Sunday, August 3, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 410



তুমি ছিলে বলেই পর্ব-১৬

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ১৬
#দিশা_মনি

স্নেহা মন খারাপ করে নিজের ঘরে বসে রয়েছে। নিজের কাছেই এখন নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে তার। যদি সে তার বাবার জমানো টাকা গুলো অনুপমকে না দিত তাহলে এখন সেই টাকা দিয়ে সে তার বাবাকে সাহায্য করতে পারত। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না। এরমধ্যে হঠাৎ সে তাদের বাড়ির দরজায় কাউকে কড়া নাড়তে শুনল। তৎক্ষণাৎ গিয়ে সে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই দেখতে পেল তাদের প্রতিবেশী শাহিন ইসলামকে। শাহিন ইসলাম হাফাতে হাফাতে উত্তেজিত গলায় স্নেহাকে বলেন,
“তোর আব্বায় বাজারে হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে রে। সবাই মিলে তাকে ধরে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেছে। তুই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওখানে চলে যা।”

নিজের বাবার অসুস্থতার কথা শুনে স্নেহা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। কোন রকমে বাড়িতে তালা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে গেল স্থানীয় হাসপাতালের দিকে। সেখানে পৌঁছে সে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করল। ডাক্তার স্নেহাকে জানালো,
“আপনার বাবার অবস্থা বেশি ভালো না। এখানে ওনার চিকিৎসা করা সম্ভব না। যদি ওনাকে বাঁচাতে চান তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শহরে নিয়ে যান।”

স্নেহা অসহায় ভাবে ডাক্তারের কথা শুনতে থাকে। তার যে বাবা ছাড়া এই গ্রামে আপন বলতে কেউ নেই। একা এতকিছু কিভাবে সামলাবে সে?

স্নেহার এই দুঃখের সময় তাদের গ্রামের কিছু লোক এগিয়ে আসে। তাঁরা অ্যাম্বুল্যেন্সে করে আব্বাস খানকে শহরে নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। স্নেহাও তার বাবাকে নিয়ে শহরের হাসপাতালে চলে আসে।

আব্বাস খানকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়৷ একজন ডাক্তার তার চেকআপ করে স্নেহাকে ডেকে বলেন,
“আপনার বাবার হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে। ওনাকে বাঁচানোর জন্য অপারেশনের কোন বিকল্প নেই। এরজন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনাকে ৫ লাখ টাকা জোগাড় করতে হবে।”

স্নেহার অসহায়ত্ব বাড়তে থাকে। কোথায় পাবে সে এত টাকা? তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। এ মুহুর্তে নিজেকে সব থেকে বেশি অসহায় মনে হচ্ছে।

স্নেহার সাথে তার গ্রামের কিছু লোকও এসেছিলেন। তারা স্নেহাকে পরামর্শ দিয়ে বলেন,
“তোমার চাচা আজিজ খান তো এই শহরেই থাকে। তুমি তার সাথে যোগাযোগ করো। তিনি নিশ্চয়ই নিজের ভাইয়ের জন্য টাকার ব্যবস্থা করে দেবেন।”

স্নেহা বুঝতে পারে না তার কি করা উচিত। দিলারা খাতুনকে সেদিন যে সে বড় মুখ করে অনেক কথা শুনিয়ে দিয়ে এসেছিল। এখন যদি ঐ বাড়িতে সাহায্য চাইতে যায় তাহলে যে তার আত্মসম্মান পুরোপুরি মাটিতে মিশে যাবে। কিন্তু স্নেহার কাছে যে এখন আর উপায় নেই। তাই স্নেহা ভাবে যতই অপমানিত হতে হোক না কেন সে আবার দীপ্রদের বাড়িতে যাবে। তাছাড়া এই অবস্থার জন্য সে নিজেও তো কোথাও না কোথাও দায়ী৷ সে যদি অনুপমকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে তার হাতে টাকাগুলো তুলে না দিত তাহলে তো আর আজকে তাকে এই দিন দেখতে হতো না৷ সেই টাকা দিয়েই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। এসব ভেবেই স্নেহা দীপ্রদের বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

★★★
দিলারা খাতুন বেশ খোশ মেজাজে আছেন। ঘটক মারফত ইমাম চৌধুরীর সাথে তার আলাপ হয়েছে। ইমাম চৌধুরী দীপ্রর সাথে তার মেয়ে ইশার বিয়ে নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। আগামীকাল তাদের দীপ্রকে দেখতে আসার কথা। দিলারা খাতুনের মনে খুশি আর ধরে না। তিনি কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে নিজে নিজেই বলছেন,
“যাক! ঐ নিপুণ নামক আপদ নিজে থেকেই দূর হয়েছে। ওকে এমনিতেও আমার পছন্দ ছিল না। ওরকম একজন সাধারণ উকিলের সাথে ছেলের বিয়ে দিয়ে আমার কি লাভ হতো? এবার আমি আমার ছেলের সাথে একজন বড় ব্যবসায়ীর একমাত্র মেয়ের বিয়ে দেব। এতে করে তার সম্পত্তি তো ভবিষ্যতে তার মেয়েই পাবে। এরকম সোনার ডিম পাড়া হাঁসই তো আমার দরকার।”

তার ভাবনার ব্যাঘাত ঘটে কলিং বেলের আওয়াজে। দিলারা খাতুন বিরক্ত করে বলেন,
“এই ভরদুপুরে আবার কে এলো?!”

তিনি উঠে দাঁড়িয়ে অতঃপর পা বাড়ালেন দরজার দিকে। দরজার খুলে স্নেহাকে দেখামাত্রই তার মেজাজ বিগড়ে গেল। তার চোখমুখে বিরক্তি ফুটে উঠল। তিনি মুখটা গম্ভীর করে বললেন,
“কি চাই?”

স্নেহা মিনমিনে স্বরে বলল,
“চাচা বাড়িতে আছেন?”

“না, নেই। কি দরকার আমায় বলো। খুব তো বড় মুখ করে বলেছিলে আমাদের বাড়িতে আর কখনো পা রাখবে না। সেই তো ডেং ডেং করে আসতেই হলো।”

স্নেহার খুব খারাপ লাগল দিলারা খাতুনের এহেন কথা। তবুও সে এসব গায়ে মাখল না। এখন তাকে এটুকু সহ্য করতেই হবে৷ স্নেহা বলল,
“আসলে চাচি আমার আব্বু খুব অসুস্থ। বর্তমানে উনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ওনার চিকিৎসার জন্য ৫ লাখ টাকার প্রয়োজন।”

“তো আমি কি করব?”

“আপনারা যদি টাকা দিয়ে সাহায্য করতেন তাহলে…”

“তোমার কি মনে হয় আমরা এখানে দাতা সংস্থা খুলে বসে আছি? টাকার দরকার হলে রাস্তায় গিয়ে ভিক্ষা করো।”

“চাচি…আপনি কি করে এমন কথা বলছেন? আমরা তো আপনাদের আত্মীয়।”

“আত্মীয়? কিসের আত্মীয়? তোমাদের সাথে আমাদের ক্লাসের কোন মিল আছে?”

“রক্তের সম্পর্ককে আপনি কিভাবে উপেক্ষা করতে পারেন? আচ্ছা, আমার উপর এত রাগ কেন আপনার? আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি বলতে পারতেন?”

“জানতে চাও তুমি, তোমার উপর আমার কিসের রাগ? তাহলে শোনো, তুমি একটা জা**রজ, অবৈধ সন্তান। আর তোমার উপর রাগ করার জন্য এই কারণটাই যথেষ্ট।”

“চাচী!! আপনি আমার সম্পর্কে এমন কথা বলতে পারেন না। আমি কি করে জা*রজ হতে পারি? আমি আমার মা-বাবার মেয়ে।”

“ভুল জানো তুমি। তুমি তোমার মা-বাবার মেয়ে নও। তোমার মায়ের কিছু শারীরিক সমস্যা ছিল যে কারণে সে কখনো মা হতে পারত না। তবে তোমার বাবা তোমার মাকে খুব ভালোবাসত এজন্য সে দ্বিতীয় বিয়ে করতে চায়নি, বাচ্চা দত্তক নিতে চেয়েছিল। এরপরই তারা একটা অনাথ আশ্রম থেকে তোমাকে দত্তক নিয়ে আসে। পরবর্তীতে আমি তোমার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখি তোমাকে জন্মের পরই ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিল তোমার মা। সেখান থেকে উদ্ধার করেই তোমাকে অনাথ আশ্রমে পাঠানো হয়েছিল। এখন তোমাকে নিশ্চয়ই আমাকে বুঝিয়ে দিতে হবে না এইসব ডাস্টবিনে কেমন বাচ্চাদের জায়গা হয়?”

স্নেহা হতবাক হয়ে সমস্ত কথা শুনতে থাকে। সব শুনে তার মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ে। স্নেহা কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারছিল না। সে নিজের মাথায় হাত দিয়ে নিচে বসে পড়ে। দিলারা খাতুন স্নেহার থেকে দূরে সরে এসে বলে,
“সত্যটা জানার পর থেকেই আমি চেয়েছিলাম তোমাকে যেন আবার অনাথ আশ্রমে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তোমার বাবা-মা এটা চায় নি। যার কারণে তাদের সাথেও আমার সম্পর্ক খারাপ হয়। এরপর শহরে চলে আসার পর আমি চেষ্টা করি তোমাদের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে।”

স্নেহা কিছু সময়ের জন্য মূর্তির মতো বসে থাকে। সত্য নিষ্ঠুর হয় সে শুনেছিল কিন্তু এত নিষ্ঠুর হয় সেটা তার জানা ছিল না। স্নেহা নিজের চোখের জল মুছে বলে,
“আমাকে নিয়ে আপনার সমস্যা থাকতেই পারে কিন্তু তাই বলে আপনি আমার বাবার চিকিৎসার জন্য টাকা দেবেন না?”

দিলারা খাতুন সরাসরি বলে দেন,
“না। এখন দূর হয়ে যাও এখান থেকে।”

বলেই তিনি স্নেহার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেন। স্নেহা বিমূর্ষ, হতাশাগ্রস্ত হয়ে ফিরে যেতে থাকে। এমন সময় হঠাৎ করে পিছন থেকে দীপ্র তার নাম ধরে ডাকে। স্নেহা পিছন ফিরে তাকাতেই দীপ্র স্নেহার হাতে একটা চেক তুলে দিয়ে বলে,
“এই নে তোর টাকা। এটা দিয়ে তোর বাবার চিকিৎসা করিয়ে নিস। আর কোনদিন আমাদের বাড়িতে আছিস না তুই।”

স্নেহা নিজের চোখের জল মুছে বলে,
“তুমি আর দিশা আপু আমার সত্যটা জেনে গেছ তাই না? সেইজন্য হঠাৎ করে আমার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করে দিয়েছিলে। তাই তো আমি ভাবছিলাম তোমরা হঠাৎ কেন বদলে গেলে।”

দীপ্র কোন উত্তর দেয়না। স্নেহা সরল মনে দীপ্রকে শুধায়,
“আচ্ছা আমার জন্মের সাথে কি আমার কোন হাত আছে? আমি যে এভাবে জন্ম নিয়েছি সেটা কি আমার দোষ?”

দীপ্র কোন উত্তর না দিয়েই নিজের বাড়ির দিকে চলে যেতে থাকে। স্নেহা দীপ্রর যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে থাকে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

তুমি ছিলে বলেই পর্ব-১৫

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ১৫
#দিশা_মনি

দীপ্রর জন্য মেয়ে দেখা শুরু করে দিয়েছেন দিলারা খাতুন। তার মাথায় যেন জেদ চেপে বসেছে। যে করেই হোক তিনি তার ছেলের সাথে খুব সুন্দরী, উচ্চশিক্ষিত, ধনী পরিবারের একটি মেয়ের বিয়ে দিতে চান। এই উপলক্ষে আজ তিনি বাড়িতে ঘটক ডেকেছেন। ঘটক সাহেব সোফায় এসে বসে চা খাচ্ছেন। কিছু ছবি তিনি দিলারা খাতুনকে দেখিয়েছেন। কিন্তু দিলারা খাতুনের কাউকের ঠিক পছন্দ হচ্ছিল না। হঠাৎ করেই তার চোখ আটকে যায় একটি ছবির উপর। ছবির মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দরী, সাজসজ্জা দেখে বেশ ভালো ঘরের মেয়েই মনে হচ্ছে। দিলারা খাতুন ঘটককে ছবিটা দেখিয়ে বলেন,
“এই মেয়েটা কে?”

“ইনি হলেন এই শহরের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ইমাম চৌধুরীর মেয়ে ইশা চৌধুরী। শুধু রাজশাহী না ঢাকাতেও ওনাদের ব্যবসা বিস্তৃত। বেশ পয়সাওয়ালা। আর মেয়েটাকে তো দেখছেনই। একদম ডানা কা’টা পরি।”

দিলারা খাতুন ছবিটা হাতে নিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকেন৷ এরমধ্যে দীপ্র সেখানে চলে আসে। দীপ্রকে দেখামাত্রই তিনি বলেন,
“এই দীপ্র, দেখ তো মেয়েটাকে তোর কেমন লাগে!”

দীপ্র ছবিটার দিকে একপলক তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে,
“এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না আম্মু। নিজের পছন্দের উপর আমার আর বিশ্বাস নেই। তোমার যাকে পছন্দ হয় তাকেই আমি বিয়ে করব। আমার এখন মনে হয় তুমি আমার থেকে ভালো মানুষ চিনতে পারো।”

দিলারা খাতুন বলেন,
“এটা বুঝতে তুই বড্ড দেরি করে ফেললি। আমার হলো জহুরির চোখ। সোনা চিনতে ভুল হয়না। তামা ও সোনার তফাতও আমি বুঝি। এবার দেখিস তোর জন্য একটা সোনার টুকরো মেয়ে নিয়ে আসব৷ যার সাথে তোকে অনেক ভালো মানাবে।”

দীপ্র কোন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। দিলারা খাতুন ঘটকের সাথে কথা বলা অব্যাহত রাখে।

★★★
নিপুণ রুদ্রর বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। তার মন আজ বড্ড বিক্ষিপ্ত। রাগে তার পুরো শরীর জ্ব’লে যাচ্ছে। এরমধ্যে হঠাৎ রুদ্র পিছন থেকে এসে তার নাম ধরে ডাক দেয়। নিপুণ ফিরেও তাকায় না। অতঃপর রুদ্র নিপুণের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
“আমি তো ডাকছিলাম তোমায়। শুনছ না কেন?”

“আপনার ডাক শোনার প্রয়োজন মনে করিনা।”

“বেশি বাড়াবাড়ি করো না। এই নাও।”

“কি এসব?”

“তোমার জন্য শপিং করে এনেছি। এখানে তোমার জন্য অনেকগুলো ড্রেস আছে। যেগুলো পছন্দ বেছে নাও।”

নিপুণ ড্রেসগুলো নিয়ে ছু’ড়ে ফেলে দিয়ে বলে,
“আপনি কি করে ভাবলেন যে আপনার মতো একটা খু*নির টাকায় কেনা ড্রেস আমি ব্যবহার করব? আপনার পাপের টাকায় খেলে তো আমার জাহান্নামেও স্থান হবে না। আপনার টাকায় কেনা কিছু আমার লাগবে না।”

রুদ্র নিপুণকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। নিপুণ নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা করে। নিপুণ যত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে রুদ্র তাকে ততোই দ্রুত চেপে ধরে। নিপুণ বলে ওঠে,
“ছেড়ে দিন আমায়। নাহলে কিন্তু ভালো হবে না।”

“কি করবে তুমি? আমাকে হুমকি দেওয়ার আগে ভেবে নিজের মায়ের কথা মনে রেখো।”

“আপনি আমায় আর কতদিন এভাবে ভয় দেখিয়ে আটকে রাখবেন মিস্টার রুদ্র চৌধুরী? আমি একদিন না একদিন আপনার সব কীর্তি ফাঁস করে দেব। আপনার পাপের সামাজ্রের ধ্বংসের সূত্রপাত হবে আমার মাধ্যমেই। দেখে নিয়েন।”

রুদ্র বাকা হেসে বলে,
“সেটা তো সময়ই বলবে। এখন আর বেশি কথা না বলে দ্রুত তৈরি হয়ে নাও।”

“কেন তৈরি হবো আমি?”

“বাইরে প্রেসের লোকজন এসেছে। এমপি রুদ্র চৌধুরী বিয়ে করেছেন এটা তো এখন টক অব দা টাউন। তারা আমার স্ত্রীকে দেখতে চাইছে।”

“আমি যাবো না।”

“তুমি যেতে বাধ্য।”

নিপুণ হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে। রুদ্র চৌধুরীর বিরোধিতা করার উপায় তার নেই। রুদ্র চৌধুরীর হাতে তাকে জব্দ করার উপায় আছে। তাই নিপুণ বাধ্য হয়েই বলে,
“আমি প্রেসের লোকের সামনে যেতে রাজি আছি। তবে আমার একটা শর্ত আছে। আপনার দেওয়া কোন ড্রেস আমি পড়ব না। আমি আমার এই ড্রেস পড়েই যাবো।”

“এই সাধারণ ড্রেস পড়ে?”

“হ্যাঁ, কোন প্রব্লেম? একটা সাধারণ মেয়েকে যখন বিয়ে করেছেন তখন তাকে সাধারণ ভাবেই সবার সামনে নিয়ে যাওয়ার সাহস রাখুন।”

“বেশ। মেনে নিলাম তোমার শর্ত। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো, যদি তুমি প্রেসের সামনে কোন বেফাঁস কথা বলো বা কোন চালাকি করার চেষ্টা করো তাহলে কিন্তু…”

“জানি আমি৷ নিজের মায়ের জীবন রক্ষার জন্যই তো এত কিছু করতে বাধ্য হয়েছি।”

রুদ্র চৌধুরী নিপুণের হাত ধরে তাকে বাইরে প্রেসের লোকের সামনে নিয়ে যেতে থাকে।

বাইরে আসতেই প্রেস, মিডিয়ার লোকেরা তাদেরকে ঘিরে ধরে৷ তারা নানারকম প্রশ্ন করতে থাকে। নিপুণ শুধু হা হু করতে থাকে। রুদ্রই প্রেসের লোকদের সামলাচ্ছিল। হঠাই করেই একজন সাংবাদিক নিপুণকে প্রশ্ন করে বসে,
“আপনার মুখটা এমন শুকনা লাগছে কেন ম্যাম? আপনি কি এই বিয়েতে খুশি নন?”

রুদ্র ব্যাপারটা সামলাতে বলে,
“খুশি হবে না কেন? আসলে ও অনেক টায়ার্ড তাই ওকে এমন লাগছে। তাই না নিপুণ? ওনাদের সবাইকে বলো এই বিয়েতে তুমি খুশি কিনা?”

বলেই নিপুণকে চোখ দিয়ে ইশারা করে রুদ্র। নিপুণ মেকি হেসে সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আমি খুশি হবো না কেন? এত ভালো একজন স্বামী পেয়েছি, এত ভালো শ্বশুর বাড়ি পেয়েছি। সব মিলিয়ে আমি ভীষণ হাসি।”

আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করে বসেন,
“কিছুদিন আগেই তো আপনি রুদ্র চৌধুরীর ভাই রাহাত চৌধুরীর বিরুদ্ধে কেস লড়ছিলেন তো সেখান থেকে আপনাদের মধ্যে মিল হলো কিভাবে? মানে আপনাদের এভাবে হুট করে বিয়েটা বেশ শকিং।”

রুদ্র আবারো ব্যাপারটা সামলাতে বলে,
“এই কেসের মাধ্যমেই নিপুণের সাথে আমার পরিচয়। আপনারা সবাই জানেন যে, আমি নিজের হাতে নিজের ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। আমি চাইতাম যে অপরাধী উপযুক্ত শাস্তি পাক। তাই যখন নিপুণ এই কেস লড়ছিল তখন ওর সাথে যোগাযোগ করি। তখন থেকেই আমাদের মাঝে একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। আমরা একে অপরকে পছন্দ করতে শুরু করি। তারপর হুট করেই বিয়ে করে নিলাম।”

নিপুণ অবাক চোখে রুদ্র চৌধুরীর দিকে দেখতে থাকে আর মনে মনে ভাবে,
“একটা মানুষ কিভাবে এত সুন্দর নাটক করতে পারে? এও সম্ভব?”

★★★
স্নেহা আজ অনেক দিন পর নিজের বাড়িতে ফিরলো৷ তার মনে কাজ করছে নানা সংশয়। কিভাবে নিজের বাবার মুখোমুখি হবে সে? তার বাবার তিল তিল করে জমানো সব টাকা সে এভাবে হারিয়ে ফেলল! স্নেহার ভীষণ অপরাধবোধ হচ্ছে।

আজ বাড়িতে ফিরেই স্নেহা লক্ষ্য করল তার বাবা আব্বাস খান বেশ চুপচাপ। স্নেহাকে দেখে তিনি বললেন,
“তুই এসেছিস স্নেহা। যা একটু ফ্রেশ হয়ে নে। আমি রান্না করে রেখেছি খেয়ে নিস।”

“তুমি কি কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত আব্বু?”

“না।”

“সত্যি বলছ তো?”

আব্বাস খান কোন উত্তর দেন না। স্নেহা বুঝতে পারেন বড় কোন সমস্যা হয়েছে। হুট করেই তাদের বাড়িতে চলে আসেন এলাকার মহাজন কুদ্দুস মিয়া। তিনি এসেই হাকডাক দিয়ে বলেন,
“কই গেলা আব্বাস? বাড়ি আছো নি? ট্যাহা নিয়া কি ভাইগা গেলা?”

আব্বাস খান স্নেহাকে তার ঘরে যেতে বললেও সে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়। কুদ্দুস মিয়া ততক্ষণে ঘরে ঢুকে বলতে থাকেন,
“এই তো আব্বাস। তা ট্যাহার ব্যবস্থা হইছে?”

“আমাকে আর একটু সময় দিন মহাজন।”

“আর কত সময় দিমু? সেই ৬ মাস থেকে তো আমায় ঘুরাইছ। আজকের মধ্যেই সুধে আসলে আমার ট্যাহা ফেরত চাই।”

আব্বাস খান বলেন,
“১০ লাখ টাকা তো আর মুখের কথা না যে এভাবে দিতে পারব। তাছাড়া আপনি তো জানেন কিছুদিন আগেই আমার খামারে আগুন লেগে সব গরুউ পুড়ে মা*রা গেছে। আমি যে অনেক অসুবিধায় আছি।”

“আমি এত কিছু শুনবের চাইনা। এতদিন অনেক দয়া দেখাইছি৷ আজ শেষবারের মতো দয়া করলাম। কাইলকেই যেন আমার ট্যাহা ফেরত পাই। নইলে কিন্তু তোমার বাড়ি কব্জা কইরা নিমু।”

স্নেহা হতবাক হয়ে যায়। তার বাবা যে এত সমস্যার মধ্যে আছে এটা সে জানতোও না। খামারে অগ্নিকান্ডের ব্যাপারেও সে আজ প্রথম জানল।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

তুমি ছিলে বলেই পর্ব-১৪

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ১৪
#দিশা_মনি

নিপুণকে অন্য কারো নামে কবুল বলতে শুনে দীপ্রর পুরো পৃথিবীটা যেন এক মুহুর্তে বদলে গেল। যেই মেয়েটাকে সে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছে, যাকে ঘিরে হরেক স্বপ্ন সাজিয়েছে আজ সেই মেয়েটা কিনা অন্য কাউকে বিয়ে করে নিলো! দীপ্রর কাছে সবটাই স্বপ্ন মনে হচ্ছে।

নিপুণ দীপ্রর দিকে অসহায় চোখে তাকালো। দীপ্র নিপুণের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কাজি অফিস থেকে বেরিয়ে গেলো৷ নিপুণ দীপ্রর পিছনে যেতে নিতেই রুদ্র নিপুণের হাত ধরে ফেলল। রুদ্র বলল,
“এখান থেকে এক পাও নড়বে না।”

নিপুণ রুদ্র চৌধুরীর বাঁধা মানল না। নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দীপ্রর পেছনে যেতে লাগল৷ রুদ্র চৌধুরী বলতে লাগল,
“যদি আমার ব্যাপারে কাউকে কিছু বলার চেষ্টা করো তাহলে তোমার মাকে কিন্তু আর জীবিত দেখতে পারবে না।”

নিপুণ রুদ্র চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্যে বলে ওঠে,
“আমি কিছু বলব না৷ আমার দীপের সাথে জরুরি কথা আছে যা আমাকে বলতেই হবে। আপনি আমায় বাঁধা দেবেন না।”

বলেই নিপুণ ছুট লাগায়৷ বাইরে এসে সে দেখতে পায় দীপ্র চলে যাচ্ছে। নিপুণ দীপ্রর নাম ধরে কয়েকবার ডাক দেয়৷ কিন্তু দীপ্র তার ডাকে সাড়া দেয় না৷ অতঃপর নিপুণ দীপ্রর সামনে এসে দাঁড়ায়। দীপ্রর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“তোমাকে আমি কিছু বলার আছে দীপ।”

“কিন্তু আমার তোমার কাছ থেকে কিছুই শোনার নেই।”

“আমাকে ভুল বুঝোনা দীপ।”

“আমি একদম তোমায় ভুল বুঝছি না নিপু। তুমি নিশ্চয়ই আমাকে এই সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল৷ তাই বুঝি ডেকেছিলে আমায়?”

“দীপ..”

“চুপ। আর একটা কথাও না। যাইহোক, তোমাকে অনেক অনেক অভিনন্দন৷ বেশ ভালোই হলো বলো। একজন এমপিকে নিজের স্বামীরূপে পেলে। এটাই বোধহয় চেয়েছিলে তুমি। আম্মু ঠিকই বলতো৷ তুমি একটা গোল্ড ডিগার।”

“দীপ!! ভালোবাসলে বিশ্বাস করতে হয়।”

“বিশ্বাস করেই তো ঠকে গেলাম। দ্বিতীয় বার আর এই ভুল করব না।”

নিপুণ আর কিছুই খুঁজে পায়না বলার মতো। দীপ্র তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে যেতে থাকে। ততক্ষণে রুদ্র চৌধুরী এসে নিপুণের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“অনেক নাটক দেখেছি৷ এখন তুমি আমার সাথে চলো।”

নিপুণ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুদ্রর সাথে যেতে থাকে।

★★★
চৌধুরী বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থেকে নামে রুদ্র চৌধুরী। অতঃপর সে নিপুণকে বলে,
“এসে গেছি। নেমে পড়ো জলদি। ”

নিপুণ গাড়ি থেকে নেমে চৌধুরী ভিলার দিকে তাকায়। বেশ বড়সড় আলিশান একটা বাড়ি৷ চারিদিকে বেশ রাজকীয় ভাব। কিন্তু এসব কিছু তার মনে কোন প্রভাবই ফেলতে পারে না। কারণ সে জানে এই রাজপ্রাসাদে কোন রাজা থাকে না থাকে রাক্ষসের দল। যাদের কাছে মানুষের জীবনের কোন মূল্য নেই।

নিপুণকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুদ্র চৌধুরী বলে,
“তুমি কি এখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ভিতরেও যাবে?”

নিপুণ বলে ওঠে,
“আমায় আপনার বাড়িতে কেন যেতে হবে? আপনার শর্ত ছিল আপনাকে বিয়ে করার যেটা আমি পূরণ করেছি৷ এবার তো আমায় যেতে দিন।”

“আমার লোকেরা কিন্তু এখনো…”

“এভাবে হুমকি দিয়ে কতদিন আটকে রাখবেন আমায়?”

“যতদিন আমার ইচ্ছা। আসলে রুদ্র চৌধুরী তার শত্রুকে নিজের কাছে রাখতেই খুব ভালোবাসে।”

বলেই বিশ্রী একটা গা জ্বালানো হাসি দেয়৷ নিপুণ নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। রুদ্র চৌধুরী নিপুণকে নিয়ে তার বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে। রাহাত চৌধুরী তখন সবেমাত্র বাড়ি থেকে বেত হচ্ছিল। নিজের ভাইয়ের পাশে নিপুণকে দেখে চমকে যায় সে৷ চিৎকার করে বলে ওঠে,
“এই মেয়েটা এখানে কি করছে?”

রাজীব চৌধুরী ড্রয়িংরুমের সোফায় বসেছিলেন। রাহাতের চিৎকার শুনে তিনি উঠে দাঁড়ান। বাড়ির মূল ফটকের সামনে গিয়ে তিনিও চরম বিস্মিত হয়ে যান। রুদ্রকে প্রশ্ন করেন,
“এই মেয়েটাকে কেন নিজের সাথে এনেছ তুমি?”

রুদ্র চৌধুরী বেশ সাবলীল ভাবেই বলল,
“কারণ ও আমার স্ত্রী। স্বামী যেখানে থাকবে তার স্ত্রীও তো সেখানে থাকবে। তাই নয় কি?”

রাহাত ও রাজীব চৌধুরী দুজনের অবাকের মাত্রা এবার বাড়ল৷ দুজনেই একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল। রাহাত বলল,
“তুমি কি সকাল সকাল আমাদের সাথে মজা করছ নাকি ব্রো?”

“তোর কি আমাকে জোকার মনে হয় যে আমি তোদের সাথে মজা করব?”

রাজীব চৌধুরী বলে ওঠেন,
“তাহলে তুই সত্যিই এই মেয়েটাকে বিয়ে করেছিস?”

“জ্বি।”

রাজীব চৌধুরী হুংকার দিয়ে বলে ওঠেন,
“আমার অনুমতি না নিয়ে এরকম একটা কাজ কিভাবে করলে তুমি? নিজেকে কি খুব লায়েক মনে করেছ?”

রুদ্র শান্ত অথচ রুঢ় স্বরে বলে,
“রুদ্র চৌধুরীর কারো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই৷ আমি নিজের ইচ্ছাতেই চলি আর সবসময় চলব।”

“এই মেয়েকে আমি আমার ছেলের বউ হিসেবে মানব না।”

“আমিও ওকে নিজের ভাবি হিসেবে মানব না।”(রাহাত)

” তোমাদের কাউকে মানতে হবে না। আমি ওকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি, কবুল বলে ওকে বিয়ে করেছি এটাই যথেষ্ট।”

এটুকু বলে নিপুণকে জোরপূর্বক নিজের সাথে নিজের কক্ষে নিয়ে যেতে থাকে রুদ্র চৌধুরী৷ রাহাত, রাজীব চৌধুরী শুধু চুপচাপ দেখতে থাকে। রুদ্র নিপুণকে নিয়ে চলে গেলে রাহাত তার বাবাকে বলে,
“ব্রো ঐ মেয়েটাকে এভাবে নিজের রুমে নিয়ে গেলে আর তুমি সেটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলে ড্যাড! কিছু বললে না কেন?”

“রুদ্রকে তো তুমি চেনোই। ওর কোন কাজে আমি বাঁধা দিতে পারব না। তবে ঐ মেয়েটাকে আমি এই বাড়িতে টিকতে দেব না। ”

“তাহলে কি করবে তুমি ড্যাড?”

“সেটাই ভাবছি যে কি করা যায়।”

★★★
দীপ্র উন্মাদের মতো নিজের বাড়িতে ফিরল। বাড়িতে এসেই নিজের রুমে একটা ঢুকে ভাংচুর করতে শুরু করে দিলো। যার ফলে দিশা, দিলারা খাতুন, আজিজ খান সবাই ছুটে,এসে দীপ্রর ঘরের বাইরে দাঁড়ান। সবাই ডাকাডাকি করতে থাকে কিন্তু দীপ্র কারো ডাকে সাড়া দেয়না। দীর্ঘ ৩০ মিনিট নিজের রুমে ভাংচুর করে দরজা খুলে দেয় সে৷ দরজা খুলতেই দিলারা খাতুন লক্ষ্য করেন দীপ্রর হাত কে’টে গেছে। তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে বলেন,
“এ কি অবস্থা করেছিস তুই নিজের? তোর হাত থেকে তো অনেক রক্ত পড়ছে।”

“আমার অন্তরে যে এর থেকেও বেশি রক্তক্ষরণ হচ্ছে আম্মু।”

আজিজ খান শুধান,
“কি হয়েছে টা কি তোমার সেটা আমাদের খুলে বলো।”

“নিপুণ আমাকে ঠকিয়েছে বাবা। আমাকে ঠকিয়ে ও এমপি রুদ্র চৌধুরীকে বিয়ে করে নিয়েছে।”

রুদ্রর কথা শুনে আজিজ খান, দিশা দুজনেই অবাক হয়ে যায়। দিশা বলে ওঠে,
“এটা কিভাবে হতে পারে? নিপুণ আপি তো এমন মেয়ে নয়।”

দিলারা খাতুন রাগী কন্ঠে বলেন,
“চুপ কর তুই। নিজের ভাইয়ের এই অবস্থা দেখেও তুই এই কথা বলছিস! আমি আগেই বলেছিলাম ঐ মেয়ে একটা গোল্ড ডিগার। কি মিললো তো আমার কথা? দীপ্রর বাবা তুমি কি বলবে এখন? খুব তো বলেছিলে নিপুণ খুব ভালো মেয়ে তোমার ছেলেকে নাকি ও খুব ভালো রাখবে। এই তার নমুনা?”

আজিজ খান দীপ্রকে বলেন,
“নিপুণ কি সত্যিই এই কাজ করেছে?”

“হ্যাঁ। আমি নিজের চোখে ওদের বিয়ে হতে দেখেছি।”

দিলারা খাতুন উত্তেজিত হয়ে বলেন,
“শুধুই দেখে গেলি? ঐ মেয়েটার গালে ঠাস ঠাস করে দুটো বসিয়ে দিতে পারলি না? বেয়াদব মেয়ে। আমার সহজ সরল ছেলেটার মন নিয়ে খেলে এখন আরেকটা বড়লোক এমপি দেখে ঝুলে পড়েছে। আগেই জানতাম ঐ মেয়ে গোল্ড ডিগার। শুধু বড়লোক ছেলেদের ফাঁসাতে জানে। মুখেই শুধু ন্যায়ের বুলি আওড়ায়। দীপ্র তুই ঐ মেয়েটাকে ভুলে যা। আমি ওর থেকে হাজারগুণ সুন্দরী, যোগ্য মেয়ের সাথে তোর বিয়ে দেব।”

দিশা বলে,
“এটা একটু তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে না মম?”

দীপ্র বলে ওঠে,
“আম্মু ঠিকই বলেছে। নিপুণ যদি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারে আমি কেন পারবো না? আমি কি ওর শোকে দেবদাস হয়ে থাকব নাকি? আমিও বিয়ে করে ওকে এটা দেখিয়ে দেব যে আমি ওকে ছাড়াও ভালো থাকতে পারি।”

দিলারা খাতুন খুশি হয়ে বলেন,
“এই নাহলে আমার ছেলে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

তুমি ছিলে বলেই পর্ব-১৩

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ১৩(মহাধামাকা পর্ব)
#দিশা_মনি

নিপুণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খুব সুন্দর করে সাজছে। তার পড়নে লাল রঙের একটি কাতানের শাড়ি আজকের দিনটা দীপ্রর সাথে আলাদাভাবে কা’টানোর জন্যই বরাদ্দ রেখেছে সে। নিপুণ তৈরি হয়ে বের হতে যাবে এমন সময় শাহিনা খাতুন তাকে আটকে বললো,
“কিরে এত সেজে কোথায় যাচ্ছিস?”

“দীপের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি মা।”

“তোদের মধ্যে তাহলে কি সব ঠিক হয়ে গেছে? বাহ, জেনে খুশি হলাম। এখন আমার শান্তি লাগছে।”

নিপুণ মৃদু হাসে। নিপুণ ঘর থেকে বেরোতে গিয়ে হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। শাহিনা খাতুন অস্থির হয়ে বলেন,
“দেখে চলবি তো।”

নিপুণ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“শাড়িতে পা আটকে পড়ে গেছিলাম মা। আসলে অভ্যাস নেই তো। আমি তাহলে যাচ্ছি।।”

“এখন যাস না। একটু অপেক্ষা করে যা?”

“কেন?”

“এভাবে হোঁচট খেলি, এখন যাওয়া ঠিক হবে না।”

“এসব কুসংস্কার মা। দীপ আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমায় যেতে হবে।”

এই বলে নিপুণ আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে বেরিয়ে যায়। শাহিনা খাতুন তাকে আটকাতে ব্যর্থ হয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,
“এই মেয়েটা যদি আমার একটা কথা শুনত!”

★★★
দীপ্রর মন মেজাজ আজ অনেক ফুরফুরে। কতদিন পর আজ নিপুণের সাথে মুখোমুখি হবে সে। নিজেদের মধ্যকার সব বোঝাবুঝি মিটিয়ে আজ আবার তারা এক হবে। দীপ্র নিজের হাতে থাকা গিফটটার দিকে তাকায়। মুচকি হেসে ভাবতে থাকে আজ নিপুণকে কিভাবে সারপ্রাইজ দেবে। আজ সবার সামনে নিপুণকে বিয়ের জন্য প্রপোজ করবে সে। এমনিতেই তাদের বিয়ের আর বেশি দেরি নেই। বিয়ের কথা ভাবতেই দীপ্রর মনে খুশির আমেজ তৈরি হয়। আর কিছুদিন পর সে নিপুণকে নিজের খুব আপন করে পাবে। নিপুণকে নিয়ে একটি ছোট্ট টোনাটুনির সংসার সাজাবে। এসব ভেবেই হেসে চলেছিল সে। এদিকে সময় অতিবাহিত হতে থাকে। দীপ্র নিজের হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,
“নিপুণ তো বলেছিল ৮ টার মধ্যে চলে আসবে। এখন তো ৮ঃ২০ বাজে। ও এখনও আসছে না কেন?”

দীপ্র নিপুণকে কল দেয়। কিন্তু নিপুণ কলটা রিসিভ করে না। দীপ্র ভাবতে থাকে,
“নিপুণ কি কোন সমস্যায় পড়েছে? না হলে ও আমার ফোন ধরছে না কেন?”

★★
নিপুণ রওনা দিয়েছে রুদ্র চৌধুরীর গোপন ডেরার দিকে। যেখানে রুদ্র চৌধুরী প্রজ্ঞাকে অপহরণ করে রেখেছে। অনেক খোঁজার পর অবশেষে সে সেই স্থানের সন্ধান পেয়েছে। তাই আর সময় নষ্ট করতে চায়না সে। প্রজ্ঞাকে ওরা অন্য কোন স্থানে সরিয়ে নেওয়ার আগেই প্রজ্ঞাকে রুদ্রর ডেরা থেকে উদ্ধার করতে চায় নিপুণ।

নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে গাড়ি থেকে নামে নিপুণ। অতঃপর প্রবেশ করে ডেরার ভেতর। সেখানে প্রবেশ করে কাউকেই দেখতে পায়না নিপুণ। ধীরে ধীরে সে আরো ভেতরে প্রবেশ করে৷ কিছুদূর যেতেই সে দেখতে পায় প্রজ্ঞাকে একটি চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। প্রজ্ঞার কাছাকাছি যেতেই নিপুণ হতবাক হয়ে যায়। কেউ প্রজ্ঞার বুকে ছু’রিকাঘাত করেছে। নিপুণ ভয় পেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আসে। অতঃপর সে সাহস করে প্রজ্ঞার কাছে গিয়ে তার নিঃশ্বাস চেক করেই দেখতে পায় নিঃশ্বাস পড়ছে না। নিপুণ এবার অনেক বেশিই ভয় পেয়ে যায়। তড়িঘড়ি করে সে পুলিশকে ফোন করতে যাবে এমন সময় হঠাৎ করে তার পেছনে চলে আসে রুদ্র চৌধুরী। নিপুণ ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে রুদ্র চৌধুরীর দিকে তাকায়। তার কাছে গিয়ে তার কলার ধরে বলে,
“আপনি একটা খারাপ লোক। আপনি মে’রেছেন প্রজ্ঞাকে তাই না? আমি আপনাকে ছাড়ব না। আপনাকে উপযুক্ত শাস্তি আমি পাইয়ে দিয়েই ছাড়ব।”

রুদ্র নিপুণকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে,
“খুব সখ না তোমার ন্যায়ের হয়ে লড়াই করা? এবার দেখ আমি তোমার কি অবস্থা করি।”

নিপুণ বিদ্রুপাত্মক হেসে বলে,
“কি করবেন আপনি? মে’রে ফেলবেন আমায়? তাতে কোন লাভ হবে না। আমি এখানে আসার আগে আমার এক বন্ধুকে সবটা জানিয়ে রেখেছি। আপনার বিরুদ্ধে আমি কিছু প্রমাণও সংগ্রহ করেছি। আমার কিছু হয়ে গেলে সেইসব প্রমাণ সে সবার সামনে আনবে। যারফলে আমার খু*নের কেসে কিন্তু আপনি ফেঁসে যাবেন।”

রুদ্র চৌধুরী বিকট হাসি দেয়। নিপুণ রুদ্র চৌধুরীর এই হাসির মানে বুঝতে পারে না। সে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রুদ্র চৌধুরীর দিকে। রুদ্র চৌধুরী নিপুণের দিকে উপহাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“তুমি কি আমাকে এতটাই বোকা ভেবেছ? আমি কেন মা’রতে যাব তোমাকে? তোমাকে মে**রে তো কোন মজাই পাওয়া যাবে না। তোমাকে নিয়ে যাতে মজা করতে পারি আমি সেই ব্যবস্থাই করব।”

নিপুণের কপালের ভাঁজ চওড়া হয়। রুদ্র চৌধুরী নিপুণের সামনে নিজের ফোনে একটি ভিডিও দেখিয়ে বলে,
“তোমার বাড়ির আশেপাশে আমার লোকেরা ঘিরে রেখেছে। যদি তুমি কোন বাড়াবাড়ি করার চেষ্টা করো তাহলে তোমার মাকে ওরা…”

নিপুণ চিৎকার করে বলে ওঠে,
“না….আমার মায়ের কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন না। নাহলে কিন্তু আমি..”

“কুল নিপুণ কুল। মেয়েদের এত রাগ, জেদ বেমানান লাগে। তুমি যদি চাও ওরা তোমার মায়ের কোন ক্ষতি না করুক তাহলে আমি যা বলবো তোমায় তাই করতে হবে।”

নিপুণ ক্রোধে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। তার ইচ্ছা করছে রুদ্র চৌধুরীকে এই মুহুর্তে মে*রে শেষ করে দিতে কিন্তু তা সম্ভব নয়। নিপুণ তাই নিজের দুই চোখ বন্ধ করে নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বলে,
“বলুন আপনি কি চান।”

“তোমাকে চাই।”

নিপুণ নিজের চোখ খুলে বিস্ফোরণ দৃষ্টিতে রুদ্র চৌধুরীর দিকে তাকায়। বলে ওঠে,
“কি বলছেন টা কি আপনি?”

“যা শুনেছ তাই। আমি তোমাকে চাই। তাও আবার হালালভাবে নিজের স্ত্রী হিসেবে। কি জানো তো তোমার সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে গেছি আমি। তাই তো তোমাকে নিজের কাছে রাখতে চাই।”

“আপনাকে তো আমি..”

“আমার কোন ক্ষতি করার চিন্তাও করো না। নাহলে কিন্তু তোমার মায়ের খাটিয়া সাজানোর ব্যবস্থা করতে হবে।”

নিপুণ নিজের হাত খামছে ধরল। এইরকম পরিস্থিতিতে যে কখনো তাকে পড়তে হতে পারে সেটা সে ভাবতেও পারেনি। রুদ্র চৌধুরী যেন নিপুণকে এভাবে দেখে খুব মজা পেল। নিপুণ তখন নিজের শক্ত খোলস ছেড়ে অনেকটাই নরম হয়েছে। নিপুণকে বড্ড অসহায় দেখতে লাগছে। এই ব্যাপারটা নিয়েই রুদ্র চৌধুরী ব্যঙ্গ করে বলে,
“তোমার মতো এতো স্ট্রং একটা মেয়েকে এভাবে ভাঙতে দেখে আমার কিন্তু পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে। আসলে মেয়েদের এমন নরম রূপেই মানায়। শক্ত খোলস তাদের কাছে বড্ড বেমানান। তো যাইহোক বলো তুমি কি সিদ্ধান্ত নিলে।”

“আমার মায়ের যেন কোন ক্ষতি না হয়।”

“কোন ক্ষতি হবে না। তুমি শুধু আমার কথাটা মেনে নাও।”

নিপুণ ধরে আসা গলায় বলল,
“বেশ, আমি মেনে নিলাম আপনার কথা। আমি আপনাকে বিয়ে করবো।”

“এতক্ষণে তোমার সুবুদ্ধি হলো তাহলে।”

★★★
নিপুণকে না পেয়ে তার ফোনের লোকেশন ট্রাক করে সেই ঠিকানা অনুযায়ী রওনা দেয় দীপ্র। ঠিকানাটা একটি কাজি অফিসের সামনে এসে থামে দেখে ভীষণ অবাক হয়ে যায় দীপ্র। তড়িঘড়ি গাড়ি থেকে নেমে কাজি অফিসের দিকে রওনা দেয়।

নিপুণ পাথরের মতো নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে৷ কাজি সাহেব তাকে কবুল বলতে জোর দিচ্ছে। এদিকে নিপুণ কিছুতেই এই বিয়েটা মানতে পারছে। একে তো এই রুদ্র চৌধুরীর মতো এত জঘন্য একটা মানুষকে তার বিয়ে করতে হচ্ছে তার উপর সে যে দীপ্রকে ভালোবাসে। নিপুণের মানসপটে বারবার দীপ্রর ছবিটাই ভেসে আসতে থাকে। নিপুণ তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“আমার পক্ষে এই বিয়ে করা সম্ভব নয়।”

তখন রুদ্র চৌধুরী শীতল অথচ কঠোর কন্ঠে বলে,
“তুমি বোধহয় নিজের মার ভালোটা চাইছ না।”

নিপুণ প্রচণ্ড অসহায়ত্ব বোধ করে। এই মুহুর্তে তার চোখে জল চলে আসে। নিপুণকে এভাবে কাঁদতে দেখে ভীষণ আনন্দ পায় রুদ্র চৌধুরী৷ মনে মনে বলে,
“আমার বিরুদ্ধে লড়তে চাইছিলে না তুমি? এবার দেখো এর ফল কত ভয়ানক হতে পারে। তোমাকে একবারে মে**রে তো কোন আনন্দ নেই। এভাবে তিলে তিলে মারব তোমায়।”

অতঃপর তাড়া দিয়ে বলে,
“জলদি কবুল বলো।”

নিপুণ কান্নায় ভেঙে পড়ে। এত অসহায় কখনো বোধ করে নি সে। চোখ বন্ধ করে নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে সে বলে ওঠে,
“কবুল।”

এমন সময় দীপ্রও কাজি অফিসে প্রবেশ করে। নিপুণকে কবুল বলতে শুনে নেয় সে। দীপ্রর পায়ে তলা থেকে মাটি সরে যায়। সে বিমর্ষ কন্ঠে বলে ওঠে,
“নিপুণ…”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

তুমি ছিলে বলেই পর্ব-১২

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ১২
#দিশা_মনি

স্নেহা অনুপমের বাসায় গিয়ে উপস্থিত হয়। স্নেহাকে দেখামাত্রই অনুপম নাটক শুরু করে দেয়। সে কান্নার অভিনয় করে বলতে থাকে,
“আমার সব শেষ হয়ে গেল স্নেহা। এখন মনে হয় আমাকে জেলে যেতেই হবে।”

স্নেহা অনুপমের কাধে হাত রেখে ভরসার বাণী দিয়ে বলে,
“তুমি চিন্তা করো না। আমি আছি তো তোমার পাশে। আমি কিছুতেই তোমায় জেলে যেতে দেব না।”

“কি করতে পারবে তুমি স্নেহা? তুমি তো আর আমাকে ১৫ লাখ টাকা দিতে পারবে না। তাইনা?”

“পারব।”

“কি? কিন্তু তুমি এত টাকা কোথায় পাবে?”

“আমার আব্বু আমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে ব্যাংকে ১৫ লাখ টাকা রেখেছেন আমার নামে। আমি সেটাই নাহয় তোমাকে দিয়ে দেব।”

“এসব তুমি কি বলছ স্নেহা? আমি কিভাবে এই টাকা নিতে পারি? এটা তো তোমার টাকা।”

“আমার আর তোমার কি? আমার ভবিষ্যৎ তো তুমিই অনুপম।”

“কিন্তু…”

“কোন কিন্তু না। তুমি অপেক্ষা করো আমি আজকের মধ্যেই ব্যাংক থেকে টাকাটা তুলে এনে তোমাকে দিয়ে দেব।”

“কিন্তু তোমার আব্বু কি এটা মেনে নেবেন?”

“আব্বুকে এখন কিছু জানাবো না৷ টাকাটা যেহেতু আমার নামে আছে তাই আমি একাই তুলতে পারব। আর তোমার এই সমস্যাটা মিটে গেলে তুমি নিশ্চয়ই টাকাটা আবার ফেরতও দিতে পারবে?”

অনুপম ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে,
“হ্যাঁ, কয়েক মাসের মধ্যেই আমি টাকাটা ফেরত দিতে পারব।”

“তাহলে তো হয়েই গেল। তুমি আর চিন্তা করো না।”

“তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেব।”

“তোমাকে ধন্যবাদ দিতে হবে না অনুপম। আমরা তো একে অপরকে ভালোবাসি। নিজের ভালোবাসার মানুষের জন্য যদি এটুকুই করতে না পারি তাহলে আর কিসের ভালোবাসা?”

অনুপম স্নেহার হাতটা আলতো করে স্পর্শ করে বলে,
“আমি নিশ্চয়ই জীবনে খুব ভালো কোন কাজ করেছিলাম যার জন্য তোমাকে নিজের প্রেমিকা হিসেবে পেয়েছি। তুমি সত্যি অনেক ভালো স্নেহা।”

স্নেহা বলে,
“কি যে বলো না তুমি! আচ্ছা, চলো তাহলে আমরা ব্যাংকের উদ্দ্যেশ্যে বের হই।”

“হ্যাঁ, চলো।”

★★★
নিপুণ প্রজ্ঞার অনেক খোঁজ করেছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি। রুদ্র চৌধুরী প্রজ্ঞাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে সেটা এখনো তার অজানাই রয়ে গেছে। নিপুণ ক্লান্ত হয়ে নিজের বাড়িতে ফিরতে যাচ্ছিল এমন সময় হঠাৎ করে তার ফোনে দীপ্রর কল আসে। নিপুণ চটজলদি ফোনটা রিসিভ করে। নিপুণ ফোনটা ধরতেই দীপ্র নিপুণের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“কেমন আছ নিপু? আমাকে কি একটুও মিস করছ না?”

দীপ্রর কন্ঠে অভিমান স্পষ্ট। নিপুণ ভালোই বুঝতে পারল সেটা। তবে সে এত সহজে গলার মেয়ে নয়৷ তাই তো বেশ শীতল কণ্ঠে বলল,
“মিস করা উচিৎ ছিল বুঝি?”

“আমি তোমার সাথে এই দূরত্ব আর বজায় রাখতে পারব না নিপু। আমি তোমাকে ভীষণ মিস করছি।”

“দূরত্ব তো তুমিই তৈরি করেছ।”

“তুমি শুধু আমারই দোষ দেবে? তোমার কি কোন দোষ নেই?”

“না৷ আমার কোন দোষ নেই। আমি নিজের দায়িত্বের সাথে কখনো কম্প্রোমাইজ করব না।”

“বাট এখন তো সব সত্যটা প্রমাণিত হয়ে গেছে। কেসটা যে ফেক ছিল তা তো এখন পরিস্কার।”

“সবসময় আমরা যা দেখি তা সত্য হয়না দীপ।”

“উফ, এসব সত্য মিথ্যা নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাইনা। আমি জাস্ট তোমার সাথে একটু কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে চাই।”

“ঠিক আছে। তাহলে কাল সকালে আমরা দেখা করছি।”

“কাল কেন? আজ কি অসুবিধা?”

“কালকের দিনটা তোমার মনে নেই? কালকের দিনটা যে আমাদের জন্য অনেক স্পেশাল।”

“কাল তো ৪ঠা ডিসেম্বর। কালকে কিভাবে স্পেশাল…ওহ মনে পড়েছে এই দিনই তো আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল।”

“যাক। মনে আছে তাহলে। কাল সকালে আমরা গ্রান্ড রেস্টুরেন্টে দেখা করব। ওখানে কিছু স্পেশাল মুহুর্ত কাটাতে চাই তোমার সাথে।”

“আমি ওয়েট করব।”

এভাবেই তাদের দুজনের কথোপকথন চলতে থাকে।

★★
স্নেহা ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা তুলে নিয়ে অনুপমের হাতে সেই টাকা তুলে দিয়ে বলে,
“এই নাও। তোমার সব সমস্যার সমাধান এখানে।”

এতগুলো টাকা দেখে অনুপমের চোখ চকচক করতে থাকে। সে বলে,
“তোমাকে অনেক ধন্যবাদ স্নেহা। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমার টাকা শোধ করার চেষ্টা করব।”

“এত তাড়াহুড়ো করতে হবে না। তোমার যখন সুবিধা তুমি তখন ফেরত দিও।”

“আচ্ছা, আমি তাহলে এখন আসি? টাকাগুলো ঐ ব্যাংকে জমা দিতে হবে”

“হ্যাঁ, এসো।”

“পরে আবার দেখা হবে।”

বলেই অনুপম বিদায় নেয়। যেতে যেতে টাকাগুলোর দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপাত্মক স্বরে বলে,
“এই জন্মে আর দেখা হবে না আমাদের। বোকা মেয়ে স্নেহা। অবশ্য এমন বোকা মেয়ে আছে জন্যই আমার প্রতারণার ব্যবসার এত রমরমা। এখন আমাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই রাজশাহী শহর থেকে বিদায় নিতে হবে। তার আগে ঐ রিমি মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। বোকা মেয়েটা ভেবে নিয়েছে আমি ওকে বিয়ে করব। কিন্তু ও তো আর জানে না আমার আসল উদ্দ্যেশ কি। আজ ওকেও একটা মিথ্যা বিপদের কথা বলব। ওর পরিবার তো বিয়ের জন্য অনেক গহনা তৈরি করেছে। এবার সেই গহনাগুলো হাতিয়ে নিয়ে এই শহর থেকে একেবারে পগারপার হয়ে যাব।”

বলেই শিষ বাজাতে বাজাতে চলতে লাগল অনুপম।

★★
স্নেহা থেকে থেকে অনুপমকে ফোন করে চলেছে কিন্তু তার ফোন সুইচ অফ বলছে। স্নেহার এখন খুব চিন্তা হচ্ছে। অনুপম তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে থেকে তার ফোন বন্ধ বলছে। স্নেহার মন কেমন জানি কু গাইছে। তার বারবার মনে হচ্ছে অনুপমের আবার কোন বড় বিপদ হলো কিনা।

এরইমধ্যে স্নেহার ফোনে নিপুণের ফোনকল এলো। স্নেহা ফোনটা রিসিভ করতেই নিপুণ বলে,
“তুমি কি এখন ফ্রি আছ? তোমাকে অনেক জরুরি কথা বলার আছে স্নেহা। যা তোমার জানা খুব প্রয়োজন।”

“হ্যাঁ, বলুন।”

“শোনো, ব্যাপারটা তোমার জন্য অনেক সেনসিটিভ হবে তাই শান্ত হয়ে সবটা শুনবে। নিজেকে প্রস্তুত করে নাও সেভাবেই।”

“আমি প্রস্তুত আছি।”

“তোমার বয়ফ্রেন্ড অনুপম একটা ফ্রড। ও মেয়েদের সাথে প্রেমের অভিনয় করে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। কয়েক বছর আগে, আমার কাছে একটি মেয়ে ওর নামে প্রতারণার মামলা করেছিল। সেবার ওর সব অপরাধ প্রমাণিত হলে ওর কারাদণ্ড হয়েছিল পরে ও জামিনে বেরিয়ে যায়। এজন্যই অনুপমকে প্রথম দেখে আমার চেনা লাগছিল কিন্তু আমি কিছু মনে করতে পারছিলাম না। আজ আবার ঐ মেয়েটির সাথে দেখা হয়েছিল৷ পরে ওনার সাথে কথা বলেই আমার সব মনে পড়ে।”

স্নেহায় পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যায়৷ নিপুণের বলা কথাগুলো তাত পুরো জীবনকে যেন এক নিমেষে বদলে দিল। স্নেহার চোখ অশ্রুতে পরিপূর্ণ। এত বাজেভাবে ঠকে গেল সে!

“হ্যলো, স্নেহা। শুনতে পাচ্ছ আমার কথা। তুমি ঐ অনুপমের ফাঁদে পা দিও না। ঐ প্রতারকের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দেও।”

স্নেহা কান্নায় ভেঙে পড়ল।

“তুমি কাঁদছ কেন স্নেহা কি হয়েছে?”

“যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেছে আপু। ঐ প্রতারক আমার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে।”

“কি?! এটা তুমি কি বলছ?”

“আজ দুপুরেই ও আমাকে বলছিল ওর ১৫ লাখ টাকার দরকার। আমি কিছু না ভেবেই..”

“এতটা বোকামি কিভাবে করলে তুমি স্নেহা? ওহ শিট! আমার উচিৎ ছিল তখনই তোমাকে অনুপমের ব্যাপারে সবটা কিন্তু তুমি এত তাড়া দেখালে যে..”

“সব আমার ভাগ্যের দোষ আপু। আমি কিভাবে এমন করলাম? এটা আমার বাবার কত কষ্টের টাকা ছিল। এখন আমি বাবাকে কিভাবে মুখ দেখাব?”

“তুমি চিন্তা করো না। আমি দেখছি কি করা যায়।”

নিপুণ ফোনটা কে’টে দেয়। স্নেহা কাঁদতেই থাকে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

তুমি ছিলে বলেই পর্ব-১১

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ১১
#দিশা_মনি

নিপুণ এতো সহজে দমে যাওয়ার মেয়ে নয়। সে যখন একবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে দোষীদের সামনে আনবে তখন সে আনবেই। এরজন্য তাকে যত দূর যেতে হয় সে যাবে। নিপুণ রাহাত চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রমাণ খোঁজা অব্যাহত রেখেছে।

আজ আবার প্রজ্ঞাদের বাড়িতে চলে এসেছে নিপুণ। পারভেজ ইসলাম তাকে দেখেই বিরক্তির ভঙ্গিতে বলে,
“কেন এসেছ তুমি? তোমাকে আর কত বার বলতে হবে আমরা কেস তুলে নিয়েছি আর এই ব্যাপারে জলঘোলা করতে চাই না।”

“আমি প্রজ্ঞাকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে চাই আঙ্কেল। আপনিও তো সেটাই চাইতেন।”

এই মুহুর্তে হঠাৎ কেউ পারভেজ ইসলামের চোখে জল চলে আসে। তিনি বলেন,
“নিজের মেয়েকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দিতে গিয়ে আমি তো ওকে চিরকালের মতো হারিয়ে ফেলতে পারব না।”

“মানে? এটা আপনি কি বলছেন আঙ্কেল? হারিয়ে ফেলবেন মানে?”

“ঐ রুদ্র চৌধুরীর লোকেরা আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে। ওরা আমাকে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে কেস তুলে নিতে বাধ্য করেছে। এখনো অব্দি আমার মেয়েটাকে ফের‍ত দেয়নি। বলেছে এসব ঝামেলা পুরোপুরি মিটে গেলে এবং কেসটা ধামাচাপা পড়লে ওকে ফেরত দেবে৷ এরমধ্যে যদি আমি কোন বাড়াবাড়ি করি বা পুলিশকে কিছু জানানোর চেষ্টা করি তাহলে ওরা আমার মেয়েটাকে…”

এটুকু বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পারভেজ ইসলাম। অতঃপর নিপুণের সামনে হাত জোড় করে বলেন,
“আমি আমার মেয়েকে হারাতে চাই না। আমার লাগবে না ন্যায়বিচার। আমার শুধু আমার মেয়েকেই চাই।”

পারভেজ ইসলামকে এভাবে কাঁদতে দেখে নিপুণের খুব খারাপ লাগে। নিপুণ তার কাধে ভরসার হাত রেখে বলে,
“আপনি কোন চিন্তা করবেন না আঙ্কেল। আমি তো আছি। আমি আপনার মেয়েকে ঠিক আপনার কাছে ফিরিয়ে দেব। শুধু তাই না ওকে ন্যায়বিচারও পাইয়ে দেব। এটাই আমার ওয়াদা যেটা আমি জীবন দিয়ে হলেও পূরণ করব।”

এটুকু বলেই নিপুণ প্রজ্ঞাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। তার সামনে এখন অনেক বড় লড়াই। যার জন্য তাকে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। নিপুণ নিজের মনে সাহসের সঞ্চার করলো। এখন তাকে অনেক বেশি সাহসিকতার পরিচয় দিতে হবে।

★★★
স্নেহা বসে আছে চুপচাপ৷ আজ তার মন ভালো নেই। রুদ্র সেদিন ওইভাবে অপমান করার পর থেকেই স্নেহার মন ভীষণ খারাপ হয়ে আছে। তাকে অনেক কিছুই ভাবাচ্ছে। তার কোন অতীতের কথা দীপ্র বলেছিল যার জন্য তাকে ঘৃণা করে সবাই–এটা জানার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে আছে সে। স্নেহা এসব ভাবতেই ব্যস্ত ছিল এমন সময় হঠাৎ করে তার কাছে অনুপমের কল আসে। স্নেহা ফোনটা রিসিভ করতেই অনুপম বলে,
“আমি অনেক বিপদে আছি স্নেহা।”


নিপুণ দুপুরে লাঞ্চ করতে একটা রেস্টুরেন্টে আসে। সে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসার সময় হুঠ করে একটি মেয়ের সাথে তার ধাক্কা লাগে। নিপুণ সরি বললে মেয়েটি নিপুণকে দেখে খুশি হয়ে বলে,
“নিপুণ ম্যাম আপনি!”

“আপনি আমায় চেনেন?”

“কি যে বলেন আমি আপনাকে চিনবো না? আপনার আমাকে মনে নেই? অবশ্য মনে না থাকাই স্বাভাবিক। আপনার সাথে প্রতিদিন কত মানুষের দেখা হয়! আমি তো আপনাকে এত সহজে ভুলতে পারব না। আপনি তো আমাকে একজন প্রতারকের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন।”

নিপুণের হঠাৎ করে একটা কথা মনে পড়ে যায়৷ কিছু একটা মনে করে সে বলে ওঠে,
“আপনি সেই মেয়েটা না…আপনার বয়ফ্রেন্ড আপনার সাথে চিট করে মিথ্যা কথা বলে আপনার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল!”

“হ্যাঁ। আমি সেই। মনে পড়েছে আপনার?”

“হুম। আচ্ছা আপনার বয়ফ্রেন্ডের নাম যেন কি ছিল?”

“ওর নাম ছিল অনুপম। ও এক নাম্বারের ফ্রড ছিল। আমার আগেও অনেক মেয়েকে ও এভাবে ফাঁসিয়েছিল।”

নিপুণের কাছে এখন সবটা জলের মতো পরিস্কার হয়৷ এই অনুপমই তো স্নেহার প্রেমিক। এই জন্যই লোকটাকে তার চেনা চেনা লাগছিল। প্রথমদিন দেখেই নিপুণের সন্দেহ হয়েছিল অনুপমের উপর। তাই নিপুণ বলে,
“আপনার সেই প্রতারক বয়ফ্রেন্ড এখন আমার চেনা পরিচিত একজনের সাথেও প্রেমের অভিনয় করছে।”

“কি বলছেন কি!”

“আমাকে এখনই স্নেহাকে সবটা জানাতে হবে।”

বলেই নিপুণ স্নেহাকে কল দিতে থাকে। কিন্তু ফোন বিজি দেখায়।

★★
এদিকে অনুপম নিপুণকে ফোনকলে বলে চলেছে,
“আমি যেই ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছি সেখান থেকে আজ নোটিশ পাঠিয়েছে যে আজকের মধ্যেই আমাকে ওদের টাকা পরিশোধ করে দিতে হবে৷ নাহলে ওরা আমার নামে কেস করবে। আমার খুব ভয় হচ্ছে স্নেহা।”

স্নেহা অনুপমের কথা শুনে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ে। সে বলে,
“তুমি এখন কি করবে?”

“কিছুই বুঝতে পারছি না আমি৷ আমার এখন নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে।”

“চুপ করো অনুপম! একদম এসব উলটাপালটা চিন্তা করবে না। আমি এখনই আসছি।”

“তাড়াতাড়ি চলে এসো। নাহলে হয়তো আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কোন বড় ভুল করে ফেলব।”

“না, প্লিজ। আমি এখনই যাচ্ছি।”

স্নেহা ফোনটা কে’টে দিয়ে দ্রুত রওনা দিতে যাবে এমন সময় নিপুণের কল আসে তার ফোনে। স্নেহা কয়েকবার ফোন কে’টে দিলেও অবশেষে রিসিভ করে। নিপুণ বলে,
“হ্যালো, স্নেহা। তোমার সাথে আমার খুব জরুরি কথা আছে।”

“আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি আপু। পরে কথা বলি?”

এটুকু বলেই স্নেহা ফোনটা রেখে দেয়। নিপুণ আর কিছু বলার সুযোগই পায়না।

নিপুণ ভাবতে থাকে,
“স্নেহা হয়তো এখন কোন কাজে ব্যস্ত আছে। এখন আর কল না করাই ভালো হবে। ওকে পরেও সবটা বলা যাবে। আপাতত আমি প্রজ্ঞার খোঁজ করে নেই। আমাকে যে করেই হোক এটা জানতেই হবে ঐ রুদ্র চৌধুরী কোথায় লুকিয়ে রেখেছে প্রজ্ঞাকে। তারপর আমাকে ওকে উদ্ধার করতে হবে।”

এই ভাবনা থেকেই নিপুণ বেরিয়ে পড়ে প্রজ্ঞার খোঁজে।

★★★
দীপ্রর আজকে কেন জানি ভীষণ কষ্ট অনুভূত হচ্ছে। সেদিন নিপুণের সাথে তর্ক হওয়ার পর থেকেই তার মনটা ভালো নেই। দীপ্র খুব চিন্তিত হয়ে ছিল জন্য বেলকনিতে দাঁড়িয়ে স্মোক করছিল। এমন সময় দিশা সেখানে এসে দীপ্রকে দেখে ফেলে। দিশা ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,
“বাহ, ভাইয়া। এই দুদিনেই তুই তো দেখছি একদম দেবদাস হয়ে গেলি।”

দীপ্র দ্রুত সিগারেটটা নিজের হাত থেকে ফেলে দিয়ে বলে,
“কি করবো বল! নিপুণের সাথে তৈরি হওয়া এই দূরত্ব যে আমাকে পীড়া দিচ্ছে। নিপুণ যে আমার থেকে ওর প্রফেশনকে বেশি ভালোবাসে।”

“ভাইয়া তুই সব ঠিক করে নে। এভাবে তোরই কষ্ট হচ্ছে৷ নিপুণ আপিও তোকে জ্যানুয়েনলি ভালোবাসে। সেও কোথাও না কোথাও কষ্ট পাচ্ছে। এসব সিল্লি ম্যাটার নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা না করাই ভালো। নাহলে পরে গিয়ে আফসোস করতে হবে।”

“তুই একদম ঠিক বলেছিস দিশা। আমি নিপুণের সাথে সব মনোমালিন্য মিটিয়ে নেব। এভাবে থাকা আমার পক্ষে পসিবল না। নিপুণকে ছাড়া আমি বাঁচব না। ও যে আমার কত আপন সেটা আমি বলে বোঝাতে পারব না। ওকে হারিয়ে ফেললে আমি নিজেও হারিয়ে যাব।”

দিশা মৃদু হেসে বলে,
“এটাই বেস্ট হবে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

তুমি ছিলে বলেই পর্ব-১০

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ১০
#দিশা_মনি

দীপ্র রেগেমেগে চলে এসেছে স্নেহার সাথে দেখা করতে। স্নেহা তখন নিজের হোস্টেল রুমে বসে পড়ছিল। এই সময় দীপ্রকে দেখে সে স্বাভাবিক ভাবেই ভীষণ অবাক হয় এবং দীপ্রকে শুধায়,
“ভাইয়া আপনি হঠাৎ!”

দীপ্র সোজা স্নেহার সামনে এসে দাঁড়ালো তারপর স্নেহাকে চড়া গলায় বলতে থাকে,
“নিপুণকে তুই এই কেসের মধ্যে জড়িয়েছিস তাই না?”

স্নেহা অবাক হওয়ার মুখ করে বলে,
“আমি কেন নিপুণ আপুকে কেসের মধ্যে জড়াবো? উনি তো নিজেই প্রজ্ঞার হয়ে কেস লড়তে চেয়েছেন।”

“চুপ। একদম চুপ। আমি কিছু বুঝিনা ভেবেছিস?”

“ভাইয়া, আপনি শুধু শুধুই এত ওভার রিয়্যাক্ট করছেন। নিপুণ আপু একজন স্বাধীন মানুষ। উনি কেন শুধু শুধু আমার কথায় প্রভাবিত হবেন? হ্যাঁ, এটা ঠিক আমি ওনার কাছে প্রথমে সাহায্য চেয়েছিলাম সেটা শুধুমাত্র প্রজ্ঞাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্তই। এরপর বাকিটা সব ওনার ইচ্ছা ছিল।”

দীপ্র ভীষণ রেগে গিয়ে স্নেহার পড়ার টেবিলের সামনে থাকা চেয়ারটা তুলে ছু’ড়ে ফেলে। স্নেহা ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। দীপ্র স্নেহাকে হুমকি দিয়ে বলে,
“যদি এই কেসে জড়িয়ে আমার নিপুণের কোন ক্ষতি হয় তাহলে কিন্তু আমি তোকে ছাড়ব না।”

“ভাইয়া! আপনি আমাকে কেন দোষ দিচ্ছেন? আমি তো এটাই জানি না, আপনি এবং আপনার পরিবারের সদস্যরা কেন সবসময় আমার সাথে এমন করেন? আমি তো আপনাদের কোন ক্ষতি করিনি।”

“তোর অতীত সম্পর্কে আমি সব জানি। তাই এসব নাটক একদম করবি না। অবশ্য তোর ফ্যামিলি ব্রাকগ্রাউন্ড দেখে তোর থেকে আর বেশি কি আশা করা যায়।”

“মুখ সামলে কথা বলুন। আমার পরিবারের বা আমার কোন খারাপ ইতিহাস নেই।”

“আছে কি নেই সেটা একটু খোঁজ নিয়ে দেখ। আর যেটা বললাম মাথায় রাখিস। নিপুণের গায়ে সামান্য কোন আঁচড় পড়লেও তোকে অনেক বড় ফল ভোগ করতে হবে।”

এটুকু বলেই দীপ্র বিদায় নেয়। দীপ্র চলে যাবার পর স্নেহা দীপ্রর বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে। কোন অতীতের কথা বলছিল দীপ্র? তাহলে কি অতীতের এমন কোন সত্য আছে যার জন্য তাকে সবাই এত অপছন্দ করে।

★★★
প্রজ্ঞাদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছে রাজীব চৌধুরীর পাঠানো কিছু লোক। তারা বর্তমানে পারভেজ ইসলামকে ঘিরে ধরেছেন৷ তাদের সবার প্রধান মোহাম্মদ আলী হুমকির সুরে বলেন,
“ভালো চাইলে রাহাত চৌধুরীর নামে কেস উঠিয়ে নিন। নাহলে কিন্তু পরিণাম ভালো হবে না।”

পারভেজ ইসলাম বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে বলেন,
“কি করবেন আপনারা? মে**রে ফেলবেন আমাদের? তো মা*-* রুন। আমার মেয়েটার জীবন তো ঐ রাহাত চৌধুরী নষ্ট করেই দিয়েছে এখন শুধু আমাদের জীবনটাই বাকি আছে। সেটাও নিয়ে নিন। কিন্তু আমি কিছুতেই পিছু হটব না।”

“আপনাকে ভালোয় ভালোয় বললাম শুনলেন না। এর পরিণাম ভোগ করতে প্রস্তুত থাকবেন। এই তোরা সবাই চল।”

বলেই তিনি নিজের দলের সকল লোককে নিয়ে বেরিয়ে যান। ওরা চলে যেতেই মনিরা খাতুন পারভেজ ইসলামের উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
“এটা কি ঠিক হলো? ওনারা যদি এখন সত্যিই আমাদের ক্ষতি করে দেন?”

“আমাকে আর এসব ভয় স্পর্শ করে না মনিরা। প্রতিনিয়ত নিজের মেয়েটাকে চোখের সামনে গুমড়ে মরতে দেখছি। একজন বাবার কাছে এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে বলো?”

মনিরা খাতুন দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন। নিজের মেয়ের এই পরিণতি যে তাকেও ভীষণভাবে ব্যথিত করেছে।

★★★
রাজীব চৌধুরী একের পর এক ফোনকল করেই চলেছেন৷ নিজের ছেলেকে জেল থেকে বের করে আনার কোন সুযোগই তিনি বাদ রাখছেন না। রুদ্র চৌধুরী আজ সংসদ অধিবেশন থেকে সরাসরি বাড়ি ফিরলো। রুদ্র চৌধুরীকে দেখেই রাজীব চৌধুরী বিরক্তির চোখে তাকালেন। রুদ্র নিজের বাবার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“নিজের ছেলেকে বাঁচানোর জন্য দিনরাত এত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছ বুঝি?”

রাজীব চৌধুরী বললেন,
“তো কি করব? তোমার মতো হাত পা গুটিয়ে বসে থাকব? তোমার নিজের ভাইয়ের প্রতি কোন দায়িত্ব কর্তব্য না-ই থাকতে পারে, তুমি ওর কথা নাই ভাবতে পারো কিন্তু আমাকে তো নিজের ছেলের কথা ভাবতে হবে।”

“তুমি আমাকেই ব্লেইম করছ?”

“করবো না তো কি? তুমি নিজের ভাইকে নিজের হাতে পুলিশে তুলে দিয়েছ। তোমার কাছে তো নিজের ভাইয়ের থেকে জনসেবাই বড়।”

রুদ্র আচমকা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। তাকে হাসতে দেখে রাজীব চৌধুরী ভ্রু কুচকে বললেন,
“এসব হাসছ কেন? আমি কি কোন মজার কথা বলছি?”

“তুমি কিভাবে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে সেটাই ভাবছিলাম। তুমি তো দেখছি রাজনীতির ” র”ও বোঝোনা।”

“মুখ সামলে বলো। তুমি যখন জন্ম নেওনি তখন থেকেই আমি রাজনীতি করি। তাই আমাকে তোমার রাজনীতি শেখাতে আসতে হবে না।”

“ওহ, তাই বুঝি? কিভাবে আইওয়াশ করতে হয় তুমি কি সেটা জানো না? সাপকে মা*রলেই তো শুধু হবে না আব্বু। সাপকে এমনভাবে মা*র‍তে হবে যেন লাঠি না ভাঙে।”

“এত কথা না ঘুরিয়ে যা বলার স্পষ্ট করে বলো।”

“তুমি টিভিটা অন করো তাহলেই সব বুঝতে পারবে।”

রাজীব চৌধুরী টিভি অন করতেই দেখতে পান নিউজ চ্যানেলগুলোতে ব্রেকিং নিউজে দেখাচ্ছে যে, রাহাত চৌধুরীর উপর থেকে কেস তুলে নিয়েছে পারভেজ ইসলাম। সাথে তিনি এও বলছেন যে, তার মেয়েকে সেদিন রাহাত চৌধুরী কিছু করে নি। রাহাত চৌধুরীর কিছু বন্ধুরা এই অঘটন ঘটিয়েছিল জন্য তার মেয়ে রাহাতকে সন্দেহ করেছিল। কিন্তু আসলে রাহাত নির্দোষ। এমনকি যেদিন মেয়েটির সাথে এই ঘটনাটি ঘটেছিল সেদিন রাতে রাহাত রাজশাহী শহরে ছিলই না, সে ছিল কক্সবাজারে। সেই প্রমাণও নাকি পুলিশের হাতে আছে। এখন সবাই প্রশ্ন তুলছে কেন একজন এমপির ভাইকে এভাবে কোন ভ্যালিড প্রমাণ ছাড়া গ্রেফতার করা হলো।

নিউজ দেখে তো রাজীব চৌধুরীর মাথা ঘুরে গেল। তিনি অবিশ্বাস্য চোখে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন,
“এটা কিভাবে সম্ভব? ঐ লোকটাকে দমানোর আমি কত চেষ্টা করেছি কোন কিছুই তো কাজ হয়নি৷ তাহলে তুমি কিভাবে এটা সম্ভব করলে?”

“এটাই তো রাজনীতির কূটকৌশল আব্বু। এরজন্য আমায় বেশি কিছু করতে হয়নি। প্রথমে কিছু লোককে পাঠিয়েছি ওদের বাড়িতে যারা প্রজ্ঞার মাথায় ব*ন্দুক ধরে তাকে তুলে নিয়ে এসেছিল। তারপর আমি নিজে পারভেজ ইসলামকে ফোন করে বলেছি যদি নিজের মেয়েকে জীবিত ফেরত চান তাহলে যেন কেসটা তুলে নেন। এরপর বাকিটা তো দেখতেই পাচ্ছ।”

“ব্রাভো মাই সান! ব্রাভো। তোমার মাথায় যে এত বুদ্ধি জানতাম না। তুমি তো নিজের বাবাকেও ছাড়িয়ে যাবে। একদিকে নিজের ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে জনগণের সামনে মহান সাজলে, নিজের ভোটব্যাংক বাড়ালে। আবার সুকৌশলে নিজের ভাইকেই জেল থেকে বের করে আনলে।”

রুদ্র চৌধুরী গর্বের সাথে বুক ফুলিয়ে বলে,
“দেখেলে তো তোমার ছেলের ক্ষমতা।”

★★★
পারভেজ ইসলাম কেসটা তুলে নিয়েছেন এটা জানতে পেরেই নিপুণ বারবার তাকে ফোন করে চলেছে। কয়েকবাএ ফোনটা কে*টে দিয়ে অবশেষে তিনি রিসিভ করেন। নিপুণ বলে “আঙ্কেল নিউজে এটা কি দেখাচ্ছে? আপনি কেসটা কেন তুলে নিয়েছেন? প্রজ্ঞা তো নিজের মুখে বলেছিল যে ঐ রাহাতকে দেখেছে। ঐ ছেলেটাই তো…”

“এই ব্যাপারে আমি আর কথা বলতে চাইনা। তুমি আমাদের অনেক সাহায্য করেছ এজন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকব। কিন্তু এখন আর এই বিষয় নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। ব্যাপারটা মিটিয়ে নিলে ভালো হয়।”

“কিন্তু আঙ্কেল…”

পারভেজ ইসলাম ফোন কে’টে দেন। নিপুণের ভীষণ সন্দেহ হয় ব্যাপারটা নিয়ে। তার মনে হতে থাকে হয়তো পারভেজ ইসলামকে এমনটা করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাই সে প্রত্যয় করে বলে,
“আসল সত্য আমি সবার সামনে আনবোই। তার জন্য যা করা দরকার আমি করবো। কিন্তু প্রজ্ঞাকে ন্যায়বিচার পাইয়ে না দিয়ে শান্তিতে নিঃশ্বাস নেব না। ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে বারবার এভাবে বেঁচে যেতে পারে না।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

তুমি ছিলে বলেই পর্ব-০৯

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ৯
#দিশা_মনি

নিপুণ স্নেহাকে সাথে নিয়ে আজ এসেছে প্রজ্ঞাদের বাড়িতে। পারভেজ ইসলামের সাথে কথা বলেই তারা দুজনে আজ এলো প্রজ্ঞাদের বাড়িতে। প্রজ্ঞা কিছুদিন আগেই নিজের বাড়িতে ফিরেছে। কিন্তু এরপর থেকেই সে নিজেকে চার দেয়ালের মাঝে বন্ধ করে নিয়েছে৷

নিপুণ প্রজ্ঞার ঘরে গেল। প্রজ্ঞা তখন উদাস মনে বিছানায় বসে ছিল। আনমনে ভাবছিল সেই ভয়াবহ রাতের কথা। প্রজ্ঞা আজো সেই দূর্বিষহ স্মৃতি ভুলতে পারে না৷ নিপুণ আলতো করে স্পর্শ করে প্রজ্ঞাকে। প্রজ্ঞা পিছনে ফিরে তাকিয়ে নিপুণকে দেখতে পায়৷ নিপুণ প্রজ্ঞার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“নিজেকে এভাবে ঘরে বন্দি করে রেখেছ কেন তুমি?”

“আমার খুব ভয় লাগে। বাইরে গেলে যদি সবাই আমাকে খারাপ কথা শোনায়..সবাই যে এটা জেনে গেছে যে আমি ধর্ষি..”

“তুমি একদম ভয় পাবে না। একটা কথা সবসময় মনে রাখবা যে তুমি কোন অন্যায় করো নি। বরং তুমি অন্যায়ের শিকার হয়েছ। তাই তোমার এরকম ভীত বা লজ্জিত হয়ে থাকার কোন কারণ নেই। তুমি বুক ফুলিয়ে ফুলবে চলবে সমাজে। বুঝলে?”

প্রজ্ঞা সম্মতি জানায়। স্নেহা ও পারভেজ ইসলামও ততক্ষণে চলে আসেন সেখানে। পারভেজ ইসলাম বলেন,
“শুনলাম রাজীব চৌধুরীর রাহাত চৌধুরীর কেস লড়ার জন্য শহরের একজন বড় উকিল ঠিক করেছেন। ওনারা তো অনেক ক্ষমতাবান। নিশ্চয়ই এই ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওনার ছেলেকে বের করে আনবেন।”

নিপুণ এক অসহায় পিতার দিকে তাকালো। তার চোখে তার মেয়েকে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে আশংকা তৈরি হয়েছে। তাই নিপুণ দৃঢ় কন্ঠে বলল,
“আপনি চিন্তা করবেন না আঙ্কেল। আমি প্রজ্ঞার হয়ে কেস লড়ব। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, প্রজ্ঞাকে আমি ন্যায়বিচার পাইয়ে দেবোই।”

স্নেহাও বলে ওঠে,
“তাছাড়া রুদ্র চৌধুরী তো ন্যায়বিচারের কথা বলেছেন।”

নিপুণ স্নেহার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“এসব রাজনৈতিক নেতাদের কথা বিশ্বাস করো না স্নেহা। ওরা নিজেদের রাজনৈতিক লাভের জন্য অনেক কথাই বলে থাকে। আমাদের এই লড়াইটা নিজেদেরই লড়তে হবে।”

★★★
নিপুণ তার বাড়িতে আসে সন্ধ্যাবেলা। বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্রই শাহিনা খাতুন তার সামনে এসে বলে,
“নিপুণ, শুনলাম তুই নাকি কোন এমপির ভাইয়ের বিরুদ্ধে কেস লড়ছিস।”

“হ্যাঁ, তুমি কিভাবে শুনলে?”

“নিউজে দেখলাম। আচ্ছা, এসবের কি খুব দরকার ছিল? এরকম ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেস না লড়লেই কি নয়?”

নিপুণ কোন ভনিতা ছাড়াই বলে,
“তুমি তো জানো মা আল্লাহ ছাড়া আমি আর কাউকে ভয় পাইনা। ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করতে আমি কখনোই পিছপা হবো না। এটাই আমার বাবার আদর্শ, যা আমি লালন করে চলছি।”

“কিন্তু আমার যে তোকে নিয়ে খুব ভয় হচ্ছে নিপুণ। তুই যে এখন আমার একমাত্র অবলম্বন। তোর কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে থাকব?”

“তুমি একদম ভয় পেওনা। আমার কিছু হবে না।”

শাহিনা খাতুন আর কিছুই বললেন না নিজের মেয়েকে। কিন্তু তার মনে যে ভয় ঢুকেছে তা আর দূর হলো না। তিনি শুধু দুহাত তুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করলেন যেন তার মেয়েটার কোন বিপদ না হয়।

★★★
দীপ্রর পরিবারের সবাই দুপুরে লাঞ্চ করতে বসেছে৷ ডাইনিং টেবিলে পিনপতন নীরবতা। দীপ্র সবেমাত্র ডাইনিং টেবিলে এসে বসলো। তাকে দেখেই তার বাবা আজিজ খান বলে উঠলেন,
“তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে দীপ।”

“জ্বি, আব্বু। বলুন।”

আজিজ খান রাসভারী স্বরে বললেন,
“রাজীব চৌধুরী আজ আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন।”

“রাজীব চৌধুরী মানে? সাবেক মন্ত্রী রাজীব চৌধুরী?”

“হ্যাঁ। ওনার সাথে আমার যে অনেক ভালো সম্পর্ক সেটা তোমাকে নিশ্চয়ই আর নতুন করে বলতে হবে না। উনি বানিজ্যমন্ত্রী থাকাকালীন আমাদের ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয়েছে এরজন্য ওনার অবদান অনেক। ওনার ছোট ছেলে রাহাতের নামে ইদানীং একটা ফলস কেস দাখিল করা হয়েছে। উনি বললেন নিপুণ নাকি এই কেসে জড়িয়েছে।”

দীপ্র অবাক হয়ে বলল,
“কই আমি তো এই ব্যাপারে কিছু জানি না।”

দিশা অবাক সুরে বলল,
“এটা তুমি কি বলছ ভাইয়া? কোন দুনিয়ায় থাকো তুমি? আজ তো নিউজে দেখালো যে এই কেসের ভিকটিমের হয়ে কেস লড়বে নিপুণ আপি।”

আজিজ চৌধুরী বলে উঠলেন,
“ঐ মেয়ে ভিকটিম নয়। এসব নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের আমার খুব ভালো করেই জানা আছে। এরা নিজেদের স্বার্থে এমন নাটক করে। রাজীব চৌধুরীর ছোট ছেলেকে আমি চিনি। ছেলেটাকে তো ভালোই মনে হয়। মনে হয় ওকে ফাঁসানো হয়েছে।”

দীপ্র বলল,
“নিপুণকে আমি চিনি আব্বু। ও কখনো কোন মিথ্যা মামলা লড়বে না।”

“সত্য মিথ্যা বড় কথা নয় দীপ। কি দরকার এসব ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লড়ার? ওনাদের পাওয়ার সম্পর্কে তোমার বা নিপুণের কোন ধারণাই নেই। এসব ব্যাপারে জড়িয়ে গেলে নিপুণ নিজেই বিপদে পড়বে। তাছাড়া ও আমাদের বাড়ির হবু বউ৷ ওর জন্য না চৌধুরীদের সাথে আমাদেরও সম্পর্ক খারাপ হয়। এর পরিণাম কিন্তু ভালো হবে না।”

দিলারা খাতুন যেন এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলাম। এমনিতেও নিপুণকে তার তেমন একটা পছন্দ নয়৷ তাই এই প্রসঙ্গ টেনেই তিনি বললেন,
“এইসব বাড়াবাড়ির জন্যই ঐ মেয়েটাকে শুরু থেকে আমার পছন্দ নয়। না জানি তোমরা বাবা-ছেলে ওর মধ্যে কি এমন দেখলে যে ওকে এই বাড়ির বউ করার জন্য একদম উঠে পড়ে লেগেছ।”

দিশা দিলারা খাতুনের উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“তুমি শুধু শুধুই নিপুণ আপিকে দোষ দিচ্ছ মম। আমি তো শুনেছি যেই মেয়েটা রাহাত চৌধুরীর নামে রে* কেস করেছে সে হলো স্নেহার বান্ধবী। আমার তো মনে হয় ঐ স্নেহাই নিপুণ আপিকে ইনফ্লুয়েন্স করেছে। নিপুণ আপি তো এমনিতেই ভালো মানুষ। তাই স্নেহার কথায় হয়তো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।”

দিলারা খাতুন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললেন,
“ও তো আরেকটা আপদ! ঐ স্নেহাকে তো আমি একদম সহ্য করতে পারি না৷ ওর আসল সত্যিটা মনে পড়লেই আমার গা জ্বলে যায়।”

আজিজ খান কপট রাগ দেখিয়ে বললেন,
“এসব কথা বলা এখন বন্ধ করো। দীপ তুমি নিপুণকে সবটা বুঝিয়ে বলো।”

“জ্বি, আচ্ছা।”

★★★
নিপুণ কোর্টে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ তার ফোন বেজে ওঠে। নিপুণ ফোনটা হাতে নিয়ে দেখতে পায় দীপ্র ফোন করেছে। সে তড়িঘড়ি ফোনটা রিসিভ করে বলে,
“হ্যালো দীপ।”

“তোমার সাথে আমার খুব জরুরি কথা আছে নিপু।”

“বলো কি বলবে।”

“এভাবে নয়। সামনাসামনি বলতে হবে।”

“আমি তো কোর্টে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছি। পরে বললে কি খুব অসুবিধা হবে?”

“আ’ম অন দা ওয়ে। তুমি তোমার বাসাতেই ওয়েট করো। আমি দশ মিনিটে পৌঁছে যাব।”

“হ্যালো, দীপ। আমার কথাটা..”

দীপ্র আর কিছু না বলে ফোনটা কে’টে দেয়। নিপুণ দীপ্রের আসার অপেক্ষা করতে থাকে। কিছু সময়ের মধ্যে দীপ্র চলে আসে নিপুণদের বাসায়। দীপ্রকে দেখে নিপুণ বলে,
“দীপ তোমার কি বলার তাড়াতাড়ি বলো। আমার অলরেডি অনেক লেইট হয়ে গেছে।”

“তুমি কেসটা ছেড়ে দাও।”

“মানে?”

“রাহাত চৌধুরীর বিরুদ্ধে তুমি যেই কেস লড়তে চাইছ সেই কেসটা ছাড়তে বলছি।”

“কিন্তু কেন?”

“কেন তুমি বুঝতে পারছ না? এরকম ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেস লড়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তুমি অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারো।”

“আমি এই কেস লড়বোই।”

“নিপু! তুমি কেন বুঝতে চাইছ না।”

“আমার কিছু বোঝার নেই।”

ততক্ষণে শাহিনা খাতুনও চলে আসেন। তাকে দেখেই দীপ্র বলে,
“আন্টি আপনি নিপুকে বোঝান। ও কিন্তু আগুন নিয়ে খেলতে চাইছে।”

“ওকে আমি আর কি বোঝাবো বাবা? ও আমার কথা শুনলে তো!”

নিপুণ ঘড়িতে টাইম দেখে বলে,
“আমি আর এক মিনিটও অপেক্ষা করতে পারব না।”

নিপুণ যেতে চাইলে দীপ্র তার পথ আটকে বলে,
“আমার কথাটা মনযোগ দিয়ে শোন নিপু। তোমার সামনে মনে করো দুটি অপশন। তুমি কোনটাকে বেছে নিবা? আমাকে নাকি এই কেসটাকে?”

নিপুণ কোন সংকোচ ছাড়াই বলে দেয়,
“আমার কাছে সবার আগে আমার দায়িত্ব তারপর বাকি কিছু।”

“বেশ। তুমি থাকো তোমার দায়িত্ব নিয়ে। আমি চললাম।”

বলেই দীপ্র হনহন করে বেরিয়ে আসে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

তুমি ছিলে বলেই পর্ব-০৮

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ৮
#দিশা_মনি

স্নেহা ও নিপুণ একসাথে বসে ছিল হাসপাতালের করিডোরে। দুজনেই প্রজ্ঞাকে নিয়েই কথা বলছিল। এমন সময় পারভেজ ইসলাম চলে আসেন সেখানে। তার মুখে ছিল মলিনতার ছাপ। তার মলিন মুখ দেখেই নিপুণ বুঝতে পারে হয়তো তিনি কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তাই নিপুণ পারভেজ ইসলামকে শুধায়,
“আঙ্কেল আপনি থানায় গিয়েছিলেন না? এফআইআর করিয়েছেন তো?”

পারভেজ ইসলাম হতাশ কন্ঠে বললেন,
“এই দেশে কি আর সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার পায়? ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের কাছেই তো আইন জিম্মি হয়ে আছে।”

“কি হয়েছে আঙ্কেল? আপনি আমায় একটু পরিস্কার করে বলুন প্লিজ।”

পারভেজ ইসলাম নিপুণকে সব ঘটনা খুলে বলে। থানায় যাওয়ার পর পুলিশরা তাকে কিরকম কথা বলেছে সব বলেন। এছাড়াও তিনি জানান একজন পুলিশ তাকে হুমকিও দিয়েছে রুদ্র চৌধুরীর সঙ্গে না লড়তে। নিপুণ সব শুনে ভীষণ রেগে যায়। বরাবরই এমন ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের ক্ষমতার অপব্যবহার তার মোটেই পছন্দ নয়। আজও তার খুব খারাপ লাগল এসব শুনে। নিপুণ বলে উঠল,
“ধিৎকার কানাই এমন পুলিশ অফিসারদের! পুলিশের দায়িত্ব জনগণের সেবা করা। কিন্তু তা না করে কিছু পুলিশ ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের সেবা করায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। এরকম পুলিশ অফিসারদের কারণেই সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার পায় না। আপনি চিন্তা করবেন না আঙ্কেল। আমি নিজেও আইনের লোক। তাই কিভাবে এসব পুলিশ অফিসারদের সাথে ডিল করতে হয় সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।”

নিপুণ কিছু একটা মনে করে বলে,
“আঙ্কেল, আমি যদি আপনার কাছে একটা পারমিশন চাই আপনি আমায় পারমিশন দেবেন তো?”

“কিসের পারমিশন?”

“আমি এই ব্যাপারটা প্রেসের লোকদের জানাতে চাইছি। কারণ যদি এই ঘটনা জনসম্মুখে আসে তাহলে পুলিশের উপরেও একটা চাপ আসবে। তখন তারা বাধ্য হবে কোন স্টেপ নিতে।”

পারভেজ ইসলাম চিন্তায় পড়ে যান। তিনি নিতান্তই একজন ছাপোষা ব্যক্তি। একজন শিক্ষক হওয়ায় সমাজে তিনি যথেষ্ট সম্মানিত। এখন যদি এসব বিষয় প্রেসের সামনে আসে তাহলে প্রজ্ঞার ঘটনাটা চারিদিকে ছড়িয়ে যাবে। নিজেকে নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। কিন্তু তার মেয়েটা কি পারবে এতসব ধকল সামলাতে।

স্নেহা পারভেজ ইসলামের মনের ভাবনাটা বুঝতে পারে। তাই সে ওনার উদ্দেশ্যে বলেন,
“আমি জানি, আপনি কি ভাবছেন। কিন্তু প্রজ্ঞাকে ন্যায়বিচার পাওয়ানোর জন্য এখন হয়তো আর কোন উপায় নেই। আমি চাই আমার বান্ধবী সুবিচার পাক। এইজন্য আপনার অনুমতির প্রয়োজন। আপনি অনুমতি দিলেই নিপুণ আপু কিছু করতে পারবে।”

পারভেজ ইসলাম অবশেষে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলেন৷ তিনি বললেন,
“ঠিক আছে। আমার মেয়েকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দিতে যদি এমনটা করতে হয় তাহলে তাই করা হোক।”

—————–
“রাজশাহী * আসনের এমপি রুদ্র চৌধুরীর ভাই রাহাত চৌধুরীর বিরুদ্ধে তরুণীকে গণ-ধ-ষনের অভিযোগ। ইতিমধ্যে তরুণীর বাবা মামলাও দায়ের করেছেন।”

ব্রেকিং নিউজে ছয়লাব টিভি চ্যানেলগুলো। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে নিন্দার ঝড়। মানুষ বেশ কড়া প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে বিষয়টি নিয়ে। অনেকেই এমন ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের করা অন্যায় নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এই সময় আরো অনেক মেয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলছে। যাদের রাহাত চৌধুরী নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ হাসিল করেছে। এতদিন তারা ভয়ে চুপ ছিল৷ কিন্তু এখন একে একে রাহাত চৌধুরীর সব অপরাধ সামনে আসতে শুরু করেছে।

টিভির রিমোট ছু’ড়ে মা*রলেন রাজীব চৌধুরী। অতঃপর নিজের ছোট ছেলের গালে সপাটে চ’ড় বসিয়ে দিলেন। রাগী স্বরে বললেন,
“ইডিয়েট একটা! তোমার জন্য আজ আমায় এই দিন দেখতে হলো। আমার সব রেপুটেশন তুমি ধুলায় মুছে দিলে। তোমার ভাইকে এখন না সাফার করতে হয় এসবের জন্য।”

“আমি কি করেছি ড্যাড?”

“কি করেছ তুমি? এটাও আমাকে বলে দিতে হবে? ঐ মেয়েটাকে তুমি রে* করেছ ভালো কথা। কিন্তু ওকে বাঁচিয়ে রাখলে কেন? ওকে মে* রে দিলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। এখন দেখছ তো কি হচ্ছে?”

“সরি ড্যাড। আমি বুঝতে পারিনি যে এত বড় একটা ব্যাল্ডার হয়ে যাবে।”

এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো রুদ্র চৌধুরী। বছর ৩০ এর এই যুবক বেশ ঠান্ডা মাথার খিলাড়ি বলেই রাজনৈতিক মহলে পরিচিত৷ তাকে কখনো কেউ রেগে যেতে দেখেনি৷ তবে বরাবরই ঠান্ডা মাথায় বেশ কায়দা করে প্রতিপক্ষকে তিনি যেভাবে বশ করেছেন তাতে নিজের দূরদর্শিতার প্রমাণই দিয়েছেন।

রুদ্র চৌধুরী এসেই বেশ স্বাভাবিক গলায় রাহাতকে বলল,
“বাইরে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। তুমি ভালোয় ভালোয় ওদের কাছে গিয়ে স্যারেন্ডার করে দাও।”

“এসব তুমি কি বলছ ভাইয়া?”

“আমি যা বলছি তাই করো।”
পুনরায় শান্ত স্বরে বলে রুদ্র চৌধুরী। রাজীব চৌধুরী রুদ্রর উদ্দ্যেশ্যে বললেন,
“মানছি তোমার ভাই একটা ভুল করেছে৷ তাই বলে তুমি ওকে এভাবে পুলিশের হাতে তুলে দেবে। তাহলে এমপি হয়েছ কেন তুমি? আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম তখন নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের কত অপরাধ ধামাচাপা দিয়েছি। আর তুমি নিজের ভাইকে সামান্য এই রে*প কেস থেকে রক্ষা করতে পারবে না?”

রুদ্র চৌধুরী নিজের পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ট করতে করতে বলল,
“আমি জনগণের সেবা করার জন্য এমপি হয়েছি। কারো অপরাধ গোপন করার জন্য নয়। রাহাত তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছ কেন? তোমাকে না যেতে বললাম।”

রাহাত অসহায় দৃষ্টিতে রাজীব চৌধুরীর দিকে তাকান। রাজীব চৌধুরী বলে ওঠেন,
“কোথাও যাবে না আমার ছেলে। তুমি যদি নিজের ভাইকে বাঁচাতে অক্ষম হও তাহলে আমি নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের ছেলেকে বাঁচাবো। ভুলে যেওনা আমার ক্ষমতাও কিন্তু কম না।”

রুদ্র চৌধুরী এবার চোখ তুলে রাজীব চৌধুরীর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকায়৷ রাজীব চৌধুরী নিজের ছেলের এই দৃষ্টিতে ভীষণ ভীত হয়ে পড়েন। তার বড় ছেলেকে তিনি খুব ভালো করেই চেনেন। ঠান্ডা মাথায় ছেলেটা সে বড়সড় কান্ডও করে দিতে পারে সেটা তার অজানা নয়। বাবা বলে তাকে রেহাই দেবে এমন ছেলে রুদ্র নয়। তাই তো রাজীব চৌধুরী আর বেশি কিছু বলার সাহস পান না। রুদ্র চৌধুরী এবার এগিয়ে যায় রাহাতের দিকে। রাহাতের হাত ধরে জোরপূর্বক তাকে বাইরে নিয়ে যায়। অতঃপর তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে বলে,
“অফিসার নিয়ে যান ওকে। আমার ভাই জন্য যেন ও বাড়তি কোন সুবিধা না পায়। ওর অপরাধ যদি সত্যিই প্রমাণিত হয় তাহলে ও যেন উপযুক্ত শাস্তি পায়।”

রাহাতের গ্রেফতারের এই ঘটনা সাংবাদিকরা ক্যামেরাবন্দী করে নেয়। রাহাতকে পুলিশে সোপর্দ করার পর তারা সবাই মিলে রুদ্র চৌধুরীকে ঘিরে ধরে। সবাই তাকে একটাই প্রশ্ন করে তিনি কিভাবে এত সহজে নিজের ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন। সেই মুহুর্তে রুদ্র চৌধুরী বেশ বুক ফুলিয়েই বলেন,
“আমি যখন একজন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছি তখন থেকেই এই এলাকার সকল মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার কাঁধে। এই এলাকার সকল মানুষের আমার আপনজন। আজ যেই মেয়েটা ধ**তা হয়েছে সেও আমার বোন। আমার নিজের ভাই এরকম একটা অন্যায় করেছে জন্য আমি সব মেনে নেব এমনটা নয়। আমি সবসময় ন্যায়বিচারের পক্ষে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব ইনশাআল্লাহ।”

রুদ্র চৌধুরীর এহেন জবানবন্দি বেশ প্রশংসিত হয়৷ সবাই রুদ্র চৌধুরীর নিজের ভাইকে এভাবে পুলিশের হাতে তুলে দেবার জন্য তাকে সাধুবাদ জানায় এবং তার ভূয়সী প্রশংসা করে।

★★★
রাহাতের গ্রেফতারের সংবাদে পারভেজ ইসলাম, নিপুণ, স্নেহা সবাই ভীষণ খুশি হয়৷ স্নেহা দৌড়ে যায় প্রজ্ঞার কেবিনে। অতঃপর মৃদু হেসে তার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“তুই এবার ন্যায়বিচার পাবি প্রজ্ঞা। ঐ রাহাত এভাবে তার দলের সব সদস্যকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।”

প্রজ্ঞা উপহাসের সুরে বলে,
“লাভ কি? সেই তো ওরা নিজেদের ক্ষমতা ব্যবহার করে বেরিয়ে আসবে। আমার মতো সাধারণ মেয়েদের ন্যায়বিচারের স্বপ্ন দেখা বৃথা।”

“তুই ন্যায়বিচার পাবিই। রাহাত চৌধুরীর ভাই এমপি রুদ্র চৌধুরী নিজে তার ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।”

“আমার কেন জানি এসব রাজনৈতিক নেতাদের বিশ্বাস হয়না। নিজের স্বার্থের জন্য তারা সব করতে পারে। আমি কি সত্যিই ন্যায়বিচার পাবো?”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

তুমি ছিলে বলেই পর্ব-০৭

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ৭
#দিশা_মনি

স্নেহা অনুপমকে সাথে নিয়ে চলে আসে প্রজ্ঞার দেওয়া ঠিকানাতে৷ এখানে এসে তারা প্রজ্ঞার কোন খোঁজ পায় না৷ স্নেহা ভীষণ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সে উদ্বিগ্ন গলায় অনুপমকে বলে,
“প্রজ্ঞার কোন বড় বিপদ হয়ে গেল না তো? আমার কিন্তু খুব ভয় করছে।”

অনুপম স্নেহাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
“তুমি চিন্তা করো না৷ চলো আমরা দুজনে আরো একটু খুঁজে দেখি৷ হয়তো আশেপাশে ওকে পেয়ে যাব।”

স্নেহা ও অনুপম প্রজ্ঞার খোঁজ অব্যাহত রাখে। কিছুদূর এগিয়ে যেতেই তারা দুজনে রাস্তায় প্রজ্ঞাকে পড়ে থাকতে দেখে৷ প্রজ্ঞাকে একদম নিস্তেজ লাগছিল। তার সারা শরীরে ক্ষতচিহ্ন। প্রজ্ঞাকেই দেখেই স্নেহা বুঝতে পারে যা অঘটন ঘটার ইতিমধ্যে ঘটে গেছে। তাই স্নেহা প্রজ্ঞার পাশে বসে কাঁদতে শুরু করে। তার চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু পড়তে থাকে। সে প্রজ্ঞাকে ডাকতে থাকে কিন্তু প্রজ্ঞা কোন সাড়া দেয় না। স্নেহা অনুপমকে বলে,
“অনুপম চলো আমরা ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।”

“পাগল নাকি তুমি? আমি যেতে পারব না।”

“কেন পারবে না অনুপম? দেখছ না প্রজ্ঞার কি অবস্থা?”

“এজন্যই তো বলছি। ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওকে হয়তো রে*প করা হয়েছে। এখন আমি যদি ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাই পুলিশ তো আমাকেই সাহায্য করবে। তাই আমি যেতে পারবো না। তুমি অন্য কারো সাহায্য নাও।”

“কিন্তু এই মুহুর্তে কে সাহায্য করবে আমায়?”

হঠাৎ করেই স্নেহার মনে পড়ে যায় নিপুণের কথা। তাই সে নিজের ফোন করে এবং নিপুণকে ফোন দেয়। নিপুণ ফোন রিসিভ করলে সে বলে,
“আপু আমি অনেক বড় একটা বিপদে পড়েছি আপনার সাহায্য প্রয়োজন। দয়া করে পদ্মাঘাট এলাকায় চলে আসুন।”

“ঠিক আছে। তুমি ওখানেই থাকো আমি যাচ্ছি।”

এটুকু বলেই নিপুণ ফোনটা রেখে দেয়। স্নেহা ফোনটা রেখে দিয়ে অনুপমকে বলে,
“আমি নিপুণ আপুকে ফোন সাহায্য চেয়েছি। উনি আসছেন।”

“ঠিক আছে। তাহলে তুমি এখানে থাকো আমি আসছি।”

“তুমি আমাকে এভাবে বিপদে একা রেখে চলে যাবে অনুপম?”

“আমি কোথাও যাচ্ছি না। আমি আশেপাশেই আছি তোমার উপর নজর রাখব। তুমি ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করো স্নেহা। এই মুহুর্তে হঠাৎ কেউ চলে আসলে আমাকেই সন্দেহ করবে।”

স্নেহা আর কিছু বলে না। অনুপম বিদায় নেয়।

★★★
নিপুণের সহায়তায় প্রজ্ঞাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে স্নেহা। প্রজ্ঞার চিকিৎসা শুরু হয়ে গেছে। নিজের বান্ধবীর এহেন অবস্থায় ভীষণ ভেঙে পড়েছে স্নেহা। সে সমানে কেঁদে চলেছে। নিপুণ স্নেহাকে সামলাচ্ছে।

কিছু সময়ের মধ্যে একজন নার্স এসে বলেন,
“পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে। উনি অনেকটাই ভেঙে পড়েছেন। ওনাকে কিছুতেই সামলানো যাচ্ছে না।”

স্নেহা বলে,
“আমি কি ওর সাথে দেখা করতে পারি?”

“হ্যাঁ, অবশ্যই।”

স্নেহা ও নিপুণ দুজনেই প্রজ্ঞার সাথে দেখা করতে তার কেবিনে প্রবেশ করে। সেখানে প্রবেশ করতেই তারা দেখতে পায় প্রজ্ঞা কিরকম পাগলামী করছে। সে সমানে বলে চলেছে,
“ওরা আমার সর্বনাশ করে দিয়েছে…আমি সমাজে মুখ দেখাবো কি করে…আমি আর বাঁচতে চাই না। প্লিজ ডাক্তার আমাকে মে*রে ফেলুন।”

প্রজ্ঞাকে এরকম করতে দেখে স্নেহার ভীষণ খারাপ লাগে। সে নিজেকেই দোষ দিতে থাকে। সে সঠিক সময় পৌঁছে গেলে হয়তো আজ প্রজ্ঞার সাথে এরকম হতো না। স্নেহা প্রজ্ঞার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“নিজেকে সামলা প্রজ্ঞা। তোর এখন এত ভেঙে পড়লে চলবে না।”

প্রজ্ঞা স্নেহাকে দেখে আরো বেশি ভেঙে পড়ে। সে বলতে থাকে,
“কি ভাবে নিজেকে সামলানো আমি স্নেহা? ঐ জানো*রগুলো আমার এত বড় ক্ষতি করে দিলো। আমি এখনো সেই বিভৎস সময়টা ভুলতে পারছি না।”

নিপুণ এবার এগিয়ে এসে বলে,
“তোমায় নিজেকে সামলাতে হবে প্রজ্ঞা। তোমার সাথে যারা এই অন্যায় করেছে তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য হলেও তোমায় নিজেকে সামলাতে হবে।”

স্নেহা প্রজ্ঞার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“উনি হলেন নিপুণ খান। উনি একজন উকিল। তুই নিঃসংকোচে তোর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা ওনাকে বলতে পারিস। উনি নিশ্চয়ই তোকে সাহায্য করবে।”

প্রজ্ঞা নিজের চোখ বন্ধ করে নেয়। তারপর বলে,
“ওদের সবাইকে আমি চিনি। আমাদের ভার্সিটির ছাত্রনেতা রাহাত আছে এসবের পেছনে। ঐ লোকটা কিছুদিন আগে আমাকে নোংরা প্রস্তাব দিয়েছিল৷ আমি সেইসময় ওনার মুখের উপর না করে দিয়েছিলাম৷ ওনাকে ভালো মন্দ অনেক কথাও বলেছিলাম। আর তাই উনি এভাবে….”

প্রজ্ঞা আর কিছু বলতে পারলো না। নিজের সাথে ঘটে যাওয়া বিভৎস ঘটনার স্মৃতি তার মানসপটে ভেসে ওঠে। সে নিজের মুখ ঢেকে কাঁদতে শুরু করে দেয়।

স্নেহা আতংকমিশ্রিত গলায় শুধায়,
“রাহাত! উনি সংসদ সদস্য রুদ্র চৌধুরীর ভাই না?”

প্রজ্ঞা উত্তরে বলে,
“হ্যাঁ, ওনার আরো একটা পরিচয় হচ্ছে উনি সাবেক মন্ত্রী রাজীব চৌধুরীর ছেলে। ওনারা অনেক ক্ষমতাবান ব্যক্তি স্নেহা। আমি মনে হয় কোনদিনও ন্যায়বিচার পাবো না।”

নিপুণ দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলে,
“অপরাধী যতই ক্ষমতাবান হোক শাস্তি তাদের পেতেই হবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। তুমি কোন চিন্তা করো না প্রজ্ঞা, তোমায় ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে আমি তোমার পাশে থাকব।”

অতঃপর সে একজন ডাক্তারের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আপনারা পুলিশকে খবর দেন নি?”

“হুম। জানিয়েছি।”

এরইমধ্যে প্রজ্ঞার বাবা মা চলে আসেন হাসপাতালে। স্নেহা তাদের ফোন করে বলেছিল স্নেহা হাসপাতালে ভর্তি। বিস্তারিত ভাবে কিছু সে বলেনি। এখানে এসে তাই তারা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছে। প্রজ্ঞার কেবিনে প্রবেশ করেই তারা স্নেহাকে শুধায়,
“কি হয়েছে আমাদের মেয়ের?”

স্নেহা তাদের সব খুলে বলে। সব শুনে তাদের দুজনের অবস্থাই খারাপ হয়ে যায়। প্রজ্ঞার বাবা পারভেজ হোসেন একজন সাধারণ স্কুলশিক্ষক এবং তার মা মনিরা খাতুন একজন গৃহিণী। তারা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের। তাদের কাছে সম্মানটাই সব। মনিরা খাতুন তো আহাজারি করে বলতে শুরু করেন,
“এজন্যই তোমায় বলেছিলাম মেয়েটার এত পড়ানোর দরকার নাই। এখন দেখলা তো ওর কত বড় সর্বনাশ হয়ে গেল।”

পারভেজ ইসলাম একদম চুপ করে রইলেন। হঠাৎ করে এই আঘাতটা তিনি নিতে পারলেন না। ততক্ষণে পুলিশও এসে উপস্থিত হয়। পুলিশকে আসতে দেখেই নিপুণ এগিয়ে গিয়ে তাদের সাথে কথাবার্তা বলে। সে শক্তভাবে অবস্থান নেয় প্রজ্ঞার পক্ষে৷ অপরাধীও বিচারের দাবি করে। পুলিশ অফিসার নিপুণকে বলে,
“আমাদের কাজ আমরা ঠিকই করব। আমাদের আগে ভিকটিম ও তার পরিবারের সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে দিন।”

পুলিশ প্রথমে প্রজ্ঞার সাথে কথা বলে। প্রজ্ঞা তো সহজে তাদের সামনে সব ঘটনা বলতে পারছিল না কিন্তু নিপুণ ভরসা দেওয়ায় সে সব ঘটনা খুলে বলে। সব শোনার পর তারা পারভেজ ইসলাম ও মনিরা খাতুনকে বলেন,
“আপনারা থানায় এসে এফআইয়ার দায়ের করুন। তারপর আমরা স্টেপ নেবো।”

পারভেজ ইসলাম তাই করতে চান। তখন মনিরা খাতুন বলেন,
“তুমি কি পাগল হয়ে গেছ নাকি? এমনিতেই মেয়েটার এত বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। এখন যদি থানা পুলিশ হয় তাহলে তো ব্যাপারটা লোক জানাজানি হয়ে যাবে। এমনিতেও ওত ক্ষমতাবান লোকের সাথে আমরা পারব না। এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি না করাই ভালো হবে।”

“আমি আমার মেয়ের জন্য ন্যায়বিচার চাই মনিরা। প্রয়োজনে নিজের যা আছে, যতটুকু আছে তাই দিয়ে লড়াই করব। তুমি একদম আমাকে বাঁধা দেবে না।”

মনিরা খাতুন আর কিছু বলতে পারেন না।

★★★
পারভেজ ইসলাম থানায় এফআইয়ার করতে গেলে একজন পুলিশ অফিসার তাকে বলেন,
“কি হবে খামোখা এসব এফআইয়ার করে? কার নামে এফআইয়ার করছেন জানেন তো? রাহাত চৌধুরী। এমপি রুদ্র চৌধুরীর ভাই। ওনাদের ক্ষমতার কাছে আপনারা ধোপে টিকবেন না। কি হবে শুধু শুধু ঝামেলা করে? তার থেকে ভালো হবে আপনারা নিজেরা নিজেরা সব মিটমাট করে নিন।”

পারভেজ ইসলাম নিদ্বিধায় বলেন,
“পুলিশের পোশাক পড়ে এমন কথা বলতে আপনার লজ্জা করছে না? আপনাদের কাজ কি নেতার চামচামি করা? আমাকে এসব কুপরামর্শ দিতে আসবেন না।”

পুলিশ অফিসার এবার থমথমে মুখে বললেন,
“দেখা যাক। আপনি কতদূর যেতে পারেন। আমরা এফআইয়ার তো নিলাম। কিন্তু সঠিক প্রমাণ ছাড়া এত বড় একজন লোকের বিরুদ্ধে স্টেপ নিতে পারব না।”

“আমার মেয়ে নিজের মুখে সব বলেছে সেটা কি যথেষ্ট নয়?”

“না। আইন প্রমাণে বিশ্বাসী।”

পারভেজ ইসলাম এবার রেগে যান। বলেন,
“আপনার কোন স্টেপ নেবেন না তাই তো? এবার দেখুন একজন বাবা তার মেয়েকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দেওয়ার জন্য কত দূর যেতে পারে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨