Thursday, August 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 455



ভালোবাসায় রাঙিয়ে দাও পর্ব-০২

0

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(২)

ইশানের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে মুন। উত্তম ব্যাবহারে ধমকাচ্ছে তাকে ইশান এটা সে কি করলো তার সাথে কেন করলো? যখনই দাদীর কথা বলে দিয়েছে তখন আর ও রে*গেছে ইশান। তার কপালে এই ব*ল*দ মার্কা বউ জুটলো শেষমেষ?বিয়ে তো করতেও হলো এখনই বউ নিয়ে সে করবে কি??
এই মেয়েটাও সেই এসে থেকেই রুমের মেঝেঁর দিকে তাকিঁয়ে আছে কি দেখছে ওখানে কে জানে?

এই ভাবে সং এর মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

আপনিই তো বললেন চুপচাপ মাথা নিচুঁ করে দাঁড়িয়ে আপনি যা বলবেন সেই সব শুনতে।

নাও!! ইশান ওর উওরে আবার সব ভুলে গিয়ে নতুন করে পাগোল হবে সে। রাগে হিস হিস করতে করতে রুম থেকেই বের হলো ইশান। বাইরে গিয়ে বড় ভাবীর কাছে কফি চাইলো। ইমরান কোথায় আছে কে জানে!!

ইশানের দাদু এসে ইশানের পাশে বসলো। প্রতিদিন দাদুর আগমনে খুশি হলেও ইশান আজকে তা আর হলো না। এই মানুষ টার জন্যই আজ বিয়ে করতে হলো ওই মুন টা কে। ওকে কি বিয়ে করার মতো বয়স হয়েছে? ওত্তসব!!ইশান দাদুর পাশ থেকে উঠে গেলো কিচেনের দিকে। সেদিকে দেখেঁ নিয়ে দাদু উচ্চ কন্ঠে মুনকে ডাকলেন। মুন রুম থেকে বের হয়ে এলো ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে আকাশী রঙ এর থ্রি পিস পরেছে। এসেই দাদুর পাশে বসলো মাথায় আচঁল টেনে দাদী আর মা বার বার বলে দিয়েছে ওই বাসায় গিয়ে মাথার কাপড় ফেলবিনা খবরদার।

জ্বি দাদু বলুন!

তোমার জামাইয়ের কি লাগে না লাগে সে খেয়াল রেখ!এখন থেকে তো ওর জন্যই তোমাকে এই বাসাতে থাকতে হবে তাই ওর সমস্ত খেয়াল রাখা তোমার দায়িত্ব! বুঝা গেলো?

জ্বি দাদু।

যাও গিয়ে দেখো কি করছে ওখানে?

জ্বি।
মুন উঠে ইশানের পিছুঁ পিছুঁ গেলো গিয়ে বললো, আমি কি আপনাকে…….

আবার এসেছিস?তোকে না বলেছি আমার পিছুঁ আসবি না। একদম দুরত্বে রেখে চলাফেরা করবি।

কিন্তু দাদু তো বললো আপনার খেয়াল রাখা!

ইশান কফির মগ রেখে সোজা ওর দিকে তাকিয়ে বললো, আমি কি বাচ্চা? এই!তুই কি আমার বড় নাকি আমি তোর বড়? কে কার খেয়াল রাখা উচিৎ তুই বল।

ইয়ে মানে, মানে, মা…..

কিসের মানে মানে করছিস?আমিই বলছি তবে, আমি আমার খেয়াল রাখতে জানি তুই তোর খেয়াল রাখ ওকে?

হুম। কিন্তু দাদু যে বললেন,

আবার সেই এক কথা! তুই যাবি এখান থেকে?নাকি এক চ*ড় লাগাবো তোকে?

না না ইশান ভাইয়া যাচ্ছি আমি।

মুন রুমে গেলো তার ওখানে যাওয়ার দরকার আর নেই। সে এই বয়সে কখনো চ*ড় থা প্প ড় পায়নি। ছোটো থেকেই শান্ত শিষ্ট মেয়ে সে পড়া শোনায় ও পাক্কাঁ তাহলে প্রহার পাবে কেন সে?রুমে এসে জানালার পাশে গেলো এখান থেকে তার বাবার বাসার এক পাশে থেকে কিছুটা দেখা যায়। কখন আসবে সবাই?তাকে নিয়ে যেতে?এর আগে সে এসে একা থাকেনি। এর উপর আবার প্রথম রাতেই কেমন ইশানের সাথে থাকতে হলো!!
তুলনা মুলক কথাও কম বলে মুন। প্রয়োজন এর বেশি খুব একটা মুখ খুলেনা সে। বিছানায় বসে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে ভাবলো,কখন সে ফিরবে বাবার বাসায়??

ইশান আর রুমে এলো না। দুপুরের দিকে এসে গোসল করে নিয়ে আবার ও বাইরে গেলো এদিকে মুনকেও আবার নতুন একটা শাড়ি পরিয়ে দিলো রিয়া। মুখে এমনিতেই দুধ সাদা এর উপরে হালকা করে মেকআপ ছুয়েঁ দিলো। মিম এসেছে একটু আগে বোনের এই বয়সে বিয়ে দেওয়া সে কিছুতেই পছন্দ করেনি সব দোষ তার বাবার মনে করে সে। এসে থেকেই মুনের সাথে আছে সে। দুপুরের দিকে সবাই আসলো বাগানে আয়োজন করা খাবার খেয়ে মুনকে আর ইশানকে আবার ও বাসায় নিয়ে যেতে চাইলেন মুনের বাবা মিলন হক। কিন্তু ত্যা*ড়া ইশান জেদ ধরেছে সে কিছুতেই যাবেনা। শামছুর আহমেদ বলে কয়েও রাজি করাতে পারলেন না। ব্যাপারটা কেমন দেখাবে?বিয়ের পরদিন যদি মেয়ে জামাই কথা না শুনে এই নিয়ে দাদুর কথার ঝুড়ির শেষ নেই। ইশানের বাবা শরিফ আহমেদ ও গিয়ে বুঝালেন অবশেষে রাজি হয়ে গেলো। কি এক যন্ত্রনায় সে ফে*সেঁ গেলো এই বউ নিয়ে সে সকলের সাথে কি ভাবে পরিচয় করিয়ে দেবে?বন্ধুরা আর ও হাসাহাসি করবে ওকে টিটকারি করে কথা শুনাবে না?শেষ এ কি না ফিডা*র খাওয়া বউ এলো তার ঘরে?

মুন রুমে এসে নিজের ল্যাগেজ দেখে নিচ্ছে। ইশানের জন্য কাপড় তুলতে বলেছে দাদী সেও নাকি যাবে সাথে। কিন্তু ইশানের কি কাপড় নেবে সে?আলমিরাতে তো অনেক গুলিই রয়েছে। কি নেবে?ভাবতে ভাবতেই ইশান চুএ এসেছে রুমে। ওকে দেখেই মুন ওর সামনে গিয়ে বলে, তুমি যে যাবে!তোমার কোন কোন পোশাক নেব?

আমার জন্য নিতে হবে কেন?আমি কি গিয়ে তোর বাবার বাসায় এক মাস থাকবো?এই যাবো কাল সকালেই চলে আসবো।

তাহলে কি করবো?

আমাকে নিয়ে ভাবছিস কেন তুই?নিজের টা দেখ! যত্তসব!বলেই বিরক্ত মাখা মুখে বিছানার দিকে গেলো।

মুনের দাদু আর ইশানের রুমে দাদু এলো রুমে ওদের দেখেই মুন মাথার কাপড় ভালো করে নিলো। মুনের দাদু এসে বসলেন বিছানার এক পাশে ইশান ও পাশ ঘুরে শুয়েছে। আর আর ইশানের দাদু সোফায় বসলেন এই নাতীর আশে পাশে যেতেও তার এখন কেমন কেমন লাগছে। কি জেদ ভাবা যায়?

কি হলো দাদু ভাই?সারা রাত কি ঘুমাওনি?এখন এই বিকেলে ঘুমিয়ে গেলে?আমি আর ও এলাম নাতনী জামাইয়ের সাথে গল্প করবো বলে।

ইশান মুনের দাদুর আওয়াজ পেয়ে উঠে বসলো ভদ্রতার সহিত বললো, কি করে ঘুমাই বলুন?আপনার সুন্দরী নাতনী রেখে!

উনি হাসঁলেন মুনের দিকে তাকিয়ে। এরপর ইশানের সাথে গল্প জুড়ে দিলেন।

চলবে
#মিশকাতুল

রেসপন্স প্লিজ!!

ভালোবাসায় রাঙিয়ে দাও পর্ব-০১

0

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(১)
মিশকাতুল

❝সকাল সকাল ব্রাশ না করেই আমায় চু**মু দিয়েছিস কেন?মুন!!❞
ইশানের ধম*ক মিশ্রিত কন্ঠে কেঁপে ওঠে ছোট মুন। তার কি দো*ষ! দাদীই তো বলেছিলো বিয়ের রাতে জামাইকে একটু আকটু চুমু দিতে!! আজ তো তাদের বিয়ের রাতই গেলো গত কাল বিকেলেই মুনকে ধরেঁ বেঁধে দাদী ইশানের সাথে বিয়ে দিলো। যদি দাদী জিজ্ঞেস করেন,চু*মু দিয়েছিলাম কি না?তাহলে কি বলতো?মুন!কিন্তু এখন কি হবে? ভ*য় পেয়ে এক দৌড়েঁ ইশানের মায়ের কাছে চলে গেলো সে। এখন এই মায়ের মতো মানুষ টাই পারবে এর হাত থেকে রক্ষা করতে।
ইশানের দাদু আর মুনের দাদীমা হলো আপন দুই ভাই বোন পাশাপাশি জমিতে বাড়ি হলেও তাদের মধ্যে কিছু পুর্ব বছরেও সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিলো না। তিন বছর আগেই ইশানের দাদু খুবই অসুস্থ হয়ে যান সেই সময় মুনের দাদীমা ভাইয়ের সাথে সব অভিমান ভুলে দেখা করতে আসেন। দীর্ঘ সময়ের ভুল বোঝাবুঝির সম্পর্ক শেষ হয়। সেই সময় মুন ছিলো সবে ক্লাস সিক্সএ পড়ুয়া একটা মেয়ে। পাশের বাসার মানুষ গুলো তাদের আত্নীয় হয় শুনলেও কখনো এ বাসায় আসতে পারেনি। কেননা মুনের দাদু নিজেই এই নিয়ম বলেছিলেন যে ওই বাসায় কেউ যাবেও না কেউ আসবেও না। সকলেই ওনার কথা মেনে চলেন। এই বাসার কেউও যোগাযোগ রাখেনা সম্পর্ক অবনতি পায়। কিন্তু মানুষ যখন জীবন এর শেষ সময়টাতে চলে আসে তখন অজান্তেই নিজের করা ভুল গুলো ভুলে যেতে চায় তেমনি ইশানের দাদুও চেয়েছিলেন এক মাত্র বোনকে পেয়ে সব ভুলে গেলেন। তিনি সুস্থ হলেন দুই পরিবার আবার মিলিত হলো। ইশান তখন সবে মেডিকেল এ ভর্তি হয়েছিলো। খুব ছোটো বয়সে মুনদের বাসায় যাওয়া আসা করেছে এর মাঝের ১৪-১৫ বছর আর কথা বার্তা, যাওয়া আসা চলে নি। মুনের বোন মিমের বয়স প্রায় ইশানের সমবয়সী। সেই সময় মুনের বোনের বিয়ে ঠিক করা হয়েছিলো পাশের গ্রামে এক যুবকের সাথে সেই সুবাদে দাওয়াত ও পেলো আবার শুরু হলো দুই পরিবারের যাওয়া আসা। এভাবেই কে*টে*ছিলো তিনটে বছর ইশান তখন খালার বাসায় ছিলো সেখানেই পড়াশোনা করেছে। ইশান হলো বাবা মায়ের ২ য় সন্তান। তার বড় এক ভাই রয়েছে ইকবাল সে বর্তমানে গ্রামের একটা কলেজ এই শিক্ষকতা করছে। আর ছোটো ভাই ইমরান তাকেও পড়াশোনার জন্য বাইরে যেতে হলো। বাসায় রয়ে গেলো শুধু ইশানের মা, বাবা, বড় ভাই আর তার বউ, আর বয়স্কা দাদু। ইশানের দাদী সেই বছর বিশেক আগেই মা*রা গিয়েছে।

ইশান একদিন বেশ রাত করেই বাসায় আসে সোজা মায়ের রুমে গিয়ে জানিয়ে দেয় সে বিয়ে করবে। ছেলের মুখে বিয়ের কথা শুনে তিনি প্র‍থমে চিন্তিত হয়। এখনো ডাক্টার হয়ে বের হয়নি এত দ্রুত ইশান বিয়ে কেন করতে চাইছে?শাহেদা আহমেদ ছেলের কথা শুনে চিন্তিত হয়েই শরিফ আহমেদকে ছেলের প্রস্তাব জানায়। ইশানের বাবা বলেন,এখন কার ছেলেদের বিয়ে বাবারা করাতেই পারেনা নিজেরাই বউ তুলে নিয়ে আসে আমার ছেলে যখন বিয়ে করতে চেয়েছে আমি আর ভাবা ভাবি করছি না। মেয়ে দেখবো কাল থেকেই।
ইশানের দাদু শামছুর আহমেদ নাতী বিয়ে করবে শুনেই শরিফের সাথে কথা বলেন। মিলনের মেয়ে মুনকে বউ করে আনলে কেমন হয়?যথেষ্ট সুন্দরী, মেধাবী একটা মেয়ে। একটু বয়সে ছোটো তাতে কি?ভবিষ্যৎ এ সব মিল পরে যাবে।

ইশানকে মেয়ে দেখতে নিয়ে যেতে চাইলো, ইশান সাফঁ জানিয়ে দিলো যে কোনো মেয়ে ওনারা পছন্দ করতে পারে। ইশান সবার পছন্দতেই বিয়ে করবে। তাই খুশি হয়ে দাদুর সাথে ইশানে বড় ভাই ইকবাল আর শরিফ বের হলেন পাশের বাসার দিকে ইকবালের ফুফাতো ভাইয়ের মেয়েকেই সে ছেলের জন্য চাইতে। ওদের দেখে মুনের বাবা মিলন হক এগিয়ে এলেন পাশাপাশি বাসা হলেও হুট হাট আসা যাওয়া হয় না তাদের মাঝে ঘটা করেই নেমন্তন্ন করে থাকে দুই পরিবার। এই সময়ে ওদের দেখে মিলন হক খুব খুশিই হলেন। ওরা এগিয়ে এসে বসলেন ভেতরে গিয়ে দোতালা বাসাটায় মুনের বাবা একাই তার আর ভাই নেই একটা ছোটো বোন আছে সে শশুড় বাড়িতেই থাকে বেশির ভাগ সময়। মুনের মা মিথিলা ওদের জন্য শরবত নিয়ে এলো এরপর মিমকে নিয়ে নাস্তা বানালো। মুন এসব কাজ পারেনা। বই আর তার মাঝেই গভীর সম্পর্ক বাইরের দিকে নজর দেবে কখন?

ওরা সোফায় বসে কথা তুললেন, মুনের দাদু আর দাদী ও সেখানেই বসলেন কি এক পাকাঁ কথা নাকি বলতে এসেছেন। ইকবাল দাদুকে বললেন,আসল কথা ধর….. ভাই বোনের বেয়াই বেয়াইন গল্প পরে হবে।
শামছুর আহমেদ গলা পরিস্কার করে বললেন,আসলে কত গুলো বছর পর আমাদের দুই পরিবারে মিলন ঘটেছে আমি এই সম্পর্ক টাকে আর ও জোড়ালো বানাতে চাইছি আমাদের ইশানকে তো তোমরা সকলেই জানো…. ওর সাথে মুন দিদিভাইয়ের বিয়ের কথা নিয়ে এসেছি। আমরা নিজেরা নিজেরাই তাই বেশি সময় নেবেনা আশা করছি। ইশানের হাতে সময় খুব কম পাচঁ দিনের ছুটি নিয়ে এসেছে ও তোমাদের মতামত থাকলে আমরা দুদিনের মাঝেই বিয়ে করাতে চাইছি। যেহেতু তুলনামুলক ভাবে মুন অল্প বয়সী তাই ছোটো করেই অনুষ্ঠান করয়ে বিয়ের কার্য সম্পাদন করতে চাইছি।

ওনার কথা শুনে মুনের দাদী শামছুরনাহার কিছু সময় চুপ করে রইলেন তার প্রস্তাব পছন্দ হয়েছে কিন্তু মুন তো একেবারেই ছোটো এসব সংসারে দন্ত্য স্ ও সে বুঝবেনা কিভাবে কি হবে?আবার ভাইকে সে ফিরিয়েও দিতে পারবেনা। মিলন তার একমাত্র ছেলে সে জানে মা বাবা যে সিদ্ধান্ত নেবেন তাই মেনে নেবেন মেয়ের জন্য। কিন্তু মুন??তার চিন্তা দূর করতে ইশানের বাবা শরিফ আহমেদ বললেন,এত ভাববেন না ফুপিমা! মুন এখানে যেমন আদরে থেকে ওখানেও তেমন আদরেই থাকবে। আমরা সবাই জানি মুন সবে কিশোরী ও এখন বিয়ে করার জন্য উপযুক্ত নয় তবুও!!

মিলন হক এতক্ষন চুপ থাকলেও এবার বললেন,আমাদের কোনো অমত নেই। মামা আপনি বিয়ের আয়োজন করুন আমার মেয়ের বিয়ে আমি আপনার নাতনীর সাথেই দেব।

মিলনের কথা শুনে সবাই আলহামদুলিল্লাহ বললেন।বিয়ের দিন ফেললেন কাল দিন পর। শুক্রবার বিকেলেই ঘরোয়াভাবে বিয়ে হবে।

ইশান যখন জানতে পারলো মুনের সাথে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে তখন বেকেঁ বসলো সে কিছুতেই হাটুঁর বয়সী মেয়ে বিয়ে করতে পারবেনা। এই মেয়ে তার পছন্দ নয় এই বিয়ে হবেনা। বিয়ে ভাংতে বললেন।
কিন্তু শামছুর আহমেদ ওকে সহ সবাইকে বললেন,এ বিয়ে হবেই। তিনি কিছুতেই এখন বিয়ে বন্ধ করতে দেবেন না। এখন যদি বিয়েটা বন্ধ হয় তাহলে দুই পরিবারের মাঝে আবার ও মনোমালিন্য দেখা দিবে। তা তিনি কিছুতেই হতে দিবেনা। ইশান ও সবাইকে বলে দিলো সে চলে যাবে করবেইনা সে বিয়ে।
ইশান নিজের সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে ব্যাগ নিয়ে বের হলো বাসা থেকে চলে যাবে বলে কিন্তু সদর দরজায় আসতে থেমে গেলো সে শামছুর আহমেদ সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।

থামলে কেন?

দাদুর প্রশ্নে ইশান থমকে গেলেও চুপ রইলো না। গলা স্বাভাবিক রেখেই বলে,দাদু আমি এই বিয়েটা করতে চাই না। আমি বলেছিলাম আমি আপনাদের পছমদের মেয়েকে বিয়ে করবো কিন্তু এরকম বাচ্চা একটা মেয়েকে কখনোই নয়। আপনি কি বুঝতে পারছেন না?

ওসব আমি বুঝতেও চাইনা। তুমি এই বিয়ে করবে! আর যদি না করো তাহলে……

তাহলে কি দাদু?

তাহলে আমার জানাজা নামাজ আদায় করে চলে যেও!!

দাদু!!
ইশানের পথ যাওয়ার জন্য বন্ধ হয়ে গেলো বাধ্য হলো মুনকে বিয়ে করতে। আর মুন?সে তো যথেষ্ট ভদ্র মেয়ে! দাদু,দাদী, বাবা মা যা বলবে সেই মেনে নেবে । তাই তো আজ এভাবেও ইশানের বউ হয়ে গেলো সে।
——–
ইশান কিচেনের সামনে এসেছে রান্না করছে ওর আম্মু শাহেদা আর ইকবালের স্ত্রী রিয়া মিলে রান্না করছিলো সকালের জন্য দুপুরে বাইরে রান্না করা হবে ডেকচিতে। মুন সেখানেই গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কাল রাতে বিয়ে করে এখানে আসার পর সে আগেই ঘুমিয়ে গেছিলো সকালে ঘুম ভাংতেই পাশে ইশান কে দেখে দাদীর বলে দেওয়া কথা মনে পরে গেলো তাই তো চু*মু দিয়েছে সে।
ইশান এসে মুনকে ডাকলো। মুন আসার একটু পরেই ইশানকে দেখে শাহেদা জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে?

মুন ভয় পেয়ে কিছুই বলছেনা। ইশান ওর দিকে কটমট করে দেখে নিয়ে বললো,

কিছুনা। বলেই আবার রুমের দিকে চলে গেলো শাহেদা সেদিকে দেখে নিয়ে রুটি নিয়ে টেবিলের দিকে গেলো, তার কাছের আত্নীয়রা শুধু এসেছে সবাইকে নাস্তা কর‍তে দিবেন তিনি , রিয়া মুনকে বললো, বর এসেছিলো কেন?কিছু করে পালিয়ে এলে নাকি?

মুন রিয়ার দিকে একবার দেখে এই মেয়েটাকে সে আগে থেকেই চেনে জানে রিয়াকে ও আগে থেকেই ভাবী বলে ডাকে রিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে, আসলে ভাবী, দাদী তো বলে দিয়েছিলো আমি যেনো বিয়ের রাতে ইশান ভাইকে আদর করে দেই কিন্তু রাতে আমি আগেই ঘুমিয়ে গেছিলাম সকাল বেলা উঠেই ইশান ভাইকে দেখে দাদীর কথা মনে পরে গেলো! আর তাই ব্রাশ না করেই একটা চু*মু দিয়েছিলাম।

রিয়া একটু হাসলোঁ তারপর বললো, দারুণ করেছো মুন!!ভয় পাওয়ার কি আছে?প্রতিদিন দিবে তাও ব্রাশ না করেই। এখন রুমে যাও বাইরে থাকার দরকার নেই সবাই তোমায় আলাদা করে লজ্জা দেবে যা তুমি বুঝতেও পারবেনা।

কেন? আমাকে লজ্জা দিবে কেন?

রিয়া ওর দিকে তাকিয়ে বলে, এখন রুমে গিয়ে ব্রাশ করে গোসল করে নাও আমি গিয়ে আবার তোমাকে শাড়ি পরিয়ে দেব কেমন??

মুন মাথা হেলিয়ে ইশানের রুমে চলে যায়।

চলবে

হৃদয় কোঠায় চাঁদের পূর্ণিমা পর্ব-৩১ এবং শেষ পর্ব

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|৩১|
#শার্লিন_হাসান

আহিয়া কল কেটে দেয়। সীতারা আহম্মেদ রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়। তার মনে হচ্ছে গেম শুরু করলো সে আর গুটি ছিনিয়ে নিলো অন্য কেউ!
সব এলোমেলো হয়ে গেলো কীভাবে? নাজিয়ার তেমন খোঁজ মেলাতে পারেনি সীতারা আহম্মেদ। সেই চিন্তায় তার অবস্থা খারাপ।

শামিম সরদার বসে,বসে বকাঝকা করছে সবাইকে। সে শুধুই বসে আছে। না আনায়াকে না নাজিয়াকে পেল আর না নিবরাসকে। তাদের মধ্যের কেউ সব উলোটপালোট করে দিয়েছে।

*****
আনায়া, আহিয়া,তাহিয়া বসে,বসে গল্প করছে। আহিয়া অনেকবার ক্ষমা ও চেয়েছে আনায়ার থেকে! সে তো কিছুই জানতো না। তাহিয়ার থেকে শুনেছে নিবরাসের কারণেই সে বেঁচে আছে। আনায়া ও নিবরাসকে বলেনি কিছু সে কোথায় আছে না আছে।

আনায়াকে যে গাড়ীতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো সেই গাড়ীতে আবার আহিয়ার পাঠানো লোক অ্যাটাক করে। শামিম সরদারের লোক সব হসপিটালে ভর্তি। আহিয়া আনায়াকে নিয়ে তাঁদের বাড়ীতে চলে এসেছে। তাহিয়ার সাথে তার দেখা হয়েছে দুইদিন পূর্বে। সে নিজেই গিয়েছিলো সেই বাড়ীতে। তাহিয়া আহিয়ার চক্ষু আড়াল হতে গিয়েও হতে পারেনি।

নাজিয়াকে নিয়ে আনায়ার চিন্তা হচ্ছে। কোন খোঁজ খবর মিলাতে পারেনি কেউ। তবে এটা নিশ্চিত যে শামিম সরদার বা জায়ান কারোর কাছেই নাজিয়া নেই।

তাঁদের খোশগল্পের মাঝে আনায়া বলে উঠে,

-নিবরাসকে বলি এসে আমায় নিয়ে যেতে?

তখন আহিয়া বলে,
-আরে কয়েকদিন পর বলিস। আমাদের বাড়ীতে কয়েকদিন থেকে যা!

-একটা মাত্র জামাই আমার সে যদি হার্ট অ্যাটাক করে বসে?

-আচ্ছা থাক আগামী কালকে বললেই হবে। রাতটা কাটুক।

আনায়া মাথা নাড়ায়। তহিয়া আহিয়ার থেকে কিছুটা দূরত্বে এসে তার বাবাকে কল দিয়ে জানায় সে সেভ আছে। চিন্তা যাতে না করে। তবে নিবরাসের কথা তার মনে পড়ছে। সবার আড়ালে নিবরাস কে মেসেজ পাঠিয়ে দেয় আনায়া।

-আমি ঠিক আছি। আগামী কালকে নিতে আসবেন!

আনায়ার মেসেজ দেখে নিবরাসের জেনো প্রাণ ফিরে আসো। তড়িঘড়ি কল দেয় নিবরাস। আনায়া রিসিভ করতেই বলে,

-আমি আসছি আর দূরে থাকতে হবে না।

-আরে আমি ঠিক আছি। আ জকের রাতটা কাজিনদের সাথে কাটাই না?

-গত দুটো রাত তো জামাই ছাড়া ঠিকই কাজিনদের সাথে ছিলা। তৃতীয় রাতটা জামাইয়ের সাথে থাকো!

-আপনি আর ভালো হলেন না।

-আসছি আমি!

নিবরাস কল কেটেই ছুট লাগায় আহিয়াদের বাড়ীর উদ্দেশ্য। তাহিয়ার সামনে পড়ার ইচ্ছে তার নেই তবুও পড়তে হবে।

কলিং বেল বাজাতে তাহিয়া নিজেই দরজা খুলে দেয়। নিবরাসকে দেখে মুচকি হাসে তাহিয়া। নিবরাস সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ভেতরো যেতে আনিসুল হক নিবরাসকে ঘিরে ধরে। নিবরাস ভদ্রতা দেখিয়ে সালাম দেয়। আনিসুল হক সালামের জবাব দিয়ে বলে,
-ক্ষমা করে দিও আমায় তেমায় ভুল বুঝার জন্য। অনেক মিথ্যের আড়ালে সত্য থাকে তবে সত্য কখনো চাপা থাকে না। যেটার প্রমাণ পেলাম।

-অবশেষে বুঝলেন মামাশ্বশুর।

-হ্যাঁ! তোমার জন্যই আমার তাহিয়া বেঁচে আছে।

-আচ্ছা মামাশ্বশুর আমার বউকে আসতে বলুন তাকে নিয়েই আমি চলে যেতে চাই।

-আসবে! তুমি বসো ডিনার করবে।

-করে এসেছি! এমনিতে ভয় করে যদি পানির সাথে কিছু মিশিয়ে আমায় মে’রে ফেলার চেষ্টা করেন।

-ইয়ার্কি আর গেলো না।

নিবরাস আনিসুল হকের সামনের সোফায় বসে পড়ে। আহিয়া তখন রাতের ডিনার টেবিলে গুছাচ্ছে। নিবরাস তাকে দেখে বাঁকা হাসে। খোঁচা মেরে বলে,

-শত্রুর জন্য এতো আয়োজন মিস আহিয়া!

-দুঃখিত!

-ভালো,ভালো।

অতঃপর তারা সবাই ডিনার করে একসাথে বসে। আনায়ার সাথে কথা বলার সুযোগ নিবরাস পাচ্ছে না।
আনিসুল হক অনেক করে বলেছেন নিবরাসকে থাকতে সে নাছোড়বান্দা। ডিনার করেই আনায়াকে নিয়ে রওনা দেয়। এখন অব্দি তাঁদের মধ্যে কথা হয়নি! বলা যায় নিবরাস কিছুটা রাগ করেই আছে। আনায়া বুঝেছে তবে কিছু বলছেনা।

মির্জা বাড়ীতে এসে সোজা রুমে চলে যায় নিবরাস। আনায়া পেছন দিয়ে আস্তে,আস্তে হেঁটে আসছে। নিবরাস ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে। আনায়াও কোনরকম ফ্রেশ হয়ে নিবরাসের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। নিবরাস তাকে আগলাচ্ছে না। তাতে জেনো আনায়ার দুঃখ রা ভীড়ছে! তখন নিবরাস আনায়াকে সরিয়ে দিয়ে বলে,

-প্লিজ ঘুমাতে দাও আমায়! দুইটাদিন ঘুমাতে পারিনি।

-স্যরি!

-শুনতে চাইনি আমি।

-অনেক খুঁজেছেন তাই না?

-জেনেও জিজ্ঞেস করছো?

-আমি কোথায় ছিলাম বলুন?
যেখানো আঁধার হারালো। আমি তো ছিলাম
আপনার হৃদয় কোঠায় পূর্নিমার চাঁদ হয়ে! আপনি সহস্র পথ মিছি মিছি ঘুরলে!

– মিছি,মিছি ঘুরিনি আমার চাঁদকে আগলে রাখতে সহস্র পথ ঘুরলাম। ভালোবাসি তাই!

-ভালোবাসি।

আনায়া নিবরাসের কপালে নিজের অধর ছোঁয়ায়।

****

এরই মাঝে বেশ কয়েকদিন কেটে যায়। এমপির বউকে খুঁজে পাওয়া গেছে সেটাও জানে লোকে। তবে নাজিয়ার খোঁজ মিলেনি! সীতারা আহম্মেদকে পুলিশ এরেস্ট করেছে তার কৃতকর্মের জন্য। সেই সাথে শামিম সরদারকেও। তিয়াশ খান নিজেও তার বিরুদ্ধে প্রমাণ দিয়েছে।জায়ানের কেস আদালতে উঠে। তার কৃতকর্মের জন্য যাবতজীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়।

সেই সাথে তাহিয়ার খোঁজ মিলে। তবে সেদিন তাহিয়ার জায়গায় কে ছিলো সেই হিসেবটা মিলাতে পারেনি কেউ! এমনকি কেউ জানেও না তাহিয়া কীভাবে বেঁচে গেছে।

সীতারা আহমেদের বিরুদ্ধের যত প্রমাণ তাহিয়ার কাছে ছিলো সবই নিবরাসকে দিয়ে দেয়।

সীতারা আহমেদ জেলে বসেই আফসোস করছে। না কিছু করতে পারছে না বলতে পারছে। সে হাজারো শুকরিয়া আদায় করে নিবরাস বা আহিয়া তাকে নিজ হাতে মারেনি আইনের আওতায় উঠিয়ে দিয়েছে। তার হাজবেন্ড তিয়াশ,তার ভালোবাসাও তার বিরুদ্ধে চলে গেলো। তার ছেলে মেয়ে তাঁদের তো খোঁজই নেই। নাজিয়ার খোঁজ পেলো না সে। হাজারটা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। জায়ান তো তার শাস্তি ভোগ করছে।

পাপের সাগরে ডুবে ছিলো এতোদিন খুজেনি ভালোকিছু!

*****
নাজিয়া সুস্থ হতে সীতাব জুম্মান তাকে বাড়ীতে দিয়ে আসার কথা বলে। নাজিয়া তাকে অনেক ধন্যবাদ দেয়। সেদিন তো সে তাঁদের ফ্যাক্টরী থেকেই পালিয়ে এসেছিলো। জায়ান আগে থেকে পরিকল্পনা করে রেখেছিলো। ভাগ্যিস এরেস্ট হয়েছে নাহলে তার সাথেও খারাপ কিছু করতো।

সীতাব জুম্মানের মা সিয়ারা জুম্মা নাজিয়ার বেশ যত্ন করে। মেয়েটাকে তার ভালো লাগে সেই সাথে তার অমায়িক ব্যবহার।

অপরিচিত একটা বাড়ী,অপরিচিত মানুষ তাঁদের সাথে এই কয়েকটা দিন থেকেছে এটাই অনেক কিছু। নিবরাসকে বলেছুলো সো সেভ আছে। আনায়ার কত,কত বকা শোনলো।

নাজিয়াকে নিয়ে খান বাড়ীতে আসো সীতাব জুম্মান। গাড়ী থেকে নেমে সীতাব জুম্মানকে নিয়ে ভেতরে যায় নাজিয়া। তার বাবা,বড় বাবা আর বড় আম্মু নাস্তা করছে। তার মা’কে দেখতে পায়নি নাজিয়া।

নাজিয়ার সাথে ডক্টর সীতাব জুম্মান চৌধুরীকে দেখে তিয়াশ খান উঠে পড়ে। সীতাব ও তাকে দেখে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে নেয়।

নাজিয়া বুঝতে পারছে না কী হচ্ছে সব! তখন তিয়াশ খান বলেন,

-আমার ক্লায়েন্টের ছেলে সীতাব। ওর সাথে আমার আগে থেকে পরিচয়! তুমি ওকে কোথায় পেলে নাজিয়া?

-ওহ্! উনিই আমায় সেদিন পেয়ে তাঁদের বাড়ীতে নিয়ে যায়। আর আন্টি অনেক ভালো।

-হ্যাঁ সেদিন ও আমার গাড়ির সামনে পড়েছিলো।

নাজিয়াকে জড়িয়ে ধরে সুহাসিনী আদর করছে। এমনিতে তাঁদের পরিবারের উপর অনেক ঝড়ঝাপটা। সেই সাথে জায়ান যা করলো!

সীতাব জুম্মান সবার সাথে কথাবার্তা বলে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে তার হসপিটালের উদ্দেশ্য।

*****

আজকে সীতারা আহম্মেদের কেসের ফাইনাল ডেট। খান পরিবারের সবাই কোর্টে যাবে। সেই সাথে আহিয়া,তাহিয়া,নিবরাস তারা সবাইও যাবে। অবশ্য উকিলকে সব প্রমাণ দিয়ে রেখেছে নিবরাস তবে তার কাছেও কপি করা আছে সব! সে নিজেকে ছাড়া আর কাউকে ভরসা করতে পারে না।

নাজিয়ার মন খারাপ। তার মায়ের এমন অবস্থা চোখের সামনে দেখবে কী করে। আজকে নিশ্চয়ই সব ফাঁস করবে।

নির্দিষ্ট সময় সবাই কোর্টে হাজির হয়। সীতারা আহম্মেদকে আনা হয়।

‘নারী পাচারের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো সে। সেই সাথে তাঁদের কোম্পানি থেকে অনেক ড্রাগস পাচার করা হতো সেসবে সীতারা আহম্মেদ আর জায়ান খান ছিলো। তাহিয়াকে মারার পরিকল্পনা করা। শামিম সরদার নিজেও সাক্ষী দিয়েছিলো। সীতারা আহম্মেদের কৃতকর্মের জন্য তাকে ফাঁ সির ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে তার চোখে মুখে কোন ব্যর্থতা কষ্টের চাপ কিছুই দেখা যায়নি।

শামিম সরদারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

তাহিয়াকে তার বেঁচে ফেরার কথা জিজ্ঞেস করা হলে সে বলে,

-সেদিন শামিম সরদার আমায় বাঁচিয়ে দেয়। সীতারা আহম্মেদ কোন কাজে আটকে যায় তাই আসতে পারেনি আমায় মা’রতে। আর তাকে শুধু শোনানো হয় আমি মরেছি। আর অন্য কারোর মৃত ব’ডি দেখানো হয়। ম’র্গ থেকে নেওয়া হয়ত বা।

তাঁদের আদালতের কাজ শেষ হতে বাইরে বেড়িয়ে আসে সবাই। নাজিয়ার মনটা ভীষণ খারাপ। অনেক কিছুই তো জানা হলো না। বিশেষ করে নিবরাস! অনেক কিছু লুকিয়েছে তার থেকে।

কিন্তু এসব জিজ্ঞেস করলো আদৌ মুখ খুলবে তো নিবরাস? সে নিজেও তো সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটা কালো জগতের রাজা। যার রাজ্য সম্পর্কে কেউ জানে না। না কেউই জানে না তার আড়ালের কৃতকর্মের সম্পর্কে।

খান পরিবারের সবাইকে অনেকক্ষণ স্বান্তনা দেয় নিবরাস। নাজিয়াকেও বুঝায় নিবরাস। নাজিয়ার তাতে হেল দোল নেই। সে তার পরিবারের সাথে বাড়ীতে চলে যায়।

নিবরাস ও বাড়ীতে চলে আসে। আজকে অনেকদিন পর তার ভালো লাগছে। ভাবছে অনেকদিন হলো আনায়াকে সারপ্রাইজ দেওয়া হয়না কিছু একটার ব্যবস্থা করবে।

যেই ভাবা সেই কাজ! রোহিতকে বলে বাংলোতে সব আয়োজন করতে বলে। সন্ধ্যায় তারা সেখানে যাবে। আনায়াকে তার রাজনীতি,কাজকর্ম সম্পর্কে অবগত রাখে না নিবরাস। তাকে এসবের বাইরে রাখে! সে চায়না আনায়ার মনে প্রশ্ন তৈরী হোক তাকে নিয়ে। তার ও ভুলভ্রান্তি আছে তবে সামনে থেকে সব সুন্দর ভাবে চলার চেষ্টা করবে সে।

****

বাড়ীতে এসে মন খারাপ করে নিজের রুমে শুয়ে পড়ে নাজিয়া। অনেকক্ষণ কান্না করার পর সীতাবের কলের দেখা মিলে নাজিয়ার। রিসিভ করতে অপরপাশের ব্যক্তি বলে,

-তোমার তো মন খারাপ চলো না কোথাও ঘুরতে যাই। বেশী না জাস্ট কফি খেতে যাবো ক্যাফেতে।

-আপনার কী মনে হয় এতো কিছুর পর আমার মন ভালো আছে আর এসবের মুড আছে? প্লিজ এসবের কথা আমায় বলবেন না। রুড বিহেভ করলে তো আবার আমার শিক্ষা দীক্ষা নিয়ে কথা তুলবেন। আপনার এতো এনার্জি আপনি একাই যাব। আসছে আজাইরা আলাপ করতে।

নাজিয়া মুখের উপর কল কেটে দেয়। সীতাব অনেকটা বোকা বনে যায় নাজিয়ার এমন কান্ডে।

******

ডার্ক চকলেট কালারের শাড়ী পরিধান করেছে আনায়া। নিবরাসের সাথে সন্ধ্যায় বের হয়েছে সে। আজকে নাকী কী সারপ্রাইজ আছে তার জন্য। আনায়া চুপচাপ নিবরাসের কান্ড দেখে যাচ্ছে।

বাংলোতে আসতে আনায়ার হাত ধরেই ভেতরে নিয়ে যায় নিবরাস। লিভিং রুমটা সাদামাটা। আনায়া বুঝতে পারছে না কোথায় গিয়ে সারপ্রাইজ দিবে নিবরাস। ভেতরে প্রবেশ করতে অন্ধকার অনুভব করে। কিছুক্ষণ পর নিবরাস লাইট অন করতে দেখে সোফা আর ট্রি টেবিল টা সাজানো। নানারকম ড্রিং,গিফ্ট,ফ্লাওয়ার দিয়ে।

তাঁদের দু’জনের সুন্দর একটা মূহুর্ত কাটে। আনায়ার নিজেকে অনেক লাকি মনে হয়। নিবরাস তাকে এতোটা ভালোবাসে ভাবলে নিজেকে প্রশ্ন করতে মন চায়, ‘আনায়া তুই এতো ভাগ্যবতী কেনো? দেখ তোকে কেউ ঠিক কতটা ভালোবাসে!’

এমনই ভালোবাসা সবার জীবনে আসুক এবং অটুট থাকুক।

*****

বেশ কয়েকমাস কেটে যায়। নাজিয়ার রেজাল্ট ও আসে। সে গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছে। ইতালির ভিসা ও পেয়ে গেছে। দেশে থাকার ইচ্ছে ও তার নেই। দম বন্ধ লাগে তার। এরই মাঝে সীতাব তাকে অনেকবার দেখা করতে বলে। নাজিয়া বরাবরের মতো না করে দেয়।

আজকে নাজিয়ার ফ্লাইট। তার পরিবারের সবাই এয়ারপোর্টে আসে। আনায়া,নিবরাস ও আসে। নাজিয়ার খারাপ লাগছে না দেশ ছাড়তে। আজকে তার বেশ খুশি লাগছে। তার মায়ের কথা ভাবলে মনের ক্ষতটা আরো বেশী বেড়ে যায়। তবে বুঝাতে পারে না কাউকে।

তবে যাওয়ার আগে সীতাবকে ছোট্ট করে মেসেজ দেয়,

‘প্রণয় যদি ভাগ্যে থাকে তাহলে অচিরেই আবার আমাদের দেখা হবে। আপনার হৃদ কোঠরে পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে থাকবো সেদিন! মানবো না কোন বাঁধন।’

নাজিয়াকে বিদায় দিয়ে আনায়া, নিবরাস ও রাজশাহীর উদ্দেশ্য রওনা হয়। নিবরাস ড্রাইভ করছে। আনায়া তার পাশের সীটে বসা। সেও গোমড়া মুখ করে বসে আছে। তখন নিবরাস বলে,

-আর ইউ ওকে?

-নাজিয়া চলে গেলো!

-দু’বছর পরে হলেও ও চলেই যেতো।

-হুহ! ভালো। তবে ও ভালো নেই!

-জানি তো।

-এসব না করে বুঝালে হতো না?

-অনেক তো হলো। যে বুঝার তাকে একবার বললেই হয়ে যায়। আর তোমার মায়ের কাছে এসব কাজ করা নেশার মতো ছিলো যা সে সহজে কাটাতে পারতো না আর না কাটাতো।

-কেউ পাপের শাস্তি পাচ্ছে। কেউ বা তার শাস্তি দেখে নিজে গুমরে মরছে। আসলে ঘৃণার আড়ালে ভালোবাসাটা কোন এক কোণে চাপা পড়লেও কোন একসময় বুঝা যায় এখনো ভালোবাসা বেঁচে আছে।

-সবাই ভালো থাকুক আর তাড়াতাড়ি আমরা বাবুর পাপা আর মাম্মাম হয়ে যাই।

-অ’সভ্য লোক বাজে কথা আর গেলো না।

-বাজে কথা কী? একদিন তো আমরাও বাবা আর মা হবো। কী বলো হবো না?

-হবো! তো?

-তাহলে বললে এতো লজ্জা পাওয়ার কী আছে।

-নিলজ্জ জামাই!

-আমার লজ্জাবতী বউ। ভালোবাসী!

– আমি ভালোবাসী আমার নিজেকে।

(সমাপ্ত)

হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-৩০

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|৩০|
#শার্লিন_হাসান

সীতারা আহম্মেদের কানে খবর আসে নাজিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মূহুর্তে চোয়াল শক্ত করে নেয় সীতারা আহম্মেদ। নিশ্চয়ই নিবরাস কলকাঠি নাড়ছে। এই নিবরাস তাকে দমাতে এখন তার ছোট মেয়েকে কিডন্যাপ করিয়েছে। সে তো শুনেছে আনায়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হয়ত নিবরাস ভাবছে সীতারা আহম্মেদ তাকে সরিয়ে রেখেছে।

তবে নিবরাসকে মা’রার জন্য লোক লাগিয়ে দিয়েছে সীতারা আহম্মেদ। জায়ানকে ছাড়িয়ে আনার জন্য কাজ চালাচ্ছে। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। ঘুষ ও নিতে চাচ্ছে না পুলিশ! সীতারা আহম্মেদের মাথা কাজ করছে না। কাকে ধরবে,কাকে ছাড়বে কিছুই মাথায় আসছে না তার।

নাজিয়া কোথা থেকে উদাও হয়েছে সেসবের পেছনেও খোঁজ লাগিয়েছে সীতারা আহম্মেদ। এদিকে তার হাজবেন্ড আর ভাসুর দু’জনেই ক্ষিপ্ত! তাঁদের কাউকেই সীতারা আহম্মেদ পাত্তা দিচ্ছে না।

*****

নিবরাস গাড়ী নিয়ে এদিকওদিক ছোটাছুটি করছে। নাজিয়াকেও খুঁজে পাচ্ছে না সে। সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী সে রাস্তায় গেলেও কিছুই মিলেনি প্রমাণ আর না আনায়াকে পেয়েছে। পুরো মোহনপুর উপজেলায় খোঁজ করা হচ্ছে! কেউই খোঁজ মেলাতে পারেনি। আনায়াকে নিয়েছে কোন কল আসেনি কারা নিলো বা কী চায়! জায়ান তো জেলে তাহলে কে?

হুট করে শামিম সরদারের কথা মাথায় আসতে নিবরাস শামিমের খোঁজে ছুটে। রোহিত নিবরাসকে বাঁধা দিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। হুটহাট রাগের মাথায় কিছু হয়ে গেলে সমস্যা। এমনিতে অনেক জামেলা যাচ্ছে।

শামিম সরদার চেয়ারে বসে হুংকার ছেড়ে সবাইকে গা’লি দিচ্ছে। আনায়াকে তাঁদের থেকে অন্য কেউ কেড়ে নিয়ে গেছে। শামিম তো প্লান করেই আনায়াকে কিডন্যাপ করেছে। এটা অনেক আগে জায়ান সহ পরিকল্পনা করে রেখেছিলো। কিন্তু তাঁদের থেকে অন্য কেউ কেড়ে নিয়েছে আনায়াকে। এখন শুধু আহিয়ার আসার অপেক্ষা। আহিয়া আসতে লেট করছে এতেই শামিম সরদারের রাগের শেষ নেই।

আহিয়া গোডাউনে আসতে শামিম সরদার তাকে দেখে বি’শ্রী কয়েকটা গা’লি দেয়। আহিয়া তেমন রিয়েক্ট করেনি। তখন শামিম সরদার বলে,

-এখন আসার সময় হয়েছে তোর? সীতারাকে খবর দে?

-তাকে এসবে টেনে কী হবে?

-তোর মুখ বেশী চলে।

-আনায়াকে কিডন্যাপ করতে গিয়েও করতে পারলি না গাধা আর দুটোও নেই তোদের মতো! তোদের থেকেও অন্য কেউ কেড়ে নিয়ে গেছে।

-আমাদের পরিকল্পনা অন্য কেউ জেনে গেছে। কিন্তু কীভাবে?

-দেখ তোর লোকদের কেউ বলেছে কীনা!

-কিন্তু আনায়াকে নিয়ে গেলো কে? ওই গর্দভ গুলো কিছুই বলতে পারছে না। অবশ্য বলবে কীভাবে? সবগুলো হসপিটালে ভর্তি!

-নাজিয়া নাকী কিডন্যাপ হয়েছে।

-তো?

-তাকে আবার এসবে আনলি কেন?

-আমি না জায়ান!

-তো? সে তো জেলে বসে আছে।

-আরে সে তো বুঝলাম! দু-একের ভেতর ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবো। তারপর নাজিয়াকে যা করার ও করবে।

-নাজিয়া কোথায় জেনো?

-ফ্যাক্টরীতে!

-ওদের?

-হুম।

আহিয়া উঠে দাঁড়ায়। তার আর কাজ নেই এখানে। শামিম সরদারকে বলে সে বেড়িয়ে এসেছে। গাড়ী নিয়ে নিজের বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা হয়। মাঝপথে এসে গাড়ী থামায় আহিয়া। নিবরাস রাস্তার সাইডে দাঁড়িয়ে আছে। তার সাথে তার গার্ডের শেষ নেই! বিরক্তবোধ করে আহিয়া। গাড়ী থামিয়ে নিবরাসের কাছে যায় সে! আহিয়াকে দেখে নিবরাস বিরক্ত বোধ করে। বিশেষত তাহিয়া আহিয়া তারা বোন। আহিয়াকে দেখলে তাহিয়ার কথা মাথায় আসবেই তাদের চেহারায় অনেক মিল। তাহিয়া মানে আরেকটা বিরক্তির কারণ।

-এমপি মনে হয় বউয়ের শোকে শেষ।

-সেসব তোকে জানতে হবে না। বোনের শোকে নিশ্চয়ই এখন ড্রিং করাও ছাড়লি না।

-না আমি কোন ড্রিং করি না।

-গুড! তা আমাকে খু’ন করবি না?

-করবো এই তো মাত্র শুরু! তোর বউ তারপর তোর ভাগ্নে তারপর মা,বাবা, বোন! তোকে খু’ন করতে এদেরকে নিতে পারি আমি। অবশ্য ভাবছি তোকে খু’ন করতে ওদের কেন জীবন নিবো?

-ফাল’তু!

-গেলাম এমপি! বসে,বসে মুড়ি খা! বউকে তো এই জনমেও পাবি না।

নিবরাস চোখমুখ শক্ত করে নেয়। আহিয়া যেতে গাড়ীতে উঠে বসে নিবরাস। সে বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা হয়। আনায়াকে কী করে খুঁজবে বের করবে বুঝতে পারছে না।

তারিশা নিবরাসকে দেখে বাঁকা হাসে। দুইদিন আগেও এই ব্যক্তি তাকে থ্রেট দিয়েছে টাকার জন্য! এবার বউয়ের শোকে মরুক তাতে তারিশার কী!

-না,না ও না মরে ওর বউ মরুক তাহলে আমার রাস্তাটা ক্লিয়ার! কী জানি আবার কোন আনায়া এসে জায়গা দখল করে নেয় কে জানে?

তারিশা নিজের রুমে চলে যায়।

নিবরাস ফ্রেশ হয়ে খাটের উপর বসে পড়ে। আহিয়া নিশ্চয়ই খোঁজ দিতে পারবে আনায়ার। কিন্তু তার জন্য তো কিছু করতে হবে। আহিয়া সোজা কথার মানুষ না। নিবরাস ভাবছে তাহিয়াই এখন একমাত্র ভরসা!

যেই ভাবা সেই কাজ। নিবরাস আহিয়াকে কল দিতে তড়িঘড়ি রিসিভ হয়। নিবরাস তখন বলে,

-আমি জানি তুমি সব জানো আনায়ার ব্যপারে। ওর খোঁজ একমাত্র তুমিই দিতে পারো। তবে তোমাকে আমি একটা হেল্প করতে পারি বা তোমার আপন কাউকে আমি ফিরিয়ে দিতে পারি।

-কাকে?

-তোমার বোনকে!

-মৃ’ত মানুষ কখনো জীবিত হয়? মনে হয় বউয়ের শোকে মাথা পুরোটা গেছে আপনার।

-হয়! তাহিয়া বেঁচে আছে।

-তো?

-তাকে চাই না তোমার?

-হ্যাঁ চাই।

-তাহলে আনায়াকে ফিরিয়ে দাও। ওর খোঁজ দাও?

-আমি কিছুই জানি না ওর সম্পর্কে।

-তাহলে তোমার বোনকে উপরে পাঠিয়ে দেই?

-দিন! দেখি কত সাহস আপনার। এমন ভাবে ফাঁসাবো না এমপিগিরি ছুটে যাবে।

নিবরাস রেগে কল কেটে দেয়। আজকে তার মনে হচ্ছে সবাই তাকে নিয়ে খেলা করছে। যেই নিবরাস মানুষকে তার কথায় ঘুরাতো,নাচাতো সেই নিবরাসকে কেউ পাত্তা দিচ্ছে না।

এখন সব রাগ যাচ্ছে আনায়ার উপর! কী দরকার ছিলো পন্ডিতি করে গাড়ীতে উঠার? সে তো বলেছে সে নিজে এসে নিয়ে যাবে। আনায়া বেশী চালাক।

আবার নাজিয়ার কথা মনে হতে আরো বেশী বিরক্ত হয় নিবরাস। তার মনে হচ্ছে এরা দুই বোনে একবোন ও কাজের না। না আছে বুদ্ধি না আছে ভয়! সব কিছু কী বলে দিতে হবে? নাজিয়াটা এতো বোকা হয়েছে কবে থেকে কে জানে?

এমনিতে আনায়া বোকা! নাজিয়াও আনায়ার ছোঁয়ায় বোকা হয়ে গেছে।

-নিবরাস মাথাটা এক বারে গেছে তোর! অবশ্য যাবেই তো কতঘন্টা হয়ে গেলো বউকে দেখি না। একটু চুমুও পাইনা। ধুর!

নিবরাস কফি খেয়ে মাথা ঠান্ডা করে ভাবতে থাকে!

******

অপরিচিত একজন লোকের গাড়ীর পেছনের সীটে পড়ে আছে নাজিয়ার নিথর দেহটা। ভদ্রলোক গাড়ী নিয়ে তার বাড়ীতে প্রবেশ করে। ভেতরে এসে কয়েকজন মেয়ে সার্ভেন্ট ডেকে নাজিয়াকে ভেতরে নেওয়ার ব্যবস্থা করে।

নিজে ফ্রেশ হয়ে নাজিয়াকে রাখা রুকটায় প্রবেশ করে ডক্টর সীতাব জুম্মান চৌধুরী। নাজিয়ার কপালে রক্ত শুকিয়ে আছে। হাতের তালু পুরোটা কেটে গেছে যেখানে সাদা কাপড় মোড়ানো। জুম্মান চৌধুরী ফাস্ট এইড বক্স এনে প্রাথমিক চিকিৎসা করে হাত,কপাল ব্যান্ডেজ করে দেয়।

সে জানে না মেয়েটা কোথা থেকে দৌড়ে এসেছে কীভাবেই বা তার সামনে এসে পড়লো! শুধু বলেছিলো হেল্প করতে। গাড়ীতে একটু স্থান দিতে। জুম্মান ও না করেনি। তবে বাড়ী ফিরতে,ফিরতে অজ্ঞান হয়ে গেছে নাজিয়া। এখন তার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় আছে জুম্মান। তারপর তার মুখ থেকে সব শুনবো ক্লিয়ার ভাবে।

নাজিয়ার মুখের দিকে তাকাতে খেয়াল হয় কোথাও দেখেছিলো তাকে। এই মূহুর্তে স্মরণ হচ্ছে না তার।

সীতারা আহম্মেদ সোফায় বসে আছে। তখন তার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। বিরক্তি নিয়ে রিসিভ করে সীতারা আহম্মেদ। ওপাশ থেকে তাহিয়া তখন বলে,

-ফুফু আম্মু! আছো?

-আহিয়া?

-একদম না! তারই বোন তাহিয়া বলছি আমি।

-তাহিয়া আসবে কোথা থেকে? ও তো মারা গেছে বছর আগে। মজা করো না আহিয়া!

-মজা করে আমার লাভ কী বলো? আমি তাহিয়া বলছি! তা তোমার মেয়েদের খোঁজে তোমার কী অবস্থা বলো?

-তুমি তাহলে সব করেছো? আহিয়া তোমাকেও আমি ছাড়বো না। একদম তাহিয়ার মতো অবস্থা করবো।

#চলবে

হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-২৯

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২৯|
#শার্লিন_হাসান

এরই মাঝে একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর আসে ভেতরে। তাকে দেখে জায়ানের গলা শুকিয়ে আসে। তার মনে হচ্ছে আর বাঁচা হবে না এই দফায়! মূহুর্তে শরীর ঘামতে শুরু করে জায়ানের। তখন আবার নাজিয়া নিচে আসছিলো। জায়ান নাজিয়ার দিকে একনজর তাকায়।

তখন ইন্সপেক্টর বলেন,
-জায়ান খানকে গ্রেফতার করা হবে।

সীতারা আহম্মেদ বলেন,
-টাকা চাই তো আপনাদের? কত টাকা চাই সেটা বলুন! এইসব কিছু ধামাচাপা দিয়ে দিন।

আশেপাশে খেয়াল না করে কথাটা বলে সীতারা আহম্মেদ। তিয়াশ খান এবং তাসরিফ খান তাকিয়ে আছে তার দিকে। সেসবে ভ্রুক্ষেপহীন সীতারা আহম্মেদ। তখন নাজিয়া এসে বলে,
-কী হয়েছে?

-কী আর হবে! আমার গুনধর ছেলে যা করার করে নিয়েছে। এখন খান পরিবারের সন্মান ধূলোয় মিশাবে।

তাসরিফ খান কথাটা বলেন। তখন তিয়াশ খান বলেন,
-সব ক্লিয়ার জানতে চাই। ইন্সপেক্টর আপনি যা করতে এসেছেন তাই করুন! প্রয়োজনে সীতারা আহম্মেদকেও গ্রেফতার করুন।

তিয়াশ খানের কথা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সীতারা আহম্মেদ। আর বাক্যব্যায় না করে কয়েকজন পুলিশ অফিসার আসে। জায়ানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। সীতারা আহম্মেদ সোফায় বসে পড়েন। তিয়াশ খান চেঁচিয়ে বলেন,

-তোর মতো বেয়া’দব,লোভীকে বিয়ে না করলেই আমার ভালো হতো।

তিয়াশ খানের কথার জবাবে সীতারা আহম্মেদ বলেন,

-যেটা জানো না সেটা নিয়ে কথা বাড়িয়ো না তিয়াশ।

-আচ্ছা! দুনিয়ার সব তুমি একাই বুঝো।

-এসব না করে সব ধামাচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করো। নাহলে কোম্পানি লাটে উঠবে। এই যে এতো টাকা পয়সা কিছুই থাকবে না তখন।

তাসরিফ খান বলেন,
-আমাদের বিজন্যাস ঠিকই আছে। তুমি আর জায়ান মিলে কী কারসাজি করেছো সব মিডিয়ার লোক,পুলিশ সামনে আনবে। খুব তো লালবাতির গাড়ী,সিকিউরিটি নিয়ে চলাফেরা করো। টাকা পয়সা উড়াও এবার সবাই জানুক সব টাকা পয়সা কোথা থেকে আসে। যা হওয়ার তুমি আর জায়ান বুঝে নিবা। আমায় আর তিয়াশকে এসবে টানবে না। জেলে পঁচে মরো নাহয় গর্তে! আমাদের ডাকবে না।

কথাটা বলে তাসরিফ খান বেড়িয়ে পড়েন। তিয়াশ খান সীতারা আহম্মেদের চোখের সামনে আঙুল দেখিয়ে বলেন,
-তোর সব কৃতকর্ম এবার ফাঁস হবে! সব জেনেছি আমি দেখ আমি বলার আগে কেউ মিডিয়া,পুলিশকে এসব বলে দিয়েছে।

তিয়াশ খান নিজেও বেড়িয়ে পড়েন। সীতারা আহম্মেদ সোফায় বসে রাগে ফুঁসছে। সুহাসিনী সেসবে কান দেয়নি সে তার কাজে চলে যায়। বাড়ী জুড়ে শুধু সীতারা আহম্মেদ আর নাজিয়া।

নাজিয়া চায়ের কাপ নিয়ে সীতারা আহম্মেদের সামনের সোফায় বসতে,বসতে বলে,

-সত্য কখনো গোপন থাকে না।

-কাটা গায়ে লবণের ছিটা দিতে শিখে গেছো দেখছি।

-সময়ের সাথে সব শিখতে হয়।

-তুমি আমার মেয়ে।

-আর তোমায় মা বলতেও আমার ঘৃণা হয়।

-নাজিয়া!

চিৎকার করে বলে সীতারা আহম্মেদ। নাজিয়াও চেঁচিয়ে বলে,

-লজ্জা,আত্মসন্মান থাকলে আর আমার সাথে চেঁচাতে না। পারলে নিজের দোষ ঢেকে দেখাও! অবশ্য পারবে কীভাবে তোমার যা পা’প আর দোষ কোনটা রেখে কোনটা আড়াল করবে?

-এসবের পেছনে তুই ছিলি তাইনা? আমারি ভুল ছিলো তোকে এতো সাদাসিধা ভেবে ছেড়ে দেওয়াটা।

-তা কী করতে আমায়?

-বাংলাদেশ থেকে দূরে পাঠিয়ে দিতাম।

-তাতে কী? সত্য কখনো কী গোপন থাকে?

-অবশ্যই থাকে! আমারটা ছিলো।

-হাস্যকর!

-তোর কী মনে হয় আমি কাঁচা প্লেয়ার? তাহিয়াকে আমি মেরেছি সেটা একটা কাকপক্ষী, এমনকি আহিয়াও জানে না আর না নিবরাস জানে!

-লজ্জা করে না?

-রুমে যাও!

-জানতে চাইনি আমি। আমার ভিসা পাসপোর্ট রেডি করে দেও আমি বিডি থেকে চলে যাবো। তোমার শাস্তি,মৃ’ত্যু যন্ত্রণা দেখার ইচ্ছে আমার নেই।

কথাটা বলে নাজিয়া উঠে চলে আসে। সীতারা আহম্মেদ বসে,বসে নতুন পরিকল্পনা করছেন। জায়ানকে ছাড়িয়ে আনতে পারলেই হলো! আর এসব ধামাচাপা দেওয়া তেমন ব্যপার না। থানায় টাকা দিয়ে মুখ অফ আর মিডিয়া! সেখানেও কয়টাকে থ্রেট আর বাকী গুলোকে টাকা। কিন্তু নিবরাস করবে জামেলা।

-এই নিবরাস টাকেই মে’রে দেই। তাহলেই তো সব সমস্যার সমাধান।

যেই ভাবা সেই কাজ! সীতারা আহম্মেদ ফোন হাতে, গাড়ী নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।

******

আনায়াকে ভার্সিটিতে নিবরাস ড্রপ করে দিয়ে গেছে। আনায়া আজকে একটু বেশীই খুশি! হুটহাট মনটা তার বেশ ভালো। সবচেয়ে বড় কথা নিবরাস তার পাশে থাকলে তার সবই ভালো যায়। মাঝেমধ্যে শুধু মুড সুয়িং টা ভিলেন হয়।

ক্লাস শেষ করে মারিয়ার সাথে অনেকক্ষণ কথাবার্তা বলে আনায়া রাস্তায় দাঁড়ায়। গাড়ী ফেলে চলে আসবে! এমন সময় একটা কার এসে দাঁড়ায় তার সামনে। আনায়া উঁকি মারতে একজন মধ্যবয়স্ক লোক বলে,

-স্যার পাঠিয়ে দিয়েছে গাড়ী।

-আপনাকে তো চিনলাম না! এর আগেও কখনো দেখিনি।

-চিনবেন না ম্যাম! আমি স্যারের পরিচিতই তবে কয়েকমাস ঢাকায় ছিলাম সেজন্য আমায় দেখেননি আপনি।

আনায়ার ইতস্থবোধ হয়। তখন ড্রাইভার বলে,

-স্যার আসতো ওনার কাজ পড়েছে সেজন্য আমায় বলেছে আপনায় নিয়ে যেতে।

-ওহ আচ্ছা আগে বলবেন তো!

আনায়া পেছনে উঠে বসে পড়ে। ড্রাইভার গাড়ী স্টার্ট দিয়ে কিছুটা সামনে এসে গাড়ী থামায়। আনায়া প্রশ্ন করে,

-গাড়ী থামালেন কেন?

-আসলে ম্যাম একটু বসুন আমার পানির তৃষ্ণা পেয়েছে।

-গাড়ীতে পানি নেই?

-না! সামনের দোকান থেকে নিয়ে আসছি।

কথাটা বলে ড্রাইভার গাড়ী থেকে নেমে পড়ে।আনায়া ও আর কথা বাড়ায়না। তখন কোথা থেকে দু’টো ছেলে এসে একজন ড্রাইভিং সীটে আরেকজন আনায়ার পাশে বসে পড়ে। আনায়া কিছু বলার আগে তাকে ক্লোরোফোম দিয়ে অজ্ঞান করে দেয়। গাড়ী নিয়ে তারা চলে যায় তাঁদের গন্তব্যের উদ্দেশে।

******

নিবরাস ভার্সিটিতে এসে আনায়াকে পায় না। তার একটু লেইট হয়ে যায়। ভেবেছে আনায়া হয়ত চলে গেছে রিকশায় করে। নিবরাস ও গাড়ী নিয়ে বাড়ীতে চলে আসে। মরিয়ম নওয়াজকে আনায়ার কথা জিজ্ঞেস করলে জানতে পারে আনায়া এখনো ফিরেনি। নিবরাস ভেবেছে তার বাড়ী চলে গেছে! কিন্তু আজকে আনায়ার মন মেজাজ ভালো ছিলো। রাগ করে তো যাবে না। নিবরাস চিন্তিত হয়ে জিয়াউর রহমানকে কল করলে সে জানায় সে অফিসে সঠিক জানে না। নিবরাস আনায়ার ফোনে কল করে। রিং হয় তবে কেউ রিসিভ করেনি।

কিছুক্ষণ এদিকওদিক খোঁজ করার পর নিবরাস বেড়িয়ে পড়ে আনায়াদের বাড়ীর উদ্দেশ্য। খুব দ্রুত সেখানে পৌঁছালে দেখে বাড়ীর মেইনডোরে তালা জুলানো! দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলে জানায় কেউ আসেনি।

পরাগ,রোহিত তারা খোঁজ খবর চালাচ্ছে। থানায় ইনফর্ম করে দিয়েছে। আরো ঘন্টা তিনেক পর আনায়ার ফোনে কল দেয়। এবার কলই ঢুকছে না।

নিবরাস চিন্তিত হয়ে পড়ে! সে যে চাল চেলেছে সেটায় না নিজেই গুটি হয়ে বসে পড়ে। কিন্তু কীভাবে সম্ভব? সে তো সব আড়ালে করেছে কেউই জানে না এসবের পেছনে কে আছে! নাজিয়া জানবে কিন্তু সে কাউকে বলবে না।

নিবরাসের মাথা কাজ করছে না। সীটে হেলান দিয়ে বসে আছে। তার সামনে ড্রাইভারের সাথে রোহিত বসে আছে। নিবরাসকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে রেহিত বলে,

-স্যার কিছু ভাবুন? আমরা আর কোথায় খোঁজ করবো আর কাকে সন্দেহ করবো?

-পাঁচ ঘন্টা হয়ে গেছে আনায়া নিখোঁজ! আমার মাথা কাজ করছে না।

-হার্ট কাজ করে তো স্যার?

-সেটাও বন্ধ করে দিচ্ছে আস্তে,আস্তে।

-ডক্টর ডাকবো স্যার?

-না তোমার ম্যামকে ডেকে আনো প্লিজ ও ছাড়া কেউই আমার অসুখ ভালো করতে পারবে না।

******

নিউজ হচ্ছে। এমপির বউ নিখোঁজ! পাঁচঘন্টা হলো তার খোঁজ মিলছে না। ব্যপারটা খুব তাড়াতাড়ি চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।

নাজিয়া কানেও খবরটা আসে। সে আর দেরী করেনি তার মায়ের খোঁজে বেড়িয়ে পড়ে। তার মায়ই একমাত্র আনায়ার খোঁজ দিতে পারবে। বাড়ীতে সে ছাড়া কেউই নেই। সবার ফিরতে রাত হবে! নাজিয়া নিজেও রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়ে তার মায়ের উদ্দেশ্য।

নিবরাসের সাথে একবার কথা হয়েছে। অনেকটা চাপে আছে সে! নাজিয়া সিএনজিতে বসে ভাবছে কে হতে পারে?

-জায়ান তো জেলে! আর সীতারা আহম্মেদ কখনো আনায়ার ক্ষতি করবে না। তাহলে শামিম সরদার? সে তো এসবে আপাতত নেই! কারণ যা করার জায়ান করবে তারপর সে তার এমপি হওয়ার শখ পূরণ করবে কোন ভাবে। সেই হিসাবে নিবরাসের উপর অ্যাটাক হওয়ার কথা! কিন্তু না সম্পূর্ণ বিপরীত হয়ে গেলো। তাহলে কী আহিয়া? তার ক্ষোভ নিবরাসের উপর। আনায়ার উপর না! তাহলে আনায়া মাঝখান দিয়ে নিখোঁজ হলো কেন?

নাজিয়া পুনরায় নিবরাসকে কল করে বলে ভার্সিটির গেটের কাছের সিসিটিভি ফুটেজ চেক দিয়ে। যেই,যেই রাস্তা দিয়ে গাড়ী গিয়েছে সেই রাস্তা,গাড়ী নাম্বার লোকেশন ট্র্যাকিং করতে।

নাজিয়ার কথায় নিবরাসের জেনো হুশ ফিরে আসে। আর দেরী না করে সিসিটিভি ফুটেজ চেক দিতে বলে। সেখানে দেখা যায় সাদা রংয়ের কার এসেছিলো। যেখানে আনায়া কিছু কথা বলছিলো ড্রাইভারের সাথে। গাড়ীর নাম্বার তেমন বুঝা যায়নি। তবে যতটুকু বুঝা যায় সেটা দিয়ে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছে।

নিবরাস নাজিয়াকে পুনরায় কল করতে তার ফোনেও রিং হয় কেউ রিসিভ করে না। নিবরাস ঘাবড়ে যায়! নাজিয়ার আবার কী হলো?

অনবরত কল দেওয়ার পর ফোন সুইচ অফ দেখায়। আনায়ারটা যা,যা। নাজিয়ার তো কিছুই জানলো না নিবরাস। কোথায় যাচ্ছে,কোন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে কিছুই জানে না সে।

এই মূহুর্তে নিবরাসের নিজেকে অনেকটা পা’গল, পাগ’ল লাগছে।

#চলবে

হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-২৮

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২৮|
#শার্লিন_হাসান

শপিংমল থেকে তড়িঘড়ি বের হয়ে দরজার সামনে আসতে আবার কারোর সাথে ধাক্কা লাগে তার। ভাগ্যিস মাস্ক পড়া! সামনে থাকা ব্যক্তি সীতারা আহম্মেদ। তাহিয়া নিজের ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে আসে কোনরকম।

সীতারা আহম্মেদ এসেছে জায়ানের খোঁজে। জানে এখন এখানেই তাকে পাওয়া যাবে। সীতারা আহম্মেদ আইসক্রিমের দোকানে ঢুকতে জায়ান মেয়েটাকে বিদায় দিয়ে দেয়। সীতারা আহম্মেদ সামনের চেয়ারে বসতে,বসতে বলে,

-এসব মেয়েবাজি আড্ডা ওফ দিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দেও জায়ান।

-তোমার মেয়েকে দিবা কাকীমা?

-বামন হয়ে চাঁদ ধরার স্বপ্ন বাদ দাও জায়ান।

-তোমার মেয়ে কী এমন যে জায়ান তাকে ডিজার্ভ করে না?

-সেটা সময় মতো বুঝবে!

-একদিন খে!য়ে দিলে বুঝবা শাশুমা। অবশ্য আমার নেক্সট টার্গেট তোমায় মেয়ে নাজিয়া। ওর এক্সাম শেষ হোক পরের দিন ওকে নিয়ে আমি হাওয়া! অনেক দিনে স্বপ্ন তাকে ছুঁয়ে দেখা।

মনে,মনে কথাগুলো বলে জায়ান। সীতারা আহম্মেদ নিজের পছন্দের আইসক্রিম অর্ডার দেয়। জায়ান ফোনে ব্যস্ত!

*******

এরই মাঝে কেটে যায় তিনমাস। নাজিয়ার এক্সাম শেষ। সে খান বাড়ীতে থাকে। ভাবছে দেশের বাইরে চলে যাবে পড়াশোনার জন্যই! সেখান থেকে গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করে একবারে ছয় সাত বছর পর দেশে ফিরবে। আর না পরিবারের কিছুতে ইন্টারফেয়ার করবে সে।

নিবরাস এখনে কিছুই পরিষ্কার বলছে না তাকে। শুধু বলছে এটা করো এখানে লোক আছে। ওটা করে নেও! এই প্রমাণ আমায় দাও!

বিকেলটা বেলকনিতে কফির মগ নিয়েই কাটে নাজিয়ার। মাগরিবের আজানের একটু পর জায়ান আসে তার রুমে। নাজিয়া তাকে দেখেও না দেখার ভাণ করে। তখন জায়ান সোফায় বসতে,বসতে বলে,

-আয়াত পাখি চলো ট্যুরে যাি আমরা।

-তোমার মন চাইলে যাও।

-আরে চলো! কাকীমাকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার।

-ক্যারেক্টারলেস কারোর সাথে আমি কোথাও যাই না ভাইয়া।

-আমার ক্যারেক্টার একবারে পরিষ্কার সাদা কাপড়ে মোড়ানো আয়াত। তুমি চাইলে একটু আধটু ধূলা বালি ছোঁয়াতে পারি।

-বেশী ফটফটর করা বন্ধ কর। জায়গা মতো একটা কিক মারলে না তোর ভবিষ্যত একবারে অন্ধকার।

-এতো তেজ কোথা থেকে আসে তোর?

-তোর এতো কারেন্ট শরীরে? আয় আমার ফোনটা একটু চার্জ দিয়ে তোর কারেন্ট কমাবো।

-মুখ সামলে!

-তোর মুখ সামলে রাখ! শা*লা আমার মুখ একবার ছুটলে গর্ত থেকে কেঁচো না এমনকি সাপ ও না একবারে অ্যানাকোন্ডা বের করে নিয়ে আসবো।

-আচ্ছা আমি গেলাম। স্যরি! কাউকে কিছু বলো না প্লিজ! আমি মজা করেছি।

নাজিয়া সেসবে কান দেয়নি। জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,

-গেট লস্ট! নেক্সট টাইম আমার রুমে আসতে হলে পারমিশন নিয়ে আসবে।

-আচ্ছা।

জায়ান মাথা নিচু করে চলে আসে। নাজিয়া রাগে শরীর জ্বলছে! সে খাটের উপর বসে আছে। জায়ানকে দেখেই বুঝে গিয়েছে বাজে মতলব আছে।

জায়ান রুমে এসে খাটে একটা লা’থি মারে। যার ফল স্বরুপ নিজের পায়েই ব্যথা পায় খাটের কিছুই হয়না। তাতেও বেশ রেগে যায় জায়ান। নাজিয়ার কথাগুলো তার মস্তিষ্কের প্রতিটা নিউরনে,নিুরনে গেঁথে গেছে। এই মেয়ে এতোটা স্ট্রং কেনো?

-ওর পার্সোনালিটিতে যে কেউ প্রেমে পড়বে! কিন্তু যে কেউটা আসার আগে একে একবার হলেও আমার বেডে চাই। একবারে নিষ্পাপ একটা ফুল!

জায়ান হাসে! বিকট শব্দ করে হাসে। নাজিয়ার একটা ছবি বের করে তার সর্বাঙ্গ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে জায়ান। তাতে জেনো তার লোভ সামলাতে পারছেনা।

*******

তারিশা এসেছে বাড়ীতে অনেকদিন পর। সবার সাথেই মোটামুটি কথা হয়েছে কিন্তু নিবরাসের আশেপাশে ও সে ঘেঁষছে না। নিবরাসকে দেখলে সে নিজে দূরত্ব বজায় রাখেছ। ব্যপারটা আনায়ার চোখে আসে। কিন্তু ঠাহর করতে পারে না সে। তারিশার মতো ছ্যচড়া এতোটা ভালো হলো কী করে?

আনায়া নিবরাসের কফির মগ নিয়ে তার পার্সোনাল রুমের দিকে যায়। তার পেছন দিয়ে তারিশা আসে। আনায়াকে দেখে বলে,

-কোথায় যাচ্ছো আনায়া?

-কফি দিতে হবু বরকে।

-ওহ যাও!

-উমম মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে চিন্তিত তুমি।

-হ্যাঁ,হ্যাঁ নিবরাস ভাই।

-কী করেছে নিবরাস?

-বারো লাখ টাকা চেয়েছে।

-কেন?

-গাড়… না কিছু না। প্লিজ তুমি তোমার রাস্তায় যাও।

আনায়া মুচকি হেসে চলে আসে। তারিশা নিজের আঙুল নিজে খুঁটছে। নিবরাসের সামনে পড়া মানে টাকা দেও নাহয় বলবে কিডনি একটা বিক্রি করে দেও। তারিশা মনে হচ্ছে শামিম সরদারের কথায় সেদিন সায় না দিলেই হতো! এদিকে নিবরাস সব জানে তাকে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিলে তার যাওয়ার মতো জায়গা নেই। বাবা মায়ের দায়িত্ব মামা মামি পালন করে এসেছে। তার উচিত হয়নি তাদের নূন খেয়ে তাদের পিঠে চু’রি ঢুকানো।

আনায়া নিবরাসকে কফির মগ দিয়ে সামনের সোফায় বসে পড়ে। নিবরাস আনায়ার দিকে এক নজর তাকিয়ে বলে,

-মহারানী আজকাল একটু বেশীই খুশি!

-হ্যাঁ তারিশাকে কী এমন বলেছেন যে ভয়ে আপনার থেকে দূরত্ব বজায় রাখে।

-আরে ওর জন্যই তো শামিম সরদার আমার বারো লাখ টাকার জান প্রাণ উড়িয়ে দিলো। এখন বলেছি বারো লাখ টাকা ও দিতে। আর টাকা না দিতে পারলে কিডনি একটা বিক্রি করে দিতে।

-আপনি ও না! কিডনি বিক্রি করার কথা কেউ বলে?

-আরে ওকে ভয় দেখাই! ওকে দেখলেই বলবো আমার বারো লাখ টাকা দিবি নাকী তোর সত্যি সবার সামনে বলে দিবো।

নিবরাসের কথায় আনায়ার হাসি জেনো থামছে না।আজকাল তারিশার চিন্তিত মুখটা দেখতে জোশ লাগছে। আগে তো সারাক্ষণ নিবরাসের পেছনে পড়ে থাকতো এখন নিবরাসকে দেখলে পালিয়ে বেড়ায়।

আনায়া উঠে কিচেনে যায়। কাজের বুয়ারা রাতের রান্না করছে। রান্না প্রায় শেষ পর্যায়। আনায়া হাতে,হাতে কিছু কাজ করে দেয়।

রাতের ডিনার শেষে রুমে চলে আসে আনায়া,নিবরাস। তারিশা টেবিলে বসেও একটা টু শব্দ করেনি আর না নিবরাসের দিকে একবারের জন্যও তাকিয়েছে। আনায়া ভাবছে এই মেডিসিন কয়েকমাস আগে প্রয়োগ করলেই হতো! নিবরাস ও আফসোসের স্বরে বলে,

-হ্যাঁ,হ্যাঁ! ওর জন্যই তো ঝগড়া হতো আমাদের। তুমিও দূরে,দূরে থাকতা। এতোদিন এটা প্রয়োগ করলে আমি চার পাঁচ বাচ্চার বাবা হয়ে যেতাম।

-বাচ্চা তো প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যায় যে বছর না যেতে পাঁচটার বাবা হতেন।

-এভাবে বলো কেন? তুমি চাইলে বছরে পাঁচটা না আটটার বাবাও আমায় বানাতে পারো।

-আপনার যত আজাইরা কথা!

-আচ্ছা আসো তোমায় আদর করি!

-অনেক আদর হয়েছে জামাই। এবার প্লিজ ঘুমাই!

-কী বউ তুমি?

-এহহ্!

আনায়া মুখ বাকায়। নিবরাস নিঃশব্দে নিজের অধর আনায়ার কপালে ঠেকায়। রোজকার মতো নিবরাসের বুকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ে আনায়া।

*****

পরের দিন সকালে খান বাড়ীর সবাই মিলে টিভিতে খবর দেখছে আর চা পান করছে। জায়ান ও তাঁদের সাথে বসা! এরই মাঝে টিভির চ্যানেলে নিউজ আসে,

-‘রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলার বিশিষ্ট বিজন্যাসম্যান তাসরিফ খান এবং তিয়াশ খান তাদের পরিবারের একমাত্র ছেলে জায়ান খান! যে তাঁদের গৃহকর্মীকে ধ’র্ষণ করে দিনের পর দিন! ব্যপারটা খান পরিবারের কেউই জানতো না! জায়ান নিজে গৃহকর্মী বন্যাকে হুমকি দিতো কাউকে কিছু বললে তাকে মে’রে ফেলা হবে। সেই সাথে খানদের দু’টো ইন্ডাস্ট্রির একটা ইন্ডাস্ট্রি বছরের আয়-ব্যায় শতকরা হিসেব অনুযায়ী পরিমাণের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী। এর পেছনেও পুলিশ সন্দেহ পোষণ করছে। এছাড়া বন্যার সাথে করা অনিয়ম, অবিচা’রের সমস্ত প্রমাণ পুলিশের কাছে আছে।’

নিউজ দেখে জায়ানের চায়ের কাপ আপনাআপনি হাত থেকে পড়ে যায়। সীতারা আহম্মেদ চুমুক দিতে গিয়েও দেননি। বাকীরাও শকড! বিশেষ করে তিয়াস খান, তাসরিফ খাম্ন তারা চা রেখে জায়ানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

এরই মাঝে এলজন পুলিশ ইন্সপেক্টর আসে ভেতরে। তাকে দেখে জায়ানের গলা শুকিয়ে আসে। তার মনে হচ্ছে আর বাঁচা হবে না এই দফায়! মূহুর্তে শরীর ঘামতে শুরু করে জায়ানের। তখন আবার নাজিয়া নিচে আসছিলো। জায়ান নাজিয়ার দিকে একনজর তাকায়।

#চলবে

হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-২৭

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২৭|
#শার্লিন_হাসান

বা’জে স্বপ্ন দেখে জায়ান ঘুম থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠে। তড়িঘড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দেয়। রাত তখন আড়াইটা! জায়ানের মনে ভয় ঢুকে যায়। সে ফাঁসলে সীতারা আহম্মেদকেও ছাড়বে না। একমাত্র সীতারা আহম্মেদ যে তার সব সিক্রেট জানে এছাড়া বাইরের এলটা কাকপক্ষী ও না। কিন্তু সীতারা আহম্মেদ এটা ককনো কাউকে বলবে না কারণ তার সিক্রেট জায়ান জানে।

চিন্তা একদিকে রেখে জায়ান পুনরায় শুয়ে পড়ে। এবং নিশ্চিন্তে ঘুম দেয়।

পরের দিন সকালে আহিয়া নাস্তা করে তার বেলকনিতে বসে। তাহিয়াকে বেশ মনে পড়ছে তার। নিবরাসকে এই মূহুর্তে খু’ন করতে মন চাইছে তার। শুধু নিবরাসের জন্যই তার বোনের এই অবস্থা। খুব করে মন চাচ্ছে বোনের স্মৃতিগুলো বিচরণ করতে। তাই তো উঠে মেমোরি কার্ডটা নেয় আহিয়া। ফোনে ঢুকিয়ে মেমোরি কার্ড সে চেক করতে থাকে। হঠাত কয়েকটা ভিডিও তার সামনে আসে। আহিয়া আর দেরী না করে ভিডিও ওপেন করে। যেটার একটা ভিডিও এরকম ছিলো,

-সীতারা আহম্মেদ কয়েকজন ভদ্রলোকের সাথে বসে মিটিং করছে। তাঁদের কথাবার্তা হচ্ছিলো পরের মাসে কয়টা বাচ্চা
জোগাড় করতে পারবে আর তাঁদের পাচার করতে পারবে। সীতারা আহম্মেদের এমন কথা আহিয়া যেন হতভম্ব হয়ে যায়। তার ফুফি আর যাই হোক এরকম করতে পারে না। কিছুতেই না! পরের ভিডিওটা দেখে যেখানে জায়ানের সাথে বসে কথা বলছে।

-নিবরাস কোন ভাবে জেনে গিয়েছে আমাদের এই বিজন্যাস এর ব্যপারে। আমার কী মনে হয় জানো জায়ান? কেউ আমাদের পেছনে পড়েছে। ছদ্মবেশে কেউ প্রমাণ জোগাড় করছে।

-কিন্তু সেটা কে? আমার কাউকে সন্দেহ হয় না। কারণ এমন কেউ নেই আমাদের পেছনে পড়বে। নিবরাস তার রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত!

সীতারা আহম্মেদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
-নাজিয়া?

-আরে না! তুমি কী যে বলো? ওর এসব দেখার সৃয় আছে বুঝি? ক্লাস নাইনে পড়া মেয়ে এসবের কী বুঝবে?

-আমার মেয়েকে ছোট ভেবে ভুল করো না। ওর বুদ্ধি তোমাকে ছাড়িয়ে গেছে।

-সে যাই হোক আমাদের পেছনে ও পড়বে না।

-তাহলে আহিয়া?

-ও কোন দুঃখে পড়বে? ও নিজের লাইপ নিয়ে ব্যস্ত। ওকে দেখে এসব মনে হয়না।

-সে যাই হোক! যেই প্রমাণ জোগাড় করুক আমার হাত থেকে বেঁচে প্রমাণ নিবরাস অব্দি যাবে না। তাইপেন আর এসিডে নিজেকে বিসর্জন দিতে হবে।

-হুহ! জানি।

-আমার কী মনে হয় জানো?

-কী?

-এই তাহিয়া নিবরাসকে পছন্দ করে। ভালোবাসে! সে নিশ্চয়ই নিবরাসের ক্ষতি চাইবে না। উল্টো নিবরাসের কাজকে সহজ করতে চাইবে। এই ধরে সমাজ থেকে আমাদের দূর করা নিবরাসের লক্ষ্য ! আর তাহিয়া সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিবরাসের মনে জায়গা করে নিবে।

-তাহলে তাহিয়া?

-হিসাবে তো তাই বলে!

-তাহলে আরকী? কয়েকদিন খোঁজ চালাও! তারপর যদি সত্যি হয় রাস্তা থেকে সরিয়ে দাও।

-খোঁজ চালানোর কিছু হয়নি। ওই আসল কালপিট যে আমাদের ধরিয়ে দিতে চায়। আমি ভাবছি কী জানো?

-কী?

-নিবরাসের সাথে তাহিয়ার দেখা হবে এরপর তাকে কিডন্যাপ করে খু’ন করবো যাতে করে দোষটা নিবরাসের উপর পড়ে। এক ঢিলে দুই পাখি মারবো।

-আহিয়া?

-তাকে সামলানোর দায়িত্ব আমার।

তারপর আর কোন ভিডিও হয়নি এটায়। আহিয়ার হাত থেকে ফোনটা আপনাআপনি খাটের উপর পড়ে যায়। দুচোখ বেয়ে অশ্রু পড়ছে। অথচ সে এতোদিন নিবরাসকে মারার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু নিবরাস এসবের কিছুতেই নেই! আহিয়া নিজেকে শক্ত করে নেয়। সে সিদ্ধান্ত নেয় সেই এর শেষ দেখে ছাড়বে। নিবরাস,তাহিয়া,আনায়া,নাজিয়া ওরা পরে। আহিয়া নিজে সবার সামনে সব নিয়ে আসবে যেহেতু তার কাছে কিছু প্রমাণ আছে। বিশেষ করে তার বোনের খু’নের প্লানিং করা ভিডিও। কিন্তু এটা তো পুরো যৌক্তিক না। কারণ এই ভিডিওর সাপেক্ষে এই কথাটাও আসে যে,
– আসল কালপিটকে ধরা যায়নি। হয়ত নিবরাস ও খুনটা করেছে। নাহয় সীতারা আহম্মেদ! প্লানিং করেছে বলে যে খু’ন করেছে এমনটাও না।হয়ত নিবরাস কোন বাবে জেনে খু’ন করে গেমটাকে পুরো ঘুরিয়ে দিয়েছে। এটাও প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু আহিয়া বিশ্বাস করে নিবরাস এসবে জড়িত না উল্টো তাকে ফাঁসানো হয়েছে।

মেমোরি কার্ডটা খুব যত্ন সহকারে রাখে আহিয়া। এখন আরো কিছু প্রমাণ চাই তার। তার বোনকে যেখানে খু’ন করা হয়েচিলো সেই স্থান,সেই সময়ের গার্ড বা লোক তাঁদের কারোর খোঁজ চাই তার। কিন্তু কীভাবে? একবছর আগের জিনিস এখন কীভাবে জানবে? যেটা চার দেওয়ালে সমাপ্তি ঘোষণা করে হয়েছিলো।

আহিয়ার মাথা কাজ করছে না। শামিম সরদার এই ব্যপারে কিছু জানে? মনে হয়না জানে! সে তো শুধু নিবরাসের জায়গায় বসতে চায় শিশু পাচার করতে না।

*****

আনায়া ভার্সিটি এসেছে আজকে। মারিয়ার সাথে খুনসুটিতে মেতে উঠেছে। এই তো নিবরাসকে নিয়ে একের পর এক কথা খোঁচাচ্ছে মারিয়া। আনায়াও বেশ মজা নিচ্ছে।

ক্লাস শেষ করে তারা বের হয় ভার্সিটি থেকে। গেট পেড়িয়ে আসতে দেখে নিবরাসের গাড়ী দাঁড় করানো। তবে সিকিউরিটি গার্ড আছে তার সাথে। অনেক ভীড় জমেছে জায়গাটায়। আনায়া যাবে কী যাবে না ভাবছে। এতো মানুষের ভীড়ে না জানি চাপা পড়ে।

এতোসব ভাবনার মাঝে মারিয়া তাকে ধাক্কা দেয়।

-যা তোর মাইন চলে এসেছে। অন্য কারোর সাথে সাইন করার আগে গ্রেপ্তার করে বাড়ী নিয়ে যা। গ্রেপ্তার টা হাত কড়া পড়ি না। ঠোঁটকরা পড়িয়ে।

-ঠোঁট কড়া কী বান্ধুবী?

-যেটা তোমার বর তোমায় উঠতে বসতে দেয়। আইমিন চুমু!

-এতো গুলো মানুষের সামনে চুমু খাবো?

-তোর জামাইয়ের আবার লজ্জা কম! সে এসব মাইন্ডে নিবে না গিয়ে খেয়ে নে।

-ছিঃ,ছিঃ,ছিঃ! আসতাগফিরুল্লাহ দিনে দুপুরে পাবলিক প্লেসে আমি রোমান্স করবো? আমাদের এতো সুন্দর বেড রুম থাকতে আমি চাইনা গাড়ীতে কলঙ্কের দাগ লাগাই।

-গাড়ীতে বসেও তো রোমান্স চলে তোদের।

-সেটা লোকচক্ষুর আড়ালে।

-সে সব বুঝলাম খালামনি হবো কবে?

-এখন না! আরো কয়েকবছর যাক।

-দেখা যাবে।

-যাহ্! এভাবে আমাকে না বলে নিজে বিয়ে করে আমায় খালামনি বানা।

-তোর দেবর থাকলে ভেবে দেখতাম।

-আমার জামাইয়ের কয়েকটা ভাই আছে। রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।

-তোর জামাইয়ের চামচা তারা!

-তোর মাথা।

-সমস্যা নেই আমি একজনকে এনে দেবো আপনার জন্য। হাই মিস মারিয়া আপু।

নিবরাসের কথায় আনায়া,মারিয়া দু’জন গাড় ঘুরিয়ে তাকায়। নিবরাস হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। আনায়ার কথা নেই তার সাথে। দেখা করতে আসে না এই বদলো কটা আর না রাত বিরাতে এসে সারপ্রাইজ দেয়।

মারিয়া ও হাসিমুখে কুশল বিনিময় করে নেয় নিবরাসের সাথে। অতঃপর বিদায় নিয়ে ওদের দু’জনকে একা ছেড়ে দেয়।

নিবরাস আনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

-মুখটা অমন শুকনো লাগছে কেন?

-ও..ওই এমনিতে।

-আচ্ছা চলো কোথাও খেতে যাই।

-যাবো না। আপনি চলে যান। আমি বাড়ী ফিরবো!

-আমি না দিলে এক চুল পরিমান ও তুমি নড়তে পারবে না।

-এতোদিন কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিলেন?

-কাজে ছিলাম।

-ভালো!

-আচ্ছা চলো গাড়ীতে বসো! লোক দেখছে আবার সাংবাদিকরা আমার চরিত্রে কালো দাগ লাগিয়ে দিয়ে হেডলাইন করবে,
‘মোহনপুরের এমপি মুয়াম্মার নিবরাস মির্জা রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের সাথে প্রেমালাপ করে।’
শা*লারা এটা দেখবে না মেয়েটা তার কী হয়! এমনিতে একবার মেয়েবাদী কেসে আমি ফেঁসে গিয়েছিলাম। এবার বউবাদী কেসে ফাঁসতে চাইনা।

-আমার লয়্যাল বরটা!

নিবরাস মুচকি হাসে।আ নায়া সহ গাড়ীতে গিয়ে বসে। নিবরাস নিজে ড্রাইভিং করছে। সামনে পেছনে তার গার্ডের গাড়ী। আনায়াকে গাড়ীতে নিয়ে বসলে কত রোমান্টিক কথাই সে বলে কিন্তু ড্রাইভার সেসব শোনলে লজ্জার ব্যপারস্যপার আছে। নিবরাস আবার লজ্জা পায় বেশী! সে আনায়ার বেশ লাজুক বর!

-তা আমাকে ছাড়া দিনকাল ভালোই যাচ্ছে বুঝি?

-আরে না কী যে বলেন? একদম ভালো যাচ্ছে না।

-বুঝেছি! রোমান্স করার জন্য অপেক্ষা করে আছো। চলো আজকের রাতটা ছোট্ট একটা সারপ্রাইজের আয়োজন করি তারপর নাহয়!

-মুখে লাগাম টানুন তো!

-আমি এমনই বউ!

-আচ্ছা চলুন আজকে আমাদের বাড়ীতে থাকবেন।

-না মির্জা বাড়ীতে চলো! কয়েকদিন থেকে আবার বাবার কাছে চলে যেও।

-ঠিক আছে।

নিবরাস মির্জা ভিলার দিকে গাড়ী ঘুরায়। অনেক দিন পরেই আনায়া মির্জা বাড়ীতে আসছে। মরিয়ম নওয়াজের সাথে কুশলাদি করে রুমে চলে আসে। লম্বা শাওয়ার নিয়ে নিবরাস সহ লান্স করে নেয়।

আনায়া লম্বা ঘুম দেয়। নিবরাস ল্যাপটপের সামনে বসে কিছু কাজ করছে।

******
তাহিয়া বিকেলে ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে নেয়। সে একটু বাজারে যাবে দরকারে। এই সন্ধ্যা বেলাটা তার কাছে সেভ মনে হয়। কেউই আসবে না তেমন! তার ও ধরা খাওয়ার চান্স নেই। তবে মাস্ক মুখ থেকে সরায় না তাহিয়া। আজকে আর মাস্ক পড়তে মন চাইলো না তার। খোলামেলা মুখেই বাজারে আসে। একটা শপিংমলে ঢুলে নিজের যাবতীয় জিনিসপত্র নিচ্ছে সে। কেনাকাটা শেষ হতে আইসক্রিমের দোকানে ঢুকতে দেখে জায়ান মেয়ে নিয়ে বসে আছে। তাহিয়া ঘুরে বেড়িয়ে আসে সেখান থেকে। তড়িঘড়ি মাস্ক পড়ে নেয়। নিবরাসের কানে এই খবর গেলে তাকে রাজশাহী ছাড়া করবে।

নিবরাসের নির্দেশ না পাওয়া অব্দি না পরিবারের কাছে যেতে পারবে না কাউকে কিছু বলতে পারবে।

#চলবে

হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-২৬

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২৬|
#শার্লিন_হাসান

সকাল,সকাল ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে নেয় নিবরাস আনায়া সহ। আনায়া কিচেনে গিয়ে কফি বানিয়ে নিয়ে আসে নিবরাসের জন্য। পুরো বাড়ীতে তারা দুজন আর তার বাবা আছে। সে নিজের রুমে!

নিবরাস কফি শেষ করে ফোন হাতে নেয়। আনায়ার থেকে বিদায় নেয়। আবার কবে আসে ঠিক নেই। নিবরাস যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে আনায়া তার পান্জাবির কলার চেপে ধরে। নিবরাস আনায়ার দিকে তাকায়। হুটহাট এমন কিছু নিবরাসের বোধগম্য নয়।

-আমি আবার কী করলাম? এখানে তো তারিশা নেই।

-আরে সেটা না। আপনি চলে যাচ্ছেন আমার থেকে পারমিশন নিয়েছেন?

-যদি শশুর চলে আসে তাহলে সমস্যা।

-আপনি পরপুরুষ নাকী? সমস্যা হবে না। আেনাকে আমি রুলস দিয়েছিলাম সেদিন? আর আমাদের দেখা হতে অনেক লেট হবে।

-আগে বলবা তো!

নিবরাস আনায়ার কপালে চুমু খায়।

-গেলাম মহারানী। নিজের খেয়াল রেখো।

-শুনুন, তারিশার থেকে দূরত্ব বজায় রাখবেন। আর নিজের খেয়াল রাখবেন।

-হিংসুটে বউ! ও আমার কাজিন।

আনায়া চোখ গরম করে তাকায়। নিবরাস তাতে চুপসে যায়। আমতাআমতা করে বলে,

-আরে ওকে পাত্তা দেওয়ার টাইম আছে নাকী আমার? তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না।

-মনে থাকে জেনো।

নিবরাস মাথায় নাড়িয়ে বেড়িয়ে পড়ে। আনায়া নিজের রুম গুছিয়ে কিচেনের দিকে হাঁটা ধরে তার বাবার জন্য চা বানাতে।

নিবরাস বাড়ীতে এসে চেন্জ করে নেয়। আজকে পার্টি অফিসে যাবে কিছু কাজ আছে। রোহিত,পরাগকে বলে দিয়েছে।

তারিশা আজকে হোস্টেলে চলে যাবে। তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়েছে। মাইশা মিসবাহ আগামী কালকে চলে যাবে। নিবরাসের ব্যস্ততা মিসবাহকেও তেমন সময় দেয় না। সেও তার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত মামুকে কাছেই পায় না।

রুম থেকে বের হতে তারিশা সামনে পড়ে নিবরাসের। নিবরাস সেদিকে না তাকিয়ে হাঁটা শুরু করে। তখন তারিশা বলে,

-ভাইয়া একটু দরকার ছিলো।

নিবরাস থেমে বলে,
-কী দরকার?

-আমি তো হোস্টেলে চলে যাচ্ছি।

-তো?

-কিছু না!

নিবরাস বাঁকা হেসে বলে,

-আমার প্রতি মিনিটের ইমফরমেশন শামিম সরদারকে দিতে পারবে না এটাই তো? সমস্যা নেই ফোনটা দিয়ে যেও তোমার হয়ে আমি নিজেই ওকে ঘন্টায়,ঘন্টায় নিউজ দেবো।

-তুমি…

-আমার বারো লাখ টাকা তোর জন্য খোয়াতে হয়েছে। খুব সুন্দর ভাবে শামিমের লোকদের বাড়ীর পথ চিনিয়েছিলি তাই না? তাঁদের সাথে দাঁড়িয়ে গাড়ীতে বোম রেখেছিস।

তারিশা চুপসে যায়। নিবরাস কাঠখোট্টা গলায় বলে,

-সব কিছুর প্রমাণ আমার কাছে আছে। ভাবছি তোকে জেলে ঢুকিয়ে দেবো। অবশ্য আগে শামিম সরদারকে সামনে আনি। কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বের করে আনবো। আর আমার বারো লাখ টাকা বা একটা গাড়ী তোর ইচ্ছে যেটা দিতে মন চাইবে। তবে বারো লাখ টাকার ক্ষতি পূরণ তুই দিবি।

-আমার কাছে এতো টাকা নেই।

-তাহলে কিডনি আছে না? একটা বিক্রি করে দে।

-ভাইয়া..

-ডোন্ট ওয়ান্না টক। আমি যখন বলবো তখন আমার বারো লাখ টাকা রেডি রাখবি।
নিবরাস আর একমুহূর্ত ও দাঁড়ায়নি।

*******

কেটে যায় এক সপ্তাহ। তারিশা নিজের হোস্টেলে থাকে। শুক্রবার বাড়ীতে আসে আবার শনিবার চলে যায়। আনায়া মির্জা বাড়ীতে এখনো আসেনি। সে তার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। নিবরাসের সাথেও তেমন কথা হয়না। এই টুকটাক কথা ছাড়া। সে জানে তার বরটাও ব্যস্ত।

নিবরাস সন্ধ্যার দিকে আনায়াকে কল করে জানায় সে আসবে। আনায়া কিছু বলেনি! জিয়াউর রহমানকে বলে দিয়েছে নিবরাস আসবে।
সন্ধ্যায় সোফায় মুড অফ করে বসে আছে আনায়া। আজকাল তার মনটা খারাপ যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে নিজেকে অনেকটাই তুচ্ছ মনে হয়। কিছুতে আগাতে মন চায় না। কেমন লাগে নিজেও বুঝে না। একপ্রকার একাই থাকে আনায়া।

জিয়াউর রহমান ল্যাপটপের সামনে বসে আছেন। আনায়াকে বলেছেন কাজের বুয়াকে কল দিয়ে আসতে বলতে। রান্না করে দিয়ে চলে যেতে। আনায়া বারণ করে দিয়েছে। সে নিজে রান্না করতে পারবে।

সময় দেখে আনায়া উঠে পড়ে। নিবরাসের পছন্দের গরুর মাংশ রান্না করবে সে। সেবার তে তারিশা রান্না করে খাওয়ালো। মনে আসে আনায়ার। জেলার্স ফিল হচ্ছে না তার। তার মনে হচ্ছে এখন যদি তারিশা নিবরাসের সাথে লং ড্রাইভে ও যায় আনায়ার কিছু যায় আসবে না। আনমনা হয়েে অনিয়ন কাটছে আনায়া। মনোযোগ উচ্ছন্নে গেলো তার। কোনরকম রান্না চেপে রুমে গিয়ে বসে পড়ে সে। মেঝেতে থাকা কার্পেটে নিজের পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে খুঁটছে সে।

নিবরাস এসে জিয়াউর রহমানের সাথে কথাবার্তা বলে নেয়। আনায়ার রুমে আসতে দেখে আনায়া বসে আছে নিচের দিকে তাকিয়ে। নিবরাস হাসিমুখে ভেতরে প্রবেশ করে। আনায়াকে জ্বালানোর জন্য বলে,

-জানো আজকে না তারিশা বাড়ী এসেছিলো। রান্নাটাও ও-ই করেছে।

-কেমন হয়েছে রান্না?

-হ্যাঁ ভালোই। ওর রান্না সবসময় ভালোই হয়।

-ওহ!

আনায়া কোন রিয়েক্ট করেনি। নিবরাস কিছুটা অবাক হয়। চুপচাপ সোফার উপর পায়ের উপর পা তুলে বসে নিবরাস। আনায়া উঠে কিচেনে যায়। নিবরাসের জন্য ঠান্ডা শরবত নিয়ে আসে।

-আনায়া তোমার মন খারাপ?

-না আমার মন খারাপ হবে কেন?

-মন খারাপের কারণের অভাব থাকে না।

-না এমনিতে ভালো লাগছে না আমার।

-চলো রাতের শহরটা ঘুরি।

-ভালো লাগছে না।

নিবরাস হাতের গ্লাসটা রেখে উঠে দাঁড়ায়। আনায়ার দিকে একনজর তাকিয়ে বলে,

-এদিকে আসো তো।

-কেন?

-মানুষ জামাইয়ের কাছে কেনো আসে?

-আপনার চুমু খাওয়ার ইচ্ছে থাকলে সেটা প্রত্যাখান করুন। নাহলে মাথা ফাটিয়ে দেবো।

-এই আমাকে দেখলে কী মনে হয় আমি তোমাকে শুধু চুমু খাবো? জড়িয়েও তো ধরতে পারি।

-আমার মজা করার মুড আসছে না। প্লিজ আমায় কিছু বলবেন না আর রুড বিহেভ করলে আমি স্যরি। কখন কী বলে বসি ঠিক নেই।

নিবরাস ঘড়ির দিকে তাকায়। দশটার উপরে বাজে। আনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

-চলো ডিনার করবো।

-চলুন।

জিয়াউর রহমান সহ তারা রাতের ডিনার করে নেয়। আনায়া কিচেনে যায় কফি বানানোর জন্য। নিবরাস জিয়াউর রহমানের সাথে বসে কথা বলছে। বেশী কথা বলতে পারেনি জিয়াউর রহমানের কাজ আছে সেজন্য সে রুমে চলে যায়। নিবরাস আনায়ার কাছে যায়। তার কফি বানানো অলমোস্ট শেষ। নিবরাস যেতে আনায়া টেবিলের উপর থেকে কফির মগটা নিবরাসকে দিয়ে দেয়। নিবরাসের ভালো লাগছে না তার বউয়ের এমন এড়িয়ে চলা। চুপচাপ না বলা কথার মাঝেও অনেক কিছু লুকিয়ে থাকে। আনায়া তার বাবার কফির মগ নিয়ে চলে আসে। নিবরাস যে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে খেয়াল নেই। নিবরাস দাঁড়িয়ে আনায়ার যাওয়া দেখছে। তার মনে হচ্ছে আনায়াকে দূরে রেখে দূরত্ব তৈরী হয়ে গেলো না তো? কিছু পড়ার শব্দে নিনরাসের টনক নড়ে। কিচেন থেকে বেড়িয়ে আসতে দেখতে পায় আনায়া কফির মগের দিকে তাকিয়ে আছে। যেটা তার হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেছে। নিবরাসকে দেখে আনায়া বলে,
-ওটা ওটা আমি ভাঙিনি আমার হাত থেকে কীভাবে জেনো পড়ে গেছে।৷ ওটা আমি ভাঙিনি বিশ্বাস করুন।

-রিলেক্স এতে উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই পাখি।

আনায়া ফ্লোরেই বসে আছে। গরম কফি তার পায়ে পড়েছে সেদিকে খেয়াল নেই তার। নিবরাস বেশ অবাক হয় এতে। আনায়ার দিকে একনজর তাকিয়ে বলে,

-পায়ে কফি পড়েছে তো।

-ক..কোথায়?

-তোমার কী হয়েছে আনায়া? এমন বিহেভ কেনো করছো?

-আমার ভালো লাগছে না নিবরাস। আমি মনে হয়না বেশীদিন বাঁচবো।

-বাজে কথা ছাড়ো। তোমার মাথাটা পুরো গেছে।

-আমার নিজেকে পাগ’ল মনে হয়। প্লিজ আমাকে একটু শান্তি খুঁজে এনে দাও আর কিছু চাই না।

-আচ্ছা চলো তোমার পা তো পুড়ে গেলো মনে হয়।

আনায়া উঠে দাঁড়ায়। নিবরাসের সাথে রুমে চলে আসে সে। ওয়াশরুমে গিয়ে পা ধুয়ে খাটের উপর বসে পড়ে। নিবরাস কফি শেষ করে বলে,

-চলো তোমায় এক জায়গায় নিয়ে যাবো।

-উঁহু! যাবো না আমি।

-চলো না আমি বলেছি তো।

আনায়া উঠে দাঁড়ায়। নিবরাস সহ তারা গাড়ীতে বসে। বাড়ী থেকে বেড়িয়ে পড়ে। নিবরাস তাকে নিয়ে খোলামেলা একটা জায়গায় গাড়ী থামায়। আনায়া বাইরে নামতে মৃদু বাতাসের দেখা পায়। যেটায় কোন কৃত্রিমতার ছোঁয়া নেই। আনায়া প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেয়। নিজেকে অনেকটা হালকা করে। নিবরাস ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে,

-আচ্ছা তোমার হার্টের যে প্রব্লেমটা সেটার জন্য ডক্টরর কাছে আর যাওনি?

– আমার হার্টে প্রব্লেম আপনি কীভাবে জানলেন?

-তোমার সম্পর্কে আমি সবই জানি। তোমার যদি কিছু জানার প্রয়োজন হয় তোমার সম্পর্কে আমায় জিজ্ঞেস করে নিতে পারো।

-আপনি আসলে কে বলুন তো?

-নিবরাস মির্জা তোমার বর।

-একদিন বলেছি কোন রহস্য রাখবেন না আমার সামনে।

-আমি একটা খোলা ডায়েরি পড়তে থাকো আমায়।

-ইয়ার্কি করছেন?

-না সোনা! ইয়ার্কি করতে ভালো লাগে না আমার। আচ্ছা তুমি শান্তি পাচ্ছে না তাই না? ওপারে গেলে শান্তি পাবা নিশ্চয়ই?

-হুম পাবো।

-তুমি আগে যাও তার পেছন দিয়ে আমিও আসছি। আমার অসম্পূর্ণ কাজ গুলো সম্পূর্ণ করে।

-আগে কাজ সম্পূর্ণ করুন তারপর একসাথে নাহয় যাবো। আপনাকে একা রেখে যেতে পারবো না কারণ তারিশা আছে না?

-এই তো লাইনে এসেছো। জেলার্স হচ্ছে?

-হবে না?

হাসে নিবরাস। আনায়া তাতে পাত্তা দেয়না। কিছুক্ষণ পর নিবরাসের বুকে লেপ্টে যায়। নিবরাস ও তাকে জড়িয়ে ধরে কপালে নিজের অধোর ছোঁয়ায়।

*****

– বিশিষ্ট খান কোম্পানির ওনার জায়ান খান। যিনি খুব সাধাসিধা ভাবে থাকলেও খুবই ডেঞ্জারাস একজন। নিজের বাড়ীর গৃহকর্মেী বন্যা নামের মেয়েটির সাথে জোর করে দিনের পর দিন শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছে। তারই কিছু ভিডিও প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। এছাড়া খান কোম্পানি বছরে কোটি টাকার বেশী লাভ করে। এটা নিয়েও সন্দেহ পোষন করছে পুলিশ। তাদের কোম্পানির সবকিছুর উপর কড়া তদন্ত চলছে। জায়ানকে পুলিশ গ্রেফ্তার করেছে।

চ্যানেল জুড়ে খবর চলছে। জায়ানের মাথা হ্যাং ধরে যায় কীভাবে কী হচ্ছে আর হলো।প্রথমত তার ক্ষোভ চলে আসে সীতারা আহম্মেদের উপর।

#চলবে

হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-২৪+২৫

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২৪|
#শার্লিন_হাসান

তাহিয়া রিকশা থেকে এদিকওদিক তাকায়। তড়িঘড়ি মাস্কটা পড়ে নেয় সে। বাইরে বের হয়েছে অনেকদিন পরেই। কিন্তু মাস্ক পড়তে তার ভালো লাগে না। এই শহরের অলিগলিতে সে ঘুরে বেড়ায় এই শহরেই থাকে। অথচ তার একটা প্রিয় মানুষের সাথেও দেখা হয়না। খুব সাবধানতা অবলম্বন করে থাকে সে। পান থেকে চুন খসলে নিবরাসের কাছে খবর পৌঁছে যাবে। আর নিবরাস ও তাকে শহর ছাড়া করবে।

হাজারো চিন্তা ভাবনা শেষ হলো যখন সে তার বাড়ীর সামনে পৌঁছায়। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে চলে যায়। বাড়ীটা পুরোনো বলা চলা। বাইরেটা দেওয়ালের রং পুরোনো হয়ে শেওলা পড়ে আছে। ভেতরে যেতে একজন মহিলা তাকে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। মহিলাকে বৃদ্ধ বলা যাবেনা আবার বেশী শক্তপাক্তো ও বলা যাবে না। সোফায় বসে পানি পান করে তাহিয়া। তখন শিরিন বেগম বলেন,

-আর কতদিন পালিয়ে বেড়াবে?

-যতদিন না সে চায়। আমার বোন তো তাকে মে*রে ফেলার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।

-তোমার বোনের ভুল ধারনা ভেঙে দাও।

-হুম ভাঙবো। কিন্তু মিমি জানো কী? সে বিয়ে করে নিয়েছে আচ্ছা আমার কথা ও ভাবলো না একটিবার?

-সে তোমায় ভালোবাসে না।

-ইশশ! আমায় কেউ ভালোবাসে না।

-এসব বাদ দাও তাহিয়া। তোমার বাবা,বোন তো এখনো তোমায় মিস করে। এসব বাদ দিয়ে তাঁদের সামনে গিয়ে দাঁড়াও। আর তোমার ফুফির আসল মুখোশটা সামনে আনো।

-আনবো খুব শীঘ্রই। এই মহিলা আমায় মেরে ফেলতে চাইলো। সেদিন নিবরাস গিয়েছিলো সেখানে। শামিম সরদারের বলা কথাগুলো রেকর্ড করে নিয়েছে আর থ্রেট দিয়েছে এটা পুলিশের কাছে দিয়ে তাঁদের সব কালো পথের ব্যবসা বন্ধ করে দিবে। তবে শর্ত দিয়েছে একটা এখানে যা হবে বাইরের কাক পক্ষী ও টের পাবেনা। আমার কী মনে হয় জানো? নিবরাস জানতো আমায় ওরা কিডন্যাপ করবে নাহলে এতো সুন্দর ভাবে অল্প সময়ে কেউ সবটা প্লান মাফিক করতে পারে?

থেমে,

সেদিন আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। নিবরাসের কথা অনুযায়ী আরেকটা মেয়েকে আনা হয়। সম্ভবত কোন হসপিটাল থেকে আনা হয়। মেয়েটার পরিচয় বা পরিবার কারোর খোঁজ ছিলো না। জানা নেই আমার তবে আমাকে বাঁচানোর জন্য মেয়েটার সাথে অন্যায় করা হয়। মেয়েটাকে চেয়ারে বসিয়ে তার মুখে এসিড ঢেলে তার মুখটা বিকৃতি করে দেওয়া হয়। নিবরাসের কাজ হতে সে আমায় নিয়ে বেড়িয়ে আসে সেদিন। আমাদের গাড়ী চলে আসে সেখান থেকে। জঙ্গল আবৃত পল্লীগ্রাম থেকে কোলাহলময় নগরীতে চলে আসা হয়। সেখানে কী হয়েছিলো জানা নেই। তবে তখন আমার মনে হয়েছিলো নিবরাস আমায় ভালোবাসে হয়ত! নাহলে আমার প্রাণ কেনো বাঁচাবে? আজোও বিশ্বাস করি সেটা। কিন্তু কয়েকদিন হলো বিশ্বাস আর মনটা ভেঙে গেছে যখন শুনেছি নিবরাস বিয়ে করেছে। আসলে সে আমার ভাগ্যে নেই তবে শখের পুরুষ সে। আছ এবং থাকবে শখের হয়ে। আচ্ছা মিমি তুমি বলো সে তো চাইতো আমি তাকে বিরক্ত না করি। আমি মরে গেলেও তার কিছু যায় আসে না বরং তার শান্তি! কিন্তু সে আমায় বাঁচালো সেদিন। এসিডে পুড়ে এই রুপটা বিভৎস হওয়া থেকে। তাইপেনের বিষাক্ত বিষের ছোঁয়া থেকে। ইশশ সেদিন আমার মুখ পুড়তো সেই সাথে আমার শরীরের প্রত্যেকটা অংশ নীলচে বর্ণ ধারণ করে সব খুঁয়ে, খুঁয়ে পড়তো। ভেবেছো কতটা ভয়ং*কর মৃ*ত্যু আমার জন্য লেখা ছিলো।

-এই নেতা কে আমি বুঝিনা মা। আসলে তার মাথায় কী ঘুরছে?

-জানা নেই!

দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় তাহিয়া। বছর খানেক হলো বাড়ীটাতে আসা! থাকা। নিবরাসই ম্যানেজ করে দিয়েছিলো। সেদিন রোহিতের সাথে একটা বাংলোতে পাঠানো হয় তাহিয়াকে। সেখানে কয়েকদিন সুরক্ষিত ভাবেই থাকে সে। তার মৃ*ত্যুর রপশ কাটতে এই বাড়ীতে চলে আসে।

জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে তাহিয়া। নিবরাস মির্জা নামটা মনে পড়লে বুকটা কেঁপে উঠে। খুব বি*শ্রী ভাবে তাকে হারালাম। ইশ! আমি এই নগরীতে থাকবো কীভাবে তাকে ছাড়া?

****

বাড়ীটা ভালো করে দেখে রাখে নাজিয়া। রিকশা ঘুরিয়ে তাহিয়ার পিছু নেয় সে। তাহিয়া এই বাড়ীতে থাকে অথচ এতোদিন ভাবতো সে মারা গেছে। আর কত কিছু লুকানো আর প্রকাশিত হবে? আনায়া নিবরাসের কথা মনে আসতে নাজিয়া চলে যায় গন্তব্যের দিকে।

তার আসতে কিছুটা লেট হয়ে যায়।আনায়া নিবরাস এতোক্ষণ একটা ক্যাফেতে বসে ওয়েট করেছিলো তার জন্য।

নাজিয়া যেতে আনায়া তাকে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে নেয়। নাজিয়াকে দেখে আনায়া মুচকি হাসে! মেয়েটা দেখতে আনায়ার কপি। চেহারায় এতো মিল! তার বোনটা অল্পবয়সী হলেও রুপে,গুণে,ম্যাচিউরিটিতে যেনো তাকে ছাড়িয়ে। নাজিয়া সামনের চেয়ারটায় বসতে আনায়া বলে,

-পাখি তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও?

-তোমার মতো একটা নেতার বউ।

নাজিয়ার কথায় আনায়া,নিবরাস দু’জনে হেঁসে দেয়। নাজিয়া সিরিয়াস মুখ করে বলে,

-অ্যাম সিরিয়াস ভাইয়াকে বলো তার মতো একটা নেতা আমায় খুঁজে দিতে। তারপর তোমার মতো আমিও নিজের নামের সাথে নেতার বউ ট্যাগটা লাগাবো।

– মেয়ে তোমার লজ্জা হওয়া দরকার। বড় বোনের থেকে জামাই খুঁজছ?

-ধুর এসব লজ্জা টজ্জা আমার কমই।

-একদম আমার জামাইয়ের মতো।

-আমি নাজিয়ার মতো এতো বেশী ঠোঁটকাটা না বউ। আমি তো তোমার লাজুক স্বামী! তোমার অনুমতি ছাড়া তোমায় একটা চুমুও খাইনি।

-হ্যাঁ,হ্যাঁ সে তো দেখি আপনি কেমন লাজুক।

নিবরাসের দিকে তাকিয়ে নাজিয়া একটু শব্দ করেই হেঁসে দেয়। আনায়া নিবরাসকে ভেংচি কাটে। তখন নাজিয়া বলে,

-বিশ্বাস করা বড্ড দায়! তুমি ভাই নিবরাস মির্জা একনাম্বারের ঠোঁট কাটা তোমার মুখে লাজুক শব্দটা একদম শোভা পায়না।

-দুই বোন মিলে আমায় পচাচ্ছে। আমি একজন নেতা একটু তো সন্মান আর ভদ্র ভাবে কথা বলো আমার সাথে।

-আরে আমরা আমরাই তো।

ঠাস করে থাপ্পড় দিয়ে কথাটা বলে আনায়া। নিনরাস গালে হাত দিয়ে বসে আছে। আনায়া কথার মাঝে খেয়াল করেনি চড়ের ব্যপারটা। কথা বলার সময় এমন হাত পা চলেই তার। তবে কয়েকমাস একটু বদ্রতার ট্যাগ বসাতে চেয়েছে কিন্তু তার মতো তার চঞ্চল বোনকে পেয়ে চঞ্চলতা জেনো বেড়ে গেছে। নিবরাস আনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

-কথা বললে হাত পা নিজের কাছে গুটিয়ে রেখে কথা বলবে। হুটহাট পাশের জনকে থাপ্পড় দিয়ে কথা বলার ফিল নেওয়া কোন ধরনের ভদ্রতা?

-আমি আপনায় থাপ্পড় দিয়েছি?

-না আদর দিয়েছো।

-স্যরি! রিয়েলি স্যরি! আমি বুঝতে পারিনি। দেখি কোথায় থাপ্পড় দিয়েছিলাম?

-গালে!

-থাক বাড়ীতে গেলে গালটা দিও একটু মালিশ করে দেবো।

-লাগবে না।

তখন নাজিয়া বলে,

-একটা কথা ছিলো খুবই ইমফরটেন্ট।

-কী কথা?

নিবরাস বলে। তখন নাজিয়া বলে,

-তাহিয়া আপুকে দেখলাম।

-দেখে ফেলেছো? ওয়াও! ভাবতে পারিনি তুমি দেখে ফেলবে। যাই হোক কয়েকদিন গেলে আমিও বলতাম তোমায়।

-তাহিয়া বেঁচে আছে? একবছর আগে না শুনলাম ও মারা গেছে।

-মরেনি ওকে বাঁচিয়ে দিয়েছি। তোমার মায়ের কুকীর্তি ফাঁস করার জন্য এমন কাউকে আমার চাই। সেজন্য ওকে বাঁচিয়ে নিয়েছি সেদিন। এছাড়া কোন ইচ্ছে ছিলো না। প্রচুর জ্বালিয়েছে আমায়।

-ও আমার কাজিন ভুলে গেলেন?

-তো কী? দেখো তোমার কাজিনের জন্য এই হ্যান্ডসাম নেতাকে হারাতে তুমি। ভাগ্যিস পটে যাইনি।

-এই শুনুন সবসময় নিজেকে এতো বড় ভাববেন না। যত্তসব!

তখন নাজিয়া বলে,
-আরে ভাই কথাটা তুললাম আমি। কাহিনীর সারাংশ বলবা তা না দু’জনে ঝগড়া করেই যাচ্ছে।

-আরে আয়াত তোমার কাজিন এটা ভার্সিটি লাইপ থেকে আমার পিছু পড়ে ছিলো। আঠার মতো! কোথাও শান্তি পেতাম না এটার জন্য। সব জায়গায় একে দেখা যেতো। কী জানি কীভাবে তোমাদের বিজন্যাসের বাইরের আরেকটা বিজন্যাসের কথা ও জানে। তোমার মাকে ফাঁসাতে চেয়েছে। জানি না কী শত্রুতা ওদের মাঝে। তোমার মা কোন ভাবে জানে আর ওকে রাস্তা থেকে সরানের জন্য সব পরিকল্পনা করে নেয়। আমি তার পরিকল্পনা সম্পর্কে আগে থেকে অবগত ছিলাম। তারপর আরকী! ওকে বাচিয়ে দেই সেদিন।

-এখন তো ওর বোন আপনায় ওর খু*নি ভেবে পেছনে পড়ে আছে। শুধু তাইনা শামিম সরদারের সাথে পরিকল্পনা করছে আপনায় মারার জন্য।

-করতে থাকুক! দেখি কবে আমায় মারে।

-আরে বাজে কথা ছাড়ুন না।
তেজ দেখিয়ে বলে আনায়া। নিবরাস আর এই নিয়ে কথা বাড়ায়নি। তারা তাঁদের মতো কথাবার্তা বলে কোল্ড ড্রিং খেয়ে উঠে। তেমন একটা ঘুরাঘুরি করেনি আর! নাজিয়াকে তার গিফ্ট গুলো আনায়া দিয়ে দেয়।

নাজিয়া গিফ্ট নিয়ে আনায়া, নিবরাসকে বিদায় জানিয়ে রওনা দেয় হোস্টেলের উদ্দেশ্য।

বাড়ীতে আসতে,আসতে বিকেল গড়ায়। আনায়া ব্যস্ত পায়ে উপরে উঠে। নিবরাস নিচে কথা বলছে রোহিত,সৌরভের সাথে।

তারিশা বেশ নজর রাখছে আনায়া,নিবরাসের উপর। কোন কথা না বলে সোজা নিবরাসের রুমে ঢুকে যায় সে। তারিশাকে দেখে আনায়া বলে,

– কারোর রুমে ঢুকতে হলে পারমিশন যে নিতে হয় সেই শিক্ষা মনে হয় এখনো পাওনি তুমি।

-পারমিশন নেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না। এই তুমি না আসলে তোমার জায়গায় আমিই থাকতাম।

-ব্রাহ্মণ্ হয়ে চাঁদ ধরার স্বপ্ন। বেশ ভালো তো! স্বপ্ন দেখা ভালো তবে সাধ্যের বাইরের কিছুকে নিয়ে নয়। এতে করে শুধু কষ্ট আর অপূর্ণতা পাওয়া যায় কখনো পূর্ণতার ছোঁয়া না।

-আজকাল বেশ বাইরে বের হও দেখছি। মির্জা বাড়ীর বউ এতো বাইরে কী?

-আমি তো আমার পার্টনারকে নিয়ে বের হই। আমায় প্রটেক্ট করার জন্য সে আছে। তুমিও আজকাল একা,একা বের হও দেখি। শুনেছি তুমি নাকী মির্জা বাড়ীর মেয়ে। আর আমি কোথায় যাবো না যাবো সেসব আমার হাজবেন্ড দেখবে বুঝবে। তোমার এসবে কাজ নেই।

-অবশ্যই কাজ আছে! অনেক কাজ আছে আমার।

-মনে হয় কারোর দু চার টাকার চাকরগিরি করো।

-মুখ সামলে!

-তুমি নিজের মুখ সামলাও! দিনদিন সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো। আমাদের পার্সোনাল মেটারে ঢুকো কেন?

-নিবরাস আমার হতো! শুধু তুমি তাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছো।

তখন আবার রুমে উপস্থিত হয় নিবরাস। তারিশার কথায় তার মেজাজ বিগড়ে যায়। মেয়েটার লাজ লজ্জা বলতে কিছু নেই। এসব বাড়াবাড়ির জন্য চ*ড় পর্যন্ত খেয়েছিলো একসময়। তখন আনায়া আসেনি নিবরাসের জীবনে। তাহিয়াকে সরানোর পর তারিশা জামেলা শুরু করে। ঘরে একজন বাইরে তো তাহিয়া ছিলোই। এখন বিয়ে করেও শান্তি নেই তার।

আনায়া রেগে তাকিয়ে আছে তারিশার দিকে। নিবরাস রুমে আসতে আনায়ার রাগ আরো বেড়ে যায়। তারিশা তাকে এতো কথা শোনাবে কেন? নিবরাস কিছু বলছে না কেন?

তখন নিবরাস তারিশাকে বলে,

-সমস্যা কী তোমার তারিশা?

-আমার সমস্যা এই আনায়া। তুমি জানো ভাইয়া আমি তোমাকে ভালোবাসী।

ঠাস করে চ*ড় পরে যায় গালে। নিবরাস রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠে,

-দিনদিন সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো তুমি। আমি বলেছি আনায়ার থেকে দূরে থাকবে এমনকি আমার থেকেও। সমস্যা কী তোমার? বেশী সুখ কপালে সইছে না তাই না? তোমার মুখোশ টেনে ছিঁড়ে তোমায় বাইরে ছুঁড়ে ফেলতে আমার দু’মিনিট ও সময় লাগবে না। সো বি কেয়ার ফুল। ওয়ার্নিং দিয়ে দিলাম। নেক্সট টাইম আমার রুমে আসবে না তো আমায় নিয়ে আনায়ার সাথে ঝগড়া করবে। গেট লস্ট! আর লজ্জা-শরম কিছু রেখো। ব্যক্তিত্ব তো নেই তারউপর যা তা অবস্থা! ছ্যচড়ার উপর কোন নোবেল থাকলে সেটা তোমাকেই আমি দিতাম।

#চলবে

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২৫|
#শার্লিন_হাসান

তারিশা রুম থেকে বের হতে দেখে মরিয়ম নওয়াজ দাঁড়িয়ে আছেন। তারিশার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছেন। তারিশা একটা ঢোক গিলে! আমতা আমতা করে বলে,

-তুমি এখানে মামনি?

-তুমি ওদের রুমে কী করো তারিশা?

-ওই এমনিতে এসেছিলাম আমি।

-আর মিথ্যে বলতে হবে না তোমার। আমি সব শুনেছি! বেয়াদব মেয়ে একটা। এই শিক্ষা দিয়েছি তোমায়? ওদের মাঝে বারনার ঢুকো কেন তুমি? আনায়া মির্জা বাড়ীর বউ এই কথাটা মাথায় রাখবে আর তুমি মেয়ে বিয়ে দিলে চলে যেতে হবে।

তারিশা কিছু বলছে না। মরিয়ম নওয়াজ হনহনিয়ে চলে আসেন সেখান থেকে। মূলত তাঁদের চিৎকার চেঁচামেচি তে এদিকটায় এসেছিলেন তিনি। তারিশার থেকে এসব একদম আশা করতে পারেনি তিনি।

আনায়া রেগে বসে আছে। নিবরাস আর কিছু বলেনি তাকে। কে জানে তার ত্যাড়া বউ আবার তার উপর রাগ ঝাড়ে কীনা। নিবরাস চুপচাপ শাওয়ারে ঢুকে যায়। আনায়া মেঝেতে তাকিয়ে আছে। পারছে না মুখের উপর সব বলে দিতে! কিন্তু বললে তারাই বিপদে পড়বে।

কী মনে হতে আনায়া সিদ্ধান্ত নেয় বাবার কাছে যাবে সে। সেখানে কয়েকমাস থাকবে। নিবরাস আসতে আনায়া বলে,

-আমি বাড়ী যাবো। কয়েকমাস সেখানেই থাকবো।

-তুমি কয়েকমাস বলতে কয়মাস বুঝাচ্ছো?

-এই দুই তিন মাস।

-তুমি কী করে ভাবলে এটা আনায়া? আমমি তোমাকে ছাড়া কীভাবে রাতে ঘুমাবো?

-যখন আমি ছিলাম না তখন কীভাবে ঘুমিয়েছেন?

-তখন তো কাজ করেই রাত কভার করে দিতাম। এখন তো বউ আছে রোমান্স করে রাত কভার করা দরকার। তবুও হিমশিম খাচ্ছি।

-অস*ভ্য লোক মুখটা বন্ধ রাখবেন?

-আরে কী বলো তুমি? দুই তিন মাস। এক দুই দিন হলে একটা কথা ছিলো।

-এতো বউ পাগল হতে হবে না।

-আচ্ছা যাও।

-দুই তিন মাস কথাটা মাথায় রাখবেন।

-হ্যাঁ,হ্যাঁ থাকবে।
দেখে কী কপাল! বিয়ের চারমাস না যেতে বউ তিনমাসের জন্য বাপের বাড়ী চলে যাচ্ছে। বউ ছাড়া থাকতে হবে।

-বেশী প্যাকপ্যাক না করে নিজের কাজে মন দিন তো।

আনায়া নিজের ব্যাগ গুছানোর কাজে উদ্যত হয়। নিবরাস কাউচে বসে ফোন স্ক্রোল করছে।

সন্ধ্যায় সবাই লিভিং রুমে বসে কথা বলছে। নিরব মির্জা সহ! আনায়া তাঁদের জন্য চা বানিয়ে আনে।
টুকটাক কথা বার্তা হতে নিরব মির্জা তারিশাকে বলেন,

-তোমার তো ভার্সিটি ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। হোস্টেল যাইবা নাকী বাড়ীতে থাকবা?

-হ্যাঁ চলে যাবো দু একের ভেতর।

-মাইশা ও চলে যাবে শোনলাম। আনায়াও চলে যাবে বাড়ী তো ফাঁকা হয়ে যাবে।

নিরব মির্জা বলেন। কেউই আর তেমন কথা বাড়ায়নি।

পরের দিন সকালে আনায়া নাস্তা করে চলে আসে তাঁদের বাড়ীতে। জিয়াউর রহমান আনায়াকে দেখে বেশ খুশি। কতদিন পর বাড়ীতে এসেছে তার কন্যা। আনায়া নিজপর রুমে গিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। কতগুলো দিন হয়ে গেলো প্রিয় রুমটায় আসা হয়না। একসময় এই রুমটা ছাড়া ভালোই লাগতো না। শখের রুমের মায়াও ত্যাগ করে দিতে হয়। এই নারীর জীবনটা বুঝি ত্যাগে,ত্যাগেই কাটলো।

বেলকনিতে যেতে দেখলো তার টবের গাছগুলোও মৃত প্রায় অবস্থা। শখ করে বিশাল বেলকনির এক কোণায় পছন্দের কয়েকটা ফুল গাছ লাগিয়েছিলো আনায়া। এখন যত্ন ও নেওয়া হয়না আগের মতো।

পুরো বাড়ীতে পদচারণ করলো আনায়া। সোফায় বসে তার বাবার সাথে খোশগল্পে মেতে উঠে। অনেকদিন পর আনায়া এসেছে তার পছন্দের খাবার রান্না করতে বলা হয় কাজের বুয়াকে।

*******

রাতের দিকে আনায়া বই হাতে বেলকনিতে বসে পড়ছে। একাডেমিক বই না সে সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন পড়ছে। বইটা তার ভীষণ প্রিয়! রাত প্রায় সাড়ে দশটা। বেলকনিতে বসে চাঁদ দেখছে সাথে বইও পড়ছে আনায়া। আজকের চাঁদটা আলো ছড়াচ্ছে বেশ। কিন্তু আনায়ার ব্যক্তিগত চাঁদ তার কাছে নেই।

আনাদের বাড়ীর গেট ছাড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করে নিবরাস। অনেকটা চোরের মতো! তাঁদের গেটের দারোয়ান ঘুমিয়ে পড়েছিলো ভাগ্যিস! হয়ত কিছুক্ষণ পর জেগে যাবে। তাতে কী নিবরাস তো আজকের রাতটা এখানে থাকবে আবার ভোর হওয়ার সাথে,সাথে চলে যাবে। বউকে ছাড়া তার রুমে মন টিকে না। বিয়ের পর এই প্রথম নিবরাস শশুর বাড়ীতে পদচারণ করছে তাও চোরের মতো।

আনায়ার ফোনে মেসেজ দেয় নিবরাস। মেসেজের শব্দে ফোন হাতে নেয় আনায়া। মেসেজ দেখে নিচে তাকায়।নিবরাস তাকে হাত নাড়িয়ে হাই দিচ্ছে।

আনায়া রুম থেকে বেড়িয়ে মেইন গেটে আসে।নিবরাস তড়িঘড়ি ভেতরে ঢুকে পড়ে। লিভিং রুম জুড়ে অন্ধকার। লাইট অন করেনি আনায়া। নিবরাসকে আলতো হাতে ধাক্কা দিয়ে বলে,

-চোরের মতো আসলেন যে?

-তুমি কী চাচ্ছো আমি ডা*কাতের মতো আসি?

– আপনার মতলব টা কী? এই শশুর বাড়ীতে চুরি করতে আসলেন নাকী?

-না শশুরের থেকে চাঁদাবাজি করতে এসেছি। ভেবেছিলাম বাবুর পাপা হবো কিন্তু তুমি আমায় বাবুর পাপা বানানোর বদলে চো*র বানিয়ে দিচ্ছো।

-আরে…

নিবরাস আনায়ার মুখ চেপে ধরে তাকে নিয়ে ভেতরে চলে যায়। আনায়ার রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দেয় নিবরাস। আনায়া দাঁড়িয়ে আছে। নিবরাস সেসবে পাত্তা না দিয়ে খাটের উপর গিয়ে বসে পড়ে।

-নতুন জামাই এসেছে তাকে আদর আপ্পায়ন করবে না?

-নতুন জামাই এভাবে চোরের মতো আসে না। বুঝলেন?

-তুমিও না বউ। আসো চুমু খাই তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

-অ’সভ্য লোক।

-এদিকে আসো আনায়া তোমার জন্য গিফ্ট এনেছি।

আনায়া খুশি হয়ে নিবরাসের সামনে গিয়ে বসে। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

-কী গিফ্ট? তাড়াতাড়ি দিন?

-ইশ কী শখ! টাকা নেই সেজন্য গিফ্ট আনিনি।

-লাগবে না গিফ্ট।

-চুমু লাগবে তাই না?

-আপনি আগে বলুন এভাবে আসলেন কেন? আমাকে বললেই তো হতো।

-ডিস্টার্ব করো কেন?

কথাটা বলে নিবরাস আনায়াকে কাছে টেনে নেয়। আনায়ার অধর জোড়ায় নিজের অধর মিশিয়ে দেয়।

কিছুক্ষণ পর নিবরাস আনায়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। আনায়া রেগে তাকিয়ে আছে।

-আজব এতে রাগার কী আছে? জামাই মানুষ আমি একটু আধটু আদর তো লাগেই।

-রাগবো না? আপনাকে আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি সেটার কোন পাত্তাই দিচ্ছেন না।

-কী জেনো জিজ্ঞেস করছো?

-আমার মাথা!

-একটু সন্মান দাও আমায়। নেতা আমি।

-আমাকেও একটু সন্মান দিন নেতার বউ হই আমি।

আনায়ার কথায় নিবরাস হেঁসে দেয়। আনায়া নিবরাসকে টেনে বেলকনিতে নিয়ে যায়। আকাশের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে,

-আজকের চাঁদটা বেশী সুন্দর তাইনা?

-উঁহু একদম সুন্দর না।

-কেন?

-আমার চাঁদের থেকে ওই আকাশের চাঁদ কিছুতেই সুন্দর হতে পারে না।

-আনায়া তোর জামাইটা কত রোমান্টিক দেখ।

-আনায়া কত ভাগ্য তোমার এমন একজনকে লাইফ পার্টনার হিসেবে পেয়েছো।

দু’জনে কিছুক্ষণ কথা বার্তা বলে রুমে চলে আসে। প্রতিদিনের মতো আনায়া নিবরাসের বুক দখল করে নেয়। গুটিশুটি মেরে নিবরাসের বুকে শুয়ে পড়ে আনায়া।

আহিয়ার মাথায় নতুন পরিকল্পনা ঘুরছে। কী ছাড়বে কী ধরবে বুঝতে পারছে না সে।
তাহিয়ার রুমে গিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করে রাত বিরাতে। পুরো রুম এলোমেলো করে ফেলে। তেমন কিছু পাচ্ছে না সে। তবে ড্রয়ার খুলে ডায়েরির পাতার ভাজ থেকে একটা মেমোরি কার্ড পায়। আহিয়া ভাবছে হথথয়ত পুরোনো ছবি সংরক্ষণ করা আছে এতে। বেশী ইন্টারেস্ট আসেনি বিষয়টার প্রতি। তার মাথায় তো একটাই চিন্তা কবে নিবরাসকে মা*রতে পারবে। শামিম সরদার কিছুই করছে না সেজন্য আহিয়া বেশ বিরক্ত হয়। তার মনে হচ্ছে তাকে কোন পরিকল্পনা করতে হবে। নাহলে নিবরাসকে দমন করা সম্ভব না।

#চলবে

হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-২২+২৩

0

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২২|
#শার্লিন_হাসান

সবার সাথে বসে নিজের কফিটুকু শেষ করে নিবরাসের কফি নিয়ে রুমের দিকে যায় আনায়া। নিবরাস তার রুমে নেই! হয়ত তার পার্সোনাল রুমে। আনায়া সেদিকেই হাঁটা ধরে। রুমটার কাছাকাছি যেতে দেখে নিবরাস বেড়িয়ে এসেছে। আনায়াকে দেখে নিবরাস মুচকি হাসে।
আনায়া কফির মগ দিয়ে রুমে চলে আসে। পেছন দিয়ে নিবরাস ও আসে রুমে। কাউচের উপর বসে নিবরাস কফি খাচ্ছে আনায়া রুমজুড়ে পায়চারি করছে। নিবরাস তার দিকে তাকাচ্ছে একটু পর,পর। কফি শেষ করে নিবরাস প্রশ্ন করে,

-এনি প্রবলেম আনায়া?

-হ্যাঁ,হ্যাঁ অনেক প্রবলেম। এই তারিশা আমার সবকিছুতে দোষ খুঁজে বের করে এককথায় ঝগড়ুটে ননদ বলা চলে একে।

-আরে খুঁজুক তাতে তোমার কী? কয়দিন পর ও হোস্টেলে চলে যাবে।

-উফফ আল্লাহ বাঁচালো বলুন?

-আচ্ছা আগামী কালকে আমরা নাজিয়ার সাথে দেখা করতে যাবো।

-আর কয়েকদিন পর! ও হোস্টেলে উঠেছে কীনা জানি না।

-দু একের ভেতর চলে যাবে।

*****

পরের দিন সন্ধ্যায় সুহাসিনী সহ নাজিয়া আড়ংয়ে এসেছে। নাজিয়ার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে। আগামী কালকে হোস্টেলে উঠবে সে। সুহাসিনী বসে আছে নাজিয়া নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিচ্ছে। দু’জন মিলে বিল পে করে বেড়িয়ে আসে।৷ নাজিয়াকে নিয়ে আইসক্রিমের দোকানে যায়।

নাজিয়ার ফেভারিট চকলেট আইসক্রিম। সুহাসিনীর প্রিয় বাটারস্কচ। আইসক্রিম খেয়ে নাজিয়া একগাদা চকলেট কিনে তার প্রিয় খাবার।

গেটের কাছে আসতে কারোর সাথে জোরেই ধাক্কা লাগে নাজিয়ার। তার জেম্মা কিছুটা সামনে। তার হাতের শপিং ব্যাগ কয়েক নিচে পড়ে যায়। সামনের ব্যক্তিকে দেখে আর কিছু বলেনি সে। কারণ সে ব্যক্তি তার শপিং ব্যাগ তুলতে ব্যস্ত। নাজিয়ার হাতে শপিং ব্যাগ দিয়ে স্যরি বলে সীতাব জুম্মান।
নাজিয়ার রেসপন্সের অপেক্ষা না করে সে আবারো নিজের কথায় মনোযোগ দেয় ব্লুটুথে। নাজিয়া তার যাওয়ার পাণে একবার তাকিয়ে আবার চলে আসে। ভদ্রলোক সেজন্য রুড বিহেভ করেনি। এই যে রেগে কাউকে যা-তা বলে দেওয়া এটা নাজিয়ার পছন্দ না।মানুষ মাত্র ভুল আর সে লোক ভুল করে স্যরিও বলেছে সেখানে তার লোকটাকে যাতা বলার রাইট নেই। এতে পারিবারিক শিক্ষাটাও প্রকাশ পায়।

গাড়ীতে এসে বসতে সুহাসিনী প্রশ্ন করে,

-এতো লেট হলো কেন?

-ওই হাত থেকে ব্যাগ পড়ে গিয়েছে।

-ভাগ্যিস তুমি পড়ে যাওনি।

-আমি পড়লে আমাকে ধরার মতো কেউই নেই সেজন্য আমি এখন পড়বো না। যেদিন তোমাদের জামাই আসবে আমায় নিতে তারপর নাহয় তার সাথে শপিং করতে আসলে পড়বো।

-পাকনাবুড়ি! এতো তাড়াতাড়ি তোমায় বিয়ে দিয়ে বিদায় করছি না।

-তাহলে নিধি আপুকে দিলে কেন?

-সে পড়াশোনায় পাকিবাজ! আর তার বিয়ের বয়স হয়েছে সাথে সময়ও।

-তবুও!

-তেমায় সবাই একটু বেশী আদর করে পাখি। সেজন্য এতো সহজে তোমায় কেউই ছাড়বে না।

-তোমার দেখি মেয়ের থেকে আমার প্রতি ভালোবাসা বেশী।

-মেয়ে পূত্রবধু একই জায়গায়।

সুহাসিনীর কথায় নাজিয়ার হাসি মুখটা মূহুর্তে মলিন হয়ে যায়। আর কথা বাড়ানোর প্রয়োজন মনে করে না নাজিয়া। মনে,মনে পণ করে নেয় সুহাসিনীর থেকেও দূরত্ব বজায় রেখে চলবে। বেশী মিশে গেলে সমস্যা তার উপর নজর পড়বে তার ছেলের জন্য দুনিয়ার কোন মেয়েকে তার পছন্দ হবে না। অবশ্য জায়ানে উড়েবেড়ানোর সময় কয়েকদিন বা কয়েকমাস। এরপর খাঁচায় বন্দী হবে! একবারে যাবত জীবনের জন্য। সব প্রমাণ সংগ্রহ করা শেষ সাথে বন্যার স্বীকারোক্তি ও নেওয়া শেষ।

বাড়ীতে আসতে,আসতে নয়টা বেজে যায়। তখন সীতারা আহমেদ, জায়ান, জাফিন, তিয়াশ খান সহ তারা লিভিং রুমে বসে কথা বলছে। তাঁদের বাসায় একজন নতুন কাজের বুয়া আনা হয়েছে। তার নাম বনিতা। বয়স অল্প না আবার খুব বেশী না। সুহাসিনীর থেকে কিছুটা বেশী হবে হয়ত। গরিব মানুষ সে। সুহাসিনী, সীতারার মতো মাসে,মাসে পার্লারে গিয়ে রুপচর্চা করতে পারে না আর না নিজের ছত্রিশ বয়সটাকে পঁচিশ বানাতে পারছে।

নাজিয়াকে দেখে জায়ান বলে,

-শপিং করা শেষ আয়াত পাখি?

-দেখতেই পাচ্ছো আবার জিজ্ঞেস করার কী দরকার?

নাজিয়ার এমন রসকষহীন কথায় সীতারা আহম্মেদ বিরক্ত হয়। আজকাল তিনি খেয়াল করেন নাজিয়া জায়ানের কথা তুচ্ছ করে। তেমন পাত্তা দেয়না বিরক্ত বোধ করে আগে এমন ছিলো না। দিনদিন তার মেয়ে চেন্জ হচ্ছে। হয়ত বড় হচ্ছে সেজন্য! আবার সন্দেহ লাগে তার মেয়ে তার সম্পর্কে সব জেনে গেলো না তো?
নাজিয়ার ব্যস্ততা দেখে এসব মনেই হয়না সীতারা আহম্মেদের।

রাতের ডিনার করে যে যার রুমে চলে যায়। নাজিয়া চুপিসারে বাইরে আসে। জায়ানের রুমে যায় চকলেট হাতে। কিছুক্ষণ মিলটিল দিয়ে জায়ানের গাড়ীর চাবি নিয়ে নেয়।
তারপর গ্যারেজে গিয়ে জায়ানের গাড়ীর লক খুলে গাড়ীর লোকেশন নিজের ফোনে সেট আপ করে যাতে সহজে গাড়ীর লোকেশন ট্রাকিং করতে পারে। কাজ শেষ হতে গাড়ী লক করে আবারো জায়ানের রুমে যায়। এবার যায় জায়ানের ফোনের উসিলা দিতে। জায়ান রাজী হয় ফোন দিতে। কিন্তু নাজিয়ার আপাতত ইন্টারেস্ট নেই মূলত চাবিটা জায়গায় রেখে
বাহানা দিয়ে চলে আসে। তার মুড এখন চেন্জ ফোন নিতে মন চাচ্ছে না।

নাজিয়া প্রস্থান করতে সাড়ে দশটায় জায়ান বেড়িয়ে পড়ে সকলের চোখ পাকি দিয়ে। আজকে অবশ্য সীতারা আহমেদ ও যাবে তার সাথে। তাঁদের নেতার সাথে কিছু কথা সাথে দেখাসাক্ষাৎ করবে তারা।

নাজিয়া ও সিদ্ধান্ত নেয় সেও আজকে তাঁদের পিছু নিবে। বেলকনি থেকে নজর রাখে জায়ান বেড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু গেটের কাছে গাড়ী নিয়ে অনেক্ক্ষণ কারোর জন্য অপেক্ষা করে। নাজিয়া রুমে এসে তড়িঘড়ি চেন্জ করে নেয়। ব্লাক জিন্স,হোয়াইট টি-শার্টের সাথে ব্লাক একটা জ্যাকেট পরিধান করে। কালো শু এর ভেতরে ছোট্ট একটা চাকু ঢুকিয়ে নেয়। কাঁধের চুলগুলো দুইভাগ করে সামনে আনে। মুখে একটা মাস্ক পড়ে নেয়।

তাঁদের বাড়ীর মোটামুটি সবাই ব্যস্ত কেউ অফিসের কাজে ল্যাপটপে কেউ বা সারাদিনের ক্লান্তির কারণে ঘুমের ঘোরে।

বনিতা বেগম নিচের লিভিং রুমের সাথের রুমটায় থাকে।

সীতারা আহম্মেদ তিয়াশ খানকে ঘুমের ঔষধ দেয় কফির সাথে। যার ফলে সে কয়েক মূহুর্তে ঘুমের ঘোরে চলে যায়। জাফিন তার বড় বাবার কাছে ঘুমাবে আজকে।

সীতারা আহম্মেদ খুব সাবধানে রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার সময় কোতা থেকে বনিতা কাশতে,কাশতে লিভিং রুমে আসে। সীতারা আহম্মেদের পা সেখানে থেমে যায়। এই বুঝি বনিতা লাইট অন করলো আর সে ধরা খেলো। মনে,মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে ধরা খেলে বনিতা আর কখনো বাড়ী যেতে পারবে না তাদের অন্দরমহলের কোন একপাশে লা”শ হয়ে শুয়ে থাকবে।

নাজিয়া রুম থেকে বেড়িয়ে রুম লক করে দেয়। সিঁড়ির কাছে আসতে গিয়েও আড়ালে চলে যায়। কারণ তার মা এখনো সিঁড়ির মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে। বাইরের আলোয় কিছুটা আলোকৃত তাদের লিবিং রুম। তারউপর বনিতা উঠে গেছে। মা মেয়ে দুজনের মাথায় একটা চিন্তা ধরা না খেলেই হলো।

বনিতা আর লাইট অন করেনি। আবছা আলোয় সে কিচেন রুমে চলে যায়। সেখানের লাইট অন করে। এই সুযোগে সীতারা আহমেদ বাইরে বেড়িয়ে যায়। নাজিয়া সেখানে দাঁড়িয়ে বনিতার অপেক্ষা করে। কিছুক্ষণের মধ্যে বনিতা চলে আসে। নাজিয়া ও বেড়িয়ে পড়ে সমস্যা হলো সে যাবে কী করে? সে তো ড্রাইভিং পারে না তেমন। আর গাড়ী বের করলে ধরা খাওয়ার চান্স আছে। যতটুকু পারে রাস্তায় বের হতে পারবে কিন্তু রাস্তায় গাড়ী বেশী থাকলে সে কন্ট্রোল করতে পারবে না।

ভাবছে নিবরাসকে জানাবে। কিন্তু কী মনে আর নক দেয়নি। হয়ত নিবরাস ঘুমাচ্ছে আর ডিস্টার্ব করতে মন চাইলো না তার। সিদ্ধান্ত নেয় পায়ে হেঁটে যাবে গাড়ীর লোকেশন ট্র্যাক করে বুঝার চেষ্টা করে কোনদিকে যাচ্ছে গাড়ী। সিদ্ধান্ত নেয় সিএনজি পেলে উঠে চলে যাবে।

এই ছোট,ছোট বুদ্ধি গুলো নিবরাস তাকে দেয়। শুধু তাইনা কীভাবে একা নিজেকে প্রোটেক্ট করতে হয় সবসময় রাতে বের হলে সাথে অস্ত্র রাখতে হয়। আর চোখ কান খোলা রাখতে হয়। নিবরাসের বলা সেই কথাটা নাজিয়াকে বেশী সাহস জোগায়,
-নাজিয়া তুমি একজন ভালো মানুষ হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়বে আমি তোমার পাশে সবসময় আছি তোমায় প্রোটেক্ট করতে।

নাজিয়া লড়ছে যতটুকু সম্ভব তবে নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাচ্ছে না এই লড়াই করার পেছনে। সে জানে তাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। কাছের মানুষগুলো যারা দিনের পর দিন অন্যায় করে যাচ্ছি নাজিয়া কিছুই জানতো না। নিবরাস বলার পরও তার বিশ্বাস হয়নি। তবে জায়ানকে কয়েকদিন ফলো করার পর তার মনে হয় সত্যি কিছু আছে। ধীরে,ধীরে তা আরো ক্লিয়ার হয়।

নিবরাস আনায়া বেড়িয়ে পড়ে। আনায়া জানে তার মামী ওরফে মায়ের সাথে আরেকবার মুখোমুখি হবে সে। নিবরাস গাড়ী ড্রাইভ করছে আনায়া বাইরে তাকাচ্ছে একটু পর,পর।

গাড়ীতে লাইট অন করে নিবরাস আনায়ার দিকে নিজের ফোনের ক্যামরটা ধরতে আনায়া হকচকিয়ে যায়। নিজের মুখে আপনাআপনি হাত চলে যায়। নিবরাস তা দেখে হাসে। আনায়া চোখ গরম করে তাকায়। ধমক দিয়ে বলে,

-এটা কোন ধরনের কাজ? তাও এই রাতের বেলা যদি আমি হার্ট অ্যাটাক করতাম?

-তাহলে ফ্রিতে আমিও তোমার ইজ্জত হরণ করতে পারতাম। উহ্! আহ্! এসব শব্দ শোনতে হতো না আর না বদলোক শব্দটাও। ফ্রিতে চুমুও খেতে পারতাম।

-বদলোকটা এতো বেশী অ’সভ্য হচ্ছে দিনদিন।

-আমার চুমু পাচ্ছে।

-এহহ্! এটা আবার কেমন কথা? শুনেছি মানুষের প্রেম পায় আর আপনার চুমু?

-আর কথা বলো না প্লিজ!

নিবরাস গাড়ী ব্রেক কষে। আনায়ার দিকে তাকিয়ে ইনিয়েবিনিয়ে বলে,

-মহারানী যদি অনুমতি দিতেন তাহলে আমি আপনার অধরে আমার অধর মিলিয়ে একখানা রোমান্টিক ফিল নিতাম। সেই সাথে আপনার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করিতাম।

-বাজে কথা ছাড়ুন আর গাড়ী স্টার্ট দিন।

-ধুর আগে চুমু তারপর গাড়ী স্টার্ট।

কথাটা বলে নিবরাস আনায়ার অধরে নিজের অধর জোড়া মিশিয়ে নেয়। আনায়ার রাগ লাগছে প্রচুর! নিবরাস ছাড়তে মুখ ফুলিয়ে তার দিকে তাকায় আনায়া।

-এমন জামাই থাকলে রোগী হতে বেশীদিন লাগবে না।

-আচ্ছা একটু অপেক্ষা করো বাড়ী গিয়ে তোমায় প্রেগন্যান্ট বানাবো।

#চলবে

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২৩|
#শার্লিন_হাসান

এমন জামাই থাকলে রোগী হতে বেশীদিন লাগবে না।

-আচ্ছা একটু অপেক্ষা করো বাড়ী গিয়ে তোমায় প্রেগন্যান্ট বানাবো।

আনায়া চোখ গরম করে তাকায়। নিনরাস গাড়ী স্টার্ট দেয়। নির্দিষ্ট সময় তারা পিচঢালা নিরব সুনশান রাস্তায় এসে গাড়ী থামায়। তাদের গাড়ীর সামনে আরেকটা গাড়ী যেখানে জায়ান আর সীতারা আহমেদ দাঁড়িয়ে আছে। নিবরাস আনায়াকে নিয়ে তাদের সামনে যায়।

নাজিয়া সিএনজি ধরে গাড়ীর লোকেশন থেকে কিছুটা দূরে নেমে পড়ে। ভাড়া মিটিয়ে হাঁটতে থাকে। পিচঢালা রাস্তা নিরব সুনশান। দূরে,দূরে ল্যাম্পপোস্ট দাঁড়ানো। সেখানে আলো জ্বলছে! তবে চাঁদের আলোয় চারপাশটা আরো বেশী জ্বলজ্বল করছে। কেউ হেঁটে গেলে তার অবয়ব বুঝা যাবে।

কিছুটা সামনে আসতে কিছু কথাপোকথন কানে আসে। জায়ানের সাথে নিবরাসের তর্কাতর্কি হচ্ছে। মূলত তারা তাহিয়াকে নিয়ে তর্ক করছে।

সীতারা, জায়ান গাড়ী থেকে এগিয়ে নিবরাসদের সামনে আসে। নিবরাস সীতারা আহম্মেদের দিকে একবার তাকিয়ে রাস্তায় থুঃথুঃ ছুঁড়ে ফেলে। সীতারা আহম্মেদ তাতে চোয়াল শক্ত করে নেয়। নিবরাস ব্যঙ্গ করে বলে,

-জায়ান ভালো করে শাশুমাকে দেখে রাখিস। আবার অন্য মেয়েদের সাথে এনাকেও মেয়ে ভেবে পাচার করে দিস না। নাহলে খান পরিবারে শনির দশা লেগে যাবে।

-তোকে ডেকেছি একটা ঢিল করতে জনগণের নেতা। আপাতত তোর এসব জ্ঞান তোর পকেটে রাখ।

-কী জেনো ঢিল? এনি ওয়ে তোদের জন্য আজকের রোমান্সটা আমার মিস গেলো। মনে হয় না তোদের মামা আর নানু হওয়ার শখ আছে।

সীতারা আহম্মেদ ঘুরে দাঁড়ায়। আনায়া নিবরাসের হাতে চিমটি কাটে। তখন জায়ান বলে,

-আমাদের কোম্পানির গোপন যে বিজন্যাসটা সেখান থেকে তোকে থার্টি পার্সেন্ট শেয়ার দিবো। প্রয়োজনে তোকে নিরবাচনে ক্ষমতায় থাকার জন্য সাহায্য করবো। আর এসবে না হলে গাড়ী,বাড়ী যেটাই চাইবি অফার দিতে রাজী আমরা।

-এতো সুন্দর অফার! মনে হচ্ছে ভাবতে হবে। এনিওয়ে তোদের আবার কিসের বিজন্যাস?

জায়ান সীতারা আহম্মেদ ভরকে যায়। তাদের মনে হচ্ছে ভুল ইনফরমেশন শুনে ভুল জায়গায় ঢিল মেরেছে। নিবরাস কিছুই জানতো না তাহলে। কিন্তু জায়ান নিবরাসের কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। ও ভোলাভালা ঠিকই কিন্তু খুবই চালাক।

তখন সীতারা আহম্মেদ বলে,

-আমাূের বিজন্যাস আছে সেসব তুমি জানো। প্রমাণ সংগ্রহ করাও তোমার বা হাতের কাজ সেটাও জানি! কিন্তু আমরা চাই না আমাদের বিজন্যাস বন্ধ হোক সেজন্য তোমায় অফার দিলাম। খবর পেয়েছি আমাদের পেছনে লোক লাগিয়েছো তুমি। টাকা নেও এসব থেকে সরে যাও।

-শাশুমা এতো সুন্দর অফার ফ্রিতে দিলে কী হতো? আমি তো আপনার মেয়ের জামাই।

-মুখটা বন্ধ রাখো নিবরাস।

-বাবুর মাম্মাম তুমি গাড়ীতে গিয়ে বসো বাবুর পাপা আসছে একটু পর।

আনায়া ব্রু কুঁচকে তাকায়। নিবরাসের কথায় সাথে,সাথে তার উদরে হাত চলে যায়। সে কী আসলেই প্রেগন্যান্ট? কই তার তো মনে হয়না। নিবরাস ধমকের স্বরে বলে,

-আমার বাবুর আম্মু কথা কানে যায়না তোমার?

-আমার বাবু কোথায়?

আনায়া বলে। নিবরাস তখন বলে,
-ঘুমাচ্ছে তোমার পেটে। এবার যাও তো! এসব কথা শোনলে যদি ভয় পাও! আমি চাইনা তোমার পেটে প্রভাব পড়ুক আর আমার বাচ্চাটার ক্ষতি হোক।

সীতারা আহম্মেদ আর জায়ান চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে রয়। আনায়া সোজা গাড়ীতে গিয়ে বসে পড়ে। নিবরাস পান্জাবির হাতা গোটাতে,গোটাতে বলে,

-শাশুমা এতো তেজ কোথা থেকে পান আপনি? লজ্জা করে না আপনার? খুব উড়ছেন মা ছেলে! এমন ভাবে খাঁচায় বন্দী করবো না।

-তোকে মেরে গুম করে দিতেও আমার সময় লাগবে না নিবরাস।বেশী মুখ চলে তোর। হয় আমাদের অফারে রাজী হয়ে যা নাহলে বউকে নিয়ে বাড়ী যা। বেশী ফটরফটর করলে বউ জামাই দুটোকে মেরে রাস্তার সাইডে ফেলে দেবো।

-কুল শাশুমা কুল! টাকা পয়সা আপনার বেশী হয়ে গেছে মনে হয়।

-ঠিকই ধরেছিস। আমার মনে হয় না আমার জীবনে কাউকে এতো তেল মাখতে হয়েছে। যতটা তোর পেছনে সময় ব্যয় করেছি আমি ততোটা সময় আমার অফিসের কাজ শেষ করলে কয়েক লাখ টাকা আসতো।

নিবরাস ঘুরে দাঁড়ায়। জায়ান সীতারা আহম্মেদ তার কান্ড দেখছে। তবে কিছুটা ভয়ে আছে তারা। আসার সময় পিস্তলটা আনেনি। যদি নিবরাস দু একটা বুলেট ছুঁড়ে চলে যায় গাড়ী নিয়ে।

-তোর উত্তরটা খুব তাড়াতাড়ি আমায় জানাবি। আর সময় মতো অফিসে এসে চেক/চাবি যেটাই লাগে নিয়ে যাবি।

নিবরাস তাতে পাত্তা দেয়না। সে যে কাজে এসেছে সে কাজ হয়ে গেছে। তার হাতেনাতে প্রমাণ দরকার ভিডিও করা ডান। সীতারা আহম্মেদের জলজ্যান্ত প্রমাণ নিয়ে নিয়েছে সাথে। নিবরাসের ভাব লক্ষণ তাদের কাছে ভালো ঠেকছে না। কিছুক্ষণ পর সীতারা আহম্মেদ জায়ান গাড়ীতে উঠে বসে।

নাজিয়া গাড়ীর পেছনের সীটে নাজিয়া গুটিশুটি মেরে বসে আছে। সামনেই জায়ান,সীতারা আহম্মেদ বসেছে জায়ানের গাড়ীর এক্সট্রা চাবি তার কাছে আছে আগে থেকেই। শুধু গাড়ীর না অনেক কিছুরই এক্সট্রা চাবি নাজিয়ার কাছে আছে।

সীতারা আহম্মেদ জায়ানকে বলে,

-সময়টা নষ্ট হলো আমার। এই নিবরাসটা এখানে এসে পড়লো কেন? মনে হয় মাঝেমাঝে উপরওয়ালা ভুল করে এখানের জিনিস ওখানে অদলবদল করে দেয়। নাহলে এতো খারাপ মানুষের মাঝে ও এতো ভালো মানুষ আসলো কীভাবে?

-আমাদের সবকয়টা কথা ও ইয়ার্কি করে উড়িয়ে দিয়েছে। মনে হয় ওর সাথে আমরা মজা করতে এসেছি।

-একে রাস্তা থেকে সরাতে হবে। যেভাবে আমি তাহিয়াকে সরিয়েছি।

-কিন্তু একে সরালে সবার আগে দোষ পড়বে শামিম সরদারের উপর। আর শামিম তো নিজের স্বার্থের জন্য আমাদের সব পাবলিশ করতে সময় ও নিবে না।

-এটাও দেখি পথের কাটা।

-একলও রাস্তা থেকে সরিয়ে দেই আর দোষ দেই নিবরাসের।

-তাহিয়াকেও তো সরিয়েছি তো দোষটা কার গাড়ে পড়লো জেনো? তোর বুদ্ধি আমি শুনি না। শামিম সরদার ও আমাদের অনেক উপকারে আসবে।

বাড়ীতে এসে গ্যারেজে গাড়ী রেখে ভেতরে চলে যায় সীতারা আহম্মেদ আর জায়ান। তার যাওয়ার পেছন দিয়ে নাজিয়া গাড়ীর লক খুলে বেড়িয়ে আসে। একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে তার কাছে তাহিয়ার খু*নী নিবরাস না। কিন্তু আহিয়া তো এটাই ভাবে।কীভাবে বিশ্বাস করাবে তাকে?

এতো,এতো ভাবনা,ভুল বোঝাবুঝি নাজিয়ার তেমন সময় ও নেই এসবে মাথা ঘামানোর। কিন্তু নিবরাস সব জানতো আর তাকে বললো না। তাহিয়ার ব্যপারটাও বলেনি। কী জানি!

নাজিয়া খুব সাবধানে ভেতরে প্রবেশ করে নিকের রুমে চলে যায়। রুমে এসে দরজা লক করতে হাফ ছেড়ে বাঁচে। ভাগ্যিস চাবিটা ছিলো আর বুদ্ধি করে গাড়ীর পেছনে বসে পড়ে। এই রাস্তায় গাড়ী পাওয়া দুষ্কর। আর সীতারা আহম্মেদ বা জায়ান পেছনে তাকানোর প্রয়োজন মনে করবে না।

আনায়াকে নিয়ে একটু ঘুরাঘুরি চন্দ্র বিলাস করে বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে নিবরাস। আনায়া চুপচাপ বাইরে দেখছে। চাঁদের আলোয় চারপাশটা জ্বলজ্বল করছে। মনে হচ্ছে পূর্ণিমা লেগেছে।

নিবরাস আনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

-শুনেছো?

-বলুন?

-আজকে তো চাঁদে পূর্ণিমা এসেছে। আমার হৃদয়কোঠায় চাঁদের পূর্ণিমা এসেছে সে অনেক আগে। আজকে পূর্ণিমারচাঁদকে দেখে মনে পড়লো সে কথা।

-আপনার যে কত প্রেম মনে,মাথায়,শরীরে। আমার ভালো লাগছে না তো! এসব ভেজাল কবে যাবে? প্লিজ এসবে আমাকে আর আনবেন না আমি শুনতে চাইনা।

-আরে আমি তো তোমায় এনেছি রাতে ঘুরার জন্য। আর ওঁদের সাথে কথা বলার রুচি ছিলো না আমার। তবুও এসেছি আমার কিছু দরকারে। তবে দরকার শেষ হয়ে গেছে।

*****

কেটে যায় বেশ কয়েকদিন। নাজিয়া হোস্টেলে এসেছেও কয়েকদিন হলো। আজকে আনায়া আসবে দেখা করার জন্য। তার মিসকে বলে ছুটি নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয় নাজিয়া। রিকশা করেই যাবে সে।

আনায়ার দেওয়া ঠিকানার উদ্দেশ্য রওনা হয় নাজিয়া। তবে সুদূরে চোখ যায় তার। চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়। মুখ দিয়ে আপনাআপনি বের হয়,

-মৃ*ত মানুষ জীবিত হয়ে কীভাবে? তাও এই শহরের অলিতেগলিতে কেন?

#চলবে