Tuesday, July 15, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 362



প্রেম রাঙানো ক্যানভাস পর্ব-০৪

0

#প্রেম_রাঙানো_ক্যানভাস💜
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৪

ধূসর বিরক্তি নিয়ে অপেক্ষা করছে অরিনের জন্য। বেশ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও অরিন আসছে না। ধূসরের ইচ্ছে করছে অরিনকে পানিতে চুবাতে। এতো সময় লাগে তৈরি হতে। ধূসর এক প্রকার রাগে ফুঁসছে। কাউকে কিছু বলতেও পারছে না সে। অরিন নিজের বারান্দা থেকে উঁকি দিয়ে দেখছে ধূসরকে। সে ইচ্ছে করেই এমন করছে। অরিন তৈরি হয়ে নিয়েছে আরো অনেক সময় আগে। ধূসরকে জ্বালানোর জন্যই এখনো নিচে নামছে না সে। তবে নিচ থেকে বড় ফুপির আওয়াজে এবার নামতেই হলো তাকে। নিচে নামতেই অনামিকা ইসলাম অরিনকে কাছে ডেকে বলে,,,

“সাবধানে যাস মা। আমার ছেলেটার একটু খেয়াল রাখিস। ও তো এখানের কিছু চিনেও না।”

অরিন মৃদু হেসে বলল,,
“তুমি চিন্তা করো না বড় ফুপি আমি তোমার ছেলের খেয়াল রাখবো। আর গ্রামটাও ঘুরে দেখাবো।”

অরিনের আম্মু অরুনি শেখ এগিয়ে এসে বললেন,,,
“রাস্তায় কোনো দুষ্টমি করবি না অরিন। আর ধূসরকে মোটেও জ্বালাবি না। সাবধানে যাস”

ইমরুল শিকদার অরিনের কাছে এসে বলেন,,,“আম্মা গাড়ি নিয়ে যাবে তোমরা? নাকি ভ্যানে যাবে?”

ধূসর ততক্ষণে বিরক্ত হয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেছে। ইমরুল শিকদারের কথা শুনে তার বিরক্তির পরিমান আরো বেড়ে গেলো। ভ্যানে সে কত বছর উঠে না। এর থেকে তো গাড়িই ভালো। অরিন ধূসরকে দেখে সয়তানি হাসি দিয়ে তার আব্বুকে উদ্দেশ্য করে বললল,,,
“আব্বু গ্রাম কি গাড়িতে ঘুরে মজা পাবে বলো? ভ্যানই বেস্ট। তুমি রহিম চাচাকে আসতে বলো। আমরা উনার ভ্যানে চড়েই গ্রাম ঘুরবো।”

ইমরুল শিকদার সম্মতি দিলেন। রহিম মিয়াকে ফোন করার জন্য সাইডে গেলেন। ধূসর বুঝলো অরিন তাকে জ্বালানোর জন্যই গাড়ির বদলে ভ্যানের কথা বলেছে। তবে ধূসর নিজের বিরক্তি প্রকাশ না করে বলল,,,
“ভ্যান! ওকে আমার কোনো সমস্যা নেই। নতুন কিছুতে উঠার অভিজ্ঞতাটা সেই। অনেক বছর হলো উঠি না। আমি খুবই এক্সাইটেড।”

অরিন খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো ধূসর তার সয়তানি বুদ্ধি ধরতে পেরে এখন এমন বলছে। মনে মনে ভীষণ হাসলো সে। আজ যে ধূসরের কপালে কি আছে তা ধূসর টেরও পাচ্ছে না। অনামিকা ইসলাম কাছে এসে বললেন,,
“আব্বু সাবধানে যাস। আর অরিনের সাথে সাথে থাকিস সব সময়। তুই কিন্তু এখানকার কিছু চিনিস না। তাই সাবধানে চলাচল করবি”

ধূসর বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,,“আম্মু তুমি ভুলে যাচ্ছো আমি আগেও এখানে এসেছি। হ্যাঁ হতে পারে অনেক বছর আগে তবে সব তো আর পাল্টায়নি তাই না। আর আমি কোনো বাচ্চা না যে একটা মেয়ের পিছু পিছু যেতে হবে।”

অনামিকা ইসলাম চোখ রাঙিয়ে বললেন,,
“ধূসর এগুলো কি ধরনের কথা। তুমি অনেক বছর পর এসেছো এখানে। সব কিছু চেঞ্জ হয়েছে। তাই অরিনকে নিয়ে ঘুরে দেখবে এতে বাচ্চা হওয়ার কথা কোথা থেকে আসছে”

ধূসর উত্তর দেয় না। রিনু এসে খবর দেয় রহিম চাচা চলে এসেছেন। অরিন ওড়না ঠিক করতে করতে বাড়ির বাইরে চলে আসে। ধূসর নিজেও বাইরে যায় সবাইকে বিদায় দিয়ে। ভ্যানের সামনে বসে পরে অরিন। অরিনকে দেখে রহিম চাচা বলেন,,

“আম্মাজান কেমন আছেন আপনে?”

অরিন মিষ্টি করে হেসে শুধালো,,
“ভালো আছি চাচা। আপনি কেমন আছেন?”

“এই তো আম্মা ভালোই আছি।”

ধূসর বুঝে উঠতে পারলো না কোথায় বসবে সে। তাই সে অরিনের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,,“আমি কোথায় বসবো?”

অরিন চোখ তুলে তাকালো। ধূসরকে নিজের সামনে দেখে বিরক্ত হলো। এরপর বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,,,“আগে দূরে সরে দাঁড়ান। এটা আপনার কানাডা না যে মেয়েদের কাছে ঘেঁষলে তারা খুশি হবে। এটা বাংলাদেশ বিদেশী বাদুড়”

“বিদেশী বাদুড় কি? আমার একটা নাম আছে ধূসর। আমার সুন্দর নামটা কি তুমি উচ্চারণ করতে পারো না?”

অরিন ভেঙিয়ে বলল,,,
“ধূসর নাকি সুন্দর নাম। ধূসর হবে না ছাই হবে। ছাই কোথাকার”

ধূসর এবার প্রচুর রেগে যায়। সে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,,“ইউ!বোম্বায় মরিচ। তুমিও যেমন, তোমার ব্যবহার বোম্বায় মরিচের মতো।”

“তো আমার কি?”

অরিনের গা ছাড়া ভাব দেখে ধূসরের রাগে শরীর জ্বলছে। রহিম মিয়া দু’জনকে ঝগড়া করতে দেখে মৃদু হাসেন। তার আর তার বউয়েরও তো এমন ঝগড়া চলতে থাকে। তবুও দিন শেষে তারা দু’জন দু’জনকে ছাড়া থাকতে পারে না। হয়তো এটাই ভালোবাসা। সে দু’জনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
“আপনারা দু’জন ঝগড়া কইরেন না। বাবা আপনি সামনে বা পেছনে এক জায়গায় বসুন।”

ধূসর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে পেছনে বসলো। তার এতো শখ নেই যে অরিনের পাশে বসবে। তার এখন মনে হচ্ছে রাজি হওয়াটাই ভুল ছিলো। অস্বস্তি হচ্ছে, কত বছর পর ভ্যানে উঠেছে। সেই ছোটবেলায় উঠেছিলো। ভ্যান চলতে শুরু করলো। আঁকা বাঁকা রাস্তায় আপন গতিতে ছুটছে ভ্যানটি। ধূসর মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে পল্লীর সৌন্দর্য দেখছে। মৃদু হাওয়া, আশেপাশের লোকজন, প্রকৃতির রূপ সব উপভোগ করছে ধূসর। অরিন নিজেও উপভোগ করছে। বেশ ক’দিন হয়েছে বাড়ি থেকে বের হয় না। এইচএসসি পরীক্ষার পর আর বের হওয়া হয়নি। এডমিশনের জন্যও এখনো কোচিং-এ ভর্তি হওয়া হয়নি।

ধূসর তার মাঝে অরিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,
“অনেক বছর পর এমন গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি। বিদেশে থাকতে থাকতে দেশীয় সংস্কৃতি এক প্রকার ভুলেই গিয়েছি। আমায় গ্রামটা ঘুরে দেখাবে মিস বোম্বায় মরিচ?”

অরিন বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,,
“একটু আগে ছাই বলাতে তো রেগে গিয়েছিলেন এখন নিজেই আমায় বোম্বায় মরিচ নামে ডাকছেন। নিজে শুধরান তারপর আমায় বলতে আসবেন”

ধূসরের শান্ত মেজাজটাই গরম হয়ে গেলো। এই মেয়ে ভালো কথা বলতেও পারে না। মেজাজটা বিগড়ে দিলো। ধূসর উত্তর না দিয়ে চুপ রইলো। অরিনও কথা বাড়ালো না। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ব্যাগ কাঁধে স্কুলের উদ্দেশ্যে পা চালাচ্ছে। আশপাশ দিয়ে আরো ভ্যান গাড়ি তাদের ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে। ধূসর ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের যেতে দেখে মনে করলো সেও যখন বাংলাদেশে ছিলো তখন এভাবে করে যেতো। সেগুলো এখন পুরোনো স্মৃতি ছাড়া কিছুই না।

অরিন খোলা মাঠে পিচ্চি ছেলেদের ফুটবল খেলতে দেখে ভ্যান থামাতে বলে। রহিম মিয়াও ভ্যান থামায়। অরিন দৌড়ে সেখানে চলে যায়। হঠাৎ গাড়ি থেমে যাওয়াতে ধূসর স্মৃতির পাতা থেকে বের হয়ে আসে। পিছনে ফিরতেই দেখতে পায় অরিন নেই। ধূসর ভাবলো অরিন কোথায় গেলো। সে নিজেও ভ্যান থেকে নেমে পরলো। এদিক ওদিক তাকাতেই চোখে পরলো অষ্টাদশীকে। যে বাচ্চাদের সাথে কিছু কথা বলছে। ধূসরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রহিম মিয়া বললেন,,,

“বাবা আপনেও যান আম্মার সাথে ফুটবল খেলেন। আম্মাজান ভারি ভালা একজন মাইয়া। আপনের লগে হয়তো একটু ঝগড়া করে তবে সে খুবই ভালো”

ধূসর রহিম মিয়ার কথায় উত্তর দিলো না। আসলে কি বলবে খুঁজে পেলো না। তাই চুপচাপ রইলো। অনেক সময় অরিনকে বাচ্চাদের সাথে কথা বলতে দেখে ধূসর নিজেই এগিয়ে গেলো। কাছাকাছি আসতেই শুনতে পেলো অরিন এবং বাচ্চাগুলোর কথা।

“আফা আপনে যান তো। আমাগে খেলতে দিন। এইখানে এসে আমাদের খেলতে ক্যান দিতাছেন না?”

“প্লিজ আমিও একটু খেলি। বেশি না অল্প একটু খেলবো।”

তবে বাচ্চারা রাজি হলো না তবুও। ধূসর এগিয়ে এসে বলল,,
“চলো এখান থেকে ওরা রাজি যখন হচ্ছে না তখন জোরাজুরি কেনো করছো বলো তো?”

“আপনি কি বুঝবেন এদের সাথে ফুটবল খেলার মজা। আপনি তো বিদেশে বড় হয়েছেন। দেশীয় সংস্কৃতি কি একটুও জানেন না কি?”

ধূসর হাত ঘড়ির দিকে তাকালো। ট্রেন কিছুক্ষণ এর মাঝে স্টেশনে পৌঁছানোর কথা। তবে তারা এখনো সেখানে উপস্থিত হতে পারেনি। সে অরিনকে তাড়া দিয়ে বলল,,,
“দ্রুত চলো মিস বোম্বায় মরিচ না হয় লেট হয়ে যাবে। তারা আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে।”

অরিন নিজেও আর কথা বাড়ালো না। ধূসরের পেছন পেছন হাঁটা ধরলো। ভ্যানে এসে বসতেই ভ্যান চলতে শুরু করলো। যাওয়ার পথে মানুষের কাজ, গ্রামীন সৌন্দর্য চোখে পরলো ধূসরের। সে উপভোগ করতে লাগলো। রাস্তায় তার সাথে আর কথা হয়নি অরিনের। দু’জনই চুপ করে ছিলো।

#চলবে~

প্রেম রাঙানো ক্যানভাস পর্ব-০৩

0

#প্রেম_রাঙানো_ক্যানভাস💜
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৩

আকাশে সাদা কালো মোঘের উপস্থিতি। ঠান্ডা শীতল হাওয়া বইছে। সূর্যের দেখা নেই বললেই চলে। অরিনদের বাড়িটা পুরোনো জমিদার বাড়ির মতো। আজাদ শিকদারের বাবার বাবা নাকি জমিদার ছিলেন। বাড়িটা সেই আমলের। তবে এখন আগের মতো নেই নতুন করে কাজ করানো হয়েছে বাড়িটাতে। তাই পুরোনো বাড়ি বলা চলে না, রং করানো হয়েছে। তবে বাড়িটা বেশ বড়। অরিন ঘুম থেকে উঠে বাড়ির পেছনের তার বাগানটিতে চলে আসলো। এইটা তার অন্যতম শখগুলোর মাঝে আরেকটি। এখানে বিভিন্ন জাতের গোলাপ, জবা, রজনীগন্ধা, কাঠগোলাপ সহ আরো অনেক রকম ফুলের গাছ রয়েছে।

ধূসর এতো সকালে না উঠলেও আজ ঘুম ভেঙে গিয়েছে। আসলে অচেনা জায়গায় মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। সে রুমের বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। এটা তার অভ্যাস ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় এসে কিছুক্ষণ সময় কাটাবে। আজও তার ব্যতিক্রম কিছু হলো না। তবে কিছুটা ব্যতিক্রম হলো অন্যদিন গুলোর তুলনায় কারণ জায়গাটা আলাদা এবং মানুষগুলো। তবুও এখানটায় একটু বেশিই ভালো লাগছে।ধূসর রেলিং এ ভর দিয়ে নিচে তাকালো। নিচে তাকাতেই চোখ পরলো মনোমুগ্ধ করা এক দৃশ্য। এক রমনী নিজ হাতে বাগানের ফুলগুলোর যত্ন নিচ্ছে। ধূসরের অজান্তেই তার মুখ থেকে বের হয়ে আসলো,,,

“সি ইজ রিয়েলি এ বোম্বায় মরিচ। কথাগুলো মরিচের মতোই ঝাল। বাট আই ডোন্ট লাইক ঝাল”

অরিন পিছু ফিরতেই ধূসরের ভালো লাগাটা গায়েব হয়ে গেলো। মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এসে ভর করলো। সে কিছু একটা ভেবে নিচে নামার জন্য রুম ত্যাগ করে। গন্তব্য তার অরিন। অরিনের সাথে ঝগড়া করতে তার বেশ লাগে। এখনও ঠিক তাই করতেই সে যাচ্ছে। সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে কাউকে চোখে পরলো না। হয়তো ঘুমাচ্ছে সবাই। ধূসর হাঁটতে হাঁটতে বাগানের দিকটায় চলে আসে। এসে এমন ভাব ধরলো যে সে অরিনকে দেখেই নি। অরিন ধূসরকে নিজের প্রিয় জায়গায় দেখে বেশ বিরক্ত হলো। তবুও গতকাল রাতের মতো ভুল সে করলো না।

ধূসর অরিনকে জ্বালানোর একটা বুদ্ধি বের করলো। বাগানের ভেতরে প্রবেশ করে একটা লাল টকটকে গোলাপ ছিড়লো। যা দেখতে পেয়ে অরিন এক প্রকার তেড়ে আসলো ধূসরের কাছে। ধূসর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

“এটা আপনি কি করলেন? আমার আমার গাছের ফুল কেনো ছিঁড়লেন আপনি? আপনায় অনুমতি কে দিয়েছে”

ধূসর ফুলটা দেখতে দেখতে বলে,,
“ফুল ছিড়তে হলে অনুমতি নিতে হয় নাকি। এই ফুলটা আমার বেশ লেগেছে তাই ছিঁড়েছি তাতে তোমার কি?”

“কারণ গাছটা আমার। আর এই ফুলগুলোও আমার খুব শখের। আমি বড় ফুপিকে গিয়ে এখনি বলছি তার বিদেশী বাদুড় ছেলে আমার গাছের ফুল ছিঁড়েছে”

ধূসর ভাবলেশহীন হয়ে বলে,,“তো বলো মানা কে করেছে তোমায়?”

অরিন কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না। এই ছেলের কথা বার্তা সে বুঝে না। গতকাল আসার পর থেকে তার পিছে লেগে আছে। অরিন বুঝলো না এর সাথে তার শত্রুতা টা কোথায়। স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে গেলেও ঝগড়া লাগে। ধূসরের ব্যবহার দেখে প্রচুর বিরক্ত সে। নিজে গায়ে পরে ঝগড়া করছে। অরিন মৃদু কন্ঠে শুধালো,,,

“আচ্ছা আপনার সমস্যাটা কি বলুন তো। গতকাল আসার পর থেকে আমায় জ্বালাচ্ছেন কেনো বলুন তো। কি ক্ষতি করেছি আপনার আমি। আপনাকে তো চিনিও না আমি ঠিকমতো। সেই কোন ছোটবেলায় দেখেছি তো আমার সাথে ঝগড়া কেনো করছেন?”

“আই ডোন্ট লাইক দিস! আমায় প্রশ্ন করবে না। এটা আমার একটুও পছন্দের নাহ। তুমি হলে বোম্বায় মরিচ, যা আমি মোটেও পছন্দ করি নাহ”

ধূসর কথাগুলো বলে শিস বাজাতে বাজাতে চলে যায়। অরিন পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলে,,,“আপনার আমাকে পছন্দ নয় এতে আমার কিছু যায় আসে না বুঝেছেন। বেয়াদব ফাজিল পুরুষ। আমার সামনে আর আসবেন না আপনি মোটেও”

অরিন রাগে ফুঁসছে। ধূসর অরিনের কথাশুনে মুচকি হেসে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। অরিন নিজেও বাগানের দরজা লাগিয়ে বের হয়ে যায়। এই বজ্জাত, বিদেশী বাদুড় একদিনেই তাকে জ্বালিয়ে মারলো। আর কত দিন থাকবে কে জানে। ধূসরকে মনে মনে বকতে বকতে নিজের রুমে চলে আসে সে। কিছুতেই রাগ কমছে না তার। ধূসরের মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।

“বেয়াদব বিদেশী বাদুড় আমি ছাড়বো না তোকে। আমার গাছের ফুল ছেঁড়া না আমিও এর প্রতিশোধ নিবো”

সকাল নয়টা। বসার রুমে সবাই মিলে গল্পগুজব করছে। সেখানে আজাদ শিকদার এবং খাদিজা বেগম এসে নিজেরাও যোগ দিলেন। কতগুলো বছর মেয়ের সাথে দেখা হয় না। আজ এতোগুলো বছর পর মেয়ে নিজের বাড়িতে এসেছে। কত কথা জমে আছে। কাল তেমন কথা বলার সুযোগ পায়নি তারা। ক্লান্ত থাকায় সবাই বিশ্রাম নিয়েছে। চৌদ্দ বছর পর দেশে ফিরেছেন অনামিকা ইসলাম। স্বামী সন্তান নিয়ে সেখানেই সেটেল্ড তারা। ধূসর একমাত্র ছেলে তাদের। ধূসর কিছুক্ষণ পরে নিচে নেমে আসলো। এসে নিজের মায়ের পাশে নিঃশব্দে বসে পরলো। এখানে কোথাও অরিনকে দেখতে পেলো না সে।

“ধূসর তুমি আর অরিন গিয়ে তোমাদের বাকি কাজিনদের নিয়ে আসবে। ওরা ট্রেনে করে আসছে। নাস্তা করে তৈরি হয়ে নাও”

ধূসর অনামিকা ইসলামের কথায় না করবে ভাবলো। তবে অরিনের সাথে যাবে ভেবে রাজি হয়ে গেলো। সে একটাও চান্স মিস করতে চাইছে না অরিনকে জ্বালানোর। তাই সে তার মায়ের কথার পিঠে উত্তর দেয়,,,

“ঠিক আছে আম্মু সমস্যা নেই”

অরিনও তখন নিচে নেমে আসে। এতোক্ষণ যাবত সে নিজের রুমে বসে আঁকছিলো। এসে সবার সাথে যোগ দেয় সেও। অরিনের বাবা ইমরুল শিকদারও এখানে ভাইবোনদের সাথে গল্প করছে বসে। অরিনকে দেখে অনামিকা ইসলাম তাকে কাছে ডাকেন। অরিন অনামিকা ইসলামের অপর পাশে বসে পরে। ধূসর তার দিকে তাকিয়েই হাসছিলো। অরিন ধূসরের হাসির মানে বুঝে উঠতে পারলো না। তখনই অনামিকা ইসলাম বলে উঠেন,,,

“অরিন মা তুই আর ধূসর গিয়ে তোর ফুপা আর ভাইবোনদের নিয়ে আয়। তারা ট্রেনে আসছে। আর আমার ধূসরকেও গ্রামটা একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আয়”

অরিন বিরক্ত হলো ফুপির শেষের কথা শুনে। সে মোটেও চাইছে না এই বজ্জাত ধূসর না না ছাইয়ের সাথে বের হতে। তবে না করাও সম্ভব না। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো। সে জোর পূর্বক হেসে বলে,,

“ঠিক আছে বড় ফুপি। কখন বের হতে হবে?”

অনামিকা ইসলাম কিছু বলবেন তার আগেই পাশ থেকে অরিনের মেঝো ফুপি সৃজনী রহমান বললেন,,,“নাস্তাটা তাড়াতাড়ি করে যা মা। আমার মেয়েটাকে কত দিন দেখি না”

অরিন সৃজনী রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“ফুপি একদিনও হয়নি তোমরা এসেছো? আর এর মধ্যে তুমি কত দিন বানিয়ে দিচ্ছো”

“ওই তো হবে কিছু একটা। মায়ের মন তুই কি বুঝবি”

অরিন ভ্রু কুঁচকে তাকায়। পাশ থেকে অনামিকা ইসলাম বলেন,,“ওসব বাদ দে মা। চল নাস্তা করে নেই সবাই”

অরুনি শেখ সবাইকে খেতে ডাক দিলেন। সবাই টেবিলে বসে পরলো সকালের নাস্তা করার জন্য। বিভিন্ন পদের খাবার দিয়ে টেবিল সাজানো। সবাই নিজের মতো নিয়ে খেয়ে নিলো। অরিন নিজের রুমে চলে আসলো। তৈরি হতে হবে আবার তার। ধূসরের সাথে যেতে হবে এর থেকে বিরক্তির আর কি হতে পারে।

#চলবে~

প্রেম রাঙানো ক্যানভাসভ পর্ব-০২

0

#প্রেম_রাঙানো_ক্যানভাস💜
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২

রাতের আকাশে পূর্নিমার চাঁদ জ্বলজ্বল করছে। চাঁদের আলোয় আলোকিত চারপাশ। অরিন বারান্দার এক কোণে বসে চাঁদ খানা নিজের রং তুলিতে ফুটিয়ে তুলতে চাইছে। তবে তার মন মতো হয়ে উঠছে না। আশেপাশে কতগুলো আর্ট পেপার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যেখানে অর্ধেক চিত্র আঁকা। অরিন শেষ মেশ না পেরে সেগুলো সেখানে রেখে রুমে আসলো। হাতে মুখে রং লেগেছে। সেগুলো ধোঁয়ার জন্য ওয়াশরুমে গেলো।

“আপপপপপু কোথায় তুই?সবাই নিচে সন্ধ্যার নাস্তা করছে। বড় ফুপি ডাকছে তোকে। অরিন আপু কোথায় তুই?”

অরিন ওয়াশরুম থেকে বের হতেই হায়াতকে দেখলো। হায়াত বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অরিন নিজেও বেশ বিরক্ত। এই মেয়ে এতো জোরে চিল্লায়। তার কান শেষ। অরিন কিছুটা ধমকের সুরে বলে,,
“এতো জোরে কেউ চিল্লায়? তুই কি পাগল। আস্তে বললে কি আমি শুনতাম না নাকি? বেয়াদব। আর কখনো আমাকে ডাকতে আসলে এতো জোরে চিল্লাবি নাহ, বুঝেছিস?”

হায়াত ভেংচি কেটে বলল,,,“আমার গলা এমন ডাকতে বললে এভাবেই ডাকবো। আসলে আয় না আসলে নাই। আমি গেলাম। তোকে কি আমি ডাকতে আসতাম নাকি শুধু মাত্র বড় ফুপি বলল তাই আসলাম হুহ”

হায়াত বেরিয়ে যেতে নিলে আবার ফিরে এসে বলে,,,“জানিস আপু ধূসর ভাইয়া আছে না উনি অনেক হ্যান্ডসাম। দেখেছিস তুই তাকে? আমি যদি তোর মতো বড় হতাম নির্ঘাত তাকে টুস করে বিয়ে করে নিতাম”

অরিন চোখ রাঙিয়ে বলে,,,
“যাবি তুই?নাকি আম্মাকে এই কথা গুলো বলবো?”

হায়াত দৌড়ে বের হয়ে গিয়েছে। অরিন চমকে উঠেছে ধূসর নাম ব্যক্তির কথা শুনে। তখন কি বাজে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতেই না পরেছিলো সে। যদিও ধূসর নিজের ভুল বুঝতে পেরে তার রুম ত্যাগ করেছিলো। পাশাপাশি রুম হওয়ায় ধূসর তার রুমে চলে এসেছিলো। তবে অরিন একটা ব্যাপারে ভীষণ অবাক হয়েছে লোকটা তাকে একটি বারের জন্যও সরি বললো নাহ। এটা ভেবে ধূসরের প্রতি অরিনের ক্ষোভ জন্মালো। ধূসরকে মনে মনে ধুয়েও দিয়েছে সে। সে রুম ছেড়ে নিচে আসে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে দেখতে পায় সবাই বসে গল্প করছে। অরিন নিজের বয়সী কাজিন গুলোকে মিস করছে।

অরিনকে দেখে অনামিকা ইসলাম তাকে কাছে ডাকলেন। অরিন তার পাশে বসলো। ধূসর তার সামনের সোফাতেই বসে ফোন দেখছে। তার ধ্যান জ্ঞান সব ফোনের ভেতরে। আশেপাশের কিছুই খেয়াল নেই। অনামিকা ইসলাম বলেন,,
“অরিন মা তোর জন্য উপহার এনেছি। সবাইকে দেওয়া শেষ তুই লেট করে আসায় এখনো দিতে পারিনি। দাঁড়া মা আমি নিয়ে আসছি।”

অরুনি শেখ বলেন,,,“আপা তুমি বসো আমি দিচ্ছি”

অরুনি শেষ অনেকগুলো প্যাকেট এনে অনামিকা ইসলামের দিকে এগিয়ে দিলেন। তিনি সেগুলো অরুনি শেখের হাত থেকে নিলেন। অরুনি শেখ নিজ জায়গায় গিয়ে বসলো। অনামিকা ইসলাম শপিং ব্যাগগুলো থেকে একটা হাতে নিয়ে বাকিগুলো পাশে রাখলেন। এরপর প্যাকেট খুলতেই বের হলো মেরুন রঙা পাকিস্তানি একটা ভারি সেলোয়ার-কামিজ। অনামিকা আহমেদ ওড়নাটা বের করে পরিয়ে দিলেন অরিনকে। অরিন চুপচাপ তার ফুপির কাজ পর্যবেক্ষণ করছে।

“ মাশাআল্লাহ আমার মেয়েটাকে এই থ্রি-পিস এ অপূর্ব সুন্দর লাগছে। তোর গায়ে এটা খুব সুন্দর মানিয়েছে অরিন মা”

অরিন লাজুক হেসে উত্তর দেয়,,,“ধন্যবাদ ফুপি”

ধূসর চোখ তুলে একবার তাকিয়ে দেখলো অরিনকে তারপর আবার নিজের ফোনে মনোযোগ দিলো। অনামিকা ইসলাম আরো কয়েকটি শপিং ব্যাগ খুলে দেখালেন অরিনকে। অরিনের বেশ ভালো লেগেছে থ্রি পিস গুলো। পছন্দ আছে বলতে হবে তার বড় ফুপির। রাতের খাবার সবাই হৈ হুল্লোড়ের সাথে খেলো। অরিন জানতে পেরেছে তার বাকি কাজিনরা আগামীকাল আসবে। এতে অবশ্য সে দারুন খুশি।

রাত বারোটার কাছাকাছি। যদিও গভীর রাত নয়, তবে গ্রামে এই সময়টাকে গভীর রাত বলেই আখ্যায়িত করা হয়। অরিন ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে আছে। হাতে রং তুলি। চুলগুলো হাত খোঁপা করা। সে বেশ মনোযোগ দিয়েই ক্যানভাসে নিজের দেখা দৃশ্যটি ফুটিয়ে তুলতে চাইছে। ধূসর নিঃশব্দে ছাদে উঠলো। ছাদে উঠতেই চোখে পরলো অপর পাশে দাঁড়িয়ে নিজ কাজে ব্যস্ত থাকা এক অষ্টাদশীকে। ধূসর ফোনটা পকেটে পুরে ট্রাউজারের পকেটে হাত গুঁজে সেদিকে এগোলো। অরিন তাকে এখনও খেয়াল করেনি।

“হেই বোম্বায় মরিচ তুমি এতো রাতে এখানে কি করছো?”

অরিন চমকে উঠলো। হাত থেকে রং তুলি পরে গেলো। বেশ ভয় পেয়েছে সে। প্রায়ই সে এখানে বসে নিজ মনে আঁকে। কেউ আসে না এই সময় তবে আজ হঠাৎ কারো গলা শুনে ভয় পেয়েছে। ধূসরকে দেখলো সে, নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,,
“আপনি কানা? চোখে দেখেন না? দেখছেন না কি করছি?”

“কানা নই আমি তবে এতো রাতে এখানে একা আসা ঠিক নয়। আমি তোমাকে এটাই বলতে চেয়েছি! বাট নামটা কি যেনো তোমার?”

“অরিন, অরিন ওয়াসিনাত আমার নাম বুঝেছেন?এখন যেতে পারেন মিস্টার ধূসর”

ধূসর ভ্রু কুঁচকে বলল,,“তুমি কি আমায় তাড়িয়ে দিচ্ছো? ইউ ফরগেট দ্যাট আজাদ শিকদার আমার নানা হয়। তোমার কোনো রাইট নেই আমাকে এখান থেকে বের হয়ে যেতে বলার”

“আমার মনে হয় আপনার ইংরেজিটা আগে ভালো করে শেখা উচিত। এতো বছর কানাডা থেকে কি করলেন যে অর্ধেক ইংরেজি তো অর্ধেক বাংলা বলতে হয়”

ধূসর রেগে বলল,,,“ইউ! তুমি কিন্তু এবার বেশি বেশি বলছো”

“আমি জানি আমি বেশি বেশি বলি। আবারও মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ধূসর সাহেব”

ধূসর রেগে স্থান ত্যাগ করে। অরিন হেসে ফেললো। তাকে রাগাতে এসেছিলো এখন নিজেই রেগে গিয়েছে। অরিন নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। সে এখন তার চিত্রটি আঁকাতে মনোযোগ দিতে চায়। আগামীকাল থেকে আবার আঁকতে পারবে না, ভাই বোনদের সাথে সময় কাটাতেই সে বেশি ভালোবাসে। তার জন্য এখন যা আঁকার আছে আঁকছে। আঁকা তার নেশা, শখ।

ধূসর রুমে এপাশ থেকে ওপাশে পায়চারী করছে। তাকে ওই পুচকি মেয়েটা নিজের কথার জালে ফাসিয়ে দিলো। তাকে ইংরেজি শিখতে বলছে! এর চাইতে অপমানের আর কি হতে পারে। ধূসর লাইট বন্ধ করে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পরলো। কপালে হাত দিয়ে চিন্তা করছে অরিনের করা কাজের কথা। রাগটা পুরো প্রিয়তার উপর পরছে। মেয়েটা তাকে কতগুলো কথা শুনিয়ে দিলো। ধূসর শান্তি মতো ঘুমাতে পারছিলো না। তাই সে আবারও ছাদে যাওয়ার চিন্তা করলো। ছাদে আসতেই খেয়াল করলো অরিনের আঁকা প্রায় শেষ। ধূসর এগিয়ে যেতেই অরিন পিছনে ফিরলো। বেশ অবাক হলো ধূসরকে আবারও আসতে দেখে।

“আপনি আবারও কেনো এখানে এসেছেন?”

ধূসর উত্তর দিলো না। কোনার পাশটাতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। অরিন বেশ অপমান বোধ করলো। আফসোস করতে লাগলো কেনো সে বেয়াদব ছেলেটাকে প্রশ্ন করলো! না হয় তো এমন অপমানিত হতে হতো নাহ। সে দ্রুত নিজের জিনিসগুলো গুছিয়ে ছাদের চিলেকোঠার রুমটাতে ঢুকলো। ধূসর আড়চোখে সব পর্যবেক্ষণ করছিলো এবং হাসছিলো। অরিনের গোমড়া মুখ দেখেই সে বুঝেছে প্রিয়তাকে এবার সে টক্কর দিতে পেরেছে। এতেই তার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে।

অরিন রুমের লাইট অন করে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখলো। অন্যসব চিলেকোঠার মতো তাদের চিলেকোঠা নোংরা জিনিস দিয়ে ভর্তি নয়। অরিন এখানটা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। সেখানে সব কিছু রেখে বের হলো অরিন। অরিন বের হবে বুঝতে পেরে ধূসর উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে রইলো। অরিন বের হয়ে ধূসরকে এখনো ছাদে দেখে মুখ বাঁকায়। তার মাথায় ধূসরকে জব্দ করার বুদ্ধি আসে। সে দ্রুত সিঁড়ি ঘর দিয়ে নেমে ছাদের লাইট বন্ধ করে দেয়। অরিন কিছুক্ষণ চুপ করে সেখানে দাঁড়িয়ে রয়। সে ভেবেছিলো ধূসর ভয়ে চিৎকার করবে তবে অনেক সময় পেরিয়ে গেলো চিৎকারের শব্দ তার কান অব্দি পৌঁছায় না।

সে ধূসরকে দেখতে চুপি চুপি ছাদে আসে। কোথাও ধূসরকে না দেখে ঘাবড়ে যায় সে। আর তখনই পেছন থেকে ধূসর হেসে উঠে। অরিন লাফিয়ে উঠে। পেছনে ঘুরে ধূসরকে দেখে রেগে তাকায়। বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,,,

“আপনি তো ভারি বেয়াদব। এই গভীর রাতে ভুতের মতো হেসে তো এখনই আমায় মেরে ফেলছিলেন”

“নিজে আমায় ভয় দেখাতে এসে এখন নিজেই ভয় পেয়ে গিয়েছো। এখব আমার দোষ দিচ্ছো? আমায় অপমান করেছিলে আমিও তার শোধ তুলে নিলাম মিস অরিন ওয়াসিনাত”

অরিন বুঝলো সে ধূসরের সাথে পারবে না। তাই কিছু না বলে ধূসরকে রেখে নিজের রুমে চলে গেলো। ধূসর হাসলো কতক্ষণ। সে নিজের প্রতিশোধ তো নিতে পেরেছে। তাকে অপমান করেছিলো সেও করে দিয়েছে। এখন শান্তি শান্তি লাগছে তার। তাকে কেউ কিছু বলবে আর সে তার জবাব দিবে না তা কখনো হয়। ধূসর নিজেও ছাদ থেকে নেমে পরলো। ঘুমানো প্রয়োজন। আবার আগামীকাল বাকি বাদর গুলো আসবে। তখন সে মোটেও ঘুমাতে পারবে নাহ।

#চলবে~

প্রেম রাঙানো ক্যানভাস পর্ব-০১

0

#প্রেম_রাঙানো_ক্যানভাস💜
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#সূচনা_পর্ব

“আপু জানিস আজকে বড় ফুপিরা আসবেন।সাথে মেঝো ফুপি আর ছোট ফুপিও আসছে। কি যে মজা হবে। কতো দিন পর সবাই আবার একসাথে হবো। এই আপু শুনছিস তুই”

অষ্টাদশী রমনী টেবিলে বসে পড়ছিলো। তখনই কানে আসে ছোট বোনের বলা কথাগুলো। অরিন খুশি হয় ফুপিদের আসার কথা শুনে। কিন্তু বড় ফুপির আসার কথা শুনে বুক কেঁপে উঠে তার। কত বছর দেখা হয় তা তাদের সাথে। অরিনের চোখ খুশিতে ঝলমল করে উঠে।কতো দিন পর কাজিনদের সাথে দেখা হবে!বেশ অনেক দিনই হলো তারা আসছে না। অরিন পড়ার টেবিল থেকে উঠে বই খাতা গুছিয়ে রাখতে রাখতে বলল,,,

“কিহ! সত্যি বলছিস ফুপিরা আসছে।তুই কিভাবে জানলি?”

হায়াত লাফাতে লাফাতে বলল,,,“হ্যাঁ রে আপু মাত্রই শুনলাম আম্মু ফোনে বলছিলো।আব্বু আর দাদা মিলে বাজারে গিয়েছে।”

অরিন হায়াতকে সাথে করে বের হয় রুম থেকে।হায়াত তো সেই খুশি,তাকে আর পায় কে!হায়াত দৌড়ে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে। অরিন হায়াতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায়।রান্নাঘরে পা রাখতেই দেখে তার আম্মু অরুনি শেখ রান্নাবান্নার জিনিসপত্র গোছাতে ব্যাস্ত। অরিন দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওড়নার কোণা মোচড়ামুচড়ি করছে।

অরুনি শেখ অরিনকে ওড়না মোচড়ামুচড়ি করতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন,,“কিছু বলবি অরিন”

অরিন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,, “আম্মু হায়াত বলল ফুপিরা আসছে নাকি!”

অরুনি শেখ কাজ করতে করতে বলেন,,,“হ্যা আসছে।তুই তোর রুমটা গুছিয়ে ফেল।বাকি রুমগুলো আমি রিনুকে দিয়ে গুছিয়ে নিচ্ছি।আর শোন উপরের একদম কোনার রুমটা তুই নিজে গোছাবি।রিনু পারবে না সুন্দর করে গোছাতে তাই তুই গোছাবি বুঝলি?”

“আচ্ছা ঠিক আছে”বলে অরিন নিজের রুমে চলে আসে।নিজের রুমের অবস্থা দেখে কপাল চাপড়ায় অরিন। এতো অগোছালো সে। ধীরে ধীরে নিজের রুমটা গোছানো সম্পূর্ন করে।এরপর চলে আসে কোনার রুমটাতে। রুমটার অবস্থা তেমন একটা ভালো না।ওড়না কোমড়ে বেঁধে নেমে পরে রুমটা পরিষ্কার করতে। দীর্ঘসময় পর রুমটা গোছানো হয়। অরিন চোখ বুলিয়ে নেয় একবার রুমটাতে। নাহ সব ঠিক আছে। জানালার দিকে চোখ পরতেই সেগুলো খুলে দেয়।ঠান্ডা বাতাস এসে পর্দাগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে।ঘরির দিকে চোখ পরতেই দেখে দেড়টার এর বেশি বাজে।আযান কখন দিয়েছে টেরই পায়নি সে কাজ করতে করতে।

অরিন কপালের ঘাম মুছে দরজা টেনে বের হয় রুম থেকে। অরিন মনে মনে ভাবে হয়তো রুমটা তার বড় ফুপির জন্য।রুমে এসে একটা গোলাপী রঙের জামা বের করে গোসল করতে যায়।গোসল সেরে এসে দেখে ২টা বেজে গিয়েছে। অরিন চুল থেকে তোয়ালে খুলে বারান্দায় টানানো দড়িতে মেলে দিলো। রুম থেকে বের হয়ে দাদির কাছে আসে। দাদি নামাজ পরে তসবিহ গুনছেন।

“এই যে বুড়ি খেয়েছো তুমি।মনে হয় না তো খেয়েছো।চলো খাবে চলো।”

অরিনের গলা পেয়ে চোখ মেলে তাকান খাদিজা বেগম। প্রিয়তাকে দেখে হাসেন তিনি। অরিনও দাদিকে হাসতে দেখে নিজেও হাসে।খাদিজা বেগম তসবিহ রেখে তার কান টেনে ধরে বলে,,,

“তোর আমাকে বুড়ি মনে হচ্ছেরে ছুকড়ি।আমি এখনো জোয়ান আছি । আমায় দেখে কেউই বুড়ি বলবে না। আর তুই আমায় বুড়ি বলছিস।”

অরিন খিলখিলয়ে হেসে দেয় দাদির কথায়।খাদিজা বেগম অরিনের কানটা আরো জোরে চেপে ধরে।সে কান ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,,
“আহ দাদি ছাড়ো লাগছে তো।তুমি তো বুড়ি হয়ে গিয়েছো।আমি দাদুকে আবার বিয়ে দেবো।আমার দাদুর জন্য একটা লাল টুকটুকে বউ নিয়ে আসবো”

অরিনের কথায় খাদিজা বেগম রা*গার ভান করেন।খাদিজা বেগম চোখ ছোট ছোট করে বলেন,,,
“তবেরে ছুড়ি আমার স্বামীরে বিয়ে করাইতে চাইস।তোর বররে একবার পাই আমি। তোর জন্যও আমি সতীন আনবো।”

অরিন খাদিজা বেগমকে মুখ ভেংচি কে*টে বলে,,,“এএ আইছে আমার বরকে তো আমি দেখাবোই না তোমাকে।দাড়াও খুব তাড়াতাড়ি তোমার সতীন আনার ব্যবস্থা করছি”

“কিরে দাদুভাই কার সতীন আনার ব্যবস্থা করছিস তুই।”

আজাদ শিকদার রুমে প্রবেশ করতে করতে কথাটা বললেন। অরিন তার দাদুভাইয়ের কথায় হেসে বলে,,,“তোমার জন্য নতুন বউ আনার কথা বলছি দাদুভাই।”

আজাদ শিকদার হাসতে হাসতে বলেন,,,
“আর লাগবে নারে দাদুভাই একজনকে নিয়েই পারি না।তুই আবার আরো একজন আনার কথা বলছিস”

অরিন খাদিজা বেগমের দিকে তাকে মুখ ভেংচি দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে।খাদিজা বেগম আর আজাদ শিকদার হাসে আরার কান্ড দেখে।তার জানে মেয়েটা বড্ড দুষ্টুমি করে তাদের সাথে।তাদের দুজনকে মাতিয়ে রাখে। তারাও তাল মেলান নাতির সাথে। বাড়িতে দুটোই মেয়ে। কোনো ছেলে নেই। খুব আদরের অরিন এবং হায়াত।

বৈশাখ মাসের শেষ সময়।আকাশে ঘনকালো মেঘের আনাগোনা।পড়ন্ত বিকাল।বিকাল হয়েছে বেশ খানিকটা সময় হলো।রোদের ছিটে ফোঁটাও নেই আকাশে। অরিন বারান্দায় বসে রং তুলি দিয়ে কিছু আকার চেষ্টা করছে।তার ভেতরেই অরুনি শেখের ডাক পরে। অরিন দৌড়ে অরুনি শেখের কাছে আসে।অরুনি শেখ অরিনকে দেখে বলে,,
“অরিন তাড়াতাড়ি আম গাছ থেকে কয়েকটা পাকা আম পেরে নিয়ে আয় তো।তোর ফুপিরা এখনই চলে আসবে কিন্তু”

“এখনই যাচ্ছি আম্মু।”

অরিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেলো।নিজেকে সামলে লোকটার দিকে না তাকিয়ে “দুঃখিত” বলে দৌড়ে চলে যায়।লোকটা সানগ্লাসটা খুলে পকেটে দুহাত গুঁজে অরিনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে,,“হু ইজ সি?”

কথাটা বলেই হনহন করে বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায়। অরিন বাড়ির পেছনে এসে আম পেরে বেশ কিছুক্ষণ পর বাড়িতে ঢোকে।বাড়িতে ঢুকতেই বাড়ি ভর্তি লোকজন দেখে চমকে যায় সে।কিছুটা ভরকেও যায়।একটা ছেলে অরিন আপু বলে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে তাকে। অরিন পরতে পরতে নিজেকে বাঁচায়।
অরিন আমগুলো রিনুর হাতে দিয়ে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে বলে,,“ভালো আছো তুমি তাতানপাখি”

তাতান আধো আধো গলায় বলে,,,
“আমি ভালো আছি অরিন আপু। তুমি কেমন আছো”

অরিন তাতানের সাথে কথা বলতে বলতে বড়দের সবার কাছে যায়।সবাইকে সালাম দিয়ে কথা বলতে থাকে।বড় ফুপি অরিনকে নিজের কাছে ডাকে। অরিন এগিয়ে তার কাছে যেতেই অনামিকা ইসলাম জড়িয়ে ধরেন অরিনকে। অরিনের একটু অস্বস্তি হলেও নিজেকে সামলে নেয়। অরিনকে নিজের বুক থেকে উঠিয়ে অনামিকা ইসলাম তার গালে হাত দিয়ে বলে,,
“অরিন মামনি কতো বড় হয়ে গিয়েছিস তুই সেই ছোট্ট বেলায় দেখেছিলাম তোকে।ভালো আছিস তো মা তুই”

অরিন মিষ্টি হেসে উত্তর দেয়,,,“জি আলহামদুলিল্লাহ বড় ফুপি ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন”

“এই দেখো মেয়ের কথা আপনি বলছে আমায়।তুমি করে বল বোকা।ছোট্ট বেলায় তো এই ফুপি ছাড়া কাউকে চিনতেই পারতিস না”

সবাই হেসে অরিনের কান্ডে। অরিন লজ্জা পায় বেশ। নিজেকে নিজেই বকতে থাকে। আপনি কেনো বলতে গেলো। আপনি না বললে তো আর লজ্জায় পরতে হতো না। তার আবার তুমি বলতেও সংকোচ হচ্ছিল তাই আপনি বলেছে।সেই কোন ছোটবেলায় দেখেছে তারপর আর দেখা হয়নি।

“লজ্জা পাস না মা বুঝতে পেরেছি অনেক বছর দেখা না হওয়ার ফলে এমন হয়েছে।সমস্যা নেই ক’দিন যাক এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।”

এরপর সবাই টুকটাক কথা বলে হালকা পাতলা নাস্তা করে রেস্ট নিতে চলে যায়।হায়াত তো ভাই বোনদের সাথে খেলছে।
অরিন উপরে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পরে। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে তার। আজকে অনেক কাজ করেছে সে। তার বয়সী এবং বড় কাজিন গুলো এখনো আসেনি, তারা হয়তো আগামীকাল আসবে। দরজা খোলার খটখট আওয়াজে চোখ মেলে তাকায় সে। উঠে বসে ওয়াশরুমের দিকে তাকাতেই চোখ বড়বড় হয়ে যায় অরিনের।

ওয়াশরুম থেকে একজন পুরুষ টিশার্ট ট্রাউজার পরে গলায় টাওয়াল ঝুলিয়ে বের হয়েছে। চুল থেকে পানি পরছে। যা দেখে অরিন বুঝতে পেরেছে পুরুষটি মাত্রই গোসল করে বের হয়েছে। তার রুমে পুরুষ মানুষ আসলো কোথা থেকে বুঝতে পারলো না সে। অরিন চিৎকার করতে যাবে তার আগেই পুরুষটি এসে ওর মুখ চেপে ধরে। ফিসফিস করে বলল,,

“হেই ডোন্ট সাউট।আমি মুখ ছাড়ছি চিৎকার করবে না”

কথাটা বলেই লোকটা আরার মুখ ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। অরিন হাঁপাচ্ছে। এতো জোরে মুখ চেপে ধরেছিলো যে সে নিঃশ্বাসটা ঠিকমতো নিতে পারছিলো না। অরিন হুট করে নিজের রুমে পুরুষ মানুষ দেখে ভয় পেয়েছে খানিক। টেনে টেনে বলল,,

“কে…..কে আ….পনি!আমার রুমে কি করছেন হ্যা।অস*ভ্য লোক মেয়ে মানুষের রুমে চলে এসেছে। আমি এখনি আব্বু আর দাদুমনিকে ডাকছি”

অরিন কথাটা বলেই চলে যেতে নিলে লোকটা তার হাত ধরে ফেলে। শান্তু সুরে তাকে উদ্দেশ্য করে শুধায়,,,
“হেই মিস বোম্বাই মরিচ!প্লিজ স্টপ। আমি অনামিকা ইসলামের ছেলে ধূসর আহসান।”

#চলবে~

প্রেমরাঙা জলছবি পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0

#প্রেমরাঙা_জলছবি
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২০(অন্তিমপর্ব)

লাল টকটকে রঙের শাড়ি পরিহিত নারী বাহির বাহিরে উমেদের পাশেই দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক দেখছে। ময়না বেগম বিছানার একপাশে বসে আছেন। সুরাইয়া ময়না বেগমকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে বুঝিয়েই যাচ্ছে উমেদ আর মেয়েটাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসতে কিন্তু ময়না বেগম কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না। ছেলের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রেখেছিলেন তিনি। ছেলে এমন একটা কাজ করে বসবে সেটা তিনি ভাবতেই পারেননি।
আশরাফ ময়না বেগমের ঘরে আসতেই ময়না বেগম বলে ওঠেন,“তুই ওদের চলে যেতে বল আমি ওদের ঘরে তুলব না।”

আশরাফ উমেদের কাছে থেকেই মায়ের ঘরে এসেছিল। মায়ের কথা শুনে পাশে গিয়ে বসে। মাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,“আম্মা, মেয়েটা এতিম। ছোটোবেলা থেকে সৎমায়ের কাছে বড় হয়েছে। বাবা যতদিন ছিলেন ততদিন তবু একটু ভালো ছিল। মেয়েটার বাবা গতমাসে মারা যায়। উমেদ মেয়েটাকে প্রাইভেট পড়াতো। মেয়েটার বাবা মারা যাওয়ার পর পড়ানো বন্ধ হয়ে যায়। সৎমা এই মেয়েটার ওপর অত্যা*চার শুরু করে। বয়স্ক একলোকের সাথে বিয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছিল। উমেদ জানতো মেয়েটা তাকে ভালোবাসে। তার এই অবস্থা জানতে পেরে ওকে নিয়ে চলে এসেছে।”

ময়না বেগম এবার উৎসুক নয়নে আশরাফের দিকে তাকায়। নরমস্বরে শুধায়,“মেয়েটা এতিম?”

আশরাফ ওপর-নিচ মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,“হ্যাঁ। আম্মা, মেয়েটাকে তুমি অন্তত একটু ভালোবাসো। তুমিও যদি বিমুখ হও তাহলে মেয়েটার কী হবে বলো তো!”

ময়না বেগম সুরাইয়ার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করে,“আমার কি মেনে নেয়া উচিৎ? তুমি কী ভাবছো?”

সুরাইয়া মাথানিচু করে বলে,“আম্মা, জানালা দিয়ে দেখলাম মেয়েটা খুব সুন্দর। আপনার ছেলে যা বলছে তা হয়তো সত্যি তা না হলে উমেদ এমন করতো না।”

ময়না বেগম বলে ওঠেন,“আমার কী করা উচিৎ সেটা বলো।”
“ওদের মেনে নিন, আম্মা। আমার একটা কথা বলার মানুষ দরকার।”

ময়না বেগম গম্ভীর হয়ে কিছু একটা ভাবেন। তারপর বলেন,“গহনা যেগুলো তোমাকে দিলাম ওগুলো ভালো করে রেখেছ?”

সুরাইয়া একপাশে মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “জি।”
“ওখান থেকে একসেট দাও। আমি আবার তোমাকে গহনা বানিয়ে দেব। নতুন বউকে খালি হাতে বাড়িতে নিয়ে আসা ভালো দেখায় না।”

সুরাইয়া দৌঁড়ে নিজের ঘর থেকে গহনার একটা বক্স এনে ময়না বেগমের হাতে দিয়ে আরেকটা শপিংয়ের ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,“আম্মা, এই শাড়িটা বউকে দেবেন। নতুন বউ নতুন শাড়ি পরবে।”

ময়না বেগম মৃদু হেসে বলেন,“তুমি কিন্তু মেয়েটা ভালো আছো।”

ময়না বেগম ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই সুরাইয়া আশরাফের কাছে এসে বাহুতে নিজের কাধ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলে,“দেখেছ শেখ সাহেব, ইয়্যুর আম্মা লাইকস্ মি।”

আশরাফ বাহিরের দিকে দেখে সুরাইয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে বলে, “তার ছেলে আপনাকে আরও বেশি ভালোবাসে সেটা দেখতে পান না? আন্ধা হো কিয়া?”

সুরাইয়া নিজেকে আশরাফের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গালে একটা চুমু দিয়ে বলে,“তার ছেলের বউও আপনাকে ভালোবাসে শেখ সাহেব।”

সবাই বাহিরে এসে উমেদ এবং উমেদের স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে আসে৷ দুজনকে সুরাইয়া ঘরে পাঠিয়ে দেবে তখন মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,“তোমার নাম যেন কী?”

মেয়েটা মাথা তুলে নরমগলায় বলে,“আমার নাম আলো।”

সুরাইয়া মৃদু হেসে উমেদের দিকে তাকায়।
“আজকের কাজে আমি খুব খুশি হয়েছি৷ আলোকিত হোক আপনার জীবন। দুজনে খুব সুখী হন দোয়া করি। স্ত্রীকে ভালোবাসায় রাখবেন।”

উমেদ ওপর নিচ মাথা নাড়িয়ে মৃদু হাসে।

সুরাইয়া ময়না বেগমের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। মায়ামাখা চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলে,“শোনো আলো, আজ থেকে আমরা তিনজন বন্ধু। আমি, তুমি আর আম্মা।”

আলো হেসে সুরাইয়ার কথা মেনে নেয়৷ ময়না বেগম সুরাইয়াকে ডান পাশে এগিয়ে নিয়ে বুকে জড়িয়ে নেন৷ আলোর দিকে আরেক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “তুমিও এসো। তুমি দূরে কেন?”

মায়ের স্নিগ্ধ আচরণে আশরাফ এবং উমেদ একে অপরকে দেখে দুজন একসাথে বলে ওঠে,“আমরা দূরে থাকব!”
______

অভ্রর বাবা-মা হৃদিতার মা-বাবাকে প্রায় রাজি করিয়ে ফেলেছেন আজই এই বিয়ে বাড়িতেই অভ্র আর হৃদিতার বিয়ে দিয়ে দেবেন। এক অনুষ্ঠানে দুইটা অনুষ্ঠান হয়ে যাবে।

কথা শেষ করে নাহার বেগম হৃদিতার কাছে চলে যান। হৃদিতা হলুদের জন্য তৈরি হচ্ছিল। তার সাথে আরও কয়েকটা মেয়ে আছে৷ সবাই একসাথে সাজগোজ করছে। নাহার বেগম ঘরে প্রবেশ করেই দেখেন হৃদিতা হলুদ শাড়ি পরেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু একটা করছে। মাকে দেখে আয়নার সামনে থেকে সরে মায়ের কাছে এসে দাঁড়ায়।

নাহার বেগম খাটে বসা মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে আবার হৃদিতার দিকে তাকায়।

“হলুদ শাড়িটা খুলে লাল একটা শাড়ি পরে নে, মা। ”
“লাল কেন? এটা ভালো লাগছে না? ঠিকই তো আছে।”

নাহার বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,“আজ তোর বিয়ে।”

ভ্রু কুচকে মায়ের দিকে তাকায় হৃদিতা। জানতে চায়,“কী বললে? আজ বিয়ে? কী বলো মা?”
“সবাই বসে ঠিক করল আজই বিয়েটা হবে।”
“আমি অন্যকারো সাথে চলে যাচ্ছি? মনে হচ্ছে আমাকে জোর করে ধরে বেধে আমাকে একদিনের মধ্যে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছ। আমি তো বিয়েতে রাজি হয়েছি। রাজি না হলে এই ব্যবহার করলে মানা যেত। আমি বড়ো করে অনুষ্ঠান না করে বিয়ে করব না। বউ সাজব, ছবি উঠব কত কী করব!”

“আমারও মন সায় দিচ্ছে না। আমার মেয়ের বিয়ে কেন এভাবে হবে? তুই অভ্রর সাথে কথা বল। ওকে বল বিয়েটা পরেই ধীরেসুস্থে হোক।”
“উনি কোথায়?”
“বাহিরেই আছে।”
“আচ্ছা আমি আসছি।”

হৃদিতা শাড়ির কুচি উঁচু করে রুমে থেকে বেরিয়ে অভ্রকে খুঁজতে থাকে। তিন চার জায়গায় খুঁজে বাহিরের উঠোনে তাকে পেয়ে যায়৷ কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। হৃদিতা সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অভ্র হৃদিতাকে দেখে ভ্রু উঁচিয়ে ইশারায় জানতে চায়, “কী হয়েছে?”

হৃদিতা নিম্নস্বরে বলে,“ফোন কাটুন কথা আছে।”

অভ্র কথা শেষ করে কল কেটে হৃদিতাকে বলে,“কী হয়েছে শুনি?”
“সবাই কি পা*গল হয়ে গেল?”

অভ্র এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,“কে পা*গল হলো?”
“সবাই পাগলামি করতেছে।”
“কী নিয়ে?”
“আপনাকে আর আমাকে নিয়ে।”
“কী করছে?”
“আজই বিয়ের কথা বলছে৷”
“কী? আমি বর সেজে বউকে আনতে যাব। আপনি জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখবেন।এভাবে কে বিয়ে করবে?”

হৃদিতা এতক্ষণে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। অনুযোগভরা কণ্ঠে বলে ওঠে,“আমি বউ সাজবো, ছবি উঠব। প্লিজ আপনি সবাইকে নিষেধ করুন আমরা এখন বিয়ে করব না। ভাইয়ার বিয়েটা হয়ে যাক।”

অভ্র এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,“আমার বলায় কাজ হলে ট্রিট দিবেন?”
“ট্রিট?”
“হ্যাঁ। ”
“আমি আপনাকে ট্রিট দেব?”
“একটা চুমু দিলেও হবে।”
“লা*ত্থি দিলে হবে না?”
“হবু বরকে লা*ত্থি দিতে পারবেন?”
“পারব। এবার গিয়ে সবাইকে নিষেধ করুন।”
“চলুন একসাথেই গিয়ে বিয়ে ভেঙে দিয়ে আসি আমার হবু বাচ্চার মা।”

হৃদিতা হেসে বলে,“আমরা বিয়ের এক বছর পরই বেবি নেব, বুঝছেন? সেদিন আমার এক্সের বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছিল, সে বলল এক্সের বউ নাকি চলে গেছে। আমরা হ্যাপি ফ্যামিলি হয়ে দেখিয়ে দেব।”

অভ্র হৃদিতার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,“কাউকে কিচ্ছু দেখাতে হবে না। আপনি চোখবন্ধ করে শুধু আমাকে ভালোবাসবেন। শুধু আমাকে। দুনিয়ার কোনকিছু আর আপনার দেখতে হবে না। আপনি শুধু আমাকে দেখবেন।”

হৃদিতা মৃদু হেসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,“সৃষ্টিকর্তা এত ভালো কিছু আমার করে রেখেছিলেন!”

~সমাপ্ত

প্রেমরাঙা জলছবি পর্ব-১৯

0

#প্রেমরাঙা_জলছবি
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৯

শাশুড়ি স্বর্ণের গহনাগুলো নিয়ে গুটিগুটি পায়ে সুরাইয়ার দরজায় এসে দাঁড়ান। দরজায় নক করার শব্দ হতেই সুরাইয়া গিয়ে দরজা খুলে দেয়। বাহিরে ময়না বেগমকে দেখে ভেতরে আসতে বলে দরজাটা ভালোভাবে খুলে দেয় সুরাইয়া। ভেতরে আসতে বলে পাশে দাঁড়িয়ে যায়। ময়না বেগম গহনাগুলো নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলেন,

“আশরাফ কল দিয়েছিল তোমাকে?”

সুরাইয়া বিছানায় রাখা ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,“ফোনটা হয়তো সাইলেন্ট আছে।”
“আমিও ওয়াশরুম থেকে ঘরে এসে দেখি আশরাফ কল দিচ্ছে। রিসিভ করব তখনই ফোন বন্ধ হয়ে গেল।”
“আমি দেখছি আম্মা, বসুন আপনি।”

ময়না বেগম চেয়ার টেনে বসলেন। সুরাইয়া ফোনটা নিয়ে আশরাফকে কল লাগায়। রিং হতেই আশরাফ কল কে*টে দেয়। সুরাইয়া দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার চেষ্টা করে কিন্তু ফলাফল একই। সুরাইয়া অসহায় চোখে ময়না বেগমের দিকে তাকায়।

“আম্মা, কল ধরছে না আপনার ছেলে।”

ময়না বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন,“ব্যস্ত আছে হয়তো। পরে কল দিও। আচ্ছা এদিকে এসো এবার।”

সুরাইয়া ফোনটা হাতে নিয়েই ময়না বেগমের পাশে গিয়ে বসলো। দুদিন হলো ময়না বেগমের ব্যবহারে সে মুগ্ধ হচ্ছে। তিনি পাল্টেছেন, সত্যিই তিনি পাল্টে গিয়েছেন। গম্ভীরভাবে থাকলেও অন্যরকম সত্তা যেন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে।

ময়না বেগম গহনার কয়েকটা বাক্স নিয়ে এসেছিলেন। একে একে বাক্সগুলো খুলে সুরাইয়ার সামনে মেলে ধরেন তিনি। সুরাইয়া সবগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিয়ে ময়না বেগমের দিকে তাকায়।

নিম্নস্বরে বলে ওঠে,“এগুলো এখানে কেন এনেছেন, আম্মা?”

ময়না বেগম গহনাগুলাও নাড়তে নাড়তে বলে,“এগুলো সব তোমার।”

অবাক হয় সুরাইয়া। প্রশ্ন করে বসে, “আমার মানে? আমার তো কোনো গহনা নেই আম্মা।”
“এগুলো সব তোমার। আমার কাছে ছিল। তোমার আমানত আমি তোমার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। তুমি এগুলো তোমার কাছেই রাখো, মা।”

ময়না বেগমের মুখে মা ডাক শুনে শীতল দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে সুরাইয়া। মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করে- ঠিক শুনলো তো সে নাকি ভুল শুনলো! বুক ভারি হয়ে আসছে তার। চোখটাও কেমন জ্ব*লছে হয়তো এখনই টলমল করে উঠবে। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সুরাইয়া। ময়না বেগম গহনার দিক থেকে চোখ তুলে সুরাইয়ার দিকে দৃষ্টি দেন।

সুরাইয়াকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে বলেন, “কী হলো? চুপচাপ আছো কেন? ”

সুরাইয়া আনমনে বলে ওঠে,“আপনাকে আমার অপরিচিত লাগছে, আম্মা।”

ময়না বেগম মৃদু হেসে বলেন, “অপরিচিত লাগারই কথা। আগে তো দজ্জাল শাশুড়ি ছিলাম।। এখন একটু ভালো হতে চাইছি। তবে এই পরিচয় এর পরিচিত হয়ে নিতে পারো। ”

এবার আর কোন বাঁধ মানে না, চোখ টলমল করে উঠে সুরাইয়ার। গলায় বলে ওঠে, “আমাকে একটা চিমটি কাটবেন, আম্মা। মনে হচ্ছে এটা স্বপ্ন, আর ঘুম ভেঙ্গে গেলে আপনিও চলে যাবেন। ”

ময়না বেগম শব্দ করে হেসে ওঠেন। সুরাইয়া মুগ্ধ নয়নে সেটা দেখতে থাকে। হাসি থামিয়ে ময়না বেগম সুরাইয়া কে ছুঁতেই আশরাফের গলা শুনতে পাই দুজন।

সুরাইয়া বসা থেকে উঠে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আশরাফ থেকে দেখে বলে ওঠে,“ফোন ধরছিলেন না কেন? কিছু হয়েছে? আমার খুব চিন্তা হচ্ছিল। আম্মা বলল আপনি নাকি উনাকেও ফোন দিয়েছিলেন। আমার ফোনটা সাইলেন্ট ছিল। আম্মা এসে আমাকে বলল আপনি কল দিয়েছিলেন তারপর কল দিলাম কিন্তু আপনি তো রিসিভ করলেন না।”

আশরাফ ঘরে প্রবেশ করতে করতে বলে, “আম্মার ঘরে যাও, নিয়ে আসছি কথা আছে। ”

ঘরে ঢুকেই ময়না বেগমকে দেখে আশরাফ বলে ওঠে, “ওহ আম্মা তুমি এখানে! আচ্ছা দাঁড়াও কথা আছে। ”

আশরাফ নিজের ফোনটা চার্জে বসিয়ে ময়না বেগমের পাশে এসে বসে। সুরাইয়া দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। আশরাফের মুখ দেখে সে বুঝতে পেরেছে সিরিয়াস কিছু ঘটেছে। কী ঘটেছে সেটা শুনতেই চুপচাপ দাঁড়ায় সে।

আশরাফ ময়না বেগমের দিকে চেয়ে স্বর নরম করে বলে, “আম্মা, তোমার ছোট ছেলে আসছে। সন্ধ্যায় হয়তো চলে আসবে। আমাকে কল দিয়েছিল। তোমাকে হয়তো কল দিয়ে সাহস করে উঠতে পারেনি তাই আমাকে কল দিয়েছিল।”

ময়না বেগম ভ্রু কুচকে শুধায়,“কি হয়েছে? পরিষ্কার করে বল। বাড়িতে আসবে ভালো কথা, আমাকে বলার সাহস পাচ্ছে না কেন?”

আশরাফ একবার সুরাইয়ার দিকে তাকায়। তারপর আবার ময়না বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে, “উমেদ বিয়ে করেছে, আম্মা।”
____

একটা ঘরে কয়েকজন মিলে সমাবেশ বসিয়েছে। তাদের মুখ্য বিষয় অভ্র আর হৃদিতার বিয়ে। হৃদিতা খবর পেয়ে ঘরের বাইরে পায়চারি করছে।

মাকে খুঁজতে খুঁজতে অভ্র হৃদিতার সামনে এসে দাঁড়ায়। হৃদিতাকে দেখে অভ্র মৃদু হেসে বলে, “আপনার সাথে তো কথা বলারই সুযোগ পাচ্ছিলাম না। মাথা ব্যথা কমেছিল? ”

হৃদিতা বলে ওঠে, “তখন তো কমে ছিল এখন তো বেড়ে যাচ্ছে।”

এদিক ওদিক তাকিয়ে অভ্র ভ্রু কুচকে বলে, “এখন বেড়ে যাচ্ছে মানে? কী হয়েছে? ”

“সবাই মিলে আমার বিয়ে ঠিক করছে। ”

অভ্র হতভম্ব চোখে হৃদিতার দিকে তাকায়। ভ্রু সটান বিস্তৃত করে বলে,“আপনার বিয়ের কথা হচ্ছে মানে? কীসব কথা বলছেন আপনি? আপনার বিয়ের কথা চলছে মানে? কোথায় শুনলেন? আপনার বাবা তাহলে আমাকে এত গুলো দিন আগে আপনার কথা কেন বলেছিল?”

হৃদিতা চোখ কঠিন করে কর্কটস্বরে বলে ওঠে, “বিয়ের কথা আপনার সাথেই হচ্ছে কিন্তু বিয়ে বাড়িতে অন্য কারো বিয়ের কথা হচ্ছে এটা কেমন শোনায় বলুন তো? বিয়ে বাড়িতে কেন আমার বিয়ের কথা হবে?”

অভ্র স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। বুকে হাত রেখে মৃদু হেসে বলে ওঠে, “ আমার সাথেই আপনার বিয়ের কথা হচ্ছে সেটা আগে বলবেন না? আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম। ”
“ভয় পাওয়ার কি আছে? বিয়ে করাই তুমি এই উদ্দেশ্য, যাকে তাকে বিয়ে করলেই হলো।”
“ জি না ম্যাম। বিয়ে করা উদ্দেশ্য না, আপনাকে বিয়ে করা উদ্দেশ্য।”

হৃদিতা এবার একটু গম্ভীর হয়। মাথা নিচু করে বলে, “আমাকে ছেড়ে দেওয়ার মানুষের অভাব নেই। যখনই আমি কারো হওয়া শুরু করি তখনই সে আমাকে ছেড়ে যায়। ”

অভ্র চকিতে বলে ওঠে, “আপনাকে আমার করতে এসেছি আমি। ছেড়ে যেতে আসিনি।”
“আপনাকে কিছু জানানোর আছে আমার।”
“এখানেই বলবেন? আশেপাশে অনেক মানুষ। ”
“ছাদে যাবেন? ”
“যাওয়া যায় প্রস্তাবটা মন্দ না। ”

হৃদিতার কথামতো অভ্র হৃদিতার কিছু কিছু ছাদে চলে যায়। সেখানেও দু একজন পিচ্চি খেলছিল। অভ্র তাদের বুঝিয়ে নিচে পাঠিয়ে দেয়। হৃদিতা ততক্ষণ ছাদের এক পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। অভ্রও দেরি না করে সেখানে উপস্থিত হয়।

অভ্র রেলিংয়ে হেলান দিয়ে বলে, “এবার বলুন। আচ্ছা আগে বলুন আমার সাথে বিয়েতে আপনার কোন অমত নেই তো? মন থেকে বলবেন প্লিজ।”

হৃদিতা এখন চুপ করে থেকে বলে, “আপনাকে আমার অপছন্দ না।”
“পছন্দ?”
“ভেবে নিতে পারেন।”
“আচ্ছা নিলাম। এবার আপনার কথাটা বলুন ।”

হৃদিতা মুহূর্ত কয়েক অভ্রর দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে থাকে তারপর বেশ স্বাভাবিকভাবেই বলে, “একজনের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল। তার নাম ইথার। বেশ ভালো চলছিল আমাদের সম্পর্ক। আমাদের বললে ভুল হবে, বিষয়টা শুধু আমার ছিল। সে আমাকে কষ্ট করে সহ্য করে গেছে।”

অভ্র মনোযোগ দিয়ে হৃদিতার কথা শুনছিল। হৃদিতা থেমে যাওয়ায় সে বলে ওঠে, “তারপর আপনি তাকে বিয়ের কথা বলেন। আপনার পড়াশোনাও শেষ হয়ে যাচ্ছিল। তাকে একটা জব নিতে বলেন। সে নিচ্ছিল না। আপনি নিজেই জব করার চিন্তাভাবনা করেন। তারপর আপনি আপনাদের কথা তার বাসায় জানাতে বলেন। সে সেটাও করছিল না। আপনি শুধুমাত্র তাকে পেতে কোর্ট ম্যারেজ ও করতে চেয়েছিলেন। এই ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই সে বিদেশে পাড়ি জমায়। আপনার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সে যে বিদেশে গিয়েছে সেটাও আপনি অন্য কারো কাছে থেকে জানতে পারেন। এসব হয়ে যাওয়ায় আপনি খুব ভেঙে পড়েন। তারপর ধীরে ধীরে এই পর্যন্ত এসেছেন। মাঝে হয়তো একটা জবও নিয়েছিলেন।”

হৃদিতা অভ্র কথায় অবাক হয়। জিজ্ঞাসু চোখে অবরোধ দেখে তাকায়। প্রশ্ন করে ফেলে, “আপনি এত কিছু জানলেন কিভাবে? ”

অভ্র মৃদু হেসে বলে, “আপনাকেই আপনার বাবার কথায় অনেকটা জেনে ফেলেছি আপনার বাহিরের খবরা-খবর জানব না?”

অভ্র হৃদিতাকে রেখে ছাদ থেকে যেতে যেতে বলে, “অতীতের সবটুকু ভুলে আমার হতে প্রস্তুত হয়ে যান। ”

#চলবে….

প্রেমরাঙা জলছবি পর্ব-১৮

0

#প্রেমরাঙা_জলছবি
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৮

রাস্তায় এমন একটা অঘটন ঘটে যাবে সেটা চারজনের কেউই ভাবতে পারেনি। আচমকা এমন একটা দূর্ঘটনা ঘটে যাওয়ায় হৃদিতা একদম চুপচাপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাসেল সাহেব তাড়াতাড়ি করে গিয়ে অভ্রকে তুলে দাঁড় করায়। নাহার বেগমও এগিয়ে আসে।

অভ্রর হাতের দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,“খুব জোরে লেগেছে, বাবা?”

রাসেল সাহেব আফসোসের সাথে বলল,“ইশ! কেন যে তোমাকে আমাদের সাথে আসতে বললাম!”

রাসেল সাহেব কথাটা বলতেই অভ্র কপালে হাতে নিজেকে লুকোনোর বৃথা চেষ্টা করে। লাভ হয় না। নাহার বেগম কথাটা ধরে ফেলেন। ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করেন,”কী বললে? তুমি অভ্রকে আমাদের সাথে আসতে বলেছ মানে?”

রাসেল সাহেব কথা কাটিয়ে উঠতে বলেন,“এই যে এই রাস্তাটুকুর কথা বললাম। রাস্তায় আর তামাশা কোরো না চল এখন। হৃদি মা বাড়ি গিয়ে অভ্রর হাতে একটু হালকা গরম সেক দিবি তো তাহলে আর ব্যথা খুব একটা বাড়বে না। ছেলে মানুষ ও, এত সহজে হার মানলে হয় নাকি!”

হৃদিতা এতক্ষণে অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,“আপনার কি খুব জোরে লেগেছে!”

অভ্র দুইপাশে মাথা নাড়িয়ে বলে,“না, চলুন যাওয়া যাক।”

বাড়িতে পৌঁছানোর সাথে আসরিফের মা আয়েশা বেগম এগিয়ে এসে সবাইকে আপ্যায়ন করে। বাড়ির ভেতরে নিয়ে গিয়ে রেস্ট নেওয়ার জায়গাও দেখিয়ে দেয়। আসার পর থেকে হৃদিতার খালাতো বোন ইরা পিছুই ছাড়ছে না। হাতে মেহেদি নেওয়া শেষ হতেই ‘আসছি’ বলেই বেরিয়ে যায় সে। আসার পর থেকে অভ্রর দেখা মিলেনি। অভ্রকে না দেখে কেমন একটা চিন্তা হচ্ছিল তার। বেচারার কী অবস্থা কে জানে! তাকে বাঁচাতে গিয়ে সে অনেক জোরে আঘাত পেয়েছে।

হৃদিতার জন্য ইরার রুমটাই বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নাহার বেগম আত্মীয় স্বজনের সাথে গল্প,আড্ডায় ব্যস্ত ওদিকে রাসেল সাহেবকেও দেখা যাচ্ছে না।
হৃদিতা হাতের ফোনটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রান্নাঘরের দিকে মাকে খুঁজতে এসে পেয়েও যায়।

নাহার বেগমের সাথে আয়েশা বেগমসহ আরও একজন মহিলা বসে আছে। নাহার বেগম হৃদিতাকে দেখেই কাছে ডেকে নেন।

পাশেই বসা মহিলাকে দেখিয়ে বলেন,“উনি তোমার ফাবিহা আন্টি। অভ্রর সাথে দেখা হলো না? অভ্রর মা এটা।”

হৃদিতা মৃদু হেসে সালাম দেয়। বলে,“কেমন আছেন আন্টি?”

ফাবিহা বেগম মৃদু হেসে বলেন,“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছ?”
“জি আলহামদুলিল্লাহ।”

কিছু সময় সেখানে ব্যয় করেই কিছু একটা ভেবে হৃদিতা ছাদের দিকে চলে যায়। সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদে চলে আসতেই দুজনের গলা শুনে চিলেকোঠার দরজায় থেমে যায় হৃদিতা।

তার বাবা আর অভ্রর গলা শুনতে পাচ্ছে সে। রাসেল সাহেব সন্তর্পণে বলে ওঠেন,“আমার মেয়েটা আমার খুব আদরের। যখন যা চেয়েছে তখন সেটাই পেয়েছে। মেয়েটা খুব চাপা স্বভাবের। মনের কথা কাউকে প্রকাশ করতে পারে না৷ সবকিছু নিজের মাঝে চেপে রাখে। তোমার সাথে আমার যেদিন প্রথম দেখা হলো সেদিনই ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমার মেয়ের জন্য পারফেক্ট। তুমি মানুষের ভেতরে দুঃখটা টেনে বের করে এনে হাসাতে পারো। আমার মেয়েটা মন খুলে অনেকদিন হাসে না।”

হৃদিতা দুই একটা কথা শুনতে পাচ্ছিল। যতটুকু শুনতে ততটুকুতে বুঝতে পারে তাকে নিয়েই কথা হচ্ছে এখানে। দুজনের কথা চলছেই দেখে ফিরে যাওয়ার জন্য পিছন দিকে ঘুরতেই কিছু একটায় পা লেগে শব্দ হতেই রাসেল সাহেব এবং অভ্রর কথা থেমে যায়। এগিয়ে আসে দুজন।

হৃদিতাকে দেখতে পেয়েই রাসেল সাহেব বলে ওঠেন,“হৃদি মা, তুই এখানে?”

হৃদিতা দুজনের ওপর চোখ বুলিয়ে নেয়। স্বাভাবিকভাবেই বলে,“ছাদে আসলাম একটু কিন্তু তোমরা এখানে কেন?”

অভ্র মৃদু গলায় বলে,“আমরা একটু আড্ডা দিচ্ছিলাম আর কি। ”

হৃদিতা বলে ওঠে,“আমি আসলে আপনাকেই খুঁজছিলাম। তখন রাস্তায় আমাকে সরিয়ে দিয়ে আপনি আঘা*ত পেলেন তাই জানতে চাচ্ছিলাম এখন কী অবস্থা আপনার।”

রাসেল সাহেব তৎক্ষনাৎ বলে ওঠেন,“তোমরা তাহলে কথা বলো৷ আমি আসছি।”

রাসেল সাহেব বেরিয়ে যেতে অভ্র বলে ওঠে,“আমি ভাবছিলাম আপনার সাথে দেখা করা ঠিক হবে কি না! আপনি কীভাবে নেবেন বিষয়টা সেজন্যই যাইনি।”

হৃদিতা রেলিং ঘেষে দাঁড়ায়। বুকে হাত গুজে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,“কী মনে করব? আচ্ছা এটা বলুন আপনার হাতের কী অবস্থা?”
“হালকা ব্যথা হয়েছে তাছাড়া সব ঠিকঠাক।”
“সুযোগ পেলেই এভাবে চেয়ে থাকবেন না ট্রেনের মতো। এ বাড়িতে এখন অনেক মানুষ। ”

একটুও ভড়কায় না অভ্র। হৃদিতার কথার পৃষ্ঠে বলে ওঠে,“তাহলে কি এখন দেখে মনের খায়েশ মিটিয়ে নেব?”
“বাবার সাথে কী কথা বলছিলেন?”
“আপনার বাবা আমাকে পছন্দ করেছেন, আপনি কী বলেন?”

হৃদিতা অবাক চোখে অভ্রর দিকে তাকায়। চকিতে বলে ওঠে,“আমার বাবা আপনাকে পছন্দ করেছে মানে?”
“কেন আপনি আমাকে পছন্দ করেননি?”
“আমার মাঝে কী দেখে ভাবলেন যে আমি আপনাকে পছন্দ করেছি?”
“আপনি আমাকে ট্রেনে বারবার দেখছিলেন।”
“এই কাজ তো আপনি করছিলেন।”
“আপনিও আমাকে বারবার না দেখলে বুঝলেন কীভাবে আমি আপনাকে দেখছিলাম?”

গলায় কথা আটকে যায় হৃদিতার। গলা খাঁকারি দিয়ে বলে ওঠে,“না মানে আপনি আমাকে দেখছিলেন কি না সেটা দেখছিলাম।”
“আমার হবু বউকে আমি দেখব না?”
“হবু বউ!”
“জি ম্যাডাম।”
“আমার বিয়ে আর আমিই জানি না?”
“আপনার বাবা জানে শুধু।”
“আমাকে জানাতো।”
“অপছন্দ করলেন না?”
“অপছন্দ কেন করব? আমার বিয়ের বয়স অনেক আগেই হয়েই গেছে। আপনি কী ভেবেছিলেন? আমি ন্যাকা ন্যাকা করে বলব, আমি এখনই বিয়ে করব না, চেনা-জানা হোক তারপর বিয়ে করব? না ভাই, আমি ওগুলো করব না। আমার বাবা-মা আমার জন্য যাকে ভালো মনে করবে তাকেই বিয়ে করব।”

অভ্র এগিয়ে এসে বলে,“আমার কাজ কী তবে সহজ হয়ে গেল?”

“জানি না।” বলেই হৃদিতা স্থান পরিত্যাগ করে। অভ্র দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হৃদিতার চলে যাওয়া দেখতে থাকে। তার নিজেরও মনে হয়নি হৃদিতা তাকে অপছন্দ করবে কিন্তু এত তাড়াতাড়ি মেনে নিবে সেটাও ভাবেনি সে।
গতবছর এই সময়েই রাসেল সাহেবের সাথে অভ্রর দেখা হয়েছিল। কাজের সূত্রে আলাপ হলেও ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে রাসেল সাহেবের দিক থেকে। একে তো আত্মীয় তার সাথে ছেলেটা এত সুন্দর একটা মানুষ। নিজের মেয়ের জন্য মনে মনে পছন্দ করে রেখছিলেন তিনি। এই তো আসরিফের বিয়ের অনুষ্ঠানে আসার আগেই আবার যোগাযোগ হয়েছে। তিনিই টিকিট কেটেছিলেন চারজনের চারটা। তিনি চেয়েছিলেন ছেলে-মেয়ে একটু চেনা পরিচিত হয়ে নিক। তিনি মনে মনে নিশ্চিত ছিলেন হৃদিতা অভ্রকে অপছন্দ অন্তত করবে না।

রাত নয়টা।
বিয়ে বাড়িতে আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশিরা এসে আড্ডা জমিয়েছে। আসরিফকে ঘিরে ধরে আড্ডায় মেতে উঠেছে সবাই। আসরিফের পাশেই বসে আছে অভ্র। তাদের ঠিক সামনা-সামনি ইরা চাচাতো বোনদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠেছে। ইরা এবার ক্লাস টেনে পড়ছে। মেয়েটা দেখতে যেমন সুন্দর ব্যবহারও তেমন।

আসর ছেড়ে আসরিফ অভ্রকে নিয়ে উঠে আসে। হবু বউ কল করেছে। কল না রিসিভ করলে তুল-কালাম বাধিয়ে দেবে সেই ভয়ে অভ্রকে দাঁড় করিয়ে ফোনালাপে ব্যস্ত হয় সে। অভ্র মাঝেমাঝে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। হৃদিতাকে দেখা যাচ্ছে না।

কিছুক্ষণের মধ্যেই পিছন দিক থেকে গলা খাঁকারির শব্দ শুনে ফিরে তাকায় আসরিফ। হৃদিতাকে দেখে অভ্রও এগিয়ে আসে।

হৃদিতাকে দেখে আসরিফ ফোনের ওপাশে থাকা নারীকে নরম কণ্ঠে বলে ওঠে,“ফোনটা একটু রাখো তো। হৃদিতা কী যেন বলবে।”

হৃদিতা আসরিফের থেকে ফোনটা নিয়ে বলে ওঠে,“ভাবি, মাঝে আর একটা দিন এরপর প্রেম করিও। এখন বরটাকে আমাদের সেবায় ছাড়ো একটু।”

আসরিফ ফোনটা নিয়ে বলে, “কী বলবি? বল।”

হৃদিতা অভ্রর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,“আপনি আসরিফ ভাইয়াকে সাথে নিয়ে ঘুরে আসুন। এই কাগজে আমার ওষুধের নাম লেখা আছে, মাইগ্রেন বেড়েছে। এটা এনে দিলে খুব উপকার হতো। ”

#চলবে…..

প্রেমরাঙা জলছবি পর্ব-১৭

0

#প্রেমরাঙা_জলছবি
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৭

“আপনাকে চুমু খেতে চেয়েছি? এভাবে তাকানোর কী আছে? মেয়েদের এভাবে তাকাতে নেই। মেয়েদের নতুন বউয়ের মতো তাকাতে হয় সব সময়।”

অভ্রর কথায় বিস্ফোরিত চোখে তাকায় হৃদিতা। ভ্রু কুচকে বলে ওঠে,“মশকরা করছেন আমার সাথে? সামনের সিটে আমার বাবা-মা আছে। সিন ক্রিয়েট করলে….”

হৃদিতাকে থামিয়ে দিয়ে গলা উঁচিয়ে সামনের দিকে আন্টি আন্টি করে ডাকতে থাকে অভ্র। নাহার বেগম মাত্রই একটু ঘুম ঘুম ভাবে এসেছিলেন। পিছনের সিট থেকে ডাক শুনে সেদিকে তাকায়।

অভ্র বলে ওঠে,“আসসালামু আলাইকুম, আন্টি। পানি হবে?”

নাহার বেগম একবার হৃদিতার দিকে আরেকবার অভ্রর দিকে তাকাচ্ছিল। অতঃপর ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা অভ্রর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,“নাও।”

অভ্র বোতলটা নিয়ে ঢকঢক করে বেশ কিছু পরিমাণ পানি খেয়ে নেয়। বোতলে ক্যাপ আটকে নাহার বেগমের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,“আন্টি আমি আমার পানির বোতলটা আনতে ভুলে গিয়েছিলাম। আপনার মেয়ের থেকে একটু চাইলাম উনি এমনভাবে তাকালো যেন আমাকে খেয়ে ফেলবে।”

নাহার বেগম মৃদু হেসে বলে,“ ও একটু ওরকমই। তা তুমি যাচ্ছ কোথায়? তোমাকে চেনা চেনা লাগছে।”

“আমি এই তো আমার মামাবাড়ি যাচ্ছি। মামাতো ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। মহেশপুর বাড়ি। আমার মামা আরজ আলী।”

হৃদিতা নাহার বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,“আম্মু, উনি খালামনিদের বাড়ি যাচ্ছে?”

অভ্র নাহার বেগমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,“আপনারা কোথায় যাচ্ছেন?”

নাহার বেগম মৃদু হেসে বলে,“আমরাও একই বাড়িতে যাচ্ছি। তুমি কি আসরিফের ফুফাতো ভাই?”

অভ্র ওপর-নিচ মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,“হ্যাঁ।”
“আমি আসরিফের খালা তোমাকে হয়তো তোমার ছোটবেলায় দেখেছিলাম। আগে তো আপার শ্বশুরবাড়ি অনেক যাওয়া আসা হতো এখন অনেকদিন আর সম্ভব হয় না।”

অভ্র হেসে বলে, “তাহলে ভালোই হলো। একসাথে কয়েকটা দিন কাটানো যাবে।”
“তুমি একা যাচ্ছ? তোমার মা-বাবা যাবে না?”
“আব্বু-আম্মু তো ছোটবোনের জিদের জন্য আজ সকালেই চলে গেছে। আমিই পরে যাচ্ছি।”
“কী করছ এখন?”
“আন্টি, আমি ঢাকাতে একটা প্রাইভেট কম্পানিতে জব করছি দুই বছর হবে।”
“বাহ ভালো তো।”

তাদের মধ্যে কথা চলতে থাকে ওদিকে হৃদিতা কানে হেডফোন গুজে চোখ বন্ধ করে গান শুনতে শুরু করে দিয়েছে।
~

পরপর কয়েকটা দূর্ঘটনার খবর দেখে আশরাফ নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা দূরে কোথাও আপাতত কয়েকদিনে আর ঘুরতে যাবে না। সুরাইয়া ভয়ে ভয়ে একটা ইচ্ছে জানাতে বারবার আশরাফের কাছাকাছি থাকছে কিন্তু বলতে পারছে না।

আশরাফ একটু বন্ধুদের সাথে বের হবে জন্য তৈরি হচ্ছিল। সুরাইয়া ঘড়িটা এগিয়ে দিয়ে আমতা আমতা করে বলে,“অভয় দিলে একটা কথা বলতাম।”

আশরাফ চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলে,“অভয় দিলাম, জলদি বলে ফেলো।”
“মা কল করেছিল। বলল আপনাকে আর আম্মাকে নিয়ে বাড়ি যেতে কালকে। আম্মা তো অনেকদিন আমাদের বাড়িতে যায় না। ”

আশরাফ সুরাইয়ার দিকে ফিরে বলে,“হ্যাঁ, ভালো কথা। এটা বলতে এত ভয় কেন?”
“আম্মা কি যাবে?”
“বলে দেখো, যাবে হয়তো।”
“আমার ভয় লাগে। ”
“এখানে ভয়ের কী আছে?”
“যদি ধমকে চুপ করিয়ে দেয়।”
“দেবে না।”
“নিশ্চিত?”
“বলেই দেখ।”

আশরাফ রেডি হয়ে ওয়ালেট নিয়ে বের হতে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে যায়। মাথা নাড়িয়ে ইশারায় সুরাইয়াকে কাছে ডাকে। সুরাইয়া আশরাফের দিকে এগিয়ে যায়। আশরাফ সুরাইয়ার কপালে চুমু দিয়ে বলে,“বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বউয়ের কপালে চুমু দিয়ে না বের হলে নিজেকে বিবাহিত বিবাহিত লাগে না।”

আশরাফের কথায় ফিক করে হেসে ফেলে সুরাইয়া। আশরাফ সুরাইয়ার হাসি দেখে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বাহিরে চলে যায়।

আশরাফ চলে যেতেই সুরাইয়া নিজের ফোনটা নিয়ে ময়না বেগমের রুমে প্রবেশ করে। ময়না বেগম শুয়েই ছিলেন, সুরাইয়াকে দেখে উঠে বসেন।
গম্ভীরস্বরে বলেন,“কিছু বলবে?”

সুরাইয়া ওপর নিচ মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,“বলতে চাচ্ছিলাম।”
“বলে ফেলো।”
“আসলে আমার মা কল দিয়েছিল।”
“হ্যাঁ, তারপর? তুমি মায়ের বাড়ি যাবে?”
“ আমি না, আমরা। ”
“তুমি আর আশরাফ? যাবে, যাও।”
“মা আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে। অনেকদিন তো যান না আমাদের বাড়িতে। ”

ময়না বেগম কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বলেন,“তোমার মাকে বইলো আমার জন্য যেন কয়েকটা নারকেলের নাড়ু বানিয়ে রাখে।”

সুরাইয়া কিছুক্ষণ স্থিরচোখে ময়না বেগমের দিকে চেয়ে থাকে তারপর মৃদু হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
__

স্টেশনে এসে ট্রেন থামে। রাসেল সাহেব সারা রাস্তা ঘুমিয়ে কিছুক্ষণ আগেই উঠেছে। ট্রেন থামতেই উঠে দাঁড়ান তিনি। নাহার বেগম আর তিনি নিজেদের সিট থেকে উঠে দাঁড়ান। অভ্র এতক্ষণ ট্রেনের দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। ব্যাগ নিতে সিটের দিকে এগুতে থাকে। হৃদিতা তখনও ঘুমুচ্ছে।
রাসেল সাহেব মেয়েকে ডেকে তুলতেই অভ্র এসে দাঁড়ায়।

নাহার বেগম রাসেল সাহবকে অভ্রকে দেখিয়ে বলে,“তোমার সাথে তো পরিচয় করিয়েই দিতে পারিনি। এটা অভ্র। আসরিফের ফুফাতো ভাই।”

দুজনের মাঝে সালাম বিনিময় হলে রাসেল সাহেব ব্যাগগুলো হাতে নিয়ে বলে ওঠেন,“চলো চলো বের হই। বের হয়ে কথা হবে। ট্রেন এখনই আবার ছেড়ে দেবে।”

অভ্র রাসেল সাহেবের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,“আঙ্কেল ব্যাগ আমার কাছে দিন। আমি থাকতে আপনি ব্যাগ নিয়ে এগুবেন এটা ভালো দেখা যায় না।”

রাসেল সাহেব হেসে মৃদু গলায় বলেন,“ও সমস্যা নেই। তুমি চলো।”

নাহার বেগম এবং হৃদিতা আগে আগে ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনে দাঁড়ায়। অভ্র রাসেল সাহেবের হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বলে,“চলুন।”

চারজন স্টেশনের সিঁড়ি বেয়ে নিচের দিকে নেমে এসে একটা অটো ঠিক করে নেয়। হঠাৎ কিছু মনে হতেই অটোতে ব্যাগগুলো রেখেই ট্রেনের দিকে দৌঁড় দেয় অভ্র। হৃদিতাসহ কেউ কিছু বুঝতে না পেরে সেদিকেই তাকিয়ে থাকে। সোজা ট্রেনের কামরায় ঢুকে যায় অভ্র। ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে ধীরে ধীরে চলতে শুরু করে। রাসেল সাহেব কিছু বুঝে উঠতে না পেরে অভ্রর দিকে এগিয়ে যায়। ট্রেন যখন ধীরে ধীরে স্টেশন ছাড়ছে তখনই ভেতর থেকে লাফ দিয়ে বেরিয়ে আসে অভ্র।

স্টেশনে নেমেই হাটুতে দুই হাত দিয়ে সমস্ত শরীরের ভর ছেড়ে দিয়ে হাঁপাতে থাকে। রাসেল সাহেব ততক্ষণে অভ্রর কাছে পৌঁছে যায়। রাসেল সাহেব এগিয়ে এসে বলেন,“এটা কি গিটার? এটার জন্য এভাবে দৌঁড়াচ্ছিলে?”

অভ্র মাথা উঁচিয়ে বলে,“এটা ছাড়া আমার বিয়েতে যাওয়াই বৃথা স্যার।”
রাসেল সাহেব মৃদু হেসে বলেন,“চলো এবার।”

গাড়ি এসে একটা ব্রিজের পাশে এসে থামে। বিয়ে বাড়ি এখানে এখনো দুই মিনিটের পথ। গাড়ি এখানেই থেমে যেতে রাসেল সাহেব বলে ওঠেন,“গাড়ি এখানে থামালেন কেন ভাই? আরেকটু পথ বাকি তো।”

গাড়িচালক ফিচেল হেসে বলে ওঠে,“ভাই, গাড়ি ভেতরের দিকে যাবে না। এটুকু রাস্তা আপনাদের হেটেই যেতে হবে।”

অভ্র পাশে থেকে বলে ওঠে,“এটা কেমন কথা? গাড়িতে ওঠার সময় তো বলেই উঠলাম আমরা।”

গাড়িচালক আবার বলে,“গাড়ি আর যাবে না। আপনাদের এখানেই নামতে হবে।”

অভ্র আবার কিছু বলবে তখনই রাসেল সাহেব ইশারায় অভ্রকে থেমে যেতে বলে। অভ্র আর কিছু বলে না।

গাড়ি ভাড়া মিটিয়ে ব্যাগগুলো নামিয়ে নিয়ে সবাই হাটা শুরু করে। রাসেল সাহেব এবং অভ্র আগে আগে গল্প করতে করতে হাটতে থাকে।
হৃদিতা এবং নাহার বেগম তাদের পিছনে হাটছে।

হৃদিতা হাত দিয়ে মাকে কিছু দেখাচ্ছিল। রাসেল সাহেবকে ডাকতে অভ্রও পিছনে ফিরে তাকায়। পিছনে একটা মাইক্রোকে দেখতে পায় সে। হৃদিতার কাছ ঘেষেই আসবে বুঝতে পেরে দৌঁড়ে গিয়ে হৃদিতাকে সেখান থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় কিন্তু নিজে সরে যাওয়ার আগেই মাইক্রো গাড়িটা অভ্রকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। রাস্তার পাশেই ছিটকে পড়ে সে।

মাটিতে থেকেই ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরে হৃদিতার দিকে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে,“একটু দেখে হাটতে পারেন না? কী হয়ে যেত এখনই!”

#চলবে?

প্রেমরাঙা জলছবি পর্ব-১৫

0

#প্রেমরাঙা_জলছবি
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৫

হৃদিতা কেবিনের দিকে যাওয়ার সময় খেয়াল করে বেশ কয়েকজন ডাক্তার নার্স এদিক ওদিকে ছুটোছুটি করছে। আজহার সাহেব একজন নার্সকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন,“কী হয়েছে এদিকে? এমন ছুটোছুটি করছেন কেন?”

নার্স কয়েক মুহূর্তের জন্য দাঁড়িয়ে যায়। বলে ওঠে,“আপনারা কোথায় ছিলেন, স্যার? এশা ম্যাডামের কেবিনে তখন কেউ ছিল না। এই সময়টুকুর মাঝেই অঘটন ঘটে গিয়েছে। পুলিশকে খবর দেয়া হয়েছে।”

আজহার রেজা পুনরায় জিজ্ঞেস করে,“কী হয়েছে সেটা বোধ হয় জানতে চেয়েছিলাম।”
“স্যার ওদিকে যান সব জানতে পারবেন। আবরার সাহেব নিজেই এশা ম্যাডামকে খুন করেছে, উনার অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিয়েছে আর তিনি নিজেও হাতের শিরা কে*টে সুইসাইড করেছে। ”

মাথায় যেন বাজ পড়ে হৃদিতার। এমন একটা ঘটনা ঘটবে সেটা সে কোনোভাবেই কল্পনা করেনি। নার্সের কথা যেন কিছুইতেই বিশ্বাস হচ্ছে না তার।

হৃদিতা বিষয়টা আরও বেশি পরিষ্কার হতে বলে ওঠে,“দুজনই মৃত?”

নার্স হৃদিতার চোখে চোখ রেখে বলে,“ইয়েস ম্যাম, আপনার পরিশ্রম বৃথা। তারা এখন মৃ*ত।”

আজহার সাহেব হৃদিতাকে ডেকে দ্রুত কেবিনের দিকে হাটা শুরু করে। হৃদিতা হতবিহ্বলের মতো একপা-দুপা করে ধীর গতিতে হাটছে। তার মনে একই ধরণের প্রশ্নই দানা বেধেছে,“এটা আদৌ ভালোবাসা? ভালোবাসলে কি ভালোবাসার মানুষের মৃত্যুর কারণ হওয়া যায়? ভালোবাসলে যেখানে ভালোবাসার মানুষের চোখের পানি বুকে কালবৈশাখী ঝড় তুলে দেয় সেখানে মৃ*ত্যুর কারণ?”

নাহ, হৃদিতা আর ভাবতে পারছে না। পা থামিয়ে দেয় সে। স্থীরচোখে মেঝেতে চেয়ে থাকে। ভাবতে থাকে এ পৃথিবীতে আর কী কী দেখা বাকি তার?
হৃদিতা ফোনটা বের করে আজহার সাহেবকে একটা টেক্সট দেয়। লেখে,“স্যার, আমি বাড়ি যাচ্ছি। আমি এরকম নির্মম ভালোবাসার সাক্ষী হতে চাই না। আমার পোষাবে না।”

হৃদিতা আর এক মুহূর্ত সেখানে দাঁড়ায় না। এই ক’টা দিনকে জীবনের কালো অধ্যায় মনে করে সেই মুহূর্তে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসে। এই কালো অধ্যায়ের সমাপ্তি টেনে নিজের গন্তব্যে ফিরতে থাকে সে।

দুইদিন হলো আশরাফ তার মায়ের সাথে কথা বলে না, একসাথে খাবার টেবিলে বসে খায়ও না। মাকে দেখলেই স্থান ত্যাগ করে।

জানালার পাশে বসে আশরাফ সুরাইয়ার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছিল। ময়না দরজা নক করতেই আশরাফ সুরাইয়ার কাছে থেকে দূরে সরে বসে।

সুরাইয়া দরজার দিকে এগিয়ে এসে বলে,“আসুন, আম্মা।”
ময়না বেগম ঘরে প্রবেশ করতেই সুরাইয়া একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলে,“বসুন।”

ময়না বেগম চেয়ার টেনে বসে। আশরাফকে উদ্দেশ্যে করে বলে,“তোদের যাওয়া,আসা আর থাকা সব মিলিয়ে কত টাকা খরচ হবে?”

আশরাফ সিরিয়াস ম্যুডেই বলে,“এখন আর যাওয়ার ইচ্ছে নেই। আমার বা আমাদের জন্য টাকা খরচ করতে হবে না, আম্মা। ওগুলো রেখে দাও।”
“আমি জানতে চেয়েছি, আশরাফ।”
“জেনে কী করবে?”
“সেটা তোর জানার প্রয়োজন নাই। আশা করব আমার মুখে মুখে কথা বলবি না। যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বল।”
“পঁচিশ-ত্রিশ হাজার।”
“যাওয়ার ব্যবস্থা কর তবুও আমার সাথে এরকম মুখ গোমড়া করে থাকিস না।”
“আমি মুখ গোমড়া করে আছি, কথা বলছি না এজন্য তুমি যেতে বলছো?”
“সেটা তোমার ভাবতে হবে না। ভালোয় ভালোয় ফিরে এসো আর তোমরা ফিরে আসলে উমেদের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখব।”

সুরাইয়া এ পর্যায়ে বলে ওঠে,“এটারই অপেক্ষায় ছিলাম। উমেদ তো এখন ভালো একটা জব পেয়েছে। তাছাড়া বাড়িতে একটা সঙ্গী হলে আমারও সময় কাটবে।”

ময়না বেগম গম্ভীরস্বরে বলেন,“হুম। তুমি আমার সাথে এসো আমি টাকা বের করে দিচ্ছি। আসার সময় শুটকি মাছ বেশি করে নিয়ে আসবে, বুঝেছ?”

সুরাইয়া আশরাফের দিকে তাকায়। আশরাফ ইশারায় যেতে বললে সুরাইয়া মৃদু হেসে বলে,“ কোন কোন মাছের শুটকি খাবেন বলেন তো, আম্মা? যেগুলো খেতে চাইবেন সে সবগুলোই নিয়ে আসব।”

ময়না বেগম চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ভ্রু কুচকে বলে,“ কোন কোনগুলো খাব মানে? যেগুলো পাবে সবই নিয়ে আসবে। আমি কিছু টাকা বেশি দিয়ে দিচ্ছি একদম কিপ্টেমি করবে না খাওয়া, থাকায়। সব জায়গায় ঘুরে আসবে, মোবাইলে ছবি তুলে নিয়ে আসবে, বাড়ি ফিরে আমাকে সব দেখাবে।”

সুরাইয়া মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,“ঠিক আছে, আম্মা।”

“তোমার বরকে বলবে এরকম গাল ফুলিয়ে যেন না থাকে।” কথাটা বলতেই ময়না বেগমের গলা ভারি হয়ে আসে। আশরাফ এবার স্থির হয়ে বসে থাকতে ব্যর্থ হয়। বসা থেকে উঠে এসে মায়ের সামনে দাঁড়ায়।

আশরাফ মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাত দিয়ে নিজের দুই কান ধরে অসহায় ভঙ্গিতে বলে ওঠে,“ স্যরি মা, তুমিই তো অবুঝের মতো আচরণ করো। কী করব বলো? আমরা এই বয়সে ঘুরাফেরা না করলে কখন করব বলো? টাকা তো কম উপার্জন করি না। আর এমন করব না, মা। স্যরি। তোমাকে বুঝানোর জন্যই আমি এমন করেছিলাম।”

ময়না বেগম আশরাফের হাতে ক্রমাগত মারতে থাকে আর বলতে থাকে,“তুই আমার সাথে কথা বলবি না। তোর কাছে আমার কোনো মূল্যই নেই। এখন আর ভালোবাসিস না। ”

আশরাফ হাসতে হাসতে মাকে জড়িয়ে ধরে। সুরাইয়া একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলে আর মায়ের কর্মকান্ড দেখছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।
ময়না বেগম ছেলের বাহু থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আশরাফ কিছুতেই ছাড়ছে না।

ময়না বেগম থামাথামির নাম না নিলে আশরাফ বলে ওঠে,“সুরাইয়া, একটা রশি নিয়ে এসো তো। এমনিতে তো মা স্থির হবে না, বেধে রাখতে হবে।”

আশরাফের কথা শুনে সুরাইয়া ফিক করে হেসে ফেলে। ময়না বেগম ধমকের সুরে বলে ওঠে,“থামো, তুমি হাসছো কেন? মজা নিচ্ছ, না?”

সুরাইয়া মুখ টিপে হাসতে থাকে। আশরাফ সুরাইয়াকে বলে,“তুমি রুমেই থাকো, আমি মানি নিয়ে আসছি। আজকে আমি আমার আম্মার ব্যাংকে আগু*ন লাগিয়ে দেব। আম্মাকে ফকির বানিয়ে দেব।”

আশরাফ হাসতে হাসতে ময়না বেগমকে নিয়ে চলে যায়। ঘরে ঢুকেই ময়না বেগম আশরাফের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আলমারির দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই আশরাফ মায়ের হাত ধরে সোফায় নিয়ে বসায়।

আশরাফ কিছুক্ষণ চুপ থেকে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,“আম্মা, সুরাইয়ার সাথে ভালো ব্যবহার করা যায় না?”

ময়না বেগম মুহূর্ত কয়েক নিরব থেকে বলে ওঠে,“আমি সবই বুঝি। তুই আমার বড় ছেলে, সবসময় শুধু মনে হয় তুই যদি তোর বউয়ের কথা শুনে আমাকে দূরে সরিয়ে দিস তাই তো আমি…”

আশরাফ ময়না বেগমের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,“মা, আমি কখনো তোমার পর হবো না। তুমি আমাকে পেটে ধরেছ আর সে আমার সারাজীবনের সঙ্গী। দুজনই দুইভাবে আমার খুব কাছের। তোমাদের কাউকেই আমি ছাড়তে পারব না। তুমি কখনো নিজেদের মধ্যে তুলনা করবে না। তোমরা দুজন ভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছো। তোমরা শাশুড়ি-বউমা একসাথে মিলেমিশে থাকবে, হাসিখুশি থাকবে এখানেই আমার শান্তি। তাছাড়া সুরাইয়া তার বাড়ির মানুষকে রেখে এখানে এসে থাকে। সে তো তোমার আদর ভালোবাসা চাইতেই পারে। তুমি মায়ের মতো ব্যবহার করে দেখো সুরাইয়া মেয়ের মতো ব্যবহার করবেই৷ সে যদি না করে সেটা আমি দেখব। আমার এই পরিবেশ একদম ভালো লাগে না, মা। ”

মা-ছেলের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ কথা চলে। আশরাফ ছোটো বাচ্চার মতো মাকে ভালো-মন্দ বুঝাতে থাকে। ময়না বেগমও বিনাবাক্যে ছেলের কথা শুনতে থাকে।

সুরাইয়া রুমে অনেক্ষণ অপেক্ষা করছে আশরাফের জন্য। ভেতরে ভেতরে চিন্তা হচ্ছে। ভাবছে কী হচ্ছে ও ঘরে, এতক্ষণ কেন লাগছে! যখন দেখলো আশরাফ আসছে না তখন সে রুম থেকে বেরিয়ে শাশুড়ির রুমের সামনে এসে বলে,“আপনারা কি চা খাবেন? চা করে দেব দুজনকে দুইকাপ?

ময়না বেগম গম্ভীরস্বরে বলে ওঠে,“ দুই কাপ কেন? তিনজনের জন্য তিন কাপ নিয়ে এসো। গলা শুকিয়ে গেছে। ”

#চলবে….

প্রেমরাঙা জলছবি পর্ব-১৪

0

#প্রেমরাঙা_জলছবি
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৪

সুরাইয়া চলে যেতেই আশরাফ আবার বলে ওঠে,“ আম্মা প্লিজ, তিনটা দিনেরই তো ব্যাপার। এর আগে তো সুরাইয়াকে নিয়ে আমি কোথাও যাইনি। আমি চাইলে তোমার অনুমতি ছাড়া অনেককিছুই করতে পারি কিন্তু করি না। আমি চাই সবকিছুই তোমার অনুমতিতে হোক। ”

ময়না বেগম উঠে দাঁড়িয়ে বলে ওঠেন,“অনেক টাকার ব্যাপার। এতগুলো টাকা জলে ফেলতে আমি দেব না। ”

আশরাফ এবার আন্তরিকতাহীন স্বরে বলে ওঠে,“আম্মা, তোমার মেয়ে নেহা আর তার জামাই কিন্তু বিয়ের দুই মাসের মাথায় কক্সবাজার আর বছর হওয়ার আগেই সাজেক গিয়ে ঘুরে এসেছে। আরও কোথায় কোথায় গিয়েছে কে জানে! মেয়ের সময় উৎসাহ দিতে পারলে ছেলের বেলায় কেন দিতে পারো না? নেহার যদি ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করে সুরাইয়ার ইচ্ছে করতে পারে না? আমি বোন আর বউয়ের তুলনা করতে চাইছি না। শুধু এটা বলো তুমি চাও না আমি সুরাইয়ার সাথে ভালো থাকি?”

ময়না বেগম চোয়াল শক্ত করে বলে ওঠেন,“ দিন দিন তোর গলার জোর বেড়ে যাচ্ছে, আশরাফ।”

আশরাফ মায়ের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে,“আমার এখন মনে হচ্ছে এটাই ঠিক। আমার মনে হয় এখন থেকে তোমার সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেয়া ঠিক হবে না। তোমার বয়স হচ্ছে, তুমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছো না। টিপিক্যাল শাশুড়ির মতো আচরণ করছো। তুমি আমার মা, তোমাকে অসম্ভব রকমের সম্মান করি বিধায় সব ব্যাপারে তোমার সিদ্ধান্তকেও সম্মান করি কিন্তু ইদানীং তোমার সিদ্ধান্ত আমার মন খারাপ করে দেয়। তোমার প্রতি আমার সম্মান কমিয়ে দেয়। আমার এই আম্মাকে চাই না আমি। ”

ময়না বেগম ভ্রু কুচকে বলেন,“তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলছিস, আশরাফ?”

আশরাফ মাথানিচু করে বলে,“ তোমাকে অসম্মান করতে হবে এরকম দিন আমার জীবনে না আসুক। শুধু এটুকু বলব তুমি মা হিসেবেও ভালো, শাশুড়ি হিসেবেও ভালো কিন্তু সেটা তোমার মেয়ের জামাইয়ের ক্ষেত্রে, আমার বউয়ের ক্ষেত্রে না। তুমি যেমন আমার মা ঠিক তেমন সুরাইয়া আমার জীবনসঙ্গী। ওকে ভালো রাখা আমার দায়িত্ব। আমি ওকে নিয়ে বিয়ের এতগুলো বছরে কোথাও যাইনি আমাদের যখন বাচ্চাকাচ্চা হবে তখন আরও সম্ভব হবে না। আমারও তো ইচ্ছে করে অন্যদের মতো নিজের বউকে নিয়ে একটু ঘুরতে, ফিরতে, বাহিরে খেতে যেতে। সুরাইয়া কোনোকিছুর আবদার করে না তাই বলে কি আমার উচিৎ না ওর খেয়াল রাখা? আমি প্রায় সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি, আম্মা। তোমার বোনের মেয়ে এসে তিনটা দিন তোমার কাছে থাকবে, আমরা এই তিনটা দিন একটু ঘুরে আসব। ”

ময়না বেগম কিছু বলে ওঠার পূর্বেই আশরাফ ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। ময়না বেগম আশরাফের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকেন৷ আশরাফ মায়ের ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের ঘরে চলে আসে। সুরাইয়া চুপচাপ বসে ছিল। আশরাফের উপস্থিতি বুঝতেই সে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।

আশরাফের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,“খান সাহেব, মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে নেই সেটা তো আপনিই বলেছিলেন তাহলে আজ ছোট্টো একটা কারণে এরকম কেন করলেন? এটা কিন্তু ঠিক হলো না। আপনি তো জানেনই আম্মা একটু ওরকমই।”

আশরাফ সুরাইয়াকে থামিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,“আমি আম্মার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে চাই না, সুরাইয়া। তুমি তো দেখেছ আজ অবধি আমি আম্মার সাথে উঁচু গলায় কথা বলিনি কিন্তু আম্মা সেটারই সুযোগ নেয় বারবার।”

সুরাইয়া আশরাফের হাত ধরে টেনে নিয়ে বিছানায় বসায়। সে আশরাফের দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,“মায়ের মনে কষ্ট দিতে নেই। আপনি তো ভালোভাবে বুঝাতে পারেন তাহলে এভাবে কেন কথা বললেন? আমি পরের মেয়ে আমি প্রতিবাদ করতেই পারি তবে নিজের ছেলে কষ্ট দিলে সেটা অনেক বেশি খারাপ লাগার কথা।”

আশরাফ বাহিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,“আম্মাকে বুঝতে হবে। নিজের মেয়ের ভালো চাওয়ার সাথে নিজের ছেলের বউকেও ভালো রাখা তার দায়িত্ব। ”

“আমার ছেলেকে উস্কে দিয়ে এখন ভালো সাজতেছ? আচ্ছা শয়তান মেয়ে তো তুমি! কী দেখে যে ছোটো ছেলের বান্ধবীকে বড়ো ছেলের বউ বানাতে রাজি হয়েছিলাম আল্লাহ জানে।” কথাগুলো বলতে বলতে ঘরে ঢুকে পড়েন ময়না বেগম। তার কথায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল তিনি বাহিরে থেকে কথাগুলো শুনেছেন।

আশরাফ সুরাইয়ার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে ওঠে,“ সুরাইয়া, তৈরি হয়ে নাও। তোমাকে তোমার বাসায় রেখে আমি উমেদের কাছে চলে যাব। শহরও ঘুরা হবে। বউকে নিয়ে না ঘুরতে পারলাম, ভাইয়ের সাথে শান্তিতে কিছু মুহূর্ত কাটাতে পারব। তৈরি হয়ে নাও আমি আধাঘণ্টার মধ্যে আসছি। রোজ রোজ এই অশান্তি আমার একদম ভালো লাগে না। বছরের পর বছর বাহিরে খাটা-খাটনি করে তিনটা মাসের জন্য দেশে আসি৷ বউকে নিয়ে তিন-চারটাদিনই যদি বাহিরে ঘুরতে না পারি তাহলে প্রবাসী হয়ে কী করলাম। এবার আর বিদেশ যাব না। দেশে যা পারি তাই করব। টাকা উপার্জন করে যদি সেটা ইচ্ছেমতো খরচই করতে না পারি তাহলে এত টাকা উপার্জন করে কী হবে?”

কথাগুলো বলেই মাকে পাশ কাটিয়ে বাহিরে চলে যায় আশরাফ। ময়না বেগম কঠিনগলায় বলে ওঠেন, “আমার বাড়ি থেকে যাওয়াই ভুল হয়েছিল। এই ক’টা দিনে এই মেয়ে আমার ছেলেকে বশ করে নিয়েছে। ”

সুরাইয়া ময়না বেগমের দিক থেকে চোখ সরিয়ে বলে ওঠে,“ সবকিছুতে আমাকে টানবেন না,আম্মা। আমক আপনার ছেলেকে বলিনি আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে। আপনার মেয়ের বর যখন আপনার মেয়ের কথা শোনে তখন ফূর্তি লাগে আপনার। হেসে হেসে সবাইকে বলেন যে আপনার মেয়ের জামাই খুব ভালো আর আপনার ছেলে আমাকে নিয়ে ভাবলে, তাকে বশ করা হয়ে যায়। ”

“তোমাকেও আমি দেখে নেব, কীভাবে ভালো থাকো সেটা দেখে নেব আমি।” সুরাইয়ার দিকে আঙুল উঠিয়ে বলে ওঠেন ময়না বেগম। সেখানে আর না দাঁড়িয়ে বিলাপ করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে যান।
____

হাসপাতালের বাহিরেই কয়েকজন অফিসারকে নিয়ে দাঁড়িয়ে এশার বাবার সাথে কথা বলছিলেন আজহার রেজা। অ্যাক্সিডেন্টের পর এশাকে হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। এশার যখন মোটামুটি উন্নতি হয়েছিল তখনই সুযোগ বুঝে এস.আই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এশার স্বীকারোক্তি নেওয়ার। তিনি জিদের বশে নিয়েছিলেনও আর তাতে এশার বাবাই রাজি হয়েছিলেন। কারণ এশার চিকিৎসা বন্ধের হুমকি দেয়া হয়েছিল। সত্যিটা না বললে চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়া হবে এমন হুমকিতে স্বয়ং এশার বাবা টলে যান নিজের সিদ্ধান্ত থেকে। মেয়েকে রাজি করিয়ে স্বীকারোক্তি দেওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি মনে করেছিলেন নিজের মেয়েকে একেবারে হারানোর চেয়ে নির্দিষ্ট সময় পর ফিরে পাওয়া হয়তো ভালো।

সবার কথা চলছিল এমন সময় হৃদিতা হাসপাতালের গেইট পেরিয়ে ভেতরের দিকে চলে আসে। আজহার সাহেব হৃদিতাকে দেখতে বলে ইশারায় সেখানেই দাঁড়িয়ে যেতে বলে।
আরও প্রায় দশ মিনিট কথা চলে সবার মাঝে। কথা শেষে আজহার রেজা বাদে সবাই একে একে বেরিয়ে চলে যায়।

সবাই চলে যেতেই হৃদিতা আজহার রেজার সামনে এসে দাঁড়ায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে বলে,“ কী হয়েছে স্যার?”

আজহার সাহেব হাতের ফোনটা পকেটে রেখে বলেন,“ এশার অবস্থা খুব খারাপ। জ্ঞান ফিরেনি অথচ তার সাত বছর কারাবাস হয়েছে। ওর ভাইকে গতরাতে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরেকটা নিউজ আছে।”

হৃদিতা ভ্রু কুচকে বলে,“ কী, স্যার?”
“ আবরার নিজের দোষ স্বীকার করেছে। সে এশাকে সঙ্গ দিয়েছিল এবং অ্যাক্সিডেন্টটা সাধারণ অ্যাক্সিডেন্ট ছিল না। উনি নিজেই ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য এত বড়ো কান্ড ঘটিয়েছিলেন। আমার তো মাঝেমাঝে আবরার সাহেবকে মেন্টালি সিক টাইপ লাগে।”

হৃদিতা আজহার সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে,“মেন্টালি সিক না হলে কেউ প্রেমিকাকে খু*নের কেস থেকে বাঁচতে সাহায্য করে! আবার সেই প্রেমিকার সাথেকার ঝামেলায় অ্যাক্সিডেন্ট ঘটাতে পারে!”

আজহার সাহেব হৃদিতাকে কপাল চুলকে বলে,“ কী যেন জরুরি দরকার ছিল তোমার?”

হৃদিতা হাতের রিজাইন লেটার এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,“স্যার আমি জবটা ছাড়তে চাইছি। ”

আজহার সাহেব কাগজটা হৃদিতার হাত থেকে নিয়ে মৃদু হেসে বলে,“তোমার বাবা আমাকে কল দিয়েছিল। বলেছে সব। চিন্তা কোরো না, আমি অফিসে কথা বলব। ”

হৃদিতা হাফ ছেড়ে বাঁচে। মনে মনে অনেক ভয় পেয়েছিল সে। ভেবেছিল এত তাড়াতাড়ি জব ছাড়ার জন্য অনেক কথা শুনতে হবে তার কিন্তু সেসব কিছুই হলো না। আজহার সাহেব কথা বলতে বলতে হৃদিতাকে বলে,“চলো ভেতরে সবকিছু শেষবারের মতো দেখে যাও। পরে তো আর এসবে আর নিজেকে জড়াতে পারবে না।”

“জি স্যার। ”

হৃদিতা আজহার রেজার সাথে সাথে ভেতরের দিকে চলে আসে। হাতের বামদিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে আজহার সাহেব বলে ওঠেন,“ আবরারকে দেখতে যেতে চাইছিলে? সে লোক তো প্রেমিকার হাত ধরে বেডে শুয়ে আছে। কত কান্ড ঘটিয়ে নিজের বেড এশার বেডের সাথে নিয়েছে। কত কি হয়ে গিয়েছে এই তিনদিনে তুমি জানো না।”

আজহার সাহেবের কথা শুনে হৃদিতা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। মনে মনে বলে,“ভালোবাসা এরকমও হয়!”

#চলবে….