Thursday, August 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 458



কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-২৯

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৯

নাস্তার টেবিলে নাস্তা সাজানো, প্রতিদিন এখানে আন্তরাও থাকে আজ নেই। আহনাফ অন্তরার রুমে এসে দেখে অন্তরা নিজের মেয়েরা মাথার চুল বেঁধে দিচ্ছি।
‘তুমি তো কখন এসময় ব্যাস্ত থাকো না। তাহলে আজ কি হলো আন্তরা।
‘আন্তরা নিজের মেয়েকে কোলে করে নিয়ে এসে এক সার্ভেন্টের কাছে দিয়ে বলে,ওকে নাস্তা করিয়ে দাও৷
তারপর আবার রুমে আসলো, আহনাফ অন্তরার হাত ধরে বলে,কি হয়েছে তোমার? তোমাকে বেশ অশান্ত মনে হচ্ছে। চলো পাহাড় অথবা সমুদ্র থেকে ঘুরে আসি, তোমার একটু প্রশান্তি দরকার।

‘অন্তরা আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে………
‘যে সম্পর্কে ভালোবাসা নেই, সেখানে প্রশান্তি আসবে কোথা থেকে?ভালোবাসা মানে হলো প্রশান্তি,আমরা যাকে ভালোবাসি তার দিকে তাকালে বা তার সাথে এক মিনিট কথা বললেও হৃদয়ে প্রশান্তি ছেয়ে যায়।নিজেও জানিনা কোন পরিস্থিতি আছি,আর অন্য কাউকে বোঝাতে পারা তো বিলাসিতা! জানো আমার মনে হয়, তোমার বউ না হয়ে,যদি তোমার প্রেয়সী হতাম তাহলেই হয়তো ভালো হতো!যুগে, যুগে প্রমানিত বউয়ের চেয়ে প্রেয়সীর স্থান পুরুষের মনে বেশী। দেখো আমি সারাজীবন চেষ্টা করেও তোমার প্রেয়সীর জায়গা নিতে পারবো না। তবে সে সারাজীবন তোমার মনে নিজের স্থান বহাল রাখতে সক্ষম, যদিও তোমাদের মাঝে এক আলোকবর্ষ দূরত্ব ও থাকে!
‘আহনাফ অন্তরাকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে, কানের কাছে আস্তে করে বলে,না হওয়া প্রেয়সী মানে দীর্ঘশ্বাস। আর আমি তো তোমাকে মিথ্যে বলতে পারবো না যে,আমি ভুলেগেছি বা ভুলে যাবো তাকে, যার জন্য জীবনের প্রথম অনূভুতি জাগ্রত হয়েছিল, জীবনের প্রথম মধুর স্বপ্নগুলো যাকে ঘিরে জাল বুনেছিল। চাইলেও সেসব ভুলে যাওয়া সম্ভব না৷ যদিও কেউ বলে,প্রথম ভালোবাসা আর প্রথম প্রেম ভুলে গেছে,তবে মনে রেখো সেখানে কখন ভালোবাসা ছিলো না। যা ছিলো সাময়িক এটেনশন।
এই সব কথার ভিড়ে আসল কথাটা কি জানো?তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি তবে স্বপ্ন পূরণ তোমার হাত ধরে হয়েছে,যেমন ধরো আজ আমি খাবার টেবিলে বসেও নাস্তা করতে পারলাম না। তোমার অনুপস্থিতি আমাকে পিড়া দিলো, এই সামান্য কাজটাই তোমাকে ছাড়া শূন্য মনে হচ্ছে, তারমানে বুঝতে পারছো তোমার স্থান কোথায়? তুমি আমার জীবনে কেমন করে মিশে গেছো!
‘অন্তরা শক্ত করে আহনাফকে জড়িয়ে ধরে বলে,তুমি আমার মানষিক শান্তির কারণ, তোমাকে হারানোর ভয় আমাকে শেষ করে দিচ্ছে।
‘আহনাফ অন্তরার কপালে চুমু দিয়ে বলে,মৃত্যু ছাড়া বিচ্ছেদ সম্ভব না। একজনে হারিয়েছি তোমাকে আর হারাতে দেবো না।

ইরহা শান্ত স্বরে বলল,হ্যা লামা আর রবিনের সাথে গতকাল রাতে আমার কথা হয়েছে, লামা আমাকে রাত দশটার দিকে কল করে, আমার কাছে ক্ষমা চায়। ওকে খুব ডিস্টার্ব লাগছিলো তাই ধৈর্য ধরে ওর কথা শুনেছিলাম। তবে মাত্র তিন মিনিটের কনভারসন।
‘একজন ইরহার ফোনটা নিয়ে চেক করে দেখ ইরহার কথাটা ঠিক।

‘একজন লেডি অফিসার বলে,কিভাবে মানবো আপনি সত্যি বলছেন?
‘ইরহা বলে কল রেকর্ড চেক করলে পেয়ে যাবেন৷ আমি রেকর্ড করে রেখেছি৷
‘তাররপর বলুন রবিনের সাথে শেষ কথা কি বলেছেন
‘ও কল করেছিল রাত তিনটে বাজে, আপনি রেকর্ড অন করুন।
রেকর্ড অন করলো,……….

প্লিজ ইরহা কল কেটো না, আজকের পর আর কখনো তোমাকে ডিস্টার্ব করবো না। কিন্তু এখন আমার কল কাটলে আমি কতজনকে খু’ন করবো জানা নেই।
‘আপনার পাগলামি অন্য কোথাও দেখান মাঝরাতে এতো বারবার কল করে ডিস্টার্ব করছেন কেন?আর এটা কার নাম্বার।
‘এটা নতুন কিনেছি কাল, এই দেখে লামার দেহটা আমার সামনে পরে আছে, দেখো মনে হচ্ছে ক্ষতবিক্ষত চোখ দু’টো দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ওরমত মেয়েদের এমন-ই হওয়া উচিৎ।
‘কি সব বাজে কথা বলছেন? ফোন রাখলাম আমি।
‘উঁহু রাখবে না, রাখলে আমি শেষ করে দেবো সবাইকে আমার শেষ কথা শুনো আমি তোমাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।কনভারসন শেষ হতেই পুলিশ অফিসার বলে,’সরি ম্যাম ডিস্টার্ব করার জন্য, আসলে জেলেদের জালে লামা মেয়েটার ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া গেছে৷ আর আগামী কয়েকদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ওর ভিডিও এতো ভাইরাল ছিলো যে,ওর লাশ চিহ্নিত করতে বেগ পেতে হয়নি। ধন্যবাদ আমাদেরকে সঠিক ইনফরমেশন দেয়ার জন্য। ম্যাম আপনাকে আরো একটা হেল্প করতে হবে।
‘জ্বি
‘যে নাম্বার থেকে কল এসেছিল ওই নাম্বারে কল দিয়ে বলুন, তুমি কি একবার আমাদের বাসায় আসবে? নওশাবাকে দেখতে?
‘ইরহা কল করলো, সাথে সাথে রিসিভ।
ওপাশ থেকে বলল, আমি জানতাম তুমি আমাকে কল করবে, অবাক হচ্ছো আমি কিভাবে বুঝে গেলাম!
‘লাশটা যখন পাওয়া গেছে তখনই বুঝে গেছি। আমি নিজেকে নিজেই শেষ করে দেবো। কোন পুলিশ আমাকে শাস্তি দিতে পারবে না। তোমার ফোনের অপেক্ষা ছিলাম। আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারিনি,সম্মান করতে পারিনি, আমি ছিলাম পঁচা শামুক। তাই আমাকে আর কখনো মনে করবে না জানি। তবুও বলবো পারলে ক্ষমা করে দিও।আর একটা অনুরোধ আমার মৃত্যুর পর কোনদিন আমার মেয়ের কাছে আমার সত্যিটা বলবে না। আমি চাইনা আমার মেয়ে জানুক তার জন্মদাতা পিতা কতটা জঘন্য ছিলো। এই ইরহা এই কথাটা রাখবে তো?
‘হ্যা রাখবো তবে শর্ত আছে। বাকি কথা বলার আগেই,
‘ওপাশ থেকে বিকট একটা শব্দ হলো।
‘ওখানকার পুলিশ পৌছনোর আগেই রবিন নিজেই নিজের গলায় ধারালো ছু’ড়ির আঘাতে খণ্ডিত করে দিয়েছে।

‘ইরহা হ্যালো হ্যালো করছে,কিন্তু আর কোন শব্দ আসলো না গোঙানির শব্দ ছাড়া।
‘ওখানের পুলিশ জানালো,স্পট ডেথ।
‘ইরহা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। কখনো এটা চায়নি এমন নির্মম পরিণতি। কিন্তু কথায় আছে পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না।প্রথমে মানুষ একটা ভুল করে আস্তে আস্তে ভুলের পাহাড় গড়ে তোলে, একটা সময় ঠিক ভুলের মধ্যে পার্থক্য ভুলে যায়। তারপর পরিণতি হয় ভয়াবহ।

পুলিশ চলে গেলে, ফরিদা বেগম বলে,ছেলটা একটা ভুল শুধরাতে আরো কতগুলো ভুল করলো৷
‘নাদিম বলে বাদ দাও তো মা’কথায় আছে যেমন কর্ম তেমন ফল।ও নিজে না মরলে জেলখানায় ধুঁকে ধুঁকে মরতো।
‘নিশাত ইরহার কাঁধে হাত রেখে বলে,যা হয় ভালোর জন্যই হয়।
‘ইরহা কিছু না বলে সবার মধ্য থেকে উঠে চলে আসলো। আসলে ইরহা শকড,পরশু যে মানুষটাকে একদম সুস্থ সবল দেখলো সেই মানুষটা আর নেই!ইরহার রাগ, ক্ষোভ সব আছে তাই বলে, এভাবে তার অধ্যায় শেষ হয়ে যাবে? ওয়াশরুমে এসে নিজের চোখে মুখে পানি দিলো।আয়নায় তাকিয়ে বলে,জীবনটা অন্যরকম হতে পারতো!তবে জীবনতো আর উপন্যাসের পাতা বা সিনেমার স্ক্রিপ্ট নয়! যে সবকিছু সাজানো গোছানো থাকবে।

✨ এভাবে কেটে গেলো বেশ কয়েকমাস। এই কয়েকমাসে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। নওশাবাও বড় হয়েছে কিছুটা এখন হাঁটতে শিখেছে আধো আধো বুলি আওড়াতে শিখেছে।সবার জীবন বেশ স্বাভাবিক।
লাবিবা আর রাতুলের এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে।
নিশাত প্রেগন্যান্ট। সব মিলিয়ে ওদের জীবনটা ভালোই চলছে।

ইরহা একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে, তার মুখোমুখি বসে আছে জারিফ। ইরহাই আগে কথা শুরু করে, আমি আগেই জানতাম আপনার মাথায় সমস্যা আছে। আর এখন এতে কোন সন্দেহ নেই। আপনি যা চান তা কখনো হবে না৷ কাউকে আবার ভালোবাসা, আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখা এসব আর সম্ভব না। আমি ক্লান্ত তাই প্লিজ আপনি বাসায় মানা করে দিন।
‘জারিফ কোল্ড কফিতে চুমুক দিয়ে বলে,আমি কি বলেছি, আমাকে ভালোবাসতে? নাকি বলেছি স্বপ্ন দেখতে? আমি শুধু আপনার আর প্রিন্সেসের দ্বায়িত্ব নিতে চাই।

#চলবে

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-২৮

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৮

লামা কোনমতে বলে,রবিন তুমি কি করছো!
‘তোমাকে শেষবারের মত ভালোবাসা দিচ্ছি জান। একটু কষ্ট হবে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
‘প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও আর কিছু বলার আগেই পরপর কয়েকটা আঘাত করলো ধারালো যন্ত্রটা দিয়ে। শেষবারের মত লামার হৃদয়বিদারক চিৎকার ভেসে আসলো। সেই চিৎকারে মিশে ছিলো বেঁচে থাকার আকুতি আর নিজের ভুলের দীর্ঘ শ্বাস।
চাঁদের আলো যেনো আরো বেড়ে গেছে সাদা বালিতে টকটকে লাল রক্ত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রবিনের সামনেই পরে আছে লামার নিথর দেহ।চোখ দুটো খোলা মনে হচ্ছে এখনো চোখে লেগে আছে, রবিন আমাকে বাঁচতে দাও। রবিন লামার চোখের দিকে তাকিয়ে ছু’ড়িটা নিয়ে পরপর দুইবার দু’চোখে আঘাত করলো। লামার লাশের পাশে বসেই পাগলের মত হাসছে আর বলছে,তোকে আমি হয়তো ক্ষমা করতাম, যদি তুই শুধু আমার জীবন নষ্ট করতি, কিন্তু তুইতো ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পরছিলি! কত ছেলে লাগে তোর তুই কিভাবে আমার বন্ধু থেকে শুরু করে আমার পার্টনারদের সাথে ও বলেই এক দলা থুথু লামার গায়ে নিক্ষেপ করলো৷ তোর আরো ভয়াবহ মৃত্যু দরকার ছিলো, তুই কি ভেবেছিলি এতো কিছুর পরেও তোকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দেবো!তোকে এবার সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দেবো কেউ জানবে না তুই বেঁচে আছিস নাকি মরে গেছিস। রবিন লামার লাশটা টেনে সমুদ্রের পানিতে ভাসিয়ে দিলো। ঢেউয়ের সাথে সাথে লাশটা রবিনের দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলো। এই ঝাউ বন আর সুনসান নীরবতা কেমন গা ছমছমে পরিবেশ এবার রবিনের ভয় লাগতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণ পরপর ঝাউ গাছের শো শো বাতাসের শব্দ আর সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ যেনো আরো ভূতুড়ে করে তুলেছে পরিবেশ। সমুদ্র থেকে হাতে কিছুটা পানি নিয়ে নিজের চোখেমুখে ছিটা দিলো। সামনে ফিরতেই মনে হলো লামা ওইভাবে শুয়ে তাকিয়ে আছে রবিনের দিকে।


লামার মা রাবেয়া বেগম হুট করে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন চিৎকার করে বলেন,লামা।
লিজার ও ঘুম ভেঙ্গে গেলো তার মায়ের চিৎকার শুনে। উঠে বলে,কি হয়েছে মা’তোমার কি শরীর খারাপ?
‘লিজা তুই লামাকে একটা কল দে তো, আমার মন কেমন কু’ ডাকছে।
‘মা তুমি তোমার ওই মেয়ের খোঁজ নিতে বলছো!যে নিজের সম্মান বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে।
‘তুই বুঝবি না, নয় মাস এই শরীরে রেখে দুনিয়ায় আনছি, যতই ভুল করুক, খু’নি হোক বা পতিতা জন্ম তো আমিই দিয়েছি তাই আমার মন তো পুড়বেই। একটা কল কর আর কখনো বলবো না।
‘লিজা বিরক্ত হলেও নিজের মায়ের আকুতি দেখে কল করলো। রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না।
কয়েকবার কল করার পর লিজা বলে,মা মনে হয় ঘুমাচ্ছে সকালে আমি কথা বলিয়ে দেবো। এখন তুমি শান্ত হও। রাতের ন’টা বাজে আমাকে কল করেছিল, তখন কথা হয়েছে এতো চিন্তা করার কিছু হয়নি।
‘তুই যাই বলিস আমার মনটা কেমন যেনো করছে।
‘সারাদিন টেনশন করো তাই এমন লাগছে।
‘তুই ঘুমা আমি নামাজ পড়বো।
‘এখন কিসের নামাহ পড়বা! মাত্র তিনটা বাজে।
‘তাহাজ্জুদ পরবো তুই ঘুমা৷

✨রাতুল লাবিবার সাথে দীর্ঘ সময় কথা বললো,শেষে একটা ছোট কথায় ঝগড়া বেঁধে গেলো।
লাবিবা, আচ্ছা বলতো আমাকে কোন রঙে বেশি মানাবে?
‘তুমি যেটা পরবে সেটাই মানাবে।
‘যদি টিয়া কালার পরি কেমন লাগবে?
‘সো বিউটিফুল লাগবে জান।
‘চুপ থাক তুই। আমি আগেই বুঝেছি তুই আমাকে ভালোবাসিস না।
‘কি আজাইরা কথা বলো জান!
‘এখন আমি আজাইরা কথা বলি! এখন আমার কথা তো ভালো লাগবেই না।
‘এসব কি বলছো আমি কখন বললাম।
‘এটাই তো সমস্যা তুই তো কিছুই বলিস না।
‘পাগলের মত বিহেভিয়ার কেন করছো?এরজন্য বাচ্চা মেয়েদের সাথে প্রেম করতে হয় না, নিব্বিদের মত আচরণ করে।
‘এখন আমি পাগল, নিব্বি আর কি বাকি আছে।
‘এখন এই মূহুর্তে ব্রেকআপ যা বুড়ি খুঁজে প্রেম কর।
‘জাননন এমন করছো কেন? আমি কি এমন বলছি।
‘না না আপনি তো কিছু বলতেই পারেননা সব বলছি আমি সব দোষ আমার আমি নিব্বি আমার সাথে কিসের কথা জনাব বুইড়া খাটাশ।
‘কি সব বলছো এসব! জান আমার ভুল হয়েছে এবারের মত ক্ষমা করে দাও। (মনে মনে রাতুল ভাবছে কোন ভুলের জন্য সরি বলছি সেটাই বুঝতে পারছি না। আসলে মেয়েদের মুড যে কখন পূর্নিমা আর কখন আমাবস্যা সেটা এজন্মে কোন পুরুষের মনে হয় না বোধগম্য হবে!
‘সরি বললেও কাজ হবে না।
‘জান সরি, জান লাভ ইউ,সাথে অনেকগুলো কিস ইমোজি। জানননন….
‘একদম গলানোর চেষ্টা করবে না, আমি আজ গলবো না।
‘আরো অনেকগুলো কিস ইমোজি দিয়ে বলে,জাননন সরি।
‘আচ্ছা যাও এবারের মত মাফ আর যদি এমন ভুল হয় তো খবর আছে।
‘রাতুল মনে মনে বলে এযাত্রায় বেঁচে গেলাম।আচ্ছা জান শুভরাত্রি।

✨সকালের মিঠা রোদ জানালার পর্দা ভেদ করে,ইরহার চোখেমুখে খেলা করছে। মিটিমিটি করে চোখ খুলে নিজের পাশে নওশাবাকে দেখেই ইরহার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। আলতো করে নওশাবার কপালে চুমু খেয়ে বেড ছাড়লো।
ফ্রেশ হয়ে প্রতিদিনের মত কিচেনে যেয়ে তো আবাক! লাবিবা নাস্তা বানানোর চেষ্টা করছে,পুরো রান্না ঘরে আটা ছড়িয়ে আছে। আটায় পানি বেশি দেয়াতে হাতে লেগে আছে। যাতা অবস্থা লাবিবার।
ইরহা খিলখিল করে হেসে বলে,কি করে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিস! সামান্য রুটি বানাতেই নিজের নাজেহাল অবস্থা বাকি সব কি করে করবি?
‘আপু শিখিয়ে দাওনা। ওদের বাসায় কোন মেয়ে নেই, সব সময় সার্ভেন্ট হাতের রান্না খায় আর নয়তো হোটেল থেকে কিনিয়ে আনে।
‘এহহ আমার বুড়ি আচ্ছা দূরে সরে দাঁড়া আমি কিভাবে করি দেখ।
‘নাহহহ তুমি বলো,আমি করি।
‘এগুলো সাইডে রাখ,এবার একটা পাতিলে পানি বসা৷
ইরহা বলে দিলো আর লাবিবা নিজ হাতে সবটা করলো,নাস্তা বানানো শেষ করে একটা টিফিন বক্সে কিছুটা তুলে রাখলো।
‘সবাই নাস্তার টেবিলে নাস্তা করতে বসেছে,ইরহা বলে ভাইয়া আজকের নাস্তা কিন্তু আমাদের লাবু বানিয়েছে,পরোটা,ভাজি, অমলেট,সুজির হালুয়া, চা।
‘সত্যি এসব লাবিবা বানিয়েছে?
‘হুম সত্যি।
‘লাবু এদিকে আয়।
‘লাবু ধীর পায়ে নাদিমের সামনে যেয়ে দাঁড়ালো, নাদিম নিজের পকেট থেকে চারখানা কচকচে পাঁচশো টাকার নোট বের করে লাবিবার হাতে দিয়ে বলে,এটা তোর বখশিশ।
‘ইরহার চোখ ভরে উঠলো,তার বাবাও তাকে এভাবে বকশিস দিয়ে বলেছিল,মেয়েরা যত ভালো পড়ালেখা জানুক সাথে কিন্তু ভালো রান্নাও জানতে হয়। যে মেয়ের রান্নায় যত জাদু সে মেয়ে সংসারে সবার তত প্রিয়।
‘নাদিম বুঝতে পরে বলে,আমাদের ইরহাকে এই বকশিস বাবা, দিয়েছিলো আর বাবার অনুপস্থিতিতে তোকে আমি দিচ্ছি। আমরা তিন ভাই বোন একসাথে থাকলে কোন দুঃখ আমাদের স্পর্শ করতে পারেনা।
‘নিশাত নওশাবাকে কোলে নিয়ে এসে বলে,মামুনি তুই আর আমি হলাম এবাসার পর আমাদের আমরা আছি চিন্তা করিস না।
‘ফরিদা বেগম নিশাতকে জড়িয়ে ধরে, তোমরা ছাড়া তো আমরা সবাই অসম্পূর্ণ তোমাদের নিয়েই আমরা পূর্ণ।
‘ইরহা বলে,এবার কি সবাই কথাই বলবে নাকি খেয়ে বলবে কেমন হয়েছে আমাদের পিচ্চির রান্না?
এতো সুন্দর মূহুর্তে হঠাৎ করে থমথমে হয়ে গেলো।
সবার মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠলো। সামনে তিনজন পুলিশ বসে আছে। কারো মুখে তোন কথা নেই!

#চলবে

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-২৭

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব_২৭

জারিফ একটার পর একটা মিষ্টি খাচ্ছে পরপর চারটা মিষ্টি খেয়ে থামলো।
‘ইরহা হেসে বলে,বেশ দারুণ খেতে কিন্তু লাল মরিচ দিয়ে শুটকি ভর্তাটা।
‘এতো ঝাল আগে বলবেন তো?
‘আমি কি করে বুঝবো যে খেতে বসেছে সে কচি খোকা এইটুকু ঝাল সহ্য করতে পারবে না!
‘দেখুন আমি আপনার চেয়ে সিনিয়র তাই রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলুন।
‘আসসালামু আলাইকুম ডিয়ার সিনিয়র আমি কি করে জানবো আপনি কচি খোকা ঝাল খেতে পারেননা।
‘আপনি মজা নিচ্ছেন?
‘মজা সেটা আবার কি ভাবে নেয়?
নিশাত জারিফের সামনে এক বাটি পায়েস বাড়িয়ে দিয়ে বলে,ভাইয়া ঠান্ডা ঠান্ডা পায়েস খান ভালো লাগবে।
‘ভাবি আপনি অনেক সুইট।কিন্তু আপনার ননদ।
‘তা বিয়ে করবে আপনার ভাই ভাবিকে তেল দিলি দিবে রাতুল আপনি কেন দিচ্ছেন?
‘তো আমি কি বিয়ে করবো না?
‘সেটা আপনি জানেন তবে এবাড়িতে বিয়ের চান্স একটাই।
‘জারিফ পায়েস শেষ করে বাটি রেখে বলে,আজকে তাহলে উঠি ভাবি অন্য আরেকদিন আসবো।
‘আচ্ছা ভাইয়া নিজের বাসা মনে করবেন৷ যখন ইচ্ছে চলে আসবেন।
‘জারিফ চলে যেতে নিশাত বলে,ছেলেটা কি দারুণ আমার বোন থাকলে বোন জামাই বানাতাম।
‘ভাবি এরচেয়ে রাতুল বেশি দারুণ।
‘আচ্ছা চলো বারান্দায় আমি চা নিয়ে আসছি দুই ননদ ভাবী মিলে আড্ডা দিবো আজ।
‘ইরহা নিশাতের হাতটা ধরে বলে,ভাবি সব ঠিক থাকলে আমার জীবনটা অন্যরকম হতো তাই না?
‘যা হয় ভালোর জন্যই হয়। হুম এই ভালো হতে, হতে অনেকটা খারাপ সময় হয়তো পার করতে হয় কিন্তু শেষটা সুন্দর হবে দেখো। দেখো রবিনের মত একটা মানুষ থেকে মুক্তি পেয়েছো সেটা হলো ভালো দিক। আবার যে সংসার আর মানুষটাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনেছিলে সেটা ভেঙে গেলো সেটা খারাপ দিক। তবে এমন মানুষ যার চরিত্রে সমস্যা আছে তার সাথে সারাজীবন কাটানোর চেয়ে একা কাটানো ভালো।
‘আমি তো এমন একটা জীবন চাইনি! আমার সামান্য একটু চাওয়া ছিলো,মনের মত একজন জীবন সঙ্গী যার সাথে সুখে,দুঃখে হাত হাত রেখে কাটিয়ে দেবো। এই সামান্য চাওয়াটা অপূর্ণ রয়ে গেলো!
‘কিছু স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া ভালো। দেখবে বাস্তবে এমন কিছু হয়তো তোমার জন্য অপেক্ষা করছে যে ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নের চেয়ে হাজার গুন ভালো। তুমি যাও আমি চা নিয়ে আসছি।

ইরাহা নওশাবাকে কোলে নিয়ে বারান্দায় চেয়ারে যেয়ে বসলো। নওশাবার দিকে তাকিয়ে বলে,আমার মিষ্টি মা’তোর কোন চিন্তে নেই তোর আম্মু তোর বাবা,মা দু’টোই জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি তোকে আগলে রাখবো।তোর মা’ আছে মানে তোর সব আছে। অতীতের কোন কালো ছায়া তোক স্পর্শ করতে পারবে না।

লবিবা এসে বলে,এই আপু তোরা কি সত্যি আমার বিয়ে পাকা করছিস?
‘নাহহহ তোর বিয়ে টাইলস করেছি। পাকা তো সস্তা তাই ভাবলাম দামি টাইলস করি।
‘মজা নিচ্ছিস?
‘কই মজা এনেছিস দে খাই।
‘দূর ভাল্লাগে না। বলনা সত্যি টা কি।
‘এখনো তোর বিয়ে পাকা, টাইলস বা মোজাইক কোনটাই করা হয়নি তবে কথাবার্তা চলছে।
‘তোমার পছন্দ হয়েছে রাতুল কে?
‘এই তোর লজ্জা শরম নাই নাকি রে? বড় বোনের কাছে নিজের জামাইয়ের প্রসংশা শুনতে চাইছিস।
‘আরেহহহ প্রসংশা করার মত কিছু আছে নাকি ওর আস্ত এলোভেরার জুস কোন রস কষ নেই।
‘লাবু তোর রস কষ খুঁজতে হবে না যেয়ে পড়তে বস।
‘শোননা আমাদের ক্লাসের ওশমির কথা মনে আছে?
‘মনে থাকবে না কেন? তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ওশমি।
‘ভাবছি জারিফ ভাইয়ার সাথে ওর সেটিং করিয়ে দেবো।তারপর দুই ফ্রেন্ডের একি শ্বশুর বাড়ি আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।
‘তোর মাথা ঠিক আছে! ওনার বয়স আর ওশমির বয়সে তফাৎ কত!
‘এ কোন ব্যাপার নাকি আমাদের ক্লাসের রিতুর বড় তো টাকলা আবার বয়সও কত বেশি রিতুর বার্থডে শাল আর ওর বরের এসএসসি সাল। চাকরি আর টাকা থাকলে বয়স কোন ব্যাপার না। আর জারিফ ভাইয়া তো রাতুলে চেয়ে হ্যান্ডসাম।
‘তুই নিজের চিন্তা কর,সর যা পড়তে বস।

✨জারিফ বাসায় আসতেই রাতুল বলে,ভাইয়া আমি অফিসে গেলাম তুমি কোথায় ছিলে?
‘আমার শ্বশুর বাড়ি। শ্বশুর বাড়ির মানুষ সবাই এতো ভালো কিন্তু বউটা জুটেছে শেওরা গাছের পেত্নী।
‘ভাইয়া তুমি কিভাবে তোমার একমাত্র ভাইটাকে ছাড়া বিয়ে করতে পারলে? আমি তোমার কাছে এতোটাই পর হয়ে গেলাম।
‘কি মেয়েদের মত প্যানপ্যান করছিস। বিয়ে করলাম কবে? তবে আমার ভাগ্য আছে বল বউয়ের সাথে একটা বাচ্চা ও পাবো৷
‘আমার ভাতিজিও আছে! আর তুমি আমার থেকে তাকে লুকিয়ে রেখেছো।
‘চুপ কর আমার বিয়ে এখনো হয়নি যখন হবে তখন।
‘তাহলে?
‘তাহলে তোর ভাবিকে পটাতে হবে জানি কাজটা সহজ না কিন্তু ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করকে হবে।
‘ভাইয়া বুঝিয়ে বলো।
‘মনে কর তোর ভবিষ্যত শ্বশুর বাড়ি আমারও শ্বশুর বাড়ি।
‘মানে তুমি ইরহা আপুকে বিয়ে করতে চাইছো?
‘হুম সেই কবে থেকেই।
‘কিন্তু আপুতো রাজি হবে না মনে হয়৷
‘জারিফ বলে,আমি পাথরে ফুল ফোটাবো শুধু ভালোবাসা দিয়ে।
‘পাথরে ফুল ফোটে না আর আপুও রাজি হবে না।
‘শোন সিরিয়াস কথা বলি,আমি ইরহার অতীত সম্পর্কে ভালোমত খোঁজ নিয়েছি। মেয়েটা সত্যি অনেক ভালো একদম আমার মনের মত ঠিক যেমন মেয়ে আমি চাইতাম। তবে ওর সাথে যা হয়েছে তাতে ওরতো কোন দোষ নেই! তাই ওর জীবনে ঝড় এসে যেভাবে ওর জীবন অগোছালো করে দিয়ে গেছে, আমি ঠিক তারচেয়ে দ্বিগুণ যত্নে সেটা গুছিয়ে দেবো। ভালোবাসা দিয়ে,সম্মান দিয়ে,যত্ন দিয়ে আর নিজের সবটা দিয়ে আগলে রেখে।

✨আজ অন্তরার বার্থডে ছিলো সব ঠিকঠাক চলছে, কিন্তু অন্তরা আহনাফকে খেয়াল করেছে, আহনাফের চেহার উদাসীনতা অন্তরার দৃষ্টির আড়াল হয়নি৷ রাত প্রায় বারোটা বাজে আহনাফ বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে আছে চোখ বন্ধ করে৷
অন্তরা বাচ্চাদের ঘুম পারিয়ে রেখে আহনাফের তাচে এসে বসলো,আহনাফের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,তোমার যদি ইরহাতে শান্তি মিলে, তবে তুমি তার কাছে ফিরতে পারো আমি তোমাকে আটকাবো না। জানো তোমাকে নিজের দিকে আকর্ষিত করার চেষ্টা করতে করতে দু’বাচ্চার মা হয়ে গেছি তবুও তোমার মন পেলাম না। তুমি প্রথমবার আমার সাথে মিলিত হওয়ার পর বলেছিলে,এটা শুধু শারীরিক চাহিদা। আমি তোমার শারীরিক চাহিদা পূরণ করতে পারলেও মানুষিক চাহিদা কখনো পূরণ করতে পারবো না। শরীর ছোঁয়া সহজ মন ছোঁয়া সহজ না।আমার মন একজন ছুঁয়ে গেছে আর সেই আমার মন জুড়ে আছে কখন এই মন আর কেউ স্পর্শ করতে পারবে না।
‘এরপরেও তোমার সাথে এতোগুলা বছর থেকে তোমার মনে জায়গা তৈরি করার বৃথা চেষ্টা করে গেলাম। তাই আজ তোমাকে মুক্তি দিলাম।
‘আহনাফ অন্তরার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কোলে বসালো। অন্তারা ঘাড়ে মুখ গুঁজে বলে,
‘তুমি কি ইরহা নামের মানবিকে চেনো?সে আমার দিকে দ্বিতীয় বার ফিরেও তাকাবে না৷ তুমি জানো ও এমন একটা মেয়ে না চাইলেও ওর প্রতি ভালোলাগা এসে পরে। যে মেয়েটা নিজের আগে সবার ভালো চিন্তা করে সে কেমন মনের বুঝতে পারছো। শুনো আজ ও না জেনে আমার অফিসে জয়েন হয়েছিল, কিন্তু যখন আমি বস এটা জানতে পারলো সাথে সাথে চলে গেছে। আমি বাঁধা দিতে চাইলে বলল,আমি যেমন একটা মেয়ে হয়ে কখনো মেনে নিবো না আমার হ্যাসবেন্ডের অফিসে তার এক্স জব করুক ঠিক আপনার ওয়াইফ ও মানবে না।আপনার পরিবার আছে সন্তান আছে তাদের নিয়ে ভালো থাকুন।
আমি জানি এসব কথা তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে তবুও বলছি কারন তুমি বললে তার কাছে ফিরে যেতে। ফেরার রাস্তা থাকলে হয়তো ফিরতাম। তবে তোমার মায়া আমাকে বেঁধে রাখতো। এটা যেমন ঠিক তুমি ইরহার জায়গা নিতে পারোনি। তবে এটাও ঠিক তুমি নিজেই একটা জায়গা তৈরি করেছো। একজন ছেড়ে গেছে ভালো মত বেঁচে আছি। হয়তো কোন বিষন্ন বেলা তার কথা ভেবে মন খারাপ হয়। কিন্তু তুমি ছেড়ে গেলে আর বেঁচে থাকা হবে ভালো থাকা তোমার সাথে চলে যাবে আর জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত বিষন্নতায় ছেঁয়ে যাবে।
‘অন্তরা নিজের ঘাড়ে আহনাফের অশ্রু অনুভব করছে। পুরুষের চোখের পানি সহজে আসে না, তারা কঠিন মূহুর্ত হেসে পার করে। কিন্তু যদি কোন নারী তাদের অশ্রু দেখে তবে তারা মমের চেয়ে দ্রুত গলে যায়।

✨রবিন লামার ঠোঁট ছেড়ে ঘাড়ে স্পর্শ করলো, আস্তে আস্তে স্পর্শ গভীর হচ্ছে। রাতের নিরবতা সাথে দু’জন মানব মানবির শ্বাসের উর্ধ্ব গতির শব্দ।
লামা হারিয়ে যাচ্ছিলো রবিনের ভালোবাসয় ঠিক সেই মূহুর্তে হঠাৎ লামা চিৎকার দিয়ে উঠলো। তার চিৎকারের শব্দ ঢেউয়ের মত তার কানে এসে বাড়ি খেলো ।

#চলবে

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-২৫+২৬

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৫

রবিন এমন ভাবে লামার মুখ চে’পে ধরেছে যে র’ক্ত বের হতে লাগলো৷
লামা মুখ দিয়ে কোন কথা বের করতে পারছে না ব্যাথায় চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরতে লাগলো৷
এমন সময় রবিনের ফোনটা বেজে উঠলো, রবিনের ফোনের রিংটোনের আওয়াজ কানে যেতে রবিন লামার মুখ থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো। বেড সাইড টেবিল থেকে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে বোন দিয়ে সেভ করা নাম্বার থেকে কল৷ রবিন মোবাইল সাইলেন্ট করে রেখে বিছানায় বসলো৷ কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে আসে লামার কাছে৷ লামার গালে চুমু দিয়ে বলে, জান তোমাকে কতবার বলেছি আমার সামনে ওই মেয়ের নাম মুখে আনবা না৷ তবুও কেন আনো। টিস্যু দিয়ে র’ক্ত মুছিয়ে দিয়ে বলে,আমি আইসক্রিম আনিয়ে দিচ্ছি তোমার ভালো লাগবে।
‘লামার ভেতরে কেমন অজানা একটা ভয় ঢুকলো। আজানা ভয় হুট করে লামার অন্তরটাকে আবৃত্ত করে নিলো। রবিন বাহিরে চলে যেতেই লামা নিজের ফোন থেকে নিজের ছোট বোনকে কল করলো, লিজা প্রথমে কল রিসিভ করলো না। কয়েকবার কল দেয়ার পর রিসিভ করে বলে,তোমার জীবন তো শেষ করেছো এখন আমাদের জীবন কেন নষ্ট করতে চাইছো? নিজের মত থাকো আমাদের সাথে কোন রকম যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না।
লামা কান্নাভেজা কন্ঠে বলল,লিজা একবার আমার কথাটা শুনবি?
‘আর কি বলার আছে তোমার?তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতোক্ষণ ঝুলে পরতো। তুমি দেখে বেঁচে আছো।
‘লামা আর কিছু না বলে,কল কেটে দিলো।পৃথিবীতে যত আপন আর নিজের মানুষ ই থাকুক না কেন,কারো পাপের ভাড় কেউ নেয়না। বরং সবাই নিজেকে সরিয়ে নেয়। লামার ইচ্ছে করছে কাউকে কিছু বলতে কিন্তু তার কথা শোনার মত আজ কেউ নেই। কত পুরুষকে নিজের রুপের জাদুতে তৃপ্তি দিয়েছে আর আজ তার রুপই তার জন্য কাল হলো।


কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে এক্সারসাইজ করতে বের হয়েছিল জারিফ৷ পাশের পার্কে অনেক সময় এক্সারসাইজ করে একটা ওয়াটার পট থেকে নিজের চোখে মুখে পানি দিয়ে নিজে কিছুটা পানি পান করলো। পার্কের একটা বেঞ্চে বসতেই খেয়াল করলো, একজন বয়স্ক লোক মন মরা হয়ে বসে আছে।
জারিফ একটু সামনে এগিয়ে বলে,আঙ্কেল কিছু নিয়ে চিন্তিত?
‘কি বলবে রে বাবা, আমার তিনটা ছেলে সব চাকরির জিবি। তোমার আন্টিও নাই সে আমাকে একা রেখে অনেক আগেই চলে গেছে। এখন কোন ছেলের বাসায় আমার ঠাই নাই। এবাসায় গেলে ওরা বলে,আমাদের বাসায় সমস্যা হয়। ও বাসায় গেলে বলে,সব সময় কি এক ছেলের ঘাড়েই বসে খাবেন! আর ছোট ছেলের বউ বলে,আমি একটা পুরুষ মানুষের সাথে একি বাসা শেয়ার করতে পারবোনা।
নিজের ছেলেদের কাছে বোঝা এখন আমি। অথচ আমি দিনরাত কত পরিশ্রম করে এদের মানুষ করেছি। সারাদিন অফিস করতাম রাতে পাইকারি ফলের ব্যাবসা করতাম। নিজে কোনদিন ভালো একটা শার্ট কিনে পরি নাই।অথচ ছেলেদের কোন শখ অপূর্ণ রাখি নাই। এহন মনচায় না কোন ছেলের বাসায় যাই। তিন বেলার দুই বেলা খাই।সেই খাবারও যদি চোখমুখ কালা কইরা দেয়। তহন আর গলা দিয়া নামে না। এই বয়সে কই যামু কি করবো!
‘আঙ্কেল কিছু মনে না করলে আমাদের বাসায় যাবেন? আমার বাবা,মা কেউ নেই। আমরা দুই ভাই আমাদের সাথে থাকবেন?
‘না,বাবা আজকে একলা আছো তাই নিতে চাইছো, কাল যখন বিয়েশাদি করবা, তোমাগো বউদের কষ্ট হয়ে যাবে।দেখি এই ঠেলাঠেলি করতে করতে কয়দিন বাঁচি।ছোট পোলার বউ যেখানে বলে, একটা পুরুষ মানুষের সাথে কিভাবে থাকবে,তারপর আর বেঁচে থাকা না থাকা সমান। আমার ছেলের বউ মানে আমার মেয়ে। বাপেরে কেউ এমন কথা বলতে পারে?
‘আঙ্কেল চলুন আমার সাথে। দেখা যাক কি হয়।

✨ইরহা নাস্তা বানিয়ে,নাওশাবাকে খাবার খাইয়ে,নিজে রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো।অফিস ঢুকতেই প্রথমে বিথীর সাথে দেখা। বিথী বলে আজ অফিস হাফ ডে হবে।
‘কেন?
‘আজ স্যারের ওয়াইফের বার্থডে তাই দুপুরের পর ছুটি আর সন্ধ্যা গেটটুগেদারের আয়োজন করেছে। আমি তো সন্ধ্যায় আসতে পারবো না৷ আমার ছোট মেয়ে আছে৷
‘তুমি বিবাহিতা?
‘নাহহ ডিভোর্সি।
‘ওহহহ, বর্তমানে ডিভোর্স এতো বেড়েছে!সে-সব ছাড়ো তোমাকে দেখলে কিন্তু বোঝা যায় না।
‘চলো কাজে মনোযোগ দেই।

ইরহা কাজ করছিলো, এমন সময় সবাই গুড মর্নিং স্যার বলে, দাঁড়িয়ে গেলো। ইরহাও দাঁড়ালো কিন্তু সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। আহনাফ নিজেও অপ্রস্তুত হয়ে পরেছে, অবাক দৃষ্টিতে ইরহার দিকে তাকিয়ে আছে। অফিসে নতুন একজন জয়েন হয়েছে সেটার খবর ছিলো কিন্তু সেি একজন যে ইরহা সেটা কল্পনাও করেনি।

আহনাফ দ্রুত নিজের কেবিনে যেয়ে ল্যান্ড লাইনে কল করে, ইরহাকে নিজের কেবিনে ডেকে পাঠালো৷

ইরহা ভেতরে ঢুকতেই আহনাফ বলে,সত্যি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না,তুমি আমার অফিসে!
‘যদি জানতাম এটার ওনার আপনি তাহলে হয়তো আসতাম না।
‘এভাবে কেন বলছো! পার্সোনাল আর প্রফেশনাল লাইফ ভিন্ন।এখানে এসব মিক্সড করার দরকার নেই৷
‘আমি জলন্ত অগ্নি শিখাকেও বিশ্বাস করবো তবুও কোন পুরুষের প্রতি আমার বিশ্বাস আসবে না৷ হ্যা আমি এটাও মানি সব পুরুষ খারাপ না। কিন্তু আবার এটাও জানি যে দু’দিন আগেও বলেছে তোমাকে এখনো ভুলতে পারিনি, তার আশেপাশে থাকতে আমার অস্বস্তি হবে।তাই আগামীকাল পদত্যাগপত্র পেয়ে যাবেন।
‘ইরহা আমি মানছি, এটা আমি এখনো তোমাকে ভুলতে পারিনি, জীবন হয়তো পারবোও না৷ প্রথম ভালোবাসা, প্রথম অনুভূতি কখনো ভুলার মত না। কিন্তু তারমানে এটাও না আমি আমার ওয়াইফকে ভালোবাসি না! আমার বাচ্চা আছে সংসার আছে আর আমার ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট তোমাকে দিতে হবে না। তুমি জানো আমি কেমন?
‘সবটাই জানি, তবে এটাও জানি আমি যেমন মেয়ে হিসেবে কখনো মানতে পারতাম না, আমার হ্যাসবেন্ডের এক্স তার-ই অফিসে জব করে, ঠিক আপনার ওয়াইফও পারবে না এটা স্বাভাবিক ভাবে নিতে। জানেন তো আমরা মেয়েরা নিজের স্বামীর পাশে মাঝে,মাঝে নিজের ছাঁয়াও সহ্য করতে পারি না৷ তাই আমাকে আটকাবেন না আশাকরি।

ইরহা অফিস শেষ করে বের হলো। তখন দুপুর তিনটা বাজে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে বাসের জন্য।
হুট করে ইরহার সামনে একটা গাড়ী থামলো, জারিফ গাড়ি থেকে বের হয়ে বলে ম্যাম কিছু মনে না করলে আমি আপনাকে হেল্প করতে চাই।
‘আমি কি আপনার কাছে কোনরকম হেল্প চেয়েছি?
‘নিজের মানুষের কাছে চাইতে হয়না৷ চেয়ে তো নিবেন অন্যদের থেকে আমি যেহেতু নিজের মানুষ তাই স্ব-ইচ্ছেতে দিতে চাইছি৷
‘দেখুন আপনার কি মনে হয় আমি কোন ষোল, সতেরো বছরের নিব্বি? আমি যথেষ্ট ম্যাচিউর তাই এসব কথা বলে,নিজেকে ব্যাক্তিত্ব হীন করবেন না।
‘আহা বিয়াইন সাহেবা আপনার আমার সম্পর্কই মজার সম্পর্ক।আচ্ছা সরি মজা করার জন্য। চলুন এবার আপনার সাথে কিছু বিষয় নিয়ে কথা আছে৷
‘আপনি সুস্থ কথাও বলতে পারেন?
‘গতকালকের আগে কখনো,অসুস্থ কথা বলেছি এই কথাটা শুনতে হয়নি।
‘ইরহা গাড়ীতে বসলো, পাশের সিটে জারিফ। ড্রাইভার গাড়ী ড্রাইভ করছে।

‘আপনি কি বলতে চাইছিলেন?
‘লাবিবা এতো ছোট, বিয়েটা এখন ঠিক করে রাখি ওর এইচএসসি পর না হয়।
‘হ্যা এটা আমরাও ভেবে রেখেছিলাম।
‘আপনার বেবিটা অনেক কিউট।
‘ধন্যবাদ, কিন্তু আপনি কোন কথার মধ্যে কোন কথা নিয়ে আসছেন!
‘সরি, হুট করে মনে আসলো বেবির কথা, তাই বলে ফেললাম।

#চলবে

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৬

আপনার মন কখন কি বলে, আপনি জানেন-না?
‘আসলে ব্যাচালার মানুষ তো তাই মনের কথা শুনে চলি। বলিয়াছেন কবি, যেদিন বিয়ে হবে মনের কথা সব জলে যাবে, বউয়ের কথাই তোর বটে পরে রবে।
‘তা এই আজাইরা কথা কোন কবি বলেছে?
‘এই যে কবি জারিফ আহসান। ফান করলাম বিয়াইন সাহবে।আচ্ছা আপনার মন খারাপ কেন?
‘আমার মন খারাপ না হয়তো আমার সময়টা খারাপ যাচ্ছে নয়তো আমি সময়ের সাথে তাল মেলাতে পারছি না। যা হচ্ছে তা চাইছি না যা চাইছি তা হচ্ছে না।
‘এটাই তো জীবন৷ দেখুন এখন পর্যন্ত বিয়ে তো দূরে থাক প্রেমও করতে পারলাম না। অথচ বাড়িতে একজন সংসারী বউ দরকার ছিলো৷
‘কেন আপনার বাসায় কোন মেয়ে মানুষ নেই।
‘নাহহ।
‘ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে ফেলুন
‘এতোদিন পর একটা ভালো মেয়ে পেয়েছি কিন্তু সে বিবাহিতা বাচ্চাও আছে তার৷
‘ইরহা হেসে দিয়ে বলে,আপনি আর আপনার জোক্স। এতো মেয়ে থাকতে শেষে বাচ্চার মা’কে পছন্দ হলো!আমি এবার নিশ্চিত আপনার মাথায় সমস্যা আছে।পাবনা চলে যান।
‘আপনি সাথে থাকলে পাবনা কেন,উগান্ডা ও যেতে রাজি।
‘চলুন বাসায় চা খেয়ে খাবেন।
‘না থাক একবার যে চা খাইয়েছেন এরপর আর চা খাওয়ার শখ নেই৷
‘এবার স্পেশাল ক্যারামেল চা খাওয়াব এরপর যতবার আসবেন এই চা’খাওয়ার বায়না ধরবেন৷
‘আপনাকে কি দ্বিতীয় বার বিশ্বাস করা যায়?
‘দ্বিতীয় জিনিসটা কঠিন তবে বিশ্বাস করতে পারেন৷
‘কঠিন কেন?
‘প্রথমবার বিশ্বাস ভঙ্গ হলে সহ্য করে নেয়া যায়। কিন্তু দ্বিতীয়বার বিশ্বাস ভাঙ্গলে বিশ্বাস বলতে কিছু আর জীবনে থাকে না৷
‘সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলে,নওশাবার আম্মু আপনার বয়স কত?
‘ধরে নিন পঁচিশ।
‘আমার আটাশ শেষ হয়ে উনত্রিশ ছুঁইছুঁই।
‘আপনার বয়স আমি জিজ্ঞেস করেছি?
‘নাহহহ জিজ্ঞেস করেননি আমি নিজেই বললাম।
‘আপনি কি জানেন না মেয়েদের বয়স আর ছেলেদের স্যালারি জিজ্ঞেস করতে নেই! আপনার বয়স হয়েছে কিন্তু বুদ্ধি হয়নি। বিয়ে করুন হয়ে যাবে কারণ বউয়ের দেয়া মূল শিক্ষা এখনো বাকি আপনার৷
‘এহহহ এটা এবার কি কথা।
‘আপনার মত ফানি কথা। ইরহা ঘরে ঢুকেই দেখে নওশাবা হামাগুড়ি দিচ্ছে। ইরহা দরজায় দাঁড়িয়ে বলে,আমার আম্মুটা কইরে?

নওশাবা নিজের মায়ের গলার আওয়াজ পেয়ে সেদিকে ছুটতে লাগলো। ইরহা নওশাবাকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলো।

‘ফরিদা বেগম জারিফকে দেখে বলে,বাবা তুমি?
‘জ্বি আন্টি ওইদিনের জাপানি চা খুব টেস্টি ছিলো তাই আবার টেস্ট করতে চলে আসলাম।
‘বসো বাবা৷ দুপুরের খাবার খেয়েছো?
‘নাহহ আন্টি আজ সময় পাইনি৷
যাও টেবিলে বসো তোমাদের দু’জনকে একসাথে খেতে দিচ্ছি।
ফরিদা বেগম ডাকলেন,নিশাত এদিকে এসো তো।
‘জ্বি আম্মা কিছু লাগবে?
‘খাবার গরম করো দেখো কে এসেছে আমি নওশাবাকে রাখছি ইরহাও তো ফ্রেশ হয়ে খেতে বসবে।
‘আচ্ছা আম্মা আপনার চিন্তা করতে হবে না আমি খাবার রেডি করছি৷
নিশাত কিচেনে যাওয়ার সময়, জারিফকে দেখে বলে,আসসালামু আলাইকুম।
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না!
‘আত্মীয় যখন হচ্ছি আস্তে আস্তে চেনা জানা সব হবে। আমি লাবিবার ভাবি৷
‘কেমন আছেন ভাবি?
‘আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
‘আমি আলহামদুলিল্লাহ অলওয়েজ ভালো থাকি।
‘আচ্ছা আপনার ফ্রেশ হওয়ার দরকার পরলে হাতের ডানপাশে গেস্ট রুমে চলে যাবেন।
‘জ্বি ভাবি দরকার হলে অবশ্য যাবো।


রবিন ফিরে আসলো রাত বারোটার পরে, লামা রবিনকে কিছু জিজ্ঞেস করছে না। অজানা ভয় ভেতর থেকে চেপে ধরেছে।
রবিন এসে লামার দিকে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বলে,রেডি হয়ে আসো আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
‘লামা বলে,কি আছে এতে?
‘খুলে দেখো।

লামা প্যাকেটটা খুলে দেখে, একটা হালকা বেবি পিংক কালারের শাড়ী সাথে মেচিং অর্নামেন্টস। লামা বলে,আজকে কি কোন বিশেষ দিন?
‘রেডি হও এখন বিচে যাবো। একদম পরির মত সাজবে।
‘লামা শাড়ী পরে সুন্দর করে সাজলো। বের হওয়ায় আগে একটা মাক্স দিয়ে মুখ ঢাকতে চাইলে, রবিন বলে,এতো সুন্দর রূপবতী বউকে কি ঢেকে রাখবো নাকি! সবাই দেখবে আর জ্বলবে। ইশশশ আমার বউ আগুন সুন্দরী। যে কোন পুরুষের মাথা নষ্ট করে দিতে সক্ষম।
‘মানুষ তো নিজের বউকে লুকিয়ে রাখতে চায়৷
‘রবিন হেসে বলে,তোমার আর লুকোনোর কি আছে বেবি। ওইদিন রুবেল বলল,ভাবিকে এক রাতের জন্য দে যত টাকা লাগে দিবো।
‘রবিন তুমি এসব কি বলছো?
‘যাস্ট ফান বেবি চলো তো। সৌন্দর্য তো প্রদর্শন করার জন্যই। মনে নেই তুমিই তো বলেছিলে আমি তোমাকে শর্ট স্কার্ট পরতে মানা করেছিলাম বলে।
‘আচ্ছা এখন কি কথাই বলবে নাকি বাহির হবে।কিন্তু এতো রাতে আমরা বিচে কেন যাচ্ছি?
‘চাঁদনি রাত মেরি বাহো ম্যা তুম অর ইয়ে ওয়াক্ত।
‘সেটা তো রুমেও হবে।
‘উত্তাল সমুদ্র সাথে মাথা নষ্ট করা রূপবতী বউ এই কম্বিনেশন মিস করতে চাইছি না। চলো তো বাবু।
‘লামার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসলো, বাইকে করে এখন সমুদ্রের তীরে যাবে এতে আনন্দিত হওয়ার কথা হলেও লামার মনে আনন্দ নেই কেমন আজানা ভয় কাজ করছে।মিনিট পনেরো লাগলো সমুদ্রের তীরে আসতে। মেইন পয়েন্ট থেকে বেশ খানিকটা দূরে ঝাউবনের শো শো বাতাস আর সমুদ্রের কলতান ছাড়া কোন আওয়াজ কানে আসছে না। লামার চুল খোলা বাতাসে উড়ছে,পূর্ন চাঁদের আলো অসম্ভব সুন্দর প্রকৃতি হলেও সব মিলিয়ে কেমন ভূতুরে পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।
লামা রবিনের হাত শক্ত করে ধরে আছে। রবিন লামার শাড়ী ভেতর দিয়ে হাত গলিয়ে লামার উন্মুক্ত কোমড়ে হাত রাখলো। রবিনের হাতের শীতল স্পর্শে ঈষৎ কেঁপে উঠলো লামা। লামার মনে ভয় ক্রমশ বেড়েই চলেছে। মনে মনে বলছে, এখানে কোন অশুভ ছায়া নেই তো! অথবা যে নিয়ে এসেছে সে নিজেই এই মূহুর্তে আমার জন্য অশুভ! হুট করে লামা বলল,তোমার মোবাইল কোথায রবিন?
‘জান ডিস্টার্ব করো না-তো উপভোগ করো,আমাদের মিড নাইট রোমান্স। শুনশান নীরবতা সাথে সমুদ্র কলতান, ঝাউ বনের শো শো বাতাস আর আমার মাতাল করা স্পর্শ।
‘আমার কেমন ভয় করছে, এমন মধ্যে রাতে এতো দূরে কেন আসলাম। মেইন পয়েন্টে থাকতে পারতাম।
‘রবিন লামার চুল সরিয়ে লামার ঘাড়ে গভির চুমু দিয়ে বলে,সেখানে সারারাত-ই মানুষ থাকে। এই সাইডে রাতে কেউ আসে না। শুধু তুমি আর আমি আর এই নীরব রাত। লামা আর কিছু বলবে, তার আগেই রবিন লামাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।


রুবি শেফালী বেগমকে বলল,মা আমার মন বলছে তোমার ছেলে বড় রকমের কোন ক্রাইম করবে! মা ও আবার ইরহা ভাবিকে খু’ন করবে না-তো?
‘কি বলছিস অলুক্ষণে কথা! ও কখনো ইরার ক্ষতি করবে না। আমার মন বলছে,ছেলেটা নিজের সাথে কিছু করে বসবে। তুই আবার কল দে আমার মন কু ডাকছে।
‘তোমার ছেলে তোমার নাম্বার আমার নাম্বার ব্লক লিস্টে ফেলে রেখেছে। আর তোমার জামাইয়ের ফোন থেকে কল করাও যাবে না,জানোই তো সে পছন্দ করে না ভাইকে। যদিও পছন্দ না করার অনেক কারণ আছে।
‘শেফালী বেগম নিজের রুমে চলে আসলেন।

✨খেতে বসে জারিফ দেখলো প্রায় খাবারই তার অপছন্দের। যেমন করলা দিয়ে ইলিশ মাছের ঝোল। যদিও তার মায়ের পছন্দের খাবার ছিলো গরমে এটা তাদের বাসায় ও রান্না হতো। চিংড়ি মাছ দিয়ে কচুর লতি চচ্চড়ি। বেগুন ভাজা, ইলিশ ভাজা। লাউ শাক ভাজি,শুটকি ভর্তা। জারিফ তো শুটকির ঘ্রাণ ও সহ্য করতে পারে না। অবশ্য তার খাওয়ার মত,দেশি মুরগীর রেজালা আর ডাল আছে।

‘ইরহা বলল,আপনি এসব খান তো?আসলে আজ সব আমার পছন্দের আইটেম রান্না হয়েছে।
‘এগুলো আপনার পছন্দ?
‘হ্যা ভিষন এই যে শুটকি ভর্তা টা দিয়ে গরম, গরম ভাত মুখে দিন মনে হবে অমৃত।

‘না থাক আমি মুরগী মাংস দিয়ে ট্রাই করি।
‘ইরহা হেসে বলে, সবাই তো আর টেস্ট বুঝে না ব্যাপার না৷
‘জারিফ নিজেই শুটকি ভর্তা নিয়ে বলে,টেস্ট না করলে তো টেস্ট বুঝবো না তাই আজ টেস্ট করবো।ভাবি, সব রকমের আইটেম থেকে একটু, একটু করে দাও তো?
‘নিশাত বেশ অবাক হলো। প্রথমবার কেউ এমন করে!একটু বেশিই মিশুক হয়তো।
‘এদিকে যে আরেকজনকে পিরিতের পেত্নী-তে ধরেছে যার ফলে হুশ ভুলে বেহুশের মত বিহেভিয়ার করছে। তার খবর তো আর নিশাতের কাছে নেই।

#চলবে

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-২৩+২৪

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#-২৩

‘অফিসের প্রথমদিন কেমন আন কম্ফোর্ট ফিল করছে ইরহা৷ আরো দু’টো মেয়ে আছে অফিসে। টুকটাক কাজ করে নিজের জন্য কফি নিয়ে আসলো।
ডেক্সে বসতেই পাশের মেয়েটি বলল,স্যার অনেক রাগী। হয়তো খাবে নয়তো কাজ করবে৷ কিন্তু কাজ আর খাওয়া একসাথে করতে পারবে না৷
‘না, না এখন কিছু খাবো না।
‘তুমি তো কফি খাচ্ছো।
‘এটাতেও সমস্যা!আচ্ছা আর কোন সমস্যা ?
‘সেটা আস্তে আস্তে জেনে যাবে আজ স্যার নেই স্যারের মামা আছে৷
‘ধন্যবাদ
‘ওয়েলকাম। আমার নাম বীথী তোমার নাম কি?
‘ইরহা।
‘আচ্ছা এখন কাজ করি লাঞ্চের সময় কথা হবে।
আরো বেশ কিছুক্ষণ কাজ করে ইরহা ফোন বের করে বাসার নাম্বার ডায়াল করলো। ঠিক তখন বয়স্ক একজন ডেক্সের উপর বাড়ি দিয়ে বলে,’মিস ইরহা আপনি কি জানেননা অফিস টাইমে ফোন ব্যাবহার করা নিষেধ।
‘ইরহা মাথা তুলে তাকিয়ে বলে, আঙ্কেল আপনি?
‘তুমি! যাক ভালো হয়েছে তবে ধন্যবাদ দেবো না৷ ভুল করেছো নিজের ভুল শুধরে নিয়েছো।
‘জ্বি আঙ্কেল।
‘আঙ্কেল বলা যাবেনা। এটা অফিস আর আমি অফিসের সেকেন্ড বস। তাই স্যার বলবে।
‘জ্বি আঙ্কেল সরি স্যার৷
‘কিপ আপ দ্যা গুড ওয়ার্ক
‘ইয়েস আই উইল ট্রাই
মিস্টার সবুজ চলে গেলেন। এই বয়সেও খুব স্মার্ট চলাফেরা আর নিজের সব কাজ পার্ফেক্ট ভাবে করতে পছন্দ করেন সবুজ সাহেব। ওনার সব কিছু পার্ফেক্ট চাই।

রাতুল বসে আছে ড্রয়িং রুমে। নাদিম রাতুলের মুখোমুখি বসে আছে। দু’জনেই চুপ৷

নিরবতা ভেঙে নাদিম বলে, তোমাদের রিলেশন কতদিনের?
‘রাতুল বলে,ছয় মাস এগারোদিন পনেরো ঘন্টা।
‘তা এতো সিরিয়াস রিলেশনশিপ ব্রেকআপ হলো কেন?
‘ভাইয়া সপ্তাহ খানেক আগে, লাবুও মানে লাবিবাই আমার সাথে কোন কারণ ছাড়া ব্রেকআপ করে৷ আমি কারণ জিজ্ঞেস করলেও ওর দিক থেকে তেমন কোন রেসপন্স পাইনি। আমি ওকে স্টিল লাভ করি।
‘স্টিল আর পিতল নাকি তামা এসব আমি বুঝিনা৷ আমি শুধু চাই আমার বোন ভালো থাকুক৷ হোক সেটা তোমার সাথে নয়তো তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে। আজ এখানে কেন এসেছো নিশ্চয়ই লাবুকে দেখতে? তার আগে বলো হুট করে গতকাল রাতে ও এমন একটা ডিসিশন কেন নিলো? তোমাদের সম্পর্ক কতটুকু গভীর চিলো সত্যিটা বলবে এক বিন্দু ও মিথ্যে বলবে না।
‘ভাইয়া আপনি যেরকম ভাবছেন সেরকম কিছুই আমাদের মধ্যে নেই। আগামীকাল আমি লাবুর উপে জেদ করে একজনের সাথে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেই আর আমার মনে হচ্ছে এটাই কারণ।
‘তোমার সাথে ওর শেষ কথা কবে হয়েছে?
‘ব্রেকআপের পরেরদিন। তারপর আর কোন যোগাযোগ ও রাখেনি আমার সাথে।
‘এখন তুমি চা খেয়ে চলে যাও। লাবিবা সুস্থ হবে ওর সাথে কথা বলে আমি তোমাকে ডাকবো।এর আগে কোনরকম যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না।

‘ভাইয়া দূর থেকে একবার দেখবো শুধু।
‘আমি যা বলেছি সেটাই আমার শেষ কথা। আসতে পারো তুমি৷
‘রাতুলের মুখটা ছোট হয়ে গেলো। একবার না দেখে শান্তি পাচ্ছে না। উঠে দাঁড়িয়ে বলল আসি ভাইয়া।
‘এরমধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠলো।

নাদিম যেয়ে দরজা খুলতেই জারিফকে দেখতে পায়। সালাম দিয়ে বলে,আপনি কে? আপনাকে তো চিনলাম না!
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম আমি জারিফ আহসান। রাতুলের বড় ভাই।
‘তা এখানে কি?
‘আপনি একজন ম্যাচিউর পার্সন অবশ্যই ভদ্রতা রক্ষা করবেন।
‘আসুন বসুন।
‘আমি আপনার বোনের জন্য আমার ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গতকাল এসেছিলাম। কিন্তু আপনার বোন যা করলো। থাক সেসব বাদ দিলাম। হঠাৎ করে সকালে এমন খবর শুনে আমি কনফিউজড! আসলে আপনার বোন কি চায় সেটাই সে বুঝতে পারছে না। আমার মনে হয় আপনাদের ওর সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বলা উচিৎ!
‘আচ্ছা ধন্যবাদ আমি কথা বলে আপনাকে জানাবো।
এরমধ্যেই নওশাবার কান্নার আওয়াজ আসলো। নাদিম বলে,নিশাত আমার আম্মাজান কান্না করছে কেন? ওকে আমার কাছে দিয়ে যাও।

‘নিশাত নওশাবাকে দিয়ে গেলো। মামুর কোলে উঠে নওশাবা একদম চুপ হয়ে গেলো৷

‘জারিফ বলে,আপনার বোনের অতিত বর্তমান সবকিছুর দ্বায়িত্ব নিতে রাজি আমরা।
‘অতীত মানেই শেষ তাই অতীতের দায়িত্ব নেই তবে বর্তমানে দায়িত্ব নিতে চাইলে আগে আমি আমার বোনের সাথে কথা বলবো তারপর।

‘তাহলে আজ আসি।
‘বসুন নাস্তা করে যান।
‘কপালে থাকলে কত নাস্তা করতে পারবো আজ ব্যাস্ত।

জারিফ বের হয়ে গাড়িতে এসে বলে,বুঝলাম না এই মেয়ের মধ্যে তুই কি দেখলি?
‘ভাইয়া ভালোবাসা কিছু দেখে হয় না! ইট’স ম্যাজিক একটা অদ্ভুত অনূভুতি যার কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নেই।যাকে ভালোবাসি তার সব কিছুই ভালোবাসি হোক তার একটু আধটু পাগলামি কিংবা ভুলচুক অথবা রাগ, অভিমান। তাকে ভালোবাসি মানে তার পুরো সত্তাটাকেই ভালোবাসি।
‘চুপ কর পুরা মাথা গেছে।এবার দেখ তোর ভালোবাসা রাজি হয় কি না।

‘নাদিম ফরিদা বেগমকে ডেকে বলল, আমার তো ছেলেকে পছন্দ হয়েছে তাহলে সমস্যা কি?
‘কি বলছিস! ইরহা কখনো রাজি হবে না বিয়েতে।
‘কেন রাজি হবে না!
‘জানিনা ছেলের কথাবার্তা আর সব শুনে আমারও পছন্দ হয়েছিল কিন্তু ইরহা বলে এ জীবনে আর বিয়ে নয়৷
‘আশ্চর্য ওকে কে বিয়ে করতে বলছে?
‘কেন ওই ছেলেটাই তো ওর ভাইয়ের জন্য ইরহার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল আবার বলেছে নওশাবাকেও মেনে নিবে।
‘আশ্চর্য ওর ভাইয়ের সাথে লাবিবার সম্পর্ক আর প্রস্তাব এটাই।
‘কিন্তু ছেলেট যে বলল ইরহার কথা।
‘হয়তো ছেলেটা জানেনা লাবিবাকে ইরহাকে তাই। আচ্ছা ছেলে যখন পছন্দ হয়েছে বিয়ে এখন ঠিক করে রাখবো ওর এইচএসসির পর হবে বাকি আনুষ্ঠানিকতা।
‘দেখ তুই যা ভালো মনে করিস। তবে ইরহার কথাটাও মাথায় রাখিস। আমার মেয়েটার সবে চব্বিশ বছর বয়স জীবনের আরো কতদিন পরে আছে। মেয়েদের চলতে গেলে স্বামী নামাক ছায়াটা লাগে। এক্ষুনি কিছু করতে হবেেনা। তবে খোঁজে রাখবি ভালো পেলে দিবো। জোড় তো নেই৷
‘মা এই কথাটা আর কখনো,মুখে আনবা না। ইরহা শুনলে কতটা কষ্ট পাবে। একবার ভেবে দেখেছো?

‘মা’তো ভুল কিছু বলেনি!আমদের কাছে আপু বোঝা না। তারমানে এটাও না তার জীবনটা এভাবেই কেটে যাবে।শুনো জড়িয়ে ধরে কাঁদার জন্য হোক বা মাঝে মাঝে ঝামেলা বা আবদার কারার জন্য হোক আমাদের একটা নিজস্ব মানুষ লাগে। এখন কিছু বলতে হবে বা এক্ষুণি করতে হবে এমন তো না, দেখতে থাকো ভালো পেলে তবেই কথা বাড়াবে। তারপর বাকি ডিসিশন আপুর।
ফরিদা বেগম বলেন,মা তুমি আমার মনের কথা বলেছো৷ হাজার বছর বেঁচে থাকো মা।

✨সেই কাক ডাকা ভোরে বাসে উঠেছে লামা,আর রবিন।যে চেহারা সব সময় প্রদর্শন করতো গর্বের সাথে আজ তা লুকিয়ে রেখেছে হিজাবের আড়ালে।
রবিন বলল,জান তুমি মুখ কেন লুকাবো! তুমিতো ভুল করোনি যারা ভুল করেছে তারা লুকাবে মুখ।
‘আসলে জান যারা ভিডিওটা দেখেছে তারা সবাই তো সত্যিটা জানেনা। তাই মুখ ঢেকে রেখেছি।
‘আমি সাথে থাকতে কিসের ভয়! ভয় নেই তোর সাথে জম।
‘লামা বলে,মানে?
‘আহা বেবি ভয় পাচ্ছো কেন?তোমার জন্য আমি সবার কাছে জম।যে তোমার দিকে আঙুল তুলবে তার জন্য জম।
‘হঠাৎ হঠাৎ তোমার কথা আমাকে ভয় পাইয়ে দেয়।
‘ভয় কে দূর করো,আর আমাদের হানিমুন কেমন কাটবে সেটা ভাবো বেব।
‘লামা বেশ কিছুক্ষণ রবিনের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
তুমি সত্যি আমাকে মেনে নিয়ে সংসারটা ঠিক ভাবে করবে এটা আমি ভাবতেও পারিনি!
‘জীবনে এমন অনেক কিছুই হয় যা আমরা কখনো ভাবনা-তো দূর চিন্তাও করি না৷
#চলবে

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৪

ইরহা অফিস থেকে বের হয়ে,পাঁচ মিনিট হেঁটে বাসে উঠলো। সন্ধ্যা সাতটা বাজে। আজকের দিনটা খারাপ কাটেনি৷জীবনের সমীকরণ কখন কোন মোড়ে এসে হুট করে পাল্টে যায় কারো জানা নেই। জীবন যেনো এক প্রহেলিকা।সম্পর্কের সুঁতো কখন টানাটানি চলে আর কখনো ছিড়ে যায় বলা দায়! অদৃশ্য এক সুঁতোয় বাঁধা আমরা সবাই যে সুতোর নাম কারো কাছে মায়া,কারো কাছে ভালোবাসা তো কারো কাছে প্রেম। বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে রাতের প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গেছে।বাসায় ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নওশাবাকে কোলে নিয়ে চুমু খেতেই ইরহার চোখ টলমলে হয়ে উঠলো। মেয়েটা সারাদিন মা’কে কাছে পায় না৷ আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে নওশাবাকে।
ফরিদা বেগম বললেন, আগে খাবার খেয়ে নে৷ নানুমনিকে আমার কাছে দে।
নওশাবাকে ফরিদা বেগমের কোলে দিয়ে হাতের উল্টো পিঠে নিজের চোখের জল মুছে নিলো৷
‘মা’রে টিকে থাকতে হলে এতোটুকু লড়াই তো করতে হবেই! জীবন তো আর এতো সোজা না। নদীর মত বাঁকে বাঁকে মোর। তবে সব মোর কাটিয়ে নদী যেমন সাগরের মোহনায় পৌঁছে যায়,ঠিক মানুষ লড়াই করতে, করতে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়৷ শুধু ওই আঁকাবাঁকা মোড়গুলো ধৈর্য ধরে পার করতে হয়।
‘ইরহা খাবার খেয়ে নওশাবাকে নিয়ে লাবিবার কাছে আসলো৷ লাবিবা তখন বসেছিলো আনমনা হয়ে৷
‘কিরে লাবু কি ভাবছিস?
‘আমি কিভাবে এতো বড় ভুল করলাম আপু! আমাকে তোমরা ক্ষমা করবা তো?
‘বাদ দে আর শোন ওই রাতুলের নাম্বার দে। আমি কল করে কথা বলি।
‘কিছু বলতে হবে না আপু। যা হচ্ছে হোক সবাই সবার মত ভালো থাকুক।
‘লাবু তুই কি আমার প্রতি রেগে আছিস?
‘তুমি বোন হিসেবে আমাকে পরামর্শ দিয়েছো যেটা তোমার দ্বায়িত্ব।
‘শোন জীবনের তিক্ত অতীত আমাকে সব কিছুতে তিক্ততা দেখায়। তবে রাতুলের সাথে দেখা করবো আমি।
ফরিদা বেগম বলে, এসেছিলো আজ দুই ভাই। তোর ভাইয়ার সাথে কথা বলে গেছে।
‘লাবিবা বলে এসেছিল দু’ভাই মানে?
‘হুম রাতুল আর জারিফ।
‘জারিফ মানে ওই অসভ্য লোকটা?
‘অসভ্য কেন বলছিস ছেলে দুটো’ অনেক ভালো।সেদিন না বুঝে ছেলেটার সাথে ওসব করা ঠিক হয়নি।
‘না বুঝে মানে?
‘ফরিদা বেগম সবটা ইরহাকে বললো।
‘ইরহা বলে ইশশ বেচারা। তারই তো দোষ বলে,আপনার বেবি সহ মেনে নিতে ও সমস্যা নেই।
‘লাবিবা হেসে বলে,বেশ তো ভাইয়াকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে যা। বেচারা বিয়ে করে নাই। তার মনের মত মানুষ ই নাকি খুঁজে পায় না৷ একটা মেয়েকে একবার হসপিটালে পছন্দ হয়েছিলো। তবে তাকে আর খুঁজে পায়নি।
‘দেখছো আম্মু তোমার বাচ্চা মেয়ের এখনি কত দরদ শ্বশুর বাড়ির জন্য। এরে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে বিদায় করে দাও।
‘লাবিবা লজ্জা পেয়ে চুপ হয়ে গেলো।
‘ওরেহহহ আমার পিচ্চি বোন লজ্জা পেতেও শিখে গেছে। দাঁড়া ভাইকে বলে বিদায় করার ব্যাবস্থা করছি।
সবাই চলে যেতেই লাবিবা নিজের মোবাইল অন করলো। অন করার সাথে সাথে মেসেজ আর মেসেজ। লাবিবা হেসে দিয়ে বলে, রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেয়া। আরো জ্বলো বাবু। তোমাকে তো আরো একটু জ্বলতেই হবে রাতুল বাবু৷

‘ইরহা নওশাবাকে ঘুম পারিয়ে মোবাইল নিয়ে বারান্দায় আসলো। জারিফের নাম্বার কল করে মনে, মনে কথা সাজাচ্ছে।

‘জারিফ অফিসের কিছু ফাইল চেক করছিলো। মোবাইলের রিংটোনের শব্দে কাজের মনোযোগ বিছিন্ন হয়। ভ্রু কুঁচকে মোবাইল নিয়ে দেখে লাবিবা দিয়ে সেভ করা নাম্বার থেকে ফোন। ফোন কেটে দিয়ে সাথে সাথে কল ব্যাক করে বলে,কি অবস্থা পিচ্চি?
‘আমি পিচ্চির বড় বোন।
‘মানে?
‘আচ্ছা আপনি জানেন লাবু কোন ক্লাসে পড়ে?
‘রাতুলের সাথেই পড়ে।
‘উহু সামনে এইচএসসি দেবে।
‘কিহহহহ এতোটুকু বাচ্চা মেয়ের আবার বাবু আছে!
‘নাহহ জনাব মাথা মোটা মাহশয়। এই নাম্বারটা কার?
‘লাবিবার।
‘কে বলেছে এটা লাবিবার নাম্বার! এটা লাবিবার বোন ইরহার নাম্বার৷
‘তারমানে বাচ্চা, ডিভোর্স সব আপনার?
‘হ্যা। সরি বলবো না কারণ ভুলটা আপনার। আপনার জন্য আপনার সাথে এসব হয়েছে।
‘আপনাকে সরি বলতে হবে না আপনার জন্য সাত খু’ন মাফ।
‘আরেকদিন দেখা করতে পারি আমরা।
‘আমার নাম্বার আপনাকে কে দিলো?
‘সব উপর থেকর ঠিক করা না হলে আপনার নাম্বার আমার কাছে কিভাবে?
‘আপনি মাথার ডাক্তার দেখান দ্রুত আপনার মাথায় সমস্যা আছে৷ লাবুর নাম্বার লাস্টে সিক্স আমার নাইন। বাকি সব সেম।
‘বাদ দেন সেসব আগে বলেন, দেখা করছেন কবে? কত কথা বলার আছে, না বলা কথাগুলো বলতে চাই৷।
‘আজাইরা আলাপ আমার সাথে করবেন না৷
‘ইশশ কি যে বলেন আপনার সাথে করবো প্রেমের আলাপ কোন আজাইরা আলাপ না।
‘আপনি তো ভারী অসভ্য।
‘হ্যা তা ঠিক বলেছেন আমার ওজন ৭০কেজি ভারী অসভ্য-ই আমি।
‘দ্রুত মাথার ডাক্তার দেখান নয়তো আমার বোনকে আপনাদের বাসায় বৌ করে পাঠাবো না।কোন পাগল ফ্যামেলিতে আমার বোন দিবো না।
‘আপনি এসে পরলেই হবে ডাক্তার লাগবে না৷ ওই যে গান আছে না৷বলতেই ইরহা কল কেটে দিলো৷
জারিফ দূর গানটাই শুনলো না। Mareez-e-Ishq hoon main kar dawaa..
Haath rakh de tu dilpe zara.

রাতুল স্টাডি রুম ক্রস করার সময় জারিফের গান শুনে বলে ভাইয়া তুমি গান গাইছো! তারমানে কি সামথিং সামথিং?
‘এতো সহজ না। তবে এ বছরের মধ্যে বিয়ে করেই ফেলবো। চল আজ তুই আর আমি একটা ঝাকানাকা গানে নাচবো।
‘হুট করে তোমার কি হলো বলো তো?
‘রঙ লেগেছে মনে তাই কুকিল ডাকে বনে।

✨ ইরহা ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, সিরিয়াসলি লোকটার মাথায় সমস্যা আছে৷ ধুর গেলাম ভালো কথা বলতে মুডটাই নষ্ট করে দিলো৷ কি বলে ভারী অসভ্য কারন তার ওজন সত্তুর কেজি। বলেই অট্টহাসি দিলো।

✨ শেফালী বেগম রুবিকে বলে, আমার মনটা যেন কেমন করছে রুবি! আমার ছেলেটার কোন বিপদ হবে না তো?
‘জানিনা আমার ও মন বলছে ভাইয়ার সামনে বড় কোন বিপদ আছে। কেন যে নিজের হাতে নিজের গোছানো জীবনটা নষ্ট করলো। ইরহা ভাবির মত একটা মেয়ে পেয়েও কি করো তাকে ছেড়ে লামার মত একটা নোংরা মেয়ের পাল্লায় পরলো!
‘কিছু মেয়ে আছে তাদের পাল্লায় পরতে হয়না, বরং তারা নিজেদের রুপ যৌবন দেখিয়ে প্রলোভিত করে ছেলেদের। ছেলে জাত এসবের প্রতি দূর্বল। সবাই তো নিজের দূর্বলতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না৷ কেউ, কেউ আটকে পরে। আমার ছেলেটাও আটকে পরেছে?
‘মা দোষ শুধু মেয়েটার না। তোমার ছেলেরও। সে কি বাচ্চা? যে প্রলোভন দেখিয়েছে বলে, প্রলোভিত হতে হবে!তোমার জামাই সহ আরো হাজার হাজার পুরুষ বাহিরে মেয়েদের সাথে কাজ করে কই তারা তো এন
এসব করে না। দূর্বলতা তাদের নেই? আসলে সব হলো চরিত্রের দোষ। চরিত্র ভালো হলে সে সব জায়গা ফিট,আর চরিত্র খারাপ হলে সে নর্দমার কিট। জানিনা আবার কোন অপরাধ সে করে।
‘একটা কল কর, বল এখানে চলে আসতে। ওরে বল একটু ভালো পথে আসতে৷
‘বললেও সে শুনবে না। তবুও বলে দেখছি।


দীর্ঘ আট ঘন্টার জার্নি শেষে কক্সবাজার এসে পৌঁছেছে রবিন আর লামা। হোটেল রুমে এসে দু’জনেই ফ্রেশ হয়ে রুমেই খাবার দিতে বললো। রবিন নিজেই লামার পছন্দের সব খাবার অর্ডার করলো।
‘লামা বলে,তোমাকে বুঝতে আমার দেরি হয়ে গেছে জান৷ তুমি যে আমাকে এতো ভালোবাসো বুঝতে পারলে!
‘বুঝতে পারলে কি হতো?
‘তাহলে কি আর জেলে পাঠাতাম! দোষটা কিন্তু তোমারও, তুমি ওই ইরহার জন্য পাগলামি করেছো৷ তাই আমি বাধ্য হয়েছিলাম৷ কি আছে ওর যা আমার নেই! বরং আমি ওর চেয়ে বেশী গ্ল্যামার।
‘রবিন রাগী কন্ঠে বলে চুপ একদম চুপ একটাও কথা বলবে না।
‘তুমি রেগে গেলে কেনো? তারমানে এখনো ওই ইরহার প্রতি তোমার আকর্ষণ রয়েছে?

রবিন লামার মুখ চেপে ধরে বলে একদম চুপ থাক তোর মুখ দিয়ে ওই নাম বের করবি না।

#চলবে

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-২১+২২

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২১

আপনার সাহসতো কম না বাসা পর্যন্ত চলে এসেছেন?
‘আপনি এমন কেন? দরজায় অতিথি দাঁড়িয়ে আছে কোথায় তাকে ভেতরে নিয়ে বসতে দিবেন, তা-না করে ঝগড়া করছেন? ভেতরে আসতে দিন, ঠান্ডা মাথায় দুটো কথা বলি।
‘আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি! একে তো হুট করে চেনা নেই জানা নেই একজনের বাসায় চলে এসেছেন।আবার বলছেন ঠান্ডা মাথায় কথা বলবো। এক্ষুনি চলে যান, নয়তো ত্রিপল নাইনে কল করবো।
‘আশ্চর্য আমি কি অপরাধী নাকি? এসেছে সু সংবাদ নিয়ে। আপনার বাসায় আপনি ব্যাতিত মুরুব্বি যারা আছে ডাকুন।আঙ্কেল আন্টি এনারা কোথায়?
‘ইরহা দরজা বন্ধ করে দিতে চাইলে। জারিফ দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে আন্টি, আন্টি বলে ডাকাডাকি শুরু করলো।
‘ফরিদা বেগম সামনের রুমে এসে অনেক সময় ধরে জারিফের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, তোমাকে তো চিনলাম না বাবা!
জারিফ ফরিদা বেগমের কোল থেকে নওশাবাকে কোলে নিয়ে বলে, আন্টি আমি এই সুইট,কিউট বাচ্চাটার হবু চাচ্চু।
‘কি বলো বাবা, তোমার কথা তো কিছুই বুঝলাস না!
‘মা এই লোক পাগল, দ্রুত আমার মেয়েকে দিন।তাড়াতাড়ি দিন৷
‘এই একদম ঝগড়া করবেননা৷ আন্টি আমি সুস্থ একজন মানুষ। আপনার এই অসুস্থ মেয়ের জন্য আমার ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।
নওশাবা জারিফের শার্টের বাটন নিয়ে খেলায় ব্যাস্ত।

‘এসব তুমি কি বলো বাবা? আমার ডিভোর্সি মেয়ে আমার এক বাচ্চার মা।মাস ঘুরলো সবে ডিভোর্সের এহনি বিয়ের প্রস্তাব?
‘ আন্টি আমার ভাই আপনার মেয়েকে পছন্দ করে,সব জেনেই ও বিয়ে করতে রাজি।আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার এই কিউট সদস্যকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে নাম কি ওর?
‘নওশাবা
‘বাহহহ ভারি মিষ্টি নাম তো। তাহলে আন্টি আমরা পাঁকা কথা বলি।
‘আচ্ছা তোমার ভাই কি করে?
‘জরিফ একটু চুপ করে থেকে বলে, বিজনেস আমাদের ফ্যামিলি বিজনেস আন্টি।
‘বাসায় আর কে কে আছে তোমাদের?
‘বাসায় কে কে আছে বলতে,আমি আর আমার ভাই,বাবা,মায়ের মৃত্যুর পর আমরাই আছি আমাদের।
“ইরহা ট্রেতে করে চা আর বিস্কুট সাজিয়ে এনে বলে,এতো কথা বলছেন, আগে চা টুকু খেয়েনিন৷ আপনার জন্য স্পেশাল জাপানি চা।
‘এসবের কোন দরকার নেই, আমার আপনার সাথে একটু কথা ছিলো।
‘কথা তো কত বলতে পারবো আপনি চা পান করুন।
নওশাবাকে আমার কাছে দিন।

নওশাবে কোলে নিয়ে বলে, মা তুমি একটু রুম থেকে নওশাবার মাম পট-টা এনে দাও তো। আমি ততক্ষণ ওনার সাথে কথা বলি৷
‘ফরিদা বেগম চলে যেতেই ইরহা বলে, চা যত গরম খাওয়া যায় তত মজা৷ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে দয়া করে পান করুন।
‘জারিফ চায়ে প্রথম চুমুক দিতেই পুরো মুখ জ্বলে উঠলো। সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করছে বেসিন কোন দিকে।

ইরহা নির্লিপ্ত ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আর ভাবছে এতো কষ্টকরে ব্লেন্ডারে কাঁচামরিচ ব্লেন্ড করে তার সাথে পানি মিশিয়ে সেই পানি ছাকনী দিয়ে ছেকে নিয়ে দু’ধ আর চা পাতি মিশিয়ে স্পেশাল জাপানি চা বানালাম। এই চুমুক তো গিলতেই হবে।
‘ঝালে জারিফে চোখে পানি চলে এসেছে। সামনে তাকিয়ে দেখে এক গ্লাস শরবত রাখা দ্রুত গ্লাস উঠিয়ে এক ঢোক গিলতেই খবর হয়ে গেলো৷ নাক ঠোঁট লাল হয়ে গেছে। শরবতেও ট্যাংয়ের সাথে মরিচের গুড়ো মিশিয়ে দিয়েছিল।
‘ঝালে কথাও বলতে পারছে না। চোখ দু’টো লাল হয়ে আছে। কোনমত বলল আপনার মত দস্যি মেয়েকে কোনদিন আমার নিরীহ ভাইয়ের বউ করবো না।
‘আপনার ভাই তো ভালো কথা আর কোন পুরুষের ছায়াও পরতে দেবো না আমার জীবনে৷ ভালোয় ভালোয় চলে যান।

জারিফের রাগ আর কন্ট্রোল করতে না পেরে বলে,ছেলেদের ছায়া পরতে দেবেন না সেটা আগে মনে ছিলো না! একটা হাঁটুর বয়সি ছেলের সাথে রিলেশন করতে পারেন আর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি বলে নাকানিচুবানি খাওয়াবেন।মেয়েরা মায়ের জাত তাই সম্মান করি। নয়তো এর ফল আপনাকে বুঝিয়ে দিতাম। বলেই লম্বা লম্বা পা’ফেলে চলে গেলো জারিফ।
‘ইরহা বোকার মত তাকিয়ে থেকে বলে, কি বলে গেলো?

ফরিদা বেগম এসে বলে,এসব কি ঠিক হলো ইরহা?ছেলেটাকে দেখে ভদ্রই মনে হয়। কেন শুধু শুধু ছেলেটাকে নাজেহাল করলি?পুরো কথাটা শুনেতো নিবি যে কি বলতে চায়? হতে পারে অন্য কাউকে ভেবে তোর ঠিকানা বা আমাদের বাসায় চলে এসেছে?

‘ইরহা রাগের মাথায় এসব করলেও এখন মনে মনে অনুতপ্ত হচ্ছে। আসলেই একটু বেশি বেশি হয়ে গেলো।

✨নিশাত আর নাদিমের বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ন’টা বাজলো।
নিশাত সবার সাথে হেসে হেসে কুশল বিনিময় করছে।

‘ফরিদা বেগম অবাক হলেও মুখে কিছু প্রকাশ করলেননা৷ অন্য সময় নিশাত বাপের বাড়ি থেকে ফিরলে তিন চারদিন কারো সাথে ঠিক ভাবে কথাই বলতো না।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷

লাবিবা সোফার রুমে পড়তে বসেছে। ইরহা নিজের রুমে মেয়ের সাথে দুষ্টমি করছে। যে যার মত ব্যাস্ত।

লাবিবা পড়ার ফাঁকে ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকতেই চোখে পরলো। রাতুল একটা মেয়ের সাথে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়েছে৷ লাবিবার চোখ থেকে অশ্রু ঝড়তে লাগলো। চোখ বন্ধ করতেই রাতুলের সাথে বিভিন্ন স্মৃতি ভেসে উঠলো চোখের সামনে। হুট করে পড়া ছেড়ে কিচেনে এসে ছু’ড়ি নিয়ে নিজের ডান হাতের রগে টান দিলো। সাথে সাথে র’ক্তের ছড়াছড়ি। চিৎকার করে বলে,তুমি আমাকে ঠকিয়েছো এটা আমি মানতে পারবো না৷
লাবিবার চিৎকার শুনে ইরহা, ফরিদা বেগম, নাদিম নিশাত সবাই ছুটে এলো।

নাদিম দ্রুত লাবিবাকে কোলে তুলে নিলে, নিশাত নিজের ওড়না লাবিবার কা’টা জায়গায় বেঁধেদিলো৷ কোনমতে কষ্ট করে লাবিবা বলল,আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর কিছু বলতে পারলো না।


জারিফ রাতুলের রুমে এসে বলে,ওই মেয়েকে ভুলে যা৷ এতোকিছুর পর ওই মেয়েকে বিয়ে করার প্রশ্নই উঠে না৷ ওই মেয়েকে ভুলে যা তোকে ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করাবো৷ এবার এসব থেকে বের হয়ে ঘুমা।
জারিফ এসব বলে চলে যেতেই রাতুল ওর ক্লাসমেট সনিয়ার সাথে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়ে রাতুল মুচকি মুচকি হাসছে আর বলছে, এবার দেখি তুমি কি করে জেলাস না হও। এবার ঠিক তুমি ইনবক্সে আসবে,আর তখন তোমাকে জিজ্ঞেস করবো আমার ভাইয়ার সাথে এসব করার সাহস তুমি কোথায় পেলে? ভালোবাসো না বিয়ে করবে না, সুন্দর করে বলে দিলেই পারতে! আমার ভাইয়ার সাথে বাজে ব্যাবহার করার সাহস তোমার কি করে হলো এই উত্তর আমাকে দিতেই হবে?


লামা নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে বসে, বসে হাউমাউ করে কাঁদছে। কে বা কারা লামার ন্যাুড ভিডিও নেট দুনিয়া ছেড়ে দিয়েছে। আর এসব মানেই মূহুর্তে ভাইরাল। কতজনের সাথে রাত যাপন করেছে কে এই কাজটা করলো। একা একা বাড়িতে অন্ধকারে বসে থেকে অনেক কান্নাকাটি করে ভাবে আমি এই মুখ আর কাকে দেখাবো কিভাবে সমাজে চলবো? রবিন ও আমাকে জায়গা দেবে না। মা,বোন দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলে, তাহলে এ জীবন রেখে আমি কি করবো? আমার কাছে এখন একটাই রাস্তা খোলা আর সেটা ছাড়া কোন পথ নেই। আমি যা পাপ করেছি তার শাস্তি কি এতোটাই ভয়ানক যে আমার জীবন ছাড়া এর মূল্য চুকানো যাবে না! সবাই আমাকে ছিহহহ ছিহহ করবে।
রবিন প্রায় বাড়ির কাছে আসতেই রুবেলের মেসেঞ্জার থেকে রবিনের কাছে কিছু ভিডিও বার্তা এলো৷ নিচে লেখা…. ব্রো ব্যাবসা মন্দা বলে,বউ দিয়ে রমরমা ব্যাবসা চালাচ্ছো আমাদের বললে তো বাহিরের কাস্টমারের কাছে ভাবিকে যেতে হতো না৷ আর এভাবে মানসম্মান শেষ করতে হতো না৷
ভাবি কিন্তু অনেক হট৷ তুই চাইলে আমি এখনো রাজি টাকা যা লাগে দেবো।

#চলবে

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২২

‘লাবিবার মাথার পাশে বসে আছে ইরহা৷ দ্রুত হসপিটালে নিয়ে আসার৷ কারনে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।
ইরহা নরম কন্ঠে বললো, এইটুকুতেই তুই জীবন শেষ করে দেয়ার ডিসিশন নিলি! অথচ আমাকে দেখ এরচেয়ে কত খারাপ সিচুয়েশন পার করেছি৷ তখন মনে হতো আমার সাথে কেন এসব হচ্ছে! আমার সাথে তো এসব হওয়ার কথা না। আমি কতটা যন্ত্রণা সহ্য করে টিকে আছি কল্পনাও করতে পারবি না।এতো কষ্টের মধ্যেও কখনো নিজেকে শেষ করে দেবো এই চিন্তাটা আসেনি। আসলে কি জানিস, তোদের এই জেনারেশনটাই এমন, কথায় কথায় সু’ই,সা’ড। ‘তোদের কাছে জীবনটা মূল্যহীন তাই না? ভাালোবাসার মানুষকে পেলাম না আমার জীবন রেখে কি হবে? অথচ যে নিজেকে-ই ভালোবাসতো পারে না সে আবার অন্যের ভালোবাসার জন্য জীবন দেয়!বাবা কটু কথা বললো,মা শাসন করলো,বোন বকাঝকা করলো, এটা দিলো না ওটা পেলাম না। ব্যাস ঝুলে পরে নয়তো কোন না কোন ভাবে নিজেকে শেষ করেই দেয়। এটাই কি সমাধান?যারা এতো বছর ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখলো, তাদের ভালোবাসার কোন মূল্য নেই!
‘লাবিবা চুপ করে সব শুনে যাচ্ছে……
জীবনে এমন কিছু মূহুর্ত আসে,যখন অনেক কিছু বলার থাকলেও সেসব শব্দ হয়ে বের হয়না।সবটা বুঝেও আমরা চুপচাপ মেনে নেই, মানিয়ে নেই। তর্কে যাই না।এটা ঠিক, এটা ভুল এই কথাটুকুও বলতে ইচ্ছে করে না। আমরা নিশ্চুপ হয়ে যাই পুরোপুরি। বাকশক্তি থাকার পরেও যেনো আমরা বাকহীন।

এই মূহুর্তে লাবিবারও কিছু বলার ভাষা নেই।

ইরহা উঠে আসলো,নওশাবাকে নিয়ে সে এখন বাসায় চলে যাবে৷ বাকীরা সকালে আসবে। হসপিটালের গেটে এসে থমকে গেলো৷ এতো রাতে কি করে যাবে!তারচেয়ে থেকেই যাবে রাতটুকু।
রাত তখন প্রায় তিনটে হসপিটালের বাহিরের এক বেঞ্চে মেয়েকে নিয়ে বসলো। আকাশে পূর্ন চাঁদ, তারার সমারোহ, চারপাশে লাইটিং আরো কত কিছু আর কত আয়োজন এতো সব কিছুর মধ্যেও ইরহার বুকে এক আকাশ শূন্যতা। ইরহা মনে মনে বলছে….. এই তীব্র কষ্টে আমার একটা জড়িয়ে ধরে কাঁদার মত বক্ষ নেই। এই যে ইচ্ছে করছে কাউকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদি,কিন্তু আমার যে আমি ছাড়া কেউ নেই।
মানুষ যতই বলুক একাকীত্ব সুন্দর, তবুও নিজের একটা মানুষ লাগে।যার কাছে দিনশেষে নিজেকে খুচরো পয়সার মত জমা রাখা যায়।এই হাহাকার শোনার মত কোন মানুষ নেই।চোখের পানি মুছে দিয়ে বলবে,আমি আছি তো এতো চিন্তা কিসের এমন মানুষের শূন্যতা আমার এ জনমে আর ঘুচবে না।
নওশাবার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,আমি খুব সাধারণ একটা মেয়ে,আমার স্বপ্নগুলোও ছিলে খুব ছোট, ছোট। কিন্তু কখনো ভাবিনি সেই ছোট স্বপ্নগুলো কোনদিন পূর্নতা পাবে না। তবে তোর ছোট,বড় সব স্বপ্ন আমি পূরণ করবো। আমি যা সহ্য করছি, সে আঁচ তোকে লাগতে দিবো না।
‘একজন নাইট গার্ড এসে বলে,এখানে রাতে থাকা যাবেনা। আপনি বরং পেশেন্টের কাছে যান। ইরহা উঠে হাঁটা শুরু করলো।


রুবেলের মেসেজ দেখে রবিন জোড়ে জোড়ে পাগলের মত হাসতে লাগলো। রাস্তায় সময় নষ্ট না করে দ্রুত বাসায় আসলো। মনের মধ্যে পৈশাচিক আনন্দ। বাসায় ঢুকে লামা, লামা বলে ডাকতে লাগলো। লামার উত্তর না পেয়ে নিজেই রুমে আসলো। লামা হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদছে। রবিন কোন কিছু না জানার ভান করে লামার কাছে এসে বলে,কি হয়েছে বাবু? পিরিয়ড তাই পেটে ব্যাথা।
‘এই মূহুর্তে রবিনের এমন স্বান্ত আচরণ লামার মনের মধ্যে ভীতি তৈরি করলো। লামা ভয়ে মাথা তুলছে না।
রবিন লামার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,আমাকে বলবা তো জান কি সমস্যা হচ্ছে।
‘লামা রবিনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে। রবিনের ইচ্ছে করছে এই মূহুর্তে লামাকে উচিৎ শিক্ষা দিতে কিন্তু সে তা করবে না। তার পরিকল্পনা আরো ভয়ংকর।
‘কান্না বন্ধ করে আমাকে বলো কি হয়েছে।
‘আমার অনেক বড় ভুল হয়েছে রবিন’ প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। জানি এই ভুলের ক্ষমা নেই তবুও ক্ষমা করে দাও সারাজীবন তোমার গোলাম হয়ে থাকবো।
‘আহা বাবু তুমি হলে রানী তুমি গোলাম কেন হতে যাবে। বলো আমাকে হয়েছেটা কি?

লামা কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের ফোন থেকে ভিডিও অন করে দেখালো।
‘রবিন বলে এই সামান্য সমস্যার জন্য তুমি এভাবে কান্নাকাটি করছো!এসব যে ফেইক ভাবে বানানো যায় আমি জানি। যাও তো উঠো ফ্রেশ হয়ে আসো,কাচ্চি নিয়ে এসেছি দু’জনে গরম, গরম খাবো।
লামা মূহুর্তের মধ্যে হেসে বলে,আমি জানতাম তুমি বুঝবে এসব ফেইক। তোমার বন্ধুরা আমাকে বাজে প্রস্তাব দিয়েছিল, আমি রাজি হইনি তাই আমার মান সম্মান নষ্ট করার জন্য এসব করেছে৷
‘বাদ দাও যাও ফ্রেশ হও খেয়ে ঘুমাতে হবে সকাল আটটার টিকিট কেটেছি আমরা কাল কক্সবাজার যাচ্ছি সব কিছু গোছাতে হবে তো।
সুন্দর ভাবে খেয়ে সব কিছু গুছিয়ে লামাকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।নারীর ছলনা যেমন ভয়ংকর তার চেয়ে বেশি ভয়ংকর পুরুষের প্রতিশোধ।

✨বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙলো রাতুলের,চোখ খুলেই ফোন অন করে দেখে অনেকগুলো মিসডকল। রাতুল দ্রুত কল ব্যাক করতেই ওপাশ থেকে লাবিবার ফ্রেন্ড রাতের ঘটনা খুলে বলে। রাতুল দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পরে৷

জারিফ আজ বেশ ভোরেই বের হয়েছে আজকে একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে। মিটিং শেষ করে নিজের কেবিনে বসে রাতুল কে কল করলো।
বেশ খানিক ক্ষন পর রাতুল কল রিসিভ করে বলে,ভাইয়া লাবিবা সু’ই’সা’ইড করেছিল।সব দোষ আমার এসব আমার জন্য হয়েছে ভাইয়া৷
‘রিলাক্স লাবিবা এখন কোথায়? আর তুই কোথায়?
‘আমি লাবিবাকে দেখতে ওদের বাসায় যাচ্ছি তুমিও আসো। বলেই কল কেটে দিলো৷
জরিফ নিজেও দ্রুত বের হয়ে গেলো। জারিফ ভাবছে লাবিবা হয়তো আর বেঁচে নেই। জারিফের মায়া হচ্ছে ছোট বাচ্চাটার জন্য। মনে, মনে বলে,কালকেই কত ইগো দেখালো আর আজ সু’ই’সাইড! নিজের মেয়েটার কথা তো ভাববে ইশশ বাচ্চা মেয়েটা।


আজকে ইরহার জয়েনিং সবার সাথে বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে ফ্রীজ থেকে পাউরুটি বের করে কোনমত একটা খেয়ে নওশাবাকে আদর করে বের হয়ে গেলো৷
নাদিম লাবিবার সাথে কোন কথা বলেনি৷নিজের বোনদের ভালোবাসায় কোন ত্রুটি রাখেনি। যখন যা চেয়েছে নিজের সাধ্য মত তখন তাই এনে হাজির করেছে।

নিশাত নাদিমের কাঁদে হাত রেখে বলে,ছোট মানুষ ভুল করে ফেলেছে রাগ না করে বুঝিয়ে দাও। তাহলে ভুলটা বুঝতে পারবে।

নাদিম নিশাতকে জড়িয়ে ধরে বলে,জানো এক মূহুর্তে জন্য আমার পৃথিবী থমকে গিয়েছিলো। ছোট বেলা থেকে কোলে পিঠে করে আদর স্নেহ দিয়ে বড় করেছি। কখনো কোন ইচ্ছে অপূর্ন রাখিনি আর সেই বোনকে মৃত্যুর মুখে দেখে আমার কি অবস্থা হয়েছিলো একবার বুঝো।
‘শোন বয়স কম তো তাই আবেগে গা ভাসিয়ে এমন উদ্ভট কাজ করে ফেলেছে। এবার বুঝিয়ে বলে দাও আর জীবনে এমন কাজ করবে না।

‘ফরিদা বেগমও একটাও কথা বলেনি, লাবিবার সাথে।মানুষ বলে আদরে বাঁদর তৈরি হয় আজ তার তাই মনে হচ্ছে। পরিবাবের সবার নয়নের মনি সবাই ওকে বেশি ভালোবাসতো কারণ ও বাবার আদর পায়নি৷ আর সেই মেয়ে কিনা এমন একটা কাজ করলো!
লাবিবা নিজের মায়ের হাতের উপর হাত রেখে বলে,ওমা’ মা’ আমাকে ক্ষমা করে দাও আর কখনো এমন ভুল হবে না। মা’শেষ বারের মত আমাকে ক্ষমা করে দাও।

#চলবে

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-১৯+২০

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৯
নিশাত তার ভাইয়ের পাশে বসে আছে, মঞ্জু বললো,কিরে বোন তোর মুখ এমন হয়ে আছে কেন? দেখে মনে হচ্ছে খুব কান্নাকাটি হয়েছে!
‘নাহহহ ভাইয়া কান্না করবো কেন!
তোহা একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে, নিশাতের কথা শুনে মনে মনে বলে,কি হলো এখনো ন্যাকা কান্না জুড়ে দিয়ে বিচার দিচ্ছে না কেন?
‘এখন কি ভাইয়ার কাছ থেকে কথা লুকাবি?
‘আগামীকাল সকালে চলে যাবো তো তাই একটু মন খারাপ।
‘ওহহহ এই ব্যাপার, তাহলে নাদিমকে কল করে বলে দেই আর কয়েকদিন পর নিতে আসতে।
‘নাহহহ যেতে হবে ভাইয়া, অন্যের বাসায় কতদিন থাকবো?
‘অন্যের বাসা মানে? এই বাসা তোর ছিলো তোর আছে, তোরই থাকবে।
‘নাহহ ভাইয়া বিয়ের পর মেয়েদের বাপের বাড়ি হয়ে যায় পর৷ তখন সেখানে আমরা মেহমান।
‘নিহা নিশাতকে তোমরা কেউ কিছু বলেছো?
‘আসলে তোহা ভুল করে বলে ফেলছে। ও আর কখনো এমন ভুল করবে না।
‘তোহা এদিকে এসো।
‘জ্বি ভাইয়া।
‘তোমারও বিয়ে হয়েছে, তুমিও এ বাড়ির একজন। তাই বলে, তোমার বাবার বাড়ি তোমার জন্য পর হয়ে যাবে?
‘আসলে ভাইয়া আমি ওইভাবে বলতে চাইনি।
‘এ বাড়ির মানুষ স্বার্থে আঘাত লাগলে তোমাকে পর করে দিতে দু’বার ভাবে না। কিন্তু তোমার বাড়িতে কেউ তোমাকে ফেলে দিবেনা৷ যত যাইহোক তোমার বাবা, মা’য়ের কাছে সব সময় তোমার আশ্রয় অক্ষুণ্ণ। আমার বোন আমাদের দুই ভাইয়ের অনেক আদরের। তাই ওরসাথে কখনো বাজে ব্যাবহার করবে না। বছরে এক,দু’বার আসে এ বাড়িতে এই কয়েকদিন তোমরা সহ্য করে নেবে। আর যদি সহ্য না করতে পারো যতদিন নিশাত এ বাড়িতে থাকবে ততদিন তোমরা ওই বাড়িতে থাকবে। আমার বোন সারা বছর এখানে এসে বসে থাকবে না।
‘সরি ভাইয়া আর কখনো এমন হবে না।

সবার কথার মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠলো, নিশাত বললো,তোমাদের জামাই এসেছে মনে হয়৷ ওর সামনে কেউ এসব কথা বলবে না। আগামীকাল সকালে চলে যাবো। দরকার পরলে কিছুদিন পর আবার আসবো।
‘নাদিম বেশ অনেক কিছু নিয়ে এসেছে, শ্বশুর বাড়ি বলে কথা দু’হাত ভরে নিয়ে এসেছে। তারাও তো কম আদর যত্ন করে না।একসাথে সবার সাথে খাবার খেয়ে রুমে আসলো, রুমে এসেই নিশাতকে জড়িয়ে ধরে বলে,আজ আমার বউটার কি হয়েছে বলো দেখি!
‘কি হবে?
‘তুমি তো এভাবে কখনো বলো না।
নিশাত নাদিমকে জড়িয়ে ধরে বলে,আজকে তোমার প্রতি ভালোবাসা উতলে উঠেছে বুঝলে।
‘নাদিম পর পর কয়েকটা চুমু খেলো নিশাতের গালে, কপালে, ঠোঁটে। নিশাত রবিনকে আর একটু গভীর আলিঙ্গন করে বলে,আমাকে ক্ষমা করে দিও, এতোদিন তোমার মা,বোনদের সাথে কত বাজে ব্যাবহার করেছি।
‘নাদিম অবাক হয়ে বলে,বিবিজান আপনি সত্যি বলছেন!
‘এভাবে অবাক হবা নাতো,সত্যি বলছি আর কখনো এমন হবে না। কত ভাগ্য করে এমন একটা শ্বাশুড়ি আর ভালো মনের দুটো ননদী পেয়েছি, এবার থেকে তাদেরকে নিজের বোনের মত আগলে রাখবো।আমার নিজের তো আপন বোন নেই।
‘নাদিম নিশাতে কোলে তুলে নিয়ে বলে,বিবিজান এইদিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। আজকে তোমাকে ভালোবাসার জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাবো জান৷


রবিন আর লামার মধ্যে সম্পর্ক চলছে নামের চলা। এরমধ্যেই বেশ ঋণের মধ্যে পরেছে রবিন৷ তবে সেদিকে কোন ভ্রূক্ষেপ নেই রবিনের। তার মাথায় চলছে অন্য কিছু।
অন্যদিকে টাকার নেশায় একের পর এক পরকীয়া জড়িয়ে পরেছে লামা৷ যেনো ঠিক ভুল সেই বিষয়টি আর তার মধ্যে নেই৷সকাল আটটা বাজে ঘুম থেকে উঠে খাবার টেবিলে যেয়ে বসলো।
শেফালী বেগম লামার জন্য কফি,পরোটা আর অমলেট এনে প্লেটে সাজিয়ে দিলেন।
‘রবিন গেস্ট রুম থেকে বের হয়ে বলে,বেবি আর একটু ঘুমিয়ে নিতে এতো তাড়াতাড়ি উঠে গেলে? রাতের দু’টো পর্যন্ত পার্টি করে এসে দিনের একটা পর্যন্ত অনন্ত ঘুমাবে তো! নয়তো শরীর খারাপ করবে৷
‘আমি ভাবছিলাম কি চলো আমরা সিলেট থেকে একটু ঘুরে আসি। কি বলো?
‘আমি ভেবে রেখেছি আমরা কক্সবাজার যাবো।
আর হ্যা মা’তুমি রেডি হও তো তোমাকে এক্ষুনি রুবির বাসায় দিয়ে আসবো।একাএকা বাসায় থাকতে হবে না তোমার।
‘শেফালী বেগম কোন কথা না বলে চুপচাপ রেডি হতে চলে গেলেন। এ বাড়িতে তারও আর ভাল্লাগে না। শখের সংসার থেকে তার মন উঠে গেছে। দিনের পর দিন ইরহা তাকে কত সেবা যত্ন করেছে, আর বিনিময়ে তাকে কষ্ট দেয়া ছাড়া আর কিছুই দেয়নি৷ আজ বুঝতে পারছে,মুরুব্বিরা যে বলতো, একটা মেয়ে চাইলে যেমন সংসারকে সুখে ভরিয়ে দিতে পারে ঠিক একটা মেয়েই যথেষ্ট একটা সংসারকে অশান্তিতে তলিয়ে দেয়ার জন্য। নিজের কর্মে নিজেই অনুতপ্ত। মনে মনে ভাবলেন যাওয়ার আগে একবার নাতনীটাকে দেখে যাবে আর ইরহার কাছে ক্ষমা চাইবে।


ইরাহা কিচেনে নাস্তা বানাতে ব্যাস্ত বাকিরা সবাই ঘুমে। সবে সকাল আটটা বাজে। নাস্তা বানানো শেষ করে শাওয়ার নিলো, আজ অনেক দিন পর ফরিদা বেগমের একটা কাঁচা হলুদ আর কালো রঙের মিশ্রণে জামদানী শাড়ী পরলো। ফর্সা শরীরে ইরহাকে বেশ মানিয়েছে শাড়ীটায়। ইরহাকে দেখলে বোঝার উপায় নেই এক বাচ্চার মা। এখনো এতো রূপবতী। যদিও ইদানীং টেনশনের ফলে চোখের নিচে কালচে দাগ পরতে শুরু করেছে। শাড়ীর কুচি ঠিক করতে করতে বসার রুমে আসতেই কলিং বেল বেজে উঠলো, ইরহা দরজা খুলে দিতেই রবিন আর শেফালী বেগমকে দেখে, মূহুর্তে চেহারার রঙ পাল্টে যায়।
‘আপনার লজ্জা নেই আবার বাসায় চলে এসেছেন!
‘শেফালী বেগম বললো,মা আমি এসেছে, তোমাকে বিরক্ত করবো না৷ আমার নাতনীর মুখটা একটু দেকেই চলে যাবে। আর কোনদিন তোমাকে বিরক্ত করবো না।
‘রবিন ইরহার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কোমড় সমান চুলগুলো ছড়িয়ে আছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে সদ্য শাওয়ার নিয়েছে৷ পরনে শাড়ী অপরুপা লাগছে ইরহাকে।
‘ইরহা বললো,আন্টি আপনি চাইলে ভিতরে আসতে পারেন তবে আপনার ছেলেকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হবে না।
রবিনের ইচ্ছে করছে একছুটে ইরহাকে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে নিতে।”কয়লার পিছু ঘুরতে, ঘুরতে হিরে যে হারিয়ে ফেলছে,সেদিকে নজর ছিলো না!!
শেফালী বেগম বাসায় প্রবেশ করতেই ইরহা দরজা বন্ধ করে দিলো।
নওশাবা তখনও ঘুমে, ইরহা নওশাবাকে কোলে তুলে নিয়ে এসে শেফালী বেগমের কোলে দিলো,নওশাবার চেহারার সাথে রুবির চেহার অনেক মিল। শেফালী বেগমের চোখ দুটোতে অশ্রু টলমল করছে। নিজের নাতনীকে চুমু খেলেন, গালের সাথে গাল মিলিয়ে রাখলেন,ততক্ষণে চোখের কার্নিশ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরতে লাগলো। শেফালী বেগম ইরহার কোলে নওশাবাকে দিয়ে বলে,পারলে এই বুড়ো মা’টাকে ক্ষমা করে দিও। তোমার সাথে যা অন্যায় করেছি, তার শাস্তি এখন কড়ায়গণ্ডায় ফেরত পাচ্ছি৷ নিজের ব্যাগ থেকে ,স্বর্নের চেইন, আংটি, ব্রেসলেট, চুড়ি বেড় করে ইরহার হাতে দিয়ে বলে,আমার নাতনীর জন্য এসব,তুমি কিন্তু মানা করতে পারবে না।
‘ইরহা বলে,আন্টি এসবের দরকার নেই আমার মেয়েটার জন্য দোয়া করে দিন তাতেই হবে৷
‘দোয়াতো সব সময় করি, এগুলো আমার স্বামী আমাকে বানিয়ে দিয়েছিল, আমি আমার নাতনীকে দিলাম৷ ভালো থেকো মা।
‘আপনিও ভালো থাকবেন,নিজের খেয়াল রাখবেন,সময় মত মেডিসিন নিবেন।
‘শেফালী বেগম কিছু বললো না, চলে আসলো। কি বলবে,কি-ই বা বলার আছে।
‘শোফালী বেগমকে দেখেই রবিন বলে,কি হলো,মা রাজি করাতে পারলে ইরহাকে?ওকি আসতে রাজি হয়েছে। এই প্রথম শেফালী বেগম নিজের ছেলেকে চড় মারলেন। রাগান্বিত স্বরে বললেন,বিয়েটাকি তোর কাছে ছেলে খেলা মনে হয়! তালাক হয়ে গেছে তোদের ইরহাকে আর এজন্সে পাবিনা। ধর্ম বলতেও তো কিছু আছে! নাকি সে-সব বিবেকও তোর মধ্যে আর নেই!
গাড়ীতে এসে বসে রবিন বলে,মা’ এই থাপ্পড়টা আগে কেন দিলে না! কেন বললে না এসব ভুল করছিস এতো ভালো মেয়েকে রেখে অন্য দিকে নজর দিস না। লাগলে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে বলতে, সময় থাকতে নিজেকে শুধরে নে।
‘তখন তো নিজেই ছিলাম ভুলের মধ্যে। আজ নিজের ভুলে তোর জীবন আমার জীবন থেকে সব আনন্দ শেষ। এখন বাকি জীবনে শুধু আফসোস নিয়ে বাঁচতে হবে।

#চলবে

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২০

শেফালী বেগম চলে যাওয়ার পর,ইরহা একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলো।সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে, চোখ থেকে নিজের অজান্তেই টুপটুপ করে আশ্রু গড়িয়ে পরছে।নওশাবা নিজের মায়ের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মুখ দিয়ে কেমন শব্দ বের করছে,তার অস্পষ্ট শব্দ হয়তো বলতে চাইছে,তুমি কাঁদছো কেন মা’!
ইরহা,নওশাবাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে,কেন এমন হলো আমার সাথে?এখন তাদের ভুল বুঝতে পারলো, তাতে কি আমার সাজানো সংসার ফিরে পাবো? নাকি আমার মেয়ে ফিরে পাবে তার বাবার আদর। সমাজের কটু কথা না হয় বাদই দিলাম।
‘ফরিদা বেগম নিজের মেয়ের কাঁধে হাত রেখে বলেন,মা’রে ভাগ্যে কি আছে কেউ জানেনা। আমরা যদি আগেই বুঝতে পারতাম জামাই এমন হইবো তাইলে কি তোর বিয়ে সেখানে দিতাম! সব বাপ,মা’ সবচেয়ে ভালো ছেলের কাছে দিতে যায়। কিন্তু চকচকে আপেলের ভেতরের খবর তো কেউ জানেনা। এসব নিয়ে আর ভাবিস না, জীবন হলো বহমান নদী,সে থামতে জানেনা চলতেই থাকে।তার চলমান শ্রোতে কখনো একুল ভাঙে ও কুল গড়ে।

‘ইরহা চোখের পানি মুছে, ফরিদা বেগমকে বলল,নাও তোমার নাতনীকে একটু সুজি খাওয়াও আমি রুমে ঠান্ডা করার জন্য রেখে আসছি।
ফরিদা বেগম নওশাবাকে নিয়ে চলে গেলেন। ইরহার চুল বতাসে বেশ এলোমেলো হয়ে গেছে হাত দিয়ে চুলগুলো খোঁপা করবে এমন সময় আবার কলিং বেল বেজে উঠলো।
‘ইরহা কোনমতে চুলে প্যাচ দিয়ে উঠে দরজা খুলল।

সমানের মানুষ টিকে দেখে রেগে গেলো,বিরক্তি নিয়ে বলে আপনি!

✨সকালের রোদ ছড়িয়ে দুপুর হচ্ছে, নাদিম এখনো ঘুমাচ্ছে,আজকে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে, সারাদিন শ্বশুর বাড়ি থেকে বিকেলে বাসায় যাবে৷
‘নিশাত এসে নাদিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে,দিতে বলে,তা শ্বশুর বাড়ির বেড বুঝি এতোই আরামদায়ক যে আমার বর বেড ছেড়ে উঠতেই পারছে না?
‘নাদিম এক হাত দিয়ে নিশাতকে টান দিয়ে নিজের বাহুতে জড়িয়ে নিয়ে বলে,জান আমার কাল রাতের পর থেকে মনে হচ্ছে আমি নতুন বিয়ে করেছি,তুমি আমার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী। তোমাকে এত্তো এত্তো ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে।
‘তো আমি তো নতুন বউ-ই মাত্র দুই বছরে কি আমি পুরোনো হয়ে গেছি!
‘এতো আদুরে কথা বললে,এই দিনদুপুরে কিন্তু… আর কিছু বলার আগেই নিশাত নিজের হাত দিয়ে নাদিমের মুখ চেপে রেখে বলে,আপনি এতো ঠোঁট কা’টা জানা ছিলো না।
‘এখন থেকে জেনে নাও।
‘নিশাত হুট করে নামিদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে পরে বলে,তাড়াতাড়ি উঠে নাস্তা করুন। সকালের নাস্তা দুপুরে করলে, দুপুরের খাবার রাতে খাবেন! এরপরে কিন্তু আজকেও থেকে যেতে হবে।
‘আনরোমান্টিক বউ আমার। মুডের চৌদ্দটা বাজিয়ে দিলো। তবে জানো আজকে নিজেকে সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। তোমাকে আমি এই রুপেই দেখতে চেয়েছিলাম।
‘একটু দেরি হয়ে গেলো,,তোমার মনের মত হতে, তবে এখন থেকে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না, যে এটা সত্যি আমি! নিজেকে এমন ভাবে উপস্থাপন করবো।
‘লাভ ইউ বউ।
‘হেট ইউ বর, তাড়াতাড়ি উঠে পরুন
‘এই এটা কিন্তু ঠিক হলো না। লাভ ইউ টু বলে যাও।
‘এহহহ কচু বলবো।
‘নিশাত রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সত্যিই আজ নাদিমের কাছে জীবনটা নতুন মনে হচ্ছে। এতোদিনের স্বপ্ন আজ পূরণ হলো।

✨রবিন সোফায় বসে আছে, রুবি রবিনের সামনে খাবার দিয়ে বলে,খেয়ে নাও ভাইয়া,চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতদিন ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করোনি।
‘রবিন নিম্ন স্বরে বলল,আমার পাশে একটু বসবি?
রুবি রবিনের পাশে বসলো, রবিন রুবির দিকে না তাকিয়ে রুবির হাতটা ধরে বলে,পারলে ভাইকে ক্ষমা করে দিস।আর আজ থেকে মায়ের খেয়াল রাখিস। আমার কিছু হয়ে গেলে কখনো আমার খোঁজ নিবি না৷ মনে করবি আমার কর্মের ফল।রবিন নিজের পকেটে থেকে বেশ কিছু টাকা বের করে রুবির হাতে দিয়ে বলে,তোর আর মায়ের খেয়াল রাখিস৷ মনে করবি এই পৃথিবীতে তোর ভাই আর নেই।
‘রুবি কেঁদে দিয়ে বলে, কি বলছো তুমি এসব!তুমি ভেবো না সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা সবাই মিলে এই সমস্যা থেকে বের হওয়ার রাস্তা বের করবো৷
‘আর কিছু ঠিক হবে না। সব আমি নিজের হাতেই শেষ করে দিয়েছি। আমার মেয়েটা আজ আমার কারণে বাবার পরিচয় থেকে বঞ্চিত। যেদিন আমার রাজকন্যা পৃথিবীতে আসলো,সেদিন আমি তার থেকে সব কেড়ে নিলাম। কিভাবে করলাম আমি! রুবি বিশ্বাস কর আমি খারাপ কাজগুলো করেছি এটা ঠিক। কিন্তু লামাকে বিয়ে করতে চাইনি৷ তবে কথায় আছে, পাপ তার বাপকেও ছাড়েনা। আমাকেও আমার পাপ ধ্বংস করে দিলো৷ আমি কিভাবে আমার রুবিকে ছেড়ে এরকম একটা মেয়ের পিছু ছুটলাম?
‘যা হয়েছে ভুলে যাও।আজকে রাতটা আমাদের বাসায় থেকে যাও।আমরা সবাই মিলে একটা সলিউশন ঠিক বের করতে পারবো।
‘আমি ঠিক করে নিয়েছি আমি কি করবো। তেরা ভালো থাকিস আমার যা হয়ে যাক। যে খেলায় আমি নেমেছি সেখান থেকে ফেরার রাস্তা বন্ধ।
‘একটা ভুলের মাশুল গুণতে যেয়ে তারচেয়ে আরো বড় ভুল করো না। জীবন একটাই ভুল শুধরে ঠিক পথে ফিরে এসো। আর তুমি ছাড়া আমাদের আপন আর পৃথিবীতে কেউ নেই, অন্তত আমাদের জন্য ফিরে এসো।
‘রবিন বললো,তোর হাতে খাইয়ে দিবি আজ?
‘রুবি হাত ধুয়ে রবিনকে খাইয়ে দিলো। রুবির মনের ভেতর কেমন হাহাকার করছে। মনে হচ্ছে খুব বাজে কিছু হবে। চোখের কার্নিশ গড়িয়ে নোনাজল পরছে৷ শেফালী বেগম দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছেন। তার মনেও শান্তি নেই, কেন যেন মনে হচ্ছে তার ছেলেকে শেষ দেখা দেখছে।
খাবার খেয়ে রবিন নিজের মায়ের কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলে,পারলে আমকে ক্ষমা করে দিও মা। রুবির দিকে তাকিয়ে বলে,তোর ভাবিকে একটা কল করবি! একটু জিজ্ঞেস কর আমার মেয়েটা বাবা বলতে পারে নাকি?
‘রুবি একটা ভিডিও অন করলো,যেখানে নওশাবা অস্পষ্ট শব্দে বাবা, বা বা বা করছে। রবিন মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে বলে,কেন আমি তোর মায়ায় আরো আগে জড়ালাম না। আমার দুনিয়ায় বেঁচে থাকার আর কোন অধিকার নেই।
‘নিজেকে সামলে নে ভাইয়া।
‘ভিডিওটা আমার মোবাইলে সেন্ট করে দিস। মা’য়ের আর তোর খেয়াল রাখিস। কথা শেষ করে দ্রুত পায়ে বের হয়ে গেলো।
‘লামা নিজের মা বোনের সাথে দেখা করতে এসেছে,
‘তুই এখান থেকে চলে যা আর কখনো আমাদের সামনে আসবি না।
‘মা’আমি নিজের জন্য একটা সুন্দর জীবন চেয়েছি এটাই কি আমার দোষ? আর এই গরীব জীবনে তোমরা অনেক ভালো আছো?লামা নিজের ব্যাগ থেকে টাকার বান্ডিল বের করে বলে,এই দেকো,সুখ কেনার চাবি। নাও কত চাও নাও।
‘ তুই এখান থেকে চলে যা। না তোর টাকা আর না তুই, কোনটাই আমার দরকার নেই। তোরমত মেয়ে আমার জন্য মৃত।
‘হ্যা, হ্যা চলে যাচ্ছি,ভুলেই গিয়েছিলাম, কু’কু’রের পেটে ঘী হজম হয় না।
‘লিজা বললো, আপু আমরা দরিদ্র তবে তোরমত বিবেকহীন না। জানিস তো বিবেকহীন মানুষ প’শুর মত। তাই যেই বাক্যটা আমাদের জন্য ব্যাবহার করলি, সেটা তোর সাথেই বেশি যায়। বাড়িতে যা তবে মুখ ডেকে বের হোস। মানুষ কিন্তু থুথু নিক্ষেপ করবে।
‘লামা লিজার গালে থাপ্পড় দেয়ার জন্য হাত উঠালো, লামার মা,লামার হাত আটকে দিয়ে বলে,এই সাহস করবি না৷ আমার মেয়ের শরীরে আঘাত তোর মত কেউ করতে পারবে না। দূরহ চোখের সামনে থেকে।
‘মেয়ে মানুষ সম্মান হলো লজ্জায়, তুই তো টাকার কাছে তোর লজ্জা বিক্রি করে দিয়েছিস৷ লজ্জাহীন মেয়ে আর খোসা ছাড়া কলা দুটোরই কোন মূল্য নেই বাজারে।
‘লামা চলে আসলো, বের হতে হতে খেয়াল করলো অনেকেই তার দিকে কেমন দৃষ্টিতে যেনো তাকাচ্ছে।

#চলবে

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-১৭+১৮

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৭

ইরহা রিকশা নিলো বাসার উদ্দেশ্যে, এমন সময় ফোনটা আবার বেজে উঠলো। ইরহা রিসিভ করতেই একজন বলল,ম্যাম আপনাকে মেইল পাঠানো হয়েছে আপনি কনফার্ম করুন।
‘ইরহা বলে, কিসের মেইল?
‘ম্যাম জব কনফার্ম লেটার।
ইরাহা খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। অবশেষে জব পেলো!

রিকশা করে বেশ কিছু দূর আসার পরে কেউ রিকশা আটকে দাঁড়ালো।
রিকশাওয়ালা মামা বলল,সাহেব রাস্তা ছাইড়া দেন৷
‘ছাড়ার জন্য তো আটকাইনি।
‘সব কিছুর একটা লিমিট থাকে মিস্টার রবিন। আপনি আপনার লিমিট ক্রস করছেন।
‘কি যে বলো না বেবি তোমার সাথে আমার আর কোন লিমিট আছে নাকি৷ তুমি মানেই সবকিছু আনলিমিটেড।
‘ভদ্রতা বজায় রাখুন এটা পাবলিক প্লেস ভুলে যাবেননা।
‘তোমাকে দেখলে আর কিছু মনে থাকে না।
‘রাস্তা ঘাটে কোন ভদ্র মানুষ অসভ্যতা করে না। দয়া করে রাস্তা ছাড়ুন।
‘ইতিমধ্যে কয়েকজন মানুষ জড়ো হয়ে গেছে।
রবিন জোড়ে জোড়ে বলে, তুই পরকীয়া থেকে বের হয়ে আমার সংসারে ফিরে আয়। আমি সব ভুলে তোকে আপন করে নেবো। নিজের কথা না ভাব আমাদের মেয়েটার কথা ভেবে অনন্ত আমার কাছে ফিরে আয়।
‘ইরহার চোখে অশ্রু টলমল করছে, কিভাবে সে বের হবে এি বিপদ থেকে। কি করবে সে? চোখ বন্ধ করে জোড়ো নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে কিছুটা প্রস্তুত করে বলে,এসব নাটক করে কোন লাভ নেই। আমি এক্ষুনি পুলিশে খবর দিচ্ছি।
‘দেখেন ভাই আপনারাই দেখেন, কোন ছেলের সাথে মিট করে আসছে। আমার সুখের সংসার নষ্ট করে।
ইরহা রিকশা থেকে নেমে ঠাসসসস৷ করে একটা চড় বসিয়ে দিলো। চিৎকার করে বলে,তোর মত পুরুষ মানুস মনে করে, মেয়েরাতো অসহায় যা ইচ্ছে করা যায় তাদের সাথে । আর আপনার কি বলছিলেন এখনকার মেয়েদের একটা দিয়ে হয় না। তা এখনকার পুরুষের হয়?এই যে মানুষটা সে এক সময় আমার হাসবেন্ড ছিলো, কিন্তু আমাকে রেখে দিনের পর দিন অন্য নারীতে মজে ছিলো। আমাকে ডিভোর্স দিয়ে তাকে বিয়েও করেছিল,তবে অসুখী তাই আবার আমার জীবনটা নষ্ট করার জন্য উঠে পরে লেগেছে।ইরহা রিকশা ভাড়া দিয়ে উল্টো পথে হাটা শুরু করলো। ইরহা চলে যেতেই সবাই রবিন কে ঘিরে ধরলো। ইরহা আর পিছু ফিরলো না। বেশ খানিকটা পথ হেঁটে আসার পর একজন নিজের প্রাইভেট কারের লুকিং গ্লাসে ইরহাকে পর্যপেক্ষণ করে। গাড়ী থামিয়ে দরজা খুলে দিলো। এই মূহুর্তে ইরহা কোন রকম বাকবিতন্ডা না করে উঠে বসলো।
লোকটা ইরহার দিকে টিস্যু বাড়িয়ে দিলো।
ইরহা টিস্যু নিয়ে নিজের চোখের অশ্রু আর মুখটা মুছে নিয়ে বলে,আপনি এই রাস্তায়?
‘আমি রুপায়ন থাকি তাই এই রাস্তা ধরেই যাতায়াত। তুমি এখানে কেন এসেছিল?
‘একটা কাছে এসেছিলাম। বুঝতে পারিনি এমন কিছুর সম্মুখীন হবো৷
‘আমাকে বলতে কি সমস্যা? সবটা আমাকে খুলে বলো, আমদের ভালোবাসার সম্পর্ক না হয় শেষ তাই বলে কি আমরা ভালো ফ্রেন্ড হতে পারি না?
‘একটা সময় পর আর কিছুই সম্ভব না। আপনার প্রেজেন্ট ওয়াইফ যখন জানবে আপনার এক্স আপনার বর্তমান ফ্রেন্ড তাও সে ডিভোর্সি! তাহলে সেটা ভালো দৃষ্টিতে দেখবে না।
‘আমার ওয়াইফের ভালো খারাপ নিয়ে তোমার এতো চিন্তা? কখন আমার জন্য এর বিন্দু মাত্র চিন্তা করেছো?
‘দেখুন আপনার এমন কথার উত্তর দেয়ার মত মুড আর সময় কোনটাই নেই। দয়া করে আমাকে এখানেই নামিয়ে দিন।
‘তুমি আমাকে এতোটা পর করে দিলে! অথচ শেষ বার আমাদের কথা হয়েছিল আমরা সারাজীবন একে অপরের পাশে থাকবো। জীবনসঙ্গী হয়ে না হোক শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে।
‘আপনি আপনার জীবনে সফল। তাই আমার মত শুভাকাঙ্ক্ষী আপনার প্রয়োজন নেই। আর আমি হলাম হতভাগা তাই কারো সুন্দর জীবন কলুষিত করতে পারবোনা।
‘তুমি নিজেকে এতো আন লাকি কেন ভাবছো? একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। যে তোমাকে হারিয়েছে সে আন লাকি৷ সে বুঝতে পারছে সে কি হারিয়েছে। তাই পাগলামি করছে। আমরা তো থাকতে মূল্য বুঝিনা৷ হারিয়ে গেলে বুঝি। হারানো জিনিস তো ফিরে আসে না,তখন আক্ষেপ ছাড়া আমাদের কিছু করার থাকে না৷
‘আপনার জ্ঞান দেয়া শেষ নাকি আরো বাকি আছে?
‘সরি বেশি বলে ফেললাম। কিন্তু ইরহা তুমি তো এমন ছিলো না।
‘গাড়ী থামান আমি নামবো।
‘এই তো কাছাকাছি চলে এসেছি, তোমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দেই।
‘আমি এখানেই নামবো।গাড়ী থেকে নামার আগে ইরহা বললো,জীবনে সব সময় অসহায় নারীদের থেকে দূরে থাকবেন। আপনার বউ, বাচ্চা নিয়ে ভালো থাকবেন৷ ভুলে যান ইরহা নামের কেউ পৃথিবীতে আছে৷
‘আহনাফ ইরহাকে নামিয়ে দিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো। তার ইরহা তো ছিলো খুব নাজুক একদম কোমল। সেই ইরহা এতো কঠোরতা আর কঠিন কথা কিভাবে শিখলো! সময়ের আঘাত কি তবে, মানুষকে এভাবেই পাল্টে দেয়?আমি তোমাকে ভালোবাসতাম, ভালোবাসি, ভালোবাসবো। পরিবার আর নিজের প্রয়োজনে বিয়ে করেছি তবে মনের মিল নেই। সম্ভব না মনের মিল হওয়া। ভালোবাসা বোধহয় ভুলে যাওয়ার যে সহজ।যত সহজে ভালোবাসা যায়, তত সহজে ভোলা যায় না৷ অথচ ভুলে যেতে পারলেই আমরা সুখী হতাম।

ক্লাস শেষ করে বের হয়েছে লাবিবা। অটোর জন্য দাঁড়িয়ে আছে।
অটোর জন্য আশেপাশে থাকাতেই চোখ পরলো রাতুলের দিকে। রাতুল একটা মেয়ে হাতে হাত রেখে এদিকেই আসছে।
রাতুলের হাত অন্য আরেকজনের হাতে আবদ্ধ দেখে লাবুর হৃদয় কেমন করে উঠলো।দৃশ্যটা যেনো হৃদয়ে ক্ষত তৈরি করে দিলো। সাথে মস্তিষ্কে জুড়ে দিলো কতশত প্রশ্ন। লাবিবার পাশে এসেই দাঁড়ালো রাতুল।
‘লাবিবা আর একটু দূরে সরে দাঁড়ালো।
রাতুলের পাশে থাকা মেয়েটা বলছে, বাবু বল তো আমাকে বেশি সুন্দর লাগছে নাকি এই মেয়েটাকে?
‘রাতুল ফিসফিস করে বলে,বর্না বেশি হয়ে যাচ্ছে।ওভার এক্টিং করার দরকার নেই।
লাবিবা অটোতো উঠো বসলো, রাতুল আর মেয়েটাও বসো। মুখোমুখি বসে আছে দু’জনে। মেয়েটার হাত এখনো রাতুলের হাতে। লাবিবা নিজের ফোন বের করলো রাতুলকে শুধু মেসেঞ্জারে ব্লক দিয়ে পোস্ট করলো……….. “শুনো তোমার প্রেমে পরার আগে আমি তোমার ব্যাক্তিত্বে মুগ্ধ হয়েছিলাম৷ তোমার চেহারা খারাপ হলে আমার ভালোবাসা তোমার প্রতি কমবে না। কিন্তু যদি ব্যাক্তিত্ব খারাপ হয়ে যায়! তবে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা মরে যাবে।আর জানোই তো, মৃত জিনিস আর ফেরত আসে না৷।

পোস্ট করে নিজের মোবাইল আবার ব্যাগে রেখে দিলো। রাতুল নিজের ফোন বের করলো,ফেবুতে ঢুকে পোস্ট-টা দেখে মনে মনে একটু আনন্দিত হলো, রাতুল পোস্ট করলো……. যে অকারণে ছেড়ে যায় , সে অকারণেই ভুল বোঝে হাতে, হাত রাখলেই কেউ চরিত্রহীন হয়ে যায় না। কিছু জিনিস দূর থেকে খালি চোখে দৃষ্টি কটু মনে হলেও সামনে তা স্বচ্ছ জলের মত পবিত্র হতে পারে?
লাবিবা ভাড়া মিটিয়ে নেবে যায়।
রাতুল বলে,বর্না আমার মনে হয় কেউ জ্বলছে ভেতরে, ভেতরে।
‘এবার আমাকে ট্রিট দে।
‘সর তোকে কিসের ট্রিট দেবো! বোন হয়ে ভাইয়ের প্রেম বাঁচাতে এতোটুকু করতেই পারিস।
‘ভালোয় ভালোয় ট্রিট দে, নয়তো,ভাবিকে কল করে সবটা বলে দেবো।
‘দেবো তোকে ট্রিট তার আগে ভাইয়ার জন্য একটা মেয়ে খুঁজে দে। সে বিয়ে না করলে আমার বিয়ে বন্ধ।
‘রিন্তি আপুকে দেখতে পারিস।
‘ঠিক বলেছিস আজকেই ভাইয়ার সাথে এ বিষয়ে কথা বলবো৷
‘এবার আমাকে ডাবল ট্রিট দে।
‘চল ট্রিটের নিচে তোকে চাপা দিয়ে রাখবো।

নিশাতের মনটা ভিষন খারাপ হয়ে গেলো,নিজের বাসায় আজ তার পরিচয় মেহমান! এই কথাটা তাকে আঘাত করেছে খুব করে। নিজের ফোন বের করে নাদিমকে কল করলো।
‘নিশাতের কল দেখে সাথে, সাথে কেটে কল ব্যাক করলো।
‘রিসিভ করে নিশাত ভারি কন্ঠে বলে,কতদিন এ বাসায় ফেলে রাখবে আমাকে? এখনো নিতে আসো না কেন?
‘এই তোমার কি হয়েছে বলো তো? সবে তো চারদিন হলো তুমি না বললে সপ্তাহ খানেক থাকবে।
‘আমি থাকতে চাইলেও তুমি কেন থাকতে দেবে!তুমি বলবা নিশাত তুমি ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো এতোদিন। রাতে একাএকা ঘুম আসে না। তাড়াতাড়ি চলে এসে মিষ্টি বউ।
‘আজকে আমার বউটার মন খারাপ কেন? তার এই ভারি, ভারি কথার কারন কি? কেউ কিছু বলেছে তোমাকে?
‘কে কি বলবে!তুমি কি আমাকে মিস করো না?
‘কেন সিস করবো না! অনেককক মিস করি। তোমার রাগারাগি, তোমার দুষ্ট ভালোবাসা, অভিমান সব মিস করি।
‘তাহলে আজই এসে আমাকে নিয়ে যাও। আমি আর থাকবো না তোমাকে ছাড়া।
‘আচ্ছা অফিস আটটায় শেষ হবে। সোজা তোমাকে নিতে আসবো। এবার একটু হাসো।
‘তুমি আসো তবেই হাসবো।কথা শেষ হওয়ার আগেই রুপা এসে বলে,ফুপ্পি, ফুপ্পি বাবা তোমার জন্য কি নিয়ে এসেছে দেখবে চলো।
‘আচ্ছা রাখি সাবধানে এসো।
নাদিম আর কিছু বলতে পারলো না। তবে ভাবতে লাগলো, কারন নিশাতের কথাগুলো কেমন দুঃখী, দুঃখী শোনালো।

#চলবে

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৮

জারিফ বাসায় এসে সোফায় গা এলিয়ে দিলো৷ চোখ দু’টো বন্ধ করতেই ভেসে উঠলো পুরোনো কিছু স্মৃতি………. হসপিটালের বেডে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে রোকেয়া বেগম ( জারিফের মা)ব্লাড প্রয়োজন ছয় ব্যাগ কিন্তু দুই ব্যাগ ব্লাড পাওয়া যায়নি৷
ঠিক সে সময় একটা মেয়ে ডাক্তারকে এসে বললো,আমি যদি এক ব্যাগ ব্লাড ডোনেট করি তাহলে কি পেশেন্টের অপারেশন করতে পারবেন?
‘হুম তাহলে রিক্স নেয়া যেতে পারে। তবে আপনার হেল্থ কন্ডিশন তো ভালো না ম্যাম।
‘ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। দুই চারদিন পরে সেরে যাবে। তবে যার আজ এই মূহুর্তে রক্তের প্রয়োজন সে হয়তো রক্ত না পেলে আগামী দিনের সূর্যদয় দেখতে পারবে না। প্লিজ আর মানা করবেননা। অনেক সময় ধরে খেয়াল করছি রক্তের জন্য সবাই ছোটাছুটি করছে৷
‘জারিফ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখছিলো, এই স্বার্থের দুনিয়ায় নিঃস্বার্থ একজান মানবী। যে নিজের কথা না ভেবে অপরিচিত একজন মানুষের কল্যানে এগিয়ে এসেছে। সে একটা সন্তান সহ হাঁটুর বয়সি ছেলের সাথে রিলেশন করবে? জারিফ মনে, মনে স্থীর করলো, যদি এটা হয়েই থাকে তাহলে আমি এই মেয়ের সাথেই রাতুলের বিয়ে দিবো।এমন মেয়ে তো সহজে পাওয়া যায় না৷
জারিফ আর রাতুলের আপন বলতে এই দু’ই ভাই তাদের বাবা,মা একটা এক্সিডেন্টে মারা যায়। তারপর পর থেকে দুইভাই একে অপরের সুখ দুঃখের সঙ্গী।

রাতুল বাসায় এসে জারিফকে এভাবে দেখে বলে,ভাইয়া কি হলো তোমার? সকালে এতো হ্যান্ডসাম হয়ে বের হলে,আর এখন একদম মনমরা কাহিনি কি?
‘কিছু না একটু টায়ার্ড। আচ্ছা লাবিবার বাসার এড্রেস দে তো।
‘কি করবে?
‘তোর জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো। মেয়েকে আমি আগে থেকেই চিনি অনেক ভালো একটা মেয়ে।
‘হুম আমি জানি কিন্তু তোমার বিয়ে না দিয়ে তো আমি বিয়ে করছি না!
‘আচ্ছা রাতুল তোদের প্রেমটা কিভাবে হলো?না মানে লাবিবাকে মেনে নিতে তোর কোন সমস্যা নেই তো?
‘আমি লাবিবাকে ভালোবাসি ওকে মেনে নিতে আমার কোন সমস্যা নেই। তুমি মেনে নিলেই হয়৷
‘আমার মানা না মানার কি আছে!সংসার করবি তুই তোর যখন আপত্তি নেই আমারও নেই।শুধু পাড়া প্রতিবেশীদের কটু কথা সহ্য করতে হবে?
‘তুমি সেসব চিন্তা করোনা। সবাই বাহবা দেবে উল্টো বলবে এমন মেয়ে আমি কই পেলাম?

জারিফ উঠে রুমে চলে আসলো, ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,যাকে খুঁজে বছরের পর বছর পাড় করলাম সে এখন এক বাচ্চার মা!আবার কয়েকদিন পরে আমার ছোট ভাইয়ের বউ! এটা কি পসিবল? নাকি আমার কোন ভ্রম?

রাতুল বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে লাবিবার আবেগঘন পোস্ট দেখে বলে,হায় আমার নিব্বি প্রেমিকার খুব জ্বলছে। লাবিবার পোস্ট……

“ভালোবাসলে তাকে যে পেতেই হবে এমন তো নয়!
সে থাক না তার মতো।
নাই বা খুঁজলো আমার ভালোবাসার ছন্দ
নাই বা হলো আমার মন খারাপের সাথী
তবে মন খারপে তার কথা ভেবেই আমার মুখে ফুটে ওঠে হাসি…
সে নাই-বা জানলো আমার অভিমানের কারন
তবে তার জন্য আমার কি অভিমান করাও বারণ?
আমার অনূভুতি না হয় অপ্রকাশিতই থাক!
তার না হয় অজানাই থাক,
আড়ালে আবডালে তাকে কেউ এক সমুদ্র ভালোবাসে।
তার আড়ালে লুকিয়ে তার চেয়েও তার কথা বেশি ভাবছে।
প্রকাশ করলেই না অবহেলা বারে…
তার চেয়ে অপ্রকাশিত ভালোবাসাটা অপ্রকাশিত থাক।
আমার গল্প সে হলেও
সে না হয় অন্য কাউকে গল্প বানাক।
তাকে ছুয়ে দেখা না হোক।
হৃদের গভীরে ধারন করে অনুভব করা হোক
ছুঁয়ে দেখতে তো অনেকই পারে
অনুভব তো আর সবাই করতে পারে না।
এতো অপ্রাপ্তির ভীরে সে একান্ত আমার অপ্রকাশিত ভালোবাসা হয়ে থাক।
নাই বা দিলো সে আমায় তার সুখ, দুঃখের ভাগ!!

রাতুল কমেন্ট করলো রুপা আইডি দিয়ে, আপু দুনিয়া আপডেট হয়ে গেছে, এখন কেউ কারো দুঃখের ভাগ এমনিতেও নেয়না। এসব আবেগ এখন সস্তা খুচরা মূল্যে বিক্রি হয়।
রাতুল মনে, মনে বলে,তুমি পুড়বে আমি তোমাকে পোড়াবো! যে দহনে জ্বলছি সে দহনে তোমাকেও জ্বালাবো সুইটহার্ট।


আজকের ঘটনা ইরহাকে বেশ আঘাত করেছে। কি করবে এই কথাটি তার ভাইকে বলবে?নাকি বাড়তি অশান্তি আর পেরেশানিতে ফেলার দরকার নেই কাউকে।
মলিন মুখে বাসায় ঢুকে আগেই ফ্রেশ হয়ে নওশাবাকে কোলে তুলে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে আদর করে দিলো।
কথায় আছে মায়েরা সন্তানের মুখ দেখে বলতে পারে,তার সন্তান কেমন আছে? ফরিদা বেগম আরহার কাছে এসে বলে,কিরে মা তোর কি মনটা কোন কারণে খারাপ?মুখটা কেমন শুকনো লাগছে।
‘খুব খিদে পেয়েছে মা’ খেতে দাও।এরজন্যই মুখ শুকনো দেখাচ্ছে।
‘এতো বড় কবে হলি ইরহা? নিজের মায়ের কাছেই দুঃখ লুকাতে শিখে গেছিস!
‘নিজের কষ্টটা আর লুকাতে পারলোনা। এতো ক্ষণের আটকে রাখা অশ্রুগুলো অঝোর ধারায় ঝড়ে পরতে লাগলো।
ফরিদা বেগম ইরহার মাথায় হাত রেখে বলে,কি হয়েছে আমাকে বল মা’
‘ইরহা সবটা বললো ফরিদা বেগমকে। ফরিদা বেগম নিজের আঁচল দিয়ে মেয়ের চোখের জল মুছে দিয়ে বলে,থানায় জিডি করে রাখবো ওর নামে, এতো বড় সাহস আমার মেয়েকে রাস্তায় অপমান করার চেষ্টা করে!নাদিম আসুক আজ বাসায়। আর তুই আরো স্ট্রং হ।নরম মানুষকে সবাই আঘাত বেশি করে,তুই নরম না তুই হলি ইট।কোথায় জেনো পড়েছিলাম, আমি মাটি ছিলাম তোমারা আমাকে পুড়িয়ে, পুড়িয়ে ইট বানিয়েছো, এখন আমাকে ভাঙ্গা এতো সহজ না!!
কেউ ভাঙ্গতে আসলেও তার শক্তি ব্যায় করতে হবে। তাই নিজেকে আরো শক্ত কর।
‘মা একটা সুখবর ও আছে, আমার চাকরি হয়ে গেছে পরশু দিন থেকে জয়েনিং।
‘যাক আলহামদুলিল্লাহ একটা কিছু তো ভালো হলো। এখন আস্তে আস্তে সব ভালো হবে ইনশাআল্লাহ।
মা মেয়ের কথার মাঝেই লাবিবা এসে বলে,ভাইয়া কল করেছিল, বলেছে আজকে ভাবির বাসায় যাবে তাই টেনশন করতে না।
‘তোর মোবাইলে কেন কল দিলো?
‘তোমাকেই নাকি দিয়েছিলো তুমি রিসিভ করছো না তাই আমাকে দিলো।

ইরহা বললো তাহলে আজ একসাথে খাবার খেয়ে সবাই একসাথে ঘুমাবো। সবাই মিলে আগের মত রাত জেগে আড্ডা ও দেবো।

✨রবিন নিজের অফিসে এসেছে প্রায় সপ্তাহ খানিক পর। এতোদিনে ব্যাবসার অবস্থা শোচনীয়। অফিসের স্টাফদের সাথে রাগারাগি করে বাসায় ফিরে আসলো। বাসায় এসে চিৎকার করে লামা কে ডাকতে লাগলো।
শেফালী বেগম নিজের রুম থেকে বের হয়ে বলে,লামা তো বাসায় নেই?তোর কোন বন্ধুর বার্থডেতে গিয়েছে। তোকে কিছু বলেনি?
‘রবিন আর কোন কথারে উত্তর না দিয়ে নিজের রুমে আসলো। বেডে বসে মাথায় হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো। কি ভাববে নিজের গাতে নিজের সুন্দর সংসারকে শেষ করে দিয়েছে। এখন হয়তো নিজেকে শেষ করতে হবে! আর নয়তো অন্য কাউকে।


সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বরাবরের মতই ছাদে যেয়ো গাছ গুলোতে পানি দিলো। কিছুক্ষণ সকালের স্নিগ্ধ বাতাস উপভোগ করে নিচে চলে আসলো, কিচেনে যেয়ে চা করে এনে বারান্দায় বসে চায়ের কাপে চুমুক বসালো। চুমুক দিতেই মনে পরলো ও বাড়িতে সকালের ব্যাস্ততা। জীবন কত অদ্ভুত সাজানো সংসার মূহুর্তে তছনছ হয়ে গেলো। অতি আপন মানুষটা কেমন পর হয়ে গেলো!একটা মেয়ে খুব যত্ন নিয়ে নিজের সংসার সাজায়। তিন বছরে একটু একটু করে সাজানো সংসার একটা সাইনে শেষ করে এসেছে।মেয়ারা নিজেদের সংসারকে খুব ভালোবাসে নিজেকে সারাদিন ক্ষয় করে সংসার গুছিয়ে নেয়। আজ সেই সংসার আন্য কারো। চাইলেই কি সে মায়া ত্যাগ করা যায়?

#চলবে

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-১৬

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৬

ন’টা বাজেই রেডি হচ্ছে জারিফ।গোল্ডেন শার্ট আর ব্ল্যাক প্যান্ট। উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ে বেশ ফুটেছে শার্ট-টা। চুলগুলো সেট করছিলো। তখন রাতুল এসে বলে,আজকে কি কোন বিদেশি ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং আছে? সকাল সকাল এতো ফিটফাট হয়ে কোথায় যাচ্ছো?
‘একটা জরুরি কাজ আছে শনি আখড়ার দিকে যাবো।
‘ওদিকে কি কাজ?
‘এখন কি আমার কাজের শিডিউল তোকে দিতে হবে?
‘নাহহহ তা কেন হবে। তবে আজকে তোমাকে বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে।
‘বয়স ত্রিশের কোটা পার করেছে, এখন হ্যান্ডাস লাগার কিছু নেই।
‘ভাইয়া এখন মানুষ পঁয়ত্রিশেও বিয়ে করে। আর ত্রিশতো নরমাল। তবে আঠাশেই করে নেয়া ভালো।
‘তা তোর বয়স কত? তুই যে সত্তুর বছরের বুড়োদের মত বিয়ে নিয়ে ভাষণ দিচ্ছিস!

‘এই তো বাইশের শেষ দিক আর তৈইশ উঁকি দিচ্ছে।
‘যদি এই বয়সে তোর পঁচিশ বা ছাব্বিশ বয়সি মেয়ের সাথে প্রেম হয় বা বিয়ে হয় তুই কি মেনে নিবি?
‘প্রেম ভালোবাসার জন্য বয়স লাগে নাকি? হতেই পারে আমার বয়সি কেউ এক বাচ্চার মা সহ কোন ডিভোর্সী মেয়েকে বিয়ে করলো। অথবা কোন বিধবা মেয়েকে বিয়ে করলো। নয়তো ভার্সিটির সিনিয়র মেয়ের সাথে প্রেম করে বিয়ে করলো। বয়সতো একটা সংখ্যা মাত্র। ভালোবাসা হলো রঙিন প্রজাপতি কখন তোমাকে ছুঁয়ে দিয়ে রাঙিয়ে দেবে বুঝতেও পারবা না।
‘তোর আজাইরা কথা শোনার সময় আমার নেই৷ আসছে লেকচার দিতে। এসব কথা মুখেই মানায় কাজে ঘটলে তখন দৃষ্টিকটু দেখায়। ভালোবাসার ভূত মাথা থেকে নামিয়ে নাস্তা করে ভার্সিটিতে যা।
‘ভাইয়া তুমি বলেছে, তুমি যেভাবেই হোক লাবিবাকে বোঝাবে। ওর সাথে কথা বলেছো?
‘তুই ভার্সিটিতে যা। আমি কথা বলে তোকে জানাবো।
জারিফ নিজেকে শেষ বারের মত আয়নায় পর্যবেক্ষণ করে বের হয়ে গেলো।

✨ইরহা নাস্তা বানিয়ে টেবিলে গুছিয়ে রেখে, নওশাবার জন্য সবজি খিচুড়ি রান্না করে নিয়ে আসলো। নওশাবাকে ফ্রেশ করিয়া খিচুড়ি খাওয়াচ্ছিলো। নওশাবা খেতে চাচ্ছে না ইরহা জোড় করে খাওয়াচ্ছে।
ফরিদা বেগম বললেন,মেয়েটা কাঁদিয়ে খাওয়াতে হবে না। দে ওকে আমার কাছে দে।

‘আচ্ছা মা’তিনদিন হয়ে গেলে ভাবির কোন খবর নেই।
‘নিশাত বাপের বাড়ি গেলে একসপ্তাহ তো থাকেই। সবে তিনদিন হলো। আর চার পাঁচ দিন যাক। নাদিম নিজেই যেয়ে নিয়ে আসবে৷

তুই যা হাত ধুঁয়ে নিজে খেয়েনে আর লাবুকেও ডেকে তুলে খেত বল। কলেজে যাবে না নাকি?

ফরিদা বেগম নওশাবে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলেন।

‘ইরহা রুটি ছিড়ে তরকারি নিয়ে মুখে দিবে আর তখনি ফোনটা বেজে উঠলো। রুটির টুকরো মুখে পুরে মোবাইলটা হাতে নিলো।নাম্বার দেখে টাইম খেয়াল করলো দশটা বিশ বাজে। ভুলেই গিয়েছিল ইরহা। একটু পানি মুখে দিয়ে নিজের রুমে এসে বোরকা আর হিজাব পরে বের হয়ে গেলো।
রাস্তায় বের হয়ে রিকশায় বসতেই আবার রিং বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নরম কন্ঠে বলে,আপু প্লিজ দেখা করুন আমার খুব জরুরি কথা আছে।
‘আপনি হসপিটালের পিছনের গেটের সামনে অপেক্ষা করুন আমি আসছি।আমার আসতে ত্রিশ মিনিট লাগবে।
‘এতোক্ষণ আমি দাঁড়িয়ে থাকবো!
‘তাহলে চলে যান, নয়তো রাস্তায় বসে পরুন। আচ্ছা এক কাজ করুন রাস্তা পার হয়ে দেখনু একটা ছোটখাটো রেস্তোরাঁ আছে। সকালের নাস্তা না করে আসলে, করে নিন আমি আসতে, আসতে। বলেই কল কেটে দিলো ইরহা।
‘এই মেয়ের এতো জেদ কেন!কোন কথা বলার সুযোগ-ই দেয়না। জারিফ তোকেও এমন কাটকাট কথা বলতে হবে। যেভাবেই হোক এই মেয়েকে বুঝিয়ে তোর ভাইয়ের ঘাড় থেকে নামাতে হবে।

✨নিশাত বসে বসে নিজের মায়ের সাথে গল্প করছিলো। নিশাতের বড় ভাবি নিহা বলে,তুমি আর কতদিন থাকবা নিশাত? জামাইকেও বলো দুচারদিন তোমার সাথে এসে থাকতে। আসলেই চলে যায় নাদিম তো থাকেই না।
নিশাতের ছোট ভাবি তোহা বলে,তার একার জ্বালা কি কম মনে হচ্ছে ভাবি! যে দাওয়াত করে আরো একজন আনতে চাইছেন।
‘ভাবি একদম মুখ সামলে কথা বলেন,এটা আপনার বাড়ি না। এটা আমার বাপের বাড়ি।
‘মুখ সামলে কথা বলবো মানে!নিজের বাড়িতে দাঁড়িয়ে স্বামীর টাকায় খেয়ে তোমাকে ভয় পেয়ে কথা বলবো নাকি?ভুলে যেওনা বিয়ের পরে স্বামীর বাড়ি হলো নিজের বাড়ি। আর এ বাড়িতে তুমি দু’দিনের মেহমান তাই মুখ সামলে কথা তুমি বলো।
‘আমার বাড়িতে আমি মেহমান কেন হতে যাবো। এটা আমারও বাড়ি।
‘বললেই তো আর হয়ে যাবেনা। বিয়ের পরে মেয়েরা হয়ে যায় পর।
‘তুমিও কি তোমার বাপের বাড়ির পর হয়ে গেছো?
‘তাতো হয়েছি-ই এখন এটাই আমার বাড়ি।
‘ভাইয়া বাসায় আসুক আজ এর একটা বিহিত না করা পর্যন্ত খাবার মুখে তুলবো না।
‘আছে তো এই ঝামেলা করার গুন আর করবা কি এটা ছাড়া। যতবার আসবে ততবার ঝগড়া বাঁধিয়ে দিয়ে যাবে।
‘তোহা থাম তো কি শুরু করলি। এটা যতটা তোর বাড়ি ঠিক ততটাই নিশাতের বাড়ি। এসব নিয়ে বাচ্চাদের মত ঝগড়া করিস না। যাহহহ নিজের কাজ কর।
‘সব সময় আসবে খাবে আমাদের বিরক্ত করবে জ্বালাবে আবার যাওয়ার সময় অশান্তি বাধিয়ে রেখে যাবে। এই মেয়ে স্বামীর সংসারে টিকে আছে কিরে?
রাবেয়া বেগম বললেন,তোহা এবার তুমি বেশি বলে,ফেলছো,ছোট ননদ কই আদর যত্ন করবা তা-না মেয়েটা বাড়িতে আসলেই ওর পিছে পরে থাকো৷
‘তোহা কিছু বলার আগে নিহা বললো, আর একটা কথাও বলবি না তুই।তোকে আমি পরে দেখবো৷
তোহা রাগ দেখিয়ে চলে আসলো। মনে, মনে বলে এক বাড়িতে দু’বোন বিয়ে করাই ঝামেলা মনমত কথাও বলতে পারি না৷

তোহা চলে যেতেই নিহা বলে,মা’আপনি ওর কথায় কিছু মনে করবেন না।আপনি নিশাতের কাছে যান, আমি আপনাদের জন্য চা করো নিয়ে আসছি৷

✨ইরহা হসপিটালের সামনে এসে কল করলো,
‘জারিফ রিসিভ করে বলে আপনি যেখানে বলেছিলেন আমি সেখানে বসে নাস্তা করছি।
‘আচ্ছা ভিড় কেমন এখন?
‘অতো একটা ভিড় নেই কারন প্রায় বারোটা বাজে সবার সকালের নাস্তা করা শেষ।
‘আচ্ছা আমি আসছি।
‘ইরহা রেস্তোরাঁয় ঢুকলো। খুব ছোট একটা খাবের রেস্তোরাঁ হসপিটালের পাশে। এই মূহুর্তে চার-পাঁচজন মানুষ আছে বাকি পুরোটা ফাঁকাই। ইরহা কল করতেই কর্নারে টেবিলের উপর রাখা ফোনটা বেজে উঠলো৷ ইরহা দু’টো চায়ের অর্ডার দিয়ে জারিফের বিপরীত পাশে বসলো।
‘জারিফ বলে, আপনি?
‘হ্যা আমি দ্রুত খাবার শেষ করুন।
‘জারিফ টিস্যু দিয়ে হাত মুছে ইরহার দিকে তাকায়, পার্পল কালারের হিজাব,মুখটা মাক্স দিয়ে ঢাকা। তবে চোখ আর কপাল দেখে বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা সুন্দরী।
‘ইরহা চামিচ দিয়ে টেবিলে বাড়ি দিয়ে বলে,আপনার জরুরি কথা কি আমাকে পর্যবেক্ষণ করা।
‘হ্যা, না, না তা কেন হবে! আমি এসেছে জরুরি কথা বলতে৷আচ্ছা মাস্কটা খুলে ফেলুন এমন মাস্ক পরা থাকলে কথা বলতে আনইজি লাগবে৷
‘আমি আপনার প্রেমিকা বা বিয়ে করা বউ না যে ইজি লাগবে কথা বলতে! বলার হলে বলুন নয়তো আমি চলে যাচ্ছি।
‘আচ্ছা বলছি।
‘আমি শুনছি শুরু করুন।
‘আপনি সত্যি বিবাহিতা? সত্যি আপনার মেয়ে আছে?
‘ইরাহা রেগে গিয়ে বলে, এই জরুরি কথা আপনার? একটা অপরিচিত মেয়েকে কল করে ডেকে এনে এসব জিজ্ঞেস করছেন? লজ্জা করে না আপনার!
‘জরুরি কথা বলার আগে এটাও জানা জরুরি। প্লিজ বলুন।
‘আমি ডিভোর্সী আর হ্যা আমার মেয়ে আছে আর কিছু?
‘এর মধ্যে চা দিয়ে গেলো ওয়েটার।
‘ইরহা মাস্ক খুলে চায়ের কাপটা হাতে নিলো।
‘জারিফ ইরহার চেহারা দেখেই বলে,নাহহ এটা হতে পারে না!
‘ইরহা বলে কি হতে পারে না?
‘আপনি এমন একটা কাজ কিছুতেই করতে পারেন না। আমি এটা মানতে পারছি না। আমারই হয়তো কোথাও একটা ভুল হয়েছে। জরিফ আর কোন কথা না বলে উঠে চলে গেলো।
ইরহার এতোবার ডাকলো একবারের জন্যও পিছু ফিরলো না।

ইরহা বিল পে করে, বের হয়ে আসে, কি আজব মানুষ বললো,জীবন,ম’র’নের কথা আছে, কিছু না বলেই চলে গেলো! অদ্ভুত কি বললো, এটা হতে পারে না! কিন্তু সেটা কি? কি হতে পারে না আর আমি কি করতে পারি না?

#চলবে

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-১৫

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৫

‘আচ্ছা আপু,ষোল বছর বয়সে কি ভালোবাসা হয় না! এই বয়সে প্রেম করলে সবাই এটাকে আবেগ কেন বলে? এই যে আমার হৃদয় পুড়ছে, ভিষণ কষ্ট হচ্ছে, নিজেকে কেমন ছন্ন ছাড়া মনে হচ্ছে। আপু আমার আবেগ কবে শেষ হবে! এই আবেগ আমি সহ্য করতে পারছি না।
“লাবু আমি বলবো না এটা তোর আবেগ।একদিনেও কাউকে শত জনমের ভালোবাসা যায়। আর ষোড়শী প্রেম তো গভীর প্রেম৷ প্রথম অনূভুতি, প্রথম অনুভব। সে সব তো আবেগ হতে পারে না! তবে সময়টা ভুল, এই একটা ভুল তোর সারাজীবনের ক্ষত। তুই কখনো চাইলেও এই মানুষটাকে ভুলে যেতে পারবি না৷ এই প্রথম ভালোবাসা ভয়ংকর।জীবনে যত সুখ আসুক, হুটহাট জীবনের মোড়ে তাকে মনে পরবেই। প্রথম ভালোবাসা অপূর্ণ রয়ে যায়, বেশির ভাগ সময়।
‘আমি তো রাতুল কে ভুলতে পারছি না আপা। আমার কষ্ট হচ্ছে, ভিষণ কষ্ট। মনে হচ্ছে আমার শ্বাস বারবার আটকে আসছে!
‘তোর যদি ইচ্ছে হয় তাহলে তুই রিলেশন কন্টিনিউ কর। তবে মনে রাখি সূচনা যত মধুর সমাপ্তি ততই তেতো। আমি চাইনা তুই ঠিক আমার মত কষ্ট পাস। তবে সবার ভাগ্য এক হয় না৷ আমি ব্যার্থ হয়েছি বলে,তুই ব্যার্থ হবি, যদিও এমন কোন রুলস নেই।

ইরহা চলে আসলো, নওশাবা ঘুমিয়ে আছে, ওর নিষ্পাপ চেহারার দিকে তাকালে ক্ষনিকের জন্য সব কষ্ট ধুয়ে মুছে যায়। আলতো করে চুমু খেলো নওশাবার কপালে। আহনাফের জন্য কষ্ট হচ্ছে। এতোদিন পর দেখা হলো,অথচ স্মৃতিটুকু বিষাদ নিয়ে গেলো! কি করার ছিলো ইরহার! যাকে বলেছিলো ভালো থাকবে, তার সামনে নিজের দুঃখ বিলাস করবে! দুঃখ তো ব্যাক্তিগত এর ভাগ কাউকে দিতে নেই। আমি কেমন আছি, আমি কেমন থাকবো এটা কাউকে প্রভাবিত করবে না। কিন্তু আমি খারাপ আছি,কষ্টে আছি এটা শুনে কেউ সিমপ্যাথি দেখাবে আবার কেউ মজা লুটবে। তাই দুঃখ শুধু নিজের করে রাখতে হয়। যাকে ভালোবাসা দিতে পারিনি তাকে দুঃখের ভাগও দেবো না। ভেতরটা ঝলসে যাক,উপরের চকচকে রঙটা সবাই দেখুক৷ ইরহার ভাবনার মাঝেই ফোনটা বেজে উঠলো।ইরহা ভাবলে হয়তো রবিন কল করেছে, তাই রিসিভ করলো না। এভাবে তিনবার রিং হয়ে কে’টে যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে, অপরিচিত নাম্বার। ইরহা কল রিসিভ করে বারান্দায় যেয়ে সালাম দিলো।
“ওপাশ থেকে মিষ্টি পুরুষালি কন্ঠ ভেসে আসলো, ওয়া আলাইকুমুস সালাম পিচ্চি।
‘আপনাকে কে বললো আমি পিচ্চি? আজাইরা আলাপ অন্যকারো সাথে পারেন৷
‘রিলাক্স বাচ্চা মেয়ে এতো রাগ কিসের?
‘সেই কখন থেকে বাজে কথা বলেই যাচ্ছেন, আমি পিচ্চি! এক মেয়ের মা আমি। আর আমাকে বলেন পিচ্চি।আমার নাম্বার পেলেন কোথায়? আর একবার কল করে ডিস্টার্ব করলে আপনার খবর করে ছাড়বো। যত্তসব ফাউল লোক । বলেই কল কেটে দিলো ইরহা।
জারিফ বোকার মত ফোনের স্কিনে তাকিয়ে আছে। এক মেয়ের মা! মানে তার ভাই বিবাহিত মেয়ের সাথে রিলেশন করে? এটা কি করে সম্ভব! আবার মনে মনে ভাবছে এখন বর্তমানে অনেক ছেলেরা এমন করে। কিন্তু এটাতো রাতুল কে করতে দেয়া যাবে না। মাত্র অনার্সে উঠলো, এই বয়সে এক বাচ্চার মাকে বিয়ে করবে! নাহহহ এটা কিছুতেই হতে দেয়া যাবে না। জরিফ মাথা ঠান্ডা করে আবার কল দিলো। সাথে সাথে রিসিভ, ইরহা কড়া গলায় কিছু বলবে,তার আগেই জারিফ বলে,সরি আপু। আসলে আপনার সাথে আমার জরুরি কথা ছিলো।এরজন্য একজনের কাছ থেকে নাম্বারটা নিয়ে কল করলাম।
‘আমার কোন ছেলের সাথে জরুরি কথা নেই।
জরিফ নিজের রাগ কনট্রোল করে বলে,আপু জীবন ম’রনের কথা প্লিজ মানা করবেন না।আপনার কোথাও আসতে হবে না,আপনি যেখানে বলবেন আমি সেখানে আসবো।
‘নাম কি আপনার?
‘ইমতিয়াজ আহসান জারিফ। পিতা জাকির আহসান।
‘আচ্ছা আগামীকাল সকাল দশটায় মাতুয়াইল শিশু হসপিটালের সামনে থাকবেন।
‘জ্বি আপু।ধন্যবাদ আমার কথা রাখার জন্য।
ইরহা কোন কথার উত্তর না দিয়ে কল কে’টে দিলো।

‘জারিফ বলে,করে তো একটা দুধের শিশুর সাথে প্রেম! ভাব দেখে মনে হয় মহারানী ভিক্টোরিয়া। একবার শুধু হাতের নাগালে পাই,তারপর বোঝাবো।
জারিফ আস্তে আস্তে পা ফেলে, রাতুলের রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো।

রাতুলের দরজা খোলাই ছিলো পর্দার আড়াল থেকে জারিফ দৃষ্টি দিলো রাতুলের দিকে। রাতুল মোবাইলে কিছু একটা দেখছে বা করছে গভীর মনোযোগ দিয়ে।
রাতুলের রুপা নামে একটা ফেইক আইডি আছে সে আইডি দিয়ে লাবিবার আইডি ঘাটাঘাটি করছে। তিন মিনিট আগে লাবিবা একটা পোস্ট করেছে……
শেষ হয়ে যাচ্ছে আমাদের পথচলা….
তবু চিরসবুজ থাকবে আমাদের ভালোবাসা।
~~লাবু

রুপা স্যাড রিয়েক্ট দিয়ে কমেন্ট করলো। পথচলা শেষ হয়ে গেলে ভালোবাসা চিরসবুজ কিভাবে থাকে?
রাতুল অপেক্ষায় আছে কখন লাবিবা কমেন্টের রিপ্লাই করবে? রাতুলের ছোট বেলা থেকে গান গাওয়ার শখ৷ গিটার বাজানো শিখেছিলো। মাঝে, সাঝে টুং টাং সুর তুলে। নিজের গিটারটা হাতে নিয়ে টুংটাং সুর তুলে গাওয়া শুরু করলো…… রাগ কমলে ফোন করিস
আমি রাত জেগে তোর অপেক্ষায়।
তুই কেনো এমন করিস?
ফোন করবো না
আমি রেগে আছি বেজায়।
কথা জমলে ফোন করিস
আমি তারা গুনে লিখে রাখি মেঘের গায়।
বল কেন এত ভুল করিস
আমি গলছিনা কিছুতেই তোর কথায়,
তুই এতো সহজে শুধরে যাবি না জানি
তাই হতেই হয় আমাকে অভিমানী!
তোর ফোন না এলে ঘুম নামে না দু চোখে
তাই তখন থেকে বলেই চলেছি তোকে
রাগ কমলে ফোন করিস।
চোখের কোন কেমন ভিজে এলো। যখনি টুকটাক ঝগড়া হতো গানটা রেকর্ড করে লাবুর ইনবক্সে পাঠিয়ে দিতো। আজ কেন লাবু হুট করে সব শেষ করে দিলে!

জারিফ আড়াল থেকে দেখেই চলে আসলো। মনে, মনে ভাবলো থাক মেয়ে বড় হয়েছে তো কি হয়েছে,যেহেতু রাতুল সত্যিকারের ভালোবাসে, মেয়েটাকে রাজি করিয়ে ছাড়বে। ভালোবাসায় বয়স কিসের আবার! কিন্তু যদি মেয়েটার হ্যাসবেন্ড থাকে তখন কি করবো?

✨রবিন বাসায় এসেছে প্রায় রাত একটায়। শেফালী বেগম তখন গভীর ঘুমে।রবিন নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে দরজা খুলতে যেয়ে দেখে তার কাছে চাবি নেই। তারপর মনে পরলো এই দু’দিন সে জেলে ছিলো। চোখ বন্ধ করে, মনে, মনে কিছু একটা ভেবে দীর্ঘ শ্বাস নিলো। তারপর নিজের ফোন বের করে, লামাকে কল করলো।
লামা রিসিভ করে বলে,কি তোমার এক্স ওয়াইফ জায়গা দিলো না! ফিরে আসতেই হলো?
‘জান কি বলো তুমি! আমি তো বিজনেস ডিল করতে গিয়েছিলাম৷ আর এখন আমার বুদ্ধি সচল হয়ে গেছে, তোমার মত হট, স্পাইসি বউ ঘরে থাকতে ওই মেয়ের কাছে যাবো! তাহলে কি ওকে ছেড়ে তোমাকে বিয়ে করতাম?
‘তাহলে ঘটে বুদ্ধি এসেছে? দাঁড়াও দরজা খুলছি।
কিছু কিছু সময় মানুষ নিরব ঘাতক হয়ে উঠে। কিন্তু লামা সেটা বুঝতেই পারলো না।

রবিন ঘরে ঢুকতেই লামা বলে,তোমার সুবুদ্ধি উদয় হয়েছে অবশেষে।
রবিন লামাকে নিজের কাছে এনে, লামার কপালে পরে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলে,সুইটহার্ট মাঝে মাঝে বুদ্ধি ঘাস খেতে যায়। তাকে ফিরিয়ে এনেছে। এখন যা হবে ধীরে, ধীরে খুব নিরবে।
‘কি করবে?
‘তোমাকে ভালোবাসবো গভীর ভাবে ভালোবাসবো।
‘হুট করে তোমার কথাটা কেমন গায়ে কা’টা দিলো।এভাবে কেউ ভালোবাসার কথা বলে?
‘আচ্ছা জান তোমার বাড়িতে কে কে আছে?
‘বোন আর মা। যদিও তোমাকে বিয়ে করেছি তাই তারা রেগে আছে আমার উপর।
‘রবিন কথাটা শুনে একটা মুচকি হাসি দিলো।

#চলবে