Saturday, August 2, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 409



তুমি ছিলে বলেই পর্ব-২৭ এবং শেষ পর্ব

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ২৭(অন্তিম)
#দিশা_মনি

নিপুণ দৌড়াতে দৌড়াতে এসে উপস্থিত হলো চিঠিতে পাওয়া ঠিকানায়। কিন্তু সেই স্থলে এসে সে কাউকেই দেখতে পেল না। নিপুণ অবাক হলো ভীষণ। নিজের মাকে ডাকতে লাগল অবিরত ভাবে। আচমকা তার সামনে চলে আসলো ইশা। ইশাকে দেখে নিপুণ ভড়কালো। ভ্রু কুচকে বলল,
“তুমি এখানে কি করছ?”

ইশা অট্টহাসি দিয়ে বলে,
“তোমার মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানাতে এসেছি আমি।”

“তার মানে তুমি আমাকে ঐ চিঠিটা দিয়েছিলে?”

“একদম ঠিক ধরেছ। আমার আসল উদ্দ্যেশ্য তো ছিল তোমাকে মে*রে ফেলা। যাতে করে তুমি আমার রুদ্রার জীবন থেকে সরে দাড়াও। রুদ্রাকে যে আমি ভীষণ ভালোবাসি।”

“তুমি এমনটা করতে পারো না।”

“আমি এমনটাই করবো। তুমি নিজের মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানাতে প্রস্তুত হও নিপুণ।”

এই কথাটা বলে ইশা যেই না বন্দুকটা চালাতে যাবে ওমনি রুদ্র সেখানে এসে উপস্থিত হলো। সে নিপুণকে বাঁচিয়ে নিলো। অতঃপর ইশার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“তোকে আমি নিজের বন্ধু ভেবেছিলাম ইশা। আর তুই এভাবে আমার পিছে ছু’রি মা*রলি।”

“আমি তোকে বন্ধু ভাবিনি রুদ্রা। আমি ভালোবাসি তোকে।”

“এটা কেমন ভালোবাসা? যে তুই আমার ভালোবাসারই ক্ষতি করতে চাইছিলি?”

“তোকে পাওয়ার জন্য এছাড়া যে আর কোন রাস্তা ছিল না।”

“ভুল রাস্তা বেছে নিয়েছিলি তুই। আর এবার তার জন্য তোকে উপযুক্ত শাস্তিও পেতে হবে। ইন্সপেক্টর এরেস্ট হার।”

মহিলা পুলিশ সদস্যরা এসে ইশাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এসব কিছু হয়ে যাবার পর রুদ্র নিপুণকে বলে, “তুমি ঠিক আছ তো?”

” না, আমি মোটেই ঠিক নই। শুধুমাত্র আপনার জন্য আমি ঠিক থাকতে পারছি না।”

“এসব তুমি কি বলছ নিপুণ?”

“হ্যাঁ আমি ঠিকই বলছি। আপনি আমার মাকে লুকিয়ে রেখেছেন। আমাকে নিজের মতো করে চালোনা করছেন। এত সবকিছুর পর আমি কিভাবে ভালো থাকব। আর আপনি তো খুব নিজের বান্ধবীকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন তো এবার নিজেকেও পুলিশের হাতে তুলে দিন।”

“আমি নিজেকে কেন পুলিশের হাতে তুলে দেব?”

“কারণ আপনি একটা খু**নি। প্রজ্ঞার খু***ন করেছেন আপনি।”

তখনই হঠাৎ করে মাস্ক পড়া একটি মেয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে বলে,
“জীবিত ব্যক্তির খু**নের জন্য কেউ কিভাবে শাস্তি পেতে পারে?”

নিপুণের খুব চেনা চেনা লাগা মেয়েটির গলা। তাই সে জিজ্ঞেস করে,
“কে আপনি?”

মেয়েটি মাস্ক খুলতেই নিপুণ হতবাক হয়ে যায়। তার তো নিজের চোখকেই বিশ্বাস হয়না। সে অবাক হয়ে বলে,
“প্রজ্ঞা, তুমি বেঁচে আছ?”

প্রজ্ঞা মৃদু হেসে বলে,
“হ্যাঁ, আর আজ আমার বেঁচে থাকার সব কৃতিত্ব রুদ্র স্যারের। উনিই আমাকে আর আপনাকে সেফ করার জন্য এসব করেছেন।”

“মানে?”

রুদ্র বলতে শুরু করে,
“আমার বাবা রাজীব চৌধুরী একজন অত্যন্ত ক্ষমতাবান ব্যক্তি। উনি তোমাকে আর প্রজ্ঞাকে মে**রে ফেলার পরিকল্পনা করেছিলেন। আমি সেইসময় তোমাকে আর প্রজ্ঞাকে সেফ করার উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তারপর অনেক ভেবে এই প্ল্যান সাজাই। প্রথমে প্রজ্ঞাকে সবটা জানাই এবং ওকে মে**রে ফেলার মিথ্যা নাটক করি এবং তারপর তোমাকে সেফ করার জন্য বিয়ে করে নিজের কাছে নিয়ে আসি।”

নিপুণ জিজ্ঞেস করে,
“তাহলে আপনি আমাকে সবটা জানান নি কেন?”

“সত্যটা জানলে তুমি হয়তো আমাকে সঙ্গ দিতে না। কারণ তুমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই করতে চাও”

প্রজ্ঞা বলে,
“আপনার মাকেও রুদ্র স্যার নিরাপদে রেখেছেন। আমি এতদিন আপনার মায়ের খেয়াল রেখেছিলাম।”

নিপুণ ধীর পায়ে রুদ্রর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“আপনি আমার জন্য এত কিছু কেন করলেন?”

“ঋণ শোধ করার জন্য।”

“কিসের ঋণ?”

“তোমার বাবার কাছে আমি ঋণী নিপুণ। ছোটবেলায় যখন রাজীব চৌধুরী আমাদের অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন তখন উনি আমাকে এবং আমার মাকে সাহায্য করেছিলেন। সেই ঋণের প্রতিদানের জন্যই।”

“শুধুই কি প্রতিদান নাকি অন্যকিছু?”

“সত্যি বলতে আরো অনেক কিছুই। তুমি আমার লাইফে এসে আমায় ভালোবাসতে শিখিয়েছ। #তুমি_ছিলে_বলেই আমি ভালোবাসার মর্ম বুঝেছি। মিথ্যা বলব না, আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি নিপুণ। যদিও আজকের পর আমি তোমাকে ফ্রি করে দেব কারণ আমার উদ্দ্যেশ পূরণ হয়েছে। আমার বাবার একটা অনৈতিক ব্যবসার বিরুদ্ধে তোমার বাবা কেস লড়ছিল জন্য উনি তোমার বাবাকে মে*রে ফেলেন এবং দূর্ঘটনার নাটক সাজান। সেটা এখন প্রমাণিত। এই কেসের জন্য রাজীব চৌধুরীকে এবং প্রজ্ঞাকে রে**পের জন্য রাহাতও গ্রেফতার হয়েছে। এখন তুমি নিরাপদ। তাই আমি আর তোমাকে আটকাবো না। তুমি নিজের পথে চলে যেতে পারো।”

প্রজ্ঞা নিপুণের কাছে তার মাকে এনে দেয়। নিপুণ তার মাকে পেয়ে তার সেবায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অতঃপর রুদ্রর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আপনার কাছে আমিও আজ থেকে ঋণী হয়ে রইলাম। তবে সত্যি এটাই আমার মনে আপনার জন্য কোন অনুভূতি নেই। ভালো থাকবেন।”

এটুকু বলেই সে নিজের মাকে নিয়ে রওনা দেয়। যাওয়ার সময় আর একটিবারও পিছনে ফিরে চাইল না৷ রুদ্রের বুকের বা পাশে অদ্ভুত ব্যাথা অনুভূত হলো। তার মন যেন কেদে উঠল। রুদ্র নিজের কষ্টে গান ধরল,
“Accha chalta hoon Duaaon mein yaad rakhna Mere zikr ka zubaan pe swaad rakhna Dil ke sandookon mein Mere acche kaam rakhna Chitthi taaron mein bhi Mera tu salaam rakhna Andhera tera maine le liya Mera ujla sitaara tere naam kiya Channa mereya mereya Channa mereya mereya Channa mereya mereya Beliya O piya… Channa mereya mereya”

নিপুণ আর নিজেকে আটকাতে পারল না। দৌড়ে এসে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরল। কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল,
“কেন আমার এত কষ্ট হচ্ছে মিস্টার রুদ্র চৌধুরী? আমি কি তবে আপনাকে ভালোবেসে ফেললাম?”

★★★
৩ মাস পর,
মহাসমারোহে রুদ্র ও নিপুণের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। গতবার বিয়েটা সাধারণ ভাবে হলেও এবার বেশ ধুমধামের সহিতই হচ্ছে। এমপি রুদ্র চৌধুরীর বিয়ে বলে কথা। রুদ্র চৌধুরীর আর তর সইছে না। তবে আজ যেন তার জন্য আরো বড় কিছু অপেক্ষা করছিল। ইশার সৎমা মালিনী বেগম আজ দেখা করতে এলো রুদ্রর সাথে। তিনি এসেই রুদ্রর উদ্দ্যেশ্যে বললেন,
“আজ তোমাকে আমি কিছু কথা বলতে চাই। যা না বললে আমি মরেও শান্তি পাবো না। আসলে তোমার মা যেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন আমি সেখানকার নার্স ছিলাম৷ তোমার মা সাধারণ ভাবে ম*রে যায়নি। তোমার সৎমা তাকে খু**ন করেছিল এমনকি তোমার সদ্যজাত বোনকেও ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিল। আমায় সেইসময় প্রাণের ভয় দেখিয়ে এবং অনেক টাকা দিয়ে চুপ করে রেখেছিল। তবে এবার আমি সব সত্য তোমায় জানাতে এসেছি। এমনকি অনেক কষ্টে অনাথ আশ্রম থেকে তোমার বোনের বর্তমান ঠিকানাও জোগাড় করে এনেছি। এই নাও সেই ঠিকানা।”

রুদ্র আর এক মুহুর্ত দাঁড়ায় না। দৌড়ে চলে যায় সেই ঠিকানা অনুযায়ী।

স্নেহা তার বাবার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকদিন আগেই আব্বাস খান ইহজগতের মায়া ত্যাগ করেছেন। স্নেহার বিয়েটাও আর হয়নি। মৃত্যুর আগে স্নেহার বাবা তাকে জানিয়েছিল যে সে তার আসল মেয়ে নয়৷ যদিও স্নেহা এটা আগে থেকেই জানত। তার চোখ থেকে অনবরত জল পড়ছে। স্নেহা কান্নারত স্বরে বলে,
“তুমি আমায় কেন একা করে ফেলে গেলে আব্বু? এখন আমি কার কাছে থাকব?”

হঠাৎ করেই রুদ্র দৌড়ে স্নেহার ঘরে প্রবেশ করল। স্নেহাকে দেখেই বুঝতে পারল এই তার বোন।ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল তাকে। হঠাৎ একজন পুরুষ মানুষ এভাবে জড়িয়ে ধরায় স্নেহা দ্রুত সরে গিয়ে বলল
“কে আপনি? আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরছেন কেন?”

“আমি তোমার ভাই হই।”

স্নেহা কিছুই বুঝল না। রুদ্র স্নেহাকে সব খুলে বলল। সব শুনে সে আবেগাপ্লুত হয়ে গেল। সে এবার রুদ্রকে জড়িয়ে ধরল। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। অবশেষে সে নিজের আসল পরিবারের খোঁজ পেল।

_★
স্নেহাকে নিয়ে রুদ্র নিজের বাড়িতে ফেরে। নিপুণ স্নেহাকে দেখে অবাক হয়। রুদ্র সবার সামনে স্নেহার আসল পরিচয় বলে। নিপুণ খুব খুশি হয়।

নিপুণ ও রুদ্রের বিয়ে সম্পন্ন হয়। অবশেষে তাদের পরিবার সম্পুর্ণ হয়৷ দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে ফেলে দীপ্র। তার ভালোবাসার মানুষটা এখন অন্যকারো। তার ভীষণ কষ্ট হয় কান্না পায়৷ সে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে করতে বলে,
“তুমি আমার ভাগ্যে ছিলে না নিপুণ। তাই হয়তো আমাদের এভাবে আলাদা হয়ে যেতে হলো।”

আনমনা হয়ে চলতে গিয়েই স্নেহার সাথে ধাক্কা খেল দীপ্র। স্নেহা পরে যেতে নিতেই দীপ্র তাকে ধরে নেয়। তারা একে অপরের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে থাকে।

~~~~~~~✨সমাপ্ত ✨~~~~~~~~~~

তুমি ছিলে বলেই সিজন-০২পড়তে লেখাটির উপর ক্লিক করুন

তুমি ছিলে বলেই পর্ব-২৬

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ২৬
#দিশা_মনি

নিপুণ রুদ্রের মাথায় ভরসায় হাত বুলিয়ে দেয়। রুদ্রকে নম্ন স্বরে শান্তনা দিয়ে বলে,
“আপনি নিজেকে সামলান।”

রুদ্র বলে ওঠে,
“কিভাবে সামলাবো আমি নিজেকে? ছোটবেলা থেকে আমাকে শুনতে হয়েছে আমি একজন অ*বৈ-ধ সন্তান। জানেন, ছোটবেলায় আমার মা ঘুমানোর পর রাতে আমি একা একা কাঁদতাম। মাকে দেখতে দিতাম না সেই কান্না যাতে তার কষ্ট না হয়৷ আমার মাকেও সবাই নানা বাজে কথা বলত। যার কোনটাই সত্য না। আমার মা গ্রামের এক সাধারণ মেয়ে ছিল৷ আমার দাদা ও নানা অনেক ভালো বন্ধু ছিলেন৷ ছোটবেলাতেই পারিবারিক ভাবে আমার মা-বাবার বিয়ে হয়ে যায়৷ তারপর বাবা শহরে চলে আসেন। এখানে এসে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে তারপর অবস্থার উন্নতি হয়। ক্ষমতার নেশা তাকে অন্ধ করে তোলে। সেইসময় একজন হেভিওয়েট নেতার মেয়ে ওনাকে ভালো বেসে ফেলেন৷ বাবা নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের কথা ভেবে নিজের বিবাহিত হওয়ার সত্য লুকিয়ে তাকে বিয়ে করেন। এভাবে দিন চলতে থাকে। আমি পৃথিবীতে আসি। অন্যদিকে রাহাতও জন্ম দেয় তার দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে। একদিন এক গাড়ি দূর্ঘটনায় আমার নানা-নানী, মামা-মামী এবং দাদা সবাই প্রাণ হারান। আমি আর মা তখন সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়ি। মা তখন গর্ভবতী ছিলেন। এমতাবস্থায় বাবার সাথেও আমাদের যোগাযোগ ছিল না। তাই আমাকে নিয়ে মা শহরে চলে আসে বাবার সন্ধানে৷ অনেক খুঁজে বাবার সন্ধান পাই। তাই বাড়িতে গিয়ে উঠতেই তিনি আমাকে এবং মাকে অস্বীকার করেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রী আমাদের দূর দূর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর আমরা অসহায়ের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকি৷ এরপর বাবা একদিন আমাদের তার বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু একটা শর্ত দেন। শর্ত অনুযায়ী মাকে কাজের লোক হয়ে থাকতে হবে এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সামনে বলতে হবে যে সে আগে যা বলেছিল সব মিথ্যা ছিল এবং মা সব লোভের বসে বলেছিলেন। মা আমার কথা ভেবে বাবার সব শর্ত মেনে নেয়। তারপর আমার মাকে নিজেরই স্বামীর বাড়িতে কাজের লোক হয়ে থাকতে হয়। তবে কথায় আছে না সত্য কোনদিন চাপা থাকে না তেমনি আমার সত্যিটাও একদিন বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর সামনে আসে। সেদিনই সবথেকে বড় আঘাত নেমে আসে আমাদের জীবনে। বাবা ওনার দ্বিতীয় স্ত্রীকে বলেন আমি ওনার অবৈধ সন্তান এবং মাকেও তিনি নিজের স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেন না। মা সেদিন খুব ভেঙে পড়েছিলেন। এরপর হঠাৎ একদিন মা সিড়ি থেকে পড়ে যান। সেইসময় তার ৯ মাসের প্রেগ্যান্সি চলছিল৷ মাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। আমার মা এবং আমার অনাগত সহোদর দুজনকেই আমি হারিয়ে ফেলি। আমার জীবন আরো নরকময় হয়ে ওঠে। বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আমাকে দুচোখে সহ্য করতে পারতেন না। অনেক অত্যাচার করতেন। আমি মুখ বুজে সব মেনে নিতাম। তবে বেশিদিন আমাকে এসব মানতে হয়নি। কিছু বছর পর উনিও একটি সড়ক দূর্ঘটনায় মা*রা যান। তারপর থেকে রাহাত আর আমাকে আমার বাবাই মানুষ করতে থাকেন।”

রুদ্রের কাছ থেকে সকল কথা শোনার পর নিপুণের ভীষণ খারাপ লাগতে থাকে। রাজীব চৌধুরীর প্রতি তার মনে এক রাশ ঘৃণা সৃষ্টি হয়৷ নিপুণ বুঝতে পারে রুদ্রের শৈশব কতোটা কষ্টে কে’টেছে। তার মায়া হতে থাকে রুদ্রের জন্য। নিপুণ রুদ্রের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আপনার অতীত সত্যিই ভীষণ কষ্টদায়ক ছিল। আপনার জন্য আমার ভীষণ খারাপও লাগছে। কিন্তু আপনার অতীত বিবেচনা করে বর্তমানে আপনি যে অন্যায় করেছেন সেটা ক্ষমা করে দেওয়ার কোন মানে হয়না। আপনি একটা নিরপরাধ মেয়ের হ–ত্যা***কারী। আপনাকে আমি এইজন্য কখনো মাফ করতে পারি না৷ তাই আপনাকে উপযুক্ত শাস্তি পাইয়ে দেওয়ার কথা আমি কখনো ভুলতে পারি না।”

রুদ্র করুণ কন্ঠে নিপুণের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আমি যদি প্রজ্ঞার খু***নি না হতাম তাহলে কি তুমি আমাকে ক্ষমা করতে?”

নিপুণ বলে,
“তাও হয়তো করতাম না। কারণ আপনি আমার মাকে কিডন্যাপ করেছেন, আমাকে জোর করে বিয়ে করেছেন। এসব আমি এত সহজে ভুলতে পারব না মিস্টার রুদ্র চৌধুরী। তাই আপনাকে ক্ষমা করাও কখনো আমার দ্বারা সম্ভব নয়।”

রুদ্র নিপুণের থেকে দূরে সরে আসে। অতঃপর উদাস মনে চলে সেখান থেকে চলে আসে।

রুদ্র ও নিপুণের বলা সব কথা লুকিয়ে লুকিয়ে শুনে নেয় ইশা। এত গোপন কথা একসাথে জেনে সে ভীষণ অবাক হয়। সাথে অনেক খুশিও হয়। ইশা বাকা হেসে বলতে থাকে,
“ব্যস, আমার সব জানা হয়ে গেছে। যা জেনেছি তাই এনাফ। এখন এসব কথা যদি আমি রাজীব আঙ্কেলকে গিয়ে বলি তাহলেই কেল্লাফতে।”

ইশা খুশি খুশি মনে রাজীব চৌধুরীর রুমে যায়। রাজীব চৌধুরী ইশাকে দেখে বলেন,
“তুমি কিছু বলবে? আমার মন মেজাজ আজ বেশি ভালো নেই। যা বলার তাড়াতাড়ি বলে চলে যাও।”

“কুল আঙ্কেল, কুল। আপনার জন্য আমি এমন সুখবর এনেছি যা শোনামাত্র আপনার খারাপ মেজাজ একদম চাঙা হয়ে উঠবে।”

“যা বলার স্পষ্ট করে বলো।”

ইশা একে একে রাজীব চৌধুরীকে সব রুদ্র ও নিপুণের সব কথা খুলে বলে। সব শুনে রাজীব চৌধুরী ভীষণ খু্শি হন। তিনি বলেন,
“এই তাহলে আসল কাহিনি। আমি শুধু শুধুই নিপুণকে নিয়ে তাহলে ভয় পাচ্ছিলাম। রুদ্র তাহলে ওকে ভালোবেসে বিয়ে করেনি৷ করেছে অন্য উদ্দ্যেশ্যে।”

ইশা রাজীব চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“নিপুণকে ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে আঙ্কেল। রুদ্রা হয়তো ওকে ভালোবেসে বিয়ে করে নি কিন্তু এখন রুদ্রার মনে হয়তো ওর মনে অনুভূতি তৈরি হয়েছে। ওর আচার ব্যবহারই তো সেটা প্রমাণ করে দিচ্ছে। আপনিই ভেবে দেখুন ঐ মেয়েটার জন্য রুদ্রা রাহাতের গায়ে পর্যন্ত হাত তুলেছিল। তাছাড়া নিজের অতীতের ব্যাপারে ও সবকিছু ঐ নিপুণকে সব খুলে বলেছে। যেটা আমি ওর বেস্টফ্রেন্ড হয়েও এতদিন জানতাম না।”

“এটা তো তুমি একদম ঠিকই বলেছ ইশা। তাহলে এখন কি করা যায়?”

“আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে আঙ্কেল যার মাধ্যমে ঐ নিপুণ নামের পথের কাঁ’টা দূর হবে।'”

“কি প্ল্যান?”

“রুদ্রা নিপুণের মাকে কিডন্যাপ করে কোথায় রেখেছে সেটা নিশ্চয়ই রুদ্রার সেক্রেটারি জানে। আপনি রুদ্রার সেক্রেটারির মুখ থেকে সব সত্য বের করে আনার ব্যবস্থা করুন। আর তারপর সেটা আমাকে জানান। বাকি কাজ আমিই করে নেব।”

“ঠিক আছে, কিন্তু এতে কাজ হবে তো?”

“আলবাত হবে। নাহলে আমি আর আছি কি করতে? আপনি জাস্ট নিজের করা প্রমিসের কথা ভুলবেন না। আপনার কাজ করে দেওয়ার বিনিময়ে কিন্তু আপনাকে আজিজ চৌধুরীর ব্যবসা ধ্বংস করে দিতে হবে।”

“ঠিক আছে।”

ইশা এবার কুটিল হাসি দেয়। সবকিছু তার প্ল্যানমাফিকই এগোচ্ছে।

★★★
ভোরের আলো চোখে এসে পড়তেই ঘুম ভাঙে নিপুণের। চারিদিকে পাখিদের কিচির মিচির শব্দ আর ভোরের আলোয় ভীষণ সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। নিপুণ চোখ মেলে তাকানোর পর দেখে রুদ্র ঘরে নেই। প্রতিদিন সোফায় শুয়ে ঘুমায় রুদ্র। কিন্তু আজ রুদ্রকে দেখাই যাচ্ছে না।

নিপুণ হঠাৎ টেবিলের উপর একটা চিঠি দেখতে পায়। সেটা খুলতেই দেখে সেখানে লেখা,
“যদি নিজের মাকে ফেরত পেতে চাও তাহলে ** ঠিকানায় চলে এসো।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

তুমি ছিলে বলেই পর্ব-২৫

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ২৫
#দিশা_মনি

নিপুণ ঘরে এসে দরজা বন্ধ করতে যাবে এমন সময় রুদ্র এসে দরজাটা বন্ধ করতে বাঁধা প্রদান করে। নিপুণ রুদ্রর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আপনি এখন এখানে এসেছেন কেন? যান গিয়ে নাচুন না। কত সুন্দর নাচছিলেন আপনার বান্ধবীর সাথে। সবাই হাততালি দিচ্ছিল৷ যান কন্টিনিউ করুন।”

“ইশা শুধুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নিপুণ। তার থেকে বেশি কিছু নয়।”

“আমি কি কিছু জানতে চেয়েছি আপনার কাছে? তাহলে শুধু শুধু কৈফিয়ত দিতে এসেছেন কেন?”

“তুমি হঠাৎ এভাবে চলে এলে তাই আমি ভাবলাম…”

“কি ভেবেছেন যে আপনাকে আপনার বান্ধবীর সাথে নাচতে দেখে আমার খারাপ লাগছিল৷ তাই আমি চলে এসেছি। কি এটাই ভাবছিলেন তো?”

রুদ্র কিছু বলে না। তার এই মৌনতাকে সম্মতি ধরে নিয়ে নিপুণ বলে,
“একটা কথা বেশ কান খুলে শুনে রাখুন আমার আপনাকে নিয়ে কোন মাথাব্যাথা। আপনি আমার চোখে শুধু একজন অপরাধী, একজন খু***নি। আপনাকে আমি সহ্য করছি শুধু নিজের মায়ের জন্য। তাই আপনি কার সাথে নাচলেন বা গাইলেন তাতে আমার কিছু যায় আসে না।”

রুদ্র আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই আচমকা ইশা রুদ্রর নাম ধরে ডাকতে ডাকতে সেখানে চলে আসে৷ রুদ্রর একদম পাশে এসে রুদ্রর হাত ধরে সে বলে,
“তুই এভাবে চলে এলি কেন রুদ্রা? নিচে সবাই তোর খোঁজ করছে।”

“ইশু তুই যা আমি আসছি।”

“আঙ্কেল আমায় পাঠিয়েছে তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তোর জন্য নাকি উনি অনেক বড় সারপ্রাইজ প্ল্যান করে রেখেছেন৷ তুই চল তো আমার সাথে।”

বলেই রুদ্রর হাত ধরে জোরপূর্বক টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে ইশা৷ যা দেখে নিপুণের আরো একদফা খারাপ লাগে। সে নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিয়ে বলে,
“রুদ্র চৌধুরীকে নিয়ে আমার এমন অনুভূতি হচ্ছে কেন? কেন আমি ঐ ইশাকে ওনার পাশে মেনে নিতে পারছি না?”

এই প্রশ্নের কোন উত্তর নিপুণ খুঁজে পায়না৷ অগত্যা সে নিজের ভাবনাতেই মগ্ন থাকে।

★★★
স্নেহাকে খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হচ্ছে। তাদের কিছু প্রতিবেশীই স্নেহাকে সাজিয়ে দিচ্ছে। এই সাজানোর পেছনে একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণও আছে বৈকি! আজ স্নেহাকে দেখতে পাত্রপক্ষ আসছে। আব্বাস খান নিজে স্নেহার জন্য যোগ্য পাত্র খোঁজার ঘটকের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন৷ স্নেহার ছবিও দিয়েছিলেন ঘটককে৷ সেই ছবি দেখেই আজ স্নেহাকে পছন্দ করে ফেলেছে পাত্রপক্ষ। তারাই আজ স্নেহাকে দেখতে আসছে।।

স্নেহাকে সাজিয়ে তাকে আয়নার সামনে দাড় করায় তাদেরই পাশের বাড়ির এক মেয়ে তোহা। অতঃপর মুচকি হেসে বলে,
“তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে স্নেহা। পাত্রপক্ষ আজ নিশ্চয়ই তোমাকে পছন্দ করবে।”

এই কথা শোনামাত্র তোহার ছোট বোন তাবাসসুম বলে ওঠে,
“পাত্রপক্ষ পছন্দ করলে তো আমাদের স্নেহার ভাগ্যই খুলে যাবে। শুনেছি ওকে যারা দেখতে আসছে তারা ভীষণ বড়লোক। ছেলে নাকি ডাক্তার। সব মিলিয়ে একদম সোনায় সোহাগা।”

স্নেহা সব কথাই নিশ্চুপ হয়ে শুনছিল। নিজের বিয়ে নিয়ে তার মধ্যে কোন উন্মাদনা নেই৷ এই বিয়েতে না করার জন্য তার কাছে কোন উপযুক্ত কারণ নেই। আগে নাহয় সে একজনকে ভালোবাসত কিন্তু সেও তো একজন প্রতারক বের হলো। তাই এখন নিজের বাবার পছন্দের উপরেই ভরসা রাখছে সে। তবুও তার মনটা কিছুতেই খুশি হতে পারছে না৷ এরমধ্যে আব্বাস খান এসে তাড়া দিলেন। স্নেহার উদ্দ্যেশ্যে বললেন,
“তোর সাজসজ্জা শেষ হয়েছে স্নেহা? ওনারা তো চলে এসেছেন।”

তোহা বলে,
“জ্বি চাচা। সাজগোজ একদম কমপ্লিট। আপনি দেখুন তো স্নেহাকে কেমন লাগছে?”

আব্বাস খান স্নেহার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলেন,
“মাশাল্লাহ। কারো নজর না লাগুক।”

কিছুক্ষণের মধ্যেই স্নেহাকে পাত্রপক্ষের সামনে নিয়ে যাওয়া হলো। স্নেহা সবার সামনে গিয়ে সালাম দিলো৷ তারপর চুপচাপ চেয়ারে বসে পড়ল৷ ডাঃ সোহাগ রহমান মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগল স্নেহাকে। ছবিতে যতটা না সুন্দর লাগছিল বাস্তবে তার থেকেও সুন্দর লাগছে স্নেহাকে। সোহাগ একদম মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যায়। সাথে এও প্রতিজ্ঞা করে নেয় তার যদি বিয়ে করতে হয় তাহলে এই মেয়েটাকেই করবে।

সোহাগের মা সালমা খাতুনের অবশ্য স্নেহাকে তেমন একটা পছন্দ হয়না। স্নেহা দেখতে সুন্দরী হলেও তাদের পারিবারিক অবস্থা বেশি ভালো না৷ সালমা খাতুন চান আরো স্বচ্ছল পরিবারে নিজের ছেলের বিয়ে দিতে। তাই তিনি স্নেহাকে নিয়ে বেশি আগ্রহ দেখান। টুকটাক কয়েকটা প্রশ্নই শুধু করেন। তবে সোহাগের বাবা হাবিব হাসান স্নেহাকে বেশ পছন্দ করে ফেলেন৷ তাই তিনি স্নেহাকে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন৷ সালমা খাতুন এসবে বিরক্ত হন। একপর্যায়ে নিজের স্বামীকে থামিয়ে তিনি আব্বাস খানের উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
“আজ তাহলে আমরা উঠি৷ ঘটকের মাধ্যমে নাহয় আমাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবো।”

এই বলেই তিনি উঠে পড়েন। সোহাগ যাওয়ার আগেও বারবার স্নেহার দিকে তাকায়৷ আর মনে মনে বলে,
“আমি তোমাকেই বিয়ে করব হৃদয়হরিণী। শুধু অপেক্ষা করো আমার বউ হওয়ার জন্য।”

★★★
নিপুণের একা ঘরে থাকতে ভালো লাগছিল না৷ তাই সে জন্মদিনের অনুষ্ঠানের স্থলে চলে আসল৷ এসেই তার চোখ খুঁজতে লাগল রুদ্রকে। তার অবচেতন মন একটিবার দেখতে চাইছে রুদ্রকে।

হঠাৎ করেই কারো একটা সাথে ধাক্কা খায় নিপুণ। তাল সামলাতে না পেরে চলে যেতে নিলে রুদ্র তাকে সামলে নেয়৷ রুদ্রর সাথেই সে ধাক্কাটা খেয়েছে। রুদ্র নিপুণকে স্বাভাবিক ভাবে দাড় করিয়ে দিয়ে বলে,
“একটু দেখেশুনে চলে ফেরা করো। কোন চিন্তায় মগ্ন ছিলে?”

“তেমন কিছু না।”

“তোমায় দেখে কেন জানি মনে হচ্ছিল তুমি কাউকে খুঁজছিলে। বাই এনি চান্স তুমি কি আমাকে খুঁজছিলে?”

“আপনাকে খুঁজতে যাব কেন? আমি তো এমনিই…”

নিপুণ নিজের কথা সম্পূর্ণ করতে পারল না। তার আগেই শুনতে পেল রাহাত মাইক হাতে নিয়ে সবার উদ্দ্যেশ্যে এনাউন্সমেন্ট করে বলছে,
“লেডিস এন্ড জেন্টালম্যান আপনাদের সবাইকে শুভ সন্ধ্যা, গুড ইভেনিং। আজকের এই সন্ধ্যা সবার আনন্দময় হয়ে উঠুক। আপনারা সবাই জানেন আজ আমাদের এমপি মহোদয় মোঃ রুদ্র চৌধুরীর জন্মদিন। তার এই জন্মদিন উপলক্ষে আমি তার জন্য একটা সারপ্রাইজের আয়োজন করেছি। এখন আমি সেটা রিপ্রেজেন্ট করব।”

সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে রাহাতের সারপ্রাইজ কি সেটা জানার জন্য। রাহাত আবারো বলা শুরু করে,
“আজ যেহেতু রুদ্র চৌধুরীর জন্মদিন তাই তার জন্ম সংক্রান্ত কিছু কথা আগে জেনে নেওয়া যাক, যেটা হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন না। আপনারা অনেকে মনে করেন রুদ্র চৌধুরী রাজীব চৌধুরীর সন্তান, আজ বড় ভাই। কিন্তু এটা সত্য নয়৷ রুদ্র চৌধুরী আমার নিজের বড় ভাই নয় আর না তো রাজীব চৌধুরী মানে আমার বাবার বৈধ সন্তান। বরঞ্চ সে হলো আমার বাবার সাথে অন্য একজন মহিলার অবৈধ মেলামেশার ফসল।”

বার্থডে পার্টিতে উপস্থিত সকলে হতভম্ব হয়ে যায় এসব কথা শুনে। রুদ্র চৌধুরীর ব্যাপারে এসব কথা সবার অজানা ছিল৷ সব শুনে সবাই কানাঘুষা শুরু করে দেয়। রুদ্র ঠায় পাথরের মতো দাঁড়িয়ে ছিল। নিপুণও হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রাজীব চৌধুরী রাহাতের হাত থেকে মাইক কেড়ে নিয়ে রাগী গলায় বলেন,
“এসব কি বাজে বকছ তুমি?”

“বাজে কোথায় বকছি? যা সত্যি তাই তো বলছি আমি!”

“তুমি সবার সামনে আমার আর তোমার ভাইয়ের সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিলে। তোমাকে তো আমি বলেছিলাম ধৈর্য ধরতে। এর কি খুব দরকার ছিল?”

“অবশ্যই৷ এটাই আমার রিভেঞ্জ।”

আজকে প্রেসের কিছু লোকজনও রুদ্র চৌধুরীর বার্থডে কভারেজ করতে এসেছিল৷ তারা রুদ্রকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে৷ তাদের প্রশ্নের ধরণ ছিল কিছুটা এরকম,
“আপনার ভাই রাহাত চৌধুরী কি ঠিক বলছে মিস্টার রুদ্র চৌধুরী? সত্যিই কি আপনি রাজীব চৌধুরীর অবৈধ সন্তান?”

রুদ্র ভীষণ রেগে গিয়ে সাংবাদিকের কলার চেপে ধরে বলে,
“আর একবার এই কথা উচ্চারণ করলে আমি তোর জিভ চিড়ে ফেলব।”

বলেই সে নিজের ঘরের দিকে রওনা দেয়৷ নিপুণও রুদ্রর পিছু পিছু যায়। রুদ্র ঘরে এসে দরজা বন্ধ করতে নিলে নিপুণ তাকে আটকে দেয়। রুদ্র আজ অনেক ভেঙে পড়েছে। সে আজ কাদো কাদো গলায় বলে,
“কেন এসেছ তুমি? আমায় অপমান করতে? আমার জন্মপরিচয় নিয়ে খোচা দিতে?”

“আমার মধ্যে মানবিকতা নামক একটা ব্যাপার আছে রুদ্র চৌধুরী। তাই আমার সম্পর্কে এমন ভাববেন না।”

রুদ্রর আচমকা কি হলো সে নিজেও জানে না। সে হঠাৎ করে নিপুণকে জড়িয়ে ধরে করুণ গলায় বলল,
“বিশ্বাস করো আমি অবৈধ সন্তান নই। আমার মাও কোন খারাপ চরিত্রের মহিলা নন। আমি রাজীব চৌধুরীর বৈধভাবে বিয়ে করা স্ত্রীর সন্তান। যেই স্ত্রীকে রাজীব চৌধুরী কখনোই স্বীকৃতি দেননি৷ যার কারণে আজ আমার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে!”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

তুমি ছিলে বলেই পর্ব-২৪

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ২৪
#দিশা_মনি

রুদ্র নিপুণের ঘরে তার জন্য খাবার নিয়ে এলো। নিপুণ মনমরা বসে ছিল। রুদ্র খাবার নিয়ে এসেই নিপুণের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আমি আপনার জন্য খাবার এনেছি। নিন, খেয়ে নিন।”

“আমি খাবো না। আপনি নিয়ে যান।”

“শোনো নিপুণ আমার কিন্তু অবাধ্যতা পছন্দ নয়। বেশি কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নাও। বাটিতে যেন একটুও খাবার পরে না থাকে।”

“আমি যদি না খাই তাতে আপনার কি? আপনি থাকুন না নিজের মতো। শুধু শুধু আমায় বিরক্ত করছেন কেন? আপনার জন্য তো আমার জীবনটা নরক হয়েই গেছে। আপনি আমার মাকে বন্দি করে রেখেছেন, আমার ভালোবাসার মানুষের থেকে আমাকে আলাদা করেছেন,আমার জীবনের সন স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছেন আর কি চান আপনি? শুধু আমার জীবন টাই তো দয়া ভিক্ষা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন। যেটার আমার কোন দরকার নেই। আপনার জন্য আমাকে নিজের আদর্শের সাথেও সেক্রিফাইজ করতে হয়েছে। আমি আর পারছি না এভাবে বাঁচতে এবার আমায় মুক্তি দিন।”

“আমি তো বলেছি সঠিক সময় এলেই তোমাকে মুক্তি দেব। তুমি চাইলেও আর তোমাকে আটকে রাখবো না তাহলে আমার কথা শুনছ না কেন তুমি?”

“কারণ আমার আপনাকে একটুও বিশ্বাস হয়না। আপনি একজন খু**নি, একজন অপরাধী।”

রুদ্র ভীষণ আঘাত পায় নিপুণের কথায়। আর কোন কথা না বাড়িয়ে সে নিজের মতো চলে যেতে নেয়। যাওয়ার আগে খুবই আকুতির সুরে বলে,
“খাবারটা খেয়ে নিয়েন। আমার উপর রাগ থেকে এভাবে না খেয়ে থাকবেন না।”

রুদ্র ঘর থেকে বেরোতে যাবে এমন সময় ইশা চলে আসে। ইশা রুদ্রকে দেখামাত্রই তাকে জড়িয়ে ধরে। অতঃপর চিৎকার করে বলে ওঠে,
“হ্যাপি বার্থ ডে আমার প্রিয় বন্ধু।”

হঠাৎ ইশার এমন আগমনে রুদ্র অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। নিপুণও ইশার পানে তাকায়। ইশা এভাবে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরেছে দেখে তার মনে অন্যরকম একটা অনুভূতি হয়। কেমন জানি রাগ অনুভূত হচ্ছিল তার। নিজেকে সামলে সে নিজেই নিজেকে বুঝ দেয়,
“ওনাকে কোন মেয়ে জড়িয়ে ধরল তাতে আমার কি! উনি একজন অপরাধী।”

রুদ্র ইশার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। অবাক চাহনিতে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুই কখন এলি ইশু?”

ইশা সামান্য হেসে বলে,
“এই তো একটু আগেই ঢাকা থেকে ফিরলাম। তারপর সোজা এখানে চলে এলাম। তুই তো আমাকে ভুলেই গেছিস রুদ্রা। আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিলি। তাই ভাবলাম জন্মদিনের দাওয়াতও বুঝি পাবো না। সেই জন্যই তো আমি নিজেই চলে এলাম বিনা দাওয়াতে।”

রুদ্র বলে ওঠে,
“সেরকম কিছু নয়। আসলে বিয়েটা এভাবে হঠাৎ করে হয়ে গেল যে বলার সুযোগই পাই নি। তাছাড়া আজ যে আমার জন্মদিন এটা আমার নিজেরই মনে ছিল না৷ তুই উইশ করার পর মনে পড়ল।”

“সে কি কথা! বিয়ের পর বউয়ের খেয়াল রাখতে রাখতে নিজের জন্মদিনের কথাই ভুলে গেলি তুই রুদ্রা! তা তোর বউ কোথায়?”

রুদ্র নিপুণের দিকে তাকায়। রুদ্রর সাথে সাথে ইশাও তাকায় সেদিকে। অতঃপর সে নিপুণের সামনে গিয়ে বলে,
“হ্যালো, আমি ইশা চৌধুরী। তোমার স্বামী রুদ্র চৌধুরীর একমাত্র বন্ধু+বেস্ট ফ্রেন্ড। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক কিন্তু অনেক গভীর। কিছু মনে করো না তোমাকে তুমি করেই বললাম। তোমার নামটা যেন কি?”

“নিপুণ।”

“ওহ আচ্ছা৷ তো যাইহোক, তুমি কেমন বউ হ্যাঁ? আমার বন্ধুর নাহয় নিজের জন্মদিনের কথা মনে নেই। তুমি তো ওকে মনে করিয়ে দিতে পারতে। নাকি নিজের স্বামীর জন্মদিনের কথা নিজেই ভুলে গেছিলে?”

নিপুণ কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই রুদ্র বলে ওঠে,
“ওর কোন দোষ নেই ইশু। আসলে ও অনেক অসুস্থ ছিল৷ তাই আমিও ওকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম।”

“অসুস্থ! আচ্ছা কোন ব্যাপার না। তুই কোন চিন্তা করিস না। আমি যখন এসে গেছি তখন তোর জন্মদিন অনেক বড় করে সেলিব্রেশন করব। তোর জন্মদিনের সব আয়োজনের দায়িত্ব আমার।”

“তোকে এত কিছু করতে হবে না। তুই এত দূর থেকে এলি এখন রেস্ট নে।”

“তা বললে কি করে হয়? আমার বন্ধুর জন্মদিন আর আমি রেস্ট নেব। সেটা তো হতে পারে না। শহরের এমপি রুদ্র চৌধুরীর বিয়ে বলে কথা। দেখবি আমি কত গ্রান্ড আয়োজন করি। এমন আয়োজন করব যে আজকের দিনটা তুই আজীবন মনে রাখবি।”

এটুকু বলেই রহস্যজনক হাসি দেয় ইশা।

★★★
রুদ্রর জন্মদিনের সব আয়োজন ইশা একা হাতে করেছে। রাজীব চৌধুরীর সাথে মিলে অনেক গেস্টদের ইনভাইটও করেছে। পুরো চৌধুরী বাড়ি আজ আলোকসজ্জায় সেজে উঠেছে। চারিদিকে উৎসবের আমেজ।

ঘরের এককোণে দাঁড়িয়ে আছে রাহাত। রাজীব চৌধুরী রাহাতের কাছে গিয়ে বলে,
“এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছ কেন? তোমার ভাইয়ের জন্মদিন তোমাকে এভাবে চুপচাপ থাকলে মানায়?”

“ঐ রক্ষিতার ছেলের জন্মদিনে আমি অংশ নেব না।”

“রাহাত! ভেবে চিন্তে কথা বলো। দেওয়ালেরও কিন্তু কান আছে।”

“তুমি ঐ রুদ্র চৌধুরীকে ভয় পেয়েই মরো। আমি তেমন নই। এখন যাও তো সামন থেকে।”

রাজীব চৌধুরী চলে আসেন।রাহাত বলতে থাকে ,
“আজ তোমার জন্মদিনের সেরা গিফট অপেক্ষা করছে রুদ্র চৌধুরী। আমার গায়ে হাত তুলেছিলে না? এবার এর ফল ভোগ করবে।”

ইশা নিপুণ ও রুদ্রকে নিয়ে আসে। তারপর রুদ্রর সামনে কেক আনা হয়৷ ইশা রুদ্রর হাতে কেক কা’টার নাইফ দিয়ে বলে,
“নে এবার মোমবাতিতে ফু দিয়ে কেকটা কা’ট।”

রুদ্র তাই করে। কেকের প্রথম অংশটা সে নিপুণকে খাওয়াতে যাবে তার আগেই ইশা সেটা নিয়ে খেয়ে নেয়। নিপুণের এটা মোটেই ভালো লাগে না। রুদ্রও ব্যাপারটা ভালো চোখে নেয় না। তবুও সবার সামনে নিজের বান্ধবীকে সে কিছুই বলে না। সবাই আনন্দের মুডে রয়েছে। একে একে সবাই এসে রুদ্রকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।

ইশা রুদ্র আর নিপুণের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আজ রুদ্রর জন্মদিন উপলক্ষে একটা ডান্স পারফারম্যান্স হয়ে যাক রুদ্রা এবং তার স্ত্রী নিপুণের।”

নিপুণ সরাসরি বলে দেয়,
“আমি ডান্স করব না।”

রুদ্র বলে,
“ও তো অসুস্থ।”

ইশা তখন বলে,
“কোন ব্যাপার না। আমি আছি তো। তুই আয় আমার সাথে ডান্স কর। ডিজে মিউজিক চালাও।”

Tere vaaste falak se main chaand laaunga
Solah satrah sitaare sang baandh laaunga
Tere vaaste falak se main chaand laaunga
Solah satrah sitaare sang baandh laaunga

Chaand taaron se kaho
Abhi thehrein zara
Chaand taaron se kaho
Ki abhi thehrein zara

Pehle ishq lada lun uske baad laaunga
Pehle ishq lada lun uske baad laaunga
Tere vaaste falak se main chaand laaunga
Solah satrah sitaare sang baandh laaunga

রুদ্র ইশাকে এভাবে নাচতে দেখে রেগে যায় নিপুণ। তার জেলাস ফিল হতে থাকে। সে আর সহ্য করতে না পেরে নিজের রুমে চলে যায়। নিপুণকে যেতে দেখে রুদ্রও তার পিছন পিছন যেতে থাকে।

এসব দেখে ইশা বাকা হেসে বলে,
“আগুন লাগানো কমপ্লিট। এবার জাস্ট ঘি ঢালা বাকি।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

তুমি ছিলে বলেই পর্ব-২৩

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ২৩
#দিশা_মনি

নিপুণ এখন মোটামুটি সুস্থ। তার শরীর এখন আগের থেকে অনেক ভালো আছে। সে এখন অনেকটাই আরাম বোধ করছে। সুস্থ হওয়ার পর সে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসেছে। অপেক্ষা করছে রুদ্রর আসার। অবশেষে নিপুণের আশা পূরণ করতে রুদ্র ফিরে আসে। নিপুণকে বসে থাকতে দেখে সে বলে,
“তুমি কি এখন সুস্থ বোধ করছ?”

রুদ্রর প্রশ্নে নিপুণ হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ায়। রুদ্র অনেকটা নিশ্চিত হয় নিপুণের সুস্থতার কথা শুনে। গত রাতে সে ভালো করে ঘুমাতেই পারে নি৷ নিপুণের অসুস্থতা তাকে একদম নাড়িয়ে রেখে দিয়েছিল। নিপুণ আচমকা রুদ্রের উদ্দ্যেশ্যে বলে ওঠে,
“আপনি আসলে কি চান?”

রুদ্র অবাক হয়ে বলে,
“আমি কি চাই মানে?”

“আপনাকে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না মিস্টার রুদ্র চৌধুরী। আপনি মানুষটা ভীষণ অন্যরকম। আমার চোখে আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্টতম একজন মানুষ। যে এক অসহায় মেয়েকে খু***ন করেছে, আমার মাকে অপহরণ করেছে, প্রতি মুহুর্তে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করেছে। এতটাই জঘন্য সে। সেইজন্য আপনি আমার ঘৃণার পাত্র। কিন্তু…”

রুদ্র অদ্ভুত ভাবে হাসে। অতঃপর নিপুণের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“রুদ্র চৌধুরীকে তুমি কখনোই চিনতে পারবে না নিপুণ। তাই চেনার চেষ্টাও করো না।”

নিপুণ রুদ্র চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আপনি আমায় বাঁচিয়ে রেখেছেন কেন বলুন তো? প্রজ্ঞার মতো আপনি তো আমাকেও মে*রে ফেলতে পারতেন।”

“এই ব্যাপারে তো আমি আগেই তোমাকে বলেছি।”

“আপনি যা বলেছেন তা ঠিক নয়। আপনি যদি সত্যিই আমায় কষ্ট দিতে চাইতেন এখানে এনে আমার উপর টর্চার করতেন। কিন্তু আপনি তো সেটা করেন নি। উল্টো আমাকে গু**ন্ডাদের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন, আমার জন্য নিজের ভাইকে আঘাত করেছেন, আমার জ্বর হওয়ায় সারারাত জেগে আমার সেবা করেছেন। এসব কিছু তো আপনার চরিত্রের সাথে যাচ্ছে না।”

“তাহলে আমার কি করা উচিৎ? তোমার উপর টর্চার করা উচিৎ?”

“আপনার চরিত্রের সাথে সেটাই পারফেক্ট। কিন্তু আপনি তো একদম ভিন্ন কিছু করছেন। আসলে আপনি চাইছেন টা কি বলুন তো?”

“যদি বলি তোমাকে আগলে রাখতে চাইছি তাহলে বিশ্বাস করবে তো আমার কথা।”

“না।”

রুদ্র আবারো অবোধ্য হাসি দেয়। বিনাবাক্য ব্যয়ে সে স্থান ত্যাগ করে। রুদ্র চলে যাবার পর নিপুণ দীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করে। তার কাছে এখনো সবকিছু অবোধ্যই রয়ে গেল।

★★★
কয়েক দিন পর,

স্নেহা তার বাবাকে নিয়ে গ্রামে ফিরে এসেছে। ইতিমধ্যে কুদ্দুস মিয়ার থেকে নেয়া টাকাও সে শোধ করে দিয়েছে৷ তাই তার উপর থেকে এখন সব ধরনের চাপ কমে আছে। স্নেহার বাবা আব্বাস খানও এখন অনেকটাই সুস্থ। বাড়িতে ফিরে তিনি এখন বিশ্রাম নিচ্ছেন।

স্নেহা তার বাবার জন্য তার ঘরেই খাবার নিয়ে আসে৷ স্নেহাকে খাবার নিয়ে আসতে দেখে তার বাবা তার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“তোর উপর দিয়ে নিশ্চয়ই এই কয়দিন খুব ঝড় গেছে। তাই না মা?”

স্নেহা মলিন হেসে বলে,
“হ্যাঁ, তা তো গেছেই। তোমার অসুস্থতার প্রতিটা মুহুর্ত , প্রতিটা ক্ষণ আমাকে যে মানসিক পীড়া দিয়েছে তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আমার বারবার মনে হচ্ছিল এই বুঝি তোমায় হারিয়ে ফেলব!”

“বুঝতে পারছি তুই আমার জন্য অনেক চিন্তায় ছিলি।”

“তা আর বলতে। কিন্তু এখন যে তুমি একদম সুস্থ হয়ে উঠেছ আমি তাতেই খু্শি। এবার দেখবে সব কিছু একদম ঠিক হয়ে যাবে।”

“আচ্ছা আমার অসুস্থতার খবর তোর চাচারা পায় নি? তারা কি একবার আমাকে দেখতেও আসেনি?”

স্নেহা এবার কোন ভনিতা ছাড়াই বলে দেয়,
“এসেছিল তো। তোমার ভাই এসেছিল তোমায় দেখতে।”

“কিন্তু দেখা করল না যে।”

“আব্বু, তুমি এই সত্যটা এবার মেনে নাও যে তোমার ভাই বদলে গেছে। শহরের হাওয়া লেগেছে তার গায়ে।”

আব্বাস খান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি অনেক দিন থেকেই বুঝতে পেরেছেন তাই ভাই তার থেকে দূরত্ব রেখে চলছে। হয়তো স্ট্যাটাস মিলছে না জন্য। তবে এখন তার একমাত্র চিন্তা নিজের মেয়েটাকে নিয়ে। স্নেহা তার নিজের মেয়ে হলেও বড় আদর করেছেন। কখনো স্নেহাকে তার আসল সত্যটা জানতে দেন নি যে স্নেহা তার নিজের মেয়ে নন। তিনি ভেবেও রেখেছেন স্নেহাকে কখনো সত্যটা জানতেও দেবেন না। তবে এখন তার চিন্তা স্নেহার ভবিষ্যত নিয়ে। নিজের অসুস্থতায় তিনি বড্ড বাজে ভাবে অনুভব করেছেন তাকে ছাড়া স্নেহা কতোটা অসহায়। তার শরীরের অবস্থা এখনো খুব বেশি ভালো না। যেকোন সময় যেকোন দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই আব্বাস খান চান তিনি জীবিত থাকা অবস্থাতেই স্নেহার হাত অন্য কারো হাতে তুলে দিতে। এজন্যই তিনি স্নেহার বিয়ের ব্যাপারে ভাবছেন। এই চিন্তা থেকেই তিনি স্নেহাকে বললেন,
“আচ্ছা স্নেহা, তোর তো বিয়ের বয়স প্রায় হয়েই গেছে। আমি যদি এখন তোকে বিয়ে দিতে চাই তোর কোন আপত্তি আছে?”

“না, আব্বু। আমার কোন আপত্তি নেই। আমি জানি তুমি যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটা আমার ভালোর জন্যই নেবে।”

“আমি যোগ্য পাত্র দেখে তার হাতে তোকে তুলে দেব।”

“কিন্তু আমি চলে গেলে যে তুমি একা হয়ে যাবে আব্বু।”

“তুই আমার চিন্তা করিস না স্নেহা। এবার তুই নিজের ভালো টা বুঝতে শেখ।”

★★★
রাজীব চৌধুরী রাহাতকে নিয়ে বাড়িতে ফিরল। রাহাতকে ফিরতে দেখে রুদ্র ভীষণ রেগে যায়। সে রেগে গিয়ে বলে,
“এই কুলাঙ্গারটাকে কেন ফিরিয়ে আনলে?”

রাজীব চৌধুরী কিছু বলতে যাবেন তার আগেই রাহাত বলে উঠল,
“আমার বাড়িতে আমি ফিরবো তাতে তোমার কি অসুবিধা ব্রো? ভুলে যেওনা এই বাড়িতে তোমার যতটা না অধিকার তার থেকে বেশি অধিকার আমার। কারণ আমি রাজীব চৌধুরীর বিয়ে করা বউয়ের সন্তান কোন রক্ষিতার নয়।”

রুদ্রের রাগ এবার মাত্রা ছাড়িয়ে গেল। এমনিতেই সে রাহাতের উপর রেগে ছিল। এই ঘটনা তার রাগ আরো বাড়িয়ে দিল। সে রাহাতের দিকে ছুটে গিয়ে তার নাক ব**রাবর ঘু**ষি মা**রল এরপর আরো প্রহার করতে যাবে তার আগেই রাজীব চৌধুরী তাকে থামিয়ে দিলো। রুদ্র হুংকার দিয়ে বলল,
“তুমি নিজের ছোট ছেলেকে সামলাও। দ্বিতীয় বার যেন ও আমার মায়ের ব্যাপারে এমন জঘন্য কথা না বলে। এমন বললে কিন্তু আমি ওকে একদম শে**ষ করে দেব। কারণ আসল সত্যটা তুমি আর আমি খুব ভালো করেই জানি। আমার মা কোন রক্ষি**তা ছিল না। তিনি ছিলেন..”

“আমি রাহাতকে সব বুঝিয়ে বলব রুদ্র। তুমি শান্ত হও। রাহাত আমার সাথে ঘরে চলো।”

এই বলে তিনি জোরপূর্বক রাহাতকে ঘরে নিয়ে যায়। এদিকে রুদ্র রাগে ফুসতে থাকে।

ঘরে এসেও রাগে ফুসতে থাকে রাহাত। রাজীব চৌধুরী রাহাতকে বলেন,
“তোমায় না বলেছিলাম বাড়িতে এসে কোন ঝামেলা না করতে। তুমি আমার কথা শুনলে না কেন?”

“তুমি চুপ করো ড্যাড। তুমি শুধু আমার উপরই রাগ দেখাতে পারো। আর নিজের বড় ছেলের সামনে একদম ভেজা বেড়াল। ও যে আমাকে কুলাঙ্গার বলেছে সেটা শুনতে পাওনি তুমি? এতকিছুর পরেও আমি চুপ থাকব? তুমি নিজের বড় ছেলেকে ভয় পেতে পারো কিন্তু আমি পাইনা। ও যেভাবে আমায় মে**রেছে আমার তো ইচ্ছা করছে ওকে মে**রে দিতে।”

“আহ, রাহাত। কাম ডাউন। এত রাগলে চলে? রুদ্রর সাথে সরাসরি লড়া যাবে না। ওকে কৌশলে ঘায়েল করতে হবে।”

“সেই কৌশলটাই তো আমি জানতে চাইছি।”

রাজীব চৌধুরী বাকা হেসে বলেন,
“কৌশল প্রস্তুত করে নিয়েছি।”

“কে সেই কৌশল?”

এমন সময়ই একটি মেয়ে ঘরে প্রবেশ করে বলে,
“আমি।”

রাহাত হতবাক হয়ে বলে ,
“ইশা তুমি! ড্যাড ও তো…”

রাজীব চৌধুরী বলেন,
“রুদ্রর বেস্ট ফ্রেন্ড ইশা। এবার ও আমাদের তুরুপের তাস হয়ে সাহায্য করবে।”

“কিন্তু ও তো ভাইয়ার ফ্রেন্ড ও আমাদের কেন সাহায্য করবে?”

ইশা বলে,
“এমনি এমনি করবো না। এইজন্য আমাকে আঙ্কেল আমার অনেক উইশ পূরণ করার প্রমিস করেছেন। যার অন্যতম হলো আজিজ চৌধুরীর ব্যবসার ধ্বংস।”

ইশা দীপ্রর দেওয়া থা**প্পরের কথা মনে করে। এবার সেই থা***প্পরের চরম মূল্য তাদের দিতে হবে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

তুমি ছিলে বলেই পর্ব-২২

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ২২
#দিশা_মনি

নিপুণ নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে আছে রুদ্রর পানে৷ এই লোকটা সত্যিই তাকে ভীষণ ভাবে অবাক করে দিচ্ছে৷ আজ তার সম্পূর্ণ নতুন এক চেহারা উন্মোচিত হয়েছে নিপুণের সামনে। আজ নিপুণ অসুস্থ জন্য রুদ্র নিজে তার সেবা করছে। এ যেন নিপুণের কাছে এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য।

কিছুক্ষণের মধ্যে ডাক্তার এলো। ডাক্তার এসে নিপুণের জ্বর মেপে বলল,
“ওনার গায়ে তো খুব জ্বর। যেই মেডিসিন গুলো লিখে দিচ্ছি এনে খাওয়ান ঠিক হয়ে যাবে।”

“এগুলো খেলেই কি ও ঠিক হয়ে যাবে?”

“হওয়ারই তো কথা। যাইহোক, আপনি কি ওনার মাথায় জলপট্টি দিয়েছেন?”

“জ্বি।”

“তাহলে ঠিক আছে৷ আশা করি এই ওষুধে কাজ হবে। ”

ডাক্তার প্রস্থান করল। রুদ্র নিপুণের কপাল আলতো করে হাত বুলিয়ে দেখে কপাল এখনো যথেষ্ট গরম। নিপুণের জন্য তার ভীতি চিন্তা হচ্ছিল। সে উঠে ওষুধ আনতে যাবে এমন সময় নিপুণ রুদ্রর হাত আটকে ধরল। আলতো স্বরে বলল,
“দয়া করে আমাকে ছেড়ে যাবেন না। আমার ভীষণ ভয় করছে।”

“তুমি ভয় পেয়ো না। আমি এখানেই আছি।”

★★★
নিজেদের বন্ধুদের সাথে হ্যাংগ আউট করে বাড়িতে ফিরল ইশা। ইশাকে বাড়িতে ফিরতে দেখে তার সৎমা মালিনী বেগম বলে উঠলেন,
“কোথায় গিয়েছিলে তুমি? আজ তোমাকে দেখতে আসছে ছেলের বাড়ি থেকে আজকের মতো একটা জরুরি দিনে তুমি কাউকে কিছু না বলে এভাবে বাইরে চলে গেলে কেন? তোমার কি কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই।”

ইশা ফুসে উঠে বলে,
“এই একদম চুপ। আমার উপর একদম দাদাগিরি করতে আসবে না। তোমাকে আমার বাবা কিন্তু আমার মা করে আনে নি এনেছে এই বাড়ির কাজের লোক করে। সেই কথা কিন্তু ভুলবে না।”

মালিনী বেগম চুপ করে যান। ইশার এইরকম ব্যবহারের জন্যই তার সাথে কথা বলতে যান না তিনি। ইশা মালিনী বেগমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার নাকে বিশ্রী একটা গন্ধ ভেসে আসে। মালিনী বেগম নাক চেপে ধরে বলেন,
“তুমি আজ আবার ড্রিংক করেছ?”

ইশা রেগে গিয়ে বলল,
“হ্যাঁ করেছি৷ তাতে তোর কি?”

“ইশা। ভদ্রভাবে কথা বলো। আমি তোমার গুরুজন হই।”

ইশা এগিয়ে এসে মালিনী বেগমের গলা টিপে ধরল। মালিনী বেগমের শ্বাস নিতে অসুবিধা হচ্ছিল। তিনি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকেন। ইশা যেন এই ঘটনায় পৈশাচিক আনন্দ পায়। আরো জোরে গলা টি*পে বলতে থাকে,
“নিজের ভালো চাইলে আমার ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করা থেকে বিরত থাকবি। নাহলে কিন্তু একদম জানে মে*রে দেব।”

কথাটা বলেই মালিনী বেগমের গলা ছেড়ে দেয় ইশা৷ অতঃপর এগিয়ে যেতে থাকে সামনের দিকে। মালিনী বেগম জোরে শ্বাস নিতে থাকেন। তিনি গোঙাতে গোঙাতে বলেন,
“এই মেয়েটা একদম নিজের বাবার মতো ভয়নাক হয়েছে। আমার তো ভীষণ ভয় হচ্ছে সেই বাড়ির জন্য যেখানে ও বউ হয়ে যেতে চলেছে!”

★★
দীপ্ররা সপরিবারে পৌঁছে গেছে ইশাদের বাড়িতে। ইশার বাবা ইমাম চৌধুরী তাদের সবাইকে আপ্যায়ন করছেন। মালিনী বেগমও উপস্থিত আছেন সেখানে৷

ইমাম চৌধুরী আজিজ খানের সামনে নিজের ধন-সম্পত্তি নিয়ে বেশ বড়াই করে চলেছেন। আজিজ খান সব চুপচাপ শুনছেন। তবে দিলারা খাতুন তো আর চুপ থাকার মানুষ নন। তিনিও ইমাম চৌধুরীর সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি নিয়ে বড়াই করে চলেছেন। তিনি বলছেন,
“আমাদের তো বাড়ি-গাড়ির কোন অভাব নেই। শহরে আমাদের দশটা বড় বাড়ি আছে, বিএমডব্লিউ আছে আটটা। সামনের বছর তো আমাদের ল্যাম্বরগিনি কেনারও কথা আছে।”

নিজের স্ত্রীর কথা শুনে কাশতে শুরু করলেন আজিজ খান। ইমাম চৌধুরী মিটিমিটি হাসতে লাগলেন। দীপ্র বলে উঠল,
“আহ, আম্মু। তুমি চুপ করো না।”

দিলারা খাতুন ফিসফিস করে বললেন,
“আমি কি ভুল কিছু বলে ফেললাম?”

দিশা তার প্রশ্নের জবাবে বলল,
“ভুল নয়তো কি? আমরা ল্যাম্বরগিনি কিভাবে কিনব মম? তোমার মাথা ঠিক আছে তো?”

দিলারা খাতুন নিজের এই বোকামিতে মনে মনে ভীষণ লজ্জা পেলেন। তবে নিজের দোষ স্বীকার করার মানুষ তিনি নন। তাই তো নিজের সাফাই গেয়ে বললেন,
“সে তো আমি এমনি কথার কথা বলেছি। কিন্তু আমাদের তো কম কিছু নেই। তাই না?”

ইমাম চৌধুরী মালিনী বেগমকে উদ্দ্যেশ্যে করে বললেন,
“যাও দেখো তো ইশা তৈরি হলো কিনা। ওনারা তো অনেকক্ষণ হলো এসেছেন৷”

মালিনী বেগম মাথা দুলিয়ে যেতে উদ্যত হলেন এমন সময় ইশা সেখানে এসে উপস্থিত হলো৷ তার পরনে কালো রঙের একটা সিল্কের শাড়ি। ভীষণ স্টাইলের সাথে সে এগিয়ে এসে নিজের বাবার পাশে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসল।

ইশার এই এটিটিউড দীপ্রর একদম ভালো লাগল না। এভাবে কেউ গুরুজনদের সামনে পায়ে পা তুলে বসে? দীপ্র বিরক্ত হলো খুব।

ইশাকে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে গেলেন দিলারা খাতুন। বিশেষ করে ইশার গা ভর্তি হিরার গহনা তাকে মুগ্ধ করে দিলো। তিনি ইশার প্রশংসা করে বললেন,
“বাহ, তোমাকে দেখতে তো ছবির থেকেও সুন্দর লাগছে।”

ইশা মৃদু হেসে বললো,
“ধন্যবাদ।”

ইমাম চৌধুরী নিজের মেয়ের প্রশংসা করে বলতে লাগলেন,
“আমার মেয়ে দেখতে যেমন সুন্দরী তেমনি অনেক ট্যালেন্টেডও। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছে। সেখান থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে৷ তবুও ও কিন্তু একদম সাধারণ বাঙালি মেয়ের মতোই। ও চায় সংসার করতে।”

“ভালোই তো। আমি আমার ছেলের জন্য এমন মেয়েই তো খুঁজছিলাম।”

ইশা হঠাৎ করে দিলারা খাতুনকে প্রশ্ন করে বলল,
“তা আপনার ছেলের এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন কি? মানে কোথায় পড়াশোনা করেছেন উনি?”

“ও তো ব্রাক ইউনিভার্সিটিতে পড়েছে।”

“রিয়্যালি? কেন বিদেশে পড়ার যোগ্যতা ছিল না বুঝি।”

দীপ্র এবার ভীষণ অপমানিত বোধ করে। সে আর সহ্য করতে না পেরে বলে,
“আমার যোগ্যতা কি সেটা আপনাকে জানতে হবে না। আম্মু তুমি চলো এখান থেকে আমি আর এক মুহুর্ত এখানে থাকতে চাই না।”

দিলারা খাতুন দীপ্রর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আরে তুই রেগে যাচ্ছিস কেন? ইশা নিশ্চয়ই মজা করছে। তাই না?”

ইশা সাফ বলে দেয়,
“ইশা চৌধুরী কখনো মজা করে না। আমি ভীষণ পরিমাণে স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড।”

দিশাও এবার দিলারা খাতুনের কানে কানে বলল,
“এই মেয়েকে তো আমার সুবিধার লাগছে না৷ কিভাবে ভাইয়াকে ইনসাল্ট করল। এখানে সম্মন্ধ না হলেই ভালো হবে।”

“তুই চুপ কর। এই মেয়ে আমাদের জন্য সোনার ডিম পাড়া হাস। একে হাতছাড়া করা যাবে না। একবার শুধু বিয়েটা হয়ে যেতে দে। তারপর দেখিস এই মেয়েকে আমি কিভাবে টাইট দেই। এখন নাহয় ওর এইসব একটু সহ্য করে নিলাম।”

ইশা দিলারা খাতুনকে এভাবে ফিসফিস করে কথা বলতে দেখে বলল,
“আপনার কি ফিসফিসানি রোগ আছে নাকি?”

দিলারা খাতুন ভীষণ অপমানিত বোধ করলেন। তবে সেটা প্রকাশ না করে বললেন,
“তেমন কিছু না।”

এরপর তিনি ইমাম চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্যে বললেন,
“তাহলে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলা যাক।”

দীপ্র, আজিজ খান, দিশা সবাই দিলারা খাতুনের এই বাড়াবাড়িতে প্রচণ্ড রকমের বিরক্ত হয়ে যায়। কিন্তু দিলারা খাতুন সেসব কিছু পরোয়া করেন না। এরমধ্যে ইশা বলে ওঠে,
“আমি আপনার ছেলেকে বিয়ে করবো কিন্তু একটা শর্তে।”

“কি শর্ত?”

“ওকে এই বাড়িতে ঘরজামাই হয়ে থাকতে হবে।”

দীপ্র বলে ওঠে,
“ব্যস, এবার সব সীমা পেরিয়ে গেছেন আপনি। আম্মু তুমি এখনই উঠবে নাকি আমরা তোমাকে এখানে ফেলেই উঠে যাব?”

দিলারা খাতুন কাচুমাচু মুখ করে উঠে দাঁড়ান। তারা বেরিয়ে যেতে ধরলে ইশা এগিয়ে এসে দিলারা খাতুনকে বললেন,
“যাওয়ার আগে যেই চা-নাস্তা খেলেন সেই বাটিগুলো পরিস্কার করে দিয়ে যান।”

দীপ্র বলল,
“আপনি কিন্তু আমাদের অপমান করছেন।”

“তোরা তো এটারই যোগ্য। কি ভেবেছিস কি তোরা? তোদের ব্যাপারে আমি কোন খোঁজ নেই নি? ছিলি তো ফকিরের ঘরের ফকিন্নি৷ তারপর ভাগ্যক্রমে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিস। তোদের তো আমাদের মতো এমন খানদানি ব্যাপার স্যাপার নেই। ছোটলোক সবসময় ছোটলোকই থেকে যায়।”

দিলারা খাতুন ভীষণ অপমানিত হলেন। তার চোখে জল চলে এলো। আজিজ খান বলে উঠলেন,
“ভদ্রভাবে কথা বলো।”

“এই বুড়ো চুপ থাক। তোকে কে কথা বলতে বলেছে?”

ইশার এই ব্যবহারে ইমাম চৌধুরীও বিব্রত হন। মালিনী বেগম অবাক হন না। কারণ ইশার থেকে এর থেকে বেশি কিছু আশা করা যায়না। দিলারা খাতুন হঠাৎ করে পা তাল সামলাতে না পেরে পাশের একটি ফুলদানির সাথে ধাক্কা খান। তার হাত লেগে ফুলদানি মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়। ইশা এটা দেখে চিৎকার করে বলে ওঠে,
“শা**লীর ঘরের শা**লী এটা কি করলি তুই? আমার প্রিয় ফুলদানি ভেঙে দিলি। জানিস আমি লন্ডন থেকে এনেছিলাম এটা। এটার জন্য ৫০ হাজার টাকা দিয়ে যা।”

দীপ্র ইশার গালে ঠাস করে চ’ড় বসিয়ে দেয়। ইশা গর্জে বলে ওঠে,
“তোর এত বড় সাহস তুই আমার গায়ে হাত তুললি? ইশা চৌধুরীর গায়ে। এবার দেখ এর পরিণাম কত ভয়ানক হয়।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

তুমি ছিলে বলেই পর্ব-২১

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ২১
#দিশা_মনি

স্নেহা তার ১৫ লাখ টাকা ফেরত পেল। তার মনে শান্তি যেন ফিরে এলো। এখন টাকা ব্যবহার করেই সে দীপ্রর কাছ থেকে নেয়া ঋণের টাকা ফেরত দেবে। একইসাথে কুদ্দুস মিয়ার টাকাও সে এখন ফেরত দিতে পারবে। টাকা হাতে পেতেই স্নেহা রওনা দিল দীপ্রদের বাড়িতে। আজ সর্বপ্রথম সে দীপ্রকে টাকাটা ফেরত দেবে। সে চায়না তাদের কাছে কোন ঋণ রাখতে যা নিয়ে তারা পরবর্তীতে কথা শোনানোর সুযোগ পায়।

এদিকে দীপ্রদের বাড়িতে সাজ সাজ রব। আজ দীপ্ররা সপরিবারে ইশাদের বাড়িতে যাবে। দিলারা খাতুনের খুশি আজ আর ধরে না। সব কিছুর তদারকি আজ তিনিই করছেন। স্নেহা দীপ্র দের বাড়িতে এসে কলিং বেল চাপলো। তার কিছু সময় পর দিলারা খাতুন এসে দরজা খুলে দিলেন। স্নেহাকে দেখে তিনি চরম বিরক্তি নিয়ে বললেন,
“তুমি আবার এসেছ আমাদের বাড়িতে। তোমার কি কোন লজ্জা নেই?”

“দীপ্র ভাইয়াকে ডেকে দিন। আমার ওনার সাথে কথা আছে।”

“কি কথা আছে আমার ছেলের সাথে হ্যাঁ? আমি কিছু বুঝি না ভেবেছ? নিশ্চয়ই আবার ওর কাছে হাত পাতবে। শোনো আমার ছেলে দাতা হাতিম নয় যে তোমাকে সবসময় সাহায্য করবে। এখন দূর হও তো।”

এরইমধ্যে দীপ্র সেখানে উপস্থিত হয়ে যায়। সে বলে ওঠে,
“কি হয়েছে আম্মু? এত চেচামেচি করছ কেন?”

“এই দেখ না, এই মেয়েটা আজ আবার সাহায্য চাইতে চলে এসেছে। কি মনে করেছে টা কি বুঝতে পারছি না।”

স্নেহা দীপ্রর সামনে এসে তার হাতে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দিয়ে বলে,
“আমি কোন সাহায্য চাইতে আসিনি। আপনাদের থেকে যে ৫ লাখ টাকা নিয়েছিলাম তা ফেরত দিতে এসেছি। আমরা আপনাদের মতো এত ধনী নই ঠিকই কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমাদের কোন আত্মসম্মান নেই। বারবার লোকের কাছে হাত পাতি না আমরা।”

বলেই স্নেহা চলে যেতে উদ্যত হয়৷ দীপ্র তাকে পিছু ডেকে বলে,
“এত টাকা হঠাৎ কোথায় পেলি তুই?”

দিলারা খাতুন বলে উঠলেন,
“বুঝতে পারছিস না? এসব মেয়েদের কি ব্যবসার অভাব আছে নাকি? জার**জ মেয়েরা আর কত ভালো হবে।”

স্নেহা আজ আর সহ্য করতে পারলো না। দিলারা খাতুনের উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“আপনি নিজের মুখে লাগাম লাগান চাচি। আপনি যদি আপনার বড় না হতেন তাহলে আমি…”

“তাহলে কি করতে তুমি? দেখেছিস দীপ এই মেয়ে আমাদের বাড়িতে এসে আমাদেরই হুমকি দিচ্ছে।”

স্নেহা দিলারা খাতুনের এমন ব্যবহারে ভীষণ রেগে যায়। সে রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,
“একজন নারী হয়ে আপনি আমার সম্পর্কে যে ধরণের মন্তব্য করেছেন তা শোভনীয় নয়। আপনি নারী জাতিকে কলংকিত করেছেন। তবে কি জানেন তো এই পৃথিবীতে কোন কিছুর প্রতিবাদ থেকে আমরা বঞ্চিত হই না। ভালো কাজের যেমন ভালো ফল পাই তেমনি খারাপ কাজের পরিণামও আমাদের ভোগ করতে হয়। আজ আপনি আমাকে যেভাবে অপমান করলেন দেখবেন একদিন আপনাকে এর থেকেও হাজারগুণ বেশি অপমানের শিকার হতে হবে।”

“তোমার তো সাহস কম নয়। আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমাকেই অভিশাপ দিচ্ছ। এক্ষুনি বের হও।”

“যাচ্ছি আমি। আপনাদের বাড়িতে থাকার জন্য তো আর আসিনি।”

বলেই স্নেহা বেরিয়ে যায়। স্নেহা চলে যেতেই দিলারা খাতুন দীপ্রর সামনে নাটক করে বলতে লাগলেন,
“দেখলি তো ঐ মেয়ের কি দুঃসাহস। আমাকে কিভাবে অপমান করল। তুই ওকে কিছু বললি না কেন?”

“আমি কেন কিছু বলব আম্মু? তোমার কি দরকার ছিল ওকে এমন জঘন্য কথা বলার? একটা মেয়ের কাছে তার চরিত্র কতটা গুরুত্বপূর্ণ তুমি জানো না? কারো সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে একটু ভেবে তো নাও। শুধু শুধু ব্যাপারটাকে অতিরঞ্জিত করছ কেন?”

“ওহ, এখন তো সব দোষ আমার। আমি তো সব দোষ করেছি। তুই শুধু আমার দোষটাই দেখলি আর ঐ মেয়ে যে আমাকে এত কিছু বলল সেটা কিছু না?”

“আম্মু এখন আমরা একটা যায়গায় যাচ্ছি। এখন কি এসব ঝামেলা না করলেই নয়? তুমি আর আমাকে এব্যাপারে কিছু বলো না। আর পারলে নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করো। সবসময় এত বাড়াবাড়ি ভালো লাগে না।”

★★★
হাসপাতালের করিডোরে উদ্বিগ্নতার সাথে পায়চারি করছেন রাজীব চৌধুরী। ভিতরে রাহাতের চিকিৎসা চলছে। একজন ডাক্তার বাইরে এলে তিনি এগিয়ে গিয়ে তাকে শুধান,
“আমার ছেলের অবস্থা এখন কেমন?”

“আগের থেকে বেটার। তবে ক্ষতগুলো বেশ গভীর। ঠিক হতে সময় লাগবে৷ দেখে মনে হচ্ছে কেউ খুব বা’জে ভাবে পি**টিয়েছে। কিন্তু ওনার এই অবস্থা হলো কিভাবে?”

রাজীব চৌধুরী থতমত খেয়ে যান৷ সত্যিকারের ঘটনা তো এভাবে সবার সামনে বলা যাবে না। তাই তিনি বললেন,
“কলেজে মা**রামারি করতে গিয়ে এই হাল।”

★★
নিপুণ থম মে**রে বসে আছে বেলকনিতে। তার মধ্যে আজ একটু অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। কিছুই ভালো লাগছে না৷ এরমধ্যে হঠাৎ করে সে ভীষণ শীত অনুভব করতে লাগল। মাথাও ভীষণ ব্যাথা করছিল৷ তাই সে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। তার শরীরের উষ্ণতা বাড়তে লাগল। নিপুন বুঝতে পারল তার জ্বর এসেছে। গত কয়দিন থেকে তার উপর দিয়ে যা স্ট্রেস যাচ্ছে তাতে এমন হওয়াই স্বাভাবিক। নিপুন কম্বল গায়ে টেনে নিয়ে গোঙাতে লাগল। কিছু সময় পর রুদ্র ঘরে এলো। নিপুণকে এভাবে গোঙাতে দেখে সে হতবাক হয়ে গেল। ছুটে গিয়ে টেনে বসল নিপুনের পাশে৷ নিপুনের মাথায় হাত দিয়েই সে বুঝতে পারল তার জ্বর এসেছে। রুদ্র ভীষণ অস্থির হয়ে উঠল। দ্রুত ডাক্তারকে ফোন করে খবর দিল। শুধু ডাক্তারকে দেখেই ক্ষান্ত হলো না সে। নিজে নিপুনের মাথায় জলপট্টি করতে লাগল। নিপুন এমতাবস্থায় গোঙাতে গোঙাতে বলছিল,
“আমায় মুক্তি দিন। আমায় যেতে দিন এখান থেকে। আমার একটুও ভালো লাগছে না।”

রুদ্র নিপুনের মাথায় চরম আবেশে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“আর বেশিদিন তোমায় অপেক্ষা করতে হবে না। আমি নিজে থেকেই তোমায় মুক্তি দেব। কিন্তু তার আগে যে আমার অনেক জরুরি কাজ বাকি আছে।”

★★★
রাজীব চৌধুরী রাহাতের পাশে এসে বসলেন। অনেক আগেই রাহাতের জ্ঞান ফিরেছে। রাহাত নিজের বাবাকে কপট রাগ দেখিয়ে বলতে লাগল,
“তুমি এতকিছুর পরও চুপ করে থাকবা ড্যাড? ভাইয়ার বাড়াবাড়ি কিন্তু এবার চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে৷ ও কিনা শেষপর্যন্ত একটা বাইরের মেয়ের জন্য আমাকে এভাবে মা**রল। এজন্যই সবাই বলে পর কখনো আপন হয়না।”

“রাহাত! কি বলছ তুমি এসব?”

“ঠিকই তো বলছি আমি। ঐ রুদ্র চৌধুরী তো আমার নিজের ভাই নয়। তোমার রক্ষিতার মেয়ে ও। অথচ আমি তোমার বিয়ে করা বউয়ের ছেলে হলেও তুমি আমার থেকে বেশি ওকে গুরুত্ব দাও। এজন্যই তো নিজের পরে ওকে এমপি বানিয়েছ।”

“আর কোনদিন যেন তোমার মুখে আমি এমন কথা না শুনি। তোমরা দুজনেই আমার সন্তান। আমার কাছে তোমরা দুজনেই সমান।”

“যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে তুমি ভাইয়াকে কেন সবসময় সমীহ করে চল? ওর এত বাড়াবাড়ি কেন সহ্য করো।”

“সব সময় এত উত্তেজিত হয়ে থাকলে হয় না। রুদ্র ঠান্ডা মাথায় কাজ করে সবসময়। আজ যদিওবা যা করেছে সেটা রাগের মাথায় ছিল। যাইহোক, এই ব্যাপারটা সামলাতে হলে আমাদেরও ঠান্ডা মাথায় চাল চালতে হবে।”

“কি করবো টা কি তাহলে আমরা?”

“আমি ইতিমধ্যেই সব প্ল্যান সাজিয়ে নিয়েছি। তুমি শুধু একবার সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে চলো তাহলেই সব দেখতে পারবে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

তুমি ছিলে বলেই পর্ব-১৯+২০

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ১৯+২০
#দিশা_মনি

নিপুণকে টানতে টানতে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে রুদ্র। অতঃপর তাকে ছু’ড়ে মা’রে বিছানায়৷ নিপুণ কিছু বলার চেষ্টা করতেই রুদ্র ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। নিপুণ এবার একটু ভয় পেয়ে যায়। তার মনে হয় আজ রুদ্র হয়তো তার সাথে খুব খারাপ কিছু করতে চলেছে। এই জন্য নিপুণ কিছু দূরে অবস্থান করা একটা ফুলদানি দেখে রাখে। রুদ্র সর্ব প্রথমে সেই ফুলদানিটাই তুলে আছাড় মা’রে। নিপুণ ঘাবড়ে যায়৷ রুদ্র গর্জে উঠে বলে,
“এসব চিন্তা ভাবনা একদম মাথায় এনো না।”

“আপনি কি করে বুঝলেন আমি ভাবছি?”

“আমি তোমার মতো নির্বোধ নই৷ তাই অন্যের মনের কথা বুঝতে বেশি সমস্যা হয়না। আমি এটাও জানি তুমি মনে মনে কি ভাবছিলে আমার সম্পর্কে। তাহলে খুব ভালো করে শুনে রেখো, রুদ্র চৌধুরী আর যাই হোক নারী লোভী নয়৷ রুদ্র চৌধুরী মেয়েদের সম্মান করতে জানে।”

নিপুণ উপহাসের সুরে ব্যঙ্গ করে বলে,
“সেটা তো আমার নিজের চোখেই দেখা। মেয়েদের সম্মান করেন জন্যই তো একটা ধ*-তা মেয়ের ন্যায়বিচারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ সেইজন্যই তো একটা নিরপরাধ মেয়েকে খু* ন করেছেন।”

“আমরা নিজের চোখে সব সময় যা দেখি তা সত্য নাও হতে পারে।”

রুদ্রর এমন কথায় নিপুণ ভাবনায় পড়ে যায়। এই কথার দ্বারা কি বোঝাতে চাইল রুদ্র? নিপুণকে ভাবনার মধ্যে রেখেই রুদ্র দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেলো৷ যাওয়ার আগে জোরে শব্দ করে বাইরে থেকে দরজা নক করে দিয়ে বলল,
“তুমি আজ যা করলে তার ফল তোমায় ভোগ করতেই হবে। আজ থেকে তুমি এই ঘরের চার দেয়ালে বন্দি থাকবে।”

রুদ্র চলে যাওয়ার পর নিপুণ বিছানায় বসে পড়ে। রাগে জেদে তার মাথা ফে’টে যাচ্ছিল। আবার রুদ্রর বলা কথাও তাকে ভাবাচ্ছিল। এত সব কিছুর পরে গিয়ে নিপুণ একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হলো। সে বলল,
“আমি এই রুদ্র চৌধুরীকে বিন্দু মাত্র বিশ্বাস করি না। খুব শীঘ্রই আমি ওনার সকল চক্রান্তের জাল ছি’ড়ে বের হবো৷ আর এটাই এখন আমার জীবনের উদ্দ্যেশ্য।”

★★★
স্নেহা আজ বেশ খুশি মনে রয়েছে। তার এই খুশির যথেষ্ট কারণও আছে৷ প্রথমত তার বাবা এখন অনেকটাই সুস্থ। ডাক্তার বলেছেন ওনার জীবনের ঝুঁকি কে’টে গেছে। আপাতত এখনো ওনার জ্ঞান ফেরেনি। তবে ডাক্তারের ভাষ্যমতে খুব শীঘ্রই ওনার জ্ঞান ফিরবে। স্নেহার খুশির দ্বিতীয় কারণ অনুপম এখন পুলিশের জিম্মায়। শুধু তাই নয় পুলিশ অনুপমের থেকে সে স্নেহার থেকে প্রতারণা করে যেই টাকা গুলো নিয়েছিল সেগুলোও উদ্ধার করেছে। একটু আগে তাকে ফোন করে টাকা গুলো নিতে ডাকল তারা। সব কিছুর জন্য স্নেহা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করতে ব্যস্ত। এমন সময় হঠাৎ করেই হাসপাতালে এসে উপস্থিত হলেন আজিজ খান। আজিজ খানকে দেখেই স্নেহা দাঁড়িয়ে পড়ে৷ আজিজ খান ছুটে এসে স্নেহাকে বলেন,
“শুনলাম আব্বাস নাকি অসুস্থ! কি হয়েছে ওর?”

স্নেহা বলে,
“আব্বার হার্টে কিছু সমস্যা ছিল। অপারেশন হয়ে গেছে এখন উনি একদম সুস্থ।”

“যাক জেনে খু্শি হলাম। আসলে আমি কিছু জরুরি কাজে ঢাকায় গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরেই আব্বাসের ব্যাপারে জানতে পেরে ছুটে চলে এলাম। যাইহোক, তোমার যদি কোন সাহায্য লাগে তাহলে বলতে পারো আমি সাহায্য করব।”

“তার কোন দরকার নেই চাচা। আমার আব্বুর চিকিৎসার ভার আমি নিজেই বহন করতে পারব। হ্যাঁ, ওনার অপারেশনের সময় নিরুপায় ছিলাম জন্য দীপ্র ভাইয়ার থেকে টাকা নিতে হয়েছিল তবে সেই টাকাটাও আমি শীঘ্রই ফেরত দেব।”

“তুমি এভাবে বলছ কেন? আব্বাস তো আমার নিজের ভাই। ওর বিপদে যদি আমি সাহায্য করি তাহলে অসুবিধা কোথায়?”

“অসুবিধা আমাদের কারো নেই। অসুবিধা তো আপনার স্ত্রীর।”

“দিলারার ব্যবহারের ব্যাপারে শুনেছি আমি। এজন্য আমি সত্যি অনেক দুঃখিত। কিন্তু ওর এমন ব্যবহারের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।”

“কারণটা আমি তাই তো?”

আজিজ খান কোন কথা বললেন না। স্নেহা এক নিঃশ্বাসে বলতে শুরু করল,
“আমার মতো একটা অনাথ শিশুকে অনাথ আশ্রম থেকে তুলে এনে মানুষ করেছেন আমার বাবা। এটাই ওনার অপরাধ তাই তো? এই জন্যই বোধহয় ওনার জীবন মৃত্যুর লড়াই চলছে জেনেও আপনার স্ত্রী আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল।”

আজিজ খান আবারো নিশ্চুপ হয়ে যান। স্নেহা কিছুটা দম নিয়ে বলে,
“আমার সাথে আপনার স্ত্রী যদি খারাপ ব্যবহার করতো তো সেটা আমি মেনে নিতাম কিন্তু উনি যেটা করেছেন সেটা আমি কখনো ক্ষমা করতে পারব না। উনি একজন অমানুষের মতো আচরণ করেছেন। উপরে যদি একজন আল্লাহ থাকেন তো তিনি এর উপযুক্ত বিচার করবেন। আমি সব বিচার তার উপরেই ছেড়ে দিয়েছি। আর হ্যাঁ, আপনি এটা জেনে রাখবেন অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহ্য করে দুজনেই কিন্তু সমান অপরাধী। আপনি তো আপাতদৃষ্টিতে কোন কিছু করেন নি। কিন্তু নিজের স্ত্রীর অন্যায়ে কোন প্রতিবাদ না করে আপনি তাকে অন্যায় করার সাহস প্রদান করেছেন। আপনি যদি নিজের স্ত্রীর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতেন তাহলে আজ উনি এতটা নিচে নামতে পারতেন না। যাইহোক, এই নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না। আপনি নিজের ভাইকে দেখতে এসেছেন সেখানে তো আমি আর বাধা দিতে পারি না। আপনি যান আপনার ভাইকে দেখে আসুন। আর পারলে নিজের স্ত্রীকে একটু সামলান। একজন প্রকৃত পুরুষ অবশ্যই তার ঘরের নারীকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।”

স্নেহার বলা কথা গুলো শুনে অপমানিত বোধ করলেন আজিজ খান। তিনি আর এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করলেন না৷ দ্রুত বেগে হেটে চলে গেলেন। তাকে যেতে দেখে স্নেহা কিছু বলল না। কারণ সে জানত এমন কিছুই হবে। স্নেহা মনে মনে ব্যাঙ্গাত্মক হাসল। আর স্বগোতক্তি করে বলল,
“আমি খুব ভালো করেই জানতাম চাচা আপনি আজ আব্বুকে দেখতে আসেন নি। আপনি জাস্ট ফর্মালিটি দেখাতে এসেছিলেন। কিন্তু এসব লোক দেখানো ফর্মালিটির না আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। আমরা এসবে অভ্যস্ত নই।”

★★★
রাত্রিকাল। চারিদিকে শীতের আমেজ বইছে৷ এরইমধ্যে চার দেয়ালের মাঝে বিরক্তিকর সময় পার করছে নিপুণ। তার আজ তাই কিছুই ভালো লাগছে না। নিপুণ যখন চার দেয়ালের মাঝে অলস সময় পার করছিল ঠিক এমন সময় হঠাৎ করে রুদ্র দরজা খুলে ঘরের মধ্যে চলে আসে। রুদ্রকে দেখে উঠে দাঁড়ায় নিপুণ। রুদ্র নিপুণের কাছে এসে তার হাত ধরে বলে,
“এসো আমার সাথে।”

নিপুণ কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিপুণের হাত ধরে টানতে টানতে তাকে নিয়ে নিচতলায় চলে আসে রুদ্র। দ্রুত বেগে নিয়ে আসার কারণে নিপুণের হোচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়৷ সেই সময় রুদ্র নিপুণকে সামলে নেয়। অতঃপর স্বাভাবিক গতিতে নিপুণকে নিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামে রুদ্র। নিচে রাহাত চৌধুরী ও রাজীব চৌধুরী দাঁড়িয়ে ছিলেন। রাজীব চৌধুরী রুদ্রকে দেখামাত্রই বিরক্তির ভঙ্গিতে বলে ওঠেন,
“বলো কি রাজকার্য করতে ডেকেছ আমাদের।”

রুদ্র নিপুণের হাত ছেড়ে দিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। রাহাতের সামনে এসে তার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায়। রাহাত ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে ঢোক গিলতে থাকে সে। রুদ্র নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। তার চোখে যেন আগুন জ্বলছে। রুদ্র আচমকাই ঠা’স করে চ’ড় বসিয়ে দেয় রাহাতের গালে। অতঃপর জোরে চিৎকার করে বলে ওঠে,
“এত সাহস কোথায় পেলি তুই?”

“তুমি আমায় মারলে ব্রো!”

“হ্যাঁ। কেন মা’রটা লাগেনি বুঝি? আরেকটা দেই?”

রাজীব চৌধুরী রুদ্রকে ধমকে বলেন,
“তুমি কোন সাহসে আমার ছেলের গায়ে হাত তুললে?”

“ও তোমার ছেলে জন্যই শুধু একটা থা’প্পরেই সীমাবদ্ধ থাকলাম। অন্য কেউ হলে বুঝিয়ে দিতাম।”

রাহাত চেচিয়ে বলে,
“কিন্তু আমার গায়ে হাত কেন তুললে সেটা তো বলো?”

“আজ যখন নিপুণ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় তখন তো তুই দেখেছিলি তাহলে আমায় ইনফর্ম করিস নি কেন?”

রাহাত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে৷ সে ভেবেছিল হয়তো রুদ্র জেনে গেছে সেই নিপুণকে মা*রার চক্রান্ত করেছিল। রাহাত এবার একটু অভিনয়ের ভঙ্গিমা করে বলে,
“আমার কি দোষ ব্রো? নিপুণ আই মিন ভাবিই তো আমায় বলল যে তুমি নাকি ওনাকে অনুমতি দিয়েছ যাবার।”

“তুই কি ছোট বাচ্চা যে তোকে যা বলল তাই বিশ্বাস করে নিয়েছিস। শেষ অব্দি আমায় বাড়ির কাজের লোক মারফত জানতে হলো যে নিপুণ বাড়ি থেকে বেরিয়েছে৷ যদি আজ আমি সঠিক সময় সবটা জানতে না পারতাম তাহলে নিপুণের কত বড় বিপদ হয়ে যেত তুই জানিস না।”

রাহাত মনে মনে বলে,
“সেটাই তো আমি চাইছিলাম। কিন্তু তোমার বউয়ের ভাগ্যটা খুব ভালো তাই আজকের মতো বেঁচে গেল। তবে দ্বিতীয় বার সুযোগ পেলে আর এই ভুল করব না। ওকে একেবারে জা*নে মে**রে দেব।”

এরইমধ্যে হঠাৎ রুদ্রর ফোন বেজে ওঠে। রুদ্র ফোনটা রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে তার বডিগার্ড বলে ওঠে,
“স্যার, যেই গুন্ডাগুলো ম্যাডামকে মে*** রে ফেলার চেষ্টা করেছিল তাদের আমরা উদো**ম কে**-লানি কিলিয়েছি। আপনার কথা মতো আমরা ওদের উপর সব রকমের টর্চা চালিয়েছি এবং অবশেষে ওরা স্বীকার করেছে কে ওদের এই কাজের জন্য হায়ার করেছে।”

“কে সে?”

“…”

“কি হলো চুপ করে আছিস কেন? বল কে সে।”

“জানি না সত্য নাকি মিথ্যা কিন্তু ওদের ভাষ্যমতে আপনার ভাই রাহাত চৌধুরী ওদেরকে এই কাজ করতে বলেছিল। আমরা ওদের অনেক বার জেরা করছি, অনেক রকম ভাবে টর্চার করছি কিন্তু ওরা এই একটা কথাই বলছে।”

রুদ্র চৌধুরী খুবই শান্ত ভাবে নিজের কান থেকে ফোনটা নামিয়ে রাখে। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় রাহাতের দিকে। রাহাত কিছুই বুঝতে পারছিল না। রাহাত কিছু বুঝে ওঠার আগেই রুদ্র রাহাতের প্যান্টের বেল্ট টেনে খুলে নেয়। অতঃপর রাহাতকে নির্মমভাবে আঘাত করতে শুরু করে। রাহাত যন্ত্রণায় আর্তনাদ করতে থাকে। রাজীব চৌধুরী, নিপুণ দুজনই একদম হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।

রাজীব চৌধুরী রাহাতকে রক্ষা করতে গেলে রুদ্র গর্জে উঠে বলে,
“তুমি একদম এর মাঝে ঢুকবে না। নাহলে কিন্তু আমি ভুলে যাব যে তুমি আমার বাবা।”

রাজীব চৌধুরী পিছিয়ে যান। নিজের শান্ত ছেলেটার এই রূপ তার কাছে বড্ড অচেনা। রুদ্রর এই রুদ্রমূর্তি কখনো দেখেননি তিনি। রুদ্র ছোট থেকেই শান্ত স্বভাবের। যদিওবা কখনো খুব রেগে গেছে কিন্তু কখনো এভাবে রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় নি। সর্বদা শান্ত মাথায় সব সামলেছে৷ তাহলে এখন হঠাৎ কি এমন হলো যে রুদ্র এইরকম করল?

রাজীব চৌধুরীর এই প্রশ্নের উত্তর পেতে দেরি হলো না। রুদ্র রাহাতকে মা*** রতে মা*** রতে বলতে লাগল,
“তোর সাহস কিভাবে হলো আমার নিপুণকে মে**রে ফেলার চেষ্টা করার। আজ আমি তোকে মে*রেই ফেলব। নিপুণকে মা**রবি না তুই। আমার নিপুণকে মা***রবি।”

এই বলে রাহাতকে মা**রতেই থাকে। একপর্যায়ে নিপুণ এগিয়ে এসে রুদ্র চৌধুরীকে থামানোর চেষ্টা করে। সে বলে,
“ছাড়ুন ওকে। নাহলে ও মরে যাবে।”

“যাক মরে। ওর এটাই প্রাপ্য। ও কিভাবে এত সাহস দেখাল? রুদ্র চৌধুরীর বউকে মা**রার পরিকল্পনা করল কিভাবে ও? এর পরিণাম ওকে পেতেই হবে।”

“ও ভাই হয় তোমার রুদ্র।”—(রাজীব চৌধুরী।)

রুদ্র আরো নৃশংস ভাবে মা*রতে থাকে। আর কোন উপায় না দেখে নিপুণ রুদ্রর হাত থেকে বেল্টটা নেওয়ার চেষ্টা করে বলে,
” ও আমায় মা**রলে আপনার কি? আপনিও তো এটাই চান যে আমি মরে যাই।”

রুদ্র এবার নিপুণের উপর চড়াও হয়। নিপুণের দিকে এগোতে এগোতে বলে,
“এমনটা চাই বুঝি আমি? এমন টা চাই বলেই বোধহয় তোমাকে এত কষ্ট করে বাঁচিয়ে রেখেছি?”

নিপুণও ধীরে ধীরে পেছোতে থাকে৷ এই সুযোগে রাজীব চৌধুরী তার কিছু স্টার্ফদের ডাকে। অতঃপর রাহাতকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়। রাহাতের পুরো শরীর রক্তে একদম একাকার। ফ্লোর ভেসে গেছে রক্তের স্রোতে।

রুদ্র চৌধুরী হনহন করে নিজের রুমের দিকে যায়। নিপুণও যায় তার পেছনে। রুদ্র নিপুণকে নিজের পেছনে আসতে দেখে বলে,
“আমার সাথে এসো না। আমাকে কিছু সময় একা থাকতে দাও। আর হ্যাঁ, বাড়ি থেকে পালানোর বৃথা চেষ্টা করো না। বাইরে আমি সিকিউরিটি গার্ড রেখেছি। আজ থেকে তুমি এই বাড়ির মধ্যেই বন্দি। আমার বন্দিনী তুমি।”

“আপনি একটা পশু। নিজের ভাইকে কিভাবে পশুর মতো মা**রলেন। এই সবই আপনার নাটক তাই না? এসব করেই বুঝি আমাকে ভোলাতে চাইছেন।”

“হ্যাঁ, সব আমার নাটক। এখন যাও তুমি আমার সামনে থেকে।”

রুদ্র চৌধুরী নিপুণকে পেছনে ফেলে চলে যায়। রুদ্র চৌধুরী চলে যাবার পর নিপুণ ভাবনায় পড়ে যায়। আজ এক অন্য রুদ্র চৌধুরীকে আবিষ্কার করল সে। রুদ্রকে এখন তার রহস্যমানব বলে মনে হচ্ছে। কিছুটা হলেও ইতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে মনে। এরইমধ্যে তার মনে পড়ে যায় প্রজ্ঞার কথা। তার কথা মনে আসতেই নিপুণ বলে,
“নাহ, এই রুদ্র চৌধুরী যত ভালো ব্যবহারই করুক ওনাকে বিশ্বাস করি না আমি৷ উনি একজন খু*নি। আমার চোখের সামনে প্রজ্ঞাকে খু***ন করেছেন উনি। যার শাস্তি ওনাকে পেতেই হবে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

তুমি ছিলে বলেই পর্ব-১৮

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ১৮(মহাধামাকা)
#দিশা_মনি

রিমির হবু স্বামীর দিকে তাকাতেই চমকে যায় স্নেহা। তার চোখ বিস্ময়ে থ বনে যায়। রিমি তার হবু স্বামীকে টেনে স্নেহার সামনে এনে বলে,
“ও হলো আমার উডবি হাজবেন্ড ওর নাম…”

“অনীল মাহবুব। আমার নাম অনীল মাহবুব।”

স্নেহা আপাদমস্তক পরখ করে নিল অনীল মাহবুব নামের এই লোকটিকে। ঘন লম্বা চুল, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, মুখে মাস্ক। স্নেহা আজ ভালো করে শুনে দেখল গলার স্বরটাও একদম অন্য লাগছিল। তাহলে কি সে ভুল শুনেছিল?

স্নেহা সামান্য হেসে অনীল মাহবুবের সাথে পরিচিত হয়ে নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই অভিক, অনিল আর তার রিমি স্নেহার কাছ থেকে বিদায় নেয়। স্নেহার মনে সন্দেহ কোথাও একটা থেকেই যায়। অনীল মাহবুবের মাস্কটা সরিয়ে নিতে পারলে বোধহয় ভালো হতো। এরূপ নানা ভাবনা থেকে সে হাসপাতালের দিকে রওনা দেয়। হাসপাতালে পৌঁছে স্নেহা তার বাবার খোঁজ নেয়। ডাক্তার জানায় অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। স্নেহা এবারে অনেকটা স্বস্তি পায়।

★★★
নিপুণ হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আগন্তুক লোক গুলোর দিকে। নিপুণের মাথায় বন্দুক তা’ক করে থাকা লোকটি ট্রিগারে চাপ দিতেই যাবে তার আগেই হঠাৎ করে কেউ এসে তার হাত থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নেয়। নিপুণ রুদ্রকে হঠাৎ দেখে চমকে যায়। রুদ্রর সাথে তার কিছু বডিগার্ডও এসেছিল৷ তারা সবাই মিলে গু*ন্ডাগুলোর সাথে ফাইট করতে থাকে। এদিকে রুদ্র নিপুণের মাথায় বন্দুক ধরা লোকটির হাত মুচড়ে দিয়ে বলে,
“তোর সাহস কি করে হলো রুদ্র চৌধুরীর স্ত্রীর মাথায় বন্দুক ধরার? যেই হাত দিয়ে তুই আমার স্ত্রীর মাথায় বন্দুক ধরেছিস সেই হাত আজ আমি গুড়িয়ে দেব।”

বলেই হাতটা জোরে মুচড়ে দেয় রুদ্র। নিপুণ রুদ্রর দিকে বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে থাকে। রুদ্রর আজ এ কোন রূপ দেখছে সে! আচমকা রুদ্র নিপুণের সামনে এসে দাঁড়ায়। অতঃপর নিপুণের হাত শক্ত করে ধরে তাকে শাসানি দিয়ে বলে,
“বলেছিলাম না তোমায় আমার কথার অবাধ্য হবে না? তবুও তুমি দুঃসাহস দেখালে। দেখলে তো এর ফল কি হলো?”

“আমার মা কোথায়।”

“বাড়ি ফিরে চলো।”

“আমি কিছু জানতে চেয়েছি।”

“তোমার মা যেখানেই আছেন একদম নিরাপদ আছেন। তোমাকে ওনাকে নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবে না।”

নিপুণ রুদ্রর থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলে,
“আমি আপনাকে একদম বিশ্বাস করি না। আপনি নিশ্চয়ই আমার মায়ের বড় কোন ক্ষতি করে দিয়েছেন তাইনা? আমি আপনাকে ছাড়ব না। আপনাকে তো আমি…”

রুদ্র নিপুণের হাত আরো শক্ত করে ধরে জোরপূর্বক তাকে নিজের সাথে নিয়ে যেতে থাকে। নিপুণ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। রুদ্রের ধৈর্যের সীমা পেরিয়ে যায়৷ সে নিপুণকে নিজের গাড়িতে বসিয়ে তাকে ভিডিও কলে শাহিনা খাতুনকে দেখায়। তাকে কোন একটা অচেনা যায়গায় গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। রুদ্র নিপুণকে তার মায়ের ছবি দেখিয়ে বলে,
“যদি তুমি চাও তোমার মা ভালো থাকুক তাহলে আমার কথা মেনে নাও।”

নিপুণ আবেগঘন চোখে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। রুদ্র বাঁকা হেসে বলে,
“তুমি কি আমাকে এতটাই বোকা ভেবেছ নাকি নিপুণ? আমি খুব ভালো করেই জানতাম তুমি কোন চালাকি করার চেষ্টা করবে। এইজন্যই তো তোমার মাকে সরিয়ে দিয়েছি৷ এখন তুমি আমার কথা মেনে চলতে বাধ্য থাকবে তুমি।”

“কতদিন? আর কতদিন আর আপনি আমাকে এভাবে কন্ট্রোল করবেন?”

“বেশি দিন না। জাস্ট এক মাস।”

“এক মাস পর কি হবে?”

“সেটা নিজেই দেখতে পারবে।”

নিপুণ আর কিছু বলে না।

★★★
অনুপম পপকর্ন খাচ্ছে আর খিকখিক করে হাসছে। আজ কি সুন্দর অভিনয়টাই না করল সে! অনুপম স্বগোতক্তি করে বলতে থাকে,
“এতটা কাঁচা খেলোয়াড় নই আমি স্নেহা। একই শহরে যখন দুটি ভিন্ন মেয়ের সাথে প্রতারণা করছি তখন তো তাদের কাছে একই নাম, একই লুকে নিজের পরিচয় দিতে পারি না! তাই তো আমি তোমার কাছে নিজের পরিচয় দিয়েছি অনুপম রূপে। আর রিমির কাছে আমি ডাক্তার অনীল মাহবুব। নাম, লুকস সব ভিন্ন। ভাগ্য ভালো আমি দূর থেকে তোমায় দেখে ফেলেছিলাম তাই মাস্ক পড়ে নিয়েছিলাম। এছাড়া আমার তো একটা গড গিফটেড পাওয়ারও আছে নিজের গলার স্বর পরিবর্তন করার।”

এসব বলেই সে অন্য ভাবনায় মগ্ন হোক। যতই সে আজ স্নেহাকে বোকা বানিয়ে নিক এভাবে বেশিদিন চলা যাবে না। অনুপম বেশ ধূর্ত প্রকৃতির হওয়ায় খুব ভালো করেই জানে, “চোরের দশ দিন, গৃহস্থের এক দিন।”

তাই অনুপম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিমির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে এই শহর থেকে চলে যেতে চায় আর সেটা আজকেই। এমন ভাবনা থেকেই সে রিমিকে ফোন করে। রিমি ফোন রিসিভ করতেই অনুপম নাটক করে বলতে শুরু করে,
“রিমি আমি অনেক বড় বিপদে আছি। তুমি প্লিজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রোয়েরিটা পার্কে চলে আসো। সাথে আমাদের বিয়ের জন্য তোমার পরিবার যেই গহনাগুলো তৈরি করেছে সেগুলোও নিয়ে এসো।”

“কেন? গহনা নিয়ে তুমি কি করবে?”

” আমার ওগুলোর খুব প্রয়োজন। তোমায় বলেছিলাম আমার উপর একজন পেশেন্টের ফ্যামিলি কেস করে দিয়েছে। তাদেরকে আজ টাকা দিতে না পারলে আমায় জেলে নিয়ে যাবে।”

“ঠিক আছে। তুমি কোন চিন্তা করো না। আমি গহনাগুলো নিয়ে এখনই পৌঁছে যাচ্ছি।”

বলেই রিমি ফোন কে’টে দেয়। অনুপম বাকা হেসে বলে,
“আজ আবার আরেকটা বুদ্ধু মেয়ে আমার শিকার হবে।”

প্রোয়েরিটা পার্কে এসে দাঁড়িয়ে আছে অনুপম। রিমির জন্য অনেকক্ষণ থেকে অপেক্ষা করছে কিন্তু তার আসার কোন খবর নেই। অনুপম ভীষণ ভাবে বিরক্ত হয়ে ওঠে। নিজের ফোন বের করে রিমিকে ফোন করতে যাবে এমন সময় রিমি চলে আসে। রিমিকে দেখে অনুপম তার দিকে এগিয়ে যায়৷ রিমিকে খালি হাতে দেখে অনুপমের ভ্রু কুচকে যায়। সে বলে ওঠে,
“তুমি খালি হাতে এসেছ কেন রিমি? তোমাকে না বলেছিলাম আমাদের বিয়ের জন্য বানানো গহনা গুলো নিয়ে আসতে। সেগুলো কোথায়?”

“এইদিকে।”

স্নেহার গলা শুনে সেদিকে তাকাতেই চমকে ওঠে অনুপম। স্নেহা একা আসে নি সাথে পুলিশও নিয়ে এসেছে। পুলিশ দেখেই অনুপম পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। স্নেহা অনুপমের সামনে এসে বলে,
“কি বলে ডাকব তোমায়? অনুপম নাকি অনল মাহবুব? তোমার তো একটি মুখের পেছনে হাজারটা মুখোশ রয়েছে। না জানি কত মেয়ের আবেগ নিয়ে খেলে তাদের সাথে প্রতারণা করেছ তুমি। তোমার মতো ছেলেদের তো জু*** খুলে পে*–নো উচিৎ।”

অনুপম স্নেহাকে জিজ্ঞেস করে,
“তার মানে তুমি আমায় তখন চিনতে পেরেছিলে?”

“অবশ্যই। তুমি কি ভেবেছ তুমি একাই শুধু বুদ্ধিমান? আমি তোমায় প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলেছি৷ তাহলে ভাবছ তো আমি কেন তোমায় না চেনার ভাব করেছিলাম? কারণ আমি তোমায় হাতে নাতে প্রমাণসহ ধরতে চেয়েছিলাম। যাতে তোমায় আইনের হাতে তুলে দিতে পারি।”

অতঃপর স্নেহা অনুপমের গালে ঠা**স করে কয়েকটা চ**ড় বসিয়ে দেয়। স্নেহার পরে রিমি এগিয়ে আসে। অনুপমের গা*লে ঠাস করে থা**প্পড় মে***রে বলে,
“ভাগ্য ভালো স্নেহার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। নাহলে তো আজ আমিও ওনার মতো ঠকে যেতাম। তোমার মতো ছেলেদের তো জেলে পচে ম*রা উচিৎ। ফ্রড একটা।”

রিমি মনে করে আজ দুপুরে স্নেহা তার সাথে দেখা করতে এসেছিল। মূলত অভীকের মায়ের মাধ্যমেই তার সাথে যোগাযোগ করে। অতঃপর অনুপনের ব্যাপারে সব বলে। প্রথমে তো রিমির বিশ্বাসই হয়নি কিন্তু তারপর যখন অনুপম তার কাছে ফোন করে টাকার জন্য বলে তখন রিমি নিশ্চিত হয়ে যায় স্নেহা সত্যিই বলছে। তাই সে স্নেহার সাথে যোগাযোগ করে এবং পুলিশ নিয়ে এখানে হাজির হয়।

পুলিশ অনুপমকে নিয়ে যেতে থাকে। যাওয়ার আগে একজন পুলিশ অফিসার বলে যায়,
“আপনি চিন্তা করবেন না মিস স্নেহা৷ আমরা ঐ অনুপমের পেট থেকে ঠিকই আপনার টাকা উদ্ধার করে দেব।”

“আমার টাকা পাওয়াটা বড় ব্যাপার না। এইরকম একটা ফ্রড ছেলেকে যে পুলিশে সোপর্দ করতে পেরেছি সেটাই অনেক। নাহলে না জানি এ আরো কত মেয়ের সাথে এমন করত।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

তুমি ছিলে বলেই পর্ব-১৭

0

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ১৭
#দিশা_মনি

নিপুণ রুদ্রদের বাড়ির চার দেয়ালে বন্দি সময় পার করছে। তবে সে এখনো কিন্তু হাল ছাড়েনি। নিপুণের এখন একটাই উদ্দ্যেশ্য। তার মাকে উদ্ধার করে একটা সেফজোনে রেখে আসা৷ তাহলে রুদ্র চৌধুরী আর তাকে কোনভাবেই ব্ল্যাকমেইল করতে পারবে না। এই সুযোগে সে রুদ্র চৌধুরীর আসল রূপ এবং তার সব অপকর্ম সবার সামনে তুলে ধরতে পারবে।

নিপুণ শুধু একটা সুযোগ খুঁজছিল রুদ্রর বাইরে যাওয়ার। কারণ রুদ্র যে তাকে নজরবন্দী করে রাখতে চাইছে সেটা সে বেশ ভালোই অনুধাবন করতে পারছে।

অবশেষে আজ দুপুরে নিপুণ সুযোগ পেয়েও গেল। রুদ্র চৌধুরী তৈরি হচ্ছিল। বারবার তার কাছ ফোন আসছে। নিপুণ বেশ বুঝতে পারছে রুদ্র এখন হয়তো বাইরে যাবে। রুদ্র চৌধুরী একটা মুজিব কোর্ট পড়ে বের হচ্ছিল যাওয়ার পূর্বে সে নিপুণকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে যায়,
“আমি কিছু প্রয়োজনে বাইরে যাচ্ছি। আমার অবর্তমানে একদম কোন চালাকি করার চেষ্টা কিন্তু করতে যেও না। এর ফল কিন্তু ভালো হবে না।”

নিপুণ মনে মনে ভাবে,
“আপনি আমায় অনেক ভয় দেখিয়ে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করেছেন মিস্টার রুদ্র চৌধুরী, এবার আর নয়। এবার আমি পুরো খেলাটাই একদম ঘুরিয়ে দেব।”

রুদ্র চৌধুরী নিপুণকে বারবার করে সতর্ক করে দেয় যেন সে কোন চালাকি না করে। নিপুণও তাকে বলে,
“আপনি চিন্তা করবেন না। আমি কোন বাড়াবাড়ি করব না।”

রুদ্র কতটা নিশ্চিত হয়েছে জানা নেই। কিন্তু সে আর কিছু না বলেই বিদায় নেয়। রুদ্র চলে যাবার পর নিপুণ সুযোগ পেয়ে যায় এই বাড়ি থেকে বাইরে যাবার। তবে সে তাড়াহুড়ো করতে চাইছিল না। ধীরে সুস্থে সবটা করতে চাইছিল। এমনটা না হলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রুদ্রর বেরিয়ে যাবার ঘন্টা খানেক পরেই বেশ সচেতনতার সাথে রুদ্রদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা চালায় নিপুণ। সে বাড়ি থেকে বেরোতে যাবে এমন সময় হঠাৎ রাহাত চৌধুরী তাকে দেখে ফেলে। সেও এই মুহুর্তে বাড়ির বাইরে যাচ্ছিল। নিপুণকে দেখেই সে তার পথ আটকে বলে,
“কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”

নিপুণ চিন্তায় পড়ে যায়। এখন এই ছেলেটাকে কিভাবে ম্যানেজ করবে সে? কিছুটা সময় নিয়ে ভেবে নিপুণ বলে,
“আমি শপিং করতে যাচ্ছি।”

“ভাইয়া অনুমতি দিয়েছে?”

“দেবে না কেন? আমি তোমার ভাইয়ার বউ, তার আদেশ না নিয়ে আমি বাইরে যাব বলে কি তোমার মনে হয়? তাছাড়া তোমার ভাইয়া আমায় শপিং করার জন্য টাকাও দিয়েছে। এই দেখ।”

বলেই নিজের ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে রাহাতকে দেখায় সে। রাহাত আর ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামায় না। সে নিজের মতো চলে যেতে থাকে। এরপর নিপুণও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। অতঃপর বাড়ির বাইরে পা রেখে নিজের গন্তব্যের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়।

এদিকে রাহাত বাড়ি থেকে বের হয়েই কাউকে একটা ফোন করে। বিপরীত দিক থেকে ফোনটা রিসিভ করতেই সে বলে,
“শিকার বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। তোরা তোদের কাজ শুরু কর।”

বলেই সে ফোনটা কে’টে দেয়। অতঃপর বাঁকা হেসে বলে,
“আমাকে জেলে পাঠানোর খুব ইচ্ছা ছিল না তোমার এডভোকেট নিপুণ খান? এবার তুমি বুঝবে কত ধানে কত চাল। কি ভেবেছিলে আমার ভাইকে ফাঁ/সিয়ে বিয়ে করেই সব ঠিক করে নেবে? এবার দেখো তোমার সাথে কি হয়। এবার তোমার এমন অবস্থা করব যে ভবিষ্যতে কেউ রাহাত চৌধুরীর সাথে লড়তে আসার আগেও দশবার ভাববে।”

★★★
নিপুণ দ্রুত নিজের বাড়ির দিকে রওনা দেয়। একটি সিএনজিতে করে সে রওনা দিয়েছে বাড়ির পথে। চাইলেই সে রুদ্র চৌধুরীর বাড়ির গাড়ি ব্যবহার করতে পার‍ত কিন্তু এতে করে যদি কোন ভাবে খবরটা রুদ্র চৌধুরীর কাছে চলে যেত তাহলে তার বিপদ হতে পারত এজন্যই সে সিএনজি বেছে নিয়েছে।

কিছু সময়ের ব্যবধানে সে নিজের বাড়িতে পৌঁছে যায়। সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে সে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। দ্রুত বাড়ির কাছাকাছি এসে সে চমকে যায়। নিপুণ দেখে তাদের বাড়ির গেটে তালা ঝোলানো। এটা দেখে নিপুণ হতবিহ্বল হয়ে যায়। সে বলতে থাকে,
“গেটে তালা ঝুলানো কেন? মা কোথায়?”

নিপুণ গেটে নক করে তার মাকে ডাকতে থাকে কিন্তু ভিতর থেকে কোন সাড়া আসে না।

নিপুণ এবার ভীষণ ভেঙে পড়ে। নিজের মায়ের জন্য তার খুব চিন্তা হতে থাকে। তার বারবার মনে হয় রুদ্র চৌধুরী কি তাহলে তার মায়ের কোন ক্ষতি করে দিল? নিপুণ বাড়ির দরজার সামনে বসে পড়ে। বিড়বিড় করে বলতে থাকে,
“আমি তোমার কিছু হতে দেব না মা। তুমি ছাড়া যে আমার কেউ নেই। প্লিজ তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেওনা।”

হঠাৎ করে নিপুণ লক্ষ্য করে তার মাথায় কেউ ব*ন্দুক তাক করেছে। মাথা তুলে তাকাতেই সে দেখতে পায় কয়েকজন মাস্ক পড়া লোক তার সামনে দাঁড়িয়ে। নিপুণ বুঝতে পারে না এরা কারা। সে প্রশ্ন করে,
“কারা আপনারা? আপনারা কি আমার মা’কে কিডন্যাপ করেছেন? বলুন কোথায় রেখেছেন আমার মাকে।”

মাস্ক পড়া লোকগুলো একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকে। নিপুণের মাথায় যেই লোকটা বন্দুক তাক করে ছিল তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন,
“চল তোকে তোর মার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।”

বলেই বন্দুকের ট্রিগারে হাত দেয়।

★★★
স্নেহা হাসপাতালে ৫ লাখ টাকা জমা দিয়ে দিয়েছে। তার বাবার অপারেশন শুরু হয়ে গেছে। এখন সে অনেকটা স্বস্তি পাচ্ছে।

এত কিছুর পরেও স্নেহার মনে একটা বিষয়ই ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটা হলো তার আসল পরিচয়ের ব্যাপারটা। স্নেহার এখনো এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে যে জন্মের পর থেকে সে যাদেরকে নিজের মা-বাবা ভেবে এসেছে তারা তার আসল মা-বাবা নয়৷ এরমধ্যে স্নেহার ভীষণ খিদাও পেয়ে যায়। তাই সে পাশের রেস্টুরেন্টে খেতে চলে যায়। তার কাছে বেশি টাকা ছিল না তাই সে খুব সাধারণ, সস্তার খাবার অর্ডার করে।

স্নেহা খাওয়া শুরু করে। খাওয়া শেষ করে অতঃপর সে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরোনোর পর হঠাৎ করে স্নেহার নজরে আসে কেউ তার দিকে ছুটে আসে। অভিক ছুটে এসে স্নেহার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“কেমন আছেন ম্যাম? আমায় চিনতে পারছেন তো?”

স্নেহা বলে,
“হ্যাঁ, তুমি তো অভিক প্রজ্ঞার স্টুডেন্ট। তোমাকে পরীক্ষার আগে আমি একবার পড়িয়েছিলাম।”

“ও। মনে রেখেছেন তাহলে। আচ্ছা প্রজ্ঞা ম্যামের কি হয়েছে? উনি আমায় এখন আর পড়াতে আসেন না কেন?”

স্নেহা বুঝতে পারে না কি বলবে। কিছুটা ভেবে সে বলে,
“আসলে প্রজ্ঞা একটু অসুস্থ তো তাই। যাইহোক তুমি একা এখানে কি করছ?”

“আমি একা আসিনি। আমি তো আমার খালা আর হবু খালুর সাথে এখানে এসেছি।”

“ও কোথায় তারা?”

এমন সময় অভিকের খালা রিমি সেখানে চলে আসে। এসে অভিককে বকুনি দিয়ে বলে,
“হঠাৎ এভাবে ছুটে এলে কেন তুমি? তোমাকে না বলেছি রাস্তায় এভাবে ছুটবে না।”

“সরি খালা। আসলে আমি ওনার সাথে দেখা করতে এসেছি। উনি আমার পরিচিত। একদিন আমাকে প্রাইভেট পড়িয়েছিলেন।”

“ওহ।”

রিমি স্নেহার সাথে আলাপ বিনিময় করে। স্নেহার হঠাৎ করে মনে পড়ে যায় রিমির হবু স্বামীর কথা। তার গলার স্বরটা একদম অনুপমের মতোই ছিল। স্নেহা তো সেদিন তেমনি শুনেছিল। তাই সে রিমিকে প্রশ্ন করে,
“আচ্ছা আপনার হবু স্বামী কোথায়?”

“ও…”

একটু আশেপাশে তাকিয়ে তারপর হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলে,
“ঐ তো ও এদিকেই আসছে।”

স্নেহা রিমির ইশারা মতো রিমির হবু স্বামীর দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨