Tuesday, August 26, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 486



মিঠা রোদ পর্ব-৩৩+৩৪+৩৫

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩৩
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“এমন কেন হয় মনের ভেতর অনেক কথা থাকে কিন্তু সেগুলো মুখে আসেনা।প্রশ্নগুলোর জবাব আছে।”

“তবে বলতে পারছো না।তাইতো?”

তোশা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো।বারান্দার দিকে হওয়ায় মৃদু আলো পরিবেশকে উজ্জ্বল করেছে।সাহেদ পুনরায় গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“আমার বয়স জানো কতো?বর্তমানে পঁচাত্তর বয়স।শরীরের চামড়া ঝুলে গিয়েছে।চোখের দৃষ্টি ঘোলাটে হয়েছে।তোমার থেকে অভিজ্ঞতা বেশী এটা তো মানো মা?”

“জি।”

“জবাব সেই সব প্রশ্নের থেকেও থাকেনা যেগুলো উত্তর সঠিকভাবে গোছানো হয়না।”

“না জবাব আছে তো।”

“তাহলে বলো।”

আন্দোলিত হয়ে উঠলো তোশার ছোট্ট মন।বুকের ভেতর লাব-ডাব শব্দের তীব্রতা বাড়ছে।বড় করুণ সুরে সে শুধালো,

“যদি জবাব না দিতে পারি তাহলে আমাকে মেনে নিবেন না?”

“আমি সেটা বলিনি।কারণ যারা সংসার করবে তাদের সমস্যা না হলে আমার কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু সংসার টিকতে হবে আগে।যে ভালোবাসার দোহাই দিবে সেটা কবীর ও দিশার মধ্যেও অনেক ছিল তোমার বাবা-মায়ের মধ্যেও ছিল।কিন্তু দিনশেষে সকলের পথ ভিন্ন।আমি কখনো চাইবো না বয়সের কঠিনতম সময়ে এসে আমার ছেলেটা একা থাকুক কিংবা দ্বিতীয়বার বিচ্ছেদের য ন্ত্র ণা পাক।”

“আমি এমন না।কবীর শাহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জীবনে।”

“থাকতে পারে।কিন্তু সবসময় হবে এমন তো নয়।”

নীরবতার চাদরকে অবলম্বন করলো তোশা।বয়সে বড় কেউ যে সহজে ছোট বয়সীদের প্রশ্নের বেড়াজালে আঁটকে ফেলতে পারে তা ক্ষণে ক্ষণে টের পাচ্ছে তোশা।যদি এখানে না আসতো তবে এমন প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন হতে হতো না।সাহেদ মেয়েটির মনের কথা বুঝতে পারলো।হালকা কেশে বলল,

“আমার কাছে অথেন্টিক দার্জেলিং টি আছে খাবে?বেশ ভালো বানাই।এরপর না হয় আলোচনা করা যাবে।”

তোশা ঈষৎ হেসে উঠলো।উপর নিচে মাথা দুলিয়ে সাহেদের পিছনে যেতে লাগলো।

(***)

সাধারণ ঘরোয়া পোশাকে অফিসে কবীরকে প্রবেশ করতে খুব কম দেখেছে সকলে।সর্বদা পরিপাটি হয়ে থাকে এই তামাটে লৌহ মানবটি।তবে আজ যেন ব্যতিক্রম হলো।ঘন্টা দুয়েক জিম করে সোজা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের অফিসে চলে এসেছে।যদিও পিছনে সুন্দর যুবতীকে এক নজর দেখার স্বার্থটা সবথেকে বেশী।

পিয়ন লোকটিকে পানি আনতে বলে চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো কবীর।মিনিট দুয়েক পরে তাহিয়া ভেতরে প্রবেশ করলো।পিছনে মায়ের আঁচল ধরে ছোট্ট কন্যাটিও আছে।নীল রঙা ড্রেসটিতে অপরাজিতা লাগছে।

“তাহিয়া,তোমার মেয়ের ভার্সিটি নেই?সারাদিন এমন ঘুরাঘুরি করে কেন?”

“আছে।কিন্তু এখন সে বায়না করেছে বড় হবে।এই কারণে রোজ অফিসে এসে বিষয়গুলো বুঝতে চেষ্টা করে।”

কবীরের দৃঢ় কপালে কয়েকটি রেখার উদয় ঘটলো।এমনিতে সেদিন বাড়ীতে তার বাবা সাহেদের সঙ্গে তোশার ঠিক কী কথা হয়েছে সেটা এখনও জানতে পারলো না।সকালে বাবাকে ডাকতে গিয়ে দেখে তখনও আলোচনা চলছে দুজনের মধ্য।উপরন্তু তোশার ব্যবহারে বেশ পরিবর্তন এসেছে।

“এই মেয়ে বড় হবে?আমার বিশ্বাস হয়না।”

যুবতী তোশা মায়ের আড়ালে চোখ রাঙায় প্রিয় মানুষটিকে।কিন্তু কবীর শাহ তাতে ভয় পায় নাকী?বরং উল্টো সুর ধরে বলল,

“তোশামণিকে শাসন করো তাহিয়া।অভিনয়ের ব্যাপারটা ভুলে যেওনা।আর শেখার সময় আছে।অসময়ে কিছু হয়না।”

“থাক না কবীর।একটু-আধটু থাকুক আমার সাথে।”

“তাহলে শেখা হবেনা।তুমি ওকে কিছু করতেও দিবে না।উল্টো সময় নষ্ট হবে।পড়াশোনায় ঝামেলা হবে।”

“কথাটা তো সঠিক।”

কবীর যেন এই বাক্যের অপেক্ষায় ছিল।হালকা কেঁশে শুধালো,

“আমার অফিসে থাকুক।সেইফ থাকবে এবং বুঝবেও ভালো।”

“ঠিক।কিন্তু ভুল তো করবে অনেক।”

“ভয় নেই তাহিয়া।তোমার মতোন আমিও এই দস্যুকে শাসন করতে পারিনা।অনুমতি থাকলে একটু পর ওকে নিয়েই আমি মেইন অফিসের জন্য বের হবো।”

কবীরের প্রস্তাবে তাহিয়া অকপটে রাজি হয়ে গেলো।কিন্তু তোশা গাইগুই করতে লাগলো।কবীরের সন্নিকটে থাকলে যে তার উদ্দেশ্য সফল হবেনা।কিন্তু মায়ের মুখের উপর মানা করতে পারলো না।ঘন্টা দুয়েক পর কবীরের সঙ্গে প্রধান অফিসের দিকে যাত্রা শুরু করলো।এখন তামাটে পুরুষ পুরোপুরি গোছানো মানুষ।কোথাও যেন খুঁত নেই।ড্রাইভার না থাকায় বেশ সুবিধা হলো তোশার।

“আপনি অনেক চালাক কবীর শাহ।কতোটা সতর্ক ভাবে আম্মুকে বুঝিয়ে দিলেন।এখন নিশ্চয় আমাকে সেক্রেটারী করবেন।এরপর অফিস রোমান্স।”

পুলকিত হয়ে উঠলো তোশার মন।কিন্তু এই ভাবনায় এক সমুদ্র পানি ঢেলে দিয়ে কবীর বলল,

“না ম্যাডাম।আপনি আপাতত বেসিক শিখবেন তাও আমার ম্যানেজারের থেকে।শুধু কীভাবে মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে হয় এটা শেখাবে।অন্যকিছু ভবিষ্যতে।”

“কেন?তাহলে তো আমি আম্মুর সাথে ভালো ছিলাম।”

“আগে বলো মাথায় এসব ভূত কোথায় থেকে এলো?এই মেয়ে এতো চিন্তা কীভাবে করো তুমি?আব্বু বলেছে এসব?”

তোশা জ্ব লে উঠে বলল,

“আঙ্কেলের নামে উল্টোপাল্টা ভাবলে খবর আছে।”

“তাই?আব্বুর সাথে এতো মিল হলো তোমার।বেশ, ভাববো না কিছু।তবে সেদিন রাতে কী বলেছে সেটা বলো আগে।”

তোশা নতমস্তকে শুধালো,

“আমার নামে এতোগুলো টাকা কেন রেখেছেন আপনি?”

হাসিখুশি কবীরের মুখটা নিভে গেলো।সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য তাহলে কাজ করতে চাও?আব্বু বলেছে তাইনা বিষয়টা?”

“নাহ-হ্যাঁ।কারণ আছে অন্য।কিন্তু আপনি এতো কেন করেন আমার জন্য?”

“শুনতে চাও?”

“হুঁ।”

গাড়ীটা একপাশে থামিয়ে দিলো কবীর।টান দিয়ে মেয়েটিকে নিজের কাছে নিয়ে এলো।দুজনের উষ্ণ শ্বাস একত্রিত হয়ে উঠলো।খোঁচা শক্ত গাল দ্বারা তোশার নরম গালে আলতো স্পর্শ করলো কবীর।মৃদুমন্দ কণ্ঠে বলল,

“তোমার ভবিষ্যত সুরক্ষিত করে দিলাম।”

“টাকা থাকলে ভবিষ্যত সুরক্ষিত হয়?”

“কিছুটা বেলাডোনা।ভীষণ ভালোবাসি।”

তোশার মন জুড়ে নির্মল বাতাস বয়ে গেলো।কিন্তু আ’হত কণ্ঠে বলল,

“যদি ভবিষ্যত আপনি না হোন তাহলে টাকার সুরক্ষা দিয়ে কী করবো আমি?”

“থাকবো না কেন?”

“জানিনা।আমার খুব ভয় করছে কবীর শাহ।মনে হচ্ছে সামনে অনেক কঠিন কিছু হবে।”

“ভয় নেই।যতোটা কঠিন হবে সামলে নিবো আমরা।”

কবীর মেয়েটিকে নিশ্চিন্ত করতে পারলো না এই কথায়।সে বুঝতে পারছে তার বাবা কিছু একটা বলেছে যার প্রতিফলনে তোশার এমন ভয়।হুট করে মেয়েটা চোখ তুলে তাঁকালো।কী সুন্দর সজীব মুখটা।কবীর শক্ত আঙুল গুলো দ্বারা গালে হাত বুলিয়ে নিলো।চোখ দুটো বন্ধ করে স্পর্শ গুলো অনুভব করতে করতে তোশা বলল,

“কবীর শাহ চলুন আজ, এখুনি বিয়ে করে ফেলি।তা নয় মনে হচ্ছে আমি আপনাকে কখনো পাবো না।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩৪
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“মেয়েদের চোখ ও সমুদ্রের মধ্যে মিল কোথায় আছে জানো?দুটোর জল কখনো শেষ হয়ে যায়না।কেঁদো না বড্ড মিষ্টি লাগছে দেখতে।”

অশ্রু ভেজা চোখ দুটি আকারে সংকুচিত হয়ে উঠলো।রক্তিম নাক দিয়ে লম্বা একটি নিশ্বাস টেনে তোশা আস্তে করে বলল,

“ঢং করেন।”

“তোমার থেকে শিখেছি মেয়ে।বিয়ের ভূত মাথা থেকে আপাতত নামাও।তোমার বাবা দেশে আসছে ছয় মাস পর।তখন সবকিছু সকলে জানবে।”

উচ্ছাসিত কণ্ঠে তোশা শুধালো,

“আব্বু দেশে আসছে?কিন্তু আম্মুকে তো এখনও বিয়ে দিতে পারলাম না।”

“তাহিয়া বিয়ে করতে চায়না।ব্যাপারটা বড় করবেনা।চলো অফিসে লেট হচ্ছে আমার।”

কবীর পকেট থেকে রুমাল বের করে তোশার গাল দুটি মুছে দিলো।মেয়েটাও সর্বোচ্চ অধিকারে নিজের সিক্ত নাকটি কবীরের টাই তে মুছে নিলো।

তোশার অফিস রোমান্সের স্বপ্নটাও পূরণ হলো না।উল্টো গম্ভীর এক রমণীর সান্নিধ্যে পাঠিয়ে দিলো কবীর।মহিলার নাম মিরা রহমান।দেখতে শুনতে বেশ ভালো।মূলত তোশার চোখে পৃথিবীর সব নারী সুন্দর।নিজ নিজ উপায়ে।

“তুমি কী রোজ অফিসে আসবে তোশা?”

মিরার প্রশ্নে সোজা হয়ে বসলো তোশা।চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে বলল,

“যেদিন ভার্সিটিতে ক্লাস কম থাকবে অথবা শ্যুটিং থাকবেনা সেদিন আসবো না।”

“তুমি অভিনেত্রী?কীসে অভিনয় করেছো?”

“এখনও শুরু হয়নি অভিনয়।কেবল একটা কন্ট্রাক সাইন করেছি।”

“ভালো লাগে অভিনয়?”

“তেমন একটা না।”

মিরা উষ্ণ এক শ্বাস ছেড়ে বলল,

“আমার মা ভালো অভিনয় জানতেন।অনেক বড় বড় হিরোইনদের সাথে সাইড রোল হিসেবে কাজ করেছেন।যদি ছবি দেখাই চিনতে পারবে।আগের মুভিগুলো দেখা হয়েছে?”

“তেমন একটা না।”

“থাক তাহলে চিনবেনা ছবি দেখেও।”

কথাটি বলে মিরা পুনরায় নিজ কাজে মনোযোগ দিলো।তোশা সৌজন্যতাবসত বলল,

“দেখাতে পারেন।আমি চিনবো হয়তো।”

সুন্দর মিষ্টি করে হাসলো মিরা।ল্যাপটপটি বন্ধ করে নিলো।

“দেখাবো।তোমাকে ভালো লেগেছে মেয়ে।এজন্য কিছু উপদেশ দেই অভিনয়ে স্বাবধানে পা বাড়াবে।পেশাটি যতো উজ্জ্বল ঠিক ততোটাই গভীর।”

“জানি আমি।তাছাড়া হয়তোবা এটাই শেষ অভিনয় হবে।আপনি অভিনয় জগত সম্পর্কে খুব জানেন তাইনা?”

“হুম।”

“কখনো অভিনয় করেছেন?যেহেতু আপনার মা এই পেশায় ছিলেন।”

“করেছি বৈকি।তবে ভালো স্মৃতি নেই।”

“কেন?”

লম্বা একটা শ্বাস নিলো মিরা।যে ঘটনাটি মাথায় চলছে সেটা সে বহুবার বহু মানুষকে বলেছে।

“কেন এর জন্য বিশেষ একটি ঘটনা আছে।আমার বয়স এখন অনুমান করতে পারবে?এইতো পঞ্চাশের কোঠায়।ধরে নাও আজ থেকে সাতাশ বছর পূর্বে বিখ্যাত একজন নায়কের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলাম আমি।সাইড নায়িকা নয় মূখ্য অভিনেত্রী হিসেবে।শুট্যিং একমাস চলল এরমধ্যে সেই অভিনেতার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলো।গোপনে বিয়েও করে ফেললাম।কিন্তু হুট করে শ্যুটিং বন্ধ হয়ে গেলো।খবর নিয়ে জানতে পারলাম যার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে সে পূর্ব থেকে অনেক বড় একজন মন্ত্রীর মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিল।আমার কথা জানার পর তার প্রথম স্ত্রী শ্যুটিং বন্ধ করে দিলো।ব্যস দুনিয়া ঘুরে গেলো আমার।এরপর সেই মানুষটাও যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো।অভিনয় তো আর হলো না।বাস্তব জীবনেও কেমন যেন পিছিয়ে গেলাম।বিয়েও হলো না আর মানুষটার সঙ্গে বিচ্ছেদও না।”

মিরা চশমার ফাঁকে আঙুল দিয়ে চোখ মুছলো।তোশা বুঝতে পারলো মহিলাটি এই ঘটনা সবাইকে বলে অভ্যস্ত আছে।ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেলো ছোট্ট যুবতীর।কতো মানুষের কতো রকম গল্প আছে।বিব্রতবোধ থেকে নিজেকে উদ্ধার করতে সে উঠে দাঁড়ালো।

“আমি একটু কবীর শাহ এর কাছে যাচ্ছি আন্টি।”

মিরা হেসে বলল,

“স্যারকে তুমি নাম ধরে ডাকো কেন?সে কিছু বলেনা?”

“উহু,বরং ডাকটা ভালোবাসে।”

“তোশা, আমার কাহিনীর আরো একটি রুপ আছে জানো?মানুষটা আমাকে ছেড়ে দেওয়ার মাস দুয়েক পর চমৎকার একজন মানুষের অস্তিত্ব আমার শরীরের ভেতর পেয়েছিলাম আমি।বাবার মতোন সে নিজেও বিখ্যাত একজন অভিনেতা।পথ চলতে তোমার দেখা হতে পারে তার সঙ্গে।নামটা বলবো না।কারণ এবার তুমি তাকে চিনবে।যাকে তার মা-বাবা কেউ পরিচয় দেয়নি নিজেদের।”

“সে কী প্রতীক স্যার?”

মিরা মুখ দিয়ে বিরক্তিকর একটি শব্দ করে বলল,

“প্রতীক হওয়ার প্রশ্ন আসেনা।সে অন্য কেউ।মন বলছে দেখা হবে তোমাদের।”

তোশার মন অবশ্য সেটি বলল না।জোরপূর্বক অধরযুগলে হাসি টেনে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।পথ চলতে গিয়ে মিরা কাহিনী আদৌ সত্য কীনা সেটা খুব করে ভাবতে লাগলো সে।

(***)

“বৃষ্টি কল্লোলকে পছন্দ করে।এজন্য চাচ্ছে তোশার সাথে তুমি সম্পর্কটা ভে ঙে দাও।চাচার প্রেমিকার মামাতো ভাইকে পছন্দের কথা বলতে ওর লজ্জা লাগছে।”

কবীরের ভ্রু দুটো কুঁচকে গেলো।গলার টাই একটু ঢিলে করে নিলো।দিশাকে দেখার পর থেকে যেন শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে তার।

“এসব কথা বলার জন্য এসেছো?আবার সেই দিনে যেদিন তোশা আমার সাথে অফিসে এসেছে?”

চোখ-মুখের পেশী শক্ত করে রেখে দিশা জবাব দিলো,

“হ্যাঁ।বরং তাহিয়াকে ফোন করে ওর থেকে শুনে এসেছি।”

“লাভটা কী এরকম করে?আমি তোমার প্রাক্তন।বিয়েটা ভাঙার সময় এসব মনে ছিলনা?”

“ছিল।কিন্তু তোশার সঙ্গে তোমার পুরোপুরি সম্পর্ক জুড়তে দিবো না আমি।অল্প বয়সী বউ পেয়ে আহনাফকে ভুলে যাবে তুমি?রঙীন রাতের আড়ালে আমার ছেলটা শুধুমাত্র একজন ফেলনা হয়ে থাকবে।”

কবীরের মন চাইলো দিশাকে ক ষি য়ে একটা চড় দিতে।মাঝেমধ্যে তার কাছে অবিশ্বাস হয় এই মানুষটা এক সময় সত্যি তার স্ত্রী ছিল তো?ছিল কিন্তু কোনগুণে কবীরের পছন্দ হয়েছিল তাকে সেটিই রহস্য।

“আহনাফের সাথে তোশার যতোটা ভালো সম্পর্ক সেটির এক আনাও তোমার সঙ্গে নেই।তাছাড়া তোশাকে মানসিক ভাবে এতোটা কষ্ট দেওয়া কতোটা সঠিক?”

দিশা জবাব দেওয়ার পূর্বে দরজা খুলে তোশা প্রবেশ করলো।যুবতীর চোখের রঙ বদলানো খেয়াল হলো কবীরের।দিশা যেন এই সুযোগটির অপেক্ষায় ছিল।আরামে চেয়ারে গা হেলিয়ে বলল,

“কবীর তোমার মনে আছে মালদ্বীপে বেড়াতে গিয়েছিলাম আমরা।সেখানে বীচের মধ্যে রাতের বেলায় কতোটা উন্মাদ হয়ে উঠেছিলে তুমি?আহা সেসব স্মৃতি মনে হলে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠি।”

কবীর তোশা দুজনে কিছুটা সময় নির্বোধের অনুরুপ দিশার পানে তাঁকিয়ে রইলো।কিন্তু অবাক হওয়াকে দ্রুত কাঁটিয়ে কবীর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তোশাকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল,

“অতীত মনে রাখা আমার স্বভাবে নেই দিশা।যদি বলো আগত কিছু স্মৃতির আশায় রোমাঞ্চিত হয়ে উঠে আমার মন।বিশেষ করে তোশা আর আমি একটু আগে প্ল্যান করছিলাম কীভাবে বিয়ের পরের দিন গুলো কাঁটাবো।আর কিছু না হোক।আমার বেলাডোনা তোমাকে কখনো সেসব উজ্জ্বল ভালোবাসার চিহ্ন দেখানোর মতোন রুচি রাখেনা।তো ভয় নেই।”

তোশার ছোট্ট মাথায় আগের কথা গুলো না ঢুকলেও প্ল্যানের বিষয়টা ভালো করে ঢুকলো।নিজ মনে মনে সে বলল,

“আমরা এসব প্ল্যান করলাম কখন?স্বপ্নে?”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

পৃথিবীর সবথেকে বিদ্রুপ জড়িত হাসিটা যেন এইমাত্র হেসে নিলো দিশা।কবীরের কথাগুলোকে তোয়াক্কাও করলো না।বরং চেয়ার থেকে নিজের ব্যাগটা হাতে তুলে বলল,

“তোশা তুমি কবীরের বাবাকে কী বলে ডাকো?নিশ্চয় দাদা কিংবা নানা নয়।সেখানে তোমার মা আঙকেল বলে ডাকে।হয়তো তুমিও তাই ডাকবে।এই একটা জিনিসে বোঝা যায় তোমাদের সম্পর্কের রঙ মাখা ভালোবাসা প্ল্যান করা কতোটা নো ং রা।তোমরা যেটাই বলো না কেন?শেষে বিয়েটা আমি হতে দিবো না।আমি মটেও চাইবো না শেষ জীবনে গিয়ে আমার একমাত্র সন্তানের বাবা কষ্ট পাক।আজ উঠি।”

কবীর বা তোশা দুটো মানুষ যেন মুখে কুলুপ এঁটে রইলো।সুমিষ্ট চেহারায় দিশা নামের মানুষটা কতোটা না সত্য কথা বলল তাদের।তবে এই সত্যটি হজম হলো না প্রেমিক যুগলের।অভিমানে তোশা কবীরকে ছেড়ে বের হয়ে গেলো।দিশা পুনরায় মনকাড়া হাসলো।

“ছোট মরিচের ঝাল যেমন বেশী।ঠিক তেমনটা ওর মতো মেয়েদের আবেগ বেশী।তাই নিজের ভাতিজির কথা চিন্তা করে হলেও সরে যাও সবকিছু থেকে।”

“আমরা রিলেশনে আছি এটা বৃষ্টি তোমাকে বলেছে?”

“হ্যাঁ।ওর রিকোয়েস্টে এখানে আসা।স্বার্থপর হবেনা।সারাজীবন ভাই ও তার পরিবারের জন্য কতোকিছু করলে।এটা শেষ বেলায় এসে ধুঁয়ে দিবেনা আশা করি।”

কবীর নিশ্চুপ।যেন কথা বললে অজানা মহামারী ছড়িয়ে পড়বে।সুগঠিত পেশিবহুল হাত গুলো দ্বারা দিশাকে বাহিরের রাস্তাটি অবশ্য দেখাতে ভুললো না।

“আমার পরিবার দিশা।কী করবো সেই বিষয়ে প্রাক্তনের থেকে নিশ্চয় উপদেশ নিবো না।”

“কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রাক্তন আশীর্বাদ স্বরুপ হয়ে থাকে।ভালো উপদেশ গুলো গ্রহণ করো।আসছি।”

“আর ফিরে এসো না।”

অপমানটা গ্রহণ করলো না দিশা তবুও মুখের রঙ পরিবর্তন করে বের হয়ে গেলো।কবীরের মনে হলো দুজন স্বার্থবাদী নারী একা করে চলে গেলো তাকে।

(***)

“মন্দ বলুক সমাজ
তুমি আমারই, হায়, বলবো শতবার
ও আমার বন্ধু গো
চির সাথী পথ চলার,
তোমারই জন্য গড়েছি আমি
মঞ্জিল ভালোবাসার।”

গানগুলোর প্রত্যেকটি লাইন তোশার মনে বিষাদ জুড়ে দিলো।পরনে তার কুঁচি করা সুন্দর একটি জামদানী।আশির দশকের মেয়েদের মতোন করে খোঁপা করা চুলে।এইতো আজ শ্যুটিং এর দ্বিতীয় দিন তার।বেশ ভালো অভিনয় করছে তোশা।কিন্তু ডিরেক্টর সোহান হয়তো তৃপ্ত হতে পারছেনা।তাকে স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসিয়ে রেখেছে।ব্যক্তিটা অবশ্য অমায়িক।গানের গলা সুন্দর।তোশা ঘাড় ঘুরিয়ে তাঁকিয়ে দেখছে।সোহান মিষ্টি হেসে বলল,

“গানটা ভালো গেয়েছি তোশা?কী বলো?”

“আসলেও সুন্দর স্যার।”

“যখন সালমান শাহ্ ও মৌসুমির শ্যুটিং চলছিলো এই গানটায় তখন বাবার হাত ধরে এসেছিলাম দেখতে।সেই থেকে আমার প্রিয় গান।তোমাকে আমার কাছে সেই আর্লি এইজের মৌসুমীর মতোন লাগে।মিষ্টি মেয়ে।”

হুট করে কোথাও থেকে প্রতীক এসে তাদের পাশে বসলো।তোশাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“নায়িকারা দেখতে মিষ্টি হয় সোহান ভাই।জানেন না কোনো স্পার্ক না থাকলে সে নায়িকা নয়।তোশা অভিনয়ে আরো ভালো করতে হবে।কিন্তু তোমার চেহারা বড় সুন্দর।”

“প্রতীক স্যার।অভিনয় জগতে সব কী সৌন্দর্য নাকী?দক্ষতা বলে কিছু নেই?”

মাথা দুলালো প্রতীক।একটা ছেলে দৌড়ে এসে তাকে কফি দিয়ে গেলো।সেখানে চুমুক বসিয়ে বলল,

“ফিফটি-ফিফটি।দুটোই লাগে।যাই হোক কেমন লাগছে?”

“ভালোই।খারাপ না।”

“আরো ভালো লাগতো যদি এতো কড়াকড়ি নিয়মে না থাকতে।মিস.শাহ তো সব ঠিক করে দিয়েছে।এমনকি তোমার পোশাক গুলোও।”

তোশা কথাগুলোর বিপরীতে অধর প্রসারিত করলো শুধু।কবীরের সঙ্গে কয়েকদিন ধরে নীরবে বোঝাপড়া চলছে তার।কারণটা অবশ্য দিশা।একটু অভিমানে তোশা ভেবেছিল ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলবে মানুষটা।কিন্তু ওইযে পাষাণ হৃদয়ের মানুষ।

“কোথায় হারিয়ে গেলে তোশা?”

“এখানে আছি।”

প্রতীক হালকা ইতস্তত করলো।কিন্তু মেয়েটিকে তো পেতে হবে।এই কারণে নিজের ভালো প্রভাব বিস্তার করার নিমিত্তে বলল,

“আমার আগের কাজগুলো দেখেছো কখনো?কেমন লাগতো আমাকে?”

“হালকা পাতলা দেখেছি।কিন্তু আমার মামী আপনার খুব ফ্যান।”

“একদম ডাই হার্ড ফ্যান কোন নায়কের তুমি?”

তোশা মিনমিন করে বলল,

“সে অভিনেতা নয়।কিন্তু তার ফ্যান আমি।”

প্রতীক উপলব্ধি করতে পারলো মেয়েটা কার কথা বলছে।নিজেকে সর্বোচ্চ শান্ত রেখে বলল,

“মানুষটা কী কবীর স্যার?”

“হ্যাঁ।”

“ভয় করেনা এতো সিনিয়র কাওকে পছন্দ করতে?”

“বুঝলেন কীভাবে?”

“জানি একভাবে।”

তাদের কথার মধ্যিখানে সোহান সিন শ্যুট করার তাড়া দিলো।এবার বেশ ভালো করে অভিনয় করছে তোশা।দৃশ্যের এক পর্যায়ে মেয়েটার খোঁপায় ফুল গুঁজে ভালোবাসা ব্যক্ত করলো প্রতীক।বিনিময়ে তোশার নতমুখে লজ্জায় রক্তিম হয়ে উঠলো।ঠিক যেন লালচে করঞ্জ।

কবীর দূর থেকে দৃশ্যটি দেখলো।বুকে চিনচিনে ব্যাথা হলো তার?হয়তো।গাড়ী থেকে নেমে দাঁড়ালো।তোশার আড়চোখের দৃষ্টি অবশ্য তার উপর পড়েছে।মেয়েটা দৃশ্যটি শেষ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো।এতে অবশ্য অভিনয়টি আরো নিখুঁত হলো বটে।

সোহান বৃদ্ধা আঙুল উঁচু করে বলল,

“খুব সুন্দর হলো তোশা।একটু ব্রেক নাও।বিকেলে আবার একটা দৃশ্য আছে।”

“জি ধন্যবাদ।”

তোশা পা চালিয়ে কবীরের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।তবে মুখটা এখনও নিচের দিকে।এক হাতে আঁচলটি জড়িয়ে নিচ্ছে।মেয়েটির হাবভাব কেমন যেন অদ্ভূদ।কবীর ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,

“কী সমস্যা?”

ভেঙে ভেঙে বলল তোশা,

“লজ্জা পাচ্ছি।”

“কেন?”

“আপনাকে দেখে।ইশ কতো সুন্দর আপনি।”

কবীর মুখে সংক্রিয়ভাবে হাসি চলে এলো।তবুও গম্ভীরতা বজায় রেখে বলল,

“তুমি আর লজ্জা?অভিনয় থেকে বের হও।”

“এভাবে বলবেন না।বুঝেন না কেন?নারী হওয়ার চেষ্টা করছি।আপনি এখন আমাকে হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন আমি জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলবো।আঁচলে মুখ লুকাবো।আপনি লজ্জা ভাঙিয়ে আরো কাছে আসবেন।এরপর…।থাক আপনি এসব কিছু করেন না।রোমান্স বর্জিত ব্যাটা।”

তোশার কথাটি শেষ হওয়ার সঙ্গে মেয়েটি বাহু ধরে নিজ কাছটায় টেনে নিয়ে এলো কবীর।বুকের সঙ্গে লেপ্টে গেলো যুবতী।আলতো হাতে তার কপালের চুলগুলো সরিয়ে বলল,

“বেলাডোনা,তুমি কিন্তু লজ্জা পাচ্ছো না।এভাবে আমার দিকে তাঁকিয়ে দেখছো কী?”

তোশা এখনও পলকবিহীন মানুষটিকে দেখছে।লজ্জা সেটা তো দূরের বিষয়।

“কবীর শাহ।আমাদের সম্পর্কটা কী নো ং রা?”

“দিশার কথাগুলো এখনও ভাবছো?”

তোশা সোজা হয়ে একটু দূরে সরে গেলো।আঁচলটা টেনে বলল,

“ভাবার বিষয় নয় কী?কিন্তু নো ং রা তো সেই সব সম্পর্ক যেখানে কাওকে ঠকানো হয়।আমরা কাওকে ঠকাচ্ছি না।হয়তো আপনি আমার বাবা-মায়ের বন্ধু।বয়সে বড়।কিন্তু কী বলেন?ভালো আপনাকে লাগে।শান্তি আপনাকেই লাগে।অথচ সকলে বলে বদলে যাবো।এইযে অনুভূতি।সব শেষ হয়ে যাওয়া এতো সহজ?”

কবীর তোশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

“বড়দের মতোন কথা বলো না।তোমাকে ছোটখাটো পুতুল হিসেবে ভালো লাগে।চলো আজ রিক্সায় ঘুরবো আমরা।”

“শ্যুটিং আছে যে।”

“ওটা আজ হবেনা।আমি না করে দিবো।এই শাড়ীতেই চলো।”

“আপনি এতো ব্যস্ত।তাও কেন রোজ আমার জন্য সময় বের করেন?ভালোবাসেন এজন্যই তো।আমার জায়গায় অন্য কাওকে নিয়ে আসতে পারবেন?”

“সম্ভব না।এসব ভাবতে হবেনা।আমি ভবিষ্যতের সব ঝড় দেখবো।”

“তাহলে আমাদের সম্পর্ক নো ং রা না।হ্যাঁ ঠিক নো ং রা না।”

তোশা বারংবার কথাটি বলছে।কবীরের বড় মায়া হলো মেয়েটিকে দেখে।কাওকে পছন্দ করে নিজের করতে চাওয়ার মধ্যে হয়তো কোনো নোং’রামি নেই।দুটো মানুষ অসম ভালোবাসাতে জড়িয়ে গিয়েছে।একে অপরের সঙ্গে একটু ভালো থাকা তাদেরও প্রাপ্য।এইযে রিক্সায় হাত ধরে বসে আছে দুজন।কয়েকজন ইতিমধ্যে বাঁকা দৃষ্টিতে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে তাদের।কিন্তু এই কবীর-তোশা প্রেমিক যুগলের সেগুলোর জবাব দেওয়ার সময় আছে নাকী।

নাকে মিষ্টি রজনীগন্ধার সুগন্ধে চিন্তা থেকে ফিরলো কবীর।যুবতী তার কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।হাত বাড়িয়ে ফুলটিকে দুমড়েমুচড়ে কংক্রিটে রাস্তায় ফেলে দিয়ে স্বস্ত্বি ফিরলো তামাটে পুরুষটির।নিজের বেলাডোনার গায়ে অন্য কারো দেওয়া ফুলের টোকাও দিতে নারাজ সে।কবীরের মন হঠাৎ বলে উঠলো,

“বেলাডোনার প্রতি এতো ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে আছে কীভাবে সে?এমন মায়াতে শেষ হওয়াও ভালো।”

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-৩০+৩১+৩২

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩০
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমরা এখানে কেন এলাম আম্মু?কোনো কাজ আছে?”

বড্ড মিনমিন কণ্ঠসুরে কথাটি শুধালো তোশা।দিনের শুরুতে মা তাকে সঙ্গে করে নিয়ে বেড়িয়েছে।যদিও জানতো না কোথায় যাচ্ছে তারা।কিন্তু গাড়ী থামার পর স্মরণে এলো এটা শাহ গ্রুপের প্রধান অফিস।জীবনে একবার অবশ্য তোশা এসেছিল।

“কবীরের সাথে আমার কিছু কথা আছে তোশামণি।এরপর তোমাকে নিয়ে হেয়ার ট্রিটমেন্টের জন্য যাবো।এতো সুন্দর চুলগুলো কাকের বাসা বানিয়ে ফেলেছো।”

“আম্মু আগে বলবেনা।আমি বড্ড উদ্ভট পোশাকে এসে পড়েছি।তিন রঙা লাগছে।”

“সমস্যা নেই।কবীর কিছু মনে করবেনা।তুমি তো বাচ্চা।”

তোশার মন খারাপ দূর হলো না।তার মা তো জানেনা লোকটার সঙ্গে আড়ালের সম্পর্কের কথা।ভালোবাসা স্বীকার করার পর এবার দিয়ে প্রথম দেখা তাদের।যদি জানতো তোশা তবে সবথেকে সুন্দর রঙের ড্রেসটা পরে আসতো।আফসোসের অনলে ভেতর থেকে উষ্ণ শ্বাস বের হয়ে এলো কন্যাটির।

অফিসটাতে বেশ টাকা খরচ করেছে কবীর।মনের মাধুরি অনুযায়ী তৈরী করেছে যেন।গতবার এতোকিছু খেয়াল ছিলনা তোশার।আজ বেশ আয়েশ নিয়ে সবটা দেখছে।লিফট থেকে বের হওয়ার পর তাদের মধ্যবয়স্ক এক লোকের সঙ্গে দেখা হলো।

“তাহিয়া চৌধুরী।কেমন আছেন?”

হাসিমুখে তাহিয়া কোনমতে ভালো আছি বলে পাশ কাঁটাতে গিয়েও পারলো না।লোকটা থামিয়ে বলল,

“কোথায় যাচ্ছেন?মি.শাহ এখন ব্যস্ত।চলুন ক্যান্টিনে গিয়ে আলাপ করে নেই।আহা বিব্রত হচ্ছেন কেন?চলুন তো একবার যতোক্ষণ না মি.শাহ ফ্রি হচ্ছে।”

“অন্য একদিন।আমার সময় নেই আলমগীর।অন্য একদিন কথা হবে।

তোশার পানে আলমগীর তাঁকালো একবার।লোকটার চাহনি ভালো না।

” এটা নিশ্চয় আমাদের মামুনী।কেমন আছো মা?আমি তোমার মায়ের বন্ধু।”

“ভালো।”

বন্ধু শব্দে মটেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হলো না তাহিয়ার।মেয়ের নির্বিকার চাহনী থেকে বাঁচতে আলমগীরের সঙ্গে যাওয়ার জন্য রাজী হলো।পাছে কিছু মনে করে তোশা।তবে এটা যেন ভুল ছিল তাহিয়ার।অতীতে তাকে বহুবার আকার ইঙ্গিতে অন্যরকম প্রস্তাব দিয়েছিল আলমগীর।আজ সেটা কিছুটা সরাসরি দিলো।এতোটা সাহসের কারণ অবশ্য একটু পর অনুধাবন হলো তাহিয়ার।কবীরের সঙ্গে অনেক বড় একটা প্রজেক্টে কাজ করবে সে।

“এখানে কী হচ্ছে?সুন্দর আড্ডা আমাকে ছাড়া হয়ে যাচ্ছে?”

নিজের বিশাল দেহটা নিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো কবীর।মানুষটার চেহারা,পোশাকে যত্নের ছাঁপ ও সুবিন্যস্ত পরিপাটি অবস্থা দেখে আরেক দফা কান্না এলো তোশার।আজকেই কেন সে পাগলের মতো বের হলো।ভাগ্যিস অন্তত শ্যাম্পুটা করেছিল সে।আলমগীর তাকে দেখে সুন্দর হেসে বলল,

“এমনি কথা বলছিলাম।আপনি তো জানেন কবীর।তাহিয়াকে আমার কতোটা পছন্দ।”

“আপনার ডিভোর্সটা কী হয়েছে মি.আলমগীর?শুনলাম হবেনা।গতরাতে আপনার স্ত্রী ফোন করেছিল।হোটেল সোনারগাঁ তে ইনভাইট করলো আমাকে।কী বলেন তো আপনারা রাস্তাঘাটের সকলকে পছন্দ করেন নাকী?”

“কী আশ্চর্য!আপনারা রাস্তাঘাটের নাকী?”

“একদম না।রাস্তাঘাটের মানুষ হলো তারা যাদের..।”

হুট করে তোশার দিকে তাঁকালো কবীর।আদেশের সুরে বলল,

“দুহাত দিয়ে কান চেপে ধরো।”

“কেন?”

“প্রশ্ন নয় মেয়ে।”

তোশা কথা মতোন দুহাত দিয়ে কান বন্ধ করলো। তৎক্ষনাৎ কবীরের পুরু ঠোঁট দুটো নড়ে উঠলো।মুখটা বিবর্ণ হয়ে উঠলো আলমগীরের।

“আশা করি এরপর থেকে কাওকে পছন্দের কথা দেখেশুনে বলবেন।মিটিং শেষ অনেক আগে।সময় গড়ালে অফিস থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে খুব কষ্ট হবে আপনার।”

“জি মি.কবীর।ভালো থাকবেন।”

তড়িঘড়ি করে উঠে চলে গেলো আলমগীর।যুবতী তোশা এখনও কানে হাত দিয়ে দূরে উদাস হয়ে তাঁকিয়ে আছে।যেন ইহজাগতিক বিষয়ে সে বড় নির্বিকার।কবীর আস্তে করে তোশার হাত দুটো নামিয়ে তাহিয়াকে শুধালো,

“হঠাৎ অফিসে কেন তুমি?আর কতোবার বলেছি এসব পা র্ভা ট দে র সাথে সৌজন্যেতাবশতও কথা বলবেনা।”

“কবীর, আমার ইচ্ছে ছিলনা।মেয়ের সামনে বলে আমি নাকী তার বন্ধু।তোশা যদি কিছু মনে করে।”

“তোমার মেয়ে বেশ বুদ্ধিমতী।কিছু মনে করবেনা।যাই হোক কেবিনে চলো।”

তাহিয়া আগে আগে কেবিনের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো।কবীর প্যান্টের পকেট থেকে হাতটা বের করে আস্তে করে তোশার আঙুলে চাপ দিলো।শিওরে উঠলো মেয়েটা।ধীর কণ্ঠে বলল,

“তিন রঙের পোশাক।দারুণ ফ্যাশন।সুন্দর লাগছে আকাশী মেয়ে।”

লজ্জায় চোখে পানি আসার উপক্রম।মানুষটা তবে তার পোশাকের ক্রুটি ধরতে পারলো।তবে সে দমে যাওয়ার নয়।

“ফ্যাশনটা আজকেই আবিষ্কার।”

“গুড।”

“আচ্ছা আলমগীর আঙকেলের ওয়াইফ আপনাকে কেন ইনভাইট করলো।দুনিয়া মানুষের অভাব আছে?”

“আমি সুন্দর,ব্যাচেলর।সুগঠিত পুরুষ।এই তিনটে বাহানা যথেষ্ট নয় কী?”

“হু?সেই তো কালো।”

কবীরের অধরযুগল প্রসারিত হয়ে গেলো।সকলের অগোচরে পুনরায় কন্যাটির হাতে হাত বুলিয়ে দিয়ে ধীর কণ্ঠে বলল,

“কালো, বুড়ো যাই বলো সুন্দর কন্যার নজরে শুধু আমিই আছি।”

“ভীষণ আত্নবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে।”

মিষ্টি করে হাসলো কবীর শাহ।ব্যস, তোশামণির দিন সেরা হওয়ার জন্য যা যথেষ্ট ছিল।এইতো একটু একটু ভালোবাসার স্পর্শ,মায়াময় বাক্য এসবের জন্য কতোটা আকুলতা ছিল তার।দিনশেষে সব স্বপ্ন পূরণ হয়ে ওঠে।

(***)

ক্ষণবাদে বিশাল বড় একটি কেবিনে প্রবেশ করলো তোশা।কবীর নিজের চেয়ারে বসে শুধালো,

“তাহিয়া হঠাৎ এখানে এলে যে?”

“আমি একটা ভুল করে ফেলেছি।সেই কারণে এলাম।”

“কী ভুল?”

“তোমার কোম্পানিতে কাজ শুরু করার পর থেকে আমার যতোটা প্রোফিট ছিল এরমধ্যে বেশীরভাগ বাবার নামে দিয়েছিলাম।বাকীটা তোশার নামে।এখন তিনি চাচ্ছেন সেই টাকা তার আরো দুই সন্তান ও কল্লোলের নামেও দিবেন।আমি কিংবা তোশা একা কেন পাবো?অথচ সবটা আমার মেয়ের।নিজের চেনা পরিচিত বাবাকে চিনতে পারছিনা আমি।”

গম্ভীর সুরে কবীর শুধালো,

“আঙকেলকে জিজ্ঞেস করেছিলে ব্যাপারটা কেন তোমার টাকা বণ্টন করছেন?”

“করেছিলাম।সে বললেন টাকা তার নামে।আমার সত্যিই বড় খারাপ লাগছে।দিনশেষে সকলে ধোঁ কা দেয়।”

শুকনো ঢোক গিললো তোশা।কবীর মুখে একরাশ মেঘ জমিয়ে বলল,

“আমি একবার আঙকেলের সঙ্গে কথা বলে দেখবো?”

“লাভ হবেনা।দেখো না বাসাটাও আমাকে এমনভাবে দিয়েছে যে কখনো আমি দাবী করতে পারবো না।কোনো উপায় নেই টাকা গুলো ফেরত পাওয়ার?”

“আজ কালের মানুষ নিজের ছায়াকে বিশ্বাস করেনা সেখানে তুমি কাজটা ঠিক করো নি।টাকা যাক।বাবার সঙ্গে তো লড়তে পারবেনা এখন।”

“কিন্তু তোশা?ওর অধিকার সেসব।”

“মায়ান যেমন হোক বাবা হিসেবে সেরা না হলেও তোশাকে নিয়ে ভালো প্ল্যান আছে ওর।ভয় নেই।ভেসে যাবেনা।”

“একদম না।যে লোক এতোগুলো বছরে মেয়েকে দেখতে একবারও দেশে আসেনি সে কেমন বাবা হবে জানা আছে।”

প্রাক্তনকে নিয়ে আক্ষেপ কখনো মেয়ের সামনে করেনি তাহিয়া।কিন্তু আজ পরিস্থিতি ভিন্ন।বাবা -মা কেন যে সব সন্তানের সঙ্গে সমান হতে পারেনা।তোশা নতমুখে টেবিলের কাঁচ পানে তাঁকিয়ে আছে।

“তাহিয়া আমাকে বিশ্বাস করো?”

“করি।তুমি একজন যে কীনা স্বার্থ ছাড়া আমাকে নিরাপদ রেখেছো।”

“স্বার্থ,প্রাপ্তির বিষয় পরে।ভয় নেই আমি আছি।তোশার ক্ষেত্রে সবসময় আমাকে পাবে।”

তাহিয়া সেই কথা জানে।তবুও বাবার দেওয়া য ন্ত্র ণাগুলো বড্ড পোড়াচ্ছে।এখন কেঁদে দিবে সে বুঝতে পারছে।হুট করে উঠে দাঁড়ালো।কম্পমান কণ্ঠে বলল,

“আমি একটু আসছি।তোশা এখানেই থাকো।”

কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো তাহিয়া।কিন্তু একরাশ কষ্ট রেখে গেলো দুজন নর-নারীর মনে।কবীর চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বলল,

“কী ভাবছো তোশা?”

“নানা সত্যিই এমন করেছেন?আমি খেয়াল করেছিলাম গতকাল কিছু নিয়ে সকলের মধ্যে আলোচনা চলছে।”

কবীর এই আলোচনায় গেলো না।যতোটা টাকা তাহিয়ার চলে গিয়েছে ততোটার থেকে বেশীই বহু আগে কবীর নিজে তোশার নামে রেখেছে।কেন, কোন সম্পর্কের জোরে জানা নেই।কিন্তু মেয়েটির প্রতি অনিমন্ত্রিত দায়িত্ববোধ থেকে করেছে।

“তাহিয়া আমাকে খুব বিশ্বাস করে তোশামণি।তাকে কখনো কীভাবে জানাবো আমাদের অনুভূতির কথা?”

ভীত হয়ে উঠলো তোশা।ভেঙে যাওয়া গলায় বলল,

“আপনি কী আবার অস্বীকার করবেন সব?”

“যদি মা কে হারিয়ে ফেলো?ধরো তাহিয়া অথবা আমার মধ্যে কাওকে বেছে নিতে হলো।তবে কাকে নিবে?ভেবে বলো।”

প্রশ্নটির উত্তর তোশার জানা।নতমস্তকে ধীর কণ্ঠে বলল,

“আম্মু ছাড়া থাকতে পারবো না।”

“তাহলে তো হিসেবটা মিটে গেলো।”

হাসিখুশি মনটা মুহুর্তেই কেঁদে উঠলো।ফুঁপিয়ে তোশা পুনরায় বলল,

“কবীর শাহ কে ছাড়াও থাকতে পারবো না।দুজনকে ছাড়াই থাকতে পারবো না।”

কাছের মানুষদের কান্না ব্যস্ত করে তুলে কবীরকে।সে ভীষণ আকুলতায় যুবতীর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।চট করে তাকে দাঁড়া করিয়ে পিছন দিকে থেকে আলিঙ্গন করলো।বিশাল দেহটি হালকা নিচু করে নরম ঘাড়ে চিবুকটি ঠেকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কান্না করো কেন?”

“কষ্ট হচ্ছে যে।”

“কষ্ট পাওয়ার জন্য কী আমাকে ভালোবাসনি?”

“জানিনা।”

তোশাকে আরো নিবিড় বন্ধনে জড়িয়ে কবীর বলল,

“কবীর শাহ এর ভালোবাসা তোশামণিকে।দিনশেষে আমার বলা শেষ বাক্যটিও এটা হবে বেলাডোনা।তুমি থাকো কিংবা না থাকো।আমি সবসময় আছি।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩১
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমার নায়িকার সঙ্গে ঠিক কীরকম সম্পর্ক আপনার?সুগার গার্ল নাকী সুযোগ নেওয়া?”

“তুমি জানো প্রতীক এই প্রশ্নগুলোর জন্য তোমার অভিনয় ক্যারিয়ার শে ষ করে দিতে পারি।”

“সেটা আপনার ক্ষমতায় আছে জানি মি.শাহ।আমি তো শুধু জানতে চাচ্ছি আমার নায়িকার ব্যাপারে।”

কবীরের গম্ভীর মুখটিতে ফ্যাকাসে রঙ আরো এক ধাপ নিচে নেমে গেলো।তবুও মুখের বিনয়ী ভাব ধরে বলল,

“আমার নায়িকা সম্বোধন হয়তো তোশার ক্ষেত্রে চলে না প্রতীক।তুমি সেন্সিবল পার্সন।সম্পর্ক কী সেটা ধরতে পারবে।তবে সহজ করার জন্য বলে দিচ্ছি মেয়েটি একান্ত আমার আপনজন।”

“ধরতে পারি রিয়েল লাইফে আপনার নায়িকা।”

কবীর ধণাত্বক মাথা নাড়ালো।প্রতীক হুট করে উচ্চশব্দে হেসে উঠলো।যা মটেও ভালো লাগলো না কবীরের।বিষয়টি বুঝতে পেরে স্বনামধন্য প্রযোজক মিনহাজ বড় সুন্দর কণ্ঠে বলল,

“হয়েছে কী মি.শাহ।তোশা আজ সকালে আমাদের সাথে কন্ট্রাক সাইন করে গিয়েছেন।নাটকটির বিপরীতে অভিনয় করবে প্রতীক।এজন্য আমার নায়িকা বলে সম্বোধন করেছে।”

“অভিনয় করবেনা তোশা।ছোট মানুষ ভুলে কারো রায় না নিয়ে করে ফেলেছে।এখুনি কন্ট্রাকটির অস্তিত্ব মিটিয়ে ফেলবেন।”

মিনহাজ জবাব দেওয়ার পূর্বে প্রতীক মুখ ফুটে বলল,

“সম্ভব নয়।তাছাড়া অভিনয় খারাপ কিছু নয়।সাধারণ সামাজিক একটি স্ক্রিপ্ট।কিন্তু ভাবিনি এই কারণে মি.শাহ সব কাজ ফেলে আসবেন।তাহলে অসাধারণ কিছু গল্পে রাখতাম।”

“প্রতীক তুমি অল্প বয়সী যুবক।সেক্ষেত্রে যা কথা বলার প্রযোজকের সঙ্গে হবে।কী বলেন মি.মিনহাজ।আমার বিপক্ষে যাবেন?”

“না না মি.কবীর।প্রতীক তুমি কথা বলো না।আমি অন্য কোনো নায়িকার সঙ্গে যোগাযোগ করছি।”

প্রতীক নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে কবীরের মুখখানির দিকে তাঁকিয়ে আছে।কঠিক এক ধাঁধার সমাধান হচ্ছে না।তোশাকে যতোটা আজ সকালে সরাসরি দেখেছে তাতে মনে হয় না তেমন খারাপ স্বভাবের কেউ।এক্ষেত্রে কবীরের ইমেজ অনেক ক্লিয়ার।বিশিষ্ট শিল্পপতী হওয়ায় গতবছর টিভিতে এক অনুষ্ঠানে দুজন একত্রে হয়েছিল।তখন যা টুকটাক পরিচয়।ক্ষমতাধর লোক হলেও বিনয়ী তবে প্রখর ব্যক্তিত্বের।সেই লোকটি কীনা অর্ধেক বয়সের মেয়ের সাথে প্রেম ভালোবাসায় জড়িয়ে আছে?বিষয়টি গলাধঃকরণ করার মতোন নয়।হালকা বাজিয়ে দেখার জন্য মিনহাজের উদ্দেশ্যে বলল,

“কন্ট্রাক এতো সহজে ভেঙে যাওয়ার সুযোগ থাকলে আমিও আপনার প্রোডাকশন হাউজের সাথে সব ধরণের চুক্তি শেষ করতে চাচ্ছি।”

‘প্রতীক!বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করো।”

মিনহাজের কথার ধারের কাছ দিয়েও গেলো না প্রতীক।উল্টো কবীরের উদ্দেশ্যে বলল,

“অল্প বয়সী মেয়েরা নানা ধরণের এডভেঞ্চার করতে পছন্দ করে।আপনি নিশ্চয় তোশা চৌধুরীর কাছে ঠিক সেরকম কেউ কবীর শাহ।চোখ বন্ধ করে দুনিয়া দেখছে তো।ব্যাপার না আমার সান্নিধ্যে একটা নাটক অভিনয় করুক।পাশা পাল্টে যাবে।”

“স্বার্থ কী তোমার প্রতীক?”

“মা বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছেন।তোশা সুন্দরী,বুদ্ধি কম একটা মেয়ে।বাকী কিছু না হলেও চলবে।”

কবীর ঈষৎ হেসে বলল,

“এতোটা ভুল ধারণা যে তোশা তোমার কাছাকাছি চলে এলে সব বদলে যাবে।ও আমার ফিউচার ওয়াইফ।কোনো বন্ধু নয় যে নতুন কাওকে পেয়ে আমাকে ভুলে যাবে।”

ফিউচার ওয়াইফ দুটো শব্দে কিছু একটা ছিল।মিনহাজ ও প্রতীক দুজনের কপালে কিঞ্চিত রেখার উদয় ঘটলো।

“তাহলে নাটকে অভিনয় করতে দেন।কন্ট্রাক বহাল থাকুক।প্রমাণ হয়ে যাক।”

“তোশা আমার কাছে কোনো খেলনার বস্তু নয় যে আমি তোমার সঙ্গে যুদ্ধে নামবো।সে আমার কাছে সম্মানীয় ও বিশ্বাসযোগ্য।”

“ভয় পাচ্ছেন কবীর শাহ?আমি কিন্তু আপনার মতোন কালো নই।এক ধাপ এগিয়ে আছি।”

প্রতীক ভ্রু দুটো খানিকটা উপর নিচে করলো।সামনে বসে থাকা কালো হীরাকে দ্বিধায় ফেলতে পারলে অর্ধেক কাজ হয়ে যাবে।

“ভয় সেই পায় যার কাছে হারানোর মতোন কিছু থাকে।যে মানুষ আমার সঙ্গে বিন্দু বিন্দুতে জড়িয়ে গিয়েছে সেখানে হারানোর প্রশ্ন আসেনা।আমি জানতে চাচ্ছি না কিছু।আইনী জটিলতা না থাকলে কন্ট্রাকটি বাদ যাবে।একটি নাটকের জন্যই তো।আর যদি ফিরে আসার পথ না থাকে তবে আমি যা বলবো সেভাবে কাজ করতে হবে।”

কবীর উঠে দাঁড়ালো।এমন অসাধারণ বডি স্ট্রাকচার মিনহাজকে বেশ অভিভূত করলো।চল্লিশ বছর বয়সে এমন অনেক নায়ক আছে যারা নিজেকে মেইন্টেইন করতে পারেনা।সেক্ষেত্রে একজন পুরোদস্তুর বিজনেসম্যান হয়ে কবীর নিজের যৌবনকে ধরে রেখেছে যা প্রশংসার দাবিদার।ফিরে যাওয়ার পূর্বে কবীর পুনরায় বলল,

“ভবিষ্যতে যেন আমার নায়িকা বলে সম্বোধন করতে না শুনি প্রতীক।ধূ র্ত তা কিছু মানুষের স্বভাবে জড়িত।আশা করি তুমি এই ভা ই রা স মুক্ত।এবং তোমার মা কে বলবে ভালো পাত্রীর জন্য ঘটকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।এরকম রাস্তাঘাটে যাকে দেখবে তাকে পছন্দ হলে তবে চৌদ্দ শিকের পিছনে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।”

(***)

“কবীর শাহ ক্ষমা করে দেন।আর কখনো না বলে কিছু করবো না।এই কবীর শাহ,ফোনটা ধরেন।আমি কিন্তু তা নয় বাসায় চলে আসবো।এরপর..কী হলো?এসএমএস গুলোর জবাব দেন তো।”

ফোনটি অনবরত ভাইভ্রেট হচ্ছে।কবীর উজ্জ্বল হতে থাকা স্ক্রীনের পানে তাঁকিয়ে আনমনে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে।তোশা নামক মেয়েটি গত দুদিন ধরে অনবরত ফোন, ম্যাসেজ দিয়ে যাচ্ছে।এমনকি আজ অফিস অবধিও চলে এসেছিল।কিন্তু কবীর দেখা করেনি।মিটিং এর বাহানায় দুই ঘন্টা অপেক্ষা করিয়ে পরবর্তীতে বাড়ী চলে যেতে বাধ্য করেছে।তোশার সঙ্গে এরকম করার কারণ খুব সাধারণ।মেয়েটি বড় বেশী বুঝে।যখন কবীর শুনলো অভিনয় করবে ঠিক তখুনি ফোনে অনেকগুলো কড়া কথা শুনিয়েছে।এবং গত দুদিন ধরে কথা বলেনা।এতে যদি মেয়েটা একটু জব্দ,একটু শুধরে যায়।বাচ্চামো করা বন্ধ করে।ঘড়িতে এখন রাত বাজে একটা।কবীর বারান্দায় ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।চারিধারে অন্ধকারে ডুবে আছে।তোশা বিশ মিনিট ধরে কোনো ফোন দিচ্ছে না।কবীর ধরে নিলো মেয়েটা ঘুমে।হুট করে নিচে কোনো একটা শব্দ হলো।কবীর ল্যাপটপটা কোল থেকে সরিয়ে রেখে নিচে তাঁকিয়ে দেখতে পেলো কেউ একজন আহনাফকে ধরে গেটের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে।ছোটখাটো ছিমছাম শরীরটা চাদরে আবৃত।শীতল হয়ে গেলো কবীরের শরীর।ছেলেটি তার প্রাণ।বড় বড় পা ফেলে কবীর নিচে নামছে। যেটা দূর থেকে দেখলে লাফানো মনে হবে।মাত্র দুই মিনিট পরেই অপরিচিত শরীরটির ঘাড় চেপে ছেলেকে নিজের দিকে টেনে নিলো সে।

“কে তুই?আমার ছেলের সঙ্গে কী তোর?নয়ন,নয়ন।লাইট অন করো এখানের।”

নয়ন কবীরের বাড়ীতে দারোয়ান হিসেবে থাকে।চেয়ারে বসে ঝিমিয়ে নিচ্ছিলো।চকিত হয়ে মুহুর্তেই মনিবের কথায় লাইট টিপে উজ্জ্বল করে দিলো চারিধার।কবীরের হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামার শব্দে সকলে জাগ্রত হয়ে গেছে।অপরিচিত মানুষটি হুট করে কাঁপছে।কবীরের নাকে চেনাপরিচিত সুবাস এলো।মাথার কিছু একটা আসতেই শীতল স্রোত বয়ে গেলো শরীর জুড়ে।শক্ত মনটা বারবার বলছে শয়তান মেয়েটা যেন না হয়।কিন্তু ভুল প্রমাণ হলো কবীর।নতমুখী তোশা তার দিকে ঘাড়ে হাত দিয়ে ফিরে দাঁড়ালো।

“এখানে কী করছো দুজনে?এতো রাতে তাও?তোশা এই বাড়ীতে কীভাবে এলে?জবাব দাও।”

কবীরের এতো রাগান্বিত কণ্ঠ কখনো শুনেনি আহনাফ।সে ছোট্ট করে বলল,

“আব্বু।”

“চুপ।বাঁদর দুটো।”

ব্যস বাবার ভয়ে কেঁদে দিলো আহনাফ।এই সেই কান্না নয় বরং চিৎকার করে কান্না।নিজের প্রাণ প্রিয় আইসক্রিমের ছোঁয়ায় কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো।মুহুর্তেই ফর্সা বাচ্চাটি লাল হয়ে উঠলো।কবীরের রাগ কয়েকশো গুণ বেড়ে গেলো এতে।চিল্লিয়ে বলল,

“তোশা গালের মধ্যে দশ টা চ ড় না খেতে চাইলে এখুনি বলবে এখানে কী করো?কীভাবে এলে?উত্তর মন মতো না হলে বে’তের বাড়ী পরবে পিঠে।”

কবীরের হুমকি শুনে আহনাফকে জড়িয়ে ধরে কেঁপে উঠলো তোশা।মুখ দিয়ে ‘আম্মু’ ডাকটি বের হয়ে এলো।ওদিকে বাড়ীর সকলে উপস্থিত সেখানে।ধরা পড়ে যাওয়া কিংবা ভয় পেয়ে কেঁদে দিলো তোশা।উষ্ণ শ্বাস ফেলে কবীর নিজের কপালে হাত দিলো।এদিকে দুই দস্যু একে অপরের গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে।দর্শক বাড়ীর সকলে।আড়চোখে নিজ বাবার দিকে তাঁকালো কবীর।যে বড় নির্বিকার হয়ে আছে।মনে মনে কবীর নিজের উদ্দেশ্যেই বলল,

“চল্লিশ বছর বয়সে বাবার কাছে কীনা শেষমেশ প্রেমিকা নিয়ে জবাবদিহি করতে হবে।এর থেকে দস্যুটার উপর রাগ না করা ভালো ছিল বোধহয়।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩২
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

” সুশীল সিনিয়র, এতো রাতে অন্যের বাড়ীর সামনে কী?”

পরিচিত নারী কণ্ঠ শুনে থতমত খেয়ে গেলো কল্লোল।গাঢ় অন্ধকারে একবার চারিধারে চোখ বুলিয়ে দেখলো।বড় কালো রঙের গেইট দিয়ে মাথা বের করে আছে বৃষ্টি।কল্লোলের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময়ে মিষ্টি করে হেসে বলল,

“বাড়ীতে আসেন।চাচ্চু আপনাদের সকলের একুশটা বাজাবে।গাড়ী দারোয়ান ভেতরে নিয়ে আসবে।”

কল্লোল এগিয়ে গিয়ে শুধালো,

“তোশা ধরা পড়লো কীভাবে বৃষ্টি?”

“সেটা ওকে জিজ্ঞেস করুন সুশীল সিনিয়র।”

বৃষ্টির সম্বোধনে বিরক্ত হলো কল্লোল।সে আর মেয়েটি একই মেডিক্যালে পড়াশোনা করছে।সিনিয়র হয়েও কোনোপ্রকার য ন্ত্র ণা কিংবা ফরমাইশ না দেওয়ার দরুণ তাকে সুশীল সিনিয়র বলে ডাকে নতুনরা।যদিও সকলে নয় বৃষ্টি একটু বেশীই।

“কবীর আঙ্কেল রেগে আছে কেন?ও না হয় একটু আহনাফের রাগ ভাঙাতে এসেছিল।”

“দিনে কী আমাদের বাড়ীতে প্রবেশ নিষেধ নাকী?”

“তা নয়।আসলে তোশার সব আবদার পূরণ করি আমি।”

“কেন?”

প্রশ্নের বিনিময়ে মনকাড়া হাসলো কল্লোল।যা বৃষ্টির অন্তকরণের ভেতর প্রবেশ করলো একদম।উষ্ণ শ্বাস ফেলে তাকে ভেতরে নিয়ে গেলো মেয়েটা।সেখানে সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে আহনাফ ও তোশা।পাশেই কবীর সর্বোচ্চ কঠিন কণ্ঠে শুধালো,

“কল্লোল তোমার ফুফাতো বোন যদি তোমাকে বাঘের খাঁ চা য় যেতে বলে তাহলে সেটাই করবে তুমি?”

“নাহ তেমন করবো কেন?”

“তাহলে এতো রাতে কেন নিয়ে এসেছো ওকে?রাস্তায় কতো ধরণের মানুষ আছে জানো?রাত প্রায় দেড়টা বাজে।”

“দুঃখিত আঙকেল।ওর সব চাওয়া পূরণ করা হয়।”

“তবুও..।”

হুট করে কবীরের বাবা উঠে দাঁড়ালো।গম্ভীর সুরে সকলের উদ্দেশ্যে বলল,

“এখন রাত দেড়টা বাজে।কবীর সব কথা সকালে হবে।ওদের বাড়ীতে পাঠানোর দরকার নেই।তাহিয়াকে ফোন করে বলে দাও।আর শুনো কবীর।ফজরের নামাজের সময় তুমি আমার সাথে মসজিদে যাবে।”

“জি আব্বু।”

“বৃষ্টি নিজের রুমে নিয়ে যাও তোশাকে।আর কল্লোলকে গেস্ট রুমে থাকতে দাও।”

সাহেদের ইশারা বুঝে কবীরের মা আহনাফকে বুকে জাপটে ধরে নিজেরর রুমে নিয়ে গেলো।এই বাড়ীর সদস্য সংখ্যা কম।সেই কারণে জটলাও কম হয়েছিল।বৃষ্টির সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব আছে তোশার।এই কারণে মাথা নিচু করে পিছনে হাঁটতে লাগলো।কিন্তু রুমে প্রবেশ করার পূর্বে হাতে টান অনুভব হলো।

“বৃষ্টি তুমি ঘুমাও।তোশার সঙ্গে আমার কথা আছে।”

মিনমিনে সুরে তোশা বলল,

“আমি যাবো না।”

“চ ড় এখনও খাওনি দেখে মুখে মুখে তর্ক করছো।চলো আমার সাথে।”

তোশাকে লম্বা টান দিয়ে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো কবীর।বৃষ্টি দীর্ঘ একটা হাই তুলে নিজের বিছানায় চলে গেলো।

“আপনি এমন কেন কবীর শাহ?বৃষ্টি কী ভাববে বলেন তো।”

“দিশা আর বৃষ্টির সঙ্গে কতোটা ভালো সম্পর্ক সেই আইডিয়া তোমার নেই মেয়ে।তুমি যে আমার জন্য এমন করো সেটা বহু আগে থেকে বৃষ্টি জানে।তবে ও সরাসরি আমাকে এসে জিজ্ঞেস করেছিলো।”

“আপনি কী বলেছিলেন?”

“যা সত্য।যদিও তোমাকে আমার সাথে ও একটুও মানেনা।কিন্তু কার্টেসী মেইন্টেইন করছে এই যা।”

মুখটা গোলাকৃতি করে তোশা বলল,

“ও বুঝেছি।কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

“তোমাকে শাস্তি দিতে।”

দোতালা থেকে তিনতলায় উঠে একটি অন্ধকারময় ঘরে প্রবেশ করলো দুজনে।মৃদু আলো জ্বলে উঠলো কক্ষে।সুসজ্জিত ভাবে বইগুলো বিন্যস্ত দেখে তোশা বুঝতে পারলো এটা লাইব্রেরি।ভাবনার সঙ্গে তার হাতেও টান লাগলো।সে লুটিয়ে পড়লো শক্ত দৃঢ় কঠিন বুকটায়।মেয়েটির থুতনি শক্ত করে চেপে ধরে কবীর শুধালো,

“এতো ভুল করছো কয়টার জন্য শাস্তি দিবো বলো?দেখো কালকে বাবা আমাকে কী কী বলে।আমি চাচ্ছি সাধারণভাবে দুজনের সম্পর্ক গড়ে উঠুক।কিন্তু তুমি সেটা চাওনা।কেন?”

“কে বলল চাইনা?এই কারণে তো রাগ কমানোর জন্য এসেছি।আপনিও তো অপ্সরাদের বাসায় গিয়েছিলেন।”

“ধরা পড়েছিলাম এভাবে?তোমরা যে রাস্তা দিয়ে ড্রাইভ করে এলে সেটা রাতে কতোটা ডেঞ্জারেস হয় জানো?”

“জানি তো।ব্যাথা পাচ্ছি।”

“কেন এতোগুলো যন্ত্র ণা দাও আমাকে?বুঝো না কেন?”

কবীর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তোশাকে।অতি নরম এই মেয়েটা তার সব ধরণের চাহিদার সীমা শেষ করে দিচ্ছে।নিশ্চুপে আস্তে করে তোশা বলল,

“কথা না বললে খুব খারাপ লাগে।অভিনয় করবো না তো।রাগ করবেন না আর।”

“সেটা সম্ভব না।কারণ যে কন্ট্রাকে গিয়েছো।ওটা বাদ যাবেনা।”

“আপনার না খুব ক্ষমতা।তাহলে?”

“চেষ্টা তো করলাম।দেখি আরো কয়েকদিন।এজন্য কিছুটা শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম তোমাকে।অথচ কী একটা কাজ করলে।আব্বু ক্লাস নিবে আমার।”

“ভালো হবে।”

“যখন তোমার কথা জিজ্ঞেস করবে তখন কী বলবো?আহনাফের রাগ ভাঙাতে আসবে সেটা মটেও বিশ্বাসযোগ্য না।”

“কবীর শাহ ভয় পাচ্ছে।”

ঈষৎ আলোয় কন্যাটির মুখ দেখে মৃদু হাসলো কবীর।লম্বা আঙুলগুলো আলতো করে গালে বুলিয়ে দিলো।হালকা উষ্ণ পরিবেশও কেঁপে উঠলো তোশা।মেদুর গালে রক্তিম আভা লেপ্টে আস্তে করে শুধালো,

“এখন আমি ট্রু লাভ’স কিসটা পেতে চলেছি তাইনা?”

“মটেও না।যতোপ্রকার দস্যু তস্করের মতোন চিন্তাভাবনা।এখনও খুব ছোট আপনি।ওয়েট।তুমি না পনের মিনিট আগেও কতো কাঁদছিলে।”

“ভয় পেয়েছিলাম।বৃষ্টি কী ভাববে বলুন তো।”

“সমস্যা কী তোমার?কখনো তো লজ্জা পাওনা।আজ এমন করছো কেন?”

তোশা খুব সন্তপর্ণে কবীরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।সে কীভাবে বলবে যে মানুষটার স্পর্শ তাকে মাদক-প্রভাবিত করে দিচ্ছে।চাওয়া পাওয়া প্রজাপতি হয়ে উড়ে যাচ্ছে।কানের পিঠে চুলগুলো গুঁজে নিয়ে বলল,

“আপনার রুমটা দেখার অনেক ইচ্ছা।সেখানে নিয়ে যাবেন আমাকে?”

“কেউ দেখলে বিষয়টা খারাপ হবে।আমি কথা বলতাম না খারাপ লাগতো তাইনা?”

হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো তোশা।

“খুব খারাপ লাগতো।”

“আর কখনো এমন যোগাযোগ বন্ধ করবো না।ভুলে গিয়েছিলাম আমি তুমি তোশা।যাও এখন রুমে যাও।কাল সকালে কথা হবে।”

কবীর চলে যেতে নিলে তোশা তার টি-শার্টের কোণা ধরে আঁটকে ফেলে বলল,

“যেতে মন চাচ্ছে না।আরেকটু থাকি আপনার সাথে?”

নি:সংকোচ, ভয় বিহীন আবদার।তবে কবীরের মস্তিস্ক সায় দিচ্ছে না।সে যৌবন পুড়ে যাওয়া পুরুষ।তোশার সঙ্গে অন্যরকম অনুভব হয়।

“প্লিজ থাকি না কবীর শাহ।আমরা গল্প করবো।”

“ঠিক আছে।কিন্তু শুধু বিশ মিনিট।”

(***)

ক্ষণবাদে বৃষ্টির রুম পর্যন্ত কবীর তোশাকে এগিয়ে দিয়ে গেলো।সে ফিরে যেতেই রুমের দরজায় আস্তে করে টোকা পড়লেো।তোশা জেগে ছিল দেখে দরজাটি খুলে দিলো।ওপাশে কবীরের বাবা সাহেদ দাঁড়িয়ে আছে।নিজেকে গুছিয়ে তোশা বলল,

“কিছু বলবেন আঙকেল?”

“বের হয়ে এসো।কথা আছে।”

“কী কথা?”

চঞ্চল তোশা তৎক্ষনাৎ বের হয়ে এলো।একটু দূরে সাহেদ গিয়ে থামলো।মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,

“আমার ছেলেকে ভালোবাসো তুমি?ওর সাথে কেমন সম্পর্ক?বিয়ে হয়েছে দুজনের?”

ভয় পেয়ে গেলো তোশা।মৃদু মৃদু ঘাম জমেছে কপালে।কিন্তু সাহস করে জবাব দিলো,

“ভালোবাসা আছে দুজনের।বিয়ে এখনও হয়নি।”

“বেশ।তবে তুমি একটা কারণ দেখাও আমার ছেলের যোগ্য কীনা তুমি।ভেবো না টিপিক্যাল বাবার মতোন কথা বলছি।শুধু আমি জানতে চাই কোন সাহসে আমার একমাত্র নাতি ও ছোট ছেলেকে তোমার হাতে তুলে দিবো?তুমি নিজেই তো মায়ের হাতে ভাত খাও।বাস্তবতা বির্বজিত কিংবা সবসময় ফ্যান্টাসী জগতে ভুগতে থাকা একজন মেয়ে কী আদৌ কবীর শাহ এর মতোন মানুষের যোগ্য?ভালোবাসার কথা বলবেনা।এছাড়া যুক্তি দিয়ে বলো।তোমার সময় দুই মিনিট।”

তোশা নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে সাহেদকে দেখছে।সে খুব করে বলতে চাচ্ছে আমার পড়াশোনা ভালো,বাবা-মায়ের ভালো পরিচয় আছে।কিন্তু এসব কথা মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।আদৌ কী এই গুণগুলো কবীর শাহকে পাওয়ার মতোন যোগ্যতা রাখে অথবা আহনাফের মা হওয়ার?

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-২৭+২৮+২৯

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২৭
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“জেনেশুনে অবুঝের মতোন ব্যবহার করা মেয়েকে আমার কোনোকিছু বোঝানো বাকী নেই।চলো বাসায় ছেড়ে দিয়ে আসবো।এরপর যেখানে খুশি সেখানে যাও।”

তোশার সামনে থেকে উঠে দাঁড়ালো কবীর।রাগে গা কাঁপছে তার।মেয়েটিকে যতো বুঝানো হচ্ছে ততো যেন মাথায় চড়ে বসেছে।

“আমার সঙ্গে এতো রুড বিহেভ কেন করছেন?এটাই কী আমার প্রাপ্য?”

“হ্যাঁ।”

মৃদু হাসলো তোশা।গা সোফায় এলিয়ে দিয়ে বলল,

“আমার কতো কিছু প্রাপ্য তাইনা?শুধু দোষটা কোথায়?নিজের বাবা-মায়ের বন্ধুকে ভালোবেসেছি।আমাকে দেখে মনে হয় সবথেকে আদর, ভালোবাসা পাওয়া মেয়েটা।কিন্তু সত্যি কী তাই কবীর শাহ?আপনি না আব্বুর বন্ধু।বলেন তো বাবা আমাকে ঠিকঠাক ভালোবাসে কীনা?”

“ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলে কাজ হবেনা তোশামণি।তুমি যথেষ্ট আদরে বড় হয়েছো।”

“না ভুল।একসময় আদরে ছিলাম।কিন্ত আব্বু ও আম্মুর ডিভোর্সের পর থেকে নেই।নানীর বাড়ীতে সব তো উপরে উপরে।যদি জীবন নিয়ে বেশী বুঝদার হয়ে পড়তাম তাহলে মানুষ আরো দায়িত্ব চাপিয়ে দিতো আমার উপর।আমার কেউ নেই শুধু মা ছাড়া।তার জন্যই তো সেদিন রাতের পর আপনার সাথে সেরকম ব্যবহার করেছি।নেশার ঘোরে আপনি বললেন মা কষ্ট পাবে।আমি মেনে নিলাম।এক সময় ধরে নিলাম আপনার প্রতি কিশোরী বয়সের আবেগ।দুজনের দেখা বন্ধ হওয়ার পর থেকে কান্না করতাম,খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলাম।এরমধ্যে আপনার প্রাক্তন স্ত্রী দিশা ম্যামের অ ত্যা চা র গুলো।”

শেষের কথাটি শুনে চমকে উঠলো কবীর।দিশার নাম তো সে কখনো নিয়েছিল না।তবে তোশা কীভাবে চিনে?

“তুমি কবে থেকে জানলে যে দিশা আমার এক্স ওয়াইফ।”

“আপনার সঙ্গে কথা বন্ধ হওয়ার এক মাস পরে জেনেছিলাম।ম্যাম নিজে বলেছিল।একদিন টিফিন পিরিয়ডে আমাকে ডেকে আহনাফের থেকে দূরে থাকতে বলে।আমি আসলে বুঝতে পারিনি কেন।কারণ ওই বাচ্চাটার সঙ্গে আমি জুড়ে গিয়েছিলাম।আইসক্রিম ডাকটা খুব ভালো লাগতো।ম্যাম দূরে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করার পর সে তখন বলেন আপনি তার স্বামী ছিলেন।খুব খুব মন্দ লেগেছিল।ম্যামের ক্লাস করতে পারতাম না।আপনার কথা মনে হতো।টিনেজার ছিলাম।আবেগ বেশী ছিল।আপনার থেকে দূরে থাকাটা সম্ভব হচ্ছিলো না বিধায় ম্যামকে গিয়ে সরাসরি সব বলে দেই।যেন সে আপনাকে বোঝায়।কতোটা বোকামি ছিল।ম্যাম ধীরে ধীরে সব শুনলো।এরপর শুরু হলো আসল কষ্ট দেওয়া।পড়াশোনা নিয়ে য ন্ত্র ণা বাদ দিলাম।আসল আঘাত করতো আপনাকে নিয়ে।সুন্দর সুন্দর শাড়ী পরে আসতো।যেগুলো আপনি উপহার দিয়েছিলেন।সেসব আমাকে দেখাতো।বিশ্বাস করুন শাড়ী গুলোতেও ম্যামকে কেন যেন খুব সুন্দর লাগতো।মনে মনে কতোবার যে ওই সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার দোয়া করেছি।আপনাদের ভালো ভালো মোমেন্টস সব শেয়ার করতো।আমি মূর্তির মতোন শুধু দাঁড়িয়ে থাকতাম।দিন যেতে লাগলো পড়াশোনা খারাপ হতে লাগলো।স্বাস্থ্য ভা ঙ তে লাগলো।ম্যাম আমাকে পুরোপুরি ভেঙেছিল কবে জানেন?যেদিন…।”

তোশা থামলো।কবীর ভ্রু কুঁচকে তাঁকিয়ে আছে।যেন বাকীটা শোনার তীব্র বাসনা জন্মেছে মনে।

“যেদিন কী তোশা?”

“একটা জিনিস বলেন তো।দিশা ম্যামের গলার একটু নিচে বহু পুরোনো কা ম ড়ে র দাগ আছে তাইনা?যেটা আপনি দিয়েছিলেন।বহুদিন বাজে ক্ষ ত টা থেকে গিয়েছিল।”

কবীরের শরীর বেয়ে উষ্ণ স্রোত বয়ে গেলো।তোশার বলা কথাটি সত্য।হোক না তারা প্রাক্তন তবুও এটা তাদের গোপন বিষয়।যেটা তোশার জানার কথা নয়।কবীর গম্ভীর সুরে বলল,

“তুমি কীভাবে জানলে?”

“ম্যাম নিজে দেখিয়েছিল।আপনি ভালোবাসার সময় কতোটা উ ন্মা দ হতেন।কতো নামে ডাকতেন।কীভাবে আগলে নিতেন।সব ব্যাখা করে ম্যাম শেষে বলেছিল আপনি এখনও তাকেই ভালোবাসেন।এবং বিচ্ছেদ শুধু লোক দেখানো।এবং এমন করে কাউকে ভালোবাসবেন না।এমনকি দুই একটা ছবিও দেখেছি।সেদিন বাসায় ফিরে অনেকসময় ব্লে ড নিয়ে বসেছিলাম।নিজেকে শেষ করে দিতে মন চাইতো।কতো যোগাযোগ করতে চেয়েছি।মায়ের জন্য করিনি।আপনারা বলেন আবেগ।তখন আমি বুঝেছিলাম এসব চাওয়া পাওয়া কখনো মিটবার নয়।ম্যাম এতোগুলো ট র্চা র করেছিল কেন জানেন?শুধু একবার জবাবে বলেছিলাম আপনিও আমাকে ভালোবাসেন।কী হলো কিছু বলছেন না কেন?”

কথাগুলো বিপরীতে ঠিক কী প্রতিক্রিয়া দেওয়া উচিত কবীর ভুলে গেলো।লজ্জায় তামাটে মুখটি আরক্ত হয়ে উঠলো।

“তোশামণি…।”

“আমার সব কথা আগে শুনুন কবীর শাহ।জানেন নিজের কষ্ট লাঘব করতাম কীভাবে?আহনাফকে বলে দিতাম তোমার বাবাকে জড়িয়ে ধরে এরপর কোথাও স্পর্শ না করে আমার কাছে আসবে।বাচ্চাটা তাই করতো।আমিও আবেগে ওকে জড়িয়ে ধরে রাখতাম।আপনার উষ্ণতা অনুভব হতো।সঙ্গে বাচ্চাটির পবিত্রতায় মন শান্ত হতো।এমন না ম্যামের সঙ্গে আপনার যা ছিল তা পাপ।কিন্তু আমাকে সেসব বলে ছোট মনটাকে কেন বি ষি য়ে তুলতো?নিজের মানসিক অবস্থা রিকোভার করতে অনেক সময় লেগেছে আমার।তবুও তো আপনাকে ভুলিনি।বলেন আম্মু মানবেনা।কিন্তু একমাত্র যে মানুষটা আমাকে ভালোবাসে সে কী চাইবে আজীবন আমি কষ্ট পাই?চাইবে কীনা বলেন?কিংবা আপনি কবীর শাহ।যে আমাকে মায়া তো করেন কিন্তু স্বীকার করেন না।নি র্দ য় ব্যক্তি।”

“আমি নি র্দ য় নই তোশামণি। শুধু বাস্তবতা দেখছি।ভালোবাসা সব নয়।তুমি কষ্ট পাবে দেখে একমাসের সেই গেমটা আমি চালিয়ে যাইনি।দূরে থাকি।তাও যদি এসব ফেইস করো আমি কী করবো বলো?বড্ড হেল্পলেস লাগছে।”

তোশা এতো এতো কথা বলতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে।তার কান্নার বেগ বেড়ে যাচ্ছে।সোফায় হাঁটু ভাজ করে বসে কান্না করতে লাগলো।কবীর মটেও স্বান্ত্বনা দিলো না।এক অদৃশ্য আত্নগ্লানি তার অন্ত:করণকে পু ড়ি য়ে দিচ্ছে।ক্ষণবাদে খেয়াল করলো তোশা তার দিকে এগিয়ে আসছে।সিক্ত নাকটা টাই দিয়ে মুছে শক্ত দৃঢ় বুকে মাথা ঠেকালো।

“বেলাডোনা,তোমার নিজের ওড়না ছিল তো।কিংবা আমার কাছে রুমাল আছে লাগবে?”

কান্নারত কণ্ঠে তোশা জবাব দেয়,

“টাই দিয়ে মুছে নিয়েছি তো কী হয়েছে?এমন করেন কেন?দুঃখে স্বান্ত্বনা দিয়ে তো আলিঙ্গনও করতে পারতেন।অবশ্য পা ষা ণ মানুষের কাছে এর থেকে বেশী আশা করা যায় নাকী বলেন?”

“আসলেও যায়না।কী বলো তো?আমার মুখে জন্মের পর মা লোহা দিয়েছিল।সেই সুবাধে এতো পা ষা ণ।”

“বুঝি তো।আমার মন বদলানোর জন্য বলছেন।তাও একবার মুখ থেকে বের হবেনা পছন্দ করার কথা।শ য় তা ন।”

“হুম বুঝেছি।খুদা লেগেছে না?কী খাবে বলো তো।পিজ্জা অর্ডার করি?নাকী ভারী মিল নিবো?”

“পিজ্জা।তবে আমাকে কিছু সময় কাঁদতে দেন।বিরক্ত করবেন না।”

“আবার কাঁদতে হবে কেন?দিশা যা যা বলতো সেসব ভুলে যাও।স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে রঙের অভাব থাকেনা।কেঁদো না লিটল চেরী।আমার কষ্ট হচ্ছে।”

তোশা কিন্তু নিষেধটি শুনলো না।বরং কান্না করতে থাকলো।এই অবস্থাতে ফোন বের করে ফুড পান্ডায় খাবার অর্ডার করলো কবীর।অশ্রুর বৃষ্টির বন্ধ হলো খাবার ডেলিভারিতে আসার পর।তোশা ততোক্ষণে স্বাভাবিক।

“যাও হাত মুখ ধুয়ে এসো তোশামণি।গাড়ীতে কতো ধূলা লেগেছে।বোতলটা নিয়ে যাও।এমনিতে ট্যাপে পানি আসতে একটু সময় লাগবে।”

“টিস্যু দিয়ে মুছে নিলেই হবে।”

“না যাও হাত মুখ ধুয়ে এসো।”

মুখ ভেংচি কেঁটে তোশা নরম কণ্ঠে বলল,

“সব সময় আমাকে বাচ্চার মতো ট্রিট করেন।”

“কারণ তুমি বাচ্চা।”

যতো কথা বলুক না কেন কবীর দিশার এসব কান্ড ভুলতে পারছেনা।বারংবার লজ্জায়, খারাপ লাগায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।সঙ্গে তোশার কষ্টও অনুভব হচ্ছে।মেয়েটা কতোটা কষ্ট পেয়েছো ছোট বয়সে।কোনেভাবে নিজেকে শান্ত রেখেছে কবীর।দূরে গিয়েও তোশার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সে হোক সেটা মানসিক।সারামুখে বিন্দু বিন্দু পানি নিয়ে ফিরে এলো তোশা।মেয়েটিকে স্নিগ্ধ লাগছে।কবীরের হঠাৎ কী হলো।এগিয়ে গিয়ে তোশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

“আমার জন্য যতোটা কষ্ট পেয়েছো সবকিছুর জন্য সরি বেলাডোনা।না হোক সম্পর্ক।কিন্তু আর কখনো তোমার অনুভূতিকে অসম্মান করবো না।”

নাক টেনে যুবতী কন্যাটি বলল,

“হেইট ইউ কবীর শাহ।আপনিও একবার বলেন হেইট ইউ।বলেন না..।”

কবীর হাসলো।কিন্তু বড্ড নিস্তেজ কণ্ঠে জবাব দিলো,

“হেইট ইউ টু সুন্দর মেয়ে।”

চলবে

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২৮
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“ড্রাকুলা তোশা।”

বক্ষঃস্থলের নিবারণ ত্বকের উপর ছোট ছোট দাঁতের চিহ্ন দেখে ঈষৎ হাসলো কবীর।মেয়েটির জন্য ড্রাকুলা উপাধি যেন একদম মিলে যায়।এখনও ক্ষ ত টা জীবন্ত রয়েছে।সকালের পর তাতে ঔষধ লাগানোর সময় হয়ে উঠেনি।ড্রয়ার বের করে তাতে মলম লাগাচ্ছে এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো।হাত বাড়িয়ে রিসিভ করে সেটি কানে রাখলো কবীর,

“হ্যাঁ বল পারভেজ।”

“ভাই তোশার কথাগুলো সত্য।দিশা নিজে স্বীকার করলো আমার কাছে।”

মুহুর্তেই তামাটে মুখটি আরক্ত হয়ে উঠলো।কবীর এমনিতে শান্ত ধীর মেজাজের মানুষ।তবে কোনোকিছু নিয়ে বিরক্ত হলে রাগের শেষ থাকেনা।

“দিশার কী মাথা খারাপ?ও বুঝতে পারছে ঠিক কী করেছে?সব বাদ বাচ্চা মেয়েটিকে আমার ইন্টিমেন্ট সময়ের বিহেভিয়ার গুলো বর্ণনা করেছে।দিশা না শিক্ষিত একজন মানুষ?তবে কেন এসব করলো?এতো যদি মায়া বা স্মৃতিচারণ করার ছিল তাহলে ডিভোর্স কেন দিলো?বিচ্ছেদের কথা তো আমার থেকে নয় বরং ওর থেকে আগে উঠে এসেছিল।”

পারভেজ উষ্ণ শ্বাস ফেলে বলল,

“মানুষ বড় বিচিত্র মস্তিস্কের হয়।কোন সময় কোন বিহেভিয়ার করে ফেলে বলা যায়না।আমাকে যতোটা বলল সেটা হচ্ছে আহনাফের সাথে তোশার বেশ ভালো সম্পর্ক।ঠিক সেটা মেনে নিতে পারেনি ও।এজন্য কীনা…।”

“এজন্য কী?কোনোভাবে জঘন্য কাজটা তুই জাস্টিফাই করতে পারিস না।হতে পারে দিশা তোর সবথেকে প্রিয় বন্ধু।কিংবা আমার প্রাক্তন স্ত্রী।তবে ওর কিছু কিছু কাজ মনুষ্যত্বের বাহিরে চলে যায়।ভেবেছিস কতোটা ট্রমাতে গিয়েছে তোশা।”

“দিশা নিজের ক্যারিয়ার ভুলে শুধুমাত্র আহনাফের জন্য স্কুলটায় আছে।যদি দেখে ছেলেটা তার থেকে তোশাকে বেশী ভালোবাসে, দেখা হলে কথা বলেনা তবে কোন মা মানতে পারবে বল?ক্ষমা করে দে।”

কবীরের মুখমণ্ডলের মাংস পেশী দৃঢ় হতে দেখা গেলো।পারভেজ ও দিশা বন্ধু কম ভাই বোনের মতোন বেশী।এই কারণে একজনকে কিছু বললে অপর জন জেনে যায়।কবীর নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,

“আমার ছেলে বা তোশার কারো জীবনে যেন দিশাকে আবার না দেখি।মনে রাখতে বলবি।”

“ওকে বলবো।কিন্তু একটা কথা বল।তোশার সঙ্গে আবার যোগাযোগ শুরু হয়েছে তোর?দেখ আমি অন্য কারো নয় শুধু তোর কথা ভাবছি।মেয়েটা ছোট্ট।এখন মনে হবে তুই সব।কিন্তু একসময় তোর উপর বিতৃষ্ণাতে সরে যাবে।জীবনের যতোটা দিন আছে এরপর তো তুই কষ্ট পাবি।”

“না যোগাযোগ নেই।আজ দেখা হয়েছিল।তাই আক্ষেপ করে কথাগুলো বলল।”

“যোগাযোগ না রাখা ভালো।আমি দিশাকে বলে দিবো।ও কখনো এমনটা করবেনা।তুই শুধু তোশার সঙ্গে কোনোরকম আলাপ করিস না।”

“খেয়াল রাখবো।”

পারভেজ ফোনটা রেখে দেওয়ার পর ভাবুক হয়ে উঠলো কবীরের মন।সে মুখের উপর মিথ্যেটা বলেছে কারণ তোশার কথাটি অতীতে পারভেজকে জানানোর কয়েক মুহুর্ত পরে দিশা জেনে গিয়েছিল।ফলস্বরুপ বিষয়টা আরো কাঁদায় মাখামাখি হয়েছে।কবীর এটা বিশ্বাস করে কিছু সত্য কারো ভালোর জন্য গোপন রাখা ভালো।

“বাবা,মা আবার কী করেছে?”

ভাবনা থেকে বের হয়ে সামনে তাঁকালো কবীর।আহনাফ রাতের পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছে।স্বভাবসুলভ সে বাবার সাথে ঘুমাবে।ছেলেটা মায়ের মতোন গায়ের রঙটা পেলেও মুখাবয়ব সবটা বাবার মতোন পেয়েছে।কবীর শাহ এর শুভ্র রুপ হচ্ছে আহনাফ।

“কিছু করেনি আহনাফ।তুমি এখানে ঘুমাবে আজ?”

“হ্যাঁ বাবা।আমার কাছ থেকে হাইড করার কোনো কারণ নেই।এখন আমি বড় হয়ে গিয়েছি।”

কবীর হেসে ফেললো।এক তোশা যে সবসময় ছোট থাকতে চায় আরেক আহনাফ যে সবসময় বড় হতে চায়।বিপরীত মেরুর দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব হলো কীভাবে?

“তোমার আইসক্রিমকে দিশা কষ্ট দিয়েছে একটু।তাই রাগ হয়েছিল।”

“আইসক্রিম নিশ্চয় কেঁদেছে?মেয়েটা খুব কাঁদে।”

“আমি আইসক্রিমের ব্যাপারে কীভাবে জানি সেটা জিজ্ঞেস করবেনা?”

আহনাফ বিছানাতে একপাশে শুয়ে পড়তে পড়তে বলল,

“তোমাকে ভালোবাসে আইসক্রিম।তবে তুমি চিনবেনা এমনটা তো হওয়ার নয়।”

কবীরের অক্ষিগোলকের আকৃতি বড় হতে দেখা গেলো।একটা টি-শার্ট গায়ে দিয়ে বিছানার পাশে এসে বসলো।

“তুমি মাত্র বারো বছর বয়সে ভালোবাসার অর্থ জানো আহনাফ?এসব শিখেছো কার থেকে?”

“দাদা শিখিয়েছে।”

মৃদু হাসলো কবীর।তার বৃদ্ধ বাবা এক বয়সে তাকেও এসব শিক্ষা দিয়েছিল।ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো কবীর।বাচ্চাটাও যেন মোমের মতোন গলে গেলো।বাবার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল,

“আমি তোমাকে ভালোবাসি বাবা।তুমি কখনো আমাকে ভুল বুঝো না।”

“আহনাফ শাহ একজন ভালো ছেলে।আমি জানি তুমি এমন কোনো কাজ করবেনা যা অন্য মানুষের চোখে ভালো নয়।কিন্তু ভালোবাসা নিয়েও ভাববেনা।বয়স অল্প।জীবনে এসবের জন্য বিস্তর সময় আছে।মনে রাখবে আহনাফ সময়ের আগে ফল পরিপক্ব হয়না।হলে সেটার মিষ্টতা থাকেনা।তোমার আইসক্রিমকে দেখো মিঠা রোদে পরিপক্ব ফল।যত্ন নিতে হয় বেশী।”

আহনাফের পিঠটা মৃদু আন্দোলিত হলো।হাসির ঈষৎ আওয়াজে কবীর ভ্রু কুঁচকে রইলো।ছেলেটির কিছু স্বভাব যে তোশার সঙ্গে মিলে আজ অনুধাবন করতে পারলো সে।

“তুমি হাসছো কেন আহনাফ?”

“আইসক্রিম জানো তোমাকে কী বলে?”

“কী?”

“শুনো আমি হলাম মালাই,সে আইসক্রিম আর তুমি সবার উপরে থাকা চকলেট সিরাপ।”

“এটা তোশামণির বলা কথা?আশ্চর্য।আমি কীনা চকলেট সিরাপ?”

হুট করে আহনাফ আবদারের সুরে বলল,

“আইসক্রিম আমি রবিবারে ঘুরতে যাবো।তুমি সাথে যাবে আব্বু।”

“তোমার মেয়েটাকে কেন খুব ভালোলাগে?”

ধণাত্বক মাথা দুলালো আহনাফ।শোয়া থেকে উঠে এসে বাবার গলা জড়িয়ে বলল,

“জানিনা কিন্তু ওর সাথে সময় কাঁটাতে ভালোলাগে।”

কবীর ফিসফিস করে বলল,

“আমারও।”

(***)

“এই তোশামণি।এই তোশামণি উঠ।দেখ ভূ মি ক ম্প ছাদে এসেছে।”

ঘুম জড়ানো কণ্ঠে তোশা জবাব দিলো,

“ঘুমাতে দে অপ্সরা।ভূ মি ক ম্প ছাদে আসার সম্ভবনা নেই।”

“আরে স্বপ্নে বহু কিছু হয়।উঠ তো তুই।”

নিভু নিভু দৃষ্টিতে চোখ মেলে তাঁকালো তোশা। বাহির থেকে ল্যাম্প পোস্টের হলদেটে আলো আসছে।

“আমি স্বপ্ন দেখছি অপ্সরা?”

“হ্যাঁ তো।চল তোর ভূ মি ক ম্প দেখতে হবেনা?”

“হু।”

“উঠ রে তোশামণি।”

ঘুমের ঘোরেও তোশার বড্ড কৌতুহল হলো।ছাদে কীভাবে ভূ মি ক ম্প আসবে?কাঁপতে কাঁপতে অপ্সরার পিছনে হাঁটছে।আচ্ছা স্বপ্নও কী এতো বাস্তব হয়?

অপ্সরার বলা ভূ মি ক ম্পটি লম্বা চওড়ায় বিশাল।রাতের অন্ধকারেও তামাটে রঙটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।তোশা স্বপ্নের ভ য়া ব হতা বুঝতে পেরে শিউরে উঠলো।হাতা কাঁটা টি-শার্টটিতে পুরুষটির বাহু দুটোকে উঁচু ঢিবি মনে হচ্ছে।তোশার ঘোর হলো।সে এগিয়ে গিয়ে ছাদের একপাশে দেয়ালে পিঠ ঠেকালো।চোখ বন্ধ করে পুনরায় তন্দ্রায় ডুবে গেলো।যেন স্বপ্নটি পুরোটা না দেখলেও চলবে তার।বিভ্রান্ত কবীর শাহ কিন্তু পিছু হটলো না।সরল পায়ে এগিয়ে এসে ঘুমন্ত যুবতীকে সোজা করে দাঁড়া করালো।মেয়েটা রোদে থাকা টলমলে লতার ন্যায় হয়ে উঠেছে।তাকে পিছন দিকে থেকে আলিঙ্গন করলো কবীর।ক্ষণে ক্ষণে সময় অতিবাহিত হওয়ার পর যুবতীর উদ্দেশ্যে শুধালো,

“তোমার কাছে ভালোবাসার অর্থ কী তোশামণি?”

তন্দ্রাচ্ছন্ন তোশা জবাব দিলো,

“কবীর শাহ।অন্য ভালোবাসায় আম্মু,আব্বু ও মালাই আছে।”

ভালো লাগায় মনটা ভরে গেলো কবীরের।পরক্ষণে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে তোশা শুধালো,

“আপনার কাছে ভালোবাসার অর্থ কী কবীর শাহ?”

জবাবে সে বলল,

“ভালোবাসার অর্থটা জানা নেই।কিন্তু নামটা আমার কাছে এক।যা সময়ে সময়ে বিভিন্ন রঙে এসে ধরা দেয়।কখনো ছোটখাটো ছিমছাম কিশোরী রুপে তো কখনো খোলাচুলে লাবণ্যময়ী যুবতী রুপে।তবে সে একজনই তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।”

অধর যুগল প্রসারিত হয়ে গেলো তোশার।আস্তে করে চোখ খুললো।এতোক্ষণে তার মস্তিস্ক সচল হতে শুরু করেছে।পুরোপুরি জাগ্রত হয়ে উষ্ণ শ্বাস ফেললো সে।কী এক য ন্ত্র ণা হচ্ছে তার।অভিমানী হয়ে বলল,

“কেন এসেছেন আমার কাছে এসব কথা নিয়ে?আপনি তো স্বপ্ন নয়।হুট করে মন কেন পরিবর্তন হলো?”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২৯
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমি সত্য বলেছি শুধু।পরিবর্তন এক্ষেত্রে কী জানা নেই।”

“সন্ধ্যায় ছেড়ে যাওয়ার সময় সামান্যতম বিদায়টুকু দেননি।আমি বুঝেছি তো প্রাণপ্রিয় দিশা ম্যামের দোষ গোপন করতে মায়া দেখাচ্ছেন।”

অভিমান বৃষ্টি হয়ে পড়ছে তোশার কণ্ঠে।অথচ খুব প্রিয় একটা জিনিস সে পেয়ে গিয়েছে।কিন্তু কেমন ব্যবহার করলে সে যে সর্বোচ্চ খুশি সেটা প্রকাশ পাবে তা অনুধাবন হচ্ছে না।বিভ্রান্ত ছোট্ট মুখটি আজলায় তুলে নিলো কবীর,

“নির্বোধ তোশা।মেয়েরা তো সবথেকে বেশী বুঝতে পারে ছেলেদের ব্যবহার।তবে তুমি কেন বুঝতে পারো নি কবীর শাহ তোমাকে পছন্দ করে?”

“মাঝের চারটে বছর আমি একবারও আপনাকে দেখিনি।সত্যি বলছি।কিন্তু গত কয়েকদিন পূর্বে যখন আবার দেখা হলো তখন মনে হয়েছিল চোখ দুটো ভিন্ন কিছু বলে।”

গাঢ় গম্ভীর কণ্ঠে কবীর শুধালো,

“কী বলে আমার চোখ দুটো?”

“যেদিন দয়া দেখিয়ে এই ভালোবাসার কথা না বলবেন সেদিন বলবো।”

“মানে?আমি পছন্দের কথা দয়া দেখিয়ে বলছি?”

“অবশ্যই।বোকাসোকা হতে পারি।কিন্তু মাঝেমধ্যে বুদ্ধি খুলে যায় বুঝলেন।”

ভ্রু দুটো কুঁচকে এলো কবীরের।মেয়ে মানুষের স্বভাব বিচিত্র।কিছু পাওয়ার জন্য ভীষণ বায়না করবে যখন জেদটা পূরণ হবে তখন এভাবে নয় ওভাবে হলে ভালো হতো মনে হবে তাদের।উষ্ণ একটি শ্বাস বের হয়ে এলো কবীরের ভেতর থেকে।সব মেয়ে নাকী তোশা এমন কে জানে?পাশে তাঁকালো কবীর।তোশা আনমনে নিকষ কালো মেঘকে দেখছে।খোঁপা করা চুলগুলো যেকোনো সময় মুক্ত হয়ে উঠবে।

“জানেন আমাদের কথা কে কে জানে কবীর শাহ?”

“কে কে?”

“বড় দাদা-দাদী,আসিফ আঙকেল, সিয়া ম্যাম।আমার তিন বন্ধু।”

মৃদু চিৎকার করে উঠলো কবীর।ভীষণ উত্তেজিত হয়ে উঠলো সে।

“আসিফ ভাইয়া?মায়ানের চাচা-চাচী জানে?শিট তারা কী ভাববে আমাদের?তাহিয়াকে তো বলে দিবে।কবে থেকে জানে?”

“শান্ত হোন কবীর শাহ।দাদা-দাদী জানে সেই শুরু থেকে।আসিফ আঙকেল জেনেছে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর।আশ্চর্যভাবে তারা সকলে আমাকেই সাপোর্ট করেছে।কিন্তু দেখুন সব কয়টা মানুষ শিক্ষিত, বয়সের ভারে জর্জরিত।শুধু আপনি এক পছন্দ তো করেন কিন্তু সমাজের তোয়াক্কা করেন।”

“কারণ এসব মানুষকে নিয়ে সমাজ নয়।তারা সকলে আবেগে ডুবে আছে।যাই হোক চলে যেতে হবে আমার এখন।তবে তুমি কেন আমাকে দেখে আশ্চর্য হলে না?”

“যেমনটা আহনাফের সঙ্গে আমার পরিচয়ে আপনি চমকে উঠেননি ঠিক তেমন।অপ্সরা সাহায্য করেছে।”

“ছোট শাহ এর যে একজন আইসক্রিম আছে সেটা জানা ছিল আমার।তাছাড়া একদিন ওর সাথে ভিডিও কলে কথা বলার সময় আমি তোমার হাসি শুনেছিলাম।তখন থেকে সন্দেহ ছিল।অপ্সরা সাহায্য করেছে সেটা ঠিক।আমার মনে হচ্ছিলো হঠাৎ তোমাকে মনের সবগুলো কথা না বললে চলছেনা।”

“ইশ,তাই এভাবে চলে আসবেন?অপ্সরা বাহু দুটো দেখে কী বলবে?হায়া নেই।”

“হায়া শব্দটি তাহিয়ার কমন ভাষা।যাই হোক আর কাওকে কখনো কিছু বলবেনা।মনে থাকবে?”

হাই তুলে তোশা জবাব দিলো,

“একদিন পুরো দেশকে জানাবো আমি যে এই সেই কবীর শাহ যার সাথে আমার প্রণয়।অপেক্ষা করেন সেদিনের।এখন যান ঘুমাবো আমি।কাল বাসায় চলে যাবো।”

কবীর হাত বাড়িয়ে তোশার মসৃণ চুলগুলো এলেমেলো করে দিয়ে বলল,

“দয়া বলো যাই বলো।পছন্দের কথা স্বীকার করেছি আমি।কিন্তু ভেবেছিলাম তুমি খুব খুশী হবে।আচ্ছা চলে যাচ্ছি আমি।”

“শুনেন শুনেন।”

“হুম বলো।”

কবীরের হতাশমূলক বাক্য শুনে নিজেকে আড়ালে বকলো তোশা।পুরুষটির সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

“মন খারাপ করবেন না।আমি বিশ্বাস করেছি পছন্দ করেন।কিন্তু ভুল দিনে বলে ফেলেছেন যেদিন আমার মন মানছেনা।সঠিক সময় আসুক।আচ্ছা আমাদের সুন্দর একটি সম্পর্ক হবে তো?”

চট করে প্রশ্নটির উত্তর দিতে পারলো না কবীর।বরং গভীর ভাবনায় ডুবে গেলো।স্বীকারোক্তিতে যে একটা সম্পর্কে বাঁধা পড়বে সেই কথাটি তো ছিল মনে।কিন্তু আদৌ কী কঠোর কিছু হবে?

“আমি তোমার আছি তোশামণি। বাকীটা পরবর্তীতে তোমার মনের অনুযায়ী হবে।”

কথাটির গভীরতা হয়তো বুঝে উঠতে পারলো না তোশা।কিন্তু এটা বুঝতে পারলো সবকিছু তার উপর নির্ভর করে।একটি ভালোলাগা,একটি ভয়ে মনটা হঠাৎ বিষাদে ছেয়ে গেলো তার পরীক্ষা কিংবা য ন্ত্র ণা যেন কেবল শুরু হলো।

(***)

বাসায় ফিরেই তোশার মনে হলো এখানকার পরিবেশ কিছুটা উত্তপ্ত।মায়ের মুখটা দেখে সেই বিষয়ে নিশ্চিত হলো।তাহিয়া হাসিমুখে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেও ওতোটা আন্তরিকতা প্রকাশ পেলো না।

“কী হয়েছে আম্মু?”

“তেমন কিছু না।তোমার মামার সাথে তর্ক হয়েছে একটু আগে।বাসা বাসা করে মাথা খাচ্ছে।”

মনটা বিষাদে লেপ্টে গেলো তোশার।হাজার আদরে থাকুক দিনশেষে সত্যি হলো সে আর তার মা এ বাড়ীর আশ্রিতা।নানা যদিও সম্পত্তি লিখে দিয়েছে।কিন্তু এমনভাবে যা সহজে দখলে যেতে পারবেনা তাহিয়া।

“আম্মু চলো অন্য কোথাও চলে যাই।শাহ সাহেব তোমাকে কী কম পারিশ্রমিক দেয়?একটা ছোট্ট ফ্ল্যাট কিনতে পারবো না?”

“পারবো।কিন্তু তোমাকে নিয়ে নিরাপত্তা সব জায়গায় নেই।”

“তাহলে তোমাকে বিয়ে দিয়ে দেই।আসিফ আংকেলকে বলি?”

“তোশামণি।দুষ্ট মেয়ে এসব কথা যেন আর না শুনি।তোমার বিয়ের বয়স হয়ে এলো।আমি কীনা এসময় বিয়ে করবো।”

সুবোধ বালিকার ন্যায় মাথা দুলায় তোশা।কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে খুব করে চায় আসিফকে নিজের বাবা হিসেবে।তোশাকে ফ্রেস হওয়ার তাগিদ দিয়ে বের হয়ে গেলো তাহিয়া।দরজাটি বন্ধ করে ফোন হতে বিছানায় লুটোপুটি খেতে লাগলো মেয়েটি।দুরুদুরু বুকে কবীরের কাছে ফোন করলো।রিসিভ হতে কিঞ্চিত সময় লাগলো।

“বলো তোশামণি।”

“আমরা কী সম্পর্কে আছি কবীর শাহ?”

“কেন ফোন করেছেন সেটা বলেন।আমি ভীষণ ব্যস্ত।”

অভিমান হলো তোশার।সে নিজেও তো ব্যস্ত।তাই বলে কখনো মানুষটা ফোন করলে ফিরিয়ে দিবে নাকী?

“আমিও অনেক ব্যস্ত কবীর শাহ।কথা হলো আরো ব্যস্ত হওয়ার জন্য ফোন করেছি।”

“শুনি কমলা সুন্দরীর বায়না গুলো।”

“আমার মা কে বিয়ের জন্য রাজী করাচ্ছেন না কেন?এই বলেন বন্ধুত্ব?”

“পাগলের মাথা খালি থাকেনা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ তুমি।তাহিয়া বিয়ে করবেনা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

“হু?আমি মানবো না এটা।আম্মুকে বিয়ে দিবো আমি।রাজী আপনি করাবেন।”

“কেন তুমি করাও।”

“বুঝেন না কেন?আমি তো ছোট মানুষ।”

“দস্যুর জাহাজের কান্ডারি(নাবিক) তুমি।সবকিছু বোঝো তো।”

“উহু।রাজী করাবেন আমি জানিনা,জানিনা,জানিনা।”

মেয়েটির নাছোড়বান্দা স্বভাবের সঙ্গে পরিচিত কবীর।এজনয় বশ্যতা স্বীকার করে বলল,

“বলে দেখবো।আপনি কী করেন ম্যাম?খেয়েছেন কিছু?বাসায় যেতে সমস্যা হয়নি তো?”

“এতো প্রশ্ন একসাথে?আমরা সত্যিই প্রেম করছি কবীর শাহ।”

“ধীরে বলো তোশামণি।রাখছি আমি।”

“আপনি কী লজ্জা পাচ্ছেন?এইযে শুনেন।”

ফোনটা রেখে দিলো কবীর।প্রাণখুলে হেসে উঠলো তোশা।মনটা ভালো লাগায় ভরে উঠেছে তার।কিন্তু ছোট্ট মন আসন্ন বিপদ নিয়ে টের পেলো না এখনো।

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-২৪+২৫+২৬

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২৪
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমার মিসেস এর নাম্বার।ও খুবই ভ্রমণপিপাসু।এইতো কয়দিন পর নেপাল ঘুরতে যাবে।আপনারও উচিত একবার ভ্যাকেশনে যাওয়া।ভালো সঙ্গ দিতে পারবে আমার মিসেস।”

বাক্যগুলোর সমাপ্তিতে খুব অমায়িক এক হাসি ফুটে উঠলো লোকটির মুখে।জবাবে কবীরও হাসির বিনিময় করে নাম্বারসহ কার্ডটা হাতে নিলো।লোকটি অধরযুগল আরো বিস্তৃত করে বিদায় নিলো।তৎক্ষনাৎ কবীর কার্ডটা পাশের ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেললো।সে এরকম ভ্যাকেশনের অফার বহু পেয়েছে জীবনে।কিছু ভদ্রলোক আছেন যা দারুণভাবে নিজের স্ত্রীকে অন্যের অধীনে ছেড়ে দেন শুধুমাত্র কাজ হাসিলের জন্য।প্রথম প্রথম কবীর এসব বুঝতো না।একবার তো অফার পেয়ে সেটা নিয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে নিজ ভুল বুঝতে পেরে খুব সতর্কতার সঙ্গে বিষয়গুলো সামলে নেয়।

ঘড়িতে এখন দুপুর তিনটে বাজে।লাঞ্চের জন্য বের হতে হবে এখুনি।ল্যাপটপটা বন্ধ করে কবীর উঠতে যাবে তখুনি দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো সিয়া।মুখে গুরুগম্ভীর ভাব এঁটে আছে।কবীর মিষ্টি হেসে শুধালো,

“এখানে হঠাৎ?”

“সরিষার তেলের তেহারি করেছিলাম সকালে।তখন দিয়ে যেতে পারিনি।এখন ঠান্ডাটা নিয়ে এলাম।”

“ব্যাপার না।আমি পিয়নকে ডেকে গরম করিয়ে দিচ্ছি।তুই খেয়েছিস?”

“নাহ তোর সাথে লাঞ্চ করবো ভাবলাম।আহনাফ আজকে স্কুলে যায়নি?একটু আগে ফোন করে আমাকে বাসায় যেতে বলল।”

“না।হালকা জ্বর এসেছে।তাই মা যেতে দেয়নি।কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুই অন্য কোনো কারণে এসেছিস।”

কবীরের এহেন সোজাসাপটা বাক্যে খানিকটা বিব্রতবোধ করলো সিয়া।ঈষৎ কেঁশে বলল,

“আমার মনে হয় তোশার মাথায় সমস্যা আছে।”

হেসে ফেললো কবীর।চোখকে চশমা থেকে মুক্তি দিয়ে বলল,

“এটা কেন মনে হলো?”

“আমার কাছে আজ এসেছে কিছু রোমান্টিক নভেলের নাম শোনার জন্য।তোকে বুঝাতে নাকী বেশ কাজে লাগবে।তুই বিশ্বাস কর আমি তব্দা খেয়ে গিয়েছিলাম।নাহ সে যদি আমার স্টুডেন্ট না হতো তখন না হয় কথা ছিল।”

“আমারও একসময় মনে হয়েছিল তোশার মানসিক কোনো সমস্যা আছে কীনা।যেমনটা ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানদের হয়।পরে ভুলটা ভেঙেছে।আমার ক্ষেত্রে মেয়েটা এমন যাকে বলে ব্রেক ছাড়া।”

“বিষয়টি এঞ্জয় করিস তুই?”

“একদম না।আবার এমন বাচ্চামো দেখতে ভালো লাগে।”

পিয়ন এসে গরম করা খাবার দুজনের জন্য প্লেটে দিয়ে গেলো।সিয়া বরাবর ভালো রাঁধুনী।কবীর মুখে দিয়ে দুপাশে মাথা হেলিয়ে বলল,

“ভালো হয়েছে।ওহ একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছি।আজ সকালে তোশামণি আমার সাথে কী করেছে জানিস?”

“কী করেছে?দেখা হয়েছিল দুজনের?”

কবীর সম্মতিতে মাথা দুলিয়ে সকালের ঘটনাটি ব্যাখা করলো। পুরো বিষয়টি শুনে ভ্রু কুঁচকে সিয়া শুধালো,

“তুই বলিস না যে জিনের কথাটা বিশ্বাস হয়েছে তোর।”

“এতোটাও বুড়ো হইনি।প্রথমে আমারও খটকা লেগেছিল বিষয়টি।কিন্তু পরবর্তীতে ওর ফোনের লোকেশন দেখে নিশ্চিত হয়েছি যে মেয়েটা মজা করছে।নিজের মাকে ম্যানেজ করেছে কীভাবে ও ভালো জানে।”

“কিছু বলবিনা?”

“করুক।আমি লিটল চেরীকে খুব ভালোমতন চিনি।মেয়েটা সেই যে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পর থেকে আমাকে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে।তাহিয়া মেয়ের ভালোবাসায় অন্ধ।এই কারণে যা বুঝায় তাই বুঝে।যখন আঠার হলো তখন তাহিয়াকে মিথ্যা বলে সাজেক ঘুরতে গিয়েছিল জানিস।এতো সাহস বোকাটার।ফ্রেন্ডের মামা বাড়ীতে গিয়েছে শুনে আমার তো খটকা লাগলো।খোঁজ লাগালে বের হয়ে গেলো যে কল্লোলের সাথে গিয়েছে।তখন আমার হাতে মারাত্মক কাজ জমা।তবুও ছুটলাম সাজেকের উদ্দেশ্যে।চারদিন মেয়েটার পিছন পিছন লুকিয়ে ছিলাম।ভয় ছিল বাচ্চা তো যদি কিছু হয়ে যায়।”

“এতো ভালোবাসিস মেয়েটাকে?”

খাবারের প্লেটে দৃষ্টি রেখে মলিন হাসলো কবীর।এই প্রশ্নের সম্মুখীন জীবনে কয়েকবার হয়েছে সে।তবে জবাব দিতে কখনো কার্পণ্য করেনি।

“ভালোবাসি দেখে তো দূরে আছি।”

“দেখ তুই চাইলে একত্রে থাকা সম্ভব।বয়সটা তো একটা সংখ্যামাত্র।”

“সংখ্যা নয়।এখানে গভীর অনেক কিছু যুক্ত সিয়া।আমার শরীরের চামড়া এখনও টান টান হয়ে আছে দেখে মেয়েটার এতো পছন্দ আমাকে।একটু এদিক সেদিক হোক তখন এই কালোকে পছন্দ হবেনা।তাছাড়া আমি চাইনা তাহিয়ার মনে হোক যে অন্যায় করলাম তার সঙ্গে।”

“মায়ান ভাইয়ের সাথে সব কথা খুলে বলে দেখ একবার।”

“তোশার অভিভাবক হিসেবে মায়ানকে আমি মানিনা সিয়া।বরং প্রিয় বন্ধুর নামে কথাটি বলতে খুব খারাপ লাগছে যে নিজ সন্তান, স্ত্রীর সাথে ভালো কাজ করেনি।যখন দুজনের ডিভোর্স হলো তখন একটিবারও ভাবলো না তাহিয়া সেই মেয়েটা যে কলেজে মাথা নিচু করে যেতো আর আসতো।কথা বলতে গেলে তোতলামো করতো।সম্পর্কের শুরুতে মাত্র আঠার বছর বয়সে বিয়ে করা নিয়ে আমার ঘোর আপত্তি ছিল।এরপর তোশা খুব অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তাহিয়ার কাছে এলো।মেয়েটা কিন্তু নিজের কথা ভাবলো না।বিশ বছর বয়সে এক বাচ্চার মা হয়ে গেলো।এতোটা ছোট বয়সে সংসার সামলেছে,বাচ্চাটাকে দেখেছে বিনিময়ে বিচ্ছেদ কপালে জুটলো।মায়ান ছেড়ে দেওয়ার পর ভাবেনি ভাই, বাবার ঘরে কতোটা মূল্যায়ন হবে তাহিয়ার।এদিকে আমি যোগাযোগ করলে এড়িয়ে যেতে লাগলো তাহিয়া।হয়তো ভেতর থেকে মন সায় দিচ্ছিলো না।তখন উল্টো বুদ্ধি বের করে কোম্পানিটা খোলা।এতে যাই হোক সমাজে মূল্যায়ণ আছে তাহিয়ার।আমার প্রতি ও যে খুব কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে এটা আমি জানি।সেই মানুষটা কীভাবে আমাকে নিজ মেয়ের ভালোবাসা হিসেবে মেনে নিবে?”

সিয়ার ভেতর থেকে দীর্ঘ এক শ্বাস বের হয়ে এলো।আসলেও অনুভূতিগুলো বড্ড বেহায়া।উচিত ছাড়া অনুচিত মানুষের উপর এসে যায়।

“শুন ভাই যে যার সাথে খুশি থাকে সেটাই মূখ্য বিষয়।আমার মনে হয়না তোকে হারিয়ে তোশা খুব ভালো থাকবে।তাছাড়া তুই নিজেও ভালো থাকতে পারছিস?ভালোবাসা সবসময় ষোল বছরে আসবে এমন নয়।তোর জীবনে না হয় পঁয়ত্রিশে এসেছে।”

“বাদ দে সিয়া।তোশামণিকে দেখে রাখিস।এমনিতে এখন রঙীন দুনিয়াতে পা রেখেছে।”

“দিলাম।তবে তুই যে তোশার সব ব্যাপারে কোনটা ভালো তা নিজে থেকে ঠিক করে দিচ্ছিস ওর জীবনসঙ্গীও কী নিজেই বাছাই করে দিবি?”

“দরকার হলে তাই দিবো।”

সিয়া হাল ছেড়ে দিলো।সে জানে তার ভাই কখনো এই বিষয়টি পারবেনা।মাথা নিচু করে খাবার খাওয়ার চেষ্টায় আছে কবীর।কিন্তু আশ্চর্যভাবে সিয়ার শেষ প্রশ্নটি শোনার পর থেকে খুদাটা শেষ হয়ে গিয়েছে তার।এমনকি শ্বাসটা নিতেও কষ্ট হচ্ছে।

(***)

দুটো বিড়াল তুমুল ঝগড়া লাগিয়েছে।তাদের ম্যাও ম্যাও কণ্ঠে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো তোশা।একে তো রাতে ঘুম হয়নি তার।দ্বিতীয়ত সকাল হতেই ক্লাস করার জন্য ছুটতে হয়েছে।তাহিয়া জানতো না যে সে সকালে বাসায় ছিলনা।বিষয়টা কল্লোল অবশ্য সামলে নিয়েছে পরে।আপাতত মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বান্ধুবীর বাসায় কয়েকদিন থাকবে তোশা।ঘুমঘুম চোখে উঠে বসলো।মৃদু কণ্ঠে ডাকলো,

“অপ্সরা তোর এই টিকু এতো ঝগড়াটে কেন?এসেছি থেকে শুনছি একেকর পর এক মা রা মা রি করেই যাচ্ছে।”

অপ্সরা সবেমাত্র গোসল করে বের হয়েছে।চুলগুলো মুছতে মুছতে জবাব দিলো,

“ও এমনই।এলাকার রাণী।যাই হোক ম্যাডাম এখন উঠেন।যে বাহানায় এসেছেন সেটা কিন্ত শিখতে হবে।”

“ওটা মা কে এমনি বলেছি।”

“লাভ নেই ।আন্টি আম্মুকে ফোন করে বলেছে।এখন সে জিনিসপত্র সাজিয়ে বসে আছে।কখন তুই যাবি এরপর মিষ্টি বানানো শুরু করবে।তবে ভালোই হলো।তুই ময়রা হয়ে যা আর তোর খয়ের শাহ সেগুলো ঝুড়িতে করে নিয়ে বেঁচবে।ভালো ইনকাম হবে।আমরা তিনজন ফ্রিতে খাবো।”

“তোর নাম অপ্সরা হলে কী হবে?তুই মটেও তাদের মতো কথা বলিস না।আমার ঘুম পাচ্ছে রে।”

“লাভ নেই তোশামণি।বাকী দুইজন শুনলাম কাল আমাদের এখানে আসবে।”

“হু শুনেছি।”

“এখন উঠেন।”

তোশা পাহাড় ভাঙার সমান ক্লান্তি নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো।ঘুম পাচ্ছে খুব। কিন্তু উপায় নেই কোনো।অপ্সরা তার খুব কাছের বান্ধুবী।ইন্টারে পরিচয় হয়েছিল।এছাড়া আরো দুজন বান্ধুবী আছে।যাদের সে খুব ভালোবাসে।

(***)

রাতেও ঘুমানোর জন্য খুব একটা সুযোগ হয়নি তোশার।রাত দুটোর সময় উঠে সাজতে বসেছে সে।উদ্দেশ্যে কবীর যখন জগিং এর জন্য আসবে তখন তাকে চমকে দেওয়া।মসৃণ, লম্বা চুলগুলোকে পিঠের উপর ছেড়ে দিয়ে আয়নায় আঁচল ঠিক করছে তোশা।আজকে সে সাদা রঙের সিল্কের শাড়ী পরেছে।অপ্সরা ঘুমঘুম চোখে বলল,

“শুন তোশা।আজ তোকে দেখে কবীর শাহ একদম পাগল হয়ে যাবে।”

“অন্য কথা বল।এটা বহু পুরোনো কথা।খুব ঘুম পাচ্ছে রে।”

“আচ্ছা তুই কেন এই জিনের ভয় দেখাবি লোকটাকে।এমনি বয়স চল্লিশ।পরে হার্টঅ্যাটাক করলে সব শে ষ।”

“আমার শাহ এর হার্ট এতো দূর্বল না।কিন্তু ছোট ছিলাম দেখে আমাকে পানি খাইয়ে মাতাল করেছিল।সেই প্রতিশোধ নিতে হবেনা?ভালোবাসা সেটা তো বাকীর খাতায় লেখা আপাতত।এখন চল।এতোক্ষণে চলে এসেছে।”

“দাঁড়া আগে দেখে নেই আব্বু কোথায়।”

অনেকটা সতর্কের সাথে ঘর থেকে বের হয়ে এলো দুটো মেয়ে।বুকের লাব-ডাব শব্দ হচ্ছে তোশার।এমনিতে কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু এতো সকালে সাজগোছের জন্য যা অস্বস্থি লাগছে।মিনিট পাঁচেক এর মধ্যে তারা মাঠে এসে পৌঁছে গেলো।সকালের মিষ্টি বাতাস বইছে।দূরে লুকিয়ে পড়লো অপ্সরা।তোশা একটি গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ালো।তাকে সত্যিই এখন রহস্যময়ী নারী মনে হচ্ছে।

সূর্যের প্রথম রশ্মির সঙ্গে তামাটে পুরুষটির আগমণ হলো।লম্বা লম্বা পা ফেলে কবীর মৃদু ছন্দে দৌড়ে আসছে।তোশার নিশ্বাস আশ্বাস আঁটকে গেলো।কবীর এমন এক ব্যক্তি যার দর্শনে তোশার পরিবেশ এলেমেলো হয়ে যায়।কিন্তু ওইযে সবসময় একটা অবহেলা করে।এতো সৌন্দর্যের বাহার নিয়ে দাঁড়ানো রমণীকে পাশ কাঁটিয়ে চলে গেলো কবীর।তোশার ধ্যান ভাঙলো।একবার রাউন্ড শেষ করে আসলে মিষ্টি হেসে কবীরের সামনে দাঁড়ালো তোশা।

“কী ব্যাপার কবীর শাহ?আমাকে দেখেও না দেখার ভান করছেন।”

গমগমে দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিলো কবীর,

“একটা জিনকে দেখার মতো কিছু নেই।তারা দেখতেও তো ভ য় ং ক র হয়।”

“আমি তো আপনার প্রিয় রমণীর বেশে আছি।যাকে এই রুপে সবসময় স্বপ্নে দেখেন।আজ আপনার সব স্বপ্ন বাস্তব হবে।”

কবীর মনে মনে হাসলো।তোশাকে সে এই রুপে বহুবার কল্পনা করেছে কিন্তু তা লাল রঙের শাড়ীতে।

“আচ্ছা হোক বাস্তব।আমি স্বপ্নে আর কী দেখি বেবী গার্ল।”

তোশা দ্বিধা নিয়ে কবীরের সামনে এসে দাঁড়ালো।পরক্ষণে আস্তে করে জড়িয়ে ধরলো।বাহুবন্ধন ধীরে ধীরে শক্ত হচ্ছে।মোহাবিষ্ট হয়ে তোশা বলল,

“আপনি রোজ স্বপ্নে দেখেন তোশা নামক ভালো মেয়েটা আপনাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে।”

হেসে উঠলো কবীর।তোশা নামক বাচ্চাটা হয়তো কখনো তার কাছে বড় হবেনা।

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমাকে জড়িয়ে ধরার অধিকার ঠিক কোথা থেকে পেয়েছেন তোশামণি?”

কবীরের মুখ থেকে আপনি ডাকটা নিয়ে বিভোর হলো তোশা।সে সচারাচর জানে মানুষের রাগ উঠলে তবে সে অপর মানুষটিকে আপনি বলে সম্বোধন করে।তার প্রতি কবীরের রাগ তখুনি আসবে যখন সত্যি করে মনে করবে তোশা উপস্থিত আছে।কিন্তু এভাবে এতো সকালে কোনো রমণীকে দেখার আশা না থাকলেও সাক্ষাৎ হওয়াটা তো অপ্রত্যাশিত।এমন বহুজনকে তোশা বোকা বানিয়েছে।পরবর্তীতে উষ্ণ শ্বাস ছাড়লো।বহুজন নয় কবীর শাহ একজন।নিষ্ঠুর মানব।

“জিনদের অনুমতি লাগেনা।”

নেহাৎই কবীরকে বাজিয়ে দেখার জন্য কথাটি বলল।এতে অবশ্য ক্ষতি হলো তোশার।তাকে নিজ থেকে সরিয়ে দিলো কবীর।

“বাসায় যাও।নাটক বহু হয়েছে।”

“আমি নাটক করছিনা।”

“বিষয়টা নতুনরুপ পাক আমি চাচ্ছি না তোশা।প্রথমদিন মজা করছো মেনে নিয়েছি।কিন্তু এভাবে শাড়ী পরে আসা বড্ড বেমানান।”

ধরা পড়লেও দমে যাওয়ার পাত্রী নয় তোশা।তাইতো খুব আত্মবিশ্বাসের সুরে বলল,

“আমার অভিনয়কে কতো নাম্বার দিবেন?একশ দুইশ তিনশ তে?এভাবে চলতে থাকলে হলিউড, বলিউড, টলিউড সব কনফার্ম।আমি তো অডিশনও দিচ্ছি।”

বাজপাখির মতোন শি কা রি দৃষ্টিতে মেয়েটিকে দেখছে কবীর।তার অপরিপক্ক ফলটি এখন পূর্ণরুপে পরিপক্ব হয়েছে।এতো সুন্দর সাজটা নষ্ট করে দিতে মন চাইলো কবীরের।সদ্য ঘুম থেকে উঠেছে বিধায় এখন ভ য় ং ক র ইচ্ছা জাগছে কীনা।।মূদু শীতল সমীরণে সে কেঁপে উঠলো। নিজের মন পরিবর্তন করার জন্য হুট করে তোশার গালে আস্তে করে চ ড় মারলো কবীর।

“অভিনেত্রীর অভিনয়ের পারিশ্রমিক।”

হতভম্ব তোশার ত্বকে আ ঘা ত না হলেও চড়ের ভারে সে যেন শ্বাস নিতে ভুলে গেলো।এতোটা নির্দয় কোনো ব্যক্তি হতে পারে?অশ্রুতে টইটম্বুর দুচোখ নিয়ে সে দেখছে কবীরকে।অথচ পুরুষটি আরামসে দৌড়াতে লাগলো।কিছু সময় হতভম্ব থেকে আশেপাশে দেখলো তোশা।অনতিদূরে লোকজন হেঁটে যাচ্ছে।ভারী লজ্জা অনুভব হলো যুবতীর।অথচ আশ্চর্যের বিষয় ভালোবেসে জড়িয়ে ধরার সময় এমন লেগেছিল না।অভিমানে,আত্মগ্লানিতে অপ্সরাদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো তোশা।পরক্ষণে কিছু একটা ভেবে ফিরে এলো।কবীর ততোক্ষণ দৌড়ের কারণে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে।অকস্মাৎ তার পিঠে ছোট হাতের কয়েকটা ঘু ষি পড়লো।

“মা র লে ন কেন?মা র লে ন কেন?আমি কী করেছিলাম হ্যাঁ?”

“তোশা কী করছো?”

ঘুরে তোশার দুহাত নিজের হাত দাঁড়া আঁকড়ে ধরলো কবীর।দৃঢ় কণ্ঠে বলল,

“এমনি দিয়েছি।ব্যাথা তো লাগেনি।”

“তাও দিলেন কেন?”

“আমাকে যে দিলে?”

তোশা জবাব না দিয়ে কবীরের মুখ পানে তাঁকিয়ে রইলো।শুভ্র নাকটা চেরী টমেটোর মতোন রক্তিম আভা ছড়াচ্ছে।এইতো চোখে জমা জলরাশি যেকোনো সময় মেদুর গাল গড়িয়ে পড়বে।যুবতী নাক টেনে কবীরের বুকে মাথা ঠেকালো।পুরুষটি ধরে নিয়েছিল হয়তো অভিমান ব্যক্ত করবে।কিন্তু ত্বকে চিকন দাঁতের আভাস পেয়ে থমকে গেলো।ধীরে ধীরে গাঢ় হচ্ছে আ ঘা ত টি।শান্তসুরে কবীর বলল,

“তোশামণি আমি ব্যাথা পাচ্ছি।এগুলোতে আমার খারাপ লাগেনা?”

নিশ্চুপ তোশা।ক্ষণবাদে ছেড়ে দিয়ে সিক্ত ঢোক গিললো।গলায় নোনতা স্বাদ পেলো অবশ্য।

“আমি র ক্ত ভুলে খেয়ে ফেলছি কবীর শাহ।পেট খারাপ হবে না তো?”

“অবিশ্বাস্য।এই তোমাকে নিয়ে আমি আজই সাইক্রাটিস্টের কাছে যাচ্ছি।আর দেখি দাঁত দেখি।”

নরম ঠোঁট আঙুলের সাহায্যে উপরে উঠালো কবীর শাহ।তোশার ছে দ ন দাঁতে র ক্ত লেগে আছে।

“তুমি নিশ্চয় ভ্যাম্পায়ার।যাও এখুনি বাসায় যাও।তাহিয়াকে আজকে বিচার দিবো।”

“দেন আমার কী তা?মা র লে ন কীসের জন্য?”

“মজা বুঝো না?শয়তান মেয়ে।যাও এখুনি বাসায় যাও।শরীরে বড় হলে কী হবে?দিনদিন আরো বাচ্চা হয়ে যাচ্ছো।”

তোশা ফিরে যাওয়ার আগে শুধালো,

” র ক্ত খেলে পেট খারাপ হয়না তো?বললেন না যে?আর আপনার উপর অধিকার আছে আমার।হেইট ইউ।হেইট ইউ।হেইট ইউ কবীর শাহ।”

ধুপধাপ পা ফেলে অতি সন্তপর্ণে বাসার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো তোশা।কবীর নিজের ক্ষ ত স্থান দেখে উষ্ণ শ্বাস ছাড়লো।অন্তত এটা বুঝতে পারলো তোশার আবেগ,অনুভূতি খারাপ লাগার পরিমাণ খুব বেশী।তার সামান্য আ ঘা ত মেনে নিতে পারেনি।

(***)

“মেয়েটির নাম তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।বর্তমানে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে।মা-বাবার ডিভোর্স হয়েছে আরো অনেক বছর আগে।নানার বাড়ীতে থাকে।এমনি খুব ভালো, ভদ্র।আপনার সাথে খুব ভালো মানাবে স্যার।”

“বলছো?”

“অবশ্যই।আপনি চাঁদের মতোন দেখতে।”

নিজের লোকের কাছে প্রশংসা শুনে প্রতিকের মুখের উজ্জ্বলতা আরো বৃদ্ধি পেয়ে গেলো।শীতাতপ নিয়ন্ত্রণিত কক্ষ হওয়ার পরেও সে ঘেমে উঠেছে।টিস্যু দিয়ে কপালের ঘামটি মুছে বলল,

“অফ স্ক্রীন জুটি কেমন হয় সেটা পরে দেখা যাবে।কিন্তু আপাতত অন স্ক্রীনে দেখি মানুষ কতোটা পছন্দ করে।অভিনয় কেমন?”

“মোটামুটি চলে।”

“তবে পরবর্তী নাটকে তোশাকে নিয়ে নাও।কিন্তু আমি যে অন্যরুপে পছন্দ করেছি সেটা যেন না জানে।”

“কখনো জানবেনা স্যার।আপনার শ্যুটিং শুরু হবে।”

“ওকে।আমি আসছি একটু পর।”

ব্যক্তিটি চলে গেলো প্রতীক ল্যাপটপের স্ক্রীনে পুনরায় তাঁকালো।সেখানে হাসৌজ্জ্বল তোশার একখানা ছবি রয়েছে।যেটা আজ থেকে তিন মাস আগের তোলা।কোনো এক অডিশন হুট করে দিয়েছিল মেয়েটা।তেমন ভালো অভিনয় না করার কারণে আগেই রি জে ক্ট হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে তোশার ছবিটা অজান্তে প্রতীকের সামনে চলে আসে।ওইযে প্রথম দেখার প্রেম।সেটা হয়ে গিয়েছে তার মধ্যে।প্রতীক আনমনে নিজের সঙ্গে বলল,

“দেখা হতে হতে প্রেমটা হয়ে যাবে তোশা চৌধুরী।এখন কবে দেখা হবে সেটাই তো বুঝতে পারছিনা।”

(***)

“আহারে তোশা।তোমার কবীর শাহ একটু বেশীই অভিজ্ঞ।তাকে বোকা বানানো এতো সহজ হবেনা মনে হয়।আর ছোট্ট করে চ ড় টা দিয়েছে।দূর থেকে আমি দেখেছি।এমন তো কতো টিকুকে দেই আমি।এতো কাঁদার কী হলো?”

“বুঝবি না তুই।আমার কষ্ট হচ্ছে।কবীর শাহ একটুও ভালোবাসে না।”

“সেটা তো আমরা সকলে জানি।নতুন কিছু বল।”

তোশা সকাল থেকে কেঁদে যাচ্ছে।তার ভাষ্যমতে এতো সেজে যাওয়ার পরেও মজা করেও কীভাবে কবীর চ ড় টা দিলো?মায়া হলো না?অপ্সরা এতো বোঝানোর পরেও মানছেনা।তোশার যে আবেগ বেশী সেটা সে জানে।

“কান্না থামাবি তুই তোশা?”

“উহু,কবীর শাহ যতোক্ষণ অবধি না বলবে আমার সঙ্গ না দিবে ততোক্ষণ অবধি থামবেনা।”

“এটা কখনো হওয়ার নয় তুই জানিস।”

“তাহলে থামাবো না।”

“অসুস্থ হয়ে পড়বি তো।”

“তুই তাকে কল করে বল তোশা খুব কাঁদছে।”

হকচকিয়ে অপ্সরা জবাব দিলো,

“অসম্ভব।”

“না তুই ও আমাকে ভালোবাসিস না।”

অপ্সরা আরো কিছুসময় মেয়েটির কান্না দেখলো।পরবর্তীতে সহ্য করতে না পেরে তোশার ফোন দিয়ে কবীরকে কল করলো।পুরুষটি যতো সীম চেঞ্জ করুক না কেন?তোশা প্রত্যেকবার নাম্বার ম্যানেজ করে নিতো।দীর্ঘ চার মিনিট কথা বলার পর অপ্সরা বিরস মুখে বলল,

“তোর কবীর শাহ আসছে।রেডী থাকতে বলেছে।”

তোশার মুখে যেন মিঠা রোদের আভাস দেখা গেলো।সে এতো কান্নার মধ্যে হাই তুলে বলল,

“যাক অভিনয় কাজে লাগলো।তুই ও বুঝতে পারলি না যে আমি নাটক করছিলাম।হুহ আমার অভিনয়ের পারিশ্রমিক কীনা চ ড়?আজকে সারাদিন নাকানিচুবানি খাওয়াবো।হ্যাঁ রে আসতে কতোক্ষণ?”

অপ্সরা বারংবার চোখের পলক ফেললো।সে বুঝোছিল তোশা কার্যসিদ্ধির জন্য এমন করছে।পরক্ষণে মেয়েটির চোখের পানি দেখে মায়া হয়েছিল।দীর্ঘ এক শ্বাস ফেলে অপ্সরা বলল,

“কবীর শাহ লোকটা তোর এসব নাটক বুঝেও কেন যে কিছু বলেনা।আমি হলে সোজা কাজী অফিসে নিয়ে যেতাম।অন্তত মানসিক শান্তি তো থাকতো।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২৬
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“না আমি আপনার প্রাক্তন।না আপনার বর্তমান।তবে কেন প্রত্যেক দিন ঘন্টায় ঘন্টায় নিজের হয়ে জবাবদিহিতা করার জন্য ফোন করেন আমাকে?”

আসিফ মৃদু হাসলো।ক্লান্ত হয়ে থাকা শরীরটা চেয়ারে এলিয়ে দিলো,

“একজন সচেতন মন্ত্রী হওয়ার দরুণ দেশের নাগরিকের খোঁজ খবর নেওয়া কর্তব্য।তাছাড়া তোমাকে বোঝানোর জন্য চারটে বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছি তাহিয়া।এতোদিনে তো পাহাড় কেঁটে পাথরও তৈরী করা যায়।”

“হায়া হীন কথাবার্তা।আপনার বয়স নিশ্চয় তোশামণির মতো নয়?”

“তা অবশ্য নয়।মেয়ে কোথায়?”

“বান্ধুবীর বাড়ীতে গিয়েছে।”

“তাদের চিনো?”

“হ্যাঁ।”

ক্ষণকাল দুজনে মৌন থাকলো।আসিফ যে ক্লান্ত তা খুব ভালোমতন উপলব্ধি হচ্ছে তাহিয়ার।কিন্তু একটা অদৃশ্য পর্দার আড়ালে রয়ে গিয়েছে তারা।

“ঘর পো ড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায় প্রবাদের অনুসারী তুমি তাহিয়া।অথচ দেখো মায়ানকে কিন্তু এতোদিন সময় দাও নি।চট করে বিয়ে করে নিয়েছিলে।সেই তো সংসারটা টিকলো না।কী লাভ হলো?অথচ আমি অভাবী অনাহারে থেকে গেলাম।”

“আমি নিশ্চয় কোনো খাদ্য বস্তু নই।যাই হোক মায়ানের কথা না উঠানো ভালো।”

“কেন নয়?জানো গতকাল মায়ানের সঙ্গে ফোনে কথা হলো।স্ত্রী,সন্তান নিয়ে প্যারিসে বেড়াতে গিয়েছে।আইফেল টাওয়ারের সামনে ফটোও তুলেছে।দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে।ইয়াং লাগছে।স্ত্রী ও সুন্দর।আসলে কী সব গরু জীবনে ভালো থাকে।কিন্তু কিছু ছোটখাটো গরু আছে যারা ভালো থাকতে ভয় পায়।”

থমথমে কণ্ঠে তাহিয়া জবাব দিলো,

“অপমান করার হলে সরাসরি করুন।এভাবে গরু বলবেন না।আমি চল্লিশ বছর বয়সী একজন নারী।কোনো টিনেজার নই।”

“সেটাই আমার মন্দ ভাগ্য।তবে টিনেজারের থেকে প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছি।ঠিক এই বয়সে ভাবা যায়?”

“আসলেও যায়না।অল্প বয়সী মেয়েদের এমনিতেও মাথা খারাপ থেকে।নিজের থেকে এতো বছর বেশী কাওকে কীভাবে যে পছন্দ করে বুঝে আসেনা।এমন মেয়েদের দেখতে পারি না আমি।”

নিশ্চুপ হয়ে গেলো আসিফ।কবীর ও তোশার মুখটা ভেসে উঠলো।সামনে ঝড়,টর্নেডো সব আসছে।এই কারণে সময় থাকতে তাহিয়াকে নিজের দিকে টেনে নিতে চায়।অথচ মানুষটা বুঝেও না।ওপাশের মানুষটা নিশ্চুপ দেখে তাহিয়া ডাকলো,

“আসিফ ভাই।”

“হু বলো।”

“খেয়ে নেন।আমি রাখছি।আর এতোবার ফোন করবেন না।”

আসিফ আচ্ছা বলে ধণাত্মক প্রতিক্রিয়া জানালো।তাহিয়া নিষেধ করার পরেও রাতে আরেকবার ফোন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো।এখন সে ভেতরে ভেতরে আসন্ন সময় নিয়ে চিন্তিত।

(***)

কবীরকে দেখে দৌড়ে তার কাছে গেলো টিকু।লোমশ তুলতুলে দেহটি দিয়ে পুরুষটির গায়ে এসে পড়ছে।মিষ্টি হেসে টিকুকে কোলে তুলে নিলো।বিড়ালটির সঙ্গে টুকটাক কথা বলার মাঝে তোশা সেখানে উপস্থিত হলো।গাঢ় দৃষ্টিতে মেয়েটিকে একবার অবলোকন করে গাড়ীতে গিয়ে বসলো।তোশা কিন্তু এমন অবহেলায় বিন্দুমাত্র দমে গেলো না।বরং মলিন মুখে গাড়ীতে উঠে বসলো।

“আমরা কোথায় যাবো তোশা?”

“মণি বললেন না যে।রাগ করে আছেন?”

“কোথায় যাবে সেটা বলো।কান্না করে মুখের অবস্থা করুণ কেন করেছো?কী এমন করেছিলাম আমি?”

“পাগলের ডাক্তারের কাছে যাবো।নিয়ে যাবেন?”

“সম্ভব না।কারণ আমি জানি তুমি সুস্থ।মিছে মিছে শুধু চিন্তা করে লাভ নেই।”

“রাগলে আপনাকে ভীষণ সুন্দর দেখা যায় কবীর শাহ।”

কথাটার বিপরীতে কবীর সৌন্দর্যের দুই চারটে বাক্য বলতে পারতো।কিন্তু ওইযে মাঝেমধ্যে মনের ভাবনাকে দমিয়ে রাখতে হয়।তা নয় ভীষণ বিপদ হয়ে যায়।

“আমি সুন্দর সেটা বহু পুরোনো কথা কমলা সুন্দরী।আমরা এখন গাজীপুর যাচ্ছি।”

“ওইযে আপনার সেই বাসায়?যেখানে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল?”

“হ্যাঁ।”

তোশা উচ্ছাসিত হয়ে হাত তালি দিয়ে উঠলো।অভিনয় দ্বারা মাঝেমধ্যে দারুণ কিছু পাওয়া যায়।না সে তার এই প্রতিভাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।

গাজীপুর পৌঁছাতে তাদের তিন ঘন্টার মতো সময় লাগলো।এই সময় পুরোটা দুজন মানুষ নিশ্চুপ ছিল।যেন নীরবে বোঝাপড়া চলছে।তোশা অবশ্য পাশে বসে থাকা মানুষটিকে বুঝতে পারছেনা।রেগে যে আছে তা স্পষ্টত।আচ্ছা রাগ দেখাবে কীভাবে? মা র বে না সেটা তোশা জানে।আবার মনে পড়ে গেলো।একবার চুল মুঠোয় ভরে ব্যাথা দিয়েছিল।

“বাড়ীটা অনেকদিন ধরে বন্ধ ছিল।দেখেশুনে ঢুকবে।”

“এইযে আমাকে নিয়ে নির্জনে এলেন ভয় লাগছে না কবীর শাহ?”

ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে উঠলো কবীরের।প্রশ্নটি কী তার শুধানো উচিচ ছিল না?গম্ভীর সুরে বলল,

“আমার ভয় কেন লাগবে?”

“আমি লাবণ্যময়ী রম্ভা।খুব বেশী দূরে থাকা দুষ্কর।অবশ্য আপনি তো মানুষ নয়।মহাপুরুষ।”

“সোফায় গিয়ে বসো।আমি মূলত তোমাকে এখানে কিছু কথা বলতে ডেকেছি।যদিও এসব বলতে বলতে আমার শক্তি প্রায় শেষ হয়ে আসছে।”

“তো কেন বলতে যান সবসময়?কেন মেনে নিতে পারেন না?আজ যদি আমার জায়গায় কোনো নিপিড়ীত নারী থাকতো তবে মহৎ হওয়ার জন্য এক চান্সে রাজী হয়ে যেতেন।চিনি তো পুরুষদের।”

তোশার কণ্ঠ বেশ উচ্চ শোনা গেলো।কবীরের ভেতর সুপ্ত অবস্থায় জমতে থাকা রাগ এবার আরো বড় হয়ে বের হয়ে এলো।

“চিল্লিয়ে কথা বলবেনা।বেয়াদব মেয়ে।তাহিয়া যদি সময় থাকতে শাসন করতো তবে আজ এমন পরিস্থিতি কখনো আসতো না।”

“করেনি শাসন।করবেও না।বরং আমি ভালোবাসার জিনিস।”

“চুপ ইডিয়ট।সোফায় গিয়ে বসো।খুব রাগ লাগছে আমার কিন্তু।”

তোশা নিশ্চুপে সোফাতে গিয়ে বসলো।মনে মনে সে ভীষণ বিমর্ষ হয়ে উঠলো।ভেবেছিল অতীতের মতোন আজ কিছু সময় অতিবাহিত করবে তারা।কিন্তু সেসব তো কিছু হচ্ছে না।বরং মন খারাপের বাক্সের ভার বেড়ে যাচ্ছে।কবীর নিজেকে শান্ত করার দরুণ পায়চারি করছে।গলায় সুন্দর করে লেগে থাকা টাইয়ের বাঁধন ঢিলা করে দিলো।তাকে দেখতে ছোটখাটো আগুনের গো লা লাগছে।তোশার মনে পড়ে গেলো সংগীত শিল্পী মমতাজের সেই বিখ্যাত গানের লাইনটি।’পোলা তো নয় যেন আগুনের গোলা’।কিন্তু আফসোস সেটা যদি এখন গায় তো কবীর তার হাতের ব্যায়াম তোশার গালে করতে পারে।মিনমিন কণ্ঠে যুবতী শুধালো,

“আমার খুদা লাগছে।শুনেনা ফুড পান্ডায় অর্ডার দেই।”

“সিরিয়াস একটি পরিবেশ তোশা।কীভাবে মজা করো?”

“তাহলে দেন আপনাকে খেয়ে ফেলি।”

“তুমি আমাকে বলো না যে খেয়ে ফেলার ভয়ংকর অর্থটি তোমার জানা নেই।”

কবীর এগিয়ে এসে তোশার সামনে বসলো।হাতের আজলায় ছোট্ট তুলতুলে মুখটা তুলে বলল,

“কেন এমন করো সবসময়?আমার সাথে তোমার যায় বলো?বুড়োতে কী মজা পেয়েছো তাই বলো?”

“ভালোবাসা চিনেন কবীর শাহ?”

“চিনিনা এবং চিনতেও চাইনা।শুধু আমার জীবন থেকে সরে যাও।চারটে বছর তো দূরে ছিলে।আবার কেন সব এলেমেলো করছো?”

অধর দ ং শ ন করে তোশা।অশ্রুপূর্ণ দৃষ্টি মেলে তামাটে পুরুষটিকে দেখছে।পোড়াখাওয়া কপালের ঘামগুলো হাত দ্বারা মুছে দিলো।

“আপনি চান আজীবন প্রথম চাওয়া পাওয়া কিংবা ভালোবাসা ছাড়া বেঁচে থাকি আমি?”

“প্রথম কিংবা শেষ প্রেম বলে কিছু হয়না তোশামণি।তুমি ভুল।ওয়াদা করো আমাকে আজকের পর সব ভুলে যাবে।যেমন এই কয়দিন চললো।”

“সম্ভব না।”

“আমার বয়স বেশী।দুদিন পর চামড়া ঢিলা হওয়া শুরু করবে।মজা নাও আমার সাথে?এসব ভালোবাসা তোমার মতো সুন্দরী মেয়ের কাছ থেকে পাওয়া আমার জন্য উপহাস বৈ কি কিছু নয়।আজ জিম করা,নিয়ন্ত্রিত খাদ্যভাস পাল্টে দিলে চলে যাবে সব।ধরো সম্পর্ক হতো।তোমার আশেপাশে আমাকে তুমি ঠিক দশ বছর পর সহ্য করতে পারবে?আমার স্পর্শ পারবে মেনে নিতে?”

তোশা জবাব না দিয়ে কাঁপা কাঁপা অধরযুগল তামাটে কপালে ঠেকালো।কবীর তৎক্ষনাৎ ছিটকে দূরে সরে গেলো।যেন এই মুহুর্তে কয়েক হাজার ভোল্টেজ তার শরীর দিয়ে বয়ে গেলো।

“এটা কী করলে তোশা?”

“আপনাকে দেখে লোভ সামলাতে পারিনি।ভীষণ আদুরে আপনি।কথা বলেন সুন্দর করে।যেন হাজার বছরের পুরনো কাব্য।কবীর শাহ আপনাকে নিয়ে বলতে গেলে দেখা যাচ্ছে আমার সময় শেষ যাবে।কিন্তু অনুভূতি মিটবেনা।”

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-২১+২২+২৩

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২১
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

দূর্বোধ্য এক অনুভূতিতে বাঁধা পড়েছে কিশোরী তোশা।ক্ষণে ক্ষণে যা তাকে শেষ করে দিচ্ছে।জীবনে হাসিখুশির উজ্জ্বলিত প্রদীপটি যেন আজ নিভন্ত পর্যায়ে এসে ঠেকেছে।সকাল থেকে ঠিকমতো খাওয়া হয়ে উঠেনি।তাহিয়া ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি তেমন একটা খেয়ালও করেনি।পেটের প্রত্যেকটি আনাচে কানাচে এখন তোশাকে খাবার গ্রহণের জন্য আকুতি জানাচ্ছে।কিন্তু আশ্চর্য মেয়েটি এক দানাও মুখে তুলতে পারছেনা।অথচ যাকে ঘিরে এই খারাপ লাগার আয়োজন সেই কবীর শাহ হেসে খেলে বেড়াচ্ছে।বোনের বিয়ে উপলক্ষে আসিফ তার সমস্ত বন্ধুবান্ধবদের ডেকেছে।একসময় তারা কবীরের সিনিয়র ছিল।তারা যে জায়গায় পড়াশোনা করেছে তা মূলত স্কুল,কলেজ একত্রে ছিল।

“রান্না ভালো হয়নি তোশা?”

“ভালো হয়েছে আম্মু।”

“তাহলে জলদি খেয়ে রুমে চলে যাও।একটু পরে সকলে আড্ডার আসর জমাবে।তুমি ছোট এখানে থাকা উচিত হবেনা।”

“তুমি এখানে থাকবে আম্মু?”

“কবীর থাকবে।আমি কিছুসময় আছি।ভয় নেই।তোমার সাথে আপাতত থাকার জন্য একজন মেয়েকে সাথে দিবো আমি।”

“হুহ।”

তোশা মনে মনে ভাবছে সে তো শুধু তার মায়ের কথা শুনতে চেয়েছিল।তবে সেখানে কবীর নামটা কেন যুক্ত হলো?ভয়ংকর অপমান করেছে লোকটা তাকে।সে কখনো আর কথা বলবেনা।মনকে শাসন করে নিলো।ছোট ছোট করে খাবার মুখে দিচ্ছে এহেন সময় একজন মহিলাকে ঘিরে হৈ হৈ করে উঠলো সকলে।তোশা তাকে চিনে।প্রচন্ড রকমের বি ত র্কিত একজন নারী লেখক।নাম রুবা।বয়স আসিফের সমান হবে সম্ভবত।তোশা আগ্রহের সহিত মায়ের উদ্দেশ্যে শুধালো,

“উনি কে হোন আসিফ আঙকেলের?”

“বান্ধুবী।আমাদের সিনিয়র ছিলেন।তখন তো ভালো ছিল।কিন্তু এখন পুরোদস্তর ফেমিনিস্ট।কবীর তো এক কালে রুবা আপু বলতে ফিদা ছিল।”

তোশার শূন্য হৃদয়ে কেউ যেন একরাশ কয়লা ফেলে দিলো।জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।ধীর কণ্ঠে শুধালো,

“কেমন ফিদা ছিল?”

“ফ্লার্ট করতো।বাড়ীতে গিয়ে ঢিল ছুঁড়তো।টিনেজাররা যেমন করে।দেখো আজ আবার যখন দুজনের দেখা হবে তখন ঠিক আগের রুপে ফিরে যাবে।”

“ভালোবাসা ছিল?”

মিষ্টি করে হাসলো তাহিয়া।যা পুরোদস্তুর নিরোর্থক অনুভব হলো তোশার নিকট।খাওয়া বাদ দিয়ে কিশোরী সামনে তাঁকিয়ে রইলো।কবীর শাহ ভীরের মধ্যে একদম রুবার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।তোশা চোখ বন্ধ করে নিলো।কিন্তু কথা গুলো ঠিকই তার কর্ণগোচর হলো।এইতো সেই দৃঢ়, মায়াময় শক্ত কণ্ঠে কবীর বলছে তবে অন্য এক রমণীর উদ্দেশ্যে।

“কী আশ্চর্য আজ জমিনে চাঁদের আগমণ ঘটলো।এই কয়লা হয়ে যাওয়া পাথরটি তো নিজেকে কু র বা ন করতে ভুলবে না সেনোরিটা।”

রুবা উচ্ছাসিত কণ্ঠে বলল,

“কবীর শাহ।তুমি সত্যি নাকী আমি ভুল দেখছি।”

“কী ব্যাপার রুবা।আমাকে নিয়ে কী খুব বেশীই স্বপ্ন দেখেন যে বাস্তবে দেখে বিশ্বাস হচ্ছে না।”

কুটিল হাসলো রুবা।ঘাড় অবধি সুন্দর করে কাট দেওয়া চুলগুলো নাড়িয়ে বলল,

“তুমি বদলালে না।”

“এতো রুপ দেখে বদলানো যায় বলেন?তবে মন খারাপ হয়েছিল।বিয়ে শেষ হতে চলল অথচ সুন্দরীর দেখা মিললো না।অবশেষে এই অধম এক বিন্দুর পানির দেখা পেলো।”

রুবা সহ আশেপাশের সকল মানুষ উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো।আসিফ তাদের থামিয়ে বলল,

“চুপ থাকো দুজনে এখন।চল রুবা তাহিয়ার সঙ্গে আলাপ করিয়ে আনি।”

“তাহিয়া?ও এখানে কীভাবে?”

“সে বহু কথা।আয়।”

রুবার সঙ্গে সরাসরি পরিচয় হতে হবে দেখে তড়িঘড়ি করে মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে নিলো তোশা।কবীরের মুখে বলা একেকটি বাক্য তাকে য ন্ত্র ণা দিচ্ছে।হয়তো শুধুমাত্র একান্তে সেসব পাওয়ার আশা জাগে মনে।যা পূরণ হয়না।প্রস্থানের সময় কবীরের সঙ্গে চোখাচোখি হলো তার অবশ্য।কিন্তু অনুভূতির বিনিময়?সেটা কখনো হবে?”

(***)

গভীর রাত দুটো।সকলের সঙ্গে আড্ডায় এতোটা সময় কখন চলে গিয়েছে বুঝতে পারেনি কবীর।তাছাড়া সে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিল তোশার কথা ভুলে থাকতেও।রুমের কাছে এসে সে থমকে দাঁড়ালো।পাশে তাহিয়াদের রুম যেটির দরজাটি হালকা খোলা।খটকা লাগলো কবীরের।যদিও ভেতরে উঁকি দেওয়া কোনো সভ্য মানুষের কাজ হবেনা কিন্তু নিজেকে দমন করতে পারলো না।বিছানায় একান্তে শুধু তাহিয়াকে শুয়ে থাকতে কপালে মৃদু ভাঁজ পড়লো।ওয়াশরুমটাও যে ফাঁকা সেটি বোঝা যাচ্ছে। মুহুর্তেই ঘাম ছুটে গেলো কবীরের।হালকা নেশা আছে তার।তবুও হন্তদন্ত হয়ে নিজের রুমে এসে দেখলো সেটিও ফাঁকা।

“তোশা তুমি কী ভেতরে আছো?”

জবাব পেলো না পুরুষটি।তৎক্ষনাৎ বের হয়ে গেলো রুম থেকে।অবশেষে আধা ঘন্টার গোপন অভিযানের পর মেয়েটির দেখা মিললো ছাদে।আজ তাকে সুন্দর করে শাড়ী পরিয়ে দিয়েছিল তাহিয়া।হলুদ রঙা মিষ্টি পাখি লাগছিলো।এই কিশোরীকে কখনো শাড়ী পরলে ছোট লাগেনা।কবীরের কী হলো কে জানে?পিছন থেকে তোশাকে খুব শক্ত করে আলিঙ্গন করলো।

“এখানে কী করছো তুমি?জানো রুমে না দেখে ভয় পেয়েছিলাম।”

কুণ্ঠিত হয়ে তোশা জবাব দিলো,

“আম্মু ঘুম থেকে উঠেছে?”

“নাহ।”

“রুমে ভালো লাগছিলো না।”

“তাহলে আমার কাছে আসতে।তবুও একা কেন ঘুরাঘুরি করছো।”

“আপনি আমার কে যে আপনার কাছে যাবো?”

কবীর অবাক হয়ে নিজ বক্ষের সঙ্গে লেপ্টে থাকা অভিমানী কিশোরীকে দেখলো।তৎক্ষনাৎ স্মরণে এলো সে সত্যিই কেউ না।ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।গম্ভীর সুরে বলল,

“রুমে ফিরে চলো।”

“একটু পরে।”

“মন খারাপ কিছু নিয়ে?”

“হুহ।”

“সেটা কী?”

“শুনে কী করবেন?আপনার জন্য তো বহু রুবা আছে।এক তোশার কথা না শুনলেও চলবে।”

“জেলাস?”

কঠিন মুখে ফিরে তাঁকালো তোশা।আবারও অনুভূতিকে অপমান করছে ব্যক্তিটি।

“মি.শাহ।আপনি আমার অনুভূতিকে ইনসাল্ট করার সাহস পান কোথা থেকে সবসময়?”

ভ্রু কুঞ্চিত হলো তামাটে পুরুষটির।অধরে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলল,

“তুমি ভীষণ রহস্যময়ী বেলাডোনা।যাকে এই কয়লা বুঝতে পারছেনা।”

তোশা অশ্রুপূর্ণ দৃষ্টিতে মানুষটিকে দেখলো।ভালোবাসি সে আর বলবেনা।বরং এখন থেকে দূরে দূরে থাকবে।চলে যেতে নিলে তার আঁচলখানা ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো কবীর।প্রাণভরে মেয়েটির গায়ের উষ্ণ সুগন্ধ গ্রহণ করলো সে।

“তোশামণি,তুমি বড় অসময়ে আমার জীবনে এলে।যদি তা না হতো বিশ্বাস করো সবথেকে ভালোবাসা দিতাম তোমাকে।”

“আপনি নিষ্ঠুর কবীর শাহ।”

কবীর পুনরায় সেই ভুলটি করলো।তবে এবার তোশা সজ্ঞানে রয়েছে।আস্তে করে তপ্ত অধর দুটো তোশার কপালে ঠেকালো।মিষ্টি একটি বাতাস এসে স্পর্শ করে গেলো তাদের।কবীর আনমনে বলল,

“আমি দেশ ছাড়বো তোশা।যদি এখন তোমার থেকে দূরে না যাই তবে পাগল হয়ে যাবো।জানো হালকা নেশা করেছি একটু আগে।সেই কারণে এমন নিজেকে খুলে দিচ্ছি তোমার কাছে।নেশা কেঁটে গেলে আবার বাস্তববাদী হয়ে পড়বো।”

“কেন যাবেন কবীর শাহ?আমাকে ভালোবাসেন আপনি?উত্তরটি কী হ্যাঁ নয়?”

“হয়তো আবার হয়তোবা না।বাদ দাও এসব কথা।এখন শুধু এই সময়টুকুকে উপভোগ করো।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২২
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“বউয়ের সঙ্গে রেডিমেড একটা মেয়ে পেলে মন্দ হয়না কী বলো কবীর?এই কারণে তাহিয়ার পিছু পিছু ঘুরছি।যদি মানুষটার আমার প্রতি মায়া জন্মায়।”

“কিন্তু তাহিয়া বিয়ে করবেনা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আসিফ ভাই।মায়ান যখন পরবর্তীতে সংসার গড়ে তুললো তখন আমরা সকলে ওর জন্য পাত্র দেখা শুরু করেছিলাম।কিন্তু মেয়ের জন্য রাজী হয়না।”

“আমার কাছে তাইয়ুবার একটুও অনাদর হবেনা।মায়ান মেয়ের খোঁজ রাখে?”

“খুব ভালোবাসে।সব খোঁজ নেয়।”

“যাই হোক।তোমাদের এখানে ডেকে আমার খুব ভালোলেগেছে।বিশেষ করে তাইয়ুবাকে।মেয়েটা আসলেও ছোট্ট একটা পুতুল।”

আসিফ যে মায়া মমতা নিয়ে তোশার পানে তাঁকালো কবীর ঠিক সেটা পারলো না।বরং তার মনে একরাশ অস্বস্ত্বি এসে জড়ো হলো।গত পরশু গায়ের হলুদের রাতে ছাদে ঠিক কী হয়েছিল তাদের মধ্যে কবীরের মনে মেই।শুধু এতোটুকু স্মরণে ছিল সে তোশার কপালে চুম্বন করেছে।এবং মেয়েটির সম্পূর্ণ জ্ঞান ছিল তখন।এই একটি মাত্র নির্লজ্জতায় কবীর আত্নগ্লানিতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।এরপরে বহু সময় তারা ছাদে একত্রে ছিল।ঠিক ওতোটা সময়ে কী হয়েছিল কবীরের স্মরণে নেই।তবে বিশেষ কিছু হয়েছিল তখন।তা নয় তোশা নামক কিশোরী একটি বাক্যও উচ্চারণ করেনি এই দুদিন তার সঙ্গে।তাকে ভাবনার বিশাল সমুদ্র থেকে বের করে আসিফ বলল,

“রুবা চলে যাচ্ছে কবীর।”

“হু,কখন?তাকে ঠিকমতো ডোজ দিতে পারলাম না।এরকম ফেমিনিস্ট হয়েছে কেন সেটাই ভাবার বিষয়।”

“তিন বছরে দুবার সংসার ভাঙছে।ঠিক এই কারণে।তবে আমার আশ্চর্য লাগে এটা ভেবে যে তোমাদের মধ্যে কতো অদ্ভূত কথাবার্তা হয়।”

“ফেমিনিস্ট না হলে কী হবে।তেজ আগে থেকে ছিল।এই কারণে নাকানিচুবানি খাওয়াতাম।মনে আছে আমি একবার ইট ছুঁড়তে গিয়ে তার বাবার মাথা ফা টি য়ে দিয়েছিলাম।”

আসিফ হাসতে হাসতে বলল,

“খুব মনে আছে।আর আঙকেল এরপর থেকে যে বারান্দায় হেলমেট পরে ঘুরাঘুরি করতো এই দৃশ্যও মনে আছে।”

কবীর হাসিতে যোগ দিলো।আজকে বিয়ে শেষ হয়ে গিয়েছে।এজন্য মেহমানরা একে একে চলে যাচ্ছে।মেয়ের স্কুল মিস যাচ্ছে বিধায় তাহিয়াও চলে যাবে।কাজ সব শেষ করে কবীর ফিরবে ঢাকাতে।সকলের কাছ থেকে বিদায় নিতে গেলো তাহিয়া।এদিকে চুপচাপ গাড়ীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে তোশা।আজ খুব সুন্দর লাগছে তাকে।গোলাপি রঙের সুঁতি থ্রি পিচ পড়েছে।মসৃণ চুলগুলো পিঠময় ছড়িয়ে আছে।কবীর অনেকটা ইতস্তত করে তার পাশে এসে দাঁড়াল।মানুষটার গায়ের রঙ কালো হলে কী হবে?কালো শার্টেও খুব মানাচ্ছে।শক্ত ফুলে ফেপে থাকা পেশিগুলোর উপর শার্টটি আঁটসাঁট হয়ে বসেছে।গা থেকে সেই তীব্র সুগন্ধ।যা নাকে আসতে মনটা খারাপ হয়ে গেলো তোশামণির।

“চলে যাচ্ছো?খেয়েছো কিছু?”

“খেয়েছি।”

“তোশামণি একটি কথা জিজ্ঞেস করার ছিল।সেদিন মানে হলুদের দিন ছাদে আমার দ্বারা তোমার সাথে কোনো অন্যায় হয়েছে?সত্যি করে বলো।”

তোশা একটি বার পাশে দাঁড়ালো শৈল্পিক মানুষটিকে দেখলো।তার থেকে বেশ লম্বা হওয়ায় তামাটে মুখশ্রীকে মনে হচ্ছে বেশ দূরে তার থেকে।

“সত্যি বলতে কালোতে আপনাকে মানায় না কবীর শাহ।”

“মজা নয় লিটল চেরী।আমি কী কোনো ভুল করেছি?এতোটা মনে আছে আমি ভুল স্পর্শ করেছিলাম।”

“এটা নিয়ে তো দ্বিতীয়বার ছিল।তবে এতো গিল্টি ফিল করছেন কেন?”

কবীর বিবর্ণ হেসে বলল,

“সম্মান ও কামনার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে লিটল চেরী।”

তোশা পুনরায় অনুভূতিহীন দৃষ্টিতে কবীরকে দেখছে।এইতো সেই মানুষটা যে তার স্বপ্নের পুরুষ ছিল উহু,বরং আছে।এবং সবসময় থাকবে।কিন্তু আজকের পর থেকে বিচ্ছেদ যে শুরু হবে তাদের মধ্যে।সেটি কী কখনো মিটবে?

“আপনি কিছুই করেননি কবীর শাহ।যা আমার কাছে সুখের বিষয় সেটিকে ভুল বলবেন না।আর হ্যাঁ আপনাকে দেশ ছাড়তে হবেনা।আমি কখনো আপনার সামনে আসবো না আজকের পর থেকে।”

“কেন আসবেনা?এর মানে আমি ভুল করেছি কিছু।”

বাক্য দুটো বলতে গিয়ে কবীরের কণ্ঠ মৃদু আন্দোলিত হয়ে উঠলো।তীব্র আশংকায় বুকটি শেষ হয়ে যাচ্ছে তার।তোশা নিজেকে সামলে বলল,

“আমি বুঝেছি আপনার আমার হয়না।আর সত্যিই আবেগ ছিল কিছুটা।ভাববেন না টাকার জন্য ছিলাম।”

রেগে গেলো কবীর।মেয়েটির বাহু শক্ত করে ধরলো।দাঁতে দাঁত ঘর্ষণ হলো তার।

“আমি কখনো সেটা বলেছি?এরকম অদ্ভূত মনগড়া কথা বললে ট্রাকের নিচে ধা ক্কা দিয়ে ফেলে দিবো।”

“না আপনি বলেননি।আমি কথার কথা বললাম।যাই হোক সত্যিই আবেগ ছিল।আপনি হালকা কাছে আসায় মিটে গিয়েছে।”

আশ্চর্য হয়ে তোশার বাহু ছেড়ে দিলো কবীর।শুকনো তিক্ত ঢোক গিলে শুধালো,

“এইতো বললে সময়টা সুখের ছিল।তবে আমার স্পর্শে খারাপ লেগেছে তোমার?”

“ভুলে বলেছি।কিন্তু আপনার সামনে কখনো আসবো না।টাকা পয়সার দিক দিয়ে দেখতে গেলে আমি আপনাকে ডিজার্ভ করিনা আর সৌন্দর্য বয়সের দিক দিয়ে দেখতে গেলে আপনি আমাকে ডিজার্ভ করেননা।তাই দূরে থাকা ভালো।দেশ ছাড়বেন না।অন্তত ছেলেকে সাথে নিয়ে বাঁচেন।”

কবীর যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা যে এটাই সেই ছোট্ট তোশামণি কীনা।যার সঙ্গে এইতো মাত্র কয়েকমাস আগে পরিচয় হলো তার।পুতুলের মতোন আশেপাশে মিশে থাকতো।এখন তার সামনে যে শক্ত,দৃঢ় মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে তার বয়স যেন বিশ বছর বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছে।পরবর্তীতে কবীরের সম্মান আঘাত এলো।সে শক্ত কণ্ঠে বলল,

“তোমার থেকেও সুন্দর আমার টগর ছিল তোশা।সেই হিসেবে চাইলেই আরো ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করি।আজকে যা অপমান করলে আমাকে তুমি।সব কথা ভুলে গেলেও শেষের কোনো বাক্য ভুলবো না।যাও কখনো আমার সামনে আসবেনা।”

তোশা অধরযুগল কাঁ ম ড়ে ধরে অশ্রু আঁটকানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু শক্তি তো পাচ্ছে না মেয়েটা।কবীর পিছন ফিরে বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো।পুনরায় হু ং কা রের অনুরূপ বলল,

“এরপর যদি কখনো আমাদের দেখা হয় তোশা তবে হয় তুমি আমার প্রেমিক রুপ দেখবে যেখানে বয়স,সম্পর্কের কোনো প্রকার ভয় থাকবেনা।তা নয় অবহেলার রুপ দেখবে।যাই হোক দেখা হলে কী ডিজার্ভ করি আমি বুঝিয়ে দিবো।”

ব্যস এতোটুকু কথার বিপরীতে কোনো কিছু বলার সাহস হয়ে উঠেনি তোশার।কবীর আর একটিবারও তার দিকে দৃষ্টি দেয়নি।তোশাও পাথরের মূর্তির মতোন গাড়ীতে গিয়ে বসলো।শুধু যখন পাশে তাহিয়ার সান্নিধ্য পেলো তখন মাকে শক্ত জড়িয়ে ধরে বলল,

“তোমাকে অনেক ভালোবাসি আম্মু।ধন্যবাদ আমাকে জীবনে রাখার জন্য।”

মেয়ের মন খারাপ দেখে তাহিয়া শুধালো,

“কী হয়েছে তোশামণি?মায়ের প্রতি হঠাৎ এতো ভালোবাসা?”

“সবসময় তোমাকে ভালোবাসি আম্মু।”

গাড়ী চলতে শুরু করলো।তোশা জানে এখন গাড়ী থেকে মাথা বের করলে কবীরের দেখা পাবে।কিন্তু সে ভুলেও এই কাজটি করবেনা।চোখ বন্ধ করে সেদিনের রাতের ঘটনাগুলো মনে করলো।কবীরের বলা প্রত্যেকটি বাক্য তার এখনও স্মরণে আছে।হয়তো আজীবন থাকবে।

(***)

সময়ের স্রোতে চারটি বসন্ত কেঁটে গিয়েছে।দুনিয়ার সমীরণের সঙ্গে মানুষগুলোও যেন বদলে গিয়েছে।এইযে তোশা নামক সেই কিশোরী বিশ বছরের যুবতী।এক সপ্তাহ পূর্বে ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।বয়স বেড়েছে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শারীরিক ও মানসিক পরিপক্বতা বেড়েছে।কিন্তু এখনও যেন তাহিয়ার ছোট্ট কন্যাটি।ক্ষণবাদে ভার্সিটিতে যাবে তোশা।টেবিলে বসে আছে নাস্তার জন্য।তাহিয়া ফোনে কথা বলছে আর মেয়ের মুখে ব্রেড ভরে দিচ্ছে।পাশে কল্লোল বসে আস্তে করে চায়ে চুমুক দিচ্ছে।

“ফুপু তুমি কেন তোশামণিকে এখনও খাইয়ে দাও।ও তো বড় হয়ে গিয়েছে।”

তাহিয়া মুচকি হেসে বলল,

“ও আমার কাছে সবসময় ছোট থাকবে।যাই হোক ওকে ভার্সিটিতে নামিয়ে তবে তুমি যাবে।”

“তোশাকে তো কতোবার বলি ড্রাইভিং শিখে নাও।”

মুখে এতোগুলো খাবার নিয়ে তোশা জবাব দিলো,

“গাড়ী চালাতে ভালো লাগেনা আমার।তুমি না নিলে বলো আমি উবারে চলে যাবো।”

“নিয়ে যাবো তো।জলদি খেয়ে নাও।”

কল্লোল বর্তমানে মেডিক্যালে পড়াশোনা করছে।ভবিষ্যত ডাক্তার হওয়ার সমস্ত হাবভাব প্রকাশ পেয়েছে তারমধ্য।তাহিয়া গোপনে নিশ্বাস নিলো।তোশাকে যে কল্লোল পছন্দ করে সেটা সে জানে।কিন্তু মেয়েটির মতিগতি বুঝেনা সে।

গাড়ীতে বসে একমনে বাহিরে তাঁকিয়ে আছে তোশা।ঢাকা শহরকে তার অনুভূতিহীন শহর মনে হয়।কিন্তু ভালো লাগেনা আবার এখান থেকে দূরে কোথাও গিয়ে।তীরে এসে তরী ডুবার মতোন শাহবাগে এসে জ্যামে পড়লো তারা।হঠাৎ আনমনে তোশার বাহিরে ফুলের দোকানগুলোর উপর দৃষ্টি পড়লো।নিশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে গেলো তার।সমস্ত মাদকতা নিয়ে সেই তামাটে স্বপ্নের পুরুষটি দাঁড়িয়ে আছে।বাহুতে অন্য এক রমণীর হাত।প্রায় তিন বছর পর তার দর্শণ পেলো তোশা।দোকানদার একগুচ্ছ গোলাপ এগিয়ে দিলো কবীরের দিকে।সে হাতে নিয়ে পাশে থাকা রমণীর উদ্দেশ্যে এগিয়ে দিলো।এর বেশী নিতে পারলো না তোশা।চোখ ভরে এলো তার।এদিকে জ্যাম ছেড়ে গিয়েছে।পাশে বসে থাকা কল্লোলকে বলল,

“ভাইয়া একটু আস্তে কিন্তু যখন বলবো তখন জোরে চালাবে।”

“কেন?”

তোশা জবাব দিলো না।পানি ভর্তি বোতল নিয়ে জানালা থেকে কবীরের দিকে ছুঁড়ে মারলো।মুহুর্তেই ভিজে গেলো লোকটা।চমকে গাড়ীর দিকে তাঁকালে দেখতে পেলো একটি মেয়ে মুখ বের করে চিল্লিয়ে বলল,

“হেইট ইউ কবীর শাহ।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২৩
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“পুরুষ কী শুধু প্রেমিকাকে ফুল দিতে পারে অন্য কাওকে না?আমি জন্ম থেকে এতিম ছিলাম।কিন্তু একজন চমৎকার মানুষ আমাকে নিজের পরিচয়ে বড় করে তুলেছেন।সেই চমৎকার মানুষটির আবার আরেকজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের ছেলে আছে।যে নিজ বোনের অনুরূপ আমাকে সম্মান করে, ভালোবাসে।আমার প্রিয় ফুল গোলাপ।যখুনি দেখা হবে ফুল কিনে দিতে ভুলবেনা।এমনকি সেই ভাইয়ের ছোট ছেলেটিও দেখা হলে ফুল দিবে।এখন বলো তোমরা তারা কী পুরুষ নীতির বিরুদ্ধে কাজ করছে?”

ক্লাসের অন্যসকল ছেলে-মেয়েগুলো না বোধক শব্দ করলো।শুধু মাত্র সামনে বসে থাকা অতি সুন্দরী যুবতীটি নিজ ওষ্ঠাধর একত্রে চেপে বসে রইলো।এতোক্ষণ যে কথাগুলো বলল সে তাদের একজন অধ্যাপিকা সিয়া শাহ।এই ম্যাডামটি যখন ক্লাসে ঢুকলো তখুনি তোশার প্রাণ পাখি ঝিমিয়ে গিয়েছিল।পরবর্তী শাহ পদবি শুনে চক্ষু চড়কগাছ।তবে ভেবেই নিয়েছিল সিয়া ম্যাম কিছু শুনেনি বা তাকে চিনবেনা।কিন্তু আগাগোড়া সবটাই তো ভুল হলো।সিয়া এগিয়ে এসে ঠিক তোশার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

“পরিচিত ব্যক্তিকে অচেনা কাওকে ফুল দিতে দেখলে তুমি কী ভাববে প্রথমে মিস?”

“তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।”

“জি তোশা।তুমি কী ভাববে?”

তোশা উষ্ণ শ্বাস ফেললো।যা হবার হোক।তবুও সে সত্যিটাই বলবে।দাঁড়িয়ে সে মাথা নিচু করে বলল,

“দুনিয়াতে অন্যসব পুরুষ কাকে ফুল দিলো আমার মাথা ব্যাথা নেই।কিন্তু একজন নির্দয়,পাষাণ ব্যক্তিকে কাওকে ফুল দিতে দেখলে আমার অবশ্যই পুড়বে।”

চমকে উঠলো সিয়া।কপালে খুব চিকন ভাঁজ পড়লো।চোখের চশমাটি একটু ঠিক করে বলল,

“তোমার বয়স কতো?”

“জি ম্যাম বিশ বছর।”

“বেশ।ক্লাস শেষে আমার সঙ্গে দেখা করবে।”

তোশা মাথা নাড়িয়ে বসে পড়লো।সিয়া নামক যে তাদের ম্যাডাম আছে আজ সে জানলো।কারণ সিয়া এক সপ্তাহের ছুটিতে ছিল।নাহ,এভাবে সত্য বলায় তোশার বিন্দুমাত্র আক্ষেপ হচ্ছে না।বরং মনে মনে সে খুশি।আবার কবীর শাহ এর জীবনে ঝড় তোলার একটি মাত্র সরু পথ তো খুঁজে পেলো।ক্লাসটা পরিচয় দেওয়া নেওয়ার মধ্যেই শেষ হলো।সিয়ার পিছন পিছন ছোট্ট নরম পায়ে বের হয়ে এলো তোশা।একটু নির্জনে যুবতীর উদ্দেশ্যে সে শুধালো,

“আমার ভাইকে এতো ঘৃণা করার কারণ কী তোশা?তুমি কী মায়ান চৌধুরীর মেয়ে?”

“ঘৃণা করিনা ভালোবাসি।হ্যাঁ আমি মায়ান চৌধুরীর মেয়ে।”

সিয়ার অক্ষিগোলক স্বীয় ছন্দে বড় হয়ে গেলো।বাচ্চা মেয়েটির পা থেকে মাথা অবধি একবার দেখে নিলো।

“কেমন ভালোবাসা?ভাইয়ের বয়স চল্লিশ জানো?তোমার দ্বিগুণ।”

“ম্যাম বয়স তো সংখ্যামাত্র।”

“একদম না।আজকের দিনে বয়স,যোগ্যতা,লুক সবকিছু মেটার করে।নেহাৎই আমার ভাই সুন্দর,যোগ্যতাসম্পন্ন।বয়স ওর চল্লিশ মনে হয়না।”

তোশা থমথমে মুখে বলল,

“কিন্তু যাই বলেন কবীর শাহ তো কালো।”

“তুমি আমার ভাইকে কালো বললে?”

“যা সত্যি তাই।”

“তাহলে ভালোবাসার কথা কেন বলছো?আবার ঘৃণাও করো।স্টুপিড মেয়ে কোধাকার। ক্লাসে যাও।”

“সব কথা তো শুনেন ম্যাডাম।আপনার ভাইকে এতোদিন পর দেখলাম তাও ফুল দিতে।এজন্য রাগ সামলাতে পারিনি।”

সিয়া ধমকে বলল,

“ক্লাসে যাও।এখুনি যাবে।এখন মনে পড়লো দুই বছর আগে আমার ভাই বলেছিল এরকম একজনের কথা।”

“সত্যি?কী বলেছিল?”

” ক্লাসে যাও তোশা।”

তোশা গোমড়া মুখে ক্লাসের দিকে এগিয়ে গেলো।সিয়া সেদিকে তাঁকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে কবীরের নাম্বারে ডায়াল করলো।ওপাশ থেকে রিসিভ হতে বলল,

“তোশা এখনও তোকে ভালোবাসে ভাই।আমি পরীক্ষা করে দেখেছি।”

“ভালোবাসার ভূত তাহলে এখনও মাথা থেকে নামেনি।”

“মনে হয়না নামবে।যাই হোক মেয়েটা হয়তো সত্যিই তোকে ভালোবাসে।তা নয় চার বছরে যা কমলো না।তুই নিজেও তো..।”

কথা সম্পূর্ণ করতে পারলো না সিয়া।তার পূর্বেই ফোনটি কেঁটে দিয়েছে কবীর।

(***)

সূর্যের সঙ্গে যেন প্রতিযোগীতা করে ঘুম থেকে উঠে কবীর।এইতো ক্ষীণ আলো প্রকাশ পাওয়ার পূর্বেই তৈরী হয়ে বাহিরে দৌড়ানোর জন্য বের হয়ে যায়।এসব নিয়মিত শরীর চর্চার জন্য কীনা চল্লিশ বছর বয়সেও দেখতে যথেষ্ট কম বয়সী লাগে।লম্বা বড় বড় পা ফেলে সে দৌড়ে চলেছে বিশাল বড় মাঠটির এ মাথা থেকে ওই মাথা।হুট করে তার সঙ্গী দৌড়ে এলো কোথাও থেকে।থেমে গেলো কবীর।মিষ্টি হেসে বিড়ালটিকে কোলে তুলে নিলো।বিড়ালটি ম্যাও ম্যাও শব্দে আদরে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে ব্যক্তিটিকে।এই প্রাণীটিকে দেখলেই তোশার কথা মনে পড়ে কবীরের।উষ্ণ শ্বাস বের হয়ে এলো ভেতর থেকে।কিছুটা সময় আদর করে প্রাণিটিকে নামিয়ে দিলো কবীর।একজনের যে পালিত বিড়াল তা গলার মালা দেখে বোঝা যায়।পুনরায় দৌড়ানো শুরু করলো সে।এবারও তার সঙ্গী হলো কিন্তু মানুষ।কবীর ভ্রুঁ কু্চকে পাশ ফিরে তোশাকে দেখে চমকে গেলো।নিশ্চয় মেয়েটি বিভ্রম তার।ওতোটা তোয়াক্কা না করে কবীর নিজ ছন্দে দৌড়াচ্ছে।

ব্যক্তিটির এরকম নির্বিকার ভঙ্গি দেখে মেজাজটি খারাপ হয়ে গেলো তোশা।চিল্লিয়ে বলল,

“আস্তে কবীর শাহ।এতো বেশী দৌড়াচ্ছেন কেন?”

থেমে গেলো কবীর।অবিশ্বাসের সুরে বলল,

“তোশা তুমি?”

“কেন অন্য কাওকে আশা করেছিলেন?”

“আবার শুরু হলো।কোন বুদ্ধিতে যে সিয়াকে নিয়ে ফুল কিনতে গিয়েছিলাম।”

কবীরের বিরক্তিতে তোশার বুকটা ভেঙে গেলো একদম।কান্নাগুলো প্রায় চলেই এসেছিল এমন সময় থেমে গেলো।শুকনো ঢোক গিলে বলল,

“দেখুন।”

“হুম বলো।”

“আরে আমাকে দেখতে বলেছি।”

“তুমি কী দেখার জিনিস?”

“দেখেন তো।”

তোশা ঘুরেফিরে কবীরকে দেখালো।হলুদ ড্রেসটায় তাকে ছোট্ট হাঁসের ছানার মতোন লাগছে।

“দেখা শেষ এবার বলো।”

“আমার এনআইডি কার্ডটা তো বাসায় রেখে এসেছি।পারলে সেটাই দেখাতাম।এখন আমি বড় হয়েছি।সেসব বাদ আমি আপনার পিছনে আসিনি।না হলে ছয়দিন আগে পানি মে রে ছি লা ম এরপর দেখেছেন আমাকে?বরং ওইযে যে বিড়ালটাকে দেখলেন ওদের বাসায় এসেছি।টিকুর মা আমার বান্ধুবী।”

“ভেরী গুড।তা আমার সামনে কেন এলে?”

“বারান্দা থেকে গত তিনদিন ধরে দেখি লোভ সামলাতে পারিনি আজ এজন্য।বাই দ্যা ওয়ে আপনি আরো সুন্দর হয়েছেন কবীর শাহ।তুলে বিয়ে করে ফেলতে মন চাচ্ছে।বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসেছি।আপনি খুব সুন্দর ব্রেইন ওয়াশ করেছিলেন আমার অতীতে।ছোট ছিলাম দেখে।এবার ছাড়বো না।তাই বলতে এলাম।”

“ন্যাকা মেয়ে একটা।”

তোশার মাথায় শক্ত করে একটা চাটি দিয়ে পুনরায় দৌড়াতে লাগলো কবীর।কিন্তু আশ্চর্য রাউন্ড শেষ করে এসে দেখে মেয়েটি নেই।শুধু টিকু নামক বিড়ালটি আছে।কবীরকে দেখে প্রাণিটি উচ্ছাসিত হয়ে তার দিকে এগুবে ওমনিই একটা মেয়ে ডাকতে ডাকতে এদিকে এলো।

“এইযে ভাইয়া পিকুকে একটু দেন তো।”

কবীর খেয়াল করলো মেয়েটি তোশার বয়সী।কিন্তু নাম ভিন্ন বলায় সে শুধালো,

“ওর নাম তো টিকু।”

“না তো।পিকু।”

“কেন তোশা যে বলল।”

“তোশা কে?”

“তোমার বান্ধুবী।”

মেয়েটি মুচকি হেসে বলল,

“আমার এমন নামের কোনো বান্ধুবী নেই।আচ্ছা আপনি যাকে দেখেছেন সে কী খুব সুন্দরী?”

গম্ভীর মুখে কবীর জবাব দিলো,

“হুম পরীর মতোন দেখতে।”

“নিশ্চয় তবে সেই জিনকে দেখেছেন যা আমার বড় ভাইয়ের পিছনে দশ বছর ছিল।এইযে মাঠে যারা দৌড়ায় তাদের এসে ধরে।আপনি যা সুন্দর তাই আপনার প্রিয় মানুষটার রুপ ধরে এসেছে।”

“আমাকে বোকা মনে হয় তোমার মেয়ে?”

“বিশ্বাস করলেন না তো?সত্যি বলছি।”

কবীরের কেমন যেন খটকা লাগলো।তাই সে তৎক্ষনাৎ তাহিয়াকে ফোন করে তোশার খোঁজ করলো।মেয়েটা বাড়ীতে ঘুমাচ্ছে শুনে চমকে গেলো।কিন্তু তা প্রকাশ করলো না।নিজ বাড়ী থেকে খুব বেশী দূরে এই মাঠটি নয়।কতো বছর ধরে আসে কিন্তু এমন তো শুনেনি।আগুন্তক মেয়েটি বিড়ালটিকে কোলে নিয়ে নিজ বাসার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো।এই পুরো ঘটনায় একমাত্র টিকু যে এই মাত্র পিকু নামে ভূষিত হয়েছে সে সমান তালে ম্যাও ম্যাও করছে।যার বাংলা করলে হয়তো এটা দাঁড়াবে,

“কবীর শাহ তোমাকে দুনিয়ায় সবথেকে মিষ্টি মেয়েটি বোকা বানালো।এবার সে কোমড় বেঁধে নেমেছে প্রেম প্রেম খেলার মাঠে।হারবে না।”

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-১৮+১৯+২০

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১৮
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“স্কুলে না গিয়ে এখানে কী করছো তোশা?”

দিশার প্রশ্নে বিব্রতবোধ করলো তোশা।এতোক্ষণ যে বাতাবরণ উষ্ণতায় মোড়ানো ছিল হুট করে তা নির্জীব হয়ে গেলো।শীতল অসহনীয় হয়ে উঠলো চারিধার।নির্জনতায় শুধু একটু দূরে থাকা প্লেট ও চামচের টুংটাং স ং ঘ র্ষের শব্দ শোনা যাচ্ছে।

“ম্যাম,আমি অসুস্থ ছিলাম।এই কারণে যাওয়া হয়নি।”

“রেস্ট্রুরেন্ট কী সুস্থ হওয়ার জায়গা?”

তোশা আস্তে করে জবাব দিলো,

“এখানে না এলে আমি সুস্থ হতাম না।”

বাক্যটির বিপরীতে ঠিক কী বলবে দিশা সেটা খুঁজে পেলো না।অথচ যাকে ঘিরে এই দ্বিধার মেলা বসেছে।সেই কবীর শাহ নিশ্চুপ হয়ে ফোন ঘাটছে।মুখটা তুলেও দিশার দিকে দেখলো না।

“ঠিক আছে।কাল স্কুলে দেখা হবে।নিজের খেয়াল রেখো।”

“জি ম্যাম।”

দিশা চলে গেলে তোশা আস্তে করে কবীরের পাশে এসে বসলো।লোকটার মুখের উজ্জ্বলতা কয়েক ধাপ নিচে নেমে গেছে যেন।

“হঠাৎ আপনার কী হলো কবীর শাহ?”

“মিটিং আছে।তোমাকে পৌঁছে দিচ্ছি।”

“না যেতে পারবো।মনে থাকবে তো আমরা এখন থেকে বন্ধু?”

থমথমে গলায় কবীর জবাব দিলো,

“থাকবে।কিন্তু আজকের পর থেকে এভাবে দেখা করতে আসবেনা।বিষয়টা ভালো দেখা যায়না।”

“আমার সাথেই সব ভালো দেখা যায়না আপনার।অথচ আড়ালে বেলাডোনা বলে ঠিক ডাকেন।এমনকি।থাক বললাম না।কিছুটা হুঁশ ছিল আমার।”

কবীরের অক্ষিগোলক আকারে যেন কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়ে গেলো।পরক্ষণে মৃদু হেসে বলল,

“সব চুম্বন কামনার হয়না।কিছু স্পর্শ সম্মানেরও হয় বেলাডোনা।”

(***)

রাতের খাবার তিল পরিমাণও খেতে পারেনি দিশা।কী যে য ন্ত্র ণা হচ্ছে তার।একে তো কবীরের বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে মনটা খারাপ ছিল।আবার তোশার সঙ্গে আজ রেস্ট্রুরেন্টে দেখা হলো।কবীরের বাহুতে মেয়েটা যে মাথা ঠেকিয়ে ছিল।সেটা খুব ভালোমতন দেখেছে।অনেকটা সময় নিজের সঙ্গে দ্বন্ধতে লিপ্ত থেকে অবশেষে কবীরের নাম্বারে ডায়াল করলো।প্রথম কয়েকবার রিসিভ হলো না।কিন্তু একসময় অপ্রত্যাশিতভাবে কবীরের কণ্ঠটি শোনা গেলো।

“বলো।”

“কবীর তুমি কী পাগল হয়ে গিয়েছো?আমি শুধু জানতাম মেয়েটা সঙ্গে কথা হয়।কিন্তু ওরকম কোনো সম্পর্ক নেই।তবে আজ রেস্ট্রুরেন্টে যা দেখলাম?ওসব কী?”

“স্টপ দিশা।আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে জানো।”

“জানি।এই কারণে বলছি তোশাকে এতোটা আস্কারা দিওনা।ও বাচ্চা একটি মেয়ে।এবং তোমার বন্ধুর মেয়ে।মায়ান যদি কখনো জানতে পারে কেমন হবে?আমার ভয় লাগছে কবীর।তোশা অনেক ভালো একটি মেয়ে।তোমার জন্য জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে ওর।”

“এতো কথা কেন বলো দিশা?আমার জীবনে কী হচ্ছে না হচ্ছে সেটা দেখার বিষয় তোমার না।আমাকে কী চরিত্রহীন মনে হয়?”

কথাগুলো বলার সময় কবীরের কণ্ঠে ভীষণ রাগ মিশে ছিল।সে পুনরায় বলল,

“আমি জানি কীভাবে ওকে হ্যান্ডেল করতে হয়।আমার বিয়ে ও বাচ্চার কথা শুনে মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।সেখানে কঠোর আমি কীভাবে হবো?আগে যেটা হইনি।”

পূর্ব দিক থেকে উষ্ণ বায়ু এসে দিশার মুখোমন্ডলে লুটপাট করতে লাগলো।তবুও যেন অনবরত ঘামতে থাকা স্যাতস্যাতে অনুভূতি কমছেনা।কিছুটা আবেগ ও আন্দোলিত কণ্ঠে শুধালো,

“তোশাকে ভালোবাসো তুমি কবীর?”

“ভালোবাসা?”

শব্দটি কবীর শাহ নামক শক্ত পুরুষকে গম্ভীর চিন্তায় ফেলে দিলো।সে চট জলদি কোনো জবাব দিতে পারছেনা।তোশাকে সে অনুভব করে।এই কথাটি তো মিথ্যা নয়।দিশা এই নিরবতার চাদরকে সরিয়ে বলল,

“তবে ভালোবাসো মেয়েটিকে?”

“সম্ভবত অনুভূতি তৈরী হয়েছে।আমি এটা অস্বীকার করতে পারবো না।”

“লজ্জা করলো না নিজ প্রাক্তন স্ত্রীকে এসব কথা বলতে?”

“আমি নিজ থেকে বলেছি এই কথা?অদ্ভূত।”

দিশা কিছু বলার পূর্বে ফোনটি কেঁটে দিলো কবীর।যেন এরপর কোনো কথা থাকার মতো নেই।অপরদিকে দিশা নামক নারীটি অসহ্য অনলে জ্বলেপুড়ে একদম দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে।

(***)

“আপনি বিশ্বাস রাখতে পারেন।আমরা নিজেদের বেস্ট দিয়ে একটা ইভেন্ট সম্পূর্ণ করি।আপনার মেয়ের বিয়েতে কোনোকিছুর কম রাখবো না।”

সামনে বসে থাকা ষাট বছর বয়সী লোকটি মৃদু হেসে বলল,

“আপনাদের ভালো নাম আছে দেখে এসেছি মিস.তাহিয়া।বাই দ্য ওয়ে মিস্টার শাহ কোথায়?”

“কবীর আসছে।আপনার সঙ্গে পার্সোনালি কথা বলবে ও।”

ফোন বের করে পুনরায় কবীরকে ম্যাসেজ করলো তাহিয়া।বড্ড উসখুস লাগছে তার।কারণটি হলো সামনে বসে থাকা বৃদ্ধ লোকটিকে সে চিনে।এমনকি তার পাশে বসে থাকা আটত্রিশ বছর বয়সে বেশ খানিকটা যৌবন ধরে রাখা আসিফকেও।একসময় এই আসিফ নামের লোকটি তাহিয়ার জন্য পাগলপ্রায় ছিল।যখন মায়ানের সঙ্গে বিয়ের কথা সকলে জানলো তখন যে লোকটা আ ত্ম হ ত্যা করার মতোও পদক্ষেপ নিয়েছিল সেটাও জানা তাহিয়ার।পরবর্তীতে দেখা হয়নি কখনো।এতোদিন পর ক্লায়েন্ট হিসেবে আসিফকে পাওয়া বেশ বিব্রতকর।অথচ অপর ব্যক্তিটা কেমন নির্জীব শান্ত হয়ে ফুলের সাজসজ্জা দেখতে ব্যস্ত।যেন তাহিয়াকে কখনো সে দেখেনি। সবেমাত্রই পরিচয় হলো যেন। অফিস রুমটায় হুট করে এক তামাটে চাঁদের আর্বিভাব ঘটলো।যে নিজের সমস্ত আলোকছটা নিয়ে চেয়ারে বসার পূর্বে আসিফের সঙ্গে করমর্দন করতে ভুললো না।

“কেমন আছেন আসিফ ভাই?”

“কবীর তোমাকে দেখে তো বয়স আন্দাজ করা যায়না।কী ব্যাপার এতো সৌন্দর্যের?”

“ব্যাচেলর তো।এই কারণে এতোটা সৌন্দর্য।”

আসিফ হেসে বলল,

“আমিও তো এক জীবন ধরে ব্যাচেলর।কিন্তু চুলের রঙ পরিবর্তন হতে শুরু হয়েছে।তোমরা কেমন যেন রহস্যময় মানুষ।কারো সৌন্দর্য কমেনি।”

কথাটি তাহিয়ার দিকে তাঁকিয়ে বলল আসিফ।যাতে তার অস্বস্তি আরো বৃদ্ধি পেয়ে গেলো।এরপর পুরো মিটিং এ তিনটি পুরুষের কণ্ঠ শোনা গিয়েছে।তাহিয়া নিশ্চুপে শুধু কফির কাপে চুমুক বসিয়েছে।ঘড়িতে দুপুর দুটো বাজে।তাহিয়া উঠে দাঁড়ালো হঠাৎ।

“কবীর তুমি একটু কথা বলো।তোশামণি আসছে কীনা দেখছি আমি।”

“তোশামণি কে কবীর?”

কৌতুহলী হয়ে প্রশ্নটি শুধালো আসিফ।

“তাহিয়ার মেয়ে।”

“ওহ।মায়ান কেমন আছে?”

তাহিয়া এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি আর নিতে পারলো না।সে তৎক্ষনাৎ বের হয়ে গেলো।কবীর আস্তে করে বলল,

“আমার মতোন মায়ান-তাহিয়ারও ডিভোর্স হয়েছে।আঙকেল আসুন লাঞ্চ আমাদের সাথে করবেন।”

কিছু যেন বলতে চেয়েছিল আসিফ।কিন্তু পরিস্থিতির চাপে নিশ্চুপ থেকে গেলো।

বাহিরের এক জায়গায় ক্লান্ত পরিশ্রান্ত স্কুল ড্রেস পরা কিশোরীকে দেখে কবীরের অধরে হাসি ফুটে উঠলো।মেয়েটির ঘর্মাক্ত মুখটিও যেন মায়াতে জড়ানো।মেয়েটির প্রতি এতো ভালোলাগা কবীরকে কষ্টের সঙ্গে শান্তিটাও দিয়ে যায়।তাহিয়া যত্ন সহকারে মেয়ের মুখটা মুছে দিচ্ছে।সে ফোন হাতে চলে গেলে তৎক্ষনাৎ কবীর তার পাশে গিয়ে বসলো।তোশা না তাঁকিয়ে বলল,

“জানেন কবীর শাহ।আপনার বিয়ে ভে ঙে গিয়েছে।”

“আমি জানিনা তো।তুমি কীভাবে জানলে?”

নাকের ডগায় বিন্দুঘাম ছিল।তোশা এগিয়ে এসে সেটা কবীরের বাহুতে মুছে বলল,

“কেবল মায়ের ফোনে কল এসেছিল।কলি আন্টি না করে দিয়েছে।আমার ভা গ্য কী ভালো তাইনা?”

কিশোরীর মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি।সে আরো উচ্ছাসিত কণ্ঠে বলল,

“এখন গেইম আবার স্টার্ট হবে কবীর শাহ।রাউন্ড থ্রি।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১৯
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“কলিকে আগে থেকে ওর বন্ধু পছন্দ করতো।লোকটার স্ত্রী মা রা গিয়েছে গত বছর।তাই বিয়ে ঠিক হওয়ার কথা শুনে বলেছে পছন্দের বিষয়টা।এখন সেই ছেলে আর কলি মিলে মোটামুটির সংসার গড়বে।এই কারণে বিয়েটা হচ্ছে না তোমার সঙ্গে।আমি কীভাবে আন্টিকে বলবো বিষয়টি।”

“মোটামুটির সংসার?”

“ছেলেটির স্বাস্থ্য মোটা।”

কবীরের কাছে নিজ বিয়ে ভাঙার বিষয়টি হাস্যকর না লাগলেও কিশোরী তোশা উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো।তাহিয়া মেয়েকে চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বলল।

“দেখো কবীর।”

“এই বিষয়ে পরে কথা হবে তাহিয়া।এখনও আসিফ ভাইয়ারা আছেন।”

“তুমি একটু তাদের নিয়ে লাঞ্চ করো।আমি মেয়েকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যাবো।”

“ততোসময়ে ওর খুদা লেগে যাবে।লাঞ্চ করিয়ে নিয়ে যাও।”

কবীরের একটু বেশীই তোশার প্রতি চিন্তা প্রকাশ পায়।যা তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে ঠিক মিশেনা।বিষয়টি তাহিয়া অনেকবার খেয়াল করেছে।পরবর্তীতে সঠিক কিছু অনুসন্ধান করে না পাওয়ায় চিন্তাটি এগিয়ে নিয়ে যায়নি।আসিফ ও তার বাবা আবদুল এমন সময় কথা বলতে বলতে সেখানে প্রবেশ করলো।সর্বপ্রথম আসিফের টেবিলে বসে থাকা ছিমছাম গড়নের তোশার উপরে নজর পড়লো।মায়ের সঙ্গে যতো বিবাদ হোক।তোশার সাথে পরিচয় হওয়ার লোভ সে সামলাতে পারলো না।পাশে বসতে বসতে বলল,

“তাহিয়ার ছোট ভার্সন তোমার নাকী?”

“আমাকে বলছেন?”

“জি ম্যাডাম আপনাকে।”

অচেনা মানুষ বিধায় তোশা মায়ের পানে তাঁকালো।তাহিয়া আস্তে করে বলল,

“আমাদের সিনিয়র ছিলেন ইনি।নাম বলো তোমার।”

“তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।”

“সুন্দর নাম।আমি আসিফ মির্জা।”

“আমাকে আম্মুর ছোট ভার্সন বললেন কেন?”

“খানিকটা তাহিয়ার কিশোরী বয়সের মতোন তুমি।এই কারণে।আব্বু মনে আছে এই বয়সে থাকতে তুমি রোজ তাহিয়াকে পটেটো চিপস কিনে দিতে।”

আবদুল ছোট্ট করে ‘হুম’ বলল।সঙ্গত কারণে সে তাহিয়াকে এখন পছন্দ করেনা।অথচ এক সময় মেয়ের থেকেও বেশী ভালোবাসতেন।অতীতের জন্য এতো সময় অচেনার বেশ ধরে ছিল।কিন্তু ছেলের এতোটা পরিস্ফুটিত হওয়া পছন্দ হচ্ছে না তার।

“কবীর তোমাদের তিনজনের পুরো ফাংশন গেস্ট হিসেবেও এটেন্ড করতে হবে।আমি ইনভাইট করে যাচ্ছি।”

“হয়তো আমার সম্ভব হবেনা ভাইয়া।কিন্তু তাহিয়া থাকবে।”

“কোনো কথা শুনছিনা।তাইয়ুবাকে নিয়ে আসবে তোমরা।”

কবীর সৌজন্যেবোধক হাসলো।ব্যক্তিটার খাবার গ্রহণ করাও তোশার কাছে অনন্য লাগে।সে আড়চোখে তাঁকিয়ে আছে।হুট করে কবীরের সঙ্গে দৃষ্টির মিলন ঘটলো তার।ব্যক্তিটা ভ্রু উঁচু করে ইশারায় হয়তো জিজ্ঞেস করলো এভাবে দেখছে কেন?তোশা মিষ্টি হেসে মাথাটা এপাশ ওপাশ দুলালো।খাওয়া দাওয়া শেষে আসিফরা বিদায় নিলো।তোশার মাথায় সুন্দর করে হাত বুলিয়ে আসিফ বলল,

“তাইয়ুবা তুমি কিন্তু ফাংশনে আসবে।আমি অপেক্ষায় থাকবো।”

“অবশ্যই আঙকেল।”

গাড়ীতে উঠে বসলো তারা।আসিফ উষ্ণ শ্বাস ফেলে স্টার্ট করলো গাড়ীটি।আবদুল একটু অসন্তোষ প্রকাশ করে বলল,

“তাহিয়ার মেয়ের প্রতি হঠাৎ এতো মায়া দেখালে আসিফ?ভুলে গিয়েছো অতীত?”

“না আব্বু।কিন্তু দ্বিতীয়বার হয়তো একটা সুযোগ পেতে যাচ্ছি আমি।কেন কাজে লাগাবো না।”

“এতোকিছুর পরেও তাহিয়ার প্রতি অনুভূতি আছে?সতেরটি বছর অতিক্রম হয়ে গিয়েছে আসিফ।দিন দুনিয়া বদলে গিয়েছে।”

“আব্বু,ভালোবাসা তো বদলায়নি।যা যুবক বয়সে পাইনি তা আজ যৌবনের শেষে পেয়ে গেলে মন্দ হয়না।হোক না দেরী।”

“বিষয়টা আমার ভালো লাগছেনা।ডিভোর্সের কারণটাও জানিনা।অথচ তুমি পুনরায় স্বপ্ন দেখছো।স্বাবধান থেকো।”

“জি বাবা।বাই দ্যা ওয়ে বাচ্চা মেয়েটা কিন্তু সুন্দর।রেডিমেড মেয়ে পেয়ে গেলে বরং এই বয়সে ভালো হবে।”

আবদুল উষ্ণ শ্বাস ফেললো।ছেলে তাকে সবসময় বন্ধু হিসেবে দেখেছে।এই কারণে মনের কথাগুলো বিনা সংকোচে বলতে পারে।ছেলে এতো বছরেও বিয়ে না করার দুঃখ তার যদি ঘুচে যায় তাহলে সে নিশ্চিন্ত হতে পারবে।

(***)

কতোগুলো প্রাণবন্ত ইন্টারে পড়ুয়া মেয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে ও আলাপ করছে।কোনোকিছু নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একে অপরের উপর হাসতে হাসতে ঢলে পড়ছে।হুট করে তাদের কানে পুরোনো হিন্দি সিনেমার গান ভেসে এলো।তৎক্ষনাৎ তারা থেমে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধ লোকটির উদ্দেশ্যে বলল,

“হ্যালো হ্যান্ডসাম।আজকেও কিশোর কুমার চলছে?”

বৃদ্ধ লোকটি হাসলো।গালের চামড়ায় আরো কয়েকটি ভাঁজ পড়লো।

“ইয়াং লেডিস্ তোমরা জানো না কিশোর কুমার একটি ইমোশন।কী ব্যাপার পড়তে যাচ্ছো তোমরা?আমার সাথে কফি ডেউটের কী হলো?”

“ওটা পরের শুক্রবার।আমরা সকলেই যাবো।”

“মনে থাকে যেন সুন্দরীরা।”

মেয়েগুলো সম্মতিতে মাথা দুলিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো।পাশের কোচিং সেন্টারে তারা পড়াশোনা করে।বৃদ্ধ লোকটির নাম হুমায়ুন।এইতো গত মাসে বয়স বাহাত্তরের ঘর ধরলো।কিন্তু মনটা যেন এখনও সেই সুইট সিক্সটিন।নতুন করে দুনিয়া দেখার ইচ্ছা জাগে।মেয়েগুলোর সাথে এরকম উপহাস তাকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলে।ভেতরে এসে নিজ মিসেসের উদ্দেশ্যে বলল,

“মেয়েগুলো সুন্দর।তাদের সাথে কথা বলাতে তোমার হি ং সা হয়না?তোশামণি তোমার দাদীর আমার প্রতি ভালোবাসা চলে গিয়েছে।”

হুমায়ূনের আফসোস মাখা কণ্ঠে মৃদু হাসলো তোশা।দাদীর হাতে খেতে খেতে জবাব দিলো,

“দাদীকে নিয়ে কফি ডেইটে যাও।দেখবে ভালোবাসা জন্মাবে।”

“তোমার দাদীর কী সেই সময় আছে।কী মিসেস কথা বলছেন না কেন?”

শরীফা বিরক্ত হয়ে বলল,

“আপনি কী ইন্টারে পড়েন?না তো।ওই মেয়েগুলো পাগল বুড়ো দেখে মজা নেয়।”

“তোমার মনে হয় আমি এনাফ হ্যান্ডসাম না।”

“না।”

“অপমান মিসেস।”

হুমায়ূন এতোক্ষণ মজা করলেও এবার প্রসঙ্গ বদলে বলল,

“খয়ের শাহ(পান খায় যে খয়ের দিয়ে) যে বিবাহিত তুমি তা জানতেনা তোশা?এই কারণে আমি বলেছিলাম সব খোঁজ নিয়ে দেখো।এখন কী চাও?শুনলাম অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলে।”

“দাদু আমি জানতাম না।তোমরাও বলো নি।”

“বিষয়টি সাধারণ ছিল।এখনও কী ভালোবাসার ভূত আছে?”

তোশা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলল।শরীফা রাগত সুরে বলল,

“তোমার ভালোবাসা এতোদিনেও কমলো না?শুধু কান্নাকাটি করো দেখে সাহায্য করি।যদি মায়ানের বাবা এসব জানে আমাকে কী বলবে জানো?বড় ভাবী হিসেবে কিন্তু খুব সম্মান করে। খয়ের শাহ এর প্রতি বিশ্বাস আছে ও ভুল করবেনা।এজন্য যা খুশি তাই করতে পারছো।”

“কবীরকে তোমরা খয়ের শাহ বলো কেন?গায়ের রঙের জন্য?”

শরীফা মাথা দুলালো।সে ও হুমায়ূন হচ্ছে মায়ানের আপন চাচা-চাচী।সপ্তাহে একবার তাদের কাছে তোশাকে দিয়ে যায় তাহিয়া।কারণ বুড়ো মানুষ দুটো বড় একা।হুমায়ূন তাদের কথার মাঝে বলল,

“আরে শুনো তোশামণি।যখন তোমার মা-বাবার বিয়ের কথা জানলাম।তখন তো তুলকালাম লেগে গেলো।ছেলে-মেয়ে এখনও এতো ছোট্ট।তোমার দাদা নিজের ব ন্দু ক নিয়ে বের হলেন।এতো অসম্মানের থেকে মে রে ফেলবে ছেলেকে।তখন এই খয়ের মানে কবীর শাহ তোমার দাদার সামনে দাঁড়িয়ে সাহসী হয়ে বলেছিল,’বিয়ে আমি দিয়েছি কী করবেন করেন?’
আবার যখন এতে মায়ানের বাবা আরো রেগে গেলো।তখন বলেছিল’ ভালোবাসা হয়ে গিয়েছে।আমি আপনি বা যে কোনো মানুষ থামানোর কে?যে যার সাথে সুখী থাকে।’
কথাগুলো এখনও আমার কানে এসে লাগে।সেই কবীর শাহ এর প্রেমে তুমি কীভাবে মজলে সেটাই ধোঁয়াশা তোশা।যদি কেউ জানে আমরা তোমাকে সাহায্য করেছি তখন আমাদের ঘৃ ণা করবে মানুষ।”

তোশা সোফা থেকে উঠে এসে হুমায়ূনকে জড়িয়ে ধরলো।আপন দাদার থেকে হুমায়ূন বেশী প্রিয় তার।

“করুক।কিন্তু আমি তোমাদের খুব ভালোবাসি।জানো দাদা কতো চেষ্টা করেছি লোকটাকে ভুলতে।কিন্তু মন মানেনা।শরীরে যন্ত্রণা হয়।তোমরা বলো সময় দিলে সব শেষ হয়ে যাবে।”

“হয়ে যাবে।কিন্তু সীমাতে থেকে চেষ্টা করো দেখো।অন্তত আমি বা তোমার দাদী চাইনা এই বয়সে কোনো মন ভাঙা নিয়ে বড় হও।বাকী ওই বলি বিল্ডার খয়ের শাহ এর প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।ও তোমাকে মেনে নিবেনা।যদিও পুরুষ মানুষ তো বলা যায়না।”

“সে সত্যিই এতো সাহসী ছিলেন?”

“কবীরকে এখনও ঠিকঠাক চিনো না তোশা।মনে নেই কীভাবে তোমাকে পানি খাইয়ে মাতাল করেছিল।ও ঠিক এমনই।”

তোশা দাদার কথায় খিলখিল করে হেসে উঠলো।কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে খুব ভীত হয়ে আছে।অনুভূতি গুলো এতো বে ই মান কেন সেটাই কিশোরী বুঝে উঠতে পারছেনা।তাছাড়া দুনিয়াতে এতো মানুষ থাকতে কবীর শাহ নামক পা ষা ণ মানুষটার প্রতি ভালোবাসা কেন তৈরী হলো?যেখানে অসম বয়সের য ন্ত্র ণা আছে।জটিল সম্পর্কের সমীকরণের দেখা মিলে।যা ঘন্টার পর ঘন্টা চেষ্টা করলেও সিদ্ধ হয়না।

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২০
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“যৌবন ধরে রেখেছো কীভাবে?এখনও বেশ সুন্দর লাগে দেখতে।”

“আপনার মনে হয়না আসিফ ভাই ফ্লার্ট করা বা নেওয়ার বয়সটা আমাদের নয়।”

“তুমি তো এতো তেজি ছিলেনা তাহিয়া।হঠাৎ এই রুপ।”

তাহিয়া নিরবতার চাদরকে অবলম্বন করলো।নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ থাকার পরেও এতো ভীরে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার।সামনে শীতকাল আসবে।পরিবেশ ধীরে ধীরে জানান দিচ্ছে তা।আসিফের বোনের আজ মেহেদী অনুষ্ঠান।পুরো তিনদিনের লম্বা প্রোগ্রাম রেখেছে তারা।আর হবেনা কেন?আসিফ যে রাজনীতিতে আছে তা সকালে জানলো তাহিয়া।তখন থেকে মেজাজ যেন আরো চটে গিয়েছে।তার ভাষ্যমতে রাজনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত মানুষেরা খানিকটা অদ্ভূত ধরণের হয়ে থাকে।যাদের অনুভূতির আগামাথা হয়না।আসিফ হাতে থাকা মোহিতো তাহিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

“মাথা ঠান্ডা করো।ফ্লার্ট করছিনা আমি।তবে একটি প্রশ্ন করা আমার অধিকারে আছে।এতো প্রেমের সংসার ভাঙলো কেন?”

“আমার পার্সোনাল ব্যাপার আসিফ ভাই।”

“আমি তো বলিনি যে বিষয়টি জনগণের ব্যাপার।সকলের শোনা উচিত।বিষয়টি নিয়ে চর্চা করা উচিত।এমনকি টিভিতে নিউজেরও কথা বলিনি।”

“আশ্চর্য।”

তাহিয়ার কণ্ঠের গাঢ়তা অনুকরণ করে আসিফ বলল,

“অদ্ভূত।তাইয়ুবা কোথায়?এটার জবাব দাও অন্তত।”

তাহিয়া আশেপাশে তাঁকিয়ে দেখলো তোশা কোথাও নেই।সে রেগে গেলো নিজের এসিস্ট্যান্টের উপর।কয়েক মাস আগে এমনই এক অনুষ্ঠানে মেয়েকে সে হারিয়ে বসেছিল।পাশ থেকে মেয়েটিকে ডেকে শুধালো,

“তোশা কোথায়? ”

“ম্যাম, তোশামণি তো উপরে গিয়েছে।বলল ঘুম আসছে বলে।”

” রুমের চাবি পেলো কোথায়?”

তাহিয়ার হঠাৎ মনে পড়লো খাওয়ানোর সময় সে নিজেই চাবি দিয়েছিল।চারিধারে প্রচন্ড জোরে গান চলছে।মানুষ নাচানাচি করছে।এমন পরিবেশে মেয়েটিকে না রাখা উত্তম দেখে তাহিয়া চিন্তায় মগ্ন ছিল।অকস্মাৎ তাহিয়া আসিফের উদ্দেশ্যে শুধালো,

“দয়া করে তোশার সামনে স্বাভাবিক ব্যবহার করবেন।আপনি এক সময় আমাকে পছন্দ করতেন বিষয়টি জানলে খুব বিব্রতবোধ হবে।”

“ভয় নেই তাহিয়া।তুমি জানো আমি অনুভূতি প্রকাশে ভীষণ কার্পণ্য করি।এজন্য সতের বছর আগে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারিনি।”

“যা তখন পারেননি তা নিয়ে এই মাঝ বয়সে এসে আক্ষেপ করা বোকামো।”

তাহিয়া শাড়ী সামলে নিজের কাজে চলে গেলো।পিছন ফিরে অবশ্য একবার আসিফের দিকে তাঁকিয়েছিল।লোকটার চোখে একরাশ শূন্যতা কাজ করছে।তাহিয়া বুঝতে পারছে অপর ব্যক্তিটা তাকে পাওয়ার চেষ্টায় আছে।এজন্য তোশার মন জয় করার বহু চেষ্টাও করছে।তবে তাহিয়ার কাছে এসব তেতো অনুভূতি ছাড়া কিছু নয়।জীবনে মায়ান নামের একজন ছিল।সে চলে যাওয়ার পর আর কাওকে প্রবেশ করতে দিবেনা সে।নতুন বউয়ের দিকে তাঁকিয়ে হুট করে তাহিয়ার চোখ দুটো অশ্রুতে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো।এরকম সুখি একসময় সে নিজেও ছিল।

(—)

আস্তে করে ভারী দরজাটি খুলে ভেতরে উঁকি দিলো তোশা।দরজা ক্যাচ ক্যাচ শব্দ করে অবশ্য আগুন্তকের বার্তা ভেতরের মানুষটিকে জানান দিলো।ফোনটা কানে রেখেই পিছন ফিরে তাঁকালো কবীর।পরক্ষণে সামনে ফিরে ফোনে থাকা ব্যক্তিটির উদ্দেশ্যে বলল,

“আমি রাখছি আব্বু।বিষয়টি খেয়াল রাখবো।”

কবীর ফোনটা রেখে জানালায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।তোশাকে একবার ভেতরে আসতেও বলল না।ছোট্ট মেয়েটির মন এজন্য অভিমানে ভরে গেলেও ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গ পাওয়ার লোভ সামলাতে পারলো না।মৃদু পায়ে সামনে এসে দাঁড়ালো।জানালা দিয়ে মৃদু রঙীন আলো আসছে।আলোর উষ্ণ উজ্জ্বলতায় কবীর শাহ নামক মানুষটিকে নতুন করে আবিষ্কার করলো তোশা।লম্বা চওড়া পাহাড়ের মতোন শক্ত দৃঢ় শরীরে সাদা রঙের পাঞ্জাবীটা বেশ ফুঁটে উঠেছে।

“আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে কবীর শাহ।”

“হুম।”

তোশামণির ছোট্ট মন যেন আরো ভেঙে গেলো।সে তো অনেক অনেক সুন্দরী।যা সকলে বলে বেড়ায়।আবার গায়ের রঙ নাকী দুধে আলতা।সেখানে আলতো স্পর্শ করলেও রক্তিম আভা ফুঁটে উঠে।এইতো আজ স্বপ্নের মানুষটির সঙ্গে মিল রেখে সে অফ হোয়াইট রঙের গাউন পড়েছে।গলায় আবার মুক্তোর মালাও দিয়েছে।তাহিয়া তো তাকে ছোট্ট বারবি বলতেও দ্বিধা করেনি।কিন্তু এই পা ষা ণ, নির্দয় পুরুষটি একবার তাঁকিয়েও দেখলো না।কিন্তু দুষ্ট মন তা মানলো না তোশার।নিজ থেকে শুধালো,

“আমাকে কেমন লাগছে বললেন না তো।”

কবীর ঘাড় ঘুরিয়ে একটিবার মেয়েটিকে দেখলো।পরক্ষণে সরিয়ে নিলো দৃষ্টি।

“আমাকে ভালোবাসো অথচ আমার দৃষ্টি পড়তে পারো না?”

“পড়ার সুযোগটি আমাকে দেননি।”

“তোশা তুমি কবে সিরিয়াস হবে?জানো আমি খুব..।”

“আপনি কী?”

“এইযে ভালোবাসার কথাগুলো বলো।হুটহাট দেখা করতে চলে আসো।এসব কেউ জানলে কী হবে জানো?তোমার কিছুই হবেনা।উল্টো আমার সম্মান চলে যাবে।একজন ষোল বছরের কিশোরীর কী আর ভুল ধরবে মানুষ।”

“আপনাকে খুব হতাশাগ্রস্ত দেখাচ্ছে।”

“কারণটা তুমি।”

কথাটি শুনে রাগ হলো না তোশার।বরং সে এগিয়ে এসে অনন্য শৈল্পিক মানুষটিকে উষ্ণ আলিঙ্গন করলো।

“তুমি এভাবে আমার সন্নিকটে চলে আসা বিরাট বড় ভুল করিয়ে দিতে পারে তোশা।”

“যেমন?”

তোশা সরিয়ে দিলো কবীর।সে খোলামেলা কিছু বলতে পারছেনা।বরং অনুভূতির বি ষা ক্ত দ ং শ নে শেষ হয়ে যাচ্ছে।হুট করে তোশার প্রতি রাগ উঠে গেলো তার।এগিয়ে তার হাতখানি শক্ত করে ধরে বলল,

“দুনিয়াতে এতো মানুষ থাকতে বাবা-মায়ের বন্ধুর প্রেমে কেন পড়তে হলো তোমার?আবার যখন ভালোবাসা তৈরীই হলো।তবে কেন লুকিয়ে রাখলে না।”

“কারণ ভালোবাসা লুকানোর জিনিস না।”

“বড় বড় কথা ফেলতে জানো শুধু।বাস্তবতা জানো?”

তোশা কম্পমান কণ্ঠে শুধালো,

“আমার সাথে এমন করছেন কেন?”

“বয়স অনুযায়ী অনেক ছেলে পাবে।কেন আমাকে মানুষের কথার ভাগীদার বানাচ্ছো?”

“আমি কী করলাম।”

তোশাকে দূরে সরিয়ে দিলো কবীর।রাগে হাসফাস করছে সে।যে ব্যক্তিত্ব সম্মান এতো বছরে কুড়িয়েছে তা এক নিমিষেই শেষ করে ফেলবে মেয়েটা।হুট করে ভয়ার্ত তোশার মুখপানে তাঁকালো সে।কী সুন্দর মায়ামাখা মুখখানি।এমন মায়া সে রোজ দেখতে চাইবে।তোশার চোখের কার্ণিশ ছুঁয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।ছোট্ট করে বলল,

“ভালোবাসি তো কবীর শাহ।”

“ভালোবাসো ঠিক আছে।কাছে আসো।আমার স্ত্রী হতে চাওনা?বিয়েটা চলো এখন করে আসি।এরপর দুজনের রাত রঙিন হোক।”

“না।এটা ভালোবাসা না কবীর শাহ।”

“আমার কাছে এটাই ভালোবাসা।যদি না পারো এখুনি বের হবে রুম থেকে।”

“এটা কী পরীক্ষা?”

“ধরে নাও।”

ফুঁপিয়ে কান্না করে উঠলো তোশা।কবীরকে আজ ভিন্ন লাগছে তার কাছে।

“আমি ষোল বছরের একজন মেয়ে।তার কাছে কীভাবে আপনি এমন কিছু আশা করেন?”

নিজের কথায় তোশা চমকে উঠলো।সে এই কথাটা বলে তাদের সম্পর্ক যে সম্ভব নয় সেটাই বুঝিয়েছে।কবীরের অধরে হাসি ফুটে উঠলো।সে এগিয়ে এসে তোশার গালে হাত দিয়ে উষ্ণ স্পর্শ করে বলল,

“ভালোবাসা বৈবাহিক সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত।আর বিয়ে শারীরিক লেনাদেনায় অনেকটা টিকে থাকে।আমার বাচ্চার মুখ থেকে মা ডাক শোনার জন্য আমার স্ত্রী হতে হবে।যাও বের হও রুম থেকে।তা নয় ধাক্কা দিয়ে বের করবো।”

তোশা এক মুহুর্তও সেখানে দাঁড়ালো না।কবীর এই ছোট্ট পুতুলটির মন একটুও ভাঙতে চায়নি।এতোটা কঠোর কখনো সে হতো না।যদি না দিশা সবকিছু কবীরের বাবাকে জানাতো।সেই এখন ফোন করে অনেকগুলো কথা শুনিয়ে দিলো।অবসন্ন মন নিয়ে কবীর বিছানাতে গা এলিয়ে দিলো।সিলিং এর পানে তাঁকিয়ে ফিসফিস করে বলল,

“আমাকে ক্ষমা করিও তোশা।নিজেকে এতোটা ছোট করতে হলো শুধু তোমাকে দূরে সরানোর জন্য।”

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-১৫+১৬+১৭

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আগের দিনে মেয়ে দেখাটা অন্যরকম ছিল।এখন তো বেশীরভাগ ছেলেদের মেয়ে পছন্দ করা থাকে।”

“তা ঠিক বলেছেন ভাই।এইযে আমার তাকে যখন দেখতে গেলাম তখন বড় করে ঘোমটা দিয়ে সামনে আনা হলো।আমার মা বারবার বলে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে।এদিকে লজ্জা করছে।তবুও খুব কষ্টে জিজ্ঞেস করেছিলাম বয়স কতো?তখন ছিল তার বারো বছর।আমার সাতাশ।এমনই পার্থক্যে তো বিয়ে হতো।”

নানার মুখে পাত্রী দেখতে যাওয়ার ঘটনা শুনে তোশার মনটা আরো ভেঙে গেলো।পূর্বে এতো বয়সের পার্থক্যে বিয়েটা সহজ থাকলে সে কেন সেই সময় জন্ম নিলো না?কবীর শাহ না হয় এভাবে তাকে দেখতে গিয়ে নিজের ঘরনি করে নিয়ে আসতো।হুহ,সব জায়গায় কেমন দুঃখের আবহাওয়া।

কলির বাবা নেয়ামতের সঙ্গে ইতিমধ্যে কবীরের বাবা সাহেদের বেশ ভাব জমে গিয়েছে।তাহিয়ার বাবাও এই দুজনকে বেশ সঙ্গ দিচ্ছে।আর যেসব নারীরা আছে তারা একপাশে বসে পুরুষদের আলোচনা শুনছে।পুরো ঘটনায় কেউ যদি নিরব থেকে থাকে তবে সে কবীর শাহ।এক মনে খেতে ব্যস্ত।তোশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাহিয়া বলল,

“কী ব্যাপার তোশা মা?খিদে লাগেনি?এখানে এসে খেয়ে নাও।”

“কিন্তু আম্মু।”

তাহিয়া তোশার গড়িমসি বুঝতে পারলো।কবীরের পাশের চেয়ার ব্যতীত আর কোনো চেয়ার খালি নেই।

“সমস্যা নেই তোশামণি।কবীরের পাশে এসে বসো।আমি তোমাকে খেতে সাহায্য করছি।”

তোশা একটু হেঁটে কবীরের পাশে এসে বসলো।আনমনে দুজনের হাঁটুর ঠোকাঠুকি হলো।তোশার পুরো শরীর জুড়ে যেন বিদ্যুৎের ছুটোছুটি চলছে।ব্যক্তিটার সংস্পর্শে এলে এমন সহ্যহীন অনুভূতি হয় কেন?কবীরের অভিব্যক্তি বোঝা গেলো না।সে নিজ ছন্দে খেতে ব্যস্ত।তাহিয়া নিজ প্লেট ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে গেলে কবীর বাঁধা দিয়ে বলল,

“আমি ওকে সাহায্য করছি তাহিয়া।বসো ওখানে।”

“সমস্যা নেই কবীর।ওর শুধু মাছটা খেতে সমস্যা।”

“আমি পারবো বসো ওখানে।”

কবীরের ধীর স্থির কণ্ঠে তোশার অভিমান যেন আরো বৃদ্ধি পেলো।লোকটা তাকে দয়া দেখাচ্ছে?বিষয়টা বুঝতে পেরে মাছটা প্লেটে অবধি তুললো না তোশা।উল্টো মাংস নিয়ে ধীরে ধীরে খেতে লাগলো।হুট করে নিজ প্লেট থেকে কাঁটা ছাড়ানো মাছ কবীর তোশার প্লেটে তুলে দিলো।ছোট্ট করে বলল,

“খেয়ে দেখো।ভালো লাগবে।”

“দয়া?”

“ধরে নাও তাই।”

সবকিছু ভেঙে কান্না পাওয়ার অনুভূতিটা ফিরে এলো তোশার মনে।সে এতোটাও বাচ্চা নয়।মায়ের চিন্তা, ভালোবাসা সে বুঝে।কিন্তু কবীরের এরকম খেয়াল রাখার মানে কী?শুধু সৌজন্যেবোধ?হয়তোবা তাই।

(***)

কবীর ও কলির বিয়ে ঠিক হয়েছে।গত তিনদিন ধরে যতোবার কথাটি মনে হয় তোশার ততোবার বেঁচে থাকার শক্তি সে হারিয়ে ফেলছে।সর্বদা বুকের ভেতর কেমন জ্ব লে পু ড়ে যায়।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে থাকে।খাওয়ার রুচিটাও কমছে।মেয়ের এরকম অবস্থা দেখে তাহিয়া ভীষণ চিন্তিত।এই কারণে আজ ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসেছে।

“বেশী কিছু নয়।সাধারণ ভিটামিনের অভাব দেখা দিয়েছে শরীরে।খাওয়া দাওয়া করলে ঠিক হয়ে যাবে।তাছাড়া ওর উঠতি বয়স।এখন মন মস্তিস্কের রুপ কতোভাবে বদলাবে।”

“এমনি সমস্যা নেই তো ডক্টর?”

“নাহ।আমি ভিটামিন লিখে দিচ্ছি।তোশা ঠিকমতো খেও কেমন।”

হাসিমুখে মাথা দুলালো তোশা।শরীরের ডাক্তার কী জানবে মনে কী চলে?তাহিয়া তোশার হাতখানা ধরে বাহিরে বের হয়ে এলো।

“আম্মু তোমাকে এই হসপিটালের লোকগুলো চিনে কীভাবে?সবাই বেশ পরিচিত দেখছি।”

“কারণ কলির অপারেশনের সময় এসেছিলাম অনেকবার তাই।”

“কলি আন্টির অপারেশন?কী হয়েছিল তার?”

“জরায়ুতে টিউমার।সেটা কেঁ টে ফেলে দিয়েছে।”

থেমে গেলো তোশা।চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো তার।উত্তেজিত কণ্ঠে সে মায়ের উদ্দেশ্যে শুধালো,

“তাহলে সে মা হবে কীভাবে?বিয়ে কেন ঠিক করলে তোমরা?”

“বিষয়টা কবীরের পরিবার জানে।”

“তবুও তারা মেনে নিলো?কেন?”

“কারণ কবীরের আর বাচ্চা না হলেও ভালো হবে।যেহেতু একজন ছেলে আছে।”

তোশা শুকনো ঢোক গিললো।কম্পিত কণ্ঠে শুধালো,

“কার ছেলে আছে?”

“কবীরের।তুমি হয়তো ছোট শাহ কে এখনো দেখেনি।বাচ্চাটা বেশ চুপচাপ।”

“তিনি বিবাহিত?তার স্ত্রী কোথায়?”

“ডিভোর্স হয়েছে।”

তোশা এগুনোর শক্তিটুকু পাচ্ছে না।কবীর বিবাহিত ছিল সে কোনোদিনও সেটা শুনেনি।এমনকী একটা ছেলেও আছে?তোশার নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।মাথায় তীব্র ব্যাথা শুরু হলো।চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হওয়ার পূর্বে নিচে বসে পড়লো সে।তাহিয়া পিছন ফিরে মেয়ের এই দশা দেখে ছুটে গেলো।

“কী হলো তোশামণি?খুব খারাপ লাগছে?”

“আম্মু আমার চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসছে।”

অন্যকিছু বলার পূর্বে পুরোপুরি জ্ঞান হারালো তোশা।

(***)

“ও জ্ঞান হারালো কেন?কোনো গুরুতর সমস্যা?”

“কয়েকদিন ধরে ঠিকমতো না খেয়েছে,না ঘুমিয়েছে।আমি এজন্য ডাক্তারের কাছে এনেছিলাম।”

কবীর ঘুমন্ত তোশার দিকে তাঁকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।কিছু বিষয় এখন মটেও আবেগ,বয়সের দোষ মনে হচ্ছে না।যা তার তামাটে কপালের রেখার সৃষ্টি করলো।মেয়েটা যদি সত্যিই তাকে ভালোবাসে?ছোট বয়সে কী না পাওয়ার ধাক্কা সামলাতে পারবে?মেয়ের এমন দশাতে তাহিয়ার মুখটা ছোট হয়ে গিয়েছে।বাড়ীর সকলে দেখতে এসে ফিরে গিয়েছে দশ মিনিট হলো।

“তাহিয়া তুমি ক্যান্টিনে গিয়ে এক কাপ কফি খেয়ে নাও।ভালো লাগবে।মেয়ের টেনশন নিওনা।”

“গলা দিয়ে নামবেনা।”

“রিলাক্স তাহিয়া কিছুই হয়নি।যাও তুমি।”

সত্যিই তাহিয়ার একটু নির্জনতা প্রয়োজন ছিল।অন্তত মেয়ের জন্য ঠিকঠাক সুস্থতা কামনা করতেও।সে বাহিরে চলে গেলে তোশার পাশে এসে বসলো কবীর।আলতো হাতে কপালের চুলগুলো এলেমেলো করে দিলো।ধীর কণ্ঠে বলল,

“এতো ভালোবাসা নিয়ে কেন আগে এলে না বেলাডোনা(অর্থ সুন্দর নারী)?বয়স কমানোর মন্ত্র তো জানা নেই।তাছাড়া আমি জীবনে অনেক এগিয়ে গিয়েছি।ছেলে আছে।বিবাহিত ছিলাম।তবে তোমার মতোন সতেজ ফুলকে রোদে পুড়ে যাওয়া পাথরটি কীভাবে আগলে নেয় বলো তো।”

জীবনের সবথেকে সাহসী কাজটা হয়তো আজ করলো কবীর।ঘুমন্ত তোশার হাতের পিঠে আস্তে করে চুমো খেলো।সে জানে এটা কেউ জানলে ছি: ছি: এর বন্যা বয়ে যাবে।তবে সে কামনা নিয়ে এই স্পর্শ করেনি।ব্যস তাকে যে রমণী এতো ভালোবাসে সেই রমণীকে মনের ভেতর থেকে মায়া দেখিয়ে স্পর্শ করেছে।যা কখনো কেউ জানবেনা।স্বয়ং ঘুমন্ত সতেজ ফুলটিও না।

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১৬
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমি খুব ঘেমে গিয়েছি তোশামণি।লজ্জা লাগছে।”

“কল্লোল ভাইয়া লজ্জা পাও কেন?সকলে তোমার পোশাক দেখে বুঝবে যে খেলার মাঠ থেকে দৌড়ে এসেছো।তোমার ছোট মাথা এটা বুঝলো না?”

কল্লোল চোখ দুটো ছোট ছোট করে তোশার পানে তাঁকালো।চশমার আড়ালে অবশ্য সেটা বোঝা গেলো না।তার থেকে বয়সে ছোট হয়ে কীনা মেয়েটি বলছে ছোট মাথা?

“এখন কেমন আছো তোশা?ধরো এটা তোমার জন্য।”

“চকলেট কেন?”

“হসপিটালে রোগী দেখতে এলে কিছু একটা নিয়ে আসতে হয়।তুমি তো বাড়ীতেই চলে যাবে একটু পরে।সেজন্য কী নিয়ে আসবো ভাবছিলাম।”

উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো তোশা।মনোমুগ্ধ হয়ে সেই দৃশ্য গ্রহণ করলো কল্লোল।এই হাসির অনুরূপ ছন্দ আজকেই খুঁজে বের করবে সে।

“রোগীকে দেখতে কেউ চকলেট নিয়ে আসেনা।যাই হোক আম্মু কোথায় গেলো?”

“ডক্টরের কাছে হয়তো।আমার হাসপাতালে এলে কেমন যেন লাগে?নিজেও তো একদিন ডক্টর হবো তাইনা?”

“হবে তো।আমি বিজনেস করবো।কবীর শাহ এর সাথে প্রতিযোগীতা করে।”

“কবীর আঙকেল?আচ্ছা তাকে তো দেখলাম।”

মুখের রঙ আরো কয়েক ধাপ ঘোলা করে তোশামণি জবাব দিলো,

“সে তো সব জায়গায় আছে।”

(***)

মায়ান একের পর এক ফোন দিয়ে যাচ্ছে।তাহিয়ার সামনে রিসিভ করতে কেমন বিব্রোতবোধ হচ্ছে কবীরের।তার ভুল সে যদি তোশার ব্যাপারটি না জানাতো তবে এমন কল করতো না।এদিকে তাহিয়ার ফোনে কল করার সাহস মায়ানের নেই।তাহিয় আড়চোখে স্ক্রিনে ভেসে উঠা বিদেশি নাম্বারটি দেখে শুধালো,

“মায়ান এতো কল করছে কেন কবীর?তোশার ব্যাপার বলেছো?”

“হ্যাঁ।এখানে আসার আগে বলেছি।”

“ওহ।দেখবে বলবে যে তাহিয়া একজন কে য়া র লে স মাদার।আমি সত্যি বুঝিনি তোশার শরীরটা এমন হয়ে যাবে।”

“বলবেনা।ও জানে তুমি কীভাবে আগলে রেখেছো মেয়েকে।তেমন কিছু হয়নি।শুধু একটু হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করো মেয়েকে।”

তাহিয়া কিছু একটা নিয়ে প্রচন্ড উশখুশ করছে।যেন না বলতে পারলে শান্তি মিলছেনা।কপালে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো টিস্যু দিয়ে মুছে নিলো।এখনও বেশ সুন্দর দেখা যায় তাকে।কবীর অবশ্য বিষয়টি বুঝতে পেরে শুধালো,

“কিছু বলবে তাহিয়া?”

“হ্যাঁ।ভুলভাবে নিওনা।এতো দামী গিফট তোশাকে কেন দিয়েছিলে?বিষয়টি আমাকে খুব বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছিল।”

কবীরের ভেতর থেকে উষ্ণ শ্বাস বের হয়ে এলো,

“লকেটটিতে ওকে খুব সুন্দর মানাতো এজন্য দেওয়া।তুমি রাখতে দিও তোশাকে।”

“কিন্তু তাও।আচ্ছা ওটা তো মায়ান দেয়নি?”

“মেয়েকে কিছু দিতে মায়ানের কখনো আমার বাহানা লাগবেনা তাহিয়া।”

হাঁটতে হাঁটতে তারা কেবিনের কাছে এসে পড়েছে।এমন সময় তোশার হাসিমাখা মুখটা দরজার কাছ থেকে কবীরের দর্শন হলো।শত শত জলকণা সমেত সমীরণ যেন কবীরকে স্পর্শ করে গেলো।একটি হাসিতে এতোটা মুগ্ধতা লুকিয়ে থাকতে পারে?উহু,লুকিয়ে কোথায়?ওইযে প্রকাশে আছে।যে কেউ মনোযোগ দিলে মুগ্ধ হতে বাধ্য।কবীরের মনে যখন শান্তির বাতাস বয়ে যায় তখন সামনে বসে থাকা কিশোরীর মনে দুঃখ
অগ্ন্যুৎপাতকালে আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত গলিত প্রস্তরাদির মতোন গড়িয়ে পড়তে থাকে।

“তোশামণি চলো।এখন আমাদের বাড়ী যাওয়ার সময়।কল্লোল ওকে উঠতে সাহায্য করো তো।”

কল্লোলের পূর্বে কবীর তোশার উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে দিলো।কিন্তু মেয়েটি পুরোদস্তুর তামাটে পুরুষটিকে উপেক্ষা করে কল্লোলের হাত ধরলো।তাহিয়া জিনিস পত্র নিয়ে তোশার আরেক পাশে ধরে তাকে বেড থেকে নামিয়ে দিলো।কবীর এখনও বিষয়টি হজম করতে ব্যস্ত।

“কবীর তুমি একটু তোশাকে ধরবে?আমি গাড়ীটা পার্কিং এড়িয়া থেকে বের করে আনতাম।”

জবাব না দিয়ে তোশাকে এক হাত দিয়ে শক্ত করে আলিঙ্গন করলো কবীর।ফলস্বরুপ কল্লোলকে হাত ছাড়তে হলো।

“তুমি যাও তাহিয়া।আমি নিয়ে আসছি ওকে।কল্লোল তোমারও স্পোর্টস ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে।এগিয়ে যাও।”

কল্লোল মাথা দুলিয়ে এগিয়ে গেলো।এরকম নির্জনতার অপেক্ষায় ছিল কবীর।তোশাকে গম্ভীর সুরে বলল,

“হাত ধরতে কী সমস্যা ছিল?কল্লোলের সামনে বিষয়টি কেমন হলো না?”

“আপনি বিবাহিত?”

“এটা আমার প্রশ্নের জবাব হলো না।আমি বিবাহিত এটা আজ জানলে নাকী?”

প্রশ্নটি করে নিজেই থমকে গেলো কবীর।খানিকটা হতবিহ্বল কণ্ঠে শুধালো,

“আমার ডিভোর্স হয়েছে।ছেলে আছে বিষয়টা তুমি এতোদিন জানতেনা তোশা?”

“যদি বলি না।”

“আজ জানলে?”

“হ্যাঁ।”

কবীর পূর্বের সবকিছু মনে করলো।এতোদিন যে ভালোবাসা নিয়ে কথা হতো সেখানে ছেলে সমন্ধে একটি প্রশ্নও তোশা করেনি।এমন নয় বিষয়টি প্রথম মাথায় এলো
পূর্বেও এসেছে।কিন্তু সত্যি যে তোশা এতো বড় কিছু জানবেনা তা বুঝতে পারেনি।মলিন হাসলো কবীর।

“আমাকে এখন ঘৃ ণা করছো তাইনা তোশামণি?বিশ্বাস করো বুঝিনি যে এতো বড় বিষয়টি জানবেনা।এ কারণে তখন হাত ধরলেনা?”

তোশা কিছু বলল না।লিফটের ভেতর ঢুকে যেতে হলো তাদের।আশেপাশে আরো মানুষ থাকায় কবীর একটি কথাও বলেনি।কিন্তু পুনরায় নির্জনতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেকি দাম্ভিক সুরে বলল,

“দেখলে আমি যে তোমার অনুভূতিকে মোহ,মায়া এবং আবেগের নাম দিতাম।কতোটা সত্য ছিল না।তুমি আমাকে ভালোবাসোনি।”

তোশা পূূর্বের মতোন নিশ্চুপ হয়ে থাকলেও এবার কবীরকে দেখলো।ব্যক্তিটা খুব লম্বা।তবুও তোশা মাথা এলিয়ে নাক টেনে কবীরের শরীরের ঘ্রাণ নিলো।গাড়ীর কাছে পৌঁছানো অবধি দুটো প্রাণ আর কোনো বাক্য বিনিময় করলো না।

(***)

ঘড়িতে এখন দুপুর তিনটে বেজে বিশ মিনিট।ভীষণ ক্লান্ত অনুভব হচ্ছে কবীরের।অথচ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি মিটিং আছে।গতকাল থেকে মনটায় খড়া নেমেছে তার।কবীর নিজের সঙ্গে অভিনয় করেনা।সে জানে তোশার প্রতি পূর্বে ভালো লাগা থাকলেও এখন সেটা রুপ বদলে যাচ্ছে।একসময় নিজে অস্বীকার করলেও এখন মেনে নিতে দ্বিধা নেই যে সে নিজ থেকে বিশ বছরের ছোট মেয়ের মায়াতে জড়িয়েছে।এই কারণেও বিয়েতে হ্যাঁ বলেছিল।সেদিন থেকে যা খারাপ লাগা ছিল মনের ভেতর তা গতকাল বৃদ্ধি পেয়েছে তোশার অবজ্ঞাতে।অবশ্য যা হওয়ার ঠিক হয়েছে।

“স্যার আপনি তো লাঞ্চ করলেন না।মিটিংটা শুরু করবো কখন?”

কবীরের এসিস্ট্যান্ট নাহিদ দরজার বাহির থেকে কথাটি শুধালো।উষ্ণ শ্বাস ফেলে কবীর জবাব দিলো,

“এখুনি শুরু করবো।”

“জি স্যার।”

নাহিদ ফিরে যাওয়ার আগে কিছু একটা মনে হতে থেমে গেলো।পুনরায় বলল,

“স্যার একটি মেয়ে এসেছিল আপনার সঙ্গে দেখা করতে।সম্ভবত কোথাও দেখেছি তাকে।”

কবীরের ভেতর এলেমেলোভাবে আন্দোলিত হয়ে উঠলো।সে সোজা হয়ে বসে বলল,

“নিজের নামটা কী বলেছে সে?”

“তোশা।”

“সে কোথায় এখন?”

“আপনি ব্যস্ত ছিলেন দেখে রিসিপশনে বসিয়ে রেখেছিলাম।কিন্তু সবেমাত্র বের হয়ে গেলো।”

কবীর একটুও অপেক্ষা করলো না।তৎক্ষনাৎ ফোনটা টেবিল থেকে নিয়ে বের হয়ে গেলো।

“নাহিদ মিটিংটা দুই ঘন্টা পরে হবে।”

হন্তদন্ত হয়ে বাহিরে বের হয়ে এলো কবীর।এপাশ ওপাশে দেখলো কোথাও তোশা আছে কীনা।তার এই অফিস এড়িয়াটি খুব বড়।চারিধার পরিষ্কার বাতাবরণ।লাঞ্চ টাইম শেষ হওয়ায় বাহিরে দারোয়ানরা ব্যতীত কেউ নেই।দূরে এক জায়গায় ছিমছাম শরীরে মেয়েকে হেঁটে যেতে দেখে সেদিকে এগিয়ে গেলো কবীর।কিশোরী মেয়েটির বাহু শক্ত করে ধরতে সময় লাগলো না।

“তোশা তুমি এখানে কেন?”

“আপনি না ব্যস্ত ছিলেন শুনলাম।”

“তোমার আগে কোনো ব্যস্ততা নেই।আমাকে না বলে চলে যাচ্ছিলে কেন?”

কবীর হয়তো খেয়াল করেনি সে কী বলে ফেলেছে।কিন্তু তোশার ঠোঁট দুটোর মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি হলো।এইযে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অফ হোয়াইট রঙের স্যুট পরনে পরিপাটি পুরুষটি কী এই মাত্র সবকিছুর উপরে তাকে রাখলো?পুরুষটির গা থেকে আসা মন মাতানো সুগন্ধে মনটা ভরে গেলো তার।এগিয়ে মুখোমুখি দাঁড়ালো।

“একটু নিচু হবেন কবীর শাহ?আপনি অনেক লম্বা।”

“কেন বলো তো।”

“হোন না নিচু।”

কবীর কথামতোন নিচু হলো খানিকটা।তোশা নিবারণ হাতের ত্বকের সাহায্য তামাটে পুরুষটির কপালের ঘাম মুছে দিলো।নরম তুলতুলের হাতের ছোঁয়ায় কবীরের সবকিছু ভুলে যাওয়ার মতোন অবস্থা।তোশা সবথেকে সুন্দর হাসিটি দিয়ে বলল,

“আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে এলাম।নতুন করে পরিচিত হবো দুজনে।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১৭
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“বন্ধুত্ব কী সমান সমান বয়সে হয়না?আমি তোমার অনেক বড় তোশামণি।সেটা কেন ভুলে যাও?”

“আপনার সঙ্গে প্রেম করা যাবেনা,বন্ধুত্ব করা যাবেনা।এটা যাবেনা,ওটা যাবেনা।তো করবো কী আমি বলেন?নিষ্ঠুর লোক।”

“এভাবে থাকো।কথা বলো। কয়দিন পর কলির সঙ্গে বিয়ে হলে..।”

কবীর কথাটি সম্পূর্ণ করার পূর্বে অসহায় চোখে তার পানে তাঁকালো তোশা।কয়দিন ধরে ঠিকমতো না খাওয়ার দরুণ ছোট মেয়েটি আরো শুকিয়ে গিয়েছে।কবীর উষ্ণ শ্বাস ফেললো।মেয়েটির কাছে যদি এসব আবেগ হয়েও থাকে তবে তার কাছে তো তা হবেনা।বরং অনুভূতি তীব্র দ ং শ নে সে শেষ হয়ে যাবে।তোশা খুব নিষ্প্রাণ গলায় শুধালো,

“বন্ধুত্বও করবেন না?”

“খাবার ঠান্ডা হচ্ছে খেয়ে নাও।”

“ইশ,খাওয়ার জন্য মনে হয় শেষ হয়ে যাচ্ছি।ভাতের অভাব আছে তো আমার।”

তামাটে পুরুষটি পুরোদস্তুর অবাক হয়ে গেলো।মেয়েটি যেন চোখের সামনে বড় হচ্ছে সঙ্গে কথার খই ফুটতে শুরু হয়েছে।অগত্যা কবীর তোশাকে চেয়ার টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো।একটি প্লেটে খাবার নিয়ে চামচ দিয়ে তা তোশার সামনে তুলে ধরলো,

“শুধু বড় বড় কথা মুখে।”

“বলেন না বন্ধুত্ব করবেন কীনা।”

“করবো।ধরো খেয়ে নাও।”

তোশা খুশিমনে কবীরের হাত থেকে খেয়ে নিলো।এমন সময় তার স্বপ্ন পুরুষটি প্রচন্ড রকমের আজব কাজ করে বসলো।নিজেও একই চামচ দিয়ে খাবার খেলো।এটা কী নেহাৎ অবচেতন মনের কাজ?

“তোশামণি আজ কী বলে বাড়ী থেকে বের হলে?তোমার আম্মু বের হতে দিলো?তাও এমন অসুস্থ শরীর নিয়ে?”

“আজকেও বলেছি ফ্রেন্ডরা কেএফসিতে যাবো।”

“বুঝিনা তোমরা টিনেজাররা এতো টাকা কোথায় পাও।আমাদের সময় তো মা-বাবা ঘুরতে গেলে টাকা দিতে চাইতো না।পুরো সপ্তাহ জমিয়ে এরপর চিড়িয়াখানায় যেতাম।খাওয়া বলতে ওইযে বাদাম।”

“আপনার-আমার পুরো একটা জেনারেশন গ্যাপ তাইনা?”

“যাক অবশেষে বুঝলে তো।”

“কিন্তু একটা ব্যাপারে আপনাকে একটু শুধরে দিতে চাই আমি।আমার ফ্রেন্ডরা সত্যি কেএফসি তে এখন।ওদের পুরো খরচ আমি দিয়ে দেই।”

“তুমি এতো পাও কোথায়?”

“আমিও টাকা জমাতে জানি।হুহ কী মনে করেছেন?”

কবীর সরু চোখে কিশোরীকে দেখলো।মেয়েটা উচিতের চেয়ে বেশী চঞ্চল।কিন্তু ছদ্মবেশ ধরে থাকে।তোশার এতো কাছে বসে থাকা কবীরের মনে ঝড় সৃষ্টি করেছে।সে কখনো ভাবেনি সাধারণ বাচ্চার প্রতি অনুরাগ তৈরী হবে তার।কবীর জানে এখন চিন্তাধারা অনেক দূরে চলে যাবে।মেয়েটার সান্নিধ্য আরো কামনা করবে মন।

“লিটল চেরি এখন কেমন বোধ করছো?শরীর সুস্থ তো?”

“আমি অজ্ঞান হয়েছিলাম আপনার বিয়ে ও ছেলে আছে সেই কথাটি শুনে।”

খুব সহজ সরল স্বীকারোক্তি তোশার।কণ্ঠসুরে তীব্র অভিমানের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।পাশে বসে থাকা বৃহদাকার কবীর শাহ এর দৃঢ় শক্ত হাতকে আঁকড়ে ধরে বলল,

“আপনি বিয়ে কেন করেছিলেন?আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারলেন না।”

“মানে?”

“বিয়ে কেন করলেন?আমার জন্য অপেক্ষা করতেন।আবার একটা বাবুও আছে।বয়স কতো ওর?দেখতে কেমন?আমাকে মা বলবে তো?”

” লিটল চেরি তুমি আবার ভুলভাল বকে চলেছো।কলির সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।”

“হবেনা বিয়ে।”

কবীরের কপালে কয়েকটি ভাঁজ পড়লো।সে একটু কেশে বলল,

“কিছু করেছো তুমি?”

“আরে না।মন বলছে আমার।”

‘হায়রে মন।কতো কথা বলে।এখন তাড়াতাড়ি শেষ করেন খাবার।”

“খাচ্ছি তো।জবাব দিলেন না যে বিয়ে কেন করলেন?আবার ডিভোর্স কেন হলো?”

“সেটা জানা তোমার জন্য জরুরি নয়।”

“বলতে হবে।”

“তুমি একটু বেশী বাচ্চামো করছো না?আমি বা কেন শুনে যাচ্ছি।”

“ইশ, আমার মনের মতোন আপনি অনেক কথা বলেন।বিয়ে কেন ভাঙলো?একটা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন না।”

“তোতাপাখি চুপ।এতো কথা বলো না।”

“আপনি জবাবগুলো দেন।”

কবীর দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।কিশোরী বয়সী মেয়েরা এমনিতে চঞ্চল হয়।তাছাড়া মানুষ যার প্রতি আসক্ত থাকে তার সংস্পর্শে এলে আরো বেশী প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠে।

“বিয়ের বয়স হলো তাই করেছিলাম।”

“প্রেম করেছিলেন?”

“আমি,তাহিয়া,মায়ান ও…।”

নামটা বলতে গিয়ে কবীর নিশ্চুপ হয়ে গেলো।তোশার ক্লাস টিচার দিশা।এমনিতে বাচ্চা মেয়েটি আবেগপ্রবণ।জানলে কিছু না কিছু বেফাঁস বলে বা করে ফেলবে।এই কারণে নিশ্চুপ থেকে দিশার অন্য নাম নিলো।

“টগর একই কলেজে পড়তাম।ক্লাসমেট ছিলাম এই কারণে কিছুটা প্রেমের বিয়ে।দ্বিতীয়বার লন্ডনে যাওয়ার আগে বিয়ে হয়।এরপর কয়েকদিন পর ছেলে জন্ম নেয়।সব ঠিক ছিল।কিন্তু ও বদলে যাওয়া শুরু করলো।আমিও ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।একসময় ও ছেলের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করলো।শেষে ঝগড়া গুলো বিচ্ছেদের রুপ নিলো।

” ভালো হয়েছে।তাহলে আপনার স্ত্রীকে আম্মু চিনে?”

“চিনে।এই ব্যাপারে কথা বাদ।আমার চলে যেতে হবে।মিটিং আছে তো।”

“জি।”

তোশা মাথা দুলিয়ে প্লেটের খাবারটা শেষ করলো।কবীর মেয়েটিকে একদম বাচ্চার মতোন সামলে রাখছে।মায়া,অনুভূতি তো তৈরী হয়েই গিয়েছে।

“কবীর শাহ শুনেন।”

“জি বলেন।”

তোশা একটু ইতস্তত করলো।এরপর আস্তে করে কবীরের কাঁধে মাথা রাখলো।গম্ভীর শ্বাস নিয়ে বলল,

“ভালোবাসি আপনাকে কবীর শাহ।খুব খুব।আমার বয়স, সন্তান থাকা কিংবা ডিভোর্স হওয়া নিয়ে কোনো কিছুতে অভিযোগ নেই।আবেগ বলবেন না অনুভূতিকে।”

“আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরো কোন অধিকারে?”

“তোশামণির নিজস্ব অধিকার আছে কবীর শাহ এর প্রতি।”

“আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে লিটল চেরি।”

দীর্ঘ শ্বাস ফেললো তোশা।কিছু বলতে যাবে এর পূর্বে পাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,

“তুমি এখানে কী করছো তোশা?”

চমকে পাশ ফিরে তাঁকালো তোশা।মুখে ঈষৎ হাসি ফুটিয়ে বলল,

“দিশা ম্যাম আপনি?”

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-১২+১৩+১৪

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১২
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমাদের সম্পর্কটি অনুচিত কেন?বয়স নাকী বাবা-মায়ের সঙ্গে বন্ধুত্বটা কারণ?”

“যদি বলি দুটোই?তাছাড়া আমার আগেও..।”

কথাটি শেষ হওয়ার পূর্বে ওয়েটার এসে টেবিলে খাবার রেখে গেলো।কবীর নিজ উদ্যোগে লবস্টার ছাড়িয়ে তোশার প্লেটে তুলে দিলো।

“আপনি বেশী ভাবছেন কবীর।দেখবেন সকলে মেনে নিবে।সমস্যা হলো আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা নেই।”

“ওহো তোশামণি।বয়স অনুযায়ী ভালোবাসা সম্পর্কে একটু বেশীই কৌতুহল হয়ে আছে তোমার মন।পড়াশোনা এতোটা পারো?ওয়েল চলো ধরি কয়েকটা প্রশ্ন।”

তোশার চোখদুটো ছোট ছোট হয়ে গেলো।এই সুদর্শন তামাটে বর্ণের অহংকারী পুরুষটি কী মনে করে তাকে?

“উহু,সবসময় আমি কেন পরীক্ষা দিবো?উল্টো আজ আপনাকে প্রশ্ন করবো আমি।বলেন গ্যালিলিও এর সূত্র কী?প্লবতা সম্পর্কে বলেন।উত্তল, অবতল দর্পণ কোনগুলো।কখন প্রতিবিম্ব বড়-ছোট হবে?বলেন বলেন কবীর শাহ।”

কবীর ঠোঁট কামড়ে নিজের হাসি সংবরণ করলো।উচ্ছ্বল প্রাণবন্ত কিশোরীর চোখদুটো জবাবের জন্য চকচক করছে।মেয়েটা কী ধরে নিয়েছে সে এসব প্রশ্নের জবাব জানেনা?নাহ,মেয়েটাকে আজ আবার হারাতে হবে।উষ্ণ শ্বাস ফেলে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিলো কবীর।তোশামণি ঈষৎ বি র ক্ত হলো।মন খারাপের সুরে বলল,

“আপনি সবসময় জিতে যান।বয়সে বড় হলে সকলে জিতে যায় তাইনা?”

“ধরে নাও তাই।”

“যখন আমি বড় হবো।মানে ইউনির্ভাসিটিতে পড়বো তখব দেখবো কীভাবে হারিয়ে দেন আমাকে।”

কবীর শুধু হাসলো তোশার কথায়।সেই অবধি কী তাদের সম্পর্ক এগিয়ে যাবে?নিজের প্লেট থেকে কিছুটা উঠিয়ে তোশার প্লেটে দিলো কবীর।বিষয়টা নিছক অভ্যেসের ফলে হয়েছে।দিশাকেও সে এমনভাবে মায়া-মমতা দিয়ে আগলে রেখেছিলো।

“তোশা একটা কথা তোমার মাথায় আসেনা কেন আমি তোমার সাথে খেলায় নামলাম?চাইলে তো তাহিয়া কিংবা মায়ানকে বিষয়টা জানাতে পারতাম।তারা হ্যান্ডেল করে নিতে পারতো।”

কপালের একপাশে বিরক্ত করতে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে নিলো তোশা।

“এসেছিল।আমি জিজ্ঞেস করবো ভেবেছিলাম।”

“কয়েকমাস আগে আমি যখন আমার বন্ধু এলেক্সের বিয়েটা এটেন্ড করতে গিয়েছিলাম তখন একজন লেখকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল।নাম রিকার্দো কুয়ারেজমার।আমাকে ড্রিংক অফার করে।তখন বসে বসে আলাপের সময় রিকার্দো আমাকে নিজ জীবনের একই রকম ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা শুনান।সে নিজেও সতের বছর বয়সী টিনেজারের সঙ্গে একমাস কম্পিটিশন করেছে।”

তোশা উত্তেজিত হয়ে বলল,

“তাদের বিবাহিত জীবন এখন কেমন চলছে?”

কবীর হেসে ফেললো তোশার কথায়।যে হাসিতে কিশোরীর মনের বাগানে সুগন্ধ মেখে প্রজাপতি উড়ে গেলো।আজও ব্যক্তিটার হাসি চোখ অবধি পৌঁছায়নি।

“তাদের বিয়ে হয়নি।এমনকি সম্পর্কও হয়নি।মেয়েটা চৌদ্দ দিনে নাকানিচুবানি খেয়ে পালিয়েছে।”

“আপনি ভাবছেন আমিও সেরকম করবো?”

“আমি জানি শেষটা রিকার্দোর সঙ্গে যা হয়েছে সেটি হবে।সত্যি বলি?তখুনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই তুমি এগিয়ে এলে আমি এই প্রতিযোগীতা আনবো দুজনের মধ্যে।এতে সাপও ম র বে..।”

“আর লাঠিও ভাঙবেনা।তাইতো?”

“হ্যাঁ।”

তোশার শ্বাস ভারী হয়ে এলো।সাদা মুখটা ছোট্ট চেরি টমেটোর মতোন রক্তিম হয়ে উঠেছে।মেদুর গালটি টেনে দিলো কবীর।

“রাগলে তোমাকে পেঁকে যাওয়া চেরি টমেটোর মতোন লাগে।”

“ওই মেয়েটির মতোন আমি না।পালাবো না।ঠিক ত্রিশ দিন পুরো করবো।”

“করো সমস্যা নেই।শেষে দেখা যাবে আমি জিতবো।তবে বেশী কষ্ট না পেলে পিছিয়ে যাওয়া উত্তম।”

তোশা রেগে কবরীরের শার্টের কলার হাতের মুঠোয় ভরে নিলো।

“কবীর শাহ ওভার কনফিডেন্স খুব খারাপ জিনিস।এটা কী আপনার আম্মু শিখায়নি?”

“আমার মা তো অনেক কিছু শিখিয়েছে।যেমন ছোট্ট বাচ্চাদের সঙ্গে লাগতে নেই।”

“ইশ,ছোট বাচ্চা তাইনা?আম্মু, আব্বুর রিলেশন কতো বছরে হয়েছিল মনে আছে?আমি জানি সতের তে।”

“তাই?তোমার বাবার বয়স কতো ছিল তখন জানো?ঠিক সতের।ক্লাসমেইট ছিল মায়ান-তাহিয়া।আমার বয়স কতো থার্টি সিক্স।মানানসই হলো।ঠিক ওদের জন্য আমি তোমার সাথে কঠোর হতে পারছিনা।”

খুব কান্না পাচ্ছে তোশার।ব্যক্তিটা কেন বুঝতে পারছেনা কিছু।হুট করে মেয়েটির কী হলো।নিজ থেকে কবীরের বুকে মাথা রাখলো।পুরুষটির গায়ের তীব্র সুগন্ধ প্রাণভরে নিলো সে।বুকের অস্থিরতা তো কমছেনা।কবীর নির্বিকার বসে আছে।মেয়েটির প্রতি অবাঞ্চিত অনুভূতি গুলো বেড়ে উঠুক তা সে চায়না।যা সমাজ,নীতি, সম্পর্ক বিরুদ্ধ সেসব অনুভূতি শুধু দুঃখ ও ভাঙন বয়ে আনে।

“শুনেন কবীর শাহ।আমি তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা সত্যিই আপনাকে ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি।সরাসরি কখনো বলেছিলাম কথাটি?”

তোশার ছোট্ট ছিমছাম দেহের উষ্ণতায় বিভোর হয়ে থাকা কবীর বলল,

“এসব বাচ্চামো আবেগ,মায়া ছাড়া কিছু নয়।”

“আবেগ,মায়াও অনুভূতি।আর যেকোনো অনুভূতি ভাঙলে খুব কষ্ট হয়।”

তোশার এমন বড় ধরণের কথায় কবীর অবাক না হলেও ফোনের ওপাশে থাকা নারীটি ভীষণ অবাক হলো।এতো অনুভূতি নিয়ে কথাগুলো তার শেখানো নয়।তোশার নিজ থেকে বলা।ভালোবাসা চাওয়া পাওয়া মাঝেমধ্যে সত্যিই বড় বিচিত্র আচরণ করায় মানুষকে দিয়ে।

(***)

কবীরের কথাটি সত্য হলো।প্রতিযোগীতার দ্বিতীয় পর্বে খুব বাজেভাবে হেরে গেলো তোশা।যে মা তাকে বকেনা সে রে গে আজ অনেক কথা শুনিয়েছে।এমনকি লকেটটা আপাতত তাহিয়ার জিম্মায় আছে।কী অসহ্য যন্ত্রণা ভালোবাসায়।যেখানে বয়স না মিললে হবেনা।ত্বকের রঙে না মিললে হবেনা।টাকা পয়সায় না মিললে হবেনা।সম্পর্কে না মিললে হবেনা।তাহলে যে অনুভূতি না হওয়ার থাকে সেটা তৈরী হয় কেন?বড় বড় অশ্রুকণা মুছতে মুছতে কবীরের নাম্বারে ডায়াল করলো তোশা।ওপাশ থেকে রিসিভ হওয়ার পর কান্নার শব্দ শুনে আনমনা পুরুষালি শক্ত কণ্ঠে কবীর বলে উঠলো,

“হেরে গেলে তোশামণি।কাল আবারও কী তৃতীয় পর্বে সামিল হতে চাও?হেরে যাবে কিন্তু।”

তোশা কান্নারত কণ্ঠে জবাব দিলো,

“হেরে যাওয়ার জন্য হলেও আবার একই খেলা খেলবো।”

“আমাকে হারিয়ে ফেলার এতো ভয় তোশামণি?”

কবীর প্রশ্নটি করতে গিয়ে নিজেও কেমন অসহায় বোধ করলো।বুকের ভেতর থেকে শূন্য হয়ে আসছে তার।কেন অবাঞ্চিত মায়া জন্মে মানুষের?সেই প্রশ্নের জবাব নেই।

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১৩
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“তোশামণি ক্লাসে চল।”

“যাচ্ছি দাঁড়া।”

বাতাসে তোশার মসৃণ চুলগুলো উড়ো উড়ি করছে।সেগুলো কানের পিঠে গুঁজে নিলো।বড্ড উত্তেজিত দেখাচ্ছে তাকে।মাঠের একদম শেষ মাথায় গেটের কাছে কবীর দাঁড়িয়ে আছে গাড়ী নিয়ে।নিশ্চয় তোশার জন্য এসেছে।কিন্তু এখনও তো ছুটির অনেকক্ষণ বাকী।কবীরের তামাটে শক্ত মুখখানার দর্শনে তোশার অশান্ত মন আরো জ্ব লে উঠলো।মেয়েটা যেন এতোদূর থেকেও তামাটে পুরুষটির গায়ের তীব্র সুগন্ধ পাচ্ছে।

“কী হলো তোশামণি ক্লাসে চল।কাকে দেখিস এভাবে?”

বান্ধুবীর সামনে প্রচন্ড লজ্জা অনুভব হলো তোশার।সে ঈষৎ কেঁশে বলল,

“কাওকে না।চল স্যার এসে পড়বে।”

ফিরে যাওয়ার সময় তোশা বারবার পিছন ফিরে দেখছিলো।বড্ড মন খারাপ হয়ে গেলো তার।ব্যক্তিটা একবার বারান্দায় তাঁকালে অন্তত কোনো ইশারায় অপেক্ষা করতে বলতো।অথচ ছোট্ট কিশোরী তোশামণি টের পেলো না কবীর শাহ নামক সবথেকে নিষ্ঠুর অঘোষিত গোপনীয় প্রেমিকটি তার জন্য নয়।অন্য কারো সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।মিনিট দশেক পর কাঙ্ক্ষিত রমনীর দেখা পেলো কবীর।দিশা নিশ্চুপ হয়ে তার পাশে এসে দাঁড়ালো।

“গাড়ীতে উঠে বসো দিশা।”

দিশা উষ্ণ শ্বাস ফেললো।টিস্যু দিয়ে মুখবিবরে লেপ্টে থাকা ঘামগুলো মুছে নিয়ে বলল,

“কেন ডেকেছো সেটা বলো।”

“তুমি নিশ্চয় চাইবেনা সকলের সামনে আমার মেজাজ খারাপ আর তোমার সম্মানহানী হোক।”

“তাই?যে পুরুষ বিবাহ বন্ধনে থাকা অবস্থায় আমাকে সাধারণ ফুলের টোকাও দেয়নি সে প্রাক্তন হয়ে যাওয়ার পর বৃহৎ কিছু করবে বলে আমার মনে হয়না।”

কবীর এগিয়ে এলো দিশার দিকে।তার পুরু ভ্রু দুটো সদা প্রিয় ছিল দিশার নিকট।অতীতের অভ্যেস থেকে কীনা নিজের ব্যবহার করা টিস্যু দিয়ে কবীরের কপালের ঘাম মুছে দিলো দিশা।

“তুমি আরো তামাটে হয়ে গিয়েছো কবীর।”

প্রশ্নটির জবাব না দিয়ে দিশা টেনে সজোরে গাড়ীর ভেতর ফেললো কবীর।কোনোকিছু নিয়ে বড় রেগে আছে সে।কবীর নিজেও গাড়ীর ভেতরে গিয়ে বসলো।

“তোমাকে কী কোর্ট থেকে আহনাফের থেকে দূরে থাকতে বলা হয়নি?তবে এই স্কুলে এতো মাস ধরে চাকরি করার সাহস পেলে কোথায় থেকে?”

“কবীর নিজের ভুলটা শুধরে নাও।আমি একবারও আহনাফের সাথে কথা বলিনি।ইনফ্যাক্ট ও আমাকে দেখেওনি।আমি নাইন ও টেনে ক্লাস নেই।”

“ভুল বললে।গতকাল দেখেছে।এবং রাতে আমাকে জানিয়েছে।”

দিশা একটু মনক্ষুন্ন হয়ে বলল,

“আমাকে দেখেও ও কথা বলেনি কেন?”

দিশার মাতৃত্বের উপর পুরোদমে বিদ্রুপ করে হেসে কবীর বলল,

“তুমি ওর মা হওয়ার মতো কিছু করেছো?এক মিনিট তুমি বৃষ্টিদের ক্লাস নাও?”

“হ্যাঁ।”

“অথচ বৃষ্টি আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি।”

“একটা বিষয়কে বড় করে নিচ্ছো কবীর।বৃষ্টির কী দরকার তোমাকে বলার জন্য?এমন না ওর সাথে টিচার-স্টুডেন্টের বাহিরে কোনো সম্পর্ক আছে আমাদের।”

“না থাকুক।তোমাকে কেন আশেপাশে টলারেট করবো আমি?”

“তো কাকে করবে?মায়ানের মেয়ে তোশাকে?”

কথাটি সুঁচালো ছুঁ ড়ি র মতোন কবীরের বুকে এসে লাগলো।হুট করে উত্তেজিত হয়ে দিশার চোয়াল চেপে ধরলো সে।

“তোশার কথা আসছে কেন এখানে?ও শুধু তোমার স্টুডেন্ট।”

“লাগছে কবীর।”

“লাগুক।তোশার কথা মাথা থেকে সরিয়ে দাও।”

“কেন লজ্জা পাচ্ছো তুমি?ইশ যখন তুমি আমার সাথে ভালোবাসার রাত গুলো উদযাপনের করতে তখন তোমার বর্তমান মায়ের বুকে শুয়ে ঘুম পাড়ানি মাসি-পিসি শুনতো।কীরকম বিদঘুটে বিষয় হয়ে গেলো না কবীর?মায়ান জানে?তাছাড়া কী যাদুবলে মেয়েটা সুন্দর,ব্যক্তিত্ববান,আদর্শবান,নিজ নীতিতে অবিচল থাকা কবীর শাহকে মানিয়েছে।বাই এনি চান্স?”

“মুখ সামলে কথা বলো দিশা।তোশা খুব ভালো একটা মেয়ে।”

“থাকুক।কিন্তু যে তোমাদের কথা শুনবে সেই তো বলবে মেয়েটা তোমার সুগারবেবি।খরচ করো ওর পিছনে?”

“স্টপ দিশা।আমি কী করি সেগুলো তোমার দেখার বিষয় নয়।”

“অবশ্যই দেখার ব্যাপার আছে।ছেলেটা এখনও তোমার কাছে আছে।তার জন্য ভবিষ্যত দেখতে হবে তো নাকী?যদিও মনে হয়না তোশাকে তুমি বিয়ে করবে।শুধু শুধু চুইংগামের মতোন চিবানোর কী দরকার?”

“ও চুইংগাম না।জলজ্যান্ত একজন মানুষ।পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর মানসিকতা আর মন ওরমধ্যে আছে।এইযে যেসব কথা বললে সব গুলো অনুচিত ছিল তোমার।যাই হোক কথাগুলো যেন আমার মধ্যে থাকে।ভুলক্রমে লিটল চেরির কাছে বললে আমি তোমাকে ছাড়বো না দিশা।

কবীর নিজের সীটে ফিরে এসে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো।রাগে তার মুখটা রক্তিম হয়ে উঠেছে।দিশার চোখ দুটো অশ্রুসজল হয়ে উঠলো।এই ব্যক্তিটা একসময় শুধু তার ছিল।অথচ আজ সব পরিবর্তন কেন হয়ে গেলো?

” লিটল চেরি?ভালো নাম দিয়েছো তো।যাই হোক আমার ক্লাস আছে।তাও আবার তোমার লিটল চেরির ক্লাসে।ভালো থেকো।”

“দাঁড়াও দিশা।আহনাফ কিংবা তোশা দুজনের থেকে দূরে থাকবে।”

“তোমার তোশামণির সঙ্গে আমার কোনো দেনাপাওনা নেই।যদি আহনাফের কথা আসে তবে আমার বলতে হবে ছেলেটা আমারও অংশ।পেটে ধরেছি।তাই অধিকার আছে।”

দিশা গাড়ীর দরজাটি খুলে বাহিরে চলে গেলো।কবীর অবশ্য তাকে বিদায় দিলো না।চোখের কার্ণিশে জমে থাকা অশ্রুগুলো বাম হাতের পিঠের সাহায্য মুছে নিলো।হুট করে ঝুঁকে কবীরের উদ্দেশ্যে বলল,

“তুমি আমার ছিলে কবীর।সেখানে তোমার নতুন প্রেমিকাকে চোখের সামনে দেখতে পেয়ে খুব খারাপ লাগে।”

“নিজেদের দোষে প্রাক্তন হয়েছি দিশা।এখানে নতুন কারো দোষ নেই।”

(***)

স্কুল থেকে বড্ড দুঃখিত মন নিয়ে বাসায় ফিরে এলো তোশা।ভেবেছিল ছুটির পর কবীরকে দেখতে পাবে।কিন্তু ব্যক্তিটা তো ছিলনা তখন।এজন্য বাসায় ফিরে এসে রুমে দিকে ছুটতে লাগলো।তোশার নানী রাহেলা আড়চোখে নাতনিকে দেখলো।বড় চঞ্চল হয়ে উঠেছে ইদানীং।কবীরের নাম্বার ডায়াল করতেই রিং হতে লাগলো।সঙ্গে তোশার বুকের হৃদপিন্ডের লাব-ডাব শব্দের গতি বাড়ছে।রিসিভ হতে তোশা শুধালো,

“চলে গেলেন কেন?”

কবীর বিরক্তি হয়ে বলল,

“তুমি করিডোর থেকে দেখছিলে কেন আমাকে?”

“বাহ!দেখার মানুষ দেখবো না?”

অন্যসময় হলে কবীর হেসে ফেলতো একথায়।কিন্তু আজ দিশার কথায় বড় প্রভাবিত হয়েছে সে।

“আমাকে আর ফোন করবেনা তুমি।যা হচ্ছিলো তা বাদ।”

“কেন?কী হলো হঠাৎ?”

“সব তোমাকে বলতে হবে আমার?ইডিয়ট কোধাকার।”

ফোনটা কেঁটে গেলো।এরপর যতোবার ব্যাক করলো তোশা ততোবার বিজি পেলো।মানে লোকটা তার নাম্বার ব্ল্যাকলিস্টে রেখেছে।তীব্র যন্ত্রণায় বুকে ব্যাথা শুরু হয়ে গেলো।এমন সময় কল্লোল আপেল খেতে খেতে রুমে এসে তোশার পাশে বসলো।

“জানিস তোশামণি কলি খালামণিরা আসছে খুব তাড়াতাড়ি।”

নিজের কষ্ট লুকানোর জন্য তোশা হাসার প্রয়াস করে বলল,

“তাই?”

“হ্যাঁ।পাত্র দেখছে তার জন্য।ওইযে কবীর আঙকেল।সেই হচ্ছে পাত্র।”

শিউরে উঠলো তোশা।অনুভূতির আরশিমহলে কাঁপন সৃষ্টি হলো।সবটা ভেঙে পড়বেনা তো এবার?

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১৪
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আপনি কী নিয়মিত জিম করেন?আমি কিন্তু মটেও স্বাস্থ্য সচেতন নই।এই কারণেও স্বাস্থ্যও বেশী।”

নিজের এই অপারগতা প্রকাশ করতে বিন্দুমাত্র লজ্জা পেলো না কলি।মেয়েটা বেশ স্মার্ট।কথাবার্তায় মেকি ভাব কম।

“সকলে যে স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন হবে এমন নয়।রেস্ট্রুরেন্টের বিজনেস তাহলে চলবে কীভাবে বলেন?”

কলি হাসলো।এতে তার শুভ্র মুক্তার মতোন দাঁতগুলো দৃশ্যমান হলো।

“বাই দ্য ওয়ে আমাদের নামের মধ্যেও কিন্তু মিল আছে ‘ক’ তে।সত্যি বলতে আমি এতো কথা বলিনা কখনো।”

“আমাকে দেখে বলতে মন চাচ্ছে এতো কথা?”

কলি লাজুক হেসে শাড়ীর আঁচল আঙুলের সঙ্গে লেপ্টে দিতে দিতে মাথা দুলালো।

“জি।’

“বেশ।”

কবীরের মটেও আলাপ করতে ভালো লাগছেনা।উল্টো চোরাচোখে দূরে বসে থাকা মিষ্টি কন্যাকে দেখতে ভালো লাগছে।ফোলা ফোলা গালের মধ্যে বিষন্নতা ছেয়ে আছে তোশামণির।এতে যেন আরেকটু সুন্দর লাগছে মেয়েটিকে। সে মাথাটা তুলতেই দুজনের দৃষ্টির মেলবন্ধন ঘটলো ।কবীরকে তার দিকে তাঁকিয়ে থাকতে দেখে মুখটা ঘুরিয়ে নিলো তোশা।

“কী দেখছেন ওদিকে?”

কবীর আস্তে করে জবাব দিলো,

“অভিমান দেখছি।”

“হু?কী বললেন?কে অভিমান করেছে?”

কলি সামনে চোখ তুলে তাঁকিয়ে তোশা ছাড়া আর কাওকে দেখতে পেলো না।সে ধরে নিলো নিশ্চয় এই বাচ্চা মেয়েটির অভিমান কবীর দেখছেনা।

“কলি আমি একটু আসছি।দুঃখিত আপনাকে একা ছাড়ার জন্য।”

কবীরের মিষ্টি হাসিটা সংক্রমিত হয়ে কলির মুখেও ছড়িয়ে গেলো।সে ঋণাত্মক মাথা দুলিয়ে বলল,

“সমস্যা নেই।আমি সেই অবধি তোশার সঙ্গে একটু গল্প করে নেই।”

কবীর সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার আগে একবার পিছন ফিরে তোশাকে দেখলো।মেয়েটার মাথা থেকে নিশ্চয় এতোদিনে প্রেমের ভূত নেমে গিয়েছে।তা নয় সকালে এসেছে।অথচ একটিবারও তার সঙ্গে কথা বলেনি।উষ্ণ শ্বাস বের হয়ে এলো কবীর শাহ এর পাথর হৃদয় থেকে।

তোশামণির চুলগুলো ইদানীং বেশ বড় হয়েছে।মৃদুমন্দ হাওয়ার সঙ্গে সেগুলো উড়োউড়ি করতে ব্যস্ত।তোশাকে আত্মীয়রাও বেশ আহ্লাদ করে।কলি এসে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“কী ব্যাপার তোশামণি?মনটা খারাপ কেন তোমার?ভালো লাগছেনা এখানে?”

“ভালো লাগছে খালামণি।একটু আগে যারা এলো তারা কে?”

“কবীরের মা-বাবা।আপাতত তারা এসে আমাকে দেখে যাচ্ছে।পরবর্তীতে কথা এগিয়ে গেলে বাড়ীর সকলকে নিয়ে আকদ অনুষ্ঠিত হবে।”

“ওহ।”

শব্দটি অন্তত মনমরা হয়ে তোশার ভেতর থেকে বের হয়ে এলো।যার গভীরতা কলি মাপার প্রয়োজনবোধ করলো না।তোশা পুনরায় ব্যগ্র হয়ে শুধালো,

“তিনি তোমাকে পছন্দ করেছে খালামণি?”

“এখনও বলা যাচ্ছেনা।স্বাস্থ্য একটু বেশী দেখে কতোজন রিজেক্ট করলো।যদি তোমার মতোন সুন্দর থাকতাম তবে বিয়ে এতো দেরীতে হতো নাকী?”

কলির আক্ষেপটা তোশার মনে সুঁ চ হয়ে য ন্ত্র ণা দিলো।এতো রুপের ডালি মেলে ধরেও তো সেই মানুষটার হলো না।কিশোরী তোশার মনে আত্মসম্মান ফুঁটে উঠেছে।ঠিক এই কারণে আজ তেরো দিনেও সে কবীর শাহ এর সঙ্গে কথা বলেনি।থাকুক না দূরে।গোপনে আড়ালে সব বির্সজিত হয়ে যাক।কলি নিজ ফোনে মত্ত্ব হয়ে পড়লো।উষ্ণ শ্বাস ফেলে তোশা উঠে দাঁড়ালো।এই বাড়ীটাও তার নানার।কিন্তু সাভারের দিকে হওয়ায় খুব বেশী আসা হয়না।অনেকটা খোলামেলা বাগান বাড়ীর মতোন।বাড়ীটা নানার হলেও আপাতত এটা তোশার ছোট খালামণির নামে।দুই ধার দিয়ে সিঁড়ি উঠে যায় ছাদের দিকে।তোশা যেদিকে কবীর গিয়েছিল ঠিক তার বিপরীতের দিকে গেলো।পথিমধ্যে বড়দের হাসির আওয়াজ শুনতে পেলো সে।বিয়েটা হয়তো হয়েই যাবে।

(***)

একমনে বাহিরে তাঁকিয়ে আছে কবীর শাহ।বাড়ীর সবথেকে নির্জন ব্যলকনি এটা।বহু বছর আগে মায়ানের সঙ্গে এই বাড়ীতে পিকনিক করতে এসেছিল সে।আজও সেই স্মৃতিগুলো কতোটা রঙিন।যে ছেলেকে বন্ধু হিসেবে সে মানে তার মেয়ের প্রতি অবাঞ্জিত দূর্লভ অনুভূতিকে সে শাসন করতে করতে ক্লান্ত।একদম ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।এটা তো হওয়ার কথা ছিলনা।হুট করে নাকের ভেতর সুগন্ধীরা এসে ছুটোছুটি করতে লাগলো।Johnson Baby Powder এর।তোশা এখনও এটা গায়ে মাখে।যে মেয়ে ষোল বছরেরও বাচ্চামো ধরে রেখেছে তার সঙ্গে আসলেও তর্ক করে আগানো যায়না।মনের কৌতুহল দমাতে পারলো না কবীর।এগিয়ে গেলো সুগন্ধের দিকে।বাহিরের দিকে মুখ করে কাঁদছে তোশা।একটু পর পর হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে চলেছে।কবীর বাঁকা হেসে দেয়ালে বাহু ঠেকিয়ে দাঁড়ালো।আগমন বুঝতে পেরে তোশা শুধালো,

“কাঁদতে দেখে আনন্দ হচ্ছে?নিষ্ঠুর,পাষাণ,শক্ত হৃদয়ের মানুষ।”

“ভালো লাগছে সুন্দর,কোমল,নরম হৃদয়ের কন্যা।”

তোশা প্রচন্ড তেজ নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো।কান্না করতে করতে চোখ দুটো ফুলে গিয়েছে তার।কবীর হতাশামূলক শ্বাস ফেলে বলল,

“কিশোরী বয়সটা সত্যি ভয়ংকর আবেগের বয়স।যেখানে ভালো মন্দের বিচারে অনুভূতি প্রাধাণ্য বেশী পায়।”

“আবেগ?কেন এই বয়সে কারো মনে চাওয়া পাওয়া তৈরী হতে পারেনা?মানুষের তো ছোটবেলায় বন্ধুত্ব তৈরী হয়।যা পরবর্তী তে ভালোবাসা হয়ে উঠে।সেই বেলায় দোষ নেই।”

“ভীষণ বড় হয়ে যাচ্ছো তোশামণি।”

“হইনা বড়।তবে যদি আপনার মায়া হয়।”

কবীরের চোখ দুটো হেসে উঠলো।সে এগিয়ে এলো তোশার সামনে।মেয়েটি তার থেকে শারীরিকভাবে বেশ ছোটখাটো।নরম তুলতুলে হাত দুটো শক্ত হাতের মধ্যে নিয়ে নিলো সে।খুব ধীর আওয়াজে গেয়ে উঠলো,

ম্যেয়ে শায়ের তো নেহি মাগার এ হাসিন যাবসে দেখা
ম্যেনে তুজকো মুজকো শায়েরী আ গ্যেয়ি
ম্যেয়ে আশিক তো ন্যেহি মাগার এ হাসিন যাবসে দেখা
ম্যেনে তুজকো মুজকো আশিকি আ গ্যেয়ি

গানের লাইন গুলোর সমাপ্তিতে তোশার মাথাটি নিজের বুকের মধ্যে এনে রাখলো কবীর।মেয়েটির কান্না যেন এতে আরো বেশী বৃদ্ধি পেয়ে গেলো।ফিসফিস করে বলল,

“আমি নাটক করিনা কবীর শাহ।সত্যি মন থেকে বলি সব কথা।সকলে বলে খুব সুন্দর দেখতে আমি।তবে রুপের লোভে পড়েই আমাকে একবার পাওয়ার আশা করে দেখুন।”

শান্ত ধীরে তোশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

“পৃথিবীতে এমন জায়গা খুঁজে বের করো যেখানে তোমার অনুভূতিকে অসম্মান করার মতো কেউ থাকবেনা।”

“এমন জায়গা নেই কবীর শাহ।আপনি এইমাত্র যে গান গাইলেন সেখানে আমার প্রতি অনুভূতি খুঁজে পেয়েছি।এটা কী যথেষ্ট নয় সব ঘৃ ণা কে পিছন ফেলে দেওয়ার।আমি এতো বড় বড় কথা বলতে জানতাম না।ধরে নিন শিখছি।”

কবীরকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তোশা।কবীর দুহাত দিয়ে মেয়েটির নরম মুখ উপরে তুলে ধরলো।চোখ দুটো অশ্রুসজল হয়ে আছে।দুহাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে মুছে বলল,

“আমার বুকে মাথা দিয়ে ইচ্ছামতো কেঁদে নাও তোশা।কখনো আর এই সুযোগ পাবেনা।যখন আমার চুল সাদা হওয়া শুরু হবে তখন তুমি পূর্ণ যুবতী হবে।বুঝতে পারবে বৃথায় অশ্রু ফেলেছিলে।”

তোশা কবীরের শক্ত বুকে পুনরায় কপাল ঠেকিয়ে বলল,

“এই কান্না কখনো থামবেনা আমার।কখনো না।”

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-১০+১১

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১০
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“তুমি একজন কিশোরী হতে পারো লিটল চেরি।কিন্তু আমি কিশোর নই।সেই কারণে এমন ফ্যান্টাসীতে জীবনযাপন করা বন্ধ করো।”

“ভয় পাচ্ছেন?”

“লম্বা চওড়া,বলিষ্ঠ এই পুরুষকে তোমার ভীতু মনে হচ্ছে?”

কবীরের দৃষ্টিতে প্রহেলিকার দেখা মিললো।তোশার ছোটখাটো বুদ্ধিতে কবীরের অন্তত পরিবর্তন তো ধরা পড়ছে।মৃদুমন্দ বাতাস বইছে।এখন তারা পারভেজের বাড়ীতে আছে।রাত এগারটা বাজে।হয়তো আর আধা ঘন্টা কবীর নামক মানুষটার সঙ্গ মিলবে।এই কারণে তোশা কথাবার্তায় তারাহুরো করতে চাচ্ছে না।আলাপচারিতা যেন পার্ফেক্ট হয়।তবেই তো কবীর শাহ এর মনে নিজের ছাঁপ ফেলতে পারবে।

“দেখুন আমি সরাসরি কিছু বলিনি আপনাকে।তো কী মনে করে এগুলো বললেন?বলেন বলেন?”

শব্দের সঙ্গে তোশার ভ্রু উঠানামা করলো।সুন্দর গোলগাল এই মেয়েটির মধ্যে অন্য কারো আত্না এসে বসবাস শুরু করলো না তো?বাগানের এক পাশে দুটো বেতের চেয়ারে পাশাপাশি বসে আছে তারা।পারভেজের স্ত্রী জোর করলো তাই সকলের এখানে আসা।তাহিয়া আপাতত ভেতরে আছে।

“হা করলে যে হামিদপুর বলবে সেটা তো বোঝার কথা।”

“আমি তো হা করিনি।হ্যাঁ করেছি নিজের মনের সঙ্গে।”

ক্ষণমুহুর্ত থমকালো।এরপর শব্দ করে হেসে উঠলো কবীর।বলবান কণ্ঠ নির্জন ঈষদুষ্ণ পরিবেশে অনেক মোহময় লাগলো তোশার নিকট।সে খেয়াল করলো কবীর হাসলেও সেটা তার চোখ অবধি পৌছায়নি।কেমন শৈল্পিক হাসে ব্যক্তিটা।

“ডায়লগটি কোথা থেকে শুনেছো?”

“হুমম।ধরে নেন নিজে থেকে বানাচ্ছি।”

“ওয়েল লিটল চেরি।যখন আমি তোমার বয়সে ছিলাম তখন নিজেও এমন অনেক বেখেয়ালি ভাবতাম।ধীরে ধীরে বড় হলাম।দুনিয়াকে দেখলাম।এইযে অর্থ দেখছো না?এটা তো গত সাত আট বছরের সঙ্গী।কিন্তু এর আগে যথেষ্ট দুনিয়া দেখেছি।তোমার বয়সী বহু মেয়ে বিদেশে বয়ফ্রেন্ড রাখছে,ডেটে যাচ্ছে,সী-বীচ,লং ড্রাইভে এসবে মত্ত্ব।আমাদের দেশে এইতো কয়েক বছর ধরে এসব।তো যখন ওই মেয়েদের আমি দেখতাম আগে মনে হতো কী সুন্দর জীবন।পরবর্তীতে শেষবার বিদেশ ভ্রমণে ওরকম এক কিশোরীর সঙ্গে দেখা হলো আমার।বিশ্বাস করো বয়স সাতাশ হলে কী হবে?দেখলে বিয়াল্লিশ বয়সী লাগছে।জীবনের তীব্র স্রোতে গা ভাসিয়ে ঠিক টিকতে পারেনি।হ্যাঁ যদি সুগার ড্যাডি থাকে তবে কথা ভিন্ন।এসব কেন বললাম?তুমি আমাকে নিয়ে অহেতুক চিন্তায় ভুগছো সেটা কয়েকমাস আগে জেনেছি।প্রথম প্রথম বিলিভ হয়নি।”

“এদিকে আসেন।কানে কানে একটা কথা বলি।”

“আমি যা বললাম তা কী একবারও কানে যায়নি?”

“গিয়েছে তো।এদিকে আসেন গোপনে একটা কথা বলি।”

তোশার কথামতোন ঈষৎ ঝুঁকে এলো কবীর।যদিও দূরত্ব ভীষণ দুটো মানুষের মধ্যে।তোশা খুব ধীরে ধীরে বলতে লাগলো,

“বিশ্বাস করুন।আপনাকে ভীষণ ভয় লাগে আমার।এইযে কথাগুলো শুনছি, বলছি ভেতর থেকে মনটা ধীরে ধীরে কেঁপে উঠছে।কিন্তু কী বলেন তো।ভেতরে জ্বর এসেছে আমার।মুখটা তেতোমিঠা হয়ে আছে।বুঝেন তো কীসের জ্বর।”

“অবিশ্বাস্য!তুমি কী পাগল হয়ে গেলে তোশা?কথার ব্রেক হচ্ছে না একদম।”

“পাগল হইনি।”

তোশা আড়চোখে হাতে থাকা ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাঁকালো।সেখানে কেউ এখনও টাইপ করে যাচ্ছে।তোশা এতোক্ষণ ধরে যা যা বলছে সেটা তাকে কেউ শিখিয়ে দিচ্ছে।যদিও কথাগুলো তার মনের।কিন্তু সুন্দর করে গুছিয়ে দিচ্ছে মানুষটা।তোশা হালকা কেশে পুনরায় বলল,

“আমাকে কিশোরী হিসেবে নয়।একজন মেয়ে হিসেবে তো দেখতে পারেন।দেশে এমন অসংখ্য অসম মানুষের সম্পর্কের কথা শোনা যায়।”

“বিষয়টি তা নয় তোশা।তুমি আমার দুজন প্রিয় বন্ধুর মেয়ে।যখন আমি ঢাবিতে পড়াশোনায় ব্যস্ত।তখন তুমি জন্ম নাও।সমাজ,নীতি, বন্ধুত্ব সবকিছুর বিরুদ্ধে তোমার অনুভূতি।হ্যাঁ বিশ,পঁচিশ,ত্রিশের বয়সের ব্যবধানে অনেক মানুষের সম্পর্ক হয়।কিন্তু আমি,তুমি না।”

“ভুল কবীর শাহ।আপনার চেহারার সঙ্গে ব্যক্তিত্ব এখন মিলছেনা।”

“কী বলতে চাচ্ছো?”

“যা বুঝেছেন সেটাই।এতো ভয় কেন?জানেন না ভালোবাসা ও যুদ্ধে সবকিছু সঠিক।”

“তো তুমি আমাকে ভালোবাসো?শব্দটা এতো সস্তা?”

প্রশ্নবাণের ভারী আ ঘা তে তোশা হাসফাস করতে লাগলো।কী পাষাণ লোকটি।কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই পুনরায় বাঁধাপ্রাপ্ত হলো।

“শুনো।কবীর শাহ কেমন মানুষ সেটা তুমি ধারণাও করতে পারবেনা।ভালোবাসা চাও তাইনা?ঠিক আছে।চলো একমাস একটি প্রতিযোগীতা হয়ে যাক।আমি তোমাকে বাস্তবতা সমাজ ও তুমি কতোটা ভুল সেটা দেখাবো।এবং তুমি আমাকে ভালোবাসা জানাবে।অসম বয়সীর ভালোবাসা।শেষে যার স্কোর বেশী হবে সে জিতবে।”

“এটা কেমন হলো?”

“করবে কম্পিটিশন?”

তোশার ফোনে ক্রমগাত ম্যাসেজ আসছে।এতোক্ষণ তাকে যে সবকিছু শিখিয়ে দিচ্ছিলো সে না করার জন্য হয়তো এক মিনিটে পঞ্চাশটি ম্যাসেজ করে বসেছে।তোশা নিজেও দ্বিধায় শ্বাস ফেলছে।লোকটা হুট করে এ কেমন খেলার কথা জানাচ্ছে?যদি সে হেরে যায়?এজন্য তো অংশগ্রহণ করতে হবে আগে।তোশা খুব শক্ত করে নিজেকে সামলে নিলো।গায়ের আঁচল অনেকটা টেনে বলল,

“আমি রাজি।শেষে যদি জিতে যাই সমাজ,পরিবার সবকিছু মানানোর দায়িত্ব আপনার।”

“এমন কোনো সিচুয়েশন আসবেনা।”

“দেখা যাক।”

কবীর কিছু একটা ভাবলো।উঠে দাঁড়িয়ে তোশার চেয়ারের দুপাশে হাত রেখে মেয়েটির সন্নিকটে ঝুঁকে এলো।পুরুষটির সজীবতাময় পুরু ত্বকে খুব করে তোশার চিমটি কাঁটতে মনে চাচ্ছে।উষ্ণ শ্বাস এসে মুখে লাগছে।কবীর আনমনে তোশার ঘাড়ের দিকে চুলের গোছাতে শক্ত করে মুঠোয় ভরে নিলো।

“আহ লাগছে কবীর।”

“ব্যাথা লাগছে?সহ্য করে নাও নরম তোশামণি।আমি পূর্বেই অনুধাবন করেছিলাম পনের বছরের মেয়ে এতোটা বোকা হয়না।”

“আমি দুনিয়ায় সকলের কাছে ছোট।কিন্তু আপনার কাছে নয়।”

“তাই?দেখা যাক বড় মানুষ।তাছাড়া এসব ব্যাথা সহ্য করে নাও।আমি ভীষণ ব্যাথাময়।”

(***)

কবীর ভেতর গিয়েছিল।খুব শীঘ্রই ফিরে এলো হাতে দুটো গ্লাস নিয়ে।

“বড় মানুষ তোশা।ধরো এই নাও।গ্লাসে ওয়াইন আছে।চলো আলাপ করতে করতে পান করি।”

ভূত দেখার মতোন চমকে উঠলো তোশা।উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,

“আপনি আমাকে ড্রিংক করতে বলছেন?”

“জি।আর না পারলে সব বাদ।কম্পিটিশন সহ সব বাদ।বাড়ী গিয়ে সোজা ঘুমিয়ে পড়বে কেমন?”

কবীর নিজের গ্লাসে চুমুক বসালো।হুট করে তোশার কী হলো সে গ্লাসটা নিয়ে পুরো তরলটি খেয়ে ফেললো।স্বাদে যদিও পানি মেশানো স্প্রাইটের মতোন।কবীর এখনও নিজের ছন্দে আছে।পুরোটা গিলে তোশা নিজের মতোন বসে থাকলো।ধীরে ধীরে ওয়াইনের প্রভাব দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে।পাগলের মতোন হাসতে শুরু করলো।তোশার দূর্ভাগ্য ছিল কীনা।ঠিক তখুনি তাহিয়া সেখানে এসে উপস্থিত হলো।মেয়েকে পাগলের মতোন হাসতে দেখে শুধালো,

“কী হয়েছে তোশামণি?এভাবে হাসছো কেন?”

তোশা হাসতে হাসতে জবাব দিলো,

“আম্মু আমি না একটু ওয়াইন খেয়েছি।এইযে পাগল লোকটা দিয়েছে।”

তাহিয়া চোখ বড় বড় করে কবীরকে দেখলো।

“কীভাবে পারলে তুমি কবীর?যেখানে আমি ড্রিংক করিনা।সেখানে আমার বাচ্চা মেয়েকে।”

“রিলাক্স তাহিয়া।ওর খালি গ্লাসে একটু রয়ে গিয়েছে মুখে দিয়ে দেখো তো ওটা কী।”

“একদম না।ওয়াইন খাইনা আমি।”

“বিশ্বাস করো আমাকে।খেয়ে দেখো।”

তাহিয়া কবীরকে বিশ্বাস করে এক বিন্দুর মতোন মুখে নিলো।সঙ্গে সঙ্গে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তার।তরলের স্বাদ বলছে এটি কার্বোনেটেড পানি।

“তোশা,তুমি পানি খেয়ে মাতলামো করছো?”

তাহিয়ার কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসিতে ফেটে পড়লে কবীর।কী প্রাণবন্ত হাসি তার।

“তাহিয়া,তোমার মেয়েকে বলিও এই কবীর শাহ এক সময় বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খাইয়েছে।তার সঙ্গে বোঝাপড়া ভালো হবেনা।”

“এটা প্লাসিবো এফেক্ট?ও তো খেয়েছে পানি।কিন্তু ওর মস্তিস্ক ধরে নিয়ছে ওয়াইন খেয়েছে।বাচ্চার সাথে এমন মজা কবীর?”

কবীর জবাব দিলো না।একটা বাচ্চা মেয়ে তার সাথে প্রতিযোগীতায় নেমেছে।যাকে কীনা সে পানি খাইয়ে মাতাল করেছে।কবীরের চোখেমুখে লম্বা চওড়া হাসি দেখা গেলো আবারও।তোশাকে প্রথম পর্বে হারিয়ে দিয়ে জিতে যাওয়ার হাসি।

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১১
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“একজন বাচ্চা মেয়ে যে জন্মের আগেও আমাকে দৌড় করিয়েছে।যেদিন জন্ম নিলো সেদিনও কী নাকানিচুবানি না খাওয়ালো।আজ যখন কিশোরী তখন প্রেম প্রেম খেলায় সেই দৌড় করিয়ে নিচ্ছে।লিটল ডেভিল চেরি।বাট অলসো বিউটিফুল।”

ঘুমঘুম চোখে আহনাফ নিজের বাবার দিকে তাঁকালো।ব্যক্তিটা আয়নার দাঁড়িয়ে নিজের সঙ্গে কথা বলছে।অভ্যেসটা শাহ বংশের সব ছেলেদের রয়েছে।এমনকি আহনাফেরও।কবীরের উদ্দেশ্য সে শুধালো,

“লিটল ডেভিল চেরি কে আব্বু?”

“তুমি জেগে আছো এখনও?”

“নাহ।ঘুমিয়ে আছি।”

আহনাফ বালিশে মাথা রেখে কথাগুলো বলল।কবীর মিষ্টি হেসে নিজের ছেলের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।দুজনের একই রকম পোশাক।এমনকি ঘুমানোর নিয়মও একই।

“আহনাফ,তুমি ঘুমালে এখন কে কথা বলছে?”

“আমি আব্বু।”

“তাহলে ঘুমালে কীভাবে?”

“ঘুমিয়ে তো।”

“কথাটি হবে ঘুমিয়ে ছিলাম।কিন্তু ঘুমটা ভেঙে গিয়েছে।বুঝলে?”

আহনাফ বাবার বুকে মাথা রেখে হ্যাঁবোধক দুলালো।কবীরের জীবনে একরাশ সুখ বলতে এই বাচ্চাটি আছে।

“আব্বু।একটা কথা বলি?”

“বলো।”

“আম্মুকে আজ আমি স্কুলে দেখেছি।”

“সত্যি?খেয়াল করে বলো দিশাকেই দেখেছো কীনা।”

“আম্মুকে দেখেছি।আইসক্রিমের সাথে।”

“ওকে।কী করছিলো সেখানে?তোমার সঙ্গে কথা বলেছে?”

“বলেনি।”

“তুমি ডেকেছিলে একবারও?”

“ডাকলে যদি বকে তাই।”

কবীরের ভেতর থেকে উষ্ণ শ্বাস বের হয়ে এলো।একজন সন্তান নিজ মায়ের সঙ্গে কথা বলতে ভয় পাচ্ছে বকা খাবে এজন্য।মনে মনে দিশা নামক মানবীকে সে ধিক্কার দিলো।আরো কিছু জিজ্ঞেস করবে এর পূর্বে আহনাফের ভারী নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পেলো সে।

(***)

“মেয়ে কীরকম তাহিয়া?জানো তো একজনের বাচ্চা অন্য আরেকজন সহজে মেনে নিতে পারেনা।কবীরকে সঙ্গ দিতে গিয়ে আহনাফকে ভুলে যাবে এমন কাউকে চাইনা।”

কবীরের মা সেতুর কণ্ঠের প্রত্যেকটি শব্দে আশংকা প্রকাশ পেলো।বৃদ্ধ হওয়া চুলগুলোতে খুব নিঁখুতভাবে মেহেদী দেওয়া।চেহারা যে এককালে ভীষণ মায়াবী ছিল সেটা বেশ বোঝা যায়।তাহিয়া মাতৃমনকে আশ্বস্ত করে বলল ফোনের এপাশ থেকে বলল,

“চাচী, কলি আমার ফুফাতো বোন।মেয়েটা নিজেও জীবনে খুব সহ্য করেছে।এখন এসে সুখের মুখটা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।সে জানে দুনিয়া কতোটা কঠিন। ও জব করে এই বিষয়টা নিয়ে ভাবছেন আপনি?”

“না না।ওটা কোনো ব্যাপার হলো?এক কালে আমিও চাকরি করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু নিবিড় পঙ্গু হয়ে জন্ম নেওয়ায় স্কুলের টিচার আর হতে পারলাম না।এরপর কবীর জন্ম নিলো তাড়াতাড়ি।তাই নিজ ছেলের বউদের সাথে আমি কখনো চাকরি নিয়ে ঝামেলা করিনা।দিশাও তো…।”

“বাদ দেন আন্টি।দিশার মতোন নয় কলি।খুব ভালো মেয়ে।কবীরের সাথে মানাবে।”

“তাহলে আসতে বলো তাদের।দেখা হোক দুই পরিবারের।”

“আপনি তারিখ জানালে।”

“একবার কবীরের বাবার সাথে কথা বলে জানাবো।তোমার মেয়ে কেমন আছে?”

“ভালো আছে।কবীরের সাথে অনেক ভাব জানেন।গতকাল রাতে সেই পুরোনো কবীরকে তোশার মাধ্যমে দেখেছি আমি।”

“তাই নাকী?কীভাবে?”

তাহিয়া হাসতে হাসতে পুরো বিষয়টি জানালো তাকে।কিন্তু হাসিতে মন থেকে যোগ দিতে পারলো না সেতু।কারণটা খুব স্বাভাবিক।কবীর এখন বয়সে বড় হয়েছে।তাছাড়া বাচ্চাদের সাথে খুব মায়া,মমতা নিয়ে কথা বলে। ষোল বছরের একজন মেয়েকে যদিও পুরোদস্তুর বাচ্চা বলা যায়না।তবুও কবীর হুট করে এমন মজা করেছে সেটা মেনে নেওয়া অনেকটা কষ্টকর।

(***)

তোশাকে নিয়ে বহুতল ভবনের ভেতরে ঢুকলো কবীর।জায়গাটিকে মেয়েটা চিনে।আটতলায় ফাইভ স্টার একটি রেস্ট্রুরেন্ট আছে।মায়ের সাথে কয়েকবার এসেছে সে।আজ তাদের ভালোবাসা -বাস্তবতা খেলার দ্বিতীয় পর্ব।তোশা নিজেকে মনে মনে সব ধরনের প্রশ্ন কিংবা পরিকল্পনার জন্য তৈরী রেখেছে।আজও তার ফোনের হোয়াটসঅ্যাপ কেউ কলে রয়েছে।যে তাকে ব্লুটুত কিংবা ম্যাসেজের মাধ্যমে সব দিক নির্দেশনা দিবে।লিফটে কবীর ও তোশার সঙ্গে আরো দুটো ছেলে প্রবেশ করলো।বয়স ২৩ এর আশেপাশে হবে।তাদের মধ্যে একজন তোশার গা ঘেঁষে দাঁড়াতে গেলে মেয়েটার কাঁধ ধরে টান মেরে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো কবীর।উষ্ণ দৃঢ় ছোঁয়ায় কেঁপে উঠলো মেয়েটা।

“মাস্ক পরে নাও তোশা।”

“কিন্তু কেন?আমরা তো লিফটে।”

“যা বলেছি সেটা করো।”

কবীরের কথামতোন মাস্ক পরে নিলো তোশা।সঙ্গে সঙ্গে লিফটের দরজা খুলে গেলো।মেয়েটির নরম হাত শক্ত করে ধরে আছে কবীর।যেন ছেড়ে দিলে হারিয়ে যাবে।পথিমধ্যে নিচুসুরে কবীর বলল,

“বড় হচ্ছো।নিজের ভালোমন্দ তো খেয়াল রাখতে পারো।ছেলেটা একটু একটু করে তোমার চুলে নাক ঠেকাতে গিয়েছিল।”

“সরি।”

“এখানে সরি বলার কিছু নেই।”

সবথেকে কর্ণারে সুন্দর একটি টেবিল পূর্ব থেকে কবীর বুক করে রেখেছিল।তোশাকে একদম নিজের পাশে এসে বসালো।কবীরের হাবভাব অনুধাবন করে তোশা যেন আকাশে প্রজাপতি হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে।

“কী খাবে বলো?এখানে ভালো সী-ফুড পাওয়া যায়।”

“লবস্টার,এবং অক্টোপাস।এই রেস্ট্রুরেন্টে এই ডিশগুলো খুব ভালো।”

কবীর বড় বড় করে তোশার দিকে তাঁকালো।লবস্টার মানা যায়,কিন্তু অক্টোপাস আশা করেনি সে।অর্ডার দেওয়ার পর কেঁশে গলাটা পরিষ্কার করে নিলো কবীর।

“আমার সাথে তাহিয়া আসতে দিলো?”

“বলেছি বান্ধুবীদের সাথে কেএফসি তে যাচ্ছি।”

“কেন?আমার কথা বলতে ভয় কী ছিল তোশামণি?”

আচমকা কবীরের করা প্রশ্নে থমকে গেলো তোশা।সত্যিই তো।মাকে যদি বলতো কবীরের সাথে বাহিরে যাচ্ছি তাহলে কী হতো?বিষয়টা নিয়ে মনে সংক্রিয়ভাবে উৎপন্ন ভয়টা নিয়ে মেয়েটির কপালে ভাঁজ পড়লো।

“এমনি বলিনি।কাল বের হওয়ার সময় বলবো।চলেন প্রতিযোগীতা শুরু করি।আজ না বলে কিছু পরীক্ষা করবেন না।”

তোশাকে ব্যঙ্গ করে কবীর বলল,

“না সেই সাধ্য আমার আছে?তুমি আজ কী করবে বলো।”

তোশা ঈষৎ লাজুকসুরে বলল,

“আমার জীবনের সবথেকে সুন্দর সুন্দর মুহুর্ত গুলোকে আজ দেখাবো আমি।”

“কেন?”

“নিজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে নিতে চাচ্ছি।”

কবীর পূর্ণ দৃষ্টি ফেললো মেয়েটির দিকে।বলতে গেলে তোশাকে সে এখন নারী হিসেবে দেখে।আজও সেটির ব্যতিক্রম নয়।কবীরের ইদানীং কেন যেন আবার আঠার বছরের সময়ে ফিরে যেতে মন চাচ্ছে।

“শুনেন কবীর।”

“আবার নাম ধরে ডাকলে।”

তোশা হেসে ফেললো।ব্যাগ থেকে ছোট এলবাম বের করে টেবিলে রাখলো।আজকে সেই ড্রেসটা পরে এসেছে যেটা কবীর কিনে দিয়েছিল।

“তোশা মণিকে এখন বড় বড় লাগছে।কাল শাড়ী পরেছিল তখনও বড় লাগলো।অথচ মায়ের সামনে বাচ্চাদের মতোন ফ্রক পরো।আবার বোকামো করো।কেন?”

“মা চায় সবসময় ছোট থেকে যাই এজন্য।শুনেন…।”

তোশার মুখে শুনেন ডাকটি বড় মধুর লাগছে কবীরের নিকট।

“এক মিনিট তোশা।আগে আমার কাজটি শেষ করে নেই।”

পকেট থেকে সুন্দর একটি স্বর্ণের লকেট বের করলো কবীর।মাঝখানে আবার প্লাটিনাম লাগানো।

“এসো পরিয়ে দেই।”

“আপনি এই গিফট কেন দিচ্ছেন?আমি নিবো না।”

“নির্বোধ লিটল চেরি।শুনো আগে।এই লকেটটি আজ আমার পরীক্ষার বস্ত।তুমি সুন্দর করে গলায় দিয়ে বাড়ীতে যাবে।এরপর সবাইকে দেখাবে।”

“হুম এতে লাভ?”

“গোপনে ডেকে এনে দিয়েছি সেটাও জানাবে।এমনকি নিজ হাতে পরিয়েছি তাও।”

“জানালান এরপর?”

“এরপর আমাকে রিয়াকশন বলবে।কে কী বলে?যদি কেউ বলে সুন্দর হয়েছে।তবে তুমি পাশ করে যাবে।আর যদি কেউ আমাকে তোমার প্রেমিক ভেবে বা গোপন সম্পর্কের কথা চিন্তা করে মুখে বিতৃষ্ণা ফুটিয়ে তুলে তবে তুমি হেরে যাবে।”

“কিন্তু কেউ তো এটাকে স্বাভাবিক নিবেনা।”

“তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক ভাবে নিবে মনে হয়?এটা তুমি তোমার মামিকে দেখাবে আগে।”

তোশাকে নিজ হাতে গলায় পরিয়ে দিলো কবীর।হঠাৎ করে মেয়েটা নিচু কণ্ঠে বলল,

“স্বাভাবিকভাবে কেউ নিবেনা যখন জানবে ঘুরতে নিয়ে গিয়ে এই উপহার দিয়েছেন।দেখা যাচ্ছে আপনি এমন কিছু করছেন যাতে আমার হেরে যাওয়া নিশ্চিত।”

কবীরের অধর একপাশে বাঁকা হলো।পুরু হাতের ত্বক দ্বারা মেয়েটির গালে স্পর্শ করলো।

“আমাদের একে অপরের ভালোবাসা দুই জনের জন্য লজ্জা ছাড়া কিছুই বয়ে আনবেনা।বিষয়টা শিখতে হবে তোমার বেবি গার্ল।”

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-৮+৯

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৮
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“সত্যি বলি?একটা পনের বছরের মেয়েকে আমি সাধারণ বাচ্চা হিসেবে নয়।নারী হিসেবে দেখতে আরম্ভ করেছি।না সে আমাকে যৌ ন তা মনে করিয়ে দেয়না।তোশা স্নিগ্ধ সুন্দর একটি অপরিপক্ক ফল।যার এখনও রোদে পুড়ে সুমিষ্ট হওয়া বাকী।তবে কেন আমি ওকে সাধারণ একজন নারী যার সাথে বৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলা যাবে সেই হিসেবে দেখছি?আমার মাথায় কী কোনো সমস্যা হচ্ছে?মেবি আই এম গোয়িং ক্রেইজি বিকজ অফ দ্য লোনলিনেস।”

নিজের জীবনের অনেকটা সময় অতিবাহিত করা কবীর শাহ চোখ বন্ধ অবস্থায় কথাগুলো বলল।বিন্দু বিন্দু ঘাম তার কপাল জুড়ে ছড়িয়ে আছে।পুরুষালি সুললিত গম্ভীর কণ্ঠ তার।নিজের বিলাসবহুল অফিস রুমে বসে আছে।তার সামনে সমবয়সী আগুন্তকের ঠোঁটের কোণা ঈষৎ বেঁকে গেলো।

“এই কথা মায়ান ও তাহিয়া জানলে কী হবে জানিস তুই কবীর?”

“পারভেজ, ওরা জানবে কেন?”

“নাহ যদি জানে।কারণ আমার মনে হচ্ছে তোশার সঙ্গে তোর বিষয়টা একটুতে থেমে থামবেনা।”

“স্টপ।সেই বাচ্চাটা ছোট।ও হয়তো আমার অনুভূতি বা মাইন্ড চেঞ্জের বিষয়টা অনুধাবন করতে পারবেনা।”

“আজকালের বাচ্চা আমাদের মতোন নয়।এটা আধুনিক যুগ।একটু আগে গার্ডেনের বিষয়টা আমি খেয়াল করেছি।যদি বলি তোশার চোখে আলাদা টান কাজ করছে।”

“বেশী ভাবছিস।”

“আমি একজন সাইকোলজিস্ট।হিউম্যান বিহেভিয়ার সমন্ধে জ্ঞানকে তুচ্ছ করার অবকাশ নেই কিন্তু।”

কবীরের তামাটে কপাল কুঞ্চিত হলো।তার চোখেমুখে অবিশ্বাসের ছাঁপ।পারভেজ গলা পরিষ্কার করে শুধালো,

“বিশ্বাস হচ্ছে না তো?”

“অবশ্যই না।”

“হয়ে যাক পরীক্ষা।যদি আমার কথা সঠিক হয় তবে পরের শুক্রবার তোর বাসায় ওয়াইন দিয়ে শাওয়ার নিবো।”

“আমার বিশ্বাস দূর্লভ বোতল গুলো আমি বাজিতে হারবো না।”

“দেখা যাক।বাই দ্যা ওয়ে তোশা এখনও তো আছে তাইনা?”

“হয়তো।”

“একটা কথা বল তো।মেয়েটা কী বলে ডাকে তোকে।”

কবীরের স্মরণে হলো সম্বোধন নিয়ে দুজনের মান অভিমান।যা সবেমাত্র আজ ভেঙেছে।সে একটু লজ্জা পেলো বিষয়টা বন্ধুকে জানাতে।

“আমাকে কিছু বলে ডাকেনি এখনও।”

“ওকে।”

পারভেজ অফিস রুম থেকে বের হয়ে গেলো।শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে বের হওয়ার দরুণ পুরু ত্বকে জ্বা লা তৈরী হলো।দ্বিতীয় তলা থেকে নেমে আসতেই তোশার সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো তার।তাহিয়ার সঙ্গে মাঝেমধ্যে এক দুইবার দেখা হয় পারভেজের।যার কারণে তোশাকে সে চিনে।পকেট থেকে কিটক্যাট বের করে মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিলো।

“কেমন আছো তোশামণি?”

“পারভেজ আঙ্কেল।কেমন আছেন?”

তোশার কণ্ঠে উচ্ছাস মিশে আছে।সে কিটক্যাট হাতে নিয়ে বলল,

“থ্যাংক ইউ আঙ্কেল।”

“আমাকে নয় তোশামণি।কবীর আঙ্কেলকে বলবে?”

“সে আপনার আঙ্কেল লাগে?”

“আমার কীভাবে আঙ্কেল লাগবে বলো?তোমার কথা বলেছি।”

চওড়া বিস্তৃত হাসি মিলিয়ে গেলো তোশামণির মুখবিবর থেকে।প্রাণহীন হয়ে উঠলো কণ্ঠ।

“সে বলেছে আমি তাকে আঙ্কেল ডাকি?”

“হ্যাঁ কবীর বলল তো।”

“ভুল বলেছে।আমি কখনো তাকে এভাবে ডাকিনি।”

হুট করে তোশার কণ্ঠের তরঙ্গ বৃদ্ধি পেলো।সে শক্ত করে নরম চকলেটটি চাপ দিয়ে ভেঙে ফেললো।পারভেজের মুখে হাসি ফু্ঁটে উঠলো।জিতে যাওয়ার হাসি।একটু পিছন ঘুরে দেখলো কবীর অনতিদূরে দাঁড়িয়ে আছে।প্রচন্ড ঘামছে সে।পারভেজ উষ্ণ শ্বাস ফেলে বলল,

“এতো হাইপার হচ্ছো কেন তোশা?”

“মিথ্যাবাদী সুদর্শন পুরুষ।”

“কার কথা বলছো?”

“কারো না।আমি কারো কথা বলছিনা।”

তোশার মধ্যে অনেক ধরণের ইমোশন দেখা যাচ্ছে।মেয়েটা চোখের পানি লুকিয়ে জায়গা থেকে উঠে দাঁড়ালো।নিজেকে গুছিয়ে জোরে জোরে হেঁটে জায়গাটি ত্যাগ করলো।পারভেজের মুখে আত্নগরিমা ফুঁটে উঠলো।সে পিছন ফিরে আহত কবীরের উদ্দেশ্য উঁচু সুরে বলল,

“আমি যা বলেছিলাম।মেয়েটা তোকে পছন্দ করে।যা তোর সাব-কনশাস মাইন্ড ধরতে পেরেছে।”

কবীর আগের মতো জবাব দিলো,

“আই ডোন্ট বিলিভ ইট।”

“অবিশ্বাসে সত্য বা ভবিষ্যত বদলে যাবেনা।”

(***)

বিভ্রান্ত কবীর বাসায় ফিরে এলো আকাশসম দুঃখ নিয়ে।এমন সময় ফোনে ম্যাসেজ এলো।বিদেশ থাকাকালীন তার সবথেকে কাছের বন্ধু এলেক্সের বিয়ে আগামী পনের তারিখে।এই ছেলেটির কাছ থেকে সে শরীর চর্চা শিখেছিল।যা আজও তাকে তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করছে।কবীর বিয়েতে যাওয়ার জন্য সম্মতি দিয়ে দিলো।ভাগ্যিস দেশের বাহিরে যাওয়ার জন্য সুযোগ এলো তার।অনেকক্ষণ ধরে তোশার ব্যাপারটা মাথা থেকে সে বের করতে পারছেনা।এই বাহানায় যদি কিছু একটা হয়।কবীর ভেবে পায়না কেন আর কীভাবে তোশাকে সে পছন্দ করা শুরু করেছে।বিষয়টি কী নীতি বিরুদ্ধ নয়?বাড়ীর ভেতর ঢুকতেই গুনগুন করে কারো গীত গাওয়া শোনা গেলো।কবীর মুচকি হেসে মা বাবার রুমের সামনে দাঁড়ালো।নিজেকে সে খুব ভাগ্যবান মনে করে কারণ বাবা মা দুজন বেঁচে আছে তার।ছোট্ট আহনাফ মন দিয়ে দাদীর গীত শুনছে।

“মা।”

থেমে গেলো সেতু।বৃদ্ধ চোখ তুলে নিজের সুর্দশন ছেলেকে দেখলো।

“বাবু দেখ তো আমার নাতীটা ঠিক তোর মতো হয়েছে।সন্ধ্যা হলেই গা ঘেঁসে বসে পড়ে।”

“নিশ্চয় পড়তে না বসার বাহানা এটি।কী ব্যাপার আহনাফ শাহ।পড়া নেই আপনার?”

আহনাফ মাথা দুলালো এপাশ ওপাশ।যার অর্থ নেই।কবীর পুনরায় শুধালো,

“কেন নেই?”

“পড়া শেষ করেছি বিকেলে।”

“আচ্ছা।আহনাফ দেখছি গুড বয়।চলেন আমার সাথে।আজ ডোরেমনের মুভিটা শেষ করবো আমরা।চলেন।”

কবীর হাত বাড়িয়ে দিলে ছোট্ট আহনাফ তাতে ঝুলে পড়লো।সেতু পিছন থেকে তৃপ্তির হাসি হাসে।বাবা ছেলের এতোটা মিল।

আহনাফকে নিয়ে সোজা নিজের রুমে এলো কবীর।বাচ্চাটি কৌতুহলী হয়ে শুধালো,

“ডোরেমন বাস্তবে আছে বাবা?”

“না তো।”

“থাকলে আমি ওকে বলতাম এমন কোনো গ্যাজেট দাও যাতে আমি আইসক্রিমকে নিয়ে আসতে পারি।”

“তাই?কিন্তু আইসক্রিম তো আমি নিজেই এনে দিতে পারি।”

“সত্যি বাবা?”

“সত্যি তো।”

রুমের ভেতর নিয়ে আহনাফকে বিছানায় বসালো সে।পাশের ছোট্ট ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বের করে ছেলেটির হাতে দিলো।

“নাও খাও আমি গোসল করে আসছি।”

আহনাফ পিটপিট করে হাতে রাখা শীতল খাদ্য বস্তুটি দেখলো।তার বাবাকে সে ভীষণ করে বলতে চাচ্ছে আহনাফের বলা আইসক্রিম একটা জলজ্যান্ত সুন্দর মানুষ।যার ভালো নাম তোশামণি।

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৯
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“হ্যালো তোশামণি?আম্মু কেমন আছো?”

“ভালো আছি আব্বু।তুমি কেমন আছো?”

“ভালো।পড়াশোনার কী খবর?তোমার মা কোথায়?সে কেমন আছে?”

মায়ানের করা প্রশ্নে আড়চোখে মায়ের পানে তাঁকালো তোশা।এতে অবশ্য তাহিয়ার খুব একটা হেলদোল নেই।সে আগের মতোন তোশার পড়ার টেবিল গুছিয়ে নিচ্ছে।ফোনটা একটু মায়ের দিক থেকে দূরে সরিয়ে তোশা বলল,

“আম্মু ভালো আছে বাবা।এবং পড়াশোনা চলছে।”

“রেজাল্ট ভালো করতে হবে।যেন খুব শীঘ্রই আমার কাছে নিয়ে আসতে পারি।কী মামুনি আসবেনা?”

শেষের প্রশ্নটি মায়ান প্রত্যেকবার ফোন করে শুধায়।এবং তোশা খুব বুদ্ধিমতীর মতোন সুন্দর একটি হাসি দিয়ে এড়িয়ে যায়।বাবার সাথে কথা তার খুব একটা হয়না। যখন হয় তখন তাহিয়া দশ মিনিটের বেশী বলতে দেয়না।আজও সেটির ব্যতিক্রম না।ঘড়িতে গুণে গুণে দশ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর তাহিয়া ফোনটা নিয়ে কেঁটে দিলো।

“বাবার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে তোশামণি?”

তাহিয়াকে মন দিয়ে জড়িয়ে ধরে তোশা।খুব আস্তে ধীরে বলে,

“আমার তোমাদের দুজনের সঙ্গেই কথা বলতে ভালো লাগে।”

“মায়ানের কথামতোন বড় হলে কানাডা চলে যাবে?”

“আমি কখনো তোমার কাছে বড় হবো না আম্মু।গেলেও তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাবো।তুমি না খাইয়ে দিলে আমার পেট ভরেনা।পরে দেখা যাবে না খেয়ে শেষ।ওইযে মামী কল্লোল ভাইয়াকে দেখে বলেনা
‘আহারে আমার সোনা ছানা না খেয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে।একটুও খায়না।’
তখন তুমিও আমাকে দেখলে একই কথা বলবে।”

“ভালো নাটক করতে জানো দেখছি।ভাবী তোমার গুরুজন।তার কথা এভাবে নকল করতে হয়না।”

“কী করবো বলো আম্মু।জানো কল্লোল ভাইয়া না অনেক বেশী খায়।সত্যি হলো সব খায়।কিন্তু দেখো মোটা হয়না।আমি কম খাই।সেরকম শরীর।”

“কিছু মানুষ এমন হয় তোশামণি।যেমন তোমার বাবা।হাজার খেলেও শরীরে লাগেনা।”

তাহিয়া থমকে গেলো।মায়ানের কথা খুব সহজে বলেনা সে।কিন্তু মাঝেমধ্যে যখন বলে ফেলে তখন চোখেমুখে আলাদা ধরণের তৃপ্ততার দেখা মিলে।কথাটা তখুনি ঘুরিয়ে ফেললো সে,

“অনেক রাত হলো ঘুমিয়ে পড়ো।কালকে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবে আমার সঙ্গে।”

“উহু,আম্মু যাবোনা।”

“কেন?”

“এমনি।”

“না যাবে আমার সঙ্গে।এখন ঘুমাও গিয়ে।”

তোশা মাকে কীভাবে বলবে যে গেলে কবীর শাহ নামক সবথেকে নির্দয়,নিষ্ঠুর লোকটার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে।এমনিতে দিনের ঘটনায় মন খারাপ তার।মুখে আকাশসম মেঘ নিয়ে তোশা চলল ঘুমাতে।মেয়ে ঘুমিয়েছে কীনা সেই বিষয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে তাহিয়া বের হয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।ভ্যাপসা গরম ছড়িয়েছে বাতাবরণে।বিচ্ছেদের পর থেকে তাহিয়া নিজেকে চিনতেই পারেনা।ফোনটা উঁচু করে মায়ানের আইডিটা দেখলো।এখনও একটিভ দেখাচ্ছে।তাহিয়ার খুব করে ইচ্ছা হয় সেই কলেজ লাইফের মতোন ব্যক্তিটার সঙ্গে সবটা দিয়ে কথা বলতে।কিন্তু যেই দিন গুলো চলে যায় তা আর কখনো ফেরত আসেনা।তাহিয়া ও মায়ানের দিনগুলোও নিভু নিভু মোমের মতোন ফুরিয়ে এসেছে।শুধু রেখে গিয়েছে তোশা নামক সুন্দর এক স্নিগ্ধ আলো।

(***)

কবীর শাহ নামক মানুষটার সঙ্গে তোশার দীর্ঘ বিচ্ছেদ চললো।প্রায় বলতে গেলে চার মাসের মতোন।এই সময়ে সবথেকে মজার ব্যাপারটি হলো এইযে তোশার বয়স পনের থেকে ষোলতে এসে ঠেকেছে।মানসিক কিংবা শারীরিক বেশ অনেকটা পরিবর্তন ঘটার দরুণ তোশা দুনিয়াকে অন্যরকম ভাবে দেখতে শিখেছে জানতে শিখেছে।কিন্তু কবীর নামক সুন্দর, বলিষ্ঠ তামাটে পুরুষটির কথা সে ভুলেনি।হয়তো ভু্লবেও না।আজ লোকটার ছত্রিশ তম জন্মদিন।এই কারণে সুন্দর একটি ফাইভ স্টার হোটেলে ব্যুফের আমন্ত্রণ দিয়েছে তাহিয়া ও তোশাকে।

“তোশা এখনও রেডি হওনি?”

জবাব না দিয়ে মায়ের সামনে সাদা রঙের সুন্দর একটি জামদানী তুলে ধরলো তোশা।

“আজ আমি এটা পরে যাবো আম্মু।”

“শাড়ী?হঠাৎ কেন?তোমার ফ্রেন্ডরা তো যাচ্ছে না।”

“আম্মু প্লিজ।”

“ওকে।কিন্তু সামলাতে পারবে তো?”

“হ্যাঁ।তুমি পরিয়ে দাও সুন্দর করে।”

তোশাকে সুন্দর করে শাড়ীটা পরিয়ে দিলো তাহিয়া।মেয়েটিকে এখন মটেও ছোট লাগছেনা।সন্ধ্যা সাতটায় তারা রেস্ট্রুরেন্টে গিয়ে পৌছালো।

শুভ্র শাড়ী পরা ছিমছাম গড়নের কিশোরীর প্রথম দর্শনে কবীরের মনো হলো না সে দূরেই ভালো ছিল।মাঝে বিদেশ ভ্রমণে কতোটা তোশার প্রতি মায়াকে কাঁটিয়ে উঠতে পেরেছে সেই পরীক্ষায় নেমেছিল কবীর।এজন্য সব বন্ধু, বান্ধুবীদের ডেকে আনা।কিন্ত আজ এই মুহুর্তে সন্ধ্যা বেজে ঠিক সাতটা দশ মিনিটে মনে হচ্ছে তোশাকে নিয়ে কবীরের পরীক্ষা করা উচিত নয়।ছোট্ট মেয়ে যে এখন দুনিয়ায় কিছুই দেখেনি তার সবকিছু মুগ্ধ করে কবীরকে।এইতো হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলাটাও।কবীর নিজেকে সামলে মা মেয়ের দিকে এগিয়ে গেলো।ছোট্ট ভালোমন্দ জিজ্ঞাসার পর তাদের টেবিল দেখিয়ে দিলো।ব্যুফে হওয়ার যে যার পছন্দ মতোন খাবারের পদ নিয়ে খেতে শুরু করেছে।বন্ধুমহল একত্রে হলে যা হয়।হাসি তামাশায় মেতে আছে সকলে।এক ফাঁকে কবীর তোশাকে নিচু সুরে জিজ্ঞেস করলো,

“তুমি বড় হয়ে গিয়েছো তোশামণি।শাড়ীতে খুব সুন্দর লাগছে।”

“সত্যি বড় দেখাচ্ছে?আপনার কিন্তু একটুও পরিবর্তন হয়নি।কীভাবে?”

“এটা বহু গোপন কথা।”

“মিথ্যা নিয়মিত জিম করেন সেজন্য।”

“ঠিক।তাছাড়া পরিমিত কিংবা নিয়ন্ত্রিত খেলে যে কারো সজীবতা চেহারায় ফুঁটে উঠে।”

“হুহ।আপনাকে আর আমার ইংলিশ টিচারকে একই বয়সী লাগে।তার বয়স সাতাশ।”

বয়সের কথা শুনে কবীরের অন্তরের কোথাও শূন্যতা অনুভব হলো।পরক্ষণে ভাবলো এসব অনুভূতি বড্ড তেতোমিঠা।তোশা হাত দিয়ে কিছুটা খেতে পারে।সে একমনে খেতে খেতে বলল,

“জানেন কবীর।আমার আবার তাড়াতাড়ি বড় হওয়ার ইচ্ছা।”

“তুমি আমাকে নাম ধরে ডাকলে তোশামণি?”

“এখন থেকে এভাবে ডাকবো।বড় হওয়ার ইচ্ছা কেন শুনতে চাননা?”

“ওয়েল বলো শুনি।”

তোশা আড়চোখে মা কে দেখলো।যে পারভেজের সাথে আলাপে মত্ত্ব।একটু কবীরের দিকে ঝুঁকে এলো তোশা।তামাটে পুরুষটির গা থেকে আসা তীব্র সুগন্ধে পেটের ভেতর কেমন করে উঠলো তার।তামাটে বলিষ্ঠ হাত দুটো বড় আঁকড়ে ধরতে চাচ্ছে।নিজ ইচ্ছাকে সংবরণ করে বলল,

“বড় মানুষদের বড় বড় সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়।তাছাড়া আপনিই তো গর্ব করে বলছিলেন একটু আগে আই এম এ ম্যান।তো ম্যানের জন্য ওমেন হতে হবেনা?”

কবীর চমকে উঠলো তোশার কথায়।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ শুনছে কীনা।

“তোশা বিহেভ ইওরসেল্ফ।”

“দুঃখিত কবীর শাহ।তোশামণি বড় হয়ে গিয়েছে শুধু আপনার কাছে।এখন তার পদক্ষেপও বড় বড় হবে।”

চলবে।