ভালোবাসায় রাঙিয়ে দাও পর্ব-০১

0
597

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(১)
মিশকাতুল

❝সকাল সকাল ব্রাশ না করেই আমায় চু**মু দিয়েছিস কেন?মুন!!❞
ইশানের ধম*ক মিশ্রিত কন্ঠে কেঁপে ওঠে ছোট মুন। তার কি দো*ষ! দাদীই তো বলেছিলো বিয়ের রাতে জামাইকে একটু আকটু চুমু দিতে!! আজ তো তাদের বিয়ের রাতই গেলো গত কাল বিকেলেই মুনকে ধরেঁ বেঁধে দাদী ইশানের সাথে বিয়ে দিলো। যদি দাদী জিজ্ঞেস করেন,চু*মু দিয়েছিলাম কি না?তাহলে কি বলতো?মুন!কিন্তু এখন কি হবে? ভ*য় পেয়ে এক দৌড়েঁ ইশানের মায়ের কাছে চলে গেলো সে। এখন এই মায়ের মতো মানুষ টাই পারবে এর হাত থেকে রক্ষা করতে।
ইশানের দাদু আর মুনের দাদীমা হলো আপন দুই ভাই বোন পাশাপাশি জমিতে বাড়ি হলেও তাদের মধ্যে কিছু পুর্ব বছরেও সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিলো না। তিন বছর আগেই ইশানের দাদু খুবই অসুস্থ হয়ে যান সেই সময় মুনের দাদীমা ভাইয়ের সাথে সব অভিমান ভুলে দেখা করতে আসেন। দীর্ঘ সময়ের ভুল বোঝাবুঝির সম্পর্ক শেষ হয়। সেই সময় মুন ছিলো সবে ক্লাস সিক্সএ পড়ুয়া একটা মেয়ে। পাশের বাসার মানুষ গুলো তাদের আত্নীয় হয় শুনলেও কখনো এ বাসায় আসতে পারেনি। কেননা মুনের দাদু নিজেই এই নিয়ম বলেছিলেন যে ওই বাসায় কেউ যাবেও না কেউ আসবেও না। সকলেই ওনার কথা মেনে চলেন। এই বাসার কেউও যোগাযোগ রাখেনা সম্পর্ক অবনতি পায়। কিন্তু মানুষ যখন জীবন এর শেষ সময়টাতে চলে আসে তখন অজান্তেই নিজের করা ভুল গুলো ভুলে যেতে চায় তেমনি ইশানের দাদুও চেয়েছিলেন এক মাত্র বোনকে পেয়ে সব ভুলে গেলেন। তিনি সুস্থ হলেন দুই পরিবার আবার মিলিত হলো। ইশান তখন সবে মেডিকেল এ ভর্তি হয়েছিলো। খুব ছোটো বয়সে মুনদের বাসায় যাওয়া আসা করেছে এর মাঝের ১৪-১৫ বছর আর কথা বার্তা, যাওয়া আসা চলে নি। মুনের বোন মিমের বয়স প্রায় ইশানের সমবয়সী। সেই সময় মুনের বোনের বিয়ে ঠিক করা হয়েছিলো পাশের গ্রামে এক যুবকের সাথে সেই সুবাদে দাওয়াত ও পেলো আবার শুরু হলো দুই পরিবারের যাওয়া আসা। এভাবেই কে*টে*ছিলো তিনটে বছর ইশান তখন খালার বাসায় ছিলো সেখানেই পড়াশোনা করেছে। ইশান হলো বাবা মায়ের ২ য় সন্তান। তার বড় এক ভাই রয়েছে ইকবাল সে বর্তমানে গ্রামের একটা কলেজ এই শিক্ষকতা করছে। আর ছোটো ভাই ইমরান তাকেও পড়াশোনার জন্য বাইরে যেতে হলো। বাসায় রয়ে গেলো শুধু ইশানের মা, বাবা, বড় ভাই আর তার বউ, আর বয়স্কা দাদু। ইশানের দাদী সেই বছর বিশেক আগেই মা*রা গিয়েছে।

ইশান একদিন বেশ রাত করেই বাসায় আসে সোজা মায়ের রুমে গিয়ে জানিয়ে দেয় সে বিয়ে করবে। ছেলের মুখে বিয়ের কথা শুনে তিনি প্র‍থমে চিন্তিত হয়। এখনো ডাক্টার হয়ে বের হয়নি এত দ্রুত ইশান বিয়ে কেন করতে চাইছে?শাহেদা আহমেদ ছেলের কথা শুনে চিন্তিত হয়েই শরিফ আহমেদকে ছেলের প্রস্তাব জানায়। ইশানের বাবা বলেন,এখন কার ছেলেদের বিয়ে বাবারা করাতেই পারেনা নিজেরাই বউ তুলে নিয়ে আসে আমার ছেলে যখন বিয়ে করতে চেয়েছে আমি আর ভাবা ভাবি করছি না। মেয়ে দেখবো কাল থেকেই।
ইশানের দাদু শামছুর আহমেদ নাতী বিয়ে করবে শুনেই শরিফের সাথে কথা বলেন। মিলনের মেয়ে মুনকে বউ করে আনলে কেমন হয়?যথেষ্ট সুন্দরী, মেধাবী একটা মেয়ে। একটু বয়সে ছোটো তাতে কি?ভবিষ্যৎ এ সব মিল পরে যাবে।

ইশানকে মেয়ে দেখতে নিয়ে যেতে চাইলো, ইশান সাফঁ জানিয়ে দিলো যে কোনো মেয়ে ওনারা পছন্দ করতে পারে। ইশান সবার পছন্দতেই বিয়ে করবে। তাই খুশি হয়ে দাদুর সাথে ইশানে বড় ভাই ইকবাল আর শরিফ বের হলেন পাশের বাসার দিকে ইকবালের ফুফাতো ভাইয়ের মেয়েকেই সে ছেলের জন্য চাইতে। ওদের দেখে মুনের বাবা মিলন হক এগিয়ে এলেন পাশাপাশি বাসা হলেও হুট হাট আসা যাওয়া হয় না তাদের মাঝে ঘটা করেই নেমন্তন্ন করে থাকে দুই পরিবার। এই সময়ে ওদের দেখে মিলন হক খুব খুশিই হলেন। ওরা এগিয়ে এসে বসলেন ভেতরে গিয়ে দোতালা বাসাটায় মুনের বাবা একাই তার আর ভাই নেই একটা ছোটো বোন আছে সে শশুড় বাড়িতেই থাকে বেশির ভাগ সময়। মুনের মা মিথিলা ওদের জন্য শরবত নিয়ে এলো এরপর মিমকে নিয়ে নাস্তা বানালো। মুন এসব কাজ পারেনা। বই আর তার মাঝেই গভীর সম্পর্ক বাইরের দিকে নজর দেবে কখন?

ওরা সোফায় বসে কথা তুললেন, মুনের দাদু আর দাদী ও সেখানেই বসলেন কি এক পাকাঁ কথা নাকি বলতে এসেছেন। ইকবাল দাদুকে বললেন,আসল কথা ধর….. ভাই বোনের বেয়াই বেয়াইন গল্প পরে হবে।
শামছুর আহমেদ গলা পরিস্কার করে বললেন,আসলে কত গুলো বছর পর আমাদের দুই পরিবারে মিলন ঘটেছে আমি এই সম্পর্ক টাকে আর ও জোড়ালো বানাতে চাইছি আমাদের ইশানকে তো তোমরা সকলেই জানো…. ওর সাথে মুন দিদিভাইয়ের বিয়ের কথা নিয়ে এসেছি। আমরা নিজেরা নিজেরাই তাই বেশি সময় নেবেনা আশা করছি। ইশানের হাতে সময় খুব কম পাচঁ দিনের ছুটি নিয়ে এসেছে ও তোমাদের মতামত থাকলে আমরা দুদিনের মাঝেই বিয়ে করাতে চাইছি। যেহেতু তুলনামুলক ভাবে মুন অল্প বয়সী তাই ছোটো করেই অনুষ্ঠান করয়ে বিয়ের কার্য সম্পাদন করতে চাইছি।

ওনার কথা শুনে মুনের দাদী শামছুরনাহার কিছু সময় চুপ করে রইলেন তার প্রস্তাব পছন্দ হয়েছে কিন্তু মুন তো একেবারেই ছোটো এসব সংসারে দন্ত্য স্ ও সে বুঝবেনা কিভাবে কি হবে?আবার ভাইকে সে ফিরিয়েও দিতে পারবেনা। মিলন তার একমাত্র ছেলে সে জানে মা বাবা যে সিদ্ধান্ত নেবেন তাই মেনে নেবেন মেয়ের জন্য। কিন্তু মুন??তার চিন্তা দূর করতে ইশানের বাবা শরিফ আহমেদ বললেন,এত ভাববেন না ফুপিমা! মুন এখানে যেমন আদরে থেকে ওখানেও তেমন আদরেই থাকবে। আমরা সবাই জানি মুন সবে কিশোরী ও এখন বিয়ে করার জন্য উপযুক্ত নয় তবুও!!

মিলন হক এতক্ষন চুপ থাকলেও এবার বললেন,আমাদের কোনো অমত নেই। মামা আপনি বিয়ের আয়োজন করুন আমার মেয়ের বিয়ে আমি আপনার নাতনীর সাথেই দেব।

মিলনের কথা শুনে সবাই আলহামদুলিল্লাহ বললেন।বিয়ের দিন ফেললেন কাল দিন পর। শুক্রবার বিকেলেই ঘরোয়াভাবে বিয়ে হবে।

ইশান যখন জানতে পারলো মুনের সাথে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে তখন বেকেঁ বসলো সে কিছুতেই হাটুঁর বয়সী মেয়ে বিয়ে করতে পারবেনা। এই মেয়ে তার পছন্দ নয় এই বিয়ে হবেনা। বিয়ে ভাংতে বললেন।
কিন্তু শামছুর আহমেদ ওকে সহ সবাইকে বললেন,এ বিয়ে হবেই। তিনি কিছুতেই এখন বিয়ে বন্ধ করতে দেবেন না। এখন যদি বিয়েটা বন্ধ হয় তাহলে দুই পরিবারের মাঝে আবার ও মনোমালিন্য দেখা দিবে। তা তিনি কিছুতেই হতে দিবেনা। ইশান ও সবাইকে বলে দিলো সে চলে যাবে করবেইনা সে বিয়ে।
ইশান নিজের সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে ব্যাগ নিয়ে বের হলো বাসা থেকে চলে যাবে বলে কিন্তু সদর দরজায় আসতে থেমে গেলো সে শামছুর আহমেদ সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।

থামলে কেন?

দাদুর প্রশ্নে ইশান থমকে গেলেও চুপ রইলো না। গলা স্বাভাবিক রেখেই বলে,দাদু আমি এই বিয়েটা করতে চাই না। আমি বলেছিলাম আমি আপনাদের পছমদের মেয়েকে বিয়ে করবো কিন্তু এরকম বাচ্চা একটা মেয়েকে কখনোই নয়। আপনি কি বুঝতে পারছেন না?

ওসব আমি বুঝতেও চাইনা। তুমি এই বিয়ে করবে! আর যদি না করো তাহলে……

তাহলে কি দাদু?

তাহলে আমার জানাজা নামাজ আদায় করে চলে যেও!!

দাদু!!
ইশানের পথ যাওয়ার জন্য বন্ধ হয়ে গেলো বাধ্য হলো মুনকে বিয়ে করতে। আর মুন?সে তো যথেষ্ট ভদ্র মেয়ে! দাদু,দাদী, বাবা মা যা বলবে সেই মেনে নেবে । তাই তো আজ এভাবেও ইশানের বউ হয়ে গেলো সে।
——–
ইশান কিচেনের সামনে এসেছে রান্না করছে ওর আম্মু শাহেদা আর ইকবালের স্ত্রী রিয়া মিলে রান্না করছিলো সকালের জন্য দুপুরে বাইরে রান্না করা হবে ডেকচিতে। মুন সেখানেই গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কাল রাতে বিয়ে করে এখানে আসার পর সে আগেই ঘুমিয়ে গেছিলো সকালে ঘুম ভাংতেই পাশে ইশান কে দেখে দাদীর বলে দেওয়া কথা মনে পরে গেলো তাই তো চু*মু দিয়েছে সে।
ইশান এসে মুনকে ডাকলো। মুন আসার একটু পরেই ইশানকে দেখে শাহেদা জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে?

মুন ভয় পেয়ে কিছুই বলছেনা। ইশান ওর দিকে কটমট করে দেখে নিয়ে বললো,

কিছুনা। বলেই আবার রুমের দিকে চলে গেলো শাহেদা সেদিকে দেখে নিয়ে রুটি নিয়ে টেবিলের দিকে গেলো, তার কাছের আত্নীয়রা শুধু এসেছে সবাইকে নাস্তা কর‍তে দিবেন তিনি , রিয়া মুনকে বললো, বর এসেছিলো কেন?কিছু করে পালিয়ে এলে নাকি?

মুন রিয়ার দিকে একবার দেখে এই মেয়েটাকে সে আগে থেকেই চেনে জানে রিয়াকে ও আগে থেকেই ভাবী বলে ডাকে রিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে, আসলে ভাবী, দাদী তো বলে দিয়েছিলো আমি যেনো বিয়ের রাতে ইশান ভাইকে আদর করে দেই কিন্তু রাতে আমি আগেই ঘুমিয়ে গেছিলাম সকাল বেলা উঠেই ইশান ভাইকে দেখে দাদীর কথা মনে পরে গেলো! আর তাই ব্রাশ না করেই একটা চু*মু দিয়েছিলাম।

রিয়া একটু হাসলোঁ তারপর বললো, দারুণ করেছো মুন!!ভয় পাওয়ার কি আছে?প্রতিদিন দিবে তাও ব্রাশ না করেই। এখন রুমে যাও বাইরে থাকার দরকার নেই সবাই তোমায় আলাদা করে লজ্জা দেবে যা তুমি বুঝতেও পারবেনা।

কেন? আমাকে লজ্জা দিবে কেন?

রিয়া ওর দিকে তাকিয়ে বলে, এখন রুমে গিয়ে ব্রাশ করে গোসল করে নাও আমি গিয়ে আবার তোমাকে শাড়ি পরিয়ে দেব কেমন??

মুন মাথা হেলিয়ে ইশানের রুমে চলে যায়।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে