তুমি ছিলে বলেই পর্ব-১১

0
311

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ১১
#দিশা_মনি

নিপুণ এতো সহজে দমে যাওয়ার মেয়ে নয়। সে যখন একবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে দোষীদের সামনে আনবে তখন সে আনবেই। এরজন্য তাকে যত দূর যেতে হয় সে যাবে। নিপুণ রাহাত চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রমাণ খোঁজা অব্যাহত রেখেছে।

আজ আবার প্রজ্ঞাদের বাড়িতে চলে এসেছে নিপুণ। পারভেজ ইসলাম তাকে দেখেই বিরক্তির ভঙ্গিতে বলে,
“কেন এসেছ তুমি? তোমাকে আর কত বার বলতে হবে আমরা কেস তুলে নিয়েছি আর এই ব্যাপারে জলঘোলা করতে চাই না।”

“আমি প্রজ্ঞাকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে চাই আঙ্কেল। আপনিও তো সেটাই চাইতেন।”

এই মুহুর্তে হঠাৎ কেউ পারভেজ ইসলামের চোখে জল চলে আসে। তিনি বলেন,
“নিজের মেয়েকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দিতে গিয়ে আমি তো ওকে চিরকালের মতো হারিয়ে ফেলতে পারব না।”

“মানে? এটা আপনি কি বলছেন আঙ্কেল? হারিয়ে ফেলবেন মানে?”

“ঐ রুদ্র চৌধুরীর লোকেরা আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে। ওরা আমাকে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে কেস তুলে নিতে বাধ্য করেছে। এখনো অব্দি আমার মেয়েটাকে ফের‍ত দেয়নি। বলেছে এসব ঝামেলা পুরোপুরি মিটে গেলে এবং কেসটা ধামাচাপা পড়লে ওকে ফেরত দেবে৷ এরমধ্যে যদি আমি কোন বাড়াবাড়ি করি বা পুলিশকে কিছু জানানোর চেষ্টা করি তাহলে ওরা আমার মেয়েটাকে…”

এটুকু বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পারভেজ ইসলাম। অতঃপর নিপুণের সামনে হাত জোড় করে বলেন,
“আমি আমার মেয়েকে হারাতে চাই না। আমার লাগবে না ন্যায়বিচার। আমার শুধু আমার মেয়েকেই চাই।”

পারভেজ ইসলামকে এভাবে কাঁদতে দেখে নিপুণের খুব খারাপ লাগে। নিপুণ তার কাধে ভরসার হাত রেখে বলে,
“আপনি কোন চিন্তা করবেন না আঙ্কেল। আমি তো আছি। আমি আপনার মেয়েকে ঠিক আপনার কাছে ফিরিয়ে দেব। শুধু তাই না ওকে ন্যায়বিচারও পাইয়ে দেব। এটাই আমার ওয়াদা যেটা আমি জীবন দিয়ে হলেও পূরণ করব।”

এটুকু বলেই নিপুণ প্রজ্ঞাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। তার সামনে এখন অনেক বড় লড়াই। যার জন্য তাকে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। নিপুণ নিজের মনে সাহসের সঞ্চার করলো। এখন তাকে অনেক বেশি সাহসিকতার পরিচয় দিতে হবে।

★★★
স্নেহা বসে আছে চুপচাপ৷ আজ তার মন ভালো নেই। রুদ্র সেদিন ওইভাবে অপমান করার পর থেকেই স্নেহার মন ভীষণ খারাপ হয়ে আছে। তাকে অনেক কিছুই ভাবাচ্ছে। তার কোন অতীতের কথা দীপ্র বলেছিল যার জন্য তাকে ঘৃণা করে সবাই–এটা জানার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে আছে সে। স্নেহা এসব ভাবতেই ব্যস্ত ছিল এমন সময় হঠাৎ করে তার কাছে অনুপমের কল আসে। স্নেহা ফোনটা রিসিভ করতেই অনুপম বলে,
“আমি অনেক বিপদে আছি স্নেহা।”


নিপুণ দুপুরে লাঞ্চ করতে একটা রেস্টুরেন্টে আসে। সে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসার সময় হুঠ করে একটি মেয়ের সাথে তার ধাক্কা লাগে। নিপুণ সরি বললে মেয়েটি নিপুণকে দেখে খুশি হয়ে বলে,
“নিপুণ ম্যাম আপনি!”

“আপনি আমায় চেনেন?”

“কি যে বলেন আমি আপনাকে চিনবো না? আপনার আমাকে মনে নেই? অবশ্য মনে না থাকাই স্বাভাবিক। আপনার সাথে প্রতিদিন কত মানুষের দেখা হয়! আমি তো আপনাকে এত সহজে ভুলতে পারব না। আপনি তো আমাকে একজন প্রতারকের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন।”

নিপুণের হঠাৎ করে একটা কথা মনে পড়ে যায়৷ কিছু একটা মনে করে সে বলে ওঠে,
“আপনি সেই মেয়েটা না…আপনার বয়ফ্রেন্ড আপনার সাথে চিট করে মিথ্যা কথা বলে আপনার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল!”

“হ্যাঁ। আমি সেই। মনে পড়েছে আপনার?”

“হুম। আচ্ছা আপনার বয়ফ্রেন্ডের নাম যেন কি ছিল?”

“ওর নাম ছিল অনুপম। ও এক নাম্বারের ফ্রড ছিল। আমার আগেও অনেক মেয়েকে ও এভাবে ফাঁসিয়েছিল।”

নিপুণের কাছে এখন সবটা জলের মতো পরিস্কার হয়৷ এই অনুপমই তো স্নেহার প্রেমিক। এই জন্যই লোকটাকে তার চেনা চেনা লাগছিল। প্রথমদিন দেখেই নিপুণের সন্দেহ হয়েছিল অনুপমের উপর। তাই নিপুণ বলে,
“আপনার সেই প্রতারক বয়ফ্রেন্ড এখন আমার চেনা পরিচিত একজনের সাথেও প্রেমের অভিনয় করছে।”

“কি বলছেন কি!”

“আমাকে এখনই স্নেহাকে সবটা জানাতে হবে।”

বলেই নিপুণ স্নেহাকে কল দিতে থাকে। কিন্তু ফোন বিজি দেখায়।

★★
এদিকে অনুপম নিপুণকে ফোনকলে বলে চলেছে,
“আমি যেই ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছি সেখান থেকে আজ নোটিশ পাঠিয়েছে যে আজকের মধ্যেই আমাকে ওদের টাকা পরিশোধ করে দিতে হবে৷ নাহলে ওরা আমার নামে কেস করবে। আমার খুব ভয় হচ্ছে স্নেহা।”

স্নেহা অনুপমের কথা শুনে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ে। সে বলে,
“তুমি এখন কি করবে?”

“কিছুই বুঝতে পারছি না আমি৷ আমার এখন নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে।”

“চুপ করো অনুপম! একদম এসব উলটাপালটা চিন্তা করবে না। আমি এখনই আসছি।”

“তাড়াতাড়ি চলে এসো। নাহলে হয়তো আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কোন বড় ভুল করে ফেলব।”

“না, প্লিজ। আমি এখনই যাচ্ছি।”

স্নেহা ফোনটা কে’টে দিয়ে দ্রুত রওনা দিতে যাবে এমন সময় নিপুণের কল আসে তার ফোনে। স্নেহা কয়েকবার ফোন কে’টে দিলেও অবশেষে রিসিভ করে। নিপুণ বলে,
“হ্যালো, স্নেহা। তোমার সাথে আমার খুব জরুরি কথা আছে।”

“আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি আপু। পরে কথা বলি?”

এটুকু বলেই স্নেহা ফোনটা রেখে দেয়। নিপুণ আর কিছু বলার সুযোগই পায়না।

নিপুণ ভাবতে থাকে,
“স্নেহা হয়তো এখন কোন কাজে ব্যস্ত আছে। এখন আর কল না করাই ভালো হবে। ওকে পরেও সবটা বলা যাবে। আপাতত আমি প্রজ্ঞার খোঁজ করে নেই। আমাকে যে করেই হোক এটা জানতেই হবে ঐ রুদ্র চৌধুরী কোথায় লুকিয়ে রেখেছে প্রজ্ঞাকে। তারপর আমাকে ওকে উদ্ধার করতে হবে।”

এই ভাবনা থেকেই নিপুণ বেরিয়ে পড়ে প্রজ্ঞার খোঁজে।

★★★
দীপ্রর আজকে কেন জানি ভীষণ কষ্ট অনুভূত হচ্ছে। সেদিন নিপুণের সাথে তর্ক হওয়ার পর থেকেই তার মনটা ভালো নেই। দীপ্র খুব চিন্তিত হয়ে ছিল জন্য বেলকনিতে দাঁড়িয়ে স্মোক করছিল। এমন সময় দিশা সেখানে এসে দীপ্রকে দেখে ফেলে। দিশা ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,
“বাহ, ভাইয়া। এই দুদিনেই তুই তো দেখছি একদম দেবদাস হয়ে গেলি।”

দীপ্র দ্রুত সিগারেটটা নিজের হাত থেকে ফেলে দিয়ে বলে,
“কি করবো বল! নিপুণের সাথে তৈরি হওয়া এই দূরত্ব যে আমাকে পীড়া দিচ্ছে। নিপুণ যে আমার থেকে ওর প্রফেশনকে বেশি ভালোবাসে।”

“ভাইয়া তুই সব ঠিক করে নে। এভাবে তোরই কষ্ট হচ্ছে৷ নিপুণ আপিও তোকে জ্যানুয়েনলি ভালোবাসে। সেও কোথাও না কোথাও কষ্ট পাচ্ছে। এসব সিল্লি ম্যাটার নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা না করাই ভালো। নাহলে পরে গিয়ে আফসোস করতে হবে।”

“তুই একদম ঠিক বলেছিস দিশা। আমি নিপুণের সাথে সব মনোমালিন্য মিটিয়ে নেব। এভাবে থাকা আমার পক্ষে পসিবল না। নিপুণকে ছাড়া আমি বাঁচব না। ও যে আমার কত আপন সেটা আমি বলে বোঝাতে পারব না। ওকে হারিয়ে ফেললে আমি নিজেও হারিয়ে যাব।”

দিশা মৃদু হেসে বলে,
“এটাই বেস্ট হবে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে