Thursday, August 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 459



কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-১৪

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৪

ড্রেস চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে,নওশাবাকে কোলে নিলো,সারাদিন পর নিজের মেয়ের মুখটা দেখে আদরে ভরিয়ে দিলো। এতো, এতো অশান্তি আর কষ্টের মাঝে এই মুখটাই যেনো একমাত্র প্রশান্তি। ইরহা নাওশাবাকে লাবিবার কাছে রেখে,কিচেন থেকে প্লেটে খাবার বেড়ে নিয়ে টেবিলে বসলো। কয়েক লোকমা মুখে তুলতেই কলিং বেল বেজে উঠলো।

✨আন্টি ইরহা এখানেই থাকে মানে?
‘সেসব জেনে আর কি করবে! এখন থেকে এটাই ওর স্থায়ী ঠিকানা।
‘কিছু মনে না করলে কারণ বলা যাবে?
‘কি কারণ শুনবা বাবা!ডিভোর্স হয়ে গেছে ওদের।
আহনাফের কানে ডিভোর্স শব্দটা বর্জ্যপাতের ন্যায় ঠেকলো। অবাক হয়ে বলে ডিভোর্স মানে?
‘সবই কপাল, জামাই আরেকটা বিয়ে করেছে।
‘আহনাফ স্তব্ধ হয়ে গেলো,ইরহাকে যেদিন বলেছিলো, তুমি কি আমাকে ছেড়ে অন্য কোন সংসার করতে পারবে?
‘আমাদের মত মেয়েরা সব পারে,সামান্য সংসার কি এমন জিনিস!খড়কুটোর বাসা ঠিক সামলে নিতে পারবো। আমার তো আর অতোশত চাহিদা নেই। সাধারণ ভাবে জীবনটা ঠিক টেনে নিতে পারবো।
তাহলে হুট করে ডিভোর্স কেন?

ফরিদা বেগম, আহনাফকে ডেকে বলে,কি ভাবছো বাবা? আমার মেয়েটার মত এতো শান্ত শিষ্ট মেয়েটা এই পথ কেন বেছে নিলো?দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ গর্জে ওঠে।

‘আমি কি ওর সাথে দেখা করতে পারি?
‘তুমি বসো আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি।

ইরহা দরজা খুলতেই রবিন হড়বড় করে ঘরে ঢুকে গেলো।

‘আপনি আবার কেন এসেছেন?
‘দেখো অনেক হয়েছে মান অভিমান। আমার তোমাকে লাগবে মানে তোমাকেই লাগবে। চলো আমার সাথে।
‘দু’দিন জেলে থেকে মাথার তাড় সব ছিড়ে গেছে মনে হয়। আপনার পাগলামি অন্য কোথাও যেয়ে দেখান৷ এটা ভদ্রলোকের বাসা।
‘তুমি জানতে আমি জেলে ছিলাম তবুও গেলেনা দেখা করতে! কিভাবে এতো পরিবর্তন হয়ে গেলে? মাত্র কয়েকদিনে আমার প্রতি সব ভালোবাসা ধুঁয়ে মুছে শেষ।
‘আপনি কে?আপনি জেলে থাকেন নাকি মর্গে থাকেন তাতে আমার কি?
কবুল বলে যেমন আপনি আমার স্যার সম্পর্ক তৈরী করেছিলেন,তালাক নামায় সিগনেচার করে ঠিক সম্পর্ক শেষ করেছেন। আর বর্তমান আপনি আমার অপরিচিত। তাই এই মূহুর্তে আমার বাসা থেকে বের হন।
‘তোকে কতবার করে বলছি, যা হয়েছে তার জন্য আমি দুঃখিত তাও তোর তেজ কমে না! এতো কিসের তেজ তোর? কয়েকদিন আগেও তো আমার আগে পিছে ঘুরেছিস আমার এট্যানশন পাওয়ার জন্য। আর এখন তেজ দেখাস? তোর আমার সাথে তেজ দেখানোর মত আর কি আছে?আরো বাজে কিছু ওয়ার্ড ব্যাবহার করছে রবিন।

আহনাফ পাশের রুম থেকে আওয়াজ শুনে ডাইনিং রুমে আসতেই ইরহা আর রবিনের বাকবিতন্ডা দেখতে পায়।ফরিদা বেগম ও তার পাশেই। কিছু বলা উচিৎ হবে কি না সেটা ভাবছে আহনাফ।

ইরহা আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারলো না। ঠাসসসস করে পরপর দু’টো চড় বসিয়ে দিলো রবিনের বা গালে। আপনি যেমন ঠিক তেমন আপনার ভাষা। আর কখনো যদি আমার বাড়ির সীমানায় আপনাকে দেখি, তাহলে আইনি ব্যাবস্থা নিতে বাধ্য হবো।
রবিন কয়েক মূহুর্তের জন্য থমকে যেয়ে বলে,তোর এতো সাহস তুই আমার গায়ে হাত তুলিস। আজ তোর তেজ বের করবো আমি। বলেই ইহার চুলের মুঠি ধরতে যায়। হাত চুলে পৌঁছনোর আগেই আহনাফ রবিনের হাত শক্ত করে ধরে বলে,যদি গণধোলাই খেতে না চান তাহলে মানে, মানে কেটে পরুন।
‘রবিন বলে,বাহহহ মাস না পেরুতেই নতুন নাগর যেগাড় করে ফেলেছিস?
আহনাফ রবিনকে ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিয়ে বলে,এরপরে যেনো এই এলাকায় না দেখি।
ইরহা হঠাৎ আহনাফ কে দেখে থমকে গেলো। চেয়ারের হাতল শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো। আহনাফ দরজা লক করে, ইরহার কাছে এসে বলে,তুমি ঠিক আছো?
‘ইরহা চুপ করে রইলো। মনে, মনে বলে, কেন আমার দূর্বলতা তোমার সামনে আসলো? আমি তো বলেছিলাম ভালোই থাকবো। তাহলে তুমি কেন আজকে সবচেয়ে খাবার সিচুয়েশনে আমার সামনে আসলে!নিজের অজান্তেই চোখের কার্নিশ বেয়ে আশ্রু গড়িয়ে পরতে লাগলো।

‘সরি এই সময়ে আমার উপস্থিতির জন্য।আমি জানতাম না তুমি এ বাড়িতে।

‘ইরহা চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলে,কেন এসেছেন?
‘আন্টিকে ইনভাইট করতে।
‘কাজ হয়ে গেলে আসতে পারেন।
‘ইরহা আমি তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাই।
‘আমি চাইনা৷ আর তাছাড়া আপনার ওয়াইফ যখন জানতে পারবে, আপনি আপনার প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে আলপ করেছেন, সেটা তার জন্য সুখকর হবে না নিশ্চয়ই?
‘সাধারণ কথাকে তুমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?
‘প্লিজ এভাবে তুমি করে ডেকে বিব্রত করবেন না৷ অপরিচিত কেউ আপনি বললে ডাকটা ভালো শোনায়।
‘আমরা কি ফ্রেন্ড হিসেবে নরমাল কথা বলতে পারি না?
‘আসসালামু আলাইকুম। আহনাফ ভাইয়া কেমন আছেন? ভাবি কেমন আছে?
‘আহনাফ কোন কথার উত্তর না দিয়ে বলে,আন্টি তাহলে আজ আসি। অন্য কোন সময় আবার আসবো৷
আহনাফ চলে যেতেই ফরিদা বেগম বলে,এটা কেমন ব্যাবহার ইরহা?
‘মা’ যে ভালোবাসা ছেড়ে এসেছি, যে মানুষটাকে পর করে দিয়েছি,তার সামনে নিজের দূর্বলতা আমি প্রকাশ করতে পারবো না। আমার জীবনে যা হচ্ছে তা আসি একা শয়ে যাবো। যত কষ্ট হোক একাই লড়াই করবো। আমার পাশে কেউ থাকলে তোমরা আছো। যাকে অতীতে হেলায় হারিয়েছি। তাকে অসময়ে কষ্টের ভাগ দিতে চাই না৷
‘ফরিদা বেগম বলেন, সব দোষ আমাদের এতো,সোনার টুকরো ছেলেকে অবহেলা করে কয়লা বেছে নিলাম।
‘বাদ দাও মা’এসব বলে কি হবে? ভাগ্যে যা ছিলো তাই হয়েছে। এসব ভেবে এখন আফসোস করে লাভ নেই।

✨রাতুলের চোখে ঘুম নেই ষোড়শী কন্য লাবিবাকে রাতুল অনেকটা ভালোবাসে। কিন্তু হুট করে তার লাবুর কি হলো! কেন সব সম্পর্ক মূহুর্তে শেষ করে দিলো। সব জায়গা থেকে ব্লক করে দিয়েছে রাতুলকে। মন খারাপ করে নিজের রুম অন্ধকার করে শুয়েছিল রাতুল। ঠিক তখন জারিফ এসে লাইট অন করে বলে,কিরে তোর কি হয়েছে?
‘কই কি হয়েছে ভাইয়া!
‘আমাকে মিথ্যে বলবি না! সত্যটা বল।
‘রাতুল কিছু সময় চুপ করে থেকে বলে,আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি। হুট করে মেয়েটা আজ আমার সাথে ব্রেকআপ করে ফেললো। কোন কারণ ছাড়াই। আমি ওকে সত্যি ভালোবাসি ভাইয়া।
‘তোর বড় হয়ে আজ পর্যন্ত একটা প্রেম করতে পারলাম না৷ আর তুই প্রেম থেকে ব্রেকআপে চলে গিয়েছিস?
“ভাইয়া আমি সিরিয়াস!
‘কতটা সিরিয়াস?
‘প্লিজ ভাইয়া তুমি কিছু করো। শুধু জানতে চাই আমার ভুলটা কোথায়?
‘নাম্বার দে কল করে জিজ্ঞেস করি।
রাতুল খুশি হয়ে জরিফকে জড়িয়ে ধরে বলে,তুমি আমার বেস্ট ভাইয়া। নাম্বার বলছি টাইপ করো।
‘জরিফ নাম্বার নিয়ে বলে,এবার নিচে আয় রাতের খাবার খাবো। তারপর তোর সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো।
‘কিভাবে করবে? এখন কে আমাকে মেয়ে দেবে!আমি তো বেকার।
‘জরিফ হেসে বলে,বাহহহ কত চিন্তা আমার ভাইটার। তা তোর ভাই আর বাপের টাকা আছে কি করতে?তোদের মত দুইটা কবুতরের বাচ্চা আমরা অনায়াসে পালতে পারবো।
‘তোদের মত মানে?
‘তুই আর তোর বউ। এবার চল।

✨লাবিবা নওশাবাকে, শুয়ে দিয়ে পড়ার টেবিলে উদাস মনে বসে আছে। রাতুলের সাথে অল্প দিনের সম্পর্ক তবে ভালোবাসাটা মনে হচ্ছে বহু যুগের। আচ্ছা ষোল বছর বয়সে প্রেমে পরলে,সবাই সেটাকে আবেগ কেন বলে? ষোল বছর বয়সে কেউ কি গভীর প্রেমে পরতে পারে না?

#চলবে

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-১৩

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৩

বাস থেকে নামতেই একজনের চেহারা দেখে ইরহার পা’থমকে গেলো। হঠাৎ করে মনে হলো কেউ তাকে আটকে দিয়েছে।
প্রাঙ্গণ শব্দটা আমাদের সাথে এমন ভাবে মিশে থাকে মনে হয় যেন অতি প্রিয় দুঃখ। ইরহা অতি কষ্টে কয়েক কদম সামনে এগুলো। সেই প্রিয় মুখ, সেই প্রিয় মানুষ, কিন্তু আজাব সে আর প্রিয় নেই! যাকে দেখলে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে চলতে হয় এখন!একটা সময় ছিল যখন তাকে দেখার জন্য,মনের মধ্যে ব্যাকুলতা সৃষ্টি হতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সবকিছু কেমন পাল্টে গেছে জীবনটা আসলেই অন্যরকম, প্রিয় থেকে অপ্রিয়, নিজের থেকে অন্যের, বর্তমান থেকে প্রাঙ্গণ। সবকিছু কেমন আবহাওয়ার মত পাল্টে যায়। শুধু আমাদের মনের কোণে রয়ে যায় গভীর ক্ষত অথবা আফসোস প্রিয় মানুষটিকে নিজের করে না পাওয়ার। আমার মানিয়ে নিতে চেষ্টা করি কিন্তু কতটা পারি হয়তো সমাজ, মানুষ সবাই আমাদের সুখটা দেখে, কিন্তু হুট করে বিষন্ন বিকেলে প্রাঙ্গন কে ভেবে বুকের ভেতর দগ্ধ ক্ষত কেউ দেখেনা! আমরা ভীষণভাবে মানিয়ে নিয়ে বেঁচে থাকি অথবা নতুন করে স্বপ্ন বুনি।
ইরহা দ্রুত প্রস্থান করলো। আজকে আরো তিনটা ইন্টারভিউ। জীবন কত কঠিন হয়ে গেলো। একটা চাকরির জন্য পাগলের মত ছুটছে তবুও চাকরির ব্যাবস্থা হচ্ছে না।
কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না, ইরহা। কিন্তু একটা চাকরির খুব প্রয়োজন। এতো, এতো টেনশন,কষ্ট নিজের মধ্যে চেপে রেখে, ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। জীবন এতো সহজ না। যেমন আমরা কল্পনা করি! কতশত স্বপ্ন আজ সব মিথ্যে। যেই স্বামীকে পেয়ে নতুন পৃথিবী সাজিয়েছিলো আজ তার জন্য জীবনের কঠিন বাস্তবতার সমানে দাঁড়িয়ে। জীবন ভয়ংকর সুন্দর।
বাস থেকে নেমে রিকশা নিলো।কালকে যখন নীলুফার সাথে দেখা হয়েছিল। তখন নিলুফা উপহাস করে বলেছিল,”অতি রাঁধুনি না পায় ঘর,অতি সুন্দরী না পায় বর!!
গ্রামের মুরুব্বিদের মুখে এমন কথা কত শুনেছি, আজ নিজের চোখে দেখছি। তুই কি রুপে,গুণে কম! তবুও তোর ঘর ভেঙে গেলো!তবে আর একটু ধৈর্য ধরে স্বামীর সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করতে পারতি। সমাজে ডিভোর্সী মেয়েদের মানুষ ভালো চোখে দেখে না-রে!
ইরহা মুচকি হেসে বলেছিল,তুই কোন চোখে দেখিস! আর বলতো সমাজ আমার কোন উপকার করেছে?
‘তুই রাগ করলি!আমি তো ভালো মনে কথাগুলো বললাম৷ থাক বাপু আমার আর কোন কথা বলে কাজ নেই।এ পাড়ায় আমারও বাপের বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি থেকে আসলেই তোর সাথে দেখা হবে। তুই না চাইলে কথা হবে না।
‘দেখ নীলু আমি বলিনি কথা বলিস না। শুধু জিজ্ঞেস করলাম, ডিভোর্সী মেয়েদের কোন চোখে দেখিস?
“আমার দেখা দিয়ে কি সমাজ চলবে? আচ্ছা যাই আজ ভালো থাকিস।
নীলুর কথাগুলো মনে করে তাচ্ছিল্য হেসে মনে মনে বলে,সময়ের সাথে, সাথে সব পাল্টে যায়। পরের কথায় আঘাত না থাকলেও কাছের লোকের কথার আঘাতে হৃদয় ছি’ন্ন’ভি’ন্ন হয়ে যায়।

✨কলেজের ক্লাস শেষ করে আনমনে হাঁটছে লাবিবা। ইরহার কথাগুলো সে গভীর ভাবে উপলব্ধি করেছে। কিন্তু রাতুলকে সে ভালোবাসে। এখন তার কি করা উচিৎ। ভাবতে ভাবতে নিজের মোবাইল বের করে দেখে, রাতুলের বেশ কয়েকটা মিসড কল। সাথে সাথে রাতুল কে ব্লক করে দিলো। মন খারাপ করে একটু সামনে আসতেই কলেজের ক্যাম্পাসের কাঠগোলাপ গাছটার সামনে এসে দাঁড়ালো।বুকের বা’পাশটায় কেমন ব্যাথা হচ্ছে। হুট করে মনে পরে গেলে রাতুলের সাথে প্রথম ব্রেকআপের কথা।সামান্য বিষয় নিয়ে ব্রেকআপ করেছিল……. তোমার কেমন চুল পছন্দ?
‘আমার ছোট চুল পছন্দ।অবাক হলে!মেয়ে হয়েও আমার লম্বা চুল পছন্দ না বলে?
‘নাহহ তা কেন হবো!আসলে আমারও মেয়েদের ছোট চুল পছন্দ।
“মানে কি? তুমি কেমন ছেলে!কোথায় রোমান্টিক ভাবে বলবে,প্রিয়তমা আমার জন্য তুমি দীঘল কেস রাখবে, তোমাকে বড় চুলে ভিষন মায়াবী লাগবে। তা-না তুমি বলো তোমার ছোট চুল পছন্দ! যাও ব্রেকআপ।
” এই এতোটুকু কথায় কেউ ব্রেকআপ করে?
‘দেখুন ব্রেকআপ মানে ব্রেকআপ। রস কষ ছাড়া ছেলের সাথে আমি প্রেম করবো না।
কথটা ভাবতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। ঠিক সে সময় একজন বলে,মহারানী এখানে দাঁড়িয়ে হাসছেন! আর আপনাকে পুরো কলেজ খুঁজে বেড়াচ্ছি। আজকে ব্লক করার কারণ কি? নিব্বা প্রেমিকা নিয়া আমি অসহায় প্রেমিক বড় জ্বালায় আছি।
‘তাহলে ব্রেকআপ করে নাও।
‘কি হয়েছে লাবু? আজকে তোমার মন খারাপ?
‘রাতুল আমার পক্ষে রিলেশন কন্টিনিউ করা সম্ভব না।
‘কি হয়েছে বলবা তো!
‘আমি বুঝতে পেরেছি এটা আমার প্রেম করে বেড়ানোর বয়সা না। তাই আজকে থেকে আমাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই।
‘এই লাবু তুমি না বললে আমি বুঝবো কি করে?
‘বাংলা ভাষায় স্পষ্ট উচ্চারণে বলেছি এরপর না বুঝলে আমার কিছু করার নেই।
‘রাতুল লাবুর কানের সামনে এসে বলে,রাগ কমলে ফোন করিস, আমি রাত জেগে তোর অপেক্ষায়।
‘লাবিবা কোন কথা না বলে চলে যাচ্ছে
‘রাতুল পিছু পিছু আসছে। লাবিবা থেমে যেয়ে বলে,এভাবে পিছু আসবে না। দয়া করে আমাকে ভুলে যাও।
রাতুল যেয়ে রইলো লাবিবার চলে যাওয়ার পথে। সব সময় দুষ্টমিতে মেতে থাকা মেয়েটা হঠাৎ এতোটা গম্ভীর হলে কি করে? সেই হিসেব মেলাতে ব্যাস্ত রাতুলের মন মস্তিষ্ক।

✨রুবির হ্যাসবেন্ড তামিম সারাদিন অনেক চেষ্টা করেও জামিন করাতে পারলো না রবিনের। শেষ প্রহরে রুবি আর তামিম রবিনের কাছে এসে বলে,আজতো কিছু করতে পারলাম না। দেকি আবার আগামীকাল চেষ্টা করবো।
‘তোদের কিছু করতে হবে না। বাসায় চলে যা।আর হ্যা শোন মা’য়ের খেয়াল রাখিস। আমি এখানেই ঠিক আছি। যেমন কর্ম তেমন ফল। কথাটার মর্মার্থ আজ বুঝতে পারছি।
‘এখন বুঝে যদিও কোন লাভ নেই। আর এসব কথা এখন আমি বলতেও চাইছি না। নিজের খেয়াল রাখো। তামিম চেষ্টা করছে, দু-একদিনের মধ্যে জামিন পেয়ে যাবে আশাকরি। একটু ধৈর্য ধরো। কথায় আছে, “গর্তে পরিলে হাতি, ব্যাঙেও মা’রে লাথি। গর্তে যখন পরেছো ধৈর্য ধরা ছাড়া উপায় নেই।
রুবিদের কথার মাঝেই,ফোরন কেটে লামা বলে,মুখেই বড় বড় কথা! কাজের কাজ তো কিছুই করতে পারলে না।
‘আপনার মত মেয়েদের সাথে কথা বলার রুচি আমার নেই।
‘কথা বলবে না, শুধু পায়েও পরবে। নিজের ভাইয়ের ভালো চাইলে মুখটা বন্ধ রাখো।

‘তামিম বললো,রুবি চলো, এখানে আর থাকা যাবে না।
‘তা জামাই বাবু এতো তাড়া কিসের? ওয়েট করেন আর একটু।
লামা রবিনকে ছাড়িয়ে নিলো। তবে রবিনকে শর্ত নামায় সাইন করতে হয়েছে। আর কখনো এমন করবেনা।

সবাই মিলে বাসায় আসলো। রবিন বাসায় না এসে সোজা চলে গেলে ইরহাদের বাসার উদ্দেশ্য। যেভাবেই হোক ইরহাকে ফেরাতে হবেই।রবিন জানে কাজটা সহজ না তবুও যত কষ্ট হোক সে এটা করবেই। ভুল যেমন করেছে তেমন শুধরে নেবে।রবিন হয়তো জানেনা, কিছু ভুল কখনো শুধরে নেয়া যায় না। বিয়ে কোন পুতুল খেলা নয়! চাইলেই বিয়ে দিলাম আবার ভালো না লাগলে ভেঙে দিলাম। ডিভোর্স /তালাক হওয়ার পরে ফেরার পথ ধর্ম মতে বন্ধ। অনুতপ্ত হলেও কিছু,কিছু ভুলের ক্ষমা হয় না,চাইলেও সব ভুল শুধরে নেয়া যায় না!
“যে ঘর অগোছালো হয়, তা গোছানো যায়। যে ঘর বানের জলে ভেসে যায়! তা কখনো ফিরে পাওয়া যায় না৷

✨ইন্টারভিউ শেষ করে বাড়ি ফিরছে ইরহা। আজকের ইন্টারভিউয়ের শেষেরটায় আশা করা যায় চাকরিটা হবে। গুমোট আকাশ হয়তো এক্ষুনি ধরনি কাঁপিয়ে বৃষ্টি নামবে। ইরহা রিকশায় বসে আছে আর বিশ মিনিটের পথ। মনে মনে চাইছে যাতে বৃষ্টি না হয়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।
ভাড়া মিটিয়ে বাসায় ঢুকতে ঢুকতে প্রায় ভিজেই গেলো ইরহা।
ইরহা বাসায় ঢুকে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। কাভার্ড থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো ফ্রেশ হতে।

বসার রুমে বসেছিল এক যুবক যে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে ছিলো ইরহার দিকে। ইরহা চলে যেতেই লোকটি বলে,আন্টি ইরহা এখানে?
“হ্যাঁ বাবা ও তো এখানেই থাকে।

#চলবে
হ্যাপি রিডিং 🥰

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-১২

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১২

সকাল,সকাল ঘুম থেকে উঠে ইরহা,লাবিবাকে ডেকে তুললো।
লাবিবা ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসবে।ইরহা বলে তুই আমার সাথে একটু ছাদে চল।
‘ধুর এতো সকালে ছাদে কেন?
‘আসতে বলেছি আয় এতো কথার কি আছে!
দু’বোন মিলে ছাদে আসলো। ইরহাদের বাড়িটা তিন তলা বিশিষ্ট। যদিও পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন দেয়া৷ কিন্তু ইরহার বাবার মৃত্যুর পর কাজ বন্ধ।
ছাদে কোন গাছ নেই। গাছের ড্রাম বা টবগুলোতে ঘাস হয়ে আছে।
ইরহা বলে,জানিস লাবু, আমি এখানে ছোট একটা বাগান করেছিলাম৷ আমি যখন পরিচর্যা করতে পারতাম না,তখন বাবা পরিচর্যা করতো। বিকেলে ফ্লাক্সে চা ভরে কাপ নিয়ে, বাবা মেয়ে মিলে চলে আসতাম ছাদে। মা ও আমাদের ডাকতে এসে আমাদের আড্ডায় যুক্ত হয়ে যেতো। বাবাকে নিজের বন্ধু ভাবতাম। আমার ভার্সিটির ফাইনলা ইয়ারের স্টুডেন্ট ছিলো বাবার বন্ধুর ছেলে আহনাফ মাহমুদ। বাবা পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল আহনাফ ভাইয়ার সাথে। ভার্সিটিতে গেলে রেগুলার তার সাথে দেখা হতো৷ উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের পুরুষ। অন্য কারো কাছে কেমন লাগতো জানা নেই,তবে আমি ধীরে ধীরে তার প্রতি মুগ্ধ হয়ে যাই৷ ভাইয়াদের বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ঠিক আগের দিন, ভাইয়া আমাকে প্রপোজ করে। নিজের পছন্দের মানুষটা আমাকে পছন্দ করে! মানা করিনি তার প্রপোজ রাজি হয়ে যাই৷ নতুন প্রেম তাও পছন্দের মানুষ। জীবনটা সদ্য ফোটা গোলাপের মত মনে হচ্ছিল। অথবা শত ডানার প্রজাপতি, যার মনে রঙের মেলা৷ সে উড়ে বেড়াচ্ছে মনের রঙে। কি যে ছিলো সে সময় টা। আর আহনাফ ভাইয়ার মত মানুষ হয় না। সে এতো ভালো ছিলো৷ তবে উড়তে উড়তে ভুলে বসেছিলাম। আমি কনজার্ভেটিভ পরিবারের মেয়ে।এখানে প্রেম ভালোবাসা এসব ঠুনকো। সবার আগে আমি বাবাকে বলি, সেদিন বাবা বলেছিল, তোমাকে একটা কথা বলি, হয়তো আমরা নয়তো তোমার দু’দিনের ভালোবাসা! তোমার যা খুশি। বাবা, মা, ভাই সবাই আমার উপর রেগে থাকতো। নিজেকে তখন গুটিয়ে নিয়েছিলাম নিজের মধ্যে। ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম ধীরে, ধীরে,নিজের কষ্টকে চাপা দিয়ে বাবার কথা মেনে নিয়েছিলাম৷ জানিস পৃথিবীতে সবচেয়ে কষ্ট হলো,নিজের ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসি, না এই কথাটা বলা। আমি যখন আহনাফ ভাইয়াকে বলেছিলাম৷ এরকম ভালোবাসা হয়েই থাকে, সময়ের সাথে সেসব শেষ হয়ে মানুষ আবার নতুন প্রেমে পরে। নতুন ভাবে ভালোবাসে।সে মৃদু হেসে বলেছিল,আমি বলবো না, ইরহা তুমি ভালো থেকো! কারন আমার ভালো থাকা কেড়ে নিয়ে তুমি কি ভালো থাকতে পারবে? আবার চাইবো না তুমি খারাপ থাকো।
যাকে ভালোবাসি, সে খারাপ আছে এটাও মানতে পারবো না। তবে আমি চাই, মাঝে মাঝে আমার কথা তোমার মনে পরুক। তুমি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নীরবে দু’ফোটা অশ্রু ফেলে বলো,হয়তো তুমি থাকলে জীবনটা অন্য রকম হতো। তোমার মত কেউ আমাকে ভালোবাসবে না।
“তুমি তাকে ছাড়লে কেন আপু? বিয়ে করে নিতে কয়েক বছর পর বাবা, মা মেনে নিতোই!
‘জীবন কি এতো সহজ? ধর আমি পালিয়ে বিয়ে করে নিলাম৷ সমাজ আর সমাজের মানুষ আমার বাবাকে কতটা অসম্মানিত করতো!যে মেয়েকে জন্ম দেয়ার পর থেকে আঠারো বছর এতো ভালোবাসা, আদর, স্নেহ দিয়ে বড় করলো, তার বিনিময়ে তার আদরের মেয়াটা তাকে সমাজের কাছে, লাঞ্ছিত, আর অপমানিত করে চলে যেতো? শোন টাকা হারালে টাকা আবার ইনকাম করা যায়। কিন্তু সম্মান হারালে আর তা ফিরে পাওয়া যায় না। তোকে এতো কথা বলছি,তার কারণ আমি চাইনা এই বয়সে তুই ভুল করিস। আমি প্রেম করেছি ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার কত পরে।তখন আমি ম্যাচিউর। আর তুই সবে ইন্টারে উঠলি, এই বয়স আবেগের। তাই নিজেকে শুধরে নে।

” বনু আমি রাতুলকে ভালোবাসি।
‘কঠিন কথা বলি তোকে লাবু, মেয়েদের জীবন হলো কচু পাতার পানির মত। মানে বুঝেছিস, খুব ঠুনকো। খুব সহজে তাদেরকে আঘাত করা যায়। খুব সহজে তাদেরকে বদনাম করা যায়। তাই আমাদের পা’ফেলতে হয় ভেবে চিন্তে। একটা ভুল কদম মূহুর্তে আমাদের চরিত্রে দাগ লেপ্টে দিয়ে যায়।

সবাই বলে মেয়েরা স্বার্থপর!আসলেই স্বার্থপর, যখন নিজের ভালোবাসা আর পরিবারের সম্মানের মধ্য থেকে একটা বেছে নিতে হয়,তখন বাবা,মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক মেয়েই নিজের ভালোবাসাকে কবর দিয়ে দেয়। আমাদের জীবন হলো গন্তব্যহীন মুসাফিরের মত!যে বাড়িতে বড় হই সেটাও আমাদের হয় না। আবার যে বাড়ির জন্য জীবন শেষ করি সেটাও আমাদের হয় না। আমাদের ঠোঁটের কোনে হাসির আড়ালে,আমরা কত না বলা কথা আর দুঃখকে আড়াল করে রাখি, তা হয়তো সৃষ্টিকর্তা আর আমরা ছাড়া কেউ জানে না। আমরা সত্যি-ই স্বার্থপর। ভালেবাসাকে বেছে নিলে পরিবারের কাছে, পরিবার বেছে নিলে ভালোবাসার কাছে।
তুই এখনো ছোট কিন্তু অবুঝ না। ইরহা নিচে চলে আসলো। আহনাফের কথা মনে পরলে বুকটা ভারি হয়ে আসে। জীবন কত অদ্ভুত ভাবে রং বদলায়। কখনো ধুসর রাঙা মেঘ, তো কখনো রঙ ধনুর সাত রঙে রঙিন।


জেলখানার চৌদ্দ শিকের ভেতর বন্দী, রবিন। লামা শেষ পর্যন্ত এই কাজটা করেই ছেড়েছে।
শেফালী বেগম রুবি কল করলো,রুবি ঠান্ডা গলায় বললো,আমি আসছি। দেখি কি করা যায়! এসব তো হওয়ার-ই ছিলো।
শেফালী বেগম কল কেটে দিয়ে লামাকে বলে,আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে আনো। তুমি যে ভাবে চাও সব কিছু সে ভাবেই হবে।
“এখন বলে লাভ নেই, আপনার ছেলে যখন আমার গায়ে হাত তুলেছিল, তখন তো আরাম করে বসে ছিলেন৷ একবারও তো নিজের ছেলেকে বাঁধা দেননি! আপনার নামেও কেস করা দরকার ছিলো।
‘তুমি কি সংসার করার জন্য বিয়ে করো নি?
” সংসারের নামে অত্যাচার আমার সাথে চলবে না। আমাকে বিয়ে করে আবার ছেড়ে দেওয়া বউয়ের পা’ধরে তাকে ফিরিয়ে আনতে যাওয়া! আমি বানের জলে ভেসে আসিনি৷ আর আমি ওই বউয়ের মত না। যা করবেন মুখ বুঝে সহ্য করবো।
‘সহ্য করতে হবে না। তুমি যা বলবে তাই হবে। তবুও আমার ছেলেটাকে বের করে আনো।
‘আপনার ছেলে আগে ক্ষমা চাইবে, নিজের ভুল স্বীকার করবে, আমার কাছে নত হবে তারপর ভেবে দেখবো।নারী নির্যাতন মামলা এতো সহজে আপনাে ছেলে পার পাবে না।
রবিন আরো কিছু আসামিদের সাথে বসে আছে। নিজেকে আজ বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে। তার টাকা তার সম্মান রক্ষা করতে পারলো না। একটা সুস্থ জীবনকে নিজের হাতে অসুস্থ করলো। এখান থেকে বের হলেও সম্মান তো আর ফিরে আসবে না। পত্রিকার হেড লাইন হবে বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী রবিন হাসানের বিরুদ্ধে তার ওয়াইফ নারী নির্যাতন মামলা করেছে। সবাই দেখবে,তার শত্রুরা মজা নেবে।হাসির পাত্র হবে সবার কাছে। অথচ তিন বছর একজন নীরবে সংসার করে গেলো।তারজন্য কখনো নত হতো হয়নি৷ ভুল করার পরে ভুল বুঝতে পারলেও, সব ভুল শুধরে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় না। কিছু কিছু ভুল বিষাক্ত কা’টার মত বিঁধে থাকে।সে ভুল আর শান্তিতে বাঁচতে দেয় না।


ইরহা আজকেও দু’টো ইন্টারভিউ দিয়েছে। কিন্তু শেষের ইন্টারভিউতে তাকে হ্যারাস মেন্টের শিকার হতে হয়েছে। ইনফ্যাক্ট ম্যানেজার থাকে চাকরির বদলে রাত কাটানোর অফার করেছে। সেখান থেকে মানা করে চলে আসলেও কথাগুলো তাকে বড্ড পিঁড়া দিচ্ছে।মেয়েরা কি কোন সেক্টরে সেভ না! একটা মেয়ে ডিভোর্সী শুনলেই কি তার দিকে নজর ঘুরিয়ে তাকাতে হবে?ইরহার মাথায় প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই দেখা হলো তার এক ভার্সিটি ফ্রেন্ডের সাথে।…….

#চলবে

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-১১

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১১

হাতে থাকা কলমটা দিয়ে, পত্রিকার জব অফার গুলো মার্ক করতে ব্যাস্ত ইরহা। কোনমতে একটা জব পেলে হয়।এমন সময় নওশাবার কান্নার আওয়াজ কানে আসল।ইরহা নওশাবাকে কোলে নিয়ে শান্ত করে। বসার রুমে আসলো। ফরিদা বেগম বললেন, খাবার খেয়েনে। সারাদিন ধরে মনে হয় কিছু মুখে তুলিস নি।

“মা লাবু কই?
‘পড়তে বসছে।
‘তুমি খাবার রেডি করো আমি লাবুকে নিয়ে আসছি।

‘বইয়ের মধ্যে মোবাইল রেখে চ্যাটিং করতে ব্যাস্ত লাবিবা৷ মনযোগ এতো গভীর কেউ পিছেনে এসে দাঁড়িয়েছে সে খবর নেই।
‘ইরহা শান্ত স্বরে বললো,কিরে এসব কতদিন ধরে চলছে? ছেলেটা কে?
‘হঠাৎ ইরহার কথা শুনে লাবিবা হকচকিয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে,কই আপু কি চলছে?
‘লাবু মিথ্যে বলবি না। সত্যিটা কি বল।
‘কলেজ ফ্রেন্ড।
‘আচ্ছা কলেজ ফ্রেন্ডকে, ‘বাবু আই লাভ ইউ বলে! এই নিয়ম তো জানা ছিলো না।
‘মজা করে বলছি। তুমি সিরিয়াস কেন হচ্ছ।
‘তা এমন মজা কবে দেখে করছিস।

ফরিদা বেগম বলেন,কিরে তোরা দুই বোনে কি এতো কথা বলিস! সারারাত পরে আছে আগে খেয়ে তারপর গল্প করিস।

খাবার টেবিলে সবাই খাবার খেতে ব্যাস্ত। লাবিবা ব্যাস্ত কি মিথ্যে বলে কাটানো যায় কথাটা সেটা ভেবে।
লবুর প্রেমিক রাতুল৷ ভার্সিটিরর প্রথম বর্ষের স্টুডেন্ট। ছয়মাস ধরে তাদের প্রেমের সম্পর্ক।কিন্তু রাতুল এখনি সবাইকে ব্যাপারটা জানাতে মানা করেছে।
ইরহা আড়চোখে কয়েকবার লাবিবার দিকে তাকালো।

খাবার শেষ যে যার রুমে।
নাদিম নিজের শরীরটা বেডে এলিয়ে দিয়ে কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে কিছু ভাবছে।
নিশাত নাদিমের কাছে বসে নিজের হাত নাদিমের মাথায় রাখলো। নাদিমের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,আজ তোমাকে বেশ ক্লান্ত লাগছে।
‘হুম কাজের চাপ বেশি ইদানীং। তুমি কিছু বলবে নিশি!
‘আমি একটু বাবার বাড়িতে যাবো দুই তিনদিনের জন্য।
“আচ্ছা একস্ট্রা আদর করার এই কাহিনি। এবার বুঝতে পারলাম। বেশ তো আমি তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসবো। আগামীকাল অফিস থেকে একটু আগে বের হবো৷
‘শুনো না৷ আগে শুনবা তো আমার কথা।
” বলো তোমার কথা না শুনলে কার কথা শুনবো!
“আমার কিছু টাকা লাগবে?
” যত টাকা লাগে মায়ের কাছ থেকে নিয়ে নিও।
নিশাতের হাত থেমে গেলো। আমি জানতাম তুমি এ কথাই বলবা, দুই বছর ধরে বিয়ে হইছে তুমি কখনো, মাস শেষে টাকা আমার হাতে না দিয়ে মায়ের হাতে তুলে দাও। কেন আমি কি তোমার কেউ না! বান্ধবীরা বলে আমাদের হ্যাসবেন্ডরা এক, এক পয়সার হিসেব দেয় আমাকে। মাস শেষ স্যালারিটা তাদের হাতে তুলে দেয়। তোমাকে বিয়ে করাই ভুল হয়েছে। মায়ের আঁচলের তলের ছেলেরা বউ প্রেমী হতে পারে না।
“তোমাকে কি আমি ভালোবাসি না!তোমার কোন ইচ্ছে কি আমি অপূর্ণ রাখি?
” শুধু ওই সব ভালোবাসায় কাজ হয় না। থাক বাদ দাও আমার কোন কথার মূল্য তোমার কাছে আছে নাকি?
“অবশ্যই আছে। এই পুরো পৃথিবীতে তিনজন নারীর কথার দাম আমার কাছে সবচেয়ে বেশি।
” বউ আর মা,বোন এক হলো?
“নাহহ তা কেন হবে! তবে এই তিনজন নারীই আমার কাছে দামী। তুমি স্ত্রী হিসেবে আমার প্রিয়তমা। আমার বোনরা আমার কাছে প্রিন্সেস আমার মা আমার জান্নাত। আর ভবিষ্যতে আমার মেয়ে হলে, সে হবে রহমত।
” নিশাত কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,আচ্ছা বাদ দাও আমার ঘুম আসছে আমি ঘুমাবো।
“নদিম নিশাতের অভিমান বুঝতে পেরে,নিশাতের হাত ধরে নিজের একদম কাছে বসিয়ে বলে,নিশাত আমি তোমাকে ভালোবাসি।মা,বোনের ভালোবাসা ভিন্ন আর তোমার ভালোবাসা ভিন্ন। তুমি ছাড়া কিন্তু আমি অপূর্ণ অর্ধাঙ্গিনী মানে তো বোঝ?তাহলে কেন অভিমান করো।
” আমার মনে হয় তুমি আমার চেয়ে তোমার বোন আর মা’কে বেশি ভালোবাসো।
“তা কেন হতে যাবে! বউয়ের ভালোবাসা ভিন্ন আর সেদিক থেকে তোমাকে আমি পরিপূর্ণ ভালোবাসি রাগী বউ।
” যদি কখন মা,বোন বউয়ের মধ্য থেকে কাউকে বাদ দিতে হয়, তখন কাকে বাদ দিবে?
“কখন এমন পরিস্থিতি আসতেই দেবো না। আমার জীবনে তোমাদের সবাইকে চাই। আমি বেঁচে থাকতে তোমাদের কাউকে ছাড়বো না। নিজের সবটুকু দিয়ে আগলে রাখবো।


ইরহা ঘুমায়নি এখনো। রাত গভীর চারপাশে নিরবতা ভেদ করে কিছু আওয়াজ কানে আসছে৷ বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে দূর আকাশে মিটি মিটি করে জ্বলতে থাকা তারাগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদটা বিপরীত পাশে। নয়তো দৃষ্টি চাঁদের পানে থাকতো।
‘দুঃখের রাত দীর্ঘ হয়,এটা ইরহা শুনেছিল। কিন্তু সত্যি যে দীর্ঘ হয় সেটা টের পাচ্ছে এখন।
ইরহা তারাগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে,যারা রাত টাকে ঘুমিয়ে কাটাতে পারে, তাদের চেয়ে সুখী মানুষ হয়তো পৃথিবীতে নেই! আর যারা তোদের মত মিটি মিটি জ্বলতে থাকে ভিতরে থাকা ক্ষতের কারণে, তারা জানে রাত কত বড় অভিশাপ তাদের জন্য।
” ঘুম না আসা রাত জানে, দুঃখগুলো কতটা গভীর।
জীবন মনে হয় দুঃখগুলোর হিসেব রেখে আবার তা দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দেয়? যে আমাকে ভালোবেসে পাগলেরমত চাইলো, তারে দুঃখ দিয়া এতো সুখের ঘর বানাইলাম। তাও ঠুনকো ঝড়ে ভেঙে গেলো? আচ্ছা কি স্বাদ এই বিষাদের? কি-ই বা রং এই কষ্টের। না দেখা যায় না ছোঁয়া যায়! তবুও হৃদয় পুরে যায়।

রবিন আর লামার মধ্যে তুমুল ঝগড়াঝাটি শুরু হয়েছে।সাথে অকাথ্য ভাষায় গা’লী তো আছেই। শেফালী বেগম থামাতে না পেরে ড্রয়িংরুমে এসে একটা চেয়ারে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। কি করবেন কাকে ডাকবেন?ঢাকা শহরে যে যার ফ্লাটে নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত। হুটহাট সিঁড়িতে দেখা হলে কুশল বিনিময় এতোটুকুই। নয়তো এক ফ্লাটে খু’ন হলেও অপর ফ্লাটের মানুষ টেরও পায় না।
শুধু মাত্র দেয়ালের পার্থক্যে তাদের দুরুত্ব শত মাইলের চেয়ে বেশি। এই রাতে কাকে ডেকে আনবেন? কিন্তু কাউকে একটা তো খবর দিয়ে আনতেই হবে। নয়তো খারাপ কিছু যদি হয়ে যায়?
নিজের হাতে থাকা মুঠোফোন থেকে। সজল লেখা নাম্বারে কল করলো৷ তিনবার রিং হয়ে কেটে যাওয়ার পর ওপাশ থেকে রিসিভ হলো। শেফালী বেগম ভূমিকা ছাড়াই বললেন, বাবা তুমি একটু তাড়াতাড়ি আমাদের বাসায় আসো।
‘কি হইছে আন্টি?
“বাবা তুমি আসো আসলে দেখতে পারবা। আসো একটু কষ্ট করে।
সজল পাশের বিল্ডিংয়ে থাকে৷ শার্ট পরে দ্রুত বের হয়ে আসলো।
এসে দেখে রবিন লামাকে প্রচুর আঘাত করেছে। লামার নখের আঁচড়ে রবিনেরও বেশ ক্ষত হয়েছে। এদেরকে ছাড়িয়ে দিতেই। লামা নিজের পার্স নিয়ে বের হয়ে যায়। যাওয়ার সময় চিৎকার করে বলে,তোরে যদি জেলের ভাত না খাওয়াই আমার নাম লামা না। তোর এতো সহস তুই আমার গায়ে হাত তুলিস।

সজল এগিয়ে এসে বলে,ভাবি মাথা ঠান্ডা করেন। সংসারে এমন টুকটাক ঝামেলা হয়।আবার ঠিক হয়ে যাবে। গেটের ভিতরে এসে দরজা বন্ধ করে কথা বলি। মানুষ শুনলে কি বলবে? বাড়ির মালিকের এমন করলে ভাড়াটিয়ারা কি করবে?তাছাড়া আপনার সম্মানটা কোথায় নামবে?
” সম্মান!শরীরে আঘাত পরলে আর সম্মানের কথা মনে থাকে। ওরে আমি উচিৎ শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো।
“তুই কার সাথে কথা বলছিস!রাস্তার মেয়েরা সম্মানের কি বুঝবে?থার্ড ক্লাস মেয়েদের আবার সম্মান? এদের কাজই আজ এই ডালে কাল ওই ডালে।
” লামা একটা অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বলে, পিরিত করার সময় মনে ছিলো না! তখন ছিলাম মধুর চাক, আর এখন মধু পোকা! কথাগুলে গলা ছেড়ে বলছে।
‘শেফালী বেগম লামার হাত ধরে বলে,মা’স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা হয়েছে, সেটা নিজেরা বসে মিটিয়ে নাও। এভাবে সংসারের কথা বইরে নিও না।
লামা কিছু বলবে, তার আগে রবিন বলে, আমি আর ওর সাথে একদিন ও সংসার করবো না।

#চলবে

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-১০

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১০

মেঘাচ্ছন্ন আকাশে কালো মেঘের ভেলা৷ ফজরের আগে থেকে থেমে, থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এখন যদিও বৃষ্টি নেই তবে,আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন। ইরহা সেই কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে, সব কাজ গুঁছিয়ে নিচ্ছে। আজ সে জবের জন্য তিন’ অফিসে ইন্টারভিউ দেবে৷
সকাল টাইমে নওশবা বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠে। সেই সুযোগে সব কাজ করে নিচ্ছে। রান্না শেষ করে; লম্বা একটা শাওয়ার নিলো। পরোনে রয়েল ব্লু আর গোল্ডেন কালারের মিশ্রণে একটা হালকা কাজের কটন থ্রিপিস। ও বাড়ি থেকে আসার সময়, রবিনের দেয়া কিছু নিয়ে আসেনি। আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে। ঠিক তখন মনে হলে, জীবনটা এমন না হলেও পারতো! একটা ছোট জীবন;তারমধ্যে এতো ট্রাজেডি। চোখের কার্নিশে জমে থাকা জলগুলো গড়িয়ে পরার আগেই মুছে নিলো।নিজেই; নিজেকে বলছে,আমি কাঁদবো না!আমি তো নিজেকে, মুক্ত করেছি একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে!আমার মেয়ে আর আমি’আমাদের একটা পৃথিবী গড়বো।দ্রুত রেডি হয়ে নাস্তা করে, মেয়েকে খাইয়ে নিজের মায়ের কাছে রেখে যাচ্ছে।ভেতরে থেকে দলা পাকিয়ে আসা কান্নাগুলো বারবার সংযাত করছে। জন্মের পর থেকে মেয়েটাকে এক সেকেন্ডের জন্য চোখের আড়াল হতে দেয়নি। এখন থেকে হয়তো রোজ মেয়েটাকে রেখে যেতে হবে। নওশাবার কপালে চুমু দিয়ে বের হয়ে গেলো। একটা রিকশা ডেকে, তাতে উঠে বসলো,পার্স থেকে টিস্যু বের করে, চোখের কোণে জমে থাকা জলটুকু মুছে নিলো। রিকশা চলছে আপন গতিতে। এই জবটা হলে ইরহার জন্য ভালো হয়। কারণ এই অফিসটা মোটামুটি কাছাকাছি। সকাল দশটায় ইন্টারভিউ। এখন বাজে ন’টা পঞ্চাশ। আরো অনেকই এসেছে, তাদের সাথে ইরহাও বসে আছে। জীবন কখন কোন পথে এনে দাঁড় করায় কেউ বলতে পারে না!ইরহা কি কখনো ভেবেছিলো,তার স্বপ্নের সংসার ছেড়ে এভাবে সিরিয়ালে দাঁড়াতে হবে জবের জন্য! জীবন এক প্রহেলিকার নাম। তার প্রতিটি অধ্যায় কি আছে কেউ জানেনা। আমরা হঠাৎ হঠাৎ নতুন নতুন প্রহেলিকায় জড়িয়ে পরি।
অনেক অপেক্ষার পর ইন্টারভিউ হলো। কিন্তু এখানে বিবাহিত নেবে না। ইরহা এই লজিকের আঁগা মাথা বুঝলো না। আচ্ছা এটা কেমন রুলস? ভঙ্গ হৃদয়ে বেরিয়ে পরলো আরেকটা ইন্টারভিউ দিতে সেটার টাইম দুপুর বারোটা। এরপরের টা বিকেল তিনটে।
গন্তব্যে পৌঁছে অপেক্ষা করছে। কিন্তু এখানেও হলো না। একে একে সব ইন্টারভিউ দিয়ে ক্লান্ত পথিকের মত বাসার পথ ধরলো। লোকাল বাসে মানুষের ভিড় আর অসহনীয় গরম, পেটের খুদা, মনের যন্ত্রণা। অথচ এতো মানুষের মধ্যে কেউ তা জানেনা। মানুষের খোলস এতো শক্ত!উপর থেকে দেখে ভেতরটা বোঝাই যায় না! বাস থেকে নেমে কিছু পথ হেঁটে রিকশা নেয়ার চিন্তা করলো ইরহা। মনের মত শত চিন্তা নিয়ে হাঁটছে, হঠাৎ চোখ পরলো রাস্তায় পাশে বেঞ্চে এক মহিলা বসে কাঁদছে। ব্যাস্ত রাস্তা মানুষ আসছে, যাচ্ছে অথচ কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না। ঢাকা শহরের মানুষদের মন কি?সত্যি ইট,পাথরের মত শক্ত থাকে?সবাই কেমন নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত কেউ ম’রে গেলেও ফিরে তাকায় না। ইরহা মহিলাটার পাশে যেয়ে বসলো,দিন গড়িয়ে তখন সন্ধ্যা নামছে। ইরহা নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলো, বোন আপনার কি হয়েছে?
“কি হবে বলুন! কি হওয়ার আছে? বিয়ে হয়েছে তিন বছর, পান থেকে চুন খসলেই গায়ে হাত। মনে হয় আমি মানুষ না!মধ্যবিত্ত পরিবাবের মেয়ে আমি’ এক ভাইয়ের আয়ে সংসার চলে,তাই মুখ বুঝে সব সহ্য করি।যখন আমার স্বামী আমাকে প্রচন্ড আঘাত করে, তারপর বাবাকে নয়তো মা’কে কল করে কথা বলি।কান্না গিলে তাদের কন্ঠ শুনে নিজেকে স্বান্তনা দেই। ভাবি এদের জন্য হলেও মানিয়ে নিতে হবে।জানেন আপু মাঝে মাঝে মনে হয়, “আমি কালো হয়েছি সেটাই ভালো!আচ্ছা যদি ফর্সা হতাম, তাহলে শরীরের এই আঘাতের চিহ্ন কি করে লুকাতাম?নিজের হাতে রান্না করে খাইয়ে তার শক্তি যোগাই। আর সেই শক্তি দিয়ে সে আমাকেই আঘাত করে।আচ্ছা আঘাত করার সময় কি আমার অসহায় মুখটা দেখে তার মায়া হয় না? বউ নাকি ভালোবাসার জিনিস!তাহলে তার শরীরে আঘাত করে কি করে? রাগ করে সেই দুপুরে বাসা থেকে বের হইছি, ভাবছি স্বামী নামক মানুষটা আসবে,কিন্তু সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামছে ‘সে আসলো না। বাবার বাড়িতে যে,যাবো সে উপায়ও নেই।
ইরহা নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,এখন রাত নামছে,একটা মেয়ের জন্য রাত হলো জঙ্গল আর মানুষগুলো পশু। সুযোগ পেলেই খাবলে খাবে।তাই বাসায় চলে যান। আর হ্যা প্রতিবাদ করুন। তারপরেও যদি না শুধরে নেয়। তাহলে তাকে ছেড়ে দিন। জীবন একটাই কারো পায়ের তলে পিশে মরার চেয়ে মাথা উঁচু করে একদিন বাঁচলেও শান্তি।
‘ধন্যবাদ তোমাকে বোন। এটাই শেষ ভরসা। তবে আসল কথা হলো,রুপ আর টাকা ছাড়া মেয়ে হয়ে জন্মানোই হয়তো,সবচেয়ে বড় অন্যায়।
‘না গো বোন, ভুল বললে, রুপ,বাবার নাম, ভাইয়ের টাকা,কোন কিছুই মূলত কারণ না। কারণ হলো কিছু মানুষ আর তাদের হায়েনা মনোভাব। আচ্ছা বোন উঠে পরো রাত হওয়ায় আগেই ফিরে যাও। আমাকেও যেতে হবে,আমার ছয় মাসের বাচ্চাটাকে রেখে এসেছি বাসায়।
” দু’জনেই উঠে হাঁটা শুরু করলো,রাস্তাটা ভিন্ন কিন্তু উদ্দেশ্য এক।”নতুন করে বাঁচা।


বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা সাতটা ছাড়িয়েছে,সারাদিনের না খাওয়া ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে কোনমতে, ঘরে ঢুকতেই চোখে পরলো নওশাবাকে কোলে নিয়ে বসে আছে রবিন৷ তার পাশেই শেফালী বেগম।
ইরহা ঘরে ঢুকেই এক প্রকার ছিনিয়ে নিলো,রবিনের কোল থেকে নওশাবাকে। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,মা’এনারা কারা?আর এখানে কেন এসেছে? কান খুলে শুনে রাখো, এদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। বলেই নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। শেফালী বেগম, সামনে যেয়ে দাঁড়িয়ে বলে,মা’আমরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছি। প্লিজ ফিরে চলো। তোমাকে রাজরানি করে রাখবো। আমার নাতনী কে আর তোমাকে ছাড়া,আমার বাসাটা কেমন মরুভূমি।
“আপনি হয়তো ইসলামি বিধান সম্পর্কে অবগত না। তাই এসব বলছেন। যেদিন আপনার ছেলে আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে, সেদিন থেকে আমার জন্য আপনার ছেলে বাহিরের পুরুষ। আর যেখানে আপনার ছেলের সাথে কোন সম্পর্ক নেই, সেখানে আপনিও অপরিচিত।এসেছেন চা,নাস্তা করুন চলে যান।
” ইরহা এভাবে ফিরিয়ে দেবে আমাকে! রবিনের রসালো কথা শুনে ইরহার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। লাবিবার কোলে নওশাবাকে দিয়ে পাঠি দিলো। তারপর হাত তালি দিয়ে বলে,বাহহহহ মিস্টার রবিন’আপনি তো দারুণ অভিনয় করতে পারেন! তবে এসব অভিনয়ে আপনার এক্স ওয়াইফ ইরহা গলে যেতো। কিন্তু আপনার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে নওশাবার মা’ আর সে কোন সস্তা অভিনয়ে গলে না।ভদ্র ভাবে এখান থেকে চলে না গেলে!অপমান করে বেড় করে দেবো।এবার আপনারা ঠিক করুন, কোনটা চান?
‘এতো দেমাগ ভালো না।মানলাম রবিন ভুল করেছে, তাতে কি ওতো নিজের ভুল স্বীকার করে নত হয়ে,তোমাকে নিতেও এসেছে। নিশাত বললো কথাগুলো।
‘ভাবি তোমার হ্যাসবেন্ড আরেকটা বিয়ে করে, তোমাকে ডিভোর্স দেয়ার কিছুদিন পর আবার তোমাকে আনতে গেলে তুমি কি করতে?
‘একদম বাজে বকবে না ইরহা!তোমার ভাই কখনো এরকম করবে না। এসব অলুক্ষণে কথা মুখেও আনবা না।
‘তাহলে মেয়ে হয়ে কিভাবে তুমি আমাকে এমন কথা বলো? যেই জায়গায় নিজেকে কল্পনা করতে পারছো না! সেই জায়গায় আমি দাঁড়িয়ে আছি! এখন ভুল বুঝতে পেরে কি হবে? ধরো তুমি আমাকে হত্য করলে, এপর মনে হলো তুমি ভুল করেছ। তখন কি আমাকে আবার জীবিত করতে পারবে? তালাক মানে বিয়ে কে হত্যা করা। আর মৃত মানেই শেষ। তা আর শুরু করার কোন রাস্তা নেই।

#চলবে

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-০৯

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৯

লামা বাড়ি ফিরলো ভোর রাতের দিকে,পুরো,রাত নাইট ক্লাবে ম’দ আর জু’য়া খেলায় মত্ত ছিলো।রাতে এসে কলিং বেল বাজচ্ছে তো বাজাচ্ছে। শেফালী বেগম এসে দরজা খুলে দিলো।
লামা ভেতরে, ঢুকতেই শেফালী বেগম বলে,এটা ভদ্র বাড়ি। আর তুমি এবাড়ির বউ এভাবে সারা রাত বাহিরে কাটিয়ে কোন ভদ্র বাড়ির বউ বাড়ি ফেরে না নিশ্চয়ই?
‘বুড়ো মানুষ ভদ্রতা আর আধুনিকতার কি বুঝবেন!আর ভদ্র বাড়ি, কথাটা বলেই উচ্ছ স্বরে হেসে বলে,আপনার ছেলের সাথে তো আগে লেট নাইট পার্টি করতাম। আরো কত কি করতাম। তা তখন আপনার ছেলের কি মনে ছিলো না, সে ভদ্র বাড়ির ছেলে?
‘দেখো ছেলে মানুষ আর মেয়ে মানুষ এক না!
‘এসব বলে আপনি গেঁয়ো ইরহাকে বোঝাতে পারতেন, কিন্তু আমাকে এসব বুঝ দিলে হবেনা। ছেলেরা যা ইচ্ছে করতে পারে বলে,তাকে ছাড় দিবেন আর বউ,করলে দোষ!
রুবিও উঠে এসেছে তার মায়ের সাথে। শ্বশুর বাড়ি থেকে প্রায় ছ’মাস পরে এসেছিল। কিন্তু নিজের বাসার পরিস্থিতি দেখে ইচ্ছে করছে, এক্ষুনি চলে যেতে।
রুবি বলল,মা সুস্থ মানুষের সাথে কথা বলা যায়। অসুস্থ মানুষের সাথে না। এদের থেকে ভদ্রতা আশা করা বোকামি। আমি তো চলে যাবো কিন্তু সারাজীবন তোমার আর তোমার ছেলের এসব সহ্য করতে হবে।
‘লামা কোন কথার উত্তর না দিয়ে নিজের রুমে যেয়ে শুয়ে পরলো।
রবিন যদিও লামার আসার টের পেয়েছে তবুও চুপ করে রইলো এই মূহুর্তে লামার সাথে ঝামেলা করার মুড নেই। তাই একি ভাবে ঘুমের ভান ধরে পরে রইলো।

‘রুবি শেফালী বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে,মা’ জীবনে বড় একটা ভুল করলে,এই ভুল তোমার সুখের সংসারকে কোথায় নিয়ে যায় দেখো।একটা ভদ্র, ভালো মেয়ে যেমন পরিবার আর নিজের সংসারকে রাঙিয়ে তুলতে পারে। ঠিক একটা বাজে মেয়ে একটা পরিবার আর সংসারকে আমাবস্যার রাতের মত অন্ধকার করে তুলতে পারে। আর তুমি তো নিজের হাতে আলো কে তাড়িয়ে দিয়ে আঁধার ডেকে আনলে।
“আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। ঘরের লক্ষীকে পায়ে ঠেলে, কাল সা’প ঘরে তুলেছি। আমি ফিরিয়ে আনবো আমার ঘরের লক্ষীকে।
‘রুবি হেসে বলে,সময় থাকিতে যারে হেলায় হারিয়েছো। অবেলায় তার খোঁজ করা বোকামি ব-ই কিছুই না।


সন্ধ্যার পর থেকেই ইরহার মনটা বেশ খারাপ। আজকে প্রতিবেশীদের মধ্যে কিছু মহিলা বাসায় এসেছিলো। একজন বললো, তোমার মেয়েটার কপাল কত খারাপ দেখলে, যে এক স্বামীর ঘর করতে পারে না। সে আর কোন স্বামীর ঘরও করতে পারবে না। তোমার মেয়ের জীবনে আর সুখ নাই। আবার হইছে একটা মেয়ে। ছেলে হলেও বড় হয়ে নিজের মায়ের দেখাশোনা করতে পারতো। এখন তো উল্টো এই মেয়েকে লাখ, লাখ টাকা খরচ করে বিয়ে দিতে হবে।এক ছেলের কামাইয়ের সংসার তোমাদের এখন দু’জনকে টানতে হবে।
আরেকজ বললো,স্বামীর ঘর করা কি এতো সহজ! আজকালের যুগের মেয়েরা, পান থেকে চুন খসলেই ডিভোর্স, ডিভোর্স করে।বাপু আমারা এতো বছর বছর সংসার করি ওসব তো কখনো মুখে আনিনি। কম তো ঝড়ঝাপটা পার করিনি জীবনে। শোন মেয়৷ ধৈর্য নিয়া স্বামীর ঘর করতে হয়। বেডা মানুষ একটু আধটু চরিত্রের দোষ থাকবোই। হেরে নিজের জালে বেঁধে রাখতে জানতে হয়। ছটফট করে ছেড়ে যে আসলা!নিজের আর নিজের মেয়ের ভবিষ্যতেে চিন্তা করলা না!
আরেকজন বলে,বাদ দেও আমাগো কি!নিজের ভুল যখন নিজে বুঝবো তখন কপাল চাপড়ানো ছাড়া উপায় থাকবো না। ভাই ভাবির সংসারে থাকা কি এতো সোজা। দিন যাক পরে বুঝবো।
কথাগুলো বিষিয়ে তুলছে ভেতর থেকে ইরহাকে। আচ্ছা এখানে দোষটা কি ইরহার! সে কি ইচ্ছে করে নিজের সংসার ছেড়ে চলে এসেছে? আচ্ছা এই সমাজ আর সমাজের মানুষগুলো এমন কেন! তারা কোন মেয়ের ডিভোর্স হলে বা ধর্ষণ হলেও মেয়েটাকেই ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে। অথচ তাদের সাথে যে-বা যারা অন্যায় করেছে তাদের দেখে না। এই উল্টো নিয়মে কতদিন চলবে মানুষ! কেউ কি বুঝবে না। মেয়েরা যদি মেয়েদের কষ্টটা না বোঝে তাহলে কে বুঝবে? নিজের সখের সংসার নিজের হাতে কে শেষ করতে চায়? ধৈর্যের নামে কি দিনের পর দিন সমাজের দোহাই দিয়ে মেয়েরা অত্যাচারিত হবে!কে দেবে এই সব উত্তর!আকাশের পাণে দৃষ্টি রেখে বলে,আল্লাহ তুমি আমাকে ধৈর্য দাও। আমার মেয়েটার জন্য আমাকে সব সহ্য করে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। যার কেউ নেই তারজন্য তুমি আছো খোদা।
এমন সময় ফরিদা বেগম নিজের মেয়ের কাঁদে হাত রাখলো।
ইরহা ঘুরে নিজের মা’কে দেখে জড়িয়ে ধরলো। কেঁদে কেঁদে বলে,আমি কি করতাম মা! ওই মানুষটা দিনের পর দিন আমার আড়ালে অন্য মেয়ের সাথে কাটিয়েছে। যেদিন আমি মৃত্যুর সাথে লড়াই করে তার সন্তানকে পৃথিবীতে আনতে ব্যাস্ত। তখন সে আমাকে সতীন উপহার দিলো। আমি কি করতাম বলো মা!
‘কাঁদিস না। লোকের কথা কানে তুলতে নেই, তুই জানিস তুই সঠিক কাজ করেছিস। কে কি বললো সেসব শোনার প্রয়োজন নেই। মানুষ আমাদের কষ্ট দেখে হাসবে,অথবা দূর থেকে করুণা করবে।কেউ সেই কষ্টের ভাগ নেবে না। তুই আমার মেয়ে আমি জানি তুই ঠিক কাজ করেছিস। তাই নিজেকে সামলে নে। এসব কথা শুনতে হবে। তবে এক কানে শুনবি,অন্য কান দিয়ে বের করে দিবি।এসব কথা মাড়িয়ে চলতে হয়। নিজেকে প্রমাণ কর মা।
‘ইরহা বললো, আমাকে যে পারতেই হবে!আমার প্রিন্সেসের জন্য। আর এরচেয়ে বড় বিষাদ কাটিয়ে উঠেছিলাম। এটাও পারবো।
“হয়তো আমাদের একটা ভুল ডিসিশনের জন্য তোর কপালে এ দুঃখ। সেদিন যদি….
এতোটুকু বলতেই, ইরহা বলে,বাদ দাও মা’পুরোনো কথা টেনে কি লাভ?আমার ভাগ্যে যা ছিলো তাই হয়েছে, এখানে কারো কোন দোষ নেই। ফরিদা বেগম বলেন, যাহহ নিজের প্রিন্সেসের পাশে শুয়ে ঘুমা। বাকি কথা আগামীকাল সকালে হবে।

ফরিদা বেগম চলে গেলেন। ইরহা নিজের বালিশে মাথা রেখে হুট করে সেই দিনের কথা ভাবতে লাগলো, যেদিন শেষ বারের মত টেক্সট এসেছিল ….

তুমি চলে যাওয়ার পর, আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি, ঠিক আগের মত। আগেও আমি ছিলাম শুধুই আমার।হুট করে তুমি এলে, একাকি জীবনে জোনাক জ্বেলে। আবার মিলিয়ে গেলে অন্ধকারে।
যতটুকু আলো জ্বেলেছিলে, ততটুকু আঁধার দিলে।
“আমি নিজেকে আবদ্ধ করে নিলাম, একলা আমি আমার মাঝে।

তারপর আর কোনদিন সেই চেনা,নাম্বার থেকে কোন খুদে বার্তা আসেনি৷ আর কখনো শোনা হয়নি সেই প্রিয় কন্ঠ। সময় দ্রুত পাল্টে যায়। চোখের পলখে নিজের মানুষ অন্যের হয়ে যায়। যাকে ছাড়া এক মূহুর্ত কল্পনা করা যেতো না, তাকে ছাড়াই জীবন পার করে দিতে। আমরা শিখে যাই নতুন করে বাঁচতে, নতুন করে ভালোবাসতে৷ কিন্তু কোথাও না কোথাও অতিতের সেই প্রিয় বিষাদ আমাদের সাথে থেকে যায়।সুখের সময় তার কথা মনে না আসলেও, হুট করে দুঃখ পেলে তার কথা মনে পরে যায়। মনে হয় ওই মানুষটা থাকলে হয়তো জীবনটা অন্যরকম হতো। হয়তো এই বিষাদগুলো আমাকে ছুঁয়ে দিতে পারতো না।
আসলে তো মানুষ নিতান্তই বোকা। তারা তো জানেইনা, যেখানে গভীর ভালোবাসা, সেখানেই বিষাদ।যেখানে ভালোবাসা নেই, সেখানে বিষাদও নেই। আমরা বোঁধ হয় ভালো না বাসলেই, সুখে থাকতাম। অথচা আমরা ভালোবাসা ছাড়া বাঁচতেও পারি না। আবার ভালোবাসা মানে নিজের সুখকে জিম্মি রাখা আরেকজনের কাছে।আমরা যেনো,বন্দী আছি নিজেদের প্রহেলিকায়। অবশেষে একটা কথাই মন বলে উঠে #কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর? ‘ঘর ছাড়া যে নারীর জীবন সমাজে বড্ড পর!!

#চলবে

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-০৮

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৮
কারো কর্কশ কন্ঠ শুনে নিচে তাকাল ইরহা৷ এক মধ্য বয়স্ক ভদ্রলোক। ইরহা নিচে আসতে, আসতে লোকটা চলে, যায়। ইরহা মনে মনে বলে,ইশশ সরি বলা হলো না। বাসার গেটে ঢুকবে তখন খেয়াল করে একটা ফাইল। ফাইলাটা হাতে উঠিয়ে নেয়। উপরে লেখা অবনী টেক্সটাইল গ্রুপ। ইরহা আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে উপরে চলে আসে৷ ফাইল রেখে কিচেন যেয়ে সবার জন্য নাস্তা বানায়। সবার জন্য নাস্তা বানানো শেষ করে টেবিলে সাজিয়ে রাখছে,এমন সময় নিশাত আসে ডাইনিং রুমে,নিশাত তাচ্ছিল্য সুরে বলে,বাহহহহ ভালোই হলো, তোমার পিছনে খাবার খরচটা ওয়েস্ট হবে না। তার বিন্দু তুমি সব কাজ করে দেবে।
‘নিজের বাসার কাজ করতে আবার এসবের কি আছে!
‘নিজের বাসা!তোমার বাসা কোথা থেকে আসলো? শুনো এটা তোমার বাপের বাড়ি, আর বিয়ের পর মেয়েদের বাপের বাড়িতে কোন অধিকার থাকে না।
ইরহা কিছু,না বলে,নিজের রুমে চলে আসলো, নওশাবার ডায়পার চেঞ্জ করে দিয়ে,নিজের পুরোনো সার্টিফিকেট আর কিছু কাগজপত্র বের করলো। কাগজ পত্র ঘাটতে ঘাটতে হুট করে হাতে আসলো,পুরনো সেই চিঠিখানা। যা লিখা তো হয়েছে, কিন্তু প্রাপ্রোকের নিকট পৌঁছানো হয়নি। সাদা কাগজে কালো কলির লেখাগুলো কেমন পুরোনো হয়ে গেছে,চিঠির লেখাগুলোতে চোখ বুলাতে চেয়ে চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।মানুষ ভুলে যেতে যেতে মনে রেখে দেয়। স্মৃতি কি আর পুরোনো হয়? মেনে নেয়া আর মানিয়ে নেয়ার মাঝে হারিয়ে যায়। আবার হুট করে তা তাজ হয়ে উঠে!যেনো সদ্য ফোটা কাটা যুক্ত গোলাপ। যার সৌন্দর্য আবিষ্ট করে রেখেছে কাটার বাহার৷ তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়া যায়, তবে ছুঁতে গেলেই দুঃখ হয়ে যায়। পুরো চিঠিতে চোখ বোলাতে বোলাতে, দৃষ্টি আটকে গেলো শেষ কিছু লাইনে…..
‘তুমি আমার জীবনে প্রভাতের প্রথম আলোর মত এসেছিলে,আমার একাকি জীবনে, গুমেট মেঘ সরিয়ে আলোর ফুয়ারা জ্বালিয়েছিলে!
তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই, নেই কোন অভিমান। যে হাত সারাজীবনের জন্য ধরে রাখতে পারবো না। সে হাতের প্রতি তবু কেন এতো,টান?
যার জন্য চিঠিটা লেখা হয়েছিল, তাকে পাঠানো হয়নি!অভিমান, অভিযোগ এসে ভীড় করে চিঠিটা আর পৌঁছানো হয়নি। ইরহা আবার ভাজ করে চিঠিটা রেখে দিলো। মনে, মনে ভাবছে কি অদ্ভুত তাই না। যে আমাকে ভালোবেসেছিল,তাকে হারিয়ে যাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলাম আজ আমি তাকেও হারালাম। আমার নাম ইরহা না হযে বিষাদ হওয়া দরকার ছিলো! এরমধ্যেই নাদিম রুমে আসলো,ইরহা বলে, ভাইয়া কিছু বলবে?হ্যা বলতাম তুই চাইলে আমার ফ্রেন্ড আবরারের অফিসে জবের জন্য এপ্লাই করতে পারিস। ওরা তো ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে কাজ করে। তুই বললে, আমি কথা বলে,দেখবো।
‘না ভাইয়া।জব করলে অন্য কোন কোম্পানিতে করবো।পরিচিত কারো সহায়তা দরকার নেই। নিজের যোগ্যতায় কিছু করবো।
‘তোর যা ভালো মনে হয় কর।আর হ্যা জব করতেই হবে এমন কিন্তু নয়। তোর ভাই যতদিন বেঁচে আছে ততদিন কোন টেনশন নেই।
‘তা আমি জানি ভাইয়া।আচ্ছা ভাইয়া বেতন পেয়ে আমাকে সেলাই মেশিন, আর এম্বরোটারি,এই দুই, তিনটা মেশিন কিনে দিও।
‘আচ্ছা ঠিক আছে। আমি অফিসে যাচ্ছি।

নাদিম অফিসে চলে গেলো।
বাসায় সাবাই মিলে ভালোই সময় কাটাচ্ছিলো। ফরিদা বেগম, লাবিবা সবাই ইরহাকে খুশি রাকার চেষ্টা করছে। যত যাই করুক একটা মন দু’বার ভাঙ্গার যন্ত্রণা তো কম কথা না! নিজের হাতে সাজানো সংসার অন্য কেউ দখল করে নিলো। চোখের পলকে নিজের সব কিছু অন্যের হয়ে গেলো, এ শোক যে হৃদয় পোড়াচ্ছে। সে পোড়া গন্ধ কেউ পায় না৷ সে দগ্ধ হৃদয় কেউ দেখে না।
সবাই কথা বলছে এমন সময় কেউ একজন কলিং বেল বাজাচ্ছে। লাবিবা যেয়ে দরজা খুলতেই মধ্য বয়স্ক লোকটা বলে,এই মেয়ে তোমার জন্য আজ আমার এতো বড় লস হলো। এর দায়ভার কে নেবে?
‘লাবিবা চিৎকার দিয়ে বলে,মা গো পাগল এসেছে।
‘লোকটা ধমক দিয়ে বলে,নিজের বাবার বয়সী একজনকে পাগল বলছো?বেয়াদব মেয়ে।
ইরহা দরজার কাছে আসতেই একটু থমকে যেয়ে বলে,সরি।
‘ওহহ তারমানে তুমি আমার ক্ষতি করেছো?
‘আঙ্কেল ভেতরে আসুন, বিশ্বাস করেন ইচ্ছে করে করিনি।
‘তোমার ইচ্ছে অনিচ্ছায় আমার কত বড় লস হচ্ছে।
‘কি হয়েছে আঙ্কেল?
‘তোমার জন্য আমার ফাইল খুঁজে পাইনি৷ আমার ডিল হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
ইরহা নিজের রুম থেকে ফাইল এনে লোকটার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে এই নিন। এটাই তো?
‘হ্যা কিন্তু তুমি এটা কোথায় পেলে?
‘আমি আপনাকে সরি বলতে নিচে গিযেছিলাম। তখন দেখলাম নিচে পরে আছে।
‘লোকটা বলে এবার চলি।
‘চা খেয়ে যান।
‘না এখন সময় নেই।

বেশ কিছুদিন ধরে লসের উপর রবিনের কোম্পানি।একটার পর একটা ডিল ক্যানসেল হচ্ছে। একদিকে বাসার অশান্তি অপর দিকে অফিসের টেনশন পাগল হওয়ার যোগার।
রবিন কিছু নিয়ে চিন্তা করছিল, এমন সময় ম্যানেজার এসে বলে,স্যার ম্যাডাম আজ সতেরো লাখ টাকা উঠিয়েছে একাউন্ট থেকে।
রবিন বলে হোয়াট?
‘জ্বি স্যার।
‘ঠিক আছে আপনি যান আমি দেখছি। নিজের সেল ফোন থেকে কল করলো, লামাকে। দুইবার রিং হয়ে কেটে গেলো। তৃতীয় বার রিসিভ হতেই, বিরক্তি কন্ঠে লামা বলে,ম্যানারস জানোনা! এভাবে কল করছো কেন? আমি শপিংয়ে বিজি।
‘রাখ তোর শপিং, তুই এতো টাকা কেন তুলেছিস? আমার সংসারে পা দিয়েছিস সপ্তাহ পেড়োয়নি। আর তুই আমাকে ধ্বংস করে দিচ্ছিস।
‘নাইস জোক্স, তোমার সাথে আমার দেড় বছরের বেশি সময় ধরে সম্পর্ক।আর হ্যা যে স্বামী বউকে সুখে রাখতে পারে না। তার বউতো টাকা খরচ করে সুখ কিনে নেবেই। ছোট লোকের মত কথা বলবা না।
‘তুই কি ভেবেছিস তোকে ঘরে জায়গা দিয়েছি বলে যা খুশি তাই করবি?
‘তোমার বাজে কথা পরে শুনবো। এখন ডোন্ট ডিস্টার্ব মি। বলেই ফোনটা কেটে দিলো। লামার সাথে ঝুমা নামের একটা মেয়ে। কিরে কি বলে তোর নাগর?
‘আর বলিস না। বিয়ে করার আগেই ভালো ছিলো কত টাকা দিতো হাত খরচ। আর আজ মাত্র সতেরো লাখ টাকা নিয়েছি এরজন্য রুড বিহেভিয়ার করলো৷
‘সতেরো লাখ তোর কাছে মাত্র মনে হয়?তুই ভুলে যাচ্ছিস মাত্র বিশ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতি!
‘সেসব অতীত। এখন বিশ হাজার টাকা আমার হাতের ময়লা। আজ ক্লাবে যাবো। তুইও চল৷

শেফালি বেগম এ ক’দিনেই বুঝতে পেরেছে,হিরে পা’য়ে টেলে কয়লাগে আপন করেছে।রবিন ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরলো।নিজের মাকে দেখে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে বলে,মা আমার বুল হয়েছে, আমার ইরহাকে আমার চাই। আমার রুবাবাকেও দেখিনা কতদিন।
শেফালী বেগম বলে,নিজেকে শান্ত কর আগামীকাল একবার যাবো ওই বাসায়। দেখি কি বলে।
‘যেভাবে হোক এনে দাও ইরহাকে। নয়তো আমি পাগল হয়ে যাবো।
রুবি পাশের রুম থেকে এসে বলে….. ‘যাকে পেয়ে যাবে? তাকে ক্ষনে, বিক্ষনে সংসারে নিত্যদিনে ভুলে যাবে।
কিন্তু যাকে পাবে না – সে সব সময় মনে রয়ে যাবে… ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস হয়ে।
“মিলন ভুলিয়ে দেয়!বিরহ ভুলিতে দেয় না?
‘যারা পেয়েও অযত্নে,অবহেলায় হারিয়ে ফেলে,তারা নিজের অজান্তে নীল বি’ষ পান করে। যার যন্ত্রণা তাকে মরতেও দেয় না বাঁচতেও দেয় না!!
আর তুমি নিজেই নীল বি’ষ পান করেছো! এর জ্বালা তো তোমাকেই ভোগ করতে হবে৷
কথায় আছে, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝেনা৷
এখন যত আফসোস করো যত কান্নাকাটি করো কি হবে?ফেরাতে পারবে! কখনো পারবে না।মেয়েরা নিজের হ্যাসবেন্ডের পাশে অন্য মেয়ের ছাঁয়া সহ্য করতে পারেনা। সেখানে দিনের পর দিন তুমি অন্য নারীতে আসক্ত ছিলে।

#চলবে

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-০৭

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৭

ইরহার পাশে রুবাবাকে কোলে নিয়ে বসে আছে নাদিম।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে নাদিম বলে,তোর আরো আগে পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ ছিলো!এবার যা হয়েছে ভুলে যা। নিজেকে গুঁছিয়ে নে। কথায় আছে দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।
‘ভাইয়া আমি ঠিক করেছি তো? আমার৷ জন্য এখন তোমাদেরও কথা শুনতে হবে।
‘শোন সমাজ আর সামাজের মানুষের কথা বাদ দিয়ে দে। জীবনটা আমাদের সমাজের না!তোর শ্বশুর বাড়ির মানুষ তোর হ্যাসবেন্ড যে এতো কিছু করলো।তুই যে এতো কিছু,সাফার করলি। সমাজ কি করেছে তোর জন্য। সমাজের দোহাই দিয়ে জুলুম সহ্য করার পক্ষে আমি নেই। তুই সমাজ আর সমাজের মানুষের কথা বাদ দে।তোর পরিবার তোর ভাই আছে তোর সাথে। তুই শুধু নিজেকে স্ট্রং কর। দেখিয়ে দে তুই চাইলে সব পারিস।
‘মানুষ হারালে, মানুষের জন্য শোক পালন করে দুঃখ বিলাস করে। মানুষ নামে পশু হারালেতো কোন শোক বা দুঃখ থাকে না ভাইয়া। আমি আমার জীবন আবার নতুন করে শুরু করবো।আমার মেয়ে আর আমি আমাদের পৃথিবী গড়ে তুলবো।
‘নিজের বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,এইতো আমার লক্ষী বোন। শোন সব সময় মনে রাখবি তোর পাশে ছাঁয়ার মত তোর ভাই আছে। তাই নিজেকে এ লাড়াইয়ে একা ভাববি না। নে তোর পৃথিবী ঘুমিয়ে গেছে মামা আমার।
ইরহা রুবাবাকে কোলে নিয়ে বলে আজ থেকে ওর নাম নওশাবা তাজরিন নুহা। আমার নওশাবা বলেই চুমু খায়া নিজের মেয়ের কপালে।
‘নাদিম বলে মাশা আল্লাহ খুব সুন্দর নাম। একদম প্রিন্সেস নওশাবা।
নাদিম চলে, আসতেই ইরহা নওশাবাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে মশারী টাঙ্গীয়ে দিলো।
নিজের পরিচিত রুমটায় কত দিন পরে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে নজর দিলো। আয়নায় তাকিয়ে বলে,নিজেকে নিজে করেছি বিলীন,বিনিময়ে পেয়েছি কি? যে সংসার৷ বাঁচাতে সংগ্রাম করেছি, যে সংসার তিলে তিলে স্বপ্ন আর ভালোবাসা মিলিয়ে গড়ে তুলেছি, তা আজ মূহুর্তে বিলুপ্ত হয়ে গেলো। মানুষ ঠিক বলে, মেয়েদের সব হয়, শুধু নিজের একটা ঘর হয় না।পরের ঘর আর বাপের ঘর সময় পাল্টে গেলেই করে দেয় পর!
নিজের চোখের কোনের পানি টুকু বা হাতের উল্টো পিঠে মুছে নিয়ে বলে,আমি গড়বো আমার ঘর। আমার জন্য না হোক আমার নওশাবার জন্য হলেও আমাকে পারতে হবে।ইরহা ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করেছে। কিন্তু বিয়ের পর সংসারী হয়েছে। সব ইচ্ছে কে বানের জলে ভাসিয়ে দিয়ে ভালো,বউ হয়ে উঠতে চেয়েছিলাম। আজ সমাজের চোখে খারাপ মেয়ে,খারাপ বউ। তবে আমি ভালো মা হয়ে উঠবো।

লাবিবা এসে বলে,আপু তুই একদম মন খারাপ করিস না। তুই এক কাজ কর কাল থেকে জব খোঁজা শুরু কর। ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে এগিয়ে যা।
‘হুম তাই করবো। তোরা তো আছিস পাশে। একটা খারাপ অধ্যায় শেষ হয়েছে, এখন ভালো অধ্যায় শুরু হওয়ার পালা।


রবিন বেডের শুয়ে আছে, লামা এসে বলে,এই উঠে বসো,তোমার সাথে কথা আছে।
‘এখন শোনার মুড নেই পরে বইলো।
‘মুড নেই বললে তো হবে না। শুনতে হবে৷ উঠো।
‘রবিন উঠে বসতে, বসতে বলে,তোমার কি ঝামেলা করা ছাড়া আর কোন কাজ নেই! আসার পর থেকে একদিন ও শান্তিতে থাকতে দাওনি। সমস্যা কি তোমার? নিজে ভালো থাকো আমাকে ও থাকতে দাও।
‘এখনো আমি বিরক্তকর অসহ্য, আমি ঝামেলা করি, আর তোমার বোন কি করলো। আমাকে অপমান করলো!তুমি ওকে কিছু বললে না। বাহহহহ কেমন মেরুদন্ডহীন পুরুষ তুমি! তোমার সামনে তোমার বুকে তোমার ছোট বোন যা নয় তা বলে গেলো আর তুমি কোন প্রতিবাদ করলে না!
‘দেখো লামা এমন নাটক করছো,যেনো মনে হচ্ছে তোমাকে আমার পরিবারের লোক বিয়ে করিয়ে নিয়ে এসেছে। ভুলে যেওনা আমরা পরকীয়া প্রেমিক প্রেমিকা থেকে হ্যাসবেন্ড ওয়াইফ হয়েছি, তাই কিছু কথা তো তোমাকে সহঢ করতেই হবে।
‘না না আমি তো সহ্য করবো না। আরেক বাসা থেকে এসে তোমার বোন আমাকে কথা শোনাবে আর তুমি বলবা বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে হয়নি তাই সহ্য করতে হবে!এসব আমি মেনে নেবো না।
‘তাহলে তুমি কি চাইছো?
‘তোমার বোন এবাসায় আর আসতে পারবে না।
‘নিজের লিমিটেডের মধ্যে কথা বলো লামা। তোর বাপের বাসা না, এটা! এটা আমার বোনের বাসা। ওর যখন খুশি আসবে। তোর ভালো না লাগলে তুই বের হয়ে যা।
‘তোর এতো বড় সাহস তুই আমাকে তুই করে বলিস, কথাটা বলেই নিজের মোবাইল ছুড়ে ফেলে বলে,তুই আমাকে ইরহা ভাবিস না।
‘কি করবি তুই কর, দেখি কি করতে পারিস।
বেশ খানিকটা সময় ঝগড়াঝাটি করে,এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়ে যায়।
শেফালী বেগম কোনমত থামিয়ে নিজের ছেলেকে বাহিরে পাঠিয়ে দেয়।

লামা কর্কশ কন্ঠে বলে,আপনার ছেলেকে আমি ছেড়ে দেবো না৷ আমার গায়ে হাত তোলা! নারী নির্যাতন মামলায় কেস করবো।

রুবা বাসার রুমে বসে বসে মিটি মিটি হাসছে, আসলে তো এটা হওয়ারই ছিলো।একটা ভালো মেয়েকে কষ্ট দিয়ে বের করে দিয়ে একটা সয়তান ঘরে তুলে এনেছে। একটা ভালো মেয়ে যেমন সংসারকে সর্গ করে তুলতে পারে,ঠিক একটা চরিত্রহীন বাজে মেয়ে সংসারকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
রবিন একের পর এক সিগারেট শেষ করেই যাচ্ছে। কতদিন পর পুরনো আড্ডায়। রবিনের সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস নেই। মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে হুটহাট হয়তো কালে ভদ্রে খেয়েছে।কিন্তু নিয়মিত স্মোকার না। কিন্তু আজ এ পর্যন্ত তিন প্যাকেট শেষ করে ফেলেছে।
ইসমাইল, বলল রবিন তুই এভাবে সিগারেট খাচ্ছিস ব্যাপার কি?
‘ব্যাপার কিছু না। আজ তোর ভাবির সাথে ঝগড়া হয়েছে।
‘কি যে বলিস ভাবি আর ঝগড়া! ভাবিতো তোর সাথে উঁচু আওয়াজে কথাও বলেনা৷
‘রবিন অট্টহাসি দিয়ে বলে,সে তো আর নেই!
‘এই রবিন কি বলছিস মাতালের মত! তুই নেশাটেশা করিস নি তো? আবল তাবল বকছিস।
‘সত্যি বলছি, তোরা যাকে ভাবি হিসেবে চিনতি সে নেই। চলে গেছে।
‘হেয়ালি না করে বলতো কি হয়েছে?
‘রুবেল বল, ওর প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে, ওর সেক্রেটারি কে বিয়ে করেছে। বুঝিসই তো মেয়েটা কেমন হলে, বসের সংসার ভেঙে নিজে সংসার জুড়ে দেয়।
‘ইসমাইল অবাক হয়ে বলে,ইরহা ভাবির মত বউ পেয়ে কেউ ছাড়ে! তুই পদ্য ফুল রেখে গোবরে নামলি কেন?
‘রবিন কিছু না বলে চলে আসলো।
রুবেল বলে,বুঝবে শা’লা কি আ’গু’নে হাত দিয়েছে ওর জীবন এখন পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে।
‘তুই মেয়েটাকে আগে থেকে চিনিস?
‘এটা ওই মেয়েটা যাকে নিয়ে কক্সবাজার ট্যাুর দিয়ে আসলাম।
‘মানে শেষ এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করলো রবিন!
‘ভেবেছিলাম কয়েকদিন মজ মাস্তি করে ছেড়ে দেবে।এসব মেয়েকে কেউ ঘরের বউ করে?
‘ইয়ার ইরহা ভাবির জন্য কষ্ট হচ্ছে, ভাবি আসলেই ভালো মেয়ে।
‘বাদ দে চল নিজেদের ঘর সামলাই পরের ঘরে কি হলো তাতে আমাদের কি। মাঝে মাঝে ফ্রীতে বিনোদন দেখবো।এই তো!
‘কি বলছিস শতহোক আমাদের ফ্রেন্ড।
রবিনের বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত দুটো বেজেছে। রুমে না যেয়ে বসার ঘরের সোফায় ঘুমিয়ে পরেছে।

✨একটা ভয়াবহ দিন তারপর দীর্ঘ এক কালো রাত শেষ করে, চারপাশ আলোকিত করে উঁকি দিচ্ছে নতুন দিন।
কথায় আছে, “দুঃখ একটা দীর্ঘ রাতের মত, যা শেষ হয়ে নতুন দিনের সূর্য উঠবেই।শুধু ধৈর্য নিয়ে সেই রাতটুকু পার করতে হবে।
সকালের মৃদু বাতাসে বাহিরে তাকিয়ে আছে ইরহা। ফজরের নামাজ পরে খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়েছে, মনটা কিছুটা হলেও ফুরফুরা। কেমন যেনো একটা প্রশান্তি অনুভব হচ্ছে। প্রকৃতি দেখতে এতোই মগ্ন যে, হাতে থাকা চায়ের কাপ হাত থেকে নিচে পরে গেলো। যখন বিষটা খেয়াল করলো, তখন কর্কশ ভাষায় কেউ বলছে,কমন সেন্স নাই?

#চলবে

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-০৬

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৬

ইরহার এক হাতে ব্যাগে অন্য হাতে রুবাবাকে আগলে নিয়ে বাড়ির চেনা রাস্তার দিকে আগাচ্ছে। কি অদ্ভুত তাইনা। সেই পরিচিত পথ আজ কেমন অপরিচিত মনে হচ্ছে। যেখানে আসলে শান্তি অনুভব হতো। আজ সে পথ ধরে যতটা এগোচ্ছো বুকের ভেতরটা ততই তোলপাড় হচ্ছে। আচ্ছা সমাজের মানুষ কি বলবে!সব দোষ তো তারা আমাকে দেবে। সবাই বলবে,কি মেয়ে স্বামির সংসার করতে পারলো না। মানুষ তো মাটি কামড়ে স্বামির ঘরে পরে থাকে, আর এই মেয়ে দেখে স্বামী ছেড়ে চলে আসছে। নাকি সবাই বলবে, ডিভোর্সি মেয়েদের সমাজে কোন সম্মান আছে নাকি! নাকি বলবে, মা বাবার সম্মান ডুবিয়ে চলে আসছে? সবাই কি আমাকে আড় চোখে দেখবে।যেই দৃষ্টিতে থাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য। আনমনে ভাবছে আর সরু গলিতে হাঁটছে।ইরহা রুবাবাকে আর একটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, আচ্ছা এমন একটা মানুষ, যে রাতের পর রাত অন্য নারীতে মগ্নছিলো। দিনের পর দিন মিথ্যে বলে ধোঁকা দিয়েছে। তার সাথে কি সত্যি আপোষ করে থাকা উচিৎ ছিলো? যে মানুষটা এতো এতো অন্যায় করার পরও একবারের জন্য ও নিজের অন্যায় স্বীকার না করে বলে, দেখো আমার সমর্থ আছে, দুটো বউ চালানোর। তাই তুমি চাইলে থেকে যেতে পারো। তোমার কোন কিছুতে অভাব হবে না।
আচ্ছা আমাদের কি অভাবের জন্য বিয়ে দেয়া হয়! নাকি পরিবার খাবার দিতে পারে না তাই বিয়ে দেয়?
বিয়েটা কি শুধু শারীরিক অভাব দুর কারার জন্য! আমি তো জানতাম বিয়ে মানে, দুটো মানুষের মধ্যে ভালোবাসা,বিশ্বাস, শ্রদ্ধার সম্পর্ক। যেখানে মেয়েরা নিজের পছন্দের মানুষের পাশে দ্বিতীয়জনের ছায়া দেখতে পারে না। সেখানে নিজের লাইফ পার্টনারকে আরেকজনের সাথে শেয়ার করা কি এতোটাই সহজ?আর সারাজীবন আল্লাহ তায়ালার বিধানের সব হুকুম অমান্য করে, দ্বিতীয় বিয়ে জায়েজ বলে,যুক্তি দিয়ে দেবে!সাথে সবাই বলবে, বেডা মানুষ তো দুই বিয়ে করতেই পারে!
আচ্ছা ইসলাম কি এতো সহজ? দুই বিয়ে জায়েজ সেটা কত শর্ত সাপেক্ষে। সেসব না মেনে তো জায়েজ নয়। ইসলামের দোহাই দিলেই তো অযৌক্তিক কথা সঠিক হয়ে যাবে না।শত ভাবনা বাদ দিয়ে মেইন গেটের সামনে এসে থামলো ইরহা। বুকে দুরুদুরু করছে, ব্যাগটা নিচে রেখে আলতো হাতে কলিং বেল চাপ দিলো।

বিকেল গড়িয়ে কেবল আলো পড়তে শুরু করেছে আর আধঘন্টার মধ্যে হয়তো কালো মেঘে ছেয়ে যাবে ধরণী। ফরিদা বেগম চায়ে শেষ চুমুক দিবেন ঠিক তখনি কলিং বেল বেজে উঠলো। চায়ের শেষ চুমুক দিয়ে, গেট খুলতেই ইরহাকে দেখে বেশ চমকে যায়!
‘কিরে মা এই সন্ধ্যা বেলা তুই?
‘ভেতরে আসতে দাও মা। যার জীবনে অন্ধকার নামবে, তার জন্য তো আগে সন্ধ্যা আসবে-ই।
‘ভেতরে আয়, কি হয়েছে বল। ফরিদা বেগম রুবাবাকে কোলে নিয়ে বলে,বল কি হয়েছে?
‘মা,এক গ্লাস পানি দাও।
‘ফরিদা বেগম গলা ছেড়ে ডাক দিলো লাবিবা এদিকে আয় তাড়াতাড়ি।
লাবু নিজের রুম থেকে এসে বলে,কিরে আপু তুই! কখন আসলি বলে আসবি তো?
‘কথা কম বল আগে ইরহার জন্য এক গ্লাস পানি আন। আমার মনটা কেমন কু ডাকছে।
‘ইরহা বসে পানিটা এক শ্বাসে শেষ করে, বোরকাটা খুলে সোফার কোনায় রাখে।
ফরিদা বেগম মেয়ের বিধ্বস্ত চেহারা দেখে বুঝতে পেরেছেন বড় কিছু হয়েছে। মাথায় নানা প্রশ্ন এসে জট পাকাচ্ছে।
ইরহা শান্ত স্বরে ডাকলো মা’আমি সব শেষ করে চলে এসেছি।
‘কি শেষ করে চলে এসেছি?
‘একটা মেয়ের অস্তিত্ব কি মা?
‘তুই বল খুলে কি হয়েছে? এমন কেন করছিস?
নিশাত নিজের রুম থেকে বের হতে হতে বলে, হওয়ার আর কি বাকি রেখেছে! আমাদের মানসম্মান সব ডুবিয়ে এসেছেে।আপনার মেয়ে কোর্ট থেকে আসলো একদম ডিভোর্সী হয়ে। এখন আপনার মেয়ে ছাড়া নারী। সমাজে আর মুখ থাকবে না। জনে জনে বলে বেড়াবে ওই বাসার বড় মেয়েকে জামাই ছেড়ে দিয়েছে।
‘ফরিদা বেগম রাগী কন্ঠে বলল,নিশাত একদম বাজে কথা বলবেনা। আমার মেয়েকে আমার চেনা আছে।
‘তা কত জনের মুখ বন্ধ রাখবেন! আমাকে না হয় ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলেন। আশেপাশের মানুষের মুখ কি দিয়া বন্ধ করবেন শুনি!
‘এক কথা বারবার বলবো না। তুমি নিজের রুমে যাও।আমার মেয়ে আমি বুঝে নেবো।
‘কি আর বোঝার বাকি আছে! এখন আমার বরের ঘাড়ের উপর বসে বসে খাবে।একা হলে তাও কথা ছিলো!সাথে আবার আরেকটা আছে। বলেই চলে গেলো নিশাত।

নিশাত চলে যেতেই, ফরিদা বেগম বলেন, এবার আমাকে বল মা কি হয়েছে?
‘ইরহা সবটা খুলে বলল। এবার তুমিই বলো আমি কি করে থাকবো ওই সংসারে। নিজের চোখের সামনে নিজের স্বামী, নিজের সংসারে অন্য কারো রাজত্ব। মেয়ে হয়ে কি করে মেনে নেবো! তাই বাধ্য হয়ে এই পথ বেছে নিয়েছি৷
‘তুই এসব আগে কেন বলিস নি?
‘আমি চেষ্টা করেছিলাম মানিয়ে নিতে।ভেবেছিলাম সে পাল্টে যাবে ঠিক হয়ে যাবে।আসলে যার চরিত্র নষ্ট হয়ে যায়, সে-তো কখনো ঠিক হয় না।
‘যা রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। যা হওয়ার হয়েছে। ভাগ্যের সাথে কেউ লড়তে পারে না।
ইরহা রুমে চলে আসলো। সাথে লাবিবাও ইরহার সাথে রুমে আসলো।
ফরিদা বেগম ফ্রীজ থেকে দুধের বোতল বের করে পানিতে ভিজিয়ে রাখলেন। রুবাবাকে খাওয়ানোর জন্য। ফরিদা বেগম রুবাবার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,এই মায়াবী মুখ যাকে আটকাতে পারলো না তাকে পৃথিবীর আর কেউ আটকে রাখতে পারবে না৷

রবিন, রাগ নিয়ে লামার হাত ছাড়িয়ে বলে, কি দরকার ছিলো তোমার এসব করার! এসব করে কি পেলে?
‘বাহহ খুব ভালো বললে তো!তুমি গাছেরটাও চাও আবার তলার টাও লাগবে!এভাবে দু’নৌকোতে পা দিয়ে কতক্ষণ বলো। একটা না একটা তো বেছে নিতেই হতো। সেটা আজ হোক বা কাল।

‘আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম, স্ত্রীর অধিকার ছাড়া আমি তোমাকে সব দেবো। তোমার দেখা শোনা, তোমার যত খরচ সব।
‘আমার তো তোমার স্ত্রী এই ট্যাগটা চাই রবিন।নয়তো সমাজে আমার কি পরিচয় থাকতো রক্ষিতা।
আমি তো সেই ট্যাগ নেবো না। আর বাদ দাও বাবু যা হয়েছে ভুলে যাও আমরা হ্যাসবেন্ড ওয়াইফ সব কিছু নতুন করে শুরু করো। পুরনো অধ্যায় ছিড়ে ফেলো তো।
রবিনের বোন, রুবি বলল,শোন মেয়ে পুরোনো অধ্যায় ছিড়ে ফেলা যায় না।পুরোনো অধ্যায় থেকে নতুন অধ্যায় জন্ম নেয়। আর তোমার মত একটা মেয়ে, যে কিনা একটা ছেলে বিবাহিত জানার পরেও তার গলায় ঝুলে পরেছে, তার সাথে নতুন অধ্যায়! সো ফানি। আসলে কথায় আছে না, “নারীরাই নারীর শত্রু। এই কথাটা তোমাদের মত থার্ডক্লাস মেয়েদের জন্য। যারা অন্যের স্বামীকে ফুসলিয়ে নিজের করে নাও। তবে এটা ভুলে যাও,যে পুরুষ এক নারীতে আসক্ত হতে পারেনি, সে তোমাতেও আসক্ত হবে না৷
‘এসব কথা বলার মানে কি? আমি জানি রবিন কেমন।
‘শুনো আমার ভাইয়ের চোখে এখন রঙিন চশমা, তাই তোমাকে রঙিন লাগছে। তবে চশা তো সব সময় পরে থাকে না কেউ। যখন চশমা খুলে ফেলবে,তখন বুঝবা। অন্যের স্বামীকে কেড়ে নেয়ার শাস্তি।

‘আপনি কিছু বলবেন আপনার মেয়েকে, নাকি আমার বলতে হবে!
‘রুবি চুপ কর। আর ওই মেয়ে যত সহজ সরল সেজে থাকতো, সেরকম মোটেই না। যা হয়েছে ভালো হয়েছে।
‘বাহহহহ মা, তোমাকে তো এওয়ার্ড দেয়া উচিৎ! নিজে পছন্দ করে এনেছিলে। আর কি বললে যেরকম দেখতে সেরকম না। ঠিকি বলেছ ওই মেয়ে তো বোকা, তাই এভাবে চলে গেছে। আমি হলে তোমাদের মা ছেলেকে চৌদ্দ শিকের ভাত খাইয়ে ছাড়তাম।

রবিন বলে, রুবি তুই থামবি!

#চলবে

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-০৫

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৫
এখন কি খাবার খেতে দিবা না! আসার পর থেকে কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করছো।
‘ইরহা উঠে বাবুর পাশে শুয়ে পরলো। রুবাবার চেহারার দিকে তাকিয়ে বলে,কি আছে রে তোর কপালে!তোকে কি আমি অবহেলায় রাখবো! তোর জন্য লড়াই করবো।দরকার পরলে আমরা নিজেদের জন্য একটা পৃথিবী বানাবো। তোর আর আমার পৃথিবী। আর কাউকে দরকার নেই। যেখানে গুরুত্ব নেই সেখানে পরে থাকা অর্থহীন।
রবিন পেছনে দাঁড়িয়ে বলে,মেয়ে মানুষ নাকি অনেক ধৈর্যশীল থাকে।
‘ধৈর্যের দোহাই দিয়ে,পুরুষ মানুষ তাদের শোশন করবে? ভুলে যেও না প্রত্যেকটা জিনিসের নির্দিষ্ট একটা সীমা থাকে। সীমা পার করে ফেললে তারপর কেউ আর চুপ থাকে না!
‘তোমার সাথে অযথা তর্ক করার সময় বা ইচ্ছে কোনটাই নেই। আমি খুব টায়ার্ড। আর শুনো কালকে লামা আসবে, ওর বাসায় কেউ নেই তাই কিছুদিন আমাদের বাসায় থাকবে। তোমার তো কোন আপত্তি নেই।
‘যদি বলি আছে!
‘তাহলে বলবো অযৌক্তিক কথা বলছো।
‘শুনো লামা সেই মেয়েটা, প্রথমবার তোমার ওয়েলেটে যার ছবি পাই, লামা সেই মেয়েটা, তোমাকে আর তাকে আপত্তিকর অবস্থায় নিজের চোখে দেখেছিলাম। আমার মনে হচ্ছে লামা নামটা আমার জীবনে তুফান।
‘আমি ভাবতে পারছি না ইরহা! তোমার মত একটা লো মেন্টালিটির মেয়ে আমার ওয়াইফ!সামান্য কথাকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো!
‘প্রতিটি অসামান্য কথাই সামান্য কথা দিয়ে শুরু হয়।
নাদিম বালিশ নিয়ে রুম থেকে বের হওয়ার আগে বলে,তোমাদের মত মেয়েদের জন্যই স্বামীরা অন্য নারীর কাছে সুখ খুঁজতে যায়।
‘যে পুরুষের সুখ অন্য নারীর কাছে,তার কাছে গরের নারী বি’ষ।
‘তুমি থাকো একা আমি গেস্ট রুমে যাচ্ছি।
‘শুনো আমি সব সময় তোমাকে সরি বলি, আমি ভুল করি বা তুমি করো। আমি তোমার রাগ, তোমার মায়ের রাগ, তোমার বোনদের রাগ। সব কিছু সহ্য করি। কখনো মুখফুটে কিছু বলিনা। সহ্য করি তোমার জন্য। আজ আমার সামান্য কথার উত্তর না দিয়ে তুমি রুম ছেড়ে চলে যেতে যাইছো!আজ তোমাকে আটকাবো না, জড়িয়ে ধরে বলবো না। সব ভুল আমার, তুমি রেগে থেকো না। তোমার ঠোঁটে আলতো ভালোবাসার পরশ দিয়ে বলবোনা ভালোবাসি। কারণ আজ আমার উত্তর চাই। শুধু একটা না এবার অনেকগুলো উত্তর চাই।
এই যে তোমার ফোন এবার বলো মাই হার্ট লিখে সেভ করা নাম্বারটা কার। এইযে তোমার সিক্রেট গ্যালারি। এবার বলো এই মেয়ের সাথে তোমার আপত্তিকর ছবিগুলো কোথা থেকে এলো। এই যে তোমার সিক্রেট ভিডিও ফোল্টার, এবার বলো আমি কোন অংশে কম! আমাকে রেখে তোমার পরনারীর কাছে কেন যেতে হলো নোংরামি করতে? এবার উত্তর দাও তারপর তুমি কেন যাবে,আমি চলে যাবো।

রবিনের কপালে ঘাম জমতে শুরু করেছে, পা থেমে গেছে। আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইরহার দিকে? এসব হাইড করা জিনিস গুলো সামনে আসলো কি করে? এই পাসওয়ার্ডগুলো শুধুমাত্র লামা আর আমি ছাড়া কারো জানার কথা না।

রবিনের অবস্থা দেখে ইরহা বলে, বেশ অবাক হলে, তাইতো! আমি এসব কি করে জানলাম!
কিছু সময় পূর্বের ঘটনা……
রবিনের খাবার প্লেট, বাটি কিচেনে রেখে আসার সময় ইরহার ফোনে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। তারপর বিপরীত পাশের একজন বলে, আপনার হোয়াটসঅ্যাপে বেশ কিছু ছবি পাঠিয়েছে এক্ষুনি চেক করুন। তাহলে আপনার হ্যাসবেন্ডের সত্যিটা জানতে পারবেন।
ইরহা নিজের হোয়াটসঅ্যাপ ওপেন করতেই কিছু টেক্সট, কিছু পিক আর রবিনের গোপন পাসওয়ার্ড সব ইরহার হাতে চলে আসে। রুমে এসে কিছু না বলে, কথার ফাঁকে সবটা চেক করে নেয়। রবিন নিজের মধ্যে এতোটা ব্যাস্ত সে ভাবতেই পারেনি ইরহা কি করছে? একবার অবশ্য সে খেয়াল করেছে তার মোবাইল ইরহার হাতে কিন্তু সে তো জানতো না। ইরহার কাছে গোপন পাসওয়ার্ডগুলো আছে।

এবার বুঝলে তো, কিভাবে জানতে পারলাম সত্যিটা। ধোঁকা,আপনি আমাকে এতোদিন ধরে ধোঁকা দিচ্ছিলেন! আমি কি বোকা আর আপনি কি নিখুঁত অভিনেতা!আপনাকে অভিনয়ে চান্স দিলে শাহরুখ খানও আপনার পিছনে থাকতো। দূর কিসের সাথে কি জোড়া দিচ্ছি। শাহরুখ খান তাও বাস্তব জীবনে এক নারীতে আসক্ত। আর আপনি তো চরিত্রহীন।

নিজের রুমে বসে অট্টহাসিতে ফেটে পরছে লামা। এতোদিনে একটা মনের মত কাজ করেছে৷ লামার পাশেই তার বোন লিজা বসা। লিজা বললো, তুমি কি কাজটা ঠিক করলে আপু! একটা মেয়ের সংসার ভেঙে দিলে।
‘এই সংসার না ভাঙ্গলে আমার সংসার গড়বো কিভাবে!নিজের জন্য স্বার্থপর হতে হয় মাঝে মাঝে।
‘কিন্তু তাই বলে, অন্যজনের সংসার ভেঙে নিজেেসংসার গড়বে! কারো ভাঙা জিনিসে তার রুহের হায় থাকবে।তার দীর্ঘশ্বাস তোমাকে ভালো থাকতে দিবে তো?
‘তুই চুপ থাকতো। বেশি বুঝিস না। আমাদের বাবা নেই, এতো বড়লোক ছেলে আমরা পাবো! ঢাকাতে বাড়ি আছে। একমাত্র ছেলে, দুই বোন তাও বিবাহিত শ্বশুর বাড়ি, বুঝতে পারছিস পুরো বাড়ি জুড়ে আমার রাজত্ব।
‘কারো রাজ্য ধ্বংস করে নিজে রাজত্ব দখল করে টিকিয়ে রাখতে পারবে তো?
‘তুই ছোট সবে সতেরো বছর, তুই কি বুঝবি! দেখিস কত আয়েসে জীবন কাটাবো আমরা।
‘আমি তোমার ছোট কিন্তু অবুঝ নই। লোভ মানুষতে ধ্বংস করে দেয়৷
‘এই তুই যা তো রুম থেকে বের হ, আজকে মায়ের রুমে ঘুমা। আমারটা আমি বুঝে নেবো৷

লিজা মন খারাপ করে মায়ের রুমে এসে মায়ের পাশে শুয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
লতা বেগম বলেন, কিরে মা তুই কাঁদছিস কেন কিছু লাগবে তোর। আর পাঁচদিন পর গার্মেন্টসে বেতন দেবে।বল কি লাগবে তখন তোকে কিনে দিবো৷
‘আমার কিছু লাগবে না মা৷ আমার ভয় হচ্ছে আপুর জন্য।
‘কেন লামাকে নিয়ে কিসের ভয়!
‘তুমি তো সারাদিন কাজে থাকো এদিকে আপু কি করেছে জানো। লিজা সবটা বললো, লতা বেগমকে৷ লতা বেগম মনে হয় এসব শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলেননা। স্বামীর মৃত্যুর পর অভাবের সংসার নিজে চালিয়ে মেয়ে দু’টোকে মানুষ করেছে। আর সেই মেয়ে এমন জঘন্য একটা কাজ করলো। লতা বেগম বিছানা ছেড়ে সোজা লামার রুমে আসলো। লামা তার মা’কে দেখে বুঝে গেছে কি হতে পারে, লামা আগেই বলে,লেকচার দিবানা। কি দিয়েছো তুমি জীবনে? সব সময় টানাটানি আর হিসেব করে চলেছি। এখন যদি আমার আমার সুখ, আমার ভালো থাকা খুঁজে নেই তাতে তোমাদের এতো সমস্যা কেন হচ্ছে! এখন তো মনে হচ্ছে তোমরাই আমার আসল শত্রু।
লামা আর কিছু বলার আগে লতা বেগম ঠাটিয়ে ছড় বসিয়ে দিলো লতার গালে।
‘লতা চিৎকার করে বলে মা’তুমি আমার গায়ে হাত তুললে৷
‘তোর ওই মুখে আমাকে মা ডাকবি না৷ তোর মত মেয়ের মা হওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। তোর বুক কাঁপলো না এতো বড় সর্বনাশ করার আগে?
‘লতা নিজের সামনে থাকা বেডের উপরের বালিশ বেড কাভার ছুড়ে ফেলে বলে,আমার ধৈর্যের পরিক্ষা নিওনা৷ আমি কত ভয়ংকর তুমি তা জানোনা।
‘জেনে গেছি। শোন তোকে জন্ম দিয়েছে তাই এই রাতে বের করে দিতে পারছিনা। আগামীকাল সকালের আলো ফোটার আগে চলে যাবি। তোর মত মেয়ে আমার জন্য মরে গেছে।
‘ভুল করছো তুমি আমার সঙ্গ দাও তোমার জীবন সুখে ভরিয়ে দিবো।
‘অন্যের সুখ কেড়ে নিয়ে কেউ সুখি হতে পারে না। আর আমরা সুখেই আছি।বলেই চলে গেলো লতা বেগম।

✨ইরহা বলে,বিয়েটা করেছো তাও আমার মেয়ের বার্থডের দিন। এটা কিভাবে পারলে, আমি মৃত্যুর সাথে লড়াই করছি, আর তুমি বিয়ে করছো। বাহহহ।
‘আমি তোমাকে সবটা বুঝিয়ে বলছি। আর কিছু বলতে হবে না।
বাকিটা শুধু দেখবে।
রিকশা ওয়ালা মামা বলল,আপা আইসা পরছি নামবেননা।
রিকশা ওয়ালার কথা শুনে নিজের ভাবনা থেকে বের হয় ইরহা।

#চলবে