Thursday, August 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 456



হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-২০+২১

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২০|
#শার্লিন_হাসান

গাড়ীতে আনায়া গাল ফুলিয়ে বসে আছে তাকে শপিং করিয়ে দেয়নি বলে। নিবরাস রেগে বসে আছে তাকে দোকানদারের সামনে ইনডিরেক্টলি কিপ্টা প্রমাণিত করলো তার বউ। তারউপর তার চুজ করা ঘড়ি রিজেক্ট করে নিজের পছন্দের ঘড়ি নিলো।

দু’জনের মাঝে পূর্ণ নিরবতা বিরাজমান। মির্জা বাড়ীতে আসতে আনায়া চুপচাপ নাজিয়ার গিফ্ট নিয়ে ভেতরে চলে যায়। নিবরাস তার পেছন দিয়ে আসে। রুমে এসেও কেউ কারোর সাথে কথা বলে না। আনায়া শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে নিচে চলে যায় লান্সের জন্য! তার পেছন দিয়ে নিবরাস আসে। বাকীদের লান্স শেষ। আনায়া নিবরাস চুপচাপ বসে খাচ্ছে। কেউই কারোর সাথে কথা বলে না।

তখন আবার মিসবাহ আসে। তার মামু আর বউমনিকে এতো চুপচাপ দেখে বলেই ফেলে,

-মামু বউমনিকে বকা দিয়েছো?

-না শপিং করিয়ে দেইনি।

-টাকার অভাব তোমার?

-হুম! তোমার নানাভাইকে বলো মামুকে টাকা দিতে এইমাসে।

-দিবে না সে আরেক কিপ্টা।

-যাহ বাপ তোর বউমনির কাছেই যা। কিছু হলেই তোদের মুখে কিপ্টা ছাড়া কিছুই শুনি না। গাড়ত্যাড়া একটা আমার কপালে জুটেছে।

নিবরাসের কথায় আনায়া রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। নিবরাস সেসবে পাত্তা দেয়নি। চুপচাপ খেয়ে দু’জন রুমে চলে যায়। আনায়া অপেক্ষায় ছিলো নিবরাস কখন আসবে আর তাকে ধরবে।

নিবরাস চুপচাপ খাটে গা এলিয়ে দেয়। আনায়া তখন তার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

-আমি ঘাড়ত্যাড়া?

-আমাকে জিজ্ঞেস করছো?

আনায়া রেগে যায়। সে সিরিয়াস মুডে ঝগড়া করতে এসেছে অথচ তার বদলোকটা এমন ভাব করছে মনে হয় কিছুই হয়নি।

-সত্যি আপনার টাকা নেই?

-তোমার মতো আমি কোটিপতি না। সরকার যা দেয় সেখান থেকে আবার কতজনকে দান করতে হয়। চাঁদাবাজি করলে টাকার অভাব পড়তো না। অবশ্য এসব আমি করি না।

-আপনার বাবার কোম্পানি আছে না?

-আচ্ছা এতো কথা কেন? গতকাল রাত্রে তোমার রাগ ভাঙাতে কতগুলো টাকা খরচ হলো। সেই সাথে লাখ টাকার উপরে গিফ্ট কেনা হলো শুধু একরাতের জন্য। আজকেও পঞ্চাশ হাজারের বেশী গেলো। একটু হিসাব করো?

-বাবা এই কিপ্টে লোককে কোথা থেকে খুঁজে পেলো.
-শোনো আমাদের বেবি আসলে তখন…

-এই শুনুন আপনার এসব হিসাবের ভাষণ নিজে,নিজে দেন আমার সামনে না। যত্তসব! মানে কী একটা অবস্থা এটা আপনি? এতো হিসাবী?

-শোনো আমি ভাষণ দেই না। আমি সবার জন্য একসাথে শপিং করবো সেজন্য তোমায় একা করে দেইনি।

-সবাই কী আমার মতো আপনার বউ?

-না।

-বুঝেছি তারিশা রাগ করবে মেইন পয়েন্ট এটা। এতেসব বাহানা আমায় দিবেন না। যান আমার চোখের সামনে থেকে সরে যান। আর শপিংয়ের কথা তৃতীয়বারের মতো মুখে আনবেন না। এটার ম্যাটার এখানে ক্লোজ।

-তুমি রাগ করেছো?

-আসলে কী! কিছু মানুষ রাগিয়ে দেওয়ার পর যখন জিজ্ঞেস করে রাগ করেছো তখন তাদের মন চায়..

-কী?

আনায়ার কথার মাঝে পোড়ন কেটে বলে নিবরাস। তখন আনায়া বলে,

-মুখটা ভেঙে দিতে। অসহ্য লাগে এদের।

-স্যরি।

নিবরাসের স্যরি আনায়া পাত্তা দেয়না।

*****

বিকেলের দিকে আনিসুল হক বসে কফি খাচ্ছেন। আহিয়া ও তার সাথে বসে নিজের কাপে কফি বানাচ্ছে। তখন আনিসুল হক বলেন,

-তোমার ফুফির সাথে কথা হয়?

-হুম হয় তো!

-আগামী কালকে খান বাড়ীতে যাবো। তোমার ফুফির ছুটির দিন সাথে খান বাড়ীর সবাই অবসর! তাঁদের সাথে কালকের দিনটা কাটাবো।

-ওহ! যাবো তবে।

-তাহিয়াটাকে না খুব মনে পড়ছে। একটা পাগল ছিলো আমার। চঞ্চল মেয়েটা একবারে সারাজীবনের মতো নিরব হয়ে গেলো।

-ওই নিবরাস!!

-ওদের ক্ষমতা আছে সেজন্য কিছু বলতে পারছি না। তবে এর পতন হলে অবশ্যই এই কেসটা সামনে আনবো একে এমন ভাবে ফাঁসাবো যাতে যাবত জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়।

-ওটা তো তোমার ভাগ্নির জামাই।

-আনায়ার কথা মনেই ছিলো না। বাদ দাও ওর বাবার সাথে তেমন ভালো সম্পর্ক নেই আমাদের আপাতত যা আছে মন কষাকষি!

আহিয়া কফির মগ হাতে নিজের রুমে চলে আসে। তাহিয়ার একটা ফটোফ্রেম বের করে তাতে হাত বুলায়। মিষ্টি হাসি দেওয়া মেয়ে। চোখ দু’টো ভীষণ মায়াবী ছিলো। চঞ্চল একটা মেয়ে ছিলো। হ্যাঁ নিবরাসকে পা’গলের মতো ভালোবাসতো তাহিয়া। ভার্সিটিতে তার সাথে নিবরাসের প্রথম দেখাটা হয় নবীন বরণে। সেখানে নিবরাসকে কালো পান্জাবিতে দেখে ক্রাশ খায় তাহিয়া। খবর নেওয়ার পর জানে ছাত্রলীগের সভাপতি। পলিটিক্স নিয়ে দিনরাত কাটায়। বলা যায় ভবিষ্যত নেতা। নিবরাসে হাঁটা, চলা, কথার ভাব ভঙ্গি সবই তাহিয়াকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করে। যখন শুনতে পায় নিবরাস মেয়েদের থেকে দূরে থাকে। কাউকে পাত্তা দেয়না অনেকে প্রপোজাল দিয়ে রিজেক্ট হয়! তখন প্রপোজাল দেওয়ার কথা মাথা থেকে উড়ে যায় তাহিয়ার। নিবরাসকে বেশীরভাগ সময় ফলো করতো সে। একদিন তো হাতেনাতে ধরাও খায় তার দলের একজনের কাছে। অবশ্য তেমন কিছু বলতে পারেনি লোকটা নিবরাসের জন্য সেদিন বেঁচে যায়। নিবরাস জিজ্ঞেস করেছিলো কেনো প্রতিদিন পিছু নেয়। তখন তাহিয়া উত্তর দেয়, ‘তার বাড়ী সামনের রাস্তায় সেজন্য এই পথে আসা যাওয়া হয়।’

ধীরে,ধীরে নিবরাসের প্রতি না চাইতে একটু বেশী আসক্ত হয়ে পড়ে তাহিয়া। সে জানতো না এই আসক্তি কতটা ভয়বহ! এলকোহলের আসক্তি তো ধীরে,ধীরে একটা মানুষকে মৃত্যুর সর্য্যায় নিয়ে যায় তবে এই নিবরাসের প্রতি অনুভূতুর আসক্তি তাকে ধীরে,ধীরে না একজটকায় মৃত্যুর দুয়ারে নিয়ে যায়।

খান বাড়ীতলও মাঝেমধ্যে আসা যাওয়া হতো তাহিয়ার। তখন শামিম সরদারের সাথে জায়ানের গলায়,গলায় ভাব ছিলো। যাওয়া আসা হতো খান বাড়ীতে! শামিম সরদারের পেছন দিয়ে একদিন তাহিয়া ও যায়। জায়ান আর শামিম সরদারের কিছু কথোপকথন যা নিবরাসের বিরুদ্ধে ছিলো সেই সাথে তার ফুফির আর জায়ানের গোপন অবৈধ ব্যবসা সবই নিজ কানে শুনে তাহিয়া। তার পরে ছিলো নির্বাচন। শামিম সরদার প্রার্থী হবে নিবরাসের সাথে। এমপি নির্বাচিত হলে জায়ানের বিজন্যাসের জন্য লাভ সেই সাথে শামিম সরদারকে শেয়ার দিবে।

তখন তাহিয়া সীতারা আহম্মেদের পেছনে লাগে। তার বিরুদ্ধে কিছু প্রমাণ জোগাড় ও করে। তার ইচ্ছে ছিলো নিবরাসকে সবটা বলে দেওয়ার। সেই সাথে প্রমাণ ও দিয়ে দেওয়ার। তখন তাদের নির্বাচন ছিলো এটা,ওটার ভেজাল ছিলো। কোন ভাবে সীতারা আহম্মেদ ও টের পায় তাহিয়া তার বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করে আর সে নিবরাসের পক্ষে। নিবরাসের ভালো চায়! কিন্তু নিবরাস তাকে এভয়েড করে।

তাহিয়ার উপর কড়া নজরদারি করা হয়। নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করার পর নিবরাস এমপি মনোনয়ন পায়। তার কয়েকমাস পর তাহিয়া পুনরায় নিবরাসকে ফলো করতো। একটু কথা বলার সুযোগ খুজতো, এক্সিডেন্টলি তাঁদের দেখাও হতো। নিবরাস কিছুতেই তাকে পাত্তা দিতো না। তবে তাহিয়া হাল ছাড়েনি। চেয়েছিলো নিবরাসের মন জয় করতে।

এসবের ভীড়ে সীতারা আহম্মেদের কথা তার মাথা থেকে উড়ে যায়। নিবরাসের নাম্বার জোগাড় করে কল দিয়েও তাকে বিরক্ত করা শুরু করে তাহিয়া। কিছুতেই নিবরাসের মনে স্থান করে নিতে পারেনি। একসময় তার কাছে তার অনুভূতি তুচ্ছ মনে হয়। খুব রাগ,অভিমান জমে নিবরাসের প্রতি! এই একটা অভিমান নিয়েই দুনিয়া ছাড়তে হয় তাকে। আজো জানা নেই তাহিয়া নামক মেয়েটি নিবরাসের মনে স্থান করতে পেরেছিলো কীনা। হয়ত না! নিবরাসের এসবে ইন্টারেস্ট কোন কালে ছিলো না। সে চায়না তার রাজনীতির মঞ্চে কোন কালো দাগ! সে চায় না তার নামের পাশে নারীর নামের কোন ঘটনা চক্রের ট্যাগ বসুক। শুধু তাহিয়া না তাহিয়ার মতো অনেককে নিবরাস এভয়েড করতো।

তাহিয়ার জীবনের শেষ দিন ছিলো। দিনটা ছিলো বৃহস্পতিবার। একটা ক্লাস শেষ করেই তাহিয়া বেড়িয়ে পড়ে নিবরাসের খোঁজে।

#চলবে

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২১|
#শার্লিন_হাসান

তাহিয়ার জীবনের শেষ দিন ছিলো। দিনটা ছিলো বৃহস্পতিবার। একটা ক্লাস শেষ করেই তাহিয়া বেড়িয়ে পড়ে নিবরাসের খোঁজে।
সেদিন নিবরাস একটা ইভেন্টে যায়। সেখানের কাজ শেষ করে গাড়ীতে করে তারা কোলাহল মুক্ত নিরব একটা জায়গায় গাড়ী দাঁড় করায়। তার পেছন দিয়ে তাহিয়া আসে। নিবরাসকে দেখে তড়িঘড়ি তার কাছে যায়। তাহিয়াকে দেখে নিবরাস বিরক্ত হয়। তখন তাহিয়া বলে,

-আমাকে ভালোবাসলে কী বেশী ক্ষতি হতো নেতাসাহেব?

-দেখুন এভাবে আমার পেছনে ঘুরঘুর না করে নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করুন। আমার থেকে বেটার কাউকে পাবেন।

-বেটার কাউকে আমার চাই না নেতাসাহেব। আপনি হলেই হবে!

-শুনুন আপনার এই এক ডায়লগ প্রতিদিন শোনতে,শোনতে আমার মুখস্ত হয়ে গেছে সাথে আমি অতিষ্ঠ।

-নতুন কিছু বলবো নেতাসাহেব?

-আমার পথ থেকে সরে দাঁড়ান।

-ইশ নেতার ব্যবহার এতো খারাপ কেনো?

-এই মুখটা বন্ধ রাখবেন? প্রতিদিন এগুলো কোন ধরনের নাটক? ফা*লতু মেয়ে! এটেনশন পাচ্ছে না জেনেও ছ্যাচড়ামি করেই যাচ্ছে।

-ভালোবাসার জন্য আমি এমন ছ্যচড়া হাজারবার হতে পারি নেতা সাহেব। বিয়ে করবেন আমায়?

-বিয়ে না আপনায় আমি খু*ন করবো।

-সত্যি? আচ্ছা সমস্যা নেই বিয়ে করেই খু’ন টা করিয়েন। আমার প্রপোজাল একসেপ্ট করলে এমনিতেও আমি খু*ন হয়ে যাবো।

-শিক্ষাদীক্ষার বড়ই অভাব আপনার। আনিসুল হক সাহেব মনে হয়না শিক্ষা দিক্ষা ভালো দিয়েছে আপনায়।

-সব শিক্ষা আছে এমনকি আপনার বউ হওয়ার মতো যোগ্যতা!

-আপনার বাবার সাথে আমার বাবার পুরোদমে শত্রুতা। আর সেখানে আপনি কীভাবে ভাবছেন বিয়ের কথা? আপনি আমায় চেনেন? মির্জার ছেলে! আর আমার নামের শেষে রাসের জায়গায় আকার বাদ দিলে যে রস বানান হয় আমি রসের বিপরীত। একদম রসকষহীন একটা মানুষ। আপনার মতো চিপ ক্লাসের প্রতি কখনোই ফিলিংস আসবে না। এবার দয়া করে আসুন ভদ্রতার সহিত এতোদিন সহ্য করেছি।

-মূল কথাটাই তো বলা হয়নি। আসলে আপনাকে আমি একটা কথা বলতে এসেছি। কিছু প্রমাণ দিতে এসেছি।

-আপনার আবার কথা! প্লিজ যান শত্রুর মেয়ে আবার আমায় কী প্রমাণ দিবে? রোহিত এ যদি না যায় এখন তাহলে কল লাগাও একে একবারে গুম করে দেওয়া যাক।

-আমি আপনার খারাপ চাইনা নেতা সাহেব!

-শত্রু সবসময় শত্রুর খারাপ চায় এটা সবাই জানে। সো প্লিজ আপনার বক্তব্য আপনার কাছে রাখুন।

-কিন্তু আপনি আমার শত্রু নন আমার ভালোবাসা!

ঠা’স করে চড় পড়ে যায় তাহিয়ার গালে। নিবরাস এতোক্ষণ ঠান্ডা মাথায় বললেও এখন ভীষণ রেগে যায়। সে বুঝতে পারছে তাকে পাষাণোর জন্য নতুন চাল এটা। হয়ত বিরোধী দলের পরিকল্পনা। না জানি কে আবার ভিডিও করে মিডিয়া পাড়ায় ছেড়েও দিলো নেতা নিরালায় দাঁড়িয়ে অষ্টদশী কন্যার সাথে প্রেমালাপ করছে। তারউপর যা মেয়ে! সরতে চাইছে না।

নিবরাস পুনরায় ধমক দিয়ে বলে,

– আত্মসন্মান থাকলে আর কখনো আমার সামনে আসবেন না।

তাহিয়া আর একমুহূর্ত ও দাঁড়ায়নি। সোজা চলে আসে। তার আত্মসন্মানে লেগেছে শেষের কথাটা। হ্যাঁ সে ভালোবাসে পাগলের মতো তবে প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনরকম। সে নিবরাসের ক্ষতি চায় না ভালো চায়। সীতারা আহম্মেদ সম্পর্কেই কিছু বলতে চেয়েছিলো। অথচ বলা হলো না। তাহিয়া ভাবছে কারোর মাধ্যমে প্রমাণ পাঠিয়ে দিবে। তবে নিবরাসের প্রতি অনেকটা অভিমান জমেছে। কী এমন ক্ষতি হয় তাকে গ্রহণ করলে? ভালোবাসা কী পাপ নাকী দোষের কিছু? সে তো পুরোদমে ভালোবেসেছে।

পায়ে হেঁটে কিছুটা সামনে আসতে তাকে কিডন্যাপ করা হয়। গোডাউনে নিয়ে গিয়ে হাত পা বেঁধে রাখা হয়। তবে বুঝতে পারেনি তাহিয়া কে এমনটা করছে। তখন আবার শামিম সরদার আসে। তাহিয়া তাকে দেখে বেশ চমকায়। শামিম সরদারের সাথে জায়ানের হাত আছে আর জায়ানের কলকাঠি তো সীতারা আহম্মেদ নাড়ে। তার মাথায় মূহুর্তে সীতারা আহম্মেদের কথা চলে আসে। তাহলে কী কোন ভাবে টের পেয়ে গেছে তাঁদের বিরুদ্ধের প্রমাণ তার কাছে সংরক্ষিত আছে আর সবগুলো নিবরাসকে দিতে চেয়েছে তাহিয়া।

শামিম সরদার একটা সিরিঞ্জ এনে তাহিয়ার সামনে নড়াছাড়া করে। তাহিয়া তা দেখে কিছুটা ভীতু চোখে তাকায়। তখন শামিম সরদারকে বলে,

-আমাকে এখানে আনার মানে কী? ফুপ্পি কোথায়? সে নিশ্চয়ই আমাকে এনেছে।

-হুম! তোমার ফুফির পরিকল্পনা সব।কী টাইমিং দেখো নিবরাসকে তোমার মৃত্যুর জন্য দায়ী করা যাবে। একটা কালো দাগ পড়ে যাবে তার ক্যারিয়ারে। উফফ কী বলবো তাহিয়া!

-আমায় মেরে ফেলবে?

-তা কী মনে হয় তোমার? তোমার ফুফির কালো ব্যবসা সম্পর্কে জানো তার বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করে নিয়েছো। এখন এটাও জানো তোমায় সে কিডন্যাপ করিয়েছে তোমার বেঁচে থাকার কোন মানেই হয়না।

-ওই মহিলাকে আমি এখান থেকে যেতে পারলে জু’তো পেটা না করেছি।

-যাবে কীভাবে সেটা বলো?

-আমায় ছাড়ো তোমরা।

-তোর বাপ আসলেও ছাড়াতে পারবে না। এই সিরিন্জে কী আছে জানিস?

না বোধকে মাথা নাড়ায় তাহিয়া। তখন শামিম সরদার হেঁসে বলে,

-বিষ আছে! বিষাক্ত সাপের বিষ। একটু পর তোর ফুফি এসে এটা তোকে পুশ করবে তারপর তোর ফেসটা একদম শেষ করে দিবে এসিড দিয়ে।

তাহিয়া চুপচাপ তাকায় সিরিঞ্জের দিকে।

তার ঘন্টা দুয়েক পর সীতারা আহম্মেদ আসে গোডাউনে। তাহিয়ার ফেসের দিকে তাকিয়ে নজর সরিয়ে নেন তিনি। এসিড দিয়ে একদম বাজে অবস্থা করে দিয়েছে শামিম সরদার। রেগে সামনের একটাকে চ*ড় মারে সীতারা আহম্মেদ। দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,

-আমি না আসার আগে এতো আপ্পায়ন করতে কে বলেছে? আমি বলেছিলাম একে আমি নিজ হাতে মারবো কত বড় কলিজা আমায় ফাঁসাতে চায়। আর এ তো এখন আধমরা হয়ে গেছে আমি কী মারবো?

তখন তাঁদের একজন বলে,

-মুখ বেশী চালাচ্ছিলো ম্যাম সেজন্য থামাতে শামিম স্যার রেগে এসিড ছুঁড়ে মারে। এখনো মরেনি ও! তবে মরে যেতে বেশীক্ষণ নেই বাকী কাজটা আপনি করে নিন!

হাত বাড়ায় সীতারা আহম্মেদ। তখন একজন তাকে সিরিঞ্জ দেয়। বিষের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে সীতারা আহম্মেদ। সোজা তাহিয়ার চেয়ারের কাছে যায়! গাড়ের টানা রগ যেটা মাথায় গেছে সেই রগে সিরিঞ্জটা পুশ করে। এটা তাইপেন সাপের বি*ষ। যেটা অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হয়েছে। সীতারা আহম্মেদের অস্ত্রের মূল হলো এই সাপের বিষ যেটা তার কাছে সংরক্ষিত আছে অনেক। তাইপেনের এক ছোবলে ৫০জনের অধিক লোক ও মারা যায়। সেখানে এক সিরিঞ্জ বিষ পুশ করা হয়েছে! মূহুর্তে রক্তে বিষ মিশে কালো হয়ে যায় শরীরের রং! ধবধবে ফর্সা শরীরটা মূহুর্তে অজানা নামহীন বি*শ্রী রং ধারণ করে।

মিনিট পাঁচেক পর বলেন,

-একে কোন নদীর কিনারায় ফেলে দিয়ে আয়। যাতে ভাবে একে খু*ন করেছে আর সেটা নেতা বাবাজি! সেটা যদি না হয় তাহলে বলবি আত্মহত্যা করেছে। আর টাকা যা লাগবে আমি দেবো। তবুও এর ম্যাটার ক্লোজ করে দে।

বেড়িয়ে আসে সীতারা আহম্মেদ। শামিম সরদারকে দেখতে পায়নি সে। হয়ত চলে গেছে ভেবে আর মাথা ঘামায় না সীতারা আহম্মেদ। জায়ানকে বলে রেখেছে যাতে গোডাউন পুড়িয়ে দেয়। কোন প্রমাণ কোথাও যাতে না থাকে।

এরই মাঝে তাহিয়ার লা’শ উদ্বার হয়। প্রথমত নিবরাসকে সন্দেহ করা হয়। কিন্তু প্রমাণ মেলাতে পারেনি। সবাই মোটামুটি জানে নিবরাস মেয়েদের ইগনোর করে আর তাহিয়া তার পেছনে ঘুরলেও সে পাত্তা দেয়নি।
নিবরাসের বিরুদ্ধে তেমন প্রমাণ না পেয়ে শামিম সরদারের উপর চাপ পড়ে। থানায় কী হয়েছে সেটা সীতারা আহম্মেদের অজানা। এই কেসটা দামা চাপা দিতে থানায় টাকা অফার করে। এসপি লোভী থাকায় বেশী ভাবতে হয়নি তাঁদের। শেষমেষ এটাকে আত্ন*হ*ত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। তবে তাহিয়ার পরিবার জানে নিবরাস তাহিয়ার খু*নি। নিবরাস জানে জায়ান খু*নি আর সীতারা আহম্মেদের লোক জানে তারাই আসল খু*নি। গল্পের মেড়টা তাড়াই ঘুরিয়ে দেয়। কারণ নিবরাস অনেক চালাক। নিজেকে একবারে ফ্রেশ রাখে কোন ধূলাবালি তার সুন্দর ক্যারিয়ারে লাগতে দেয়না। সীতারা আহম্মেদের প্লানিং ফ্লপ খায়। সে থেকে নিবরাসের উপর দ্বিগুন ক্রোধ জমা হয়। আনিসুল হক বেশী কিছু করতে পারেন না। থানার লোক নিজে থেকে সরে গেছে। নিবরাস তো একবারে ইনোসেন্ট! তারউপর সীতারা আহম্মেদ যা বুঝ দেওয়ার দিয়ে ফেলেছে। এই নিয়ে কত নিউজ সত্য,মিথ্যা রটেছে তবে নিবরাস মিডিয়ার লোকদের বলে দিয়েছে এসব কেসে তার নামের ট্যাগ বসালে সে আইনি ব্যবস্থা নিবে। একবারে চাকরী উড়িয়ে দিবে কয়েকজনের! সেই সাথে তাকে এসবে না জড়ায়।

আহিয়ার ক্রোধ একটাই। এতো কিছু হয়ে গেলো অথচ নিবরাস কীভাবে,কীভাবে বেঁচে গেলো। এই হিসাব মিলাতে আজোও তার ব্রেন অক্ষম! হয়ত ক্ষমতার জোর নাহয় কিছু সত্য,মিথ্য। এখনো সব ধোঁয়াশা!

নিবরাসের অধঃপতন না দেখা অব্দি তার শান্তু হবে না।

তার বোনটাকে সে আজোও মিস করে। চঞ্চল ছিলো তবে অনেকটাই সহজসরল ছিলো। নিবরাসের পেছনে ভালোবাসার জন্য কত দৌড়ালো। পাষাণ লোকটাকা ভালোবাসেনি তার বোনকে। তার বোন অভিমান,অভিযোগ,ভালেবাসা পাওয়ার তৃষ্ণা নিয়েই বিদায় নিলো।

আনায়া সন্ধ্যায় কফি বানায় সবার জন্য। তারিশা কফি এক চুমুক দিয়েই বলে,

-একদম জঘন্য হয়েছে। এতো তেতো কেন? সুগার দাওনি?

-কী জানি! আমার বানানো কফি মিষ্টি হলেও তোমার মুখে তেঁতোই লাগবে।
বাবা-মা তোমরা বলো কফি ঠিক আছে কীনা?

আনায়ার কথায় নিরব মির্জা কফিতে চুমুক দেয়। বেশী তারিফ করে। সাথে মরিয়ম নওয়াজ ও! সেই সাথে তারিশার দিকে সন্দেহের জাল ছিটিয়ে দেন মরিয়ম নওয়াজ! তারিশার হাব ভাব বেশী ভালো ঠেকছে না তার কাছে। আনায়ার পেছনে কেমন পড়ে আছে সেই সাথে কথাবার্তায় কেমন ক্ষোভ প্রকাশ করে তারিশা।

#চলবে

হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-১৮+১৯

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|১৮|
#শার্লিন_হাসান

নিবরাস হুট করে আনায়াকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে থাকে। আনায়া তার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,

-অসভ্য লোক নিচে নামা তো।

-বউ আজকে আর ছাড়ছি না কিন্তু। একবারে বাবুর পাপা হওয়ার মতো অসভ্যতামী করেই ছাড়বো।

মেইন ডোরের সামনে আসতে আনায়া বলে,

-আমার গিফ্ট গুলো চোর নিয়ে যাবে।

-মনেই ছিলো না। আচ্ছা চলো গিফ্টগুলো নিয়ে আসি।

-আমাকে নিচে নামান।

-আরে তুমি যা চিকন আমি এরকম কোলে নিয়ে পুরোবাড়ী দশবার ঘুরলেও আমার কিছু হবে না।

নিবরাস আনায়াকে নিয়েই টেবিলের কাছে আসে। ফুল,গিফ্টগুলো আনায়া হাতে নিয়ে কেক আর ড্রিং দেখে খেতে মন চায় তার। নিবরাস তাকে কোল থেকে নামাতে আনায়া চেয়ারে বসে পড়ে। কেক খেয়ে কোল্ড ড্রিং এর বোতল নিয়েই বসে পড়ে আনায়া। নিবরাস তার দিকে তাকিয়ে বলে,

-এতো পেটুক তুমি?

-আরে আমার প্রিয় কেক আপনি জানেন?

-আচ্ছা খাও ভালো করে বাবুর মাম্মাম হবে না।

আনায়া মাঝপথে খাওয়া অফ করে দেয়। নিবরাস চোখ দিয়ে ইশারা করতে কেক খাওয়া আরম্ভ করে। আনায়া খাচ্ছে নিবরাস বসে,বসে তার খাওয়া দেখছে। তাঁদের খাওয়াদাওয়া শেষ হতে নিবরাস রেহিতকে মেসেজ দিয়ে বলে দেয় এদিকটা সামলে নিতে। ফোন পকেটে ঢুকিয়ে আনায়াকে পুনরায় কোলে নিয়েই বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করে।

করিডোর পেড়িয়ে যেতে তারিশা পেছন দিয়ে আসে। আনায়া নিবরাসকে দেখে আবারো রুমে চলে যায়।

রুমে এসে দরজা লক করে দেয় নিবরাস। আনায়া ফ্রেশ হয়ে শাড়ী চেন্জ করে নেয়। নিবরাস ও চেন্জ করে নেয়। অতঃপর দু’জন শুয়ে পড়ে। আনায়া ভাবছে আজকের মতো সে বেঁচে গেলো। কিন্তু নিবরাস তো নিবরাসই! আনায়াকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসে। কপালে অধর ঠেকিয়ে বলে,

-চলো বউ বাবা-মা হওয়ার কাজে নেমে পড়ি।

-আজকে আমি বেশী খেয়ে ফেলেছি। রিলেক্স করি!

-ডোন্ট এক্সকিউজ সোনা।

আনায়া আর কথা বাড়ায়নি। নিবরাস বুঝে চুপ থাকা সম্মতির লক্ষণ! সেও সময় ব্যায় করে না। আনায়ার তনুর আংশুক আবরণ ছাড়াতে উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়ে। নিজের প্রেয়সীকে সবটা উজাড় করে ভালোবাসা। নিবরাসের ভালোবাসার পরশ নিশ্চুপে নিজের গায়ে মাখে আনায়া। প্রণয়ের ঢেউ থামাতে ব্যস্ত দু’টো তনু।

সকাল,সকাল শাওয়ার নিয়ে রুম গুছাচ্ছে আনায়া। নিবরাস শাওয়ার নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। ড্রয়ার থেকে ঔষধ বের করে আনায়ার হাতে দেয় নিবরাস।

-খেয়ে নিও মনে করে। স্যরি হ্যাঁ রাতে কষ্ট দিতে চাইনি।

আনায়া মাথা নাড়িয়ে শাড়ী ভাজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রুমটা গুছিয়ে নিজের জমা ফ্লাওয়ার গুলো নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে নাড়াচাড়া করছে। নিবরাসের দেওয়া গিফ্টগুলো খুলে দেখে। হাতে একটা রিং পড়ে আর চেইনটা রাখে পড়ার জন্য। বাকীগুলো ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দেয়। নিবরাস পান্জাবি পড়ে আয়নার সামনে এসে নিজের চুল ঠিক করছে। আনায়া তখন চেইন হাতে নেয় পড়ার জন্য। নিবরাস তাকে থামিয়ে দেয়। নিজ হাতে আনায়ার গলায় চেইন পড়িয়ে দেয়।

আয়নায় দু’জন দু’জনকে দেখে। তখন নিবরাস বলে,

-তুমি আগের থেকে বেশী সুন্দর হয়ে গেছো।

-আগে আমি অসুন্দর ছিলাম নাকী?

-না আমার ভালোবাসা পেয়ে তোমার রুপ খুলে গেলো দেখছি।

-এহহ! সরুন তো! সবসময় ঢং করে নিজের থোতমা নিয়ে।

-তো করবোনা? নাহলে বউ আমায় গাধা,আনস্মার্ট ভেবে পাত্তা দিবে না।

-আপনার এতো ঢং কোথা থেকে আসে জানি না। সরুন তো আমার ভালো লাগছে না।

-বেশী খারাপ লাগছে?

-তো কী? যান আপনি পাষাণ।

-স্যরি!

আনায়া উঠে দাঁড়ায়। সোজা খাটের উপর গিয়ে শুয়ে পড়ে। নিবরাস হাত ঘড়ি পড়তে,পড়তে বলে,

-আমি নাস্তা নিয়ে আসছি। ঔষধ খেয়ে নিবে।

নিবরাস বেড়িয়ে পড়ে। আনায়া নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষণ পর নিবরাস ট্রে নিয়ে ভেতরে আসে। আনায়ার জন্য ব্রেড,জেলি, কফি এনেছে। খাটের পাশে ছোট্ট টেবিলটায় ট্রে রেখে নিবরাস বসে পড়ে। আনায়াকে ব্রেডে জেলি লাগিয়ে দেয়। নাস্তা শেষ হতে ঔষধ খাইয়ে নিবরাস উঠে দাঁড়ায়।

-আজকে রুমেই থাকো বের হতে হবে না।

-আপনি এখন চলে যাবেন?

-হ্যাঁ কিছু কাজ আছে। তবে তাড়াতাড়ি ফিরবো।

-আচ্ছা সাবধানে যাবেন আর নাস্তাটা করে যাবেন।

-আচ্ছা।

নিবরাস দরজার কাছে আসতে আনায়া ডাক দেয়। নিবরাস ফিরে তাকায়। আনায়া তাকে হাত দিয়ে ইশারা করতে নিবরাস আনায়ার সামনে বসে।

-আমার কপালে চুমু না দিয়ে চলে যাচ্ছেন? রুলস দেইনি মনে হয়? প্রতিদিন বাইরে বের হওয়ার সময় আমার কপালে চুমু খেয়ে যেতে হবে।

-তোমার মুখ থেকে এটা শোনার অপেক্ষায় ছিলাম বউ।

নিবরাসের কথায় আনায়া ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে যায়। নিবরাস হেঁসে বলে,

-ঠোঁট, কপাল দুটোতে আমি চুমু খেতে চাই। একটার পারমিশন পেয়েছি আরেকটা পারমিশন যদি দিতে খুব উপকৃত হতাম।

-যান বদলোক আপনার চুমু খেতে হবে না। বাঙালি মানুষ বসতে দিলে শুতেও চায়। অস*ভ্য!

-অসভ্যতামী একটু করাই যায় বউ।

নিবরাস জোর করে আনায়ার ঠোঁটে চুমু খায়। যাওয়ার সময় কপালে চুমু খেয়ে বেড়িয়ে যায়। আনায়া রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিবরাসের দিকে। সে পড়েছে মহাবিপদে। মনে,মনে ভাবছে,
-জামাই এতোটা রোমান্টিক না হলেও পারতো। ধুর! আমি ভেবেছিলাম নেতা মানুষ সারাদিন জনগনের চিন্তায় বউ আছে যে সেটাই ভুলে যাবে এখন দেখি ষোলো কলা পূর্ণ করছে।

******

তাসরিফ খান,তিয়াশ খান সহ সীতারা আহম্মেদ তারা নাস্তা করতে বসেছে। জায়ানও আছে তাঁদের সাথে। নাজিয়া চুপচাপ নিজের কফিতে চুমুক দিচ্ছে। তখন বন্যা বলে,

-বড় স্যার ম্যাডাম আমি আর আপনাদের বাড়ীতে চাকরীটা করবো না।

বন্যার এহম কথায় জায়ানের মুখশ্রী মূহুর্তে চেন্জ হয়ে যায়। নাজিয়া তাকায় জায়ানের দিকে। তখন তাসরিফ খান বলেন,

-হঠাত করে বন্ধ কেন? আর তোমার মায়ের তো ঔষধ লাগে প্রতিমাসে আবার তোমাদের চলতেও হিমশিম। চাকরী ছেড়ে দিলে কীভাবে কী হবে?

-নতুন আরেকটা চাকরী পেয়েছি। সেটা আমার বাড়ীর পাশেই। আপনাদের বাড়ী তো দূরে মাকে দেখতে যাওয়ার জন্য ছুটি ফেলেই যেতে হয়। আর সেখানে আমি কাজ শেষ করে রাতেই নিজের বাসায় চলে যেতে পারবো।

তখন জায়ান বলে,
-এই সমস্যার কথা আগে বললেই পারতা। প্রয়োজনে রাতে আমি তোমায় ড্রপ করে দিয়ে আসতাম তোমার বাসায়।

-তার মনে হয় আর প্রয়োজন নেই জায়ান ভাইয়া। আগে ভেবে বলতে বন্যা আন্টির প্রয়োজন অপ্রোয়জন। যেহেতু তাকে নিয়ে একটু বেশী ইন্টারেস্টেড তুমি।

নাজিয়া বলে। তখন জায়ান বলে,

-আয়াত পাখি ব্যপারটা এরকম না।

-আমি শুনতে চাইনি ব্যপারটা কেমন।

জায়ান চুপসে যায়। তখন সীতারা আহম্মেদ বলে,

-বেশী কষ্ট হয় নাকী বন্যা?

তখন তিয়াশ খান বলেন,
-কিসের কষ্ট সীতারা? ও তো বাড়ীর একজন সদস্য!

-হুম সেজন্যই তো বললাম। কাজ করে বেতন দেই বাড়ীতে থাকে সেই হিসাবে কিছু চাওয়া-পাওয়া তো পূরণ করতে হয়।

সীতারা আহম্মেদের কথার আগামাথা তারা দুই ভাই বুঝতে পারেনা। তবে নাজিয়া ঠিকই বুঝে। জায়ান সীতারা আহম্মেদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। নাজিয়ার মন চাচ্ছে এখনি তার মায়ের আর জায়ানের পর্দা ফাঁস করতে। কিন্তু তার মায়ের বিরুদ্ধে তেমন প্রমাণ জোগাড় হয়নি। বিশেষ করে তার অবৈধ বিজন্যাস যেটা জায়ান সহ করে সেটার প্রমাণ জায়ানেরটা মিললেও তার মায়েরটা মিলাতে পারেনি। এই মহিলা দূর্তবাজ। সবচেয়ে বেশী খারাপ লাগছে নাজিয়ার তার মা একজন নারী হয়ে কী করে আরেকজন নারীর ক্ষতি জেনেও কিছু বলেনি।

তখন বন্যা বলে,
-আজকে রান্না করে দিয়ে আমি চলে যাবো। আপনারা নতুন কাজের লোক খুঁজে নিবেন।

তিয়াশ খান গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-ঠিক আছে।

সবাই যে যার মতো নাস্তা করে নিজেদের গন্তব্যের জন্য নেমে পড়ে। জায়ান,সীতারা আহমেদের এক অফিস তারা একই কারে করে যাবেন। তাশরিফ খান এবং তিয়াশ খান আরেক অফিস তারা এক কারে করে যায়। নাজিয়াকে ড্রপ করে দেয় বাড়ীর গাড়ী দিয়ে ড্রাইভার। সুহাসিনী একটা কিন্ডারগার্টেন সামলায় সেও তার কাজে চলে যায়। খান ভিলা ফাঁকা। বন্যা রান্না করে চলে যাবে গেটে তালা লাগিয়ে। চাবি দারোয়ানকে দিয়ে যাবে।

জায়ান গাড়ী ড্রাইভ করছে সীতারা আহমেদ পেছনে বসা। ফোন টা ব্যাগে ঢুকিয়ে সীতারা আহম্মেদ বলেন,
-মনে হয়না বন্যা তোমার জন্য চলে যাচ্ছে।

-হবে হয়ত! বাট কখনো কাউকে কিছু বললে ওকে মে*রে দেবো।

-উফফ এসব মারা মারি বাদ দাও! ওই তাহিয়ার কাছে আমার কিছু প্রমাণ ছিলো যা ফাঁস করলে আমি কেস খেতাম। জানি ভাইয়ের মেয়ে হলে কী হবে! একসময় না একসময় আমায় ফাঁসাত সেজন্য রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলাম।

-শুভ কাজটা প্লানিং করে করেছি আমি।

-মে*রেছি কিন্তু আমি।

-মাঝখানে জনগনের নেতা তোমার একমাত্র মেয়ের জামাই ফেঁসে গেছে।

-ধুর! ওরা জাহান্নামে যাক আমার কী?

-কাম্মা আনায়াকে নিয়ে ভাবো না? মায়া লাগে না?

-তোমায় বলবো নাকী মায়া লাগে নাকী লাগে না।

-আরে বলো না?

-ও আমার সন্তান! তুমি জানো সন্তানদের প্রতি মায়ের ভালোবাসা অকৃত্রিম। সো…”

-এতো ভালোবাসো তো ছেড়ে আসলে কেন? ওইখানে কিন্তু জীবনটা গুছিয়ে নিতে পারতে।

-সেটা আমি জানি। আমার লাভ ছিলো তিয়াশ খান ওর জন্য আমি সব করতে পারি। ইউ নো হোয়াট এই সীতারা না আসলে খানদের এতো উন্নতি হতো না। লাইফে টাকা ইনকাম করা প্রচুর দরকার। এতো,এতো টাকা দরকার যাতে বুড়ো বয়সে আরাম আয়েশ করে কাটিয়ে দিতে পারি। টাকা যাতে শেষ না হয়! আমার ছেলের ভবিষ্যত ও যাতে চলে যায়।

-বুড়ো বয়স যদি জেলে বসে কাটাতে হয়?

-আমার টাকা আর লোকের অভাব নেই প্রয়োজনে পুলিশদের মা*র্ডার করে দিবে। আর সীতারাকে জব্দ করা ওতো সহজ না! শকূনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলতে পারি আমি।

-নিবরাস কিন্তু ঠান্ডা মাথার প্লেয়ার। ওর সাথে জীবনে কেউ টেক্কা দিতে পারে না।

-ওর ও গোপন টিম আছে। ইভেন আমাদেরও আছে। ও ইট ছুঁড়লে আমিও পাটকেল মারতে তৈরী।

-মেইন প্লেয়ার সীতারা আহম্মেদ আর সবাই ভাবে শামিম সরদার।

-ওরা ও আমাদের দলের লোক।

-সেদিন মনে হয় নেতার জানপ্রাণকে বাঁচিয়ে দেওয়া উচিত হয়নি।

-ও আমার মেয়ে ভুলে গেলে? ওর গায়ে একটা আঁচড় লাগলে তোমায় খু*ন করতে একবার ও ভাবতাম না আমি।

-স্যরি আমি কিছু করবো না ওর।

-হুম! আমার কথার থেকে এক চুল পরিমাণ নড়চড় হলে তোমায় জেলে ঢুকিয়ে যাবত জীবন কারাদন্ড দিতে আমার দুই সেকন্ড সময় ও লাগবে না।

-তুমিও ফাঁসবা কিন্তু!

-হাহা! আমি আমার বিজন্যাস নিয়ে কোন ইনফরমেশন বা কেস দিবো না। দিবো তো কাজের মেয়েকে রেপ করার কেস। তুমি জানো সব ভিডিও প্রমাণ আমার কাছেও আছে।

-তুমি আমার দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছো?

-তাছাড়া তোমায় জব্দ করার জন্যই আমি কিছু বলিনি। নাহলে আমায় তোমাদের এসিস্ট্যান্ট হতে হতো। মেইম পয়েন্টে আসি! মেইন পয়েন্ট এখন আমি তোমাদের বস আর তোমরা আমার কথা মতো সব করবা।

-সে তো করছি এখনো।

-ভাবতে পারিনি আমি টাকা, শো অফ,প্রাচুর্য আমায় এতোটা অন্ধ করে দিবে খারাপ পথে চলেই গেলাম। অবৈধ জিনিস পাচার করা দেশে আনা। কোটি,কোটি টাকা ইনকাম করা। সাথে দু একটা টিম রাখা। দু’একটা খু*ন ও নিজের হাতে করা।

-নিবরাস মনে হয় না এতো সহজে আমায় ছেড়ে দিবে।

-আমাদের কোন তথ্যই বাইরে পাচার হয়না। বাড়ীরটা বাড়ীতে,ফোনেরটা ফোনে আর অফিসেরটা অফিসেই থাকে।

#চলবে

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|১৯|
#শার্লিন_হাসান

আনায়া শুয়ে,শুয়ে ফোন স্ক্রোল করছে। আজকে আর সে নিচে যায়নি। তখন তারিশা আসে রুমে। আনায়ার এতো সুখ সহ্য হচ্ছে না তার। তারিশাকে দেখে আনায়া বলে,

-তারিশা আপু! বসো! নিশ্চয়ই আমার বানানো রুটিগুলোকে মিস করছো।

-তোমার বানানো রুটি আমার গলা দিয়ে নামে না।
বসতে,বসতে বললো তারিশা। আনায়া ফোন রেখে তারিশার দিকে তাকায়। তখন তারিশা বলে,

-খুব সুখে আছো মনে হয়?

-না গো সুখে নেই। তোমার মতো ছ্যাচড়া যেভাবে আমার জামাইয়ের পেছনে পরেছে চিন্তায় থাকতে হয়।

-আমি তোমার জামাইয়ের পেছনে পড়িনি তোমার জামাই আমার পেছনে পড়েছে।

-এতোটা খারাপ সময় আসেনি আমার জামাইয়ের যে তোমার পেছনে পড়বে।

-হাহা! দেখা যাবে।

আনায়া কথা বাড়ায়না। তারিশা উঠে দাঁড়ায় এসেছিলো আনায়াকে কয়টা কথা শোনাবে এখন আনায়া তাকে শুনিয়ে দিলো। রাগ-ক্ষোভে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় তারিশা।

তার কিছুক্ষণ পর নিবরাস চলে আসে। রুমে প্রবেশ করে কলে কথা বলতে,বলতে।
আনায়া উঠে নিবরাসের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায়। নিবরাস কলে কথা বলায় ব্যস্ত। আনায়া হাত বাড়িয়ে দেয় নিবরাসের দিকে। নিবরাস তাকে টেনে একবাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে। আনায়া পুনরায় নিজের হাত নিবরাসের সামনে ধরতে নিবরাস পকেট থেকে ছোট্ট একটা বক্স বের করে আনায়ার সামনে ধরে।

আনায়া বক্সটা খুলে দেখে কাপল রিং। নিবরাসের কল কাটার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয় আনায়া। কল কাটতে নিবরাস ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে,

-গিফ্ট পেয়েছি আমি আনিনি।

-কে এতো বড়লোক শুভাকাঙ্ক্ষী?

-এই তোমার বোন।

-আপনি ডেইলি ওর সাথে দেখা করেন?

-আরে না। ও হোস্টেলে চলে যাবে আর আমার কিছু ইনফরমেশন লাগতো।

-ওহ! ওর মনে হয় টাকা বেশী সেজন্য দু’দিন পরপর গিফ্ট পাঠায়।

-ওর বাপ মায়ের যা টাকা আছে না এসব ওর কাছে বিলাসিতা ব্যপার।

নিবরাস রিং দু’টো হাতে নেয়। আনায়ার আঙুলে একটা পড়ায় আরেকটা নিজের আঙুল পড়ে নেয়। ডায়মন্ডের রিং দু’টোর দিকে তাকিয়ে নিবরাস বলে,

-একটু পর রেখে দেবো।

-এমা কেন?

-আরে আমি কত জায়গায় যাই। আর এসব অলংকার ব্যবহার করা আমার পছন্দ না। তুমি করলে করো।

-ওর থেকে প্রতিদিন গিফ্ট নিয়ে চলে আসেন ওকে তো কিছুই দিলেন না।

-তুমি পছন্দ করে দিও আমার এসবে আইডিয়া নেই।

-ক্রেডিট কার্ড?

-নিও!

-আচ্ছা আমরা আগামীকাল যাবো ওর জন্য গিফ্ট কিনতে। তারপর একদিন ওর হোস্টেলে যাবো ওকে নিয়ে বাইরে কোথাও ঘুরতে বের হবো।

-আচ্ছা যেও।

******

সন্ধ্যার দিকে নাজিয়া ওর বাবাকে ক্রেডিট কার্ড ফেরত দেয়। তিয়াশ খান কার্ড হাতে নিয়ে বলেন,

-আর কেনাকাটা আছে?

-হ্যাঁ হোস্টেলে যাবো। আম্মুর ক্রেডিট কার্ড আমায় দিও। আপাতত তোমারটা ফাঁকা।

তখন সীতারা আহম্মেদ বসা থেকে উঠে আসেন। তিয়াশ খানের থেকে ক্রেডিট কার্ড হাতে নিয়ে বলেন,

-দুইদিন আগে না নিলা। দুইদিনে টাকা শেষ?

-আরে আম্মু আমি ডায়মন্ড কিনেছিলাম। একটা লকেট আরকী।

-কই দেখাও তো?

-ওটা বড় আম্মুর কাছে।

-আমাকে বললে আমি নিয়ে আসতাম নাজিয়া।

-আমি আর বড় আম্মু মিলেই কিনে এনেছি।

-যাও এবার থেকে টাকা হিসাব করে ভাঙবে।

-একমাত্র মেয়ে আমি এটা বলছো তুমি? একটু টাকাই তো খরচ করি তোমার ব্রেন না। বাবাই আম্মুকে কিছু বলো! তোমরা দু’জন জব করো আমি একজন মাত্র খরচ করার। আর তোমরা না দিলে কী হবে? জায়ান ভাইয়ার ক্রেডিট কার্ড আছে না? তাই না জায়ান ভাইয়া।

তখন জায়ান মাথা নাড়িয়ে বলে,
-হ্যাঁ আছে তো তোমার যখন খুশি নিও।

-দেখো আবার আমায় ক্রেডিট কার্ড দিলে ফূর্তি করতে পারবা না। ভাগ্যিস বন্যা আন্টি নেই নাহলে তারউপর দিয়েই সব যেতো।

নাজিয়ার কথায় জায়ান কটমট চোখে তাকায়। নাজিয়া মুখ বাকায়। সীতারা আহম্মেদ এসবে পাত্তা দেয়না। হয়ত নাজিয়া আন্দাজি ঢিল ছুড়ছে। ওতোটুকু মেয়ে এতোকিছু বুঝে না। সে তো বারণ করে দিয়েছে কখনো কারোর ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ বা কারোর পার্সোনাল লাইপ নিয়ে জানার আগ্রহ না দেখায়।

নাজিয়া তার পোষা পাখি। ছোটবেলায় থেকে যেভাবে বলেছে ঠিক সেভাবে এসেছে একচুল ও এদিকওদিক হয়নি। তার শখের মেয়ে নাজিয়া! নাজিয়ার উপর আলাদা বিশ্বাস ভরসা আছে সীতারা আহম্মেদের।

সীতারা আহম্মেদ উঠে রুমে চলে যান। কিছুক্ষণ পর ক্রেডিট কার্ড নিয়ে নাজিয়াকে দেয়। আর পড়তে বসার আদেশ জারি করতে নাজিয়া প্রস্থান করে।

স্কুলের টিফিন টাইমে পাশের শপিংমলে গিয়েছিলো নাজিয়া। তাকে চিনে অনেকে বিশেষ করে তার বাবা-মা,জায়ান,জেঠু তাদের সুত্রে। সেখান থেকেই আনায়া নিবরাসের জন্য কাপল রিং কিনে আনে। এরই মাঝে নিবরাসের সাথে দেখা করার অনুমতি আসে। জায়ান সম্পর্কে সব তথ্যই সংগ্রহ করা শেষ। সব নিবরাসের কাছে আছে সাথে তার কাছেও আছে। তবে তার মাকে নিয়ে কোন তথ্যই সে দিবে না। অবশ্য নিবরাসই বারণ করেছে। সে বলেছে,

-জায়ানের অধঃপতন হলে নাজিয়ার আফসোস হবে না। কিন্তু ওর দেওয়া প্রমাণের ভিত্তিতে যদি ওর মাকে আজীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। জেলে বসে,পঁচে মরবে ওর মা তখন মাকে দেখলে হয়ত ওর আফসোস হবে, ‘কেনো সেদিন নিবরাসের কথায় ইনফরমেশন জোগাড় করে দিলো। শত হোক মা তো! তার এমন অবস্থা কোন সন্তানই মেনে নিতে পারবে না। নিনরাস চায়না নাজিয়া কখনো অপরাধবোধে নিজেকে নিঃস্ব ভাবুক,অসহায় ভাবুক। নিজেকে দায়ী করুক।

আপাতত নাজিয়া আর এসবে নেই। শুধু অপেক্ষা জায়ানের মুখোশ টেনে ছেঁড়ার অপেক্ষায়।
মনোযোগ দিয়ে পড়ছে নাজিয়া। এক্সামের আর বেশীদিন নেই তার।

সকাল বেলা নাস্তা খেয়ে রেডি হয়ে নেয় আনায়া। নিবরাস সহ বাইরে বের হবে। করিডোর দিয়ে নিচের দিকেই আসছিলো তারা। তারিশার রুম সোজা আসতে তখন তাড়াহুড়োয় তারিশা বের হয়। অল্পের জন্য নিবরাসের গায়ের উপর পড়েনি। তারিশা নিনরাসকে জিজ্ঞেস করে,

-তোমরা কোথায় যাচ্ছো?

-আপাতত জাহান্নামে যাচ্ছি। যাইবা আমাদের সাথে?

-জাহান্নামে কেনো যাবো? আরে ঠাট্টা করছি না বলো কোথায় যাচ্ছো?

-এই তো তোমার ভাবীকে নিয়ে ঘুরতে,শপিং করতে।

-ওহ যাও তাহলে।

-তুমি কোথায় যাচ্ছো?

-এই আপনার শত্রুর সাথে দেখা করে নতুন প্লানিং মাথায় নিয়ে আসতে।

আনায়া বলে। তখন আবার মরিয়ম নওয়াজ সেখানে উপস্থিত হোন। আনায়ার কথায় তিনি ব্রু কুঁচকে তাকান তারিশার দিকে। তারিশার চোখেমুখের অবয়ব মূহুর্তে পরিবর্তন হয়ে যায়।

-তারিশা কয়েকদিন পর পর কোথায় যাও?

প্রশ্ন করেন মরিয়ম নওয়াজ। তখন তারিশা বলে,

-মামনি আমার আমার বান্ধুনী তুলি,তুলির সাথে দেখা করতে যাই।

-এতো তোতলাচ্ছো কেন?

-না আসলে!

-তুলিকে বলো মির্জা ভিলায় আসতে। আমার সাথেও পরিচিত হয়ে যাবে। কী বলো?

-না ও এতোদূরে আসবে না।

-শোনো তোমায় আমার মেয়ের মতোই বড় করেছি।সবটা দেখভাল করেছি। এমন কিছু করোনা যাতে তোমায় রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলতে দুইবার না ভাবি। একটা কথা কান খুলে শুনে রাখবে এটা আমি অন্যদেরও বলি আগেও বলেছি এখন আনায়া আছে তার সামনেও বলছি। দুনিয়া একদিকে আমার ছেলে একদিকে। আমার ছেলের জন্য আমি সব করতে রাজী। আর তারিশা তো ছোট বেলা থেকে দেখেছো নিবরাস আমার কাছে কী।

আমার ছেলের যে ক্ষতি করতে চাইবে তার খেসারত হিসেবে জীবনটাই দান করে দিতে হবে।

-এতো দেখি আরেক ভিলেন! মনে হয় ছেলের মতো ওনার ও গ্যাং আছে। যেভাবে বলছে মনে হয় খু*ন করে ফেলবে। এই মহিলা আসলেই তেজী! একবার ধরা খেলে তারিশা তোর আর রক্ষে নেই।

মনে,মনে বলে তারিশা।
নিবরাস তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আনায়াও তাকিয়ে আছে মরিয়ম নওয়াজের দিকে। তখন মরিয়ম নওয়াজ বলেন,

– সাবধানে যাও। তোমরা কোথায় জেনো যাবে?

তখন নিবরাস বলে,
-আড়ংয়ে যাবে।

-তারিশা আবার ওদের পেছনে দৌড় দিও না। তোমার ভাব ভালো ঠেকছে না।

-না,না ওদের সাথে কেনো যাবো?

নিবরাস তার মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে আনায়াকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। তারিশাও আস্তে,আস্তে কেটে পড়ে। গেট পেড়িয়ে রিকশা ধরে তারিশা। অবশ্য আনায়া নিবরাসকে ফলো করতে,করতে যায়। তার শপিংমলেই গিয়েছে। তারিশা সেসব রেখে নিজের গন্তব্যে ছুটে। এসবে সময় ব্যায় করে লাভ নেই তার।

নিবরাস বসে আছে। আনায়া নাজিয়ার জন্য গিফ্ট দেখছে। তার আইডিয়া আসছে না কী দিলে ভালো হবে। অনেক খুঁজাখুঁজি করার পর সিদ্ধান্ত নেয় শাড়ী, সাথে জুয়েলারি সহ একবক্স হিজাব,চকলেট সাথে গোল্ডের কিছু দিবে।

নাজিয়ার গিফ্ট কেনা শেষ হবে আনায়া নিজের জন্য জামা দেখছে। নিবরাস তখন বলে,

-নাজিয়ার গিফ্ট কেনা শেষ এবার বাড়ী চলো।

-আমি কিছু কিনবো না?

-আমার ক্রেডিট কার্ডের দম আসে আর যায়। সামনের মাসে শপিং করো আপাতত আমার টাকা পয়সা সংকটে।

-চাঁদাবাজি করেন না?

-ভাগ্যিস এটা পাবলিক প্লেস নাহলে এই শব্দটার জন্য তোমার ঠোঁটের উপর অত্যাচার হতো।

-সত্য কথা বলছি।

-তোমার আর সত্য! আমাকে দেখে কোন এঙ্গেলে চাঁদাবাজ মনে হয় তোমার?

-আমার মুখের দিকে তাকালে চো*র ভাবটা আসে এই ধরুন জনগনের থেকে চাঁদাবাজি করে সেটা ঢাকা দিতে চাইছেন।

-ভাবছি তোমার বাপের থেকেই চাঁদাবাজি করবো। ইডিয়েট একটা। তোমার এই কথায় আমার কান জ্বালা ফালা হয়ে গেছে। এমপি আমি একটু তো সন্মান দাও?

-আমাকে শপিং করিয়ে দিতে গেলে আপনার টাকা শেষ হয়ে যাবে। মাসে,মাসে যে সরকার টাকা দেয় সেগুলো কী করেন?

-বেতন দিয়ে খানদান পালন করি।

-আপনাদের না ইন্ডাস্ট্রি আছে।

-তো? সেখানে আমি জব করি নাকী? সেসব তো তোমার শশুর মশাই নিজের পকেট আর একাউন্টে তুলে রাখে।

-আরে আসুন না আমার একটা ঘড়ি পছন্দ হয়েছে।

-আচ্ছা চলো ঘড়িটা কিনে চলে যাবো। ক্রেডিট কার্ড ফাঁকা আট হাজার মনে হয় আছে।

-শা*লা কিপ্টা।
বিড়বিড় করে বলে আনায়া। তখন নিবরাস বলে,

-কিছু বললে?

না বোধকে মাথা নাড়ায় আনায়া। নিবরাসকে নিয়ে ঘড়ির দোকানে প্রবেশ করে আনায়া। দোকানদার নিবরাসকে দেখে হ্যান্ডশেক করে। আনায়া একটা ঘড়ি নিয়ে নিবরাসের দিকে ধরে। ঘড়ির প্রাইস বারো হাজার টাকা। নিবরাস প্রাইস দেখে বলে,

-কী একটা ঘড়ি। একদম বাজে! অন্যটা দেখো।

-এটা বেশী সুন্দর।

-তুমি চিনো কী?

নিবরাস দেকানদারকে বলে অন্য ঘড়ি দেখাতে। আনায়া দাঁড়িয়ে, দাঁড়িয়ে ঘড়ি পছন্দ করবে কী নিনরাসের চৌদ্দ গুষ্টি তুষ্টি উদ্ধার করছে।

-শালা কিপ্টা দেখছি তোর মতো একটাও দেখিনি। শুনেছি এমপিদের টাকার অভাব থাকে না। এখন মনে হচ্ছে সম্পূর্ণ ভুল। ওর টাকা পয়সা সব কোথায় যায়? কী করে?

-এদিকে আসো আমার গুষ্টি পরে উদ্ধার করো।

আনায়া নিবরাসের কাছে যায়। সে একটা ঘড়ি চুজ করেছে আনায়া প্রাইস দেখে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা।

-কী একটা পছন্দ আপনার। এটা একদম বাজে। আংকেল আগের ঘড়িটাই প্যাক করে দিন। যেটা বারো হাজার টাকা প্রাইস।

দোকানদার মিষ্টি হেসে ঘড়ি প্যাক করে। আনায়া হাসে, নিবরাস হাতের ঘড়িটা রেখে দিয়ে আনায়ার দিকে কটমট চোখে তাকায়। দোকানদার নিশ্চয়ই তাকে কিপ্টা ভাববে। যে বারো হাজার টাকার ঘড়ি বাজে বলে রেখে পাঁচ হাজার টাকা ঘড়ি নিয়েছে। আনায়া এভাবে তার সন্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।

দোকানদার প্যাকেট এগিয়ে দিতে আনায়া সেটা নেয়। নিবরাস তার আরেকটা ক্রেডিট কার্ড বের করে যেটায় টাকা বেশী আছে। আট হাজার টাকার কার্ডটা পকেটেই থাকে সেটা আর বের করে না।

কার্ড হাতে শক্ত মুখ করে নিবরাস বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে আসে। আনায়া তার দিকে তাকিয়ে বলে,

-কার্ডে আট হাজার নিয়ে ঘুরেন এখন বারো হাজার টাকা পেমেন্ট করলেন কীভাবে?

-তোমার বাপের থেকে চাঁদাবাজি করে পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছিলাম সেটা ভুলবশত পকেটের এক কোণে পড়ে ছিলো। এখন সেটা দিয়েই পেমেন্ট করেছি।

-বাকী তো একহাজার থাকে সেটা?

-শহরে মাইকিং করে জানানোর জন্য রেখেছি। মুয়াম্মার নিবরাস মির্জার বউ তাকে চাঁদাবাজ বলে আখ্যায়িত করে সাথে তার সন্মান নিয়ে যেখানে সেখানে ফুটবল খেলে।

-ভাগ্যিস খেলিনি ফুটবল খেললে এতেদিন এভাবে বাঘের মতো না ঘুরে কাঁথার নিচে মুখ লুকাতেন।

-তোমার আঁচল থাকতে কাঁথা কেন?

-কিপ্টা লোককে আমি আমার আঁচলে মুখ লুকাতে দেব না।

-আমি মোটেও কিপ্টা না। তুমি পছন্দ করে কিনলে সেটায় ইন্টারেস্ট পাইবা না। আমি পছন্দ করে কিনে দিলে সেটায় এক্সাইটমেন্ট কাজ করবে বেশী।

-আর ভাষণ দিতে হবে না। কিপ্টা দেখেছি আপনার মতো একটাও দেখিনি।

-অনেকদিন হলো তোমার বাপের থেকে চাঁদাবাজি করতে পারিনি সেজন্য পকেট ফাঁকা।

#চলবে

হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-১৬+১৭

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|১৬|
#শার্লিন_হাসান

নাজিয়ার সাথে কথা বলে ডকুমেন্টস নিয়ে নিবরাস বেড়িয়ে পড়ে। তবে তার হাতে নাজিয়ার আনা অনেকগুলো ফুল,চকলেট সাথে একটা পার্সেল। আনায়ার জন্য এনেছে নাজিয়া! নিবরাসের কাছে সেগুলো দিয়েছে। তাজা বেলী ফুলের দু’টো চুড়ি নিবরাস হাতে নেয়। দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে হাজারো বেলীর মাঝে দু’টো করে গোলাপ।

গাড়ীতে বসে গিফ্টগুলো সামনেই রাখে নিবরাস। শুধু হাতে বালা জোড়া। তার ইচ্ছে আনায়াকে নিজ হাতে পড়িয়ে দিবে। বালাজোড়া নিবরাস নাড়াচাড়া করছে তখন পরাগ বলে,

-ম্যাম তো রাগ করে আছে স্যার। রাগ ভাঙাবেন না?

-তুমি না বললে আমার মনেই ছিলো না। সন্ধ্যায় গার্ডেনের এককোণ সাজিয়ে রেখো। সাথে রাতের ডিনার,কেক,ড্রিং সব রেখো। আর হ্যাঁ কারেন্টের দিকে খেয়াল রেখো কেউ যাতে সুইচ অফ করে না দেয়।

-আচ্ছা আমি মেসেজ করে দিচ্ছি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসতে।

-হুম দাও।

আনায়া মারিয়াকে বিদায় দিয়ে গাড়ীতে বসে পড়ে। তার মনে রাগ আছে প্রচুর তবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিবরাসকে এবার কিছু বলবে না। চুপ থাকবে সেও দেখবে নিবরাস কতটুকু যায়! তার ইচ্ছে করছে তার বাবাকে কল দিয়ে সব অভিযোগ বলতে নিবরাসকে নিয়ো। এতো নেতা তার লাগবে না। আর না এসব শত্রু, চলার পথে পা ফেলতে এতো ভাবনা। নেতাকে পেয়ে লাভ কী? তাকে চায় একের পর একজন। পিছু পড়ে আছে! পিছু ছাড়ছে না।

-আমার কপালটাই এমন। আমার সবকিছুতেই অন্যদের ভাগ থাকবে। অন্যদের পছন্দ হবেই।

মির্জা বাড়ীতে আসতে দেখে একটু আগে নিবরাসরা এসেছে। তারিশাও আছে নিবরাসের সাথে। আনায়া ড্রাইভারকে বিদায় দিয়ে নিবরাসকে এভয়েড করে ভেতরে ঢুকে যায়। নিবরাস পরাগকে দিয়ে গিফ্টগুলো ভেতরে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। শুধু বালা জোড়া নিজের হাতে রাখে। তখন তারিশা বলে ফেলে,

-বালাগুলো খুব সুন্দর তাও তাজা ফুলের। আমায় দাও না বালাগুলো। তুমি কী করবে এসব দিয়ে?

-তোমার বিয়ের জন্য এনেছি তারিশা। সেন্স বলতে কিছু তো নেই তোমার মাঝে আর না আছে লজ্জা। আমার বউ আছে তুমি ভুলে গেছো? সবসময় আমার পিছু লাগবে মা আমার বিরক্ত লাগে তোমাকে। আমি ম্যারিড আমার বউ আছে বুঝেছো?

-আনায়ার জন্য এনেছো আমি কী দোষ করলাম?

-আনায়ার তুমি কে? নিজের জায়হায় সীমাবদ্ধ থাকো বেহায়া মেয়ে। শুধু বাবার জন্য কিছু বলতে পারি না নাহলে তোমার মুখোশ টেনে ছিঁড়তে আমার সময় লাগবে না। একশুটে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেবো। ডিজগাস্টিং।

নিবরাস চোখ-মুখ শক্ত করে ভেতরে চলে আসে। আর্জেন্ট কল আসাতে ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ত্রস্ত পায়ে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হয়। খাটের উপর গিফ্ট সাথে ফুলের তোড়াটা রাখা। আনায়া রুমে নেই হয়ত শাওয়ারে গেছে। নিবরাস সোফার উপর,পায়ের উপর পা তুলে বসে।

আনায়া শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসে। কোন কথা বলে না নিবরাসের সাথে। ব্যস্ত হাতে হেয়ার ড্রয়ার নিয়ে চুল শুকাতে থাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে। তাঁদের রুমটা বিশাল। ঢুকার সময় ছোট্ট রুমের মতো যেটায় সোফা রাখা ভেতরে তাঁদের বেডরুম। সাথে এটাস্ট ওয়াশরুম আর একটা চেন্জিং রুম যেখানে কাবাড আর জামাকাপড় রাখা। তাদের বেডরুমে কাউচ,বেড,ড্রেসিং টেবিল সাথে বেডের দুই পাশে টেবিল।

আনায়া চুল শুকিয়ে তৈরি হয়ে বাইরের দিকে যায়। নিবরাসকে দেখেও না দেখার ভাণ করে। ড্রয়িং রুমে আসতে মরিয়ম নওয়াজ খাবার টেবিলে রাখছেন। আনায়া তাকে সাহায্য করার জন্য যায়। মরিয়ম নওয়াজ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

-নিবরাস বাইরে থেকে এসেছে ওর জন্য শরবত নিয়ে যাও। আর বলো লান্স করতে আসার জন্য।

আনায়া শরবতের ট্রে টা নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। করিডোর দিয়ে হাঁট ছিলো তখন কোথা থেকে তারিশা তড়িঘড়ি আসে। অল্পের জন্য ধাক্কা লেগে শরবতের গ্লাস নিচে পড়েনি। আনায়া সেসব পাত্তা দেয়নি সোজা রুমে চলে যায়। নিবরাস সোফায় বসে,বসে কপাল স্লাইড করছে। আনায়া টেবিলের উপর ট্রে টা রেখে ব্যস্ততা দেখিয়ে বলে,

-লান্স করার জন্য আসতে বলা হয়েছে।

-শোনো!

-সময় নেই।

নিবরাস উঠে দরজা লক করে দেয়। আনায়া বেডরুমে চলে আসে। নিবরাস শরবতের গ্লাস হাতে ভেতরের দিকে আসে।

-গিফ্ট গুলো তোমার জন্য।

-লাগবে না।

– তুমি যদি ভেবে থাকো আমি এনেছি আমার দেওয়া গিফ্ট ভেবে প্রত্যাখ্যান করবে তাহলে ভুল।আমি আনিনি তোমার জন্য এসব একজন পাঠিয়েছে।

-কে?

-নাজিয়া!

আনায়া অবাক হয়। নাজিয়া কে নিবরাস চেনে? আর গিফ্টগুলো নিবরাসকে দিয়ে পাঠিয়েছে। আনায়ার ভাবনার মাঝে নিবরাস গ্লাসটা সাইড টেবিলে রেখে পাশ থেকে ফুলের বালা দু’টো নিয়ে আনায়ার হাতে পড়িয়ে দেয়। আনায়া নিবরাসের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়।

-আপনি আসুন আমি গেলাম।

-এই তুমি রাগ করেছো?

-কই না তো!

-মিথ্যে বলবে না।

-আমার রাগের দাম আছে নাকী? আর যার কাছে আমার দাম নেই তার কাছে রাগ করা বোকামী ছাড়া আর কিছু না।

-আমি ওকে অপমান করেছি তো।

-আমি শুনতে চাইনি এসব ব্যপার। প্লিজ আপনি আপনার মতো থাকুন আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। যদি এটাও সম্ভব না হয় তাহলে বলুন আমি ব্যাগ গুছিয়ে নিজের বাড়ী চলে যাচ্ছি।

-স্যরি।

আনায়া পাত্তা না দিয়ে বালা জোড়া খুলে খাটের উপর রাখে। দ্রুত প্রস্থান কর নেয়। নিবরাস পকেট থেকে ফোন বের করে খাটের উপর ছুঁড়ে মারে। তারিশাকে পারছে না বাড়ী থেকেই বের করে দিতে।

আবারো ফোন হাতে পরাগকে টেক্স দেয়,

-সুন্দর ভাবে ডেকোরেশন না করলে বুলেট কিন্তু মাথায় গেঁথে দেবো।

টেক্স পেয়ে পরাগ আর রিপ্লাই দেয় না। বুঝেছে নিবরাস রেগে আছে। হয়ত আনায়া তাকে কথা শুনিয়েছে।
পরাগের মতো ভালোই হয়েছে মাথা ফাটায়নি যে এটাই তাঁদের নেতার সাত কপালের ভাগ্য।

আনায়া চুপচাপ খাবার খেয়ে উঠে যায়। তারিশা সব বসেছে তার পেছন দিয়ে নিবরাস আসে। বাকীদেরও মোটামুটি খাওয়া শেষ।

তারিশা,নিবরাস একসাথে খাচ্ছে। তখন মরিয়ম নওয়াজ বলেন,

-তারিশার এতো লেট কেন?

-আসলে মামনি এসে শাওয়ার নিয়ে একটু রেস্ট নিয়েছি সেজন্য লেট হয়ে গেছে।

মরিয়ম নওয়াজ আর কিছু বলেন না। নিবরাস কোনরকম খেয়ে উঠে পড়ে। বারবার আনায়া যেখানে থাকার কথা সেখানে তারিশা চলে আসছে। নিবরাসের বিরক্ত লাগছে প্রচুর প্রকাশ করতে পারছে না।

ত্রস্ত পায়ে নিজের রুমে যায়। আনায়া কাউচের উপর বসে ফোন স্ক্রোল করছে। নিবরাস বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর,পর আনায়ার দিকে তাকাচ্ছে। আনায়া তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। নিবরাস নিরব থেকে আনায়াকে বলে,

-তোমার বোন গিফ্ট পাঠালো দেখলে না?

আনায়া জবাব দেয়না। নিবরাস ব্যর্থ হয়ে আবারো বলে,

-খাটে এসে বসো না?

আনায়া ফিরেও তাকায়নি নিবরাসের দিকে। সে তার মতো ফোনে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পর উঠে কুশন এনে কাউচে গা এলিয়ে দেয় আনায়া। নিবরাস খাটের উপর শুয়ে,শুয়ে আনায়ার কান্ড দেখছে। মনে,মনে নিজেকে বকা দিচ্ছে। আর কখনো তারিশাকে পাত্তা দেওয়া যাবে না। তারিশা কে তাকে নিবরাস চিনে না। আনায়া তাকে টর্চার করছে। জনগনের নেতা বউয়ের কাছে পাত্তা পাচ্ছে না।

*****

নাজিয়া পাঁচটার দিকে বাড়ী ফিরে। তার স্কুল থেকে কিছুটা দূরে একটা ক্যাফ ছিলো। সেখানে নিবরাসের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো নাজিয়া। গিফ্টগুলো আগে কিনে রেখেছে শুধু আসার সময় ফুলগুলো নিয়েছে। কী জানি আনায়া গিফ্টগুলো একসেপ্ট করেছে কীনা। ফুল দেখলে কেউ রাগ,অভিমান করতে পারে না আর না ফুল ফেলে দিতে পারে। ফুল মানে শুভ্র, শুদ্ধ।

তড়িঘড়ি শাওয়ার নিয়ে খাবার খেয়ে নেয় নাজিয়া। সাড়ে পাঁচটায় তার প্রাইভেট আছে টিচার আসবে। নিজেকে তৈরী করে স্টাডি রুমে চলে যায়। তার টিচার চলে এসেছে অলরেডি। বাড়ীতে তেমন কেউ নেই বললে চলে। তার মা জব করে অফিসে। আজকে হয়ত মিটিংয়ে আটকা পড়েছে সাথে তার বাবা,বড়বাবা ও। তার জেম্মা আড়ংয়ের জন্য বের হবে একটু পর। নাজিয়ার প্রাইভেট শেষ হলে দু’জন যাবে। তার ভাই জাফিন একটা আন্টির বাসায় নাজিয়ার আম্মুর পরিচিত। সে আসার সময় জাফিনকে নিয়ে আসবে।

সুহাসিনী রেডি হয়ে অপেক্ষা করে নাজিয়ার। আজকে নাজিয়াকে নিয়ে টুকটাক শপিং করবে। নাজিয়ার কী লাগবে না লাগবে আজকে কিনবে সাথে নিজের জন্যও। তাশরিফ খানের এটিএম কার্ড রেখে দিয়েছিলেন সকালে।

নাজিয়া সহ সুহাসিনী আড়ংয়ে আসে। নাজিয়ার ফোন ব্যতীত অন্য যা পছন্দ তাই নিতে পারবে। ফোনটা তার মায়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে চালাতে পারে না। তবে তার নিজের টাকায় কেনা ফোন আছে যেটা লুকিয়ে চালায় সে। তার রুমে তেমন কেউ আসে না। আর সে সারাদিন স্কুলে,পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকে। সামনে তার এক্সাম বেশীদিন নেই আর তিনমাস পর ফেব্রুয়ারিতে এক্সাম। আগামী মাসে হোস্টেলে উঠে যাবে ভালো গাইডলাইনের জন্য। এই একসপ্তাহের মতো আছে বাড়ীতে।

সুহাসিনী নাজিয়ার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাথে নিজের জন্যও শপিং করে টুকটাক। নাজিয়া সহ তাঁদের পরিবারের চারজনের জন্য মেচিং পান্জাবি নেয় সুহাসিনী। তাদের দুই জা এর জন্য মেচিং শাড়ী। তবে নাজিয়া তাদের সাথে মেচিং করেনি। সে তার পছন্দের টপস,জিন্স,জামা নেয়। সুহাসিনী অনেক বলেও নেওয়াতে পারেনি। নাজিয়ার মতিগতি বুঝতে পারে না সুহাসিনী। সীতারা আহমেদকে বললে তার এক ধমকে সব ঠিক হয়ে যাবে। সেজন্য নাজিয়ার জন্য মেচিং করে নিয়ে নেয় সে।

তাঁদের শপিং শেষ হতে আইসক্রিমের দোকানে ঢুকে দু’জন। নাজিয়া আইসক্রিম খাচ্ছে আশেপাশে তাকাচ্ছে। কয়েক টেবিল পর চোখ যায় তার। জায়ান কারোর সাথে হেঁসে, হেঁসে আইসক্রিম খাচ্ছে আর কথা বলছে। সুহাসিনী দেখেনি সে তাঁদের উল্টোমুখী হয়ে বসেছে। নাজিয়া আফসোস করছে ফোন থাকলে কয়েকটা পিক তুলে রাখা যেতো।

তখন সুহাসিনীকে বলে,

-জায়ান ভাইয়া অফিসে তো?

-আজকে মিটিং আছে ওদের।

-আম্মুর ও?

-হুম।

-বড় বাবা আর বাবা ওরা মেবি কাজে আটকা পড়েছে ওদের মিটিং নেই।

-না ওদের কোম্পানিতে আজকে মিটিং নেই।

-হুম!

নাজিয়া ভাবছে জায়ান এখানে তো সীতারা আহমেদ কোথায়? নিশ্চয়ই ওদের গোপন বিজন্যাসের মিটিংয়ে আটকা পড়েছে। নিবরাস ভুল কিছু বলেনি! সীতারা আহমেদ জায়ানের সাথে মানুষ। যে সবসময় নিজেকে আড়াল করে রাখে। নাজিয়া সুহাসিনীর দিকে তাকিয়ে আফসোসের স্বরে বলে,

-ইশ মায়ের মেয়ে হয়েও মায়ের মতো হতে পারলাম না।

-হয়ে যাও বারণ করলো কে? ট্যালেন্টেড!

-এমন ট্যালেন্ট আমার দরকার নেই।

-এক্টা কথা আছে কী নাজিয়া জানো? হুজুরের সন্তান জালিম হয় আবার জালিমের সন্তান হুজুর হয়।

-তুমি ইনডিরেক্টলি আমার মাকে জালিম বললা নাকী?

-আরে না! ও তো খুব ভালো। ওকে এসব বলার সাধ্য আছে নালী আমার ?

-কারোর সাধ্য নেই তাকে কিছু বলার তাই না?

#চলবে

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|১৭|
#শার্লিন_হাসান

(প্রাপ্ত বয়স্ক মনস্কদের জন্য উন্মুক্ত)

সুহাসিনী সহ নাজিয়া বাড়ীতে আসার পেছন দিয়ে সীতারা আহমেদ,তিয়াশ খান চলে এসেছে। জাফিন ও তাদের সাথে আছে। বন্যা তাঁদেরকে ঠান্ডা শরবত দেয়। শরবত পান করে তারা সবাই উপরে চলে যায়। লিভিং রুমটা একদম ফাঁকা সবাই নিজ,নিজ রুমে। বন্যা কিচেনে থালা ধুয়ে রাখছে। আচমকা কোমড়ে কারোর স্পর্শ পেতে চমকে যায়। হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে সে হাত আরো বেশী শক্ত করে তার কোমড় আকড়ে ধরে নিকের সাথে মিশিয়ে নেয়। বন্যা পারফিউমের স্মেল শুকে বুঝতে পেরেছে এটা জায়ান আর স্পর্শটা ও তার কাছে অতি পরিচিত।

-জায়ান স্যার আ আপ..নি?

-হুম সুন্দরী আমি। সেদিন তো নাজিয়াকে পাঠালে আমি রেডি ছিলাম অথচ তুমি আসলে না।

বন্যা জায়ানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা লাগায়। কোন ভাবে সফল হয় না। না পেরে দরজার দিকে মুখ করে বন্যা। সামনে নাজিয়াকে ফোন হাতে দেখতে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। জায়ান সামনে তাকায়নি তবে বন্যার গাড়ে নিজের থোতমা দিয়ে রেখেছে। তখন নাজিয়া গলা খাকাড়ি দিতে জায়ান চিটকে দূরে সরে যায়। নাজিয়াকে দেখে বলে,

-তুমি কখন আসলে পাখি?

-এদিক দিয়ে বেচিংয়ে যাচ্ছিলাম বাট তোমাকে দেখলাম ওইখানে…

-হ্যাঁ,হ্যাঁ আমি ত.. তো ওই যে ”
আশেপাশে তাকায় জায়ান। ফ্রিজের দিকে তাকিয়ে বলে,

-ফ্রিজ থেকে পানির বোতল নিতে এসেছি।

-ওহ আচ্ছা তা পানির বোতল কোথায় তোমার?

-বন্যা দিবে। বন্যা আমি সোফায় বসলাম বোতল নিয়ে আসো।

জায়ান তড়িঘড়ি প্রস্থান করে। নাজিয়া বন্যার দিকে তাকায়। বন্যা তাকে দেখে মাথা নিচু করে নেয়।

-তুমি চাকরীটা ছেড়ে দাও আপাতত।

-কিন্তু আমার মা তো অসুস্থ প্রতিমাসে তার ঔষধের জন্য অনেক টাকার দরকার। চাকরীটা ছেড়ে দিলে না খেয়ে মরতে হবে।

-সেই ব্যবস্থা আমি করে দেবো তোমায়। আমার বাবার এটিএম কার্ড যখন খুশি তখন আমি নিতে পারি। তোমার স্যালারীর ফিফটি পার্সেন্ট আমি দেবো আর ফিফটি পার্সেন্ট আমার জিজু দিবে।

-জিজু…

-ডোন্ট ওয়ান্না টক বন্যা আন্টি। আমি গেলাম!

নাজিয়া চলে আসে রুমে। ফোনটা বের করে ভিডিওটা দেখে নাজিয়া। সে তো অপেক্ষায় ছিলো কখন জায়ান আসবে! বন্যাকে কিচেনে একা পেলে জায়ান ছাড়তো না এরকম কিছু মাথায় এসেছিলো নাজিয়ার। এরকম একটা প্রমাণ কতদিন ধরে চেয়েছিলো। ফাইনালী ডান! ভিডিওটা নিবরাসের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেয় নাজিয়া।

******

সন্ধ্যায় নাস্তা করে আনায়া খাটে বসে আছে। নিবরাস রুমেই পায়চারি করছে আর কলে কথা বলছে। আনায়া তার দিকে তাকাচ্ছে বারবার। কিছুক্ষণ পর নিবরাস ফোনটা পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকিয়ে আনায়ার সামনে এসে বসে। আনায়া ফোনে ধ্যাণ দিতে নিবরাস ফোন তার থেকে কেড়ে নেয়।

-ফোনটা দিবেন নাকী আমি চলে যাবো বাড়ী থেকে?

-প্লিজ তুমি কথাটা তো শোনো?

-একটা কথাও বলবেন না আপনি। আপনাকে দেখলেই আমার রাগ উঠে খু’ন করতে মন চায় আপনাকে।

-স্যরি তো!

-সরুন আমার সামনে আসবেন না দয়া করে। এরকম আলগা দরদ আমার দরকার নেই।

-আনায়া শোনো না?

আনায়া চোখ গরম করে তাকায়। নিবরাস সেসবে ভ্রুক্ষেপ না করে উঠে দাঁড়ায়। কাউচের উপরে রাখা শপিং ব্যাগটা এনে আনায়ার দিকে দেয়।

-গার্ডেনে এসো একটু পর!

-ঠেকা পরেনি আমার।

-শপিং ব্যাগটা তো খুলে দেখো?

-প্রয়োজন মনে করি না।

নিবরাস ব্যর্থ চোখে তাকায়। আনায়া এতো গাড় ত্যাড়া। মনে হচ্ছে তারই কিছু করতে হবে। নিবরাস সোজা দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আসে।

-আমার কথা না শুনলে আমিও রাগ করবো।

-করুন তাতে আমার কী? আপনার রাগ ভাঙানোর জন্য তারিশা আছে না?

-আবারো তাকে আনছো আমাদের মাঝে।

-আমি আনিনি আপনি এনেছেন। আচ্ছা এটা বলুন আমি আগে নাকী তারিশা আগে?

-অফকোর্স তুমি।

-তাহলে আমায় ড্রপ করে দিয়ে আসতে সমস্যা! তারিশাকে নিয়ে তো সুন্দর ভাবেই ঘুরে আসলেন। এতে বুঝা যাচ্ছে আপনার কাছে আমি কতটা ইমফরটেন্ট।

-তোমার ভার্সিটি উল্টো দিকে আর ওরটা আমার যাওয়ার পথেই।

-তো বারণ করতেন? বলতেন আপনার তাড়া আছে নিতে পারবেন না।

-ও সীটে বসে গেছে আমার কোলে না।

-আপনার সাথে নিবেন কেন?

-আর কখনো নেবো না স্যরি।

আনায়া কথা বাড়ায়না। চুপচাপ বসে থাকে নিনরাস তার মুখোমুখি বসে বলে,
-শাড়ীটা পড়ে রেডি হয়ে নিও।

-পারবো না।

-আরেকবার বলো?

আনায়া তাকায়। নিবরাস কঠোর চাহনি দিয়েছে। আমতাআমতা করে বলে,
-আচ্ছা ঠিক আছে।

-একটু তো সন্মান দাও আমায়। এভাবে তুচ্ছ করো কেন?

-সন্মান! দেওয়ার সময় ঠিকই দেবো। এখন যান আমার মাথা গরম করবেন না প্লিজ।

নিবরাস উঠে চলে যায়। আনায়া থামাতে গিয়েও থামায়নি। আজকের গিফ্ট গুলো এখনো দেখা হয়নি। নিনরাস যেতে শপিং ব্যাগের ভেতর থেকে একটা শাড়ী সাথে কিছু জুয়েলারি বের করে আনায়া। নিবরাসের আনা পার্সেলটা আনবক্সিং করে। সেখানেও শাড়ী,জুয়েলারি,গাজরা সহ সুন্দর একটা কম্বো ছিলো। আরেকটা পার্সেলে অনেকগুলো চকলেট। ছোট্ট একটা চিরকুট পায় আনায়া। তাতে লিখা,

-জানি না আমায় দেখে তোমার কেমন ফিল হয় বা কেমন চোখে দেখো আমায়। বাট বিলিভ মি তোমার চেহারার দিকে ফাস্ট টাইম তাকিয়ে আমি মায়ায় পড়ে গেছি। ভাবি, এই সুন্দর মেয়েটি আমার বোন! দেখতে ঠিক আমার মতো আমার টুইন বললে ভুল হবে না। ছোট্ট মেয়েটার পক্ষ থেকে তোমার জন্য সামান্য কিছু।

আনায়া হাসে। শাড়ীটায় হাত ভুলায়। যত্ন সহকারে চিরকুট সহ কাবাডে ঢুকিয়ে রাখে।

অতঃপর শাড়ী নিয়ে রেডি হতে চলে যায়। আনায়া শাড়ীটা পড়ে সাথের জুয়েলারি গুলোও পড়ে নেয়। তেমন একটা সাজেনি তবে কম ও সাজেনি। আজকে বেশ সাজতে মন চাইছে তবে সিম্পলের মাঝে কিছুটা গর্জিয়াস। আয়নায় নিজেকে দেখে আনায়া। ভাবছে নিবরাস অজ্ঞান না হলেই হলো।

দশটা বাজতে বাকীরা ডিনার করে নেয়। নিবরাস জানায় তারা বাইরে ডিনার করবে। এছাড়া পরাগ আগে বলেছে মরিয়ম নওয়াজকে তাদের ডেকোরেশন সাথে নিবরাসরা গার্ডেনে ডিনার করবে। সবকিছু সাজিয়ে পরাগ ও ডিনার করে নেয়। তবে মেইন সুইচ তাকে পাহাড়া দিতে হবে। কখন আবার তারিশা অফ করে দেয় ঠিক নেই।

তারিশা খেতে বসে বারবার আনায়ার খোঁজ করেছে সাথে তাঁদের রাতের ডিনার নিয়ে একশ একটা প্রশ্ন করেছে। পরাগ পারে না ধমকি একটা দিয়ে বসিয়ে দেয়।

তাদের খাওয়া শেষ হতে যে যার রুমে চলে যায়। নিবরাস আনায়াকে মেসেজ দিতে সে রুম থেকে বের হয়। করিডোর পেড়িয়ে সিঁড়ির কাছে যেতে হবে। করিডোরে থাকা অবস্থায় তারিশার সাথে দেখা হয়। আনায়াকে দেখে বলে,

-শাড়ীটা সুন্দর তবে তোমায় মানাচ্ছে না।

-শেয়ালের চোখে সবই সরিষা ফুল। এনি ওয়ে আমি কমপ্লিমেন্ট চাইনি তোমার থেকে। আমার ভদ্রলোক আমায় দেখে কমপ্লিমেন্ট দিবে। অবশ্য সবার চোখে ভালো কিছু মানান সই হয়না। নিজেকে যেমন ভাবে অন্যকেও ঠিক তেমনই ভাবে। আগে নিজেকে আয়নায় দেখো।

আনায়া মেজাজ গরম হয়ে যায়। আর একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে যায় সিঁড়ির দিকে। তারিশা যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়। আনায়াকে আজকে সুন্দর লাগছে। তার শখের পুরুষ আনায়ার সাথে ডিনার করবে। কত সুন্দর একটা মোমেন্ট কাটাবে ভাবতে তারিশার গা জ্বলে যাচ্ছে।

আনায়া বাড়ী থেকে বেড়িয়ে ত্রস্ত পায়ে ডেকোরেশন করা জায়গা খুঁজতে লাগে। কিছুটা এগিয়ে আসতে লাইট অন হয়। আনায়া পুরো সারপ্রাইজড হয়ে যায়। সামনের জায়গাটা সুন্দর ভাবে ডেকোরেশন করা লাভ সেফের বেলুন আনায়ার বেবি পিংক কালারের শাড়ীর সাথে মেচিং করে হোয়াইট,পিংক বেলুন দিয়ে। মাঝখানের কয়েকটা বেলুন স্যরি লেখা। সাথে কয়েকটা স্যাড ইমুজি! বড় টেবিলজুড়ে ক্যান্ডেল লাইট কয়েকটা গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানো। মাঝখানে একটা কেক রাখা সেটাতেও স্যরি লিখা। সাথে কয়েক রকমের ড্রিং,খাবার ও আছে। আনায়া এসব দেখে আশেপাশে তাকায়। নিবরাসকে খুঁজছে।

তখন লাইট অফ হয়ে যায় আবার। মোমবাতির আলোয় চারপাশটা মৃদু আলোকিত হয়। আনায়া ছোট্ট করে ডাক দেয়,
-চাঁদাবাজ নেতা! ওহ্ স্যরি আমার লিডার কোথায় লুকিয়ে বসে আছেন?

নিবরাস ত্রস্ত পায়ে আসে তখন। লাইট অন হতে আনায়া নিবরাসকে দেখে। সে হোয়াইট কালারের পাঞ্জাবি পরিধান করেছে। একটু গভীরভাবে খেয়াল করলো আনায়া। হোয়াইট কালারের পাঞ্জাবিতে তাকে আজকে দারুণ লাগছে। আনায়া হাসে নিবরাসকে দেখে। তখন নিবরাস বলে,

-জান বলে ডাক দিতে পারতে তা না কীসব চাঁদাবাজ বলছো। বউ তুমি আসলেই পাষাণ।

-স্যরি মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে।

-এরপর থেকে আর বলবা না এসব। ভবিষ্যতে আমার বাচ্চাকাচ্চারা ও দেখবো তোমার থেকে শুনে আমায় চাঁদাবাজ বলছে।

-বলবে না।

-আচ্ছা চলো।

নিবরাস হাত বাড়িয়ে দিতে আনায়া তার হাতে নিজের হাত রাখে। দু’জনে চেয়ারে বসে। নিবরাস নিজে আনায়াকে খাবার বেড়ে দেয়। আনায়া চুপচাপ খেয়ে নেয়। দু’জনের খাওয়া দাওয়া শেষ হতে নিবরাস একটা বক্স এগিয়ে দেয় আনায়ার দিকে।

-শোনো রাগ করার জন্য একটা গিফ্ট আরেকটা তোমার বাসর রাতে তো কিছু দেইনি সেই গিফ্ট। অবশ্য বাসর করতে পারিনি গিফ্ট দিয়ে কী লাভ?

-বদলোক বাসর ছাড়া আর কোন কথা মুখে নেই।

-বউ প্লিজ বুঝো! আমাদের ও তো বেবি দরকার। চলো আজকে লং ড্রাইভে যাই। আমাদের বাংলোতে বাসরটা সেরে ফেলি।

-চুপ! রাগ ভাঙাতে এনেছেন নাকী বাসর করার প্রস্তাব দিতে? বদলোক একটা।

-দু’টোই।

-মুখটা বন্ধ রাখবেন?

-আচ্ছা রাখলাম।

আনায়া গিফ্টগুলো খুলে দেখে। একটা বক্সে গোল্ডের ব্রেসলেট সাথে দু’টো রিং রাখা। রাগ ভাঙানোর জন্য। আর বাসর রাতের লেইট গিফ্ট যেটা সেই বক্সে তডায়মন্ডের একটা নেকলেস সাথে গোল্ডের একটা চেইন রাখা।

আনায়া গিফ্টগুলো আবারো বক্সে ঢুকিয়ে টেবিলর এক কোণে রাখে। নিবরাস প্রশ্ন করে,

-গিফ্ট কম হয়েছে তাই না? আচ্ছা পরের বার বেশী করে দেবো। আমি শপিংমলে গেলে সব কিনে আনবো।

-আমি একবার ও বলেছি কিছু?

-না বলোনি তোমার মুখ দেখে বুঝলাম। শ্বশুর মশাই নিশ্চয়ই এর থেকে বেশী কিছু তোমায় দিয়েছে আমি কিছুই দিতে পারলাম না এখন অব্দি তোমায়।

-দিবেন কীভাবে? সারাদিন মেয়েদের চিপায় থাকেন।

-কই? আমি এখন আর কোন ইভেন্টে গেলে মেয়েদের সাথে পিক তুলি না।

-আগে তো তুলতেন?

-এরকম হ্যান্ডসাম,সিঙ্গেল নেতাকে যে কেউ চাইবে ইমপ্রেস করতে।

মুখ বাকায় আনায়া। নিবরাস হেঁসে বলে,

-আমার চাঁদের পূর্ণিমা।

-আর আমার অমাবস্যার চাঁদ।

নিবরাসের হাসি আপনার আপনি থেমে যায়।

-আমি তোমার থেকে বেশী ফর্সা বউ।

-তো কী? একদম ভাব নিবেন না বলে দিলাম।

আমার ‘হৃদয় কোঠায় চাঁদের পূর্ণিমা’ এসেছে। ভালোবেসে হৃদয় কোঠরে থাকবে তো?

-থাকবোনি।

-একটু সুন্দর ভাবে বলো না?

-ভালোবাসবো! আপনার হয়ে সবসময় থাকবো।

নিবরাস আনায়ার হাতের পিঠে চুমু খায়। কয়েকটা ফ্লাওয়ার আনায়াকে দেয়। অতঃপর তারা দু’জন কেক কাটে। আনায়া নিবরাসের দিকে তাকিয়ে হাসে।
নিবরাস আর সময় ব্যয় না করে আনায়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

-মহারানীর রাগ ভেঙেছে তো?

-না ভাঙেনি।

-চুমু খেলে ভাঙবে তাই না?

-আসলে এসব কিছুতে রাগ ভাঙবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার ঠোঁটে আমি অত্যাচার করতে পারবো।

-পাষাণ বউ।

আনায়া নিবরাসের গাড়ে কামড় বসিয়ে দেয়। নিবরাস কিছুটা ছিটকে সরে যায় আনায়ার থেকে। আনায়া নিবরাসের হাত টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। পা উঁচু করে নিবরাসের অধরে,অধর মিলিয়ে নেয়।

আনায়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিবরাস গাড়ে হাত রাখে। কামড়টা জোরেই দিয়েছে আনায়া। নিবরাস অভিমানী স্বরে বলে,

-কামড় না দিলেও পারতা।

-বেশ করেছি।

নিবরাস হুট করে আনায়াকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে থাকে। আনায়া তার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,

-অসভ্য লোক নিচে নামা তো।

-বউ আজকে আর ছাড়ছি না কিন্তু। একবারে বাবুর পাপা হওয়ার মতো অসভ্যতামী করেই ছাড়বো।

#চলবে

হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-১৫

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|১৫|
#শার্লিন_হাসান

ও আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে নাজিয়া।

-ও তোমার সম্পর্কে সব জানে?

-শুধু আমার সম্পর্কে না। ক্লাবে যাওয়া আসা সেখানে একেকদিন একেক মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করা।

-তার নজরে তুমিও চলে আসলে। ব্যপার না ওর সম্পর্কে মোটামুটি আমি জানি ওর ভালো মানুষীর মুখোশটাও আমি জানি। শুধু জানতাম না ও এতোটা জঘন্য,ক্যারেক্টারলেস।

-আমি কী করবো?

-যা হওয়ার হয়ে গেছে। এবার থেকে ও তোমায় রুমে ডাকলে আমায় বলবে ঠিক আছে? ওর থেকে দূরে,দূরে থাকবে এটা আর কাউকে বলার দরকার নেই যেহেতু সবাই ব্যস্ত অফিস,মিটিং,কাজকর্ম নিয়ে।

-আচ্ছা বলবো না।

-হুম,বাকীটা আমি দেখবো। ওকে ওর যোগ্য শাস্তি পেতে হবে।

বন্যা বেড়িয়ে আসে রুম থেকে। নাজিয়া দরজা লাগিয়ে মেসেজ দেয় নিবরাসকে দেখা করার জন্য। নিবরাসের কথা মতোই সে মির্জা বাড়ীতে গিয়েছিলো আনায়ার সাথে দেখা করতে। তার আগে থেকে নিবরাসের সাথে পরিচয় ছিলো নাজিয়ার। তাঁদের স্কুলের ইভেন্টে চিপ গেস্ট হিসাবে এসেছিলো নিবরাস। সেখানে তাকে কিছুটা আইডিয়া দেয় জায়ান নিয়ে। আনায়ার সাথে দেখা করার পর নিবরাস তার স্কুলে এসেছিলো। নাজিয়াকে একটা এন্ড্রয়েড ফোন দেয় নিবরাস তাকে কিছু ইনফরমেশন কালেক্ট করে দিতে জায়ান সম্পর্কে। এছাড়া নাজিয়া নিজে কয়েকবার দেখেছিলো জায়ান লুকিয়ে রাতে বেড়ুতো বাড়ী থেকে। নাজিয়ার বেলকনি থেকে নজর দিলে দেখা যেতো। জায়ানের অসৎ পথে ব্যবসা আছে। নিবরাসকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে শামিম সরদারকে বসাতে পারলে জায়ান নিশ্চিত থাকতো কারণ দাপট,ক্ষমতা, আইন তার পকেটে থাকতো এখন তো চোরের মতো সব করতে হয়।

নিবরাসের ধারণা এসব ব্যপার সীতারা আহমেদ জানে। নাজিয়ার বিশ্বাস হয়না আবার হয়! তার মাও অফিসের কাজে বিজি থাকে। সত্যি-মিথ্যা কিছুটা ধোয়াশা সাদা কাপড়ে মোড়ানো। এই জীবনের রঙিন কৃত্রিম, অকৃত্রিম মঞ্চে সবাই ভালো। তবে মুখোশের আড়ালে সবারই ভয়ংকর রুপ লুকানো থাকে। কারোটা প্রকাশ পায় কারোটা পায় না।

নাজিয়া ভাবছে জায়ানের ভালো মানুষী নিয়ে। মুখোশের আড়ালে থাকা রুমটা যে কতটা ভয়ংকর তার। সীতারা আহমেদের সাথেও তেমন ভাব নেই আজকাল নাজিয়ার।

রাত কেটে সকাল হয়। নিবরাস নামাজ আদায় করে আনায়া সহ। আনায়া কিচেনে আসে সকালে নাস্তা রেডি করার কাজে হেল্প করবে।

তাঁদের বুয়া অলরেডি চা বানিয়ে বাকী সব ও করে রেখেছে। আনায়া আজকে রুটি বানাবে তার শখ হয়েছে সবাইকে রুটি বানিয়ে খাওয়াবে। পারে না তাও নিশ্চিত সাথে বুয়া আছে দেখিয়ে দিবে।

রুটি বানাতে গিয়ে ব্যর্থ হয় আনায়া। গোল হয়না। কত চেষ্টা করেছে রুটি গোল করার একটা হয় বাকীগুলো মানচিত্র। আনায়ার বানানো রুটি গুলোই সেকে নেয় বুয়া।

নিরব মির্জা, রোহিত,পরাগ,নিবরাস,তারিশা,মিসবাহ,মাইশা,মরিয়ম নওয়াজ সবাই মিলে নাস্তা খেতে বসেছে। আনায়া সবাইকে সার্ভ করছে।
তারিশা রুটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। আনায়া নিজেও নিবরাসের পাশের চেয়ারে বসে পড়ে। সবাই চুপচাপ খাচ্ছে। তখন তারিশা রুটির দিকে তাকিয়ে তচ্ছিল্যের স্বরে বলে,

-রুটি গোল হয়নি খেয়ে মজা পাচ্ছি না।

তখন মাইশা বলে,
-প্রতিদিন তো গোল খাও একদিন বাঁকা খাও না?

তখন নিবরাস বলে,
-আচ্ছা তারিশা তুমি রুটি কীভাবে খাও?

-ছিঁড়ে খাই।

-ছিঁড়ে যেহেতু খাও এতে রুটি গোল, ত্যাড়া ব্যাকা হলেই কী? ছিঁড়েই তো খাও।

তারিশা চুপসে যায়। মিসবাহ শব্দ করে হেঁসে দেয়। বাকীরাও মিটমিট করে হাসছে। পরাগ ভাবছে তারিশার এতো মাথা ব্যথা কিসের? মেয়েটা বেশী বলে কবে হোস্টেলে যাবে সেই অপেক্ষায় আছে পরাগ।

আনায়া রেডি হয়ে নেয়। ভার্সিটি যাবে নিবরাসকে বলেছে দিয়ে আসতে। নিবরাসের কাজ আছে সে যেতে পারবে না এক কথায় বারণ করে দিয়েছে। আনায়াকে বলে দিয়েছে ড্রাইভার নিয়ে যেতে। আনায়া কিছু বলেনি!

রেডি হয়ে রুমের বাইরে আসতে দেখে তারিশাও রেডি হয়ে এসেছে। আনায়া ব্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

-তুমি কোথায় যাচ্ছো?

-কলেজ যাবো ফ্রেন্ডরা আসবে সাথে কিছু কাজ আছে।

তখন নিবরাস আসে। পান্জাবির হাতা গোটাতে,গোটাতে। আনায়া, তারিশাকে দেখে থামে নিবরাস। আনায়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-ও কোথায় যাচ্ছে এখন?

নিবরাসকে দেখে তারিশা বলে,
-ভাইয়া তুমি বাজারের দিকে যাবে?

-হুম ওইদিক দিয়েই যাবো।

-আমায় কলেজে নামিয়ে দিও।

নিবরাস আনায়ার দিকে তাকিয়ে ‘হ্যাঁ’ বোধকে মাথা নাড়ায়। আনায়া আর এক মূহুর্ত দাঁড়ায়নি প্রস্থান করে সেখান থেকে। নিবরাস তারিশার কথা ফেলতে পারেনি কারণ তার যাওয়ার পথেই তারিশার কলেজ। আনায়ার ভার্সিটি উল্টো পথে সেখানে নিবরাস যাবে না।

নিবরাসের পেছনে তারিশা আসে। বাইরে আসতে দেখে আনায়া ড্রাইভারের সাথে কথা কাটাকাটি করছে কিছু নিয়ে। নিবরাস সেখানে গিয়ে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে,
-কী হয়েছে?

তখন ড্রাইভার মোতাহের হোসেন বলে,
-বউমনিকে বললাম গাড়ীতে উঠতে আমি নামিয়ে দিবো। শোনেনা উনি নাকী রিকশায় করে যাবে।

-তোমার কাছে টাকা আছে আনায়া?

-না থাকলে আপনি দিবেন নাকী? আর সেটা জেনে আপনার কোন কাজ নেই!

নিবরাস বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে কপাল স্লাইড করে মোতাহের হোসেনকে বলে,
-আনায়াকে নামিয়ে দিয়ে সেখানে অপেক্ষা করবেন। ওর ক্লাস শেষ হলে আবার নিয়ে আসবেন।

-ঠিক আছে কিন্তু বউমনি তো যেতে চায় না।

-আনায়া গাড়ীতে বসো যাও।

-প্রয়োজন নেই। বাবাকে বলে দিয়েছি গাড়ী পাঠিয়েছে।

-এতে বাবাকে ডাকার কী আছে? আমার কী গাড়ীর অভাব আছে?

-ঘুষের টাকার গাড়ীতে আমি যাই না।

আনায়া হেঁটে গেটের সামনে চলে যায়। তখন তারিশা বলে,
-এতো ঢং করার কী আছে? নিজের বাবার গাড়ীর গরম দেখায় নাকী টাকার গরম?

-আমার সাথে যেতে হলে মুখটা বন্ধ রাখবা নাহলে গু’লি মেরে খুলি উড়িয়ে দেবো।

পরাগ গাড়ী নিয়ে নিবরাসের সামনে আসে। নিবরাস পরাগের সাথেই বসে। আনায়া পেছনে একা,একা বসে। নিবরাস জানালা দিয়ে বাইরে তাকাচ্ছে। আজকে আনায়া তাকে কত প্রকার অপমান দিবে সেটা ভাবছে। একে তো একটু আগে ঘুষের টাকা নিয়ে বলেও দিলো। তার বউ তাকে চাঁদাবাজ, ঘুষখোর বলে অখ্যায়িত করে বাকীরা শোনলে কী করবে? ছিঃ! নিবরাস ছিঃ বউয়ের মুখ থেকে এখন অব্দি ঘুষ,চাঁদাবাজ শব্দ দূর করতে পারলি না? যাদের সামনে ভাব সাব নিয়ে চলাফেরা করিস তাঁদের সামনেই অপমান করে দিলো। সবাই ভাববে বউয়ের কাছে সব শেয়ার করিস, কোথায় ঘুষ নিস আর ঘুষের টাকায় কী, কী কেনা হয়। এই আনায়া এতো তেঁতো কেন?

নিবরাস ভেবে পায়না। তারিশাকে গন্তব্যে নামিয়ে দেয়।

তখন তারিশা বলে,
-তোমার ফিরতে কতক্ষণ লেট হবে?

-এই ঘন্টাখানেক।

-আমারও ঘন্টাখানেক সময় লাগবে। গেটের সামনে এসে নক দিও আমি চলে আসবো।

তখন পরাগ বলে,
-এতো স্যারের পেছনে লেগে আছো কেন? গাড়ীর অভাব আছে নাকী?

-সেটা তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি আমি। নিবরাস ভাইয়া আমাকে নিয়ে যাইবা যাওয়ার সময়।

নিবরাস মাথা নাড়ায়। তারিশা হেসে ভেতরে যায়। পরাগ গাড়ী স্টার্ট দিতে,দিতে বলে,

-আনায়া ম্যাম দেখে কিছু বলেনি আমি ওনার জায়গায় হলে এই তারিশাকে কবে শিক্ষা দিয়ে দিতাম।
পরাগের কথায় নিবরাস বলে,

-পৃথিবীর সব থেকে সুখি মানুষ কে জানো?

-কে?

-যার লজ্জা নেই। এক্সামফল তারিশা! অপমান তাকে কম করা হয়নি এটা,ওটার মাধ্যমে। তাও সে বুঝে না। লজ্জা হয়না তার।

-তারিশা নামের মেয়েগুলো নিলজ্জ আর ছ্যাচড়া হয় মনে হয়।

-সেসব জানি না তবে এই তারিশা প্রচুর ছ্যাচড়া। সবকিছুতে বা হাত ঢুকানো তার অত্যাবর্শকীয় কাজ।

-যাওয়ার সময় একে আবার গাড়ীতে নিবেন স্যার?

-হুম নিবো।

-ম্যামের জায়গায় আমি হলে আপনাকেও টাইট দিয়ে দিতাম কবেই। তারিশাকে একটু বেশী প্রশ্রয় দেন আপনি।
মনে, মনে বলে পরাগ।

-তোমার ম্যাম ব্যর্থ।

-কেন?

-আমার পেছন থেকে তারিশাকে সরাতে পারেনি।

-সেটা আপনার ব্যর্থতা বউ থাকতেও অন্য নারীকে ছাটাই করতে পারেননি।

নিবরাস আর কথা বাড়ায়না।

ভার্সিটিতে এসে মারিয়াকে পায় আনায়া। অনেকদিন পর দেখা হয়েছে তাদের। ক্লাস দুইটা করে চলে আসে দু’জন মিলে গল্প করবে। আনায়া নিজের সুখ দুঃখ সাথে তারিশার ছ্যাচড়ামির কথা শেয়ার করে। মারিয়া সে মজা নিচ্ছে সাথে আনায়াকে ক্ষেপাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে স্বান্তনা দিয়েছে সাথে তারিশার গুষ্টি তুষ্টি ধুয়েমুছে দিয়েছে। নিবরাসের গুষ্টিও উদ্ধার করে দিয়েছে।

আনায়া ভাবছে বাড়ী গিয়ে কীভাবে নিনরাসের সাথে কথায় পেড়ে উঠা যাবে ঝগড়ায়। মারিয়ার থেকে আইডিয়া নিচ্ছে।

-এই বদলোক ঝগড়ুটে অনেক। মনে হয়না যুক্তি দিয়ে জিততে পারবো।

-বান্ধুবী তোর একে সোজা করতে একমাস লাগছে আমার একসপ্তাই যথেষ্টা ছিলো।

-যদি আমার কথা শোনতো তবে আমার একদিনই যথেষ্ট।

-প্রব্লেম কী তোর ভদ্রলোকের? বউ থাকতে আরেক মেয়ে নিয়ে পড়ে আছে।

-ও পড়ে নেই তারিশা নিজে ওর পেছনে পড়ে আছে। কী বলবো বোইন, একের পর এক শুধু আমার জামাই নিয়ে টানাটানি করছে।

-সে তো তোরই। যেই টানটানি করুক সে কিন্তু নিয়ম করে তোর ঠোঁটেই চুমু খায় অন্য মেয়ের ঠোঁটে না।

-যাহ্! তোর কাছে কিছু বলে শান্তি পাইনা কোন না কোন ভাবে লজ্জায় ফেলে না দিলে তোর হয়না।

-সত্যি বললাম তো।

-তোর সত্যি তোর কাছে রাখ। এমনিতেআ জকে আমার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে শরীর জ্বলে যাচ্ছে।

-দেএ আমি খবরটা জিজুকে দেই।

-না দরকার নেই।

-আরে দে না মজা হবে অনেক দেখি শা*লা কী রিয়েক্ট করে।

কথাটা বলে মারিয়া আনায়ার থেকে ফোন নিয়ে নিবরাসের নাম্বারটা খুঁজে। সহজে পেয়ে যায় নিবরাস দিয়ে সেভ করা। মারিয়া নাম্বারের দিকে তাকিয়ে বলে,
-কী আনরোমান্টিক তুই। এই জেনারেশনে এতো, জান,বাবু,সোনা,কলিজা,কিডনি,লিভার, ফুসফুস থাকতে নাম দিয়ে সেভ করলি?

-ওর নাম্বার আমার ফোনে রেখেছি সেটাই ওর সাত কপালের ভাগ্য।

মারিয়া হাসে। নিবরাসের নাম্বারে কল দেয়। আনায়া চেয়ে আচে কল রিসিভ করে কীনা সেটা দেখবে। প্রথমবার কল যেতে কেটে দেয় নিবরাস। তাতে আনায়ার রাগ আরো ৪০০ ডিগ্রী বেড়ে যায়। দ্বিতীয়বার কল দিতে সে কেটে দেয়। তৃতীয় বার কল রিসিভ করে নিবরাস ঝাড়ি দেয়।

-কল কেটে দিচ্ছি বুঝতে পারছো ইমফরটেন্ট আছে তাও বারবার ডিস্টার্ব করো কেন?

-স্যরি জিজু বুঝতে পারিনি আসলে আমি আনায়া না ওর বেস্টফ্রেন্ড মারিয়া ।

-আনায়া কোথায়?

-রেগে বোম বসে আছে। আপনি বাড়ী গেলেই বেমটা ব্লাস্ট করবে আমি সাবধান করে দিচ্ছি।

-আপনার ফ্রেন্ড এক নাম্বারের গাড় ত্যাড়া। একটু বুঝিয়ে বলবেন ত্যাড়ামী কমাতে। আনায়ার সাথে আমার বাড়ীতে আসবেন দেখা হবে তখন কথাও হবে। এখন আমি ব্যস্ত আছি।

নিবরাস কল কেটে দেয়। আনায়া কথা বলছে না। মারিয়ার জায়গায় সে থাকলে নিশ্চিত ঝাড়িটা সেই খেতো। আজকে নিবরাস শুধু বাড়ী আসুক আনায়া বুঝাবে ঝাড়ি কত প্রকার ও কী,কী সাথে ঝাড়ি,হুমকি-ধমকি পানির সাথে গুলিয়ে খাওয়াবে।

#চলবে

হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-১৪

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|১৪|
#শার্লিন_হাসান

-আচ্ছা শোনো কী বলি। তোমার বোন আহিয়ার বড় বোন তাহিয়া।

-মারা গেছে বছর হবে তো মনে হয়।

-মারা যায়নি মেরে ফেলা হয়েছে।

-আপনি মেরেছেন নাকী?

-চুপ মুখটা বেশী চলে তোমার।

আনায়া আর কথা বাড়ায়না। নিবরাস পুনরায় বলে,

-তুমি যাকে এতোদিন আমার বউ,বউ করে চিল্লাতে সে আসলে আমার বউ না। আমি এর আগে বিয়েও করিনি তুমি আমার প্রথম বউ। তাহিয়া আমার পেছনে ভার্সিটি লাইপ থেকে পড়েছিলো। প্রচুর জ্বালিয়েছে আমায়! যদিও কখনো ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করিনি কারণ আমি জানি ওরা প্লান করে আমায় ফাঁসাতে চাইবে। এই তাহিয়াকে সেদিন আমি এসবের জন্য অনেক হুমকি-ধমকি দিয়েছিলাম। বাড়ীতে আসার একঘন্টা পর কল আসে তখন জানতে পারি ও মা*রা গেছে। অনেকে বলে সুইসাই’ড,অনেকে বলে মার্ডার আর দোষারোপ করে আমাকে। তবে প্রমাণ না থাকায় কেউ এগিয়ে আসতে পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা আমার সাথে ওর কোন সম্পর্ক ছিলো না। এই আহিয়া চায় না আমায় তুমি ভালো জানো। ও তোমার মনে আমায় নিয়ে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিয়েছে। আর তুমিও!

-আহিয়ার এসব করে লাভ কী? পারলে নিজের বোনের খুনি*কে খুঁজে বের করে শাস্তি দিক।

-ও তো ভাবে ওর বোনকে আমি খু’ন করেছি।

-ওর ধারণা ভুল।

-আর ওকে শামিম সরদার ঘুরাচ্ছে।

-যা খুশি করুক আমি তো সত্যিটা জানতে পেরেছি।

নিবরাস হাসে। আনায়া চুপচাপ দেওয়ালের দিকে তাকায়। তাহিয়াকে নিয়ে মনের মাঝে হাজারো প্রশ্ন জড়ো হচ্ছে তার।

****

নাজিয়া বেলকনিতে বসে বই পড়ছিলো। তখন জায়ান আসে সেখানে। তারা ও রাজশাহী চলে এসেছে।বাইরের দিকে একনজর তাকিয়ে নাজিয়াকে প্রশ্ন করে,

-আচ্ছা আয়াত তোমার কেমন লাইপ পার্টনার পছন্দ?

জায়ানের মুখে এমন প্রশ্নে নাজিয়া বিরক্তবোধ করে।আজকাল জায়ানের বাড়াবাড়ি তার ভালো লাগে না।
উত্তর দেয়না নাজিয়া। জায়ান পুনরায় শুধায়,

-বললে না তো?

-আমার পছন্দ অপছন্দ দিয়ে তুমি কী করবে? ডিস্টার্ব করো না তো।

জায়ান বিরক্ত হয়। নাজিয়ার এতো ভাব তার অপছন্দ হয়ে যাচ্ছে। চুপচাপ প্রস্থান করে নাজিয়ার রুম থেকে।

জায়ান যেতে নাজিয়া বই রেখে রুমে চলে আসে। জায়ানকে বেশী পাত্তা দেওয়া যাবে না। আর না বিশ্বাস করে কিছু বলবে নাজিয়া। কিন্তু জায়ানকে নিয়ে ফ্যামিলির কাউকে কিছু বললেও বিশ্বাস করবে না তারা।

সন্ধ্যায় নুডলসের বাটি নিয়ে টিভির সামনে বসেছে নাজিয়া। জায়ান কলে কথা বলতে,বলতে নিচে আসছে। নাজিয়া আড়চোখে তাকে দেখছে। জায়ান সোফায় বসতে নাজিয়া বলে,

-ভাইয়া তোমার ফোনটা একটু দাও তো?

-এখন কী করবে তুমি ফোন দিয়ে?

-আইডি লগ ইন দেবো। একটা কথা মনে পড়েছে।

-পাঁচ মিনিট পর দেই?

-রাখো তোমার পাঁচ মিনিট। এই পাঁচ মিনিট প্রয়োজন আমার শিওর হতে।

-কী শিওর হতে?

-একটা মেসেজ আরকী একজনকে দিয়ে একটা কথা জিজ্ঞেস করে শিওর হবো।

জায়ান ফোনটা এগিয়ে দেয় নাজিয়ার দিকে। নাজিয়া উঠে দাঁড়ায়। জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,

-আধঘন্টা পর ফোন পাইবা। এখন আমার কাছে থাকুক।

জায়ান মাথা নাড়ায়। নাজিয়া প্রস্থান করতে কপালে স্লাইড করতে থাকে। চিন্তা হচ্ছে আবার হচ্ছে না। নাজিয়া যদি কোনভাবে কোন ডকুমেন্টস দেখে নেয়? তিয়াশ খান তাকে লা’থি মেরে বাড়ী ছাড়া করবে। তার বাবা তাকে ত্যাজ্য করতে দুইবারও ভাববে না। তখন সুহাসিনী আসে। সীতারা আহমেদ ফোনে ব্যস্ত। জায়ানকে দেখে জিজ্ঞেস করে,

-তোমার শরীর খারাপ জায়ান?

-না এমনিতে মাথা ব্যথা করছে।

-চা/কফি কিছু করে দিতে বলবো?

-হ্যাঁ বলো কফি নিয়ে আমার রুমে আসতে।

জায়ান উঠে রুমে চলে যায়। কাজের মহিলা বন্যাকে সুহাসিনী বলে কফি নিয়ে জায়ানের রুমে যেতে। প্রথমে বন্যা কিছুটা ঘাবড়ে যায়। পরে ঠিক করে কফিটা নাজিয়াকে দিয়ে পাঠাবে।

নাজিয়া জায়ানের ফোনের কল রেকর্ডে ঢুকে। যে নাম্বার থেকে সবচেয়ে বেশী কল এসেছে সেটার রেকর্ড শোনা ট্রাই করে। এতো লম্বা কথার রেকর্ড তার শোনতে অসুবিধা হবে সেজন্য ফোনে জায়ানের মেমোরির বদলে নিজের মেমোরি ঢুকায়। সব রেকর্ডিং মেমোরিতে ট্রান্সফার করে।

কয়েক মিনিটের মধ্যে নাজিয়ার কাজ শেষ হতে আদার্স অ্যাপ ঘেঁটে দেখে। সেখান থেকে কিছু স্কিনশর্ট নিয়ে মেমোরিতে ট্রান্সফার করে। মেমোরি খুলে সব ঠিকঠাক করে নেয়। নিজের ফোনটা কাবাডে জামাকাপড়ের ভপতর লুকিয়ে রেখে দেয়। তখন বন্যা আসে কফির মগ হাতে।

নাজিয়া তাকে দেখে ব্রু কুঁচকে বলে,

-আমি তো কফি চাইনি আন্টি।

-জায়ান স্যার চেয়েছে।

-তো তাকে দিয়ে আসো আমায় কেন?

-আসলে ছোট ম্যাম আপনি একটু দিয়ে আসুন না?

-জায়ান ভাইয়া নিশ্চয়ই আমাকে বলেনি কফি দিতে তোমাকে বলেছে।

-আসলে আমার পিরিয়ড চলছে।

-এটার সাথে ওটার কী সম্পর্ক?

-এখন তো আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না স্যার জোর করবে হয়ত বা। কিন্তু আমি অসুস্থ হয়ে পড়বো।

বন্যার কথায় নাজিয়ার মাথা হ্যাং হয়ে যায়। বন্যার কথার মানেটা সে বুঝে। বনঢ়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

-এর আগেও এমন করেছে আন্টি?

বন্যা চোখের পানি ছেড়ে দেয়। নাজিয়া জেনো সব স্বপ্ন দেখছে। বন্যার হাত থেকে কফিটা নিয়ে তাকে খাটে বসায় নাজিয়া।

-একটু বোসো আমি কফিটা দিয়ে আসছি। আমি কিছু জিজ্ঞেস করবো তোমায়।

-আচ্ছা।

নাজিয়া কফির মগ নিয়ে ত্রস্ত পায়ে জায়ানের রুমে প্রবেশ করে। জায়ান ল্যাপটপে ধ্যান দিয়েছে কারোর উপস্থিতি টের পেতে বুঝে বন্যা এসেছে কফি নিয়ে। জায়ান ল্যাপটপে চোখ রেখে বলে,

-বন্যা ম্যাডাম এতো লেট হলো কেন?

ভয়েস অনেকটা চেন্জ হয়ে আসে জায়ানের। নাজিয়া চুপচাপ হেঁটে জায়ানের কাছাকাছি যেতে জায়ান মুচকি হেঁসে বলে,

-উহুম! আজকে রেডি তো?

-ভাইয়া তোমার কফিটা।

জায়ান থতমত খেয়ে যায়। নাজিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

-আয়াত পাখি তুমি? আগে বলবা না?

-আসলে আমি কিচেনে গিয়েছিলাম তারপর শুনি বন্যা আন্টি তোমার জন্যই কফিটা বানিয়েছে আমি তো ফোনটা দিতে আসতাম তাই ভাবলাম কফিটা আমিই নিয়ে আসি। বন্যা আন্টি রাতের খাবার রান্না করছেন।

-ওহ সেটাই বলো।

-হুম।

নাজিয়া কফির মগ আর ফোন দিয়ে বেড়িয়ে আসে। জায়ানের ভাবভঙ্গিতে বন্যার কথা বিশ্বাস করা যায়। তড়িঘড়ি নিজের রুমে প্রবেশ করে দরজা আটকে দেয় নাজিয়া। বন্যা তাকে দেখে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলে,

-স্যার কিছু বলেনি তো?

-কী বলবে? সব ম্যানেজ করে দিয়েছি মিথ্যে বলে।

এবার তুমি বলো এসব কতদিন ধরে চলে?

-ছয়মাস ধরে।

-ছিঃ!

-প্লিজ ভুল বুঝো না। আমাকে বাধ্য করে এসব করে। আমি ভেবেছিলাম তোমার মাকে বলবো কিন্তু সাহস হয়না।

-কারণ সেও এসব কুকর্ম করেছে জীবনে। থাকুক সেসব কথা।

-তোমাকে আমার ভরসাযোগ্য মনে হলো। নিধির বিয়ের দিন তোমার তেজ দেখে তোমার প্রতি একটা ভরসা আমার আসে। আজকে গেলেও হয়ত বা আমায় ছাড়তো না জায়ান স্যার। নিজের চাহিদা মিটিয়ে টাকা ধরিয়ে দিতো।

নাজিয়া চুপ করে বসে যায়। বন্যার দিকে তাকিয়ে বলে,
-আমার বাবাকে বলতে? নাহয় বড় বাবাকে। জেম্মা ছিলো তাঁদের কাউকে বলতে?

-আমার সাহস হয়নি এসব বলার। কারণ বড়স্যার আমায় ভালো জানে। আর ওনার ছেলেকেও ভালো জানে। আর এসব কথা কাউকে বললে সে হয়ত জায়ান স্যারকে চাপ দিতো তখন আমায় মে*রে ফেলতো সে। সে বলেছে এসব যাতে বাইরে না যায়। নাহলে আমায় মে*রে ফেলবে।

-এসব বাইরে যাবে না আন্টি। তুমি ওর ডাকে সাড়া দিলে কেন?

-ও আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে নাজিয়া।

-ও তোমার সম্পর্কে সব জানে?

-শুধু আমার সম্পর্কে না। ক্লাবে যাওয়া আসা সেখানে একেকদিন একেক মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করা।

#চলবে

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-১৩

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|১৩|
#শার্লিন_হাসান

চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে রাজশাহীর রোডে ঢুকার আগে সবাই রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে। গাড়ীটা রেস্টুরেন্টে এড়িয়া থেকে কিছুটা দূরেই পার্কিং করতে বলে নিবরাস। কিছুটা খোলামেলা জায়গায়। নির্দিষ্ট সময়ের আগে সবাই রেস্টুরেন্টে চলে যায়। নিবরাস ঘড়িতে সময় দেখছে। ফোন হাতে তার দলের একজনকে মেসেজ পাঠায়,

-যা করার তাড়াতাড়ি করবি। একটা টু শব্দ যাতে না হয় আর না ওদের কানে খবরটা আসে। এখান থেকে যতদূরে সম্ভব গাড়ী নিয়ে যা আধঘন্টার মাঝে । আর সেম গাড়ী রেস্টুরেন্টের সামনে রেখে যাবি।

আনায়া নিবরাসের দিকে তাকিয়ে হাসছে। সেও ঘড়ির কাটা দেখছে। খাবার অর্ডার দিতে চলে আসে কিছুক্ষণের মধ্যে। সবাই স্বাভাবিক ভাবে খেলেও নিবরাস ধীরে সুস্থে খাচ্ছে। মরিয়ম নওয়াজ কিছুটা অবাক হয়ে বলেন,

-তাড়াতাড়ি করো না নিবরাস? আজকে তোমার এতো লেট হচ্ছে?

-বাড়ীতে নাহয় আধঘন্টা পরে পৌঁছাবে এতে সমস্যা কোথায়? আমি আস্তেই খাবো।

কেউ আর কিছু বলেনি। নিবরাস খাওয়া শেষ করে ফোন চেক দেয়। নির্দিষ্ট সময় হতে রেস্টুরেন্টে থেকে বেড়িয়ে গাড়ীতে বসে পড়ে। তখন আনায়া বলে,

-মনে হয় অন্য গাড়ীতে উঠেছি আমরা।

তখন নিবরাস বলে,
-অন্য গাড়ী কোথা থেকে আসবে? গাড়ী একটাই! অন্য গাড়ী হলে নিশ্চয়ই চাবি দিলেও স্টার্ট হতো না।

রোহিত তখন গাড়ী স্টার্ট দেয়। আনায়া মিটমিট হাসছে। নিবরাস তার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারা করে। তারিশা ফোনে ব্যস্ত।

পরাগ রাগে ফুঁসছে। সে পারছে না গাড়ীতে বসে থাকা একজনকে লা’থি মেরে রাস্তার সাইডে ফেলে দেয়। শুধু নিবরাসের জন্য চুপ করে আছে।

ভোর ছয়টায় তারা রাজশাহীর মোহনপুর চলে আসে। বাড়ীতে এসে সোজা রুমে চলে আসে আনায়া,নিবরাস। আনায়া চেন্জ করে খাটে বসতে,বসতে নিবরাসকে বলে,

-গাড়ীটা কোথায় ব্লাস্ট হলো?

নিবরাস চোখ গরম করে তাকায়। আনায়া হেঁসে দেয় নিবরাসের তাকানো দেখে।

-একদম মুখ খুলবে না। নাহলে ছাঁদ থেকে ফেলে দেবো।

-ভাগ্যিস আপনি সহ ব্লাস্ট হোননি।

-রেগে ব্লাস্ট হয়েছি তবে প্রকাশ করতে পারিনি।

-এমনই হবে আপনার সাথে। যাই হোক রেগে ব্লাস্ট হয়েছেন গাড়ীর সাথপ তো আর হোননি।

-তুমি চাও আমি মা’রা যাই?

-এসব কী বলেন? আমি তো মজা করে বলছি। আমি কেন চাইবো আপনি মারা যান?

-কিছু না।

নিবরাস ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। আনায়া শুয়ে পড়ে। তার ঘুম আসছে প্রচুর।

নিবরাস কালো জিন্সের সাথে সাদা টিশার্ট গায়ে জড়িয়ে বাইরে বেড়িয়ে পড়ে। পরাগকে বলেছে গাড়ী বের করতে সে একজায়গায় যাবে।

এরই মাঝে খবর পায় শামিম সরদার নাকী আনায়াকে না পেয়ে পাগলা কু’কুরের মতো করেছে। তাতে নিবরাস তৃপ্তির হাসি দেয়। ফোন কেটে দিয়ে বলে,

-এই কু’কুরকে আরো পাগ’ল বানাবো আমি। সাথে আহিয়াকে। এই আহিয়াটা না বড্ড বেড়েছে। কী দরকার আমার পেছনে পড়ার? ওকে রাস্তা থেকে সরানো আমার জন্য কয়েক মিনিটের ব্যপার।

পরাগ ড্রাইভিং করতে,করতে বলে,

-আপনার রহস্য বের করতে চায়। আপনার মুখোশ টেনে ছিঁড়তে চায় এই আহিয়া।

-আমার মুখোশ আমি সরিয়ে নিয়েছি। আর ও আমাকে ওর বোনের খু’নি ভাবে কিন্তু আমি ওর বোনকে রিজেক্ট করেছি,অপমান করেছি কিন্তু খু’ন করিনি।

-এটা ও জানে! চা*ল চালছে এছাড়া আর কী?

-যে খু’ন করেছে সে আশেপাশে আছে খুব শীঘ্রই তাকে ধরে নিবো আমরা।

-আচ্ছা স্যার শামিম সরদার তো খু’ন করবে না। তাহলে আর কে চেনাজানার মধ্যে?

-শুধু শামিম প্রকাশ্যে আমার শত্রু সবাই জানে। বাট গোপন শত্রুর কথা কয়জন জানে?

-জায়ান?

-ও বিজন্যাস নিয়ে ব্যস্ত। আহিয়াদের পরিবারের সাথে ওর শত্রুতা আছে কীনা জানা নেই। তবে নাজিয়া মেয়েটা যথেষ্ট ভালো কী জানি কবে জায়ানের ফাঁদে পা দিয়ে নিজেকে ব*লি করে।

-নাজিয়াকে আপনি চেনেন স্যার? আর আপনি না বললেন জায়ান বিজন্যাস নিয়ে ব্যস্ত।

-হুম! নাজিয়া সম্পর্কে আমার শালিকা হয়। তবে ওর মায়ের কথা কী বলবো? আস্ত বেয়াদ’ব মহিলা। বিয়ের পরও পরকীয়া ছাড়েনি নিজের বয়ফ্রেন্ডের সাথে শেষে তো বিয়েও করে নিলো তিয়াশ খানকে।

-মাঝখানে ম্যাডামের জীবনটা কষ্টে কাটলো।

-হুম! আমার শ্বশুর মশাই আগলে রেখেছে তাকে এখন আমি আগলে রাখবো।

-তারিশা বেশী বাড়াবাড়ি করছে না স্যার?

-করুক! ওকে আমি মা’রবো না। সময় মতো যে মারার সেই মে’রে দিবে। আমার বাপের নুন খেয়ে বড় হয়েছে আবার পেছন দিয়ে চুড়িও চালাচ্ছে। বিশ্বাসঘাতক একটা।

-সাহস আছে বলতে হবে। আমার মনে হয় আপনার সম্পর্কে ওর মাথায় নূন্যতম ধারণা নেই।

-সাহস দেখাও তবে নিজের দাঁড়ানোর জায়গাটা শক্ত রেখে। নিজের দাঁড়াতে কষ্ট আবার তুমি কীভাবে আরেকজনকে দাঁড়ানো জায়গা করে দিবে? শেষ সেও জায়গা পাবেনা তুমি দাঁড়ানো থেকে একবারে গর্তে পড়ে যাবে। সুন্দর না ব্যপারটা?

পরাগ মাথা নাড়িয়ে ড্রাইভিং করতে থাকে। জায়গা মতো আসতে একটা কালো গাড়ী তাঁদের পথ আঁটকায়। নিবরাস গাড়ী থেকে নামে। কালো গাড়ী থেকে একজন এসেছে তাকে দেখে নিবরাস মুচকি হাসে। তার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

-সে তো আসলেই আমার কাছে। এতোদিন বড়বড় কথা বলে কী হলো?

-আমার বিরুদ্ধের সব প্রমাণ মুছে ফেল?

নিবরাস আসেপাশে তাকায়। পরক্ষণে বলে,

-পরিবারের কাছে খুব হুজুর সাজো তাইনা? তোমার কালো ব্যবসা ও খুব শীঘ্রই বন্ধ হবে।

-আমি তোর মুখোশ টেনে ছিঁড়ে দেবো নিবরাস।

-আমার তো কোন মুখোশ নেই তুই ছিঁড়বি টা কী? বুঝা আমাকে?

-তুই আহিয়ার বোনের খু’নি।

-ওটা তুই খু’ন করেছিস আমি না। আমি শুধু থ্রেট দিয়ে চলে এসেছিলাম সেদিন।

-যাই হোক! সবাই জানে তুই মেয়েটাকে মেরেছিস। দেখ নিবরাস তোর বউয়ের কানে যদি একবার ও যায় তুই নিষ্পাপ মেয়েটাকে খু’ন করেছিস আর সে একটা খু’নির সাথে সংসার করছে তখন? আচ্ছা রাজের কথা বাদ দিলাম! সে তো দোষী তুই সরিয়েছিস সেটা ভালো কথা আমিও দুইদিন পর এটাকে বিদায় করে দিতাম পৃথিবী থেকে। খামাখা আবর্জনা রেখে লাভ আছে?

-আনায়ার কানে কোন খবরই যাবে না। আর সবচেয়ে বড় কথা খু’নটা তো আমি করিনি! আমার উপর দোষ চাপানো হচ্ছে।

-সে যাই হেক। তোর বউয়ের কাছে তুই খু’নি হবি। সমস্যা নেই আনায়ার জীবনের সুখ সব কেড়ে নিতেও আমার সময় লাগবে না। মেয়েটা দুঃখে,দুঃখে জীবন কাটাক।

-তুই জানি কাকে ভালোবাসিস? উমমম… মনে পড়ছে না নামটা মাথায় আছে তবে মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।

-আমি কাউকে ভালোবাসি না। আমি জানি সে আমার প্রতি দুর্বল আর একসময় আমার সত্যিটা জানবে সবাইকে বলার ও চেষ্টা করবে তবে সেদিন হবে তার জীবনের শেষ দিন।

-এসব আমায় কেন বলছিস? মনে হয় তোর নেশা এখনো কাটেনি সেজন্য সব গড়গড়িয়ে বলে দিচ্ছিস।

-আমি নেশা করি না।

-চোর বলে আমি চুরি করি না। ব্যপারটা এমন হয়ে গেলো না?

-মুখ সামলে কথা বলবি তুই এমপি ঠিক আছে তবে আমি তোর বাপ এটাও মনে রাখবি।

-সুতো টান দিলে ছেলের কাছে এসে হাত জোড় করতে হবে বাপ।

-হাহা! সব প্রমাণ তুই পুড়িয়ে দিবি।

-দেখা যাক।

নিবরাস চলে আসে। পরাগ তাকে আর প্রশ্ন করে না।

আনায়া লেট করে ঘুম থেকে উঠে। কাজের বুয়ারা রান্নাবান্না সব করে নিয়েছে। শাওয়ার নিয়ে লিভিং রুমে আসতে দেখে মাইশা,মরিয়ম নওয়াজ,মিসবাহ তারা বসে অপেক্ষা করছে। নিবরাস নিচে আসতে সবাই লান্স করতে বসে পড়ে। তারিশা আজকাল কিছুটা চুপচাপ থাকল। খাওয়া শেষ হতে মিসবাহ বলে,

-মামু আমার চকলেট?

-মনে ছিলো না। সন্ধ্যায় চলে আসবে।

মিসবাহ তারিশার দিকে তাকায়। তারিশার চোখে চোখ পড়তে তারিশা আমতাআমতা করে বলে,

-এভাবে তাকাচ্ছিস কেন বাপ?

তখন নিবরাস বলে,

-তোমার জন্য ও চকলেট আনবো খবরদার মিসবাহর চকলেটের দিকে নজর দিবা না।

কথাটা বলে নিবরাস চলে আসে। আনায়া খেয়েই রুমে চলে এসেছে। নিবরাস আসতে আনায়া প্রশ্ন করে,

-আচ্ছা আপনি সবসময় তারিশাকে তুমি বলে সম্মোধন করতেন?

-হুম! ও আমার ছোট।

-তো আমাকে কেন আপনি বলে সম্মোধন করতেন প্রথম,প্রথম?

-আমার ইচ্ছে। আর তুমি যদি আনকম্ফোর্ট ফিল করো হুটহাট কেউ তুমি বলে সম্মোধন করলে।

আনায়া কিছু বলেনা। নিবরাস বিছানায়া গা এলিয়ে দেয়। আনায়াকে বলে,

-তুমি ভার্সিটি যাবা নাকী শুধু এক্সাম দিবা?

-যাবো এখন থেকে নিয়মিত।

-যাওয়ার দরকার নেই। সময় মতো এক্সাম দিবা। বাড়ীতে পড়বা।

-তারিশা যাবে?

-হুম! ও যাক ওর সমস্যা নেই।

-আমি গেলে কী সমস্যা?

-জেনেও অবুঝের মতো কথা বলবা না তুমি। এখন আবার শাশুড়ীর সুর ধরো না রাজনীতি করতে কে বলেছে।

-তো ঠিকই তো। মা ভুল কিছু বলেনা। কী দরকার ছিলো রাজনীতিতে ঢুকা?

-রাজনীতি আমার নেশা না পেশা। বুঝেছো?

-যেদিন সব হারাবেন সেদিন বুঝবেন আপনি কী জঘন্য একটা পেশায় ছিলেন।

-শোনো বউ রাজনীতি সুন্দর যদি নোং’রামী না থাকে।

-আপনি তো চাঁদাবাজ।

-আমি তোমার বাবার থেকে টাকা তুলে চাঁদাবাজি করেছিলাম নাকী সে বারবার চাঁদাবাজ বলে অপমান দাও?

-আমার বাবার থেকে না এলাকার মানুষদের থেকে।

-আমার দলের কেউ চাঁদাবাজি করে না। আর করলেও সবার আগে আমার কানে খবর আসতো।

-তাহলে মানু্ষ কী মিথ্যে বলে?

– কে কী বললো তোমায়?

-বলেছে একজন আপনি নাকী চাঁদাবাজ একনাম্বারের।

-আর এসব বলবা না। পরে দেখা যাবে আমার বাচ্চাকাচ্চা হলে তারা ও তোমার থেকে শোনে আমায় চাঁদাবাজ বলবে।

-লজ্জা করবে না আপনার? আমার বাচ্চাগুলোর পোড়া কপাল হবে তাদের বাপ নাকী চাঁদাবাজ।

নিবরাস আর সময়ব্যয় করলো না। টান দিয়ে আনায়াকে নিজের কাছে নিয়ে এসে ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়। কিছুক্ষণ পর ঠোঁটে কামড় বসিয়ে ছেড়ে দেয়।

আনায়া ঠোঁটে হাত দিয়ে নিবরাসের দিকে রাজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।

-বাইরে বের হবো কীভাবে?

-আর বলবা আমি চাঁদাবাজ? এবার থেকে এমনই হবে।

-আর বলবো না।

বোকাবোকা মুখ করে বলে আনায়া। নিবরাস হাসে আনায়ার দিকে তাকিয়ে। আনায়ার গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। কী একটা অবস্থা নিবরাসের ইচ্ছার বিরুদ্ধে একটা কথা বললেই হলো! এভাবে তো তার ঠোঁট দু’টো অকালে মারা পড়বে।

-আচ্ছা এদিকে আসো দেখি ঠোঁটে কী হয়েছে?

-কথা বলবেন না বদলোক একটা।

-স্যরি পাখি তোমার মুখ বন্ধ করার জন্য এছাড়া আর ভালো উপায় পেলাম না।

-মুখে বললে কী হতো?

-তুমি না আমার কথা কত শোনো মনে হয়? ঘাড়ত্যাড়া একটা।

-সত্য কথা বললে আপনার গায়ে লাগে। আপনি আমার কাছে এমন রহস্য রাখেন কেন? সব ক্লিয়ার করতে পারেন না? তাহলে তো আমি উল্টাপাল্টা বলি না।

-আমার আবার কিসের রহস্য? আমার জীবনে কোন রহস্য নেই তবে গোপন কিছু সত্য আছে। সবচেয়ে বড় কথা তুমি জানো আমার পেছনে শত্রু! দিনদিন নতুন শত্রু বের হচ্ছে। তারাই আমাকে ফাঁসাচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে একটার পর একটা স্ক্যান্ডাল রটাচ্ছে। কিছু মানুষ সেটা বিশ্বাস করে আবার পাবলিসিটি ও করে। এই ধরো তুমি!

আনায়ার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। নিবরাসের থেকে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে। তার বর তাকে অপমান দিচ্ছে আর দশজন মানুষের সাথে মিশিয়ে? সত্যিটা বলে দিলেই তো হয়। তাহলেই তো আর আনায়া কিছু বলেনা। লোকটা আস্ত বদ! বউকে কীভাবে মুখের উপর অপমান দেয়।

-আমার বউ হয়ে তুমি অন্যের কথায় কান দাও। কেমন বউ তুমি?

-আমি তো শুধু একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম সেও আপনাদের অফিসে জব করে।

এই আপনার রাজনীতি নিয়ে। যা আমার থেকে লুকাচ্ছেন আর বাকীরা ঠিকই জানে।

-সে কী বলেছে?

-বলেছে, ‘আপনার হাজবেন্ডকে আপনি ভালো চিনেন আমাদেরকে জিজ্ঞেস করছেন কেন?’

-আমি বলেছি, ‘সেটা ফ্যাক্ট না। আমি সত্যিটা জানতে চাই।’

-সে বলেছে, ‘মিসেস মুয়াম্মার নিবরাস মির্জা আমি কিছু বলতে পারবো না।’

তো আর কী করার? আপনার উপর সন্দেহ বেড়ে গেলো।

#চলবে

হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-১২

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|১২|
#শার্লিন_হাসান

শামীম সরদার তার দলের সব কয়টা কে চ’ড়, থাপ্পড়, সাথে লা’থি মেরে আপাতত শুইয়ে দিয়েছে। আরাফের মাথার চুল টেনেছে কিছুক্ষণ। শামিমকে আপাতত পাগ’লা কু’ত্তা লাগছে। যে ক্ষেপে আছে! নিজের শিকার ধরতে না পারায়।

বাকীরা কয়েকজন ভয়ে তটস্থ। শামিম সরদার হুংকার ছেড়ে বললেন,

-কার গাড়ীতে করে ওরা ফিরেছ? গাড়ীর নাম্বার ডিটেলস কিছু জানিস? তোদের মতো গরু গুলোকে পুষি যারা ছোট একটা বাচ্চা আর মেয়ের সাথে পারে না। তোরা তো পুরুষদের বদনাম করে দিলি ওই সামান্য একটা মেয়ের কাছে হেরে।

-গাড়ীর কালার সাদা ছিলো। আর ওটা বড় মাইক্রো ও না আবার ছোট কার ও না। মাঝারি…”

-সুন্দর ভাবে কথাটাও গুছিয়ে বলতে পারে না। ছোট ও না বড় ও না মাঝারি। শা*লা BANCD আজকে থেকে গরুর সাথে গিয়ে ঘাস খাবি মা*ল পাবি না কেউ।

আরাফ চুপসে যায়। শামিম সরদার নিজের মাথার চুল নিজে টেনে ছিঁড়ে ফেলার উপক্রম করছে। কেউ কিছু বলছে না। আপাতত এই পাগ’ল কুকুরকে সামলানো যাবে না। আরাফের চোখের ইশারায় একজন ম*দের বোতল আর গ্লাস এগিয়ে আনতে শামিম সরদার বোতল নিয়েই ঢকঢক করে গিলতে থাকে।

বাকীরা দাঁড়িয়ে দেখছে শামিমের ম*দ খাওয়ার কান্ড।আহিয়া তখন কল দেয় শামিমকে। শামিম কল রিসিভ করে বিশ্রী কয়টা গা’লি দেয়।

আহিয়া ও ছাড়েনি সেও পাল্টা গা’লি দিয়ে বলে,

-কী রে পাগলা কু’ত্তা শিকার খাঁচায় আসেনি বলে এমন ঘেউ,ঘেউ করছিস?

-তোকে কাছে পেলে খে*য়ে দিতাম। নেতার বউয়ের ক্ষেপটা তোর উপরই মিটাতাম আহিয়া। ভাগ্যিস তুই কাছে নেই বলে বেঁচে গেলি।

-হাহা আহিয়া তো বোকা! তোর মতো জানোয়ারকে বিশ্বাস নেই। আমার কাজ হয়ে গেলে তোর পশ্চাৎদেশে লা’থি মেরে তোকে বুড়িগঙ্গায় ফেলে চলে আসবো। (মনে,মনে)

-আমি না তোর সহযোগী। গেমের লিডার আমি আর তুই! সেখানে তুই ফূর্তি করবি নেতার বউকে নিয়ে আর আমি ফূর্তি করবো….”

-নেতাকে নিয়ে নাকী তার বাপকে নিয়ে?

-দু’টো মা*লই কিন্তু হ্যান্ডসাম আছে। তবে বুড়োটা অন্যের খা*ওয়া। আর নেতাকে দেখে মনে হয় না….”

-তোকে দেখে করেছে নাকী সংসার?

-সেরকম কিছু না।

ওদের অকথ্য কথা বার্তা বাকীরা চুপচাপ শোনছে। আরাফের মন চাইছে আহিয়াকে কষে কয়টা থাপ্পড় মারতে। কেনো জানি খুব ক্ষোভ আহিয়ার উপর জমা হয়েছে।

******

পরের দিন সকালে নিবরাস পরাগকে দিয়ে চকলেট আনিয়েছে মিসবাহর জন্য। মিসবাহ সে চকলেট নিয়ে বসে,বসে খাচ্ছে। সবাইকে বিলাচ্ছে! তারিশার আশেপাশে ও সে ঘেঁষছে না। তখন তারিশা দুষ্টমি করে বলে,

-কী ভাগ্নে আমাকে চোখে লাগছে না?

-তুমি পঁচা সেজন্য পঁচা মানুষকে আমি চকলেট দেই না।

মুখের উপর বলে নিবরাস চলে আসে। বালীরা কেউ মিটিমিটি হাসছে। নিবরাসের তাতে হেলদোল নেই। আনায়াকে ডেকে বলে,

-তারিশাকেও কিছু চকলেট দাও তো। পরে আবার কান্না করলে ওর চোখের পানি অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে আমার জন্য। এতো রিস্ক নিতে চাই না আমি।

নিবরাসের কথায় তারিশা জ্বলেপুড়ে যায়। আনায়া চকলেটর বক্স তারিশাকে এগিয়ে দিলে তারিশা তার প্রত্যাখান করে বলে,

-তোমরাই বসে,বসে চকলেট খাও! আমি গেলাম।

-মনে,মনে তো আমায় হাজারটা গালি দিচ্ছো সাথে অভিশাপ সেটা জানি। আচ্ছা থাক চকলেট খেতে হবে না। গালি তো খেলামই! অকৃতজ্ঞ মানুষদের আবার

-গালি দেবো কেন? আমি আবার এসব পঁচা কথা বলি না।
নিবরাসের কথার মাঝে পোড়ন কেটে বলে তারিশা। আনায়া তাঁদের দুজনকে বলে,

-এতো কথা বাড়াও কেন তোমরা? খাবে না মানে খাবে না শ্যাষ!

তারিশা চলে আসে। আসার সময় হাজারটা বকা দেয় নিবরাসকে।

-এদের ঢং দেখতে,দেখতে আর কত জনম যাবে কে জানে? আনায়া কে বলেছে আমি চকলেট খাবো না? একটু ঢং করেছি তাই বলে তোমরা জামাই বউরা সিরিয়াস ভাবে নিবা? ধ্যাত! এরা বুঝে না চকলেট আমার কত প্রিয়।

ঢংটা না করলেই বোধহয় ভালো হতো আমার।

তারিশা আফসোস করছে।

আনায়া নিবরাসকে বলে দিয়েছে যাতে আজকে সন্ধ্যায় রওনা হয় রাজশাহীর উদ্দেশ্য। মোহনপুর না যাওয়া অব্দি তার শান্তি হচ্ছে না। এখানে কেমন হাসফাস লাগছে। বিশেষ করে গতকাল রাতের কথা মনে পড়লে মনে আলাদা ভয় কাজ করে।

নিবরাস ও সবাইকে বলে দেয় রেডি হয়ে নিতে। যা ঘুরাঘুরি হয়েছে এটাই বেটার। বেশীর দরকার নেই আশেপাশে শত্রু ঘুরছে।

মরিয়ম নওয়াজ তো প্রথমে বলেই দিলেন,
-এমপি না হলেই ভালো হতো! অন্তত শান্তিতে থাকতে পারতাম। এই শত্রু,এই নজর ওর নজর। মাঝেমাঝে মন চায় কারাগারে ঢুকে যাই সেটাই ভালো।

-আরে মা এমন করছো কেন? এমন শত্রু থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

-তাই বলে বাবার বাড়ীতে এসেও দু’টো দিন থাকতে পারবো না?

-আরে মামনি সবই আনায়ার চাল। ওর মন চাচ্ছে না সেজন্য আমাদেরকে নিয়েও টানাটানি করে। ওর ভালো না লাগলে চলে যাক না? গাড়ী তো বাইরে দাড়ানো আছেই।

-লিসেন তারিশা! আমি একবার ও বলেছি না আনায়া একবার ও এসে বলেছে ওর ভালো লাগছে না সেজন্য রাজশাহী ব্যাক করছি আমরা? আমার দরকারী কাজ পরেছে সেজন্য চলে যাবো। তোমার এতো বেশী থাকতে মন চাইলে একাই থাকো না? যত্তসব টেমপার গরম করার মতো কথাবার্তা।

নিবরাসের গরম গলার স্বরে সবাই চুপসে যায়। মরিয়ম নওয়াজ উঠে চলে যান। আনায়া সে রুমে এখানে নেই। তারিশা বিষ খেয়ে বিষ হজম করছে। নিবরাস মুখের উপর অপমান দিলো।

তখন মিসবাহ আসে নিবরাসের কাছে। এসে বল,

-আমার চকলেট গুলো পাচ্ছি না মামু।

-নিশ্চয়ই তারিশা খেয়ে নিয়েছে। তাই না তারিশা?

নিবরাস বলে। তারিশা থতমত খেয়ে যায়। আমতাআমতা করে বলে,

-আজব! আমি কেনো ওর চকলেট না বলে খেতে যাব বো? খাওয়ার হলে তখনই খেতাম।

-আমি দেখেছি তো তুমি যখন চকলেট নিয়ে ছাঁদে যাচ্ছিলে।

-বাজে কথা বলবে না ভাইয়া। আমার তো বয়ে গেছে অপমান পাওয়ার পর আবার চকলেটের দিকে তাকাবো?

নিবরাস একটা ভিডিও ধরে তারিশার মুখের উপরে। যেটাতে দেখা যাচ্ছে সে চকলেট হাতে ছাঁদের দিকেই যাচ্ছে। নিবরাস হেসে ভিডিও অফ করে বলে,

-বললে নাহয় আরেক ঝুড়ি এনে তোমায় দিতাম। তাই বলে এভাবে? কে জানি দেখা যাবে কবে আমার বউকে ভালোবেসে ফুল এনে দিলাম আর সেই ফুল ও তুমি না বলে নিয়ে গেলে।

তারিশা কিছু বলছে না। নিবরাস মিসবাহকে বলে,

-রাজশাহী গেলে তোমায় আবারো চকলেট কিনে দেবো সোনা। তোমার আন্টি রা’ক্ষসী সেজন্য সব চকলেট খেয়ে নিয়েছে।

মিসবাহ মাথায় নাড়ায়। যাওয়ার সময় তারিশার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে যায়।

সন্ধ্যায় তারা রেডি হয়ে গাড়ীতে বসে পড়ে। আজকে তারিশার লেট হচ্ছে। নিবরাস বিরক্তি নিয়ে বলে,

-ওর থাকার মনে হয় বেশী ইচ্ছে। ওকে থাকতে বলো। ড্রাইভার গাড়ী স্টার্ট দাও তো!

-এই তো আমি।
দৌড়ে এসে বলে তারিশা। তড়িঘড়ি গাড়ীতে উঠে বসতে নিবরাস ও বসতে,বসতে বলে,

-সেদিন তো আমার বউয়ের দেরী হওয়ায় মনে,মনে কত বকা দিয়েছো। এখন তো তোমার নিজেরই লেট।

-এই নিবরাস মনের কথা পড়ে নিচ্ছে কীভাবে? ও কী করে জানে ওদের আমি মনে,মনে গুষ্টিতুষ্টি উদ্বার করে দেই?

মনে,মনে বলে তারিশা। নিবরাস জানে না এসব! সে তো আন্দাজি ঢিল ছুঁড়েছে। তারিশার ভাবভঙ্গি দেখে বলে,

-আর কখনো আমাকে বা আমার বউকে মনে,মনে বকলে জেলে ঢুকিয়ে দেবো।

তখন রোহিত মজা করে বলে,

-এভাবে থ্রেট দিচ্ছেন কেন বেচারিকে? মানুষ মাত্রই ভুল স্যার।

-তোমাকে ওর হয়ে গীতা পাঠ করতে হবে না।

রোহিত চুপসে যায়। মরিয়ম নওয়াজ মন খারাপ নিয়ে বসে আছেন সে দুটো দিন থাকতে পারলো না। ছেলেকে কে বলেছে এমপি হতে? ওর জন্যই ঠিকঠাক ভাবে বাইরে বের হতে পারেন না। এই শত্রু এর নজর ওর কুনজর।

মরিয়ম নওয়াজকে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতে দেখে নিবরাস বলে,

-তোমার আবার গালে কী হলো? মৌমাছি কামড় দিলো নাকী?

-বাজে কথা ছাড়ো নিবরাস। তোমার এই রাজনীতির জন্য আমি শান্তিতে কোথাও যেতে পারি না।

-তো যাও না? বারণ করলো কে? গিয়ে দু চারটার বুলেট খেয়ে আসো। তারপর হসপিটালের বেডে তিনমাস শুয়ে থাকো। ওইটা বেটার হবে মনে হচ্ছে।

-এভাবে ভয় দেখাও কেন?

-ভাইয়া ঠিকই বলেছে। তুমি আজকাল ঘুরে বেড়ানোর জন্য ছটফট করছো। দেখো না বাইরে শত্রুর শেষ নেই।

-হ্যাঁ এতোই শত্রু যে কখন আবার গাড়ীটা না ব্লাস্ট করে। পরে দেখা যাবে নিবরাস মির্জার শত্রু তার গাড়ীতে টাইম বোমা সেট করে রেখেছে।অবশ্য শত্রু গুলোকে চেনাও যাবে না।

মাইশার কথার মাঝে আনায়া বলে কথাটা। তারিশা তো সন্দেহের জাল ও ইতোমধ্যে ছিটিয়ে দিয়েছে। নিবরাস স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে ব্যপারটা। এরকম টিটকারি তার বউ এর আগেও করেছে। এটা তো সিম্পল লাগছে তাকে সে ডিরেক্ট চাঁদাবাজ বলে অপবাদ দিয়েছে সেটা তো তার ইগোতে লেগেছে। শুধু বউ বলে কিছু বলেনি।

তখন তারিশা বলে উঠে,

-বহিরা শত্রুর আগমনের আগে ঘরের শত্রু না কাজটা করে রেখেছে। আর যে করেছে সেই নিশ্চয়ই এটা সম্পর্কে জানে।

-তুমিও না তারিশা আপু। থিংকিং ভালো তবে ওভারথিংকিং না।

-যুক্তি দেখালাম।

-তোমার বালের যুক্তি আনায়া গুণেও না। যত্তসব! নিজে যে কেমন সেটা ভাবে না আসে আমার কথার মাঝে যুক্তি দেখাতে। চুলের পোলাপাইন।

মনে,মনে বলে আনায়া। তখন আবার নিবরাস বলে,

-যুক্তি দেখাতে যাও কেন তারিশা? চুপচাপ শুনতে পারো না? তাহলে তো আর এসব কথা-কাটাকাটি হয়না। কথাও বাড়ে না। আসলে মেয়ে জাত এমনই! একটা কথা পেলে সেটা তিল থেকে তাল তাল থেকে তালাফি করা।

এবার সবাই নিশ্চুপ। আনায়া তারিশা আর নিবরাসের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।

*****

জায়ান নাজিয়াকে নিয়ে বাইরে বের হয়েছে। সাথে কাউকে আনেনি! নাজিয়া গতকাল থেকে মুড অফ করে রেখেছে। কারণটা জায়ান জানে না। সেটাই জিজ্ঞেস করার জন্য বাইরে বের হয়েছে। হাঁটতে, হাঁটতে বলে,

-মুড অফ কেন পাখি?

-কিছু না! একটা কথা ভাবছি।

-কী কথা?

-এই ধরো শামিম সরদার জানলো তুমি বা তোমার গাড়ীর মাধ্যমে নেতার বউ পালিয়েছে তখন যদি তোমার গাড়ীতে বোম সেট করে রাখে? তোমাকে আর তোমার গাড়ীকে উড়ানোর জন্য।

-ফাল’তু কথা ছাড়ো! ও এরকম আমার সাথে করবে না।

হাসে নাজিয়া। জায়ান তাকিয়ে তার হাসি দেখছে। পরক্ষণে নাজিয়া বলে,

-আরে শামিম সরদার যা! হলেও হতে পারে। তোমার গাড়ীতে না হোক পথযাত্রীদের গাড়ীতে যদি তাই করে থাকে।

-তোমার নিশ্চয়ই মুডের উপর বাজ পড়েছে সেজন্য উল্টাপাল্টা বকছো। যাও তো মুডটাকে ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়েমুছে আসো তারপর শুদ্ধ, সুন্দর ভাবনা ভাবো। এসব আজাইরা চিন্তা তোমাদের মেয়ে মানুষদের দ্বারাই সম্ভব।

#চলবে

হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-১১

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|১১|
#শার্লিন_হাসান

“পালিয়ে গেলো মির্জার বউ আর ভাগ্নে।”

আরিফের কানে কথাটা যেতে সাথের টাকে ঠাস করে চ’ড় মেরে দেয়। চুলগুলো টেনে বলে,

-ওইটুকুন মেয়ে আর বাচ্চার সাথে পারলি না? এমন দাম’ড়া হয়ে কী হলো? আর আমার সাথে সবার পার্কে যাওয়ার জন্য গেছে? শামিম সরদার তোদের না পুষে কয়টা গরু পোষলেও কাজে দিতো।

-আমাদের সাথে আপনিও কিন্তু আছেন।

পাশের জন বলতে তার গালেও চড় বসিয়ে দেয় আরিফ। তারা সবাই বেড়িয়ে পড়ে আনায়ার খোঁজে। পার্কের দিকে না গিয়ে তাঁদের পেছনে দৌড়ানো ছেলেটার কথা অনুযায়ী সামনে এগোচ্ছে তারা।

আনায়া, মিসবাহ দৌড়ে ছুটছে। পেছনে সেই ছেলেটাও দৌড়ে আসছে। ভাগ্যিস আজকে আনায়া লং ড্রেস পড়েনি। জিন্স আর ছোট জামা পড়েছে। দৌড়ের সাথে পিছলা হিজাবটা খুলে যাচ্ছে বারবার। আনায়া বিরক্ত হয়ে যায়। একহাতে হিজাব সামলে অন্য হাতে মিসবাহকে নিয়ে দৌড়াচ্ছে।

কিছুটা সামনে এসে দু’টো পথ দেখতে পায় আনায়া। একটা সোজা আরেকটা অন্য গ্রামে ঢুকেছে হয়ত। আনায়া গ্রামের রাস্তাটা ধরে মিসবাহকে নিয়ে। সে জানে না সে কোথায় যাচ্ছে তবে পেছনে লোক আছে তাঁদেরকে ধরার জন্য এটা শুধু মাথায় ঘুরছে।

নিবরাস সোডিয়ামের কাছে এসেও কিছু পায়নি। লাইট দিয়ে আশে-পাশে তন্নতন্ন করে খুঁজে। ফোন হাতে তার দলের একজনকে কল লাগায়। কল রিসিভ হতে কয়েকটা গা’লি দেয় নিবরাস।

-চোখ কোথায় ছিলো তোদের? বলেছিলাম না আমাদের সবার আশে পাশে থাকতি।

-আমরা তো পার্কের আশে পাশেই ছিলাম স্যার। কিন্তু ম্যামকে দেখতে পাইনি।

-চোখ থাকলে না দেখতি। তোদের সব-কয়টাকে আমি পাই শুধু। এক্ষুনি লোক লাগা আশে পাশে রাস্তায় আর গ্রাম থাকলে গ্রামের রাস্তা গুলোতে। এই পাহাড়ি এলাকায় গাছপালা এতো বেশী বিরক্ত লাগে।

নিবরাস কল কেটে দেয়। তারিশা বিরক্ত হচ্ছে! তার মনে হচ্ছে আনায়া এক্সট্রা প্যারা হয়ে গেলো। ইশশ! কী সুযোগ ছিলো নিবরাসের সাথে ঘুরার। কী দরকার ছিল আনায়ার কল দিয়ে খবরটা দেওয়ার?

তারিশার ভাবনার মাঝে পরাগ বলে,

-নিশ্চয়ই শামিম সরদারের কাজ এটা।

-ও ছাড়া আর কে?

-আমার মনে হয় স্যার আপনার সুরক্ষা আগে দরকার। বউমনিকে খোঁজা যাবে।

-হ্যাঁ পরাগ ভাইয়া ঠিক বলেছে। নিবরাস ভাইয়া গাড়ীতে বসো! লোক তো লাগিয়েছো খোঁজার জন্য।

তারিশা বলে। নিবরাস বিরক্ত হয় তারিশার বা হাত ঢুকানো দেখে।
-আমার কিছু হবে না। আমি কচি খোকা নই! আর যার সুরক্ষা বেশী প্রয়োজন সে গিয়ে গাড়ীতে বসে পড়ো। খামাখা বা হাত ঢুকিয়ে আমার টেম্পার গরম করো না।

পরাগ, তারিশা চুপসে যায়। অতঃপর তারা চারজন সামনের দিকে অগ্রসর হয়।

গ্রামের রাস্তায় গাড়ী চালাচ্ছে জায়ান। সাথে আছে সীতারা আহমেদ,নাজিয়া,নিধি,সায়ন্তিক। তারা এই গ্রামের দোকানে যাবে।

সুনশান নিরব রাস্তা! তেমন একটা লোকের দেখা নেই। জায়ান গাড়ী চালাচ্ছে মনোযোগ সহকারে। হুট করে কোথা থেকে একটা মেয়ে আসে গাড়ীর সামনে। জায়ান ব্রেক কষে নেয়। মেয়েটা জানালার কাছে এসে হাত দিয়ে খোলতে বলে। জায়ান জানালা খোলতে আনায়া বলে,

-প্লিজ একটু লিভ দিন। আমি বড় বিপদের পড়েছি।

নাজিয়া জায়ানের পাশের সীটে বসা। সে তাকিয়ে দেখে আনায়া। চিনতে ভুল হয়নি কিন্তু অপরিচিত সেজে কথা বলতে হবে তার মায়ের সামনে। তড়িঘড়ি জায়ানকে বলে,

-আপুটা নিশ্চয়ই বিপদে পড়েছে। আর গাড়ীতে জায়গা আছে সামনের সীট তো খালি প্রায়।

জায়ান মাথা নাড়িয়ে তড়িঘড়ি দরজা খুলে দেয়। আনায়া মিসবাহ কে নিয়ে গাড়ীতে বসে পড়ে। জায়ান পুনরায় গাড়ী স্টার্ট দেয়। আনায়া তাকে বলে,

-সামনে কিছু লোক দেখবেন। প্লিজ গাড়ী থামাবেন না ওরা আমাদের পিছু নিয়েছে।

তখন জায়ান বলে,

-ওদের সাথে আপনার কোন শত্রুতা আছে?

আনায়া খেয়াল করে নিধিকে সাথে সায়ন্তিককে। যদিও নিধি,নাজিয়াকে চিনে। কিন্তু তারা দু’জন চুপ। পাশে তাকাতে থমকে যায় আনায়া।

সীতারা আহমেদ তেমন রিয়েক্ট করেনি। সে নিজেও জানে না পাশে তারই মেয়ে বসা। কতগুলো বছর আনায়াকে দেখে না। সেই পাঁচ বছর কী ছয়বছর বয়সে ছেড়ে এসেছিলেন। এখন তো বাইশ একুশ বছর বয়স হবে। এতো কিছু চিনে না তিনি।

আনায়ার কোলে মিসবাহ বসা। সে চুপচাপ। গাড়ীতে সবাই মোটামুটি চুপচাপ। তখন আনায়া বলে,

-আমাদেরকে একটু পার্কের কাছে নামিয়ে দিয়ে আসবেন? আমার হাজবেন্ডকে কল দিয়ে বলে দিচ্ছি চলে আসতে।

-আপনার পেছনে ওরা পড়লো কেন?

প্রশ্ন করে জায়ান। আনায়া বলার আগে মিসবাহ বলে,

-ওরা আমার মামুর বিরোধী দলের লোক। আমার মামুর ক্ষতি করার জন্য আমাদেরকে কিডন্যাপ করতে চায়।

নাজিয়ার মাথায় মূহুর্তে শামিম সরদারের নাম চলে আসে। জায়ান তো শামিম সরদারের পক্ষে! এখন যদি শোনে বন্ধুর শিকার শত্রুর সম্পদ তার হাতে, তার খাঁচায় আদৌ ছেড়ে দিবে তো? বিশেষ করে শামিম সরদার চাবি ঘুরালেই সব শেষ। নাজিয়ার মনে পড়ে, সে জায়ানকে বলেছে শামিম সরদারের সঙ্গ ত্যাগ করতে। নিশ্চয়ই নাজিয়ার কথা শোনবে জায়ান। তবুও ভয় হচ্ছে জেনেশুনে যদি অজান্তে বিপদে ফেলে দেয় আনায়াকে।

আনায়া নিবরাসকে কল দেয়। সাথে,সাথে রিসিভ হতে বলে,

-পার্কের সামনে অপেক্ষা করুন আমরা আসছি।

কথাটা বলে কল কেটে দেয় আনায়া। মিসবাহকে শক্ত করে ধরে বসে! গাড়ীতে লাইট জ্বলছে সীতারা আহমেদের দিকে একটু পর পর নজর দিচ্ছে আনায়া। তার কোলে একটা ছেলে বসে আছে। দেখতে অনেকটা আনায়ার চেহারার অবয়ব পেয়েছে। না পাওয়ার কী আছে? বাবা ভিন্ন মা তো একজনই!

জাফিন আনায়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আনায়া মুচকি হাসে! ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে জাগলো না মনে। সীতারা আহমেদের দিকে তাকাতে মুখটা মলিন হয়ে যায়। তার মা তাকে চিনতে পারছে না। এতোটা পর হয়ে গেলো? মানুষ বলে নিজের গর্ভের সন্তান যতই বড় হোক আলাদা টান থাকে! যতই অচেনা হোক তবুও চেনা,চেনা লাগে। আর সে কী জানে না আনায়ার বিয়ে নেতার সাথে হয়েছে যার অহরহর শত্রু!

নাজিয়া তার মায়ের দিকে তাকায়। সে ফোনে ব্যস্ত! পাশে তার বড় মেয়ে অথচ তার ভাবনা নেই। সত্যি কী চিনতে পারছে না আনায়াকে? নাজিয়া তখন বলে,

-আপু তোমার নাম কী?

-মিসেস মির্জা।

-আরে সেটা না তেমার আসল নাম বলো?

-অনু।

তখন মিসবাহ বলে,

-আনায়া ইবনাত না? অনু হলো কখন বউমনি?

-সোনা ওটা আনায়ার সংক্ষিপ্ত অনু।

সীতারা আহমেদ চোখ তুলে তাকান। আনায়ার দিকে তাকাতে দেখতে পান সে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। আনায়া তার বড় মেয়ের নাম ছিলো। কিন্তু কতগুলো বছর তাকে দেখেননি তিনি। এমনকি মেয়ের চেহারাটাও মনে নেই!

কেউ কিছু বলেনি আর। জায়ান ও প্রশ্ন করেনি। আনায়াকে নিয়ে পার্কের কাছে আসে। গাড়ী থেকে সবাই নামতে নিবরাসদের দেখতে পায়।

মিসবাহ আনায়াকে দেখে নিবরাস সবার আগে ছুটে আসে। পাবলিক প্লেসেই আনায়াকে জড়িয়ে ধরে নিবরাস। আনায়ার লজ্জা লাগছে। নিবরাসের তাতে হেলদোল নেই। নাজিয়া নিধি মিটমিট হাসছে। নিবরাস উত্তেজিত হয়ে বলে,

-তোমার কোথাও লাগেনি তো? ওরা কিছু করেনি তো আবার?

-না কিছু করতে পারেনি। ভাগ্যিস ওনাদের গাড়ীর সামনে পড়েছি।

জায়ান নিবরাসকে দেখে অবাক হয়ে যায়। শাহরিয়ার সায়ন্তিক সে নিবরাসের সাথে কুশল বিনিময় করে। এমপি স্যারের দেখা এভাবে পাবে ভাবতে পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা এমপির ওয়াইফকে সেভ করতে পেরেছে। নিবরাস জায়ানকে বারবার ধন্যবাদ দেয়।

সীতারা আহমেদ বুঝেছেন আনায়া তারই মেয়ে। খবর এসেছিলো মেয়ের বিয়ে এমপির সাথে হয়েছে। এমপিকে সবাই চিনে। কিন্তু তিনি আর কথা বাড়াননি। শুধু মেয়ের দিকে একনজর তাকান। পা থেকে মাথা অব্দি দেখেন।

সেখানে তাঁদের কথাবার্তা হতে তাদেরকে বিদায় জানিয়ে নিবরাস আনায়া,মিসবাহকে নিয়ে গাড়ীতে বসে পড়ে। রাত প্রায় সাড়ে দশটার কাছাকাছি।

গাড়ীতে বসেও নিবরাস আনায়াকে এক হাতে কাঁধে রেখেছে। পারে না গাড়ীতেই জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। আনায়ার মনে হচ্ছে সে হারিয়ে গেছে আর অনেকগুলো বছর পর তাকে ফিরে পেয়েছে। মিসবাহ সে অভিমান করে আছে। তার মামু সে তখন একটু জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়েছিলো এখন আর কিছু বললো না।

তারিশা বিরক্তি নিয়ে পেছনে বসে আছে। আজকের ঘুরাঘুরি টাই মাটি।

-এদের বর বউয়ের নাটক শেষ হবে না এ জীবনেও। এতো আহ্লাদ করা লাগে? ঢংয়ের শেষ নেই।

তারিশা মনে,মনে ভেংচি কাটে। আনায়ার গুষ্টি তুষ্টি মনে মনে উদ্ধার করে নিচ্ছে সে।

আনায়া মন মরা হয়ে বসে আছে। তার মা তাকে দেখেও না দেখার ভাণ করলো। চেনে না এমন কোন কথা না! নিবরাসকে দেখার পর নিশ্চয়ই বুঝেছে। কই তাকে তো জড়িয়ে ধরলো না একবার ও। অবশ্য নিজের স্বামী, সংসার সন্তানদের নিয়ে বেশ সুখেই আছেন।

কঠোর মনটাও ভেঙে যাচ্ছে বারবার। এক্ষুনি কান্না করতে পারলে শান্তি লাগতো আনায়ার। কান্না পাচ্ছে কিন্তু কান্না করতে পারছে না।

বাড়ীতে আসতে সবাই গাড়ী থেকে নামতে নিবরাস কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে, ‘যা হয়েছে কেউ যাতে কাউকে কিছু না বলে। এমনকি মিসবাহও যাতে মুখটা চুপ রাখে।’

মিসবাহ সে তো অভিমান করে আছে। বাকীরা ভেতরে চলে যায়। মিসবাহ ভেতরে যাওয়ার সময় আনায়া তাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খায়।

-মিসবাহ সোনা বেস্ট! ব্রেইভ, ইন্টেলিজেন্ট।

-মামু একবার ও আমায় কোলে নিলো না। আমি কতগুলো দৌড় দিলাম কিছু খাওয়ালো ও না।

নিবরাস কোলে তুলে নেয় মিসবাহকে। মুখশ্রী তে চুমুতে ভড়িয়ে দেয়।

-সোনা আগামী কালকে এক ঝুড়ি চকলেট এনে দেবো।আজকে মামুর প্রেসার লো হয়ে গেছে। এখন মামিকে জড়িয়ে ধরে প্রেসার ঠিক করতে হবে।

-যাও তুমি ভীতু! সামান্য বিষয়ে কারোর প্রেসার লো হয়?

-আরে আমার সোনা এতো সাহসী! মাশাল্লাহ। নির্বাচনে তোমাকে দাঁড় করাবো।

মিসবাহ মাথা নাড়ায়। হেসে ভেতরে প্রবেশ করে। নিবরাস বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। আনায়া ভেতরে প্রবেশ করার জন্য পা বাড়াতে নিবরাস তার কোমড় জড়িয়ে ধরে এক টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।

-জান আমার প্রেসার লো হয়ে গেছে। একটু জড়িয়ে ধরবে আমায়? প্রেসারটা ঠিক করতে চাই।

– জড়িয়ে ধরার মাঝে প্রেসার ঠিক হওয়ার কী সম্পর্ক নেতাসাহেব?

-কোন সম্পর্ক নেই। তবে আমার লো প্রেসার হাই হবে তুমি জড়িয়ে ধরলেই। একটুর জন্য তো আমি হার্ট অ্যাটাক করিনি।

আনায়া জড়িয়ে ধরে নিবরাসকে। ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলে,
-হার্ট অ্যাটাক করলে নিউজ হতো, ‘নেতা বউকে এক ঘন্টার জন্য না পেয়ে হার্ট অ্যাটাক করেছে। এই নেতা নাকী আবার করবে জনগনের সেবা! এলাকার উন্নয়ন? সে তো বউ ছাড়া মৃ’ত। বউ কাছে নেই মানে নেতা হসপিটালে ভর্তি।

-একঘন্টা আমার কাছে এক যুগের সমান। আমি তো এক সেকেন্ডের জন্যও আমার বউকে ছেড়ে দূরে থাকতে রাজী নই।

-আমিও আমার বর মহাশয়কে ছেড়ে থাকতে রাজী নই।

#চলবে

হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-১০

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|১০|
#শার্লিন_হাসান

সকাল বেলা হাঁটতে বের হয়েছে সবাই। চিকন সরু রাস্তায় সবাই হাঁটছে। মিসবাহ ছুটাছুটি করছে রাস্তায়। আনায়া সবার শেষে হাঁটছে। নিবরাস কলে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে।

হাটাহাটি শেষ করে তারা নাস্তা করে নেয়। এই বাড়ীতে থাকা একজন কাজের বুয়া আরেকজন মধ্যবয়স্ক লোক যিনি বাড়ী দেখাশোনা করেন। তারাই খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। নিবরাসরা আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে রাজশাহীর মোহনপুর ব্যাক করবে।

আনায়া মিসবাহর সাথে বাড়ীর ছাদে যায়। শেওলা পড়েছে অনেকটা। হয়ত কেউ আসে না সেজন্য! ছাঁদটা অনেক পুরোনো লাগলো! বেশীক্ষণ থাকলো না আনায়া মিসবাহ সহ চলে আসে।

*****

নিধির মামনিরা আপ্পায়নে ব্যস্ত! প্রায় বছর পর তারা চট্টগ্রাম এসেছে। নাজিয়া বাড়ীটা ঘুরে,ঘুরে দেখছে। জায়ানের নানু বাড়ী!

সকালে নাস্তা শেষ করে নিধি,শাহরিয়ার,জায়ান, নাজিয়া হাঁটতে বের হয়। অবশ্য কেউই তেমন রাস্তা ঘাট চেনে না।

তবুও হাঁটছে তারা। এক গ্রাম ছাড়িয়ে অন্য গ্রামে পা রেখেছে। চট্টগ্রাম এর মানুষের আঞ্চলিক ভাষা তেমন বুঝে না তারা।

আগামী কালকে তারা সবাই রাতে ঘুরতে বের হবে। অবশ্য গ্রামগুলো সাধারণের মাঝে তবুও ঘুরে দেখবে তারা। একেক জেলায় একেকরলম সবকিছু! একেক কালচার একেক নিয়ম অনেককিছুই তাদের অজ্ঞতার মাঝে পড়ে।

ঘুরাঘুরি শেষ করে বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা হয় তারা।
জায়ানের ছোট মামাতো ভাই তাঁদের নিয়ে দিঘির পাড়ে যায়। শান দিয়ে বাঁধাই করা সিঁড়ি তে নামে নাজিয়া,নিধি। জায়ান নামেনা তার ভয় করে যদি পা পিছলে পড়ে যায়। নাজিয়া নিধিকে বারণ করেছে নামতে। শেওলা পড়ে আছে কিছু,কিছু সিঁড়িতে।

নিধি কয়েক সিঁড়ি নামতে জুতা স্লিপ কেটে পড়তে যাবে নাজিয়ার হাত ধরে নেয়। তাতেও তাঁদের রক্ষা হয়নি দু’জন মিলে পানিতে পড়ে যায়। নাজিয়া সাতার জানে না।

জায়ান আর এক মূহুর্ত ও দাঁড়ায়নি গুটিগুটি পায়ে পানিতে নেমে পড়ে। নিধি সাতার কেটে সিঁড়িতে এসে বসে। জায়ান নাজিয়াকে নিয়ে আসে। শাহরিয়ার সায়ন্তিক সেখানে দাঁড়িয়ে রয়। তার ভয় করে যদি সেও পড়ে যায়।

নিধি বার কয়েক কেশে উঠে। সায়ন্তিকের দিকে নজর যেতে মেজাজ তুঙ্গে উঠে যায়। চেঁচিয়ে বলে,

-ওইখানে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আপনার বউ পড়ে গেছে মরে যাচ্ছে দয়া মায়া লাগে না?

-আমার ভয় করছে যদি আমিও পড়ে যাই।

-যাহ্! এই শা*লা তো দেখি মেয়েদের থেকেও ভীতু।
মনে,মনে কয়েকটা গালি দেয় নিধি। জামাইকে শা*লা বানিয়ে দিয়েছে তারজন্য কয়েকবার তওবা পড়ে নেয়। এটা তার কমন গালি! বিশেষ করে ছেলেদের এটা বলে।

নাজিয়াকে ধরে উপরে নিয়ে আসে জায়ান। নিধি সেও আস্তে,আস্তে উঠে আসে। ততক্ষণে জায়ানের আম্মু সাথে জায়ানের নানুও আসে। কেউ নিধিকে বকছে তো কেউ জায়ানকে। জায়ান কী করেছে যে ওদের আগলে রাখতে পারলো না।

জায়ান বুঝাচ্ছে নিধি পিছলা খেয়েছে এতে কারোর দোষ নেই। আর পড়ে যাওয়ার পর সেই তো উঠিয়ে আনলো নাজিয়াকে। কে জানে সবার কথা শোনে নাজিয়া আবার তার সাথে না রাগ করে বসে।

বাড়ীতে এসে এক দফা বকা খেয়েছে নাজিয়া। সীতারা আহমেদ তাকে বকা দিয়েছে। যদিও জায়ান সামলে নেয়। তাতেও নাজিয়ার মন ভে’ঙে গেছে। সামান্য কয়েকটা ক’টু কথাই তার কিশোরী মনে এক্কাদোক্কা খেলছে। নিতে পারেনি কথাগুলো! যদিও এর থেকে বড়,বড় বিষয়গুলো হাসিমুখে সামলে নিয়েছে কিন্তু ছেট,ছোট ব্যপারগুলো নিয়ে হুটহাট মন খারাপ হয়ে গেছে। তার কী দোষ? আর মা জাতিরা অপমান করতে গেলে ছাড়ে না। একবারে মুখ না দেখানোর মতো অপমান।

জামা কাপড় চেন্জ করে লিভিং রুমে বসে নাজিয়া। হাতে তার আম্মুর ফোন! ফেবুতে একটু ঢু মারতে তার ছোট ভাই আসে ফোনের জন্য। ফোনে ভিডিও দেখবে সে। নাজিয়া দিতে নারাজ! তার মতে, ‘ছোট বাচ্চাদের ওতো ফোন দেখতে নেই।’ কিন্তু তার ভাই কান্না করছে। তারউপর সীতারা আহমেদ এসে নাজিয়াকে বকা দিয়েছে আবার। বেড়াতে এসে আবার কিসের ফোন?

উঠে চলে আসে নাজিয়া। জায়ান জাফিনের গাল টেনে দেয়। উঠে নাজিয়ার রুমের দিকে যায়।

সে দরজা বন্ধ করে রেখেছে। জায়ান বার কয়েক ডাক দেয়। নাজিয়া দরজা খুলে দেয়। তবে তার মন খারাপ সহজে জায়ান ধরে নেয়। নিজের ফোন এগিয়ে দিয়ে বলে,

-আইডি লগ ইন করে নিও। আমি কিছু বলবো না ফোন ইউস করতে পারো।

-ধন্যবাদ! লাগবে না।

-আরে কাকীমা তো এমনই! তোমাকে বেশী শাসন করে। তবে আমার কাছে তুমি খোলা ডায়েরির মতো! আর ডায়েরিটা আমার আগলে রাখতে চাই।

-তুমি যতটা বলছো ততোটা নই আমি। নির্দিষ্ট সীমার মাঝে! আর আমার মনে পড়ছে না তুমি যতটা এলোমেলো ভাবে আমায় সাজাচ্ছো আমি ততটা এলোমেলো। আর শোনো আমায় নিয়ে তোমায় এতো ভাবতে হবে না। আমি নিজেকে নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা করি।

-আয়াত পাখি বেশী পেকে গেছো।

-তোমার মতো বোকা কয়জন আছে? আচ্ছা তুমি কী এই জনমেও একটু চালাক হবা না?

-আমি যথেষ্ট চালাক। শুধু তোমার চোখে বোকা লাগতেই পারে।

-হ্যাঁ দেখাই যাচ্ছে চালাকের নমুনা। আমায় এতো দরদ দেখাতে হবে না। পারলে নিজের কাকীমার দোষ,ভুলগুলো চোখের সামনে তুলে ধরো। মানুষ মানেই ভুলত্রুটি দিয়ে গড়া! নিজেকে এতোটা সঠিক মনে করা ঠিক না বরং নিজের ভুলগুলো খুঁজে নিজেকে সুধরে নেওয়া।

-সময় হলে সব বুঝবে। এই নিয়ে মন খারাপ করো না।

-আমার আবার মন খারাপ!

তাচ্ছিল্য হাসি টানে ঠোঁটে। তখন জায়ান পকেট থেকে দু’টো চকলেট বের করে নাজিয়ার দিকে এগিয়ে দেয়।

-তুমি চকলেট লাভার। আই হোপ মন খারাপে চকলেট পেলে মন কিছুটা ভালো হবে তোমার।

নাজিয়া চকলেট দু’টো হাতে নিয়ে ধন্যবাদ দেয় জায়ানকে। জায়ান হেঁসে প্রস্থান করে। জায়ানের কেয়ারগুলো নাজিয়ার ভালো লাগে আবার ভাবায় ও! শুধু কী ভাই,বোন হিসাবে? নাকী জায়ান তাকে অন্যকিছু ভাবে। তার মনে হয়না বোন হিসাবে এতো কেয়ার করে। নাহলে নিধিও সমান কেয়ার পেতো। কিন্তু জায়ান তাকে একটু আলাদা রকমের কেয়ার করে।

*****

দুপুরে লান্স করে রুমে এসে শুয়ে পড়ে আনায়া। হুটহাট মন খারাপ তার। সব বিরক্ত লাগছে! হয়ত মুড সুয়িং ভাবতে আরো বেশী বিরক্ত হয় আনায়া। তার মুড সুয়িং মানে জ্বালিয়ে মারবে সাথের জনকে। এটা ভালো লাগবে না ওরা ভালো লাগবে! একে বিরক্ত লাগবে তাকে বিরক্ত লাগবে। ভালো কথাও যেনো বি’ষের মতো
লাগে।

নিবরাস রুমে আসে। আনায়াকে দেখে বলে,

-এই বাড়ীতে ভালো লাগছে তোমার?

-মোটেও না। আমার মন চাচ্ছে রাজশাহী চলে যাই। আমার শহর আমার কাছে বেস্ট।

-সে তো বটে।

সন্ধ্যায় তারা সবাই বের হয় ঘুরতে। মিসবাহ,তারিশা,রোহিত, পরাগ,নিবরাস,আনায়া। গাড়ী নিয়েই বের হয়। আনায়ার মন ভালো নেই তবুও সবার সাথে বের হয়েছে।

নিবরাসদের গাড়ীর পেছনে শামিম সরদারের গাড়ী আসছে। তাঁদের গাড়ীর থেকে অনেকটা দূরে শামিম তার গাড়ী থামায়।

একটা পার্কের কাছে এসেছে নিবরাসরা। সন্ধ্যায়ও মানুষের আনাগোনা আছে।

নিবরাস পরাগ কথা বলতে,বলতে পার্কে ঢুকছে। তারিশা রোহিতের সাথে তাদের পেছনে। আনায়া মিসবাহর সাথে আস্তেধীরে ঢুকছে। মিসবাহর কথায় আনায়া দোকান থেকে আইসক্রিম কিনতে গেছে। তার সাথে মিসবাহ ছিলো তবে সে পেছনে দাঁড়ানো। আনায়া আইসক্রিম দু’টো হাতে নিয়ে টাকা দেয় দোকানদার কে। পেছনে ঘুরতে দেখে মিসবাহ নেই। দোকানদার কে তড়িঘড়ি জিজ্ঞেস করে,

-মামা ওকে যেতে দেখেছেন?

বিনিময় দোকানদার হাসে। তার হাসিটা আনায়ার পছন্দ হয়নি। তখন দোকানদার বলে,

-মিসবাহকে জায়গা মতো পাঠিয়ে দিয়েছি মিসেস মির্জা। পারলে খুঁজে বের করো! এই ছোকড়াকে দিয়ে তোমার প্রাণপ্রিয় স্বামীকে জব্দ করবো আমরা। আমি কিন্তু দোকানদার নই!

আনায়া আইসক্রিম রেখে বেড়িয়ে আসে। পার্কে কত মানুষই তো। এতো মানুষের ভীড় থেকে কীভাবে কী? নিশ্চয়ই পার্কের ভেতরে প্রবেশ করবে না মিসবাহকে নিয়ে। আনায়া বেড়িয়ে পড়ে তড়িঘড়ি। বাইরে গাড়ী পার্কিংয়ের জায়গা সেখানে অনেক গাড়ী। তার কিছুটা সামনে গেলে ল্যাম্পপোস্ট তেমন দোকানপাট নেই।
অনেকদূরে দোকান সেখানেও বখাটে দের আড্ডা।

আনায়া ফোনের ফ্লাশ অন করে। তার বুক কাঁপছে। মিসবাহ তো উসিলা! তার নেতার যদি কিছু হয়ে যায়? মনের মাঝে অজানা ভয় গ্রাস করে। ল্যাম্পপোস্টের কাছে এসে আনায়া মিসবাহ বলে বার কয়েক ডাক দেয়।

আনায়ার ডাক কানে আসে শামিম সরদারের লোকদের। তারাও বাচ্চাটাকে খুঁজছে। দোকান থেকে বহুকষ্টে বাইরে আনলেও হাতে কামড় দিয়ে কোনদিকে জানি ছুটেছে বাচ্চাটা। দেখে পাঁজি মনে হয়েছে।

ফোনের ফ্লাশ লুকিয়ে ফেলে আনায়া। তার মনে হলো তার আশেপাশে লোক আছে। ভেবে আনায়া বড় গাছটার পেছনে লুকিয়ে পড়ে

শামিম সরদারকে কল লাগায় একজন। কল রিসিভ হতে বলে,

-স্যার ছোকড়াটা পালিয়ে গেছে। কী পাজি ছেলে! হাতে কামড় দিয়ে পালিয়ে গেছে মামুর মতোই হয়েছে।

-কু*ত্তার বা** তোদের দ্বারা কোন কাজই হবে না। আমার ছেলেটাকে চাই মানে চাই। যে করেই হোক! এতোদূরে আসলাম এতো সময়,তেল, টাকা সব খরচ করে। বাচ্চাটাকে আমার চাই মানে চাই।

-কিন্তু স্যার অন্ধকারে কোথায় খোজবো?

-আমার শ্বশুর বাড়ীতে খোঁজ হারামজাদা। আমি বলে দেবো কোথায় খুঁজবি? নিজের গো*বর ভর্তি মাথাটাকে কাজে লাগা।

শামিম সরদার কল কেটে দেয়। রেগে গাড়ী থেকে বেড়িয়ে আসে সে। গাড়ীতে কয়েকটা লাথি মারতেও ভুলেনি সে।

-শীঘ্রই জায়গা বদল করো। অন্য জায়গায় খোঁজো! নিশ্চয়ই ছেলেটা পার্কের ভেতরে আবার প্রবেশ করছে। আমার সাথে পার্কে চলো আবার।

আরিফের কথা মতো বাকীরা চলে যায় পার্কের উদ্দেশ্য। আনায়া ফ্লাশ অন করে আশেপাশে তাকায়। না কেউই নেই সব চলে গেছে। তখন আনায়ার হাতে টান পড়তে ভয়ে লাফ দিয়ে উঠে আনায়া। ফ্লাশ ধরতে দেখে মিসবাহ। আনায়া তাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে,

-কোথায় লুকিয়েছিলে সোনা?

-ওই যে গাড়ীটার পেছনে।

আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় মিসবাহ। আনায়া খেয়াল করে অন্ধকার বললে ভুল হবে ল্যাম্পপোস্টের কিছুটা আলো বাড়ি খাচ্ছে তবে গাড়ীর পেছনটা নিশ্চয়ই গাছপালা দ্বারা আবৃত্ত জঙ্গল টাইপ হবে।

-চলো সোনা আমরা মামুকে কল দিয়ে জানিয়ে দেই?

-তাড়াতাড়ি কল দিয়ে বলো।

আনায়া নিবরাসকে কল দেয় তড়িঘড়ি। কল রিসিভ হতে নিবরাসের ব্যস্ত কন্ঠ শোনতে পায় আনায়া।

-কোথায় তুমি? মিসবাহ কোথায়? তুমি ঠিক আছো?

-ল্যাম্পপোস্টের এখানে আমরা। তাড়াতাড়ি আসুন! বাকী কথা পরে বলবো।

আনায়া কল কেটে দেয়। তখন একটা ছেলে লাইট জ্বালায় তাদের চোখেমুখে। আনায়া চোখ বন্ধ করে নেয়। ফোন হাতে ছেলেটা বলে,

-স্যার নেতার বউ,ভাগ্নে দুটোকে একসাথে পেয়েছি।

-তাড়াতাড়ি দুটোকে আমার কাছে নিয়ে আয়।

শামিম সরদার লাইন কেটে দেয়।
আনায়া মিসবাহর হাত ধরে ছুটে বেড়িয়ে পড়ে। লোকটা ফোন পকেটে ঢুকাতে,ঢুকাতে লেট হয়ে যায়।

#চলবে

হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-০৯

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|৯|
#শার্লিন_হাসান

হসপিটাল থেকে বাড়ী ফিরবেন আনিসুল হক। সীট কেটে দেওয়া হয়েছে। আহিয়া ঔষধপত্র সব নিয়ে গাড়ীতে বসেছে। বিকেলে আবার শামিম সরদারের সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আছে।

বাড়ীতে এসে সব ঠিকঠাক করে নেয় আহিয়া। তেমন কেউই থাকে না বাড়ীতে।

আনিসুল হকের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে সে বেড়িয়ে পড়ে।

বাংলোতে আসতে আহিয়া খবর পায় মির্জা পরিবার চট্টগ্রাম যাবে।
শামিম সরদার সহ বসে প্লানিং করছে কী করা যায়।

-আচ্ছা ওর ভাগ্নেটাকে দিয়ে শুরু করি?

শামিম সরদার বলে। তখন আহিয়া হেঁসে বলে,

-আইডিয়াটা মন্দ না। ওর ভাগ্নেটাকে কিডন্যাপ করে ওকে জব্দ করবো। একবারে ওকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিবো। তারপর এমপি নির্বাচনে তুমি প্রার্থী হবা আর আমিও আমার প্রতিশোধ নিতে পারবো। মানে এক ডিলে দুই পাখি মারা।

-হুম! তাহলে চলো আমরাও যাই চট্টগ্রামে। আমাদের দলের কিছু এলাকায় থাকুক বাকীরা চট্টগ্রাম রওনা দেবো।

-তোমরা যাও আমি আমার বাবার কাছে থাকবো। অবশ্য এই বাংলোতেই তো সবাই একজোট হবো।

-তাহলে এই কথাই রইলো।

আহিয়া বেড়িয়ে যায়। শামিম সরদার তার দলের লোকদের বলে রেডি হয়ে নিতে তারা বের হবে।

****

বিকেলের দিকে সনাই রেডি হয়ে নেয়। বড় মাইক্রো করে তারা চট্টগ্রাম যাবে। রোহিত,পরাগ যাবে তাঁদের সাথে। তারিশা রেডি হয়ে গাড়ীর সীটে বসে পড়ে। মাইশা,মরিয়ম মওয়াজ তারা ও বসে পড়ে। নিবরাস সাইডে কলে কথা বলছে। আনায়া এখনো আসেনি তারই লেট হচ্ছে।

হিজাব ওরনা টা ঠিকঠাক করে বেঁধে নেয় আনায়া। সাধাসিধা টাইপ ড্রেসআপ পড়েছে আনায়া। লং ড্রাইভে লং কুর্তি সাথে হিজাব ওরনা! হিজাব বাঁধে না মাথা ব্যথা হয়ে যায় আধঘন্টা গেলেই। নিজের দরকারী জিনিস গুলো ব্যাগে ঢুকাচ্ছে আনায়া। হাত ব্যাগে ফোন নিয়ে নেয়। জুতা হাতে বেড়িয়ে আসে রুম থেকে।

লিভিং রুম পেড়িয়ে বাইরে এসে জুতা পড়ে নেয়।

আনায়া লেট তারিশার বিরক্ত লাগছে। বাকীরা ঠিকঠাক ভাবে আছে। আনায়াকে নিবরাস কিছু বলছে না লেটের জন্য!

আনায়া আসার পরেও নিবরাসের লেট। এবার আর তারিশা কিছু বলতে পারছে না। তবে মনে,মনে জামাই,বউ দু’জনকে বকা দিচ্ছে। নিবরাস বউ পাগ’ল হয়ে গেলো! অথচ আনায়ার জায়গায় তার থাকার কথা ছিলো। নিবরাস এতোটা স্ট্রং ছিলো যে মচকে যায়নি। নারীবাদী ছিলো! কিন্তু তার জীবনে তারিশা ছাড়াও আহিয়ার বোন ঢুকতে চেয়েছিলো। অবশ্য এই সবই তারিশা জানে!

নিবরাস আসতে গাড়ী স্টার্ট দেয় ড্রাইভার। সামনে পরাগ বসেছে। নিরব মির্জা যাবেন না। পরের সারিতে রোহিত,মাইশা, মরিয়ম নওয়াজ বসেছে। তৃতীয় সারিতে নিবরাস,আনায়া,মিসবাহ আছে। তারিশা একাই পেছনে। তাকে বলেছে মাইশা রোহিতের সাথে বসতে সে বসেনি। সবার পেছনে একাই বসেছে।

নিবরাসের পাশের সীট খালি। আনায়া ভাবছে কখন৷আবার তাারিশা বসে পড়ে ঠিক নেই। নিবরাস ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

*****

খান বাড়ীতে শাহরিয়ার সায়ন্তিক, নিধি এসেছে। নিধির নানু বাড়ীতে দাওয়াত পড়েছে তারাও চট্টগ্রাম যাবে। সন্ধ্যায় রওনা হয় তারা সবাই। দু’টো কার নিয়ে রওনা হয় তারা।

রাতে তারা রেস্টুরেন্টে যায়। নাজিয়া খাবার শেষ করে কফি নিয়ে বসেছে। বাইরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে! এই ওয়েদারে কফি বেশ উপভোগ করছে নাজিয়া। তখন জায়ান এসে বসে তার পাশের সীটে। নাজিয়া জায়ানকে দেখে ব্রু কুঁচকে তাকায়।

-আয়াত পতেঙ্গা সমুদ্রে যাবা?

-আজ্ঞে না! তুমিই যাও, আমার ভালো লাগছে না।

-তুমি চিন্তিত?

-হ্যাঁ!

-কী নিয়ে?

-আচ্ছা ভাইয়া তুমি এমপিকে চেনো?

-হুম, চিনি।

গম্ভীর হয়ে জবাব দেয় জায়ান। নাজিয়া বলে,

-খুব ভালো মানুষ সে।

-মোটেও না। তুমি তাহলে জানো না! ওর বাইরের রুপটা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবে কিন্তু ওর কিছু ভয়ংকর অতীত জানলে যে কেউ নাক ছিটকাবে।

-এই শোনো রাজনীতিতে এসে কেউই সৎ থাকতে পারে না। ঘাতকে প্রতিঘাত করতে হলে এমন খারাপ হওয়া লাগেই। আচ্ছা একটা কথা দেখাই, ‘আমি রাজনীতিতে আসলাম আমি সৎ হয়ে চলতে চাই। সৎ হয়ে চলতে পারতাম যদি বিপরীত দল আমার পেছনে না পড়তো। ওদেরকে ধমিয়ে রাখতে অসৎ কাজ দু চারটা করা লাগে। তুমি নিজে সরে আসলেই তো সে সুষ্ঠু রাজনীতি করতে পারে।’

-সনারই ক্ষমতা পাওয়ার ইচ্ছে থাকে। ওই সাদা পান্জাবি পড়ে এলাকা চড়বে! ভাষণ দিবে, মানুষ নেতা বলে সম্মোধন করবে সবারই আশা থাকে।

-সেজন্য ব্যবহার আর পার্সোনালিটিও লাগে স্ট্রং,গাঁজা খোরদের নেতা মানায় না।

কথাটা বলে নাজিয়া উঠে যায়। জায়ান বুঝেছে নাজিয়া কথাটা কাকে খোঁচা মেরেছে। শামিম সরদারকে নিয়ে একটু আধটু সবারই ধারণা আছে। আপাতত এলাকার বড় সন্ত্রাসী ও বলা যায়।

রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে সবাই কারে বসে। নাজিয়া জায়ানের পাশের সীটে বসেছে। জায়ান ড্রাইভিং করছে। তাদের পেছনে শাহরিয়ার সায়ন্তিক শিকদার সাথে নিধি আছে। গাড়ী চালাতে,চালাতে জায়ান প্রশ্ন করে,

-আচ্ছা শামিম সরদারের সাথে আমার মেলামেশা দেখে তুমি এসব বলছো?

-আমি কখন কী বললাম তোমায়?

-কিছু না।

-হুম! আজে বাজে মানুষের সাথে চলা ছেড়ে দাও।

-তুমি বলছো?

-হুম! তুমি খান বাড়ীর ছেলে, তোমার স্টাইল,ব্যক্তিত্ব সব আলাদা রকমের হবে যাতে এই ধরনের মানুষ তোমার আশেপাশে ঘেঁষতে না পারে।

-তাহলে চেন্জ করে নেই সব।

-আমার কথায়?

-হুম।

-আমার কথায় কেন?

-ভালো লাগে, তোমার উপদেশ।

-কাজে লাগাও।

মাথা নাড়ায় জায়ান। শাহরিয়ার সায়ন্তিককে নাজিয়া প্রশ্ন করে,

-আচ্ছা জিজু এমপিকে আপনার কেমন লাগে? মানুষ হিসাবে বা তার ব্যক্তিত্ব যতটুকু দেখেছেন বা শুনেছেন?

-তুমি এমপির পেছনে পড়লা কেন পাখি? সে কিন্তু ম্যারিড।

-তেমাকে এখনে কে বলেছে বা হাত ঢুকাতে? আর সে ম্যারিড এটা সবাই জানে ওকে? তুমি অন্য মাইন্ডে নেও কেন? উপজেলার এমপি তাকে নিয়ে দু’একটা কমপ্লিমেন্ট শুনছি মানুষের থেকে। তোমার মাইন্ড এতো ডার্টি কেন?

জায়ানকে বলে নাজিয়া। নাজিয়ার কথায় নিধি শব্দ করে হেঁসে দেয়। তখন শাহরিয়ার সায়ন্তিক বলে,

-শালা বাবু মুখটা বন্ধ রাখো শালিকা কিন্তু আগুন।বুঝেশুনে কথা বলো ওর সাথে।

-না জায়ান ভাইয়া ব*লদের সাথে থাকতে,থাকতে নিজেও দিনদিন আ*বাল হয়ে যাচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সঙ্গ পরিত্যাগ করো ভাইয়া। নাহলে এমন অপমান ছাড়া কিছুই জুটবে না কপালে।

জায়ান আর টু শব্দই করে না। তার মনে হচ্ছে আসলেই শামিম সরদার তার জন্য শনি। তার পরিবার পছন্দ করে না ব্যপারটা। সবচেয়ে বড় কথা আয়াত পাখি এসব পছন্দ করে না। তার উচিত সঙ্গ পরিত্যাগ করা। আজকেও কতগুলো জ্ঞান দিলো ওই টুকুন মেয়ে। বয়সের তুলনায় একটু বেশী ম্যাচিউর হয়ে গেলো না?

-বলুন জিজু?

-যতটুকু শুনেছি আমি ভালোই শুনেছি। তার ভালো কাজগুলো সত্যি প্রশংসনীয়। কিন্তু তার শত্রু বেশী।

-ভালো মানুষের শত্রু থাকে ব্যপার না। সবচেয়ে বড় কথা অধম আছে যারা তারাই এমন ভালো মানুষের পেছনে পড়ে।

জায়ান আড়চোখে তাকায় নাজিয়ার দিকে। কথাগুলো তার গায়ে বিঁধে যাচ্ছে। না আর উপায় নেই শামিম সরদারের সঙ্গ পরিত্যাগ করে নাজিয়ার মতো এমপির প্রশংসা করতে হবে এখন থেকে।

-এমপির শালিকা আমি! দেখি আমার পরিবারে আর কে তার শত্রুর সাথে হাত মেলায়। আমার বোনের পরিবারটা হ্যাপি থাকুক আর শত্রু কমুক এটাই চাই।

মনে,মনে বলে নাজিয়া। জায়ানের মুখের দিকে তাকাতে তার হাসি পাচ্ছে। যা অপমান দিলো মনে হয় সোজা হয়ে গেছে তার ভাই।

*****

রেস্টুরেন্ট থেকে ডিনার সেরে গাড়ীতে বসেছে সবাই। আনায়া নিবরাসের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। নিবরাস ও তাকে আগলে নেয়। তবে তারিশা আনায়ার পাশের সীটে বসেছে। নিবরাস তারিশার মাঝখানে আনায়া। তারিশা বসার পর ভেবেছে নিবরাস মাঝখানে বসবে কিন্তু আনায়া মাঝখানে বসে শেষে নিবরাস উঠে গাড়ীতে। তারিশা মুখটা সে কখন থেকে কালো করে রেখেছে। তাতে নিবরাসের কিছু যায় আসে না। সে তার অর্ধাঙ্গিনীকে আগলে রাখছে।

ভোরের আলো ফুটতে তারা নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়। নিবরাস আনায়াকে নিয়ে তাঁদের রুমে চলে যায়। সব গুছিয়ে রাখা হয়েছে তারা আসবে সেজন্য। আনায়ার পা থেকে জুতা জোড়া খোলে তাকে সুন্দর ভাবে শুইয়ে দেয় নিবরাস। কেন জানি আনায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে তার। এক ধ্যাণে তাকিয়ে আছে আনায়ার দিকে নিবরাস।

কিছুক্ষণের মধ্যে ফজরের আজান পড়ে যায়। নিবরাস আনায়াকে ডাক দেয়। কয়েকবার ডাক দিতে রেসপন্স পায়নি নিবরাস। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

-এই যে নিবরাসের পাখি উঠুন না? নামাজ পড়বেন না?

আনায়া নড়েচড়ে উঠে। নিবরাস আবারো ডাক দেয়,

-পাখি উঠো? দেখো ভোরের পাখিরাও জেগে গেছে শুধু তুমি জাগতে লেট করছো।

আনায়া উঠে। নিবরাস সহ নামাজ আদায় করে নেয়। পুনরায় নিবরাসের বুকে মাথা গুঁজে দেয় আনায়া। নিবরাস তার চুলে বিলি কেটে দেয়।

-আচ্ছা আপনার এতো শত্রু যদি কখনো এই রাজনীতির জন্য আমায় বা পরিবারের কাউকে হারাতে হয়।

-তোমার আমার সম্পর্কে ধারণা নেই পাখি। এই যে তুমি এখানে আছো আমার পরিবার এখানে আছে তোমাদের সুরক্ষার সব ব্যবস্থা করা আছে। তুমি চিনতে পারবে না আসলে কারা তারা! কিন্তু আমাদের আশেপাশে আছে তারা।

-হুম ভালো। কী দরকার ছিলো রাজনীতিতে আসার? শুধু,শুধু শত্রুতা।

-রাজনীতিটা আমার নেশা নয়, পেশা। ভার্সিটি লাইপ থেকে রাজনীতি বেছে নিয়েছি। আমি জানি এই রাজনীতি মঞ্চে সৎ থাকা যায় না। আমিও পারিনি সৎ থাকতে। তবুও আমি কারোর উপরকার করলাম, কেউ বিপদে আমার দ্বারা উপকার পেলো এটাই অনেক। আমি জানি আমি একাবারে ভালো না। ভালো খারাপ দু’টো মিলিয়ে মানুষ হয়ত আমি একটু বেশী খারাপ তবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা আমার দায়িত্ব আর কাজ বলে আমি মনে করি।

-হয়েছে আপনি যার কাছে যেমন হোন না কেন আমার লিডার আমার কাছে বেস্ট এন্ড অলওয়েজ বেস্টই থাকবে।

-আমি খারাপ হতাম না পাখি শুধু তোমার জায়গাটায় অন্য কাউকে বসাইনি,বসতে দিইনি। তোমার জায়গায় যেই হতো সেই জিততো।

-আমি জিতছি? বাট আপনি তো কখনো বললেন না আমি জিতছি এরকম বউ পেয়ে।

-বউ আনরোমান্টিক! জিতলাম আর কোথায়?

-আমি মোটেও আনরোমান্টিক না আমি লজ্জাবতী।

-আচ্ছা সমস্যা নেই আমার পাখি! তুমি লজ্জাবতী থেকো আমি নাহয় একটু ঠোঁটকাটা হবো।

#চলবে