Thursday, August 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 457



হৃদয় কোঠায় চাঁদের পূর্ণিমা পর্ব-০৮

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|৮|
#শার্লিন_হাসান

-এভাবে বসে থাকবা? আমাকে সাইড দাও ঘুমাবো টায়ার্ড লাগছে।

নিবরাস কথাটা বলে আনায়াকে। আনায়া কোন রেসপন্স করে না। সে খাটের উপর বসে আছে। নিবরাস পুনরায় বলে,

-কথা কানে যাচ্ছে না তোমার?

আনায়া বালিশ নিয়ে নিবরাসের দিকে অগ্রসর করে।

-যান সোফায় গিয়ে ঘুমান।

-আমি সোফায় ঘুমাতে পারি না।

-সেটা জেনে আমার কাজ নেই।

-আচ্ছা আমি তারিশাকে আর কীভাবে বললে ওর লজ্জা হবে? এর আগে আমি ওকে যা কথা শুনিয়েছি ওর লজ্জা থাকলে আমার আশেপাশে ঘেঁষত না।

থেমে,

-ও হোস্টেলে যাওয়ার কয়েকদিন আগে। আমি বৈঠকঘরে বসে ফাইল দেখছিলাম তখন ও প্রবেশ লরে সেখানে। ইনিয়েবিনিয়ে বলছিলো,
-শুদ্ধ পুরুষ আপনাকে আমি ভালোবাসি।
তখন ওকে চ’ড় মেরেছিলাম। বলেছি,
-আমার থেকে একশ গজ দূরে থাকবি। বোন,বোনের মতো থাকবি এর থেকে বেশী বাড়াবাড়ি করলে এবার শুধু চ’ড় মেরেছি পরেরবার মুখটাই ভে’ঙে দেবো।

সাথে আরো কথা শুনিয়েছি। তারপর ও মেয়েটা বেহায়া! ওকে তেমন কিছু আমি বলতে পারবো না কারণ ওর বাবা-মা নেই। এখানে বড় হয়েছে আমাদের দায়িত্ব আছে ওর উপর। আর ওর সেন্স থাকলে এসব করতো না। আমার নিজেরই বিরক্ত লাগে ওকে। আচ্ছা তুমি বলে আমি তো এভয়েড করি ওকে।

-আজকে সারাদিন তে ওর চিপায় ছিলেন। এক সাথে গাড়ীতে করে এসেছেন, ওর হাতের বানানো শরবত খেয়েছেন, আবার ওর রান্না ও।

-তুমি নিজে অনুপস্থিত থাকো। তুমি জানো না আমি বাড়ী ফিরলে আমায় ঠান্ডা পানীয় দেওয়া লাগে।

-এসব আমাকে বলবেন না। আমাকে কেউ সুযোগ দেয়? তারিশাই তো আগে গ্লাস নিয়ে হাজির হয়।

-আমি আম্মুকে বলে দিবো।

-আর নাটক সাজাতে হবে না।

আনায়া নিবরাসের কোলে বালিশ ছুঁড়ে মারে। নিজে বালিশ ঠিক করে খাটের একপাশে শুয়ে পড়ে। নিবরাস সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। আনায়া তাকে পাত্তা দিচ্ছে না।
বালিশ নিয়ে সোফায় বসে নিবরাস। হাত দিয়ে কপাল স্লাইড করছে। একটু পর পর আনায়ার দিকে তাকাচ্ছে নিবরাস। তারিশার প্রতি এতো বেশী রাগ হচ্ছে তার।

-আমি স্যরি আর এমন হবে না।

কানে হাত দিয়ে আনায়ার সামনে আসে নিবরাস। তাতেও আনায়া গলে না। মুখ ফিরিয়ে নেয় নিবরাসের থেকে।

-আচ্ছা তারিশা আমাদের মাঝে আসবে না। আমি নিজে ওকে বলে দিবো। প্লিজ পারমিশন দাও আমি সোফায় ঘুমাতে পারি না।

-সারারাত বললেও পারমিশন দেবো না। আর আমায় ডিস্টার্ব করবেন না প্লিজ।

নিবরাস ডান হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়। বা হাত দিয়ে চুল স্লাইড করে মাথার পেছনে হাত রাখে। আনায়ার দিকে একনজর তাকিয়ে সোফায় এসে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর গা এলিয়ে দিতে সক্ষম হয়। তার হাইটের থেকে সোফা ছোট সেজন্য পা আটে না।

-দয়ামায়াহীন বউ! জনগণের নেতাকে এই ছোট্ট সোফায় ঘুমোতে দিচ্ছে। আমার রুম, আমার বাড়ী অথচ খাটে জায়গা হলো না।

বিড়বিড় করতে,করতে ঘুমিয়ে পড়ে নিবরাস।

******

সীতারা আহমেদ কিচেনে নাস্তা বানাচ্ছেন। নাজিয়া উঠেই প্রথমে কিচেনে যায়৷ বাড়ীর বাকীরা এখনো ঘুমাচ্ছে। মেয়েকে দেখে সীতারা আহমেদ প্র্শ্ন করেন,

-এতো সকালে তুমি?

-এখন তো কেউ নেই।

-কিছু বলবা?

-হ্যাঁ বলবো। আনায়া আপুর কথা!

-তোমাকে এই নাম কে বললো শুনি?

-সেসব ছাড়ো! ও তো তোমার সন্তান, কীভাবে এতোগুলো বছর দেখা না করে আছো?

-সেসব তোমায় বুঝতে হবে না। আমার ব্যক্তিগত মতামত,ব্যক্তগত বিষয়ে তুমি খোঁচাবে না। যাও ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আসো

-ওর ও তো ইচ্ছে করে মাকে কাছে পেতে। মায়ের আদর,যত্ন, ভালোবাসা পেতে।

-দেখো নাজিয়া আমাকে ইমোশনাল বানিয়ো না। তুমি যাও তো এখান থেকে।

নাজিয়া আর কথা বাড়ায়না চলে আসে। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে জায়ানের মুখোমুখি হয়। নাজিয়াকে দেখে জায়ান হাসিমুখে বলে,

-গুড মর্নিং আয়াত পাখি।

নাজিয়া মুখ ঘুরিয়ে চলে আসে। কথা বলে না জায়ানের সাথে। নাজিয়া যেতে জায়ান দাঁড়ায়। হয়ত কেউ কিছু বলেছে নাজিয়াকে। নিচে আসতে তার কাকীমা কে দেখে জিজ্ঞেস করে,

-কাকীমা আয়াত পাখিকে কিছু বলেছো?

-না তেমন কিছু বলিনি। কেন?

-হয়ত আমার সাথে রাগ করে আছে।
বিড়বিড় করে বলে জায়ান।

****
ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে খাটে শুয়ে পড়ে নিবরাস। আনায়া নিচে চলে গেছে সেজন্য আর কথা কাটা কাটি হয়নি তাদের মাঝে।

আনায়া কাজের বুয়াদের সাথে নাস্তা রেডি করে টেবিলে সাজায়। চায়ের কেটলি ট্রেতে রাখে কাপ নিয়ে সোফার ট্রি টেবিলে উপর রাখে। নিরব মির্জা, পরাগ,রোহিত নিচে আসে তখন। তাদেরকে চায়ের কাপ দিয়ে উপরের দিকে পা বাড়ায় আনায়া। করিডোরে আসতে দেখে তারিশা তাঁদের রুমের দিকেই যাচ্ছে। আনায়ার বেশ রাগ হয়। চুপচাপ নিঃশব্দে পেছনে হাঁটে।

তারিশা নিবরাসের রুমে প্রবেশ করে। নিবরাস কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে। গুটিগুটি পায়ে নিবরাসের সোজাসুজি গিয়ে দাঁড়ায়। নিবরাসের ঘুমন্ত চেহারার দিকে একবার তাকিয়ে হাসে।
বিড়বিড় করে বলে,

-শখের পুরুষ।

হাত বাড়িয়ে কপাল স্পর্শ করতে যাবে তখন আনায়া তড়িঘড়ি শব্দ করে রুমে প্রবেশ করে। তারিশা তাকে দেখে থতমত খেয়ে যায়।

আনায়া চুলগুলো সামনে ভাজ করে আনতে,আনতে বলে,

-সমস্যা কী তোমার? আমার বরকে স্পর্শ করছো লুকিয়ে? লেসবিয়ান নাকী?

-আমার ভাইকে আমি স্পর্শ করছি তাতে কার কী?

-কিসের ভাই হ্যাঁ? আর কখনো আমাদের রুমে চোরের মতো ঢুকবে না অবশ্যই পারমিশন নিবে। আর আমার নিবরাসকে আগ বাড়িয়ে শরবত,তোমার রান্না করা খাবার ওর প্লেটে দিবা না। দূরত্ব বজায় রাখবা! আগের সময়টা নেই যে তুমি যা খুশি তা করবা। এখন ওর অর্ধাঙ্গিনী আছে ওর দেখভাল করার জন্য।

চিৎকার, চেঁচামেচি তে নিবরাস উঠে বসে। আনায়ার দিকে তাকাতে দেখে রেগে আছে সে। পাশে তারিশা সেও রেগে আছে।

-তারিশা এখানে কী করছে?

-আমার অনুপস্থিতিতে আপনায় স্পর্শ করতে চাইছে। কতবড় নিলজ্জ হলে হতে পারে।

নিবরাস তারিশার দিকে রেগে তাকায়। কঠোর গলায় বলে,

-নেক্সট টাইম আমার রুমে পারমিশন ছাড়া আসবি না। আর আমার সব দরকার, প্রয়োজন দেখার জন্য আমার বউ আছে। একদম গায়ে পড়তে আসবি না আমার এসব পছন্দ না। দ্বিতীয় বারের মতো ওয়ার্নিং দিলাম। এরপর চড় পাঁচ ছয়টা বসবে আমি ওতো দয়ালু না। এখন গেট লস্ট!

তারিশা চলে আসে। আনায়া নিবরাসের দিকে একবার তাকায়। পরক্ষণে বাইরে চলে যায়।

নিবরাস উঠে বেলকনির দিকে যায়। একে তো তারিশার জন্য গত কালকে খাটে ঘুমাতে পারেনি। আজকে যদি কিছু হতো তাহলে তো রুমেই জায়গা হতো না তার।

রুমে এসে রেডি হয়ে নেয় নিবরাস। সাদা পান্জাবি গায়ে জড়িয়ে নেয়।
নিচে এসে সবার সাথে বসে নাস্তা করে নেয়। সৌরভ আসতে তাদেরকে বাজারে পাঠায় নিবরাস। আজকে চারজন মহিলা আসবে তাঁদের জন্য সেলাইয়ের মেশিন কিনে আনতে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য সেলাইয়ের মেশিন দিবে নিবরাস। এগারোটার দিকে তারা চারজন মির্জা বাড়ীতে আসবে।

নিরব মির্জার সাথে কথা বলেনি নিবরাস। মূলত অফিসে তাঁদের মাঝে এক দফা কথা কাটাকাটি হয়েছিলো করের বিষয় নিয়ে।

নিরব মির্জা অফিসে চলে যান। মরিয়ম নওয়াজ তাকে বলে দিয়েছে আজকে সন্ধ্যায় তারা চট্টগ্রাম যাবে।
আনায়া রান্নার বিষয়টা দেখে। তারিশা নিবরাসের থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে তবে নজর তো যায়ই।

গার্ডেনে বসে আছে নিবরাস। তার সাথে রোহিত আছে,পরাগ আছে।

ঘন্টাখানেক পর সৌরভ আসে৷ সাথে তাঁদের দলের কয়েকজন ও আছে।
সেলাইয়ের মেশিন এনে বিশাল লিভিং রুমে রাখা হয়। যথাসময়ে মহিলা চারজন আসে। নিবরাস তাঁদেরকে মেশিন বুঝিয়ে দেয়। তাঁদের বাড়ী অব্দি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়।

সন্ধ্যায় তারা রওনা হবে চট্টগ্রাম এর উদ্দেশ্য।
রান্নাবান্না শেষ হতে আনায়া রুমে চলে আসে। নিবরাস লোকদের বিদায় দিয়ে রুমে আসে। আনায়া নিজের ব্যাগ গুছায়। নিবরাস তাকে দেখে বলে,

-আমার ব্যাগটাও গুছিয়ে দাও।

-নিজের কাজ নিজে করা বেটার।

-কী বউ তুমি? শ্বশুর মশাইকে জিজ্ঞেস করবো জন্মের পর তোমায় মধু খাইয়েছে কীনা।

-করলা আমার প্রিয়।

-দেখতে মিষ্টি মেয়ের মতো কিন্তু কথাবার্তা এতো জঘন্য তেতো কেন?

কিছু বলেনা আনায়া। চুপচাপ নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিবরাসের ব্যাগটাও গুছিয়ে দেয়। আনায়াকে চুপচাপ দেখে নিবরাস নিজে আগ বাড়িয়ে বলে,

-আচ্ছা আমি কী তোমায় কোন ব্যপারে হার্ট করেছি?

মাথা নাড়ায় আনায়া। নিবরাস তাকে কাছে ডেকে নেয়। আনায়া চুপচাপ বসে আছে নিবরাসের সামনে। আনায়াকে এমন চুপচাপ দেখে নিবরাস বলে,

-এতো চুপচাপ থাকো কেন পাখি?

-এমনিতে মন চায়।

-আমি শুনেছি তুমি চঞ্চল তাহলে এখন নিশ্চুপ কেন?

জবাব দেয়না আনায়া। নিবরাস ব্যর্থ হয়। আনায়াকে পুনরায় জিজ্ঞেস করে,

-মাকে মনে পড়ে?

-একদম না। আমার এখন চুপচাপ থাকতে ভালো লাগে। আচ্ছা আপনি বলুন আমাকে ম্যাচিউর হতে হবে না? ইমম্যাচিউর পিচ্চি থাকতাম? নেতার বউ না আমি?

-আচ্ছা তুমি ম্যচিউর হও আর যা খুশি হও আমার সামনে ইমম্যাচিউর থাকবা। ওতো বুঝদার বউ আমার দরকার নেই আমি আমার বউয়ের পাগলামী দেখতে চাই।

-বিরক্ত হয়ে যাবেন।

-সময় বলে দিবে।

হাসে আনায়া। নিবরাস তার হাসির দিকে তাকিয়ে আছে।

-আচ্ছা পাখি তোমার আদরযত্ন ঠিকঠাক হচ্ছে তো?

ব্রু কুঁচকে তাকায় আনায়া। নিবরাস হাসছে আনায়া মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

-চলো চুমু খাবো তোমায়।

কথাটা বলে আনায়ার ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয় নিবরাস।

এরই মাঝে দরজায় কেউ নক করে। নিবরাস কিছুটা সরে যায়। আনায়া দরজা খুলতে তারিশাকে দেখে। নিবরাস বেশ বিরক্ত হয়। আনায়া তারিশাকে জিজ্ঞেস করে,

-কোন দরকার আছে?

তারিশা নিবরাসের দিকে একবার তাকায়। পরক্ষণে বলে,

-হ্যাঁ মামনি ডাকছে।

-তুমি যাও আমরা আসছি।

#চলবে_

হৃদয় কোঠায় চাঁদের পূর্ণিমা পর্ব-০৭

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|৭|
#শার্লিন_হাসান

আহিয়ার বাবা হসপিটালে ভর্তি আছে । নিবরাসের দলের কয়েকজন আসে হসপিটালে। তাঁদের একজনের হাতে ফুল৷ কেবিন নাম্বার জেনে তারা ভেতরে প্রবেশ করতে দেখে আনিসুল হক অক্সিজেন মাস্ক লাগানো মুখে। তাদেরকে দেখে চিনতে ভুল হয়নি। নিবরাসের দলের একজন সৌরভ ফুলটা এগিয়ে দিয়ে বলে,

-আনিসুল হক আমাদের নেতার পক্ষ থেকে আপনার জন্য। জানি বেশীদিন টিকবেন না! আমাদের নেতা আবার বেশ দয়ালু দেখুন আপনি তার শত্রু অথচ আপনার মৃত্যুর সময়টা যাতে ফুলের মতো সুন্দর হয় সেজন্য ফুল সাথে দো’আ পাঠিয়েছে।

সৌরভের কথায় আনিসুল হক অক্সিজেন মাস্ক খুলে বলে,

-অসুস্থ হয়েছি বলেই কী মরে যাবো? চিকিৎসার জন্য হসপিটালে এসেছি এই নয় যে আমার অবস্থা করুণ।

-চিকিৎসা না হলে তো আর বাঁচবেন না। নেতাকে বললে সেটাও ব্যবস্থা করে দিবে। আপনাকে উপরে পাঠানো তো সময়ের ব্যপার।

সৌরভের কথায় আনিসুল হক চুপসে যায়। তখন আহিয়া রুমে আসে। সৌরভকে দেখে বেঙ্গ করে বলে,

-কীরে নেতার চামচা ফুলটা কিনে আনার জন্য কত টাকা মারলি? নিশ্চয়ই কোন অসহায় লোকের পকেট থেকে চাঁদাবাজি করেছিস। ফুল না আনলেও হতো! লোকটার অন্তত একবেলার খাবার জুটতো।

-ফাল’তু কথা বাদ দে আহিয়া। নিবরাস ভক্তরা চাঁদাবাজি করে না। তবে শামিম সরদারের লোকজন আমাদের নাম করে চাঁদাবাজি করলেও করতে পারে।

-এসব দুই টাকা পাঁচ টাকা শামিম সরদার নেয়না ভিক্ষা করে। এসব তোরাই নিস!

-মনে হয় বাপের সাথে তোকে ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ইনজেকশন দিয়ে উপরে পাঠাতে হবে।

-একটা মে য়াদ উত্তীর্ণ ইনজেকশন দিয়ে আমায় মারা যাবে না। আমায় মারতে হলে দম লাগবে যেটা এখনো মুয়াম্মার নিবরাস মির্জার হয়ে উঠেনি।

-দেখা যাবে।

সৌরভ তার দলের লোকদের নিয়ে বেড়িয়ে আসে। আহিয়া তাঁদের যাওয়ার পাণে তাকায়। আনিসুল হকের কাছে এসে বসে।

-চিন্তা করো না বাবা। এঁদের একদিন সব শেষ হবে। এই নিবরাস মুখোশ পড়ে থাকে। এর মুখোশ একদিন আমি টেনে ছিঁড়ে দেবো।

-পারবি না মা। ওদের সাথে পারবি না। ভুল যে শুধু ওদের এমনটা তো নয়! আমাদেরও ও ভুল আছে।

-কোন ভুল নেই আমাদের। সব ভুল নিবরাসের।

*****

-স্যার ওই বুইড়া শালাকে হুমকি দিয়ে আসলাম। সাথে ওর সাহসী মাইয়ারে। একা পেলে একবার খেয়ে ছেড়ে দিমু।

পার্টি অফিসে এসে অতি আনন্দের সহিত কথাটা বলে সৌরভ। তাতেই ঠাস করে চড় বসে যায় তার গালে। নিবরাস হুংকার ছেড়ে বলে,

-ভাষার এই অবস্থা কেন তোর? ওই মেয়ের কোন ক্ষতি করবি না। শুধু ওই মেয়ে না আমার এলাকার কোন
মেয়ের যাতে কোন ক্ষতি না হয়। আর যদি কিছু হয় সবার আগে তোকে ধরবো আমি।

সৌরভ চুপসে যায়। এই নিবরাসকে মাঝেমাঝে বুঝতে পারে না কেউ। শত্রু ভয় পেলো এই কথা শোনে কোথায় খুশি হবে তা না ভাষা নিয়ে জ্ঞান দিয়ে দিলো।

মিটিং শেষে নিবরাস বেড়িয়ে যায় পার্টি অফিস থেকে। তখন মাইশা কল দিয়ে বলে মিসবাহকে নিয়ে চলে আসতে। স্কুলের সামনে আসতে দেখলো তারিশা মিসবাহ গেট দিয়ে বের হচ্ছে।

মিসবাহকে দেখে নিবরাস জিজ্ঞেস করে,

-গাড়ী নিয়ে এসেছে তোমার আন্টি?

-না আসেনি। তোমার গাড়ী দিয়ে যাবো আমরা দু’জন।

নিবরাস মাথা নাড়ায়। তারিশা মিসবাহকে নিয়ে গাড়ীতে উঠে বসে। তারিশা সামনে বসেছে নিবরাসের সাথে। মিসনাহ একা,একা পেছনে। তার পেছন দিয়ে একটা গাড়ী আসছে।

কিছু মহিলা এসেছে মির্জা বাড়ীতে। অবশ্য সাহায্য চাইতে এসেছে। মরিয়ম নওয়াজ সাথে আনায়া ছিলো বাইরে মহিলাদের কাছে। তখন নেতার গাড়ী প্রবেশ করে গেট দিয়ে।

আনায়া সাথে মহিলারাও তাকায় গাড়ীর দিকে। নিবরাস গাড়ী থেকে নামতে তারিশা ও নামে। আনায়া নিবরাসের দিকে তাকিয়ে আছে৷ লোকটা এদিকে একবারের জন্য ও তাকাচ্ছে না। মিসবাহ তারিশাকে ভেতরে পাঠিয়ে এদিকটায় আসে। আনায়াকে দেখে বলে,

-বাইরে কী করছো? যাও ভেতরে চলে যাও।

আনায়া আর কথা বাড়ায়নি। পা ফেলে চলে আসে তবে তার হাটায় অনেকটা রাগ প্রকাশিত হয়। নিবরাস মহিলাদের সাথে কথা বলো সমস্যার কথা জানে। আপাতত বাজার করার জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে দেয় চারজন মহিলাকে। আগামী কালকে আসতে বলেছে। একটা ব্যবস্থা করে দিবে নিবরাস।

ভেতরে এসে আনায়া সোফায় বসে আছে। নিবরাস আসতে তাকে দেখেও না দেখার ভান করে আনায়া। নিবরাস আনায়ার সোজা সোফায় আয়েশ করে বসে৷ তখন তারিশা তারজন্য শরবত নিয়ে আসে। আনায়া সামনে বসে আছে তারিশা তার দিকে শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিবরাস নিবে নাকী নিবে না ভাবছে। তখন মরিয়ম নওয়াজ সেখানে উপস্থিত হোন।

-তারিশার থেকে গ্লাস টা নিচ্ছো না কেন নিবরাস?

আনায়া তাকায় তাঁদের দিকে। নিবরাস মাথা নাড়িয়ে শরবতটা পান করে। আমতাআমতা করে বলে,

-আনায়ার দায়িত্ব তারিশা পালন করছে। এদিকটা খেয়াল রাখা উচিত।

-তোমার বা*লের দায়িত্বর উপর তুমি নিজে খেয়াল রাখো। এসব দেখার টাইম নেই আনায়ার।

মনে,মনে কথাগুলো বলে আনায়া। প্রকাশ করার জো নেই যদি ধমক দিয়ে বসে নিবরাস।

আনায়া সেসবে আর কান দেয়নি উঠে সোজা রুমে চলে আসে। রুম জুড়ে পায়চারি করছে। নিবরাস কখন রুমে আসবে আর ঝাড়িটা দিবে আনায়া।

কলে কথা বলতে,বলতে রুমে প্রবেশ করে নিবরাস। আনায়া তাকে পাত্তা দিবে না জানে সেজন্য কলের ব্যস্ততা দেখাচ্ছে সে।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আনায়া নিবরাসকে বলে,

-কলটা কাটুন।

নিবরাস ফোন পান্জাবির পকেটে নিয়ে নেয়। আনায়া তার কলার চেপে ধরে বলে,

-তারিশার সাথে খুব ঘুরাঘুরি হয়েছে বুঝি? তারিশার হাতের শরবত অমৃত তাই না?

-আরে এসব কিছু না। ও গাড়ী নিয়ে যায়নি সেজন্য আমার গাড়ীতে নিয়েছি।

কলার ছাড়িয়ে নিয়ে বলে নিবরাস।

-না ঠিক আছে। আমি কে? আমি কী হই? কেউ না কিছু না। তারিশা সব! যান,যান তাকে নিয়ে লং ড্রাইভে ও যান। আমি কিছু বলব না।

-রাগ করছো কেন? দেখো তোমার কত সাহস আমার কলার চেপে ধরেছো। অন্য কেউ হলে জেলে ঢুকিয়ে দিতাম।

-এই আপনি এসব জেল,ক্ষমতা নেতাগিরি অন্য কোথাও গিয়ে দেখিয়োন আর বলিয়েন বউয়ের কাছে না।

-ঠিক আছে।

আনায়া পুনরায় নিবরাসের কলার চেপে ধরে পা উঁচু করে তার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায়।

-যদি আবার ধাক্কাটাক্কা লেগে তারিশার সাথে এসব হয়ে যায়। তার আগে আমি….

তাহলে চলো সবার আগে সংসারটা তোমায় নিয়েই শুরু করি। এতো ছটফট করছো আজকে সব থামিয়ে দেব।

আনায়া নিবরাসকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। কথা না বাড়িয়ে বাইরে চলে আসে।

*****

নিধিকে বিদায় দিয়ে এদিকটা সামলে নেয় জায়ান। আত্মীয়স্বজন কিছুটা কমতে শুরু করে। তিয়াশ খান তার বড় ভাই তাশরিফ খানের রুমে গিয়েছে। জায়ান তখন নিজের রুমে এসে শামিম সরদারকে কল দেয়।

-ওই তিন কুকুরের হাত পা ভেঙে হসপিটালের কেবিনে শিফ্ট করিয়ে রাখবি। এসব আগাছা আার বাড়ীতে আনলি কোন সাহসে?

-আরে জায়ান ভাই থাম। ওঁদের আমি দেখে নেবো।

-তোর কথায় আমার বিশ্বাস নেই। ওদের হসপিটালে বসিয়ে পিক পাঠা। অবশ্যই হাতে পায়ে বেন্ডেজ থাকা চাই আমার।

জায়ান কল কেটে দেয়। সোফায় গা এলিয়ে বসে পড়ে। চিন্তায় ঘাম ছুটে গেছে। গায়ের কালো পান্জাবিরটার দিকে একনজর দেয়। এই বুঝি তার বাবারা এসে বকা-ঝকা দিলো। নাজিয়াকে কিছু বলতে পারবে না সে। সফট হার্টে কঠিন কথা দিয়ে আঘাত করার সাধ্য জায়ানের নেই।

তিয়াশ খান,তাশরিফ খান জায়ানের রুমে প্রবেশ করে। তাশরিফ খান তো রেগে জায়ানকে বলে,

-এসব শামিমের সাথে তোমার কিসের সম্পর্ক? ও ভালো না। এমপির পেছনে তো পড়েছে সাথে এলালার মেয়েদেরকেও উত্যক্ত করে।

-আসলে বাবা..!

-আর কখনো যাতে শামিম সরদারের সাথে তোমার উঠাবসা,চলাফেরার কথা আমি না শুনি।

তাশরিফ খান বেড়িয়ে যায়। তিয়াশ খান জায়ানকে বলে,

-এসব লোক বাড়ীর আশেপাশে ও যাতে না ঘেঁষে। নাজিয়া আমাদের পরিবারের সন্মান। বুঝলে?

মাথা নাড়ায় জায়ান। তিয়াশ খান প্রস্থান করতে শামিমের চৌদ্দ গুষ্টি বকাঝকা দিয়ে শুদ্ধো করে দেয় জায়ান। পারছে না নিজে গিয়ে গলা টিপে মেরে দিতে ছেলে তিনটাকে।

*****

সন্ধ্যায় মির্জা পরিবার ঠিক করছে কোথাও যাওয়ার জন্য। সবাই মিলে ঠিক করছে নিবরাসের নানুদের বাড়ী যাবে। তারপরে নিবরাস আর আনায়া অন্য কোথাও যাবে। আগামী কালকে তারা রওনা হবে রাজশাহী থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। মরিয়ম নওয়াজ কল করে বলে দিয়েছেন তারা পুরোনো বাড়ীতে যাবে আগামীকাল সব জেনো ঠিকঠাক করে রাখে।

রাতের খাবার রেডি করে টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখছে আনায়া সাথে কাজের বুয়া একজন। তখন তারিশা আসে কিচেনে। রাতের মেনু দেখে বলে,

-এই কয়টায় হবে নাকী? আমি গরুর মাংশ রান্না করবো এখন।

-এখানে যথেষ্ট আইটেম আছে। আর একজন দু’টো বেশী নিবে না। সেখানে তিন রকমের মাছ,হাঁসের মাংশ,মুরগির মাংশ ও আছে। এখন রান্না করার দরকার নেই।

-নিবরাস ভাইয়া গরুর মাংশ বেশী পছন্দ করে৷ এখন হলে মন্দ হয়না।

কথাটা বলো তারিশা দেখে মাংশ নামায়। আজকে নতুন করে আনা হয়েছিলো বেশী বরফ হয়নি। কাজের বুয়া দু’জনকে বলে বাকী কাজ করে দিতে সে রান্না বসাবে। আনায়া কিচেন থেকে চলে আসে রুমে। নিবরাস তখন ল্যাপটপে কাজ করছিলো। সোজা রুমের দরজা লাগিয়ে দেয় আনায়া।

-এই শুনুন তারিশা নতুন করে আপনার জন্য রান্না করছে। ভুলেও ওই খাবারে নজর দিবেন না। যা আছে তার দিয়ে খেয়ে নিবেন। যতই প্রিয় খাবার হোক।

-আচ্ছা খাবো না।

-যদি খান তো আজকে সত্যি খবর আছে আপনার আমি বলে দিলাম।

-আরে খাবো না। যাও তারিশার থেকে কিছু শিখে নেও! দেখো ওর কিছু হইনা অথচ আমার জন্য রান্না করছে আর তুমি? একটা নিউজ নিয়ে এসেছো

-আচ্ছা আমিও ট্রাই করবো রান্না করার।

-তা পড়াশোনা নেই তোমার?

-আছে।

-সেগুলো কে করবে? পড়াশোনা ঠিকঠাক করছো না কেন?

-এই পড়াশোনা নিয়ে এতো বেশী সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই।

-আছে।আমার বউ শিক্ষিত হতে হবে নাহলে বাচ্চা মানুষ করাবো কীভাবে?

-আপনি আছেন না?

-আমি তো ব্যস্ত! তুমি মানুষ করাবা।

-গা’লি শিখানো ছাড়া আর কী শিখাবো?

– আমার বাচ্চাদের মানুষ করতে বলেছি গালি শিখাতে না।

– আগে বলুন বাচ্চা কই?

-আগে বলো তোমার পড়াশোনা কই? সার্টিফিকেট কই?

– চলুন আমার খিদে পেয়েছে।

নিবরাসকে নিয়ে নিচে আসে আনায়া। বাকীরাও এসেছে। নিবরাস আসতে সবাই খেতে বসে। তারিশা তার গরুর মাংশ এনে নিবরাসের সামনে রাখে। পাশে আনায়া বসা। হাত দিয়ে চিমটি কাটছে নিবরাসের হাতে যাতে মাংশ না নেয়।

-নিবরাস ভাইয়ার গরুর মাংশ পছন্দের আমার হাতের রান্না ও। খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে।

নিবরাস মনে,মনে নিজেকে গালি দেয়। কবে বলেছে তারিশার রান্না পছন্দের? মনে করার চেষ্টা করছে। এখন রুমে গেলে তার বউ আবার এটা নিয়ে রাগ করবে। তখন তারিশা উঠে নিবরাসের প্লেটে গরুর মাংশ ঢেলে দেয়। ততক্ষণে নিবরাস ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে। সামনে রোহিত, পরাগ বসা। নিবরাস তাদেরকে
উদ্দেশ্য করে বলে,

-ওই যে সামনে দু’জন বসে আছে ওদের দাও না? আমাকেই কী শুধু চোখে লাগে?

-দিচ্ছি।

তারিশা তাদেরকেও দেয়। নিবরাস খেটেখুটে না পেরে খাচ্ছে। আনায়া সবার আগে উঠে রুমে চলে যায়। নিবরাস খাওয়া শেষ করে কফির মগ নিয়ে রুমে চলে আসে।

#চলবে

হৃদয় কোঠায় চাঁদের পূর্ণিমা পর্ব-০৬

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|৬|
#শার্লিন_হাসান

-কীভাবে চেনো?

-আসলে আমি খান বাড়ীর মেয়ে। তিয়াশ খান এর বড় মেয়ে উম্মে আয়াত নাজিয়া। আশা করি তুমি চিনবে আমায়।

আনায়ার তখন তার মায়ের কথা মনে পড়ে। তিয়াশ খান বর্তমানে তার মায়ের বর।
তখন আনায়া বলে,

-তোমার মা জানে তো এখানে এসেছো যে?

-না আম্মু কিছু জানে না।

-না বলে একা,একা আসাটা ঠিক হয়নি তোমার।

-আরে বাদ দাও; বোনের সাথে দেখা করতে এসেছি।

আনায়া চুপসে যায়। মেয়েটা বেশ মিশুক! কিন্তু আনায়া মিশতে পারছে না। তারা তো বোন! বাবা ভিন্ন হলেও মা তো একজনই। আনায়াকে চুপ থাকতে দেখে নাজিয়া বলে,

-আমার তোমাকে দেখার শখ ছিলো। পূরণ করলাম। আর কিছু বলার নেই এখন আমি চলে যাব।

-সে কী! এখনই চলে যাবা?

তখন একজন সার্ভেন্ট নাস্তা নিয়ে আসে। নাজিয়া তখন বলে,

-ফিরতে,ফিরতে লেট হয়ে যাবে আবার। কিছু কেনাকাটা করতে হবে নাহলে কী জবাব দেবো? আমরা উঠি! আবার দেখা হবে আমাদের।

তখন মরিয়ম নওয়াজ বলেন,
-নাস্তা করে যাও।

-না করে এসেছি আন্টি।

কেউ আর কিছু বলেনা। নাজিয়া,নিধি বিদায় জানিয়ে বাইরে আসে। পেছনে আনায়াও আসে। তখন আবার নিবরাসের গাড়ী প্রবেশ করে গেট দিয়ে।

-আচ্ছা আমার ভার্সিটিতে এসো দেখা হবে তোমার সাথে।

আনায়া বলে। তখন নাজিয়া বলে,

-মেইন শহরেরটা?

-হুম।

-আচ্ছা বায়।

নিধি,নাজিয়া চলে আসে। আনায়া অন্যমনষ্ক হয়ে ভেতরের দিকে যায়। ভেতরে আসতে দেখলো নিবরাস চুপচাপ। হয়ত কিছু হয়েছে অফিসে। আনায়া সেসবে মন দিলো না। কিচেনে যেতে দেখলো তারিশা ট্রে তে গ্লাস রাখছে। বাইরে থেকে এসেছে নিবরাস তার জন্য ফ্রিজ থেকে জুশ নামিয়ে গ্লাসে নেয়।
আনায়া জিজ্ঞেস করে,

-কার জন্য নিচ্ছো?

-ভাইয়ার জন্য। বাইরে থেকে এসেছে তো।

আনায়া কিছু বলেনা। তারিশার পেছনে আসে।
নিবরাস জুশটা শেষ করে রোহীতকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-আর কী,কী অপকর্মের কথা আমি জানি না? সব খুঁজে বের করে আমায় ডিটেইলস দিবা।

কথাটা বলে আর একমূহুর্ত দাঁড়ায়নি নিবরাস।

****

আড়ং থেকে তড়িঘড়ি দু’টো ড্রেস নিয়ে নাজিয়া,নিধি বাড়ীতে চলে আসে। তাদের কিছুটা লেট হয়ে যায়। সূতারা আহমেদ দু’জনকে বকাঝকা শুরু করে দেন। তখন নাজিয়া ফাস্টফুড খাওয়ার নাম দেয়। দোকানে লেট হয়েছে তাদের। এতে অবশ্য তেমন কিছুই বলেনি সীতারা আহমেদ।

শিকদার বাড়ী থেকে সব ঢালা পাঠিয়ে দিয়েছে। খান বাড়ী থেকে বিকেলে সব পাঠিয়ে দেবে। সেটার গোছগাছ হচ্ছে। বাড়ীতে বিয়ে অথচ নাজিয়ার সেসবে মন নেই। আনায়ার কথা ভাবছে সে। মায়ের মতোই সুন্দর হয়েছে। নাজিয়াও দেখতে সীতারা আহমেদের মতোই। আসার সময় নিধি বলেছে তাঁদের দুই বোনের চেহারায় নাকী অনেক মিল আছে।

বিকেলের দিকে প্রাইবেট আছে নাজিয়ার। সে রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়ে। বড়রা জায়ান সাথে তার কিছু কাজিন ফ্রেন্ডসরা যাবে শিকদার বাড়ীতে।

নাজিয়া এসবে নেই। সে নিজের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। ফ্যামিলির তেমন কোন ইভেন্টে তেমন তদারকি করে না সে।

খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে নিবরাস। আনায়া সোফায় বসা। মৌনতা বজায় রেখে আনায়া প্রশ্ন করে,

-আপনি কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত?

-তেমন কিছু না অফিসে কর নিয়ে জামেলা হয়েছিলো সেটা মিটমাট করলাম।

-চলুন না কোথাও ট্যুরে যাই?

-এতো প্রেম নাই শরীরে তোমার মন চাইলে যাও। এদিকে কী হবে না হবে সেটা ভাবছি আমি।

-ওই রাজকে নিয়ে ভয় পাচ্ছেন?

-তোমার মনে হয় আমি ভয় পাবো সামান্য বিষয় নিয়ে?

-ওটা সামান্য মনে হয়? আপনি কাউকে মেরে ফেলেছেন।

-তো?

-আপনি নাকী আবার এমপি।

-এই কথায়,কথায় এতো এমপি টেনে আনবা না।

-আগের বউকেও নিশ্চয়ই এজন্য মেরেছেন।

-তাকে আমি মারিনি দোষটা আমার গাড়েই পড়েছে।

-তার নাম কী ছিলো?

-বউ।

-মজা করছেন?

-আমি আগে কোন বিয়ে টিয়ে করিনি। এই তুমি আমার প্রথম বউ।

-প্রথম বউ কী হ্যাঁ? বলবেন একমাত্র বউ। আপনি আরো বিয়ে করতে চান?

-এই বউ ভালোবাসে না আরেকটা করতে হবে মনে হয়।

-আমি কিছু জানি না। আমাকে নিয়ে একটু ঘুরতে যান না? এইজন্যই এসব নেতাফেতাদের বিয়ে করতে নেই। বাড়ীতে বসে,বসে কান্না করো। এই সমস্যা ওই সমস্যা।

-আচ্ছা জায়গা সিলেক্ট করো। হানিমুনে যাবো।

কথাটা বলে নিবরাস উঠে যায়। তার কল এসেছে। আনায়া সেখানে বসে তাকিয়ে থাকে নিবরাসের যাওয়ার পাণে। ভেবেছিলো নাজিয়ার কথা বলবে নিবরাসকে। কিন্তু নিবরাস যা ব্যস্ত। মনে হয় না বলা হবে।

তখন আবার মিসবাহ আসে আনায়ার রুমে। তার পেছনে মাইশা আছে। কোন কিছু নিয়ে তাড়া করেছে মিসবাহকে।

মাইশা মিসবাহকে পুনরায় বলে,

-আজকে তোমার খবর আছে মিসবাহ। বেশী বেড়ে গেছো তুমি।

-কী হয়েছে আপু?

প্রশ্ন করে আনায়া। তখন মিসবাহ নিজেই বলে,

-আরে তারিশা আন্টি কান্না করছিলো তো আমি বলেছি আংকেলের অভাবে কান্না করো নাকী মামু তোমায় ছ্যাকা দিলো।

তারিশা আন্টি আবার আম্মুর কাছে আমার নামে কীসব জানি বানিয়ে বলেছে সেজন্য আম্মু আমার পেছনে পড়েছে। আগে তোমার বোনকে ঠিক করো। প্রেম করে কতগুলো।

মিসবাহর কথায় মাইশা এসে কানের নিচে ঠাস,ঠাস দু’টো থাপ্পড় মারে।

-বেয়াদব ছেলে। আজকে নিবরাস আসুক ওকে সহ মারবো। ওই তোমাকে প্রশ্রয় দিয়ে,দিয়ে মাথায় তুলেছে।

মাইশা বেড়িয়ে যায়। তখন আনায়া মিসবাহকে নিয়ে খাটের উপর চলে যায়। থাপ্পড় দেওয়া জায়গায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

-তোমার তারিশা আন্টি তোমার মামুকে পছন্দ করে?

-তুমি কাউকে বলো না। আমি শুনেছি দুইবার কাকে জেনো কলে বলতো এমপি সাহেব আমার স্বপ্নের পুরুষ। তাকে আমি পছন্দ করি।

আবার ওর বান্ধবী কাকে জেনো বলতো কিসের ভাই হ্যাঁ? জামাই বলবি নিবরাস আমার জামাই।

আনায়ার মনে মূহুর্তে হিংসারা দলা পাকায় তাও নিজের বরকে অন্য কেউ জামাই দাবি করছে সেই হিংসা। এখন আর বাবার বাড়ীতে গিয়েও থাকা যাবে না। নাহলে তারিশা তার বরটাকে কবে নিজের আঁচলে বেঁধে নেয়। কিন্তু নিবরাস এসব পাত্তা দেয় না। তাতে কিছুটা খুশি হয় আনায়া।

-বিয়েতে তারিশা আসেনি কেন?

-মামু বারণ করেছে।

-কেন বারণ করলো?

-তুমি জিজ্ঞেস করে নিও।

-আচ্ছা নেবো। চলো আমরা তোমার মামুকে রাজী করিয়ে কোথাও ঘুরতে যাই?

-চলো তুমি প্লেস সিলেক্ট করো।

-আগামী কালকে হসপিটালে ফুল একটা নিয়ে দিয়ে আসিস। বলসি এমপির তরফ থেকে শেষ বিদায়ে আপনার জন্য ফুলগুলো। ওপারে ভালো থাকবেন।

কথাটা বলতে,বলতে রুমে প্রবেশ করে নিবরাস। আনায়া,মিসবাহ তার দিকে তাকায়। নিবরাস বায় বলে কল কেটে দেয়। মিসবাহ কে জিজ্ঞেস করে,

-তারিশাকে কী বলেছো তুমি মিসবাহ?

-বলেছি আংকেলের অভাবে কান্না করছো নাকী আমার মামু তোমায় ছ্যাকা দিয়েছে।

মিসবাহর কথা শুনে নিবরাস আনায়ার দিকে তাকায়। রাগিনী রেগে তাকিয়ে আছে। এনার নিশ্চয়ই মিসবাহ যাবে আর ঠাস,ঠাস দরজা লাগিয়ে কথা সব জিজ্ঞেস করবে। তখন নিবরাস ধমক দিয়ে বলে,

-ছ্যাকা কী মিসবাহ? তুমি এতো পঁচা কথা বলো?

-তারিশা আন্টির থেকে শুনেছি। ওর বান্ধবীরা বলতো, নেতার বিয়ে হলে তো তুই ছ্যাকা খাবি। তো এখন তোমার বিয়ে হয়েছে সে ছ্যাকা খেয়েছে।

-ওসব কিছু না যাও মামু গিয়ে ঘুমাও। তারিশাকে আর উল্টাপাল্টা কিছু বলবা না।

-বউমনি আমি গেলাম।

মিসবাহ চলে যেতে আনায়া উঠে ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। নিবরাস দেখেও না দেখার ভাণ করে তাকায়। কিন্তু তার দেখা না দেখায় কিছু যায় আসে না। আনায়া নিজে তার সামনে এসে দাঁড়ায়।

-এই জন্যই বুঝি আমাকে বাবার বাড়ীতে অনেকদিন রাখতে চেয়েছিলেন। তখন তো তারিশার এক্সাম ও শেষ হয়ে গিয়েছে। এই আপনি আমায় বুঝ দিচ্ছেন? শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছেন?

-আরে এমন কিছু না। পাত্তা দেওয়ার হলে ওকেই আমি বিয়ে করতাম।

-কী বললেন আবার বলুন? আপনি না আজকে ওর দেওয়া জুশটা খেলেন?

-তুমি দাওনি ও দিয়েছে না তো আর করতে পারি না।

-আমাকে কেউ বলেছে কিছু? আপনি নিজেও তো বলতে পারতেন।

-না কিছু না। দেখো তোমার বরের জন্য কত মেয়ে পাগ’ল। তুমি ছাড়া।

-যদি জানতো আপনি একটা গুন্ডা তো কেউই পাগ’ল হতো না।

-আমি গুন্ডা দেখে তুমি আমায় অবমাননা করছো?

-না,না তা করবো কেন? আপনার জন্য কত মেয়েরা পাগল আমার সাধ্য আছে নাকী আপনার মতো এমপি,গুন্ডা,চাঁদাবাজ, দয়ালু ব্যক্তিকে অবমাননা করার?

-প্রশংসা করলা নাকী বদনাম?

-চুপ থাকুন। একদম তারিশার আশেপাশে ঘেঁষবেন না।

-আরে এসব ছাড়ো। পরিবারের সদস্য খাবার টেবিলেও সামনাসামনি বসা হয়ে যায়।

-তাকাবেন না একদম।

******

খান বাড়ীতে বিয়ের আমেজ। নিধিকে পার্লার থেকে সাজানো হয়েছে। শাহরিয়ার সায়ন্তিক শিকদারের সাথে কিছুক্ষণের মধ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

বিয়েতে এসেছে শামিম সরদার সাথে তার দলের লোকজন। বেশ ভালোই কাটছে সময়। নাজিয়া সায়ন্তিকের পিকচার তোলার জন্য স্টেজের কাছে যায়। ভিড় ঠেলে কয়টা পিকচার তুলে সাইডে আসে। তখন পাশে থেকে একটা ছেলের কথা কানে আসে,

-মেয়েটার ফিগার কিন্তু জোশ মামা। হয়ত কোন রিলেটিভ যাওয়ার সময় খোঁজ করব একা রাতের জন্য হলে মন্দ হয় না।

নাজিয়া তাকায়। তার দিকেই তাকিয়ে আছে ছেলে তিনটে। এসে সোজা গালে চড় বসিয়ে দেয়। বাকী ছেলেদের দিকে রেগে তাকিয়ে বলে,

-তোদের মতো কুকুর দের ইনভাইট দিলো কোন কুকুর? নাকী বিনা ইনভিটেশনে চলে এসেছিস? আর আমি এই খান বাড়ীর মেয়ে ভালো করে চিনে রাখবি। মেয়েদের সন্মান কীভাবে করতে হয় সেটাও নিজের মা-বোন থাকলে তাঁদের থেকে শিখে নিস। নাও থাকতে পারে অবশ্য তোদের মতো কুকুরদের নিশ্চয়ই রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নিয়েছে।

কিছু লোক এদিকটায় চলে এসেছে। তিয়াশ খান, জায়ান খান এসেছে। ছেলে তিনটে জায়ানকে দেখে দমে যায়। তখন তিয়াশ খান বলে,

-নাজিয়া ওঁদের মারলে কেন?

-ওরা আমায় বাজে কথা বলেছে।

তখন সেখানের একটা ছেলে বলে,

-প্রমাণ কী আমরা যে বাজে কথা বলেছি তোমায়?

নাজিয়া তাকায় ছেলে তিনটার দিকে। নিজের ফোন থেকে ভিডিও টা সবার সামনে ধরে। অবশ্য তার ভিডিও অন করা ছিলো তখন। ভিডিও দেখার পর জায়ান রক্তচক্ষু করে ছেলে তিনটার দিকে তাকায়। কিছু বলতে যাবে ঠিক তখন কোথা থেকে শামিম সরদার এসে ছেলেদেরকে সোজা লা’থি মারে। তার দলের লোকদের চোখ দিয়ে ইশারা দিতে এদের তিনজনকে নিয়ে চলে যায়।

জায়ান নাজিয়াকে বলে,

-ওদের ভাইয়া দেখে নেবো চিনতে পারেনি তুমি যে এই বাড়ীর মেয়ে।

-এই বাড়ীর মেয়ে হিসাবে চিনলে বুঝি কিছু বলতো না?

-না।

-অন্য বাড়ীর মেয়ে ভেবে কেন বললো? আমাকে নাহয় ছেড়ে দিতো জায়ান খানের বোন বলে অন্য বাড়ীর মেয়েরা কী দোষ করলো? ওরা এমন কেন? মেয়েদের সন্মান দিতে পারে না। আসলে ছেলে জাতটাই খারাপ। এদের ইনভাইট দিয়ে আনো কেন ভাই?

জায়ান চুপ হয়ে যায়। এই মেয়ে শুরুতে জাত নিয়েই বলে দিলো। বড্ড বেশী পাকনা এটা। কথা একটা পেলে খোঁচাতে খোঁচাতে গভীর অব্দি চলে যায় । জায়ানের ভালো লাগে এর স্পষ্টভাবটা।

-আচ্ছা তুমি নিধির কাছে যাও আমি এদের শিক্ষা দেবো যাতে পরবর্তীতে অন্য কোন মেয়েদের অসন্মান না করে।

-তুমি নিজেও শিক্ষা গ্রহণ করে নিও কাকে ইনভাইট দিতে হয় আর কোথায় দিতে হয়। এসব কুকুরদের রাস্তা থেকে নিয়ে এসে নিজের স্ট্যটাস নিচে নামিয়ো না।

মাথা নাড়ায় জায়ান। নাজিয়া প্রস্থান করতে সে হাফ ছেড়ে বাঁচে। মেয়েটা মুখের উপর বলে দেয়। তার নিজেরও ব্যপারটা লজ্জা লেগেছিলো যখন ভিডিওটা তার চাচ্চুর সামনে ধরে। সব গেলে তার বাবাও তাকে বকা দিবে এটা শিওর। পারছে না শামিম সরদারের খু’লিটাই উড়েয়ে দেয় জায়ান।

#চলবে

হৃদয় কোঠায় চাঁদের পূর্ণিমা পর্ব-০৫

1

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|৫|
#শার্লিন_হাসান

রাজের কাহিনী শেষ করে দিয়েছে নিবরাস। লাভ টা হলো কী? এই নিবরাস ঠান্ডা মাথায় সব শেষ করে দিলো? কোথায় ভেবেছিলাম আনায়াকে চ’ড় থা’প্পড় মেরে ডিভোর্স দিয়ে তাড়িয়ে দিবে। রাজের কথা বিশ্বাস করার কথা ছিলো নিবরাসের। আচ্ছা এখনকার যুগে বেড শেয়ার,বফ এসব থাকা সিম্পল ব্যপার বাট নিবরাস বিশ্বাস করলো না কেন? কোন রিয়েক্ট করলো না কেন? এই নিবরাস চাচ্ছে কী?

পায়চারি করতে,করতে কথাটা বলে আহিয়া। শামিম সরদার এসেছে কিছুক্ষণ আগে।

তাঁদের মাঝের একজন বলে,

-এই নিবরাস ঠান্ডা মাথায় যা করার করে। ওর সাথে কেউ পারবে না।

কথাটা শেষ হতে শামিম ছেলেটাকে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয় গালে। কয়েকটা কুৎসিত গা’লি দিয়ে বলে,

-আমাদের লোক হয়ে নিবরাসের গুণগান গাইছিস? ওই নিবরাস সিংহের বাচ্চার মতো চলাফেরা করে। অথচ ওর জায়গায় আমার থাকার কথা ছিলো।

তখন আহিয়া বলে,
-নিবরাস যেমন আনায়া টাও তেমনই। এই নিবরাসের পরিবারকে আমি শেষ করে দিবো।

-বোনের মৃ’ত্যুর জন্য?

প্রশ্ন করে শামিম সরদার। আহিয়া কিঞ্চিৎ হেঁসে বলে,

-সেটা আসল ফ্যাক্ট না! এই নিরব মির্জার জন্য একসময় আমাদের সব নিলামে উঠেছিলো। পথের ভিখারী হয়ে গিয়েছিলাম। বাপ করলো যায় ছেলে কম কী করলো? আমার বোন তো ওকে ভালোবাসতো! ও একটু ভালোবাসলে কী এমন ক্ষতি হতো?

বিরক্ত হয় শামিম সরদার। এসব প্রেম ভালোবাসা তার কাছে বিরক্ত লাগে। ভার্সিটি থাকা কালীন বেশীরভাগ মেয়েরা নিবরাস,নিবরাস করতো। সেটাও শামিম সরদারের বিরক্ত লাগতো।

আহিয়া বিরক্ত হয়ে বেড়িয়ে আসে। আপাতত কোন প্লানিং নেই তার মাথায়। কিন্তু নিবরাসের সংসার না ভাঙা অব্দি তার শান্তি হবে না।

*****

বিকেলের দিকে বাড়ীতে ফিরে নিবরাস। নিজের হাতের দিকে তাকায়। এই হাত দিয়েই তো খু’ন করলো সে। রুমে প্রবেশ করতে দেখলো আনায়া বসে ফোন স্ক্রোল করছে। নিবরাস সেসবে পাত্তা না দিয়ে শাওয়ারে ঢুকে যায়।

আনায়া অপেক্ষায় আছে কখন নিবরাস আসবে আর ছেলেটার খোঁজ নিবে। আদৌ কিছু করেছে, জেলে দিয়েছে নাকী ছেড়ে দিয়েছে।

নিবরাস আসতে প্রশ্ন করে আনায়া,

-লোকটাকে কী করেছেন?

-উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি।

ঠান্ডা মাথায় জবাব দেয় নিবরাস। আনায়া উঠে দাঁড়ায়। নিবরাসকে পুনরায় জিজ্ঞেস করে,

-ইয়ার্কি করছেন? নেতা না আপনি! দয়ামায়া নেই?

-নিবরাস কারোর সাথে ইয়ার্কি,হাসিঠাট্টা করে না। রাজ আমার ছাত্রলীগের একজন সদস্য ছিলো আগে।

-তারপর?

-আমার বিপক্ষ দলের সাথে হাত মিলায়! একে আজকে হলেও মারতে হতো কালকে হলেও! নেও আজকে আপদ বিদায় করে দিলাম। এরপর আর কেউ আপনাকে বিরক্ত করবে না।

আনায়া কথা বলেনা। নিবরাসের দিকে একনজরে তাকিয়ে আছে। নিবরাস মুচকি হেঁসে বলে,

-আচ্ছা আমি কী আগের থেকে বেশী সুন্দর হয়ে গেছি?

আনায়া চোখ সরিয়ে নেয়। নিবরাস ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বলে,

-কালো হয়ে গেছি? আপনি বললে আমি ফেসের যত্ন নিবো।

-আপনি একটা গুন্ডা! বাবা আমাকে একটা গুন্ডার সাথে বিয়ে দিলো? এই আপনি আবার আমায় মে’রে ফেলবেন না তো?

-এসব বলে না জান। নেতার বউ হয়ে নেতাকে গুন্ডা উপাধি দিচ্ছো? জনগণ শোনলে তো তোমায় পাবলিক প্লেসে রেখে কেলানি দিবে। তখন কিন্তু আমি বউ বলে পরিচয় দেবো না। বলবো আগেরটার মতো এটাও এসেছে আমার ক্যারিয়ার নষ্ট করতে।

-আগেরটা মানে?

-বুঝবে না তুমি।

-আপনার আগের বউ?

হাতে টান পড়ে আনায়ার। নিবরাস তাকে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আলতো করে আনায়ার ওষ্ঠ স্পর্শ করে।

-একদম বেশী নড়াচড়া করে না জান। প্রেকটিস করাচ্ছি!

আনায়া রেগে তাকিয়ে আছে নিবরাসের দিকে। নিবরাসের কথায় হাসি,কষ্ট দুঃখ সবই প্রকাশ পাচ্ছে! মানুষের সামনে ভাবসাব নিয়ে চলা নেতা তার সাথে রোমান্স করছে।

-আমি কী কোন কথা জিজ্ঞেস করে কোন উত্তর পাবো না আপনার থেকে?

-পাইবা তবে ফাল’তু কিছু জিজ্ঞেস করে না।

নিবরাস পাঞ্জাবির হাত কিছুটা গুটিয়ে নেয়। বাক্যব্যয় না করে নিচে চলে যায়। আনায়া সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। নিবরাস আসলেই রাজকে মে’রে ফেলেছে? এই নিবরাস তো একজন ক্রিমিনাল তাহলে। অথচ নিজেকে সাদা পান্জাবিতে মুড়িয়ে রেখেছে।

আনায়া ভাবতে পারছে না আর। নিবরাসকে দিনদিন তার কাছে রহস্যজনক মনে হয়। এই রহস্য কোনদিন ফাঁস হলে নিবরাস পবিত্র থাকবে নাকী পাপী হয়ে যাবে?

তখন আবার মিসবাহ আসে আনায়ার কাছে। তার সাথে ড্রয়িং করতে৷ আনায়া ও এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে চলে যায় মিসবাহর সাথে।
মিসবাহর স্টাডি টেবিলের সামনে দু’জন বসে আছে। কখনো আনায়া ড্রয়িং করছে কখনো মিসবাহ।

নিবরাস বসে,বসে কিছু ফাইল দেখছে। তাঁদের কোম্পানির কর আদায়ের বিষয়টা পরাগের মাধ্যমে জেনেছে নিবরাস। কর্মচারীদের থেকে নাকী একটু বেশী কর নেওয়া হয়। এই নিয়ে কয়েকজন অসন্তুষ্ট। নিবরাস আগামী কালকে অফিসে যাবে। তার বাবাকে যদিও কিছু জানায়নি।

চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে রেখেছে নিবরাস। এই নাম,যশ,খ্যাতি সবই তো আসলো। তবে কিছু কালো পথ ও আছে তার এই মঞ্চে দাঁড়ানো এবং এই পর্যন্ত টিকে থাকা। ক্যারিয়ারের শুরুটা শামিম সরদারের সাথে রেষারেষি ভাবের মাধ্যমে শুরু। কিছুটা পরিচিতি আসতে সবচেয়ে জঘন্য ব্যপার নিবরাসের কাছে যেটা মনে হয় সেটা হলো নারী বিষয়ক।
এমপি হওয়ার ছয়মাসের মাথায় তার ক্যারিয়ার বাদ করে দিতে চেয়েছে আহিয়ার বোন। সে জানতো আহিয়ার বোন তাকে পছন্দ করে সে ভার্সিটি লাইপ থেকে কিন্তু নিবরাস অপছন্দ করে তাকে। সে বেশ ভালো করেই জানে রিভেঞ্জ নিতে চায়। বিজন্যাসে থাকাকালীন আহিয়ার বাবার সাথে নিরব মির্জার ভুল বোঝাবুঝি হয়। আহিয়ার বাবা বিজন্যাসে লস খায়! আবার তাঁদের সব নিলামে উঠেছিলো। অনেককিছু মিলিয়েই ব্যপারটা। সেজন্যই নিবরাস বরাবরের মতো সব এভোয়েড করে গেছে। ক্ষ্যন্ত হয়নি আহিয়ার বোন তাহিয়া। নিবরাস ও তাকে জায়গা মতো পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন আবার আহিয়া তার পেছনে লেগেছে। তবে নিবরাসের কিছু যায় আসে না। না আছে সাক্ষী না আছে কোন সাক্ষাৎকার বা প্রমাণ। যা করে সব জায়গায় শেষ! ভিক্টিম সাথে প্রমাণ ও।

তারিশা মিসবাহর কাছে যায়। আনায়া তাকে দেখে কথা বলে। তারিশা কিছুটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। আনায়া বুঝতে পারেনা বিষয়টা। ভেবেছে মিসবাহকে কিছু জিজ্ঞেস করবে। তারিশা কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়।

আনায়া মিসবাহকে প্রশ্ন করে,

-ও কী কোন ব্যাপারে হার্ট হয়েছে?

-জানি না। হোস্টেল থেকে আসার পর আন্টি কেমন জেনো হয়ে গেলো।

মাথা ঘামায় না আনায়া। উঠে রুমে চলে আসে। নিবরাসের খোঁজ মেলেনি। হয়ত ব্যস্ত!

নিরব মির্জা, মরিয়ম নওয়াজ তারিশাকে নিয়ে কথা বলছে।
তখন নিরব মির্জা বলেন,
– নিবরাসের বিয়েটা তো এভাবেই হয়ে গেলো। আমাদের পরিবারের সবাই মিলে কোথাও একটু ঘুরতে যাওয়া দরকার।

-কীভাবে যাবো? তেমার ছেলের এই সমস্যা ওই সমস্যা। আজকে এটা কালকে ওটা। পরিবারকে সময় দেওয়ার মতো সময় তার কাছে নেই। রাজনীতি আমার পছন্দ না তাও ছেলেটা রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়ালো।

-রাজনীতি খারাপ কী? নিজে সাবধাণ হয়ে চললে হয়। মানুষের সেবা করা এটা তো অনেক ভাগ্যের ব্যপার।

-সেবা করে না খু’ন করে আপনাদের ছেলে।
মনে,মনে কথাটা বলে আনায়া। আনায়াকে দেখে মরিয়ম নওয়াজ তাকে কাছে ডেকে নেয়। তার পেছন দিয়ে মাইশা,মিসবাহ আসে। তার গল্প করছে। মূলত কোথাও ট্যুর দেওয়া যায় তা নিয়েই ভাবছে।

আনায়া সন্তুষ্ট হতে পারছে না। বারবার একটা কথাই মাথায় ঘুরছে নিবরাস খু’নি। খু’নির সাথে সে কীভাবে সংসার করবে?

তখন নিনরাস,রোহীত সিঁড়ি বেয়ে নিচের দিকেই আসছে কথা বলতে,বলতে। আনায়ার চোখ যায় নিবরাসের দিকে। সাদা পান্জাবি পড়া কতটা স্নিগ্ধ লাগছে অথচ কে বিশ্বাস করবে লোকটা কাউকে মে’রে ফেলেছে।

-আচ্ছা রোহীত, পরাগ ওরা সব জানে? না জানার কী আছে? সারাক্ষণ নিবরাসের পেছনে লেগে থাকে। আচ্ছা নিবরাস যখন মারলো রাজকে তখন পুলিশ ছিলো না? অবশ্য থাকলে কী? টাকা দিলে সব বন্ধ মুখ। নিবরাস আর ভালো কোথায়? সে ও তো নোং’রা রাজনীতি করে।

মির্জা বাড়ীর সবাই ডিনার করে নেয়। আনায়া আর বাকীদের মাঝে থাকে না। রুমে চলে যায়।

****

পরের দিন সকালে খান বাড়ী ডেকোরেশনের কাজ চলছে। বাড়ীতে উৎসব লেগেছে। জায়ানের বোন উম্মে আয়াত নিধি । বিয়েটা অবশ্য শিকাদারদের একমাত্র ছেলে শাহরিয়ার সায়ন্তিক শিকদারের সাথে।

সীতারা আহমেদ তার বড় ঝা সুহাসিনীর সাথে বসে শাড়ী চুজ করছে বিয়ের জন্য। তাঁদের বড় মেয়ের বিয়ে। সীতারা আহমেদের একটা মাত্র মেয়ে এই সংসারে এবার টেনে উঠেছে। আর ছোট্ একটা ছেলে আছে পাঁচ বছর বয়স।

তার মেয়ের নাম উম্মে আয়াত নাজিয়া। ছেলে জাফিন খান। শুনেছেন তার বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে কয়েকদিন আগে এমপির সাথে।

নিধি,নাজিয়া বাইরে বের হবে। কিছু কেনাকাটা আছে তাঁদের। যদিও বা তাঁদের এক জায়গায় যাওয়ার উদ্দেশ্য আছে। বাড়ী থেকে পারমিশন পেতে দু’জন বেড়িয়ে পড়ে। আজকে নিজেদের কার নেয়নি। রিকশায় করে যাবে।

মূলত নাজিয়ার জন্যই নিধি বেড়িয়েছে। তার আগের বোনের খোঁজ জানতে চায় নাজিয়া। জিজ্ঞেস করলে কেউই বলেনি। কিন্তু তার ইচ্ছে বোনকে দেখার। এতোদিনে তো ঠিকানা জানতো না তবে শুনেছে এমপির সাথেই বিয়েটা হয়েছে।

এমপির বাড়ীতে যাবে! অনুমতির একটা ব্যপারস্যপার আছে। নাজিয়া সেসব ভাবছে না। কেউ কিছু বললে বলবে এমপি তার জিজু।

সকালে মির্জা বাড়ীতে নাস্তা শেষ করে যে যার কাজে চলে যায়। নিবরাস আজকে অফিসে যাবে। আনায়া রান্নার কাজে সামিল হয়েছে। কাজের বুয়া দু’জন রান্নাবান্না দেখলেও আনায়াও আজকাল ব্যপারটা দেখে।

লিভিং রুম পুরোটা পরিপাটি করে নিয়েছে সার্ভেন্ট দু’জন।
আনায়া গরুর মাংশ রান্না করে বাইরে চলে এসেছে। আজকে এটাই তার হাতে প্রথম রান্না শ্বশুর বাড়ীতে। কিছুক্ষণ পর দারোয়ান একজন সার্ভেন্টকে দিয়ে খোঁজ পাঠায় আনায়ার।
আনায়া বাইরে যাবে কী যাবে না ভাবছে। তার ভাবনার মাঝে মেয়ে দু’টো ভেতরের দিকে আসে। অবশ্য অনেকেই আসে এভাবে! তখন আনায়া বা বাড়ীর বউ,মেয়েরা ভেতরেই থাকে।

নাজিয়া সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা একজন সার্ভেন্ট কে জিজ্ঞেস করে,

-স্যারের ওয়াইফ কে?

সার্ভেন্ট আনায়াকে দেখিয়ে দেয়। নাজিয়া সালাম দেয় আনায়াকে। আনায়াও সালামের জবাব দেয়। আনায়ার কাছে কেমন জেনো লাগছে। মরিয়ম নওয়াজ আসতে আনায়া কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। মরিয়ম নওয়াজ তাঁদেরকে বসতে বলে। আনায়া ও বলে!

তখন নিধি বলে,

-নাজিয়া আপনার সাথে দেখা করার জন্য অস্থির। এখন না আগে থেকেই কিন্তু আপনার ঠিকানা জানতো না। এখন তো শুনেছে এমপি স্যারের সাথে বিয়ে হয়েছে সেজন্য সমস্যা হয়নি বেশী।

মুখ ফসকে কথাটা বলে দেয় নিধি। নাজিয়া এবার কী বলবে ভাবছে। আগের কথা জিজ্ঞেস করলে? বলে দিবে তারা বোন? যদি আনায়া রিয়েক্ট করে। সীতারা আহমেদকে এখনো ভালোবাসে আনায়া? যে ছোটবেলায় তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। সত্য কোনদিন গোপন থাকে না। নাজিয়ার কাছেও কিছু সত্য গোপন রাখা হয়েছিলো কিন্তু কিছুটা বুদ্ধি হওয়ার সাথে,সাথে সবই জেনে নেয় সে।

তখন আনায়া বলে,

-আমাকে আগে থেকে চেনো তোমরা?

-হ্যাঁ চিনি।

নাজিয়া বলে। নিধি চুপচাপ বসে আছে। সে জানে এখন সে কথা বলা মানে প্যাসকেলের সাথে সূচকের প্যাচ লাগানো। যেটার সমাধান হয়না! আর যা প্যাচ লাগবে সেটা জাতে পদে পড়বে না।
তখন আনায়া প্র্শ্ন করে,
-কীভাবে চেনো?

-আসলে আমি খান বাড়ীর মেয়ে। তিয়াশ খান এর বড় মেয়ে উম্মে আয়াত নাজিয়া। আশা করি তুমি চিনবে আমায়।

#চলবে

হৃদয় কোঠায় চাঁদের পূর্ণিমা পর্ব-০৪

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|৪|
#শার্লিন_হাসান

জায়ানের সাথে কথাবার্তা শেষ হতে সীতারা আহমেদ সাথে জায়ানের মা নিরুপা ইসলাম ডিনারের ব্যবস্থা করেন শামিম সরদারের জন্য।

ডিনার করে বেড়িয়ে পড়ে শামিম সরদার। সে তার বাংলোতে যাবে এখন। তার দলের কয়টা আছে তাঁদের সাথে সারারাত ধরে ম’দ পান করবে।

নিবরাস আনায়াকে কল দিয়ে জানায় সে আজকে ভার্সিটিতে যাবে। আনায়াকে মির্জা ভিলাতে নিয়ে আসবে। এখান থেকে যা পড়াশোনা করার করবে। কোন রকমের রিস্ক নিবরাস নিতে চায় না। আনায়া কিছু বলেনি।

সকাল,সকাল রেডি হয়ে নাস্তা করে নেয়। জিয়াউর রহমানকে বলে দিয়েছে তাকে নিবরাস নিতে আসবে। যদিও আগে নিবরাস কথা বলে নিয়েছে জিয়াউর রহমানের সাথে।

বাবা মেয়ে একসাথে বের হয়। আনায়াকে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিয়ে জিয়াউর রহমান তার অফিসের উদ্দেশ্য রওনা হয়।

আনায়া অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট আহিয়া তার থেকে সিনিয়র। সে মাস্টার্স করছে তবে এক ভার্সিটিতে না। দু’জন ভিন্ন ভার্সিটিতে। আহিয়ার সাথে আনায়ার ওতো গলায়,গলায় ভাব নেই। এই দেখা হলে যা কথা হয়। মূলত তার মা চলে যাওয়ার পর মামুদের সাথে সম্পর্ক ফ্যাকাশে হয়ে যায়। এখন হয়ত তার মায়ের দ্বিতীয় সংসারে আসা যাওয়া হয় তার মামুর পরিবারের। আনায়াও যায় না মামুর বাড়ীতে। তার বিয়েতে শুধু আহিয়া এসেছে আর কেউই আসেনি।

ভার্সিটিতে আসতে আজকে তার বান্ধবীকে পেলো না আনায়া। মারিয়া আজকে আসেনি! মন মরা হয়ে ক্লাস গুলো শেষ করে নেয়। নিবরাস মেসেজ দিয়ে রেখেছে সে আসছে বিশ মিনিট পরেই।

আনায়া কিছুটা দূরে বড় মেহগনি গাছটার নিচে শান দিয়ে বাঁধাই করা গোলাকৃতি স্থান। সেখানে বসে পড়ে। ফোনের দিকে ধ্যান দেয়। বেশী একটা লোকের সমাগম নেই এই দিকটায়।

নিবরাসের লাস্ট মেসেজ পেতে উঠে দাঁড়ায় আনায়া। এই নিবরাস আসবে!

দূর থেকে এক জোড়া চোখ আনায়ার উপর দৃষ্টি ফেলছে। কানে ব্লুটুথ গুঁজে রাখা। কলের অপরপাশের ব্যক্তিকে বলছে,

-আসছে নাকী জনগণের নেতা?

-হ্যাঁ কাছাকাছি।

-তার বউ আরেকজনে আলিঙ্গন করলো বলে! তাড়াতাড়ি এসে দেখো।

-ওয়েট করো এই ছাঁদে আসছি।

নিবরাসের হাটার সাথে,সাথে গতি মিলিয়ে লোকটা পাশের বিল্ডিংয়ে চলে যায়। দ্রুত পায়ে ছাঁদের কাছে যায়। যেখান থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে নিবরাসের আগে একটা ছেলে আনায়াকে হুট করে জড়িয়ে ধরেছে।

ছেলেটার এমন কাজে আনায়া ভ্যবাছ্যাকা খেয়ে যায়। নিজের রাগকে সামলাতে না পেরে কষে দু’টো থাপ্পড় মেরে দেয় ছেলেটার গালে। নিবরাস আনায়ার কাছাকাছি এসে থমকে দাঁড়ায়।

-সাহস তো কম না বলা নেই কওয়া নেই হুট হাট জড়িয়ে ধরলি?

তখন নিবরাস এসে ছেলেটাকে প্রশ্ন করে,

-কে পাঠিয়েছে তোকে এখানে?

ছেলেটা কথা বলছে না। আনায়া নিবরাসের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বলে,
-একে জেলে দিবেন নাহলে আপনাকে আমি জেলে ঢুকিয়ে দেবো। সাহস কত একটা মেয়েকে হুটহাট জড়িয়ে ধরা।

-আনায়া তুমি এসব কী বলছো? আমাকে ভুলে গেলে তুমি? আমি রাজ তোমার বয়ফ্রেন্ড। আর এই ছেলেটা কে আনায়া?

থাপ্পড় খাওয়ার পর ছেলেটা এই কথা বলে। আনায়া অবাক চোখে তাকায়। নিবরাস আনায়ার দিকে তাকায়।

-এসব কী আনায়া?

আনায়া বেশ চটে যায়। কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,

-আমার কোন বফ নেই। আর এ কে তো আমি কোনদিন দেখিনি। কোথা থেকে এসে কী বলছে?

তখন রাজ হেঁসে বলে,
-সেদিন বেড শেয়ার করলা এখন খাওয়া শেষ ভুলেও গেলা? বাহ আনায়া বাহ!

আনায়ার রাগে গা জ্বলছে। নিবরাসের দিকে তাকিয়ে বলে,
-আশ্চর্য আপনি দাঁড়িয়ে দেখছেন টা কী? এই ছেলে আমার নামে অপবাদ দিচ্ছে।

তখন রাজ বলে,
-আনায়া একে বলে কী লাভ? তুমি ভাবছো এই নেতাকে দেখলে আমি ভয় পাবো?

-আর একটা কথা বললে তোর দাঁত সব কয়টা আমি ফেলে দেবো। জন্মের ঠিক আছে তোর? বাসায় মা বোন নেই তোর? কার কথায় নাটক সাজাতে এসেছিস?

-আশ্চর্য কার কথা আসবো মানে? তুমি না আমার গফ।

তখন নিবরাস চিৎকার করে উঠে,

-চুপ একদম চুপ। আর একটা কথা বলবে না কেউ। আনায়া আপনি গাড়ীতে গিয়ে বসুন!

নিবরাসের কথায় আনায়া স্বস্তি পেলো না। চেঁচিয়ে বলে,
-যান আপনি গিয়ে গাড়ীতে বসুন। ওর সাহস কত আমায় এসব অপবাদ দিচ্ছে? কী প্রমাণ আছে ওর কাছে? ওর মুখ না ভাঙা অব্দি আমার শান্তি হবে না। আর আপনি কী নিয়ে আসেন? কই আপনার সাথে পুলিশ নেই কেন? এক্ষুনি থানায় কল করুন! একে…

তার আগে নিবরাস আনায়ার হাত টেনে নিয়ে আসে।
আনায়া নিবরাসের যাওয়া দেখে রাজ হাসে।

-কাজ হয়ে গেছে।

অপরপাশের মেয়েটি বলে,
-এবার নিজ গন্তব্যে চলে যাও।

নিবরাস আনায়াকে গাড়ীতে বসিয়ে নিজেও বসে পড়ে। নিবরাসের এমন ভাব ভঙ্গি আনায়ার বিরক্ত লাগছে! লোকটাকে এভাবে ছেড়ে দিবে?

গাড়িতে বসতে,বসতে নিবরাস মেসেজ সেন্ড করে দেয় তার লোকেদের। দু-ঘন্টার মধ্যে সে গোডাউনে আসবে।

আনায়া কথা বলছে না। নিবরাস চুপচাপ গাড়ী চালাচ্ছে। দু’জনের মাঝে পূর্ণ নিরবতা বিরাজ করছে। তখন নিবরাস বলে,

-ওইসব আর মাথায় রাখবেন না। সব ওদের প্লানিং করে করা।

-আপনি পাঠিয়েছেন লোকটাকে?

-আপনার এটা মনে হয়? আমি তো পাগ’ল হয়েছি আমি থাকতে নিজের বউকে জড়িয়ে ধরার জন্য লোক পাঠাবো?

-তো এখন কিছু বললেন না?

-পাবলিক প্লেস! চিন্তা করবেন না লোকটা আমার গোডাউনে পৌঁছে গেছে অলরেডি।

-এই আপনি গুন্ডা?

আনায়ার প্রশ্নে নিবরাস ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে যায়। কিঞ্চিৎ রাগ দেখিয়ে বলে,

-আমাকে গুন্ডা মনে হয় আপনার?

-তা নয়ত কী? গুন্ডাদেরই তো গোডাউন থাকে। নেতা যদি হয় গুন্ডা তাহলে জনগণের কী হবে?

-এই শুনুন আজকাল সুষ্ঠু রাজনীতি করতে গেলে একমাস পরে নিজেকেই ব’লি হতে হবে। এরকম দু’একটা দল আড়ালে রাখা লাগে। নাহলে টিকে থাকা দায়!

– দেখতে নেতা আসলে সে গুন্ডা, এমন লোকের সাথে বাবা আমায় বিয়ে দিলো? তারউপর আগে একটা বিয়ে করছে।

আনায়ার কথা নিবরাস ব্রেক কষে। আনায়া তাকায়। নিবরাস চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে তারদিকে। আনায়া দৃষ্টি সরিয়ে নিবরাসের হাতের দিকে তাকায়। এই বুঝি দাবাং মার্কা হাত দিয়ে তাকে চড়টা দিলোওওও।

কোন রেসপন্স আসেনি। আনায়া নিবরাসকে বলে,

-গাড়ী স্টার্ট দিন না?

-আপনার মুখটা দয়া করে বন্ধ রাখবেন?

-আসলেই আপনি গুন্ডা? আচ্ছা আপনি চাঁদাবাজি করেন?

-হ্যাঁ করি তো! আপনার বাবার থেকেই জোর করে টাকা নিয়ে চাঁদাবাজি করি আমি। এবার শান্তি হয়েছে?

-এমন করেন কেন? আচ্ছা আপনি এতো চুপচাপ থাকেন কেন?

নিবরাস উত্তর দেয়না চুপচাপ গাড়ী স্টার্ট দেয়। আনায়া ও আর প্রশ্ন করেনা। তার মনে হচ্ছে এসব জিজ্ঞেস করা উচিত হয়নি তার। আর জিজ্ঞেস করলেই কী? সে তো রাজনীতি নিয়ে তেমন কিছু জানে না। জামাইয়ের সম্পর্কে সব জানার অধিকার তো তার আছে।

-কী একটা মেয়ে বিয়ে করলাম। নিজের বরকে নেতা থেকে সোজা গুন্ডা আর গুন্ডা থেকে ডিরেক্ট চাঁদাবাজ বানিয়ে দিলো?

ও কী বুঝবে এসবের? মাথায় আছে টা কী?

আনায়াকে মির্জা ভিলাতে নামিয়ে দিয়ে নিবরাস চলে যায় গোডাউনের দিকে। আনায়া গাড়ী থেকে নামতে দেখলো পেছনে আরো দু’টো গাড়ী ছিলো। সেগুলোও নিবরাসের গাড়ীর পেছনে যাচ্ছে।

আনায়া সেসবে পাত্তা দেয়না। ভেতরে যেতে মরিয়ম নওয়াজ তার কাছে আসে। আনায়া তাকে সালাম দেয়। তার পেছন দিয়ে মিসবাহ দৌড়ে আসে। স্কুল ইউনিফর্ম পড়া। আনায়াকে দেখে তাকে জড়িয়ে ধরে। তখন মরিয়ম নওয়াজ বলেন,

-নিবরাস আসেনি?

-এসেছে একটা দরকারে বাইরে গেছে।

তখন তারিশা,মাইশা আসে। মাইশাকে সালাম দেয় আনায়া। তারিশাকে দেখেও ভালো মন্দ খোঁজ খবর নিয়ে পরিচিত হয় আনায়া। মরিয়ম নওয়াজ তাকে ফ্রেয় হতে রুমে পাঠায়। আনায়ার পেছন দিয়েত তারিশা যায় নিবরাসের রুমে।

তারিশাকে দেখে বসতে বলে আনায়া। ব্যাগ থেকে থ্রিপিস বের করে ওয়াশরুম ঢুকে যায় আনায়া। তারিশা খাটের উপর বসে রুমটায় চোখ বুলায়। সব এখন আনায়ার হয়ে গেলো।

বেশীক্ষণ বসেনি তারিশা। চলে আসে রুম থেকে।

*****

রাজকে বেঁধে রেখেছে চেয়ারের সাথে। নিবরাস সাথে তার কয়েকজন লোক যায় গোডাউনে। রাজকে দেখে হাসে নিবরাস।

হাতের পিস্তলটার দিকে একবার তাকায়। পরক্ষণে রাজের মাথা বরাবর পিস্তলটা ধরে বলে,

-আমি আসলে অতি সাধারণ ভাবে নিজেকে তুলে ধরতে পছন্দ করি। তবে কী জানিস? এই রাজনীতির মঞ্চে এসে কেউই সৎভাবে চলতে পারে না। এরকম দু একটা গ্যাং রাখা লাগে। যাদের সম্পর্কে কেউ জানে না। নাহলে শত্রুর জন্য একমাস না যেতে রাজনীতির মঞ্চ থেকে ঠাস করে নিচে পড়ে যেতে হয়। আচ্ছা তুই বল! এতো কষ্ট করে এমপি পদে নির্বাচিত হয়ে কেউ রাজনীতির রংমহলের মঞ্চ থেকে ঠাস করে নিচে পড়ে যেতে চায়? তাও কয়টা গ্যাং না রাখার জন্য? একদম না! তোর এতো সাহস! নেতার বউকে স্পর্শ করেছিস।

নিবরাসের কঠিনগলায় বলা কথাগুলো রাজকে কাঁপিয়ে তুলে। ভার্সিটিতে তখন তেমন কোন রিয়েক্ট করেনি নিবরাস! এমন ভাব করেছে জেনো কিছুই হয়নি। সাধারণ কিছু ঘটেছে।

নিবরাস হুংকার ছেড়ে বলে,

-কে পাঠিয়েছে তোকে?

-ম্যাম।

-কোন ম্যাম?

-আছে তাকে আমি চিনি না।

-না চিনে চলে আসলি নাটক সাজাতে?

-টাকার জন্য!

-গুড! তা এখন তোকে কী করা যায়? হাত দু’টো ভেঙে আজীবনের জন্য পু’ঙ্গ নাকী মাথাটা গলা থেকে আলাদা করে দেওয়া যায়?

-যা খুশি কর নেতা! আপনার সব সত্যও একদিন সামনে আসবে।

হাসে নিবরাস। ভয়ংকর রকমের ধ্বনি তুলছে তার এই হাসি। বাকীরা তাকিয়ে আছে নিবরাসের দিকে। আজকে নিবরাস সাদা পান্জাবি পড়ে আসেনি। কালো শার্ট পড়ে এসেছে। আর বাক্যব্যয়,সময়ব্যয় না করেই পিস্তাল থেকে দুটো বুলেট রাজের নামে দান করে দেয়। রক্ত কিছু ছিটকে নিবরাসের শার্টে আসে। সেটা সে টিস্যু দিয়ে মুছে নেয়।

-আসলে কী জানো? সাদা মানে শুভ্র আর পবিত্র! সেজন্য সাদা পান্জাবি পড়ে আমি খু’ন করে শুভ্র রংটা নষ্ট করতে চাই না। কালো মানে কুৎসিত! যেটা খু’ন করার সময় পরে থাকার জন্য উত্তম একটা রং। যেটায় রক্তের দাগ লাগলে কেউ বুঝবে না। কিন্তু! সাদা রংটায় রক্তের দাগ লাগলে সবাই বুঝে যাবে শুভ্র নিবরাস খু’নি।

গোডাউনটা পুড়িয়ে দিয়ে চলে আসো। তবে খেয়াল রাখবে যাতে সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

নিবরাসের কথা অনুযায়ী কিছু লোক কাজে লেগে পড়ে। রোহীত নিবরাসের পেছনে আসে।

-স্যার আপনার কী মনে হয় ওই মেয়েটা কে?

-আহিয়া।

-কিন্তু!

-আমায় রাজনীতির মঞ্চ থেকে ছুঁড়ে ফেলতে চায় এই আহিয়া। হয়ত শামিম সরদারের সাথে হাত আছে ওর। পুরোনো ক্ষোভ না নেওয়া অব্দি এই মেয়ে ক্ষেন্ত হবে না।

-ওটাতে তো আপনার ভুল নেই! ওর বোনের দোষ। আপনার কী? মেয়েটার মাথা নিশ্চয়ই পাগ’ল হয়ে গেছে সেজন্য সাদরে মৃ’ত্যু গ্রহণ করতে চাইছে।

-কলিজাটা ভীষণ বড় ওর। আজকে যখন আমি ভার্সিটিতে যাই তখন দেখেছি ও পাশের বিল্ডিংটায় দাঁড়িয়ে আনায়ার উপর নজর রেখেছিলো।

-কিন্তু!

-নিবরাসকে চেনো তো রোহীত? অবশ্য চিনবে না চেনার কী আছে? এতোবছর ধরে আছো। আমি কাঁচা খেলোয়াড় নই!

-আজকে একটা খু’ন হলো!

-সব এখানেই শেষ রোহীত। কেউ জানবে না এটা।

-যদি পুলিশ তদন্ত করে?

-প্রমাণ কোথায়?

-আপনি স্যার এলাকার এমপি কিন্তু আপনি যদি মানুষ খু’ন করেন?

-আবর্জনা দূর করছি এলাকা থেকে।

#চলবে

হৃদয় কোঠায় চাঁদের পূর্ণিমা পর্ব-০৩

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|৩|
#শার্লিন_হাসান

পরের দিন সকালে নিবরাস নামাজ আদায় করে রেডি হয়ে নেয়। আজকের দিনটা সে বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মা-বাবাদের সাথে কাটাবে। তাঁদের সাথে গল্প করবে। রেডি হয়ে জিয়াউর রহমানের নাম্বারে কল করে। আনায়ার নাম্বার তার কাছে নেই। কল রিসিভ হতে নিনরাস সালাম দিয়ে খোঁজখবর জিজ্ঞেস করে। আনায়ার সাথে কথা বলবে এটা জিয়াউর রহমানকে বলতে পারছে না নিবরাস। মনে,মনে দোআ করছে এই বুঝি তার শ্বশুর মশাই বললো, ‘নেও বাবা আনায়ার সাথে বলো।’

তখন জিয়াউর রহমান বলেন,
-কিছু বলবে বাবা?

-না,না তেমন কিছু না।

-আনায়ার সাথে কথা হয়েছে?

-আসলে ওর নাম্বার টা আমার কাছে নেই।

-আচ্ছা আমি হোয়াটসঅ্যাপ করে দিচ্ছি।

-আচ্ছা,ধন্যবাদ।

-আচ্ছা নিজের খেয়াল রেখো।

-আপনিও।

কল কেটে দেয় নিবরাস। কিছুক্ষণ পর হোয়াটসঅ্যাপে আনায়ার নাম্বার আসে। নিবরাস কল দেয় আনায়াকে। কয়েকবার রিং হতে রিসিভ করে সালাম দেয় আনায়া। ভয়েস শুনে বুঝতে পারে এটা নিবরাস।

-নামাজ পড়েছিলেন আজকে?

-এখন বলে কী হবে? সকালে জাগিয়ে দিলেন না কেনো?

-আমি কীভাবে জাগাবো?

-তো আপনার কাছে রেখে দিলেন না কেন?

-আচ্ছা এবার থেকে ফোনে এলা্র্ম সেট করে রাখবেন। আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন।

-হুম বুঝলাম।

-ভার্সিটি যাবেন?

-হ্যাঁ যাবো।

-সুন্দর ভাবে চলাফেরা করবেন। নেতার বউ আপনি মাথায় রাখবেন।

-কী প্যারা দেখছেন?

-সেটা না আসলে আমার তো শত্রুর অভাব নেই। সেজন্য আপনাকে একা ছাড়তে চাইছি না।

-আরে চিন্তা করবেন না কে আমাকে কী বলবে? আর কেউই আমায় তেমন চিনে না। আমি ফেস আড়াল করেই রাখি।

-আচ্ছা বায় আমি বের হবো।

-যান ভাগেন।

আনায়া কল কেটে দেয়। নিবরাস বুঝতে পারেনা মেয়েটা মত। নিচে আসতে দেখে রোহিত আছে। পরাগ সহ তারা বেড়িয়ে পড়ে। আনায়ার ভার্সিটিতে লোক লাগিয়ে দিয়েছে নিবরাস, আনায়ার সেফটির জন্য।

সকাল দশটায় তারা আসে বৃদ্ধাশ্রমে। আসার পথে সবার জন্য ফুল নিয়ে আসে। সবাইকে নিয়ে একটা খোলামেলা রুমে বসে নিবরাস। সবার হাতে দু’টো করে গোলাপ দেয়। এর আগেও কয়েকবার এসেছিলো নিনরাস তবে তেমন গল্প করা হয়নি তার। সবার সাথে সুখ দুঃখের গল্প করছে। সবার সন্তানদের নিয়ে অভিমান, অভিযোগ শুনছে।

কেউ,কেউ সন্তানকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করে পড়াশোনা করালো, বড় নামীদামী কলেজ,ভার্সিটিতে। ভালো পজিশনে জব হলো! বিয়ে করলো বৃদ্ধ বাবা মা সেবা করার ভয়ে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে গেলো।

কারোর বা সন্তান খোঁজই নেয়নি। আদৌ বাবা বেঁচে আছে তো?
অথচ সন্তান! বাবা-মা।

তারিশা মির্জা বাড়ীতে এসেছে। এবার এইচএসসি দিয়েছে। এই গতকালকে তার এক্সাম শেষ হয়েছে। ভালো গাইডলাইনের জন্য এক্সামের দুইমাস আগে হোস্টেলে উঠে তারিশা। মির্জা বাড়ীতেই ছোট থেকে বড় হয়েছে সে। মরিয়ম নওয়াজ ও তাকে অনেক আদর যত্ন করেন।

দুপুরে বাড়ীতে এসেই মামানি বলে ডাকছে তারিশা। মরিয়ম নওয়াজ তড়িঘড়ি আসেন। তারিশা তাকে জড়িয়ে ধরে।

-এক্সাম কেমন হলো মা?

-ভালোই হয়েছে মামনি। নিবরাস ভাইয়া কোথায়?

-সে তো আজকে বৃদ্ধাশ্রমে গিয়েছে।

-আসবে কখন?

-চলে আসবে একটু পরই।

-মিসবাহ কোথায়?

-স্কুলে। নিবরাস হয়ত ওকে নিয়েই আসবে।

-আচ্ছা আমি মিসবাহকে আনতে গেলাম।

-আরে না দরকার নেই। তুমি বরং রেস্ট নেও। নিবরাস নিয়ে আসবে।

-তুমিও না মামনি। কতদিন হলো মিসবাহকে দেখি না আমি। গেলাম তো! ড্রাইভারকে নিয়েই যাবো।

-আচ্ছা যাও।

তারিশা মাথা নাড়িয়ে বেড়িয়ে আসে। ড্রাইভার কে বলে গাড়ী বের করতে। তারিশা গাড়ীতে বসতে গাড়ী স্টার্ট দেয় ড্রাইভার তারা মিসবাহর স্কুলের দিকে যাত্রা শুরু করে।

-আংকেল বাড়ীতে কেউ এসেছিলো নাকী? নানার মৃত্যুবার্ষী কি তো সামনে এখন কোন আয়োজন হলো নাকী?

তারিশার কথায় ড্রাইভার মোতাহের বলে,

-সে কী মামনি তুমি জানো না এমপি স্যার যে বিয়ে করলো?

-না, আমি তো শুনিনি। কবে করলো বিয়ে?

-আর কয়েকদিন আগে। গতকালকে বৌভাত অনুষ্ঠান গেলো।

-আমার তো এক্সাম ছিলো।

-হুম! ওইরকম আয়োজন হয়নি। আর এমপি স্যার তো এসবে আগ্রহী না। একবারে সাধারণ ভাবেই বিয়েটা সম্পন্ন হয়েছে।

-বউকে দেখেছেন আংকেল?

-হ্যাঁ দেখেছিলাম। মাশাল্লাহ এমপি স্যারের জন্যই মেয়েটা।

-আমার থেকে বেশী সুন্দর আংকেল?

তারিশার কথায় মোতাহের হোসেনের কথা আটকে যায়। কাউকে বেশী সুন্দর, কম সুন্দর বলাটা ঠিক হবে না। যে যার মতো সুন্দর। কিন্তু মেয়েটা তো তুলনা দিয়ে ফেললো তার সাথে।

-কী হলো আংকেল?

-সে তার মতো সুন্দর আর তুমি তোমার মতো সুন্দর মা। মনে রাখবে আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। কখনো কারোর সৌন্দর্যের সাথে নিজের তুলনা করে মন খারাপ করবে না। আর না নিজের সৌন্দর্যের সাথে অন্য কারোর তুলনা করে কাউকে অপমান করবে।

-সেটা বুঝাইনি আমি।

-বুঝেছি আমি।

মিসবাহর স্কুলে গিয়ে পৌঁছানো পাঁচমিনিটের মাঝে নিবরাস আসে। নিজেদের গাড়ী দেখে চিনতে ভুল হয়নি তার। এরই মাঝে মিসবাহর স্কুল ছুটি হতে মিসবাহ চলে আসে। তারিশা গাড়ী থেকে বেড়িয়ে মিসবাহর কাছে যায়। নিবরাসকে দেখে হাসি মুখে বলে,

-কেমন আছো ভাইয়া?

-আলহামদুলিল্লাহ, তুমি?

-আলহামদুলিল্লাহ।

-এক্সাম তো গতকালকে শেষ হলো। আই হোপ ভালো রেজাল্ট আসবে।

-ইনশাআল্লাহ ভাইয়া।

-মিসবাহ আন্টির সাথে যাবা নাকী মামুর সাথে?

-তোমার সাথে মামু।

-না থাক আন্টির সাথে যাও। কষ্ট করে এসেছে।

-কিন্তু…

-আমি বলেছি না মিসবাহ?

-হ্যাঁ যাচ্ছি।

তারিশা,মিসবাহ তারা আগে চলে যায়। পেছন দিয়ে নিবরাস আসে।

*******

ভার্সিটি থেকে এসে সোজা হাত পা ছিটিয়ে শুয়ে থাকে আনায়া। বাড়ীতে তেমন কেউই নেই। সে আর তার বাবাই থাকে। কাজের বুয়া এসে নাস্তা বানিয়ে দেয় সকালে। রান্না করে টুকটাক কাজ সেরে চলে যায়। আনায়া ও দেখাশোনা করে সবটা। তবুও মাঝেমাঝে অলসতা কাজ করে। সাথে একঝাঁক অভিমান,অভিযোগ কিন্তু এই অভিযোগ করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। অভিমান করার মতো পরিস্থিতি হতে দেয়নি তার বাবা। এই জন্যই বলে বাবারা বাবাই হয়। মায়ের অভাবটা পূরণ না হলেও আনায়া নিজেকে ভালো রাখা ট্রাই করছে। মরিয়ম নওয়াজ ভীষণ ভালো একজন মানুষ তাকে নিশ্চয়ই আগলে রাখবেন।

ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে কল দেয় আনায়া। তার সাথে কথা বলে কিছুক্ষণ। সাথে তার আরেকটা ননদিনীর খোঁজ পায়। তারিশা নাম। আজকে বাড়ী এসেছে এতোদিন হোস্টেলে ছিলো।

কথাবার্তা শেষ হতে আনায়া কফি বানায়। জিয়াউর রহমান অফিস থেকে আসতে তাকে ঠান্ডা জুশ দেয় আনায়া। খাবার বেড়ে টেবিলের উপর রাখে।

বাবা মেয়ে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে। কথার কথায় আনায়া সাহস জুগিয়ে বলেই ফেলে,

-বাবা তুমি তো জানো তোমার থেকে আমি কিছু লুকাতে পারি না। এমনকি মনে প্রশ্ন জমা হলেও তার উত্তরটা তোমার থেকে না জানা অব্দি আমার শান্তি হয়না।

-হ্যাঁ বলো কী প্রশ্ন?

-এই নিবরাস মির্জা।

-কী হয়েছে আবার?

-শুনেছে এমপি নাকী আগেও একটা বিয়ে করেছে।

-তোমাকে এটা কে বললো?

-শুনেছি আমি তোমার থেকে বাকীটা শুনতে চাই।

-এরকম কিছু না মা। আমি জেনেশুনে তো আর তোমাকে আগুনে ফেলবো না। নিবরাস যথেষ্ট ভালো একটা ছেলে। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের পরিবারে কালো দাগ আছে। অতীত! এখনো সমাজে কিছু প্রচলিত কুসংস্কার আছে। যদিও আমি সেসব টানবো না। আমি চাইনা তোমার মায়ের জন্য কেউ তোমায় বলুক যে, ‘মায়ের মেয়ে তার মতো হবে।’ নিবরাস যেমনই হোক তুমি মানিয়ে নিবে মায়ের মতো হবে না আশা করি।

-বাবাই তুমি জানো আমি মাকে ঘৃণা করি। তুমি কীভাবে একসেপ্ট করছো তার মতো আমি হবো? প্রশ্নই আসে না! আমি আমার বাবার মতো সৎ,ল্যায়ল হবো।

****

সন্ধ্যায় নিবরাস সহ বাকীরা বসে আছে। তারিশা সবার চায়ের কাপ ট্রে তে করে এনে দেয়। যদিও নিরব চৌধুরী এতে বকাঝকা করেচেন এতো লোক থাকতে তারিশা কেন চায়ের ট্রে আনবে।
তখন নিবরাস বলে,

-তোমার ভাগনির সুখ বেশী। কেউ বলেনি চায়ের ট্রে আনতে ও নিজেই এনেছে।

-আমার বউমনি এনে দিলে বেশী খুশি হতাম।

মাঝখানে মিসবাহ কথাটা বলে। নিবরাস তার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়। তাতে দমে যায় মিসবাহ। তারিশা মিসবাহর দিকে তাকিয়ে আছে। তার কাছে মিসবাহকে ওভার লাগছে। সব জায়গায় এতো বউমনি,বউমনি করা লাগে?

তখন মরিয়ম নওয়াজ বলেন,
-আচ্ছা আমরা,আমরাই তো। এতো রিয়েক্ট করার কী আছে? ওর মন চেয়েছে এনেছে এতো কথা শোনানো লাগে তোমাদের?

নিবরাস উঠে চলে আসে ফোন হাতে। তার কল এসেছে। এসব নিয়ে আর মাথা ঘামাবে না সে! এর আগেও ঘামায়নি আজকে বকাঝকা শুনে রিয়েক্ট করলো।

আননোন নাম্বার থেকে কল আসায় প্রথমে রিসিভ করেনি পরবর্তীতে কল আসাতে রিসিভ করে। অপরপাশে চিরপরিচিত কন্ঠ শামিম সরদারের।

-নেতা সাহেব! এলাকার উন্নয়ন নিয়ে খুব বেশী চিন্তা তাই না?

-থাকবেই তো চিন্তা আমার এলাকা।

-এতো সুনাম থাকবে না। বেশী না কয়েকটা বাচ্চা গুম করে তোকে জব্দ করতে পারলেই হলো।

-আমাকে জব্দ করে কী হবে?

-পথ থেকে সরিয়ে দেবো। নতুন করে এমপি নির্বাচন করবো আর প্রার্থী তে আমি দাঁড়াবো। শামিম সরদার রাজত্ব করবে। তুই জানিস তুই আসার পর আমার সব শূন্যের চৌকোঠায় দাঁড়িয়েছে।

হাসে নিবরাস। জবাব দেয়না। নিবরাসকে চুপ থাকতে দেখে শামিম বলে,

-তোর একমাত্র জানপাখি,প্রাণপাখি একমাত্র বউ আনায়া তাকে জব্দ করলেও কিন্তু অনেক কিছু করা সম্ভব।

-তারপর আর কাকে,কাকে জব্দ করবি?

-তোর পরিবারকে।

-আর কাকে?

-মজা নিচ্ছিস? তোর মনে হয় আমি তোর সাথে মজা নিচ্ছি?

-বায় তোর মজা আর সিরিয়াস কথা বুঝার মতো সময় আমার নেই।

নিবরাস কল কেটে দেয়। শামিম রাগে ফুসতে থাকে। তার দলের লোকদের আদেশ দেয় আনায়ার সব ডিটেইলস বের করে আনতে। সে নিজেও গাড়ী নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে জায়ানের বাড়ীর উদ্দেশ্য।

*****

রাতে নামাজ আদায় করে, ডিনার শেষে বৈঠক ঘরে যায় নিবরাস। সেখানে তার যত ফাইল,পেপার্স আছে তা দেখছে। আনায়াকে কী নিজের কাছে নিয়ে আসবে? তার লোক তো আছেই আনায়াকে প্রোটেকক্ট করার জন্য। তবুও নিশ্চিন্ত হতে পারছে না নিবরাস। আহিয়া যে আনায়ার কাজিন সেটাও আজকে খবর নিয়ে জেনেছে। সে নিশ্চিত বিয়েসাদীর খবর আহিয়াই আনায়ার কানে ঢুকিয়েছে। কিন্তু তাতে নিবরাসের কিছু যায় আসে না। চলার পথে কত বাঁধা আসবে! আনায়া বুঝলেই হলো। মেয়েটা লাফায় বেশী! তাকেই বুঝ দিতে হবে। মা হারানো মেয়ে চঞ্চল রয়ে গেলো অবশ্য অষ্টম আশ্চর্যের বিষয়। কিন্তু ও তো ওর মাকে ভালোই বাসে না। আবার কষ্ট!
এমন দয়ামায়াহীন মেয়ে তার কপালে জুটলে ভালোবাসা জুটবে কীনা সন্দেহ পোষণ করছে নিবরাস।

রাত একটার দিকে কাগজপত্র রেখে রুমে এসে শুয়ে পড়ে নিবরাস।
জিয়াউর রহমানের সাথে কথা বলে বাকী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে সে।

#চলবে

হৃদয় কোঠায় চাঁদের পূর্ণিমা পর্ব-০২

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২|
#শার্লিন_হাসান

এলার্মের শব্দে নিবরাসের ঘুম ভে’ঙে যায়। আনায়াও এলার্মের শব্দে নড়েচড়ে উঠে। নিবরাস তড়িঘড়ি এলার্ম বন্ধ করে আনায়াকে ডাকে।

-এই যে মিসেস মুয়াম্মার নিবরাস মির্জা উঠুন?

আনায়া ঘুমের ঘোরে বলে,
-ভালো লাগছে না। ডাকছেন কেন?

-নামাজ পড়বেন।

-কোন ওয়াক্ত?

-ফজরের নামাজ। উঠুন একসাথে নামাজ আদায় করবো।

-টেনে তুলুন প্লিজ।

নিবরাস মুচকি হেসে আনায়ার হাত জোড়া ধরে টান দেয়। আনায়া উঠে চোখেমুখে তার ঘুমের রেশ। নিবরাস ফ্রেশ হয়ে অযু করে বসে আনায়ার জন্য। কিছুক্ষণ পর আনায়া অযু করে আসতে দু’জন একসাথে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে পড়ে।

নামাজ আদায় করে আনায়া সোজা শুয়ে পড়ে। নিবরাস আনায়ার দিকে একনজর তাকায়। মূহুর্তে ঘুমের ঘোরে তলিয়ে গেছে মেয়েটা। সে আর দেরী করেনি। বাইরে আসতে বুয়া তার চায়ের মগ টেবিলের উপর দেয়। চা-টা শেষ করে নিবরাস হাঁটতে বের হয়।

তার সাথে তার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট রোহিত আছে। দু’জনে কথা বলতে,বলতে হাঁটছে। রাস্তায় কয়েকজনের সাথে দেখা হয়। তারাও হাঁটতে বের হয়েছে। বেশীরভাগ একটা প্রশ্নের সন্মুখীন হতে হয়েছে, ‘নেতা নাকী বিয়ে করেছেন?’ নিবরাস শুধু মাথা নাড়ায়। এই নারী, প্রেম এসব থেকে দূরে থাকে সে। কিছুটা অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে। তবে রাজনীতিতে আসার পর বেশীরভাগ মানুষের মতে তার গার্লফ্রেন্ড আছে। না ভাবার কী ছিলো? ভার্সিটি থেকে রাজনীতিতে প্রবেশ করে। সভাপতি থেকে এমপি পদে প্রার্থী হয়। বিপুল ভোটে জয় লাভ ও করে।
ভার্সিটি পড়ুয়া বেশীরভাগ ছেলে মেয়েদের গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড থাকে। তবে রাজনীতি নিয়ে অনেক বাধাবিপত্তি আসে। এখনো কম না! লোকের মতে রাজনীতি মানে, ‘চাঁদাবাজি, সন্ত্রা’সী’ আবার কারোর, কারোর মতে বর্তমানে সুষ্ঠু রাজনীতি বলতে কিছুই নেই। রাজনীতি শব্দটা মাথায় আসলে সর্বপ্রথম মুখ থেকে বের হয়, ‘নেতার ব্যক্তিত্ব আর ব্যবহার কেমন?’
আজকালকার রাজনীতির রংমহল তো নোং’রা মী ছাড়া কিছুই নেই। নিবরাস চেষ্টা করে ভালো কিছু করার। বর্তমান সময়ে এসেও মানুষের ধারণার বিপরীতে হাঁটার চেষ্টা।

হাঁটাহাঁটি শেষ করে সাতটার দিকে মির্জা বাড়ীতে ফিরে নিবরাস,রোহিত ।

নিবরাসের বাবা মুয়াম্মার নিরব মির্জা তখন চা পান করছিলেন। সাতটা বাজতে বাড়ীতে অনেক লোকের সমাগম বেড়ে গেলো।

নিবরাস তার বাবার বরাবর সামনের সোফায় বসে। তখন নিরব মির্জা বলেন,

-বৌভাতের আয়োজনটা?

-এখন না। তিন-চারদিন পর। আমার এলাকার এতিমখানার বাচ্চাদের খাওয়াবো আমি।

-রোহিত,পলাশ ওদের বলে দেই বাজার করে নিতে। তুমি তো আবার পার্টি অফিসে যাইবা।

-রোহিত আমার সাথে যাবে। বাকীদের বলে দাও।

তখন মিসবাহ আসে লিভিং রুমটায়। মিসবাহকে দেখে নিবরাস বলে,

-সুপ্রভাত সোনা।

-গুড মর্নিং মামু। বউমনি এখানে নেই?

মিসবাহর কথায় নিবরাস অন্যদিকে তাকায়। এই ছেলেটা তাকে আর কত জানি লজ্জায় ফেলে হিসাব ছাড়া। বুঝে না তার মামু মেয়েদের নিয়ে বা বউ নিয়ে কথা বলতে একটু ইনসিকিউর ফিল করে। তাও বাবার সামনে!
নিবরাসের মুখ দেখে রোহিত মিটিমিটি হাসে। মিসবাহ তার মামুর উত্তরের অপেক্ষায় আছে। তখন নিরব মির্জা বলেন,

-এদিকে আসো ভাইয়া।

মিসবাহ নিরব মির্জার পাশে বসে। তখন নিবরাস বলে,

-মিসবাহ তোমার রুমটায় আমি অপেক্ষা করছি একটু এসো তো।

মিসবাহ মাথা নাড়ায়। নিবরাস উঠে চলে যায়। তখন নিরব মির্জা বলেন,

-তোমার মামুকে এভাবে সবার সামনে বউমনি নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করো না।

-কেন? সে তো আমাদের পরিবারের সদস্য নানাভাই।

-একমাস পড়ে জিজ্ঞেস করিও। যখন তোমার বউমনি সবার সাথে মিশে যাবে তখন।

-ঠিক আছে।

-আচ্ছা যাও তোমার মামু ডাকছে।

মিসবাহ মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। নিবরাস সোফায় বসে অপেক্ষা করছিলো মিসবাহর জন্য। সে যেতে কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,

-মামু কারোর সামনে আর বউমনির কথা আমায় জিজ্ঞেস করবা না।

-করলে প্রবেম কী মামু?

-ওটা প্রবেম না প্রব্লেম মামু।

-একই ব্যপার মামু। বউমনিকে বলে দিও আমার সাথে গল্প করার জন্য।

-সে বলে দিবো আর তুমি সবার সামনে এভাবে বলবা না। তুমি জানো না তোমার মামু লজ্জা পায়। আর তুমি সবসময় আমায় লজ্জায় ফেলো মিসবাহ।

-তাই বলে আমি কিছু জিজ্ঞেস করবো না তোমায়?

-করবা তবে বউমনি নিয়ে না।

আনায়া ঘুম ভাঙতে তরিঘড়ি উঠে। ঘড়ির দিকে নজর যেতে দেখলো সাড়ে আটটা বাজে। উঠে ফ্রেশ হয়ে নিজেকে গুছিয়ে নেয়। তখন আবার নিবরাস রুমে প্রবেশ করে। আনায়াকে দেখে বলে,

-মিসবাহ র সাথে গল্প করতে পারেন। বোরিং লাগবে না।

-আচ্ছা করবো।

-হ্যাঁ চলুন নাস্তা করবেন।

-সবাই করে ফেলেছে? ইশ! আমি লেট লতিফা। আপনি তো পারতেন আমায় একটু জাগিয়ে দিতে।

-তখন তো টেনে তুললাম আপনার ঘুমের ডিস্টার্ব করে এখন যদি তুলতে যাই আপনি যদি ঘুমের ঘোরে আমায় চ’ড় মেরে দেন?

-আমার হাত ওতো চলে না। আর আমি চড় মারবো না।
আর ধন্যবাদ আমাকে নামাজের জন্য জাগিয়ে তোলার জন্য।

-আপনি অনুমতি দিলে আমি প্রতিদিন আপনাকে নামাজের জন্য জাগিয়ে তুলবো।

-আচ্ছা দিলাম অনুমতি।

-আচ্ছা চলুন নাস্তা করবেন।

মাথা নাড়ায় আনায়া। নিবরাসের পেছনে হাঁটা ধরে। টেবিলের কাছে আসতে মরিয়ম নওয়াজ তাকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নাস্তা নিয়ে আসে। মিসবাহ ও এতোক্ষণ ওয়েট করে ছিলো আনায়ার সাথে নাস্তা করবে বলে। নিনরাস,মিসবাহ,মাইশা,আনায়া সাথে নিবরাসের মেয়ে কাজিন, ‘শিফা, সাইফা’ ছেলে কাজিন, ‘মাহি,মুনিম’ তারা সবাই একসাথে নাস্তা করতে বসে।

নাস্তা শেষে শিফা,সাইফার সাথে কথা বলতে বলে আনায়া। সাথে মাহি,মুনিম ও আছে। মরিয়ম নওয়াজ সাথে মাইশা রান্নাবান্নার দিকটা দেখছে।

নিবরাস রেডি হয়ে নেয় পার্টি অফিসের জন্য বেরুবে। তখন মিসবাহ আনায়াকে নিয়ে নিবরাসের রুমে প্রবেশ করে। নিবরাসকে দেখে মিসবাহ বলে,

-চলে যাচ্ছো?

-হ্যাঁ!

-কোথায় যাচ্ছেন?

প্রশ্ন করে আনায়া। তখন নিবরাস বলে,

-পার্টি অফিসে।

-ওহ্! ফিরবেন কখন?

-মিটিং শেষ হলে দুই আড়াই ঘন্টা পর।

-ওহ্!

নিবরাস মাথা নাড়ায়।

*****

কেটে গেছে চারদিন। আজকে আনায়া,নিবরাসের বৌভাত অনুষ্ঠান। আয়োজন করা হয়েছে এতিমখানার বাচ্চাদের জন্য সাথে তাদের ফ্যামিলি আর অল্পকিছু রিলেটিভিদের নিয়ে।

নিবরাস নিজে খাবার সার্ভ করছে বিভিন্ন টেবিলে।

আনায়া রুমেই বসে আছে। তাকে ঘিরে আছে শিফা,সাইফা,আহিয়া সাথে আছে মিসবাহ। মাইশা তার বরের সাথে কথা বলছে। রিলেটিভি অনেকে আনায়াকে দেখতে এসেছে।

চুপচাপ বসে আছে আনায়া। বৌভাত অনুষ্ঠানে এসে আহিয়ার বলা কথাটা আবারো মনে পড়লো তার। কিন্তু এই মেয়ে তো পুরো সত্যি তাকে বলবে না।

-আচ্ছা নিবরাসের কোন অতীত আছে? কী হতে পারে? আমার জানা মতে ও ভার্সিটি থেকেই রাজনীতিতে প্রবেশ করে। এই নিয়েও কত ঝড়,ঝামেলা বাবার মুখে শুনেছে আনায়া। কখন নারী প্রসঙ্গে কিছুই কানে আসেনি।

আনায়ার ভাবনার মাঝে আহিয়া বলে,
-আবার কী ভাবছিস আনায়া?

-না কিছু না!

-তোর বরের বিয়ে নিয়ে?

চুপিসারে কথাটা বলে আহিয়া। আনায়া কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,

-দেখ আহিয়া তুই খুব ভালো করেই জানিস আমি অর্ধেক কথা পছন্দ করি না। বললে পুরোটা বলবি না বললে এক কথা বারবার জিজ্ঞেস করবি না। কাটা গায়ে লবণের ছিটা দেওয়া বন্ধ কর।

-আরে রেগে যাচ্ছিস কেন? তোকে কিন্তু দারুণ লাগছে আজকে।

-সে লাগবেই। নেতার বউ বলে কথা।

-অহংকার পতনের মূল।

-অহংকার না প্রাউডলি বললাম।

তখন মিসবাহ জোরে বলে,

-এই বউমনি আমার সাথে কথা বলছো না কেন? ওই আন্টিটার সাথে এতো বেশী কথা বলছো আমার তো জেলাচ হচ্ছে।

-সোনা ওটা জেলাচ না জেলার্স হবে।

রুমে প্রবেশ করে কথাটা বলে নিবরাস। নিবরাসের কন্ঠ স্বর কানে বাজতে সবাই তার দিকে তাকায়। আহিয়াকে দেখে নিবরাস থমকে যায় কিছুটা। তবুও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,

-সবাই অপেক্ষা করছে নিচে। মিসবাহ, শিফা,সাইফা গেস্ট সাথে বউমনিকে নিয়ে আসো।

নিবরাস প্রস্থান করে। শিফা,সাইফা আনায়াকে নিয়ে নিচে যায়। তখন মরিয়ম নওয়াজ আসেন আনায়ার কাছে। আনায়াকে দেখে মিষ্টি হেসে বলেন,

-মাশাল্লাহ আমার বউমা আস্ত পরী।

-ধন্যবাদ আম্মু।

মরিয়ম নওয়াজ সবার সাথে আনায়ার পরিচয় করিয়ে দেন। জিয়াউর রহমান নিবরাস সাথে নিরব মির্জার সাথে কথা বলছে।

আজকে আনায়া পিংক কালারে শাড়ী পরিধান করেছে। খুবই সিম্পল ভাবে সেজেছে। তাঁদের কথাবার্তা পর্ব শেষ হতে বাকীরা সহ খেতে বসে। নিবরাস এতিমখানার বাচ্চাদের বিদায় দিয়ে আসে।

আনায়া রেডি হয়ে নিয়েছে তাঁদের বাড়ীতে যাবে বলে। নিবরাসের দেখা মেলেনি এখনো। গেলে যাবে না গেলে নাই। আনায়ার এসবে মাথা ব্যথা নেই। তখন মরিয়ম নওয়াজ সাথে নিবরাস ও আসে রুমে। আনায়া মরিয়ম নওয়াজকে দেখে বলে,

-মিসবাহ যাবে আমার সাথে?

-নিবরাস গেলে ও যাবে।

-আপনি যাবেন না?
জিজ্ঞেস করে আনায়া। নিবরাস উত্তর দেয়,

-আসলে আমার কাজ আছে। আপনি যান, কয়দিন থেকে আসুন।

আনায়া মাথা নাড়ায়। মরিয়ম নওয়াজ প্রস্থান করতে আনায়া ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। নিনরাস পেছন ফিরে তাকাতে দেখলো আনায়া রেগে তাকিয়ে আছে। নিবরাস ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,

-রেগে লাভ নেই, আমি যাবো না।

-আপনাকে আমি যাওয়ার জন্য বলতাম ও না। শুধু আম্মুকে দেখে বললাম। আর যাবেন কেন শুনি? নিজের প্রাক্তন স্ত্রী কে নিয়েই বসে,বসে শোক করুন।

-ফাল’তু কথা ছাড়ুন তো।

-সত্য কথা আপনার কাছে ফাল’তু মনে হয়?

-কিসের সত্য? প্রমাণ আছে আপনার কাছে? কার কথায় ভুল ভাল দোষ দিচ্ছেন?

-যদি কখনো এটা সত্য হয়ে সামনে আসে।

-কখনো এরকম কিছু হবে না। সবচেয়ে বড় কথা, যা ঘটেনি তা সত্য হয়ে সামনে আসবে কীভাবে?

-আসবে,আসবে।

-সেদিন আপনি মাইক নিয়ে এলাকাবাসীকে বলিয়েন যে, মুয়াম্মার নিবরাস মির্জা আগে একটা বিয়ে করছে এবং আমি তার দ্বিতীয় স্ত্রী সেটা তদন্ত করে বের করে এনেছি এখন আমাকে নোবেল এনে দিন আপনারা।

-আপনার সাথে কথা বলে পারা যাবে না।

-যান তো বাপের বাড়ী। চলে তো যাবেন কোথায় স্বামীর সেবা করে যাবেন কয়দিন পর না পর দেখা হয়।

-বউকে বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দিচ্ছেন আলিঙ্গন করে দুই চারটা চুমু দিয়ে বলবেন, ‘মিস করবো তোমায়।’ তা না তাড়িয়ে দিচ্ছেন?

-আমি ব্যস্ত কাউকে মিস করি না।

-এই জন্যই আগের বউ নিশ্চয়ই চলে গেছে।

-ফাল’তু কথা ছাড়বেন?

-সত্যিটা না জানা অব্দি ছাড়ছি না।

-ওকে ফাইন! নেক্সট টাইম বিয়ের কথা উঠাবেন আর ঠাসঠাস চুমু খাবেন। এখন আপনার চয়েজ।

-আপনার মনে হয় আমি ভয় পাবো?

-না,না ভয় পাবেন কেন? আমার মনে হয় আপনি খুশি! আপনি জানেন এই নেতার পেছনে কত মেয়ে লাইন মারতে চেয়েছে সেখানে আপনার বর উনি।

তাঁদের কথা কাটাকাটির মাঝে সাইফা এসে নক করে। নিনরাস দরজা খুলে দিতে সাইফা বলে,

-আনায়া আপু কোথায়? তাকে যেতে বলেছে।

-হ্যাঁ যাবে ব্যাগ গুছাচ্ছে।

সাইফা মাথা নাড়িয়ে চলে আসে। আনায়া ব্যাগ নিয়ে বাইরের দিকে রওনা হয়। যাওয়ার সময় নিবরাসকে বলে,

-আচ্ছা আপনি আমাদের ভার্সিটিতে আসিয়েন সময় করে। আমি আগামীকাল থেকে নিয়মিত হবো।

-আচ্ছা যখন যাই জানাবো।

-আসি!

-হ্যাঁ যান।

-সুন্দর ভাবে বলুন।

-আসুন ম্যাডাম।

আনায়া বেড়িয়ে আসে। নিচে আসতে সবাইকে দেখতে পায়। মিসবাহ বায়না ধরেছে যাওয়ার জন্য। কিন্তু নিবরাসকেও যেতে হবে। নিবরাস যাবে না। মিসবাহকে স্বান্তনা দেওয়ার জন্য নিবরাস বলেছে যখন আনায়াকে নিয়ে আসার জন্য যাবে তখন মিসবাহকে নিয়ে যাবে। তাতে আর কিছু বলেনি মিসবাহ। নিবরাস বুঝেছে এখন আর বেশীদিন আনায়া সেখানে থাকতে পারবে না। একদিন না যেতে মিসবাহ জ্বালিয়ে মারবে যাওয়ার জন্য। একে বলে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা।

আনায়াদের বিদায় জানিয়ে চলে আসে নিবরাসরা সবাই।

#চলবে

হৃদয় কোঠায় চাঁদের পূর্ণিমা পর্ব-০১

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|১|
#শার্লিন_হাসান

‘তোর বর আগেও একটা বিয়ে করছে আনায়া; অথচ তুই এতোদিন নিজেকে কতটা লয়্যাল রাখলি। ছেলেদের ইগনোর করতি দেখ সেজন্য তোর ভাগ্যেই বিবাহিত জামাই জুটলো।

আমি যে তোকে এটা বলেছি কাউকে বলিস না।’

মামাতো বোন আহিয়ার কাছ থেকে কথাটা শোনে কোন রিয়েক্ট করেনি আনায়া। তার বাবা তার ভালো চেয়ে হয়ত বা করেছে। আর বাবার সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করে আনায়া। লোকে যা বলার বলুক! তার এখন বিয়ে হয়ে গেছে। আর ঘন্টাখানেক পর বিদায়ের সময় ও ঘনিয়ে আসবে।

এই বিয়েটা মোটামুটি গোপনে হচ্ছে। বাইরের লোক তেমন কেউই জানে না। তবে বিয়ের খবরটা লিক হতে ও হয়ত বেশী লেট নেই। সাধারণ দিনের মতো সাদা পান্জাবি পড়েই বিয়েতে এসেছে নিবরাস। তার দলের লোক ছাড়া কেউই জানে না বিয়ে নিয়ে।

ডান হাত দিয়ে বা হাত কচলাচ্ছে আনায়া। তেমন ভাবেনি তবুও কেমন জেনো লাগলো। এমপি আগে বিয়ে করেছে এটা তো লিক হওয়ার কথা ছিলো। কেউ না জানলেও তার বাবা নিশ্চয়ই জানতো। নিবরাসের বাবার সাথে গলায়,গলায় ভাব। নেতা নিবরাসের সাথেও।

আনায়ার বাবা জিয়াউর রহমান মেয়েকে নিবরাসের হাতে তুলে দিয়ে বলেন,

-তোমার প্রতি বিশ্বাস এবং ভরসা সবশেষে ভালোবাসা রয়েছে আমার। আল্লাহর পর আমার মেয়ের দ্বিতীয় ছায়াটা তুমি হইয়ো।

নিবরাস মাথা নাড়িয়ে বলে,
-জ্বী আমি চেষ্টা করবো।

অতঃপর আনায়াকে নিয়ে মির্জা ভিলার দিকে রওনা হয়। গাড়ীতে কেউ কারোর দিকে ফিরিয়েও তাকায়নি। আনায়ার মাথায় নিবরাসের আগের বিয়ের কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে।

মির্জা বাড়ীতে আসতে লোকের সমাগম দেখতে পেলো আনায়া। না থাকারই বা কী আছে? এমপির বাড়ী বলে কথা। লোকজন একের পর এক। বিশাল বাড়ীতে লোকের অভাব নেই! অথচ আনায়ার বাড়ীতে তেমন মানুষই নেই। চাচ্চুদের সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর আনায়ার একাই সময় কাটতো। মা তো সে কবেই ছেড়ে চলে গেলো নিজের সুখের খোঁজে।

কয়েকজন মেয়ে আনায়াকে একটা রুমে নিয়ে যায়। বিশাল লিভিং রুম জুড়ে লোকের সমাগম। নতুন বউ! ভেতরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন মরিয়ম নওয়াজ। তার মেয়ে মাইশা নওয়াজ তার অন্যান্য কাজিনদের সাথে মিলে আনায়াকে নিয়ে ভেতরে যায়। সেখানে আনায়া চেন্জ করে আরেকটা শাড়ী পরিধান করে। যথাসময়ে নাস্তা আসে। বাকীদের সাথে বসে হালকা নাস্তা করে নেয় আনায়া।

ফ্রেশ হয়ে দলের লোকেদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসেছে নিবরাস। তাদের বৈঠকঘরে এই আলোচনা। বিশেষ করে তার এলাকার উন্নয়ন নিয়ে। সেই সাথে বিপরীত দলের লিডার শামিম সরদার। উঠেপড়ে লেগেছে তার পেছনে।

নেতার বিয়ে হলো অথচ কোন জাঁকজমক কিছুই হলো না। না তেমন লোক আসলো, জানাজানি হলো! সাধারণ আর পাঁচটা দিনের মতো আজকের দিনটাও নিবরাসের কাছে একই মনে হলো। নিজের জীবনের সাথে আরেকজন জড়ালো সেটা মনেই হয়না।

দশটার দিকে তাঁদের কোম্পানির কিছু ফাইল দেখে সে।
তাদের মির্জা কোম্পানিকে টেক্কা দিতে চায় জায়ান কোম্পানি। ব্যস্ত হাতে ফাইল দেখছে। তার পেছন দিয়ে তার ভাগিনা মিসবাহ আসে। মামুকে ব্যস্ত দেখে বলে,

-মামু ডিনার করবা না?

-তুমি করে নেও বাকীদের সাথে মামু একটু ব্যস্ত।

-মামু তুমি অনেক পঁচা। জানো কী তুমি?

নিবরাস হাতের ফাইলটা রেখে তাকায় মিসবাহর দিকে। শান্ত কন্ঠে বলে,

-কী করলাম সোনা?

-বউমনির সাথে পরিচয়টা করিয়ে দিলে না আমায়। মামু চলো আমি, তুমি,বউমনি একসাথে বসে গল্প করি।

-আহা! মামুর কী আবদার! দেখো মিসবাহ আমি ব্যস্ত। তুমি পারলে গিয়ে তোমার বউমনির সাথে গল্প করো মামুর এসবে ইন্টারেস্ট নেই।

-আসবে না তাই না? দাঁড়াও মজা দেখাচ্ছি।
মনে,মনে কথাগুলো বলে মিসবাহ স্থান ত্যাগ করে। কিছুটা সামনে এসে চিৎকার করে উঠে। মিসবাহর চিৎকার শুনে নিবরাস তড়িঘড়ি উঠে যায় হাতের ফাইলটা রেখে।

মিসবাহ নিচে পড়ে কান্না করছে। নিবরাস তাকে কোলে উঠিয়ে নেয়। গালে হাত রেখে বলে,

-কী হয়েছে সোনা? পড়ে গেলে কীভাবে?

-তুমি আমার সাথে আসলেই তো আর পড়তাম না আমি। আসেনি কেন?

নিবরাস পড়েছে বিপাকে। ততক্ষণে মরিয়ম নওয়াজ সাথে মাইশা এসেছে তাঁদের কাছে। মিসবাহর কথা শুনে মরিয়ম নওয়াজ বলেন,

-কী এমন ক্ষতি হতো মিসবাহর সাথে আসলে? দেখলে তো বাচ্চাটা পড়ে ব্যথা পেয়েছে।

-স্যরি সোনা, মামু আসছি পাঁচ মিনিটের মধ্যে।

-হ্যাঁ এসো আমার ঘরটায়তে ই আসো। এক মিনিট লেট হলে আড়ি তোমার সাথে।

-একদম লেট হবে না সোনা।
কথাটা বলে মিসবাহর কপালে চুমু খায় নিবরাস। উঠে ত্রস্ত পায়ে ফাঁকা রুমটায় যায়। ফাঁকা বললে ভুল হবে, বসার মতো সোফা টেবিল,আলামরি আছে দুইটা। যেখানে নিবরাস তার পার্সোনাল ফাইল রাখে,ফাইল দেখে নিরবে। হাতের কাজ কোনরকম শেষ করে হাঁটা ধরে মিসবাহর রুমের দিকে।

রাত বাজে দশটা। বাকীরা ব্যস্ত! কেউ নিবরাসের রুম নিয়ে,কেউ রান্নাবান্না নিয়ে। এই মূহুর্তে অনেকে হয়ত জেনেছে তার বিয়ের কথাটা। ত্রস্ত পায়ে রুমে প্রবেশ করতে নিবরাসের আঁখি জুগল যায় খাটে বসে থাকা অষ্টদশী কন্যার দিকে। জামদানী শাড়ীতে নিজেকে মুড়িয়ে রেখেছে। গাঢ় সবুজ রঙের জামদামী শাড়ীটা ফর্সা দেহে ফুটে উঠেছে বেশ ভালোভাবে। মেয়েটাকে দেখে অল্পবয়সী মনে হচ্ছে। নিবরাস চোখ সরিয়ে নেয়।নিবরাস মিসবাহকে ডাক দেয়।

মিসবাহ হাত দিয়ে ইশারা করে নিবরাসকে আসতে,বসতে। নিবরাস অস্বস্তি অনুভব করছে। আনায়া নিবরাসের দিকে তাকায়। কালো পাঞ্জাবি পড়ে আছে লোকটা। দেখতে ভালোই লাগছে। চেহারায় সবসময় গম্ভীর্যতা থাকলেও নেতানেতা ভাবটা বেশ প্রখর।

নিবরাস সোফায় বসে পড়ে। আনায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-আপনি জিয়াউল আংকেলের মেয়ে আনায়া রাইট?

আনায়া ভ্যাবয়ছ্যাকা খেয়ে যায়। এতো ভাব কিসের লোকটা? সে তো তার শিকড়েই বেঁধে নিয়েছে নিজেকে। ভাব দেখিয়ে লাভ কী সেই একদিন হলেও বউয়ের কাছেই আসতো হবে। নিবরাসকে মূহুর্তে বিরক্ত লাগলো আনায়ার কাছে। ইগো,এট্টিটিউড তারও পছন্দ কিন্তু ওভার না।

নিবরাস কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সে জানে আনায়া জিয়াউর রহমানের মেয়ে তাও জিজ্ঞেস করলো। তখন মিসবাহ বলে উঠে,

-মামু বউমনিকে নিয়ে খাবার খেতে আসো। নানু ডাকছে।

-কখন ডাকলো মিসবাহ?

-এখনি ডাকবে দেখো।

তখন একজন মেয়ে সার্ভেন্ট এসে তাঁদেরকে খাবার খেতে যাওয়ার জন্য বলে। নিবরাস বুঝেছে এটা তো ডেইলি রুটিন! মিসবাহ ভালো করেই জানে।

সার্ভেন্ট ডাক দিতে মিসবাহ ছুটে চলে। তখন নিবরাস আনায়াকে বলে,

-চলুন! ডিনার করবেন।

নিজে হাঁটা ধরে। আনায়া তার পেছনে আসছে। টেবিলে সব সাজিয়ে রাখছেন মরিয়ম নওয়াজ। আনায়াকে দেখে তড়িঘড়ি তার কাছে গেলেন। চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিজ হাতে খাবার বেড়ে দিলেন।

-তুমি খেতে পারবা তো মা? নাকী আমি খাইয়ে দেবো?

মরিয়ম নওয়াজের কথায় নিবরাস তাকায় আনায়ার দিকে। তার কাছে কেন জানি ওভার লাগছে সবকিছু। আনায়াকে এতো প্রশ্রয় দেওয়ার কিছু হয়নি। কিন্তু সেটা বাইরে প্রকাশ করতে পারলো না নিবরাস। খেয়ে উঠে গেলো সবার আগে। বাকীরা খাচ্ছে একের পর এক। মানুষ গিজগিজ করছে মির্জা ভিলাতে। যদিও একটু পর অনেকটা ভিড় কমে যাবে।

******

ফুলসজ্জিত রুমের খাটের এক কোণে বসে আছে আনায়া। নিবরাস রুমে প্রবেশ করেছে সবে মাত্র। তবে কোন কথা না বলে বালিশ হাতে নেয়। পেছন ঘুরে বলে,

-আপনার সাথে এডজাস্ট করতে আমার সময় লাগবে।

-এতো বেশী ঢং দেখাবেন না। এই শুনুন আমিও এতো ইন্টারেস্ট নই আপনার উপর। সেই শুরু থেকে আপনার ভাবটাই দেখে যাচ্ছি। নেতা! তো কী? বাইরের মানুষের কাছে নেতাগিরি আর ভাব দেখাবেন আনায়ার সামনে না।

-আমি কারোর সামনে ভাব দেখাই না! তবে যার তার সাথে কথাও বলি না। তেমন মিশি না, বিশেষ করে আপনার মতে মানুষদের সাথে। বাকীদের সাথে ঠিক আছি।

-নেতার ব্যবহারের কী অবস্থা। এ আবার করবে জনগনের সেবা? প্রশ্নই আসে না!

-এই শুনুন আপনাকে এতো বেশী কথা বলতে বলিনি।

– আমি তো আপনাকে ভোটই দেবো না।

-আপনার একটা ভোটে আমার কিছু যায় আসে না মিস আনায়া ইবনাত অরি।

-হয়নি বলা! বলবেন মিসেস মুয়াম্মার নিবরাস মির্জা অরি।

-উফফ কী শখ!

-আপনি এমন রসকষহীন মানুষ কেন?

-আপনাকে উত্তর দিতে বাধ্য নই আমি।

-লাগবে না আপনার উত্তর। বাবা যে কী দেখে আমায় বিয়েটা দিলো। এটা জামাই ও না জামাইয়ের মাথা ও না। ওই জনদরদি হতে পারবেন বউ দরদি না।

-আমার জীবনে আমি কারোর সাথে এতো কথা বলেছি কীনা জানা নেই! এই আপনার মতো বাঁচাল মেয়ের সাথে বলতে হলো।

-আপনাকে কে মানা করেছে বকবক না করতে? আজব!

-সরুন তো!

আয়ানাকে ঠেলে নিজের সীটে শুয়ে পড়ে নিবরাস। ওতো নাটক করার সময় তার নেই। আনায়া বসে,বসে ভাবছে কী করবে? আচ্ছা আগের বিয়ের কথা কিছু জিজ্ঞেস করবে? যদি আবার বেশী রিয়েক্ট করে? যদি এই দাবাং মার্কা হাত দিয়ে তাকে চড় দিয়ে দেওয়ালে পোস্টার বানিয়ে জুলিয়ে দেয়?

-না,না এই রিস্ক কিছুতেই আনায়া নিতে পারবে না। এই নেতা এতো রসকষহীন কেন? দেখতে আটাশবছরের যুবক মনে হলেও মনটা আশি বছরের বুড়ো লোকদের মতো। বুড়ো লোকরাও ভালো বউ পাগ’ল হয়। এই ভদ্রলোক তো বউ বলতে এলার্জী। কী জানি দেখা যাবে মানুষের সামনে তাকে বউয়ের জায়গায় বোন বলে না পরিচয় করিয়ে দেয়।

আনায়া সব ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেয়। তবে একটা ভাবনা রয়েই যায় আর সেটা হলো নিবরাসের বিয়ে নিয়ে। যদি নিবরাস বিয়ে করে থাকে?

-বাবাই জেনেশুনে একটা বিবাহিত ছেলের সাথে আমায় বিয়ে দিলো? কিন্তু লোকটাকে দেখে মনে হয়না বিয়ে করেছে আগে। এমন ও তো হতে পারে আহিয়া মিথ্যে বলেছে আমাকে। কিন্তু ও কেন মিথ্যে বলবে?

আনায়াকে বসে থাকতে দেখে নিবরাস বলে,

-সালাম তো দেননি! বিয়েটা যা,যা বাসরটা শুদ্ধ হলো না। মনে হয় আরেকবার বিয়ে করে বাসর শুদ্ধ করে নিতে হবে।

নিবরাসের কথায় আনায়া তাকায়। চোখ বন্ধ করে কথাগুলো বলেছে নিবরাস। আনায়া তখন বলে,

-আপনি তো এসে বালিশ হাতে কোনদিকে জানি হাটা ধরলেন? ভাব আপনি দেখিয়েছেন আর আমি সালাম দেওয়ার সুযোগ কোথায় পেলাম?

-ঝগড়া করতে,করতে দম আসে আর যায় আবার আপনি দিবেন আমায় সালাম?

-আচ্ছা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

-কী কথা?

-আপনি নাকী আগে একটা বিয়ে করেছেন?

আনয়ার কথা নিবরাস কোন রিয়েক্ট করে না। মুখে গাম্ভীর্যতা টেনে বলে,

-হ্যাঁ করেছিলাম তো! আপনি জানেন না?

-তো আমাকে বিয়ে করলেন কেন?

-আপনার বাপ আমার বাপ দু’জনে চেয়েছে সেজন্য আর সবচেয়ে বড় কথা আমার বিয়ের বয়স হয়েছে। এখন বিয়ে না করলে কী বুড়ো হয়ে করবো?

-আগে না বিয়ে করলেন?

-ডোন্ট ওয়ান্না টক। ফাল’তু কথা মুখ দিয়ে বের করলে থাপ্পড় দিয়ে দেওয়ালে পোস্টার বানিয়ে জুলিয়ে দেবো। যান ঘুমান।

-ফাল’তু কথা কী? সত্যিটা বললেই ভালো লাগে না আপনার। আপনি নিশ্চয়ই বউকে জ্বালিয়ে,ঝগড়া করে মেরেছেন।

নিবরাস আনায়ার হাতে ধরে টান দিয়ে নিজের উপর ফেলে দেয়। একবাহু দিয়ে আনায়ার কেমড় আঁকড়ে ধরে।

-আর একটা কথা বললে অশুদ্ধ বাসরটাই আমি সেরে নিবো।

-এই আপনি আমায় থ্রেট দিচ্ছে…”

নিবরাস নিজের ওষ্ঠদ্বয় আনায়ার ওষ্ঠদ্বয়ে ঠেকালো।
কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিতে আনায়া ছিটকে দূরে সরে যায়। তখন নিবরাস বলে,

-আর একটা ফাল’তু কথা বললে আবারো এমনটাই হবে। ঘুমান তো! বাঁচাল কোথাকার।

আনায়ার মনে চাচ্ছে নিবরাসের চুলগুলো টেনে ছিঁড়তে। এই লোকের সাথে ঝগড়া করে জেতা যাবে না। এমনকি তার আগের বিয়ে নিয়েও কিছু জানতে পারবে না। জিজ্ঞেস করলেই ঠাস করে ওষ্ঠ ঠেকিয়ে দিবে।

#চলবে
(টোটাল শব্দসংখ্যা: ১৫৯২)

কোন সুতোয় বাঁধবো ঘর পর্ব-৩১ এবং শেষ পর্ব

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৩১

আজ শুক্রবার আর কিছুক্ষণ, তারপরই জারিফের সেই কাঙ্খিত মূহুর্ত চলে আসবে। ইরহাকে রাজি করাতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি৷ অবশেষে শক্ত মনের মানবী তার হচ্ছে।জারিফের মনে হচ্ছে ওই গানটার মত, আমি পাথরেও ফুল ফোটাবো শুধু ভালোবাসা দিয়ে।অবশেষে সে পাথরে ফুল ফোটাতে পেরেছে। যেমন এক্সাইটেড তেমন মনে, মনে নার্ভাস। একটু সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠলো সামনের কমিটি সেন্টারে বিয়ে। ছাদারে এক পাশে দাঁড়িয়ে ডেকোরেশনের কাজ দেখছিলো, হঠাৎ চোখ আটকে গেলো জারিফ ওয়েডস ইরহা লেখা ব্যানারে। সেখানে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,জীবনের কত বসন্ত একলা কাটিয়ে তোমায় পেতে চলেছি আমার বসন্তের পাখি। এবার থেকে আমার প্রতিদিন বসন্তের রঙে রাঙিয়ে দিও ।
রাতুল অদূরেই দাঁড়িয়ে আছে, তার মন খারাপ কারণ নাদিম বলেছে বিয়ে এখন হবে না। লাবিবার এইচএসসির পরই বিয়ে। এখন শুধু জারিফের বিয়ে হবে।কিন্তু তার ইচ্ছে ছিলো দুই ভাই একসাথে বিয়েটা সেরে ফেলবে। ইচ্ছের কথা লজ্জায় মুখ ফুটে বলতেও পারেনি। নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে লাবিবাকে কল করল,লাবিবা রিসিভ করে বলে,কি হয়েছে বাবু।
‘জান চলো বিয়েটা আজ করে ফেলি।
‘আমি কখন মানা করলাম বাবু যাও ভাইয়াকে রাজি করাও।
‘তোমার ভাই এমন কেন হু একটু বিয়ের জন্য রাজি হলে কি হতো। আই নিড বিয়া।
‘আমাকে বলে কি হবে ভাইয়াকে বলো।আর বিয়ে না হচ্ছে তো কি আমরা প্রেম করতে থাকি। বিয়ে তো হবেই।
‘তোমার যে পানসা প্রেম, হাতটা পর্যন্ত ধরতে দাওনা। কিস করতে বললে একগাদা ইমোজি পাঠিয়ে দাও।
বিয়ে হলে তো আর এমন হবে না গো। তখন প্রেম হবে মাখোমাখো।
‘আহা গো বাবু তোমার মাখো মাখো প্রেমের জন্য আরো আটমাস ওয়েট করো। রাখো এখন সাজতে বসবো।
‘জান, ও জান শুনোনা৷
‘হ্যা বাবু বলে শুনছিতো
‘চলো আমরা কোর্ট ম্যারেজ করে নেই।
‘বাবু আমি এখন ব্যাস্ত বলেই লাবিবা কল কেটে ইরহার রুমে আসলো।

“ইরহা পার্লারে সাজবে না। কিন্তু নিশাত আর লাবিবা পার্লারে সাজার জন্য জোড় করছে৷
‘ইরহা বললো আমি পার্লারে সাজবো না, মানে না।
‘এমন করছিস কেন আপু! বিয়ে কি প্রতি বছর বছর হয় একবারই হবে। একটু সাজলে কি হবে?
‘ভুলে যাচ্ছিস নাকিে!এটা আমার দ্বিতীয় বিয়ে, দেখ লাবিবা তোরা যা আমি নিজের মত সেজে নেবো।
‘লাবিবা চলে গেলে নিশাত বলে,আপু জীবনে জোয়াড় ভাটা থাকবেই তাই বলে কি জীবন থেমে থাকবে? সে তো নিজের মত চলতেই থাকবে।মেয়েদের জীবন কচু পাতায় জমা পানির মত নড়বড়ে। অল্পতে মেয়েদের অপবাদ দেয়া যায়, স্বামীর সংসার না টিকলে দোষ মেয়েদের হয়। ধর্ষক ধর্ষন করলেও লোকে বলে,এমন ভাবে চলাফেরা করতো তাই ধর্ষণ হয়েছে। নয়তো আর কেউ হতে পারলো না। সমাজ সব সময় মেয়েদের কোনঠাসা করে দেয়। কখনো এটা কেউ বুঝতে চায় না, একটা মেয়ে নিজের সবটুকু দিয়ে সংসারের সুতো আগলে রাখতে চায়। যাতে সুতো ছিড়ে সে বাঁধন হারা না হয়ে যায়। কোন মেয়ে চায় না সে ধর্ষিতা হোক। দোষ তার না দোষ ধর্ষকের। তুমি যাদের কথা ভেবে সাজতে চাইছো না। ভাবছো সবাই বলবে, হচ্ছে দ্বিতীয় বিয়ে তাও কত রঙ ঢং। তুমি ভুলে যাচ্ছো তারা শুধু তোমার খারাপে আছে তারা তোমার ভালো তে নেই। তোমার ভালো শুধু তোমার। জারিফের কিন্তু এটা প্রথম বিয়ে তার মনে কিন্তু এটা নিয়ে অনেক স্বপ্ন। আমার যা মনে হলো বললাম বাকিটা তোমার ইচ্ছে।
‘ইরহা রাজি হলো।
নিশাত ইরহাকে জড়িয়ে ধরে বলে,এবার থেকে তোমার সাথে সব ভালো হবে দেখে নিও।

ইরহাকে তিন ঘন্টা সময় নিয়ে পার্লারের মেয়েরা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো। গাড়ো খয়েরী রঙের লেহেঙ্গা সাথে গোল্ডের জুয়েলারি। ইরহাকে পরির মত লাগছে।
নিশাত বলল,জারিফ ভাইয়া তোমাকে দেখে বেহুশ হয়ে যাবে নিশ্চিত।

দেখতে দেখতে বরযাত্রী চলে আসলো, ইরহা নওশাবাকে ঘুম পারিয়ে চুমু খেয়ে স্টেজে আসলো।
ইরহা আর জারিফের বিয়ে হচ্ছে।
সবাই আনন্দিত।
আহনাফ একপাশে দাঁড়িয়ে দেখছে, মনে মনে বলছে,কিছু মানুষ হৃদয়ে থাকে ভাগ্যে থাকে না।
অন্তরা আহনাফের হাতে নিজের হাত রাখলো। আস্তে করে বললো, তোমার জন্য আমি আছি তো।
‘একটা কঠিন সত্য কি জানো অন্তরা, আমরা পুরো পৃথিবীর সাথে লড়াই করেও নির্মম ভাবে ভাগ্যের কাছে হেরে যাই। ভাগ্যের সাথে আমাদের লড়াই চলে না৷
‘এখন এসব কথা কেন বলছো।
‘আর বলবো না, তোমাকে নিয়ে বাকি জীবন সুখে কাটিয়ে দেবো৷

দেখতে দেখতে ইরহার বিদায়ের সময় চলে আসলো,জারিফ নওশাবাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
নাদিম ইরহার হাত জারিফের হাতে দিয়ে বলে,আমি কিছু বলবো না শুধু চাই এই হাত দুটো একত্রে থাকুক সব সময়।
এদিকে রাতুল লাবিবার লেহেঙ্গার আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
তুমি এমন করছো,মনে হচ্ছে আমি পালিয়ে যাচ্ছি। আরেহ বোকা আমাদের বিয়েও তো হবে।
‘চলো জান আজ বিয়ে করে নেই।
লাবিবা রাতুলের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,চোখ বন্ধ করো।
রাতুল চোখ বন্ধ করতে লাবিবা রাতুলের কানের কাছে মুখ এনে বলে,চোখ মেললেই দেখি তোমাকে, চোখ বুজলে পাই আরো কাছে….. ভালোবাসি বড় ভালোবাসি এর বেশি ভালোবাসা যায় না ও আমার প্রাণ পাখি ময়না। বলেই নিজের পা দুটো উঁচু করে রাতুলের কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো।রাতুল চোখ খোলার আগেই লাবিবা ফুড়ুৎ।
রাতুল মুচকি হেসে বলে, আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।আমার হলদে রাঙা পাখি।

✨বাসর ঘরটা এতো সুন্দর করে সাজানো দেখে ইরহা বলে,এটা কি বেড রুম নাকি গার্ডেন?
‘আসলে এখানে আজকে থেকে আমার ফুল থাকবে তাই এটা আজ থেকে গার্ডেন। জারিফ ঘুমন্ত নওশাবাকে বেডের পাশের দোলনায় শুয়ে দিয়ে মশারী টানিয়ে দিলো। তারপর নিজের ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
জারিফ ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে ইরহা রুমে নেই। সাথে সাথে দোলনা চেক করে দেখে নওশাবা আছে। নওশাবাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, তারমানে আশেপাশেই আসে। ইরহা একহাত ঘোমটা টেনে আস্তে আস্তে জারিফের সামনে এসে দাঁড়ালো। জারিফ ইরহার ঘোমটা তুলে বলে,আমি জানি আপনি। আর কিছু বলার আগেই চিৎকার করতে নেয়। ইরহা সাথে সাথে জারিফের মুখ চেপে রেখে বলে,গার্ডেনে শুধু ফুল না পেত্নী ও থাকে।
কিছুক্ষণ পর মুখ ছেড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে চলে যায়। ইরহা চলে যেতেই জারিফ বলে….. বিয়ে জিনিসটা অতো একটা সুখকর বিষয় না, আবার যে দুঃখের তাও না। আসলে বিয়ে না করলে বুঝবেননা বিয়েটা আসলে কি?
জারিফ কি বউ তোর বাসর রাতে তোকে ভয় দেখিয়ে ছাড়লো।

ইরহা ওয়াশরুম থেকে বের হলো সামনের কিছু চুল ভেজা পরনে বাসন্তী রঙের জামদানী শাড়ী লাল পাড় খোলা এলোমেলো চুল কোন রকম প্রসাধনীর ছোঁয়া নেই চেহারায়। কি স্নিগ্ধ লাগছে। চোখ সরছে না জারিফের। জারিফ ইরহার দিকে আগ্রসর হয়ে নিজের হাত বাড়িয়ে ইরহাকে একটানে নিজের বাহুতো এনে ঘোড় লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইরহার দিকে।
ইরহা কিছু বলবে তার আগেই জারিফ ইরহার ঠোঁটে আঙুল রেখে বলে,তোমার এই গোলাপের পাপড়ির মত দুটো ঠোঁট যখন নেড়ে কথা বলো, তখন আমার পুরো দুনিয়া তোমার ঠোঁটে আটকে যায়, হৃদয়ে তৃষ্ণা বাড়তে থাকে এই পাপড়ি ছুয়ে দেখার। তুমি আমার এতোদিনের অপেক্ষা পর আমার হওয়া বসন্তের ফুল। তুমি গোলাপ কিংবা রজনীগন্ধার অথবা বেলি নও, তুমি আমার মন বাগানের এক সাত রাঙা ফুল যার রঙে আজ থেকে আমি রঙিন হবো। জারিফ ইরহার কোমড় উঁচু করে ধরে বলে, তুমি আমার রঙিন প্রজাপতি, আর আমি তোমার শত ডানা। ইরহা নিস্তব্ধ হয়ে যায়। তার শ্বাস বেড়ে গেছে হৃদয়ে কেমন ধুকপুক শব্দ করছে। জারিফ ইরহাকে নামিয়ে ইরহার কোমর ধরে নিজের একদম কাছে এনে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। মিনিট পাঁচেক পর ইরহার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে ইরহাকে কোলে তুলে বারান্দায় নিয়ে আসে। ইরহাকে দাঁড় করিয়ে ইরহার পিছনে নিজে দাঁড়িয়ে বলে, আজকে থেকে তুমি আমার পৃথিবী। আর কখনো কোন কারণে কোন সময় ভুলেও তোমার অতীত টানবে না।তুমি আমার কাছে পবিত্র সদ্য ফোটা গোলাপের মত।
ইরহা ঘুরে জারিফকে জড়িয়ে ধরে বলে,একবার সম্পর্কে সুতো ছিড়ে যাওয়ার পর ভাবতাম #কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর? আজ মনে হচ্ছে আমি সঠিক সুতো পেলাম নিজেকে বেঁধে রাখার। কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না তো?
‘কখনো না। তুমি আমার অনেক সখের।বলেই ইরহার কপালে চুমু দিলো। জারিফের বুকে মাথা রেখে ইরহা বলে,”জীবনের সব রঙ মুছে যখন ধূসর ছাই! সেই ছাই থেকেও জন্ম নিতে পারে এক সতেজ প্রাণ। দ্বিতীয়বার বলে কিছু নেই এই কথাটা ভুল, সঠিক মানুষ জীবনে আসলে তৃতীয়বারের জীবন হয় ফুল।

“জীবন গল্পের মত গোছানো হয়না, আবার কখনো, কখনো গল্পের চেয়েও সুন্দর হয়”!বাস্তবতা আর উপন্যাস ভিন্ন তাই উপন্যাসের পাতায় বাস্তবতা খুঁজতে যাবেননা।তবে উপন্যাস কাল্পনিক হলেও মাঝে, মাঝে সেখানে ফুটে ওঠে বাস্তব চিত্র।
“গল্প থেকে জীবন নয়, জীবন থেকে-ই গল্পের জন্ম হয়।

সমাপ্তি।

কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-৩০

0

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৩০

‘দ্বায়িত্ব শব্দের ওজন জানেন?এর ভার সহ্য করতে পারবেন? আমি যাকে প্রথম ভালোবেসে ছিলাম,তাকে নিয়ে হাজরো রঙিন স্বপ্ন দেখতাম, নতুন প্রেম, নুতন রঙ, সব কিছুই রঙিন লাগতো তখন, সে আমাকে বলতো তোমার ছোট, ছোট সব ইচ্ছেগুলো পূরণ করার দ্বায়িত্ব নিলাম,একদিন মা,আমাকে ডেকে নিয়ে বোঝালো এসব আমার আবেগ এসব কোন ভালোবাসা না!এই বয়সে এমন হয়েই থাকে। আমি মা’কে অনেক বোঝাতে চেয়েও ব্যার্থ হয়ে তাদের পছন্দের একজনকে বিয়ে করে নিলাম।আমার ভাই তার হাতে আমার হাত দিয়ে বলেছিল, আজকে থেকে আমার বোনের সব দ্বায়িত্ব তোমার। তারপর সে কেমন দ্বায়িত্ব পালন করেছে তাতো জানেন। তাই দ্বায়িত্ব নিতে চাই এই শব্দ বলবেননা৷
‘তাহলে ভালোবাসার সুযোগ দিন।
‘ভালোবাসতে ভয় করে এমন-না, বিষয়টা হলো ভালোবাসা শব্দ-টার উপর থেকে বিশ্বাস চলে গেছে।এই শব্দটা ছাড়াও জীবন চলে,জীবনে তেমন কোন ইম্পর্ট্যান্ট বস্তু না এটা!ভালো আছি, ঠোঁটে উচ্চারিত শব্দ মাত্র,আমি জানি রোজ কতটা লড়াই করে টিকে আছি। এই যে নিজের সাথে লড়াই এটার আঘাত কেউ দেখে না,শত কষ্ট লুকিয়ে বলি, আমি তো ভালো আছি।আমি নিজেকে একটু সামলে নিয়েছি এরপর ভেঙে পরলে আর মনোবল পাবো না।বারবার মেনে আর মানিয়ে নেয়া যায় না!কতবার একটা মানুষ ভেঙে নিজেকে গড়ার ক্ষমতা রাখে?
‘আমি বলবো না আমাকে বিশ্বাস করতে, বলবো না আমাকে ভরসা করতে, বলবো না আপনাদের দ্বায়িত্ব দিতে। আমি খুব সাধারণ তাই আমি সাধারণ ভাবে একটা কথা বলতে চাই, আমার আপনাকে পছন্দ হয়েছিল, হসপিটালে বসে,প্রথম দেখায় ভালো লাগা। তারপর বাবা,মায়ের মৃত্যু শোক কাটিয়ে উঠতে, উঠতে বেশ সময় লেগেছে, আমি আপনাকে আর খুঁজে পাইনি৷ এরপরে বিয়ে করবো ভাবার পর আশেপাশের পরিস্থিতি দেখে ভাবলাম বিয়ে আমি করবো না।আমার লাইফে আমার ভাই আগে, যদি বিয়ের পর কোন কারণে তার থেকে আলাদা হতে হয়!এই ভয়ে বিয়ে করিনি আজ পর্যন্ত। কিন্তু আপনাকে দ্বিতীয় বার দেখে আবার ইচ্ছে জাগলো, শেষ বয়সে গল্প করার মত একজন সঙ্গী হিসেবে আপনাকে নিজের করে নিতে। বাকিটা আপনার ইচ্ছে।
‘ইরহা উঠতে, উঠতে বলে, আমি বাসায় যেয়ে জানাচ্ছি।
‘তবে শুনে রাখুন মিস আপনার উত্তর যেনো হ্যা হয়, নয়তো এই অধম আপনার পিছু ছাড়বে না। ওই যে গান আছে না, আমি পাগল হয়ে ঘুরবো তবু পিছু ছাড়বো না।

রেস্টুরেন্টে সবাই জারিফের দিকে তাকিয়ে আছে৷
ইরহা আস্তে করে বলে,আপনি পাগল হয়ে গেছেন।
‘হু আর এই পাগলের চিকিৎসক আপনাকেই হতে হবে।

‘ইরহা বেরিয়ে এসে রিকশায় উঠলো,কোন ষোড়শী হলে এই প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করতে পারতো না। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা যে প্রতি পদে,পদে অনুভব করেছে তারজন্য এসব পাগলামি ছাড়া কিছুই না।

‘ইরহা বের হয়ে যেতেই জারিফ নিজের গাড়ি নিয়ে বের হলো।

ইরহা বাসার সামনে এসে রিকশা ভাড়া মিটিয়ে বাসার সামনে আসতেই অবাক হয়ে যায়।

জারিফ নওশাবাকে কোলে নিয়ে হাটু গেড়ে বসে বলে, আমাদেরকে আপনার মনে জায়গা দেয়া যায়?
‘কি শুরু করেছেন প্রতিবেশিরা দেখছে।

‘কয়েকদিন পর যখন তোমার বর বেশে আসবো তখনও দেখবে,এতে আর এমন কি?
‘কি পাগলামো হচ্ছে এসব! বলেছি তো ভেবে জানাবো।
‘তুমি না বললেও হ্যা আর হ্যা বললেও হ্যা। মানে তোমাে সাথে আমাকে রাখতেই হবে। এই দেখো বাবাই তো সেটা চায়।আমার মেয়েটাকে বাবা ছাড়া করবে না প্লিজ।
‘ও আপনার মেয়ে কিভাবে হলো? যে ডাউনলোড দিলো সে তো পরিচয় দিলো না, আপনি উড়ে এসে জুড়ে বসছেন কেন?
‘তুমি সব সময় বেশি কথা বলো,জন্মদিলেই সবাই বাবা হয়ে যায় না। তোমার বাসায় যেদিন প্রথম এসেছি বাবাই আমার কোলে এসে একদম আমার সাথে মিশে ছিলো, তারমানে বুঝো তুমি!ও চায় আমাকে বাবা বানাতে আর তুমি ওর কথা ফেলতে পারো না৷ এখন বলো আমাকে বিয়ে করবে কবে?
‘ইরহা ফুল গুলো নিয়ে বলে,ভালো হয়ে যান। বলেই চলে গেলো।
‘জারিফ নওশাবার কপালে চুমু দিয়ে বলে,মামুনি অফিসিয়ালি তোমার বাবা হতে যাচ্ছি ফিলিংস লুঙ্গী ড্যান্স।
‘নওশাবাও জারিফের কথা শুনে আও, আও করে কিছু বললো।না নওশাবা জারিফের কথা বুঝলো না জারিফ নওশাবার কথা৷
জারিফ নওশাবাকে কোলে নিয়ে বাসায় আসলো৷


লাবিবা আর রাতুলের মধ্যে তুমুল ঝগড়া।লবিবা রাতুলকে বলেছে, আইডিতে পোস্ট করতে, আমি এক লাবিবাতে আসক্ত বাকি সব মেয়ে আমার জন্য বিষাক্ত। লাবিবা আর জান আমি লাবিবার প্রাণ৷
‘রাতুল বলেছে এমন নিব্বিদের মত পোস্ট সে করতে পারবে না। এ নিয়ে রাগারাগি কথা বন্ধ।চার ঘন্টা ধরে। চার ঘন্টা পর অনলাইনে এসে দেখে, রাতুল নিজের প্রোফাইল পিক চেঞ্জ করেছে,সেখানে লাবিবা আর রাতুলের হাতের পিক দেয়া আর ক্যাপশন ছিলো…. “আমার একটা নিজের মানুষ আছে, একান্ত ব্যাক্তিগত নিজের মানুষ।ভবিষ্যতে কি হবে জানিনা!বর্তমানে সে একান্তই আমার প্রিয় মানুষ।
পোস্ট দেখে লাবিবা সাথে সাথে রাতুলকে ভিডিও কল করে বলে,বাবু আই লাভ ইউ। ক্যান আই কিস ইউ?
‘রাতুল বলে,তোমাদের মেয়েদের ঠিক বুঝিনা আমি, কখন আমাবস্যা আর কখন পূর্নিমা।
‘এন্সার দাও।
‘কিস করতে মানা করবে, এমন প্রেমিক এদেশে আছে?
‘সোজা কথার উত্তর সোজা ভাবে দাও।
‘আমি বাসার নিচে আসছি, দেখি কত কিস করতে পারো।
‘রাখো আসছি মানে? কিস দেবো মোবাইলে,সরাসরি পাবা বিয়ের পর। এই ঠোঁট-টা একটু স্কিনের সামনে আনো।
‘মানে?
‘আনো মানে আনো কিস করবো। আনরোমান্টিক ঢেঁড়স প্রেমিক, প্রেমও করতে জানেনা। জানো আমার বান্ধবীর বিএফরা কিভাবে প্রেম করে?
‘কিভাবে?
‘বলে, বাবু হা করো।তারপর আমার বান্ধবী বলে,এইতো বাবু হা করেছে, তারপর ওর বিএফ বলে এই নাও তোমার মুখে লোকমা তুলে দিলাম, খেয়ে বলে কেমন হয়েছে?
‘তোমার বান্ধবী আর তার বিএফের মাথায় সমস্যা আছে। আমি সুস্থ মানুষ তাই কিস করতে চাইলে কয়েকটা কিসি ইমোজি দাও।
‘তোমারে কোন কিসি দেবোই না, আনরোমান্টিক বেডা একটা। যাও প্রেমের ক্লাস করে আসো৷
‘ওরে আমার রোমান্টিক নিব্বি এই আমি আমার ঠোঁট মোবাইলের স্ক্রিনের একদম কাছে আনলাম।
‘এবার চোখ বন্ধ করো।
‘চোখ বন্ধ করলে রিপ্লাই দিবো কি করে?
‘বুঝেছি তুই কখনো রোমান্টিক হতেই পারবি না।তোকে বলছি বলতে তুই বলবি এই বন্ধ করলা।
‘আচ্ছা বাবু এই চোখ বন্ধ করলাম।
‘আমার এখন মুড নাই কিস করার।
‘রাতুল বলে,তোমাদের মুড বোঝার জন্য অবশ্যই ক্লাস করতে হবে।
‘ভালোবাসা থাকলেই মুড বোঝা যায়,কোন ক্লাস করা লাগে না। আমার ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে সাথে আইসক্রিম চারটা নিয়ে বাসার নিচে আসো।
‘এখন রাত দুইটা বাজে বাবু এখন এসব কোথায় পাবো?
‘ওহহ এখন রাত দুটো বাজে সে কথা মনে পরলো, আর যখন চুমু খাওয়ার কথা শুনেছো তখন রাতের কথা মনে পরেনি!
‘সরি
‘কতবার বলেছি কথায়, কথায় সরি বলবে না, আমি কি পর নাকি যে সরি বলতে হবে! মিষ্টি করে জান বলে ডাকবা দেখবা সব রাগ ভ্যানিস।
‘ওকে মেরি জান।
‘লাভ ইউ
‘লাভ ইউ টু বেবি।
‘আচ্ছা তুমি কি খুশি আপির বিয়ে ভাইয়ার সাথে ঠিক হওয়াতে?
‘খুশি মানে অনেকককক খুশি,অবশেষে আমারও ভাবি হচ্ছে তাও তোমার বোন। মানে বুঝতে পারছো?
‘কি বুঝতে পারবো?
‘থাক বুঝতে হবে না।
‘বলো বলছি, না হলে কিন্তু রাগ করবো।
‘তারমানে ভবিষ্যতে আমার সাথে কিছু করলে,ভাবির কাছে বিচার দিয়ে তোমাকে বকা খাওয়াবো৷
‘আহা শখ কত, তোমার ভাবি থাকলে আমারও জিজু আছে, তার কাছে বিচার দিয়ে তোমাকো উত্তম মাধ্যম খাওয়াবো।

#চলবে