Sunday, August 10, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 427



প্রেম প্রেয়স পর্ব-১৫+১৬

0

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_১৫
#আয়েশা_আক্তার

-হ্যাঁ, আমি ছাড়া দুনিয়ার সবকিছুই তোমার কাছে সুন্দর।

প্রিয় পুরুষের অভিমানী কন্ঠস্বর শুনে চকিতে তাকায় এশা।সাদাফ এশার পাশে বসে অন্য দিকে মুখ করে রেখেছে। এশা কিছুক্ষণ সাদাফকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে হু হু করে হেসে ফেলে। হাসির শব্দ শোনে সাদাফ এশার দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকায়। এশা হাসতে হাসতে বলে,

-অভিমান করলে তোমায় বাচ্চাদের মতো লাগে।

সাদাফ আর কোনো কথা না বলে আবারও উল্টোদিকে মুখ ফেরায়। গাল ফোলানো সাদাফকে দেখতে অনেক কিউট লাগছে এশার। এক নিষিদ্ধ কাজ করে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার। এশা আজ মনের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় সাদাফের কাছে। সাদাফের ডান পাশের গালে নিজের ঠোঁট দুটো ছুঁয়ে দিয়েই এশা ছিটকে খানিক দূরে সরে যায়। সাদাফ গালে হাত দিয়ে এশার দিকে ঘুরে দেখলো, এশা পুকুরের পানির দিকে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেয়ে আছে। তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে যেন সেকেন্ড কয়েক আগে কিচ্ছুটি হয়নি। সাদাফ এশার হাত ধরে একটানে বুকে জড়িয়ে ধরে। এশা লজ্জা পেয়ে সাদাফের বুকে মুখ লুকায়। সাদাফ এশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

-এটা কি হলো?

এশা মাথা তুলে সাদাফের দিকে চেয়ে জবাব দেয়, – কিছুই হলো না।

বলেই সঙ্গে সঙ্গে আবার বুকে মাথা রাখে এশা। এই পুরো দৃশ্যটা লাবণ্য তার ফোনে ক্যাপচার করে নিলো। ভিডিও করা শেষ হতেই, প্রীতম, হৃদয়, অমিত হইহই করে উঠে।

শুধু মোহনা ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে একটু গম্ভীর টাইপের। সবার মতো সবকিছুতে হইহই করে উঠতে পারে না মোহনা। তবে সবার আনন্দ, খুশিতে তার মনেও একটা আনন্দের বার্তা দোলা দিয়ে যায়। সবার মতো তার মনেও অনুভূতি আছে। তবে সে চাইলেই সেটা কাউকে বোঝাতে পারে না। এই যেমন হৃদয় মোহনার মনে এক বিশেষ জায়গা তৈরি করেছে কিন্তু সে চাইলেই সেটা প্রকাশ করতে পারে না। আবার ভয়ও হয়, যদি হৃদয় মোহনাকে পছন্দ না করে? যদি বন্ধুত্ব নষ্ট করে দেয়, তাহলে মোহনা সেটা কি করে সহ্য করবে? বন্ধুত্বের অজুহাতে হলেও রোজ নিয়ম করে দেখা সাক্ষাৎ হচ্ছে, কথা বার্তা হচ্ছে। মোহনা হৃদয়কে নিজের মনের কথা বললে যদি মোহনা এটুকুও হারিয়ে ফেলে! নাহ, সে কিছুতেই তাঁর মনের কথা প্রকাশ করবে না। তার জীবনটা তো অন্যদের মতো না। তাই তো বন্ধুদের সাথে ও খুব বেশি দেখা যায় না তাকে। এইযে ওর বন্ধুরা সবাই মাস শেষে বাবা-মা এর থেকে কোচিং ফি, হাত খরচ, মাসে মাসে শপিং ইত্যাদি না চাইতেও হাজির হয়ে যায়। কিন্তু মোহনা খেটে খাওয়া মেয়ে। তার ঘরে বাবার ছায়া নেই, বয়স্ক- গৃহিনী মা। ছোট বোন এবার এসএসসি দিয়েছে তার কলেজে ভর্তি, মায়ের ঔষধ সবকিছু মোহনাকেই দেখতে হয়। মোহনার এইচএসসি পরীক্ষার আগেই তার বাবা মারা গিয়েছে। মা চেয়েছিলো মোহনার বিয়ে দিয়ে দিতে। সমন্ধও দেখেছে কয়েকবার। কিন্তু মোহনা বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চায়। পড়াশোনা শেষ করে নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। তাই আপাতত হৃদয়ের বিসর্জন না হয় মোহনার হৃদয়েই হোক।

-মোহ? বলতো আজ হিজল ফুল গুলোকে কেন বেশি লাল মনে হচ্ছে?

হঠাৎ পরিচিত কন্ঠ শুনে পাশ ফিরে তাকায় মোহনা। হৃদয়কে এতোটা কাছে দেখে অস্বস্তি বোধ হয় তার। আবার এক ভালো লাগায়ও ছেয়ে হৃদয় মোহনার কাছে আসলে। মোহনা বোঝে উঠতে পারে না। এ কেমন অনুভূতি?

-কিরে কই হারায় গেছিস?

মোহনাকে কথা বলতে না দেখে হৃদয় আবারো প্রশ্ন করে। বাকি সবাই সাদাফ এশাকে নিয়ে মেতে আছে। তারা সাদাফ – এশাকে আজ ইচ্ছে মতো পচাচ্ছে। মোহনা থতমত খেয়ে গেলেও নিজেকে স্বাভাবিক করে জবাব দেয়,

-না.নাহ, কোথাও হা.হারাইনি আমি। আ.আমিমি ত.তো সাসাদাফ এশাকে দে.দেখছিলাম।

মোহনার তোতলানো দেখে হৃদয় হুহা করে হেসে ফেলে। হাসতে হাসতে মাটিতে বসে পড়বার যোগাড় হয়েছে হৃদয়ের। মোহনা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,

-আমাকে আজ জোকার দের মতো দেখতে লাগছে নাকি হৃদয়? এভাবে হাসার কি হলো?

হৃদয় হাসি থামিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে মোহনার দিকে তাকায়। চোখে চোখ পড়তেই মোহনার আবিষ্কার করলো, হৃদয়ের চোখ দুটো অনেক সুন্দর। সে সাথে সাথে মাথা নিচু করে নেয়। হৃদয় মোহনার দিকে তাকিয়ে আছে এখনো। চেয়ে থেকেই বলে,

-তুই অনেক সুন্দর মোহ। আমার চোখে তোর থেকে সুন্দর আর কাউকে আমি দেখিনি। জানি বিশ্বাস করবি না তবে এটাই সত্যি।

হৃদয়ের মুখে নিজের সৌন্দর্যের প্রশংসা শুনে ভালো লাগায় ছেয়ে যায় মোহনার অন্তর। সে একবার মাথা তুলে হৃদয়ের মুখপানে চেয়ে আবার দৃষ্টি নামিয়ে নেয়। মনের অবাধ্যতা টের পেয়ে মনকে গভীর ভাবে লাগাম পড়ানোর চেষ্টা করে মোহনা। বলে উঠে,

-কি যা তা বলছিস? তুই একটা পাগল আমি আর সুন্দর কখনোই এক হতে পারে না।

হৃদয় নিজেকে সংবরণ করে বলে, -বাদ দে, বলতো আজকে হিজল ফুল গুলোকে কেন বেশি সুন্দর আর লাল মনে হচ্ছে?

মোহনা ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যিই আজকের ফুলগুলো অন্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি রঙিন।

-আসলেই তো আজকের ফুলগুলো অন্য দিনের তুলনায় অত্যধিক লাল মনে হচ্ছে। কিন্তু কেন সেটা বুঝতে পারছি না। তুই জানিস?

-হ্যাঁ, জানি তো।

-তাহলে বল?

কথাটা বলেই পাশের বেঞ্চে গিয়ে বসে পরে মোহনা৷ হৃদয়ও মোহনার পাশে বসতে বসতে বলে,

-ভালোবাসার রং লাল বলে একটা কথা শুনেছিস মোহ? যখন মানুষ কাউকে ভালোবাসে তখন তার অবস্থানরত চারপাশটাকেও ভালোবাসে। তাছাড়া মানুষ প্রেমে পড়লে সে যেমন মনের দিক দিয়ে উজ্জ্বলতা অনুভব করে, তার চারপাশটাও তখন উজ্জ্বল আর রঙিন হয়ে উঠে। ওইযে সবার মাঝখানে সাদাফ এশাকে দেখছিস মোহ?

মোহনা হৃদয়ের দেখানো আঙুল অনুসরণ করে দেখে দু’জন যুবক -যুবতীকে ঘিরে আছে তার বাকি বন্ধুরা। তারা কথা বলছে আর হাসির ফোয়ারা তুলছে। তাদের সবার মাঝখানে যে মেয়েটা বসে আছে তার দিকে নোহনা গভীর দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পায়। মেয়েটার মুখ দেখলে যে কেউ বলে দিবে মেয়েটা অনেক বেশি খুশি। তাছাড়া এশা যখন এখানে এসেছিলো তারপর থেকেই এশার মুখ থেকে যেন খুশিরা ছিটকে বেড়িয়ে আসছে। অবশ্য মাঝে মাঝে লজ্জারা এসে এশার মুখে লাল আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে। মোহনা মনে মনে বলে উঠে, সত্যিই ভালোবাসার রং লাল। ভালোবাসা মানেই সবকিছু রঙিন।

মোহনার নিরব ভাবনায় ছ্যাঁদ ঘটিয়ে হৃদয় আবারো বলে উঠে,

-এশা সাদাফের প্রেমে পড়েছে। আর সাদাফ এশার তাই তাদের চারপাশটা আজ এতো রঙিন আর সুন্দর। তোর কাছেও আজ সবকিছু রঙিন লাগছে মোহ? তবে কি তুই ও কারো প্রেমে পড়েছিস মোহ?

চলবে..

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_১৬
#আয়েশা_আক্তার

ঢাকা শহরে অনেক আগেই রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে। মানুষ নিজেদের ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়েছে বিছানায়। তলিয়েছে গভীর ঘুমে। এই ঘুমন্ত নগরীতে বিছানায় শুয়ে হাস ফাঁস করছে এক শ্যামাঙ্গিনী। সে পাশ ফিরে লাবণ্যকে দেখলো,বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। হ্যাঁ মোহনা ঢাকাতে লাবণ্যর বাসায় থেকেই ভার্সিটি আসা যাওয়া করে। মোহনার বাকি বন্ধু গুলোও ভীষণ হেল্পফুল তার প্রতি। তবে লাবণ্য একটু বেশিই। এইযে এতোবছর ধরে লাবণ্যের বাসায় থেকে পড়াশোনা করছে, লাবণ্যর মাকে মোহনা আম্মু বলে ডাকে আর নিজের মা’কে মা। মোহনার মনে পড়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার প্রথম দিনগুলোর কথা। সেই গ্রাম থেকে কত কষ্ট করে ভার্সিটি আসতো সে। ভার্সিটি শেষে গ্রামে যেতে যেতেই বিকেল হয়ে যেতো। তারপর আসা যাওয়ার ভাড়ায় এক্সট্রা খরচও লাগতো। এতোকিছু করতে কত কষ্ট করতে হয়েছে মোহনা জানে। লাবণ্য মোহনার জীবনে এসেছে আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত স্বরূপ। বন্ধুত্ব হওয়ার পর থেকেই মেয়েটা তারজন্য এতোকিছু করছে যে সারা জীবনেও লাবণ্য’র ঋণ সুদ করতে পারবে না। এ পর্যন্ত একটা বইও কিনে নি মোহনা। সব লাবণ্যর বই দু’জন ভাগাভাগি করে পড়েছে। ঢাকা শহরে লাবণ্য -ই মোহনার টিউশনি গুলো ঠিক করে দিয়েছে। টিউশনির টাকা দিয়ে মা আর ছোট বোনের সংসার চালায় মোহনা। নিজের সবকিছু তো লাবণ্যই করছে। মোহনা লাবণ্য মুখের উপর ছড়িয়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দেয় তারপর আপন মনে বলে উঠে, “তুই এতো ভালো কেন লাবু?”

মোহনা বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দায় যায়।অন্ধকার আকাশের দিকে চেয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। মনে পড়ে যায় আজ দুপুরে ভার্সিটিতে রেড কার্পেটে ঘটে যাওয়া ঘটনা। কানে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে হৃদয়ের বলা কথাগুলো।

“এশা সাদাফের প্রেমে পড়েছে। আর সাদাফ এশার তাই তাদের চারপাশটা আজ এতো রঙিন আর সুন্দর। তোর কাছেও আজ সবকিছু রঙিন লাগছে মোহ? তবে কি তুই ও কারো প্রেমে পড়েছিস মোহ?”

কথাগুলো শুনে এশা বেশ অস্বস্তিতে পড়েছিলো। তার এক মন বলছিলো মনের ডাকে সাড়া দিয়ে হৃদয়কে ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিতে। আরেক মন বলছিলো, নাহ ভালোবাসা আমার জন্য না।

এই মুহুর্তে মোহনার ঠোঁট ভেঙে কান্না আসছে। বুকে ব্যথা অনুভব করছে। কাউকে ভালোবেসে তার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা কতটা কষ্টের সেটা শুধু মাত্র তারাই বোঝে যারা এমন পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছে বা হয়।

মোহনা বিছানা ছেড়ে বারান্দায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই ঘুম ভেঙেছে লাবণ্যর। সেও মোহনার পিছু পিছু বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু মোহনা টেরও পায়নি। মোহনাকে লাবণ্য নিজের বোনের মতো মনে করে। তার কষ্টে লাবণ্যের বুকেও এক সূক্ষ্ম ব্যথার টের পায় লাবণ্য। মোহনার কাঁধে স্নেহের হাত রেখে সে। মোহনা পাশ ফিরে লাবণ্যকে দেখে জড়িয়ে ধরে। জড়িয়ে ধরে লাবণ্যও। মোহনা নিজের বা- বোনকেও কখনো এভাবে জড়িয়ে ধরে নি। যেভাবে লাবণ্যকে জড়িয়ে ধরতে পারে। মোহনা মায়ের চোখে অনেকবারই নিজেকে বোঝা স্বরূপ দেখেছে। এমনকি বোনের কাছেও মেহনা শুধুই আবদার পূরণের ভান্ডার। মোহনার মনে হয়, বাবা থাকলে সব ঠিক থাকতো। কেন বাবা তাকে এভাবে অবহেলার সমুদ্রে রেখে হারিয়ে গেলো? বর্তমানে বন্ধু গুলো ছাড়া মোহনার নিজের বলতে আর কেউ নেই, কেউ না।

লাবণ্য মোহনার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম কন্ঠে সুধায়,

– কাঁদছিস কেন?

মোহনা নিশ্চুপ। লাবণ্য আবারো জিজ্ঞেস করে,

-ভালোবাসিস হৃদয়কে? চুপ করে থাকিস না মোহ। সত্যিটা বল আমায়। ভালোবাসিস?

মোহনা ফুঁপিয়ে উঠে দু’হাতে চোখের পানি মুছে সামনে পিছে মাথা নেড়ে বোঝায় সে ভালোবাসে হৃদয়কে।

-তুই কি জানিস? বুঝতে পারিস হৃদয়ও তোকে ভালোবাসে? শুধু তুই ওকে ফিরিয়ে দিস সেই ভয়ে বলতে পারে না।

-কি বলছিস এসব? ও কেন আমায় ভালোবাসতে যাবে আমি ওর যোগ্য নই। এটা কিছুতেই হতে পারে না। হৃদয়ের ফ্যামেলি কখনোই আমায় মেনে নিবে না।

-কেন নিবে না? তুই কম কিসে? তুই ভীষণ ভালো একটা মেয়ে, সুন্দরী, মেধাবী, আর কি চাই?

-তুই সবকিছু জেনে শুনে অবুঝের মতো কথা বলছিস কেন?

-তুই তোদের আর্থিক অবস্থার কথা বলছিস? দেখ,হৃদয় ভীষণ ভালো ছেলে। সে কখনোই চাইবে না তুই তোর পরিবারের অযত্ন করিস।

-ওর চাওয়া দিয়ে কি হবে? ওর ফ্যামেলি আমায় মানবে না তুই দেখে নিস।

-আচ্ছা, বাদ দে। এখন ঘুমাবি চল।

-হুম, সকালে উঠে আবার গ্রামে যেতে হবে।

-গ্রামে যাবি মানে? এক সপ্তাহ পর আমার বিয়ে আর তুই চলে যাবি?

-মা অনেক রাগারাগি করবে রে।

-আচ্ছা বেশ, কাল তোর সাথে আমিও গ্রামে যাবো আর আন্টির অনুমতি নিয়েই তোকে নিয়ে আসবো।

-মা কিছুতেই দিবে না।

-সেটা দেখা যাবে এখন চল তো।

পরদিন সকালে,
সাদাফ গাড়ি নিয়ে এসে লাবণ্যের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। বারবার কল দেওয়ার পরও পাওয়া যাচ্ছে না তাঁকে। সাদাফ, হৃদয়, অমিত, প্রীতম একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে অথচ কোন খবর নেই তার। সাদাফ হৃদয়কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

-তুই বরং মোহ’কে কল কর। ওরা দু’জন তো একসাথেই আছে।

-আমি? কিন্তু মোহ যদি কিছু মনে করে?

হৃদয় এবং মোহনার খুব বেশি ফোনে কথা হয় না। এতো বছরে মাত্র দু’বার কথা হয়েছে কলে তা-ও মিনিট গড়ায়নি একবারো। দুইবারই হৃদয় মোহনাকে কল করেছে একটা দুটো কথা বলেই কল কেটেছে। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে অস্বস্তি হয় হৃদয়ের। হৃদয় যে মোহনার প্রতি প্রথম থেকেই দূর্বল সেটা সবাই জানে। শুধু মেহনা বাদে। সাদাফ বিরক্ত নিয়ে বললো,

-এতো হেজিটেড করার কি আছে? আমরা সবাই খুব ভালো বন্ধু। আর তুই ই বা এতো ভীতু কেন হৃদয়? মনের কথা বলে দিলেই পারিস।

-তোদের মতো এতো সাহস আমার নাই।

কথাটা বলেই নিজের ফোন থেকে মোহনার নম্বরে ডায়াল করে হৃদয়। বার কয়েক রিং হতেই মোহনা রিসিভ করে। মোহনার নিশ্চুপতা দেখে হৃদয় বলে,

-কই আছিস তোরা?

-কেন? লাবণ্যদের বাসায়ই তো আছি।

-কখন থেকে বাসার নিচে বসে তোদের জন্য অপেক্ষা করছি। লাবণ্য কই?

-ওয়াশরুমে গিয়েছে।

-আচ্ছা, তাড়াতাড়ি আয়। তোরা মেয়ে মানুষ আসলেই ঢিলা কম্পানি।

-ভালো হচ্ছে না কিন্তু হৃদয়। তুই ঢিলা তোর বউ ঠিলা।

বলেই কল কাটে মোহনা। হৃদয় থ হয়ে গেলো। সাদাফ বললো,

-কি হয়েছে?

-ওরা আসছে।

প্রীতম হৃদয়ের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

-তা তো বুঝলাম মাম্মা। কিন্তু তোমার মুখ এমন লজ্জাবতী রমণীদের মতে লাগছে কেন?

-ফালতু কথা বলিস না তো তুই?

-আমি মোটেও ফালতু কথা বলছি না। বল কাহিনি কি? মোহ তোকে কি বললো?

-কিছুই বলেনি, তোরা তো ওকে চিনিস। ও আর কি বলবে আস্ত একটা গম্ভীর মাইয়া।

লাবণ্য আর মোহনা চলে আসায় প্রীতম আর কিছু বলে না। এশা এতোক্ষণ সাদাফের বন্ধুদের খুনসুটি দেখছিলো আর হাসছিলো। আর সাদাফ দেখছিলো এশাকে। লাবণ্য আর মোহনাকে দেখে এক লাফে ওদের দুজনের মাঝখানে চলে আসে এশা। উৎফুল্লতার কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

-কেমন আছো আপু’রা?

-আলহামদুলিল্লাহ। তুমি? ( দু’জনেই সমস্বরে বলে উঠে)

-আলহামদুলিল্লাহ।

মোহনা সবাইকে দেখে অবাক হয়ে যায়। আজ লাবণ্যকে নিয়ে গ্রামে যাওয়ার কথা মোহনার কিন্তু সবাই এখানে কি করছে। মোহনার মনে প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে বুঝতে পেরে লাবণ্য বলে উঠে,

-তোকে এতো ভাবতে হবে না। আমরা গ্রাম থেকে আন্টির অনুমতি সহ তোকে নিয়ে এসে তারপর শপিং করতে যাবো। সবাই মিলে শপিং করবো, রেস্টুরেন্টে খাবো আর অনেক মজা করবো। বিয়ের পর দেশ ছেড়েই চলে যেতে হবে। আর কখনো সুযোগ হয়ে উঠবে একসাথে সময় কাটাবার। আর মোহ, এশা আমরা তিনজন কিন্তু একই রঙের শাড়ি পড়বো হলুদ অনুষ্ঠানে।

চলবে….

প্রেম প্রেয়সী পর্ব-১৩+১৪

0

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_১৩
#আয়েশা_আক্তার

এশা জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে এক বন্ধ ঘরে আবিষ্কার করে। ঘরটা কেমন অন্ধকার। এশা অন্ধকারে ভীষণ ভয় পায়। মনে হচ্ছে এই বুঝি কোনো অশরীরী এশার গলা টিপে ধরবে। এশা ভয়ে যেই চিৎকার দিতে যাবে ওমনি। এশা যে ঘরে রয়েছে তার দরজাটা খট করে খুলে যায়। বাইরে থেকে এক পশলা আলো ছড়িয়ে পড়ে দরজার কাছটায়। এশা ভাবে, কে দরজা খুললো? মানুষ নাকি কোনো অশরীরী? তখনই ঘরের লাইট জ্বলে উঠে। এশা সামনে চোখ মেলে দেখতে পায়, কোনো অশরীরী নয় বরং মধ্য বয়স্ক একজন মহিলা হাতে একটা লাল বেনারসি শাড়ি আর কিছু গহনা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মহিলাটি এশার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,

-আহারে! কি সুন্দর মাইয়াডারে এই অন্ধকার ঘরে বন্দী কইরা রাখছে! এরা মানুষ না।

এশার হঠাৎ মনে পড়ে সে দুপুরে বাড়ি ফিরছিলো তারপর কিছু গুন্ডা এশার পথ আঁটকে দাঁড়ায়। তারপর, তারপর কি হয়েছিলো আর কিছুই মনে করতে পারছে না এশা। এশা ঘরের চারপাশে ভালো করে চেয়ে দেখে এটা তার পরিচিত ঘর নয়। তবে কি গুন্ডা গুলোই আমায় তুলে এনেছে এখানে? এশার প্রশ্ন শুনে মহিলাটি পেছনে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে কেউ আছে কি না। কেউ নেই বুঝতে পেরে মহিলাটি এশার দিকে দৃষ্টি পাত করে ফিসফিসিয়ে বলে,

-চটপট তৈরি হইয়া নেও আম্মাজান। নইলে অমানুষ গুলা তোমারে মা ই রা ফেলবো।

-এসব কি? আর কেনই বা আমি তৈরি হবো?

-চৌধুরী সাহেবের একমাত্র পোলা আমান তোমারে বিয়া করবো। সে কাজী সাহেবরে নিয়া আইতে গেছে। তুমি তৈরি হইয়া নেও।

-আমাকে বিয়ে করবে বললেই আমি নাচতে নাচতে কবুল বলে বিয়ে করে নিবো? এটা আপনারা কিভাবে ভাবতে পারেন? আর আমাকে এখানে তুলে নিয়ে আসার জন্য উনার তো জেইল হতে পারে। একটা আসামি’কে মরে গেলেও আমি বিয়ে করবো না।

-ম রে গিয়ে বিয়ে তোমায় আমাকে করতে হবে না। জীবিত থেকেই বিয়ে করবে। ম রা বউ দিয়া আমি কি করমু?

সামনে দাড়িয়ে থাকা মহিলাটি এবং এশা দু’জনের চোখ ই দরজার দিকে যায়। মহিলাটি দরজায় দাঁড়ানো ছেলের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,

-বাবা, মাইয়াতা কিছুতেই সাজগোজ করবে না। আমি কতবার কইরা কইলাম কিন্তু কিছুতেই রাজি হয় না।

-আচ্ছা খালা আপনি যান আমি দেখছি।

চৌধুরী সাহেবের বাসায় কাজ করে সুমনের মা। আমান সুমনের মা’কে চলে যেতে বললেও সে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। যদি আমান মাইয়াডার গায়ে হাত তুলে, এটা ভেবে তার মনে ভয় হয়। কাজের মহিলা হলেও সুমনের মা ভীষণ ভালো মানুষ। কেউ বিপদে পড়লে তার কষ্ট হয়।

এশা যখন দেখতে পেলো সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটা বিকেলে ওর পথ আটকে ছিলো যে সে-ই। তখন রাগে ফুঁসে ওঠে। এশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমান মহিলাটির হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে এসে এশার সামনে ধরে বলে,

-তাড়াতাড়ি রেডি হও। কাজী সাহেব বসে আছে। আর যা বলতে চাইছিলে বাসর ঘরে বলো। এখন কিছু বলতে হবে না।

এশা রেগে জবাব দেয়,

-জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন মিস্টার। আমি জীবনেও আপনাকে বিয়ে করবো না। আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। সে জানলে আপনার খবর করে ছাড়বে বলে দিচ্ছি ভালোয় ভালোয় আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন।

-বাসায় দিয়ে আসার জন্য তো তুলে আনিনি। আর কি বললে, অন্য কাউকে ভালোবাসো? অন্য কেউটা যে সাদাফ সেটা আমি ভালো করেই জানি। সাদাফ জানলে আমার কিছুই করতে পারবে না। ওকে আমি নিজে টেক্সট করে তোমার আমার বিয়ের কথা বলে দিয়েছি। কু কু র কখনো বিয়ে বাড়ি পর্যন্ত আসতে আসতে হাড্ডি মাংসও জুটবে কিনা সন্দেহ আছে।

কথাগুলো বলে আমান যেই হাসতে যাবে ওমনি এশা আমানের গালে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। থাপ্পড়ে মুখ খানিকটা ঘুরে যায় আমানের। এতে করে আমান এশার উপর ভীষণ রেগে যায়। রাগে গর্জন করে বলে উঠে,

-শা লি, তোর এত্তো বড় সাহস তুই আমান চৌধুরীর গায়ে হাত তুলছিস! আমান চৌধুরীর গায়ে? তোর হাত আমি যদি ভেঙ্গে গুড়িয়ে না দিছি আমার নামও আমান চৌধুরী না। এতোক্ষণ ভালো করে কথা বলছি তো তাই কানে যায়নি কথা। এবার তো তোকে আমি জোর করেই বিয়ে করবো তারপর বোঝাবো তোকে আমান কি জিনিস।

– কথায় আছে না পাগলের সুখ মনে মনে। তোর হয়েছে সেই অবস্থা। এতোক্ষণ আপনি আপনি করে বলেছি তো তাই তোর কান অব্দি পৌঁছায়নি আমার কথা গুলো তাই না? আরে তুই তো রাস্তার কু কু রের থেকেও অধম। রাস্তার কু কু রকেও ভালো করে কথা বললে শুনে।

আবারো এশা আমানকে কু কু র বলায় আমান রেগে আ গু ন হয়ে যায়। সে হাত উঠায় এশার গাল বরাবর। কিন্তু এশাকে মা/রার আগেই পেছন থেকে একটা শক্ত হাত এসে আমানে হাত ধরে ফেলে। আমান রেগে বলে,

-কোন শা/লা/র বাচ্চা আমার হাত ধরছে রে?

-তোর য/ম।

পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনে আমান পেছনে ফিরে তাকায়। সাদাফকে দেখে চমকে যায় আমান। মনে মনে ভাবতে থাকে, এ বাড়ি তো সাদাফের চেনার কথা না। তাহলে চিনলো কি করে?

-কি ভাবছিস? আমি কি করে তোর আস্তানা চিনে এলাম তাই তো? মানুষ বাঁচার জন্য যেখানেই লুকিয়ে থাকুক আজরাইল ঠিক পৌঁছে যায় জান কবজ করতে। আর তোর মতো অমানুষ যেখানেই থাকুক আমার মতো সাদাফ সেখানে পৌঁছাবেই।

কথাটা বলে সাদাফ আমানের হাতটা মুচড়ে ধরে। আমান ব্যথায় আহ করে উঠে। নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলে,

-তোকে আমি ছাড়বো না সাদাফ।

-ইশ! সাদাফ তোর বড্ড ভয় পেয়েছে রে। পুলিশ অফিসার এই অমানুষটাকে আর সহ্য হচ্ছে না আমার ওকে এখনই সামনে থেকে সরান।

এতোক্ষণে আমান খেয়াল করলো। তার ডান পাশে পুলিশ দাড়িয়ে আছে এমনকি দরজার সামনেও দু’জন পুলিশ এবং একজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে। আমান কিছু বলতে যাবে তার আগেই পুলিশ ওর হাতে হাতকড়া পরিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যায়। দরজা অব্দি গিয়ে আমান পেছনে ফিরে তাকায়। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

-আমি, ঠিকই ফিরে আসবো আর সেদিনই হবে তোর শেষ দিন।

-আগে বেড়িয়ে তো আয়।

পুলিশ আমানকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যায়।

এতোক্ষণ শক্ত থাকলেও এশা সাদাফকে দেখে আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারলো না। নিচের দিকে চেয়ে কাঁদতে শুরু করেছে। সাদাফ এশার পাশে গিয়ে হাত দুটো এশার দু’গালে রাখে। তারপর কোমল কন্ঠে বলে

– কাঁদছো কেন? বোকা মেয়ে, আমি আছি তো!

এশা সাদাফকে জড়িয়ে ধরে। পেছনে চোখ যেতেই ছেড়ে দেয় সাদাফকে। তারপর দরজার দিকে এগিয়ে বলে,

-বাবা তুমি এখানে?

-হুম, আমিই তোমার বাবা। তাড়াতাড়ি বাসায় চলো এখন তোমার মা তো মেয়ের শোকে কেঁদে কেটে অবস্থা খারাপ।

এশা এবার খেয়াল করে তার বারবার দিকে। এই শক্ত মানুষটার মুখেও কেমন ভয়ের ছাপ লক্ষ্যনীয় হয়ে আছে। এশা বাবার বড় আদরের মেয়ে। এশা জানে আজ তাকে খুঁজে না পাওয়া গেলে মানুষটা বাঁচতেন না। অথচ নিজেকে শক্ত রেখে মায়ের অবস্থার কথা বলছে। এশা ইয়াশ আহমেদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আবারো কেঁদে ফেলে এশা। ইয়াশ আহমেদ নিজেকে আর শক্তিতে রাখতে পারলেন না। সেও কেঁদে ফেললেন মেয়েকে জড়িয়ে ধরে।

চলবে ,,

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_১৪
#আয়েশা_আক্তার

-শশুর মসাই, আপনার মেয়ে এখনই আমার বাসায় চলে যাচ্ছে না। তাই কান্না বন্ধ করুন। বাকি টা নাহয় আপনার মেয়ে যখন আপনার বাড়ি ছেড়ে আমার বাড়ি চলে আসবে। তখনই কাঁদবেন।

সাদাফের কথায় এশা বেশ লজ্জা পেয়ে যায়। লজ্জা পায় ইয়াশ আহমেদও। এভাবে ছেলের বয়সী কারো সামনে ইমোশনাল প্রকাশ করার লজ্জা। ইয়াশ আহমেদ নিজেকে স্বাভাবিক করে বললেন,

-এবার চলো, যাওয়া যাক।

ওরা তিনজন বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসে। সামনে ড্রাইভিং সীটে বসে সাদাফ, আর পেছনে ইয়াশ আহমেদ ও এশা। এশা লজ্জা পাচ্ছে আর ভাবছে, বাবা কি তবে সাদাফ আর আমার সম্পর্কের কথা জেনে গেলো? বাবা কি কষ্ট পেয়েছে এসব জেনে? এশা তো চায়নি তার বাবাকে কষ্ট দিতে। এসবই ভাবছিলো এশা বাইরে চেয়ে চেয়ে। তখনই ইয়াশ আহমেদ মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত রাখে। এশা ঘুরে বাবার দিকে তাকায়। সামনের লুকিং গ্লাসে সাদাফ দেখতে থাকে বাবা-মেয়েকে। ইয়াশ আহমেদ জিজ্ঞেস করে,

-কি ভাবছো?

-না মানে বাবা….

-সাদাফ আমাকে কই পেলো সেটাই তো?

এশা মাথা নিচু করে নেয়। ইয়াশ আহমেদ বলতে শুরু করে,

-আমি যখন তোমাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে থানায় জিডি করতে যাই। তখন জিডি করে বেরিয়ে আসার সময় আমি ছাড়াও অন্য কারো মুখে তোমার নাম শুনতে পাই। আশেপাশে খুঁজে আবারো তোমার নাম শুনে সেটা অনুসরণ করতেই সাদাফকে দেখতে পাই। আর সাদাফ হচ্ছে তোমার সৈকত আঙ্কেলের ছেলে। তুমি যেমন আমার বন্ধু হিসেবে সৈকতকে চেনো।তেমনই সাদাফ ও তার বাবা সৈকত আহমেদের বন্ধু হিসেবে আমাকে চেনে। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় কোনো দ্বিধা ছাড়াই ওকে প্রশ্ন করি ও এশাকে কিভাবে চেনে? আর জানলোই কিভাবে তোমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে আমি থানায় গিয়েছি সেটা? তখনও আমি বুঝতে পারিনি আমাদের থানায় দেখা হওয়ার বিষয়টা পুরোটাই কাকতালীয়। তারপর সাদাফের থেকেই শুনি, তোমাকে চৌধুরীর ছেলে আমান তুলে নিয়ে গিয়েছে। আমানের নামে কেইস ফাইল করতেই সাদাফ থানায় যায়।

-কিন্তু চৌধুরী আঙ্কেলকে তুমি চেনো কিভাবে?

-তোমার মনে নেই? চৌধুরী আমাকে এবং সৈকতকে নিজের শত্রু মনে করে। চৌধুরী সবসময় এশা ইন্ডাস্ট্রি এবং এস.এ ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি করতে চায়। এমনকি এই দুটো কম্পানির সাথে জরিত মানুষেরও ক্ষতি করতে দু’বার ভাবে না চৌধুরী।

ওদের কথার মাঝেই গাড়ি থেমে যায় সেটা ইয়াশ আহমেদ বা এশা কেউই খেয়াল করে না। সাদাফ তাই জোরে জোরে হর্ন দিতে শুরু করে। বাবা – মেয়ে দু’জনেই সাদাফের হর্ন লক্ষ্য করে বোকার মতো চেয়ে থাকে। সাদাফ কেন হর্ন বাজাচ্ছে সেটা মনে হয় তাদের মাথার উপর দিয়ে গেলো। বিশেষ করে এশার। সাদাফ এবার পেছনে ফিরে ইয়াশ আহমেদকে বললেন,

-ইয়াশ আঙ্কেল, আপনাকে আর আঙ্কেল ডাকা যাবে না। এখন থেকে আমি আপনাকে শশুর মশাই-ই ডাকবো। আমি কিন্তু কোনো বারণ মানবো না।

-সেটা না হয় ডেকো, তবে বিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করো।

সাদাফ আর কিছু বলতে যাবে তখন এশা উচ্চস্বরে বলে,

-তোমরা দু’জনেই পাগল।

এটা বলে এশা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। সাদাফও সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে নেমে এশার সামনে এসে দাঁড়ায়। ফিসফিস করে বলে,

“আমি আজীবন তোমার জন্য পাগল থাকতে চাই। তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতে চাই, তোমার ভালোবাসায় বারবার, হাজারবার পাগল হতে চাই।”

এশা মাথা নিচু করে নেয়। ইয়াশ আহমেদও এতোক্ষণে গাড়ি থেকে নেমে দাড়িয়েছে। সাদাফ এবার ইয়াশ আহমেদের সামনে দাড়িয়ে বলে,

-আল্লাহ হাফেজ,শশুর মশাই। আমার প্রাণভোমরাকে দেখে রাইখেন।

-সাবধানে যাও।

-আসসালামু আলাইকুম।

-ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ভালো থেকো।

-আপনিও।

সাদাফ আর দাড়ায় না৷ গাড়িতে উঠে জানালা দিয়ে এশার দিকে তাকিয়ে বিদায় জানায় সাদাফ। এশাও হাত নেড়ে বিদায় জানায়। সাদাফ জানালার গ্লাস তুলেই শাঁ শাঁ গতিতে এগিয়ে যায়।
_____________________
দুই মাস পর,
আজ সাদাফের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে সাদাফ, প্রীতম, হৃদয়। মোহনা ও লাবণ্য গিয়েছে এশাকে নিয়ে আসতে। আর মাত্র এক সপ্তাহ পর লাবণ্যর বিয়ে। তারপরই লাবণ্য মেহেদীর সাথে চলে যাবে লন্ডনে। আবার কবে দেশে আসবে ঠিক নেই। লাবণ্য বন্ধুদের সবাইকে অনেক মিস করবে। সেই সাথে মিস করবে, ভার্সিটির রেড কার্পেট নামক জায়গাটাকে। হ্যাঁ, ওরা বর্তমানে ভার্সিটির ভেতরে যে জায়গাটাতে অবস্থান করেছে সে জায়গাটার নাম রেড কার্পেট। কারণ এ জায়গার চারপাশ টা জুড়ে রয়েছে অসংখ্য হিজল ফুলের গাছ। ফুলগুলো মাটিতে এমনভাবে পড়ে আছে যে জায়গাটা পুরো লাল রঙে ছেয়ে গেছে। এরজন্যই এ জায়গাকে রেড কার্পেট নামকরণ করেছে সাদাফ ও তার বন্ধুরা। অন্যরা অবশ্য হিজলতলী বা পাশে পুকুর থাকায় পুকুরপাড় বলেই জায়গাটকে চেনে। হিজল ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম : Barringtonia acutangula।

হিজল গাছ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী গাছ। এটি মাঝারি আকারের ডালপালা ছড়ানো একটি দীর্ঘজীবী চিরহরিৎ গাছ। এর বাংলায় অনেক নাম আছে যেমন- হিজল, নদীক্রান্ত, জলন্ত, কার্ম্মক ইত্যাদি। এর ইংরেজি নাম গুলো হল- Barrigntonia, Freshwater Mangrove plant, Samundarphal, Indian Oak, Indian Putat. হিজল গাছের আদি নিবাস দক্ষিণ এশিয়া, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া।

ঐতিহ্যবাহী গাছের মধ্যে হিজল গাছ একটি। এ গাছটি আমাদের প্রকৃতি থেকে দিন দিন হারিয়েই যাচ্ছে। ডালপালার বিস্তার চারদিকে। উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ মিটার। পাতা

হিজল ফুল দেখতে খুবই সুন্দর। গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে হিজল গাছে ফুল ফুটতে শুরু করে। ফুল সাদা, গোলাপি বা লাল রঙের, ছোট, ৬ – ১০ মিমি লম্বা চার পাঁপড়ি বিশিষ্ট। ১০-১২ সেমি লম্বা পুষ্পদণ্ডের মাঝে অসংখ্য ফুল ঝুলন্ত অবস্থায় ফোটে। গভীর রাতে ফুল ফোটে, সকালে ঝরে যায়। ফুলে একধরনের মিষ্টি মাদকতাময় গন্ধ আছে। সকালের সময়টাতে ছোট আকৃতির লাল অথবা গোলাপি হিজল ফুল গাছের নিচে ঝরে বিছিয়ে থাকে যেন এক অপরূপ দৃষ্টি নন্দন পুষ্প শয্যা।

লাবণ্য ও মোহনা এশাকে নিয়ে এসে পৌঁছেছে সবে। এশা তো এখানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে পুরোই মুগ্ধ। এতো সুন্দর জায়গা এশা এর আগে কোথাও দেখেনি। আর ভার্সিটির ভেতরে এতো সুন্দর একটা জায়গা আছে সেটা এশা কখনো কল্পনাও করেনি। এশার চোখ মুখের মুগ্ধতাই বলে দিচ্ছে এশা এখানে এসে অনেক বেশি খুশি হয়েছে। সবার চোখেই এটা পড়ছে। এশা অনেকক্ষণ চেয়ে থাকলো হিজল ফুলগুলোর দিকে। তার লাবণ্যকে বললো,

-আপু আমি জুতো খুলে ফুলগুলোর উপর দিয়ে হাঁটি?

-হাঁটো, সমস্যা নেই তো।

অনুমতি পেয়ে এশা আর দেরি করে নি। তাড়াতাড়ি জুতো খুলে ফুলগুলোর উপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করে। ফুলের উপর পা পড়তেই সে অনুভব করে, কি নরম! মোলায়েম ফুলের রাস্তা! হেঁটে হেঁটে এশা একদম পুকুরের কাছে চলে যায়। লাল রঙা হিজল ফুল পুকুরের পানিকেও রাঙিয়ে দিয়েছে। এশা পুকুরের সিঁড়িতে বসে, হাতে পানি নেয়। পানিতে হিজল ফুল নিয়ে হেসে উঠে, আপন মনে। আর বলে উঠে, কি সুন্দর! কি সুন্দর!

-হ্যাঁ, আমি ছাড়া দুনিয়ার সবকিছুই তোমার কাছে সুন্দর।

চলবে…

প্রেম প্রেয়সী পর্ব-১১+১২

0

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_১১
#আয়েশা_আক্তার

সেদিন বাসায় ফেরার পর সাদাফ নিজের রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে সাদাফ কিছু একটা ভাবছিলো আর আপন মনে হাসছিলো। হঠাৎ কাঁধে কোমল হাতের স্পর্শ পেয়ে পাশ ফিরে তাকায়। ওষ্ঠ যুগল ফাঁকা করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিসেস সেলিনা আহমেদ বলে উঠেন,

-মেয়েটাকে খুব বেশি ভালোবাসিস?

সাদাফ খানিক বিস্মিত হলেও সেটা নিজের মনের মধ্যে রেখে হেসে ফেলে। তারপর জিজ্ঞেস করে,

-তার আগে বলো তুমি কিভাবে জানলে মা?

-মায়েরা অনেক কিছু জানতে পারে। এই যেমন একটু আগে তুমি একটি মেয়ের কথা ভেবেই হাসছিলে। এটা কিন্তু তুমি আমায় বলোনি কিন্তু আমি জানি।

-হ্যাঁ, মা মেয়েটাকে আমি অনেক বেশিই ভালোবেসে ফেলেছি।

সাদাফ নিজের মাকে খানিকটা জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বলে। মিসেস সেলিনা ছেলের কাঁধে স্নেহের হাত রেখে বলে,

-নাম কি? বাসা কোথায় দেখতে কেমন?

সাদাফ মোবাইল ফোন হতে একটা ছবি বের করে দেখায়। মিসেস সেলিনা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মেয়েটিকে দেখতে থাকে। শুভ্র -আকাশী রঙের মিশেলে পড়া একটা সাধারণ থ্রি পিছ, লম্বা চুলগুলো বিনুনি করা, নৌকায় বসে হাস্যোজ্জ্বল মুখে চেয়ে আছে। কোনো সাজগোছ হীন একটা মানুষকে এতো সুন্দর লাগে এটা এই প্রথম সেলিনা বেগমের বোধগম্য হয়। মেয়েটাকে তারও ভীষণ পছন্দ হয়েছে। সাদাফের দিকে মোবাইল ফোন এগিয়ে দিয়ে বলেন,

-মাশাল্লাহ, সুন্দর মেয়েটা। তা বাসা কোথায়? উত্তরাতেই মা। আমাদের ভার্সিটিতে পড়ে এবার সেকেন্ড ইয়ারে উঠবে।

-কি বলো সেকেন্ড ইয়ার? দেখতে তো পিচ্চি লাগে একদম। হালকা গুলুমুলু ভাব আছে। একদিন বাসায় নিয়ে এসো। আর নাম কি মিষ্টি মেয়েটার?

-নাম এশা ইসলাম, সবাই এশা বলেই ডাকে।

-সুন্দর নাম। তোমার বাবার সাথে কথা বলবো আমি। তুমি ভালো করে পড়াশোনায় মন দাও।

-জী, আম্মু।

তখনই ঘরে গিয়ে মিসেস সেলিনা তার হাসবেন্ডকে সৈকত আহমেদকে সবকিছু খুলে বলে। ছেলের পছন্দই তাদের পছন্দ। এতে তারা অখুশি হননি কেউ ই। বরং দুজনেই ঠিক করেছে ছেলের পরীক্ষার পরই মেয়ের বাসায় যোগাযোগ করবে। মিসেস সেলিনা ছেলেকে পরে এই কথা জানিয়েও দেন।

তার একদিন পরই কোনো এক কাজে বাবার অফিসে এসে শুনতে পায় তার বাবার প্রতিদ্বন্দ্বী মিস্টার চৌধুরী সাহেব তাকে নিয়ে কথা শুনাচ্ছেন। সে দমে যাওয়ার পাত্র নন তাই সবার মুখের উপর উচিৎ জবাব দিয়ে দেন। সাদাফের জবাব শুনে চৌধুরী সাহেব কোনো কথা না বাড়িয়ে মিনমিন করে বললেন,

– ছেলের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন অথচ কাউকে জানাননি? বিয়ে কি লুকিয়ে করার জিনিস নাকি।

সৈকত আহমেদ শান্ত কিন্তু ধারালো স্বরে জবাব দেয়,

-কুকুরকে বিয়ের খবর দিতে হয় না। সে গন্ধ শুঁকে শুঁকে ঠিকই বিয়ে বাড়িতে পৌঁছে যায়।

চৌধুরী সাহেব স্পষ্ট বুঝতে পারলেন, কুকুর সম্বোধনটা তাকেই করা হয়েছে। ভেতর ভেতর ক্রোধে ফুসলেও ভেজা বেড়ালের মতো লেজ গুটিয়ে প্রস্থান করেন তিনি। চৌধুরী সাহেব যেতেই সাদাফ ভেতরে এসে সৈকতের সামনে চেয়ার টেনে বসে। সৈকত সাহেব এতোক্ষণ ঘটে যাওয়া ঘটনা ভুলে ছেলেকে জিজ্ঞেস করে,

-হঠাৎ অফিসে এলে?

-এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। তাই ভাবলাম একবার ঘুরে যাওয়া যাক।

-হ্যাঁ, পুরো অফিসটা ভালো করে ঘুরে দেখো। একদিন তো তোমাকেই ব্যবসার হাল ধরতে হবে।

-হ্যাঁ, তবে পাশাপাশি আমি গানকে রাখতে চাই।

-তোমার গান থাকুক সাথে ব্যবসাটাও। তোমার উপর আমার আস্থা আছে তাই তো তোমার মতের অমত কখনো করিনি। আর এটাও জানি আমার ছেলেও আমার অপছন্দ কিচ্ছু করবে না।

-ধন্যবাদ বাবা, এতোটা ভরসা করার জন্য। তুমি পৃথিবীর বেস্ট বাবা। আর সরি আমার জন্য তোমাকে চৌধুরী আঙ্কেলের থেকে এতোগুলা কথা শুনতে হলো।

-প্রথমত, পৃথিবীর প্রতিটি বাবাই তার সন্তানের জন্য বেস্ট। আর সরি বলার কিছু হয়নি বরং আমি তোমার মায়ের বলা কথাগুলো ভুলে গিয়েছিলাম। আর এটাই সেই তোমার পছন্দের মেয়ে সেটাও বুঝতে পারিনি কারণ আমি তাকে দেখিনি। এরজন্যই চৌধুরীকে সাথে সাথে জবাব দিতে পারিনি। ভালো হয়েছে তুমি এসেছো। তোমার মা বলেছে তার মেয়েটাকে পছন্দ হয়েছে। তারমানে মেয়েটা অবশ্যই মিষ্টি। একদিন বাসায় নিয়ে এসো।

-আচ্ছা বাবা, আমি অফিস টা ঘুরে আসি।

-ওকে।
___________________________

এশার ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষার রেজাল্ট দিলো। ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছে এশা। সে খুশিতে সাদাফকে কল করে সাথে সাথেই জানিয়েছে। সাদাফ আজকাল ভীষণ ব্যস্ত পড়াশোনায়। এক সপ্তাহ পরই পরীক্ষা। তাই এশার সাথে দেখা সাক্ষাৎও আগের থেকে তুলনা মূলক কম হয়।

এদিকে এশাসহ ক্লাসের আরো কয়েকজন মেয়ে ট্রিট দেওয়ার জন্য পাগল করে তুলেছে। বাধ্য হয়ে এশা সবাইকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে যায়। সেখানে হালকাপাতলা খাওয়া দাওয়া আর আড্ডায় কিছু সময় ব্যয় করে তারা। সবশেষে এশা সবার বিল দিয়ে সবাইকে নিয়ে বের হয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে। সবাই যে যার বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। তাদের মধ্যে দু’জন রওয়ানা দেয় ভার্সিটির হোস্টেলের দিকে। এশা এবং তানহার বাসা দু’দিকে হওয়ায় তারাও একে অপরের থেকে বিদায় নিয়ে দুদিকে অগ্রসর হয়। কিছুক্ষণ হেঁটে একটা রিকশা ডেকে যেই এশা উঠতে যাবে ওমনি তার সামনে উপস্থিত হয় কালো কোর্ট, প্যান্ট, কালো চশমা পড়া একজন দৈতমানব। সে পেছনে ইশারা করে বলে,

-ধর মেয়েটাকে, এখনই গাড়িতে তোল।

তারা এশাকে ধরার জন্য হাত বাড়াতেই এশা সামনে পেছনে বারকয়েক চোখ বুলিয়ে বলে উঠে,

-আপনারা কারা? আর আমাকে গাড়িতেই কেন তুলবেন? আমি বাড়ি যাবো।

-গাড়িতে করে তোমায় মামাবাড়িতে নিয়ে যাবো সোনা।

-আপনারা কেন আমায় মামা বাড়িতে নিয়ে যাবেন? আমার মামা বাড়ি তো রূপপুর গ্রামে।

-আহ, বেশি কথা বলেরে। আমরা তোমার মামাবাড়িতেই নিয়ে যাবো তোমায় এখন গাড়িতে উঠো।

এশা দেখতে পেলো দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাওয়ালা চোখে মুখে ভয় নিয়ে রিকশা নিয়ে পালালো।

-কি হলো উঠবি নাকি জোর করে উঠাবো?

-তুই তুকারি করছেন কেন? আমি মানা বাড়ি যাবো আপনাদের সাথে আমি এখন বাসায় যাবো।

কথাগুলো বলেই এশা হাঁটা ধরে কিন্তু পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন এসে এশার হাত দুটো ধরে ফেলে। আরেকজন এসে কিছু একটা স্প্রে করে এশার মুখ বরাবর। সঙ্গে সঙ্গে এশা নেতিয়ে পরে। লোক দুটো এশাকে ধরে গাড়িতে বসায়। তারপর নিজেরাও বসে একজন ড্রাইভিং সীটে অন্য জন তার পাশে। কালো কোর্ট পড়া লোকটা কাউকে কল করে বলে,

-হ্যালো ড্যাড, কাজ হয়ে গিয়েছে। মেয়েটি এখন আমার গাড়িতে অবচেতন হয়ে পড়ে আছে।

ওপাশ থেকে কি বললো শোনা গেলো না। ছেলেটা আবারো বিরবির করে কিছু একটা বলে কল কেটে মুঠোফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে নেয়। তারপর গাড়িতে উঠে মেয়েটির পাশের সীটে বসে। ড্রাইভিং সীটে বসা লোকটি গাড়ি চালাতে শুরু করে। কালো কোর্ট পড়া লোকটা এবার এশাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে। হঠাৎ করে তার মনে হচ্ছে এশাকে তার ভালো লেগে গেছে। যে করেই হোক এশাকে তার চাই। ফিরে গিয়েই ড্যাডকে বলবে সে। ড্যাডের কাজ তো করা হলো এবার তার কাজের পালা। সে আরো ভাবতে থাকে,

“ছোট থেকেই সাদাফের জন্য অপমানিত হয়ে এসেছি। স্কুল লাইফে ওর জন্য স্যার আমাকে অনেক অপমান করতো। এমনকি ওর জন্য কোনো মেয়ে আমার দিকে তাকাতো না। আজ ওর প্রাণভোমরাকে কাছে পেয়েও ছেড়ে দিবো? কখনোই না। তোর প্রাণভোমরাকে ছিনিয়ে নিয়ে তোকেও উপভোগ করাবো হেরে যাওয়া কতটা কষ্টের। কথায় আছে না শেষ ভালো যার সব ভালো তার। তাহলে সারাজীবন জিতে গিয়ে কি লাভ হলো তোর? শেষে জিত তো হবে আমার।”

চলবে….

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_১২
#আয়েশা_আক্তার

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে এখনো মেয়েকে ফিরতে না দেখে আনিকা চিন্তিত হয়। বারবার ঘড়ি দেখে আর দরজর দিকে তাকায়৷ সময় চলে যাচ্ছে, সন্ধ্যা প্রায় হয়ে আসছে। কিন্তু এশার আসার খবর নেই। তার মন কেমন কু ডাকছে। মনে হচ্ছে মেয়ের সাথে খারাপ কিছু হয়েছে। নাহলে এশা দুপুর তিনটার মধ্যেই বাসায় ফেরে সবসময়। আরো আগেই বেশির ভাগ ফেরে, খুব বেশি দেরি হলে তিনটা। আনিকা আর কিছু ভাবতে পারছে না। মুঠোফোন তুলে নিয়ে স্বামী ইয়াশ আহমেদের নম্বরে ডায়াল করে। ইয়াস আহমেদ মিটিং এ ব্যস্ত থাকায় কল কেটে দেয়। আনিকা আবারো কল দেয়। এবার ইয়াশ মনে মনে ভাবে, জরুরি কিছু না হলে তো আনিকা কল কেটে দেওয়ার পর আর কল দেয় না। তবে কি বাসায় কিছু হলো? এসব ভেবে নিয়ে সবার থেকে দু’মিনিট সময় চেয়ে নিয়ে কল রিসিভ করে। কল রিসিভ করতেই আনিকা হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। কান্নার শব্দে চমকে যান ইয়াশ আহমেদ। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে কান্না একটু কমিয়ে ভেঙে ভেঙে বলে,

-এশা এখনো বাড়ি ফিরে নি। তুমি কিছু করো প্লিজ।

এটুকু বলেই আনিকা কল কেটে দেয়। সৈকত মেয়ের না ফেরার কথা শুনে দ্রুত মিটিং ক্যান্সেল করে বাসায় চলে আসে। ইয়াশ আহমেদ বাসায় এসে দেখে তার স্ত্রী মেয়ের চিন্তায় ঘরময় পায়চারী করছে আর চোখের পানি মুছছে। আর ছোট মেয়ে ইয়াশাও তার পাশে পাশে হাঁটছে আর দরজার দিকে তাকাচ্ছে। ইয়াশ আহমেদ ইয়াশাকে জিজ্ঞেস করে,

– তোমার আপুর বন্ধুদের ফোন নাম্বার আছে? তাদের সাথে যোগাযোগ করেছো?

-হ্যাঁ, মায়ের ফোন থেকে সবাইকে কল করে জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু কেউ আপুর কোনো খবর জানে না। আমি আশায় ছিলাম তানহা আপু অন্তত জানবে আপু কোথায় আছে সেটা। কিন্তু হতাস, সেও জানে না। আপু নাকি অনেকক্ষণ আগেই বাসার দিকে রওয়ানা হয়েছে। কিন্তু এখনো কেন আসছে না সেটাই বুঝতাছি না।

-আমার এশার নিশ্চয়ই কোনো বিপদ হয়েছে। তুমি যেখান থেকেই হোক খুঁজে এনে দাও আমার মেয়েটাকে।

বলেই আবারো কান্নায় ভেঙে পড়ে আনিকা। সৈকত ইয়াশাকে আনিকাকে সামলাতে বলে বেরিয়ে পরে।
_______________________

এশাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না শুনে তানহা প্রথমে ভাবে, হয়তো এশা সাদাফের সাথে কোথাও দেখা করতে গিয়েছে। কিন্তু আজ দুপুর পর্যন্ত তো এশা ওর সাথেই ছিলো। এরকম কিছু প্ল্যান থাকলে এশা অবশ্যই তাকে বলতো। তানহা আর কিছু না ভেবে লাবণ্যর নম্বরে কল করে। সাদাফের ফোন নাম্বার যেহেতু নাই তাই লাবণ্যকে কল করেই জিজ্ঞেস করবে এশা সাদাফের সাথে আছে কি না। যেই ভাবা সে কাজ। এশা লাবণ্য’র নম্বরে কল করলো। কয়েকবার রিং হতেই লাবণ্য কল রিসিভ করে,

-হ্যালো, তানহা। কেমন আছো?

-ভালো না আপু। তুমি কেমন আছো?

-আমি তো ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ। তুমি ভালো নেই কেন?

-আসলে আপু, এশাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওর বাসায় সবাই অনেক চিন্তা করছে।

-কি বলো? হয়তো সাদাফের সাথে কোথাও গিয়েছে।

-না, আপু আজ পর্যন্ত আমরা একসাথেই ছিলাম। এরকম কিছু হলে ও আমাকে আগেই বলতো। আমার খুব টেনশন হচ্ছে আপু। আপনি একটু সাদাফ ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করে আমাকে জানান প্লিজ।

-ওকে পাগলী মেয়ে, চিন্তা করো না। ও হয়তো সাদাফের সাথেই আছে। আমি এক মিনিটে সাদাফকে জিজ্ঞেস করে তোমাকে কল ব্যাক করছি কেমন?

-ওকে আপু।

লাবণ্য কল কেটেই সাদাফের নাম্বারে ডায়াল করলো। সাদাফ কল রিসিভ করতেই লাবণ্য জিজ্ঞেস করে,

-এশা তোর সাথে আছে?

-মানে? এশা আমার সাথে থাকবে কেন? আগে বিয়ে তো করি তারপর একসাথে থাকবো। তুই এসব কি কথা বলিস বিয়ের আগেই একসাথে থাকবো?

-ফাজলামো বাদ দে সাদাফ। এশাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।ওর বাসার সবাই অনেক চিন্তা করছে। তাই তানহা আমাকে কল দিয়ে বললো, তোকে জিজ্ঞেস করতে তোর সাথে আছে কি না?

-কি বলিস ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে? আমাদের তো আজ দেখা হয়নি। দুপুর থেকে ওকে ফোনেও পাচ্ছি না আমি। বারবার সুইচড অফ বলছে।

-তাহলে কি হয়ে গেলো মেয়েটার? ও কি কোনো বিপদে পড়েছে?

-বাজে কথা বলবি না লাবণ্য আমার শরীরে রক্ত থাকতে আমি এশার কিছু হতে দিবো না।

কথাটা বলেই কল কেটে দেয় সাদাফ। লাবণ্য তানহাকে কল করে জানিয়ে দেয় সাদাফের সাথে আজ এশার দেখা হয়নি। সাদাফ কল কেটে তক্ষুনি বাসা থেকে বের হয়ে যায় এশাকে খুঁজতে। সাদাফ এদিক সেদিক সব বন্ধুদের লাগিয়ে দেয়। তারপর এশার পেছনে লাগিয়ে রাখা দু’জন গোপন সোর্স কে কল করে যা জানতে পারে। সেটা জেনে রাগে সাদাফের কপালের রগ ফুলে যায়। চোখ মুখ কেমন লাল বর্ণ ধারণ করে।
_______________________

এদিকে নিজের ছেলেকে পাঠিয়ে এশাকে তুলে নিয়ে এসেছে এস.এ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি করতে। মানে সাদাফকে মানসিক ভাবে অসুস্থ করে দিতেই এশাকে তুলে নিয়ে আসার প্ল্যান করে তিনি। এতে সাদাফ এশাকে হারিয়ে ধীরে ধীরে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যাবে। আর তারপরই ছেলের শোকে মিস্টার সৈকত আহমেদ ভেঙে পড়বে। ধীরে ধীরে তার দাঁড় করানো ব্যবসারও অবনতি হবে। তখন চৌধুরী সাহেব এ শহরে সবার থেকে উচু আসনে তার ব্যবসাকে দাঁড় করাতে পারবে। এই তার প্ল্যান। কিন্তু কে জানতো তার ছেলে এশাকে তুলে আনতে গিয়ে তার প্রেমে হাবুডুবু খাবে? জানলে কখনোই তিনি ছেলেকে এ দায়িত্ব দিতেন না।

চৌধুরী সাহেবের একমাত্র ছেলে আমান চৌধুরী এশাকে তুলে নিয়ে এসেই বাবার কাছে আবাদার করে, সে এশাকে বিয়ে করতে চায়৷ আজ এবং এখনই। তারপর সাদাফকে দেখিয়ে দিতে চায় কেড়ে নেওয়ার শাস্তি কতটা ভয়ানক হয়? ঠিক যেভাবে ছোট সময় সাদাফ ক্লাসের ফার্স্ট বয় হতে সরে গিয়েছিল। সাদাফ আসার পূর্বে সবসময় আমান স্কুলে ফার্স্ট হতো। কিন্তু সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় সাদাফ ওদের স্কুলে এসে ভর্তি হয়। তখনও আমানের রোল ০১ ছিলো। কিন্তু পরবর্তী বছর সাদাফের রোল ০১ হয়ে যায়। এরপর থেকে আমান আর কখনো ক্লাসের ফার্স্ট বয় হতে পারে নি। এতে ভেতরে ভেতরে সাদাফের উপর আমানের মনে ক্রোধের জন্ম হয়। সেই ক্রোধের রোষানলে জ্ব লে ই আমান এশাকে সাদাফের থেকে কেড়ে নিতে চাইছে।

আমান বড্ড জেদি ছেলে। সে যখন বলেছে এশাকে বিয়ে করবে মানে করবেই। তাই চোধুরী সাহেবও বাধ্য হয়ে ছেলের কথা মেনে নিলেন। সে শান্ত স্বরে ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন,

-আমান বাবা, তোমার যখন ইচ্ছে তুমি এই মেয়েকেই বিয়ে করো। কিন্তু দুটো দিন সময় নাও।

-নাহ, দুটো দিন অনেক সময়ের ব্যাপার এরমধ্যে সাদাফ এসে ওকে নিয়ে যাবে।

-সাদাফ জানতেই পারবে না এশা এখানে আছে। তুমি আজ রাতটা অন্তত পার হতে দাও। কাল কাজী ডেকে আমি নিজে এই মেয়ের সাথেই তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করবো।

-তুমি সাদাফকে চেনো না বাবা। ও আবারো এসে আমার থেকে মেয়েটাকে ছিনিয়ে নিতে চাইবে। সেই সুযোগ আমি দিবো না। আমি যেহেতু বলেছি আমি আজকেই মেয়েটা বিয়ে করবো। তারমানে আজ, এই মুহুর্তেই আমি বিয়ে করবো। কেউ আটকাতে পারবে না আমায়। এমনকি তুমিও না বাবা।

বলেই আমান গটগট করে হেটে কোথাও একটা চলে গেলো। তারপর আবার পেছনে ফিরে কৃত্রিম হেসে চৌধুরী সাহেবকে লক্ষ্য করে বললো,

-হালকা পাতলা শপিং করতে যাচ্ছি। বিয়ে করবো বউকে কিছু দিবো না এটা কেমন দেখায় না?

চলবে…

প্রেম প্রেয়সী পর্ব-১০

0

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_১০
#আয়েশা_আক্তার

এশার ইয়ার চেঞ্জ এক্সাম শেষ হয়েছে আজ। সাদাফ ওকে বলে দিয়েছে আজ পরীক্ষা শেষে যেখানে সাদাফের গাড়ি রাখা হয় সেখানে চলে যেতে। এশা পরীক্ষা শেষ হতেই সাদাফের কথামতো গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। সাদাফ আগে থেকেই ড্রাইভিং সীটে বসে অপেক্ষা করছিলো। তাই এশা আসা মাত্র দরজা খুলে দিয়ে ভেতরে বসতে ইশারা করে। এশা বাধ্য মেয়ের ন্যায় গাড়িতে উঠে বসে সিট ব্যালট বেধে নেয়। তারপর জিজ্ঞেস করে,

-এভাবে ডাকলেন যে কোথাও যাবেন?

-আজ কতদিন পর তোমায় দেখছি। কতদিন পর কাছে থেকে তোমার কন্ঠ স্বর শুনতে পাচ্ছি।

-দেখা না হলেও কথা তো হয়েছে।

-সরাসরি তোমার কথা শুনতে পারা আর ফোন কলে তোমার শোনা কি এক এশা? আমার প্রতিটি মুহুর্তে তোমার সঙ্গ চাই এশা।

-তাহলে বিয়ে করে ফেলুন।

-চলো এখনই কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি।

কথাটা ব’লেই সাদাফ ড্রাইভ করতে শুরু করে। ভার্সিটি এরিয়া থেকে গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে শাঁ শাঁ গতিতে। এশার তখন টনক নড়ে মুখ ফসকে বেফাঁস কি বলে ফেলছে। বুঝতে পেরেই এশা সাদাফের দিকে তাকায়। সাদাফ ড্রাইভিং এ মনযোগ দিয়েছে। আড়চোখে এশার চুপসানো মুখ দেখে হেসে ফেলে সাদাফ। হাসি দেখে এশা প্রশ্ন ছুঁড়ে,

-হাসছেন কেন আপনি? আর সত্যি সত্যিই কী কাজী অফিসে যাচ্ছেন নাকি? এভাবে আমাদের পরিবার ছাড়া বিয়ে করাটা ঠিক হবে না সাদাফ।

সাদাফ সামনে দৃষ্টি রেখেই বলে,

-আমি তো বিয়ের কথা বলিনি। তুমিই বললে, তারমানে তুমি এখনই আমায় বিয়ে করতে চাইছো?

এশা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে। সাদাফ এক হাত বাড়িয়ে পাশে থাকা এশার হাতের উপর রেখে বলে,

-বিয়ে আমাদের দুই পরিবারের সম্মতিতেই হবে। তোমার পিচ্চি মাথায় এসব চিন্তা ঢুকাতে হবে না। পরীক্ষা শেষ হলেই আমি তোমাকে নিয়ে বাবা-মা এর সাথে কথা বলবো।

এশা মাথা নিচু করে রয়, কিছু বলে না। ঢাকার পাশে কিছুদূর এসে সাদাফ গাড়ি থামায়। গাড়ি থেকে নেমে এশাকেও নামতে বলে। এশা নেমে সামনে তাকাতেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে অবাক হয়ে যায়। এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে, আর কিছুটা পথ হাঁটলেই নদী। নদী নাকি সমুদ্র এশা ঠিক বুঝলো না। কি সুন্দর, উত্তাল জলরাশী! সামনের দিকটায় বালু আস্তরণের কারণে কিছুটা বীচের মতো দেখতে লাগছে। এশা ভাবে, কক্সবাজার ছাড়া-ও বাংলাদেশে বীচ আছে? কই এশা তো জানে না। সাদাফের দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকায় এশা। সাদাফ হেসে জিজ্ঞেস করে,

-জায়গাটা ভালো লাগছে?

-দারুণ! কিন্তু এটা কি সমুদ্র নাকি নদী? এ জায়গাটা দেখে কেমন মনে হচ্ছে এটা একটা বীচ!

-এটা সমুদ্র নয়, এটা হচ্ছে পদ্মা নদী। হ্যাঁ, নদীর পাড়ে বালির জন্য বীচের মতোই লাগে অনেক টা। তোমাকে এখানে কেন নিয়ে এলাম জানো,

-কেন?

-এ জায়গাটা আমার ভীষণ প্রিয়। বিয়ের পর তোমাকে নিয়ে এখানে আসা হবে, থাকবোও তখন এখানকার জেলেদের সাথে কিছু সময়।

-জেলে?

-হ্যাঁ, সকাল সকাল এলে আরো সুন্দর দৃশ্য দেখতে পেতে এখানে। সকালে জেলেরা মাছ ধরে হাঁটে -বাজারে বিক্রি করে। এখানে আসলে আমি প্রায়ই তাদের সাথে মাছ ধরা শিখি, আড্ডা দেই।

শহরের পাশে এতো সুন্দর একটা জায়গা আছে এশা আগে কখনো ভাবতেও পারে নি। আর সাদাফ শহরের বড় বাড়ির ছেলে হয়েও জেলেদের সাথে আড্ডা দেয় শুনে এশার মনে ভালো লাগায় ছেঁয়ে গেলো। দুজনেই আশেপাশের পরিবেশ টা দেখতে লাগলো কারো মুখে কোন কথা নেই। ঠিক তখনই খালি গায়ে, কাঁধে গামছা ঝুলানো, হাতে ওজন মাপার জন্য লোহার তৈরী জিনিস নিয়ে ওদের সামনে আসে একজন মধ্য বয়স্ক লোক। পান খাওয়া দাঁত বের করে সাদাফের দিকে চেয়ে বলে,

-অনেক দিন পর আইলা বাবা?

-আসলে চাচা ব্যস্ততায় আসা হয়না। আপনার শরীর কেমন? চাচী কেমন আছে?

-ভালোই বাবা। তবে মাইয়াডার জ্বর দুইদিন ধইরা৷

-একি! ফুলির জ্বর? ডাক্তার দেখিয়েছেন?

– দেহাইছি তয় ডাক্তার কইলো, দূর্বলতার লাইগা জ্বর সারে না। আমরা গরীব মানুষ ফলমূল খাওয়ামু কই থেইকা কউ?

-চাচা, আপনাকে বলেছি না যা সমস্যা হবে আমাকে বলবেন।

-আর কত কমু বাবা? তোমার গান গেয়ে উপার্জনের টাকার এক অংশ তো আমাগোরেই দিয়া দেও।

-আমি আপনাদের ছেলের মতো চাচা। ছেলে হয়ে বাবা-মা, ভাইবোনের পাশে দাঁড়াবো না?

-তোমার লগে কথায় পারন যাইতো না। ঘরে আহো দুইডা ডাইল -ভাত খাইয়া যাও।

-আসবো চাচা, বিয়ের পর আপনাদের মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই আসবো। আজ নয়।

সাদাফ এশাকে ইঙ্গিত করে কথা বলে। এশা এতোক্ষণ আগ্রহ নিয়ে দুজনের কথোপকথন শুনছিলো। হঠাৎ সাদাফের বলা কথাগুলো আর তাকানো দেখে এশা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা এবার এশার দিকে তাকায়। হেসে বলে উঠে,

-আম্মা তো মাশাল্লাহ মেলা সুন্দর বাবা! আপনের লগে বেশ মানাইবো। দোয়া রইলো সুখী হোন।

-ধন্যবাদ চাচা, আর এই টাকাটা নিয়ে যান ফুলির জন্য ফলমূল কিনে নিয়েন।

পকেট থেকে এক হাজার টাকার নোট এগিয়ে দিয়ে লোকটির হাতে ধরিয়ে দেয় সাদাফ। লোকটি টাকা হাতে নিয়ে ছলছল চোখে তাকায় সাদাফের দিকে। সাদাফ আস্বস্ত করে বলে,

-এখনই ফলমূল কিনে বাড়ি যান চাচা। ইনশাআল্লাহ ফুলি সুস্থ হয়ে উঠবে।

লোকটি বাড়ির দিকে না গিয়ে পুনরায় বাজারের দিকে এগিয়ে যায়।

সাদাফ এশার হাত ধরে নদীর পাড়ের দিকে এগিয়ে যায়। একদম নদীর পানি ঘেঁসে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে রয় কিছুক্ষণ। এশা হঠাৎ সাদাফকে জড়িয়ে ধরে। প্রথমবার এশা সাদাফকে জড়িয়ে ধরেছে। সাদাফ বিস্ময় নিয়ে তাকায়। এশা ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠে,

-“থেংকিউ, আমার জীবনে আসার জন্য। থেংকিউ আমাকে নতুন খুশি উপহার দেওয়ার জন্য। থেংকিউ আমাকে ভালোবাসা নামক অনুভূতির সাথে পরিচয় করানোর জন্য। ভালোবাসি সাদাফ।”

সাদাফ হেসে আরো খানিক শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয় এশাকে। পদ্মা নদীর উত্তাল জলরাশী, চিকচিক করা বালি, আশেপাশে আকাশের ছুঁতে চাওয়া লম্বা গাছ সবকিছু সাক্ষী হয়ে রয় সাদাফ এশার ভালোবাসার। সাদাফ- এশা নিজেদের মধ্যে আর কোনো কথা বলে না বরং নিরবে অনুভব করতে থাকে দু’জন দুজনকে। এভাবে কতক্ষণ তারা একে অপরকে আলিঙ্গন করে ছিলো জানে না তারা।
____________________

-মিস্টার সৈকত আপনার ছেলে আজকাল নদীর পাড়ে মেয়েদের নিয়ে মাখামাখি করছে সে খবর কি আছে? তা-ও আবার ঢাকার পাশেই পদ্মানদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা মৈনট ঘাটে গিয়ে।

-মুখ সামলে কথা বলবেন চৌধুরী সাহেব। আপনি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ঠিক আছে তবে আমার ছেলেকে নিয়ে কোনো বাজে কথা বলবেন না।

-বাজে কথা আমি বলছি না। আপনি নিজের চোখেই দেখে নিন।

ছবিটি দেখে চমকে উঠে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সৈকত আহমেদ। তারপর ও নিজেকে সামলে অবিশ্বাস্য চোখে বলে উঠে,

-এটা হতেই পারে না। আমার ছেলে গানবাজনা নিয়ে থাকলেও সে যথেষ্ট রুচিশীল। কত মেয়ে ফ্যান ওকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় ও না করে দেয়। আর ও এমন কাজ করবে হতেই পারে না।

-বাবা হয়ে ছেলের নষ্টামো দেখেও চুপ করে আপনি থাকতে পারেন আমরা নই। আজই এখবর সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হবে। এস,এ ইন্ডাস্ট্রির এমডি মিস্টার সৈকতে আহমেদের বড় ছেলে সিঙ্গার হওয়ার নাম করে মেয়েদের নিয়ে ন ষ্টা মো করে বেড়াচ্ছে। হাহাহা…

-আর যদি নিউজটার পরবর্তী নিউজ এমন হয় মেয়েটি এস.এ. কোম্পানির এমডি সৈকত আহমেদের বড় ছেলের হবু পুত্র বধু, যদি এমন হয় মেয়েটির সাথে আমার বাবা-মা আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে। আর তার সাথে নদীর পার কেন আমার যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারি। তখন আপনার নিউজ টিকবে চৌধুরী আঙ্কেল?

দরজায় দাঁড়ানো সাদাফকে দেখে চমকে উঠে চৌধুরী সাহেব। চমকান বাবা সৈকত আহমেদ ও।

চলবে…

প্রেম প্রেয়সী পর্ব-০৯

0

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্বঃ০৯
#আয়েশা_আক্তার

এশার পরীক্ষার মাঝামাঝি সময় সাদাফ সিলেট থেকে ফিরে এসেছে। তার মনে হচ্ছে কত বছর ধরে তার প্রেয়সীকে দেখে না। তাই এসেই ভার্সিটির উদ্দেশ্যে ছুটেছে।

ঠান্ডা বাতাস শরীর কাঁপিয়ে জানান দিচ্ছে শীতের তীব্রতা। তারপর এশা জানালার পাশের সিটে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। জানালা খোলা থাকার দরুন বাতাস আসছে আর ঠান্ডা বাতাসে এশার শরীর বারবার কেঁপে উঠছে। এশা দিকে পাত্তা না দিয়ে পরীক্ষার খাতায় কলমের খচখচ শব্দ তুলে লিখে যাচ্ছে। চারঘন্টা পার হওয়ার শেষ ঘন্টা বেজে গেলো। সবাই যে যার খাতা জমা দিচ্ছে। এশা খাতা জমা দিয়ে বাইরে এসে দাঁড়ায় তানহার জন্য। তানহা বের হয়ে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় সাদাফ এদিকে চেয়ে আছে। তানহা বুঝতে পারে সাদাফ ঢাকায় ফিরেছে, আর ফিরেই এশাকে দেখার জন্য ছুটে এসেছে। তাই ও অজুহাত দেখিয়ে দুটো মেয়ের সাথে কথা বলে এশার দিকে তাকিয়ে বললো,

-আমার ওর সাথে একটু কাজ আছে আমি পরে যাবো তুই আজ চলে যা এশা।

এশা কথার প্রতুত্তরে কিছু বলবে তার আগেই তানহা মেয়েটার হাত ধরে উল্টোদিকে চলে গেলো। এশা হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে হাঁটা ধরলো। পরের পরীক্ষার পড়া কিছু শেষ হয়নি। বাসায় গিয়ে পড়তে হবে। তাই তানহার এমন আচরণ বেশি একটা গায়ে মাখলো না। পরে তানহার সাথে কথা বলে দেখা যাবে। সাদাফ সিঁড়ির পাশের খালি ক্লাস রুমের দরজা দাঁড়িয়ে দেখছে এশাকে। এশা সামনে আসতেই ভীরের মধ্যে থেকে এক টানে ক্লাসের ভেতরে নিয়ে এসে দরজা আটকে দেয়। এশা প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও সাদাফকে দেখে বুঝতে পারে। কিন্তু অভিমানে কান্না পায় এশার। সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। সাদাফ ভাবছে,ও কি বাড়াবাড়ি করে ফেললো? এশা কি সাদাফকে খারাপ ভেবেছে? কথা বলে ক্লিয়ার হবে ভেবে সাদাফ এশাকে জিজ্ঞেস করে,

– কাঁদছো কেন?

এশা ফুপিয়ে উঠে, চোখ মোছার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছু বলে না। সাদাফ আবারো জিজ্ঞেস করে,

-কষ্ট পেয়েছো এভাবে তোমাকে এখানে নিয়ে আসায়?

এশা মাথা দোলায় না বোঝায়।

-তাহলে?

-আপনি আমায় ভুলে গিয়েছেন সাদাফ।

এমন অভিযোগে সাদাফ চমকায়। একটু কাছে এসে জবাব দেয়,

-ভুলে গেলে কি সিলেট থেকে ফিরেই তোমায় দেখতে আসতাম?

-এসব আমি জানি না। কিন্তু এতোগুলো দিন আপনি একবারও আমার খোঁজ নেননি। আমার কত চিন্তা হচ্ছিল জানেন আপনি? জানেন না, হুহ।

এশা কান্না থামিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে কথা গুলো বললো। সাদাফ সমস্ত অভিযোগ মাথা পেতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-ভালোবাসো?

এশা এবার একটু লজ্জা পায়। তবে মাথা নেড়ে জানায় ভালোবাসে।

আকাঙ্ক্ষিত জিনিসটি পেয়ে সাদাফ অনেক বেশি খুশি হয়ে গেলো। খুশির ঝিলিক ফুটে উঠলো তার চোখে মুখে। সে কান ধরে এশার সামনে বসে বললো,

-সরি, আর হবে না প্রমিজ।

এশা ফিক করে হেসে বললো, -উঠুন।

সাদাফ উঠে দাঁড়িয়ে বললো, -পরীক্ষা কেমন হচ্ছে?

-আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

-আমি ছিলাম না বলে ভালো হচ্ছিল তাইনা?

কথাটা বলেই সাদাফ গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকায়৷ এটা দেখে আবারো এশা হেসে ফেলে।

-উহু, বাকিগুলো আরো ভালো হবে।

সাদদফ এবার সামনে তাকায়। জিজ্ঞেস করে,

-কাল পরীক্ষা আছে?

-হুম আছে তো।

-তাহলে চলো বাসায় যাওয়া যাক।

-আপনি আমার সাথে যাবেন কিভাবে?

-আমার বাসাও উত্তরাতেই। আর তোমার বাসাও সেইম তাহলে যেতে সমস্যা কোথায়?

-সমস্যা নেই কিন্তু আপনি কি করে জানেন আমার বাসা উত্তরায়?

-প্রিয়জনের সব খবরই যদি জানতে না পারি তবে আমি কেমন প্রেমিক হলাম?

-হয়েছে হয়েছে, এবার চলুন।

-ওকে।

ওরা ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার সময় কেউ যেনো কিছু বলতে না পারে তারজন্য এশা আগে আগে হাঁটতে থাকলো আর সাদাফ পেছনে পেছনে। এশা ভার্সিটি থেকে বের হয়ে বাসট্যান্ডের দিকে যেতে নিলে সাদাফ এশাকে পার্কিং এরিয়াতে যেতে বলে। এশা প্রথম কিছু বুঝে উঠতে পারে না। সাদাফ গাড়ি কাছে গিয়ে দরজা খুলে এশাকে ভেতরে যেতে বলে। কিন্তু এশা তটস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাদাফ জিজ্ঞেস করে,

-কি হলো? উঠো?

-আমি তো বাসে করে যাই৷

-আজ আমার গাড়ি দিয়ে যেতে কি খুব অসুবিধে হবে?

এশার অস্বস্তি হচ্ছে। তারপর ও সাদাফের অনুরোধ ফেলতে না পেরে গাড়িতে উঠে সিট ব্যালট বেধে নেয় সে। সাদাফ ড্রাইভিং সীটে বসে ড্রাইভ করতে শুরু করে। রাস্তায় কেউ কারো সাথে কথা বলে নি। এশা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে ব্যস্ত। তাকে মনে হচ্ছে রাস্তায় কোন মূল্যবান কিছু খুঁজে চলেছে এশা। সাদাফ অবশ্য ড্রাইভিং এর ফাঁকে ফাঁকে আড়চোখে দেখেছে এশাকে। এশাদের বাসা থেকে কিছু পথ পেরুনো আগেই গাড়ি থামালো সাদাফ। হঠাৎ গাড়ি থেমে যাওয়ায় এশা জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকায় সাদাফের দিকে। সাদাফ হেসে সুধায়,

– এখান থেকে হেঁটে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না তোমার। একদম বাসার সামনে তোমায় নামালে কেউ দেখে ফেলতে পারে। অবশ্য তুমি বললে তোমার বাসায়ও পৌঁছে দিতে পারি আমি। সাদাফ আহমেদ কাউকে ভয় পায় না।

একটু ভাব নিয়ে কথা গুলো বলে থামে সাদাফ। এশা ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে,

-আসছি, নিজের খেয়াল রাখবেন।

-ওয়েট, ওয়েট।

-আবার কী?

-তোমার সাথে কথা না হলে আমার দমবন্ধ লাগে। এই ক’টা দিন কি যন্ত্রণা সহ্য করে কাটিয়েছি আমি! তবে আর এক মুহুর্তও তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবো না।

-বুঝেছি।

এশা হেসে ফাইল থেকে কলম বের করে সাদাফের হাতটা টেনে ধরে তাতে কলমের আঁচড় কেটে নিজের এগারো ডিজিটের নাম্বারটা লিখে দিয়ে বেরিয়ে যায়। সাদাফের কাছে এই সামান্য বিষয়টাও ভালো লাগায় ছেঁয়ে গেলো। এশা তাকে প্রথম ছুঁলো ভাবতেই হাসি ফুটছে তার ওষ্ঠে। এশা চলে যাচ্ছে মনে হতেই সে সামনে তাকায় এশাও ঠিক তখনই পেছনে ফিরে সাদাফের দিকে তাকিয়েছে। সাদাফ হাসে, লজ্জা রাঙা হাসি উপহার দেয় এশাও। তারপর ধীরে ধীরে দু’জন দু’জনের দৃষ্টির অগোচর হয়। সাদাফ তারপরও একমনে চেয়ে আছে পথ পানে। যে পথ দিয়ে এশা হেটে গিয়েছে। এশা তার বাসার গলির ভেতরে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। তার মনে হচ্ছে আজকের দিনটা তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিন। এশা ভাবতে থাকে, আজ এতোটা খুশি লাগছে কেন? প্রেমে পড়লে বুঝি আশেপাশের সবকিছুই ভালো লাগায় ভরে উঠে! ভালোবাসলে যদি সবকিছু ভালো লাগে। তবে ভালোবাসা সুন্দর। ভয়ানক সুন্দর!

চলবে….

প্রেম প্রেয়সী পর্ব-০৮

0

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_০৮
#আয়েশা_আক্তার

নিষ্ঠুর প্রিয়া,
এতোবার ভালোবাসি বলার পরও যখন আমায় চাইলে না। তবে আমারও তোমায় চাইনা। ভালোবাসার মানুষের নিকট বারবার নিজেকে অবহেলিত হতে দেখা কতটা কষ্টের সেটা তুমি বুঝবে না। তবে কখনো যদি মনে হয় তোমার আমাকে চাই, আমাকে তুমি ভালোবাসো তবেই না হয় আমায় ডেকো।

ইতি
তৃষ্ণার্ত প্রেমিক

এশা চিরকুটটা বার কয়েক পড়লো। তার কাছে সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। সত্যি সত্যি তার “শ্যাম পুরুষ” তাকে চিরকুট লিখেছে এটা যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না এশার।

তানহার মুখ থেকে সবটা শুনে এশার যেমন ভালো লাগছিলো। তেমনই তানহার জন্য খারাপ লাগছিলো। ও যতই বলুক ক্রাশ আর ভালোবাসা এক নয় তবুও এশা জানে তানহা সাদাফের জন্য কি কি পাগলামি করেছে। এশা ভেবেছিলো তানহা সবকিছু জেনে এশাকে ভুল বুঝবে কিন্তু তানহা উল্টো এশার জন্য এতোটা ত্যাগ স্বীকার করবে এটাও ভাবে নি এশা।
_____________________________

আজ এশার শরীর অনেক টা সুস্থ। এশা মনে মনে ভাবছে, ভার্সিটিতে গিয়ে সাদাফকে সেও ভালোবাসে এটা জানিয়ে দিবে। অনেক তো লুকুচুরি হলো। এবার বলেই দিবে। এতো এতো অশান্ত মন নিয়ে পড়াশোনা করা যায় না, ঘুমানো যায় না। দুই দিন পর ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা পড়াশোনা তো করতে হবে।পরীক্ষার কথা মনে হতেই এশা বই নিয়ে শুয়ে শুয়ে পড়তে শুরু করলো। ইয়াশা ঘরে এসে এসে এশাকে পড়তে দেখে বলে উঠলো,

-বাহ, আপু আজ তুমি সকাল সকাল বই নিয়ে বসে গিয়েছো? আবারো আগের মতো গুড স্টুডেন্ট হয়ে যাবে নাকি আপু?

-আমি ব্যাড স্টুডেন্ট ছিলাম কবে? যে এখন নতুন করে গুড স্টুডেন্ট হতে হবে?

-না মানে পড়ার ভয়ে মামাবাড়িতে চলে গিয়েছিলে তো তাই আমি ভেবেছিলাম তুমি বোধহয় ব্যাড স্টুডেন্টের খাতায় নামটা লিখিয়েই ফেলেছো।

-আমি মোটেও পড়ার ভয়ে মামা বাড়ি যাইনি। বেড়াতে গিয়েছি। এতো বকবক করছিস কেন স্কুল নেই তোর?

-আজ শুক্রবার তুমি জানো না বুঝি।

-অহ তাই তো ভুলে গিয়েছিলাম রে।

-আপু, তোমার মনে আছে আগে আমরা শুক্রবারে শাড়ি পড়তাম। তারপর ছাঁদে গিয়ে ছবি তুলতাম।

-হ্যাঁ, মনে থাকবে না কেন?

-চলো না আজও বিকেলে শাড়ি পরে ছবি তুলি।

-বাইরে দেখছিস কি ঠান্ডা বাতাস? শীত এসে গেছে প্রায়। এ অবস্থায় শাড়ি পরে ছাঁদে গেলে ঠান্ডা লাগবে না?

-তুমি তো সুস্থ হয়ে গিয়েছো আপু। প্লিজ, প্লিজ, আপু চলো না শাড়ি পড়ি।

-ওকে বিকেল হোক, পড়বো শাড়ি।

এশা পড়া শেষ করতে করতে এগারোটা বেজে গিয়েছে। পড়া থেকে উঠে গোসল সেরে নেয় তারপর রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখে তার মা মিসেস আনিকা মুচকি হেসে বলে উঠে,

-সুস্থ হয়ে গিয়েছিস?

-হ্যাঁ, মা মানুষ কতদিন অসুস্থ থাকে বলো। আমি তো দু’দিন থেকেই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি।

-তো রান্নাঘরে এলি কেন? কিছু খেতে ইচ্ছে করছে?

-না, রান্না করতে ইচ্ছে করছে।

এটা এশার ছোট থেকেই অভ্যাস। সে মাঝে মধ্যেই কিছু কিছু রান্না করার চেষ্টা করে। যদিও ভালো পারে না। তবে রাঁধতে তার বেশ লাগে।এশার মা আনিকারও রান্না করতে ভালো লাগে তাই মেয়ের এমন আগ্রহে খুশিই হন। আনিকা ফ্রিজ থেকে বের করে রাখা মাছ এবং সবকিছু দেখিয়ে দিয়ে তিনি চলে গেলেন গোসল সারতে। একটু পরই আজান দিয়ে দিবে। শুক্রবারের দিনটা কেমন যেনো নিমিষেই চলে যায়। কিন্তু কাপড় চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমে যাবে তখন দেখে তার স্বামী মিস্টার ইয়াশ আহমেদ ওয়াশরুমের ভেতরে। তাই বের হয়ে বাইরে যে ওয়াশরুম আছে রান্নাঘরের পাশে সেখানেই গোসল সারবেন বলে প্রবেশ করলেন তিনি।

এদিকে এশা চুলায় কড়াই বসিয়ে তাতে তেল দিয়ে তেল গরম হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে। তেল গরম হয়ে এলে হলুদ, মরিচ, লবণ দিয়ে মাখানো মাছগুলো লাল করে ভেজে নেয়। তারপর মাছগুলো কড়াই থেকে নামিয়ে নেয় এবং কড়াইয়ে আরো কিছু পরিমাণ তেল দিয়ে পেয়াজ, কাঁচা মরিচ কুঁচি দিয়ে ভেজে নেয়। তারপর হলুদ, মরিচ আরো প্রয়োজনীয় মশলাদি দিয়ে মাছগুলো কষিয়ে সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে দেয়। ঠিক তখনই তার বোন ইয়াশা মা, মা, করে ডেকে রান্নাঘরে আসে। এশাকে দেখে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

-আপু তুমি? তাহলে মা কই?

-মা গোসল করতে গেছে। মা’কে তোর কি প্রয়োজন এখন?

-আরে মায়ের একটা বান্ধবী আছে না উনি বারবার মায়ের ফোনে কল করছে তাইতো ডাকতে এলাম।

-তুই গিয়ে বল মা গোসল করছে পরে কল দিতে। আর তুই ও তাড়াতাড়ি গোসল সেরে নে। নামাজ পড়ে খাওয়া দাওয়া করে ফ্রী হয়ে শাড়ী পড়বো দু’জন তারপর রাতে আবার পড়া আছে তো।

-হ্যাঁ, যাচ্ছি। তোমার রান্নার সুন্দর ঘ্রাণ আসছে আপু কি রান্না করছো? মা-ই সব রান্না করেছে। শুধু মাছ ভোনাটা বাকি ছিলো ওটাই আমি করছি।

-অহ, তবে আপু তোমার রান্না কিন্তু একদম মায়ের মতো হয়।

-হয়েছে, আর পাম দিস না গোসল করতে যা।

-সত্যি কথার দাম নেই।

বলেই ইয়াশা চলে গেলো। এশার রান্না হলে এশা গ্যাসের চুলা বন্ধ করে দেয়। আনিকা গোসল সেরে বেরিয়ে এসে একবার দেখে যায়। রান্না দেখে মনে হচ্ছে বেশ ভালো হয়েছে। আজান দিলে ইয়াশ আহমেদ বাসার কাছেই একটা মসজিদে চলে যায় জুম্মা নামাজ আদায় করতে। আনিকা, এশা, ইয়াশা বাড়িতেই নামাজ পড়ে নেয়। ইয়াশ এলে সবাই একসাথে খেতে বসে। খাওয়ার মাঝে কিছুক্ষণ আড্ডাও হয় তাদের মাঝে। এরপর ইয়াশ আহমেদ উঠে সোফায় গিয়ে বসে টিভি ছেড়ে খবর দেখতে শুরু করে। আর আনিকা সবকিছু গুছিয়ে রুমে গিয়ে বান্ধবীর নাম্বারে ডায়াল করে কথা বলতে শুরু করে।

এশা, ইয়াশা দুই বোন নিজেদের রুমে চলে যায়। এশা তানহার সাথে কিছুক্ষণ মেসেজে কথা বলে মোবাইল রেখে দেয়। তারপর ভাবতে থাকে কাল ভার্সিটি গেলে কি হবে? সাদাফকে এবার এশা নিজের মনের কথা কিভাবে বলবে? আর এশার কথা শুনে সাদাফই বা কি বলবে? সাদাফ কি সত্যিই অনেক টা খুশি হবে?

এশার ভাবনার মধ্যে ইয়াশা এসে ওর কানের কাছে মুখ এনে জোরে চিৎকার করে ডাকে, “আপু”।

এতো জোরে ডাকায় এশা চমকে যায়। একটু রেগে বলে,

– এতো জোরে ডাকার কি হলো? আর কানের কাছে মুখ এনে ডাকতে হবে কেন তোকে?

-সেই কখন থেকে ডাকছি তুমি তো শুনছিলেই না। তাই এভাবে ডেকেছি।

-তো, ডাকছিস কেন ছাগলের মতো?

-তুমি ছাগল?

-আমি ছাগল?

বলেই এশা কটমট করে বোনের দিকে তাকায়। ইয়াশা ভয়ে পেয়ে ঠোক গিলে জবাব দেয়,

-না, তুমি না৷ আমিই ছাগল। আপু শাড়ি পরবে না?

-হ্যাঁ, চল মায়ের থেকে শাড়ি নিয়ে আসি।

ইয়াশা নিলো আকাশু রঙের শাড়ি এবং এশা নিলো একটা সাদা রঙের জামদানী। দুজনেই কিছুক্ষণের মধ্যে শাড়ি, চুরি পড়ে চোখে কাজল, কানে ঝুমকো, ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে সেজে নেয়। তারপর ছাঁদে গিয়ে অনেক গুলো ছবি তুলে দেয়।

পরদিন,
এশা ভার্সিটি গিয়ে দেখে পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে। একসপ্তাহ পরই পরীক্ষা। আজ এশার চোখ বারবার সাদাফকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কোথাও সাদাফের দেখা পাচ্ছে না। তানহা এশার অবস্থা বুঝতে পেরে জানায়, সাদাফ পনেরো দিনের জন্য একটা কনসার্টে গিয়েছে তাই আসতে পারবে না। তানহা আগে থেকেই জানে কিন্তু এশাকে বলতে ভুলে গিয়েছিল। কি আর করার, তানহার সাথে আড্ডা দিয়ে ভার্সিটির ক্লাসগুলো করেই বাসায় চলে এসেছে ও। আজ অবশ্য তানহার জন্য ওর ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিলো। কিন্তু তানহার ত্যাগ ও ব্যবহারে ও মুগ্ধ। কি করে পারে মেয়েটা? কৌতুহল বশত এশা তানহাকে জিজ্ঞেস করে,

-আমার উপর তোর রাগ লাগছে না? আমার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করে ফেলতে ইচ্ছে করছে না?

-মারবো এক চড়। তোর উপর কেন রাগ লাগবে আমার?

-ওইযে সাদাফ ভাইয়া আমাকে….

-এশু, তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আর উনি আমার ক্রাশ। ক্রাশ আর ভালোবাসা এক নয়। আর যদি এক হয়েও থাকে। উনি যদি আমার ভালোবাসা হয়েও থাকে তবে আমি চাই আমার ভালোবাসা ভালো থাকুক। আর তার ভালো থাকাটা যদি তুই হোস তাতে ক্ষতি কি? ক’জন পারে নিজের ভালোবাসার মানুষকে ভালো থাকতে দিতে!

চলবে…..

প্রেম প্রেয়সী পর্ব-০৭

0

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_০৭
#আয়েশা_আক্তার

তানহা ভার্সিটি এসে দেখে এশা আসে নি। কল দিয়ে জানতে পারে এশা অসুস্থ। সে মনে মনে ভাবে, আমি সুস্থ হতেই এই এশুটার অসুস্থ হতে হল? অসুস্থ হবি যখন আরো দু’দিন আগেই হতি। দু’জন একসাথে ভার্সিটি বন্ধ করতাম। ক্লাসে বসে এসবই ভাবছিলো তানহা। ক্লাস শুরু হতে এখনো সময় আছে কিছু। তার কাঁধে একটা কোমল হাতের ছোঁয়া পেতেই এশা পেছনে ফিরে তাকায়। লাবণ্যকে দেখে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে,

-আরে আপু কেমন আছো?

-এইতো বেশ, তোমার কি অবস্থা? এই ক’দিন ভার্সিটি আসোনি কেন?

-অসুস্থ ছিলাম আপু। দেখো না আমি সুস্থ হয়ে ফিরে আসতেই এশুটা অসুস্থ হয়ে গেলো।

-কি বলো? ও অসুস্থ কবে থেকে?

-কাল রাত থেকে নাকি প্রচুর জ্বর। কল দিয়েছিলাম ওর মা বললো জ্বরে নাকি ওর কোনো হুঁশ নেই।

-ইশ! এতোটা অসুস্থ মেয়েটা!

-হ্যাঁ, আপু মন খারাপ লাগছে ওর জন্য।

-মন খারাপ করো না, এশা খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।

-ইনশাআল্লাহ।

-আচ্ছা, ক্লাসের মাঝখানে যখন বিশ মিনিট ব্রেক দিবে তখন একটু লাইব্রেরীতে আসতে পারবে? আমার বন্ধু সাদাফ তোমার সাথে কথা বলতে চায়। তুমি যদি কিছু মনে না করো।

সাদাফ ওর সাথে কথা বলতে চাইছে শুনে তানহা যেনো আকাশ থেকে পড়লো। সত্যি তার ক্রাশ আজ তার সাথে প্রথমবার কথা বলতে চাইছে। তানহার তো খুশিতে নাচতে মন চাচ্ছে। খুশির ঝিলিক তানহার চোখে মুখেও স্পষ্ট হলো, যা লাবণ্যর চোখ এড়ালো না। লাবণ্য মনে মনে ভাবতে লাগলো, সাদাফ যে তার মন ভেঙে দিতে চাইছে এটা বুঝলে এ মেয়ে কিছুতেই সাদাফের সাথে দেখা করতে চাইতো না।

ক্লাসে স্যার চলে আসতে দেখে লাবণ্য তানহার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো। তানহার কাছে যেনো আজকের ক্লাস শেষই হচ্ছে না। তার উপর দু’দুটো ক্লাস শেষ করতে হবে। অনেক অপেক্ষার পর ক্লাস দুটো শেষ হলো। তানহা তাড়াতাড়ি করে চলে গেলো লাইব্রেরীতে৷ তার কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। আবার লজ্জাও লাগছে। ভয়, লজ্জা নিয়ে সে লাইব্রেরীতে প্রবেশ করে দেখে সাদাফ আগে থেকেই বসে আছে। তানহা গিয়ে সাদাফকে সালাম দেয়। সাদাফ সালামের জবাব নিয়ে সামনে চেয়ারের দিকে ইশারা করে বসতে বলে। তানহা বসার সাথে সাথেই সাদাফ বলে উঠে,

-তুমি নাকি আমায় পছন্দ করো?এটা কি সত্যি?

সাদাফের সরাসরি এমন প্রশ্নে এশা ভয় যেমন পেলো তেমনই লজ্জাও পেলো। মনে মনে বলতে লাগলো, “হে আল্লাহ, মাটিটা ফাঁক করে দিন। আমি ঢুকে যাই।”

তানহাকে চুপ থাকতে দেখে সাদাফ আবারো বলে উঠলো,

-চুপ করে থেকো না তানহা। আমি সহজ কথা সহজভাবে বলতে ও শুনতে পছন্দ করি। তাই তুমি আমাকে পছন্দ করো কি না সেটা বলো। হ্যাঁ অথবা না?

-জী আপনাকে আমার ভালো লাগে। আপনার প্রায় সব গান আমি শত হাজার বার করে শুনে ফেলেছি৷ (কাঁপা ঠোঁটে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললো তানহা।)

-তানহা, আমি তোমার ভালো লাগাকে অসম্মান করছি না। তবে তুমি কি এটা বিশ্বাস করো যে, যেকোনো সম্পর্কেই দু’জন মানুষের আগ্রহ সমান ভাবে লাগে।

-হ্যাঁ, করি।

-তাহলে জেনে রাখো আমি অন্য একজনের প্রতি আগ্রহ ফিল করছি তা-ও প্রথম দেখাতেই। যা অন্য কারো জন্য কখনো আসেনি আর আসবেও না। আর সে তোমার খুব কাছের একজন।

-আমার কাছের? কে সে?

-এশা।

-এশা? (বিস্ময়ে একটু জোরেই বললো তানহা)

-হ্যাঁ, এশাকেই আমি ভালোবেসে ফেলেছি। ওকে আমি প্রথম দেখেছিলাম রূপপুর গ্রামে। সেখানেই ওকে আমার ভালো লেগে যায়। নৌকায় বসে মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো আমি বুঝেছি। আড়চোখে আমিও তাকে দেখেছি। এটা ও বুঝতেই পারে নি। একদিনেই যাকে মন দিয়ে দিলাম, যার জন্য রাতের ঘুম হারিয়ে গেলো তাকে অনেক খুঁজে ভার্সিটিতে পেলাম। প্রপোজ করতে গেলাম আর ও আমায় ফিরিয়ে দিলো।

-তারমানে আপনিই ওর সেই নৌকার মাঝি?

-হ্যাঁ। আমিই কিন্তু তুমি জানলে কি করে?

-আরে, এশাই তো আমাকো সব বলেছে কিন্তু ও যখন আমায় এসব বলেছে তখন আপনার নাম জানতো না। শুধু জানতো ও সেই “শ্যাম পুরুষ” কে ভালোবেসে ফেলেছে।

-শ্যাম পুরুষ?

-হ্যাঁ আপনাকে ভালোবেসে ও এই নাম দিয়েছে।

-কিন্তু স্বীকার তো করছে না।

-আশ্চর্য! ও আপনাকে না করে দিয়েছে?

-হ্যাঁ।

-কেন?

-কারণ তুমি আমায় পছন্দ করো তাই। বলো এতে আমার দোষ কোথায়? কত মেয়েই আমাকে পছন্দ করতে পারে কিন্তু আমি তো শুধু ওকেই আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে চাই। আবার অনেকেই ওকেও পছন্দ করতে পারে এতে ওর দোষ নেই আর না আমার কিছু করার আছে।

-অহ, এই কথা? আচ্ছা ভাইয়া আমি ওকে বোঝাবো ভার্সিটিতে এলে। আজ তো আসেনি এশু অসুস্থ তাই। বলবো যে আমার আপনাকে পছন্দ করা মানে হচ্ছে জাস্ট এ্যা ক্রাশ।ক্রাশ তো অনেকেই হয় তাই বলে সবাইকে ভালোবাসতে হবে বা বিয়ে করে হবে এমন কোন কথা নেই।

-এ্যাক্সেক্টলি, তুমি ওকে বুঝিও কেমন? আর আমি পনেরো দিনের জন্য সিলেটে চলে যাচ্ছি। একটা কনসার্ট আছে তাই। ওর খেয়াল রেখো।

-ওকে, আসছি ভাইয়া।

-দাঁড়াও এ চিরককুটটা এশাকে আমার হয়ে দিয়ে দিও প্লিজ।

তানহা কোনো কথা না বলে মাথা নাড়ায়। তারপর ক্লাসে চলে আসে। বেঞ্চে মাথা রেখে কাঁদতে শুরু করে। তানহা জানে না কেন কান্না আসছে তার। তবে বুকে ছোট্ট একটা ব্যথা অনুভব করছে সে। “কেন এই ব্যথা? তারই ক্রাশ তার বান্ধবীকে ভালোবাসে বলে?”

কোনো রকম ক্লাসগুলো শেষ করে বাসায় ফিরলো তানহা। কারো সাথে কোনো কথা না বলে সোজা রুমে গিয়ে দরজা লক করে বিছানায় শুয়ে পরে সে। কয়েকবার এসে তার মা ডেকে যাওয়ার পরও দরজা খুলেনি তানহা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পার হলো, ঢাকা শহর রাতের অন্ধকারে ছেঁয়ে গেলো। সেই সাথে তানহার বুকের ব্যথা গুলোও তরতর করে বৃদ্ধি পেলো। এভাবে কতক্ষণ বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদেছে জানে না তানহা।তবে এখন উঠে বসলো। সিদ্ধান্ত নিলো আর কাঁদবে না। কার জন্য কাঁদবে? সাদাফ তো কখনো তার ছিলোই না। তখনই হঠাৎ এশার কথা মনে পড়লো তানহার। সাথে মোবাইল হাতে নিয়ে সময় দেখে রাত বারোটা বেজে গিয়েছে অলরেডি। এতো রাতে কল দেওয়াটা ঠিক হবে না ভেবে মোবাইল রেখে ওয়াশরুমে চলে যায় তানহা। তারপর ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে শুয়ে পরে। আজ আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না তার। তাই মনের বিরুদ্ধে গিয়ে খাবারও খেলো না সে।

পরদিন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই তানহার মা প্রশ্ন করেন,

-কি হয়েছে তোমার?

-কিছু হয়নি মা। এমনিতেই ভালো লাগছিলো না।

-চোখ, মুখ এমন ফুলে আছে কেন? কাঁদছিস?

-না, একটু শরীর খারাপ লাগছে তাই।

-তাহলে রেডি হইছিস কেন? আজ ভার্সিটিতে যেতে হবে না।

-না, মা কিছু দিন পরই পরীক্ষা শুরু এখন ক্লাস মিস দেওয়া যাবে না।

-আচ্ছা সাবধানে যাস।

তানহা ভার্সিটিতে যাওয়ার নাম করে। এশাদের বাসায় চলে গেলো। কিছুক্ষণ এশার মা ও বোনের সাথে আড্ডা দিয়ে এশার রুমে যায় তানহা। এশা ঘুমাচ্ছে, তানহা এশার কপালে হাত রাখো। এখনো জ্বর কমেনি এশার। তানহা তাই আর ডাকলো না এশাকে। কিন্তু তানহার স্পর্শ পেয়ে এশার ঘুম এমনিতেই ভেঙে গেলো।সে চোখ খুলে এশাকে দেখে জিজ্ঞেস করে,

-তানু, তুই এসেছিস?

-হ্যাঁ এলাম তো। তোর আশিক তোর প্রেমে পাগল হয়ে গেছে দোস্ত তোকে না দেখে থাকতেই পারছে না। তাই তো আমায় দিয়ে চিরকুট পাঠালো।

জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললো তানহা।

চলবে…

প্রেম প্রেয়সী পর্ব-০৬

0

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_০৬
#আয়েশা_আক্তার

সাদাফের ভীষণ মন খারাপ হলো। সে লাবণ্যকে সবটা খুলে বললো। লাবণ্য আবারো তাকে এশার সাথে কথা বলতে বলেছেন। এবার লাবণ্য তাকে সাহায্য করবে এটাও কথা দিয়েছে।

ভার্সিটি ছুটির পর যখন এশা ক্লাস থেকে বের হচ্ছিল তখন লবণ্য গিয়ে এশার সামনে দাঁড়ায়। এশা লাবণ্যকে দেখে খানিক হাসার চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করে,

-কেমন আছো আপু?

-এইতো ভালো, তুমি কেমন আছো?

-আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

-আচ্ছা তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো তোমাকে।

-হ্যাঁ, আপু বলুন কি কথা?

-আমার এক বন্ধু তোমার সাথে কথা বলতে চায়।

এটা শুনে এশার ভেতরটা শুকিয়ে গেলো। ঠোঁট গিলে জবাব দিলো,

-বাড়ি ফিরতে দেরি হলে মা টেনশন করবে। আর কিছুূদিন পর আমার ইয়ার চেঞ্জ এক্সাম। পড়তে হবে বাসায় গিয়ে।

-জাস্ট দু’মিনিট হলেই হবে।

ভদ্রতার খাতিরে এশা কিছু বলতে পারলো না। সাদাফ লাইব্রেরীতে বসে আছে। লাবণ্য এশাকে নিয়ে ভেতরে গিয়ে সাদাফকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-তোরা কথা বল। আমি বাইরে আছি।

-ওকে।

-আপু, আমি আপনার সামনেই কথা বলবো আর না হয় কথা বলতে চাই না আমি।

লাবণ্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাদাফ বলে উঠে,

-ওকে লাবণ্য, তুই ও বোস আমাদের সাথে। তুই আমার বন্ধু আর আমি লুকিয়ে কোনো কিছু করতে চাইও না। শুধু ওর সম্মানহানি হবে ভেবেই চুপ করে থাকি।

লাবণ্য অন্য একটা টেবিলে বসতে চাইলে। এশা লাবণ্যকে তার পাশেই বসতে অনুরোধ করে। তাই বাধ্য হয়ে লাবণ্য এশার পাশেই বসে। আর সাদাফ এশার ঠিক সামনে বসেছে। সাদাফ এশার চোখের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলে,

-কি সমস্যা তোমার? আমার গায়ের রং তোমার মতো অতটা ফর্সা নয় তাই পছন্দ করো না আমায়?

একথা শুনে এশা চমকে উঠে অস্ফুট উচ্চারণ করে,

-ছি! ছি! কি বলছেন আপনি? এরকম কিছু না।

-তাহলে কি রকম কিছু? তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো বা রিলেশন আছে?

এশা মাথা নেড়ে না বোঝায়।

– তাহলে তোমার সমস্যাটা কোথায়? বলো প্লিজ।

এশা এবার কাঁদতে শুরু করে। ভালোবেসেও ভালোবাসার মানুষকে দূরে সরিয়ে দিতে তার কষ্ট হুচ্ছে তবে কিছু করার নেই। সাদাফ এশার কান্নার দিকে চেয়ে রইলো। নিমিষেই তার বুকে ব্যথা অনুভব হলো। কিছুক্ষণ যাওয়ার পরও এশা কান্না থামাতে পারছেনা দেখে সাদাফ একটু রেগে গেলো। লাবণ্যকে বললো,

-ওকে কান্না থামাতে বল লাবণ্য।

লাবণ্য এশার চোখ মুছে দিয়ে বলে, – বোকা মেয়ে কাঁদছিস কেন? সাদাফ ভীষণ ভালো ছেলে। সেই প্রথম দেখাতেই ও তোকে ভালোবেসেছে। এখনকার ছেলেরা উঠতে বসতে প্রেমে পড়ে। কিন্তু সাদাফ তোর প্রেমে পড়ার আগে সত্যি সত্যি ভালোবেসেছে। নিজের মন কুঠোরীতে জায়গা দিয়েছে। ওকে ফিরিয়ে দিসনা এশু।

এশা হেঁচকি তুলে বললো, – সরি আপু আমার কিছু করার নেই। উনাকে বলে দাও এত ভালোবাসা আমি ডিজার্ভ করি না।

-আচ্ছা তুই আজ বাসায় চল। অন্যদিন না হয় তোরা নিজেদের মধ্যে কথা বলিস আবার।

লাবণ্য ইশারায় সাদাফকে কিছু একটা বলে এশাকে নিয়ে বের হয়ে যায় লাইব্রেরী থেকে। হাটতে হাটতে এশা কিছুটা স্বাভাবিক হলে লাবণ্য জিজ্ঞেস করে,

-আমি তোকে তুই করে বলায় রাগ করছিস না তো এশু?

-উঁহু, তুমি তো আমার বড় বোনের মতো। ডাকতেই পারো। আমার তো কোনো বড় বোন নেই তাই তুমিই আমার ভিন্ন মায়ের পেটের আপু।

-আচ্ছা, আমিই তোর ভিন্ন মায়ের পেটের আপু। হয়েছে?

-হুম।

-এশু সাদাফ ভীষণ ভালো ছেলে। ওর গান শুনে কত মেয়ে ওকে প্রপোজ করেছে কিন্তু ওর এসবে ইন্টারস্টে নাই বলে রিজেক্ট করে দিয়েছে। তুই-ই প্রথম যাকে ও প্রথম দিনই গ্রামে নৌকায় দেখে মনের সবটুকু দখলদারত্ব দিয়ে বসে আছে। ওকে ইগনোর করিস না প্লিজ।

-আমি উনাকে ভালোবাসতে পারবো না কখনোই। কেন সেটা তো বল?

-কারণ আমার বান্ধবী তানহা সাদাফকে ভাইয়াকে পাগলের মতো ভালোবাসে। উনার গাওয়া প্রতিটি গান তানহা বারবার শুনে, উনার প্রতিটি স্টেজ পারফরম্যান্স ও দেখে। সেদিন ওই দূরে একটা জায়গায় সাদাফ ভাইয়ার গানের কম্পিটিশন হয়েছিলো না? সেখানেও আমায় নিয়ে গিয়েছিল। এবার বুঝো ও কতটা ভালোবাসে উনাকে। আমি কি করে বন্ধুর ভালোবাসাকে ছিনিয়ে নিতে পারি বলো আপু?

-পাগলী, তুই কেন তানহার ভালোবাসাকে ছিনিয়ে নিবি? সাদাফ তো আর তানহাকে ভালোবাসে নি। আর না ওদের মধ্যে কোনো রিলেশন হয়েছে। তাহলে ছিনিয়ে নেওয়ার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?

-তারপর ও আপু আমি তো জানি তানহা সাদাফ ভাইয়াকে পাগলের মতো ভালোবাসে।

লাবণ্য এ কথার পরি প্রেক্ষিতে কিছু বলতে যাচ্ছিলো। তখন এশা বলে উঠলো, -আপু আজ আসি৷ এমনিতেই দেরি হয়ে গিয়েছে। অন্য দিন কথা হবে।

-ওকে, সাবধানে যাস।

-জী আপু, ভালো থাকবেন।
____________________

সেদিন বাসায় যাওয়ার পর থেকেই তুমুল জ্বর উঠেছে এশার শরীরে। সিজন চেঞ্জ হওয়ায় হয়তো এমনটা হয়েছে এটাই ভাবছে এশা। প্রথমে বাবা -মা না বললেও এশা জ্বরের জন্য উঠে ওয়াশরুমে যাওয়ার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। অনেক কষ্টে ওয়াশরুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই এশার পুরো পৃথিবী নড়ে উঠে। ধপাস করে ফ্লোরে পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ছোট বোন ইয়াশা তখন রুমের দিকেই আসছিলো। এশার পরে যাওয়ার শব্দ শুনে দৌড়ে এসে দেখে এশা জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে শুয়ে আছে। বড় বোনের এমন অবস্থা দেখে ইয়াশা ভয় পেয়ে যায়। চিতকার করে মাকে ডাকতে শুরু করে। হেলেনা বেগম মেয়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে আরেক মেয়েকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে কেঁপে উঠলেন। কেমন ভয়ে তার বুকের বা পাশ মোচড় দিয়ে উঠলো। তাড়াতাড়ি মেয়ের কাছে এসে শরীরে হাত দিতেই দেখে। জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। তাই আর দেরি না করে ছোট মেয়ের সাহায্যে এশার মাথায় পানি ঢালতে শুরু করেন মিসেস হেলেনা। মাথায় পানি দিয়ে তেল দিয়ে দিলেন। তারপরও জ্ঞান ফিরছে না দেখে, একটু তেল গরম করে ইয়াশা আর মিসেস হেলেনা মিলে এশার হাতে পায়ে মালিশ করতে শুরু করে। এভাবে অনেক্ক্ষণ যাওয়ার পর এশার জ্ঞান ফেরে। চোখ মেলেই বোনের কান্না মিশ্রিত চোখ, মায়ের ভয়ে ভীত চেহারা দুটোই দেখতে পেলো এশা। ফ্যাসফ্যাসে গলায় জিজ্ঞেস করে,

-কি হয়েছে, তোমরা কাঁদছো কেন?

-একটা কথাও বলবি না তুই এশু। তোর জ্বর এসেছে এটা আমাদের জানানোর প্রয়োজন বোধ করিস না তুই আজকাল? বড় হয়ে গিয়েছিস বেশি? ইশু আর আমি না থাকলে তোর কি অবস্থা হতো আজ ভাবতে পারছিস?

-মা, আমি তোমাদেরকে কি করে জানাবো? আমি তো ভার্সিটি থেকে এসে খাওয়া দাওয়া করে ভালো শরীর নিয়েই ঘুমিয়েছি। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে এইরকম অসুস্থ হয়ে যাবো সেটা তো জানতাম না। হয়েছে, চুপ কর। আমি স্যুপ রান্না করে নিয়ে আসছি খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিবি। এখন চুপচাপ শুয়ে থাক।

-আচ্ছা, বাবা আসেনি?

-না এসে পড়বে হয়তো। তুই চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাক। রাতের রান্নাটাও করা হয়নি আমার কাজ বাকি অনেক। ইশু তই আপুর পাশে বসে পড়তে থাক। আর আপুর খেয়াল রাখিস।

ইয়াশা মাথা নাড়িয়ে টেবিলের উপর থেকে একটা বই হাতে তুলে নিয়ে এসে এশার পাশে বিছানায় বসে পরে। আর মিসেস হেললনা চলে যায় রান্নাঘরের দিকে।

চলবে….

প্রেম প্রেয়সী পর্ব-০৫

0

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_০৫
#আয়েশা_আক্তার

সাদাফের গান শেষ হওয়ার আগেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় এশা। এশার দাঁড়ানো দেখে তানহাও সাথে সাথে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,

-কি হলো তোর?

-আমার শরীর খারাপ লাগছে বাসায় যাবো। তুই গান শোন, আমি গেলাম।

-শরীর খারাপ লাগছে আর তুই একা একা বাসায় যাবি? তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? চল আমিও যাচ্ছি।
_________________________

সাদাফ গান শেষ করে দৌড়ে এসে এশাকে খুঁজে পেলো না। ওর বন্ধুরা সব জিজ্ঞেস করছে, কি খুঁজছে? ওর কানে সে কথা ঢুকছেই না। অনেকক্ষণ খুঁজেও না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে বসে পরে সাদাফ। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলে, আবারও হাড়িয়ে ফেললাম। হায় আফসোস!

তিনদিন কমপিটিশন শেষ হওয়ার পর সাদাফ বিজয়ী হয়। সে ভার্সিটির সুনাম অর্জন করে। তারজন্য ভার্সিটির শিক্ষকরা সবাই তাকে ভালোবাসে। ছাত্র – ছাত্রীদের মধ্যে প্রায় সবাই ওর গানের ভক্ত। কিন্তু পর মনে হতে লাগলো, তার অপরিচিতার হয়তো তার গান ভালো লাগেনি তাই ওভাবে মাঝখান থেকে হারিয়ে গেলো। ভার্সিটি ক্যান্টিনে বসে এসবই ভাবছিলো সাদাফ হঠাৎ দেখে সেই অপরিচিতা প্রেম প্রেয়সী হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলতে বলতে ক্যান্টিনে আসছে। এক মুহুর্তের জন্য সাদাফের মনে হলো হার্ট মিস করে গেলো। এবার সাদাফ কিছুটা হা করে তাকিয়ে রইলো এশার দিকে। এশা তানহার সাথে কথা বলতে বলতেই ক্যান্টিনে এসেছিলো। সকালে বাসা থেকে খেয়ে না আসায় খিদেয় তার পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে। তাই তো প্রথমবার ক্যানটিনে আসলো সে। সাদাফ এখনো হা করে তাকিয়ে আছে। এটা দেখে অমিত সাদাফের চোখ অনুসরণ করে দেখলো একটা সুন্দরী মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে সাদাফ। এটা দেখে অমিত হইহই করে উঠলো। তার সাথে সাথে এতোক্ষণে বাকি বন্ধু গুলোও বুঝে গিয়েছে যে সাদাফ কার দিকে তাকিয়ে আছে শুধু যার দিকে তাকিয়ে আছে তার কোনো খেয়াল নেই। এশা গিয়ে ধপ করে একটা খালি টেবিলের চেয়ার টেনে বসে পড়লো। তানহা গিয়ে দুজনের জন্য দুটো সমুচা আর দুটো পিয়াজু অর্ডার করে এশার সামনের চেয়ারে বসে বসলো। সাদাফ এখনো ঠিক আগের মতোই এশাকে দেখে যাচ্ছে। লাবণ্য কেশে বলে উঠলো,

-প্রেমে পড়েছিস গুরু?

-উহু, মনের দখলদারিত্ব দিয়েছি।

-আহা!

সবাই একসাথে আহা! বলে উঠায় সাকিব একটু নড়েচড়ে উঠে। তারপর সবাইকে বলে,

-তোরা আমার দিকে কি দেখছিস?

-আমাদের সাদাফ যে দিওয়ানা হয়ে গেছে সেটাই দেখছি।

-দিওয়ানা হইছি না ছাই!

-ছাঁইইইই? (সবাই একসাথে)

-হু, ছাঁই। তোরা পোড়া গন্ধ পাচ্ছিস না? এই মেয়ে সেদিনের পর থেকে আমাকে পোড়াচ্ছে।

-তারমানে এটাই সে নৌকায় দেখা মেয়েটি? ( হৃদয় বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে)

-হ্যাঁ।

-বাহ, তাহলে তো ভালোই। আমি এখনই কথা বলি গিয়ে একটু? (লাবণ্য হাসতে হাসতে বলে কথাটা)

-কথা বলবি? হ্যাঁ বল দোস্ত প্লিজ। এই মেয়েকে আমার চাই।

-তো কি বলবো গিয়ে, এই মেয়ে শুনো তোমাকে সাদফের চাই। এটা বলবো?

-হ্যাঁ, বল। সোজা কথা সোজা ভাবেই বলা উচিত।

-আচ্ছা, যাচ্ছি।

-দাঁড়া লাবণ্য।

লাবণ্য উঠার আগেই প্রিতম বাঁধা দিয়ে বলে।

-আমার মনে হয় না হুট করে এখনই সাদাফকে নিয়ে কথা বলাটা ঠিক হবে। তুই বরং আজ মেয়েটার নাম, পরিচয়, কোন ইয়ার এসব জিজ্ঞেস করে আয়। আর একটু ভাব জমিয়ে আয় তারপর কাল অথবা অন্য কোনো দিন না হয় সাদাফ নিজেই জানাবে।

-প্রিতম এইটা একদম ঠিক বলছিস। আমার সব কথা আমাকেই বলতে হবে। লাবণ্য তুই বরং পরিচিত হয়ে আয়।

লাবণ্য মাথা নেড়ে এগিয়ে যায়। তারপর এশার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ওর নাম, পরিচয়, কোন ইয়ার এসব জেনে ভদ্রতা সূচক তানহার সাথেও একটু কথা বলে। তানহা অভ্যাস অনুযায়ী লাবণ্যর সাথে বকবক জুড়ে দেয় অল্প ক্ষণের মধ্যেই। এশা মাঝে মধ্যে একটু একটু কথা বলছে শুধু। কথার মাঝখানেই তানহা বললো,

-আপু, আপনি আর আপনার বন্ধু অনেক ভালো গান করেন।

-কি বলো? তুমি আমার গান শুনেছো?

-হ্যাঁ, প্রায়ই শুনি।

-অহ আচ্ছা, আমি আর কি গাই ওই তো আমার বন্ধু সাদাফ। ও অনেক ভালো গায়।

সাদাফকে দেখিয়ে লাবণ্য কথাটা বললো। তানহা সাদাফকে দেখে খুশি হয়ে গেলো। কিন্তু এশার সাদাফকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চমকে গেলো। তানহা লাবণ্যকে কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই এশা বলে উঠে,

-আপু, আমাদের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। কাল আবার আড্ডা দিবো আজ আসি।

-ওকে যাও তোমরা। ভালো থেকো।

তানহাকে কিছু বলতে না দিয়ে এশা তারহাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে এলো। তানহা অবাক হয়ে এশার দিকে চেয়ে আছে। হঠাৎ করে হাঁটা থামিয়ে বলে,

-এভাবে কিছু বলতে না দিয়ে চলে আসলি কেন?

-ঘড়িতে দেখ, ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছে। এসাইনমেন্ট বাকি আছে ভুলে গিয়েছিস? স্যার এসে আজ তোর কি অবস্থা করবে সেটা ভাব তানু।

তানহা ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে সত্যিই ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে ক্লাসের দিকে ছুটে যায়।

লাবণ্য ফিরে আসতেই অমিত জিজ্ঞেস করে,

– কি কথা হলো?

-কি কথা হবে আবার? সব জেনে এসেছি।

-সব কি কি সেগুলো তো বল।

-আরে বলছি, ওর নাম এশা। ফাস্ট ইয়ারে পড়ে বাসা ঢাকায়।

-তবে তো সাদাফের বাসার সাথেই।

-কি মামা, তোর তো কপাল খুলে গেলো।

সাদাফ লাজুক হাসলো শুধু কিছু বলতে পারলো না।
_____________________________

পরদিন,
এশা লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ছিলো। আজ তানহা নেই, ওর জ্বর এসেছে তাই ভার্সিটিতে আসতে পারেনি। তাই একা একা ক্যান্টিনে না গিয়ে লাইব্রেরিতে এসে পড়াশোনায় মন দিলো। কিছু দিন পর, ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা। গ্রামে থাকার কারণে এতোদিন পড়ায় গ্যাপ গিয়েছে। এশার হঠাৎ মনে হলো তার সামনে কেউ বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এশা সামনে তাকাতেই তার গলা শুকিয়ে গেলো। সে কোনো কথা না বলে বইটা ব্যাগে ঢুকিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু তার ডান হাতটা অন্য একটা পুরুষালী হাত চেপে ধরলো। এশা থেমে গেলো। পেছনে তাকানোর সাহস তার নাই। সাদাফ নরম সুরে বললো,

-আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।

-জী, বলুন।

-প্লিজ বসো দু’মিনিট কথা বলেই চলে যাবো আমি। এভাবে দাঁড়িয়ে কথা বললে আশেপাশের কেউ সেটা স্বাভাবিক ভাবে নিবে না।

এশা বাধ্য হয়ে সাদাফের সামনের চেয়ারে গিয়ে বসলো। সাদাফ ঠোক গিলে বলতে শুরু করলো,

-তোমাকে আমার ভালো লাগে? তোমাকে আমি ভালোবাসি। আমি বলছি না আমার সাথে তোমায় রিলেশনে যেতে হবে। তবে আমার মনে হচ্ছে তুমি আমায় দেখে ভয় পাও। আমাকে এড়িয়ে যেতে চাও। এটার কারণ কি?

এশা বাইরে থেকে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলেও। ভেতরে ভেতরে ভীষণ ভয় পাচ্ছে। আর সে প্রথম দেখাতেই সাদাফের প্রেমে পড়েছিলো। তাকে ভালোবেসেছিল। কিন্তু তারপর ও এশার মনে কোন এক বাঁধা কাজ করছে। ভালোবাসার মানুষের মুখে ভালোবাসি শুনেও সাড়া দিতে পারছে না সে। এর কারণ কি? এর কারণ এশার বন্ধু তানহা সাদাফকে ভালোবাসে। এশা স্বার্থপরের মতো সাদাফকে তানহার থেকে নিতে পারে না। অনেক কষ্টে এশা দুটো শব্দ উচ্চারণ করে বেরিয়ে গেলো ক্যান্টিন থেকে। সাদাফ আহত দৃষ্টিতে এশার চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো,

“এটা কি হলো, সে কত আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলো এশার জবাবের। কিন্তু এশা ক্লাসের সময় হয়ে গেছে বলে অজুহাত দিয়ে চলে গেলো!”

চলবে

প্রেম প্রেয়সী পর্ব-০৪

0

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_০৪
#আয়েশা_আক্তার

পরদিন,
এশার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী তানহা সকাল সকাল এশাদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হলো। এশা ভেবেছিলো তানহা এমনি এমনিই কাল বলেছিলো যে সে এসে এশাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু এতো দেখি সত্যিই এশা এসে হাজির।

-কি রে কই হারায় গেলি? আমি সেই কখন এসেছি। আন্টির সাথে এতোক্ষণ গল্প করে তোর রুমে এলাম আর তোর কোনো পাত্তাই নেই। এভাবে ঘরের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকতে দমবন্ধ লাগে না তোর।

-একদমই না। বরং আরো বেশি ভালো লাগে একা থাকতে।

-আল্লাহ, তুই কেমনে পারিস? আমি তো দু’সেকেণ্ড ও কারো সাথে কথা না বলে থাকতে পারি না।

-আপুর কথা আর বলবেন না। আমার আপু পারলে সারাদিন রাত রুমের দরজা, জানালা অফ করে বসে থাকে। কারো সাথে মিশতেই চায় না।

এশার বোন ইয়াশা ওদের কথার মাঝখানে এসে কথাগুলো বললো। এশা বোনের দিকে কটমট করে তাকালো। ইয়াশা ভয় না পেয়ে উল্টো হেসে ফেললো। এটা দেখে এশা একটু বিরক্ত বোধ করলো। বোনকে কিছু বলতে যাচ্ছিলো এশা তার আগেই তানহা ইয়াশাকে বললো,

-শুনো ইয়াশা, আমি আপুর বন্ধু তাই তোমার আপুর মতো আমিও তোমার আরেকটা আপু তাইনা?

ইয়াশা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো।

-তাহলে আমায় তুমি আপনি করে বলছো কেন? তুমি করে বলবে ওকে?

-ওকে তানহা আপু।

– এইতো গুড গার্ল। (ইয়াশার গাল দুটো টেনে বললো তানহা।)

এশা মনে মন ভাবতে লাগলো, এই মেয়ে কাল পরিচয় হয়ে আজ এশে তার বোনের নামও জেনে ফেলেছে? আবার নাকি মায়ের সাথেও আড্ডা দিয়েছে এতোক্ষণ! কি করে এতো তাড়াতাড়ি সবার সাথে মিশতে পারে ও-ই জানে।

-কি রে এশা তুই কই হারায় যাস বারবার? তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে বের হতে হবে তো।

এশা বিনাবাক্য ব্যয়ে ওয়ারড্রব থেকে একসেট পিংক কালার থ্রি পিচ নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। তার কিছুক্ষণ পর ড্রেস চেঞ্জ করে হাত মুখ ধুয়ে বেরিয়ে এলো। মুখে একটু সানস্ক্রিন দিয়ে, লম্বা চুলগুলো খোঁপা করে নিলো, তারপর একটা পিংক কালারের হিজাব মাথায় জরিয়ে পিন আপ করে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিলো। তারপর ঠোঁটে লিপজেল দিয়ে হাত ঘড়িটা বা হাতে পরে নিয়ে সাইড ব্যাগে মোবাইল নিয়ে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে নিলো। মায়ের কাছে বলে, তানহার সাথে বেরিয়ে পরে। বাস স্টেশনে এসে বাসে উঠে পাশাপাশি দুটো সিটে বসে এশা এবং তানহা। এশা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে চুপ করে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে বাইরে তাকিয়ে সে কাউকে খুঁজছে। আর বর্তমানে এটাই তার একমাত্র লক্ষ্য বাকি সব বানের জলে ভেসে যাক। কিন্তু তানহা মোটেও চুপচাপ বসে থাকার পাত্রি নয়। তাই সে এশাকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো,

-বাইরে তাকায় কি খুঁজছিস? তোর বয়ফ্রেন্ড কে?

-বয়ফ্রেন্ড মানে? (এশা তানহার দিকে ঘুরে জিজ্ঞেস করলো)

-বয়ফ্রেন্ড মানে তোর প্রেমিক। এশা তুই এমন একটা ভাব করছিস যেনো এ নাম তুই প্রথমবার শুনলি! কেন তোর বয়ফ্রেন্ড নেই?

-আমার আর বয়ফ্রেন্ড? মন যার কাছে চলে গেলো তার দেখা আর পাবো কি না তারই ঠিক নেই আবার বয়ফ্রেন্ড, হাহ!

-তারমানে, ইউ হ্যাভ এ্যা ক্রাশ?

-কিছুটা সেরকমই।

-ধুর, হেয়ালি না করে ঘটনা কি বলতো।

এশা এবার বাইরে তাকিয়ে উদাস মনে নৌকায় দেখা অপরিচিত ছেলের কথা খুলে বললো। এটা শুনে তানহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-তার নাম কি?

-জানি না।

-বাসা কোথায়? এটলিস্ট ঠিকানা তো নিয়ে আসবি?

-না, ঠিকানাও জানি না। অদ্ভুত আমি তো তার সাথে কথাই বলিনি। শুধু জানি সে নৌকা চালাচ্ছিলো। আর আমি এবং মামা সেই নৌকা দিয়েই নদী পার হয়েছি।

এটা শুনে তানহা হু হু করে ফেললো। হাসতে হাসতে বললো,

-শেষে কি না মাঝির প্রেমে পড়লি তুই এশা? তুই তো দেখছি নাটক সিনেমাকেও হার মানিয়ে দিয়িছিস। হাহাহা।

-হাসিস না তো তানু। আমার ভাল্লাগছে না কিছু।

-ওকে, দোস্ত মন খারাপ করিস না। আমি দোয়া করে দিলাম তুই তোর মাঝিকে খুব শীগ্রই পেয়ে যাবি। আগে চলে আমার হিরোকে দেখবি। তারপর দু’জন মিলে না হয় তোর সেই নৌকার মাঝিকে খুঁজে বের করবো।

-হুম, গাড়ি থেমে গেছে এবার নাম।

এশা এবং তানহা বাস থেকে নেমে রাস্তায় দাড়িয়ে আছে। তানহা গিয়ে আশেপাশের কয়েকজনকে কি যেনো জিজ্ঞেস করে আবার ফিরে এলো। তারপর তারা জিজ্ঞেস করে করে সাদাফ দের কমপিটিশনের ওখানে চলে গেলো। তারা স্টেজের সামনে গিয়ে স্টুডেন্টদের জন্য যেখানে জায়গা রাখা হয়েছে সেখানে গিয়ে বসলো। তারা বসার কয়েক সেকেন্ড পরই মাইকে সাদাফের নাম উচ্চারিত হলো, সাথে চারপাশ হাত তালির শব্দে মুখরিত হলো। সাদাফের নাম শুনে তানহা নিজের হাত দিয়ে এশার একটা হাত চেপে ধরে। এশা জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই তানহা ফিসফিসিয়ে বললো,

-কি কানেকশন দেখেছিস? আমি এসে বসার সাথে সাথে আমার হিরোকে স্টেজে ডাকা হলো।

এশা বিরক্ত মুখে স্টেজের দিকে তাকালো। সে যা দেখলো তারজন্য এশা মোটেও প্রস্তুত ছিলো। তার মুখ দিয়ে অস্ফুটে উচ্চারিত হলো,” এইতল সেই শ্যাম পুরুষ! ” তানহা এশার হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বললো,

-কিরো কোথায় হারিয়ে গিয়েছিস? কি তাক লেগে গেলি তো আমার হিরোকে দেখে। শুধু দেখেই এ অবস্থা তার গান শুনে কি করবি রে তুই এশা?

এশা হাসার চেষ্টা করে বললো, তুই কি যে বলিস তানহা? আমি তাক লেগে যাবো কেন? আমি তো জানতামই তোর পছন্দ যখন তখন সে অবশ্য সেরা হবে।

-হ্যাঁ এবার তার গান শুনলেই বুঝবি আমার পছন্দ খারাপ হতেই পারে না।

তানহার হাস্যোজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে এশা কিছুই বলতে পারলো না। তানহাকে তার বলা হলো না, এটাই সেই মাঝি, বলা হলো না এটাই এশার শ্যাম পুরুষ। তবে এশা বুঝতে পারলো তার বুকের বা পাশে একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে। এশা সেই ব্যথাকে পাত্তা না দিয়ে গান শোনা মন দিলো। সাদাফ আজও সবাইকে সালাম দিয়ে গাইতে শুরু করেছে,

“আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি
আর মুগ্ধ এ চোখে চেয়ে থেকেছি।”

দুই লাইন গেয়ে সামনে খেয়াল করতেই সাদাফের চোখ পড়লো সেদিন নৌকায় থাকা অপরিচিতা মেয়েটি সামনে দর্শকের ভিরে বসে আছে। চোখে ভুল মনে করে সাদাফ চোখ বন্ধ করে আবার খুললো। এবারও দেখলো মেয়েটি সত্যিই সেদিনের মতোই তার দিকে তাকিয়ে তার গান শুনছে। মুহুর্তেই সাদাফের মন ভালো হয়ে গেলো। আজ আর সাদাফ চোখ সরিয়ে নিলো না। বরং পিংক কালারের থ্রি পিছ পড়া মেয়েটির দিকে চেয়ে থেকেই গাইতে শুরু করলো,

“আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি
আর মুগ্ধ এ চোখে চেয়ে থেকেছি।
বাজে ঝিনিঝিনি রিনিঝিনি
তোমারে যে চিনি চিনি।
মনে মনে কত ছবি এঁকেছি,
আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি।

এশা আর তানহা পাশাপাশি বসেছে। তাই সাদাফ যখন এশার দিকে তাকিয়ে আছে তখন তানহা ভাবছে সাদাফ হয়তো তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সাদাফের তাকানো দেখে লাল, নীল বসন্ত এসে যেন তানহার মন ছুঁয়ে দিলো। লজ্জারা এসে তানহার মুখ উপচে পড়ছে। তানহা এশার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

-এশা, দেখছিস সাদাফ আজ আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে। আমার যে কি লজ্জা লাগছে। আবার খুশিও লাগছে আগে কখনো ও ফিরেও তাকায়নি আর আজ এভাবে তাকিয়ে আছে ভাবতেই খুশি লাগছে।

এশা তানহার দিকে একবার তাকিয়ে আবার সাদাফের দিকে তাকালো। এশা মনে মনে বললো, তবে আমার কেন মনে হচ্ছে উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে? হয়তো আমার মনের ভুল। উনি হয়তো তানহার দিকেই চেয়ে আছে।

চলবে….