মিঠা রোদ পর্ব-৩৬+৩৭+৩৮

0
468

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩৬
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“তোশামণি ও কবীর শাহ এর ভালোবাসা হলো মিঠা রোদের মতোন।প্রচন্ড ঝড়ের পর ঘোলাটে আকাশ থেকে হালকা করে উঁকি দিয়ে পুনরায় মেঘের আড়াল হয়ে গিয়েছে।ক্ষণস্থায়ী রোদটি আর উঠবেনা।সেই তো বদলে গেলো কবীর শাহ।মাঝে আমি এটা করবো ওটা করবো বলে কতো ভাব।আপনি কিছু বলবেন সিয়া ম্যাম?”

চশমাটি ত্বকের সাথে চেপে ধরলো সিয়া।বইয়ে মুখ ডুবিয়ে রেখে বলল,

“ওভার রিয়াক্ট কেন করছো?তুমি যাকে পছন্দ করো সে আবেগে গদগদ হয়ে ভালোবাসি বলার মানুষ নয়।বরং মানি মেকার,কাজ পাগল একজন মানুষ।রোজ কথা না বললে দেখা না করলে ভালোবাসা থাকেনা?”

“গত একমাসে কতোটা অবহেলা করেছে জানেন?”

“নাহ।কারণ আমি তার বোন।প্রেমিকার সাথে কেমন সম্পর্ক সেটা বলার মতোন মানসিকতা ভাইয়ের নেই।”

তোশা ঠোঁট দং শনে অশ্রু দমনের চেষ্টায় ব্যস্ত।এই বিশাল পৃথিবীতে তার ছোট্ট অনুভূতিকে কেন কেউ দাম দেয়না?মানুষটা এমন কেন?তার সঙ্গে জড়িত সকলেও কেমন অদ্ভূত।সিয়ার বড্ড বিরক্ত অনুভব হচ্ছে।সেটা কোনমতে দমন করে বলল,

“ভাইকে এতো প্রেশার দিওনা।সে তোমার পড়াশোনা থেকে সবকিছুর খেয়াল রাখছে।এটা কী যথেষ্ট নয়?”

“নয়।”

“তো কী চাও?সাথে নিয়ে চলুক সবসময়?ভাই তো তার অফিসে যেন সবসময় দেখা করতে পারো সেই ব্যবস্থাও করে রেখেছে।আসলে কী চাও তুমি?”

“থাক কিছু চাইনা।”

“গুড।তোমার পড়াশোনার খেয়াল রাখবে।ইদানীং এক্সাম গুলোতে মার্কস কম আসছে।ভাই শুনলে বকবে।”

“জি ম্যাম।”

অতি সন্তপর্ণে চোখের কার্ণিশে থাকা অশ্রু কণা মুছে নিলো তোশা।যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে তখন সিয়া ডেকে বলল,

“শুনো তোশা।তোমাদের সম্পর্ককে আমি স্বাভাবিক নিয়েছি এতোটা এনাফ।বাকী খোলামেলা আলোচনা করার দরকার নেই আমার সাথে।আমি তোমার টিচার।মনে থাকবে?”

“জি ম্যাম।ধন্যবাদ কথা বলার জন্য।”

তোশার প্রস্থানে উষ্ণ শ্বাস বের হয়ে এলো সিয়ার ভেতর থেকে।সে এতোটাও কঠোর হতো চায়নি।কিন্তু সাহেদের পরামর্শ রয়েছে যেন কবীর তোশার বিষয়ে সে কথা না বলে।হোক না পালিত পিতা।তার কথা ফেলে দেওয়ার মতোন সাহস সিয়ার নেই।এতে তোশা কষ্ট পেলেও কিছু করার নেই।

(***)

“কী বলল ম্যাম?ভাইয়াকে বোঝাবে তো?”

অপ্সরার কৌতুহলী মুখ পানে গভীর দৃষ্টি সহকারে দেখছে তোশা।বারংবার নিজের ভালোবাসার মানুষের অবহেলা তৃতীয় ব্যক্তিকে বলতে ভালো লাগেনা তার।শুকনো হাসি দিয়ে এড়িয়ে গিয়ে বলল,

“আমাকে এখন অনেক সুন্দর লাগে তাইনা?কবীর শাহ বলছিলো কথাটা।”

“কল করেছিল তোকে?”

“হুম।মাফ চাইলো ফোন,এসএমএস গুলোর জবাব না দেওয়ার জন্য।খুব শীঘ্রই ঘুরতে নিয়ে যাবে সেটাও বলল।”

“কোথায় যাবি তোরা?কিছু ঠিক করলি?”

“আপাতত করিনি।কিন্তু পুরো একদিন আমাকে দিবে বলল।”

“ক্লাস কিংবা শ্যুটিং তবে একদিনের জন্য বাদ?”

“হ্যাঁ।ভাবছি সেদিনের মতোন আবার শাড়ী পরে ঘুরবো।ওইযে লাল পাড়ের সাদা শাড়ীটা।”

“পড়িস।”

তোশা ও অপ্সরা ক্যান্টিনে এসে বসলো।মেয়েটির মুখের নির্জীব হাসি অপ্সসার চোখ এড়িয়ে যায়নি।ভালো থাকার কতোটা নিখুঁত অভিনয়।তোশার মনের ভেতর যে ভীষণ কষ্ট আছে সেটা সে জানে।মা,বাবার উপরও মেয়েটির অনেক অভিমান আছে।কিন্তু হাসি,দুষ্টামির আড়ালে কেউ তা বুঝেনা।কিন্তু অপ্সরা কীভাবে যেন বুঝে যায়।এইযে ফোন টিপার বাহানায় কবীরকে এসএমএস করে যাচ্ছে।আর ওপাশ থেকে পাষাণ পুরুষটি নীরবে সব সিন করে রেখে দেওয়ায় বান্ধুবীর মলিন মুখের ভাষাও পড়তে সক্ষম সে।

“তোশামণি।”

চকিত হয়ে তোশা জবাব দিলো,

“হুম বল।”

“ফোন রাখ।ব্যস্ত হয়তো।ম্যাসেজের জবাব আসবেনা।”

“রিপ্লাই তো দিচ্ছে।”

“দিচ্ছে না।রাখ ফোন।”

টেবিলের উপর ফোনটা রেখে দিলো তোশা।চোখটা বড্ড য ন্ত্র ণা দিচ্ছে।নিজেকে ঠিক রাখতে কফিতে ছোট করে চুমুক দিলো।রাত থেকে না খাওয়ায় গুলিয়ে উঠলো পেটটা।

“আর খাবো না টিকুর মা।”

“তুই খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করিস তো?”

“খেতে মন চায়না।সেই ক্লাস নাইন থেকেই এমন হয়।আমার ওয়েট এতো কম তার চিন্তায়।”

“কাওকে এতোটাও ভালোবাসতে হয়না যেখানে নিজেকে ভুলতে হয়।তুই একটু বেশীই মায়া দেখাস।আমাদের বয়সের মেয়েরা কতোটা হাসিখুশি থাকে।আর নিজের কতোগুলো ভুল সিদ্ধান্ত এর জন্য তোর অবস্থা দেখ।”

বিনিময়ে হাসলো তোশা।সত্যিই তো অনুভূতি তৈরী হওয়ার পর থেকে যেন সে নিজেকে ভুলতে বসেছে।কষ্ট গুলো কেমন বেহায়াও সবসময় তার থাকে।শেষ হয়না কখনো।আশেপাশে তাঁকালো।তার সমবয়সী মানুষের কী প্রাণখোলা হাসছে।তোশার মনে হঠাৎ প্রশ্নের উদয় হলো।এসব ছেলে-মেয়েরা কী কাওকে ভালোবাসেনা?যদি বেসে থাকে তবে এতো খুশি থাকতে পারে কীভাবে তারা?কষ্ট নেই জীবনে?

(***)

“কী ব্যাপার?এতো চুপচাপ কেন?ঘুম আসছে?যদিও রাত বাজে বারোটা।ঘুমাতে পারো কষ্ট হলে।”

কবীরের এতোগুলো কথার জবাব দিলো না তোশা।বরং সুন্দর মুখটায় নির্বিকার ভঙি বজায় রাখলো।চোখে অমীমাংসিত দৃষ্টি।খোলা চুল নরম টি-শার্টে বেশ সুন্দর লাগছে দেখতে।কবীর ক্লান্ত ভরা দৃষ্টিতে নিজ প্রেমিকার এহেন রুপ দেখছে।হ্যান্ড ওয়াচ খুলতে খুলতে শুধালো,

“ঘুমাবেনা?”

“নাহ।”

“খেয়েছো?”

“হুম।”

“বেশ।থাকো ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

ঘড়িটা পাশে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে এক নিমিষেই গায়ের শার্টটা খুলে ফেললো কবীর।তামাটে দেহে ঘামগুলোতে তেলের মতোন লাগছে।লোকটার শরীর দিনকে দিন কীভাবে যে এতো সুগঠিত হচ্ছে সেই ধারণা নেই যুবতী তোশার।সে ভালোবাসার দৃষ্টি ফেলবেনা লোকটার উপর।চোখ দুটো বন্ধ করে খাটের অগ্রভাগে গা এলিয়ে দিলো।ল্যাপটপে ভিডিও কলে কথা বলছে তারা।সারাদিনে একমাত্র এই সময়টা হলো মানুষটার?অথচ তোশা নিজেও তো ব্যস্ত থাকে।তখন তো মানুষটাকে ভুলেনা।মিনিট দশেক পর গম্ভীর কণ্ঠে কবীর শুধালো,

“ঘুম এলে ঠিকঠাক বিছানায় ঘুমাও তোশা।”

“আসছেনা।”

“এতো নিশ্চুপ কেন?”

“কারণটা কী খোঁজার চেষ্টা করেছেন কখনো?”

ডিভানে গা এলিয়ে দিয়ে ল্যাপটপটি কোলের উপর রাখলো কবীর।হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বলল,

“আমি বহু কষ্টে আজ এই জায়গায় এসেছি তোশা।জিনিসগুলো ধরে রাখতে হলে কষ্ট সহ্য করতে হবে।আহনাফ বড় হলে তবে আমি কিছুটা স্বস্তি পাবো।বৃষ্টিও অফিসে বসার চিন্তাতে নেই।”

“আপনার এতোসব চিন্তায় তোশামণি কোথায় কবীর শাহ?”

“সব জায়গায় আছো।”

“বাবা আসছে আর তিনমাস পরে।”

“জানি আমি।”

“সকলকে জানানোর জন্য নিজেদের মধ্যেও তো বোঝাপড়া দরকার।কিন্তু আপনি..।”

“বলেছি না একবার ভাবতে হবেনা।”

“একশবার ভাববো।”

“দেখো সম্পর্ক থাকলে সারাক্ষণ কথা বলতে হবে এমন কোনো কথা নেই।দিশাও একসময় তোমার সমান ছিল।কিন্তু ও তো এতোটা।”

কবীরের এতোটুকু কথা যথেষ্ট ছিল।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তোশা বলল,

“প্রাক্তনের সাথে কেন তুলনা করলেন?”

“নাহ করিনি।বেলাডোনা এই কেঁদে দিলে নাকী?”

তোশা পাশে ল্যাপটপটা রেখে বালিশে মুখ লুকিয়ে কেঁদে দিলো।অস্থির চিত্তে কবীর ডেকে উঠলো তাকে।

“শুনো মেয়ে।তুলনা করিনি।বুঝানোর জন্য বলেছি।এইযে ভালোবাসা।”

তোশার এসব মায়াময় বাক্য কানে ঢুকছে নাকী?সে কাঁদছে আর ফিসফিস করে কিছু বলছে।উষ্ণ শ্বাস ফেললো কবীর।তাদের অসম সম্পর্কের সবথেকে বড় ভিলেন হচ্ছে দুজনের মতের ও চাওয়া পাওয়ার পার্থক্য।এভাবে বিয়ে হলে বিষয়টা সুন্দর হবে তো?অনেকক্ষণ মেয়েটির কান্না বসে বসে দেখলো সে।এদিকে ঘড়ির কাঁটা তখন একটার করে।

“লিটল ক্যাট, কী করলে কান্না থামবে বলো তো?আসবো এখন দেখা করবে?”

তোশা ইশারায় না করলো।কবীর হাল ছাড়লো না।মেয়েটির সঙ্গে যে নিজেকেও ছোট হতে হচ্ছে।

“তাহলে কাল চলো দেখা করি।শুক্রবার তো।”

ভাঙা গলায় তোশা জবাব দিলো,

“শ্যুটিং আছে।”

“তাহলে কী চাও বলো?গান শুনবে?”

“আপনার গলায় সুন্দর লাগবেনা গান।”

কবীর হেসে ফেললো।মেয়েটা শুনবে সেটাও ঘুরেফিরে বলছে।সে গলাটা স্বাভাবিক করে কয়েকটা লাইন গাইলো।এতে অবশ্য কাজ হলো।যুবতী পাশ ফিরলো।ফোলা ফোলা বড় চোখ তার।গোলগাল গালদুটো ভিজে আছে।কবীর যৌবনপোড়া পুরুষ।মেয়েটিকে স্ত্রীকে হিসেবে পাওয়ার আশায় মরিয়া হওয়ার জন্য এমন বেশ গুলো যথেষ্ট।তোশা এক দৃষ্টিতে তাকে দেখে বলল,

“আপনাকে শার্টলেসে ভীষণ পঁ চা লাগে কবীর শাহ।আর একবার পিঠের মাঝ বরাবার ছোট কিসমিস সমান তিলটাকে দেখতে দিবেন?দিবেন বলেন?”

আবদার করতে গিয়েও তোশা কেঁদে বসলো।কবীরের হঠাৎ মনে হলো মেয়েটির সব কান্নাগুলো শুধু তাকে দেখলে বের হয়।সে হয়তো পেঁয়াজ জাতিবিশেষ মানব।

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩৭
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“তুমি স্বপ্ন নও তোশামণি।বাস্তবে এসেছো।রাত কয়টা বাজে এখন?”

“বিশ্বাস করুন কবীর শাহ আমি স্বপ্ন।এখন রাত দুটো বাজে।”

মিষ্টি কণ্ঠে মিথ্যাটি হজম করেনি কবীর।বরং হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলো।ঘড়িতে এখন দুপুর দুটো বাজে।অনেকদিন পর লম্বা একটা ঘুম দিয়েছিলো সে।হুট করে ঘুমের ঘোরে খেয়াল করলো আস্তে করে কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।দৃষ্টি পরিষ্কারর হওয়ার পর বোধগম্য হলো এটা আর কেউ নয় সেই দুষ্ট মেয়েটা।

“দুপুর বেলা এখানে কেন?কাল রাতে যখন বললাম দেখা করো তখন তো খুব বললে শ্যুটিং আছে।”

“আপনার কী মনে নেই যে আর দুটো দিন মাত্র শ্যুটিং হবে।”

ঘুম ঘুম জড়ানো কণ্ঠে কবীর হাই তুলে বলল,

“যাক বাঁচলাম।তবে আমাকে নিজের মতোন এতোটাও গ’র্দ’ভ পেও না যে বাস্তবকে স্বপ্ন ভাববো।সকলের নজর অতিক্রম করে রুমে এলে কীভাবে?”

তোশা লাল লিপস্টিক আভায় জড়ানো অধরযুগল প্রসারিত করলো।মসৃণ চুলগুলো অকারণে সুগঠিত করে বলল,

“হুঁ।আমি লুকিয়ে আসবো কেন?ভয় পাই নাকী?বরং মাথা উঁচু করে এসেছি।তারপর আন্টি ঠান্ডা ঠান্ডা সেমাই নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছে।”

“আন্টি কে?”

“আরে আপনার মা।”

কবীরের মনে পড়লো তোশা তার বাবাকে আঙকেল বলে আর মা কে আন্টি।অলস ভঙিতে উঠে বসলো সে।অবিন্যস্ত অবস্থায় তামাটে পুরুষটির রুপ যেন আরো কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।চোখটা ডলে চশমা পরে নিলো কবীর।প্রথম বার এই রুপটা দেখে তোশা আনমনে নিজেকে নিচু সুরে বলল,

“এতো সুন্দর লোকটাকে তুই পটিয়ে নিলি কীভাবে তোশা মেয়ে।”

“তোশামণি?”

চমক ভাঙলো মেয়েটির।থেমে যাওয়া কথাটি পুরো করে বলল,

“আরো শুনেন আঙকেলের সাথে দাবা খেলেও এসেছি।পরে আহনাফ এখানে নিয়ে এলো।ভাববেন না আপনার সাথে দেখা করতে সেই সকাল দশটা থেকে অপেক্ষা করছি।”

“জি লিটল ডেভিল চেরি।আপনি তো আমার সাথে দেখা করতে আসতেই পারেন না।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি?তারপর সব কথা বলবো।আর শুনো সকলের সামনে আম্মু, আব্বুকে আঙকেল /আন্টি বলে ডেকো না।”

“ঠিক আছে।”

তোশা চোখ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রুমটা দেখছে।ওয়াশরুমের দরজা অবধি গিয়ে কী একটা ভেবে ফিরে এলো কবীর।তোশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পুনরায় চলে গেলো।এরকম করার কারণটা জিজ্ঞেস করার সুযোগটুকুও দিলো না।

(***)

কবীরের মা বৃদ্ধা হলে কী হবে?রান্নাবান্নায় বেশ সৌখিন মানুষ।তার বড় বউ মুমতাহিমা সে শ্বাশুড়ীর এই বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে।তাহিয়ার কাছে এই পরিবারটিকে আগে থেকেই ভীষণ ভালো লাগে।ছোটখাটো এবং লোভ হি ং সা বির্বজিত।

“তাহিয়া, তোমার মেয়েটা ভীষণ মিষ্টি তো দেখতে।অনেক বিয়ের প্রপোজাল পাও নিশ্চয় বুঝি?”

“একদম ভাবী।এসএসসি পাশ করার পর থেকে এমনটা হয়ে আসছে।”

“আগেই বিয়ে দিওনা কিন্তু।দেখবে সোনার ছেলে পাবে।তা কাওকে পছন্দ আছে মেয়ের?”

“সেরকম নেই।”

“তোমরা এসেছো দেখে ভীষণ ভালো লাগলো।সারাদিন একা থাকি তো।তাছাড়া তোশার সাথে আলাপটা হয়ে উঠেনি।সেদিন অল্প সময়ের জন্য দেখলাম।কী যে কান্না মেয়েটির।”

মুমতাহিমা হালকা সুরে হেসে ফেললো।তাহিয়া বিষয়টিতে একটু বিব্রতবোধ করলো।কথাবার্তা মসৃণ করার উদ্দেশ্যে বলল,

“বৃষ্টিও দেখতে মিষ্টি।যদি সম্ভব হয় তবে আমাদের কল্লোলকে দিয়ে নিবো।”

“কল্লোল?বিষয়টা ম’ন্দ হবেনা।ছেলেটা ভালো বুদ্ধিদীপ্ত।কিন্তু একবার যে শুনেছিলাম তোশাকে নিতে চায় তোমার ভাবী।”

“ওদের বিয়েটা ঠিক হবে বলে আমার মনে হয়না।তাছাড়া তোশা কল্লোলকে ভাই/বন্ধু ব্যতীত অন্য চোখে দেখতে নারাজ।”

“হুম বুঝলাম।এমন আবেদন যদি সত্যিই তোমার ভাই-ভাবীর থেকে আসে তাহলে অন্তত আমার কোনো আপত্তি থাকবেনা।”

“দেখা যাক।”

তাহিয়া ও মুমতাহিমা নানা রকমের আলাপ করতে লাগলো।কিন্তু কেউ একবারও খেয়াল করেনি দরজায় দাঁড়িয়ে সমস্ত কথা বৃষ্টি শুনেছে।যাকে পছন্দ করে তাকে পরিবারও পছন্দ করে এমন খুশি সব মেয়ের ভাগ্যে জুটেনা।মন প্রাণ জুড়িয়ে গেলো তার।খুশিমনে নিজের বান্ধুবীদের সাথে বিষয়টা আলাপ করতে যাবে তখুনি সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকা তোশার প্রতি নজর পড়লো।বৃষ্টির মনের ভেতর শব্দ করে মেঘ ডেকে উঠলো।নিজের ভেতরকার আ ক্রো শ দমন করতে না পেরে তোশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

“কী বৃষ্টি পড়াশোনার কী খবর?”

“তোমার সঙ্গে কিছু কথা আছে আমার তোশা।”

“কী কথা?”

“এসো আমার সঙ্গে।”

অনেকটা বলপূর্বক তোশাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি।নিজের রুমে এসে দরজাটা চাপিয়ে তোশাকে সামনে দাঁড়া করালো।

“চাচুর সাথে তোমার সম্পর্কটা শেষ করে দিবে আজ এবং এখুনি।লজ্জা করেনা মুখ উঠিয়ে এই বাড়ীতে আসতে।”

তোশার শুভ্র কপাল কুঞ্চিত হলো।গায়ের ওড়নাটা ঠিক করে বলল,

“কী বলতে চাও?”

“আমি কল্লোল ভাইয়াকে পছন্দ করি ধরে নাও ভালোবাসি।মা আর তাহিয়া আন্টি তার সাথে বিয়ে নিয়ে আলাপ করছে।”

“এটা তো ভালো কথা।”

“হতো যদি তুমি না পরগাছা হতে।”

“কী?আমি পরগাছা?”

“হ্যাঁ তাই।যখন চাচুর সাথে তোমার সম্পর্কের কথা চলবে আমি হলফ করে বলতে পারি কেউ কল্লোল ভাইয়ার সাথে আমার বিয়েটা মানবেনা।ফুফাতো বোন হয়ে যাবে মামী শ্বাশুড়ী।কতোটা ডিজগাস্টিং ব্যাপার।যদিও সেই অবধি যাবে কীনা তোমাদের কিছু সন্দেহ।”

বৃষ্টির কথায় মুখের রঙ বির্বণ হতে লাগলো তোশার।নিজের চিরপরিচিত বাচ্চাসুলভ কথাগুলোর বাহিরে গিয়ে শুধালো,

“তুমি কে?”

“আমি কে জানো না?”

“জানি।কিন্তু আমাদের সম্পর্ক থাকবে কী থাকবে না সেই বিষয়ে তুমি বলার কে?কতোটা অধিকার দেওয়া হয়েছে এই বিষয়ে তোমাকে?”

“আমি চাচুর খুব আদরের।ছোট থেকে তার মেয়ের অভাব পূরণ করেছি।”

“বেশ।সেই সম্পর্ক এক জায়গায় আর আমি এক জায়গায়।নিজের পছন্দের জন্য সব শেষ করতে বলতে পারো।অথচ আমি কেন করবো এমনটা?আমি তাকে ভালোবাসিনা?কিংবা সে?”

“তোমাদেরটা নো ং রা।”

হুট করে তোশার বড় রাগ উঠে গেলো।এই একটা শব্দ সে আর নিতে পারছেনা।

“মুখ সামলে কথা বলো বৃষ্টি।তা নয় ফল ভালো হবেনা।”

“বাহ?ন্যাকা সাজা মেয়েটি হু’ম’কিও দিতে জানে?দারুণ তো।”

বৃষ্টির কণ্ঠে বিদ্রুপ মিশে আছে।তোশা কিছু বলতে যাবে এর পূর্বে পুনরায় বৃষ্টি বলল,

“তুমি যে সু’গা’র গা’র্ল সেটা কিন্তু দেখেই বোঝা যায়।সুন্দর চেহারার ভালো ফায়দা নিতে জানো।”

“বৃষ্টি আর একটা কথা বললে মে রে ফেলবো।”

মুমতাহিমার এহেন হুমকিতে দুটো মেয়েই কেঁপে উঠলো।বৃষ্টি মনোবল না হারিয়ে বলল,

“মা জানো চাচু কতোটা অন্যায় করছে।সে..।”

কথাটি সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই বৃষ্টির গালে চ ড় বসিয়ে দিলো মুমতাহিমা।সে কখন এসেছে কেউ খেয়াল করেনি।

“মা তুমি।”

“তোশা নিচে তোমার মায়ের কাছে যাও।বৃষ্টির কথা শুনতে হবেনা।”

থমথমে মুখে তোশা জবাব দিলো,

“জি ভাবী।”

মুমতাহিমা আশ্চর্য হয়ে গেলো।সকলের সামনে যে মেয়েটা তাকে আন্টি ডেকেছে আড়ালে সম্বোধন বদলে গেলো।তোশা চলে গেলে বৃষ্টির গালে আরো একবার হাত চালিয়ে নিলো মুমতাহিমা।

(***)

অসময়ে কাক ডাকছে।কবীর সেই ছোটবেলা থেকে কাকের ডাক পছন্দ করেনা।কেমন যেন গা কেঁপে বিরক্তি ছড়িয়ে পড়ে শরীরে।গোসল করে বারান্দায় এসে সবেমাত্র দাঁড়িয়েছে সে।দুপুর দুটো অবধি ঘুমানোর আশ্চর্য এক ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নেয় সব পুরুষ।কবীরও ব্যতিক্রম নয়।একবার কলেজে থাকতে সে বিকেল পাঁচটা অবধি ঘুমিয়েছিল।ব্যস ওমনি পরিবারের মানুষ ভেবে নিলো ঘুমের ঔষধ খেয়েছে ছেলেটা।ডাকাডাকিতে সাড়া দিচ্ছিলো না যে এজন্য।পরে কবীরের মামা এসে দুই বালতি পানি ঢেলে জাগিয়েছিল।এবং মে রে ছিল ও খুব।অতীত মনে হতেই কবীর হেসে ফেললো।সবেমাত্র যৌবনপ্রাপ্ত সময়গুলো কতোটা না মধুর ছিল।হুট করে দরজা খোলার শব্দ হলো।তোশা জোরে জোরে পা ফেলে কবীরের সামনে এসে দাঁড়ালো।মেয়েটা রেগে আছে।দেখতে কৃষ্ণচূড়ার মতোন স্নিগ্ধ লাগছে।

“কী ব্যাপার তোশামণি?এতো রেগে কেন?”

তোশা কথায় জবাব দিলো না।পাশে বেতের চেয়ারে দাঁড়িয়ে নিলো।লম্বায় খাটো হওয়ায় পাছে কার্যসিদ্ধি না হয়। কবীরের টি-শার্টের কলার ধরে কাছে টেনে আনলো।আশেপাশে অবশ্য তোয়াক্কা করলো না।মুহূর্তেই তোশা জীবনে অন্যতম চাওয়া ট্রু লাভ’স কিসটা আদায় করে নিলো।তবে তা ক্ষণ মুহুর্তের জন্য।কবীর ঠোঁটে ভেজা ভাব নিয়ে এখনও বোঝার চেষ্টায় আছে ঠিক কী হলো?

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩৮
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“মেয়েদের লাজুকলতা হওয়া উচিত।যাকে ছুঁয়ে দেওয়ার পূর্বেই কুঁকড়ে যাবে।এটা কোন ধরণের বিহেভিয়ার মেয়ে?”

কবীর বড্ড ঠান্ডা মাথায় কথা বলছে।এই যুবতী মেয়েটিকে সামলাতে গিয়ে যে নাকানিচুবানি খাচ্ছে সে তার ব্যাখা হয়না।তোশা আস্তে করে কবীরের বুকে মাথা রেখে বলল,

“সুগার গার্ল তারা হয় যারা সহজ বাংলায় বে শ্যা।আমি কী তাই?কেন এমন কথা শুনতে হয়?আপনাকে তো অন্যায়ভাবে চাইনি।শুধু আপনি আমার বাবা-মায়ের বন্ধু তার সাথে সম্পর্ক রাখায় আমি টাকার বিনিময়ে নিজেকে বি ক্রি করা মেয়েদের সমতুল্য হয়ে গেলাম?সমবয়সী থেকে আজকাল যারা বিয়ের আগে সব করে ফেলছে তাও বাদ যারা বান্ধুবীদের সাথে কথা বলার রাখঢাক রাখেনা।খারাপ ভাষায় গালি দেয়।উদ্ভট পোশাক পরে তারা সকলে পিওর?একমাত্র আপনাকে ভালোবাসায় এসব শুনতে কেন হবে?আমি আপনি কবে কোথায় নোংরামি করেছি?আজ তাই সেটা করে ফেললাম।কারণ আমি তো সুগার গার্ল।”

কবীরের তামাটে বর্ণের কপালে রেখার উদয় ঘটলো।প্রচন্ড বিতৃষ্ণা নিয়ে শুধালো,

“কথা গুলো কে বলেছে?”

“বৃষ্টি।এসব শুনতে হবে দেখে আমাকে পাত্তা দেননি তাইনা?”

“কান্না থামাও।এদিকে এসো।”

বুক থেকে তোশার মাথাটা উঠিয়ে আজলায় তুলে নিলো কবীর।কী মায়াময় মুখখানি।অশ্রুতে সিক্ত হওয়ায় বৃষ্টিতে ভেজা ফুলের মতোন লাগছে।কবীর শক্ত লম্বা আঙুলগুলো তোশার অশ্রু দ্বারা ভিজিয়ে নিয়ে তাকে টেনে ভেতরের বিছানায় বসালো।সে কিন্তু মেয়েটির পাশে বসলো না।বরং মেঝেতে বসে হাত দুটো মুঠোতে ভরে নিলো।

“আমি কিছু কথা বলবো তোশা।মনোযোগ দিয়ে শুনবে।কান্নাটা থামাও আগে।”

“বলেন।”

“তুমি কোন ক্লাস থেকে পছন্দ করো আমাকে?ক্লাস নাইন?আমিও কিন্তু ঠিক সেসময় থেকে তোমাকে পছন্দ করা শুরু করি।ফলস্বরুপ ইগ্নোর করা,বকা দেওয়া, পাত্তা না দেওয়া।যখন দেখা হলো তোমার সাথে তখন আমি ভীষণ একাকিত্বে ভুগছিলাম।দিশার সাথে বিচ্ছেদের কথাটা আমার থেকে উঠেছিল না প্রথমে।বরং সে চেয়েছিল আমরা আলাদা হয়ে যাই।কারণটা খুব সাধারণ।আজকে জীবনে যা আছে তা পাওয়ার আগে খুব স্ট্রাগল করতে হয়েছে।দিশার বক্তব্য ছিল সেসবের জন্য কষ্ট করতে করতে আমার ও ছেলের প্রতি মায়া তার নেই।আহনাফের যখন বয়স আরো কম তখন দিশার সঙ্গে দেখা করতে গেলে খারাপ ব্যবহার করতো।আমিও পরে শক্ত হয়ে কোর্ট থেকে পারমিশন নিয়ে রাখি যাতে দিশা আহনাফের কাছে এলে যেকোনো স্টেপ নিতে পারি বা না আসতে পারে।এইযে ঝামেলা এতে হলো কী?আমরা বাবা-ছেলে একা হয়ে গেলাম।আর যখন মানুষ একা থাকে তখন ভালো কারো সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে।আমি কখনো ভাবিনি যে মেয়েটি জন্মের সময় আমি পরিপূর্ণ যুবক সেই বাচ্চাটা আমাকে ভালোবাসার কথা আবেদন করবে।এটা ভাবনার বাহিরে ছিল।তোমার অনুভূতিকে অল্প বয়সী আবেগ,স্বপ্ন,বাচ্চামো কতোকিছুর নাম দিয়েছি।বন্ধুর মেয়েকে ভালোবাসবো?বিয়ে করবো?কী হীন কাজ।পরে মনে হলো তোমাকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে ধর্মীয় দিকে বাঁধা নেই।সম্পর্কে জড়ানো যায়।কিন্তু সমাজ?”

“সমাজের জন্য আজকে আমার শুনতে হচ্ছে কবীর শাহ।এমন কেন সবাই?”

“এই বোকা মেয়ে কেঁদো না।আমার কথাগুলো শুনো।তোমাকে আমার বিছানায় নিয়ে যাওয়া এক দুই সেকেন্ডের ব্যাপার।এটা কী জানো?প্রচন্ড আবেগী তুমি।ক্লাস নাইনে থাকতে দূরে সরানোর জন্য আমাকে বিয়ে করতে বললাম।তুমি রাজী হলে না প্রথমে।কিন্তু দুই রাত পরেই মেনে নিতে সেটা জানো?”

“কবীর শাহ।”

“থামো।কথাটা মিথ্যা নয়।এরপর যুবতী হয়েছো।নিজের মধ্যে পরিবর্তন পেয়েছো অনেক।কিন্তু আমাকে মস্তিস্ক থেকে সরাতে পারলে না।অদ্ভূতভাবে আমিও না।শেষে বুঝে গেলাম যেমন হোক আমি তোমাকে ভালোবাসি।স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে চায় মন। পুরুষদের মন কিন্তু অনেক জটিল হয়।সহজে কাওকে সারাজীবন পাওয়ার মতোন মানসিকতা রাখেনা।আজকাল বছরের পর বছর সম্পর্ক থাকার পর ভেঙে যায়।সেখানে আমার তোমাকে ছাড়ার কোনো ইচ্ছা নেই।ইনফ্যাক্ট থাকবেও বা কেন?তুমি আমার জীবনে দ্বিতীয় নারী তোশামণি।এবং শেষ নারীও।যাকে মলিন হৃদয়ে কখনো স্পর্শ করিনি।চাইনি।”

তোশার মনে একরাশ সুখ দোলা দিয়ে গেলো।শুভ্র মুখটায় লজ্জারা হানা দিয়ে বসলো।অধরযুগল বিস্তৃত করে বলল,

“আপনার মুখে প্রেমের কথা মানায় না কবীর শাহ।আপনি গম্ভীর,অহংকারী হয়ে ঘুরবেন।ইগ্নোর করবেন এটাই শান্তির।”

“ভেবে বলছো তো?এখন থেকে আরো বেশী করে ইগ্নোর করবো।”

তোশার চোখ দুটো ছোট ছোট হয়ে গেলো।মুখ ভেঙিয়ে বলল,

“করে দেখেন।কেঁদে ফেলবো।”

“তাই?”

“হ্যাঁ।এতো কাঁদলে আমাদের বিয়েতে কী কাঁদবো?”

কথাটি বলেই তোশার মুখটি মলিন হয়ে উঠলো।কবীর নিজের কথাগুলো সম্পূর্ণ করার নিমিত্তে বলল,

“পৃথিবীতে কে না ভালোবাসাকে চায় বলো?যে নারীকে স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করা সম্ভব।তার উপর ভালোবাসি তাকে পেতে কেন চাইবো না আমি?ভালোবাসা পেতে এই কবীর শাহ ও চায়।ধরে নিলাম তোমার অল্প বয়সী চিন্তা ভাবনা।আমার তো না।একজনকে হারিয়ে কেন সারাজীবন কষ্ট পাবো?আমি পিওর ব্যবসায়ী।দুঃখের সঙ্গে ডিল করলে প্রোফিট আসবেনা।এখন আসি যারা কোনোকিছুকে বিকৃত করে।ধরো এক জায়গায় ক আছে আমি খ বলে খুব মজা নিলাম।নিজের আত্নাকে তৃপ্ত করলাম।কিন্তু আদৌতে খ হবে বিষয়টা?তাহলে মিথ্যা প্রচার হলো না?তেমন হোক টাকার লোভী অথবা মানুষ দেহ লোভী। অসম বয়সের কারো সম্পর্ক বা বিয়ে হলে কেন মানুষ মেনে নিতে পারেনা?শেষে সম্পর্কতে তারা থাকবে তো।কিন্তু কারো কারো মন্তব্যে মনে হয় বিয়েটা সারা দেশকে নিয়ে করছে।সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু কাপল আছে যারা এমন অসম বয়সী।তারা বেশ ফেমাস।তাদের পোস্টের কমেন্ট বক্সে ঢুকলে মনে তারা বিয়ে করে অন্যায় করে ফেলেছে।আর সবথেকে মজার ব্যাপার কী জানো?মেয়েদের এতো বাজে বাজে মন্তব্য করে মোট কথা তাদের এইযে প্রস্টিটিউট লেভেলে নিয়ে যেতেও মুখে আঁটকায় না।এইযে মন্তব্যকারী মানুষরা তারা আসলে কী চায়?আমার বুঝে আসেনা।এবং কতোটা যে ফ্রাস্টেটেড নিজেদের লাইফে।কারো বিন্দুমাত্র কিছু দেখলে হোক ভালো মন্দ।রঙ মিশিয়ে মজা নিবে।বাকস্বাধীনতার সর্বোচ্চ খারাপ উপায়ে ব্যবহার করে এমন ভাব করবে শেষে I am the purest person in the world. এদের মন মতো না হলে তোমার বিপদ।সেসব কথা যাক।তুমি-আমি দুজনকে পছন্দ করি পাওয়ার অধিকার রাখি।আর কে না চায় ভালোবাসার মানুষকে পেতে?ভবিষ্যতে গিয়ে এমন মন্তব্য বহু পাবে।আড়ালে হাসবে মানুষ।কিন্তু শেষটায় আমি থাকবো তোমার সাথে।আমার চোখে বিশুদ্ধ নারী তুমি।কেঁদো না।বৃষ্টির সঙ্গে কথা বলবো আমি।কিন্তু মাথায় রাখবে আমরা সবাইকে জবাব দিতে গেলে কিংবা যারা ঘটনা বিকৃত করে মজা নিতে পিছপা হয়না তাদের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হলে তাদের মতোন ভাষা আর মানসিকতা হতে হবে।সমান সমান লড়াই যে।আর ধরে নাও না পজেটিভ বিষয়।সুগার মানে চিনি আর গার্ল মানে মেয়ে।তুমি মিষ্টি মেয়ে তোশা।”

উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো তোশা।কতোটা না নিখুঁতভাবে তার মনের ঝড়টা থামিয়ে দিলো এইযে তার বাবার বন্ধু।উহু,তোশার কবীর শাহ।যাকে সে ভালোবাসে।সমাজের নিয়ম অতিক্রম করে কামনা করে।এবং সবসময় করবে।

“বুঝেছি আপনার সব কথা।সত্যিই যে সমাজে পাপ করে ফিরে এসে নতুন জীবনযাপন করা দায় কি’বা ধ’র্ষ’ক নয় ধ’র্ষি’তা’র শুনতে হয় সেটাকে তোয়াক্কা করা নিজেকে কষ্ট দেওয়ার সমান।”

“তবে এভাবে আঙকেল আন্টি ডেকো না আম্মু-আব্বুকে আড়ালে হলেও।ভবিষ্যতের বিষয় পরে।কেমন বুঝলে?আর অন্যায় কিছুও করবেনা।যা একটু আগে করলে।But…

কবীর নিজ প্রাণের নিকটবর্তী হলো।ফিসফিস করে বলল,

“কিছু বলতাম।থাক না বলি।”

তোশা কথাটি বাড়ালো না।কবীরের কণ্ঠে কিছু একটা ছিল।সে তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

“আসছি আমি।”

“যাও।আমার খুদা লেগেছে অনেক।মাকে বলো তো খাবার উপরে পাঠাতে।”

“তবে আপনি আনরোমান্টিক লোক।কিন্তু নীতিবান।”

“এতো প্রশংসা করো না মেয়ে।পরে ভুল গুলো বড় হয়ে নজরে আসবে।”

কবীরের হাসিমাখা মুখটা দেখে একরাশ শান্তি পেলো তোশা।মনটা শান্ত করে বের হয়ে গেলো।তোশা যাওয়ার মিনিট খানেক বাদে লে তাহিয়া রুমের বাহির থেকে ভেতরে আসার অনুমতি চাইলো।নিজেকে গুছিয়ে কবীর বলল,

“সারপ্রাইজ হয়ে গিয়েছি আমি তাহিয়া।হঠাৎ এখানে?”

“আন্টি আসতে বলল।তোমার বিয়ে নিয়ে কথা বলবে।”

“তুমি ভীষণ বা জে ঘটক তাহিয়া।গতবার মোটামুটির সংসার দেখিয়েছো।”

কথাটি হজম করে তাহিয়া শুধালো,

“কী ব্যাপার কবীর?ভীষণ খুশি লাগছে তোমাকে।তোশা কী এসেছিল এখানে?”

মিথ্যা কবীর বলতে চায়না।তাই সত্যিটা বলল।তবে সাধারণভাবে।

“এসেছিল।কেবল বের হলো।”

“ইদানীং ভীষণ অবুঝ হয়ে যাচ্ছে তোশামণি।”

“কেউ কেউ অবুঝ হওয়া ভালো।পৃথিবীর সকলে বুঝদার হলে সবটা যান্ত্রিকতায় রুপ নিবে।তোশা না হয় সারাজীবন অবুঝ ফুল হয়ে থাকলো।”

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে