করছি। তুমি আবার কিছু মনে করো না।”

“না। কিছু মনে করব না। তুমি নিশ্চিত মনে প্রশ্নটা করতে পারো প্রেরণা।”

“বলছিলাম যে, তুমি নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কি ভাবছ?”

“ভবিষ্যৎ বলতে?”

“আজীবন কি এভাবে একাই কা ‘টিয়ে দেবে? তোমার তো পরিবার, আত্নীয়, স্বজন সব আছে। তোমার কি ইচ্ছা করে না তাদের কাছে ফিরতে?”

প্রেয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“আমি শুধু বর্তমান নিয়েই থাকতে চাই প্রেরণা। অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার মতো কিছু নেই৷ অতীতে যা হবার হয়ে গেছে আর ভবিষ্যতেও যা হবার তাই হবে।”

“ও তাই!”

“হুম।”

“আচ্ছা, ধরো কোন একদিন তোমার অতীত তোমার সামনে এসে দাঁড়াল তখন তুমি কি করবে?”

“আমি অতীতকে এড়িয়ে যাব।”

“সেটা কি এতই সহজ?”

“সহজ না হলে সহজ করে নেব। আমার সেই ক্ষমতা আছে।”

“সেটা সময়ই বলে দেবে।”

★★★
আকাশে ঘন মেঘের ঘনঘটা। যেকোন সময় মেঘ চিরে বৃষ্টি এসে ধরা দিতে পারে ধরিত্রীর বুকে। বৃষ্টির আবাহনী বার্তা দিচ্ছে মেঘের তর্জন, গর্জন।

প্রেয়া সবেমাত্র একজন ছাত্রীকে টিউশনি করিয়ে হোস্টেলে ফেরার জন্য রওনা দিলো। আসার সময় আকাশ পরিস্কার থাকায় ছাতাও সাথে আনে নি সে। তাই এখন বেশ চিন্তায় পড়তে হলো তাকে। এখান থেকে তার হোস্টেল বেশ খানিকটা দূরে। আজ পরিবহন ধর্মঘট থাকায় রাস্তায় কোন যানবাহনও পাওয়া যাবে না। তাই এত দূর হেটে যাবে কিভাবে সেই নিয়েই ভাবনায় ব্যস্ত ছিল সে। সে যখন এমন ভাবনায় ব্যস্ত ছিল সেই সময় যেন তার ত্রাণকর্তা হিসেবে আবিভূত হলো আকাশ। আকাশ হলো প্রেয়া যে ছাত্রীকে পড়াতে আসে তার বড় ভাই। আকাশরা বেশ বড়লোক। তাদের বড় গাড়িও আছে। আকাশ বেশ বুঝল প্রেয়ার পরিস্থিতি। তাই সে আগ বাড়িয়ে প্রশ্ন করল,
“May i help you?”

“আপনি আমায় কিভাবে সাহায্য করবেন?”

“আমার গাড়িতে করে আপনাকে আপনার হোস্টেলে পৌঁছে দিতে পারি।”

আকাশের প্রস্তাবে কি জবাব দেওয়া উচিৎ সেটা নিয়েই চিন্তায় ব্যস্ত ছিল প্রেয়া। আকাশের চাহনি বেশ অনেক দিন থেকে খেয়াল করছে সে। এই ছেলেটার মনে যে তাকে নিয়ে অন্যরকম অনুভূতি আছে সেটাও বেশ বুঝতে পারে সে। তাই যথাসম্ভব চেষ্টা করে আকাশকে এড়িয়ে যেতে। কিন্তু এখন এই পরিস্থিতিতে আকাশের প্রস্তাব মেনে না নিলে তাকে বেশ বেকায়দায় পড়তে হতে পারে। তাই সে বলে,
“আমি আপনার সাহায্য নিতে রাজি আছি কিন্তু একটা শর্ত আছে।”

“ব্যাপারটা তো দারুণ ইন্টারেস্টিং। মানে আপনাকে সাহায্যও করব আমি আবার শর্তও মানব আমি!”

“আরে খুব একটা কঠিন শর্ত নয়। আমার শর্ত এটাই যে, আমি পিছনের সিটে বসব।”

“কেন? সামনে বসলে কি সমস্যা? সামনে বসলে কি আমি আপনাকে গিলে খাব?”

“উফ! আপনি এত প্রশ্ন করেন কেন? আমার শর্ত মেনে নিন না।”

“আপনি আমায় ফোর্স করতে পারেন না।”

প্রেয়া আর কিছু না বলে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকায়। আকাশ মৃদু হেসে নিজের গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলে,
“উঠুন।”

প্রেয়া উঠে বসে পড়ে পেছনের সিটে৷ আকাশ সামনের সিটে বসে ড্রাইভ করতে শুরু করে।

★★★
আহিল রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। একেই বৃষ্টি তার উপর এই সময়ই তার গাড়িতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সিলেটে পৌঁছে তাই ভারী বিপদে পড়তে হলো তাকে। বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে এলো। এমন সময় আহিল হঠাৎ খেয়াল করল তার সামনে একটি গাড়ি এসে থামলো।তৎক্ষণাৎ গাড়ি থেকে একটি মেয়ে নেমে রাস্তার মাঝে বমি করতে লাগল। আহিল প্রথমে সেদিকে পাত্তা দিলো না। একটু পর সেদিক পানে তাকাতেই বিস্ময়ে তার চোখ বড় হয়ে গেল। সে অস্ফুটস্বরে বলে উঠল,
“প্রেয়া…”

আহিল প্রেয়াকে দেখে এতটাই অবাক যে আবেগের বহিঃপ্রকাশ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সে দৌড়ে প্রেয়ার কাছে যায় এমন সময় আকাশ গাড়ি থেকে নেমে প্রেয়ার পাশে এসে দাঁড়ায়। আহিল থেমে যায়। প্রেয়া চোখ তুলে তাকাতেই আজ দীর্ঘ ৩ বছর পর দুজন একে অপরকে দেখতে থাকে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ❤️

একতরফা ভালোবাসা পর্ব-১৪

0

#একতরফা_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি

আহিল বাসের মধ্যে উঠে কোথাও প্রেয়াকে খুঁজে পায় না। এই বিষয়টি তাকে ভীষণ ভাবে হতাশ করে। সে হঠাৎ করে বলে ওঠে,
“তাহলে কি তুমি সত্যি আমায় ছেড়ে একেবারের জন্য চলে গেলে প্রেয়া? আর কি কখনো তোমার দেখা পাবো না?”

বাস ছাড়ার সময় হয়ে আসায় বিষন্ন ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়েই বাস থেকে নেমে পড়ল আহিল। সে এখন পুরোই হতাশায় ভুগছে। তবুও আশা ছাড়ল না আহিল। আজ সারাদিন বাস স্ট্যান্ডেই থাকার সিদ্ধান্ত নিলো। তার একটাই উদ্দ্যেশ্য যে করেই হোক প্রেয়াকে খুঁজে বের করবেই। তার জন্য যা করতে হয় সে করবে। প্রয়োজনে আজ সারাদিন বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকবে।

★★★
প্রেয়াদের বাসটা আহিল বাসস্ট্যান্ডে উপস্থিত হওয়ার আগেই ছেড়ে দেয়। তাই আহিল প্রেয়ার আগাল পায়নি।

বাসের মধ্যে একদম জানালার পাশের সিটে বসে আছে প্রেয়া। জানালার কাচ ভেদ করে সে দেখে চলেছে বাইরের দৃশ্য। প্রেয়ার চোখের কোণে জমে আছে বিন্দু বিন্দু জলরাশি। আপন মানুষজন, চেনা শহর ছেড়ে সে আজ একজন নতুন গন্তব্যের দিকে পা বাড়াচ্ছে। সে জানে না তার ভবিষ্যত কি হবে। নিজের সামনের পদক্ষেপ নিয়েও সন্দিহান সে। তবুও আপাতত সে চাইছে জীবনের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়া। সে জানে আপন মানুষজনকে ছেড়ে থাকাটা মোটেই সুখকর হবে না। বিশেষ করে তার প্রান্তির কথা খুব মনে পড়বে। তবুও প্রেয়া নিজেকে শক্ত রাখক। স্বগতোক্তি করে বলল,
“আমি একটা অপয়া মেয়ে। আমার পাশে থাকলে সবার বিপদ হতে পারে৷ তার থেকে ভালো আমি সবার থেকে দূরে চলে যাই। তাহলেই হয়তো সবাই ভালো থাকবে।”

এসবের মধ্যে আহিলের কথাও তার মনের মধ্যে আসে। আহিলের কথা মনে আসতেই প্রেয়া বলে ওঠে,
“আহিল ভাইও নিশ্চয়ই তার জীবনটা নতুন ভাবে সাজিয়ে নেবে। নতুন কাউকে হয়তো বিয়েও করে নেবে…যাইহোক সে সুখী হোক। এতে আমিও খুশি হবো। ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষগুলো। আমার একতরফা ভালোবাসার অনুভূতি আর আহিল ভাইয়ের দয়ার সংসারের থেকে বেটার হবে যেন সে কাউকে মন থেকে আপন করে নিতে পারে।”

★★★
তুষার আহিলকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছে যেন সে বাস স্ট্যান্ড থেকে বাড়ি ফিরে যায়৷ কিন্তু আহিল কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। আহিল সমান তালে বলে যাচ্ছিল,
“আব্বু আমায় বলেছে প্রেয়াকে না নিয়ে যেন আমি বাড়িতে না ফিরি। আমি তাই করব। আমি যতক্ষণ না প্রেয়াকে খুঁজে পাচ্ছি ততক্ষণ বাড়িতে ফিরব না আর এটাই আমার প্রতিজ্ঞা।”

তুষার অনেক বুঝিয়েও কোন লাভ পায়না। সেও আজ সারাটা দিন কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিল৷ কিন্তু প্রেয়াকে খুঁজেই পায়নি সেখানে। তুষার খুব ভালোই বুঝতে পেরেছে প্রেয়া হয়তো তাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। সে আহিলকেও এটা বোঝানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আহিল কোন কিছু মানতেই রাজি নয়। আহিলকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে তুষার হা হুতাশ করে বলে,
“জানি না এটা কেমন ভাগ্য৷ যেই গল্প শুরু হয়েছিল প্রেয়ার একতরফা ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে না জানি সেই গল্পের শেষটা কোথায় গিয়ে হয়!”

~~~৩ বছর পর,
অফিস থেকে নিজের ভাড়া বাসায় ফিরে এলো আহিল। এসেই বসে পড়লো সোফায়। অতঃপর প্রেয়ার ডায়েরিটা হাতে তুলে নিলো। প্রেয়া চলে যাওয়ার সময় এই ডায়েরিটা রেখে গিয়েছিল৷ গত ৩ বছর থেকে আহিল প্রতিদিন নিয়ম করে এই ডায়েরিটা পড়ে। এই ডায়েরির প্রত্যেকটা শব্দ, প্রত্যেকটা বাক্য তার মুখস্থ হয়ে গেছে। ডায়েরির পুরোটা জুড়েই তাকে নিয়ে প্রেয়ার সুপ্ত অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আহিলের ভাবতেও ভালো লাগে যে কেউ একজন তাকে এত বেশি ভালো বেসেছিল৷ অথচ সে সেই ভালোবাসাটা উপলব্ধি করতে দেরি করে ফেলেছে। এজন্যই বোধহয় বলে সঠিক সময়ে মূল্য দিতে না জানলে হারিয়ে ফেলার পর আফসোস করা ছাড়া কিছু করার থাকে না। গত ৩ বছর ধরে আফসোস, দীর্ঘশ্বাস এগুলো নিয়েই চলে যাচ্ছে আহিলের জীবনটা। সে তার বাবাকে দেওয়া কথা রাখতে নিজের বাড়িতেও আর ফেরেনি৷ এখনো সে এই কথা নিয়েই বসে রেখেছে যে যতদিন না প্রেয়াকে খুঁজে পাবে ততক্ষণ সে নিজের বাড়িতে পা রাখবে না।

হঠাৎ করেই আহিলের ফোন বেজে উঠল। আহিল ফোনটা তুলে দেখল তার মা ফোন দিয়েছে। আহিল বিরক্তিতে মুখ দিয়ে “চ” জাতীয় শব্দ করে। কারণ এটা তার কাছে নতুন কিছু নয়৷ গত ৩ বছর থেকে প্রত্যেকটা দিনই রাহেলা বেগম প্রতিদিন এভাবে তাকে ফোন করেন। ফোনে অনেক কান্নাকাটি করেন, আহিলকে বাড়িতে ফিরতে বলেন। আহিলের প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও পরবর্তীতে বিরক্তি জন্ম নেয়৷ তার উপর যখন একদিন রাহেলা বেগম নিজের মুখেই সব স্বীকার করেন তিনি প্রেয়ার সাথে কিরকম ব্যবহার করেছিলেন তখন থেকে আহিল নিজের মাকে যথা সম্ভব এড়িয়ে চলে। ভালো ভাবে কথাও বলে না। তবুও রাহেলা বেগম প্রতিদিন নিয়ম করে তাকে ফোন করেন। আহিল একটু সময় নিয়েই ফোনটা রিসিভ করল। সাথে সাথেই রাহেলা বেগম কাতর কন্ঠে বলে উঠলেন,
“ফোন ধরতে এত দেরি হলো কেন আহিল? তুই কি ব্যস্ত আছিস?”

“ব্যস্ত থাকলেও বা তোমার কি? তুমি তো সেই প্রতিদিনের মধ্যে একটু পরেই কান্নাকাটি করে ভাসিয়ে দেবে। আমাকে ফিরে যেতে বলবে তাই তো? তো শুরু করো তোমার নাটক।”

“আহিল!! আমার কান্নাকে তোর নাটক মনে হয়? একজন মায়ের মন তুই বুঝবি না। তুই আমার একমাত্র ছেলে। তোকে ঘিরেই যে আমার সব।”

“অথচ তোমার ছেলের জীবন তুমি নিজের হাতে নষ্ট করে দিয়েছ আম্মু।”

রাহেলা বেগমের অন্তরে গিয়ে লাগল কথাটা। তিনি জানেন আহিল ঠিক বলছে। নিজের ভুলের উপলব্ধি অনেক আগেই হয়েছে তাঁর। তিনি ভেবেছিলেন প্রেয়াকে দূর করতে পারলেই সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু তিনি যে নিজের অজান্তে নিজের ছেলের কত বড় ক্ষতি করেছেন সেটা বুঝতে পারেন নি। তাই তো এখন প্রতিনিয়ত তাকে গ্লানির অনলে জ্ব*লতে হচ্ছে। রাহেলা বেগম অসহায় স্বরে বলেন,
“আমি জানি আমি অন্যায় করেছি। কিন্তু আমার অন্যায়ের শাস্তি তুই নিজেকে কেন দিচ্ছিস? ফিরে আয় আহিল। আমার কথা না ভাব তোর বাবার কথা ভাব। ওনার শরীর আজকাল ভালো যাচ্ছে না। বারবার তোকে দেখতে চাচ্ছেন। তোকে সেদিন ঐ কথাটা বলার জন্য উনি আজও আফসোস করেন জানিস?!”

আহিল কোন কিছুই বলে না। রাহেলা বেগম ফোনটা রেখে দিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। এই পৃথিবীতে কিছু কিছু অন্যায়ের জন্য একটু ভয়াবহ শাস্তিই বোধহয় পেতে হয়। রাহেলা বেগম এখন সেটা উপলব্ধি করেছেন। প্রেয়ার সাথে তিনি যে অন্যায় করেছিলেন তার জন্য আজ তিনি নিজের ছেলের চোখে খারাপ হয়ে আছেন, তার ছেলে তার থেকে এত দূরে, স্বামীর থেকে অবহেলিত হন তিনি। এসব কিছু তার মনে পীড়ার জন্ম দিয়েছে। রাহেলা বেগম এখন চান নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও প্রেয়াকে ফিরিয়ে আনতে৷ তার ছেলের জীবনটা সুন্দরভাবে গুছিয়ে দিতে। কিন্তু এখন যে সেটা আর তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এই আত্মগ্লানি বয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে তাকে।

★★★
সিলেটের একটি বেসরকারি ভার্সিটির ক্যাম্পাসে নিজের কিছু ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে প্রেয়া। এই প্রেয়ার সাথে ৩ বছরের আগের প্রেয়ার অনেক অমিল। যদিও স্বভাবে আগের মতোই চাপা স্বভাবের রয়ে গেছে সে। কিন্তু চলনে বলনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে সে অনেক আধুনিকমনা এবং স্বাধীনচেতা জীবন যাপন করছে। শরীর স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয়েছে। আগের থেকেও বেশি সুন্দরী হয়ে উঠেছে সে। অনেক ছেলে তার জন্য পাগল। কিন্তু সে এসবে পাত্তা দেয়না। প্রেয়া নিজেকে গড়ে তুলেছে একজন নারীবাদী হিসেবে। সে নারী অধিকার নিয়ে অনেক কথা বলে। তাদের গ্রুপের বাকি বান্ধবীরাও তার সমমনা। প্রেয়ার চিন্তাধারা এখন এমন মেয়েরা চাইলে একাই নিজের জীবন কা*টিয়ে দিতে পারে। তার জীবনে কোন পুরুষের প্রয়োজনীয়তা নেই। এই চিন্তাধারাই লালন করে চলেছে। বর্তমানেও এই বিষয় নিয়ে কথা বলছিল সে। এরইমধ্যে তাদের গ্রুপের মেঘলা নামের একটি মেয়ে বলে ওঠে,
“জানিস আমার ফ্যামিলি আমার বিয়ে ঠিক করেছে। ছেলে নাকি অনেক ভালো ফ্যামিলির। ইঞ্জিনিয়ার! আমার কি বিয়েটা করা উচিৎ?”

প্রেয়া সাথে সাথে বলে ওঠে,
“একদম না। তুই এখনই গিয়ে না করে দে। ছেলে যেমনই হোক সেটা কোন ফ্যাক্ট না। নিজে প্রতিষ্ঠিত না হয়ে বিয়ে করার প্রশ্নই ওঠে না। এমন হলে বিয়ের পর তোকে স্বামীর কথামতো চলতে হবে। তুই কেন কারো দয়ার উপর চলবি? তুই নিজে চাকরি করবি, নিজের টাকায় চলবি। ওমেন ইম্পাওয়ারম্যান্টে অংশ নিবি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে শোষিত হলে চলবে না।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ❤️

একতরফা ভালোবাসা পর্ব-১৩

0

#একতরফা_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি

প্রেয়া বাড়ি ত্যাগ করে আশ্রয় নেয় ডাক্তার আকরাম খানের বাড়িতে৷ আকরাম খান প্রেয়াকে নিজের মেয়ের মতোনই দেখেন। তবে প্রেয়ার কাছে মনে হয় ঢাকায় থাকলে আহিলরা তাকে খুব সহজেই খুঁজে পাবে। তাই সে যত দ্রুত সম্ভব দূরে কোথাও চলে যেতে চায়। প্রেয়া তার ইচ্ছার কথা ড়াক্তার আকরাম খানকে জানাতেই তিনি কিছুটা চিন্তায় পড়ে গিয়ে বলেন,
“তুমি একা একটা মেয়ে, শহর থেকে বাইরে গিয়ে একা কিভাবে থাকবে?”

“আমি কোনভাবে ম্যানেজ করে নেব। আপনি শুধু আমার এই শহর থেকে দূরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।”

আকরাম খান ভাবনায় পড়ে যান। এইভাবে একটা মেয়েকে দূরে কোথাও পাঠাতে মোটেই তার মন সায় দিচ্ছিল না। কিন্তু প্রেয়াও নাছোড়বান্দা। সে ঠিক করেই নিয়েছে এই শহর সে আজই ত্যাগ করবে। আর কোন উপায়ন্তর না পেয়ে আকরাম খান ঠিক করেন প্রেয়াকে সিলেটে পাঠাবেন। আকরাম খানের পৈত্রিক বসতবাড়ি সিলেটে। নিজের মেয়ের মৃত্যুর পর তিনি সিলেটে তার মেয়ের স্মরণে একটি অনাথ আশ্রম তৈরি করেছেন। আকরাম খান সিদ্ধান্ত নেন সেই অনাথ আশ্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেবেন প্রেয়াকে। সাথে তিনি সিলেটের স্থানীয় একটি প্রাইভেট ভার্সিটিতে প্রেয়ার এডমিশনের ব্যবস্থাও করে দিলেন। অতঃপর প্রেয়ার উদ্দ্যেশ্যে বললেন,
“সাবধানে থেকো। আজ থেকে তোমার নতুন জীবন শুরু হলো।”

প্রেয়া সামান্য হেসে বলল,
“আমি নিজের নতুন জীবনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব। এই নতুন জীবনটা যেমনই হোক, আশাবাদী আমার অতীতের জীবন থেকে ভালো হবে।”

★★★
আহিল প্রেয়ার রুমে এসে তাকে না দেখতে পেয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কি করবে কিছু ভেবে পায়না। আশেপাশে খুঁজেও যখন প্রেয়াকে খুঁজে পায়না তখন তার মনে ভয় বাসা বাধে। এমন সময় তার হাতে এসে পড়ে প্রেয়ার লেখা সেই চিঠি। যেখানে প্রেয়া লিখেছে সে দূরে কোথাও চলে যাবে এবং আহিল যেন তার খোঁজ না করে। প্রেয়ার এই চিঠিটা পেয়েই আহিল স্তম্ভিত হয়ে যায়। উদ্ভ্রান্তের মতো গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় প্রেয়াকে খুঁজতে। কিন্তু কোন লাভ পায়না। আহিল কি করবে কিছু বুঝতে পারে না। এই প্রথম সে উপলব্ধি করতে পারে প্রেয়ার প্রতি তার মনে কি ধরনের অনুভূতি রয়েছে। এই অনুভূতি কেবল মায়া বা দয়া হতে পারে না। এটা আরো তীব্র অনুভূতি। প্রেয়াকে হারানোর ভয়ে কেঁদেই ফেলে আহিল। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে থাকে যেন সে প্রেয়াকে খুঁজে পায়।

প্রেয়াকে খুঁজে না পেয়ে ব্যর্থ হয়ে আহিল বাড়িতে ফিরে আসে। আহিলকে অগোছালো অবস্থায় বাড়িতে ফিরতে দেখে রাহেলা বেগম তার কাছে গিয়ে বলেন,
“কি হয়েছে আহিল? তোকে এমন লাগছে কেন?”

আহিল হতাশ স্বরে বলে,
“প্রেয়া কোথাও চলে গেছে মা। আমি ওকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা।”

রাহেলা বেগম তো এই কথাটা শুনে মনে মনে ভীষণ খুশি হন। এটাই তো চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আহিলের সামনে নিজের সেই খুশি প্রকাশ না করে অবাক হওয়ার ভান করে বলেন,
“সে কি কথা? কোথায় গেল মেয়েটা?”

আহিল নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইল। গরম আজহারুল আহমেদও সেখানে উপস্থিত হন। প্রেয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা শুনে তিনি বেজায় চটে যান। এমনিতেই নিজের ভাইয়ের মৃত্যুতে তিনি চরম শোকাহত তার উপর এই খবরটা তাকে আরো আহত করল। তার সব রাগ গিয়ে পড়ল আহিলের উপর। তিনি আহিলের উদ্দ্যেশ্যে রাগী গলায় বলেন,
“কেমন স্বামী তুমি যে নিজের স্ত্রীর খেয়াল রাখতে পারো না? আমি কিছু শুনতে চাই না তুমি যত তাড়াতাড়ি পারো যেখান থেকে পারো প্রেয়াকে নিয়ে এসো। ওর যদি কোন ক্ষতি হয়ে যায় তাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। তোমার জন্য মেয়েটা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে আর নয়।”

রাহেলা বেগম প্রতিবাদ করে বলেন,
“তুমি আমার ছেলেকে দোষ দিতে পারো না। ঐ প্রেয়াই তো নিজের ইচ্ছায় আমার ছেলেকে বিয়ে করেছে। আহিলের কি দোষ? আর এখনও তো ও নিজের ইচ্ছাতেই চলে গেছে।”

“চলে গেছে না বলো চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। তোমার গুণধর ছেলের জন্যই প্রেয়া সব ছেড়ে চলে গেছে।”

আহিলের আর ভালো লাগছিল না এসব কথা শুনে। সে দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে নেয়। রাহেলা বেগম পিছন থেকে বলে ওঠেন,
“কোথায় যাচ্ছিস তুই আহিল?”

আহিল তখন বলে,
“আমি প্রেয়াকে খুঁজে আনতে যাচ্ছি আম্মু। আর আব্বু আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি যতদিন না পর্যন্ত প্রেয়াকে খুঁজে পাব ততক্ষণ এই বাড়িতে আমি পা রাখবো না।”

রাহেলা বেগমের মাথায় হাত চলে যায়। তিনি বলে ওঠেন,
“এসব তুই কি বলছিস আহিল? ও গো তুমি আটকাও তোমার ছেলেকে। ও কোথায় খুঁজবে ঐ মেয়েকে? যে নিজে থেকে চলে যায় তাকে কি কখনো খুঁজে পাওয়া যায়?”

আহিল আর বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ না করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আহিল সোজা চলে যায় তুষারদের বাড়িতে। কারণ তার মনে হয় প্রেয়া প্রান্তির কাছে থাকতে পারে। আর যদি নাও থাকে তাহলেও হয়তো প্রান্তি প্রেয়ার কোথায় আছে সেই ব্যাপারে জানতে পারে।

তুষারদের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজায় আহিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তুলি এসে দরজা খুলে দেয়। আহিলকে দেখে সে বলে,
“ভাইয়া তুমি হঠাৎ এই সময়! কোন সমস্যা হয়েছে কি?”

আহিল ভেতরে প্রবেশ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে তুলিকে শুধায়,
“আচ্ছা প্রেয়া কি তোমাদের বাড়িতে এসেছে?”

“কই নাতো। প্রেয়া তো আসেনি। কেন, প্রেয়া কি বাড়িতে নেই?”

আহিল কোন উত্তর না দিয়ে উলটো বলে,
“তুমি প্লিজ প্রান্তিকে ডাকো। আমার ওর সাথে জরুরি কথা আছে।”

ততক্ষণে তুষার ও প্রান্তিও সেখানে এসে উপস্থিত হয়। প্রান্তি আহিলকে শুধায়,
“কি জানতে চাও তুমি?”

আহিল কাতর কন্ঠে বলে,
“আসলে প্রেয়া…..ও এই চিঠিটা লিখে বাড়ি থেকে চলে গেছে। আমি ওকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি…তাই আমি ভাবলাম যদি তুমি ওর ব্যাপারে কিছু জানো।”

প্রান্তি চিঠিটা হাতে নিয়ে বলে,
“আমি কিছুই জানি না। আমার বোনটা হঠাৎ কোথায় চলে গেল? আমার খুব ভয় হচ্ছে। এমনিতেই আমি আমার বাবাকে হারিয়ে ফেলেছি। এখন নিজের বোনকে হারাতে চাই না।”

বলেই কেঁদে ফেলে সে। তুষার প্রান্তিকে শান্ত হতে বলে। অতঃপর আহিলকে প্রশ্ন করে,
“আচ্ছা, প্রেয়া কি ওর সাথে ফোন নিয়ে যায়নি?”

“না। ও ফোন বাসাতেই রেখে গেছে।”

তুষার প্রান্তির হাত থেকে প্রেয়ার লেখা চিঠিটা হাতে নেয়। চিঠিটা মনযোগ দিয়ে পড়ে বলে,
“আমার মনে হচ্ছে প্রেয়া শহর থেকে বাইরে কোথাও যাওয়ার প্ল্যান করছে।”

প্রান্তির কান্নার বেগ বাড়ে। সে বলে,
“তাহলে কি ওকে আর খুঁজে পাবো না?”

“কেন পারবোনা? আমার মনে হয় ও এখনও শহর ছেড়ে কোথাও যায়নি। আহিল তুমি একটা কাজ করো তুমি কির বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখ আর আমি কমলাপুর রেলস্টেশনে খুঁজে দেখছি। ভাগ্য ভালো থাকলে ওকে পেলেও পেতে পারি।”

আহিলও তুষারের সাথে সম্মতি জানায়। অতঃপর দুজনেই নিজেদের গন্তব্যে রওনা দেয়।

★★★
ডাক্তার আকরাম খানের সাথে সিলেটগামী একটি বাসের উদ্দ্যেশ্যে বাস স্ট্যান্ডে এসেছে প্রেয়া। আকরাম খান প্রেয়াকে বাস কাউন্টারে নিয়ে এসে বলে,
“এই নাও তোমার টিকেট। সাবধানে দিও। আর এই বাটন ফোনটা সাথে রাখো। এর মাধ্যমে আমার সাথে যোগাযোগ করবে। পৌঁছে কিন্তু কল দেবে।”

প্রেয়া আবেগাপ্লুত হয়ে বলে,
“আপনার এই অবদান আমি কখনো ভুলব না আঙ্কেল।”

“কোন ব্যাপার না, মা।”

প্রেয়া মৃদু হেসে বাসে উঠে বসে। একটু পরেই বাসটা রওনা দেবে। সে অপেক্ষা করতে থাকে বাসটা ছাড়ার।

★★★
দীর্ঘক্ষণ জ্যামে আটকে থাকার পর অবশেষে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছায় আহিল৷ সে বাস স্ট্যান্ডে পৌছাতেই দেখতে পায় একটি বাস এখনই স্টার্ট দেবে। সে দ্রুত গিয়ে বাসটিতে উঠে পড়ে। তারপর খুঁজতে থাকে প্রেয়াকে। হঠাৎ করেই সে চমকে গিয়ে বলে ওঠে…

চলবে ইনশাআল্লাহ ❤️