প্রেম প্রেয়সী পর্ব-১৩+১৪

0
318

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_১৩
#আয়েশা_আক্তার

এশা জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে এক বন্ধ ঘরে আবিষ্কার করে। ঘরটা কেমন অন্ধকার। এশা অন্ধকারে ভীষণ ভয় পায়। মনে হচ্ছে এই বুঝি কোনো অশরীরী এশার গলা টিপে ধরবে। এশা ভয়ে যেই চিৎকার দিতে যাবে ওমনি। এশা যে ঘরে রয়েছে তার দরজাটা খট করে খুলে যায়। বাইরে থেকে এক পশলা আলো ছড়িয়ে পড়ে দরজার কাছটায়। এশা ভাবে, কে দরজা খুললো? মানুষ নাকি কোনো অশরীরী? তখনই ঘরের লাইট জ্বলে উঠে। এশা সামনে চোখ মেলে দেখতে পায়, কোনো অশরীরী নয় বরং মধ্য বয়স্ক একজন মহিলা হাতে একটা লাল বেনারসি শাড়ি আর কিছু গহনা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মহিলাটি এশার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,

-আহারে! কি সুন্দর মাইয়াডারে এই অন্ধকার ঘরে বন্দী কইরা রাখছে! এরা মানুষ না।

এশার হঠাৎ মনে পড়ে সে দুপুরে বাড়ি ফিরছিলো তারপর কিছু গুন্ডা এশার পথ আঁটকে দাঁড়ায়। তারপর, তারপর কি হয়েছিলো আর কিছুই মনে করতে পারছে না এশা। এশা ঘরের চারপাশে ভালো করে চেয়ে দেখে এটা তার পরিচিত ঘর নয়। তবে কি গুন্ডা গুলোই আমায় তুলে এনেছে এখানে? এশার প্রশ্ন শুনে মহিলাটি পেছনে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে কেউ আছে কি না। কেউ নেই বুঝতে পেরে মহিলাটি এশার দিকে দৃষ্টি পাত করে ফিসফিসিয়ে বলে,

-চটপট তৈরি হইয়া নেও আম্মাজান। নইলে অমানুষ গুলা তোমারে মা ই রা ফেলবো।

-এসব কি? আর কেনই বা আমি তৈরি হবো?

-চৌধুরী সাহেবের একমাত্র পোলা আমান তোমারে বিয়া করবো। সে কাজী সাহেবরে নিয়া আইতে গেছে। তুমি তৈরি হইয়া নেও।

-আমাকে বিয়ে করবে বললেই আমি নাচতে নাচতে কবুল বলে বিয়ে করে নিবো? এটা আপনারা কিভাবে ভাবতে পারেন? আর আমাকে এখানে তুলে নিয়ে আসার জন্য উনার তো জেইল হতে পারে। একটা আসামি’কে মরে গেলেও আমি বিয়ে করবো না।

-ম রে গিয়ে বিয়ে তোমায় আমাকে করতে হবে না। জীবিত থেকেই বিয়ে করবে। ম রা বউ দিয়া আমি কি করমু?

সামনে দাড়িয়ে থাকা মহিলাটি এবং এশা দু’জনের চোখ ই দরজার দিকে যায়। মহিলাটি দরজায় দাঁড়ানো ছেলের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,

-বাবা, মাইয়াতা কিছুতেই সাজগোজ করবে না। আমি কতবার কইরা কইলাম কিন্তু কিছুতেই রাজি হয় না।

-আচ্ছা খালা আপনি যান আমি দেখছি।

চৌধুরী সাহেবের বাসায় কাজ করে সুমনের মা। আমান সুমনের মা’কে চলে যেতে বললেও সে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। যদি আমান মাইয়াডার গায়ে হাত তুলে, এটা ভেবে তার মনে ভয় হয়। কাজের মহিলা হলেও সুমনের মা ভীষণ ভালো মানুষ। কেউ বিপদে পড়লে তার কষ্ট হয়।

এশা যখন দেখতে পেলো সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটা বিকেলে ওর পথ আটকে ছিলো যে সে-ই। তখন রাগে ফুঁসে ওঠে। এশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমান মহিলাটির হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে এসে এশার সামনে ধরে বলে,

-তাড়াতাড়ি রেডি হও। কাজী সাহেব বসে আছে। আর যা বলতে চাইছিলে বাসর ঘরে বলো। এখন কিছু বলতে হবে না।

এশা রেগে জবাব দেয়,

-জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন মিস্টার। আমি জীবনেও আপনাকে বিয়ে করবো না। আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। সে জানলে আপনার খবর করে ছাড়বে বলে দিচ্ছি ভালোয় ভালোয় আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন।

-বাসায় দিয়ে আসার জন্য তো তুলে আনিনি। আর কি বললে, অন্য কাউকে ভালোবাসো? অন্য কেউটা যে সাদাফ সেটা আমি ভালো করেই জানি। সাদাফ জানলে আমার কিছুই করতে পারবে না। ওকে আমি নিজে টেক্সট করে তোমার আমার বিয়ের কথা বলে দিয়েছি। কু কু র কখনো বিয়ে বাড়ি পর্যন্ত আসতে আসতে হাড্ডি মাংসও জুটবে কিনা সন্দেহ আছে।

কথাগুলো বলে আমান যেই হাসতে যাবে ওমনি এশা আমানের গালে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। থাপ্পড়ে মুখ খানিকটা ঘুরে যায় আমানের। এতে করে আমান এশার উপর ভীষণ রেগে যায়। রাগে গর্জন করে বলে উঠে,

-শা লি, তোর এত্তো বড় সাহস তুই আমান চৌধুরীর গায়ে হাত তুলছিস! আমান চৌধুরীর গায়ে? তোর হাত আমি যদি ভেঙ্গে গুড়িয়ে না দিছি আমার নামও আমান চৌধুরী না। এতোক্ষণ ভালো করে কথা বলছি তো তাই কানে যায়নি কথা। এবার তো তোকে আমি জোর করেই বিয়ে করবো তারপর বোঝাবো তোকে আমান কি জিনিস।

– কথায় আছে না পাগলের সুখ মনে মনে। তোর হয়েছে সেই অবস্থা। এতোক্ষণ আপনি আপনি করে বলেছি তো তাই তোর কান অব্দি পৌঁছায়নি আমার কথা গুলো তাই না? আরে তুই তো রাস্তার কু কু রের থেকেও অধম। রাস্তার কু কু রকেও ভালো করে কথা বললে শুনে।

আবারো এশা আমানকে কু কু র বলায় আমান রেগে আ গু ন হয়ে যায়। সে হাত উঠায় এশার গাল বরাবর। কিন্তু এশাকে মা/রার আগেই পেছন থেকে একটা শক্ত হাত এসে আমানে হাত ধরে ফেলে। আমান রেগে বলে,

-কোন শা/লা/র বাচ্চা আমার হাত ধরছে রে?

-তোর য/ম।

পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনে আমান পেছনে ফিরে তাকায়। সাদাফকে দেখে চমকে যায় আমান। মনে মনে ভাবতে থাকে, এ বাড়ি তো সাদাফের চেনার কথা না। তাহলে চিনলো কি করে?

-কি ভাবছিস? আমি কি করে তোর আস্তানা চিনে এলাম তাই তো? মানুষ বাঁচার জন্য যেখানেই লুকিয়ে থাকুক আজরাইল ঠিক পৌঁছে যায় জান কবজ করতে। আর তোর মতো অমানুষ যেখানেই থাকুক আমার মতো সাদাফ সেখানে পৌঁছাবেই।

কথাটা বলে সাদাফ আমানের হাতটা মুচড়ে ধরে। আমান ব্যথায় আহ করে উঠে। নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলে,

-তোকে আমি ছাড়বো না সাদাফ।

-ইশ! সাদাফ তোর বড্ড ভয় পেয়েছে রে। পুলিশ অফিসার এই অমানুষটাকে আর সহ্য হচ্ছে না আমার ওকে এখনই সামনে থেকে সরান।

এতোক্ষণে আমান খেয়াল করলো। তার ডান পাশে পুলিশ দাড়িয়ে আছে এমনকি দরজার সামনেও দু’জন পুলিশ এবং একজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে। আমান কিছু বলতে যাবে তার আগেই পুলিশ ওর হাতে হাতকড়া পরিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যায়। দরজা অব্দি গিয়ে আমান পেছনে ফিরে তাকায়। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

-আমি, ঠিকই ফিরে আসবো আর সেদিনই হবে তোর শেষ দিন।

-আগে বেড়িয়ে তো আয়।

পুলিশ আমানকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যায়।

এতোক্ষণ শক্ত থাকলেও এশা সাদাফকে দেখে আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারলো না। নিচের দিকে চেয়ে কাঁদতে শুরু করেছে। সাদাফ এশার পাশে গিয়ে হাত দুটো এশার দু’গালে রাখে। তারপর কোমল কন্ঠে বলে

– কাঁদছো কেন? বোকা মেয়ে, আমি আছি তো!

এশা সাদাফকে জড়িয়ে ধরে। পেছনে চোখ যেতেই ছেড়ে দেয় সাদাফকে। তারপর দরজার দিকে এগিয়ে বলে,

-বাবা তুমি এখানে?

-হুম, আমিই তোমার বাবা। তাড়াতাড়ি বাসায় চলো এখন তোমার মা তো মেয়ের শোকে কেঁদে কেটে অবস্থা খারাপ।

এশা এবার খেয়াল করে তার বারবার দিকে। এই শক্ত মানুষটার মুখেও কেমন ভয়ের ছাপ লক্ষ্যনীয় হয়ে আছে। এশা বাবার বড় আদরের মেয়ে। এশা জানে আজ তাকে খুঁজে না পাওয়া গেলে মানুষটা বাঁচতেন না। অথচ নিজেকে শক্ত রেখে মায়ের অবস্থার কথা বলছে। এশা ইয়াশ আহমেদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আবারো কেঁদে ফেলে এশা। ইয়াশ আহমেদ নিজেকে আর শক্তিতে রাখতে পারলেন না। সেও কেঁদে ফেললেন মেয়েকে জড়িয়ে ধরে।

চলবে ,,

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_১৪
#আয়েশা_আক্তার

-শশুর মসাই, আপনার মেয়ে এখনই আমার বাসায় চলে যাচ্ছে না। তাই কান্না বন্ধ করুন। বাকি টা নাহয় আপনার মেয়ে যখন আপনার বাড়ি ছেড়ে আমার বাড়ি চলে আসবে। তখনই কাঁদবেন।

সাদাফের কথায় এশা বেশ লজ্জা পেয়ে যায়। লজ্জা পায় ইয়াশ আহমেদও। এভাবে ছেলের বয়সী কারো সামনে ইমোশনাল প্রকাশ করার লজ্জা। ইয়াশ আহমেদ নিজেকে স্বাভাবিক করে বললেন,

-এবার চলো, যাওয়া যাক।

ওরা তিনজন বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসে। সামনে ড্রাইভিং সীটে বসে সাদাফ, আর পেছনে ইয়াশ আহমেদ ও এশা। এশা লজ্জা পাচ্ছে আর ভাবছে, বাবা কি তবে সাদাফ আর আমার সম্পর্কের কথা জেনে গেলো? বাবা কি কষ্ট পেয়েছে এসব জেনে? এশা তো চায়নি তার বাবাকে কষ্ট দিতে। এসবই ভাবছিলো এশা বাইরে চেয়ে চেয়ে। তখনই ইয়াশ আহমেদ মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত রাখে। এশা ঘুরে বাবার দিকে তাকায়। সামনের লুকিং গ্লাসে সাদাফ দেখতে থাকে বাবা-মেয়েকে। ইয়াশ আহমেদ জিজ্ঞেস করে,

-কি ভাবছো?

-না মানে বাবা….

-সাদাফ আমাকে কই পেলো সেটাই তো?

এশা মাথা নিচু করে নেয়। ইয়াশ আহমেদ বলতে শুরু করে,

-আমি যখন তোমাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে থানায় জিডি করতে যাই। তখন জিডি করে বেরিয়ে আসার সময় আমি ছাড়াও অন্য কারো মুখে তোমার নাম শুনতে পাই। আশেপাশে খুঁজে আবারো তোমার নাম শুনে সেটা অনুসরণ করতেই সাদাফকে দেখতে পাই। আর সাদাফ হচ্ছে তোমার সৈকত আঙ্কেলের ছেলে। তুমি যেমন আমার বন্ধু হিসেবে সৈকতকে চেনো।তেমনই সাদাফ ও তার বাবা সৈকত আহমেদের বন্ধু হিসেবে আমাকে চেনে। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় কোনো দ্বিধা ছাড়াই ওকে প্রশ্ন করি ও এশাকে কিভাবে চেনে? আর জানলোই কিভাবে তোমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে আমি থানায় গিয়েছি সেটা? তখনও আমি বুঝতে পারিনি আমাদের থানায় দেখা হওয়ার বিষয়টা পুরোটাই কাকতালীয়। তারপর সাদাফের থেকেই শুনি, তোমাকে চৌধুরীর ছেলে আমান তুলে নিয়ে গিয়েছে। আমানের নামে কেইস ফাইল করতেই সাদাফ থানায় যায়।

-কিন্তু চৌধুরী আঙ্কেলকে তুমি চেনো কিভাবে?

-তোমার মনে নেই? চৌধুরী আমাকে এবং সৈকতকে নিজের শত্রু মনে করে। চৌধুরী সবসময় এশা ইন্ডাস্ট্রি এবং এস.এ ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি করতে চায়। এমনকি এই দুটো কম্পানির সাথে জরিত মানুষেরও ক্ষতি করতে দু’বার ভাবে না চৌধুরী।

ওদের কথার মাঝেই গাড়ি থেমে যায় সেটা ইয়াশ আহমেদ বা এশা কেউই খেয়াল করে না। সাদাফ তাই জোরে জোরে হর্ন দিতে শুরু করে। বাবা – মেয়ে দু’জনেই সাদাফের হর্ন লক্ষ্য করে বোকার মতো চেয়ে থাকে। সাদাফ কেন হর্ন বাজাচ্ছে সেটা মনে হয় তাদের মাথার উপর দিয়ে গেলো। বিশেষ করে এশার। সাদাফ এবার পেছনে ফিরে ইয়াশ আহমেদকে বললেন,

-ইয়াশ আঙ্কেল, আপনাকে আর আঙ্কেল ডাকা যাবে না। এখন থেকে আমি আপনাকে শশুর মশাই-ই ডাকবো। আমি কিন্তু কোনো বারণ মানবো না।

-সেটা না হয় ডেকো, তবে বিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করো।

সাদাফ আর কিছু বলতে যাবে তখন এশা উচ্চস্বরে বলে,

-তোমরা দু’জনেই পাগল।

এটা বলে এশা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। সাদাফও সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে নেমে এশার সামনে এসে দাঁড়ায়। ফিসফিস করে বলে,

“আমি আজীবন তোমার জন্য পাগল থাকতে চাই। তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতে চাই, তোমার ভালোবাসায় বারবার, হাজারবার পাগল হতে চাই।”

এশা মাথা নিচু করে নেয়। ইয়াশ আহমেদও এতোক্ষণে গাড়ি থেকে নেমে দাড়িয়েছে। সাদাফ এবার ইয়াশ আহমেদের সামনে দাড়িয়ে বলে,

-আল্লাহ হাফেজ,শশুর মশাই। আমার প্রাণভোমরাকে দেখে রাইখেন।

-সাবধানে যাও।

-আসসালামু আলাইকুম।

-ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ভালো থেকো।

-আপনিও।

সাদাফ আর দাড়ায় না৷ গাড়িতে উঠে জানালা দিয়ে এশার দিকে তাকিয়ে বিদায় জানায় সাদাফ। এশাও হাত নেড়ে বিদায় জানায়। সাদাফ জানালার গ্লাস তুলেই শাঁ শাঁ গতিতে এগিয়ে যায়।
_____________________
দুই মাস পর,
আজ সাদাফের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে সাদাফ, প্রীতম, হৃদয়। মোহনা ও লাবণ্য গিয়েছে এশাকে নিয়ে আসতে। আর মাত্র এক সপ্তাহ পর লাবণ্যর বিয়ে। তারপরই লাবণ্য মেহেদীর সাথে চলে যাবে লন্ডনে। আবার কবে দেশে আসবে ঠিক নেই। লাবণ্য বন্ধুদের সবাইকে অনেক মিস করবে। সেই সাথে মিস করবে, ভার্সিটির রেড কার্পেট নামক জায়গাটাকে। হ্যাঁ, ওরা বর্তমানে ভার্সিটির ভেতরে যে জায়গাটাতে অবস্থান করেছে সে জায়গাটার নাম রেড কার্পেট। কারণ এ জায়গার চারপাশ টা জুড়ে রয়েছে অসংখ্য হিজল ফুলের গাছ। ফুলগুলো মাটিতে এমনভাবে পড়ে আছে যে জায়গাটা পুরো লাল রঙে ছেয়ে গেছে। এরজন্যই এ জায়গাকে রেড কার্পেট নামকরণ করেছে সাদাফ ও তার বন্ধুরা। অন্যরা অবশ্য হিজলতলী বা পাশে পুকুর থাকায় পুকুরপাড় বলেই জায়গাটকে চেনে। হিজল ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম : Barringtonia acutangula।

হিজল গাছ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী গাছ। এটি মাঝারি আকারের ডালপালা ছড়ানো একটি দীর্ঘজীবী চিরহরিৎ গাছ। এর বাংলায় অনেক নাম আছে যেমন- হিজল, নদীক্রান্ত, জলন্ত, কার্ম্মক ইত্যাদি। এর ইংরেজি নাম গুলো হল- Barrigntonia, Freshwater Mangrove plant, Samundarphal, Indian Oak, Indian Putat. হিজল গাছের আদি নিবাস দক্ষিণ এশিয়া, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া।

ঐতিহ্যবাহী গাছের মধ্যে হিজল গাছ একটি। এ গাছটি আমাদের প্রকৃতি থেকে দিন দিন হারিয়েই যাচ্ছে। ডালপালার বিস্তার চারদিকে। উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ মিটার। পাতা

হিজল ফুল দেখতে খুবই সুন্দর। গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে হিজল গাছে ফুল ফুটতে শুরু করে। ফুল সাদা, গোলাপি বা লাল রঙের, ছোট, ৬ – ১০ মিমি লম্বা চার পাঁপড়ি বিশিষ্ট। ১০-১২ সেমি লম্বা পুষ্পদণ্ডের মাঝে অসংখ্য ফুল ঝুলন্ত অবস্থায় ফোটে। গভীর রাতে ফুল ফোটে, সকালে ঝরে যায়। ফুলে একধরনের মিষ্টি মাদকতাময় গন্ধ আছে। সকালের সময়টাতে ছোট আকৃতির লাল অথবা গোলাপি হিজল ফুল গাছের নিচে ঝরে বিছিয়ে থাকে যেন এক অপরূপ দৃষ্টি নন্দন পুষ্প শয্যা।

লাবণ্য ও মোহনা এশাকে নিয়ে এসে পৌঁছেছে সবে। এশা তো এখানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে পুরোই মুগ্ধ। এতো সুন্দর জায়গা এশা এর আগে কোথাও দেখেনি। আর ভার্সিটির ভেতরে এতো সুন্দর একটা জায়গা আছে সেটা এশা কখনো কল্পনাও করেনি। এশার চোখ মুখের মুগ্ধতাই বলে দিচ্ছে এশা এখানে এসে অনেক বেশি খুশি হয়েছে। সবার চোখেই এটা পড়ছে। এশা অনেকক্ষণ চেয়ে থাকলো হিজল ফুলগুলোর দিকে। তার লাবণ্যকে বললো,

-আপু আমি জুতো খুলে ফুলগুলোর উপর দিয়ে হাঁটি?

-হাঁটো, সমস্যা নেই তো।

অনুমতি পেয়ে এশা আর দেরি করে নি। তাড়াতাড়ি জুতো খুলে ফুলগুলোর উপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করে। ফুলের উপর পা পড়তেই সে অনুভব করে, কি নরম! মোলায়েম ফুলের রাস্তা! হেঁটে হেঁটে এশা একদম পুকুরের কাছে চলে যায়। লাল রঙা হিজল ফুল পুকুরের পানিকেও রাঙিয়ে দিয়েছে। এশা পুকুরের সিঁড়িতে বসে, হাতে পানি নেয়। পানিতে হিজল ফুল নিয়ে হেসে উঠে, আপন মনে। আর বলে উঠে, কি সুন্দর! কি সুন্দর!

-হ্যাঁ, আমি ছাড়া দুনিয়ার সবকিছুই তোমার কাছে সুন্দর।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে