Tuesday, August 26, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 485



মিঠা রোদ পর্ব-৬৩+৬৪+৬৫

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬৩
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“অবশেষে মেয়েকে বি’ক্রি করে দিলি তুই?এটা বিশ্বাস হচ্ছেনা তাহিয়া।আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক করার তুই কে?”

“আপনার মেয়ে মায়ান?কতো বছর পর মনে হলো আমার মেয়ে?”

“সবসময় মনে ছিল।কবীরের সাথে তোশার বিয়ে হতে পারেনা কখনো না।”

তাহিয়া কথাকে একটুও পাত্তা দিলো না।বরং মাথা নিচু করে নিজ কাজ করতে লাগলো।মায়ানের ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার দরুণ তাহিয়ার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ছুঁড়ে মা’র’লো।

“তোকে কিছু বলছি আমি।”

“আমি জবাব দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছিনা মায়ান।আপনি আসতে পারেন।আর তোশা শুধু আমার মেয়ে।বছরে একবার দামী গিফট দেওয়া কোনো পিতার দায়িত্ব হতে পারেনা।একটা কথা বলেন ডিভোর্সের পর কিংবা নতুন বিয়ের পর তোশাকে দেখতে একবারও বাংলাদেশে এসেছিলেন?”

“কানাডা তোর বাবার না যে যখন তখন..।”

অদ্ভূত এক শব্দ হলো।বিষয়টি এতো দ্রুত ঘটলো যে মায়ান প্রতিক্রিয়া দেখানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।তাহিয়া নিশ্বাস ফেলছে ঘনঘন।ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“কাজটা আমার আরো আগে করা উচিত ছিল মায়ান।কিন্তু সুদীর্ঘ তেইশ বছর পর যখন আপনার সাথে দেখা হয়েছিল তখন থেকে এই চল্লিশ বছরে এসে সাহসটা পেয়েছি।তখন যদি ভালোবাসা নয় বরং নিজ মর্জি চালাচ্ছেন সেটা বিশ্বাস করতে পারতাম তাহলে আজ আমার জীবন এমন হতো না।কখনো না মায়ান।বরং এই বয়সের অন্য মানুষ যা পায় সেরকম সবকিছু আমারও হতো।জানেন আমার ও তোশার মধ্যে পার্থক্য কী?ও যাকে পছন্দ করেছে সে একটা সুপুরুষ আর আপনি স্রেফ একটা হাওয়া যে কখনো সঠিক দিকে প্রবাহিত হয়না।এবং সবসময় সঙ্গে ঝড় নিয়ে আসে।”

মায়ান গালে হাত দিয়ে খানিকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।এরপর ঠান্ডা সুরে বলল,

“তোর চ’ড় কে আমি কিছুই মনে করিনি তাহিয়া।কারণ শোকে মাথা গিয়েছে।শুধু মেয়ের বিয়েটাতে মত দিবি না।আমার মেয়ে ছোট।”

“ওহ তাই?কানাডার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনজুরুল খানের ছেলের বয়স তবে কতো?২২ নাকী ৩২?”

মায়ানের মুখটা কালো হয়ে গেলো।তোশা তার সুন্দরী মেয়ে হওয়ার দরুণ বিভিন্ন যোগ্যতাসম্পন্ন ছেলেদের সে বাছাই করে রেখেছে।এরমধ্যে তালিকার শীর্ষে হচ্ছে বত্রিশ বছর বয়সী একজন।

“৩২ ও ৪০ তে দীর্ঘ ৮ এর পার্থক্য তাহিয়া।তাছাড়া কবীর আমার বন্ধু।”

“কী বন্ধু?সত্য হলো আপনি কখনো কবীরকে বন্ধু ভাবেননি।বরং ভেবেছেন নিজের প্রতিপক্ষ।আমাদের সম্পর্ক ভাঙার কারণ কী মনে আছে?আপনার জীবন নাকী এদেশ ও স্ত্রী,সন্তানের মধ্যে থেকে ন’ষ্ট হয়ে যাচ্ছে।কবীর নিজ সামর্থ্য দ্বারা যখুনি কোনো সাফল্য অর্জন করতো তখুনি আপনি হীনমন্যতায় ভুগতেন।আমার এই হচ্ছে ওই হচ্ছে।এই বয়সে এটা করা উচিত।বাচ্চাকে দেখার না।কেন?বিয়ে কিংবা স্ত্রীর দায়িত্ব ভো’গ করার ক্ষেত্রে মনে ছিলনা এসব?আমি পাগল তাহিয়া চুপ থেকেছি।কাওকে বলিনি।এমনকি ডিভোর্স টাও মেনে নিলাম।আবার বললেন একা থাকতে পারিনি তাই বিয়ে করেছি।সত্যি ডিভোর্সের এক বছরের মাথায় বিয়ে করেছিলেন।আপনি একটা তেঁতো মানুষ।আমার মেয়ে ভালো থাকবে কবীরের সাথে।ওকে জীবনহীন জড়বস্তু কিংবা আমার মতোন ভাগ্য পেতে দিবো না।কখনো না।আরে আপনি কী বুঝবেন স্বার্থপর।”

তাহিয়া কথাগুলো বলে অনাদরে পড়ে থাকা ফোনটি কুড়িয়ে নিয়ে বলল,

“বের হোন এখুনি।আমার অফিসে আসার সাহস এরপর কখনো করবেন না।”

মায়ান এবারও নিশ্চুপ।তবে মনের ভেতর মস্ত বড় সুরে তাহিয়া নামক মানুষটিকে দেখছে।বয়সের ছাঁপ মুখে এখনও আসেনি রমণীর। টান টান আধা পো’ড়া খাওয়া শুভ্র ত্বকে দেখতে অভিজাত্যপূর্ণ।কপালের একগোছা চিরপরিচিত চুলে মিষ্টি লাগছে ।মায়ান যতোটা আ’ক্রো’শে এসেছিল ঠিক ততোটা নরম হয়ে চলে গেলো।নি:শব্দে, গোপনে।

রুমের বায়ু হালকা হওয়ায় তাহিয়া উদাস হয়ে বসে রইলো।এই কথাগুলো কতোদিন ধরে মনে জমে ছিল।আজ অবশেষে বলতে পারলো।হুট করে আরেকটি কণ্ঠে সে বিভ্রান্ত হয়ে গেলো।

“মনে হচ্ছে কেঁদে ফেলবেন আপনি।”

“কে কে?ওহ উল্লাস।এসো ভেতরে।”

“হঠাৎ এলাম দেখে কিছু মনে করবেন না।আমার প্রিয় একটা বই রেখে গিয়েছিলাম।”

“দেখো বইটা ওই সেল্ফের উপর আছে।নিয়ে নাও।”

উল্লাস বিনা বাক্য ব্যয়ে বইটি হাতে নিলো।কিছুটা দ্বিধা নিয়ে শুধালো,

“মি.মায়ান এসেছিল দেখলাম।তার মুখটা কালো ছিল।আচ্ছা আপনি কী মন বদলে ফেললেন?”

“এলেমেলো উল্লাস ভয় পাচ্ছে?শুনো তোমার কথায় বিয়েতে আমি রাজী হইনি।কিংবা কারো কথায় না।তাই মত বদলানোর প্রশ্ন আসেনা।”

“ওহো।মিস.তাহিয়া আপনি মুখের উপর অ’প’মা’ন করতে জানেন।কিন্তু মিষ্টি মানুষদের মুখে কটূ কথাও তেতো লাগেনা।”

তাহিয়া মৃদু হাসলো।এই নায়কটাকে তার ভীষণ চালাক মনে হয়।কথার জালে খুব ভালোভাবে ফাঁ’সি’য়ে দিতে জানে।

(***)

তোশাকে এখনও বুকের সাথে আগলে রেখেছে কবীর।মেয়েটির আঙুল নিয়ে খেলছে।লম্বা সরু হাতটা এখন যেন বাচ্চাভাবে মোড়ানো।কবীরের মনে প্রজাপতি উড়ে যায় তোশাকে নিয়ে।চুলে নাক ঠেকিয়ে গম্ভীর শ্বাস ফেলে বলে,

“আই লাভ ইউ তোশা।চলো এখুনি বিয়ে করে ফেলি।”

“আপনাকে মটেও আজ আসল কবীর শাহ লাগছেনা।বরং ভিন্ন কেউ মনে হচ্ছে।”

“হতে পারে আমি ভিন্ন কেউ।”

“না আপনি ভিন্ন কেউ না।আপনার মতোন ভিন্ন নামে কে ডাকতে পারবে?ও একটা কথা জানেন?সেদিন একজন আমাকে হোয়াইট বলে ডেকেছে।হসপিটালের মধ্যে।”

কবীর চমকে তোশাকে সোজা করে বসালো।গালে হাত দিয়ে বলল,

“হোয়াইট?লোকটিকে তুমি চিনো?”

“নাহ।”

“দেখতে কেমন ছিল?”

“বিদেশিরা যেমন হয়।”

কপালে ভাঁজ পড়ে গেলো কবীরের। সে শক্ত কণ্ঠে বলল,

“এরপর এমন কেউ সামনে এলে দ্রুত নিজের আত্মরক্ষা করবে।যে হোয়াইট বলেছে সে সম্ভবত সেই লোক যে আমাকে স্যু’ট করেছিল।”

“আপনি সিওর কবীর শাহ?সাথে অনেকগুলো অপরিচিত মানুষ ছিল।”

“তারা আমার লোক।আমি সিওর তোশা।ভুল নেই এখানে।ফ্রান্সিসকো আমাকে চিঠি দিয়েছে আমার সুখের সময় চুরি করে নিবে বলে।”

তোশার ছোট্ট মনটা কেঁপে উঠলো।কবীরকে দুই বাহুতে টেনে আনলো।পুরুষটির বৃহৎ শরীর আঁটেনা।তবুও বৃথা চেষ্টা।

“এতো কষ্টে আমরা এক হলাম কবীর। আবারও একটা ভয় ঢুকে গেলো মনে।”

“ভয় নেই বেলাডোনা।আমাদের জীবনে এমন অস্বাভাবিক ঘটনা আরো আসবে।তাই বলে পিছিয়ে থাকবেনা কিছু।”

তোশা তবুও কবীরকে ছাড়ে না।তামাটে পুরুষটিকে আঁকড়ে ধরে তার বুকে মাথা রাখে।এবার ভয় যে চিরতরে হারিয়ে ফেলার।

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬৪
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“এই বাড়ীটা তোশা ও তোর থাকার জন্য তৈরী করা কবীর?বেশ ভালো তো।”

মায়ান কথাগুলো বলার সময় মুখের ভাব কিছুটা অন্যরকম করলো।ঠিক খুশি হলো নাকী দুঃখ পেলো বোঝা মুশকিল।কবীর সুইচ সবগুলো টিপে দিলো।বাড়ীর কাজ শেষ এখন শুধু রঙ করা বাকী।শূন্য পানসে দেয়ালের দিকে তাঁকিয়ে মায়ান শুধালো,

“আমার মেয়ের জন্য অনেক বড় অঙ্কের টাকা ব্যাংকে রেখেছিস।কেন?তখন তো তোদের সম্পর্ক ছিলনা।”

“কথাটা কে বলেছে তোকে?”

“সেই প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারবো না।বরং তুই বলবি কবীর নেপথ্যে কাহিনী কী আসলে।”

কবীর চিরায়ত গম্ভীর দৃষ্টিতে নিজ প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে দেখলো।ঠোঁটে নির্বিকার হাসি।গলার টাই আলগা করতে করতে বলল,

“বাড়িটা দেখতে চেয়েছিস এজন্য আনলাম তোকে।বাহিরে কোনো প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারবো না।”

“কেন?মনে নিশ্চয় চো”র আছে।”

“না ডা”কা”ত আছে।মায়ান তুই নিজেকে জিজ্ঞেস কর একবার।কবীর শাহ পনের বছরের বাচ্চা মেয়ের প্রেমে নিজ থেকে পড়ে যাবে?সম্ভব?পুরো ঘটনা তুই জানিস।এখানে কোনো ছলের আশ্রয় নেই।”

মাথা নাড়ালো মায়ান।পকেট থেকে হাতটা সরিয়ে বলল,

“তোর মনে আছে আগে আমরা দুজন কুস্তি লড়তাম।”

“আর তুই সবসময় হেরে যেতি।”

“হ্যাঁ।শক্তিশালী,সামর্থ্যবান ,বুদ্ধিতে ভরা কবীরের কাছে আমার হেরে যাওয়া যেন নিত্য দিনের কাজ ছিল।তবুও পরের দিন আবার তোকে রাজি করাতাম শক্তির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য।আজকে চল আবার দেখি কে জিতে যায়?”

ভ্রু কুঁচকে গেলো কবীরের।মায়ানের কথাগুলো তার নিকট রহস্য।তবে সে স্বাবধানী।এবং নিজেও চতুর।কথাতে সায় দিয়ে বলল,

“ঠিক আছে চল।এবার জিতলে তোর গ্রীসের ট্যুর ফাইনাল।”

মায়ান বিদ্রুপ হেসে শুধালো,

“আমি জিতবো তোর মনে হয়?”

“ভবিষ্যত কে জানে?”

বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা কেয়ার টেকার লোকটি কৌতুহল হয়ে শুনছিলো তাদের কথা।তার মনিবের সাথে লোকটাকে নতুন লাগছে।তুই সম্বোধনে বুঝতে সক্ষম হলো বন্ধু হবে হয়তো।কিন্তু তারা এখন কুস্তি লড়বে এখানে? সে অপরিচিত কিন্তু তবুও বুঝতে পারছে আগুন্তক লোকটির মতিগতি ভালো নয়।যেভাবে হাসছে তাতে কিছু তো লুকিয়ে আছে।শুরুর আগে মায়ান কবীরকে বলল,

“তোর লোকদের বলে দে খেলার দশ মিনিটে আমাকে কোনো বাঁধা দিতে পারবেনা।”

“দিবেনা।”

“ওয়াদা।”

মায়ানের মুখে আবারও হাসি ফুঁটে উঠলো।তারা যখন লড়াই করা শুরু করলো তখন শুরুতে কবীরের পুরুষালি শক্ত হাতের কাছে সহজেই হেরে গেলো মায়ান।কিন্তু মিনিট খানেক বাদে অদ্ভূত ভাবে শরীরকে বাঁকিয়ে কবীরকে মাটিতে ফেলে দিলো মায়ান।এবং বুকের দিকটায় হাঁটু চেপে হাত দুটো বেঁধে ফেললো।বিষয়টি খুব দ্রুত হলো।মায়ান দ্রুত গতিতে শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল,

“হতে পারি খুব দূর্বল।কিন্তু জীবনে এই একটা জিনিস শিখেছি যা খুব কাজে লাগে।কবীর আজকে তুই হেরে যাবি।নির্ধারিত আর ছয় মিনিট বাদ আছে।”

মায়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইচ্ছামতোন কবীরকে আ’ঘা’ত করলো।কবীরের সাথে থাকা লোকেরা এগিয়ে আসতে গেলে নিয়মের বেড়াজালে আটকে দিলো।পুরুষদের এই এক সমস্যা।অহেতুক নিয়ম মেনে চলে।ইতিমধ্যে তরল নোনতা স্বাদ কবীরের মুখে অনুভব হয়েছে।সর্বশক্তি দিয়ে সে মায়ানকে উপর থেকে ফেলে দিলো।ঘড়িতে তখুনি নির্ধারিত সময় শেষ।

“মায়ান তুই কী পাগল?কী ভেবেছিলি মে””রে ফেলবি আমাকে?”

গলার টাই দিয়েই কবীরের হাতখানা আঁটকে ছিলো মায়ান।সেগুলো খুলে ক্ষ’ত স্থানে হাত রাখলো কবীর।মায়ান অতীব শান্ত সুরে বলল,

“আমার মেয়েকে তুই বিয়ে করবি।আঁটকাতে পারিনি।কিন্তু মনে তো একটা কষ্ট আছে।তাই তোকে ইচ্ছামতোন মে”” রে নিলাম।এখন শান্তি লাগবে অন্তত জীবনে।”

কবীর অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে মায়ানকে দেখলো।রাগ উঠে গেলো তার।বিশাল দানব শরীর নিয়ে মুহুর্তে মায়ানের সামনে দাঁড়িয়ে তার শার্ট ধরে হালকা উঁচু করলো।

“আমি এখন তোকে কী করতে পারি সেটা জানিস মায়ান?আমি স্বভাবে কেমন বিষয়টি জানার কথা।”

“তুই কেমন?জানি যেমনটা দুনিয়াকে দেখাতে পছন্দ করিস আদৌও সেটা নয়।এই ধনবান হওয়া কিংবা অর্থ সবকিছু ভুলভাবে পেয়েছিস তুই।”

“এটা তোর ভুল ভাবনা।আমি নিজের সামর্থ্য দ্বারা পেয়েছি।পথ চলতে কিছু মানুষ এসেছিলো তাদের শুধু সরিয়ে দিয়েছি।তবে আজ বেঁচে গেলি শুধু আমাদের নতুন সম্পর্কের জন্য।তুই যে সারাজীবন বন্ধুর নামে শুধু ছলনা করে গিয়েছিস বেশ জানি মায়ান।কিন্তু দুঃখ নেই আমার।বরং করুণা হয়। একটা মানুষ কতোটা আমার মতোন জীবন চেয়েছিল কিন্তু পাইনি।”

ভীষণ অপমানজনক কথা।মায়ানের মুখটা থমথমে হয়ে গেলো।কবীরকে আজীবন নকল করে এসেছে এটা সে মন থেকে জানে।কিন্তু কখনো স্বীকার করা হয়না।শার্ট থেকে হাতটা সরিয়ে বাহিরে চলে গেলো মায়ান।কবীরের রাগে মাথায় কষ্ট হচ্ছে।কতোগুলো অধীনস্থ কর্মচারীর সামনে হে’ন’স্থা হতে হলো।

“কে আছো?আমার জন্য পানি নিয়ে এসো।”

কেয়ার টেকার লোকটি দৌড়ে পানি আনতে গেলো।দুই বন্ধুর মধ্যে কতোটা মুশকিল ঘটনা ঘটে গেলো।ভেবেছিল চোখের সামনে আজ খু””ন দেখতে হবে।পানি পেয়ে সর্বপ্রথম তা মাথায় ঢাললো কবীর।কিছু একটা মনে হচ্ছে তার।এজন্য দ্রুত গতিতে কাওকে ফোন করতে করতে বের হয়ে গেলো।

(***)

রাত দশটা বাজে।তাহিয়া সবেমাত্র অফিস থেকে ফিরেছে।ডায়নিং এ সকলে বসেছে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য।তাছাড়া তোশার বিয়ে নিয়েও কিছু আলোচনা সেড়ে নিবে।তাহিয়ার মা,বাবা ও শিউলি বিয়েতে আপত্তি না জানালেও ভাই ও ভাবী অসন্তুষ্ট।কিন্তু তাহিয়ার তাতে দুঃখ নেই।কারণ সে চোখ বন্ধ করে মেয়ের সুখ দেখবে।হুট করে কলিং বেল বেজে উঠলো।কাজের মেয়েটি গিয়ে দরজা খুলে দিলো।একরাশ উষ্ণ বায়ুর সাথে কবীর ভেতরে প্রবেশ করলো।সাথে আরও দুজন লোক আছে।কবীরের মুখে আ”ঘা”তের চিহ্ন দেখে তাহিয়া ব্যস্ত হয়ে বলল,

“কবীর এরকম অবস্থা কেন?কে করেছে?”

“মায়ান।তোমার মেয়েকে ডাকো তাহিয়া।আমি এখুনি বিয়ে করবো।”

“মায়ান?সে কী পাগল?আর এটা কেমন কথা যে এখুনি বিয়ে করবে?সবকিছুর সময় আছে।”

“নেই তাহিয়া।এতো মানসিক অশান্তি নিতে পারবো না।হ্যাঁ তো বলেছো।তাহলে কথা কেন পাল্টে ফেলবে?তোশাকে ডাকো প্লিজ।পরে ধুমধামে হবে না হয় সব।”

তাহিয়া কিছু বলতে চাইলেও তার মা হাত ধরে ফেললো।চোখের ইশারায় সম্মতি দিতে বলল।কারণ বিষয়টা একভাবে কাগজে কলমে উঠলে ভালো হবে।কিন্তু যাকে নিয়ে আয়োজন সে বেঁকে বসলো।সে বউ না সেজে বিয়ে করবেনা।কবীরকে ব”কে কান্নাকাটি করেও লাভ হলো না।তামাটে পুরুষটির ধমক শুনে চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসতে হলো।পরনে তার ছিল খরগোশের ছবি আঁকা গেঞ্জি ও প্লাজো।অদ্ভূত পোশাক।অবশ্য নতুন কনের পোশাকের ম”র্মা”ন্তি”ক দৃশ্য দেখে তোশার নানীর মায়া হলো।নিজের বিয়ের ওড়না বের করে এনে মেয়েটাকে পড়িয়ে দিলো।কবীর নিজ বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়েছে কল করে।ঠিক রাত দশটা বিশে কাঙ্ক্ষিত বিয়েটি পূর্ণ হলো।তোশা মুখটা লাল করে কবীরের উদ্দেশ্যে ফিসফিস করে বলল,

“ডা’কা’ত,স্বৈ’রা’চা’রী।এলো কথা বলল আর রাজকন্যা দখল করে নিলো।বউ সাজতেও সময় দিলো না।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“বউয়ের রাগ ভাঙায় কীভাবে চড়ুইপাখি?জবাব দাও।”

তোশার মুখ থেকে জবাব আসেনা।বরং নিশ্চুপ হয়ে কবীরের বুকে মাথা রাখলো।আজকে রাতে তারা দুজনে একসাথে থাকবে।বাজপাখির সঙ্গে মধুরাত?ভাবতে গিয়ে তোশা শিওরে উঠে।ক্ষণে ক্ষণে বুকে শত রঙীন প্রজাপতি উড়ে যায়।

“আমি তো জানতাম না লিটল চেরীর বউ সাজার এতো শখ।অবশ্য সব কেনা ছিল।কিন্তু নিয়ে যে আসবো সেই পরিস্থিতি বা মাথায় ছিলনা।মায়ানের উপর রাগ হয়েছিল অনেক।”

তোশা অকস্মাৎ উঠে সোজা হয়ে বসলো।কবীরের মুখমণ্ডলে থাকা র’ক্তি’ম আভাতে হাত বুলিয়ে বলল,

“ব্যা’থা অনেক তাইনা?আমি একটু অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিচ্ছি।”

“ওয়েট তোশা লাগবেনা।তুমি শুধু বসো আমার কাছে।আহনাফের সাথে কথা হয়েছে?”

“হয়েছে।ও কাল দুপুরেই আসবে।আমি আর ও ঘুরতে যাবো শপিং কমপ্লেক্সে।”

“ইতিমধ্যে প্ল্যান বানানো শেষ!এইযে লিটল ডেভিল শ্বশুর বাড়ীতে যেতে হবেনা?”

“তাতে তো বিশদিন বাকী এখনও।”

কবীর তোশার হাতখানা নিজের গালে এনে ঠেকালো।উষ্ণ, নরম তালুতে পুরুষালি গালের রুক্ষতা টের পাওয়া যাচ্ছে।এইযে একত্রে থাকা কিংবা এই সময়টা।এর জন্য কতোবার কেঁদেছে তোশা?কতো শূন্যতা অনুভব করেছে।পাওয়ার আশা কতোবার নিরাশাতে রুপ নিয়েছে?এরকম হাজারও অনুভূতি অতিক্রম করে আজ নতুন অনুভূতি সে কবীর শাহ এর স্ত্রী।তার বৈধ নারী।

“তোশা,আমাকে পেয়ে তোমার মনে কোনো খারাপ লাগা নেই তো?”

“যদি হতো এতোকিছু করার সাহস থাকতো কবীর শাহ?”

“তুমি সবসময় আমার নাম পুরো বাক্যে কেন বলো?”

“ভালো লাগে।”

তোশা আবারও হাসলো।আজকে তার মুখ থেকে হাসি কেন সরে যাচ্ছে না?মুখটা উঁচু করে কবীরের গালে লাল হয়ে থাকা অংশতে অধর স্পর্শ করলো সে।যে ছোঁয়ায় মলিনতা নেই।বয়স,সময়,সম্পর্কের দূরত্ব নেই।লোকে কী বলবে ভয় নেই।ক্ষণে ক্ষণে থেকে আরো কয়েকটি ভালোবাসার স্পর্শ পেলো কবীর।এবার শব্দ করে হেসে বলল,

“এটা ভালো।বাবা কষ্ট দিবে মেয়ে মলম লাগাবে।”

তোশাকে টেনে নিজের কাছে এনে তার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বলল,

“বিয়ে হলেও সব ঝামেলা মিটে যাবেনা।এখন মানুষ নানা ধরণের কথা বলবে।সব সহ্য করে নিও।”

“আপনি নিতে পারবেন?”

“তোমার জন্য সবটা সহ্য করতে পারি তাহিয়ার কন্যা।”

ফোনের রিংটোনে তোশার পরবর্তী কথা চাপা পড়ে গেলো।উল্লাসের নামটা স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে।তোশা চট জলদি রিসিভ করে বলল,

“নায়ক আমার বিয়ে হয়ে গেছে।”

কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে উল্লাস বলল,

“কবীর শাহ এর সঙ্গে এটা কীভাবে করতে পারলি সখী?এতোদূরে এসে হাল ছেড়ে দিলি?তাহিয়া তো ওয়াদা করেছিলো তোকে।”

তোশার কপালে কিঞ্চিত ভাঁজ পড়লো।কবীর তাকে ইশারাতে লাউড দিতে বলল।

“কী বললি নায়ক বুঝিনি।”

“কবীর শাহ তোর হাজবেন্ডকে কী করবে এখন?আমি তোর ভবিষ্যত খারাপ দেখছি।”

“কিন্তু আমি তো ভালো দেখতে পাচ্ছি উল্লাস।”

“কবীর শাহ?”

“ইয়েস।”

“হঠাৎ কীভাবে হলো?”

“তাহিয়া তো আগে থেকে রাজী ছিল।এখন কীভাবে হলো তা গোপন থাকুক।যেমন তুমি গোপন করেছো তাহিয়া কীভাবে রাজী হলো।”

“আপনি সব জেনে যান কবীর শাহ।অভিনন্দন দুজনকে।সব বাঁধা অতিক্রম করে এক হয়েছেন।ধুমধাম করে কবে হচ্ছে সব?”

“খুব শীঘ্রই।তোমাকে ধন্যবাদ উল্লাস।তুমি অনেক সাহায্যে করেছো।”

“বস্তুতপক্ষে আমি কেউ নই কবীর শাহ।তবে আপনার সাথে আরেকটা কথা আছে আমার।ফোনটা লাউডে থাকলে অফ করুন তা।”

উল্লাস কিছু একটা বলছে কবীরকে।তোশা সেদিকে মন দিলো না।বরং রুমের লাইট অফ করে বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়লো।ঘুম আসছেনা তার।এই অন্ধকারে কবীরের কণ্ঠ শিহরণ জাগাচ্ছে মনে।

(***)

একদম অল্প ঘুম হলো তোশার।অবশ্য সেটা তার নিজের মনে হলো।কিন্তু সে আসলে ঘুমিয়েছে পুরো বারো ঘন্টা।ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ থম মে’রে বসে রইলো।ওয়াইফাই অন থাকার দরুণ একটু পরপর নোটিফিকেশন আসছে।কৌতুহলী হয়ে সে সোশ্যাল মিডিয়াতে ঢুকে দেখলো কবীর তাকে উল্লেখ করে বিয়ের বার্তা সকলকে জানিয়েছে।তাদের নিয়ে অনেকদিন ধরে চর্চা হওয়ায় বিষয়টি টক অফ দ্য টাউন হতে সময় লাগেনি বোধহয়।এমনকি উল্লাসও নিজস্ব ব্যক্তিগত পেইজে থেকেও অভিবাদন জানিয়েছে।তোশা মন্তব্য দেখতে গেলো না।বরং বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।কবীর চলে গিয়েছে সে বুঝতে পারলো।কীভাবে বুঝে যায় মানুষটির উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতি?রাতে তার মাথায় দেওয়া লাল ওড়নাটি বিছানার একপাশে অনাদরে পড়ে আছে।কুঁড়িয়ে নিলো তোশা।আচ্ছা তার নানু যখন প্রথমবার ওড়নাটি পরেছিলো তখন কেমন অনুভব করেছিলো?জিজ্ঞেস করবে।

“তোমাকে অনেক খুশি লাগছে তোশামণি।”

মায়ের কণ্ঠে চমকে গেলো তোশা।তাহিয়া হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।আশ্চর্যভাবে মায়ের চোখে অন্যরকম উজ্জ্বলতা দেখতে পেলো সে।যা কখনো দেখেনি।

“আম্মু তুমি আজ অফিসে যাওনি?”

“নাহ।মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। প্রথমদিনই অফিসে যাওয়া শোভা পায়না।”

তোশা এগিয়ে গিয়ে মা কে জড়িয়ে ধরলো,

“ধন্যবাদ আম্মু।আমি জানিনা কীভাবে খুশি বর্ণনা করবো।”

“তোমার সব আবদার পূরণ করেছি তোশা।কিন্তু এবার সবথেকে শুদ্ধ ও সঠিক আবদার করেছিলে।বুঝতে শুধু একটু সময় লেগেছিল।”

মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে সে পুনরায় বলে,

“এখন পাগলামি ছাড়তে হবে।বড় হতে হবে।কবীর যতো বলুক কিন্তু তার মা ও বাবাকে সম্মান করতে হবে।”

“আম্মু তুমি আমাকে সাজিয়ে দিবে?আহনাফের সাথে ঘুরতে যাবো।”

“অবশ্যই।তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো আগে।”

তোশা তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেলো।এতোক্ষণে বুকের ভেতর থাকা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো তাহিয়ার।তার মেয়ে চলে যাবে।এতো জলদি?বিষয়টি মেনে নিতে কষ্টকর।আড়ালে চোখ মুছলো।ওদিকে মায়ের সামনে থেকে চট জলদি এসে পড়েছে কারণ কান্না আঁটকিয়ে রাখা খুব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিলো।মা কে ছেড়ে চলে গিয়ে সে ভালো থাকবেনা।একটুও না।কিন্তু সেই কথা বলবে কীভাবে?দরজা আঁটকে অনেকক্ষণ তা নিয়ে কাঁদলো তোশা।দিনশেষে তাহিয়া একা এবং শূন্য।

চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।

মিঠা রোদ পর্ব-৬০+৬১+৬২

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬০
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমি তোমাকে বিগত কয়েকদিন এতো দেখা করতে বললাম করলে না।কিন্তু আজ হুট করে চলে এলে যে?এতো সুন্দর সারপ্রাইজ।”

দিশার মুখ বিবরের উজ্জ্বলতা পুরো রুমে ছড়িয়ে পড়লো।কবীরের দৃষ্টিতে তা লুকালো না।সে মৃদু হেসে বলল,

“কতোদিন পর তোমাদের বাড়ীতে এলাম।আঙকেল বা আন্টি কোথায়?”

“আঙকেল-আন্টি?”

“তোমার মা-বাবা।”

“কিন্তু তুমি তো তাদের মা-বাবা বলে ডাকতে।”

“যুগের সঙ্গে আপডেট হওয়া আধুনিকতার ধর্ম নাকী পিছিয়ে থাকা?যা চলে গিয়েছে সেটা নিয়ে আফসোস বা পুরোনো সম্পর্ক ধরে রাখে বোকারা।”

“কিছু সম্পর্ককে সম্মান করতে হয়।যা শেষ হওয়ার পরেও।এটাকে আধুনিকতা বলে।সম্বোধন বদলে ফেলা উচিত নয়।”

“দিশা তুমি এখনও সেই অতীতে আছো।মুভ অন করছো না কেন?”

রেগে গেলো দিশা।হালকা উষ্ণ কণ্ঠে বলল,

“আমাকে তুমি এসব বলতে এসেছো?ফিরে যেতে চাওয়া দোষের কিছু নয়।বরং এতোদিন পর এটা করতে চাচ্ছি সেটা বুদ্ধিমানের কাজ।”

“ডিরেক্টরকে স্ক্রিপ্ট কেন দিয়েছো?”

কবীরের প্রশ্নে হকচকিয়ে উঠলো দিশা।কপালে কিঞ্চিত ঘাম জমে গেলো তার।প্রাক্তন স্বামীর নিকট সে অনেক ব্যক্তিত্ববান নারী।সেখানে এমন কিছুর জবাবদিহিতা নিশ্চয় কাম্য নয়।দিশা ব্যাপারটিকে ঘুরানোর নিমিত্তে বলল,

“আমি তো ক্রিপ্ট রাইটার নই যে কাওকে স্ক্রিপ্ট দিবো।শুধু ঘটনা বলতে পারি যা ঘটে।সেটা যদি কেউ নিজ কাজে লাগায় সেক্ষেত্রে আমি নির্দোষ।”

“নির্দোষ?”

কবীরের কণ্ঠে কেমন কৌতুকের আভাস পাওয়া গেলো।

“শুনো দিশা তুমি আমার স্ত্রী ছিলে।এক সময় দুনিয়াতে সবথেকে কাছের মানুষ ছিলে।দুজনে এক সাথে খেয়েছি,ঘুমিয়েছি ইভেন এক বালিশও শেয়ার করেছি।তাকে তুমি যদি বলো আমি আপেলের মতোন মিষ্টি।বস্তুতপক্ষে তা কমলার মতোন টক।সে কী বিশ্বাস করবে?তোশা আমার বাগদত্তা পরে সে কী একজন মেয়ে নয়?আমাকে ফ্লিমটি দেখাও। নিশ্চয় কপি আছে তোমার কাছে।”

“নেই।”

“তুমি কী চাও কবীর শাহ কঠোর হোক?বিনিময়ে ভীষণ খারাপ হবে তোমার সাথে।”

প্রায় ধমকে কথাগুলো উচ্চারণ করলো কবীর।দিশা অনেকক্ষণ শক্ত হয়ে সোফায় বসে রইলো।পরবর্তীতে নাছোড়বান্দা কবীরের শা’ণি’ত দৃষ্টির সামনে হার মানতে হলো।উপরে রুমে গিয়ে একটা পেইনড্রাইভ এনে তাকে দিলো।

“এখানে আছে।আমি আবারও বলছি এমন মুভি হবে সেটা শুরুতে জানা ছিলনা।”

“তুমি প্রতীককে কীভাবে চিনো?”

“তোমার এই বিষয়ে কোনো মাথা ব্যাথা থাকার কথা নয়।”

“একচুয়েলি তুমি আমার মাথার পেইন হয়ে দাঁড়িয়েছো এখন।আশা করা যায় আজকেই শেষ হবে সবকিছুর।”

“মানে?”

দিশার কথাকে তোয়াক্কা না করে গাড়ী থেকে ল্যাপটপ নিয়ে এলো কবীর।তাতে পেইনড্রাইভ ঢুকিয়ে মুভিটা অন করলো।উল্লাস সঠিক ছিল।ভীষণ ই’রো’টি’ক করে তুলেছে দৃশ্যগুলো।সবথেকে অদ্ভূত কবীরের এটা দেখে লেগেছে তোশার ক্যারেক্টারে কয়েকটি পুরুষের প্রতি আ’স’ক্ত থাকাকে দেখিয়েছে।চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো কবীরের।মন চাচ্ছে এই কাজের সঙ্গে জড়িত সকলের উপর থেকে নিচে আ’ল’গা করে দিতে পারলে ভালো হতো।

“দিশা তুমি একটা…..।”

কবীর অতীব ভ’য়া’ব’হ ভাষা উচ্চারণ করলো দিশার উদ্দেশ্যে।কানে হাত রেখে দিশা প্রতিবাদ করে বলল,

“কবীর।তুমি এরকম কথা বলতে পারলে?”

“আমি তোমাকে শেষ বিন্দু অবধি সম্মান করেছি টগর।কিন্তু সেই সবকিছুর যোগ্য তুমি নও।এখন বলো শা’স্তি হিসেবে কী চাও?”

“আমাকে শা’স্তি দেবার তুমি কে?”

“রাইট।আমি কেউ না আসলে।”

কবীর ধীরে উঠে দাঁড়ালো।সে আজকে গ্রে রঙের স্যুট পরেছে।কেমন মনকাড়া দেখাচ্ছে।দিশার সামনে দাঁড়িয়ে একটু ঝুঁকে এলো।

“তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে দিশা।তবে তুমি বললে আমি আসলে কেউ না।কিন্তু আজ থেকে আমাকে ছাড়া তুমি কাওকে ভাবতে পারবেনা।”

ভ্রু কুঁচকে দিশা জবাব দিলো,

“মানে?”

কবীরের ঠোঁটে অদ্ভূত হাসি ফুটে উঠলো।দিশার গালে হাত বুলিয়ে বলল,

“কবীর শাহ আজকের এই জায়গায় এমনি এমনি আসেনি।শূন্য থেকে বড় হয়েছে সে।তোমাকে যদি হ্যান্ডেল না করতে পারি তাহলে সেটা আমার নিজ স্বত্তায় কষ্টের আ’ঘা’ত দিবে।”

“কবীর সরো।তোমাকে অদ্ভূত লাগছে।”

কবীর স্মিত হেসে সরে দাঁড়ালো।কোনো প্রকার উচ্চবাচ্য না করে সোজা বের হয়ে গেলো।দিশার মনটা কেমন শুষ্ক হয়ে উঠেছিল যখন মানুষটা তার সামনে ওভাবে ছিল।যেন চিরপরিচিত কবীর নয়।অন্য একটা মানুষ।সামনে টেবিলে রাখা পানির গ্লাসটিকে উঠিয়ে নিলো সে।জিহবাতে তরলের স্পর্শ পেয়ে ভ্রুঁ কুঁচকে ফেললো।তার মনে হলো স্বাদটি ভিন্ন।কিন্তু এইমাত্র তো কবীরের জন্য পানিটা এনেছিল।পুনরায় পান করে দেখলো সব স্বাভাবিক।হঠাৎ এমন মনের ভুল কেন হলো?

(***)

তোশা হসপিটালের বারান্দায় পায়চারি করছে।একে তো বিলাসবহুল প্রাইভেট হসপিটাল।দ্বিতীয়ত ভিআইপি সেবা পাচ্ছে সে। দীর্ঘ ঘুমের পর তাকে একটু হাঁটাহাঁটির পরামর্শ দিয়েছে ডাক্তার।সঙ্গে নার্স রয়েছে।করিডোরের এমাথা থেকে ওমাথা হেঁটে যাচ্ছে।যদিও বাড়ীতে যাওয়ার জন্য মনটা উদগ্রীব।তোশা আড়চোখে আশেপাশে কয়েকজনকে দেখলো।যাদের মিলিটারির মতোন লাগে।সকাল থেকে তার আশেপাশে এমন অনেকজনকে দেখেছে।বিষয়টি কেমন ভাবাচ্ছে তাকে।বেখেয়ালিভাবে একটি বৃদ্ধ লোকের সাথে ধাক্কা লেগে গেলো তোশার।

“সরি সরি।”

“ডোন্ট বি সরি ডিয়ার।আই এম ওকে।”

তোশা খেয়াল করলো লোকটা বিদেশি।চেহারাতে নেটিভ ব্রিটিশদের মতোন হাবভাব।মুখ তুলে লোকটা বিনয়ী হেসে বলল,

“দিস ইজ ফর ইউ হোয়াইট।”

“হোয়াইট?”

“এ কমপ্লিমেন্ট ফর ইউ বিউটিফুল গার্ল।”

লোকটি হাত এগিয়ে একটি সাদা গোলাপ দিলো তাকে।তোশা বিনয়ী ভাবে তা গ্রহণ করলো।লোকটি হেসে তৎক্ষনাৎ চলে গেলো সেখান থেকে।তোশা একবার ভেবেছিল ডেকে আলাপ করবে।পরক্ষণে সেই চিন্তা বাদ দিয়ে কেবিনে ঢুকলো।মিনিট পাঁচেক পর চিরচেনা পারফিউম পেলো তোশা।আশ্চর্য কাল স্বপ্নেও এমন পেয়েছিল।নিজের মানসিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে ভেবে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো।একটু পর উষ্ণতার আভাস পেলো ত্বকে।

“কী ব্যাপার লিটল চেরী?যখুনি দেখা করতে আসি তখুনি ঘুম?দ্যাটস নট ফেয়ার।”

তোশা চট করে চোখ খুলে ফেললো।না সে স্বপ্নে দেখছেনা।উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,

“আপনি?কেউ এসে পড়বে সেদিনের মতোন।”

“কেন সেই গান শুনো নি?যা পেয়্যার কিয়্যা তো ডারনা কিয়্যা।আমিও আর ভয় পাইনা বেলাডোনা।”

তোশার চোখ দুটো ছোট ছোট হয়ে গেলো।কবীর এমন নিশ্চিন্ত মুডে খুব কম থাকে।

“আপনাকে খুশি লাগছে কেন কবীর শাহ?আমার থেকে পিছু ছেড়ে গিয়েছে এজন্য?”

“তোমার থেকে?ইহজীবনে আমার পিছন ছাড়বেনা তুমি।কীযে দুষ্ট তুমি।”

“সব তো শেষ হয়ে গিয়েছে সেদিন।আর কী আছে?”

তোশার কণ্ঠে অভিমান জমা আছে।তবে এক্ষেত্রে সে কার উপর ক্ষি’প্ত নিজ ব্যতীত?কবীর তার পাশটায় গিয়ে বসলো।গায়ের ব্লেজার খুলতে খুলতে বলল,

“আমার মাথায় ব্যাথা হয়ে ছিল কিছু জিনিস।আজ সবকিছু শেষ করে এসেছি।কোথায় আমাকে ফুলের পাপড়ি দিয়ে বরণ করে নিবে তা নয়। ”

“কী এমন কাজ করলেন শুনি।”

“বলা যাবেনা।তবে…।”

“তবে?”

কবীর টেনে তোশাকে নিজের কাছটায় আনলো।হকচকিয়ে উঠলো মেয়েটি।তোশার নরম গালে শক্ত আ’ঙু’ল দিয়ে চেপে বলল,

“তবে যদি আর কোনোদিন অবাধ্য হও আমার সেক্ষেত্রে কথা আছে।এই সুন্দর ঠোঁট দিয়ে যেন আর কখনো অভিনয় করবো এটা বের না হয়।”

তোশা ছিটকে সরে গিয়ে উচ্চারণ করলো আম্মু।কবীর তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়ালো।দেখলো দরজাতে কেউ নেই।

“দরজাতে কেউ নেই কবীর শাহ।আমি আপনার অদ্ভূত কথায় ভয় পেয়ে মা কে ডেকেছি।কিন্তু আপনি আম্মুকে ভয় পান?”

কবীর বিরক্ত হয়ে বলল,

“মটেও না।বরং আবার সেই একটা কথা শুরু হতো।সেসবকে ভয় পাই।”

কবীর ক্লা’ন্তিতে পুনরায় বেডে শুয়ে পড়লো। তার পা দুটো মেঝেতে স্পর্শ করে আছে।এতো বড় শক্তিশালী একজন মানুষকে ক্লান্ত হতে খুব কম দেখা যায়।কিন্তু মনভরে তাকে দেখলো তোশা।এই মানুষটাকে সে আর কী কখনো পাবেনা?

“এদিকে এসো তোশা।”

ধ্যান ভাঙলো তোশার।তবুও নিজ জায়গা থেকে নড়লো না।

“কী বলছেন?”

“তোমার হাতে আমার দেওয়া আঙটি কোথায়?”

“মায়ের কাছে।”

চোখ খুলে ফেললো কবীর।একটু কঠিন কণ্ঠে বলল,

“এতো সহজে দিয়ে দিলে?তুমি কী সত্যি আমার উপর মায়া করো?”

“বলতে পারলেন এভাবে?”

“তো দিলে কেন?”

“মা জোর করে নিয়েছে।আমি, আমি আসলে।”

তোশা ঠোঁট কাঁ’ম’ড়ে কেঁদে ফেলার ভঙিতে বলল।

“তুমি অনেক ছিঁচকাঁদুনে হয়ে গিয়েছো বেলাডোনা।”

কবীর উঠে তোশাকে নিজের কাছে এনে বসালো।আগলে নিয়ে বলল,

“তুমি অল্প বয়সের আবেগে আমাকে পছন্দ করেছিলে।তখন কী ভেবেছিলে এসব হবে?”

“নাহ।কিন্তু আপনি জানতেন।”

“কিছুটা আন্দাজ তো করতে পেরেছিলাম।এখন এতো অসুস্থতা কেন তোশা?শক্ত হতে শিখো।তোমার জীবনে এক পুরুষ থাকবে।সেটা আমি।বাকীটা ম্যানেজ করে নিবো।”

“হ্যাঁ দেখতো পাচ্ছি।আপনার ম্যানেজ করতে গেলে আমি বুড়ি হয়ে যাবো।”

“আমি তোমার থেকে বিশ বছরের বড়।নিজে বুড়ো হওয়ার চিন্তা করিনি আর তুমি কীনা?অদ্ভূত লিটল টমেটো।”

তোশা রে’গে নিজের হাতটা উঁচু করে দিয়ে বলল,

“ধরেন নেন আমাকে লবণ, মরিচ দিয়ে খে’য়ে ফেলেন।কখনো লিটল ফ্রুট,কখনো টমেটো,কখনো চেরি।দুনিয়ায় সব খাবার আমি।যতোসব মন ভোলানো কথা।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬১
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

প্রিয়জনের সঙ্গে অতিবাহিত সময় দ্রুত চলে যায়।এইতো তোশার সঙ্গে মৃদু ঝ’গ’ড়া কিংবা দুঃখের গল্প বলতে বলতে প্রায় ঘন্টা দুয়েক অতিক্রম হয়ে গিয়েছে।এখন মেয়েটা খুব আরামে কবীরের হাঁটুতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।যেন নাবিক বহুকাল ধরে সমুদ্রে হারিয়ে গিয়েছিল।দিক খুঁজে পেতে গিয়ে ক্লান্ত।তোশার নরম লাবণ্যময় গালে কবীর আঙুলের ছোঁয়া দিলো।শিহরিত হয় তার মন।এই মেয়েটা এতোটা ভালোবাসে কেন তাকে?কতোভাবে পিছন ছাড়ানোর চেষ্টা করেছে কবীর।কিন্তু ফল বৃথা।সে এটাও জানে নিজ মাকে যতো বলুক সে তার ভালোবাসা ভুলে যাবে।কিন্তু মন শান্ত হলে ঠিক আবার কবীরের আশেপাশে মৌমাছি হয়ে ঘুরবে।তবে যে সে মৌমাছি নয়।বরং সর্বপেক্ষা শক্তিশালী রাণী।কবীর আস্তে করে ডাকলো,

“বেলাডোনা।তুমি কী জেগে আছো?”

“হুঁ।”

কবীরের ধারণা ঠিক।মেয়েটাকে ঘুমে ডাকলে সাড়াশব্দ করে।কিন্তু পরে সব ভুলে যায়।আলতো করে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।এমন সময় দরজা খোলার শব্দ হলো।কবীর না দেখে অনুমান করলো তাহিয়া এসেছে।কিন্তু আজ কোনো লুকোচুরি নেই।ভয় নেই।বাঁধা নেই।হুট করে কবীর এতো চঞ্চল কীভাবে হলো?এখন তার মনটাকে ত্রিশ বছরের সেই শক্ত মন মনে হচ্ছে।যে প্রেমিকার জন্য সব করতে পারে।

তাহিয়া হাতের ব্যাগটা এক সাইডে রেখে তোশার কাছে এলো।মেয়েটা পরম শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।নিরবতায় কেঁটে গেলো আরো কয়েক মুহুর্ত।ক্লান্ত তাহিয়া আজকে শান্ত।কবীরের পাশে খালি জায়গায় বসলো।নীরবতায় আরো কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তাহিয়া বলল,

“এক সময় তুমি অনেক ভালো গান করতে কবীর।এখন তোমাকে গান গাইতে দেখা যায়না।মনে আছে কলেজের মাঠে তুমি সিনিয়রদের উদ্দেশ্যে গিটার নিয়ে গান গাইতে।সেই দিন গুলো কতো প্রাণবন্ত ছিল।”

“দিন এখনও প্রাণবন্ত তাহিয়া।কিন্তু আমাদের সকলের এক হওয়ার উপলক্ষ নেই।”

“হলেও আগের সেই সুন্দর মন কারো নেই।তবে তোমার একটা কথা আমার খুব করে মনে আছে।তুমি সালমান খানের একটা গান আছেনা যাতে কলেজে পারফর্ম করেছিলে।”

“‘স্বপ্ন ম্যে রোজ আয়ে’ এটা?”

“হ্যাঁ।তখন তুমি স্টেজে দাঁড়িয়ে বলেছিলে জীবনে তোমার একজন স্বপ্নকন্যা আছে।যার হাসি বুঝতে পারো, যার দুঃখ, কষ্ট সব বুঝতে পারো।আমরা বুঝেছিলাম সেটা দিশাকে ভেবে বলেছিলে।”

“বাস্তবের কাওকে ভেবে বলিনি।তখন ছিল না।”

“এখন আছে?আর সে আমার মেয়ে তোশা?টেল মি কবীর শাহ।আমার মেয়েকে কেন ভালোবাসো তুমি।দুনিয়াতে এতো মেয়ে থাকতে।”

কবীর মৃদু হাসলো।তাহিয়া বেশ চালাক একজন মানুষ।যদিও অতীতের সিদ্ধান্তে বোকা বলা চলে।

“দুনিয়াতে এতো মেয়ে থাকতে কেন এই দুষ্ট মেয়েটাকে পছন্দ করি সেই ব্যাখা আমার নেই তাহিয়া।তোশাকে প্রথমবার আমি দেখেছিলাম তোমার দেওয়া ছবিতে।তখন নেহাৎ ছোট বাচ্চা।সাধারণ দুটো চোখে কিছু খুঁজে পাইনি।এরপর সামনে থেকে প্রথম দেখলাম যেদিন ও হারিয়ে গিয়েছিল।এরপর ঘটনা বিচ্ছিন্ন।কখনো মনে হতো ও পা’গ’লা’মি করছে।আবার কখনো রাগ হতো।কিন্তু একদিন ওকে স্বপ্নে দেখেছিলাম আমার রাখা বিশেষ শাড়ীতে।নিজেকে ছোটও করেছি এজন্য মনে মনে।কিন্তু বুঝে গিয়েছিলাম তাকে আমি ভালোবাসি।আমি তোশাকে ছাড়া থাকতে পারবো না৷কখনো না।সে আমাকে যে যাই বলুক।”

“আমার অর্ধেক কথার জবাব দিলেনা।একটা কথা বলো তো আমার মেয়ে বারো বছরের এক সন্তান ডিজার্ভ করে এখন?”

“তাহিয়া হয়তোবা এসব কথা দুজনের মধ্যে মেটার করেনা।আমি ভালোবাসি তোশাকে।এটা কী যথেষ্ট নয়?”

“যথেষ্ট।”

তাহিয়ার ছোট এই উত্তরে চমকে গেলো কবীর।মুখে দ্বিধা ভাব তুলে বলল,

“যথেষ্ট তাহলে আমাদের ব্যাপারে মেনে নাও।আমি আমি সারাজীবন তোমার উপকার স্বীকার করবো।”

“মেয়েটা আমার কবীর।উপকারের প্রশ্ন আসেনা।কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে।”

তাহিয়া অতি শান্ত কণ্ঠে বলল।যেন পাশে ভয়া’বহ রা’ক্ষ’স আছে।সব শুনে ফেলবে।

“আমার একটা মেয়ে কবীর।যদি তোমাদের সম্পর্ক না চলে।”

“যারা এতো যুদ্ধ করতে পারে তারা কখনো আলাদা হওয়ার নয়।”

তাহিয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিশ্চুপ হয়ে রইলো।কবীর দ্বিধা নিয়ে বলল,

“তুমি কী রাজী তাহিয়া?”

“হ্যাঁ।কেন কীভাবে রাজী হলাম সেসব জিজ্ঞেস করবেনা দয়া করে।”

“মায়ানের পারমিশন?”

“তুমিই তো বলেছিলে যে লাগবেনা।”

কবীর আসলে কী রিয়াকশন দিবে বুঝতে পারছেনা।তবে বারবার ঢোক গিলছে।আশ্চর্য তাহিয়া মেনে নিলো।তাও এতো জলদি?কবীর আস্তে ধীরে পুনরায় শুধালো,

“মানুষ নাটক দেখে সব জেনে গেছে।ঠিক এই কারণে তুমি রাজী হলে?”

“নাহ।সমাজের মানুষকে ওতোটা ভাবলে চলেনা।বরং ভালো হয়েছে।কারো কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।এবং জবাবদিহিও করতে হবেনা।কিন্তু বাসার অন্য সকল মানুষের মতামত নিবো আমি।তুমি কী খুশি নও কবীর?”

কবীর হেসে বলল,

“তাহিয়া তোমাকে বোঝাতে পারবো না কিছু এখন।আমি তোশাকে ডেকে বিষয়টি বলি?”

“নাহ।আমিই বলবো।কিন্তু আমাকে ওয়াদা করতে হবে।দিনশেষে আমার মেয়ের কোনো কষ্ট হবেনা।”

“হবেনা।ওয়াদা করলাম।”

(***)

তোশা যখন ঘুম থেকে উঠলো তখন মনে হতো লাগলো খুব সুন্দর কিছু ঘটে গিয়েছে।কিন্তু কী তা সে জানেনা।পরক্ষণে ভাবলো কবীরের হসপিটালে এসে তার সঙ্গে দেখা করা হলো সুন্দর জিনিস।এরকম মুহুর্ত খুব দূর্বল।কিন্তু মানুষটি বিদায় না নিয়ে কেন চলে গেলো?অভিমান হলো তোশার।মেয়েকে বিছানাতে গোমড়া হয়ে বসে থাকতে দেখে তাহিয়া শুধালো,

“কী ব্যাপার তোশামণি।শরীর খারাপ লাগছে?”

মায়ের এমন নরম কণ্ঠ অনেক দিন শুনেনি তোশা।আস্তে করে বলল,

“কেবল ঘুম থেকে উঠলাম।”

“কবীরকে খুঁজছো?ও দশ মিনিট আগে চলে গিয়েছে।”

“আসলে আম্মু তাকে আমি ডেকেছিলাম দেখে এসেছিল।ভুল বুঝো না।”

“কথা বানাতে হবেনা তোশামণি।ফ্রেশ হয়ে এসো।”

তাহিয়া মেয়ের কান্ড দেখে অবাক হয়ে গেলো।কবীর কিছুক্ষণ আগে বলেছে সে নিজে এসেছিল।কিন্তু তোশা ভাবছে রাগারাগি করবে মা।এই কারণে কথা ঘুরাচ্ছে।তোশা ফ্রেশ হয়ে মায়ের কাছাকাছি এসে বসলো।

“তোমার মামা-মামী,নানু বা বাড়ীর কাওকে আসতে নিষেধ করেছি আমি।কারণ তারা এলে মানসিক অশান্তি পাবে।তাছাড়া নিজেকে প্রস্তুত করো।মেয়ের বিয়ে আমি অনুষ্ঠান করে দিবো।তখন নানান লোকে নানান কথা বলবে কিন্তু।”

“মেয়ের বিয়ে?কার সাথে আম্মু।”

“কবীর শাহ।”

তোশা চিল্লিয়ে উঠলো হঠাৎ। তাহিয়া চমকে বলল,

“কী হয়েছে?”

“সত্যি আম্মু?”

“হ্যাঁ।”

“আম্মু আম্মু থ্যাংক ইউ।থ্যাংক ইউ।”

বলতে বলতে মা কে জড়িয়ে ধরলো তোশা।প্রায় কেঁদে ফেলেছে সে।তাহিয়া মেয়েকে জড়িয়ে রইলো অনেকক্ষণ।সামাজিকতা ও লৌকিকতার গন্ডিতে কখনো সে বাঁধেনি তোশাকে।তো এই বেলায় কীভাবে এতো বড় কষ্ট দিবে মেয়েকে।তোশাকে সোজা করে চোখের পানিটা মুছে বলল,

“তুমি সুখে থাকবে।কখনো ভে’ঙে পড়বেনা।এই ওয়াদা দিতে রাজী তো?”

“হ্যাঁ।জানো কতো খুশি লাগছে।আমি মনে হয় স্বপ্ন দেখছি।”

“কিছু স্বপ্ন সত্যি হয় তোশা।তোমার ক্ষেত্রে হয়ে গেলো।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬২
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“চল্লিশ বছরের পুরুষ হয়ে মায়ের পিছন পিছন বিয়ে নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে।আমার লজ্জা করেনা আম্মু?”

কবীরকে নির্বিকার দৃষ্টিতে দেখে নিজ কাজে মনোযোগ দিলো সেতু।আজ সারাদিন তার ছেলে পিছন পিছন ঘুরেছে তোশাকে বিয়ে করার জন্য।সে এখনও মত দেয়নি।কেন দিবে?সব কথা একদিকে আর তোশার বয়স আরেক দিকে।সেতুর সোনার সংসার।বড় ছেলেটা পঙ্গু বয়স বাড়ছে।এছাড়া বাপের বাড়ীর দিকে অনেকের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে রেখেছে সে।সব দিক বিবেচনায় যখন তার স্বামী আর সে চোখ বন্ধ করবে তখন আদৌ কী কবীরের স্ত্রী রুপে থাকা তোশা সব সামলাতে পারবে?কবীর পুনরায় জবাবের আশায় বলল,

“মা তুমি কিছু তো বলো।”

“কী বলবো?তুমি চাও আমি যেন হ্যাঁ বলি।কিন্তু আমার মনে আছে না উত্তর।সেটা তো মানবেনা।”

“তোশা ভালো মেয়ে।এসব ভাবনা বাদ দাও।”

“দিলাম।কিন্তু বউ পেয়ে দুদিন পর আমার আহনাফকে যে ভুলে যাবে।সেটা কীভাবে বাদ দেই?”

কবীর আহত সুরে বলল,

“তোমার মনে হয় আমি এমন বাবা?”

“বউ পেলে সবাই বদলে যায়।”

ড্রয়িং রুমে বসে থাকা সেলিম গলার সুর উঁচু করে বলল,

“তোমার মা ঠিক বলেছে কবীর।বউ পেলে সকলে বদলে যায়।আমার শ্বশুর মশাই তো বদলে গিয়েছিলেন।তাই তোমার মায়ের ভয়।”

সেতু শুষ্ক চাহনি ও বিতৃষ্ণাতে জর্জরিত হয়ে শুধালো,

“আপনি জানেন যে আমার বাবা বদলে গিয়েছিল?ভুলভাল কথা বলবেন না।বরং আমার নতুন মা নিজেও আমাকে আর ভাইকে আগলে রেখেছিলেন।তাদের শিক্ষা ও ব্যক্তিত্ব ছিল এমন।”

“তাহিয়ার মেয়েরও ব্যক্তিত্ব ঠিক এমন সেতু।তুমি জানো না কিন্তু একদিন ও বিশদভাবে আমার সাথে আলোচনা করেছিলো এই সম্পর্ক নিয়ে।ওই মেয়ের ভেতর কোনো তিল পরিমাণ অন্য ভাবনা নেই।বিয়েটা তো হচ্ছে।কিন্তু যদি আহনাফের বি’রু’দ্ধে উল্টোপাল্টা মনোভব নিজে ডেকে আনো সেক্ষেত্রে কারো কিছু করার নেই।কবীর আমি তাহিয়ার সঙ্গে কথা বলে নিয়েছি।তাই চিন্তা ছাড়া অফিসে যাও।”

“কিন্তু আব্বু চিন্তা আছে।এই মানুষটা আমার মা।তার অনুমতি ছাড়া কিছু কীভাবে করি?”

ব্যস এতোটুকু ছিল সেতুর মনের শীতল বরফ খন্ডকে মাতৃ উষ্ণতায় মুড়িয়ে গলিয়ে দেওয়ার জন্য।কবীর মা কে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,

“বয়স কম হোক।তোমার তো পুত্রবধূ হবে।মে” রে তুমি কাজ শেখানো বা ভদ্রতা শেখানো জানো না।কিন্তু আমি জানি তুমি কয়লা থেকে হীরা বের করতে পারো মা।প্লিজ রাজী হয়ে যাও।আহনাফকে তোশা অনেক ভালোবাসে।”

সেতু কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকলো।এখন বৃদ্ধ বয়স তার।নতুন করে পুত্রবধূকে শিখিয়ে পড়িয়ে নেওয়ার মতোন শক্তি শরীরে নেই।কিন্তু তবুও আস্তে করে মাথা নাড়ালো।ছেলের কষ্ট সে চায়না।কবীর তৃপ্তিদায়ক হেসে মা কে ধন্যবাদ জানালো।

“আম্মু ধন্যবাদ আমাকে বোঝার জন্য।মামাদের হ্যান্ডেল করে নিও প্লিজ।”

“তা করবো।কিন্তু শর্ত আছে।”

“সেটা কী?”

“দিশার সঙ্গে যোগাযোগ আমি বন্ধ করবো না।মেয়েটা অসুস্থ।উল্টোপাল্টা জিনিস দেখে সারাদিন।ওর মৃ’ত দাদাকেও দেখে।সে বলে এসে কথা বলে রোজ ওর সঙ্গে।”

“পারভেজকে দেখাচ্ছে না কেন?যেহেতু মানসিক সমস্যা।”

“জানিনা।এই কারণে একটা বয়সের পর একা থাকতে হয়না।”

সেতু আরো নানান কথা বলতে লাগলো দিশার সমন্ধে।সবগুলো ওর অসুস্থতা নিয়ে।কবীর বাহিরের মনোভাব সাধারণ হলেও ভেতরের মনে সবকিছুর হিসেব মিলাচ্ছে।হয়তো আর কিছুদিন।এরপর দিশা পুরোপুরি মানসিক ভাবে পাগল হয়ে যাবে।যদিও দুই তিন বছরে সুস্থ হয়ে পড়বে।কিন্তু নিজ কাজের শাস্তি পেয়ে।কতোটা অদ্ভূত।যাকে একসময় ভালোবাসার কথা বলেছে আজ তার সঙ্গে কবীরের এমনটা করতে হলো।

(***)

কবীরের একমাত্র সিংহাসনে বসে আছে তোশা।তবে এখানে আসনটি সোনায় মোড়ানো না হলেও দামী কালো রঙের কাঠে তৈরি।এই অফিস রুমের এক পাশে বিশাল কাঁচের জানালা আছে।যা দিয়ে মিঠা রোদ আসে।সুন্দর আকাশ দেখা যায়।খোলাচুলে সাদা রঙের পোশাক ও অধরযুগলে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে চেয়ারে গাল ঠেকিয়ে বাহিরে তাঁকিয়ে আছে তোশা।এতো উঁচু হওয়া স্বত্ত্বেও আকাশে কোনো পাখি নেই।শুধু শরতের খন্ড খন্ড মেঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে।তোশা নিজে থেকে চিন্তা করে নিলো।সুবিশাল আকাশে রঙীন ঘুড়ি উড়ছে।পাশে এক ঈগল ও চড়ুই একই সাথে ডানা ঝাপটে চলছে।কতো অসম্ভব জিনিস।কিন্তু তোশার ভালো লাগছে ভাবতে।যদিও বাজপাখির সঙ্গে চড়ুই পেরে উঠছেনা।

“তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে মেয়ে।”

মীরার কণ্ঠে ধ্যান ভাঙলো তোশার।মিষ্টি সুরে বলল,

“কেমন আছো আন্টি?”

“ভালো।বেশ ভালো।কিন্তু তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।কিন্তু শুনেছি প্রায় এক মাসের মতোন অসুস্থতায় ভুগলে।হসপিটালে ছিলে।”

“এক মাস নয়।বিশ দিন হসপিটালে ছিলাম।গত পরশু রিলিজ পেয়েছি।”

“অবশ্য এতো অসুস্থ থাকার কথা।কারণ যা গেলো উপর দিয়ে।আমি কিন্তু শুরু থেকে তোমাদের সাপোর্টে ছিলাম।স্যার তোমাকে এখানে বসতে বলেছে?”

“নাহ এটা তার জন্য সারপ্রাইজ।”

তোশা লাজুক হাসলো।আশ্চর্য তার মধ্যে এখন লজ্জা কাজ করে।যা কয়েক মাস পূর্বেও ছিলনা।বেশী অবাক লাগে যখন মনে পড়ে অল্প দূরত্বে আছে নববধূ হওয়ার।নিজ খেয়াল থেকে বের হয়ে তোশা মীরার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিলো।উল্লাসের চেহারার সঙ্গে শুধু নাকটায় মিল আছে।একটু বিব্রত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো,

“আন্টি একদিন তুমি উল্লাসের কথা আমাকে বলেছিলে তাইনা?ও তোমার ছেলে।”

মীরা উষ্ণ শ্বাস ফেলে বলল,

“হ্যাঁ।”

“ওর সাথে কবীর শাহ এর এতো ভালো সম্পর্ক কীভাবে?”

“ব্যাপারটা আমিও জানিনা।কিন্তু দুজনে একে অপরের ক্রা”ই”ম পার্টনার বলতে পারো।আচ্ছা পরে কথা হবে।এই ফাইলগুলো রাখতে এসেছিলাম।”

মীরা অনেকটা জলদিতে বের হয়ে গেলো।যেন কথাটিতে সে বিব্রত।তোশা সেদিক থেকে মনটা সরিয়ে পুনরায় আকাশ দেখতে লাগলো।ভাবনায় বুঁদ মেয়েটিকে হঠাৎ উষ্ণতায় জড়িয়ে নিলো।কবীর নিজ শক্ত হাত দ্বারা তাকে শূন্যে নিজ কোলে তুলে নিলো।তোশা ভয় না পেয়ে বরং তামাটে পুরুষটির গলা জড়িয়ে ধরলো।এক সময় ছিল যখন এতোটা কাছাকাছি আসতে ভয় লাগতো দুজনের।কিন্তু আজকে কোনো বাঁধা নেই।যেন বালির বাঁধের মতোন সব মলিনতা ভেঙে গিয়েছে। তোশাকে কোলে নিয়ে নিজেই চেয়ারে বসলো কবীর।

“আপনি কখন এলেন বেলাডোনা?সারপ্রাইজ হয়ে গেলাম।”

“এসেছি অনেকক্ষণ হলো।কী হলো বাড়ীতে?”

“মা মেনেছে।”

“সত্যি?”

তোশার নাকের সঙ্গে নিজের নাকটি ঘষে জবাব দিলো।

“সত্যি লিটল চেরী।শেষমেশ আমাকে পাওয়ার লড়াইতে জিতে গেলেন।”

“উহু আমরা জিতে গেলাম।বিয়ের ডেট কবে দিবেন?”

কবীরকে একটু অশান্ত দেখা গেলো।তোশার মাথাটা বুকে রেখে বলল,

“মায়ান এখনও হ্যাঁ বলেনি।যতোকিছু বলো না কেন?সে তোমার বাবা।মতামত জরুরি।”

“হুঁ।”

“বাই দ্য ওয়ে তর্নি কে তোশা?আমি তোমার মুখে শুনেছি নামটা।”

কবীরের মুখে প্রশ্নটি শুনে তোশার গালে লাল আভা ছড়িয়ে পড়লো।যেন সত্যি সে টমেটো।

“আমাদের মেয়ে।যে দেড় বছরের মধ্যে আমার কোলে থাকবে।কতো মজা হবে তাইনা?”

“নাহ।কারণ আপনি পড়াশোনা শেষ করবেন।এরপর বাকী বিষয়।”

“আপনার কথা মতোন?”

“জি হ্যাঁ।”

তোশা চোখ ছোট ছোট করে বলল,

“বউয়ের কথা শুনবেন না আপনি?এতো বড় সাহস।”

কবীর আরো তিনগুণ চোখ ছোট করলো।এরপর তোশার ছোট্ট নরম হাতের সঙ্গে নিজের তামাটে শক্ত হাত মিলিয়ে বলল,

“কোথাও দেখেছো সিংহকে টিয়া পাখি শা’স’ন করে?আমাদের দুজনের হাত দেখো।শক্ত এই হাতকে নরম এই হাত শা’স’ন করতে পারবে?বিষয়টি অসম্ভব।”

“শুনবেন না সত্যি আমার কথা?”

“কখনো না।বরং ভয় পাও যে তোমাকে পানি খাইয়ে মা’তা’ল করতে পারে তার সাথে সংসার জীবনে কয়বার হারবে?”

তোশা আহ্লাদী কণ্ঠে বলল,

“হারবো কীনা জানিনা।কিন্তু কবীর শাহ এর প্রাণ ভোমরা তোশা পাখি।সে জানে তামাটে পুরুষকে কীভাবে বশে রাখতে হয়।”

“সত্যি?তবে ভয় পাওয়া উচিত সুন্দরী ছোট্ট শয়তান।কারণ বিয়ের পর অন্য রকম কবীরকে দেখতে পাবে তুমি।যে উত্তাল ভালোবাসাতে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তার বেলাডোনাকে।”

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-৫৭+৫৮+৫৯

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫৭
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“অসহায় বন্দী মানুষ যে মুক্তির পথ খু্ঁজে বেড়াচ্ছে তাকে যদি বলেন তোমার আরো কিছুদিন কারা’বাস হলো।তখন সেই মানুষটা যেমন ভেতরে শেষ হয়ে যাবে।ঠিক এমন লাগছে এখন কবীর শাহ।বলুন তো সত্যি শেষ দেখা আমাদের?”

তোশার কণ্ঠে উৎসুকভাব।কবীর ও সে খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েটির উষ্ণ নিশ্বাস নিজের ত্বকে অনুভব করছে সে।নাহ তার বেলাডোনার সুগন্ধ যেকোনো ফুলের থেকেও বেশী।শক্ত হাত দিয়ে নরম গালটিতে তামাটে পুরুষটি স্পর্শ করে শুধালো,

“খুব খারাপ লেগেছে কথাটিতে?”

“হুম।”

“আমি তো এমনি বলছিলাম।”

“কখনো বলবেন না কবীর শাহ।বলেন আমাকে যে বলবেন না।ওয়াদা করেন।”

“ওকে লিটল ফ্রুট।আপনি সত্যি করে বলেন তো কীভাবে বুঝলেন আমার উপস্থিতি?”

রুমে থাকা ডিভানে গিয়ে বসলো কবীর।তোশাকেও টেনে নিজের হাঁটুর উপর বসালো।এতোটা কাছাকাছি বসা হয়নি তাদের কখনো।লাজুক তোশার ভেতরে অনুভূতির সূর্যোদয় ঘটলো যেন।রঙীন প্রজাপতি শত রঙের পাখা মেলে উড়ে যাচ্ছে।কবীরের কাঁধে হাত দিয়ে জড়িয়ে নিলো তোশা।

“ওইযে বললাম টেলিপ্যাথি।আপনি আশপাশের আছেন সেটা মন বলছিলো।আপনি কীভাবে এলেন?”

“বিষয়টা একটা ইতিহাস বেলাডোনা।তোমার নানা অযথা একটা লোহার পাইপ ঠিক এই পাশের বারান্দা বরাবর সেই শুরু থেকে রেখে দিয়েছে।আশ্চর্য যে তা এতো বছর পরেও আমার ভার বহন করতে পেরেছে।”

তোশাকে অতীতের ঘটনা গুলো বললে হো হো করে হেসে দিলো মেয়েটা।কী অনাবিল সেই হাসি।অথচ কবীর খেয়াল করলো তোশার চোখের নিচে কালি।মুখ দেখে মনে হচ্ছে খুব ক্লান্ত।তার চোয়ালে হাত রেখে কবীর বলল,

“তুমি কেমন বড় হয়ে গেলে তোশা।চিন্তা করছো?”

“হ্যাঁ।বাসায় সকলে স্বাভাবিক কথা বলে।কিন্তু তাদের দৃষ্টিতে কিছু একটা আছে।মা কথা বলেনা আমার সাথে।সব কবে ঠিক হবে?”

“হয়ে যাবে।আহনাফ তোমার জন্য ফুলগাছ লাগিয়েছে ছাদে।যখন তুমি ওই বাড়ীতে চলে যাবে তখন দুজন একসাথে বড় গোলাপ বাগান করবে।এসব ছেলেটির স্বপ্ন।”

তোশা কিছু বলতে যাবে এর পূর্বে বাহিরে গেইট খোলার শব্দ হলো।দুজনে সতর্ক হয়ে গেলো।

“এতো রাতে কে এলো তোশা?”

“সেটাই ভাবছি।আপনার গাড়ী কোথায়?”

“দূরে ড্রাইভার সাথে আছে।”

“এক মিনিট আমি দেখে আসছি।শব্দ করবেন না।”

তোশা সতর্ক পায়ে জানালার সাইডে এলো।পর্দা সরিয়ে দেখলো চার জন মানুষ সহ একটি গাড়ী এসেছে।অবয়ব দেখেই সে অনুমান করতে পারলো এটা তার খালা শিউলি ও তার পরিবার।এতোদিন আসতে পারেনি।ভয়ে আ’ত্মা শুকিয়ে গেলো তার।কারণ খালা এলে সর্বপ্রথম তার খোঁজ করবে।

“কবীর শাহ।তাতান এসেছে।”

“মানে শিউলি?”

“হ্যাঁ।এখন কী হবে?আপনি চলে যাবেন তাও সম্ভব হবেনা কারণ দারোয়ান আঙকেল জেগে আছে।”

ভয়ে তোশার মুখটা পাংশু বর্ণ ধারণ করলো।আশ্চর্য ভাগ্যের উপর মনে মনে একচোট হেসে নিলো কবীর।যদি জীবন রঙীন না হতো তাহলে কেন এই বয়সে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হবে আর কেন বা আজকে অন্যের বাসায় বিনা অনুমতিতে ঢোকার ব্যাপারে অভিযুক্ত হবে?তোশা চট জলদি কবীরকে বাথরুমে ঢুকে অপেক্ষা করতে বলল।মেয়েটার ভয় মাখা মুখ দেখে কবীরও নিষেধ করলো না।

মিনিট পাঁচেক পর তোশার রুমের দরজাতে করাঘাত শোনা গেলো।ইচ্ছে করে মেয়েটা পাঁচ মিনিট দেরীতে দরজাটা খুললো।

“কী ব্যাপার তোশা?তোমাকে না বলেছিলাম রুমের দরজা সবসময় খোলা রাখতে।”

“আম্মু আসলে..।”

শিউলি মা মেয়ের কথার মধ্যে বিরতি দিয়ে বলল,

“থাক না আপু।তোশামণি কেমন আছো আম্মু?”

“ভালো আছি তাতান।তুমি কেমন আছো?”

তোশাকে জড়িয়ে ধরে ভেতরে প্রবেশ করলো শিউলি।বিরোধ করে বলল,

“ভালো থাকলে শরীর আরো শুকিয়ে গেলো কেন?মনে হচ্ছে এইট /নাইনে পড়ো।এক মিনিট তোমার রুমে এই অদ্ভূত ফ্রেশনারের সুগন্ধ আসছে।কোথা থেকে নিয়েছো?দারুণ তো গন্ধটা।”

একে বলে ভাগ্য সদয় না হলে কোনো কিছু ভালো হয়না।তোশা ভুলে গিয়েছিল কবীর শাহ এর পারফিউম এর কথা।যা সে প্যারিস থেকে এনে ব্যবহার।যা মানুষটা চলে গেলেও রুমে দশ মিনিট স্থায়ী হয়।শিউলি পূর্ব থেকে ঘ্রাণ সংবেদনশীল।

“তাতান এটা বাহির থেকে আসছে।”

তাহিয়া তাদের মাঝের কথা কেড়ে নিয়ে বলল,

“তাই তোশা?তাহলে তোমার রুমের ফ্লোরে জুতার ছাঁপ কেন?”

সকলের দৃষ্টি রুমের ফ্লোরের উপর পড়লো।তোশা সম্ভবত বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।শুকনো ঢোক গিলে অন্য একটা মিথ্যা বলবে কী?যা সফল হওয়া অনিশ্চিত?শিউলি সামান্য হেসে বলল,

“আমার জুতার ছাঁপ এটা আপু।দেখো স্লিপার পড়ে এসেছি।”

“তাইনা?আমাকে বোকা ভাবিস তুই শিউলি?”

“হয়তো যেমনটা তুমি আম্মু,আব্বুকে ভাবতে।”

শিউলি স্পষ্টত খোঁচা দিলো তাহিয়াকে।কিন্তু সে ওটা গায়ে মাখলো না।রুমের এই মাথা ওই মাথা খু্জতে শুরু করলো।অবশেষে চিল্লিয়ে ডাকতে লাগলো কবীরকে।

“কবীর,কবীর বের হও।এখুনি বের হবে।”

খট করে বাথরুমের দরজা খুলে গেলো।সেখান থেকে বের হয়ে এলো কবীর।তার চিরচেনা সেই কঠিন আবহ নিয়ে।দুরন্ত দৃষ্টি গুলোতে না আছে ভয় না আছে সংশয়।

“তাহিয়া?”

“আশ্চর্য কবীর।শেষে তোমাকে এখানে পাবো কখনো চিন্তা করিনি।আমার ভুল মনে রাখা উচিত ছিল।এই রুমে আগে আমি থাকতাম ও এখানে আসার গোপন রাস্তা তুমি জানো।রোজ আসো তাইনা?”

“না।আজ প্রথম।এবং হয়তোবা শেষ।”

“তুমি নিজের বয়স অনুযায়ী তো কাজ করো কবীর।এগুলো কোন ধরণের খারাপ কাজ?”

তাহিয়া যতোটা পারছে ততোটা জোরে কথা বলছে।মানুষ রেগে গেলে হয়তোবা এমন জোরে কথা বলে।বাসার অন্য সব মানুষদের রুমে চলে আসতে সময় লাগলো না।তাহিয়া দশগুণ উত্তেজিত হয়ে বলল,

“আমার তোমার সাথে কোনো কথা নেই কবীর।কোনো কথা না।সব এই মেয়ের সাথে।আমার মেয়ে। তোশা তোমাকে আমি কষ্ট করে জন্ম দিয়েছি তার প্রতিদান এসব দিয়ে দিলে?আরে এতোটা ভালোবেসেছি তোমাকে।ভুল আমার জানো এখানে হয়নি যে তুমি দৃষ্টির আড়ালে প্রেম করেছো আমার বন্ধুর সাথে।সমস্যা হয়েছে সেখানে যখন তোমার বাবা বলেছিল গর্ভে তোমাকে মে’রে ফেলতে।বা আমার মা ঔষধ এনে দিয়েছিলো যা আমি মায়া দেখিয়ে খাইনি।তখুনি মে’রে ফেলতাম আমার এতো কষ্ট হতো না।হায় আমি এটা কেন করলাম না।”

“আপু তোর মাথা খারাপ বাচ্চা মেয়েটাকে কী বলছিস?ও তোর গর্ভে নিজ থেকে আসেনি।তোরা এনেছিস। সৃষ্টিকর্তা দিয়েছে।সন্তান খারাপ করলে তাকে জন্মের কথা বলা কতোটা ঠিক?”

“সব ঠিক।”

“তাহিয়া চুপ।আমি কিছু বলছিনা তোমার ইমোশনকে খেয়াল রেখে এর মানে বলতে পারবো না তা নয়।তোশা আর আমি ভালোবাসি।দুজনে এক হতে চাই।এতে মেয়েটাকে ম’র’তে বলছো?শুনো তুমি মা হও যাই হও।কিন্তু ওর অস্তিত্ব না থাকার কাম্য করার অধিকারটুকু নেই।”

কবীরের বলিষ্ঠ কণ্ঠে কিছু একটা ছিল।কবীর শাহ আসলে কে?একজন স্বনামধন্য মানুষ।যে নিজের সম্মানকে আদুরে বিড়াল ছানার মতোন যত্নে রাখে।সে কীনা ছোট হচ্ছে বারবার পাশে দাঁড়ানো বিশ বছরের যুবতীর জন্য?তোশা অদ্ভূত দৃষ্টিতে মা কে দেখছে।কবীরের অনেক মায়া হলো।কাওকে পরোয়া না করে তোশাকে আগলে বলল,

“কষ্ট পেও না।তাহিয়া রেগে আছে।”

“কবীর শাহ আপনি চলে যান।আর কখনো আসবেন না।”

তোশা প্রয়োজনীয় জোরে কথাটি বলেছে।যা শুনে রুমের আর সকলে তাদের দিকে তাঁকালো।তোশা কবীরের মুখপানে তাঁকিয়ে বলল,

“আমি মনে হয় আপনার থেকেও মা কে বেশী ভালোবাসি।চলে যান আপনি।আম্মু যার দুনিয়া আমি সেই দুনিয়া না থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করা সবথেকে বড় কষ্টদায়ক।চলে যান কবীর শাহ।”

কবীর কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে তোশাকে দেখলো।মেয়েটির দৃষ্টি এসব বলছে তো।কিন্তু মানতে পারছে?

“তুমি সব শেষ করছো তোশা?এই ভয়ং’কর সময়টিতে?”

“হ্যাঁ।আমি অনেক খারাপ প্রেমিকা তাইনা?”

“নাহ বেলাডোনা।তুমি অনেক ভালো একজন মেয়ে।চলে যাচ্ছি।আমি তর্ক করে তোমাকে কষ্ট দিবো না।”

কবীর তোশার কপালের চুলগুলো এলেমেলো করে দিলো।তাহিয়া সহ রুমের সকলে নীরব।দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তাহিয়ার উদ্দেশ্যে কবীর বলল,

“আমি প্রতিদানের বিনিময়ে কিছু নেইনা তাহিয়া।তা নয় একুশ বছর আগের করা উপকারের প্রতিদান দিতে গিয়ে তুমি দুনিয়া হারিয়ে ফেলতে।তবুও তুমি অনেক ভালো বন্ধু।এবং আমি তা মানি।”

কবীর রুম থেকে বের হয়ে গেলো।কল্লোল বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল।কবীরকে বলল,

“আমি আপনাকে গেট অবধি ছেড়ে দিচ্ছি।”

কল্লোল বাহিরে তো গিয়েছিল কবীরকে নিয়ে।কিন্তু ফিরলো একা।তোশা মূর্তির অনুরুপ দাঁড়িয়ে আছে একপাশে।কল্লোলকে দেখে উত্তেজিত হয়ে বলল,

“তিনি চলে গেছেন কল্লোল ভাইয়া?”

“হ্যাঁ।”

“এই বাড়ীতে নেই?”

“না।”

“কবীর শাহ কোথাও নেই।কবীর শাহ কোথাও নেই।”

সবথেকে বেদনাদায়ক কণ্ঠে চিৎকার করে উঠলো তোশা।ফর্সা মুখটা রক্তিম হয়ে উঠলো।মেঝেতে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো।শিউলি তৎক্ষনাৎ বসে মেয়েটাকে জড়িয়ে নিলো।

” কাঁদে না তোশা।সব ঠিক হবে।”

“কিছু ঠিক হবেনা। কিছু না। কবীর শাহ চলে গেছে।আর আসবেনা কখনো।আর না।খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।মনে হচ্ছে দুনিয়ায় নিশ্বাস নেওয়ার মতো কিছু নেই।কবীর শাহ চলে গেলেন।আমি যেতে বলেছি।আমাদের আর কথা হবেনা।এতো খারাপ লাগছে কেন?আমি মনে হয় মা’রা যাচ্ছি।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫৮
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“মানুষ যতো রঙের কথাও বলে ততো রঙের তাইনা?বাহিরে বের হওয়া যায়না মানুষ তোশাকে নিয়ে বলে।মানসম্মান সব শেষ হয়ে গেলো।”

তাহিয়া নিজ ভাবী পাখির দিকে নির্বিকার দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।তিনবেলা সেই একই কথা তে মুখটা তেঁতো হয়ে গিয়েছে তার।

“কয়েকদিন বোরখা পরে বাহিরে বের হও ভাবী।সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।”

“কেন?আমি কী দো’ষী নাকী?উল্টো যে মেয়েকে নিয়ে এসব সেই তো সেজেগুজে ভার্সিটিতে চলে গেলো।”

“তোশা ভার্সিটিতে গিয়েছে?”

“বাহ!মেয়ের খবর ঠিকঠাক এখনও রাখো না?এতো কিছুতেও শিক্ষা হয়নি?”

তাহিয়া জবাব দিলো না।গতকাল রাতে খাদ্য মন্ত্রীর বাড়ীতে বড় একটি ইভেন্ট ছিল।সেই অর্গানাইজ করেছিলো।সেসব গুছিয়ে আসতে আসতে সকাল দশটা বেজে গিয়েছে।তোশার খবর নেওয়া হয়নি।সোফায় বসে তৎক্ষনাৎ ফোন বের তাতে মেয়ের নাম্বারে ডায়াল করলো।

“কোথায় তুমি তোশা?ভার্সিটিতে যাবে আমাকে বলেছিলে?এখুনি বাসায় আসবে।”

তোশাকে কোনোকিছু বলতে না দিয়ে ফোন রেখে দিলো তাহিয়া।বড় ক্লান্ত শরীর তার।কিন্তু মেয়ে না ফিরে আসা অবধি জায়গা থেকে একটু ও নড়লো না।তোশা এক ঘন্টার মাথায় বাসায় ফিরে এলো।বড় ধীর পায়ে।বিশ বছরের কিশোরীর চঞ্চলতা নেই।সকালে খেয়েছে কীনা কে জানে?তাহিয়াকে দেখেও কিছু বলল না।

“রুমে যাও তোশা।আমি আসছি।”

মেয়ের পিছনে পিছনে তাহিয়া তার রুমে এলো।শক্ত কণ্ঠে বলল,

“এরপর আমার অনুমতি ছাড়া বাহিরে যাবে না তুমি।”

তোশা অবাক হয়ে শুধালো,

“কেন?”

“তোমাকে কৈফয়ত দিতে হবে কেন না করলাম?”

তোশা অনেকক্ষণ মায়ের মুখটার দিকে তাঁকিয়ে থেকে বলল,

“হ্যাঁ।দিতে হবে আম্মু।”

“মুখে বড় বড় কথা।এতোকিছুর পরেও…।”

“তোমার আসলে কবীর শাহ এর সাথে সমস্যা কী আম্মু?সে বয়সে বড় নাকী তোমাদের বন্ধু।”

“এখানে কবীর আসছে কোথা থেকে?”

“তুমি এনেছো।বলো কী নিয়ে সমস্যা।”

“দুটোই।আমি কেন আমার মেয়েকে বয়সের দুই গুণ লোকের কাছে বিয়ে দিবো?বয়স হতে গিয়ে দেখা যাবে জা’ন শে’ষ।অল্প বয়সে আমার মেয়েকে বিধবা হতে দিবো না।”

“মৃ’ত্যু মা বলা যায়?আমি যদি আগে চলে যাই?”

“এসব উদ্ভট বিতর্ক আসলে বৃথা তোশা।আর রইলো বন্ধুর কথা।হ্যাঁ সমাজ সহ ব্যাপারটা আমার ভালো লাগেনা।শুধু শুধু তর্ক করো না।”

“না আম্মু কখনো তোমার সাথে এই বিষয় নিয়ে বলিনি।কিন্তু আজ বলবো।ছোট বেলা থেকে তুমি সব আমাকে দিয়েছো।আমি তা মানি।এবং আমি সেই সব সন্তানদের মতোন না যারা বাবা-মায়ের প্রতিদান ভুলে যায়।তবে একটা কথা বলো মনের উপর কারো জোর আছে?তুমি নিজ জীবনে যা খেতে পারো না।তা জোর করে কেউ খাওয়ালে শেষে বমি করা ছাড়া উপায় থাকবে?থাকবেনা তো।আমার সঙ্গে এখন যা করছো সেই বিষয়ের সামিল।একটা মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য জরুরি নাকী তার ভেতরের?কবীর শাহ কে বিয়ে করতে আমার ধর্ম আঁটকাবে?অনুমতি দেয়নি তা বলতে পারবে কখনো?বলবে সমাজের কথা।সেই সমাজ যাদের নিজ চরিত্রের ঠিক নেই এবং অন্যকে জাজ করে?সেই সমাজ যারা অন্যায় করতে করতে এতোটা খারাপ পরিস্থিতিতে চলে গিয়েছে যে মানুষের বেঁচে থাকা দায়।ধরো আমি সমাজের চোখে পাপী।তাহলে তোমার বড় মামা?আমি তো জানি তিনি এমন একজনকে বিয়ে করেছে যে দূর-সম্পর্কে তার ভাতিজি।এটা নিয়ে নানুরা মুখ টিপে হাসে।গ্রামে গঞ্জে সহ পৃথিবীর অনেক জায়গায় এমন বিয়ে হয়।আরে সেই দিক থেকে কবীর শাহ তোমাদের র’ক্তের কেউ নেই।সমস্যা সত্যি করে হচ্ছে আমি ও কবীর শাহ ভালোবাসি দুজনকে।এবং বড়দের সম্মান করে তাদের কথা মেনে এক হতে চাই।যদি উত্তরঞ্চলের নদী ভাঙনের স্বীকার কোনো গরীব ঘরের মেয়ে হতাম।আর বাবা বড় মুখ করে বিদেশে থাকা নতুন টিনের বাড়ীর চল্লিশ বছরের কবীর শাহ এর কাছে বিয়ে দিতো যাকে আমার বাবা ভাই বলে ডাকে তখন তোমাদের মনে হতো না সব ঠিক আছে।মেয়ে সুখী বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে।কিন্ত না বাস্তবে তোশা হচ্ছে ঢাকার অভিজাত ধনী পরিবারের মেয়ে এবং কবীর শাহ হচ্ছে ঈগল পাখি।যার আশেপাশে যাওয়া মানে সুগার বেবী হওয়া।আজকে সমাজ,বয়স,পরিবারের দোহাই দিয়ে দুটো মানুষকে শেষ করে দাও।মে’রে ফেলো।আর কী বললে সেদিন?আমি গর্ভে ম’রে গেলে ভালো হতো?না মা এটা বলা উচিত না।বাবা-মা দুনিয়াতে আনার সিদ্ধান্ত নিবে।এরপর সেই সন্তানের কাছে জন্মের প্রতিদান চাইবে?এই বিষয় না ভেবে সে আদৌও কী চায়?মা তোমাকে আমি কখনো বলতে পারিনি তোমার সেই পছন্দের জাম ফল আমার পছন্দ না।তবুও তোমার দিকে তাঁকিয়ে খাই।নিজ হাতে খেতে আমার ভালো লাগে।কিন্তু তাও তোমার শান্তির জন্য তোমার হাতে খাই।এতো পড়াশোনা ভালো লাগেনা।তবুও বেস্ট হতে হবে আমাকে।মায়ের মতে বেস্ট হতে হবে।সারাজীবন তোমার কথা মতোন বেস্ট,গুড সবথেকে সেরা মেয়ে হয়ে এসেছি।আজ যখন নিজের জীবনের জন্য কিছু চেয়ে বসলাম।তাহলে খারাপ?বলো মা।তুমি আমার জন্য যা করেছো এজন্য প্রতিদানে বাবার কাছ থেকে ভালো কথা শুনলে না।তুমি সারাজীবন আমার জন্য যা করেছো তা কী শুধুমাত্র বাবার কাছ থেকে ভালোর সার্টিফিকেট পেতে?তাহলে মনে করে দেখো আমার নামে যতোগুলো ভালো কথা।তুমি অনেক ভালো মা।অনেক ভালো।কিন্তু আমি ভালো মেয়ে না।খুব খারাপ।”

অনেকগুলো কথা।এতো জলদি বলতে গিয়ে তোশার শ্বাস উঠে গিয়েছে।মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে।তাহিয়া অবাক হয়ে মেয়েকে দেখছে।বস্তুত পক্ষে তোশাও নিজের জায়গাতে সঠিক।এবং তাহিয়া নিজেও।কেমন উইন-উইন পরিস্থিতি সবকিছুতে।

“জানো মা সেদিন রাতে এসব কেন সকলের সামনে বলিনি?কারণ আমি চাইনি সবার সামনে মা কে এসব বলতে।কবীর শাহ ও চায়না।সেই মানুষটা কীভাবে খারাপ হয়?যাকে আমি পেতে পারবো না।”

শেষের কথা বলতে গিয়ে কাঁপতে কাঁপতে মেঝেতে বসে পড়লো তোশা।শরীর জ্ব’লে যাচ্ছে তার।ভেতরটাতে চাপ দিচ্ছে।

“তোশা?তোশা তোমার কী হচ্ছে?”

তাহিয়া গিয়ে জাপটে ধরলো তোশাকে।মেয়েটির গা কেমন ঠান্ডা।শুধু দূর্বল কণ্ঠে বলতে লাগলো,

“আম্মু গত আট চল্লিশ ঘন্টা ধরে ঘুমাইনি আমি।তাই ঘুমের ঔষধ নিয়েছি তিনবেলায় দুটো করে।তাও ঘুম আসেনি।কিন্তু হঠাৎ আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।আম্মু সব শেষ হয়ে যাচ্ছে মনে হয়।এই কথা গুলোর বলার জন্য এতোক্ষণ সাহস ছিলো।আম্মু ওই মানুষটা আমার কোনোদিন হবেনা তাইনা?”

“তুমি পাগল তোশা?এই মেয়ে।চোখ খুলো।বাবা, বাবা।কল্লোল কে আছো?তাড়াতাড়ি এসো।তোশা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।”

তাহিয়ার গা কাঁপছে।গলা শুকিয়ে আসছে।তবুও মেয়েকে ডেকে চলেছে।

(***)

দরজা খোলার শব্দে তাহিয়া মাথা উঠালো।রাত এখন গভীর একটা।হসপিটালের গন্ধে মনটা কেমন ভয়ে মিশে আছে।আসিফকে এমন সময় দেখে মটেও চমকায়নি তাহিয়া।বরং শান্তভাবে শুধালো,

“আপনি তো জাপানে ছিলেন।কবে এলেন?”

আসিফের কাঠখোট্টা জবাব,

“কবে থেকে আমার খোঁজ রাখা শুরু করলে?”

বেডের কাছাকাছি এসে ঘুমন্ত তোশার মায়াময় মুখটার দিকে তাঁকালো।মেয়েটার মুখের আদল হুট করে কেমন যেন বদলে গিয়েছে।আগে মনে হতো তাহিয়ার চেহারা পাবে।কিন্তু এখন অনন্য সৌন্দর্যে মন্ডিত।যা বর্ণনা করা যায়না।আসিফ মৃদু হেসে তোশার কপালে হাত বুলিয়ে বলল,

“নিজেকে নিয়ে এতোটা ব্যস্ত ছিলে যে খেয়াল করো নি ও ঘুমের ঔষধ নিচ্ছে তবুও ঘুমাতে পারছেনা।মানুষ যখন নির্ঘুম রাত কাঁটায় তখন কতো ধরণের চিন্তা করে।ভাগ্য ভালো মেয়েটা নিজেকে শে’ষ করে দেয়নি।”

“আপনি সব জানতেন আসিফ ভাইয়া?”

“হ্যাঁ।”

“তবুও আস্কারা দিলেন?মানে বুঝেন নি কেমন খারাপ বিষয়টা?”

তাহিয়ার উপর পূর্ণ দৃষ্টি ফেললো আসিফ।বয়স তার পঞ্চাশের কাছাকাছি।চেহারার জৌলুসতা যদিও সাদা পাঞ্জাবী ও পরিপাটি গোছানো রুপের জন্য বেড়েছে।

“তাহিয়া কারো মনের উপর কখনো অন্য কেউ খবরদারি করতে পারেনা।যদি সেটা সম্ভব হতো তাহলে আজ তুমি আমার স্ত্রী এবং তোশা একমাত্র আমার সন্তান হতো।শুনো ব্রোকেন ফ্যামিলির বাচ্চাদের মাইন্ড না অনেক ক্রিটিক্যাল হয়।বাবা-মায়ের বিচ্ছেদে এমন কোন সন্তান কষ্ট পায়না?তখন সেই সন্তানেরা ভিন্ন পথ খুঁজে নেয় ভালো থাকার।”

“কী বলতে চাচ্ছেন আমি তোশাকে কম ভালোবেসেছি?”

“No,I didn’t said that.But you have to admit it there is a difference between a mother’s love and a man’s love.”

“That’s not the issue.এই পুরো দুনিয়াতে তোশা সেই কবীরকে ভালোবাসার জন্য পেয়েছে?মায়ের ভালোবাসা ও পুরুষের ভালোবাসা দুটো ভিন্ন জিনিস মানলাম।ওর কবীরের সঙ্গে মিলে যাওয়া আমার জন্য কোনো বেনিফিট নিয়ে আসবে যা আবশ্যক।এবং এটা তাদের মিলনই সম্ভব। তা তো নয়।”

“কোনো ক্ষতিও তো নিয়ে আসছেনা।ও কী বলেছে যে তোমাকে ছেড়ে দিবে?কথাটা হলো আমি চিনি তাহিয়াকে।সে এটা ভেবে ভয় পাচ্ছে আসলে কবীর মায়ানের বন্ধু।এবং লোকটা নিজেও বিচ্ছেদের পর তোশাকে পেয়েছে।সত্যিটা এখানে তাহিয়া।তোমার বন্ধু ও বয়সে বড় এসব জিনিসকে তোমার মন ২০% এর বেশী তোয়াক্কা করেনা।কারণ তুমি জানো কবীর বা তোশা কেউ মৃ’ত্যু দন্ডের আসামী নয়।বরং তারা চাচ্ছে কবীরকে দেখো একজন মানুষ হিসেবে।একটা কথা বলো তাহিয়া।কবীর ক্রিমি’নাল?”

“না।”

“তাহলে এতো কেন ভাবছো?”

তাহিয়া শুকনো ঢোক গিললো।এমন না কবীরকে সে চিনেনা।একজন পার্ফেক্ট মানুষ সে।কিন্তু যদি সময় রুপ ভিন্ন হতো তাহলে?আসিফ দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।গলা পরিষ্কার করে বলল,

“কবীর করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে।ভেতরে আসতে চাচ্ছে।কিন্তু তোমার অনুমতি চায়।উহু,ওকে মটেও দূর্বল ভাববেনা।কারণ জানো কবীর শাহ এসব মেনে চলতো না।যদি ওর অন্য কোনো বন্ধুর মেয়ে হতো এতোদিনে তুমি বা আমি সেজেগুজে যেতাম বিয়ের দাওয়াত খেতে।ও তোমাকে নিশ্চিতভাবে অন্য রকম সম্মান করে।তবে অনুভূতির উপর ও নিজেও কিছু করতে পারিনি।দেখা করতে দাও কবীরকে।”

তাহিয়া অপ্রস্তুত মাথা দুলালো।কিছুটা অনিশ্চিত সুরে বলল,

“আমাকে আজ তোশা নিজের মনের কথাগুলো বলেছে।আমি সেগুলো আপনাকে বলতে চাই।শুনবেন?”

“শুনবো।কিন্তু ওয়াদা করতে হবে তুমি একপাক্ষিক বা সমাজের দৃষ্টিতে নয় বরং মন থেকে দেখবে।তোশা সারাজীবন তোমার মাথা উঁচুতে রেখেছে।আজও নিচু করেনি কারণ জীবনসঙ্গী হিসেবে অসাধারণ এবং ব্যক্তিত্ববান মানুষকে বেছে নিয়েছে।এসো আমার সঙ্গে।”

তাহিয়াকে নিয়ে বের হয়ে এলো আসিফ।করিডোরের মাথায় কবীর দাঁড়িয়ে আছে।মুখ তুলে তাহিয়াকে দেখলো।আসিফ চিল্লিয়ে বলল,

“যাও কবীর।বাট তোমার কাছে অল্প সময় আছে।”

কবীর মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলো।তামাটে পুরুষটির মুখের রঙ আরো যেন কয়েক ধাপ নিচে নেমে গেছে।তাহিয়ার দিকে অর্থহীন দৃষ্টি দিলো।যার অর্থ এবার তুমি কেন খেয়াল রাখলে না মেয়েটির?

কবীর দরজাটি আঁটকে ধীর পায়ে মেয়েটির কাছে এসে দাঁড়ালো।তোশা ঘুমন্ত অবস্থাতে কিছু টের পেলো যেন।নাক দিয়ে সুগন্ধ খোঁজার চেষ্টা করছে।কবীর বলে দিতে পারছে মেয়েটা স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝে বন্দী হয়ে আছে এখন।ধীরে ধীরে ছোট্ট বেডে তোশার পাশটা দখল করে নিলো কবীর।উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে তোশা চোখ খুললো ধীরে ধীরে।বড় দূর্বল কণ্ঠে বলল,

“I am sorry.”

“আমি তোমাকে কখনো আজকের মুহুর্তের জন্য ক্ষমা করবো না বেলাডোনা।নিজেকে কষ্ট দিয়েছো।আর তুমি আমার।আমার মানুষকে কষ্ট দেওয়ার অধিকার নেই।”

দূর্বল তবে স্বস্তিতে ফিচেল হেসে তোশা শুধালো,

“এতো ভয়ং’কর প্রেমিক হলেন কবে থেকে?”

“শুরু থেকে।তোমার দৃষ্টি তা দেখেনি এতে আমি দোষী নই।”

“আপনি দোষী।সব দো’ষ আপনার।হিটলার আপনার থেকেই অনুপ্রেরণা নিয়ে যু’দ্ধে নেমেছিল।”

“মাথা গিয়েছে?কীসব বলছো?”

“জানিনা।”

তোশা আদুরে বিড়াল ছানার মতো কবীরের বুকের ভেতরে ঢুকে গেলো।ফিসফিস করে বলল,

“কী সুন্দর স্বপ্ন।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫৯
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“স্বপ্ন দেখা তোমার অনেক প্রিয় বেলাডোনা?”

“অনেক।স্বপ্নে কোনো বাঁধা নেই।যা মন চায় তাই পাওয়া যায়।আপনাকে কতোবার পেয়েছি।আবার হারি’য়েছিলাম একবার।তখন জানেন অনেক কান্না পেতো।”

তোশার মুখের অভিব্যক্তি করুণ হতে দেখা গেলো।যেন মনের সুখ মিটে গিয়ে একরাশ দুঃখের ফুল ঝড়ে পড়ছে।কবীর মেয়েটির মুখটাতে হাত বুলিয়ে বলল,

“তোমার স্বপ্ন সম্পর্কে আমাকে বলো।শুনতে চাই আমি।কেন দেখো এতো সুন্দর স্বপ্ন?মানুষ তো দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছু দেখতে পারেনা এখনকার যুগে।”

কবীরের উষ্ণতা তোশার মুখমণ্ডলে আদুরে স্পর্শ মেখে দিচ্ছে।কী দারুণ দেখতে তার ছোট্ট প্রেমিকা।তোশার এখনও সম্পূর্ণরুপে জ্ঞান নেই। বরং মৃদু সুরে কিছু বলছে।কবীর কান পেতে শুনলো তা।

“স্বপ্ন,সুন্দর, কবীর শাহ,আম্মু,আহনাফ।তর্নি, তর্নি।”

“তর্নি?সে কে তোশা?”

“জানিনা।কিন্তু তর্নি।”

বারংবার নামটি ডেকে ঘুমের ঘোরে তলিয়ে গেলো তোশা।কবীর তার কপালে দীর্ঘ এক উষ্ণ চুম্বন দিলো।আরো কিছু সময় ওভাবে অতিবাহিত হয়ে গেলো।সময় জ্ঞান কী তামাটে পুরুষটির আছে?ম্যাসেজের শব্দে কবীর ফোনটা বের করলো।দেখলো আসিফ তাকে বের হতে বলছে।যে সময়টুকু ধা’রে দিয়েছিল তা শেষ।তোশাকে মনভরে দেখে নিলো কবীর।শীতের রাতে আ’গুনের উষ্ণতার মতো দৃষ্টির শূন্যতা,শুষ্কতা মিটিয়ে নিয়ে বের হয়ে এলো।তাহিয়া ও আসিফ তখনও করিডোরে বসে কথা বলছে।কবীর আজ ও পথে পা বাড়ালো না।তাহিয়ার সঙ্গে কী কথা হচ্ছে সে জানে।সেই এক বোঝাপড়া কিংবা সামাজিকতা।সেসব পুরোনো কিংবা বারংবার নতুন হয়ে ধরা দিবে।শতাব্দীর সেরা কবিতার মতোন তোশা ও কবীরের প্রেম কাহিনী।অন্ধকার রাত হওয়ায় চারিধার নির্জন হয়ে আছে।কিছুদিন পূর্বে ফ্রান্সিসকো এর হা’ম’লার পর ব’ডিগা’র্ড ছাড়া যদিও কবীর বের হয়না।কিন্তু তোশার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে একা।কাওকে না জানিয়ে।এমনিতে সোশ্যাল মিডিয়াতে বিষয়টি আগুন।সেখানে মাঝরাতে হসপিটালে দেখতে আসা মানে দুটো কারণ বের করবে।
এক.এ’ বো’ র্শ’ ন
দুই.সু’ ই” সা’ ই’ ড

দুটোর একটাও যেহেতু হয়নি তো অহেতুক বিষয় রটানোর মানে হয়না।পার্কিং এড়িয়া যেন আরো নির্জন।নিজ গাড়ীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কবীর এমন সময় কোথা থেকে ছোট্ট একটা কবুতর তার গাড়ীর সামনে বসলো।চট করে তার মাথায় কেউ তরঙ্গের সৃষ্টি করলো।সময় ন’ষ্ট না করে দ্রুত গাড়ীতে বসে দরজা আঁটকে দিলো।কারণ তার স্মরণে এটা আছে ফ্রান্সিসকো কবুতর অনেক ভালোবাসতো।কাওকে ভ’য় বা চমকে দিতো হুট করে এমন কবুতর দিয়ে।এবং ঢাকা শহরে কবুতর এতোটা সহজলভ্য নয়।গাড়ী স্টার্ট করে চলে যাবে তৎক্ষনাৎ তোশা ও তাহিয়ার কথা মনে পড়ে গেলো তার।সে কা’পু,’র’ষ নয় যে নিজের কথা চিন্তা করে চলে যাবে এখন।কল করে নিজ বডিগার্ডদের চলে আসতে বললো।মিনিট বিশেক সময় লাগবে তবুও গাড়ীতে বসে থাকতে পারলো না সে।ধীর পায়ে বেড়িয়ে এলো।তখনও কবুতরটি সেখানে বসে আছে।কবীর নরম হাতে পাখিটিকে হাতে তুলে নিলো।পাখিটির পায়ে একটা কাগজ রাখা।সেটা খুলে দেখলো সেখানে ইংরেজিতে সুন্দর করে লেখা-

“তোমার হোয়াইটকে বলবে তাকে নীল রঙে অনেক সুন্দর দেখাবে।ভয় নেই কবীর তুমি যেভাবে আমার সবথেকে সুখের সময়টা চু’রি করে নিয়েছিলে।আমিও তোমার থেকে তাই নিবো।”

কবীর বুঝতে পারলো তোশাকে হোয়াইট বলে ডেকেছে ফ্রান্সিসকো।সে যতোটা লোকটাকে চিনে কবীরের ভাগের আ’ঘা’ত তাকে করবে।তোশাকে না।তবুও স্বাবধান হতে চায় সে।ফোনের রিংটোন পুনরায় বেজে উঠলো।এতো রাতে উল্লাস কেন কল করেছে?

“হ্যালো।”

“কবীর শাহ আপনি কোথায়?”

“হসপিটালে কেন?”

“তোশা কেমন আছে?আমি কাল সকালে যাবো।”

“ভালো আছে।ঘুমাচ্ছে এখন।”

উল্লাস গলা পরিষ্কার করে বলল,

“বলতে পারেন কবীর শাহ এ’ক্স,’রা এমন হয় কেন?”

“তোমার কোন এ’ক্স আবার কী করেছে?”

“আমার না আপনার।আসলে আমি নাটকের পক্ষে পঞ্চাশ শতাংশ শিওর ছিলাম।কিন্তু রিলিজ দিতে হয়েছে আপনাদের কাহিনীর উপর নির্মাণে একটা ওয়েব ফ্লিম রিলিজ হতো।যেখানে সব থাকতো অ’শ্লী’ল।ই’রো’টি’ক এবং আপনাদের বিষয়টি বা’জে’ভাবে দেখানো হতো।দুই মাস ধরে দেখবেন একটা ওয়েব ফ্লিম ‘অ’কো’ওয়ার্ড’ নামের অনেক প্রচার হতো।কিন্তু বিষয়বস্তু এক্সক্লুসিভ ছিল।সেটাই মূলত আপনাদের নিয়ে ছিল।আমরা যেদিন নাটক রিলিজ দিলাম তার চার ঘন্টা পর ওটা রিলিজ হওয়ার কথা ছিল।যদি তা হতো আপনার সম্মান ও তোশার জী’ব’ন দুটোই আজ পথের ময়লা হতো।”

কবীর খুব শান্ত মাথায় কথাগুলো শুনলো।ফ্রান্সিসকো এর ব্যাপার আবার উল্লাস এসব বলছে।অফিসে কিছু ঝা’মে’লা হচ্ছে সব মিলিয়ে কবীরের মাথায় জ্যাম ধরে যাচ্ছে।

“কে করেছে এটা?দিশা?”

“সে হালকা-পাতলা আছে।কিন্তু প্রতীক প্রায় সবটা এটার পিছনে ছিল।আমি শুনেছি আপনার কিছু শ’ত্রু এই ফ্লিমের প্রডিউসার।এবং দিশা ম্যাম স্ক্রিপ্ট দিয়েছে।সে কী চাচ্ছে আপনার কাছে?”

“ফিরে আসতে চাচ্ছে।”

“অদ্ভূত।এজন্য তোশার সম্মান নিয়ে খেলা করা উচিত হয়নি।এখন তবে আরেকটা সমস্যা আছে।তারা এই প্রজেক্টের নাম বদলে সত্য ঘটনার নাম দিয়ে রিলিজ দিবে।আমি থামাতে পারবো তাদের কিন্তু নিজের বাচ্চাদের কী সা’হ’সি’ক’তা’র গল্প শোনাবেন না?সেক্ষেত্রে কাল সকালে কিছু একটা করুন।”

কবীর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,

“আমার কী এখনও দিশাকে সম্মান করা উচিত উল্লাস?”

“উচিত নয়।কিন্তু আমি জানি আপনি করবেন।এবং নিজের স্টাইলে স’ম’স্যা’টির সমাধানও করতে পারবেন।একচুয়েলি দুনিয়া সব টাকার উপরে চলছে এখন।আপনার অর্থ কিংবা শক্তি বেশী।ততো চর্চাও বেশী আপনার।বাই দ্যা ওয়ে আজকে তোশার কাছে আপনাকে থাকতে দিলো না তাহিয়া ম্যাম?”

“নাহ।তোমার কোনো সাংবাদিক বন্ধু আছে?”

“আছে।কেন বলেন তো?”

“তাকে কল করে বলো।একটা দারুণ নিউজ আছে প্রতীকের সম্পর্কে।”

কবীর ফোনটা কেঁটে দিলো।দ্রুত তার মস্তিস্ক সঞ্চালন করে বিভিন্ন ঘটনা সাজালো একের পর এক।আশেপাশে তাঁকিয়ে কারো উপস্থিতিও আছে কীনা নিশ্চিত করে নিলো।আকাশের দিকে তাঁকালো সে।তার বৃহদকার সুগঠিত পুরুষালি দে’হ’ কে এখন লাগছে শিল্পের তৈরী সুন্দর সৃষ্টি।কবীর নিজের সঙ্গে বলে উঠলো,

“প্রেম,পায়’রা,প’য়,সা তিনটাকে সামলানোর শেষ চা’ল কবীর শাহ জানে।অদ্ভূত ফ্রান্সিসকো তুমি ভুলে গেলে আমি সেই বালক থেকে ঈগল পাখি হয়েছি।দেখা যাচ্ছে দুনিয়াতে ডি’সে’ন্ট কবীরের থেকে আড়ালে থাকা কবীরের বেশী দরকার।”

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-৫৪+৫৫+৫৬

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫৪
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমি দেখতে সুন্দর? হ্যাঁ ভীষণ সুন্দর।শাড়ীটাতে মানাচ্ছে তাইনা?”

ডিভানে হেলান দিয়ে আবেশিত দৃষ্টিতে আয়নার সামনে দাঁড়ানো তোশাকে দেখছে কবীর।পুরুষটির বসার ধরণ কায়দা করে শৈল্পিক ধরণের।শরীরের গঠণকে প্রাচীন গ্রিক যোদ্ধার সঙ্গে অনায়াসে তুলনা করা যায়।এইযে বাহুর বাইসেপস গুলো মুহুর্তে শার্টের আবরণ খুলে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে।তোশা অবশ্য সেদিকে তাঁকায় না।প্রিয় মানুষটির নিয়ে আসা শাড়ীটিকে পরে নিজেকে সৌন্দর্যের সাগরে আবিষ্কার করতে মত্ত্ব সে।

“কী হলো বলেন সুন্দর লাগছেনা?”

“লাগছে।”

“শুধু এতোটুকু প্রশংসা।”

“হুঁ।”

পিছন ফিরে তাঁকালো তোশা।চোখে বেদনার ছাঁপ।হালকা অসহিষ্ণু হয়ে কবীরের দৃষ্টির আড়ালে বসতে চাইলো।কিন্তু এতো কী সহজ সর্ব’নাশা দৃষ্টির আড়ালে যাওয়া?

“অভিমান বেলাডোনা?প্রশংসা অনেক শব্দে করা কী জরুরি?বুঝে নেওয়া যায়না?”

“যায়না।”

নাকের কাছে শাড়ীর আঁচলটা টেনে নিলো তোশা।অনেক পুরোনো দিনের সুগন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।প্রাণভরে শ্বাস টেনে নিলো সে।কবীর যুবতীর মনের কথাটি বুঝতে পারলো।তোশা খুব বেশী দূরে না বসায় হাতটা মেয়েটার চুলে ঠেকিয়ে বলল,

“শাড়ীটাকে অনেক পুরোনো মনে হচ্ছে তাইনা?”

“হ্যাঁ।আপনার মায়ের?”

“না আমার বউয়ের।”

“দিশা ম্যামের?”

“উহু আমার বউয়ের।”

“আমার?”

কবীর উষ্ণ শ্বাস ফেলে বলল,

“আমার বউয়ের।”

“তো আমি আপনার বউ না?অন্য কাওকে পছন্দ করেন?”

“একটা জিনিস দেখবে?”

পাশে অনাদরে পরে থাকা স্যুট থেকে একটা ছবি বের করলো কবীর।তোশাকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

“দেখো তো চিনো কীনা।”

কৌতুহলী হয়ে তোশা ছবিটাকে হাতে তুলে নিলো।হাসৌজ্জ্বল একজন তামাটে যুবক একপাশে তাঁকিয়ে আছে।গায়ের মলিন রঙ,রোগা পাতলা চেহারা,পরনে পাতলা শার্ট তাও ইন করা।নব্বই দশকের সবথেকে স্টাইলিশ যুবক লাগছে।কবীরের এমন রুপ তোশা প্রথমবার দেখলো।

“আপনি আগে থেকেই সুন্দর।পিছনে কোনো অনুষ্ঠান ছিল?”

“হ্যাঁ।আমার ছোট মামার বিয়ে ছিল।ছবির সাথে তোমার পরনের শাড়ীর সঙ্গে গভীর মেলবন্ধন আছে।”

“তাই?”

“যেদিন বিয়েটা ছিল মানে ছবিটা তোলা সেদিন মামীর বাবার বাড়ীর পাশে মেলা ছিল।কাজিনরা মিলে গিয়েছিলাম।সেখানে আমি একজনকে দেখি।লাভ এট ফার্স্ট সাইট বলা যাবেনা কিন্তু মেয়েটাকে পছন্দ হয়।তার গায়ে এই সেইম শাড়ীটা ছিল।পরবর্তীতে মেয়েটার খোঁজ না পেলেও শাড়ীটা খুঁজে বের করে সংগ্রহে রেখেছিলাম।কারণ এই বয়সেও মনে হয় এই শাড়ীটাতে সব মেয়েকে সুন্দর লাগবে।আমার বউয়ের জন্য কেনা ছিল।যেই হোক সেই পাবে।”

“দিশা ম্যাম পেয়েছিল?”

“হ্যাঁ।”

তোশার মুখটা মলিন হতে গিয়েও থেমে গেলো।শাড়ীটাতে কিশোর কবীর শাহ এর আবেগ জড়িয়ে আছে।নিশ্চয় দুটো মানুষ বিবাহ বন্ধনে বিচ্ছেদের আশায় জড়িয়েছিল না।কবীর অবশ্য নিজ প্রিয়তমার মনের কথা উপলব্ধি করতে পারে।মেয়েটির নরম হাতটা ধরে কাছে টেনে আনে।

“তুমি অতীত কেন মনে করো এতো?শাহ সাহেব কিন্তু সহজে কাওকে ছাড়েনা।কিন্তু কেউ ছেড়ে গেলে তাকে আঁটকে রাখেনা।”

“মন খারাপ করিনি।শুধু ভাবছি আম্মু,আব্বুর কথা।”

“তারা ভালো আছে।তুমি খুব শীঘ্রই দেখতে পারবে।”

“তাহলে আজ থেকে আমি আপনার বউ?শাড়ীটা যে এনে দিলেন।”

“তা তুমি অনেক আগে থেকে লিটল ডেভিল চেরি।বড় ভ’য়ংকর মেয়ে তুমি।ষোল বছরের তোমার পাগলামি দেখে ভেবেছিলাম যে মেয়েকে পানি খাইয়ে মা’তা’ল করতে পারি।সে তো কাঠের পুতুল।কিন্তু আজ উপলব্ধি হলো তুমি আমাকে প্রেমের নেশায় বুদ করে দিয়েছো।”

কবীরের কথায় উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো তোশা।স্মরণে হয়ে গেলো তারা একটি গেইমেও খেলেছিল যেখানে কবীরকে পাওয়ার জন্য একবারও জিতেনি সে।অথচ কোনো গেইম,পরীক্ষা লাগেনি সে এমনিতে মানুষটার ভালোবাসা পেয়েছে।এক বছর পূর্বেও কবীরকে নিজের করে পেয়েছিল না। অথচ আজ সব নতুন।তোশা আস্তে করে কবীরের কাঁধে মাথা রাখলো।যদিও স্বাবধান বাণী শুনতে পেলো,

“আস্তে ব্যান্ডেজ এখনও আছে।”

“আমাকে কেন ভালোবাসলেন কবীর শাহ?আপনার বন্ধুর মেয়ে।অর্ধেক বয়সী।আপনি যেখানে কোটি তৈরী করেন সেখানে মা-বাবার টাকায় আমি চলি।বলেন তো কেন ভালোবাসলেন?”

“শুনতে চাও?বলবো সঠিক সময়ে।এখন সময়টা উপভোগ করো।”

চোখ বন্ধ করে তোশা সময়টা উপভোগ করার চেষ্টা করলো।কতোক্ষণ অতিবাহিত হলো?একটি ঘন্টাও না।কবীরের ফোনের অনবরত কম্পন সে বুঝতে পারছে।

“আপনাকে কেউ কল করছে।”

“হ্যাঁ।তুমি তৈরী তো?আমাদের এক জায়গায় যেতে হবে।”

“কোথায়?”

“আজ সেই দিন যেদিন তাহিয়ার মুখোমুখি হতে হবে আমাদের।”

চট করে চোখ খুললো তোশা।বুকের হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পেয়ে গেলো।অধরযুগল জিহবা দ্বারা সিক্ত করে বলল,

“আমাকে হালাল করার জন্য এতো সুন্দর করে সাজিয়েছেন?ভীষণ খারাপ কবীর শাহ।”

“এই পদক্ষেেপের আগে মনে ছিলনা সামনে কঠিক এক পরিস্থিতি আসতে চলেছে?”

“আমি কেন ইংল্যান্ড ভেগে যাবো?ভালো করেছি।”

“গুড।”

কবীর উঠে দাঁড়ালো।পাশ থেকে ব্লেজারটা গায়ে দিতে দিতে বলল,

“গালে দুই চারটে পড়লে আবার কান্না করো না।যদিও আমি আছি।কিন্তু তাহিয়া,মায়ানের থেকে বড় অভিভাবক হয়নি।”

“আম্মু মা”রবে?”

“অসম্ভব কিছুনা।”

তোশা কিছু একটা ভাবলো।এরপর কবীরের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

“গালে আদর করে দেন।যদি কিছু খেতে হয় তখন ব্যাথা কম হবে।”

“আদর?সেটা কী?”

“স্মুচ।”

“ওয়েল স্মুচ?”

“একটু আগে না বউ বললেন?তাহলে কীসের লজ্জা?কাম’অন কবীর শাহ আপনি পারবেন।”

“তোমার মাথাটায় একটু সমস্যা আছে না?আমাদের মেয়েকে এমন পাগল বানিও না লিটল আনরাইপ টম্যাটো।”

“আশ্চর্য আমি অপরিপক্ক?”

“ইংরেজি বললাম দেখে বুঝোনি?”

“কবীর শাহ।”

“চলুন মিস চেরী।আমাদের যুদ্ধ নামতে হবে।শাড়ী পরেই চলো।”

কবীর হাত বাড়িয়ে দিলো।তোশা আনমনে সেটা আঁকড়ে ধরলে হ্যাচকা টান অনুভব করলো।তামাটে পুরুষটি নিজের সঙ্গে একেবারে মিশিয়ে নিয়েছে মেয়েটাকে।তোশা দৃষ্টি মেলে দেখলো।দুজনের শ্বাস মিশে যাচ্ছে গভীর আকুলতায়।

“বেলাডোনা, মাঝেমধ্যে বুঝতে পারিনা তোমাকে নিয়ে আমি কী করবো?এতোটা আদর লাগে।সেখানে নতুন করে আদর দিয়ে মে’রে ফেলতে চাইনা।সবুর করো।”

(***)
তোশাকে নিয়ে যখন কবীর তাহিয়ার বাড়ীতে এলো তখন সন্ধ্যা সাতটা।ড্রয়িং রুমে থমথমে পরিবেশ।কবীরের শক্ত হাতটাকে আঁকড়ে ধরে আছে তোশা।বিশাল পুরুষালি দেহের পিছনে মেয়েটা নিজেকে আড়ালের বৃথা চেষ্টা করছে।অবনত চোখে মা, বাবার দিকে তাঁকালো সে।তাহিয়াকে বড় ক্লান্ত লাগছে।মায়া লাগলো তোশার।পুরো রুমে এবার সে চোখ বুলালো।তার নানার বাড়ী,দাদর বাড়ীর কেউ মনে হয় বাদ যায়নি এখানে উপস্থিত হতে।পরিবেশ উষ্ণ না হলে ছোটখাটো গেট টুগেদার বলা যেতো।সবার চোখে প্রশ্ন,আকুলতা।হুট করে তোশার নিজেকে বাহুবলি মনে হচ্ছে।ওইযে প্রথম পার্টের শেষটায় বাহুবলির পরিচয় পাওয়ার পর সকলে কেমন উৎসুক হয়ে তাঁকিয়ে থাকে তেমন।পরবর্তীতে নিজেকে ধিক্কার দিলো।ছি: এমন পরিস্থিতিতে কী ভাবছে সে?

কিন্তু বিশ বছর বয়সী তোশার সবথেকে খারাপ লাগলো এটা দেখে সুদর্শন নায়ক উল্লাস পরিবেশের সম্পূর্ণ বিপক্ষে গিয়ে সোফায় বসে একমনে কিছু খাচ্ছে।নিশ্চয় সেটা মামীর তৈরী সেমাই।তোশা মানছে জিনিসটা মজা হয়।তবে এই পরিবেশে এতোটা বেখেয়ালী কীভাবে নায়কটা?

“তোশা আমার কাছে এসো।”

তাহিয়ার কণ্ঠ শুনে বাস্তবে ফিরলো তোশা।ধীর স্থির কিন্তু শক্তিশালী লাগছে মা কে আজ।ভয় বেড়ে গেলো মেয়েটার।

“আম্মু।”

“কবীরের হাত ছেড়ে আমার কাছে এসো তোশা।ও সঠিক নয় তোমার জন্য।বুঝতে পারো না?কেন পারো না বেয়া’দব মেয়ে।”

তাহিয়ার চিল্লানোর কণ্ঠে রুমের সকলে নড়েচড়ে বসলো।মায়ান অবশ্য নির্বিকার।পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে।কম্পিত হওয়া তোশাকে এক হাতে আগলে নিলো কবীর।

“স্বাভাবিক কণ্ঠে কথা বলো তাহিয়া।তোশা ভয় পাচ্ছে।”

তাহিয়া যেন পাগল হয়ে গেলো।দৌড়ে কবীরকে নিজের মেয়ের কাছ থেকে সরিয়ে নিতে নিতে বলল,

“ছাড়ো আমার মেয়েকে।ছাড়ো।ও তোমার কেউনা।আমার মেয়ে তোশা তোমার কেউ না কবীর।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“তোশা আমার প্রেমিকা,ভালোবাসা।এবং বর্তমানে মায়ের পর সবথেকে কাছের নারী।তুমি চিল্লিয়ে যাই বলো তাতে সত্য পরিবর্তন হবে না তাহিয়া।”

কবীরের গলার আওয়াজে কী ছিল?হু’মকি?কিংবা স্বাবধান বাণী?তবে যা ছিল ঘরে উপস্থিত সকলকে নড়েচড়ে বসতে সাহায্য করলো।অবস্থা বেগতিক দেখে নেয়ামত উঠে এসে তোশার হাত ধরে গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“বসে কথা বলো দুজনে।কারণ চিল্লিয়ে কথা বললে মানুষ হাসানো ছাড়া কিছুই হবেনা।আমরা বড়রা আছি।তারা দেখছি বিষয়টা।”

“বাবা আপনারা আমার মেয়ের সবথেকে বড় অভিভাবক নয় নিশ্চয়।কোনো কথা বলতে রাজী নই আমি।”

“চুপ থাকো তাহিয়া।”

তোশা কবীরের অন্য হাত ধরে আছে।আশ্চর্যভাবে মনে হচ্ছে এখন ছেড়ে দিলে আর কখনো ধরা হবেনা হাতখানা।

“তোশা তোমার নানুর কাছে গিয়ে বসো।তা নয় ভেতরে চলে যাও।জিদ করো না বিষয়টা ভালো হবেনা কিন্তু।”

“ঠিক আছে নানাভাই।”

নানার কথা মতোন সোফার এক কোণায় গিয়ে বসলো তোশা।কবীর এখনও দাঁড়িয়ে আছে।তাহিয়া কিছুতে শান্তি পাচ্ছে না।গলার সুর কয়েক গুণ উঁচু করে শুধালো,

“ডিভোর্সের পর তুমি আমার খেয়াল রেখেছিলে কবীর।একজন পার্ফেক্ট বন্ধু, পার্ফেক্ট জেন্টালম্যান।সে কীভাবে আমারই মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ায়?ভুলে গিয়েছো ওর জন্ম দেখেছো তুমি?মায়ান সবসময় তোমাকে ভাই বলে ডাকে।তার কথার এই প্রতিদান?ঘেন্না করলো না?”

“তোশা রক্তের কেউ না আমার।”

“রক্তের না হলেও চক্ষুলজ্জার ব্যাপার বলে কিছু আছে।”

“তাই?তোমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করো তো চক্ষুলজ্জা শব্দের জন্য আমাকে ছাড়বে কীনা?দেখো তাহিয়া তোমরা কী বলবে বা বলতে পারো আমি সেটা জানি।কিন্তু সত্য হলো আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি।বিয়ে করতে চাই।তোশা যদি সকলকে এভাবে জানানোর পদক্ষেপ গ্রহণ কিংবা আমার সাথে দূর্ঘটনা না হতো আজ ইংল্যান্ডে থাকতাম দুজনে।কিছুই করতে পারতে না।”

“কোনোভাবে বিষয়টিকে নর্মাল বলে চালিয়ে দিতে পারো না তুমি।”

কবীর তীব্র দুঃখে বাঁকা হাসলো।গালের শক্ত পেশিগুলোতে টান পড়লো হালকা।

“আমি নিজেও জানি বন্ধুর মেয়ে।বিশ বছর বয়সী ভার্সিটিতে পড়া একজন মেয়ের সাথে বিয়ের কথা চিন্তা করা কখনো নর্মাল বিষয় না।বরং আপাতত দৃষ্টিতে দেখলে অদ্ভূত ও ভীষণ অন্যায়।আমি সেই অন্যায়টা করেছি।তা নিয়ে কোনো অনুতাপ নেই।বাট আই ওয়ান্ট হার সো ব্যাডলি।”

বলিষ্ঠ পাহাড়ের সমান মজবুত বাক্য কবীরের।অধিকাংশ মানুষ তা হজম করতে পারলো না।তোশা কিছু বলার জন্য মুখ খুললে প্রথম ধমকটা কবীরই দিলো।যেন নিশ্চুপ থাকে সে।তোশার মনে হলো এতে দয়া করছে তার ভালোবাসার মানুষটা।কারণ সব দোষ কবীরের হবে।অথচ যদি এমন ভালোবাসা দোষের হয় সেখানে প্রকৃত অপরাধী তোশা নিজে।প্রথম পদক্ষেপ তার ছিল।সিক্ত কার্ণিশ আঙুলের ডগা দিয়ে মুছে তোশা মানুষটিকে পুনরায় দেখলো।লম্বা,চওড়া বাজপাখির মতো ধারালো মানুষটা নির্দোষ হওয়া স্বত্ত্বেও তাকে কারো কাছে ছোট হতে দিচ্ছে না।রুমে উপস্থিত বেশীরভাগ মানুষ কবীরকে কথা শুনাচ্ছে।অনেক বড় তর্ক তৈরী হয়ে যাচ্ছে এই ব্যাপারে কেন সে নিজে ঠিক থাকলো না?উল্টো তোশাকে ভুলভাবে বুঝিয়েছে নিশ্চয়।পুরো ব্যাপারটিতে কেউ যদি নিশ্চুপ থেকে থাকে তবে সে হলো মায়ান।তার দ্বিতীয় স্ত্রী টিনা পাশ থেকে বলল,

“তুমি কিছু বলবেনা মায়ান?অবস্থা বেগতিক হচ্ছে।”

“বলবো।আগে তাহিয়ার কাছ থেকে কিছু প্রশ্নের উত্তর নিবো।”

“প্লিজ শান্ত থেকে কথা বলবে।”

টিনার কণ্ঠে চিন্তা মিশে আছে।মায়ান আগে পিছে কোথাও না গিয়ে একদম তোশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।মেয়েটা বাবাকে দেখে নিশ্চুপ হয়ে গেলো।

“সবাই একটু চুপ থাকেন।তোশার সঙ্গে কিছু কথা বলবো আমি।”

কবীর বিরোধ করে বলল,

“ওর সাথে কোনো কথা নেই মায়ান।আমি তো জবাব দিচ্ছি।”

“চুপ কবীর।আমার মেয়ের ব্যাপারে আমি বুঝবো।তোশা একটা কথা বলো শুরুটা তুমি করেছিলে তাইতো?আমি নাটক পুরোটা পাঁচবার দেখে সিচুয়েশন বোঝার চেষ্টা করেছি।”

তোশা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করলো।ভীষণ স্বাভাবিক কণ্ঠে জবাব দিলো,

“জি বাবা।”

“শুরুতে তুমি কবীরের সাথে রেস্ট্রুরেন্টে ঘুরেছো।সেটা তাহিয়া জানতো না।যাচাই-বাছাই কখনো করেনি?”

“না।”

“ওকে।এরপর সম্পর্ক হলো তোমরা তো পাব্লিক প্লেসেও চোখে চোখে কথা বলতে। আমি বাংলাদেশে এসেই বুঝেছি বিষয়টা।আর দিশা কীনা বলে জানিনা?ওর খবর আছে।কিন্তু তার আগে তাহিয়া তোর বিচার হওয়া উচিত।মা হওয়ার যোগ্যতা আছে?না থাকলে মেয়েকে আমার কাছে কেন দিয়ে দিলি না?”

তাহিয়াকে শুরু থেকে মায়ান তুই বলে সম্বোধন করতো।আজ এতো বছর পর সরাসরি কথা বলছে তারা।তাহিয়ার থেমে থাকার পাত্র নয়।মায়ানকে কোণঠাসা করার নিমিত্তে বলল,

“বড় বড় কথা বলবেন না মায়ান।কাপুরষ কোথাকার।মেয়েকে আমি সঠিক শিক্ষায় বড় করেছি।”

“হাহ?সেটা তো দেখতে পাচ্ছি।”

বিদ্রুপে কান্না চলে আসছে তাহিয়ার।যে মেয়েকে কখনো কোনো কষ্ট পেতে দেয়নি আজ তার জন্য সকলের কাছে সে ছোট হয়ে গেলো।আশেপাশে তাঁকালো।সবাই বিতৃষ্ণায় তাদের দেখছে।গা গুলিয়ে আসছে তাহিয়ার।কোনোমতন মায়ানকে বলল,

“আপনাকে কোনো জবাবদিহিতা করতে চাইনা মায়ান।অবশ্য কাওকে না।”

পুনরায় থেমে বলল,

“কবীর আমি জানি তুমি বুদ্ধিমান একজন মানুষ।বিষয়টা খুব খারাপ হচ্ছে।আমি কখনো মেয়েকে খারাপ শিক্ষা দেইনি।কিন্তু এই মানুষটা নিজেকে কী ভাবে?আজ আমার উপর প্রশ্ন তুলছে।প্লিজ তোমার কাছে বলছি তোশাকে ছেড়ে দাও।”

দাঁড়িয়ে বড় বড় শ্বাস ফেলছে তাহিয়া।কবীরের হঠাৎ মায়া হলো।পাশ থেকে চেয়ার এনে তাহিয়াকে সেখানে বসালো।এরপর মুখোমুখি নিজেও হাঁটুগেড়ে বসলো।

“তাহিয়া,তুমি আমার চমৎকার একজন বন্ধু।কিন্তু এর বাহিরে পিওর একটা সোল তুমি।সাধারণ,কোনো উচ্চ আকাঙ্খা নেই।বুদ্ধিমতী মানুষ।সাথে জানো খুব সুন্দর একটা মেয়ের মা হয়েছো।মানছি তোশা ও আমি তোমাকে জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্টটা দিয়েছি।কিন্তু অনুভূতির কাছে দুজনে হেল্পলেস।তুমি আগে নিজেকে শান্ত করো।আমার এই দুনিয়াতে কাওকে মানাতে হবেনা।শুধু আমার বাবা-মা ও তোমাকে আর মায়ানকে মানানো ছাড়া।এ বাদে যে যা বলুক।তোশাকে আমি ছাড়বো না।এবং আমি তাতে সিরিয়াস।”

শেষের কথাটিতে মনে হলো কবীর হু’মকি দিচ্ছে।তাহিয়া অনেক অবাক হয়ে কবীরকে দেখছে।ওই গভীর দুই চোখে অনেক ভালোবাসা।তার ছোট মেয়ে তোশার জন্য।কবীর পুনরায় বলল,

“আমি আজ তোশাকে রেখে যাচ্ছি কারণ তোমাকে শান্ত হওয়ার সময় দিচ্ছি।এর মানে একেবারে পালিয়ে যাচ্ছি না।তাহিয়া আমি জানি নিজের মেয়ের সাথে রা’গ করে ভুলভাল কিছু করার মানুষ তুমি না।আমার তোশাকে দেখে রেখো।ঠিক আছে?”

তাহিয়া নিশ্চুপ শুধু চেয়ে রয় কবীরের দিকে।যাওয়ার আগে বেলাডোনাকে চোখে আশ্বস্ত্ব করে কবীর।যে সব ঠিক হবে।

(***)

কবীর একমনে সামনের দিকে তাঁকিয়ে আছে।চোখে তার অমীমাংসিত দৃষ্টি।তোশাকে রেখে একটুও আসতে মন চাচ্ছিলো না।পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে দেখলো উল্লাস দাঁড়িয়ে আছে।

“ভেতরে কী হচ্ছে উল্লাস?”

“মেলোড্রামা।একটা কথা বলুন তো মায়ান নামের লোকটা আপনার বন্ধু হয়েছিল কীভাবে?চোখে দেখে অনেক কিছু অনুমান করা যায়।”

“তোশা কী করছে?”

“বসে কাঁদছে।না করে এলাম।ওহো আমাকে প্রেশার দেওয়া হচ্ছে নাটকটা ডাউন করে দিতে।কিন্তু অলরেডি তা ভাইরাল।বাট আমি তা করবো না।কারণ দশ জন মানুষের অন্য দশজন মানুষকে কনভেন্স করার ক্ষমতা থাকে।আমি এটা এভাবে পাব্লিকে না আনলে প্রতীক কিন্তু খারাপ ভাবে আনতো।”

“কেন?”

“ও তোশাকে পছন্দ করে।তাহিয়াকে কিন্তু এপ্রোচও করবে ভেবেছিল।সখীর হয়েছে জ্বালা সুন্দরী হয়ে ।কিন্তু চাঁদে যে গ্রহণ আছে।”

“তুমি ফর্সা দেখে আমাকে কালো বলার রাইট নেই ছেলে।”

কবীরের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।উল্লাস কিছু বলতে যাবে এর পূর্বে কবীরের ফোনে কল এলো।দিশার নামটা স্ক্রিনে দেখে রিসিভ করবেনা ভেবেছিল।কিন্তু কী ভেবে ধরলো।

“হ্যাঁ দিশা বলো।”

“কবীর, সব ছেড়ে দাও।তোশাকেও ছাড়ো।আমরা আবার এক হতে পারিনা?আমি তোমার সাথে সংসারে ফিরতে চাচ্ছি।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫৬
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“এতো রাত অবধি তুমি অফিসে?হুট করে কী দরকার হলো যে আজ মনে পড়লো তোমার একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কোম্পানিও আছে?বিশেষ কিছু কবীর?”

তাহিয়ার কণ্ঠে স্পষ্টত খোঁচা বিদ্যমান।সেটাতে অবশ্য কবীর ভ্রক্ষেপ করলো না।হাতের ফাইলটা সরিয়ে দিয়ে বলল,

“ম্যানেজার বলল কিছু পেপার্সে সাইন করতে হবে।তুমি নেই দেখে আমাকে কল করেছিলো।”

“বাহ!এতে বোঝা গেলে আমরা পার্টনার নয়।আমি তোমার অধীনস্থ চাকরি করা একজন মানুষ।”

“বেশ এগ্রে’সিভ লাগছে তোমাকে।বসো এতো রাতে তুমি এখানে কেন?”

তাহিয়া কবীরের সামনের চেয়ারে বসলো।বিগত দিন গুলোতে যা কিছু ঘটে গেলো সেই সুবাধে দুজনের এই মুখোমুখি বসা যেন ছবি তুলে ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো ব্যাপার।সবসময়ের মতো আজও কবীরের বেশভূষা শৈল্পিক।অসুস্থতা,কুচিন্তা গুলো বাহ্যিক অবস্থাকে বিন্দুমাত্র প্রভাবিত করেনি।

“এসেছিলাম কারণ এই কাজ গুলোর কথা হুট করে মনে হয়েছিল।তা দেখি আমার প্রয়োজন শেষ হয়ে আসছে।”

“মটেও না।তোমাকে সকলে স্পেস দিচ্ছে তাহিয়া।”

“দয়া?কী অদ্ভূত না কবীর?”

“এখানে অদ্ভূত ব্যাপার কিছু নেই।এখন যাওয়ার দরকার নেই।বসো আমি দিয়ে আসবো।রাত নয়টা বাজে।”

“তোমার সাথে দেখা হয়ে গিয়ে ভালো হলো।এসব তুমি করিয়ে চলেছো না?নিজের দিকে সবকিছু পজেটিভ ভাবে আনতে?”

দ্বিধা নিয়ে কবীর শুধালো,

“কীসের কথা বললে?”

তাহিয়া ফোন বের করে একটা পোস্ট কবীরকে দেখালো।দেশের স্বনামধন্য একজন সাংবাদিক তোশা ও কবীরের সম্পর্ককে বাহবা দিয়েছে।

“এইযে এটা।”

“আমার এসবের কোনো দরকার নেই তাহিয়া।তারা নিজে থেকে করছে।সবাই তো বুঝতে পারছে তোশা কতোটা পার্ফেক্ট আমার জন্য।”

তাহিয়া উচ্ছাসিত কণ্ঠে বলল

“একদম কথাটা তুমি।বিজনেস জগতে একজন বাঘ।যাকে মন্ত্রীরা তোয়াজ করে চলে।আমি জানি কতো টাকার মালিক তুমি।তো সে বারো বছরের মেয়েকে বিয়ে করলেও বাহ বাহ করবে সবাই।”

কবীর স্মিত হেসে ফাইল গুলোতে মনোযোগ দিলো।তাহিয়াকে এখন কিছু বোঝানো যাবেনা।কিন্তু তবুও তোশার কথা জিজ্ঞেস করার মতোন সাহস দেখালো।

“তোশা কেমন আছে তাহিয়া?খায় ঠিকমতো?”

“ওর কথাটা কী না বললে হতো না?”

“না।কারণ আমার সাথে কথা বন্ধ ছিল মাঝের চার বছর।তখন মেয়েটা ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া কিংবা অসুস্থতায় ভুগতো বেশী।”

তাহিয়া অবাক হয়ে কবীরের দিকে তাঁকিয়ে রইলো।স্মরণে হয়ে গেলো অতীত।ভ্রু কুঁচকে বলল,

“অথচ দারুণ অন্ধ ব্যক্তি আমি।তোমার সব গল্প ওর কাছে করতাম।দুজনকে আস্কারা আমি দিয়েছি।”

“যা হওয়ার ছিল তাহিয়া।প্রশ্নগুলোর জবাবটা দাও।”

“নাহ।”

তাহিয়া উঠে দাঁড়ালো।ইদানীং বুকটা ব্যাথা হয় ভীষণ।যদি হার্ট অ্যাটাক করে কেমন হবে?তোশাকে এই দুনিয়াতে একা রেখে চলে যাবে?কীভাবে থাকবে মেয়েটা?পরক্ষণে কবীরের নামটা মন থেকে ভেসে এলো।সে জানে তোশার জন্য মানুষটা সঠিক।কিন্তু অনেক কিছুকে আড়াল করে এই ভাবনাটা ভাবতে হবে।বয়স,সম্পর্ক,পদমর্যাদা, মানুষের কথা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো তাহিয়া।কবীর অবশ্য আঁটকালো না।

হাতের ফাইলটা শেষ করে কবীর চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো।এসি আছে তবুও গরম লাগছে।বেলাডোনার সাথে কথা হচ্ছে না আজ চার দিন।মেয়েটা কেমন নেশা কবীরের জন্য।বিগত কয়েকটা দিন শরীর সুস্থ হলেও কবীরের দিন খুব খারাপ যাচ্ছে।দিশাকে ফিরিয়ে আনার জন্য তার মা খুব প্রেশার দিচ্ছে।কিন্তু এটা কখনো পসিবল না।বাড়ীতেও শান্তি নেই এখন।শুধু আহনাফকে একবার দেখার জন্য বাড়ীতে ফিরে।ফোন বেজে উঠলো কবীরের।তার বিজনেস ডিলের জোয়ার ভাসছে এখন।আশ্চর্য মানুষ ভাবে একটা জিনিসকে নেগেটিভভাবে প্রচার করলে সেটার পরিধি কমে যায়।কিন্ত বাস্তবে হয় উল্টো।কবীরের লাভ লাইফের উপর ভিত্তি করে সে এতোগুলো ডিল পাচ্ছে?হ্যা সেটাই দাঁড়ায়।ফোনটাকে পাশে রেখে গভীর চিন্তায় মন দিলো সে।হুট করে একটা বিষয় মাথায় এলো এবং তার অধরযুগল বিস্তৃত হয়ে গেলো।সে কীভাবে ভুলে এই কথাটি?

(***)

নিকষ কালো অন্ধকার।এই রাতের বেলা কে যেন পিঠা ভাজছে মনে হচ্ছে।কবীরের মা বলে এমন গন্ধে জিন আসে।কিন্তু তার সে ভয় নেই।তোশার নানার বাসার বাগানের ঝোপের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে সে।গায়ের রঙ শ্যামলা হওয়ার দারুণ সুযোগ নিলো।যখন রাত গভীর হলো তখন পাইপ দিয়ে দোতালায় ওঠা শুরু করলো সে।নিজের শক্তপোক্ত ওজন নিয়ে ভয় ছিল অবশ্য।কিন্তু নেয়ামত সাহেব ভালো মজবুতভাবে বাড়ী তৈরী করেছে।মূলত যে পাইপটা ওটা ফাঁপা লোহার এবং খুব একটা কাজে লাগেনা।প্রায় পঁচিশ বছরের পুরোনো।অতীতে তাহিয়ার কাছে চিঠি এভাবে পৌঁছে দিতো সে।মায়ান ওতোটা শক্তিশালী না হওয়ায় বন্ধুর জন্য কাজটা কবীরই করতো।কে জানতো এতো বছর পর এই পথ কবীরকে সাহায্য করবে?

কবীর দুটো জিনিস ভেবে নিলো।ধরা পড়লে অন্তত পুলিশে দিবে না।কিন্তু আরো কথা শুনতে হবে অবশ্য।তোশাকে একবার দেখার জন্য এটা অন্তত করা যায়।শব্দহীন কদম ফেলে তোশার রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো কবীর।তাহিয়া ভেতরে না থাকুক এটা প্রাণপণে চাচ্ছে।খুব অদ্ভূত ভাবে এ চাওয়া পূর্ণ হয়ে গেলো।তখুনি তোশা দরজা খুলে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রইলো।কবীর ছোট করে হেসে বলল,

“ভেতরে কেউ আছে?”

হাত ধরে তাকে ভেতরে টেনে আনলো তোশা।দুজনে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে।

“আপনি এখানে?আমার মনেই হচ্ছিলো আশেপাশে আছেন।”

“কীভাবে?”

“মেবি দুজনের টেলিপ্যাথি হয় একে অপরের সঙ্গে।আমার ভয় করছে।কেউ দেখেনি তো?”

“না।”

কবীর খুব করে খেয়াল করলো ভয়ার্ত ছোট এই মুখটাকে।আহারে তার মনের তৃষ্ণা।মিটলো কী এখন?তোশাকে হুট করে টেনে শক্ত করে নিজের বুকে মিশিয়ে নিলো কবীর।মিষ্টি সুগন্ধ নাকে এসে ঠেকলো।

“আমি মিস করেছি তোমাকে বেলাডোনা।কীভাবে কী করলে তোমাকে পাবো বলো তো?”

তোশার চোখ দুটো অশ্রুতে ভরে গেলো।কী জবাব দিবে সে?নিজেই তো প্রশ্নটির জবাব জানেনা।মুখটা উঁচু করে তামাটে পুরুষটিকে শুধালো,

“কেমন আছেন আপনি কবীর শাহ?”

“ভালো না।”

“হাতের ব্যাথা কমেছে?”

“মনের ব্যাথা বেড়েছে।”

“তাহলে চলুন পালিয়ে যাই।কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমার সালমান শাহ ও মৌসুমীর মতোন।এরপর পাহাড়ে
আশ্রয় নিবো।কিন্তু শেষে হ্যাপি এন্ডিং হবে আমাদের?”

শুভ্র কপাল থেকে চুলগুলো সরিয়ে কবীর শুধালো,

“হ্যাপি এন্ডিং যদি না হয় আমাদের?আমাকে ছাড়তে পারবে?আজ যদি বলি এটা আমাদের শেষ দেখা?”

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-৫১+৫২+৫৩

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫১
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

তোশামণি কবীর শাহ সিনড্রোমে ভুগছে।তামাটে পুরুষটির সব ভালো লাগে তার।এইযে অসুস্থতায় মলিনতা ভরা চেহারায় যে গাম্ভীর্য ভাবখানা ফুঁটে উঠেছে এটাও তোশার কাছে ভালোবাসাময় লাগছে।এই অপ্রতিরোধ্য সিনড্রোমের কথা কবীরকে জানালে সে সবথেকে মিষ্টি সুরে হেসে বলল,

“তাহলে তুমি অবসেসড আমার প্রতি?”

“হ্যাঁ।সব ভালো লাগে আপনার।”

“তোমারও সব ভালো লাগে আমার।লাল শাড়ীতে সুন্দর পুতুল লাগছে।তুমি বিয়ের পর রোজ শাড়ী পরবে।”

তোশা লাজুক হাসে।কোমড়ে শাড়ীর আঁচল গুঁজে পুরো রুম ঘুরে।গুণগুণ করে গানে ভেসে যায় বাতাবরণ।কবীরের সুবিন্যস্ত রুমটাকে অহেতুক এলেমেলো করলো সে।আবার নিজেই গুছাতে লাগলো।কবীর মায়া ভরে মেয়েটিকে দেখছে।সব ঠিক থাকলে আজকে কী সে তোশাকে কাছে রাখতে পারতো না?বুকের ভেতর মিশিয়ে দিতো একদম।কবীর পুরুষ মানুষ।যা তার কঠোর ব্যক্তিত্ব অস্বীকার করলেও ভেতরে নরম ভঙ্গুর মনটা স্বীকার করতে বাধ্য।সে নিজের ভেতর চলতে থাকা উত্তাল ঢেউকে দমিয়ে রেখেছে বহু বছর ধরে।এই প্রায় একুশ বছরের তরুণ ফুলকে সে মলিনতা নিয়ে কখনো স্পর্শ করেনি।

“বাসায় তো আহনাফ ও কাজের খালা বাদে কেউ নেই।তুমি ঢুকলে কীভাবে?”

“আহনাফ ঢুকিয়েছে।”

“বেশ।তাহলে বাবাকে প্রেমে সাহায্য করছেন তিনি।”

“হু।”

“তোমাকে কী বলে ডাকে?মা?”

তোশা চকিতে কবীরের দিকে তাঁকালো।ভাবনায় বিমূঢ় হয়ে বলল,

“এখনও বলেনি।ইনফ্যাক্ট আমাদের সম্পর্কটাকে কীভাবে নেয় সেটা বুঝতে একটু সময় লাগছে আমার।আপনার রুমে ওটা কীসের দরজা?”

“আমার ছোটখাটো নিজস্ব একটি জিম আছে।একদিন ঘুরিয়ে দেখাবো।”

তোশা আরো কতোক্ষণ বিচ্ছিন্ন ঘুরে কবীরের পাশটায় বসলো।হসপিটাল থেকে লোকটা ফিরেছে গতকাল।আজ তোশা দেখা করতে আসতে পেরেছে।পরন্ত বিকেলের সময়।কুসুম রঙা হলদেটে আলোয় উদ্ভাসিত পুরো কক্ষ।

“কবীর শাহ।”

তোশা লোকটার বৃহৎ হাতটি নিজের করপুটতলে নিয়ে নেয়।চোখে একরাশ মায়া ফুটিয়ে বলল,

“আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি।যাই হোক শুধু সেটা মনে রাখবেন।”

“আজ এতো সিরিয়াস?কারণ কী ছোট পাখি?”

কবীর বহুদিন পর তোশাকে নতুন নামে ডাকলো।মানুষটা ভিন্ন নামে ভিন্ন অনুরাগ দেখায়।

“কারণ কিছু নেই।জানেন উল্লাসের বিশেষ একটি নাটক আজ রাতে প্রচার হবে।গত দুদিন ধরে খুব প্রমোশন চলছে।আপনি দেখবেন না?”

“দেখবো।ও কল করেছিলো সকালে।পরিবার সহ দেখতে বলেছে।এখন জিজ্ঞেস করলাম রোমান্টিক বা ইরোটিক কিছু কীনা?উত্তর দিলো না।অদ্ভূত কিছু হলে মা,বাবার সামনে লজ্জা পাবো।”

“আমি জানি কী সেটা।”

“কী?”

“আপনি ঠিক বলেছেন।অদ্ভূত কিছু।তবে দেখার আগে বলে দিলে কী মজা?”

তোশার কথায় প্রহেলিকা জুড়ে আছে।কবীর এতোক্ষণ পর নিজের প্রেমিকাকে ভালো করে অবলোকন করলো।পরিপাটি সাজ ও পুতুল চেহারার পিছনে খুব সন্তপর্ণভাবে ক্লান্তিকর,ভীত এক দুঃখী চেহারা লুকানোর চেষ্টা করেছে সে।

“কী হয়েছে তোশা?কেউ কিছু বলেছে?তোমাকে ভীষণ মিস্টিরিয়াস লাগছে এখন।”

“নাহ তো।আপনার অসুস্থতা আমাকে দূর্বল করে দিয়েছে।”

“এদিকে এসো।”

তোশা বাধ্য মেয়ের মতোন কবীরের সাথে মিলেমিশে বসে।পুরুষটির শরীর থেকে আসা সুগন্ধ তার মস্তিস্কের নিউরন গুলো সজাগ করে দেয়।ঠিক প্রথম দিনের মতোন মনে কম্পন তৈরী করে।মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে কবীর বলল,

“তুমি অনেক বোকা সেটা জানো লিটল চেরী?”

“এমনটা মনে হলো কেন?”

“হলো।এমনকি একটুও ম্যাচুরিটি নেই।তা নয় আমাকে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে না?”

“বলছেন ম্যাচিওর কোনো মেয়ে আপনার প্রেমে পড়তো না?”

“তোমার বয়সী।”

“কী করবো বলেন আপনি তো ভীষণ সুন্দর তাই এই হার্টে ব্যাথা হয়।সেটা কমানোর জন্য ভালোবাসি।”

তোশা বুকের ডান পাশে হাত রেখে হার্টের ব্যাথাকে নির্দেশিত করলো।কবীর আস্তে করে মেয়েটির হাতটি তুলে বলল,

“হার্ট বামপাশে থাকে।”

“উহু,বামপাশে যেটা থাকে তা হলো রক্ত সঞ্চালনকারী একটা যন্ত্র।ডানপাশে যেটা আছে তা হলো ভালোবাসার জন্য সুন্দর মন।ডক্টররা সেটা খুঁজে পায়না।অদৃশ্য অঙ্গ।”

কবীর উচ্চ শব্দে হেসে ফেললো।মেয়েটির এহেন বহু বোকা বোকা কথা প্রায় শুনতো আগে।কিন্তু মাঝে এতোটা কী নিয়ে চিন্তিত ছিল কে জানে?

“তোশা তুমি মাঝেমধ্যে খুব বাচ্চার মতোন কথা বলো। অবাক হয়ে যাই আমি।তোমার সাথে প্রেম করছি।”

থমথমে মুখে তোশা শুধালো,

“আমি কী কুষ্ঠো রোগী?আমার সাথে প্রেম না করলে কী এমন হতো আপনার?”

“বিয়ে।এতোদিনে হয়তো দুটো বাচ্চা হয়ে যেতো।”

“সত্যি বলছেন?”

“অবশ্যই।কেন মনে নেই তোমার আন্টির সাথে বিয়ের কথা হয়েছিল।যদি না মন তোমার কাছে থাকতো তাহলে হয়তোবা..।”

কবীর যা বলছে হয়তোবা সত্যি।কিন্তু তোশার মেনে নিতে বড় কষ্ট হচ্ছে।স্মরণ হলো সেই দিনের কথা।যেদিন কবীর তার আন্টিকে দেখতে গিয়েছিল। বিয়েটাও ঠিক হয়েছিল।তখনকার অনুভূতির কথা মনে হতে তোশার মনটা কেঁদে উঠলো।সে অভিমানে উঠে দাঁড়ালো।

“চলে যাচ্ছি আমি।”

“হঠাৎ কী হলো?”

“জানিনা।”

তোশার বড় খারাপ লাগছে।কতোটা ভালোবাসা নিয়ে সে এসেছিল তা কী পা’ষা’ণ পুরুষটি জানে?তোশা দরজায় কাছে চলে যাচ্ছে দেখে অকস্মাৎ বিছানা থেকে উঠে প্রায় কয়েক লাফে মেয়েটিকে ধরে ফেললো কবীর।হাতটা ব্যাথায় কেমন করে উঠলো।তোশাকে দেয়ালের সঙ্গে মিশিয়ে চোখ বন্ধ করে নিজের ব্যাথাকে সহ্য করে নিলো।জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে।উষ্ণ শ্বাসে শিহরণ জাগে তোশার।একটু ধাতস্থ হয়ে তোশার চোয়াল চে’পে ধরলো কবীর।

“তোমার মনে হয়না তোশা একটু বেশী রাগ করো?আমি এখন যা বলেছি তাতে ভুল নেই।তুমি যখন স্কুলে ছিলে দিশা কোন জিনিসটা বলে বেশী য’ন্ত্র’ণা দিয়েছে তোমাকে?আমার আগ্রাসী ভালোবাসার কথাগুলো তুলে।তাইতো?সেই পুরুষ যখন একাকিত্বে ছিল তখন একটা টিনেজ মেয়েকে পছন্দ করে তার কষ্ট হবে দেখে কোনো পার্টনার গ্রহণ করেনি।তুমি কী ভেবেছো তোমাকে ম্যানিপুলেট করা কঠিন?বরং অনেক সহজ।যদি আমি না নিজেকে সামলে নিতাম তবে এতোদিনে..।”

কবীরের ভারী অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে।এতোগুলো গভীর কথা সে বলছে অথচ তোশা নির্বিকার।কবীর নিজে সাধারণ মানুষ।সহজাত বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করে তার সবদিক থেকে সঙ্গী পাওয়ার কথা ছিল।অথচ সেই সময়টা সে ত্যাগ করেছে বিশ বছরের প্রেমিকার জন্য।হঠাৎ তোশার উপর ভীষণ রাগ হলো তার।একটু মাথা ঝুঁ’কে ফর্সা চিতল মাছের পেটের মতোন গলায় কা’ম”ড় দিলো।তোশা চোখ বন্ধ করে অনুভূতি হজম করে নিলো।ক্ষণবাদে কবীর ছাড়লো।মেয়েটির ঘাড়ে নাক ঠেকিয়ে সুবাসে মাতোয়ারা হলো।জড়ানো তবে বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলল,

“আই লাভ ইউ তোশা।আই লাভ ইউ।নেভার লিভ মি।আই উইল গিভ ইউ অল দ্য হ্যাপিনেজ অব লাইফ।মাই লাভ,নেভার লিভ মি।”

কবীরের ভেতর জ্ব’ল’ন্ত উন্মাদনা প্রথমবারের মতোন উপলব্ধি করতে পারলো তোশা।কতো ভালোবাসা লুকিয়ে রেখেছিল মানুষটা নিজের মধ্যে।যেখানে কামুকতা নেই।আছে শুধু স্বার্থহীন এক চাওয়া।

(***)

রাত আটটায় উল্লাসের বহুল আলোচিত নাটকটি শুরু হবে।সাধারণত উল্লাস নাটক করেনা।তবুও হঠাৎ এতো গোপনে কী স্ক্রিপ্টে নাটক করলো তা সকলের মধ্যে কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে।বাড়ীর সবাইকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে আছে কবীর।বৃষ্টি ও তার মা ভারী উত্তেজিত।পক্ষান্তরে আহনাফ চুপচাপ বসে ড্রয়িং করছে।ওদিকে কবীর বিকালে কাঁটানো মুহুর্ত গুলো থেকে নিজেকে বের করতে পারছেনা।তোশা কী রাগ করেছে তার উপর? যাওয়ার আগে এতোটা নিশ্চুপ কেন ছিল?বৃষ্টির উত্তেজনা বশত চিৎকারে ভাবনা থেকে ফিরে এলো কবীর।শুরু হচ্ছে নাটকটি।একই সাথে ইউটিউবেও সম্প্রচার হবে।

নাটকের শুরুতে খুব সুন্দর করে লেখা বাস্তব ঘটনার উপর নির্মিত।

শুরুর পাঁচ মিনিটে একজন কিশোরীকে দেখা যাচ্ছে যে বিয়ে বাড়ী থেকে হুট করে উধাও হয়ে গিয়েছে।মেয়েটির মা বেশ চিন্তিত হয়ে কাওকে কল করছে।কবীরের মনে হলো খুব কাছ থেকে ঘটনাটি দেখেছে সে।তার মনে একটা অদ্ভূত ভাবনা তৈরী হলো।সেটা বাস্তব রুপ নিলো যখন স্ক্রিনে উল্লাস ত্বকের রঙ তামাটে ও পোশাকের ভাবভঙি অবিকল কবীরের মতোন করে সামনে এলো। কবীরের মা তো বলেই ফেললো নায়কটাকে তার ছেলের মতোন দেখাচ্ছে।এখন কবীর কীভাবে বলবে তার হবু বউ যে কীনা দস্যুদের জাহাজের কান্ডারী সে তার আর নিজের প্রেমিকের প্রেমকথা সকলের সামনে নাটকের সামনে উপস্থাপন করছে হয়তো।এই কারণে সে চায়নি উল্লাসের সাথে পরিচয় হোক মেয়েটির।কারণ দুটো মানুষই পাগল।উদ্ভট কান্ড করে।এখন সকলে জেনে যাবে বিষয়টি।তাতে কবীরের ভয় নেই।কিন্তু জানার ধরণটা ঠিক নয় এটা যা তাকে ভাবাচ্ছে।

হুট করে কবীরের বুকটা ভীষণ ব্যাথা করছে।মনে মনে সংকল্প নিলো,”বিয়ের পর এই মেয়েকে ছয় মাস বাবার বাড়ীতে রাখবে সে।থাকবে মায়ের দু’ষ্ট মেয়ে মায়ের কাছে।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫২
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমি তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।এইযে মাঝেমধ্যে বলে না পশ ফ্যামিলির সন্তান।রিচ কিড।আমি সেরকম একজন মানুষ।অনেকটা বনেদি পরিবারে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম।মজার ব্যাপার হলো আমার মায়ের বয়সের অর্ধেক আমি।অতি সুন্দর ভাবে যেদিন আম্মুর বিশ বছরের জন্মদিন ছিল সেদিন আমার জন্ম।আরে তখন আব্বুর বয়সও তো বিশ বছর ছিল।”

কথাটি বলার সঙ্গে অদ্ভূতভাবে হাসলো তোশা।দীর্ঘ পয়তাল্লিশ মিনিটের নাটকের পর তাকে এখন স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে।পরনে বিকেলের সেই হাসিটা।কবীর এতোক্ষণে মেয়েটির এতোটা ক্লান্ত থাকার কারণ খুঁজে পেলো।

“আমার মা-বাবা ভালোবেসে খুব অল্প বয়সে বিয়ে করেছিল।এটাও নিয়েও তো এক সময় কথা উঠেছিল।তবে আমার মায়ের যোগ্য ও পিওর সন্তান আমি।কারো কথায় কী আসে যায়?দুটো মানুষ খুব অল্প বয়সে বিয়ে করেছিল।কতোটা ভালোবাসা ছিল তাদের মধ্যে।আমি সবার আদরের তোশামণি।ছোটবেলার নিজের ছবি দেখে পুতুলের মতো লাগে।তাহলে এমন কোনো পা’ষা’ণ ব্যক্তি হয়তো ছিলনা যে আমাকে পছন্দ করেনি।সুখী একজন মেয়ে তোশা।কিন্তু সব সুখে গ্রহণ লাগা যেন আবশ্যক।বয়সের একটা সময়ে আম্মু-আব্বুর ডিভোর্স হয়ে গেলো।আব্বু চলে গেলেন কানাডা।আমার ছোট্ট আম্মু আমাকে আঁকড়ে থেকে গেলেন এখানে।তোশামণির দুনিয়া ছিল রঙিন।রোজ সকালে মা চুমু খেয়ে ঘুম থেকে ওঠায়,নানা আদর করেন।নানী বসে গল্প শোনান।খালামণি বাহিরে ঘুরাতে নিয়ে যান।মেকআপ শেখান।মামা দেশের সব প্রান্ত থেকে গিফট এনে দেয়।বছরের এক সময় কানাডায় থাকা বাবার থেকে ভারী রকমের গিফট বক্স আসে।যেখানে থাকে দামী ব্রান্ডের কাপড়,বারবি,খেলনা কতোকিছু।

পড়াশোনাতেও প্রথম তোশামণি।সকলের প্রিয়।স্বপ্নে মোহিত একজন মেয়ে।এতো কিছু পাওয়া মেয়ের জীবনে হুট করে একজন পা’ষা’ণ পুরুষের আগমণ ঘটে।আমার মায়ের বন্ধু,বাবার বন্ধু কবীর শাহ।বাজপাখির মতোন মানুষটাকে প্রথম দেখায় নিজের স্বপ্নের সঙ্গে মিলিয়ে ফেললাম।ওইযে স্বপ্ন দেখতে ভালোবেসেছি।কবীর শাহ কে দেখলে আমার বুকের ভেতর অদ্ভূত অনুরাগ তৈরী হতো।পনের বছরের তোশামণি যার কারণ খু্ঁজে পায়না।এক পা দুই পা করে সময় যায়।বুঝে গেলাম বাজপাখি নরম মনের ছোট্ট তোশাকে বহু পূর্বে নিজের করে নিয়েছে।মানুষটা অবশ্য তা মানতে নারাজ।

বাকী কাহিনী আপনারা দেখলেন।জেনেছেন।আমি জানি কিছু মানুষ তেঁতো মনোভাবে লম্বায় এই পাঁচ ফুট পাঁচ রোগা শরীরটিকে দেখছেন।মনে হচ্ছে কী মেয়ে নিজের বাবার বয়সী লোকের সাথে প্রেম করে?হ্যাঁ করেছি।তাকে ভালোবাসি।তিনিও আমাকে ভালোবাসেন।একটি সুন্দর সম্পর্ক আছে আমাদের।এই বলে আমি তার সুগার গার্ল নই।কবীর শাহ এর খুব কাছের মানুষের কাছ থেকে আমি এমন মন্তব্য বহুবার পেয়েছি।দুঃখিত হয়েছিল মন।কিন্তু আমি ওমন মেয়ে নই।এই কথাটা চাইনা কেউ বলুক। আমার মা কষ্ট পাবে।এখন বলতে পারেন কাজটা এমন করলে কেন যাতে মা কষ্ট পাবে?তাদের কাছে একটি প্রশ্ন নির্জন অন্ধকারে দ্বীপে আলোর দেখা পেলে আপনি কী করবেন?উল্টো পথে দৌড়ে পালাবেন নাকী আলোতে উদ্ভাসিত করবেন জীবন?আমি আলো পেয়েছি সেই বাজপাখির মধ্যে।

কাওকে ভালোবাসা দোষের না যতোক্ষণ না সেটা অন্যায় করে পাওয়া হয়।কবীর শাহ চমৎকার একজন মানুষ।সেই চমৎকার মানুষটিকে আমি তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা ভালোবাসি।এতে কারো ক্ষ’তি হয়নি।অন্যায় হয়নি।কিংবা দেশের ইকোনমি সিস্টেমও ধ্বসে পড়েনি।তবে সেখানে দুটো মানুষকে কেন এভাবে জাজ করবেন?নিজের এই ঘটনাটি দেখানোর উদ্দেশ্য হলো সবাইকে জানিয়ে দিলাম আমি তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা এমন একজনকে নিজের করে চাই যাকে চাওয়ার বৈধতা সমাজ দেয়নি।তবুও আমি তাকে চাই।এবং সে আমাকে চায়।

কথাগুলো ব্যক্ত করতে গিয়ে তোশার নিশ্বাস উঠে গিয়েছে।খুব করে হয়তো কান্না আঁটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে।নিজের অধর দং’শন করে পুনরায় বলল,

“আমি যদি কারো কাছে দো’ষী হয়ে থাকি তা আমার মায়ের কাছে।আম্মু সরি।আব্বু সরি।কিন্তু আমি..।”

তোশা থেমে পুনরায় বলল,

“আমি কবীর শাহ কে ভালোবাসি। এবং কবীর শাহ যিনি আমার থেকে বয়সে দ্বিগুণ সে ও আমাকে ভালোবাসেন।”

করুণ সুরের মাধ্যমে তোশার কথাগুলো শেষ হয়ে গেলো।কবীর খেয়াল করেছে মেয়েটি বহু প্রাণপণে নিজের কান্না থামানোর চেষ্টা করেছিলো।হুট করে বাড়ির পরিবেশ কেমন থমথমে হয়ে গেলো।কবীরের মনে হলো প্রত্যেকে যারা এই নাটকটি দেখছিলো নিজেদের ঘরে বসে তাদের সবার মুখ থমথমে।কবীরের বাবা পরিবেশটি হালকা করতে বলল,

“তোশাকে অনেক সুন্দর লাগছিলো তাইনা?”

সেলিমের প্রাণপ্রিয় স্ত্রী যে কখনো তার উপর চড়াও হয়ে কথা বলেনি সে অদ্ভূত চিৎকারে শুধালো,

“আপনি কীভাবে ওকে সুন্দর বলতে পারেন?”

“সুন্দরকে সুন্দর বলবো না?”

“সব জানতেন তাইনা?কবীর কীভাবে নিজের বন্ধুর মেয়ের সাথে?”

মায়ের কণ্ঠের অবজ্ঞা কবীরকে নাড়াতে পারলো না।ওদিকে ফোনে অনবরত ভাইব্রেটে কারো কলের জানান দিচ্ছে।গম্ভীর শ্বাস নিয়ে স্ক্রিনে দেখতে পেলো তাহিয়ার নামটা।কবীরের অন্ত:করণে তীব্র বে’দ’না ফুঁটে উঠলো।এই কলটাকে সে ভয় পাচ্ছে।আশ্চর্য কিন্তু এমন কিছুর মুখোমুখি তো হওয়ার ছিল একদিন।অদ্ভূত উপায়ে যদিও বা তাদের বিষয়টা সকলে জানলো।সেতু আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলো।কবীর হাত বাড়িয়ে থামতে বলল।

“তাহিয়া।”

“কবীর আমার মেয়ে কোথায়?”

তাহিয়ার কণ্ঠ শুনে মনে হচ্ছে দীর্ঘ সময়ের মুসাফির সে।অনেক দূর থেকে কথা বলছে।যার শব্দে প্রাণ নেই।কবীর ঘড়িতে দেখলো।রাত্রি প্রায় অনেকটা বাজে।

“বিকেলে এসেছিল আমার কাছে।মায়ানের বাসায় হয়তোবা।আমি ফোন করছি তাহিয়া।”

“ও কোথাও নেই কবীর।দীর্ঘ চল্লিশ মিনিট ধরে খুঁজে চলেছি।কোথাও নেই।ওর বাবা,বান্ধুবী কারো কাছে নেই।আমার মেয়ে কোথায় কবীর?তোশা কোথায়?ও খুব ছোট একটা বাচ্চা।কখনো এভাবে বাহিরে থাকেনি।কোথায় আমার মেয়ে।”

“তাহিয়া শান্ত হও।ফোন করছি ওকে আমি।”

“ওর ফোন বন্ধ।কবীর তুমি কীভাবে পারলে আমার ছোট্ট মেয়ের সাথে।কীভাবে?আমাকে মেয়েকে এনে দাও।”

“শান্ত হও তাহিয়া।”

তাহিয়া ফোনটা রেখে দিলো।কবীর তৎক্ষনাৎ তোশার নাম্বারে ফোন করলো।আশ্চর্যভাবে মেয়েটা উবে গেলো নাকী?

(***)

কবীরের প্রেশার বেড়ে যাচ্ছে।কিন্তু কোনোমতন অসুস্থতার দোহায় দিয়ে নিজের রুমে এসেছে সে।সেতু আবার ছেলে বলতে পাগল।তাইতো বেশী রাগারাগি করেনি।কবীর উল্লাসের নাম্বারে ডায়াল করলো।কারণ সেই একমাত্র ব্যক্তি যে জানে তোশা কোথায়।দীর্ঘক্ষণ রিং হওয়ার পর ফোনটা ধরলো উল্লাস।

“বিয়েটা তবে কোথায় করবেন কবীর শাহ?সিলেটে আমার সুন্দর একটা বাড়ী আছে।”

“এমনটা কেন করলে?”

কিছুক্ষণ নিরব থেকে উল্লাস বলতে শুরু করলো।ধীর, স্থির রহস্যময় কণ্ঠ তার।

“মায়ান চৌধুরী দীর্ঘ অনেক বছর পর দেশে আসার উপলক্ষে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন।সেখানে তার প্রাণ প্রিয় বন্ধু কবীর শাহ হুট করে তার মেয়েকে বিয়ে করে নিজেদের ভালোবাসার কথা জানাবেন।স্বাভাবিক কেউ পছন্দ করবেনা এবং সেদিন রাতে ইংল্যান্ডে উড়িয়ে নিয়ে যাবেন নববধূকে।সেখানে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ীর পরিচর্যা বেশ কয়েক মাস ধরেই করছেন।দিন যাবে একদিন তোশার বাবা-মা মেয়ের জন্য সব মেনে নিবে।কিন্তু আপনি এটা কখনো ভাবলেন না যে ঝামেলা করার আগে বিয়েটা করলে তোশাকে কোন লেভেলে নামিয়ে আনবে সমাজ?ও মিডিয়া জগতের সাথে যুক্ত হয়ে গিয়েছে।তাছাড়া ওর মাকে মানুষ কী বলবে?মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছে।”

“দেখো আমি যেভাবে ভেবে রেখেছিলাম সেটা হয়তোবা..।”

“কবীর শাহ এদেশে কখনো আপনাদের ভালোবাসার মূল্যায়ণ হবেনা।তাছাড়া আপনার উপর প্রশ্নও উঠতো না।সব দোষ আমার সখীর হতো।”

“উল্লাস,তোশা কোথায়?”

“সুস্থ আছে।বাট ভয় পেয়েছে।একটু দূরে থাকুক সকলের।এবং ভয় পাবেন না।মিডিয়াকে আমি ঘুরিয়ে দিবো।আপনাদের ক্ষ’তি আমি চাইনা।আর এটাও জানি নিজের বেলাডোনাকে বাজপাখি ভালোবাসে।তবে ওই পদ্ধতিটা খুব খা’রাপ ছিল।”

“তোশাকে বলো ওর মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।কিংবা আমার সাথে।”

“আপনি কথা বলবেন?”

“হ্যাঁ।”

কবীরের কণ্ঠে আকুলতা।সময় যাচ্ছে মেয়েটির কণ্ঠ শোনার ইচ্ছা বাড়ছে।অথচ বিকেলেও তো তারা একসাথে ছিল।নিজের তামাটে ত্বকে তোশার উষ্ণতা এখনও আছে।অবশেষে দীর্ঘ এক মিনিট পর ওপাশ থেকে মিহি কণ্ঠে কেউ বলে উঠলো,

“কবীর শাহ।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫৩
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“কেমন মেয়েকে ভালোবাসো তুমি যে সবার সামনে এতো দিনে গড়া সম্মান মিশিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে?কবীর তুমি রাজা।এভাবে নিজের সাম্রাজ্য গুঁড়িয়ে দিও না।”

দিশার কথাকে বালুকণা পরিমাণ পাত্তা না দিয়ে কবীর মিষ্টি করে হাসলো।দুটো রুট বিয়ারের ক্যান খুলে টেবিলের উপর রাখলো।মানুষটা যেন দৃঢ় ইস্পাত।লম্বা চওড়া দেহ দেখে বয়সের অনুমান করা কঠিন।হাতে আ’ঘা’তও যাকে টলাতে পারেনি।

“তোশা যেখানে আছে সুস্থ আছে।মেয়েটা ছোট যা কিছু হচ্ছে সেসব গ্রহণ করতে পারবেনা।”

“মনে তো হয়না ছোট।বাবার বন্ধুর সাথে।”

“দিশা,আমার পরিচয় কী শুধু মায়ানের বন্ধুর?তোশা আমাকে পুরুষ হিসেবে দেখেছে।”

“আমাদের ছেলের উপর কী যাচ্ছে সেটা খেয়াল করেছো একবার?মা হিসেবে আমাকে বাধ্য করবেনা আবার আইনের আশ্রয় নিতে।তোমার উচিত তোশার সঙ্গে সব বন্ধ করে মিডিয়া থেকে অতি দ্রুত ড্রামাটা সরানোর।”

কবীর হালকা তরল গলা:ধকরণ করে জবাব দিলো,

“উপদেশের জন্য ধন্যবাদ।কিন্তু মেয়েটাকে আমি ছাড়ছিনা।দেখো তো কতো কঠিন প্রেমিকা ও।”

“তুমি ম্যানিয়াকের মতোন আচরণ করছো।বুঝেছো নিশ্চয় কীসের কথা বলছি?শরীর সব নয় কথাটা বুঝো মি.শাহ।”

“টগর,তোমার উচিত আমার জীবনে এতো দখলদারি না করার।বিয়ে করছো না কেন?সামনে কিন্তু আমি বিয়ে করবো।”

কবীরকে এহেন সোজাসাপ্টা কথা বলতে অনেকদিন শুনেনি দিশা।টগর নামটাও অনেকটা সময় পর ডাকলো।কবীরের মুখমণ্ডল ঈষৎ উজ্জ্বল হয়ে আছে।অসুস্থতা,টেনশন কিছুই তো মুখের রঙটাকে মলিন করতে পারেনি।

“তুমি সিরিয়াস তোশাকে বিয়ে করা নিয়ে?মায়ান -তাহিয়ার কথা একবারও ভাবছো না?”

“আমার ওদের সাথে এখনও কথা হয়নি তোশাকে নিয়ে। যদিও টেনশন করছে দুজনে।তবে দুজন মানুষ আমাকে এখনও ভরসা করে।তাইতো মেয়ের খোঁজ না জানলেও ভয়ে নেই।”

দিশার মুখবিবরে আক্রোশের ছায়া ফু্টে উঠলো।পা দিয়ে মেঝেতে শব্দ করে বলল,

“সেই তাহিয়ার বিশ্বাস ভাঙলে।এটা নিয়ে হালকা অনুতাপ যদি করতে।”

কবীর সেই প্রসঙ্গে গেলো না।ল্যাপটপ থেকে কিছু একটা বের করে দিশার সামনে তুলে ধরলো,

“দেখো তো।ছেলেটিকে পছন্দ কীনা?লন্ডনে আছে।আমাদের থেকে এক কী দুই বছরের বড় হবে।”

“তাতে আমার কী?”

“তোমার জন্য পাত্র দেখছি।এবার বিয়ে দিয়ে ছাড়বো।”

“মাথা খারাপ কবীর?”

“আমি কনসার্ন করে পাত্র খুঁজে চলেছি।আর তুমি মাথা খারাপ বললে?”

“আমার পার্সোনাল লাইফে তোমাকে এতো কনসার্ন করতে কে বলেছে?ভুলে যেওনা তুমি প্রাক্তন।”

হুট করে বাতাসে মুক্তো ছোঁয়ার মতোন করে কবীর বলল,

“তাহলে তুমি কেন ভুলে গিয়েছো যে আমরা প্রাক্তন?”

দিশা সহসা শব্দ খুঁজে পেলো না কিছু বলার জন্য।কিন্তু কথায় পুরোনো আমলের দড়িটা ফের টান দিলো যেন।

“তোশা তোমার বন্ধুর মেয়ে।মায়ানকে কতোবার তুমি ভাই বলে ডেকোছো।”

“ওর সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক না।তোশার সাথেও না। আমি মেয়েটাকে ওয়াদা দিয়েছি বিয়ের।তোমার মনে হয় কবীর শাহ সেরকম মেরুদণ্ডহীন পুরুষ যে একটি মেয়েকে এমনি বিয়ের কথা বলবে?”

“তুমি নও।কিন্তু বিষয়টা কেউ মেনে নিবে না।”

“আমাদের পরিবার নিলে হবে।”

হাতের তালু ঘেমে যাচ্ছে দিশার।শক্ত কাঁচে উপর হাতটা ঘসে শুধালো,

“আমি তোমার পরিবার নই?”

“নাহ।সেই সম্পর্ক বহুকাল পূর্বে দুজনে নিজ হাতে শেষ করেছি।তুমি এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন।আমিও।বারবার সেখানে কথা তুলে বিব্রত করো না।তাছাড়া যে ব্যাপারটা চলছে আমি মিটিয়ে নিবো।”

“বেশ।একটা কথা বলার ছিল।”

“বলো।”

“মার্চে আমি দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।হয়তো চিরতরে ডেনমার্কে।আহনাফকে কখনো আমার কাছে যাওয়ার অনুমতি দিবে?”

“আমার ছেলে যথেষ্ট সেন্সিবল ও বুদ্ধিমান।সে যদি নিজ মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায় তবে অবশ্যই দিবো।”

“আচ্ছা।”

দিশা পাশের চেয়ার থেকে ব্যাগটা উঠিয়ে কাঁধে তুলে নিলো।হঠাৎ বুকে ভীষণ ভারী অনুভব হচ্ছে।কবীরের সঙ্গে এটা তার শেষ দেখা।সে কখনো আর তোশার ব্যাপার হয়তো বলবেনা।কোনো রকম বিদায় সম্ভাষণ না করে হাঁটা আরম্ভ করলো।দরজার কাছে দাঁড়িয়ে হঠাৎ পিছন ফিরে বলল,

“সন্তানটা আমারও কবীর।কিন্তু তুমি আমাদের কেন বললে না?তুমি হয়তো তোশার স্বামী হবে।কিন্ত তোমার প্রথম সন্তান আহনাফের মা সবসময় দিশা থাকবে।সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আমাদের শব্দটা ব্যবহার করবে।”

কবীর নিশ্চুপ থাকলো।এক কালে ভীষণ পরিচিত মানুষ ডিভোর্স শব্দটায় অচেনা হয়ে উঠে।

(***)

অনেকক্ষণ ধরে তাহিয়ার মাথা ব্যাথা করছে।তীব্র যন্ত্রণায় পৃথিবী দুলে উঠছে।তার মা একটু আগে এক গ্লাস দুধ এনে দিয়েছিল।সেটা ছোট করে একটা চুমুক দিলো।অকস্মাৎ তার সামনে কেউ একটা কাগজ রাখলো।তাহিয়া চোখ তুলে দেখলো তার বাবা নেয়ামত দাঁড়িয়ে আছে।

“এটা কী বাবা?”

“তোমার সারা জীবনের অর্জন।সেসব ফিরিয়ে দিলাম।”

“হঠাৎ কেন?”

নেয়ামত অদ্ভূত করুণভাবে হাসলো।

“মানুষ কখন সবথেকে কষ্ট পায় জানো?যখন সারাজীবনের অর্জনে কেউ আ’ঘা’ত করে।”

নেয়ামতের বয়স হয়েছে।কথা অনেক থেমে থেমে বলে।মেয়ের পাশে বসে পুনরায় বলল,

“আমি খুব সুন্দর একটা মেয়ের বাবা হয়েছিলাম।কতো স্বপ্ন ছিল তাকে পড়াবো,সুন্দর করে বড় করে তুলবো।কিন্তু স্বপ্ন ভেঙেছিল আজ থেকে একুশ/বাইশ বছর আগে।কী যে বুকে য’ন্ত্র’ণা হয়েছিল আমি এই নেয়ামত আজও কাওকে তা বোঝাতে পারিনি।সেই মেয়ে আবার কিছু বছর পর তালাক নিয়েও চলে এলো।তখন ভেবেছিলাম এর শোধ তুলবো।তোমার অর্থ নিয়ে সংশয় তৈরী করে ভেবেছিলাম এইতো আমার প্রতি’শোধ শেষ।কিন্তু সৃষ্টি কর্তা ভিন্ন কিছু ভেবে রেখেছিলো তাহিয়া।আজ তুমি সেই জায়গায় যেখানে দাঁড়িয়ে আমি..। ”

নেয়ামত দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।তাহিয়া উদাসভাবে বাবাকে দেখছে।

“এজন্য ভাবলাম এই অর্থ দিয়ে আর কী করবো?ফিরিয়ে দিলাম।”

“লাগবেনা বাবা।”

“কেন?মেয়েকে তুমি ছেড়ে দিয়েছো?ভালোর জন্যও এটা করবেনা।তোমার মায়ানকে পাওয়ার অধিকার থাকলে তোশারও আছে।”

“আমাকে অনেক ঘৃ’ণা করেন বাবা তাইনা?”

মেয়ের কণ্ঠে একরাশ কান্নার সুর খুঁজে পায় নেয়ামত।আস্তে করে ক্ষয়ে যাওয়া কাঁধে তাহিয়ার মাথাটা রাখলো।

“তুমি কী তোশামণিকে ঘৃণা করো তাহিয়া?”

“একদম না বাবা।মেয়ের জন্য মনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে।আমি জানি কবীরের কাছে ঠিক আছে ও।বাহিরে যা হচ্ছে তা মেয়েটার আসলেও দেখা উচিত না।কিন্তু..।”

“তাহলে আমার কথার জবাব পেয়ে যাবে তাহিয়া মামুনি।তোমার প্রতি অনুভবটা আমার কেমন।”

বাবার মুখে বছর বছর পর মামুনি ডাক শুনতে পেলো তাহিয়া।হঠাৎ পুরোনো স্মৃতি গুলো ফিরে এলো।আজ এতো বছর পর মায়ানের ও তার বাবার দুঃখটা সে উপলব্ধি করতে সক্ষম হলো।

(***)

তোশার দিনগুলো কয়েক দিন ধরে খুব অলস কাঁটছে।সারাদিন কথা বলার জন্য কেউ নেই।ফোনটাও দেয়নি উল্লাস।বলেছে কী যেন সারপ্রাইজ আছে।সেটা তৈরী হলে দিয়ে দিবে।তোশা বিরোধিতা করেনি।কবীর উল্লাসের পরামর্শ মতোন চলতে বলেছে।এই কথাগুলোও বলেছিল আজ বেশ কয়েক দিন হয়ে গেলো।নাহ মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারছে না কবীরের সঙ্গে।মুখে তেতোমিঠা ভাব নিয়ে উঠে দাঁড়ালো তোশা।নির্জন এই ফ্ল্যাটটির কিছু ভালো লাগেনি।শুধু একটা জিনিস বাদে।সুন্দর একটি মেয়ের ছবি বড় করে ড্রয়িং রুমে টাঙানো।আবার ছবির নিচে লেখা “রসে ডুবানো মধুর মৌমাছি”

লেখাটা ভারী অদ্ভূত।তোশা ভেবেছে উল্লাসকে জিজ্ঞেস করবে মেয়েটা কে?টুংটাং শব্দে কলিং বেল বেজে উঠলো।তোশা নিজেকে বিন্যস্ত করে দরজাটি খুলে দিলো।অপ্রত্যাশিত ভাবে ওপাশে কবীর দাঁড়িয়ে আছে।কেমন মন ভুলানো রঙের স্যুট পরেছে মানুষটা।কালোতে যা ফু়টে উঠে।ফর্মাল পোশাকে মানুষটাকে দেখে সবসময় পাগল হয়ে যায় তোশা।কিন্তু নিজের মনের ঝড়কে এক পাশে রেখে বলল,

“প্রবেশ করতে পাসওয়ার্ড বলতে হবে?জানেন আপনি মি.শাহ।”

কবীর মুগ্ধ চোখে নিজের প্রেমিকাকে দেখছে।দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ালো সে।তেতো কোলনের মাদকময় সুগন্ধে তোশার পেটের ভেতর প্রজাপতি উড়ে গেলো।

“জানি।বললে ভেতরে ঢুকতে পারবো?সুন্দর ফুলটাকে নিতে।”

তোশা ভালোবাসায় সম্মতিতে মাথা দুলায়।কবীর জড়ানো কণ্ঠে বলল,

“পাসওয়ার্ড হচ্ছে ভালোবাসি বেলাডোনা।ভালোবাসবো বেলাডোনা।”

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-৪৮+৪৯+৫০

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪৮
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“সহস্র কোটি বছরের দূরত্ব তোমার-আমার লিটল চেরী।আমাদের ভালোবাসাকে তুমি কীভাবে সঙ্গায়িত করবে?যেখানে বয়স,সম্পর্কের অসীম মতভেদ?”

“জীবনে সবথেকে অদ্ভূত বিষয় কী কবীর শাহ?বাবার বন্ধুকে প্রেমিক বানানো,বয়সের দ্বিগুণ পুরুষকে প্রেম নিবেদন?নাকী একজনকে ভালোবাসা, সম্পর্কের দোহায় দিয়ে ঠকানো?যা অন্যরা করে।অথবা সমবয়সী বিয়ে গুলো ভেঙে যাওয়া?আমার মা-বাবার মধ্যে কতো প্রেম ছিল একসময় সেটা আপনি দেখেছেন।আজ তারা দুই মেরুর মানুষ।সেখানে ভালোবাসা শব্দটা আমি ব্যবহার করলেও ভীষণ মেকি লাগে কথাটিকে।বস্ততপক্ষে ভালোবাসা ত্যাগ শিখায়।আমি পারবো না ত্যাগ করতে।”

“কথায় আছে যে ভালোবাসায় পূর্ণতা নেই তাতে খাদও নেই।আমি কিন্তু কথাটির সাথে সহমত নই তোশামণি।তুমি?”

তিমিরে দৃষ্টি রেখে একমনে দেখছে তোশা।মৃদুমন্দ বাতাস বইছে।যুবতীর কাঁধে ঝুলতে থাকা একগুচ্ছ চুলকে দুলিয়ে দিচ্ছে বাতাস।আনমনে সে দেয়ালটিতে মাথাটি ঠেকিয়ে আছে।ধারণা করা যায় সে মোহমায়া এবং ইহজাগতিক সব বিষয় থেকে উর্ধে কিছু একটা ভাবছে।কবীরের গাঢ় শিকারী দৃষ্টি মেয়েটির মুখে আলোকছটা খুঁজে চলেছে।

” চাওয়া থেকে পাওয়া না হলো তা কীসের মায়া কবীর শাহ।মায়া তো সকলকে করা যায়।কিন্তু কাছে পাওয়ার মায়া কয়জনকে করা যায়?”

“তুমি ভীষণ বড় বড় কথা বলছো তোশামণি।যেটা এক কালে ছিলনা।”

তোশা হেসে বলল,

“খেয়াল করুন আমি একুশে পা দিতে চলেছি।”

“আর আমি একচল্লিশে।”

বাক্যের শেষটিতে কবীরের অন্ত:করণ হতে দীর্ঘ এক শ্বাস বের হয়ে এলো।কী দারুণ য’ন্ত্র’ণা কথাটিতে।তোশার কান্না পায়।আরো সন্নিকটে যায় কবীরের।বাহিরে থেকে হৈচৈ এর শব্দ শোনা যাচ্ছে।আসিফ মানুষটা এমন যখুনি পার্টির আয়োজন করে তখন হৈ-হুল্লোড় থাকবেই।

“আমরা একসাথে অনেক বছর বাঁচবো কবীর শাহ।হোক না দুজনের আলাপ স্বল্প সময়ের।তাছাড়া আপনি এখনও যা ফিট। দেখবেন আহনাফের ছেলের বিয়ে দেখে যেতে পারবেন।আর আমাদের মেয়ের মেয়ের বিয়েও।”

“তাই?তুমি কীভাবে জানলে আমাদের মেয়ে হবে?”

“জানি জানি।আচ্ছা বলেন তো এতো বয়সে আপনার চুলগুলো কীভাবে কালো থেকে গিয়েছে।গোপন রহস্যটি বলুন। ”

“হেয়ার ট্রিটমেন্ট করাচ্ছি নিয়মিত।”

“এর মানে আপনিও নিজেকে গ্রুমিং করান। বাহ এজন্য তো বলি দেখতে নায়কের থেকে কম না।উল্লাস তো বলে চল তোকে আর তোর প্রেমিককে দিয়ে রহিম -রুপবান সিনেমা নতুন করে তৈরী করি।কিন্তু আমি চিনিনা এরা কারা।আপনি বলুন না কারা?”

“একটা মিথ আছে রুপবান নামক বারো বছরের বালিকার সাথে বারো দিনের বয়সী রাজপুত্র রহিমের বিয়ে হয়।এরপর বনবাসে পাঠানো হয় তাদের।নানা সময় অতিক্রমের পরে দুজনে বড় হয়।কিন্তু রহিম শেষে রুপবান বয়সে বড় হওয়ায় বিয়েটা মেনে নিতে পারেনা। মাঝে কিছু একটা হয় রুপবান যৌবন ফিরে পায়।এটা নিয়ে বহু বাংলা সিনেমা আছে।”

“আমরা কী ওরকম?আর বলবেন না যে একটা মিরাকেল হবে আর আপনি যৌবন ফিরে পাবেন।”

“সম্ভব নয়।এই কারণে তো নিজেকে গ্রুমিং করি।আমি কখনো চাইনা কেউ আমাদের দেখে বলুক ছি:মেয়েটা বেশী বয়সের লোককে বিয়ে করেছে।”

“যা সকলে আপনি না বললেও করবে।দেখুন না আপনার সঙ্গে তেমন কোনো সম্পর্ক না থাকার পরেও সুগার গার্ল বলে।এটা মানুষের স্বভাব।”

তোশার বড় মানুষের মতোন কথাবার্তা কবীরকে অবাক করে।সেই ছোট্ট কন্যাটি আজ কতোকিছু বুঝতে সক্ষম হয়েছে।মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

“আমি ছোট্ট,মাসুম এবং আহ্লাদী এক তোশাকে ভালোবেসেছি।তোমার বড় হতে হবেনা।শুধু নিজেকে সব ঝড়ের থেকে সামলে রেখো। কবীর শাহ নামক বিশাল বাজপাখি তোমাকে ছায়া দিবে সবসময়।”

(***)

“রাস্তাঘাটে রোজ তো কতো মানুষ ম’র’ছে কবীর শাহ।দেখবেন কোনো একসময় মৃ’তের তালিকায় আপনার নাম না উঠে যায়।”

ছোটখাটো হু’ম’কি স্বরুপ চিঠি এসেছে।কবীর তোয়াক্কা করলো না তা।কাগজটিকে দুমড়ে মুচড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো।তার জীবনে বড় হওয়ার গল্পে এরকম বহু চিঠি এসেছে।পাশ কাঁটিয়ে সে এগিয়ে গিয়েছে।

“স্যার, আপনার জুয়েলারিটা ডেলিভারি দিয়ে গিয়েছে।আপনি কী দেখবেন?”

“সিওর।”

এসিসট্যান্ট মেয়েটি একটা ব্যাগ কবীরের দিকে এগিয়ে দিলো।সেখান থেকে একটা বক্স বের করে নিলো।তাতে দামী একটি চুড়ি রাখা।যার গাঁয়ে ডায়মন্ড বসানো।এই বহুমূল্য জিনিসটি সে ক্রয় করেছে তোশার জন্য।যেদিন তাদের মিলনের রাত হবে সেদিন প্রেম নিবেদন করে মেয়েটির হাতে পরিয়ে দিবে।

“থ্যাংক ইউ ইয়ামিনা।তুমি আসতে পারো।”

“স্যার এটা কোনো স্পেশাল মানুষের জন্য?”

“জি তোমাদের ম্যামের জন্য।”

তোশাকে নিজ জীবন সঙ্গীনি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়াতে আলাদা প্রশান্তি পেলো কবীর।মিষ্টি হেসে হাতের জিনিসটা পকেটে ভরে বের হয়ে গেলো।তার প্ল্যান খুব সাদাসিধা।দুদিন পর মায়ানের বাড়ীতে অনুষ্ঠান।সেদিন সবার সামনে তোশাকে চাইবে সে।সাধারণ বিষয় অনেক কান্ড ঘটবে।কিন্তু কবীর জানে তাহিয়া রাজি হলে অন্য কারো অভিমত কী দরকার?কবীর অফিস বিল্ডিং এর নিচে আসার সঙ্গে সঙ্গে জোরে একটা ফায়ারিং এর আওয়াজ হলো।প্রচন্ড ধাক্কায় বিশাল দেহটি নিচে পড়ে গেলো।আশেপাশে কোথা থেকে শ্যু’ট করা হয়েছে সেটি বুঝা গেলো না।হট্টগোল শুরু হলো মুহূর্তের মধ্যে।ফিনকি দিয়ে র’ক্ত মুহুর্তে ভূমিকে রঙিন করে তুললো।

(***)

তোশা হাত ভর্তি করে ব্রাইডাল মেহেদী দিচ্ছে।তার দাদী একটু পর পর উঁকি দিয়ে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছে।অদ্ভূত বিষয়।দুদিন পর তাদের বাড়ীতে অনুষ্ঠান তাই বলে কী এভাবে মেহেদী দিতে হবে?তোশার অণুকরণ করে অন্যসব মেয়েরাও বায়নায় মেতেছে।

“তুমি এতো গর্জিয়াস মেহেদী কেন দিচ্ছো তোশা আপু?মনে হচ্ছে বিয়ে হয়ে যাবে।”

“হতেও পারে।কিন্তু তোমরা সবাই কেন দিবে?”

“দেখাদেখি।এক মিনিট দাঁড়াও কার নাম লিখেছো দেখি?”

“তুমি বুঝবে না।”

তোশা আগে থেকে আর্টিস্টকে কৌশলে শাহ লিখতে বলেছিল।এটা যদিও কেউ বুঝবে না তবুও সে কাওকে দেখাতে নারাজ।তারা সকলে বারান্দার কাছটায় বসে ছিল।হুট করে গেইটের সামনে একটি গাড়ী থামলো।তোশা চিনে গাড়ীটাকে।মিনিট খানেক বাদে তাহিয়া হন্তদন্ত বাড়ীর দিকে ছুঁটছে।মানুষটার ফর্সা মুখটা রক্তিম হয়ে আছে।তোশা দুহাত ভর্তি মেহেদী নিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে ছুঁটলো।

“আম্মু,তুমি এখানে?কী হয়েছে?”

“তোমাকে নিতে এলাম তোশামণি।হসপিটালে যেতে হবে।”

“নানার কিছু হয়েছে?”

“নাহ কবীরের।ওকে কেউ শ্যু’ট করেছে।তুমি এতো মেহেদী কেন দিয়েছো হাতে?ধু্ঁয়ে এসো।”

তোশা নিস্তেত কণ্ঠে শুধালো,

“তিনি কেমন আছেন মা?”

“আইসিইউতে।তুমি ধুঁয়ে জলদি এসো।”

তোশা নির্বিকার হয়ে দুহাত ভর্তি মেহেদী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অদ্ভূতভাবে ভেতর থেকে সে কাঁপছে।ভয় লাগছে।বুক ফেঁটে কান্না আসছে।মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে।মানুষটা কী শেষ হয়ে যাবে?এই আশংকায় বুকের হৃদস্পন্দন বাড়ছে।আশ্চর্য এরকমভাবে কাঁদলে সে কৈফিয়ত দিবে কী?কবীর শাহ এর কী হয় তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা?

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪৯
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমি তো বিচ্ছেদ চাইনি।কিংবা উপন্যাসের শুরুতে বিয়োগান্ত অধ্যায় শুরু হোক সেটাও চাইনি।তাহলে কবীর শাহ সাথে এরকম হলো কেন?”

তোশার মনে এমন হাজারও প্রশ্ন উত্থিত হচ্ছে।কিন্তু জবাবের আশায় কারো কাছে তা ব্যক্ত করতে পারছেনা।হসপিটালের নিচ তলায় সকলে বসে আছে।মায়ান অবশ্য উপরে গিয়েছে।তোশার খুব করে নিজ বাবার সাথে যেতে মন চাইলো।ক্ষণবাদে মায়ান হন্তদন্ত করে নেমে এলো।কবীরের বাবা সেলিমকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“কবীর সুস্থ আছে আঙকেল।গু’লিটা বাহুতে লেগেছিল ভাগ্যিস।ডক্টররা তো এমনিতে আইসিউ এর ভেতরে দিয়েছিল।”

“দেখা করা যাবে?”

“কেবিনে শিফট হোক আগে।”

সুখবর এলো তোশার জন্য।এখনও কান্না পাচ্ছে তার।অধরযুগল দ’ং”শ’ন করে তা থামানোর চেষ্টা করলো।মায়ের বাহুতে আস্তে করে মাথা ঠেকালো।তাহিয়া মেয়েকে যত্নে আগলে নিয়ে বলল,

“খারাপ লাগছে তোশামণি?বাড়ী যাবে?”

“দেখা করে যাই আম্মু।”

“আজ এতো মানুষকে দেখা করতে দিবেনা।পরিবারের মানুষজন দেখা করুক আগে।”

“আমরা পরিবারের মানুষ নই?”

“ফ্যামিলি ফ্রেন্ড।”

তোশা অমীমাংসিত দৃষ্টি নিয়ে তাহিয়াকে দেখছে।সে তো নিজ মা কে জানাতে পারছেনা দুদিন পর কবীরের সবথেকে আপন সে হতো।

“আম্মু,আজকে বাবার বাসায় যাবো না।তোমার কাছে থাকবো।”

“তোমার জিনিসপত্র?”

“থাকুক।কাল তো আবার চলে যাবো।”

“দাদুবাড়ী ভালো লাগেনা তোশা?”

“একটুও না।মা কবীর শাহ ঠিক হয়ে যাবে তো?”

“যাবে।ও অনেক স্ট্রং একজন মানুষ।যখন তোমার বাবা ও আমার সম্পর্ক সকলে জানলেন তখন কতো কথা হতো।সবকিছুর জবাব কবীর নিজে একা দিতো।সেই বেপরোয়া মানুষটিকে এতো সহজে কেউ আঁটকাতে পারবেনা।দেখো না আমাদের মতোন দুজন অসহায় মানুষের সামনে ঢাল হয়ে থাকে সবসময়।তোমার সিয়া ম্যামও কিন্তু কবীরের আপন বোন নয়।এরকম বহু উদাহরণ আছে ওই মানুষটার।সব ভালো কাজের বিনিময় তো পাবে।”

তোশা শক্ত করে মা কে আঁকড়ে ধরলো।শব্দহীন তার ঠোঁট নড়তে লাগলো কবীর শাহ এর সুস্থতার জন্য।

(***)

সারাটি রাত ঘুমাতে পারেনি তোশা।সকালে ফোলা ফোলা চোখ নিয়ে বিছানাতে উঠে বসলো সে।কী অদ্ভূত কাঁদতে না পারার য’ন্ত্র’ণা।হসপিটালের নিয়ম অনুযায়ী সকাল দশটায় দেখা করা যাবে।এখন বাজে সবে সকাল সাতটা।তবুও তোশা রেডি হচ্ছে।মেয়ের এমন উৎসুকতাকে তাহিয়া সাধারণ কৌতুহল কিংবা সম্মান হিসেবে বিবেচনা করে নিলো।

“আম্মু আর কতোক্ষণ লাগবে তোমার?আমি তৈরী হয়ে নিয়েছি।”

“এতো সকালে যাবে তোশামণি?এখান থেকে হসপিটাল কিন্তু বেশী দূরে নয়।”

“চলো না মা।অল্প সময় না হয় বসে থাকবো।”

মেয়ের জোড়াজুড়িতে তাহিয়া রেডি হতে চলে গেলো।নারীটির বয়স একচল্লিশ হবে কয়েকদিন পর।কিন্তু দেখে উপায় আছে?মার্জিতভাবে শাড়ী পরে নিলো।কিন্তু সবথেকে অগোছালোভাবে আজ তৈরী হলো তোশা।ছোটখাটো অভিনেত্রী যাকে বলা যায় তার এমন সাজে বের হওয়া বেমানান লাগে।গাড়ীতে বসে তাহিয়া খেয়াল করলো তোশার মেহেদী ভীষণ লাল রঙ দিয়েছে সারারাত রাখার পর।সে হেসে বলল,

“জানো তো তোশামণি।মা আমাকে বলতো মেহেদীর এতো গাঢ় রঙ হওয়া মানে বিয়ের জীবনে সুখী হওয়া।যদিও কথাটি মিথ্যা।”

তোশা মায়ের বুকের দীর্ঘ শ্বাস উপলব্ধি করতে পারে।বিরস মুখে জানালার বাহিরে তাঁকালো।হসপিটালে পৌঁছানোর জন্য প্রত্যকটি সময় গুণছে সে।

(***)

“তোর এতো বড় শত্রু কে কবীর?একদম সিনেম্যাটিক স্টাইলে কাজ সেরে নেওয়ার চেষ্টা করেছে।আমার মাথায় অবশ্য একজনের নাম আছে।”

“তুই যার নাম বলবি মায়ান।সেটা আমিও ভাবছি।ফ্রান্সিসকো!ও বলেছিল জেল থেকে বের হওয়ার পর আমি যেখানে থাকি দেখে নিবে।”

“ভাগ্য ভীষণ সদয় ছিল তোর উপর।আন্টির দোয়া গুলো কাজে লেগেছে।তা নয় তোকে মীরা আপু হঠাৎ ডাকবে কেন?আর তুই পিছনে তাঁকাবি।”

“ঠিক।মা কোথায়?এখন যদি আসতে চায় বলবি ঘুমাচ্ছি।”

“বাড়ীতে পাঠিয়েছি।যদিও আমার ছোট্ট মা তোশামণি তোকে দেখার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছে।সেই ভোর পাঁচটায় আসতে চেয়েছিল।”

“কখন আসবে?”

কবীরের কণ্ঠে উত্তেজনা কিন্তু মায়ানের চোখ এড়ায় না।মৃ’ত হয়ে যাওয়া অভিশংকা সজীব হতে শুরু করে।

“আসছে বলল।”

কবীরের সঙ্গে আরো টুকটাক কথা হলো মায়ানের। পুরোটা ফ্রান্সিসকো কে নিয়ে।বছর পনের আগে কবীর যখন বিদেশে ছিল তখন লোকটার সাথে দেখা হয়। অনেক প্রাণবন্তু ও খোশমেজাজের লোক ছিল।এলাকার সকলের ভীষণ প্রিয়ও ছিল।কবীরের সাথে ভালো বন্ধুত্ব হওয়ায় ফ্রান্সিসকো এর বাড়ীতে যাতায়াত ছিল।একদিন সেখানে গিয়ে কবীর দেখতে পায় লোকটা যদিও তখন যুবক ছিল এক শিশু কন্যাকে নি’র্যা’ত’ন করছে।সে তৎক্ষনাৎ পুলিশকে ফোন দিয়ে ধরিয়ে দেয় লোকটাকে।ফ্রান্সিসকো কবীরকে অনেক অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছিলো।তাই গ্রেফতার হওয়ায় মনে করলো কবীর বেইমানি করেছে।সেদিন বলে গিয়েছিলো যেদিন সুযোগ পাবে দেখে নিবে কবীরকে।হয়তো এতো বছর পর সুযোগটা পেয়েছে।মায়ান চলে যাওয়ায় নির্জন কেবীনে এসব ভাবছিলো কবীর।দরজায় শব্দ হওয়ায় সেদিকে তাঁকালো।তাহিয়া ঢুকলো প্রথমে তার পিছনে চাঁদের আলো হয়ে এলো তোশা।মলিন মুখ,শুষ্ক অধর,ফোলা চোখ,ক্লান্ত তনু।তবুও যেন চাঁদের সব থেকে উজ্জ্বল আলোকরেখাটি।

“কেমন আছো কবীর এখন?সরি রাতে দেখা করার সুযোগ মিলেনি।”

“এখন ভালো।কিন্তু বহুদিন জিম করতে পারবো না।”

“আশ্চর্য।এই অবস্থায় জিমের চিন্তা আসছে কীভাবে?আহনাফ ফিরেছে সিলেট থেকে?”

“নাহ।ওকে বৃষ্টি আনতে গিয়েছে।আমার এই খবরটা জানেনা।”

“খুব কাঁদবে ছেলেটা।”

কবীরের স্বল্প দৃষ্টি তখন তোশার উপর।যে মেয়েটা অভিমানে শুভ্র দেয়ালের দিকে তাঁকিয়ে আছে।যুবতীর উদ্দেশ্যে কবীর শুধালো,

“কী খবর তোশামণি?অসুস্থ লাগছে তোমাকে।”

তাহিয়া মেয়ের হয়ে জবাব দিলো,

“তোমার জন্য ভীষণ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল।দেখো না সকাল সকাল এসে পড়েছি।”

“মায়ানেও সেটা বলছিলো।”

“সে এখানে?”

“বাহিরে গিয়েছে।এক ঘন্টার মধ্যে চলে আসবে।”

তাহিয়া এবার নড়েচড়ে বসলো।কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে চলে যেতে চাইলো।কিন্তু তোশা বেঁকে বসলো।কবীরও সায় দিয়ে বলল,

“তোশা থাকুক। আমার সঙ্গ হবে।তাছাড়া মায়ান এসে পড়বে একটু পর।”

“আচ্ছা।নিজের খেয়াল রেখো কবীর।তোশামণি আসছি আমার অফিস আছে।”

তাহিয়া চলে গেলে তোশা নিজের জায়গাতেই বসে থাকলো।কবীর মেয়েটার হাত দেখছে।শুভ্র হাতে থোকায় থোকায় গোলাপ ফুঁটেছে।

“কাছে এসো বেলাডোনা।এখন সিনেমার মতোন বলো না সব দোষ আমার।নিজের খেয়াল রাখিনি তাই এমন হয়েছে।”

“সেটা বলবো না।কিন্তু আমার খুব কান্না পাচ্ছে।ভিজিটিং আওয়ার্স শেষ হয়ে যাচ্ছে তাইনা?”

কবীর মাথা এপাশ-ওপাশ দুলিয়ে বলল,

“না বেবি গার্ল।”

তোশা নিজ জায়গা থেকে উঠে অতি সন্তপর্ণে কবীরের পাশটায় বসলো।কতো আশংকা, কতো ভয়।এখনও যে শেষ হচ্ছে না।বাম হাতে ক্ষ’তটি হয়েছে মানুষটির।শুভ্র ব্যান্ডেজটা র’ক্তি’ম হয়ে আছে।

“আমি একটু স্পর্শ করি?”

“করো।”

তোশা আস্তে করে সেখানে স্পর্শ করে নিজে উহু করে উঠলো।যেন ব্যাথা সে পেলো।

“গু’লি লাগলে অনেক ব্যাথা করে তাইনা?”

“নো।ইঞ্জেকশনের অনুরুপ হালকা লাগে।”

“মিথ্যা।আপনার মনটা লোহা হলেও শরীরটা তো নয়।বাজপাখি কোধাকার।”

“কমপ্লিমেন্ট দিলে?”

“নাহ।খুব ভয় পেয়েছিলাম আমি।”

কবীরের ঘাড়ে মুখ গুঁজে কেঁদে ফেলে তোশা।সে এতো তাড়াতাড়ি ম’র’ণ নামক বিচ্ছেদের অংশীদার হতে চায়।কবীর ঘাড়ে সিক্ততার ছোঁয়া পেলো।মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

“আমাদের কাহিনী এতো সহজে শেষ হয়ে যাবেনা বেলাডোনা।এখনও সুন্দর একটি সংসার হওয়া বাকী।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫০
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আপনার কী খুব ব্যাথা করছে?য’ন্ত্র’ণা লাগছে?ডক্টরকে ডাকবো?”

তোশা ব্যস্ত হয়ে কবীরকে প্রশ্নগুলো একের পর এক করে যাচ্ছে।অন্যদিকে মানুষটি ধীর, শান্ত মেজাজে এক মনে পাশে দাঁড়ানো যুবতীর উৎকণ্ঠা মেপে নিচ্ছে।সে কী ভেবেছিল ছোট্ট ফোলা ফোলা গালের মেয়েটিকে সে ভালোবাসবে?বরং খুব বেশীই ভালোবাসা তৈরী হবে?যে তার দুঃখে দুঃখিত হবে।াতার ব্যাথার চোটে যার মুখবিবর নীল আভা ধারণ করবে।

“আমার য’ন্ত্র’ণা করছে সেটা কীভাবে জানলে তুমি?”

“চোখের ভাষায়।”

“কীরকম বেলাডোনা?আমার চোখ কী বলছে?”

“বলছে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন।ক্ষ’ত জায়গায় ব্যাথা করছে।”

কবীর হেসে ফেললো।এই সময় শঙ্খের মতোন শুভ্র দাঁতটা দৃশ্যমান হলো।হসপিটালের আকাশী রঙের পোশাকে কালো কবীরকে মানাচ্ছে না।বড্ড পানসে লাগছে দেখতে।

“ইয়াং ওমেন।ক্ষ’ত একজনের হয় ব্যাথা আরেকজনে পায়।তোমার -আমার তাহলে দুই প্রাণ এক শরীর।”

বিদ্রুপে তোশার মন খারাপ হয়।সে তো শুধু চিন্তা করছে মানুষটিকে নিয়ে।এই চিন্তা কী দোষের?এখনও মায়ান ফিরেনি।কবীরকে দেখতে বার কয়েক নার্স এসেছিল।সব বলে ঠিক আছে কিন্তু বারবার মানুষটি সিলিঙ ফ্যানের দিকে তাঁকিয়ে নির্জীব হয়ে যাচ্ছে।তোশা পাশে বসে কবীরের চুলের গভীরে আঙুলের সাহায্য স্পর্শ করলো।অন্য হাতটি বুকে রেখে বলল,

“বাচ্চামো বলুন কিংবা অল্প বয়সী উত্তেজনা কবীর শাহ।আমি ভীষণ চিন্তিত আপনাকে নিয়ে।যে কারণটি বললেন অসুস্থ হওয়ার তাতে ভয় আরো বেড়ে গেলো।লোকটি যদি ধরা না পড়ে?”

“পড়বে আমি বেঁচে না থাকলে হয়তো বেঁচে যেতো।মায়ান কিছু সন্দেহ করছে তোশা।”

তোশা চমকে উঠলো।সোজা হয়ে বসে বলল,

“কী দেখে?”

“ওর কথার মাধ্যমে বোঝা গেলো।তবে ভয় পাওয়ার কারণ নেই।এমনিও তো আমরা কালকে সকলকে জানানোর ইচ্ছায় ছিলাম।বিষয়টি এখন যা পিছিয়ে গেলো।”

“হুঁ।”

“মন খারাপ করলে এরকম অসুস্থতায়?”

“আপনার এখানে কোনো হাত নেই।”

দরজার বাহিরে মায়ানের কণ্ঠ শুনে তোশা দূরে সরে গেলো।তখুনি তার বাবা ভেতরে প্রবেশ করলো।মেয়েকে দেখে একটু অবাক হলো সে।

“তোশা তুমি একা কেন?”

“আমাকে দেখতে এসেছিল তাহিয়া।ওকে রেখে গিয়েছে।তোর সঙ্গে বাড়ী ফিরবে তাই।”

মায়ানকে তবুও সন্তুষ্ট হতে দেখা গেলো না।সে কবীরের সঙ্গে টুকটাক কথা বলে তোশাকে নিয়ে চলে গেলো।শূন্য রুমে এবার কবীরের মুখের রঙ বিবর্ণ হতে দেখা গেলো।বুকে খুব বেশী ব্যাথা করছে তার।চট জলদি নার্সকে ডেকে নিলো।সে সত্যিই খুব কষ্টে ছিল এতোক্ষণ।কিন্তু চায়না তোশা আরো কষ্ট পাক।

কবীরের মাথায় আরো একটি বিষয় উত্থিত হচ্ছে।যদি কাল সে ম’রে যেতো কিংবা গুলিটা ঠিক হৃদপিন্ড বরাবর এসে আ’ঘা’ত করতো তাহলে তোশা নিজেকে কীভাবে সামলে নিতো?দীর্ঘ এক জীবনে সব থেকে বড় কষ্ট তবে এটাই হতো মেয়েটির জন্য।কবীর যেহেতু জীবনের অনেকটা সময় অতিবাহিত করে এসেছে তাই তার কাছে এখন সূর্যাস্তের সময়টা বাকী আছে।সেখানে তোশার জীবনে কেবল উজ্জ্বল সকাল।এরমধ্যে নিজের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া সবথেকে স্বার্থপরের মতোন কাজ হবে।একটা আ’ঘা’তে কবীরের মন পরিবর্তন হচ্ছে।কিন্তু পরক্ষণে ভাবছে তোশাকে সুন্দর একটি সংসারের স্বপ্ন দেখিয়েছে সে একটু আগেও।সেই ওয়াদার কী হবে?কবীরের নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।ডক্টর দেখে ইঞ্জেকশন দিয়ে গেলো।শরীরের ব্যাথা কমে এলেও মনের ভেতর বয়ে যাওয়া আশংকার তীব্র ঝড় কমেনা।

(***)

মায়ানের বাড়ী তোশার নিজের হলেও ততোটা আপন মনে হয়না।কাল অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু এখানে এসে শুনতে পেলো কবীরের অসুস্থতায় তা হচ্ছে না।এক সপ্তাহ পিছিয়ে যাচ্ছে।

“তোমাকে খুব ক্লান্ত লাগছে তোশা।শরবত করে এনে দেই?খাবে?”

টিনাকে আন্তরিকতার সাথে না করে দেয় তোশা।মানুষটা তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী।এই কারণে কিছুটা এড়িয়ে চলে।বিষয়টি বুঝতে সমস্যা হয়না টিনার।সে হেসে বলে,

“আমাকে অপছন্দ করো তুমি তাইনা?”

“সেরকম নয়।আপনি ভুল ভাবছেন আন্টি।”

“তোমার মায়ের সাথে একদিন আলাপ করিয়ে দিবে?কথা বলার ইচ্ছে ছিল।”

“কেন?”

“এমনি।আলাপ করার ইচ্ছেটা।”

তোশা বার কয়েক চোখের পলক ফেললো।কিছু মানুষের অহেতুক কৌতুহল তার পছন্দ নয়।শক্ত কণ্ঠে বলল,

“আমার মা আপনার সাথে কথা বলার জন্য কম্ফোর্টেবল বোধ করবে না।সেক্ষেত্রে আলাপ না হওয়া ভালো।”

“শুনো দ্বিতীয় স্ত্রী যে হয় সে খারাপ হবে এমন কথা নেই।কখনো তাহিয়াকে নিজের কম্পিটিটর রুপে দেখিনি।”

“কারণ সে আপনার সাথে কম্পিটিশনে নামেনি।আমার বাবাও কোনো সুসজ্জিত ট্রফি নয়।”

ড্রয়িং রুম থেকে উঠে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো তোশা।টিনা বার দুয়েক ডাকলো।কিন্তু সে উত্তর করলো না।ঘরে ঢুকে দরজাটি ভালো করে বন্ধ করে দিলো।হেলেদুলে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিলো।শব্দ করে চিকন ধারায় পানি ঝড়ছে।সঙ্গে বাড়ছে কান্নার বেগ।এক সময় মেঝেতে বসে আর্তনাদ করে উঠলো সে।কালো কেশগুচ্ছ পানির ছোঁয়ায় উজ্জ্বলিত হচ্ছে।ফর্সা মুখটা মুহুর্তে লাল হয়ে উঠলো।তোশার মনে অনেক দুঃখ।কিন্তু সেটা কেউ বুঝেনা।বি’ষ’ধ’র সাপের মতোন রোজকার জীবনে অনেকগুলো চিন্তা রোজ দ’ং’শ’ন করে চলেছে।কবীরের কিছু হলে সে কী করতো?মনে নানা ভয় উঠে।সেগুলোকে কান্নার সাথে গিলে নেয়।অনেকটাক্ষণ শাওয়ারের নিচে বসে কান্না করলো তোশা।মাঝে কেউ খোঁজের জন্যও এলো না।অথচ মায়ের বাসা হলে এতোক্ষণে দরজা ভে’ঙে ফেলতো তাহিয়া।মা তার ভীষণ ভালো একজন মানুষ।তাকে কীভাবে নিজের ভালোবাসার কথা জানাবে?কিন্তু তোশাও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।কাপড় বদলে রুমে এসে সে উল্লাসের নাম্বারে ডায়াল করলো।

“উল্লাস!আমি আজকে নিজের শটটা আজকে দিতে চাচ্ছি।”

উল্লাস কিছুসময় নীরব থেকে বলল,

“তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস তোশা।ভয় নেই কবীর শাহ ঠিক আছে।হসপিটালে এতোক্ষণ ছিলাম আমি।”

“উহু,আমি দিবো।এক সপ্তাহের মধ্যে টেলিকাস্ট করতে বলবি।”

“বলবো।কিন্তু…।”

“উল্লাস কবীর শাহ জীবনের অনেকগুলো দিন অতিবাহিত করে ফেলেছে।আমি একা থাকতে চাচ্ছি না আর।”

“তাকে অনেক ভালোবাসিস তাইনা?”

“হ্যাঁ।”

এলেমেলো উল্লাস বেদনায় হাসে।বিনা শব্দে ফোন কেঁটে দেয়।ভালোবাসা কী অদ্ভূত জিনিস।তার মা ভালোবাসলো সে ডুবলো,তোশা ভালোবাসলো সে-ও ডুবলো।চারিধারে যারা ভালোবাসে তারা ডুবে যায় কষ্টের অতল সাগরে।এলেমেলো উল্লাস তাইতো ভালোবাসবে না।কখনো না।

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-৪৫+৪৬+৪৭

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“ডিভোর্স হলে সন্তান হয়ে যায় জেদের জিনিস।স্বামী বলে সে রাখবে, স্ত্রী বলে সে রাখবে।যাক সেই কথা।তোশার উপর তোর থেকে তাহিয়ার অধিকার বেশী মায়ান।এতোগুলো বছর তুই দেশে আসিস নি।এখন এসে অধিকার দেখালে তো চলবে না।”

“তাই বলে আমার সাথে দেখা অবধি করতে দিবেনা মা?”

“দেখা করতে দেয়না?নাকী তোশা আসেনা?আমি ওর দাদী।বলতে পারবি?প্রত্যেক বছর ইদে ডেকে নিজ হাতে রান্না করিয়ে সামান্য সেমাই খেতে দিয়েছি?তাহিয়া অনেক আহ্লাদে বড় করেছে।কারো আদর পায়নি।”

মায়ান দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।চোখের চশমাটি ঠিক করে বলল,

“কবীর মানিয়েছে তাহিয়াকে তোশামণিকে যেন এই বাড়ীতে আসতে দেয়।”

“তাহলে এতো কথা উঠছে কেন?হলো তো।”

“কথা উঠবেনা মা?দেখা গেলো আমার থেকেও তোশার বড় অভিভাবক হচ্ছে কবীর।”

নিজ পুত্রের চোখেমুখে হতাশার শীতল ঢেউয়ের ছায়া তিথির চোখ এড়ালো না।মায়ানের কষ্টটি ঠিক কোথায়?তা সরাসরি জিজ্ঞেস করে ফেললো,

“তোর কষ্টটা কোথায়?কবীরের শক্ত জায়গা তোশার জীবনে নাকী নিজের অবস্থান নিয়ে?”

“দুটোই মা।”

“বন্ধু হিসেবে কবীরের মতোন তুই আন্তরিক না।”

“কথাটা তোমার নতুন না।”

গেইট খোলার শব্দে মায়ান বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।তোশা একা ড্রাইভ করে এসেছে।মায়ানের মাঝেমধ্যে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় মেয়েটা সেই ছোট্ট পুতুলটা নেই।

ড্রয়িং রুমে অচেনা অতিথির ন্যায় বসে আছে তোশা।এটা তার মায়ের প্রাক্তন সংসার। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সে।অদ্ভূত হলেও জায়গাটি আপন নয় তার নিকট।রান্নাঘর থেকে টুংটাং শব্দ হচ্ছে।তোশা উঠে গেলো।বরং ফোন বের করে কবীরের নাম্বারটিতে ম্যাসেজ পাঠিয়ে দিলো।

“তোশামণি?”

বাবার কণ্ঠে মিষ্টি করে হাসলো তোশা।মায়ান কন্যার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

“ব্যাগ কোথায়? তুমি কী কয়দিন থাকবেনা?”

“ব্যাগ গাড়ীতে।”

“আমি কাওকে দিয়ে আনিয়ে নিচ্ছি।দাদীর সাথে কথা বলে নাও।সে তোমার অপেক্ষা করছিলো।”

তিথি মায়ানের পিছনে ছিল।নাতনিকে বসিয়ে আদর করে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে।এমনকি তার জন্য হরেক রকমের পিঠা তৈরী করেছে।টিনা দূর থেকে তোশাকে দেখলো।হাজার হোক স্বামীর অন্য পক্ষের মেয়ের আপ্যায়ণ তার মনমতো হলো না।মুহুর্তে ড্রয়িং রুমে কোলাহল জুড়ে গেলো।তোশার অন্য সব কাজিনরা এসে তার সাথে আলাপ করছে।এদের সঙ্গে বছরেরও একটি কথা হয় কীনা সন্দেহ।তবে ওইযে রক্তের সুমিষ্ট ঘ্রাণে সকল আত্মীয় আচ্ছাদিত হয়ে থাকে।তোশার ছোট চাচার মেয়ে তাকে আহ্লাদে জিজ্ঞেস করলো,

“তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে তোশা আপু?”

তোশা মিষ্টি করে হাসলো।বড়রা এখন নেই আশে-পাশে।সে একটু গা ছাড়া ভাবে বসে বলল,

“আছে তো।”

“ওয়াও!সে কী করেন?”

অল্প বয়সী মেয়েদের কথাগুলো বেশ বিস্ময়কর হয়।তোশা হেসে বলল,

“তোমার আছে নিশা?”

“আছে।আমাদের ক্লাস টপার।তোমার জন কে?”

“শুনলে ভয় পাবে।”

“কেন?কী এমন মানুষ সে?”

“সে?সে হচ্ছে দৃঢ় ইস্পাত,কঠিন শিলা,শক্ত সেগুন কাঠ।”

নিশা কৌতুহলী হয়ে শুধালো,

“আপু সে কী কালো?কারণ এখানে সব কয়টার রঙ ময়লা।”

পরপর চোখের পাপড়ি ফেললো তোশা।কী আজব?কবীর শাহ যে কালো সেটা সকলে কেন বুঝে যায়?প্রিয় কোলনের সুগন্ধে তোশার টনক নড়লো।সে পাশ ফিরে দেখলো সেই দূঢ় ইস্পাতের মতোন পুরুষটি তার পাশ দিয়ে হেঁটে গেলো।তোশা নিজেকে সুবিন্যস্ত করে নিলো।ভেতর থেকে মায়ান ও কবীরের কথা শোনা যাচ্ছে।তোশাদের আলাপ জমলো না।তাকে নিয়ে নিশা নিজের রুমে চলে গেলো।মানুষটা কী সুন্দর মেয়ে তোশাকে এড়িয়ে গেলো?যুবতীর ভেতর স্বত্ত্বা মুখ বাঁকিয়ে নেয়।

(***)

চায়ের কাপে টুংটাং শব্দ হচ্ছে।বাহিরে কোথাও কাক বিরক্তিকর সুরে ডেকে উঠলো।দুজন কতো কালের বন্ধু।কিন্তু আজ যেন তাদের মধ্যে কোনো দেয়াল গড়ে উঠেছে।

“কী বলতে চাস তুই যে আমার বিয়ে করতেই হবে?এটা জরুরি নাকী?”

“আলবৎ জরুরি।মেয়ে দেখেছি।তোকে বিয়ে দিয়ে এরপর কানাডায় ফিরবো আমি।”

কবীরের ভ্রু যুগল আন্দোলিত হলো।বাহুদ্বয় আড়াআড়ি জুড়ে শুধালো,

“হঠাৎ আমার বিয়ে নিয়ে পড়লি যে মায়ান?দিশা বলেছে?”

“নাহ তো।”

“আমি জানি তুই ওর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলি।মনের কথাগুলো খুলে বল।”

“মনের কথা মনে থাকুক কবীর।মেয়ে কে শুনতে চাইবি না?”

“নাহ তো।”

“কেন?”

“কারণ তাকে বিয়ে করার কোনো কারণ দেখছিনা।বিয়ে আমি করবো।সময় হলে।”

“তাই নাকী?সেই মেয়েটি কে?”

“সময়টা হয়নি বলার।”

কবীরের রহস্যময় কথাবার্তায় মায়ানের মনটা কেঁপে উঠলো।সত্যি অর্থে তোশাকে নিয়ে ভয়টি তার কাঁটেনি।যদি বিষয়টি অবাঞ্চিত হয় তাহলে বন্ধুর সামনে কম নিচু হবেনা সে।

“আমি কী চিনি তাকে কবীর?”

মায়ানের প্রহেলিকাতে সন্দেহের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।কবীর চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে বলল,

“যদি বলি চিনিস?তাও থাক।সারপ্রাইজ হোক বিষয়টি।”

“শেষে এমন সারপ্রাইজ না পাই যেটা হজম করা কষ্টসাধ্য হয়।”

টিনা উচ্চশব্দে ডেকে উঠলো মায়ানকে।কবীরের থেকে ছুটি নিয়ে রুমের দিকে এগিয়ে গেলো সে।তার কথাগুলো ভাবাচ্ছে কবীরকে।বাঁধ ভাঙা পানির মতোন সময়গুলো বয়ে চলেছে।সবথেকে কঠিন পরীক্ষাতে বসবে কবীর।দেখা যাক পাশ করে নাকী হাঁটুভেঙে মুখ থুবড়ে মাটিতে গড়াগড়ি খায়।অনেকক্ষণ মায়ানের দেখা না পেয়ে উঠে দাঁড়ালো কবীর।সামনে ছাদের সিঁড়ি।কোনোকিছু না ভেবে সেদিকে অগ্রসর হলো।গা গরম হওয়া রোদ পায়চারি করছে কবীর।মায়ানকে দিশা কিছু বলেছে কীনা সেই বিষয়ে সন্দেহ হচ্ছে।অন্যমনস্ক কবীরের হাতটা হঠাৎ ছোট্ট বড়ই গাছটায় গিয়ে লাগলো।সামান্য আঁচড় লাগলো এতে।

“ব্যাথা পেলেন আপনি?”

তোশা ব্যস্ত হয়ে কবীরের হাতখানি ধরলো।আদরে জায়গাটিতে আঙুলের স্পর্শ দিলো।

“বেবি গার্ল,তোমার কী মনে হয়?কবীর শাহ এতো অল্প ছোঁয়ায় ব্যাথা পায়?তার এসবে কষ্ট হয়না।কিন্তু..।”

তোশাকে টেনে একদম নিজের কাছটায় নিয়ে এলো।কপালের সঙ্গে নিজের উষ্ণ কপালটা মিলিয়ে বলল,

“কষ্ট হয় এটা ভেবে যদি সমাজের দোহাই, সম্পর্কের চাদরে আমাদের ভালোবাসা মিথ্যা হয়ে যায়?বয়স ধরে তোমাকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়?যতো সময় আসছে ভয় বাড়ছে।”

মুগ্ধ তোশা কবীরের গালে হাত বুলিয়ে দিলো।মায়াময় কণ্ঠে বলল,

“আমার খুব কান্না পায়।”

“আমার বুকে এসো।এরপর কাঁদো।যদি তোমার শীতল চোখের জলে আমার য’ন্ত্র’ণা কমে যায়।”

বাধ্য মেয়ের মতোন তোশা বুকে মাথা রেখে কাঁদছে।নিজের হাতে ধাতব কিছুর স্পর্শ পেয়ে চমকে মুখ তুললো মেয়েটি।হাতে সুন্দর একটি আঙটি পরিয়ে দিয়েছে কবীর।

“এটা আমাদের বিয়ের প্রথম রীতি ছিল বেলাডোনা।আঙটি বদল।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪৬
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“তোশা নামের মেয়েটিকে প্রায় নিজের বাবার বন্ধুর সাথে দেখা যায়।বুঝিস না কাহিনী অন্যরকম।”

“এজন্য ভাবনায় চলে আসতো যার বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়েছে সে কীভাবে এতো উচ্চবিলাসী হতে পারে?”

নতসুরে ক্লাসের দুটো মেয়ে আলাপ করছে তোশার ব্যাপারে।অদ্ভূত কথা হলো তারা দুজন স্পিকারের অতি সন্নিকটে ছিল।এবং যেসব কথা বলেছে তা ক্লাসের সকলের কানে স্পষ্ট গিয়েছে।তোশা নির্বিকার দৃষ্টিতে বারংবার আঁখিপাতা ফেলছে।যে দুটো মেয়ে আলাপ করছিলো তাদের বান্ধুবীরা ইশারায় থামতে বলল।নিজেদের আড়ালের বক্তব্য এরকম সকলের শোনায় কোনো হেলদোল নেই যেন তাদের।

তোশা দীর্ঘ এক শ্বাস ছাড়লো।আশেপাশে তাঁকিয়ে দেখলো ছেলে-মেয়েরা তাকে দেখছে।চোখটি বন্ধ করে সে উঠে দাঁড়ালো।মেয়ে দুটির সামনে গিয়ে বলল,

“কথা পুরো করো।এক মিনিট স্পিকারটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিতে পারো।”

“দেখো তোশা।”

“দেখছি।কী বলতে চাও ক্লিয়ার করে বলো।আমি নিজের বাবার বন্ধুর সঙ্গে যদি প্রেমটা রাঙিয়েও থাকি তবে সমাজের কী?”

“কিছুনা।বরং কিছু জিনিস দৃষ্টিকটূ।”

“সেক্ষেত্রে তোমাদের দৃষ্টিতে সমস্যা।তাছাড়া আমার মা সৎ ভাবে একজন সফল বিজনেস ওমেন।সে কতোটা ইনকাম করে আমি কীভাবে চলি তা না গুণলেও চলে।”

একটি মেয়ের তোশার কথাটি হয়তো হৃদয়ে লাগলো।সে অতি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

“আমার খালাও ডিভোর্সি।তার সন্তানদের কাছে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবে বাবা ছাড়া কী অবস্থা হয়।অথচ তোমাকে দেখো?আর তোমার মায়ের কথা বললে?আমি যতোটা জানি সে নিজেও তোমার প্রেমিকের অফিসে জব করে।সুর কোথায় গিয়ে তাল হারিয়েছে সবটা আমাদের জানা।”

“তুমি কীভাবে জানলে সে আমার প্রেমিক?আমি তো বলিনি।”

“রোজ কার গাড়ীতে করে ঘুরে বেড়াও সব তো দেখা যায়।তাছাড়া এসব আমরা জেনে যাই।”

তোশা কপাল কুঁচকে রইলো কিছুক্ষণ।পরমুহূর্তে মনে পড়লো এই মেয়েটির সাথে বৃষ্টির ভালো চেনাজানা।বড় বিচিত্র অনুভূত হলো তোশার।কবীর শাহ তো বৃষ্টির সবথেকে আপন।তার সম্মান এভাবে উড়ানোর যৌক্তিকতা আসলে কোন জায়গায়?মেয়েটির সঙ্গে কথায় দ্বন্দে না গিয়ে সেখান থেকে উল্টো পথে হাঁটা ধরলো তোশা।পিছনে গুঞ্জন উঠে।হরেক রকমের কথার রঙ ছড়ায়।কিন্তু সে পাত্তা দেয়না।

(***)

“খুব বাজে পারফিউম।এটার জন্য তোকে দশ দিনের কারাদণ্ড দিলাম আমি।যা দূর হ।”

উল্লাসের মুখে কারাদণ্ডের কথা শোনে তার সেক্রেটারী মুখ ভেঙালো।সে এলেমেলো নায়কটার সান্নিধ্য থেকে মুক্তি পেলে স্বস্তি পায়।কিন্তু আফসোস রাজা নাম হলেও মনের জোর বড় দূর্বল ছেলেটির।

“স্যার,আপনার জুস।”

“জুস?তোর কী মনে হয় আমি বাচ্চা?এক মিনিট সেইভ করার পর একটু বেশী ইয়াং লাগছে কী?”

আয়নায় নিজের মুখটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কিছুক্ষণ অবলোকন করলো উল্লাস।কিন্তু কোনো পরিবর্তন নেই।হ্যাঁ যদিও গালের মধ্যে নতুন একটা তিল উঠছে।মেয়েরা কী এটাও পছন্দ করবে?দরজা খোলার শব্দে আয়না দিয়ে সেদিকে তাঁকালো উল্লাস।তোশা ভ্রু কুঁচকে তাঁকিয়ে আছে।

“তোকে মটেও কবীর শাহ এর মতোন লাগছেনা সখা।সে কালো।তুই ভীষণ ফর্সা।বাদ দে।”

“তোর কী আমার অভিনয়ে সন্দেহ আছে সখী?”

“নব্বই শতাংশ।”

উল্লাস সেই কথাকে পাত্তা দিলো না।বরং নিজের হাতে ফাউন্ডেশন মাখতে লাগলো।ঘুরিয়ে ফিরিয়ে হাতটাকে দেখে বলল,

“আমাকে কালোতেও মানায়।কী বলিস সখী?”

“মন ভালো না রে সখা।আজকে ভার্সিটিতে কী হয়েছে শুনবি?”

উল্লাস সম্মতিতে মাথা দুলায়।তোশার সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনেক মজবুত হয়েছে।কীরকম করে দুটো পাগল নিজেদের সখা হয়ে গেলো।সমস্ত ঘটনা উল্লাস শুনে বিজ্ঞের অনুরুপ শুধালো,

“এতোটুকুতে খারাপ লাগছে?অথচ সামনে এমন একটি সময় আসবে যখন এই বলবে।ওই বলবে।রাস্তার পাশে দাঁড়ানো ঝালমুড়ি ওয়ালা মুড়ির সঙ্গে তোদের ঘটনা বানাবে।সেক্ষেত্রে স্টেপ কী হবে তোদের?খুব অল্প সংখ্যায় মানুষ তোদের পক্ষে বলতেও পারে কিংবা না।”

তোশা গুরুগম্ভীর ভাবনায় ডুবে যায়।কাঁধের ব্যাগটা কোলে নিয়ে বসে পড়লো।সত্যি সে যেই সমুদ্রে নৌকা ভাসিয়েছে সেখানে ঝড় আছে।ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টি হয়।

“এলেমেলো উল্লাস,তুই কী সিওর যে কবীর শাহ বিয়ের ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাবে?”

“নাহ।কবীর শাহ পিছাবে না কারণ সে কথা দিয়ে কথা রাখতে জানে।কিন্তু পরিস্থিতি যদি অনুকূলে না হয়?বাই দ্য ওয়ে তোদের ভালোবাসা মুহূর্তের কিছু তো পেলাম না স্ক্রিপ্টে।”

“মানে?”

“কবীর শাহ তোকে কিস করেনি?রোমান্টিক মোমেন্ট।”

রাজার মনে হচ্ছে দৌড়ে এখান থেকে চলে যাক।সে স্বভাবগত একজন প্রচন্ড লাজুক একজন মানুষ।আর তার কর্মজীবনে অর্ধেক পাগল এলেমেলো উল্লাসের সাথে জুড়ে গিয়েছে।এতক্ষণ তাদের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো সে।এবার চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস টেনে নিলো।তোশা নির্বিকার ভাবে বলল,

“তোর নিউরনগুলোর সিন্যাপসে বহু সমস্যা আছে।জানতাম না এতো পাগল তুই।”

“আমিও তো জানতাম তুই অনেক আহ্লাদী।সেক্ষেত্রে এমন চুপ কেন?”

“কারণ মানুষের আহ্লাদের মানুষটি একজন হয়।”

তোশা পরবর্তীতে নিশ্চুপ হয়ে গেলো।সামনে রাখা ল্যাপটপে বাকী স্ক্রিপ্টটা লিখে দিয়ে যাচ্ছে।সময়ে সময়ে দীর্ঘ শ্বাস বের হচ্ছে মেয়েটির ভেতর থেকে।উল্লাস স্মিত হাসলো।কিছু ভালোবাসা এতোটা জটিল হয় কেন?

“তোশামণি।”

“হ্যাঁ।”

“ভেবে নে।এমন একটি দিন এলো যেখানে কবীর শাহ থাকলো না।কেমন লাগবে?”

তোশা না ভেবে জবাব দিলো,

“এমন দিনটা একদিন এলো।সেদিন আমি হারিয়ে যাবো।”

ভর্ৎসনা করে উল্লাস হাত নাড়ালো।

“টিপিক্যাল প্রেমিকার অনুরুপ ম’রা’র চিন্তা।তখন কবীর শাহ তোর স্মৃতিতে বানাবে চেরীমহল।যা শত শত বছর ধরে সকলের কাছে প্রিয় হয়ে থাকবে।”

তোশা মৃদু হেসে টাইপিং এ মনোযোগ দিলো।তার কথার আড়ালে অনুভূতিটি এলেমেলো উল্লাসের হয়তো বোঝার কথা নয়।

(***)

“বৃষ্টি।বৃষ্টি।”

কবীরের বলিষ্ঠ কণ্ঠ শুনে বাড়ীর সকলে নিজ রুম থেকে বের হয়ে এলো।বৃষ্টি ছাদে ছিল।দৌড়ে এসে শুধালো,

“কিছু বলবে চাচু?”

“আমার রুমে এসো।”

চামড়ার জুতোতে কঠিন শব্দ তুলে নিজ রুমের দিকে এগিয়ে গেলো কবীর।পিছনে বৃষ্টিও গেলো।

“চাচু ডেকেছিলে?”

কথার সমাপ্তিতে অনেক জোরে চ’ড় বসিয়ে দিলো কবীর মেয়েটির গালে।হতভম্ব হয়ে গেলো বৃষ্টি।যে চাচা ছোট্ট পুতুলটির অনুরুপ সামলে রেখেছে সে আজ গায়ে হাত তুলে দিলো?

“চাচু।”

“চুপ।তোমার কী মনে হয় মেয়ে?কবীর শাহ এতোটা সস্তা ও চরিত্রহীন যে টাকার বিনিময়ে নিজ বান্ধুবীর মেয়েকে র’ক্ষি’তা করে রাখবো?একটা মেয়ে হয়ে তার নামে এসব ছড়ানো কোন ধরণের মানসিকতার প্রমাণ।”

বৃষ্টি কোথাও থেকে সাহস জুগিয়ে বলল,

“যে মেয়ে বয়সের দ্বিগুণ মানুষকে পছন্দ করতে পারে সে কীভাবে ভালো হয় চাচু?বরং অর্থলোভীদের কাতারে সবার আগে তার নামটা থাকবে।”

কবীর খলবলিয়ে উঠলো।কপালের চুলগুলো সুবিন্যস্ত করে রাখলো।পুনরায় চড় বসিয়ে দিলো বৃষ্টির গালে।

“তোমাকে কেন কাওকে এক্সপ্লেনেশন দেওয়ার জন্য কবীর বসে নেই।তোমার যে বান্ধুবীকে এগুলো বলে ভার্সিটিতে ছড়িয়েছো তাকে আজকে সব ক্লিয়ার করে দিবে।তা নয় পরের চড়টা তোমার ফুপু সিয়া দিবে।”

“চাচু তোমরা কোনভাবে বিষয়টাকে ভালো ব্যাখায় দাঁড়া করিয়ে রাখতে পারবে না।বরং..।”

“শাট আপ বৃষ্টি।এখান থেকে যাও।”

“একদিন পস্তাবে তুমি চাচু।যখন মেয়েটা তোমাকে বিপদে ফেলে সব সম্মান নষ্ট করে চলে যাবে।”

“তোশা পালাতে চাইলেও ধরে রাখবো আমি।”

বৃষ্টির বড় দুঃখ লাগলো।সে কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।কবীর ক্লান্ত শরীরে ডিভানে গা এলিয়ে দিলো।শৈল্পিক দেহ তার।বড় বড় পা ছড়িয়ে দিলো সামনে।ফোন বের করে তোশার নাম্বারে ডায়াল করতে গিয়ে থেমে গেলো।হাতেগোনা কয়দিন পর বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।অথচ নিজ মস্তিস্কের সঙ্গে সে লড়ছে।মূলত তোশা-কবীর প্রেমিক যুগল দুজনে লড়ছে তাদের মানসিক অবস্থান নিয়ে।কিন্তু কেউ কাওকে জানাচ্ছে না।ভালোবাসার রঙটা তাদের জীবনে বির্বণ হয়েই ধরা দিবে নাকী রঙিন মিষ্টি প্রজাপতি হয়ে?

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪৭
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“প্রাক্তন স্বামীকে এতোদিন পর দেখে কেমন লাগছে তাহিয়া?খুশি তো?যার দুঃখে এতোটা শোকাবহ যে এখন অবধি বিয়ে করার নাম নেই।”

আসিফের কণ্ঠে একরাশ অভিমান মিশে একাকার হয়ে আছে।বোকা পুরুষটি বুঝে না অভিমান করার ক্ষেত্রে দুজনের মধ্যে সহমর্মিতা থাকা জরুরি।তাহিয়া মৃদু হাসলো।অদূরে মায়ানের চোরা চোখের দৃষ্টি মিনিট খানেক পর পর তার কাছে এসে থামছে।

“আমি বিয়ে করিনি জীবনে এর মানে এটা নয় মায়ানকে ভুলতে পারিনি কিংবা তার জন্য এখনও কষ্ট পাই।”

“তোমার হৃদয়ে তবে মায়ানের জন্য কোনো কষ্ট নেই?ধরে নিবো যা আছে সবটা ভালোবাসা?”

“ভালোবাসা যেখানে আছে সেখানে বিচ্ছেদ পা রাখতে পারে?সম্ভব নয়।”

আসিফ সম্মতিতে মাথা দুলায়।পরিবেশে পো’ড়া মা’ংসের সুগন্ধে ভরে গিয়েছে।আজকে সকলকে স্টেক পার্টিতে ইনভাইট করেছে আসিফ।নেপথ্যে কাহিনী হলো তাহিয়াকে যেভাবে হোক বিয়ের জন্য মানিয়ে নেওয়া।

“তাহলে মুভ অন না করার ক্ষেত্রে তোমার গুরুত্বপূর্ণ কারণটা কী?”

“বলতে পারেন সম্পর্ক জড়ানোর মুডটা ঠিক নেই আমার।”

তাহিয়ার খামখেয়ালী কথাবার্তা আসিফের ভেতর থেকে উষ্ণ শ্বাস বের হয়ে আসে।বিবর্ণ কণ্ঠে বলল,

“ঠিক করে বলো।আসলে কী চাও তুমি।মায়ানকে দেখো জীবনে কতোটা এগিয়ে গিয়েছে।তুমি কেন একা থাকবে?”

“শুনেন আসিফ ভাই।আমার দ্বারা সংসার আর হবেনা।রোজ একটা টেনশন, কতোগুলো কার্টেসী মেইনটেইন করা।কিংবা সম্পর্ক নিয়ে সবসময়ের ভয়টা আমি চাইনা।বরং ক্লায়েন্ট ও স্টাফদের সাথে তর্কবহুল আলোচনাকে বেশী স্বস্তিদায়ক মনে হয়।আমি মায়ানকে ভালোবাসি না।সেক্ষেত্রে শোক পালনের প্রশ্নটি নেহাৎ অবাঞ্জনীয়।”

“বুঝলাম।আমাকে তাহলে সারাজীবন একা থাকতে হবে?”

আসিফের করুণ কণ্ঠে তাহিয়া হেসে উঠলো।

“আপনি ভীষণ বোকা আসিফ ভাই।যেখানে আজকাল স্বার্থের আড়ালে শত্রুকে সালাম দেয় মানুষ সেখানে ভালোবাসার জন্য সংসার ধর্ম পালন না করা বোকামো।”

“কিন্তু তোমার অনুযায়ী সংসার খারাপ।”

“যদি তাই হতো আমাদের মা-বাবা কীভাবে থাকলেন?সমস্যা টা হলো চাওয়া-পাওয়া দুই দিক থেকে থাকতে হয়।আপনি তো এক হাতে তালি বাজাতে পারবেন না।”

আসিফ বিজ্ঞের অনুরুপ মাথা দুলায়।এই জীবনে হয়তো চিরকুমার থাকতে হবে তাকে।ওদিকে দুজনের আলাপে মায়ান কৌতুহলী হয়।শুনতে মন চায় প্রাক্তন স্ত্রী কী কথা বলছে।ভরসার স্থান হিসেবে খুঁজে পেলো মেয়ে তোশাকে।যে গালে হাত দিয়ে একমনে কয়লা পুড়তে দেখছে।মায়ান তার পাশে গিয়ে বসলো।

“একা একা কী করো তোশা মা?”

“কিছুনা আসলে বোরিং লাগছে আমার।তোমরা সকলে তো ওল্ড।কীসব কথা আলাপ করো তা বুঝতে সমস্যা হয়।”

“ঠিক।সবসময় এমন ছিলনা।আসলে কবীর ইয়াং থাকতে..।”

মায়ানের কথা শেষ হওয়ার আগে জিহবায় কামড়ে নিজেকে শাসিয়ে নিলো তোশা।গোমড়া মুখে বলল,

“তোমরা ওল্ড না।কবীর শাহ তো আরো না।”

“তাহিয়াকেও তো ইয়াং লাগছে।আচ্ছা সত্যি কী তোমার মা আসিফ ভাইকে বিয়ে করবে?”

“করতেও পারে।”

“তুমি একবার বলেছিলে।মায়ের সঙ্গে এই ব্যাপারে ঠিকঠাক আলাপ কেন করো না?”

“করেছিলাম।তবে মা কী চায় সেটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ।”

তাহিয়া পূর্বের জায়গা থেকে উঠে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।কী সুন্দর হাঁটার ভঙিমা,শিল্পীর আঁকা প্রতিচ্ছবিও মনে হচ্ছে চল্লিশের পরেও।সুন্দর করে কপাল থেকে চুল সরিয়ে তোশাকে বলল,

“তোমার খুদা লাগেনি তোশামণি?আমার সাথে এসো।”

মায়ান যেন এই সুযোগের অপেক্ষাতে ছিল।তাহিয়াকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলার জন্য গলা পরিষ্কার করলো।কিন্তু আফসোস গলা থেকে বাঘের গর্জন আসা তো দূরের কথা।সামান্যতম বিড়ালের ম্যাও টি বের হলো না।তাহিয়া অবশ্য তোশার হাত ধরে তাকে নিয়ে অন্য একটি জায়গায় এলো।যেখান থেকে কবীরকে খুব ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে।তাদের কলেজের অনেকে থাকায় গোল হয়ে বসে কবীরের সাথে পাঞ্জা লড়ছে সকলে।অথচ আফসোস তামাটে পুরুষটির শক্তির কাছে অন্য কেউ পারবে নাকী?তোশার বুক কাঁপে।দীর্ঘ শ্বাস টানে।রোদে পোড়া কবীর শাহ আজকে অন্যরকম সেজেছে।বিশেষ করে চুলে নতুন ধরণের কাটে একটু বিশেষ লাগছে না?এইযে ঠোঁট কপাল কুঁচকে অপর পক্ষের মানুষকে শক্তিতে হারিয়ে দিচ্ছে এতে তোশামণি আরো নাজেহাল যেন।সে বুঝে পায়না শৈল্পিক এই মানুষটিকে কীভাবে পটিয়ে ফেললো?

কবীর একে একে সবাইকে হারিয়ে বেশ গর্ভের সাথে বলল,

“আমাকে হারানো এতো সহজ না।আর কেউ বাদ আছে?মায়ান এক হাত হবে নাকী?”

মায়ান ইশারায় না করে দেয়।কিন্তু একটি নারী কণ্ঠ বিচলিত করে তুলে সকলকে।

“আমি পারবো হারাতে।”

কবীর তোশার কণ্ঠ শুনে ভ্রুঁ কুঁচকালো।মেয়েটি অতি কনফিডেন্টের সাথে কবীরের সামনে দাঁড়ালো।

“আমি পারবো।”

কবীর গোপনে হাসে।অহংকারী সুরে বলে,

“বুঝে কথাটি বললে নাকী না বুঝে?”

“একদম বুঝে।এবং জিতবো আমি।”

“বাচ্চা দেখে কিন্তু আমি সেক্রিফাইজ করবো না।”

পাশ থেকে আসিফ বলে উঠলো,

“তুমি কিন্তু গল্পের সেই খরগোশের মতোন করছো কবীর।হতে পারে তাইয়ুবা হারিয়ে দিলো তোমাকে।”

“এমনটা যদি হয় আসিফ ভাই তাহলে বিরোধী দলের ভাগের একশটি ভোট আপনাকে এনে দিবো।”

“গোপন কথা এভাবে বলতে হয়না কবীর।বাই দ্য ওয়ে তাইয়ুবা এবার কিন্তু জিততেই হবে।”

তোশা অতি কনফিডেন্সের জোরে কবীরের সামনে বসে পড়লো।অতি চেনা ছোঁয়ায় শিহরিত হলো।হাতের তালুতে ছোট্ট হাতখানির কম্পন কবীর বুঝতে পারে।যখন শুরু হলো শক্তির পরীক্ষা আশ্চর্যভাবে কবীর হারছেনা।উল্টো জিতে যাচ্ছে।বিশ সেকেন্ড তার হাতের ভার বহন করতে গিয়ে নাজেহাল হলো তোশা।হেরে গেলো সে।আসিফ ইশ বলে আফসোস করে উঠলো।সকলের এমনভাব যেন এমনটা হওয়ার কথা ছিলনা।তোশা অবাক হয়ে কবীরকে দেখছে।জিতে যাওয়ার খুশিতে তামাটে পুরুষটির চেহারাতে আত্মগৌরবের ছায়া ফুঁটে উঠেছে।তোশার মন বলল হেরে গেলে কী হতো কবীর শাহ এর?

(***)

অন্ধকারে পদধ্বনি বড় অদ্ভূত গম্ভীর শোনাচ্ছে।বাড়ীর সবথেকে নির্জন জায়গায় একটা মেয়ে উড়ো উড়ো চুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।পিছন থেকে কেউ তাকে রহস্য ভৌতিক নারী বলে বিবেচনা করে নিতে পারে।কিন্তু তামাটে পুরুষটির কথা ভিন্ন।সে এগিয়ে এসে প্রাণ ভরে তরুণীর সুগন্ধ নেয়।

“তুমি বেবি পাউডার দেওয়া বন্ধ করবে কবে?এমনি বাচ্চা তখন আরো ছোট মনে হয়।”

কবীর শাহ কাঁধ ধরে মেয়েটিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো।আলো আঁধারে দেখতে পেলো তোশার চোখদুটো অশ্রুতে ভরে গিয়েছে।ঠোঁটটি উল্টিয়ে রয়েছে।বড় মায়া হলো কবীরের।নিজের হাতখানা দেখিয়ে বলল,

“এসো আবার পাঞ্জা ধরি।এবার তুমিই জিতবে।”

“না হবেনা।সকলের সামনে আপনি জিততে দেননি আমাকে।”

“তোমার হাত দেখো আর আমার হাত দেখো।কখনো দেখেছো সিংহকে বিড়াল হারিয়ে দিতে পারে শক্তিতে?”

“আমাকে বিড়াল বললেন কবীর শাহ?”

“নাহ নিজেকে সিংহ বললাম।”

তোশার চোখদুটো ছোট ছোট হয়ে গেলো।তখন হেরে যাওয়ায় মনটা কীনা এখনও খারাপ।গলাটা একটু পরিষ্কার করে কবীরের সন্নিকটে এলো।সাহস জুগিয়ে পুরুষটির কবজিতে কা’ম’ড়ে ধরলো।সময় যায় এক মিনিট, দুই মিনিট করে।কবীরের মুখের রঙ দ’ং’শ’নে বির্বণ হয়।কিন্ত তোশা নামক ছোট্ট বিড়াল সাহসী সিংহ কবীর শাহ এর কবজি ছাড়ে না।

“আহ! বিড়াল মেয়ে ছাড়ো তো হাতটা।”

তোশা নাছোড়বান্দা।ছাড়বে না হাত।নোনতা স্বাদ স্বাদগ্রন্থিতে লাগায় অবশেষে মায়া হলো।কবীরের বুকে মাথা ঠেকালো।

“আমি ভেবেছিলাম জিতে যাবো।প্রেমিকরা নিজ প্রেমিকাকে জিতিয়ে দেয়।আমি ভুলে গেছিলাম আমার প্রেমিক কবীর শাহ।”

গা দুলিয়ে হাসলো কবীর।সুন্দর করে বলল,

“আমার মধ্যে পার্থক্যটি কী?”

“কিছুনা।আপনি ভীষণ আনরোমান্টিক।”

হুট করে কবীর তোশাকে উঁচু করে ধরলো।তরঙ্গায়িত হয়ে গেলো তরুণীর মন।কোমড়ে শক্ত হাতের ছোঁয়ায় শিওরে উঠলো।মেয়েটির পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে কবীর শুধালো,

“কী বললে আমি কী?”

“আআআআআআনননননরোরোরোমা..।”

“তুমি সারে গা মা পা কেন বলছো?”

কবীরের শান্ত অথচ গম্ভীর দৃষ্টি তোশাকে বিভ্রান্ত করে তুলছে।মিনিট খানেক পর কবীর তাকে নামিয়ে দিলো।দূরে সরে গেলো।ঈগলের অনুরূপ কঠিন ব্যক্তিত্বের মানুষটিকে তোশার বড় মায়াময় লাগছে।

দূরে গিয়ে এমন এক জায়গায় দাঁড়ালো কবীর যেখানে তোশার ছায়া পড়ে।ঝুঁকে মেয়েটির ছায়াকে চুমো খেলো কবীর।শীতলতা ছড়িয়ে পড়লো তোশার অন্ত:করণে।শিহরণে লাফ দিয়ে অপর দেয়ালে মিশে গেলো।কবীর সোজা হয়ে দাঁড়ালো।তরুণীর নি:শ্বাস আরো গম্ভীর হচ্ছে।

“আমাদের আর তিনদিন পর বিয়ে বেলাডোনা।”

চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।

মিঠা রোদ পর্ব-৪২+৪৩+৪৪

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪২
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“প্রেমে বাঁধা না এলে তা প্রেম নয় বন্ধুত্ব।সেক্ষেত্রে আমি এমন বন্ধুত্বে বিশ্বাসী নই।”

“তুমি প্রেম ব্যাপারে অনেক কিছু জানো দেখছি।কাওকে ভালোবাসো তোশা?”

কল্লোলের প্রশ্নে তোশার দৃষ্টি থমকে গেলো।সে বিভ্রান্ত হয়ে বলল,

“বাসি।কেন বলো তো?”

“কথাটা অস্বীকার কেন করলে না?মানে আমার থেকে লুকানো উচিত ছিল তোমার।”

যুবতী কন্যার মন কাড়া হাসি অধরযুগলে।যেন কোনোকিছু লুকানোর নেই।

“নিজের অনুভূতি প্রকাশে লজ্জাবোধ আমার হয়না।”

“তুমি এমন ছিলেনা তোশা।ছোট্ট হৃদয়ের সকলের তোশামণি ছিলে।”

“এখনও তা আছি।শুধু তোমার দেখার দৃষ্টি ভঙ্গি বদলেছে কল্লোল ভাইয়া।”

“নাহ।আমি এক দৃষ্টিতে তোমাকে আজীবন দেখেছি।কিংবা দেখবো।”

তোশা প্রসঙ্গ বদলে ফোনটায় ব্যস্ত হয়ে উঠলো।কল্লোলের পুরোনো দৃষ্টি তার মুখবিবরে লুটোপুটি খাচ্ছে।সত্যি কী মেয়েটি পূর্বের মতোন আছে?কল্লোলের ভেতর হতে কোনো স্বত্তা তা অস্বীকৃতি জানালো। নারীরা বোধহয় তাদের প্রতি প্রেমময় দৃষ্টিকে উপলব্ধি করতে পারে।তোশার এতো কাছে থেকেও কল্লোল মন স্পর্শ করতে পারেনি?আফসোস!

আজ মায়ান তার দ্বিতীয় পরিবার নিয়ে দেশে ফিরছে।এয়ারপোর্টের বাহিরে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে তোশা।যদিও তার ইচ্ছে ছিলনা এখানে আসার।কিন্তু বাবার মন খারাপ হবে কিংবা কবীরের কথায় এসেছে।গাড়ীতে বসে ফোন টিপছে এমন সময় জানালার কাঁচে আঙুলের টোকা পড়লো।ওপর প্রান্তের মানুষটিকে দেখে তোশা তড়িঘড়ি করে নেমে এলো,

“কেমন আছেন ফুপু?”

লায়লা বিরস মুখে জবাব দিলো,

“ভালো।তোমার মা এসেছে?”

“মায়ের আসার কথা ছিলনা।”

“তা ঠিক।”

লায়লা অবশ্য তোশার কথাটি আরেকবার পরীক্ষা করার জন্য গাড়ীর ভেতর দৃষ্টি দিলো।কল্লোল সালাম দিলো তাকে।

“তোশা,আম্মু-আব্বু আছে।তাদের সাথে একবার যোগাযোগ করে আসতে পারতে।থাক সেসব কথা।তোমার মা না করে তুমি বাচ্চা মেয়ে আর কী যোগাযোগ করবে?চলো সকলের সাথে দেখা করবে।শুনলাম অভিনেত্রী হয়েছো।নাটকটা বেশ হয়েছে।ভালো লেগেছে আমার।”

“ধন্যবাদ ফুপু।আপনারা যে দেখেছেন জানতাম না।”

“না দেখে উপায় ছিল নাকী?মায়ান ভাই রোজ কল করে বলতো।কল্লোল তুমি কী গাড়ীতে থাকবে?আমাদের সাথে চলো।”

“আমি গাড়ীটা ভালো জায়গায় রেখে আসছি।”

তোশা ও লায়লা একসাথে হেঁটে যাচ্ছে।দাদীর বাড়ীর লোকের সঙ্গে আহামরি ভালো সম্পর্ক নেই মেয়েটার।ওইযে চলনসই কিছু অবশিষ্ট আছে।মায়ানের বাবা-মা নিজের নাতনিকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন।হাজার হোক তার ছেলের সন্তান তো।ফুপা আইসক্রিম কিনে দিলো তোশাকে।কিন্তু মেজো চাচা-চাচীর ব্যবহার অনেক ঠান্ডা।তোশা খেয়াল করলো তার হাতে থাকা আইসক্রিম যেমন ঠান্ডা।

“কবীর ভাই আসছে আম্মা।দেখো দুজনের বন্ধুত্ব।এতোদিনেও মিটেনি।কতো কাজ ফেলে ঠিক দৌড়ে আসছে।”

লায়লার কথায় মুচকি হাসলো তোশা।যাদের মধ্যে এতো ভালো বন্ধুত্ব তা কখনো ভাঙবে নাকী?কবীর নামের সঙ্গে তামাটে পুরুষটি এসে হাজির।কালোদের নাকী কালো পরতে নেই?কিন্তু তোশার মনে হলো কথাটি পুরোপুরি ভুল।ব্ল্যাক শার্ট ইন করে পরায় কবীরের দর্শনে তোশার মনটা কী দূর্বল হয়ে উঠলো?কী সুন্দর কায়দা করে হাঁটে লোকটা।কবীর এসে সরাসরি মায়ানের বাবা-মায়ের সঙ্গে আলাপ করে নিলো।একবার তোশার সঙ্গে অবশ্য দৃষ্টি বিনিময় হলো।

“লায়লা,ওদের এখন বের হওয়ার সময়।তোমরা এখান থেকে সরে গিয়ে বসো।আমি মায়ানদের নিয়ে আসছি।”

“জি ভাই।একা যাবেন?”

“না তোশা যাবে সাথে।বাবা এতোদিন পর মেয়েকে দেখলে একটু বেশী খুশি হবে।”

তোশা যেন এই মুহুর্তের অপেক্ষায় ছিল।মাথা নিচু করে হেসে কবীরের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটা আরম্ভ করলো।ক্ষণ দূরত্ব অতিক্রম করে তোশার আধখাওয়া আইসক্রিমটা এঁটো করে দিলো কবীর।ফিসফিস করে কন্যার উদ্দেশ্যে বলল,

“ভালোবাসা বাড়িয়ে দিলাম মাই লাভ।”

“কেউ দেখলো না তো?”

“এতো ভয়?”

“আমার নেই।যদি আপনি পান ভয়।”

“হুঁ?পাগল মেয়ে।স্মরণে আছে আমি বলেছিলাম আমি ব্যাথাময়?তো যে আ’ঘা’ত দিতে জানে সে কখনো ভীতু হয়না।”

“আজ আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে জানেন?”

“তোমার কণ্ঠে নতুন কিছু নেই বেলাডোনা?আমার প্রশংসায় সবসময় নিজেকে মাতিয়ে রাখো।চলো মায়ান বের হবে।”

কবীরের শক্ত হাতটা আকড়ে ধরলো তোশা।পৃথিবীর সকলকে জানাতে ইচ্ছা হয় মাঝেমধ্যে তার।এই মানুষটির সঙ্গে সে প্রেম করছে।এইযে সুবিশাল লম্বা দেহ ও বিশাল শরীরের মানুষটি।শুধু মাত্র তার ভালোবাসা।

মিনিট দশেক পর মায়ানের দেখা মিললো।বাবার সঙ্গে দেখা হবে এটা নিয়ে সে খুব একটা উত্তেজিত না হলেও মানুষটাকে যখন স্বচক্ষে দেখলো তখন বুকটা ভারী হয়ে গেলো তার।এইযে পাতলা গড়নের সাদামাটা লোকটা মায়ান চৌধুরী।তাইয়ুবা চৌধুরী তোশার বাবা।চোখের কার্ণিশে অশ্রু এসে গেলো মেয়েটির।অবশ্য একই অনুভূতি মায়ানেরও হলো।সকলকে ভুলে সে আগে তোশাকে দেখলো।আত্নাটা কেমন করে উঠলো তার।পাশে থাকা নিজের দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী টিনাকে বলল,

“আমার মতোন অসুন্দর একটা মানুষের ঘরে এতো সুন্দর হীরা কীভাবে এলো?”

স্ত্রীর জবাবের আগে তোশাকে চিল্লিয়ে ডেকে উঠলো মায়ান।কাছে গিয়ে জড়িয়েও ধরলো।বাবার স্পর্শে মেয়েটাও গলে গিয়ে কেঁদে উঠলো।একটা বৈবাহিক বিচ্ছেদে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়তো সন্তানের হয়।

“তোশামণি আমার মেয়ে।আমার মা।দেখি কতো বড় হয়ে গিয়েছে।এতো সুন্দর হয়েছো।জানো টিনা, তাহিয়া এমন দেখতে ছিল।ঠিক যেন তাহিয়া?”

টিনা নির্বিকার হাসলো।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নিজের ছোট্ট ছেলে মেয়ের হাতগুলো শক্ত করে ধরলো।কিছুক্ষণ বাবা-মেয়ের মিলনের পর মায়ান তাকে ছাড়লো।

“কবীর,তুই সর।তোর এতো রুপের আগুনে আমার চোখটা জ্ব’লে যাচ্ছে।”

কবীর হাসতে হাসতে জবাব দিলো,

“চোখ বুড়ো হয়ে যাচ্ছে।সেই বাহানা দে ব্যাটা।তার আগে বুকে আয়।”

কবীরের সঙ্গে আলিঙ্গনে মত্ত্ব হলো মায়ান।তোশা নিজেকে ঠিক করতে ব্যস্ত।টিনা এক দৃষ্টিতে তাকে দেখছে।নিজের উপস্থিতি মায়ানকে মনে করিয়ে দিয়ে টিনা শুধালো,

“মেয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবেনা মায়ান?”

“ও হ্যাঁ।তোশা এটা তোমার মা।”

নিজ পিতার দিকে কেমন বর্ণনাহীন দৃষ্টি দিলো তোশা।কবীর অবশ্য বুঝতে পারলো মায়ানের ভুল সম্বোধন।কিন্তু সে আগ বাড়িয়ে কিছু বলল না।বরং তোশা জবাব দিয়ে বলল,

“আমার মা তো বাসায়।হ্যালো আন্টি আমি তোশা।”

টিনা অবশ্য অপ্রীতিকর অবস্থা হাসিমুখে কাঁটিয়ে নিলো।কবীর তাড়া দিয়ে মায়ানদের এগিয়ে যেতে বলল।বাবাকে দেখে যতোটা খুশি হয়েছিল তোশা তা ঝোড়ো হাওয়ায় ভোঁ’তা হয়ে গেলো।বিরস মুখে এগিয়ে যেতে নিলে কবীর হাতখানা ধরে থামিয়ে দিলো,

“কী সমস্যা?”

“আমার মা একজন।বাবা কেন তাকে আমার মা বলল?হতে পারে তার স্ত্রী দুজন ছিল।”

“রিলাক্স মেয়ে।আহনাফ তোমাকে কখনো মা ডাকবেনা বলে মনে হয়?”

“কিন্তু..।”

“তোমার বাবা দেশে এসেছে।এখন নানান ধরণের কথা হবে।সবকিছু রেখে চলতে হবে।”

“আমি একা পারবো না।”

কবীরের ভ্রুঁ আন্দোলিত হলো।প্রেমিকার নরম হাতখানি নিজের বুকের পাশে রেখে শুধালো,

“কবীর শাহ তার ভালোবাসাকে একা রেখে কখনো সরে যাবে মনে হয়?স্বপ্ন দেখো সুন্দর একটি ভবিষ্যতের।তাছাড়া অন্য সবকিছুতে রেস্ট নাও।লিটল চেরীর এতো ভাবতে হবেনা।”

“আপনি সত্যি আমার সাথে থাকবেন?”

“এটা আমার থেকে লিটল চেরীর মনটা ভালো জানে।চলো এখন।”

“কিছুক্ষণ কথা বলেন আমার সঙ্গে।”

“এতো কী বলবে শুনি?”

মায়ান অনেকটা এগিয়ে গিয়ে কবীর-তোশার খোঁজে পিছন ফিরে এসেছিল।কিন্তু সামনে থাকা দৃশ্যটি তার মনে দাগ কেঁটে দিলো।এমন না কবীরের মুখের হাসি সে কখনো দেখেনি।কিংবা তোশার কথা বলার বাচনভঙ্গি।মায়ান পূর্ব থেকে বিচক্ষণ মানুষ।প্রথম দেখায় কারো মধ্যে কেমন অনুভূতি চলছে তা বলতে পারে।আশ্চর্যভাবে তা মিলে যায়।তোশা ও কবীরের মধ্যে এখনও আলাপ চলছে।কন্যার হাতটাও তামাটে পুরুষের বক্ষ সীমানায়।

“তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেন?মায়ান?”

“টিনা তুমি একা কেন?বাচ্চারা কোথায়?”

“লায়লা আপুর কাছে।”

“একটা জিনিস দেখো তো ওদিকে।আমার মেয়ের হাত কেন কবীর ওভাবে ধরে আছে?”

“কী বলতে চাও?দেখো ইঙ্গিতটা কিন্তু ভীষণ..।”

“আমি নিজের বন্ধুকে বিশ্বাস করি।সঙ্গে মেয়েকেও।”

“তাহলে?বাদ দাও এসব।”

“টিনা তুমি বুঝতে পারছো না।আমি কী নিজের পঁচিশ বছরের বন্ধুকে চিনবো না?তার চাহনি কিংবা হাসি?”

“রিলাক্স মায়ান।তুমি কেবল দেশে এলে।।সত্যিকার অর্থে কী বুঝতে চাচ্ছো?”

“জানিনা।কিন্তু শুধু এটা বুঝতে পারলাম।আমার বন্ধু কবীর শাহ একজন পুরুষ।এবং বিশ বছরের ছোট্ট তোশামণি একজন নারী।”

“এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে জাজ করছো?”

“অভিজ্ঞতা।”

মায়ান থামলো।পুনরায় কবীরের চোখের দৃষ্টিতে দেখলো।তোশাকে একমনে দেখে যাচ্ছে সে।কী অদ্ভূত মায়াময় দৃষ্টি কবীরের।মায়ান শুকনো ঢোক গিলে বলল,

“আমি কবীর শাহ এর চোখে এই দৃষ্টি নতুন দেখছি।তবে অনুভূতিগুলো উপলব্ধি হচ্ছে।অথচ যদি আমি ভুল প্রমাণিত হই।তাহলে কতো না ভালো হবে।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪৩
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আঠার বছর বয়স তো।দুনিয়া রঙিন মনে হবে।এরকম করে হাসাহাসি বন্ধ করো।আশেপাশের মানুষের সমস্যা হচ্ছে।”

দিশার স্বাবধান বাণীতে কিশোরী গুলো বিরক্তবোধ করলো।কিন্তু এতে অবশ্য কাজ হলো।নিজেদের কণ্ঠ খাঁটো করে নিলো।দিশা লম্বা শ্বাস নিয়ে পুনরায় নিজের ফোনে মনোযোগ দিলো।ক্ষাণিকক্ষণ বাদে চিরপরিচিত কণ্ঠে মুখে হাসি ফুঁটে উঠলো তার।

“মায়ান!কেমন আছো?কতোগুলো দিন পর।”

বিনিময়ে মায়ান হেসে বলল,

“আমি ভালো আছি।তা বলো তো।তোমরা নিজেদের এতো মেইনটেইন করো কীভাবে?সবগুলো এখনও নজরকাড়া রয়ে গেলে।মনে হয় না বয়স চল্লিশ।”

“প্রশংসা নাকী নিন্দে করলে?”

“অবশ্যই প্রশংসা।”

“টিনাকে নিয়ে এলে না কেন?ওর সাথে দেখা করার ইচ্ছে ছিল।”

মায়ানের মুখটি গম্ভীর হতে দেখা গেলো।নিজস্ব ফোনটা সুইচড অফ করে শুধালো,

“তোমার মনে আছে?আমার ধারণা করার ক্ষমতা অনেক?মানে যার ব্যাপারে যেটা বলতাম।ঠিক সেটা মিলে যেতো।”

“আছে।হঠাৎ এই প্রশ্ন যে।”

“দেশে ব্যাক করার পর এয়ারপোর্টে কবীর-তোশা গিয়েছিল।তাদের একান্তে কথা বলা।একে অপরকে দেখে হাসা আমার কাছে স্বাভাবিক লাগেনি।তুমি জানো কবীরকে কতোগুলো বছর ধরে চিনি।আমি কীভাবে ভুল হতে পারি যে ও আমার মেয়েটাকে পছন্দ করে।তুমি কী এই ব্যাপারে কিছু জানো?তোশার ম্যাডামও ছিলে তুমি।কখনো এরকম কিছু…।”

দিশার ঘোলাটে দৃষ্টি মায়ানের মুখবিবরে লুটোপুটি খেতে লাগলো।সময়ের সঙ্গে প্রশ্নের জবাব দেওয়ার কৌতুহল বেড়ে যাচ্ছে তার মনে।পাশ থেকে কিশোরী গুলোর খিলখিল আওয়াজে দিশার ধ্যান ভাঙলো।

“আমি কিছু জানিনা মায়ান।হতে পারে তোমার দেখার ভুল।”

“এতো বড় ভুল হবে?আমি কখনো ভুল প্রমাণিত হইনি।”

“তাহলে দেখা যাচ্ছে তোমার ধারণা করার রোগটি এখনও সারেনি।”

“রোগ বলো না।সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত একটি উপহার।তা নয় আমি যেমনটা ধারণা করলাম তোমার সংসার কিংবা নিজের সংসার নিয়ে।ঠিক সেটাই তো শেষটাতে গিয়ে হলো।মনে করে দেখো কবীরের সাথে ঝগড়ার পর সবসময় আমি বলতাম সংসার টিকবেনা।এবং শেষটায় তাই হলো।বাই দ্যা ওয়ে পুনরায় বিয়ে কেন করছো না?”

“তুমি কেন ডিভোর্সের পর এতো জলদি বিয়ে করে নিয়েছিলে?ওয়েট আগে খাবার অর্ডার করে নেই।”

ওয়েটার এসে খাবারের অর্ডার নিয়ে গেলো।দিশা পুনরায় প্রশ্নটির কথা মায়ানকে মনে করিয়ে দিলো।অদ্ভূত এক জবাব দিলো সে..

“সঙ্গীবহীন থাকতে কষ্ট লাগছিলো দেখে বিয়ে করে নিয়েছি।”

“এরপর তোমার সব কষ্ট চলে গিয়েছে?তাহিয়ার সঙ্গে বিচ্ছেদে আফসোস হয়না?”

মায়ান অনেকটা জলদি জবাব দিলো,

“কষ্ট হয়।কিন্তু পরিমাণ কম।”

“বেশ।তবে আমার একাকিত্ব বোধ হয়না।বিশ্বাস করো তাহিয়ারও হয়না।তাইতো দুজনে কাওকে জীবনে আসতে দেয়নি।অথচ তোমরা।”

“তোমরা?কবীর কাওকে পছন্দ করে?সত্যি করে বলো।”

দিশা প্রসঙ্গ বদলানোর নিমিত্তে বলল,

“আমি কবীরের ব্যাপারে কিছু জানিনা।যদি পছন্দ করে থাকে সেক্ষেত্রে ভেবে নিবো যে মেয়ে পছন্দ করে তাকে সে যোগ্য হীরাকে পছন্দ করে।”

“তোমাদের কবীরকে উপরের স্তরের ভালো বলার অভ্যেসটা কখনো গেলো না।স্কুল, কলেজে সকলের দৃষ্টিতে আজও কবীর ভালো।কিন্তু আমি আবার স্বাবধানী।ছেলে মানুষ একা থাকে।তাই..।”

ওয়েটার খাবার দিয়ে গেলো।চামচ দিয়ে অল্প মুখে নিয়ে দিশা শুধালো,

“সময়কে সময় দাও।দেখবে শেষটায় যা হওয়ার তাই হবে।তবে কী জানো মায়ান?তুমি ধারণা করা বন্ধ করে দাও।যদি বছর বছর পূর্বে আমার ক্ষেত্রে ঝগড়া মিটিয়ে নিয়ে সংসারের পরামর্শ দিতে।কিংবা তা নিজেও মানতে তাহলে হয়তো আজ সবকিছু শেষ হতো না।ভবিষ্যতে একটা তেঁতো কান্ডের সূচনা তৈরী হতো না।”

“এখন সব দোষ আমার ধারণার দিওনা।ডিভোর্স তো দুটো দম্পতির মধ্যেকার ব্যাপার।”

দিশা ধীর কণ্ঠে মাথা দুলিয়ে বলল,

“যতোক্ষণ না সেখানে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ ঘটে।”

“বাদ দাও দিশা।যাক মেয়ে নিয়ে যে টেনশনের কিছু নেই এটাতে খুশি আমি।”

বিনিময়ে দিশা মুচকি হাসলো।সে সত্য বলে দোষের ভাগীদার হতে চায়নি।এই কারণে মিথ্যার আশ্রয়টি গ্রহণ করেছে।সে বুঝেছিল মায়ান দেশে এলে বিষয়টা বুঝবে।যেহেতু এতোটা খেয়াল করেছে বাকীটা না হয় নিজে বের করুক।তবে তার কাছে একটি বিষয় অদ্ভূত লাগলো হুট করে দেশে এসে তোশার ব্যাপারে পজেসিভ হয়ে উঠেছে তার বাবা।অথচ কতোগুলো বছর দায়িত্ব পালনে অপারগ ছিল।

(***)

“আপনি পরকীয়া করছেন কবীর শাহ।আপনি এই আপনি ঠিক নেই।”

“কী বলতে চাও?আমি কেন ঠিক থাকবো না?”

প্রশ্নের সঙ্গে কবীরের ভ্রুঁ জোড়া আন্দোলিত হলো।তোশা ক্রন্দরত কণ্ঠে পুনরায় বলল

“পুরো বিশ্বে একটা জিনিস আগুনের মতো ছড়াচ্ছে।মানুষ বিশ,পঁচিশ, ত্রিশ বছর বাঁচার পর পুরুষ থেকে নিজেকে নারী ভাবা শুরু করে।আপনি ও কী এমন?দেখেন আমি অনেক সুন্দর।হতে পারে উল্লাসের মতোন বডি ফিটনেস এতো সুন্দর না।”

নিজের নাম শুনে উল্লাস মুখের উপর থেকে ম্যাগাজিন সরিয়ে দিলো।তোশার উদ্দেশ্যে চিল্লিয়ে শুধালো,

“তুই কী বলতে চাস তোশামণি?”

“বলতে চাচ্ছি দুজন সুপুরুষ একে অপরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করছে।এটা নিশ্চয় ভালো কিছু না।তারা সবসময় একে অপরের সাথে থাকছে।এরকম গোপন জায়গায় আসছে।”

“তাই তারা সম্পর্কে আছে?”

“হুঁ।”

কবীর-উল্লাস নিজেদের দৃষ্টির বিনিময় করে নিলো।দীর্ঘ শ্বাস ফেলে উল্লাস বলল,

“কবীর স্যার,আমার পক্ষ থেকে নিজের প্রেমিকাকে জোরে করে একটা চ’ড় দিবেন।এমনভাবে হাতের কাজ সারবেন যে হাতের পাঁচটা আঙুল যেন বোঝা যায়।”

কবীর অবশ্য হাতের কাজ দেখালো না।তোশাকে নিজের কাছে টেনে বলল,

“এসব কোথা থেকে শিখলে?ইন্সটা রিলস?”

“হুঁ।”

“বোকা মেয়ে।আমরা গভীর একটা কাজে এসেছি।জেদ করলে দেখে নিয়ে এলাম।উল্লাস একটা সমস্যায় পড়েছে আসলে।একজন রিপোর্টার ওর নামে ষ’ড়’য’ন্ত্রে লিপ্ত।সেটাকে একটু টাইট দিতে।”

“তাই?”

“হ্যাঁ।এখানে বসো।আমরা ওদিকটায় আছি।ভয় নেই তোমার সাথে আমার স্টাফ থাকবে।”

কবীর ইদানীং খুব নরম করে কথা বলে তোশার সঙ্গে।আজ তো আশ্চর্য কাজ করলো তামাটে পুরুষটি।পুরু উষ্ণ ঠোঁট দাঁড়া কপােলে চুমো খেলো মেয়েটির।

“আমি সব পরিস্থিতিতে তোমাকে ভালোবাসি বেলাডোনা।এখানে থাকো।আসছি একটু পর।”

উল্লাসকে ইশারায় নিজের সাথে আসতে নির্দেশ দিলো কবীর।তারা দুজন স্বচ্ছ কাচের দেয়ালে তৈরী একটা ঘরে ঢুকলো।একটা ধূর্ত লোক সেখানে প্রবেশ করতেই উল্লাস জোরেশোরে চ’ড় মেরে মাটিতে ফেলে দিলো।এরপর শুরু হলো কবীরের কাজ।তোশা তো পূর্ব থেকে এই পুরুষটির উপর মুগ্ধ ছিল।আজ যেন শতগুণে বেড়ে গেলো।লোকটাকে শা’স্তি দিচ্ছে কিছুর?তা নয় এতোটা ম’রি’য়া হয়ে আ’ঘা’ত করছে কেন?এলেমেলো কবীর শাহ তোশার হৃদয়ের স্পন্দন বাড়িয়ে দিচ্ছে।মেয়েটি তো পুরুষটির কপালের ঘাম মুছে নেওয়াকেও শৈল্পিক ধরে নিলো।যে লোকটাকে শা’স্তি দিচ্ছে সেই লোকটা বারংবার ভ’য়ে তোশার দিকে তাঁকাচ্ছে।হুট করে মেয়েটির মনটা কেমন করে উঠলো।সে নিজেকে প্রশ্ন করলো,

“কবীর শাহ কেন বলল সে সব পরিস্থিতি তে তাকে ভালোবাসে?কী এমন পরিস্থিতির উদয় ঘটলো?”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪৪
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আপনি লোকটাকে এভাবে মা’র’লে’ন কেন?”

“সেটা তোমার জানা আবশ্যক নয়।তবে মনে রাখো আজকের পর থেকে কখনো অভিনয় জগতের নামটাও নিবেনা।”

কবীরের লম্বা পা ফেলার সঙ্গে ঠিক পেরে উঠছেনা তোশা।দৌড়াতে হচ্ছে রীতিমতো।নিজের শারীরিক গঠণ নিয়ে প্রথমবারের মতোন আফসোস হলো তার।

“আমাকে বলতে হবে আপনার।কেন লোকটার এই অবস্থা করলেন।এবং অভিনয়ের সঙ্গে কীসের সংযোগ?”

“সব শুনতে হবে তোমার?”

তোশা মুখটা উঁচু করে বলল,

“হ্যাঁ।”

“আমি বলতে বাধ্য নই।”

“আরে কবীর শাহ।”

কথা বলতে বলতে নিচে নেমে এসেছে তারা।উল্লাস পূর্বেই নিজের গাড়ী নিয়ে চলে গিয়েছে।তোশাকে টেনে গাড়ীর ভেতর বসালো কবীর।

“তোশা মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনবে।অভিনয় জগত যতোটা চাকচিক্যময় দেখা যায় বস্তুত পক্ষে বিষয়টা তা নয়।একটা কনটেন্ট সেটা হোক সিনেমা,নাটক,শর্ট ফ্লিম তা হিট করানোর জন্য অনেকগুলো উপায় তৈরী করে।তোমার নাটকটা হিট করেছে।যা মানানসই।কিন্তু প্রোডাকশন টিম আরো বেশী হিট করার জন্য তোমার ফ্যামিলির কিছু ব্যাপার নিয়ে অপব্যবহার করতো।উল্লাস বিষয়টি জেনে আমাকে বলল।দেখো অভিনয় খারাপ সেটা নয়।বরং মার্জিত অনেক কিছু সিনিয়র এক্টররা তৈরী করেছেন।তুমি বুঝতে পারছো আমি কী বললাম?”

তোশা বিস্ময় নিয়ে কবীরের ঘর্মাক্ত মুখটা দেখছে।দীর্ঘ ললাট,পুরু অধরযুগলে মায়া জড়ানো।তোশা মুখ ফসকে বলে ফেললো,

“অপব্যবহার করলে কী হতো?মানুষ কী এখনও এতোটা বোকা যে অন্যের ফ্যামিলিতে কী চলে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাবে।”

“জীবন এখন এমনটাই রয়েছে।বিষয়টা বলতে চাইনি।”

“আমার ফ্যামিলির ঠিক কোন বিষয়টা নিয়ে নিউজ হতো?”

“তোমার মা-বাবার বিয়ে।ডিভোর্স এসব।বাদ দাও।”

কথার সমাপ্তিতে গাড়ী চলতে শুরু করলো।তোশার কৌতুহলী মন।সে পুনরায় শুধালো,

“বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়েছে।তার মানে কী পরিবার খারাপ?শুধু শুধু।”

“হুম।”

তোশার মন অবশ্য সেটা মানলো না।স্মরণে হচ্ছে কিছু একটা লুকাচ্ছে কবীর।ঠান্ডা বাতাসে হালকা শীত লাগছে তোশার।গা গরম হওয়ার জন্য হাতে হাত ঘর্ষণ করলো।

“এসি অফ করে দিবো?”

“উহু।আপনি কিছু লুকাচ্ছেন।আমাকে সেটা বললে কী হয়?”

“শুনতে ভালো লাগবেনা।কিন্তু বিষয়টা না জানলে ভবিষ্যতে আবার মানুষ দূর্বলতা ভেবে নিবে।”

“ভয় দেখাচ্ছেন?”

কবীর নিশ্চুপ থেকে গাড়ী অচেনা একটা রাস্তায় নিয়ে গেলো।ক্ষণবাদে বিশাল বড় একটি বাড়ীর সামনে তা থামালো।বাড়ীটা এখনও পুরোপুরি তৈরী হয়নি।কবীর প্রথমে বের হয়ে তোশাকেও পথ করে দিলো।

“এটা কার বাসা?”

“মি.কবীর শাহ ও মিসেস.তোশা চৌধুরীর।”

শিহরণ বয়ে গেলো তোশার শরীর মন জুড়ে।মাথাটি নিচু হয়ে গেলো।কবীর বাঁকা হাসলো যুবতীর লজ্জা দেখে।কাছে এসে উষ্ণ শ্বাসের ছোঁয়া দিলো তোশাকে।

“মিসেস বলায় এতো লজ্জা?অথচ মানুষ শুনলে বলবে কী বুড়োর সাথে প্রেম করছে।”

“আপনি মটেও বুড়ো না।”

“সে তুমি মন ভুলানো যাই বলো।নেমে এসো।”

কবীরের শক্ত হাত খানা ধরে নেমে এলো তোশা।বাড়ীর চারিধারে উজ্জ্বল লাইট জ্বলছে।কয়েকজন দারোয়ানও রাখা হয়েছে দেখা যাচ্ছে।কবীর সোজা তোশাকে নিয়ে ছাদে চলে এলো।সাদা-কালো রঙে মেতে থাকা অনুভূতিহীন ঢাকা শহরকে দেখে তোশার দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো।কবীর তার পাশটায় এসে দাঁড়ালো।সমীরণে পুরুষটির কপালের চুলগুলো উড়ছে।

“বাবা -মায়ের বিয়ে নিয়ে কতোটা জানো তুমি?”

“এটা যে অনেক ছোট বয়সে বাবা মনে করলো মাকে বিয়ে করে ফেলবে।তাই করলো।কিন্তু আমি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে..।”

“মায়ানের হঠাৎ এই খেয়াল কেন এলো কখনো ভেবেছো?মায়ান-তাহিয়া এক জায়গায় ঘুরতে গিয়েছিল কলেজ মিস দিয়ে।সেখানে কিছু ছেলেরা তাদের আঁটকে রাখে একদিন।পরবর্তীতে বিষয়টা ঢাকতে বিয়ের কথাটি ছড়ানো হয়।প্রায় তিনমাস দুজনে বিয়ে ছাড়া সংসার করেছে।বিষয়টা কিছু মানুষ জানতো।তাদের থেকে কীভাবে তোমার টিমেরা খবর পেয়েছে সেটা জানা নেই।”

“কবীর শাহ আমি বৈধ সন্তান তাদের?”

মেয়েটির কণ্ঠে কিছু একটা ছিল।যা কবীরকে বিভ্রান্ত করে দিলো।সে শশব্যস্ত হয়ে বলল,

“এই চুপ।তুমি শুদ্ধ একজন মানুষ।এমনটা ভেবো না।”

” তাহলে এভাবে কেন বলছেন?কেন বা আমাকে জানাচ্ছেন?নাহ আপনি সব বলছেন না।আমার জন্ম ইতিহাস আরো গভীর কিছু আছে।”

“নেই।এতোটুকু জানা প্রয়োজন ছিল।যাতে তুমি নিজেকে ডিফেন্ড করতে পারো।বেশী ভেবো না।”

“আপনি আমাকে স্বাত্বনা দিচ্ছেন?”

“নিজের মায়ের পবিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন আছে তোমার?”

“না।”

“সেখানে এসব প্রশ্ন করা উচিত নয়।তারা নিজেদের সংযত রেখে পরবর্তী বিয়ে করে নিয়েছে।”

“আপনি সত্যিটা বলেন।”

“এটাই সত্যি।”

কবীরের খামখেয়ালিপনাতে তোশার রাগ উঠে গেলো।সে কাছে টেনে লোকটাকে শুধালো,

“আপনি কী আমাকে বলদ ভেবেছেন?এটাকে ইস্যু ধরে কীভাবে কী রটাতো লোকটা?”

“বলদ ভাবার কিছু নেই।টেকনিকালি তুমি সেটাই।”

অপমানে কেঁদে ফেললো তোশা।অন্ধকার ময় পরিবেশে যা ভুতুড়ে লাগলো।কবীর নিজের সঙ্গে কিছু একটা বলল।গরম লাগছে তার।অকস্মাৎ নিজের গায়ের শার্টটি খুলে ফেললো সে।তোশা কান্না থামিয়ে একমনে তা দেখছে।

“কী হলো কান্না থামালে কেন?শুনতে মধুর লাগছিলো।”

“আপনি কতোটা পা’ষা’ণ জানেন?”

“তাহিয়া-মায়ান কখনো এমন কিছু করেনি যার জন্য নিজেকে অপবিত্র বলবে।”

“আব্বুকে কবে আমাদের কথা বলবেন?”

“কেবল দেশে এলো।কয়দিন অপেক্ষা করো।”

“মিথ্যুক।আপনি বলবেন না।পরে সব শে’ষ হয়ে যাবে।”

“মেয়ে মানুষ তো সবুর নেই।”

“এই ছেলে মানুষ,আপনার সবুর দেখি।দেখি আপনার সবুর।”

“ওইযে আমার মাথায় সবুর।”

তোশা এগিয়ে এলো কবীরের কাছটায়।কিন্তু যেই না তাকে স্পর্শ করতে যাবে ঠিক তখুনি কবীর হাত মুচড়ে তাকে নিজের কাছটায় নিয়ে।

“আগামী সাতদিন পর আপনাকে আমি নিজের করে নিবো।বিয়ের জন্য খুব লাফান না তোশামণি?নিজেকে তৈরী করে নেন।”

তোশা অবাক হয়ে কবীরের সামনে দাঁড়ালো।বিস্ময় কণ্ঠে বলল,

“সত্যি?”

“হ্যাঁ।চলো তোমাকে এখানে নিয়ে আসার কারণ দেখাই।”

তোশার হাতটা ধরে নিচে নেমে যাচ্ছে কবীর।তিনতলা কিছুটা কমপ্লিট হয়েছে।বড় একটা রুমের সামনে তাকে নিয়ে এলো।সাইডে কালো রঙের আলমারি খুললো কবীর।

“তোমার বিয়ের শাড়ী।দেখো তো পছন্দ হয়েছে কীনা।”

একটি খয়েরী রঙের বেনারসি তোশার সামনে ধরলো কবীর।মেয়েটির চোখ অশ্রুতে ভরে গেলো।হুট করে তাকে আয়নার সামনে নিয়ে গেলো কবীর।পিছন থেকে স্বর্ণ রঙের পাথরখচিত ওড়না মাথায় পরিয়ে দিয়ে বলল,

“দেখো তো কবীর শাহ এর বধূকে কেমন লাগছে?”

“অনেক সুন্দর।”

“তাইনা?”

তোশা মাথা নাড়ালো।সে কবীর শাহ এর বধূ।ভাবতেই একটু আগের ভয়, কান্না মিলিয়ে গেলো।এই দিনটার জন্য সে কতো অপেক্ষা করেছে।তামাটে পুরুষটির সঙ্গে বৈধ হওয়ার জন্য।তোশার পিছনে কবীর বোতাম লাগানো বিহীন শার্ট পরে আছে। দুজনের পোশাক এখন বড় অদ্ভূত।কিন্তু তোশা এই অদ্ভূত পোশাকের সময়টি কখনো ভুলবেনা।বারংবার তার কানে বেজে চলেছে।

“সে কবীর শাহ এর বধূ।”

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-৩৯+৪০+৪১

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩৯
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমার মেয়ের সাথে তোমার অন্যরকম সম্পর্ক কবীর।কেমন অদ্ভূত লাগে যখন একে অপরের সঙ্গে কথা বলো।সাধারণ যে ভাব কিংবা অনুভূতি বজায় থাকার কথা দুজনের মধ্যে সেখানে ব্যতিক্রম কিছু আছে।”

“তুমি বুদ্ধিমতী তাহিয়া।এর বাহিরে কিছু বলার নেই।”

কবীরের হেঁয়ালিপূর্ণ বাক্যগুলোতে ব্যতিক্রম সন্ধান করেও মিললো না।তাহিয়া মুখ বিবরে দ্বিধা বজায় রেখে পুনরায় বলল,

“তোশামণি কী নিজের কথা তোমার সাথে কখনো শেয়ার করে?আমাকে একটা জিনিস জেনে বলতে পারবে?”

“তোমার কী হলো বলো তো তাহিয়া।আজ এসব কথাবার্তা বলছো।”

তাহিয়া অপ্রস্তুত ভঙিতে হাসলো।গায়ে জড়ানো ওড়নাটি একটু এদিক ওদিক করে নিলো।চেহারার চেকনাই এখনও সমানতালে চারিধারে আভা ছড়ায়।

“মায়ান বড্ড সুবিধাবাদী মানুষ।এতোদিন মেয়েকে বড় করলাম আমি।এখন এতো বছর পরে হুট করে পিতৃধর্ম পালন করতে চাচ্ছে।ওর বড় ভাইয়ের ছেলের সাথে তোশার বিয়ের কথা শোনালো।দেখো তো প্রাক্তনরা এমন কথাবার্তা কেন বলে যে ঘৃ’ণা করাও তাদের ক্ষেত্রে কম মনে হয়।”

কবীরের মুখের রঙ কয়েক দফা বিবর্ণ হয়ে গেলো।সে জানতো মায়ানের এমন পরিকল্পনার কথা।তবে সময়ের ব্যবধানে ভুলে গিয়েছিল।

হালকা বিদ্রুপের সুরে বলল,

“তোশামণিকে দেখছি অনেকে বিয়ে করতে চায়।অবশ্য সুন্দরী,গুণে লাবণ্য মেয়েদের এমন এক জ্বা’লা থাকবেই।ভেবো না।মায়ান ঠিক করুক।কিন্তু শেষে তোশামণি যাকে গ্রহণ করতে ইচ্ছা পোষণ করবে সেই মানুষটা বিজয়ী হবে।”

“আমি এই কথাটা জানার জন্য এসেছি তোমার কাছে।তোশা কী কাওকে পছন্দ করে?”

“তোমার মন,মস্তিস্কের ধারণা কী?”

“ধারণা সবসময় সত্য হবে এমনটা নয়।কিন্তু মন বলছে কেউ একজন আছে আমার মেয়ের জীবনে।মস্তিস্ক আবার বলে যে মেয়েটা এখনও এতো বোকা বোকা কথা বলে সে প্রেম বা ভালোবাসা নামক জিনিসে জড়াবে?”

“কেন?জড়ানো তে অস্বাভাবিক কিছু দেখছিনা।”

“আছে।প্রেম করে চালাক মানুষেরা।আমার মেয়েটা এতো ওমন নয়।”

কবীর অধরযুগল কাঁ’ম’ড়ে হেসে ফেললো।মেয়ে যে প্রেমের বেলায় অষ্টরম্ভা নয় বরং ভাবনার বাহিরে চতুর।এই কথাটি তাহিয়া নামক জননীর জানা নেই।পরক্ষণে তাকে কোণঠাসা করার উদ্দেশ্যে কবীর বলল,

“হুঁ?বোকারা প্রেম করেনা?নিজের জীবন দেখেও এই ধারণা জন্ম নিলো মনে?তুমি কিন্তু সর্বোচ্চ লেভেলের বোকা ছিলে।আর মায়ান ছিল ভীতু।এগুলো ভুলে যেওনা।”

“তোমার এসব কথায় মনে হচ্ছে তুমি চিনো তোশামণি কাকে পছন্দ করে কিংবা পুরো ব্যাপারটা কী আসলে।”

কবীর দ্বিধা তৈরী করে বলল,

“জানি কিংবা জানিনা।ভেতরের কথা গুলোর জন্য সময়কে সময় দাও।সবটা জানতে পারবে।”

“মেয়ে তো বিপথগামী হয়নি?”

বড্ড ঠান্ডা সুরে প্রশ্নটি শুধালো তাহিয়া।কবীরের বর্তমানে জীবনে যা সবথেকে ভ’য়া’বহ।আজকে তাদের মধ্যে আলোচনাকে সবাইকে সবটা জানানোর প্রথম ধাপ বলে বিবেচিত করে নিলো।প্রশ্নটির ভিন্নমাত্রায় জবাব দিলো সে।

“মেয়ের জীবনসঙ্গী হিসেবে তোমার কোনো চাওয়া-পাওয়া আছে?”

“সারাজীবন সাথে থাকবে ব্যতীত আর কোনো চাওয়া নেই।বাকীটা যে সাথে থাকবে সে যদি খুশি থাকে সেখানে মা হয়ে সেই আনন্দ কেঁ’ড়ে নেওয়ার মতোন নির্বোধ আমি নই।”

“তাহলে সুপথ/বিপথের ভাবনাটি না হয় আপাতত সরিয়ে রাখো।সঠিক সময়ের অপেক্ষা করো শুধু।”

উষ্ণ শ্বাসে কবীরের বুকটা ভরে গেলো।এই অসম সম্পর্কের ব্যাপারে আলোচনা যেখানে কঠিন সেখানে সকলকে বিয়ের জন্য মানানো অনেক বড় ব্যাপার হবে।কিন্তু দুনিয়াতে হয়তো অসাধ্য বলে কিছু নেই।কোননা কোনো পরিণতি পাবে তোশা-কবীরের সম্পর্ক।

(***)

“তুই কী সালমান খান হওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছিস নিজের সঙ্গে?দেখ চল্লিশটা বছর হয়ে গেলো।এইবার তো বিয়ে করে নে।”

মাথা নিচু করে কবীর খেতে ব্যস্ত।যেন মায়ের কথাগুলো কর্ণকুহর হয়নি।হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাসটা নিতে নিতে বলল,

“বুঝলে মা আমাকে পরীতে ধরেছে।খুব সুন্দর পরী।আপাতত সে ছাড়বেনা।যদি ভবিষ্যতে ছেড়ে কোনো জিনের পিছনে দৌড় দেয় তখন তাহিয়া ঘটককে কাজে লাগাবো।”

সেতু খলবল করে বলল,

“তাহিয়াকে মটেও ঘটক বলবিনা।সোনা মেয়েটা কতো চেষ্টা করছে তোর সংসার তৈরী করার।”

“ওইযে বললে সালমান খান হবি কীনা।আপাতত সেই চিন্তায় আছি।ফিফটি সেভেনে পা রাখতো দাও।তখন বিয়ের জন্য ভাববো।তাছাড়া আমি যথেষ্ট ইয়াং একজন পুরুষ।মটেও বুড়ো নই যে বিয়ের জন্য পাগল হলে।”

“দেখলে তাহিয়া।”

তাহিয়া উপর নিচে মাথা দুলিয়ে বলল,

“দেখছি আন্টি।কবীর তোমার বিয়ে করতে কী সমস্যা?সত্যি করে বলো।”

“ছেলে আছে আমার।”

“তা কোনো ব্যাপার না।তুমি চাইলে ইয়াং মেয়েকেও বিয়ে করতে পারো।কারণ বিনা সংকোচে তোমার কোয়ালিফিকেশন দেখে রাজী হয়ে যাবে মেয়েরা।”

“ওইযে বললাম পরীতে ধরেছে।”

“কোনো পছন্দ আছে?”

“জানিনা।”

সেতু বিরক্ত হয়ে বলল,

“এতো পরী পরী করিস না।ভালো লাগেনা আমার ভয় করে।পরীরা দেখতে কুৎসিত হয়।বাহিরের সৌন্দর্য সবতো মরিচীকা।”

সেতু আদি যুগের মানুষ।এক কালে অনেক প্রসস্থ মস্তিস্কের হলেও ইদানীং গ্রামের মহিলাদের মতোন স্বল্পপ্রাণের হয়ে যাচ্ছে।পুরো বিষয়টিতে কেউ যদি একটুও মন না বসাতে পারে সে হচ্ছে তোশা।কারণ কুৎসিত কথাটি শুনে বৃষ্টি আড়ালে হেসেছে।এই একটু-আধটু বিদ্রুপের হাসিগুলো।তোশাকে ইদানীং সর্বোচ্চ পোড়ায়।রাগটা এবার কবীর শাহ এর উপরে গিয়ে পড়লো।একটু শক্ত সুরে বলল,

“তাকে পরীতে ধরবে কীভাবে?সে তো কালো।আর কালোদের সুন্দর পরীতে ধরেনা।”

ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত সকলের চোখ তোশার কাছে এসে থেমে গেলো।তাহিয়া চাপাসুরে স্বাবধান করলো।সেতু মুখটা গো’ম’ড়া করে বলল,

“তোশামণি,আমার ছেলে মটেও কালো না।”

কবীর কথার মধ্যিখানে বলল,

“কালো হলেও যে পরীটা পছন্দ করে সে খুব সুন্দর।যদি ধরো আমি কু’ৎ’সি’ত তাহলে ভাবতে হবে পরীটা অন্ধ।এক্ষেত্রে ভালোবাসা বেশী।বুঝলে।”

“বুঝলাম।”

সেতু কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলো।কিন্তু কবীর চোখের ইশারায় না করে দিলো।সে জানে তার মা এই কালো,ফর্সার ভেদাভেদ মানতে পারেন না।মুখটা মলিন করে সেতু খেতে লাগলো।পুরো ডাইনিং রুমে নিস্তব্ধ পরিবেশ।হুট করে সামান্য কেঁশে সেতু বলল,

“আসলে হয়েছে কী?এটাই সঠিক সময় দেখে বিষয়টা বলছি।অন্তত তাহিয়া তো বুঝবে আমাকে।দিশা কাল রাতে ফোন করেছিল আমাকে।সে নিজের স্বামী সন্তান ফিরে পেতে চাচ্ছে।আমি কিছু বলিনি।তবে যদি ফিরে আসে তো।”

কবীর মুখে থাকা খাবার গিলে ফেললো।শক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

“এটা কোনো আলোচনার মধ্যে পড়ে মা?সম্ভব এতো বছর পর কিছু?”

“কেন নয়?”

“কখনো না।তাছাড়া আমি জীবনে অনেক এগিয়ে গিয়েছি।”

“কিন্তু সেই তো একা।”

“নাহ আমি একা নই।”

“তাহলে এতোক্ষণ পরীর কথাটা সত্য?কেউ আছে জীবনে।”

“না থাকার কিছু নেই।আছে একজন।তাই বলে সে দিশা নয়।”

সেতু শান্ত হলো।ভীষণ নরম কণ্ঠে বলল,

“দিশা আমাকে গত একমাসেও ফোন করেনি।বরং কথাটি বানিয়ে বলেছি তোমার জীবনে কেউ আছে কীনা জানতে।চল্লিশ বছর বয়সে কেউ প্রেম করে?পরীকে ধরে নিয়ে আসবি।তা নয় এমন কবিরাজি আরো দেখবি।”

কবীর আ’হ’ত সুরে বলল,

“তুমি মিথ্যা বলে বের করলে?”

“একদম।তাহিয়া তুমি জানো কে?”

“নাহ তো আন্টি।আশ্চর্য জানেন আমার নিজের মেয়ের কথাও মনে হয় ওর কেউ আছে।তোশাকে কয়েকবার জিজ্ঞেসও করতে গিয়েও পারিনি।আজ কবীর বলল।দেখেছেন আমাদের দুজনের ছানার গোপন মানুষ আছে।কিন্তু আসলে তারা কে?”

সেতু তাল মিলিয়ে বলল,

“নিশ্চয় সারপ্রাইজ পাবো আমরা সময় হলে।বাচ্চাদের উপর বিশ্বাস রাখি।”

টেবিলে বসে থাকা এই তাহিয়া -সেতু নামের মা গুলো ছাড়া আর সকলে জানে তাদের ছানাদের গোপন মানুষ বলতে তারা নিজেরাই।কবীর অসহায় হয়ে নিজের মাকে দেখছে।আসলেও সে সব রমণীর কাছে চ’তু’র হলে মা নামক মানুষটার নিকট ভীষণ বোকা।অন্যদিকে তোশা দুই রমণীর হাসিতে অবাক হচ্ছে।যখন সারপ্রাইজটা পাবে তখন কী করবে তারা?সময় তো ধীরে ধীরে ঘনিয়ে আসছে সকলের সবটা জানার।

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪০
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“পুরুষ মানুষেরা ভালোবাসি,বিয়ে করবো কথাটি আসলে এমনিই বলে।গভীর কোনো ভিত্তি নেই যার।দেখবে এটা তাদের জন্য অনেক সহজ।”

“নিজে পুরুষ হয়ে এভাবে বলতে পারলেন প্রতীক স্যার?”

“তোশা যা সত্য।”

তোশা বিশ্বাস করলো না।আজ তার শ্যুটিং এর শেষ দিন।চুলগুলো সুন্দর করে বিন্যস্ত করে শুধালো,

“তাহলে কী এই পৃথিবীতে বিবাহিত বলতে কোনো পুরুষ থাকতো?আপনিও এমন নিশ্চয়।”

নিজের প্রশংসা করার দরুণ প্রসঙ্গটি উঠিয়েছিল প্রতীক।গলাটি পরিষ্কার করে বলল,

“আমি সাধারণ নই।যাকে পছন্দ করি মন থেকে বলি।জানো তো আমার পছন্দের আছে একজন।”

“তাই?সে কে?”

প্রতীক অনেকটা সাহস নিয়ে বলতে যাবে ঠিক তখুনি গেট দিয়ে কয়েকটি গাড়ীর প্রবেশ ঘটলো।আজকে তারা একটি স্টুডিও এর ভেতরে শ্যুটিং করছে।পরপর থামা গাড়ীগুলো অতি সহজে সবার দৃষ্টি কেঁড়ে নিলো।তোশাও ব্যতীক্রম নয়।সে অবাক হয়ে দেখছে গাড়ী থেকে নামা এলেমেলো পুরুষটিকে।উল্লাস!বর্তমানে সিনেমা জগতে সবথেকে বড় সুপারস্টার।এবং সকলের প্রিয় মুখ।তোশা নিজেও এই ছেলেটির অভিনয় পছন্দ করে।কিন্তু তার ব্যক্তিগত জীবনকে নয়।উল্লাসকে দেখে প্রতীক বিষন্ন কণ্ঠে বলল,

“পরিবেশকে নষ্ট করার জন্য এসে গিয়েছে।এই ছেলেটা কীভাবে যে এতোটা জনপ্রিয়তা পেলো।”

তোশা চোখটা প্রতীকের পানে ঘুরিয়ে শুধালো,

“কেন?সমস্যা কী?উল্লাস তো ভালো অভিনেতা।”

“ব্যক্তিগত জীবনে উদ্ভট আর এলেমেলো মানুষ।সারাক্ষণ ভ্যাপিং করে।গাঁ থেকে কোলনের সাথে এ’ল’কোহলের গন্ধ আসে।ধরি মাছ না ছুঁই পানি টাইপ প্লে’বয়।আরো শুনতে চাও?”

“বুঝলাম।কিন্তু ব্যক্তিগত জীবন দিয়ে কী হবে যদি অভিনয় ভালো হয়?”

“তোমার জন্য একটা অফার এসেছিল বিপরীতে এই উল্লাস কাজ করতো।আমি পরামর্শ কিংবা না জানিয়ে না করে দিয়েছি।”

“এমনিতেও আমার কবীর শাহ এরপর অভিনয় করতে দিবেনা।”

“রিয়েলি?তোমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হলো না তাতে?মানে পার্টনার হিসেবে তোমার নিজস্ব ভালোলাগা নেই।অভিনয় পছন্দ তোমার তাইতো?”

“সেরকম..।”

“না বলতে নিশ্চয়।কিন্তু এটা তোমার মনের কথা নয়।”

“আমার মনে কী চলে তা আপনি কীভাবে বলবেন?কবীর শাহ কখনো আমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেননি।তার একটি জিনিস পছন্দ নয়।সেটা আমি করবো না।”

“তোমাদের মেয়েদের সবথেকে বড় সমস্যা কী জানো?ছেলেদের কথাগুলো মেনে নেওয়া।তাছাড়া মি.শাহ বিশ বছরের বড় তোমার।কিছু তো মিলেনা।দেখো জীবনের অনেকটা সময় পড়ে আছে।এসব টাকাওয়ালা লোকেদের সঙ্গে প্রকৃত সুখ পাবেনা।”

তোশা ভীষণ নির্বিকার হয়ে প্রতীককে দেখছে।একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই আবার সুগার গার্ল শব্দ মোড়ানো অ’স্ত্র তার দিকে ছুঁড়ে দিলো।কিন্তু এবার মেয়েটির মনে মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে।মন খারাপ করবে?নাকী এড়িয়ে যাবে?

“প্রতীক স্যার,আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বলার কোনো অধিকার আপনাকে দিয়েছিলাম বলে মনে আসছেনা।”

“আরে তোশা রাগ করো না।ভালো এর জন্য।”

“নিশ্চয় আমার মা-বাবা মা’রা যায়নি।তারা বিষয়টি দেখবে।টাকার কথাটি উঠলো তখন বলতে হয় আপনি কেন অভিনয় ছেড়ে বৈরাগী হচ্ছেন না?”

অন্য কোনো বাক্য শোনার পূর্বে জায়গাটি ছেড়ে সিঁড়ির দিকে যেতে লাগলো তোশা।দোতালায় ছোট্ট একটি নিরিবিলিতে বসার জায়গা আছে।অনেক গুলো সাংবাদিক নেমে আসছে দোতালা থেকে।উল্লাসের পিছনে গিয়েছিল তারা।তোশা নতুন মুখ হওয়ায় কেউ কোনো আগ্রহ দেখালো না।কিন্তু হলুদ রঙা শাড়ী পরিহিতাকে একবার পিছন ফিরে দেখে নিলো অবশ্য।

উষ্ণ পরিবেশ হলেও ঈষৎ বাতাস আছে।ছোট ছোট চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে নিলো তোশা।মন খারাপ কিংবা ভালো নয়।সকলের থেকে দূরে থাকার উদ্দেশ্যে সে এখানে এসেছে।ফোনটা বের করে কবীর শাহ এর নাম্বারে ডায়াল করলো।রিসিভ হলে মিষ্টি করে শুধালো,

“পালিয়ে বিয়ে করতে কেমন লাগে?”

কবীর ভ্রু কুঁচকালো।সামনে তার বিদেশি ক্লায়েন্ট বসে আছে।তবুও প্রিয় নারীর সঙ্গে কথা বলার লোভ কী সামলানো যায়?

“নিশ্চয় ফ্রি এখন আপনি তোশা ম্যাডাম।”

“এটা উত্তর হলো?”

“চলেন না পালিয়ে যাই।এরপর কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমার মতোন দূরে পাহাড়ে চলে যাবো।আপনি কষ্ট করে টাকা নিয়ে আসবেন তাতেই চলে যাবে দিন।”

কবীরের সামনে বিশ্বের অন্যতম মানি মেকার পার্সনরা বসে আছে।তাদের সামনে ফোনে কথা বলায় উচ্চ শব্দে হাসি অসৌজন্যমূলক আচরণ হিসেবে গণ্য হলেও কবীর না হেসে পারলো না।সকলে তার দিকে অদ্ভূতভাবে তাঁকালো।বিনিময়ে নিজেকে ধাতস্থ করে সে বলল,

“কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমায় দুজনের হ্যাপি এন্ডিং হয়না।কিন্তু এই শাহ তার চৌধুরীর সাথে সুন্দর একটি এন্ডিং চায়।বুঝলেন।”

“এভাবে বলবেন না আমার লজ্জা লাগে।”

“বেলাডোনা রাখছি। তুমি সুন্দর করে শ্যুটিং শেষ করো।”

“আর একটু কথা বলেন।”

“ব্যস্ত।”

কবীরের ফোনটা কেঁটে গেলো।মন খারাপ হয়ে গেলো তোশার।কিছুটা অদৃশ্য বাতাসের উদ্দেশ্যে করে বলল,

“সে কেন বুঝেনা তার সঙ্গে কথা বলতে ভীষণ ভালো লাগে আমার।ষোল বয়সের প্রেমিকের মতোন সারাক্ষণ কল, ম্যাসেজ দিতো যদি।”

তোশা আনমনে বললেও সে একা ছিলনা অবশ্য।কড়া কোলনের(পারফিউম টাইপ) সুগন্ধে বিমোহিত হলো সে।পাশে ধোঁয়া উড়তে দেখে চমকে উঠে সেদিকে তাঁকালো।উল্লাস একমনে ভ্যাপিং করছে।এলেমেলো সত্যিই মানুষটা।এক হাত ডিভানের উপর রাখা।তোশাকে তার দিকে তাঁকাতে দেখে হাতের ভ্যাপটা সেধে বসলো।হকচকিয়ে উঠলো তোশা।

“আমি এসব খাইনা।”

উল্লাস হাতটা গুটিয়ে ব্লেজারে কিছু একটা খুঁজলো।ভীষণ স্বল্পভাষী ছেলেটা।একটু পর সিগারের প্যাকেট এগিয়ে দিলো।আঁতকে উঠে তোশা বলল,

“আমি এটাও খাইনা।”

“ওহ।কিন্তু আমি তো আ’ফি’ম টানিনা।বললে আনিয়ে দিবো।”

কতোটা সহজ সরল প্রস্তাব।তোশার কপালে ভাঁজ ও দুঠোঁটের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হলো।এই নায়কটা আসলেও উদ্ভট তো।

“এগুলো কী বলছেন?জানেন আমি কে?”

“প্রেমিকের কাছ থেকে পাত্তা না পাওয়া প্রেমিকা।”

“নাহ।”

“তো কে?”

“তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।”

“ভীষণ পঁ’চা নাম।”

“ধুর কোথাও শান্তি নেই।”

তোশা উঠে যেতে নিলে উল্লাস ধোঁয়া উড়িয়ে বলল,

“দুই ঘন্টার জন্য অজ্ঞান হয়ে যা মেয়ে।যার এটেনশন পাওয়ার জন্য মন খারাপ করছিস।তখন এটেনশনের চোটে বিরক্ত হবি।”

“এই এই সাহস কে দিলো তুই বলার।”

উল্লাস জবাব দিলো না।বরং নির্বিকার নিজের কাজ করছে।হুট করে তোশার মনের শয়তানটাও নড়েচড়ে বসলো।কৌতুহলী হয়ে বলল,

“দুই ঘন্টার জন্য অজ্ঞান হওয়া যাবে?”

উল্লাস পুনরায় দেহে অনুসন্ধান করলো।খানিক বাদে হাতে কোলন স্প্রে এর ছোট একটি বোতল উঠে এলো।

“নাকের কাছে দুবার স্প্রে কর।বেশী করিস না।”

তোশা বোতলটি নিতে গিয়েও নিলো না।হাত গুটিয়ে বলল,

“আমি কেন নিবো?”

উল্লাস মৃদু হেসে ঝড়ের গতিতে উঠে এসে তোশার নাকের সামনে স্প্রে করে মুখটা চেপে ধরলো।পুরুষালি শক্তির কাছে নিরুপায় হয়ে তোশা হাসফাস করতে লাগলো।ক্ষাণিকবাদে চেতনা হারালো সে।নিরিবিলি হওয়ায় কেউ দেখলো না কী হলো।তাকে আস্তে করে ডিভানে বসিয়ে ফোনটা তুলে নিলো উল্লাস।একটু আগে লুকিয়ে পাসওয়ার্ড দেখে নিয়েছিল।তাছাড়া বোকাসোকা মেয়েরা যে ১-৮ পর্যন্ত ডিজিটের পাসওয়ার্ড দেয় সেই বিষয়ে বেশ অবগত কবীর।ডায়ালের শুরুতে কবীরের নামটা দেখে মুচকি হাসলো।

তোশার কল আবার আসতে দেখে কবীর একটু অবাক হলো।সাধারণত ব্যস্ত বললে মেয়েটা কখনো দ্বিতীয়বার ফোন করেনা।

“হ্যালো লিটল চেরী।কী হয়েছে?”

“আপনার লিটল চেরী আপাতত অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।আপনি জলদি আসুন।”

“কে? কে আপনি?তোশা কোথায়?”

“আমি উল্লাস।”

যতোটা শশব্যস্ত হয়েছিল কবীর ঠিক ততোটা শান্ত হয়ে গেলো।স্বস্ত্বির সঙ্গে বলল,

“তোশা কোথায় উল্লাস?”

“অজ্ঞান হয়ে আছে।”

“এটা বলো না তুমি স্প্রে করেছো ওর উপর।”

“হুঁ।”

“কেন?তুমি কী এখনও বাচ্চা?”

“আপনি আসবেন নাকী আমি রেখে চলে যাবো?দুজনে একত্র হয়ে ঘুরবেন তা না কাজ পাগল হয়ে থাকেন।আমার সখী মন খারাপ করছিলো।”

“সখী কে?”

উল্লাস ঘুমন্ত তোশাকে দেখে বলল,

“নাম তো বলল তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।”

চিৎকার করে কবীর বলল,

“প্লিজ দুজনে বন্ধুত্ব করো না।তোমরা দুটো উপরের লেভেলের বুদ্ধিমান মানুষ।”

“আপনি ইনডায়রেক্ট নিজের প্রেমিকা আর এই এলেমেলো উল্লাসকে পাগল বললেন?”

“আমি ডাইরেক্ট বললাম।তোশার কাছে থাকো আসছি।”

কবীরের পাগল বলাকে একটুও গায়ে মাখলো না উল্লাস।ফোনটা রেখে বরং নরম মনে তোশার উদ্দেশ্যে বলল,

“সখী তোশা,

তুই আমি এক রকম?হুঁ আমি এতো বোকা না।আবার তোর মতোন ভালোও না।তোর সঙ্গে বন্ধুত্ব অদ্ভূত হবে।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪১
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

কবীর শাহ কী আদৌ তোশাকে ভালোবাসে?নাকী অন্তরালে যে অনুভূতি রয়েছে সেটা মোহ মায়া?এমন নিবিড় প্রশ্নের উদয় তোশার মনে এইতো ঘন্টা দুয়েক আগে থেকে হচ্ছে।উল্লাসের দেওয়া স্প্রে এর প্রতিক্রিয়া শেষ হতে চারটে ঘন্টা সময় লাগলো।কখন বাসায় কীভাবে এসেছে সেগুলোর হদিশ নেই।তবে তার মামীর ভাষ্যমতে উল্লাসের সেক্রিটারী এসে দিয়ে গিয়েছে।তোশা ভেবেছিল কবীর শাহ হয়তো জানেনা।ইনিয়ে বিনিয়ে অজ্ঞান হারানোর ঘটনা বলে ম্যাসেজ করলো।কিন্তু আশ্চর্য সিন করে রেখে দিলো মানুষটা।অবজ্ঞায় কান্নাও আসছেনা তোশার।

“তোশামণি,উঠো তোমার আব্বু ফোন করেছে।কথা বলে নাও।”

বাবার কথায় লাফ দিয়ে উঠে বসলো তোশা।তাহিয়া বুঝতে পারে এসব খুশি হওয়া নিছক অভিনয়।মেয়েটা কীভাবে যে মা-বাবা দুজনের মন রক্ষা করে চলল কে জানে?

“হ্যালো আব্বু।কেমন আছো?”

মায়ানের জবাব দেওয়ার পূর্বে তাহিয়া উঁচু সুরে বলল,

“তোশামণি,বাবাকে বলে দিও তোমার নিজস্ব ফোন আছে।সেখানে পরের বার কল করে যেন।”

মায়ান অস্পষ্ট কথাগুলো শোনার জন্য শুধালো,

“কী বলে গেলো তোমার মা?”

“আমার ফোনে কল দিতে বলল।”

“কেন?ওর ফোনে কী সমস্যা?”

“সমস্যা নেই।তবে পছন্দ করে না হয়তো।কেমন আছো বললে না?”

তোশা খেয়াল করলো তার বাবা মুখে মেকি হাসি তুলে কথা এগিয়ে যেতে লাগলো।কথার এক ফাঁকে মায়ান অন্যরকম একটি প্রসঙ্গ তুললো।যা মটেও মেয়ের সঙ্গে আলাপ করার মতোন নয়।

“শুনেছি তাহিয়া পুনরায় বিয়ে করবে?তুমি জানো কিছু আম্মু”

“তাই?এসব কথা কে বলল তোমাকে?কবীর শাহ?”

“না।কবীর ওরকম নয়।তাছাড়া তুমি ওকে নাম ধরে কেন ডাকছো?”

“এমনি এমনি।তাহলে আসিফ আঙকেল?”

“না।আমার মন বলল।”

বাবার কথায় প্রাণখোলা হাসে তোশা।কী সুন্দর মানুষ নিজের ধারণাকে সত্য প্রমাণের চেষ্টায় মত্ত্ব থাকে।তোশা আরেকটু ঘটনাটি উ’স্কে দিতে বলল,

“মায়ের বিয়ে আমি দিতে চাই।পাত্র ঠিক করা।আসিফ আঙকেল।কিন্তু মা তো বুঝতেই চায়না।তুমি আসবে তখন মায়ের বিয়ে ধুমধাম করে দিবো।কী বাবা আমার সাথে থাকবে তো?”

“আসিফ ভাই?সত্যি তাহিয়া পছন্দ করে তাকে?”

“করবেনা কেন?মাথা ভর্তি চুল আছে,স্বাস্থ্য ভালো।একজন ভালো লিডার।তাছাড়া ব্যাচেলরও বটে।”

“ওহ।”

মায়ানের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।কারণ একে তো তার মাথার চুল উঠে যাচ্ছে দ্বিতীয়ত স্বাস্থ্য রোগাটে।এবং মটেও ব্যাচেলর না।দীর্ঘ এক শ্বাস বের হয়ে এলো মায়ানের বুক চিড়ে।নিজেকে মটেও মেইনটেইন করতে পারেনা অথচ কবীর,আসিফ নামের পুরুষের কীভাবে পারে?বড় প্রশ্ন।তোশা ভেতরে ভেতরে হেসে শে’ষ হয়ে যাচ্ছে।নিজের বাবার সঙ্গে এমনটা করতো না।যদি না মায়ের বিয়ে নিয়ে আগ্রহ দেখাতো।তোশার কোথাও মনে হয় মায়ান তাহিয়ার সঙ্গে বিরাট অন্যায় করেছে।আগুনে আরেকটু ঘি ঢালার জন্য তোশা বলল,

“জানো মায়ের বিয়ে নিয়ে..।”

“বুঝেছি বুঝেছি আম্মু।তোমার অনেক প্ল্যান।আমি তো আসছি কয়েকমাস পর।তখন না হয় এসব নিয়ে আলোচনা হবে।বাই দ্য ওয়ে তোমাকে অভিনেত্রী হিসেবে দেখার জন্য অনেক এক্সসাইটেড আমি।কবে টেলিকাস্ট হচ্ছে?”

“দশদিন পরে।”

“অল দ্য বেস্ট মামুনী।আমি জানি তুমি অনেক সুন্দর কাজ করেছো।”

“না দেখে বললে?”

“আমার মেয়ের প্রতি অগাধ বিশ্বাস আছে আমার।রাখছি পরে কথা হবে।”

মায়ান ফোন রেখে দেওয়ার পর তোশা বিছানাতে শুয়ে অনেকক্ষণ হেসে নিলো।চোখের কিনারাতে জল আসার উপক্রম।একটু পরে কবীরের নাম্বার থেকে ফোন এলো।

“হ্যালো কবীর শাহ।”

“কী ব্যাপার লিটল চেরী?এতো খুশি কেন?”

“আব্বুর সাথে মজা নিয়েছি।”

“কেমন?”

পুরো ঘটনা বিস্তারিত খুলে বলল তোশা।কবীর বিস্মিত হয়ে বলল,

“অবিশ্বাস্য!তুমি সত্যি নিজের বাবার সঙ্গে এমন মজা করেছো?মায়ানের রিয়াকশন কেমন ছিল?”

“মোটামুটি ধরা পড়া লোকের মতোন।আমি বুঝিনা এক্স হলে বুঝি মানুষ ট’ক্সিক হয়ে যায়।যেখানে দেখি সেখানেই এমন।প্রাক্তনেী জীবনে এগিয়ে গেলে কী হয় তাদের?নিজেরা যেন বসে আছে।”

ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তোশা কবীরকে যে দিশাকে নিয়ে খোঁচা দিলো সেটা বেশ অনুধাবন হলো। মেয়েটা দিন দিন স্বভাবে ভিন্ন হচ্ছে।

“আমি তোমাকে কখনো সুন্দর করে ভালোবাসি বলেছি তোশামণি?”

“নাহ তো।কখনো না।ইহ জীবনে না।এতো দিনেও না।এতো সেকেন্ডও না।এতো ঘন্টায় না।”

“দেখা করবে আজ?”

তোশা গলা উঁচু করে জানালার বাহিরে তাঁকালো।রাত হয়ে গিয়েছে।এখন বের হওয়া অনেক কঠিন।

“কালকে করবো।”

“আজকেই।ধরো আমি যদি টিনেজারদের মতোন রাতে পাইপ বেয়ে ছাদে এসে দেখা করি?খুশি হবে তুমি?”

“আপনি এমনটা করবেন?হুঁ নির্বোধ নই আমি।”

কবীর স্মিত হাসলো।তোশাকে রা’গা’নো’র জন্য বলল,

“প্রেমিক হিসেবে সত্যি কবীর শাহ নিরামিষ।সঙ্গে তোশমণি নির্বোধ কন্যা।”

(***)

অসময়ে ভীষণ ঝড় এলো।শব্দ করে জানালার পর্দাগুলো উড়ছে।বৃষ্টির পানির ঝাপটা ঘরে এসে পড়ছে।তোশা উঠে বসলো।ঘড়িতে এখন রাত দুটো বাজে।মা কে পাশে না পেয়ে অবাক হলো।পরক্ষণে মনে হলো ঘুমানোর সময় তাহিয়া অন্য রুমে চলে গিয়েছিল।তোশার ঘুমটা এখনও কাঁটেনি।ধীরে ধীরে নিজের ফোনটা সামনে নিয়ে চমকে উঠলো।স্ক্রীনে কবীর শাহ এর নাম্বার।সঙ্গে ছাদে আসার জন্য অসংখ্য ম্যাসেজ।তোশার সেসব দেখে মাথায় হাত।কোনোমতে ওড়না গায়ে জড়িয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে দৌড়ে গেলো।ছাদের মধ্যে আলো ফেলে তোশা দেখলো কবীর শাহ এখনও রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে আছে।তোশা লাইটটা অফ করে একপাশে রেখে দিলো।অন্ধকারে শক্ত লোহার মতোন শরীরটাকে স্পর্শ করলো।ভিজে গেলো কবীরের সিক্ত দেহের স্পর্শে।

“আপনি সত্যি এসেছেন কবীর শাহ?কতোক্ষণ হলো এসেছেন?”

“দেড় ঘন্টা আগে।জানো তো সিনেমাতে নায়কেরা এরকম বৃষ্টি রাতে নায়িকার সঙ্গে দেখা করতে আসে।বৃষ্টির দিন তো শেষ হয়ে আসছে।ওয়েদার রিপোর্ট অনুযায়ী আজ অসময়ের বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল দেখে চলে এলাম।তোমাকে নিয়ে ভিজবো,গাইবো,আর ভালোবাসি বলবো।”

তোশার অধরযুগল প্রশস্ত্ব হয়ে গেলো।কবীর শাহ মানুষটা তো এমন নয়।অহংকারী, বদমেজাজি মানুষ।তবে আজ কী হলো?উল্লাসের কথা মনে হতে সেটা বলতে যাবে তখন কবীর শাহ নিজ থেকে বলল,

“উল্লাস আমার পরিচিত।কিছুটা পাগলাটে।তোমার সঙ্গে এমন করার কারণ তুমি ঘুরে অজ্ঞান হওয়ার কথাটি নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলে।আমি কী এতোটা অবহেলা করেছি তোমাকে যে এভাবে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করাতে হবে?”

“তাতে কী কাজ হয়নি?”

“নাহ।আমি আজ এসেছি তুমি কতোটা স্পেশাল সেটা অনুভব করানোর জন্য।কবীর শাহ তার মধ্য বয়সে এসে একজনকে ভালোবেসেছে।সে সবথেকে দামী।সেটা তাকে নিজের ক্ষতি করে বুঝতে হবেনা।আমি তোমাকে সরাসরি কখনো তেমনভাবে নিজের ভালোবাসার কথা বলিনি।কিন্তু আজ চাই বলতে।”

যদিও অন্ধকার কিন্তু তোশা মনে হয় স্পষ্ট দেখতে পেলো কবীরের চোখে তার জন্য ভালোবাসা।মানুষটি এগিয়ে এসে তোশাকে আলিঙ্গন করলো।মুখোমুখি দাঁড়া করিয়ে বলল,

“তোমায় আমি দেখেছিলাম ব’লে

তুমি আমার পদ্মপাতা হলে;

শিশির কণার মতন শূন্যে ঘুরে

শুনেছিলাম পদ্মপত্র আছে অনেক দূরে

খুঁজে খুঁজে পেলাম তাকে শেষে।

নদী সাগর কোথায় চলে ব’য়ে

পদ্মপাতায় জলের বিন্দু হ’য়ে

জানি না কিছু-দেখি না কিছু আর

এতদিনে মিল হয়েছে তোমার আমার

পদ্মপাতার বুকের ভিতর এসে।

তোমায় ভালোবেসেছি আমি, তাই

শিশির হয়ে থাকতে যে ভয় পাই,

তোমার কোলে জলের বিন্দু পেতে

চাই যে তোমার মধ্যে মিশে যেতে

শরীর যেমন মনের সঙ্গে মেশে।

জানি আমি তুমি রবে-আমার হবে ক্ষয়

পদ্মপাতা একটি শুধু জলের বিন্দু নয়।

এই আছে, নেই-এই আছে নেই-জীবন চঞ্চল;

তা তাকাতেই ফুরিয়ে যায় রে পদ্মপাতার জল

বুঝেছি আমি তোমায় ভালোবেসে।

–জীবনানন্দ দাশ

কবিতাটি বৃষ্টি রাতে কবীর শাহ এর কণ্ঠে অন্যরকম শোনালো।কী হতো কবি যদি আরো কয়েকটি ছন্দ মিলাতো।অবশেষে তোশার জীবনে সেই সত্য সময়টি এলো।কবীর আস্তে করে বলল,

” আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি তোশামণি।”

“আমিও আপনাকে ভালোবাসি কবীর শাহ।অনেক বেশী।”

দুজনের মুখে সুন্দর এক হাসি।সিক্ত সমীরণের সঙ্গে উষ্ণ শ্বাস মিলে যাচ্ছে।কিন্তু ছাদের দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা কল্লোলের মুখখানি মেঘে জড়িয়ে গেলো।তার ভালোবাসায় দেখা তোশামণি কাওকে ভালোবাসে?আর সেটা কীনা বাবা-মায়ের বন্ধু কবীর শাহ!

চলবে।

মিঠা রোদ পর্ব-৩৬+৩৭+৩৮

0

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩৬
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“তোশামণি ও কবীর শাহ এর ভালোবাসা হলো মিঠা রোদের মতোন।প্রচন্ড ঝড়ের পর ঘোলাটে আকাশ থেকে হালকা করে উঁকি দিয়ে পুনরায় মেঘের আড়াল হয়ে গিয়েছে।ক্ষণস্থায়ী রোদটি আর উঠবেনা।সেই তো বদলে গেলো কবীর শাহ।মাঝে আমি এটা করবো ওটা করবো বলে কতো ভাব।আপনি কিছু বলবেন সিয়া ম্যাম?”

চশমাটি ত্বকের সাথে চেপে ধরলো সিয়া।বইয়ে মুখ ডুবিয়ে রেখে বলল,

“ওভার রিয়াক্ট কেন করছো?তুমি যাকে পছন্দ করো সে আবেগে গদগদ হয়ে ভালোবাসি বলার মানুষ নয়।বরং মানি মেকার,কাজ পাগল একজন মানুষ।রোজ কথা না বললে দেখা না করলে ভালোবাসা থাকেনা?”

“গত একমাসে কতোটা অবহেলা করেছে জানেন?”

“নাহ।কারণ আমি তার বোন।প্রেমিকার সাথে কেমন সম্পর্ক সেটা বলার মতোন মানসিকতা ভাইয়ের নেই।”

তোশা ঠোঁট দং শনে অশ্রু দমনের চেষ্টায় ব্যস্ত।এই বিশাল পৃথিবীতে তার ছোট্ট অনুভূতিকে কেন কেউ দাম দেয়না?মানুষটা এমন কেন?তার সঙ্গে জড়িত সকলেও কেমন অদ্ভূত।সিয়ার বড্ড বিরক্ত অনুভব হচ্ছে।সেটা কোনমতে দমন করে বলল,

“ভাইকে এতো প্রেশার দিওনা।সে তোমার পড়াশোনা থেকে সবকিছুর খেয়াল রাখছে।এটা কী যথেষ্ট নয়?”

“নয়।”

“তো কী চাও?সাথে নিয়ে চলুক সবসময়?ভাই তো তার অফিসে যেন সবসময় দেখা করতে পারো সেই ব্যবস্থাও করে রেখেছে।আসলে কী চাও তুমি?”

“থাক কিছু চাইনা।”

“গুড।তোমার পড়াশোনার খেয়াল রাখবে।ইদানীং এক্সাম গুলোতে মার্কস কম আসছে।ভাই শুনলে বকবে।”

“জি ম্যাম।”

অতি সন্তপর্ণে চোখের কার্ণিশে থাকা অশ্রু কণা মুছে নিলো তোশা।যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে তখন সিয়া ডেকে বলল,

“শুনো তোশা।তোমাদের সম্পর্ককে আমি স্বাভাবিক নিয়েছি এতোটা এনাফ।বাকী খোলামেলা আলোচনা করার দরকার নেই আমার সাথে।আমি তোমার টিচার।মনে থাকবে?”

“জি ম্যাম।ধন্যবাদ কথা বলার জন্য।”

তোশার প্রস্থানে উষ্ণ শ্বাস বের হয়ে এলো সিয়ার ভেতর থেকে।সে এতোটাও কঠোর হতো চায়নি।কিন্তু সাহেদের পরামর্শ রয়েছে যেন কবীর তোশার বিষয়ে সে কথা না বলে।হোক না পালিত পিতা।তার কথা ফেলে দেওয়ার মতোন সাহস সিয়ার নেই।এতে তোশা কষ্ট পেলেও কিছু করার নেই।

(***)

“কী বলল ম্যাম?ভাইয়াকে বোঝাবে তো?”

অপ্সরার কৌতুহলী মুখ পানে গভীর দৃষ্টি সহকারে দেখছে তোশা।বারংবার নিজের ভালোবাসার মানুষের অবহেলা তৃতীয় ব্যক্তিকে বলতে ভালো লাগেনা তার।শুকনো হাসি দিয়ে এড়িয়ে গিয়ে বলল,

“আমাকে এখন অনেক সুন্দর লাগে তাইনা?কবীর শাহ বলছিলো কথাটা।”

“কল করেছিল তোকে?”

“হুম।মাফ চাইলো ফোন,এসএমএস গুলোর জবাব না দেওয়ার জন্য।খুব শীঘ্রই ঘুরতে নিয়ে যাবে সেটাও বলল।”

“কোথায় যাবি তোরা?কিছু ঠিক করলি?”

“আপাতত করিনি।কিন্তু পুরো একদিন আমাকে দিবে বলল।”

“ক্লাস কিংবা শ্যুটিং তবে একদিনের জন্য বাদ?”

“হ্যাঁ।ভাবছি সেদিনের মতোন আবার শাড়ী পরে ঘুরবো।ওইযে লাল পাড়ের সাদা শাড়ীটা।”

“পড়িস।”

তোশা ও অপ্সরা ক্যান্টিনে এসে বসলো।মেয়েটির মুখের নির্জীব হাসি অপ্সসার চোখ এড়িয়ে যায়নি।ভালো থাকার কতোটা নিখুঁত অভিনয়।তোশার মনের ভেতর যে ভীষণ কষ্ট আছে সেটা সে জানে।মা,বাবার উপরও মেয়েটির অনেক অভিমান আছে।কিন্তু হাসি,দুষ্টামির আড়ালে কেউ তা বুঝেনা।কিন্তু অপ্সরা কীভাবে যেন বুঝে যায়।এইযে ফোন টিপার বাহানায় কবীরকে এসএমএস করে যাচ্ছে।আর ওপাশ থেকে পাষাণ পুরুষটি নীরবে সব সিন করে রেখে দেওয়ায় বান্ধুবীর মলিন মুখের ভাষাও পড়তে সক্ষম সে।

“তোশামণি।”

চকিত হয়ে তোশা জবাব দিলো,

“হুম বল।”

“ফোন রাখ।ব্যস্ত হয়তো।ম্যাসেজের জবাব আসবেনা।”

“রিপ্লাই তো দিচ্ছে।”

“দিচ্ছে না।রাখ ফোন।”

টেবিলের উপর ফোনটা রেখে দিলো তোশা।চোখটা বড্ড য ন্ত্র ণা দিচ্ছে।নিজেকে ঠিক রাখতে কফিতে ছোট করে চুমুক দিলো।রাত থেকে না খাওয়ায় গুলিয়ে উঠলো পেটটা।

“আর খাবো না টিকুর মা।”

“তুই খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করিস তো?”

“খেতে মন চায়না।সেই ক্লাস নাইন থেকেই এমন হয়।আমার ওয়েট এতো কম তার চিন্তায়।”

“কাওকে এতোটাও ভালোবাসতে হয়না যেখানে নিজেকে ভুলতে হয়।তুই একটু বেশীই মায়া দেখাস।আমাদের বয়সের মেয়েরা কতোটা হাসিখুশি থাকে।আর নিজের কতোগুলো ভুল সিদ্ধান্ত এর জন্য তোর অবস্থা দেখ।”

বিনিময়ে হাসলো তোশা।সত্যিই তো অনুভূতি তৈরী হওয়ার পর থেকে যেন সে নিজেকে ভুলতে বসেছে।কষ্ট গুলো কেমন বেহায়াও সবসময় তার থাকে।শেষ হয়না কখনো।আশেপাশে তাঁকালো।তার সমবয়সী মানুষের কী প্রাণখোলা হাসছে।তোশার মনে হঠাৎ প্রশ্নের উদয় হলো।এসব ছেলে-মেয়েরা কী কাওকে ভালোবাসেনা?যদি বেসে থাকে তবে এতো খুশি থাকতে পারে কীভাবে তারা?কষ্ট নেই জীবনে?

(***)

“কী ব্যাপার?এতো চুপচাপ কেন?ঘুম আসছে?যদিও রাত বাজে বারোটা।ঘুমাতে পারো কষ্ট হলে।”

কবীরের এতোগুলো কথার জবাব দিলো না তোশা।বরং সুন্দর মুখটায় নির্বিকার ভঙি বজায় রাখলো।চোখে অমীমাংসিত দৃষ্টি।খোলা চুল নরম টি-শার্টে বেশ সুন্দর লাগছে দেখতে।কবীর ক্লান্ত ভরা দৃষ্টিতে নিজ প্রেমিকার এহেন রুপ দেখছে।হ্যান্ড ওয়াচ খুলতে খুলতে শুধালো,

“ঘুমাবেনা?”

“নাহ।”

“খেয়েছো?”

“হুম।”

“বেশ।থাকো ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

ঘড়িটা পাশে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে এক নিমিষেই গায়ের শার্টটা খুলে ফেললো কবীর।তামাটে দেহে ঘামগুলোতে তেলের মতোন লাগছে।লোকটার শরীর দিনকে দিন কীভাবে যে এতো সুগঠিত হচ্ছে সেই ধারণা নেই যুবতী তোশার।সে ভালোবাসার দৃষ্টি ফেলবেনা লোকটার উপর।চোখ দুটো বন্ধ করে খাটের অগ্রভাগে গা এলিয়ে দিলো।ল্যাপটপে ভিডিও কলে কথা বলছে তারা।সারাদিনে একমাত্র এই সময়টা হলো মানুষটার?অথচ তোশা নিজেও তো ব্যস্ত থাকে।তখন তো মানুষটাকে ভুলেনা।মিনিট দশেক পর গম্ভীর কণ্ঠে কবীর শুধালো,

“ঘুম এলে ঠিকঠাক বিছানায় ঘুমাও তোশা।”

“আসছেনা।”

“এতো নিশ্চুপ কেন?”

“কারণটা কী খোঁজার চেষ্টা করেছেন কখনো?”

ডিভানে গা এলিয়ে দিয়ে ল্যাপটপটি কোলের উপর রাখলো কবীর।হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বলল,

“আমি বহু কষ্টে আজ এই জায়গায় এসেছি তোশা।জিনিসগুলো ধরে রাখতে হলে কষ্ট সহ্য করতে হবে।আহনাফ বড় হলে তবে আমি কিছুটা স্বস্তি পাবো।বৃষ্টিও অফিসে বসার চিন্তাতে নেই।”

“আপনার এতোসব চিন্তায় তোশামণি কোথায় কবীর শাহ?”

“সব জায়গায় আছো।”

“বাবা আসছে আর তিনমাস পরে।”

“জানি আমি।”

“সকলকে জানানোর জন্য নিজেদের মধ্যেও তো বোঝাপড়া দরকার।কিন্তু আপনি..।”

“বলেছি না একবার ভাবতে হবেনা।”

“একশবার ভাববো।”

“দেখো সম্পর্ক থাকলে সারাক্ষণ কথা বলতে হবে এমন কোনো কথা নেই।দিশাও একসময় তোমার সমান ছিল।কিন্তু ও তো এতোটা।”

কবীরের এতোটুকু কথা যথেষ্ট ছিল।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তোশা বলল,

“প্রাক্তনের সাথে কেন তুলনা করলেন?”

“নাহ করিনি।বেলাডোনা এই কেঁদে দিলে নাকী?”

তোশা পাশে ল্যাপটপটা রেখে বালিশে মুখ লুকিয়ে কেঁদে দিলো।অস্থির চিত্তে কবীর ডেকে উঠলো তাকে।

“শুনো মেয়ে।তুলনা করিনি।বুঝানোর জন্য বলেছি।এইযে ভালোবাসা।”

তোশার এসব মায়াময় বাক্য কানে ঢুকছে নাকী?সে কাঁদছে আর ফিসফিস করে কিছু বলছে।উষ্ণ শ্বাস ফেললো কবীর।তাদের অসম সম্পর্কের সবথেকে বড় ভিলেন হচ্ছে দুজনের মতের ও চাওয়া পাওয়ার পার্থক্য।এভাবে বিয়ে হলে বিষয়টা সুন্দর হবে তো?অনেকক্ষণ মেয়েটির কান্না বসে বসে দেখলো সে।এদিকে ঘড়ির কাঁটা তখন একটার করে।

“লিটল ক্যাট, কী করলে কান্না থামবে বলো তো?আসবো এখন দেখা করবে?”

তোশা ইশারায় না করলো।কবীর হাল ছাড়লো না।মেয়েটির সঙ্গে যে নিজেকেও ছোট হতে হচ্ছে।

“তাহলে কাল চলো দেখা করি।শুক্রবার তো।”

ভাঙা গলায় তোশা জবাব দিলো,

“শ্যুটিং আছে।”

“তাহলে কী চাও বলো?গান শুনবে?”

“আপনার গলায় সুন্দর লাগবেনা গান।”

কবীর হেসে ফেললো।মেয়েটা শুনবে সেটাও ঘুরেফিরে বলছে।সে গলাটা স্বাভাবিক করে কয়েকটা লাইন গাইলো।এতে অবশ্য কাজ হলো।যুবতী পাশ ফিরলো।ফোলা ফোলা বড় চোখ তার।গোলগাল গালদুটো ভিজে আছে।কবীর যৌবনপোড়া পুরুষ।মেয়েটিকে স্ত্রীকে হিসেবে পাওয়ার আশায় মরিয়া হওয়ার জন্য এমন বেশ গুলো যথেষ্ট।তোশা এক দৃষ্টিতে তাকে দেখে বলল,

“আপনাকে শার্টলেসে ভীষণ পঁ চা লাগে কবীর শাহ।আর একবার পিঠের মাঝ বরাবার ছোট কিসমিস সমান তিলটাকে দেখতে দিবেন?দিবেন বলেন?”

আবদার করতে গিয়েও তোশা কেঁদে বসলো।কবীরের হঠাৎ মনে হলো মেয়েটির সব কান্নাগুলো শুধু তাকে দেখলে বের হয়।সে হয়তো পেঁয়াজ জাতিবিশেষ মানব।

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩৭
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“তুমি স্বপ্ন নও তোশামণি।বাস্তবে এসেছো।রাত কয়টা বাজে এখন?”

“বিশ্বাস করুন কবীর শাহ আমি স্বপ্ন।এখন রাত দুটো বাজে।”

মিষ্টি কণ্ঠে মিথ্যাটি হজম করেনি কবীর।বরং হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলো।ঘড়িতে এখন দুপুর দুটো বাজে।অনেকদিন পর লম্বা একটা ঘুম দিয়েছিলো সে।হুট করে ঘুমের ঘোরে খেয়াল করলো আস্তে করে কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।দৃষ্টি পরিষ্কারর হওয়ার পর বোধগম্য হলো এটা আর কেউ নয় সেই দুষ্ট মেয়েটা।

“দুপুর বেলা এখানে কেন?কাল রাতে যখন বললাম দেখা করো তখন তো খুব বললে শ্যুটিং আছে।”

“আপনার কী মনে নেই যে আর দুটো দিন মাত্র শ্যুটিং হবে।”

ঘুম ঘুম জড়ানো কণ্ঠে কবীর হাই তুলে বলল,

“যাক বাঁচলাম।তবে আমাকে নিজের মতোন এতোটাও গ’র্দ’ভ পেও না যে বাস্তবকে স্বপ্ন ভাববো।সকলের নজর অতিক্রম করে রুমে এলে কীভাবে?”

তোশা লাল লিপস্টিক আভায় জড়ানো অধরযুগল প্রসারিত করলো।মসৃণ চুলগুলো অকারণে সুগঠিত করে বলল,

“হুঁ।আমি লুকিয়ে আসবো কেন?ভয় পাই নাকী?বরং মাথা উঁচু করে এসেছি।তারপর আন্টি ঠান্ডা ঠান্ডা সেমাই নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছে।”

“আন্টি কে?”

“আরে আপনার মা।”

কবীরের মনে পড়লো তোশা তার বাবাকে আঙকেল বলে আর মা কে আন্টি।অলস ভঙিতে উঠে বসলো সে।অবিন্যস্ত অবস্থায় তামাটে পুরুষটির রুপ যেন আরো কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।চোখটা ডলে চশমা পরে নিলো কবীর।প্রথম বার এই রুপটা দেখে তোশা আনমনে নিজেকে নিচু সুরে বলল,

“এতো সুন্দর লোকটাকে তুই পটিয়ে নিলি কীভাবে তোশা মেয়ে।”

“তোশামণি?”

চমক ভাঙলো মেয়েটির।থেমে যাওয়া কথাটি পুরো করে বলল,

“আরো শুনেন আঙকেলের সাথে দাবা খেলেও এসেছি।পরে আহনাফ এখানে নিয়ে এলো।ভাববেন না আপনার সাথে দেখা করতে সেই সকাল দশটা থেকে অপেক্ষা করছি।”

“জি লিটল ডেভিল চেরি।আপনি তো আমার সাথে দেখা করতে আসতেই পারেন না।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি?তারপর সব কথা বলবো।আর শুনো সকলের সামনে আম্মু, আব্বুকে আঙকেল /আন্টি বলে ডেকো না।”

“ঠিক আছে।”

তোশা চোখ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রুমটা দেখছে।ওয়াশরুমের দরজা অবধি গিয়ে কী একটা ভেবে ফিরে এলো কবীর।তোশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পুনরায় চলে গেলো।এরকম করার কারণটা জিজ্ঞেস করার সুযোগটুকুও দিলো না।

(***)

কবীরের মা বৃদ্ধা হলে কী হবে?রান্নাবান্নায় বেশ সৌখিন মানুষ।তার বড় বউ মুমতাহিমা সে শ্বাশুড়ীর এই বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে।তাহিয়ার কাছে এই পরিবারটিকে আগে থেকেই ভীষণ ভালো লাগে।ছোটখাটো এবং লোভ হি ং সা বির্বজিত।

“তাহিয়া, তোমার মেয়েটা ভীষণ মিষ্টি তো দেখতে।অনেক বিয়ের প্রপোজাল পাও নিশ্চয় বুঝি?”

“একদম ভাবী।এসএসসি পাশ করার পর থেকে এমনটা হয়ে আসছে।”

“আগেই বিয়ে দিওনা কিন্তু।দেখবে সোনার ছেলে পাবে।তা কাওকে পছন্দ আছে মেয়ের?”

“সেরকম নেই।”

“তোমরা এসেছো দেখে ভীষণ ভালো লাগলো।সারাদিন একা থাকি তো।তাছাড়া তোশার সাথে আলাপটা হয়ে উঠেনি।সেদিন অল্প সময়ের জন্য দেখলাম।কী যে কান্না মেয়েটির।”

মুমতাহিমা হালকা সুরে হেসে ফেললো।তাহিয়া বিষয়টিতে একটু বিব্রতবোধ করলো।কথাবার্তা মসৃণ করার উদ্দেশ্যে বলল,

“বৃষ্টিও দেখতে মিষ্টি।যদি সম্ভব হয় তবে আমাদের কল্লোলকে দিয়ে নিবো।”

“কল্লোল?বিষয়টা ম’ন্দ হবেনা।ছেলেটা ভালো বুদ্ধিদীপ্ত।কিন্তু একবার যে শুনেছিলাম তোশাকে নিতে চায় তোমার ভাবী।”

“ওদের বিয়েটা ঠিক হবে বলে আমার মনে হয়না।তাছাড়া তোশা কল্লোলকে ভাই/বন্ধু ব্যতীত অন্য চোখে দেখতে নারাজ।”

“হুম বুঝলাম।এমন আবেদন যদি সত্যিই তোমার ভাই-ভাবীর থেকে আসে তাহলে অন্তত আমার কোনো আপত্তি থাকবেনা।”

“দেখা যাক।”

তাহিয়া ও মুমতাহিমা নানা রকমের আলাপ করতে লাগলো।কিন্তু কেউ একবারও খেয়াল করেনি দরজায় দাঁড়িয়ে সমস্ত কথা বৃষ্টি শুনেছে।যাকে পছন্দ করে তাকে পরিবারও পছন্দ করে এমন খুশি সব মেয়ের ভাগ্যে জুটেনা।মন প্রাণ জুড়িয়ে গেলো তার।খুশিমনে নিজের বান্ধুবীদের সাথে বিষয়টা আলাপ করতে যাবে তখুনি সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকা তোশার প্রতি নজর পড়লো।বৃষ্টির মনের ভেতর শব্দ করে মেঘ ডেকে উঠলো।নিজের ভেতরকার আ ক্রো শ দমন করতে না পেরে তোশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

“কী বৃষ্টি পড়াশোনার কী খবর?”

“তোমার সঙ্গে কিছু কথা আছে আমার তোশা।”

“কী কথা?”

“এসো আমার সঙ্গে।”

অনেকটা বলপূর্বক তোশাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি।নিজের রুমে এসে দরজাটা চাপিয়ে তোশাকে সামনে দাঁড়া করালো।

“চাচুর সাথে তোমার সম্পর্কটা শেষ করে দিবে আজ এবং এখুনি।লজ্জা করেনা মুখ উঠিয়ে এই বাড়ীতে আসতে।”

তোশার শুভ্র কপাল কুঞ্চিত হলো।গায়ের ওড়নাটা ঠিক করে বলল,

“কী বলতে চাও?”

“আমি কল্লোল ভাইয়াকে পছন্দ করি ধরে নাও ভালোবাসি।মা আর তাহিয়া আন্টি তার সাথে বিয়ে নিয়ে আলাপ করছে।”

“এটা তো ভালো কথা।”

“হতো যদি তুমি না পরগাছা হতে।”

“কী?আমি পরগাছা?”

“হ্যাঁ তাই।যখন চাচুর সাথে তোমার সম্পর্কের কথা চলবে আমি হলফ করে বলতে পারি কেউ কল্লোল ভাইয়ার সাথে আমার বিয়েটা মানবেনা।ফুফাতো বোন হয়ে যাবে মামী শ্বাশুড়ী।কতোটা ডিজগাস্টিং ব্যাপার।যদিও সেই অবধি যাবে কীনা তোমাদের কিছু সন্দেহ।”

বৃষ্টির কথায় মুখের রঙ বির্বণ হতে লাগলো তোশার।নিজের চিরপরিচিত বাচ্চাসুলভ কথাগুলোর বাহিরে গিয়ে শুধালো,

“তুমি কে?”

“আমি কে জানো না?”

“জানি।কিন্তু আমাদের সম্পর্ক থাকবে কী থাকবে না সেই বিষয়ে তুমি বলার কে?কতোটা অধিকার দেওয়া হয়েছে এই বিষয়ে তোমাকে?”

“আমি চাচুর খুব আদরের।ছোট থেকে তার মেয়ের অভাব পূরণ করেছি।”

“বেশ।সেই সম্পর্ক এক জায়গায় আর আমি এক জায়গায়।নিজের পছন্দের জন্য সব শেষ করতে বলতে পারো।অথচ আমি কেন করবো এমনটা?আমি তাকে ভালোবাসিনা?কিংবা সে?”

“তোমাদেরটা নো ং রা।”

হুট করে তোশার বড় রাগ উঠে গেলো।এই একটা শব্দ সে আর নিতে পারছেনা।

“মুখ সামলে কথা বলো বৃষ্টি।তা নয় ফল ভালো হবেনা।”

“বাহ?ন্যাকা সাজা মেয়েটি হু’ম’কিও দিতে জানে?দারুণ তো।”

বৃষ্টির কণ্ঠে বিদ্রুপ মিশে আছে।তোশা কিছু বলতে যাবে এর পূর্বে পুনরায় বৃষ্টি বলল,

“তুমি যে সু’গা’র গা’র্ল সেটা কিন্তু দেখেই বোঝা যায়।সুন্দর চেহারার ভালো ফায়দা নিতে জানো।”

“বৃষ্টি আর একটা কথা বললে মে রে ফেলবো।”

মুমতাহিমার এহেন হুমকিতে দুটো মেয়েই কেঁপে উঠলো।বৃষ্টি মনোবল না হারিয়ে বলল,

“মা জানো চাচু কতোটা অন্যায় করছে।সে..।”

কথাটি সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই বৃষ্টির গালে চ ড় বসিয়ে দিলো মুমতাহিমা।সে কখন এসেছে কেউ খেয়াল করেনি।

“মা তুমি।”

“তোশা নিচে তোমার মায়ের কাছে যাও।বৃষ্টির কথা শুনতে হবেনা।”

থমথমে মুখে তোশা জবাব দিলো,

“জি ভাবী।”

মুমতাহিমা আশ্চর্য হয়ে গেলো।সকলের সামনে যে মেয়েটা তাকে আন্টি ডেকেছে আড়ালে সম্বোধন বদলে গেলো।তোশা চলে গেলে বৃষ্টির গালে আরো একবার হাত চালিয়ে নিলো মুমতাহিমা।

(***)

অসময়ে কাক ডাকছে।কবীর সেই ছোটবেলা থেকে কাকের ডাক পছন্দ করেনা।কেমন যেন গা কেঁপে বিরক্তি ছড়িয়ে পড়ে শরীরে।গোসল করে বারান্দায় এসে সবেমাত্র দাঁড়িয়েছে সে।দুপুর দুটো অবধি ঘুমানোর আশ্চর্য এক ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নেয় সব পুরুষ।কবীরও ব্যতিক্রম নয়।একবার কলেজে থাকতে সে বিকেল পাঁচটা অবধি ঘুমিয়েছিল।ব্যস ওমনি পরিবারের মানুষ ভেবে নিলো ঘুমের ঔষধ খেয়েছে ছেলেটা।ডাকাডাকিতে সাড়া দিচ্ছিলো না যে এজন্য।পরে কবীরের মামা এসে দুই বালতি পানি ঢেলে জাগিয়েছিল।এবং মে রে ছিল ও খুব।অতীত মনে হতেই কবীর হেসে ফেললো।সবেমাত্র যৌবনপ্রাপ্ত সময়গুলো কতোটা না মধুর ছিল।হুট করে দরজা খোলার শব্দ হলো।তোশা জোরে জোরে পা ফেলে কবীরের সামনে এসে দাঁড়ালো।মেয়েটা রেগে আছে।দেখতে কৃষ্ণচূড়ার মতোন স্নিগ্ধ লাগছে।

“কী ব্যাপার তোশামণি?এতো রেগে কেন?”

তোশা কথায় জবাব দিলো না।পাশে বেতের চেয়ারে দাঁড়িয়ে নিলো।লম্বায় খাটো হওয়ায় পাছে কার্যসিদ্ধি না হয়। কবীরের টি-শার্টের কলার ধরে কাছে টেনে আনলো।আশেপাশে অবশ্য তোয়াক্কা করলো না।মুহূর্তেই তোশা জীবনে অন্যতম চাওয়া ট্রু লাভ’স কিসটা আদায় করে নিলো।তবে তা ক্ষণ মুহুর্তের জন্য।কবীর ঠোঁটে ভেজা ভাব নিয়ে এখনও বোঝার চেষ্টায় আছে ঠিক কী হলো?

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩৮
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“মেয়েদের লাজুকলতা হওয়া উচিত।যাকে ছুঁয়ে দেওয়ার পূর্বেই কুঁকড়ে যাবে।এটা কোন ধরণের বিহেভিয়ার মেয়ে?”

কবীর বড্ড ঠান্ডা মাথায় কথা বলছে।এই যুবতী মেয়েটিকে সামলাতে গিয়ে যে নাকানিচুবানি খাচ্ছে সে তার ব্যাখা হয়না।তোশা আস্তে করে কবীরের বুকে মাথা রেখে বলল,

“সুগার গার্ল তারা হয় যারা সহজ বাংলায় বে শ্যা।আমি কী তাই?কেন এমন কথা শুনতে হয়?আপনাকে তো অন্যায়ভাবে চাইনি।শুধু আপনি আমার বাবা-মায়ের বন্ধু তার সাথে সম্পর্ক রাখায় আমি টাকার বিনিময়ে নিজেকে বি ক্রি করা মেয়েদের সমতুল্য হয়ে গেলাম?সমবয়সী থেকে আজকাল যারা বিয়ের আগে সব করে ফেলছে তাও বাদ যারা বান্ধুবীদের সাথে কথা বলার রাখঢাক রাখেনা।খারাপ ভাষায় গালি দেয়।উদ্ভট পোশাক পরে তারা সকলে পিওর?একমাত্র আপনাকে ভালোবাসায় এসব শুনতে কেন হবে?আমি আপনি কবে কোথায় নোংরামি করেছি?আজ তাই সেটা করে ফেললাম।কারণ আমি তো সুগার গার্ল।”

কবীরের তামাটে বর্ণের কপালে রেখার উদয় ঘটলো।প্রচন্ড বিতৃষ্ণা নিয়ে শুধালো,

“কথা গুলো কে বলেছে?”

“বৃষ্টি।এসব শুনতে হবে দেখে আমাকে পাত্তা দেননি তাইনা?”

“কান্না থামাও।এদিকে এসো।”

বুক থেকে তোশার মাথাটা উঠিয়ে আজলায় তুলে নিলো কবীর।কী মায়াময় মুখখানি।অশ্রুতে সিক্ত হওয়ায় বৃষ্টিতে ভেজা ফুলের মতোন লাগছে।কবীর শক্ত লম্বা আঙুলগুলো তোশার অশ্রু দ্বারা ভিজিয়ে নিয়ে তাকে টেনে ভেতরের বিছানায় বসালো।সে কিন্তু মেয়েটির পাশে বসলো না।বরং মেঝেতে বসে হাত দুটো মুঠোতে ভরে নিলো।

“আমি কিছু কথা বলবো তোশা।মনোযোগ দিয়ে শুনবে।কান্নাটা থামাও আগে।”

“বলেন।”

“তুমি কোন ক্লাস থেকে পছন্দ করো আমাকে?ক্লাস নাইন?আমিও কিন্তু ঠিক সেসময় থেকে তোমাকে পছন্দ করা শুরু করি।ফলস্বরুপ ইগ্নোর করা,বকা দেওয়া, পাত্তা না দেওয়া।যখন দেখা হলো তোমার সাথে তখন আমি ভীষণ একাকিত্বে ভুগছিলাম।দিশার সাথে বিচ্ছেদের কথাটা আমার থেকে উঠেছিল না প্রথমে।বরং সে চেয়েছিল আমরা আলাদা হয়ে যাই।কারণটা খুব সাধারণ।আজকে জীবনে যা আছে তা পাওয়ার আগে খুব স্ট্রাগল করতে হয়েছে।দিশার বক্তব্য ছিল সেসবের জন্য কষ্ট করতে করতে আমার ও ছেলের প্রতি মায়া তার নেই।আহনাফের যখন বয়স আরো কম তখন দিশার সঙ্গে দেখা করতে গেলে খারাপ ব্যবহার করতো।আমিও পরে শক্ত হয়ে কোর্ট থেকে পারমিশন নিয়ে রাখি যাতে দিশা আহনাফের কাছে এলে যেকোনো স্টেপ নিতে পারি বা না আসতে পারে।এইযে ঝামেলা এতে হলো কী?আমরা বাবা-ছেলে একা হয়ে গেলাম।আর যখন মানুষ একা থাকে তখন ভালো কারো সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে।আমি কখনো ভাবিনি যে মেয়েটি জন্মের সময় আমি পরিপূর্ণ যুবক সেই বাচ্চাটা আমাকে ভালোবাসার কথা আবেদন করবে।এটা ভাবনার বাহিরে ছিল।তোমার অনুভূতিকে অল্প বয়সী আবেগ,স্বপ্ন,বাচ্চামো কতোকিছুর নাম দিয়েছি।বন্ধুর মেয়েকে ভালোবাসবো?বিয়ে করবো?কী হীন কাজ।পরে মনে হলো তোমাকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে ধর্মীয় দিকে বাঁধা নেই।সম্পর্কে জড়ানো যায়।কিন্তু সমাজ?”

“সমাজের জন্য আজকে আমার শুনতে হচ্ছে কবীর শাহ।এমন কেন সবাই?”

“এই বোকা মেয়ে কেঁদো না।আমার কথাগুলো শুনো।তোমাকে আমার বিছানায় নিয়ে যাওয়া এক দুই সেকেন্ডের ব্যাপার।এটা কী জানো?প্রচন্ড আবেগী তুমি।ক্লাস নাইনে থাকতে দূরে সরানোর জন্য আমাকে বিয়ে করতে বললাম।তুমি রাজী হলে না প্রথমে।কিন্তু দুই রাত পরেই মেনে নিতে সেটা জানো?”

“কবীর শাহ।”

“থামো।কথাটা মিথ্যা নয়।এরপর যুবতী হয়েছো।নিজের মধ্যে পরিবর্তন পেয়েছো অনেক।কিন্তু আমাকে মস্তিস্ক থেকে সরাতে পারলে না।অদ্ভূতভাবে আমিও না।শেষে বুঝে গেলাম যেমন হোক আমি তোমাকে ভালোবাসি।স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে চায় মন। পুরুষদের মন কিন্তু অনেক জটিল হয়।সহজে কাওকে সারাজীবন পাওয়ার মতোন মানসিকতা রাখেনা।আজকাল বছরের পর বছর সম্পর্ক থাকার পর ভেঙে যায়।সেখানে আমার তোমাকে ছাড়ার কোনো ইচ্ছা নেই।ইনফ্যাক্ট থাকবেও বা কেন?তুমি আমার জীবনে দ্বিতীয় নারী তোশামণি।এবং শেষ নারীও।যাকে মলিন হৃদয়ে কখনো স্পর্শ করিনি।চাইনি।”

তোশার মনে একরাশ সুখ দোলা দিয়ে গেলো।শুভ্র মুখটায় লজ্জারা হানা দিয়ে বসলো।অধরযুগল বিস্তৃত করে বলল,

“আপনার মুখে প্রেমের কথা মানায় না কবীর শাহ।আপনি গম্ভীর,অহংকারী হয়ে ঘুরবেন।ইগ্নোর করবেন এটাই শান্তির।”

“ভেবে বলছো তো?এখন থেকে আরো বেশী করে ইগ্নোর করবো।”

তোশার চোখ দুটো ছোট ছোট হয়ে গেলো।মুখ ভেঙিয়ে বলল,

“করে দেখেন।কেঁদে ফেলবো।”

“তাই?”

“হ্যাঁ।এতো কাঁদলে আমাদের বিয়েতে কী কাঁদবো?”

কথাটি বলেই তোশার মুখটি মলিন হয়ে উঠলো।কবীর নিজের কথাগুলো সম্পূর্ণ করার নিমিত্তে বলল,

“পৃথিবীতে কে না ভালোবাসাকে চায় বলো?যে নারীকে স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করা সম্ভব।তার উপর ভালোবাসি তাকে পেতে কেন চাইবো না আমি?ভালোবাসা পেতে এই কবীর শাহ ও চায়।ধরে নিলাম তোমার অল্প বয়সী চিন্তা ভাবনা।আমার তো না।একজনকে হারিয়ে কেন সারাজীবন কষ্ট পাবো?আমি পিওর ব্যবসায়ী।দুঃখের সঙ্গে ডিল করলে প্রোফিট আসবেনা।এখন আসি যারা কোনোকিছুকে বিকৃত করে।ধরো এক জায়গায় ক আছে আমি খ বলে খুব মজা নিলাম।নিজের আত্নাকে তৃপ্ত করলাম।কিন্তু আদৌতে খ হবে বিষয়টা?তাহলে মিথ্যা প্রচার হলো না?তেমন হোক টাকার লোভী অথবা মানুষ দেহ লোভী। অসম বয়সের কারো সম্পর্ক বা বিয়ে হলে কেন মানুষ মেনে নিতে পারেনা?শেষে সম্পর্কতে তারা থাকবে তো।কিন্তু কারো কারো মন্তব্যে মনে হয় বিয়েটা সারা দেশকে নিয়ে করছে।সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু কাপল আছে যারা এমন অসম বয়সী।তারা বেশ ফেমাস।তাদের পোস্টের কমেন্ট বক্সে ঢুকলে মনে তারা বিয়ে করে অন্যায় করে ফেলেছে।আর সবথেকে মজার ব্যাপার কী জানো?মেয়েদের এতো বাজে বাজে মন্তব্য করে মোট কথা তাদের এইযে প্রস্টিটিউট লেভেলে নিয়ে যেতেও মুখে আঁটকায় না।এইযে মন্তব্যকারী মানুষরা তারা আসলে কী চায়?আমার বুঝে আসেনা।এবং কতোটা যে ফ্রাস্টেটেড নিজেদের লাইফে।কারো বিন্দুমাত্র কিছু দেখলে হোক ভালো মন্দ।রঙ মিশিয়ে মজা নিবে।বাকস্বাধীনতার সর্বোচ্চ খারাপ উপায়ে ব্যবহার করে এমন ভাব করবে শেষে I am the purest person in the world. এদের মন মতো না হলে তোমার বিপদ।সেসব কথা যাক।তুমি-আমি দুজনকে পছন্দ করি পাওয়ার অধিকার রাখি।আর কে না চায় ভালোবাসার মানুষকে পেতে?ভবিষ্যতে গিয়ে এমন মন্তব্য বহু পাবে।আড়ালে হাসবে মানুষ।কিন্তু শেষটায় আমি থাকবো তোমার সাথে।আমার চোখে বিশুদ্ধ নারী তুমি।কেঁদো না।বৃষ্টির সঙ্গে কথা বলবো আমি।কিন্তু মাথায় রাখবে আমরা সবাইকে জবাব দিতে গেলে কিংবা যারা ঘটনা বিকৃত করে মজা নিতে পিছপা হয়না তাদের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হলে তাদের মতোন ভাষা আর মানসিকতা হতে হবে।সমান সমান লড়াই যে।আর ধরে নাও না পজেটিভ বিষয়।সুগার মানে চিনি আর গার্ল মানে মেয়ে।তুমি মিষ্টি মেয়ে তোশা।”

উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো তোশা।কতোটা না নিখুঁতভাবে তার মনের ঝড়টা থামিয়ে দিলো এইযে তার বাবার বন্ধু।উহু,তোশার কবীর শাহ।যাকে সে ভালোবাসে।সমাজের নিয়ম অতিক্রম করে কামনা করে।এবং সবসময় করবে।

“বুঝেছি আপনার সব কথা।সত্যিই যে সমাজে পাপ করে ফিরে এসে নতুন জীবনযাপন করা দায় কি’বা ধ’র্ষ’ক নয় ধ’র্ষি’তা’র শুনতে হয় সেটাকে তোয়াক্কা করা নিজেকে কষ্ট দেওয়ার সমান।”

“তবে এভাবে আঙকেল আন্টি ডেকো না আম্মু-আব্বুকে আড়ালে হলেও।ভবিষ্যতের বিষয় পরে।কেমন বুঝলে?আর অন্যায় কিছুও করবেনা।যা একটু আগে করলে।But…

কবীর নিজ প্রাণের নিকটবর্তী হলো।ফিসফিস করে বলল,

“কিছু বলতাম।থাক না বলি।”

তোশা কথাটি বাড়ালো না।কবীরের কণ্ঠে কিছু একটা ছিল।সে তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

“আসছি আমি।”

“যাও।আমার খুদা লেগেছে অনেক।মাকে বলো তো খাবার উপরে পাঠাতে।”

“তবে আপনি আনরোমান্টিক লোক।কিন্তু নীতিবান।”

“এতো প্রশংসা করো না মেয়ে।পরে ভুল গুলো বড় হয়ে নজরে আসবে।”

কবীরের হাসিমাখা মুখটা দেখে একরাশ শান্তি পেলো তোশা।মনটা শান্ত করে বের হয়ে গেলো।তোশা যাওয়ার মিনিট খানেক বাদে লে তাহিয়া রুমের বাহির থেকে ভেতরে আসার অনুমতি চাইলো।নিজেকে গুছিয়ে কবীর বলল,

“সারপ্রাইজ হয়ে গিয়েছি আমি তাহিয়া।হঠাৎ এখানে?”

“আন্টি আসতে বলল।তোমার বিয়ে নিয়ে কথা বলবে।”

“তুমি ভীষণ বা জে ঘটক তাহিয়া।গতবার মোটামুটির সংসার দেখিয়েছো।”

কথাটি হজম করে তাহিয়া শুধালো,

“কী ব্যাপার কবীর?ভীষণ খুশি লাগছে তোমাকে।তোশা কী এসেছিল এখানে?”

মিথ্যা কবীর বলতে চায়না।তাই সত্যিটা বলল।তবে সাধারণভাবে।

“এসেছিল।কেবল বের হলো।”

“ইদানীং ভীষণ অবুঝ হয়ে যাচ্ছে তোশামণি।”

“কেউ কেউ অবুঝ হওয়া ভালো।পৃথিবীর সকলে বুঝদার হলে সবটা যান্ত্রিকতায় রুপ নিবে।তোশা না হয় সারাজীবন অবুঝ ফুল হয়ে থাকলো।”

চলবে।